Saturday, July 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2412



জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১২

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

আব্বুর সাথে কথা বলতে বলতে কপি বানিয়ে ফেললাম, কপি নিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম
–কপি নাও
–(কপি নিতে নিতে বললেন তোর গলার চেইন কোথায়)
–(এখন কি বলি মিথ্যে বলবো নাহ সত্যি টাই বলে দেই)
–চুপ হয়ে আছিস কেন কোন আকাম করতে গিয়ে চেইন হারিয়ে এসেছিস
–আম্মু কি বলছ এসব
–কেন সত্যি কথা শুনতে ভালো লাগে না
–আমার ফ্রেন্ডের ভাগ্নি হয়েছে বেবিটাকে চেইন দিয়ে এসেছি
–এজন্যই তো অলক্ষি বলি আমার সংসার ডুবাইবি তুই
–আমার চেইন আমি দিয়েছি এতে তোমার সংসার ডুববে কেন
–খুব বেড়ে গেছিস এখন মুখে মুখে কথা বলিস বলেই গরম কপি আমার দিকে ছুড়ে মারল, লাফ দিয়ে সরে যেতে গিয়ে আমার পায়ে পরে গেলো, যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে উঠলাম কোনো ভাবে রোমে গিয়ে বুয়া খালার মলমটা পায়ে লাগালাম, খুব যন্ত্রণা করছে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম রাতে খেলামও না, সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–এতো সময় ঘুমালে রান্না করবে কে
–আমার পা যন্ত্রণা করছে পারবো না
–ঠিক আছে আমিও তোর আব্বুকে ফোন করে বলছি কাল কোন আকাম করতে গিয়ে চেইন হারিয়ে এসেছিস (আর চুপ থাকতে ইচ্ছে হলো না)
–বলো গিয়ে আমার আব্বু তোমার মতো নোংরা মনের মানুষ না যে এসব বিশ্বাস করবে
–কি আমি নোংরা মনের মানুষ
–হ্যা নাহলে নিজের মেয়েকে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে পারতা না আমাকে এসব খারাপ কথা বলতে পারতা না
–ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি তুলিকে রেখেই যাচ্ছি

আর কিছু বললাম না বারান্দায় গিয়ে বসে রইলাম রিয়া ফোন দিলো
–কিরে হাসপাতালে যাবি
–আমাদের বাসায় আয় একটু
–কেন কোনো জামেলা হয়েছে
–পরে বলবো
–ঠিক আছে আসছি
বসে বসে ভাবছি কবে সবকিছু ঠিক হবে আদৌ কি এসব ঠিক হবে, আম্মু কি আগের মতো আমাকে ভালোবাসবে নাকি এমন খারাপ ব্যাবহার করে যাবে, তুলিটা বড় হয়েছে আম্মুর এসব ব্যবহার দেখে ও দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে আগের মতো হাসে না চুপচাপ থাকে, কি করবো আমি এই বাসা থেকে চলে যাবো কোথায় যাবো আমার তো যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই, এইসব আনমনে হয়ে ভাবছি তখন রিয়া আসলো
–কিরে কি হয়েছে
–কি আর সবসময় যা হয়
–হুম হাসপাতালে যাবি না
–পা পুরে ফেলছি কিভাবে যাবো
–কিভাবে পুরলি
–(কিছু বললাম না মৃদু হাসলাম জানি রিয়া আমার এই হাসি থেকে বুঝে যাবে)
–শ্রাবনকে ফোন দিছিলি
–না
–দিয়ে দেখ কি বলে যাওয়ার কথা বললে তো যেতে হবেই
–হুম
ওকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–হুম
–কি করো
–জানতে হবে না
–কেন
–রাত থেকে এখন পর্যন্ত একটা ফোন দিছ কেমন আছি জানতে চেয়েছ, জানতে চাইবা কেন আমি তোমার কে বলেই ফোন কেটে দিলো
ওকে কি করে বুঝাই আমি সমস্যায় আছি রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরছিলাম তাই ফোন দিতে পারিনি

রিয়া: শ্রাবন তো রেগে আছে কি করবি
–হাসপাতালে যাবো
–পায়ের এই অবস্থা নিয়ে
–হুম
–একটা কথা বলি কিছু মনে করিস না
–বল
–তুই আমাদের বাসায় চল কিছু দিন থেকে আয় তোর মন ভালো হবে আন্টিও যদি একটু পাল্টায়
–আমারও এখানে আর ভালো লাগে না কিন্তু আব্বু রাজি হলে তো আর তোর পরিবার
–আঙ্কেল কে আমি রাজি করাবো আর আমাদের বাসায় আম্মু আমি কাজের মেয়ে ছাড়া কেউ নেই ভাইয়া আর আব্বু ব্যবসার কাজে বাইরে গেছেন
–ঠিক আছে আব্বুকে বলে দেখি
–এখনি বল রাজি হলে এখন চলে যাবো

আব্বুকে ফোন দিলাম
–আব্বু
–হ্যা আম্মু কেমন আছিস
–ভালো তুমি
–ভালো
–আব্বু একটা কথা বলতে চাই যদি অনুমতি দাও
–অনুমতি চাওয়ার কি আছে বল কি বলবি
–আব্বু আমার কিছু ভালো লাগছে না এক বাসায় থাকতে থাকতে কয়েকটা দিন রিয়াদের বাসায় থেকে আসি তুমি যদি অনুমতি দাও
–কিন্তু রিয়ার পরিবার
–রিয়াই বলেছে আর ওর ভাইয়া আব্বু বাহিরে আছে কোনো সমস্যা হবে না (রিয়া আমার কাছ থেকে ফোন নিলো)
–আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল
–ওয়ালাইকুম আসসালাম মা কেমন আছ
–ভালো আপনি ভালো আছেন
–ভালো
–আঙ্কেল আমি তমাকে বাসায় নিয়ে গেলে আম্মু খুব খুশি হবেন প্লিজ না করবেন না
–আমার মেয়েটা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি ও যেতে চাইলে নিয়ে যাও আমার আপত্তি নেই
–ঠিক আছে আমরা এখনি যাবো
–আচ্ছা
ফোন রেখে রেডি হয়ে বের হলাম, আম্মু ড্রইংরুমে বসে আছেন
–কোথায় যাওয়া হচ্ছে
–রিয়াদের বাসায়
–কেন
–কয়েকদিন থাকবো
আর কিছু বললো না মনে হলো উনি খুশি হয়েছেন

বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা হাসপাতালে গেলাম, গিয়ে দেখি মা শ্রাবনকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন ও খাচ্ছে না
আমি: মা
মা: তুই এসেছিস দেখ ও কিছুই খাচ্ছে না সকাল থেকে এক কথাই বলতেছে তুই নাকি ওকে ভালোবাসিস না
রিয়া: আন্টি চলেন আমরা বাইরে যাই ওদের একা কথা বলতে দিন
রিয়া মা কে নিয়ে বাইরে চলে গেলো

আমি: রেগে আছ কেন
শ্রাবন: তুমি তো আমাকে ভালোবাস না তোমার উপর রাগ করবো কিভাবে
–কে বলছে ভালোবাসি না
–আমি হাসপাতালে কেমন আছি ওষুধ খেয়েছি কিনা একটা বার জানতে চাইছো, বাসায় গিয়ে তো ফোন দাও নি তো কি বুঝবো
— আমি রাতে পা পুরে ফেলছি যন্ত্রণায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা তাই ফোন দিতে পারিনি (বাধ্য হয়ে পা দেখালাম)
–কিভাবে পুরছে
–কপি পরে গেছিল
–ওষুধ খেয়েছ
–না যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো আর আমি কয়েকদিন রিয়াদের বাসায় থাকবো
–কেন
–এমনি
–মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কিছু খাওনি
–হুম রাত থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই খাইনি
–এখানে খাবার আছে খাও আমাকেও খাইয়ে দাও
ওকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলাম আমিও খেলাম
–রাগ কমেছে
–হুম
–না বুঝে আমার উপর কখনো রাগ করো না ইচ্ছে করে কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না
–হুম
–রেস্ট নাও আমি ডক্টরের কাছ থেকে আসি
–আচ্ছা
মা কে রোমে পাঠিয়ে রিয়াকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে গেলাম, ডক্টর বলেছে আগামীকাল শ্রাবনকে রিলিজ করে দিবে, শ্রাবণের কাছে গেলাম
–মা একটু পাশের কেবিন থেকে আসছি
–কেন
–তোমার আদরের বউমা কাল একজন কে রক্ত দিছিল তাকে দেখতে যাবে হয়তো (পাশ থেকে শ্রাবণ বললো)
–রক্ত দেয়া তো দোষের কিছু না যা মা তুই দেখে আয়
–ঠিক আছে (শ্রাবনকে একটা মুখ ভেঙ্গছি দিয়ে চলে গেলাম)

সেই মেয়েটির কেবিনে গেলাম, আমাদের দেখেই আন্টি এগিয়ে আসলেন
–কেমন আছ মা তোমরা
–ভালো আপনি ভালো আছেন
–হ্যা ভালো, এইযে আমার মেয়ে শিলা যাকে তোমরা রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছ
–আপু কেমন আছেন
–ভালো তোমরা ভালো আছ
— জ্বী ভালো
–তোমাদের জন্যই আমি আজ বেঁচে আছি

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি  পার্ট: ১১

0

জীবনের_ডায়েরি  পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

এখান থেকে শ্রাবনদের কথা শুনা যাচ্ছে
শ্রাবন: রিয়া ও কাঁদতেছে ওকে ভিতরে নিয়ে আস
রিয়া: ওর আম্মুর কথা মনে পড়ছে কাঁদতে দাও হালকা হবে
শ্রাবণ: হুম

শ্রাবণের আম্মু আসলেন দেখেও ভিতরে গেলাম না ভালো লাগছে না এখন আম্মু পাশে থাকলে জরিয়ে ধরে অনেক কাঁদতাম আমার তো আম্মুই নেই, খুব কান্না পাচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে কাদি
আন্টি: কিরে বউমা কোথায়
শ্রাবণ: বারান্দায় দারিয়ে কাঁদতেছে
আন্টি: কাঁদতেছে কেন
শ্রাবণ: ওর আম্মুর কথা মনে পড়েছে
আন্টি আমার কাছে আসলেন আমার দুগালে হাত দিয়ে বললেন
–কিরে মা আমাকে এখনো মা হিসেবে মেনে নিতে পারিসনি
–মেনে নিবো না কেন
–তাহলে কাঁদছিস কেন আমি কি তোর মা না, আমার তো মেয়ে নেই তুই আমার মেয়ে, আমার ঘরে যখন বউ হয়ে যাবি তোকে বাড়ির বউ না মেয়ে করে রাখবো
–(উনাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে দিলাম আমি তো জানিই না মায়ের ভালোবাসা কেমন ছোট বেলায় নতুন আম্মুর ভালোবাসা একটু পেয়েছিলাম তাও আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলেছি)
–কিরে এভাবে কেঁদেই যাবি আমার ছেলেটা যে কাঁদতেছে দেখেছিস
আন্টির কথা শুনে রোমের ভিতরে থাকালাম রিয়া শ্রাবন দুজনেই কাঁদতেছে, ভিতরে গেলাম
–কাঁদতেছ কেন
–তুমি কাঁদো কেন আমি তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারি না
–ঠিক আছে কাঁদবো না কান্না থামাও
–হুম
–রিয়া তুইও কাদতেছিস পিচ্ছি হয়ে গেছিস
–ভালো করেই জানিস তোর কষ্ট সহ্য হয় না আমার
–হুম (নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে এতো গুলা কাছের মানুষ পেয়ে)

আন্টি: ৪টা বেজে গেছে তোদের কি খাওয়া লাগবে না
শ্রাবন: তুমিই তো দেরি করে আসছ
আন্টি: রাতে তো এখানে থাকতে হবে তাই বাসার কাজ শেষ করে রান্না করে আসতে দেরি হয়ে গেছে, খাবার এনেছি তোরা তিনজন খেয়ে নে
আমি: আন্টি আমি এখন খাবো না ভালো লাগছে না বাসায় গিয়ে গোসল করবো
আন্টি: আমাকে আবার আন্টি ডাকলে রাগ করবো এখন থেকে মা ডাকবি, আর চুপচাপ খেয়ে নে
আমি: ঠিক আছে (এখনি মা ডাকতে হবে কেমন যেন লাগে বিয়ের আগেই শাশুড়ি)
শ্রাবন: তমা তুমি আমাকে খাইয়ে দাও (রাগি চোখে থাকালাম কেমন বোকা মায়ের সামনে খাইয়ে দিতে বলে)
শ্রাবন:আম্মু দেখছ তোমার বউমা আমার দিকে রাগি চোখে থাকায় (মায়ের দিকে থাকিয়ে দেখি উনি হাসতেছেন সাথে রিয়া ফাজিটাও, এই মা ছেলে একরকমই)
মা: আমি বাইরে যাচ্ছি তোরা খেয়ে নে
আমি: বাইরে যেতে হবে কেন আমাদের সাথে খাবেন না
মা: আমি বাসা থেকে খেয়ে এসেছি আর তুই তো লজ্জা পাচ্ছিস আমি বরং বাইরেই যাই
মা বাইরে চলে গেলেন রিয়া এখনো হাসতেছে
–এভাবে হাসছিস কেন লাত্তি খাইতে মন চাইতেছে বুঝি
–আমাকেও কি বাইরে যেতে হবে (আবার হাসতেছে)
–রিয়া হাসি থামা
–ঠিক আছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে বাসায় যেতে হবে তোর আম্মু আজ না জানি কি কান্ড করে
–হুম
ওকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়ালাম আমিও খেলাম
–এখন যাই সকালে আসবো
–(চুপ হয়ে আছে)
–মন খারাপ করে রাখছ কেন
–কই, সকালে তাড়াতাড়ি এসো
–ঠিক আছে হাত বেশি নাড়াচাড়া করো না
–হুম
আন্টিকে বলে রিয়া আর আমি বেরিয়ে আসলাম মেয়েটার কেবিনের কাছে গেলাম, মেয়েটির মা আসলেন
–তোমাদের খুঁজেছি পাইনি কোন কেবিনে ছিলে
–পাশেই তো আর সময় পাইনি তাই আসতে পারিনি
–একটা মেয়ে বেবি হইছে আমার মেয়েটার এখনো জ্ঞান ফেরেনি
–চিন্তা করবেন না আল্লাহ কে ডাকুন
–বেবিটা দেখে যাইবা না মা
–হুম চলুন (বেবি টা দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে কেমন ড্যাবড্যাব করে থাকিয়ে আছে আমার দিকে হিহিহি, বেবি তো দেখলাম কি দেই এখন এই সোনামণিটা কে গলার চেইনের দিকে নজর পড়লো খুলে বেবির গলায় পড়িয়ে দিলাম)
–আরে মা চেইন দিচ্ছ কেন
–এমন ফুটফুটে বেবি কি এমনি দেখা যায় আর আমি আমার বোনজি কে দিয়েছি আপনার কি
–(উনি হেসে দিলেন)
–আমাদের এখন যেতে হবে সকালে এসে দেখে যাবো আবার
–ঠিক আছে মা তোমাদের উপকারের কথা কখনো ভুলবো না
–উনি তো আমাদের বড় বোনের মতই আমাদের বোন হলেও তো রক্ত দিতাম, আসি দেরি হয়ে যাচ্ছে
–ঠিক আছে

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রিক্সায় উঠলাম রিয়া আর আমার বাসা পাশাপাশি তাই একসাথেই যাওয়া যায়
–তমা দেখেছিস শ্রাবন তোকে কতটুকু ভালোবাসে আর ওর মা তো তোকে মেয়ে বানিয়ে ফেলছে এখনি বউমা ডাকে
–হুম কিন্তু আমি কি ওদের এতো ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারবো
–কেন পারবি না
–আম্মু যদি মেনে না নেয় জামেলা করে
–সেটা পরে দেখা যাবে
–হুম
বাসায় আসলাম কলিংবেল চাপতেই আম্মু দরজা খুলে দিলো, আজ আমার কপালে দুঃখ আছে উনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে
আম্মু: আমি তো ভেবে ছিলাম রাতের আধারে কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেছিস আমারও আপদ বিদায় হইছে কিন্তু ফিরে আসলি কেন
–আম্মু কি বলছ এসব
–কেন ভুল বললাম নাকি
–ছি আম্মু নিজেরে মেয়েকে এসব বলতে তোমার লজ্জা করে না
–কে আমার মেয়ে তুই আমার মেয়ে না তুই তো একটা অলক্ষি ছোট বেলায় নিজের মাকে খেয়েছিস আর এখন আমার সংসার খাচ্ছিস
–প্লিজ চুপ করো আমি তোমার সংসার খাবো কেন
–তুই এই সংসারের আপদ তুই না থাকলে আমার সংসার অনেক সুন্দর হতো, তোর পিছনে কামুকাই টাকা নষ্ট করতেছে তোর আব্বু
–আমি আব্বুর প্রথম মেয়ে ভুলে যেও না
–হুহ আসছে প্রথম মেয়ে তোকে যেদিন এই ঘর থেকে বের করতে পারবো সেদিন আমি শান্তি হবো
আর কিছু বললাম না কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি রোমে চলে আসলাম, আম্মুর কথা গুলো কানে বাজতেছে আমি নাকি ছোট বেলায় আম্মুকে খেয়েছি আচ্ছা আম্মু তো এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন এতে আমার কি দোষ, আমি নাকি এই সংসারের আপদ এসব শুনার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো, বিছানায় শুয়ে কাদতেছি শ্রাবন ফোন দিলো
–হ্যালো
–বাসায় পৌঁছেছ
–হ্যা
–তোমার কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন তুমি কাদতেছ
–কই না তো
–হুম যাও গোসল করে এসো
–ঠিক আছে রাখি
গোসল করে আসতেই আম্মু আসলো
–রান্না করবে কে
–হুম যাচ্ছি
–কখন রাত ১২টায়
–মাত্র তো ৬টা বাজে
–কয়টা বাজে তোকে দেখতে হবে না রান্না করতে বলছি রান্না কর গিয়ে
–হুম (রান্না করতে চলে গেলাম)
রান্না প্রায় শেষ আম্মু আসলো
–তাড়াতাড়ি এক মগ কপি বানিয়ে দে তো
–দিচ্ছি
কপি বানাচ্ছি আব্বু ফোন দিলেন
–হ্যালো আব্বু
–কিরে বাসায় এসেছিস
–হ্যা অনেক আগেই
–খেয়েছিস কিছু
–হুম
–ঠিক আছে রাখি আমি একটু ব্যাস্ত পরে ফোন করবো
–আচ্ছা

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১০

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–তোমার ভিতরে যে কয়টা ফাজিল বাস করে আল্লাহ জানেন, চুপ করে খাও আর একটা কথাও বলবানা
–হুম
ওকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়ালাম
–এখন একটু ঘুমাও
–না
–কেন
–তোমাকে দেখব
–এখনি ঘুমাও নাহলে আমি বাসায় চলে যাবো
–ঠিক আছে ঘুমাচ্ছি ঘুম থেকে উঠে যেন তোমাকে দেখি
–ঠিক আছে
পাগলটা ঘুমিয়ে পড়েছে আমি কেবিন থেকে বেরিয়ে হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম, হাসপাতাল আমার ভালো লাগে না তাও সময় কাটানোর জন্য ঘুরে ঘুরে দেখছি, কেউ কাঁদতেছে কেউ হাসতেছে কেউ যন্ত্রণায় চটপট করতেছে এটাই হাসপাতাল, আমি কারো কান্না সহ্য করতে পারি না তাই হাসপাতাল ভালো লাগে না, হঠাৎ চোখ পড়লো একটা কেবিনে কয়েকজন মানুষ কাদতেছে আর বেডে শুয়া একটি মেয়ে সবার দিকে চেয়ে মৃদু হাসতেছে, হাসিটা যে জোর করে ঠোটের কোনে ফুটিয়েছে তা বুঝাই যাচ্ছে, মেয়েটির কি হয়েছে জানতে ইচ্ছে হলো তাই সেই কেবিনে গেলাম, গিয়ে দেখলাম মেয়েটি প্রেগন্যান্ট সম্ভবত ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে আনা হয়েছে, একজন মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম
–আন্টি উনার কি হয়েছে
–ডেলিভারির জন্য রক্ত প্রয়োজন, রক্ত না পেলে হয় বাচ্চাটি মারা যাবে নাহয় আমার মেয়েটি (বুঝলাম উনি মেয়েটির মা)
–উনি হাসতেছেন কেন
–ডক্টর বলেছে ১ঘন্টার ভিতরে রক্ত জোগাড় না করতে পারলে যে কোনো একজন কে বাঁচাতে পারবে, আমার মেয়েটি ডক্টর কে বলেছে বাচ্চাটা বাঁচাতে, ও হাসতেছে ওর বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখবে এই খুশিতে আর আমি কাদতেছি আমার একমাত্র মেয়েটি পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে এই কষ্টে
–(হায়রে মা জাতী নিজে মারা যাবে তাও কষ্ট নেই মনে বাচ্চাটি পৃথিবীতে আসবে এই খুশিতে মৃত্যুর মুখে থেকেও হাসতেছে)
আন্টি রক্ত কি জোগাড় হয়নি
–চার ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন দুই ব্যাগ জোগাড় হইছে আর দুই ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে না
–আচ্ছা উনার রক্তের গ্রুপ কি
— O-
–আমার রক্তের গ্রুপও তো O-
আন্টি কাঁদবেন না আমি আপনার মেয়েকে রক্ত দিব
–সত্যি দিবা মা
–হ্যা
আমার একটু রক্তের জন্য যদি একজন মানুষ বেচে যায় রক্ত দিতে দোষ কি, মেয়েটি বেচে গেলে তো বাচ্চাটি আর আমার মতো মা হারা হবে না, আন্টিকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে গেলাম
–ডক্টর আমি উনার মেয়েকে রক্ত দিব আমার রক্তের গ্রুপ O-
–কিন্তু উনার তো আরও দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন
–সমস্যা নেই আমিই দুই ব্যাগ দিব
–পাগল হয়েছেন আপনার শরীরের যা অবস্থা দুই ব্যাগ রক্ত দিলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন
–অসুস্থ হবো মারা তো যাব না বাচ্চাটি তো মা হারা হবে না
–দেখুন আমরা একজন রোগী কে বাঁচাতে গিয়ে আর একজন কে বিপদে ফেলতে পারবো না, আপনার শরীর থেকে আমরা এক ব্যাগ রক্ত নিতে পারবো
–প্লিজ ডক্টর বুঝার চেষ্টা করুন
–সরি আমাদের কিছু করার নেই
ডক্টর কে কোনো ভাবেই বুঝাতে পারলাম না এখন কি করবো আমার মতো বাচ্চাটি মা হারা হউক আমি চাই না, মেয়েটির মা আবার কান্না শুরু করেছেন কি করবো বুঝতে পারছি না একটা চেয়ারে গিয়ে বসলাম, আমারও এখন কান্না পাচ্ছে একি রক্তের গ্রুপ হয়েও আমি মেয়েটিকে বাঁচাতে পারবো না, হঠাৎ মনে পড়লো রিয়া একদিন বলেছিলো আমাদের দুজনের রক্তের গ্রুপ এক তাড়াতাড়ি ওকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–রিয়া তোর রক্তের গ্রুপ কি
–তোকে তো একদিন বলছিলাম আমাদের দুজনের রক্তের গ্রুপ এক O-
–১০মিনিট এর ভিতরে হাসপাতালে আয় একজন কে রক্ত দিতে হবে
–কাকে
–এসব পরে বলবো তুই ১০মিনিট এর ভিতরে আয় আমি শ্রাবণের কেবিনের সামনে তোর জন্য অপেক্ষা করছি
–ঠিক আছে আসছি
যাক শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে বাঁচাতে পারবো, তাড়াতাড়ি মেয়েটির মায়ের কাছে গেলাম
–আন্টি রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে আর কাঁদবেন না প্লিজ
–কে দিবে
–আমার ফ্রেন্ড আর আমি ও আসছে ১০মিনিট লাগবে
–আমার মেয়েটা বাঁচবে তো (আমার হাত ধরে)
–আমরা তো রক্ত দিব এখন আল্লাহ কে ডাকুন
–আমার একমাত্র মেয়েটার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো
–কিচ্ছু হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে আন্টি আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, একটু অপেক্ষা করুন আমি ওকে নিয়ে আসছি
–ঠিক আছে

আমি শ্রাবণের কেবিনে গেলাম ও ঘুমিয়ে আছে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে মুখটা অনেক মায়াবী লাগছে, ওর পাশে গিয়ে বসলাম চুল গুলায় আলতো করে হাত বুলালাম
রিয়া: ওলে বাবালে এখনি এতো ভালোপাশা
আমি: কখন আসলি
–এখনি এসেই আপনার রোমান্স দেখলাম
–চুলে হাত বুলানো টাও রোমান্স
–তো কি
–পরে শিখাবো আপনাকে এখন চল আগে রক্ত দিয়ে আসি
–কাকে বলবি তো
–পরে সব বলবো আগে রক্ত দিয়ে আসি
–ওকে চল
একজন নার্স কে ডেকে বললাম শ্রাবণ কে দেখে রাখতে আর আমাকে খুঁজলে যেন বলে পাশেই আছি তাড়াতাড়ি চলে আসবো, রিয়াকে নিয়ে ডক্টরের চেম্বারে গেলাম একজন নার্স এসে আমাদের নিয়ে গেলো, জীবনের প্রথম রক্ত দিচ্ছি আল্লাহ জানেন কি হয় আমি তো সূচ বেশি ভয় পাই
ভালো ভাবেই রক্ত দিলাম হাতটা একটু ব্যাথা করছে শুধু, রিয়া আর আমি মেয়েটার কেবিনের সামনে গেলাম সবাই ব্যাস্ত এখন অপারেশন শুরু হবে, মেয়েটার মা আসলেন
আন্টি: মা এখন তো অপারেশন হবে তুমি থাকবা আমার মেয়েটা তোমাকে দেখতে চাইছে
আমি: পাশের কেবিনে আমাদের রোগী আছে আমি ওখানেই আছি পরে এসে দেখে যাবো
আন্টি: ঠিক আছে মা
রিয়া আর আমি চলে আসলাম, রিয়াকে সব বললাম, এসে দেখি শ্রাবণ রাগে বেলুনের মতো ফুলতেছে
–ঘুম থেকে কখন উঠেছ
–তোমার জানতে হবে না
–রেগে আছ কেন
–কই গেছিলা
–পাশের কেবিনে
–কেন
–একটা মেয়ে অসুস্থ রিয়া আর আমি দুজন মিলে রক্ত দিয়ে আসছি
–রক্ত দেয়ার মতো কি এই দুনিয়ায় আর কেউ ছিল না তোমাকেই দিতে হলো কেন
–আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছিলো না তাই
–যদি তোমার কোনো ক্ষতি হয়
–রক্ত দিলে ক্ষতি হবে কেন
–তাও ভয় করে
–কিছু হবে না আর যদিও হয় একটু অসুস্থ হবো বাচ্চাটা তো আর মা হারা হবে না, মা না থাকার যন্ত্রণা আমি জানি আমি চাই না ছোট বাচ্চাটি এই যন্ত্রণা পাক
–হুম
আম্মুর কথা মনে পড়ে গেলো দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে কেবিন থেকে বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে দারালাম, আম্মু নাকি এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন অপারেশন এর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন ছিল আব্বু টাকা জোগাড় করতে পারেন নি তাই আম্মু না ফেরার দেশে চলে গেছেন, সেই সময় যদি কেউ আব্বুকে একটু সাহায্য করতো তাহলে হয়তো আম্মু আজ বেচে থাকতো আমিও মা হারা হতাম নাহ……

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৯

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–কলেজে যাওয়ার জন্য আম্মুর কাছে টাকা চাইতে ভালো লাগে না
–ঠিক আছে যাওয়ার সময় দিয়ে যাবো
–হুম
চার দিন কিভাবে যেন কেটে গেলো আব্বু চলে গেলেন, সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে আছি রিয়া ফোন দিল
–কিরে ভুলে গেলি
–নারে আব্বু আসছিলেন বাসায় তাই তোকে ফোন দেয়া হয়নি কলেজেও যাইনি জানিস তো আব্বু পাশে থাকলে সব ভুলে যাই
–হুম আজ শ্রাবণের দেয়া এক সপ্তাহ শেষ
–তুই জানলি কিভাবে
–শ্রাবণ আমাকে সব বলেছে এখনো সময় আছে রাজি হয়ে যা নাহলে ও খারাপ কিছু করে বসবে
–তুই ওকে বুঝিয়ে বল খারাপ কিছু যেন না করে আমি ভেবে দেখি
–ওর ফোন বন্ধ কিভাবে বুঝাব
–আচ্ছা ফোন রাখ ভালো লাগছে না ভেবে দেখি
ফোন রেখে শুয়ে পরলাম কিছু ভালো লাগছে না ছেলেটা কি সত্যি আমাকে ভালোবাসে, সত্যি না হলে তো এমন পাগলামো করত না আমার কি করা উচিত মেনে নিব, পরে যদি সমস্যা হয় আম্মু জানতে পেরে যদি জামেলা করে, দুর পরে যা হবার হবে যে আমাকে এতো ভালোবাসে তাকে আর কষ্ট দিতে চাই না সকালেই ওকে বলবো আমি রাজি, এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতেই পারিনি, সকালে রিয়ার ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে এতো সকালে ফোন দিলি
–তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আয়
–কেন কি হয়েছে
–শ্রাবণ হাতের রগ কেটে সুইসাইড করতে চাইছিল এখন হাসপাতালে আছে
–কোন হাসপাতাল
রিয়ার কাছ থেকে হাসপাতালের নাম জেনে তাড়াতাড়ি গেলাম, একজন মহিলা কাঁদতেছেন উনি মনে হয় শ্রাবণের মা আর
শ্রাবণের কয়েকটা ফ্রেন্ডস দারিয়ে আছে, রিয়া আসলো
–এবার শান্তি পেয়েছিস
–আমি কি করলাম
–একটা ছেলে তোকে এতো ভালোবাসে রাজি হলে কি এমন হতো
–আমি তো ওকে কষ্ট দিতে চাই না বলেই রাজি হইনি
–হ্যা এখন আর ওর কষ্ট হবে না মারা গেলেই সব শান্তি
–রিয়া প্লিজ চুপ কর
–কেন চুপ করব ওর যদি কিছু হয়ে যায় ওর আম্মুর কি হবে
–ওর কিছু হবে না আমি ওকে ভালোবাসি আমার ভালোবাসা দিয়েই ওকে সুস্থ করে তুলবো
–সত্যি ওকে ভালবাসিস
–হুম কাল রাতে অনেক ভেবে দেখেছি পরে যা হবার হবে ও আমাকে এতো ভালোবাসে যখন আমিও ওকে অনেক ভালোবাসব
–আমি সবসময় তোর পাশে থাকবো
ডক্টর শ্রাবণের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো
আমি: ডক্টর শ্রাবণের কি অবস্থা
ডক্টর: ডান হাতের কব্জির রগ অনেকটা কেটে গেছে অনেক রক্ত ঝরেছে তো সুস্থ হতে কিছু সময় লাগবে আর রোগীর পাশে কান্নাকাটি করবেন না
আমি: এখন কি ওকে দেখতে পারবো
ডক্টর: হ্যা তবে বেশি মানুষ একসাথে যাবেন না
রিয়া আমি আর শ্রাবণের আম্মু ভিতরে ঢুকলাম, ও আমার দিকে থাকিয়ে আছে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে মাথা নিচু করে দারিয়ে রইলাম
শ্রাবণ: আম্মু তোমার বউমার উপরে রেগে আছ তাই না (খুব অভাক হলাম ওর কথা শুনে কেমন ফাজি ছেলে)
ওর আম্মু: এমন লক্ষী বউমার উপরে কি রেগে থাকা যায় (যাক বাবা মা ছেলে দেখি এক রকমই এখনি বউমা ডাকতেছে)
মারে প্রথম তোর উপরে অনেক রেগে ছিলাম তোর কারনে আমার ছেলে মরতে বসেছিল তাই কিন্তু তোকে দেখার পর সব রাগ চলে গেছে তুই সত্যি অনেক লক্ষী একটা মেয়ে আমার ছেলের পছন্দ আছে (আমার মাথায় হাত বুলিয়ে উনি এসব বললেন)
শ্রাবণ ইশারা দিয়ে বললো ওর আম্মুকে সালাম করতে আমিও সালাম করলাম, রিয়া দেখি মুচকি মুচকি হাসতেছে দিলাম ওর পায়ে এক লাত্তি
রিয়া: তমা আন্টি তো সকাল থেকে কেঁদেই যাচ্ছেন এখনো কিছু খাননি তুই এখানে থাক আমি আন্টিকে নিয়ে গিয়ে কিছু খাইয়ে আসি আর তোদের জন্য ও নাস্তা নিয়ে আসি
আমি: ওকে যা
রিয়া আর আন্টি চলে গেলো
–এই যে আমার পাশে কি একটু বসা যাবে
–হুম (ওর পাশে গিয়ে বসলাম)
–এতো চুপ হয়ে আছ কেন
–যা কান্ড করেছ চুপ হয়ে থাকবো না তো কি করব
–তোমার কারনেই তো এমন করতে হলো আগে রাজি হয়ে গেলেই হত
–এখনো তো রাজি হইনি
–আর মিথ্যে বলতে হবে না তোমার চোখ ই বলে দিচ্ছে আমাকে ভালোবাস কি না, কেঁদে কেঁদে তো চোখ ফুলিয়ে ফেলছ
–যা করেছ কাঁদবো না তো কি হাসব
–দোষ তোমারই তুমি রাজি হউনি তাই এমন করতে হয়েছে
–হুম যদি খারাপ কিছু হয়ে যেত
–হাত কাটার পর তো ভেবেছিলাম মরেই যাবো আর তোমাকে দেখা হবে না কিন্তু বেচে গেছি হয়তো তোমার ভালবাসার কারনেই
–হইছে এগুলা বাদ দাও আর এমন করবা না কখনো
–এখন তো তুমি আছ আর এমন করার প্রশ্নই আসে না
–হুম
–একটা বার লাভ ইউ বল না প্লিজ
–পারবো না
–পারবা যখন হাতে ব্যাথা পেয়ে কাঁদবো তখন
–নিজেই হাতে ব্যাথা দিবা নাকি
–হ্যা লাভ ইউ না বললে হাতে ব্যাথা দিব আর কাঁদবো
ওর দিকে রাগি চোখে থাকালাম কেমন ফাজি ছেলে, তখন আব্বু ফোন দিলেন
–কেমন আছ আব্বু
–ভালো তুই কোথায়
–হাসপাতালে আসছি আমার একটা ফ্রেন্ড অসুস্থ
–তোর আম্মুকে বলে আসবি না
–আম্মু ঘুমে ছিল তাই আর জাগাইনি
–ঠিক আছে
–আব্বু আম্মুকে একটু বলে দাও আমার বাসায় যেতে বিকেল হবে
–আচ্ছা
ফোন রেখে শ্রাবণের দিকে থাকালাম ফাজিলটা হাসতেছে
–হাসতেছ কেন
–আমার জন্য শশুড় আব্বুর কাছে মিথ্যে বললা তাই
–এখনি শশুড় বানিয়ে ফেলছ আর মিথ্যে বললাম কই
–এক সময় তো শশুড় হবেই এখন থেকে ডাকলে সমস্যা কি আর আমি তো তোমার ফ্রেন্ড না এটা মিথ্যে না
–ফ্রেন্ড না বলে কি বলা উচিত ছিল
–“আব্বু তোমার জামাই আমার জন্য হাত কেটে হাসপাতালে ভর্তি আছে দেখতে আসছি” ঠিক এভাবে
–তুমি আসলেই একটা ফাজিল
–যাই বলো আমার শশুড় আব্বু কিন্তু অনেক ভালো
–আবার শশুড় ডাকো শুধু তোমার কাটা হাতে ব্যাথা দিব
–ঠিক আছে উনাকে শশুড় ডাকবো না তোমাকে বউ ডাকবো
–আল্লাহ কোন ফাজিল এর পাল্লায় পরলাম

আন্টি আর রিয়া চলে আসলো
আন্টি: মা তুমি এখানে একটু থাকতে পারবা বাসায় যেতে হবে বিকেলে চলে আসবো
আমি: ঠিক আছে
রিয়া: আমাকেও বাসায় যেতে হবে তুই থাক এখানে আর খাবার গুলা রাখ খেয়ে নিস ওকে ও খাইয়ে দিস
আমি: ঠিক আছে

আন্টি আর রিয়া চলে গেলো
শ্রাবণ: খিদে লাগছে খাইয়ে দাও
–পারবো না নিজে খাও
–আমার হাত তো কাটা কিভাবে খাবো
–হাত কাটার সময় মনে ছিল না
–আমি তো কাটছিলাম মরার জন্য কিন্তু মরিনি, মরে গেলে ভালই হত কাটা হাত নিয়ে কষ্ট করে খেতে হত না
–হইছে আর মৃত্যু কামনা করতে হবে না খাইয়ে দিচ্ছি
–হাত কেটে ভালই হইছে
–কেন
–তোমাকে ফেলাম সাথে তোমার সেবা যত্ন ফ্রি
–তোমার ভিতরে যে কয়টা ফাজিল বাস করে আল্লাহ জানেন, চুপ করে খাও আর একটা কথাও বলবা না…….

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৮

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–পাগল হয়ে গেছ নাকি সামান্য কথা থেকে ডিভোর্স এর কথা বলতেছ
–আমার এই সংসার আর ভালো লাগে না আমাকে এই সংসারে রাখতে হলে আমার কথা মতো চলতে হবে
–(আল্লাহ কি করবো এখন আমি এতো অত্যাচার সহ্য করবো কিভাবে, ডিভোর্স দিয়ে চলে গেলে আব্বু আবার কষ্ট পাবেন আমি চাই না আব্বু দ্বিতীয় বার স্ত্রী হারানোর কষ্ট পান)
–চুপ হয়ে আছিস কেন আমার কথা মতো চললে বল নাহলে এক সপ্তাহের ভিতরে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো তুলিকেও রেখে যাবো তোর মতো তুলি মা হারা হউক এইটা নিশ্চয় চাইবি না
–হুম বলো তোমার কি কি কথা শুনতে হবে
–প্রতিদিন কলেজে যাওয়া চলবে না তোর আব্বুকে বলবি কলেজে যাস, বাসার সব কাজ করতে হবে আমি যাই করি তোর আব্বুকে বলতে পারবি না
–হুম

এই মহিলার ভিতরে কি চলতেছে আল্লাহই জানেন আমার আব্বুকে কোনো বিপদে না ফেললেই হলো, আব্বুকে ভালো রাখার জন্য আমি সব সহ্য করতে পারবো
সারাদিন বাসার কাজ করলাম আম্মুর কথা তো শুনতে হবেই আব্বুকে ভালো রাখার জন্য তুলিকে মা হারা না করার জন্য, এই মহিলা মানুষ নাকি অন্য কিছু আল্লাহ জানেন নিজের মেয়েকেও মা হারা করতে চায়

পরের দিন আর কলেজ যাওয়া হলো না সারা দিন বাসার কাজ করে কাটিয়ে দিলাম, এখন বাসার সব কাজ একাই করতে পারি, সন্ধ্যায় রিয়া ফোন দিল
–কিরে কলেজে আসলি না এখনো রেগে আছিস
–তোর উপর রাগ করে থাকতে পারি নাকি
–তাহলে কলেজে আসলি না কেন
–আম্মু বলছে প্রতিদিন কলেজে যাওয়া যাবে না
–কেন
–বাসার কাজ করবে কে
–আমি বুঝি না তুই তোর আব্বুকে সব বলিস না কেন
–আমি সংসারে কোনো অশান্তি চাই না বাদ দে
–হুম শ্রাবণের কথা কিছু ভাবলি
–না এসব সম্ভব না বাদ দে
–হুম
ফোন রেখে ভাবছি শ্রাবন কি সত্যি আমাকে ভালবাসে এই সময় আবার ফোন বেজে উঠলো শ্রাবণ ফোন দিছে
–হ্যালো
–আজকে কলেজে আসনি কেন
–আর কলেজে যাবো না
–আমি আর তোমার দিকে থাকিয়ে থাকবো না প্লিজ তুমি কলেজে আসা বন্ধ করো না
–এই কারনে না পারিবারিক সমস্যা
–হুম বুঝেছি
–এসব পাগলামো বন্ধ করো পড়াশোনায় মন দাও
–মন তো তোমাকে দিয়ে দিছি বইকে কিভাবে দিবো মন দুইটা নাকি
–ফাজলামো করতেছ কেন
–ছাদে আস
–মানে
–তোমাদের ছাদে আস আমি ছাদে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি
–এতো রাতে ছাদে যাবো পাগল হয়ে গেছ নাকি
–হ্যা তোমার জন্য পাগল হইছি ছাদে আসবা তোমাকে দেখেই চলে যাবো আর না আসলে সারা রাত ছাদেই থাকবো বাই
ফোন কেটে দিল আল্লাহ কোনো পাগলের পাল্লায় পরলাম, এতো রাতে ছাদে যাওয়া কি ঠিক হবে আম্মু যদি বুঝে যায় কি করবো ভাবতেছি তখন ফোনে মেসেজ আসলো শ্রাবন মেসেজ করেছে
“ছাদে আসবা না হলে সারা রাত এখানেই বসে থাকবো”
বাধ্য হয়ে ছাদে গেলাম ও আমাকে দেখেই কান্না শুরু করে দিছে বুঝলাম না কান্না করার কি আছে
–এই কাঁদছ কেন
–কলেজে যাওনি কেন
–তাই বলে কাঁদতে হবে
–তুমি তো আমাকে ভালোবাস না তুমি বুঝবা না তোমাকে না দেখলে কতটুকু কষ্ট হয়
–এসব তোমার পাগলামি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে
–পাগলামি না সত্যি তোমাকে ভালবাসি
–হইছে এখন যাও আম্মু বুঝতে পারলে সমস্যা হবে
–তোমার মনে কি আমার জন্য একটু ভালোবাসাও নেই
–না নেই
–ঠিক আছে কি করে ভালোবাসা জন্মাতে হয় আমি জানি
–কি করবা তুমি
–সুইসাইড
–(ঠাস করে একটা তাপ্পর দিলাম)
–মারলা কেন
–তো কি করবো পাগলের মতো কি বলতেছ এসব জীবন এতই সস্তা একটা মেয়ের ভালোবাসা না পেলে সুইসাইড করতে হবে
–তো কি করবো অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলে থাকার এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারিনি
–প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো
–কিচ্ছু বুঝতে চাই না এক সপ্তাহ সময় দিয়ে গেলাম এর মধ্যে তোমার মতামত জানাইবা

ও চলে গেলো কি করবো আমি যদি সত্যি খারাপ কিছু করে বসে ওর আম্মুকে কি বলবো, ওর আব্বু নেই ওকে নিয়েই ওর মা বেচে আছেন ওর কিছু হলে আমি দায়ী হবো, ভালো লাগছে না কিছু আমার জীবনটা এমন কেন, রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম

এক সপ্তাহ থেকে দুদিন চলে গেলো শ্রাবণ আর ফোন করল না পাগলটা কি সত্যি খারাপ কিছু করবে নাকি আল্লাহ জানেন, আব্বু ফোন দিলেন
–হ্যালো আব্বু
–আম্মু বাসায় আসতেছি কিছু লাগবে
–চকলেট নিয়ে এসো আর কখন আসবা
–রাত ৯টার দিকে
–আচ্ছা সাবধানে এসো
–আচ্ছা রাখি
ফোন রেখে ভাবছি মাত্র সন্ধ্যা হইছে ৯টা বাজতে অনেক দেরি আমি তো এখন অনেক ভালো রান্না করতে পারি আজ আব্বুর প্রিয় খাবার রান্না করবো, ভুনা খিচুরি আর ইলিশ ভাজা আব্বুর প্রিয় খাবার শুধু আব্বুর না আমারও, যেই ভাবা সেই কাজ রান্না করতে শুরু করে দিলাম, আম্মু আসলো
–কি ব্যাপার আজ এসব রান্না করছিস কেন
–আব্বু আসবে তাই
–আমাকে তো বলেনি
–আমি কি জানি
–তুই যে রান্না করতেছিস তোর আব্বুকে কি বলবি আবার ঘরে অশান্তি শুরু করে দিবি
–কিছু হবে না চিন্তা করো না তোমার কথা কিছুই বলবো না
–বললে তো কি হবে বুঝিস ই
–হুম
রান্না শেষ করে ফ্রেশ হয়ে আসলাম ৯টার দিকে আব্বু আসলেন
আব্বু: আমার আম্মুরা কই (তুলি দৌড়ে গিয়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: আব্বু তোমাকে আজ অনেক খুশি খুশি লাগছে কারন কি
আব্বু: চার দিন তোদের কাছে থাকবো তাই, অনেক খিদে লেগেছে চল খাবো
আমি: হুম চলো
আম্মুর অবস্থা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে আব্বু বাসায় আসলে সব কাজ আম্মুকেই করতে হয় এখনো মুখ গোমরা করে খাবার বারতেছেন
আব্বু: আজ খাবারের গন্ধ অন্য রকম লাগতেছে
তুলি: আব্বু আজ আপু তোমার প্রিয় ভুনা খিচুরি আর ইলিশ ভাজা রান্না করেছে
আব্বু: কিরে রান্না শিখলি কিভাবে (আম্মু আমার দিকে রাগি চোখে থাকিয়ে আছে)
আমি: আব্বু এখন রান্না শিখতে বেশি সময় লাগে নাকি ইউটিউব আছে না
আব্বু: হুম বুঝেছি
খেয়ে রোমে আসলাম একটু পর আব্বু আসলেন
–চল ছাদে যাই
–তুমি যাও আমি কপি নিয়ে আসি
–ওকে
দুই মগ কপি বানিয়ে আর কিছু চকলেট নিয়ে ছাদে গেলাম
–এখন আর আগের মতো চকলেট নিয়ে পাগলামি করিস না
–হয়তো বড় হয়ে গেছি
–হুম বড় হয়েছিস বলেই তো বাবাকে মিথ্যে বলিস
–মিথ্যে কখন বললাম
–আমি এতো বোকা না রে মা কোনটা ইউটিউব দেখে প্রথম রান্না আর কোনটা পাকা রাঁধুনির হাতের রান্না সেটা আমি বুঝি
–বাদ দাও তো আব্বু মেয়েদের তো সব শিখে রাখতে হয়
–হুম, কাজের বুয়ার টাকা বেচে যাবে
–কলেজে যাওয়ার জন্য আম্মুর কাছে টাকা চাইতে ভালো লাগে না

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৭

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

সকালে নাস্তা বানিয়ে তুলির কাছে গেলাম গিয়ে দেখি তুলি স্কুল ড্রেস পড়ছে আর আম্মু কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে ইদানীং আম্মু অনেক সময় ফোনে কথা বলে আব্বু তো কাজের চাপে তেমন ফোন দিতে পারেন না তাহলে কার সাথে এতো কথা বলে আম্মু, যার যা খুশি করুক আমি নাস্তা করে কলেজে চলে আসলাম, ক্লাস শুরু হয়ে গেছে রিয়া আর আমি পাশাপাশি বসে ক্লাস করছি, রিয়া বললো
–শ্রাবণ তোর দিকে থাকিয়ে আছে
–তো কি করব
–আমার মনে হয় ছেলেটা তোকে সত্যি ভালোবাসে
–তোকে কি ও ওকালতি করতে বলছে
–রেগে যাচ্ছিস কেন
–তো কি করবো আমার সম্পর্কে তুই ওকে বললি কেন
–তোকে অনেক ভালোবাসি তাই
–মানে
–তোর এসব কষ্ট আমার সহ্য হয় না তাই শ্রাবণ কে সব বলেছি ওর ভালোবাসায় যদি একটু সুখি হছ আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো
–(চুপ হয়ে আছি ওর কথা শুনে এই রিয়াটাই আমাকে বুঝে অনেক ভালোবাসে)
ক্লাস শেষ করে রিয়া আর আমি মাঠে গিয়ে বসলাম শ্রাবণ আসলো
শ্রাবণ: তমা কেমন আছ
আমি: ভালো
শ্রাবণ: আমাকে কি এখন বিরক্ত লাগে তোমার
আমি: না
শ্রাবণ:একটা বার ভেবে দেখো না প্লিজ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না (ওর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরতেছে)
রিয়া: শ্রাবণ একটা প্রশ্ন করি
শ্রাবণ: হুম
রিয়া: তমার সম্পর্কে তো সবই জানো কোনো ঝড় আসলে ওর পাশে থাকবা তো
শ্রাবণ: ওকে একটা বার রাজি হতে বল দেখো ওকে অনেক ভালোবাসব কখনো কষ্ট দিব না সবসময় ওর পাশে থাকবো
আমি: তুমি আমাকে ভালোবাস মানছি কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না প্লিজ আমাকে ভুলে যাও
শ্রাবণ: তমা আমার কথা একবারও ভাববা না আমি যে কষ্ট পাচ্ছি (আবারো কাঁদতেছে)

আর ওখানে বসলাম না রিয়া কে নিয়ে চলে আসলাম রিক্সায় বসে আছি রিয়া বললো
–ছেলেটা তোকে সত্যি ভালবাসে
–বুঝলি কি ভাবে
–ছেলেরা খুব বেশি কষ্ট না পেলে কাঁদে না ওদের চোখের জল কখনো মিথ্যে হয় না
–কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না
–কেন তোর আব্বু তো মেনে নিবেন
–আম্মু কেমন জানিস তো বাসায় জামেলা শুরু হবে আমি চাই না আমার জন্য আব্বু কষ্ট পান তাছাড়া আম্মু কখন জানি বিয়ে দিয়ে দিতে চায় তখন শ্রাবণ কে কি বলবো
–এসব পরে ভাবা যাবে আগে ছেলেটার কথা ভাব আমার মনে হয় তোর ওর প্রতি দূর্বলতা আছে মন যা বলে তাই শুন
–আমার কোনো দূর্বলতা নেই
–আছে তুই বুঝতে পারছিস না আস্তে আস্তে বুঝবি তখন বুঝবি তুইও শ্রাবণ কে ভালবাসিস
–হইছে বাদ দে তোর ওকালতি

বাসায় এসে সব কাজ সেরে গোসল করলাম, সন্ধ্যায় রান্না শেষ করে কপি নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম আম্মু আসলো অভাক হলাম কারন উনি এখন আর আমার রোমে আসেন না,
–আম্মু তুমি আমার রোমে
–কেন আসতে পারি না
–এখন তো আর আস না তাই বললাম
–হুম
–কিছু বলবা
–হুম একটু সাহায্য করবি
–কি বলো
–আমার কিছু টাকা লাগবে তোর আব্বুকে বলে এনে দিবি
–তুমি বললেই তো হয়
–আমার লাগবে বললে অনেক প্রশ্ন করবে তোর লাগবে বলে এনে আমাকে দিবি
–কত টাকা
–২ লক্ষ
–এতো টাকা দিয়ে তুমি কি করবা তাও আব্বুকে না জানিয়ে
–প্রয়োজন আছে প্লিজ এনে দে আমি আর তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না
–আম্মু তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে এতো টাকা আমি আব্বুর কাছে কি করে চাইবো
–তুই চাইলে দিয়ে দিবে আমি জানি
–হ্যা দিবে তাই বলে আব্বুকে মিথ্যে বলে টাকা আনবো
–মায়ের জন্য একটু মিথ্যে বললে কিছু হবে না
–বাহ সেদিন মা ডাকতে নিষেধ করে আজ টাকার জন্য বলছ মায়ের জন্য মিথ্যে বললে কিছু হবে না
–এতো প্যাঁচাল না করে বল এনে দিবি কি না
–দেখো টাকা কম হলে এনে দিতাম এতো টাকা এনে দিতে পারবো না তাও আব্বুকে মিথ্যে বলে আমার পক্ষে সম্ভব না
–নিজের প্রয়োজন হলে ঠিকি আনতে পারতা প্রয়োজন তো আমার এখন পারবা না
–আব্বু কি তোমাকে টাকা দেন না
–হ্যা দেয় কিন্তু
–টাকা দিয়ে কি করবা এটা বলো পেয়ে যাবা
–এতো বলতে পারবো না আর আমার কথা না শুনার শাস্তি পাবি
আম্মু রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো হায়রে মানুষ টাকা প্রয়োজন তাই এতো সুন্দর ব্যাবহার, আল্লাহ জানেন টাকা এনে না দেয়ার জন্য কি শাস্তি অপেক্ষা করছে আমার জন্য, বুঝতেছি না এতো টাকা দিয়ে আম্মু কি করবে তাও আবার আব্বুকে না জানিয়ে, এসব ভাবছি বারান্দায় বসে বসে তখন ফোন বেজে উঠলো আব্বু ফোন দিয়েছেন
–কেমন আছ আব্বু
–ভালো তুই কেমন আছিস
–ভালো
–কলেজে যাস তো ঠিক মতো
–হুম
–মন দিয়ে পড়াশোনা করিস
–আচ্ছা বাসায় কি আসবা
–দেখি সময় পেলে আসবো
–আচ্ছা রাতে খেয়ে নিও
–তুইও খেয়ে নিস রাখি
–হুম
রাতে খেয়ে শুয়ে পড়লাম, কলেজে ঠিক মতো যাই না বাসায়ও পড়ি না এখন থেকে পড়াশোনায় মন দিতে হবে, আচ্ছা আম্মু এতো টাকা দিয়ে কি করবে আব্বুকে না জানিয়ে আমি কি আব্বুকে বলবো, না থাক বললে আম্মু আব্বুর মধ্যে জামেলা হবে, এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম

সকালে উঠে আম্মুকে বাসায় ফেলাম না এতো সকালে কোথায় গেলো কে জানে, আমি আর নাস্তা বানালাম না কলেজে চলে গেলাম, ক্লাসে বসে আছি শ্রাবণ যে ভাবে থাকিয়ে আছে আজ আর ক্লাস করা হবে না কেউ এভাবে ফ্যালফ্যাল করে থাকিয়ে থাকলে ক্লাস করা যায় বুঝি
ক্লাস শেষে রিয়া আর আমি মাঠে বসে আছি শ্রাবণ আসলো
আমি: আমার দিকে এভাবে থাকিয়ে থাক কেন
শ্রাবণ: আমার ভালো লাগে তাই
আমি: আর এভাবে থাকাবা না
শ্রাবণ: আমি থাকাবই
আমি: তাহলে আমি আর কলেজে আসবো না
শ্রাবণ: এইটা কেমন শাস্তি
রিয়া: তমা তুই পাগল হয়ে গেছিস ও তোকে ভালোবাসে তাই এমন করে আর তুই বলছিস কলেজেই আসবি না
আমি: আমার কারো ভালোবাসা চাই না থাক তোরা ভালবাসা নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করবি না
রাগ করে বাসায় চলে আসলাম কি করবো আমি এভাবে চলতে থাকলে শ্রাবণের পাগলামি দিন দিন বাড়বেই আমি কাউকে আমার জীবনের সাথে জরাতে চাই না, বাসায় এসে দেখি আম্মু ড্রইংরুমে বসে আছে মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজ আমার কপালে দুঃখ আছে,
–এই যে নবাবজাদী কলেজে তো চলে যাও বাসার কাজ করবে কে আর সকালে নাস্তা বানিয়ে রেখে গেলি না
–সকালে তুমি বাসায় ছিলে না তাই নাস্তা বানাই নি আর বাসার কাজের জন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিতে হবে নাকি
–মুখে মুখে কথা তো ভালই বলতে পারো ইদানীং
–আম্মু তুমি কিন্তু বেশি করছ আমি আব্বুকে বলে দিব
–বল আমার কি ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো
–পাগল হয়ে গেছ নাকি সামান্য কথা থেকে ডিভোর্স এর কথা বলতেছ

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট : ৬

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট : ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

রাতের রান্না শেষ করে রোমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি একটা অচেনা নাম্বার থেকে অনেক গুলা মিসড কল, কে হতে পারে এতো গুলো কল দিয়েছে ভাবতে ভাবতেই সেই নাম্বার থেকে আবার কল আসলো রিসিব করলাম
–আসসালামু আলাইকুম
–ওয়ালাইকুম আসসালাম
–কে বলছেন
–আমি শ্রাবণ
–ওহ
–কেমন আছো
–এই তো ভালো তুমি
–ভালো কি করতেছ
–বসে আছি হঠাৎ ফোন দিলা যে
–না এমনি ভাবলাম কি কর দেখি
–হুম

শ্রাবণ এর সাথে অনেক সময় কথা হলো, একটু ফেবু তে ঘুরাঘুরি করে খেয়ে এসে শুয়ে পড়লাম, আজ আম্মুর কথা মনে পরতেছে আম্মুটা যে কেন আমাকে একা রেখে চলে গেলো এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম

এভাবে প্রায় একমাস চলে গেলো, ইদানীং শ্রাবণ এর সাথে অনেক কথা হয় কলেজে, ফোনে, ফেবুতে খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছি আমরা
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি রিয়া ফোন দিল
–কিরে কলেজে আসবি না
–হুম রেডি হচ্ছি
–তোর সাথে নাকি শ্রাবণ এর কি কথা আছে তাড়াতাড়ি আসতে বলছে
–কি এমন কথা যে তাড়াতাড়ি যেতে হবে
–জানিনা এসেই দেখ কি বলে
–হুম আসছি রাখ

রিক্সায় বসে ভাবতেছি শ্রাবণ কি এমন কথা বলবে যে কলেজে তাড়াতাড়ি যেতে বলছে, ভাবতে ভাবতেই কলেজে চলে আসলাম রিয়া আর শ্রাবণ সামনে এসে হাজির
শ্রাবণ: আজ ক্লাস করবো না
আমি: কেন
শ্রাবণ: তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
আমি: তো বলো
শ্রাবণ: এখানে না চলো কোনো রেস্টুরেন্ট এ যাই
রিয়া: কথা বলার জন্য রেস্টুরেন্ট এ যেতে হবে কেন আর গেলে তোরা যা আমি যাবো না
আমি: আমিও যাবো না যা বলার এখানে বলো
শ্রাবণ: প্লিজ চলো তোমরা আর কখনো কিছু চাইবো না আজকে কথা গুলো না বলতে পারলে আমি হয়তো মরেই যাবো

ওর এমন কথা শুনে তিন জন রেস্টুরেন্ট এ আসলাম
আমি: হুম বলো কি বলবা
শ্রাবণ: কিছু খাবার অর্ডার দেই
আমি: আমি খাবো না তোমাদের জন্য দাও
রিয়া: আমি খাবো
আমি: তুই সারা জীবন পেটুকই থেকে যাবি
রিয়া: আগে খাওয়া তারপর দুনিয়ার সব
আমি: হুম তুই অর্ডার দে আর শ্রাবণ বলো কি বলবা
শ্রাবণ: আসলে আমি যে কথা গুলো বলবো জানিনা তুমি কিভাবে নিবে কিন্তু কথা গুলো না বলে আমি আর থাকতে পারতেছি না
আমি: এতো আমতা আমতা না করে বলো
শ্রাবণ: তোমার সাথে প্রথম দিন ধাক্কা খাওয়ার পর যখন তোমার দিকে থাকিয়ে ছিলাম তখনি তোমাকে আমার ভালো লাগছিল আমি ভাবছিলাম সেটা শুধু মাত্র ক্ষণিকের জন্য ভালো লাগা তারপর তোমার সাথে প্রতিদিন দেখা হওয়া কথা বলা থেকে বুঝতে পারছি আসলে সেটা শুধু মাত্র ভালো লাগা না ভালোবাসা, বিশ্বাস করো তমা আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলছি তোমার সাথে কথা না হলে আমি যেন অস্থির হয়ে যাই তোমাকে একদিন না দেখে আমি থাকতে পারিনা তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিনা
আমি: অনেক বলে ফেলছ থামো এবার তোমার সাথে আমি জাস্ট বন্ধু হিসেবে কথা বলি আর তুমি এই সুযোগে ভালোবাসার কথা বলতেছ আসলে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করাটাই আমার ভুল হইছে, আর কখনো আমাকে ফোন দিবা না আমার সামনে আসবা না (উঠে চলে আসলাম)
শ্রাবণ: তমা শুনো যেও না প্লিজ
রিয়া: এই তমা দারা

কারো কথা শুনলাম না বাসায় চলে আসলাম আমি কাউকে আমার এই জীবনের সাথে জরাতে চাই না, ফোনটা অফ করে রেখে দিলাম, সারা দিন এভাবেই কেটে গেলো রাতে ফোন অন করলাম আব্বুকে ফোন দেয়ার জন্য তখন শ্রাবণের একটা মেসেজ আসলো না পড়েই আব্বুকে ফোন দিলাম
–কিরে মা কেমন আছিস
–ভালো তুমি কেমন আছো
–ভালো কি করছিস
–বসে আছি এই সপ্তাহে কি বাসায় আসবা না
–কাজের খুব চাপ দেখি সুযোগ ফেলে আসবো
–আচ্ছা
–তোর আম্মু তোর সাথে ঝগড়া করে না তো
–না ঝগড়া করবে কেনো আমরা ভালোই আছি
–তুলি কি তোকে আপন বোন ভাবে নাকি তোর মায়ের মতই খারাপ আচরণ করে
–তুলি আর কি বুঝে তাও আমাকে বড় বোন ভাবে অনেক ভালোবাসে
–হুম তোরা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকিরে মা
–আমাদের জন্য চিন্তা করো না নিজের খেয়াল রেখো
–আচ্ছা রাখি
–হুম

আব্বুর সাথে কথা শেষ করে শ্রাবণের মেসেজ পড়তে শুরু করলাম
তমা বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আজ রিয়া তোমার সম্পর্কে আমাকে সব বলেছে, আমি বুঝতে পারছি তুমি হয়তো আমাকে তোমার জীবনের সাথে জরাতে চাইছো না কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি আমি তোমার কষ্টের ভাগ নিতে চাই আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিবো না প্লিজ একটু ভেবে দেখো

মেসেজটা পড়ে রিয়ার উপরে খুব রাগ উঠলো আমার সম্পর্কে শ্রাবণ কে কেন বলতে গেলো আমি চাই না কেউ আমার কষ্ট শুনে আমার দিকে করুনার দৃষ্টিতে থাকাক

পরের দিন আর কলেজে গেলাম না সারা দিন বাসার কাজ করেই কাটিয়ে দিলাম, রাতে রান্না করে রোমে আসলাম ফোন হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবণ এর অনেক গুলো ফোন, ফোনটা রেখে বারান্দায় গিয়ে বসলাম আকাশের তারা গুলা মিটিমিটি করে জ্বলছে ছোট বেলায় শুনতাম মানুষ মারা গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায় এটা কি সত্যি, যদি সত্যি হতো অনেক ভালো হতো আমি রাত হলেই আম্মুকে দেখতে পারতাম, আচ্ছা আম্মু থাকলে আমাকে কতোটুকু ভালোবাসত আমাকে হয়তো কষ্ট কি বুঝতেই দিতো না আচ্ছা আমি কি পাপ করছিলাম যে আল্লাহ এতো ছোট থাকতেই আমাকে মা হারা করলেন, এসব ভাবছি আর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরছে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, ফোন হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবণ বুঝি না ছেলেটা কেন বার বার ফোন করছে এসব পাগলামি করে তো লাভ নেই আমি কাউকে এই জীবনের সাথে জরাতে চাই না এসব ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে গেলো আবার কল আসলো রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–কেমন আছ
–ভালো তুমি
–আমার ফোন রিসিভ কর না কলেজে আস না কি করে ভালো থাকবো
–দেখ শ্রাবণ এসব পাগলামি করে লাভ নেই বন্ধু আছি এটাই ভালো প্লিজ বন্ধুত্ব নষ্ট হউক এমন কিছু আর করো না
–বুঝার চেষ্টা কর তুমি আমি নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু তোমাকে ভুলতে পারছি না
–প্লিস এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না অন্য কথা থাকলে বলো
–আজ কলেজে আসনি কেন
–এমনি
–আগামীকাল আসবা
–হুম
–একটা বার চেষ্টা করে দেখো না প্লিজ
–ভালো লাগছে না রাখছি বাই
ফোন অফ করে বসে আছি কি করবো আমি শ্রাবণের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিব ছেলেটা যদি কষ্ট পায়, কষ্ট পেলে আমার কি আমি তো ওকে ভালোবাসি না আর বাসতে চাইও না, রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৫

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–এখন তো আমার কথা চেঁচামেচি মনে হবেই একদিন বুঝবা
–আচ্ছা

আব্বু আর কথা বাড়ালেন না সবাই একসাথে খেয়ে নিলাম, রোমে বসে আছি আব্বু আসলেন, মা চল ছাদে যাই অনেক দিন ধরে বাপ বেটি মন খুলে কথা বলি না
ছাদে বসে আছি আব্বু আর আমি, যখন আব্বু কাছে থাকেন সব কষ্ট ভুলে যাই
–আজ তোর মা বেচে থাকলে অনেক খুশি হতো
–হুম
–আজকের খুশির দিনে আমার কাছে কিছু চাইবি না
–তুমি পাশে আছ এটাই তো অনেক আর কি চাই
–তোর পাশে সবসময় থাকবো বল কি চাস
–একটা প্রশ্ন করতে চাই যদি অনুমতি দেও
–অনুমতি চাওয়ার কি আছে
–না আসলে যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই প্রশ্নটা মনের মধ্যে বাসা বেধেছে কিন্তু কিসের যেন ভয় হয় তোমাকে প্রশ্নটা করার
–আমার কাছে আবার ভয় কিসের বলে ফেল
–আচ্ছা আব্বু আমার নানু বাড়ির কি কেউ বেচে নেই ওদের কাউকে কখনো দেখছি বলে মনে হয় না
–তোর নানু নেই নানা আছেন আর তোর দুই মামা আর তাদের পরিবার আছে
–তাহলে কখনো আমার খোঁজ নেয়নি কেন ওরা
–তোর মা আর আমি একি কলেজে পড়তাম সেখান থেকেই আমাদের পরিচয়, তোর মায়ের পরিবার গ্রামে থাকতো এখন কোথায় আছে জানিনা, তোর মা আর তোর দুই মামা ছিল, একমাত্র মেয়ে তো তাই তোর নানা আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি আমার পরিবারও মেনে নেয়নি তাই আমরা পালিয়ে বিয়ে করি, যখন তোর জন্ম হলো আমার পরিবার আমাদের মেনে নিল আমরা ভেবেছিলাম তোর নানা আমাদের মেনে নিবেন তাই তোকে কোলে নিয়ে সেখানে যাই কিন্তু গিয়ে শুনি তোর মায়ের শুকে তোর নানু মারা গেছেন তাই আমাদের আর কেউ মেনে নেয়নি তোর মামারা বলে দেয় আমাকে চোখের সামনে ফেলে মেরে ফেলবে, তোর মা আমাকে হারানোর ভয়ে সেই শহর ছেড়ে এখানে চলে আসে তারপর তোর দাদা-দাদি ও মারা গেলেন আমরা একা হয়ে গেলাম, তোর চার বছর হতেই তোর মা আমাদের একা করে দিয়ে চলে গেলো (আব্বুর দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে সাথে আমারও)
–আমরা একা কে বললো আব্বু বাবা মেয়ে তো আছি একজন আর একজনের পাশে
–হুম তোকে একটা জিনিস দিতে চাই নিবি তো
–কি
–তোর নামে ব্যাংক একাউন্টে ১০লক্ষ টাকা আছে কোনো সময় প্রয়োজন হলে তুলে নিস
–এতো টাকা দিয়ে আমি কি করবো
–আমি না থাকলে যদি তোর প্রয়োজন হয়
–হুম
–ভর্তির কথা কি ভাবলি
–পাশের কলেজেই ভর্তি হবো যেতে সুবিধা হবে
–ওকে
–আচ্ছা আব্বু আমি কি অনেক বড় হয়ে গেছি
–কে বললো
–আম্মু সেদিন বললো বড় হয়ে গেছি বিয়ে দিয়ে দিবে
–বিয়ে তো একদিন করতেই হবে তোর আম্মুর কথা কানে নিস না আমি তোকে পড়াবো
–হুম

দুদিন পর আব্বু চলে গেলেন আর আমার উপর অত্যাচার আবার শুরু হয়ে গেলো

দেখতে দেখতে ভর্তির সময় চলে আসলো রিয়া আর আমি আমাদের পাশের কলেজে ভর্তি হলাম, বাসা থেকে কলেজে যেতে রিক্সায় ১০মিনিট লাগে,
আজ প্রথম ক্লাস তাই একটু তাড়াতাড়ি কলেজে গেলাম, কলেজের গেটে গিয়েই কার সাথে যেন ধাক্কা খেলাম তাল সামলাতে না পেরে দেয়ালে পরে গেলাম উফফফ মাথাটা মনে হয় ফেটেই গেছে, রিয়া তাড়াতাড়ি মাথায় চেপে ধরলো সত্যি ফেটে রক্ত বের হচ্ছে সামনে থাকিয়ে দেখি একটা ছেলে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে তারমানে এই ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথাটা ফেটে গেছে, রিয়া গিয়ে ছেলেটার সাথে ঝগড়া লেগে গেছে
–ওই দেখে চলতে পারেন না চোখ কই থাকে
–আসলে আমি দেখিনি আর উনিও তো দেখেননি
–নিজের দোষ এখন ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন
–আমার একার দোষ নাকি উনিও তো দেখেননি
–হইছে চুপ করেন আপনার জন্য ওর কতোখানি রক্ত ঝরলো
–আচ্ছা ঝগড়া পরে করি আগে উনাকে পাশের ফার্মেসিতে নিয়ে যাই
–হুম চলেন

রিয়া আর ছেলেটা পাশের ফার্মেসিতে নিয়ে গেলো কপালে
ব্যান্ডেজ করে দিলো আর কয়েকটা ওষুধ দিয়ে দিলো, আবার কলেজে আসলাম মাঠের এক কোনে গিয়ে বসলাম, তখন ছেলেটা আসলো
–সরি সত্যি আমি দেখিনি আমার জন্য আপনার এতো রক্ত ঝরলো
–আপনার তো একার দোষ না আমারও দোষ আছে আমিও তো না দেখাতেই ধাক্কা লাগলো
–তাও আমার সাথে ধাক্কা লেগেই তো আপনার রক্ত ঝরলো আই রিয়েলি সরি
–ইটস ওকে ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে
–আমরা কি বন্ধু হতে পারি আমার নাম শ্রাবণ
–আমার নাম তমা আর ও আমার বান্ধবী রিয়া

আর ক্লাস করা হলো না বাসায় চলে আসলাম আম্মু তো মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে রেগে আগুন, আমি নাকি কোন আকাম করে মাথা ফাটাইছি আর ব্যান্ডেজ করে উনার টাকা নষ্ট করছি হায়রে মা, উনার কথায় কান না দিয়ে রোমে এসে শুয়ে পড়লাম মাথা যন্ত্রণা করছে ভালো লাগছে না কিছু, কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারিনি একেবারে সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙ্গলো উঠে গিয়ে রান্না করলাম, রান্না শেষে কপি নিয়ে রোমে আসলাম অনেক দিন হলো ফেবু তে যাই না তাই ফোনটা হাতে নিয়ে আইডি টা লগইন করলাম রিয়ার সাথে অনেক সময় চ্যাট করলাম, রোম থেকে বেরিয়ে দেখি আম্মু খেয়ে নিছে তাই খেয়ে নিলাম রোমে এসে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লাম

সকালে উঠে নাস্তা বানালাম, আম্মু নাস্তা করে তুলিকে নিয়ে স্কুলে চলে গেলো, মাথাটা যন্ত্রণা করছে কলেজে যেতে ভালো লাগছে না তাই ছাদে গিয়ে বসে রইলাম, রিয়া ফোন দিলো
–কিরে কলেজে আসবি না
–না ভালো লাগছে না
–মাথা ব্যাথা করে নাকি
–একটু একটু করতেছে চিন্তা করিস না কমে যাবে
–শ্রাবণ আমাকে পাগল বানিয়ে দিতেছে তুই কখন কলেজে আসবি জানার জন্য
–বল যাবো না
–ওকে রাখি
–হুম

পরের দিন কলেজে গেলাম, ক্লাসে ঢুকতেই শ্রাবণ এসে হাজির
–কাল কলেজে আসেননি কেন
–এমনি
–আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম মাথায় আবার কিছু হলো কি না ভেবে
–না তেমন কিছু না এমনি আসিনি
–আচ্ছা আমরা তো ফ্রেন্ড তুমি করে তো বলতে পারি
–হুম
–একটা কথা বলি যদি রাগ না করো
–হুম বলো
–তোমার নাম্বারটা দেয়া যাবে
–কেন
–না মানে তুমি কলেজে না আসলে ফোন দিয়ে জানতে পারবো কেন আসনি আসলে আমার জন্যই তো তোমার মাথা ফেটে গেছে তাই যতো দিন না মাথার কাটা কমেছে নিজেকে অপরাধী মনে হবে, তুমি না চাইলে মাথার কাটা কমে গেলে পর আর ফোন দিবো না
–ওকে নাও (নাম্বার দিলাম)

বাসায় এসে গোসল করে ছাদে গেলাম, ফুল গাছ গুলায় অনেক দিন ধরে পানি দেওয়া হয় না তাই পানি দিতে শুরু করলাম, অনেক গুলো বেলি ফুল আর কয়েকটা সাদা গোলাপের গাছ এই দুইটা ফুল আমার পছন্দের

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৪

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–আমি বলিনি আব্বু কিভাবে যেন দেখে ফেলছেন
–হইছে আর মিথ্যে বলতে হবে না, ঘরে অশান্তি আনার জন্যই তো বলছিস
–আম্মু বিশ্বাস করো আমি বলিনি
–তুই আজকে থেকে আমাকে আম্মু ডাকবি না, অলক্ষী মেয়ে নিজের মাকে তো অল্প বয়সেই খেয়েছিস এখন আমার সংসারে আগুন লাগাতে চাস
–আম্মু এসব কি বলছ
–ভালো করে শুনে রাখ এখানে থাকতে হলে কাজ করে খেতে হবে এতো বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না আর যদি ভেবে থাকিস সব বাবাকে বলে দিবি তাহলে ভুল করবি দুইটা কে ছেড়ে চলে যাবো
–হুম
–যা কাজ কর গিয়ে কোনো ভুল হলে খবর আছে

রান্না করতে আসলাম পুরা হাত নিয়ে কিভাবে রান্না করবো জানিনা তাও করতে হবে আমার যে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এখানেই থাকতে হবে, অনেক কষ্ট করে রান্না করলাম জানিনা কেমন হয়েছে, আম্মু খেতে বসলো তুলিকে নিয়ে আর আমাকে বললো
–এখন থেকে আমাদের খাওয়া শেষ হলে পর যা থাকে তুই খাবি আর তোর আব্বু আসলে একসাথে খাবি ও যেন কিছু বুঝতে না পারে
–হুম
–এসব কি রান্না করেছিস তরকারীতে লবন বেশি কেন (আমার উপরে তরকারি ছুড়ে মারলো)
–প্রথম তো রান্না করেছি তাই লবন বেশি হয়ে গেছে
–আর যেন এমন না হয়
–হুম

সারা শরীরে তরকারী লেগে আছে তাই এই রাতের বেলা গোসল করতে হলো, গোসল করে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম

রাতে অনেক জ্বর উঠলো তাই সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেছে আম্মু এসে ডাক দিল
–নবাবজাদীর ঘুম কি এখনো শেষ হয়নি নাস্তা বানাবে কে
–আম্মু আমার খুব জ্বর আজ নাস্তাটা তুমি বানিয়ে নাও
–এই অলক্ষী মুখে আবার আমাকে মা ডাকলে তোর জিহ্বায় আগুন লাগিয়ে দিবো আর জ্বর টর বুঝি না এখনি নাস্তা বানিয়ে দে
–হুম

নাস্তা বানিয়ে দিলাম ওরা খেয়ে চলে গেলো যা বাকি ছিল আমি খেয়ে নিলাম, ছাদে বসে আছি আম্মু ফোন দিল
— শুন আজ আমার এক বন্ধু আর তার স্ত্রী আসবে ঘর ভালো করে পরিষ্কার করে রাখবি আমি একটু পর এসে রান্না করবো তোর রান্না তো মুখেও দেয়া যায় না
–হুম

ফোন রেখে সবকিছু পরিষ্কার করলাম ফ্লোর মুছতে খুব কষ্ট হলো জীবনে কখনো করিনি হাতটা ও এখনো কমেনি, এই সময় আম্মু আসলো এখন আম্মু ডাকতে খুব ভয় হয়, আম্মু এসে রান্না শুরু করলো আর আমাকে থালা বাসুন ধুতে বললো, বাসুন ধুতে গিয়ে হাত ফচকে একটা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেলো
–হায় হায়রে এই অলক্ষী রে নিয়া আমি কি করি এতো দামী বাসুনটা ভেঙ্গে ফেলছে
–আমি ইচ্ছে করে ফেলিনি হাত ফচকে পড়ে গেছে
–দারা আর যেন কোনো দিন হাত ফচকে না পড়ে সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
–মাগো (বাসুনের একটা টুকরা দিয়ে হাত কেটে দিল)
–একদম চিৎকার করবি না আর আমার বন্ধুর সামনে আসবি না

হাত দিয়ে অনেক রক্ত ঝরছে কোনো ভাবে বিছানায় গিয়েই অজ্ঞান হয়ে গেলাম, কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরেছে জানিনা উঠে দেখি এভাবেই পড়ে আছি রক্ত পড়াটা বন্ধ হয়েছে, রোম থেকে বেরিয়ে দেখি আম্মু উনার বন্ধুদের নিয়ে অনেক হাসাহাসি করছে তাই ছাদে চলে গেলাম ছাদে বসেই সারাদিন কাটিয়ে দিলাম সন্ধ্যায় আম্মু এসে রান্না করতে বললো, হাত নিয়ে খুব কষ্ট করে রান্না করলাম আজ আর লবন দিতে ভুল করিনি খুব সাবধানে রান্না করেছি তরকারী উপরে ছুড়ে মারবে এই ভয়ে, রাতে আম্মু খাওয়ার পর আমি খেলাম রোমে এসে দেখি আব্বুর ফোন
–কেমন আছো আব্বু
–ভালো তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন
–ঠিকি তো আছে
–আমি আসার পর কি তোর আম্মু তোকে কিছু বলছে
–কই নাতো
–তোর হাত পুরা নিয়ে ঝগড়া হইছিল তাই ভয় হচ্ছিল তোর সাথে না আবার ঝগড়া করে
–না ঝগড়া করেনি (করছে তো ঠিকি)
–এই মাসে আর আসা হবে না কাজের চাপ বেশি একটু সাবধানে থাকিস আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবি
–আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না
–আচ্ছা রাখি

ফোন রেখে ভাবছি এই মাসে না আসাটাই ভালো হাত কাটার দাগটা ততো দিনে মিটে যাবে, হাতটা ব্যাথা করছে জ্বর ও কমেনি ঘুমিয়ে পড়লাম
আম্মু আর আমি একটা সবুজ মাঠে পাশাপাশি হাটছি আম্মু আমার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রাখছেন ছাড়লেই যেন আমি হারিয়ে যাবো
–আম্মু আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে আমাকে সাথে নিয়ে গেলেই তো আজ এতো অত্যাচার সহ্য করতে হতো না
–আর সহ্য করতে হবে না মা তোকে আমার কাছে নিয়ে যাচ্ছি
–কিন্তু আব্বু তো একা হয়ে যাবে আমি চলে গেলে
–তোর আব্বুকেও আমাদের কাছে নিয়ে আসবো
–হ্যা এটাই ভালো হবে আমরা আবার এক হবো আমাদের সুন্দর একটা সংসার হবে আব্বু রাজা তুমি রানী আর আমি তোমাদের রাজকন্যা হবো
–হ্যা মা তোকে আর কষ্ট পেতে হবে না
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার সারা শরীর ঘামতেছে তারমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম, ঘড়িতে থাকিয়ে দেখি ১০টা বেজে গেছে আব্বুকে ফোন দিলাম
–আব্বু কি করো
–কিরে তোকে এতো অস্থির লাগছে কেন
–আম্মুকে স্বপ্নে দেখছি
–হুম যা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নে
–আচ্ছা (দূর আব্বুর মনটা খারাপ করে দিলাম)

নাস্তা করে কপি নিয়ে ছাদে গেলাম, বসে আছি আর আম্মুর কথা ভাবতেছি স্বপ্নের মতো যদি সত্যি আম্মু আমাকে আম্মুর কাছে নিয়ে যেতো অনেক ভালো হতো এতো অত্যাচার সহ্য করতে হতো না কারো বোঝা হয়ে থাকতে হতো না, আচ্ছা নতুন আম্মু এতো পাল্টে গেলো কেন উনার মেয়ে তুলি আছে বলে আমিও তো উনার মেয়ে হয়তো তুলি আর আমার মা দুইজন কিন্তু বাবা তো একজনই তাহলে আমাকে নিজের মেয়ে ভাবলে কি হয় একটু মায়ের ভালোবাসাই তো চাই অন্য কিছু তো না, আল্লাহ হয়তো আমার কপালে মায়ের ভালোবাসা লিখে দেননি তাই তো ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি যাকে নতুন মা করে আনলাম সেও পাল্টে গেলো

এভাবেই কেটে গেলো তিন মাস আজ আমার রেজাল্ট দিবে অথচ আব্বু বাসায় নেই, এখন আমি সব কাজ পারি অনেক রান্না পারি একদম কাজের বুয়ার মতো, কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে এখন আর কাজ করতে বিরক্ত লাগে না কষ্ট হয় না, দুপুরের দিকে রেজাল্ট পেলাম আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক ভালো রেজাল্ট করেছি কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মু নাই এই খুশির দিনে, আব্বু ফোন দিয়ে বললেন রাতে আসবেন

রাতে আব্বু আসলেন অনেক গুলো মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে আম্মু তো দেখেই রেগে গেছে
–এতো মিষ্টি কে খাবে
–আমার মেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে প্রতিবেশীদের খাওয়াতে হবে না
–আহ্লাদ দেখে বাচি না শুধু শুধু টাকা নষ্ট
–টাকা তো তুমি রোজগার করো না তো এতো চেঁচামেচি করো কেন
–এখন তো আমার কথা চেঁচামেচি মনে হবেই একদিন বুঝবা

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৩ 

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–আচ্ছা আপু আম্মু আমাকে ভালোবাসে কিন্তু তোমাকে ভালোবাসে না কেন তুমিও তো আম্মুর মেয়ে
–কে বলছে ভালোবাসে না আম্মু তো আমাকে অনেক ভালোবাসে
–তাহলে মাঝে মাঝে মাইর দেয় কেনো
–এসব তুমি বুঝবা না বড় হলে বুঝবা
–হুম
–চল রোমে যাই সন্ধ্যা হয়ে গেছে
–চলো

নিচে যেতেই আম্মু রাগি চোখে থাকালো
–রান্না করবে কে
–আম্মু আমি তো রান্না পারি না
–শিখে নাও বড় হইছ এখন আর কতো বসিয়ে খাওয়াবো বিয়ে দিতে হবে তো

কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে আসলাম কিছুই তো পারিনা কি রান্না করবো হঠাৎ মনে হলো খালাকে ফোন দিয়ে শিখে নেই, খালাকে ফোন দিতেই রিসিব করলো
–হ্যালো খালা
–হ্যা মা কেমন আছ
–ভালো তুমি
–ভালো
–খালা রান্না কিভাবে করে শিখিয়ে দিবা
–তুমি রান্না করবা কি ভাবে হাত পুরে ফেলবা তো
–পারবো তুমি শিখিয়ে দাও
–আচ্ছা

খালার কাছ থেকে ভাত রান্না ডিম ভাজি আর কিছু তরকারী রান্না শিখে রান্না করতে শুরু করলাম, রান্না করছি আর ভাবছি আম্মুর কথা গুলা সত্যিই কি আমি বড় হয়ে গেছি এখনি বিয়ের কথা বললো যে, এসব ভাবতে ভাবতে ভাতের মার ফেলতে গিয়ে হাতে পেলে দিলাম চিৎকার শুনে আম্মু আসলো এসেই বকা শুরু করলো, পুরা কপাল আমার হাত পুরে ফেলছি কই একটু ওষুধ লাগিয়ে দিবে উল্টা বকতেছে, আর সহ্য হলো না রোমে এসে বসে আছি কি দিতে হয় জানিনা তাই আবার খালাকে ফোন দিলাম
–খালা হাত পুরে ফেলছি
–জানি তো এমন কিছুই হবে
–খুব জ্বালা করছে কি দিব বলে দাও
–আমি যে রোমে থাকতাম সেখানে গিয়ে দেখো টেবিলের ড্রয়ারে মলম আছে এনে লাগয়ে দাও বার বার দিও আর ওষুধ আনিয়ে খেয়ো সেরে যাবে
–আচ্ছা রাখি

মলম হাতে লাগিয়ে বসে বসে কাঁদতেছি আজ যদি আম্মু বেচে থাকতো আমাকে এতো কষ্ট করতে হতো না আব্বুও দূরে চলে গেলেন আমার জীবনে কি শুধুই কষ্ট, কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম সকালে অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলো, আম্মু খাওয়ার জন্য ডাকল না একবার এসে দেখলো না হাতের কি অবস্থা, নিচে গিয়ে দেখি আম্মু তুলিকে নিয়ে স্কুলে চলে গেছে কিছুই রান্না করেনি এদিকে খিদায় আমার পেটে ছু ছু করছে এখন পুরা হাত নিয়ে রান্না করবো কিভাবে তাই পাশের দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে এনে খেয়ে নিলাম

হাতটা খুব জ্বালা করছে মলম লাগিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদে গেলাম এই সময় আব্বু ফোন দিলেন
–আমার আম্মুটা কেমন আছে
–অনেক ভালো তুমি কেমন আছো
–ভালো নাস্তা করেছিস
–হুম তুমি
–করেছি তোর আম্মু কোথায়
–তুলিকে নিয়ে স্কুলে গেছেন
–বাসায় একা কি করছিস
–ছাদে বসে আছি
–আগামীকাল বাসায় আসবো
–সত্যি
–হ্যা কিছু লাগবে তোর
–না কিছু লাগবে না
–আচ্ছা রাখি এখন
–আচ্ছা

খুব ভালো লাগছে আব্বু আসবেন হঠাৎ হাতের কথা মনে হলো আব্বু দেখলে কি বলবো মিথ্যে বলেও তো লাভ হবে না

দুপুরে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম একেবারে রাতে উঠলাম তুলির কাছে গেলাম ও পড়ছে আর আম্মু রান্না করছে, হাতের জ্বালা কমেনি তাই আম্মুকে ওষুধের কথা বললাম আম্মু বললো এইটুকু পুরাতে ওষুধ লাগবে না আর কিছু বলিনি রোমে চলে আসলাম, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি রিয়ার অনেক গুলা ফোন, রিয়া আমার বান্ধবী সব কষ্ট ওকেই বলি রিয়াকে ফোন দিলাম
–রিয়া কেমন আছিস
–ভালো তোর কোনো খবর নাই যে ফেবু তে ও আসিস না
–এমনিরে ভালো লাগে না কিছু
–কাল দেখা করতে পারবি
–না তুই আমাদের বাসায় আসিস
–আচ্ছা রাখি তাহলে

ফোন রেখে বসে আছি তুলি আসলো
–আপু তুমি দুপুরে খাইছিলা
–না তুই আর আম্মু কখন আসছিলি বাসায়
–৪টার দিকে আম্মু আমাকে নিয়ে আম্মুর এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিল, চলো খাবো
–হুম চল

ভাত সামনে নিয়ে বসে আছি খাব কি করে ডান হাত তো পুরা আম্মুর দিকে বার বার থাকালাম আম্মু একবারও বললো না খাইয়ে দিবে তাই নিজেই চামচ দিয়ে কষ্ট করে অল্প খেয়ে রোমে চলে আসলাম, আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে আজ আম্মু বেচে থাকলে আমার এতো কষ্ট করে চামচ দিয়ে খেতে হতো না, আম্মুর ছবিটা বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম ইদানীং কান্না আমার সঙ্গী হয়ে গেছে

সকালে উঠে খুব ভালো লাগলো কারন আজ আব্বু আসবেন, সারাটা দিন ভালই কাটলো বিকেলে রিয়া আসলো অনেক গল্প করলাম সব কষ্ট গুলো বললাম এই রিয়াটাই শুধু আমার কষ্ট গুলো বুঝে

সন্ধ্যায় আব্বু আসলেন আমার জন্য অনেক চকলেট আনলেন ইদানীং চকলেট খাওয়াটা প্রায় ভুলেই গেছি অথচ একসময় আমি চকলেট পাগলী ছিলাম, আব্বু আমার রোমে আসলেন তাড়াতাড়ি হাতটা ওড়না দিয়ে ঢাকলাম
–কিরে মা এতো শুকিয়ে গেছিস কেন
–কই
–আমি তো দেখতেছি
–বাদ দাও তো কয়দিন থাকবা বলো
–দুদিন আছি, খেতে আয় খুব খিদে লাগছে
–আচ্ছা চলো

খেতে বসে আব্বু জিজ্ঞেস করলেন বুয়া কোথায় আম্মু বললেন ছুটিতে গেছে
–কিরে মা খাচ্ছিস না কেন
–হুম খাবো তো (হাত বের করলেই তো আব্বু দেখে ফেলবে কি করে খাই) আব্বু আজ খাইয়ে দাও না
–পাগলী মেয়ে এখনো পিচ্ছিই রয়ে গেলি
–আব্বু সত্যি আমি পিচ্ছি রয়ে গেছি নাকি বড় হয়ে গেছি
–মা বাবার কাছে সন্তান সবসময় ছোটই থাকে
–হুম (এই আম্মু তো আমার আপন আম্মু না তাই হয়তো আমাকে বড় বলে)

আব্বু খাইয়ে দিলেন হাতটা আর বের করতে হলো না, রোমে গিয়ে বসে আছি আব্বু এসে বললেন চল ছাদে যাই, বাপ মেয়ে ছাদে গেলাম, ছাদে বসে আছি এই সময় আব্বু বললেন
–তোর হাতে কি
–কই কি
–বাবার চোখে ফাকি দিতে চাস
–(চুপ হয়ে রইলাম কি বলবো)
–কিভাবে পুরলি
–কপি বানাতে গিয়ে
–সত্যি তো
–জানিনা (আব্বুকে মিথ্যে বলতে পারলাম না)
–হুম জানিস তোর আম্মুকে ভালোবেসে বিয়ে করছিলাম
–আগে তো কখনো বলোনি
–এমনি বলিনি খুব ভালোবাসতাম তোর মাকে এখনো বাসি, বিয়ের আগেই তোর নামটা দুজন মিলে ঠিক করে রাখছিলাম, এতো সুখের সংসারটা এলোমেলো হয়ে গেলো
–সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা চিন্তা করো না
–রোমে গিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা কর আমি আসছি
–কই যাবা
–আসছি রোমে যা

১০মিনিট পর ওষুধ নিয়ে আসলেন নিজেই খাইয়ে দিলেন, ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম

কিভাবে যেন দুইটা দিন কেটে গেলো আজ আব্বু চলে গেলেন, হাতটা একটু কমছে, আম্মু এসে বললেন
–এবার শান্তি তো
–মানে
–এখন কিছুই বুঝো না ভাজা মাছটা যেন উল্টে খেতে জানে না
–কি করছি বলবা তো
–হাত পুরছে এটা তোর আব্বুকে না বললে হতো না
–আমি বলিনি আব্বু কিভাবে যেন দেখে ফেলছেন

চলবে?