কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব-০২

0
109

#কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
#পর্ব-২
আমার যখন জ্ঞান হলো তখন নিজেকে আবিস্কার করলাম বিছানায়। ভেবেছিলাম মাম্মাস বয় হয়তো আমায় কোলে করে ঘর পর্যন্ত পৌছে দিয়ে গেছে, কিন্তু না। শুনলাম আমি অজ্ঞান হবার পর সে দৌড়ে এসে আমার মা’কে বলেছে যে আমি বেহুশ হয়ে পড়ে আছি। গাধা কোথাকার! উঁহু গাধা না, ভীতু কোথাকার। আমার ৪২ কেজির হালকা শরীর টা বইতে পারলো না! নাকি আমাকে রোদে শুইয়ে শোধ নিলো!

আমার ঠিকঠাক সুস্থ হতে সময় লাগলো তিনদিন। এই তিনদিনে মা এক সেকেন্ডের জন্যও কাছ ছাড়া করলেন না আর নিলু ভাইয়ের সাথে দেখাও হলো না। শয়তান টা একটু ভদ্রতা করেও আমায় দেখতে এলো না। তিন দিন পর আবারও ছাদে গিয়েছিলাম যে নিলু ভাইয়ের দেখা পাব। কিন্তু দেখা হয় নি। শেষমেস লাজ, শরম ভুলে নিলু ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় গেলাম।

আন্টি বরাবরের মতোই আমাকে দেখে আহ্লাদে গদগদ হলো। ছুটে এসে বলল, আহারে সোনা মেয়েটা আমার! জ্বরে একদম নেতিয়ে গেছে।
আমি শুকনো হাসি দিয়ে বললাম,
“আন্টি নিলু ভাই কোথায়? তাকে থ্যাংকস বলার জন্য এসেছি। ”

আন্টি এবার তার দাঁতগুলো বের করে বলল, নিলু তো ঘরেই আছে কিন্তু ওকে থ্যাংকস কেন বলবে?

“আসলে সেদিন আমি ছাদে বেহুশ হয়ে গেছিলাম যখন তখন মা’কে খবর দিয়েছে তাই আর কী….

আন্টি মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, আরে না কী বলো প্রত্যাশা, এরজন্য নিলুকে ধন্যবাদ বলবে কেন! এটা তো ওর দায়িত্ব। তুমি তো ওর ছোটবোনের মতো ই।

আমার রক্ত টগবগিয়ে ফুটতে শুরু করলো মুহুর্তের মধ্যেই। এই নিলু গাধার মা কী বলছে! আমি নিলুর ছোট বোন কেন হতে যাব!

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, আন্টিই আসলে আমার তো নিলু ভাইয়ার সাথে জাস্ট একবার দেখা হইছে, এতো অল্প সময়ে তো আর ছোট বোন হতে পারিনি, না মানে বোন হতে গেলে তো একটু সময় লাগে। তাই ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

আন্টি আবারও রসগোল্লার মতো মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,

“ধুর বোকা মেয়ে, আমি তো নিলুকে প্রথম দিনেই বলে দিয়েছি যে আমার একটা মেয়ের শখ ছিলো কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সেই শখ পূরন না করলেও কোনো আফসোস নাই কারণ প্রত্যাশা এখন থেকে আমার মেয়ে।”

আমার আর হাসি পেল না এবার। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। চোখমুখ শক্ত করে বসে রইলাম। আন্টি গাজরের একটা প্রিপারেশন বানাতে লাগলো আমার জন্য। আর দুনিয়ার সব কথা আমার কানের কাছে টেপ রেকর্ডারের মতো বাজাতে লাগলো।
অনেক ক্ষন এভাবে কেটে যাবার পর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো আমার। নিলু ভাই সেজেগুজে কোথাও একটা যাচ্ছে, তাকে দেখে আমি জোরে জোরে আন্টিকে বললাম,

“আন্টি আমি এখন উঠি। আমার একটু পাব্লিক লাইব্রেরী তে যাবার দরকার ছিলো। ”

নিলু তখন একমনে জুতা পরছিল। আমার দিকে একটু ফিরেও তাকায় নি। আন্টি মুখ ছোট করে বলল, গাজরের পায়েশ টা খেয়ে যেতে প্রত্যাশা, জ্বর মুখে খেতে ভালোই লাগতো।

আমি তাড়াহুড়ো দেখিয়ে বললাম, না আন্টি। আসলে এখন না গেলে আমার দরকারী বই টা পাব না তাই…

“আচ্ছা যাও।”

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যাক আন্টি শেষ পর্যন্ত ছেড়েছে। কিন্তু হঠাৎই আন্টি তার ছেলেকে ডেকে বলল,

“এই নিলু ওকে একটু পাব্লিক লাইব্রেরী পর্যন্ত পৌছে দে। বেচারি অসুস্থ এমনিতেই। রাস্তাঘাটে বেহুশ হয়ে যদি আবারও পড়ে থাকে তখন আবার আরেক বিপদ। ”

নিলু তখন সিড়ি দিয়ে নামছিল। মায়ের কথায় এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে করিডোরে নেমে অপেক্ষা করতে লাগলো। যার অর্থ হলো আমাকে পৌছে দিবে।

আমি খুশিতে আটখানা হয়ে নামতে শুরু করলাম। এমনিতেই বাসা থেকে বেরোনোর সময় একটু সেজেগুজে বেরিয়েছিলাম তাই নিলুর পাশে হাটতে খুব একটা অসুবিধে হচ্ছিলো না। নাহলে ওকে হিরো আর আমাকে পেত্নী মনে হতো।

****
বড় রাস্তায় এসে নিলু ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে কী রিকশা ডেকে দেব?

আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম, কোনো দরকার নেই। আমি নিজে ডেকে নিতে পারব।

“এ্যজ ইউর উইশ। ”

“শুনুন। ”

“হ্যাঁ বলো। ”

“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সেদিনের ঘটনার জন্য। ”

কথাটা বলার পর যা ঘটলো সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। নিলু ইবলিশ টা আমাকে বলল,

“ইটস ওকে। রাস্তায় একটা কুকুর অসুস্থ হলে আমি চেষ্টা করি তাকেও হেল্প করতে। আর তুমি তো…..

কথা শেষ করতে দিলাম না। আমি শাসিয়ে বললাম,

“ওই ব্যটা তুই আমাকে কুকুর বললি কোন সাহসে?”

নিলু বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হয়ে যেকোনো সময় আমাকে ভস্ম করে দেবে এমন অবস্থা। চিউ চিউ করা মাম্মাস বয় বাঘের মতো গর্জন করে বলল,

“হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি তুই তোকারি করছ কেন?”

“আগে বল তুই আমাকে কুত্তার সাথে ক্যান তুলনা করলি?”

নিলয় এবার থতমত খেয়ে বলল, কুত্তা আইমিন কুকুর বলিনি তোমায়। এক্সাম্পল দিতে কুকুরের রেফারেন্স টানছি।

গলার স্বরে যেন মধু ঝরে পড়ছে। আমরা যে বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছি সেটা আমার খেয়াল না থাকলেও নিলয়ের আছে। নিলয় একটু কাছাকাছি এসে বলল, ওকে ফাইন, আই এম এক্সট্রেমলি সরি। পাব্লিক প্লেসে আর সিন ক্রিয়েট করো না প্লিজ।

আমি বললাম, রিকশা ডাকুন আর আমি যেখানে যেখানে যাব আপনিও সেখানে সেখানে যাবেন। আন্টি বলে দিয়েছে মনে নেই।

নিলয় কথা না বাড়িয়ে রিকশা ডাকলো। রিকশায় উঠে এক কোনে চেপে বসলো আর আমি বসলাম গায়ে গা লাগিয়ে। যতবার আমার গায়ের সাথে ওর গা লেগে যায় ততবারই ও পাশে সরে যায়। আর আমি ক্ষেপানোর জন্য সেটা আরও বেশী বেশী করেছি।

লাইব্রেরীতে যতক্ষণ সময় ছিলাম নিলয় বিরক্তমুখে দাঁড়িয়ে ছিলো। লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে আমি বললাম, বেশী করে ঝাল দিয়ে ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে এখন আমার।

বিনাবাক্যব্যয়ে ফুচকার দোকানে নিয়ে গেল। ফুচকার অর্ডার দিয়ে পাশের চেয়ারে বসে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো ভাবলেশহীন মুখে। আমি একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আপনি খাবেন না?

বলল, ফুচকা আমার সহ্য হয় না।

এরপর আরও দুই কিলোমিটার রিকশা চড়ে গেলাম আইসক্রিম খেতে। আইসক্রিম খাওয়ার কথা বললে এলবার বলেছিল, তোমার না জ্বর?

আমি বলেছিলাম, জ্বরের মধ্যে আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার।

আচ্ছা বলে তারপর চুপ করে রইলো।

ফুচকা, আইসক্রিম খেয়ে সন্ধ্যা নামার পরে রিকশা করে বাসার দিকে রওনা হলাম। তখন নিলয়ের একটা ফোন এলো। নিলয় ফোন ধরে ফোনের ওপাশে থাকা একজন কে খুব রিকোয়েস্ট করলো আরও একটু অপেক্ষা করতে। ফোনের ওপাশে ছেলে ছিলো নাকি মেয়ে সেটা বোঝা গেল না তবে নিলয় কে বেশ চিন্তিত লাগলো।

রিকশা থেকে আমি নামলেও নিলয় নামলো না। আমি নামতেই রিকশাওয়ালাকে বলল, মামা কুরিয়ার সার্ভিস রোড চলুন তো?

তারমানে কুরিয়ার সার্ভিসের লোককেই অতো রিকোয়েস্ট করেছিল। ইশ! আমার তখন খুব খারাপ লেগেছিল, আমি স্বার্থপরের মতো নিলয়ের সান্নিধ্যে থাকার জন্য ওর কাজের ক্ষতি করলাম। কাল এরজন্য সরি বলতেই হবে। এটাই ছিলো আমার প্রেমের শুরু। হিরোর মতো দেখতে ছেলেটার প্রেমে শুধু পড়িনি, পড়ে হাবুডুবুও খেতে শুরু করেছি।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে