Thursday, August 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2020



অনুভবে_তুমি পর্ব ১০

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ১০
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

মুনতাসির কথাটা শোনামাত্রই লাজুকের কাছে চলে আসলো।আর বললো,”আমাদের দুজনের আজকে কী হয়েছে শুনবেন?”

লাজুক ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালো যে শুনবে।কারন মুনতাসির লাজুক কে গাড়ির সাথে হাত দিয়ে আটকে ধরছে ।

“আমি আপনার প্রেমে পড়েছি। আর মুনা ও আপনার প্রেমে পড়েছে।”

এটা বলেই মুনতাসির লাজুক কে ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।মুখে ছিলো তার দুষ্টু হাসি।

অন্যদিকে লাজুকের সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে, কী থেকে কী হয়ে যাচ্ছে লাজুক কিছুই বুঝতে পারছেনা।

সকাল থেকে একটার পর একটা শকড খাচ্ছে।

লাজুকের ভাবনা কাটে মুনতাসিরের ডাকে।

“ও হ্যালো ম্যাডাম! আপনার ভাবনা শেষ হলে গাড়িতে উঠুন।আমাদের লেইট হচ্ছে।”

“জি স্যার আসছি।”
এটা বলে লাজুক যেই না পেছনের সিটে বসতে গেলো ওমনি মুনতাসির বলে উঠলো,”আমাকে কি আপনার গাড়ির ড্রাইভার পেয়েছেন যে গাড়ির পেছনে বসছেন?”

কথাটা খুব রেগেই বললো মুনতাসির।
লাজুক তখন পেছন থেকে নেমে সামনে বসলো।

আর গাড়ি চলতে লাগলো তার আপন গতিতে।

বাগেরহাট থেকে মাগুরা সদরে যেতে ওদের পাক্কা চার ঘন্টা সময় লাগলো।

মুনতাসিরের মেজাজ আজ ভীষণ ফুরফুরে।

লাজুকের ও ভালো লাগছে।কতোগুলো বছর পর আবার চিরচেনা সেই চির চেনা গ্রামে ফিরছে।খুব আনন্দ লাগছে তার ।

ওরা দুজন সদরে আসতেই মুনতাসির গাড়ি গ্যারেজে রেখে আসলো।আর ড্রাইভার কে ফোন করে বলে দিলো ওদের ব্যাগপত্র গুলো নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে।

মুনতাসির লাজুক কে নিয়ে কিছু সময় একা কাটানোর জন্য দুটো গাড়ি বুক করেছিলো।একটা নিজে ড্রাইভ করে লাজুক কে নিয়ে এলো, আরেকটা তে ড্রাইভার আসছে দুজন।

গাড়ি গ্যারেজে দিয়ে লাজুককে বললো, “এখান থেকে রিক্সা করে যাবো।চলুন আমার সাথে।”

লাজুক এবার ভারী অবাক হলো।কারন এই খচ্চর লোকটার সাথে রিক্সাতে বসতে হবে,

লাজুক তো মুখ ফসকে বলেই ফেললো,”আচ্ছা রিক্সাগুলো এতো ছোট কেন?”

“এক্সকিউজ মি!কি বললেন আপনি? রিক্সা ছোট, না কী আমার পাশে বসতে আপনার সমস্যা হচ্ছে ?”

” না না স্যার একদম না।তা হবে কেন? আপনার পাশে বসতে আমার কোনো আপত্তি নেই তো স্যার।বরং আপনার পাশে বসতে পারলে নিজেকে খুব ভালো লাগছে।”

কথাগুলো বলেই লাজুক হাসলো।

মুনতাসির ভ্রু কুঁচকে ফেলে লাজুকের কথা শুনে।

ওরা আর কথা বাড়ায় না।অনেকটা পথ রিক্সা করে আসার পর রিক্সা ছেড়ে দেয়।

লাজুক বলে,”রিক্সা ছাড়লেন কেন?”

মুনতাসির বললো আমরা এখন হেঁটে হেঁটে যাবো।কতোদিন গ্রামের পথে হাঁটা হয়না !

হুম ঠিক আছে,

মুনতাসির আর লাজুক পাশাপাশি হাঁটছিলো।

তখনি এক মুরব্বী বলে উঠলো,”আরে নীলাভ বাবা যে!কেমন আছো? কতোদিন পর এলে?”

মুনতাসির লাজুকের মুখপানে চেয়ে শুকনা একটা হাসি দিয়ে মুরব্বী কে সালাম দিয়ে বললো,”এইতো চাচা আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?”

মুরব্বীঃহ্যা আমিও ভালো আছি।কতোদিন পর আমি তোমাকে দেখলাম। সেই যে গেলে বাবা,আর তোমার দেখা নাই।
তা বাবা সাথে কি বউমা নাকি?
বিয়ের কতোদিন হলো?নতুন বউ নিয়ে গ্রাম দেখাতে এলে বুঝি?

মুনতাসিরঃহ্যা চাচা সাথে আপনার বউমা।এইতো তিন দিন হলো বিয়ের বয়স।গ্রাম দেখাতে নিয়ে এসেছি আপনার বউমা কে।

কথা টা শেষ করেই মুনতাসির লাজুকের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো ।

লাজুক এমনিতেই লজ্জাবতী।মুনতাসিরের চোখ টিপ দেখে আরো লজ্জা পেয়ে গেলো।
কিন্তু মুখে কিছু বললোনা।

মুরব্বী লোকটা মুনতাসিরের কথা শুনে বেশ খুশিই হলো।

“বউমা কিন্তু খুব মিষ্টি দেখতে।আর লক্ষ্মী ও খুব।মায়াবতী দেখাচ্ছে বউমা কে।তা বাবা বউমা কে নিয়ে আমাদের বাড়ি এসো কিন্তু।”

মুনতাসিরঃজি চাচা। অবশ্যই আসবো, আমাদের জন্য দোয়া করবেন,আসি তাহলে?

মুরব্বীঃহ্যা এসো এসো।

মুরব্বী লোকটা চলে যেতেই লাজুক মুনতাসিরের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,”আপনার নাম নীলাভ?”

মুনতাসির হেসে বললো,”কেন বলবো আমার নাম কি?”

লাজুক এবার ভীষণ রেগে গেলো।আর বললো,”বলবেন না মানে? আপনাকে বলতে হবে।কেন ওই লোকটা আপনাকে নীলাভ বলে ডাকলো?আর আমি আপনার বউ নাকি যে ওনার সামনে আমাকে বউ বলে পরিচয় দিলেন?”

মুনতাসিরঃবাবারে বাবা,এতো প্রশ্ন একসাথে? আচ্ছা আচ্ছা বলছি।
আমার নাম মুনতাসির চৌধুরী নীলাভ।

গ্রামের সবাই আমাকে নীলাভ নামেই চিনে।

লাজুক মনে মনে ভাবতে থাকে,এই সেই নীলচে চোখের ছেলে যার প্রেমে পড়েছিলাম শৈশবে।
কিন্তু কিছু বলার আগেই হারিয়ে গেছিলো।

নিয়তি বড়োই অদ্ভূত।আবার সেই কৈশোর কে আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিলো।

মুনতাসির লাজুকের মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,”ভাবা শেষ হলে যেতে পারি আমরা?”

লাজুক আর কথা বাড়ায়না।কিন্তু মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরছে লাজুকের।

চার রাস্তার মোড়ে যখন ওরা চলে আসে তখন ই লাজুক হঠাৎ থেমে যায়।

মুনতাসির অবাক হয়ে লাজুকের দিকে তাকায়। দেখে লাজুক কেমন জানি আনমনা।মুখে সেই হাসি নেই যা আসার সময় ছিলো।

লাজুককে থমকে দাঁড়াতে দেখে মুনতাসির বলে,”কি ব্যাপার মিস লাজুক,দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন?চলুন!”

“স্যার আমার বাড়ি আর আপনার বাড়ির রাস্তা আলাদা।আমি ডান দিকের রাস্তায় যাবো।”

মুনতাসিরের মন খারাপ হয়ে গেলো লাজুকের কথা শুনে।
তবু মুখে হাসি এনে বললো,”ওহ আচ্ছা।চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”

লাজুকঃতার আর দরকার হবেনা স্যার।এলাকার সবাই আমাকে চিনে।কোনো সমস্যা হবেনা।অনেকদিন পর এসেছেন আপনি বরং আগে আপনার বাবা মায়ের সাথে দেখা করেন ।

আসছি আমি।

লাজুক মুনতাসিরের উত্তরের অপেক্ষা না করে হাঁটতে থাকে সামনের দিকে।

আর মুনতাসির পেছন থেকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে লাজুকের পথ পানে।যতোদূর চোখ যায় মুনতাসির তাকিয়ে থাকে।

যখন আর লাজুক কে দেখা যাচ্ছিলো না তখনি মুনতাসির ও পা বাড়ায় নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

লাজুক বাড়ির সামনে চলে আসে, কিন্তু গেইট দিয়ে ঢুকতে লাজুকের আনইজি ফিল হচ্ছিলো।

নাহার বেগম কি কাজে যেনো বেলকনিতে আসছিলেন।এসে দেখেন কেউ একজন গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে কিন্তু ভেতরে ঢুকছে না ।

নাহার বেগম খেয়াল করে দেখেন ওটা লাজুক, তখনি চিৎকার করে ডাকতে লাগলো লাজ এই লাজ!

লাজুক আর এক মূহুর্ত দেরী করে না দৌড়ে চলে যায় ভেতরে।

নাহার বেগম ও ছুটতে ছুটতে নিচে নেমে আসেন।মেয়েকে দেখা মাত্রই জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেন।

মেয়ে ও কাঁদে,মা ও কাঁদে।এতোদিনের জমানো সব ভালোবাসা যেনো পুষিয়ে দিচ্ছে কেঁদে।

নাহার বেগম লাজুক কে নিয়ে উপরে উঠে যান।
লাজুক নিজের ঘরে গিয়ে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছায়।আট বছর আগে যেমন রেখে গিয়েছিলো ঘর, তেমনি মনে হচ্ছে যেখানে যা রেখেছে ঠিক সেখানেই আছে।আর ঘর টা ও খুব পরিষ্কার করে রাখা।

লাজুক খুশি হয়ে যায় খুব।কারন লাজুক না থাকলেও নাহার বেগম ঠিক আগের মতোই লাজুকের ঘর গোছান।

অপরদিকে মুনতাসির বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে রেস্ট নিতে যায় নিজের রুমে।

মুনতাসিরের আজ কিছুই ভালো লাগছেনা।মনে হচ্ছে কি জানি নাই নাই।খালি খালি লাগছে বুকের বা’পাশ টা।

ওদিকে লাজুকের ও সেইম অবস্থা।
লাজুক ভাবছিলো অন্য কথা।মুনতাসির ই সেই নীলাভ যাকে লাজুক খুঁজতো।আজ জানতে পেরে লাজুকের খুব কষ্ট হচ্ছে।কারন লাজুকের এতো কাছে থাকা সত্ত্বেও লাজুক চিনতে পারলোনা!

লাজুকের ভাবনায় ছেদ পড়ে মোবাইলের শব্দে, স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে শুভাকাঙ্ক্ষীর নাম্বার।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ কি ব্যাপার মায়াকন্যা সারাদিনে একটা কল,টেক্সট করলেনা যে?

লাজুকঃ আসলে আমি ভুলে গেছিলাম আপনার কথা।সারাদিনে যা যা ঘটছে আমার সাথে কি আর বলবো।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ তাই! তা কি কি ঘটেছে একটু বলোতো শুনি।

লাজুক একে একে সব কিছু বললো সকাল থেকে এই পর্যন্ত যা যা হয়েছে।
অপরদিকে শুভাকাঙ্ক্ষী মনোযোগী শ্রোতার মতো সব শুনে যাচ্ছিলো।

লাজুক আরো বললো,”জানেন মুনতাসির ই সেই নীলচে চোখের নীলাভ।যাকে আমি স্কুল জীবনে ভালোবেসেছিলাম।যার উপর প্রথম আমি ক্রাশ খেয়েছিলাম।
যাকে ভালোবাসি বলার আগেই হারিয়ে গিয়েছিলো,তুলিন নামক অভিশাপ চলে এসেছিলো আমার জীবনে।
সেই নীলচে চোখের ছেলে আমার এতো কাছেই ছিলো অথচ আমি এতো দিন চিনতে পারিনি।

আজ যখন চিনতে পেরেছি তখন দেখি ওনার গার্লফ্রেন্ড ও আছে।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ আচ্ছা মায়াকন্যা তোমার মন কাকে চাই আমাকে বলো তুমি?আমি নিশ্চয় তোমাকে সাহায্য করবো সিদ্ধান্ত নিতে।

লাজুকঃ আসলে আমি কি করবো আমি জানিনা।এতোবছর পরেও যখন একটুও দূর্বলতা কমেনি আমার নীলাভের উপর থেকে তখন আমি বুঝে গেছি আমি নীলাভ কে ভালোবাসি। কিন্তু ওনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে।

আর আমার জন্য ওনার মনে কোনো প্রকার দূর্বলতা নাই।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ তুমি এতোটা নিশ্চিত হয়ে কী করে বলছো? দূর্বলতা থাকতে ও তো পারে।

লাজুকঃ না দূর্বলতা নাই।
এটা যেমন সত্যি তেমন এটাও সত্যি আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে।কারন আমার অসময়ের বন্ধু আপনি।
কিন্তু আমি আপনাকে কিছুতেই ভালোবাসতে পারবোনা।

কী করবো আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।

শুভাকাঙ্ক্ষী লাজুকের এমন কথা শুনে হুট করেই ফোন কেটে দেয়।

লাজুক ভাবে হয়তো মানুষ টা আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছে।

এভাবেই দুইটা দিন কেটে যায়।মুনতাসিরের কোনো খোঁজ নেই,আবার শুভাকাঙ্ক্ষীর ও কোনো খোঁজ নেই।

লাজুক যেনো খুব একা হয়ে পড়ে।

মেয়েকে এমন বিষন্ন দেখে নাহার বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করেন,”কি রে মা তোর কি হয়েছে? আমাকে খুলে বলতো এমন মন মরা হয়ে থাকিস কেন তুই?”

লাজুকঃউহু,আম্মু!কিচ্ছু হয়নি আমার।আমি শুধু সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা।

আম্মুঃ কী সিদ্ধান্ত দেখি আমাকে বলতো।

লাজুক সব খুলে বলে ওর মা কে।

সব কিছু শোনার পর লাজুকের মা লাজুক কে বলেন,”লাজ তোর জীবনের সিদ্ধান্ত আজ পর্যন্ত সব তুই নিয়েছিস।আমি কিচ্ছু বলিনি।আজ ও বলবোনা।শুধু বলবো যাই করিস না কেন ভেবে চিন্তে করিস।”

নাহার বেগম লাজুকের রুম থেকে চলে যাওয়ার পর পর ই লাজুকের ফোনে শুভাকাঙ্ক্ষীর কল আসে।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ কেমন আছো মায়াকন্যা?

লাজুকঃদুইদিন পর আমাকে মনে পড়লো? আচ্ছা আপনি কি রেগে আছেন আমার উপরে, নাকি আমার ওই দিনের কথায় কষ্ট পেয়েছেন?

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ আরেনা কষ্ট পাইনি।আমি ব্যস্ত ছিলাম।তাই কল করিনি।
তোমার সিদ্ধান নিয়ে ভাবছিলাম।
আচ্ছা মায়াকন্যা তুমি মুনতাসির মানে নীলাভ কে প্রথম কোথায় দেখেছিলে?

লাজুকঃআমাদের স্কুলের একটা প্রোগাম ছিলো,সেদিন আমি নীলাভ কে প্রথম দেখি।মুখটা ভালো করে দেখতে পারছিলাম না।চোখ দুটোতে আটকে ছিলাম।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ ওয়েল ডান। তুমি কী এখনো কনফিউজড নীলাভ কে নিয়ে?

লাজুকঃনা আমার কোনো কনফিউশান নাই।আমি আম্মু কে বলেছি সব টা।কিন্তু স্যারের তো গার্লফ্রেন্ড আছে।

কথা টা বলেই লাজুক মন খারাপ করে ফেললো ।

তখন শুভাকাঙ্ক্ষী লাজুক কে বলে,”যখন বাগেরহাট ছিলে তোমরা সেখানে তোমার স্যার তোমাকে কি জানি বলেছিলো?”

লাজুক তখন বলে, “স্যার বলেছিলো আমাকে তার করেই ছাড়বে।”

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ তাহলে এবার ভাবো তার যদি গার্লফ্রেন্ড ই থাকতো তাহলে সে কেন একথা বললো তোমাকে?

“আসলেই তো।স্যার কেন বলেছিলো একথা?”

আরো কিছু কথা বলে ওরা ফোন রাখে।
লাজুক ফোন রাখার সাথে সাথেই লাজুকের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে।

ম্যাসেজ টা দেখেই লাজুক চমকে যায়।

চলবে,,,,,,,,

অনুভুবে_তুমি পর্ব ৯

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৯
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

লাজুক অবাক হলেও মুখে তা প্রকাশ করেনা।
চুপ করে বসে বসে মুনতাসিরের যত্ন নেওয়া দেখে লাজুকের প্রতি।

ব্যান্ডেজ করা শেষে মুনতাসির লাজুক কে বলে,”কেয়ারলেস মেয়ে কোথাকার।নিজের যত্ন নিজে নিতে পারেনা।আসছে প্রোজেক্টের কাজ করতে কোথায় সিম্পল পোশাকে থাকবে।তা না করে শাড়ি,চুড়ি পরে আসছে।নূন্যতম সেন্স টুকু নেই মাথায়।”

মুনতাসির লাজুক কে এসব বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
লাজুক ভাবে এই লোক টা কেমন জানি।এই ভালো তো এই খারাপ।ওনার মন বোঝা প্রায় অসম্ভব।এই লোকের জন্য মুনার মতো মেয়েই ঠিক আছে।

লাজুকের ভাবনায় ছেদ পড়ে আবারো মুনতাসিরের চিৎকারে।

মুনতাসির লাজুক কে ডাকতে থাকে কিন্তু লাজুক ভাবনায় ছিলো।এ জন্য মুনতাসির চিৎকার করে।
লাজুক দ্রুত পায়ে হেঁটে মুনতাসিরের কাছে চলে যায়। নিজের কাজে মনযোগ দেই।
ওইদিন আর কোনো বকাবকি লাজুক শোনেনা।

রাতের আকাশে মেঘ জমেছে খুব।সেই সাথে সাথে কোনো একজনের মনেও মেঘ জমেছে।হয়তো মেঘের সাথে সাথে তার মনের একটা গভীর কানেকশন আছে।
যদি কানেকশন ই না থাকবে তাহলে মেঘের সাথে সাথে কেন মনে ও মেঘ জমবে?

হ্যা লাজুকের মন খারাপ।মেঘ টা লাজুকের মনেই জমেছে।
লাজুক বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলো এক মনে।কোনো দিকে কোনো খেয়াল ছিলোনা।

লাজুকের পাশে যে কেউ একজন দাঁড়িয়েছে অনেকক্ষন থেকে সেটা লাজুক খেয়াল ই করেনি।

লাজুকের পাশে এতোক্ষন মুনতাসির দাঁড়িয়ে ছিলো।মুনতাসির মুখে হালকা শব্দ করে লাজুক কে বোঝায় যে কেউ একজন তার পাশে দাঁড়িয়েছে।

লাজুক কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে চমকে উঠে। ফিরে তাকায় পাশে।দেখে মুনতাসির পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক সেই ভঙ্গীতে যে ভঙ্গীতে লাজুক এতোক্ষন দাঁড়িয়েছিলো।

লাজুক মুনতাসির কে দেখে ঘরে চলে যেতে নিলে মুনতাসির লাজুকের হাত ধরে ফেলে।
লাজুক এবার আর অবাক হয়না।কারন লাজুক জানে হয়তো এখনো বকা খেতে হবে বসের কাছে।

কিন্তু অবাক করা বিষয় মুনতাসির লাজুক কে কোনো প্রকার কটু কথা শোনায়না।
বরং লাজুক কে এটা বলে,”মিস লাজুক আমি দুঃখিত সকালের ব্যবহারের জন্য।আসলে মুনা কে কেউ কিছু বললে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।”

লাজুকঃঠিক আছে।কোনো সমস্যা নাই।ভালোবাসার মানুষ কে কেউ কিছু বললে সবার ই মাথা গরম হয়ে যায়।কিন্তু স্যার এক তরফা কোনো কথা শোনা উচিত না কখনোই।
অনেক রাত হয়েছে,আসি আমি।শুভ রাত্রী।

লাজুক আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ায় না।কারন লাজুকের খুব কান্না পাচ্ছিলো তখন।কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছিলো।
দ্রুত লাজুক তার ঘরে চলে আসে।

ঘরে আসতে না আসতেই লাজুকের ফোন বেজে ওঠে।কিন্তু লাজুক ইচ্ছে করে ফোন রিসভ করেনা।আর এদিকে ফোন টা ও বাজতেই থাকে।থামাথামির কোনো নাম গন্ধ নাই।

এক পর্যায়ে লাজুক বাধ্য হয়ে ফোন টা রিসিভ করে।কারন ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির লাজুকের মন ভালো করার ক্ষমতা আছে।

লাজুক ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশের ব্যক্তি টি বলে,”মায়াকন্যা তোমাকে আমি কখন থেকে ফোন দিচ্ছি ধরছোনা। মনের আকাশে কি খুব মেঘ জমেছে আজ?”

লাজুক কথা বলছেনা চুপ করে শুধু শুনছে।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ এই মায়াকন্যা কথা বলছোনা কেন তুমি আমার সাথে? প্লিজ বলো কাঁদছো কেন? বলোনা মন খারাপ কেন?

লাজুকঃআমি বুঝতেছিনা আমার সাথে এগুলো কেন হচ্ছে?
কখনো মনে হচ্ছে মুনতাসির চৌধুরী ই সেই নীলচে চোখের ছেলে।আজ থেকে দশ বছর আগে আমি যার প্রেমে পড়েছিলাম।
আবার কখনো মনে হচ্ছে,না এই মানুষ টা সে হতেই পারেনা।
কখনো আমার এতো বেশি কেয়ার করছে যে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।
আবার কখনো এমন বিহেভ করছে তাতে আমার সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ মায়াকন্যা এভাবে ভাবছো কেন? শান্ত হও। কেন কাঁদছো কি হয়েছে আমাকে বলো তুমি।সব ঠিক হয়ে যাবে।কাঁদছো কেন?

লাজুকঃকাঁদবো না তা কি করবো? আপনি আমাকে জানেন তো আমি কেমন? সকালে মুনা ছুরি ধরেছিলো আমার গলায়।অনেক কটু কথা শোনায় আমাকে।তখন আমি মুনাকে বলি আপনি একটা সাইকো,বেহায়া মেয়ে।
এটা বলাতেই মুনা রেগে গিয়ে আমার বাম হাতে ছুরি দিয়ে কেটে দেই।
তারপর যখন আমি রেডি হয়ে বাইরে এলাম তখন স্যার আমাকে খারাপ খারাপ কথা বলে।

দেয়ালে চেপে ধরে হাত।হাতে চুড়ি থাকায় সেগুলো ভেঙে হাতে ঢুকে যায়।
ব্যাথায় যেনো আমি মরেই যাচ্ছিলাম।
তবু কিছু বলিনি।যখন কাজের জায়গা গেলাম তখন নিজেই এসে ব্যান্ডেজ করে দিলো।
আবার কথাও শোনালো।
আমি আর ওনার কোম্পানি তে জব করবোনা।এখান থেকে ফিরেই রিজাইন দিবো।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ তোমার হাতের এখন কি অবস্থা?ওষুধ খেয়েছো? নিজের যত্ন নাও মায়াকন্যা।রাগ করে থেকোনা।তোমরা ফিরে যাচ্ছো কবে?

লাজুকঃ কাল সকালেই ফিরে যাবো।আর ফিরে গিয়েই রিজাইন দিবো।আমি চাইনা আর ওনার মুখোমুখি হতে।কষ্ট পাচ্ছি শুধু শুধু।

আচ্ছা মুনা কে দেখে কেন আমার এতো খারাপ লাগছে বলতে পারেন? অভিমান হচ্ছে খুব। কিন্তু কেন?

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ তুমি প্রেমে পড়েছো মুনতাসিরের মায়াকন্যা।

মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে কথাটা বললো অপর পাশের ব্যক্তিটি।

লাজুকঃ কখনোই না।ওনার মতো খচ্চর,খারাপ লোক কে ভালোবাসা যায়না।কিন্তু তবু আমার কষ্ট হচ্ছে বুকের বা’পাশ টা তে।
নিজেকে একা একা লাগছে খুব।

আচ্ছা শোনেন,আমি রাখি।ঘুমাতে হবে।সকালে আবার যেতে হবে নিজের ঠিকানায়।
শুভ রাত্রী।

এটা বলেই লাজুক কল কেটে দেয়।আর ভাবতে থাকে,”আচ্ছা এই শুভাকাঙ্ক্ষী,নীলাভ,আর মুনতাসির একজন না তো? আমার কখন কখন মন খারাপ থাকে সেগুলো শুভাকাঙ্ক্ষী কি করে জানে?সব কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে আমার।আবার নীলচে চোখের ছেলের পদবী চৌধুরী,বসের পদবী ও চৌধুরী।কি হচ্ছে এগুলো আমার সাথে।”

লাজুক আর ভাবতে পারেনা।ঘুমিয়ে যায় ওভাবেই।

সকালে ঘুম ভাঙে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে।
লাফিয়ে উঠে যায় লাজুক।চিৎকার করতে যাবে তখনি কেউ একজন মুখ টা চেপে ধরে হাত দিয়ে।

“আপনি কি সবসময় এমন চিৎকার করার জন্য প্রস্তুত থাকেন নাকি?”

লাজুক মুনতাসিরের হাতে কামড়ে দেয়।

হ্যা মুনতাসির এসেছে লাজুকের ঘরে।

মুনতাসির দ্রুত হাত সরিয়ে নেই লাজুকের মুখ থেকে।তারপর বলে,”কামড়ে দিলেন কেন আমাকে?”

লাজুকঃসরি স্যার।আপনি মুখ এতো জোরে চেপে ধরেছিলেন যে কথা বলতে পারছিলাম না।তাই কামড়ে দিয়েছি।

“এখন বলুন আপনি আমার রুমে কি করে আসলেন?”

“এসেছি দরজা ভেঙে।”
কথাটা বলার সময় মুনতাসিরের ঠোঁটে বাঁকা হাসি লেগে ছিলো।

লাজুক ঘাবড়ে যায় মুনতাসিরের কথা শুনে।

লাজুক কে ঘাবড়ে যেতে দেখে মুনতাসির বলে,”এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম।দেখলাম আপনার ঘরের দরজা খোলা।ভাবলাম আপনি উঠে পড়েছেন।তাই চলে এলাম।”

লাজুক আবার প্রশ্ন করে মুনতাসির কে,”কেন এসেছেন আমার ঘরে?”

মুনতাসির তখন লাজুকের অনেকটা কাছে এসে বলে,”আপনার সাথে প্রেম করতে এসেছি।”

লাজুক মুনতাসিরের কথা শুনে দূরে সরে যেতে চাইলেও পারেনা।কারন লাজুকের হাত ধরে আছে মুনতাসির।
লাজুক যেনো ভারী অবাক হয়।লাজুক ভাবে মানুষ টা কে কি ভুতে পেয়েছে যে এমন অদ্ভূত আচরণ করছে।

“এখান থেকে সরুন তো আপনি।আমি উঠবো।লেইট হয়ে যাবে নাহলে।আর আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছেই,আমার সাথে প্রেম করতে আসছেন কেন আবার?”

মুনতাসির দেখলো লাজুক কথা গুলো অনেকটা অভিমান নিয়েই বলেছে।তাই মুনতাসির আবার দুষ্টামী শুরু করলো।আর বললো,”ওই গার্লফ্রেন্ড টা একটা সাইকো।পুরোনো হয়ে গেছে।তাই এখন আমি আপনার প্রেমে পড়েছি।”

লাজুক ভ্রু কুঁচকে ফেলে মুনতাসিরের কথা শুনে।

তখন মুনতাসির লাজুককে আবার বলে,”আপনাকে আমি আমার করেই ছাড়বো।এই সকাল বেলা চা না খেয়ে বলছি।চা এর প্রমিস।আপনাকে আমি আমার করেই নিবো।”

এটা বলে মুনতাসির লাজুকের হাতে একটা খাম দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

লাজুক খামটা হাতে নিয়ে পড়ে দেখে, যে কন্ট্রাক্ট এর জন্য এলএন কোম্পানি এখানে এসেছিলো সেটা ওরা পেয়ে গেছে।

আর ওই খামের সাথে ছিলো লাজুকের এক সপ্তাহ ছুটির জন্য একটা চিঠি।

লাজুক যেনো এবার ভারী অবাক হয়।মুনতাসিরের লেখা চিঠি আর শুভাকাঙ্ক্ষীর দেওয়া চিঠির লেখা সেইম।

লাজুক কিছুটা আন্দাজ করতে পারে যে এই মুনতাসির ই কী তাহলে শুভাকাঙ্ক্ষী? কিন্তু তবু মনে একটা সন্দেহ থাকে।ভাবে স্যার কে একবার ফোন দিলে বুঝতে পারবো আসলে কি হচ্ছে।

লাজুক তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে আসে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে স্যার সকালে ওগুলো কি বললেন? আমাকে ওনার করেই ছাড়বেন মানে কি?
এটা ভেবেই লাজুক ফিক করে হেসে ফেলে।আর মুখে বলে স্যার সকালে কিসের প্রমিস করলেন?” চা এর”!উনি পারেন ও বটে।

মুনতাসির তখন আবারো লাজুকের রুমে আসে।এসে দেখে মেয়েটা হাসছে।

মুনতাসির লাজুকের সামনে গিয়ে হাতে তুড়ি বাজিয়ে লাজুকের মনোযোগ কাড়ে।
লাজুক চমকে বলে, “আ আ আপনি?”

মুনতাসিরঃ কখন এসে দাঁড়িয়েছি।আমার দিকে কোনো খেয়াল ই নেই।কি ভাবছেন এতো? আমাদের যেতে হবে তো।যাবেননা নাকি?

লাজুকঃআসলে স্যার,আপনি তো আমাকে এক সপ্তাহের ছুটি দিয়েছেন তাই ভাবছি আমি এই পথেই একবার বাড়িতে যাবো।
আম্মুর সাথে দেখা হয়না আট বছর।
ভাবছি এবার আম্মুর সাথে দেখা করে আসবো একবার।

মুনতাসিরঃওয়াও গ্রেট।চলুন তাহলে একসাথেই যাওয়া যাক।
আমি তো অলরেডি গাড়ি বুক করে নিয়েছি।
আপনার বাড়ি যেনো কোথায়?

লাজুক অস্পষ্ট ভাবে বলে,”গোপালগ্রাম,মাগুরা।”

মুনতাসির খুব খুশি হয়ে বলে, “ভেরি গুড।আমিও গোপালগ্রামে যাবো।তাহলে চলুন একসাথে যাওয়া যাক?”

লাজুক তখনি মুনতাসিরের উদ্দেশ্যে বলে,”শহুরে ছেলে আবার গ্রামে কেন যাবে হঠাৎ? ”

“এই হলো আপনাদের মেয়েদের সমস্যা।যেটা বলেছি সেটা শুনলেই হয়।তা না হাজার টা প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে বসে পড়েন।যাকগে ছাড়ুন।আজকে ঝগড়া করার মুড নাই।বাবা-মা এসেছে বিদেশ থেকে গতোকালের ফ্লাইটে।এজন্য গ্রামে যাচ্ছি।
আমাদের গ্রামের বাড়ি ও গোপালগ্রামে।”

লাজুক আর কথা বাড়ায়না।মুনতাসিরের সাথে বেরিয়ে পড়ে।

কিন্তু মুনতাসির আর লাজুক গাড়িতে ওঠার সময় কোথ থেকে জানি মুনা চলে আসে।

মুনা আসাতে লাজুক খুব বিরক্ত হয়।কিন্তু প্রকাশ করেনা।

মুনা মুনতাসির কে জড়িয়ে ধরে এসেই।আর বলে,”মিসড ইউ হ্যানি।”

“সেইম টু ইউ মুনা।”

“আমি তোমার সাথে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার বস আমাকে নিতে এসেছে।সে জন্য আর তোমার সাথে যাওয়া হলোনা।সাবধানে যেয়ো তোমরা।”

মুনা লাজুকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।
লাজুক যেনো খুব বেশি অবাক হয়।চমকে তাকায় মুনার দিকে।

লাজুক ভাবে কি হচ্ছে এগুলা আমার সাথে? সকালে স্যারের এমন রোমান্টিক কথাবার্তা,এখন আবার মুনা সাইকো টার হাসি।

মুনতাসির লাজুকের দিকে তুড়ি বাজিয়ে ডাকে,”ও হ্যালো ম্যাডাম,কি ভাবছেন?আমাদের যেতে হবে তো না কি?”

“আসলে স্যার আমি ভাবছি আপনাদের দুজনের আজ কি হলো? দুজনের এতো ভালো ব্যবহার আমার ঠিক হজম হচ্ছেনা।”

মুনতাসির কথাটা শোনামাত্রই লাজুকের কাছে চলে আসলো,আর বললো,,,,,,,

চলবে,,,,,,

অনুভবে_তুমি পর্ব ৮

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৮
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

সব ভালোবাসাতে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ কি অনিবার্য?মনে হয়।

জীবনে প্রথম লাজুক প্রেমে পড়েছিল নীলচে চোখের ছেলেটার উপর।
তারপর ঝড়ের গতিতে তুলিন প্রবেশ করে তার জীবনে।আর কেড়ে নেয় আটটা বছর।

এরপর আবার ভালো লেগেছিলো এই মুনতাসির চৌধুরীকে।কিন্ত এখন?তার সাথেই কেন এমনটা হতে হবে?

মেঠো পথ, চারিদিকে নতুন গজানো ধানের শিষ।দেখে মনে হচ্ছে এটা সোনার খনি।

সামনে মুনতাসির আর মুনা একে অপরের হাত ধরে হাঁটছে।

মেয়েটার নাম মাইসারা রহমান মুনা।সে মুনতাসিরের কলেজিয়েট ফ্রেন্ড।
তাছাড়াও তাদের একটা গভীর সম্পর্ক আছে।

সেটাকে কি বলে আখ্যায়িত করবে জানা নেই লাজুকের।

গ্রামে একটা বাংলো বাড়িতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাতে ফ্রেশ হয়ে লাজুক মুনতাসিরের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।কিন্ত দরজা খুলতেই একটা শীতল রক্তের স্রোত তার শরীর দিয়ে উপরে উঠে যায়।
মুনা নামক মেয়েটা মুনতাসিরের বুকে মাথা দিয়ে তার হৃদস্পন্দন অনুভব করছে।
লাজুকের রাগ হচ্ছে প্রচন্ড।মনে হচ্ছে মুনাকে যদি কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে পারতো!কিন্ত তার এতো রাগ হওয়ার কারণও সে খুঁজে পাচ্ছে না।উদ্ভট চিন্তাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে লাজুক দরজায় নক করে।
.
.
“এক্সকিউজ মি স্যার!আই নিড টু টেল ইউ সামথিং ভেরি ইমর্পট্যান্ট।”

“ইয়াহ মিস লাজুক।কাম ইন।”

মুনা তখনও ওর বুকে মাথা রেখে আছে।মানুষ এতো বেহায়া কিভাবে হতে পারে বুঝে উঠতে পারছে না লাজুক।

ঘোর কাটে মুনতাসিরের চিৎকারে।সে মুনাকে ঘর থেকে বের হতে বলায় সে যেতে চাইছিলো না।তাই রেগে গিয়ে মুনতাসির চিৎকার করতে বাধ্য হয়।মুনা বেরিয়ে যাওয়ার সময় লাজুক ওর মুখে প্রচন্ড ভয়ংকর একটা প্রতিশোধের স্পৃহা দেখতে পাই।
.
.
মুনতাসিরের সাথে কথা বলা শেষ হয় প্রায় ১২ টার দিকে।নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় লাজুক।
অনেক রাত হওয়াতে আম্মুকে আর ফোন করে না।

মুনার কথা ভাবতে ভাবতে শুভাকাঙ্খীর কথা প্রায় ভুলে যায় লাজুক।তখন ম্যাসেজ টোনটা বেজে ওঠে।
“আজ আকাশে অনেক মেঘ দেখেছো মায়াকন্যা।আর আমি এটাও জানি তোমার মনের আকাশেও অনেক মেঘ জমে আছে।ওগুলো বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে পড়তে চাইছে।কেঁদো না মায়াকন্যা।জীবনটা বড়ই ছলনাময়ী।”

কোনো উত্তর দেয়না মায়া।সত্যিই আজ তার মনের আকাশে অনেক মেঘ জমে আছে।আর দেরি করে না লাজুক।কাল প্রোজেক্ট প্লেসে ঠিক টাইমে যেতে হবে।

কোকিলের মিষ্টি মধুর কণ্ঠে ঘুমটা ভাঙে লাজুকের।আজ প্রকৃতিকে অপরূপ লাগছে তার কাছে।দ্রুত শাওয়ার নিয়ে রান্নাঘরে চা করতে যায় লাজুক।

পেছন থেকে জাপটে ধরে আছে লাজুককে।আর গলায় ধরা আছে একটা সদ্য কেনা ছুরি।নড়ারও উপায় নেই।
ক্রোধমিশ্রিত কণ্ঠে মুনা লাজুকের উদ্দেশ্যে বলে______
“যেই না হ্যান্ডসাম একটা ছেলে দেখো তার পিছনেই পড়তে হবে?”

“কার পেছনে পড়তে দেখলেন আপনি আমাকে?”

“মুনতাসিরের সাথে কি সম্পর্ক তোমার?”

“সে আমার বস ছাড়া কিছু না।”

“তাহলে কাল রাতে ওর ঘরে গেছিলে কেন?”

“আপনি তো বড্ড বেহায়া।আপনি আমার হাতে ফাইল দেখছিলেন।তবুও এই প্রশ্ন কেন?”

“তোমার মতো মেয়েকে অনেক ভালো করে চেনা আছে আমার।”

“আপনি সত্যিই একটা সাইকো।কালকের ধারনা আজ সত্যি হলো।”

মুনাকে কোনোমতে সরিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে লাজুক।বিরক্ত লাগছে তার এই পরিবেশটাকে।

সুন্দর একটা চকোলেট কালারের হাফ সিল্কের শাড়ি পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে লাজুক।তারপর ম্যাচিং কিছু অর্নামেন্টস পড়ে নেয়।
ঘর থেকে বের হওয়ার পথে উত্তরের সোফাতে দেখতে পায় চকোলেট কালারের একটা ফর্মাল টিশার্টে বসে আছে মুনতাসির।চমকে ওঠে লাজুক।সাথে একটু ভয় পায়।

“মিস লাজুক আমরা কোনো বিয়ে এটেন্ড করতে যাচ্ছি না।এতো সাজ গোজের কিছু দেখছি না আমি।”

“আসলে স্যার……..”

কথা শেষ করতে না দিয়ে মুনতাসির মুনাকে ডাকে।তার হাত দেখিয়ে লাজুককে বলে_____
“আপনি কোন সাহসে মুনাকে বেহায়া বলেছেন?আর ওর হাত কেটে দিলেন কেন?”

লাজুক প্রচন্ড অবাক হয়।বরং মুনা ক্রোধের বশে লাজুকের বাম হতাটা কেটে দেয়।

মুনা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মুনতাসির তাকে দেওয়ালের সাথে আটকে ধরে দাঁতে দাঁত খিচে বলে____
“লোকজনকে নিজের সৌন্দর্য দেখানোর দরকার নেই।একটা ফর্মাল কামিজ পড়ে বের হয়ে আসুন॥”
বলেই বেরিয়ে যায় মুনতাসির।
লাজুক এতক্ষন ব্যাথায় কোকড়াচ্ছিলো।

হাতে থাকা কাচের চুড়িগুলো টুপটুপ করে ভেঙে পড়ছে।লাজুকের হাতের কয়েকটা জায়গা কেটেও গেছে।লাজুক ওগুলোকে পাত্তা না দিয়ে একটা নীল রং এর কামিজ পড়ে বের হয়ে আসে।

নিচে আসতেই লাজুক মুখোমুখি হয় মুনা আর মুনতাসিরের।মুনা তার দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি হাসছে।
আর মুনতাসির ভাবছে নারীর আর কত রূপ?কিছুক্ষন আগে শাড়িতে লাগছিলো একটা পরিপূর্ণ নারী।আর এখন সেই চোখজোড়াতে নেই কাজলের আভা, ঠোঁটে নেই সেই লাল আভা,হাতে চুড়িও নেই।চুড়ির কথা মনে করে মুনতাসির লাজুকের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত থেকে এখনো রক্ত পড়ছে।মুনতাসির খেয়াল না করে গাড়িতে ওঠে।
কিছুক্ষন পরে লাজুকের ফোনে সেই চিরচেনা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসে।
“মায়াবতী নিজের যত্ন নিও।”

লাজুক উত্তর দেয়, “দেখা যাবে।”

অপর পাশের ব্যক্তিটা বোঝে তার মায়াবতীর অভিমান।
প্রোজেক্ট প্লেসে পৌঁছে মুনতাসির একটা ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এগিয়ে আসে লাজুকের দিকে।পরম যত্নে লাজুকের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

লাজুক একটু না অনেকখানি অবাক হয় মুনতাসিরের এরূপ কাজে।

চলবে……….

অনুভবে_তুমি পর্ব ৭

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৭
#সানজিদা_আক্তার_সীমা

অনুষ্ঠানের সকলের দৃষ্টি তখন লাজুকের দিকে।
লাজুক ইতস্ততবোধ করছে।

তার থেকেও বড় কথা মুনতাসির চৌধুরীর কথা লাজুককে খুব ভাবাচ্ছে।

লাজুকের অজান্তেই তার বস মাইকে তার নাম ঘোষনা করেন “যে লাজুক গান গাইবে”।

অথচ আজ ৮ বছরে লাজুক কখনো গান গায়নি।

ভাবনার টানাপোড়নের মধ্যে লাজুক একদম মিডিলে এসে একটা গান ধরে____

“সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে?
তোমরা যে বলো দিবসও রজনী, ভালোবাসা ভালোবাসা!
সখী ভালোবাসা কারে কয়?সে কি কেবলই যাতনাময়।
সেকি কেবলই চোখের জল, সেকি কেবলই দুঃখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কি সুখেরই তরে এমন দুঃখের ফাঁস।”

লাজুক মনোযোগ দিয়ে গানটা শেষ করলো।

সকলের কড়ো তালিতে আশেপাশে মুখরিত হয়ে উঠেছে। এভাবেই অনুষ্ঠানের পর্ব শেষ করে ওরা।

সবাই বাসার উদ্দেশ্যে বের হতে হতে প্রায় ১২টা বেজে যায়।এদিকে এখন গাড়ি পাওয়া মুশকিল।

লাজুক চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।তখন একটা গাড়ি এসে থামে তার সামনে ।
.
.
“মিস লাজুক গাড়িতে উঠুন, আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।”
শান্ত কন্ঠে কথাটা বলে মুনতাসির।

লাজুক ভয়ে ভয়ে গাড়িতে ওঠে।কেননা এতো রাতে যদি গাড়ি না পাওয়া যায়?

চারিদিকে নিস্তব্ধ পরিবেশ।দিনের এই ব্যস্ততাময় শহর রাতের বেলা কতটা নির্জন।দুজনেই চুপ করে আছে।লাজুক জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখছে।

লাজুকের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে মুনতাসির তার উদ্দেশ্যে বলে_____

“আগামীকাল আপনার অফিস ছুটি।পরশু আমরা একটা প্রোজেক্টের জন্য বাগেরহাট যাচ্ছি।আশা করি তৈরী থাকবেন।
আর হ্যাঁ আমাদের কোম্পানি থেকে কিন্ত এই প্রোজেক্টের উদ্দ্যেশে আপনি মেইন লিডার।”

“জ্বি স্যার।আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।”

“দ্যাটস গুড।”

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে লাজুক।

আজ শুভাকাঙ্খী কোনো ম্যাসেজ করলো না যে!

এটা ভাবতে ভাবতে ফোনে ম্যাসেজ টোন বাজে।
তাতে লেখা ছিলো”নীল রং এ তোমাকে অসম্ভব মানায়।নীলকে কষ্টের রং বলা উচিত না,নীলকে ভালোবাসার রং বলা উচিত।
আচ্ছা গান এতো অন্তর থেকে করো কেন?চাইলে তো গানকে ফ্যাশন করতে পারো।
আজকে রিপ্লাই আশা করবো না।কারন তুমি ক্লান্ত।ঘুমাতে যাও মায়াবতী।”

লাজুক সত্যিই খুব ক্লান্ত ছিলো।তার উপরে প্রোজেক্টের টেনশন।ও কী পারবে এতো বড় বড় দুটো কোম্পানির সামনে তাদের কোম্পানিকে প্রেজেন্ট করতে?
এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় লাজুক।

সকাল ৭টা বাজে।মুনতাসিরের কথামতো সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে লাজুক।তার বসের ইচ্ছা হয়েছে বাস জার্নি করার।
বাসে এটা লাজুকের প্রথম জার্নি।ছোট থাকতে গাড়িতেই যাতায়াত করতো।আর এখানে এসেছিলো ট্রেনে॥

.
.
“মিস লাজুক আপনি কি সবসময় সব কাজে এডভান্স?”
লাজুকের উদ্দ্যেশ্য প্রশ্নটা ছোড়ে মুনতাসির।

লাজুক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

“ইয়েস স্যার, আই মিন নো স্যার।”
কথাটা শেষ করেই মুনতাসিরের দিকে তাকিয়ে দেখে মুনতাসির তার বড় বড় চোখদুটো ছোট করে মুখ কুচকে তাকিয়ে আছে।বেশ লাগছে তাকে দেখতে।

“জীম করা বডি, মুখে খোচা খোচা দাড়ি, ঠোঁট দুটো একদম রেড ওয়াইনের মতো,এক চুমুকেই খাওয়া যাবে, চোখে তার নীচলে আভা।চোখ দুটো বড় বড় না হয়ে ছোট ছোট হলে ভালো লাগতো।সৃষ্টিকর্তা বোধহয় তাকে তৈরী করার সময় মাটি একটু কম ব্যবহার করেছে।”

অপন মনে ভাবছিলো লাজুক এগুলো।

মুনতাসিরের ধমক শুনে বাস্তবে ফেরে।কেননা আর ২ মিনিট পর বাস ছাড়বে।
জানালার সাইডে বসেছে লাজুক।পাশে কেউ একজন বসেছে, তাকে এক পলক দেখেই আত্মা শুকানোর উপক্রম।
মুনতাসির তার পাশে বসা।
অস্বস্তি লাগছিলো লাজুকের।
অথচ মুনতাসির কানে হেডফোন গুজে গান আর আশেপাশে সবকিছু উপভোগ করছে।

বাগেরহাট পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে।
ওরা একটা গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটছে।
মুনতাসির যে এতো আভিজাত্যের মাঝেও এতো সাধারন লাজুক তা কল্পনাও করেনি।দুজনেই চুপচাপ হাঁটছে, কেউ কোনো কথা বলছে না।

ঋতুরাজ বসন্তের দৌলতে এখানে একটু কোকিলের ডাক উপভোগ করা যাচ্ছে।না হলে শহরে এগুলো পৌঁছায়না।

কোকিল পাখিকে নকল করছে লাজুক।সে এমন ভাব করছে যেন সে একটা মজার খেলা খেলছে।

অতিরিক্ত খুশিতে লাজুক ভুলেই যায় পাশে তার বস দাঁড়ানো।ও শক্ত করে মুনতাসিরের হাত চেপে ধরে।মুনতাসির তবুও রিয়্যাক্ট করে না।

ভয়ে আর লজ্জায় মুখটা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে লাজুক।
দুরে থেকে সে দেখতে পারছে একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া মেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে, মুখে তার অজস্র হাসি।পাশে তাকাতেই লাজুক দেখে মুনতাসির মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

মেয়েটা কাছে আসতেই মুনতাসিরকে শক্ত করে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে।যেন সে ছুটে পালাবে।

এদিকে লাজুকের মনে হচ্ছে তার বুকের বাম পাশে কয়েক হাজার বোলতা তাদের বিষ ছেড়ে দিচ্ছে লাজুকের শরীরে।

চলবে……….

অনুভবে_তুমি পর্ব ৬

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৬
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

তুলিকা যখন লাজুক কে তুলিনের সাথে দেখা করতে বলে তখন লাজুক যা বলে-

লাজুকঃতুলিকা আমি অতীতে ফিরতে চাইনা।তুলিন আমার জীবনের অভিশাপ।

তাই আমি কোনো মতেই আর তুলিনের মুখোমুখি হতে চাইনা।

তুই তুলিন কে বলে দিস আমি তুলিন কে ক্ষমা করে দিয়েছি।
কারন প্রকৃতি কখনো প্রতিশোধ নিতে ভুলে যায় না।

আজ আমি আসি তুলিকা।আমি খুব ক্লান্ত।
তুই ভালো থাকিস।আল্লাহ হাফেজ।

লাজুক তুলিকার উত্তরের অপেক্ষা না করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ে বাসার উদ্দেশ্যে।

বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে,ডিনার সেরে মা কে কল করে।

লাজুকঃআসসালামু আলাইকুম আম্মু! কেমন আছে আমার আম্মুটা?

ওপাশেঃ ওলাইকুম আসসালাম।আমি ভালো আছি মা।তুই কেমন আছিস?

লাজুকঃআলহামদুলিল্লাহ।কি করো আম্মু?খেয়েছো?

ওপাশেঃসব করেছি।এখন শোন গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

তোর বাবা যে শিক্ষকের কারনে হার্ট অ্যাটাক করেছিলো, তাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে।

লাজুকঃ কি বলো এসব? কেন আম্মু? এসব কি করে হলো?

ওপাশেঃ শোন মা,পাপ বাপকে ও ছাড়েনা।যে মানুষ টা তোর থেকে তোর বাবা কে কেড়ে নিলো,মা-মেয়ের সম্পর্ক নষ্ট করলো!
তাকে কি আমি ছেড়ে দিবো?
কখনোই না।

তোর ঐ শিক্ষকের সকল প্রকার অন্যায় কাজের প্রমাণ জোগাড় করেছি আমি এই ক’বছরে।ঠিক সময়ে তা পুলিশের কাছে দিয়েছি।আজ আমি ভীষণ খুশি।

লাজুকঃথাক মা এসব বাদ দাও।অতীত মনে পড়লে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় আমার।

লাজুকের মা আর কথা বাড়ায়না।ফোন রেখে দেন আরো অল্প কিছু কথা বলে।

লাজুক ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।তার মধ্যে একটা ম্যাসেজ আসে লাজুকের ফোনে।

“মায়াকন্যা রাত জেগোনা,আর দুশ্চিন্তা করোনা।সব ঠিক হয়ে যাবে।” (শুভাকাঙ্ক্ষী)

লাজুক মুচকি হাসে।তারপর ঐ নাম্বারে ডায়াল করে।কিন্তু কল টা রিসিভ হয়না।
রিং হতে হতেই কেটে যায়।

কল কেটে যাওয়ার পরেই লাজুক ফিরতি ম্যাসেজ পাঠায়।

“এই যে শুভাকাঙ্ক্ষী,অনেকদিন তো হলো! এবার কি আমার সাথে একটু কথা বলা যাবে?ইচ্ছে হচ্ছে আপনার সাথে কথা বলতে খুব।”

তখনি লাজুকের ফোনের টোন বেজে ওঠে।কল আসে ঐ নাম্বার থেকে।

লাজুক কল টা রিসিভ করার পর পর ই শুনতে পায়,
“জো হুকুম মহারানী! আপনি চাইলেন আর আমি চলে এলাম।”

লাজুক হেসে ফেলে তার কথা শুনে।আর বলে,”আমি আবার আপনি হয়েছি কবে থেকে?আপনার মুখে আপনি টা ঠিক মানায় না।আমি আপনার তুমিতেই অভ্যস্ত।”

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ ঠিক আছে।আর আপনি বলবোনা।আমিতো মজা করছিলাম।

আরো কিছু টুকটাক কথা বলে ওরা ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন সকালে লাজুক অফিসে ঢোকে অফিস টাইমের ঠিক দশ মিনিট আগে।

লাজুক নিজের ডেস্কে গিয়ে বসতেই টেলিফোন টা বেজে ওঠে।

লাজুকের বস মুনতাসির লাজুক কে তার কেবিনে ডেকেছে।

লাজুক তো ভয়ে থাকে।কেন তাকে ডাকা হলো? বসের ডেস্কে যাওয়ার আগে লাজুক একবার সময় টা দেখে নেয়।ভাবে যে ঠিক সময়েই এসেছি।মানে বকা খাবোনা।

কিন্তু বসের কেবিনে গিয়ে লাজুক ভীষণ অবাক হয় বসের কথা শুনে।

মুনতাসিরঃ আপনার নাম যেনো কি? ও হ্যা মনে পড়েছে।লাজুক রহমান।
এখন কয়টা বাজে?

মুনতাসিরের কথা শুনে লাজুক বোকাবনে চলে যায়।

আর বলে,”কেনো স্যার আপনি জানেন না এখন কয়টা বাজে? আপনার হাতঘড়ির টাইম ঠিক নেই?”

মুনতাসির লাজুকের এমন কথা শুনে খুব রেগে যায়।আর বলে,”স্টুপিড”।

“আপনার অফিস টাইম কখন? এতো আগে কেন এসেছেন?
তার উপর আবার ফাঁকা অফিস।কোনো কমনসেন্স নেই আপনার?”

“কাল থেকে জাস্ট টাইমে আসবেন।এক মিনিট আগে বা এক সেকেন্ড পরে আসলে খুব খারাপ হবে।গেট আউট মাই রুম।”

লাজুকের অবাক হওয়া চরম সীমায় পৌঁছে গেলো।

লাজুক মুনতাসিরের রুম থেকে বেরিয়ে চিন্তা করতে লাগে,এতো সুন্দর,স্মার্ট একটা ছেলের ব্যবহার কি না এতো জঘন্য?

আর তার উপর কি না আমি ক্রাশ খাচ্ছিলাম! আল্লাহ তুমি মাটি ফাঁকা করো আমি মাটির মধ্যে ঢুকে যাই।

লাজুক আর দাঁড়িয়ে না থেকে কাজে মন দেয়।

অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে শুভাকাঙ্ক্ষী ফোন করে লাজুক কে।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ কী ব্যাপার ম্যাডাম,আজ অফিস কেমন কাটলো?

লাজুকঃ আর বলবেন না।অফিসের বস একটা খচ্চর,খাটাস।এতো সুন্দর,স্মার্ট,পুরো নায়কের মতো দেখতে।কোথায় মিষ্টি করে কথা বলবে।তা না করে বকাবকি করলো আমাকে।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ তা কি বকাবকি করলো একটু বলোতো!

লাজুক সকালের ঘটনা সব খুলে বলে।

তখন শুভাকাঙ্ক্ষী বলে,”আরে পাগলি এটাকে বকা দেওয়া বলেনা।এটাকে কেয়ার বলে।দেখো অফিস তো ফাঁকা ছিলো।তোমার তো কোনো ক্ষতি ও হতে পারতো তাইনা?”

লাজুক তখন বলে,”এটা কোন ধরনের কেয়ার?আচ্ছা বাদ দেন।মুড নষ্ট না করি।বাসায় চলে আসছি।এখন রাখছি।আল্লাহ হাফেজ।”

ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে,রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে লাজুক।
কারন আজ তার মুড ভালো নেই।

পরেরদিন সকালে জাস্ট টাইমে অফিসে যায়।

সেদিন আর মুনতাসির বকাবকি করেনা লাজুক কে।

লাজুক খুব অবাক হয়।কারন মুনতাসির আজ বকাবকির বদলে লাজুক কে ইনভাইট করে তার জন্মদিনে।

হ্যা,কাল মুনতাসিরের জন্মদিন।

তাই ইনভাইট পায় অফিসের সবাই।

পরেরদিন সন্ধ্যায় লাজুজ হাফ সিল্কের একটা ব্লু শাড়ি পরে,সাথে ম্যাচিং গহনা পরে চলে যায় পার্টির উদ্দেশ্যে।

পার্টিতে গিয়ে লাজুক খুব অবাক হয়ে যায়।

কারন পার্টির সমস্ত ডেকোরেশন,খাবারের আইটেম সব কিছু লাজুকের পছন্দের।

লাজুক ভাবে এখানে সব কিছু আমার পছন্দ মতো কেন? তারপর আবার ভাবে হয়তো স্যারের ও এসব পছন্দ।
দুইটা মানুষের পছন্দ মিলে যেতেই পারে।এটা অস্বাভাবিক কিছুনা।

মুনতাসির সবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলে।

তারপর শুরু হয় কেক কাটা।

মুনতাসিরের বাবা-মা কেউই মুনতাসিরের সাথে থাকেনা।ওনারা দুজনই বর্তমানে বিদেশে আছেন।

কেক কাটা পর্ব শেষে মুনতাসির সবার উদ্দেশ্যে বলে,”আজ আমার জন্মদিন।আমার বাবা-মা দুজনেই অনেক দূরে আছেন।এখানে আমার অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন।আর আছেন আমার কলিগ।

আমি যদি আজ আপনাদের মধ্যে কারো কাছে কিছু চাই তাহলে কী পাবো?”

তখন সবাই একসাথে মুনতাসির কে বলে,” হ্যা অবশ্যই”।

মুনতাসির তখন লাজুকের দিকে তাকিয়ে বলে,”মিস লাজুক আমি………

চলবে,

অনুভবে _তুমি পর্ব ৫

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৫
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

এই ৮ বছরে লাজুক গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ফেলেছে।
আর পিছু ফিরে তাকাইনি।
আর সেই চিঠিওয়ালা মানুষ টার প্রতি লাজুকের একটু দূর্বলতা শুরু হয়েছে।

চিঠিপত্র রেখে লাজুক উঠে পড়ে।খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমাতে আসে।তখন ই ফোনে ম্যাসেজ আসে একটা।

লাজুকের চাকরী টা হয়ে গেছে।একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী তে লাজুকের চাকরী হয়েছে।
এল এন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এ লাজুকের জয়েনিং কাল।

লাজুক ভীষণ খুশি হয়ে যায়।ফোনটা হাতে নিয়ে ৮ বছর পর সেই পুরোনো নাম্বারে ডায়াল করে।

রিং হতে না হতেই ফোন টা রিসিভ হয়।মনে হয় অপর পাশের ব্যক্তিটি চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করে ছিলো এই ফোন কলের।

বেশ কিছুক্ষণ দু’পাশেই নিরবতা।
নিরবতা কাটিয়ে লাজুক ই প্রথম কথা বলে।

লাজুকঃআসসালামু আলাইকুম!

ওপাশেঃনিরবতা,কোনো উত্তর নেই শুধু ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

লাজুকঃ আম্মু! মা! ও মা! আম্মু গো! (লাজুক কাঁদতে কাঁদতে বলে) একটাবার কথা বলো মা আমার সাথে।
আর কতো শাস্তি দিবে মা তীমার মেয়েকে? আমি যে এতিম মা।তুমিও মুখ ফিরিয়ে আছো আমার থেকে।
আমি যে অনাথ হয়ে গেলাম।মা ও মা! আমার সোনা মা! একটু কথা বলো. মা!

ওপাশেঃ কাঁদতে কাঁদতে বললো, এক থাপ্পড়ে তোমার গাল লাল করে দেবো।অনেক বড় হয়ে গেছো তুমি তাইনা? আমি না হয় অভিমান করে ছিলাম।তাই কথা বলিনি এতোগুলো দিন।হ্যা রে লাজ তুই কেমনে পারলি? এতোদিনে একবার কল দিয়ে দেখতি আমাকে,আমি অভিমান করে থাকতে পারতাম?

লাজুকঃ নাও হয়েছে হয়েছে,আর কাঁদতে হবেনা।ঈশ,বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে। ভালোবাসি মা,খুব ভালোবাসি তোমাকে।আমাকে ক্ষমা করে দাও আম্মু।

ওপাশেঃ হু ঠিক আছে,বাড়িতে চলে আয় এবার।আমার একা ভালো লাগেনা যে আর।

লাজুকঃ না আম্মু।এখনি আসতে পারবোনা চাইলেও।আমার নতুন জব হয়েছে।কাল থেকে জয়েনিং।
খুব ভালো কোম্পানী।স্যালারি ও অনেক।তাই ছুটি পেলেই আসবো আম্মু।

ওপাশেঃ আচ্ছা যা ভালো বুঝিস কর।

লাজুক তার মা এর সাথে কথা বলার মাঝেই ডোর বেলটা বেজে ওঠে।
লাজুক ভাবে এতো রাতে আবার কে এলো?

লাজুক ফোনের লাইন কেটে যায় দরজা খুলতে।দরজা খুলে দেখে কেউ নেই।কিন্তু দরজার ওপাশে ফুলের তোড়া আর একটা চিরকুট রয়েছে।

লাজুক কিছু না ভেবে ওগুলো রুমে নিয়ে চলে আসে।
চিরকুট খুলে দেখে তাতে লেখা অভিনন্দন মায়াকন্যা।

লাজুকের বুঝতে অসুবিধা হয়না চিরকুট টা কে পাঠিয়েছে।
লাজুক মুচকি হেসে চিরকুট রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরেরদিন সকাল বেলা একটা কালো পাড়ের জামদানী শাড়ি পরে অফিসে যায় লাজুক।চুলগুলো হাত খোপা করা,চোখে হালকা কাজল।খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো লাজুক কে।

অফিসের এক জোড়া চোখ দেখতে থাকে লাজুক কে।
লাজুকের কেমন জানি ফিল হত।মনে হয় ওর আপন কেউ আছে এখানে।কিন্তু লাজুক এসবে পাত্তা দেইনা।ভাবে মনের ভুল।

অফিসের প্রথম দিনেই নতুন এমডি আসে।
আর তাকে ফুল দিয়ে বরণ করার দায় ভার পড়ে লাজুকের উপর।

লাজুক ফুল দয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সময় থমকে যায় এমডি সাহেব কে দেখে।
কারন এমডি সাহেবের চোখ দুটো নীলচে।একদম লাজুকের স্বপ্নের নায়কের মতো।যার প্রতি লাজুক দূর্বল।

কিন্তু যাকে দেখে লাজুক থমকে যায় তার নাম মুনতাসির চৌধুরী।

লাজুক নিজেকে সামলে নেই।বস কে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানাই।

ঐ দিন টা ভালোই কাটে অফিসে।লাজুক বাসায় ফিরে শাওয়ার নিতে যায়।
শাওয়ার নিয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ১৫ টা ম্যাসেজ।৫ টা কল।

লাজুক ম্যাসেজ চেক না করে আগে কল ব্যাক করে।কারন কল টা লাজুক এর মা এর ছিলো।

আমিঃআম্মু বলো,আমি শাওয়ারে ছিলাম।

আম্মুঃ অফিস কেমন কাটলো? খেয়েছিস কিছু? কেমন আছিস? অফিসের বস ভালো নাকি অনেক রাগী?

আমিঃবাপ্রে বাপ!এতো প্রশ্ন? একটাই উত্তর সব ভালো।খাইনি,এখন খাবো।তুমি খেয়ে নিও মা।এখন রাখছি আমি ক্লান্ত খুব।

আম্মুঃ ঠিক আছে সোনা মা।

লাজুক পরের দিন ঠিক সময়ে অফিসে চলে যায়।অফিস থেকে ফেরার পথে লাজুকের তুলিকার সাথে দেখা হয়ে যায়।

তুলিকা লাজুক কে দেখেই কেঁদে ফেলে।লাজুক আহম্মক হয়ে যায়।ভাবছে তুলিকা কেন কাঁদছে?

লাজুক আর তুলিকা এখন মুখোমুখী একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।
নিরবতা ভেঙে লাজুক কে প্রশ্ন করে তুলিকা।কেমন আছিস লাজুক?

লাজুক হেসে বলে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমি।তুই কেমন আছিস?

তুলিকাঃআমরা ভালো নেই রে লাজুক।

লাজুক অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, আমরা বলতে? ঠিক বুঝলাম না।

তুলিকাঃতুলিন ভাই ভালো নাই।তবে আমরা কিভাবে ভালো থাকি বল?

জানিস লাজুক তোর সাথে ব্রেকাপের পর প্রথম ক’দিন ভাইয়া খুব ভালো ছিলো।
সুন্দরী এক মেয়ের প্রেমে পড়ে।কিন্তু মেয়ে টা নেশা করতো।তাই ভাইয়া ও নেশা করা শুরু করে।

ইন্টারমিডিয়েট এ ফেইল করে এক সাব্জেক্টে।পড়াশোনা টা ওখানেই ছেড়ে দেয়।

রেস্টুরেন্টে চাকরী নেই,ওই মেয়েকে বিয়ে ও করে।কিন্তু ভাবী ভাইকে ঠকিয়ে অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যায়।

ভাই তখন থেকে তোকে খুঁজে বেড়ায়।ভাই মনে করে তোর সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছে ভাই।

ওই বউ চলে যাওয়ার পর ভাই আবার বিয়ে করে।এই বউ টা ও চলে যায় ভাইয়ের অত্যাচারের কারনে।

এখন ভাই ভবোঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়ায়,আর তোকে খুঁজে।তোর কাছে ক্ষমা চাইবে বলে।

তুই কি একটু দেখা করবি লাজুক?

লাজুক তখন বলে…..

চলবে,

অনুভবে _তুমি পর্ব ৪

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৪
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

সিনিয়র শিক্ষক লাজুক কে তার চেম্বারে ডাকেন।
এতোটুকুই তো ছিলো নাকি?

চলুন জানা যাক সেদিন স্যার কি বলেছিলেন লাজুক কে।

তিনি লাজুক কে তার চেম্বারে ডাকেন।সামনে বসিয়ে লাজুক কে প্রশ্ন করেন,”তোমার কি সমস্যা? এমন মন খারাপ করে থাকো কেন? আমাকে সব খুলে বলো।”

লাজুক এক মিনিট মতো চুপ করে থাকে।

স্যার আবারো প্রশ্ন করে,বলবা আমাকে?

যদি তুমি বলতে চাও তাহলে বলতে পারো।

লাজুক তখন কাঁদতে থাকে।স্যার ও কিছু টা সময় দেই লাজুক কে।

লাজুক তখনো ভুলতে পারেনি তুলিন কে।স্যার কে ভরসা করে লাজুক সব ঘটনা খুলে বলে।

প্রথম থেকে একদম শেষ পর্যন্ত, যা যা লাজুকের জীবনে ঘটেছে।

স্যার তখন লাজুক কে বোঝায়।অনেক যুক্তি দেখায়।

লাজুক কে বলে তুলিন কে ভুলে যেতে।তাহল লাজুকের মা আবার আগের মতো ভালোবাসবে লাজুক কে।

লাজুক কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারেনা।স্যার এর থেকে সময় চেয়ে নেই।বেরিয়ে আসে স্যারের চেম্বার থেকে।

সেরাতে লাজুকের ঘুম হয়না।স্যারের কথা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাই।

লাজুক তখন আপন মনেই বলে ওঠে,
‌‌‌ আমার হাতে এখন দুটো রাস্তা।একটা রাস্তা আমাকে আমার স্বপ্ন পূরনের জন্য হাতছানি দিচ্ছে।
আর অপর রাস্তা আমাকে বলছে আমার স্বপ্নগুলোকে স্থগিত রেখে ভালোবাসা কে বছে নিতে।
কোনটা বেছে নেবো আমি? এই শহরে কী আদৌও ভালোবাসা নামক বস্তু আছে? নাকি সবকিছুই মরিচীকা?

এসব ভাবতে ভাবতে লাজুকের ফোনের টোন বেজে উঠে।

লাজুকঃআসসালামু আলাইকুম!কে বলছেন?

অপরপাশেঃওলাইকুম আসসালাম।আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী লাজুক।তুমি কল কাটবেনা।জাস্ট একটা মিনিট কথা বলবো আমি তোমার সাথে।এই এক মিনিট তুমি চুপ করে আমার কথা শুনবে শুধু।

লাজুকঃঠিক আছে আমি কল কাটছিনা।বলেন আপনি কি বলতে চান।

অপরপাশেঃ লাজুক তুমি আমাকে চিনবেনা হয়তো বা।কিন্তু আমি তোমাকে চিনি।খুব কাছ থেকে তোমাকে আমি চিনি।এতো ভেবে লাভ নেই লাজুক।তোমার মন যেটা বলে তুমি তাই করো।আমি জানি তুমি চিন্তিত।
এটা বলেই অপরপাশের লোক টা ফোন কেটে দেই।

আর অন্যদিকে লাজুক হ্যালো হ্যালো করতে থাকে কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনা।কল ব্যাক করলে দেখে নাম্বার অফ।

তখন ই লাজুক তুলিন কে কল করে।আর বলে যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তুমি আর যোগাযোগ করোনা আমার সাথে।ভালো থেকো।

সেদিন ই আমি ভালোবাসা ছেড়ে আমার ক্যারিয়ার কে বেছে নিয়েছিলাম।
তারপর থেকে অনেক গুলো বছর আর ডায়েরী লিখিনি। কেটে গেছে আটটা বছর।
এতোগুলো বছরে মা ও মুখ ফিরিয়ে আছে আমার থেকে। তাই বাড়ি যাওয়া হয়না।

ও হ্যা,এই ক’বছরে ঘটেছিলো অদ্ভুত এক কাণ্ড।

সেদিনের পর থেকে,মানে যেদিন আমি তুলিনের সাথে সবরকম সম্পর্ক শেষ করি।তারপর থেকে প্রতি মাসে আমার নামে একটা করে চিঠি আসতো।

চিঠিতে একটাই নাম থাকতো শুভাকাঙ্ক্ষী।

কিন্তু কে এই শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষ টা? লাজুকের মন খারাপের দিনে এই লোক টা লাজুক কে ফোন করতো।পরিচয় জানতে চাইলে বলতো শুভাকাঙ্ক্ষী। তাকে লাজুক দেখেনি কখনো।কে এই মানুষ টা?

লাজুক এসব ভাবতে ভাবতেই একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে ডায়েরী বন্ধ করে দেয়।

খুঁজতে থাকে ওই চিঠিগুলো।
প্রথম চিঠি থেকেই লাজুক পড়তে থাকে।

মায়াবিনী,
প্রিয়তম মায়াবী চোখের মেয়ে,কেমন আছো তুমি? যদিও আমি জানি তুমি ভালো নেই।তুমি অনেক ডিপ্রেশনে আছো।কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।আল্লাহ তোমার সকল ডিপ্রেশন দূর করে দিবেন।আমিন।
ভাবছো তো আমি কে? আমি তোমার ছায়া।জানো মায়াকণ্যা,যখন তুমি বাচ্চা মেয়ে ছিলে আমি তখন প্রথম তোমার প্রেমে পড়ি।
তোমার ঐ মায়াবী চোখ,কোঁকড়ানো চুল,তোমার গানের সুর,তোমার বাঁকা দাঁতের হাসি সব মিলিয়ে আমার মন কেড়ে নাও তুমি।
আর যেটা ভাল্লাগে তা হলো তোমার লজ্জা পাওয়া।
কিন্তু আমি খুব দেরী করে ফেলি, তোমাকে আমার মনের কথা জানাতে।আমি তোমাকে ভালোবাসতাম। আজ ও ভালোবাসি।ভীষণ রকম।খুব করে চাই আমি তোমাকে।
সেদিন ই আমি তোমার সামনে আসবো যেদিন তোমার মনে আমার জন্য অনূভুতির সৃষ্টি হবে।যেদিন তুমি বলবে #অনুভবে_তুমি আছো।সেদিন ই আমাকে দেখতে পাবে।
সবসময় আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।আর ভুলেও ভুল কোনো পদক্ষেপ নেবেনা।
আমি সবসময় তোমার আশেপাশে থাকি।যত্ন নিও নিজের।

ইতি
তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী

লাজুকের অদ্ভূত লাগে চিঠিটা পড়ে। ভাবিতে থাকে কে এই লোকটা।

মাথা না ঘামিয়ে লাজুক পড়াশোনায় মন দেই।এরপর থেকে প্রতিমাসে লাজুকের নামে চিঠি আসতো।আর লাজুক চিঠিগুলো পড়তো।সব চিঠিই অনুপ্রেরণামূলক।

অপরদিকে লাজুক ওই নীলচে চোখের ছেলেটা কে মিস করতে থাকে।কারন লাজুকের দূর্বলতা,প্রথম ভালোলাগা ছিলো সেই নীলচে চোখ দুটো।
লাজুক তার মুখ দেখেনি।শুধু চোখ দুটোই দেখেছিলো।
নিজের মনের ভালোলাগার কথা প্রকাশ করার আগেই তো তুলিনের সাথে এতোসব ঘটে গেলো।

আচ্ছা,লাজুক কি আর কখনো নীলচে চোখের ছেলেটির দেখা পাবেনা???
নীলাভ কোথায় হারিয়ে গেলো? সে কি আর ফিরবেনা??

আর কে ই বা এই শুভাকাঙ্ক্ষী? তাহলে কি লাজুকের গল্প টা নতুন মোড় নিচ্ছে? লাজুক কি হারিয়ে ফেলবে তার প্রথম ভালো লাগাকে?

কতো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে লাজুকের।এরপর কি হতে চলেছে??
,
,
চলবে

অনুভবে _তুমি পর্ব ৩

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৩
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

তুলিনের এসব পাগলামী,ইমোশোনালী ব্ল্যাকমেইল দেখে লাজুক ও তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে।

সেদিন প্রথম লাজুক তুলিন কে নিজমুখে ভালবাসার কথা বলেছিলো ভয়ে।কারন সেদিন তুলিন স্কুলের ছাঁদ থেকে লাফ দিতে গেছিলো।

লজ্জাবতী লাজুক তার লজ্জা ভুলে জাপ্টে ধরে তুলিন কে।তখন টিফিন টাইম হওয়ায় কোনো শিক্ষকের চোখে পড়েনি ওরা।
তবে দেখেছিলো অনেক শিক্ষার্থীরা।আর দেখেছিলো সেই নীলচে চোখের ছেলেটা।
,
,
কে এই নীলচে চোখের ছেলে??কি নাম তার?

আসুন জেনে নেই কে এই ছেলে!

নীলচে চোখের ছেলে,যার নাম নীলাভ চৌধুরী।নীলাভ এইচএসসি ক্যান্ডিডেট সে বার।যখন লাজুক সবে ক্লাস এইট এর ছাত্রী।

তো সেদিন যখন লাজুক তুলিন কে জড়িয়ে ধরে তখন এই দৃশ্য নীলাভ দূরে দাঁড়িয়ে দেখে ফেলে।কারন নীলাভ তার পরীক্ষা শেষ করে লাজুক কে প্রোপোজ করার জন্য লাজুকের স্কুলে আসে।

আর এসেই এটা দেখে ফেলে।সেদিনের পর থেকে নীলাভ কে আর কোথাও কেউ দেখতে পাইনি।

আর লাজুক তো চিনতোই না নীলাভ কে।শুধু নীলাভের চোখ দুটো চিনতো।
,
ওই ঘটনার পর থেকে শুরু হয় লাজুক আর তুলিনের প্রেম।কিশোর বয়সের প্রেম।যে প্রেমে আছে শুধু পাগলামী,মাতাল করা পাগলামী।
উত্তাল প্রেম যাকে বলে।

দুজন দুজন কে প্রচন্ড রকম ভালবাসতো।ওদের ভালোবাসায় ছিলোনা কোনো অপবিত্রতা।ছিলোনা কোনো অশালীন চাওয়া।

যেহেতু দুজনেই ক্লাসমেইট ছিলো,আর পড়তো ক্লাস এইটে তাই দুজনার ই সমাপনী পরীক্ষা ছিলো।
পরীক্ষা ও হলো আর দুজনে ভালো রেজাল্ট ও করলো।

নবম শ্রেণিতে উঠে দুজনেই সাইন্স নিলো।ভালোই চলছিলো ওদের দিনগুলো।
উত্তাল প্রেম,পাগলামী,ভালোবাসা খুনশুটি,সব মিলিয়ে ওরা ছিলো বেস্ট কাপল।

কিন্তু ওই যে কথায় আছেনা, বেশি ভালোবাসা বেশি দিন যায়না।কারো না কারো নজর লাগে।

তেমনি লাজুকের ভালোবাসায় ও নজর পড়ে লাজুকের বেস্ট ফ্রেন্ড ইফরার।

তুলিন ও হঠাৎ করে বদলাতে শুরু করে।আগের মতো লাজুকের কেয়ার করেনা।শাসন করেনা।ভালোওবাসেনা।

লাজুক খেয়াল করে এটা যে তুলিন আর আগের মতো নেই।
লাজুক সহ্য করতে না পেরে তুলিন কে প্রশ্ন করে কেন এমন ইগ্নোর করছে সে?

জবাবে তুলিন বলে,”দেখো লাজুক তোমার প্রতি আমার যে ফিলিংস টা ছিলো সেটা এখন আর নেই।
তোমাকে আমার আর ভালো লাগেনা।
আমি তোমার সুন্দরী বান্ধবী ইফরাকে ভালোবাসি।আর ইফরা ও আমাকে ভালোবাসে।তোমার থেকেও বেশি”।

এগুলো শোনার পর লাজুক কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে আসে।
এক প্রকার গুটিয়ে নেই নিজেকে।

অভিমানী মন নিয়ে বসে থাকে।কারো সাথে আর কথা বলেনা।হাসেনা।ইফরা আর তুলিকার সাথে এক বেঞ্চে বসেওনা।
এভাবেই দশম শ্রেণীতে উঠে যায় ওরা।

এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ লাজুকের ফোনের টোন বেজে উঠে।
লাজুক ডায়েরী রেখে ফোন হাতে নিতেই দেখে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেছে অনেকক্ষন আগেই। কিন্তু লাজুক বুঝতে পারেনি।

স্মৃতির পাতা গুলো বুঝি এমন ই।বর্তমান ভুলিয়ে দেই।

তাড়াতাড়ি করে লাজুক উঠে পড়ে ডায়েরী রেখে।নাস্তা বানিয়ে বেরিয়ে পড়ে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে।

লাজুক এর প্রিপারেশন ভালো ছিলো।তাই ইন্টারভিউ ও খুব ভালো দেয়।তাই কোনো টেনশন থাকেনা আর।

লাজুক অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে এসে আবার ডায়েরী নিয়ে বসে।কারন লাজুক আবারো একবার অতীতে ফিরতে চাই।

অতীত লাজুক কে শক্তি দেয়।অনুপ্রেরণা যোগায়।তাই লাজুক অতীতে ফিরতে চাই।

ডায়েরী খুলে লাজুক আবারো পড়তে শুরু করে।পড়তে পড়তে ভাবনার জগতে ডুবে যায় আবার।
এইতো যেনো সেদিনের কথা,সব চোখের সামনে ভাসছে।

দশম শ্রেণী তে ওঠার পর তুলিন আবার লাজুকের কাছে ফিরতে চাই।
আবারো পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাই।

লাজুক সহজ সরল মেয়ে।আবার তুলিনের প্রতি তার দূর্বলতা ও কম না।তাই ক্ষমা করে দেই লাজুক তুলিন কে।

আবারো চলতে থাকে ওদের প্রেম।চুটিয়ে প্রেম করতে থাকে ওরা।

একদিন স্কুল ছুটি শেষে তুলিন আর লাজুক ক্লাস থেকে একসাথে বের হয়।সিঁড়ি ঘরে পা রাখতেই হঠাৎ করে তুলিন লাজুক কে জড়িয়ে ধরে।লাজুকের হার্টবিট বেড়ে যায়।
লাজুক ও দুহাতে জড়িয়ে নেই তুলিন কে।

আর এটা দেখে ফেলে ওদের ই এক শিক্ষক।তখনি দুজন কে বেত দিয়ে খুব মারে।আর গার্ডিয়ান কল করে।

তখন লাজুকের টেস্ট পরীক্ষা মাত্র তিনদিন পর।তার মধ্যেই এমন একটা কাণ্ড বাঁধিয়ে বসে ওরা স্কুলে।

বিচার বসায় ওদের নিয়ে স্কুল কমিটি।সব শিক্ষক-শিক্ষিকা যা নয় তাই বলে অপমান করে লাজুকের বাবা-মা কে।কিন্তু তুলিন কে কিছুই বলেনা।তুলিনের বাবা-মা কে ও কিছু বলেনা।
কারন ওগুলো ছিলো ওই শিক্ষকের প্ল্যান।

তুলিন কে কাজে লাগিয়ে লাজুকের বাবাকে হেনস্তা করা।আর ওই শিক্ষক তাতে জয়ী ও হন।

যেহেতু লাজুক ভালো স্টুডেন্ট ছিলো তাই তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়না।

আর ওদিকে,লাজুকের বাবা এই অপমান সহ্য করতে না পেরে স্ট্রক করেন।
হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই লাজুকের বাবা মারা যায়।

পাথর হয়ে যান নাহার বেগম।বাকরুদ্ধ হয়ে যায় লাজুক।

হারিয়ে যায় লাজুকের মাথার উপর থেকে বটগাছ নামক ছাঁয়া টা।

সেদিন থেকে নাহার বেগম লাজুকের সাথে কথা বলেন না।

লাজুক ও ভেঙে পড়ে খুব।বাবাকে হারিয়ে তো এতিম হয়েছে,আর মা কে ও হারায় এখন।অনাথের মতো হয়ে যায় লাজুক।

বাবার স্বপ্ন ছিলো লাজুক অনেক পড়াশোনা করবে।তাই এই শোকের মধ্যেও লাজুক টেস্ট পরীক্ষা দেই।

টেস্ট পরীক্ষাতে লাজুক এ প্লাস পাই।কিন্তু বোর্ড পরীক্ষায় বাধে বিপত্তি।

একদিকে মা কথা বলেনা।অন্যদিকে সবার অপমান।তুলিনের ও পরিবর্তন।

লাজুক এসএসসি তে ভালো রেজাল্ট করতে পারেনা।টেনেটুনে এ গ্রেইড পাই।

খুব কাঁদে লাজুক।ডিপ্রেশনে চলে যায়।কিন্তু তবুও নাহার বেগম তার কলিজার টুকরা কে শান্তনা দেননা।

এই সুযোগে তুলিন আবারো যোগাযোগ করে লাজুকের সাথে।কারন তুলিনের তখন টাকার প্রয়োজন।

যেহেতু লাজুক বরাবর ই তুলিনের প্রতি দূর্বল সএই সুযোগ টা কেই কাজে লাগাই তুলিন বারবার।
দু একটা মন ভোলানো কথা বলে ঠিক ই মানিয়ে নেই লাজুক কে।

যখন যখন টাকা লাগে তুলিন লাজুক কে বলে।আর বোকা লাজুক ও টাকা দিয়ে দেই ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে।

এভাবেই চলতে থাকে ওদের দিন।

হঠাৎ একদিন তুলিন লাজুক কে বলে বসে,”লাজুক অনেকদিন তো হলো রিলেশনের।এতোগুলো দিনে তুমি আমাকে তোমার হাত ধরা ছাড়া আর কিছুই করতে দাওনি।
একবার জোর করে জড়িয়ে ধরেছিলাম…..

এতোটুকু বলতেই লাজুক রেগে যায়।লাজুক তখন তুলিন কে কয়েকটা কটূ কথা শুনিয়ে দেই।
লাজুক বলে,” সেদিন তোমাকে বাঁচাতে তোমার প্রেমে রাজি হয়েছিলাম।আর এখন সত্যি সত্যি ভালোবাসি বলে তুমি অন্যায় আবদার করতে পারোনা তুলিন।”

চলে আসে তুলিনের সামনে থেকে লাজুক।বেশ ক’দিন আর যোগাযোগ করেনা তুলিনের সাথে।
,
লাজুক ইন্টারমিডিয়েট এর পাশাপাশি কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা তে ভর্তি হয়।

লাজুকের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে লাজুকের জীবনের সব কিছু পাল্টে যায়।তখনো নাহার বেগম লাজুকের সাথে কথা বলেনা।

লোক দিয়ে বিজনেস সামলান নাহার বেগম।আর মাস গেলে লাজুকের একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেন।

লাজুকের মা লাজুকের সাথে কথা বলেনা বলে লাজুক হোস্টেলে ওঠে।একা একা থাকে।কারো সাথে কথা বলেনা।

কলেজের এক সিনিয়র শিক্ষক লক্ষ্য করতো লাজুক কে।সে ঠিক লক্ষ্য করতোনা কেউ একজন তাকে দিয়ে লক্ষ্য করাতো লাজুক কে।

একদিন সেই সিনিয়র শিক্ষক লাজুক কে তার চেম্বারে যেতে বলেন।
,
,

চলবে

অনুভবে _তুমি পর্ব ২

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০২
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

আমাকে অবাক করে দিয়ে স্যার যখন বললেন,”প্রথম স্থান অধিকারী লাজুক রহমান”।
আমি তো এক চিল্লানী দিছিলাম।ভীষণ খুশি আমি।বাবা আমাকে অনেক গিফ্ট দিয়েছে আজ
,
,
এতোটুকুই লেখা ছিলো এ পেইজে।
,
,
লাজুক আবারো পেইজ উল্টাতে থাকে।একটা পেইজ খুলে পড়তে থাকে।
,
,
মাঝে অনেক দিন ডায়েরী লিখেনি লাজুক।পুরো একটা বছর।অর্থাৎ লাজুক সপ্তম শ্রেণী পার করে ফেলেছে।
,
,
লাজুক বরাবর ই ভালো ছাত্রী।লেখাপড়া তে ও ভালো,খেলাধুলা তে ও ভালো।তেমনি গানের কণ্ঠ।
দেখতে যেমন মায়াবী তেমনি লজ্জাবতী।
,
,
১৪.০৪.২০..

আজ পহেলা বৈশাখ। আজ আমার জীবনের বিশেষ একটা দিন।
স্কুলে আজ বৈশাখী অনুষ্ঠান ছিল।সেখানে লাজুকের আজ গানের অনুষ্ঠান ছিল।
,
,
আজ প্রথম শাড়ি পরেছিলাম আমি।

এতোটুকু লেখা পড়েই লাজুক থেমে যায়।ডুব দেই ভাবনা জগতে।
,
,
আমি,ইফরা,তুলিকা বেস্টফ্রেন্ড।তিনজন ই শাড়ি পরেছি।
ওরা ফর্সা,দুধে আলতা গায়ের রং।তাই ওদের সাজুগুজু করাতে অপ্সরীর মতো লাগছে।
আমি শুধু চোখে কাজল দিয়েছি,হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি,চুলে গাজরা।সাজ আমার এতোটুকুই।
,
,
স্যার স্টেজে পারফমেন্স করার জন্য আমার নাম ঘোষণা করেন।”এবার গান নিয়ে আসছে আমাদের প্রিয় ছাত্রী লাজুক রহমান”।
,
,
লাজুক স্টেজে উঠে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে গাইতে শুরু করে।

——–“”আইলো,আইলো,আইলোরে————
রঙ্গে ভরা বৈশাখ আবার আইলোরে।
আইলো,আইলো,আইলোরে
রঙ্গে ভরা বৈশাখ আবার আইলোরে।
পাগলা মনে রঙিন চোখে নাগরদোলায় বছর ঘুরে,
একতারাটার আউর টা নিতে হাজার প্রাণের বাউল সুরে
দেশটা জুড়ে খুশির ঝড়ে, একটা কথাই সবার মনে।
আইলো,আইলো,আইলোরে
রঙ্গে ভরা বৈশাখ আবার আইলোরে””………………………………….
…………………………………………………..
,
,
,

গান শেষ হতেই সবার কড়োতালী তে মুখোরিত চারিদিক।অসম্ভব সুন্দর গেয়েছে লাজুক।
,
,
কিন্তু অপর দিকে এক জোড়া নীলচে চোখ সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে লাজুকের দিকে। একমাত্র তুলিকা সেটা লক্ষ্য করে।

তুলিকা লাজুক কে ডেকে বলে,”এই লাজুক দেখনা নীলচে চোখের একটা ছেলে তোর দিকে কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।”
,
,
লাজুকঃ কইরে তুলিকা? আমি তো দেখতে পাচ্ছিনা।

লাজুক ছেলেটার দিকে তাকানোর আগেই ছেলেটা ওখান থেকে চলে যায়।
,
,
আর অপর দিকে ইফরা কে তুলিকার ভাই তুলিন ডেকে বলে,লাজুক কে নিয়ে স্কুলের পেছনের দিক টা তে আসতে।
,
,
ইফরা লাজুক কে নিয়ে স্কুলের পেছনের দিক টা তে যায়।যেখানে আছে একটি বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ।
,
,
লাজুক ওখানে গিয়ে দেখে,তুলিন তাকিয়ে আছে লাজুকের দিকে।
,
,
লাজুক মৃদু হেসে তুলিকার ভাই অর্থাৎ তুলিন কে বলে কি রে তুই এখানে কেন ডাকলি আমাকে?
,
,
তখন ই তুলিন লাজুকের সামনে হাঁটুগেড়ে বসে পড়ে,হাতে গোলাপের তোড়া নিয়ে।
তারপর লাজুক কে বলতে শুরু করে-
,
,
লাজুক,
তুমি আমার দেখা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী।আমার স্বপ্নের রানী তুমি।আমি সেই ক্লাস সেভেন থেকে তোমাকে ভালবাসি।এতোদিব বলার সাহস হয়নি।আজ বলছি,তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিওনা প্লিজ!
তোমার কৃষ্ণচূড়া আর গোলাপফুল অনেক পছন্দ।তাই তোমায় এই কৃষ্ণচূড়া গাছের এখানে ডেকে এনেছি।
তুমি কি হবে আমার স্বপ্নের রানী?
,
,
তুলিনের কথা শুনেই লাজুক উল্টো ঘুরে হাঁটা শুরু করে।তখনি তুলিন লাজুকের হাত টেনে ধরে।
,
,
লাজুক হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে দেখ আমরা ক্লাসমেইট। এটা হয়না।বাবা-মা কষ্ট পাবে।
আর তাছাড়া তুই অনেক সুন্দর দেখতে।আমার সাথে তোর যায়না।তুই ভুলে যা আমাকে।,
,
,
অপরদিকে তুলিকা লাজুক কে খুঁজতে থাকে,আর পেয়েও যায়।তখন আবার নীলচে চোখের ছেলেটার কথা জানায় লাজুক কে।কিন্তু লাজুক পাত্তা দেইনা।
,
,
লাজুক আর কথা বাড়াইনা।বাড়ি চলে আসে।ভয়ে বাবা-মা কে কিছু জানায়না।ডায়েরী তে লিখে রাখে সব।
,
,
অন্যদিকে নীলচে চোখের ছেলেটার ঘুম হয়না রাতে।ভাবে কখন সেই মায়াবতী মেয়েটার দেখা পাবে।
,
,
পরপর দুই সপ্তাহ কেটে যায় এভাবে।আর ওদিকে তুলিন ব্ল্যাকমেইল করে লাজুক কে।কখনো হাত কাটে,তো কখনো লাজুকের পা জড়িয়ে ধরে,তো কখনো আবার কান্না করে।
,
,
কি হতে চলেছে লাজুকের জীবনে? আর কে ওই নীলচে চোখের ছেলেটা? লাজুক কার ডাকে সাড়া দিবে?
,
,
,
,
চলবে

Protected: নীলা পয়েন্ট টু

0

This content is password protected. To view it please enter your password below: