Friday, August 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2023



পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২৯

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৯
#লেখিকাTasneem Tushar

দুজনই বেশ কিছুক্ষন নীরবে নিভৃতে একসাথে সমুদ্রের পাড় ধরে হেঁটে বেড়ায়। এক সময় হাটতে হাটতে তিয়াশার কানে ফিসফিস করে হঠাৎ আদিল বলে উঠে,

“ভালোবাসি।”

“আমিও।”

আদিল তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। নাহ্ গলা দিয়েও কোন স্বর বের হচ্ছেনা এখন। তিয়াশা খুব সহজে ভালোবাসি বলে দিবে সেটা আদিল কখনো কল্পনাও করেনি।

হঠাৎ আকাশের দিকে নিশানা করে দেখায় আদিল। তিয়াশা আদিলের আঙ্গুল অনুসরণ করে দেখতে পায় দ্রুত গতিতে একটি তারা ছুটে যাচ্ছে। খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠে তিয়াশা,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“ওহ মাই গড, শুটিং স্টার!”

আদিল তৎক্ষণাৎ তিয়াশার চোখে হাত দিয়ে ঢেকে বলে,

“কোন মুভিতে যেন দেখেছি, শুটিং স্টার দেখে কিছু প্রার্থনা করলে সেটা নাকি ফলে যায়।”

“আপনি বিশ্বাস করেন?”

“উহু করিনা, কিন্তু আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে কিছু একটা উইশ করতে। চেষ্টা করে দেখি, কি বলো?”

তিয়াশারও বিষয়টা বেশ মজা লাগে এবং বলে উঠে,

“ঠিক আছে।”

দুটি হৃদয় শুটিং স্টার দেখে মনে মনে কিছু প্রার্থনা করে। কিন্তু কী প্রার্থনা করে এই দুটি হৃদয় তা শুধু তারাই জানে। তবে অনুমান করা যায় আদিল মনে মনে তিয়াশাকেই চেয়েছে। কিন্তু তিয়াশার মন কী চাইলো?

*

পরদিন সকালে সবাই যার যার ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয়ে নেয়। আজই তারা এখান থেকে চলে যাবে। চেক আউট টাইম সকাল ১১টা। ম্যাথিউ, প্যাট্রিসিয়া, পৌষী, আদনান সবাই তৈরি। তিয়াশা তৈরি হয়ে বের হচ্ছে তার রুম থেকে তখন আদনান দরজায় নক করলে, তিয়াশা ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বলে উঠে,

“সরি, দেরি করে ফেললাম। তোরা চেক আউট করে ফেল। আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি।”

“না দেরি হয়নি। আসলাম তোর কোনো সাহায্য লাগবে কিনা দেখতে।”

“হুম, লাগবে তো।” ব্যাগপ্যাক এগিয়ে দিয়ে বলে,

“নে এটা ধর?”

“বুঝছি তো, তোর এখন হেল্পার লাগবে।”

“হুম, তুই তো হেল্পারই।”

একজন আরেকজনের সাথে খুনসুটি করতে করতে বাহিরের দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। সেখানে সবাই উপস্থিত। কিন্তু আদিল নেই। তিয়াশা আদনানকে জিজ্ঞেস করে,

“এই মিঃ আদিল কইরে?”

“কি যেন এখানেই তো ছিল একটু আগে। চলে আসবে হয়তো এখুনি।”

“তোর ভাই মিঃ আদিল একটা উদ্ভট মানুষ। সারাক্ষন দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় তার।”

“হা হা, তা তুই বলতে পারিস। ভীষণ দুষ্ট। তো তুই কতক্ষন এভাবে মিঃ আদিল, বলে সম্বোধন করবি? আমার ভাই তো তোরও ভাই। ভাই বলেই ডাক না।”

“তাইতো, তুই তো ভালো কথা বলেছিস। আমি তো ভাইয়া বলে ডাকতেই পারি।”

ওদের কথোপকথনের মাঝেই আদিল বাইরে থেকে ঘরে ফিরে। তিয়াশা আদনানকে দেখিয়ে বলে উঠে,

“ওই তো ভাইয়া এসেছে।”

হঠাৎ তিয়াশার মুখে ভাই ডাক শুনেই একটা ভিমড়ি খায় আদিল। তিয়াশার দিকে ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে, তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলে,

“আজকে যাচ্ছিনা আমরা। আগামীকাল যাবো। আজকের দিনটা এক্সটেন্ড করা হয়েছে।”

আদনান বলে উঠে,

“ওয়াও। দ্যাট ইস গ্রেট। আমার তো এখান থেকে এমনিতেই যেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।”

পৌষী, প্যাট্রিসিয়া, ম্যাথিউ সবাই খুশিতে হই করে উঠেছে। নিশ্চুপ আছে শুধু তিয়াশা। আদিল তাকিয়ে আছে তিয়াশার দিকে আর ভাবছে, যার জন্য করলাম সে কেন কিছু বলছেনা? তারপর একটু পরেই তিয়াশা চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠে,

“কিন্তু আমাকে যে কাজের জন্য আগামীকাল যেতে বলেছে ম্যানেজার। আমিও তো হ্যাঁ বলে দিয়েছি।”

আদিল বলে উঠে,

“এখনই ফোন দিয়ে বলে দাও, যে তুমি যেতে পারবেনা।”

“আমিতো কিছুক্ষন আগেই কনফার্ম করলাম। আবার এখুনি মানা কিভাবে করি?”

আদিল বলে উঠে,

“এক কাজ কর, কাল সকালে সিক কল দিবে। বলবে তুমি অসুস্থ কাজে আসতে পারবেনা। ব্যাস তাহলেই তো হয়ে যায়।”

তিয়াশা একটু চুপ করে থেকে বলে উঠে,

“হুম, এটা কিন্তু একটা ভালো বুদ্ধি দিয়েছেন মিঃ আদিল। আই মিন আদিল ভাইয়া।”

আদিল সবার সামনে কিছু বলছেনা, কিন্তু বুকটা যেন জ্বলে যাচ্ছে। একটু কেশে বলে উঠে,

“সবাই তো রেডিই আছো। তাহলে ব্যাগ যার যার রুমে রেখে এসে চলো আমরা বাইরে ঘুরতে যাই। গতকাল তো আমি বেশিক্ষন থাকতে পারিনি। আজকে অনেক আনন্দ করবো ইচ্ছা সবার সাথে।”

*

সারাদিন প্রচুর ঘুরাফেরা, খাওয়া দাওয়া, কেনাকাটা আর ফান এক্টিভিটিস করে বিকেলের দিকে সবাই কটেজে ফিরে আসে। আজ গরমও পড়েছে প্রচন্ড, তাই কটেজে ফিরেই সবাই ঝাঁপ দেয় সুইমিং পুলে।

দেখতে দেখতে সূর্য ডুবে আসছে প্রায়। কটেজের বাগানে আগুন জ্বালিয়ে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর সবাই সুইমিংপুল থেকে উঠে গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে বাগানে বসেছে ক্যাম্পফায়ার ঘিরে। আদিলের হাতে গিটার, সে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে গান ধরে,

“দো দিল মিল রাহে হ্যায়
মাগার চুপকে চুপকে

সাবকো হো রাহি হ্যায়
খাবার চুপকে চুপকে।”

আস্তে আস্তে সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে আসলে চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে, আকাশে দেখা দেয় বিশাল এক পূর্ণিমার চাঁদ। মোহনীয় একটি সন্ধ্যা, চাঁদের আলো এসে পড়েছে কটেজের আঙিনায়। সুইমিংপুলে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে নীলাভ আলো ছড়াচ্ছে চারপাশে। প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ তিয়াশাকে অনুরোধ করে এমন মোহনীয় সন্ধ্যায় যেন একটি গান ধরে সে। তিয়াশা অনুরোধ রাখতে গেয়ে উঠে,

“নীল চাঁদোয়া।।
আকাশটাকে আজ লাগছে যেন
মাঝে মাঝে কিছু কিছু তাঁরা বোনা বৃষ্টি ধোয়া।।

জড়োয়ার ঘোমটা পড়ে ফুলের বাসরে
সেজেছে সুন্দরী রাত জোছনা শিশিরে।
এই মিষ্টি রাতে আমি চাই তোমার ছোয়া।।

মধুয়ার গন্ধ ধরে রাতের আঁচলে
বসেছে মনের ময়ুর চোখের কাজলে।
ঐ বৃষ্টি থেকে আমি চাইপ্রেম ছোয়া।।”

তিয়াশা যখন গানটি গাওয়া শুরু করে, আদিলও তখন তার সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠে এবং দ্বৈত কন্ঠে গানটি শেষ করে।

*

রাতের খাবার শেষে কিছুক্ষন গল্প করে যে যার রুমে ঘুমোতে চলে যায়। তিয়াশাও বেডে শুয়ে ভাবছে আদিলের কথা। হুম আদিলের কথাই তো। আদিলের দেয়া প্রত্যেকটা সারপ্রাইজ সত্যি তিয়াশাকে ভীষণ পুলকিত করেছে। সাথে কিছু অভিজ্ঞতা তাকে সাহসীও করেছে। কিন্তু এমন অনুভূতির সৃষ্টি কেন হচ্ছে তার মনে আদিলের জন্য? নাহ এই অনুভূতি বাড়তে দেয়া যাবেনা। এটা যে জীবন ধ্বংস ছাড়া আর কিছু করতে পারেনা। হঠাৎ তিয়াশার ফোনে একটি মেসেজ আসে,

“একটু বাইরে আসবে কি?”

তিয়াশা ফোনে তাকিয়ে দেখে রাত এগারোটা বাজছে। যাবে কি যাবেনা ভাবছে। কিছু একটা চিন্তা করে সে পা টিপে টিপে বাহিরে পা বাড়ায় যাতে তার পায়ের শব্দে কারো ঘুম না ভেঙে যায়।

তিয়াশাকে দেখেই আদিলের চোখেমুখে উচ্ছাস দেখা দেয়। আদিল বলে উঠে,

“কেমন আছো?”

তিয়াশা হেসে দেয়। আজ সারাদিনই তো একসাথে সবাই মিলে ঘুরাফেরা করলো। মজা করলো। আদিল ও ছিল। তাহলে এখন এই প্রশ্ন কেন করছে বুঝতে পারছেনা তিয়াশা। হেসে উত্তর দেয়,

“ভালো আছি। আপনি?”

“যেমন রেখেছো।”

কথা বলতে বলতে দুজনে যেয়ে বসে কটেজের দোলনায়।

“মানে?”

“আমার চোখের দিকে তাকাও।”

তিয়াশা আদিলের চোখে দেখতে পায় এক ধরণের মাদকতা। এ চোখ যেন কিছু বলতে চাইছে। আজ সারাদিনই তিয়াশা লক্ষ করেছে আদিলের চাহনি, যা হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করে। কি হয়েছে আদিলের? আদিল আবার বলে উঠে,

“কি? কিছু বুঝলে?”

তিয়াশা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে মাথা নাড়ায় যে সে কিছুই বুঝেনি।

আজ বাতাসটা একটু ঠান্ডা, তিয়াশা দুই হাত জড়ো করে বসে আছে। আদিল খেয়াল করে এবং তার গায়ে থাকা পাতলা জ্যাকেট খুলে তিয়াশাকে অনুরোধ করে,

“এটা নাও।”

“লাগবেনা, ভাইয়া।”

আদিল জোর করে তিয়াশার গায়ে দিয়ে বলে,

“এই মেয়ে কিসের ভাইয়া তোমার?”

“কেন? আদনানের ভাইতো আমারও ভাই।”

“শ…শ…মাইর দিবো ভাই বললে।”

“ঠিক আছে, মিঃ আদিল। এখন ঠিক আছে?”

আদিল মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলে,

“আপাতত আছে। পরে পরিবর্তনও হতে পারে।”

তিয়াশা মুচকি হাসে। তারপর দুজন পাশাপাশি বেশ কিছুক্ষণ নীরবে বসে থাকে। কেউ যেন কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছেনা। তিয়াশা হাতের নখ খুটছে, কিন্তু ঠিকই খেয়াল করেছে আদিল অপলকহীন ভাবে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। তিয়াশার তার চাহনি দেখলে হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। কিছুক্ষন পর তিয়াশা বলে উঠে,

“উঠি তাহলে?”

“আরেকটু বসো না।”

“রাত হয়ে গেছে অনেক। এখন যাই। আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন।”

বলেই উঠে চলে যেতে নিলে আদিল তিয়াশার হাত টেনে ধরে বলে,

“তোমাকে ভালোবাসি, তিয়াশা।”

তিয়াশা চমকে উঠে, নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছেনা। আদিল পরক্ষনেই বলে উঠে,

“তুমি বলবেনা? আরেকটিবার বলোনা! আমার তো বারবার শুনতে ইচ্ছা করছে।”

তিয়াশার চোখে প্রশ্নবোধক চাহনি দেখে আদিল বলে উঠে,

“গতকালের মতো।”

তিয়াশার মাথা এখন কাজ করছেনা। গতকালের মতো? সে কখন বললো আদিলকে ভালোবাসে? ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,

“মিঃ আদিল, আপনি আবার মজা করছেন আমার সাথে, তাইনা? এবার কিন্তু এত সহজে বোকা হবোনা।”

আদিল তিয়াশার চোখে চোখ রেখে গলায় গাম্ভীর্য এনে বলে,

“তোমার মনে হচ্ছে আমি মজা করছি?”

তিয়াশা যেন গোলক ধাঁধায় পড়ে যায়। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। গতকালের এমন কোনো কথোপকথন কিছুই তো মনে পড়ছে না তার।

চলবে…

আগের পর্বের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২৮

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৮
#লেখিকাTasneem Tushar

প্রায় ভোর রাত।

পৌনে তিনটা বাজে। হরর মুভি দেখা শেষে ভয় কাটিয়ে পরিবেশ হালকা করার জন্য সবাই মিলে কিছুক্ষন কার্ড গেম খেলে। এরপর ক্লান্ত হয়ে সবাই যে যার মত ঘুমাতে চলে গেছে। তিয়াশাও এখন বাংক বেডের দোতলায় শুয়ে আছে। পৌষী ও প্যাট্রিসিয়া বেঘোরে ঘুম। কিন্তু তিয়াশার চোখে এক ফোটা ঘুম নেই, শুধু এপাশ ওপাশ করছে। মাথার মধ্যে জন্মদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা ঘুরপাক খাচ্ছে। আদিল ফিরে আসার পরে তার সাথে কোনো কথা বলেনি তিয়াশা। আদিলের কাছ থেকে এখনো জানা হয়নি কেন এমন ভয়ঙ্কর প্ল্যান করেছিল? কি উদ্দেশ্য ছিল তার?

পাশ ফিরে শুতেই জানালা দিয়ে দেখতে পায় আকাশে ঝলমলে তারা জ্বলে উঠেছে। তিয়াশা উৎসুক দৃষ্টিতে তারা গুলো দেখতে থাকে কিন্তু মনের মধ্যে ঠিকই চলছে অনেক প্রশ্নের ঝড়। সেসব ভাবতে ভাবতেই একটা হামি তুলে তিয়াশার চোখ প্রায় লেগে আসে। ঠিক তখনই গগন বিদাড়ি চিৎকারে তিয়াশার পিলে চমকে উঠে। ধরফড়িয়ে উঠে বাংক থেকে লাফ দিয়ে নেমে যায় তিয়াশা।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



নেমেই কটেজের সদর দরজার দিকে দৌড় দেয়। মনে হচ্ছে কারো আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। কেউ বোধহয় কোনো বিপদে পড়েছে। কাউকে ডাকবে কিনা ভাবছে তিয়াশা। পরক্ষনেই আবার চিৎকার শুনতে পেলে, তিয়াশা আর কিছু না ভেবেই অন্ধকারের মধ্যেই দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে যায়।

অন্ধকার হাতরেই আর্ত চিৎকার অনুসরণ করে এগোতে থাকে তিয়াশা। দৌড়তে দৌড়তে পৌঁছে যায় বীচের কাছাকাছি। চিৎকারটি আরো জোড়ালো শোনা যাচ্ছে এখন। আশেপাশেই হয়তো আছে বিপদগ্রস্ত মানুষটি। হঠাৎ খেয়াল হয় তার সাথে ফোন রয়েছে। ফোন বের করে টর্চ লাইট অন করে তিয়াশা। এখন একটু ভালো দেখতে পাচ্ছে সে।

চিৎকারটি এখন গোঙানির শব্দে পরিণত হয়েছে। তিয়াশা এদিক ওদিক ফোনের টর্চ লাইটের আলো সরিয়ে দেখতে থাকে কাউকে দেখতে পায় কিনা। একটা সময় খেয়াল করে কিছু একটা নড়াচড়া করছে। সেদিকে ভালোভাবে আলো ধরতেই দেখতে পায় একটা মানুষের দেহ পরে আছে বালিতে। তিয়াশা দৌড়ে যায়, ফোনটি হাত থেকে নামিয়ে রেখে হাটু গেড়ে বসে বিপদগ্রস্ত মানুষটিকে ডাকতে থাকে।

“এই যে শুনছেন? আপনার কি হয়েছে? আপনার কোনো সাহায্য লাগবে? এখানে কিভাবে এলেন?”

কোনো কথা নেই, শুধু গোঙানির শব্দ আসছে। তিয়াশা ভালোভাবে দেখার জন্য টর্চ লাইটের আলো সেই মানুষটির মুখে ফেলতেই আঁতকে উঠে অস্ফুট চিৎকার বেরিয়ে আসে। একটি সুক্ষ রক্তের ধারা দেখতে পায় তিয়াশা। সাথে সাথে কাঁপা হাতে মানুষটির মাথা কোলে রেখে ডাকতে থাকে কান্নারত কন্ঠে,

“আদিল?…মি. আদিল? বলুন না কি হয়েছে আপনার।”

আদিল কিছু বলছেনা, শুধু পেট চেপে গোঙাচ্ছে। তিয়াশা আবার জিজ্ঞেস করে,

“আদিল কি হয়েছে আপনার? কারা আপনার এই অবস্থা করেছে?”

তিয়াশা দিশেহারা হয়ে ফোন তুলে আদনানের নাম্বারে ডায়াল করে, কিন্তু ফোন বন্ধ পাচ্ছে।

পরপর প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ এর ফোনে ট্রাই করে। কিন্তু নাহ ফোন ঢুকছেনা, আসলে নেটওয়ার্ক পাচ্ছেনা। তিয়াশা কান্না করে দেয় এবার। কি করবে বুঝতে পারছেনা।

বিড়বিড় করে বলতে থাকে,

“নাহ্ ৯১১ এই ফোন দিতে হবে।”

এই বলেই ফোনটিতে ডায়াল করতে যাবে অমনি শুনতে পায় অট্টহাসি। তিয়াশা এখন ভরকে যায়। একেতো আদিলের সাথে অঘটন ঘটেছে আর এদিকে অট্টহাসি, নিশ্চয়ই আদিলকে আহত করা খারাপ মানুষটি আশেপাশেই আছে।

আবার ডায়াল করতে নিবে তখনই হাতের থেকে ফোনটি খপ করে নিয়ে নেয় কেউ। তিয়াশা ঘটনার আকস্মিতায় চমকে যায়। তাকিয়ে দেখে তিয়াশার কোলে মাথা রেখে আদিল দিব্যি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। চোখ তার ছানাবড়া। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা তিয়াশা।

তিয়াশা ভ্যাবাচেকা পূর্ণ চাহনি নিয়ে বসে আছে। আসলেই বুঝতে পারছেনা কি হয়েছে। আদিল হাসছে না সে ভুল দেখছে। নিশ্চিত হবার জন্য বলে উঠে,

“আদিল? আপনার কি হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন তো? আপনি কি হাসছিলেন? কিন্তু আপনি হাসলে চিৎকার করলো কে? আর চিৎকার করলে হাসলো কে?”

ধ্যাৎ কি যে হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। পাগল হয়ে যাবো বোধহয়।

হঠাৎ তিয়াশার হাত ধরলে তিয়াশা আবার তাকায় আদিলের দিকে। আদিলের হাতে তার ফোনটি তাতে এখনো টর্চ লাইটটি জ্বলছে। এবং সেই আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আদিল তার বত্রিশটি দাঁত বের করে খিলখিল করে হাসছে।

“অসহ্য।”

বলেই তিয়াশা উঠে সরে দাঁড়ায় আর আদিলের মাথা ধুপ করে বালিতে যেয়ে পরে। তিয়াশা কোনদিকে না তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে আর তখন মনে পরে তার ফোনটি আদিলের হাতে। ফিরে আসলে দেখে আদিল উঠে বসেছে। তিয়াশা আদিলের হাত থেকে টেনে নিজের ফোনটি নিতে গেলে, আদিল খপ করে তিয়াশার হাত শক্ত হাতে ধরে ফেলে। তিয়াশা হাত ঝেড়ে ফেলে চোখ রাঙিয়ে তাকায় আদিলের দিকে। আদিল ও সাথে সাথে সুর তোলে,

“শোনো গো রূপসী ললনা
আমাকে যখন তখন চোখ রাঙানো চলবেনা।”

তিয়াশা হনহন করে কটেজের দিকে রওনা দেয়। আদিল ও পেছন পেছন আসতে থাকে তিয়াশার। তিয়াশা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,

“আপনি আসছেন কেন? আসবেন না আমার সাথে।”

আদিল আবার ও মজা করে গেয়ে উঠে,

“তুমি যেখানে, আমি সেখানে
সেকি জানোনা…

একি বাঁধনে, বাঁধা দুজনে
ছেড়ে যাবোনা।”

*

তিয়াশার কাছে এসে কানে হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আদিল। চোখের দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে সে লজ্জিত তার প্রত্যেকটি কৃতকর্মের জন্য।

“আমাকে ক্ষমা করা যায় কি?”

তিয়াশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে। আদিলের কানে ধরে তার সামনে হাটু গেড়ে বসে থাকাটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত তার কাছে। আদিল আবার বলে উঠে,

“খুব বেশি কষ্ট দিয়েছি?”

“উঠুন আপনি।”

“আগে বলো ক্ষমা করেছ?”

“হুম”

“কি হুম?”

“করেছি।”

“কি করেছি?”

“ক্ষমা।”

“সত্যি?”

“হুম।”

তারপর তিয়াশা চলে যেতে নেয় আর আদিল তিয়াশারা হাত টেনে ধরে বলে,

“থাকো কিছুক্ষন।”

“হাত ছাড়ুন।”

“উহু, চলো আমার সাথে।”

“কোথায়?”

“তোমাকে কিছু দেখাবো।”

তিয়াশার চোখে হাত দিয়ে ঢেকে নিয়ে যেতে থাকে আদিল। তিয়াশা অস্থির হয়ে বলে উঠে,

“আরে করছেন কি?”

“আমার উপরে ভরসা রাখো।”

তিয়াশাকে নিয়ে সাগরের পাড়ে দাঁড়ায়, তারপর চোখের থেকে হাত সরিয়ে আঙ্গুল দিয়ে নিশানা করে দেখায় সমুদ্রের পাড়। তিয়াশা খুশিতে লাফিয়ে উঠে, আয়নার মতো স্বচ্ছ জলে যেন প্রতিফলিত হচ্ছে আকাশের অসংখ্য উজ্জ্বল তারা। মনে হয় কোটি জোনাকির আলো আছড়ে পড়ছে পাড়ে ঢেউয়ের সাথে সাথে। কি অপরূপ, মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, প্রকৃতি যেন নিজ হাতে লাখো নীল আলোয় সাজিয়ে দিচ্ছে সমুদ্রের পার ঢেউয়ের তালে তালে মিলিয়ে।

তিয়াশা তাকিয়ে ঢেউয়ের দিকে আর আদিল এই অন্ধকারেই তার ভালোবাসার দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে তিয়াশার দিকে। তিয়াশার উচ্ছাসে সে নিজেও আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। এক পর্যায়ে আদিল তিয়াশার আরেকটু কাছে এসে হাতের আঙ্গুল স্পর্শ করে বলে,

“তিয়াশা।”

তিয়াশা মুগ্ধ নয়নে যেন ধ্যানে নিমজ্জিত হয়ে নীল আলোর খেলা দেখছে ঢেউয়ের সাথে সাথে। শুধু বলে,

“হুম?”

“জানো? এ উজ্জ্বল নীল আলো আর কিছুর নয়, এক ধরণের সামুদ্রিক ফাইটোপ্লাঙ্কটনের। এর নাম ডিনোফ্ল্যাজেলাটিস যার রয়েছে লুসিফেরাস নামক রাসায়নিক উপাদান যা আলো সৃষ্টি করতে পারে। খুবই ক্ষুদ্র হয় এই জীবগুলো।”

তিয়াশা খুশি হয়ে বলে উঠে,

“ধন্যবাদ।”

“কেন?”

“এই যে এত সুন্দর একটি দৃশ্য দেখানোর জন্য।”

“তোমার ভালো লেগেছে?”

“অসম্ভব ভালো লেগেছে।”

কিছু ভাবতে ভাবতে আদিলকে প্রশ্ন করে,

“একটা প্রশ্ন করি?”

“হুম, করো যা ইচ্ছা।”

“আপনি এত ভালো, তাহলে আমার জন্মদিনে আমাকে এতটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কেন ফেলেছিলেন?”

“তোমার পুনর্জন্মের জন্য।”

“মানে?”

“তুমি খুব নরম স্বভাবের তিয়াশা। তোমাকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে শক্ত করার জন্য করেছি। এই যে দেখো সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কারণেই কিন্তু আজ তুমি একা অন্ধকারে বের হতে ভয় পাওনি।”

তিয়াশা ভেবে দেখে তাইতো। আসলেই সেদিনের পর থেকে মনে হয় সে নিজেকে যে কোনো পরিস্থিতিতে সামলাতে পারবে। নিজের উপরে আস্থা আছে এখন তার।

“কি ভাবছো?”

“এমনি, কিছুনা।”

“তুমি জানো সেদিন প্রত্যেকটা পদক্ষেপে তোমার সাথে সাথে ছায়ার মতো ছিলাম আমি। তোমাকে একা এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে দেইনি।”

তিয়াশা অবাক তাকিয়ে থাকে, মুখে কোনো কথা নেই। মনে মনে ভাবছে এই মানুষটা এত কিছু ভেবেছে তাকে নিয়ে। এত কিছু করেছে তার জন্য। এক ধরণের শ্রদ্ধার অনুভূতি সৃষ্টি হয় তিয়াশার মধ্যে আদিলের প্রতি। তিয়াশা বলে,

“আপনাকে ধন্যবাদ।

“সত্যি? সত্যি রাগ নেইতো?”

“উহু। রাগ অভিমান চলে গেছে। সত্যিই আমার পুনর্জন্ম হয়েছে সেদিনের পর থেকে। আমি এখন সত্যিই অনেক কনফিডেন্ট নিজের ওপর।”

“কিন্তু… কিন্তু তখন কেন এমন করলেন? আপনি জানেন আপনাকে ঐ অবস্থায় দেখে কতটা ভয় পেয়েছি?”

“কেন ভয় পেয়েছ কেন?”

“কেন মানে? আপনার যদি সত্যি কিছু হয়ে যেত?”

“হলে কি হতো?”

“উফ কি হতো মানে কি? আল্লাহ মাফ করুক।”

“কেন? আমার জন্য মায়া হয় তোমার?”

তিয়াশা ইতস্তত হয়ে বলে,

“ন..না…তা না।”

“তাহলে কাঁদলে কেন আমাকে ব্যথায় ছটফট করতে দেখে?”

তিয়াশা মুচকি হেসে জানায়,

“সব প্রশ্নের উত্তর হয়না।”

এরপর দুজনই বেশ কিছুক্ষন নীরবে নিভৃতে একসাথে সমুদ্রের পাড় ধরে হেঁটে বেড়ায়। এক সময় হাটতে হাটতে তিয়াশার কানে ফিসফিস করে হঠাৎ আদিল বলে উঠে,

“ভালোবাসি।”

“আমিও।”

চলবে…

আগের পর্বের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২৭

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৭
#লেখিকাTasneem Tushar

সকালের নাস্তা শেষে সবাই তৈরি হয়ে নেয়। উদ্দেশ্য আজ সারাদিন ঘুরাফেরা করবে, সাথে সি বীচে গোসল, প্যারা সেইলিং, জেট স্কি চালানো আর কায়াকিং। তাছাড়া আশেপাশের ছোট্ট শহরটাও ঘুরে দেখার ইচ্ছে তাদের। তিয়াশা খুব খুশি মনে আছে। গতকাল রাতের অন্ধকারে কোথায় উঠেছে, কতদূরে তা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি তিয়াশা। দিনের ঝকমকে আলোয় বাইরে বেরিয়ে তিয়াশা ভালোভাবে ঘুরে দেখতে থাকে সব।

সি বীচের খুব কাছেই এই দোতলা বিশিষ্ট কটেজ। কটেজের ছাদটা গোলাকার, দেখলে মনে হয় ছনের তৈরি। দোতলায় যেতে হয় কটেজের বাহিরে থাকা একটি পেঁচানো সিঁড়ি দিয়ে। কটেজের সীমানায় রয়েছে জাকুজি ও একটি সুইমিংপুল। একপাশে নানা ফুলের সমারোহে একটি বাগান আর সেই বাগানের এক কোণায় রয়েছে একটি দোলনা। অন্যপাশে একটি হ্যামক ঝুলছে। তিয়াশা দৌড়ে যেয়ে বসে পড়ে সেই দোলনাটিতে।

এত সুন্দর পরিবেশ পেয়ে খুব খুশি লাগছে তিয়াশার। কল্পনাও করেনি এত সুন্দর জায়গায় তার জন্মদিন পালিত হবে। এর জন্য মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিয়াশা তার পরিবার ও বন্ধুদের। কিন্তু মনে পুষে রয়েছে এখনো আদিলের প্রতি অভিমান। কাউকে সারপ্রাইজ দিতে গেলে বুঝি এত ভয়ঙ্কর প্ল্যান করতে হয়?

তিয়াশা যখন দোলনায় ঝুলছে, তখন আদনান সুযোগ পেয়ে তিয়াশার কাছে এসে বলে,

“বসতে পারি?”

“হুম বসুন না।”

“আজকের আবহাওয়াটা কিন্তু অনেক ভালো।”

“হুম, অনেক ভালো।”

হাতে থাকা আইসক্রিমের বার তিয়াশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“নাও তোমার জন্য।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



তিয়াশা ভীষণ খুশি হয়ে যায়। আনন্দিত হয়ে আইসক্রিমের প্যাকেটটি সে হাতে তুলে নেয়।

“ওহ মাই গড। থ্যাংক ইউ। আমার আইসক্রিম অনেক পছন্দের।”

“তাহলে তো ঠিক বুঝেছি।”

আইসক্রিম খেতে খেতে তিয়াশা জিজ্ঞেস করে,

“আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা যা করেছেন, আমার এই জন্মদিনটি সারাজীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

“তোমার ভালো লেগেছে?”

তিয়াশা চোখ বড় বড় করে বলে,

“হুম লেগেছে তো। কিন্তু এই কিলার সারপ্রাইজ প্ল্যানটা আপনার মাথা থেকে এসেছে?”

তিয়াশার কথায় আদনান হাসতে হাসতে শেষ। তিয়াশা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,

“হাসছেন যে? এটা কি হাসির কথা।”

“সেটার ব্যাখ্যা তোমাকে আমার ভাইজান দিতে পারবে। প্ল্যানের সিকিভাগ আমার মাথা থেকে বেরিয়েছে। আর বাকি প্ল্যান তার।”

তিয়াশার চোখে মুখে ভাবনার ছাপ পরে। দেখে মনে হয় গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। তারপর বলে উঠে,

“হুম। বুঝলাম, দুষ্টের শিরমণি লঙ্কার রাজা।”

ওদিকে আদিল হ্যামকে চোখবন্ধ করে শুয়ে মুখের উপর হ্যাট দিয়ে তিয়াশা ও আদনানের সব কথাই শুনতে পাচ্ছিল। তরাং করে উঠে বসে বলে,

“আমি কিন্তু, একা একা খাইনা চানাচুর ভাজা।”

*

সমুদ্র পারে এসেছে সবাই। তিয়াশা একটি বিচবেডে বসে আছে। বাকি সবাই পানিতে ঝাপাঝাপি করছে। একটু পর পৌষী ও প্যাট্রিসিয়া এসে টানতে টানতে নিয়ে যায় তিয়াশাকে। কি আর করা তিয়াশা সাঁতার জানেনা, নামতে চাইনি কিন্তু ওদের আগ্রহে সেও যোগ দিয়েছে সবার সাথে।

হঠাৎ একটা চিৎকার শুনতে পায় সবাই, কেউ একজন চিৎকার করছে,

“শার্ক, শার্ক।”

হাঙ্গরের দেখা নাকি পাওয়া গেছে এবং সেটা নাকি এদিকেই আসছে। সবাই ভয়ে পানি থেকে চিৎকার করতে করতে উপকূলের দিকে ছুটে আসতে থাকে। হঠাৎ পৌষী প্যাট্রিসিয়াকে ও ম্যাথিউকে অস্থির হয়ে ডেকে বলতে থাকে,

“তিয়াশা আপি কোথায়? ওকে তো দেখছিনা।”

দূরে দেখতে পায় তিয়াশা একা পরে গেছে এবং একটি হাঙ্গর খুব দ্রুত তার দিকেই ছুটে আসছে। তিয়াশা স্রোতের বিপরীতে দৌড়ে আসার চেষ্টা করছে, কিন্তু হাঙ্গরটি তিয়াশার প্রায় পায়ের কাছে চলে আসে। তিয়াশা প্রানপনে চিৎকার করে বলছে,

“বাঁচাও, বাঁচাও।”

তার শরীর যেন অসার হয়ে গেছে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। একটু পরেই চোখ খুলে হঠাৎ আদিলকে দেখতে পেয়ে তিয়াশা হকচকিয়ে একটি লাফ দিয়ে দূরে সরে যায়। দেখতে পায় আদিল হাঙ্গরের কস্টিউম পরে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং সমানে হেসে চলেছে।

তিয়াশা এবার ভীষণ ক্ষেপে যায়, আদিলের টি-শার্ট খামচে ধরে কাছে টেনে নিয়ে বলে,

“ফাজলামি পেয়েছেন? মেরে ফেলবেন নাকি?”

আদিল মুচকি হেসে বলে গান ধরে,

“উহু, তোমার জন্য মরতে পারি
ও সুন্দরী তুমি গলার মালা।”

তিয়াশা প্রতিউত্তরে বলে,

“ধ্যাৎ, ঝামেলা।”

বলেই টি-শার্ট ছেড়ে আদিলের দিকে রেগে কটমট করে তাকায় তারপর হনহনিয়ে চলে আসতে নেয়। একটু থমকে দাঁড়ায়, কি যেন কি ভেবে আদিলের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়েই আদিলের পায়ে তিয়াশা তার পা দিয়ে অনেক জোরে চাপা দিয়েই দৌড় দেয় উপকূলের দিকে।

আদিল ঘটনায় আকস্মিকতায় শুধু বলে উঠে,

“উহ।”

তারপর তিয়াশার পেছন পেছন দৌড়ে উপকূলের দিকে আসতে থাকে।

*

দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে শহরে ঘুরতে এসেছে সবাই মিলে। একটি সুভিনিয়ার শপে ঘুরে ঘুরে দেখছে কি পাওয়া যায়। এদিকে আদিল একটি ফোনকলে ব্যাস্ত হয়ে যায়। ফিরে এসে আদনানের উদ্দেশ্যে বলে,

“আদনান, আমার যেতে হবে। একটা কাজ পরে গেছে।”

“হঠাৎ? কি কাজ পড়লো আবার তোর?”

“আছে একটু আর্জেন্ট।”

“ফিরবি কখন?”

“তা জানিনা। দেখি।”

“দেখি মানে কি? আগামীকালই তো ফিরে যাব। তুই তাড়াতাড়ি কাজ সেরে চলে আসবি।”

“চেষ্টা করবো। এখন বলতে পারছিনা।”

আদিল চলে যাচ্ছে দেখে সবারই ভীষণ মন খারাপ হয়। বেশি মন খারাপ হয় পৌষীর। সে বলে উঠে,

“ভাইয়া, আপনি প্লিজ যাবেন না। আপনি না থাকলে তো একটুও মজা হবেনা।”

আদিল পৌষীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“চেষ্টা করবো ছোট আপি। দেখি।”

তারপর তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে,

“অনেকে হয়তো খুশিই হবে আমি চলে গেলে।”

বলেই আদিলের প্রস্থান ঘটে। তিয়াশা তাকিয়ে রয় আদিলের চলে যাওয়ার দিকে। কেন যেন মনটা খারাপ হয়ে গেল। মানুষটা সারাক্ষন তিয়াশাকে বিভিন্ন ভাবে জ্বালাতন করতো। মজাও লাগতো আবার বিরক্ত ও লাগতো। কিন্তু এখন মনটা বিষন্ন হয়ে যাচ্ছে।

*

সূর্যাস্তের সময় সমুদ্রকুল যেন অপরূপ সৌন্দর্যে পরিণত হয়েছে। আকাশে সূর্যের লাল আভা, সাথে সামুদ্রিক বাতাস, মনটাই ভালো করে দেয়। সবার সাথে তিয়াশা উপকূলে বসে আছে। পাশেই আদনান।

আদনানের সাথে তিয়াশার বেশ ভালোই বন্ধুত্ব হয়েছে। কথায় কথায় এখন তাদের কথাবার্তা আপনি থেকে তুইতে এসে পৌঁছেছে। আদনান ও মনে মনে বেশ খুশি। সে তো তিয়াশার ভালো বন্ধু হতে চেয়েছিল। তবেই না সে তার মনের কথা তিয়াশাকে জানাতে পারবে। তিয়াশা আদনানের সাথে গল্প করছে ঠিকই কিন্তু মনে এক শূন্যতা বিরাজ করছে। সব আছে তারপরেও কি যেন নেই।

তিয়াশা সুযোগ বুঝে তার ক্রসবডি ওয়ালেট থেকে ফোন বের করে এবং একটি টেক্সট পাঠায় আদিলকে যাতে লিখা,

“আপনি আসবেন কি?”

ঘণ্টা দুয়েক হয়ে গেছে সবাই কটেজে ফিরেছে।তিয়াশা ফোন চেক করে দেখে কোন উত্তর আসেনি। তিয়াশার একটু মন খারাপ হয়।

এখন রাতের ডিনার তৈরির কাজ চলছে। রাতের ডিনার তৈরিতে আছে আদনান ও ম্যাথিউ। তিয়াশাকে রান্নাঘরে যেতে দেয়নি। তাও সে টুকটাক সাহায্য করেছে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে এখন মুভি দেখার পালা।

সবার ইচ্ছা অনুযায়ী হরর মুভি “দা নান” দেখবে বলে ঠিক করেছে। স্ক্রিনে মুভি চলছে, তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে পৌষী। আরেক পাশে প্যাট্রিসিয়া। তিনজনই ভয়ে মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে ফেলছে। এর মাঝেই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায় আর মনে হয় পুরো বাড়িতে কেমন ঝুনঝুন ও মচমচ শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ভয়ে সবাই এক যোগে চিৎকার শুরু করে দেয়।

“আরে! কি হয়েছে? চিৎকার করছো কেন সবাই?”

কথা শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে একহাতে চাবি আর অন্যহাতে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আদিল। ততক্ষনে বিদ্যুৎ ও চলে আসে। আদিলকে দেখে যেন সবার দেহে প্রাণ ফিরে আসে।

নিজেদের কাণ্ডে নিজেরাই হেসে খুন হয়ে যায় সবাই।

চলবে…

আগের পর্বের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

হৃদয়_স্পর্শ পর্ব ৩ ও শেষ

0

হৃদয়_স্পর্শ পর্ব ৩ ও শেষ
#লেখনীতে_সাদিয়া_নুর

– তারপর তোদের কাহিনী কবে স্টার্ট হলো?
– ফেসবুক!
– কি? ফেসবুকে স্টার্ট হইসে?
– হ্যা। খুব ভয়ে এবং লজ্জায় ছাদ থেকে নিচে নামলাম দোয়া পড়ছিলাম তার সামনে যেন আর না পরি। হ্যা দোয়া কবুল হয়েছিলো দুই চোখ জোড়া শুধু তাকে খুজছিলো কিন্তু কোনো মতেও তাকে পাইনি।
– না পাওয়াই তো ভালো ছিলো তাইনা।

ইশ যদি সাদিয়া আরেকটু পর্যবেক্ষণ করত আদনান কে তাহলে দেখতো আদনানের ঘাড়ের রগের সাথে হাতের রগ ও বের হয়ে আসছে এবং হাত কে মুঠি বদ্ধ করে রেখেছে!

– ফেসবুকে লগইন করেছিলাম তার দুইদিন বাদ।মেসেঞ্জারে সবার মেসেজেস এর রিপ্লাই দেয়ার পর স্প্যাম মেসেজেস দেখতে দেখতে একটা আইডি তে চোখ পড়ল নাম ছিলো “ইরশাদ খান ইফতি” নাম টা দেখে খটকা লাগলো সাথে সাথে প্রফাইলে গেলাম,, চ্যাক করে দেখি সেই ছেলেটা। শুয়ে থেকেও মাথা ঘুরাচ্ছিলো। এর দুইমিনিটের মাথায় আবার সে মেসেজ দেয়,,
” কান্না করবানা সেইদিনের মতো!”
এটা দেখে প্রচন্ড লজ্জা পেলাম। কিন্তু মনে সাহস জুটিয়ে লিখে ফেল্লাম,,
“ব্লক হচ্ছেন” লিখার সাথে সাথে সে একবস্তা মানে আমার যত পিক ছিলো সব দেয়া স্টার্ট করেছে। আমি তো ভয়ে কাপছিলাম।
– এই এই তোকে কি ব্ল্যাকমেইল করেছে?খারাপ এডিট করবে বলে?
– আরে না!
– তাহলে,,
– আমি বললাম “খারাপ এডিট করে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার খুব ইচ্ছা তাইনা তাহলে মনে রাখুন আমি বাংলাদেশ ২০১৮ নিউ মডেল হিসেবে পার্টিসিপ্যান্ট করছি। তাই কোনোও লাভ নেই”
– হাহাহা হাহাহাহা হোয়াট এ জোক!
– চুপ যা! সেও এভাবে হেসেছে..পুরো প্ল্যান ভেসে গিয়েছিলো।
– তারপর?
-সে বলল “যেটাতেও পার্টিসিপ্যান্ট করো না কেন..আজ থেকে তোমার মনে তোমার মস্তিষ্কে শুধু আমিই থাকবো”
আমিও বললাম “ইয়ার্কি পাইসেন যা বললেন সুস্থ মস্তিষ্কে বলেছেন তো? সিনিয়র বলে সেইদিন কিছু বলিনি কারণ আমার স্কুল এবং আমার প্যারেন্টস আমাকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে। ওইদিন আপনিই ধাক্কা দিয়েছিলেন কিছু বলিনি,, চোখ রাঙাইনি চোখ বড় করে তাকিয়ে ছিলাম,, আর আপনার সামনে না আসতে হয় তখন চলে যাচ্ছিলাম,, কিন্তু এত ইন্সাল্ট,, কে সহ্য করবে আমি তো একদমই না। আমার চোখের পানি মুল্য আমি আজ পর্যন্ত কারো থেকে চাইনি। বাট আপনি সেই মুল্যটাও দিতে পারবেন না। কারণ আপনারা হলেন পাষাণ।”
– বাহ দারুন বলেছিস,, তারপর কি বলল,,
– চুপ ছিলো ভাবলাম বেশিই কি বলে ফেলসি,, তারপর নিজেই লিখতে লাগলাম “আ’ম রিয়েলি সরি” কিন্তু সেন্ড করবো তার আগেই একটা কবিতা সেন্ড করল..
,Ba
জানিনা কি এমন ছিলো তোমার মাঝে
যা তোমার চোখের অশ্রু দ্বারা বুঝতে পেরেছি,
জানিনা কি এমন ছিলো তোমার সেই কালো মাথা বর্তি কেশ এ
চোখ নামছিলোই না সেই স্থান থেকে।
সেই কাজল মাখা চোখ দুটোতে হারিয়ে গিয়েছিলাম
সেই বড় বড় টানা চোখ দুটিতে ফেসে গিয়েছিলাম,
সেই কন্ঠস্বর এখনো শুনতে ইচ্ছে হয়,
তোমার সেই গোল চেহেরা বার বার মনে পড়ে চোখের পাতায়,
তোমার সেই কান্না #হৃদয়_স্পর্শ করে ফেলেছে অজান্তেই,
ভালোবেসে ফেলেছি ছোট্ট মায়াময়ী কে,
আকড়ে ধরতে চাই এই ছোট্ট চঞ্চল মায়াময়ী কে,
নিজের পাশে চাই সর্বক্ষণ এই মায়াময়ী কে,
হৃদয় স্পর্শ করতে চাই তোমার পারবো কি করতে?
——সাদিয়া নুর
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



এটা শুনেই আমি গলে যাই,, কিছুক্ষণ চুপ থাকতেই..সে বলে উঠে “এত চিন্তার কিছু নেই কাল গুলশান এত নম্বরে আসো মিট করব” তারপর কি গেলাম পরদিন সেই দিন সে একদম নরমাল ভাবে কথা বলেছে আমার সাথে ছেলেটা সেইদিন ভালোভাবে দেখলাম হাইটে ৫’১১ উজ্জ্বল শ্যামলা আমার মতই আর বডি ভালোই ছিলো কিন্তু তার রাগ বেশি ছিলো…সব বোঝার পর মতামত চাইসে আমি কিছুক্ষণ ভেবে তারপর হ্যা বললাম শুরু হলো রিলেশন সুন্দর ভাবেই ৭ টা মাস কাটলো তারপর শুরু হলো অবহেলা,, তার বলে চাকরিটা ভালো লাগছে না,, তাই সে ছেড়ে দিবে মেনে নিলাম কারণ এখনো তার মাস্টার্স কম্পলিট হয়নি,, তারপর যখব বেকার হলো একটা বিজনেস স্টার্ট করল এমনেও তার বাবা রাজনীতিতে ছিলো বলে খুব দ্রুত বিজনেস গ্রো হয়েছে,, নানা ধরনের ক্লাইন্ট এর সাথে মেলামেশা আমার জন্য তো একটা দুন ও টাইম নেই,, নিজেকে বুঝিয়েছি,, কিন্তু কয়দিন তার ফ্রেন্ডস দের মোটামুটি সবাইকে চিনতাম সবাই আমাকে ভাবি ডাকতো তদের থেকে একজন কে জিজ্ঞেস করলে বলেছে তাকে সবসময় একটা মেয়ে ক্লায়েন্ট এর সাথে দেখতো,, কিন্তু তারা ওটাকে সিরিয়াস কিছু ভাবতো,, আমি মানলাম না একদিন ওর বাসায় পৌছে যাই তখন আমাদের রিলেশনের ১৪ মাস,,
তাকে পেয়েই জড়িয়ে ধরি কিন্তু তার পেছন পেছন সেই মেয়েটাও আসে,, মেয়েটা জিজ্ঞেস করে “হু ইস দিস গার্ল আর তোমাকে জড়িয়ে কেন ধরল” ইরশাদ বলল “আমার বোন হয় তুমি এত ওভাররিয়েক্ট করছ কেন”

– হা হা,, তুই গেলি হাহাহা,,
– চুপ থাক,, শুন তারপর,, “কি বললা তুমি বোন হই তোমার,, তাহলে প্রেমের প্রস্তাব দেয়া ফিউচার প্ল্যান ১ বছর দুইমাস রিলেশন এসব কি” মেয়েটা বলল “কিহ এই মেয়ে কি সব বলছো সে আমার উডবি আমাদের বিয়ে ফিক্স হয়েছে” মাটি যেন নাই হয়ে গেছে মোবাইল থেকে সব প্রমাণ দিলাম তারপর কান্না কর করতে চলে আসলাম,, আজ পর্যন্ত সে আমার সাথে শুধু ছলনা করেছে মানতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো,, সে মেয়েটা বলে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে শুনেছিলাম,, অনলাইনে লগইন করলে শুধু ইরশাদের মেসেজ পেতাম কতরাত নির্ঘুম কাটিয়েছি,,একদিন সে একটা মেসেজ দেয়,,”যেইদিন ভুলতে পারবে আমাকে সেইদিন নিজ থেকে বানানো একটা কবিতা সেন্ড করিয়ো কেমন? এখন এই কবিতাটা তোমার জন্য সেই দিনের যেইদিন আমাদের রিলেশনের ছয়মাস হয়েছিলো আর তুমি হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছিলে,

তোমার ওই কাজলবিহীন চোখে
তবু লেপটে থাকা কাজলের মায়ায়
আমার থমকে গেছে সারাটা বিকেল,
চোখে ভাসে তোমার প্রতিচ্ছায়া।

তোমার ওই কাঞ্চাসোনা গায়ের নিখুঁত গড়ন,
হলুদরাঙা শাড়ি
কৃষ্ণচূড়ার রঙ মাখানো আগুন লাগা কোমল ঠোঁটের,মিষ্টি হাসি
অগোচরেই সর্বস্ব নিয়েছ কাড়ি।

তোমার ওই বনফুলের আবীর মাখা গা,
নূপুর পরা আলতারাঙা পা,
আগোচরেই দৃষ্টি হারালো সেথা।

হ্যাঁ, আমি বোধহয় প্রেমে পড়েছি,
আমি তোমার প্রেমেই পড়েছি।
আমি আমার নিজেকে কখন যেন, উজাড় করে-
তোমাতে বিলিয়ে দিয়েছি।
সত্যিই আমি তোমার, প্রেমে পড়েছি।

“তোমার প্রেমেই পড়েছি”

এই কবিতাটা পড়ে,,,খুব ক্ষোভ হলো,, লিখে ফেললাম তার জন্য কবিতা,, সাথে একটা মেসেজ…”এত নিখুঁত একটিং ভালোই করো যদি ভালোবাসতে তাহলে আরেক মেয়ের দিক চোখ যেত না,, যদি ভালোবাসতে সেইদিন বলতে না আমি তোমার বোন, যদি ভালোবাসতে তাহলে আমাকে এবং আমার ভালবাসা কে অবহেলা করতে না এই কবিতাটা তোমার জন্য,,

এই যে তুমি আমায় ধরে রাখতে পারলে না,
বুকের কাছে যত্নে রাখতে পারলে না,
এই ব্যর্থতা শুধু তোমার।
আমি তো কেবল তোমার আপন হতে চেয়েছিলাম।
তুমি আমায় অযত্নে অবহেলায় দূরে ঠেলে দিলে,
শেষবেলায় খোঁজ নিলে না,
মনের ব্যকুলতা জানতে চাইলে না,
কষ্টের দিনে দেখা দিলে না,
এই ব্যর্থতা শুধুই তোমার।
আমি তো সেদিনই জিতে গিয়েছিলাম যেদিন তোমায় ভালোবাসতে পেরেছি।
অভাবের এই দুনিয়ায় কজন ভালোবাসতে পারে বলো?
ভালোবাসা যে আজকাল দূর্লভ,তোমার মতোই দূর্লভ।

“অসমাপ্ত”

কিছুদিন কেটে গেলো তাকে ভুলতে শুরু করলাম আগের মত কষ্ট হতো না তোকে পেলাম নতুন করে জীবন সুন্দর লাগতে শুরু হলো তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ যেন স্বর্গের মত লাগছিলো কিন্তু তুই যেই দিন গায়েব হলি না সেই দিন ইরশাদের জন্য একটা কবিতা লিখলাম,,

“আমি বোধহয় আপনাকে ভুলে যাচ্ছি”
এখন আর মাঝ রাতে হুটহাট ঘুম ভেঙে যায় না, আপনাকে না পাওয়ার আর্তনাদে।

যখন তখন আপনাকে মনে করার যে,
একটা নামহীন অসুখ আছে সেটাও এখন আর নেই।

“সত্যিই বোধহয় আমি আপনাকে ভুলে যাচ্ছি”
আপনাকে ভুলতে না পারার যে কষ্টটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বুকেপিঠে এঁটে থাকতো,
সেই কষ্টটা এখন আর নেই।

এখন আর শূন্যতারা আমাকে গ্রাস করে না,
আপনি না থাকার অভাবে।

“আমি বোধহয় আপনাকে ভুলে যাচ্ছি”
আপনাকে মনে করে এখন আর,
হাসির আড়ালে মেঘরা কান্না করে না।

আপনি ফিরে আসবেনা আর, কিভাবে যেনো আমি মেনে নিয়েছি আমার একটুও কষ্ট হয় না।

কিন্তু আমি বুঝতে পারছি,
ভয়ঙ্কর কিছু একটা হতে যাচ্ছে আমার সাথে……
কারণ আপনাকে ভুলে যাওয়ার সাথে সাথে,
এটাও মনে হচ্ছে আমি বোধহীন হয়ে যাচ্ছি….
হৃৎপিন্ডটা ধীরে ধীরে হয়তো,
কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে……
তাই হয়তো আমি অসাড় হয়ে যাচ্ছি।

হৃৎপিন্ডটা আপনার কাছে
একটু একটু করে চলে যাচ্ছে,
আমি বুঝতে পারছি।
তার চলে যাওয়াটা….
আমি আটকাতে পারবো না
মনে হচ্ছে।

“তাই বোধহয় আমি আপনাকে ভুলে যাচ্ছি”
আর ভয়ঙ্কর কিছু একটা হচ্ছে,…..
যেটা আমি চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারবো না।

এটা লিখে আমি ভেঙে পড়েছিলাম খুজতে চাচ্ছিলাম তোকে কিন্তু পারছিলাম না। চারটা মাস পর যখন তোকে আবার পেলাম মনে হচ্ছে স্বর্গ পেয়ে গিয়েছিলাম আর জানিস তোকে এভাবে আজ সামনা সামনি পেয়ে যাবো কল্পনার বাহিরে ছিলো,, আমি তোকে কিছু বলতে চাই শুনবি?

আদনান সাদিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে বলে,,

– ভালোবাসি পাগলি খুব খুব ভালবাসি।
সাদিয়া আদনানের দিক ফিরে আদনানের মুখ মন্ডল নিজের হাতে নেয় আর বলে
– সত্যি কি?
– সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি পাগলি তুই কি আমাকে তোর হৃদয় স্পর্শ করতে দিবি? আমাকে তোর প্রেমিক হতে দিবি আমাকে তোর সর্বশেষ প্রেম হতে দিবি।
সাদিয়া কিছু বলে না শুধু মুখ উপর নিচ নাড়িয়ে হ্যা বলে,,
আদনান আর অপেক্ষা করে না সাদিয়ার কোপালে উষ্ণ চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে আর সাদিয়া পরম সুখে চোখ বন্ধ করে আদনানে হৃদপিন্ডের আওয়াজ শুনছে।

– আদু..
– হু,,
– একটা কবিতা শোনায় তোমাকে
– বাহ তুই থেকে তুমি??.
– হুম,,
– এখন কি এমন কবিতা মনে পড়ল তোর,,
– শুনবা?
– বল..

“জানো,
আজ আমার পুরোটা জুড়ে শুধু তোমার অস্তিত্ব।
আমার ভেতরের আনাচে কানাচে তোমায় নিয়ে নিত্য মিছিল হয়।
সেই মিছিলের একটাই স্লোগান,
ভালোবাসি ভালোবাসি।

ভালবাসতে ভালোলাগে তাই ভালোবাসি।
তুমি ভালোবাসো বলো তাই ভালোবাসি।
ভালো না বেসে থাকতে পারিনা, তাই ভালোবাসি।

এইযে এত ভালবাসা,
রক্তজবার মতো লাল ভালোবাসা,
আকাশের মতো গাঢ় নীল ভালোবাসা,
ফুচকার মতো টক ভালোবাসা,
সবটা শুধু তোমার জন্য।

আমার শাড়ির প্রতিটা ভাঁজে তোমার নামে ভালোবাসা লেখা।
আমার টিপের প্রতিটা রঙে তোমার নামে ভালোবাসা লেখা।

এই যে আমার সকাল,বিকাল,রাত,দিন সবজুড়ে ভালবাসা,
বিশ্বাস করো প্রিয়,
কিচ্ছু চাইনা আমি ভালোবাসা ছাড়া।
আমার ভালোবাসা নিও,
আর তোমার ভালোবাসার ছায়াতলে আমায় জিরোতে দিও।

– দিবো।

##############সমাপ্ত###############

মতামত দিবেন দয়া করে।

হৃদয় স্পর্শ পর্ব_২

0

হৃদয় স্পর্শ পর্ব_২
#লেখনীতে_সাদিয়া_নুর

কুয়াশাতে ভরা আকাশ এবং চারপাশ। কি ঠান্ডা। ওরনাটা ভালো ভাবে জড়িয়েও শান্তি নেই। এতরাত ভয় ভয় ভাবটাও জেগে আসছে। মনের মধ্যে সন্দেহ উঁকি দিচ্ছে এত রাতে কেন সে ঢাকা এলো এবং আমার বাসার ঠিকানাও কিভাবে জানলো? উফফ চরম মাথা ব্যাথা। কিন্তু তাকে নিজের চোখের সামনে দেখার আকুলতা যে আরো বেশি। এই ভেবে সাদিয়া চারপাশ চোখ বুলাচ্ছে। খুব বড় ছাদ। এগারো তলা বিল্ডিং। থাকে ৮ তলা। লিফটের মাধ্যমে দ্রুত আশা যেত কিন্তু এত রাতে লিফট টাও বন্ধ। চালু থাকলেও সমস্যা মনে করত চোর এসেছে। সাদিয়া নিজের অজান্তে হেসে ফেলে। এই হাসিতে একজন নড়ে চড়ে উঠে আর বলে ফেলে,,,

– কে ওখানে, সাদিয়া তুই?

আদনানের গলার আওয়াজ শুনে সাদিয়া থেমে যায়। রীতিমতো ঘামছে। এতক্ষণ ঠান্ডায় মরে যাচ্ছিলো আর এখন গরম হাওয়া যেন বয়ে গেছে বুকের মাঝে। কি অসাধারণ অনুভূতি! ইশ কিভাবে সামনা সামনি হবে। কিভাবে কথা বলবে? নাহ নাহ পারবে না। সাদিয়া উলটো পাশে হাটা ধরলেই আদনান ফ্ল্যাশ লাইট অন করে সামনে আসে।

চোখের সামনে এক সদ্য ঘুমকুমারি রানী কে দেখার সৌভাগ্য কার কার হয়। আদনানের হয়েছে। ইশ মনের মাঝে কেউ লোহা দিয়ে পেটাচ্ছে এমন অনুভূতি। সাদিয়ার থেমে যাওয়াতে আদনান এক পা এক পা করে সাদিয়ার সামনে আসে। চোখ মুখ ফোলা ঘুমের জন্য নাকি কান্নার জন্য সেটা ধরা মুশকিল। কিন্তু আদনানের মন বলছে তার মেসেজ পড়ে এমন হাল হয়েছে এই মেয়েটার। কত তাড়াতাড়ি কান্না করে দেয় এই মেয়েটি। পারবে তো আজ বলতে সব? এতদিনের জমানো অনুভুতি ব্যক্ত করতে পারবে কি? নাকি আবারও হেরে যাবে যেভাবে প্রথমবার হারিয়েছিলো একটা মেয়ের কারণে। দুইজন কিছুই বলছেনা,, কখন থেকে সাদিয়া নোখ ভাঙার চেস্টা করেই যাচ্ছে তো যাচ্ছে আর আদনান দেখেই যাচ্ছে কর্মকান্ড। চুল গুলোও বাধেনি। জটলেগে যাচ্ছে বারবার ওরনা ঠিক করার কারণে। আদনান প্রথমেই শুরু করে,,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



– ইজি হো,, আমি তোর বর না যে এত আনকম্ফোর্ট হতে হবে। কথা আছে তাই এসেছি এতদুর। নয়ত আসতাম না।
– বর না কিন্তু পর তো হয়ে গেছেন৷ আর্মিতে চাকরি করেন। ছ্যাকা খেয়েছেন। আপনি তো অনেক বড় মানুষ হয়ে গেছেন। আর বয়সের দিক দিয়েও…..

আর বলতে পারে না,, আদনান পাশ থেকে একটা লাঠি উঠিয়ে নিয়ে শিক্ষকের মত আচরণ করা শুরু করে দিয়েছে,, সাদিয়া লাঠি দেখে ভয়ে ‘আ’ জোরে বলে ফেলে,, আর চিল্লিয়ে বলে,,

– আরে আরে রাগ করছিস কেন…
– কি বললি বয়স,, হ্যা তুই পুচকি,, হ্যা তুই ছোট বাচ্চা,,
– তো বড় কে বড় না বলে কি এলিয়েন বলমু।

এটা না বলতেই মার পড়লো পিঠে সাদিয়ার।

– আহ,, লাগছে তো আদনান। যাহ আমি চলে যামু,,
– যেতে পারবি না।
– এহ,, মামা বাড়ীর আবদার মনে হচ্ছে,, ভাগ এখান থেকে,, আমার ঘুম নষ্ট করবি, কান্না করাবি, এত রাতে এত কুয়াশার মধ্যে ছাদে ডাকবি ঠ্যাকা পড়সে তোর কাছে থাকার আর মাইর খাওয়ার?
– কান্না করেছিস মানে, আর কিসের জন্য কান্না করেছিস?

আদনান জানে কেন কান্না করেছে কিন্তু সে সাদিয়ার মুখ থেকে জানতে চায়।

– আসলে, আসলে,
– হ্যা আসলে নকলে বল জলদি,,
– ওই তো,চারমাস পর মেসেজের উত্তর দিলি, আর যেই ছ্যাকা খেয়েছিস না সেই কাহিনি শুনে অজান্তেই কান্না করে দিয়েছিলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু নাহ।
– সত্যি আর কিছু না।
– আর জানিস আমি এই ছ্যাকা খেয়ে না বড় অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
– যেমন?
– আয় চল এদিকে বসি…
– ইশ, নাহ বাবা, খুব ঠান্ডা, আর রেলিং গুলো বরফের মত ঠান্ডা বসতে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
– আচ্ছা তোর বসতে হবে না আমি বসমু তুই দাড়ায় দাড়ায় শুনবি,,
– আচ্ছা,

দুইজনে হেটে হেটে ছাদের দক্ষিন পাশের দিক চলে যায় সেখান থেকে সিড়ির দিক উল্টো। তাই কেউ আসলে তদের দিক চোখও পড়বে না।

– তো বল, কি কি অভিজ্ঞতা লাভ হলো,,
– তুই তো আগের থেকেই জানোস, আমি আগে কখনো রিলেশনে যাইনি,,এইবার ইভা কে ভালোবেসে আমার অভিজ্ঞতা পূরণ হলো,,সব ফ্রেন্ডস দের থেকে তাদের ছ্যাকা খাওয়ার কাহিনি শুনতাম আর বেশ মজাও পেতাম কিন্তু এইবার নিজে সেই কষ্ট টা ফিল করেছি, দম বন্ধ হয়ে আসতো যখনি ইভা আমাকে পিক পাঠাতো কিভাবে সেই জানোয়ারটা মেরেছে। কতই না কষ্ট দিচ্ছে শুধু আমার জন্য। কিন্তু এখন নিজেকে নিজে বলি সে এখন পর।

সাদিয়া কিভবে নিজের চোখের পানি আটকাবে কিভাবে। সে তো নিজেই ইরশাদ এর ভাবনায় ডুবে যাচ্ছে।

– জানিস আদনান! তোর মত আমারও এমন একটা সময় পার হয়েছিলো। কিন্তু তখন আমি টিনেজার ছিলাম। তুই তো এডাল্ট হয়ে এসবে জড়াইসিস। কিন্তু আমি জানি টিনেজ বয়সের প্রেমের পর যখন ছেড়ে চলে যায় তার কষ্ট। তুই যখন আমাকে মেসেজ গুলো দিয়েছিলি না প্রত্যেক টা লাইনে আমি ইরশাদ কে মনে করে কেঁদেছিলাম।
কত জঘন্য দিন গুলি ছিলো,,

সাদিয়া আনমনে কথাগুলো বলতে বলতে কখন যে আদনানের বসার পা গুলোর মাঝে চলে যায় বুঝতেই পারেনি,, আদনানের শরীরে ভর দিয়ে মুখটা কে সোজা দেয়ালের দিক রেখে কথা বলছে আর আদনান সাদিয়ার মাথায় নিজের থুতনি লাগিয়ে রেখেছে।

– ইরশাদ,, আগে তো কোনোদিন বলিস নি, কোন ক্লাসে পড়ত?
– অনার্স কম্পলিট তার। এসএসসি শেষ তখন আমার। স্কুলে একটা পার্টি ছিলো যেখানে আমাদের ক্লাসের সবাই ইনভাইটেড ছিলো সাথে আরো সাত আট বছর আগের স্টুডেন্টস রাও ইনভাইটেড ছিলো,, খুব ইঞ্জয় করছিলাম তখন একজনের সাথে ধাক্কা লাগে, সিনেমার মত ছিলো না যে সে আমাকে উঠিয়ে সরি বলবে বা ব্যথা পেয়েছো নাকি জিজ্ঞেস করবে…সে সরাসরি আমাকে ধমক দিয়ে বলে,,
“এই মেয়ে চোখ কোই তোমার,,, দেখে হাটতে পারোনা।”
এমন বকা মনে হয় আমি সাত জন্মেও শুনিনি,, কান্নাতে চোখ গুলো টলমল করছিলো,আমার ফ্রেন্ডস রাও পর্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলো,,সম্পুর্ণ দোষ কিন্তু তারই ছিলো কিন্তু ক্ষমা চেয়েছিলাম আমি,, সেইদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যাই হোক এই বেটার সামনে আসবো না। কিন্তু কে জানতো আগামি দেড় টা বছর আমাদের রিলেশন হবে,,
– নেক্সট কি হয়েছিলো?

সাদিয়া নিজের চোখের কোনা মুছে আবার বলতে শুরু করে,,

– কি আর হবে সেই দিনই স্কুলের ক্যান্টিনে ৫০ টাকার ফুচকা অর্ডার দিচ্ছিলাম ৫ জনে খাবো বলে৷ ফুচকা আশা মাত্রই সে চারটা প্লেট দখল করে আমার দিক তাকিয়ে বলে,,
“সেই ঘটনার শাস্তি সরূপ এই চারটা প্লেট ফুচকা আমার হয়ে গেলো”
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিলো কিন্তু অনেক সিনিয়র বলে চুপচাপ রাগ হজম করে বিল নতুন করে পে করে ফ্রেন্ডস দের ট্রিট দিয়েছিলাম।

– তুই কি তখন কালো ছিলি,,
– এটা কেমন প্রশ্ন?
– নাহ ভাবছিলাম ছেলেটা তোকে একদেখাতে প্রেমে পড়েনি কেন?
– তুই পড়েছিস? যখন আমাদের ফ্রেন্ডশীপের পর আমি তোকে পিক দিয়েছিলাম?
-আচ্ছা বাদদে তোর আওয়াজ শুনেও প্রেমে পড়েনি?

এইবার সাদিয়ার রাগ উঠে সে আদনানের শরীর থেকে ভর সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে মুখোমুখি হয়ে তাকায় আদনানের এতক্ষন সে আদনানের মুখোমুখি ছিলো না।

– তুই প্রেমে পড়েছিলি যখন আমি তোকে ভয়েজ মেসেজ পাঠাতাম?
আদনান এইবার বলে উঠে,,
-নেক্সট কি হয়েছে আগে সেটা বল,,
– রাগে দুঃখে দ্রুত অনুষ্ঠান থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলাম,, তখন দুপুর ১ টা বাজে,, আর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিলো ১২ঃ১৫ নাগাদ আর আমি গিয়েছিলাম ১১ঃ৩০ দিক। মেডাম বার বার পেছন থেকে ডাকছিলো কেন গেট দিয়ে বের হচ্ছিলাম। তখন ম্যাম বলে ইরশাদ কে পাঠায় আমাকে ডেকে আনতে,, পেছন থেকে আমাকে চেনা যাচ্ছিলো না বলে সে তাড়াতাড়ি ছুটে বলে,,
“এক্সকিউজ মি,, এই যে মিস আপনার ম্যাম ডেকেছে,,”
পিছন ফিরে দেখি সেই ছেলেটা আরো রাগ উঠলো কিন্তু তখনো কিছু বললাম না কিন্তু এরপর যা করল তাতে রাগে দুঃখে কান্নাই করে দিয়েছিলাম,, আর সেই কান্নার রিজন ছিলো,,
“ওহ তো আপনি সেই মিস,, জানেন আপনি কতটা সাইকো? আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন,, যখন আমি আপনাকে পানিশ করলাম তখন চোখ রাঙানি দিয়েছেন আর এখন ম্যাম আমাকে বলল আপনাকে ডেকে আনতে,এত অবাধ্য এত অসাবধান কিভাবে?”
তার কথাগুলো হজম করতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো,প্রচুর কষ্ট। কিন্তু আমি জীবনেও কারো সামনে কান্না করতাম না কারণ কান্না মানুষের দুর্বলতা। আর মেয়েদের দুর্বলতা দেখা দিলে সামনের মানুষটা শক্তিশালী হয়ে যায়।
– তারপর কিভাবে কান্না গিলেছিস?
– তেমন কিছু করতে হয়নি সে এসব বলে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিলো আর আমি “সরি” নামক একটা ছোট্ট ওয়ার্ড জোরে বলে দৌড় দিয়েছিলাম স্কুলের ভিতর, দৌড়ে সোজা তিনতলা ছাদে সেখানে গিয়ে এককোনায় কান্না তে ভেঙে পড়েছিলাম। ফ্রেন্ডস দের থেকে ইন্সাল্ট ঠিক আছে,, ফ্যামিলি সদস্য থেকে ইন্সাল্ট ঠিক আছে কিন্তু বাহিরের মানুষ যাকে আজ পর্যন্ত চিনতাম না সে ইন্সাল্ট করবে সয্য আমি করতে পারবো না।
কান্না করতে করতে হিচকি উঠে গিয়েছিল কিন্তু কান্না থামছিলো না,, পাশ থেকে একজন পানির বতল পাস করে ভেবেছিলাম রুহি এসেছে তাই বলে ফেললাম “থ্যাংক্স দোস্ট সবসময় পাশে থাকিস আর কাউকে বলবি না আমি কান্না করেছি আর রুমাল দে চোখ ফুলে গেসে না দেখ তো লাল হয়ে আছে কিনা?” এসব আমি অন্যদিকে ফিরে চোখে মুখে পানি দিচ্ছিলাম আর বলছিলাম…কিন্তু পাশে রুহির বদলে ইরশাদ ছিলো কে জানতো,, চুপ করে এক ধ্যান এ আমার কথা গুলো শুনছিলো আর আমায় দেখছিলো,,,
পাশ ফিরে যখন তাকে দেখলাম তখন কান্না না রাগ আসছিলো,, কিন্তু সে কিছু না বলে রুমাল রেখে নিচে চলে যায়,,,আর আমি হা করে তাকিয়ে থাকি সে কি আমার কান্নার ফুল এপিসোড দেখেছে আর কি ভাবলো আমার ব্যাপারে আরো নিচ মেয়ে?

চলবে?

হৃদয়_স্পর্শ পর্ব_১

0

হৃদয়_স্পর্শ পর্ব_১
#লেখা_সাদিয়া_নুর

– এই ছেলে তুই এত বদলাইয়া গেসোস কেন? একদিন না দুইদিন না তিনদিন না,, ৪ টা মাস তুই যোগাযোগ রাখোস নাই আমার সাথে। যেই ছেলে আমাকে এত জ্বালায় সেকিনা…আমি মানি না। আজ তুই আমার মেসেজের রিপ্লাই না দিলে আমি কিন্তু বগুড়া চলে যাবো আর তোর বাড়িতে গিয়ে তোরে মারমু।

চারঘন্টা পর★★

আনিশাঃ কি হইসে সাদিয়া তুই ভালো মত কথা বলছিস না কেন হু হা,, কি শুরু করছিস।
সাদিয়াঃ ভালো লাগছে না বাদদে।
আনিশাঃ বলবি তো।
সাদিয়াঃএকটা ছেলে রে,,
আনিশাঃ প্রেম?
সাদিয়াঃ নাহ, বেস্টফ্রেন্ড বলতে পারিস,, এখনো মনে আছে,, চারটা মাস আগে মোট ৭ মাসের ফ্রেন্ডশিপ, এত জ্বালাতো, এত পচাতো, কি দুষ্টামি না করতো আমার সাথে। বাট,, এক পলকে গায়েব,, চার মাসের শুরুতে মেসেজ সিন করে হু হা করে চলে যেত। ভাবতাম কিছু সমস্যা হয়েছে, কিন্তু তিনমাসের শুরুর দিকে একদমই গায়েব। আমি প্রতিদিন মেসেজ দিতাম এই ভরসায় যে সে একবার আমার মেসেজ দেখলে রিপ্লাই করবে। কিন্তু দের মাস হয়ে গেছে তার আইডি ডিয়েক্টিভেট। কাল আবার অন করেছে, তাই রিপ্লাই দিয়েছি সকালে বাট এখনো এক্টিভ আছে কিন্তু নো সিন।
আনিশাঃ নাম কি ছেলেটার?
সাদিয়াঃ আদনান। আর্মি তে চাকরি করে।
আনিশাঃ বাট তুই তো মাত্র ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে। এত কম বয়সের মেয়ের সাথে সে কেনোই বা…
সাদিয়াঃ চাকরি তো ২১ দিন আগে থেকে স্টার্ট করেছে যেই দিন সে গায়েব হয়েছে।
আনিশাঃ ওহ. এখন কি করে জানবি কি হয়েছে না হয়েছে।
সাদিয়াঃ জানি না রে দোস্ট। বাট আমার মন বলছে সে এমনে এমনে যোগাযোগ অফ করেনি কিছু একটা কারণে সে যোগাযোগ অফ করেছে। এই চারটা মাস খুব কষ্টে ছিলাম।
আনিশাঃ ভালোবাসিস?
সাদিয়াঃ(,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,)

★★★-ঃরাত ৩ টাঃ-★★★

টিংটুং মেসেজের আওয়াজ আর ভাইব্রেটের কারণে সাদিয়ার ঘুম নষ্ট হয়।
সাদিয়া হাত দিয়ে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে টাইম দেখে। ৩ টা ১২ বাজে। সাদিয়ার মাথা নষ্ট হয় কেমনে মানুষ এতরাতে জ্বালাতে পারে??
সাদিয়া উঠে বসে আর পানি খায়। মোবাইল আনলক করে দেখে আদনানের ১৫ টা মেসেজ…ইয়া বড় বড়। সাদিয়া পানি খাওয়ার সময় অর্ধেক পানি নিজের উপর ফেলে। দ্রুত নিজেকে ঠিক করে

আদনানঃ- জানিস সাদু,, ভালোবাসা কি? হয়ত জানবি না বয়স হয়নি তোর। কিন্তু আজকে তোকে একটা কাহিনি শুনাবো যেই কাহিনি টা আমার সাথে এই চারটা মাসে হয়েছে। প্রথমত তোর সাথে বিষয় টা শেয়ার করতাম। কিন্তু ইতিমধ্যে আরেকজনকে যে অন্ধ বিশ্বাস করতাম।

সাদিয়ার চোখের পানি স্ক্রিনে গিয়ে পড়ে….

আদনানঃ কিছুটা এমন ছিলো আমাদের ভালোবাসা…ইমাজিন কর যে তোর সামনে ঘটছে…

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন




ইভাঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,, আপনার আইডির যত পোস্ট দেন সব আমার ভালো লাগে আর আপনার পিক গুলোও জোস,, কিসের চাকরি করেন?
আদনানঃ ধন্যবাদ,, আমি চাকরি করিনা এপ্লাই করেছি আর্মি তে। একবার কনফার্মেশন এসে যাক তারপর ট্রেনিং এ চলে যাবো।
ইভাঃ ওহ আচ্ছা,, আমার নাম ইভা, আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে আছি ইংরেজী বিষয় নিয়ে।
আদনানঃ ভালো তো….কোথা থেকে পড়াশোনা করছেন?
ইভাঃ বগুড়া ইউনিভার্সিটি থেকেই। আপনি কোথায় থাকেন?
আদনানঃ আমিও বগুড়ায়।



আদনানঃ এভাবে দিন কাটছিলো তোর রিপ্লাই কম করতাম মোট মিলিয়ে শুধু ইভাই আমার মস্তিষ্কে ঘুরপাক করছিলো মনে বসে গিয়েছিলো,,,

সাদিয়ার চোখ থেকে আবারও দুইফোটা স্ক্রিনে পড়ে…

আদনানঃ তারই মধ্যে আমি দ্রুত কনফার্মেশন লেটার পেয়ে যাই আর সেই খবর তোকে জানাই প্রথম। তারপর ইভাকে মোট মিলিয়ে আমি অনেক খুশি ছিলাম। সেই দিনের রাতে সে আমাকে তার মনের কথা জানায় আমিও তাকে জানাই..শুরু হয় আর্মি ক্যাম্পে ইভার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম আলাপ,, সব কিছু ঠিক চলছিলো তারই মধ্যে সে আমার সাথে দেখা করতে আসে সারপ্রাইজ পেয়েছিলাম বাট অনেক খুশি জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার নানা কথা বলি…কিন্তু মেয়েটা এমন ছিলো যে এক কথায়…..

সাদিয়া বুঝতে পেরেছে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে তাই আদনান কথার মাঝেও চোখের পানি মুছেছে। সাদয়া নিজের ও চোখে পানি মুছে…

আদনানঃ এর পরের দুইটা মাস স্বপ্নের মত চলে যায় কিন্তু তারপর যেই ছুটি পেলাম আর ইভা কে পাচ্ছিলাম না,, হটাৎ একটা মেসেজ পাই..

ইভাঃ আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে,, আমাকে ভুলে যাও।

আদনানঃ কোনো মতে দ্রুত তার ঠিকানা বের করে বর পক্ষের ছেলেকে মেনেজ করি কিন্তু সে ইভার ফ্যামিলিকে নানা ভাবে অপমান করে। হয়ে গেলাম খারাপ ইভা আমাকে নানা ভাবে কথা শোনাচ্ছিলো দেন তার বিয়ে হয়ে যায় সেই লোকটির সাথে,,, তার ১০ দিন বাদ ইভা অনেক গুলো ছবি পাঠায় যেখানে ওকে মারা হচ্ছে নানা ভাবে মানষিক অত্যাচার, ইভা আমাকে বলছে আমার কারণে নাকি এসব হয়েছে। পারছি না রে সাদু,, ওইদিনের পর ডিপ্রেশনে চলে যাই নিজেকে খুব দোষী লাগছিলো রে। কিন্তু কিছুদিন সেই পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আবার তোর কাছে ফিরে আসতে চাই। আসতে দিবি।

সাদিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ করে,,

সাদিয়াঃ কো কোই তুই এখন।
আদনানঃ টাইপিং…….
সাদিয়া বালিশে মাথা রেখে চোখ থেকে পানি ফেলে ভাবতে থাকে,,

একটা মেয়ে একটা ছেলের জীবন নষ্ট করতে পারে সাথে একটা মেয়ে যেই ছেলের জীবন তছনছ সেটাকে গুছিয়েও দিতে পারে। আদনানের জীবনে কি সেই মেয়েটা আসবে। পরিবর্তন হতে হবে আদনান কে। ওর জীবন পরিবর্তন হবে। কিন্তু সেই মেয়েটা….
টুংটুং আওয়াজে আবার ও সাদিয়ার ধ্যান ভাঙে…
হাতে নিয়ে ফোনে দেখে,,,

আদনানঃ নিচে আয় বা ছাদে আয়।
সাদিয়া কিছুক্ষণ স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে মেসেজ লিখে,,

সাদিয়াঃ ছাদে।
সাদিয়া একটা শাল গায়ে দিয়ে ফোনের লাইট অন করে আস্তে ধিরে লিভিং রুমে যায় সবদিক ভালো ভাবে তাকিয়ে তারপর আস্তে করে দরজার তালা খুলে বেড়িয়ে আবার তালা লাগিয়ে উপরে উঠতে থাকে। বুক ধুকপুক করছে হাত পা কাপছে তাও সে চায় আদনান কে সামনা সামনি…..

.
.
আরো দুই পর্বের পর সমাপ্তি। ভালো লাগলে মতামত দিবেন প্লিজ?।

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২৬

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৬
#লেখিকাTasneem Tushar

কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছে তিয়াশা। কারো ডাকেই সারা দিচ্ছেনা। একবার ধরফড়িয়ে উঠে ঘুমের ঘোরে এদিক সেদিক তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে সে। আবার ডাক দিলে, তিয়াশা ঘুমের ঘোরেই বলে উঠে,

“আম্মু, আরেকটু ঘুমাই। আজকে তো উইকেন্ড।”

“আপি, আম্মু নাতো। আমি.. পৌষী। উঠো এখন।”

“পৌষী একদম জ্বালাবি নাতো। ঘুমোতে দে।”

বারংবার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে পৌষী। প্যাট্রিসিয়ার ডাকেও কোনো কাজ হয়নি। এই মেয়ে আজকে বোধহয় উঠবেনা। আজকের সারাদিনের প্ল্যান পন্ড করে ছাড়বে। এদিকে সকাল প্রায় ১০টা। সবাই অপেক্ষা করছে একসাথে সকালের নাস্তা করবে বলে। বোধহয় অনেক বেশি ধকল গিয়েছে গতকাল তার উপর দিয়ে, তাই উঠতে পারছেনা।

একটু পরেই একটা বাজ খাই গলার আওয়াজে তিয়াশা ধরাম করে উঠে বসে চোখ কচলাতে থাকে। আসে পাশে তাকিয়ে দেখে সে বাংক বেডের দোতলায় শুয়ে আছে, পরিবেশটাও অচেনা লাগছে। বোধহয় স্বপ্নই দেখছি এই ভেবে যেই শুতে নিবে, ঠিক তখনই একটি হাত তিয়াশাকে ধরে ফেলে।

তিয়াশা এবার চোখ খুলে অবাক হয়ে বলে উঠে,

“আদিল… আপনি? উফ, আপনি কি আমার স্বপ্নেও হানা দিবেন?”

“হুম তাতো দিবই। কিন্তু আপাতত স্বপ্ন নয়, সত্যি। এবার উঠুন। সবাই অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। না উঠলে এবার আপনাকে তুলে নিয়ে সুইমিং পুলে ফেলবো।”

তিয়াশা তাকিয়ে দেখে পৌষী মিটিমিটি করে হাসছে প্যাট্রিসিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে। নাহ এটা কিভাবে সম্ভব একই বাসায় প্যাট্রিসিয়া পৌষী আবার আদিল ও, এটা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ভেবে আবার বালিশে মাথা দিতে গেলেই তার হাতে আবার টান পরে। এবার তিয়াশা ভীষণ বিরক্ত হয়, উঠে বলে

“উফ কি শুরু হলো? একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারছিনা।”

রাগ করে বেড থেকে নামতে নিয়ে দেখে বেডটা অনেক উঁচু। তিয়াশা এবার চিন্তায় পরে যায়। চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখতে দেখতে আদিলের দিকে চোখ পরতেই তার গতকালের সব ঘটনা মনে পড়ে যায়।

ভ্রু কুঁচকে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

” একটু সরুন । নিচে নামবো।”

আদিল সরে দাঁড়ালে বাংক বেডের মই বেয়ে নীচে নামতে যেয়ে হটাৎ পা পিছলে তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলে আদিল ধরে ফেলে তাকে। তিয়াশা নিজেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে আদিলের কোলে আবিষ্কার করে ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়। একটু ধাতস্থ হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

“ধন্যবাদ।”

“কেন?”

তিয়াশার ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি দেখা দেয়।

“জানিনা।”

বলেই তিয়াশা দ্রুত তার রুম প্রস্থান করে। আর পেছনে আদিল বুকে হাত দিয়ে গুনগুন করে গান ধরে,

“ভোলিসি সুরাত
আয় হায়ে।

ভোলিসি সুরাত, আখমে মাস্তি
দূর খারি শারমায়ে

আয় হায়ে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



এক ঝালাক দ্বিখলায়ে কাভি
কাভি আচাল মে ছুপ যায়ে।”

তিয়াশা যেতে যেতে সবটাই শুনে। আদিল জানালার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তিয়াশার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গুনগুন করছে। তিয়াশা এক ঝলক পেছনে তাকায় আদিলকে দেখার জন্য। তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি, কিন্তু চাহনিতে অভিমান গতকালের ঘটনার জন্য।

*

কটেজেই রান্নার ব্যবস্থা রয়েছে। কটেজ তো নয় যেন বিলাস বহুল একটা বাসা। সবই রয়েছে এতে।

খাবার টেবিলে বসেছে সবাই। তিয়াশা রান্নাঘরে ঢুঁ মেরে দেখতে পায়, আদনান সকালের নাস্তা তৈরি করছে সবার জন্য। আসলে আদনানের উদ্দেশ্য তিয়াশাকে রান্না করে খাওয়ানো। তিয়াশাকে দেখতে পেয়েই আদনান বলে উঠে,

“শুভ সকাল হে জন্মদিনের কন্যা।”

তিয়াশা হেসে দেয়। পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

“শুভ সকাল।”

একটু উকি দিয়ে বলে,

“আরে করছেন কি? রান্না পারেন আপনি? দিন আমি করি।”

“কেন নয়?”

“না…মানে রান্না তো মেয়ে…”

আদনান থামিয়ে দিয়ে বলে,

“উহু, রান্না একটি কাজ অথবা শিল্প বলতে পার। এই কাজের কোনো লিঙ্গ ভেদাভেদ নেই।”

“কিভাবে? সারাজীবন বাঙালির মুখে এটা শুনে বড় হলাম, রান্না, ঘর সংসার সব মেয়েদের কাজ।”

“মজার ব্যাপার কি জানো? আমার মা আমাদের তিনভাই বোনকে সমানভাবে ঘর সংসার সহ বাইরের সব কাজ শিখিয়েছে। কোনো কাজে ভেদাভেদ শেখায়নি। কারণ কখনো যেন কারও উপরে নির্ভরশীল হতে না হয়।”

“আন্টি কিন্তু ভীষণ স্মার্ট।”

“আমার আম্মু ভুক্তভোগী ও।”

“বুঝলাম না।”

“শোনো। এখন তো মেয়েরাও বাইরের কাজ করছে, পাশাপাশি ঘর সামলাচ্ছে। একটা মেয়ে যদি এত কিছু পারে তাহলে আমরা পারবোনা কেন?একটা মেয়ে যদি আত্মনির্ভরশীল হয়ে ছেলেদের সাথে তাল মিলিয়ে বাইরে কাজ করে রোজগার করে, তাহলে আমরা ছেলেরা কেন ঘরের কাজে সহায়তা করতে পারবোনা? আমরা এদিক থেকে পিছিয়ে গেলাম না? ছেলেরা নির্ভরশীল হয়ে গেলো না?”

তিয়াশা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আসলেই তো এভাবে তো কোনদিন ভেবে দেখেনি।

আদনান ডিম পোচ করতে করতে বলতে থাকে,

“অন্যভাবে বললে ছেলেরা মেয়েদের উপর বোঝা স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। আমার আম্মু চেয়েছে তার প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে সব কিছুতে স্বনির্ভর হোক, যেন কোনো কিছুতেই কারো উপর নির্ভরশীল হতে না হয়। না আর্থিক ভাবে, না ঘর সংসারের কাজে।”

“আন্টিকে সালাম জানাই।”

আদনান হেসে দিয়ে বলে,

“অফকোর্স। মাই মম ইস দা বেস্ট মম ইন দিস ওয়ার্ল্ড।”

আদিল পেছন থেকে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো সে এসে কথায় যোগ দিয়ে বলে,

“আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তুই মিস করেছিস আদনান।”

“কি সেটা ভাইয়া?”

“এই যে প্রত্যেকটা ছেলে ও মেয়েদের আল্লাহ নিজস্ব কিছু গুণাবলী দিয়ে দিয়েছেন। যেমন ধর, মেয়েদের বেবি হয়, ইনবিল্ট ঘর পরিচালনার বৈশিষ্ট আছে। আবার অন্যদিকে ছেলেদের শারীরিক শক্তি বেশি যাতে কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। তাই বলে এই বৈশিষ্ট গুলোর জন্য এই জগৎ সংসারের কাজগুলো দুটো নির্দিষ্ট ধারায় ফেলে দেয়াটা ঠিক নয়। বরং ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে আমরা মানুষ আর জীবনে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের দৈনন্দিন অনেক কাজ করতে হবে। তাই মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত কেউ কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্বনির্ভর হওয়া এবং একজন আরেকজনের কাজের পরিপূরক হওয়া। একজন আরেকজনকে কাজে সাহায্য করা। বোঝা হওয়া নয়।”

তিয়াশা যে আদিলের উপর অভিমান করে আছে সেটা বেমালুম ভুলে গিয়ে বলে উঠে,

“কিন্তু এ নিয়ে তো অনেক মতবিরোধ আছে।”

আদিল বলে উঠে,

“মানুষের মূর্খতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা পরিবর্তন না হলে এই মতবিরোধ কোনোদিন যাবেনা।”

আদনান তাড়া দিয়ে বলে উঠে,

“ভাইরে আজকে থাম। অনেক গুরুগম্ভীর কথা হয়েছে। আমার খাবার ঠান্ডা হয়ে গেল। দয়া করে মহারানীকে নিয়ে খেতে চল।”

চলবে…

আগের পর্বের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২৫

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৫
Tasneem Tushar

তিয়াশা প্রাণপনে হাত পা ছুড়ছে। মনে হচ্ছে কেউ টেনে হিঁচড়ে তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। এবার বোধহয় জমেই টেনে নিবে। এ যাত্রায় তিয়াশা বোধ হয় আর বেঁচে বাড়ি ফিরবেনা। কেউ তাকে বাঁচাতেও আসবেনা। একেবারেই নিরাশ হয়ে যায় তিয়াশা।

হঠাৎ চোখে একরাশ আলোর ঝলকানি এসে লাগে। হঠাৎ এত আলোয় চোখ ঝলসে যাওয়ার অবস্থা, সব কিছু ঝাপসা লাগছে। আলো ঠেকাতে চোখের সামনে আপনা আপনি তার হাতটা চলে যায়, তখন তিয়াশা বুঝতে পারে যে তার চোখের সেই বাঁধন আর নেই, মুখেও কারো হাত চেপে ধরে নেই। মনের মধ্যে বাঁচার একটা আশা জেগে ওঠে তিয়াশার, অমনি অন্ধের মতো সামনের দিকে দৌড় দেয়। তার মনে এখন একটাই চিন্তা, যেভাবেই হোক দুর্বৃত্তদের হাত থেকে পালাতে হবে।

কিন্তু হুট করে দৌড়াতে যেয়ে কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে আচমকা পড়ে যেতে নেয় সে। ঠিক তখনই আবার কে যেনো তাকে ধরে ফেলে। তিয়াশার হৃদপিন্ড যেন ড্রাম পিটাচ্ছে। নাহ শেষ রক্ষা আর বুঝি হলোনা, সব শেষ। এসব যখন ভাবছে ঠিক সেই মুহূর্তেই শুনতে পায় সম্মিলিত চিৎকারে পুরো বাড়ি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে,

“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…

হ্যাপি বার্থডে টু ইউ

হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার তিয়াশা

হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!!!”

ভুল শুনছেনা তো তিয়াশা? তীব্র আলো এখনো চোখে বিধছে, এখনো ঝাপসা দেখছে। ঝাপসা দৃষ্টিতে মনে হলো সামনে অনেক গুলো মানুষ। নাহ হ্যালুসিনেশন হচ্ছে বোধহয়। এই নির্জন বাড়িতে এত মানুষ কোথা থেকে আসবে এখন? আর বার্থডে কিসের? কার?

অতি দ্রুত ঘটছে যেন সবকিছু। তিয়াশার সারা শরীরে এবার একটা ঝাঁকুনি খায়। তখনই মনে পড়ে যে সে পড়ে যেতে নিলে কেউ তাকে ধরে ফেলে। এবার মুখ তুলে তাকাতেই এক ঝলক দেখে মনে হলো সে আদিলকে দেখতে পেলো। এইবার পেয়েছি তাকে, ভেবেই রাগে ক্ষোভে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দিতে থাকে সমানে।

“আরে বাবা! কি হয়েছে? থামো, থামো!”

তিয়াশা মুখ তুলে তাঁকিয়ে কিছু বলতে নিবে খেয়াল করে সামনে আসলে আদিল নয় আদনান দাঁড়িয়ে। দুই ভাইয়ের চেহারাতে মিল থাকার কারণে আলো আঁধারিতে গুলিয়ে ফেলেছিল সে। কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে থাকে, তারপর আদনানকেই আবার পিটাতে শুরু করে। উপস্থিত সবাই হেঁসে যাচ্ছে তিয়াশার কান্ড দেখে। আদনান আহ্.. ওহ্.. করতে করতে কোনরকমে বলে,

“বাপরে, বার্থডে গার্লের হাতে মাইর খাবো সেটা তো চিন্তাও করিনি।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



আদনান হাত দিয়ে তিয়াশার মাইর ঠেকানোর চেষ্টা করছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজছে। একটু পর আদিলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ভাই, দেখ তোর জন্য এখন আমার মাইর খেতে হচ্ছে।”

আদিল স্মিত হাসে,

“কেমন লাগছে মাইর খেতে? মাইর তো খাওয়াই উচিৎ তোর।”

“আ..আমি কি করলাম? আমি তো শুধু সারপ্রাইজ দিব বলেছি। বাকি তো সব…”

তিয়াশা এবার থামে। আদনানের চোখ অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে আদিল দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। তিয়াশা চোখ গরম করে আদিলের দিকে তাকায়, তাতে হাজার অভিমান স্পষ্ট।

তৎক্ষণাৎ তিয়াশার ছোট বোন ও ভাই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে,

“হ্যাপি বার্থডে আপি।”

এবার কিছুটা সম্বিত ফিরে পায় তিয়াশা। এত সব আয়োজন ওর জন্মদিন উপলক্ষে করছে সবাই, আর কি ভয়টাই না পাচ্ছিলো ও এতক্ষণ!

হাতের মোবাইল ফোনটা তিয়াশাকে ধরিয়ে দেয় পৌষী,

“এই নে কথা বল।”

তিয়াশার মা নীলিমা হাবিব তখন ভিডিও কলে ছিলেন, তিয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“হ্যাপি বার্থডে সোনা বাচ্চা আমার। তোর জন্য অনেক দোয়া মা। আল্লাহ তোর জীবনটা সুখে ও শান্তিতে আবার ভরে তুলুক।”

“ধন্যবাদ আম্মু। তুমি কোথায়?”

“আমি কাজে আছি। ব্যস্ততার কারণে আসতে পারিনি। তোরা আনন্দ কর।”

“তুমি জানো মা কি হয়েছে?”

“কি হয়েছে, বল?”

“ওরা যা করেছে আজ…”

নীলিমা হাবিব মুখ চেপে হেসে যাচ্ছে।

“আমি তো জানি।”

তিয়াশা হা করে তাকিয়ে থাকে মায়ের কথা শুনে। একটু অভিমান করে বলে,

“তুমি জানো? তাহলে আমাকে কেন জানাও নি?”

“যাহ বোকা মেয়ে, বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ হতো?”

“শুধু সারপ্রাইজ? আজ তো মনে হয় ম..রে..”

কথা শেষ করতে পারেনি তিয়াশা, তার আগেই পৌষী এসে হাত থেকে ফোন নিয়ে তার মাকে বলে,

“মা, লাভ ইউ। পরে কথা হবে। এখন আমরা একটু পার্টিটা উপভোগ করি। তোমাকে খুব মিস করছি মা।”

“আচ্ছা, সাবধানে থাকিস। দুষ্টুমি করিস না। পানিতে বেশি লাফালাফি করিস না।”

“আচ্ছা। তুমিও সাবধানে থেকো। রাখি। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই দ্রুত ফোনটা কেটে দেয় পৌষী। ম্যাথিউ, আদনান, প্যাট্রিসিয়া ও আরো চার পাঁচজন বন্ধু বান্ধব সবাই তিয়াশাকে নিয়ে বার্থডে পার্টিতে মেতে উঠে। তিয়াশাও সে আনন্দের জোয়ারে ভাসে সবার সাথে মিলে। তিয়াশা কল্পনাও করেনি যে ওর জন্মদিনে এতো চমক পাবে সে, সত্যি বলতে কি ও নিজেরই খেয়াল ছিল না যে আজকে ওর জন্মদিন। অনেক অনেক বছর পর ওর জন্মদিন এত উচ্ছাস নিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে, আর সেও অনেক দিন পর তাই প্রাণ খুলে হাসছে। বুকে জমে থাকা কষ্টের ভারী পাথরটা যেন নিমিষে মিলিয়ে যাচ্ছে।

তিয়াশার এই হাসি মাখা মুখ, প্রাণচঞ্চলতা আদিল শুধু দূরে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে অবলোকন করছে।

“কিরে ভাইয়া, আয় এদিকে। সবার সাথে যোগ দে।

আদনানের কথায় সংবিত ফিরে পায় সে। তারপর সেও যোগদান করে। অনেক খাওয়া দাওয়া হয়। রাত জেগে বন্ধুরা মিলে কার্ড গেম উনো, মিউজিক পিলো, কাগজের চোর-পুলিশ খেলে। খেলতে খেলতে কখন যে গভীর রাত হয়ে যায় কে জানে।

এই পুরোটা সময় তিয়াশা সবার সাথে হাসি আনন্দে মেতে থাকলেও আদিলকে এড়িয়ে চলে। যদিও আদিল অনেকবার চেষ্টা করেছে খেলার মাঝে মজা করে তিয়াশার সাথে স্বাভাবিক হতে। একেকবার তিয়াশাও গেইম খেলার মাঝে দুষ্টুমি, খুনসুটি করেছে, আবার পরক্ষনেই আদিলকে দেখে না দেখার ভান করেছে।

আদিল তিয়াশার বাচ্চামিতে বেশ মজাই পাচ্ছে। তিয়াশা এই মজা করছে তো এই অভিমান চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছে। আদিল জানে তিয়াশা ভীষণ রাগ করেছে। যা ঘটেছে তাতে রাগ হবারই কথা।

আদিল আনমনেই মুচকি হাসে তারপর, আদনানকে উদ্দেশ্য করে আদিল বলে উঠে,

“তোরা আনন্দ কর। আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি যাই।”

“ভাইয়া ঐদিকে কোথায় যাস?”

“ওহ”

আদিলের খেয়াল হয় সে বাইরে যাওয়ার দরজা খুলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর বলে,

“ওই, আমাদের রুম তো ওদিক টাতেই। ভুলে গেছিস?”

“উপস, আসলেই তো। আচ্ছা যা।”

আদিল চলে যায়। তিয়াশা আড় চোখে একবার দেখে নেয় যে আদিল চলে যাচ্ছে। একবার মনে মনে খুশি হয় আদিল চলে যাচ্ছে, আবার মনটাও যেন কেমন করে উঠে। এ কেমন টানাপোড়েন? যাই হোক, ভীষণ অভিমান হয়েছে তার আদিলের প্রতি, সেই সাথে হাজারো প্রশ্ন। যদি কষ্টও হয় তারপরেও কথা বলবনা এই পণই করে তিয়াশা মনে মনে। অনেক ভোগান্তি দিয়েছে আজকে আদিল। তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে!

এদিকে আদিল রুম থেকে বেরিয়ে একবার জানালা দিয়ে তিয়াশাকে দেখে নেয়। ঠোঁটে তার রহস্যের হাসি। মনে মনে কিছু একটা ফন্দি আটছে আবার কোনো।

কী ফন্দি করছে আদিল? আবারও কি তিয়াশাকে বিপদে ফেলবে? নাকি অভিমান ভাঙ্গাবে? আদিল কি পারবে তিয়াশার মান ভাঙাতে?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ২৪: https://www.facebook.com/107665540875368/posts/138964491078806/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২৪

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৪
Tasneem Tushar

হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে তিয়াশা। রাতের আলো আধারিতে নিয়ন আলোয় আরো ভুতুড়ে লাগছে জনমানবহীন এই পরিবেশ।

আদিল কেন আমাকে এখানে ফেলে রেখে গেল? কি ক্ষতি করেছি আমি তার। নাহ, এখন আদিলের কথাও চিন্তা করতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। আগে এখান থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে।

তিরচিহ্ন অনুসরণ করে যেতে যেতে বহুদূর চলে এসেছে তিয়াশা। সামনে আর কতদূর যেতে হবে সেটাও বোঝা যাচ্ছেনা এই অন্ধকারে। হঠাৎ খেয়াল করে তিরচিহ্নের কোনো দিক নির্দেশনাও আর চোখে পড়ছেনা। এই নিয়ন আলোর দিক নির্দেশনাই ছিল একমাত্র ভরসা। দিশেহারা লাগছে এখন নিজেকে। মনে হচ্ছে সি-বীচের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। যে পথ দিয়ে এসেছে সে পথেই ফিরে যাবে কিনা ভাবছে।

তিয়াশা কোনো কিছু না ভেবেই পেছনের দিকে ঘুরে যে পথে এসেছে সে পথে পা বাড়াতেই চমকে উঠে। একি! এখন তো কোনো নিয়ন আলোয় তিরচিহ্নের দিক নির্দেশনা দেখা যাচ্ছে না। সামনে পেছনে ভালোভাবে ঘুরে তাকিয়ে দেখে নেয়। না কোনো আলোই নেই।

দিক নির্দেশনা গুলো কোথায় মিলিয়ে গেল? মরীচিকা দেখেনি তো? উফ আল্লাহ কি করব এখন? এই অভিশপ্ত রাত কি শেষ হবে? আকাশ টাও কালো মেঘে ঢেকে আছে, তাই আরও বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে চারিপাশ টা। শেষ আশাটাও নিভে গেল।

তিয়াশার চোখে জল। এতক্ষন মনের জোরে সাহস করে এতদূর পর্যন্ত এসেছিল, কিন্তু এখন আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারছেনা। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে তিয়াশা।

বাতাসের সাথে দূর থেকে গানের সুর ভেসে আসছে মনে হচ্ছে। আবার একটু সাহস পায় মনে। কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে কেউ তাকে দেখছে। ভূত টুত নয়তো। এসব কি ভাবছি? মাথা থেকে বাজে চিন্তা তাড়াতাড়ি দূর করে ফেলে তিয়াশা। হঠাৎ চোখে পড়ে দূরে একটি বাতি জ্বলে উঠেছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



তিয়াশা এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে আলোর উৎসের দিকে পা বাড়ায়। হেঁটে যেতে যেতে পৌঁছায় একটা বাড়ির সদর দরজার সামনে। অন্ধকারে খুব ভালোভাবে বাড়িটি বোঝাও যাচ্ছেনা।

তিয়াশা আন্দাজ করে বাড়িটি সমুদ্র পাড় থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এখনো সামুদ্রিক বাতাস গায়ে এসে লাগছে ও সমুদ্রের গর্জন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। তিয়াশা খুশি হয়ে যায় মনে মনে। এ বাড়িতে নিশ্চয়ই কেউ থাকে যার থেকে সাহায্য পেতে পারে তিয়াশা। কিন্তু কোনো বাতি জ্বলছে না কেন? যেই আলো দেখে এখানে এসে পৌঁছেছে সেটাও আর দেখা যাচ্ছে না। এখন কয়টা বাজে সেটাও ঠাহর করতে পারছেনা।

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তিয়াশা বাড়ির সদর দরজায় নক করতেই, ক্যাক! শব্দ হয়ে দরজাটি আপনাআপনি খুলে যায়। একটু অবাক হয় তিয়াশা। কাঁপা গলায় আওয়াজ তুলে বলে,

“এক্সকিউজ মি! কেউ কি আছেন এখানে?”

কোনো সাড়া নেই। তিয়াশা আবার জিজ্ঞেস করে,

“এনি বডি হোম? ক্যান সামওয়ান হেল্প মি?”

একটু থেমে আবার বলে উঠে,

“আমার সাহায্য দরকার। আশেপাশের শহরের রাস্তাটা কেউ কি বলে দিতে পারবেন?”

নাহ এবারও কোনো সাড়া নেই। একবার ফিরে যাবে কিনা ভাবে। কিন্তু চারপাশে তাকিয়ে যখন ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখে তখন পা বাড়ানোর আর সাহস হয়না। কোথায় যাবে সে এই অন্ধকারে? বরং এখানে তো মাথার উপরে একটা ছাদ পেয়েছে। নাহয় এখানেই রাতটা কাটিয়ে দিয়ে সকালে সূর্যের আলোয় একটা উপায় খুঁজে বের করবে।

দাঁড়িয়ে আছে তিয়াশা। কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা। কাঁধে কিছুর স্পর্শে তিয়াশা লাফিয়ে উঠে জিজ্ঞেস করে,

“কে…? কে.. এখানে…?”

হঠাৎ একটি কালো হাত তিয়াশার মুখ চেপে ধরে। কিছু বোঝার আগেই চোখে কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়।

তিয়াশা প্রাণপনে হাত পা ছুড়ছে। মনে হচ্ছে কেউ টেনে হিঁচড়ে তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। এবার বোধহয় জমেই টেনে নিবে। এ যাত্রায় তিয়াশা বোধ হয় আর বেঁচে বাড়ি ফিরবেনা। কেউ তাকে বাঁচাতেও আসবেনা। একেবারেই নিরাশ হয়ে যায় তিয়াশা।

কি হচ্ছে এসব? বিপদ কি কমবে না? আদিল কোথায়? তিয়াশা কি এ যাত্রায় আসলেই বাচঁবেনা?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ২৩: https://www.facebook.com/107665540875368/posts/138551357786786/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২৩

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৩
Tasneem Tushar

তিয়াশা চিৎকার করে বলছে,

“হ্যালো…! ইস এনি বডি হেয়ার…? সাম ওয়ান হেল্প মি প্লিজ…।”

*

কিছুক্ষন আগের ঘটনা…

সূর্য ডুবি ডুবি করছে। হিম বাতাসে গায়ে যেন কাঁটা দিচ্ছে। তিয়াশা চোখ কচলাতে কচলাতে নিজেকে আবিষ্কার করে নির্জন বেলাভূমিতে। মাথাটা ভীষণ ঝিম ঝিম করছে তার। স্বপ্ন দেখছে নাতো সে। ভালোভাবে চোখ কচলে তাকিয়ে দেখে, যতদূর চোখ যায় সামনে শুধু অথৈ নীল সমুদ্র, সেই সাথে সমুদ্রের গগন বিদারি গর্জন।

হকচকিয়ে উঠে বসে তিয়াশা। চারপাশে তাকিয়ে দেখে কোনো মানুষ নেই। মাথার উপরে সি বীচের ছাতা দেখে খেয়াল হয় সে বসে আছে বিচবেডে। তিয়াশা এবার লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়, দেখে পরণে তার নীল জর্জেটের শাড়ি। আরও বেশি অবাক হয় সে। নাহ সে হয়তো আসলেই স্বপ্ন দেখছে। তিয়াশা দ্রুত বিচবেডে যেয়ে চোখ বন্ধ করে চুপটি করে শুয়ে পড়ে। প্রত্যাশা এটাই যা দেখছে তা শুধু স্বপ্ন। ঘুমোলে সব ঠিক হয়ে যাবে এবং সকালে চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করবে তার চিরচেনা ছিমছাম ঘরে।

বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখার পর ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় তিয়াশা। নাহ এবার সত্যি ভয় লাগছে তার। সূর্যটা ডুবে গেছে। চারপাশে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার এবং সেই সাথে সমুদ্রের জোড়ালো গর্জন। কান্না পাচ্ছে তার। এখানে কিভাবে এলো সে? কোথাও কেউ নেই কেন? তার পরণেই বা শাড়ি কেমন করে এলো?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



হঠাৎ মনে পড়ে সে আজ সকালে কাজে গিয়েছিল সে। সাথে সাথেই মনে পরে তার ফোন দিয়ে যোগাযোগ করা উচিত বাসায়। কাঁপা হাতে সে বিচবেডে হাতিয়ে নিজের ফোন খোঁজার চেষ্টা করে। হায় আল্লাহ নিজের পার্স ব্যাগ, ফোন কিছুই তো নেই এখানে।

এলোপাতাড়ি হাটতে শুরু করে তিয়াশা। জোরে চিৎকার করে বলে,

“হ্যালো! ইস এনিবডি হেয়ার? সাম ওয়ান হেল্প মি প্লিজ।”

নিজের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়ে নিজের কানেই বাজছে। চোখ ছলছল করছে তার আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে সাহায্য চেয়ে।

হঠাৎ চোখে পরে সমুদ্রের পার ঘেঁষে একটু পর পর নিয়ন বাতিতে জ্বলছে তিরচিহ্নে আঁকা দিক নির্দেশনা। তিয়াশা আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে সেই তিরচিহ্ন দেখে হাঁটা শুরু করে। মনে তার আশার আলো দেখা দিয়েছে। এই পথ ধরে গেলেই হয়তো সে আশেপাশের লোকালয়ে পৌঁছতে পারবে এবং সেখান থেকেই সাহায্য নিতে পারবে।

হাটতে হাটতে মনে পড়লো তিয়াশার আদিলের সাথে দেখা হয়েছিল কাজ শেষে এবং আদিল তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় গাড়িতে করে।

*

কয়েক ঘন্টা আগের স্মৃতি রোমন্থন করছে তিয়াশা।

ম্যাকডোনাল্ডের পাশে পার্ক থেকে তিয়াশার হাত শক্ত করে ধরে টেনে এনে আদিলের গাড়িতে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসায় তিয়াশাকে। তিয়াশা লক্ষী মেয়ের মতো গাড়িতে বসলে, আদিল তিয়াশার সিট বেল্ট বেঁধে দিয়ে নিজের সিটে বসতে বসতে গুনগুন করে গান ধরে,

“তোরে পুতুলের মত করে সাজিয়ে
হৃদয়ের কোঠরে রাখবো।

আর হৃদয়ের চোখ মেলে তাঁকিয়ে
সারাটি জীবন ভরে দেখবো।

আমি নেই নেই নেই রে
আমি নেই নেই নেই রে
যেন তোরই মাঝে হারিয়ে গেছি।”

তিয়াশা বলে উঠে,

“আপনার কণ্ঠ মধুময়। খুব সুন্দর গান করেন আপনি।”

আদিল ও মুচকি হেসে বলে,

“হুম পুতুলরানী আমার কন্ঠে মধু ঢেলে দিয়েছে।”

“জ্বি, বুঝলাম না।”

“এত বুঝতে হবেনা। শুধু আমার সাথে চলো।”

“আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায়?”

আদিলের ঠোঁটে রহস্যের হাসি। আদিলের ঠোঁটের এই মারাত্মক হাসি ইদানিং কেমন যেন অনুভূতির সৃষ্টি করে তিয়াশার মনে। কিছুক্ষন আদিলের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকলে, আদিল তিয়াশার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কোথায় হারিয়ে গেলেন?”

“আপনা…তে। মা… মানে… ভাবনাতে।”

“তাই?”

“হুম”

আদিল মুচকি হাসে। তিয়াশা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে একবার আড় চোখে দেখে নেয় আদিলকে। আদিল ড্রাইভিং সিটের পাশে গ্লাস হোল্ডার থেকে পানির বোতল তিয়াশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“অনেক রোদ আজ। পানি পান করবেন?”

“হুম।”

“আপনি পারবেন? না আমি খাইয়ে দিব?”

তিয়াশা স্মিত হাসি দিয়ে বলে,

“হুম পারবো।”

আদিলের গাড়ি ৮০ মাইল বেগে হাইওয়েতে ছুটছে। গাড়িতে বাজছে সুন্দর মেলডির গান। কোথায় যাচ্ছে ঠিকানা জানেনা তিয়াশা তবু মনে ভয় কাজ করছেনা তিয়াশার। বেশ খানিকটা পথ আদিল তিয়াশার সাথে গল্প করে। ঠিক কতক্ষন গল্প করেছে মনে নেই। একটু পরেই তার দু’চোখ জুড়ে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম। এরপর আর কিছুই মনে নেই তিয়াশার।

*

তিয়াশার মনে পড়ে পানি খাওয়ার পর থেকেই তার মাথা কেমন ঝিমঝিম করছিল। যাকে এত ভরসা করলো সে তাকে এভাবে ফেলে গেল তিয়াশাকে? নাহ কিছু একটা রহস্য রয়েছে। তবে তার আগে তিয়াশার লোকালয়ে পৌঁছতে হবে আরও কোনো বিপদ ঘটবার আগে।

জুতো পরে বালিতে হাটতে খুব সমস্যা হচ্ছে তার।পা থেকে জুতো খুলে হাতে নিয়ে অন্ধকারে এই নিয়ন আলোকে ভরসা করেই হেঁটে যাচ্ছে তিয়াশা।

তিয়াশা লোকালয়ে পৌঁছতে পারবে তো? নাকি আরো বড় কোনো বিপদ ওঁৎ পেতে আছে নির্জন রাতের অন্ধকারে?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ২২: https://www.facebook.com/107665540875368/posts/137791711196084/