Friday, August 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2024



পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২২

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২২
Tasneem Tushar

তিয়াশার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পড়লে, আনমনেই কাঁধের হাতটি ধরে সজোরে হু হু করে কেঁদে উঠে তিয়াশা।

ফোনটি বারবার বেজে উঠছে তিয়াশার, কিন্তু প্রতিবারই সে কলটি কেটে দিচ্ছে আর পার্কের বেঞ্চে বসে কেঁদেই চলেছে। তার মনে হলো কেউ যেন তাকে বলে উঠলো,

“ফোনটি ধরুন।”

তিয়াশা চোখের পানি মুছে ফোনটি ধরে। কণ্ঠে কান্নার রেশ স্পষ্ট,

“হ্যালো?”

“কি এত কষ্ট তোমার?”

তিয়াশা হকচকিয়ে উঠে এত কাছ থেকে গলার শব্দ শুনতে পেরে। হঠাৎ তার খেয়াল হয় সে নিজের কাঁধে অন্য কারো হাত ধরে আছে। খেয়াল হতেই সেই হাতটি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর মুখ তুলে তাকালে দেখতে পায় খুব পরিচিত একটি মুখ দাঁড়িয়ে।

তিয়াশা দ্রুত মুখ ফিরিয়ে চোখ মুছে মুখে হাসি হাসি ভাব আনার চেষ্টা করে। পরিচিত মুখটি এবার বেঞ্চে যেয়ে বসে। তারপর তিয়াশাকে বলে,

“বসুন।”

তিয়াশা চুপ করে থাকে, তার মুখে কোনো শব্দ নেই। ধীর পায়ে হেটে এসে বেঞ্চে বসে। হঠাৎ পরিচিত মুখ দেখে হকচকিয়ে উঠেছে সে, তাই থিতু হতে সময় লাগছে।

হুট করেই দুই হাত দিয়ে তিয়াশার গালে হাত রেখে তার মুখটা তুলে ধরে সেই পরিচিত মুখটি। কন্ঠে তার অধিকারের সুর, তিয়াশার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“চোখের পানি খুব সস্তা হয়ে গেছে তোমার, তাইনা?”

তিয়াশা ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। এখনো চোখে তার পানি ছলছল করছে। পরিচিত মুখটি এবার বলে বসে,

“জানি অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি নিরুপায়, আপনার এই কান্না মাখা চেহারা দেখাটা আমার জন্য ভীষণ কষ্টের হয়ে যাচ্ছে।”

বিবর্ণ মুখে বসে আছে তিয়াশা। তার স্পর্শে হঠাৎ অস্বস্তি হলেও এক ধরণের মায়ার অস্তিত্ব টের পায় সে। অনেকটা রাগ করেই বলে উঠে সেই মুখটি,

“কাকে দেখে এভাবে দৌড়ে পালালে? ভূত দেখেছ? আর কিসেরই বা এত কষ্ট তোমার?”

তিয়াশা হুট করেই জিজ্ঞেস করে বসে,

“আচ্ছা আপনি সবসময় কিভাবে আমার খারাপ সময়ে পৌঁছে যান?”

“সে আমার মন জানে। সব সঠিক সময়ে জানতে পারবেন।”

তিয়াশার কি যেন কি হয়, ফিক করে হেঁসে দেয়। ছেলেটি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে বলে,

“হাসছো যে?”

“এমনি।”

“না সত্যি বলো।”

“আপনি খুব মজার মানুষ, মিঃ আদিল।”

“তাই? মজার কি এমন করলাম?”

“এই যে আপনি কখনো আমাকে আপনি, কখনো তুমি করে সম্বোধন করেন। ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে।”

আদিলও হেসে দিয়ে বলে,

“আমার যখন যেটা ভালো লাগে সেভাবেই তোমাকে সম্বোধন করবো। সেটা তুমি এখন বুঝবেনা।”

তিয়াশা আবার হেসে দেয়। আদিল বলে উঠে,

“তুমি হাসলে তোমাকে কতটা ভালো লাগে, সেটা কি তুমি জানো?”

তিয়াশা কথা এড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,

“আপনি এখানে কি করছেন?”

“আমি আশেপাশেই ছিলাম মিস টি।”

এই লোকালয়েরই কফিশপে সুহানির সাথে দেখা করতে এসেছিল আদিল। সে ইচ্ছা করেই এই লোকালয়ে দেখা করতে আসে সুহানির সাথে, যেন সুহানির সাথে কোনোরকম দেখা শেষ করেই তিয়াশার খোঁজ করতে ম্যাকডোনাল্ডে যেতে পারে। আর এরপরে তো একটা সুযোগ চলেই এসেছে তার হাতে। এতকিছু তিয়াশাকে না বলে শুধু জানায়,

“তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

“মানে?”

“মানে বুঝতে হবেনা। তোমার ফোনের অপেক্ষায় তো অনেকদিন বসে রইলাম। সেই যে বললে তুমি আমাকে ফোন দিবে। আমাকে খাওয়াবে রেস্টুরেন্টে, কই আর তো ফোন দিলেনা।”

তিয়াশা একটু লজ্জা পেয়ে যায়।

“আসলে, আসলে…।”

“থাক আসলে আসলে করতে হবেনা। এখন চলো আমার সাথে।”

তিয়াশার চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন। সেটা দেখতে পেয়ে আদিল মুচকি হেসে তিয়াশার হাত ধরে টেনে বলে,

“আবারও অনধিকার চর্চা করছি। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই আমার। যেতে হবে আমার সাথে। কেন? কোথায়? এসব জিজ্ঞেস করবেনা। উত্তর পাবেনা।”

“উম..কিন্তু বাসায় যেতে হবে..তো। আম্মুকে না জানিয়ে কোথাও যাইনা আমি।

আদিল তিয়াশার হাত ধরে টানতে টানতে বলে,

“আন্টির পারমিশন নিয়েই এসেছি আমি।”

তারপরও তিয়াশা দ্বিধা করতে থাকলে, আদিল মজা করে বলে উঠে,

“না আসলে কিন্তু আমি এবার আরেকটা অনধিকার চর্চা করবো।”

“জ্বি?”

“জ্বি জ্বি, বলে লাভ নেই। একেবারে কোলে তুলে নিয়ে যাবো।”

তিয়াশা লাফ দিয়ে পিছু হটে যায়,

“না না, থাক। ঠিক আছে, আমি আসছি। চলুন।”

আদিল হো হো করে হেসে দেয়। তারপরও তিয়াশার হাত শক্ত করে ধরে রেখে বলে,

“চলো।”

তিয়াশা বাধ্য মেয়ের মতই আদিলকে অনুসরণ করে। যদিও তার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে, তবুও মনে এক প্রশান্তি কাজ করে আদিলের সাথে থাকলে। সে মনে প্রানে বিশ্বাস করে যে আর যাই হোক আদিলের সাথে থাকলে তার কোনো ক্ষতি হবার শঙ্কা নেই।

কিন্তু আদিল কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে? সত্যিই কি তিয়াশা নিরাপদ তার কাছে?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ২১: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/943334306097289/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২১

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২১
Tasneem Tushar

“সুহানি।”

সুহানি খুশি হয়ে যায়, বোধ হয় আদিল তার মনের কথাটি বলার জন্যই তার নাম ধরে ডেকেছে। সুহানি পুলকিত হয়ে দ্রুত বলে উঠে,

“হুম, বলনা।”

“আমি একটু আসছি। তুমি বস।”

“উত্তর দিলে না?”

“একটু… একটু আসছি রেস্টরুম থেকে। এসে বলি?”

কথা শেষ করেই আদিল দ্রুত সুহানির সামনে থেকে সরে আসে। পকেট থেকে ফোন বের করে বার বার কল দিয়েই যাচ্ছে একটি নাম্বারে, কিন্তু অপর পাশ থেকে ফোনটি রিসিভ করছেনা। আদিল অধর্য্য হয়ে পায়চারি করছে ফোন ধরছেনা দেখে। দশ মিনিট চেষ্টা করার পর ফোন ধরলে আদিল চেঁচিয়ে উঠে,

“এই ফাজিল, কি কথা ছিল তোর সাথে আমার?”

ফোনের অপরপাশ থেকে আদনান সজোরে হেসে বলে,

“শান্ত হও ভাই। কি হয়েছে?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“কি হয়নি? এক ঘন্টা যাবৎ এখানে বসে আছি। তোকে না বলেছি সুহানির সাথে দেখা করার আধা ঘন্টার মধ্যেই আমাকে ফোন দিয়ে জরুরি কাজ আছে বলে তাগাদা দিবি?”

“রিলেক্স ভাইয়া। আমি তো কল করতামই।”

“কখন করতি? আমি শহীদ হয়ে গেলে?”

“কি ব্যাপার ভাইয়া? হবু ভাবী কি তোমাকে ঘায়েল করে ফেললো নাকি?”

“ওই, কিসের হবু ভাবী?”

“আরে বাবা মজা করছি। তুমি যাও আমি দশ মিনিটের মধ্যে কল করছি।”

“দশ মিনিট কেন? দুই মিনিটের মাঝে কল করবি।”

“ম্যাথিউ এর সাথে একটা জরুরি বিষয়ে কথা বলছিলাম। ওর সাথে বাকি কথাটুকু সেরেই তোমাকে কল দিচ্ছি।”

“ওর সাথে পরে কথা বলিস। আগে আমাকে উদ্ধার কর।”

“উফ! ভাইয়া, একটা পরিকল্পনা করছিলাম আমরা। আর এর মাঝেই তুমি ফোন দিয়ে বারোটা বাজালে।”

“কিসের পরিকল্পনা?”

“আছে, একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান।”

“কিসের প্ল্যান? জলদি বল।”

“আচ্ছা বলবো পরে। আগে কথা সেরে নেই ম্যাথিউ এর সাথে।”

“ওই, তুই আগে আমাকে কল দিয়ে এখান থেকে বের কর। আমি…” একটু ভেবে আদিল আবার বলে উঠে, “আমি তাহলে তোর প্ল্যানে সাহায্য করবো।”

“সত্যি? তোমাকে আসলে লাগতো… প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য…।”

“আমি তো জানি আমাকে ছাড়া কিছু করতে পারিস না তুই।”

“হুম, এই সাহায্যের জন্য তো আবার ভর্তুকি ও দিতে হয়।”

“আরে বাপ, এখান থেকে উদ্ধার কর। কোনো ভর্তুকি দিতে হবেনা।”

আদনান বেশ খুশি হয়ে যায় এবং বলে উঠে,

“আর ইউ শিওর? ওকে, যাও আমি এখুনি তোমাকে কল করে তোমার প্রাণ ভ্রমরার হাত থেকে রক্ষা করছি তোমাকে।”

*

দুপুর দুইটা। তীব্র রোদ।

তিয়াশা ম্যাকডোনাল্ডে সকালের শিফটের কাজ সেরে ড্রেস পাল্টিয়ে বের হয়ে মেইন রোডে দাঁড়িয়ে আছে, উদ্দেশ্য উবার কল করবে। তীব্র রোদ হওয়ার দরুন সে চোখে সানগ্লাস আর মাথায় পাতলা স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢেকে আছে।

হঠাৎ তার সামনে একটি গাড়ি সজোরে এসে ব্রেক কষে। আচমকা (লেখিকা-তাসনীম তুষার) গাড়ি সামনে চলে আসাতে তিয়াশা ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে পেছনে সরে যায়। হৃদপিন্ড যেন খুলে বের হয়ে আসবে তার। হাপাতে থাকে সে, তারপর গাড়ি চালকের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“এই যে, চোখ কি কপালে তুলে গাড়ি চালান? এক্ষুনি তো মেরে ফেলতেন আমাকে।”

গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। হাত ধরাধরি করে হাঁটছে তারা। তিয়াশাকে যেন তারা দেখতেই পায়নি। তিয়াশা ও আর কথা না বাড়িয়ে উলটো পথে হাঁটা দেয়। হয়তো আসলেই তিয়াশাকে দেখতে পায়নি। কিন্তু ছেলে ও মেয়ে দুজনকেই তিয়াশার খুব পরিচিত লাগছিল। কিন্তু ভালো করে দেখতে পারেনি।

“এক্সকিউজ মি?”

হঠাৎ ডাক শুনে তিয়াশা পেছন ফিরে তাকায়। দেখতে পায় সেই ছেলেটি ডাকছে। ছেলেটির পাশে থাকা মেয়েটি হেঁটে আরো সামনে চলে গিয়েছে। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে তিয়াশা বলে উঠে,

“জ্বি, আমাকে বলছেন?”

ছেলেটি তার চোখে থাকা সানগ্লাস সরিয়ে বলে উঠে,

“আপনি কি বলতে পারেন, এখানকার ফেমাস ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টটা কোন দিকে?”

তিয়াশা যেন একটা ধাক্কা খায় ছেলেটিকে দেখে। বিষন্নতায় ছেয়ে যায় তার মুখ। স্কার্ফ দিয়ে তার মুখটা আরো ভালো ভাবে ঢেকে হাতের ইশারায় আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,

“ওদিক টায়।”

“ধন্যবাদ।”

তিয়াশা কোনো কিছু না ভেবেই হুট করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে বসে,

“উনি কে?”

“আমার ফিয়ন্সে।”

“ওহ”

বলেই এক মুহূর্ত দেরি না করে সেখান থেকে দৌড়ে ছুটে সরে যায় তিয়াশা। তার চোখ দিয়ে নীরবে পানি ঝরছে। পাশেই একটা পার্ক। সেখানে গাছের নিচে মন খারাপ করে বসে পড়ে সে। কেন বারবার দেখা হয়ে যাচ্ছে তার সাথে। আমাকে দেখে কি চিনতে পারেনি? আমার কণ্ঠস্বর? কিছুই চিনতে পারলোনা?

তারপর মনে পড়লো তার মাথায় স্কার্ফ আর সানগ্লাস থাকাতে হয়তো চিনে নি। মাথা থেকে স্কার্ফ সরিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে আর ভাবে, ভালোই হয়েছে চিনতে পারেনি তাকে।

তিয়াশার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পড়লে, আনমনেই কাঁধের হাতটি ধরে সজোরে হু হু করে কেঁদে উঠে তিয়াশা।

চলবে…

আগের পর্বের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/942637466166973/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২০

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২০
Tasneem Tushar

আদিল চুপটি করে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, আর তার মা নওরীন মুজদাহীর আদিলের চুলে পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

“কি হয়েছে বাবা, এত চুপচাপ কেন? মন খারাপ?”

“এমনি মা। কিছু ভালো লাগছেনা।”

“কেন? তিয়াশাদের বাসা থেকে আসার পর থেকে মনমরা দেখছি তোমার। কিছু কি হয়েছে?”

“মা, তুমি শুধু মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।”

“আমার পাগল ছেলে। মায়ের কাছে কিছু লুকোতে হয়?”

“মা তোমাকেই তো বলবো। কিন্তু এখন না।”

“আচ্ছা তোর যখন ইচ্ছা তখনই বলিস। এখন বলতো, তিয়াশা গিফ্ট পেয়ে খুশি হয়েছে কিনা? মেয়েটা কিন্তু ভীষণ মিষ্টি।”

তিয়াশার কথা শুনেই, আদিল উঠে বসে পরে। তার মুখ (লেখিকা-তাসনীম তুষার) খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে বলে,

“মা সেতো ভীষণ খুশি হয়েছে। তোমাকে ধন্যবাদ ও দিয়েছে। ওহ তোমাকে তো একটা জিনিস দিতে ভুলেই গেছি। দাঁড়াও এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”

বলেই আদিল তার টেবিলে রাখা ব্যাগ থেকে একটা গ্রিটিংস কার্ড বের করে নওরীন মুজদাহীরের হাতে দেয়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই গ্রিটিংস কার্ডটি দিয়েছে। দেখো মা কি সুন্দর করে ফুলের কাজ করা। জানো? এটা সে নিজে বানিয়েছে।”

নওরীন মুজদাহীর খুশি হয়ে হাতে কার্ডটি নিয়ে বলে,

“বাহ! খুব চমৎকার একটি কার্ড। সত্যি তিয়াশা নিজ হাতে বানিয়েছে? মেয়েটির গুন আছে বলতে হয়।”

“হুম, নিজে বানিয়েছে।”

“মাঝে মাঝে মনে হয়, তিয়াশার মতো যদি আমার মেয়ে থাকতো। তাহলে আমার দুটো মেয়ে থাকতো। আলিয়া চলে যাবে। বুকটা আমার খালি হয়ে যাবে।”

আদিল তখন মজার ছলে কৌশলে মাকে তার মনের কথা জানায়,

“আম্মু, তুমি চাইলে কিন্তু তিয়াশাকে মেয়ে বানিয়ে তোমার কাছে এনে রেখে দিতে পারো। আলিয়া আপি চলে গেলেও তিয়াশা কিন্তু তখন তোমার কাছেই রয়ে যাবে।”

নওরীন মুজদাহীরের কি যেন কি মনে হতেই সাথে সাথে বলে উঠলো,

“ভালো কথা মনে পড়লো। আচ্ছা শোনো, তোমার বাবা চাইছিল তুমি ডা. সামিরের মেয়ে সুহানির সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে একে অপরকে ভালো করে চেনো ও জানো।”

আদিলের মুখটা সাথে সাথে কালো হয়ে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে মুখে হাসি হাসি ভাব ফুটিয়ে রেখেছে। মাকে বললাম কি আর মা বলছে কি। আম্মু কি আসলেই আমার ইঙ্গিত বুঝেনি। আদিলকে চুপ থাকতে দেখে নওরীন মুজদাহীর বলে উঠে,

“চুপ করে আছো যে?” আদিলের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “সুহানির সাথে কথা বললেই তো তাকে বিয়ে করতে হবেনা। তোমার ভালো লাগলে তবেই। কিন্তু আপাতত তোমার আব্বুর নির্দেশ এটা।”

“ঠিক আছে আম্মু। আমি দেখা করবো।”

কথাটি বলেই কোনো রকম মুখে হাসি ফুটিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আদিল। নওরীন মুজদাহীর ছেলের চোখের ভাষা ও ইঙ্গিত ঠিকই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু সে যে নিরুপায়। নাদিম মুজদাহীরের কথার অমতে গেলেই যে আদিলের উপরে অসন্তুষ্ট হবে সে। ছেলের ব্যাথিত হৃদয় যে তাকেও কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

*

এক সপ্তাহ পর।

আদিল ও সুহানি বসে আছে মুখোমুখি স্টারবাকস কফি শপে। আদিল তার বাবা নাদিম মুজদাহীরের নির্দেশে ও তার মা নওরীন মুজদাহীরের অনুরোধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসেছে সুহানির সাথে কথা বলতে। টেবিলে কফি ও মাফিন নিয়ে বসেছে দুজনে। আদিলের মুখে কোনো কথা নেই। ক্যাফেতে হালকা মিউজিক বাজছে, তার সাথে সাথে কফি কাপে চুমুকের শব্দ। নীরবতা ভাঙতে কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে সুহানি বলছে,

“আদিল, কথা বলবে না?”

আদিল কফি কাপ থেকে একবার মাথা তুলে সুহানির দিকে তাকায়। তারপর আবার মনোনিবেশ করে কফি পান করাতে। শুধু প্রত্যুত্তরে বলে,

“কি জানতে চাও? বলো।”

“সেই কখন থেকে হুম হুম করে যাচ্ছ।” হুট করে সুহানি আদিলের হাতের উপর হাত রেখে বলে, “আচ্ছা শোনো, চলো আমরা লং ড্রাইভে যাই। দূরে কোথাও লেকের পাড়ে মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে কথা বলি।”

আদিল একটু বিব্রত হয়। মেয়েটির গায়ে পড়া স্বভাব তার একটুও ভালো লাগছেনা। হাত সরিয়ে বলে,

“অন্য কোনদিন। আজকে একটু তাড়া আছে।”

“মাত্রই তো এলাম। আর তুমি তো কোনো কথাই বলছো না।”

“আজ নাহয় নিঃশব্দতায়ই হোক আমাদের কথা।”

“কি বলো এসব? কিছুই বুঝিনা।”

আদিল ধীরে ধীরে অধর্য্য হয়ে উঠে। এখানে বসে থেকে সুহানির সাথে কোনো কথাই বলতে ইচ্ছে করছেনা। বারবার তিয়াশার কথাই মনে পড়ছে। তিয়াশার সাথে রেস্টুরেন্টে যাবার ব্যাপারটা এখনো ফাইনাল হলোনা। তিয়াশাকে একটা ফোনে দিব। আদিল যখন তিয়াশার ধ্যানে মগ্ন ঠিক তখন সুহানি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

“বুঝেছি তুমি কিছু বলবেনা। আমিই বলি, শোনো।”

“হুম শুনছি।”

“আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি।”

আদিল হেসে শান্ত কন্ঠে বলে,

“সুহানি, তুমি আরেকটু ম্যাচিউরড হও। তারপর ভেবে চিন্তে বলো।”

সুহানি হেসে দৃঢ়তার সাথে বলে,

“আমি যা বলছি ভেবে চিন্তেই বলছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

আদিল কি বলবে বুঝতে পারছেনা। ভালোভাবেই ফেঁসে গেছে সে। এখান থেকে পালাতে মন চাইছে তার। কি করে সুহানির হাত থেকে বের হবে সে? সুহানি আবার বলে উঠে,

“তুমি এখনো কিছু বলবেনা?”

আদিল বারবার তার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে। যেন উপায় খুঁজছে কিভাবে এখান থেকে বের হতে পারে আবার সুহানিও যেন তার ব্যাবহারে আঘাত প্রাপ্ত না হয়।

আদিল ভাবতে থাকে, কি করা যায় এখন।

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৯: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/941159789648074/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৯

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৯
Tasneem Tushar

ছেলেটি তিয়াশার চোখের সামনে তুড়ি মারলে, সংবিত ফিরে পায় সে। তিয়াশা তোতলাতে তোতলাতে বলে উঠে,

“আ…আপনি…?”

“হুম আমি। একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম, কি জানেন?

“জ্বি?”

“আমি যে এত সুন্দর সেটা জানতাম না।”

তিয়াশা আমতা আমতা করে বলে,

“মা…মানে?”

“এই যে তুমি আমাকে যেভাবে হা করে তাকিয়ে দেখছিলে তাতে মনে হলো আরকি।”

তিয়াশা হেসে কথা উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় বলে,

“আপনি ভীষণ মজা করে কথা বলতে পারেন, মি. আদিল।”

“চিনতে পেরেছ তাহলে?”

“হুম। পেরেছি। কিন্তু আপনি তো আমাদের বাসাতেই এসেছেন, তাহলে ফোন করেছিলেন কেন?”

“বোঝার জন্য যে আমাকে তুমি মনে রেখেছো কিনা।”

তিয়াশা কথা এড়িয়ে হেসে বলে,

“চলুন। সবাই অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।”

তিয়াশাকে অনুসরণ করে আদিল হাঁটছে আর বলছে,

“আর তুমি?”

“আমি…মানে?”

“মানে তুমিও কি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে?”

তিয়াশা নিশ্চুপ থাকে। তখন আদিল বলে উঠে,

“আচ্ছা একটা কথা বলি?”

“জ্বি বলুন।”

“কিছু মনে করবে না তো?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“বলেই দেখুন।”

“আপনাকে অগোছালো ভেজা চুলে কিন্তু অনেক স্নিগ্ধ লাগে।”

তিয়াশা এ কথাটিরও কোনো উত্তর দেয় না। কেউ তাকে সুন্দর (লেখিকা-তাসনীম তুষার) বললে এখন আর পুলকিত হয়না সে। এক বুক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ঠোঁটে স্মিত হেসে কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কেমন আছেন আপনি?”

“এখন খুব খুব ভালো আছি। আর তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।”

“সত্যি…? তাহলে মুখ এত মলিন কেন?”

তিয়াশা নীরবে হাসে। সে ভেবে পায়না ছেলেটি কিভাবে তার প্রত্যেকটা জিনিস বলার আগেই বুঝে যায়। পরে ভাবে যেহেতু সে ডাক্তার, ডাক্তাররা বোধ হয় এমনি হয়, রোগী দেখেই তার রোগের কথা বলে দিতে পারে।

“কিছু বলুন।”

“চলুন আমার সাথে।”

আদিল বিড়বিড় করে বলে,

“তোমার সাথেই তো চলতে চাই।”

তিয়াশা আদিলকে নিয়ে তাদের ড্রইংরুমে আসে। নীলিমা হাবিব তিয়াশার বন্ধু সহ আদিল ও আদনানকে খাবার পরিবেশন করে। অনেকক্ষন ধরে গল্প করেন তিনি আদিল ও আদনান দুই ভাইয়ের সাথে। সেই ফাঁকে তিয়াশা তার নিজের ঘরে এসে চুলগুলো আঁচড়িয়ে, চোখে হালকা কাজল দিয়ে একটু পরিপাটি হয়ে ফিরে আসে ড্রইংরুমে। তিয়াশাকে দেখে নীলিমা হাবিব বলে,

“এসেছিস? বসে কথা বল ওদের সাথে। আমি একটু আসছি।”

আদিল নীলিমা হাবিবকে যেতে দেখে বলে উঠে,

“আন্টি, আপনি থাকুন। আপনার সাথে গল্প করতে ভালোই লাগছে।”

“একটু আসছি বাবা, তোমরা গল্প করো। আজ দুপুরের খাবার কিন্তু খেয়ে যাবে।”

“আন্টি, আজ নয়। আরেকদিন হবে। একটু পরেই বেরিয়ে যাবো।”

আদনান ও আদিলের কথায় সায় দিয়ে বলে,

“জ্বি আন্টি, আরেকদিন আসবো। তখন এসে আপনার হাতের আরও মজাদার খাবার খাবো। আসলে এখানে একটা কাজে এসেছি।”

“কি কাজ বাবা?”

আদনান তার ব্যাকপ্যাক থেকে কিছু একটা বের করতে করতে বলে,

“আসলে আন্টি, আমার আম্মুর তিয়াশাকে খুব পছন্দ হয়েছে”

“বুঝলাম না।”

“মানে আমার আম্মুও বাংলাদেশি। অনেকদিন পর নিজের মনের মতো কাউকে পেয়ে অর্থাৎ তিয়াশাকে দেখে অনেক আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছেন। তাই আমাদেরকে পাঠালো তিয়াশাকে উনার ভালোবাসা প্রদর্শন স্বরূপ ছোট্ট একটি উপহার দিতে।”

কথাটি বলার পর হাতে থাকা গিফ্টটি বের করে তিয়াশার দিকে এগিয়ে দেয় আদনান।

“তিয়াশা, এটা তোমার জন্য। আম্মু খুব খুশি হয়ে তোমাকে দিয়েছে।”

তিয়াশা ইতস্তত হাতে গিফ্টটি হাতে নিয়ে ধন্যবাদ জানায়। আদিল ও আদনানের অনুরোধে তিয়াশা বক্সটি খুলে দেখতে পায় স্বরভস্কি স্টোনের সুন্দর একটি লকেট আর কানের দুল। আদিল জিজ্ঞেস করে,

“পছন্দ হয়েছে আপনার?”

“আন্টি ভালোবেসে একটা জিনিস দিয়েছে, পছন্দ না আসার প্রশ্নই আসেনা। খুব পছন্দ হয়েছে। আন্টিকে আমার ধন্যবাদ জানাবেন। আর আপনাদেরকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ।”

“এটা তেমন কিছুই নয়।”

“আমার কাছে এটি আশীর্বাদ স্বরূপ।”

*

নাদিম মুজদাহীর দুপুরের দিকেই তার অফিস থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসে। নওরীন মুজদাহীর দুপুরের খাবারের আয়োজনে যখন ব্যাস্ত তখন তিনি কিচেনে প্রবেশ করে,

“নওরীন?”

“আরে তুমি এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে আজ?”

“হুম, মনটা আজ ভীষণ খুশি।”

“কেন? কি হয়েছে?”

“আজ ডা. সামিরের সাথে অনেকক্ষণ গল্প হলো।”

“সেটা তো তোমাদের প্রায়ই হয়।”

“আজ একটা বিশেষ বিষয়ে কথা হয়েছে।”

“তাই, তো বলো শুনি কি এমন কথা হয়েছে যার জন্য এত খুশি তুমি?”

“আজ ডা. সামির নিজে থেকেই তার মেয়ে সুহানির বিয়ের জন্য ইঙ্গিত দিয়েছে আমাদের ছেলের সাথে।”

“উত্তম প্রস্তাব। তো কোন ছেলের সাথে? আমাদের তো দুটো ছেলে।”

“কোন ছেলে আবার। অবশ্যই আদিল। আমার ডাক্তার ছেলের জন্য তো ডাক্তার বউই উপযুক্ত। কি বলো?”

“তোমার যেমনটা ইচ্ছে। তবে ছেলের ও তো পছন্দ থাকতে পারে তাইনা?” কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার নওরীন মুজদাহীর বলে উঠে, “আপাতত আদিলের বিয়ের চিন্তা বাদ দাও। আগে আলিয়ার বিয়েটা সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করে নেই, তারপর নাহয় আদিলের টা নিয়ে ভাববো।”

“ছেলেকে তো পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম সুহানির সাথে। ওকে জিজ্ঞেস করো কেমন লেগেছে তার। আমার কিন্তু মেয়েটিকে আদিলের জন্য ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

মুজদাহীর দম্পতি যখন এসব আলাপ করছিল, তখন দুই ভাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনে ফেলে।

সেসব শুনে আদিলের চেহারা মুহূর্তে বিষন্ন হয়ে যায়। আদনান দুষ্টুমির ছলে আদিলকে কিছু বলতে যেয়ে দেখে আদিলের চোখ ছলছল করছে।

ভাইয়া কেন এত কষ্ট পাচ্ছে? সেতো বাবা মায়ের সব ইচ্ছাই মাথা পেতে নেয় খুশি মনে। আজ কি এমন হলো যে তার ঠোঁটে হাসি থাকলেও চোখ দুটো অন্য কথা বলছে। নাহ ভাইয়ার ব্যাপারটা কী, জানতে হবে।

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৮: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/940399226390797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৮

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১৮
Tasneem Tushar

তিয়াশা যখন কিচেনে দাঁড়িয়ে পৌষীকে ঝাড়ি দিচ্ছে, ঠিক তখন পেছন থেকে এসে দু’চোখে চেপে ধরে কেউ। তিয়াশা ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“আরে… কে? কে আমার চোখ ধরলো?”

তিয়াশা তার চোখের উপরে হাতরিয়েও কিছু বুঝতে পারছেনা।

“কি মুশকিল চোখ ছাড়ুন। এই পৌষী বলছিস না কেন কে?”

পৌষী মিটিমিটি হেসে চলেছে আর তিয়াশা ক্ষেপে যাচ্ছে। চোখ থেকে হাত সরিয়ে সাথে সাথে প্যাট্রিসিয়া বলে উঠে,

“ভাউ…”

তিয়াশা চমকে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,

“প্যাট, তুই কখন এলি?”

“মাত্রই এলাম। ম্যাথিউ বললো আসতে।”

“কিন্তু ম্যাথিউ এর সাথে উনি কেন এসেছেন? ম্যাথিউ নিয়ে এসেছে?”

“তুই নিজেই জিজ্ঞেস কর। আয়, আমার সাথে।”

বলে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে তিয়াশার হাত ধরে ড্রইংরুমের দিকে প্যাট্রিসিয়া। তিয়াশা বলে উঠে,

“আরে বাবা ছাড় না, এই অবস্থায় কেমনে যাই। দেখতেই তো পাচ্ছিস মাথায় এখনো টাওয়াল দেয়া।”

“আরে ধুর বন্ধুই তো। চল।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



*

ড্রইংরুমে এসে প্যাট্রিসিয়ার পিছনে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছে তিয়াশা। প্যাট্রিসিয়া তিয়াশার হাত ধরে টেনে সামনে এনে দাড় করায়। তিয়াশা মাথা নিচু করে একবার আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নিয়ে ইতস্তত কণ্ঠে বলে,

“আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন? ”

ম্যাথিউ তখন উচ্চস্বরে হেসে বলে,

“কিরে টি, যেভাবে কথা বলছিস, মনে হচ্ছে তোকে দেখতে এসেছে।”

তিয়াশা ম্যাথিউ এর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে মাইর দিতে যেয়েও সোফায় বসা অতিথির দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে মুখে হাসি ফোটায়।

আদনান ঠোঁটে মুচকি হাসি এনে বলে,

“হুম, দেখতেই তো এসেছি। তো মিস তিয়াশা এতক্ষনে দেখা পাওয়া গেলো তোমার?”

তিয়াশা স্মিত হেসে (লেখিকা-তাসনীম তুষার) মাথার টাওয়াল চুল থেকে সরিয়ে হাতে নিয়ে পেছনে লুকোতে লুকোতে বলে,

“আসলে…।”

“আসলে কিছুনা, বসো তো। একটু স্বাভাবিক হও। এত ইতস্তত করলে চলবে? আমরা তো বন্ধুই তাইনা?”

তিয়াশা হেসে বলে,

“আপনি কেমন আছেন? হঠাৎ এখানে?”

“ওই যে ম্যাথিউ যেমনটা বললো, তোমাকে দেখতে এসেছি।”

তিয়াশা সজোরে হেসে দিলে আদনান বলে উঠে,

“কি বিশ্বাস হলো না?”

“আচ্ছা অনেক হয়েছে। মজা ছাড়ুন। বলুন কেমন আছেন?”

“ভালো। তুমি কেমন আছো?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আচ্ছা একটু বসুন আমি আসছি।”

বলেই সে কিচেনে অতিথিদের জন্য নাস্তার ব্যাবস্থা করতে (লেখিকা-তাসনীম তুষার) যেতে নিলে দেখে তার মা নীলিমা হাবিব ও পৌষী চা নাস্তার ট্রে নিয়ে ড্রইংরুমে প্রবেশ করছে।

“বাবা, তোমাদের জন্য সামান্য আয়োজন। একটু মিষ্টি মুখ করো। তারপর কথা।”

“আন্টি এত কিছু কেন করতে গেলেন?”

“এটা এমন কিছু নয়, সামান্য চা নাস্তা।”

“কষ্ট করে এখানে নিয়ে না এসে আমাদের ডাকলেই পারতেন আন্টি।”

“আহা বাবা, কোনো কষ্টই না। খাও।”

নীলিমা হাবিব খাবার এগিয়ে দিয়ে চারপাশে তাকিয়ে বলে,

“আরেকজন যে এসেছে সে কোথায়?”

প্যাট্রিসিয়া তখন বলে উঠে,

“উনি একটু বাইরে গিয়েছে। কি যেন দরকার।”

নীলিমা হাবিব তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে,

“যা তো মা ডেকে নিয়ে আয় ছেলেটাকে।”

তিয়াশা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে,

“কাকে ডাকবো মা?”

“এত কথা বলছিস কেন? যা না, বাইরে আছে। ভেতরে নিয়ে আয়।”

তিয়াশা অসহায় দৃষ্টিতে একবার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে গজগজ করতে করতে বাসার দরজার সামনে যায়। সকাল সকাল একটু শান্তি পাচ্ছি না। একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলেছে বলেই দরজা খুলে কাউকে দেখতে পায়না সে।

বাড়ির সামনে ঘাসে বাঁধানো একটি উঠোন। সীমানায় একটি বড় গাছ। তিয়াশা হেটে গাছের দিকে হাঁটতে থাকে।

অন্যদিকে তিয়াশাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটি এতক্ষন তাদের ড্রইংরুমের (লেখিকা-তাসনীম তুষার) জানালা দিয়ে দেখছিল। যেইনা তিয়াশা বের হয়েছে অমনি সে দ্রুত গাছের আড়ালে যেয়ে দাঁড়ায়।

তিয়াশা গাছের নিচে এসে দেখে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। পেছনদিক দেখতে পাচ্ছে শুধু।

“এক্সকিউস মি। শুনছেন?”

ছেলেটি সেভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই মুচকি হেসে বলছে,

“জ্বি, বলুন?”

“ভেতরে আসুন।”

“একজন অপরিচিতকে না দেখে শুনেই ভেতরে যেতে বলছেন?”

“আম্মু চিনে আপনাকে। আসুন।”

“কেন, আপনি চিনতে চান না?”

তিয়াশা চিন্তায় পরে যায়। কি করবে সে বুঝতে পারছেনা।

“উম…আম্মু চিনে, তার মানে হয়তো আমিও চিনি।”

“উহু এটা বললে তো হবেনা। আপনি না চিনে আমাকে আপনার ঘরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন, ব্যাপারটা কেমন হয়ে যাচ্ছেনা?”

ইশ এই লোকটা কিসব বলছে মনে মনে ভাবছে তিয়াশা। রাগ উঠছে তার। (লেখিকা-তাসনীম তুষার) আসলে আসবে, না আসলে না আসবে। এত সাধতে পারবোনা। ধুর। আম্মু যে কেন পাঠালো, বলেই সে হাত পা ছুড়ে হাটতে হাটতে ছেলেটির সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। কোমড়ে দুইহাত দিয়ে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখে হা করে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। মুখ দিয়ে যে তার কোনো কথা বের হচ্ছেনা।

ছেলেটি তিয়াশার চোখের সামনে তুড়ি মারলে, তিয়াশা স্তম্ভিত ফিরে পায়। তিয়াশা তোতলাতে তোতলাতে বলে,

“আ…আপনি…?”

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৭: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/939698966460823/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৭

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১৭
Tasneem Tushar

তিয়াশা তার ঘরের দরজা বন্ধ করে আলমারি থেকে পুরনো এলবাম বের করে ছবি দেখছে আর অতি যত্ন সহকারে হাত বুলাচ্ছে। চিবুক বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে ছবিগুলোর উপরে। দ্রুত সে পানির ফোটাটি মুছে ফেলে এলবাম থেকে যাতে ছবি নষ্ট না হয়ে যায়। এলবামটি ভাঁজ করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ বেয়ে নীরবে পড়ছে তার অজস্র কষ্টের নোনা জল।

জানিনা কাকে দেখলাম? ঠিক দেখেছি কিনা তাও জানিনা? কিন্তু মন কেন মানছেনা? এত নাটকীয়তা করে সুখেই আছো তাহলে? আনমনে (লেখিকা-তাসনীম তুষার) এসব ভাবছে আর নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে কেঁদে চোখ ভিজাচ্ছে তিয়াশা।

ফোনের রিংটোন বেজে উঠলে, চমকে উঠে তিয়াশার ধ্যানভঙ্গ হয়। কোনরকম এলবামটি গুছিয়ে ফোনটি হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে ফোন নাম্বারের বদলে প্রাইভেট লিখা দেখাচ্ছে। অস্বস্তি নিয়ে ফোন ধরে বলে,

“হ্যালো?”

“তিয়াশা?”

“জ্বি, বলছি। আপনি কে বলছেন?”

“তোমার পরিচিত।”

“আমার পরিচিত? বুঝতে পারছিনা? কে আপনি?”

“ধরো, তোমার আপনজন।”

“দুঃখিত, আপনি বোধহয় ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন।”

এসব ন্যাকা কথা শুনেই গা জ্বলে যায় তিয়াশার। কলটি খট করে কেটে দিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে ফোনটি বিরক্তি নিয়ে। ফোনটির রিংটোন আরও বেশ কয়েকবার (লেখিকা-তাসনীম তুষার) বেজে উঠে। তিয়াশা বিরক্তি নিয়ে ফোনটি সাইলেন্ট করতে যেয়েও কি মনে করে যেন আবার কলটি রিসিভ করে।

“হ্যালো। আমিতো বলেছি আপনি রং নাম্বারে ডায়াল করেছেন। কেন বারবার কল করেই যাচ্ছেন?”

“তুমি সত্যি আমাকে চিনতে পারছনা?”

তিয়াশা ঝাঁঝালো কণ্ঠে উত্তর দেয়,

“না, পারছিনা।”

“আমার কণ্ঠ চিনতে পারছনা?”

“না পারছিনা। আচ্ছা শুনুন, আপনি আর ফোন করবেন না। রাখছি আমি।”

“আচ্ছা বলছি। তার আগে বলো তোমার গলা এত শুকনো কেন শোনাচ্ছে? আবার কান্নাকাটি করেছো?”

তিয়াশা অবাক হয়ে যায়। সে কিভাবে বুঝলো আমি কাঁদছিলাম? তিয়াশা কিছু না বলে চুপ করে থাকে। ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে,

“ঠিক বলেছি, তাইনা?”

তিয়াশা শান্ত কণ্ঠে বলে,

“আপনি কে বললেন নাতো?”

“দুদিন আগেই তোমাকে আমার ফোন নাম্বারটি দিয়েছিলাম। ভুলে গেছো?”

“আপনি…আপনি, আদিল?”

“যাক শেষ পর্যন্ত চিনতে পারলে তাহলে?”

“আমি খুবই দুঃখিত। কিন্তু আপনার ফোন নাম্বার তো উঠেনি। প্রাইভেট লিখা দেখাচ্ছে নাম্বারের জায়গায়।”

“ওহ তাইনাকি। আচ্ছা দাঁড়াও আমি আবার কল করছি।”

তখনই তিয়াশার দরজায় বেশ কয়েকবার নক পড়লে, তিয়াশা আদিলকে জানায়,

“আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আমি একটু পর আপনাকে কল করছি।”

“ঠিক আছে। কল দিবে কিন্তু। আমি অপেক্ষায় থাকবো।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“জ্বি করবো। রাখছি।”

দরজা খুলে দেখে পৌষী দাঁড়িয়ে। তিয়াশা বলে উঠে,

“কিরে এখানে কি করছিস?”

“আম্মু ডাকছে। নিচে চলো।”

“আচ্ছা, তুই যা। আমি আসছি।”

“এই আপু আমার দিকে তাকাও দেখি।”

কান্না করে তিয়াশার চোখ ফুলে গেছে, তাই সেটা আড়াল করতে সে মাথা নিচু করে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। তখন পৌষী জোর করে তিয়াশার থুতনি ধরে মুখ উঁচু করে বলে,

“তুমি আবার কাঁদছিলে আপি?”

পৌষীর হাত সরিয়ে দিয়ে তাকে মাইর দেয়ার ভঙি করে বলে,

“মাইর খাবি। যা নিচে, আসছি আমি।”

“আম্মুকে বলে দিব কিন্তু।”

“তুই যাবি?”

