পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৭

0
991

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১৭
Tasneem Tushar

তিয়াশা তার ঘরের দরজা বন্ধ করে আলমারি থেকে পুরনো এলবাম বের করে ছবি দেখছে আর অতি যত্ন সহকারে হাত বুলাচ্ছে। চিবুক বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে ছবিগুলোর উপরে। দ্রুত সে পানির ফোটাটি মুছে ফেলে এলবাম থেকে যাতে ছবি নষ্ট না হয়ে যায়। এলবামটি ভাঁজ করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ বেয়ে নীরবে পড়ছে তার অজস্র কষ্টের নোনা জল।

জানিনা কাকে দেখলাম? ঠিক দেখেছি কিনা তাও জানিনা? কিন্তু মন কেন মানছেনা? এত নাটকীয়তা করে সুখেই আছো তাহলে? আনমনে (লেখিকা-তাসনীম তুষার) এসব ভাবছে আর নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে কেঁদে চোখ ভিজাচ্ছে তিয়াশা।

ফোনের রিংটোন বেজে উঠলে, চমকে উঠে তিয়াশার ধ্যানভঙ্গ হয়। কোনরকম এলবামটি গুছিয়ে ফোনটি হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে ফোন নাম্বারের বদলে প্রাইভেট লিখা দেখাচ্ছে। অস্বস্তি নিয়ে ফোন ধরে বলে,

“হ্যালো?”

“তিয়াশা?”

“জ্বি, বলছি। আপনি কে বলছেন?”

“তোমার পরিচিত।”

“আমার পরিচিত? বুঝতে পারছিনা? কে আপনি?”

“ধরো, তোমার আপনজন।”

“দুঃখিত, আপনি বোধহয় ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন।”

এসব ন্যাকা কথা শুনেই গা জ্বলে যায় তিয়াশার। কলটি খট করে কেটে দিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে ফোনটি বিরক্তি নিয়ে। ফোনটির রিংটোন আরও বেশ কয়েকবার (লেখিকা-তাসনীম তুষার) বেজে উঠে। তিয়াশা বিরক্তি নিয়ে ফোনটি সাইলেন্ট করতে যেয়েও কি মনে করে যেন আবার কলটি রিসিভ করে।

“হ্যালো। আমিতো বলেছি আপনি রং নাম্বারে ডায়াল করেছেন। কেন বারবার কল করেই যাচ্ছেন?”

“তুমি সত্যি আমাকে চিনতে পারছনা?”

তিয়াশা ঝাঁঝালো কণ্ঠে উত্তর দেয়,

“না, পারছিনা।”

“আমার কণ্ঠ চিনতে পারছনা?”

“না পারছিনা। আচ্ছা শুনুন, আপনি আর ফোন করবেন না। রাখছি আমি।”

“আচ্ছা বলছি। তার আগে বলো তোমার গলা এত শুকনো কেন শোনাচ্ছে? আবার কান্নাকাটি করেছো?”

তিয়াশা অবাক হয়ে যায়। সে কিভাবে বুঝলো আমি কাঁদছিলাম? তিয়াশা কিছু না বলে চুপ করে থাকে। ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে,

“ঠিক বলেছি, তাইনা?”

তিয়াশা শান্ত কণ্ঠে বলে,

“আপনি কে বললেন নাতো?”

“দুদিন আগেই তোমাকে আমার ফোন নাম্বারটি দিয়েছিলাম। ভুলে গেছো?”

“আপনি…আপনি, আদিল?”

“যাক শেষ পর্যন্ত চিনতে পারলে তাহলে?”

“আমি খুবই দুঃখিত। কিন্তু আপনার ফোন নাম্বার তো উঠেনি। প্রাইভেট লিখা দেখাচ্ছে নাম্বারের জায়গায়।”

“ওহ তাইনাকি। আচ্ছা দাঁড়াও আমি আবার কল করছি।”

তখনই তিয়াশার দরজায় বেশ কয়েকবার নক পড়লে, তিয়াশা আদিলকে জানায়,

“আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আমি একটু পর আপনাকে কল করছি।”

“ঠিক আছে। কল দিবে কিন্তু। আমি অপেক্ষায় থাকবো।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“জ্বি করবো। রাখছি।”

দরজা খুলে দেখে পৌষী দাঁড়িয়ে। তিয়াশা বলে উঠে,

“কিরে এখানে কি করছিস?”

“আম্মু ডাকছে। নিচে চলো।”

“আচ্ছা, তুই যা। আমি আসছি।”

“এই আপু আমার দিকে তাকাও দেখি।”

কান্না করে তিয়াশার চোখ ফুলে গেছে, তাই সেটা আড়াল করতে সে মাথা নিচু করে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। তখন পৌষী জোর করে তিয়াশার থুতনি ধরে মুখ উঁচু করে বলে,

“তুমি আবার কাঁদছিলে আপি?”

পৌষীর হাত সরিয়ে দিয়ে তাকে মাইর দেয়ার ভঙি করে বলে,

“মাইর খাবি। যা নিচে, আসছি আমি।”

“আম্মুকে বলে দিব কিন্তু।”

“তুই যাবি?”

“আচ্ছা যাচ্ছি, শোন একটু ফ্রেশ হয়ে নিচে নেম।”

“কেন?”

পৌষী যেতে যেতে চিৎকার করে বলে,

“সেটা নিচে আসলেই জানতে পারবে।”

*

তিয়াশা আনমনে ভাবছে হঠাৎ ফ্রেশ হতে বললো কেনো? আয়নার সামনে যেয়ে দেখে বিধ্বস্ত অবস্থা মুখের। পার্টি থেকে ফিরে এসে গত দুইদিন থেমে থেমেই কান্না করে যাচ্ছে সবার আড়ালে। কষ্ট গুলো ভুলে নিজের দিকে খেয়াল দেয়া উচিত মনে করে মাথার এলোমেলো চুল গুছানোর চেষ্টা করে তিয়াশা। কিন্তু পরক্ষনেই চোখ বেয়ে পানি ঝরা শুরু করে তার।

নিচের ফ্লোর থেকে পৌষী আবার ডাক দিলে, তাড়াহুড়ো করে বাথরুম থেকে শাওয়ার সেরে নিয়ে মুখে ময়শ্চারাইজার ক্রিম মেখে টাওয়াল দিয়ে চুল পেঁচিয়েই সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে তাদের নিচের ফ্লোরে। তিয়াশার পরণে ছিল প্লাজো আর টি-শার্ট।

তিয়াশাদের বাসাটি ৩ রুম বিশিষ্ট একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। দোতলায় তিনটা বেডরুম। আর নিচ তলায় আছে একটা বিশাল কিচেন উইথ এটাচড ডাইনিং, একটা ফ্যামিলি রুম ও একটি ড্রইং রুম। দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই সামনেই পরে একটি খোলা স্পেস আর সেখানেই তাদের বাসায় প্রবেশ করার প্রধান দরজা। হাতের বা দিকে রয়েছে ড্রইংরুম, আর তার পাশেই রয়েছে কিচেন। তিয়াশা সিঁড়ি দিয়ে নেমে আনমনে হেটে ড্রইংরুমে যেতেই চমকে উঠে এবং দৌড়ে সেখান থেকে বের হয়ে চলে যায় রান্নাঘরে।

কিচেনে যেয়ে পৌষীকে পেয়েই পিঠের মধ্যে কিল দিয়ে বলে,

“এই বদমাইশ, বাসায় গেস্ট এসেছে আমাকে বলবিনা?”

“আরে, গেস্ট কোথায় দেখলে? তোমারই তো পরিচিত ওরা।”

“বেশি বুঝিস সবসময়। ধ্যাৎ। আমি এখন সামনে যাবো কি করে?”

“তোমাকে এভাবেই সুন্দর লাগছে। যাও আপু।”

“মাইর খাবি। দৌড়ে চলে এসেছি। এখন কি করে যাই সামনে?”

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৬: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/939034049860648/

[বি.দ্র: এখন থেকে ভাবছি ছোট ছোট পর্ব করেই গল্প দিব কিন্তু প্রতিদিন দিব ?]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে