হৃদয়_স্পর্শ পর্ব ৩ ও শেষ

0
1108

হৃদয়_স্পর্শ পর্ব ৩ ও শেষ
#লেখনীতে_সাদিয়া_নুর

– তারপর তোদের কাহিনী কবে স্টার্ট হলো?
– ফেসবুক!
– কি? ফেসবুকে স্টার্ট হইসে?
– হ্যা। খুব ভয়ে এবং লজ্জায় ছাদ থেকে নিচে নামলাম দোয়া পড়ছিলাম তার সামনে যেন আর না পরি। হ্যা দোয়া কবুল হয়েছিলো দুই চোখ জোড়া শুধু তাকে খুজছিলো কিন্তু কোনো মতেও তাকে পাইনি।
– না পাওয়াই তো ভালো ছিলো তাইনা।

ইশ যদি সাদিয়া আরেকটু পর্যবেক্ষণ করত আদনান কে তাহলে দেখতো আদনানের ঘাড়ের রগের সাথে হাতের রগ ও বের হয়ে আসছে এবং হাত কে মুঠি বদ্ধ করে রেখেছে!

– ফেসবুকে লগইন করেছিলাম তার দুইদিন বাদ।মেসেঞ্জারে সবার মেসেজেস এর রিপ্লাই দেয়ার পর স্প্যাম মেসেজেস দেখতে দেখতে একটা আইডি তে চোখ পড়ল নাম ছিলো “ইরশাদ খান ইফতি” নাম টা দেখে খটকা লাগলো সাথে সাথে প্রফাইলে গেলাম,, চ্যাক করে দেখি সেই ছেলেটা। শুয়ে থেকেও মাথা ঘুরাচ্ছিলো। এর দুইমিনিটের মাথায় আবার সে মেসেজ দেয়,,
” কান্না করবানা সেইদিনের মতো!”
এটা দেখে প্রচন্ড লজ্জা পেলাম। কিন্তু মনে সাহস জুটিয়ে লিখে ফেল্লাম,,
“ব্লক হচ্ছেন” লিখার সাথে সাথে সে একবস্তা মানে আমার যত পিক ছিলো সব দেয়া স্টার্ট করেছে। আমি তো ভয়ে কাপছিলাম।
– এই এই তোকে কি ব্ল্যাকমেইল করেছে?খারাপ এডিট করবে বলে?
– আরে না!
– তাহলে,,
– আমি বললাম “খারাপ এডিট করে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার খুব ইচ্ছা তাইনা তাহলে মনে রাখুন আমি বাংলাদেশ ২০১৮ নিউ মডেল হিসেবে পার্টিসিপ্যান্ট করছি। তাই কোনোও লাভ নেই”
– হাহাহা হাহাহাহা হোয়াট এ জোক!
– চুপ যা! সেও এভাবে হেসেছে..পুরো প্ল্যান ভেসে গিয়েছিলো।
– তারপর?
-সে বলল “যেটাতেও পার্টিসিপ্যান্ট করো না কেন..আজ থেকে তোমার মনে তোমার মস্তিষ্কে শুধু আমিই থাকবো”
আমিও বললাম “ইয়ার্কি পাইসেন যা বললেন সুস্থ মস্তিষ্কে বলেছেন তো? সিনিয়র বলে সেইদিন কিছু বলিনি কারণ আমার স্কুল এবং আমার প্যারেন্টস আমাকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে। ওইদিন আপনিই ধাক্কা দিয়েছিলেন কিছু বলিনি,, চোখ রাঙাইনি চোখ বড় করে তাকিয়ে ছিলাম,, আর আপনার সামনে না আসতে হয় তখন চলে যাচ্ছিলাম,, কিন্তু এত ইন্সাল্ট,, কে সহ্য করবে আমি তো একদমই না। আমার চোখের পানি মুল্য আমি আজ পর্যন্ত কারো থেকে চাইনি। বাট আপনি সেই মুল্যটাও দিতে পারবেন না। কারণ আপনারা হলেন পাষাণ।”
– বাহ দারুন বলেছিস,, তারপর কি বলল,,
– চুপ ছিলো ভাবলাম বেশিই কি বলে ফেলসি,, তারপর নিজেই লিখতে লাগলাম “আ’ম রিয়েলি সরি” কিন্তু সেন্ড করবো তার আগেই একটা কবিতা সেন্ড করল..
,Ba
জানিনা কি এমন ছিলো তোমার মাঝে
যা তোমার চোখের অশ্রু দ্বারা বুঝতে পেরেছি,
জানিনা কি এমন ছিলো তোমার সেই কালো মাথা বর্তি কেশ এ
চোখ নামছিলোই না সেই স্থান থেকে।
সেই কাজল মাখা চোখ দুটোতে হারিয়ে গিয়েছিলাম
সেই বড় বড় টানা চোখ দুটিতে ফেসে গিয়েছিলাম,
সেই কন্ঠস্বর এখনো শুনতে ইচ্ছে হয়,
তোমার সেই গোল চেহেরা বার বার মনে পড়ে চোখের পাতায়,
তোমার সেই কান্না #হৃদয়_স্পর্শ করে ফেলেছে অজান্তেই,
ভালোবেসে ফেলেছি ছোট্ট মায়াময়ী কে,
আকড়ে ধরতে চাই এই ছোট্ট চঞ্চল মায়াময়ী কে,
নিজের পাশে চাই সর্বক্ষণ এই মায়াময়ী কে,
হৃদয় স্পর্শ করতে চাই তোমার পারবো কি করতে?
——সাদিয়া নুর
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



