Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 214



মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব-০৮

0

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৮
#নুজাইফা_নূন

-” শার্ট,প্যান্ট দিয়ে আমি কি করবো?”

-” তুমি পরার জন্য কোনো জামাকাপড় পাচ্ছো না ।তাই আমার শার্ট,প্যান্ট দিয়ে তোমাকে সহযোগিতা করলাম‌।এখন যদি বাপের বাড়ি যেতে চাও,অতি দ্রুত শার্ট, প্যান্ট পরে রেডি হয়ে নাও।”

-” উৎসের কথায় আদ্রি বোকা বনে গেলো।উৎস আদ্রি কে দশ মিনিট সময় দিয়ে বাইরে গিয়েছিলো‌। কিন্তু উৎস প্রায় এক ঘন্টা পরে এসে দেখে আদ্রি রেডি না হয়ে বসে আছে। মূলত আদ্রি সবসময় বোরকা হিজাব পরিধান করে বাইরে বের হয়। তার ইচ্ছে ছিলো বোরকা পরে বিয়ে করবে। কিন্তু হঠাৎই দমকা হাওয়া এসে সবটা এলোমেলো করে দিয়ে চলে গেল। হুট করেই তার বিয়েটা হয়ে গেলো।আদ্রি ভেবেছিলো তার মা হয়তো লাগেজে কাপড়ের সাথে বোরকা হিজাব ও দিয়ে দিবে। কিন্তু আদ্রি উৎসের কথা অনুযায়ী রেডি হতে এসে লাগেজের সব কাপড় উল্টো পাল্টা করে ও নিজের বোরকা টা পেলো না। বোরকা হিজাব না পেয়ে আদ্রি ঠাঁই সেখানেই বসে র‌ইলো।”

-” এদিকে উৎস নিজের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে উপমা কে ডেকে বললো,

-” মেয়েটা কি রেডি হয়েছে?”

-” কোন মেয়েটা ভাইয়া??”

-” আরে ঐ যে আদ্রি নাকি পাদ্রি?”

-” আমি জানি না ।আর তার সম্পর্কে জানার কোনো ইচ্ছা ও আমার নেই।ক্ষ্যাত একটা মেয়ে। চলাফেরা, কথাবলার স্টাইল দেখেছো?তাকে দেখলেই আমার গাঁ গুলিয়ে আসে।তোমার ব‌উ। তুমি গিয়ে খোঁজ নাও‌ রেডি হয়েছে কিনা বলে উপমা পার্লারে চলে গেলো।”

-” উপমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে উৎস তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, তিন কবুল বলে বিয়ে করলেই ব‌উ হ‌ওয়া যায় না। শুধুমাত্র সজল খন্দকারের কথায় ঐ বাড়িতে যাওয়া‌।তিনি আমার বাবার বয়সী।তার আকুতি মিনতি আমি ফেলতে পারি নি।তাই তো অনিচ্ছাকৃত ভাবে ঐ বাড়িতে যেতে হচ্ছে।তবে আমি এই মিথ্যা সম্পর্ক বেশি দিন বয়ে নিয়ে বেড়াবো না।উকিলের সাথে কথা বলে আমি খুব শীঘ্রই ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করবো বলে উৎস আদ্রির রুমে এসে দেখে আদ্রি রেডি না হয়ে মেঝেতে বসে রয়েছে।যা দেখে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে উৎসের।উৎস আদ্রির দিকে তেড়ে এসে বললো,

-” বাপের বাড়ি যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নাই বুঝি? তোমাকে বলেছিলাম না রেডি হয়ে থাকতে? এই তোমার রেডি হবার নমুনা? তুমি কি ভেবেছিলে তুমি রেডি না হলে আমি সিনেমা, গল্প, উপন্যাসের নায়কদের মতো তোমাকে নিজে হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে দিবো?”

-” আমি লুলা না যে আপনার হাতে আমার সাজগোজ করতে হবে।আপনার হাতে সাজগোজ করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।”

-” তাহলে এখনো‌ রেডি না হয়ে বসে রয়েছো কেন?”

-” আদ্রি বোরকার কথা বলতে গিয়ে ও কিছু একটা ভেবে বললো,

-” আমি তো নতুন ব‌উ। নতুন ব‌উয়েরা সাধারণত নতুন জামাকাপড় পরে। কিন্তু এ বাড়িতে আসার পরে আমাকে কোন নতুন শাড়ি বা জামা দেওয়া হয় নি।আমি বাড়ি থেকে যে পুরাতন জামাকাপড় এনেছিলাম , সেগুলোই পরেছি। কিন্তু বাপের বাড়ি যদি এই পুরাতন কাপড় পরে যাই।তখন আশেপাশের লোকজন আপনাদের কে গালমন্দ করবে।বলবে তারা নাকি এতো‌ বড়লোক।অথচ নতুন ব‌উকে একটা ভালো শাড়ি পর্যন্ত দিতে পারে নি? কেমন বড়লোক তারা?আদ্রির কথা শুনে উৎস তৎক্ষণাৎ নিজের রুমে এসে কাবার্ড থেকে শার্ট, প্যান্ট নিয়ে আদ্রির মুখের উপর ছুড়ে ফেলে দিলো।আদ্রি মুখের উপর থেকে শার্ট ,প্যান্ট হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে বললো,

-“শার্ট,প্যান্ট দিয়ে আমি কি করবো?”

-” তুমি পরার জন্য কোনো জামাকাপড় পাচ্ছো না ।তাই আমার শার্ট,প্যান্ট দিয়ে তোমাকে সহযোগিতা করলাম‌।এখন যদি বাপের বাড়ি যেতে চাও,অতি দ্রুত শার্ট, প্যান্ট পরে রেডি হয়ে নাও।”

-” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? শার্ট প্যান্ট ছেলেদের পোশাক।আমি মেয়ে হয়ে কেন ছেলেদের পোশাক পরবো?”

-” উৎস দাঁতে দাঁত চেপে বললো,আমরা তো ছোটলোক। আমাদের টাকার অভাব।তোমাকে শাড়ি, থ্রিপিস কিনে দেওয়ার মতো কোনো টাকা আমাদের নেই। এজন্যই আমার যেগুলো আছে সেগুলো আমরা দুজনে ভাগাভাগি করে পরবো কেমন?”

-” উৎসের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সালমা তালুকদার দৌড়ে আসে।তাকে দেখেই উৎস রুম থেকে বেরিয়ে যায়।উৎস যেতেই সালমা তালুকদার আদ্রির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

-” কি হয়েছে আদ্রি মা? উৎস রেগে গিয়েছে কেন?”

-” আসলে মা আমার তো ভালো কোনো জামা নেই। তাছাড়া মা লাগেজে বোরকা হিজাব দিতে ও ভুলে গিয়েছে।আমি যদি পুরাতন কাপড় পরে ঐ বাড়িতে যাই‌‌।তাহলে লোকে আপনাদের বদনাম করবে।সেটাই বলছিলাম।আর তখনি উনি শার্ট প্যান্ট এনে আমার মুখে ছুড়ে দিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে।খারাপ লোক একটা।”

-‘ আদ্রির কথা শুনে সালমা তালুকদার মুচকি হেসে বললেন, উৎসের রুমে আলমারি তে তোমার জন্য শাড়ি, থ্রিপিস রাখা হয়েছে।উপমা কে বলেছিলাম শাড়ি , থ্রিপিস তোমার হাতে দিতে। কিন্তু মেয়েটা তোমার হাতে না দিয়ে সেগুলো আলমারি তে রেখে দিয়েছে।আর আমি তো জানতাম না তুমি বোরকা পরো।জানলে শাড়ি , থ্রিপিস এর সাথে দুইটা বোরকা ও নিয়ে আসতাম।আমার ভুল হয়ে গিয়েছে মা।এবারের মতো শাড়ি পরে বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে এসো। তুমি ফিরলে আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে তোমার পছন্দ মতো বোরকা কিনে দিবো।”

-” আমার নতুন বোরকা লাগবে না মা।ঐ বাড়িতে আমার বোরকা রয়েছে।আমি সেটাই নিয়ে আসবো।”

-” আচ্ছা ঠিক আছে।এখন কথা না বাড়িয়ে চলো।আমি ঝর্ণা কে বলছি । ঝর্ণা তোমাকে শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে।”

-” ঠিক আছে মা।”

-“প্রায় দুই ঘণ্টা পরে আদ্রির সাজ কমপ্লিট হয়‌।ঝর্ণা তালুকদার তাকে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।আদ্রি আয়নায় নিজেকে দেখে যেন নিজেই চিনতে পারে না।তাকে সম্পূর্ণ অন্য রকম লাগছে।তার গাত্রে বেগুনি কালারের একটা জামদানী শাড়ি জড়িয়ে রয়েছে।গলায় স্বর্ণের অলংকার, নাকে নাকফুল, হাতে স্বর্ণের মোটা বালা।চোখে গাড়ো কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চুলগুলো খোঁপা করে এক সাইডে গোলাপ ফুল গুঁজে দেওয়া। সবমিলিয়ে পরীর মতো লাগছে আদ্রি কে।আদ্রি কে এই রুপে দেখে সালমা তালুকদার নিজের চোখ থেকে হাতের কোনায় একটু কাজল নিয়ে আদ্রির কপালে ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

-” এসব অলংকার তোমার শ্বাশুড়ি মায়ের।এই‌ অলংকারের আসল উত্তরাধিকারী তুমি।এই অলংকার যেন তোমার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কথাটা শুনে আদ্রি সালমা তালুকদার কে জড়িয়ে ধরলো।তিনি তৎক্ষণাৎ আদ্রির কপালে আলতো চুমু দিয়ে বললো,

-“ন‌জর না লাগুক যেন চান্দের ও গায়।”

-” আমি অনেক ভাগ্য করে আপনার মতো একজন শ্বাশুড়ি, কাকীমার মতো একজন চাচি শ্বাশুড়ি, সিজানের মতো একজন দেবর পেয়েছি।”

-“আর আমার ছেলে বুঝি ভালো নয়?”

-” আমাদের বিয়েটা তো শুধু মাত্র কাগজের বিয়ে হয়েছে।আমি তার কাগজের ব‌উ।এই সম্পর্ক কতোদূর আগাবে আমি জানি না মা।তবে আমি মন প্রাণ দিয়ে চাই আমাদের সম্পর্ক টা আর পাঁচটা স্বাভাবিক দম্পতির মতো হোক।আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাবো স্বামী, শ্বশুর, ননদ সবার মন জয় করার।সবার ভালোবাসা পাবার।”

-” তোমার শ্বাশুড়ি সবসময় তোমার পাশে থাকবে মা বলে সালমা তালুকদার, ঝর্ণা তালুকদার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।তারা যাওয়ার পর পরই উৎস ফোনে কথা বলতে বলতে আদ্রির রুমে প্রবেশ করলো। হুট করে আদ্রির অন্য রুপ দেখে সে যেন কথা বলতে ভুলে গেলো।উৎস পলকহীন দৃষ্টি তে আদ্রির দিকে তাকিয়ে র‌ইলো‌।।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব-০৭

0

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৭
#নুজাইফা_নূন

-” প্রথমবারের মতো নিজের বর কে দেখে চমকে উঠে আদ্রি।যার দরুন আদ্রির হাত থেকে কফির মগ নিচে পড়ে যায়।মগে থাকা গরম কফি আদ্রির পায়ের উপর পড়ে। তৎক্ষণাৎ আদ্রি ও মাগো বলে চিৎকার করে উঠে।তার চিৎকারে কাজে ব্যাঘাত ঘটে উৎসের ।উৎস বিছানার উপর ল্যাবটপ রেখে দৌড়ে আদ্রির কাছে এসে বললো,

-” আদিতা তুমি এসেছো? আমি জানতাম তুমি ঠিক আমার কাছে ফিরে আসবে।তোমাকে নিশ্চয় তোমার পরিবারের লোকজন জোর করে আটকে রেখেছিলো?তোমাকে বাধ্য করেছিলো পালিয়ে যাওয়ার নাটক করতে? তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে তাই না?আমি জানতাম আমার ভালোবাসা ,আমার সন্ধ্যে কন্যা আমার সাথে প্রতারণা করতে পারে না।প্রতারক তোমার পরিবার, তোমার বোন।আমি তোমার বোন , আর পরিবার কে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না।”

-” আদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই উৎসের আদ্রির পায়ের উপর নজর পড়ে।উৎস আদ্রির হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আদ্রির পা নিজের হাঁটুর উপর রাখে।পায়ে উৎসের স্পর্শ পেয়ে আদ্রির দেহ শিউরে উঠে। আদ্রি দুহাতে বিছানার চাদর খামচে ধরে তোতলাতে তোতলাতে বললো,

-” একি আপনি পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?এটা পাপ।আমাকে দয়া করে পাপের ভাগীদার করবেন না।”

-” কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকো।পায়ে যে গরম কফি পড়েছে সে খেয়াল আছে তোমার? জায়গা টা লাল হয়ে উঠেছে। ফোস্কা পড়ে যাবে।আমি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে দেখে তোমার চমকে উঠতে হলো?আমাকে দেখে এমন রিয়েক্ট করলে যেন এই প্রথম তুমি আমাকে দেখছো।”

-” উৎসের কথা শুনে আদ্রি মনে মনে বললো আমি সত্যিই আপনাকে দেখে চমকে উঠেছিলাম।আপনাকে আমার বরের আসনে দেখতে হবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি আমি। সেদিন সন্ধ্যে বেলায় যখন
জীবনের প্রথম বার শরীরে আপনার স্পর্শ পেয়েছিলাম।তখন আপনি সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন ব্যক্তি ছিলেন।আমি আমার শরীরে আপনার স্পর্শ কিছুতেই মানতে পারি নি। সেদিন বাড়ি ফিরে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে আমার শরীরের যেখানে যেখানে আপনার হাতের স্পর্শ লেগেছিলো , সেখানে সেখানে সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনা আমাকে স্থির থাকতে দিচ্ছিলো না।ভেতরে ভেতরে অপরাধ বোধ কাজ করছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো এতে আমার স্বামী কে ঠকানো হবে।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ সেই মানুষটা আমার বিয়ে করা বর।যার জীবনে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই।সে আমাকে আদিতা মনে করে করে আমার সেবা শুশ্রূষা করেছে।নিয়তি আজ আমাকে কোথা থেকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে।আদ্রির ভাবনার মাঝে নিজের পায়ে ঠান্ডা অনুভব করলো।আদ্রি তৎক্ষণাৎ উৎসের দিকে তাকিয়ে দেখলো উৎসে আলতো হাতে তার পায়ে মলম লাগিয়ে সেই জায়গায় ফুঁ দিয়ে দিচ্ছে।আদ্রি আবেশে চোখ বন্ধ করে পুনরায় বিছানার চাদর খামচে ধরে আমতা আমতা করে বললো,

-” আপনি হয়তো আমাকে আদি মনে করে আমার এতো সেবা শুশ্রূষা করছেন। কিন্তু আমি আদি ন‌ই, আদ্রি।আদ্রি কথাটা শোনা মাত্রই উৎসের হাত থেমে গেল।উৎস তৎক্ষণাৎ তার হাতে থাকা মলম ছুড়ে ফেলে দিয়ে আদ্রির হাত ধরে বিছানা থেকে টেনে তুলে বললো,

-” তোমাকে বারবার বলেছিলাম তুমি আমার সামনে আসবে না। তারপর ও কেন এসেছো আমার রুমে?”

-” উৎসের কথায় আদ্রির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।উৎস আদ্রির চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বললো,

-” এই চোখ দুটো মনে হচ্ছে আমি আগে কোথাও দেখেছি।মনে হচ্ছে যেন চোখ দুটো যেন আমাকে কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু এমনটা মনে হচ্ছে কেন? এই ঠকবাজ ,প্রতারক মেয়েকে আজ প্রথমবার দেখছি আমি। তবুও কেন মনে হচ্ছে এই মেয়েকে আমি আগে কোথাও দেখেছি।তার মানে কি? না না। হয়তো তারা জমজ বোন হবার দরুন আমার এমন টা মনে হচ্ছে। কিন্তু এই মেয়েকে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাহলে মাথার উপর উঠে নাচতে শুরু করবে।উৎসের ভাবনার মাঝে আদ্রি বললো,

-” আমি জানি আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে পারছেন না।আপনি ভাবছেন আমি জোর করে আপনার জীবনে প্রবেশ করেছি। কিন্তু আমি জানি আমি কোনো অন্যায় করি নি।উল্টো আদির ভুলের মাশুল আমাকে দিতে হচ্ছে। যেভাবেই হোক আমাদের বিয়ে হয়েছে।নিয়ম অনুযায়ী গতকাল আমাদের বাবার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু যাওয়া হয়নি।বাবা বারবার কল করে আমাদের যেতে বলেছেন। আমাদের হয়তো আপনাদের মতো এতো বড় বাড়ি, গাড়ি , টাকা পয়সা নেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমাদের বাড়িতে আপনার আদর অ্যাপয়নে বিন্দুমাত্র ত্রুটি থাকবে না।”

-” আদ্রি কথা বলার পুরোটা সময় উৎস আদ্রির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।আদ্রি কি বলেছে না বলেছে উৎসের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।আদ্রি উৎসের থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে উৎসের রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসে।আদ্রি নিচে আসার পর পর‌ই উৎসের ফোন বেজে উঠে। উৎস কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সালাম দিয়ে বললো,

-” কেমন আছো বাবা?”

-” জ্বি ভালো। কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।”

-” আমি আদ্রির বাবা বলছি।”

-“জ্বি আঙ্কেল বলুন।”

-” তোমরা কি এ বাড়িতে আসবে না বাবা ?”

-” ঠকবাজ, প্রতারকদের বাড়ির খাবার যে আমার পেটে হজম হবে না আঙ্কেল।আপনি এসে বরং আপনার মেয়েকে নিয়ে যান।আমি তার সাথে এক‌ই ছাদের তলায় থাকতে পারবো না।”

-” এসব তুমি কি বলছো বাবা? আদ্রি তোমার স্ত্রী।”

-” কিসের স্ত্রী।আমি মানি না এই বিয়ে। আপনারা সকলে মিলে ঠকিয়েছেন আমাকে।আমি কোনো দিন ও আপনাদের ক্ষমা করতে পারবো না।”

-” অন্যায় আমরা করেছি। কিন্তু আমার মেয়ের কোনো দোষ নেই।”

-” আপনার মেয়ে তো ধোঁয়া তুলসী পাতা। নির্লজ্জের মতো ছোট বোনের হবু বর কে দিয়ে করে নিলো।”

-” এখানে আমার আদ্রি মায়ের সত্যিই কোনো দোষ নেই। এমনকি আদ্রি তো এই বিয়েটা করতেই চায় নি। কিন্তু আমার স্ত্রীর লোভ আর জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে।সে ভেবেছিল বড়লোক বাড়িতে বিয়ে দিতে পারলেই হয়তো আমার মেয়েটা সুখী হতে পারবে। কিন্তু সে হয়তো এটা জানে না যে দুইজনের মধ্যে ভালোবাসা না থাকলে রাজপ্রাসাদ , টাকা পয়সা সুখ দিতে পারে না। তবে ভালোবাসা থাকলে কুঁড়ে ঘরে ও সুখে শান্তিতে বসবাস করা যায়।আদ্রি কে জোর করার পরেও যখন আদ্রি বিয়েটা করতে চায় নি , তখন আমার স্ত্রী হাতে বিষের বোতল নিয়ে বিষ খেয়ে আ’ত্ম’হ’ত্যা
করার হু’ম’কি দেয়।আদ্রি আর কোন উপায় না পেয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়।আদ্রি কে চিনতে ভুল করেছো তুমি।আদ্রি একটা খাঁটি সোনা।আমার বলে আমি একটু ওবাড়িয়ে বলছি না।এখন সবটা তোমার ইচ্ছা বাবা।তোমার যদি মন চায় তাহলে আমার মেয়েটা কে নিয়ে এসো।আর যদি না আসো তাহলে আর কিছু করার নেই বলে চোখের পানি মুছে কল কেটে দিলেন সজল খন্দকার।।”

-” আদ্রি নিচে এসে কিচেনে গিয়ে দেখলো সালমা তালুকদার আর ঝর্ণা তালুকদার দুজনে মিলে রান্না করছেন।আদ্রি কে দেখে সালমা তালুকদার বললো,

-” বর কে বলেছো বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা।”

-” হ্যাঁ মা বলেছি। কিন্তু আপনার ছেলে যাবে না বলার আগেই উৎস কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে বললো,

-” দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নাও।আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।ফিরে এসে যদি দেখি তুমি রেডি হ‌ও নি।তাহলে তোমার বাপের বাড়ি যাওয়া ক্যান্সেল।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব-০৬

0

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৬
#নুজাইফা_নূন
-” হাউ ডেয়ার ইউ! তোমার সাহস হয় কি করে আমার অনুমতি ব্যতীত আমার রুমে প্রবেশ করার?তোমার মতো ঠকবাজ, প্রতারক মেয়ের স্থান আমার মনে বা বিছানায় কোথাও হবে না। তুমি ঠকিয়েছো আমাকে।ইউ আর এ চিটার। তুমি এক্ষুনি এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাবে বলে উৎস আদ্রির হাত ধরে টানতে টানতে রুমের বাইরে বের করে দিলো।উৎস আদ্রির হাত এমন ভাবে চেপে ধরেছে যে আদ্রির হাতে থাকা কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে আদ্রির হাতে ঢুকে র’ক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু আদ্রির সেদিকে কোন খেয়াল নেই।উৎস আদ্রি কে রুমের বাইরে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে যাবে তার আগেই আদ্রি ঘোমটার আড়াল থেকেই উৎসের হাত ধরে ফেললো।আদ্রির এহেন কার্যে উৎসের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো। উৎস কিছু বলার আগেই আদ্রি বললো,

-” আপনি কিছু না জেনে শুনে আমাকে অপমান করতে পারেন না।আমি বিয়ের আগে থেকেই বারবার আপনাকে কথাটা বলতে চেয়েছি। কিন্তু আপনি শোনার প্রয়োজন মনে করেন নি।তখন যদি একবার আমার কথাটা শুনতেন।তাহলে আজকে দুই দুইটা জীবন নষ্ট হতো না।”

-” তোমার জীবন আর নষ্ট হলো কোথায় বলো তো?উল্টো তোমার তো কপাল খুলে গিয়েছে।ছোট বোনের হবু বর কে ছলে বলে কৌশলে বিয়ে করে নিলে। বড়োলোক শ্বশুর বাড়ি, হ্যান্ডসাম বর পেলে।আর কি চায় বলো?আমার তো মনে হয় তোমার চারিত্রিক কোনো সমস্যা আছে।হয়তো বিয়ের আগেই অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলে।যার জন্য তোমার বাবা মা তোমার বিয়ে দিতে পারছিলো না।তাই তো তোমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য সবাই মিলে এমন ছলনার আশ্রয় নিয়েছে ।তোমাকে এমনকি তোমার পরিবার তোমার কথা আমাদের থেকে লুকিয়ে গিয়েছে।প্রথমে ছোট বোন কে দেখিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে সময় মতো তাকে সরিয়ে দিয়েছো।আর আমাকে বিয়ের আগে এই কথাটা বলার জন্য তোমার ছটফট করাটাও তোমাদের প্ল্যানের একটা পার্ট।কারণ তোমরা খুব ভালো করে জানতে আমার তখন কিছু জানার প্রতি আগ্রহ থাকবে না।আর সবটা তোমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হলো।আমিও কতো বোকা ছিলাম।তোমাদের এই নোংরা পরিকল্পনায় আমি কতো সহজে ইনভলব হয়ে গিয়েছিলাম। সবাইকে বিশ্বাস করেছিলাম। জীবনের প্রথম বার কাউকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সেটা আসলে ভালোবাসা ছিলোই না।ছিলো তোমার মতো একটা খারাপ মেয়েকে বড়লোক ছেলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্ল্যান।”

-” আপনার ভাবনা সত্যি নয় উৎস। এরকম কিছুই হয় নি।”

-” আমি তোমার মুখ থেকে আর একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না বলে আদ্রির মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো উৎস।আদ্রির হাত থেকে তখন টপটপ করে র’ক্ত ঝরছে। কিন্তু দেহের ক্ষতের থেকে মনের ক্ষত তাকে বেশি পোড়াচ্ছে ।আদ্রি ঘোমটা সরিয়ে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে নিচে বসে পড়ে।”

__________________________________

-” জাহিদ তালুকদারের যৌথ পরিবার।মস্ত বড় ফ্লাটে দুইটা পরিবার মিলেমিশে বসবাস করে।যদিও এখন যৌথ পরিবার প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারা দুই ভাই জাহিদ তালুকদার আর জামিল তালুকদার এখনো সেই যৌথ পরিবারের ধারা অব্যাহত রেখেছে।জাহিদ তালুকদারের নিজের সন্তান বলতে উৎস একাই। যদিও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সালমা তালুকদারের মেয়ে উপমা । তবুও জাহিদ তালুকদার উপমা কে নিজের মেয়ের মতো করেই ভালোবাসে।তাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেয়।উৎস সালামা তালুকদার কে পছন্দ না করলেও উপমা কে অনেক বেশি ভালোবেসে।বোনের সকল আবদার হাসি মুখে মেনে নেয়। তালুকদার ভিলার সবচেয়ে ছোট সদস্য সাজিন তালুকদার।জামিল তালুকদার আর ঝর্ণা তালুকদারের একমাত্র সন্তান।সাজিন সবার ছোট হ‌ওয়ার বেশ আদরের।সাজিন খুবই মিশুক। খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যায়।মাত্র কয়েক ঘন্টায় আদ্রির সাথে বেশ ভাব জমেছে তার।সাজিন বায়না করে সে আদ্রির সাথে থাকবে। ঝর্ণা তালুকদার অনেক বুঝিয়ে সাজিন কে ঘুম পাড়িয়ে দেয়‌।বিয়ের জন্য সারাদিন সবার বেশ ধকল গিয়েছে। ক্লান্ত থাকার জন্য বাড়ির সব সদস্যরা নিজেদের কাজ গুছিয়ে যার যার মতো শুয়ে পড়েছে।তখনি সাজিন গুটি গুটি পায়ে উৎসের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।সাজিন উৎসের রুমের দরজায় আদ্রি কে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে তার কাছে ছুটে আসে।আদ্রি সাজিন কে দেখা মাত্রই চোখ মুছে নিয়ে বললো,

-” তুমি এখনো ঘুমাও নি কেন সাজিন?”

-” আমার ঘুম আসছে না নতুন ব‌উ।তোমার সাথে খুব গল্প করতে ইচ্ছে করছিলো।তাই তো বাবা মা ঘুমোনোর পর আমি চুপিচুপি বিছানা ছেড়ে চলে এসেছি। কিন্তু তুমি এখানে কি করছো? উৎস ভাই তোমাকে বকেছে বুঝি?”

-” না বাবু বলে আদ্রি সাজিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।তখনি সাজিন আদ্রির হাত থেকে রক্ত ঝরছে দেখে চিৎকার করে উঠে বললো,

-” তোমার হাত থেকে তো র’ক্ত বের হচ্ছে নতুন ব‌উ।আমি এক্ষুনি ডাকছি সবাইকে।”

-” ও কিছু না বাবু। এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবো।তোমার কাউকে ডাকতে হবে না। অনেক রাত হয়েছে। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো বাবু।”

-” তোমার তো কষ্ট হচ্ছে নতুন ব‌উ। তুমি আমার সাথে আমার রুমে চলো।”

-” আদ্রি না যেতে চাইলেও সাজিন আদ্রি কে জোর করে নিজের রুমে নিয়ে আসে।সে রাত আদ্রি সাজিনের সাথেই কাটিয়ে দেয়। দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের দুই টা দিন পার হয়ে যায়‌। কিন্তু আদ্রির উৎসের সাথে একেবারে জন্যেও কথা বা দেখা হয় নি।না উৎস আদ্রির মুখ দেখেছে ।আর না আদ্রি উৎসের মুখ দেখেছে।আদ্রি এই দুই দিন আদি কে বারবার ফোনে ট্রাই করেছে। কিন্তু আদি ফোন রিসিভ করে নি‌। তৃতীয় দিনে আদি নিজে থেকেই আদ্রি কে ফোন করে।আদ্রি আদির সাথে কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।আর তখনি সালমা তালুকদার এসে আদ্রির কাঁধে হাত রাখে।আদ্রি চোখের পানি মুছে পেছনে ফিরে বললো,

-“কিছু বলবেন আন্টি ?”

-” আন্টি? আমার ছেলেটা এ পর্যন্ত আমাকে মা বলে ডাকলো না। তুমি ও আমাকে আন্টি বলে ডাকছো?”

-” কোন সম্পর্কের ভিত্তিতে মা ডাকবো? আপনার ছেলে তো আমাকে তার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি। বিয়ের আসরে আমাকে ফেলে চলে এসেছে।একটা বার জানতেও চায় নি আমি কেমন আছি? কিভাবে আছি?আমি শুধু মাত্র তার কন্ঠস্বর শুনেছি। মানুষ টাকে এ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠে নি।হয়তো এই বাড়িতে ও আমার ঠাঁই হবে না।”

-” বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছে। তুমি এখন এ বাড়ির ব‌উ।এ বাড়িতে আমার যতোটুকু অধিকার রয়েছে।তোমার ও ঠিক ততোটাই অধিকার রয়েছে। তুমি তোমার অধিকার আদায় করে নিবে।যেমন টা আমি নিয়েছি।তখন আমার পাশে আমার শ্বাশুড়ি আম্মা ছিলো না। কিন্তু আমি তোমার পাশে আছি। তুমি তোমার স্বামীর ভালোবাসা আদায় করে নিবে।সে‌ বিয়েটা মানে না বললেই তো আর হয়ে যাবে না।”

-” জোর করে সব পাওয়া গেলেও ভালোবাসা পাওয়া যায় না মা।”

-” জোর করতে হবে না। তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার স্বামীর ভালোবাসা আদায় করবে।স্বামীর থেকে দূরে দূরে থাকলে কখনোই তোমাদের সম্পর্ক আগাবে না।সে যতো তোমাকে দূরে সরিয়ে দিবে তুমি ততো তাকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিবে।তোমার বাবা কল করেছিলেন। আমাকে বারবার অনুরোধ করেছেন ,আমি যেন তোমাদের ঐ বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।উৎস নিজের রুমে আছে। তুমি এক্ষুনি গিয়ে তার সাথে কথা বলো।”

-” তার কথা শোনা মাত্রই আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে।আমি তার মুখোমুখি হতে পারবো না মা।”

-” তোমার বাবা তোমাদের জন্য অধীর আগ্রহে বসে রয়েছে।এখন তুমি দেখো কি করবে বলে সালমা তালুকদার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তিনি যাওয়ার পর আদ্রি রুম থেকে বেরিয়ে উৎসের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।তখনি ঝর্ণা তালুকদার হাতে কফি নিয়ে উপরে আসে।আদ্রি কে দেখে তিনি আদ্রির হাতে কফির কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললো,

-” এটা উৎসের রুমে দিয়ে আসো নতুন ব‌উ।আমার আবার সাজিন কে রেডি করে দিতে হবে। অনেক টা বেলা হয়ে গিয়েছে।”

-” ঠিক আছে কাকিমা বলে আদ্রি গুটি গুটি পায়ে উৎসের রুমে প্রবেশ করে।উৎস তখন ল্যাবটপ নিয়ে কাজ করছিলো।আদ্রি রুমের মধ্যে ঢুকে প্রথমবারের মতো নিজের বর কে দেখে চমকে উঠে। যার দরুন আদ্রির হাত থেকে কফির মগ নিচে পড়ে যায়।।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব-০৫

0

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৫
#নুজাইফা_নূন
-“কবুল বলার ঠিক পরের মুহূর্তেই বর বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায়। মূহুর্তের মধ্যেই বিয়ে বাড়িতে শোরগোল পড়ে গেলো।আদ্রির মা শায়লা খন্দকার মেহমানদের সামনে আদ্রির হাত ধরে রুমের মধ্যে টেনে নিয়ে এসে একপ্রকার বিছানায় ছুড়ে মারলো।আদ্রি টলমলে চোখে শায়লা খন্দকারের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলো।সে যেন নিজের মা কে চিনতেই পারছে না।আদ্রি বিছানা ছেড়ে উঠে শায়লা খন্দকারের দিকে এগিয়ে এসে তার হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,

-” সরি মা।আমি তোমার কথা রাখতে পারি নি।বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন। জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।আমি চাই নি সেই পবিত্র বন্ধন মিথ্যা দিয়ে তৈরি হোক। তাছাড়া সত্য কখনো চাপা থাকে না মা।তারা আজ নয় তো কাল জানতো আমি আদিতা না‌।তখন সমস্যা আরো বাড়তো।তার থেকে এটাই ভালো হয়েছে , আমি সত্য টা বলে দিয়েছি। তুমি রাগ করো না মা।আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। কিছু একটা বলো মা।এভাবে চুপ করে থেকো না।”

-” আদ্রির কথায় শায়লা খন্দকার আদ্রির হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললো,কিসের মা? আমি কারো মা না।আর না কেউ আমার মেয়ে।”

-” এসব তুমি কি বলছো মা?”

-” বুঝতে পারছিস না কি বলছি? আমি যদি তোর মা ই হতাম , তাহলে পারতিস এইভাবে সবার সামনে আমাকে অপমান অপদস্থ করতে?কি দরকার ছিলো সবাইকে বলার যে তুই বিয়ের পাত্রী না। আমাদের আত্মীয় স্বজনেরা’ই তোকে আর আদি কে গুলিয়ে ফেলে।সেখানে তুই না বললে তারা কখনো জানতে পারতো না তুই আদ্রি নাকি আদি? দিব্যি বড়লোক বাড়িতে রাজরানীর মতো পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারতি।বর , শ্বশুর শাশুড়ি সবার আদর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে থাকতে পারতি। কিন্তু তুই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলি।মহৎ সাজতে গিয়েছিলি তাই না? এখন পুড়লো তো কপাল?বর বিয়ের আসর ছেড়ে চলে গেলো। শ্বশুর শ্বাশুড়ির ও তোর প্রতি কোনো আগ্ৰহ নেই।তোকে আমি একটা কথা বলে রাখছি আদ্রি।তোর শ্বশুর বাড়ি তে তোর যদি কোন জায়গা না হয়।তাহলে আমার বাড়িতে ও তোর কোনো জায়গা হবে না।

-“শায়লা খন্দকারের কথায় আদ্রি ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।সে বিয়েটা না করতে চাইলেও শায়লা খন্দকার এক প্রকার জোর করেই আদ্রি কে বিয়ের সাজে সাজিয়ে দিয়ে বিয়ের আসরে নিয়ে যায়।আদ্রি উৎস দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়। ঘোমটার আড়ালে আদ্রি চোখের পানি ফেলতে থাকে।উৎস সেটা লক্ষ্য করে তার রুমাল এগিয়ে দেয় আদ্রির দিকে।আদ্রি উৎসের হাত থেকে রুমাল নেওয়ার সময় উৎসের হাতের স্পর্শ পাওয়া মাত্রই আদ্রি নিজেকে গুটিয়ে নেয়।আদ্রি উৎস কে সত্য টা বলার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকে‌। কিন্তু সে সুযোগ হয়ে উঠে না।এক পর্যায়ে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।বিয়ে শেষ হলে উৎস আদ্রির হাতের উপর নিজের হাত রাখে।উৎসের স্পর্শে আদ্রির সর্বাঙ্গ শিরশির করে উঠে‌।আদ্রি নিজর শাড়ি মুঠোয় নিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো,

-” আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।আমি বিয়ের আগে থেকেই কথাটা আপনাকে বলতে চাচ্ছি। কিন্তু বলতে পারি নি।”

-“আদ্রির কথায় উৎস মজার ছলে বললো, এখনি তো নয়।আসুক সময়।বলবো কথা বাসর ঘরে।এখনি যদি সব কথা বলে শেষ করে দাও।তাহলে বাসর রাত টা মাটি হয়ে যাবে আমাদের।সো তোমার যা বলার সোজা বাসর ঘরে বলবে।”

-” আদ্রি উৎসের কথায় কান না দিয়ে বলে উঠলো,
আমি আপনার পছন্দ করা পাত্রী ন‌ই ।আমি আদ্রিকা ।আদিতার বড় বোন।আদি আপনাকে বিয়ে করবে না বলে সকালে পালিয়ে গিয়েছে। বাবা মা নিরুপায় হয়ে আমাকে আদির জায়গায় বসিয়ে দিয়েছে। আমি আর আদ্রি টুইন।আমি চাইলেই ব্যাপার টা হাইড করতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই নি মিথ্যা দিয়ে বিয়ের মতো একটা পবিত্র সম্পর্ক তৈরি হোক।কথাটা শোনা মাত্রই উৎস উৎস গলা থেকে বিয়ের মালা, মাথা থেকে পাগড়ি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায়।উৎস যেতেই মেহমানরা আদ্রি কে ঠকবাজ, প্রতারক বলে অপমান করতে থাকে।যা দেখে শায়লা খন্দকার আদ্রি কে‌ রুমের মধ্যে নিয়ে আসে।আদ্রি ভেবেছিলো হয়তো শায়লা খন্দকার তাকে সান্ত্বনা দিবে। কিন্তু তিনি আদ্রির ধারণা কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আদ্রি কে গালমন্দ করতে থাকে।আদ্রি ফ্লোরে বসে কান্না করতে থাকে এমন সময় আদ্রির বাবা সজল খন্দকার আদ্রি কে ফ্লোর থেকে তুলে বুকে টেনে নিয়ে বললো,

-” তোর মা আর বোনের লোভ তোর জীবন টা নষ্ট করে দিলো রে মা।পারলে আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস।”

-” এভাবে বলছো কেন বাবা?জন্ম , মৃত্যু, বিয়ে আল্লাহর হাতে। আল্লাহ তায়ালা আমার কপালে যা রেখেছে তাই হবে। সেসব নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।”

-“চিন্তা করো না বললেই কি আমি চিন্তা মুক্ত হতে পারবো?আমি যে বাবা।প্রত্যকটা বাবা মা চায় তার মেয়েটা ভালো থাকুক,সুখে থাকুক।আমি ও চাই তুই ভালো থাক।যা হবার হয়েছে। তুই একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিস।”

-” আদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই জাহিদ তালুকদারের স্ত্রী সালমা তালুকদার এসে বললো, সন্ধ্যা প্রায় গড়িয়ে যাচ্ছে।আমাদের যেতে হবে বেয়াইসাহেব ।”

-” আপনাদের কে বলার মতো কোনো ভাষা আমার নেই।তবে একটা কথায় বললো, আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবেন।বড্ড ভালো আমার মেয়েটা।”

-“আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো।আপনি আদ্রি কে নিয়ে আসুন।”

-” বর ছাড়া একাই শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় আদ্রি। গাড়ি তে উঠে বুক ভারি হয়ে আসে তার। অঝোরে কান্না করতে থাকে সে।তার কান্না দেখে সাত বছরের একটা বাচ্চা ছেলে আদ্রির দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো,

-” নতুন ব‌উ তুমি কান্না করছো কেন?উৎস ভাইয়া তোমাকে বকেছে বুঝি?জানো‌ উৎস ভাইয়া খুব খারাপ।আমাকে ও বকা দেয়।আবার বকা দেওয়ার পর চকলেট ও দেয়।আদর দেয়। তুমি দেখো তোমাকে ও চকলেট দিবে, আদর দিবে।বাচ্চাটার কথা শুনে কান্না বন্ধ হয়ে যায় আদ্রির।আদ্রি বাচ্চা টাকে কোলের উপর বসিয়ে গাল টেনে দিয়ে বললো,

-” তোমার নাম কি বাবু?”

-” আমি বাবু না।আমি সাজিন।”

-” ভারী মিষ্টি নাম তো তোমার।”

-” তুমি ও অনেক মিষ্টি দেখতে।”

-” সাজিনের এমন মিষ্টি মিষ্টি কথায় মন হালকা হয়ে যায় আদ্রির। সাজিনের সাথে গল্প করতে করতে‌‌ আদ্রি কখন যে তালুকদার ভিলার সামনে চলে এসেছে টের পায় না।সে গাড়ি থেকে নেমে সাজিনের হাত ধরে তালুকদার ভিলার ভেতরে প্রবেশ করে।”

_________________________

-” ফুলে ফুলে সজ্জিত বিছানায় এক হাত ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে আদ্রি।বুকের ভেতর যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে।উৎস তাকে নিজের রুমে, নিজের বিছানায় দেখে কেমন রিয়েক্ট করবে ভাবতেই গায়ের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সৃষ্টি হচ্ছে।আদ্রি বারবার শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিচ্ছে। বিছানায় স্থির হয়ে বসে থাকতে না পেরে এক পর্যায়ে আদ্রি বিছানা থেকে নেমে রুমের মধ্যে পায়চারি করতে শুরু করে।আর তখনি খট খট আওয়াজে দরজা খুলে যায়।আদ্রি উৎসের দিকে এক নজর তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ ঘোমটার আড়ালে চলে যায়।উৎস রুমের দরজা লাগিয়ে পেছনে ফিরতেই আদ্রি উৎসের দিকে ঝুঁকে সালাম করতে যায় । কিন্তু আদ্রি উৎসের পায়ে হাত দেওয়ার আগেই উৎস আদ্রির হাত ধরে ফেলে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব-০৪

0

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৪
#নুজাইফা_নূন

-” আপনি সিগারেট খান মিস্টার হ্যান্ডসাম?”

-” অদিতার প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল উৎস। উৎস মনে মনে বললো,মেয়ে মানুষ গিরগিটির থেকে ও অতি দ্রুত রং বদলায়। আমার সেদিনের দেখা সন্ধ্যে কন্যা আর এই মেয়েটার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে। সন্ধ্যে কন্যা এতো দ্রুত কিভাবে নিজেকে পরিবর্তন করে নিলো?উৎসের থেকে রেসপন্স না পেয়ে আদিতা আবারো বললো,

-” আপনাকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি মিস্টার হ্যান্ডসাম।”

-” না। সিগারেট খাই না।”

-” কেন খান না?”

-” সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই।”

-” সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু চুমু নয়।বিয়ের পর যদি কখনো আপনার সিগারেট খেতে মন চায়, আপনি সিগারেট না খেয়ে আমার ঠোঁটে চুমু খাবেন।তাহলে দেখবেন আপনার সিগারেটের নেশা কেটে যাবে।”

-” আদিতার এমন লাগামহীন কথায় স্থির থাকতে পারলো না উৎস।উৎস বললো ,একটা কথা বলুন তো।আপনি কি সত্যিই সেদিন সন্ধ্যে বেলায় দেখা আমার সন্ধ্যে কন্যা? সেদিনের আপনি আর আজকের আপনির মধ্যে আমি কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না।আপনি সত্যিই আমার সন্ধ্যে কন্যা তো?”

-” উৎসের কথায় আদিতা মনে মনে বললো,
ওহ্ ! তার মানে এই ব্যাপার । এই হ্যান্ডসাম তাহলে আমাকে নয় বরং আপুকে পছন্দ করেছে।ভাবছে সেদিন সন্ধ্যে বেলায় আমাকে দেখেছে। কিন্তু আমি যে তাকে প্রথম দেখছি এটা বলা যাবে না।তাহলে ছেলেটা বুঝে যাবে আমি তার সন্ধ্যে কন্যা না।আমি কিছুতেই এই হট, হ্যান্ডসাম , বড়লোক ছেলে কে হাতছাড়া করতে পারবো না বলে আদিতা উৎসের মুখে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,

-” আপনি আমার চোখ দেখেও বুঝতে পারছেন না মিস্টার হ্যান্ডসাম?আমিই আপনার সন্ধ্যে কন্যা। হয়তো আমার কথাবার্তায় আপনি অবাক হয়েছেন। যে মানুষ টার সাথে সারাজীবন কাটাতে হবে। তার সাথে বিয়ের আগে থেকে যতো ফ্রি হতে পারবো।বিয়ের পরে ঠিক ততো তাড়াতাড়ি সবটা মানিয়ে নিতে পারবো।আমি আপনার স্ত্রী হবার আগে আপনার ভালো বন্ধু হতে চাই মিস্টার হ্যান্ডসাম।উইল ইউ বি মাই বেস্ট ফ্রেন্ড?”

-” উৎস নিজের হাত টা আদিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো , হ্যাঁ আমি আমার সন্ধ্যে কন্যার একজন ভালো বন্ধু হতে চাই।”

-” সেদিন‌ ই উৎস আর আদিতার বিয়ের দিনক্ষণ পাকা হয়ে যায়।আদিতা উৎস দুজনেই রাতভর ফোন আলাপ , দেখা সাক্ষাৎ করতে থাকে।আদিতা সেই সুযোগে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের দিন উপস্থিত হয়।সজল খন্দকার তার সামর্থ্য অনুযায়ী বিয়ের আয়োজন করেছেন।যেনো কোথাও কোন ক্রুটি না থাকে।তার এতো ব্যবস্তার মধ্যে তিনি আদ্রির কথা ভুলে যান নি।তিনি আদ্রির রুমে এসে দেখে আদ্রি একটা সাদামাটা থ্রি পিস পরে তার লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে।তিনি এসে আদ্রি কাঁধে হাত দিতেই আদ্রি চমকে উঠে বললো,

-” কে??”

-” আমি মা।”

-” সজল খন্দকারের কথা শুনে আদ্রি পেছনে ফিরে বললো, ঐ দিকে সব ঠিকঠাক আছে তো বাবা?”

-” হ্যাঁ মা।আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি।জামাই বাবাজি গতরাতে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো।আমার হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দিয়েছিলো।আমি রাখি নি।আমি নিজে যতটুকু পেরেছি করেছি।তবে তোর জন্য আমার খারাপ লাগছে রে মা।বড় মেয়ে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি। মানুষ তোকে অনেক কথা শোনাবে রে মা।”

-” এসব নিয়ে তুমি ভেবো না বাবা। আমি চাই আমার আদি ভালো থাকুক।আদি সবসময় আফসোস করতো সে কেন বড়লোকের ঘরে জন্ম নিলো না।কেন এমন একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হতে হলো তাকে? এবারে আদির সেই চাওয়া টা পূরণ হবে বাবা। আমার আদি সুখী হলে তাতেই আমার সুখ। তুমি যাও বাবা। ”

-” তুই আমার মেয়ে এটা ভাবতেই গর্বে আমার বুকটা ভরে উঠে।আমার মেয়ে একটা রত্ম ।এমন রত্ম যে পাবে তার জীবন সুখে শান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।আমি দোয়া করি মা তুই জীবনে অনেক অনেক সুখী হ। কোনো দুঃখ যেন তোকে স্পর্শ করতে না পারে।আদির বিয়েটা ভালোই ভালোই মিটে যাক। এরপর একটা ভালো রাজপুত্রের হাতে আমি আমার রত্ম তুলে দিবো।আদ্রি সজল খন্দকারের কথায় তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-” আমি চলে গেলে তোমাদের কে দেখবে বলো তো?আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।আমি সারাজীবন তোমাদের সাথে থাকতে চাই বাবা।”

-” মেয়েরা চাইলেও সারাজীবন বাবার বাড়িতে থাকতে পারে না রে মা।একদিন না একদিন বাবা মায়ের সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হয়।”

-” আদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাইরে থেকে বর এসেছে বর এসেছে চিৎকার শুনতে পায়।আদ্রি তৎক্ষণাৎ সজল খন্দকারের বুক থেকে মাথা তুলে বললো, তুমি যাও বাবা। বরপক্ষ চলে এসেছে।”

-” নিজের খেয়াল রাখিস মা বলে সজল খন্দকার আদ্রির রুম থেকে বেরিয়ে আসার আগেই শায়লা খন্দকার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।তাকে দেখতে কেমন বিধ্বস্ত লাগছে।ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘাম সৃষ্টি হয়েছে।তার এমন অস্থিরতা দেখে সজল খন্দকার এগিয়ে এসে বললো,

-” তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন শায়লা? সব ঠিক আছে তো?”

-” কিচ্ছু ঠিক নেই।স’র্ব’না’শ হয়ে গেছে। ”

-” এতো ভনিতা না করে বলবে তো কি হয়েছে।”

-” আদি সেই সকালে পার্লারে গিয়েছে । অথচ দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে , কিন্তু আসছে না দেখে আমি আদির রুমে গিয়েছিলাম।আদি আমাদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে। কথাটা শোনা মাত্রই সজল খন্দকার মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়লো।আদ্রি এগিয়ে এসে তাকে নিচ থেকে তুলে বিছানায় বসিয়ে পানি খাইয়ে দিয়ে শায়লা খন্দকারের দিকে এগিয়ে এসে বললো, আদি কোথায় গিয়েছে কিছু বলেছে?আদি তো বলছিলো সে উৎস কে ভালোবাসে।তাহলে আদি কেন বিয়ে আসর ছেড়ে চলে গেল?”

-” শায়লা আদ্রির হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বললো, তুই নিজেই পড়ে দেখ।আদ্রি চিরকুট খানা নিয়ে পড়তে শুরু করলো,

-” আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা মা।আমি কয়েক দিন যাবত উৎসের সাথে মিশে বুঝতে পেরেছি আমি যেমন ছেলে চাই।উৎস তার বিপরীত। উৎস ব্যাকডেটেড মেয়ে পছন্দ করে।উৎস কে বিয়ে করা মানেই আমার পায়ে বেড়ি পরে যাওয়া। খাঁচায় বন্দী পাখি হয়ে যাওয়া।আমি উৎসের চাওয়া অনুযায়ী বোরকা, হিজাব পরে নিজেকে মুড়ে রাখতে পারবো না।আমি লাইফ টাকে ইনজয় করতে চাই। তাছাড়া উৎসের নিজের বলতে কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স নেই।আমি উৎসের থেকে ও বড়লোক ছেলে ডিজার্ভ করি। আমি এই বিয়ে করবো না বলে অনেক দূরে চলে এসেছি। আমাকে খোঁজার চেষ্টা করো না। অবশ্য চেষ্টা করলেও লাভ হবে না।কারণ যে নিজে থেকে হারিয়ে যায়, তাকে হাজার খোঁজাখোঁজি করলেও খুঁজে পাওয়া যায় না।ভালো থেকো তোমরা।
‌ ইতি বাবার অপছন্দের মেয়ে, আদিতা।।

-” সবটা শুনে সজল খন্দকার বললো, এখন কি হবে শায়লা? আমার মানসম্মান কিছুই রাখলো না তোমার আদরের মেয়ে।সে বিয়ে করবে না আগেই বলতে পারতো। বিয়ের আয়োজন করতে গিয়ে কতগুলো টাকার দেনা হতে হয়েছে।সেসব না হয় বাদ ই দিলাম। বরপক্ষ একবার যদি জানতে পারে বিয়ের কনে পালিয়েছে।সবাই আমাদের মুখে থুথু দিবে‌।আমার তো ম’রা ছাড়া কোনো গতি থাকবে না শায়লা।”

-” উপায় একটা আছে বলে শায়লা খন্দকার আদ্রির দিকে এগিয়ে এসে আদ্রির হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,

-” একমাত্র তুই ই পারিস আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব-০৩

0

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৩ [ এলার্ট]
#নুজাইফা_নূন

-” বিয়ের আগেই ইন্টিমেন্ট হ‌ওয়া টা ঠিক নয় সৌখিন।আমার খুব ভয় করছে‌।যদি বাবা ,মা এই ব্যাপারে জানতে পারে‌।তাহলে অনেক বড় বিপদ হতে পারে।”

-” কাম অন আদিতা।এটা আধুনিক যুগ।অথচ এখনো তুমি সেই ব্যাকডেটেড ই থেকে গেলে। তাছাড়া আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড । কিছু দিন পরেই আমরা বিয়ে করবো।তাহলে তোমার সমস্যা কোথায় আদিতা? নাকি তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না? আমাকে ভালোবাসো না? সৌখিন কথাটা বলা মাত্রই আদিতা সৌখিনের ঠোঁটের উপর একটা আঙ্গুল রেখে বললো,

-” তোমাকে আমি যতোটা ভালোবাসি ততোটা ভালো আমি আমার নিজেকেও বাসি নি সৌখিন।তোমার জন্য‌ই আমি নতুন একটা জীবন পেয়েছি।মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে শিখেছি। কিন্তু এই ব্যাপার টা আমার ভালো লাগছে না সৌখিন। কোথাও না কোথাও আমার বিবেকে বাঁধা দিচ্ছে।চলো না জান আমরা আজকেই বিয়ে করে ফেলি। এরপর তোমার আমার মাঝে আর কোনো দেয়াল থাকবে না।”

-” আর ইউ ক্রেজি আদিতা? তুমি খুব ভালো করেই জানো আমার পাপা একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি।তিনি তার একমাত্র ছেলের বিয়ে কখনোই যেনো তেনো ভাবে দিবেন না। আমাদের বিয়ে অনেক ধুমধাম করে করে।সারা শহরের মানুষ জানবে সৌখিন মির্জার বিয়ে হচ্ছে।আমার পাপা আমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে।আমি বিয়ের জন্য আমার পাপা কে খুব সহজেই ম্যানেজ করে নিতে পারবো‌। কিন্তু সমস্যা টা তো তোমার হবে। তুমি না বলেছিলে তোমার বাবা একজন নামকরা বিজনেস ম্যান।তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন? দেশে ফিরতে একটু দেরি হবে?”

-” আদিতা আমতা আমতা করে বললো, হ্যাঁ জান।বাবা একটা কাজে আটকে পড়ে গিয়েছেন।”

-” আদিতা কথাটা বলা মাত্রই সৌখিন আদিতার কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,

-” তোমার বাবা দেশে ফেরা মাত্র‌ই আমরা বিয়ে করে নিবো।এখন আর কোনো কথা নয়।জাস্ট ফিল দিস মোমেন্ট বলে সৌখিন আদিতা কে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে আদিতার অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দেয়।আদিতার ও তার ডাকে সাড়া দেয়।ধীরে ধীরে অনাবৃত হয় দুটি দেহ।দুজনে মেতে উঠে এক আদিম খেলায়।বদ্ধ রুমের চার দেয়াল সাক্ষী হয় আদিতার আর্তনাদের।”

___________________

-” সাদা বিছানায় উপর দুটো নিস্তেজ ,অনাবৃত দেহ পড়ে রয়েছে।সাদা বিছানায় র’ক্তে’র লাল লাল ছোপ ফুটে উঠেছে।আদিতা বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়ে ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো। তৎক্ষণাৎ তার ফোন বেজে উঠলো‌।আদিতা বেড শিট গায়ে জড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে ফোনের স্ক্রিনে মা নাম টা জ্বলজ্বল করতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।আদিতা ফোন রিসিভ করবে কি না ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেলো।আদিতা এতে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আদিতা ফোন রেখে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পুনরায় ফোন বেজে উঠলো।আদিতা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে শায়লা খন্দকার বললো,

-” তুই কেমন আছিস মা?”

-” আমি কেমন আছি সেটা তোমার না জানলেও চলবে মা‌। তুমি কেন ফোন দিয়েছো সেটা বলো মা?”

-” তোর কপাল খুলে গেছে রে মা। অনেক বড় পরিবার থেকে তোর জন্য বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে।উৎস গ্ৰুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর কর্ণধার জাহিদ তালুকদারের একমাত্র ছেলে উৎস তালুকদার স্বয়ং নিজে তোকে পছন্দ করে আমাদের বাড়িতে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে।ছেলে দেখতে একদম নায়কের মতো।আমি নিজেই তার থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না। তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আয় মা।সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। সেরকম হলে তারা আজকেই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে যাবে।”

-“ঠিক আছে মা ।আসছি আমি। অতঃপর আদি ফোন রেখে দিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা সৌখিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

-” এজন্যই ফর্সা ছেলেদের আমার পছন্দ হয় না।ফর্সা ছেলেদের চেহারার মধ্যে কেমন একটা বলদা বলদা ভাব লুকিয়ে থাকে।বলদা ছেলেটা বুঝতে ও পারলো না তাকে কাছে পাওয়ার প্ল্যান টা এই আদিতার করা।সে বুঝতেই পারে নি আমি কখন ছলে বলে কৌশলে তার একাউন্ট থেকে আমার একাউন্টে পঞ্চাশ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে দিয়েছি।এখন তোকে আমার না হলেও চলবে বলে আদিতা সৌখিনের শরীরে‌ একটা ইনজেকশন পুশ করে দিয়ে বললো, টাটা, খতম, গুড বাই।”

_________________

-” তোমার মাথা ঠিক আছে শায়লা? এসব তুমি কি বলছো? বড় মেয়ে রেখে ছোট মেয়ে বিয়ে দেওয়া টা আমাদের সমাজ ভালো চোখে দেখে না।সবাই বলবে বড় মেয়ের নিশ্চয় কোনো সমস্যা আছে।তাই তার বিয়ে হচ্ছে না। অথচ আমার মেয়েটা খাঁটি সোনা। চাঁদের কলঙ্ক থাকলেও আমার মেয়ের কোনো কলঙ্ক নেই।”

-” আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।বর্তমানে যৌতুক ছাড়া মেয়ে বিয়ে দেওয়া খুব‌ই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।দুইটা মেয়েকে বিয়ে দিতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন।সেখানে আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি।তারা শুধু মাত্র আদি কে চায়। এছাড়া তারা আর কিছু‌ই নিবে না আমাদের থেকে। তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো।এমন সুযোগ বারবার আসবে না। অনেক বড় লোক এনারা। আমাদের মেয়ে তাদের বাড়িতে রাজরানীর মতো থাকবে।”

-” এতো লোভ ভালো না শায়লা।লোভ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।”

-” মেয়ের সুখের জন্য না হয় একটু লোভী হলাম।আদি কে ফোন দিয়েছিলাম।আদি এক্ষুনি চলে আসবে। তুমি বরং মেহমানদের কাছে যাও‌।দেখ তাদের কিছু লাগবে কি না?”

-” ঠিক আছে যাচ্ছি। কিন্তু আদ্রি কোথায়?”

-” তুমি আদ্রি কে চিনো না?বাড়িতে অপরিচিত কেউ আসলে আদ্রি কে কখনো তাদের সামনে যেতে দেখেছো? আদ্রি সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখতে পছন্দ করে।আমি ও আদ্রির ব্যাপারে কিছু বলি নি তাদের কে।এক বার ভালোই ভালোই বিয়েটা মিটে যাক। তারপর আদ্রির ব্যাপারে সবাইকে জানাবো। ”

__________________________

-” ড্রয়িং রুমে উৎস সহ উৎসের গোটা পরিবারের সদস্যরা বসে রয়েছে।এর‌ই মধ্যে আদি সেখানে উপস্থিত হয়।তার পরণে রয়েছে স্লিভলেস ব্লাউজের সাথে পাতলা ফিনফিনে একটা শাড়ি।তাকে এর রুপে দেখে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়।উৎস ও অনেক অবাক হয়ে যায়।সে ভেবেছিলো তার সন্ধ্যে কন্যা হয়তো লজ্জাবতী পাতার ন্যায় হবে।যাকে ছুঁয়ে দিতেই লজ্জায় একদম নুয়ে পড়বে। কিন্ত তার সন্ধ্যে কন্যা কে এমন খোলামেলা পোশাকে দেখবে এমনটা আশা করে নি উৎস।উৎস ভাবলো সে একবার আদিতার সাথে নিজে কথা বলবে। কিন্তু কিভাবে আদিতার সাথে দেখা করার কথাটা তুলবে বুঝতে পারছিলো না।তাকে হাঁসফাঁস করতে দেখে উৎসের দাদু বললো, আমাদের যা জানার জেনে নিয়েছি।আমার মনে হয় যারা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে। তাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলা উচিত। দাদুভাই তুমি বরং আদি কে নিয়ে ছাদে যাও। নিজেদের মধ্যে কথা বলে নাও।উৎস যেন এই কথাটার অপেক্ষায় ছিলো। উৎস সাথে সাথেই বললো ঠিক আছে দাদু।যাচ্ছি আমরা।”

-” ছাদের রেলিং ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে আদিতা আর উৎস।কারো মুখে কোনো কথা নেই। নিরবতা ভেঙ্গে আদিতা বললো,

-” আপনি অনেক হট এন্ড কিউট দেখতে।শ্যাম বর্ণের ছেলে আমার ভাল্লাগে।আপনি একদম পারফেক্ট আমার জন্য।”

-” আদিতার কথায় উৎস সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, কিছুদিন আগে যেই মেয়ের চোখে আমি লজ্জা, ভয় দেখেছিলাম ।মাত্র কয়েকটা দিনে সেই মেয়েটা এতোটা চেঞ্জ হয়ে গেলো কিভাবে?নাকি আমার কোথাও ভুল হচ্ছে।এটা কি সত্যিই আমার সন্ধ্যে কন্যা ? নাকি অন্য‌ কেউ??”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব-০২

0

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০২
#নুজাইফা_নূন
-” আহ্! ছাড় তো আদি। কেউ দেখলে খারাপ কিছু মিন করবে।প্লিজ ছাড়।বিরক্ত লাগছে আমার।”

-” না ছাড়বো না বলে আদি আদ্রি কে আরো শক্ত জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বললো,

-” আই লাভ ইউ মাই ডেয়ার সুইট সিস্টার।ইউ আর সো সুইট।আর আজ আমি তোর মতো করেই বোরকা হিজাব পরে চোখে কাজল দিয়ে সেজেছি। তুই সবসময় আমাকে বলিস আমি যেন শার্ট প্যান্ট না পরে বোরকা হিজাব পরি।আজ তোর ইচ্ছে পূরণ করেছি আমি আপু।তোর মতোই কালো বোরকা পরেছি ।চোখে কাজল দিয়েছি।অথচ তুই আমার দিকে ফিরেও তাকিয়ে দেখেছিস না আপু।”

-“আদির কথায় আদ্রি বিরক্তি নিয়ে নিজের থেকে আদি কে ছাড়িয়ে দিয়ে বললো, এতো ভনিতা না করে বল কতো টাকা চায়?”

-” কথাটা শোনা মাত্রই আদি আদ্রির গালে পরপর দুই টা চুমু দিয়ে বললো, এজন্যই তোকে আমি এতো ভালোবাসি আপু। তুই আমার মন পড়তে পারিস।আমার না বলা কথাগুলো খুব সহজেই বুঝে যাস।”

-” কারণ তোর সাথে যে আমার টাকার সম্পর্ক আদি। তুই কখনো টাকার কথা ছাড়া আমার সাথে অন্য কোনো কথা বলেছিস আদি? কখনো জানতে চেয়েছিস আমি কেমন আছি?ক্লাস শেষ করে এসে পরপর তিনটা টিউশনি করাতে আমার কষ্ট হয় কিনা?জানতে চাস নি।আসলে জানার প্রয়োজন মনে করিস নি।আমি নাতাশা কে পড়াচ্ছিলাম । সাজেদা খালা যখনি নাতাশার রুমে গিয়ে বলেছে আদিতা নামের কেউ একজন তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে‌।তখনি আমি বুঝতে পেরেছি তোর টাকার প্রয়োজন।কতো টাকা লাগবে বল?”

-” পাঁচ হাজার আপু।”

-” পাঁচ হাজার? এতো টাকা দিয়ে তুই কি করবি?”

-” আমারা ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই মিলে একটা ট্যুরে যাবো আপু।তার জন‌্য‌ই টাকার প্রয়োজন।যদিও পাঁচ হাজার টাকা খুব‌ই কম হয়ে যাবে।বাট আই উইল ম্যানেজ।”

-” চলতি মাসের ১ তারিখে তোকে আমি পনেরো টাকা দিয়েছি।এখনো এ মাস শেষ হয় নি।এর‌ই মধ্যে তোর দশ হাজার টাকা শেষ হয়ে গেলো?”

-” তুই তো হোস্টেলে থাকিস না। এজন্য হোস্টেলের খরচা সম্পর্কে তোর কোনো ধারণা নেই। হোস্টেলে থাকা, খাওয়া,পড়াশোনা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়।তুই দিবি কিনা তাই বল?”

-“আমার তিনটা টিউশনি থেকে মাসে পনেরো হাজার টাকা আর্ন হয়। যার সম্পূর্ণ টাকা আমি তোর হাতে তুলে দেই। কিন্তু বিশ তারিখে বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী। ভেবেছিলাম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে বাবা মায়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করবো ।তাই পনেরো হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম।আমার কাছে টাকা বলতে সেই পাঁচ হাজার টাকা আছে।এখন তোকে যদি সেই টাকা টা দিয়ে দেই ।তাহলে বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী তে তাদের কিছু দিতে পারবো না।”

-” তার মানে তুই দিবি না টাকা? ওকে ফাইন আমি বাবার থেকে টাকা চেয়ে নিবো।”

-” প্লিজ আদি‌ এমনটা করিস না বোন। বাবার কাছে ট্যুরে যাওয়ার জন্য টাকা চাস না। তুই তো সবটা জানিস।একটা ছাদের ঘর তুলতে গিয়ে আমাদের কতো টাকা দেনা হয়ে গিয়েছে।মাস শেষে বাবার বেতনের প্রায় অর্ধেক টাকা পাওনাদারদের কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। এমতাবস্থায় তুই যদি টাকা চাস‌।বাবা কোথা থেকে তোকে টাকা দিবে বল তো?তার থেকে তুই বরং ট্যুরে যাওয়া ক্যান্সেল করে দে বোন। আমাদের পরীক্ষা শেষ হোক। তারপর আমরা সবাই মিলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ঘুরে আসবো। তুই একবার বাবার কথাটা বোঝার চেষ্টা কর।”

-” আমি বুঝতে চাই না আপু।বাবা যদি আমার ভরণপোষণ না ই দিতে পারে।তাহলে ছোটবেলায় আমাকে গলা টিপে মে’রে ফেলবো না কেন?আর র‌ইলো ট্যুরে যাওয়ার কথা। সেখানে তো আমি যাবোই।আমি তোর মতো খাঁচায় বন্দী হয়ে বাঁচতে চাই না।আমি মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে চাই। এবং আমি সেটাই করবো বলে আদি চৌধুরী ভিলা থেকে বেরিয়ে গেলো।।”

____________________________

-” উৎস গ্ৰুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর কর্ণধার জাহিদ তালুকদারের একমাত্র ছেলে উৎস তালুকদার। পাঁচ বছর আগে উৎস তালুকদারের মা মালিহা তালুকদার একটা এক্সিডেন্টে মা’রা যান।তিনি মা’রা যাওয়ার পর জাহিদ তালুকদার দ্বিতীয় বিয়ে করেন।যেটা মানতে পারে নি উৎস।উৎস বাবার উপর অভিমান করে নিউইয়র্ক পাড়ি জমায়।যদিও উৎসের দেশে ফেরার ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু তার দাদীর মৃ’ত্যু’র খবর শুনে উৎস নিউইয়র্ক থেকে দেশে ছুটে আসে। কিন্তু দেশে এসে দেখে সবটা নাটক ছিলো।তার দাদী সুস্থ্য সবল রয়েছে। শুধু মাত্র তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সবাই মিলে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে। এরপর আর উৎস নিউইয়র্ক ফিরতে পারে নি। পরিবারের মায়া তার মতো শক্তপোক্ত যুবক কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে।উৎস উচ্চতায় প্রায় ছয় ফুট।গায়ের রং উজ্জল ফর্সা না হলে মুখের গড়ন অত্যাধিক সুন্দর।যা দেখে যেকোনো মেয়ে ঘায়েল হতে বাধ্য। উৎসের বোন উপমার সব কটা বান্ধবী উৎসের প্রতি ফিদা। তাদের হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণ উৎস।কিন্তু সেই ছেলেটা এক সন্ধ্যে কন্যা কে দেখে ঘায়েল হয়ে গিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় মেয়েটা কে দেখার পর চোখ থেকে ঘুম উবে গিয়েছে উৎসের ।চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে মায়াবী দুটো চোখ ভেসে উঠেছে। মায়াবী চোখ দুটো একটু ও ঘুমোতে দেয় নি উৎসকে। সারাটা রাত বিছানায় ছটফট করেছে বেচারা।এক পর্যায়ে উৎস ঘুমোতে না পেরে বিছানা ছেড়ে উঠে সন্ধ্যে কন্যার মায়াবী চোখ দুটো কল্পনা করে রং , তুলির সাহায্য সুন্দর দুটো মায়াবী চোখ অঙ্কন করতে করতে তার রাত কেটে যায়। রোজকার নিয়ম অনুযায়ী সকাল সকাল কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে উৎস।শত ব্যস্ততার মধ্যেও সন্ধ্যে কন্যার মায়াবী চোখের কথা ভুলতে পারে না সে। উৎস নিজের কাজ ফেলে তার সন্ধ্যে কন্যার ব্যাপারে খোঁজ নিতে সোজা চৌধুরী ভিলায় চলে আসে।সে গাড়ি থেকে বের হতেই তার ফোন বেজে উঠে।উৎস ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে চৌধুরী ভিলা থেকে কয়েক কদম দূরে চলে যায়।উৎস কথা বলা শেষ করে ফোন পকেটে রেখে পিছনে ফিরতেই দেখে গতকালের মতো সেইম বোরকা হিজাব পরিহিতা একটা মেয়ে গেইট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা কে দেখা মাত্রই উৎসের হার্ট বিট বেড়ে যায়। অদ্ভুত এক ধরণের অনুভূতি সৃষ্টি হয়।উৎস তৎক্ষণাৎ দৌড়ে এসে দারোয়ান কে বললো,

-” আঙ্কেল এক্ষুনি যে মেয়েটা এখান থেকে বেরিয়ে গেলো।তার ব্যাপারে আমাকে কিছু বলতে পারবেন?”

-” আমি তার ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে পারবো না বাপু।তবে হ্যাঁ তার নাম আদিতা। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।”

-” কথাটা শোনা মাত্রই উৎস ওয়ালেট থেকে পাঁচশত টাকার দুইটা চকচকে নোট দারোয়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,থ্যাংক ইউ সো মাচ আঙ্কেল।আপনার এই টুকু তথ্য পেয়ে আমার অনেক বড় উপকার হলো। পাঁচশত টাকার দুইটা চকচকে নোট দেখে খুশি তে চোখ ছলছল করে উঠলো‌ দারোয়ানের। দারোয়ান উৎসের হাত থেকে টাকা টা নিয়ে পকেটে রেখে দিয়ে বললো,

-” অনেক বড় মন আপনার সাহেব। আপনি চাইলে আমি কিছুক্ষণ পরে মেয়েটার ব্যাপারে আরো তথ্য দিতে পারি।”

-” এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তুমি বরং আমার ফোন নাম্বার টা রাখো।বেশি কিছু লাগবে না। শুধু মেয়েটার বাবার নাম আর কোথায় থাকে এইটুকু বললেই হবে।”

-” ঠিক আছে সাহেব।কাজ হয়ে যাবে ।আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন সাহেব।”

-” উৎস মুচকি হেসে মনে মনে বললো,এক সন্ধ্যে কন্যা সন্ধ্যে বেলায় দেখা দিয়ে যে আগুন আমার বুকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যে কন্যা আমার বুকে মাথা রেখে সেই আগুন না নেভানো পর্যন্ত আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারছি না।এখন তো আমার ডাক ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করছে,

-” তুমি জ্বালাইয়া গেলা প্রেমের আগুন,
নিভাইয়া গেলা না।।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব-০১

0

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#সূচনা_পর্ব
#নুজাইফা_নূন

-” বাসর রাতে আমার বরের পরিবর্তে সাত বছরের দেবরের ‌‌সাথে রাত্রি যাপন করতে হয়েছে।যেই রাতে বরের সাথে গল্পগুজব ,সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়া কথা। সেই রাতে সারাটা রাত আমার চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কেটেছে।আমার বর কবুল বলেই বিয়ের আসরে আমাকে একা ফেলে চলে এসেছে।যেখানে মেয়েরা বরের হাত ধরে শ্বশুর বাড়ি প্রবেশ করে।সেখানে আমি সাত বছরের দেবরের হাত ধরে শ্বশুর বাড়ি প্রবেশ করেছি।আমাদের বিয়ের দুই টা দিন পার হয়ে গিয়েছে । অথচ আমার বর একটা বারের জন্যও আমার মুখ দর্শন করে নি।আমার সাথে দুটো ভালো করে কথা বলে নি।একটা মেয়ের কাছে এর থেকে বড় অপমান আর কি হতে পারে ? বলতে পারিস আদিতা?”

-” কি বলছিস আপু? উৎস তালুকদার তোকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি ?”

-“আমাকে উৎসের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার কথা ছিলো বুঝি? কেন আমার জীবন টা নষ্ট করে দিলি আদি? বিশ্বাস কর আমি বেশি কিছু চাই নি।আমি একটু ভালো ভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোর টাকা , পয়সা, বাড়ি গাড়ি, অর্থের লোভ আমার জীবন টা শেষ করে দিলো রে আদি।”

-” তুই আমাকে ভুল বুঝছিস আপু। উৎস তোকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি।এখানে আমার দোষ কোথায় বল তো আপু? আমি তো আর উৎস কে বলে দেই নি সে যেনো তোকে স্ত্রী হিসেবে না মেনে নেয়।”

-” উৎস তোকে ভালোবাসে আদি। দু দিন আগে উৎসের সাথে তোর বিয়ে হবার কথা ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমি আমার ছোট বোনের হবু বরের ব‌উ হয়ে গেলাম।সেটা আবার যেনো তেনো ব‌উ না। কাগজের ব‌উ।যাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র তিন কবুল আর একটা কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ।বিয়ে , বাসর রাত নিয়ে প্রত্যেক টা মেয়ের জীবনে নানা রকম জল্পনা কল্পনা থাকে।স্বামী নামক অপরিচিত ব্যক্তির জন্য মনের গহীনে কতো শতো স্বপ্নের জাল বোনা থাকে।তাদের মধ্যে ভর করে একরাশ লজ্জা , কামনা , বাসনা, প্রিয় মানুষ কে কাছে পাওয়ার আকুলতা, ব্যাকুলতা ,ভয় আর সুখ মিশ্রিত অনুভূতি ।আমি ও তার ব্যাতিক্রম ছিলাম না আদি। কিন্তু তুই আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিলি। কেন আমার সাথে এমনটা করলি?তোকে আমি কোনোদিন ও ক্ষমা করতে পারবো না আদি। কোনোদিন ও না বলেই ফোন রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো আদ্রিকা। তার পুরো নাম আদ্রিকা খন্দকার। সজল খন্দকার আর শায়লা খন্দকারের বড় মেয়ে আদ্রিকা খন্দকার।আদ্রিকা আর আদিতা দুজনেই জমজ বোন।আদিতার থেকে আদ্রিকা দুই মিনিটের বড়। সবাই ভালোবেসে আদ্রিকা কে আদ্রি আর আদিতা কে আদি বলে ডাকে।জমজ হ‌ওয়ার দরুন তাদের চেহারার মিল থাকলে ও চারিত্রিক দিক দিয়ে এক জন অন্যজনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।আদি অনেক স্টাইলিশ আর চঞ্চল প্রকৃতির ।বিলাসবহুল জীবনযাপন তার পছন্দ। বড়লোক বাপের বখে যাওয়া ছেলেমেয়েদের সাথে তার উঠাবসা।মাঝ রাত অব্দি পার্টি করা , ড্রিংক করা , সিগারেট খাওয়া তার কাছে ভাত মাছ।অন্য দিকে আদ্রিকা আদিতার সম্পূর্ণ বিপরীত।আদ্রি খুব‌‌ই সহজ ,সরল, শান্ত প্রকৃতির।বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান।নিজেকে সবসময় বোরকা হিজাবে মুড়ে রাখতে পছন্দ করে।আদ্রি, আদি দুজনেই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কিন্তু কেউ জানে না তারা দুজন এক‌ই মায়ের পেটের আপন বোন।আদি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে।আদির ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই জানে তার বাবা অনেক বড় বিজনেস ম্যান।অথচ আদির বাবা সজল খন্দকার সামন্য বেতনে প্রাইমারি স্কুলে দপ্তরের চাকরি করেন।আদির হোস্টেলে থাকা খাওয়া ,পড়াশোনার খরচ চালানো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। শুধু মাত্র আদির কথা ভেবে আদ্রি পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি শুরু করে।মাস শেষে নিজের বেতনের সম্পুর্ন টাকা বোনের হাতে তুলে দেয়।যাতে বোন নিজের পড়াশোনা ভালো ভাবে চালিয়ে যেতে পারে।অথচ সেই বোনের জন্য‌ই আদ্রির জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ।”

-” আদ্রি ভার্সিটি গিয়ে ক্লাস শেষ করে পরপর তিন টা টিউশনি করে তবেই বাড়ি ফেরে।দিনটি ছিলো সোমবার। সেদিন আদ্রির স্টুডেন্ট নাতাশার জন্মদিন ছিলো।আদ্রি নাশাতা কে পড়াতে গিয়ে দেখে তাদের পুরো বাড়ি এক নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে।আদ্রি ভেতরে গিয়ে জানতে পারে আজ নাতাশার জন্মদিন।রাতে অনেক বড়ো করে পার্টি হবে। অনেক বড় বড় সম্মানীয় ব্যক্তিরা আসবেন নাতাশার জন্মদিনের পার্টিতে।এসব দেখে আদ্রি চলে আসতে গেলে নাতাশা আদ্রি কে বাঁধা দেয় ।যা দেখে নাতাশার মম র’ক্ত চক্ষু নিয়ে নাতাশার দিকে তাকিয়ে থাকে।তিনি আদ্রি কে খুব একটা পছন্দ করেন না। কিন্তু মেয়ের ভালোর কথা বিবেচনা করে আদ্রি কে চোখের সামনে সহ্য করতে হয়। তার হাজবেন্ড ফারুক চৌধুরী নাতাশার পড়াশোনার জন্য আদ্রি কে এই চৌধুরী ভিলায় নিয়ে আসে।আদ্রি খুবই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।অন্যদিকে নাতাশা খুব‌ই দুষ্টু আর চঞ্চল প্রকৃতির। এজন্যই কোনো টিচার ই তাকে পড়াতে চায় না।সেই দুষ্টু মেয়েটাকে আদ্রি ভালোবাসা দিয়ে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। নাতাশা পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে উঠে।তার পড়াশোনায় ইমপ্রুভমেন্ট দেখে ইতি চৌধুরী চাইলেও আদ্রি কে চৌধুরী ভিলা থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে নি। কিন্তু সুযোগ পেলে আদ্রি কে অপমান করতে ছাড়ে না। নাতাশার জন্মদিনেও ছাড়ে নি।তিনি নাতাশা কে সাইডে নিয়ে গিয়ে বলেন,

-” এটা তুমি কি করলে বেবি? তুমি জানো আমাদের বাসায় আজকে কতো মেহমান আসবে। কতো বড়ো বড়ো সেলিব্রিটিদের তোমার জন্মদিনের পার্টিতে ইনভাইট করা হয়েছে।এতো লোকের মাঝে তুমি ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েকে থাকতে বললে? সবাই যদি মেয়েটার পরিচয় জানতে চায় ।তখন আমি কি জবাব দিবো?আমি যদি সবাইকে বলি একটা থার্ডক্লাস গরীব মেয়ের কাছে আমার বেবি পড়ে।তাহলে আমার মানসম্মান থাকবে বলো?”

-” ইতি চৌধুরীর কথা শুনে আপনা আপনি চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে আদ্রির।আদ্রি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নাতাশা দৌড়ে গিয়ে আদ্রির হাত ধরে বললো,

-” প্লিজ ম্যাম, মমের কথায় আপনি কিছু মনে করবেন না। আপনি আর একটু থাকুন ম্যাম। আমার ভালো লাগবে।”

-“আমি শুধু শুধু কেন থাকবো নাতাশা।এখানে তো আমার কোনো কাজ নেই।”

-“পার্লারের মেয়েরা আমাকে সাজাতে এসেছে। আপনি বরং তাদের সাথে থেকে আমাকে সাজিয়ে দিন ম্যাম।তাহলে মম ও কিছু বলতে পারবে না।আর আপনি ও আমাদের বাড়িতে কিছু টা সময় থাকতে পারবেন।”

-” ঠিক আছে চলো বলে আদ্রি নাতাশা কে রেডি করতে নিয়ে যায়। পার্লারের মেয়েরা নাতাশা কে সাজিয়ে দিচ্ছে।আর আদ্রি তাদের কে এটা ওটা এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করছে। অবশেষে প্রায় তিন ঘণ্টা পরে নাতাশার সাজ কমপ্লিট হয়‌। ততোক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।আদ্রি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে চৌধুরী ভিলা থেকে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু ধরনীর বুকে আঁধার নেমে এসেছে দেখে অনেক টা ঘাবড়ে যায় আদ্রি।আদ্রি বেখেয়ালে দুরুদুরু বুকে চৌধুরী ভিলা থেকে সামনে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই শক্ত পুরুষালী দেহের সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে যাওয়ার আগেই লোকটা এক হাতে আদ্রির কোমড় জড়িয়ে ধরে। জীবনের প্রথম পুরুষালী হাতের স্পর্শে আদ্রি চমকে উঠে।তার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে শিহরণ বয়ে যায়।আদ্রি লোকটার চোখের দিকে এক নজর তাকিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।আদ্রির যাওয়ার পানে তাকিয়ে লোকটা তার বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে বললো,

-” সন্ধ্যে বেলায় এক সন্ধ্যে কন্যা উৎস তালুকদারের হৃদয় হরণ করে নিয়ে গেলো।অথচ উৎস তালুকদার টের ও পেলো না।হাউ স্ট্রেঞ্জ??”

চলবে ইনশাআল্লাহ।

কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#শেষ পর্ব
নিলয়ের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছে সাড়ে চার বছর আগে। ওই যে যাবার আগে আমায় নিয়ে রিকশা করে ঘুরে, ফিরে হোস্টেলের গেটের সামনে নামিয়ে দিয়েছিল সেই ই শেষ দেখা। হ্যাঁ তারপর আর দেখা হয় ও নি।

এই চার বছরে আমি নিজেকে নতুন রুপে আবিষ্কার করেছি। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ানো জীবন ছেড়ে অন্য এক জীবনে পা রেখেছিলাম একজনের উপর জেদ করে। সেই একজন সেদিন ও আমার কাছে যেমন ছিলো আজও তেমন আছে। না তাকে আমি ভুলতে পারিনি! অথচ ভুলে যাবার জন্য কত কী ই না করেছি। সেগুলো ভেবে আনমনে নিজে নিজে এখনো হাসি। আমার দিন শুরু হতো চরম ব্যস্ততায়, তবুও সেই ব্যস্ততার মাঝে একটা সময় কাটতো নিলয়ের টুকরো স্মৃতিগুলো নিয়ে। খুব ই অল্প সময়ের আলাপে এরকম ও যে হতে পারে সেটা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। আমার যারা ক্লোজ তারা বলে দেখ গিয়ে নিলয় হয়তো অন্য কাউকে মন দিয়ে বসে আছে। ওসব টুকিটাকি প্রেম বাচ্চাকালেই চলে। তুই শুধু শুধু ওকে ভেবে সময় নষ্ট করছিস।

আবার কেউ কেউ খোঁচা মেরে বলতো তোমাদের গল্প তো পুরাই ফিল্মি। আমি তাদের কিছু বলি না। আমার ভালো লাগে নিলয় কে ভাবতে। মন বলে নিলয় একদিন সত্যিই আসবে। সে আমাকে ভালো না বাসলেও পছন্দ যে করে সেটার ক্লু দিয়ে গেছে। আর সেটুকু পুজি করেই আমি অপেক্ষায় আছি।

****
নিলয় চলে যাবার পর আমি ওর সাথে যোগাযোগ করিনি। আমি ওর চিরকুট হাতে পেয়ে অপেক্ষা করছিলাম যে ও হয়তো নিজে থেকেই আমাকে ফোন করবে। কিন্তু সেটা করেনি। আমিও আর দ্বিতীয়বার বেহায়া হতে পারলাম না। তবুও আমার দিন শুরু এবং শেষ হতো নিলয়ের এক্টিভিটি দেখে। তার গলার স্বর না শুনলেও হাসিখুশি ছবিগুলো দেখে সন্তুষ্ট থাকতাম। অপেক্ষা করতাম যে নিলয় একদিন হুট করে ফোন করবে কিংবা যোগাযোগ করবে। কিন্তু সেরকম কোনো কিছু ঘটলো না।

ছুটিতে বাড়ি গেলে আন্টির কাছে জানতে পারতাম যে নিলয় ভালো আছে। আন্টি সবসময়ের মতোই ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন। নানান ধরনের গল্প করতেন। একবার বললেন,

এই প্রত্যাশা নিলুকে একটা বিয়ে দিলে কেমন হয়? একটা লাল টুকটুকে বউ আসবে।

আমি হেসে বললাম, ভালোই হবে আপনিও একটা মেয়ে পেয়ে যাবেন।

আন্টি খুশি হন। একটু পরেই আবার বলেন,

“এই প্রত্যাশা নিলুর কী কোনো পছন্দ আছে? জানো কিছু?”

“না আন্টি সেসব কী করে জানব!”

“তোমাকে কখনো বলেনি?”

“না আন্টি। আমার সাথে তো অল্প কয়েক মাসের আলাপ ছিলো, এতোটা ঘনিষ্ঠতা তো ছিলো না। ”

আন্টি অবাক হয়। বলে, কী বলো! নিলু তো তোমাকে খুব পছন্দ করতো।

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। আন্টি এসব কী বলছে। আমি যে আন্টিকে কথাটা আরেকবার জিজ্ঞেস করবো সেই সাহস হয় না। চোখ জ্বলতে শুরু করে। মনে মনে বলি, আমারও তো তাই মনে হয়েছিল আন্টি। কিন্তু আপনার ছেলে তো…..

পরেরবার যখন ছুটিতে বাড়ি গেলাম তখন শুনলাম আন্টি, আংকেল বাসা ছেড়ে দিবেন। মায়ের কাছে কারন শুনলাম যে তাদের বাড়ি বানানো কমপ্লিট হয়ে গেছে তাই ফিরে যাচ্ছে। এই ঘটনা শুনে আমার অবচেতন মন বলল, নিলয় কে তুই হারিয়ে ফেলছিস প্রত্যাশা। এরপর আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আন্টির সাথে দেখা হলে আন্টি বললেন, প্রত্যাশা লাল টুকটুকে বউয়ের স্বপ্ন তো শেষ। নিলু তো দেশে ফিরতে চাইছে না। ওখানেই নাকি সেটেল হয়ে যাবে।

আমার শরীর খারাপ হতে শুরু করে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, কেন ফিরবে না আন্টি?

“আরে ওখানে খুব ভালো অপরচুনিটি পেয়েছে যে! আমাদের ও নিয়ে যাবে বুঝলে। তোমার আংকেল অবশ্য গাইগুই করছে না যাবার জন্য। কিন্তু আমি বলেছি যে যাব ই। বছরে ছয়মাস না হয় দেশে এসে থাকব। ”

আন্টি হড়বড় করে কথা বলে যাচ্ছিল। তার গলায় খুশি উপচে পড়ছে। আমি আর কিছু বললাম না।

আন্টিরা চলে গেলেন। নিলয়ের গাছগুলো আমার অনুরোধে রেখে গেলেন। কিছু গাছ এখনও আমার বারান্দায় রয়ে গেছে। বাড়িতে এলে ওগুলো দেখে আমার বুক টা হু হু করে ওঠে। আন্টির ভাষ্যমতে নিলয় যেহেতু ওখানেই থেকে যাবে তাই লাল চুলওয়ালা কাউকে বিয়ে করে নেবে। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে নিলয় ঠিক ই ফিরে আসবে। কোনো এক কমলা রোদের বিকেলে এসে বলবে চলো প্রত্যাশা ফুসকা খেয়ে আসি। তুমি না খেলেও আমার পাশে বসে থাকবে। রিকশায় গায়ে গা লাগিয়ে না বসার জন্য খটমট কিছু একটা বলবে। কিন্তু সেই দিন টা কবে আসবে আমি জানিনা।

যেটুকু আশা ছিলো তাও গুড়ে বালি হয়ে গেল যখন নিলয়ের অনলাইন এক্টিভিটি পেলাম না। একাউন্ট ডিজেবল প্লাস নতুন আইডিও নেই। আমার ভালো থাকার রসদ টুকুও শেষ হয়ে গেল।

গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি শুরু করছি। এই চাকরিতেও বাবা মায়ের ঘোর আপত্তি। পড়াশোনা করতে চেয়েছ ঠিক আছে কিন্তু চাকরি কেন বাপু! তাদের ভাষ্যমতে, তাদের অনেক আছে তবুও কেন চাকরি করতে হবে। আমি বললাম, আমার একটা নিজের আইডেন্টিটি থাকুক। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি সেটা বৃথা কেন যাবে! ভাইয়া ফুল সাপোর্ট করলো এখানেও। ভাইয়ার বউ মানে আমার ভাবীও আমাকে সাপোর্ট করলো।

চাকরি জীবনে ক’টা মাস কাটতেই বাবা মায়ের বিয়ের ঘ্যানঘ্যান শুরু হয়ে গেল। তাদের স্পষ্ট কথা হলো পছন্দ থাকলে সেটা বলে দাও। আমার উত্তর ছিলো, এখন নয় পরে।

মায়ের এই ঘ্যানঘ্যান ভাঙা রেকর্ডের মতো দিন রাত কানের কাছে বাজতেই লাগলো। আর আমিও ধৈর্য্য ধরে শুনতে লাগলাম। একবার ভাবী জিজ্ঞেস করলো, নিলয়ের জন্য আর কত অপেক্ষা করবে প্রত্যাশা?
আমি উত্তর দেই না। চুপ করে থাকি। আন্টিরা চলে যাবার পর আমি ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করিনি। খানিক টা অভিমান ও ছিলো, আর বাকী টা ছিলো ইগো।

****
বাবা মায়ের চাপে পড়ে একবার পাত্র পক্ষের সাথে দেখা করতে গেলাম। পাত্র পক্ষ বললে ভুল হবে, শুধু পাত্রের সঙ্গে। ভদ্রলোকের নাম আদিব। কানাডা থেকে এমবিএ করে এখন ফ্যামিলি বিজনেস সামলাতে ব্যস্ত। ভদ্রলোকের নিজের কোনো পছন্দ নেই তাই বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবে। ওনার সাথে কথা বলে বোঝা গেল যে উনি ইন্টেরেস্টেড। কিন্তু আমার দিক থেকে আমি ক্লিয়ার করলাম যে আমার পক্ষে বিয়েটা করা সম্ভব না।

ভদ্রলোক স্বাভাবিক ভাবে নিলেন। বললেন যে জোর করবেন না। তবে কারণ টা কী বয়ফ্রেন্ড ইস্যু নাকি অন্যকিছু।

আমি প্রথমে বলতে চাইছিলাম না। পরে ভাবলাম যে কথাটা বলে দেয়াই ভালো হয়। কারণ না হলে ব্যপার টা ওনার জন্যও ইনসাল্টেড। উনি হয়তো ভাববেন যে ওনাকে পছন্দ হয় নি। আমি ওনাকে নিলয়ের সব টা খুলে বললাম। সব শুনে উনি গম্ভীর গলায় বলল,

“আপনার কী মনে হয় উনি আপনার কাছে ফিরবে?”

“হ্যাঁ মনে হয়। কারন সে আমাকে যথেষ্ট ক্লু দিয়ে গেছে। ”

“তাহলে এতোদিনেও ফিরছে না কেন! সাড়ে চার বছর কিন্তু লং টাইম। ”

” কেন ফিরছে না সেটার যেমন কোনো লজিক নেই, তেমন ফিরবে সেটার ও লজিক নেই। ”

“আচ্ছা বুঝলাম। ”

“ধন্যবাদ আপনাকে এতটা বোঝার জন্য। ”

“কিন্তু প্রত্যাশা আমার মনে হয়, আপনি যেমন ইগো’র জন্য তার সাথে যোগাযোগ করছেন না তেমন সেও করছে না। ”

“হতে পারে। ”

“আপনার কী মনে হয় না ইগো দূরে সরিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা?”

“মনে হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার আমি তার কাছে বেহায়া হতে পারব না। ”

আদিব সাহেব হেসে ফেলল। বলল,

“উনিও হয়তো মনে মনে এটাই ভাবছে। ”

“মানে?”

“মানে উনি যখন আপনার জন্য কিছু একটা ফিল করেছিল তখন কিন্তু আপনার কাছে ফিরে এসেছিল। আপনি তখন অভিমানের পাহাড় তুলে রেখেছিলেন তাই সেটা বুঝতে পারেন নি। আপনার অভিমান এতোটাই প্রখর ছিলো যে আপনি বুঝেও বুঝতে চান নি। ”

আমি চুপ করে রইলাম। উনি আবারও বললেন,

“আপনার অভিমান ভেঙেছে আপনি যখন ওই চিরকুট টা খুঁজে পান তখন তাই না?”

আমি মাথা নাড়লাম।

এই চিঠিটা আপনি যদি আগে পেয়ে যেতেন তাহলে আপনার গল্পের এন্ডিং টাও আরও আগে পেয়ে যেতেন।

“মানে?”

“মানে আপনার অভিমান ভেঙে যেত আর কী….
প্রত্যাশা শুনুন, ভালোবাসা হলো চমৎকার একটা সাবজেক্ট। যেখানে এক মুঠো মায়া, এক চিমটি চমৎকার অনুভূতি, আর খানিকটা মান, অভিমান থাকে। সেখানে ইগো’কে জায়গা দিতে হয় না।

আদিব সাহেবের কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগলো। আমি সারারাত তার কথা ভাবলাম। নিলয় একদিন আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, হ্যাঁ তারপর ক্ষমাও চাইতে এসেছে কিন্তু আমি যেমন বুঝতে পারিনি তেমন নিলয়ও আমাকে বুঝাতে পারে নি। তাই বলে এতোটা রাগ কিংবা ইগো নিয়ে থাকা কী ঠিক! ঠিক না। নিলয় কে তো আমি ভালোবাসি তাই নিশ্চয়ই আরেকবার বেহায়া হওয়া যায়!

****
আন্টির যে কন্টাক্ট নাম্বার আমার কাছে ছিলো সেটায় লাগাতার ফোন করেও পেলাম না। ভাইয়াকে দিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম আন্টি আঙ্কেল দুজনেই হ্বজে গেছেন। তাই তারা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই। জীবনের সবচেয়ে কষ্টের কিংবা মধুর যন্ত্রণার নাম যে অপেক্ষা সেটা হাড়েমজ্জায় টের পেলাম। একেকটা দিন কাটে অসহ্য অস্থিরতার মধ্যে।

দিন সাতেক পর আদিব সাহেব একদিন টেক্সট করলেন। লিখলেন,

“প্রত্যাশা, আই হোপ ভালো আছেন। আপনার সাথে অল্প সময় আলাপ কিংবা কথা বলে এটুকু বুঝেছি যে আপনি একজন চমৎকার মানুষ। চলা পথে কিছু মানুষ কে ক্ষনিকের দেখায় ই মনে হয় কতো আপন! আপনি তেমন একজন। তাই একটা ভয়ংকর কাজ করে ফেলেছি। কী কাজ করেছি সেটা আপনার ইমেইল চেক করলে পেয়ে যাবেন। আপনার অনুভূতি কিংবা প্রতিক্রিয়া কী হবে জানিনা তবে এটা না করলে মন খচখচ করতো।

আমি মেইল চেক করলাম অতিদ্রুত। সেখানে মিশেল রাহেজা নামে অবাঙালি একাউন্ট থেকে টেক্সট এসেছে,

“ডিয়ার প্রত্যাশা, আমরা আজকের দিন টার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমাদের গ্রুপে হাইয়েস্ট মার্কস পাওয়া ছেলেটা তার হতাশা দূর করতো একটা সাধারণ মেয়ের মুখচ্ছবি দেখে। সেই মেয়েটা তুমি। তার ধারণা কোনো একদিন তুমি তাকে চমকে দেবে আর সেই দিন টা হবে তার জীবনের অন্যতম একটা সুন্দর দিন। কিছুদিন আগে তোমার ব্যাপারে জানতে পেরে আমরা বুঝে গেছি যে সেই দিন টির আর দেরি নেই। তুমি কী একবার সেই ছেলেটাকে ফোন করবে?

আমি ইমেইল টা অনেক বার পড়লাম। শেষ কবে এতটা ব্যকুল হয়ে কেঁদেছিলাম মনে পড়ে না। আমি আদিব সাহেব কে ফোন করলাম। ভদ্রলোক ফোন ধরে অমায়িক গলায় বলল, তোমার প্রথম ফোন টা তো অন্য কোথাও করা উচিত।

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, থ্যাংকস এ লট!

“আর দেরি কোরো না। এরপর কী করবে সেটা তোমার ভাইয়ার কাছ থেকে জানতে পারবে। আর হ্যাঁ তোমার বিয়েতে ইনভাইট করতে ভুলে যেও না। অনেক দিন কবজি ডুবিয়ে খাই না। হাহাহা।

****
আজ নিলয় আসবে। আন্টি আঙ্কেল এসে গেছে। ভাইয়া তাদের হ্বজে যাবার ব্যাপার টা আমাকে বানিয়ে বলেছে। সেই গল্পটুকু পরে বলি। আগে আমাদের ফ্যামিলির প্রতিক্রিয়া বলে নেই।

আমার মা সব টা শুনে বলল, আমি তো আগেই জানতাম যে এরকম কিছু একটা খিচুড়ি পাকানো হচ্ছে। ছেলেটা খুব ঘুরঘুর করছিল আমার মেয়ের পিছনে। আমার মেয়েটা তো সোজা সরল। এতো প্যাঁচগোছ আমার মেয়ের তো নেই। পড়াশোনা, চাকরি এসবের ভুত তো ওই ছেলেই ঢুকিয়েছে।

আমার বাবার রিয়েকশন, ছেলে ঘরের পাশে থাকতে হিল্লিদিল্লি কতো ঘুরলাম। যুগের চক্করে পড়ে ছেলে, মেয়ে দুটো ভালো খেল দেখিয়েছে।

আমার ভাইয়ার প্রতিক্রিয়া হলো, তোর কপাল ভালো যে আমি সেই বিয়েটা আটকেছিলাম। নাহলে তোর ছেলেমেয়েরা নিলয়ের মা’কে নানু আর নিলয় কে মামা ডাকতো। হাহাহা।

আমার ভাবী সে আপাতত ব্যস্ত বিয়েতে শাড়ি নাকি ল্যহেঙ্গা পরানো হবে সেটা নিয়ে। একমাস আগে পারসোনায় বুকিং দিয়ে রাখার পরও তার মাথায় হঠাৎ ভুত চাপলো ডেস্টিনেশন ওয়েডিং এর।

এবার আমার আন্টি ওরফে হবু শাশুড়ী মায়ের কথা বলি। আন্টি আমাকে দেখেই চিৎকার করে বললেন, এই প্রত্যাশা একটা জোরে চিমটি কাটো তো। আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। আন্টি বললেন, আরে আমি তো মনে মনে তোমাকেই চাইছিলাম।

আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম, কই সেটা তো আপনি কখনো বলেন নি। আপনি তো লাল টুকটুকে বউ খুঁজছিলেন নিলুর জন্য।

আন্টি আহ্লাদী গলায় বললেন, আরে তুমিও তো লাল টুকটুকে।

আঙ্কেল মানে আমার হবু শ্বশুর মুখে কিছু বলছেন না। আপাতত তার চিন্তা হলো আন্টির আব্দার কিভাবে মেটাবেন সেটা নিয়ে। আন্টি বলেছেন তার ছেলের বিয়েতে হাজার খানেক ফকির, মিসকিন খাওয়াতে। কিন্তু আঙ্কেলের ধারণা দেশ উন্নত হয়ে গেছে। ঢাকা শহরে এতো মিসকিন পাওয়া যাবে না।

***
নিলয় কে পাবার ঘটনা অনেক টা নাটকীয় ভাবে। আমার প্রেমের সব টা’ই অবশ্য নাটকের মতো। আদিব সাহেব সেদিন আমার সঙ্গে দেখা করে ফিরে গিয়ে ভাইয়াকে সব টা বললেন। ভাইয়ার কাছে চিরকুটের কথা আমি বলিনি। আর ভাবীও জানতেন না। তাই ভাইয়া আন্টির সাথে যোগাযোগ করে নিলয়ের সাথে যোগাযোগ করে পুরো ব্যাপার টা ঘটালো।

এখানেও শয়তান ছেলেটা খুব ভাব নিলো। ইমেইল টা পাঠিয়েছে বন্ধুকে দিয়ে। নিজেও পাঠায় নি। শেষ পর্যন্ত আমায় বেহায়া বানিয়ে ছাড়লো। আস্ত শয়তান একটা।

আমি ভাইয়ার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে নিলয় কে ফোন করেছিলাম। নিলয় শুধু হ্যালো বলেছিল৷ আর আমি একটা কথাও বলতে পারিনি। কেঁদে কেটে মহাসমুদ্র বানিয়ে ফেলেছিলাম।

****
সাড়ে চার বছর পর প্রথম দেখায় নিলয় আমাকে দেখে বলল, হায় খোদা তোমার এই অবস্থা! তোমার জন্য তো রিকশা অর্ডার করে বানাতে হবে। নরমাল রিকশায় তুমি বসলে আমি তো স্পেস পাবো না।

আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম। নিলয় হেসে ফেলল। বলল, টেষ্ট করে দেখছিলাম যে আগের প্রত্যাশা কি না!

“তুমি কেন এসেছ? তোমার বন্ধুকে পাঠাতে সে এসে বিয়ে টা করতো। ”

নিলয় হাসতে হাসতে বলল, তুমি তো দেখছি এখনো ক্ষ্যাপাটে আছ! এই মেজাজ কী বাসর অবধি চলবে?

আমি নিলয়ের গায়ে মারতে মারতে বললাম, আমি মোটেও তোমাকে বিয়ে করবো না। তুমি খুব ই খারাপ একটা মানুষ।

“আই নো। তবে সমস্যা নেই তুমিও তো লেডি ভিলেন। ”

“শয়তান ছেলে! আমায় এতো এতো কষ্ট দেয়া! তোমার জীবনে ভালো হবে না।

“কষ্ট তুমিও দিয়েছ, আমিও দিয়েছি। শোধবোধ। তাছাড়া আমিও অনেক বেহায়া হইছি। সো… এসব বাদ।”

“আচ্ছা তুমি যে আমার ব্যগে চিরকুট টা রেখেছিলে সেটা কখন রেখেছিলে? ”

“আইসক্রিম খেতে গিয়ে তুমি যখন ভ্যা ভ্যা করে কাঁদার জন্য একটু দূরে গিয়েছিলে তখন।”

“আর প্রথম কবে ভালোবাসতে শুরু করলে?”

“যেদিন রোজিকে ম্যাসেজ দেবার জন্য অনেকগুলো বকা দিয়েছিলাম সেদিন। বাসায় যেতেই খুব খারাপ লাগলো। তবে পছন্দ করেছিলাম পায়েশ রেধে যেদিন নিয়ে এসেছিলে। ও হ্যাঁ এক চামচ খেয়েছিলাম। ভীষণ বাজে হয়েছিল৷

আমি নিলয় কে খামচি মেরে বললাম, তুমি এতো কাহিনী না করে ভালোবাসার কথা কেন বললে না?

“তুমি তো আগে ফিল করেছিলে। তাহলে তুমি কেন বললে না?”

“হ্যাঁ আবারও বলতে গিয়ে পঁচা পঁচা কথা শুনি! ”

নিলয় আমার কাছাকাছি এসে বলল, শোনো ক্ষ্যাপাটে মেয়ে, আমি তোমাকে বৃষ্টির চেয়ে কম আর কাঠগোলাপের চেয়ে বেশী ভালোবাসি।

আমি ফিসফিস করে বললাম, প্রিয় বৃষ্টি আজ থেকে তোমাকে আমি খুব হিংসে করি।

নিলয় হেসে ওর নাক দিয়ে আমার নাক টা ঘষে দিলো। আমি ফিসফিস করে বললাম, আমি তোমাকে ফুসকার চেয়ে বেশী আর তেঁতুল জলের চেয়ে একটু কম ভালোবাসি। নিলয় আমার কানে আলতো করে চুমু খেল। আবেশে চোখ বন্ধ করে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। শুরু হলো আমাদের আরেকটা গল্প। ভালোবাসার গল্প।

সমাপ্ত

কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০৮

0

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#পর্ব-৮
নিলয় কাঠগোলাপ গাছের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“আমি একবার কাউকে কোনো জিনিস দিলে তা আর ফেরত নেই না। এটাই আমার ক্যারেক্টার। ”

আমি হেসে ফেললাম। হাসি থামিয়ে বললাম,

“আমার আবার স্বভাব হলো সবার কাছ থেকে সব কেড়ে নেবার। আমাদের বাসায় এর আগে যারা এসেছে তাদের সবার কাছ থেকেই আমি কিছু না কিছু এমনি করে কেড়ে নিয়েছি। আবার পরে ফেরত ও দিয়ে দিয়েছি। এটা হলো আমার ক্যারেক্টার। ”

নিলয় আমার দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল,

“হঠাৎ ঢাকা যাচ্ছ যে?”

“পড়াশুনা টা এবার সিরিয়াসলি নেব ভাবছি। লাইফে সবকিছু তো হেলাফেলায় খুইয়েছি তাই ভাবলাম সুযোগ আর সময় যেহেতু আছে, একটাবার চেষ্টা করে দেখি। ”

নিলয় ঠোঁট উলটে ভ্রু নাচিয়ে বলল, গুড ডিসিশন। তা হঠাৎ এই বোধদয়? ”

“এই প্রশ্নের উত্তর টা জানা কী খুব জরুরী? ”

“অবশ্যই না। ”

“আপনি পারলে আমায় ক্ষমা করে দিবেন। ”

নিলয় চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো। তারপর বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসলো। এই হাসির অর্থ আমি বুঝলাম না তবে নিলয়ের হাসিমুখ আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখলাম।

আমার সবকিছু এলোমেলো লাগছে। নিলয়ের সামনে বেশীক্ষন থাকা যাবে না। আমি নিলয় কে বললাম,

“আমি আজ আসি। ”

নিলয় বলল, এগেইন উইশ ইউ বেস্ট অফ লাক।

“সেইম টু ইউ। ”

এই ছিলো নিলয়ের সাথে আমার শেষ দেখা। পরদিন সকালে কাঁদতে কাঁদতে আমার শহর ছেড়েছিলাম। কাঠগোলাপ গাছ টা নিলয়ের বাসাতেই রয়ে গেছে। আমার আর আনা হয় নি। একবার মনে হয়েছে নিয়ে আসি। স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে। তারপর মনে হলো কী দরকার! মানুষ টা যেহেতু কাছের কেউ না, তখন কী দরকার তার স্মৃতি জমিয়ে রাখা।

****
নতুন শহরে আমার ঘুম ভাঙে এলার্মের শব্দে। যেখানে আজীবন নয়টা, দশটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে প্রায় ই ক্লাস মিস করেছি সেখানে আমার ঘুম ভাঙে ভোর ছ’টায়। আমার দুই রুমমেট দিবা আর আশার সাথে ইতিমধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ইউনিভার্সিটি তে ক্লাসও করছি রেগুলার। বাবা, ভাইয়া নিয়ম করে দেখতে আসেন। মা চাইছিলেন ঢাকা এসে আমার সঙ্গে থাকবেন। কিন্তু আমি সেটা চাইলাম না। নিজের জগৎ টা একা একা একটু সাজাই।

জাদুর শহরে আমি অল্প দিনের মধ্যেই অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। মোটামুটি অনেকগুলি বন্ধুও জুটে গেছে সকালে উঠি, ব্রেকফাস্ট করে ইউনিভার্সিটি তে যাই, লাইব্রেরী তে যাই। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই হোস্টেলে ফিরে পড়াশুনা করি। এর বাইরে আরেকটা কাজ করি, সেটা হলো নিলয়ের টাইমলাইন টা রোজ একবার করে ঘুরে আসি। আমার একাউন্ট থেকে ব্লক দেয়া বলে ফেইক একাউন্ট থেকে দেখি।

মাস দুয়েক পরের ঘটনা। এক সকালে আমাকে খবর দেয়া হলো যে একজন আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। বাবা কিংবা ভাইয়া প্রতি সপ্তাহেই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে, কিন্তু সেটা আমাকে ফোন করে জানায়। তাই আমি একটু অবাক হলাম। কে আসতে পারে।

মোটামুটি রেডি হয়ে নিচে নামলাম। কিন্তু নিচে আমার জন্য যে চমক অপেক্ষা করছিল সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। নিলয় দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে। একটা চকলেট কালারের শার্ট পরা, চুলে জেল দেয়া, খোচাখোচা দাঁড়িতে নিলয় কে দেখে আনন্দে বুক কেঁপে উঠলো আমার। আমি বিস্মিত গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

“আপনি!”

নিলয় হাসলো। মাতাল করা এই হাসি আমি প্রথম দেখলাম। নিলয় বলল,

“তোমার কাছে বিদায় নিতে এলাম। কাল দেশ ছাড়ছি তো। ”

শুধুমাত্র এই কথাতেই আমার চোখে পানি এসে গেল। এর কোনো মানে হয়! যাকে ভুলে যাবার জন্য এতোকিছু তার জন্যে এখনো অল্পতেই চোখে পানি এসে যাচ্ছে!

নিলয় বলল, চলো কোথাও ঘুরে আসি।

আমার বলতে চাইলাম যে আমার ক্লাস আছে। কিন্তু বলতে পারলাম না। নিলয়ের পিছু পিছু হাটতে লাগলাম।

রিকশায় পাশাপাশি দুজন বসে আছি কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছি না। আমি একটু দূরে সরে বসলাম যেন নিলয়ের গায়ে গা লেগে না যায়। নিলয় সেটা দেখে রিকশাওয়ালার উদ্দেশ্যে বলল, মামা আপনার রিকশা টা একটু ছোট হয়ে গেছে। আইমিন আপনার রিকশাটা প্রেমিক, প্রেমিকাদের জন্য। আম জনতাদের জন্য না, এরপর থেকে রিকশায় শুধু প্রেমিক, প্রেমিকা ওঠাবেন।

আমি আড়চোখে নিলয়ের দিকে তাকালাম। নিলয় নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।

একটা জায়গায় রিকশা থামিয়ে বলল,

“আসো আজ তোমাকে দুনিয়ার বেস্ট ফুসকা খাওয়াবো। ”

আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম।
আমি সরাসরি নিলয়ের দিকে তাকাতে পারছি না। তাই সবসময়ই নিচের দিকে তাকিয়ে থাকছি। কখন যেন আবার আমার চোখের জল দেখে ফেলে!

ফুসকার অর্ডার দিয়ে আমাকে বলল,

“তোমার দিনকাল কেমন চলছে?”

“ভালো। ”

“বাহ! তোমাকে সিরিয়াস হতে দেখে ভালো লাগছে। ”

আমি বিড়বিড় করে বললাম, আমি সিরিয়াস হলে তোর কী শালা। কে বলেছে তোকে এখানে আসতে!

নিলয় স্পষ্ট শুনতে পেল না। তাই বলল,

“কিছু বললে? ”

“না। ”

“কিছু একটা তো নিশ্চয়ই বিড়বিড় করছিলে। ”

“হ্যাঁ। বলেছি যে সিরিয়াস পড়াশুনা করছি যেন স্টাবলিশড জামাই পাই। ”

নিলয় হো হো করে হাসলো। বলল, বাহ! তুমি তো বেশ জ্ঞানী।

“মানে?”

“মানে ভবিষ্যতের ভাবনাই তো জ্ঞানীর কাজ। তাইনা?”

আমি জবাব দিলাম না। ফুসকার প্লেট এসে গেছে। নিলয় নিজের জন্যও ফুসকা অর্ডার করেছে। আমি বললাম,

“আপনি না ফুসকা খান না?”

নিলয় ফিসফিস করে বলল, ফুসকা এখন আমার প্রিয় হয়ে গেছে।

আমি অবাক চোখে নিলয় কে দেখতে লাগলাম।

নিলয় ফুসকা মুখে দিচ্ছে। আমি যে তাকিয়ে দেখছি সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ফুসকা শেষ করে বলল, বিল টা তুমি দিয়ে দাও। এর আগে আমি একদিন খাইয়েছিলাম না! সেটা শোধ করে দাও তাহলে আর ঋন থাকবে না।

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ব্যটা শেষ সময়টা’তেও আমাকে জ্বালিয়ে যাবে।

এরপর গেলাম আইসক্রিম খেতে। আগে একদিন আমাকে আইসক্রিম খাইয়েছিল। তারপর আবারও রিকশায় উঠলাম। রিকশায় উঠে নিলয় আবারও গম্ভীর হয়ে গেল। হাবভাব দেখে মনে হলো যে মেরে ধরে জোর করে রিকশায় বসানো হয়েছে।

গেটের সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে বলল, ভালো থেকো।

আমি কিছু বলতে পারলাম না। কান্নার দমকে গলা দিয়ে একটা শব্দও বের হলো না। শয়তান টা কী একবার বলতে পারতো না, প্রত্যাশা আমি তোমাকে পঁচা পঁচা কথা শুনিয়েছি ঠিক ই কিন্তু আমি তোমায় ভালোবাসি। তাই তো ছুটে এলাম।

এই কথাগুলো বললে আমি কী ওকে ক্ষমা করে দিতাম? নিশ্চয়ই দিতাম। ভালোবাসার চেয়ে বড়কিছু পৃথিবীতে আছে! এটুকু ক্ষমা তো করাই যেত। কিন্তু শয়তান টা তো কিছু বলল ই না! এতো খারাপ একটা মানুষ!

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললাম, হে আল্লাহ আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে শয়তান ছেলেটা’কে ভালোবেসে ফেলেছি। এখন এই পাপীকে ক্ষমা করে তার মন থেকে শয়তান টা’কে ভুলিয়ে দাও।

****
নিলয় চলে গেল। আমার কয়েকটা দিন কীভাবে গেল সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। খেতে ভালো লাগে না, ঘুমাতে ভালো লাগে না কিচ্ছু ভালো লাগে না। কয়েকদিন এমন হলেও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পড়ার চাপে সিধা হয়ে গেলাম। আবারও শুরু হলো শহুরে যান্ত্রিক জীবনের ছোটাছুটি।

একদিন ব্যাগে একটা কাগজ খুঁজতে গিয়ে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া একটা কাগজ পেলাম। ঝুড়িতে ফেলে দেবার জন্য রেখে দিয়ে অন্যান্য কাজ করলাম৷ রাতে বিছানা ঝাট দিতে গিয়ে সেই কাগজ টা আবারও চোখে পড়লো। ফেলে দিতে গিয়ে কী ভেবে যেন কাগজ টা খুললাম। দেখি তাতে লেখা আছে,

“শোন মেয়ে, আমার জিনিসপত্রের জন্য আমার খুব মায়া। একটু খারাপ ভাবে বলতে গেলে আমি ভীষণ হিংসুটে ছেলে। আজ পর্যন্ত কখনো কাউকে একটা পেন্সিল, ইরেজার পর্যন্ত ধারও দেই নি। সেই আমি তোমাকে আমার প্রিয় কাঠগোলাপ দিয়েছিলাম। আর তুমি সেটা ফিরিয়ে দিলে! ফিরিয়ে দিলেই বা কেন আমি ফেরত নেব! বারান্দার সবগুলো গাছ তোমায় দিয়ে গেলাম। আমার প্রিয় জিনিস, আমার প্রানের চেয়েও দামী তাই ওগুলোর যত্ন নিও।

চলবে….