Sunday, July 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 216



তুমি এলে তাই পর্ব-১২

0

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ১২

চৈতিদের বাসা থেকে বের হতেই মোবাইলে ফোন আসল।পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করতে অপর পাশ থেকে আরশি বলল,

“শুভ্র ভাই!খবরে দেখলাম চৈতি যে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল সে রেস্টুরেন্টে নাকি আগুন লেগেছে?

” হুম।”

আরশির ভয়ে গলা কাঁপছে।কথাগুলা যেন গলার মধ্যে আটকে আসছে।বের হতে চাইছে না।কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

“চৈতি!চৈতি ঠিক আছে?ওর কিছু হয়নি তো?”

“একটু বিপদ হয়েছিলো!”

“কিহ?”

শুভ্র হেসে বলল,

“কিন্তু আমি সামলে নিয়েছি।এখন আপাতত ভালোই আছে।চিন্তার কোন কারন নেই।”

আরশি চোখ বন্ধ করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

“ভাগ্যিস!ভাগ্যিস তুই বলেছিলি চৈতির কাছে টাকা নেই। ওকে যেন নিয়ে আসি। নাইলে কি যে হতো!ভেবেই আমার হাতের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।”

“থাক! এখন এসব কথা ভেবে লাভ নাই।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে এরকম বাজে একটা ঘটনা থেকে চৈতি রেহাই পেয়েছে।ওর কিছু হয়নি।

” হুম।তুইও চিন্তা করা বাদ দে ”

“অই ছেলের কি খবর?যে দেখা করতে চেয়েছিলো?”

“জানি না।চৈতিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বাট উনি বিষয়টা এড়িয়ে গিয়েছেন।”

“কি হলো আবার?আচ্ছা আমি ওকে জিজ্ঞেস করে দেখব। দেখি কি বলে।রাখি এখন।”

শুভ্র কি একটা মনে করে আবার কল দিলো আরশিকে।

“শুন, তোর সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।দেখা করা যাবে?”

“হ্যা,কিন্তু কি কথা?”

“সেটা বললেই বুঝবি।আমি আসছি। ”

আরশি কল কেটে ভাবল শুভ্র ভাই ওকে কি এমন কথা বলবে যেটা কলে বলা যায়না?পরেরটা পরে দেখা যাবে।নিশ্চয়ই জরুরি কোন কথা নইলে তো এভাবে আর ডাকতো না।ভেবেই চিন্তা করা বন্ধ করে দিল।

.
.
পরেরদিন,
বাসা থেকে বের হয়ে গেটের বাইরের দিকে তাকালো চৈতি। নাহ্,শুভ্র তো নেই।অন্যদিন তো গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে আজকে কি হলো?নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে!আজকে বাস দিয়েই যাওয়া যাক।এমনিতেও অনেক দিন বাস দিয়ে যাওয়া হয় না।ভেবেই একটু হাঁটতেই একটা বাস পেয়ে গেল। খালি বাস থেকে উঠেও গেল।কিছুক্ষন পর কলেজের সামনে আসতেই নেমে গেল। গেটে প্রবেশ করে একটু দুরেই আরশির মতো কাওকে একটা দেখা যাচ্ছে। একটু ভালো করে তাকাতেই দেখল ওটা তো আরশিই।দৌড়ে আরশির কাধে হাত রাখল।আরশি একবার চৈতির দিকে তাকিয়ে পাত্তা না দিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠে চলে গেল।চৈতির হাসিমুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেল।পরক্ষনে নিজেকে সামলে ক্লাসরুমের ভিতরে ঢুকে দেখল আরশি এখও আসেনি।চৈতি নিজের সিটে বসার কিছুক্ষন পরই আরশিকে আসতে দেখে হাত নাড়ালো।পাশের সিট থেকে নিজের ব্যাগটা উঠিয়ে আরশিকে বসার জায়গা করে দিল।কিন্তু আরশি একবার তাকিয়ে সামনের একটা সিটে গিয়ে বসে পরল।চৈতির মন এবার আরও বেশি খারাপ হয়ে গেছে।আরশি কেন এমন করছে তাই বোধগম্য হচ্ছে না তার।বারবার সামনে আরশির দিকে তাকাচ্ছে।আরশি পাশে বসা একটা মেয়ের সাথে দিব্যি হেসে কথা বলছে।ওর সাথে কেন কথা বলছেনা?ওর উপর কি রাগ করেছে?কিন্তু ও তো কোন দোষ করেনি তাহলে এরকম কেন করছে?কিছুক্ষনের মধ্যেই স্যার এসে পরল।
আশরাফ ক্লাসে ঢুকেই সর্বপ্রথম চৈতির সিটের দিকে তাকালো।কিন্তু মেয়েটার মুখটা এমন কালো হয়ে আছে কেন?কিছু কি হয়েছে?মাথা নিচু করে বসে আছে চৈতি।আশরাফ একটু ভালো করে দেখেই বুঝল আরশি যে কিনা প্রতিদিন চৈতির সাথে বসে সে বসে নি।চৈতির পাশের সিটটা খালি।

“মিস আরশি!চৈতির পাশে গিয়ে বসুন।”

“সরি স্যার!লাস্ট বেঞ্চে আমার গরম লাগে আর তাছাড়া লেখাও ভালো করে বুঝি না।”

“এতদিন কি করে বুঝতেন?আমি এই কলেজে আসার পর থেকেই দেখেছি প্রতিদিন আপনি লাস্ট বেঞ্চেই বসেছেন।তাহলে আজকে কি এমন হলো যে আপনি বোর্ডের লেখা দেখতে পান না?আমি কোন কথা শুনতে চাই না।আপনি এক্ষুনি গিয়ে চৈতির পাশে বসবেন।”

“কিন্ত স্যার….”

“আমি কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না।”

আরশি মুখ কালো করে চৈতির পাশে এসে বসল।প্রথমে চৈতি খুশি হলেও পরে আরশির কালো মুখ দেখে কোন কথা বলল না।
ক্লাস শেষে,

“কি হয়েছে তোর?আমার সাথে কথা বলছিস না কেন?আমি কি করেছি বল?এভাবে চুপ করে থাকিস না!”

আরশি বিরক্ত হয়ে বলল,

“তোর জন্য স্যার আমাকে লাস্ট বেঞ্চে বসতে বলেছে।”

“সরি,আমি চাইনি তুই মন খারাপ করে আমার পাশে বসবি।”

“হইছে!আর কিছু বলা লাগবে না।ভালো লাগছে না আমার। আমি গেলাম।”

আরশির যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে মন খারাপ করে কলেজ গেটের বাইরে এসে দেখল শুভ্রও আসেনি।উনি কি ভুলে গিয়েছেন আমার কথা নাকি আজকে আসেই নাই?
আর কিছু না ভেবে বাসে উঠে পরল।
.
.
ইফতার করে বিছানায় বসে বসে রেস্ট নিচ্ছিলো
চৈতি।কোনসময় যে চোখ লেগে গিয়েছে টের পায়নি সে।ঘুম ভাংগল ৮:৩০ এর দিকে। শোয়া থেকে উঠে এক কাপ কফি বানিয়ে পড়ার টেবিলে বসল সে।হঠাত পাশে টেবিলের উপর রাখা মোবাইলের আলো জ্বলে উঠতে দেখে মোবাইলটা চেক করতে একটা মেসেজ দেখতে পেল সে।

“আমি আপনার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।আসুন জলদি।”

চোখ ভালো করে ঢলে আবারও তাকালো।ঘুমের মধ্যে কি সে ভুলভাল দেখছে নাকি?এত রাতে কে ওকে মেসেজ করবে?তাও আবার বলছে বাসার নিচে!

“কে আপনি?আমার বাসা চিনলেন কি করে?”

“সেটা নিচে আসলেই দেখতে পারবেন।তাড়াতাড়ি নামুন।আমার হাতে বেশি একটা সময় নেই।আপনি না আসলে আমি আপনার বাসার ভিতর আসতে বাধ্য হবো।আপনি নিশ্চয়ই সেটা চান না!”

কে এই লোক?রীতিমতো কিনা হুমকি দিচ্ছে!

“আপনার আসতে হবে না।আমিই আসছি।”

মেসেজটা সেন্ড করেই মাথায় ওড়না দিয়ে ঘর থেকে বের হলো নিচে আসতেই আশরাফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে।গাড়িতে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে সে।আশরাফকে এত রাতে আসতে দেখে অবাক হলো খুব চৈতি।দ্রুত পায়ে হেঁটে সামনে গিয়ে মোবাইলে টাইপ করে বলল,

“আপনি এত রাতে এখানে কি করছেন?আর আমাকে নিচে ডাকলেন কেন?”

“কথা বলেতেই ডেকেছি।”

“কলেজই বলতেন!এখানে আসার কি দরকার ছিল?আচ্ছা কি বলবেন বলুন?একটু তাঁড়াতাঁড়ি বলুন আম্মু জানতে পারলে রেগে যাবে।”

“চৈতি আপনি শুভ্র ছেলেটার সাথে আর মিশবেন না!”

আশরাফের কথা শুনে চৈতি অবাক হয়ে বলল,

“মানে?এই কথা বলার জন্য আপনি এখানে এসেছেন?সিরিয়াসলি?আমি কার সাথে মিশব কার সাথে মিশব না সেটা কি আপনি ডিসাইড করে দিবেন?”

“নাহ,আমি সেভাবে বলিনি।”

“অইভাবেই বলেছেন।আপনার কোন রাইট নেই আমাকে আদেশ করার।হ্যা আছে সেটা শুধু কলেজের মধ্যে।এর বাইরে না।আর একটা কথা আমি শুভ্রের সাথে কথা বলব। একশবার কথা বলব।অই মানুষটাই একমাত্র আমাকে প্রাধান্য দিয়েছে।আমার সব প্রয়োজন -অপ্রয়োজন সবকিছু বুঝেছে।আপনার মতো কথায় কথায় অপমান করেন নি।সবসময় আমার পাশে থেকেছেন।সবরকমের সাহায্য করার চেষ্টা করে গেছেন কোন স্বার্থ ছাড়াই।আপনার এক কথায় আমি উনার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিব ভাবলেন কি করে?আমি আসছি।”

“আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি চৈতি।আপনার সাথে কাওকে আমার সহ্য হয় না।এতে দোষটা কোথায়? কি করব আমি?”

ফিরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই আশরাফের এমন মেসেজ দেখে স্তব্দ হয়ে গেল চৈতি।পিছনে ফিরে দেখল আশরাফ অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে চৈতির দিকে।

” আপনি এসব কি বলছেন?”

আশরাফ মলিন হেসে বলল,

“আমাকে পাগল ভাবছেন তাই না?ভাবছেন মাথার তার ছিড়ে গেলো কিনা?প্রথমে আমিও ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম যে মেয়েটাকে আসি দু চোখে দেখতে পারিনা,যাকে দেখলেই শুধু তাচ্ছিল্যের কথা বের হয় মুখ থেকে তাকে আমি কি করে ভালোবেসে ফেললাম?কিন্তু আমি অসহায়! নিজেকে আটকাতে পারি নি।”

“দেখুন,আপনার আর আমার মাঝে যে সম্পর্ক আছে সেটা শুধু টিচার আর স্টুডেন্টের!একজন টিচার হয়ে আপনি আপনার স্টুডেন্টকে এসব বলেন কোন সাহসে?”

“তোমার সাথে যেদিন আমার ফাস্ট দেখা হয়েছিল সেদিন তো আমি তোমার টিচার ছিলাম না!”

“হ্যা ছিলেন না।কিন্তু এখন আপনি আমার টিচার।একজন টিচার হিসেবে আপনার এসব বলা উচিত হয়নি।আর আপনি ভাবলেন কি করে আপনি বললেই আমি রাজি হয়ে যাবো,আপনাকে ভালোবাসবো?আপনি আমাকে রিজেক্ট করেছেন আমি করিনি।আপনার মা আমাকে দেখতে এসে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করেছেন।সেটা আমি এখনও ভুলিনি।”

“আমি এর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।মানুষ তো ভুল করেই তাই না?এটাও আমার ভুল! আমি মেনে নিচ্ছি সেটা।”

“আপনি মেনে নিলেই সবকিছু আমি ভুলে যাব না।আপনার মুখে আমি যেন আর এ কথা না শুনি।”

“কি করলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে?”

“আপনি ক্ষমার যোগ্যই না।ক্ষমা করবার চিন্তা করা তো দুরের কথা! আমি আসছি।”

এক মুহুর্তও দেরি না করে দৌড়ে গেটের ভিতর ঢুকে গেল চৈতি।জীবনে এমন একটা মুহুর্ত, পরিস্থিতিতে পরবে তা সে কোনদিন চিন্তা তো দুরের কথা, কল্পনাও করেনি।চৈতির যাবার দিকে আশরাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।কিন্তু সবদিক থেকে বিবেচনা করলে তো সব দোষ তারই।সে যদি তার মার কথা না শুনত! যদি চৈতিকে বিয়ে করার ডিশিসন নিতো,চৈতির পাশে এসে দাঁড়াতো তাহলে তো তাকে আজ এভাবে অসহায় হতে হতো না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠল।বাসার সামনে আসতেই রোবটের মতো গাড়ি থেকে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নিজের রুমেই যাচ্ছিলো।

“আশরাফ!তোকে আজ এমন এলোমেলো লাগছে কেন?কি হয়েছে তোর?”

“কিছুনা!”

“কিছুনা বললেই হলো?চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে।”

বলেই আশরাফের কাছে এসে মুখে হাত বুলিয়ে দিতেই আশরাফ এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিল।

“ছোবে না তুমি আমায়।”

“কি হলো?তুই এভাবে কথা বলছিস কেন?”

“আমার এ পরিস্থিতির জন্য তুমি দায়ী।তুমি যদি সেদিন চৈতিকে অপমান না করে এ বাড়ির বউ হিসেবে আনতে তাহলো আমার আজ এ অবস্তা হতো না।”

“তুই শান্ত হো!চৈতি?কোন মেয়েটা? অইযে কানে শুনেনা আর বোবা?”

আশরাফ নিজেকে আটকাতে পারলো না।কাদঁতে কাঁদতে বললো,

“হ্যা মা!জানো?আমি না অই বোবা মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছি।অনেক চেয়েছিলাম নিজেকে আটকাতে কিন্তু পারিনি।আমার মস্তিষ্ক বলছে ওকে ভালোবাসা উচিত না!আবার আমার মন তার ঠিক বিপরীত কাজটা করছে!আমি আর পারছিনা নিজেকে সামলাতে।আমি হাপিয়ে উঠেছি প্রতিনিয়ত মস্তিষ্ক আর মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে।”

পরক্ষনেই হেসে বলল,

“অবশ্য আমিও না! এসব কথা কাকে বলছি যে মানুষটা অই মেয়েটাকে দেখতে পারে না তাকে?কি বোকা আমি।বাদ দাও!এসব নিয়ে মাথা ঘামিও না।চৈতি আমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে।আমার করা অন্যায়গুলো আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তোমার টেনশন করার কোন কারণ নেই। ”

বলেই রোবটের মতোই সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেল।ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন,

“আমার ছেলেটা তো এমন ছিলো না!না না,আমি এই আশরাফকে চিনি না।হঠাত করে এমন কি করে হয়ে গেল ও?”

চলবে……

তুমি এলে তাই পর্ব-১১

0

#তুমি_এলে_তাই
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা

আরশি কলেজ ছুটির পরই চৈতিদের বিল্ডিংএর সামনে এসে দাঁড়িয়ে শুভ্রকে ফোন করল।ফোন রিসিভ করতেই আরশি বলল,

“আমি আপনার বাসার নিচে।তাড়াতাড়ি আসেন।”

বলেই ফোন রেখে দিল।শুভ্র কিছুক্ষন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইল।এই মেয়ে এমন কেন?এভাবে হুট করে কেও ফোন দিয়ে নিচে আসতে বলে?উত্তরে যে কিছু বলবে তারও তো সুযোগ দেয় নাই মেয়েটা।আজব!
ভাবতে ভাবতে দরজা লক করে নিচে গেটের সামনে যেতেই আরশিকে দেখতে পেল।কাধে ব্যাগ দেখেই বুজল কলেজ থেকেই সরাসরি এসেছে।

“কিরে?কি এমন দরকার পরল যে কলেজ থেকে ডাইরেক্ট আমার বাসায় চলে আসলি?”

“চৈতি যে রেস্টুরেন্টে ছেলের সাথে দেখা করতে গেছে জানেন?”

“হ্যা!না জানার কি আছে।অই তো বলল।”

“ওকে গিয়ে নিয়ে আসুন।ও বাসা থেকে টাকার ব্যাগ নিতে ভুলে গেছে।ওর কাছে এখন এক টাকাও নাই।”

“কিন্তু আমার তো একটু কাজ ছিল।”

“ও আসবে কি করে?আমি রেস্টুরেন্টের ঠিকানা,নাম সবকিছু মেসেজে জানিয়ে দিচ্ছি আপনি যান।”

“আচ্ছা।একটু রেডি হয়ে আসি।”

“হুম।আমি গেলাম।”

শুভ্র ঘরে ফিরে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরল।গুলশানের কোন একটা রেস্টুরেন্টেই নাকি দেখা করতে গিয়েছে।কিছুদুর যেতেই হঠাত একটা রেস্টুরেন্টের কাছে ভীড় দেখতে পেল।দুর থেকে যা বুঝল অই রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে।কাজ করে কিভাবে এরা যে আগুন লাগার চান্স থাকে।এত এত মানুষ যায় একটু সাবধানে কাজ করলেই তো হয়।না জানি কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।মনে মনে বিরক্ত হয়ে গাড়ি সামনে আগাতে নিয়েই কি একটা মনে করে গাড়ি থামালো।এই রেস্টুরেন্টে আবার চৈতি নাই তো?রেস্টুরেন্টের নামটা কেমন চেনাচেনা লাগছে।মনে মনে দোয়া করছে এই রেস্টুরেন্টে যেন চৈতি না থাকে।কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল বের করে মেসেজে গিয়েই নামটা দেখে হাত থেকে মোবাইলটা নিচে পরে গেল।তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে৷ ভীড় ঠেলে সামনে যেতেই কয়েকটা পুলিশ থামিয়ে বলল,

“ভিতরে আগুন লেগেছে দেখতে পারছেন না?”

“রেস্টুরেন্টের ভিতরে আমার পরিচিত একজন আছে।”

“ভেতরে কেও নেই।”

“আছে।আমি সিউর!”

“আপনি জানলেন কি করে?”

“দেখুন মেয়েটা যে হট্টগোল শুনে বেরিয়ে আসবে তার কোন চান্স নেই কারণ সে কানে শুনতে পারে না।আর ভিতরে থাকলে চিৎকার করে যে কাওকে ডাকবে সেটাও পসিবল না কারণ সে কথা বলতে পারে না।”

“উনি নিশ্চয়ই বেরিয়ে গিয়েছেন।আপনি শুধু শুধু টেনশন করছেন।”

“আমি নিজে গিয়ে চেক করতে চাই।”

“কিন্তু এতে আপনার ক্ষতি হবে।”

“আমার কোন ক্ষতি হবে না। যেতে দিন আমাকে।আমি জাস্ট সিউর হতে চাই যে উনি ভিতরে আছেন কিনা।প্লিজ যেতে দিন আমাকে।”

“দেখুন আমি আপনার অবস্তাটা বুঝতে পারছি।আমার হাতে কিছুই করার নেই।একজনের জীবন বাঁচাতে আমি আরেকজনকে বিপদে ফেলতে পারি না। ”

“আমার যদি কিছু হয় তার দায়ভার আমি নিব।আপনাকে বিপদে ফালাব না।প্লিজ একটু বুঝার চেষ্টা করুন।মেয়েটা অসহায়!ও নিজে কিছু করতে পারবে না।সাহায্যের জন্য চিৎকারও করতে পারবে না।প্লিজ আমাকে যেতে দিন।”

“কিন্তু…..”

“যেতে দাও ওকে।এখনও আগুন অতটাও ছড়ায়নি যে যেতে পারবে না ও।যেতে দাও ওকে উনাকে তুমি আটকে রাখতে পারবে না।”

কথাটা শুনে শুভ্র আর পুলিশ অফিসার দুইজনেই পাশে তাকালো।লোকটাকে দেখেই পুলিশের লোকটা বলল,

“অবশ্যই স্যার।আপনি যেতে পারেন।”

শুভ্র আর এক মুহুর্তও দেরি না করে সিড়ি দিয়ে বেয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতর প্রবেশ করল।
.
.
চৈতির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।ও এখনো বুঝতে পারছে না রেস্টুরেন্টে হঠাত করে কি হলো?রেস্টুরেন্টে কি আগুন লেগেছে?কেও ওকে ডাকলো না কেন?কিছুক্ষন পর পর কাশি আসছে। তার সাথে শ্বাসকষ্ট তো রয়েছেই।না ওকে এখান থেকে বের হতে হবে।ভেবেই চেয়ার থেকে উঠে একটু হেঁটে সামনে যেতেই পরে যেতে নিলে কেও একজন দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল।চৈতি তাকাতেই শুভ্রের মুখ ভেসে উঠল।

“চৈতি,চোখ বন্ধ করবেন না। চোখ খোলা রাখুন।কিচ্ছু হয়নি আপনার।এক্ষুনি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

বলেই পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে চৈতির মুখের সামনে ধরল যাতে ধোয়া নাকে যেতে না পারে।চৈতি এত ধোয়ার মাঝে শুভ্রের বলা কথাটুকু বুঝতে পারল না।

“চলুন।”

এক হাতে জড়িয়েই সিড়ি দিয়ে নামার সময় সিড়ির নিচে আগুন দেখে ভয়ে চৈতি স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।চৈতিকে দাঁড়াতে দেখে শুভ্র বলল,

“কি হলো?এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?চলুন!আমাদের হাতে বেশি সময় নেই।”

চৈতি তখনও ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আগুনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চৈতিকে ছেড়ে ইশারায় বলল,

“চৈতি আমাদের যেতে হবে এখান থেকে।সিড়ির নিচের দিকে তাকাবেন না।চোখ বন্ধ করে রাখুন দরকার হলে।প্লিজ চলুন এখান থেকে।নইলে পরে আটকা পরে যাব দুজনে!”

শুভ্রের কথা শুনে চৈতির হুশ ফিরল।নাথা নেড়ে সিড়ি বেয়ে নামতে শুরু করল।

রেস্টুরেন্ট থেকে নেমেই একটা পার্কের বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে পাশের দোকান থেকে এক বোতল পানি এনে চৈতির দিকে এগিয়ে দিল শুভ্র।শুভ্রের হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে এক ঢোকে পুরো পানির বোতলের পানি খেয়ে একটা জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল।

“ঠিক আছেন আপনি?”

চৈতি মাথা নাড়লো।

“চলুন ডাক্তারের কাছে যাই।”

“নাহ, আমার ডাক্তার দেখানো লাগবে না।আমি একদম আছি।”

“কিন্তু তাও…..কোথাও ব্যাথা পাননি তো?”

“নাহ,ধন্যবাদ। হেল্প করার জন্য। এত বড় বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য।আমি জানতামই না আগুন যে লেগেছে।কেও বলেও নাই।হঠাত নাকে ধোয়ার গন্ধ পেয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখি কেও নেই।ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।সবাই নিশ্চয়ই নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যই দৌড়ে চলে গিয়েছিল।তাই আমাকে তাদের চোখে পরেনি।আর আমিও কি একটা চিন্তায় বিভোর ছিলাম তাই হয়তো টের পাইনি।”

“কিন্তু তাও ওদের তো উচিত ছিল আপনাকে জানানোর!আপনাকে খোঁজার জন্য যখন যেতে চেয়েছিলাম তখন পুলিশ আমাকে বলেছিল ভিতরে নাকি কেও নাই!চেক করেছেন তারা।তাহলে আপনি কই থেকে আসলেন?একটা জল জ্যান্ত মানুষকে নাকি তারা দেখেননি!কিভাবে সম্ভব?শুধু আপনার জন্য ওদের কিছু বললাম না।নইলে আমিও শেষ দেখে ছাড়তাম।ওদের পুলিশ হওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই!”

শুভ্রকে এত রাগতে কখনো চৈতি দেখেনি।আজকেই ফাস্ট দেখল।এর আগে যতবারই কথা হয়েছে শুভ্র যথেষ্ট নরম, শান্ত কন্ঠে কথা বলেছে।

“আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন?কিছু তো হয়নি তাই না?”

“হতে তো পারত!অনেক বড় একটা এক্সিডেন্ট হতে পারতো।আমি সময়মতো না গেলে…..”

“শান্ত হন।”

শুভ্র একটা জোরে শ্বাস নিয়ে শান্ত হয়ে বলল,

” আপনি যে ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছেন সেই ছেলে কই?ওকে তো দেখলাম না!”

“উনি অনেক আগেই চলে গেছেন।”

“কিহ্!কিন্তু আপনাকে ফেলে উনি কিভাবে চলে গেলেন?”

“আমিই যেতে বলেছি উনাকে।”

“কিন্তু কেন?”

“বাদ দেন না!”

“আচ্ছা।বাসায় যাবেন এখন?”

“হুম।”

“চলুন।”

চৈতি বেঞ্চ থেকে উঠে শুভ্রের পিছু পিছু হাঁটতে লাগল।গাড়ির সামনে আসতেই শুভ্র গাড়ির দরজা খোলে দিলো।চৈতি চুপচাপ সিটে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল।শুভ্র নিজের সিটে বসে চৈতির দিকে একবার তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।অতঃপর গাড়ি চালানোর দিকে মনযোগ দিল।বাসার সামনে আসতেই গাড়িটা গ্যারেজে পার্কিং করে চৈতির সামনে এসে বলল,

“চলুন!আপনাকে আপনার বাসায় দিয়ে আসি।”

“আমি পারব যেতে!”

“কোন কথা না।এত বড় এক্সিডেন্টের পর আপনার শরীর দুর্বল হয়ে আছে আমি কোন রিস্ক নিতে চাচ্ছি
না।”

“কিন্তু….”

“আপনার মা তো আমাকে চিনেনই!তাহলে অসুবিধাটা কোথায়?”।

” আচ্ছা চলুন।”

দরজা নক করতেই দরজা খুলতে খুলতে চৈতির মা বললেন,

“কিরে!এত দেরি হলো কেন?”

সামনের দিকে তাকাতে শুভ্রকে দেখে বললেন,

“একি শুভ্র বাবা তুমি?আর চৈতির কি হয়েছে?”

“একটু পরে বলি?উনার রুম কোনদিকে?”

চৈতির মা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিতেই শুভ্র চৈতিকে ওর রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,

“আপনি রেস্ট নিন।”
চৈতিকে বসিয়ে রুম থেকে বের হতেই চৈতির মা সামনে এসে বললেন,

“বলবে তো!ওর কি হয়েছে?চোখ মুখ অমন হয়ে আছে কেন ওর?”

শুভ্র সব খুলে বলতেই চৈতির মা বললেন,

“বলো কি?ওর কোন কিছু হয়নি তো?”

শুভ্র হেসে বলল,

“নাহ আন্টি!একদম ঠিক আছে ও।”

“তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব…”

“আরে আন্টি!তার কোন দরকার নেই।আমি আজ আসি।”

চৈতিদের বাসা থেকে বের হতেই মোবাইলে ফোন আসল।পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করতে অপর পাশ থেকে…..
#চলবে….

তুমি এলে তাই পর্ব-১০

0

#তুমি_এলে_তাই
#পর্ব:১০
#লেখিকা:ইশরাত_জাহান_অধরা

“কলেজ ছুটির সময় আপনাকে আমার জন্য ওয়েট করা লাগবে না।”

চৈতির কথা শুনে শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,

“কেন?কোথাও যাবেন?”

“আসলে আম্মুর ফ্রেন্ডের ছেলের সাথে দেখা করতে হবে।তাই কলেজ শেষে সরাসরি অই রেস্টুরেন্টে চলে যাব।”

“অহ, আচ্ছা ঠিক আছে।বেস্ট অফ লাক!”

“বেস্ট অফ লাক বললেন কেন?”

“আপনাকে ছেলে দেখতে আসবে তো বেস্ট অফ লাক বলব না?”

চৈতি কিছু না বলে চুপ করে রইল।

“আমি চাই অনেক ভালো একটা ছেলের সাথে আপনার বিয়ে হোক!যাতে আপনি সুখী থাকেন।আপনাকে যেন মানুষের কাছ থেকে কথা শুনতে না হয়।”

শুভ্রের কথা শুনে চৈতি অবাক হয়ে শুভ্রের দিকে তাকালো।পরক্ষনেই ভাবলো তার ভালোর কথা চিন্তা করে বলেই তো এসব বলল।

“আচ্ছা,তবে আসি।বাসায় এসে বলবেন কিন্তু ছেলেকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা!”

চৈতি উপর নিচ মাথা নাড়ালো।

শুভ্র হেসে নিজের গাড়িতে ওঠে চলে গেল।

চৈতি শুভ্রের যাবার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ক্লাসে চলে গেল।গিয়ে আরশির কাছে বসতেই আরশি বলল,

“কিরে?তোর মুখ এমন কালো হয়ে আছে কেন?কিছু কি হয়েছে?”

“নাহ তো!”

“সত্যি করে বল।আমি জানি তুই মিথ্যা বলছিস।”

“আজকে এক ছেলের সাথে দেখা করতে হবে।ছেলেটা আম্মুর বান্ধবীর ছেলে।উনি আমার সম্পর্কে সবকিছু জেনেশুনেই দেখা করতে চেয়েছে।”

“তাহলে তো ভালোই হলো।এবার মনে হয় তোর বিয়েটা হয়েই যাবে।”

“কিন্তু,আমার তো খুশি হবার কথা!আমি কেন যেন খুশি হতে পারছি না।বারবার মনে হচ্ছে ছেলে যাতে আমাকে মানা করে দেয়।এতদিন তো ভাবতাম যার তার সাথে আমার বিয়ে হলেই হয়।কিন্তু এখন কেন মন থেকে খুশি হতে পারছিনা?”

“শুভ্র ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছিস?”

আরশির কথা শুনে চমকে আরশির দিকে তাকিয়ে বলল,

“উনাকে কেন আমি ভালোবাসব?কিসব যাতা বলছিস?”

“তাহলে তোর হাত কাঁপছে কেন?”

“কই হাত কাঁপছে?এসব ফালতু কথা একদম বলবিনা।”

কিছুক্ষন থেমে আবার বলল,

“উনি আমাকে বলেছেন ছেলের যাতে আমাকে পছন্দ হয়।উনাকে ভালোবেসে ফেললেই বা কি হবে?উনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।জাস্ট মানবতার খাতিরে সাহায্য করে এসেছেন।”

“হ্যা মানছি।শুভ্র ভাইয়ের মন ভালো। উনি সবাইকেই সাহায্য করার চেষ্টা করেন।কিন্তু উনার চোখে আমি তোর জন্য চিন্তা,ভালোবাসা দেখেছি!আমার দেখা তো আর ভুল হতে পারে না।”

“ভুলই দেখেছিস তুই।আচ্ছা একটু চুপ থাক!ভালো লাগছেনা কিছু।”

“হুম।”

ছুটির পর,

“আমার কথাটা একটু ভেবেচিন্তে দেখিস।শুভ্র ভাই তোকে নিশ্চয়ই ভালোবাসে।কোন মেয়ের প্রতি আমি ওকে এতটা যত্নশীল হতে দেখেনি।যতোটা তোর প্রতি শুভ্রভাইকে হতে আমি দেখেছি।”

“তোর কাছে কিছু টাকা হবে?আসলে আসার সময় টাকার ব্যাগটা আনতে ভুলে গিয়েছি।”

আরশি নিজের ব্যাগ থেকে ১০০০ টাকার নোট নিয়ে চৈতির দিকে এগিয়ে দিল।

“এত টাকা লাগবে না।১০০ টাকা হলেই হবে।রেস্টুরেন্ট বেশি একটা দুরে না। ”

“কত রকম বিপদ থাকতে পারে না?প্রয়োজন হলে তো কাজে লাগাতে পারবি।তোর কাছে টাকাটা রাখ।পরে দিয়ে দিস।”

“কিন্তু….”

“আমার কাছে ভাংতি টাকা নাই।নিলে নে নাহলে যাই আমি।”

“আচ্ছা দে।কালকেই তোকে ফেরত দিয়ে দিব।চিন্তা করিস না।”

“এক যুগ পরে দিলেও কোন সমস্যা নাই আমার।তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে।আর নিজের মনের বিরুদ্ধে কিছু করিস না।নিজের মনের কথা শুনবি।নাহলে আজকে হোক বা কয়েক বছর পর ঠিক পস্তাবি।মনে হবে কেন আগে কাজটা করলাম না।পরে যাতে আফশোস না করিস।দেখিস!”

চৈতি আরশির যাবার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা সিএনজি নিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা হলো।
রেস্টুরেন্টের ভিতর যেতেই একটা ছেলে এসে বলল,

“আপনি চৈতি?”

কথা বুঝতে পেরে চৈতি মাথা নাড়ালো।

ছেলেটা একটা টেবিলের দিকে ইশারা দিয়ে বলল,

“অইযে ওখানে চলুন।”

চৈতি সিটে বসতেই ছেলেটা বলল,

“কিছু অর্ডার করব?কি খাবেন বলুন?”

চৈতি খাতায় লিখে বলল,

“আমি কিছু খাব না।”

ছেলেটা হেসে বলল,

“তা বললে হয় নাকি?প্রথম দেখা।খালি মুখে কিভাবে যেতে দেই।এক কাপ কফি অর্ডার করি?”

“কফি খেতে পারি না।তিতা লাগে।”

“তাহলে জুস?”

“হুম।”

ওয়েটারকে ডেকে জুস আর কফি অর্ডার দিয়ে বলল,

“আমার নাম নিলয়।নিশ্চয়ই শুনেছেন?”

“জ্বি।”

“আপনার সম্পর্কে সব জানি।আপনাকে পছন্দও হয়েছে।শান্ত স্বভাবের মেয়ে আপনি।কিন্তু….”

“কিন্তু?”

“দেখুন আপনার সাথে চলতে আমার অনেক অসুবিধে হবে।যেহেতু আপনি শুনতে পাননা সেহেতু কোন একটা কাজের সময় আপনাকে অন্য রুম থেকে ডাকা যাবে না যে আমার এটা লাগবে।আবার সবসময় তো হাতের লেখা পড়ে কথা বুঝা সম্ভব না।তাতেও আমার কোন অসুবিধা নেই। আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন যে আমি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করি।মাস শেষে যে টাকা পাই তা অনেক কম।দুজনের চলতে কষ্ট হবে।তার উপর কয় মাস পর যদি আমাদের বাচ্চা হয় তাহলে তারও ভরণপোষণের জন্য টাকা লাগবে।”

“আপনি এসব কেন বলছেন?”

“কিছু মনে করবেন না,আপনার মা যদি বেশি না কয়েক লাখ টাকা দিত তাহলে একটা বিজনেস শুরু করতে পারতাম এতে আপনিও সুখী হতেন।”

“আপনি কি যৌতুক চাচ্ছেন?”

“না না,যৌতুক কেন চাইব?এটা তো আমি শুধু একা ভোগ করব না তাই না?আপনি আমাদের বাচ্চার ভালোর জন্যই চাচ্ছি. এটাকে কি যৌতুক বলে?”

“আপনি ইনডাইরেক্টলি যৌতুকের কথাই বলছেন।দেখুন আমি কাওকে যৌতুক দিয়ে বিয়ে করব না।”

“ভেবে দেখুন আমাকে বিয়ে না করলে আপনি সারাজীবন কুমারীই থেকে যাবেন।কেউ আপনাকে বিয়ে করবে না।এর চেয়ে কয়েক টাকা খরচ করে যদি আপনার বিয়েটা হয় তাহলে অসুবিধাটা কোথায়?”

“সেটা নিয়ে আপনার কোন চিন্তা করতে হবে না।আমি দরকার হলে সারাজীবন কুমারীই থাকব তবুও আপনার মতো মানুষকে আমি যৌতুক দেয়ে কোনদিন বিয়ে করব না।”

“যা বলছেন সব ভেবে বলছেন তো?

” অবশ্যই।”

“পরে আবার পস্তাবেন না কিন্তু!”

“প্রশ্নই আসে না।”

“আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।”

“এতক্ষন যে আপনি আমাকে অপমান করলেন আমার শারীরিক ক্রুটি নিয়ে! ”

“ওটাকে কি অপমান বলে নাকি?আমি যা সত্যি তাই বলেছি।আপনার মতো মেয়েকে কে বিয়ে করবে?তাও আপনার সাত জনমের ভাগ্য যে আমার মতো একটা ছেলে যৌতুকের বিনিময়ে হলেও আপনাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। আজকাল দেখছি সত্যি কথা বললেও দোষ।”

“দয়া করে আপনি আসতে পারেন।আর যাওয়ার সময় আপনার কফির বিল দিয়ে যাবেন।আপনার কফির বিল আমি দিতে পারব না।”

“ফাজিল কোথাকার!”

বিড়বিড় করতে বিল দিয়ে রেস্টরেন্ট থেকে নেমে গেল।চৈতি হালকা হেসে জুস খাওয়াতে মন দিৱ।এখন একটু শান্তি লাগছে।জুস খেতে খেতে খেতেই হঠাত নাকে ধোয়ার গন্ধ পেল।এখানে ধোয়া আসল কোথা থেকে ভেবে পেল না সে।আশে পাশে তাকাতেই দেখল পুরো রেস্টুরেন্ট খালি যেটা একটু আগেও ভরাট ছিল।ধোয়ার পরিমান আস্তে আস্তে বাড়ছে।চৈতির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।ও এখনো বুঝতে পারছে না রেস্টুরেন্টে হঠাত করে কি হলো?রেস্টুরেন্টে কি আগুন লেগেছে?কেও ওকে ডাকলো না কেন?কিছুক্ষন পর পর কাশি আসছে। তার সাথে শ্বাসকষ্ট তো রয়েছেই।না ওকে এখান থেকে বের হতে হবে।ভেবেই চেয়ার থেকে উঠে একটু হাঁটতেই……
#চলবে…..

তুমি এলে তাই পর্ব-০৯

0

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৯

“আরে গান না।চৈতির জন্য হলেও গান।ও তো কোনদিন আপনাকে গাইতে দেখেনি!”

চৈতির কথা শুনে শুভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।চৈতির দিকে মিষ্টি করে হেসে সামনে গিয়ে গিটার নিয়ে দাঁড়ালো।শুভ্রের হাসির কারন খুঁজে পেল না চৈতি। অতঃপর চৈতিকে উদ্দেশ্য করে ইশারায় বলল,

“আমার গাওয়া গানটা আপনার জন্য মিস চৈতি।

কি যেন ভেবে শুভ্র একটা ছেলের কাছে গিটারটা দিয়ে কানে কানে গানের নাম বলে ওকে বাজাতে বলল।শুভ্র যে গিটার বাজাতে পারে না ব্যাপারটা এমন নয়।কিন্তু ওর মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে।সেটা চৈতির জন্যই। অতঃপর গিটারটা দিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরল।

আমি সেই সুতো হবো

যে তোমায় আলোকিত করে

নিজে জ্বলে যাবো

আমি সেই নৌকো হবো

যে তোমায় পার করে

নিজেই ডুবে যাবো

হবো সেই চোখ

যে তোমায় দেখেই বুঁজে যাবো

হবো সেই সুর

যে তোমায় মাতিয়ে করুণ হবো

হব সেই চাঁদ

যে হয়ে গেলে রাত

তোমাকে আলো দেবে

দিন ফিরে এলে

আবার ফুরিয়ে যাবো

শুধু ভালবেসো আমায়।

পুরোটা গান শুভ্র মুখে গেয়েছে সাথে চৈতি যাতে লিরিক্স বুঝে গানের অর্থ বুঝে সেজন্য পুরো গানটা হাত দিয়ে ইশারা করেও গেয়েছে।চৈতি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষন।কই কেও তো ওর জন্য এভাবে গান গায়নি!তাহলে শুভ্রই কেন?

” শুভ্র ভাই আপনার মাথায় যে এত বুদ্ধি তা তো আগে জানতাম না!চৈতি যাতে আপনার গানের অর্থ বুঝে সেজন্যই ওকে ডেডিকেট করে গাইলেন তাই না?”

আরশির কথা শুনে শুভ্র চৈতির দিকে তাকিয়ে ওর অবাক,বিস্মিত হওয়া চেহারা দেখতে পেল।এই চেহারা দেখে মাথা নিচু করে হেসে আরশিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আমার মাথায় তোর মতো গোবর নাই যে এই সামান্য ব্যাপারটা মাথায় আসবে না।”

শুভ্রের কথা শুনে আরশি মুখ ফুলিয়ে বলল,

“আপনার প্রশংসাও করা যায় না।শুধু পিঞ্চ মেরে কথা বলেন।”

“প্রশংসা করতে যাস কেন?আমি বলছি তোরে?”

খাওয়া দাওয়া শেষে শুভ্র আর চৈতি রওনা দিল বাসার উদ্দেশ্যে।

“আজকে গাড়ি নাই আমার কাছে।আর এত রাতে কিছু পাবো বলেও মনে হয় না।হেঁটে যেতে পারবেন তো?”

চৈতি হেসে বলল,

“আমার হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস আছে।আর আরশির বাসাটা তো এতো দুরেও না যে হেঁটে যেতে পারব না।”

“কিন্তু আপনি তো হিল জুতা পড়ে আছেন।যেতে পারবেন তো?”

“হুম।”

“তাহলে তো ভালোই।”

কিছুক্ষন পর,

চৈতি পাশের একটা বেঞ্চে বসে পরল।চৈতিকে বসে পরতে দেখে শুভ্র অবাক হয়ে বলল,

“কি হলো?বসে পরলেন যে?”

চৈতি এখন শুভ্রকে কি করে বলবে যে তার পায়ের অবস্তা বেহাল হিল জুতা পরে?খুব তো বলেছিল হিল জুতা পরে হাঁটতে পারবে এখন কি হবে?কেন যে বলতে গেল?হিল জুতা পরার অভ্যাস ওর একদম নেই।তাও আবার নতুন জুতা।পায়ের পিছনের দিকটা জ্বলছে খুব।কিন্তু এখন কি বাহানা দিবে?

“বেঞ্চটা অনেক সুন্দর তো তাই বসতে ইচ্ছা হলো।৫ মিনিট বসেই আবার হাঁটা শুরু করব।আপনিও বসুন না।অনেক তো হাঁটলেন।”

শুভ্রও কিছু না বলে চৈতির পাশে বসে পরল।১ মিনিট পার হতেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।

“দাঁড়িয়ে গেলেন যে?কোন সমস্যা?”

“আসলে আমার একটু কাজ আছে।আমি এক্ষুনি আসছি।”

বলেই চলে গেল।চৈতি আরামে বসল।ভালোই হয়েছে।উনার কাজ শেষ হতে নিশ্চয়ই সময় লাগবে।ততক্ষনে আমার পায়ের ব্যাথা একটু কমে যাবে।ভেবেই ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ফেসবুক স্ক্রলিং করতে লাগল।

কিছুক্ষনের মধ্যেই শুভ্র ফিরে আসল।শুভ্র যে এসেছে তা চৈতি এখনও দেখেনি।ও মোবাইলে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।চৈতিকে মোবাইল চালাতে দেখে শুভ্র কিছু না বলে চৈতির পায়ের কাছে নরমাল স্যান্ডেল জোড়া রেখে দিল।চৈতি এতক্ষনে হুশ আসল।ততক্ষনে শুভ্র ওর পাশেই বসে পরেছে।শুভের দিকে তাকাতেই শুভ্র পকেট থেকে দুটো ওয়ানটাইম বেন্ডেজ বের করে চৈতির হাতে রেখে বলল,

“পায়ের যেখানে জ্বলছে সেখানে বেন্ডেজ লাগিয়ে জুতাগুলা পরে ফেলুন।আর পায়ে বর্তমানে যে জুতা জোড়া আছে তা এই বেগের মধ্যে রেখে দিন।”

চৈতি অবাক হয়ে বলল,

“আপনি জানলেন কি করে আমার পায়ে যে ব্যাথা?আর এখন জুতা কিনতে গেলেনই বা কেন?আমি একটু পরে এমনই হাঁটতে পারতাম।”

“হ্যা এমনিই হাঁটেন আর পরে পায়ে ইনফেকশন বানান!তখন মেবি বেশি ভালো হতো।ঘরে বসে থাকতেন।কলেজে যাওয়া লাগতো না।”

“আমি সেটা বলেননি।”

“হয়েছে।হিল জুতা খুলে স্যান্ডেলগুলা পরেন।আরাম লাগবে।”

চৈতি মাথা নেড়ে পায়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে স্যান্ডেলগুলা পরল।সত্যিই আরাম লাগছে এখন।এতক্ষন কি যে লাগছিল।যদিও ব্যাথাটা পুরোপুরি যায়নি।হালকা রয়ে গেছে।

“হাঁটতে পারবেন?”

“হুম।”

“সিউর?আবার জুতার মতো যেন না হয়?”

“সত্যিই হাঁটতে পারব।”

“তাহলে চলুন।এমনেতেই রাত হয়ে গেছে অনেক।আল্লাহই জানে দাড়োয়ার গেট বন্ধ করে দিছে নাকি?তাহলে সারারাত বাহিরে থাকা লাগবে।”

“আমি তো ভুলেই গেছিলাম গেটের কথা।চলুন চলুন।”

হাঁটতে হাঁটতে চৈতি শুভ্রকে জিজ্ঞেস করল,

“আমার মার সাথে আপনার দেখা হয়েছে?”

“হ্যা।অনেক ভালো মানুষ। মিশুকও বটে।আমাকে নিজের ছেলের মতো ভেবে নিয়েছিলেন।ইফতারিও এনেছিলেন।”

“উনি কি আপনাকে আমার সম্পর্কে কিছু বলেছেন বা ইংগিত দিয়েছেন?”

“মানে?”

“মানে উনি কি বলেছেন আমার মেয়েটাকে তোমার কেমন লাগে?অনেক লক্ষী মেয়ে ও। ওর মতো মেয়ে পুরো দুনিয়াতে পাওয়া দুস্কর।একটু কথা বলো আমার মেয়ের সাথে।এরকম কিছু?”

“হ্যা বলেছিলেন তো।আপনি জানলেন কি করে?”

চৈতি কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“আমার মার কথায় কিছু মনে করবেন না।উনি এরকমই।আমার বিয়ে হচ্ছে না দেখে একটু চিন্তায় আছেন।তাই আবোল তাবোল কি কাজ করেন তিনি নিজেও জানেন না।”

“আরে না না।আমি কিছু মনে করিনি।বরং আমার তো উনাকে অনেক পছন্দ হয়েছে।কি সুন্দর বাবা ডাকেন আমায়।আর উনার হাতের বানানো ইফতারি গুলা অনেক মজার ছিল। পুরোটা খেয়েছি আমি।”

চৈতি একটু কেশে বলল,

“ওটা আমার হাতের বানানো ইফতার ছিল।আম্মু বানায়নি।”

“অই একই হলো।সবসময় বাইরের ইফতারি খেয়ে খাবারের উপর থেকে মনই উঠে গিয়েছিল।অনেকদিন পর বাসায় বানানো ইফতারি খেয়েছি।”

“কেন আপনার বাবা মা কোথায়?”

“আম্মু আরশিদের সাথে থাকে।”

“কেন?আপনি থাকেন না কেন ওদের সাথে।”

“অইযে বাসা এসে পরেছে।থ্যাংকস গড গেটে তালা দেয়নি এখনো।”

চৈতির মনে হলো শুভ্র যেন কথাটা এড়িয়ে যেতে চাইছে।তাই আর মাথা ঘামালো না।কাওকে তো সে জোর করতে পারে না।অধিকারও তো নেই তার। তাই মাথা না ঘামিয়ে নিজের বাসায় চলে গেল।শুভ্রও চৈতির যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকাতেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

“সরি চৈতি আপনাকে আমি সবকিছু শেয়ার করতে পারলেও এই কথাটা শেয়ার করতে পারব না।”

ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিফট থেকে নেমে নিজের বাসায় চলে গেল।
চৈতি বাসায় যেতেই ওর মা কাছে ডেকে এনে বললেন,

“চৈতি,কালকে তোর একটা রেস্টুরেন্টে একজন ছেলের সাথে দেখা করা লাগবে।”

“কেন?”

“ছেলের নাকি তোকে দেখে অনেক পছন্দ হয়েছে।আমাকে ফোন করে জানালো।তাই তোর সাথে দেখা করতে চাইছে।”

চৈতি রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মা বলে উঠল,

“অই ছেলে তোর সমস্যার কথা জানে।সব জেনে শুনেই দেখা করতে চেয়েছে।দেখ আমিও চাই না অই ছেলের সাথে তোর বিয়ে হোক।শুভ্র ছেলেটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।ছেলেটা মাশাল্লাহ সবদিক থেকে পার্ফেক্ট।কিন্তু অই ছেলে আমার বান্ধবীর ছেলে।আমার বান্ধবীকে তো সরাসরি না করতে পারি না তাই না?তুই জাস্ট দেখা করব আয়।পরে এসে বলে দিস তোর ছেলেকে পছন্দ হয়নি।”

“কিন্তু…..”

“প্লিজ!আমার মান সম্মানটার কথা ভাব?”

“আচ্ছা।”

“কোথায় যাচ্ছিস?”

“শুভ্রের কাছে।উনাকে যেয়ে বলতে হবে তো।নয়তো উনি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন।”

“আচ্ছা যা।তাড়াতাড়ি আসিস।মানুষ আবার দেখলে খারাপ ভাববে।”

“তাও তো ঠিক।আচ্ছা কালকে বলব নাহয়।কলেজে যাবার সময়।”

“তাই করিস।এখন গিয়ে রেস্ট নে।”

“হুম।”

চলবে…..

তুমি এলে তাই পর্ব-০৮

0

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৮

“অহ আচ্ছা।আপনি জানলেন কি করে আরশি যে আমার বান্ধবী? ”

“আগে জানতাম না।আপনি তো বলেছিলেনই আপনার বান্ধবীর জম্মদিন।হঠাত আপনাকে দেখে বুঝলাম আরশিই আপনার বান্ধবী যার কথা আপনি বলছিলেন।আন্দাজ করেই বলেছি।”

“বাহ,আপনার ধারনাশক্তি ভালো তো।”

“সবাই বলে।”

ওদের কথা শেষ হতেই আরশির আগমন ঘটল।আরশিকে দেখেই চৈতি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।

“সকালের ঘটনার দুঃখিত।আমার অইসময় অই কথাগুলা বলা উচিত হয়নি।আমি যদি জানতাম তুই কষ্ট পাবি তাহলে কোনদিন কথাগুলা বলতাম না।”

আরশি চৈতির কাছে এসে কাধে হাত রেখে বলল,

“ইট’স ওকে।তুই যখন এসেই পরেছিস তাহলে আগের কথাগুলা সব ভুলে যা।আমারও বুঝা উচিত ছিল তোর জন্য এখানে আসাটা কঠিন।অবুঝের মতো আবদার করেছিলাম।সেই অবুঝের আবদার পুরন করার ধন্যবাদ।বাই দা ওয়ে,শুভ্র ভাই আর তুই কথা বলছিলি।চিনিস তোরা একে অপরকে?”

“হুম,একই এপারমেন্টে থাকি আমরা।”

আরশি ভ্রু কুচকে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

“শুভ্র ভাই, আপনি তো সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে পারতেন না।কবে থেকে শিখলেন?”

শুভ্র মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,

“ইয়ে মানে…কয়দিনই হলো।সহজই তো!আমার আগে থেকেই ইন্টারেস্ট ছিল শিখার।”

“কই আগে তো জানতাম না যে আপনি ইন্টারেস্ট ছিলেন এই ভাষা শিখায়?জানলে তো আমিই শিখাই দিতাম।”

শুভ্র চোখ পাকিয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে বলল,

“কেন?মানুষের কি ইন্টারেস্ট পরে জম্মাতে পারেনা?”

“পারে।বাট হুট করেই…..”

শুভ্রের চাহনি দেখে আরশি শুকনো ঢুক গিলে বলল,

“আমাকে আম্মু মনে হয় ডাকছে।আমি গেলাম।তোরা কথা বল।আর চৈতি শুন তুই একটু ওয়েট কর।আমাদের পার্টিটা ছাদে হচ্ছে।সব কাজিনরা মিলে সাজাচ্ছে।একটু দেরি হবে।আর হ্যা রাতের খাবার খেয়ে যাবি শুধু কেক খেলেই হবে না।”

“কিন্তু বেশি রাত হলে…. ”

“শুভ্র ভাই দিয়ে আসবে।উনিও আজকে থাকবে না এখানে।জাস্ট আমার জম্মদিনের জন্যই এসেছেন।তোরা একসাথে যাস খেয়ে দেয়ে।”

বলেই আরশি চলে গেল।

“আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

শুভ্রের বলা কথায় মাথা নাড়ালো চৈতি।

“আপনার জম্মদিন কবে?জাস্ট ইচ্ছা হলো আরকি।”

“জম্মদিন?”

“হুম।”

“জানিনা তো!”

শুভ্র অবাক হয়ে বলল,

“জানেন না মানে?আপনি আপনার জম্মদিন জানেন না কবে?আগের বার কত তারিখে পালন করছিলেন জম্মদিন?”

“পালন করিনি তো!”

“এর আগের বার?”

“আগেরবারও না।”

শুভ্র হেসে বলল,

“মজা করছেন আমার সাথে?আপনার মনে হয় বলার ইচ্ছা নাই।আচ্ছা বলা লাগবে না।”

“আমি মিথ্যা কথা বলছিনা।সত্যিই জানিনা আমার জম্মদিন কবে?তবে বার্থ সার্টিফিকেটে লিখা আছে আমি এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ জম্মেছি। তবে শুনেছি ওটা নাকি কমিয়ে দেওয়া।আমার আসল বার্থ ডেট আমি জানি না।”

শুভ্র অবাক হয়ে বলল,

“আপনি কোনদিন আপনার জম্মদিন পালন করেননি?”

“নাহ৷ ”

“কেন?না মানে সবাই তো জম্মদিন পালন করে।আপনার পরিবার কি ধার্মিক? যেহেতু জম্মদিন পালনে নিষেধ আছে। এজন্য কি তারা জম্মদিন পালন করেন না?”

“নাহ।আমার জম্মটাকে আমার মা শুভ মনে করেন না।একে তো আমি জম্মালাম বোবা,কালা হয়ে আবার আমার জম্মের সময়ই বাবা অফিস থেকে আসার পথে রোড এক্সিডেন্টে মারা যান।সব মিলিয়ে আমার জম্মটাকে আমার মা অশুভই ভাবেন।তাই জম্মদিন পালন করেন নি। জানেন ছোটবেলায় যখন দেখতাম সবার মা বাবা ওদের সন্তানদের জম্মদিন পালন করছে তখন আমিও অপেক্ষা করতাম কবে আমিও সবার মতো জম্মদিন পালন করব।কিন্তু অই অপেক্ষাটা অপেক্ষাই রয়ে গেল বাস্তব হলো না।আমি একদিন আম্মুর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম সবার জম্মদিন পালন হয় আমারটা কেন হয় না?আম্মু আমার গালে দুইটা চড় দিয়ে বলেছিলেন সবাই তোর মতোন না।সবাই জন্মগ্রহণ করেছে ভাগ্য নিয়ে আর তুই কোনকিছুই নিয়েই জন্মগ্রহণ করিস নি। তোর মুখে আর দ্বিতীয়বার যেন না শুনি জম্মদিনের কথা।সেদিন থেকে আর কোনদিন সাহস করিনি জম্মদিন নিয়ে কথা বলার।এখন বড় হয়ে বুঝতে পারছি আম্মু কেন কোনদিন জম্মদিন পালন করেননি।আসলে আমি জম্মদিন পালনের যোগ্যই না।”

বলেই চুপ করে রইল।শুভ্র এক দৃষ্টিতে চৈতির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা যে এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে,ওর মধ্যে যে এত কষ্ট,অপমান রয়েছে তা সে কাওকে বুঝতেই দেয়নি?কই এতদিন ধরে মিশছে ও চৈতির সাথে একবারও তো আন্দাজ করতে পারে নি।

“সরি।অনেক বেশি কথা বলে ফেলেছি মনে হয়। বিরক্ত হলে দুঃখিত।”

“ইট’স ওকে।”

এর মধ্যেই আরশি এসে শুভ্র আর চৈতিকে ছাদে যেতে বলল।সব কাজ শেষ।শুভ্র চৈতিকে নিয়ে ছাদে চলে গেল।চৈতি আশেপাশে তাকাতেই মন খারাপ ভালো হয়ে গেল।চারদিকে লাইট জ্বলমল করছে।রাতের অন্ধকারের মাঝে পুরো ছাদটা যেন আলোতে আলোকিত হয়ে আছে।তার পাশাপাশি বেলুন তো আছেই। ছাদেএ মাঝখানেই টেবিল রাখা।আর তার উপর ইয়া বড় একটা কেক রাখা।যথারীতি আরশি কেক কেটে প্রথমে চৈতিকে কেক খাওয়ালো।আরশির বাবা মা এসব অনুষ্ঠান পছন্দ করেন না তাই তারা আসেন নি।তবে তাদের জন্য কেক আলাদা করে রাখা হয়েছে।কেক কাটা শেষে চৈতি বেসিনে গেল হাত মুখ ধুতে।সারা মুখে কেকের ক্রিম লাগানো। আরশিই লাগিয়েছে।হাত মুখ ধুতে ধুতে ধুতেই একটা কম বয়সী ছেলে আসল।দেখে মনে হয় 7 বা 8 এ পড়ে।

“তুমি নাকি কানে শুনতে পাও না?আচ্ছা একটা পরীক্ষা নিয়ে দেখা যাক।যেহেতু তুমি কানে শুনতে পাওনা সেহেতু তোমার কানের কাছে চিৎকার করলেও তোমার অসুবিধে হবে না তাই না?কারন তুমি তো শুনতেই পাও না।”

চৈতি কিছু বুঝে উঠবার আগেই ছেলেটা তার বন্ধুদের নিয়ে চৈতির কানের কাছে জোরে জোরে চিৎকার করা শুরু করল।

“কি হচ্ছে এখানে?”

শুভ্রের ধমকানি শুনে ছেলেটার সব বন্ধু ভয় পেয়ে দৌড়ে চলে গেল।

“কি হলো কথা বলছিস না কেন?”

ছেলেটা আমতা আমতা করতে করতে বলল,

“মজা করছিলাম।”

“মজা?এটা তোদের কাছে মজা মনে হচ্ছে?একটা মানুষকে কষ্ট দিয়ে তোরা মজা নিচ্ছিস?স্কুলে এসব শিখানো হয় তোদের?”

“জীবনে বোবা কালা মানুষ দেখিনি তো তাই সামলাতে পারলাম না।দেখতে চাইছিলাম উনি সত্যিই শুনতে পারেন কিনা।”

শুভ্র চিৎকার দিয়ে বলল,

“আরাফ!”

শুভ্রের চিৎকার শুনে আরাফ ভয়ে কেঁপে উঠল।

“ইচ্ছা করছে তোর গালে দুটা চড় মারি।একটা মানুষকে নিয়ে এসব কথা বলতে তোর বিবেকে বাধল না?মানুষটা কি ইচ্ছা করে এমন হয়েছে?আজকে উনার বদলে যদি তুই এমন হতি? তোর কানের পাশে যদি কেও চিৎকার করতো তাহলে কি করতি?শুকরিয়া কর তোর এই অবস্তা হয়নি দেখে।আর কোনদিন এমন করবি না।যদি দেখি তাহলে সত্যি সত্যি তোরে দুটা চড় মারতে আমার হাত কাঁপবে না।আপুকে সরি বলে যা।”

“কিন্তু ও তো শুনতে পাবে না। বলে কি হবে?”

“সেটা তোর জানার বিষয় না।তোকে সরি বলতে বলেছি বলবি।”

“সরি আপু।”

চৈতি কিছু না বলে মলিন হাসল শুধু।

চৈতিকে হাসতে দেখে আরাফ অবাক হয়ে গেল।তাহলে কি মেয়েটা শুনতে পেয়েছে ওর সরি বলাটা।ছোট্ত মাথায় কিছু বুঝল না সে।মাথা নিচু করে চলে গেল।শুভ্র একটা জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলালো।অতঃপর চৈতির দিকে চেয়ে ইশারায় বলল,

” ঠিক আছেন আপনি?”

চৈতি মাথা নাড়লো।

“কিছু মনে করবেন না।ছোট মানুষ বুঝতে পারে নি।তাই এমন একটা কাজ করে ফেলেছে।”

“আমি কিছু মনে করি নি।”

“ধন্যবাদ। শুনে ভালো লাগল।”

কিন্তু শুভ্র চৈতির চোখের কোণায় পানি দেখে বুঝল মেয়েটা কি পরিমান কষ্ট পেয়েছে।আচ্ছা সবাই এমন কেন?কেও উনাকে কেন বুঝতে চায় না?নিজের জম্মদাতা মাও না?আচ্ছা সবাই ওকে কষ্ট দিয়ে কি মজা পায়?এমন একটা মেয়েকে কষ্ট কি করে দিতে পারে?ও তো কোনদিন দিতে পারবে না।বুক কাঁপবে ওর।এসব ভেবে একটা শ্বাস ফেলে শুভ্র বলল,

“চলুন ওখানে গান হচ্ছে।”

“গিয়ে কি হবে?আমি তো গান শুনতে পারবনা।”

চৈতির কথায় বুকের মাঝে ধক করে উঠল।মেয়েটা এত কঠিন কথা কি করে বলতে পারে?

“গান শোনা লাগবে না।গিয়ে জাস্ট বসে থাকবেন তাহলেই হবে।চলুন।”

চৈতি কিছু না বলে শুভ্রের পিছুপিছু হাঁটতে লাগল।গিয়ে দেখল সবাই মাদুর পেতে বসেছে।সামনেই গিটার রাখা। একটা ছেলে গান গাচ্ছে।চৈতিকে দেখেই আরশি হাত নাড়িয়ে বলল ওর পাশে বসতে।চৈতি গিয়ে আরশির পাশে বসল।

“শুভ্র ভাই,আপনিও তো গান গাইতে পারেন। গান না একটা?”

“না না।অনেক দিন গান গাইনা ভুলে গেছি সব।”

“আরে গান না।চৈতির জন্য হলেও গান।”

চৈতির কথা শুনে শুভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।চৈতির দিকে মিষ্টি করে হেসে সামনে গিয়ে গিটার নিয়ে দাঁড়ালো।শুভ্রের হাসির কারন খুজে পেল না চৈতি। অতঃপর চৈতিকে উদ্দেশ্য করে ইশারায় বলল,

“আমার গাওয়া গানটা আপনার জন্য মিস চৈতি।গানটাকে অনুভব করুন।”

সবাইকে অবাক করে দিয়ে…..

চলবে…..

তুমি এলে তাই পর্ব-০৭

0

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৭

মার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে লিফট থেকে নেমে দৌড়াতে লাগল।আজকেও লেট হয়ে গেছে।সামনেই গাড়ির সামনে শুভ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পায়ের স্পিড আরও বারিয়ে দিল।আর মার দেওয়া হিল জুতা পরার ফলেই একটা অঘটন ঘটে গেল। তাড়াতাড়ি করে হাঁটতে গিয়ে চৈতি জুতার সাথে পা লেগে গিয়ে একদম শুভ্রের উপর পরল।এই ঘটনাই চৈতি যেমন অবাক হয়েছে তেমন শুভ্রও অবাক হয়েছে।চৈতি তাড়াতাড়ি সরি বলে শুভ্রের থেকে উঠে এলো।শুভ্র এখনও ঘোরের মধ্যে আছে।একটু আগের ঘটা ঘটনাটা থেকে বেরুতে পারছে না।শুভ্রকে স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চৈতি একটু সামনে এগিয়ে শুভ্রের মুখের সামনে নিজের হাত নাড়ালো।হুশ ফিরে আসতেই নিজেকে সামলে চৈতির জন্য দরজা খুলে দিল।চৈতি গাড়ির ভিতর ঢুকতে যেতেই গাড়ির উপরের অংশের সাথে জোরে ঢাক্কা খেল।কপালে হাত দিয়েই ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে ফেলেছে সে।যে সময়ই তাড়াহুড়া করতে যায় সেময়েই হাজারটা অঘটন ঘটে।যেমন আজকেরটাই ধরা যাক,এই পর্যন্ত কতবার বাজে ঘটনা ঘটল।প্রথমে হোচট খেয়ে শুভ্রের উপর পরা আর তারপর গাড়ির সাথে এমন জোরে ঢাক্কা খাওয়া।চৈতিকে ব্যাথা পেতে দেখে শুভ্র জিজ্ঞেস করল,

“কপাল তো ফুলে গেছে।বরফ আনব?’

এমনিতেই আজকে দেরি হয়ে গিয়েছে।তার উপর এখন বরফ এনে কপালে দিলে আর কলেজে যাওয়া লাগবে না।আশরাফ স্যার নিশ্চয়ই ভাবছে আমি উনার পড়ায় ফাকি দেবার জন্য ইচ্ছা করে দেরি করে আসছি!শুভ্রকে মানা করে দিল চৈতি।শুভ্রও কিছু না বলে নিজের সিটে বসে গাড়ি চালাতে লাগল। কিছুক্ষন পর ব্যাথা ঠিক হতেই শুভ্রের কাছে টিস্যু চাইলো।পিছনের সিট থেকে টিস্যুর বাক্সটা এনে চৈতিকে দিল শুভ্র।লিপস্টিকটা মুছা লাগবে তার। এভাবে কলেজে কেও লিপস্টিক দিয়ে যায় নাকি?তাও আবার লাল লিপস্টিক।নিজের কাছেই কো কেমন যেন লাগছে।নুড কালার বা হালকা কালারের হইলে নাহয় মানা যেতো। কিন্তু লাল লিপস্টিক?ও কি বিয়ে বাড়ি নাকি কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছে যে তাকে লাল লিপস্টিক ইউজ করা লাগবে।ব্যাগ থেকে আয়না বের টিস্যু দিয়ে ঠোটে লেগে থাকা লিপস্টিকটুকো মুছতে লাগলো।লিপস্টিক মুছা শেষ হলে টিস্যু বাইরে ফেলে পাশের দিকে তাকাতেই দেখল শুভ্র তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।চৈতি হুট করে তাকাবে তা সে কল্পনাই করেনা।হকচকিয়ে ড্রাইভিংয়ে মন দিল সে।কলেজের সামনে আসতেই চৈতি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমেই দৌড় দিল ক্লাসের দিকে।চৈতির যাবার দিকে তাকিয়ে থেকে শুভ্রও গাড়ি ঘুরালো।
.
.
ক্লাসে ঢুকতেই চৈতি দেখল আশরাফ এখনো ক্লাসে আসেনি।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে।

“কিরে দৌড়ে এসেছিস নাকি?”

আরশির কথা শুনে চৈতি আরশির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল।

“দৌড়ে আসতে কে বলেছে তোকে?কিছু যদি হয়ে যেতো?দেখছিস কিভাবে হাপাচ্ছিস?পানিও তো খেতে পারবি না।রোযা রেখে কি দরকার দৌড়ানোর?”

আরশির কথা শুনে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে বলল,

“আরে ঠিক আছি আমি।চিন্তা করিস না।আর অইদিন তো দেখলিই দেরি করে আসার কারণে স্যার কি করল।এরপরও কি দেরি করে আসতে ইচ্ছা হয় তুইই বল!”

“হুম তাও ঠিক।যাইহোক, আজকে আসবি তো?”

“কোথায়?”

আরশি অবাক হয়ে বলল,

“কোথায় আবার আমার বাসায়!”

“তোর বাসায় কেন যাব?”

আরশি রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চৈতি হেসে বলল,

“আরে মজা করছিলাম!এত সিরিয়াস হয়ে যাস কেন?একটা কথা বলব?”

আরশি ভ্রু কুচকে বলল,

“কি কথা?”

চৈতি জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল,

“না গেলে হয় না?তুইই দেখ আমি কথাও বলতে পারি না কানেও শুনিনা।তোকে হ্যাপি বার্থডে বলতে পারব না।তোকে গানও শুনাতে পারব না।আবার মানুষের কথাও কিছু বুঝব না।ধর কেও আমাকে জিজ্ঞেস করল তোমার নাম কি?তুমি আরশির কি হও? আমি নাহয় উনার লিপ রিডিং করে উনার জিজ্ঞেস করা প্রশ্ন বুঝলাম।কিন্তু উত্তর দিব কি করে?আমি তো চাইলেও বলতে পারব না.আবার খাতা কলমে লিখেও দেখাতে পারব না।তাই না?মানুষ আরও আমার উপর বিরক্ত হবে।কি দরকার মানুষকে বিরক্ত করার?তার চেয়ে বরং তুই তোর কেক কাটার মোমেন্টটা ভিডিও করে রাখিস ক্লাসে এসে আমি দেখব। তাহলেই তো হয়ে গেল। সব ঝামেলা শেষ তাই না?”

“কোন ঝামেলা শেষ হবে না।আমি তোর সাথে সাথে থাকব। কেও কিছু জিজ্ঞেস করলে তাকে আমি তোর হয়ে এন্সার দিব।আর আমার তোর মুখের হ্যাপি বার্থডে শুনা লাগবে না।তোর হাত দিয়েই নাহয় আমি শুনে নিব।কেও তোকে কিছু বলবে না।বলতেই দিব না আমি।আর কিছু বলে ফেললেও তাকে উচিত জবাব দেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে।এখন তুই যদি মন থেকে যেতে না চাস তাহলে তো আমার কিছু করার নেই।সবার সাথে যুদ্ধ করতে পারলেও তোর মনের সাথে তো যুদ্ধ করতে পারব না।তুই না চাইলে না হয় থাক।জোর তো আর করতে পারি না।”

“তুই কি রাগ করেছিস আমার উপর?”

“নাহ,রাগ করব কেন?”

চৈতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশরাফ প্রবেশ করল ক্লাসরুমে।আর কিছু বলতে পারল না চৈতি। শুধু ইশারায় সরি বলল।আরশি উত্তরে কিছু বলল না।মুখ ফুলিয়ে ক্লাসে মনযোগ দিতে দেখে চৈতিও মন খারাপ করে মনযোগ দিল ক্লাসে।মনে হয় ওর কথাগুলো বলা উচিত হয় নাই।কেন যে বলল?দুর ভাল্লাগে না।
ক্লাস শেষে ছুটি হওয়ার পর,

চৈতির মন খারাপ দেখে শুভ্র জিজ্ঞেস করল,

“কি হয়েছে? মন খারাপ?”

শুভ্রকে পুরো ঘটনা খুলে বলতেই শুভ্র বলল,

“এক কাজ করুন না আপনি আপনার বান্ধবীর বার্থডেতে গিয়ে সারপ্রাইজ দিয়ে দিন।সব রাগ গলে পানি হয়ে যাবে।”

“যদি কথা না বলে?”

“আরে বলবে না কেন?উনি তো আপনার সাথে রাগ করেছে না যাওয়া নিয়েই তাই না?এখন আপনি যদি গিয়ে সারপ্রাইজ দেন তাহলে তো রাগ থাকবার কোন প্রশ্নই থাকে না। ”

“হুম!”

“তাহলে যাবেন?”

“হুম।”

“গুড গার্ল।”

.
.
চৈতি আরশিদের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে ১০ মিনিট হলো।ওর মধ্যে একটা অসস্তি কাজ করছে।কিন্তু এসে যখন পরেছেই তাহলে তো যাওয়া লাগবেই।তাও সে যেতে পারছে না।টানা ১৫ মিনিট নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে গেটের ভিতর ঢুকলো।দরজায় গিয়ে নক করতেই একটা মধ্য বয়স্কা মহিলা এসে চৈতিকে দেখেই ভ্রু কুচকালো।এতে চৈতির মধ্যে অসস্তি দ্বিগুন হারে বেরে গেল।

“কে তুমি?এখানে কি করছ?”

এখন সে কিভাবে উত্তর দিবে?

“কি হলো?কথা বলছ না কেন?”

চৈতি কাধে থাকা ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করতেই যাবে তার আগেই শুভ্র এসে বলল,

“আম্মু, উনি হলেন আরশির বান্ধবী।এক সাথেই পড়ে উনারা।”

শুভ্রকে দেখেই যেন চৈতি চোখ বড় হয়ে গেছে বিস্ময়ে।এই ছেলে এখানে কি করছে?মধ্য বয়স্কা মহিলা বিরক্ত হয়ে বললেন,

“তো এই কথা কি এই মেয়ে বলতে পারে না?তোর কেন বলা লাগল?আর তুই কি করে চিনিস এই মেয়েকে?”

“আমি যেখানে থাকি সেখানের নিচতলায় থাকেন উনি।আর আমি আরশির সাথে অনেকবার দেখেছি উনাকে।”

“ভিতরে আসো।আমি আরশিকে ডেকে দিচ্ছি।”

চৈতি মাথা নাড়িয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে রুমে থাকা সোফায় বসে পড়ল।শুভ্রকে ইশারায় বলল,

“পানি হবে?আমি ইফতারের পর থেকে আর পানি খাইনি।”

“একটু অপেক্ষা করুন। আমি আনছি।”

শুভ্র কিছুক্ষন পর এক গ্লাস পানি এনে চৈতির সামনে রেখে সামনের সোফাটায় বসে পরল।চৈতি এক ঢোকে পুরো পানি খেয়ে খালি গ্লাসটা সামনে থাকা টেবিলে রাখতেই শুভ্র বলল,

“আপনি অবাক হন নি?জিজ্ঞেস করবেন না আমি এখানে কি করছি?”

“হুম অবাক তো হয়েছি বটে।আরশিকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি।বাই দা ওয়ে,আরশি আপনার কে হয়?”

“ছোট বোন।”

“কই আরশি তো আমাকে কোনদিন বলেনি যে ওর একটা বড় ভাই আছে।”

“আপন না।ফুফাতো।”

“অহ আচ্ছা।আপনি জানলেন কি করে আরশি যে আমার বান্ধবী? ”

“আগে জানতাম না।আপনি তো বলেছিলেনই আপনার বান্ধবীর জম্মদিন।হঠাত আপনাকে দেখে বুঝলাম আরশিই আপনার বান্ধবী যার কথা আপনি বলছিলেন।আন্দাজ করেই বলেছি।”

“বাহ,আপনার ধারনাশক্তি ভালো তো।”

“সবাই বলে।”

ওদের কথা শেষ হতেই…….
#চলবে….

তুমি এলে তাই পর্ব-০৬

0

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৬

চৈতি আরশিকে বিদায় দিয়ে দরজায় নক করতেই আশরাফ সাথে সাথে দরজা খুলল যেন এতক্ষন ওর জন্যই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।প্রথমে চমকে উঠলেও নিজেকে শান্ত করে নোটে লিখে আশরাফকে দেখালো।

“আমায় দেখেছিলেন স্যার?”

“হ্যা, কেন আপনাকে ডাকতে পারি না আমি?একজন স্যার হিসেবে তার স্টুডেন্টকে ডাকার সম্পূর্ণ রাইট আছে আমার। নাকি আপনার থেকে পারমিশন নেওয়া লাগবে?”

আশরাফের বলা কথাগুলা শুনে চৈতি ভ্রু কুচকালো।সামান্য প্রশ্ন করার জন্য কেও এতগুলা কথা শুনায় তা চৈতির ধারনার বাইরে ছিল।সে তো ফর্মালিটির জন্য বলেছিল কথাটা।নাকি তার বলা উচিত ছিল,

“কেন ডেকেছিলেন আমায়?”

নাহ!এটা বড্ড বেয়াদবি হয়ে যেত।কিন্তু এই কথা বলেও তো কোন লাভ হলো না। সেই কথা শুনতে হলো।

“আমার কথা কি বুঝতে পেরেছেন?নাকি বুঝতে পারেন নি?এভাবে বলদের মতো তাকিয়ে আছেন কেন?কিছু তো বলুন।”

চৈতি বুঝতে পারল আশরাফ তার উপর রাগ দেখাচ্ছে।কিন্তু কিসের জন্য? সে কি কোন ভুল করেছে?

“না না স্যার।আমি তো জাস্ট এমনি বললাম।কিসের জন্য ডেকেছিলেন আমায় যদি বলতেন…….”

আশরাফ জিজ্ঞেস করতেই যাবে সে অই ছেলের সাথে কেন গাড়িতে উঠেছিল গতকাল।কিন্তু একজন শিক্ষক হিসেবে একজন ছাত্রীকে এই কতগা জিজ্ঞেস করা বেমানান।নিজের কাছে কেমন যেন লাগছে।চৈতি যদি খারাপ মনে করে?ও যদি ভাবে ওর ব্যাপারে সে কেন হস্তক্ষেপ করছে। যদি জিজ্ঞেসই করে তাহলে সে কি জবাব দিবে?চৈতির মুখের দিকে তাকাতেই দেখল চৈতি উত্তরের আশায় চেয়ে আছে তার দিকে। এখন কি বলবে সে?

“আব……ম্যাথের চ্যাপটার ৫ টা কালকে সম্পূর্ণ পড়ে আসবেন।ম্যাথ করতে দিব। ”

“এই কথা বলার জন্য আপনি আমায় ডেকেছেন?”

“হ্যা,ক্লাসে মনে ছিল না বলতে। আর এই পড়াটা শুধু আপনার জন্যই বরাদ্দ।”

” কেন স্যার?সবাই কি দোষ করেছে?আমিই শুধু একা একা পড়ব কেন?”

আশরাফ বিরক্ত হয়ে বলল,

“গত সপ্তাহে যে মডেল টেস্ট নিয়েছিলাম মনে আছে আপনার?”

“এটা মনে থাকবে না কেন?অবশ্যই মনে আছে।”

“সেই পরীক্ষায় আপনি এত লো মার্ক পেয়েছেন যে আমার বলতেই লজ্জা লাগছে।আমার স্টুডোন্ট হয়ে ম্যাথে এত কম মার্ক পাবে সেটা আমি কোন আশা কেন কল্পনাও করেনি।এখন ক্লাসের সবার সামনে আপনার মার্ক বললে আমার নিজেরই লজ্জা লাগবে।সবাই ভাববে আমি কেমন শিক্ষক যে স্টুডেন্টকে সামান্য পাশও করাতে পারলাম না।আমারই অপমান হবে।আর সামনেই তো টেস্ট এক্সাম সেখানেও যদি আপনি এমন মার্ক পান তাহলে আপনাকে আর বোর্ড এক্সাম দেওয়া লাগবে না৷ পরের বছরও ইনশাল্লাহ এই কলেজেই থাকবেন।তাই যদি কলেজ পাশ করতে চান তাহলে আমার কথা আপনাকে মানতে হবে।”

আশরাফের বলা কথাগুলো বুঝে এখন চৈতিরই লজ্জা লাগছে। মাথা নিচু করা ফেলল সে।হ্যা মানছে সে অংকতে একটু কাঁচা।একটু না অনেকটা কাঁচা তাই বলে কলেজ লাইফে এসে কিনা সে ফেইল করবে?এটা শুনলে তো মানুষ হাসাহাসি করবে।

“কি হলো? কিছু বলছেন না কেন?আপনি কি পড়া শিখে আসবেন কালকে?নাকি আমি সবাইকে আপনার মার্কস বলে বেড়াতাম?”

“না না স্যার।আমি কালকে আপনার পড়া শিখে আসব। কিন্তু এক রাতে একটা চ্যাপ্টার….. ”

“পরিক্ষার আর বেশি দেরি নেই।তাই একটু প্রেসার নিতেই হবে।বাই দা ওয়ে,আমি আর কোন বাহানা শুনছি না। ভালো করে পড়ে আসবেন।আর যেটা বুঝবেন না সেটা রেড পেন দিয়ে মার্ক করে আমাকে বলবেন।আমি বুঝিয়ে দিব।”

“জ্বি স্যার।”

“আর কি?যান এবার।আমার কথা শেষ নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন?”

“ভালো থাকবেন স্যার। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই সালাম দিয়ে চলে গেল।চৈতির যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে জোরে একটা শ্বাস ফেলল।

.
.
“আজকে আসতে এত দেরি হলো যে?”

শুভ্রের কথা শুনে চৈতি ভ্রু কুচকে বলল,

“আপনি কি আমার জন্য ওয়েট করছিলেন?বেশিক্ষন ওয়েট করিয়ে ফেললাম আমি?”

চৈতির কথা শুনে ঘাবড়ে আমতা আমতা করতে করতে শুভ্র বলল,

“নাহ নাহ,আমি তো এই মাত্র আসলাম।সবাইকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম কিন্তু আপনি বের হচ্ছেন না দেখে বললাম।আর তাছাড়া গতকাল তো আগেই বেরিয়েছিলেন।”

“হুম,আশরাফ স্যারের সাথে কিছু কথা ছিল।তাই দেরি হয়ে গেল।”

“আশরাফ স্যার কে?গতাকাল যার সাথে কথা হলো উনি?”

“হুম”

চৈতির উত্তর শুনে শুভ্রের মন খারাপ হয়ে গেল।কেন মন খারাপ হলো তা সে জানে না।তাই চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগল। বাকিটা সময় দুজনের মধ্যে কোন কথা হলো না। বাসার সামনে আসতেই শুভ্র ইশারায় বলল,

“তাহলে যান।আমার একটু কাজ আছে।একটা জায়গায় যাওয়া লাগবে।কালকে দেখা হচ্ছে।”

চৈতি মাথা নাড়িয়ে গেটের ভিতর ঢুকতেই শুভ্র ফুস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল।আচ্ছা ওর এত মন খারাপ কেন হচ্ছে?আশরাফ চৈতির টিচার হয়।আর দরুন ওদের মধ্যে কথা হতেই পারে। ও কেন নেগেটিভ ভাবছে বিষয়টা?

“বি পজেটিভ শুভ্র।ওদের মধ্যে জাস্ট টিচার এন্ড স্টুডেন্টের সম্পর্ক। এর বেশি কিছু না।তুই কেন ওভারথিংকিং করছিস?এত ভাবার কিছুই নেই।নিজের কাজে ফোকাস দে।”

নিজেকে সামলিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে গাড়ি চালানোতে মন দিল।
বাসায় ফিরতেই,

‘শুভ্রের সাথে আসছিস?”

মার কথা শুনে ভ্রু কুচকে চৈতি জিজ্ঞেস করল,

“তুমি উনার নাম জানলে কি করে?”

“না মানে,গতকাল বললাম না এক ভাবীর ফ্লাটে গিয়েছিলাম?”

“হুম”

“তো উনি বললেন নতুন এক ভাড়াটিয়া উঠেছে তার নাম নাকি শুভ্র।তো আমি বুঝলাম তোর সাথে যেই ছেলেটাকে দেখেছিলাম ওর কথাই বলছে।”

“উনি ভাড়াটিয়া না আম্মু।এটা উনার নিজস্ব ফ্লাট।বলো নতুন ফ্লাটে যে উঠেছে। ”

“অই একই হলো।তুই কি প্রতিদিন ওর সাথেই আসবি?”

“হ্যা।কেন?”

“কেন আসবি?”

চৈতি বিরক্ত হয়ে বলল,

“এটা আবার কেমন প্রশ্ন মা?উনি কাজে আমার কলেজের সামনে দিয়ে যান।যেহেতু আসার সময় আমার কলেজ সামনে পরে আবার ছুটিও হয় অইসময় তাই উনি আমাকে ড্রপ করে দেন।”

“হুম, এতটুকুই জানার ছিল।আচ্ছা তুই রেস্ট নে।”

মার কথা চৈতি কিছুই বুঝল না।অবুঝের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মায়ের কথায়।
একটু রেস্ট নিয়ে ইফতার শেষ করে পড়তে বসলো সে।ফুল চ্যাপ্টার আজকে রাতের মধ্যে শেষ করতে হবে।যেখানে সে একটা চ্যাপটার ২ সপ্তাহ লাগায় পড়তে।তাও ভালো করে পড়া হয় না।এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে অংক করাতে মন দিল।কিছুক্ষন পড়ার পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ১২টা ছুইছুই। তারমানে ৪ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে।অথচ সে এক পেজও শেষ করে নাই।মোট কথা তার মাথায় অংকের অ টাও ঢু*কতাছে না।সারাদিনের ক্লান্তিতে মাথা ঘুম এসে ভর করছে।এই পর্যন্ত ৫ কাপ চা খেয়ে ফেলেছে সে।তাও ঘুম যেন যাচ্ছেই না!চেয়ার থেকে উঠে কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করল।নাহ।এবার মনে হয় একটু ঘুমটা কমেছে।আবার চেয়ারে বসে অংক করাতে মনযোগ দিলো।চোখে মুখে আলোর ছোয়া পেতেই আড়মোড়া ভেংগে নিজের দিকে তাকাতেই দেখল সে চেয়ারে বসে আছে তার মানে সে কি ঘুমিয়ে পরেছিল?মোটামোটি অর্ধেক শেষ করতে পেরেছে।বাকিগুলা বুঝে নাই বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।পেন্সিল ব্যাগ থেকে লাল কলম বের করে বাকি অংকগুলা দাগিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।

“লিপস্টিক লাগিয়ে যা।”

মার কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলল,

“লিপস্টিক কেন লাগাব আম্মু?তুমি তো জানো আমি লিপস্টিক পরিনা ”

“চোখ মুখ ফ্যাকাশে লাগছে তোর।”

বলেই লাল লিপস্টিক ঠোটে লাগিয়ে দিল।চৈতি মুছতে গেলেই ওর মা হাত ধরে বাধা দিয়ে বলল,

“খবরদার,মুছবি না।এটা না মুছলে অনেকক্ষন থাকবে।কলেজ থেকে আসলে যেন আমি তোর ঠোটে লিপস্টিক দেখতে পাই।”

“আচ্ছা আচ্ছা,মুছব না।লেট যাচ্ছে আমার যাই?”

“হুম যাহ”

মার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে লিফট থেকে নেমে দৌড়াতে লাগল।আজকেও লেট হয়ে গেছে।সামনেই গাড়ির সামনে শুভ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পায়ের স্পিড আরও বারিয়ে দিল।আর মার দেওয়া হিল জুতা পরার ফলেই একটা অঘটন ঘটে গেল। তাড়াতাড়ি করে হাটতে গিয়ে চৈতি…..
#চলবে…..

তুমি এলে তাই পর্ব-০৫

0

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৫

কিছুক্ষন পর চৈতি গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো।তখনও হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে।দেখতে ভালোই লাগছে।হঠাত চোখের সামনে আশরাফকে দেখল।সেও তার গাড়ি নিয়েই ওদের পাশে আসছে।চৈতি ভ্রু কুচকে ফেলল।উনি আবার কখন ওদের সাথে আসছে সেটা ও এতক্ষন দেখতেই পায়।নাই।আশরাফকে মনযোগ দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে দেখে চৈতি ভাবল হয়তবা উনি উনার গন্তব্যেই যাচ্ছে।কাকতালীয়ভাবে মনে হয়ে দেখা হয়ে গেছে।চৈতি জানলা থেকে মুখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই আশরাফ আড়চোখে চৈতির দিকে তাকালো। গাড়ির জানলা খোলা রাখায় স্পষ্ট চৈতিকে দেখা আছে।সামনের দিকে তাকিয়ে আছে ও।আশরাফের মাথায় একটা কথা কিছুতেই আসছেনা।চৈতির সাথের ছেলেটা যদি ওর বাসার প্রতিবেশি হয় তাহলে চৈতিকে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে কেন?কই ওর বাসার প্রতিবেশী তো ওরে গাড়ি করে কোন জায়গায় ড্রপ করে দেয় না বা হঠাত করে দেখা হয়ে গেলেও গাড়ি করে তো বাসায় নামিয়ে দেয় না।তাহলে চৈতির বেলাতেই অই ছেলে ওকে গাড়ি করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে কেন?এই সম্পর্ক কোন পাড়া-প্রতিবেশীর সম্পর্ক হতে পারে না।নিশ্চয়ই কিছু না কিছু তো আছে ওদের মাঝে।কিন্তু কি সম্পর্ক আছে ওদের আছে মাঝে?প্রেমেরে সম্পর্ক কি?
এটা ভেবেই আশরাফের রাগ হলো চৈতির উপর খুব।চৈতি মেয়েটাই বা কেমন?একটা ছেলের সাথে গাড়িতে উঠে গেল?পাড়া প্রতিবেশীই হোক তাই বলে গাড়িতে উঠে যাবে?যা ইচ্ছা তাই করুক।তাতে ওর কি?ওর এত হিংসে হচ্ছে কেন?চৈতি যার তার সাথে প্রেম করুক ওর কোন আসে যায় না।ভেবেই গাড়ির স্পিড বারিয়ে দিয়ে সামনে চলে গেল।
কিছুক্ষন পর,
চৈতি ওর বাসায় সামনে এসে পরল।গাড়ি থেকে নেমেই চৈতি ধন্যবাদ জানালো শুভ্রকে।শুভ্র মাথা নেড়ে বলল,

“ইট’স ওকে।”
.
.
“ছেলেটা কেরে?আগে তো কোনদিন দেখিনি।”

হাত পা ধুয়ে ঘরের ফ্যান চালিয়ে বিছানায় বসেছে কেবল চৈতি।সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে তার উপর।পায়ের ব্যাথাটা এতক্ষন কমে থাকলেও হুট করে যেন এখন বেরে উঠেছে।বিছানায় পা টা তুলে দেখছিল। এমন সময় মা এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে উপরোক্ত কথাটা বলল। চৈতি বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে খাতায় লিখে বলল,

“কোন ছেলের কথা বলছ?”

“আরে যার সাথে গাড়ি করে তুই আসলি।নিশ্চয়ই ছেলেটা অনেক বড়লোক।দেখতেও তো মাশাল্লাহ রাজপুত্রের থেকে কম না।কে এই ছেলে?”

চৈতি বিরক্ত হয়ে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে খাতায় লিখে দেখালো।

“এই ছেলেটা তেমন কেও না আম্মু।আমাদের বাসার উপরে থাকেন।একদিন হঠাত উনার সাথে আমার পরিচয়। আজকে আসার সময় বাইরে বৃষ্টি পরছিল।আমি দাঁড়িয়েছিলাম। তাই জাস্ট ভদ্রতার খাতিরে উনি আমাকে গাড়িতে করে ড্রপ করে দিয়েছেন।যেহেতু উনিও এখানে থাকেন।এর বেশি কিচ্ছু না।প্লিজ মাথা ঘামিও না উনাকে নিয়ে। তোমার তো আবার যেকোন ছেলেকে দেখলেই বিয়ের জন্য তোড়পাড় শুরু করা লাগে।আল্লাহর রহমতে এমন কিছু করো না।উনি খারাপ ভাববেন।”

“এহ,বললেই হলো নাকি!এত সুন্দর,বড়লোক,ভালো ছেলে পেয়ে আমি হাতছাড়া করব?”

চৈতি বিরক্ত হয়ে বলল,

“উনি যে ভালো তুমি বুঝলে কি করে?”

“আমার চোখ যে কাওকে দেখলেই বুঝে ফেলে সে কেমন।তাছাড়া ও ভালো না হলে কি তোকে ড্রপ করে দিত নাকি?নিশ্চয়ই অই ছেলে তোরে ভালোবাসে ”

চৈতি অবাক হয়ে বলল,

“আম্মু!”

নিজেকে সামলিয়ে বলল,

“মানে,তুমি কিভাবে এক কথায় বলে দিলে যে উনি আমাকে ভালোবাসেন?একদিনের পরিচয়ে কেও কাওকে ভালোবেসে ফেলে?প্লিজ!এসব চিন্তা বাদ দাও।আর এখান গেলে আমি এখন খুশি হবো।একটু রেস্ট নিব আমি।”

“পরেরটা পরে দেখা যাবে।কিছু খাবি এখন?”

“নাহ, আমার কোন খিদে নেই।”

.
.
শুভ্র ফ্রেশ হয়ে বসতে যাবে এমন সময় কলিং বেল শুনে মনে মনে ভাবল এখন আবার কে আসল?এমন সময় তো কেও আসার কথা না।দরজা খুলতেই চৈতির মা হেসে বললেন,

“ভালো আছো বাবা?”

শুভ্র কোনরকম হেসে বলল,

“জ্বি আন্টি। কিন্তু আপনাকে কে তো ঠিক চিনলাম না। ”

“চৈতি কে চিনো?”

“হ্যা হ্যা আন্টি৷ ”

”আমি ওর মা।”

“সরি আন্টি।আগে চিনতে পারি নি।কিছু মনে করবেন না।”

“সমস্যা নাই।এটাই স্বাভাবিক।তুমি তো আমাকে আর আগে দেখো নাই।”

“ভেতরে আসুন না।”

চৈতির মা ঘরের ভেতর ঢুকেই আশেপাশে এক নজর তাকালো।নাহ,ছেলে বেশ গোছগাছই আছে।চৈতির সাথে খুব ভালো মানাবে।এর মধ্যেই একটা চেয়ার এনে শুভ্র বসতে বলল।চৈতির মা বসে হেসে হাতে থাকা টিফিন বক্সটা বারিয়ে দিয়ে বললেন,

“নাও বাবা।সন্ধার ইফিতারি।তোমার জন্য নিয়ে আসলাম।”

“এত কষ্ট করার কি দরকার ছিল?আমি বাইরে থেকে খেয়ে নিতাম।”

“না না বাবা।বাইরে খাবার আনহাইজেনিক জানো তো।শরীর খারাপ করবে তোমার।এর থেকে বাসার তৈরি খাবার হাজার গুনে ভালো। স্বাস্থ্যসম্মত।

” তা তো জানি।কিন্তু ঘরে কে বানাবে বলুন?আব্বু আম্মু দুজনেই অন্য জায়গায় থাকেন।একটু দুরেই থাকেন তারা।বানিয়ে দেবার মতো কেও তো নেই।তাই বাইরের খাবার খাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।”

“সমস্যা নেই বাবা।তোমাকে আমি প্রতিদিন ইফতার বানিয়ে দিয়ে যাব।এতে তোমার ও সুবিধা আমারও সুবিধা।”

শুভ্র অবাক হয়ে বলল,

“আপনার সুবিধা মানে?”

“না ইয়ে মানে আমার ডায়াবেটিস তো।কিন্তু বাইরে বেশি একটা যাওয়া হয় না।তোমাকে খাবার দেওয়ার উছিলায় একটু হাটাও হবে আমার।”

“কিন্তু আপনি এত কষ্ট করবেন কেন আমার জন্য?”

“কষ্ট কই বাবা?তুমি তো আমার ছেলেরই মতো।নিজের ছেলেকে ইফতারি বানিয়ে দিতে কি কষ্ট লাগে নাকি কারোর?আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

“জ্বি বলুন না!”

“চৈতিকে তোমার কেমন লাগে?”

“চৈতিকে আমার কেমন লাগে মানে?”

“না ইয়ে মানে আমার মেয়েটা কারোর সাথে মিশে না তো।ফাস্ট দেখলাম তোমার সাথে কথা বলছে।তাই জিজ্ঞেস করলাম। ”

“না না আন্টি ও তো অনেক ভালো।”

এই তো ছেলে ভালো বলেছে। তারমানে চৈতিকে ওর পছন্দ হয়েছে।

“আচ্ছা তাহলে এবার আসি হ্যা।আমাদের বাসায় একবার বেড়াতে এসো।”

” দুঃখিত আন্টি আপনাকে কিছু খাওয়াতে পারলাম না!”

“আরে কিছু হবে না।তুমি ছেলে মানুষ!তুমি কি খাওয়াবে?”

“তাও আন্টি।”

“বাদ দাও তো।আমি গেলাম।”

“আচ্ছা,আবার আসবেন। ”

“তা তো অবশ্যই! ”

“জ্বি কিছু বললেন?”

“না না বাবা।আচ্ছা চেষ্টা করব।ভালো থাকবেন।”

“তুমিও।”

বাসায় আসতেই চৈতি খাতায় লিখে বলল,

“কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”

“তেমন কোথাও না। ভালো লাগছিল না তাই এক ভাবির ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম।”

“অহ আচ্ছা।”

চৈতির মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।যাক বাবা চৈতি কিছু বুঝতে পারে নাই। উনি তো চৈতির ভালোর জন্যই এমনটা করছেন।এতে মিথ্যা বললে কিছু হবে না।বরং এতে যদি উনার মেয়ের লাভ হয় তাহলে ক্ষতি কোথায় মিথ্যা বলতে?এসব ভেবেই নিজেকে শান্ত করলেন তিনি।
.
.
“মিস চৈতি ছুটি শেষে আমার সাথে দেখা করবেন।”

আরশি চৈতিকে খোচা মেরে বলল,

“কিরে তোর সাথে স্যার দেখা করতে চাইছে কেন তাও আবার পারসোনালি?”

“জানি না।”

“আচ্ছা তুই স্যারের সাথে দেখা করিস।আমি তোর জন্য নাহয় বাইরে ওয়েট করব।”

“তুই কেন আবার ওয়েট করবি?”

“আরে কিছু হবে না।আমার এমনেও কলেজ শেষে কোন কাজ থাকে না।আজাইরা বইসাই থাকি।”

চৈতি আরশির কথায় হেসে বলল,

“আচ্ছা। তুই বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার জন্য ওয়েট করিস আর মশার কামড় খাস কেমন?”
#চলবে…..

তুমি এলে তাই পর্ব-০৪

0

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৪

মিস চৈতি,আপনার পায়ে কি হয়েছে?এভাবে খুড়িয়ে হাটছেন কেন?”

চৈতি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছিল।হঠাত সামনে আশরাফকে দেখে থেমে গেল।আশরাফের কথা চৈতি বুঝেনি।তাই হা করে তাকিয়ে ছিল।আশরাফ বিরক্ত হয়ে বলল,

“আমিও না!আপনি তো শুনতেই পান না।কাকে কি বলছি।”

মোবাইল বের করে লিখে চৈতিকে দেখালো।চৈতিও লিখে বলল,

“তেমন কিছু না।জাস্ট আসার সময় একজনের সাথে ঢাক্কা খেয়ে পরে গিয়েছিলাম”

“আমার কেবিনে আসুন।”
বলেই আশরাফ চলে গেল।চৈতি আশরাফের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মনে মনে ভাবল তাকে ডাকছে কেন?ও কি কিছু অন্যায় করেছে নাকি?ওর যতদুর মনে পরে ও তো আজকে আশরাফের ক্লাসই করেনি।তবে কি আরশির সাথে কেন্টিনে গিয়েছে বলে কিছু বলবে?ভয়ে ভয়ে আশরাফের রুমে যেতেই আশরাফ চেয়ারে বসতে বলল।চৈতি চেয়ারে বসতেই আশরাফ বলল,

“পা টা দিন।”

চৈতি আশরাফের কথা বুঝে আশরাফের দিকে তাকাতেই আশরাফ বুঝল কি বলে ফেলেছে সে।টেবিলে থাকা ফাস্ট এইড বক্সটা চৈতির দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল,

“এই নিন।আমি বাইরে যাচ্ছি।আপনি মেডিসিন লাগিয়ে নিন।নয়তো ইনফেকশন হবে।”

বলেই কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।আশতাফেএ যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে রইল চৈতি।

“লোকটার আজ কি হলো?সকালে দেরি করে গেলাম বলে ধমক দিয়ে বাইরে দাড় করিয়ে রাখল।আর এখন ফাস্ট এইড বক্স দিয়ে সাহায্য করছে?”

ভাবতে ভাবতেই পায়ে বেন্ডেজ করে বাইরে বের হতেই দেখল আশরাফ দাঁড়িয়ে আছে।চৈতিকে বের হতে দেখেই আশরাফ বলল,

“মেডিসিন লাগিয়েছেন?”

চৈতি উপর নিচে মাথা নাড়ল।

“দেখুন,একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি।আপনি আবার অন্য কিছু ভেবে নিয়েন না।এখন বাসায় যান।”

বলেই কেবিনের ভিতরে চলে গেল।আশরাফের যাওয়ার দিকে চৈতি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকল।কারণ আশরাফের বলা কথা ও বুঝতে পারে নাই।লোকটা এত তাড়াতাড়ি বলল যে চৈতি লিপ রিডিং করতে পারে নাই। ও কি কেবিনে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে যে আশরাফ কি বলেছিল তখন?না থাক,পরেই নাহয় জিজ্ঞেস করবে।ভেবেই কলেজ থেকে বেরিয়ে গেল।কেবিনের জানলা দিয়ে আশরাফ বাইরেই তাকিয়ে ছিল।চৈতিকে খুঁড়িয়ে যেতে দেখে আশরাফ মনে মনে ভাবল,

“মেয়েটা এই পা নিয়ে যেতে পারবে তো?আমার তো উচিত ছিল ওকে বাসায় পৌছে দেওয়া।কেন যে তখন কিছু না শুনেই মেয়েটাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলাম!এতক্ষন বাইরে দাঁড়ানোর কারনেই মনে হয় পায়ের ব্যাথাটা বেড়েছে।”

পরক্ষনেই নিজের ভাবনাকে দুরে ছুড়ে ফেলে দিল।চৈতিকে নিয়ে এত ভাবনা কবে থেকে ভাবছে ও?ওদের মধ্যে সম্পর্ক জাস্ট টিচার স্টুডেন্টের।একজন টিচার নিশ্চয়ই তার স্টুডেন্টকে নিয়ে এত ভাবে না।নাহ বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা।এই ব্যাপারটাকে আর ওগুতে দেওয়া যাবে না।মেয়েটার কাছ থেকে নিজেকে দুরে রাখতে হবে।ভেবেই বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
.
.
চৈতি কলেজ থেকে বেরিয়েই বাসস্টেশনে এসে দাঁড়ালো।বাসের অপেক্ষায়।কম ভীড় থাকলে তবেই ও বাসে উঠবে।নয়তো না।প্রায় অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও কম ভীড় বাস পেল না।এরমধ্যেই হঠাত বৃষ্টি নামা শুরু হয়ে গিয়েছে।চৈতি দৌড়ে গিয়ে একটা ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ালো।বৃষ্টি পড়ার আর টাইম পেলো না?এখনই বৃষ্টি পরা লাগলো।এখন নিজের উপরই রাগ লাগছে।কেন সে বাসে উঠলো না?উঠলে তো আর এভাবে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা লাগতো না।বাস কখন আসবে কে জানে?ভাবতে ভাবতে ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে হাত মুছতে লাগল।হাতে খানিকটা বৃষ্টির ফোটা পরেছে।বৃষ্টির ফোটা পরলেই ওর আবার জ্বর উঠে।সেই জ্বর চার পাঁচদিনের আগে ছাড়ে না।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাত হাত থেকে রুমালটা নিচে পরে গেল।এখন রুমালটা তুলতে নিলেই সে বৃষ্টিতে ভিজে যাবে।কিন্তু রুমালটা তো ওকে তুলতেই হবে।আরশি দিয়েছে ওকে রুমালটা।।তাই বাধ্য হয়ে নিচু হযে রুমালটা তুলতেই যাবে এমন সময হটাত ও খেয়াল করল ওর মাথায় আর বৃষ্টি পরছে না।অবাক হযে উপরে তাকাতেই আশরাফকে দেখতে পেল। ওর মাথার উপর ছাতা ধরে আছে।মুখে কিছুটা গম্ভীর ভাব।
“এভাবে তাকিযে আছেন কেন?উঠুন!সবাই দেখছে।”

আশরাফের কথা বুঝে তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে টাইপ করে বলল,

“আপনি?”

আশরাফ আমতা আমতা করতে বলল,

“আব…ইয়ে মানে সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম।হঠাত আপনাকে দেখলাম।”

কিছুক্ষন থেমে আবার বলল,

“বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন?”

চৈতি উপর নিচ মাথা নাড়ালো।

আশরাফ কিছু বলতে যাবে হঠাত শুভ্র এসে চৈতির মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল,

চৈতি!আপনি?আপনার দেখা পাব আশা করিনি।”

আশরাফ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে শুভ্রর উপর।এই ছেলে আবার কই থেকে আসল?চৈতির নাম জানে কিভাবে?কে এই ছেলে?কি সম্পর্ক চৈতির সাথে?বয়ফ্রেন্ড নাকি ওর?এরকম হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে আশরাফের।শুভ্র আশরাফকে দেখিয়ে ইশারায় বলল,

উনি?

চৈতিও ইশারায় বলল,

আমার কলেজের স্যার।

আশরাফের দিকে তাকিয়ে মোবাইলে টাইপ করে লিখল,

“উনি আমাদের বাসার উপরে থাকেন।”

আশরাফ হাত বারিয়ে দিয়ে বলল,

হাই, আমি আশরাফ। আপনিও কি মিস চৈতির মতো কথা বলতে পারেন না?না মানে দেখছি উনার সাথে সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলছেন তো তাই।কিছু মনে করবেন না প্লিজ।”
আশরাফের কথা শুনে শুভ্রর মনে হলো চৈতিকে উনি ইচ্ছা করে খোচা মেরে কথা বলেছেন।পরক্ষনেই নিজের ভাবনাকে ভুল ভাবল। কারন একজন টিচার নিশ্চয়ই তার স্টুডেন্টকে খোচা মেরে কথা বলবেন না।
তাই হাসি মুখে বলল,

“আমি শুভ্র। আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগল।”

চৈতিকে উদ্দেশ্য করে ইশারায় বলল,

“চৈতি,চলুন আমরা বাসায় যাই।বৃষ্টি কমে এসেছে।”

চৈতিও উপর নিচ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

“আসি ভালো থাকবেন।আর চৈতির প্রতি একটু খেয়াল রাখবেন।জানেনই তো ও অন্য স্বাভাবিক স্টুডেন্টের মতো না।”

বলেই শুভ্র চৈতিকে নিয়ে চলে গেল।আশরাফ ওদের যাওয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।এই ছেলে চৈতির সাথে কেন এত কথা বলছে?অই মেয়ের জন্য ও সাইন ল্যাংগুয়েজও শিখেছে কিন্তু কেন?
.
.
“বাহ বেশ ভালোই সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে পারেন তো আপনি!”

চৈতির ইশারায় কথা বলা বুঝে শুভ্র মাথা নিচু করে হেসে বলল,

“অই আরকি।”

হাঁটতে হাঁটতে একটা গাড়ির সামনে এসে শুভ্র চৈতিকে ইশারায় বলল,

“উঠুন।”

চৈতি অবাক হয়ে বলল,

“আপনার গাড়ি আছে?”

“আগে তো ছিল না।আপনার জন্য আব্বুর থেকে আনা লাগল।”

শুভ্রের কথা না বুঝে চৈতি বলল,

“কি বললেন?আমি লিপ রিডিং করতে পারি নি।”

“আসলে আমি গাড়ি বেশি একটা ইউজ করি না তো।তাই দেখেন নি।”

“অহ আচ্ছা।”

“আমি আপনার কলেজের দিকটায় প্রতিদিনই আসি।তাই আপনি আসার সময় আমার সাথে আসতে পারেন।এতে করে আপনাকে আর ভীড় বাসে উঠতে হবে না।”

“কিন্তু….”

“আমি আপনাকে জোর করব না।জাস্ট বললাম।আমার কোন অসুবিধা হবে না।বরং আপনার আরও সুবিধা হবে অই ভীড় বাসে যাওয়ার থেকে।দেখলেনই তো আজ কি হলো। আমি তো আর সবসময় থাকব না।”

চৈতি কিছুক্ষন ভেবে রাজি হয়ে গাড়িতে উঠল।কিন্তু আপত্তি বাধল সিট বেল্ট বাধা নিয়ে। ও তো কোনদিন গাড়িতে উঠেনি।মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে সে।গাড়ি না থাকাটাই স্বাভাবিক।শুভ্রকে কিছু বলতেও পারছে না।কি না কি ভাববে!হটাত শুভ্র এগিয়ে এসে সিট বেল্ট বাধতে বাধতে চৈতির মুখের দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে আছে।মনে হচ্ছে এক্ষুনি চক্ষু কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।কিছুক্ষন তাকিয়ে নিজের সিটে এসে বসল।এতক্ষন জমে থাকা শ্বাস বের করে দিল।একটুর জন্য হৃদপিন্ডটা বেরিয়ে আসে নি।নিজেকে সামলিয়ে ধন্যবাদ দিল শুভ্রকে।শুভ্র কিছু না বলে হেসে গাড়ি চালানো তে মন দিল।কিছুক্ষন পর চৈতি গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো।তখনও হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে।দেখিতে ভালোই লাগছে।হঠাত চোখের সামনে…..
#চলবে….

তুমি এলে তাই পর্ব-০৩

0

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৩
চৈতি ঘুম থেকে উঠেই দেখলো ৮ঃ৩০ বাজে।অথচ তার ক্লাস ৯ টায়।বড্ড লেট করে ফেলেছে সে।ফাস্ট ক্লাস আবার আশরাফ নামক অসহ্য ব্যাক্তিটার।যে কিনা সময় অসময়ে ওকে খোটা দেওয়ার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে আজকে কি বলবে আল্লাহই জানে।বিছানা থেকে ওঠে হাত মুখ ধুয়ে ড্রেস চেন্জ করে চুলগুলো আচড়িয়ে বেধে নিল যে করেই হোক ৯ টার মধ্যে পৌছাতে হবে।ব্যাগ কাধে নিয়েই দৌড়ে বেরিয়ে গেল।চৈতির মা তখন রান্নাঘরে রান্না করছিল।তাই দেখতে পায় নি যে চৈতি কলেজে চলে গিয়েছে।

বাস স্টেশনে দাঁড়াতেই ৫ মিনিট পরেই ভাগ্যক্রমে একটা বাস পেয়ে গেল।সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাসে উঠতেই সামনে তাকাতেই দেখল বাসে ভীড়।অন্য দিনও যে ভীড় থাকে তা না।তবে আজকে একটু বেশিই ভীড়।এত ভীড় যে মানুষের মাঝে পিপড়ার সমানও জায়গা নেই।মন খারাপ হয়ে গেল ওর।বাস তো ঠিকমতো পেল।কিন্তু এখন দাঁড়িয়ে যাওয়া লাগবে।একটা সিটও খালি না থাকায় অগত্যা দাঁড়িয়েই থাকতে হলো।হঠাত চৈতি ওর পিঠে কারোর স্পর্শ পেয়ে চমকে পিছনে তাকালো।দেখল একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।চৈতি কিছু না বলে ছেলেটার থেকে একটু দুরে গিয়ে দাঁড়ালো।কিন্তু কিছুক্ষন পর আবার অই ছেলেটা ওর কোমড় স্পর্শ করছে।এইবার দুরে যাওয়ার আর কোন রাস্তা নেই।পাশে আরও লোকজন আছে।আজকে সে কথা বলতে পারলে নিশ্চয়ই উচিত একটা জবাব দিত।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আর কখনও ভীড় বাসে উঠবে দরকার হলে হেঁটে যাবে।

একটু দুরে দাঁড়িয়েই শুভ্র সবটা দেখলো।প্রথমে রাগ উঠেছিল চৈতির উপর কিছু না বলে চুপচাপ সহ্য করছে বলে।পরক্ষনেই মনে পড়ল।মেয়েটাতো বোবা।ও কি করে প্রতিবাদ করবে?ভীড় ঠেলে ছেলেটার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

“এইযে ভাই! একটু পিছনে গিয়ে দাঁড়ান।”

“কেন? আমি আগে আসছি।আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে দাঁড়াবো আপনার সমস্যা কি?”

“সামনের যে মেয়েটাকে দেখছেন ও আমার পরিচিত একজন।অপরিচিত মানুষের মাঝে ও কমফোর্টেবল ফিল করে না।তাই বলছি।আপনি একটু সরে দাঁড়ালে ভালো হতো।”

“পরিচিত মানুষ হলে কি হইছে?আপনি তো উনার আর জামাই লাগেন না যে পাশে এসে দাঁড়াবেন!”

শুভ্রর ইচ্ছা করছে ছেলেটার নাক বরাবর ঘুষি দিতে।একে তো অন্যায় করছে তার উপর আবার মুখে মুখে তর্ক করছে।নিজের রাগটাকে দমানোর জন্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ঠিক বলেছেন।আমি উনার জামাইই লাগি তাই বলছি।সরে দাঁড়ান।নইলে ভালো হবে না।”

শুভ্রর কড়া চাহনি দেখে ছেলেটা ভয় পেয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো।চৈতি অনেকক্ষন ধরে কোন বাজে স্পর্শ পাচ্ছে না দেখে পিছনে ফিরে তাকাতেই শুভ্রর মুখটা দেখল।অবাক হয়ে ইশারায় বলল,

“আপনি?”

শুভ্র পকেট থেকে মোবাইল বের করে লিখল,

“হ্যা,একটা কাজে যাচ্ছিলাম। আপনি কোথায়
যাচ্ছেন?”

চৈতিও নিজের মোবাইলে লিখে শুভ্রকে দেখাল।

“কলেজে।”

“অহ আচ্ছা।এখন থেকে আর বাসে উঠবেন না।”

চৈতি অবাক হয়ে বলল,

“বাসে না আসলে কিভাবে আসব?আমার কলেজ তো অনেক দুরে। রিকশা ভাড়া ১০০ টাকা চায়।”

শুভ্র কিছুক্ষন ভেবে বলল,

“আচ্ছা। পরে এ ব্যাপারে পরে দেখা যাবে।”

“হুম।”

কলেজের কাছে আসতেই চৈতি শুভ্রকে বিদায় দিয়ে দৌড়ে কলেজের ভিতর ঢুকল।ওর ক্লাস ৫ তলায়।সিড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি করে উঠতে যেতেই একজনের সাথে ঢাক্কা খেয়ে পরে গেল।
আশরাফ ক্লাসে ঢুকেই সারা ক্লাসে চোখ বুলালো।পরিচিত মুখ না দেখতে পেয়ে ভ্রু জোড়া কুচকে এলো।কই এতদিন ক্লাস নিচ্ছে একদিনও তো সে চৈতিকে লেট করে আসতে দেখে নাই।সবসময় ক্লাসে এসেই চৈতির মুখটা দেখেছে তবে আজকে কেন চৈতি আসে নি?ও কি অসুস্ত?নাকি আসবে না?এত চিন্তা করছে কেন সে অই মেয়েটাকে নিয়ে?কই অন্য স্টুডেন্ট না এলে তো এত চিন্তা করে না।তবে চৈতিকে নিয়েই কেন?তবে কি ও চৈতির প্রেমে পরে গিয়েছে?নাহ,এ অসম্ভব।ও অই বোবা,বধির মেয়ের প্রেমে পরতেই পারে না।কি আছে ওর মধ্যে?কাঠের মতো শুকনা এক শরীর,লম্বাও তো না এত।ফর্সাও না।শ্যামলা গায়ের রঙ।আর একটুর জন্য কালো হয় নাই।আরেকটু চাপা হলেই কালো বলা যেত।কি আছে ওর৷ মধ্যে?কিছুই নেই।তবে কি দেখে ও প্রেমে পরল ওর?মা তো কিছুতেই মেনে নিবে না।নাহ,নিজেকে আটকাতে হবে।নইলে বড় সর একটা ঝামেলা হয়ে যাবে।আচ্ছা মেয়েটাকি ওকে জাদু করল?ডিজিটাল যুগে এসে কিনা সে এখন জাদুটুনায় বিশ্বাস করছে?এত অধঃপতন কি করে হলো তার?
.
.
সামনে তাকাতেই মেয়েটা সরি বলে চলে গেল।চৈতি ফ্লোর ধরেই বসা থেকে কোনমতে উঠে দাড়ালো। অনেক জ্বলছে পা টা।দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে ৫ তলা বেয়ে উঠে ক্লাসের সামনে আসতেই দেখল আশরাফ অলরেডি ক্লাসে ঢুকে গিয়েছে।চৈতি কিছু না বলে দরজায় হাত দিয়ে নক করল।আশরাফ মনে মনে ভাবছিল। হঠাত নকের শব্দ শুনে তাকাতেই চৈতিকে দেখল।

“এত দেরি হলো কেন?”

চৈতি লিপ রিডিং করে পরে খাতায় লিখে আশরাফকে দেখালো

“সরি স্যার,ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছিলো।”

“তাহলে ক্লাসে আসার দরকার কি ছিল?বাসায় বসে ঘুমাতেন।”

“সরি স্যার।আর এরকম হবে না।”

“আপনাকে এখন যদি আমি কোন পানিশমেন্ট না দেই তাহলে আপনি মাথায় উঠে বসবেন।আজকে লেট করেছেন।কালকেও লেট করবেন।পরশুদিনও লেট করবেন।বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন।আমার ক্লাস শেষ না হওয়া অবদি ক্লাসের ভিতর ঢুকবেন না।”

চৈতি মাথা নাড়িয়ে ক্লাস রুম থেকে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো।চোখ থেকে পানি পরছে ওর। আজ পর্যন্ত কোনদিন ও এভাবে ক্লাসরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে নি।আজকেই প্রথম পা টাও বড্ড জ্বালা করছে।মনে হয় চামড়া ছিলে গিয়েছে।দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে খুব।ক্ষিধেও পেয়েছে।ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেতে নিতেই পাশ্ব আরশিকে দেখল।অবাক হয়ে ইশারায় বলল,

“কিরে?তুই এখানে?”

আরশি হেসে বলল,

“তোর জন্য এলাম।তোকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কষ্ট হচ্ছিল।তাই ইচ্ছা করে পিছনের মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করাতে ও স্যারকে বিচার দিয়েছে।আর স্যারও আমাকে বের করে দিল।কত চালাক না আমি?”

“আমার জন্য তুই ক্লাসরুম থেকে চলে আসবি?”

“তো?তোকে একা একা দাঁড় করিয়ে রাখতাম?তুই বোরিং হতি না?”

চৈতি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না।নিজের বাবা মা ওকে এত বুঝে না। যতটা আরশি নামক মেয়েটা বুঝে।

“তোকে এত ভালো হতে কে বলেছে?আমার কথা চিন্তা করতে কে বলেছে।অন্য সবার মতো কেন হলি না তুই?

“আরে আরে কান্না করছিস কেন?আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।তোর কথা আমি চিন্তা করব না তো কে করবে?আমার বিশ্বাস আমার জায়গায় তুই হলে আমাকেও তুই এভাবেই সাহায্য করতি।এবার চোখের পানি মুছ।তোকে কান্না করলে অনেক বিশ্রি লাগে।হায়,আমার ভবিষ্যতের দুলাভাই ঝগড়ার পরে তোর কান্নারত মুখটা দেখে না জানি কবে হার্ট এট্যাক করে!”

চৈতি কান্না মুছে চোখ বড় বড় করে ইশারায় বলল,

“হইছে।তোর আর আমাকে পঁচাতে হবে না।”

“চল ক্যান্টিনে যাই।”

“কেন?”

“মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কিছু খাসনি।তাই।”

“কিন্তু স্যার?”

“আরে কিছু হবে না।চল তো!”

“হুম চল।”

ক্যান্টিনে,
খাবার অর্ডার দিয়ে টেবিলে বসতেই আরশি বলল,

“কালকে আমার জম্মদিন।একটা পার্টি রেখেছি। তুই আসবি। ”

“আমি এসে কি করব?প্লিজ আমি যাব না।”

“তুই আমার জম্মদিনে আসবি না?”

“কিন্তু….”

” আমি কিছু শুনতে চাই না।তুই আসবি মানে আসবি।”

“আচ্ছা দেখি।”

“দেখি না আসতেই হবে।”

“আচ্ছা আসব।খুশি?”

“অবশ্যই ”

হঠাত আরশির মোবাইলে কল আসাতে আরশি ইশারায় বলে,

“চৈতি,ক্লাসে যা।আমি একটু পরে আসছি।”

.
.
“মিস চৈতি,আপনার পায়ে কি হয়েছে?এভাবে খুড়িয়ে হাটছেন কেন?”

চৈতি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছিল।হঠাত সামনে আশরাফকে দেখে থেমে গেল।আশরাফের কথা চৈতি বুঝেনি।তাই হা করে তাকিয়ে ছিল।আশরাফ বিরক্ত হয়ে বলল,

“আমিও না!আপনি তো শুনতেই পান না।কাকে কি বলছি।”

মোবাইল বের করে লিখে চৈতিকে দেখালো।চৈতিও লিখে বলল,

তেমন কিছু না।জাস্ট আসার সময় একজনের সাথে ঢাক্কা খেয়ে পরে গিয়েছিল।”

“আমার কেবিনে আসুন।”
লেখাটা দেখিয়েই আশরাফ চলে গেল।
#চলবে…..