এটা শুনেই আমি গলে যাই,, কিছুক্ষণ চুপ থাকতেই..সে বলে উঠে “এত চিন্তার কিছু নেই কাল গুলশান এত নম্বরে আসো মিট করব” তারপর কি গেলাম পরদিন সেই দিন সে একদম নরমাল ভাবে কথা বলেছে আমার সাথে ছেলেটা সেইদিন ভালোভাবে দেখলাম হাইটে ৫’১১ উজ্জ্বল শ্যামলা আমার মতই আর বডি ভালোই ছিলো কিন্তু তার রাগ বেশি ছিলো…সব বোঝার পর মতামত চাইসে আমি কিছুক্ষণ ভেবে তারপর হ্যা বললাম শুরু হলো রিলেশন সুন্দর ভাবেই ৭ টা মাস কাটলো তারপর শুরু হলো অবহেলা,, তার বলে চাকরিটা ভালো লাগছে না,, তাই সে ছেড়ে দিবে মেনে নিলাম কারণ এখনো তার মাস্টার্স কম্পলিট হয়নি,, তারপর যখব বেকার হলো একটা বিজনেস স্টার্ট করল এমনেও তার বাবা রাজনীতিতে ছিলো বলে খুব দ্রুত বিজনেস গ্রো হয়েছে,, নানা ধরনের ক্লাইন্ট এর সাথে মেলামেশা আমার জন্য তো একটা দুন ও টাইম নেই,, নিজেকে বুঝিয়েছি,, কিন্তু কয়দিন তার ফ্রেন্ডস দের মোটামুটি সবাইকে চিনতাম সবাই আমাকে ভাবি ডাকতো তদের থেকে একজন কে জিজ্ঞেস করলে বলেছে তাকে সবসময় একটা মেয়ে ক্লায়েন্ট এর সাথে দেখতো,, কিন্তু তারা ওটাকে সিরিয়াস কিছু ভাবতো,, আমি মানলাম না একদিন ওর বাসায় পৌছে যাই তখন আমাদের রিলেশনের ১৪ মাস,,
তাকে পেয়েই জড়িয়ে ধরি কিন্তু তার পেছন পেছন সেই মেয়েটাও আসে,, মেয়েটা জিজ্ঞেস করে “হু ইস দিস গার্ল আর তোমাকে জড়িয়ে কেন ধরল” ইরশাদ বলল “আমার বোন হয় তুমি এত ওভাররিয়েক্ট করছ কেন”

– হা হা,, তুই গেলি হাহাহা,,
– চুপ থাক,, শুন তারপর,, “কি বললা তুমি বোন হই তোমার,, তাহলে প্রেমের প্রস্তাব দেয়া ফিউচার প্ল্যান ১ বছর দুইমাস রিলেশন এসব কি” মেয়েটা বলল “কিহ এই মেয়ে কি সব বলছো সে আমার উডবি আমাদের বিয়ে ফিক্স হয়েছে” মাটি যেন নাই হয়ে গেছে মোবাইল থেকে সব প্রমাণ দিলাম তারপর কান্না কর করতে চলে আসলাম,, আজ পর্যন্ত সে আমার সাথে শুধু ছলনা করেছে মানতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো,, সে মেয়েটা বলে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে শুনেছিলাম,, অনলাইনে লগইন করলে শুধু ইরশাদের মেসেজ পেতাম কতরাত নির্ঘুম কাটিয়েছি,,একদিন সে একটা মেসেজ দেয়,,”যেইদিন ভুলতে পারবে আমাকে সেইদিন নিজ থেকে বানানো একটা কবিতা সেন্ড করিয়ো কেমন? এখন এই কবিতাটা তোমার জন্য সেই দিনের যেইদিন আমাদের রিলেশনের ছয়মাস হয়েছিলো আর তুমি হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছিলে,

তোমার ওই কাজলবিহীন চোখে
তবু লেপটে থাকা কাজলের মায়ায়
আমার থমকে গেছে সারাটা বিকেল,
চোখে ভাসে তোমার প্রতিচ্ছায়া।

তোমার ওই কাঞ্চাসোনা গায়ের নিখুঁত গড়ন,
হলুদরাঙা শাড়ি
কৃষ্ণচূড়ার রঙ মাখানো আগুন লাগা কোমল ঠোঁটের,মিষ্টি হাসি
অগোচরেই সর্বস্ব নিয়েছ কাড়ি।

তোমার ওই বনফুলের আবীর মাখা গা,
নূপুর পরা আলতারাঙা পা,
আগোচরেই দৃষ্টি হারালো সেথা।

হ্যাঁ, আমি বোধহয় প্রেমে পড়েছি,
আমি তোমার প্রেমেই পড়েছি।
আমি আমার নিজেকে কখন যেন, উজাড় করে-
তোমাতে বিলিয়ে দিয়েছি।
সত্যিই আমি তোমার, প্রেমে পড়েছি।

“তোমার প্রেমেই পড়েছি”

এই কবিতাটা পড়ে,,,খুব ক্ষোভ হলো,, লিখে ফেললাম তার জন্য কবিতা,, সাথে একটা মেসেজ…”এত নিখুঁত একটিং ভালোই করো যদি ভালোবাসতে তাহলে আরেক মেয়ের দিক চোখ যেত না,, যদি ভালোবাসতে সেইদিন বলতে না আমি তোমার বোন, যদি ভালোবাসতে তাহলে আমাকে এবং আমার ভালবাসা কে অবহেলা করতে না এই কবিতাটা তোমার জন্য,,

এই যে তুমি আমায় ধরে রাখতে পারলে না,
বুকের কাছে যত্নে রাখতে পারলে না,
এই ব্যর্থতা শুধু তোমার।
আমি তো কেবল তোমার আপন হতে চেয়েছিলাম।
তুমি আমায় অযত্নে অবহেলায় দূরে ঠেলে দিলে,
শেষবেলায় খোঁজ নিলে না,
মনের ব্যকুলতা জানতে চাইলে না,
কষ্টের দিনে দেখা দিলে না,
এই ব্যর্থতা শুধুই তোমার।
আমি তো সেদিনই জিতে গিয়েছিলাম যেদিন তোমায় ভালোবাসতে পেরেছি।
অভাবের এই দুনিয়ায় কজন ভালোবাসতে পারে বলো?
ভালোবাসা যে আজকাল দূর্লভ,তোমার মতোই দূর্লভ।

“অসমাপ্ত”

কিছুদিন কেটে গেলো তাকে ভুলতে শুরু করলাম আগের মত কষ্ট হতো না তোকে পেলাম নতুন করে জীবন সুন্দর লাগতে শুরু হলো তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ যেন স্বর্গের মত লাগছিলো কিন্তু তুই যেই দিন গায়েব হলি না সেই দিন ইরশাদের জন্য একটা কবিতা লিখলাম,,

“আমি বোধহয় আপনাকে ভুলে যাচ্ছি”
এখন আর মাঝ রাতে হুটহাট ঘুম ভেঙে যায় না, আপনাকে না পাওয়ার আর্তনাদে।

যখন তখন আপনাকে মনে করার যে,
একটা নামহীন অসুখ আছে সেটাও এখন আর নেই।

“সত্যিই বোধহয় আমি আপনাকে ভুলে যাচ্ছি”
আপনাকে ভুলতে না পারার যে কষ্টটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বুকেপিঠে এঁটে থাকতো,
সেই কষ্টটা এখন আর নেই।

এখন আর শূন্যতারা আমাকে গ্রাস করে না,
আপনি না থাকার অভাবে।

“আমি বোধহয় আপনাকে ভুলে যাচ্ছি”
আপনাকে মনে করে এখন আর,
হাসির আড়ালে মেঘরা কান্না করে না।

আপনি ফিরে আসবেনা আর, কিভাবে যেনো আমি মেনে নিয়েছি আমার একটুও কষ্ট হয় না।

কিন্তু আমি বুঝতে পারছি,
ভয়ঙ্কর কিছু একটা হতে যাচ্ছে আমার সাথে……
কারণ আপনাকে ভুলে যাওয়ার সাথে সাথে,
এটাও মনে হচ্ছে আমি বোধহীন হয়ে যাচ্ছি….
হৃৎপিন্ডটা ধীরে ধীরে হয়তো,
কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে……
তাই হয়তো আমি অসাড় হয়ে যাচ্ছি।

হৃৎপিন্ডটা আপনার কাছে
একটু একটু করে চলে যাচ্ছে,
আমি বুঝতে পারছি।
তার চলে যাওয়াটা….
আমি আটকাতে পারবো না
মনে হচ্ছে।

“তাই বোধহয় আমি আপনাকে ভুলে যাচ্ছি”
আর ভয়ঙ্কর কিছু একটা হচ্ছে,…..
যেটা আমি চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারবো না।

এটা লিখে আমি ভেঙে পড়েছিলাম খুজতে চাচ্ছিলাম তোকে কিন্তু পারছিলাম না। চারটা মাস পর যখন তোকে আবার পেলাম মনে হচ্ছে স্বর্গ পেয়ে গিয়েছিলাম আর জানিস তোকে এভাবে আজ সামনা সামনি পেয়ে যাবো কল্পনার বাহিরে ছিলো,, আমি তোকে কিছু বলতে চাই শুনবি?

আদনান সাদিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে বলে,,

– ভালোবাসি পাগলি খুব খুব ভালবাসি।
সাদিয়া আদনানের দিক ফিরে আদনানের মুখ মন্ডল নিজের হাতে নেয় আর বলে
– সত্যি কি?
– সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি পাগলি তুই কি আমাকে তোর হৃদয় স্পর্শ করতে দিবি? আমাকে তোর প্রেমিক হতে দিবি আমাকে তোর সর্বশেষ প্রেম হতে দিবি।
সাদিয়া কিছু বলে না শুধু মুখ উপর নিচ নাড়িয়ে হ্যা বলে,,
আদনান আর অপেক্ষা করে না সাদিয়ার কোপালে উষ্ণ চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে আর সাদিয়া পরম সুখে চোখ বন্ধ করে আদনানে হৃদপিন্ডের আওয়াজ শুনছে।

– আদু..
– হু,,
– একটা কবিতা শোনায় তোমাকে
– বাহ তুই থেকে তুমি??.
– হুম,,
– এখন কি এমন কবিতা মনে পড়ল তোর,,
– শুনবা?
– বল..

“জানো,
আজ আমার পুরোটা জুড়ে শুধু তোমার অস্তিত্ব।
আমার ভেতরের আনাচে কানাচে তোমায় নিয়ে নিত্য মিছিল হয়।
সেই মিছিলের একটাই স্লোগান,
ভালোবাসি ভালোবাসি।

ভালবাসতে ভালোলাগে তাই ভালোবাসি।
তুমি ভালোবাসো বলো তাই ভালোবাসি।
ভালো না বেসে থাকতে পারিনা, তাই ভালোবাসি।

এইযে এত ভালবাসা,
রক্তজবার মতো লাল ভালোবাসা,
আকাশের মতো গাঢ় নীল ভালোবাসা,
ফুচকার মতো টক ভালোবাসা,
সবটা শুধু তোমার জন্য।

আমার শাড়ির প্রতিটা ভাঁজে তোমার নামে ভালোবাসা লেখা।
আমার টিপের প্রতিটা রঙে তোমার নামে ভালোবাসা লেখা।

এই যে আমার সকাল,বিকাল,রাত,দিন সবজুড়ে ভালবাসা,
বিশ্বাস করো প্রিয়,
কিচ্ছু চাইনা আমি ভালোবাসা ছাড়া।
আমার ভালোবাসা নিও,
আর তোমার ভালোবাসার ছায়াতলে আমায় জিরোতে দিও।

– দিবো।

##############সমাপ্ত###############

মতামত দিবেন দয়া করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে