Wednesday, August 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2019



রংধনু পর্ব ৬

0

রঙধনু?

তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)

পর্ব ছয়

?

খুব একটা মিষ্টি গন্ধ মোহর নাকে এসে বারি খাচ্ছে বারবার..তার ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছে কেও তাকে অনেক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে..চোখ খুলতে তার ইচ্ছা করছে না..

চোখ যখন খুললো তখন দেখলো কারো বুকের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে..বুকটা ধক করে উঠলো..চোখ তুলে উপরের তাকালো দেখলো ফারিশ তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে..কল্পনা কি না ফারিশের উদাম বুকে একটা চিমটি দিলো।।

“আউচ” ফারিশ হালকা চিৎকার দিলো

মোহ ওমনিতে ধড়াস দিয়ে উঠে দাড়িয়ে গেলো..সাথে সাথে এক চিৎকার,

“মাআআআআআআআআআআআ”

মোহর এমন চিৎকারে ফারিশের কানে মনে হয় তালা লেগে গেলো..রুম সাউন্ডপ্রুফ হওয়ার সুবাদে চিল্লানী বাহিরে যায় নি..

মোহ থরথর করে কাপছে..আর মোহর এই কাপাকাপি দেখে ফারিশ ভিতর ভিতর আনন্দ পেলেও মোহর সামনে গম্ভীর মুখ প্রকাশ করে আছে..

“কাম হেয়ার” গম্ভীরমুখে বললো ফারিশ

মোহ এখনো ঠায় মেরে দাড়িয়ে আছে..তিন বছর পর এই মানুষটার সামনে সে,নিজের চোখ দেখেও দেখছে না,মন বাধাও মানছে না আর বেহায়া কানের কথা কি বলবো..আরেকটা লাইন শুনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে..

মোহর রিয়াকশন না দেখে ফারিশ নিজে টেনে হাত ধরে নিয়ে আসলো..মোহর সারা শরীর বেয়ে মনে হচ্ছে কারেন্ট বয়ে গেলো..বুকটা কেমন ধুকপুক করছে..

“চিল্লালে কেন??” মোহর চুল কানের পিছে গুজে দিয়ে ফারিশ বললো

ফারিশের এমন বিহেভিয়ার দেখে মোহর চোখ ত কপালে..কারন,সে যতটুকু জানে ফারিশে তাকে মেনে নিতে পারে নি বিধেয় বিয়ের দিন তার মুখ না দেখে এইভাবে চলে গেছে..

চোখভর্তি জল নিয়ে তাকিয়ে আছে মোহ ফারিশের দিকে.. একটু সরে আসলো সে ফারিশের থেকে..ফারিশ আরেকটু কাছে গেলে মোহ ইশারায় না করে কাছে না আসার জন্য।।

ফারিশের ভিতরটা মনে হচ্ছে ছ্যাৎ করে উঠলো মোহর এমন এমন ইশারায় কাছে না আসার, অনুমতি না দেয়ার।।

মোহ চোখের জল এক হাত দিয়ে মুছে বেরিয়ে যেতে লাগলে..ফারিশ বলে উঠলো,

“স্টপ!!আই ডোন্ট গিভ ইউ পারমিশন টু গো আউট”

এমন থমথমে গলা শুনে মোহ দাড়ালো ঠিকই কিন্তু পিছন ফিরে তাকালো না..সে ভেবেছে ফারিশ এইবার তাকে হয়তো ডিভোর্স দেয়ার জন্য এসেছে।।

ফারিশ অয়ায়ের কদম চালিয়ে মোহর কোমর দুই হাত দিয়ে ধরতে গেলে..

“আপনি যা চাইবেন বা যে জন্য এসেছেন এখানে এসেছেন আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব না” কোনকিছুর না বুঝে এই জবাব দিয়ে গেট খুলে বেরিয়ে পরলো।।

ফারিশের চোখ রাগে একদম লাল হয়ে গেছে..

“এতো এভোয়েড??হাহ??সে ত এখনো জানেই নাই আমি ফাইজান ফারিশ,আমাকে ইগনর করার শাস্তি একদম তিলে তিলে সুদে আসলে দিব..আর কি বললো ও?? আমি যা চাই সে দিবে না??বাট সরি টু সে বেবি,আমি যা চাই তা নিয়েই ছাড়ি…আর সেখানে তুমি আমার বউ..তোমাকে ত আমি চাইইই চাইইই সেটাতে তোমার অনুমতি না থাকলেও” বাকা হেসে বললো..

লিভিংরুম,

সবাই নিচে বসে আছে,অপেক্ষা করছে মোহ আর ফারিশ নিচে নেমে আসার কিন্তু এখনো আসছে না শুধু ফারিশের রুম থেকে বিভিন্ন ভাঙচুরের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে..

“এই এক সমস্যা এই ছেলের,কিছুই হইলেই ভাঙচুর আরম্ভ করে” সুলেমান বিড়বিড় করে উঠলো

এভ্রিল উপরে অনেকবার যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ফারিহা আর সুলেমান আটকে রেখেছে তাকে..পায়চারি করছে সারা লিভিং এরিয়া জুড়ে।।

মোহ ওয়াশরুম দরজা বন্ধ করে মুখ চেপে কাদছে..এতোবছর পর তার স্বামীকে দেখছে..কিজন্য আসছে তাকে মেনে নিতে?? অবশ্যই না..তাকে তার জীবন থেকে একদম বিতাড়িত করার জন্য এসেছে সে..

রাতেরবেলা,

লিভিংরুমের পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে…কারন,ফারিশ আর মোহ কেও নিচে নামে নাই..মোহ মাথাব্যাথার অজুহাত দিয়ে আগেই রুম লক করে শুয়ে গেছে..

ফারিহা থাকতে না পেরে এই দমবন্ধ কর পরিস্থিতিতে, উপরে গেলো ভাইয়ের রুমে..দুই একবার নক করলো তবে সাড়া নাই..

“ভাইয়া দরজা খোল..তোদের টেনশনে বাকি সব মরে যাইতেছে আর রুম লক করে কি জপ করতেছোস??” ফারিহা বলে উঠলো

এই কথায় মনে হয় টনিকের মতো কাজ হলো তার..দরজা খুলে বের হয়ে আসলো সে..কিন্তু ফারিহাকে কিছু সুযোগ না দিয়ে নিচে চলে ধপাধপ পা ফেলে..ফারিহা রুমের হাল দেখে হতবাক..রুমের সব জিনিসের উপর যে মর্মান্তিক অত্যাচার হয়েছে সেটা সে বুঝতে পারছে,বুয়াকে ডেকে রুম পরিষ্কার করতে বললো..

ফারিহা নিচে যেয়ে দেখলো বাবা মায়ের সামনের সোফাতে ফারিশ বসে আছে..দুই হাটুর উপরে দুই হাত ভর দিয়ে থুতনীতে রাখছে..

“কি হয়েছে বলবা কি??” সুলেমান জিজ্ঞেস করলো

“তুমি না বললে বুঝতে পারবো কি করে???তাছাড়া তুমি এখানে এসেছো কোনকিছু বলার জন্যই তাই না??” এভ্রিল ইতস্ততভাবে বললো

ফারিশ এইবার চোখ তুলে তাকালো..চোখগুলো দেখে এভ্রিলের বুকটা ধক করে উঠলো..অসম্ভব লাল হয়ে আছে,আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় সে যে কেদে চোখ ফুলিয়ে রেখেছে সেটা..কারন,ফারিষ কষ্ট দিবে কিন্তু নেয়ার মানুষ না..

ফারিশ ধীর পায়ে কাছে এসে মায়ের হাটুর কাছে বসলো।।

“মা!!” ফারিশ এভ্রিলকে ডেকে থেমে গেলো..আসলে সেও এই প্রথকবারের মতো গুছিয়ে কথা বলতে যেয়েও পারছে না।।

এভ্রিল হয়তো আন্দাজ করতে পারছে ছেলের পরিস্থিতি..তাই তিনি এগিয়ে এসে ফারিশের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে..চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।।

“আই নো দ্যাট আই মেড এ মিসটেক..আই অলসো নো দ্যাট হোয়াট ই ডিড ইন পাস্ট,ইট ইজ রং” ফারিশ এইটুকু বলে থামলো।।

কিছুক্ষন থেমে আবার বলা শুরু করলো,

“আমার ভুলের জন্য আমাকে যা শাস্তি দিবা তুমি দাও কিন্তু ও যেন আমারে ছেড়ে চলে না যায়.. ও আমাকে ভুল বুঝে আছে আমি জানি,আমার উচিত হয় নি তাকে এইভাবে ফেলে চলে যাওয়াটা কিন্তু মা আমি আসলে জড়াতে চাই নাই কোন শিকলে..কিন্তু এই শিকলটায় আমাকে তার সাথে এমনভাবে আবদ্ধ করেছে যে আমি চাইলেও তার থেকে দূরে থাকতে পারবো না..আমি যদি একটু চিন্তাও করি দূরে চলে যাবে সে,আমার দম টা বন্ধ হয়ে আসে মা” এক নাগাড়ে কথা গুলো বললো ফারিশ

এভ্রিল স্তব্ধ হয়ে গেছে ফারিশের এমন কথা শুনে..সে এখনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।।

“আই নো মা..আমার এই দুইদিনে যতটা দম বন্ধ হয়ে আসছে ঠিক ততোটাই ওর এই তিন বছরের হয়ে আসছে কিন্তু মা আমি ত এখন ওকেই চাই..যে করেই হোক” ফারিশ চোখমুখ শক্ত করে বললো।।

“কিন্তু এতো বছরের ঘা যা সে পেয়েছে মুছে ফেলা কি সম্ভব??এভ্রিল বলছে

” আমি সব পারবো”বাকা হাসি দিয়ে উপরে চলে গেলো ফারিশ

এভ্রিল,সুলেমান আর ফারিহা এখনো হতভম্ব হয়ে নিচে আছে..

রাতেরবেলা,

“ওই তোর রুমে চল..মোহ ওখানে ঘুমাবে ক্যান??আমি আসছি আমার ঘরে ঘুমাবে” ফারিশ ভ্রু কুচকে ফারিহাকে বলে উঠলো

“ভাইয়া তোমার কি মনে হয় ভাবী তোমার রুমে যাবে?” ফারিহা বললো

“কেন যাবে না হু?? ওর ঘাড় যাবে!!অভিমান করছে ভাঙায় দিব..কিন্তু এখন আমার ঘরে আমার সাথে থাকা লাগবে,আমি থাকতে পারবো না আর ঘুমাতেও পারবো না ওরে ছাড়া” ফারিশ ব্যাকুল কন্ঠে বলে উঠলো

“আমি এই রিস্ক নিতে পারুম না ভাই..ভাবী যদি জানে কষ্ট পাবে..একটু সময় দাও তাকে এবং নিজেকে..গুছিয়ে উঠতে হবে সবকিছু..তাড়াতাড়ির ফল খারাপ হয়” ফারিহা বললো।।

অগত্যা ফারিশকে নিজের রুমে যেতে হলো..মোহকে আর রাতে দেখতে পেলো না।।

“ইউ আর মোস্ট ডিয়ারেস্ট পানিশমেন্ট অফ মাই লাইফ সুইটি” এই বলে বাকা হাসি দিয়ে ফারিশ ঘুমানোর চেষ্টা চালাতে লাগলো।।

সকালবেলা,

ফারিহা কোচিং থাকার কারনে সে একেবারে কলেজ ড্রেস পরে কোচিং এর উদ্দেশ্য রওনা দিলো..আজ গাড়ি নিয়ে বের হবে না,কানে হেডফোন গুজে রিক্সাতে উঠে চিপ্স খাইতে খাইতে গেলো কোচিং এ।।

কোচিং এ আসার পর,রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিয়ে নিচে নামলো যখন..এক বাইকওয়ালা কই থেকে জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলো দূর্ভাগ্যবশত ফারিহাকে লেগে যায়..বেশি ব্যাথা না পেলেও কব্জি খানিকটা ছিলে যায়..

“আহ!!” বলে নিচে বসে পরলো ফারিহা

বেচারা বাইকওয়ালা মাথা থেকে হেলমেট খুলে হন্তদন্ত হয়ে আসলো ফারিহা কাছে..কাছে এসে দেখতে চাইলে,ফারিহা এমন কটমট করে তাকালো যে এখনি ওকে খেয়ে ফেলবে।।

“ধাক্কা দিয়া ফালাইয়া কি তামাশা দেখতে আসছেন??একদম টাচ করবেন না!!সরেন” ফারিহা নিজে উঠে দাড়িয়ে জামা ঝেড়ে ভিতরে গেলো..

এদিকে আশেপাশের মেয়েরা ছেলেটাকে হা করে গিলে খাচ্ছে..

“আরে ব্রো মেয়েটা তোরে একেবারে ভাউ না দিয়ে চলে গেলো” একটা ছেলে বললো

“এইটা দ্যা পলিটিশিয়ান সুলেমান আঙ্কেলের একমাত্র মেয়ে” ছেলেটি বলে উঠলো অবাক যখন ফারিহাকে দেখতে পেলো।।

“সুলেমান ফাজের একমাত্র ফাবিহা ফারিহা ফাজ এই নুহাস চৌধুরীকে ইগনরে করে মনের ভিতর যে ভালোবাসার আগুন জ্বালালো সেটার কি হবে” শয়তানী হাসি দিয়ে বললো নুহাস

রাফাইয়েত নুহাস চৌধুরী সন অফ কবির চৌধুরীর একমাত্র ছেলে..নামীদামী ব্যবসায়ীদের মাঝে একজন..পড়াশোনা শেষে কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছে..বাবার ব্যবসাতে হাত লাগানোর আগে একটু লাইফটাকে ইনজয় করছে..বাইক তারই,তার বাবার থেকে কাল শোরুম থেকে লেটেস্ট মডেলের নিয়েছে..চেহারা,এটিটিউড এবং চলাফেরা অলওয়েজ খাতারনাক..মেয়ে মানুষের ক্রাশ হলেও,মেয়ে মানুষের কাছ থেকে অলওয়েজ দূরে থেকেছে সে।।

ফারিহার কটমট করে তাকানো নুহাসের মনে একটা আলাদা উত্তেজনার জ্বালা সৃষ্টি করেছে..

“আই কান্ট ওয়েট টু সি হার ফর নেক্সট টাইম..এন্ড অভিয়েশলি আই নিড হার মাই লাইফ..ওয়েলকাম হানি..গেট রেডি টু কাম নুহাস কিংডম”

বাকা হাসি দিয়ে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ কিনে পাঠালো নুহাস ফারিহার জন্য।।

সুলেমান আর এভ্রিল অবাক হয়ে সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে আছে..সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটি বলছে,

“আমার ছেলে আপনার মেয়েকে শপিংমলে দেখে পছন্দ করে ফেলছে..সে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়” ভদ্রলোক বলে উঠলো..

এভ্রিলের চিনতে অসুবিধা হয় নি ছেলেটাকে..এই ছেলেটা সেদিন মোহকে নাম আর ও কি কি জিজ্ঞেস করছিলো।।

“আমার মেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পড়ে এখন বিয়ে দিবো না” সুলেমান বললো

“আঙ্কেল আমি আপনার ছোট মেয়েকে চিনি..আপনার বড় মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই” স্যুট পরা একটা সুদর্শন ছেলে বলে উঠলো

“ওটা আমার মেয়ে না,ওটা আমার বড় ছেলের বউ” এভ্রিল বললো

“হোয়াট!!” ছেলেটা এক প্রকার চিৎকার দিলো..

মোহ ওই সময় বুয়াকে দিয়ে চা আর নাস্তা দিয়ে পাঠালো

“এই তুমি ম্যারিড আগে বলো নি কেন?আর হলেও আমি ডিভোর্স দিয়ে ছাড়াবো মাইন্ড ইট” ছেলেটি রেগে বললো

মোহ ত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে আচমকা প্রশ্নে..এভ্রিল সামনে এসে দাড়ালো।।

“গিভ সাম গ্যাপ বয়..ইউ আর টকিং টু মাই ডটার ইন ল..কিপ ইউর ভয়েস ডাউন” এভ্রিল রেগে বললো

এদিকে ফারিশ উপর থেকে শার্ট ফোল্ড করতে করতে আসছে..যখনি ছেলেটা মোহর কাছে এসে দাড়িয়েছে,তা দেখে মেজাজ গরম হয়েছে আবার যখন সে বললো ডিভোর্স দিয়েই ছাড়বে..এইটা শুনে মাথার রগ রাগে ছিড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে..

নিচে নেমে এসে ছেলেটার কাছে যেয়ে মুখের উপর এক ঘুষি দিলো ফারিশ..

“আমার বউ কে আমার কাছে আলাদা করবি??সাহস কত তোর?? ফারিশের জানের দিকে তাকাইছোস?? আই কিল ইউর ব্লাডি বিচ” ফারিশ রাগে আরো কয়েকটা ঘুষি দিলো।।।

চলবে?

রংধনু পর্ব ৪

0

রঙধনু?

তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)

পর্ব চার

?

সকালবেলা,

ওয়াক থেকে এভ্রিল আর সুলেমান ফিরে এসে সামনে গাড়ি থেকে নেমে আসা মানুষটাকে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে অবাক..তাদের মুখটা খানিকটা না অনেকটা বড় করে হা করে রয়েছে..

সুলেমান হাসফাস দিয়ে বলে উঠলো,

“ফারিশ”

এভ্রিল ও অবাক হয়েছে অনেকখানি..সেই তিন বছর আগে গিয়েছে আর এখন আসছে..তিন বছরে ছেলের সাথে কথা ত দূরে থাক ওর মুখ দেখার কথা কেও বললে ক্ষেওএ যেতে..কিন্তু একমাত্র পুত্রসন্তানের কথা মনে হলে ভিতরটা সবসময় নাড়া দিতো..

তার ছেলে তার মতো চোখ পেয়েছে,যেমন সে তার মায়ের এই চোখের অধিকারী ছিল..ছেলে আমার আগের থেকে অনেকবেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে,রোদ ফর্সা মুখে পরাতে সারা মুখ লাল হয়ে উঠছে..কিন্তু এতোদিন পর আসছে কিজন্য??মোহকে তালাক দিতে??বুকটা ধক করে উঠলো এভ্রিলের

ফারিশ ক্লান্তমুখে হালকা হাসি এনে তারা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো..এভ্রিল চলে যেতে চাইলে ফারিশ তার মায়ের হাত ধরে সামনে আসে।।

অভিমানী মায়ের মুখ ফারিশ দুই হাতে উপরে তুলে বললো,

“মা!! তিন বছর কথা বলো নি!!এইবার ত বলো??”

এভ্রিল নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি নাই..হাউমাউ করে ছেলেকে ধরে কেদে দিয়েছে..সুলেমান, এভ্রিল আর ফারিশ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে..

“ইনাফ..আই এম সো টায়ার্ড!!নিড টু স্লিপ!!” ফারিশ বলে উঠলো

এভ্রিল ফারিশকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলো..

সুলেমান বিড়বিড় করে তখন বলছিলো,

“বাপ কা বেটি?ফারিহা তাহলে এই চার ছক্কা মেরেছে আর সে এটার কথা আমাকে বলেছিলো??ওয়াহ মাইয়া আমার একদম ম্যাক্স ওয়েল..খালি চার ছক্কা মারে”

আপনমনে হাসতে হাসতে বাড়ির ভিতরে চললো..

ফারিশ নিজের রুমে ফ্রেশ হতে চলে গিয়েছে..ফ্রেশ হয়ে ফারিশ দরজা লক করে লম্বা ঘুম দিলো..কাল থেকে ফারিশ যখনি চোখ বন্ধ করছে তখনি ওই মায়াভরা চোখ টা বারবার দেখতে পাচ্ছে..

এদিকে সুলেমান আর এভ্রিল ভাবছে..

“ফারিশ ত আসলো কিন্তু মোহকে যদি ডিভোর্স দেয়??ও ত বেচে থেকেও মরে যাবে??এভ্রিল বললো

” এমন কিছু হবে না..ভরসা রাখো”সুলেমান এভ্রিলের হাত ধরে বললো

সকাল ১১টা,

ফারিশের রুমে যাওয়া চুপিচুপি মোহর কাজ নিত্যদিনের.. আজ ও গেলো কিন্তু অবাক হলো দরজা লক দেখে একটু অবাক হলো..পরে ভাবলো মা হয়তো করেছে যেন আমি না আসতে পারি..তাই আবার ফিরে গেলো নিজের ঘরে..

বেলা ১২টার দিকে ফারিহা ঘুম থেকে উঠলো..উঠেই মোহকে খুজছে

,”ভাবীইইইইইইইইইইই!!!দিল কা পিঞ্জিরা কিধার হ??ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলছে ফারিহা

দুইদিকে চুল বেধে আছে,টিশার্ট মিকি মাউসের আর পায়জামা হাটু অব্দি উঠে আছে..আউলাঝাউলা হয়ে শুয়ে থাকার সব এলোমেলো হয়ে আছে তার।।

ফারিহার এমন ডাক শুনে মোহ জলদি ঘরে আসে আর ভাবছে না জানি কি হলো

“এই কি হয়েছে তোমার??চিলাইতেসো যে?? মোহ জিজ্ঞেস করে উঠলো

” এই মাদার তেরেসা!!ফারিহা মাথা নিচু করে বলছে

মোহ এই নাম শুনে ফিক করে হেসে দিলো..সে মোহকে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সময়ে ডাকে..মোহ পাশে এসে বললো,

“কি হয়েছে আমার পাখির দেখি??

” জানো ভাবী”কাদো কাদো কন্ঠে বললো ফারিহা

“কি বলো?” মোহ ও উদগ্রীব হয়ে আছে কি হয়েছে শুনার জন্য

“আসলে আমি কার বাসা আছি এইটা মনে করতে পারছি না??এইটা মেইন ফ্যাক্ট না,মেইন ফ্যাক্ট আমার অত্যন্ত জরুরী ইমারজেন্সি লাইন চালু হয়ে গেসে,যেকোন মুহূর্তে সেখানে না গেলে পরের বাসার পরের ঘরে বাসাইয়া দিব আমি” ফারিহা বললো

মোহ হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না..সে বুঝতে পারলো ফারিহা ইমারজেন্সি লাইন বলতে কাকে বুঝিয়েছে,

“আচ্ছা চলো ওয়াশরুম” হাত ধরে মোহ ফারিহাকে নিয়ে যাচ্ছে

ফারিহা যেতে বললো,”তুমি যদি আজ না থাকতে আমার ইমারজেন্সি লাইন আজ লিক হয়ে যেতো..আই লাভ ইউ”এই বলে মোহর গালে চুমু দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো..

মোহ ভাবছে,

“এই মেয়ের হুশ থাকে না ঘুম থেকে উঠলে..নিজের বাড়ি চিনতে না পেরে বলে কার বাড়িতে আছি??না জানি বিয়ে হইলে বাসরের পরের দিন না বলে উঠে,এই আপনি কোন আফ্রিকার উগান্ডার মানুষ??

বাসর আর স্বামী শব্দটা উচ্চারণ করেই নিজের মন থেকে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো..

মোহ নিচে যেয়ে দেখলো এভ্রিল আর সুলেমান তখন থেকে কি বিড়বিড় করছে,মোহকে দেখে চুপ হয়ে গেছে আর একটা কেমন হাসি দিলো..

“চা দিব??” মোহ বললো..

“হ্যা চা দে..তোর হাতের চা খাওয়ার জন্য কখন থেকে বসে আছি??সুলেমান কেমন ভড়কে যেয়ে বললো

” আচ্ছা দিচ্ছি “মোহ মিষ্টি করে হেসে বললো

কারো মনের আর কথার প্যাচ কিংবা কেও যে তাকে কটুক্তি করছে তার পিছন ফিরে সামনে হেসে হেসে কথা বলছে এই মেয়ে বুঝতে পারে না..মোহ এতো বেশি সোজা সরল দেখে এই পরিবারের প্রতিটা মানুষ তার জান হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে

“এই বেগম রোকেয়া!!এতো উদারতা কেন??একদম মেরে দিব..চুপচাপ নিজের ছাড়া আর আমার ছাড়া কারো প্রতি দরদ দেখালে” ফারিহা রেগে বলেছিলো কথা গুলো কারন,ফারিহাদের এক কাজিন তাদের বাসায় এসেছিলো,মোহ তাদের সামনে নাস্তার প্লেট রেখেছিলো..

মোহ যাওয়ার পর তাদের মাঝে একজন বলেছিলো,

“এখনো এতিম মাইয়ারে রাখছো তোমরা??এই মেয়ের জন্য তোমার ছেলে এখনো বাড়ি ফিরে না”

মোহ সব শুনেছিলো কিন্তু টু শব্দ না করে অতিথিদের আপ্যায়ন করাতে ব্যস্ত ছিলো সে..এইসব দেখে সেদিন ফারিহা এতোগুলো ঝেড়েছিলো তাকে..

চা দিয়ে মোহর ফোনে কল আসে ভার্সিটি থেকে..প্র‍্যাকটিক্যাল ক্লাস নাকি আজ আছে দুপুরে?সেইজন্য যেতে হবে..

মোহ রেডি হয়ে ভার্সিটি গেলো..বাসাতে ত খেতে পারবে না,এভ্রিল আবার টাকা দিলো।।

“মা তোমার দেয়া অনেক টাকা জমায় আছে??এখন লাগতো না” মোহ বললো

“আছে রাখতে দে..তুই খরচ করিস না,এতো তোর দোষ?এভ্রিল বললো

মোহ টাকা নিবে না এভ্রিল ধমক দিয়ে ব্যাগে গুজে দিলো..অবশেষে হার মেনে মোহকে নিতে হলো,” এই এমন পরিবারের মানুষের ভালোবাসা দেখে সে বাঁচার জন্য আস্থা খুজে পায়”

“গাড়ি ওয়েট করছে,বের হ..আর পৌছে কল দিবি??এভ্রিল বললো

” হুম “মোহ বেরিয়ে পরলো..এভ্রিল তাকে গাড়িতে তুলে, যতক্ষন গাড়ি না ছাড়ছে ততক্ষন দাড়িয়ে ছিলো..বিদায় দিয়ে বাড়ি আসলো..

দুপুরবেলা,

ফারিহা,সুলেমান আর এভ্রিল একসাথে খেতে বসেছে..টেবিলের রাখা খাবারের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ফারিহা।।

“ভাইয়ার পছন্দের খাবার সব আজ??আজ ত ওর জন্মদিন ও না??ফারিহা জিজ্ঞেস করে উঠলো

সুলেমান আর এভ্রিল একে অপরের মুখ চাওয় চাওয়ি করছে..

” তুমি কাল যে চার ছক্কা মেরেছো??এইগুলো এখন আমার পক্ষ থেকে পুরষ্কার ” সুলেমান চেয়ার টেনে বসতে বললো

“মারছি আমি…পছন্দের খাবার ও হবে আমার মতো করে??ভাইয়ার পছন্দের ক্যান” নাক ফুলিয়ে বলে উঠলো ফারিহা

উপর থেকে ফারিশ নামছে..থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর ঢিলা টিশার্ট ব্ল্যাক কালার..উফফ মাখনের মতো হয়ে আছে?

ফারিশকে উপর থেকে নামতে দেখে ফারিহা ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে..

“চার ছক্কা ময়দানে মারলাম আমি..আর তুমি এতো জলদি আউট হয়ে চলে আসলা ভাইয়া???” ফারিহা ওর বাবার কানে বলছে।।

“এই লাইলি তোমার মজনু আইসা ভাত খাইবো আর আজই তোমার ক্যাম্পাস যাওয়া লাগলো??? আস্ত একটা বোরিং মাইয়া..যার জন্য তিন বছর ধরে আহামরি করলো,আইসা হাজির আর নায়িকা সিনেমার মতো গায়েব ভুল টাইমে” ফারিহা বিড়বিড় করে চলেই যাচ্ছে।।

চলবে?

ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১২

4

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১২
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

বাসায় গিয়ে পৌছাতেই বিছানায় ঝাঁপ দিয়ে পড়ে একট লম্বা ঘুম দিলাম।রাতে আর খেতেও উঠলাম না।বিছানা ছাড়লাম একেবারে সকালে।ফোন হাতে নিয়ে দেখি ৭৩টা মিসডকল।সব শুভ্র স্যার দিয়েছে।আমি ভয়ে আর কল ব্যাক করলাম না।ফোন দিলেই না আবার চলে আসতে বলে।

আজ তিনদিন হয়ে গেছে স্যার আর একবারো ফোন করে নি।তাই একটু মন খারাপ লাগছে।
আমার ফোন দেওয়ার ইচ্ছা করলেও কেমন যেন
আর দেওয়া হল না।তবে এখানে স্যারের করা রুটিন গুলো ইচ্ছামত ভাঙছি।বেশ লাগছে,ভাবছি এক মাসের আগে আর যাবো না।কিন্তু স্যারকে দেখতেও ইচ্ছে করছে।

এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ফোনে একটি মেসেজ আসলো সামিয়ার নাম্বার থেকে।ওপেন করে দেখি লেখা আজ বিকেলে এসে পড়ো।বড় ফুফু আসবে সন্ধ্যায়।

সেই কড়া ফুফু আসবে!!
তার মানে তো যেতেই হবে।কি করার ব্যাগ পত্র গুছিয়ে চলে আসলাম বিকেলে।ঐ বাড়ি থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল।
বাসার ভেতরে গিয়ে দেখি বাড়ি পুরো খালি।সামিয়ার নাম ধরে ডাকলাম কিন্তু সাড়া পেলাম না।
রুমে গিয়ে দেখি স্যার সোফায় বসে ল্যাপটপ টিপছে।আমার সাড়া পেয়ে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দিল।

তাকে দেখে আমি থমকে গেলাম।উসকো
খুসকো চুল,মুখ দেখে মনে হচ্ছে তিন দিন ধরে শেভ করে নি।চোখ লাল হয়ে রয়েছে মনে হচ্ছে কত দিন ধরে ঘুমায় না।আমি তাকে জিগ্যাসা করলাম,বাসার সবাই কোথায়?
আজ নাকি ফুফু আসবে?
স্যার না তাকিয়েই থমথমে গলায় জবাব দিল,সবাই নানু বাড়ি গেছে একটু আগেই।
আমি কৌতূহলী চোখে বললাম,তাহলে সামিয়া যে আমাকে মেসেজ দিল আসার জন্য,
ফুফু আসবে?
স্যার ল্যাপটপ টিপতে টিপতে বলল,সেটা আমি দিয়েছি।ফুফু আসবে না।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



আমি ভুরু কুঁচকে বললাম,কিন্তু কেনো??
এবার স্যার ল্যাপটপ নামিয়ে উঠে এসে খপ করে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,কেনো! ফাঁকি কি শুধু তুমিই দিতে পারো?
এই বলে সে আমাকে ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেল।আর আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

রাতে আমি খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে ছিলাম।হঠাৎ শুভ্র স্যার রুমে এসে আমাকে ঝট করে উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলল,এই কয়দিন আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে শান্তিমতো ঘুমিয়েছো না!
আজ আমি ঘুমাবো।
বলেই আমার কোলে মাথা পেতে শুয়ে পড়ল।
তারপর বলল,আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।
আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।কিন্তু হতভম্ব ভাবটা এখনো কাটে নি।স্যার এতদিন ঘুমায় নি কেনো?আর আমি স্যারের ঘুম কেড়ে নিয়েছি মানে?

ভাবতে ভাবতে আমি সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালের আলোয় আমার ঘুম ভেঙে গেলো।
স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখি স্যার এখনো
ঘুমাচ্ছে।
আমি স্যারকে সরাতে গেলে স্যার ঘুমের চোখেই হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরল।আমি যতই ছাড়াতে চাচ্ছি ততই সে আরো শক্ত করে ধরে তার মুখ আমার পেটে ঘষতে লাগল।
আমার খুব সুড়সুড়ি লাগছে সাথে লজ্জাও।

অনেক কষ্ট করে নিজেকে স্যারের থেকে ছাড়িয়ে বাথরুমে চলে আসলাম।
অনেকক্ষণ পর বের হয়ে দেখি স্যার উঠে পড়েছে।
বসে বসে চোখ কচলাচ্ছে।

বিকেলে আমি আর সামিয়া হলে বসে ক্যারম খেলছিলাম।হঠাৎ স্যার এসে বলল সেও খেলবে।
তিনজনে জমিয়ে খেলছি।
কিন্তু স্যারের জন্য আমি আর সামিয়া কেউই বেশি গুটি নিতে পারছি না।আর ওদিকে স্যার তার সাইডে গুটির পাহাড় জমিয়ে রেখেছে।
অবশেষে স্যার ফার্স্ট হয়েছে আমি সেকেন্ড আর সামিয়া লাড্ডু।আমি তো সেই খুশি এর আগেরবার সামিয়া আমাকে গেম খাইয়েছিলো তাই।আর এটা নিয়ে আমাকে অনেক ক্ষ্যাপিয়েছে।
তাই আমিও এখন ওকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দৌড়ে উঠতে গেছি তখনি ক্যারমে পা বেজে ঠাস করে সোফার সাথে পায়ের বারি খেলাম।খুব ব্যাথা পেয়েছি।আমি বুঝতে পারছি হাটুর খানিকটা নিচে কেটে গেছে কিন্তু ওদেরকে মুখে হাসি এনে বললাম ঠিক আছি।

রুমে বসে সেলোয়ার খানিকটা উচু করে দেখছিলাম কতটুকু কেটেছে।এমন সময় স্যার আসল হাতে একটি মলম নিয়ে।স্যারকে দেখে আমি তাড়াতাড়ি সেলোয়ার নিচে নামিয়ে নিলাম।
স্যার আমার সামনে বসে হঠাৎ আমার সেলোয়ার
ধরে উপরে উঠাতে লাগল।আমি তাড়াতাড়ি বাঁধা দিয়ে আবার নামিয়ে দিলাম।এবার স্যার রেগে গিয়ে একটান দিয়ে সেলোয়ার কাটা জায়গা পর্যন্ত উঠিয়ে নয়ে মলম লাগিয়ে দিতে লাগল।

আমার খুব অস্বস্তি লাগছে তাই আমি বারবার হাত দিয়ে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

এবার স্যার আমার রেগে গিয়ে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,কি সমস্যা?আমি ছুঁলে কি হয় তোমার।
এখনো কেনো আমার সাথে এমন করছো?এত বছর জ্বালিয়েও আমাকে শান্তি পাও নি যে এখনো এমন দূরে দূরে থাকো।

আবার সেই একই কথা বলছে! যে আমি তাকে জ্বালিয়েছি।
আমি এক ছিটকানি দিয়ে তার হাত ছাড়িয়ে জোরে বললাম,আমি আপনাকে জ্বালিয়েছি আর আপনি কি করেছেন?আপনি আমাকে খুব শান্তি দিয়েছেন?আমার কেমন লাগে সেটা আমিই বুঝি।
আমার সেই আঘাতে মলম লাগাতে পারবেন না যেহেতু এই আঘাতেও লাগানোর প্রয়োজন নেই।

বলে আমি হনহন করে সেখান থেকে চলে আসলাম।সন্ধ্যার পর রুমে এসে দেখলাম স্যার এখনো বেডেই বসে আছে আর সেড সং শুনছে।আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াতে লাগলাম।আয়নায় দেখলাম স্যার আমার দিকে হতাশা চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখে মুখে একধরনের চাপা কষ্টের ছাপ।গানের কিছু লাইন আমাকে খুবই আকৃষ্ট করছে।আমি চুপচাপ শুনতে লাগলাম…..

    ঝাপসা চোখে দেখে যাই…তারার মেলা..♪♪
     কখনো বুঝি নি যে…সব অভিনয় খেলা…♪♪
          কি করে আমি বোঝাই বলো….??♪♪♪♪
      কেনো জীবন আমার এত আঁধার কালো♪♪
               যন্ত্রণা সে তো মানে না….♪♪♪♪
                 সে তো বুঝে না আ আ…….♪♪♪♪
                ভুল বুঝে চলে গেলে……♪♪♪
              জানি আসবে না কাছে আবার♪♪♪♪

এই গান স্যার শুনছে কেনো?এই গান তো আমার শোনা দরকার।স্যার এখনো আমার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে যেন গানের মাধ্যমে তার মনের কষ্ট সে আমাকে শোনাচ্ছে।

          ভালোবাসার কফিন কাঁধে……♪♪♪
     নিয়ে আমি..আর কত কাল পারি দেবো??♪♪
          সমাধি টেনে….যাও হারিয়ে……♪♪♪♪♪
           আমি…হাজার বছর ঘুমাবো♪♪♪♪♪

আমার চোখে পানি এসে পড়ল। আমি তাকে আড়াল করে লুকিয়ে চোখের পানি মুছলাম।
তারপর উঠে চলে গেলাম।

রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সোফায় বসে ভাবছিলাম,আমার,স্যারকে এভাবে না বললেও হত!স্যার তো আমাকে ঔষধ লাগাতেই এসেছিল।

এমন সময় স্যার আমার সামনে ব্যাথার ঔষধ হাতে দাঁড়াল।আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখনো মুখটা শুকিয়ে রেখেছে।
আমি হাত পেতে ঔষধটা নিতেই জগ থেকে পানি ঢেলে আমার হাতে ধরিয়ে দিল।আমি ঔষধটা খাওয়ার পরই সে চলে গেল।

আমার সবকিছু মিলিয়েই খুব কান্না পেতে লাগলো।
সোফার ব্যাকসাইডে হাতের উপর মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগলাম।কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না।

সকালে উঠে দেখি আমি স্যারের বুকে শুয়ে আছি বিছানাতেই।তার মানে স্যার আমাকে এখানে
নিয়ে এসেছে। স্যারের ঘুমন্ত মুখের দিকে
তাকিয়ে আবারো মন খারাপ হয়ে গেল।

আমি উঠে নিচে চলে আসলাম।নাস্তার সময় স্যার বলল সে উপরে রুমেই খাবে।আমি তার প্লেটে নাস্তা নিয়ে আরেকটা প্লেট দিয়ে ঢেকে স্যারের সামনের টি টেবিলটায় রাখলাম।তারপর দাঁড়িয়ে রইলাম সেখানেই।স্যার ল্যাপটপ পাশে রেখে উপর থেকে প্লেটটা উঠাতেই ভেসে উঠল দুটি ত্রিভুজাকৃতির স্যান্ডউইচের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় জ্যাম দিয়ে ইংরেজিতে লেখা”SORRY”
তার পাশে একটি সিদ্ধ ডিম যেটাকে আমি জ্যাম দিয়ে একটি মুখশ্রী বানিয়েছি মন খারাপের।আর নাক হিসেবে লাগিয়েছি গাজরের একটি স্লাইস।
অনেক কিউট লাগছে।তার পাশে দুটা লেটুস পাতা।

স্যার তা দেখে একটু মুচকি হেসে মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি সাথে সাথে শড়ির আচলের কোনা আঙুলে পেচাতে পেচাতে মাথা নিচু করে ফেললাম।
স্যার আমার হাত টেনে তার পাশে বসালো তারপর খুব নরম করে বলল,তুমি খেয়েছো?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।তারপর স্যার তার হাত দিয়ে আমার মুখে একটি স্যান্ডউইচ তুলে খাইয়ে দিতে লাগলো।তারপর খাওয়ার মাঝখানে জিগ্যাসা করলো,ব্যাথা কমেছে?
আমি মাথা নাড়িয়েই হ্যাঁ বললাম।
স্যার আমার হাত ধরে বলল,I Am Sorry..
তুমি এমনিতেই ব্যাথা পেয়েছিলে আর আমি তার ভেতর তোমাকে কথা শুনালাম।

তখনি সামিয়া এসে জানাল স্যারের সেই কড়া ফুফু এসেছে।আমি স্যারের দিকে তাকালাম আর স্যার আমার দিকে।তারপর দুজনেই একসাথে হেসে দিলাম।কারণ কয়দিন আগেই স্যার এই মিথ্যা কথা বলেছিল আর আজ তা সত্যিই হয়ে গেল।

একদিন সকালে শুভ্র স্যার আর আমি আবার জগিংয়ে গেলাম।দৌড়াতে দৌড়াতে আমি………..

চলবে,,

ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১১

0

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১১
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

আমার চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ে যাচ্ছে।এই শব্দের ভেতর কেউ আমার চিৎকারও শুনছে না।
ও আমার হাত ধরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য টান দিতেই আমাদের সামনে এসে কেউ দাঁড়াল।

আমি তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র স্যার।স্যারকে দেখে আসিফের হাত কিছুটা আলগা হতেই আমি জোরে হাত ছাড়িয়ে ছুটে গিয়ে স্যারকে শক্ত করে তার পেছনের পান্জাবী খামছে ধরে জড়িয়ে ধরলাম।আমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম।
কিছুক্ষণ পর স্যার আমাকে তার থেকে ছাড়িয়ে আসিফকে ধরে বেধম মারতে লাগল।স্যার প্রচন্ড রেগে আসিফকে পাগলের মত ঘুষি দিচ্ছে।মাঝে মাঝে হুংকার দিয়ে উঠছে আর বলছে ওর হাত ধরেছিস? তোর এত সাহস!আরো যেন কিছুু বলছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।আমি স্যারের এই রূপ কখনো দেখি নি।
আসিফ একবার কোনোমতে ছুটে দৌড়াতে চাইল কিন্তু তার আগেই স্যার ওকে ধরে আবার মারতে লাগল।আসিফের অবস্থা প্রচন্ড খারাপ।আর কিছুক্ষণ মারলে বোধহয় ও মরেই যাবে।
আমি এবার স্যারকে আটকিয়ে বললাম,স্যার
ছেড়ে দিন এবার ও মরে যাবে।বাঁধা পেয়ে স্যার একটু থেমে যাওয়ার সুযোগে আসিফ পালিয়ে গেছে।

স্যার এবার আমার দিকে তাকিয়ে সেই অগ্নিচোখেই চেঁচিয়ে বলতে লাগল,কমন সেন্স নেই।একা একা এখানে চলে এসেছো।বেশি সাহস দেখাও।
এমনিতেই আমি ভয়ে কাঁপছিলাম তার উপর স্যারের বকা শুনে আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদঁতে লাগলাম।
স্যার আমার কান্না দেখে নরম হয়ে আমার মাথা তার বুকে টেনে নিল।আমি এবার স্যারের বুকে গিয়ে ডুকরে জোরে কেঁদে উঠলাম।

তারপর স্যার আমাকে বাসায় নিয়ে আসল।
সারা রাস্তা আমি কান্না করেছি।বাসায় এসে স্যার আমার হাত থেকে ভাঙা কাঁচের চুড়ির টুকরোগুলো বের করে ঔষধ লাগিয়ে দিতে লাগল।আমি ব্যাথায় আহ! করতে লাগলাম।সামনে তাকিয়ে দেখলাম স্যারের চোখ কেমন যেন ছলছল করছে।আমার আঘাতে যেন সেই ব্যাথা পাচ্ছে।
এরপর স্যার আমাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিল।তারপর লাইট অফ করে বিছানায় নিয়ে আমাকে তার বুকে টেনে নিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।
লাইট অফ থাকার পরেও রুম হালকা আলোকিত
হয়ে রয়েছে।আজ মনে হয় ভরা পূর্ণিমা।চাঁদের
আলো উপচে পরে রুমে ঢুকে চারদিক জ্যোৎস্নার ন্যায় আলোকিত করে রেখেছে।কেমন যেন মায়াবী মায়াবী লাগছে রুমটা।ভয় আমার এখনো কাটে নি।

স্যার আমার মাথা হালকা ঝাঁকিয়ে নরম গলায় বলল,এই সুপ্তি এত ভয় পেয়ে রয়েছো কেনো।আমি থাকতে তোমার কেউ কিছু করতে পারবে না।

জানো? প্রথম যখন কলেজে ক্লাস নিতে গিয়েছিলাম,ক্লাসে ঢুকেই দেখলাম তোমাকে।দেখলাম,একটি মিষ্টি মেয়ে ঘুমে ঢুলুঢুলু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।চুলগুলোও হালকা এলোমেলো হয়ে খোলা ছিল তোমার।একটি বাচ্চা যখন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে কিছু বুঝতে না পেরে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।তুমি ঠিক সেভাবেই তাকিয়ে ছিলে।একটি নিষ্পাপ বাচ্চার মত লাগছিল তোমাকে।তোমাকে দেখে আমি সেদিন অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।
তারপর প্রতিদিনই দেখতাম তুমি একনজরে বইয়ের দিকেই তাকিয়ে থাকতে একবারো আমার দিকে তাকাতে না আর আমার চোখ বারবার কৌতূহলি হয়ে তোমার দিকেই চলে যেত।
তোমার সেই চাহনি ঘুরে ফিরে আমার মাথায় চলে আসত।
শুভ্র স্যারের কথাগুলো শুনে আমার সব ভয় কান্না কোথায় যেন চলে গেল।কত মিষ্টি করে সে কথা বলছে।আমি তার কথার মাঝে হারিয়ে গেলাম।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



স্যার বলতে লাগল,জানো যেদিন তুমি আমাকে প্রথম হরবর করে তোমার পছন্দের কথা বললে সেদিন আমি চরম বিষ্মিত হয়েছিলাম।তারপর যখন এক দৌড়ে আমার সামনে থেকে চলে গেলে, এক অপূর্ব অনুভূতিতে আমার মন ছেয়ে গেল।এত সুন্দর অনুভূতি আমার কখনো হয় নি।রাত দিন আমি যেন কোথাও হারিয়ে গেলাম।অকারণেই হাসতে লাগলাম।সবকিছুই খুব সুন্দর লাগতে শুরু করল।
চারদিন তুমি কলেজে আসলে না,তোমাকে দেখার জন্য আমি অস্থির হয়ে উঠলাম।তারপর ক্লাস টেস্টের বাহানায় তোমাকে কলেজে আনালাম।

প্রতিদিন তোমাকে নতুন করে ভালো লাগা শুরু হল।কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানে যেখানে সব মেয়েরা গাঁদা গাঁদা মেকআপ করে এসেছিল সেখানে সবার মাঝে তুমি কতটা সিম্পল সাজে এসেছিলে।সেদিন প্রথম তোমাকে শাড়ি পড়া দেখেছিলাম।
সাধারণের ভেতর অসাধারণ লাগছিলে তুমি।সেদিন তোমাকে দেখে মন থেকে একটা গানই বেরিয়েছিল,”ভালোবাসি”।

স্যার খুব আবেগ নিয়ে কথাগুলো বলছিলো।আমি
তার বুকে মাথা রেখে চুপচাপ শুনছিলাম।স্যারের হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত শোনা যাচ্ছে।

সুপ্তি, তোমার মনে আছে আমি একবার তোমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে চাইলাম কিন্তু তুমি সেখানে না গিয়ে আমাকে একটি নরমাল স্ট্রেট ফুডের শপে নিয়ে গেলে।তুমি যে কেনো রেস্টুরেন্টে যেতে চাও নি তা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝেছিলাম।তোমাকে দেখে সেদিন আমি শুধু মুগ্ধই হচ্ছিলাম।
যেখানে মেয়েরা তাদের পছন্দের মানুষকে নিয়ে দামী দামী রেস্টুরেন্ট যেতে চায়।খরচের ওপর খরচ করতেই থাকে।সেখানে তুমি আমাকে টেনে নিয়ে খরচ করতে দিতে না।কতটা সিম্পল তোমার মন,কত অল্পতেই খুশি হয়ে যাও।

আমি এবার মুখ ফুলিয়ে বললাম,আচ্ছা! বিয়ের প্রথম রাতেই যে আপনি আমাকে বললেন আমি আপনাকে বড়লোক দেখে বিয়ে করেছি?
স্যার মৃদু হেসে বলল,সেটা তো আমি তোমাকে রাগ করে হার্ট করার জন্য বলেছিলাম।আমি খুব ভালো করেই জানি আমার সুপ্তি এমন না।
তাই তো যখন তুমি এটা শুনে আহত চোখে আমার দিকে তাকালে,আমি তোমার চোখে চোখ রাখতে পারলাম না।
মাঠের কোনে গাছের গুঁড়িতে যখন আমরা পা ঝুলিয়ে বসে থাকতাম তখন হালকা রোদের কারণে তুমি হালকা চোখ কুঁচকে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে সামনে তাকিয়ে হরবর করে কথা বলতে থাকতে।মাঠের খোলা বাতাসে তোমার সামনের চুল উড়তে থাকত।তোমার ওড়নার কোনা বারবার উড়ে আমার মুখে এসে পড়ত।তখন তোমাকে যে কি সুন্দর লাগত!
আমি মুগ্ধ চোখে অপলক ভাবে তোমার দিকে
তাকিয়ে থাকতাম।

তোমার আমার জন্য প্রতিদিন যত্ন নেওয়া,কিছু না পেরেও আমার জন্য প্রতিদিনই নুডুলস রান্না করে নিয়ে আসা,আমার দিকে মায়া চোখে তাকিয়ে থাকা,তোমার দুষ্টুমি গুলো….সব কিছু আমাকে তোমার প্রতি কতটা যে দূর্বল বানিয়ে দিল তা আমি নিজেও বোঝাতে পারব না।
তোমাকে ছাড়া নিজেকে শূন্য লাগতে লাগল।আমি তোমাকে ভালোবাসি সুপ্তি….অনেক অনেক অনেক ভা………

স্যারের কথাগুলো আমি আবছা আবছা শুনতে লাগলাম।মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে কেউ বলছে
“আমি তোমাকে ভালোবাসি”
আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।কেমন যেন সব কিছু আচ্ছন্ন লাগছে।আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি চোখ দুটো খুলে রাখার।স্যারের কথা সম্পূর্ণটা শোনার।
কিন্তু নাহ্!আমি পারলাম না।পরাজিত হয়ে গভীর
ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম স্যার রুমে নেই।
আমি তাড়াতাড়ি নামায পড়ে নিলাম।মাথাটা হালকা ভার ভার লাগছে।হয়ত ঘুমের ঔষধটা হাই ডোজের ছিল।তাই বেলকনিতে গিয়ে চেয়ারে বসলাম।বেলকনির রেলিংয়ের উপর হাত রেখে তার উপর মাথা দিয়ে আনমনে তাকিয়ে রইলাম।
সকালের শীতল হাওয়া আমাকে আলতো করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ রাতে বলা স্যারের কথাগুলো ভাসা ভাসা মনে আসতে লাগলো।
স্যার আমাকে খুব আবেগ দিয়ে কিছু কথা হয়ত বলেছিল।কিছু কিছু কথা স্পষ্ট মনে আছে।কিন্তু কিছু কথা কেমন যেন মনে হচ্ছে স্যার কি বলে ছিল নাকি স্বপ্ন দেখেছিলাম।
হয়ত ঘুমের ঔষধের কারণে আমার এমন লাগছে যে স্যার সত্যি বলেছে আসলে বলে নি আমি কল্পনা করেছি।না হলে শুধু শুধু স্যার আমাকে এত ইমোশনাল কথা কেন বলবে?নাহ্ আমি বোধহয় স্বপ্নই দেখেছি।এমন স্বপ্ন তো আগেও কত দেখতাম।
প্রথমে এই কথাগুলো মনে পড়ে যে ভালো লাগা শুরু হয়েছিল এই বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে সেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল।

এর দুইদিন পর আমি ভার্সিটিতে গেলাম।ভার্সিটির
গেটে পা রাখার সাথে সাথে কোথা থেকে আসিফ এসে আমার পায়ে পরে মাফ চাইতে লাগল তাও আবার সবার সামনে।ও আপু আপু করে প্রচুর মাফ চাইছে।সবার সামনে আমার বিব্রত বোধ হতে লাগল।তাই আমি ওকে ঠিক আছে বলে চলে আসলাম।বুঝতে পারলাম শুভ্র স্যার শুধু ওকে মেরেই ক্ষান্ত হয় নি,আরও অনেক কিছু করেছে।

ক্লাস শেষে আজ তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরছিলাম রিকশা করে।পথে সামিয়ার সাথে দেখা।সামিয়াও ওর ভার্সিটি থেকেই ফিরছিলো।তারপর দুজনে মিলে রাস্তার ওপারে গিয়ে জমিয়ে ফুচকা খেতে লাগলাম।উফ! যা ভালো লাগছে না!কতদিন পর খাচ্ছি।আমি অলরেডি দেড় প্লেট খেয়ে আরেকটা ফুচকা মুখে তুলতে নিয়েছি তার আগেই সামিয়া হাত দিয়ে পেছনে ইশারা করল।আমি ফুচকা মুখের সামনে ধরেই পেছনে ঘুরতেই দেখলাম স্যার দু হাত বুকের ভেতরে গুঁজে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে সানগ্লাস চোখে  আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।সামনের চুলগুলো হালকা হালকা বাতাসে উড়ছে।একটি অ্যাশ কালারের শার্ট গায়ে সাথে ব্লাক কালারের ডোরকাটা টাইটা একটু ঢিলা করে রেখছে। ব্লেজারটা বোধহয় খুলে রেখেছে।শার্টের হাতা ফোল্ড করে রেখেছে কনুই পর্যন্ত।স্যারকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।

স্যার এবার ধীরে ধীরে আগাতে লাগল আমাদের দিকে।আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে মাত্রই কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই আমি আমার হাতের ফুচকা স্যারের মুখে ঢুকিয়ে দিলাম।স্যার মুখে ফুচকা নিয়ে কিছুই বলতে পারছে না।আমি জোরে জোরে হাসতে লাগলাম খুব।সামিয়াও হাসছে।আর স্যার তাড়াতাড়ি ফুচকা গেলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
ফুচকা খাওয়া শেষ হলে আমরা তিনজন তারপর বাসায় চলে আসলাম।

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর শুভ্র স্যার সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে আর আমি জানালার পাশে বসে জানালার বাইরে হাত বাড়িয়ে নেড়ে নেড়ে বৃষ্টির পানি ছুঁচ্ছি।
একটুপর স্যার আমার হাত টেনে বলল,কি করছো?ভিজে যাচ্ছো তো!
আমি তার কথার তোয়াক্কা না করে আবার হাত বাড়িয়ে দিলাম।
স্যার আবার হাত টেনে বলল,কতক্ষণ ধরে ভিজছো,ঠান্ডা লাগল কি করবে? কথা বললে কথা শুনো না।
তার কথা শুনে আমি ভুরু কুঁচকে মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হঠাৎ স্যার আমার গালে একটা কিস করে বসল।
আমি তো হতবাক হয়ে গেলাম।মুখ হা হয়ে গেল।
চোখ বড়বড় করে গালে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে স্যারের দিকে তাকালাম।স্যার মাথা চুলকাতে চুলকাতে অন্যদিকে তাকিয়ে লাজুক হাসি বলছে,
এতে আমার কোনো হাত নেই।তুমি বারবার মুখ ফুলিয়ে এত কিউট দেখাও কেনো?
বলে লাজুক হাসি দিতে দিতেই ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে বাইরে চলে গেল।আর আমি এখনো গালে হাত দিয়ে মুখ হা করে ভাবছি,এটা কি হলো!

রাতে শুভ্র স্যার আমাকে পড়াতে বসেছে।স্যার মুখের সামনে একটি মোটা বই তুলে পড়ে পড়ে আমাকে শুনাচ্ছে।কিন্তু আমার এত ঘুম পাচ্ছে কিছুতেই চোখ খুলে রাখতে পারছি না।একসময় ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে আমি কখন যেন স্যারের কোলেই মাথা পেতে শুয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি এখনো স্যারের কোলেই আছি।আর স্যার সেভাবেই বসা অবস্থায় খাটের সাথে হালকা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে।
তারমানে আমি সারারাত এভাবেই ছিলাম।কিন্তু স্যার আমাকে ডাকলো না কেনো?
আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম।আমার উঠে বসায় স্যার টের পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলে একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,”গুড মর্নিং”
আমি বললাম,আপনি আমাকে ডাকলেন না কেনো?আপনার এভাবে ঘুমাতে সমস্যা হয়েছে না?
স্যার মিষ্টি হাসি দিয়েই বলল,তুমি এত সুন্দর করে ঘুমিয়ে ছিলে ডাকতে ইচ্ছে করছিল না।তাই তো আমি সারারাত তাকিয়ে……
কথাটা সম্পূর্ণ না করেই সে উঠে বাথরুমে চলে গেল।আর আমার মনে একটি ভালো লাগাও তৈরি করে গেল।

একদিন বিকাল বেলা আমার বড় আপু আর ভাবী আসল আমাকে নিতে।আমি তো সেই খুশি।সে বার স্যার আমাকে যেতে দেই নি।এবার গিয়ে তাকে জব্দ করতে পারব ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগপত্র গুছিয়ে বের হলাম।
সামিয়ে বলল,ভাবী ভাইয়াকে বলেছো?
আসলে স্যারকে আমি এখনো বলি নি।বললে তো আর আমাকে যেতে দিবে না।
আমি মাকে মিথ্যা করে বললাম,মা আমার ফোনে চার্জ নেই।অফ হয়ে গেছে।আমি যাওয়ার পর আপনি একটু জানিয়ে দিবেন।
মা বলল,সুপ্তি তুমি যাও।আমি বলে দিব।
আমিও খুশি হয়ে চলে আসলাম।বাসায় গিয়ে পৌছাতেই……………

চলবে,,

ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১০

0

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১০
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

আজ আমাদের ভার্সিটিতে রিইউনিয়ন।অনেক বড় আয়োজন করা হবে।আমি সকাল থেকেই নীল
রঙের একটি শাড়ি পড়ে তৈরী হচ্ছিলাম।এত বড় অনুষ্ঠান বলে কথা,ভালো করে রেডি তো হতেই হবে।আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলাম।তখন স্যার এসে আমার পিছনে আলমারির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,বাব্বাহ্ আজ তো দেখি ভালো সাজুগুজু চলছে।

আমি আয়নায় তাকিয়েই হাতে চুড়ি পরতে পরতে
মুখ ভেংগিয়ে বললাম,
চলবেই তো।আজ কলেজে আমাদের সব সিনিয়ররা আসবে।কত বড় আয়োজন!সিনিয়রদের ঠিকমতো আপ্যায়ন করতে হবে না!
স্যার চোখ বড় বড় করে বলল,তাই নাকি।তুমি আবার আপ্যায়নও করতে পারো?তা কি আপ্যায়ন করবে শুনি?
আমি পিছনে ফিরে বললাম,সেটা আপনাকে বলব কেনো?
বলেই একটা ভাব নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।

আজ স্যার আমাকে দিয়ে আসে নি।ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়েছে।ভার্সিটিতে গিয়ে আমি পুরো বিস্মিত হয়ে গেলাম।এতো দেখি পুরো চেহারা পাল্টে গেছে।এত ডেকোরেশন।
আমার ক্লাসেরই একটি মেয়ে তিশা ওর সাথে আমার খুব ভাব,একটুপর আমার কাছে এসে বলল,এত দেরি করেছিস কেনো?
শুনেছিস?আমাদের সেকশনের মেয়েদের উপর পরেছে সিনিয়রদের আপ্যায়নের ভার।মাহমুদ স্যার বলে গেছে কোনো ত্রুটি যেন না হয়।
তারপর মুখে একটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল,
বলতো এখন অনুষ্ঠান এনজয় না করে কি সিনিয়রদের পেছনে পেছনে ঘুরবো।

ওর কথা শুনে আমারো চরম বিরক্ত লাগল।
শুভ্র স্যারকে বলা কথাটা যে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে কে জানত!আমি তো এমনিই বলে ছিলাম।
হলরুমে গিয়ে দেখলাম শুধু আমি আর তিশা না আমাদের ক্লাসের সব মেয়েরাই চরম বিরক্ত।
সবাই এত সাজগোজ করে এসেছে সেলফি তুলবে
আবার কেউ কেউ বফের সাথে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াবে।তা না করে এখন সবাই মিলে হলরুমে সিনিয়রদের জন্য ফুল,মালা,ব্যাচ আরো কত কি রেডি করছে।এই দায়িত্ব তো অন্য ক্লাসের মেয়েদেরও দিতে পারত?
আবার শুনি বেস্ট সিনিয়র স্টুডেন্টদের নাকি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করতে হবে গেট থেকে।
উফ!রিইউনিয়নে এত কিছু হয় বলে তো জানতাম না।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



একটুপর আমাদের এক বেশ সিনিয়র প্রফেসর মাহমুদ স্যার এসে বলতে লাগল,এই তাড়াতাড়ি কর।আজকে আমাদের কত সোনার টুকরো ছাত্র ছাত্রী আসবে তাদের যেন কোনো আপ্যায়নে ত্রুটি না হয়।সবাই তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে।
তারা যা চায় তা দিবে।যদি শুনি কাউকে ঠিকমতো দেখাশোনা করা হয় নি তাহলে তোমাদের সব কয়টার আমি পরে খবর নিব।
তারপর বাছাই করতে লাগল কে কে ফুলের মালা দিয়ে বেস্ট সিনিয়র স্টুডেন্টদের বরণ করবে।তারপর আমার হাতেও একটা ফুলের মালা তুলে দিয়ে স্যার চলে গেল।

কখন থেকে গেটে দাঁড়িয়ে আছি হাতে ফুলের মালা নিয়ে।একএক করে সিনিয়ররা ঢুকছে।আর মাহমুদ স্যারের বেস্ট স্টুডেন্টদের স্যার নিজে হাত ধরে ভেতরে ঢুকাচ্ছে।
হঠাৎ আমার সামনে যে, সিনিয়রের ব্যাচ পড়ে দাঁড়াল তাকে দেখে তো আমি আকাশ থেকে পড়লাম।আমার মুখ হা হয়ে গেল।

আমার সামনে একটি নীল রঙের পান্জাবী পড়ে শুভ্র স্যার দাড়িয়ে আছে।চোখে সানগ্লাস।পান্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করে হাতে কালো দামি ব্রান্ডেড ঘড়ি পরেছে।
স্যার সানগ্লাস খুলে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমটি হাসছে আর আমি মালা হাতে নিয়ে মুখ হা হয়ে দাড়িয়ে আছি।
হঠাৎ মাহমুদ স্যার এসে শুভ্র স্যারকে জড়িয়ে ধরল।তারপর আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল,শুভ্র তুমি এসেছো।কতদিন পর তেমাকে দেখলাম।
তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল,আমাদের ভার্সিটির এই পর্যন্ত সবথেকে সেরা স্টুডেন্ট শুভ্র।ওর মতো ভদ্র আর মেধাবী ছাত্র আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি।কি মেধা!এই ভার্সিটিতে এক বছর পড়ে স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনে গিয়ে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে।

তারপর আমাকে এক ধমক দিয়ে বলল,এমন হা করে না থেকে মালাটা তাড়াতাড়ি পড়াও।আর হ্যাঁ সুপ্তি,শুভ্রর ঠিকমতো দেখাশোনা করবে এই দায়িত্ব তোমার উপর রইল।
আমি স্যারকে আস্তে আস্তে মালাটা পড়িয়ে দিলাম।স্যার আমাকে একটি চোখ টিপ মারল।

আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম,পৃথিবীটা এত ছোট কেনো?আমার স্যার,বর আবার সিনিয়র একজনই।
স্যার মালা পড়ে সামনে চলে যাচ্ছে আর আমি সাইডে তাকিয়ে দেখলাম,সব মেয়েদের মুখ হা হয়ে গেছে।এখন আর কারো চোখে বিরক্তি নেই
সবার চোখে ইমপ্রেসড ভাব।তিশা আমার কাছে এসে বলল,একটু আগে চোখের সামনে এটা কাকে দেখলাম।এমন সুন্দর সিনিয়রের আপ্যায়ন তো আমাদের সারা জীবন করতে দিলেও খুশি।
সবার মুখেই এক কথা।সবাই শুধু শুভ্র স্যারকে খুঁজছে।
সত্যিই নীল পান্জাবীতে স্যারকে আজ দারুন লাগছে।চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।
নাহ্!স্যারকে এতটা সুন্দর আজকে না লাগলেও হত।
এই পেত্নিগুলি আবার আমার স্যারকে নজর না লাগিয়ে দেয়।

আমি একজায়গায় দাঁড়িয়ে পেপসির বোতলে চুমুক মাত্রই দিতে নিয়েছি তো স্যার এসে আমাকে বলল,যাও তোমার সিনিয়রের জন্য এক বোতল পেপসি নিয়ে আসো।
আমি চুপচাপ নিয়ে এসে তার হাতে দিলাম।এখন আবার সে বলে খুলে দাও।
এবার আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,কেনো আপনার হাতে কি মেহেদী লাগিয়েছেন?
স্যার বলল,সিনিয়রের কথা শুনছো না তার উপর আবার বেয়াদবি।বলব মাহমুদ স্যারকে?
আমি তার কথা শুনে ভুরু কুঁচকে মুখ ফুলিয়ে তার বোতলটা নিয়ে মুখ খুলে দিলাম।তারপর তার হাতে দিয়ে আমার পেপসির বোতলে একটা চুমুক দিলাম
আরেকটা চুমুক দিব তার আগেই স্যার তার হাতের বোতলটা আমাকে ধরিয়ে দিয়ে আমার বোতলটা নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চুমুক দিয়ে চলে গেল।
আর আমি ভাবতে লাগলাম সে আমার এটো করাটা কেন নিয়ে গেলো?

রিইউনিয়ন অনুষ্ঠানের প্রথমে ভার্সিটির প্রফেসররা একে একে লেকচার দিতে লাগল।মাহমুদ স্যার তো শুভ্র স্যারের গুনগান গাইতে গাইতেই শেষ।
আমরা সবাই চেয়ারে বসে আছি।আর বোরিং বোরিং ভাষন শুনছি।
স্যার যেখানে বসেছে তার পেছনের সারিতেই আমি বসেছি।স্যারের একদম পিছনে বসেছে আমাদের ক্লাসের সবথেকে ঢঙ্গী মেয়ে রিয়া।আর ওর তিন সিট পাশেই আমি।
রিয়া পেছন থেকেও হা করে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে।আর একটুপর পর এই সেই বাহানা নিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে।
আমার তো মনে হচ্ছে আমার পুরো শরীরে যেন কেউ মরিচের গুরো ছিটিয়ে যাচ্ছে।এত হাসাহাসির কি হয়েছে বুঝতে পারছি না।আর স্যারও দেখো কিভাবে দাতঁ কেলাচ্ছে।
হঠাৎ দেখলাম রিয়া ওর হাত স্যারের কাধেঁ রাখল।আমার পুরো শরীর জ্বলে গেল আমি ফট করে উঠে গিয়ে রিয়ার মাথার চুলগুলো ঝাকাতে শুরু করলাম তারপর ওর হাতের জুসের বোতল ওর মাথায় উপুর করে দিয়ে ফেলে দিলাম।প্রফেসর তার ভাষন থামিয়ে দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।চারপাশে সবাই দাড়িয়ে গেছে।শুভ্র স্যারও আমাকে থামনোর জন্য দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে সুপ্তি সুপ্তি বলে ডাকছে।
আমি শুধু শুনছি সুপ্তি সুপ্তি সু্প্তি…।হঠাৎ তিশার ধাক্কানোতে আমার ফিরে তাকালাম।ও আমাকে বলল,
কিরে এমন দাঁত কিরমির করে কি দেখছিস?কখন থেকে ডাকছি।
তারমানে এতক্ষণ ধরে আমি কল্পনা দেখছিলাম।
তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখনো তাদের হাসি চলছেই।আমি রাগে সেখান থেকে উঠে বাইরে চলে আসলাম।

মাঠে এক কোনায় দাঁড়িয়ে রয়েছি হঠাৎ চোখে সানগ্লাস পড়া একটি ছেলে এসে আমার দিকে হাত বারিয়ে বলল,হে প্রীটি গার্ল,তোমার নাম কি?

দেখেই বোঝা যাচ্ছে সিনিয়র।আমি বুঝতে পারছি না কি করব।এভাবে কোনো ছেলের হাত ধরতে ভালো লাগছে না কিন্তু সিনিয়র হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বারিয়েছে,না করলে অভদ্রতামি দেখায়।
আমি অতি সংকোচে হাতটা একটু একটু করে বাড়াচ্ছিলাম তখনি শুভ্র স্যার এসে সেই ছেলের বাড়িয়ে দেওয়া হাতে হ্যান্ডশেক করে বলল,কিরে রিফাত কি খবর?
সেই ছেলেটি মানে রিফাত স্যারকে জড়িয়ে ধরে বলল,দোস্ত কতদিন পর দেখা।
স্যারের পাশে আরেকটি ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল।
তাকে আমি চিনি।নাহিদ ভাইয়া,স্যারের বন্ধু।বিয়েতে দেখা হয়েছিল।নাহিদ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,আরে ভাবী যে।
রিফাত নামের ছেলেটি চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে অবাক হয়ে বলল,ভাবী??
নাহিদ ভাইয়া বলল,হ্যাঁ।এই তো আমাদের শুভ্রর বউ।কিন্তু ভাবী এখানে কেন?
শুভ্র স্যার বলে উঠল,ও এই ভার্সিটিতেই পড়ে।
রিফাত ভাইয়া বলল,ও তার মানে আমাদের জুনিয়র ভাবী।ভাগ্যিস আগেই বললি আরেকটু হলেই তো আমি প্রপোজ করে বসছিলাম।বলেই সে হাসতে লাগল।
শুভ্র স্যারের সম্ভবত কথাটি ভালো লাগল না।
তাদের দুজনকে বলল,ঐ তোদের ওখানে কেউ মনে হয় ডাকছে।

তারা দুজন চলে গেল।আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি যে স্যার মিথ্যা বলেছে।
তারপর আমাকে বলল,একটুপর পর কোথায় চলে যাও।খুঁজে পাই না।
আমি মুখ ভেংগিয়ে বললাম,কেনো হাসাহাসি শেষ হয়ে গেছে?বলেই চলে যেতে নিয়েছিলাম আর তারপরই শাড়ির সাথে পা লেগে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলাম।স্যার এসে আমার কোমড়ে হাত দিয়ে ধরে ফেলল।না হলে এক্ষুণি মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়তাম।কোনোমতে ঠিক হয়ে দাঁড়ালাম।
কিন্তু সমস্যা একটা বেঁধেই গেলো।আমার শাড়ির কুঁচি খুলে গেছে।এখন কি করি?
মুখটা কাঁদো কাঁদো করে কোনোমতে হাত দিয়ে শাড়ি সামলে রাখলাম।
স্যার আমার অবস্থা দেখে বলল,কি যে কর না!তারপর আমাকে ধরে একটি কাছের করিডোরের চিপায় নিয়ে গেল।সব ক্লাস বন্ধ।তাই এখানেই দাঁড়াতে হলো।
এখানে মানুষের ভালোই আনাগোনা।অন্য কোথাও যে যাবো,এই অবস্থায় তা সম্ভবও না।
আমি চিপায় দাঁড়িয়ে কুঁচি ঠিক করতে লাগলাম।
স্যার পেছনে মুখ করে আমায় আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে যাতে কেউ দেখতে না পারে।
এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়ি নি।কেমন যেনো লাগছে।তাড়াহুড়োয় কিছুই ঠিক করতে পারছি না।
তারউপর জামদানি শাড়ি বিধায় একা একা কুঁচি ধরতেও পারছি না।সকালেও সামিয়া ঠিক করে দিয়েছিল।

স্যার একটুপর বলল,কি হলো?তাড়াতাড়ি কর।
আমি কাঁদো কাঁদো করে বললাম,পারছি না।
স্যার এবার ফিরে আমার দিকে মুখ করে দাঁড়াল।তারপর আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নিচু হয়ে শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে লাগল।আর আমি তার দিকে
তাকিয়ে রইলাম।স্যার কুঁচি গুলো সব ভাঁজ করে আমার হাতে দিল।আমি তারপর আমার কোমড়ে তা গুঁজে নিলাম।কুঁচি কোমড়ে গোঁজার সময় শাড়ি ফাঁক হয়ে কোমড়ের খানিক অংশ বের হয়ে গেল।স্যার তা দেখে লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল।আর আমি তো লজ্জায় খুনই হয়ে গেলাম।
তাড়াতাড়ি আঁচল ঠিক করব তখনই কিছু ছেলে এখানে আসছিল বলে স্যার আমাকে আড়াল করার জন্য একদম আমার কাছে এসে পড়ল।যখন হঠাৎ দুজনেই বুঝতে পারলাম আমরা এত কাছে! তখন একে অপরের মুখে চোখ পড়তেই আমরা যেন কোথাও আটকে গেলাম।স্যার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল আর আমি স্যারের চোখে।দুজন যেন চোখের গভীরতায় হারিয়ে যাচ্ছি।পাশ থেকে হালকা হালকা বাতাস আসছে যার ফলে স্যারের সামনের কিছু চুল বারবার কপালে এসে পড়ছে আর আমার সামনের চুলগুলো পেছনের দিকে উড়ছে।মনে হচ্ছে কেউ মনের ভেতর সুর বাজিয়ে দিচ্ছে।আমাদের দুজনকে কেউ যেন স্ট্যচু করে দিয়ে চলে গেছে।
আচ্ছা একেই কি বলে চোখে চোখে কথা বলা?

বিকেলে শুভ্র স্যার আর তাদের গ্রুপের আরো বেশ কিছু ছেলে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আমি দূর থেকেই দেখছি।স্যারের কাঁধে একটি গিটার।সবাই স্যরকে গান গাইতে বলছে।স্যার আমার দিকে একপলক তাকিয়ে মুচকি হেসে গিটারে সুর তোলা শুরু করল।
তারপর আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে সুর তুলে গাওয়া শুরু করল।

হুমম হুমমম…হু♪♪হুমমম….হুমমম…হু♪♪♪♪
এতোটা কাছে.. তবুও কেনো আড়াল..♪♪♪
কোন সে ভুলে….আজ এ দ্বিধার দেয়াল♪♪♪
থামিয়ে আঁধার সময়……♪♪♪♪
চাইছে   তোমায়  হৃদয়……. ♪♪♪♪

আমি ধীরে ধীরে স্যারের দিকে আগাতে লাগলাম।মনে হচ্ছে যেনো সবকিছু থেমে স্লো মোশনে চলছে।আমি আর স্যার ছাড়া যেন এখানে আর কেউ নেই।
বাতাসেও যেন সুর বইছে।আর এর পরের লাইনটা
যেন আমার মনই গেয়ে উঠল…

ভালোবাসি…তাই কাছে আসি…..♪♪♪
ছুঁয়ে আছো এ মন…তুমি এখনও♪♪♪
ভালোবাসি…তাই কাছে আসি…..♪♪♪
হারাবে না এ পথ….জানি কখনও….♪♪♪

সবাই স্যারের কাছে গিয়ে জড়ো হচ্ছে।আর স্যার চোখ বন্ধ করে গিটারে সুর তুলে যাচ্ছে।তার মুখে এক লাজুক হাসি।হঠাৎ আস্তে করে চোখ খুলে আনমনে তাকিয়ে গেয়ে উঠল..

মিশে আছো তুমি…চেনা অনুভবে♪♪♪
ভুলে যাব আজই কেন তবে…..♪♪♪
খুঁজে দেখ যদি….পিছু অভিমানে♪♪♪
প্রিয় স্মৃতিগুলো কাছে টানে….♪♪♪
বেঁধে ছিলে আমায় অনুরাগে………♪♪♪♪♪♪

তারপর আস্তে আস্তে আমার দিকে তাকিয়ে….

♪♪♪♪♪তুমি হীনা পৃথিবী শূন্য লাগে….♪♪♪♪♪♪

ভালোবাসি তাই….কাছে আসি♪♪♪♪
ছুঁয়ে আছো এ মন….তুমি এখনও♪♪♪♪
ভালোবাসি…তাই কাছে আসি♪♪♪♪♪
হারাবে না এ পথ….জানি কখনও♪♪♪♪♪

আমাকে হারিয়ে যাওয়া থেকে ফিরিয়ে আনলো সকলের হাততালি।সবাই হাততালি দিয়ে শুভ্র শুভ্র করে চেঁচাচ্ছে।সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে গেছে।সত্যি স্যার এত সুন্দর করে গানটা গাইলো কি করে!অসাধারণের থেকেও বেশি।

সন্ধ্যার পরে কনসার্ট শুরু হল।সিংগার আনানো হয়েছে বড় বড়।তারা ব্যান্ড বাজিয়ে গান গেয়ে যাচ্ছে।আর সবাই লাফালাফি করছে।আমার হঠাৎ ওয়াশরুম যাবার প্রয়োজন পড়ল।তিশাকে যে নিবো ও নেচেই যাচ্ছে।কথা শুনছে না।এত জোরে জোরে গান হচ্ছে যে কানের কাছে কিছুই শোনা যাচ্ছে না।তাই আমি একাই ওয়াশরুমে গেলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমার পথ আগলে দাঁড়ালো আসিফ।আমার এক ব্যাচ সিনিয়র।ভার্সিটিতে আসার প্রথম দিন থেকে আমার পিছনে পড়ে আছে।আমি কখনো পাত্তা দেই নি।ওকে এইখানে এভাবে দেখে আমি তাড়াতাড়ি অন্য পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু সেখানেও সে আমার পথ আগলে দাঁড়িয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,কি হলো সুপ্তি আজকে আমার থেকে কিভাবে পালাবে?এই নিরিবিলিতে আমাদের ডিস্টার্ব করতে কেউ আসবে না।আজকে তোমাকে যা লাগছে না!
ওর কথা শুনে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
ভিষণ ভয় লাগছে।আমি আবারো চলে যেতে নিলে ও আমার হাত খপ করে ধরল।আমি হাত ছুটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি।কিন্তু পারছি না।খুব শক্ত করে ধরেছে।আমার হাতের কাঁচের চুরিগুলো ভেঙে হাতের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।খুব ব্যাথাও লাগছে।
আমার চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ে যাচ্ছে।এই শব্দের ভেতর কেউ আমার চিৎকারও শুনছে না।
ও আমার হাত ধরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য টান দিতেই আমাদের সামনে এসে কেউ………….

চলবে,,,

Protected: অতৃপ্ত জেইন

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: অন্তিম প্রহর

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

অনুভবে_তুমি অন্তিম পর্ব

0

#অনুভবে_তুমি
#শেষ_পর্ব
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

.
.
কোনো চান্স নিতে চায় না মুনতাসির।এই মেয়ের বিশ্বাস নেই, কখন কী করে বসে, তাই পরশু বিয়ে করার বদলে আজ সন্ধ্যাই ওদের বিয়ে হবে।বাকি অনুষ্ঠান খুলনাতে হবে।

বিকেলে লাজুক বাড়িতে এসে দেখে ঘর সাজানো, মেহমান এসেছে।সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ।এর মধ্যে মা এসে একটা মেরুন রং এর জামদানী শাড়ি আনে দিয়ে বলতেছে এটা পরো আজকেই তোর বিয়ে হবে, মি.নিজাম বলতেছে তার ছেলে নাকি আজকে বিয়ে করে তোকে নিয়ে যাবে , লাজুক এটা শুনে রাগে, দুঃখে লাজুকের কান্না করতে ইচ্ছে করছে ।

বাড়িতে মেহমান থাকায় লাজুক ঝামেলা করেনি আর।সন্ধ্যায় শরীয়ত মোতাবেক তার আর মুনতাসির চৌধুরী নীলাভের বিয়েটা হয়ে যায়।আজ থেকে সে মিসেস মুনতাসির চৌধুরী।অদ্ভুদ একটা ভালোলাগা খেলে যাচ্ছে লাজুকের মনে।আবার রাগও হচ্ছে।

রাত সাড়ে এগারোট লাজুক সেই কখন থেকে বিছানায় বসে আছে, মুনতাসির আড্ডা শেষ করে লাজুকের ঘরের দিকে যায় মুনতাসির ঘরে ঢুকতেই লাজুক তাকে ইচ্ছেমতো বকা দেয়।
“এই ঘরে কি আপনার?বের হয়ে যান এখনি।”
“অদ্ভুত! এটা আমার বউ এর ঘর।তোমার কথাতে বের কেন হবো?”
“আমি এই বিয়ে মানি না।”
“তোমাকে কে মানতে বলছে?আমার বউ মানলেই হবে।”
“আজব তো।বিয়ে তো আপনি আমাকে করছেন।আমিই আপনার বউ।আর কয়টা বউ লাগবে আপনার?”
“তুমিই তো বললে এই বিয়ে মানো না।এখন আবার বউএর অধিকার দেখাও কেন?”

একপ্রকার নীলাভকে মেরে ঘর থেকে বের করে দেয় লাজুক।

.
লাজুক গভীর ঘুমে আছন্ন।হঠাৎ করেই তার মনে হলো কেউ যেন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।ভয় পেয়ে যায় লাজুক।হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে ফোনটা খুজে বের করে ফোনের ফ্লাস অন করে, চমকে ওঠে লাজুক।নীলাভ তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।ঘুমের মধ্যে তাকে একটা বাচ্চার থেকে মত মনে হচ্ছে, লাজুক ভাবনা বাধ দিয়ে ডাকতে থাকে নীলাভকে,

“স্যার এই ঘর থেকে বের হোন।ভালো করে বলছি, এরপর কিন্তু উত্তম মধ্যম প্রহার করবো।”
” মায়াকন্যা কী হয়েছে একটু ঘুমাতে দাও, সারাদিনে অনেক জ্বালিয়েছ তুমি, আজকে আমাদের বাসর রাতে তাও তুমি একটু আদর করলা না, এখন আমাকে ঘুমাইতে দিচ্ছ না ।”
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো নীলাভ।লাজুকের বুকটা ধক করে ওঠে ওর এমন কণ্ঠ শুনে।নিজেকে সামলিয়ে নীলাভকে খাট থেকে ফেলে দেয় লাজুক।নীলাভ এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

“উফ মায়াকন্যা!এতো জ্বালাও কেন বলোতো?”
“বের হোন এখান থেকে।”
“আচ্ছা, বের হয়ে যাচ্ছি।”

নীলাভ ঘরের মধ্যে পায়চারী করছে।লাজুক নীলাভের মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছে না।হুট করে নীলাভ লাজুককে পাজাকোল করে ছাদে নিয়ে যায়।লাজুক হতভম্ব হয়ে যায়।লাজুক কিছু বলার আগেই নীলাভ বলে,

“তোমার অনেক অভিমান আমার উপর, এটা আমি জানি।আমাকে প্লিজ মাফ করে দাও।তোমাকে শুভাকাঙ্খী হয়ে সবসময় আগলে রেখেছি।তোমার বস হয়ে শাসন করেছি।আমার অনুভবে সবসময় তুমি ছিলে।আমিও চাইতাম যেদিন তুমি নিজ মুখে বলবে নীলাভ আমার #অনুভবে_তুমি ছাড়া আর কেউ নেই ।সেদিন তোমার সামনে আসবো।” নীলাভ চলে
যেতে নিলে লাজুক তার হাত ধরে বলে উঠলো “আমার অনুভবে আপনি ছিলেন,আছেন এবং আজীবন থাকবেন।”

কথা গুলো বলে লাজুক নীলাভকে জড়িয়ে দরে তার বুকে মুখ লুকায়।লাজুক মনে মনে ভাবে, জীবন কতো সুখের?

ছাদে পাতানো দোলনাতে বসে নীলাভ আর লাজুক চন্দ্রবিলাস করছে।চাঁদটা আছ পরিপূর্ণভাবে উঠেছে।নিশাচরেরা ডাকছে।এর মাঝে সদ্য বিয়ে করা দুজন কপোত-কপোতী তাদের ভালোবাসা বিনিময় করছে।আলতো কণ্ঠে লাজুকের কানের কাছে মুখ এনে নীলাভ বলে,
.
.
আমি রবির প্রথম কিরণে তোমাকে চাই, কাকডাকা ভোরে দুর্বাঘাসের শিশিরবিন্দুতে শুধুই তোমাকে পাই;

তুমি মেঘে ঢাকা আকাশে এক চিলতে আলো, তুমি মোর অমনিশায় সহস্র প্রদীপ হয়ে জ্বলো।

শত ব্যর্থতায় যবে, ডুবি আমি আধারে, দেখা দাও তুমি চন্দ্র হয়ে ভেসে অকুল পাথারে।তুমি মানে শত সহস্র আশা, তুমি মানে শত ঘৃণার বিপরীতে এক পৃথিবী ভালোবাসা।

গোলাপের সৌন্দর্য হয়ে যায় ম্রিয়মান যখন দেখি তোমায়, স্বপ্ন ভেলায় ভাসমান; তুমি মানে আশা, তুমি মানে ভালোবাসা, তুমি মানে পূর্ণিমার আলো, তুমি মানে হৃদবনে জ্যোৎস্না এলোমেলো।

কখনো বলিনি তাই আজ বলছি,
“অনেক বেশি বাসি ভালো।”

(সমাপ্ত)

 

অনুভবে_তুমি পর্ব ১২

0

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ১২
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

সকাল সাত টা,,,লাজুক তখনো ঘুমে বিভোর, ইদানীং কী যে হয়েছে লাজুকের,অনেক বেলা অবধি ঘুমায়।

লাজুক উঠে দেখে সাত টা বাজে।ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে নাস্তা সেরে রুমে যায় রেডি হতে।

লাজুক ভাবে শাড়ি পরে যাবে না কি সালোয়ার কামিজ! পরে আবার চিন্তা করে শাড়ি পরেই যাই।
মুনতাসির চৌধুরী তো আর সেখানে থাকছেনা।শাড়ি পরে গেলেও দেখবেনা।

লাজুক এসব ভেবেই খয়েরী কালারের একটা কাতান শাড়ি হাতে নেয়।

শাড়ি টা সুন্দর করে পরে আঁচল ছেড়ে দেয়।ম্যাচিং অর্নামেন্টস পরে নেয়,চুল হাত খোপা করে মায়ের সামনে গিয়ে বলে,”দেখোতো কেমন লাগছে আমাকে?”

“আমার মেয়েকে সবসময় সুন্দর লাগে।এখন আসো নাহলে দেরী হয়ে যাবে ।”

লাজুক:- আচ্ছা আম্মু আমি যাচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।

লাজুক বেরিয়ে যায় সেই চিরচেনা স্কুলের পথে, স্কুলের গেইটে যেতেই অবাক হয় লাজুক।

গেইটের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে তুলিন।লাজুক কে দেখে তুলিন এগিয়ে আসে।

লাজুক দেখেও না দেখার মতো করে হাঁটতে থাকে।কিন্তু কোনো লাভ হয়না।

তুলিন লাজুকের সামনে এসে পথ আটকায়।

লাজুক কথা বলেনা।চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

তুলিন:- লাজুক আমি জানিনা তোমার কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইবো, তুমি চলে যাবার পর থেকে আমি ভালো নেই, তোমাকে কষ্ট আমি যেই কষ্ট দিয়েছি তার চেয়েও অনেক বেশি কষ্ট আমি এখন পাচ্ছি, দয়া করে পারলে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।

লাজুক:- কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখী হতে পারে না, আমার কোনো অন্যায় ছিলোনা তারপর ও তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছ, যাক সেই সব কথা এখন বলে আর কোনো লাভ নেই, দেরিতে হলেও বুঝতে পারছ এটাই অনেক, তুমি তোমার কাজে অনুতপ্ত তাই আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম ।
আমার সাথে আর কখনো যোগাযোগ চেষ্টা করবে না আমার সামনেও আসবে না।

তুলিন আর কিছু বলেনা, লাজুক ও সামনে পা বাড়ায়।

অনেকদিন পর ইফরা,তুলিকা সবার সাথে দেখা হয় লাজুকের।লাজুক ওদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো।

কোথ থেকে জানি এক জোড়া হাত লাজুক কে টানতে টানতে ওদের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেলো।

“এই মেয়ে তুমি আজকেও শাড়ি পরে এসেছো?শাড়ি পরো কেন এতো হ্যা?”

কথাগুলো খুব রেগে বলতেছে মুনতাসির লাজুক কে।

লাজুক:- আমার হাত ছাড়ুন, সবাই দেখছে আমাদের।তার আগে বলুন আপনি এখানে কি করছেন?

মুনতাসির:- আমি এই স্কুলের চিপ গেস্ট হয়ে এসেছি।
আপনাকে বলেছিলাম বার বার শাড়ি না পরতে।যেহেতু পরেছেন আজ শাস্তি পাওনা।

বলেছিলাম আমি আপনাকে আমার করেই ছাড়বো,আজ সন্ধ্যায় আপনার আর আমার বিয়ে।
কথা টা মাথায় ঢুকিয়ে নেন।

লাজুক:- এক মিনিট।আমার আর আপনার বিয়ে মানে? আমার তো কাল এনগেজমেন্ট হয়েছে অন্য কারো সাথে।

মুনতাসির:- হায় রে বোকা মেয়ে।বোকা বোকাই থেকে গেলো।
মি.নিজাম চৌধুরী আমার বাবা।
তোমার সিনিয়র শিক্ষক।
সেই কাল তোমার হাতে আংটি পরিয়ে এসেছে।

লাজুক মুনতাসিরের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো।

কিন্তু কোনো প্রশ্ন করার আগেই দেখলো সেখানে মুনা ও এসেছে।

মুনা এসেই লাজুক কে প্রশ্ন করলো,”কেমন আছো লাজুক?”

লাজুক:- আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।আপনি?

মুনা:- আমিও ভালো আছি। তো কেমন সারপ্রাইজ দিলাম তোমায় বলো?

লাজুক:- আমি সত্যিই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি ।আমি এখনও ভাবতেই পারছিনা কী হচ্ছে আমার সাথে, আমার যার সাথে এনগেজমেন্ট হয়েছে সে নাকি মুনতাসির চৌধুরী।

মুনা:- কেন হতে পারে না ? এনি হাউ তুমি কী কোনো কারণে বিয়েটা করতে চাচ্ছোনা?
যায় বলো লাজুক,আমি কিন্তু তোমার চোখে নীলের জন্য ভালোবাসা দেখেছি।
অন্য মেয়ের প্রতি জেলাস দেখেছি।

লাজুক:- আপনি না স্যারের গার্লফ্রেন্ড?

লাজুক এ কথা বলাতে মুনা ও নীলাভ দুজনে একসাথেই হেসে ওঠে।

মুনা বলে,” হ্যা গার্লফ্রেন্ড তো।আমি নীলাভের ছোট্ট বেলার বেস্টফ্রেন্ড। আমাদের আরেকটা সম্পর্ক আছে।আমি নীলাভের থেকে ছয় মাসের বড়।আর আমি ওর চাচাতো বোন।

লাজুক মুনার কথা শুনে মুনতাসিরের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
আর বলে, “তাহলে এতোকিছু সব নাটক ছিলো?”

মুনা বলে,”হ্যা নাটক ছিলো।কারন নীল বুঝতে পারছিলোনা তোমার মনে ঠিক কী চলতেছে ।তাই সে আমার সাথে সব শেয়ার করে, আর আমরা এই প্ল্যান করে শিওর হলাম, তুমি নীলকে ভালোবাস।সরি লাজুক তোমার সাথে এতো নাটক আর তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য ।”

“তবে কি জানো,নীল তোমাকে অনেক ভালোবাসে।ওর সামনেই আমি তোমাকে বলছি।অনেক আগে থেকে ও তোমাকে ভালোবাসে।”

লাজুক মুনার কথা শুনে মনে মনে খুশি হলেও মুখে প্রকাশ করেনা।

মুনতাসিরের দিকে রাগী রাগী মুখ করে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায় ততোক্ষনে।

অনুষ্ঠানের সকলের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু হলো লাজুক।এটাই সেই মেয়ে যার জন্য গ্রামে কত কাহিনী চললো।এটাই সেই মেয়ে যে আট বছর আগে তার ঘর ছেড়েছিলো।হ্যাঁ এটাই সেই মেয়ে যে এখন প্রতিষ্ঠিত।একজন সফল নারী চরিত্র।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের অনুষ্ঠান শুরু হয়।একে একে বর্তমান অনেক শিক্ষার্থীরা নাচ অথবা গান করছে।মুনতাসির প্রধান অতিথি হওয়াতে তার অবস্থান স্টেজে।আর লাজুক একদম প্রথম সারীতে বসে আছে।লাজুক দেখলো মুনতাসির তাদের শিক্ষককে কিছু একটা বললো।উনি উঠে মাইক্রোফোনের সামনে এসে বলেন,
“আজ থেকে গত আট বছর আগে এক সুমিষ্ট কণ্ঠের মেয়েকে চিনতাম আমি।আজ তার কাছে আমার অনুরোধ লাজুক রহমান তুমি স্টেজে আসো।”

লাজুক কিছু বুঝে ওঠার আগে ইফরা আর তুলিকা তাকে এক প্রকার জোর করে পাঠিয়ে দেয়।ভদ্রতার খাতিরে একটা মিষ্টি হাসি মুখে ঝুলিয়ে লাজুক স্টেজে যায় গান গাওয়ার জন্য।

“মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?
কেন মেঘ আসে হৃদয়ে-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয়না।
কী করিলে বলো পাইব তোমারে রাখিব আঁখিতে আঁখিতে
ওহে এতো প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ,তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।”
.
.
গানটা শেষ করে লাজুক মুনতাসিরের দিকে তাকাতেই মুনতাসির তাকে একটা চোখ টিপ দিলো।লাজুক কপট রাগ দেখিয়ে চলে আসে।

প্রায় বিকালে অনুষ্ঠান শেষ হয়।গোধূলি সময়, কোকিলের সমারোহ, ডালে ডালে অজস্র কৃষ্ণচূড়া।লাজুক স্কুলের পিছনের মাঠটাতে এসে হাঁটাহাঁটি করছিলো।হুট করে একটা হাত তাকে টেনে নিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের সাথে বাহুবন্ধী করে ফেলে।প্রথমে ভয় পেলেও এখন লাজুকের লজ্জা লাগছে।প্রচন্ড আকারে লজ্জা।কারন এ যে তার অতি আপন একজনের ছোঁয়া।ভালোলাগাকে বাক্সবন্দী করে লাজুক ধাক্কা দেয় মুনতাসিরকে।

“আরে আরে কি করছো মায়াকন্যা?ব্যাথা পাবো তো।তাহলে পরশু আর বিয়ে করা লাগবে না।”

বাকি কথা লাজুকের কানে যায়না।সে অবাক হয়।কেননা মুনতাসির তাকে মায়াকন্যা বলে ডাকলো?মায়াকন্যা তো শুভাকাঙ্খী বলে।সন্দেহ নিয়ে লাজুক মুনতাসিরের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছোড়ে,

“আপনি আমাকে কি বলে ডাকলেন?”
“কেন?মায়াকন্যা বলে ডেকেছি।”
“এই নামটা আপনি কোথায় পেলেন?”
“আজব তো! আমিই তোমাকে এই নামে ডাকি।আর কে ডাকে?”
.
.
মুনতাসিরের ঠোঁটে মারাত্মক রহস্যজনক হাসি।লাজুক হিসেব মেলাতে পারছে না।মুনতাসির আর নীলাভ একই মানুষ।শুভাকাঙ্খী আলাদা।সে আমাকে মায়াকন্যা ডাকে, এদিকে স্যারও আমাকে মায়াকন্যা বললো।

তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে লাজুকের।আর মুনতাসির লাজুকের এই অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে।এক পর্যায়ে লাজুক হাত দিয়ে মাথা চেপে নিচে বসে পড়ে।মুনতাসির ভয়ে ভয়ে লাজুকের কাছে প্রশ্ন করে,
“মায়াকন্যা সমস্যা হচ্ছে তোমার?”

লাজুকের কোনো ভাবান্তর নেই।সে ফোন হাতে নিয়ে ডায়াল করে শুভাকাঙ্খীর নাম্বারে।আর লাজুককে অবাক করে মুনতাসিরের ফোন বেজে ওঠে।

চোখে মুখে রাগ উপচে পড়ছে লাজুকের।ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে এখানে জ্যান্ত পুতে ফেলতে।রাগটাকে নিয়ন্ত্রনে রেখে লাজুক শান্ত স্বরে প্রশ্ন করে,

“আর কয়টা রূপ আছে আপনার?”
“আর নেই।”

লাজুক মুনতাসিরকে ইচ্ছেমতো বকা দিয়ে চলে আসে।এইভাবে ঠকালো সবাই ওকে?

চলবে

অনুভবে_তুমি পর্ব ১১

0

 

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ১১
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)

ম্যাসেজ টা দেখেই লাজুক চমকে যায়।

স্কুলের পূর্ন মিলনী আয়োজন করা হয়েছে।তার ইনভাইটেশন ম্যাসেজ এসেছে লাজুকের ফোনে।

কিন্তু লাজুক ভাবছে অন্য কথা।স্কুল শেষ করেছে আট বছর হয়ে নয় বছরে পড়েছে ।
এর মধ্যেই আবার কিসের পূর্ন মিলনী?

এসব ভাবা বাদ দিয়ে লাজুক তার মায়ের কাছে গিয়ে মাকে ব্যাপার টা জানায়।

নাহার বেগম বলেন,”হ্যা মা তোর স্কুলের হেডস্যার এসেছিলেন গতকাল।তুই ঘুমিয়েছিলি তাই তোকে ডাকিনি।
উনি ও বলে গেছেন স্কুলে উপস্থিত হতে হবে তোকে।”

লাজুকঃআম্মু তুমি জানোতো আমি স্কুলে যেতে চাইনা আর।তবু কেন বলছো?

আম্মুঃদেখ,স্যার নিজে এসে বলে গেছেন।তুই না চাইলেও তোকে যেতে হবে স্যারের সম্মান রক্ষার্থে।

“ধুর আর ভাল্লাগেনা।আচ্ছা যাবো।”

আম্মুঃএইতো লক্ষ্মী মেয়ে।এখন যা তো চট করে একটা শাড়ি পরে নে।

লাজুকঃশাড়ি! হঠাৎ করে শাড়ি কেন পরবো?কেউ কি আসবে?

আম্মুঃহ্যা,আজ তোকে দেখতে আসবে।আশা করি তোর কোনো আপত্তি নেই!

লাজুক আম্মুর কথা শুনে মন খারাপ করে ফেললো, তবু মুখে অস্পষ্ট ভাবে বলে,”না আমার কোনো আপত্তি নেই।”

লাজুকের মা হাসে।
আর বলেন,”ভালো ছেলে।আমার পরিচিত।আশা করি তোর ও ভালো লাগবে।আর তাছাড়া ছেলেটা তোকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো।”

লাজুক আর কথা বাড়ায়না।রুমে চলে যায় ওখান থেকে।গিয়ে দেখে ফোনে ম্যাসেজ আসছে।

ম্যাসেজ চেক করে দেখে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে তার মধ্যে লেখা, “মিস লাজুকআমাদের খুব শীঘ্রই আবার দেখা হবে।”

লাজুক পাত্তা দেইনা।ভাবে যে হয় হোক পরে যখন দেখা হবে তখন দেখা যাবে ।

লাজুক তখন শুভাকাঙ্ক্ষী কে ফোন করে, তাকে আজ দেখতে আসবে তা জানায়।

শুভাকাঙ্ক্ষীর কোনো ভাবান্তর নেই তাতে।

লাজুকের কেন জানি মনে হলো শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে ইগ্নোর করছে।

“আচ্ছা আপনি কি আমাকে ইগ্নোর করছেন?”

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ কই না তো! তোমার এমন কেন মনে হলো যে আমি তোমাকে ইগ্নোর করছি?

লাজুকঃনা আসলে আগের মতো ফোন করেন না।কথাও বলেন না তেমন তাই আর কি!

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ আসলে লাজুক আমি একটা মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম।তার আশা করেই বসেছিলাম।ভেবেছিলাম সে ও একদিন আমাকে ভালোবাসবে।
কিন্তু কি জানো তো সবাই ভালোবাসা পায়না।তাই আমার ও পাওয়া হলোনা।

বাবা-মা বেশ ক’দিন যাবত বিয়ে নিয়ে পড়েছে।যখন বুঝলাম আমার আর তাকে পাওয়া হবেনা।তখন বাবা-মা এর কথায় রাজি হয়ে গেলাম।

আজ বিকালে বাবা-মা মেয়ে দেখতে যাবে।সেজন্য আমি একটু ব্যস্ত।

লাজুকঃআপনি সত্যিই আমাকে ইগ্নোর করছেন।কারন আপনি আজ অবধি কখনো আমাকে আমার নাম ধরে ডাকেননি।
আজ ডাকলেন।

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ আমি তোমার নাম ধরে ডেকেছি! ভুলে গেছি।আসলে অন্যমনস্ক ছিলাম তো তাই।

আচ্ছা আমি রাখছি।পরে কথা হবে।

লাজুককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দেয় শুভাকাঙ্ক্ষী।

লাজুক ভাবনায় পড়ে যায়।কী হয়েছে শুভকাঙ্ক্ষির কেনো এমন করতেছে তার সাথে।

লাজুক আর না ভেবে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে এসে একটা কাঁতানের কচি কলাপাতা কালারের শাড়ি পরে।
মাথায় ঘন কালো কোঁকড়ানো চুল, চোখে হালকা কাজল, আর হালকা সাজে লাজুক কে অপরূপ লাগছে।

নাহার বেগম মেয়েকে দেখে মেয়ের চোখ থেকে কাজল নিয়ে কানের পিছে লাগিয়ে নখ কামড়ে দেন।আর বলেন,”কারো যেনো নজর না লাগে আমার রাজকন্যার উপর।”

“মা কি হচ্ছে এসব।এখনো কুসংস্কার নিয়ে পড়ে আছো! তুমি না শিক্ষিত!এসব কেউ মানে?”

নাহার বেগমঃ ও তুই বুঝবিনা।যখন মা হবি তখন বুঝবি।

মা-মেয়ের খুনিশুটির অবসান ঘটে কলিং বেলের শব্দে।

“এইরে একদম ভুলে গেছি।ওনারা বোধ হয় চলে এসেছেন।যা তো মা দরজা টা খুলে দিয়ে আয়।”

হু,যাচ্ছি মা যাচ্ছি, এতো হাইপার হয়ে যাও কেন বুঝিনা ।”

লাজুক কথাগুলা বলতে বলতেই দরজা খুলে অবাক হয়।

লাজুকের সামনে এখন দাঁড়িয়ে আছে তার সেই কলেজ লাইফের “সিনিয়র শিক্ষক” মি. নাজিম।

যে সব সময় লাজুক কে সহযোগিতা করতো, তাকে অনুপ্রেরণা দিতো,

লাজুক স্যার কে দেখেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে,

লাজুকঃ স্যার কেমন আছেন, কোথায় ছিলেন এতো দিন, অনেকদিন পর আপনাকে দেখেছি।আমি কতো খুঁজেছি আপনাকে।
আমার সকল মন খারাপের সময় আমার আপনার কথা মনে হতো শুধু।
অবশেষে আজ আপনার দেখা পেলাম।তাও আবার আমার বাড়িতে।

মি.নাজিম:- এতো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর দিবো,
এতোদিন আমি আর আমার স্ত্রী দুজনেই বিদেশে ছিলাম।
৪-৫ দিন হলো দেশে এসেছি।
আর যাবোনা।ছেলে ও এসেছে বাড়িতে।ভাবছি ছেলের বিয়ে দিয়ে এখানেই থেকে যাবো।

নাহার বেগমঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইজান! কেমন আছেন আপনারা?

মি. নাজিম:- আলহামদুলিল্লাহ ভাবী আমরা ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?

নাহার বেগমঃ এতো দিন ভালো ছিলাম না, এখন আমার মেয়ে এসেছে তাই আমি এখন ভালো আছি, এখন আপনাদের আমানত আপনাদের হাতে তুলে দিতে পারলেই আমার শান্তি।

মি.নাজিম:- হ্যা ভাবী আমরা আজ লাজুক মা কে আংটি পরাতে এসেছি।
যা কথা ছিলো তা তো আগেই হয়ে গেছে।তবু একবার লাজুক মায়ের মতামত আমরা জানতে চাই।

আমার ছেলের কি জানি একটা কাজ পড়ে গেছে,সেজন্য সে আসতে পারেনি।তবে সে বার বার করে বলে দিয়েছে লাজুকের মতামত যেনে তারপর বিয়ের কথা পাকা করি, লাজুকের মতের বিরুদ্ধে যেনো না যাই।

তা লাজুক মা তোমার কি কোনো আপত্তি আছে? তুমি আমকে নির ভয়ে বলতে পারো, আমি তোমার মতের বিরুদ্ধে যাবো না ।

লাজুক:- আসলে স্যার আম্মু যখন আমাকে বলেছিলেন যে আজ আমাকে দেখতে আসবে,তখন একটু মন খারাপ হয়েছিলো আমার।

কিন্তু এখন আপনাদের দেখে আর মন ভালো হয়েছে গেছে ।
আমার সৌভাগ্য আপনার বাড়িতে আপনারা আমাকে জায়গা দিবেন।

বাবাকে হারিয়ে মাথার উপর যে ছাঁয়া টা আমি পেয়েছিলাম সেই ছাঁয়া আপনি।
তাই আমার কোনো আপত্তি নেই।

মি.নাজিম:- আলহামদুলিল্লাহ।তাহলে তো হয়েই গেলো।আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে। তোমায় আমার ছেলের বউ করে নয় আমার মেয়ে করে নিয়ে যাবো । তুমি আমার মেয়ের মতো থাকবে, কী পারবে না আমাদের বাবা মা ভাবতে।

লাজুক লজ্জা পেয়ে গেলো স্যারের কথা শুনে।

লাজুক কে তারা আংটি পরিয়ে দিলো, তারপর ওনারা নাস্তা করে বেরিয়ে গেলেন নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

লাজুক রুমে আসার পর এক ধ্যানে আংটির দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো,”আজ থেকে আমি কারো বাগদত্তা।কিন্তু কার বাগদত্তা আমি?
নাম টা ও জানিনা।স্যারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ সেজন্য কোনো আপত্তিও করলাম না।আমি কি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম?”

লাজুকের ভাবনায় ছেদ ঘটে ম্যাসেজ টোনে।

লাজুক ভীষণ বিরক্ত হয়।কাল থেকে শুধু ম্যাসেজ আসছে লাজুকের ফোনে।

“আজ থেকে তুমি আমার বাগদত্তা।আমার মায়াবতী বউ।”

লাজুক তখন ছোট্ট করে রিপ্লাই দেয়,”তাহলে আপনিই আমার হবু স্বামী! কিন্তু দেখেন কি আজব,আমি আপনাকে দেখিনি আর আপনার নাম ও জানিনা।”

অপরপাশ থেকে কোনো রিপ্লাই নেই।

কিছুক্ষন বাদে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে লাজুকের ফোনে।

লাজুক তখন খুব বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়।

অপরপাশেঃমিস লাজুক আপনি কোথায়? আমি আপনার বাসার সামনে আছি।বাইরে আসুন তো।

একদমে কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দেয় লাজুক কে কিছু বলতে দেয় না।

লাজুক ভাবে এটা আবার কে,কেমন অভদ্র আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কেটে দিলো! কে হতে পারে এই ভাবে বাহিরে যাওয়ার জন্য বলতেছে?

লাজুক তখনো শাড়ি পরাই ছিলো।সন্ধ্যা সাত টা তখন।লাজুক গেট খুলে গেটের বাইরে গিয়ে দেখে মুনতাসির পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

লাজুক কাছে যেতেই মুনিতাসির বলে,”কখন কল দিয়েছি,এখন আসার সময় হলো?”

লাজুক কিছু বলেনা।চুপ করে থাকে।

মুনতাসির লাজুক কে চুপ থাকতে দেখে বলে,”এই আপনার সমস্যা কি বলুন তো!যখনি দেখি তখনি শাড়ি পরে থাকেন।শাড়ি পরতে আপনার এতো ভালো লাগে?”

লাজুক:- আসলে স্যার আজ আমার এনগেজমেন্ট ছিলো।

মুনতাসির চোখ কুঁচকে বলে,”ও আচ্ছা! তা আপনার জামাই কি করেন?”

লাজুক:- জানিনা।আমি তো তাকে দেখিইনি।তার নাম ও জানিনা।

মুনতাসির লাজুকের কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে।

লাজুক:- আজব মানুষ তো আপনি! এতে হাসার কি আছে?

মুনতাসির:- জানেননা,চিনেননা তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলেন?

লাজুক:- হ্যা রাজি হয়ে গেলাম।কারন তাকে পছন্দ করেছে আমার আম্মু,আর আমাকে যিনি সবসময় সহযোগিতা করতেন অনুপ্রেরণা দিতেন আমার সেই প্রিয় শিক্ষক।
তারা অবশ্যই আমার খারাপ চাইবেনা।
আর আমার হবু স্বামী আর যায় হোক আপনার মতো এমন খচ্চর আর বাঁদর হবেনা।

মুনতাসির লাজুকের হাত ধরে টেনে পাশে নিয়ে এলো,আর বললো,”কি বললেন আমি বাঁদর? দেইখেন এই বাঁদরের গলায় ই না আপনাকে মালা পরাতে হয়।”

এটা বলে বাঁকা হাসি দিয়ে মুনতাসির লাজুক কে বলে,”চলুন তো এখন! টং দোকানের চা খাবো।একা একা ভালো লাগেনা তাই আপনাকে সাথে নিলাম।”

লাজুক আর মুনতাসির যখন চায়ের দোকানে যায় তখন এক ছেলে বলে ওঠে,”কি ভাই সাথে ভাবী নাকি?”

মুনতাসির বলে,”হ্যা তোমাদের ভাবী।”

“আচ্ছা ভাই বসেন ভাবীরে লইয়া যেহেতু আসছেন দু’কাপ গরম গরম চা খাইয়া যান।”

লাজুক মুনতাসিরের দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করতে থাকে।
আর আস্তে করে মুনতাসিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”ওই আমি আপনার কোন কালের বউ? সবার কাছে আমাকে বউ বলে পরিচয় দেন কেন? আর তাছাড়া আমি এখন অন্যের বাগদত্তা।সে জানলে কি হবে ভাবুন তো একবার?”

মুনতাসির:- এহ আইছে অন্যের বউ হতে, আমি বলেছিনা আপনাকে আমার করেই ছাড়বো।
কারো বাগদত্তা হলেও আপনি তাকে ভুলে যান।

এখন থেকে শুধু সারাক্ষন আমার কথা ভাববেন।শয়নে,স্বপনে সব জায়গায় থাকবে শুধু মুনতাসির।

লাজুক চোখ মোটা করে তাকায় মুনতাসিরের দিকে।আর বলে,”স্যার আপনি কি জানেন আপনি দিন দিন লুচুর খাতায় নাম লেখাচ্ছেন?”

মুনতাসির কিছু না বলে এক হাতে লাজুককে জড়িয়ে ধরে বলে,”বউ রাগ করে এতো দূরে দূরে কেন দাঁড়িয়ে আছো? এটা তো আমার ই এলাকা।কেউ কিচ্ছু মনে করবেনা।”

লাজুক অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায়।

“কি করছেন কি লোকের সামনে এগুলা।বললাম না আপনাকে আমার এনগেজমেন্ট হয়েছে আজ!”

মুনতাসির:- ওটা আমার সাথেই হয়ছে বউ।তুমি অন্য কারো কথা ভুলে যাও কেমন।
তুমি শুধু আমার।আর কারো না।

লাজুক:- ফাজলামির একটা লিমিট থাকে।আপনার গার্লফ্রেন্ড মুনা আছে।তবু কেন আমার সাথে এমন করছেন?

মুনতাসির আর কথা বাড়ায়না।লাজুকের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে বলে চা খান এখানে বসে।

লাজুক ও আর কিছু বলেনা।অনেক টা রাত হয়ে গেছে।লাজুক মুনতাসির কে বলে,”স্যার আমি বাসায় যাবো।আম্মু চিন্তা করবে।আসার সময় বলে আসিনি।ফোন ও আনতে সময় পায়নি।”

“হ্যা চলুন এগিয়ে দিয়ে আসছি আমি।”

লাজুক কে এগিয়ে দিয়ে এসে মুনতাসির নিজের বাড়ি চলে যায়।

লাজুক ভাবে, “স্যার কিসব বললেন আজকে? ওনার সাথে এনগেজমেন্ট হয়েছে মানে কি?আচ্ছা আম্মুর কাছে জামাইয়ের নাম শুনে আসি।”

“আম্মু! ও আম্মু! আমার জামাইয়ের নাম কি আম্মু?”

নাহার বেগম:- কিরে চেচাচ্ছিস কেন? কী হয়েছে ?

লাজুক:- তোমার জামাইয়ের নাম কি?

নাহার বেগম:- জানিস না তুই? নাম্বার দিচ্ছি ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করে নিস।এখন জ্বালাসনা তো আমাকে।

লাজুক ব্যার্থ মনে নাম্বার নিয়ে রুমে চলে এলো কিন্তু কল দিলোনা।

ঘুমিয়ে পড়লো কারন অনেক রাত হয়েছে।সকালে উঠে তো আবার স্কুলে যেতে হবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হবে।

চলবে,,,,,