“আচ্ছা যাচ্ছি, শোন একটু ফ্রেশ হয়ে নিচে নেম।”

“কেন?”

পৌষী যেতে যেতে চিৎকার করে বলে,

“সেটা নিচে আসলেই জানতে পারবে।”

*

তিয়াশা আনমনে ভাবছে হঠাৎ ফ্রেশ হতে বললো কেনো? আয়নার সামনে যেয়ে দেখে বিধ্বস্ত অবস্থা মুখের। পার্টি থেকে ফিরে এসে গত দুইদিন থেমে থেমেই কান্না করে যাচ্ছে সবার আড়ালে। কষ্ট গুলো ভুলে নিজের দিকে খেয়াল দেয়া উচিত মনে করে মাথার এলোমেলো চুল গুছানোর চেষ্টা করে তিয়াশা। কিন্তু পরক্ষনেই চোখ বেয়ে পানি ঝরা শুরু করে তার।

নিচের ফ্লোর থেকে পৌষী আবার ডাক দিলে, তাড়াহুড়ো করে বাথরুম থেকে শাওয়ার সেরে নিয়ে মুখে ময়শ্চারাইজার ক্রিম মেখে টাওয়াল দিয়ে চুল পেঁচিয়েই সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে তাদের নিচের ফ্লোরে। তিয়াশার পরণে ছিল প্লাজো আর টি-শার্ট।

তিয়াশাদের বাসাটি ৩ রুম বিশিষ্ট একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। দোতলায় তিনটা বেডরুম। আর নিচ তলায় আছে একটা বিশাল কিচেন উইথ এটাচড ডাইনিং, একটা ফ্যামিলি রুম ও একটি ড্রইং রুম। দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই সামনেই পরে একটি খোলা স্পেস আর সেখানেই তাদের বাসায় প্রবেশ করার প্রধান দরজা। হাতের বা দিকে রয়েছে ড্রইংরুম, আর তার পাশেই রয়েছে কিচেন। তিয়াশা সিঁড়ি দিয়ে নেমে আনমনে হেটে ড্রইংরুমে যেতেই চমকে উঠে এবং দৌড়ে সেখান থেকে বের হয়ে চলে যায় রান্নাঘরে।

কিচেনে যেয়ে পৌষীকে পেয়েই পিঠের মধ্যে কিল দিয়ে বলে,

“এই বদমাইশ, বাসায় গেস্ট এসেছে আমাকে বলবিনা?”

“আরে, গেস্ট কোথায় দেখলে? তোমারই তো পরিচিত ওরা।”

“বেশি বুঝিস সবসময়। ধ্যাৎ। আমি এখন সামনে যাবো কি করে?”

“তোমাকে এভাবেই সুন্দর লাগছে। যাও আপু।”

“মাইর খাবি। দৌড়ে চলে এসেছি। এখন কি করে যাই সামনে?”

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৬: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/939034049860648/

[বি.দ্র: এখন থেকে ভাবছি ছোট ছোট পর্ব করেই গল্প দিব কিন্তু প্রতিদিন দিব ?]

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৫

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১৫
Tasneem Tushar

“মা দেখো কাদের নিয়ে এসেছি।”

“এরা নিশ্চয়ই তোর বন্ধু?”

“হুম আম্মু, পরিচিত হও আমার বন্ধুদের সাথে।”

বলেই ম্যাথিউ, প্যাট্রিসিয়া ও তিয়াশাকে আদনান তার মা নওরীন মুজদাহীরের সামনে দাঁড় করিয়ে একে একে পরিচয় করিয়ে দেয়। নওরীন মুজদাহীর প্যাট্রিসিয়া ও তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে,

“কেমন আছো মা তোমরা? খুব খুশি হয়েছি তোমরা এসেছো।” ম্যাথিউকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আসার জন্য। নিজের পরিবার মনে করেই আনন্দ করো এখানে।”

“ঠিক আছে মা তাহলে আমরা যাই, বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।” বলেই আদনান সবাইকে নিয়ে চলে যেতে নিলে নওরীন মুজদাহীর থামিয়ে দিয়ে বলে,

“দাঁড়া একটু, এত তাড়া কিসের?”

তিয়াশার দিকে ফিরে বলে,

“তুমি বাংলাদেশি?”

“জ্বি, আন্টি। বাংলাদেশে জন্ম আমার।”

“তোমাকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে মা।”

“ধন্যবাদ আন্টি। আপনাকেও কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে।”

“তোমার কণ্ঠও কিন্তু খুব সুন্দর। নিশ্চয়ই তুমি ভালো গান গাইতে পারো?”

“আ আ.. আসলে আন্টি… টুকটাক গাই, খুব ভালো পারিনা।”

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ সাথে সাথে প্রতিবাদ করে জানায়,

“আন্টি একেবারেই মিথ্যে কথা বলছে। সে খুব সুন্দর গান গায়।”

“আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি।” তিয়াশার হাত ধরে বলে, “আমার একটি অনুরোধ রাখবে?”

তিয়াশা ইতস্তত কন্ঠে বলে, “জ্বি আন্টি বলেন?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“তুমি পুরনো দিনের বাংলা গান গাইতে পারবে? আমার জন্য? অনুষ্ঠানে এই ধুম ধারাক্কা টাইপ হিন্দি, ইংলিশ, বাংলা গান শুনে আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। পারবে তো?”

“পা..পারি, তবে আ.. আমিতো কোনো প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি আন্টি।”

“কোনো প্রস্তুতি লাগবেনা। তোমাকে গানে সহযোগিতা করার মানুষ থাকবে।”

আদনান এক মুহূর্ত দেরি না করে কারো সাথে কথা বলে ফোনে। তারপর আচমকা তিয়াশার হাত ধরে টেনে স্টেজের দিকে নিয়ে যেতে যেতে তার মাকে বলে,

“অবশ্যই পারবে মা। আমরাতো আছি। তুমি চিন্তা করোনা।”

আদনানের হঠাৎ স্পর্শে চমকে উঠে তিয়াশা, কিছু বুঝে উঠবার আগেই সে স্টেজে পৌঁছে যায় এবং দেখতে পায় আদিল ইতিমধ্যে সেখানে উপস্থিত।

*

তিয়াশার সামনে শ’খানেক মানুষ। ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার। আদনান গিটার হাতে বসে পড়েছে। আদিল তিয়াশার অস্থিরতা অবলোকন করে এবং এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় তিয়াশার হাতে।

তিয়াশা পানির গ্লাসটি হাতে নিয়ে ভাবছে, মানুষটি কিভাবে বুঝলো আমার এখন পানির দরকার ছিল? পানি পান শেষ করতেই আদিল তিয়াশার হাত থেকে গ্লাসটি নিয়ে তার হাতে মাইক ধরিয়ে দেয়। তারপর একটি ডায়েরী লিরিক্স স্ট্যান্ডে রেখে তিয়াশাকে বলে,

“আমার মায়ের খুব পছন্দের গান। পারেন গানটি?”

তিয়াশা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে আদিল বলে, “ভয় পাবেন না। আমি আছি সাথে।”

আদিলের কথা শুনে কি যেন কি হলো, আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় তার এবং শুরু করে,

“দুটি মন আর নেই দুজনার।”

আদনান গিটারে সুর তুললে, আদিল ও কণ্ঠ মিলায় তিয়াশার সাথে এবং দৈত কন্ঠে গায়,

“দুটি মন আর নেই দুজনার ।।
রাত বলে আমি সাথী হব যে
ফাগুনের রাতে আমি রূপকথা হয়ে কাছে রব যে।।
দুটি মন আর নেই দুজনার ।

ফুল বলে রঙে আর ছেও না
পাখি বলে আর গান গেও না ।।
আমাদের মিতালীর মায়াতে
কানে কানে কত কথা কব যে
দুটি মন আর নেই দুজনার ।

শুকতারা বলে আমি আছি তাই
দিশাহারা হতে আর ভয় কি ।।
পাছে ঘুম ঝরে পড়ে দুচোখে
হাসি মুখে তাই জেগে রব যে
দুটি মন আর নেই দুজনার।”

করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। নওরীন মুজদাহীর এবং আরো বয়োজেষ্ঠ্য মানুষের অনুরোধে তিয়াশা আরও কিছু পুরোনো দিনের একক ও দৈত সংগীত পরিবেশনা করে। মুহূর্তে মানুষের প্রশংসায় ভেসে যায় সে।

“মেয়েটি তো ভালোই গান গায়। আমাদের পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।” নাদিম মুজদাহীর বলছে তার স্ত্রী নওরীন মুজদাহীরকে।

“আসলেই তাই। মেয়েটি খুব ভালো। ওর সাথে কথা বলেই বুঝেছি সে গান গাইতে পারে।”

“হুম ভালোই গায়। কোথা থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসলে মেয়েটিকে। কত নিচ্ছে? আমাদের অন্যান্য প্রোগ্রামেও কিন্তু ওকে নিয়ে আসা যায় গান গাওয়ার জন্য। কি বলো?”

নওরীন মুজদাহীর ঝাঁঝালো কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে উত্তর দেয়,

“সবকিছুতে টাকা বিষয়টা এনো না মিঃ মুজদাহীর। সবকিছু টাকা দিয়ে কিনতে পারা যায়না। আর মেয়েটি কোনো ভাড়াটে গায়িকা না। সে আদনানের বন্ধু। আমার অনুরোধেই গান গেয়েছে সে।”

“আদনানের বন্ধু? আদনানের সাথেই তো এসব সস্তা মেয়ের বন্ধুত্ব হবে?”

“তুমি কি বলছো? কিছু বুঝতে পারছো? কিছু না জেনে মেয়েটি সম্পর্কে এধরণের কথা বলা অনুচিৎ হচ্ছে তোমার।”

“আচ্ছা রাগ করোনা। মেয়েটিকে কিছু টাকা দিয়ে দিও ভালো গান গাওয়ার জন্য। সামনে অনুষ্ঠানে ওকে ভাড়া করেও আনা যাবে তাহলে।”

“ধ্যাৎ, টাকা ছাড়া তো দেখি তুমি কোনো কথাই বলছনা। তোমার সাথে কথা বলাই বেকার। তুমি খুব বদলে গেছো নাদিম।”

রাগে গজগজ করতে করতে উঠে চলে যায় নওরীন মুজদাহীর।

*

গান শেষে স্টেজ থেকে নামলে সবাই তিয়াশাকে অনেক সাধুবাদ জানায়। মানুষের উচ্ছাস দেখে অনেকদিন পর তিয়াশার মুখে হাসি ফুটে। তিয়াশাকে হাসতে দেখে ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, এইতো মেয়েটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এটাই তো চেয়েছিল তারা।

আদনান ও আদিলের বড় বোন কোথা থেকে এসে যেন তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে,

“তুমি জানো তুমি কত সুন্দর গান গাও? আমার তো পুরোনো দিনের গান শুনলেই মাথা ধরে যেত। আজ মুগ্ধ হয়ে শুনেছি। বলতেই হয় তোমার কন্ঠে জাদু আছে।”

ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে আদিল ভ্রু কুঁচকে আলিয়ার দিকে তাকালে, আদিলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“না… তুইও ভালো গান গাইতে পারিস। তবে তিয়াশা বেশি ভালো গায়। আরে বাবা…মজা করছিলাম। তোদের দৈত কণ্ঠে গান আসলেই প্রশংসনীয়।”

“উহুম উহুম,” আদনান একটু কেশে বলে, “বাহ, আমাকে তো দেখি তোর চোখেই পড়ছেনা?”

“আরে.. আমার পুচকু ভাই, তুই না থাকলে তো ওরা গানই গাইতে পারতোনা।”

“আপি, মজা করছো?”

“অনেস্টলী স্পিকিং, ইউ থ্রী রকড দা স্টেজ”

তারপর তিয়াশার দিকে ফিরে বলে, “বাই দা ওয়ে, আমি আলিয়া। এই বাঁদর দুটোর বোন। আর তুমি?”

আদনান তখন তিয়াশার পাশে দাঁড়িয়ে বলে, “ও আমার বন্ধু, তিয়াশা।”

“এই তুই থামবি? ওকে বলতে দে।”

তিয়াশার গালে হাত রেখে বলে, “তিয়াশা, খুব সুন্দর নাম। খুব মিষ্টি মেয়ে তুমি। খুব ভালো লাগলো তোমার সাথে পরিচিত হয়ে।”

*

অনুষ্ঠানে ডিনার শেষ করে এখন সবাই ড্যান্স ফ্লোরে ডিজে মিউজিকের তালে তালে নাচছে। প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ ও বেশ মজা করছে। তিয়াশা তাদের জন্য রিজার্ভ করা টেবিলের চেয়ারে চুপ করে তাদের দুষ্টমি ভরা নাচ দেখছে।

“মে আই গেট দিস ড্যান্স, প্লিজ।” হাত বাড়িয়ে আদনান তিয়াশাকে নাচার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।

তিয়াশা সৌজন্য হাসি হেসে বলে,

“আমি তো নাচতে জানিনা।”

“আমি তো আছি। আমি শিখিয়ে দিব।”

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনে দৌড়ে এসে তিয়াশা ও আদনানের হাত ধরে একসাথে টেনে নিয়ে যায় ড্যান্স ফ্লোরে। আদনানের দুষ্টুমি ভরা নাচ দেখে তিয়াশা মুখে হাত দিয়ে অনবরত প্রাণ খুলে হেসেই চলেছে বাচ্চাদের মতো।

দূর থেকে এত মানুষের ভিড়ে তিয়াশাকে মুগ্ধ নয়নে দেখে চলেছে আদিল। তিয়াশার মন খোলা হাঁসিতে ডুব দিতে ইচ্ছে হচ্ছে তারও। কেন তার বেহায়া মন মানছেনা? কেন তিয়াশাকে দৃষ্টির আড়াল করতে পারছেনা?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৪: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/935575410206512/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৪

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১৪
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার

আদিলের গান শেষ হতেই, আদনান স্টেজ থেকে দৌড়ে নেমে চলে আসে সেই আলোর উৎসের কাছে। তার চোখে মুখে খুশির ঝলক। কিন্তু মুখ দিয়ে যে তার কোনো কথাই বের হচ্ছেনা। নিজেকে সামলাতে না পেরে জড়িয়ে ধরে।

“আরে…আরে করছো কি? আস্তে বন্ধু।”

হাসতে হাসতে কথাটি বলে নিজেকে আদনানের বাহু থেকে কোনরকমে ছাড়িয়ে নেয় প্যাট্রিসিয়া। প্যাট্রিসিয়ার পেছনেই তিয়াশা ঠোঁটে স্মিত হাসি নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। আদনান উঁকি দিয়ে একবার তিয়াশাকে দেখে নিয়ে বলে,

“আমি ভীষণ খুশি হয়েছি তোমরা এসেছ।”

ম্যাথিউ পেছন থেকে বেরিয়ে এসে অল্প কেশে হাত তুলে বলে,

“দোস্ত আমিও কিন্তু উপস্থিত আছি। আমার হাগ টা কই?”

“অবশ্যই দোস্ত। আয় আমার বুকে আয় ভাই।”

তিনজনেই হো হো করে হেসে উঠে। তিয়াশা পেছন থেকে সরে প্যাট্রিসিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আদনানকে বলে,

“কেমন আছেন আপনি?”

“জ্বি ভালো। তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।”

“ধন্যবাদ কষ্ট করে অনুষ্ঠানে আসার জন্য।”

ম্যাথিউ দুজনের কথা থামিয়ে বলে উঠে,

“ওর আবার কষ্ট কিরে? ওকে রাজি করিয়ে নিয়ে আসতে আমাদের জান বের হয়ে গেছে।”

“কেন? কি করলো আবার সে?”

“কি করেনি সেটা বল। ভীষণ নাছোড়বান্দা মেয়েরে বাবা। তো এখানে দাঁড়িয়েই সব বলবো নাকি বসতে দিবি?”

“উফ, ভুলেই গিয়েছিলাম। চল আমার সাথে।”

আদনান তিনজনকে সাথে নিয়ে স্টেজের সামনের সারির এক পাশে স্পেশাল রিজার্ভ করা টেবিলে তাদেরকে বসতে দিয়ে গল্প শুরু করে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনা…

ম্যাথিউ যখন রাগ করে প্যাট্রিসিয়াকে নিয়ে চলে আসছিল তিয়াশার বাসা থেকে, তখন তিয়াশার টনক নড়ে। ওর তো এই দেশে সবচেয়ে আপন বন্ধু এই মাত্র দুজনই। যারা বিপদে আপদে সবসময় তার পাশে ছিল। রাগ করে যদি সত্যি ওরা কথা বন্ধ করে দেয় তার সাথে, তাইতো সে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায় এবং অনুষ্ঠানে আসতে রাজি হয়।

তিয়াশা কোনোরকম একটা সালোয়ার কামিজ পরেই রওনা দিতে নিলে, তিয়াশার ছোট বোন পৌষী ও প্যাট্রিসিয়া দুজনে মিলে ধরে বেঁধে জোর করে শাড়ি চুড়ি পড়িয়ে একেবারে বাঙালিয়ানা সাঁজে সজ্জিত করে তাকে। মজার ছলে পৌষী বলে উঠে,

“আপি দেখিস, অনুষ্ঠানে গেলে তোকে দেখে সবার মাথা ঘুরে যাবে।”

তিয়াশার ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি। বহুদিন হলো তার সাজতে ইচ্ছে হয়না। আয়নায় নিজেকে একটু দেখেই চোখ সরিয়ে নেয় সে। পুরনো স্মৃতিগুলো যে নাড়া দিয়ে উঠে। ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া তাড়া দিলে মা বোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় সে দাওয়াতের অনুষ্ঠানে।

*

বর্তমান…

আদিলের ভীষণ অস্থির লাগছে। গান গাওয়া শেষেই সে দ্রুত হেঁটে চলে যায় নিজের রুমে। নিজের চোখকে যে তার বিশ্বাস হচ্ছেনা। সত্যি সত্যি তিয়াশা এসেছে।

আদিল তার ঘরের জানালা দিয়ে দেখছে যে আদনান আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সাথে আর তিয়াশা মাথা নিচু করে চুপ চাপ বসে টেবিলে। আদিল আনমনে তাকিয়ে তিয়াশাকে দেখে ভাবছে যে আদনানের সাথে তিয়াশার কি সম্পর্ক। আদনানের কাছে তো কখনো তিয়াশার কথা শুনিনি। আচ্ছা আদনানের সাথে তিয়াশার মাঝে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই তো? ধ্যাৎ কিসব ভাবছি? আদিল জানালার পাশে থাকা চেয়ারে বসে ধুপ করে বসে পরে।

কিছুক্ষন পর,

“ভাইয়া আসতে পারি?”

আদনানের গলার আওয়াজ শুনে আদিল ভাবতে থাকে আদনান হঠাৎ এখানে এলো কেন? তারপর বলে,

“হুম আয়।”

তিয়াশা, ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়াকে নিয়ে আদিলের ঘরে ঢুকে আদনান। তিয়াশা একেবারেই চুপচাপ ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একবারের জন্য ও সে আদিলের দিকে তাকায়নি। আদিল তাদেরকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে আদনান আদিলের পাশে যেয়ে তার পিঠে হাত রেখে বলে,

“আজকের এই অনুষ্ঠান কিন্তু আমার এই ভাইকে কেন্দ্র করে। আমার ভাই আদিল মুজদাহীর ডাক্তারি পাশ করে বের হয়েছে আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকেই।”

একে একে সবাই আদিলকে যখন হ্যান্ডশেক করে কংগ্রাচুলেশনস জানাচ্ছে তখন তিয়াশার চোখ ছানাবড়া আদিলের নামটি শুনে। তাকিয়ে রয়েছে সে আদিলের দিকে। সে ভাবতেও পারেনি এখানে আদিলের সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে।

“আই থিংক আই নো ইউ। আই স ইউ সাম হোয়্যার।” প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনেই বলে উঠে, “আরেন্ট ইউ দ্যাট গাই হু…”

আদিল মাঝে তাদের কথা থামিয়ে আন্তরিক হাসি দিয়ে বলে উঠে,

“উই অল গো টু সেম ইউনিভার্সিটি, সো ইট ইস নট ইম্পসিবল টু সি ইচ আদার অন দা ওয়ে।”

আদিল তিয়াশার নার্ভাসনেস দেখে ধারণা করে যে আদনান তিয়াশার একসিডেন্ট এর ব্যাপারটা হয়তো জানেনা। আর সে নিজেও তিয়াশার নাম বলেনি আদনানকে ঘটনার বর্ণনার সময়। কথা যাতে না বাড়ে তাই সে তাড়াহুড়ো করে কথা কাটিয়ে নেয়।

“আমি খুব খুশি হয়েছি তোমরা এখানে এসেছ বলে।”

তারপর তিয়াশার দিকে এগিয়ে যেয়ে ডান হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেকের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

“আরেন্ট ইউ গোয়িং টু কংগ্রাচুলেট মি?”

তিয়াশা ঢোক গিলে ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে,

“অভিনন্দন আপনাকে।”

“ধন্যবাদ।”

তিয়াশার হাতে থাকা একটি গিফট বক্স আদিলের হাতে দিয়ে বলে,

“আমাদের তিনবন্ধুর পক্ষ থেকে একটি ছোট্ট উপহার আপনার জন্য।”

আদিল গিফট বক্সটি হাতে নিয়ে ধন্যবাদ জানায়। আদনান আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বলে উঠে,

“চলো চলো, এখনো আব্বু আম্মু আর আপি বাকি পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।”

“আদনান, শোন।”

আদনান ম্যাথিউ, তিয়াশা ও প্যাট্রিসিয়াকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেই আবার আদিলের রুমে ঢুকে বলে,

“কি ভাইয়া, জলদি বল।

“তোর এই বন্ধুদের তো আগে কখনো দেখিনি।”

“ম্যাথিউ এর কথা তো তুমি জানতে। আর বাকিরা ম্যাথিউ এর বন্ধু, তো আমারও কিছুদিন আগে বন্ধুত্ব হয়েছে তাদের সাথে।”

“মেয়ে দুটোকে দেখলাম। শুধুই বন্ধু নাকি আর কোনো ব্যাপার আছে?”

“আরেহ নাহ ভাইয়া, আর কিছু নেই।”

“সত্যি?”

“ধুর, কিছু হলে তুমিই তো সবার আগে জানবে।আচ্ছা এখন যাই। ওরা বাইরে দাঁড়িয়ে। তুমিও এসে জয়েন করো আমাদের সাথে।”

“আসছি। তুই যা এখন।”

আদনান তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে গিফ্ট বক্সটা বুকে জড়িয়ে চেয়ারে বসে পড়ে আদিল। ঘরে মিষ্টি একটি পারফিউমের ঘ্রাণে ভরে গেছে। বুক ভরে এক বুক নিঃশ্বাস নিয়ে আদিল অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,

“ভালোবাসি, তিয়াশা!”

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৩: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/934878476942872/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৩

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১৩
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার

সুদর্শন তরুণদ্বয়ের হৃদয় যেন হঠাৎ থমকে গেছে। অপলক দৃষ্টিদ্বয় নিবদ্ধ নির্দিষ্ট কোন একদিকে। মন্থর গতিতে মৃদু বায়ু বইছে। পাতার খসখসে শব্দের সাথে একজোড়া নুপুর আর কাচেঁর চুড়ির রুনঝুন মিলে সৃষ্টি করেছে অনবদ্য মোহনীয় ঝংকার। সেই ঝংকারের তালে তালে বাতাসে উড়ছে কারুকাজপূর্ণ সাদা শাড়ির আঁচল। পূর্ণিমা সন্ধ্যায় তাকে লাগছে যেন আকাশ থেকে নেমে আসা এক অপ্সরা সুন্দরী।

*

আদনান আদিলকে স্টেজের কাছে নিয়ে আসলে, তাদের বাবা নাদিম মুজদাহীর ও মা নওরীন মুজদাহীর আদিলকে সাথে নিয়ে স্টেজে থাকা মাইকের সামনে দাঁড়ায়। নাদিম মুজদাহীর সবার উদ্দেশ্যে,

“আজকের এই সন্ধ্যাটি আপনাদের সকলের উপস্থিতিতে হয়েছে মুখরিত ও সম্মানিত। এই সন্ধ্যাটিকে আরো সুন্দর ও স্বর্ণালী করতে আমি সবার উদ্দেশ্যে জানাতে চাই যে, আমার বড় ছেলে আদিল মুজদাহীর একজন ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে “ডক্টর অফ মেডিসিন” ডিগ্রি নিয়ে গ্রাজুয়েশন করেছে। পাশাপাশি, পরিবারে আরো একজন ডাক্তার সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়ে মুজদাহীর পরিবারের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। আমার এই আনন্দ আপনাদের সবার সাথে ভাগ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আমার এই অনুষ্ঠানে আপনাদের উপস্থিতির জন্য। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।”

নওরীন মুজদাহীর আদিলকে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো চুমু একে মাইক হাতে নিয়ে বলে,

“আমার ছেলে আদিল। খুব ছোট বেলা থেকেই ভীষণ শান্ত ও ভালো মনের মানুষ। কারো দুঃখ কষ্ট বা বিপদ দেখলে নিজ দায়িত্বে এগিয়ে যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। প্রয়োজনে নিজের সুখ বিলিয়ে অন্যের মুখে হাসি ফুটোতে পিছপা হয়না।
আজ সে একজন ডাক্তার হিসেবে বের হয়েছে। আমি জানি তার কাছে কোনো সুস্থ অথবা অসুস্থ মানুষ আসলে খালি হাতে ফিরে যাবে না। সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সেই মানুষটিকে সঠিক সাহায্য করতে। আমার বিশ্বাস সে তার দায়িত্ব, মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা দিয়ে তার কাজ সঠিকভাবে করে যাবে। আমি তার গর্বিত মা।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



কথা শেষ করে আদিলের হাত ধরে বলে,

“অনেক বড় হও বাবা।”

নাদিম মুজদাহীর ও আদিলের পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,

“আই এম রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ, মাই সান।”

সবার দিকে তাকিয়ে নিজের শ্যাম্পেনের গ্লাসটি হাতে নিয়ে উপরে তুলে বলে,

“তো হয়ে যাক এই আনন্দে, চিয়ার্স।”

সকল অতিথিবৃন্দ তাদের টেবিলে রাখা শ্যাম্পেনের গ্লাস তুলে একে অপরের গ্লাসের সাথে ঠুকে চিয়ার্স বলে উল্লাসে মেতে উঠে।

(এখানে উল্লেখ্য, এই প্রোগ্রামে সকল স্বদেশী ও বিদেশী অতিথিদের জন্য সব ধরণের পানীয় /কোমল পানীয় এর ব্যাবস্থা রয়েছে, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে। যে যার পছন্দ অনুযায়ী পানীয় তার তার গ্লাসে নিয়ে চিয়ার্স করেছে।)

*

আদনান ও তার কিছু বন্ধুরা স্টেজে উঠে আসে এবং আদিলের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। আদনানের হাতে গিটার। অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র গুলোও গুছিয়ে নিচ্ছে তার বন্ধুরা যা বার্তা জানাচ্ছে গান বাজনার। আদিল নেমে যাচ্ছে ঠিক এমন সময় মাইকের সামনে এসে আদনান বলে উঠে,

“আজকের সন্ধ্যায় আপনারা সবাই জেনেছেন যে আমার ভাই আদিল ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়ে বের হয়েছে। তবে, তার একটি সুপ্ত প্রতিভাও আছে। তা হচ্ছে সে বেশ ভালো গানও গাইতে পারে।”

আদনানের কথায় আদিল চমকে যায়। এমন কিছু সে মোটেও আশা করেনি আদনানের মুখ থেকে। ওদিকে আদনান বলেই যাচ্ছে,

“কে কে আমার এই ডাক্তার ভাইয়ার কাছ থেকে তার গান শুনতে চান?”

উপস্থিত সবাই তখন চিৎকার করে বলতে থাকে,

“আ..দিল, আ..দিল।”

আদিলের ঠোঁটে লাজুক হাসি। মাইকটি সে হাতে নেয়। আদনানের হাতেও গিটার আর তার অন্য বন্ধুরাও প্রস্তুত।

হঠাৎ দুই ভাইয়ের চোখ আটকে যায় একটি আলোর দিকে। দুই ভাইয়ের চোখ অনুসরণ করে বাকি সকলের চোখ ও তাদের পেছনে সেই আলোর দিকে তাকিয়ে।

*

চারপাশের হরেক রকমের বর্ণিল পোশাকের ঝলকানির মাঝে হঠাৎ শুভ্র সাদামাটা রংটি বড্ড বেমানান লাগছে দূর থেকে। ধীরে ধীরে সেই সুসজ্জিত আলোটি সামনে আসতে থাকলে তা যেন সবার চোখের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সকল বর্ণিল রঙও যেন ম্লান হয়ে গিয়েছে সেই সাদা আলোর রঙের ছটায় এবং স্বমহিমায় ঘোষণা করছে নিজের জয়জয়কার।

একি সত্যি নাকি কল্পনা?

সাদা সুক্ষ কারুকাজপূর্ণ মোহনীয় শাড়ি পরণে এগিয়ে আসছে সে। সবকিছু যেন মন্থর গতিতে এগোচ্ছে। তার শাড়ির আঁচল উড়ছে বাতাসে, দুলছে তার ঝুমকো কানের দুল, হাতের চুরি ও পায়েলের রিনিকঝিনিক ঝংকার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সবার, কিন্তু…

কিন্তু দুটি যুবকেরই হৃদয় যেন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আর কোনো যুবকের এমন হচ্ছে কিনা কে জানে? হঠাৎ কারো কথায় যেন সংবিত ফিরে পায় আদনান ও আদিল।

আদিলের হাতে মাইক, আপনাআপনি যেন গলা দিয়ে তার বেড়িয়ে আসে,

“এ এমন পরিচয়, অনুমতি প্রার্থনা
সবিনয় নিবেদন কিছুই যে লাগে না
নিজেরই অজান্তে, হৃদয়ের অনন্তে
কিছু কথা ভালো লাগা
করে যায় রচনা।।

নিরালায় একা একা, এলোমেলো ভাবনায়
কত কথা বলে যাই, শুধু তারই সাথে।

এ যেন কল্পনা, মিলন মোহনা।
রঙীন চাদর বোনা।।

এ এমন বিনিময়, কিছু শুভ সূচনা
এ এমন পরিচয়, অনুমতি প্রার্থনা
আঁধারে চুপি চুপি, আঁকা বাঁকা তুলিতে
কত ছবি এঁকে যাই, এত আপন করে
এ যেন প্রভাতে, গভীর আবেশে
স্নিগ্ধ শিশির ছোঁয়া

এ এমন গীতিময়, কিছু শুভ সূচনা
এ এমন পরিচয়, অনুমতি প্রার্থনা।”

কে সে, পরিণত হলো সবার দৃষ্টিবিন্দুতে? স্তম্ভিত করে দিলো যুবকদ্বয়ের হৃদয়?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১২: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/933450670418986/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১১

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১১
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার

আজ মুজদাহীর পরিবারে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশাল বাড়িটি জমকালো আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। আত্মীয় স্বজন, পাড়া পরিজন, বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে আছে পরিবেশ। আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি।

বিয়ে বাড়িই বৈকি, এ বাড়ির বড় মেয়ের আজ বিয়ের ঘোষণা দেয়া হবে, তাছাড়া বড় ছেলে আজ ডাক্তারী ডিগ্রী নিয়ে বের হয়ে পরিবারের সুনাম আরও বৃদ্ধি করেছে।

নাদিম মুজদাহীর ও বেশ চাঙ্গা মুডে আছে।

“বুঝলে আদিলের মা, ছেলে আমাদের হীরের টুকরো। এই একটা মাত্র সন্তান যে আমার কখনো অবাধ্য হয়নি। আমার গর্ব সে।”

“হঠাৎ আদিলের মা, আজ সকাল অব্দী তো মিসেস মুজদাহীর ছিলাম।”

“ছেলেটা আমার মন জয় করে নিয়েছে।”

“তাতো করছেই বটে। আমাদের বাকি দুই সন্তান ও কিন্তু চেষ্টার ত্রুটি রাখছেনা।”

“আলিয়া আমাদের প্রথম সন্তান, সবচেয়ে বেশি আদরের। সেও সুনামধন্য ডাক্তার আজ। তবুও বিয়ে করতে চাইছে এক ব্যাবসায়ীকে। মেনে নিয়েছি, তবে খুব বেশি খুশি নই।”

“এভাবে কেন বলছো? ছেলেকে তো আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

“হুম ছেলে ভালোই। তাইতো মেনে নিয়েছি। কিন্তু বলে রাখছি, আদিলের জন্য আমি ডাক্তার বউ-ই চাই।”

নওরীন মুজদাহীর একটু চুপসে যেয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,

“ছেলেটার যদি নিজের কোনো পছন্দ থাকে?”

“পছন্দ থাকুক বা না থাকুক, এ বাড়ির বউ ডাক্তার বউ-ই হবে।”

“ছেলেটার পছন্দ… অপছন্দ…”

কথাটি শেষ করবার আগেই নাদিম মুজদাহীর তার স্ত্রী নওরীন মুজদাহীরকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“আর কোনো কথা নয়। আজ অনুষ্ঠানে অনেক স্বনামধন্য ইন্ডিয়ান ডাক্তার ও তাদের পরিবার আসবে। সেখান থেকে আদিলকে বলবে ডাক্তার মেয়ে দেখে পছন্দ করে নিতে।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



নাদিম মুজদাহীর কথাটি শেষ করেই তার বেডরুম প্রস্থান করেন। নওরীন মুজদাহীর অনুষ্ঠানের জন্য অর্ধেক তৈরি হয়ে মনমরা হয়ে বিছানায় বসে পরে। তিনি মনে প্রাণে বাংলাদেশি, তার ও কত সখ, ঘরে নিজ দেশের নিজ সংস্কৃতি জানা বউ আসবে। সন্তানদেরকেও যে সে নিজের দেশের ভাষা সংস্কৃতির শিক্ষাই দিয়েছে। কিন্তু তার স্বপ্ন যে সারাজীবন জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। এখন দিতে হচ্ছে তার সন্তানদের। আলিয়া বিয়ে করে বেঁচে যাবে। এখন বাকি ছেলে দুটোই। কি যেন কি ভাগ্যে আছে তাদের। আদনান সবার ছোট, নিজের মন মর্জিতে চলে আর তাইতো চক্ষুশূল হয়ে আছে তার বাবার। আদিলটা শান্ত, পরোপকারী, নিজের সব ইচ্ছা লুকিয়ে বাবা যেভাবে চেয়েছে তাই করে আসছে। কিন্তু তার ও তো জীবন আছে।

এসব যখন ভাবছে, তখন ঘরে প্রবেশ করে তার পুত্রদ্বয়। দুজনকেই কোনো রাজপুত্রের চেয়ে দেখতে কম লাগছেনা। পরনে তাদের ব্ল্যাক টুক্সেডো, শুভ্র সাদা শার্ট, গলায় ব্ল্যাক বো টাই, হাতে সিলভার চেইনের রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়ি আর পলিশড ব্ল্যাক শু।

“মা দেখতো আমাদের দুজনকে দেখতে কেমন লাগছে?”

নওরীন নুজদাহীর দু বাহু সামনের দিকে প্রসারিত করে ছেলেদের দিকে,

“কাছে আয় তো, আমার লক্ষী বাচ্চারা।”

আদিল ও আদনান দুজনেই দ্রুত পায়ে তাদের মায়ের কাছে পৌঁছলে নওরীন মুজদাহীর জড়িয়ে একে একে দুজনের কপালে চুমু খায়।

“তোদের দুজনকেই হলিউডের নায়কের মতো লাগছে। কি যেন নাম ০০৭ এজেন্ট….বন্ড…।”

দুই ভাই তৎক্ষণাৎ একে অপরের পিঠে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল দিয়ে পিস্তল ধরার ভঙি করে সমস্বরে বলে উঠে,

“দ্যা নেইম ইস বন্ড…. জেমস বন্ড।”

হাসিতে ফেটে পরে মা ছেলেরা। এমন সময় ঘরের দরজায় উকি দেয় একটি মিষ্টি মুখ। কেউ দেখার আগে পেছন থেকে দৌঁড়ে এসে আদিল আদনান কে জড়িয়ে ধরে। তারপর আদিল কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

“কংগ্রাচুলেশনস মেরি ভাই।”

দুই ভাই পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তাদের বড়ো বোন আলিয়া মুজদাহীর কারুকাজ পূর্ণ লেহেঙ্গা পরে দাঁড়িয়ে। পরীর মতো সুন্দর লাগছে দেখতে তাকে। তার হাসি মুখ থেকে উজ্জ্বল আভা ছড়াচ্ছে। ছড়াবেই না কেন? আজ যে তার প্রিয়মানুষের সাথে এক মেলবন্ধনের সৃষ্টি হবে।

আলিয়া লেহেঙ্গাটি পরে চারপাশে একবার ঘুরে জিজ্ঞেস করে,

“মা, দেখতো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?”

“তোকে খুব খুব সুন্দর দেখাচ্ছে মা।”

আদিল ও আদনান দুজনেই বলে উঠে,

“তোকে একেবারে শাকচুন্নির মতো লাগছে।”

“মা… দেখতো কি বলে?”

“এই আমার মেয়েকে অনেক সুন্দর লাগছে, পঁচা কথা বলবিনা। তবে শাড়িতে তোকে আরও বেশি মানাতো।”

“উফফ মা, শাড়ি টারি আমি সামলাতে পারিনা। আমার জন্য এটাই ঠিক আছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে, এখন নীচে যাও। মেহমানরা চলে আসলে তাদের সাথে সময় দাও। আমি তৈরি হয়ে আসছি।”

“ঠিক আছে, আম্মু।”

বলে সবাই চলে যেতে নিলে, তখন আদিল কে ডেকে নওরীন মুজদাহীর বলে,

“বাবা এদিকে আয় তো।”

আদিল হাটু গেড়ে তার মায়ের সামনে মেঝেতে বসে। মায়ের কোলে মাথা দিলে তখন নওরীন মুজদাহীর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,

“বাবা, আমি অনেক খুশি তুমি ডাক্তার হয়ে বের হয়েছ। মানুষের সেবায় নিঃস্বার্থ ভাবে সদা নিয়োজিত থাকো এই দোয়া করি।”

“হুম আম্মু। সে চেষ্টাই করবো।”

“আর..”

“বলো, কি বলবে মা।”

নওরীন একটু ঢোক গিলে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,

“নিজের জীবনেও চলার পথে একজন সঙ্গী দরকার। তোমার বাবা চায় আজকের অনুষ্ঠানে তুমি সেই সঙ্গীটি খুঁজে নাও।”

আদিল চুপ করে থাকে। নওরীন মুজদাহীরের চোখ চিকচিক করছে, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে তিনি বলেন,

“সঙ্গীটি যেন ডাক্তারই হয়। এটা তোমার বাবার আদেশ।”

আদিল আর কোনো কথা না বলে দ্রুত সেই ঘর প্রস্থান করে। একবুক ভারী নিশ্বাস নিয়ে ছেলের ছুটে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে নওরীন। চোখের নোনা জল আদিল ও তার মাকে দেখাতে চায়না, তাই সে নিজ ঘরে ছুটে যায়।

*

তিয়াশা গুটিশুটি মেরে বিকেল ৫ টায় তার ঘরে শুয়ে আছে মনমরা হয়ে। ওদিকে প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ তৈরি হয়ে এসেছে তিয়াশার বাসায় সাথে করে নিয়ে যাবার জন্য।

তিয়াশার মা নীলিমা হাবিব তিয়াশাকে ডেকে তুলতে রুমে গেলে দেখতে পায় তিয়াশা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আজকাল যে তার কিছুই ভালো লাগেনা। ইদানিং অতীতের স্মৃতি গুলো খুব পীড়া দিচ্ছে তাকে।

“কিরে মা, কাঁদছিস কেন?”

“আমার যে কিছু ভালো লাগেনা মা।”

চোখ মুছে দিয়ে তিয়াশাকে ধরে উঠে বসায় নীলিমা হাবিব।

“মা শক্ত হও। তোমাকে শক্ত হতে হবে। সাহসী হতে হবে। অতীতের কথা ভুলে নতুন করে শুরু কর মা।”

তিয়াশা তার মায়ের বুকে মাথা রাখে, নীলিমা হাবিব মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আমি তোমার পাশে সবসময় আছি মা। তোমাকে এই কঠিন সময় পার করে নিজ পায়ে দাঁড়াতেই হবে।”

তিয়াশার মুখের আঁধার কাটতে শুরু করে তার মায়ের কথায়। বুকে স্বল্প সাহস সঞ্চয় হলে সে হাত দিয়ে নিজের অশ্রুধারা মুছে ফেলে।

“হুম মা। আমি আর কষ্ট পাবোনা মা। আমি শক্ত হবো।”

কপালে চুমু একে বলে,

“এইতো লক্ষী মেয়ে আমার। এখন বন্ধুরা এসেছে তোমাকে নিতে। তৈরি হয়ে তাদের সাথে যাও। ঘুরতে গেলে একটু হালকা লাগবে মনটা।”

বলতে না বলতেই ঘরে প্যাট্রিসিয়া প্রবেশ করে, আর তিয়াশাকে ধরে দাড় করিয়ে একটা সজোরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,

“মাইর দিব ফাজিল মেয়ে। জীবনে দুই একটা দুর্ঘটনা ঘটলেই কি সেখানে জীবন থেমে যাবে? এখন না গেলে আমাদের সাথে তোর খবর আছে।”

তিয়াশা তাও গোঁ ধরে বসে পরে, আর বলে,

“যাবোনা আমি।”

“তুই যাবিনা তোর ঘাড় যাবে।”

ওদিকে তিয়াশার ছোটবোন পৌষী ও এসে তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আপু, তুমি অবশ্যই যাবে।”

তিয়াশা নাছোড়বান্দা, কোনো নরণ চরণ নাই। বসে আছে ঠায়।

তিয়াশাকে কি আদৌ রাজি করিয়ে নিয়ে যেতে পারবে অনুষ্ঠানে?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১০: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/930751060688947/