Thursday, August 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2021



Protected: আড়ালে থাকা তুমি

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: প্রজাপতি ঘর

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ও আসবে

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

হ্যাকারের_লুকোচুরি . সিজন_২ . পর্ব -১৬

9

হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_২
.
পর্ব -১৬
.
রাফি বুঝতে পারে যে মাফিয়া গার্ল কোন ট্রেস ই রাখে নি হয়তো তার বাবা মা পর্যন্ত পৌঁছানোর। কিন্তু রাফিও ছাড়ার পাত্র নয়। ফ্যামিলিকে তো খুঁজে বের করতেই হবে রাফিকে।
পিকাচু খুঁজতে থাকে রাফির পরিবারকে কিন্তু কোন ডিজিটাল ট্রেস ই রাখে নি মাফিয়া গার্ল। এছাড়া ফোনগুলোও আনরীচেবল হয়ে যায় কোয়ার্টারের ভেতরেই। হয়তো বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই মাফিয়া গার্ল নাম্বারগুলোকে ব্লক করে আনরীচেবল করে দিয়েছে যা বাবা মা বা তোহা কেউই জানে না। মোবাইলের কথা বাদ। রাফি চিন্তা করতে থাকে অন্য কিছু যা হয়তো মাফিয়া গার্ল ভাববে না। কি হতে পারে সেটা! সিসিটিভি ফুটেজ তো নিশ্চিন্তে ডিলিট করে দিতে পারবে মাফিয়া গার্ল এবং হাইড্রা। তারপরও একটু কুটিল বুদ্ধি খাটায় রাফি।
রাফি – পিকাচু, আমার কোয়ার্টারকে গ্রাউন্ড জিরো পয়েন্ট করো. তারপর ৩ কিলোমিটার রেডিয়াস নিয়ে একটা সার্চ সার্কেল বানাও।
পিকাচু স্যাটেলাইট ইমেজিং থেকে কোয়ার্টারে রাফির বাসাকে রেডমার্কিং করে একটা ৩ কিলোমিটার সার্কেল তৈরী করলো।
রাফি – পিকাচু, কোয়ার্টার থেকে এই সার্কেল দিয়ে বের হওয়ার কয়টা এক্সিট রুট বা বের হবার পথ আছে তা খুঁজে বের করো।
পিকাচু – পিকা, making all possible exit route…… collecting GPS data…….. 8 exits found.
পিকাচু মনিটরে গ্রীন মার্ক করে রাস্তাগুলো শো করে।
রাফি – এখন ট্রাফিক সিসি ক্যামেরা সিস্টেম একসেস করো, দেখো এই সার্কেলের ভেতর ওই ৮ রাস্তায় কয়টা ট্রাফিক ক্যামেরা এবং পার্সোনাল অনলাইন সিকিউরিটি ক্যামেরা আছে।
পিকাচু – Accessing all traffic cctv and online cctv data within 3km radius ……….
32 cctv camera found and 50 personal cctv camera detracted.
পিকাচু গ্রীন ডট দিয়ে প্রতিটা ক্যামেরার পজিশন দেখিয়ে দেয়।
রাফি – আমার দেশত্যাগের পর থেকে ৪৮ ঘন্টার ভেতর এই সব ক্যামেরাগুলোতে কোন ধরনের গ্লীচ বা ট্যাকনিক্যাল ফল্ট বা মিসিং রেকর্ডিং বা এইধরণের কোন সমস্যা আছে কি না চেক করো।
পিকাচু – Accessing cctv footage….. searching for glitch, technical fault, missing recordings…….
All 32 traffic cctv camera had glitch for 8 seconds of each and all 50 personal cctv footage had the same for 6 second each.
পিকাচু রেড ডট দিয়ে প্রতিটা ক্যামেরা মার্ক করে দেয়। রাফি দেখতে পায় সবগুলো ক্যামেরা রেড ডট দেখাচ্ছে।
রাফি জানে যে মাফিয়া গার্ল যথেষ্ট বুদ্ধিমান। প্রতিটা সিসিটিভি ক্যামেরাকেই গ্লীচ করেছে মাফিয়া গার্ল এবং এমনভাবে করেছে যেন একটা পানিভর্তি গ্লাসের ঠিক মাঝখানে একফোঁটা পানি ফেললে যেমন ঢেউ তৈরী হয় এবং একসাথে গ্লাসের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ঠিক সেভাবে সিমুল্টেনিয়াসলী গ্লীচ করে দিয়েছে মাফিয়া গার্ল যেন কেউ ধরতে না পারে যে রাফির পরিবারকে মাফিয়া গার্ল কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


রাফি – Very cleaver move, Mafia Girl, very cleaver.
কিন্তু রাফিও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। রাফি জানে যে মাফিয়া গার্ল এমন কোন পথে যাবে না যে পথে ওর কন্ট্রোল থাকবে না।
রাফি – পিকাচু, খুঁজে বের করো কোন রুটে সবচেয়ে বেশি অনলাইন সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে এবং সবচেয়ে কম অফলাইন ক্যামেরা আছে।
কারন অফলাইন সিসিটিভি ক্যামেরার রেকর্ড মুছে ফেলা মাফিয়া গার্লের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই হিসাব অনুযায়ী মাফিয়া গার্ল সেই পথ কখনই বেছে নেবে না যে পথে যাওয়ার ট্রেস মাফিয়া গার্ল মুছতে পারবে না।
পিকাচু – পিকা পিকা।। analyzing maximum online cctv camera route ……….
1 route has most of the online cctv cameras and minimum number of offline cameras.
রাফি মোটামুটি নিশ্চিত হয় যে এই রুটেই মাফিয়া গার্ল রাফির ফ্যামিলিকে বের করে নিয়ে গেছে।
রাফি – পিকাচু, এই গ্লীচ টাইমের ভেতর ওই রাস্তা দিয়ে কোন রাইড শেয়ারিং গাড়ি গিয়েছে কি না যা কোয়ার্টারের আসেপাশে দিয়ে রাইড স্টার্ট করেছে আর ওই গ্লীচ টাইমের ভেতর এই রুট দিয়ে বের হয়ে গেছে।
পিকাচু – Accessing all ride sharing vehicle control server…….. Matching GPS route…….
1 vehicle speed matched with the glitch and GPS destination is scrambled.
রাফি ধরেই নিতে পারে যে মাফিয়া গার্লের হাত ছাড়া শুধুশুধু জিপিএস ডেস্টিনেশন নিয়ে ঘোলপাক করবে না কেউ।
রাফি – পিকাচু, গাড়ির নাম্বার, মালিকের নাম এবং ড্রাইভারের নাম বর করো।
পিকাচু – পিকা।
রাফি মনিটরে গাড়িটার ফুল ডিটেলস পেয়ে গেলো।
রাফি – পিকাচু, ড্রাইভারের সাথে কন্ট্যাক্ট করো। আমি কথা বলবো।
পিকাচু – contacting ………
ড্রাইভার – হ্যালো! কেডা।
রাফি – সদর থানা পুলিশ।
ড্রাইভার – স্যার, বলেন স্যার?
রাফি – কিছুদিন আগে তুই NSA কোয়ার্টার দিয়ে কোন ট্রিপ মারছিস?
ড্রাইভার – ( কিছুক্ষণ ভেবে) NSA কোয়ার্টার? ওহহোও মনে পড়ছে, হ স্যার মারছিলাম।
রাফি – কতদিন আগে ?
ড্রাইভার – এই স্যার ৮-৯ দিন আগে।
রাফি – ৮ -৯ দিনের পুরাতন ঘটনা মনে থাকলো কিভাবে?
ড্রাইভার – আর বইলেন না স্যার, আমি তো ওই এলাকার ড্রাইভার না। এক আপায় ফোন দিলো আর জিপিএস এ ঠিকানাও দিয়া দিছিলো, প্রথমে না না করতেছিলাম কিন্তু হ্যায় ভালো টিপস দেবো শুইনা রাজি হইয়া গেছিলাম।
রাফি – আচ্ছা, লোক উঠাইছিলি কই দিয়া আর কয়জন?
ড্রাইভার – ওইভাবে তো মনে নাই তয় কোয়ার্টারের একদম ভিত্রের দিক একটা বাসা দিয়া। হ্যাতেরা ৩ জন আছিলো।
রাফি – নামায় দিছিলি কই?
ড্রাইভার- খাড়ান, দেইখ্যা কইতাছি। (কিছুক্ষণ পর) হ স্যার, ঠিকানাডা লন।
রাফি – পিকাচু, take note.
পিকাচু – পিকা।
ড্রাইভার ঠিকানা দিলো আর পিকাচু ঠিকানা অনুয়ায়ী লোকেশনটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শো করতে থাকে।
রাফি ডিসকানেক্ট করে দেয় কল। লোকেশনটা ভালো করে দেখে নেয় রাফি। আরে এটা তো সেই বাসা যে বাসায় বৌভাতের দিন থেকে অফিস জয়েন করার আগপর্যন্ত রাফি ও তার পরিবার ছিলো। রাফির বাবার বন্ধুর ফ্লাট।
রাফি বুঝতে পারে হয়তো এইজন্যই বাসার সবাই সহজে কনভিন্স হয়েছে ওই বাসায় যেতে। কেউ সন্দেহ ই করে নি। মাফিয়া গার্ল রাফির পরিবারের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু ওখানে রাখলে মাফিয়া গার্লের লাভ কি? তাহলে কি মাফিয়া গার্ল রাফিকে বোকা বানাচ্ছে!
রাফি – পিকাচু, এই দেশের নাম কি, কোথায় আছি আমরা এখন।
পিকাচু মনিটরে পিনপয়েন্ট লোকেশন শো করতে থাকে। রাফি দেশটাকে চিনতে পারে তবে সেটা অবশ্যই পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ নয়। তবে একসময় এই দেশটা বৃহত্তম দেশের আন্ডারেই ছিল। কিন্তু এখন তো নয়! তাহলে এমন লুকোচুরি কেন করলো মাফিয়া গার্ল রাফির সাথে! এসব করার মানে কি!
মাফিয়া গার্লের এসব লুকোচুরির মানে বের করতেই হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনের দিকে চোখ যায় রাফির,
রাফি – পিকাচু, আমার ফোন ট্যাপড আর ব্লক করা আছে, আমার ফোনকে সিকিউর করতে হবে।
বলে পিকাচুর সিস্টেমে নিজের নাম্বার ইনপুট করে। পিকাচু নাম্বারের ট্যাপিং সোর্স খুঁজতে থাকে।
পিকাচু – I can make your phone secure but whoever is taping will know.
রাফি – Do it.
পিকাচু – পিকা পিকা।
পিকাচু সিস্টেম দিয়ে নাম্বারকে আনরীচেবল করে দেয় যার মাধ্যমে ইনকামিং রেষ্ট্রিকটেড কিন্তু আউটগোইং ওপেন থাকবে এবং নাম্বার আইডি ও হীডেন থাকবে, ঠিক মাফিয়া গার্লের মত। এমন সময় পিকাচু শো করে একটা ইনকামিং কল, আননোন সোর্স,
রাফি – পিকাচু, আমি কলটা রিসিভ করবো, খেয়াল রাখবে যেন এই কল এর মাধ্যমে আমার ফোনের কন্ট্রোল আবারো না নিয়ে নিতে পারে। আর হ্যাঁ, ট্রাক দ্যা কলার।
পিকাচু কল রেফার করলে রাফির ফোন বেঁজে ওঠে, রাফি ফোন রিসিভ করে,
– আমার কাছ থেকে আমার সার্ভার সিস্টেম কেড়ে নিয়েছো, এখন ফোনের কন্ট্রোল? বাহ। দারুন।
রাফি – আমি মনে করি পিকাচু এখন এসব সমস্যা সামলে নিতে পারবে। (রাফি মনিটরের দিকে তাঁকিয়ে দেখে পিকাচু টাইম দিয়েছে – ৮০ সেকেন্ড এর ভেতর কল ট্রেস হয়ে যাবে)
– হ্যাঁ সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি, কিন্তু রাফি, তুমি হয়তো একটা জিনিস ভূলে যাচ্ছো। হাইড্রা পিকাচুর জমজ দুই বোন। এরা দুজন দুজনকে লুকিয়ে রাখতে খুবই পটু, আমি জানি তুমি আমার বেজমেন্টে বসে আমার সার্ভার দিয়ে আমার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আমার সাথে কথা বলছো কিন্তু পিকাচুর ব্লকিং এবং তোমার এনক্রিপশনের কারনে আমার হাইড্রা ট্রেস ই করতে পারছে না সার্ভার আর নেটওয়ার্ককে।
রাফি – সমস্যা নেই, আর পারবে না। (- ৩০ সেকেন্ড)
– হ্যাঁ, নিশ্চই কারন আর মাত্র ২৮ সেকেন্ড পরই আমরা দুজন দুজনকে এক্সপোজ করে ফেলবো! তুমি আমার হাইড্রা কে আর আমি তোমার পিকাচু কে, চয়েস তোমার।
রাফি বুঝতে পারে যে মাফিয়া গার্ল এমনভাবে নিজের ফায়ারওয়্যাল সাজিয়ে রেখেছে যাতে কেউ যদি হাইড্রা হ্যাক করতে চায় তার ৫ সেকেন্ড আগেই সে নিজে হ্যাক হয়ে যাবে, সেদিক থেকে পিকাচুর জন্ম মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে, এখনো Knowledge hunting ই কম্প্লিট হয় নি। তাই রিক্স নেয়া ঠিক হবে না ভেবে কীবোর্ড চেপে ট্রেসিং বন্ধ করে দেয় রাফি।
– A very wise decision, Mafia Boy. Appreciate it.
রাফি – I’ll see you soon Mafia Girl.
– not too soon. By the way, তোমার প্রেস ব্রিফিং এর সময় হয়ে গেছে। সবাই তৈরী। কিছুক্ষণের ভেতর লাইভ টেলিকাষ্ট হবে। Good luck.
রাফি ফোনটা রেখে দেয়। পিকাচু মনিটরে একটা মেসেজ শো করে। মেসেজটা দেখে রাফির যার পর নাই খুশি লাগে। পিকাচু মাফিয়া গার্লকে ট্রেস করার আগেই রাফি হয়তো ট্রেসিং অফ করে দিয়েছিলো কিন্তু পিকাচু ঠিকই মাফিয়া গার্লের ফোন নাম্বার ধরে ফেলেছে আর মনিটরে শো করছে।
রাফি – ওয়েলডান পিকাচু।
পিকাচু – (উৎফুল্ল) পিকাচু।
রাফি – এখন তো এটলিষ্ট *6666# এ ডায়াল করে মাফিয়া গার্লকে খুঁজতে হবে না। l lets give it a try, shal we? পিকাচু, call that number. And check the details of that number.
পিকাচু – পিকা। connecting ….
– you got my number! !!! Waah. What else you got.
পিকাচু স্ক্রীনে শো করে এক ব্যক্তির নাম যিনি ৫ বছর আগে মারা গেছেন এবং ফ্যামিলি মেম্বার ও কেউ নেই।
রাফি – একজন মৃত ব্যক্তির নাম্বার ব্যবহার করছো যাকে ফোন দেয়ার মতন ও কেউ নেই, বাহ, চমৎকার। পুলিশ তোমার নাম্বার পেলেও তোমার অস্তিত্ব খুজে পাবে না।
– রাফি, একটা জিনিস মাথায় রেখো, White, Black অথবা Ethical যে হ্যাকারই হও না কেন যখন তোমাকে সহজভাবে কেউই গ্রহন করবে না। সারা পৃথিবীর ডিজিটাল আর সাইবার ওয়ার্ল্ডে বসবাস করা সবাই ই কোন না কোনভাবে হ্যাকার শব্দটাকেই ভয় পায়, মানুষটার কথা না হয় বাদই দিলাম। বুঝবে সময় হলেই বুঝবে।
রাফি – তাহলে তো আর *6666# কেটে নাম্বারটাই সেভ করে রাখি।
– এইজন্যই কি ফোন দিয়েছিলে?
রাফি – জ্বী হ্যাঁ, চেক করার জন্য।
– ok, good luck.
রাফি ফোনটা কেটে দেয়। নিজের ফোনটা আবার নিজের নিয়ন্ত্রনে ফিরে পেয়ে মন খুশি হয়ে যায় রাফির। ফোন থেকে কাছের এক বন্ধু রকিবের নাম্বারে কল দেয়,
রকিব – হ্যালো, কে বলছেন?
রাফি – রকিব, আমি রাফি.
রকিব – রাফি! তুইইইই? কই তুই, কই হারায় গেচোস, তোরে তো পুলিশ গোয়েন্দা সবাই মিলে খুজতাছে, তুই নাকি টাকা নিয়া পলাইচোস, আর কি প্রাইভেট নাম্বার দিয়া কল দিচোস.। ?
রাফি – দোস্ত, তোর সব প্রশ্নের উত্তর দেব। আগে একটা সাহায্য কর।
রকিব – বল না কি লাগবে?
রাফি তখন বাবা মা আর তোহাকে লুকিয়ে রাখার কথা জানালো রকিবকে। এটাও বলে দিলো যে বাবা মায়ের সাথে ৩ জন বডিগার্ড ও রয়েছে যারা পাহারা দিচ্ছে বাবা মা কে।
রকিব – বুঝছি, আংকেল আন্টিকে বের করে নিয়ে আসতে হবে তাই তো।
রাফি – না। এমন কিছু করতে হবে না। যাবি। খোঁজখবর নিবি। যতটা সম্ভব বডিগার্ডদের এড়িয়ে।
রকিব – আর বলতে হবে না ভাই। বুঝে গেছি। কিন্তু তারপর কি?
রাফি – নতুন একটা ফোন কিনে আমাকে নাম্বার দে, তারপর বাবা মা এর কাছে পৌছালে ফোনটা তাদেরকে দিয়ে দিস। বাকিটা আমি বলে দেবো।
রকিব – ঠিক আছে। কিন্তু তোকে জানাবো কিভাবে!
রাফি – ২ ঘন্টা পর আমিই তোকে ফোন দেবো।
রকিব – আচ্ছা।
রাফি ভাবতে থাকে বাবা মা রকিবকে ভালো করেই চেনে। রকিবকে দেখলে হয়তো বাবা মা কথা বলতে রাজী হবে।
এদিকে কারেন্সি চুরির জন্য গঠিত টাস্কফোর্স মেম্বারদের জন্য রাফির আয়োজন করা প্রেস রিলিজ এর সময় হয়ে যায়।
রাফি – পিকাচু, প্রেস রিলিজের লাইভ ফিড দেখাও আর প্রধানের সাথে সরাসরি কমিউনিকেশন রাখার ব্যবস্থা করো।
পিকাচু- Communicating……..
রাফি স্ক্রীনে প্রেস রিলিজের লাইভ ফিড দেখতে পায়, তখনও ব্রিফিং শুরু হয় নি। পিকাচু টাস্কফোর্স প্রধান H এর সাথে কানেক্ট করে দেয় রাফিকে।
রাফি – রিপোর্ট পেয়েছেন?
H – জ্বী পেয়েছি।
রাফি – ব্রিফিং এর আগে একটা জিনিস মাথায় ঢুকিয়ে নেন, টাকা আমি ফেরত এনে দেবো, ক্রেডিট আপনারাই পাবেন। বিনিময়ে সকল অপরাধীর সাজা হতে হবে এবং সেটা NSA এর বর্তমান ডাইরেক্টর সহ, প্রমানের নথিপত্র নষ্ট ও টেম্পার করার অপরাধে। এর যেন কোন নড়চড় না হয়।
H – দেখুন আমাদের রিপোর্ট গড়মিল হতো না যদি ওই একাউন্টে টাকাগুলো থাকতো। আপনার দেয়া ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট জমা দেয়ার পর ওই টাকাগুলো আবারো ছোট ছোট ভাগে ভাগ হয়ে মুভ করা শুরু করে যা ধরা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে যায়।
রাফি – এখন একাউন্ট ফ্রীজ করা আছে। অপরাধীদের সাজার ব্যবস্থা করলে টাকাগুলো আবার ফিরে আসবে। তাই রিপোর্টা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে আমাকে নির্দোষ প্রমান করুন আর নিজেদের প্রোমোশন বুঝে নিন।
রাফি আর কোন কথা না শুনেই ফোনটা কেটে দিলো।
২ ঘন্টা পর,
প্রেস রিলিজে টাস্কফোর্স কতৃক সকল প্রমাণপত্র উপস্থাপন এবং বর্তমানে কারেন্সি কোথায় আছে তার বিশ্লেশন করে দেয়া হয়। কারা কারা অপরাধী এবং কাদেরকে ভিকটিম করা হয়েছে তার বিশ্লেষণ করে দেয়া হয় সেখানে।
রাফি কিছুটা স্বস্তি পায়। এবার রাফি তার নিজের কেস নিজে লড়ার ক্ষমতা অর্জন করেছে।
রাফির মনে পড়ে রকিবের কথা। “ওহহো রকিবকে ফোন দেয়ার কথা” জিভ কামড়ে ধরে রাফি।
রাফি – পিকাচু, রকিবকে কন্ট্যাক্ট করো।
পিকাচু – communicating………
.
গঠনমূলক মন্তব্য করলে এই অসুস্থতাও লেখার জোস পাই। আপনাদের উৎসাহই আমার প্রেরনা।

হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব-১৫

0

হ্যাকারের_লুকোচুরি
সিজন_২

পর্ব-১৫

ধীরে ধীরে জেগে উঠতে থাকে পিকাচু, সিস্টেম ইরর দেখার মত মানসিকতা নেই রাফির, পিকাচুই এখন শেষ ভরসা।
অবশেষে পিকাচুর রেস্পন্স পাওয়া গেল।
পিকাচু – (কার্টুন ভয়েসে) Hi, I am pikachu.
রাফি – Hi, pikachu, this is Rafiul Islam Rafi. I am your creator and instructor.
পিকাচু – Accessing cyber network, recognizing Rafiul Islam Rafi, 100% match, ( স্ক্রীনে ছবি ভেসে ওঠে রাফির আর সাথে জীবন বৃত্তান্ত) Rafiqul Islam Rafi, Age 27, Cyber Crime Analysist Officer, National Security Agency. Saved as creator and instructor.
রাফি খুশিতে ফেঁটে পড়ে, পিকাচু তার সাথে সফলভাবে কমিউনিকেশন করেছে। “ইইইইয়েসসস, I’ve done it” বেশ জোরেশোরেই বলে ওঠে রাফি।
পিকাচু – (কার্টুন ভয়েসে) congratulation, Creator for your achievement.
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


রাফি অবাক হয়ে যায়, পিকাচু রাফিকে কংগ্রাচুলেশন জানালো!!!
রাফি – Pikachu? Why did you congratulate me?
পিকাচু – Your voice was louder than as usual and your heart rate is higher then as usual causing adrenaline rush because of achiving something means you are very excited and happy.
রাফি নিজেই হতবাক হয়ে যায়। পিকাচু রাফির চিন্তার বাইরে স্মার্ট।
রাফি – পিকাচু, ভাষা পরিবর্তন করো.
পিকাচু – Detecting language…… language found. Accessing Dictionary, novels, journals…….. ভাষা পরিবর্তন করা হয়েছে।
রাফি বুঝতে পারে পিকাচু তার প্রয়োজন অনুযায়ী ফাইল একসেস করে নেয়।
পিকাচু – Unauthorized access request found. Somebody is trying to access the server.
রাফির মনে পড়ে যায় মাফিয়া গার্লের কথা। গত দুইদিন ধরেই তাহলে বেচারী উঠেপড়ে লেগে আছে সার্ভারের একসেস ফিরে পাবার জন্য।
রাফি পিকাচুকে মাফিয়া গার্লের সার্ভারে রাখা নিরাপদ হবে কি না তাই ভাবতে থাকে। কিন্তু তার থেকে জরুরী পিকাচু কে কন্ট্রোল করা। পিকাচু এখনো knowledge hunt করছে, এই স্টেজ পার হতে বেশ কিছু সময় লাগবে। সারা দুনিয়া জানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কতটা ভংয়কর হয়ে যেতে পারে তাই অন্য সবকিছু ভাবার আগে রাফি পিকাচুর পার্মিশন সেটিংস চেক করতে চায়।
রাফি -পিকাচু? তোমার পার্মিশন সেটিংস দেখাও।
পিকাচু – পিকা পিকা ( বলে পার্মিশন সেটিংস পেজ দেখালো)
রাফি একবারে সব পার্মিশন ডিনায়েড করে দিলো। এতে পিকাচুর knowledge hunting বন্ধ হয়ে গেল।
রাফি মনিটর দিয়ে পিকাচুর মেমরী স্ট্যাটাস চেক করলো। মাত্র কয়েক মিনিটেই সে সার্ভার ক্যাপাসিটর ৭০% লোড করে ফেলেছে। কিন্তু এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে তো পিকাচুর জন্য বিশাল মেমরী আর নেক্সট জেনারেশন কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রয়োজন পড়বে। তাই রাফি বেসিক নলেজ ক্যাটাগরি ছাড়া অন্যান্য সব ক্যাটাগরি অনলাইন বেজড করে রাখলো এবং Need to know বেসিসে করে দিলো। এতে পিকাচু তার প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন কোথায় পাওয়া যাবে তার একটা শর্টলিষ্ট করে রাখতে লাগলো, যেন অনেকটা মুভি ডাউনলোড করে কম্পিউটারে রেখে মেমরী নষ্ট না করে ওয়েবসাইটের নাম ও মুভির লোকেশন সেভ করে রাখা যেন যখন প্রয়োজন তখনই পাওয়া যায়।
কিন্তু পিকাচু একটা ওয়ার্নিং দিলো এই Need to know পলিসির জন্য, এই পলিসি গ্রহন করলে যদি কোন কারনে নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যায় বা কেউ সার্ভার অফলাইন করে দেয় কিংবা যে কোন কারনে পিকাচু এবং সার্ভারের মাঝে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে পিকাচুর পক্ষে সেই নলেজ পাওয়া সম্ভব হবে না।
রাফি বিষয়টা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো। মাফিয়া গার্ল যদি চায় তাহলে শুধুমাত্র এই ইন্টারনেট কানেকশন ব্লক করে দিলেই পিকাচু আর কিছুই একসেস করতে পারবে না। ভয় থেকেই যায় রাফির। এখানে পিকাচু কে রাখা যাবে না। এখানে রাখলে মাফিয়া গার্ল আটকে দিতেই পারে। কিন্তু তার আগে মাফিয়া গার্লের সাথে কথা বলা দরকার। কি চায় মাফিয়া গার্ল এটা জানার সময় হয়া গেছে। রাফি ডায়াল করে *6666# নাম্বারে। মাফিয়া গার্ল কিছুক্ষণ পর কল ব্যাক করে।
– what are you doing in my lab!!!! I can’t access anything!
রাফি – Pikachu is live. He is using your lab as his brain. I’m sorry, but you lost your lab.
– পিকাচু কম্প্লিট! ওয়াহ। কংগ্রাচুলেশনস।
রাফি অবাক হলো মাফিয়া গার্লের বিহেভিয়ার দেখে। কিছুক্ষণ আগেও নিজের ল্যাব নিয়ে রাফির সাথে খিচখিচ করতেছিলো আর এখন সে পিকাচুর কথা শুনে কংগ্রাচুলেশনস জানাচ্ছে!!!!
রাফি – (বিস্মিত হয়ে) ব্যাপারটা কেমন হলো! পিকাচুর কথা শুনে আপনার ভয়েস টোন একদমই বদলে গেলো। কি ব্যপার!
– কারন পিকাচু ই পারে একমাত্র আসন্ন বিপদের থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে।
রাফি – মানে? কি বিপদ! আর পিকাচু কে নিয়ে এতো এক্সাইটেড কেন আপনি!
– কারন পিকাচু আমাদের প্রোজেক্ট ছিলো। পিকাচু প্রোজেক্টের কারনেই আমার বন্ধুদের প্রান দিতে হয়েছে।
রাফি – মানে আপনি ওই ডেভেলপারদের একজন! তাহলে আপনিই তো পিকাচু কে কম্প্লিট করতে পারতেন। আমাকে তো প্রয়োজন ছিলো না। ওয়েট ওয়েট, আপনার কাছেও পিকাচু রয়েছে!!! যেটাকে আমরা এতদিন হাইব্রিড হাইড্রা হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম!!! Am I right!
– আমার কাছে পিকাচু নেই, পিকাচু প্রোজেক্টের আগে আমরা ৩ বন্ধু মিলে একটি প্রোজেক্ট শুরু করেছিলাম যেটা ড্রপ করা হয়েছিলো আইনি ঝামেলার কারনে কিন্তু আমার কাছে প্রোজেক্টের ব্লুপ্রিন্ট ছিলো। আমি সেই আনফিনিশড প্রোজেক্টের ফিনিশড রেজাল্ট ই ব্যবহার করছি। আমরা আরো ৩ বন্ধুকে নিয়ে মোট ৬ জন মিলে সেম প্রোজেক্ট আবার চালু করি সকল প্রকার আইনি প্রসেস মেনে। আর প্রোজেক্টের নাম দেয়া হয়েছিলো প্রোজেক্ট পিকাচু। আগের থেকে আরো ফুলপ্রুফ করে তৈরী করা শুরু করেছিলাম পিকাচুকে। তারপর পিকাচু চুরি হয় আর আর সব ডেভলপারদের মেরে ফেলে অস্ত্র ব্যবসায়ী। আর আমি আমাদের পুরাতন প্রোজেক্ট নিয়ে আত্বগোপন করি, পিকাচুকে বাঁচতে পারি নি আমি। এক কথায় বলা যায় আমি পিকাচুর যময বোনকে ব্যবহার করছি। দুটো প্রোজেক্টের বেজ একই যার কারনে পিকাচু অনলাইন হলে আমার সিস্টেম পিকাচুকে সেন্স করতে পারে।
রাফি – তারমানে আপনার হাইড্রা আর এই পিকাচু একই! তাহলে তো পিকাচুর কোন প্রয়োজনই ছিলো না। কেন পিকাচুকে কম্প্লিট করার দরকার পড়লো? আর আপনার ল্যাবে, আপনার সার্ভারেই পিকাচু অনলাইন হয়েছে অথচো আপনি টের পেলেন না কেন!
– অস্ত্র ব্যবসায়ী পিকাচুকে বিক্রি করার প্লান করেছিলো। পিকাচু যদি ভুল মানুষের হাতে পড়তো তাহলে এর কি পরিনতি হতে পারে তা ভেবে দেখো। আর পিকাচুকে ধরতে না পারার কারন হতে পারে প্রথমতঃ তুমি সার্ভারের এনক্রিপশন পরিবর্তন করেছো এবং দ্বিতীয়তঃ পিকাচু একটা স্মার্ট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। যদি তুমি ওকে হার্ডড্রাইভে থাকা ব্লুপ্রিন্ট অনুযায়ী তৈরী করে থাকো তাহলে পিকাচু নিজেকে লুকাতে খুবই পটু হওয়ার কথা। নিজেকে সিকিউর করে নিয়েছে হয়তো, যেমনটি আমার হাইড্রা। একটা জিনিস খেয়াল রেখো, পিকাচুকে সব ধরনের কাজের ডিসিশন দিলেও অটোনোমাস ডিসিশন নেয়ার পার্মিশন দিবে না কোনভাবেই।
রাফি – আপাতত সেই অপশন অফ করাই আছে। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যদি নিজে নিজে ডিসিশন নিতে না পারে তাহলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কি মূল্য!!!
– পিকাচু সবকিছুই করতে পারবে শুধু নিজে থেকে ডিসিশন নিতে পারবে না। তার জন্য সুপিরিয়র সুপারভিশন লাগবে আর যদি কোন কারনে সুপিরিয়র আনএভেইলেবল থাকে তাহলে পিকাচু ডিজেবল হয়ে থাকবে। No alternative.
রাফি – সেটা আমি প্রোগ্রাম ডায়গনসিস করার সময়ই দেখতে পেয়েছি। আর সেটা পরিবর্তন করারও কোন ইচ্ছা নেই আমার।
– পিকাচুর জন্য কোন Kill code তৈরী করেছো কি! বলা তো যায় না।
রাফি – চিন্তা করবেন না। আমিই পিকাচুর কিল কোড, আমি আছি তো পিকাচু আছে আর আমি নেই তো পিকাচু ও নেই। আর হ্যাঁ, আপনি কিন্তু বলেন নি , আপনি নিজে কেন পিকাচুকে ডেভলপ করলেন না! আপনি তো ডেভলপারদেরই একজন ছিলেন। আপনার জন্য তো কাজটা আরো সহজ ছিলো। তাহলে আমাকে দিয়েই কেন!
– হ্যাঁ আমি পারতাম, কিন্তু যে কারনে পিকাচুকে দরকার ছিলো তার জন্য আমার শুধু পিকাচু নয়, একজন ভালো এবং স্কীল্ড প্রোগ্রামারের ও প্রয়োজন ছিলো, and you are perfect.
রাফি – আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কি করতে চাইছেন আপনি? আমি শুধুমাত্র আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাই।
– তো কাজ শুরু করো, আর দেখো পিকাচু কতটা ইফিশিয়েন্ট। আর কেন তোমাকে আর পিকাচুকে লাগবে সেটা পরে জানাচ্ছি। এখন অটোনোমাস ডিসিশন নেয়ার পার্মিশন অফ রেখে বাদবাকী রেষ্ট্রিকশন তুলে দাও, knowledge hunting এ সময় লাগবে অনেক।
রাফি – অলরেডি আপনার সার্ভারের ৭০% ফুল হয়ে গেছে তাও কয়েক মিনিটে। আপনার সার্ভার ইনাফ না।
– খুঁজতে বলো! দেখো তো পিকাচু কি কি করতে পারে।
রাফি ফোন কেটে দেয়। মাফিয়া গার্লের কথায় কিছুটা ধোঁয়াশা ভাব থাকলেও আপাতত নিজের ব্যপারে মনযোগ দিতে চাইলো রাফি। মনিটরের দিকে তাঁকিয়ে পিকাচুর রেষ্ট্রিকশনগুলো দেখতে লাগলো। অটোনোমাস ডিসিশন ডিজেবল রেখে বাদবাকি ডিসিশন দিয়ে দেয় রাফি। পিকাচু আবারও knowledge hunting শুরু করে। কিছুক্ষণের ভেতরেই সার্ভার ফুল হয়ে যায় আর নতুন স্পেসের রিকুয়েষ্ট করতে থাকে।
রাফি – পিকাচু? নতুন স্পেস খুজে বের করো। যে কোন এক জায়গায়, ছড়ানো ছিটানো স্পেস এভয়েড করো।
পিকাচু – পিকা পিকা। Searching for available space for knowledge hunting…….
রাফি অপেক্ষায় থাকে পিকাচুর সার্চ শেষ হওয়ার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর,
পিকাচু – Available memory space found.
রাফি মনিটরের দিকে তাকায়। বেশ কয়েকটি অপশন দেখতে পায় রাফি। যার ভেতর কিছু সার্ভার আছে যেগুলোর মেমরী তার কার্যক্ষমতা থেকে কয়েকগুন বেশী আর এই অতিরিক্ত মেমরী কখনই ব্যবহার করা হয় না। এমন সব চয়েস ঘাটতে ঘাটতে রাফি একটা অপশন পেলো যা ফিজিক্যালী ইম্পসিবল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০০০০ কিলোমিটার উপরে শো করছে আর মেমরী স্পেস ও বিশাল।
রাফি – পিকাচু? Show details about the option number 32?
পিকাচু – Accessing available data, option number 32 , A tactical satellite.
রাফি – স্যাটেলাইট!
পিকাচু – Affirmative. পৃথিবীর বৃহত্তম দেশের স্যাটেলাইট এটি। একটা এক্সপেরিমেন্টাল এক্সিডেন্টে স্যাটেলাইট কন্ট্রোল ফ্যাসিলিটি ধ্বংশ হয়ে যায় আর এই স্যাটেলাইট সাধারন স্যাটেলাইটের তুলনায় অনেক উপরে থাকায় অন্য কোন স্যাটেলাইট ফ্যাসিলিটি ব্যবহার করে কমিউনিকেশন বিল্ড করা সম্ভব হয় নি।
রাফি – তাহলে তুমি কিভাবে সেই স্যাটেলাইট একসেস করবে?
পিকাচু – তা কন্ট্রোল করার মত এন্টেনা এই দেশে নেই মানে এমন নয় যে এই পৃথিবীতে নেই, তবে এমন এক দেশের কাছে এই ফ্যাসিলিটি আছে যাদের কাছে সাহায্যের জন্য কখনো এই দেশ ঝুকবে না। তাই ওই স্যাটেলাইটের মায়া একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছে সরকার।
রাফি – তুমি পারবে স্যাটেলাইটটা একসেস করতে?
পিকাচু – Affirmative. কিন্তু স্যাটেলাইটটি ১৮ ঘন্টা পর ওই এন্টেনার রেন্জে আসবে। তখন আমি স্যাটেলাইটের অর্বিটাল স্পিড এন্টেনার রেন্জের সাথে এডযাষ্ট করে দিবো যেন ২৪/৭ স্যাটেলাইটটি ওই এন্টেনা দিয়ে একসেস করা যায়।
রাফি – ১৮ ঘন্টা মানে অনেক সময়, ততক্ষণে অন্যান্য কাজ সেরে নেয়া যাক।
রাফি কীবোর্ডে হাত চালায়, পিকাচুর মাধ্যমে খুব সহজেই NSA এর সার্ভার একসেস করে ফেলে রাফি, যেন গরম ছুরি দিয়ে মাখন কেটে ফেলার মত সহজ। কিন্তু এই NSA এর ফায়ারওয়্যাল এবং সিস্টেম আপগ্রেড রাফিরই করা তারপরও পিকাচুকে এত সহজে ফায়ারওয়্যাল ফুটা করে ফেলতে দেখে কিছুটা মনক্ষুন্ন হলেও পিকাচুর ক্ষমতা রাফিকে অভিভূত করে দেয়। কারেন্সি চুরির পুরাতন ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট খুজতে লাগলো NSA সার্ভারে। পিকাচু রাফিকে সাহায্য করার জন্য,
পিকাচু – I can scan the whole system 10000 times faster than you, may I?
রাফি কিছুটা ভেবে নিজের ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টের ডেট জানিয়ে sort করে দিলো পিকাচুর সার্চ ইন্জিন, তারপর পার্মিশন দেয় সার্চ করার।
৫ সেকেন্ডের ভেতর রাফিকে রিপোর্ট জানায় যে ওই টাইমের কোন পিওর ফাইল নেই কিন্তু সেম নামের একটা মডিফায়েড ফাইল রয়েছে।
রাফি পার্মিশন দিলো ফাইলটা ওপেন করার। পিকাচু ফাইলটা ক্লোন করে এনে ওপেন করলো। ক্লোন করার কারনে ওই ফাইলের অরিজিনাল রেকর্ডস এবং এডিট হিষ্ট্রিও চলে আসে।
রাফি ফাইলটা চেক করতে শুরু করে আর মোটামুটি অবাক হতে থাকে। রাফির দেয়া রিপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে আর সেখানে নতুন রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, কারন রাফি যে সব ব্যাংক একাউন্টের লিষ্ট ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টে জমা দিয়েছিলো সেগুলোর নাকি কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি! এই কেসের ইনভেস্টিগেশন পূর্ন করার জন্য যে ১০ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিলো তারা তাদের রিপোর্টে পরিস্কার উল্লেখ করে দিয়েছে যে রাফির জমা দেওয়া ইভিডেন্সের কোন ভিত্তি নেই। রাফি ভাবতে থাকে সৎ ভাবে কাজ করতে চাইলে এরা কেউই রাফিকে বাঁচতে দেবে না। রাফি নিজের অরিজিনাল রিপোর্টটি প্রধানমন্ত্রীর ইমেইলে পাঠিয়েছিলো। তাই অরিজিনাল রিপোর্ট সেখানেই পাওয়া যাবে হয়তো।
রাফি – পিকাচু, আমার মেইল আইডি সিকিউর করো। আর চেক করো যে কেউ আইডিটা সার্ভেইল্যান্সে রেখেছে কি না।
পিকাচু – পিকা পিকাআআ, securing E mail ID path, checking for surveillance tress….. Two surveillance found ……. E mail ID secure.
রাফি – সার্ভেইল্যান্স ডিটেলস শো করো,
পিকাচু – পিকা, IP registered to the NSA Director and another is unavailable.
রাফি বুঝতে পারে যে অন্যটা মাফিয়া গার্ল। রাফি ইমেইল একসেস করে। সেখানে সেন্ড আইটেম থেকে নিজের ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট ডাউনলোড করে আর ইমেইল ডিজএবল করে দেয়।
রাফি – পিকাচু, এই ডাউনলোডেড ফাইলের ইনফরমেশন এনালাইসিস করো আর ব্যাংক একাউন্টগুলো থেকে টাকা কোথায় গেলো সেটা খুঁজে বের করো।
পিকাচু – it will be done. Accessing new file, acquiring information……. Bank records found…. accessing bank logs…….
রাফি দেখতে থাকলো পিকাচু একই সাথে রিলেটেড সবগুলো ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে এ্যাকাউন্টের ট্রানজেকশন হিষ্ট্রি বের করছে। আরো কিছু নতুন একাউন্টের নাম পাওয়া গেল। বর্তমানে টাকাগুলো কোন ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে গিয়ে জমা হয়ে আছে তার লিষ্ট তৈরী করলো পিকাচু।
পিকাচু – investigation report complete, calculating the amount found………..
পিকাচু মনিটরে একটা এ্যামাউন্ট দেখালো যেটা চুরি যাওয়া এ্যামাউন্টের কাছাকাছি।
রাফি – সব টাকা তো এখানেই আছে, তাহলে টাস্কফোর্স কি কাজ করলো!!!! পিকাচু, প্রতিটা এ্যাকাউন্ট ফ্রীজ করে দাও যেন কেউ পরবর্তী ক্লিয়ারেন্স না দেয়া পর্যন্ত টাকা তোলা বা ট্রান্সফার করতে না পারে।
পিকাচু – Freezing bank accounts…… All listed Bank accounts are freezed.
রাফি – contact all the press of my country, I will transfer this evidence to them first. Lets see what the media can do.
পিকাচু – Contacting all media……… transfering message ……………. waiting for respond …………. 75% media respond.
রাফি – Good enough. I am going to show this evidence to the whole world.
পিকাচু – preparing the evidence disclosing in 3…2….1, evidence disclosed to 75 media.
রাফি – এটাই ইনাফ না, পিকাচু, মডিফায়েড ইনভেষ্টিগেশন রিপোর্ট থেকে টাস্কফোর্স মেম্বারদের ডিটেলস নাও আর তাদের ইনভেস্টিগেশন টাইমে তাদের সাথে উল্লেখযোগ্য কি কি হয়েছিলো তা চেক করো।
পিকাচু – identifying 10 members…… acquiring personal informations………. Analyzing ……
রাফি – পিকাচু, আমার ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টের অপরাধী এবং তাদের সহযোগীদের সাথে যোগসূত্র আছে কি না তা ও ক্রসম্যাচিং করো।
পিকাচু – analyzing new data…… cross matching……
রাফি এনালাইসিসের কাজগুলো মনিটরে দেখতে থাকে। ক্রসম্যাচিং এনালাইসিসের জন্য সব ধরনের পাবলিক এবং প্রাইভেট রেকর্ড চেক করছে পিকাচু, এই পুরা কাজ করার জন্য পিকাচুকে প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশো সার্ভার একসেস করতে হচ্ছে যার অধিকাংশই এনক্রিপটেড এবং হ্যাক করতে বেশ বেগ পাওয়ার কথা, কিন্তু পিকাচুর কাছে কোন এনক্রিপশন ই কোন বাধা নয়। ভয়ংকর গতিতে কাজ করে চলেছে পিকাচু।
পিকাচু – Analysis complete.
রাফি মনিটরের দিকে তাঁকায় এনালাইসিস রিপোর্ট দেখার জন্য। এদের সবার ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট একরাতে পরিবর্তন করা হয়েছে। তারা তাঁদের ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট ঠিকঠাকই করেছিলেন কিন্তু ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেয়ার আগের দিন রাতে পুরো রিপোর্ট বদলে ফেলা হয়েছিলো। সবার পার্সোনাল কম্পিউটার একসেস করে ইনভেস্টিগেশন চলাকালীন ফলোআপ রিপোর্টগুলো সংগ্রহ করে পিকাচু কিন্তু কি কারনে তারা তাদের ফাইনাল রিপোর্ট বদলালেন তা অজানা।
রাফি – পিকাচু, এই শেষ দিনে রিপোর্ট বদলানোর কি কারন হতে পারে!
পিকাচু সম্ভাব্য অপশনগুলো তুলে ধরে রাফির সামনে যার মধ্যে হুমকি, কিডনাপ, ঘুষ, সহ আরো বেশ কিছু অপশন রয়েছে।
রাফি পিকাচুর সাথে মিলে সম্ভাব্য অপশনগুলো ক্রসম্যাচিং করতে লাগলো।
পিকাচু একটা সাজেশন দিলো ক্রসম্যাচিং চলাকালীন অবস্থায়,
পিকাচু – কেন ওই ১০ সদস্যের কাছে সরাসরিই জিজ্ঞাসা করছি না? We should asked directly.
রাফি – Not a Bad idea. কিন্তু তারা কেন আমাকে সবকিছু ঠিকঠাক বলবে!
পিকাচু – ডিসক্লোজড ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট অলরেডি বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল টেলিকাষ্ট করছে আর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তুলছে যা দেখে টাস্কফোর্সের ১০ সদস্যরা নিজেদের ভেতর কথা বলার জন্য একখানে জড়ো হয়েছে। ফোন লোকেশনে তাদের মাঝে থাকা দূরত্ব বলছে তারা এখন একটা রুমের ভেতর আছে।
রাফি – তাহলে তাদের যে কোন একজনকে কল করে তাদের সাথে কথা বলা যাক। পিকাচু, টাস্কফোর্স প্রধানের নাম্বার সিকিউর করে কানেক্ট করো।
পিকাচু – Connecting ……..
H – হ্যালো, H বলছি।
রাফি – হ্যালো H, আমি রাফি বলছি, দয়া করে ফোনটা স্পিকারে নেবেন প্লিজ? আপনাদের সবার সাথে কথা বলতে চাই।
H ফোনকে স্পিকারে নেয় আর রেকর্ডিং এর চেষ্টা করে কিন্তু পিকাচু আগে থেকেই সেই সিস্টেম অফ করে দিয়েছিলো,
রাফি – আপনাদের ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টটি জমা দেয়ার আগের রাতে পরিবর্তন হয়ে যায়, আগামী ৪ ঘন্টার ভেতর যথাযথ কারন যদি প্রেস ব্রিফিং এ সবার সামনে উপস্থাপন করে আসল দোষীদের সামনে না আনেন তাহলে আপনাদের স্বাভাবিক জীবন অনেক বেশী অস্বাভাবিক হয়ে যাবে।
H – আমরা ঠিক রিপোর্টই জমা দিয়েছি, তোমার কি দেখে মনে হলো রিপোর্ট আগের রাতেই পরিবর্তন হয়েছে!
রাফি – কারন আপনাদের প্রত্যেকের প্রতিদিনের ফলোআপ রিপোর্ট রয়েছে আমার কাছে, সিগনেচার সহ। ফলোআপ রিপোর্টের সাথে ফাইনাল রিপোর্টের কোন মিল নেই। অনেক অস্বাভাবিক নয় কি!
H – আমাদের মেরে ফেলতো যদি আমরা পরিবর্তন না করতাম। আমাদের পরিবারের উপর হুমকি এসেছিলো।
রাফি – এখন আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন, ভুল স্বীকার করে প্রেস ব্রিফিং এ আসল রিপোর্ট উপস্থাপন করুন। ভয় পাবেন না, আমি একাউন্টগুলো ফ্রীজ করে দিয়েছি, এক টাকাও এদিক ওদিক হবে না, আপনাদের মেইলে ওই কারেন্সি এখন কোন কোন একাউন্টে আছে তার ডিটেলস দেয়া আছে।
H – যদি টাকাগুলোর হদিস পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই আমরা প্রেস ব্রিফিং ডেকে সত্য বলতে রাজি আছি।
রাফি – তাহলে মেইল চেক করুন আর প্রেস ব্রিফিং এর জন্য তৈরী হোন। ৪ ঘন্টা পর আপনাদের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিং।
বলে কলটা ডিসকানেক্ট করে রাফি।
রাফি – পিকাচু, সব মিডিয়াতে আবার কমিউনিকেট করে প্রেস ব্রিফিং এর কথা জানিয়ে দাও।
পিকাচু – connecting all media…….. message send.
রাফি – নিজের কাজটা করতে হবে এবার। পিকাচু, আমার বাবা মা এবং স্ত্রী কে খুঁজে বের করো?
পিকাচু – Accessing family archive and social media……. searching……
রাফি দেখলো পিকাচু ফ্যামিলি ফটো গ্যালারী আর সোস্যাল মিডিয়া থেকে ছবি সংগ্রহ করে এবং তাদের লাষ্ট known location থেকে সার্চ শুরু করে।
কিন্তু ট্রেস করতে পারে না। পিকাচু সার্চ চালাতে থাকে।
রাফি বুঝতে পারে যে মাফিয়া গার্ল কোন ট্রেস ই রাখে নি হয়তো তার বাবা মা পর্যন্ত পৌঁছানোর। কিন্তু রাফিও ছাড়ার পাত্র নয়। ফ্যামিলিকে তো খুঁজে বের করতেই হবে রাফিকে।

হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব-১৪

0

হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২
পর্ব-১৪

বিঃদ্রঃ ব্যস্ততার কারনে গল্প দিতে দেরি হচ্ছে তার জন্য দুঃখিত।

রাফি দ্রুত ম্যাপগুলো একটা ডিজেবল সার্ভারের ফাঁকে লুকিয়ে ফেলে আর বেজমেন্ট থেকে বের হয়ে সদর দরজা খোলার জন্য এগিয়ে যায়। এতদিন বাইরের মানুষকে ভয় লাগলেও এখন আপন ভাবা সাইবার কুইনকেই ভয় লাগতে শুরু করেছে রাফির।
সদর দরজায় পৌছে রাফি দরজা খুলে দিলো। দুইজনকে শিড়ির উপর মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে রাফি। রাফির দরজা খোলার আওয়াজে দুইজনই ঘাড় ঘুরিয়ে রাফির দিকে তাঁকালো। রক্তচক্ষু বলা যায় দুইজনেরই, যে কোন ঘরের সামনে ঘন্টা খানেক বসে থাকা কম কথা নয়। দুইজন একসাথে উঠে দাঁড়াল। ছবিতে দুজনকে এভারেজ সাইজ লাগলেও বাস্তবে দুইজনই ৬+ ফিট আর হাট্টাকোট্টা বডিফিটনেস। রাফি হাত মেলানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেও দুইজনের কেউই হাত মেলালো না উল্টো হাতে থাকা ৫ লিটারের সসের বোতলটা ধরিয়ে দিয়ে রাফিকে সাইড কাটিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে যায় দুইজনই। ডাইনে বায়ে না তাকিয়ে সোজা দোতলায় উঠে যায় রাফি নীচ থেকে উঁকি দিয়ে দেখতে চেষ্টা করে দুজন কি করছে। দুইজনই নিজ নিজ জ্যাকেটের পকেট থেকে চাবি বের করে দুটো আলাদা রুমের দরজা খুলে ফেলে। এরপর ভেতরে গিয়ে বেশ জোরেই দরজা লাগিয়ে দেয়। রাফি বিষয়টা কিভাবে নেবে না নেবে কা বুঝে উঠতে পারে না, এদের দুইজনের কাছেই ঘরের চাবি রয়েছে অর্থাৎ এরা এই ঘরের পুরাতন বাসিন্দার। প্রথমবারের মত কোন বাড়িতে আসা কেউ সরাসরি সঠিক দরজার সামনে গিয়ে লক খুলতে পারে না যদি না তারা বাড়ি সম্পর্কে পরিচিত না হয়। রাফি চুপচাপ নিজের জন্য কয়েকটা স্যান্ডউইচ বানিয়ে ৫ লিটারের বোতল থেকে বেশ খানিকটা সস ঢেলে নিয়ে বেসমেন্টে চলে যায়। নিজেকে উদ্ধার করার জন্য হলেও পিকাচু কে পরিপূর্ণ রূপ দিতে হবে রাফিকে। বেজমেন্টে যেতে যেতে মাফিয়া গার্লের ফোন,
– তোমার সস পেয়েছো?
রাফি – (স্যান্ডউইচ গালে) পেয়েছি তবে ইম্পোর্টেড মাল ও যে বাজে হতে পারে তার একটা প্রমান পেলাম। যাইহোক, I wanna talk to my family, within today.
– today!
রাফি – You save them from my safe house, thank you for that but I need to talk with them. Its been a while.
– I’ll try but can’t guarantee you anything.
রাফি – if you can send Ruhi for me than it is nothing. I can’t control myself, I need to talk.
– let me check what I can do.
রাফি – ধন্যবাদ। কাজ শুরু করবো। রাখছি।
– অফলাইনেই বেশ কাজ করছো দেখছি?
রাফি – আপাতত ইন্টারনেট প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রয়োজন হলে আমিই অনলাইন করে দিবো।
– কিন্তু ওটা আমার সেফ হাউজ। I want to see what is going on over there.
রাফি – তোমার বন্ধুরা চলে এসেছে। তাদের কাছ থেকে আপডেট নিয়ে নাও।
– কি হয়েছে তোমার রাফি? এমন ব্যবহার করছো কেন?
রাফি – (বিষন্ন) Just let me talk to my family. I’m not strong without them. Please.
– ok, I’ll try.
রাফি – please. Thank you.
রাফি জানে যে এই মুহূর্তে মাফিয়া গার্লের উপর ভরসা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। জিপিএস ব্যবহার ছাড়া এই এলাকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয় আর মাত্র কয়েক ঘন্টায় একটা আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলের পুরো ম্যাপ আত্বস্থ করে ওই অন্ধকার ট্যানেলে ঢুকে যাওয়ার মত সাহস যোগাড় করাও সম্ভব নয়। আর পালালেও বা কোথায় যাবে রাফি? এই অজানা শহরের একটা পিপড়াকেও চেনে না রাফি, অনলাইনে কাউকে খোঁজ করতে চাইলে সে খবর মাফিয়া গার্লের কাছে আগে পৌঁছাবে। এই দেশের কারেন্সি এখনো পর্যন্ত দেখে নি রাফি। ইন্টারনেট, মোবাইল, টেলিফোন, জিপিএস, সিসিটিভি, স্যাটেলাইট সবখানেই মাফিয়া গার্লের উষ্ণ ছোঁয়া রয়েছে। নেটওয়ার্ক মোডিফাই করলেও ধরে ফেলবে মাফিয়া গার্ল। রাফির কাছে একটা জিনিস পরিস্কার যে মাফিয়া গার্ল তার উদ্দেশ্য সফল না করে রাফিকে ছেড়ে দেবে না, হোক সে উদ্দেশ্য রাফিকে বাঁচানো অথবা অন্য কোন ভয়ংকর কিছু।
তাই যদি এখান থেকে মুক্ত হতে হয় তো মাফিয়া গার্লের উদ্দেশ্য বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। আপাততঃ কিছু না বুঝে নিজের কাজ করে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
বেজমেন্টে বসে পুরাতন হোমওয়ার্কে বিজি হয়ে যায় রাফি, পিকাচুকে কন্ট্রোল করতে পারছিলো মাফিয়া গার্ল এমনকি পিকাচুর পার্মিশন সেটিংস ও চেন্জ করতে পারছিলো মাফিয়া গার্ল যা অথোরাইজড ইউজার ছাড়া সম্ভভ না। এছাড়াও পিকাচু কোন পরিস্থিতির সাথে এডাপ্ট ও করে নিচ্ছিলো না যার জন্য রাফিকে একই কমান্ড বার বার দিতে হচ্ছিলো। মোটকথা এই বেটা ভার্শনের পিকাচুকে পরিপূর্ণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলা চলে না। এখন পর্যন্ত পিকাচু একটা এসিস্টেন্ট ই হয়ে আছে যার জন্য শুধুমাত্র প্রিলোডেড সিমুলেশনই ফলো করছিলো পিকাচু, আর ১০ টা সাধারন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর মত। তবে পিকাচুর আনফিনিশড প্রোগ্রামিং এবং কোডিং যদি ঠিকঠাকমত শেষ করা যায় তো পিকাচু হবে পৃথিবীর অন্যতম ইফিসিয়েন্ট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
পিকাচুর ডিজাইনের একটা ডায়াগ্রাম এঁকে বেজমেন্টের দেয়ালে ঝুলিয়ে দিলো। বিশাল বড় কাজ ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে এক একটা টাস্ক ঠিক করে নেয় রাফি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


বিকেলের দিকে কম্পিউটারের মনিটর থেকে চোখ সরায় রাফি। যথাযথ কারন ও রয়েছে তার, খিদে পেয়েছে ভয়াবহ। সকালবেলা কয়েকটুকরো স্যান্ডউইচ খেয়ে কাজ শুরু করেছিলো, এখন পেটের ভেতর দানব দৌড়াচ্ছে। বেজমেন্টের কাজ রেখে উপরে উঠে আসে রাফি। ড্রয়িং এর কাছে এসে নতুন দুই সদস্যকে খুঁজতে থাকে। এখনো ঠিকমত পরিচিত ও হয় নি। হঠাৎ উপরে কিছু একটার শব্দ হওয়ায় রাফি শিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো। কোন একটা কর্মযজ্ঞ চলছে তা বোঝাই যাচ্ছে, দোতলা ছেড়ে তিন তলার দিকে তাকালো রাফি, আওয়াজ তিনতলা থেকে আসছে। রাফি তিনতলায় একটা রুম খোলা পায়, রুমটাতে ঢুকে দেখতে পায় দুইজনই রুমের ভেতর বসে ক্যাবল টানাটানি করছে। দুইটা মনিটর ট্যাম্পরারী ভাবে মেঝেতে কানেকশন দিয়ে কি যেন চেক করছে। রাফিকে দেখে দুজনেই রাফির দিকে তাকিয়ে পরে,
রাফি – (অবাক হয়ে) কি করছো এখানে!
দুইজনই কোন কথার জবাব না দিয়ে আপন কাজে মন দিলো। রাফি ঘুরে এসে মনিটরের দিকে তাকালো। সারা বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার কাজ করছে তারা, কিন্তু এখানে কেন! বেজমেন্টে তো সব সিস্টেমই রয়েছে। কিছুক্ষণ কাজ করে তারা ফোনে কাকে কি যেন বললো। ফোনটা কেটে মনিটর অফ করে রেখে বের হয় রুম থেকে আর রাফিকেও ইশারা করে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য।
রাফি রুম থেকে বের হয়ে গেলে দরজা লাগিয়ে দেয় একজন আর নীচে নামতে শুরু করে। রাফি ও চুপচাপ নীচে নামতে থাকে। তাদের কাজ আর সিস্টেম সেটআপ দেখে বোঝা যাচ্ছিলো ওরা সিসিটিভির কানেকশন ব্রডব্যান্ডে দিয়ে দিয়েছে। হয়তো মাফিয়া গার্ল ওদেরকে অল্টারনেটিভ ওয়ে তে সিসিটিভি অনলাইন করার নির্দেশনা দিয়েছে।
রাফি শিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মাফিয়া গার্লের ফোন,
– I can see the surveillance operation now. You don’t have to worry about surveillance anymore.
রাফি – ধন্যবাদ। আমার রিকুয়েষ্টের কি করলেন ? কথা বলতে পারবো তো?
– ব্যবস্থা on the way তে আছে। পৌছালে আমি জানাবো।
রাফি ফোনটা রেখে দেয়, হঠাৎ করেই পেট কড়া নেড়ে জানান দেয় যে কেন রাফিকে বেজমেন্ট ছেড়ে উপরে আসতে হয়েছে। কিচেনে গিয়ে ফ্রীজ থেকে ঠান্ডা নুডুলস বের করে সস দিয়ে ওই অবস্থাতেই খাওয়া শুরু করে রাফি। বাইরে বরফ পড়া শুরু হয়েছে, কিচেনের জানালা দিয়ে দেখতে থাকলো রাফি, এর আগে কখনো তুষারপাত দেখে নি রাফি।একনজরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারো বেজমেন্টের দিকে রওনা দেয় রাফি। অনেক কাজ করা বাকী।
বেজমেন্টে বসে আবারো কাজ করতে শুরু করে রাফি, একের পর এক কোড বসিয়ে প্রোগ্রামিং কম্প্লিট করতে থাকে সে। রাফির কাজ আরো দ্রুত হয়েছে কারন ডেভেলপাররা তাদের পুরা পিকাচু প্রোজেক্টের ইনিশিয়াল কোডিং কম্প্লিট করেই রেখেছিলো। যার জন্য রাফিকে শুধু ফিনিশিং টাচ দিয়ে জায়গামত কোডটা বসিয়ে দিতে হচ্ছে। রাফি শুধু কোডিংএর মাধ্যমে একটা ননবায়োলজিক্যাল ব্রেনের বেসিক লজিক, এন্যালিটিকাল লজিক, হিউম্যান ইমোশন সহ একজন বুদ্ধিমান মানুষের ব্রেন যে সব ভিত্তিতে কাজ করে তার সবই ডিজিটাল ল্যাংগুয়েজে ইনপুট করতে থাকে পিকাচুর সিস্টেমে। এছাড়া আগের করা কিছু কোডকে আরো আপডেট ও আপগ্রেড করতে থাকে রাফি।
রাতে ডিনার কারার জন্য রাফি বাইরে এলে নতুন দুই সদস্যের একজন সেঁধেই কথা বলতে আসে রাফির দিকে,
F1- Sorry for our behavior, bro. We were just upset about the morning issue. Nobody likes to wait in front of anybodys door.
রাফি – it’s okay. I was just busy with my work, sorry for that.
F1 – I can see that, btw, I’m Mark. He is Jack. We are here to assist you. You name it, we get it.
রাফি – ( কপাল কুচকে) Who is Mafia Girl? Bring her here.
Mark – (অবাক হয়ে) Did you ever see anybody to catch a shadow? Or even hear?
রাফি – Noop, just kidding. Thank you.
দুইজনের সাথেই হাত মেলায় রাফি। কথাবার্তায় যথেষ্ট ভদ্র লাগলেও চেহারা আর হাতের তালুর স্ট্রাকটার সেটা বলে না। দুইজনই দুই জিবন্ত হাতুড়ি সেটা আন্দাজ করতে পারে রাফি। ডিনার শেষে বেজমেন্টে ফিরে যাবে ঠিক তার আগ মুহূর্তে মাফিয়া গার্লের ফোন পায় রাফি।
– তোমার ফ্যামিলির হাতে একটা ফোন পৌঁছেছে। তাদেরকে তোমার নাম্বার কানেক্ট করে দিয়েছি। হ্যালো বললে কথা বলো।
রাফি অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো কোন পরিচিত গলার হ্যালো শোনার জন্য।
মা – হ্যালো,
রাফি – (আবেগে) মা!
মা – রাফি! কেমন আছিস বাবা! তোর না দেশে ফিরে আসার কথা ছিলো! তা না এসে আবার কেন ট্রেনিং এ ফেরত গিয়েছিস! তোকে না বললাম এই চাকরি ছেড়ে দে। ঘরে বসে থাক তারপরও চোখের সামনে থাক। দরকার নেই এই চাকরির।
রাফি – (কৌতূহল) আমি আবার ট্রেনিং এ গিয়েছি এটা তোমাদের কে বললো! আর তোমরা কোথায় আছো এখন?
মা – তুই যে ঠিকানা দিয়েছিলি বৌমা এর ফোনে, ওই ঠিকানাতেই তো আছি এখন। বলেছিস নাকি এখানেই নিরাপদ, সাথে আরো ৩ জন বডিগার্ডও দিয়ে দিয়েছিস সবসময় দেখাশোনা করার জন্য।
রাফি – (শান্তভাবে) তোমার বৌমা কোথায়!
মা – সে তো তার বাবা মায়ের কাছে গিয়েছে, বেয়ান অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সেখানেই আছে। তুই যাওয়ার দিনই খবর আসে বেয়ান অসুস্থ। পরের দিন ই তো আমরা চলে আসি তোর দেয়া ঠিকানাতে আর জোর করে পাঠাই ওকে বেয়াই বাড়ি, যেতেই চাইছিলো না মেয়েটা।
রাফি – ঠিকানাটা কোথায়?
হঠাৎ বী‌প বীপ আওয়াজ হতে থাকে অার ওপাস থেকে মাফিয়া গার্লের কম্পিউটার জেনারেটেড ভয়েস ভেসে আসে,
– কেন তুমি তোমার মা কে কনফিউজড করছো। তারা নিরাপদে আছে বলেছি তো। তোমার মা যদি জানে যে তুমি তাদেরকে ওখানে রাখো নি তাহলে তারা চলে যেতে চাইবে আর এতে হিতে বিপরীত হবে। একটা জিনিস কেন বুঝতে পারছো না তুমি!
রাফি – (রাগান্বিত) আসলেই আমি বুঝতে পারছি না আপনার উদ্দেশ্যটা কি! কি চান আপনি আমার কাছে! কেন আমার জন্য এত কিছু করছেন!
– এখনো সময় আসে নি সেটা জানানোর। আগে নিজেকে তৈরী করো নিজের বিপরীত শক্তির সাথে পেরে ওঠার জন্য।
রাফি – আমার কেন মনে হচ্ছে যে তুমিই আমার বিপরীত শক্তি?
– হতেই পারি। সারা দুনিয়া আমার অস্তিত্ব জানে না আর যারা জানে তারা কোন পজেটিভ ধারনা রাখে না মাফিয়া গার্ল সম্পর্কে। ধরে নাও এটাই আমার পক্ষ থেকে করা তোমার এবং তোমার পরিবারের প্রতি শেষ সাহায্য। তুমি যে কাজ করছো সেটা শেষ হলে তুমি তোমার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়।
রাফি – ফ্যামিলির সাথে কথা বলতে পারি এখন? মাঝপথে লাইন কেটে দিয়ে ঢুকে পড়েছেন আপনি!
– আজ আর না। তোমার মায়ের মনে সন্দেহ ঢুকে গেলে তাকে এবং তোমার পরিবারকে সিকিউর রাখা আমার জন্য টাফ হয়ে যাবে। তোমার কাজ শেষ করেই একবারে কথা বলতে পারবে। তাই Finish your task fast.
রাফি কথা বলা শেষ করে ফোন রেখে দেয়। বেজমেন্টে গিয়ে চেয়ারে বসে। ভয়ংকর জেদ মাথায় চাপে। মাফিয়া বয় একটা সাইবার রকস্টারের নাম, সারাজীবন নীতি আর আদর্শের ভেতর থাকতে চাওয়া রাফির জন্য এই দুনিয়া কখনই ফেয়ার গেম খেলে নি। কিন্তু সাইবার দুনিয়ায় মাফিয়া বয় যেভাবে খেলবে সেভাবেই গেম চলবে। মাফিয়া গার্লের কথাগুলো শুনে নিজের ভেতরের ঘুমিয়ে থাকা দানবটাকে অনুভব করতে পারে রাফি, নিজের পরিবারের সাথে কথা বলতে গেলেও এখন রেষ্ট্রিকশন মানতে হবে। ভয়ংকর জেদ মাথায় চেপে যায় রাফির। সার্ভার অনলাইনে নেয় রাফি। আর হাত চালায় কীবোর্ডে।
মাফিয়া গার্লের নেটওয়ার্ক মডিফিকেশন ডিসেবল করে নিজের কাষ্টোম মোডিফিকেশন বসায় রাফি, সার্ভারগুলোর এমনভাবে হাইড করে দিলো যে সার্ভারগুলোর ডেস্টিনেশন জানা থাকলেও কেউ এই সার্ভারগুলো এক্সেস করতে পারবে না, একই সার্ভারের ক্লোন আইপি এড্রেস তৈরী করলো কয়েক হাজার আর সারা দুনিয়াজুড়ে সেই কোডিং ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়, প্রতিবার ক্লোন আইপি একসেস করলে নতুন করে আরো ৪ টি ক্লোন আইপি তৈরী হবে আর তা হতে পারে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে। কিন্তু মাফিয়া গার্ল তো জানে যে কোথায় তার ল্যাব আর সার্ভার অবস্থিত তাই অপ্রয়োজনীয় সার্ভারগুলো ডিজেবল করে রেখে দেয় রাফি। মাফিয়া গার্লের কাছ থেকে পৃথিবীর অন্যতম এডভান্স কম্পিউটার ল্যাব ছিনিয়ে নিয়ে বসলো রাফি। “নে যদি পারিস তো এক্সেস নিয়ে দেখা!” মনে মনে মাফিয়া গার্লকে উদ্দেশ্য করে বলে মাফিয়া বয়। বেশ কিছুক্ষণ পর মাফিয়া গার্লের ফোন আসে,
– রাফি! কি করছো তুমি ল্যাবে বসে! সবকিছু কানেক্ট করে আবার ডিসকানেক্ট করে দিলে কেন।
রাফি – রাফি! Rafi lives no more, its Mafia Boy. And all of your servers are online, if you and your hybrid Hydra is that much powerful, find your servers,
– okay than, Mafia boy. Show your true color.
রাফি ফোন কেটে দেয়। রাফি জানে না মাফিয়া গার্লের হাইড্রা কতটা পাওয়ারফুল তারপরও চ্যালেঞ্জ যখন ছুড়ে দিয়েছে তখন চ্যালেঞ্জে ই কথা হবে। রাফি জানে এই পুরো সিস্টেম মাফিয়া গার্লের তৈরী, তাই পুরোটা মাফিয়া গার্লের নখের ডগায় থাকাটা স্বাভাবিক, তাপরও রাফি যে এনক্রিপশন ব্যবহার করেছে তা এজইউজুয়াল টুলস দিয়ে ক্রাক করা সম্ভব না সেই ভরসায় কাজটা করে শান্ত হলো রাফি। দ্রুতই পিকাচুর কোডিং শেষ করতে হবে রাফিকে। এভাবে চুরি করে থাকা আর সম্ভব নয়। শুরু করলো পিকাচুর কোডিং আর অপেক্ষা করতে লাগলো মাফিয়া গার্লের “হাই” পাওয়ার জন্য।
পরপর দুইদিন একইভাবে খেটে যায় রাফি পিকাচুর পেছনে। শুধুমাত্র খাওয়া ছাড়া বেসমেন্ট থেকে বের হওয়ার নাম নেয় না রাফি। কাজে এতোটা বেশী মগ্ন হয়ে যায় যে দুনিয়ার বাদবাকী সবকিছুই ভুলে যায় রাফি। দুইদিনে মাফিয়া গার্লও কোন সাড়া দেয় নি, রাফির কোডিংও প্রায় শেষের দিকে।
রাফি কোডিং শেষ করে একটু দম নেয়।
অবশেষে। রাফি একটু স্বস্তি পায়। পিকাচু প্রোগ্রাম রান করে মাফিয়া বয়। সিস্টেম এক্টিভ হওয়ার সাইন দেখায় স্ক্রীনে। ১%….২%…..৩%
ধীরে ধীরে জেগে উঠতে থাকে পিকাচু, সিস্টেম ইরর দেখার মত মানসিকতা নেই রাফির, পিকাচুই এখন শেষ ভরসা।
অবশেষে পিকাচুর রেস্পন্স পাওয়া গেল।
পিকাচু – (কার্টুন ভয়েসে) Hi, I am pikachu,

হ্যাকেরের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব-১৩

0

হ্যাকেরের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব-১৩
.
রুহী চলে গেলে দরজা লক করে সোজা চলে গেলো ষ্টোররুম দিয়ে বেজমেন্টে, অসম্পূর্ণ পিকাচুকে সম্পূর্ণ করতে হবে, নিজেকে নির্দোষ করা বাকী।
কিন্তু ঘুমে মাথা ঘুরতে থাকে রাফির। চেয়ারে বসে কীবোর্ডে হাত দেয় কিন্তু এই অবস্থায় কাজ করতে পারবে না বুঝতে পেরে যায় রাফি। গা হাত পা অসাড় হয়ে আসে আর চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়ে রাফি।

হঠাৎ ই ঘুম ভেংগে যায় রাফির। বেসমেন্টে থাকার কারনে হুট করে বুঝতে পারে না যে রাত পার হলো নাকি মাঝরাতেই ঘুম ভাংলো। সামনে পিসিতে চোখ বোলাতে বোলাতে চেক করে, রাত ৩ টা ৩৮ বাজে। খুব ভালো একটা ঘুম হলেও চেয়ারে ঘুমানোর কারনে ঘাড়ে ব্যথা হতে লাগলো রাফির। খিদেও লেগেছে হালকাপাতলা। রাফি ঘাড়ে হাত বোলাতে বোলাতে আর ঘাড় ঘোরাতে ঘোরাতে বেজমেন্ট ছেড়ে ডায়নিং রুমে আসে। ফ্রীজ ভর্তি খাবার থাকায় মাঝরাতের চুটকি খিদে মিটিয়ে নিতে বেগ পেতে হয় না রাফির। একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে সারা ঘর ঘুরে দেখতে লাগলো এতক্ষনে পুরো ঘরটাই ঠিকমত দেখেনি রাফি, ঘরের বাইরের দেয়াল ইট পাথরের হলেও ভেতরের পুরোটা কাঠের তৈরি। বাইরের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে আর ফায়ারপ্লেসের তাপের অপচয় কমাতে এই ব্যবস্থা, এইদেশের কমবেশি সব ঘরই এমনাভাবে তৈরি। নীচতলায় দরজা খুলে বামদিকে ড্রয়িংরুম আর নাক বরাবর রান্নাঘর এবং ড্রয়িংরুম, রান্নাঘর ডায়নিং একসাথেই, ডান পাশে উপরে ওঠার শিড়ি, আর শিড়ির নীচে ষ্টোররুম। বাড়িটা বেশ পুরাতন হলেও ভেতরের ডেকোরেশন একদমই আলাদা। এমন মফস্বল শহরে এমন ধাঁচের ইন্টোরিয়র দেখা যায় না। কেউ একজন খুব সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে যে কারনে কিছু কিছু জিনিস রাফির খটকা লাগছে। প্রতিটা দেশেরই কিছু ইউনিক কালচার থাকে, স্ট্রাকচার ও। রাফির কাছে মনে হতে লাগলো রাফির আশপাশকে কেমন যেন জোর করে এভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রাফি ইতিহাস কিংবা প্রাচীন আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা না করলেও কেমন যেন একটা ফিলিংস কাজ করতে থাকে রাফির যে সে আসলে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশে নেই, হয়তোবা একই রকম দেখতে অন্য কোন রাষ্ট্রে রয়েছে। সন্দেহ যেন কিছুতেই দমাতে পারছে না রাফি। ঘরের ভেতর খোঁজাখুঁজি করা শুরু করলো রাফি, এমন কোন ক্লু খুঁজতে থাকে যাতে এটা প্রমান হয় যে রাফি যা মনে মনে ভাবছে তা সঠিক নয়। রাফির হঠাৎ করে কেন এমন মনে হচ্ছে তা রাফি নিজেও বলতে পারবে না হয়তো কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই শান্তি দিচ্ছে না রাফি কে। স্যাটেলাইটের রিয়েল টাইম ইমেজিং ও টেম্পারিং করেছে মাফিয়া গার্ল, জিপিএস কোয়ার্ডিন্যান্স ও। যার পক্ষে এসব করা সম্ভব তার পক্ষে যে কাউকে নতুন করে ভূগোল বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



এ যেন নিউইয়র্ক সিটিতে দাঁড়িয়ে জিপিএস লোকেশনে নিজেকে আফ্রিকার আমাজন জঙ্গলে দেখতে পাওয়ার মত অবস্থা। ইন্টারনেটে কানেকশন দিয়ে যে কিছু করবে তার ও উপায় নেই, এই বাড়ির পুরো নেটওয়ার্ক সিস্টেম মাফিয়া গার্লের সাজানো, ফোনটাও ট্যাপ করা। কারো কাছে জিজ্ঞাসা করবে তার ও কোন উপায় নেই, এমন দুর্বোধ্য ভাষা সাবটাইটেল ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। রাফি যখন রুহীর সাথে ঘুরতে বের হয়েছিলো তখন এমন কোন বিশেষ কিছু ও চোখে বাধে নি যেটাতে রাফির এটা মনে হতে পারে এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশের কোন একটা মফস্বল শহর। শপিং করতে যেতে চাইলেও ৬০ কিলো দূরে যেতে হবে যেখান থেকে রুহী লিফট চেয়ে এতদূর পর্যন্ত এসেছিলো। উল্টো লিফট নিয়ে আসার সময় এমন একটা ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাক্টের বিশাল বড় বিলবোর্ড চোখে বেঁধেছিলো যে কোম্পানীর সাথে এই বৃহত্তম দেশের ব্যবসা থাকার কথা না। কূটনৈতিক জটিলতার কারনে পন্যটির উৎপাদক দেশটির সাথে সকল ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন রয়েছে। বিলবোর্ডটি লোকাল ভাষায় লেখা হলেও পন্যের মোড়োক আর লোগো তো আর পরিবর্তন সম্ভব না। এই ঘটনা বেশ কয়েক বছরের পুরাতন কিন্তু বিলবোর্ডটির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫-৬ মাস আগে বিজ্ঞাপনটি বিলবোর্ডে লাগানো হয়েছে, এত বছর আগে ব্যান হওয়া পন্যের বিজ্ঞাপন এখনো বিলবোর্ডে ঝোলানো থাকাটা অস্বাভাবিক। হয়তোবা সন্দেহের শুরুটা সেখান থেকেই হয়েছে।
রাফি মোবাইলটা বের করে কাছাকাছি কোন গ্রোসারি শপ আছে কি না তাই সার্চ দিলো। সার্চ রেজাল্ট আসতে আসতেই মাফিয়া গার্লের ফোন, মনে মনে ঠিক যেমনটি রাফি চেয়েছিলো,
– Didn’t you miss me?
রাফি – মিস না করে উপায় আছে? এই রাত বিরাতে নুডুলস খাওয়ার সময় যদি দেখি সস নেই তাহলে তো ম্যাডামকে মিস করতেই হবে।
– এই রাতে নুডুলস?
রাফি – রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে কি আর করবো। সময় কাটানোর জন্য আরকি। আচ্ছা আসেপাশে কি কোথাও গ্রোসারি শপ আছে যেখান থেকে এখন সস নিয়ে আসতে পারি?
– ভোর হতে এখনো বেশ দেরী, আপাতত সস ছাড়া নুডুলস খেয়ে নাও। কাল আমার দুইজন লোক যাবে তোমার কাছে। তোমার যা কিছু দরকার সবই তারা তোমাকে জোগাড় করে দেবে। আমি তাদের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম বেজমেন্ট সার্ভারে। চেক করো নি?
রাফি – সার্ভার অফলাইনে আছে। একটু কষ্ট করে আমার ফোনে সেন্ড করে দাও না? এই রাতে আর বেজমেন্টে যাবো না, আমি ফোন থেকে চেক করে নিবোনি. কেমন?
– ( কিছুক্ষণ নীরব থেকে) ঠিক আছে, তোমার ফোনেই আমি ডিটেলস পাঠিয়ে দিচ্ছি। চেক করে নিয়ো। আর হ্যাঁ সার্ভার অনলাইন না করলে বাড়ির সার্ভেইল্যান্স আর সিকিউরিটি আনপ্রোটেক্টেড থেকে যাবে, তাই যথাসম্ভব সার্ভার অনলাইন রাখার চেষ্টা করো
রাফি – চেষ্টা করবো। আর হ্যাঁ, কাল অবশ্যই অবশ্যই সস নিয়ে আসতে বলবে তোমার লোকদের। সস ছাড়া নুডুলসের স্বাদই মাটি।
– ঠিক আছে, ওদেরকে বলে দিবো।
রাফি ফোনটা কেটে দিলো। মাফিয়া গার্লের উপর সন্দেহ হতে লাগে রাফির, কিন যেন মনে হতে লাগে মাফিয়া গার্ল রাফিকে কারাগারে আটকাতে চাইছে। সামান্য গ্রোসারি শপের লোকেশন ও দেখতে দিতে চায় না সে। কিন্তু এই মাফিয়া গার্ল ই তো রাফিকে সব বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। যেখানেই সমস্যা হয়েছে সেখানেই পৌছে গেছে মাফিয়া গার্লের সাহায্য।
কিন্তু রাফির ল্যাগেজ এই বাড়িতে আগে থেকেই কিভাবে এনে রাখলো মাফিয়া গার্ল? এটা কি মাফিয়া গার্লের দ্রুত কাজ শেষ করার ক্ষমতা নাকি পূর্ব পরিকল্পিত কোন জাল।
অন্যান্য জায়গাগুলোতে রাফির ট্রান্সপোর্ট কিংবা যে কোন কাজ করতে কোন এসিস্ট্যান্সের দরকার পড়ে নি, অথচো পিড়ামিডের দেশ থেকে এই দেশে আসতে কেন রুহীকে দরকার পড়লো? কেন একটা গাড়িতে লিফট নিয়ে এই মফস্বল শহরে আসতে হলো যেখানে মাফিয়া গার্লের কাছে এতগুলো সেফ হাউজ রয়েছে, একটা গাড়ি তো কোন ব্যপার ছিলো না। রুহী লোকাল ল্যাংগুয়েজ এক্সপার্ট তাই এখানকার নেটিভ লোকজনদের সাথে কথা বলতে ওর কোন সমস্যা হয় নি। রাফি হলে হয়তো নেটিভ ভাষায় বোঝাতে পারতো না কিন্তু অন্য কোন উপায়ে হলেও এই পর্যন্ত পৌছাতে পারতো।
ধরে নিলাম এই ঘরের চাবি বা ডিজিটাল লক খুলতে রুহীকে প্রয়োজন ছিলো কিন্তু তার জন্য রুহীকে পিরামিডের শহরে যাওয়ার দরকার ছিলো না।
রাফি সোফায় বসে পড়লো। এতগুলো প্রশ্ন মাথার ভেতর একসাথে এসে ঢুকে পড়লো। এতদিন পেছনে গুন্ডাপান্ডা লেগে ছিলো বলেই রাফি হয়তো ঠান্ডা মাথায় কিছুই ভাবতে পারে নি। কিন্তু কিছুটা রিল্যাক্স হয়ে রাফির মনে এখন রাজ্যের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
মাফিয়া গার্ল চাইছে যে রাফি যেন বেজমেন্ট থেকেই বের না হয়, তাই দুইজন বডিগার্ড(!) পাঠাচ্ছে যারা রাফির হয়ে সব কাজ করবে! এতো কেন রেষ্ট্রিকশন হচ্ছে, কি চাচ্ছে মাফিয়া গার্ল। নাহ কিছু একটা তো খুঁজে পেতেই হবে যাতে প্রমান হয় রাফি যা ভাবছে তার সবই ভুল। ড্রয়িং রুম থেকে উঠে ফ্রীজ খুললো রাফি। প্যাকেট ফুডগুলোতে তো ম্যানুফ্যাকচারারের নাম থাকার কথা, অরিজিন ও থাকবে, চেক করে দেখতে দোষ কি।
ফ্রীজের ভেতর প্যাকেট ফুডের সবকিছুই ইম্পোর্টেড কোম্পানির, লোকাল বা এদেশীয় কোন প্রডাক্ট নাই। উইয়ার্ড, মফস্বল একটা শহরের সুপারশপ হোক আর গ্রোসারি শপ হোক তাতে কোন দেশী পন্য থাকবে না এটা মানা যায় না। ফ্রীজ বন্ধ করে ঘরের স্টোরেজে যায় রাফি। স্টোরেজের ফ্রীজের প্রতিটা পন্য, ওয়াশিং পাউডার থেকে শুরু করে গ্রোসারিজ প্রতিটা আইটেম আমদানীকৃত কোম্পানির, ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ডের। ইম্পোর্টারের স্টিকার লাগানো কিন্তু ভাষা বোঝার সাধ্য রাফির নেই। দেশের নাম লেখাও যদি থাকে তাও বোঝা সম্ভব হবে না রাফির। এগুলো কো-ইনসিডেন্স হতেই পারে কিন্তু সন্দেহটা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারে না রাফি। দুই বডিগার্ড চলে আসার আগেই পুরো ঘর একবার চেক করে ফেলা দরকার। সন্দেহ যখন হয়েছে তখন সত্যটা খুঁজে বের করতেই হবে। স্টোরেজ থেকে বের হয়ে শিড়ি দিয়ে ওঠার সময় ড্রয়িংরুমের টেবিলের পাশে থাকা মোড়ানো ম্যাপগুলো চোখে পড়ে রাফির। রুহী যাওয়ার আগে রাফিকে ম্যাপগুলো দেখিয়ে দিয়ে গেছে। এখানেও খটকা লাগে রাফির, মাফিয়া গার্লকে এক কথায় বলা যায় সাইবার জগতের ক্রাউনলেস কুইন, সে রাফিকে একটা জিপিএস দিয়েছে যাতে সবকিছুই রয়েছে, তাহলে রুহী কেন ফিজিক্যাল ম্যাপ দেখালো রাফিকে? জিপিএস সাথে থাকলে তো কাগজের ম্যাপের প্রয়োজন নেই। মাফিয়া গার্ল জিপিএস দিয়ে অথবা ফোনে কথা বলতে বলতে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল বা শহরের যে কোন অলিগলি অথবা যে কোন সেফ হাউজে রাফিকে পৌছানোর ক্ষমতা রাখে। তাহলে কেন এই কাগজের ম্যাপের প্রয়োজন পড়লো! রুহী কি বোঝাতে চাইলো, মাফিয়া গার্ল যদি রাফিকে আটকে রাখার প্লান করে থাকে তাহলে রুহী কেন এক্সিট প্লান দিলো রাফিকে, তাও কাগজের ম্যাপে? রাফি ম্যাপগুলো তুলে নেয়। রহস্য বাড়ছে ছাড়া কমছে না। হতে পারে রাফির ধারনা সম্পূর্ন ভুল তবে যে প্রশ্নগুলো রাফির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা সলিড ইভিডেন্স ছাড়া দূর হবে না।
রাফি ঘরের রুমগুলো চেক করতে চাইলো, এই মাঝরাতে উঠে উল্টাপাল্টা কাজ করতে কারোরই ভালো লাগার কথা নয় তবে রাফির কৌতুহলী মন আর ডিটেকটিভ মস্তিস্ক ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। ঘরের অন্যান্য রুমগুলো খুঁজে দেখা দরকার ঘরের কয়েকটা রুম লক করা, হয়তোবা পার্সোনাল রুম তাই লক থাকা স্বাভাবিক, রুম চেক করতে করতে রাফি রুহীর রুমের সামনে দাঁড়ায়, দরজা লকই করা কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় যে চাবিটা লকের ভেতরেই ঢোকানো রয়েছে। দরজা লক অথচ চাবি ঝোলানো, রাফি ভাবলো রুহী হয়তো ভুল করে চাবি ফেলে রেখে গেছে। অনেক বেশীই কো-ইনসিডেন্স ঘটছে রাফির সাথে হঠাৎ করেই।
রাফি চাবি দিয়ে লকটা খুলে ফেলে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে লাইট জ্বালানোর জন্য সুইচ খুজতে লাগলো। সুইচ পেল না কিন্তু আলো নিজে থেকেই জ্বলে উঠলো। রাফি চমকে উঠলো, ঘরে ঢোকার সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠলে চমকে ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়। রাফি আৎকে উঠে দুই কদম পিছিয়ে যায়, বোঝার চেষ্টা করলো যে ঘটলো টা কি? কিছুক্ষণের ভেতর আলোটা নিভে গেলো, রাফি আবার ভেতরে প্রবেশ করলে আলো আবারো নিজে নিজে জ্বলে উঠলো। রাফি বুঝতে পারলো হয়তো ঘরে মোশান সেন্সর লাগানো আছে, ঘরে কেউ ঢুকছে এটা মোশান সেন্সরে ধরা পড়ায় সেন্সর রুমের আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে আর যখন ঘর থেকে কেউ বেরিয়ে যাচ্ছে তখন আলো নিভিয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ দিনে দিনে কতটা অলস হতে পারে তার একটা জলজ্যান্ত প্রমান।
রাফি ঘরে ঢুকে চারিদিকটে দেখে নিলো। বেশ ভালো আকারের একটা লিভিং রুম, ২০-২১ বছরের চঞ্চল মেয়েদের ঘর যেমন থাকে তার থেকে ব্যতিক্রম না, বেশ ছড়ানো ছিটানো রয়েছে জিনিসপত্র, ৪ দরজার বিশাল আলমারি থাকার পরও বিছানায়, চেয়ারে, জামাকাপড়ের ছড়াছড়ি। সারা ঘর ঘুরে তেমন কিছুই পায় না রাফি, কাপড়চোপড়ের ট্যাগ দেখেই বোঝা যায় মেয়ে স্বদেশী জিনিসে দূর্বল।
সবকিছু ঘেটেঘুটে যখন কিছুই পায় না রাফি তখন আলমারি খোলার চেষ্টা করে, চার দরজার তিনটাই লক করা থাকলেও একটা খোলা পেল রাফি। দরজা খুলে বেশ অবাক হলো, এই দরজার পেছনে কোন কাপড়চোপড় রাখা নেই, মনে হয় রুমে ছড়ানো কাপড়চোপড় সব এই ক্যাবিনেটেই ছিল। ক্যাবিনেটের মাঝের দিকে একটা চারকোনা কিছু দেখতে পেলো, হাতে তুলে নেয় রাফি। হাতে তুলে দেখতেই চিনতে পারে, একটা raspberry pi3 মিনি কম্পিউটার, অনেক পাওয়ারফুল পোর্টেবল কম্পিউটার, একটা ছোট্ট চিরকুট দেখতে পায় কম্পিউটারের উপর,
“Use it, Only complete Pikachu can save you now.”
রাফির সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। রুহী কি জানতো যে রাফি রুহীর রুমে এসে তল্লাশি নেবে! রুহী তো মাফিয়া গার্লের ই এসিস্টেন্ট, তাহলে রুহী কেন রাফিকে এসব ক্লু ছেড়ে যাচ্ছে। রাফি চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে থাকে। এসব কি হচ্ছে, এতদিন যাকে গার্ডিয়ান এঞ্জেল হিসেবে জেনে আসছে এখন তাকেই সন্দেহের উপক্রম! ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখমুখি এসে পড়ে রাফি। মিনি কম্পিউটারটা আর ম্যাপগুলো নিয়ে রাফি নিজের ঘরে গেলো। বিছানায় শুয়ে পড়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো, রাফি এখন পর্যন্ত এসবব সাহায্যের পেছনে মাফিয়া গার্লের আসল উদ্দেশ্য জানে না। যদিও মাফিয়া গার্ল একবার বিনিময়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও রাফি তা সংগত কারনেই প্রত্যাখ্যান করে। তারপরও ভালো এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো এবং এখনো আছে আর এখন পর্যন্ত এমন কোন ঘটনা ঘটে নি যার দ্বারা এটা প্রমানিত হবে যে মাফিয়া গার্ল রাফিকে নিয়ে কোন কূটচাল চালছে। একজন দেশপ্রেমিক অন্য আরএকজন দেশপ্রেমিককে সাহায্য করতেই পারে। নাহ, মাফিয়া গার্ল নেগেটিভ কিছু হতে পারে না, রাফিকে সদা বিপদের হাত থেকে বাঁচানো মেয়েটাকে সন্দেহ করা রাফির সাজে না।
রাফি কম্পিউটারের উপরে রাখা চিরকুটটি আবারো খুলে দেখে, এই মেসেজ রুহী কার জন্য রেখে গেছে, নিজের ঘরে তো নিশ্চই অন্য কারো জন্য চিরকুট রাখে না কেউ? তাহলে কি রুহী ইচ্ছা করেই ঘরের দরজার চাবি রেখে গিয়েছে! দুই দিনের পরিচিত মেয়ে রুহীর দেয়া ক্লু দেখে এতদিনের অদৃশ্য বন্ধু মাফিয়া গার্লের উপর সন্দেহ করাটা কোন যুক্তিতেই সমীচীন লাগছে না রাফির।
তারপরও সতর্ক হয়ে যাওয়া ভালো, রুহী মাফিয়া গার্ল সব কিছু থেকেই। হঠাৎ ই রাফির মনে পড়ে রাফির বাবা মা এবং তোহা এখন মাফিয়া গার্লের হাতে, যদিও ইনফর্মেশনগুলো যাষ্টিফাই করার সুযোগ পায় নি রাফি, এটলিষ্ট যতক্ষণ ঠিকভাবে বাড়িতে কথা বলতে না পারছে ততক্ষণ এটাই ধরে নেয়া উচিৎ যে মাফিয়া গার্ল ই ঠিক যে সে রাফির পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। কালই পরিবারের সাথে কথা বলানোর জন্য মাফিয়া গার্লকে চাপ দিতে হবে। রুহীর দেয়া চিরকুটটা আগুনে পুড়িয়ে ফেলে রাফি। raspberry pi3 মিনি কম্পিউটারটা অন করে, একদম ব্রান্ড নিউ। রাফি সবকিছু চেক করে দেখলো, এই মিনি কম্পিউটার সম্পর্কে জানতো রাফি কিন্তু কখনো ব্যবহার করে নি। প্রয়োজনে কাজে দেবে ভেবে কম্পিউটারটি সরিয়ে রাখে। রাফি ম্যাপগুলো নিয়ে বসলো।
শহর আর এই গোলকধাঁধা ঘরবাড়ির রাস্তার মারপ্যাচ থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল অনেক সোজা, বেজমেন্টের পেছনে যেখানে সার্ভারগুলো রাখা তার পেছনেই আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলের দরজা। রাফির কপালে আবার ভাঁজ পড়ে, যতদূর খেয়াল করেছে রাফি ততদূর এটাই মনে পড়ে যে পুরো বেসমেন্টটি সলিড কংক্রিটের দেয়ালে ঘেরা, পেছনে কোন দরজা থাকা অসম্ভব। আজিব, রুহী যখন বোঝাচ্ছিলো তখনও খেয়াল করে নি রাফি কারন তখন রাফির চোখ ছিলো ট্যানেলের এক্সিটের দিকে, এই বাড়ির এক্সিটের দিকে নয়। তার মানে মাফিয়া গার্ল এই ম্যাপ রাফিকে বোঝানোর জন্য না ও দিতে পারে রুহীকে। রাফি তারপরও কনফিউশন কাটাতে ম্যাপটা নিয়ে সোজা বেজমেন্টে চলে যায়। বেজমেন্টের সব আলো জ্বালিয়ে দিয়ে টেবিলের উপর রাখা জিপিএসটা সহ একদম পেছনে চলে যায় বেসমেন্টের যেখানে পয়েন্ট করা আছে ম্যাপটিতে। রাফি এখন এমন জায়গায় দাড়িয়ে আছে তার সামনেই আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলে পৌছানোর দরজা থাকার কথা। কিন্তু সেখানে সলিড দেয়াল তোলা। পরিক্ষা করার জন্য রাফি কিল দিয়ে দেখতে থাকে দেয়ালে। নাহ সলিড দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে দরজা বরাবর। যদি কোন পথই না থাকবে তাহলে রাফিকে কেন এই ম্যাপটা দিয়ে যাবে রুহী! রাফি ম্যাপ থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলের একটা কোড নিয়ে জিপিএস এ ইনপুট দেয়, কিন্তু জিপিএস “কোড আনএভেইলেবল” শো করে। রাফির মনে খটকা লাগে, আরো দুই চারটা কোড ইনপুট দেয় রাফি পরিক্ষামূলক কিন্তু সবগুলোর রেজাল্ট আনএভেইলেবল শো করে জিপিএস, মানে জিপিএস এ আন্ডডারগ্রাউন্ডের কোন ম্যাপ বা কোড ইনপুট করা নেই! রাফি এবার মোটামুটি কনফার্ম হয়ে যায় যে রুহীর দেখানো পথ আর মাফিয়া গার্লের করা প্লানের মধ্যে কিছু গড়মিল তো আছেই।
রাফি আরো জোর লাগিয়ে খুঁজতে থাকে সবজায়গায়। কিছু তো একটা মিস করতেছে রাফি। খুঁজতে খুঁজতে একটা সার্ভার র‍্যাকের নীচে চোখ যায় রাফির। খুব ভালোভাবে খেয়াল করে রাফি র‍্যাকটির নীচে ম্যানহোলের ঢাকনার মত কিছু একটা দেখতে পায়। রাফি একটু জোর খাটিয়ে র‍্যাকটি খানিকটা সরিয়ে ফেলে, ঠিকই ধরেছে রাফি, একটা ম্যানহোলের ঢাকনা। যে কেউ দেখলে হয়তো ভাববে বেজমেন্টে যদি কোন কারনে পানি আটকে যায় তাহলে এই ম্যানহোল দিয়ে সেটা নিষ্কাশন করা হবে কিন্তু রাফি ভাবছে হয়তো সে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলের দরজা খুঁজে পেয়েছে। রাফি ম্যানহোলের উপর থেকে র‍্যাকটা পুরোপুরি সরিয়ে ডাকনাটি খুলে ভেতরে মাথা দিলো, হাড়কাপানো ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে গেলো রাফিকে। রাফি বুঝতে পারলো এটাই ট্যানেলে পৌছানোর পথ, তাই ম্যানহোলটাকে আগের মত সার্ভারের তাঁকে দিয়ে ঢেকে দিয়ে কম্পিউটারের সামনে এসে বসলো রাফি। বাড়ির সিকিউরিটি আর সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমটা একবার চেক করার দরকার, অনলাইন হলে কতটা মাফিয়া গার্লের নজরের ভেতর আসে সেটা দেখে রাখা উচিৎ।
রাফি কম্পিউটার দিয়ে সার্ভেইল্যান্স স্ট্যাটাস চেক করতে থাকে। মোটামুটি শকড হলো রাফি, ঘরের প্রতিটা ইঞ্চি সিসিটিভি সার্ভেইল্যান্সের আন্ডারে, অডিও ভিডিও দুটোই। এছাড়াও এই গোলকধাঁধা বিল্ডিংগুলোর পুরো এরিয়া আর এন্ট্রি পয়েন্টগুলোও সিসিটিভি কভারেজের আন্ডারে, মফস্বল শহর অনুপাতে একটু বেশীই সতর্কতা পালন করছে এই মাফিয়া গার্ল। রাফি বেজমেন্টে আসার কিছুক্ষণের ভেতরেই ইন্টারনেট কানেকশন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলো আর এখনো সেভাবেই আছে। যদি প্রয়োজনে কখনো সার্ভার অন করতে হয় সেজন্য পুরাতন সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ মুছে দেয় রাফি। যেন রাফির এই ঘরময় তল্লাসি মাফিয়া গার্লের নজরে না আসে। যখন থেকে সন্দেহ শুরু হয়েছে তখন থেকে গুছিয়ে চলাই ভালো। আর সন্দেহ যদি সত্যি হয় তো রাফি এবং তার পরিবারের সবার জীবনই বিপদের মুখে।
ঘড়িতে সময় তখন সকাল ৯ টা। হয়তো মাফিয়া গার্লের পাঠানো লোকগুলো চলে আসার সময় হয়েছে। রাফি মোবাইলটা হাতে তুলে নেয় টেবিল থেকে। কয়েকটা মেইল এসেছে আর সাথে মেসেজও। মাফিয়া গার্ল থেকে পাওয়া মেইল আগে চেক করে রাফি। হ্যাঁ দুইজনের ছবি আর কিছু ডিটেলস দিয়েছে মাফিয়া গার্ল তবে তাদের জাতীয়তা ভিন্ন। কিছুটা ডিটেলস পড়তে পড়তে একটা মেসেজ পায় রাফি, মাফিয়া গার্ল থেকে,
“Two of my friends are waiting at your door, its more like 1 hour. Open the door and make the server online.”
রাফি দ্রুত ম্যাপগুলো একটা ডিজেবল সার্ভারের ফাঁকে লুকিয়ে ফেলে আর বেজমেন্ট থেকে বের হয়ে সদর দরজা খোলার জন্য এগিয়ে যায়। এতদিন বাইরের মানুষকে ভয় লাগলেখ এখন আপন ভাবা সাইবার কুইনকেই ভয় লাগতে শুরু করেছে রাফির।
.
বি. দ্র. কমেন্টে আপনাদের মন্তব্য আমার গল্প লেখার উৎসাহকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য সবসময় কামনা করি, ধন্যবাদ

হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব-১২

0

হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২
পর্ব-১২
রুহী আর ড্রাইভার দুইজনে লোকাল ভাষায় খোসগল্পে মেতে ওঠে আর লোকাল ভাষার কিছুই বুঝতে না পারা রাফি বসে বসে জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে থাকে। আসলেই অনেককিছু জানা বাকী রাফির, অনেক কিছু করা বাকী।
রুহী আর ড্রাইভারের গল্প জমে উঠেছে এদিকে রাফি গাড়ির পেছনে বসে ভাবনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। মা বাবাকে দেখা হয় না অনেকদিন, কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ, কোথায় আছে কিভাবে আছে কোন খোঁজই জানে না রাফি, বিয়ের পর কতধরনের ঝাক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তোহা মেয়েটকে এমন আরো হাজারো প্রসংগ একের পর এক রাফির মনে কড়া নেড়ে চলেছে। ভাবনার ঘোর কাটতে না কাটতে গাড়িটা ব্রেক কষে।
রুহী – চলে এসেছি। নামতে হবে।
রাফি ঘোর কেটে যায়, আসেপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকে।
রুহী – কি হলো? নামুন?
রাফি চট করে ব্যাগগুলো কাঁধে তুলে নিয়ে নেমে পড়ে।
মোটামুটি ঘিঞ্জি মফস্বল শহর বলতে যা বোঝায়, রাস্তা আর স্থাপনাগুলো দেখলে আন্দাজ করা যায় এই শহরটি অনেক পুরাতন, আধুনিক শহর থেকে বেশ দূরে। রাফির এই পুরাতন ধাঁচের শহরই বেশী পচ্ছন্দ। কিন্তু রহস্য হলো কম বেশী সবগুলো বাড়ি ৩ তলা আর দেখতে একই রকম, গলি, রাস্তার মুখ সবই একইরকম।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


রুহী – সাথে সাথে চলুন নাহলে হারিয়ে যাবেন আর এখানে হারালে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে।
রাফি – সবকিছু একই রকম লাগছে কেন?
রুহী – কারন সবকিছু একই রকম। শহরটি যিনি গড়ে তুলেছিলেন তিনি ধাঁধা পচ্ছন্দ করতেন হয়তো খুব। তাই পুরো শহরটাকে একটা গোলকধাঁধার মত করেই তৈরী করেছিলেন।
রুহী হাঁটতে হাঁটতে কথাগুলো বলতে থাকে। রাফি রুহীর পেছন পেছন পেছন চলতে থাকলো। রাফি রুহীকে যতই দেখে ততই অবাক হয়। এত হালকা দুটো ব্যাগ যার একটাতে ল্যাপটপ আর নোটপ্যাড থাকবে হয়তো আর অন্যটিতে বাদবাকি এক্সেসরিজ যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ছোট। এত কম জিনিসপত্র নিয়ে কোন মেয়েকে এত লম্বা পথ সফর করতে এর আগে কখনই দেখে নি রাফি।
রুহী হয়তো এর আগে বেশ কয়েকবার এখানে এসেছে কারন যে গতিতে হাটছে তাতে বোঝাই যায় এই গোলকধাঁধার প্রতিটা ইট ওর চেনা। রাফির মাথা চক্কর দেয়ার উপক্রম হলো, একবার ডানদিকে একবার বাম দিকে একবার সার্কেল হয়ে কেমন চক্কর কাটছে সে নিজেও জানে না। সাধারনত মানুষ প্রথমবার যদি কোন পথে চলতে থাকে তাহলে চেষ্টা করে আশপাশটা একটু চিনে নিতে যেন ফিরতি পথে হারিয়ে না যায় কিন্তু এটা এমনই এক গোলকধাঁধা যে কোনভাবেই মনে রাখার কোন উপায় নেই।
অনেকক্ষণ ধরে গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতে খেতে অবশেষে রুহী থামলো একটা বাড়ির সামনে, অবিকল দেখতে আশপাশের আর ১৫-২০ টা বাড়ির মতনই, ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
বাড়ির প্রধান ফটকে সেই মান্ধাত্বার আমলের তালা ঝোলানে। রুহী তার ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে ফেললো। ভেতরে ঢুকে বাতি জ্বালালো রুহী আর রাফিকে ভেতরে আসতে বলে। রাফি ভেতরে আসলে রুহী দরজা লাগিয়ে দিয়ে রাফিকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যায়। রাফিকে সোফাতে বসতে দিয়ে রুহী ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বালাতে লেগে পড়ে। একদম পুরাত সিস্টেমে একের পর এক কাঠ সাজিয়ে আংগুল সমান লম্বা সাইজের দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলো। রুহীর কর্মপটু হাতের কাজ দেখে এটা বোঝা যায় যে এই কাজ রুহী আগেও অনেকবার করেছে। রুহী উঠে দাঁড়ায়, রাফির দিকে তাকিয়ে,
রুহী – এটা আপনার সেফহাউজ, এখানে কেউ আপনাকে খুঁজতে আসবে না। এখানে নিরাপদ আপনি।
রাফি – কিন্তু এটা আমার বাড়ি নয়। আমাকে বাড়ি যেতে হবে। আমি বাড়ি যাবো।
রুহী – (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আগে নিজেকে নির্দোষ তো প্রমান করেন, তারপর বাড়ি যাওয়ার কথা মাথায় তুলে নিয়েন। আপাতত নিজের পিঠ বাঁচান। এখন আসেন আপনার রুম দেখিয়ে দেই।
বলে রাফিকে দোতলায় নিয়ে যায় রুহী। একটা রুমের দরজা খুলে দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দেয় রুহী, রাফি রুমে প্রবেশ করলে রুহী বাইরে থেকেই বলতে থাকে,
রুহী – এটা আপনার রুম। ফ্রেস হয়ে নিন। ৩০ মিনিটের ভেতর নিচে চলে আসুন।
রাফি কোন কথা বলে না। একটা ছোট্টখাট্ট ট্রেডিশনাল বেডরুম। ঘরের ভেতর সব আসবাবপত্রই কাঠের, এমনকি মেঝেটাও।
রাফি ঘুরেফিরে রুমটা দেখতে দেখতে চোখ আটকায় বিছানার পাশে রাখা দুইটি ব্যাগ এর দিকে। ব্যাগদুইটি রাফিরই, বাড়ি থেকে নিয়ে যাচ্ছিলো ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে কিন্তু মাঝপথে ল্যান্ড করা বিমানের কার্গোতেই রয়ে গিয়েছিলো ব্যাগদুটো। মাফিয়া গার্ল বলেছিলো ব্যাগগুলো নিয়ে না ভাবতে কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে ব্যাগের আশা ছেড়েই দিয়েছিলো রাফি। কিন্তু ব্যাগগুলো এখানে এলো কিভাবে! তাহলে কি মাফিয়া গার্ল আগে থেকেই প্লান করে রেখেছিলো যে শেষমেশ রাফি এখানেই উঠবে! বিষয়গুলো ভাবতে ভাবতে জামাকাপড়ের ব্যাগটা খোলে রাফি। নিজের শরীরের কাপড়গুলো ঝেড়ে ফেলার দরকার। গত কয়েকদিন ধরে ব্যাকপ্যাকে থাকা জামাকাপড়গুলো রোটেশনে পড়তে পড়তে বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। ব্যাগের ভেতরে ভাঁজ করা কাপড়গুলো দেখে তোহার কথা মনে পড়ে রাফির। মেয়েটা পুরো রাত জেগে কাপড়গুলো গুছিয়ে দিয়েছিলো। একসেট কাপড় আর তোয়ালে নিয়ে ঝটপট চলে যায় ওয়াশরুমে। ফ্রেশ একটা গোসল দিয়ে বাইরে আসে রাফি। তোয়ালে বিছানায় ফেলতে গিয়েও না ফেলে স্ট্যান্ডের উপর ঝুলিয়ে দেয়। ততক্ষণে রুহী নীচ থেকে ডাক দেয়। রাফি নীচে নেমে আসে, ডায়নিং টেবিলে হালকাপাতলা নাস্তা সাজানো। রুহী ফ্রীজ থেকে খাবার বের করে ওভেনে গরম করে টেবিলে রাখছে। মেয়েটা তার কাপড় বদলে ফেলেছে। মেয়েটা কাপড়চোপড় পেলো কোথায়, যে ব্যাগ বয়ে এনেছে তাতে তো ওর শীতের কাপড়টাই ধরার কথা নয়, প্রশ্ন করতে যাবে আর তখনই,
রুহী – এটা আমার ২য় বাড়ি। এখানে আমার মাঝেমধ্যেই আসা পড়ে তাই এক্সট্রা ব্যাগেজ টানার দরকার পড়ে না।
রাফি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এই মেয়ে কি মাইন্ড রীড করতে জানে নাকি? প্রশ্ন করার আগে উত্তর দিতে থাকে! তখন রুহী একটা হেয়ালী দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রাফির দিকে তাকায়,
রুহী – আমি মাইন্ড রীডার নই। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
রাফি পুরা তব্দা খেয়ে বসে পড়ে ডাইনিং টেবিলে পাতানো চেয়ারে, স্বাভাবিকতা রাখতে,
রাফি – আমি আপনাকে কোন প্রশ্ন করি নি, এমন অপ্রাস‌ঙ্গিক কথা বলছেন কেন?
রুহী – (মুচকী হেসে) না, ভাবলাম হয়তো আপনার কিউরিয়সিটি জাগতে পারে, তাই আগে থেকে জবাব দিয়ে দিলাম। (খাবার দেখিয়ে) নিন শুরু করুন।
রাফি আর কথা না বাড়িয়ে গালের ভেতর রুটি গুজে দিয়ে চাবাতে থাকে। খাওয়াদাওয়া শেষ করে নিজের প্লেট ধুয়ে জায়গামত রেখে দিয়ে রাফি রুমের শিড়ি ধরলে রুহী বাঁধ সাধে,
রুহী – উপরে কোথায় যাচ্ছেন? উপরে শুধুমাত্র বেডরুম রয়েছে, আপনার অফিস নীচে।
রুহীর কথায় থমকে গেল রাফি,
রাফি – অফিস! কিসের অফিস।
রুহী রাফিকে অনুসরণ করতে বলে ষ্টোররুম বরাবর। ষ্টোররুমের দরজা খুলে নীচের পাপোশ সরিয়ে দেয়। রাফি পেছন থেকে পাপোশের নীচে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক লক দেখতে পায়। এত পুরাতন বাড়িতে এমন হাইটেক লক দেখে রাফির কপাল কুঁচকে যায়। রুহী পাসওয়ার্ড ও বায়োমেট্রিক থামসপ্রিন্ট দিয়ে লক ওপেন করে। স্টোররুমের পেছনে একটা খট করে আওয়াজ হয়। রুহী পাপোশটা আগের জায়গায় সরিয়ে রেখে ষ্টোররুমের পেছনে চলে যায় আর রাফিকেও আসতে বলে।
রাফি রুহীকে অনুসরণ করতে করতে ষ্টোররুমের পেছনে চলে যায়, একটা ট্যাপডোর খোলা রয়েছে আর একটা শিড়ি নেমে গেছে নীচে। রুহী একটা সুইচ অন করে আলো জ্বালিয়ে ফটাফট নেমে যেতে থাকে আর রাফির চোখ আসমানে উঠে যায়।
মান্ধাত্বার আমলের বাড়ির বেসমেন্ট মাঝারী আকারের কম্পিউটার ল্যাব। যে কোন কম্পিউটার গীকের জন্য এমন একটা ল্যাব স্বর্গের সমান। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পুরো রুম আর রুমে ঢুকলে কেউ বুঝবে না যে এটা কোন ধরনের বাড়ির নীচে অবস্থিত।
রুহী – পৃথিবীতে এমন ওয়েল ইকুপড ল্যাব আর ২য় টি নেই। MG এই ল্যাবটি আপনার জন্য সাজিয়ে রেখেছে। এখানে বসে আপনি আপনার সবব কাজ করতে পারবেন। MG আপনার ল্যাপটপ এ্যানালাইসিস করে ল্যাপটপের সকল কাষ্টমস সেটিংস ও সফটওয়্যার ক্লোন করে এই পিসির সিস্টেমে দিয়ে দিয়েছেন যেন এটা ব্যবহারে আপনার কোন সমস্যা না হয়। (হার্ডড্রাইভ এগিয়ে দিয়ে) নিন আপনার কাজ, শুরু করুন!
রাফি – (হার্ডড্রাইভটা নিয়ে) বাংকার থেকে এই ড্রাইভ নিয়ে ঘুরছি। কি আছে এতে?
রুহী – পিকাচু এর বেটা ভার্সন। একদম র ডেটা।
রাফি – পিকাচু! অস্ত্র ব্যবসায়ী পিকাচুকে দিয়ে দিলো! সাথে আনকাট ডায়মন্ড! সাথে কয়েক হাজার কিলোমিটার বিমান আর রোডট্রিপ! কেন করলো সে?
রুহী – সেটা MG বলতে পারবে। আমাকে বলা হয়েছে যতটুকু ততটুকুই আপনাকে জানালাম। আপনার কাজ এখন পিকাচুকে ডেভলপ করে আরো বেশী কর্মক্ষম করে তোলা। বেটা ভার্সনের পিকাচুর কি কি সমস্যা আছে তা হয়তো বাংকার ট্রায়ালেই বুঝতে পেরেছেন। এখন কাজে লেগে পড়েন। সিস্টেম ক্যাপাসিটি পিকাচুকে এডাপ্ট করার জন্য যথেষ্ট। এছাড়া নেটওয়ার্ক সিস্টেমও মডিফায়েড, চাইলে চেক করে কাজ শুরু করতে পারেন।
রাফি এতক্ষণ হার্ডড্রাইভটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রুহীর কথা শুনছিলো। কথা শেষ হলে রাফি জবাব না দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। সিস্টেম চালু করে নেটওয়ার্ক ডিসকানেক্ট করে ফেলে।
রাফি – এখন আমার নেটওয়ার্কের প্রয়োজন নেই। দেখি কি করতে পারি পিকাচু কে দিয়ে।
বলে হার্ডড্রাইভটা কানেক্ট করে দেয় কম্পিউটারে আর একসেস করতে থাকে একের পর এক সিষ্টেম ডাটা। রুহী চলে যাওয়ার আগে পাসওয়ার্ড রিসেট করে যায় আর রাফিকে বায়োমেট্রিক থাম্বসপ্রিন্ট দিয়ে দিতে বলে। রাফি মাথা দোলায় কিন্তু কম্পিউটার স্ক্রীন থেকে চোখ আর কীবোর্ড থেকে হাত সরায় না।
ডেভলপারদের থিম ছিলো একটা কম্প্লিট ডিজিটাল এসিস্টেন্ট তৈরী করা যার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স থাকবে, ইউনিক কোডিং আর বিভিন্ন টুলস একত্রিত করে একটা ডিজিটাল ব্রেন তৈরী করতে চেয়েছিলো। কিন্তু কাজটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মাফিয়া গার্লের কথা যদি ঠিক হয় তাহলে হয়তো এই অর্ধেক কাজের ক্ষমতা দেখে লোভে হয়তো মেরে দিয়েছে সব ডেভেলপারদের। রাফি দেখেছে পিকাচুর ক্ষমতা আর ওটা যদি বেটা ভার্সন বা ট্রায়াল ভার্সন হয়ে থাকে তাহলে এখনো অনেককিছুই বাকি।
রাফি হোমওয়ার্ক করতে বসে যায়, খুঁটে খুঁটে পিকাচুর ফল্ট আর প্রবলেমগুলো খুঁজে বের করতে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেতে থাকে কিন্তু রাফির সেদিকে হুস নেই। কাজ করতে থাকে রাফি।
এদিকে রুহী ফিরে আসে আবার বেজমেন্টে। রাফিকে তখনো কাজ করতে দেখে অবাক হয়।
রুহী – এখনো লেগে আছেন!
রাফি – এখনো ঘুমান নি আপনি! ঘুমিয়ে পড়ুন। অনেক রাত হয়েছে!
রুহী – গুড মর্নিং, মি. রাফি। আপনার ঘড়ির হিসাবে গড়মিল আছে কিনা জানি না তবে সূর্যিমামা গড়মিল করে বলে মনে হয় না।
রাফির কাছে ঘড়ি না থাকায় আর কাজে এতবেশী মগ্ন হয়ে যাওয়ায় সময়ের খেয়ালই ছিলো না রাফির।
রাফি – গুড মর্নিং! সকাল হয়ে গেল এত জলদি! মাত্রই না বসলাম!
রুহী – একটা মানুষ এত লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্রাম না নিয়ে রাত জেগে কাজ করতে পারে তা হয়তো আপনাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।
রাফি – কাজ করতে বসলে শেষ হওয়ার পর্যন্ত মানসিক শান্তি পাই না।
রুহী – তবে এখন আর কাজ করা যাবে না। MG আপনাকে লোকেশন ম্যাপ আর এক্সিট প্লান বুঝিয়ে দিতে বলেছে। আমি চলে গেলে যেন একা একা কাজ করতে পারেন, সেজন্য।
রাফি – মানে ! এমন অপরিচিত একটা দেশে আমাকে একা ফেলে চলে যাবেন মানে কি!
রুহী – তিন দিনের জন্য বান্ধবীর বাসায় আছি বলে বাসা থেকে বের হয়েছি। আপনার সমস্যা শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকতে বললেও থাকা সম্ভব না। তাই ঝটপট উঠে পড়ুন। উপরে যান, ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে চলে আসুন। আর হ্যাঁ, বায়োমেট্রিক লকে আপনার থাম্বসপ্রিন্ট দিতে ভুলে যাবেন না যেন।
রাফি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, বায়োমেট্রিক লকে থাম্বসপ্রিন্ট দিয়ে রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংএ আসলে দেখে রুহী কয়েকটা বড় মোরানো কাগজ আর একটা জিপিএস নিয়ে অপেক্ষা করছে।
রাফি – বলুন কি বলবেন।
রুহী ড্রয়িং রুমের মেঝেতে একটা ম্যাপ ছড়িয়ে দেয়।
রুহী – এই শহরের অরিজিনাল ম্যাপ।
রাফি – স্যাটেলাইট ম্যাপেও তো এমনকিছুই দেখা যাবে। শুধুশুধু এতবড় ম্যাপ করার কি প্রয়োজন?
রুহী রাফীর দিকে খটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
রুহী – স্যাটেলাইট ম্যাপ কেন, (হাতের জিপিএস দেখিয়ে) এই জিপিএসটা ছাড়া অন্য কোন জিপিএস তোমাকে এই গোলকধাঁধা থেকে বের করতে পারবে না। স্যাটেলাইট ইমেজ টেম্পারিং করে দেয়া আছে আর জিপিএস কোয়ার্ডিনেন্স ও। যেন চাইলেই অপরিচিত কেউ এখানে প্রবেশের সাহস না করে। এই এলাকার বাসিন্দারগন সবাই জন্মসূত্রে এখানে বাস করে তাই তাদের কখনই জিপিএস এর সাহায্য প্রয়োজন পড়ে না।
রাফি – (অবাক হয়ে) এও সম্ভব নাকি! যাহ, এটা বাড়ায় বলা হয়ে গেছে আপনার।
#লেখা_sharix_dhrubo
রুহী – তা কিছুক্ষন পরে বুঝতে পারবেন। (অন্য একটা ম্যাপ ওপেন করে) এটা আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই দেশের সরকার সাধারণ জনগনের নিরাপত্তার জন্য এগুলো তৈরী করেছিলেন। কালের বিবর্তনে অনেকেই টানেলগুলোর কথা ভুলে গেলেও প্রয়োজনে তোমার কাজে লাগবে। (আরো একটা ম্যাপ খুলে দিয়ে) এটা এই বাড়ির কাছাকাছি কয়েকটা সেফহাউজের লোকেশন। প্রতিটা সেফহাউজের ডিজিটাল লকে তোমার থাম্বসপ্রিন্ট ইনস্টল করে দেয়া হয়েছে।
রাফি ম্যাপগুলো নিবিড়ভাবে দেখতে থাকলো। ম্যাপের বডিতে এক এক লোকেশনে এক এক কোড দেখতে পায় রাফি।
রাফি – (আংগুল দিয়ে দেখিয়ে) এই কোডগুলো কিসের?
রুহী – আশা করছিলাম এই প্রশ্নটির। (জিপিএস দেখিয়ে) এই সব ম্যাপ আর লোকেশন এই জিপিএস এ সেট করা আছে। লোকাল ভাষা ছাড়াও শুধু এই কোড বলেই জিপিএস আপনাকে পথ দেখিয়ে ওই কোডের লোকেশন পর্যন্ত এগিয়ে দেবে।
রাফি – মানে আমাকে ইঁদুরের গর্তে ঢুকিয়ে গর্তের মুখগুলো চেনাচ্ছেন? তো চলেন দেখি আপনার জিপিএস এর জাদু দেখা যাক।
রাফি তৈরী হয়ে আসে আর নিজের ফোনের স্যাটেলাইট ম্যাপিং সিস্টেম অন করে আর সাথে রুহীও।
রুহী – আপনার মিশন, আমাকে মেইন রাস্তায় পৌছে দেয়া।
রাফি ফোনের ম্যাপ আর জিপিএস এর দেখানো পথ ধরে এগোতে চায় কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খায়, রাফি তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো থাকলেও ফোনে শো করছে একটা সিংগেল রাস্তার পাশে দাঁড়ানো সে। চোখের সামনে রাস্তা খোলা থাকলেও ফোনে শো করছে সামনে একটা বাড়ি।
রাফি কিছুক্ষণ ফোন ঝাঁকাঝাকি করে যখন কোন ফল পেল না তখন ফোনটা পকেটে চালান করে দিলো। রুহী মুখে হাত দিয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে জিপিএস আর এয়ারবট তুলে দেয় রাফির হাতে।
রুহী – আপনার জন্যই এত রংঢং করা, আমি তো আর দেশের ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল নই।
রাফি – (তাচ্ছিল্য করে) হা হা হা, ভেরী ফানি।
বলে ইয়ারবট টা কানে গুজে নেয়, মেইন রোড কমান্ড দেয়ার পর আর দশটা জিপিএসের মত স্বাভাবিকভাবেই রাফিকে ডিরেকশন দিতে থাকলো। এভাবে কয়েকটা জায়গা ঘুরে ফিরে দুইজনেই আবার ফিরে এলো সেফহাউজে।
রুহীর ফ্লাইট রাত ১০ টায়। রুহী ব্যাগ থেকে একটি পাসপোর্ট আর একটি ন্যাশনাল আইডি বের করে দেয়। রাফি পাসপোর্টটি হাতে নেয়, এই বৃহত্তম রাষ্ট্রের এক বন্ধু রাষ্ট্রের VVIP বা ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট, রাফির দাড়ি মোচওয়ালা ছবি ঠিক আছে কিন্তু নাম ভিন্ন, ন্যাশনাল আইডিতেও।
রুহী – যদি প্রয়োজন পড়ে বা কোন কারনে কোনঠাসা হয়ে পড়ো তাহলে এটা কাজে লাগবে। (ঘরের চাবি রাফিকে দিয়ে) কাল দুজন আসবে সবসময়ের জন্য তোমার দেখাশোনা করতে। তাদের ছবি ও ডিটেলস MG তোমাকে পাঠিয়ে দেবে।
রাতের খাবার শেষ করে রুহী পুরাতন ড্রেসটা পরে নিয়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। রাফি এগিয়ে দিতে চাইলেও রাতের বেলা পথ ভুললে রুহীকে আবার ফেরত এসে পথ দেখাতে হবে দেখে আটকে দিলো মেয়েটা। রুহী চলে গেলে দরজা লক করে সোজা চলে গেলো ষ্টোররুম দিয়ে বেজমেন্টে, অসম্পূর্ণ পিকাচুকে সম্পূর্ণ করতে হবে, নিজেকে নির্দোষ করা বাকী।

Protected: কিছুক্ষণ আরও

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৪০(অন্তিম)

1

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৪০(অন্তিম)
#লেখিকাTasneem Tushar

“এক আকাশ মেঘ জমেছে, মেঘের বাড়ি যাবো
মেঘকন্যার হাতটি ধরে জীবন পাড়ি দিবো।

কি মেঘকন্যা? এক পশলা বৃষ্টিতে দাওয়াত রইলো, আসবে তো? হাতটি আমার ধরবে তো?

– Your Secret Admirer”

তিয়াশা তাদের বাড়ির সামনের সবুজ ঘাসে ঘেরা আঙিনায় থাকা দোলনায় বসে দুলছে। আজ বিকেলের আকাশে বেশ মেঘ জমেছে। এলোমেলো ঝড়ো বাতাস বইছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে কিছুক্ষণ পর ঝুম বৃষ্টি নামবে। তাই তো তিয়াশা একটা আকাশি রঙের জর্জেট শাড়ি পরে, কপালে কালো টিপ, চোখে গাঢ় কাজল দিয়ে খোলা চুলে অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন বৃষ্টি নামবে। আজ মনের আনন্দ নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে সে। এমন সময় প্রাইভেট নাম্বার থেকে আসা এহেন মেসেজ পেয়ে একটু ঘাবড়ে যায় তিয়াশা। কে আবার দিলো এই মেসেজ? কে এই সিক্রেট এডমায়ারার?

এক ফোঁটা বৃষ্টি তিয়াশার গালে পড়তেই তিয়াশা আনন্দে লাফিয়ে উঠে। দৌড়ে গিয়ে হাতে থাকা ফোনটা ছাউনির নিচে রেখে এসে সে খোলা আঙিনায় দু’হাত প্রশস্ত করে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করার চেষ্টা করছে। ধীরে ধীরে আকাশ অন্ধকার হয়ে মুশলধারায় বৃষ্টি নামে। তিয়াশা মনের আনন্দে ভিজতে থাকে।

হঠাৎ পেছন থেকে তিয়াশার দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে থুতনি রাখে কেউ। তিয়াশা হাসিমুখে তার গালের সাথে গাল মিলিয়ে বৃষ্টির স্বাদ নিতে থাকে। এ যে এক মোহনীয় ক্ষণ। ভালোবাসার মানুষটি এবার তিয়াশার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তার থুতনি উঁচিয়ে ডুব দেয় তিয়াশার গোলাপি ঠোঁটে। বৃষ্টির মাঝে বুদ হয়ে আছে দুজনে গাঢ় চুম্বনে। হঠাৎই তিয়াশাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে থাকে। তিয়াশা দুহাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে ডুব দেয় ভালোবাসার অতল রাজ্যে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে রোমান্টিক গান,

“আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ,
বৃষ্টি – তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।

হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি
তাকেই কাছে ডেকে, মনের আঙিনা থেকে
বৃষ্টি তোমাকে তবু ফিরিয়ে দিলাম।

তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে, চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম।”

এ তো সত্য নয়, পুরোটাই ছিল আদনানের কল্পনা।

মুশল বৃষ্টি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু হাতে লাল টুকটুকে একটা গোলাপ নিয়ে ভিজে চুপচুপে অবস্থায় অবনত মাথায় দূরে দাঁড়িয়ে আছে আদনান। চোখ বারবার ঘোলা হয়ে আসছে তার। বোঝা যাচ্ছেনা সেকি হাসছে না কাঁদছে। একবুক স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল তিয়াশাকে প্রপোজ করবে বলে, কিন্তু তা হবার আগেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে যখন দেখে তিয়াশার সামনে হাটুগেড়ে বসে কেউ তাকে প্রপোজ করছে। ছেলেটির মুখ সে দেখতে পায়নি, আর তিয়াশা প্রপোজাল গ্রহণ করেছে কি করেনি সেটা দেখার প্রয়োজনবোধও করেনি আদনান। ভারাক্রান্ত মন কিন্তু ঠোঁটে এক চিলতে হাসি নিয়ে মুহূর্তেই সে স্থান প্রস্থান করে।

*

আলিয়ার বিয়ে ভেঙে যাবার পর মাঝে দুইমাস পেরিয়ে গেছে। এতবড় ঝড় বয়ে যাওয়ার পর আবার আস্তে আস্তে পরিবারের পরিবেশ অনেকটাই শান্ত হয়ে উঠেছে। আজ রবিবার বিকেলে মুজদাহীর পরিবারের ড্রইংরুমে বসে আছে নাদিম মুজদাহীর ও নওরীন মুজদাহীর। নাদিম মুজদাহীরকে বেশ শান্ত দেখাচ্ছে। জীবনের প্রাক্কালে এমন এক ঘটনায় তিনি বেশ ধাক্কা খেয়েছেন। নামিদামি মানুষ ও শ’খানিক আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার পরিজনের সামনে হয়েছেন লজ্জিত। শিকার হয়েছেন প্রতারণার। চোখের সামনে নিজের আদরের একমাত্র মেয়ের বিয়ে ভেঙে যেতে দেখেছেন। নাদিম মুজদাহীরের শরীর ও মন কোনটাই আর এই আঘাত সামাল দিতে পারেনি। ভেঙে পড়েছেন একেবারে।

মুখোমুখি বসে আছেন তার বন্ধু ডাঃ সামির, তার মেয়ে সুহানি, ও আরও একজন ছেলে। নাদিম মুজদাহীর বেশ শান্ত কণ্ঠে তার বন্ধুকে বললেন,

“তো বন্ধু এটাই তাহলে শেষ কথা?”

ডাঃ সামির একটু আমতা আমতা করে বলেন,

“বন্ধু, তুই কিছু মনে করিস না। আসলে মেয়ের সুখেই তো সুখ, বিজনেস তো কতই করা যাবে, বল।”

নাদিম মুজদাহীর ঠান্ডা হাসি দিয়ে বলেন,

“তুই ঠিকই বলেছিস। সন্তানের সুখেই সুখ। আমিই আসলে ভুল করেছি, ভুল বুঝে এসেছি। সারাজীবন শুধু টাকা পয়সা বিজনেস নিয়ে পড়েছিলাম। যেখানে লাভ দেখেছি সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়েছি। নিজের সন্তানদের বলি দিতেও দ্বিধা করিনি। তুই অন্তত একটা ভালো কাজ করতে যাচ্ছিস।”

চোখ ডাঃ সামিরের থেকে সরিয়ে পাশে বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে মুচকি হেসে বলে,

“তো এই সেই হীরের টুকরো ছেলে? তোর মেয়ের পছন্দ? নাম কী?”

“ওর নাম মাহিদ। আদিলেরই বন্ধু, সেখান থেকেই সুহানির সাথে পরিচয় এবং পরবর্তীতে পরিণয়।”

সুহানি নাদিম মুজদাহীরের পাশে যেয়ে বসে হাত ধরে বলে,

“আঙ্কেল, আমি খুবই দুঃখিত আপনাকে কষ্ট দিয়ে থাকলে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”

নাদিম মুজদাহীর সুহানির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“না মা, দুঃখ পাইনি। বরং খুশি হয়েছি তোমার ইচ্ছের মূল্যায়ন তোমার বাবা করেছে। সুখী হও এই দোয়া করি।”

আরও বেশ কিছুক্ষণ গল্প করেন ডাঃ সামির, তার মেয়ে সুহানি ও মাহিদ নাদিম মুজদাহীর ও নওরীন মুজদাহীরের সাথে। গল্প শেষে তারা চলে গেলে ড্রইংরুমে প্রবেশ করে আদিল, আদনান, আলিয়া ও আদিলের বন্ধু সুজয়। সুজয়কে দেখে নাদিম মুজদাহীর খুশি হয়ে তাকে কাছে ডেকে বসান,

“কেমন আছো বাবা? তোমার সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই তোমাকে বেশ মনে ধরেছে আমার। বড্ড ভদ্র ও অমায়িক ছেলে তুমি। পুরোদস্তুর জেন্টেলম্যান।”

“আঙ্কেল এভাবে বলবেন না। গুরুজনদের সম্মান করাটাই তো আমাদের কর্তব্য।”

নাদিম মুজদাহীর হেসে বলেন,

“তা বাবা আজ কি মনে করে আমাদের এখানে?”

তখন আদিল বলে উঠে,

“বাবা, সুজয় আমাদের বিজনেসের জন্য একটা কাজ করেছে। তার জন্য আমরা বেশ বড় একটা কন্ট্রাক্ট পেয়েছি এবং এই কাজটি করতে পারলে আমাদের ব্যবসায় আরও সফলতা আসবে আর লাভও দ্বিগুন।”

বিজনেস সম্পর্কে সব বিস্তারিত জেনে খুব খুশি হন নাদিম মুজদাহীর। যেই আদিলকে বিক্রি করে তিনি বিজনেস করতে চেয়েছিলেন আজ সেই আদিলই তার বাবার জন্য আরো ভালো প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। তিনি খুশি হয়ে আদিলকে বলেন,

“বাবা তোমাদের যা ভালো মনে হয় সেটা কর। আমি আর কতদিন। এখন তো তোমাদেরই দায়িত্ব হাতে নিতে হবে। যদি কোনো পরামর্শ লাগে আমিতো আছিই।”

“বাবা আরেকটা কথা আছে।”

“কী, বলো?”

“না মানে… মানে…”

“কি মানে মানে করছো?”

“মানে… ভাবছিলাম সুজয়কে আমাদের ঘরের ছেলে করে রেখে দিলে কেমন হয়?”

“বুঝিয়ে বলো।”

“সুজয় আলিয়াকে পছন্দ করে। বিয়েও করতে রাজি আছে। তুমি যদি সম্মতি জানাও তাহলে…”

নাদিম মুজদাহীর সশব্দে হেসে আলিয়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“তাই নাকি? এ তো ভালো খবর। কিরে মা? তোর কি সম্মতি?”

আলিয়া মাথা নিচু করে লাজুক হাসি হেসে বলে,

“তোমরা যা ভালো মনে করো।”

নওরীন মুজদাহীর আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“এবার আর ভুল নয় মা। সুজয় ঘরের ছেলে, সবাই তাকে ভালো করে চিনি। তোর সুখেই তো আমাদের সুখ।”

আলিয়া আরও লজ্জা পেয়ে নওরীন মুজদাহীরকে জড়িয়ে ধরে। তখন নাদিম মুজদাহীর বলে উঠে,

“তো আর কি?” সুজয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোমার বাবা মাকে নিয়ে এসো একদিন। সব ঠিক থাকলে সামনের মাসেই বাজবে বিয়ের সানাই। তবে এবার দু দুটো।”

আদিলের দিকে ভ্রু নাচিয়ে বলে,

“তোমার কোনো পছন্দ থাকলে বলে ফেল। দেরি করোনা।”

আদিলও বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। আমতা আমতা করতে থাকে, বুঝে উঠতে পারছেনা তিয়াশার কথা কিভাবে বলবে। এমন সময় আদনান হঠাৎ বলে উঠে,

“আছে তো? আছে…। ভাইয়ার পছন্দ আছে।”

আদিল বিস্মিত হয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, আদনান কি জানে সে তিয়াশাকে ভালোবাসে। আদিলের চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ভ্রূক্ষেপ করেই আদনান বলে উঠে,

“মোহিনীকে পছন্দ করে সে।”

আদিলের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। হা করে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে। কোন মোহিনীর কথা বলছে সে? ওদিকে নওরীন ও নাদিম মুজদাহীর দুজনেই বলে উঠে,

“তাহলে তো খুবই ভালো। মেয়ের বাড়ির ঠিকানা ফোন নম্বর দে। আমরা কথা বলে দেখি।”

আদনান খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠে

“অবশ্যই দিবো মা।”

আদনান ঘর থেকে বের হয়ে যেতে নিলে, নাদিম মুজদাহীর ডেকে বলে,

“শোন? তোর ওই বান্ধবী, কি যেন নাম? হুম…. মনে পড়েছে… তিয়াশা। তাকে একদিন আমাদের বাসায় আসতে বলিস তো। মেয়েটার কাছে ঋণী হয়ে আছি।”

“ঠিক আছে বাবা, বলবো।”

বলেই আদনান বেরিয়ে যায়, তার পিছু নেয় আদিল। একটু দূরে যেতেই পেছন থেকে আদনানের শার্ট খাঁমচে ধরে টান দেয় আদিল।

“কিরে? তুই কোন মোহিনীর কথা বললি? মোহিনী এখানে আসলো কোথা থেকে?”

“ওমা তুই তো নিজে থেকে কোন কালেই কাকে পছন্দ করিস, তার নাম জীবনেও বলতি না বাবাকে। আমিও তো কতবার জিজ্ঞেস করেছি, আমাকেও বলিস না। তো মনে পরে গেল তোর বাল্যকালের প্রেমিকা, মোহিনীর কথা। তার কথাই বলে দিলাম বাবাকে।”

আদিল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“মোহিনীকে কোথায় পাবি তুই? সেতো লন্ডনে চলে গিয়েছিল কবেই।”

“ফিরে এসেছে।”

“ফিরে এসেছে?”

“হুম… এই যে নে ওর ফোন নাম্বার। যোগাযোগ করে দেখ।”

বলেই আদনান চলে যায়। এদিকে আদিলের চুল ছিড়তে মনে চাচ্ছে। কি করবে সে? হ্যাঁ বাল্যকালে সে মোহিনীকে একটু একটু পছন্দ করতো। সেতো অনেক কাল আগের কথা। কিন্তু এখন তো তার মন-প্রাণ জুড়ে রয়েছে তিয়াশা। এত কষ্ট করে সুহানিকে মাহিদের দিকে ফিরিয়েছে। এখন এসে জুটেছে মোহিনী। কি করবে আদিল? কিভাবে বলবে আদিল, যে সে মোহিনীকে নয়, তিয়াশাকে ভালোবাসে। তিয়াশাকেই সে জীবন সঙ্গী করতে চায়।

*

এক সপ্তাহ পরে তিয়াশাকে আদনান নিয়ে আসে তাদের বাসায় নওরীন মুজদাহীর ও নাদিম মুজদাহীরের সাথে দেখা করানোর জন্য। নাদিম ও নওরীন মুজদাহীর বেশ আদর করে কথা বলে তিয়াশার সাথে। তার অতীতের ব্যবহারের জন্য বেশ দুঃখ প্রকাশ করে। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আলিয়ার জীবন একটি দুর্ঘটনা থেকে বাঁচানোর জন্য। খুব অল্পতেই বেশ আপন করে নেয় তিয়াশাকে। তিয়াশাও বেশ অভিভুত হয় তাদের আদর ও ব্যবহারে। এদিকে আলিয়াও তিয়াশাকে ধন্যবাদ জানায় তার জীবন বাঁচানোর জন্য। দুজনের মধ্যেও বেশ অল্প সময়ে অনেক ভাব জমে উঠে।

সেদিন বাসায় বসে জম্পেশ আড্ডা। আলিয়া, তার হবু বর সুজয়, আদনান, তিয়াশা, আদিল ও তার হবু বউ মোহিনী হয়েছে একসাথে। আদিলের বিয়ে পাকা করে ফেলেছে তার বাবা মা মোহিনীর সাথে। ঘটনা এত দ্রুত ঘটেছে যে আদিলের কিছু করার উপায় ছিলনা। সবাই গল্প করছে আর আদিল শুধু আড় চোখে তিয়াশাকেই দেখে যাচ্ছে। তিয়াশা একবারও আদিলের দিকে তাকায়নি। আদনানের সাথে খুনসুটিতে মেতে আছে সে। ভাব এমন যে আদিলের বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়াতে কষ্ট না পেয়ে বরং খুশি হয়েছে। কিন্তু তিয়াশার মাঝে কি ঝড় চলছে সেটাত শুধু সেই জানে।

গল্পের মাঝে সুযোগ বুঝে এক সময় আদনান তিয়াশার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় তাদের সুইমিংপুলের পাশে দোলনার কাছে। হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে আদনান গান ধরে,

“ভাল্লাগে হাঁটতে তোর হাত ধরে
ভাবনা তোর আসছে দিন রাত ধরে
এলোমেলো মনটাকে
কি করে কে আর রাখে
কেন আমি এত করে তোকে চাই

পারবো না আমি ছাড়তে তোকে
পারবো না আমি ভুলতে তোকে
পারবো না ছেড়ে বাঁচতে তোকে
হয়ে যা না রাজি একবার।”

আদনানের গান শুনে, তার অঙ্গভঙ্গি দেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে তিয়াশা। আর তা দেখে বুকের মাঝে তীব্র ব্যাথা হচ্ছে আদিলের। চোখ দুটো তার ছলছল করছে কিন্তু কিছু করার নেই। কথা অনেক দূর এগিয়ে গেছে, এখন তার বাবা মাকে আর থামানোর উপায় নেই। হঠাৎ স্পর্শে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মোহিনী দাঁড়িয়ে। তাকে দেখে মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে গল্প করতে থাকে তার সাথে। কিন্তু বুকের বাঁ পাশটা যেন চিনচিন করে ব্যথা করেই যাচ্ছে।

*

মুজদাহীর পরিবারে আবারও বেজে উঠেছে বিয়ের সানাই। পুরো বাড়ি সজ্জিত হয়েছে সোনালী আলোক সজ্জায়। বাড়িতে বসেছে চাঁদের হাঁট। মুজদাহীর পরিবার ভাসছে যেন আজ খুশির জোয়ারে।

বিয়ের স্টেজে বসে আছে দুই জোড়া বর কনে। সুজয় আর আলিয়া বসে আছে পাশাপাশি। মুখে তাদের মিষ্টি হাসি বিদ্যমান। দুজনকেই বেশ সুন্দর মানিয়েছে। অপরপাশে বিদ্ধস্ত মন নিয়ে বসে আছে আদিল, পাশে মোহিনী লম্বা ঘোমটা টেনে বসে। আদিলের আগ্রহও নেই মোহিনীকে দেখার। তার দু’চোখ খুঁজছে তিয়াশাকে। একবার যদি কথা বলতে পারতো তার সাথে। তিয়াশার বন্ধু, মা, ভাই বোন সবাইকেই দেখছে শুধু তিয়াশাই নেই।

আদনান আদিলের পাশে হাসি মুখ করে এসে বলে,

“কিরে ভাই, মুখে হাসি কই তোর? এত কষ্ট করে তোর বাল্য কালের প্রেমিকার সাথে মিলিয়ে দিলাম। আর তুই মুখ কালো করে রেখেছিস। হাস একটু।”

আদিল জোর করে মুখে হাসি টেনে এনে বলে,

“এত চিন্তা আমার জন্য না করলেও পারতি তুই। আচ্ছা, শোন… তিয়াশাকে দেখছিনা। আসেনি বিয়েতে?”

“আর বলিস না, এত বললাম। সে কিছুতেই আসবেনা। বললো ম্যাকডোনাল্ডে ইমার্জেন্সি ডাক পড়েছে, তাই নাকি তার যেতেই হবে। আন্টিও অনেক জোর করেছে। কিন্তু শুনলোই না।”

“তুই ওর অনেক খেয়াল রাখিস, তাইনা?”

“হুম, রাখতে তো চাই। সে চায় বলে তো মনে হয়না।”

আদিল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিশ্চুপ হয়ে যায়। আসলেই তো তিয়াশা আসবে কেন বিয়েতে। যে তাকে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে আজ নিজেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে অন্য একজনকে জীবন সঙ্গী করার জন্য তার বিয়েতে তিয়াশার না আসাটাই উচিত। না জানি মেয়েটা কি পরিমান কষ্ট পেয়েছে। সে নিজেও তো ধোকা দিলো তিয়াশাকে। এটা যে তাকে সারাজীবন কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। অসহায়ের মতো ভারাক্রান্ত মনে বসে আছে আদিল।

*

বিয়ে পড়ানো সুন্দর ভাবে সুসম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। আলিয়াকে বিদায় দিয়ে এবার বউকে বরণ করে নিয়ে বাসর ঘরে বসানো হয়েছে। সব আচার অনুষ্ঠান শেষে সবাই এখন আদিলকে তার বাসর ঘরে বউয়ের কাছে নিয়ে যেতে উঠে পরে লেগেছে। আদিল নড়ছে না। কিছু একটা ভেবে আদিল উঠে দাঁড়ায়। নাহ, একজনকে স্বপ্ন দেখিয়ে তার স্বপ্ন ভঙ্গ করেছে, কিন্তু এখন তার ঘরে যে বউ হয়ে বসে আছে তার সাথে অন্যায় করতে পারেনা। সে ভাবে, এখন চেষ্টা করবে তিয়াশাকে ভুলে, তাকে ভালোবাসতে। কিন্তু তাও মন তো মানছে না। বলা সহজ কিন্তু করা টা এত সহজ যে নয়।

ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে আদিল তার ঘরের দিকে। ঘরে ঢুকে কিছুক্ষণ ইতস্তত করে যখন পেছন ঘুরে দরজা লাগাতে যাবে ঠিক তখনই একটা তিন কি চার বছরের মেয়ে ধরাম করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ছোট ছোট বাক্যে বলে,

“আমাল আম্মু কোতায়? আম্মু? আম্মু?”

আদিল অবাক হয়ে যায়। হাটু গেড়ে বসে পিচ্চি মেয়েটাকে ধরে বলে,

“মামনি কে তোমার আম্মু? এখানে কিভাবে এলে?”

পিচ্চি মেয়েটা আঙুল তুলে দেখিয়ে বলে,

“ঐ যে আমাল আম্মু।”

আদিল বিস্মিত,

“ঐটা তোমার আম্মু? তোমার আম্মুর নাম কি?”

মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,

“হু, ঐটা আমাল আম্মু। আমাল আম্মুর নাম…।”

তার ঠিক পরেই এক পরিচিত কণ্ঠে কেউ ডেকে উঠে,

“মহুয়া। আম্মু কই তুমি? এই যে আমি এখানে। এদিকে আসো।”

পায়ের শব্দ শুনে আদিল পিচ্চি মেয়েটাকে কোলে করে নিয়ে ঘরের বাইরে যেতে নিবে তাকিয়ে দেখে পরিবারের সবাই তার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে। পিচ্চি মেয়েটা দৌড়ে গিয়ে “আম্মু” বলে ঝাঁপ দিয়ে তার মায়ের কোলে চলে যায়। আদিল পিচ্চির মায়ের দিকে তাকায়। এ কী! এ তো মোহিনী! মোহিনী এখানে, তাহলে আদিলের অপেক্ষায় বাসর ঘরে বসে আছে কে?

আদিল বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে। বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে আছে। সবার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের ঘরের বিছানায় বসে থাকা মানুষটিকে দেখে আদিল বলে উঠে,

“মোহিনী…. আম্মু হলে ওই মেয়েটা কে?”

আদনান আদিলকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বিছানায় নিয়ে ফেলে বলে,

“নিজেই দেখ।”

আদিলের হাত থরথর করে কাঁপছে। তিয়াশা নয়, মোহিনী নয়, তাহলে কাকে বিয়ে করলো আদিল? আলতো করে ঘোমটা তুলে তার চোক্ষু চড়কগাছ। সমানে ঘামছে সে। বিশ্বাস হচ্ছেনা তার, একই স্বপ্ন না সত্যি? আবার ঘোমটা তুলে ভালো করে তাকিয়ে দেখে হ্যা! এ তো সত্যি। বধূ বেশে তার সামনে বসে আছে তিয়াশা।

আদিল খুশিতে কি করবে বুঝতে পারছেনা। আদিল হাতে চিমটি কেটে দেখে স্বপ্ন দেখছে নাতো! দরজার কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করে,

“এটা কিভাবে সম্ভব?”

সবাই তাকে জোর করে রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,

“সেসব পরে শুনিস। আগে বাসরটা উদযাপন কর।”

আদিল কথা না বাড়িয়ে বিছানার কাছে যেয়ে দেখে আদনান বিছানার এক কোনে আরাম করে পা ঝুলিয়ে বসে তিয়াশার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। মজার ছলে বলছে,

“আচ্ছা তিয়াশা, তুই তো আমার বান্ধবী। আবার আমার ভাবি ও। আবার আমি তোর দেবর ও”

তিয়াশা ও খুনসুটি করে বলছে,

“হুম, তো?”

“তো শালী যদি আধি ঘারওয়ালি হয়, তবে দেবর ও তো হাফ বর। সে ক্ষেত্রে তো আমার ও আজ এই ঘরে থাকার কথা। কি বলিস…”

হঠাৎ পেছন থেকে আদিল এসে আদনানের কান টেনে ধরে বলে,

“তবেরে শয়তান…এই ইচ্ছাতে গুড়ে বালি। আর এগুলো তোরই প্ল্যান ছিল তাইনা?

আদনান শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে বলে,

“জি, দি ওয়ান এন্ড অনলি।”

“হয়েছে এবার বের হ।”

“ইশ…সহ্য হচ্ছেনা আর তাইনা?”

“এক চড় খাবি। যা এখন…।”

“আচ্ছা শোন শোন…. আমার আমানত, যখের ধন, পরান পাখি বান্ধবিটিকে তোর হাতে তুলে দিয়েছি তোর হাতে বিশ্বাস করে। তুই ওকে সারাজীবন সুখে রাখবি, কথা দে।”

হাসির ছলে আদনান কথা গুলো বললেও, তার গলা ধরে আসছে। অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রেখে জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। আদিল আদনানের হাত ধরে প্রত্যুত্তরে বলে,

“কথা দিলাম। ধন্যবাদ ভাই। তোর আমানতের খেয়ানত হতে আমি দিবোনা।”

হাসতে হাসতে আদনান বের হয়ে পেছনে দরজা আটকে দাঁড়ায়, আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরে দু ফোটা নোনা জলে, কিন্তু ঠোঁটে তার বিজয়ের হাসি। সে পেরেছে নিজের ভালোবাসাকে স্যাক্রিফাইস করে ভাইয়ের খুশির জন্য তার হাতে তুলে দিতে।

*

আদনান নীরব বসে আছে দোলনায়। মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে তার। হাতে গিটার নিয়ে বসে আছে কিন্তু কি সুর তুলবে বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ পাশে বসে মোহিনী হাত ধরতেই ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটিয়ে তাকায় আদনান। মোহিনী আদনানের গাল টেনে দিয়ে বলে,

“অনেক মহৎ কাজ করেছিস তুই। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হাতে তুলে দেয়া যে সহজসাধ্য বিষয় নয়।”

“উহু, আমার ভালোবাসার মানুষ তো পরে। বরং বলতে পারো দুটো ভালোবাসার মানুষকে কাছাকাছি আনতে সহায়তা করেছি। তবে, সঠিক সময়ে তুমি না আসলে আমিও প্ল্যান করতে পারতাম না আর তোমার সাহায্য ছাড়া এটা সম্পন্নও করতে পারতাম না।”

“তাও তুই যা করেছিস তা কেউ করবেনা। যাই হোক, এখন বলতো তুই জানলি কিভাবে তিয়াশা ও আদিল একে অপরকে ভালোবাসে? আর আন্টি আঙ্কেলই বা রাজি হলেন কিভাবে?”

“সে অনেক কথা।”

সংক্ষেপে আদনান জানায়, তিয়াশার জন্য আদিলের দুর্বলতা মাঝে মাঝেই নানা ঘটনায় দেখতে পেয়েছে সে। তিয়াশার প্রতি আদিলের কেয়ার, উদ্বিগ্নতা সবই তার মনে একটু একটু সন্দেহ জাগায়। তবে শিওর হয় সেদিন যেদিন সে তিয়াশাকে গিয়েছিল প্রপোজ করতে কিন্তু অন্য কেউ ততক্ষনে তিয়াশার সামনে হাটুগেড়ে বসে আছে দেখে। তখন যদিও মুখ দেখতে পায়নি, তবে আদিলের মতোই শারীরিক গঠন ছিল ছেলেটার। নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরে তিয়াশাকে কৌশলে জিজ্ঞেস করে, তখন তিয়াশা নিজেই স্বীকার করে যে ওরা দুইজন দুইজনকে পছন্দ করে। তারপর আদনান তার বাবা মাকে বুঝিয়ে রাজি করিয়ে তিয়াশার মায়ের সাথে কথা বলে সব আয়োজন এগিয়ে নেয়। আর আদনানের বুদ্ধিতেই আদিলকে সারপ্রাইস দেয়ার জন্য একটু মজা করে তিয়াশার নামটা গোপন রেখে বিয়েটা আয়োজন করে।

“ব্যাস, এইতো ওদের কাহিনী। আর আমার ভালোবাসা? তিয়াশা খুশি থাকলেই তো আমি খুশি। আর আদিল তো সারাজীবনই অন্যের খুশির জন্যে স্যাক্রিফাইস করছে নিজের পছন্দকে। এবার নাহয় আমিই স্যাক্রিফাইস করলাম ওর পছন্দকে সম্মান করে।”

মোহিনী আদনানের কথায় পুরা বিমোহিত,

“বাহ, তুই সত্যিই খুব ভালো একটা কাজ করেছিস। তোর এই উৎসর্গ আর ভাইয়ের বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যা যা করেছিস, আমি সত্যিই সাধুবাদ জানাই।”

*

তিয়াশা ঘোমটা টেনে বসে আছে আদিলের অপেক্ষায়। একটু আগেই দরজা বন্ধ করলো কিন্তু তার কাছে না এসে কোথায় গেল? আজব তো? কিছুক্ষন অপেক্ষা করে তিয়াশা বিছানা থেকে নেমে আদিলের বিশাল ঘরটায় তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে, কিন্তু আদিল তো নেই। হঠাৎই পেছন থেকে এসে আদিল জড়িয়ে ধরে তিয়াশাকে। আলতো করে ওষ্ঠ দ্বারা ছুঁয়ে দেয় তিয়াশার কাঁধে। তিয়াশা চমকে গেলেও তার শরীরে ঠান্ডা শিহরণ বয়ে যায়। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসতে থাকে, আর হৃদ স্পন্দন যেন ড্রাম পিটাচ্ছে। আচমকা তিয়াশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে পাজা কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকে আদিল। তিয়াশা ভয় পেয়ে আদিলের গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,

“আরে… কো…কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?”

“শশ…শ।”

আদিল তিয়াশাকে তার বিশাল বারান্দার এক কর্নারে থাকা ডিভান টাতে শুইয়ে দিয়ে বলে,

“আজ আমাদের বাসর হয়ে যাক এখানেই।”

তিয়াশা অবাক হয়ে চারপাশটা দেখতে থাকে, কি অপূর্ব সুন্দর! পুরোটা ব্যালকনি প্রদীপ আর ফুল দিয়ে সাজানো। কিছু প্রদীপ পানিতে থাকা পদ্ম ফুলের টব গুলোতে পদ্ম ফুলকে ঘিরে তার চারপাশে ভাসছে। ফুলের মিষ্টি সুবাস, প্রদীপের আলো আর যদি হয় পূর্ণিমা সন্ধ্যা এই ক্ষণ মোহনীয় করে তুলতে আর কি লাগে? তিয়াশা যখন চারপাশ দেখতে ব্যাস্ত তখন আদিল ব্যস্ত তিয়াশাকে দেখতে। তিয়াশা চারদিক দেখে আদিলের দিকে চোখ পড়তেই একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করতেই আদিল তিয়াশার মুখ তুলে কপালে পড়িয়ে দেয় ভালোবাসার চুম্বন।

“ভালোবাসি, তিয়াশা।”

তিয়াশাও ছোট্ট করে ফিসফিস করে বলে,

“আমিও।”

এর পরেই তিয়াশাকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদিল। তার চোখে দুফোঁটা আনন্দের জল। কিছু হারিয়ে যাওয়ার পর তা অবিশ্বাস্য ভাবে ফিরে পেলে যেই আনন্দ হয়, ঠিক তেমন ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফিরে পাওয়ার অসহ্য সুখের অনুভূতি নিয়ে তিয়াশাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে আদিল। একে দেয় ঠোঁটে ভালোবাসার নিবিড় পরশ।

দুজনের মাঝে কোনো কথা নেই, কিন্তু নীরব থেকেই যেন একে অপরকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে জানান দিচ্ছে তাদের ভালোবাসার গভীরতা।

এভাবেই এক পূর্ণিমা সন্ধ্যায় এক যুগলের ভালোবাসার সফল পরিণতি হয়। তিয়াশা ও আদিল যখন প্রেমের সাগরে ডুব সাঁতার কাটছে, ঠিক তখনই একটি গানের সুর বাতাসে ভেসে আসে। কিছু মুহুর্তের জন্য তিয়াশা একটু থমকে যায়। সুরটা যে খুব পরিচিত লাগছে। তারপর আবার হারিয়ে যায় ভালোবাসার অতল রাজ্যে।

তিয়াশা কি কখনো জানতে পারবে কে তার সিক্রেট এডমায়ারার?

***সমাপ্ত***

সব পর্বের লিংক একসাথে: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

[বি.দ্র: এটি আমার লেখা সর্বপ্রথম প্রেমের উপন্যাস। চেষ্টা করেছি ভালো কিছু উপহার দেবার। জানিনা কেমন হয়েছে। গল্পটি পড়ে আপনাদের অনুভূতি গঠন মূলক মন্তব্যের মাঝে জানাতে ভুলবেন না। আপনাদের মন্তব্যই আমাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগাবে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু উপহার দেয়ার।

আর আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ, যারা এই গল্পের শুরু থেকে পুরোটা সময় আমার পাশে ছিলেন। আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার গল্প নিয়মিত পড়েছেন, গঠনমূলক মন্তব্য করেছেন, গল্প এগিয়ে নেয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ।

এবার নিচ্ছি কিছুদিনের বিরতি। শীঘ্রই ফিরবো নতুন কোনো গল্প নিয়ে। ভালো থাকবেন, সাথে থাকবেন।]