Thursday, August 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2022



পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৯

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩৯
#লেখিকাTasneem Tushar

স্টেজে বউ সেজে অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হয়ে বসে আছে আলিয়া। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে তাকে রানী গোলাপি রঙা বেনারসি শাড়িতে, ঠিক যেন রানীই বসে আছে। চোখ জোড়া অপেক্ষারত তার হবু বরের পথের দিকে চেয়ে। কখন আসবে সে? কখন নিজের করে নিবে আলিয়াকে তার মনের রানী করে? এই মধুর অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চায়না। হঠাৎই বিস্তৃত হাসি দেখা দেয় আলিয়ার চাঁদ মুখে। ঐতো তার প্রাণভ্রমরা তার দিকেই হেঁটে আসছে। অপলক দৃষ্টিতে মনোমুগ্ধ নয়নে এই অবাধ্য মন শুধু তাহাকেই দেখিবার চায়। আচ্ছা, আলিয়া কি জানে ক্ষণিক পরে কি ঘটতে চলেছে?

আলিয়ার ধ্যানভঙ্গ হয় কারো ডাকে। লাজুক হেসে তাকিয়ে হঠাৎই ক্ষেপে যেয়ে দিয়ে দুই হাত দিয়ে দুজনের কান ধরে আচ্ছা মতো কানমলা দিয়ে বলে,

“ওরে শয়তানের দল। কোথায় ছিলি আজ সারাদিন?”

ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে, “আজ তোদের বোন চলে যাচ্ছে আর আজই তোরা সারাদিন ফাঁকি দিলি আমায়?”

বোনের মায়ামাখা মুখটি দেখে দুজনের চোখের কোণে পানি জমে। পাছে আলিয়া দেখে ফেলে, তাই মুখ সরিয়ে চোখ মুছে হেসে আদনান বলে,

“তোকে যদি আজ যেতে না দেই?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



আলিয়া মজা করে বলে,

“তাহলে তো ভালোই হয়। সারাজীবন জ্বালাবো তোদেরকে।” পরক্ষনেই মলিন হেসে বলে,

“তাকি আর হয় বল? যেতে তো হবেই রে।”

আদিল আলিয়ার হাত ধরে বলে,

“তোকে রেখে দিব।”

“ওরে আমার দরদী ভাইয়েরা, সারাদিন খোঁজ নেই, এখন আসছে আহ্লাদ দেখাতে তাইনা?”

“আপা, শোন তোর সাথে খুব জরুরি কথা আছে। একবার এদিকটায় আয়।”

“কি বলিস এখন আমি কিভাবে স্টেজ থেকে উঠে আসি?”

পেছন থেকে নাদিম মুজদাহীর আদিল ও আদনানকে ডেকে রাগত কণ্ঠে বলে,

“তোমাদের কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই? সারাদিন উধাও। বিয়ের সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছ মেহমানের মতো। এদিকে আমি একা সামাল দিয়ে পারছিনা। যাও ওদিকটায় কি লাগবে দু’ ভাই মিলে একটু দেখাশোনা করো।”

আদিল ও আদনান দুজনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দেখে এবার ধমক দিয়ে বলে উঠেন,

“কি হলো? কথা কানে যাচ্ছেনা? যাও।”

তাদেরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নাদিম মুজদাহীর সেখান থেকে চলে যায়। আদনান ও আদিল এখন কি করবে বুঝতে পারছেনা। বাবার কথা শুনবে না আলিয়ার সাথে কথা বলে সব জানাবে? এদিকে নাদিম মুজদাহীর যাওয়ার সাথে সাথেই তাদের মা নওরীন মুজদাহীর এসে হাজির। তিনিও বেশ ক্ষেপে আছেন বোঝা যাচ্ছে। তিনিও বেশ ঝেড়ে কথা বললেন তাদের সাথে।

বর ও কনে পাশাপাশি বসে স্টেজে। ছবি তোলা হচ্ছে। সামনে শ’খানিক লোক বিয়ের দাওয়াতে এসেছে। সবার চোখ বর ও কনের দিকে। কাজী সাহেব চলে এসেছেন, বিয়ে পড়াতে। আদিল ও আদনান অসহায়ের মতো মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে, কিভাবে বিয়ে বন্ধ করবে? এদিকে তিয়াশারাও এসে পৌঁছায়নি। প্রমাণ তো তাদের সাথেই। জোড়ালো প্রমাণ ছাড়া যে বিয়ে ভাঙা সম্ভব হবেনা।

এখনো তিয়াশারা আসছে না কেন? আর দেরী করলে তো বিয়ে পড়ানো হয়ে যাবে। চিন্তায় পড়ে যায় আদিল আর আদনান। আদনান ফোন করে তিয়াশাকে,

“কিরে তোরা কোথায়? এত দেরী করছিস কেন?”

তিয়াশা উত্তর দেয়,

“আর বলিস না, আমরা তো আরো অনেক আগেই পৌঁছে যেতাম। বের হয়েছি সেই কখন। কিন্তু কপাল খারাপ। সামনে একটা সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে, রাস্তা ব্লক করা। সামনে এগোতে পারছিনা। সামনে অনেক গাড়ির জ্যাম হয়ে গেছে।”

“হায় হায়। কি বলিস। আর বেশিক্ষন তো বিয়ে থামিয়ে রাখতে পারবো না। আর কিছুক্ষণ পরেই তো বিয়ে পড়ানো হয়ে যাবে।”

“এই থাম থাম, এই মাত্র পুলিশে সব গাড়ি ডাইভার্ট করে অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে দেওয়া শুরু করেছে। আমরা ঠিক পৌঁছে যাবো, তুই চিন্তা করিস না। বিয়ে পড়ানোটা শুধু আরো কিছুক্ষণ একটু থামিয়ে রাখ।”

“আচ্ছা দেখি কি করা যায়। জলদি আয় তোরা।”

আদনান ফোন রেখে দিয়ে আদিলকে তিয়াশাদের আপডেট জানায়। দুজনেই বেশ টেনশনে পরে যায়। কী করা যায় এখন।

অন্যদিকে নাদিম মুজদাহীর কাজী সাহেবকে ডেকে বিয়ে পড়ানোর আয়োজন শুরু করার কথা বলেন। কাজী সাহেব বলেন,

“জী, আপনারা মুরুব্বিরা সবাই একসাথে আসেন। আমরা বিয়ে পড়ানোর আয়োজন করছি। শুভ কাজে দেরী না করাই তো ভালো, তাই না।”

আদনান আদিল একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। দুজনের চোখেই একই প্রশ্ন, এখন কী হবে?

আদনান আদিলকে বলে,

“আচ্ছা, কী করা যায় এখন বলনা। আর তো দেরী করানো যাচ্ছে বলে মনে হয় না।”

“আমার মাথায় তো কিছু আসছে না, তোর মাথায় তো দুষ্টু বুদ্ধি ভরা, কিছু একটা বের কর না।”

“আচ্ছা, দাঁড়া। আমি আসছি একটু।”

বলেই আদনান দ্রুত হাঁটা শুরু করলো।

কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ চিৎকার শোনা যায় ঐদিকে।

দৌড়ে সবাই ছুটে যায় সেখানে। গিয়ে দেখে, আদনান তার হাত চেপে ধরে চিৎকার করছে, আর হাত থেকে একটু রক্ত ঝরছে।

আদিল দৌড়ে কাছে যায়,

“কিরে, এই মাত্র না আসলি, কিভাবে হাত কাটলো?”

আদনান কানে কানে ফিসফিস করে বলে,

“কেন, তুই না বললি বিয়ে পড়ানোর দেরী করার জন্য কিছু করতে। এখন কিছু সময় তো হাতে পাবি তোরা, নাকি? আর আমার আশেপাশে এতজন ডাক্তার, এইটুকু হাত কাটার চিকিৎসা করা তো কোনো ব্যাপারই না।”

আদিল মুচকি হাসে। আর সবার উদ্দেশ্যে বলে,

“এই, জলদি আমার ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে আসো। আপাতত বিয়ে পড়ানো একটু থামাও, আগে ওর হাতের অবস্থা একটু দেখে নেই আমি।”

আদনান আদিল একটু স্বস্তি পায়। আদনানের হাত কেটে হলেও, নিদেনপক্ষে এখন কিছু সময় তো পাওয়া গেলো। এখন তিয়াশাদের আসার অপেক্ষা।

*

বিয়ে পড়ানোর কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে, আলিয়াকে কবুল বলতে বলছে, আর আলিয়া কেঁদে চলেছে।

আলিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে, “আলহামদুলিল্লাহ, কবুল” বলবে প্রায় ঠিক তখনই একটা কণ্ঠ বেশ উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“থামুন। এই বিয়ে হবেনা। এই বিয়ে বন্ধ করুন।”

সবার চোখ ঘুরে এখন চেঁচিয়ে ওঠা ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে যে কিনা এখন সোজা স্টেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে সাথে যাচ্ছে আরও দুজন। নাদিম মুজদাহীর ভীষণ ক্ষেপে গেছেন, নওরীন মুজদাহীর বাকরুদ্ধ। আলিয়া বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে, কিন্তু একজোড়া রক্তচক্ষু তখন ভস্মিত হচ্ছে তিয়াশার দিকে। আদিল ও আদনান তিয়াশাকে নিয়ে স্টেজে উঠে এবং অর্কেস্ট্রা থেকে মাইক হাতে নিয়ে আদিল ও আদনান সমস্বরে বলে উঠে,

“অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, এই বিয়েটা হচ্ছেনা।”

নাদিম মুজদাহীর ও নওরীন মুজদাহীর কিছু বলার আগেই, আলিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় এবং সামনে এগিয়ে যেয়ে সজোরে থাপ্পর দেয় আদিল ও আদনানের গালে।

“ফাজলামি পেয়েছিস? এসবের মানে কি?”

তারপর তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে,

“এই মেয়েটা এখানে কি করছে? আহনাফ আমাকে বারবার সতর্ক করেছিল এই মেয়েটার ব্যাপারে। বলেছিল মেয়েটা ভালো নয়, দুরভিসন্ধি আছে কোনো। আমি পাত্তা দেয়নি। এখন দেখছি আহনাফের কথাই ঠিক।”

আদিল ও আদনান তখন সবার সামনেই আলিয়াকে আহনাফের আসল পরিচয়, তার অতীতে তিয়াশার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা সহ সবকিছু খুলে বলে। আলিয়া কোনভাবেই বিশ্বাস করতে চায়না যে আহনাফ আর আফরান একই ব্যক্তি। প্রমাণ স্বরূপ দেখানো হয় তিয়াশা ও আফরানের ছবি, বিয়ের কাবিন নামা, এছাড়া গায়ে হলুদের দিনে তিয়াশাকে ধরে হুমকি দেয়ার ভিডিও। স্বীকারোক্তি দেয় তিয়াশার মা নীলিমা হাবিবও যে এই হচ্ছে আহনাফ ওরফে আফরান তিয়াশার প্রতারক প্রাক্তন স্বামী, যে কিনা নিজের অতীত লুকিয়ে, পরিচয় গোপন করে আরেকটা মেয়ের জীবনও ধ্বংস করতে যাচ্ছিল।

আলিয়ার কান গরম হয়ে গেছে, এসবের পরেও সে বিশ্বাস করতে চায়না যে আহনাফ একটা লোভী, প্রতারক। তখন আদনান আলিয়াকে বলে,

“আপি আমাদের কথা, এত এত প্রমাণ যখন তুই বিশ্বাস করছিস না, তুই নিজেই আহনাফকে জিজ্ঞেস কর। সে স্বীকারোক্তি দিলেই তো সব প্রমাণ হয়ে যায়, আমরা ঠিক বলছি কিনা।”

আলিয়া এবার স্টেজের যেখানে আহনাফ বসেছিল সেদিকে তাকাতেই দেখতে পায় আহনাফ নেই। আরে গেল কোথায় সে? এখানেই তো ছিল? সবাই যখন ঘটনা শুনতে ব্যস্ত ঠিক সে সময়েই সুযোগ বুঝে আহনাফ ওরফে আফরান কেটে পরে। আদনান অবস্থা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,

“আমরা ঠিকই বুঝেছিলাম এই ব্যাটা ঠিক পালাবে।”

তারপর জোরে বলে উঠে,

“প্যাট, ম্যাট তোমরা সামনে আসো।”

ভিড় ঠেলে প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ স্টেজের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, দুহাতে শক্ত করে ধরে আছে আরফান নামক শয়তান টাকে। আলিয়া সামনে যেয়ে ওর গালে চড় দিয়ে, কলার চেপে জিজ্ঞেস করতেই আরফান সব স্বীকার করে সব ঘটনা সত্য বলে। এত সব প্রমাণ সামনে হাজির করার পর, স্বীকার করা ছাড়া আফরানের আর কোনো উপায় ছিল না।

আর এখানেই সমাপ্তি ঘটে বিয়ের সব আয়োজন।

*

তিনমাস পর এক সন্ধ্যায় মুজদাহীর পরিবারে আবারও বেজে উঠেছে বিয়ের সানাই। পুরো বাড়ি সজ্জিত হয়েছে সোনালী আলোক সজ্জায়। বাড়িতে বসেছে চাঁদের হাঁট। মুজদাহীর পরিবার ভাসছে যেন আজ খুশির জোয়ারে।

কিভাবে?

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৮

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩৮
#লেখিকাTasneem Tushar

বিয়ে বাড়ি। চারিদিকে ধুমধাম। উৎসবমুখর পরিবেশ জমে উঠেছে মানুষের আনাগোনাতে। জোরে গান বাজছে, বাচ্চারা ছুটোছুটি করছে, ছেলে মেয়েরা কে কী পড়বে তা নিয়ে হৈ চৈ চলছে। এদিকে আলিয়াকে বউ সাজাতে বেশ নামকরা মেকআপ আর্টিস্টকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিয়ের মূল অনুষ্ঠান শুরু হতে এখনো ঘন্টা খানিক বাকি। সবাই ব্যাস্ত অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হওয়ার জন্য।

*

আদিল ফোন হাতে নিয়ে বারবার তিয়াশাকে কল করে যাচ্ছে। কিন্তু তিয়াশার ফোন বন্ধ। গতকাল রাতে তিয়াশা ফোন করেছিল, কিন্তু সে ধরতে পারেনি এর জন্য এত রাগ? রাগ করে ফোনটাই বন্ধ করে রেখেছে। সে কি বুঝেনা যে আমি এখনো তাকে ভালোবাসি? আজকে বিয়েতে আসলে তিয়াশার মান ভাঙাতেই হবে।

হঠাৎ আদনানকে আদিলের ঘরের পাশ দিয়ে যেতে দেখেই আদিল ডাক দেয়,

“আদনান শোন তো?”

“কি ভাইয়া? কিছু বলবি?”

“হুম। বেশী ব্যাস্ত নাকি?”

“এইতো একটু ফোন করার চেষ্টা করছি। ফোন ধরছেনা। গতকাল যাওয়ার সময় দেখাও করে গেলনা।”

“কার কথা বলছিস?”

“কে আবার, তিয়াশা। গতকাল রাতে হুট করেই দেখি সে নাই। ফোন দিয়েছিলাম পাইনি। এখন চেষ্টা করছি তাও ঢুকছেনা।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



আদিলের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে। চিন্তিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?”

“ঠিক বুঝতে পারছিনা। আচ্ছা তুই যেন কেন ডাকলি?”

আদিল যেটা জানতে চেয়েছিল সেটা আদনান নিজেই বলে দেয়াতে সে উত্তরে বলে,

“না, এমনি। তুই যা তোর কাজ কর।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

বলে আদনান ফোন কানে নিয়ে হাটতে হাটতে চলে যায়, প্রত্যাশা এবার যদি তিয়াশা ফোন ধরে। কিন্তু নাহ তিয়াশার ফোন বন্ধই পাচ্ছে। চিন্তার রেখা আদনানের কপালেও ফুটে উঠে। কি হলো তিয়াশার? কোনো বিপদে পড়লো নাতো?

*

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে তিয়াশাদের বাসার ড্রইংরুমে। তিয়াশার মা নীলিমা হাবিব তাদের সামনে এসে বসেছেন, চোখে মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ। ম্যাথিউ অস্থির হয়ে পা নাড়ছে, আর প্যাট্রিসিয়া আনমনে নখ খুটছে। টেবিলে রাখা পানি ভর্তি গ্লাসটি নিয়ে দুটো চুমুকে পানি পান করে নীলিমা হাবিব বলে উঠেন,

“তাহলে তোমরা কিছুই জানোনা?”

ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া দুজনেই একসাথে বলে উঠে,

“সত্যি বলছি আন্টি, কিচ্ছু জানিনা।”

প্যাট্রিসিয়া বলতে থাকে,

“গতকাল রাতে হুট করেই উধাও হয়ে গেল। কল করে পাইনি। পরে আপনাকে কল দিলে, আপনি জানালেন যে বাসায় চলে এসেছে।”

“বুঝতে পারছিনা কি হয়েছে। রাতে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পর থেকেই দরজা বন্ধ করে বসেছে। নাওয়া খাওয়া নেই, কারো সাথে কোনো প্রকার কথাও বলছেনা। দরজাও খুলছেনা।”

কিছু একটা ভেবে নীলিমা হাবিব আবার বলে উঠেন,

“আচ্ছা, আদনান-আদিল তারা কোন কিছু বলেনি তো আমার মেয়েকে? অথবা হলুদের অনুষ্ঠানে কোনো অঘটন ঘটেনি তো?”

ম্যাথিউ বলে উঠে,

“আন্টি, টি আমাদের সাথেই ছিল সবসময়। হঠাৎ ই দূরে সরে যায়। আর বিয়ের অনুষ্ঠানে কিছু হলে কারো না কারো তো চোখে কিছু পড়তো। কিন্তু তেমন কিছু তো উপলব্ধি করিনি।”

“তাহলে মেয়েটা গেল হাসিখুশি আর এত মনমরা হয়ে ফিরে আসলো কেন?”

প্যাট্রিসিয়া বলে উঠে,

“আন্টি, সেটা তো শুধু তিয়াশাই বলতে পারবে। কিছু মনে না করলে আমরা কি তিয়াশার সাথে একটু দেখা করতে পারি? দেখি চেষ্টা করে সে কিছু বলে কিনা।”

“যাও। সে তার রুমেই আছে। দেখো দরজা খুলে কিনা।”

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ অনেকবার অনুরোধ করার পরে তিয়াশা ভেতর থেকে দরজা খুলে। তিয়াশার বিধ্বস্ত অবস্থা। একরাতেই মনে হচ্ছে তার চোখের নিচে কালি পরে গেছে। মুখটা ভীষণ মলিন দেখাচ্ছে। প্যাট্রিসিয়া ঘরে ঢুকতেই তিয়াশা তাকে জড়িয়ে ধরে ডুকড়ে কেঁদে উঠে। প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনেই তিয়াশাকে ধরে তার ঘরে বিছানায় নিয়ে বসায়। তারপর তিয়াশাকে প্যাট্রিসিয়া শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“কি অবস্থা হয়েছে তোর? কি হয়েছে একটু বলতো। গতকাল রাতে কেন ফিরে এলি আমাদেরকে না জানিয়ে? কত চিন্তায় ছিলাম আমরা জানিস।”

তিয়াশা ড্যাবড্যাব চোখে অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে। মুখে কোনো শব্দ নেই। প্যাট্রিসিয়া একটু ধাক্কা দিতেই সংবিত ফিরে পেয়ে বলে,

“হুম।”

“কি হুম? গতকাল রাতে কি হয়েছে সেটা বল।”

“আ..আফ…আফরান।”

“আফরান…? তো..তোর প্রাক্তন? ওই বদমাইশ লোকটা? সে কোথা থেকে এলো আবার? তোর মাথা ঠিক আছে তো?”

“হুম। সেই তো…।”

“সেই…তো? সেই তো কি? কি হয়েছে বল?”

ম্যাথিউ এবার অধর্য্য হয়ে বলে উঠে,

“কি করেছে সে?”

তিয়াশা ভীত কণ্ঠে বলে উঠে,

“আলিয়া আপি মানে আদনানের বোনের…হবু বর, সেই ই আফরান!”

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনেই চমকে উঠে,

“কী? কী বলছিস আবোল তাবোল? ঠিক বলছিস তো তুই?”

“হুম…একদম ঠিক বলছি।”

“আর একটু পরেই তো ওদের বিয়ে। তাহলে তো আদনান কে এক্ষুণি জানাতে হবে এটা। ওই ফ্রডের সাথে তো কোনো ভাবেই এই বিয়ে হতো দেয়া ঠিক হবেনা।”

ম্যাথিউ হাতে ফোন নিতেই তিয়াশা হুট করে ম্যাথিউ এর হাত থেকে ফোন নিয়ে ছুড়ে ফেলে। ম্যাথিউ অবাক হয়ে বলে উঠে,

“করছিস কি?”

তিয়াশারা চোখে মুখে ভয়ের ছায়া,
“নাহ, কাউকে কিচ্ছু বলা যাবেনা, বললে অনেক বড় ক্ষতি করবে সে আমাদের।”

*

আদনান হুট করেই আদিলের ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে,

“ভাইয়া, তুই কি জানিস তিয়াশার কি হয়েছে?”

আদিল একটু চমকে উঠে। আদনান কি কিছু টের পেয়ে গেল নাকি? নাহ পাওয়ার তো কথা না। একটু ইতস্তত হয়ে উত্তরে জানায়,

“না…না, আমি কি করে জানবো? তিয়াশা না তোর বন্ধু, তুই-ই তো ভালো বলতে পারবি।”

“আচ্ছা আমার বন্ধু, আর তোর? তোর কিছু হয়না?”

আদনানের এমন প্রশ্নে আদিল বেশ বিব্রত হয়ে যায়, কিছু বলতে নিবে তার আগেই আদনানকে খুঁজতে খুঁজতে আদিলের ঘরে ঢুকে তাদের কাজিন মাইশা। মাইশা ঘরে ঢুকেই আদনানকে দেখতে পেয়ে তার হাত জাপটে ধরে বলে,

“এইতো পেয়েছি তোমাকে? সারাবাড়ি খুঁজছি তোমাকে?”

আদনানের মেজাজ প্রচন্ড পরিমাণে খারাপ হয় মাইশাকে দেখে। একেতো তিয়াশাকে ফোন দিয়ে পাচ্ছেনা। তারমধ্যে প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনের একজনও ফোন ধরছেনা। তার মধ্যে এখন মাইশা নামক উটকো ঝামেলা এসে হাজির। নিজেকে শান্ত রেখে জোর করে মুখে হাসি টেনে জিজ্ঞেস করে,

“মাইশা, বোন আমার। তুমি এখানে কেন এসেছো? তুমি না তোমার ইউটিউবের ভ্লগিং নিয়ে ব্যস্ত? সেই কাজটাই করো না।”

“একদম ঠিক ধরেছ, সেই জন্যই তো তোমার কাছে আসা।”

মাইশা তার ফোন এগিয়ে নিয়ে আদনানকে দেখিয়ে বলে,

“তোমাকে একটা জিনিস দেখানোর জন্য কতক্ষন ধরে খুঁজছি। দেখো না।”

“কি জিনিস?”

“গতকাল রাতে হলুদের অনুষ্ঠানের আমি একটা ভ্লগ তৈরি করেছি। এখন তুমি একটু দেখোনা কেমন হয়েছে।”

আদনানের ইচ্ছে করছে মাইশার ফোনটা নিয়ে একটা আছাড় মারতে। কিন্তু তারপরেও সে জোর করে মুখে প্লাস্টিক হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। এখন যদি ওই ডিভিও না দেখে, এই মেয়েটা বাড়িতে আর শান্তি রাখবেনা। বিয়ে বাড়িতে অশান্তি বাড়াতে চায়না কেউ। এদিকে আদিল ও আদনানের বেহাল অবস্থা দেখে হেসে শেষ। সেও আদনানের সাথে এসে যোগ দিয়ে বলে,

“হুম দেখি তো মাইশা মনি কি ভিডিও তৈরি করেছে।”

খুব অনাগ্রহ নিয়েই ভিডিওটা দেখতে থাকে আদনান, আর আদিল দেখছে আদনানকে আরো খেপানোর জন্য। দেখতে দেখতে হঠাৎ দুই ভাইয়েরই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। একি! এ কী দেখছে ওরা?

আদিল ও আদনান একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ী করে মাইশাকে জিজ্ঞেস করে,

“তুমি এই ভিডিওটা কখন করেছ?”

“আরে বাবা গতকাল রাতে করেছি।”

আদিল তখন বলে উঠে মাইশা কে,

“মাইশা মনি তোমার ফোনটা রেখে যাও। তোমার ভিডিওটা আরেকটু সুন্দর করে এডিটিং করতে হবে।”

আদনান মাইশাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে চুমু খেয়ে বলে,

“এই প্রথম তুমি একটা কাজের কাজ করেছ।”

বলেই আদিল ও আদনান দুজনেই একসাথে বেরিয়ে পরে।

*

তিয়াশা মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে, তার সামনে আদিল ও আদনান। পাশে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া। সবাই তিয়াশার মুখের দিকে তাকিয়ে। আদনান তিয়াশার চোখের সামনে মাইশার ফোনটি ধরে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে,

“কি হলো, বলবেনা? আমার বোনের হবু বরের সাথে তুমি অত রাতে সেখানে কি করছিলে?”

আদিলও বেশ বিরক্তি নিয়ে বলে,

“আমার বোনের হবু বরের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?”

তিয়াশা ভিডিওটা দেখে ভাবে আর গোপন রাখা গেল না। মাইশার ব্লগ এর ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড এ যে তিয়াশা আর আফরানের দেখা হওয়ার সব কিছু রেকর্ড হয়ে গিয়েছে, তা মাইশাও খেয়াল করে নাই।

তিয়াশা আদিলের প্রশ্ন শুনে একটা ধাক্কা খায় এবং চোখ তুলে তাকিয়ে খুব শক্ত ভাবে উত্তর দেয়,

“হুম, সম্পর্ক ছিল।”

“মানে?”

এবার প্যাট্রিসিয়া উঠে দাঁড়ায়। তিয়াশাকে বলে,

“তুই সত্যিটা কেন বলছিস না?”

আদনান জিজ্ঞেস করে, “কোন সত্য?”

প্যাট্রিসিয়া এবার নিজেই তিয়াশার অতীতের ঘটে যাওয়া বিয়ে থেকে শুরু করে ডিভোর্স পর্যন্ত সব ঘটনা খুলে বলে। সবটুকু শুনে আদনান ও আদিল বেশ দুঃখিত হয়। আদিল যে আগে থেকেই সব জানে সেটা সে প্রকাশ করেনি। সব শুনে আদনান বলে উঠে,

“তিয়াশার সাথে যা হয়েছে, সেটা কোনো ভাবেই তার প্রাপ্য নয়। আশা করি তিয়াশা অতীত ভুলে সামনের দিকে সুন্দর ভাবে একটি জীবন গড়বে।”

কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলে উঠে,

“সব বুঝলাম, কিন্তু তিয়াশার সাথে আমার বোনের হবু বরের কি সম্পর্ক সেটা তো পরিষ্কার না”

এবার তিয়াশা বলে,

“তোমরা বুঝতে ভুল করতেছো। তোমরা যাকে তোমার বোনের হবু বর বলছো, সেই আমার প্রাক্তন স্বামী আফরান।”

আদিল আদনান দুজনেই আঁতকে উঠে। এমন কিছু শুনবে আশা করেনি। আদনানের কপাল কুঁচকে গেছে, আর আদিল তো উত্তেজিত হয়ে বলেই উঠে,

“তিয়াশা, কী বলছো! তোমার কোনো ভুল হচ্ছেনা তো? কিভাবে সম্ভব এটা? দুজনের নাম ও তো এক না।”

তিয়াশা বলে, “নাম দুটো আলাদা হলেও, ওরা দুইজন একই ব্যক্তি। যে আহনাফ ফারাবি, সেই আফরান সিদ্দিক। ওর মন পরিবর্তনের সাথে সাথে সে তার নাম ও পাল্টে নিয়েছে।”

আদনান এখনো পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না তথ্যটা।

“আচ্ছা, তোর কথা বুঝতে পারছি। এটা সত্যি হলে তো আফরান অনেক বড় ধোকাবাজ একটা। আমাদেরকে দ্রুত এই বিয়ে ভাঙতে হবে তো। আমার বোনের বিয়ে এই রকম একটা ধোকাবাজ আর অমানুষের কাছে দিয়ে আমি তার সর্বনাশ হতে দিতে পারি না।”

তিয়াশা তৎক্ষণাৎ বলে উঠে,

“কিন্তু…।”

“কিন্তু কি?”

“গতকাল রাতে সে আমাকে হুমকি দিয়েছে, যে আমি যদি তার আসল পরিচয় ফাঁস করে দেই, তাহলে সে আমার পরিবারের মানুষের অনেক বড় ক্ষতি করবে। তাইতো গতকাল রাতে আমি ভয় পেয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে এসেছি।”

আদিল ও আদনান দুজনেই তিয়াশাকে আশ্বস্ত করে বলে,

“তোমার কোনো ভয় নেই তিয়াশা। আমরা তোমাদের পাশে আছি।”

তারপর আদিল তিয়াশাকে বলে,

“আচ্ছা, তোমার কাছে কি এমন কিছু আছে যা দিয়ে অন্যদেরকে সহজে প্রমাণ দেখাতে পারবো।”

তিয়াশা কিছুক্ষণ ভাবতে থাকে। এরপর উঠে গিয়ে ওর মোবাইলে ফেসবুক এ ঢুকে ব্যক্তিগত হিডেন এলবাম থেকে কিছু ফটো বের করে দেখায়।

“এগুলা দেখলেই তোমরা তোমাদের প্রমাণ পেয়ে যাবে।”

সবাই তিয়াশার বিয়ের ছবি সহ আরো কিছু ছবি দেখে। স্পষ্ট দেখা যায় তিয়াশারা সাথে আফরান কে।

আদিল বলে উঠে,

“গুড। এটাতেই হবে। আর ভিডিও তো আছেই। আর হ্যা শোনো তুমি আন্টি, প্যাট আর ম্যাট কে সাথে নিয়ে যথা সময়ে অনুষ্ঠানে পৌঁছে যাবে। সেখানেই সবার সামনে তার মুখোশ টেনে খুলবো।”

তিয়াশা ভীত হয়ে কিছু বলতে যাবে, তখন আদিল তিয়াশার হাত ধরে বলে,

“কোনো ভয় পাবেনা। চলে এসো।”

আদনান আদিলকে বলে উঠে,

“ভাইয়া, আর অপেক্ষা কেন তাহলে? চল জলদি, কিছু কর। আপির জীবনটা বাঁচতেই হবে এই শয়তানটার হাত থেকে।”

আর কিছুক্ষন পরেই আলিয়ার বিয়ে পড়ানো হবে। সময় থাকতে ওরা পারবে তো এই বিয়েটা ভাঙতে?

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

[দুঃখিত পর্বটি দেরি করে দেয়ার জন্য। ব্যাক্তিগত কাজে কিছুটা ব্যস্ত থাকার কারণে গল্পটি দিতে পারিনি। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।]

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৭

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩৭
#লেখিকাTasneem Tushar

হলুদ সন্ধ্যা।

একমাস পর আজ নাদিম মুজদাহীরের মেয়ে আলিয়া মুজদাহীর ও তার হবু জামাতা আহনাফ ফারাবি’র একযোগে গায়ে হলুদ আজ। জমজমাট আয়োজন। চারিদিকে উৎসব। সুবিশাল মাঠে খোলা আকাশের নিচে সাদা ও হালকা গোলাপি রঙের ফুল ও নিয়ন লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে হলুদের মঞ্চ। অনুষ্ঠানে নাদিম মুজদাহীরের পরিচিত অনেক নামিদামি মানুষের আনাগোনা। এছাড়া অন্যান্য আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবরা তো আছেই। হলুদে মেয়েরা সবাই পড়েছে ময়ূরকন্ঠী নীল রঙা শাড়ি আর ছেলেরা নীলচে সবুজ রঙা পাঞ্জাবী।

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। একে একে সবাই গায়ে হলুদ দিচ্ছে ছেলে ও মেয়েকে। আর আরেকটি মঞ্চে লাইভ গান হচ্ছে। নওরীন মুজদাহীর আদনানকে ডেকে জিজ্ঞেস করে বলে,

“তোর ঐ বন্ধুটা কই?”

“কার কথা বলছো?”

“উফ…নামটা মনে পড়ছেনা। ভীষণ মিষ্টি মেয়েটা। খুব সুন্দর গান করে যে।”

আদনান হেসে বলে,

“তিয়াশার কথা বলছো?”

তারপর হাতের ঘড়িতে তাকিয়ে বলে,

“হুম বলেছে তো আসবে। কিন্তু এখনো কেন আসছেনা।”

“আসলে আমার সাথে দেখা করাতে ভুলিস না কিন্তু। ওর কণ্ঠে আবারও গান শুনতে চাই।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে আম্মু।”

*“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


তিয়াশা অনুষ্ঠানস্থলের প্রধান ফটকের সামনে এসে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ তাকে ঠেলেও ঢুকাতে পারছেনা গেটের ভেতরে। জিজ্ঞেস করলেও বলছেনা, শুধু ছটফট করছে। তিয়াশার কেন যেন খুব নার্ভাস লাগছে, হাত পা কাঁপছে। অনেক বলে কয়ে প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ তিয়াশাকে ভেতরে ঢুকালেও এখন তিয়াশা প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ এর পেছন পেছন আসছে। চেষ্টা করছে নিজেকে লুকোতে। প্যাট্রিসিয়া একটু ক্ষেপে ধমক দিয়ে উঠে তিয়াশাকে,

“কিরে তুই কি চুরি বা ডাকাতি করেছিস? তাহলে কেন এমন করছিস? এরকম করলে একটা চড় খাবি। ঠিক হয়ে হাট।”

তিয়াশা প্রথমে মন খারাপ করলেও, হঠাৎ বোধোদয় হয়। আসলেই তো সে তো কিছু করেনি বা বলেনি নিজ থেকে। তাহলে কেন এমন চোরের মতো লুকিয়ে হাটবে। প্যাট্রিসিয়াকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলে,

“ধন্যবাদ, দোস্ত।”

“কেন?”

“তোর ধমকের জন্য।”

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তিয়াশার দিকে। ধমক খেয়ে কেউ ধন্যবাদ বলে? তারপরেও খুশি এখন তিয়াশাকে স্বাভাবিক দেখে। মাঠের শেষ প্রান্তে হলুদের স্টেজ, সেদিকেই তারা হেটে চলেছে যে দিকে আদনান থাকবে বলেছে।

*

আদিলের পরণে শেরওয়ানি। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে, দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক রাজকুমার দাঁড়িয়ে। সে কথা বলছে তার দুই বন্ধু মাহিদ ও সুজয়ের সাথে। দেখে মনে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার প্রায় শেষের দিকে মাহিদের সাথে হাত মিলিয়ে বলে উঠে,

“বন্ধু, ধন্যবাদ তোকে। সবকিছু কিন্তু এখন তোর উপরেই নির্ভর করছে।”

মাহিদ হেসে বলে,

“ধন্যবাদ তো আমি তোকে দিব, বরং তোর জন্যই আমার চাওয়া পূর্ণ হতে যাচ্ছে।”

“তা যাই হোক, এখন সবকিছু ভালো ভাবে সম্পন্ন হলেই হলো।”

তারপর সুজয়ের কাঁধে হাত রেখে চাপর দিয়ে বলে,

“তোকেও অনেক ধন্যবাদ। তুই না থাকলে আমি এত সহজে এই কন্ট্রাক্টটা পেতাম না।”

“হয়েছে, এটাতে কি শুধু তোর লাভ হয়েছে? আমারও তো লাভ হয়েছে নাকি?”

আদিল হেসে দুই বন্ধুকেই সামনের দিকে হাত দেখিয়ে বলে,

“চল, যাওয়া যাক ওদিকটায়?”

যেতে যেতে আদিলের পথিমধ্যে চোখ আটকে যায় তিয়াশার দিকে। কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে সবুজ পাড়ের ময়ূরকন্ঠী নীল রঙা কাতান শাড়িতে। কানে টানা দুল, মাথায় টিকলি, নাকে নাকফুল, চুলে বেনুনি করে তাতে সাদা ফুল দিয়ে সজ্জিত করা। চোখে গাঢ় কাজল, আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। হাত ভর্তি কারুকাজ পূর্ণ চুড়ি। ইশ যদি তিয়াশার হাত দুটি সে আরেকবার ধরতে পারতো। সুজয় আদিলের চোখের সামনে তুড়ি বাজাতেই আদিল সংবিত ফিরে পেয়ে হেসে দেয়। সুজয় হেসে বলে,

“কিরে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি?”

“আরে, কোথাও না।”

“আমি তো গিয়েছিলাম।”

“মানে?”

“ঐ যে ওই মেয়েটিকে দেখছিস, সাদা এক লম্বুর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। চিনিস তাকে?”

আদিল কিছু বলার আগেই দেখতে পায় আদনান তিয়াশার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আর আদনানকে দেখেই সুজয় আদিলকে বলে উঠে,

“মনে হচ্ছে মেয়েটি আদনানের বন্ধু। শোন, আমি একটু পরিচিত হয়ে আসি।”

আদিলকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় সুজয় তিয়াশাদের দিকে। আদিলের ইচ্ছে করছে সুজয়কে ধরে ঘুষি লাগাতে। কিন্তু শুধু নীরব তাকিয়ে দেখা ছাড়া তার কিছু করার নেই এখন। আদিল পেছন ফিরে মাহিদকে নিয়ে ডাঃ সামির ও তার মেয়ে সুহানির সামনে যেয়ে দাঁড়ায় এবং খোশ গল্পে মেতে উঠে। কিছুদূর থেকে নাদিম মুজদাহীর আদিলকে সুহানি ও তার বাবার সাথে গল্প করতে দেখে ভীষণ খুশি হয় এই ভেবে যে ছেলের মন সুহানিতে বসেছে শেষ পর্যন্ত।

অন্যদিকে আদনানের সাথে কথা বলতে থাকলেও তিয়াশার চোখ থাকে আদিলের দিকে। ভাবতে থাকে, আদিল কি আমাকে দেখতে পায়নি? নাকি এড়িয়ে গেল? হয়তো সে ভালোই আছে সুহানির সাথে।

আদনান, তিয়াশা, ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া কথাবার্তা চালিয়ে যাবার মাঝে সুজয় পৌঁছলে আদনান তিয়াশা ও তার বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দেয় তার সাথে। গল্প করার এক ফাঁকে আদনান তিয়াশাকে বলে বসে,

“তুই বলেছিলি আমার অনুরোধ রাখবি।”

“হুম, বল কি অনুরোধ। ভুলে যাস না তোর অনুরোধেই আজ এসেছি।”

“বিয়েতে আসা অনুরোধ ছিলো না, ঐটা আদেশ ছিল। না আসলে কানে ধরে নিয়ে আসতাম তোরে।”

“ইশ।”

তিয়াশার হাত ধরে টানতে টানতে মঞ্চের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে,

“আমার সাথে একটা ড্যান্স পারফরম্যান্স করতে হবে তোর।”

“তোর মাথা কি খারাপ হয়ে গেল? কোনো তো রিহার্সেল করিনি। কিভাবে কি করবো?”

“কোনো কথা না, চল আমার সাথে। একটু পরেই আমাদের ডাকবে মঞ্চে।”

“আচ্ছা যাচ্ছি, আগে আপু আর দুলাভাইয়ের সাথে একটু দেখা করি, হলুদ ছোঁয়াই তারপর নাহয়…।”

“পরে দেখা করিস, আগে আপুকে সারপ্রাইজ দিয়ে নেই।”

মঞ্চে এসে দাঁড়াতেই স্পিকারে গান বেজে উঠে,

“মেহেন্দি লাগাকে রাখনা
ডোলি সাজাকে রাখনা

লেনে তুঝে ও গরি
আয়েঙ্গে তেরে সাজনা।”

দুজনে হাসি ঠাট্টা করে বেশ মজা করে পারফর্ম করে এবং করতালিতে মুখরিত হয় অনুষ্ঠান। সবাই আরেকটা পারফরম্যান্স এর জন্য অনুরোধ করলে আদনান নেমে যায় স্টেজ থেকে পরবর্তী গান ঠিক করার জন্য। এর মাঝেই হঠাৎ স্টেজ অন্ধকার হয়ে যায় এবং গান শুরু হয়,

“তেরি মেরি, মেরি তেরি
প্রেম কাহানি হ্যায় মুশকিল
দো লাফজো মে ইয়ে বায়ানা হো পায়ে।

এক দুজে সে হুয়ে জুদা
যাব এক দুজে সে লিয়ে বানে।”

স্টেজের বাতি জ্বলে উঠে এবং তিয়াশা তাকিয়ে দেখে সামনে আদিল দাঁড়িয়ে। আদিল তিয়াশাকে কাছে টেনে কোমর পেঁচিয়ে ধরে এবং খুব ধীরে ধীরে গানের তালে তালে নাচতে থাকে তিয়াশাকে নিয়ে। তিয়াশার সারা গায়ে শিহরণ বয়ে যায়, আর আদিলের দৃষ্টি নিবদ্ধ তিয়াশার দিকে।

আদনান ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মনের ভেতর কেমন খচ খচ করতে থাকে তার। তাদের নাচ শেষ হলে তাদেরকে যেয়ে সাধুবাদ জানায়। সেই সময় নওরীন মুজদাহীর তিয়াশার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে,

“সোনা মেয়েটা, ভেবেছিলাম শুধু গান জানো, এখন তো দেখছি নাচেও পারদর্শী।”

তিয়াশা ধন্যবাদ জানিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কুশল বিনিময় করার ফাঁকে নওরীন মুজদাহীর তিয়াশাকে বলে তার আম্মুকেও যেন নিয়ে আসে বিয়ের অনুষ্ঠানে। এবং তিয়াশাও কথা দেয় সে তার মা নীলিমা হাবিবকে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসবে।

নওরীন মুজদাহীর তিয়াশাকে এবার হলুদের স্টেজে নিয়ে যায় আলিয়া ও তার হবু বর আহনাফের গায়ে হলুদ দেয়ার জন্য। সাথে আছে আদনান, প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ। গায়ে হলুদ দিতে গেলে আলিয়া যখন পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে তার হবু বরের সাথে তখন তিয়াশার চোখ ছানাবড়া। এ কাকে দেখছে সে? এটা কি দুঃস্বপ্ন নাকি বাস্তব! কিভাবে সম্ভব এটা? একি আলিয়ার হবু বর আহনাফ ফারাবি নাকি তিয়াশার প্রাক্তন স্বামী আফরান?

মুহূর্তের আকস্মিকতায় তিয়াশা স্তব্ধ হয়ে যায়। কি করবে ঠিক বুঝতে পারে না। কোনরকমে কাঁপা কাঁপা হাতে হলুদ দিয়ে দেয় দুজনকেই। রক্তিম দৃষ্টিতে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে আফরান ওরফে ছদ্মনাম ধারী আহনাফ ফারাবি। তিয়াশা দ্রুত স্টেজ থেকে সরে আসে, ওর যে আফরানের কথা আদিলকে জানাতেই হবে। এই বিয়ে যে বন্ধ করতে হবে, নাহলে যে আলিয়ার সর্বনাশ হয়ে যাবে এই লোভীর সাথে বিয়ে হলে।

মোবাইলটা বের করে তিয়াশা আদিলকে কল দেয়। রিং বেজেই যায়, কিন্তু কেউ ধরে না। তার ঠিক কিছুক্ষন পরেই ফোনে একটা মেসেজ আসে প্রাইভেট নাম্বার থেকে, তাতে লিখা,

“সর্ব ডানের প্রাচীরের দিকটায় একবার আসবে? কথা বলতে চাই একটু তোমার সাথে। অপেক্ষায় আছি।”

তিয়াশা ভাবে এটাই ভালো, সামনা সামনি আদিলকে জানাতে পারলেই বেশী ভালো হবে। তাই দ্রুত পায়ে সে প্রাচীরের দিকে হাটতে থাকে। চোখজোড়া খুঁজতে থাকে আদিলকে। সেখানে পৌঁছতেই তিয়াশার হাতে হঠাৎ হেচকা টান পরে এবং কেউ একজন গায়ের জোড়ে তিয়াশাকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। তিয়াশা আধো আলো আধো ছায়াতেও যেন স্পষ্ট দেখতে পায়, তার মুখ চেপে ধরে যে আছে সে আর কেউ নয়, তার জীবনের বিভীষিকা, আফরান।

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৬

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩৬
#লেখিকাTasneem Tushar

আদনান ঘরে পায়চারি করছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে বেশ চিন্তিত। আদিলকে বাসায় ফিরতে দেখেই সে আদিলের রুমের দিকে ছুটে যায়। আদিল আদনান কে দেখে হেসে বলে,

“কিরে? কেমন আছিস?”

“এই তোর আসার সময় হলো? কই ছিলি তুই গতকাল? আম্মু পাগল প্রায়, আর বাবা তো পুরোই ক্ষেপে আছে। তোর না সুহানির সাথে দেখা করার কথা। করেছিস?”

“আদনান, তুই একটু বোস। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে বলছি।”

“তুই এত শান্ত আছিস কিভাবে বলতো?”

আদিল মুচকি হেসে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে,

“তুই ও একটু শান্ত হ। আমি এক্ষুনি আসছি। বাবা বাসায় আছে নাকি সেটা বল।”

“হুম আছে।”

“তাহলে একটা কাজ কর। বাবা, আম্মু আর আপুকে নিয়ে একসাথে বস। আমি এক্ষুনি আসছি।”

“হঠাৎ? কেন?”

“তোকে যা বলছি তাই কর। আমি আসলেই জানতে পারবি।”

*“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


মুজদাহীর পরিবারের সবাই লিভিংরুমে জড়ো হয়েছে। নাদিম মুজদাহীর ভীষণ ক্ষেপে আছে। মনে হচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিবে। নওরীন মুজদাহীরের কান্নাকাটি থেমেছে কিন্তু তিনিও ছেলের উপর রাগ করেছে ভীষণ। আদিলের উপস্থিতিতে সবাই নড়েচড়ে বসেছে। আদিল সবার আগে যেয়েই নওরীন মুজদাহীরকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আমি খুব দুঃখিত মা। তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। বিশ্বাস করো আমি নিজেও অনেক কষ্ট পেয়েছি। কথা দিচ্ছি আর কষ্ট দিবোনা। এবার হাসো।”

নওরীন মুজদাহীর এতক্ষন অভিমান করে থাকলেও আদিলের কথায় আর রাগ করে থাকতে না পেরে আদিলের কপালে চুমু খেয়ে বলে,

“আমি জানিত আমার ছেলের পাগলামি করার পেছনে নিশ্চই কোনো কারণ আছে। কি হয়েছিল তোর বল তো আমাকে।”

“তোমাকে না বললে কাকে বলবো মা?”

নাদিম মুজদাহীর খেঁকিয়ে কেশে উঠে রাগিত কণ্ঠে বলে উঠে,

“মা ছেলের আদিখ্যেতা বাদ দিয়ে, এখন আসল কথায় আসো। সুহানির সাথে দেখা হয়েছিল? পছন্দ হয়েছে তোমার? আমি চাইছি আলিয়া আর তোমার বিয়ে একই সময়ে সম্পন্ন করতে।”

এবার আদিল সবার সামনে একটি চেয়ার টেনে নিয়ে এসে বলে,

“সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বিশেষ করে বাবাকে; আমি সুহানি কে বিয়ে করতে পারবোনা। আমি…”

আদিল কথা শেষ করতে না করতেই নাদিম মুজদাহীর গর্জে উঠে বলেন,

“তোমার এত সাহস আসে কোত্থেকে? আমার কথার বাইরে তুমি কথা বলছো? সুহানিকেই তোমার বিয়ে করতে হবে।”

“বাবা… আমার কথা তো শোনো।”

“যত নষ্টের মূল এই আদনান। সেই তোমার মাথা নষ্ট করছে তাইতো? শোনো আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি সুহানির সাথেই তোমার বিয়ে হবে। আমি ডাঃ সামির কে কথা দিয়ে দিয়েছি। আমি চাই আলিয়ার বিয়ের দিনই তোমার বিয়ে হবে।”

“বাবা.. এখানে আদনান কিছু করেনি। ওকে কেন দোষ দিচ্ছ বাবা? আমি নিজে থেকেই বলছি আমি সুহানিকে বিয়ে করতে চাইনা। আমি অন্য একজন…”

“মুখে মুখে তর্ক করাও শিখেছ এখন তাহলে? আমি যেটা বলেছি সেটাই ফাইনাল।”

তারপর একটু শান্ত হয়ে নাদিম মুজদাহীর আবার বলে উঠেন,

“তোমরা আগেই জানো যে আমি ডাঃ সামিরের সাথে একটা বিজনেসে যোগ করছি আর সেটা শুধু মাত্র সম্পন্ন হবে যদি তুমি সুহানিকে বিয়ে করো। আমি এর কোনো হেরফের চাইনা। তুমি আমার একমাত্র যোগ্য সন্তান। আশা করছি তুমি আমাকে আমার বন্ধুর কাছে ছোট করবেনা। আর আমি যা করছি আমার পরিবারের ভালোর জন্যই করছি। তোমাদের জন্যই তো করছি। আর হ্যাঁ, তোমার মুখে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না সুহানিকে বিয়ে করার বিরুদ্ধে। নতুবা এর জন্য শাস্তি ভোগ করবে আদনান।”

আদিল চমকে যেয়ে বলে উঠে,

“বাবা, আদনান তো কিছু করেনি। ওকে কেন টানছো?”

“দেখো কথা বাড়িও না বেশী। যদি আমার অমত হও তাহলে জেনে রেখো, শাস্তি স্বরূপ আদনানকে আমি ত্যাজ্য করে দিবো। এখন ভেবে দেখো তুমি সুহানিকে বিয়ে করবে কি করবে না।”

আদনান এতক্ষন চুপ থাকলেও এবার কথা না বলে পারেনা। ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠে,

“সত্যি বাবা আমি ভীষণ অবাক হচ্ছি তোমাকে দেখে। তুমি খুব ভালো করে জানো ভাইয়া আমাকে ভীষণ ভালোবাসে… তাই এভাবে আমাকে শাস্তির ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছো ভাইয়াকে?”

তারপর আদিলের পাশে এসে তার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,

“ভাইয়া… আমার কথা ভাবিস না তো। ত্যাজ্য করলে করবে। আর করলে তো আরো ভালো, এই নরক থেকে বেঁচে যাবো। বাবা যে আমাকে ভালোবাসে না সেটা তো অনেক আগেই বুঝেছি, আর আজ তার প্রমাণ মিললো। কিন্তু আমার জন্য তুই নিজের সুখ বিসর্জন দিবিনা। এই প্রথম তুই নিজের কোনো ইচ্ছের কথা বলেছিস। সারাটা জীবনই তো বাবার ইচ্ছায় সব করলি, এবার না হয় নিজের মনে যা চায় তাই করলি।”

এদিকে আদিলের মনে হাইস্পীডে সব চিন্তা ভাবনা ঘুরছে। কিছুক্ষন চিন্তার হাইওয়ে তে ছুটোছুটি করে শেষে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার বাবাকে বলে উঠে,

“বাবা… আচ্ছা, তুমি যা বলবে তাই হবে। তবে বিয়েটা আমি এত তাড়াতাড়ি করতে পারবোনা। আমার একটু সময় লাগবে। আলিয়া আপির বিয়েটা হয়ে যাক। এর মাঝে আমি নিজেকে একটু তৈরি করি।”

“দ্যাট’স লাইক এ গুড বয়। থ্যাংক ইউ মাই সান।”
“আমি জানতাম তুমি পরিবারের জন্য কোনটা ভালো, সেটা বুঝতে পারবে।”

নাদিম মুজদাহীর প্রচন্ড খুশি হয়েছে। আদিলকে জড়িয়ে ধরে পিঠে চাপড় দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে তাকিয়ে বলে,

“আলিয়ার বিয়ের তারিখ সামনের মাসেই ঠিক করা হোক। আর আদিল, আদনান ও নওরীন তোমরা আয়োজন শুরু করে দাও বিয়ের। মেয়ের বিয়েতে আমি কমতি রাখতে চাইনা। আর আদিল, যাও তোমাকে এই একমাস সময় দেয়া হলো সুহানির সাথে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ার।”

কথাগুলো সেরেই নাদিম মুজদাহীর প্রস্থান করে বসার ঘর। বাকি সবাই আদিলের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নওরীন মুজদাহীরের চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। আলিয়া ও আদনান নির্বাক। আদিল সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে ছলছল চোখে কিন্তু ঠোঁটর কোণে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলে,

“কি হলো এভাবে বসে থাকলে হবে? দেখে তো বিয়ে বাড়ি বলে মনে হচ্ছে না। উঠো, চলো সবাই বিয়ের আয়োজন শুরু করি।”

বলেই আদিল তার নিজের রুমে চলে যায়। পেছন পেছন আদনানও যায়। আদিল নিজের রুম অন্ধকার করে বারান্দায় ইসি চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। আর ভাবছে কি বলবে তিয়াশাকে? ওর কিইবা করার ছিল? নিজের সুখ চাইতে গিয়ে যে ভাইকে বাবার আক্রশে পড়তে হবে সেটা তো সে বুঝেনি। বাবা বেশ ভালো করেই জানে আমি এই পরিবারকে কখনো খণ্ডিত হতে দিবোনা। কিন্তু এখন কি উপায়? তিয়াশাকে যে বললাম আমার উপর ভরসা রাখতে। এখন মেয়েটাকে সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে এসে সেই স্বপ্ন ভাঙব কি করে?

“ভাইয়া”

আদনানের ডাকে সংবিত ফিরে আদিলের। আদিল আদনানকে দেখে হকচকিয়ে উঠে মুখ লুকিয়ে চোখ মুছে হেসে বলে,

“কিরে এখানে কি করছিস?”

“তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?”

“এই প্রশ্ন কেন করছিস?”

“সোজাসুজি বল।”

“আজ থেকে আর করবো না।”

“যা বুঝার আমি বুঝেছি। তুই সুহানিকে বিয়ে করবিনা। এই আমার শেষ কথা।”

“পাগলামি করিস নাতো।”

“এবার একটু স্বার্থপর নাহয় হো। আমার জন্য নিজের মনের মানুষকে বিসর্জন দিবি? এটা আমি মেনে নিবো কি করে?”

“আচ্ছা, এবার আমাকে একটু একা থাকতে দে।”

*

তিয়াশার মনটা বেশ ভালো আজ। কখনো কল্পনা করেনি তার জীবনে কেউ আসবে খুশির বার্তা নিয়ে। গুনগুন করে গান গাচ্ছে আর ভাবছে আদিলকে একটা ফোন দিবে কিনা। ঠিক তখনই আননোন নাম্বার থেকে তিয়াশার ফোনে একটা মেসেজ আসে,

“আদিলের পথ থেকে সরে দাঁড়ান। নতুবা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর জন্য দায়ী থাকবেন আপনি।”

তিয়াশার হার্টবিট বেড়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ডায়াল করে বসে আদিলের নাম্বারে। আদিল ফোন ধরতেই তিয়াশা বলে উঠে,

“হ্যালো, তুমি কোথায়? তুমি ঠিক আছো তো?”

আদিল গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“তিয়াশা?”

“হুম। বলোনা কেমন আছো?”

“ভালো আছি। এত রাতে ফোন করলে যে?”

তিয়াশা ভেবেছিল আদিল খুশি হবে, কিন্তু আদিল যেন কিভাবে কথা বলছে। হঠাৎ খেয়াল হয় সে আদিলকে তুমি করে বলে ফেলেছে। সাথে সাথে লজ্জিত বোধ করে। এমন তো হওয়ার কথা নয়, মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। হয়তো সে জন্য গম্ভীর হয়ে কথা বলছে।

“মিঃ আদিল, আমি দুঃখিত, ভুল করে আপনাকে তুমি বলে ফেলেছি। আসলে আমার ফোনে হঠাৎ…”

আদিল তিয়াশার কথা এড়িয়ে বলে উঠে,

“ভালোই করেছ ফোন দিয়েছো। তোমাকে কিছু বলার ছিল।”

“জ্বি, বলুন।”

আদিল এবার শক্ত হয়ে নিজের বুকের তীব্র বেদনা চেপে রেখে শান্ত কন্ঠে তিয়াশাকে বলে বসে,

“মানুষ হাজারটা স্বপ্ন দেখে, কিন্তু তাঁদের সব স্বপ্ন কি পূরণ হয় বলো?”

“বুঝলাম না।”

“আমার সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নটি বোধহয় স্বপ্ন রয়ে যাবে। যার নিজের স্বপ্ন দেখার অধিকার নেই, সেখানে অন্যজনকে স্বপ্ন দেখানো দন্ডনীয় অপরাধ। তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে, নিশ্চই আমার কথার মর্ম তুমি বুঝে গিয়েছ। আমাকে ক্ষমা করো।”

তিয়াশার বুকে কেমন যেন যন্ত্রনা হচ্ছে। গলা ধরে এসেছে। কোথা থেকে যেন আপনাআপনি চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। ফোনের দুপাশেই নীরবতা। আদিলও নীরবে কাঁদছে। সেই নিস্তব্ধতার মাঝে হঠাৎ মেঘের গর্জন জানান দিচ্ছে দুজনের হৃদয়ে হয়ে যাওয়া কষ্টের ঝড়। কিছুক্ষন পর নীরবতা ভেঙে তিয়াশা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,

“মিঃ আদিল, ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। যেখানে কোনো কিছুর শুরুই হয়নি সেখানে স্বপ্ন ভাঙার প্রশ্নই আসেনা। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন, আপনার উপরে আমার কোনো রাগ নেই।”

“তিয়াশা?”

“জ্বি, বলুন।”

“আমরা কি বন্ধু থাকতে পারি না?”

“আমরা কি বন্ধু ছিলাম না?”

“হুম। তুমি এত স্বাভাবিক আছো কিভাবে?”

“ওমা। অস্বাভাবিক হওয়ার মতো কিছু হয়েছে নাকি? আচ্ছা বলুন আপনার বিয়ে হচ্ছে কবে সুহানির সাথে? দাওয়াত পাবো তো?”

“…সময় নিয়েছি। আপির বিয়ে সামনের মাসে।”

“হুম, দাওয়াত পেয়েছি। আদনান বলেছে।”

“আসবে তো?”

“ইনশাআল্লাহ। আচ্ছা শুনুন এখন রাখি। আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।”

তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দেয় তিয়াশা। অপরপাশ থেকে আদিলের শেষ কথাটা শোনা হলোনা আর।

ভালোই হয়েছে তিয়াশার আর কষ্ট করে মেসেজের কথা বলতে হলোনা। বরং সেই মানুষটি যা চেয়েছে তাই হয়েছে।

এক সমুদ্র কষ্ট নিয়ে তিয়াশা ও আদিল দুজনই চুপচাপ বসে আছে যার যার বারান্দায়। তাদের নেই কোনো অস্থিরতা। এদিকে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। গাছপালায় বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনছে আর নির্বাক তাকিয়ে সামনে বৃষ্টির ঝরনাধারা দেখছে। আজ যেন আদিল ও তিয়াশার কান্নাই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে ধরণী তলে।

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৫

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৫
#লেখিকাTasneem Tushar

গোসল সেরে গায়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ব্যাক ব্রাশ করতে থাকে আদিল। ঠিক অমন সময় চাপানো দরজায় নক করে উকি দিতেই আদিলকে খালি গায়ে দেখে লজ্জায় পরে যায় তিয়াশা। তার হাতে থাকা ট্রাউজার আর টি-শার্ট কোনরকমে বেডের উপরে রেখে পেছন ফিরে বলে,

“এগুলো পরে নিচে আসুন। আমি নিচে যাচ্ছি।”

আদিল মুচকি হেসে কাপড় গুলো হাতে নিয়ে দুষ্টুমি করে বলে,

“তুমি চাইলে কিন্তু থাকতে পারো। আমার কোনো সমস্যা নেই।”

তিয়াশার ভ্রু কুঁচকে গেছে। মানুষটা বলে কি? নিজের চোখ দুটো হাত দিয়ে ঢেকে আদিলের দিকে ফিরে বলে,

“আপনার মাথায় আসলেই সমস্যা আছে। ডাক্তার দেখাতে হবে।”

আদিল হাসতে হাসতে বলে,

“হুম আছেই তো। সেই রোগের ঔষধও আমার জানা আছে?”

“তাই বুঝি?”

বলতে না বলতেই হঠাৎ তিয়াশা কোমরে টান অনুভব করে। ঘটনার আকস্মিকতায় হাত সরে যায় তার। তাকিয়ে দেখে আদিল ট্রাউসার আর টি শার্ট পরে দাঁড়িয়ে। আদিল তার তোয়ালে দিয়ে তিয়াশার কোমড়ে পেঁচিয়ে টেনে একেবারে তার কাছাকাছি নিয়ে আসে। সাথে সাথে লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে তিয়াশা। আদিল তিয়াশার চিবুক ধরে মাথা উপরের দিকে তোলে, তারপর তিয়াশার অধরে একে দেয় গাঢ় চুম্বন। তিয়াশা বিস্ময়ের সাথে আদিলের চোখ বরাবর তাকায়। আদিল হেসে বলে,

“হুম তাই। তুমিই আমার ঔষধ। বুঝলে পাগলী?”

“কি করছেন? ছাড়ুন।”

আদিল ছেড়ে দিতেই তিয়াশা চলে যেতে নিলে আবার হাতে টান অনুভব করে। আদিলের দিকে ফিরে তাকাতেই আদিল বলে,

“হাত ধরেছি, ছাড়ার জন্য নয়।”

*“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


পৌষী ও ইশরাক বাড়ি ফিরে এসেছে। পৌষী আদিলকে সোফায় বসে পত্রিকা পড়তে দেখেই দৌড়ে যায় তার কাছে। পাশে বসে কোনো কথা না বলে চুপচাপ আদিলকে দেখতে থাকে। আদিল পত্রিকা সরিয়ে তাকিয়ে বলে,

“কি দেখছো?”

পৌষীর চোখে পানি। আদিল একটু চমকে যেয়ে ব্যাস্ত হয়ে বলে উঠে,

“কি হয়েছে? কাঁদছ কেন?”

পৌষী চোখ মুছে বলে,

“কিছু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিল বাবা বসে আছে। আপনার গায়ের যেই জামাটা এটা আমি আর আপি পছন্দ করে কিনে এনেছিলাম বাবার জন্য। বাবা এত পছন্দ করেছিল যে মাত্র একবার পড়েছিল।”

“কেন? একবার কেন?”

“কারণ বাবা চায়নি বারবার পরে পুরোনো করতে। এত বুঝিয়েছি আমি আর আপি বাবাকে, কিন্তু সে নাছোড় বান্দা কোনো ভাবেই এটাকে পুরোনো করতে দিবেনা।”

“উম, তাহলে তো আমার এগুলো পড়া ঠিক হয়নি।”

“উহু, বাবার জামা পড়ার জন্য আপনিই উপযুক্ত। আপনাকে বেশ মানিয়েছে। আপনার থেকে বাবার মতোই ঘ্রাণ আসছে। হয়তো আমার বড় ভাই থাকলে তার থেকেও এমন ঘ্রাণই আসতো।”

আদিল হেসে পৌষীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“বাবা নেই তো কি হয়েছে, আমি আছি তো। আমি বড় ভাই হয়েই না হয় পাশে থাকবো।”

পৌষীর চোখ খুশিতে চকচক করে উঠে এবং আদিলকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,

“আপনি অনেক ভালো, ভাইয়া।”

তিয়াশা তাদের সব কথোপকথনই শুনতে পায় কাজ করতে করতে। ভাবে মানুষটা এত ভালো কেন? কত অল্পতেই আপন করে নেয়। কেন তার জন্য এত মায়া লাগে আমার? এটা যে ঠিক নয়। এসব ভাবতে ভাবতেই সবাইকে ডাক দেয় টেবিলে দুপুরের খাবার খেতে আসার জন্য।

টেবিলে দেয়া হয়েছে ভুনা খিচুড়ি, গরুর গোস্ত, বেগুন ভাজা, সালাদ আর আচার। আদিল টেবিলে বসতে বসতে বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠে,

“ঘ্রাণেই তো অর্ধভোজন হয়ে গেল।”

তিয়াশা প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে বলে,

“এবার খেয়ে দেখুন কেমন হলো?”

সবাই একসাথে খাওয়া শেষ করে উঠতে না উঠতেই আদিলের ফোনে একটা কল আসে। আদিল তার ফোন নিয়ে দূরে যেয়ে কথা সেরে তিয়াশার কাছে এসে বলে,

“একটি যুদ্ধে নামবো। তোমাকে পাশে পাবো তো?”

“বুঝলাম না।”

আদিলের মুখে বেশ চিন্তার ছাপ। তিয়াশা আদিলকে উদ্বিগ্ন দেখে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে?”

“বলার মতো কিছুনা। আমি বরং আজ যাই।”

“আপনাকে কিছু বলার ছিল।”

“হুম, বলো।”

“শান্ত হয়ে বসুন আগে। তারপর বলছি।”

মুখোমুখি বসেছে দুজন। তিয়াশা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলা শুরু করে,

“আদনান কল দিয়েছিল আমাকে। আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিল।”

“আদনান? কেন?”

“বলছি।”

“হুম, বলো।”

“আপনি বেশ কদিন ধরে কারো সাথে ঠিক মতো কথা বলছেন না। খাওয়া দাওয়া করছেন না। আন্টি আপনার চিন্তায় কান্নাকাটি করে অস্থির। আপনার ফোনে কল করে কেউ পাচ্ছেনা। পরিবারের সবচেয়ে ভালো ছেলেটা আজ সবার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

“এসব আদনান বলেছে তোমাকে?”

“কেন কষ্ট দিচ্ছেন আপনজনদেরকে? আর আসলেই তো নিজের কি বেহাল অবস্থা করেছেন। কেনই বা নিজেকে এত কষ্ট দিচ্ছেন?”

“তুমি বুঝতে পারছনা? কেন এত পাগলামি করছি? পরিবারের সবচেয়ে বাধ্য, ভদ্র, শান্ত ছেলেটা আজ বেপরোয়া হয়ে গেছে। কিভাবে হলো? তুমি বুঝোনা?”

“মিঃ আদিল, প্লিজ শান্ত হোন। উত্তেজিত হওয়া আপনার জন্য ঠিক নয়।”

আদিল অস্থির হয়ে তিয়াশার হাত দুটো ধরে বলে,

“তিয়াশা, তুমি আমার পাশে থাকলে আমি আবার আগের মতো হয়ে যাবো। শুধু বলো তুমি আমার পাশে থাকবে।”

তিয়াশা হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,

“বাস্তবতা এত সহজ নয়। আমি যদি আপনার পাশে থাকতেও চাই, একটা ডিভোর্সড মেয়েকে একটা উপযুক্ত ব্যাচেলর ছেলের পাশে সমাজ পরিবার পরিজন কেউ মেনে নিবেনা। বরং আমার জন্য আপনার আপনজনদের সাথে আপনার সম্পর্কের বিপর্যয় নেমে আসবে।”

তিয়াশা এবার চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে স্মিত হেসে বলে,

“আপনি… আপনি বরং আপনার বাবার পছন্দ করা মেয়ে সুহানিকে বিয়ে করুন। মেয়েটি যথেষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন। কিছুদিন পর সেও ডাক্তার হয়ে বের হবে। আপনার সাথে দারুন মিলবে।”

আদিল নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে উঠে,

“আর তুমি? তুমি যোগ্য নও?”

“আমার যোগ্যতা এখন কেউ দেখবেনা। আমার যোগ্যতার আগে সবাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলবে আমি এক ঘর ভাঙা মেয়ে। আমার তো কোনো যোগ্যতাই নেই ঘর বাঁধার।”

“এই যুগের মেয়ে হয়ে তোমার মুখে এসব কথা মানায় না।”

“একটা জিনিস আমি এখনো বুঝতে পারছিনা। এত এত যোগ্যতা সম্পন্ন অবিবাহিত মেয়ে থাকতে, সুহানির মতো স্মার্ট মেয়ে থাকতে, কেন আমি? কেন?”

আদিল এবার তিয়াশার হাঁটুর কাছে মেঝেতে বসে তারপর বলে,

“ভালোবাসা, ভাললাগা কি বলে কয়ে হয়? তোমাকে দেখেই এক ধরণের ভালোলাগার সৃষ্টি হয়। কি যেন কি আছে তোমার মাঝে যা আমাকে ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করে। তোমাকে কেন ভালোলাগে তার কারণ খুঁজতে থাকি। শুনবে কেন? তোমাকে ভালোবাসার সবচেয়ে বড় কারণ তোমার ব্যাবহার। আমি ম্যাকডোনাল্ডে যতবার গিয়েছি, তোমার ব্যবহার দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। শুধু আমার সাথে নয়, সেখানে যাওয়া আসা করা প্রত্যেকটা কাস্টমারের সাথে তোমার অমায়িক ব্যাবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে, হোক সে যুবক অথবা বৃদ্ধ। তারপর তোমাকে যত দেখেছি ততই তোমার বাচনভঙ্গি, বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা, তোমার ছোট ছোট দুষ্টুমি, তোমার গান, তোমার কণ্ঠ সব আমাকে মুগ্ধ করেছে। আর তোমার ঠোঁটে লেগে থাকা সেই মারাত্মক হাসি, যা কোনো কিছুতেই ঠোঁট থেকে মুছেনা। আমাকে আকৃষ্ট করেছে। সেই হাসিতে খুন হয়ে গিয়েছি আমি। নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করেছি বারবার, কিন্তু কখন যে ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে নিজেই জানিনা। এরপর তোমার সবকিছুই আমি ভালোবেসে ফেলেছি।”

তিয়াশার চোখ গড়িয়ে পানি পরে আদিলের হাতে। আদিল তিয়াশার চোখ মুছে দিয়ে বলে,

“কাঁদছো কেন?”

“এর আগে কখনো কেউ আমার সম্পর্কে এত সুন্দর করে বলেনি। আপনি আসলেই আজব এক ছেলে।”

“হুম, আজব ছেলেই তো, নাহলে কি খুঁজে খুঁজে আজব মেয়েকে পছন্দ করে?”

তিয়াশার হাত ধরে বলে,

“আমি তোমাকে আমার জীবনে চাই তিয়াশা। কথা দিচ্ছি, তোমাকে সর্বোচ্চ খুশি রাখার চেষ্টা করবো।”

“মিঃ আদিল, আপনি যদি আপনার পরিবারের সবাইকে খুশি রেখে আমার হাত ধরেন, আমি আপনার হাতটি তখন নিশ্চিন্তে ধরব।”

“সত্যি?”

“হুম সত্যি।”

আদিল পারবে তো সবাইকে মানিয়ে তিয়াশার হাত ধরতে?

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৪

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩৪
#লেখিকাTasneem Tushar

তিয়াশাকে বাংলাদেশে ফেলে রেখে আফরান চলে যাওয়ার প্রায় একমাস হয়ে যায়। এই এক মাসে আফরান একবারও তিয়াশাকে ফোন দেয়নি। এদিকে তিয়াশার ইউনিভার্সিটিতে নতুন সেমিস্টারের ক্লাসও শুরু হয়ে যাবে। তিয়াশা এখন মরিয়া প্রায় ফিরে যাবার জন্য আমেরিকাতে। তিয়াশার শশুরবাড়ির লোকজনের সাথে আফরানের রোজই কথা হয়, কিন্তু তিয়াশা তাদের কাছ থেকে ফোন চেয়েও আফরানের সাথে কথা বলতে পারেনা। ঘরবন্দি হয়ে দুঃসহ যন্ত্রনায় ভুগছে সে। ভূগবেই না কেন? প্রতিনিয়ত শশুরবাড়ির মানুষেরা যে তিয়াশার বেঁচে থাকা দুর্বিষহ করে তুলেছে নানা ভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে।

*“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


অন্যদিকে আফরান আমেরিকায় পৌঁছলে তিয়াশার মা নীলিমা হাবিব অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন উত্তর পায়না আফরানের কাছে যে কেন তিয়াশাকে নিয়ে আসা হয়নি। বরং আফরান বলেছে তিয়াশা স্বেচ্ছায় ফিরে আসেনি। নীলিমা হাবিব আফরানের বাবা মাকে ফোন দিলেও কোনো সদুত্তর পায়না। এদিকে তার ছোট দুই ছেলেমেয়েকে রেখে নিজে বাংলাদেশে যাবে সেই সুযোগও নেই। সেই সাথে আফরানের দুর্ব্যবহারও নীলিমা হাবিবের সহ্যের সীমা অতিক্রম করতে থাকে।

একদিন নীলিমা হাবিব তার এক পরিচিতের মাধ্যমে জানতে পারে আফরান অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। সেদিন আফরান বাড়িতে ফিরলে নীলিমা হাবিব বেশ রাগারাগি করে এবং বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। আফরান তখন উল্টো নীলিমা হাবিবকে চাপ দেয় তারা যেই বাড়িটিতে থাকে সেটা যেন আফরানের নামে লিখে দেয় এবং এই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। যদি না লিখে দেয় তাহলে তিয়াশা বিপদে পড়বে।

নীলিমা হাবিব ভেবে পায়না কি করবে? একদিকে তার মেয়ে তিয়াশা আর অন্যদিকে তার স্বামীর কষ্টের উপার্জনে কেনা এই বাড়িটি। নীলিমা হাবিব আফরানকে জানায় বাড়িটি লিখে দিবে এবং কিছু সময় চায়। তারপর খুব সাবধানে বাংলাদেশে তার এক আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ করে এবং সেই আত্মীয়ের সাহায্যে অনেক চড়াই উৎরাই পার করে তিয়াশা সক্ষম হয় আমেরিকান দূতাবাস থেকে তার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে।

আফরান তিয়াশাকে বাংলাদেশে রেখে যাবার প্রায় তিনমাস পরে জীবন মরণ সংগ্রাম করে বহু কষ্টে তিয়াশা আমেরিকাতে পৌঁছায়। এত কিছুর পরেও তিয়াশা বাসায় পৌঁছে ভাবে আফরানের সাথে দেখা হলে আফরান তাকে দেখে খুশি হবে। হয়তো বুঝিয়ে আবার নতুন করে শুরু করতে পারবে।

কিন্তু না, সুখ তিয়াশার কপালে নেই। তিয়াশাকে দেখে প্রচন্ড রেগে যায় আফরান এবং দুর্ব্যবহার করতে থাকে তিয়াশা ও তার পরিবারের সাথে। তিয়াশাকে বলে তাদের বাড়ি আফরানের নামে লিখে দিতে নাহয় ডিভোর্স দিবে তাকে। তিয়াশা অনেক চেষ্টা করে আফরানকে বোঝানোর। কিন্তু বিধিবাম, আফরান অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, এখন আর সে বোঝার পাত্র নয়।

তিয়াশা ধীরে ধীরে জানতে পারে আফরানের সাথে একাধিক মেয়ের সম্পর্ক এবং একদিন নিজেই সরাসরি দেখতে পায় তাকে অন্য মেয়েদের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায়। আফরানের সাথে আবারও কথা কাটাকাটি হয় এ বিষয় নিয়ে এবং সে মোটেও অনুতপ্ত নয় তার কৃতকর্মের জন্য। দিন রাত কাঁদতে থাকে তিয়াশা, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে যেন সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।

পুরো বাড়িতে অশান্তি। নীলিমা হাবিব অসুস্থ হয়ে পড়েন, ছোট ভাইবোন দুটোর মুখের দিকে তাকানো যায়না। তিয়াশার পড়াশোনাও এগোয় না। এদিকে আফরান তিয়াশাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে বাড়ি লিখে না দিলে তাকে ডিভোর্স দিবে। তিয়াশা আর সহ্য করতে পারেনা, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তার।

কিছুদিন এভাবে কান্নাকাটির পর তিয়াশার বোধদয় হয় যে আফরান তার ও তার পরিবারের জীবনে ক্যান্সার স্বরূপ। সে তার জীবনে থাকলে কখনোই তার পরিবারে শান্তি আসবেনা। বাবাকে হারিয়েছে অনেক আগে, এখন মাকে হারাতে চায়না। ছোট ভাই বোন গুলোরও ভবিষ্যৎ আছে। সেই সাথে বাবার ব্যবসা আর বাড়িটাই তাদের শেষ সম্বল, এগুলো একজন লোভীর প্রাপ্য নয়। সেই সাথে তার নিজেকেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, প্রতিষ্ঠিত হতে হবে যাতে নিজের পরিচয় তৈরি করতে পারে।

তিয়াশার সীমাহীন ভালোবাসার কদর যখন আফরান বুঝলনা বরং বারবার সুযোগ নিচ্ছে এবং তারই পরিবার বারবার হেনস্তা হচ্ছে, তখন বুকে হাজার কষ্ট চেপে রেখে আফরানকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয় তিয়াশা। আর এভাবেই সমাপ্তি ঘটে আফরান আর তিয়াশার বিবাহিত জীবনের।

কিন্তু জীবন থেমে থাকে না, তিয়াশার জীবনও আবার চলতে শুরু করে। তিয়াশা মনোযোগী হয় আবার পড়াশোনায়। ধীরে ধীরে তিয়াশা ও তার পরিবারের উপর থেকে আফরান নামক কালো ছায়াটা সরে যায় এবং তাদের জীবন যাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও তিয়াশার জীবনে যেই গভীর ক্ষত হয়েছে তা এখনো মাঝে মাঝে তাকে পোড়ায়।

*

তিয়াশা চোখ মুছে তাকিয়ে দেখে আদিলের চোখেও জল।

“আপনি কাঁদছেন কেন?”

আদিল চোখ মুছে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,

“নাহ আর কাঁদবনা। আর আমার পরীটাকেও কাঁদতে দিবোনা।”

আদিল তার হাতটা বাড়িয়ে দেয় তিয়াশার দিকে,

“আমি কী বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না, শুধু এতটুকুই বলবো যে তোমার জীবনে যা ঘটেছে, তুমি তার প্রাপ্য নও। এবং অন্য কারো জীবনেও যেনো এত খারাপ অভিজ্ঞতা না দেয় আল্লাহ।”

তিয়াশা আদিলের হাতটা ধরে বলে,

“আসুন আমার সাথে। আপনি একেতো অসুস্থ আর এখন কেঁদে কেটে কি অবস্থা করছেন। আপনি গোসল সেরে নিন। বাকি কথা পরে হবে। চলুন তো।”

আদিল বাধ্য ছেলের মতো তিয়াশাকে অনুসরণ করে।

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৩

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩৩
#লেখিকাTasneem Tushar

সে বছরই শীতে ঘরোয়া ভাবে তিয়াশা ও আফরানের বিয়ে হয়ে যায়। বেশ হাসি খুশিতেই কাটছিল তাদের সংসার। আফরান যেন তিয়াশাকে সবকিছুতে আগলে রাখে ও প্রচুর কেয়ার করতে থাকে। আফরানের অফুরন্ত ভালোবাসায় সিক্ত হয় তিয়াশা। আফরানের প্রতি তিয়াশার ভালোবাসা পরিণত হয় অন্ধ ভালোবাসায়।

ছয় মাস পর তিয়াশা ও আফরানের জন্য ভীষণ খুশির একটা দিন আসে। বিয়ের পরপরই আফরান পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার জন্য আবেদন করেছিল। যেহেতু আফরান তিয়াশাকে মানে একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করে তাই ছয়মাস পরেই পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি কার্ড পেয়ে যায় এবং জবের জন্য আবেদন করলে একটি ভালো জবও পেয়ে যায়। তাদের সংসারে নামে খুশির জোয়ার।

ধীরে ধীরে আফরান ব্যস্ত হয়ে যায় কাজে। তিয়াশাকে আগের মতো আর সময় দিতে পারেনা। তিয়াশাও মেনে নেয় যেহেতু আফরান দিনরাত খেটে কাজ করে তাই সেও নিজেকে অভ্যস্ত করে নেয় তাতে এবং নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়।

একদিন রাতে আফরান বাসায় ফিরে দেখে তিয়াশা পড়াশোনা করছে। বেশ কয়েকবার ডাকলে তিয়াশা তাড়াহুড়ো করে আফরানের সবকিছু গুছিয়ে, সাথে খাবার তৈরি করে দিয়ে এসে আবার পড়তে বসে, কারণ পরদিন তার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। আফরান হঠাৎ এসে তিয়াশাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করতে থাকে তিয়াশার চরিত্র নিয়ে, যে সে পড়াশোনার নামে ইউনিভার্সিটিতে ছেলেদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয় তাই তার স্বামী রাতে ঘরে ফিরলে তাকে সময় দেয়না তিয়াশা। তিয়াশা ভীষণ কষ্ট পায় আফরানের মিথ্যা অপবাদে। প্রতিবাদ করতে গেলে আফরান গায়ে হাত তুলে বসে তিয়াশার।

কিছুদিন পরপরই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে যখন তিয়াশা রাতে পড়তে বসে। তিয়াশা কাউকে কিছু না জানিয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করে যায় ভালোবাসার খাতিরে। ভাবে আফরানের উপর দিয়ে কাজের অনেক স্ট্রেস যাচ্ছে তাই হয়তো রাগ করছে। হয়তো সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আফরান তিয়াশার সাথে খারাপ ব্যবহার করেও এর জন্য কখনো অনুতপ্ত বোধ করেনা। তিয়াশা বুকের চাপা কষ্ট নিয়েই ধীরে ধীরে চেষ্টা করে আফরান বাড়ি ফেরার আগেই পড়াশোনা, এসাইনমেন্ট সব সেরে রাখতে। কিন্তু আফরানের রাত করে বাড়ি ফেরার মাত্রা দিনকে দিন বাড়তে থাকে। তিয়াশা জানতে চাইলে তাকে আরও অকথ্য ভাষায় কথা শোনায়। অল্পতেই গায়ে হাত তোলে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



আফরানের প্রমোশন হয়। এরপর নতুনভাবে শুরু হয় আফরানের অফিস শেষে কলিগদের সাথে বার-এ হ্যাংআউট করা আর মধ্যরাতে ড্রিংকস করে বাড়ি ফেরা। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে গা ভাষায় আফরান এবং দিনকে দিন উগ্র ও উশৃঙ্খল হয়ে উঠতে থাকে। তিয়াশা মধ্যবিত্ত ঘরের মুসলিম বাঙালি মেয়ে, তাই এসব মেনে নিতে কষ্ট হলেও আফরানের প্রতি ভালোবাসা তার যেন কমেনা। আফরানকে আগের মতো করে পেতে দিনরাত চেষ্টা করে। তিয়াশা চেষ্টা করে আফরান যেন ড্রিংকস করা ছেড়ে দেয়। তার ভালোবাসায় আস্তে আস্তে আফরানও কিছুটা আগের মতো তিয়াশাকে কেয়ার করতে শুরু করে।

তিয়াশা তাতেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় এবং অসম্ভব খুশি হয় তার ভালোবাসার মানুষটিকে আংশিক ভাবে হলেও ফিরে পেয়েছে সে জন্যে।

এভাবে যখন তাদের তিন বছর পার হয়ে তাদের জীবনে আরও একটি খুশির দিন আসে। আফরান সিটিজেনশিপ পেয়ে যায় আমেরিকার। এখন সেদেশের যেকোনো কাজ অথবা বিজনেস দাড় করাতে তার কোনো সমস্যা নেই। আমেরিকার নাগরিক হয়ে এখন সে সেই দেশের সব সুযোগ সুবিধাই পাবে। ধীরে ধীরে একটি বিজনেস দাড় করায় আফরান এবং খুব অল্প সময়েই দ্রুত সাফল্য লাভ করতে থাকে।

আফরানের মাঝে আবারও পরিবর্তন দেখা দেয়। সময়ে অসময়ে তিয়াশার সাথে দুর্ব্যবহার করে সেই সাথে সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে তিয়াশার মা ও ভাইবোনদের সাথেও। তিয়াশার মা নীলিমা হাবিবও বেশ কষ্ট পায়, যে ছেলের কোনো লিগ্যাল কাগজ পত্র ছিলোনা তাকে নিজের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে তার এই দেশে থাকার উপায় করে দেয়, সেই সাথে নিজের বাড়িতে নিজের সন্তানের মতো আদর ও স্নেহ করে রাখে। অথচ সেই কিনা এখন ব্যাবসায়ী হয়ে রাতারাতি লাভের মুখ দেখে তার আচার ব্যাবহারের এত অধঃপতন। তবুও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আফরানকে কিছু বলেনা নীলিমা হাবিব। বরং তিয়াশাকে বোঝায় যেন আফরানের সাথে আরও সহনশীল হয় এবং আফরানকে তার ভালোবাসা দিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসে। তিয়াশা তার মায়ের কথা মতন চেষ্টা চালিয়ে যায়, কিন্তু এবার যেন কোন কিছুতেই আর কাজ হয়না।

এরই মাঝে হঠাৎ একদিন দেখা যায় আফরান ভীষণ খোশ মেজাজে বাসায় ফিরে, সাথে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য দুটো টিকেট। তিয়াশাও ভীষণ খুশি হয়, বিয়ের পর এই প্রথম শশুর বাড়ি যাবে। তাছাড়া সেখানে পরিবারের সবার সাথে কিছুদিন থাকলে হয়তো আফরানের মাঝেও পরিবর্তন আসবে। লাগেজ গুছিয়ে কিছুদিন পরেই বাংলাদেশের ফ্লাইট ধরে ঢাকায় পৌঁছায় তিয়াশা ও আফরান।

শশুর বাড়িতে যেয়ে বেশ কিছুদিন ভালোই কাটে তিয়াশার। আফরান ও তিয়াশা সেখানে একমাস থাকে। একমাস পর আমেরিকা ফিরে আসার সময় ঘটে বিপত্তি। হঠাৎ দেখা দেয় আফরানের মাঝে পরিবর্তন। সে সাফ জানিয়ে দেয়, তিয়াশা আমেরিকাতে ফেরত যেতে পারবেনা। আফরান আমেরিকাতে ফিরে যাবে আর তিয়াশা বাংলাদেশে আফরানের বাবা মায়ের সাথে থেকে তাদের দেখাশোনা করবে।

তিয়াশা মেনে নিতে পারেনা। যাকে এত ভালোবাসে তাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে? আর বিয়ে করেছে একসাথে থাকার জন্য, তবে কেন এখন আফরান তিয়াশাকে রেখে চলে যেতে চাইছে? এমন যদি হতো যে বিদেশে যাবার জন্য তিয়াশার কোনো কাগজ পত্র নেই, তবুও নাহয় তিয়াশার একটা কারণ ছিল বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার। আর তিয়াশার পড়াশোনাও বাকি। কিন্তু আফরানকে কোনো ভাবেই বোঝাতে সক্ষম হয়না তিয়াশা। তিয়াশার পাসপোর্ট তার কাছ থেকে নিয়ে নেয় যাতে সে আমেরিকাতে ফেরত যেতে না পারে। শুরু হয় শশুরবাড়ীর মানুষেরও অমানুষিক অত্যাচার। তারাও তিয়াশাকে যেতে দিবেনা।

আফরান তিয়াশাকে জোড় করে বাংলাদেশে রেখেই ফিরে যায় আমেরিকা। এদিকে তিয়াশার পাসপোর্ট ও নেই তার কাছে। কিভাবে উদ্ধার করবে তাও সে জানেনা। সেই ছোটবেলায় আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিল তিয়াশা, বাংলাদেশের কোনো কিছুই সে এখন ভালোমতো চিনেনা। এদিকে শশুরবাড়িতেও শুরু হয়েছে নরক যন্ত্রনা।

তিয়াশা ভেবে পায় না এখন কিভাবে সে আমেরিকায় ফিরবে আফরানের কাছে? তার মা, ভাইবোনের দেখা পাবে কিভাবে?

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩২

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩২
#লেখিকাTasneem Tushar

দুই মগ চা হাতে নিয়ে তিয়াশা এগিয়ে আসছে আদিলের দিকে। কাছে এসে একটি চায়ের মগ আদিলের হাতে দিয়ে পাশে বসতে নিলেই আদিল তিয়াশার হাত ধরে ফেলে,

“উহু, পাশে নয় আমার সামনে বসো। তোমাকে দেখে কথা বলতে ভালো লাগে।”

তিয়াশা কথা না বাড়িয়ে সামনে বসে। আদিলের কি যেন কি হয়, হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়।

“তিয়াশা, ঘরে নয়, চলনা তোমাদের বাড়ির পেছনে খোলা ডেক-এ যেয়ে বসি।”

“হুম, চলুন।”

দুজনে ডেক-এ থাকা টেবিলে মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসে। বাইরে এই মেঘলা তো এই রোদ সাথে ঝিরিঝিরি হিমেল হাওয়া বইছে। তিয়াশার চুল উড়ে বারবার তিয়াশার মুখের কাছে চলে আসছে, আর আদিল নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। তিয়াশা একটু হালকা কেশে নীরবতা ভেঙে বলে,

“আপনার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছেন মিঃ আদিল? একদিনেই চোখ মুখ শুখিয়ে গেছে। চোখ ভেতরে ঢুকে গেছে, রোগা লাগছে আপনাকে খুব। এভাবে আপনাকে দেখবো কখনো ভাবিনি।”

“তুমি সাথে না থাকলে যে আমি এভাবেই শেষ হয়ে যাবো।”

“আপনি দয়া করে পাগলামি করবেন না। আর আপনার এই পাগলামি কিছুক্ষন পরে থাকবেও না।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“আমার পাগলির জন্য আমি পাগলামি করবো তাতে তোমার কি?”

তিয়াশা অধর্য্য হয়ে বলে উঠে,

“মিঃ আদিল, আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।”

“বলোনা। আই এম অল ইয়োরস।”

“আমার জীবনের একটি কালো অধ্যায় আছে।”

তিয়াশার মুখে যেন নিমিষেই অন্ধকার নেমে আসে। নিজের অতীতের কথা এভাবে প্রকাশ করে নিজের কষ্ট বাড়াতে চাইছেনা। কিন্তু না বলেও পারছেনা, নয়তো আদিলের সাথেও প্রতারণা করা হবে। আদিল কি বুঝলো কে জানে তিয়াশার দুহাত তার মুঠোয় ভরে শক্ত করে ধরে বলে,

“বলো। আমি শুনছি। তবে বলে রাখছি, তোমার অধ্যায় যতই কালো হোক না কেন, সেই কালো কাটিয়ে তোমার জীবন আমি আলোয় রাঙিয়ে দিব।”

তিয়াশা তাকিয়ে আছে আদিলের দিকে। কিছু না শুনেই এত দৃঢ়তার সাথে কিভাবে সে এগুলা বলতে পারে। নীরবে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে তিয়াশার। তারপর বলে,

“কিভাবে শুরু করবো জানিনা।”

একটু থেমে আবার বলে,

“আমার জীবনেও প্রেম এসেছিল। দেখা মিলেছিল একটি সুপুরুষের। যার মধ্যে সেসব বৈশিষ্ট্য ছিল যা আমার চিন্তারও বাইরে। তাকে ঘিরে সাজিয়েছিলাম আমার স্বপ্নের দুনিয়া। ভালোবেসেছিলাম তাকে নিজের সবটুকু দিয়ে।”

“তারপর?”

“হুম, তারপর….।”

তিয়াশার গলা ধরে এসেছে। বহু কষ্টে কান্না চেঁপে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,

“জানেন, কতশত স্বপ্ন দেখেছি একটি সুন্দর সংসারের। বিয়ের স্বপ্ন দেখেছি। কত কি প্ল্যান করেছি। খুব খুশি ছিলাম আমি। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এক ধাপ এগিয়ে যাই …।

আদিলের বুকের মাঝে ঝড় চলছে। সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তিয়াশার চোখে সে ছেলের প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু এর মাঝেও তিয়াশার হাত সে ছাড়েনি। তিয়াশার কথার লাইনটা আদিল শেষ করে বলে,

“সেই স্বপ্নের প্রথম অধ্যায় বাস্তবায়িত হয় তোমাদের বিয়ের মাধ্যমে। কি ঠিক বললাম?”

তিয়াশার দুনিয়া যেন দুলে উঠে এক মুহূর্তে আদিলের কথা শুনে। প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে আদিলের দিকে তাকায় তিয়াশা।

“আ… আপনি জানতেন?”

বলেই আদিলের হাতের মুঠো থেকে হাত টেনে সরাতে নেয়, কিন্তু আদিল হাত দুটো আরও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বলে,

“হুম, জানতাম।”

“কিভাবে?”

“তোমার মনে আছে কটেজে থাকাকালীন সময়ে আমার কাছে হঠাৎ একটা ফোন আসে? এবং আমি কাজ আছে বলে চলে যাই? সেদিন আমার কাছে একজনের ফোন আসে। এর আগেও কয়েকবার এসেছে পাত্তা দেইনি, কিন্তু সেদিন ফোনটা ধরে ফেলি। অনেক কিছু বলে তোমার সম্পর্কে, তোমার অতীত সম্পর্কে এবং আরও অনেক কিছু। সেদিনই আমি জানতে পারি তোমার বিয়ের কথা। খুব কষ্ট পেয়ে ছিলাম। সারাদিন ভেবেছি, পর্যবেক্ষণ করেছি। যাচাই করার জন্য তোমাকে অনেকভাবে খোঁচানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তোমার সাথে মিশে বুঝেছিলাম তোমার নামে অনেক মিথ্যা গল্পও বানিয়ে বলেছে। অদ্ভুত ব্যাপার কি জানো? তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বিন্দু মাত্র কমেনি। যত তোমাকে দেখেছি, বুঝেছি, চিনেছি, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।”

তিয়াশার চোখে এখনো জল। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছেনা আদিলের কথাগুলো। বলে উঠে,

“কে আপনাকে এসব বললো?”

“নাম পরিচয় কিছু তো বলেনি, শুধু বলেছে শুভাকাঙ্ক্ষী, এতে আমি, আমার পরিবার ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবো।”

“আপনি বিশ্বাস করলেন? যাচাই করলেন না? সেই পরিচয়হীন মানুষের পরিচয় নেয়ার চেষ্টা করলেন না?”

“হুম করেছি, কিন্তু এখনো খুঁজে পাইনি। চেষ্টা চলছে। আর যাচাই সেটা তো করেছি।”

“বুঝলাম, কিন্তু আমি বিবাহিত জেনেও আপনি কেন আমাকে ভালোবাসবেন? আপনার তো বরং সরে যাবার কথা।”

আদিল একটু মাথা নেড়ে বিস্তৃত হাসি দিয়ে বলে,

“মিস তিয়াশা, আপনার কথায় একটা ভুল আছে।”

“মানে?”

“মানে হচ্ছে, আপনি অতীতে বিবাহিত ছিলেন। বর্তমানে আপনি সিঙ্গেল।”

তিয়াশা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,

“নাহ, সিঙ্গেল না। ডিভোর্সড বলতে পারেন।”

“তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।”

“আমার সমস্যা আছে।”

তিয়াশা একটু উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যেয়ে বলে উঠে,

“কেন আপনি সব জেনে শুনে আমাকে ভালোবাসবেন? এই পৃথিবীতে আরও হাজারটা তিয়াশা আপনার জন্য দাঁড়িয়ে যাবে যারা পিওর সিঙ্গেল, যাদের আমার মতো কোনো অতীত নেই। যারা আরও যোগ্যতা সম্পন্ন।”

“শান্ত হও তিয়াশা।”

“আপনি ভুল করছেন। আপনি তো জানতেও চাইলেন না ডিভোর্স কেন হলো? হতেও তো পারে আমার কোনো দোষ অথবা সমস্যার কারণে বিয়েটা টিকেনি। হতেও তো পারে আমি মেয়েটাই খারাপ।”

আদিল এবার উঠে এসে তিয়াশার হাত ধরে নিয়ে ডেকের সিঁড়িতে যেয়ে বসে। তারপর বলে,

“তোমাকে সব বলবো। শান্ত হও আগে।”

“আমার আরও আগেই জানানো উচিত ছিল সব আপনাকে। ভেবেছিলাম আপনাকে এড়িয়ে চললে আপনি নিজ থেকেই সরে যাবেন।”

“আমি তোমার ডিভোর্সের কারণ জেনেছি অনেক আগেই।”

“কার কাছ থেকে জানলেন?”

“পৌষীর কাছ থেকে তোমার বিয়ে ও ডিভোর্সের আদ্যোপান্ত সব জেনেছি।”

“তাহলে?”

“তাহলে… কিছুনা। আমি তোমার মুখ থেকে এবার সম্পূর্ণটা জানতে চাই।”

“যদি আমি মিথ্যে বলি? আপনার কাছে ভালো সাজতে চাই।”

“আমার পরীক্ষা নিয়ো না তিয়াশা। তোমার মিথ্যা বলার হলে, আমার কাছে ভালো সাজতে চাইলে তা অনেক আগেই করতে। যখন জানলে আমি তোমাকে ভালোবাসি তখন আমাকে দূরে না সরিয়ে আপন করে নিতে। তুমি তা করোনি। এখন তুমি আমাকে নিজে সব বিস্তারিত জানাবে কেন ডিভোর্স হলো? কেন তোমার মত একটা সহজ সরল মেয়েকে এত কষ্ট পেতে হলো?”

“হুম বলছি।”

বলে তিয়াশা ডুবে যায় তার অতীতের স্মৃতিতে। তিয়াশা তখন সবেমাত্র হাইস্কুল থেকে বেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে। সে বছর গ্রীষ্মের ছুটিতে এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় আফরানের সাথে। আফরান তখন স্টুডেন্ট ভিসাতে আমেরিকাতে এসে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ইউনিভার্সিটি থেকে সবে মাত্র মাস্টার্স শেষ করেছে বিজনেস এডমিনিষ্ট্রেশনের উপরে। তার আমেরিকাতে আপন বলতে আছেই এক দূরসম্পর্কের খালা আর সেও কোনো ভাবে তিয়াশাদের আত্মীয়ের পরিচিত। সেই সুবাদেই বিয়েতে আসা। সেখানেই পরিচয় হয় তিয়াশা ও তার পরিবারের সাথে আফরান ও তার খালার।

পরিচয়ের এক পর্যায়ে জানতে পারে, আফরান চাকরি খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমেরিকাতে সিটিজেনশিপ অথবা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি না থাকলে চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার, তাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সেদিন বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হবার পর একদিন তিয়াশাদের বাড়িতে ছোট্ট একটা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আফরান ও তার খালা আমন্ত্রিত হয়ে আসে। তিয়াশার মা নীলিমা হাবিবের ভীষণ পছন্দ হয় আফরানকে তিয়াশার জন্য। ছেলেটার আচার ব্যবহার পড়াশোনা যোগ্যতা সবকিছু তাকে মুগ্ধ করেছে। তাদের পরিবারে কোনো বড় ছেলে নেই। তিয়াশার সাথে বিয়ে হলে আফরানকে এখানেই রেখে দিবে সেই সাথে একটা ছেলেও পাবে তিনি। সেসব ভেবে নীলিমা হাবিব তিয়াশাকে তার মনের কথা জানালে তিয়াশারও একটু একটু করে ভালোলাগা শুরু হয়। আফরান ও তিয়াশাকে বেশ পছন্দ করে। দুই পরিবারের সম্মতিক্রমে দুজনে দেখা সাক্ষাৎ করে এবং তিয়াশা অল্প বয়সে আবেগী হওয়াতে খুব দ্রুতই গভীর ভাবে আফরানের প্রেমে পড়ে যায়। আফরানও যথেষ্ট কেয়ারিং একটা ছেলে। তিয়াশাকে ভালোবেসে মাথায় তুলে রাখে।

সে বছরই শীতে ঘরোয়া ভাবে তিয়াশা ও আফরানের বিয়ে হয়ে যায়। বেশ হাসি খুশিতেই কাটছিল তাদের সংসার।

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

[বি.দ্র: তিয়াশার জীবনে বিয়ের যেই ঘটনাটি বলছি এবং সামনের পর্বে বলবো তা একজন/ একাধিক মেয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা অবলম্বন করেই বলা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, মানুষের জীবন গল্পের চেয়েও কঠিন। আমি আমার এই গল্পে সংক্ষেপেই সেই কাহিনীটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। নতুবা শুধু এই কাহিনীটা নিয়েই একটা উপন্যাস লিখা সম্ভব। কোনোদিন যদি আপনাদের অনুপ্রেরণা পাই তখন এই সত্য ঘটনাটি বিস্তর ভাবে আমার কোনো এক গল্পে তুলে ধরবো। গঠনমূলক মন্তব্য করে আপনারা আমার পাশে থাকুন। আপনারাই আমার অনুপ্রেরণা।ধন্যবাদ।]

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩১

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩১
#লেখিকাTasneem Tushar

নাদিম মুজদাহীর আদিলকে বাসায় না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছেন। নওরীন মুজদাহীর ঘরের এক কোণায় চুপ করে বসে কাঁদছেন আর আদনান তার বাবাকে থামানোর চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে এখন তর্কে জড়িয়ে গেছে।

“নওরীন, আদিল কোথায় গেছে? কিছু বলে যায়নি কেন? আজ তার সাথে আমার বন্ধুর মেয়ে সুহানির দেখা হওয়ার কথা। কোথায় গেছে সে?”

নওরীন মুজদাহীর চোখ মুছতে মুছতে বলছে,

“ছেলেটার মন ভালোনা। কেমন পাগলামি করছে ক’দিন ধরে। বিয়ে এখন করতে চাইছেনা। কিছুদিন সময় দাও, আমি বুঝিয়ে বলবো।”

“অতশত বুঝিনা। আমার বন্ধুকে কথা দিয়ে দিয়েছি সুহানির সাথেই আদিলের বিয়ে হবে। যদি সম্ভব হয় আলিয়া ও আদিলের বিয়ে একই দিনে সম্পন্ন হবে। কিন্তু আজ আদিলের সুহানির সাথে দেখা করাটা দরকার। আদিলকে যেভাবেই হোক আজকে সুহানির সাথে দেখা করতে পাঠাবে। এর যেন নড়চড় না হয়।”

আদনান আর নিশ্চুপ থাকতে না পেরে বলে উঠে,

“বাবা, ভাইয়ার মনটা কদিন ধরে বেশ খারাপ। প্লিজ ওর মনটা একটু বোঝার চেষ্টা করো। আঙ্কেলের সাথে কথা বলে জানাও যে সুহানির সাথে আরেকদিন দেখা করবে। তাহলেই তো হয়। এত রাগ করো না বাবা।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“তুমি কোনো কথা বলবেনা। বেয়াদব ছেলে একটা। আমার কোনো কথাই তো মান্য করোনা। এখন আদিলও কি তোমার পথে পা বাড়িয়েছে? কিসের এত মন খারাপ ওর? এসব কিছু দেখবোনা আমি। যা বলেছি তাই ফাইনাল। আজই আদিল দেখা করতে যাবে।”

আদনান আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে উঠে,

“নিজেরটা ছাড়া কি তুমি কিছুই বুঝোনা বাবা? চিরটাকাল সব তোমার কথায় হতে হবে। না হলেই তাকে বেয়াদব, অবাধ্য বলে আখ্যায়িত করো। বাসা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দাও। তুমি ছাড়া পরিবারের আর কাউকে কি তোমার মানুষ মনে হয়না? সবাই কি তোমার হাতের পুতুল? আমি মানলাম আমি অবাধ্য, কিন্তু ভাইয়াতো তোমার খুশির জন্য নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়েছে। তুমি কিসে খুশি হও তার জন্য যা বলেছ তাই করেছে। আজ একটা বার সে তার মন খারাপ প্রকাশ করেছে। তাও মুখে বলেনি। একটাবার তোমার জানতে ইচ্ছে হয়না, তোমার সেই ভালো ছেলেটার কী হয়েছে?”

“আদনান, আর একটা কথাও তুমি বলবেনা। মুখে মুখে শুধু তর্ক করতে শিখেছো। সুহানির সাথে বিয়ে হতেই হবে আদিলের। নাহলে অনেক বড় লোকসান হয়ে যাবে।”

আদনান কিছু বলতে নিবে, তখন নওরীন মুজদাহীর আদনানকে থামিয়ে দিয়ে তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ঠিক আছে। তুমি যা বলেছ তাই হবে। আমার ছেলে মরুক বাঁচুক তাতে কার কি? তোমার ব্যবসায় লাভের জন্য ছেলের সুখ বিসর্জন দেয়াবো এবং তোমার মান সম্মান রাখানোর চেষ্টা করবো।”

নাদিম মুজদাহীর কোনো কথা না বলেই রাগে গজগজ করতে করতে ঘর প্রস্থান করে।

*

আদিল ও তিয়াশা বসে আছে মুখোমুখি নাস্তার টেবিলে। তিয়াশা সকালের নাস্তা তৈরি করবে কি, সকাল বেলা উঠে দেখে টেবিলে নাস্তা তৈরি এবং সে আদিলের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। তিয়াশা খাবার এগিয়ে দিয়ে, নিজের প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলে,

“আপনি তো বললেন না, আমি কিভাবে সোফায় গেলাম? আর আপনি কখন নাস্তা তৈরি করলেন? কিছুই তো উপলব্ধি করতে পারলাম না।”

আদিলের চোখে মুখে এখনো অসুস্থতার ছাপ। মুখে ম্লান হাসি টেনে এনে বলে,

“আমি সোফায় আরামে শুয়ে আছি, আর আমার প্রাণ পাখিটা মাটিতে বসে আছে, কষ্ট করছে, সে আবার আমারই কারণে, সেটা আমি কিভাবে সহ্য করি বলো?”

“তাই আপনি নিজে উঠে আমাকে শুইয়ে দিলেন আপনার জায়গায়? আপনি অসুস্থ ছিলেন, আমি তো হয়নি।”

“এত কষ্ট করলে তুমিও অসুস্থ হতে আর কতক্ষন? তাই তুমি যাতে অসুস্থ না হও তার আগেই তোমার খেয়াল রাখলাম।”

“আপনি তো আচ্ছা পাগল?”

“হুম তোমার জন্য। আমার ঘুমন্ত পরীটির মায়ামাখা মুখটি দেখতে যেই সুখ সেটা থেকে বঞ্চিত হতে চাইনি।”

তিয়াশা একটু লজ্জা পেয়ে কথা এড়িয়ে বলে উঠে,

“আর সকালের নাস্তা? আপনি আমার বাসায় অতিথি আর আপনি কেন তৈরি করলেন? সবচেয়ে বড় কথা এই অসুস্থ অবস্থায়?”

আদিল এবার হেসে দিয়ে মজা করে বলে,

“উম, আসলে… তোমার হাতের রান্না খুব একটা মজা না।”

তিয়াশা মুখ হা করে বড় বড় চোখ করে তাকায়। আদিল তিয়াশার অবস্থা দেখে হেসেই খুন।

“মজা করছি বাবা। এমন সুযোগ আর কবে পাবো তাতো জানিনা। ভাবলাম পেয়েই যখন গেছি, আমার ঘুমকুমারী ঘুমোক আর আমি এই ফাঁকে তাকে একটা সারপ্রাইজ দেই। তুমি খুশি হওনি?”

“না মোটেও খুশি হইনি। হতাম যদি আপনি সুস্থ থাকতেন। আর আমি যদি আপনার বাসার অতিথি হোতাম তাহলে।”

“যাবে আমার সাথে? আমাদের বাড়িতে? অতিথি হয়ে নয়, সেই বাড়ির রানী হয়ে। রাজরানী করে মাথায় তুলে রাখবো তোমায়। ওয়াদা করছি।”

তিয়াশা বিষম খেয়ে কেশে উঠে। আদিল তিয়াশার দিকে পানি এগিয়ে দিলে তিয়াশা ঢকঢক করে পানি পান করে নেয়। আদিলের কথা গুলো যেন সব বিশ্বাস করতে মনে চায় তিয়াশার। কিন্তু সে এসব স্বপ্নে আর বিশ্বাস করেনা। ঢের হয়েছে, মিষ্টি কথার ফাঁদে পড়েছে এবং তার মূল্য জীবন দিয়ে দিয়েছে। এখন মিষ্টি কথায় ভোলার মেয়ে নয় তিয়াশা।

পৌষী সেকেন্ড ফ্লোর থেকে নিচে নেমে বাইরে যেতে যেতে তিয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আপি, আমি আর ইশরাক একটু লাইব্রেরিতে যাচ্ছি। চলে আসব শীঘ্রই।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে যা। সাবধানে যাস। আর তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি কিন্তু।”

“ঠিক আছে।”

তারপর পৌষী আদিলকে উদ্দেশ্য করে এক চোখ টিপে বলে উঠে,

“ভাইয়া, ইটস এ চান্স ফর ইউ…। বাই দা ওয়ে, আজ কিন্তু আপনি কোথাও যাচ্ছেন না। বাসায় এসে যেন দেখতে পাই আপনাকে। দুপুরে একসাথে খাবো। বাই ফর নাও।”

আদিল ও হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায় পৌষীকে। পৌষী যাওয়ার সাথে সাথেই আদিলকে জিজ্ঞেস করে তিয়াশা,

“কিসের চান্সের কথা বললো ও আপনাকে?”

“ও…ও তুমি বুঝবেনা। এসব ছোট মানুষদের বুঝতে নেই।”

তিয়াশা উঠে কিচেন গুছাতে থাকলে আদিল ও তিয়াশার সাথে কাজে হাত লাগায়। এবার তিয়াশা রেগে যেয়ে বলে,

“আপনি কি বসবেন?”

“আপনার পাশে থাকতে যে ভালো লাগছে।”

“এতো ভালো লাগতে হবে না।”

তারপর হাত ধরে টেনে নিয়ে আদিলকে সোফায় জোর করে বসিয়ে দিয়ে কপালে হাত দিয়ে জ্বর মেপে বলতে থাকে,

“জ্বর এখনো আছে।”

জ্বরের ঔষধ ও পানি দিয়ে আদিলকে বলে খেয়ে নিন। আদিল তখন বলে উঠে,

“আমি তো অসুস্থ, খাইয়ে দাও।”

তিয়াশা অগত্যা খাইয়ে দিয়ে বলতে থাকে,

“একদম উঠবেন না এখান থেকে। আমি হাতের কাজ সেরে চা নিয়ে আসছি।”

বলেই চলে যেতে নিলে আদিল তিয়াশার হাত টেনে ধরে নিজের গালে স্পর্শ করিয়ে বলে,

“প্লিজ, তাড়াতাড়ি এসো।”

তিয়াশার গায়ে শিহরণ বয়ে যায়। হাত সরিয়ে নিয়ে মনে মনে ভাবে নাহ এই অনুভূতি আর বাড়তে দেয়া যাবেনা। গড়া যাবেনা কোনো সম্পৰ্ক। আদিলকে এখান থেকেই ফেরাতে হবে, আর এর জন্য তাকে সত্যিটা বলে দিলেই ভালো। হুম আজই সে সবকিছু বলে দিবে আদিলকে।

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩০

0

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩০
#লেখিকাTasneem Tushar

ইদানিং তিয়াশা আদিলের ফোনকল এড়িয়ে চলছে, সেই কটেজ থেকে ফিরে আসার পর থেকে। না, আদিলকে অপছন্দ করে তার জন্য নয়, বরং অনেক বেশিই পছন্দ করে। হয়তো আদিলের সাথে কথা বললে তার ভালোবাসার অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে যাবে তিয়াশা। তাই সে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে।

মাঝে পেরিয়ে গেছে একটা মাস। এক সন্ধ্যায় হঠাৎ দমকা হাওয়া বইছে, ঝড় আসার পূর্বাভাস। তিয়াশা দ্রুত দরজা জানালা লাগাচ্ছে। হঠাৎ

তিয়াশার ফোনে একটা মেসেজ আসে আদিলের, তাতে লিখা

“একটাবার কি ফোন ধরবে আমার? বিশ্বাস করো, কোনো কথা বলবনা। শুধু তোমার নিঃশ্বাস শুনবো।”

লিখাগুলো পরে তিয়াশা নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। ফোনটি হাতের মুঠোয় চেপে বুকের কাছে ধরে বারান্দার দেয়াল ঘেঁষে বসে পরে। পোড়া চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। মানুষটা তাকে আসলেই কি অনেক ভালোবাসে? বিশ্বাস হতে চায়না। সে যে তাকে এই এক মাসে অনেক কষ্ট দিয়েছে। কষ্ট নিজেও পাচ্ছে। তবুও সে কোনো বাঁধনে নিজেকে জড়াতে চায়না। কারন, ঘরপোড়া গরু এখন সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ডরায়।

বার কয়েক তিয়াশার ফোন বেজে উঠে, ফোন ধরতে নিয়েও নিজেকে সামাল দেয়। ফোন ধরলে যে নিজের মনকে প্রশ্রয় দেয়া হবে। নিজের ফোনের সুইচ অফ করে রেখে দেয় সে।

“আপি, তোর ফোন।”

তিয়াশা চোখ মুছে তাকাতেই দেখে পৌষী দাঁড়িয়ে।

“কে ফোন করলো?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“জানিনা, ধর।”

বলেই ফোনটি তিয়াশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় পৌষী। তিয়াশা ফোন কানে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিছানায় এসে বসে,

“হ্যালো।”

ওপাশ থেকে কোনো সাড়া নেই। শুধু বাতাস ও তুমুল বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এত শব্দের মাঝেও তিয়াশা ঢের বুঝে ফেলে নিঃশব্দে থাকা ওপারের মানুষটা আদিলই হবে। সেও নীরবে ফোন কানে নিয়ে বসে থাকে। মিনিট পাঁচেক পর ফোনে ভেসে আসা কণ্ঠ বলে,

“একটি বার বাইরে তাকাবে?”

তিয়াশা দ্রুত পায়ে এগিয়ে জানালা খুলে বাইরে তাকায়। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে, এর মাঝে একটি ছেলে তিয়াশাদের বাড়ির সীমানার বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। দৃষ্টি নিবদ্ধ তার তিয়াশার জানালায়। তিয়াশার শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়। এক দৌড়ে নিচে ছুটে যায় রাস্তায়।

“একি অবস্থা হয়েছে আপনার? এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন? অসুস্থ হয়ে যাবেন তো?”

আদিলের চোখ ছলছল করছে, তিয়াশার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,

“আমাকে না ভালোবাসো না? তাহলে তুমি নিজেও কেন বৃষ্টিতে ভিজে ছুটে এলে আমার কাছে?”

নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কান্নারত কন্ঠে আদিলের চোখে চোখ রেখে চাপা গলায় বলে উঠে,

“হুম ভালোবাসি। এই অবাধ্য মন আপনার ভালোবাসায় হার মেনে সত্যি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু…”

“কিন্তু কেন আমাকে পোড়াচ্ছ এভাবে?”

“আমি নিজেও যে পুড়ে ছাই হচ্ছি।”

“তাহলে কেন এই দহনের সমাপ্তি করছো না?”

“আমার প্রতি আপনার এই ভালোবাসা নিমিষে উড়ে যাবে যখন…”

আদিল বৃষ্টির মাঝেই রাস্তার ধারে বসে পরে। তিয়াশা আদিলের কান্ডে অবাক হয়ে যায়।

“কি পাগলামি করছেন? আপনি এখানে বসে পড়লেন কেন?”

তিয়াশা হাত ধরে উঠাতে গেলে আদিল হেলে পরে যেতে নেয়। তিয়াশা দ্রুত ধরে ফেললে অনুভব করে আদিলের শরীর ভীষণ রকমের গরম।

“আপনার তো জ্বর চলে এসেছে।”

আদিলকে কোনো রকমে ধরে তার বাসায় নিয়ে যায় তিয়াশা।

“পৌষী এদিকে আয়তো, একটু ধর উনাকে আমার সাথে।”

দুইবোন মিলে আদিলকে ড্রইংরুমের সোফায় শুইয়ে দিয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত পা মাথা মুছিয়ে দেয়। তিয়াশার ছোট ভাই ইশরাককে দিয়ে আদিলকে বাথরুমে পাঠায় ড্রেস চেঞ্জের জন্য। আদিল কোনরকমে ড্রেস চেঞ্জ করে বাথরুম থেকে বের হলেই ইশরাক ধরে নিয়ে এসে সোফায় শুইয়ে দেয়।

তিয়াশা আদিলের পাশে বসে তার কপালে কাপড় ভিজিয়ে জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। বেচারা জ্বরে জ্ঞান হারিয়েছে। তিয়াশা অস্থির হয়ে ভাবছে এখন কি করবে? তার মা নীলিমা হাবিবও বাসায় নেই। বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে, ফিরবে দুদিন পর। আচ্ছা আদনানকে কি ফোন দিবে? উড়িয়ে দেয় এই চিন্তা মাথা থেকে, আদনান জানতে পারলে হাজারটা প্রশ্ন করবে। তখনই পৌষী তিয়াশার কাঁধে হাত রেখে পাশে দাঁড়ায়। তার চোখ দিয়েও জল গড়িয়ে পড়ছে।

“আপি? কেন কষ্ট দিচ্ছিস উনাকে? তুই জানিস প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে তিনি এই বৃষ্টিতে ভিজেছে। তোর সাথে একটি বার কথা বলবে বলে আমার কাছে কত শতবার অনুনয় করেছে?”

তিয়াশার মুখটা শুকিয়ে গেছে। সে অনুতপ্ত, কিন্তু সে তো চেয়েছে কষ্ট পেয়ে যেন আদিল সরে দাড়ায়। বরং উল্টো ঘটনা ঘটলো এখন। পৌষী বলে চলেছে,

“গত একটা মাসে ভাইয়াকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস। দিনের পর দিন তাকে এড়িয়ে চলেছিস। অথচ তোর বিপদে সেই সবার আগে এগিয়ে এসেছে, তোর মুখে একটু হাসি ফুটানোর জন্য কত কি প্ল্যান করেছে। তোর ভয় দূর করার জন্য তার সেকি প্রচেষ্টা। যেই মানুষটা এত কিছু করলো তার ভালোবাসাটাই প্রত্যাখ্যান করছিস?”

“তুই তো জানিস আমি কেন এমন করেছি। আমার অতীত জেনে কেউ আমার পাশে থাকবেনা। আর যদি কেউ থাকেও সেটা হবে তার করুণা। আমি কারো করুণায় বাঁচতে পারবোনা।”

“পাগলামি করিস না আপি। উনাকে একবার তো বলে দেখ।”

“হুম। দেখি।”

“তুই একটু উনার পাশে বস। আমি গরম স্যুপ বানিয়ে আনি। স্যুপ খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলে আশা করি আজ রাতের মধ্যেই জ্বর অনেকটা কমে যাবে।”

এরই মাঝে বাসার ল্যান্ডলাইনের ফোন বেজে উঠলে তিয়াশা রিসিভ করে বলে,

“হ্যালো।”

“তিয়াশা, বেশ কবার তোর সেলফোনে ট্রাই করছি কিন্তু বন্ধ পাচ্ছি।”

“কি হয়েছে আদনান? তুই এত অস্থির কেন?”

“কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা। আচ্ছা শোন ভাইয়ার কোনো খোঁজ জানিস?”

তিয়াশার বুক ধড়াক করে কেঁপে উঠে। নিজেকে সামলে শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“কেন কি হয়েছে?”

“আর বলিস না, কি যে হয়েছে ভাইয়ার কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। আজ সারাদিন বাসায় ফিরেনি। সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। কোথাও নেই। ইদানিং খুব অন্যমনস্ক থাকছে। কারো সাথে কথা বলছেনা। কিছু জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দিচ্ছেনা। এদিকে বাবা ভাইয়াকে জোর করে তার কলিগের মেয়ের সাথে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আজ সকালে ভাইয়া কাউকে কিছু না বলেই বের হয়ে গেছে। আম্মু কান্নাকাটি করছে। আম্মুই বললো তোকে একটু ফোন দিয়ে জানতে, তুই কোন খোঁজ জানিস কিনা।”

তিয়াশা ইতস্ততঃ হয়ে মিথ্যা বলে।

“না, আমি তো জানিনা। আমি খোঁজ পেলে অবশ্যই তোকে জানাবো। চিন্তা করিস না। হয়তো কোন বন্ধুর বাসায় গিয়েছেন।”

“হুম। দুঃখিত তোকে এসব বলে বিরক্ত করার জন্য।”

“আরে বন্ধু বন্ধুকে বলবে নাতো কাকে বলবে?”

“আচ্ছা রাখি। ভালো থাকিস।”

“হুম। তুইও ভালো থাকিস। বাই।”

“বাই।”

*

পরদিন সকালে তিয়াশা ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করে নিজেকে সে সোফায় শুয়ে আছে। আরে যেখানে আদিল শুয়ে ছিল সেখানটিতে সে শুয়ে আছে কেন। আদিল গেল কোথায়? চারপাশে তাকিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে চোখ পড়ে আদিল বসে আছে ওর মাথার কাছে, আর তিয়াশা আদিলের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।

হকচকিয়ে উঠে বসে তিয়াশা। আদিলের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কিনা। তারপর আবার ভালো করে চোখ কচলে পরিষ্কার করে বোঝার চেষ্টা করে স্বপ্ন দেখছে কিনা। তিয়াশার যতদুর মনে পরে, সে আদিলের খেয়াল রাখতে রাখতে সোফার পাশে ফ্লোরে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সে এখানে কিভাবে এলো।

তিয়াশার মনের সব চিন্তা যেন আদিল পড়ে ফেলে। ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে বলে উঠে,

“কি ভাবছেন? আপনি এখানে এলেন কি করে?”

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797

[বি:দ্র – গল্পটি আর বেশি বড় করবোনা। চেষ্টা করবো খুব শীঘ্রই শেষ করে দেবার জন্য পরবর্তী কিছু পর্বের মাঝেই। গল্পটির শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবেন আশা করছি।]