Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 215



কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০৭

0

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#পর্ব-৭
আমার হঠাৎ বিয়ের খবরে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী সবাই খুব অবাক হলো। নিলয়ের মা তো বিশ্বাস ই করছে না যে আমার এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আমার অবশ্য তাতে কোনো ভাবান্তর নেই। আমি শুধু নিলয় কে ভুলতে চাই।

একদিন কোচিং ক্লাস শেষে আসার পথে ছোট রাস্তার মোড়ে নিলয়ের সাথে দেখা হলো। একটা মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকানে বসে ছিলো। আমাকে দেখে বেরিয়ে এসে বলল,

“প্রত্যাশা শোনো?”

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। নিলয়ের চোখে চোখ রাখলাম না। নিলয় বলল,

“তোমার সাথে আমার কথা আছে। ”

“বলুন। ”

“চলো হাটতে হাটতে কথা বলি। ”

কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে গেলাম। নিলয় কী বলতে চাইছে! আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে এই খবর টা অন্যদের সাথে সাথে ওর ও তো পাওয়ার কথা। তাহলে কী ওই ব্যপারেই কিছু বলতে চাইছে!

আমরা দুজন পাশাপাশি হাটতে লাগলাম। বিকেলের আলো তখন মরে এসেছে। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নামবে। বেশ কিছুক্ষণ হাটার পরও নিলয় কিছু বলছে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম,

“আপনি কী যেন বলবেন বলছিলেন?”

নিলয় সে কথার জবাব না দিয়ে বলল,

“ফুসকা খাবে?”

আমি বিস্মিত হলাম। বিস্ময়ভাব কাটিয়ে বললাম,

“না। ”

নিলয় আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমার খুব ফুসকা খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি না খেলে আমার পাশে বসে থেকো। এর আগে একদিন আমি বসে ছিলাম না, আজ তুমি থাকবে৷ ”

ফুসকা অর্ডার দিয়ে নিলয় এসে আমার পাশের চেয়ার টা’তে বসলো। আমি আবারও বললাম,

“আপনি যেন কী বলবেন?”

নিলয় এবারও জবাব দিলো না। ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। আমার এবার খুব মেজাজ খারাপ হলো। সন্ধ্যার আগে আমায় বাড়ি ফিরতে হবে। অথচ ব্যটার হাবভাব কেমন গা ছাড়া!

ফুসকা এসে গেছে। আমি খাব না বলেছি বলে আমার জন্য আর অর্ডার করে নি। চূড়ান্তরকম অভদ্র ছেলে!
যাইহোক তাতে আমার কী আসে যায়, ওর কাছে ভদ্রতা এক্সপেক্ট করাও বোকামি। আমি যার সাথে অভদ্র হয়েছি, সে তো আমার সাথে অভদ্র হবেই। এটাই তো হওয়ার ছিলো।

নিলয় ফুসকার প্লেট হাতে নিয়ে বসে রইলো। আমি ঘড়িতে সময় দেখে বললাম,

“সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে একটু তাড়াতাড়ি করলে ভালো হয়। ”

আমার এই কথা শুনে নিলয় একটা ফুসকা মুখে দিলো। মুখে দেয়ার সাথে সাথে মুখের রং পরিবর্তন হয়ে গেল। অতি অখাদ্য মুখে তুললে মুখের রং যেমন পালটায়, তেমন পাল্টেছে।

একটা ফুসকা কোনোমতে গিলে প্লেট টা রেখে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“লন্ডনের একটা ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করেছিলাম। ওরা পজেটিভ রেসপন্ড করেছে। ”

কথাটা শুনেই আমার গলায় কান্নার দলা পাকালো। কোনোমতে নিজেকে সামলে বললাম,

“কনগ্রাচুলেশন। ”

নিলয় আমার দিকে গভীর চোখে তাকালো। তখন সন্ধ্যাবেলা। আমার জীবনে এমন কোনো সন্ধ্যা এর আগে আসে নি, হয়তো কোনোদিন আসবেও না। আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহ এই সময় টা’কে কী থামিয়ে দিতে পারে না।

আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। নিলয় ফিসফিস করে বলল,

“তোমাকেও অভিনন্দন। ”

আমি জবাব দিলাম না। চোখের কোনে জল জমে গেছে। প্রানপনে চেষ্টা করলাম সেটা আড়াল করতে।

নিলয় আবারও বলল, শুনলাম তোমার হবু বর নাকি অনেক বড়লোক।

আমি চুপ করে থাকলাম।

“তোমার জন্য ভালো হলো। তুমি তো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছ। এস্টাবলিশড ছেলে ছাড়া বিয়ে করলে তোমার অনেক কষ্ট হবে।

এই কথাটা আমাকে বেশ আঘাত করলো। ইনডাইরেক্টলি বুঝিয়ে দেয়া যে আই এ্যম নাথিং। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,

“আমি যাচ্ছি। ”

“আরেকটা কথা। রোজি ইজ নট মাই গার্লফ্রেন্ড। শী ইজ অনলি মাই ফ্রেন্ড। ”

আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ঝাঝালো গলায় বললাম, হোয়াটএভার! নাউ আই হ্যাভ নো ইন্টেরেস্ট।

কথাটা বলে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলাম না।

*****
এই নিলয় কে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। ও আমাকে পছন্দ করে না বলেই জানতাম। তাহলে এতো ব্যখ্যা, বিদেশে যাওয়া এসব কেন শোনাচ্ছে। বাই এনি চান্স ও কী আমায় পছন্দ করতে শুরু করেছে! না সেটা হলে খোচা মেরে বলতো না যে আমি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছি বলে এস্টাবলিশড পয়সাওয়ালা ছেলে বিয়ে করছি।

****
মানুষ ভাবে একরকম কিন্তু তার সাথে ঘটে আরেকরকম। আমার জীবন টা’ও এক মুহুর্তে বদলে গেল। নিলয়ের কথায় সেদিন এতো খারাপ লাগলো যে আমি অনেকক্ষন কেঁদেছিলাম। সেটা খেয়াল করেছিল ভাইয়া। ভাইয়ার সাথে আমার বয়সের অনেক বেশী ডিসট্যান্স ছিলো বলেই সে আমাকে বাবা, মা’র মতো স্নেহ করতো। আমাদের সম্পর্ক মোটেও বন্ধুর মতো ছিলো না। কিন্তু ভাইয়া সেদিন প্রথম আমার সাথে বন্ধুর মতন আচরন করেছিল। আমাকে কাঁদতে দেখে ভাইয়া প্রথমে যে কথাটা জিজ্ঞেস করলো সেটা হলো, ছেলেটা কে প্রত্যাশা?

আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না। ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হাপুস নয়নে কাঁদতে লাগলাম। ভাইয়া পরম আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“আমাকে সব টা খুলে বল প্লিজ। আমি তোকে অবশ্যই হেল্প করবো। বাবা মা’কে যে করে হোক ম্যানেজ করব ই”।

আমি নিজেকে সামলে বললাম, সেটা সম্ভব না ভাইয়া। কারন ব্যপার টা শুধু এক তরফা।

“ছেলেটার নাম তো বল। ”

“নিলয়।”

“আমিও আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু সমস্যা টা কোথায়?”

তারপর আমি নিলয়ের সব ব্যাপার খুলে বললাম। সব শুনে ভাইয়া বলল,

“নিলয়ের উপর জেদ করে তুই বিয়ে করতে চাইছিস?”

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। ভাইয়া বলল,

“তুই কি পাগল? ”

“আমি নিলয়কে ভুলতে চেষ্টা করছি ভাইয়া। কিন্তু কাছাকাছি থেকে সেটা সম্ভব না। ”

“তাই বলে বিয়ে করতে হবে? বিয়েটা কী পুতুল খেলা! তুই এতো গাধা! বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এক ফোটা বুদ্ধিও বাড়ে নি তোর। ”

“তাছাড়া আর কী করব?”

“অনেক কিছু করার ছিলো। নিলয় যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাই কিছু একটা করে দেখিয়ে তো দিতে পারতিস। ”

আমি ভাইয়ার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলাম।

ভাইয়া বলল, এসব বিয়ে বিয়ে খেলা একদম বন্ধ। তুই ঢাকায় যাবি। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা শুরু করবি।

“কিন্তু আমার তো এক বছর নষ্ট হয়ে যাবে?”

“হলে হবে। এক বছর নষ্ট করে যদি সারাজীবন ভালো থাকা যায় তাহলে নষ্ট করবি এক বছর। ”

আমার কাছে ভাইয়ার কথাগুলো এতো ভালো লাগলো, খুশিতে আমি কেঁদে ফেললাম। ভাইয়া মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, কাঁদিস না। মানুষ চাইলে সব পারে। তুই ও পারবি। চেনা গন্ডির বাইরে গেলে অনেক মানুষের সাথে দেখা হবে, হয়তো নিলয়ের চেয়েও ভালো কাউকে পাবি।

অতিসন্তঃর্পনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। নিলয়ের চেয়ে ভালো কাউকে পেলেও নিলয় কে তো আর পাব না।

***
ভাইয়া বাবা, মা’কে ম্যানেজ করলো। একমাত্র মেয়েকে বাবা, মা দূরে পাঠাতে কোনোভাবেই রাজি না তবুও ভাইয়ার যুক্তির কাছে হার মানলেন। আমিও মা’কে বললাম, মা জীবন কে একবার আমি সুযোগ দিতে চাই। যদি হেরে যাই তবে তোমাদের কাছেই ফিরব। তোমরা যা করতে বলবে তাই করবো। অবশেষে মা, বাবা রাজি হলেন।

ভাইয়া প্রাইভেট হোস্টেলে সিট বুকিং, ইউনিভার্সিটির ভর্তি ফর্ম সবকিছু তাড়াতাড়ি করে ফেলল। হাতে সময় খুব কম তাই টুকটাক গোছগাছ চলছে। ততদিনে সবাই জেনে গেছে যে আমার বিয়ে ক্যান্সেল।

একদিন ঘটা করে কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে এলাম। বেফাঁস কথা বলা, অভদ্র আমির যে এতো বন্ধু বান্ধব আছে সেটা এতদিনে টের পেলাম। সবাই কী ভীষণ মন খারাপ করছে আমি চলে যাব বলে। আমারও ভীষণ খারাপ লাগছে চেনা গন্ডি ছেড়ে দূরে যেতে। তবুও কিছু করার তো নেই।

যাবার আগের দিন আন্টির সাথে দেখা করতে গেলাম। হড়বড় করে কথা বলা আন্টি মন খারাপ করা গলায় বলল,

“তোমার কথা যে আমার বড্ড মনে পড়বে প্রত্যাশা। ”

আমি দু’চোখ ভর্তি জল নিয়ে বললাম,

“আন্টি আমি রোজ আপনাকে ভিডিও কল দিয়ে বকবক করবো। ”

আন্টি বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কেঁদে ফেলল। অথচ এই মানুষ টার সাথে মোটে কয়েক মাসের পরিচয় আমার। আমি আন্টিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“ছুটি পেলেই চলে আসব তো আন্টি। ”

আন্টি বলল,

“নিলুটাও চলে যাবে। ছেলেমেয়ে গুলো দূরে গেলে ভালো লাগে বলো?”

আমি আর কিছু বললাম না।

***
নিলয়ের সাথে দেখা করতে যখন গেলাম তখন নিলয় বারান্দার গাছে পানি দিচ্ছিলো। আমি কাঠগোলাপ গাছ টা নিলয় কে দিয়ে বললাম,

“এই যে নিন। আমি তো আর থাকছি না কে যত্ন নেবে। তারচেয়ে আপনার জিনিস আপনার কাছেই থাকুক। ”

নিলয় আমার দিকে না তাকিয়েই বলল,

“উইশ ইউ বেস্ট অফ লাক। ”

“থ্যাংক ইউ। আপনার যাবার কী খবর? ”

নিলয় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় নিলো। আমার কাছাকাছি এসে চোখে চোখ রেখে বলল,

“আমি চলে গেলে খুশি হবে খুব?”

“আমার খুশিতে কী আসে যায়? আমি নিজেই তো থাকছি না। ”

নিলয় কোনো কথা বলল না। আমিও নিলয়ের চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম। আবার কবে দেখব কে জানে!

চলবে….

সাবিকুন নাহার নিপা

কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০৬

0

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#পর্ব-৬
বৃষ্টিতে ভিজে পায়ে ব্যথা নিয়ে আমি যখন বাসায় ফিরলাম তখন দেখলাম নিলয় মাত্র বাসার গেটে নেমেছে। আমাকে দেখে বিস্মিত চোখে একবার তাকালো। আমি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে উপরে উঠলাম। পিছনে নিলয় তাকিয়ে ছিলো হয়তো, আমি একবারও পিছু ফিরে দেখলাম না।

পায়ে ব্যথা নিয়ে নাজেহাল অবস্থায় কাটলো কয়েকটা দিন। অসময়ের বৃষ্টির পানি গায়ে লাগায় জ্বর জ্বর ভাব ও হয়েছে তাই বাসা থেকে একদম বের হলাম না। আন্টি এলেন খোঁজ নিতে। সবসময়ের মতো গল্প করে আবার চলেও গেলেন। দুই তিন দিন পর আন্টি এক বিকেলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলল,

“এই প্রত্যাশা এখন তুমি কেমন আছ?”

“জি আন্টি ভালো। ”

“শোনো রাতে কিন্তু তুমি আমাদের বাসায় খাবে। নিলুর বন্ধুরা এসেছে, ওদের জন্য টুকটাক রান্নাবান্না করব বুঝলে। তুমিও এসো। ”

সেই বৃষ্টির দিনের পর নিলয়ের সাথে আমার আর দেখা হয় নি। ভিতরে ভিতরে চাপা কষ্ট থাকলেও সেটাকে সয়ে নিতে চেষ্টা করছি। আন্টিকে এড়িয়ে যেতে বললাম,

“না আন্টি আমার তো শরীর টা তেমন ভালো নেই। আমাকে বাদ দিন। ”

কিন্তু আন্টি নাছোড়বান্দা। সে কিছুতেই ছাড়বে না। বিকেলে অনেকবার বলে চলে গেল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ঘুমের ভাণ করে থাকব তবুও নিলয়ের সামনে যাব না। কিন্তু সেটা সম্ভব হলো না। আন্টি জোর করে আমাকে নিয়ে গেল।

ঢাকা থেকে নিলয়ের তিনজন ছেলে বন্ধু আর দুজন মেয়ে বন্ধুও এসেছে। টেবিলে খেতে যখন বসলাম তখন ওরা প্রত্যেকে আমার সাথে হাই, হ্যালো বিনিময় করলো। তখন আমি মেয়ে দুটি কে ভালো করে দেখলাম। কী সুন্দর সেজেগুজে আছে। চুলগুলো রিবন্ডিং করে কাঁধ পর্যন্ত ছাটা। হাতে ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে নেইলপলিশ লাগানো। ড্রেসিং সেন্সও কী ভালো! সবচেয়ে যে জিনিস টা আকর্ষনীয় সেটা হলো কথা বলার স্টাইল। আমি কোনোদিনও এমন হতে পারব না। মফস্বলে থাকার কারনে কথা বলার ধরনেও একটা আঞ্চলিক টান আসে। এরকম বই, পুস্তকের মতো শুদ্ধ ভাষায় কোনোদিন ও কথা বলতে পারব না।

আমি ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম যে এই দুটি মেয়ের মধ্যে ওই মেয়েটা নেই। হয়তো গার্লফ্রেন্ড বলেই মেয়েটাকে বন্ধুদের মাঝে আনে নি।

হঠাৎ আমার কী যে হলো কে জানে! চোখ দিয়ে টপ টপ করে বৃষ্টির ফোটার মতো পানি পড়তে লাগলো। আন্টি প্লেটে যে খাবারগুলো দিয়েছে সেগুলো তেমনি পড়ে রয়েছে। একটা খাবারও আমার গলা দিয়ে নামলো না। নিলয় বন্ধুদের সঙ্গে ব্যস্ত বলে হয়তো আমার দিকে খেয়াল করলো না। আমি উঠে হাত ধুতে গেলে আন্টি অবাক গলায় বলল,

“একি প্রত্যাশা তুমি তো কিছু খেলেই না। ”

“ভালো লাগছিল না আন্টি। ”

আন্টি আমার ভেজা চোখ দেখে আঁতকে ওঠা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“কী হইছে তোমার?”

আমি হেসে বললাম, আমার শরীর টা ভালো নেই আন্টি। আমি বাসায় যাই।

নিলয় মা’য়ের উদ্দেশ্য বলল,
“কোনো সমস্যা ?

আন্টি মন খারাপ করা গলায় বলল,

“দেখ না মেয়েটার শরীর টা ভালো নেই তাই কিছু খেতে পারলো না। ”

নিলয় আমার দিকে তাকালো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখাচোখি হলো। গভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওই কয়েক সেকেন্ডের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করবার মতন নয়। আমি স্বাভাবিক ভাবে নিলয়ের পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। দরজার কাছাকাছি যখন আসছিলাম তখন শুনলাম টেবিলের থেমে থাকা আড্ডাটা আবারও জমে উঠেছে।

ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা কথাই ভাবতে লাগলাম, যে আমি এতো বোকা কেন! আমার দেখা জীবন আর নিলয়ের দেখা জীবনের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। আমার কাছে জীবনের আনন্দ মানে ফুসকার প্লেট হাতে নিয়ে তেতুলের টক টা মুখে দিয়ে তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেলা। কিন্তু নিলয়ের তো আর সেটা না, তার জগৎ আলাদা, জীবন দেখার ধরনও যেমন আলাদা, তেমনি জীবনের আনন্দও আলাদা। আমার মস্ত বড় ভুল ছিলো নিলয়ের প্রেমে পড়াটা।

***
আমার দিনগুলো কোনো ভাবে কেটে যায়। হুটহাট সিড়ি দিয়ে নামার সময় কিংবা রাস্তাঘাটে নিলয়ের সাথে দেখা হয়ে যায়। কথাবার্তায় তো দূরে থাক, চোখাচোখিও তেমন হয় না। তাছাড়া সামনে পরীক্ষা তাই কিছু সময় পড়াশুনোর মধ্যে কাটে। পড়াশুনোয় কখনো সিরিয়াস ছিলাম না বটে তবে এখন একটু আধটু সিরিয়াস হতে দেখে মা আর ভাইয়াও বেশ অবাক। আর আমি কোনো কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ভালো থাকব ভেবে একটু আধটু পড়ছি।

পরীক্ষা অতি সন্নিকটে বলে বিকেলে ম্যাথ কোচিং এ যাই। একদিন বিকেলে ছাতা নিতে মনে না থাকায় বৃষ্টিতে আটকে গেলাম। ভাইয়াও অফিসের কাজে ঢাকা গিয়েছে তাই বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে লাগলাম। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেছে তবুও বৃষ্টি থামার লক্ষন নেই। এদিকে মা চিন্তায় অস্থির। একটু পর পর ফোন করেন। কিছুক্ষণ পর দেখলাম নিলয় রিকশা নিয়ে এসেছে। রিকশায় আসা সত্যেও ভিজে গেছে। রিকশা থেকে নেমে বলল,

“আঙ্কেল পাঠিয়েছে তোমাকে নেয়ার জন্য। তাড়াতাড়ি চলো।”

আমি বিনা বাক্যব্যয়ে রিকশায় উঠলাম। অহেতুক তর্ক কিংবা জেদ করে লাভ নেই তাই রিকশায় উঠে গেলাম।

এর আগে যেদিন রিকশায় বসেছিলাম সেদিন ইচ্ছে করে নিলয় কে ক্ষ্যাপানোর জন্য গায়ে গা লাগিয়ে বসেছিলাম। আর আজ ইচ্ছে করেই দূরত্ব বজায় রেখেছি। আমি একটু দূরে সরে বসায় বৃষ্টির পানি গায়ে লাগছিলো। নিলয় বলল, আরেকটু ভিতরে চেপে বসো নাহলে তো ভিজে যাবে একদম।

আমি সেকথার কোনো জবাব ও দিলাম না আর ভিতরে চেপেও বসলাম না। বৃষ্টি তখন প্রায় থেমে এসেছে তাই নিলয় ও আর জোর করলো না। কিছু সময় পর নিলয় বলল,

“প্রত্যাশা আমি জানি যে তুমি আমার উপর রেগে আছ। আসলে রাগ টা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার সমস্যা হলো আমি অল্পে রাগী না ঠিক ই কিন্তু যখন রেগে যাই তখন হিতাহিত জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পায়। তাই আমার ওইদিনের কথাগুলোর জন্য এক্সট্রেমলি সরি।

আমি কোনো উত্তর দিলাম না। রিকশা চলছে তার গতিতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে মেঘলা বাতাস আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। আমি আর নিলয় দুজনেই চুপ করে আছি। হঠাৎ নিলয় রিকশাওয়ালাকে বলল,

“মামা রিকশা থামান তো। ”

রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে রিকশাওয়ালাকে বলল,

“ওকে ঠিক জায়গায় পৌছে দিয়েন। ”

আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।

নিলয় সেদিন রাতে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এসেছিল এবং পরবর্তী কয়েকদিন তীব্র জ্বরে ভুগেছে। কিন্তু একবারের জন্যও আমি ওকে দেখতে যাই নি। তবে মায়ের কাছ থেকে খবর পেয়েছি।

আমার অবস্থা হলো এমন যে তারে দেখতেও পারি না আবার তারে ছাড়া বাঁচিও না। কাছাকাছি যতক্ষণ থাকব ততক্ষন পর্যন্ত এই যন্ত্রণা সইতে হবে। তাই ভাবলাম দূরে চলে যাব।

বাবা, মা অনেকদিন আগেই চেয়েছিলেন বিয়ে দিতে। কিন্তু আমি রাজি ছিলাম না বলে ব্যাপার টা আর এগোয় নি। তাই এবার নিজেই রাজি হয়ে গেলাম। মা, বাবা অবাক হলেও মনে মনে বেশ খুশি হয়েছিলেন। আমি শুধু বলেছিলাম যে যা করার পরীক্ষার পর করবে, তার আগে না। বাবা, মা মেনে নিয়েছেন। ভাইয়া যা’ও একটু আপত্তি করেছিল বাবা, মা বুঝিয়ে সুঝিয়ে ম্যানেজ করে নিয়েছে।

বারান্দায় রাখা কাঠগোলাপ গাছ টা এখনো আছে। ভেবে রেখেছি বিদায়ের আগে নিলয় কে দিয়ে বলব এটা দিয়েই তো আমাদের গল্পটা শুরু হয়েছিল তাই এটা দিয়েই না হয় শেষ হোক।

চলবে…

সাবিকুন নাহার নিপা

কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০৫

0

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#পর্ব-৫
আমি বাড়ি ফিরলাম বিকেলের পর। ঘরে ঢুকতেই মা বললেন নিলয় নাকি আমাকে দুইবার খুঁজে গেছে। আমার হঠাৎ ই কেন যেন ভয় লাগতে শুরু করলো। এই ভয় টা সারাদিন ছিলো না কিন্তু যখন শুনলাম নিলয় আমাকে খুঁজছে তখনই মনে হলো সামনে আমার জন্য খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে। যত সময় যেতে লাগলো ভয় তত বাড়তে লাগলো। এখন আমার মনে হলো যে আমি একটু বেশী বাড়াবাড়ি করে ফেলছি। এতোটা বাড়াবাড়িও বোধ হয় করা উচিত হয় নি।

নিলয় তৃতীয়বার আমায় ডেকে পাঠালো ছাদে। ডাকতে আন্টিকেই পাঠালো। আন্টি ডাকতে এলে মা কেমন যেন একটু ত্যড়া চোখে তাকিয়ে দেখছিল। মায়ের অবশ্য আগে থেকেই কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল। যাইহোক আমি অবশ্য ওসবে নজর দেয়ার অবস্থায় ছিলাম না। ভয়ে হাত, পা ঠান্ডা হয়ে জ্বর আসার মতো অবস্থা তখন। টলমল পায়ে একেকটা সিড়ি ভেঙে ছাদের দিকে যাচ্ছি।

নিলয় রেলিঙের উপর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমার পায়ের শব্দে একবার পিছু ফিরে তাকালো। তারপর বলল,

“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। ”

আমার ভয় আরও বেড়ে গেল। যদিও কথা বলছে স্বাভাবিক গলায় তবুও আমার এতো ভয় লাগছে!

কিছু সময় থেমে থেকে আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে বলল,

“তোমার সমস্যা কী প্রত্যাশা? আমি কী তোমার ক্ষতি করেছি?”

আমি জবাব দিতে পারলাম না। কী ই বা বলব ওকে। মাথানিচু করে বসে রইলাম। নিলয় আবারও বলল,

“দয়া করে চুপ করে থেকো না। আনসার মি। ”

আমার চোখে পানি এসে গেল। নিলয়ের গলার স্বর আগের মতো নেই। কথাগুলো রুক্ষ গলায় বলছে।

“তুমি আমার কী ক্ষতি করেছ জানো?”

“ওই মেয়েটা কী সত্যিই আপনার গার্লফ্রেন্ড?”

নিলয়ের চোয়াল শক্ত হলো। বলল, এই কথার জবাব তো আমি তোমাকে দেব ই না। তুমি শুধু এটা বলো যে কেন করেছ এটা?”

আমি বুকভরে নিঃশ্বাস নিলাম। ভুল যেহেতু আমার তাই সব টা মাথা পেতে নেবার জন্য প্রস্তুত হলাম।

“তুমি কী আমার কথার জবার দেবে না?”

“আই এ্যাম সরি।”

নিলয় শ্লেষের সুরে বলল, তোমার সরি দিয়ে কিচ্ছু হবে না আমার। তুমি আমার বান্ধবীকে কী বলেছ! তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে? সিরিয়াসলি! এতো টা চিপ তুমি সেটা আমি ভাবতেও পারিনি।

এইসব কথা শুনে যাওয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। নিজের পক্ষে যে কিছু একটা বলব সেটারও কোনো অপশন রাখিনি।

নিলয় বলেই যেতে লাগলো।

“প্রথম দিন থেকে তোমার কর্মকান্ডগুলো আমি দেখছি। ভেবেছি প্রশ্রয় না দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি কী করলে! আঠার মতো পিছে লেগে রইলে। আচ্ছা আমি যে তোমাকে ইগ্নোর করছি এইটুকু বোঝার মতো গিলু তোমার মাথায় নেই?

“আপনাকে তো সরি বলছি। তাতে কী হবে না? পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে হবে?”

নিলয় তীর্যক হেসে বলল, তুমি সেটাও পারবে জানি। যতটুকু চিনেছি তাতে বুঝেছি যে আত্মসম্মান নামক কোনো কিছু তোমার মধ্যে নেই। তাছাড়া তুমি যে আমার বান্ধবীকে অপমান করেছ, একবারও কী ভেবেছ যে তাকে অপমান করার যোগ্যতা তোমার আছে কী না?

তোমাকে আর কী বলব! তুমি হয়তো এর আগেও অনেক ভাড়াটিয়াদেরও পায়েশ বানিয়ে খাইয়েছ? তাদের সাথেও নিশ্চয়ই….

বাকীটা বলতে পারলো না কারণ ততক্ষণে আমি হাপুস নয়নে কাঁদতে শুরু করেছি।

আমি চোখ মুছে বললাম, দয়া করে এই ব্যপার টা আমার বাবার কাছে বলবেন না। আর আমি আপনার সামনে আসব না।

কথাগুলো বলে আমি নিচে চলে এলাম। ভাগ্য ভালো ছিলো যে মা আর আন্টির সামনে পড়লাম না। নাহলে তারাও আমাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলতো।

***
আমি নিলয়কে ফেসবুকে ব্লক করলাম। ফেসবুক থেকে যে ছবিগুলো সেভ করে রাখছিলাম সেগুলোও ডিলিট করে দিছি। নিলয়ের কথাগুলো তিক্ত হলেও সত্যি যে আত্মসম্মান খুইয়ে নিলয়ের পিছনে ছুটছিলাম। তাই নিলয় নামক অধ্যায় টা বাদ দেয়ার জন্য পণ করলাম। চেষ্টা করলাম স্বাভাবিক হতে৷

নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য ক্লাস না থাকলেও কলেজে গিয়ে বসে থাকতাম। অনেক টা সময় লাইব্রেরীতে বই পড়ে কাটাতে লাগলাম। ইদানীং কথাবার্তাও কম বলতে চেষ্টা করছি। মা, ভাইয়া আমার এই পরিবর্তন টা লক্ষ্য করেছে৷ ভাইয়া একদিন ডেকে জিজ্ঞেস করলো, কোনো সমস্যা আছে কী না। মোট কথা ইনিয়ে বিনিয়ে জিজ্ঞেস করলো যে প্রেম, টেম আছে কী না। আমি আশ্বস্ত করে বললাম যে আমি ঠিক আছি। জানি না তারা কতটুকু বিশ্বাস করেছে। কিন্তু আমি ঠিক থাকতে চাই।

***
এক বিকেলে আন্টি এসে মায়ের কাছে অভিযোগ করলো আমি কেন আর আগের মতো তার সাথে গল্প করতে যাচ্ছি না?

মা আমাকে ডেকে আন্টির হাতে ধরিয়ে দিলো। আন্টি তার কথার ঝুড়ি নিয়ে আমার সামনে বসলেন। আমি চুপচাপ শুনতে লাগলাম। আন্টি কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন, কেন যাই না? নিলয় কিছু বলেছে কী না!

আমি এড়িয়ে যাই। হঠাৎ মনে হলো নিলয়ের কাঠগোলাপ গাছ টা ফিরিয়ে দেয়া উচিত। আন্টিকে ফিরিয়ে দিলে সে অবাক গলায় বলল, তোমার কী হইছে প্রত্যাশা? নিলয় অইদিন ছাদে তোমারে কিছু বলছিল? তারপর থেকে তুমি আর যাও না আমার কাছে?

আমি হেসে বললাম, না আন্টি। আসলে ওই যে বলছিলাম না কিছু সাবজেক্টে আমার দূর্বলতা আছে। সেগুলোর জন্য এক্সক্লুসিভ নোটস দিয়েছে।

আন্টি সরলমনে বিশ্বাস করলেন। আবারও ছেলের গুনকীর্তন শুরু করলেন। আমি চুপচাপ শুনে গেলাম। আন্টির নিশ্চয়ই বলতে পেরে অনেক ভালো লাগে, তাই যতক্ষণ থাকলেন ততক্ষণ শুধু ছেলের সুনাম ই করলেন।

যাওয়ার সময়ে বলে গেলেন, প্রত্যাশা শোনো, সামনের সপ্তাহে নিলুর বন্ধুরা আসবে। এখানে নাকি ঘুরতে আসবে।

আমি আস্তে করে বললাম, আচ্ছা।

আন্টি কাঠগোলাপ গাছ নিয়ে চলে গেলেন। যদিও নিতে চায় নি। আমি বলেছি যে আন্টি আমি নিজেই নিজের ঠিকঠাক যত্ন নিতে পারি না। কাঠগোলাপ গাছের যত্ন কী করে নেব বলুন।

আন্টি হাসলেন।

**
এর পরের দিন আন্টি কাঠগোলাপ গাছ সমেত ফেরত এলেন। বললেন,

“নিলু বলছে এটা তোমাকে যখন দিয়েছে তখন আর ফেরত নেবে না। তাই নিয়ে এলাম। ”

আমি কিছু বললাম না। মা ওখানে বসা ছিলো তাই কথা আর এগোয় নি। তবে মা জেরা করেছেন ঘটনা জানার জন্য। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মা’কে বললাম যে আমি নিলয়কে ক্ষ্যাপিয়েছি বলে নিলয় আমাকে কথা শুনিয়েছে। বিস্তারিত কিছু বলি নি অবশ্য। মা এরপর আর কিছু জিজ্ঞেস করে নি, শুধু বলেছে কথা বলিস না তো ওই ছেলের সাথে। পড়াশুনোয় ভালো বলে একটু বেশীই দেমাগ। দেখলি না সেদিন কীভাবে তোর বাবাকে নালিশ করলো।

আমি শুধু হাসলাম। মনে মনে বললাম, মা তোমার মেয়ে কী করেছে সেটা জানলে আর এই কথাগুলো বলতে পারতে না।

***
দুই তিনদিন পরের ঘটনা। আমি বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশ্য বের হবার পর পর শুরু হলো বৃষ্টি। এমন একটা জায়গায় বৃষ্টি শুরু হলো যেখানে রিকশা পাওয়াও মুশকিল। ভেজার ভয়ে দৌড়ে দোকানের ছাউনিতে যাবার সময় জুতোটা গেল ছিড়ে। ছেড়া জুতা পরে হাটতে গিয়ে বেকায়দায় পা কেটে গেল। এদিকে ভিজে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কলেজে যাওয়াও সম্ভব না। বাসায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম মনে মনে। কিন্তু বাসায় ফিরতে হলেও রিকশা নিতে হবে তাই অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা রিকশা এসে থামলো। নিলয় সেই রিকশা থেকে নেমে আমাকে বলল,

“প্রত্যাশা বাসায় যাবে? তাহলে রিকশায় উঠে পড়ো। ”

“ইটস ওকে। আমি ম্যানেজ করতে পারব। ”

“আকাশের অবস্থা ভালো না। বৃষ্টি সহজে থামবে বলে মনে হয় না। ”

“আমার সমস্যা নেই এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে। ”

নিলয় আমার পায়ের দিকে তাকালো। আঙুল থেকে এখনো চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে। সেটা দেখে বলল, ঠিক আছে তুমি একাই রিকশায় যাও। আমি তোমার সাথে যাব না।

আমি বললাম, আমি বাসায় যাব না। কলেজে যাব। এই বলে বৃষ্টির মধ্যেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে শুরু করলাম।

নিলয় সম্ভবত পলকহীন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো!

চলবে….

সাবিকুন নাহার নিপা

কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০৪

0

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#পর্ব-৪
যত দিন যাচ্ছিলো আমার অস্থিরতা তত বেড়েই যাচ্ছিল। আমি নিলয় কে বোঝানোর চেষ্টা করতাম যে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু সে বান্দা আমায় দেখলে এড়িয়ে চলে। সিড়ি দিয়ে নামতে গেলে যদি আমাকে দেখে তাহলে হয় নিচে নেমে দাঁড়িয়ে থাকে নাহলে সোজা ঘরে চলে যায়। এই ব্যপার টা আমাকেও খুব অস্বস্তিতে ফেলছিল। আমি কী একটু বাড়াবাড়ি রকমের খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি ওর সাথে! যে ও আমায় এভাবে এড়িয়ে চলে। রোজ বিকেলে আন্টির সাথে গল্প করতে যাই ঠিক ই কিন্তু ওর সাথে আমার দেখা হয় না। ও ঘরের দরজা বন্ধ করে পড়াশোনা করে, নাকি ইচ্ছে করে আমার জন্য ঘর থেকে বের হয় না তা আমি জানি না। এভাবে অনেকগুলো দিন চলে গেল। একটা সময়ে আমার মনে হলো আমি একটু বেশীই গায়ে পড়া আচরণ করছি বলে ও আমাকে এমন এড়িয়ে চলছে। ব্যাপার টা আমাকে আরও বেশি পীড়া দিচ্ছে। আমার অস্থিরতা ঘরের মানুষের চোখেও পড়লো। বাবা ব্যস্ত মানুষ তাই তার চোখে না পড়লেও মায়ের চোখে পড়েছে। মা একদিন জিজ্ঞেস করলো, নিলয় দের বাসায় রোজ রোজ কেন যাস প্রত্যাশা?

আমি একটা কিছু বলে মা’কে ম্যানেজ করার চেষ্টা করি তবুও মা অন্যচোখে তাকায়। ভাইয়াও জানতে চায় আমি কোনো কিছু নিয়ে প্রবলেমে আছি কি না। কিন্তু কাউকে ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারি না। একটা সময় মনে হয় কাউকে আমার মনের কথাগুলো বলা দরকার। না বলতে পারলে দমবন্ধ হয়ে মরে যাব তখন ছুটে গেলাম কলেজের বন্ধু ইলার কাছে। সব শুনে ইলা বলল, শোন প্রত্যাশা আমার মনে হয় ওর গার্লফ্রেন্ড আছে। আরে ও তো শহুরে ছেলে! একটা স্মার্ট গার্লফ্রেন্ড না থেকে পারে না। দেখ সেজন্য হয়তো তোকে পাত্তা দিচ্ছে না।

ইলার কথায় কষ্ট লাগলেও মেনে নিতে চেষ্টা করলাম। সত্যিই তো, ওর হয়তো গার্লফ্রেন্ড আছে তাই আমায় পাত্তাই দিচ্ছে না। চেষ্টা করলাম নিলয় কে মন, মস্তিষ্ক সব জায়গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে। কিন্তু সেটা আমার জন্য সম্ভব ছিলো না। ভাবলাম নিলয় কে ভালোবাসার কথা বলব। যা হয় হোক।

কিন্তু ব্যাপার টা যত সহজ ভেবেছিলাম তত সহজ ছিলো না। নিলয় আমার সাথে ঠিকঠাক কথাই যেখানে বলে না সেখানে ওকে কী করে নিজের ভালোবাসার কথা বলি!

এক বিকেলে আন্টির সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ বললাম,
“আন্টি আমার একটা সাবজেক্টের কিছু ব্যাপার জানার দরকার ছিলো। একটু কী নিলয় ভাইয়ার সাথে কথা বলা যাবে?”

আন্টি চোখ কপালে তুলে বলল, ওমা একি বলছ! কেন যাবে না, যাও নিলয় তো ওর ঘরেই আছে।

আমি আমতা আমতা করে বললাম,

“আন্টি আপনি একটু নিলয় ভাইয়াকে বলে দিলে ভালো হয়। ”

আন্টি আমার কথা শুনলেন। আমাকে নিয়ে নিলয়ের ঘরে গেলেন। নিলয় একমনে কম্পিউটারে কিছু একটা দেখছিলো। আন্টি গিয়ে বলল,

“এই নিলু প্রত্যাশার নাকি কোন একটা সাবজেক্টে খুব সমস্যা। একটু দেখিয়ে দে না ওকে। ”

নিলয় সরু চোখে তাকালো। আন্টি অপেক্ষা করলেন না চলে গেলেন।

আমি তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। এই প্রথম আমার কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। নিলয় আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বলল,

“তুমি না বিজনেস স্টাডিজে পড়ছ? আমি কী করে তোমার প্রবলেম সলভ করে দেব?”

আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। বুক দুরুদুরু করছে। এটাকে কী বলে আমি জানিনা। তবে ঝগড়া করা আমি আর এই আমির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

আমি বললাম, আসলে আমি মিথ্যে বলেছি। আপনার সঙ্গে আমি অন্য কথা বলতে এসেছিলাম।

নিলয় চোখ, মুখ শক্ত করে বলল, মিথ্যে বলা আমি পছন্দ করি না। আই হেট লায়িং এন্ড আই লায়ার।

মুহুর্তের মধ্যে সব অনুভূতি উবে গেল। বুক দুরুদুরু, অন্য রকম ফিলিং সব।

আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, আর আপনি বুঝি সত্যবাদী যুধিষ্ঠির?

“আমি মোটেও মিথ্যে বলি না। এমনকি প্রয়োজনেও একটা মিথ্যে বলি না।”

“শুনুন আমি আপনার মতো ভদ্দরলোক নই। আমি খুব খারাপ তাই কারনে অকারনে প্রচুর মিথ্যে বলি। এবার খুশি তো?”

নিলয় আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রাখলো। বলল,

“ইয়েস আই নো। ”

“কী জানেন আপনি?”

“তুমি খারাপ। ”

আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ইচ্ছে হলো নিজের চুল টেনে ছিড়ে ফেলি। কেন আমি এই ইবলিশ টা’র জন্য মরছি!

নিজেকে ধাতস্থ করে বললাম, আপনার ফেসবুক আইডি টা দিন তো কাজ আছে।

নিলয় এমন ভাব করলো যেন কিছু শুনতেই পেল না। আমি আবারও বলার পর একটা কাগজে লিখে দিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।

***
আমার আজ আকাশে ওড়ার দিন। ফেসবুকে নিলয়কে যখন তখন জ্বালিয়ে মারব এই খুশিতে নাচতে নাচতে ঘরে ফিরে এলাম। ফেসবুকে লগ ইন করে নিলয়ের আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে প্রফাইল স্ক্রল করতেই সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল। প্রতিটা ছবিতে একটা কমন মেয়ে আছেই। দুজনের বেশ হাসিহাসি ছবি প্রায় ছবিতেই। একটা ছবিতে দেখলাম একটু বেশীই ঘনিষ্ঠ হয়ে আছে। আমার মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল। ফোন টা বিছানায় ছুড়ে মেরে কতক্ষণ মাথা চেপে বসে রইলাম। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর ছিলাম যে ওটা ওর গার্লফ্রেন্ড। যদিও মনে মনে এমন আশঙ্কা ছিলো, তবুও এতো কেন রাগ লাগছে বুঝলাম না। মাথাটা দপ দপ করছিল। কোনো কিছুতে শান্তি পাচ্ছি না। শেষমেস আবারও নিলয়ের প্রফাইলে ঢুকলাম। শালার ব্যটা ততক্ষণে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে নিয়েছে তাই রাগ খানিক টা কমলো। তবুও মাথা ঠান্ডা করার জন্য ভয়ংকর একটা কাজ করলাম। নিলয়ের প্রফাইল থেকে ঢং করা মেয়েটার আইডি খুঁজে পেয়ে একটা ম্যাসেজ দিলাম। চুন্নিটাকে লিখলাম, আপু প্লিজ আমার হবু হাজবেন্ডের সাথে হা হা, হু হু করে ছবি তুলবেন না। এসব আসলে ঠিক না, আমি ছোট মানুষ, আমার হৃদয়ও ছোট। আমার হৃদয় এসব একসেপ্ট করতে পারছে না।

ম্যাসেজ টা লিখে মনে মনে এতো শান্তি পেলাম যা বলে বোঝাতে পারব না। হৃষ্টচিত্তে আলু, পটলের তরকারি দিয়ে এক থালা ভাত শেষ করে এসে লম্বা ঘুম দিলাম।

সকালে দেখলাম শাকচুন্নি ম্যাসেজ দিয়েছে। লিখেছে,

“কে তুমি?”

আগপিছ না ভেবেই আমি লিখে দিলাম, যার সঙ্গে আপনি প্রায় ই ক্লোজ হয়ে ছবি তুলেন।

এই ম্যাসেজ টা লিখে নিলয়ের একটা ছবিও সেন্ড করলাম। তারপর চুন্নিটাকে ব্লক করে দিলাম। কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে ডাইনির মতো হাসলাম।

মেজাজ টা’ও বেশ ফুরফুরে লাগলো। অনেকদিন পর সেজেগুজে কলেজে গেলাম। বন্ধুদের সবাইকে ফুসকা ট্রিট দিলাম। সবাই জিজ্ঞেস করলো কিসের ট্রিট তখন মনে মনে একটা চাপা আনন্দ অনুভব করলেও কাউকে কিছু বলতে পারলাম না।

কিন্তু কলেজ থেকে ফেরার পর যে অন্যকিছু অপেক্ষা করবে সেটা বুঝে উঠতে পারিনি।

চলবে…

কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০৩

0

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#পর্ব-৩
টানা কয়েকদিন আমার খাওয়া, ঘুম, পড়াশুনা কিছুই হলো না। জীবনের প্রথম প্রেম এসেছে তাও আবার একা না, বসন্তের সব রঙ নিয়ে এসেছে। ভাবা যায়! কলেজ, পড়াশুনা, আড্ডা, হৈ, হুল্লোড়ের বাইরে আমার সকাল শুরু হবে নিলয় কে ভেবে আবার রাতও শেষ হয় নিলয় কে ভেবে। এটা, ওটা ছুতোয় নিলয়দের বাড়িতে যেতাম এক নজর দেখব বলে। তবে ঝগড়াঝাটি, লেগপুলিং একদম ছেড়ে দিয়েছি। তার বদলে একটু ভালো মেয়ে হবার চেষ্টা করছি। আফটার অল নিলয় ভালো ছেলে বলে কথা। ও হ্যাঁ নিলয় কিন্তু একদম আমার মতো না। বরং পুরোপুরি আমার উল্টো। নিলয় বুয়েট থেকে ট্রিপল ই তে পাশ করেছে। এখন হায়ার স্টাডিজের জন্য দেশের বাইরে যেতে চায়। আর আমি কোনো রকম উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পাড়ার কলেজে পড়ছি। এই ব্যপার টা দুদিন খুব পীড়া দিয়েছে। তার উপর দেখতে শুনতেও আহামরি না। চোখে কাজল না দিলে চোখটাও ভালো লাগে না। নিলয় কী করে আমার প্রেমে পড়বে! যতবার এটা ভেবেছি ততবারই আমার চোখ ফেটে জল আসতে চাইছে। তারপর নিজেকে সান্ত্বনা দিতে বললাম, থাক প্রত্যাশা কী হয়েছে তোর ভালো রেজাল্ট নেই, পড়াশুনা নেই, অনেকের ই তো থাকে না। আর তাছাড়া দেখতে বা খারাপ কই! এই যে হাসলে গালে সুন্দর একটা টোল পড়ে! তাছাড়া ঠোঁটের তিল টা’ও তো মারাত্মক রকম সুন্দর। তাছাড়া তুই কী ভুলে গেছিস যে কলেজে পড়ার সময় কতো ছেলেরা পাগল ছিলো!

এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আবারও নিলয় কে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম।

একদিন বিকেলে এক বাটি পায়েশ নিয়ে হাজির হলাম নিলয়দের বাসায়। দরজা খুলল নিলয় নিজেই। দরজাটা খুলে ধড়াম করে বন্ধ করে দিলো। আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বেশী সময় লাগে নি, দ্বিতীয়বার দরজা খুলতে। দরজা খুলে নিলয় বলল,

“আম্মু বাড়িতে নেই। ”

আমি অতি কষ্টে হাসি চাপিয়ে রাখলাম। নিলয়ের প্রথমবার দরজা বন্ধ করার কারণ হলো ও একটা হাতকাটা গেঞ্জি পরেছিল। তাই দরজা বন্ধ করে অতি দ্রুত হাতাওয়ালা গেঞ্জি পরে আবারও দরজা খুলেছে। আমি স্মিত হেসে বললাম,

“মা পায়েশ পাঠিয়েছে তো তাই এলাম”

আচ্ছা বলে ভিতরে ঢুকতে জায়গা করে দিলো। আমি ভিতরে ঢুকে বাটিটা টেবিলের উপর রাখলাম। দেখলাম নিলয় এখনো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ আমাকে বসতে না বলে, বিদেয় করবে। আর আমিও একটা চূড়ান্ত গাধা শ্রেণীর মানুষ। কী দরকার ছিলো বলার যে, মা পাঠিয়েছে তাই এসেছি। এটা বলেই তো ফ্যাসাদে পড়েছি।

আমাকে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিলয় বলল,

“তুমি কী কিছু বলবে?”

“কী বলব?”

“না মানে মা তো নেই। যদি আম্মু’কে কিছু বলতে চাও আমাকে বলে যেতে পারো। আমি আম্মুকে বলে দেব। ”

“না। আমি তো আন্টির কাছে আসিনি। আমাকে মা পাঠিয়েছে তাই এসেছি। ”

আবারও সেই একই ভুল করলাম। এরপর তো আর এখানে কোনো বাহানায় থাকাও যাবে না।

“আচ্ছা আন্টিকে থ্যাংকস বলে দিও”।

কথাগুলো যেন একটু জোর করে বলছিল। আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে আমাকে তাড়ানোর জন্য একদম দাঁড়িয়ে আছে।

আমাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

“তুমি কী এবার যাবে?”

আমার ফুরফুরে মেজাজ টা মুহুর্তেই খারাপ হয়ে গেল। শয়তান টা আমাকে সরাসরি চলে যেতে বলছে! এতো অভদ্রতা! কী লজ্জার ব্যাপার!

“কেন আমি থাকলে বুঝি অসুবিধা? ”

“হ্যাঁ। ”

কতোবড় শয়তান! আবার বলে কী না হ্যাঁ।

আমি কোমড়ে হাত দিয়ে ওর দিকে ভালোভাবে চেয়ে বললাম, কী অসুবিধে শুনি?

“তোমার মতো ডেঞ্জারাস মেয়ে আশেপাশে থাকা মানেই তো অসুবিধে। ”

এই কথাটা একদম স্বাভাবিক গলায় বলল। অথচ আমি কতো আয়োজন করে ওর জন্য পায়েশ রেঁধে নিয়ে এসেছি। দুপুরে ভাত পর্যন্ত খাই নি। মা’কে বলেছি ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না একটু পায়েশ রাঁধি। আর এই ছেলে আমাকে ইনিয়েবিনিয়ে বিদেয় হতে বলছে! একেই বলে, যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।

আমি রাগী গলায় বললাম, আপনি চূড়ান্ত রকম অভদ্র একটা লোক। দেখতে যত সুন্দর, ব্যবহার তত পঁচা। একটা মানুষ এতো কষ্ট করে পায়েশ রেঁধে নিয়ে এসেছে আর আপনি তাকে বিদেয় করে দিচ্ছেন? একটুও ম্যানারস নেই!

“কিন্তু তুমি যে বললে আন্টি পায়েশ টা পাঠিয়েছে।”

আমার থোতা মুখ ভোতা হয়ে গেছে। আমতা আমতা করে বললাম,

“মা পাঠিয়েছে তাতে কী? রান্না তো আমি করেছি। ”

নিলয় ঠোঁট টিপে মাথা নেড়ে বলল, কিন্তু আন্টি আর আম্মু তো একসাথে বেরিয়েছিল, আন্টি ফিরে এসেছে।

ইশ! মা যে আন্টির সাথে বেরিয়েছে সেটা তো জানা ছিলো না। ভালোরকম কেস খেয়ে গেলাম। আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,

“আপনার কী মনে হয় আপনি হিরোর মতো দেখতে যে আমি আপনার সাথে গল্প করার জন্য বাহানা খুঁজে এসেছি।”

“না আমার সেটা মনে হয় না। কিন্তু তুমি ই তো এইমাত্র বললে যে আমি দেখতে অনেক সুন্দর। দ্যাট মিনস আমার লুক হিরোর মতো। ”

“আপনি একটা অসভ্য, অভদ্র লোক। আর মোটেও দেখতে সুন্দর না। সেদিন আপনার সাথে সেদিন এক রিকশায় বসে লজ্জায় আমার কতটা মাথা কাটা গেছে। আমার সব বান্ধবীরা ছিঃ ছিঃ করেছে যে কেন আমি আপনার সঙ্গে রিকশা চড়েছি। আর জানেন কতো ছেলেরা আমার জন্য পাগল। আমাদের ক্লাসের তুষার তো হাত কেটে আমার নামের অক্ষর ও লিখেছে।”

“হ্যাঁ জেনে নিলাম। ভালো করে নোট করে রাখব। যদি পরীক্ষায় এসে যায় তখন ফটাফট লিখে দশ নম্বর পেয়ে যাব। থ্যাংক ইউ সো মাচ প্রত্যাশা।”

এই অপমানের পর ওখানে থাকার আর মানেই হয় না। আমি চলে এলাম। ঘর থেকে বেরোতেই বলল,
আঙ্কেল, আন্টির জন্য খুব খারাপ লাগে। একমাত্র মেয়ে তাদের অথচ মাথার স্ক্রু ডিলে।

“আপনার খবর আছে। আপনার মা, বাবাকে এইসব বলব। তাদের ভালো ছেলের গুনকীর্তন সব বলব। ”

“আমার গুনকীর্তন আম্মু, আব্বুকে সবাই ই বলে। তুমি বললে তাতে তারা মাইন্ড করবে না সম্ভবত। ”

কথা শেষ করে দরজা বন্ধ করে দিলো। রাগে আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। কী বাজে ব্যবহার করলো আমার সাথে! অথচ আমি ভেবেছিলাম আলাভোলা টাইপের ছেলে। এ তো দেখছি শয়তানেরও বাপ। নেহাৎ প্রেমে পড়ে গেছি বলে ছাড় দিলাম। নাহলে দেখিয়ে দিতাম হাউ মেনি পেডি, হাউ মেনি রাইস।

*****
পুরো একদিন নিলয়ের সাথে দেখা হলো না। এদিকে আমি ভিতরে ভিতরে ছটফট করছি এক নজর দেখার জন্য, কিন্তু কি অজুহাতে যাব। তাছাড়া যে অপমান করছে তারপর গেলে ব্যাপার টা নিজের জন্যেও লজ্জাকর। তাই কারনে অকারনে নিচে যাবার জন্য ওদের বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছি। চারবার ছাদেও গেছি। ফোন নাম্বারও নেই যে একটা ফোন করবো। এই টা একটা মস্ত ভুল হয়ে গেছে। ফোন নাম্বার টা নেয়া উচিত ছিলো। ফেসবুকে নিলয় লিখে সার্চ দিলাম। শত শত নিলয় এলো অথচ শয়তান টা’কে পেলাম না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলাম যে দোকানে গেলে একটু দেখতে পাব কিন্তু সেটাও হলো না। শেষমেস না পেরে লজ্জা, শরম গুলে খেয়ে ওর বাসায় গেলাম পায়েশের বাটি ফেরত আনার অজুহাতে।

আন্টি সবসময়ের মতো গল্প জুড়ে দিলো। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম নিলয় পায়েশ খেয়েছে কি না। আন্টি বলল, খায় নি।

এবার আমার সত্যি সত্যি খারাপ লাগতে শুরু করলো।

চলবে…..

সাবিকুন নাহার নিপা

কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০২

0

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#পর্ব-২
আমার যখন জ্ঞান হলো তখন নিজেকে আবিস্কার করলাম বিছানায়। ভেবেছিলাম মাম্মাস বয় হয়তো আমায় কোলে করে ঘর পর্যন্ত পৌছে দিয়ে গেছে, কিন্তু না। শুনলাম আমি অজ্ঞান হবার পর সে দৌড়ে এসে আমার মা’কে বলেছে যে আমি বেহুশ হয়ে পড়ে আছি। গাধা কোথাকার! উঁহু গাধা না, ভীতু কোথাকার। আমার ৪২ কেজির হালকা শরীর টা বইতে পারলো না! নাকি আমাকে রোদে শুইয়ে শোধ নিলো!

আমার ঠিকঠাক সুস্থ হতে সময় লাগলো তিনদিন। এই তিনদিনে মা এক সেকেন্ডের জন্যও কাছ ছাড়া করলেন না আর নিলু ভাইয়ের সাথে দেখাও হলো না। শয়তান টা একটু ভদ্রতা করেও আমায় দেখতে এলো না। তিন দিন পর আবারও ছাদে গিয়েছিলাম যে নিলু ভাইয়ের দেখা পাব। কিন্তু দেখা হয় নি। শেষমেস লাজ, শরম ভুলে নিলু ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় গেলাম।

আন্টি বরাবরের মতোই আমাকে দেখে আহ্লাদে গদগদ হলো। ছুটে এসে বলল, আহারে সোনা মেয়েটা আমার! জ্বরে একদম নেতিয়ে গেছে।
আমি শুকনো হাসি দিয়ে বললাম,
“আন্টি নিলু ভাই কোথায়? তাকে থ্যাংকস বলার জন্য এসেছি। ”

আন্টি এবার তার দাঁতগুলো বের করে বলল, নিলু তো ঘরেই আছে কিন্তু ওকে থ্যাংকস কেন বলবে?

“আসলে সেদিন আমি ছাদে বেহুশ হয়ে গেছিলাম যখন তখন মা’কে খবর দিয়েছে তাই আর কী….

আন্টি মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, আরে না কী বলো প্রত্যাশা, এরজন্য নিলুকে ধন্যবাদ বলবে কেন! এটা তো ওর দায়িত্ব। তুমি তো ওর ছোটবোনের মতো ই।

আমার রক্ত টগবগিয়ে ফুটতে শুরু করলো মুহুর্তের মধ্যেই। এই নিলু গাধার মা কী বলছে! আমি নিলুর ছোট বোন কেন হতে যাব!

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, আন্টিই আসলে আমার তো নিলু ভাইয়ার সাথে জাস্ট একবার দেখা হইছে, এতো অল্প সময়ে তো আর ছোট বোন হতে পারিনি, না মানে বোন হতে গেলে তো একটু সময় লাগে। তাই ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

আন্টি আবারও রসগোল্লার মতো মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,

“ধুর বোকা মেয়ে, আমি তো নিলুকে প্রথম দিনেই বলে দিয়েছি যে আমার একটা মেয়ের শখ ছিলো কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সেই শখ পূরন না করলেও কোনো আফসোস নাই কারণ প্রত্যাশা এখন থেকে আমার মেয়ে।”

আমার আর হাসি পেল না এবার। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। চোখমুখ শক্ত করে বসে রইলাম। আন্টি গাজরের একটা প্রিপারেশন বানাতে লাগলো আমার জন্য। আর দুনিয়ার সব কথা আমার কানের কাছে টেপ রেকর্ডারের মতো বাজাতে লাগলো।
অনেক ক্ষন এভাবে কেটে যাবার পর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো আমার। নিলু ভাই সেজেগুজে কোথাও একটা যাচ্ছে, তাকে দেখে আমি জোরে জোরে আন্টিকে বললাম,

“আন্টি আমি এখন উঠি। আমার একটু পাব্লিক লাইব্রেরী তে যাবার দরকার ছিলো। ”

নিলু তখন একমনে জুতা পরছিল। আমার দিকে একটু ফিরেও তাকায় নি। আন্টি মুখ ছোট করে বলল, গাজরের পায়েশ টা খেয়ে যেতে প্রত্যাশা, জ্বর মুখে খেতে ভালোই লাগতো।

আমি তাড়াহুড়ো দেখিয়ে বললাম, না আন্টি। আসলে এখন না গেলে আমার দরকারী বই টা পাব না তাই…

“আচ্ছা যাও।”

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যাক আন্টি শেষ পর্যন্ত ছেড়েছে। কিন্তু হঠাৎই আন্টি তার ছেলেকে ডেকে বলল,

“এই নিলু ওকে একটু পাব্লিক লাইব্রেরী পর্যন্ত পৌছে দে। বেচারি অসুস্থ এমনিতেই। রাস্তাঘাটে বেহুশ হয়ে যদি আবারও পড়ে থাকে তখন আবার আরেক বিপদ। ”

নিলু তখন সিড়ি দিয়ে নামছিল। মায়ের কথায় এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে করিডোরে নেমে অপেক্ষা করতে লাগলো। যার অর্থ হলো আমাকে পৌছে দিবে।

আমি খুশিতে আটখানা হয়ে নামতে শুরু করলাম। এমনিতেই বাসা থেকে বেরোনোর সময় একটু সেজেগুজে বেরিয়েছিলাম তাই নিলুর পাশে হাটতে খুব একটা অসুবিধে হচ্ছিলো না। নাহলে ওকে হিরো আর আমাকে পেত্নী মনে হতো।

****
বড় রাস্তায় এসে নিলু ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে কী রিকশা ডেকে দেব?

আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম, কোনো দরকার নেই। আমি নিজে ডেকে নিতে পারব।

“এ্যজ ইউর উইশ। ”

“শুনুন। ”

“হ্যাঁ বলো। ”

“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সেদিনের ঘটনার জন্য। ”

কথাটা বলার পর যা ঘটলো সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। নিলু ইবলিশ টা আমাকে বলল,

“ইটস ওকে। রাস্তায় একটা কুকুর অসুস্থ হলে আমি চেষ্টা করি তাকেও হেল্প করতে। আর তুমি তো…..

কথা শেষ করতে দিলাম না। আমি শাসিয়ে বললাম,

“ওই ব্যটা তুই আমাকে কুকুর বললি কোন সাহসে?”

নিলু বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হয়ে যেকোনো সময় আমাকে ভস্ম করে দেবে এমন অবস্থা। চিউ চিউ করা মাম্মাস বয় বাঘের মতো গর্জন করে বলল,

“হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি তুই তোকারি করছ কেন?”

“আগে বল তুই আমাকে কুত্তার সাথে ক্যান তুলনা করলি?”

নিলয় এবার থতমত খেয়ে বলল, কুত্তা আইমিন কুকুর বলিনি তোমায়। এক্সাম্পল দিতে কুকুরের রেফারেন্স টানছি।

গলার স্বরে যেন মধু ঝরে পড়ছে। আমরা যে বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছি সেটা আমার খেয়াল না থাকলেও নিলয়ের আছে। নিলয় একটু কাছাকাছি এসে বলল, ওকে ফাইন, আই এম এক্সট্রেমলি সরি। পাব্লিক প্লেসে আর সিন ক্রিয়েট করো না প্লিজ।

আমি বললাম, রিকশা ডাকুন আর আমি যেখানে যেখানে যাব আপনিও সেখানে সেখানে যাবেন। আন্টি বলে দিয়েছে মনে নেই।

নিলয় কথা না বাড়িয়ে রিকশা ডাকলো। রিকশায় উঠে এক কোনে চেপে বসলো আর আমি বসলাম গায়ে গা লাগিয়ে। যতবার আমার গায়ের সাথে ওর গা লেগে যায় ততবারই ও পাশে সরে যায়। আর আমি ক্ষেপানোর জন্য সেটা আরও বেশী বেশী করেছি।

লাইব্রেরীতে যতক্ষণ সময় ছিলাম নিলয় বিরক্তমুখে দাঁড়িয়ে ছিলো। লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে আমি বললাম, বেশী করে ঝাল দিয়ে ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে এখন আমার।

বিনাবাক্যব্যয়ে ফুচকার দোকানে নিয়ে গেল। ফুচকার অর্ডার দিয়ে পাশের চেয়ারে বসে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো ভাবলেশহীন মুখে। আমি একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আপনি খাবেন না?

বলল, ফুচকা আমার সহ্য হয় না।

এরপর আরও দুই কিলোমিটার রিকশা চড়ে গেলাম আইসক্রিম খেতে। আইসক্রিম খাওয়ার কথা বললে এলবার বলেছিল, তোমার না জ্বর?

আমি বলেছিলাম, জ্বরের মধ্যে আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার।

আচ্ছা বলে তারপর চুপ করে রইলো।

ফুচকা, আইসক্রিম খেয়ে সন্ধ্যা নামার পরে রিকশা করে বাসার দিকে রওনা হলাম। তখন নিলয়ের একটা ফোন এলো। নিলয় ফোন ধরে ফোনের ওপাশে থাকা একজন কে খুব রিকোয়েস্ট করলো আরও একটু অপেক্ষা করতে। ফোনের ওপাশে ছেলে ছিলো নাকি মেয়ে সেটা বোঝা গেল না তবে নিলয় কে বেশ চিন্তিত লাগলো।

রিকশা থেকে আমি নামলেও নিলয় নামলো না। আমি নামতেই রিকশাওয়ালাকে বলল, মামা কুরিয়ার সার্ভিস রোড চলুন তো?

তারমানে কুরিয়ার সার্ভিসের লোককেই অতো রিকোয়েস্ট করেছিল। ইশ! আমার তখন খুব খারাপ লেগেছিল, আমি স্বার্থপরের মতো নিলয়ের সান্নিধ্যে থাকার জন্য ওর কাজের ক্ষতি করলাম। কাল এরজন্য সরি বলতেই হবে। এটাই ছিলো আমার প্রেমের শুরু। হিরোর মতো দেখতে ছেলেটার প্রেমে শুধু পড়িনি, পড়ে হাবুডুবুও খেতে শুরু করেছি।

চলবে…..

কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০১

0

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#পর্ব-১
সাবিকুন নাহার নিপা

ছেলেটা বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কী বললেন আপনি? ”

আমি আগের মতোই সিরিয়াস গলায় শাসিয়ে বললাম, এক থাপ্পড়ে আপনার বত্রিশ দাঁত ফেলে দেব।

ছেলেটা নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না যেন এখনো। বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। সিড়ি দিয়ে নামার সময় গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগলে, আমাকে স্যরি বলেছিল। কিন্তু আমার ইচ্ছে হলো শয়তানী করার। এই ছেলেটা আমাদের নতুন ভাড়াটিয়া আন্টি আঙ্কেলের ছেলে। যাদের কাজ হলো চব্বিশ ঘণ্টা আমার বাবা, মা’র কানের কাছে গুনধর ছেলের গুনকীর্তন করা। তাই এটাকে দেখলেই গা জ্বালা করে। কিন্তু বাছাধন অতি ভদ্র। তিনি মেয়েদের দিকে তাকানও না। এই যে ধাক্কাটা লাগলো তখনও সে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখে নি। অন্যদিকে তাকিয়েই স্যরি বলল। আরে ব্যটা দ্যাখ একটু তাকিয়ে! কী সুন্দর ডানাকাটা পরী ডানার অভাবে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।
কিন্তু যখনই বললাম, ফাজিল ছেলে মেয়ে দেখলে ধাক্কা দিতে মন চায়! এক থাপ্পড়ে বত্রিশ টা দাঁত ফেলে দেব তখন ঠিক ই তাকিয়ে দেখল। তারপর আবার বড় বড় চোখে তাকিয়ে দেখছে।

আমি আবারও বললাম, আপনার বাবার কাছে বিচার দেব যে আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন।

আমাকে অবাক করে দিয়ে বদমায়েশ টা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“আপনি কী ঐশ্বরিয়া যে আপনাকে ধাক্কা দেব।”

আমি বললাম, আমি ওই বিড়ালচোখা হতে যাব কোন দুঃখে। ওকে তো আমার বাসার বুয়া হিসেবেও রাখব না। ”

“আপনি একটা বেয়াদব মেয়ে। ”

কথাটা বলে হন হন করে হেটে চলে গেল। আমাকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দিলো না। আমি রাগে গজ গজ করে বললাম, তোকে আমি দেখে নেব শালা।

ছেলেটা শুনতে পেল না। ও হ্যাঁ বদমায়েশ ছেলেটার নাম নিলয়। সেদিন সন্ধ্যায় নিলয়ের মা এক বাটি পায়েশ হাতে আমাদের ঘরে এলো। সচরাচর উনি এলে মায়ের সাথেই বক বক করে। কিন্তু সেদিন এসে আমাকে ডেকে বলল, প্রত্যাশা জানো আজ কী হয়েছে? একটা চূড়ান্ত বেয়াদব মেয়ে আজ আমার নিলুকে বাজে কথা বলেছে।

আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। মাগো! এ তো দেখছি টিপিক্যাল মাম্মাস বয়। আমি আমার সাদা ঝকঝকে দাঁত বের করে হেসে বললাম, কী বলছেন আন্টি? কোন মেয়ে?

“তা তো জানিনা। ও তো নাম বলতে পারলো না। এইজন্য ই তো তোমার কাছে এলাম, তুমি তো এই বিল্ডিং এর সব মেয়েকে চেন! তুমি একটু খোঁজ নিও তো।”

আমি আমার দাঁত কপাটি বের করে বললাম, নিশ্চয়ই আন্টি। নিলু ভাইয়ের মতো একজন ডিসেন্ট ছেলের সাথে কে বেয়াদবি করেছে সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তো আমার ই। আমি কাল ই খুঁজে বের করব।

আন্টি হৃষ্টচিত্তে ফিরে গেলেন আর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এই মাম্মাস বয় কে আরেকটা শিক্ষা দেয়ার।

পরদিন আন্টির বাটি ফিরিয়ে দেবার নাম করে তার বাসায় গেলাম। আন্টি তো আইসক্রিমের মতো গলে গলে পড়ছে আমাকে দেখে । কী খাওয়াবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি হাসি মুখে অত্যাচার সহ্য করছি। অবশ্য অত্যাচার বললে ভুল হবে, মধুর অত্যাচার। খাওয়া দাওয়ার এক পর্যায়ে আন্টিকে বললাম,

“আন্টি নিলয় ভাইয়া বাসায় নেই? থাকলে জেনে নিতাম যে কোন মেয়ে তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করছে। ”

আন্টি আনন্দিত গলায় বলল, আরে আছে তো। জানো না প্রত্যাশা নিলয় তো সারাদিন পড়ে। ইউনিভার্সিটির পাঠ চুকিয়েছে ঠিকই তবুও ছেলেটা একদম ই বই ছেড়ে ওঠে না।

আমি আবারও সাদা ঝকঝকে দাঁত গুলো বের করে আন্টিকে দেখালাম। আন্টিও ছেলের গুনগান করেই যাচ্ছে। শেষমেস কায়দা করে নিলয় ওরফে আন্টির পেয়ারের নিলুর কাছে যাওয়ার সুযোগ পেলাম।

****

“কেমন আছেন নিলু ভাইয়া?”

নিলু ভাইয়া কম্পিউটারে কিছু একটা দেখছিল। আমার গলা শুনে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। আমি দেখলাম সে একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে আছে। সে আমাকে দেখে বলল,

“আপনি? আপনি এখানে কী করছেন?”

আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম, আপনাকে মেরে তক্তা বানাতে এসেছি। আমাকে ধাক্কা মেরে আবার মায়ের কাছে সাধু সাজা? একদম মেরে চেহারার আকৃতি পালটে দেব।

নিলু ভাইয়া চিউ চিউ করে দু’বার তার মা’কে ডাকলো। আমি শাসিয়ে বললাম, শয়তান ছেলে বিকেলে লুকিয়ে লুকিয়ে ছাদে বসে সিগারেট খেয়েছেন সেটা যদি এখন আন্টিকে বলে দেই!

নিলু ভাইয়ার চোয়াল ঝুলে পড়লো। আবারও চিউ চিউ করে বলল, আপনার সমস্যা কী?

এই তো ব্যটা লাইনে এসেছে। আমি মুখে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে বললাম, বেশী কিছু না। বারান্দায় যে কাঠগোলাপ গাছ টা আছে সেটা দিয়ে দিলেই হবে।

নিলু ভাইয়া অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। যার অর্থ হলো তোকে এক্ষুনি ভষ্ম করে দেব।

আমি বললাম, তাহলে যাই আন্টিকে বলি যে আপনার গুনধর ছেলে পড়ার নাম করে বইয়ের মাঝখানে পঁচা পঁচা নায়িকাদের ঠ্যাং দেখছিল।

“এসব মিথ্যে। ”

“কিন্তু আমি এমনভাবে বলব যে আন্টি বিশ্বাস করে ফেলবে। ”

নিলু ভাইয়ার ফর্সা মুখখানা রাগে লাল হয়ে গেল। বলল, আপনি একটা অসভ্য মেয়ে।

আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম, আমি আরও বানিয়ে বানিয়ে বলব যে ছাদে সিগারেট খেতে খেতে ভিডিও কলে আপনি একটা মেয়েকে চুমুও খেয়েছেন।

নিলু ভাইয়া অধৈর্য্য গলায় বলল, আপনার সমস্যা কী?

“আমার সমস্যা হলো আপনার মা সারাদিন কানের কাছে ভ্যজর ভ্যজর করে আপনার গুন গায়। সেটা সহ্য হয় না৷ পড়ুয়া ছেলেপেলে আমার পছন্দ না। তার উপর আপনার বারান্দার গাছগুলোর উপর আমার নজর পড়েছে। তাই একটু….

নিলু ভাইয়া অল্পতেই হাল ছেড়ে বলল, ওকে ফাইন। আপনি যা বলছেন তাই হবে।

আমি হেসে বললাম, আচ্ছা। এরপর একটু নিজের মা’কেও বলে দেবেন যেন একটু ভ্যজর ভ্যজর কম করে। আখেরে তো তাতে আপনার ই লাভ।

নিলু ভাই আমার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে যে আমাকে শ’ খানেক অশ্রাব্য গালি দিলো সেটা বুঝলাম।

হতভম্ব নিলু ভাইকে রেখে তার কাঠগোলাপ গাছ নিয়ে ঘরের দিকে রওনা হলাম। আন্টি বলল, একি নিলু তোমাকে গাছ টা দিয়ে দিলো!

আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, আসলে ওই খচ্চর মেয়েটাকে খুঁজে বের করার জন্য ঘুষ দিলেন।

নিলু ভাই তার অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি একটা ভয়ংকর কাজ করলাম। তাকে একটা চোখ মেরে কাঠগোলাপ গাছ টা হাতে নিয়ে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে চলে এলাম।

****
তার পরের দিনের ঘটনা। বিকেলে পাড়া বেড়াতে যাচ্ছি তখন দেখি নিলু ভাই ঘর থেকে বের হচ্ছে। একদম সেজেগুজে টিপটপ হয়ে বেরোচ্ছে। নিশ্চয়ই ব্যটা ডেট করতে যাচ্ছে। ইচ্ছে হলো মেজাজ টা খিচিয়ে দেই। সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখলাম আমাকে এক নজর দেখে উপরে উঠে গেল। অর্থাৎ আমি নেমে যাব তারপর সে নামবে। আমি একটু ভদ্রতা করে বললাম, আহা ভাইয়ায়ায়া আপনি দাঁড়িয়ে কেন! আপনি আগে নামুন না!

নিলু আমার মিষ্টি কথায় একটু ভরকে গেল। আবার অতিদ্রুত নিজেকে সামলে নিয়েও বলল,
“আপনি আগে চলে যান। আমি পরে যাচ্ছি। ”

আমি অবাক গলায় বললাম, ওমা! তা কী করে হয়! আপনি বড় মানুষ আপনি আগে যাবেন। আপনার একটা সম্মান আছে না!

নিলু চোখ গোল করে বলল, আচ্ছা! ও হ্যাঁ আপনি তো বড়দের খুব সম্মান করেন। ইতিমধ্যে তার নমুনা তো এক ঝলক আমি দেখেই নিয়েছি।

ওর মেজাজ খিচিয়ে দিতে গিয়ে আমার নিজের মেজাজ ই খারাপ হয়ে গেল। ইচ্ছে করলো কানের পর্দা ফাটিয়ে দেই, কিন্তু না।

আমি বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, এই ব্যটা আপনার কী মনে হয় আপনি হৃত্তিক রোশান?

নিলু এবার চোখ বড় করে বলল, তোমার সমস্যা কী?

এবার আমার চোখ কপালে ওঠার পালা। মাম্মাস বয় আপনি থেকে তুমিতে নেমেছে! তারমানে তাকে যেমন টি ভেবেছিলাম বাছাধন তেমন নন!

আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, এমন মেয়েদের পোশাক পরে কোথায় যাচ্ছেন নিলু ভাই?

নিলু ভাইয়ের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। তোতলাতে তোতলাতে বলল,
“মেয়েদের পোশাক মানে? হোয়াট ডু ইউ মিন?”

আমি দুঃখী গলায় বললাম, লাল শার্টে আপনাকে একদম মেয়েদের মতো লাগছে। চোখে এক ফোটা কাজল, আর ঠোঁটে একটু লিপস্টিক ছুইয়ে দিলেই এ পাড়ার সব ছেলে প্রেমপত্র লিখতে শুরু করবে।

নিলু ভাই বাঘের মতো গর্জন করে উঠলো। অতি উত্তেজনায় একটা কথাও স্পষ্ট হলো না। রাগে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ঢুকে ধড়াম করে দরজা বন্ধ করলো।
আমি মিনিট দুয়েক অপেক্ষা করলাম। আফটার অল ভদ্রতা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে না কি!

সেদিন সন্ধ্যাবেলা আমার প্রানের বন্ধু জেরিন দের বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। পাড়ার মোড়ের ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকানে দেখলাম নিলু ভাই দাঁড়িয়ে আছে। কালো টিশার্ট পরে নেমেছে। অজান্তেই হেসে ফেললাম। ব্যটা তার মানে আমার জন্য শার্ট চেঞ্জ করে নিয়েছে! অথচ লাল শার্টে নিলুকে কতো সুন্দর লাগছিল! উফ! এত্তো সুন্দর তো আমার রনবীর কাপুর কেও লাগে না। কেন যে ওই বদমায়েশী টুকু করতে গেলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম কাল নিলুকে গিয়ে স্যরি বলব। আর ওর কাঠগোলাপ গাছও ফিরিয়ে দেব আর এটাও বলব যে শুনুন, আমি কিন্তু অতো বদমায়েশ না। আপনার সাথেই প্রথম বদমায়েশী করেছি।

জেরিন দের বাসা থেকে ফিরে দেখলাম বাবা, মা, ভাইয়া তিনজনেই থমথমে মুখে বসে আছে। আমি আমার বাবা মায়ের অতি আহ্লাদের মেয়ে। ভাইয়ের জন্মের আট বছর পর তাদের কোলে এসেছি বলেই একটু বেশীই ভালোবাসে। তিনজনের থমথমে মুখ দেখে আমি ভাবলাম হয়তো কোনো বিপদ ঘটেছে বুঝি। কিন্তু বাবা যখন গম্ভীর গলায় বলল, টাকা পয়সা খরচা করে পড়াশুনা করে তুমি একটা বেয়াদব তৈরী হচ্ছো!

তখন আমি বুঝলাম যে নিলুটা আছোলা বাঁশ দিয়েছে। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবার যোগাড়। মা কিংবা ভাইয়া এই কথাগুলো বললে আমি কিছু মনে করতাম না। কিন্তু বাবা কখনো আমায় বকেন না, তার কাছে এমন বকা শুনে ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে আমার চোখে পানি এসে গেল। বাবা বকাঝকা করলেন ইচ্ছেমতো। মা আর ভাইয়া আমার চোখের জল দেখে গলে গেল। তারা বাবাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠালেন যে আমি আর এমন করব না। বাবা প্রথম ও শেষবারের মতন ক্ষমা করলেন আর ওয়ার্নিং দিলেন যে ভবিষ্যতে এমন হলে সে আমাকে আর ক্ষমা করবে না।

রাতে কেঁদে কেটে সকালে জ্বর বাধিয়ে কলেজে যাওয়া বন্ধ হলো। মা প্যারাসিটামল খাইয়ে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। নিলয় শয়তান টার কাছে ক্ষমা চাওয়ার চিন্তা আপাতত বাদ দিলাম। ওর দেয়া কাঠগোলাপ গাছ টা বারান্দায় এখনো আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম ওটা আর ফেরত দেব না। শালা আমাকে এতো বড় কেস খাইয়েছে! ওকে আরও একবার দেখে নেব।

সারা সকাল, দুপুর ঘুমিয়ে কাটলো। বিকেলে একটু শরীর ফুরফুরে লাগায় মা’কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ছাদে গেলাম।

ছাদে দেখা হলো বদমায়েশ টা’র সঙ্গে। এই প্রথম পূর্ন দৃষ্টিতে আমি বদমায়েশ টার দিকে তাকালাল। ছোট ছোট ছাট দেয়া চুল, কী সুন্দর গভীর দুটো চোখ, আর মনভোলানো হাসি! কী চমৎকার সব মিলিয়ে। আমার তাকিয়ে থাকা নিলয়ের চোখে পড়লো। নিলয় টবে মাটি ঠিক করতে করতে বলল,

“কাল তোমার বাবার কাছে তোমার ব্যাপারে বলেছি। তোমার যে আদব কায়দা শেখার দরকার সেটা তাকে বলেছি। আই থিংক এরপর তুমি বুঝেশুনে কথা বলবে অচেনা লোকের সাথে।

রাগে আমার মাথাটা ছিড়ে যাবার উপক্রম। একে তো জ্বর, তার উপর এই বদমায়েশ টা খারাপ খারাপ কথা শুনিয়ে দিচ্ছে। আমি হাত উচিয়ে এগিয়ে গেলাম। হঠাৎ মাথাটা দুলে উঠলো। চোখ বন্ধ হবার আগে দেখলাম নিলু আমার দিকে ছুটে আসছে।

চলবে……

তুমি এলে তাই পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0

#তুমি_এলে_তাই
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ১৫ (শেষ পর্ব)

বাসার গেটে ঢুকতেই শুভ্রের সাথে দেখা।শুভ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই শুভ্র বলে উঠল,

“বিয়ে করছেন শুনলাম।”

“হুম।”

“ভালো!এবার অন্তত সুখী হবেন আপনি।”

কিছুক্ষন থেমে বলল,

“আমাকে এভয়েড করছেন?”

“কই না তো!”

“বাই দা ওয়ে,Congratulation.দোয়া করি এবার অন্তত জীবনে সুখী হন।অনেক কষ্ট করেছেন লাইফে।”
বলেই গেট থেকে বেরিয়ে দিলো।শুভ্রের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চৈতি।হাসি আসছে ওর আরশির কথাগুলা মনে করে।এই ছেলে নাকি ওরে ভালোবাসে?বিয়ে হয়ে যাবার কথা শুনে যে ছেলে হাসিমুখে বলতে কংগ্রাচুলেশন বলতে পারে সে আর যাই হোক ভালোবাসতে পারে না।ও মনে হয় লাইফের বেস্ট ডিশিসনটাই নিয়েছে।আশরাফকে বিয়ের ডিশিসনটা নিয়ে ও একদমই ভুল করেনি।হঠাত গালে ভেজা অনুভব হতেই হাত দিয়ে স্পর্শ করল।আশ্চর্য ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে কেন?ওর তো খুশি হবার কথা ওর বিয়ে হচ্ছে এই কথা ভেবে।তা না করে কিনা সে কান্না করছে?না না একদমই চোখের পানি মানায় না।তাও আবার শুভ্রের জন্য। চোখের পানি মুছে ঘরে ঢুকতেই চৈতির মা বললেন,

“দেখ তোর জন্য আশরাফ শাড়ি,গয়না,সাজগোজ সবকিছুই নিজের হাতে কিনে দিয়ে গিয়েছে। তোর সাথে দেখা করতে চাইছিলো কিন্তু বেশি দেরি হয়ে যাবে তাই চলে গেলো।”

কিছুক্ষন থেমে চৈতির কাছে গিয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,

“তুই কি এই বিয়েতে সত্যিই খুশি?”

“কি যে বলো না?আমার বিয়ে আমি খুশি হবো না তো কে হবে?কত শত বিয়ে ভাংগার পর এই বিয়েটা হচ্ছে আমার থেকে তো তোমার বেশি খুশি হবার কথা মা?তুমি তো চেয়েছিলে আমার বিয়ে হোক!”

চৈতির কথা শুনে চৈতির মা মাথা নিচু করে ফেললেন।

“বাদ দাও।আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।”

.
.
“শুভ্রভাই,আজকে চৈতির বিয়ে।”

“হুম জানি তো!”

“আপনার কি চৈতির প্রতি কোন অনুভূতিই নেই?এতদিন জাস্ট ফ্রেন্ড ই ভেবেছেন?এছাড়া আর কোন অনুভূতি জম্মায়নি আপনার মনে?”

“নাহ!”

“শুভ্র ভাই,চৈতি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে।ও রাগের মাথায় বিয়েটা করছে।আপনি প্লিজ বিয়েটা আটকান!”

“ওর ডিশিসন ও নিয়েছে।আমি আটাকানোর কে?”

“আপনি থাকুন।আর অইদিকে চৈতির বিয়েটা হয়ে যাক।দেখবেন পরে আবার যেন না আফসোস করেন।”

বলেই আরশি কল কেটে দিল।
ফোনটা টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে সোজা হয়ে বসে রইল কিছুক্ষন।আচ্ছা ও কোন ভুল করে ফেলছে না তো?ও কি চৈতিকে শুধুই ফ্রেন্ড ভাবে?চৈতির জন্য ওর মাঝে কোন অনুভূতি নেই?ও কি চৈতিকে ভালোবাসে না?
একটার পর একটা এমন হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করছে।চুলগুলো খামচে মাথা নিচু করে বসে রইল শুভ্র।ও এখনো নিজের অনুভূতিটাকেই বুজতে পারছে না।
.
.
চৈতির ঘরে এখন বিয়ের শাড়ি আর গয়নায় ভরপুর।আরশি সেদিনের পর আর কথা বলেনি ওর সাথে।হয়তবা রাগ করেছে।শুভ্রের সাথেও সেদিনের পর আর দেখা হয়নি।চৈতির মা সারাদিন ব্যাস্ত। এদিক থেকে সেদিক দৌড়াচ্ছে।কখনো যেখানে রান্না হচ্ছে সেখানে গিয়ে তদারকি করছেন আবার কখনো ফুল দিয়ে যেখানে সাজানো হচ্ছে সেখানে গিয়ে তদারকি করছে।একটু পরেই পার্লার থেকে মেয়ে আসলো ওকে সাজাতে।

“বেশি ভারী সাজ দিবেন না।হালকা করে মেকাপ করে দিয়েন।”

“আচ্ছা।”

টানা ২ ঘন্টা পর সাজ একদম কমপ্লিট।

“বাহ,আপনাকে পুরা পরীর মতো লাগছে।”

মেয়েটার কথা শুনে চৈতি হালকা করে হাসলো।বিয়ের সময় হয়ে গিয়েছে।পাত্র পক্ষ এসে গিয়েছে অলরেডি চৈতির কাজিনরা চৈতিকে ধরে বিয়ের আসরে নিয়ে গেল।চৈতি মাথা নিচু করে আছে।সব নিয়মকানুন শেষে কবুল বলতে বলা হলো চৈতিকে। চৈতি সামনে আশেপাশে তাকালো।কাংখিত মুখটিকে সে খুজে পেল না।

“কিরে কবুল বলছিস না কেন?”

কবুল কথাটা লিখতেই যাবে এমন সময় হঠাত কেও ওর হাত ধরল।চমকে উপরে তাকাতেই শুভ্রের শুকনো মুখটা দেখলো।শুভ্র কিছু না বলে এক ঝটকায় হাত টান দিয়ে চৈতিকে বসা থেকে দাঁড় করালো।অতঃপর হাত টেনেই হাঁটা ধরল সামনের দিকে।

“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি চৈতিকে?আপনাকে এত বড় সাহস কে দিয়েছে?”

“চৈতি আপনাকে মন থেকে বিয়েটা করছেনা।”

বলেই আর কোন কথায় কান না দিয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে বেরিয়ে আসল।চৈতি এখনো একটা ঘোরের মাঝে আছে।শুভ্র হাত ধরেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে নিয়ে যাচ্ছে ওকে।রাস্তার সবাই ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।শুভ্রের এতে কোন মাথা নেই।ও সামনে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।কিছুদুর পার হতেই হাত ছাড়লো।

“আমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?আপনি জানেন কি কাজ করেছেন আপনি?”

“জানি!কিন্তু আপনি কি করতে যাচ্ছিলেন?যাকে ভালোবাসেন না তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন?”

“তো কি করব আমি?যাকে ভালোবাসি সে তো আমাকে মানাই করে দিয়েছে।আর কি করার আছে আমার?”

“আমি একটু কনফিউশানে ছিলাম আপনাকে নিয়ে। আপনার প্রতি আমার অনুভূতিটাকে নিয়ে।আদৌও আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা সেটা নিয়ে।তাই মানা করে দিয়েছিলাম।এখন বুঝতে পারছি আমি কত বড় ভুল করেছি।আমি আপনাকে ভুঅঅ বলেছি আমি আপনাকে বন্ধুর মতো কোনদিনই ট্রিট করিনি।আমি যা করেছি তা শুধু আপনার পাশে থাকার জন্য করেছি।আপনার মুখে হাসি ফুটাবার জন্য করেছি।দেরিতে হলেও আমি এটা বুঝেছি যে আপনাকে ছাড়া আমার জীবন অচল। এই কয়টাদিন আমি একটা ফোটাও শান্তি পাইনি জানেন?বারবার চিন্তারা আমাকে কুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।এতদিন ভুল করলেও আজকে আমি কোন ভুল করিনি।আমি নিজের মনের কথাটাকে শুনেছি।”

“কিন্তু…..”

“দুঃখিত আমার অনুভূতি বুঝতে দেরি হবার জন্য।ভালোবাসি আপনাকে।অন্য কারোর কি করে হতে দেই?”

ভেবেছিল শুভ্রকে কয়েকটা কঠিন কথা বলবে।কিন্তু শুভ্রের মুখে এমন কথা শুনে থমকে গেল।

“আমাকে কি আশরাফের মতো একটা সুযোগ দেওয়া যায়না?”

চৈতি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

“আপনার যদি অমত থাকে তাহলে আমি আবার আপনাকে বিয়ের আসরে পৌছে দিব।তাও প্লিজ চুপ করে থাকবেন না!”

“ভুলেও এই কথা বলবেন না।একে তো বিয়ের আসর থেকে তুলে এনেছেন এখন যদি আবার গিয়ে দিয়ে আসেন একটা মারও পিঠের বাইরে পরবে না।”

“চলুন।”

“কোথায়?”

“কাজি অফিসে!বিয়ে করে মার কাছে যাবো।গিয়ে দোয়া নিয়ে আসব।”

“এক্ষুনি?”

“হ্যা!পরে যদি আপনি অই আশরাফকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান? আমি একবার রিস্ক নিয়েছি আর রিস্ক নিতে চাইনা।”
“আপনার কোন অসুবিধা হবে না?”

“কিসের অসুবিধা? ”

“আপনিই তো বলেছিলেন আপনি আর আমি দুজন দুপ্রান্তের মানুষ। ”

“চৈতি সেটা আমি না বুঝে বলেছি।”

“আমি তো আপনার কোন আত্মীয় -স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কথা বলতে পারব না?তারা আপনাকে হাসবে না?”

“হাসলেও আমার কি?আমি আপনার কন্ঠ হব, শ্রবনশক্তি হবো!কেও যদি আপনাকে কিছু বলে তা আপনাকে আমি বলব।আবার আপনার কথা তাদের কাছে আমি পৌছাবো।”

“সত্যি?পরে আফসোস করবেন না তো?”

“প্রশই আসে না।”

.
.
দেখতে দেখতে প্রায় কয়েকমাস পার হয়ে গিয়েছে।শুভ্রের মা প্রথমে চৈতিকে মেনে না নিলেও এখন চোখে হারায়। উনি নিজোে ভাগ্যবতী মনে করেন এমন একটা বউমা পেয়ে।চৈতি প্রেগন্যান্ট।আর দুদিন পর ওর অপারেশনের ডেট।রান্না করছিলো রান্না ঘরে দাড়িয়ে। হঠাত পেটে আচমকা ব্যথা টের পেলো।প্রথমে পাত্তা দিলো না সে।কিন্তু আস্তে আস্তে ব্যাথার পরিমান বাড়তে লাগলো।একসময় সামান্য ব্যাথা অসহ্যনীয়তে পরিনত। হলো।নিচে বসে পরল সে পেটে হাত দিয়ে।অপারেশনের তো ডেট ছিল দুদিন পর তবে আজকে এমন ব্যথা করছে কেন।শুভ্রের মা নিজের রুম থেকে পোড়া গন্ধ পেয়ে দৌড়ে আসলেন রান্নাঘরে।এসে দেখলেন চৈতি মেঝেতে বসে আছে। ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।দেরি না করে দৌড়ে নিজের রুমে এসে অ্যাম্বুলেন্স ডাকলের।অতঃপর শুভ্রকে কল করে জানালেন।শুভ্র অফিসে বসে কাজ করছিলো।জরুরি একটা মিটিং আছে ওর।সেটারি প্রিপারেশন নিচ্ছিল।পকেটে ফোন বাজতেই রিসিভ করে হ্যালো বলতেই তার মা বললেন,

“চৈতির অবস্তা বেশি একটা ভালো। আমি ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।তুই ও তাড়াতাড়ি আয়।”

শুভ্র বসা থেকে উঠে যাওয়ার এসিস্ট্যান্টকে বলল সবগুলা মিটিং ক্যান্সেল করতে বলতে এসিস্ট্যান্ট অবাক হয়ে বলল,

“স্যার আপনি সিউর তো?না মানে কয়েক কোটি টাকার ডিল ছিল।এখন এই মুহূর্তে মিটিং ক্যান্সেল করলে তো সবগুলা টাকাই…. ”

“টাকা জাহান্নামে যাক।টাকার চেয়ে আমার স্ত্রীর গুরুত্ব আমার কাছে বেশি।”

বলেই অফিস থেকে বেরিয়ে পরল।হাসপাতালে পৌছাতেই দেখল শুভ্রের মা বসে আছে। কাছে গিয়ে বলল,

“আম্মু!”

“ওটিতে নিয়ে গেছে একটু আগে।”

শুভ্র মার পাশে বসে পরল।টেনশন হচ্ছে খুব।একটু পরেই ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই শুভ্র দৌড়ে গিয়ে বলল,

“আমার স্ত্রীর অবস্তা… ”

“সুস্থ আছেন।সাথে আপনার ছেলেও।”

“আলহামদুলিল্লাহ। দেখা করতে পারি এখন?”

“হ্যা!তবে একজন জাস্ট।”

শুভ্রের মা শুভ্রকে যেতে বলল।শুভ্র ধীর পায়ে প্রবেশ করতেই দেখল চৈতি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখতেই চৈতি চোখ খুলে বলল,

“আমার বাচ্চা!”

“আম্মুর কাছে।”

“ওকে একটু নিয়ে আসবে?”
শুভ্র গিয়ে মার থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে চৈতির কাছে নিয়ে আসলো।

“ওর কানের কাছে একটু শব্দ করো তো!”

“কেন?”

“আহা!করো না।”

শুভ্র শব্দ করতেই বাচ্চাটা নড়ে উঠল।বাচ্চাটাকে নড়ে উঠতে দেখে চৈতি প্রশান্তির একটা হাসি দিল।

“হাসছো কেন?আর শব্দ করতে বললে কেন?”

“চেক করে দেখলাম বাচ্চাটা আমার মতো হয়েছে কিনা!”

“তোমার মতো মানে?”

“কানে শুনতে পায় কিনা!”

“চৈতি!তোমাকে কয়বার বলেছি এসব নিয়ে কথা বলবে না।ও যদি তোমার মতো হতো তবুও আমি ওকে যত্নে রাখতাম।কারন ও আমার সন্তান।”

“তোমার না বলো আমাদের।”

“হুম।ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর একটা উপহার দেওয়ার জন্য। ”

“ধন্যবাদ তো আমার তোমাকে দেওয়া উচিত।তোমার কারনেই আমি আজ সুখী।সমাজের কথা -বার্তাকে দুরে ঠেলে আমাকে আপন করে নিয়েছো। আমার জীবনটা আজকে অন্যরকম হতে পারতো!কিন্তু তোমার কারণেই আমি পরিপূর্ণ হয়েছি।শুধু #তুমি_এলে_তাই আমার জীবনে আশার আলো খুঁজে পেয়েছ যে জীবনের ভবিষ্যত আমার কাছে অনিশ্চিত ছিল।ধন্যবাদ আমার লাইফে আসার জন্য। আমার বাচ্চার বাবা হবার জন্য। ”

এরমধ্যেই বাচ্চা চিৎকার করে উঠলো।

“দাও দাও আমার কাছে দাও।একটা বাচ্চাও রাখতে পারো না।”
#সমাপ্ত

তুমি এলে তাই পর্ব-১৪

0

#তুমি_এলে_তাই
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ১৪

“আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন আন্টি মানে আপনার মা আমাদের বিয়ে নিয়ে ভাবছেন!”

শুভ্রের কথা শুনে চৈতি মাথা নাড়ালো।শুভ্র জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল,

“দেখুন!আমি মানছি আপনি একজন অত্যন্ত ভদ্র -নম্র মেয়ে। আপনার মাঝে সব গুনই আছে যা একজন ছেলে তার বউয়ের মধ্যে দেখতে চায়।কিন্তু আমি আপনাকে জাস্ট আমার ফ্রেন্ডই ভাবি।ভালোবাসার মানুষ হিসেবে আপনাকে কল্পনা করিনি কোনদিন।জাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবেই আপনার সাথে চলা ফেরা করা,কথা বলা।আপনি নিশ্চয়ই আমাকে ভুল বুঝছেন তাই তো?কিন্তু আপনিই বলুন আমি আর আপনি দুজনেই তো দুই পৃথিবীর মানুষ রাইট?আমাদের মধ্যে বিয়েটা হলেও না আপনি সুখী হবেন আর না আমি!তাই বলছিলাম কি…..

” বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিতে হবে তাই তো?”

“ইয়েস।”

“আপনি কোন টেনশন করবেন না।আমি আম্মুকে বলব।আপনাকে আমার বিয়ে করতে হবে না।”

“আপনি আবার আমার উপর ভুল ধারনা…..”

“নাহ নাহ,আপনি যা বলছেন ঠিকই বলছেন!আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়ে আপনার জীবন নষ্ট করার তো কোন মানে হয় না।ঠিকই বলেছেন।”

বিড়বিড় করতে করতে চৈতি ছাদ থেকে নেমে গেল।শুভ্র একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিলো।যাক সব চিন্তা ভাবনা শেষ।

পরেদিন,

“চৈতি,আশরাফ স্যার যে রিজাইন নিয়েছে শুনেছিস?”

“হুম।”

“হুট করে রিজাইন কেন নিলেন উনি আমি তো সেটাই বুঝলাম না!কারনস্বরূপ নাকি নিজের পার্সোনাল প্রবলেমের কথা বলেছেন।”

“হুম।”

“তুই শুধু কথায় কথায় হুম বলছিস কেন?কিছু কি হয়েছে?”

“নাহ,কি হবে?”

“কিছু তো নিশ্চয়ই হয়েছে।তুই কি আমার উপর রাগ করে আছিস?”

“রাগ কেন করব?”

” কয়দিন তোর সাথে কথা বলিনি দেখে!”

“সেটা তো আমার জন্যই। আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই তো কথা বলিস নি।সেটা নিয়ে রাগ করার কোন মানে হয় না!”

“তাহলে কেন রাগ করে আছিস?”

“রাগ করিনি। এমনিই জাস্ট ভালো লাগছে না।কিছু মনে না করলে একটু চুপ থাকবি প্লিজ?কথা বলতে ভালো লাগছে না।”

“হুম।”

দুজনের মধ্যে আর কোন কথা হলো না।ক্লাস শেষে কলেজ থেকে বের হতেই দেখল শুভ্র গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওয়েট করছে বোধ হয় ওর জন্য।সকালে না হয় তাড়াতাড়ি বের হয়ে গিয়েছল।কিন্তু এখন কি করবে?শুভ্রের সামনে যেতেই কেমন যেন লাগছে।ইশ কেন যে তখন আম্মু কে মানা করলো না।তাহলে তো আম্মু শুভ্রের কাছে বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলতো না আর না এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতো।এখন কি করে শুভ্রের সামনে যাবে?নিজের অস্বস্তিটাকে দুরে রেখে শুভ্রকে না দেখার ভান করে চলেই যাচ্ছিলো। কিন্তু শুভ্র হঠাত সামনে এসে বলল,

“কোথায় যাচ্ছেন?গাড়ি তো পিছনে।আমাকে দেখেন নি?”

এখন কি উত্তর দিবে?নিজেকে সামলিয়ে বলল,

“ওহ,ওখানে আপনি দাঁড়িয়ে ছিলেন? দেখিনি তো!”

“সমস্যা নেই।এখন চলুন।”

“না!”

শুভ্র ভ্রু কুচকে বলল,

“কেন?”

“ইয়ে মানে…আমার একটু কাজ আছে অইদিকে।আমি এখন বাসায় যাব না।”

“তাহলে আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই আমি আপনাকে নামিয়ে দিচ্ছি!”

“চৈতি আমাদের বাসায় যাবে।”

আরশি চৈতির কাধে হাত রেখেই বলল।চমকে চৈতি পাশ ফিরে তাকাতেই আরশিকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

“আসলে পড়া নিয়ে একটু কথা ছিল ওর সাথে।তাই আমাদের বাসায় ওকে ইনভাইট করেছি।শুভ্র ভাই আপনি চলে যান।”

“কিন্তু….”

“চৈতি চল!দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।”

শুভ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চৈতি আর আরশি একটা রিকশায় উঠে পরল।

“কিরে?এখনো কি বলবি কিছু হয়নি?যেতে চাইছিলি না কেন?”

“তুই মিথ্যা কথা বললি কেন?”

“দুর থেকেই তোদের কথা বার্তা শুনেই বুঝলাম তুই শুভ্র ভাইয়ের সাথে বাসায় যেতে চাচ্ছিস না।তাই বুদ্ধি খাটিয়ে মিথ্যা বললাম।এবার তুই বল কি হয়েছে?”

“আম্মু উনাকে আমার সাথে বিয়ের ব্যাপারে বলেছিলেন।”

“বাহ,ভালো তো!শুভ্র ভাই নিশ্চয়ই হ্যা বলেছেন?অহ তুই লজ্জায় উনার সাথে যেতে চাচ্ছিলি না।আর আমি কি না কি ভাবলাম।”

“এসব কিছুই না।উনি মানা করে দিয়েছেন।”

“কিহ?”

“হ্যা!উনি আমাকে আলাদা করে ডেকে বলেছেন আমাকে উনি জাস্ট ফ্রেন্ডই ভাবেন। অইভাবে কোনদিন ট্রিট করেননি আমাকে।তাই উনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না।এতে আমরা কেওই সুখী হবো না।”

“মানে কি ভাই?এতদিন উনি তোরে জাস্ট বন্ধু ভাবছে?তোর জম্মদিনের আইডিয়া তো শুভ্র ভাইই আমাকে দিয়েছিলেন!ইভেন সব কাজ উনি নিজ হাতে করেছেন।আমাকে হাত লাগাতেও দেননি।কেকটা পর্যন্ত উনি নিজে বানিয়েছেন।কোন বেকারি সপ থেকে কিনেননি।তোর যদি বাইরের খাবার খেয়ে শরীর খারাপ হয় এই ভেবে।টানা ৪ ঘন্টা লাগিয়ে কেকটা বানিয়েছেন।কেও কি এতসব শুধু তার জাস্ট ফ্রেন্ডের জন্য করে?তুইই বল?”

“উনি তো তাইই বললেন।”

“ঘোড়ার ডিম বলছে।এত কেয়ার,চিন্তা ভাবনা আমি আমার লাইফে উনার বন্ধুদের জন্য করতে দেখি নি।মিথ্যা বলেছেন তোকে!”

“মিথ্যা কেন বলবেন? ”

“সেটা আমি কি করে জানব?তুইই খুজে বের কর।তোর কাজ এটা।”
.
.

আরশিদের বাসা বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে আরশির বলা কথাগুলো ভাবছে।আচ্ছা আরশির কথা গুলা কি ঠিক?কিন্তু উনি কেন মিথ্যা বলবেন আমায়?আমাকে বিয়ে করতে উনার কি সমস্যা?
ভাবতে ভাবতে বাসায় পৌছে ঘরে ঢুকতেই আশরাফের মা কে দেখল।ওরা কি আবার ওর বিয়ে নিয়ে কথা বলতে এসেছে?চৈতিকে দেখেই আশরাফের মা চৈতির কাছে এসে বললেন,

“আমাকে ক্ষমা করে দাও মা!আমার ছেলেটাকে একটা সুযোগ দাও।ছেলেটা আমার এ পর্যন্ত ভালোভাবে একটা খাবারও মুখে তুলেনি।তুমিই বলো এভাবে চলতে থাকলে তো ও অসুস্থ হয়ে যাবে!চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছে।প্লিজ তুমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাও!”

“কিন্তু আন্টি….”

“হাত জোর করে বলছি প্লিজ রাজি হয়ে যাও।তুমি বললে তোমার পায়েও পরব।আমার ছেলেটাকে আমি আর এ অবস্তায় দেখতে পারছিনা।এভাবে চলতে থাকলে ও মানসিক ভাবে অসুস্ত হয়ে যাবে।আমার ছেলেটার ভালোর কথা ভেবে রাজি হয়ে যাও।”

চৈতির মা আশরাফের মায়ের সামনে এসে বললেন,

“দেখুন!আপনি কিন্তু এখন আমার মেয়েকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করছেন!আমি আপনার ছেলেকে যা বলার বলে দিয়েছি।তাহলে আপনি কেন…. ”

“আমি বিয়েটা করতে রাজি মা।”

লেখাটা পড়ে চৈতির মা অবাক হয়ে বলল,

“চৈতি!তুই যা বলছিস ভেবে বলছিস তো?”

“হ্যা মা।আমার জন্য মানুষ এত পাগলামি করছে তাকে আমি কি করে মানা করি?ভুল তো সবাইই করে।আমাদের উচিত উনাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া।আর আন্টি আপনি আশরাফ স্যারকে চিন্তা করতে মানা করেন।উনাকে বলুন আমি এই বিয়েতে রাজি।”

“আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব?তুমি আমার ছেলেটার প্রান বাঁচালে মা!আগামি শুক্রবারে বিয়ের ব্যাবস্তা করি?”

“আপনার ইচ্ছা।আমার কোন অসুবিধা নেই।”

আশরাফের মা খুশি হয়ে চৈতিকে দোয়া করে চলে গেলেন।

“চৈতি তুই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে মতামতটা দিলি না তো?”

মার কথা শুনে চৈতি বলল,

“মা আমি সজ্ঞানে মতামতটা দিয়েছি।”

“কিন্তু….”

“আমি এখন একটু রেস্ট নিবো।”

বলেই নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পরল।
পরেরদিন কলেজে গিয়ে আরশির পাশে বসতেই আরশি বলল,

“কি শুনলাম আমি?”

“কি শুনলি?”

“তুই নাকি আশরাফ স্যারকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস?”

“হুম।”

“কিন্তু তুই এমন একটা মানুষকে বিয়ে করবি?তুই কি ভুলে গিয়েছিস উনি তোকে প্রতিদিন খোটা দিয়েছে! তোকে সবার সামনে হাসির পাত্র বানিয়েছে।কি করে তুই রাজি হচ্ছিস?”

“তোকে আমি একদিন একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে?রিকশাওয়ালা হলেও আমি বিয়ে করব?সেখানে উনি তো অনেক ভালো। উনি উনার ভুল বুঝতে পেরেছেন!আমার কি উচিত না উনাকে ক্ষমা করে দেওয়া?”

“কিন্তু শুভ্র ভাই….”

“উনি তো আমাকে মানা করে দিয়েছেনই।”

“চৈতি,তুই শুভ্র ভাইয়ের উপর রেগে বিয়েটা করতে চাইছিস তাই না?”

“তেমন কিছুই না।আমার জাস্ট মনে হলো আশরাফ স্যারকে সুযোগ দেওয়া উচিত।”

“তোর যা ইচ্ছা তুই তাই কর।আমি কিছু বলব না আর!”

.
.
বাসার গেটে ঢুকতেই শুভ্রের সাথে দেখা।শুভ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই শুভ্র বলে উঠল,

“বিয়ে করছেন শুনলাম।”

“হুম।”

“ভালো!এবার অন্তত সুখী হবেন আপনি।”

কিছুক্ষন থেমে বলল,

“আমাকে এভয়েড করছেন?”

“কই না তো!”

“বাই দা ওয়ে,Congratulation.দোয়া করি এবার অন্তত জীবনে সুখী হন।অনেক কষ্ট করেছেন লাইফে।”

#চলবে…..

তুমি এলে তাই পর্ব-১৩

0

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ১৩

আজকে নিয়ে এক সপ্তাহ পুরন হবে।এই এক সপ্তাহে চৈতির সাথে আরশিও ভালোভাবে কথা বলেনি আর শুভ্রও।শুভ্র ওকে দেখলে আরশির মতোই এড়িয়ে যায়।কথা বলার যে সুযোগটুকু পাবে সেটাও সে পাচ্ছে না।আশরাফকে অইদিনের পর থেকে চৈতি আর কলেজে দেখেনি।শুনেছে সে নাকি রিজাইন দিয়ে চলে গিয়েছে।আর চাকরি করবে না।চৈতি বুঝতে পেরেছে তার জন্য আশরাফ স্যার চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।উনার জন্য মায়া লাগছে।ও তো চায়নি ওর জন্য কেও চাকরি ছেড়ে দিক।কিন্তু ক্ষমাও তো করা যায় না।উনি তার প্রতি যে অবিচার,অন্যায় ব্যবহার করেছে সেসব ভুলে যদি আশরাফকে সে ক্ষমা করে দেয় তবে তো নিজেকেজ অপমান করা বুঝায়।ছাদে বসে এসবই ভাবছিলো।হঠাত পাশে এসে কেও একজন দাঁড়ায়।পাশ ফিরে দেখার জন্যই তাকাতে দেখে শুভ্র। আজ টানা ৬ দিন পর নিজ থেকে এসেছে সে।

“আরশি আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।”

“কোথায় ও?”

“আমি আপনাকে মেসেজ করে জায়গাটার নাম বলছি।বাই দা ওয়ে,আপনার ফোন নাম্বার টা?”

“আপনার মোবাইলটা দিন।আমি সেভ করে দিচ্ছি।”

শুভ্র পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে চৈতির দিকে বারিয়ে দিল।চৈতি শুভ্রের হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নিজের নাম্বার সেভ করে শুভ্রের হাতে দিল।শুভ্র ইতদস্ত করে বলল,

“কয়েকদিন আগে আপনার কলেজের স্যার এসেছিল এখানে!অইযে যার সাথে আপনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।কি যেন নাম? মনে পরেছে আশরাফ মেবি রাইট?”

“হুম।”

” এত রাতে কি কথা বলতে এসেছিলো?না মানে কোন স্যার তো তার স্টুডেন্টের সাথে দেখ করতে বাসার নিচ পর্যন্ত আসেনা।তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

“আমাকে ভালোবাসে উনি।সেটাই বলতে এসেছিল।আর বলেছেন আপনার সাথে যাতে না মিশি।উনার নাকি সহ্য হয় না।”

“অহ।”

“আপনি কি বললেন?মতামত জানিয়েছেন কিছু?”

“মানা করে দিয়েছি।”

“কিহ?কিন্তু কেন?”

“এমনি।”

কথাটা শুনে শুভ্র মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ করল না।নিজের খুশির অনুভূতিটাকে নিজের মধ্যেই চেপে রাখলো।

“আচ্ছা,আপনি আর আরশি আমার সাথে এমন কেন করছেন?”

“কি করেছি?”

“এইযে দুজনেই আমাকে ইগনোর করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।আজ নিয়ে প্রায় ১ সপ্তাহ হবে আরশির সাথে কথা বলি না।আচ্ছা আমি কি কোন ভুল করেছি?কি ভুল করেছি?আরশি কিছু বলেছে আপনাকে?ও তো এমন ছিলো না।হঠাত এত পালটে গেল কেন?”

“আমি তো জানি না।আমাকে ও কিছুই বলেনি।আপনাদের মধ্যকার ব্যাপার!আপনারাই সল্ভ করে নিন।আমি আসছি।”

কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।হঠাত এমন হয়ে গেল কেন সবকিছু?প্রশ্নের উত্তর খুজে পায় না সে।মনের মধ্যেই প্রশ্নগুলা জমাট রয়ে যায়।একটু পরেই মোবাইলে শুভ্র মেসেজ পাঠিয়ে জায়গার ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছে।সাথে বলেছে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে যেন পৌছে যায়।
.
.
বাস থেকে নেমে শুভ্রের দেওয়া ঠিকানায় আসতে দেখলো মাঠের মতো একটা খালি জায়গা।এই খালি জায়গায় কেন আরশি দেখা করতে চেয়েছে?বাসাতে বললেও তো পারতো!আর নাহলে কলেজেই বলতো।তা না করে এই মাঠে নিয়ে আসছে কেন?আরশিকে তো দেখা দুরের কথা কাওকেই দেখতে পারছে না।পুরো মাঠটাই খালি।সন্ধ্যা হওয়ায় দিনের আলো আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসছে।একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।এর মধ্যেই ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে আরশিকে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিলো এখানে আসার কথা।আরশি মেসেজের রিপ্লাইয়ে সামনের দিকে হাটতে বলেছে।একটু সামনেই নাকি ও আছে।ফোন ব্যাগের মধ্যে রেখে আরেকটু আগাতেই চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল।চারপাশে তাকাতেই দেখল আশেপাশে গাছগুলোর সাথে লাইট বাধাই করা।একটু আগে যে জায়গাটা পুরো অন্ধকার ছিল এখন সেই জায়গাটা লাইটের আলোই জলমল করছে।চারদিকে চোখ বুলিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল আরশি আর শুভ্র টেবিলে কেক রেখে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।চৈতিকে তাকাতে দেখেই দুজনে ইশারায় বলল,

“Happy Birthday to you.Happy Birthday to you.Happy birthday dear Chaiti.Happy Birthday to you!”

চৈতি অবাক হয়ে বলল,

“এসব কি?”

“তোর জম্মদিনের কেক।আজকে তোর জম্মদিন তো!তাই তো এত আয়োজন করা।তোর বাসাতেও করতে পারতাম কিন্তু শুভ্র বললেন তোর আম্মু নাকি এসব পছন্দ করেন না। তাই এখানেই সেলিব্রেট করব তোর জম্মদিন।আয় আয়,কেক কাট!”

চৈতি এক পা এক পা করে এগিয়ে টেবিলের সামনে আসলো।অতঃপর কেক কেটে আরশিকে প্রথমে খাওয়ালো।আরশি একটু খেয়ে চৈতিকে বলল,

“তোর জম্মদিনের কেক তুই বেশি করে খা।আমি পরেও খেতে পারব।”

মাঝখান থেকে শুভ্র বলল,

“বাহ রে!শুধু তোরাই খাবি?আমি খাবো না?এতো কষ্ট করে সবকিছুর এরেন্জমেন্ট তো আমিই করলাম।এখন আমাকেই কেক দিচ্ছিস না!এটা কিন্তু ঠিক না।”

শুভ্রের কথা শুনে আরশি বলল,

“আপনি নিজে কেক নিয়ে খান না!মানা করছে কে?”

“তাই করতে হবে দেখছি।”

চৈতি শুভ্রের জন্য আলাদা করে কেক কেটে শুভ্রকে দিল।

.
.
“আপনি জানলেন কি করে আজকে যে আমার জম্মদিন?”

“অইযে আরশির জম্মদিনে বললেন। ”

“অহ,আপনি যে আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন সেটা আমি ভাবতেও পারি নাই।আমি নিজেই তো ভুলেই গেছিলাম আমার জম্মদিনের কথা।”

“তা মিস চৈতি লাইফের ফাস্ট বার্থডে কেমন লাগলো?যদিও বেশি কিছু করতে পারি নি।তবে ইচ্ছা ছিল।”

“আমার লাইফের সেরা মুহূর্ত ছিল।এন্ড থ্যাংকস ফর দ্যাট!এজন্যই আরশি আর আপনি টানা ৬ টা দিন আমাকে ইগনোর করেছেন।”

“আরশি হয়তোবা আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এমনটা করেছে।বাট আমি একটু বিজি ছিলাম তার পাশাপাশি আপনার জম্মদিনের জন্য আয়োজন ও করতে হয়েছিলো। সময় পাচ্ছিলাম না একদম আপনার কলেজের সামনে যাবার।কালকে থেকে আমি একদম ফ্রি।যাইহোক,বাসায় চলুন!দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।”

চৈতি মাথা নাড়ালো।
.
.
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন?”

আশরাফকে দেখে চৈতির মা প্রথমে অবাক হলেন।অতঃপর নিজেকে সামলিয়ে বললেন,

“অলাইকুম আসসালাম।হ্যা ভালো আছি। কিন্তু তুমি হঠাত বাসাতে?”

“কিছু কথা বলতে এসেছিলাম।অনেক আর্জেন্ট।”

“হ্যা বলো?”

“কথাটা বলা জানি আমার ঠিক হচ্ছে না….”

“আহা,বলেই ফেলো না?”

“আন্টি অইদিন আমি এবং আমার মা ভুল করেছিলাম। জানি এই ভুল ক্ষমার না।এটাকে ভুল বললেও অন্যায় হবে।আমি চাচ্ছি আমার করা অন্যায়টা সুধরে নিতে।”

চৈতির মা আশরাফের এমন প্যাচানো কথা শুনে বিরক্ত হলেন খুব।এত পেচিয়ে কথা বলার কি আছে বাপু?সোজা সাপ্টা বললেই তো পারে?নিজের বিরক্তটাকে সহ্য করে বললেন,

“একটু ক্লিয়ার করে বলো!তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি তা।যা করার তা তো করেই ফেলেছো!এখর সেটা কিভাবে সুধরাবে?”

আশরাফ একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

“আন্টি আমি চৈতিকে বিয়ে করতে চাই।”

আশরাফের কথা শুনে চৈতির রেগে গেলেন।

“বিয়েটাকে কি তুমি ছেলেখেলা পেয়েছো?একবার রিজেক্চ করবে,অপমান করবে আবার পরে এসে বলবে বিয়ে করবে এটা কেমন কথা?দেখো এটা এখন আর সম্ভব না।আমি অলরেডি চৈতির জন্য ছেলে দেখে ফেলেছি।ছেলে দেখতে যেমন সুন্দর তার আচার আচরনও মাশাআল্লাহ।আর যে ছেলে আমার মেয়েকে দেখতে এসে মানা করে দিতে পারে তার সাথে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না।”

“আন্টি, আমি মানছি আমি ভুল করে ফেলেছি। একটা সুযোগ দিন সেই ভুলটাকে সুধরাবার?চৈতিও আমাকে সুযোগ দিচ্ছে না।আপনিও না।এমনটা করবেন না প্লিজ। আমার কথা একটু ভাবুন!”

“আমার মেয়েকে রিজেক্ট করার আগে তো তুমি আর তোমার মা দুজনের একজনও ভাবেনি আমার মেয়ের কথা।আমি কেন ভাবব?আর চৈতিই যেহেতু রাজি না সেখানে আমি কি করে রাজি হবো?তুমি এখন যেতে পারো!”

“আন্টি এমন করবেন না প্লিজ!আমাকে একটা সুযোগ দিন।আমি কথা দিচ্ছি চৈতিকে কখনো দুঃখ দিব না।রাজরানীর মতো করে রাখব।”

“আমি আমার মতামত বলে দিয়েছি।এক পা ও নড়ব না আমার মতামত থেকে।”

.
.
চৈতি বাসায় এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজের রুমে যেতে নিলেই চৈতির মা আসলো চৈতির সামনে।

“কিছু বলবে?”

“আশরাফ এসেছিলো।”

“উনি কেন এসেছিলেন?”

“তোকে বিয়ে করার জন্য অনুরোধ করছিলো।”

“অহ্,তুমি কি বললে?”

“আমি মানা করে দিয়েছি।এরকম ছেলের সাথে আমি আমার মেয়েকে তো আর বিয়ে দিতে পারি না!”

“অনেক ভালো করেছো।”

“হুম,আরেকটা কথা!”

“কিহ?”

“আমি ভেবেছি শুভ্রের সাথে কথা বলব।”

“কি কথা?”

“তোর সাথে বিয়ের কথা।ছেলেটা তোকে পছন্দ করে আমি সিউর।তোর কোন আপত্তি নেই তো?”

“তোমার যা ইচ্ছা করো।”

বলেই নিজের রুমের ভিতর চলে গেল।চৈতির বলা কথাটাকে চৈতির মা হ্যা ধরে নিলেন।

চলবে…..