পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৫

0
964

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১৫
Tasneem Tushar

“মা দেখো কাদের নিয়ে এসেছি।”

“এরা নিশ্চয়ই তোর বন্ধু?”

“হুম আম্মু, পরিচিত হও আমার বন্ধুদের সাথে।”

বলেই ম্যাথিউ, প্যাট্রিসিয়া ও তিয়াশাকে আদনান তার মা নওরীন মুজদাহীরের সামনে দাঁড় করিয়ে একে একে পরিচয় করিয়ে দেয়। নওরীন মুজদাহীর প্যাট্রিসিয়া ও তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে,

“কেমন আছো মা তোমরা? খুব খুশি হয়েছি তোমরা এসেছো।” ম্যাথিউকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আসার জন্য। নিজের পরিবার মনে করেই আনন্দ করো এখানে।”

“ঠিক আছে মা তাহলে আমরা যাই, বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।” বলেই আদনান সবাইকে নিয়ে চলে যেতে নিলে নওরীন মুজদাহীর থামিয়ে দিয়ে বলে,

“দাঁড়া একটু, এত তাড়া কিসের?”

তিয়াশার দিকে ফিরে বলে,

“তুমি বাংলাদেশি?”

“জ্বি, আন্টি। বাংলাদেশে জন্ম আমার।”

“তোমাকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে মা।”

“ধন্যবাদ আন্টি। আপনাকেও কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে।”

“তোমার কণ্ঠও কিন্তু খুব সুন্দর। নিশ্চয়ই তুমি ভালো গান গাইতে পারো?”

“আ আ.. আসলে আন্টি… টুকটাক গাই, খুব ভালো পারিনা।”

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ সাথে সাথে প্রতিবাদ করে জানায়,

“আন্টি একেবারেই মিথ্যে কথা বলছে। সে খুব সুন্দর গান গায়।”

“আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি।” তিয়াশার হাত ধরে বলে, “আমার একটি অনুরোধ রাখবে?”

তিয়াশা ইতস্তত কন্ঠে বলে, “জ্বি আন্টি বলেন?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“তুমি পুরনো দিনের বাংলা গান গাইতে পারবে? আমার জন্য? অনুষ্ঠানে এই ধুম ধারাক্কা টাইপ হিন্দি, ইংলিশ, বাংলা গান শুনে আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। পারবে তো?”

“পা..পারি, তবে আ.. আমিতো কোনো প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি আন্টি।”

“কোনো প্রস্তুতি লাগবেনা। তোমাকে গানে সহযোগিতা করার মানুষ থাকবে।”

আদনান এক মুহূর্ত দেরি না করে কারো সাথে কথা বলে ফোনে। তারপর আচমকা তিয়াশার হাত ধরে টেনে স্টেজের দিকে নিয়ে যেতে যেতে তার মাকে বলে,

“অবশ্যই পারবে মা। আমরাতো আছি। তুমি চিন্তা করোনা।”

আদনানের হঠাৎ স্পর্শে চমকে উঠে তিয়াশা, কিছু বুঝে উঠবার আগেই সে স্টেজে পৌঁছে যায় এবং দেখতে পায় আদিল ইতিমধ্যে সেখানে উপস্থিত।

*

তিয়াশার সামনে শ’খানেক মানুষ। ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার। আদনান গিটার হাতে বসে পড়েছে। আদিল তিয়াশার অস্থিরতা অবলোকন করে এবং এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় তিয়াশার হাতে।

তিয়াশা পানির গ্লাসটি হাতে নিয়ে ভাবছে, মানুষটি কিভাবে বুঝলো আমার এখন পানির দরকার ছিল? পানি পান শেষ করতেই আদিল তিয়াশার হাত থেকে গ্লাসটি নিয়ে তার হাতে মাইক ধরিয়ে দেয়। তারপর একটি ডায়েরী লিরিক্স স্ট্যান্ডে রেখে তিয়াশাকে বলে,

“আমার মায়ের খুব পছন্দের গান। পারেন গানটি?”

তিয়াশা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে আদিল বলে, “ভয় পাবেন না। আমি আছি সাথে।”

আদিলের কথা শুনে কি যেন কি হলো, আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় তার এবং শুরু করে,

“দুটি মন আর নেই দুজনার।”

আদনান গিটারে সুর তুললে, আদিল ও কণ্ঠ মিলায় তিয়াশার সাথে এবং দৈত কন্ঠে গায়,

“দুটি মন আর নেই দুজনার ।।
রাত বলে আমি সাথী হব যে
ফাগুনের রাতে আমি রূপকথা হয়ে কাছে রব যে।।
দুটি মন আর নেই দুজনার ।

ফুল বলে রঙে আর ছেও না
পাখি বলে আর গান গেও না ।।
আমাদের মিতালীর মায়াতে
কানে কানে কত কথা কব যে
দুটি মন আর নেই দুজনার ।

শুকতারা বলে আমি আছি তাই
দিশাহারা হতে আর ভয় কি ।।
পাছে ঘুম ঝরে পড়ে দুচোখে
হাসি মুখে তাই জেগে রব যে
দুটি মন আর নেই দুজনার।”

করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। নওরীন মুজদাহীর এবং আরো বয়োজেষ্ঠ্য মানুষের অনুরোধে তিয়াশা আরও কিছু পুরোনো দিনের একক ও দৈত সংগীত পরিবেশনা করে। মুহূর্তে মানুষের প্রশংসায় ভেসে যায় সে।

“মেয়েটি তো ভালোই গান গায়। আমাদের পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।” নাদিম মুজদাহীর বলছে তার স্ত্রী নওরীন মুজদাহীরকে।

“আসলেই তাই। মেয়েটি খুব ভালো। ওর সাথে কথা বলেই বুঝেছি সে গান গাইতে পারে।”

“হুম ভালোই গায়। কোথা থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসলে মেয়েটিকে। কত নিচ্ছে? আমাদের অন্যান্য প্রোগ্রামেও কিন্তু ওকে নিয়ে আসা যায় গান গাওয়ার জন্য। কি বলো?”

নওরীন মুজদাহীর ঝাঁঝালো কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে উত্তর দেয়,

“সবকিছুতে টাকা বিষয়টা এনো না মিঃ মুজদাহীর। সবকিছু টাকা দিয়ে কিনতে পারা যায়না। আর মেয়েটি কোনো ভাড়াটে গায়িকা না। সে আদনানের বন্ধু। আমার অনুরোধেই গান গেয়েছে সে।”

“আদনানের বন্ধু? আদনানের সাথেই তো এসব সস্তা মেয়ের বন্ধুত্ব হবে?”

“তুমি কি বলছো? কিছু বুঝতে পারছো? কিছু না জেনে মেয়েটি সম্পর্কে এধরণের কথা বলা অনুচিৎ হচ্ছে তোমার।”

“আচ্ছা রাগ করোনা। মেয়েটিকে কিছু টাকা দিয়ে দিও ভালো গান গাওয়ার জন্য। সামনে অনুষ্ঠানে ওকে ভাড়া করেও আনা যাবে তাহলে।”

“ধ্যাৎ, টাকা ছাড়া তো দেখি তুমি কোনো কথাই বলছনা। তোমার সাথে কথা বলাই বেকার। তুমি খুব বদলে গেছো নাদিম।”

রাগে গজগজ করতে করতে উঠে চলে যায় নওরীন মুজদাহীর।

*

গান শেষে স্টেজ থেকে নামলে সবাই তিয়াশাকে অনেক সাধুবাদ জানায়। মানুষের উচ্ছাস দেখে অনেকদিন পর তিয়াশার মুখে হাসি ফুটে। তিয়াশাকে হাসতে দেখে ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, এইতো মেয়েটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এটাই তো চেয়েছিল তারা।

আদনান ও আদিলের বড় বোন কোথা থেকে এসে যেন তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে,

“তুমি জানো তুমি কত সুন্দর গান গাও? আমার তো পুরোনো দিনের গান শুনলেই মাথা ধরে যেত। আজ মুগ্ধ হয়ে শুনেছি। বলতেই হয় তোমার কন্ঠে জাদু আছে।”

ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে আদিল ভ্রু কুঁচকে আলিয়ার দিকে তাকালে, আদিলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“না… তুইও ভালো গান গাইতে পারিস। তবে তিয়াশা বেশি ভালো গায়। আরে বাবা…মজা করছিলাম। তোদের দৈত কণ্ঠে গান আসলেই প্রশংসনীয়।”

“উহুম উহুম,” আদনান একটু কেশে বলে, “বাহ, আমাকে তো দেখি তোর চোখেই পড়ছেনা?”

“আরে.. আমার পুচকু ভাই, তুই না থাকলে তো ওরা গানই গাইতে পারতোনা।”

“আপি, মজা করছো?”

“অনেস্টলী স্পিকিং, ইউ থ্রী রকড দা স্টেজ”

তারপর তিয়াশার দিকে ফিরে বলে, “বাই দা ওয়ে, আমি আলিয়া। এই বাঁদর দুটোর বোন। আর তুমি?”

আদনান তখন তিয়াশার পাশে দাঁড়িয়ে বলে, “ও আমার বন্ধু, তিয়াশা।”

“এই তুই থামবি? ওকে বলতে দে।”

তিয়াশার গালে হাত রেখে বলে, “তিয়াশা, খুব সুন্দর নাম। খুব মিষ্টি মেয়ে তুমি। খুব ভালো লাগলো তোমার সাথে পরিচিত হয়ে।”

*

অনুষ্ঠানে ডিনার শেষ করে এখন সবাই ড্যান্স ফ্লোরে ডিজে মিউজিকের তালে তালে নাচছে। প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ ও বেশ মজা করছে। তিয়াশা তাদের জন্য রিজার্ভ করা টেবিলের চেয়ারে চুপ করে তাদের দুষ্টমি ভরা নাচ দেখছে।

“মে আই গেট দিস ড্যান্স, প্লিজ।” হাত বাড়িয়ে আদনান তিয়াশাকে নাচার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।

তিয়াশা সৌজন্য হাসি হেসে বলে,

“আমি তো নাচতে জানিনা।”

“আমি তো আছি। আমি শিখিয়ে দিব।”

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনে দৌড়ে এসে তিয়াশা ও আদনানের হাত ধরে একসাথে টেনে নিয়ে যায় ড্যান্স ফ্লোরে। আদনানের দুষ্টুমি ভরা নাচ দেখে তিয়াশা মুখে হাত দিয়ে অনবরত প্রাণ খুলে হেসেই চলেছে বাচ্চাদের মতো।

দূর থেকে এত মানুষের ভিড়ে তিয়াশাকে মুগ্ধ নয়নে দেখে চলেছে আদিল। তিয়াশার মন খোলা হাঁসিতে ডুব দিতে ইচ্ছে হচ্ছে তারও। কেন তার বেহায়া মন মানছেনা? কেন তিয়াশাকে দৃষ্টির আড়াল করতে পারছেনা?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৪: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/935575410206512/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে