ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৪+১৫
#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৪
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
একদিন বিকেলে সপিংমলে গেলাম।কিছু টুকটাক কেনাকাটা করতে।আমি একাই এসেছি।
সেখানে হঠাৎ তমার সাথে দেখা।
তারপর আমার মন খুশিতে ভরে উঠল এতদিন পর নিজের বেস্টুকে সামনে দেখে।আমি ছুটে গিয়ে তোমার নাম ধরে ডাকলাম।
তমাও আমাকে দেখে এক পলকের জন্য খুশিতে ঝিলিক মেরে উঠল কিন্তু পরক্ষনেই ওর চেহারায় খুশির বদলে রাগ ভীড় করল।
ও পিছনে ফিরে হাঁটতে লাগলো।আমি ছুটে গিয়ে ওর পথ আগলে ওর হাত ধরে বললাম,তমা আমাকে প্লিজ মাফ করে দে।
তমা ওর হাত ছাড়িয়ে বলল,আমাকে চিনিস তুই? অদ্ভুত তো?
আমি উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললাম,তমা এরকম বলিস না।
I am sorry…
তমা বলল,আর কি বলবো সুপ্তি,তুই এমন কেনো করলি?কথা নেই বার্তা নেই একদম উধাও।আর এখন তোর আমার কথা মনে পড়েছে।
আমি তমাকে ধরে কেঁদে ফেললাম।
বললাম,তমা তুই জানিস না আমার কিছু
সমস্যা ছিল।
তমা বলল,এমন কি সমস্যা থাকতে পারে যে তোকে সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া লাগে।আমার কথা না হয় বাদই দিলাম।তুই জানিস শুভ্র স্যারের কি অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।
পাগল হয়ে গিয়েছিল, পাগল।
রাত ১টা বাজে আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে শুধুমাত্র জানার জন্য যে আমি তোর কোনো খোঁজ পেয়েছি কিনা।আমি তো শুনেছি স্যার এর পর থেকে ভালোভাবে ক্লাসও নিতো না।অন্যমনষ্ক হয়ে থাকত।আমাদের ফাইনাল পরীক্ষার সময় প্রতিদিন তোকে খুঁজে বেরিয়েছে।তার কিছুদিন পরই স্যার কলেজ ছেড়ে দেয়।স্যার তোকে কত ভালোবাসে! আর তুই!
এতটা নিষ্ঠুর তুই কি করে হলি?
তমার কথাগুলো চুপ হয়ে শুনছিলাম।শেষের কথাটা শুনে বললাম,শুভ্র স্যার তোকে বলেছে সে আমাকে ভালোবাসে?
তমা আমাকে ধরে বলল,সব কথা কি বলে দিতে হয়?
তমাকে অবশেষে অনেক কষ্টে মানাতে পারলাম।
যখন ও শুনলো আমার সাথেই স্যারের বিয়ে হয়েছে তখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
ভাগ্যিস বিয়েটা স্যারের সাথেই হয়েছে।
তোকে শেষমেষ না পেলে হয়ত স্যার পাগলই হয়ে যেত।
তারপর জানলাম তমারও একবছর হলো বিয়ে হয়েছে আর এখন ও প্রেগনেন্ট।তমার ফোন নাম্বার আর অ্যাড্রেসও এনেছি।
গাড়িতে বসে বসে তমার কথাই ভাবছি।সবার চোখেই আমি দোষী।সবাই আমাকেই দোষ দিচ্ছে।
কিন্তু আমি আমার কথা আর কাউকে বলতে পারছি না।
তমা স্যারকে নিয়ে যা যা বলল তাকি সত্যি!
ও আবার কোনো ভুল বুঝে নি তো?
যদি ভুল নাই হয়ে থাকে তবে আমি সেদিন যা দেখেছিলাম তার কি মানে ছিল? স্যারের আমার প্রতি এত রাগ থাকা সত্ত্বেও আমার কতটা খেয়াল রাখে যত্ন করে,কেনো?
আমারও স্যারের প্রতি কত রাগ,অভিমান জমা আছে,কিন্তু স্যারের সামনে গেলেই সব যেনো কোথাও উধাও হয়ে যায়।ইচ্ছে করে সেসব নিয়ে না ভাবতে।কিন্তু সেদিনের দেখা দৃশ্যও আমার পিছু ছাড়ছে না।
আমার চোখে দেখা কি করে ভুল হতে পারে?
প্রশ্নের উত্তরগুলো স্রোতের বিপরীত পেয়ে আমি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি।যখনই এসব নিয়ে ভাবি আমার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগতে থাকে।
বাসায় পৌছে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম।কেমন যেন ক্লান্ত লাগছে,অনেক ক্লান্ত।
আচ্ছা এই ক্লান্তিটা কি শরীরের নাকি মনের।
ভালো লাগছে না।আমার এগুলো নিয়ে ভাবতে আর ভালো লাগছে না।তাই ভাবনা ছেড়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমের রাজ্যে পারি দিলাম।
কতক্ষণ ঘুমিয়ে রইলাম জানি না।মাথায় কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম।চোখ খুলতেই দেখলাম একটি উদ্বিগ্ন মুখ।
শুভ্র স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে জিগ্যাসা করল,সুপ্তি,শরীর খারাপ লাগছে?এই অসময়ে ঘুমিয়ে রয়েছো?
আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম।ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম রাত আট টা বেজে গেছে।
ওহ নো! এতক্ষণ ঘুমিয়েছি।মাগরীবের নামাযটাও
বাদ গেল।আমি উঠে বাথরুমে চলে গেলাম।
বের হয়ে দেখি স্যার রুমে নেই।
কিছুক্ষণ পর এশার নামাযের সাথে মাগরীবের কাযা নামাযও আদায় করে নিচে চলে গেলাম।
গিয়ে দেখি সামিয়া আর মা কি নিয়ে হাসাহাসি করছে আর চা খাচ্ছে।
মা আমাকে দেখে ডেকে বসতে বলে হাতে এক কাপ চা তুলে দিল।আর বলল,ভালো লাগছিলো না তাই এই অসময়েই চা বানিয়ে খাচ্ছি।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে এখন একটু ভালো লাগছে।
শুভ্র স্যারকে কোথাও দেখছি না।আমার কৌতূহলি চোখ বারবার এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াচ্ছে।
মা হয়তো বুঝতে পারল তাই বলল,শুভ্র ছাদে আছে,নাহিদ এসেছে,ওর সাথেই কথা বলছে।
তারপর আমার হাতে চায়ের ট্রে ধরিয়ে দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিল।
আমি চায়ের ট্রে হাতে দরজার কাছে আসতেই আমার কানে আসল শুভ্র স্যারের গলা।স্যার বলছে,নাহিদ,বিয়ের আগের আর পরের অবস্থাকে
একসাথে গুলিয়ে ফেলিস না।
বিয়ের পরে অনেক পরিস্থিতিতে তোর ভালো না লাগলেও তোকে তা হ্যান্ডেল করতে হবে।কারণ তখন সেটা তোর দায়িত্বের মধ্যে পরবে।এখন তুই যেমন ইচ্ছা রিয়েক্ট করতে পারিস কিন্তু তখনও যদি এমন করিস তাহলে সেটা তোদের দুজনেরই বাঁধবে।
সম্পর্কগুলোর মধ্যে প্রশ্ন উঠে আসবে।
তাদের এই কথার মাঝেই আমি ট্রে হাতে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমাকে দেখে তারা দুজনেই চুপ হয়ে গেল।
আমি তাদের সামনের টি টেবিলে ট্রে রেখে চা দিলাম হাতে।নাহিদ ভাইয়া বলছে,আরে ভাবী যে!
ভাবী আপনিও বসেন।
আমি বললাম,না থাক আপনারা কথা বলুন।
বলে চলে আসলাম সেখান থেকে।
সকালে মা,বাবা,সামিয়ে আবার নানু বাড়ি চলে গেলো।মাকে ডাক্তার দেখাতে।নানু বাড়ির পাশেই নাকি কোন ডাক্তার আছে ভালো।বেশ কিছুদিন সেখানে বেড়িয়েও আসবে।
একটু পর স্যারও অফিসে চলে গেল।আমি এই বড় বাড়িতে একা হয়ে গেলাম।কিছুক্ষণ ছাদে হাটাহাটি করলাম,টিভি দেখলাম,তারপর রান্নাটাও সেরে ফেললাম।
দুপুরের একটু পরই স্যার এসে পড়ল।আমি বাসায় একা আছি তাই তাড়াতাড়িই এসেছে।সে ফ্রেস হয়ে আসলে আমি তাকে খেতে দিলাম।
স্যার খাবার মুখে দিয়েই আমার দিকে তাকালো।
আমি জানি স্যার কেনো তাকিয়েছে কারণ আমি আজ খাবারে একটু বেশি ঝাল দিয়েছি।
স্যার তাকাতেই আমি কানে হাত দিয়ে মুচকি হেসে ঠোঁট নাড়িয়ে নিঃশব্দে বললাম,স্যরি….
স্যার বলল,শুধু আজকের জন্যই।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সন্ধ্যার দিক দিয়ে আকাশে কালো মেঘ করে ঢেকে গেল।মনে হয় খুব বৃষ্টি হবে।স্যার সোফায় বসে ছিল।আমার মনে পড়ল ছাদে কিছু জামাকাপড় আছে।আমি দৌঁড়ে ছাদে গেলাম।
তাড়াতাড়ি জামা কাপড় তুলতে না তুলতেই ঝপ ঝপ করে বৃষ্টি নেমে পড়ল।আমি জামা কাপড় নিয়ে দৌড়ে গেলাম।শাড়ি পড়ার কারণে বেশি জোরে দৌড়াতেও পারছি না।আমি আংশিক ভিজে গেছি। তবে মাথা ভালোই ভিজেছে।
রুমে এসে দেখি স্যার এখনো সোফাতেই বসে রয়েছে।বৃষ্টির সাথে সাথে বাতাসের বেগও আছে।
আমি টাওয়েল তুলে নিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুলগুলো সামনে এনে মুছতে লাগলাম।
হঠাৎ খেয়াল করলাম শুভ্র স্যার আমার দিকে কেমন যেন তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পলকহীন ভাবে।আমি পিছনে ঘুরে তাকাতেই স্যার হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে
উঠে গিয়ে বাইরে চলে গেল।
সেদিন রাতে ঘুমানোর সময় স্যার আর আমাকে জড়িয়েও ধরলো না।বারবার এপাশ ওপাশ করছে।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি স্যার সোফায় ঘুমিয়ে রয়েছে।
আমি বাথরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে রইলাম।আমি স্যারের স্ত্রী।আমার উপর তার পুরো অধিকার আছে।স্যার তো চাইলে জোরও করতে পারত।
কিন্তু স্যার তা কখনই করে নি।কেন জানি না যখনই স্যার আমার কাছে আসে তখনই আমার মাথায় সেই দৃশ্য ভেসে উঠে।
একটু আগেই স্যার অফিসের জন্য বেড়িয়ে গেছে।
আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছি দারোয়ান চাচা লাঠির ওপর ভর দিয়ে ঝিমিয়েই যাচ্ছে।ঝিমুতে ঝিমুতে যখনই মাথা লাঠি থেকে সরে যেতে নেয় তখনই ধড়মড়িয়ে জেগে চারপাশে চোখ বুলায়।
আমি আজ পর্যন্ত যত দাড়োয়ান দেখেছি সবাইকে শুধু ঝিমাতেই দেখেছি।
প্রাচীরের বাইরে চোখ পরতেই দেখলাম একটি আমার বয়সের শাড়ি পরা মেয়ে রেগে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে।
আর তার পেছনে পেছনে একটি ছেলে হোন্ডা হাত দিয়ে টানতে টানতে করুণ মুখে কি যেন বলছে।হঠাৎ ছেলেটি হোন্ডা থামিয়ে মেয়েটির সামনে এসে কান ধরে দাঁড়াল।মেয়েটি থেমে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল তারপর একটি লাজুক হাসি দিয়ে ছেলেটির কান থেকে হাত ছাড়িয়ে দিল।ছেলেটিও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাইকে উঠে মেয়েটিকে ইশারা করতেই মেয়েটি বাইকে দু হাত দিয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরল।তারপর তারা চলে গেল।কি সুন্দর দৃশ্য।মনে হয় দুজনের নতুন বিয়ে হয়েছে।খুনসুটি পর্ব চলছে।কত ভালোবাসা তাদের মধ্যে।
আচ্ছা আমার আর স্যারের সম্পর্কের ভবিষ্যত কি?
এতদিন ধরে বিয়ে হয়েছে তবুও আমাদের ভেতর
কিছু স্বাভাবিক নেই।আমরা এখনও আর পাচঁটা স্বামী স্ত্রীর মতন হতে পারি নি।এখনও আমাকে ছুঁতে মন চাইলেও সে পারে না।
আমাদের সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে? আমাদের সম্পর্কে কি ভালোবাসা আছে?
এসব ভাবতে ভাবতেই……………
#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৫
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
আমাদের সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে? আমাদের সম্পর্কে কি ভালোবাসা আছে?
এসব ভাবতে ভাবতেই অনেক বেলা হয়ে গেল।
স্যার দুপুরে ফিরে আসল।দুজনে খাওয়া দাওয়া করে বসে আছি।
হঠাৎ স্যার বলল,সুপ্তি চট করে রেডি হয়ে নাও এক জায়গায় যাবো।ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে তো আমি সেই খুশি।
তাড়াতাড়ি একটি কচুপাতা রঙের শাড়ি পরে নিলাম।স্যার আজকে ব্লাক টি শার্টের উপর একটি ব্রাউন কালারের জ্যাকেট পড়েছে।যার হাতা সামান্য উপরে তুলে রেখেছে।সানগ্লাসটা সামনের টি শার্টের বুকে ঝুলিয়ে রেখেছে। সাথে অ্যাশ কালারের জিন্স।হাতে দামী ব্রান্ডেড ঘড়ি।পায়ে হোয়াইট কেডস।
স্যার আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনে নিতে নিতে বলল,কি ম্যাডাম,আমাকে নিরীক্ষণ করা হয়েছে তো এবার চলুন বেড়িয়ে পড়ি।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে মুখটা ঠিক করে বেড়িয়ে পরলাম আগে আগে।আর স্যার একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে পেছনে পেছনে আসতে লাগল।
আমি গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকালাম স্যার আসছে কিনা দেখার জন্য।পিছনে
তাকিয়ে আমার চোখ আবার আটকে গেলো।
স্যার বাইরের সিড়ি দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে নামছে তার চুলগুলো হালকা উড়ছে।শেষের সিড়িটায় পা রাখতে রাখতে সানগ্লাস টা টি শার্ট থেকে বাম হাত দিয়ে টেনে বের করে চোখে পরেই আমার দিকে তাকিয়ে
মিষ্টি হাসি দিল।
আমার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠল তার এত সুন্দর হাসি দেখে।
আমি তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বসে পড়লাম।
নাহ্ এত তাকিয়ে থাকা যাবে না।আমি মেয়ে হয়ে এত তাকিয়ে থাকবো কেনো?
এমনিতেই একবার লজ্জা পেলাম।স্যার কি আজ কোনো অডিশন দিতে যাচ্ছে? না হলে একেবারে হিরোদের মতো এতো সুন্দর লাগছে কেনো!
স্যার আমার পাশের গাড়ির দরজা খুলে একহাত গাড়ির দরজার উপর আর আরেকহাত রুফ টপে রেখে ঝুঁকে বলল,বের হয়ে আসুন ম্যাডাম।আজ কারে করে যাব না।আমি জিগ্যাসা করলাম,তাহলে কি দিয়ে যাব?
স্যার হাত দিয়ে সামনে ইশারা করল। তাকিয়ে দেখি খুব সুন্দর একটা বাইক।
দেখে বললাম,আপনি বাইকও চালান।
স্যার হেসে জবাব দিল,কলেজে থাকতে প্রচুর চালাতাম।এখন অনেকদিন ধরে চালানো হয় না।
স্যার গিয়ে সেখানে বসে বাইক স্টার্ট দিয়ে আমাকে ঘাড় নাড়িয়ে ইশারা করল বসার জন্য।
আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম।
স্যার কি আজ আমাকে মারার প্লান করেছে।এমনিতেই তাকে এত সুন্দর দেখায় আমার বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটানো শুরু হয়ে গেছে আর এখন আবার বাইকে এত কাছে!
আমি বসেছি তো ঠিক আছে কিন্তু বুঝতে পারছি না স্যারের কাঁধে হাত রাখব কি না।খুবই লজ্জা লাগছে।কেনো কে জানে?
আমি দ্বিধায় ভুগতে ভুগতে লজ্জায় হাত দিয়ে কানে সামনে থাকা চুলগুলো গুঁজে চোখ নামিয়ে আস্তে আস্তে হাত তার কাঁধে রেখেই দিলাম।
স্যার বাইকের মিররে আমার দিকে তাকিয়ে একটা
মুচকি হাসি দিয়ে চালানো শুরু করল।
স্যারের কাঁধে হাত রাখায় আমার মনে হচ্ছে আমি কারেন্টের প্লাগে হাত রেখেছি।শরীর দিয়ে যেন ৪৪০ ভোল্টের কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে। স্যারের চুলের ঘ্রাণটাও আমার নাকে আসছে।
আচ্ছা স্যার কি শ্যাম্পু ব্যবহার করে? যে এত সুন্দর ঘ্রাণ।জানলে আমিও একটু দিতাম।
স্যার একটি ফাঁকা রাস্তা দিয়ে বাইক চালাচ্ছে।চারপাশে সবুজ গাছপালা,কি সুন্দর হিমশীতল হাওয়া আর আমি বসে আছি শুভ্র স্যারের পেছনে সবকিছু মিলিয়ে একটা দারুন অনুভূতি।ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।”এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বল তো”টাইপ।
স্যার একটি লম্বা ব্রিজের উপর বাইক থামালো।
আমি নেমে ব্রিজের নিচে পানি দেখছিলাম।
কি সুন্দর নদীর পানি! হালকা হালকা ঢেউ হচ্ছে মাঝেমধ্যে।খুব বাতাস এখানে।চুলগুলো ঠিক রাখতে পারছি না,বারবার সামনে এসে পড়ছে।
তাই এক হাত দিয়ে সামনের চুল কানে গুঁজে ধরে রাখলাম আর উপুর হয়ে নিচে তাকিয়ে পানি দেখছিলাম।
স্যার আমার পাশে এসে ব্রিজের গায়ে পিঠ ঠেকিয়ে বুকে হাত গুঁজে বলল,কি ভালো লাগছে?
আমি ভুরু নাচিয়ে খুশি হয়ে বললাম,খুউবব।
ব্রিজটা অনেক বড় সাইড দিয়ে ভেন গাড়ি করে অনেক জিনিস নিয়ে এসেছে।তাকিয়ে দেখলাম আমাদের মতো আরও অনেকেই ঘুরতে এসেছে।
স্যার আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,আজ তুমি চুড়ি পরো নি?
আমি হাতের দিকে তাকিয়েই অবাক হলাম।
সত্যিই তো! স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার চুড়ি পড়ার কথা একদমই মনে ছিল না।
হঠাৎ স্যার আমার হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে একটি ছোট্ট ভেনগাড়ির সামনে নিয়ে আসল।
আমি তাকিয়ে দেখলাম সেখানে অনেক রঙের চুড়ি আছে।
স্যার তার নিচের ঠোঁট কামড়ে ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল সব চুড়ি।তারপর তার মধ্যে থেকে লাল রঙের কিছু কাঁচের চুড়ি নিয়ে আমার হাতে পড়িয়ে দিতে লাগল, খুব যত্ন করে।আমি শুধু স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছি।আর স্যার আমার হাতের দিকে তাকিয়ে পড়াচ্ছে।
হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ পরায় নিচের ঠোঁটটা হালকা কামড়ে ধরে ভুরু নাচিয়ে ইশারা করল,কি?
আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নাড়িয়ে না বলে চোখ নিচে নামালাম।
চুড়ি পড়ানো শেষে স্যার আমাকে জিগ্যাসা করল,
কিছু খাবে?
তখনই দেখলাম আমাদের সামনে দিয়ে হাওয়াই মিঠাইআলা যাচ্ছে কাঁধে এত্তগুলা হাওয়াই মিঠাই ঝুলিয়ে।
আমি লাফ দিয়ে স্যারকে বললাম হাওয়াই মিঠাই খাবো।স্যার একটা কিনে এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিল।আমি পেয়েই তাড়াতাড়ি খেতে শুরু করলাম।
কিন্তু বাতাসের কারণে সব আমার নাকে মুখে লেপ্টে যাচ্ছে। সেই অবস্থাতেই খেতে খেতে বললাম,স্যার আপনি খাবেন না?
স্যার আমার নাকে ঠোঁটে লেগে থাকা হাওয়াই মিঠাই হাত দিয়ে সরাতে সরাতে মুচকি হেসে বলল,সত্যি খাবো?
আমি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেলাম।
খাওয়া শেষে আবারো আমাদের চলতে লাগল বাইকের লং ড্রাইভ।স্যার বাইকটা হঠাৎ থামাতেই দেখলাম আমরা আমাদের বাড়ির সামনে আছি।
আমি বাইক থেকে নেমে অবাক হয়ে বললাম,স্যার এখানে হঠাৎ?
স্যার বাইক থেকে নেমে বলল,আরে শ্বশুরবাড়ি এসেছি।হঠাৎ আবার কি?বলেই আমার গাল টিপে দিল।
আমি স্যারের পেছন পেছন গেলাম।
আমাদের দেখে তো সবাই মহাখুশি।ভেতরে গিয়ে বুঝতে পারলাম আমরা যে আসবো তা সবাই আগের থেকেই জানে।তার মানে স্যার শুধু আমাকেই বলে নি।রান্নাঘর থেকে বাহারি রান্নার সুগন্ধ বের হচ্ছে।বাবা আর ভাইয়া স্যারের সাথে সোফায় বসে গল্প করছে।আমি চট করে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি মা
আর ভাবী ধুমছে রান্না করছে।অবশ্য রান্না প্রায় শেষের দিকে।
একটুপর কলিংবেল বেজে উঠতেই হলে গিয়ে দেখলাম স্যার একটি ছেলের হাত থেকে এক গাঁদা জিনিস নামাচ্ছে।আমার পেছন পেছন ভাবীও এসেছে।কাছে গিয়ে ভালো করে দেখতেই আমার চোখ চড়কগাছ!সব পদের ফল,মিষ্টি,দই,রসমালাই,জুস,আইসক্রিমের পাঁচটা বড় বড় বক্স,চকলেট আরও কত কি!
মনে হচ্ছে বাজার বসে গেছে।
ভাবী বলে উঠল,শুভ্র এত কিছু আনার কি দরকার
ছিল?
স্যার মুচকি হেসে বলল,ভাবী কি যে বলেন।শ্বশুরবাড়ি এসেছি সামান্য কিছু আনবো না তো কি করব।
স্যার আমার বেডে বসে আছে আর আমি আইসক্রিম খাচ্ছি চেয়ারে বসে।হঠাৎ ভাবী একটা নক করে ভেতরে এসে সোফায় বসে আমাকে একটা চোখ রাঙানি দিয়ে বলল,একা একা বসে খেয়ে যাচ্ছিস।শুভ্রকে খেতে দেস নি কেনো?
আমি মুখ ফুলিয়ে বাটি সাইডে রেখে দিলাম।
স্যার হেসে বলল,থাক থাক ভাবী আমি খেলে আবার আপনার ননদের কম পড়ে যেতে পারে।
একাই পাঁচ জনের টা খায়।আমি তো রাগে ফায়ার!আমাকে পেটুক বলা!
আর ভাবী দাঁত কেলিয়ে হেসেই যাচ্ছে।তারপর বলল,শুভ্র তুমি কতদিন পর আসলে বলো তো?
স্যার বলল,ভাবী কাজের অনেক চাপ থাকে।
ভাবী বলল,সু্প্তিকে তো মাঝেমাঝে পাঠিয়ে দিতে পারো।
স্যার মুখে একটা সিরিয়াস ভাব এনে বলল,আর বলবেন না ভাবী! আমি সুপ্তিকে অনেকবার বলেছি যে সুপ্তি,আমি তো যেতে পারি না তুমি গিয়ে বেড়িয়ে এসো।কিন্তু ও এটা শুনলেই কান্না শুরু করে দেয়।বলে আমি যেদিন যাব সেদিনই যাবে।আমাকে ছাড়া এক রাতও বাইরে থাকতে চায় না।
স্যারের কথা শুনে তো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরল,আমি এতটা অবাক হলাম।
আমার মুখ হা হয়ে গেল।সামনে তাকিয়ে দেখি ভাবীর মুখ আমার থেকেও ডাবল বড় হা হয়েছে।
একটা খরগোশ সেখানে অনায়াসে ঢুকে যেতে পারবে।চোখ গুলো যেন যেকোনো সময় খুলে বাইরে চলে আসবে।
ভাবী খরগোশকে ঢোকার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি মুখটা বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে বলল,
কিরে সুপ্তি, এগুলো কি শুনছি? বিয়ের আগে তো,বিয়ে করব না,বিয়ে করব না,বলে গীত গাইতি আর এখন এমন জামাইপাগল হয়ে গেছিস।
বলে ভাবী মুখ টিপে হাসতে হাসতেই চলে গেলো।
আমি রাগে চোখ মুখ কুচকে স্যারের দিকে তাকাতেই স্যার একটা চোখ টিপ মারল।
কিছু বলতে যাবো তার আগেই বাইরে খাবার জন্য
ডাক পড়ল।
ডাইনিং টেবিলে বসে আমি আরামে খেয়ে যাচ্ছি।খাওয়া প্রায় শেষের দিকে।
শুভ্র স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম স্যার অসহায়
চোখে একবার আমার দিকে একবার প্লেটের দিকে তাকাচ্ছে।
তার উপর এখন খাওয়া নামের অত্যাচার চলছে,অতি মাত্রায়।আর এই অত্যাচারটা নির্ভুল ভাবে চালাচ্ছে আমার একমাত্র ভাবী।মাঝে মাঝে মাও যোগ দিচ্ছে।প্লেটে খাবারের পাহাড় জমিয়ে রেখেছে।
খাওয়া শেষে আমি উঠতে লাগলাম।
স্যার আমার উঠে পড়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে আরও অসহায় ভাবে তাকিয়েই রইল।মনে হয় কিছু এক্সপেক্ট করছে আমার বলার।আমি আবার একটু দয়াশীল কিনা তাই তার এক্সপেক্টেশন না ভেঙে বললাম,একি ভাবী তোমাদের জামাইয়ের প্লেট এমন খালি কেনো?
ভালো মতো আদর যত্ন করে খাওয়াও।দেখো, আমাকে ঐ বাড়িতে গিয়ে আবার খোটা না শুনতে হয়।
বলেই মুখে হাত দিয়ে অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।ভাবী আমার উৎসাহ পেয়ে আরও দ্বিগুণ ভাবে নেমে পড়েছে খাওয়াতে।আমার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে।স্যারের অসহায় মুখটা দেখার মত।বেশ হয়েছে!আমাকে এতদিন জ্বালিয়েছে ঐ ফলপল খাইয়ে।আবার আজ ভাবীর সামনে আমার মান সম্মানের ফালুদা বানিয়ে কি মিথ্যাটাই না বলল।এতদিন পর আমি সুযোগ পেয়েছি।এবার বুঝুক মজা।
একটুপর রুমে ঢুকেই চোখের সামনে আরেকটা হাসির কান্ড দেখলাম।শুভ্র স্যার পান্জাবীর উপরের বোতাম না খুলেই পড়তে নিয়েছিল আর সেটা এখন অর্ধেক মাথায় আটকে রয়েছে, তাই স্যার ছটফট করে যাচ্ছে।আমি অনেক চেষ্টা করে মুখ টিপে হাসি চাপাতে গিয়েও হাসি ফক করে বেড়িয়ে গেল।
তাড়াতাড়ি আবার হাসি চেপে স্যারের সামনে গিয়ে বোতামটা খুলে দিতেই স্যার মাথা বের করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।কিন্তু নিচে তাকাতেই মুখটা আবার করুন হয়ে গেল।
আমি আর হাসি চাপিয়ে রাখতে পারলাম না।খিলখিল করে হেসে দিলাম।স্যার কোনো বাড়তি জামা কাপড় না আনায় স্যারকে বাবার পান্জাবী পড়তে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু বাবার পান্জাবী না দিয়ে তো ভাইয়ারটাও দিতে পারত? সেসব কথা না ভেবে বরং হাসির কথাটাই ভাবি।স্যারের গায়ে বাবার পান্জাবীটা সাংঘাতিক ঢোলা হয়েছে।স্যারকে দেখতে পুরো কার্টুনের মত লাগছে।
আমি মুখে হাত দিয়ে হেসেই যাচ্ছি হঠাৎ স্যার পান্জাবী খুলে খালি গায়ে আমার কোমড়ে হাত দিয়ে একদম কাছে টেনে নিল।স্যারের উন্মুক্ত বুকের সাথে মিশে আমার হাসি একদম থেমে গলা শুকিয়ে আসল।স্যার আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,খুব হাসি পাচ্ছে তাই না?
আমাকে তখন খাবার টেবিলে অপদস্থ করে মনে করেছো পার পেয়ে যাবে?
আমি স্যারের কথা শুনে একটা ঢোক গিললাম।
হঠাৎ স্যার আমাকে খুব গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে একটা গভীর করে চুমু খেল।
আমি কেঁপে উঠে একহাত দিয়ে শাড়ি আরেকহাতে স্যারের পিঠ খামছে ধরলাম।
আমাকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করল ভাবী।দরজায় কড়া নেড়ে ক্রমাগত ডাকছে।স্যার আমাকে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিলে আমি দরজা হালকা খুলে দাঁড়ালাম।
ভাবী বলল,এই নে ধর তোর ভাইয়ের টি শার্ট।তখন ভুল করে তোর ভাইয়ের পান্জাবী মনে করে বাবার পান্জাবী দিয়ে দিয়েছিলাম।এই বলে ভাবী চলে গেলো।
আমি টি শার্টটা লাজুক চোখে না তাকিয়েই স্যারের দিকে বাড়িয়ে দিলাম।স্যার একটা মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আমার কেমন যেনো খুবই লজ্জা লাগছে স্যারের দিকে তাকাতেও পারছি না।
রাতে আমি আগেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু ঘুমের চোখেই বুঝতে পারলাম স্যার আমার কপালে একটি ভালোবাসার পরশ দিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল।
আমাদের বাসা থেকে তার পরেরদিন সকালেই চলে আসলাম। দুপুরের পর কতক্ষণ ধরে আমি বেডে বসে কাচুমাচু করে যাচ্ছি আর স্যার মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখে যাচ্ছে।
আমি কতক্ষণ ধরে স্যারকে বলে যাচ্ছি একটু স্টার প্লাস দিতে কিন্তু দিচ্ছেই না।রিমোট টা যদি একবার হাতে পাই।
হঠাৎ আমি পেট ধরে ন্যাকাতে লাগলাম।স্যার উদ্বিগ্ন মুখে রিমোট রেখেই উঠে পড়ে আমার কাছে এসে দাঁড়াল।আর আমি এক ছুটে রিমোট হাতে নিয়ে স্যারকে হাত তুলে দেখালাম।
স্যার কিছুক্ষণ হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়াও বলে আমার পিছনে দৌড়াতে লাগল।আমি বুঝে গেছি স্যার রেগে গেছে আজ ধরতে পারলে আর রক্ষে নেই।তাই আমিও ছুটে যাচ্ছি।
পুরো ঘরময় আমরা ছুটে বেড়ালাম।স্যার আমাকে অবশেষে ধরতে পারল যখন আমরা ছাদে চলে আসলাম।
আমার হাত দুটি পেছনে নিয়ে শক্ত করে ধরে ধমক দিয়ে বলল,বেশি চালাকি শিখছো না?
আমি বলছি,স্যার ছাড়ুন প্লিজ।ব্যাথা লাগছে।
স্যার এবার আমাকে ছেড়ে বলল,কানে ধরো।
আমি মুখ ফুলিয়ে বুকে হাত গুঁজে অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম,ইশ! বললেই হল,যখন তখন শুধু কানে ধরো।
আমি ধরবো না।
স্যার আবার চোখ রাঙানি দিয়ে বলল,ধরবা না।
আমি আগের থেকেও দ্বিগুণ ভাব নিয়ে বললাম,
না।
বলা শেষ হতে না হতেই স্যার আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ঠাস করে সুইমিংপুলের পানিতে ফেলে দিল।আমি পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি,হাত পা ছোটাছুটি করছি।
স্যার আমার এই অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে সেও পানিতে ঝাপ দিল।আর আমি স্বাভাবিক ভাবে সাতঁরে অন্য সাইড দিয়ে উঠে গেলাম।স্যার আজ দ্বিতীয় বার হতভম্ব হয়ে পানিতে দাড়িয়ে রইল।আমি তাকে বললাম,সাঁতার আমি পারি।দেখলেন তো কিভাবে আপনাকেও পানিতে নামালাম।সুপ্তির সাথে লাগতে আসলে এমনই হয় বলে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে আসলাম।
রাতে আমি অ্যাকুরিয়ামটা বিছানার কোনায় রেখে
উপুর হয়ে শুয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে মুখ রেখে মাছদুটির খেলা দেখছিলাম।
হঠাৎ স্যারও আমার পাশে আমারই মতো শুয়ে পড়ে মাছদুটির দিকে তাকিয়ে বলল,এগুলোর কোনো নাম দাও নি সুপ্তি?
স্যারের কথা শুনে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম।সত্যিই তো মাছদুটিকে আমি এখনো কোনো নাম দেই নি কেনো?এতদিন ধরে আমার কাছে আছে।
এতবর ভুল আমি করলাম?
স্যার আবার চোখ দিয়ে ইশারা করে জিগ্যাসা করতেই আমি মুখ গোমড়া করে মাথা নাড়িয়ে না করলাম।
স্যার একটা মুচকি হেসে বলল,থাক আমি এদেরকে নাম দিয়েছি।আমি উৎসুক হয়ে জিগ্যাসা করলাম, কবে?
স্যার বলল,তোমাকে দেওয়ারও আগে।
আমি এবার চরম উত্তেজনা নিয়ে বললাম,কি নাম?
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,শুভ্র সুপ্তি।
তার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে
মাছদুটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম তারা কি পরম আনন্দে একে অপরের পিছনে ছোটাছুটি করছে।
আমি আবার স্যারের দিকে তাকালাম।স্যারও আমার দিকে আবেগী চোখে তাকিয়ে বলল,মনে কর এরা আমাদের মনের একটা অংশ।
দেখো তো এই শুভ্র সুপ্তি এখন আমাদের কি করার ইশারা করছে।
আমি মাছেদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাছ দুটো একে অপরের মুখে মুখ লাগিয়ে রেখেছে।
আমার গাল একেবারে লাল হয়ে গেল লজ্জায়।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
স্যার আমার অবস্থা দেখে মাছদুটির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আমি আবার ধীরে ধীরে স্যারের দিকে তাকালাম।
স্যারের দৃষ্টি এখনো মাছের দিকে।
হঠাৎ আমার কি হল জানি না আমি খুব ধীরে ধীরে স্যারের গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম।
স্যার যেন বিদ্যুতের থেকেও বেশি চমকে আমার দিকে তাকালো।
আমি এক লাফ দিয়ে উঠে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম।কম্বলের কোনা মুখে চেপে ধরে বালিশে মুখ আধো মুখ লুকিয়ে চোখ বন্ধ করে এখনো লজ্জা পেয়েই যাচ্ছি।
আর স্যার যে এখনো আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা আমি বেশ বুঝতে পারলাম।
তার পরের দিন দুপুরের পরে আমি বেডে শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি।খুবই বোরিং লাগছে।
আর স্যার ধ্যানমগ্ন হয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে
আছে।এমন কি দেখছে ল্যাপটপে আমারও দেখতে ইচ্ছে হল।একটু পর ফোন বাজতেই স্যার রিসিভ করে বাইরে চলে গেল।আমি উঠে গিয়ে ল্যাপটপটা অন করতেই আমার মনে হল আমার বুকে যেন কেউ সজোরে আঘাত করলো।ল্যাপটপের স্কিনে স্যার আর সেই মেয়েটার ছবি।
দুজনে পাশাপাশি বসে আছে।আমার চোখ দিয়ে একটি বড় অশ্রুর ফোটা গড়িয়ে পরতে না পরতেই
স্যার রুমে চলে আসল।আমি তাড়াতাড়ি……….
চলবে,,
ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৩
#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-১৩
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
একদিন সকালে শুভ্র স্যার আর আমি আবার জগিংয়ে গেলাম।দৌড়াতে দৌড়াতে আমি ক্লান্ত।
তাছাড়াও আজ একটু বেশিই গরম পড়েছে।ঘাম ঝরছে মুখ থেকে।
আমি থেমে কোমড়ে হাত দিয়ে হাপাতে লাগলাম।
স্যার পাশ থেকে তার রুমাল দিয়ে আমার মুখের ঘাম মুছে দিতে লাগল।
আমি তার দিকে তাকালাম আর সাথে সাথে
দুজনেই একটা লাজুক হাসি দিলাম।
কারণ আমাদের দুজনেরই সেই মূহুর্তের কথা মনে আসছে যখন আমি একদিন স্যারের ঘাম মুছে দিয়েছিলাম ওড়না দিয়ে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে সবাই নাস্তার টেবিলে গেলাম।আমি মাকে সাহায্য করছি।সবাই খেতে বসে পড়েছে।ডাল ভুনা আনা হয় নি তাই আমি উঠে আবার আনতে গেলাম।
কিন্তু আনার সময় ভুলবশত ডালের চামিচটা নিচে পড়ে গেল আর খানিকটা ডালও ছিটিয়ে পড়েছে স্যারের ফুফুর পায়ের কাছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আমি তাড়াতাড়ি মাফ চেতে নিলাম কিন্তু তার আগেই ফুফু চেঁচিয়ে উঠলো,একটি সামান্য চামচ টাও সামলাতে পারে না এই মেয়ে সংসার সামলাবে কিভাবে?
আমার শ্বাশুড়ি মা তাড়াতাড়ি বলে উঠল,আপা ভুল করে পরে গেছে।
ফুফু আবার চেঁচিয়ে বলা শুরু করল,শ্বশুর শ্বাশুরীর সামনে ভুল হবে কেন!চামচ টা পড়ে কিভাবে শুনি।বেশি লাই দিয়েছো বলেই এমন ভুল করার সাহস পায়।আমার বাড়ি গিয়ে দেখো ছেলের বউকে কিভাবে টাইট দিতে হয়।
আমার হাত পা কাপঁতে লাগল।তার কথা শুনে।এভাবে কখনো কেউ আমাকে বলে নি।চোখ ভরে উঠছে পানিতে।
আর ফুফু বলেই যাচ্ছে,এই মেয়ে পারে টা কি শুনি?
সেদিন যে পায়েসের এত গুনগান হলো সেই পায়েস এই মেয়ে শুভ্রকে দিয়ে রাঁধিয়েছে।আমাকে তোমাদের কাজের বুয়া বলেছে।
ছি!ছি!শুভ্র তোকেও বলি,লজ্জা করে না বউর কাজ করে দিস।পুরুষ মানুষ হয়ে রান্নাঘরে ঢুকোস।আর আমার ছেলেকে দেখ পানির গ্লাসটাও তুলে খেতে হয় না।
স্যার চুপচাপ বসে তীক্ষ্ণ চোখে ফুফুর দিকে তাকিয়ে আছে।
এবার ফুফু মার দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগল,এত সুন্দর দুধে আলতা গায়ের রং ছেলের জন্য কোথায় তার থেকেও বেশি ফর্সা বউ আনবে তা না শ্যামলা রঙের মেয়ে নিয়ে এসেছো তা চেহারা যতই ভালো হোক গায়ের রং তো ফকফকা হতে হবে।
আমার চোখ দিয়ে এবার পানি বেড়িয়ে গেল।
তখনই স্যার উঠে দাড়িয়ে রেগে তার হাতের কাঁচের গ্লাসটা জোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারল।ভাঙা কাঁচের শব্দে সবাই স্যারের দিকে তাকাল।
স্যার রাগটাকে চেপে শান্ত ভাবে বলল,দেখো ফুফু আমার হাত থেকে একটা কাঁচের গ্লাস পড়ে ভেঙে গেল এখন আমাকে এর জন্য কি করবে কারণ সুপ্তির হাত থেকে সামান্য একটা চামচ পড়ে যাওয়ার জন্য তুমি যা করলে তাতে তো আমাকে তোমার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়ার কথা।
কিন্তু আমাকে তুমি কিছু বলবে না,কেনো! কারণ আমি এই বাড়ির ছেলে বলে আর সুপ্তি বউ বলে ও একটা সামান্য ভুলও করতে পারবে না।
কেনো?আমাকে একটু বোঝাও তো।
আর কি যেন বললে,আমার লজ্জা পাওয়া উচিত…পুরুষ মানুষ হয়ে রান্নাঘরে যাই…।
স্ত্রীর কাজে সাহায্য করায় লজ্জা না,লজ্জা সেসব পুরুষদের পাওয়া উচিত যারা স্ত্রীর কাজে সাহায্য করে না।
একচুয়েলি,তারা পুরুষই না তারা কাপুরুষ। যেমন তোমার ছেলে।আর আমি বিয়ে করেছি একজন জীবন সঙ্গিনী পাওয়ার জন্য, কোনো শোপিজের জন্য না, যে তাকে ধবধবা ফকফকা হতে হবে।আমার জন্য আমার স্ত্রী এই পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী নারী যার জন্য আমি সামান্য সাহায্য করা কি,চাইলে সারা জীবন বসিয়েও খাওয়াতে পারি।
তারপর রেগে গিয়ে হাত মুঠি করে টেবিলে বাড়ি দিয়ে বলল,সুপ্তিকে আমি বিয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছি।এই বাড়ি ততটাই ওর যতটা আমার।আমার বউয়ের সম্মান আমার সম্মান আর শুভ্র আহমেদকে যে অপমান করবে তাকে সে ছেড়ে কথা বলবে না।বলেই চেয়ার হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে হনহন করে অফিসে চলে গেল।
ফুফু তো হা হয়ে গেছে কিছুই মনে হয় বুঝতে পারছে না।সামিয়া তার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছে।আমার শ্বশুর শ্বাশুরীর মুখেও গর্বের হাসি।আর আমার চোখ দিয়ে এখনো পানি পড়ছে
তবে এই অশ্রু খুশির।আজ সে আবার আমার মন ছুঁয়ে দিল সেই প্রথম দিনের মতো।
বিকেলে ছাদের দোলনায় বসে স্যারের বলা
কথাগুলো ভাবছি।অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে।স্যারের ফুফু একটু আগেই চলে গেছে মুখ ফুলিয়ে কেউই তাকে আটকানোর চেষ্টা করে নি।
তবুও আমি আটকাতে গিয়েছিলাম ফুফু আমার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলেই যেতে থাকে আরেকবার আটকাতে যাব কিন্তু সামিয়া আমার হাত ধরে আটকিয়ে রাখে।
স্যার আজ খুব রেগে গিয়েছিল।সকালের নাস্তাটাও করে নি আর আমি নিশ্চিত দুপুরেও কিছু খায় নি।স্যারের মাথা ঠান্ডা করার আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসলো।
স্যার বাসায় আসলো রাত নয় টা বাজে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে এখনো মেজাজ খারাপ আর খাবারও খায় নি।সে ফ্রেস হয়ে বের হতেই আমি তার হাত টেনে তাকে ছাদে নিয়ে আসলাম।
স্যার বারবার বলছিল তার ভালো লাগছে না ছাদে কেনো নিয়ে যাচ্ছি?কিন্তু ছাদে এসেই চুপ হয়ে গেল।কারণ আকাশে বিশাল বড় একটা চাঁদ উঠেছে।তার আলোয় সবকিছু খুব সুন্দর লাগছে।
আমি গিয়ে ছাদের সুইমিংপুলে পা ডুবিয়ে বসলাম তারপর স্যারকেও ইশারা করলাম এসে বসার জন্য।স্যার কোমড়ে দু হাত দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিয়ে ঠিক আমার পাশে এসে বসলো পা ডুবিয়ে।
চাঁদের বিশাল প্রতিবিম্ব সুইমিংপুলের পানিতে পড়েছে।ঠান্ডা পানিতে আমরা পা ডুবিয়ে বসে আছি।ছাদের খোলা বাতাসে আমাদের চুল উড়তে লাগল।
কিছুক্ষণ পর আমি স্যারকে জিগ্যসা করলাম, আজকে আপনি সারাদিন কিছু খান নি তাই না।
আমার কথা শুনে স্যার আবার গম্ভীর হয়ে গিয়ে অন্য দিকে তাকলো।আর আমি স্যারের মুখের সামনে তুলে ধরলাম এক বাটি নুডুলস।
স্যারের বাটির দিকে নজর যেতেই আবেগী চোখে আমার দিকে তাকালো।আমি চোখ দিয়ে ধরার ইশারা করতেই স্যার বাটি হাতে নিয়ে খুশিতে আপ্লুত হয়ে গেল।
তারপর ডান হাতে বাটি ধরে বাম হাত দিয়ে আমার একটি হাত তার কোলে টেনে বলল,জানো সুপ্তি তোমার এই নুডুলস আমি কত মিস করেছি।
সেদিনের পর থেকে আমি আর কারোর হাতের নুডুলস খাই নি।নুডুলস দেখলেই আমার শুধু তোমার কথা মনে পড়ত।
আমি তাকে বললাম,এখন কি শুধু কথাই বলবেন নাকি খাবেনও।স্যার একটা মিষ্টি দিয়ে আমার হাতে বাটি দিয়ে বলল, তুমি খাইয়ে দাও না।
আমিও একটা লাজুক হাসি দিয়ে স্যারকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।আর স্যার আমার দিকে তাকিয়ে রইল।খাওয়ার মাঝখানে আমি তার মুখের সামনে নুডুলস সহ চামচ নিতেই স্যার আমার হাত খপ করে ধরে ঘুড়িয়ে আমার মুখে খাইয়ে দিল।এভাবে চলতে লাগল আমাদের নুডুলস খাওয়া।
খাওয়া শেষে আমি বাটি টা সাইডে রাখতে নিলাম আর স্যার আমার ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে লাগল।
আমি ঘুড়ে অবাক চোকে তাকাতেই আমার দিকে ভুরু নাচিয়ে ইশারা করল কি? তারপর মুচকি হেসে অন্য দিকে তাকাল।
আমরা অনেকক্ষণ গল্প করলাম।হঠাৎ স্যার আমার কাঁধে মাথা রাখল।আমি সাথে সাথে কেঁপে উঠলাম।কিছুক্ষণ পর স্যার আমার একটি হাত তার হাতের মুঠিতে নিয়ে বলল,জানো সুপ্তি,আমার না চাঁদ খুব ভালো লাগে।আগে প্রতিদিন চাঁদ উঠলে আমি একবার না একবার ছাদে এসে দেখতামই।
আমি বললাম,এখন প্রতিদিন দেখেন না?
স্যার মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,না। এখন আমার কাছে এর থেকেও সুন্দর চাঁদ আছে।যাকে আমি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পর মন ভরে দেখি।
আমি লজ্জা পেয়ে তার চোখের দিকে তাকাতেই আটকে গেলাম।খোলা আকাশের নিচে জ্যোৎস্না রাতে শীতল হাওয়ায় আবারো আমাদের চোখে চোখে যেন কথা হতে লাগল।কোনো এক অব্যক্ত কথা।।।
একদিন বিকেলে আমার বড় বোনের মেয়ে আসলো।এইবার তিন বছরে পড়েছে।অনেক কিউট।কেমন ভাঙা ভাঙা কথা বলে।খালামণি খালামণি করে নাকি পাগল হয়ে যাচ্ছিল তাই ভাইয়া নিয়ে এসেছে।
কিন্তু এখানে এসে সে খালুর জন্যই বেশি পাগল হয়ে গেছে খালামণির কথা আর মনে নেই।আর শুভ্র স্যারও একদম যেন মিশে গেছে ওর সাথে খেলায়।এত এত আদর করছে।স্যারও খুব খুশি ওকে পেয়ে।
স্যার যে এত বাচ্চা পছন্দ করে তা তো আমি জানতামই না।
আমি হলের সোফায় বসে বসে দূর থেকে তাদের খেলা দেখছিলাম।এমন সময় আমার শ্বাশুরী মা এসে আমার পাশে বসে শুভ্র স্যারের দিকে দেখিয়ে বলল,এই শুভ্রটা না বাচ্চা দেখলে একেবারে পাগল হয়ে যায়।খুব পছন্দ করে বাচ্চা পোলাপান।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,বউ মা,এবার আমার শুভ্রকে ওর নিজের একটা বাচ্চা এনে দাও।আমরাও এখন নাতি নাতনির মুখ দেখি।
মার কথা শুনে আমি বেশ লজ্জা পেলাম।স্যারও তখন এখানেই আসছিলো।মার শেষের কথাগুলো শুনে আমার সাথে চোখে চোখ পড়তেই সেও লজ্জা পেয়ে আর আগালো না, চলে গেল।
স্যার সেদিনের পর থেকে কয়দিন পরপরই বায়না ধরে আমার হাতের নুডুলস খাওয়ার।যখন তখন বলবে,সুপ্তি নুডুলস বানিয়ে নিয়ে এসো না,প্লিজ।আমার আর কি করার! আমাকেও বানিয়ে আনতে হয়।কিন্তু এখন অ্যাডভান্স যোগ হয়েছে,
আমাকে খাইয়েও দিতে হয়।
স্যার আমাকে একটি কমলার খোসা ছাড়িয়ে দিতে বলে বিছানায় হেলান দিয়ে ফোন টিপছিলো।
আমার একটু দুষ্টুমি করতে মন চাইলো।আমি চুপিচুপি তার চোখের সামনে একটি কমলা ধরে রস ছিটিয়ে দিলাম।
স্যার ধরফরিয়ে বসে পড়ে হাত দিয়ে চোখ কচলাতে লাগল আর আমি হাসতে হাসতে পালানোর জন্য এক পা বাড়াতেই পেছন থেকে হাতে একটা হেচকা টান অনুভব করে গিয়ে পড়লাম স্যারের উপর।
আমি উঠার চেষ্টা করছি কিন্তু স্যারও শয়তানি হাসি দিয়ে আমাকে হাত দিয়ে শক্ত করে আকড়ে ধরে ঘুরে তার নিচে আমাকে ফেলে আমার হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল।আমি ছোটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।আর স্যার আমাকে দেখে যাচ্ছে একদৃষ্টিতে।
আর আমি বলছি,আর করবো না।এই কানে ধরছি।প্লিজ ছাড়ুন,আমি ভর্তা হয়ে গেলাম।
নাহ্! আমার কোনো কথা মনে হয় তার কানে ঢুকছে না।কিরে বাবা!চোখ খুলেই ঘুমিয়ে গেলো না তো।
স্যার এবার আস্তে আস্তে তার মুখ আমার খোলা চুলের কাছে এনে ঘ্রাণ নিতে লাগল।
আমার বুকের ভেতর যেন কেউ হাতুরি দিয়ে পেটাচ্ছে।ধ্বক ধ্বক করেই যাচ্ছে।
কি করে নিজেকে ছুটাই?
হাত এখন কিছুট আলগা হয়ে গেছে সেই সুযোগে আমিও হাত ছাড়িয়ে হেসে হেসে স্যারকে সুড়সুড়ি দিতে লাগলাম।স্যার আমার উপর থেকে সরে যেতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে দিলাম দৌড় কিন্তু দরজা পর্যন্ত যেতেই স্যার আবার আমার হাত ধরে ফেলল পেছন থেকে।
এক টান দিয়ে আমাকে তার বুকে এনে ফেলে আমার পেছনে তার দু হাত দিয়ে আমাকে আঁকড়ে ধরল।আমি আমার হাত দিয়ে তার বুকে ধাক্কা দিয়ে তাকে সমানে সরানোর চেষ্টা করছি।
তাতে শুধু একটা জিনিস হল।আমি হয়রান হলাম আর কিছুই না।
হয়রান হয়ে মুখ ফুলিয়ে নিচে তাকিয়ে রইলাম।
স্যার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,শক্তি খাটানো হয়ে গেছে?
স্যার তার হাতের এক আঙ্গুল দিয়ে আমার কপাল থেকে শুরু করে আলতো ছুঁয়ে নিচে যেতে লাগল।
আমি ফট করে বলে উঠলাম,মা আপনি?
স্যার সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে পিছনে তাকালো।
কিন্তু দেখলো কেউ নেই।আমি তাকে জিহ্বা দিয়ে মুখে ভেংচি দিয়ে এক দৌড় দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলাম।আর স্যার কোমড়ে হাত দিয়ে হাসতে লাগল।
একদিন বিকেলে সপিংমলে গেলাম।কিছু টুকটাক কেনাকাটা করতে।আমি একাই এসেছি।সেখানে হঠাৎ তমার সাথে দেখা।তারপর……….
চলবে,,
অনুভূতির সংমিশ্রণ পর্ব ৩
অনুভূতির সংমিশ্রণ?
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
পর্ব তিন
?
নিধি অনেকক্ষন যাবত ঘর থেকে বের হয় নি আর বের হবেও না সে..কি পেয়েছে কি হ্যা??উনার বাড়িতে থাকি বলে এমন বিহেভিয়ার করবে??থাকবো না!!কাল হোস্টেলে সিট খুজবো!!থাকবো না এই যমরাজের বাড়িতে!!
নিজে নিজে বক বক করছে আর চোখের জল মুছছে নিধি।।
এদিকে ইমরেত নিজের রাগ সংযত করতে পারছে না দেখে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে।।
গোসল করে বেরোনোর পর একটু হালকা লাগছে তবে নিধির ফোনে ওয়েটিং এর কথা মনে পরতেই আবারো মাথার রগটা ফুলে ফুঠছে।।
রাতেরবেলা,
ডাইনিং এ যেয়ে ইমরেত দেখলো নিধি খেতে আসে নি।।
“নিধি কই?” ইমরেত গম্ভীরমুখে স্মৃতিকে প্রশ্ন করলো।।
“ভাই ও আসবে না,তুই খেয়ে নে..ঘরে বসে মাহি আর নিধি মিকি মাউস দেখতেছে” মেহবুব বলে উঠলো স্মৃতি বলার আগে।।
রাগে গা টা আরো রি রি করে উঠলো ইমরেতের..কোন রকমে দাঁতে দাঁত চেপে, মুখের ভিতরে খাবার গুজে উপরে চলে গেলো।।
এদিকে মেহবুবের নজর গেলো স্মৃতির শাড়ি ভেদ করে পেটের উপর,চট করে শয়তানী করার বুদ্ধি মাথায় আসলো তার।।
পানি হাতে নিয়ে স্মৃতির পেটে হাত রাখলো মেহবুব,এরকম আক্রমনে স্মৃতি চিৎকার দিতে যেয়েও থেমে গেলো বুঝলো বাহিরে আছে..চিৎকার দিলে খারাপ দেখায়।।
কটমট করে মেহবুবের দিকে তাকালে,সে খুব মনোযোগ দিয়ে চিকেন খাচ্ছে..এদিকে মেহবুব ভিজা হাত সরায় ও না,ভিতর ভিতর পৈশাচিক আনন্দ নিচ্ছে।।
স্মৃতি টেবিলের নিচ দিয়ে দিলো এক গুতা মেহবুবের পায়ে।।
“আহ!!” মেহবুব ব্যাথাতে বলে উঠলো।।
স্মৃতি দেখলো মেহবুব হাত সরায় দিয়েছে দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।।
“আরেকবার এমন করলে,তোমার সব কয়টা হাড় ভেঙে দিব আমি” রাগে গিজগিজ করতে ডাইনিং ত্যাগ করলো স্মৃতি।।
“লেটস সি বেবি..রুমে যাও তোমার কপালে কি আছে দেখবে তখন দেখবে” মেহবুব শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।।
ইমরেত সার্জারির নিয়ে একটু কথা বলছে অফিসের লোকের সাথে..কাল সকালে একটা বড় অপারেশন করতে হবে তাকে..বড় অপারেশন সব ইমরেত করে,ইমার্জেন্সি ছাড়া যায় না সে হসপিটাল.. বাকি সময় ব্যবসায়..লোকজন ভাবে এতো ট্যালেন্ট কিভাবে আসে??দুইদিক সামাল দেয়।।
ইমরেত কথা বলতে বলতে চোখ আটকে গেলো সামনের ব্যালকনিতে.. সামনের ব্যালকনিতে নিধি ইজি চেয়ারের উপর গুটিশুটি মেরে মাহিকে বুকের উপর রেখে ঘুমিয়ে গেছে।।
ইমরেত প্রয়োজনীয় কথা শেষ করে মাহির রুমে রওনা দিলো।।
মাহির রুমে গিয়ে ইমরেত দেখলো মাহিকে বুকে চেপে নিধি ঘুমিয়ে আছে..আসলেই কত নিষ্পাপ লাগছে দেখতে তাদের।।
মাহিকে কোলে নিয়ে ওর বেডে শুইয়ে দিলো..তারপর নিধির কাছে এসে কিছুক্ষন তাকালো।।
“এই মুখ দেখে আমি আমার বয়স টা ভুলে গেছি..আমি তোমার বাচ্চামো দেখে নিজের যে তোমার থেকে ১০ বছরের বড় সেটাও ভুলে গেছি..কিন্তু কি করবো বলো আমি যে তোমাকে প্রথম দেখাতে দূর্বল হয়ে গেছি,নিজের অনুভূতির প্রতিটায় শিরায় তোমাকে আবদ্ধ করে ফেলতে চাই,করে ফেলেছি এই তিন বছরে..হ্যা তোমাকে চাই আমি,খুব করে চাই..এতোবেশি চাই যেন কখনো আমি তোমার বড় কিংবা তুমি আমার ছোট এই অনুভূতি টা বুঝতে না পারি…আমি তোমাকে ভালোবাসি অনেকবেশি, এতোবেশি যে তোমাকে আমি ব্যতীত অন্য কেও কখনো কেও ভালোবাসা ত দূরেই থাক পছন্দ করুক আমি তা চাই না..আমি পারলে তোমাকে আমার বক্ষ পিঞ্জরে লুকিয়ে ফেলতে চাই..আজ যখন তোমার খোজ নেয়ার জন্য ওয়েটিং দেখলাম,বিলিভ মি মনে হচ্ছে সামনে পেলে ঠাটিয়ে দুইটা চড় মারি..দুনিয়ার সবার সঙ্গে তোমার যত কথা,আর আমি সামনে আসলে তোমার মুখ বন্ধ হয়ে যায়..আমার অনুভূতির তোমার চোখে পরতে দেই না আমি জানি কিন্তু খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার অনুভূতির সাথে পরিচয় করাবো”।।
নিধিকে কোলে তুলে মাহির পাশে শুইয়ে দিলো..কথাগুলো নিধি শুনতে পেতো কিন্তু ঘুমের জন্য তার হুশ ই নাই কেও তাকে তার অজান্তে এতোবেশি কেও চেয়ে ফেলেছে।।
নিধির কপালের চুল সরিয়ে মাথায় চুমু দিয়ে,দুজনের গায়ে চাদর লাইট অফ করে ইমরেত চলে গেলো।।
স্মৃতি ঘুমাতে পারছে না যখন সে বেডে ঘুমাচ্ছে মেহবুব তার গায়ে পানির ছিটা মারছে,দেখলো কোন উপায়ন্তর নাই নিজে রুমে থেকে চাদর নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।।
মেহবুবের মেজাজটায় এইবার খারাপ হয়ে গেলো,এমনিতে সময় পায় না ওকে আদর করার, যখন কাছে পাই হয় মাহি আসে না হয় অন্যকাজ পরে..নাহ আর এরকম করতে দিব না..ওই ভুলে গেছে ওরে আমি কেমনে তুলে এনে বিয়ে করেছি।।
ধপাধপ পা ফেলে স্মৃতির কাছে,কোমরকে শক্ত করে ধরে কাছে ঘুরিয়ে দেয়ালে ঠেসে ঠোটে ঠোট বসালো।।
বেশকিছুক্ষন ছোটাছুটি করে স্মৃতি পার পেলো না যখন তখন নিজেও তাল মিলালো..সে জানে মেহবুব বরাবরই জেদি..আর সেখানে স্মৃতিকে নিয়ে সবসময় সিরিয়াস..স্মৃতির গায়ের ঘ্রান মেহবুবের কাছে টনিকের মতো কাজ করে..
স্মৃতিকে কোলে তুলে ভালোবাসার রাজ্যে ডুব দিলো মেহবুব।।
সকালবেলা,
নিধি নিজেকে বেডে পেয়ে একটু অবাক হলো..সে ত ছিলো মাহিকে নিয়ে বারান্দায় এখানে কিভাবে এলো সে??
মাহির দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখনো ঘুমে কাদা…৪ বছরের মাহি,তার মা বাবার মতো গায়ের রঙ পেয়েছে..দেখতেও পুতুল..মাহির কপালে চুমু দিয়ে নিজের রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।।
ইমরেত তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে সার্জারীর জন্য বেরিয়ে পরেছে সকাল সকাল।।
মেহবুব এখনো স্মৃতিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে,কিছুক্ষন আগে মেহবুবকে ঠেলে উঠতে যেয়ে স্মৃতি একদফা কামড় খেয়ে শুয়ে আছে।।
“আরেকবার যদি এরকম করো,গতকাল রাতে যেমন রেস্ট দি নাই..আজ সারাদিন ও তাই হবে??” এই বলে মেহবুব স্মৃতির বুকে মুখ গুজে ঘুম।।
স্মৃতি মনে মনে গালি দিলেও মেহবুবের তাকিয়ে একটা প্রশান্তির হাসি দিলো সে।।
সকালে নিধি উঠে সবার জন্য নাস্তা বানালো সে,ভাবলো সবাইকে চমক দিয়ে দিবে যে সেও পারে।।
এদিকে নিধি ফ্রেশ হয়ে ক্যাম্পাস যায় আর সেখানে যোগাযোগ করে হোস্টেলের সিট ফাকা আছে কি না খোজখবর নেয়।।
বন্ধুরা ফোন দিয়ে পায় না নিধিকে এইজন্য জিজ্ঞেস করছে ফোন অফ ক্যানো।।
কি বলবে বুঝতে না পেরে নিধি কথা কাটিয়ে অন্য কথা তুলে ব্যস্ত হয়ে পরলো।।
ইমরেত সার্জারি শেষে ফ্রেশ মুড নিয়ে কেবিনে আসছে..তার অপারেশন সাকসেস হয়েছে..এমন কোন রেকর্ড নাই যে সে হিট করে নাই..কোন অপারেশন তার আনসাকসেফুল হয় নাই।।
” নিধির ফোন ভেঙে দিয়েছে আজ ওর জন্য ফোন কিনবে..বেচারি গান না শুনে থাকতে পারে না..ফোন নাই কিভাবে যে আছে..বাসার লোকের সাথে সে ল্যান্ডলাইনে কথা বললো..আমার দেয়া ফোন নিবে না জানে সে..স্মৃতি ভাবীকে দিয়ে দেয়াবে” বাকা হাসি দিয়ে ভাবছে ইমরেত।।
ফোন বাজছে ইমরেতের..রিসিভ করে দেখলো তার গার্ডের নাম্বার এটা।।
“স্যার নিধি ম্যাম হোস্টেলে সিট খুজছে..বেশ কয়েকজনকেও বলেছে..এখন ওর শামীম ফ্রেন্ডের সাথে বসে বলছে যে করেই হোক সিট খুজে দিতে” গার্ড টি বললো
গার্ডের কথাগুলো শুনে ইমরেতের ভালো মুড টা নিমিষে বিষে পরিনত হলো..মাথার মধ্যে মনে হচ্ছে দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো..রগ গুলো কেমন চাড়া দিয়ে উঠেছে..আজ এর বিহিধ করেই ছাড়বে সে।।
“ও যেন সিট খুজে না পায়..আর শামীম ছেলেটারে একটা ধোলায় দেও যেন হসপিটালে এক মাস থাকে..খরচ নিয়ে নিও অফিস এসে..গট ইট?” রাগে দাতে দাত চেপে বললো ইমরেত।।
ফোন কেটে মাথার চুল গুলোকে অনবরত টানছে ইমরেত..মেজাজ যে সপ্তমে তার।।
“সিট খুজা বের করাচ্ছি তোমার আমি” এপ্রোন খুলে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।।
কলেজ,
নিধি কলেজের সামনে রিক্সার জন্য ওয়েট করছে সে..কিন্তু এই ভরদুপুরে সে রিক্সা পাচ্ছে না..এমনিতেও হোস্টেলে সিট খুজার চক্করে অনেক লেট হয়ে গেছে।।
নিধির সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো..নিধি দেখে এভয়েড করলো কিছুটা দূরে সরে এসে আবার রিক্সা খুজার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলো।।
গাড়ির ভিতরের মানুষটা বেরিয়ে এসে নিধির হাত এতো শক্ত করে ধরলো..টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে..গাড়ির ভিতরের মানুষটা আর কেও নয় ইমরেত..ফর্সা মুখ রোদে একদম চকচক করছে কিন্তু মুখ লাল হয়ে গেছে রাগে।।
“আরেহ!!ইমরেত ভাইয়া ছাড়েন..কই নিয়া যান ভাইয়া!!আমি যাবো না.. আজব লোক আপনি শুনতে পান না??” নিধি বলেই যাচ্ছে আর হাত মুচরাচ্ছে।।
ইমরেত নিধির মুখে ভাই ডাক শুনলে ক্ষেপে যায় কিন্তু কিছু বলেনি এতোদিন আজ এমনিতে মেজাজ গরম ভাইয়া ডাক শুনে আরো চেতে গেছে সে।।
গাড়ির দরজা খুলে নিধিকে ধাক্কা দিয়ে বসালো..নিধি হাতে ব্যাথা পেলেও,ভয়ে কিছু বলছে না..কারন,ইমরেতের এই রুপ কখনো সে দেখে নি।।
ইমরেত নিজেও গাড়িতে বসে পরে..নিধির দিকে ঝুকে দিট বেল্ট লাগালো।।
“প্লিজ ভাইয়া গাড়ি চালাবেন না..আমি বাড়ি যাবো” নিধি এক প্রকার ভয়ে বলেই দিলো।।
“নিয়ে যাওয়াচ্ছি বাড়ি” দাতে দাত চেপে বললো ইমরেত
চলবে?
অনুভূতির সংমিশ্রণ পর্ব ২
অনুভূতির সংমিশ্রণ?
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
পর্ব দুই
?
বাসায় আসছে নিধি কিন্তু ভিতরটা ধুকপুক করছে ভীষনভাবে কারন মার খেয়েছে বাইরে ঠিকই কিন্তু বাড়ি ত উনারই, আবারো যদি থাপ্পড় মারে??
থাপ্পড়ের কথা মনে হতেই অটোমেটিক গালে হাত চলে গেলো নিধির..কোনরকমে ভিতরে আসলো সে।।
পিছন দিক থেকে দুইটা পিচ্চি হাত নিধির কোমর ধরে বললো,”ফুপি ধরে ফেলেছি”?
নিধি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,”কে এমন দুঃসাহস করলো”?
“আমি এই বাড়ির রাজকন্যা ” বলেই সামনে এসে নিজের দুই হাত কোমরে রেখে বললো।।
নিধি বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে এই পাক দিয়ে বললো,”কেমন আছে আমার রাজকন্যা?? ”
“হুহ??বলবো কেন??সকালে না দেখা দিয়ে তুমি চলে গিয়েছিলেন কেন?” পিচ্চি বলে উঠলো
“সরি পরি!!আমি আসলে যখন তোমার ঘরে যায়,তখন তুমি ঘুমিয়েছিলে..তাই আমি না ডেকে চলে আসি” নিধি মাসুমের মতো মুখ করে বললো।।
“আচ্ছা আচ্ছা থাক আর আমাকে ইমোজির মতো ব্ল্যাকমেইল হবে না” পিচ্চিটা বললো
“ইমোজি আবার কি??” নিধি অবাক হয়ে বলে উঠলো
“ও মা তুমি ইমোজি চিনো না??মা যখন রাগ করে বাবা তখন এইভাবে ইমোজির মতো ব্ল্যাক মেইল করে” পিচ্চি বললো
এতোক্ষনে নিধি বুঝতে পারলো ও কিসের কথা বলছে।।
“মামুনি ওটা ইমোজি না ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল হবে” মাথায় হাত দিয়ে।।
“ওই হলো ব্ল্যাকমেইল আছে ত নাকি” মুখ ভেংচিয়ে বললো পিচ্চি
“মাহিইই” পিছন থেকে ডাক পরলো
পিচ্চি অর্থাৎ মাহি আমার জামার পিছনে লুকিয়ে পরলো আর বললো,
“প্লিজ ফুপি বাচাও?”
সামনে এসে ২৮ বছর বয়সী নারী আসলো..ইনি হলেন ভাবী অর্থাৎ ইমরেতে ভাইয়ারর ভাবী,মেহবুব ভাইয়ার বউ..ইমরেত ভাইয়ারা দুই ভাই..বড়টার বউ হচ্ছে মেহবুব ভাই..মেহবুব ভাইয়ের বউয়ের নাম স্মৃতি ভাবী..ভীষনভাবে ভালো উনি
“এই নিধি মাহিকে কে দেখছো??নুডুলসের প্যাকেট খুলে গার্ডেনে যেয়ে ছড়িয়ে আসছে..আজ ওর একদিন কি আমার একদিন”ভাবী বলে উঠলো
নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ভাবী খপ করে মাহির হাত সামনে টেনে নিয়ে আসলো।।
রাগী চোখে মেয়ের দিকে তাকালে,মাহি টুপ করে তার মায়ের গালে চুমু খেয়ে বললো,” সরি মা”
এরকম কাজ করলে কেও কি আর রেগে থাকতে পারে??স্মৃতি ভাবী ও হেসে দিলো।।
মায়ের হাসি দেখে মাহি এক দৌড় দিলো।।
“আরেহ!!আস্তে বাবা” স্মৃতি বললো।।
নিধি মা মেয়ের মুহূর্ত উপভোগ করছিলো..ইশ সে যখন গ্রামে থাকতো তার মায়ের সাথে কতোই না দুষ্টামি করতো?
“তুমি ওমন গালে হাত দিয়ে আছো কেন??” স্মৃতি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো।।
নিধি কি বলবে বুঝতে পারছে না,ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে আছে আর বলবেই বা কি যা তার গুনধর দেবর সামনে থাপ্পড় মেরেছে??
“ইয়ে মানে আজ র্যাগ ছিলো কলেজে,কাকে র্যাগ দিছিলো কে জানে থাপ্পড় আমি খেয়েছি” নিধি ইনিয়ে বিনিয়ে বলে উঠলো
স্মৃতি গালের হাত সরিয়ে দেখলো,পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ একদম বসে গেছে,ফর্সা মুখে মনে হচ্ছে লাল রক্ত জমাট বেধে গেছে।।
“একি!!কত জোড়ে মেরেছে তোমাকে??পুরা গালের কি অবস্থা” স্মৃতি আতকে উঠে বললো।।
“আজ তোমার ভাইয়া আসুক..কোন বেয়াদবের দল এই হাল করেছে,ভার্সিটি যেয়ে সব কয়টার খবর নিতে বলবো” স্মৃতি ভাবী রেগে গিয়ে কথাগুলো বললো।।
তারপর আমার হাত টানতে টানতে ডাইনিং এর চেয়ারে বসিয়ে আইসপ্যাক ধরে থাকলো..আসলে ভাবী আমাকে প্রচুর ভালোবাসে..আমার সব প্রয়োজন উনি এক নিমিষে বুঝে যান..ক্লাস টেন থেকে আছি এই বাসাই কিন্তু উনি আমার মায়ের মতোন সব জিনিসের খেয়াল রাখে..আসলে মেহবুব ভাইয়া আর ইমরেত ভাইয়ার মা বাবা মারা যাওয়ার পর স্মৃতি ভাবী সংসার টা সামলে রেখেছে..এতো নামীদামি মানুষ হয়েও এক চুল পরিমাণ অহংকার নেই..এমনকি স্মৃতি ভাবীর ফ্যামিলি ও অবেক হাই ক্লাস,কিন্তু তাদের পিতামাতার মন একদম পানির মতো পরিষ্কার কোন ভেজাল নেই।।
রাতেরবেলা,
ইমরেত হসপিটালের ডিউটি সেরে বাসায় আসছে..মেহবুব ভাই ও অফিস থেকে ফিরে এসেছে..মাহি বসে আছে আর সবার জন্য অপেক্ষা করছে।।
ফ্রেশ হয়ে দুই ভাই নামলো..স্মৃতি খাবার সার্ভ করছে,যে যার চেয়ারে অবস্থান করলো।।
“নিধি কই?” মেহবুব দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো।।
“নিধির খুব জ্বর,আমি খাবার খাইয়ে ওষুধ খাওয়াইয়ে আসছি” স্মৃতি বললো।।
“সেকি!!জ্বর হলো কিভাবে??” মেহবুক অবাক হয়ে বললো।।
“মার খেয়ে জ্বর আসছে” স্মৃতি বললো
“কে মেরেছে???”মেহবুক একটু মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো।।
” আমি মেরেছি” ইমরেত গম্ভীরমুখে হয়ে বললো
আর কি বলবে দুজন চুপ হয়ে থাকলো..কারন,ইমরেত শাসন করে নিধিকে একটু বেশিই?
“কেন মেরেছো ফুপি কে তুমি??” মাহি চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
“কারন,তোমার ফুপি ভুল করেছে..এখন কথা না বলে চুপচাপ খাও?” ইমরেত খাবার মুখে গুজে দিয়ে বললো।।
মাহি মুখ ভেঙচি দিয়ে তার মায়ের হাত থেকে খাবার খাচ্ছে।।
গভীর রাতে নিধির মনে হলো তার গালে কেও হাত বুলিয়ে নরম স্পর্শ পাচ্ছে কিন্তু জ্বরের জন্য চোখ খুলতে পারছে না সে..জোর দিয়ে যখন চোখ খুললো অন্ধকার ঘরে কিছুই দেখতে পেলো না..ঘরের দরজা ও ত লক করা কে বা আসবে??
“আপনি খুব খারাপ ইমরেত ভাইয়া..আপনার হাতের মার খাওয়ার জন্য আমি জ্বরে ভুগতেছি দেইখেন আপনার বউ হবে যখন ওর হাতে মার খেয়ে আপনিও জ্বরে ভুগবেন?” নিধি জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় করে বলছে
নিধির জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় বলাটা কারো কানে যেতেই ব্যক্তিটি অন্ধকারে মধ্যেই বাকা হাসি দিলো।।
সকালবেলা,
নিধির ঘুম ভাঙলো বেলা বারোটা জ্বর কমলেও শরীরের দূর্বলতা এখনো যায় নাই..মনে হচ্ছে কতই না চালের বস্তা তুলেছে যে শরীরটা ভার হয়ে আছে।।
ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো..স্মৃতি ভাবী বসে বসে কাজ দেখিয়ে দিচ্ছে নতুন মালীদের,পুরোনো মালি চলে গিয়েছে বয়স হওয়ার কারনে আর পারছে না কাজ করতে এইজন্য।।
“তুমি ডাইনিং যাও, আমি আসছি” স্মৃতি ভাবী বললো
নিধি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।।
কিছুক্ষন বাদে সামনে পরোটা দিলো ভাবী কিন্ত মুখে দিতেই তিতা লাগলো..মনে হয় জ্বরের মুখে এইজন্য..
খেতে পারলাম না তখন ভাবী স্যুপ করে দিলো।।
মাহিও স্কুলে গেছে নইত ওর সাথে মজা করা যেতো।।
কল বাজছে, দেখলাম শামীম ফোন দিয়েছে।।
“বল” নিধি বললো
“আসিস নি যে কলেজ??” শামীম বললো
“জ্বর হয়েছে রে এইজন্য আসে নি” নিধি ক্ষীন কন্ঠে বলে উঠলো
এদিকে একটা আননোন নাম্বার থেকে নিধির ফোনে কল এসেই চলছে..নিধি দেখেও এভোয়েড করলো,যেহেতু চিনে না দেখেও কি হবে।।
বেশকিছুক্ষন কথোপকথন চললো।।
যে ব্যক্তিটি ফোন দিয়ে বারবার ওয়েটিং পাচ্ছিলো সে রাগে স্বজোরে গ্লাস ভেঙে ফেললো।।
সন্ধ্যাবেলা,
নিধি আরামসে শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছে,নিউজফিডে এটা সেটা ফানি ভিডিও দেখছে আর হাসছে একটু পর পর।।
ইমরেত নিধির রুমে এসে যখন দেখলো নিধি ফোনে কি দেখছে আর হাসছে তখন নিধির কাছে এসে ফোনটা নিয়ে স্বজোরে ফেলে টুকরো টুকরো করে দিলো।।
“আল্লাহ আমার ফোন?” নিধি তড়িঘড়ি ফোন তুলতে গেলে ইমরেত হ্যাচকা টান দিলো।।
“যেহেতু কাজের সময় তোমাকে পাওয়া যায় না,ফোন ও তোমার কাছে থাকবে না” ইমরেত দাত চেপে কথাগুলো বলে হনহন করে বেরিয়ে পরলো।।
নিধির চোখে জল এসে গেছে..কেন তাকে দেখতে পারে না এই লোক??কি করেছে সে তার??
ভাঙা ফোন হাতে নিয়ে বসে বসে কাদছে নিধি।।
চলবে
অনুভুতির সংমিশ্রণ পর্ব ১
অনুভূতির সংমিশ্রণ?
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
পর্ব এক
?
রেষ্টুরেন্ট ভর্তি মানুষের সামনে ইমরেত ভাইয়া আমাকে ধুমাইয়া একটা থাপ্পর মেরে দিয়েছে..আমি গালে হাত দিয়ে চোখ নিচু করে দাড়িয়ে আছি,আরেক হাত দিয়ে চোখের জল মুছছি..
পুরো নাম আদ্রিশ চোধুরী ইমরেত..দেখতে মাশাল্লাহ তাদের বংশের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ সাথে লম্বার দিক দিয়েও..বয়স ২৮ উনার..অলওয়েজ গম্ভীরমুখের আর ফর্মার লুখে থাকা উনার অভ্যাস..কথা এতোবেশি কম বলে যে সব কথার উনার হ্যা বা না এর মধ্যে শেষ..উনার কথার হেরফের যদি হয় উনার বাড়িতে তাহলে ত ওইদিন যুদ্ধ লেগে যায়..দেশের সফল ব্যবসায়ী+ডাক্তার হওয়ার সুবাদে তিনি বিভিন্ন বিজনেসম্যানদের কাছ থেকে তার মেয়ের জামাই হওয়ার অনেক প্রস্তাব ও পেয়েছে কিন্তু উনি মনে হয় সালমানের খানের পথ অনুসরণ করতে চান অর্থাৎ আজীবন সিঙ্গেল থাকার পণ করে বসে আছেন।।
আমি ফারাহ আক্তার নিধি..বয়স ১৯ এইবার অনার্স প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট.. আমার বাবা মায়ের সাথে গ্রামে ছিলাম..কিন্তু গ্রামে যে মেয়েরা থাকে তাদের খুব দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেয়..ওখানকার এক জমিদারের ছেলে রকি আমাকে একদিন স্কুল যাওয়ার পথে দেখেছিলো,সেই থেকে প্রচুর ডিস্টার্ব করতো..যেখানে সেখানে মারামারি করতো কেও আমার সাথে কথা বলতে আসলে,ওর ভয়ে কেও আমার সাথে মিশতো না..একদিন রকির বাবা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে,নাকচ করে দিতে পারছে না এই প্রস্তাব করলে আমার বাবা মায়ের গ্রামে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে তবুও বাবা না করে দিতেই জমিদার সাহেব কিছু না বলে চলে যান কিন্তু তার ছেলে রকি এসে অনেক ঝামেলা করে,নানান হুমকি দিয়ে যায়..বাবা মা উপায়ন্তর না আমাকে তার খালাতো বোনের ছেলের কাছে অর্থাৎ এই যমরাজ লোকটার কাছে ক্লাস টেনে পাঠিয়ে দেন।।
পরিচয় ত হলো..এইবার চলুন এতো সৃজনশীল থাপ্পড় খাওয়ার রিজনটাও জেনে আসি??
ফ্ল্যাশব্যাক,
ফ্রেন্ডদের সাথে কলেজ শেষে আড্ডা দিতে রেষ্টুরেন্টে এসেছি..আমরা মোট ১০ জন ছিলাম তার মধ্যে আমাদের ছেলে ফ্রেন্ড ছিলো ৪টা আর আমি সহ মেয়ে ছিলাম ৬টা..সবাই খুব মজা করতে করতে রেষ্টুরেন্টে আসছি,খাবারের টেবিলে বসে খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছি।।
আমি রেষ্টুরেন্টে আসলেই চাওমিন খাবোই খাবো..চাওমিন খাইয়ার জন্য আমি টাকা খরচ করি না,হেটে বাড়িতে চলে আসি..আমি চাওমিন অর্ডার দিয়ে,বাকিরা তাদের অর্ডার দিয়ে বিভিন্ন গল্পগুজব করতে ব্যস্ত ছিলো..
আমি বরাবরের মতো চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে..প্রচুর কথা বলতে ভালোবাসি তবে কেও যদি ক্লোজ হয়ে যায় তবে নাহলে আমি অপরিচিত দের কাছ থেকে সবসময় দূরে থাকি।।
রেষ্টুরেন্টটা ফাইভ স্টার হওয়ার সুবাদে নামীদামী বিজনেসম্যানরা এখানে মিটিং এ আসেন..বড়লোক বাপের পোলারা ছুচকি মাইয়া পটাইয়া কেও ডেটেও আসে…কিন্তু ভাই প্রেমে পরতে পারলাম না কেন এখনো এই নিয়া আফসোস করি,তার মানে এই না যে আমার ব্যাচেলর লাইফ খুব দুঃখের..আমি আমার ব্যাচেলর লাইফ নিয়ে খুব খুশি কিন্তু আশেপাশের পুতুপুতু কোন প্রেম দেখলে মনে হতো “আজ যদি কোন বফ থাকতো”কিন্তু পরক্ষনেই ভেবে ফেলি যাক আল্লাহ বাচাইছে এমন আপদ কোন জীবনে নাই।।
ওয়েটার চাওমিন নিয়ে আসা দেখে আমি খুশিতে গদগদ হয়ে গেছি কারন চাওমিন দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না তবে সবসময় না যখন ক্রেভিংস জাগে আর কি..আজ ক্রেভিংস জাগছে যে চাওমিন খাবোই খাবো।।
ওয়েটার এদিকে আসতে দেখে আমি হাত বাড়িয়ে চাওমিন নিতে যাবো ওমনে এক পিচ্চি বাচ্চা কই থেকে দৌড়িয়ে এসে আমার পায়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিজে ত পরছে পরছে আমারে নিয়ে পরেছে সাথে আমার চাওমিন ফালাই দিয়েছে।।
“আমার চাওমিন” নিচে বসে নিধি বললো
উপরে তাকিয়ে দেখলো স্যুট পরা এক লোকের মাথায় চাওমিন পরে গেছে..লোকটি যখন ঘুরে তাকালো,নিধির কলিজা গলার কাছে চলে আসছে..কারন,চাওমিনটা আর কারোর মাথায় না যমরাজের মাথায় থুক্কু ইমরেতের মাথায় পরেছে..
নিধিকে তার ফ্রেন্ড শামীম তুলে উঠালো..নিধি উঠে দাড়িয়ে পরলেও চলার শক্তি নাই..ইমরেতের চোখে দিয়া মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে..সামনে এসে নিধিকে এক থাপ্পড় দিলো..ব্যস পুরা রেষ্টুরেন্টের মানুষ ফ্রিতে সিনেমা দেখে নিলো।।?
বর্তমান,
এইটা হলো আমার থাপ্পড় খাওয়ার কাহিনী..বাপ মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে কখন জীবনে মার খাওয়ার সুযোগ হয় নি..কিন্তু যেদিন থেকে ওদের বাড়িতে এসেছি কখনো সোজা মুখে এই কুমড়াপটাশ আমার সাথে কথা বলে নি..অলওয়েজ রেগে রেগে কথা বলে মনে হয় ওর কোন পাকাধানে মই দিয়েছি আমি?
একে ত থাপ্পড় খাওয়ার জন্য গালটা ভীষণ জ্বলছে কান্না আসছে খুব,কেদেও যাচ্ছি চোখ ও মুছছি আবার চাওমিন আমার পরে গিয়েছে দেখে আরো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লেগেছি?
চলবে?
রংধনু পর্ব ৮ এবং শেষ পর্ব
রঙধনু?
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
শেষ পর্ব
?
দেখতে দেখতে দিন চলে আসছে ফারিহার জন্মদিনে তবে এভ্রিলের ইচ্ছে নাই ধুমধাম জন্মদিন পালন করার..সে খ্রিস্টান পরিবারের মেয়ে হলেও সুলেমানকে বিয়ে করে সে মুসলিম ধর্ম নিয়েছে।।
ফারিহার জন্মদিন পালন না করলেও ফারিহার জন্য সুখ শান্তির বাসায় ইমাম সাহেব ডেকে মিলাদ দিবে,ফারিহার পছন্দের খাবার সে আর মোহ মিলে বানাবে।।
মোহকে ফারিশ আর ফারিহার রুমে ঘুমাতে দেয় না..এইতো কিছুদিন আগ,মোহ ফারিহার রুমে এসে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ওমনি পিছন দিক থেকে এসে ফারিশ মোহকে কাধের উপর তুলে নিয়ে যাচ্ছে রুমের দিকে,মোহ এদিক ওইদিক তাকাচ্ছে কেও দেখলো কি না শরমে তার মাথা শেষ হয়ে যাবে কেও দেখল।।
ঘরে এসে বিছানায় ধপ করে দিলো ফারিশ মোহকে,মোহ উঠতে চাইলে মোহকে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলছে সে,
“তোরে বলছিই না যা শাস্তি দেয়ার আমার পাশ থেকে আমারে সামনে রাইখা শাস্তি দিতে??তুই কোন সাহসে ফারিহার রুমে ঘুমাস??নাকি দেখতে চাস আমি রেগে কিছু করি??”
এরকম কথা শুনে মোহ ত এক প্রকার ভয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে আছে..ফারিশ নিজেকে শান্ত করে মোহর চোখজোড়ার উপর লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে চুমু খেলো..বুকের মধ্যে নিয়ে বললো,
“সব সহ্য করতে পারবো কিন্তু তোমার কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করার এক বিন্দু টর্চার আমি সহ্য করতে পারবো না”ফারিশ মোহর কপালে ঠোট রেখে কথা গুলো বলছিলো।।
এদিকে ফারিহা ঘুমাতে পারছে না নুহাসের কলের জন্য..এই বজ্জাত ছেলে ওর নাম্বার কিভাবে পেলো??আবারো ফোন বাজছে..ধরলো না সে বাজতে থাকুক..মেসেজ আসলো,
” ফোন না ধরার সাহস দেখাও??ওয়েট তোমার বাসায় আসছি”
ফারিহা এই হুমকিতে ভয় পেলো কারন এর কিছুদিন আগে সে বাসার নিচে গাড়ি দাড়িয়ে ছিলো,ফোন না ধরাতে।।
ফোন বেজে উঠলো আবার ফারিহা অগত্যা উপায় না দেখে ফোন রিসিভ করলো..
“হ্যালো.এই এই আপনার সমস্যা কি??নিজের ঘুম হয় না বলে আমারে ঘুমাতে দিবেন না আস্ত একটা খাটাশ লোক” ফারিহা রাগে গজরাতে গজরাতে বললো
“এই আমি ডেইলি শাওয়ার নি, কই থেকে খাটাশ হলাম??আর তুমি ফোন না ধরে,আমার শান্তির ঘুম কেড়ে নিয়ে নিজে কিভাবে ঘুমাও কুম্ভকর্ণ?? নুহাস বললো
” এই শুনেন এতো পেচাল পারার টাইম নাই..ঘুম ভাল্লাগে আমার আমি ঘুমাবো..ঘুমকেই দরকার রাখেন ফোন” ফারিহা বললো
“এহ,বললেই হলো ঘুম দরকার??আমার তোমাকে দরকার,ঘুম সাইডে রাখো..মাথা গরম করো না…একটু সুন্দর করে কথা বলো বাবু?” নুহাস একটু নুইয়ে বললো
“কে বাবু?? আমি কি দুই বছরের বাচ্চা?? ফিডার খায় যে বাবু ডাকেন আস্ত একটা শয়তানের নানা”ফারিহা বলো দাত কিড়মিড় করে।।
এইভাবে চলতে থাকে তাদের টম এন্ড জেরীর মতো সারাক্ষন খুনশুটি..আজকাল নুহাসের উপরেও ফারিহার মায়া জন্মে গেছে..এক মিনিট কল দিতে দেরী বেচারাকে একদম ধুয়ে দেয়..তবে নুহাস ফারিহা এই ঝাসি কি রানী ওয়ালা লুক টা সে প্রচন্ড ভালোবাসে কারন এইজন্য সে তার প্রেমে উপুত করে পরে গেছিলো।।
জন্মদিন,
রাতে কেও উইশ করতে আসে নাই ফারিহাকে কিন্তু এই নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেয় কিন্তু নুহাস তাকে একটাবারের জন্য কল করে উইশ করার প্রয়োজনবোধ করলো না এই ভেবে তার কান্না পাচ্ছে।।
এভ্রিল আর মোহ দুজন মিলে অনেক রকমের রান্না করছে সব ফারিহার পছন্দের।।
দুপুরে সবাই মজা করে খেলেও ফারিহা খাবারে মন বসাতে পারে নি,ভিতর থেকে কান্না গুলো দলা পাকিয়ে মনে হচ্ছে ঠেলে বের হয়ে আসবে..সারাদিনেও একটাবার নুহাস ফোন দেয় নি ফারিহাকে।।
বিকালবেলা,
মিলাদ পরানো শেষ হলো কিছুক্ষন আগে..মোহ সবার হাতে মিস্টির প্যাকেট দিচ্ছে।।
“এতিমরে এখনো ঘরের বউ রাখছো??যার জন্য তোমার ছেলে দেশ ছাড়লো,তিন বছর আসলো না তারে কিভাবে মাথায় রাখো??অবশ্য মেয়ে লোভী না হইলে কি থাকে??আমি হইলে ওইদিন ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম” কটুক্তি করে বললো এক মহিলা
মোহর চোখে পানি এসে পরেছে অলরেডি..চলে যাওয়ার জন্য অন্যদিকে পা বাড়ালে,কেও তার কোমর শক্ত করে ধরে সামনে আনলো।।
এভ্রিল আর ফারিহা রেগে কিছু বলতে যাবে,সুলেমান ইশারা দিয়ে চুপ করতে বলে সামনের দিকে তাকাতে বললো।।
“আচ্ছা তাই মিসেস মজুমদার??আমার বউ না হয় এতিম,আমি ওর জন্য ঘর ছেড়েছি কিন্তু ওর জন্য যে আমি পাগল হয়ে ওর সাথে সংসার করার জন্য আসছি সেইটা দেখলেন না??আর কি বলছিলেন লোভী??আই থিংক আপনার মেয়ের থেকে আমার বউ কম আসে এই ক্ষেত্রে?? আমার বউ আমার ভালোবাসার লোভী,আমার বউ আমার ফ্যামিলির প্রতিটা মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য লোভী!! কিন্তু আপনার মেয়ে বাচ্চা দুইটা হয়েও,পরকীয়া করে টাকার জন্য??কেন স্বামী তার ব্যবহারের জন্য তার হাতে হাত খরচের টাকা দেয় বলে??” ফারিশ মুচকি হেসে কথাগুলো বললো
মিসেস মজুমদারের মুখ অপমানে লাল হয়ে গেছে..তিনি চলে যেতেই ফারিশ মোহর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,
“ট্যাংক অলওয়েজ অন থাকে??নিজের স্ট্যান্ড নিতে পারো না?? খালি ভ্যা ভ্যা করে কাদতে জানো,আর আমারে কিভাবে চিপায় ফেলতে হয় সেইটা জানো?”
মোহ ভাবছে সে কখন তাকে চিপায় ফেললো..ফারিশের মোহর প্রতি স্ট্যান্ড নেয়াতে ফারিহা সোফার উপর দাড়িয়ে জোড়ে জোড়ে শিশ বাজালো।।
সন্ধ্যাবেলা,
সবাই বসে নুডুলস খাচ্ছে,ওই মুহূর্তে এক ফ্যামিলি বাসার মধ্যে আসলো বিভিন্ন থালি নিয়ে..থালির উপরে কাপড় দেয়া,বুঝায় যাচ্ছে থালির নিচে কিছু আছে।।
ফারিহা চোখ তুলে তাকালে সে ঝটকা খায়,সামনে আর কেও না নুহাস সাদা পাঞ্জাবি পরে কিলার লুক দিয়ে হেসে আসছে।।
ফারিহার মাথা এক প্রকার ভৌ ভৌ করছে এরা কেন??
“ব্রো!! কেমন আছো??” বলেই ফারিশের সাথে ম্যানলি হাগ করলো নুহাস ফারিশকে
ফারিশ ও সেইম ভাবে জড়িয়ে ধরলো,অবাক করার বিষয় ফারিহার কাছে তা হলো তার ভাই নুহাসকে তুই তুকারি করছে।।
তার মাথা ভার হয়ে যাচ্ছে এইসব দেখে,সে জানতে পারলো আমেরিকার ইউনিভার্সিটি তে জুনিয়র ছিলো নুহাস..আর তাদের সম্পর্ক অনেক ভালো..উঠাবসা সবখানে প্রায় জায়গায় উপস্থিত থাকতো সে..কিন্তু দেশে আসার পর দেখা হয় নি তাদের আর..
ফারিহার মাথায় আরেকটা ঝটকা পরলো যখন সে শুনলো আজ তার আকদ তাও আবার নুহাসের সাথেই..তার ভাই শুধু না তার ফ্যামিলি সবাই মিলে আগে থেকে মিট করে এটা প্ল্যান করে রেখেছে,আগে আকদ হবে তারপর ফারিহার ভার্সিটি শেষে অনুষ্ঠান হবে।।
ফারিহার মুখ দেখার মতো হয়ে আছে সে শুধু কাদতে বাকি রেখেছিলো..মোহ ফারিহাকে শাড়ি পরিয়ে নিচে নিয়ে আসলো..দেখতে নীল শাড়িতে নীল টুকটুকে পরী লাগছিলো।।
চোখের সামনে নুহাস আর ফারিহার বিয়ে হয়ে গেলো..নুহাস সবার আড়ালে ফারিহার কোমর চেপে ধরলো,ফারিহা চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে।।
“হ্যাপি বার্থডে আমার ঝাসি কি রানী!!এইটা তোমার বার্থডে গিফট??এইটা দিব বলে সারাদিন কল দি নাই,গতরাতেও অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করেছি..গেট রেডি টু টলারেট মাই টর্চার বেবি??নুহাস ফিসফিসিয়ে বলে বাকা হাসি দিলো।।
” আমার সুখের দিন শেষ” ফারিহা বিড়বিড় করে বললো।।
সবাই মিলে একটা হ্যাপি ফ্যামিলি ফটো নিলো,দুই ফ্যামিলি মিলে।।
নয় মাস পর,
মোহকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অপারেশনে..সে প্রেগন্যান্ট..হ্যা সে ফারিশে বাচ্চার মা হতে চলেছে..ফারিশকে সে শাস্তি দিতে না পারলেও,প্রেগন্যান্সির সময় ফারিশকে সে চড়কা আকারে ঘুরিয়েছে..কখনো এই খাওয়ার আবদার,কখনো গোসল করানোর কখনো বমি পরিষ্কার কখনো মাথায় তেল দেয়া..ফারিশকে নাকানি চুবানি দিয়েছে সে কিন্তু ফারিশ এইসব করতে কখনো ক্লান্ত হয় নি.. ফারিশ যখন দেখলো মোহ প্রেগন্যান্ট তখন এতোবেশি খুশি হয়েছিলো মোহকে নিয়ে সারারাত কোলের মধ্যে ছিলো সে..
নার্স দুইটা এসে দুইটা বাচ্চা নিয়ে আসলো..মোহর টুইন বেবি
হয়েছে..বাচ্চা কোলে নেয়ার আগে ফারিশ জিজ্ঞেস করলো,
“আমার ওয়াইফ কেমন আছে?”
নার্স হেসে বললো,”তিনি আশংকা মুক্তো..দেখা করতে পারেন”
এভ্রিল দুই নাতি আর নাতনী কে নিয়ে মহাখুশি, সারা হসপিটাল জুড়ে মিস্টি দিচ্ছে সুলেমান।।
“আমরা কখনো নিব বাচ্চা বেবি??” নুহাস ফারিহাকে বলছে.তারাও,ফুফা ফুপি হওয়ার আনন্দে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে..
“বেবি ডাকো??আবার বাচ্চাও চাও..আস্ত একটা হাদারাম” ফারিহা মুখ ভেঙচি দিলো।।
নুহাস ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো..এই মেয়ের মুখে কিছু আটকায় না??
ফারিশ কেবিনের দরজা খুলে মোহর কাছে গেলো,ক্যানোলা হাতে নিয়ে শুয়ে আছে।।
কারো উপস্থিতিতে সে চোখ খুললো,সে ইশারায় পাশে বসতে বললো ফারিশকে।।
ফারিশের ভয় এতোবেশি ছিলো যে মোহর প্রেগ্ন্যাসির সময় তাদের উপরের রুমটা নিচে করেছিলো..মোহকে বেড থেকে নামতে দিতো না,নামলেই অনেক বকতো সে।।
“ভালোবাসি” মোহ ফারিশের দিকে তাকিয়ে বললো..এই প্রথম মোহ ফারিশকে তার ভালোবাসি কথাটা বললো
“আমিও ভালোবাসি,খুব ভালোবাসি” ফারিশ মোহকে জড়িয়ে ধরলো।।
কিন্তু এর মধ্যে এভ্রিল, সুলেমান,ফারিহা আর নুহাস দরজা ঠেলে বেবিদের নিয়ে ঢুকলো।।
“এখন আর রোমান্স হবে না..এখন আমাদের বেবিদের সময়” নুহাস বলে উঠে মোহ আর ফারিশের মাঝে দুইটা বেবি রেখে দিলো।।
রুমে সবার হাসির রোল পরলো।।এইভাবে কেটে যাক তাদের সুখশান্ত্রি জীবন..
রংধনু পর্ব ৭
রঙধনু?
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
পর্ব সাত
?
লিভিংরুমের পরিবেশ থমথমে ফারিশ হাত মুঠ করে সোফায় বসে আছে..রাগে তার সারা শরীর বারবার কেপে উঠছে..এরকম চুপ থাকা যে কোন তুফানের পূর্বাভাস সেইটা তার বাবা মা বুঝতে পারছে।।
“মা?তুমি এই ছেলেরে চিনো??” মোহর দিকে তাকিয়ে ফারিশ প্রশ্ন করলো..মোহ ত মেঝেতে নখ খুটিয়ে যাচ্ছে ভয়ের ঠেলাতে..বিনা কিছু করাতেই তার অবস্থা করুন হয়ে দাড়িয়েছে..
“হ্যা এই ছেলেটা মোহকে শপিংমলে নাম আর কি কি জিজ্ঞেস করেছিলো..আমি ওরে সেখান থেকে উত্তর দিয়ে টাইনা নিয়ে গেছি” এভ্রিল উত্তর দিলো।।
ফারিশ চোখমুখ শক্ত করে মোহর দিকে তাকালো,মোহ এখনো মাথা নিচু করে আছে..ফারিশ কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো গাড়ি নিয়ে।।
ফারিশের এই স্বভাবের সাথে পরিচিত তার বাবা মা..এইজন্য উনারা আর কিছু বলে নি,কিন্তু মোহর কাছে ফারিশের এই স্বভাবটা নতুন..সে বেশ ভয় পেয়েছে..এভ্রিল বুঝতে পেরে,মোহকে সাথে করে ঘরে নিয়ে গেলো..
“মনোযোগ দিয়ে কিছু কথা শুন,আমি যা বলবো এখন” এভ্রিল বললো
“ফারিশের উপর তোর অভিমান জমে আছে অনেকখানি..এটাও জানি এটা সহজে ভাঙার নয়..আমি আমার ছেলের হয়ে সাফায় গাইতে আসে নি..আমি তোকে আমার মেয়ে ভাবি বিধেয় কথাগুলো বলছি..ফারিশ তোকে ডিভোর্স দিতে আসে নি,বরং তোর উপর এতোবেশি দূর্বল হয়েছে সে,তোর সাথে সংসার করার জন্য এসেছে সে!!” এতটুক বলে এভ্রিল থামলো
সংসার করতে এসেছে শুনে মোহর বুকের উপর মনে অনেক কেজি ওজনের পাথরটা সরে গেলো।।
“জানি তুই হয়তো ভেবেছিস ডিভোর্স দেয়ার জন্য সে এসেছে কিন্তু না,তোর মতো আমিও ভেবেছিলাম এরকম কিছু একটা..এই কথা শোনার পর জানি তুই ওর সাথে ঢ্যাংঢ্যাং করে ক্ষমা করে দিবি..কিন্তু আমি বলছি তুই এটা করবি না” এভ্রিলের সাফ জবাব
“ক্ষমা করতে না করছে তার ছেলেকে??” এই কথা শুনে মোহ কিছুক্ষন তার শাশুড়ী দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকলো।।
“শোন ওকে তোর গুরুত্বপূর্ণ টা আরো বুঝাতে হবে…ক্ষমা করবি,করে দে কিন্তু বুঝতে দিস না..চড়কা কারে তাকে ঘুরা কিছুদিন..” এভ্রিল বললো
“মানে” চোখ বড় বড় করে বললো মোহ
“মানে সোজাসাপটা তাকে তোর পিছে ঘুরা কয়দিন,যেমনটা তুই এতোবছর অপেক্ষা করেছিলি” এভ্রিল চোখ ঘুরিয়ে বললো
“কিন্তু মা” মোহ কিছু বলতে যাবে তার আগের এভ্রিলের ধমক
“চুপ..যা বলছি তাই করবি..ওর সামনে নরম থাকবি কিন্তু বুঝতে দিবি না তুই সব জানোস,মাফ কইরা দিছোস” এভ্রিল বললো
“কিন্তু মা উনি যে রাগী,আজ যেমন ব্যবহার করলো..আমার দিকে যেইভাবে তাকিয়ে ছিলো মনে হচ্ছে আজকে কুরবানী করে দিবে” মোহর জবাব
মোহর কথা শুনে এভ্রিল ফিক করে হেসে দিলো।।
“হ্যা ওদের বংশের সব কয়টা এক লাইনের..রাগী আর বদমেজাজি তবে ফারিশ একটু বেশি..ছোট থেকে ওর যা চায় দিতেই হতো না দিলে কি যে প্রবলেম করতো” এভ্রিল বললো
“কিন্তু মা তুমি যেসব বলছো, আমি কি পারবো করতে?” মোহ ঢোক গিলে বললো।।
“পারবি না মানে,পারতেই হবে..নাইলে ওই ছেলেরে ডেকে এনে তোর বিয়া দিয়ে দিব?” এভ্রিল হাসি আটকে রেখে বললো
“না না না আমি পারবো” মোহ তাড়াহুড়ো করে বললো
এভ্রিল হো হো করে হেসে মোহকে জড়িয়ে ধরলো।।
কলেজ,
কোচিং এ এক পিচ্চির কাছ থেকে ফারিহা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ পেয়ে,সেটা কব্জিতে লাগিয়ে রেখেছে..পিচ্চিকে জিজ্ঞেস করেছিলো কে দিলো??পিচ্চিটা কিছু না বলে দৌড় দিসে।।
কলেজ শেষে ক্লাসমেটদের সাথে ফারিহা দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে।।
দূর থেকে গাড়ির ভিতরে চোখে সানগ্লাস দিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নুহাস ফারিহার দিকে..সকালে দেখার পর থেকে নুহাস ছটফট করছে ফারিহাকে দেখার জন্য,এখন ছুটি শেষে তাকে দেখতে এসেছে।।
কিছু বখাটে ছেলে আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আর টিস করছে বাকি মেয়েদের..ফারিহা চুপচাপ খাচ্ছে কিছু বলছে না।।
কিন্তু দূর থেকে নুহাস সব দেখছে,এই কান্ড দেখে সে ভীষণ রেগে গেছে..গাড়ি থেকে নেমে ওদের দিকে এগোতে যাবে কি একটা অনেক জোরে থাপ্পড়ের সাউন্ড আসছে।।
নুহাস এগিয়ে গিয়ে দেখলো ফারিহা একটা ছেলের চুল ধরে একের পর এক থাপ্পর মেরেই চলছে।।
“আর আমার ফুচকার প্লেটে হাত দিবি??তোর সাহস ত কম না আমার ফুচকার প্লেট থেকে ফুচকা তুলে খাস তুই??বাইর কর,এখুনি ফেল” এই বলে আবারো থাপ্পর মারতে লাগলো
“আফা মাফ করি দেন,আমি ফুচকা কেন..আমি আজ বাড়ি যেয়ে ভাত ও খাবো না!!ছাইড়া দেন” এই বলে ছেলেটা পা ধরতে আসছে
“লজ্জা করে না মেয়েদের টিস করোস আর আমার ফুচকা খেয়ে,আমারে টিস করার সাহস করার চেষ্টা করছোস”ফারিহা রাগে আবারো মারতে গেলে কেও তার হাত টেনে সামনে নিয়ে আসলো।।
” ইনাফ..যথেষ্ট মেরেছো তাকে,এইবার অফ যাও?? যতটা মেরেছো ওই আর কোন মেয়েকে টিস করার আগে দশবার ভাববে?” নুহাস কথা গুলো বললো
নুহাস ফারিহার হাত ধরেছে বলে ফারিহা নিজের কনুই দিয়ে নুহাসের পেটে দিলো এক গুতা।।
“আউচ” বলে নুহাস পেটে হাত দিলো।।
“নেক্সট টাইম ফারিহা ফাজের হাত ধরার সাহস করবেন মিস্টার ধলা মুরগী..স্টে এওয়ে ফ্রম মি” এইটা বলে ফারিহা সামনে চুল টা উপরের উঠিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।।
“মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকতি ঠিকই তুই কিন্তু মেয়েরা তোর কাছে দূরে থাকতো না..প্রেমে পরলি ত পরলি এমন এক লেডি ডনের প্রেমে পরলি যে প্রথম মিটেই মার দিলো..এতো কড়া?? ডোন্ট ওয়ারি বেবি..একবার সব সেটেল হোক,তখন তোমাকে টাইট দিয়ে পানিশমেন্ট দিব একদম কড়া করে” এই বলে নুহাস বাকা হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে পরলো।।
সন্ধ্যাবেলা,
ফারিশ সকালে যেয়ে এখনো আসছেনা দেখে মোহর টেনশনে দুপুরে খেতে পারে নি..এভ্রিল অনেকবার বললো কিন্তু ওর ভয় লাগছে ফারিশ এখনো আসে নি এইজন্য।।
ফারিহার কব্দিতে স্যাভলন দিয়ে,মলম দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে মোহ..সুলেমান আর এভ্রিলকে স্ন্যাকস দিয়ে,টেবিলে পানি রাখছিলো।।
কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে ফারিশ মোহর এক হাত ধরে উপরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে,এমন আচমকা টানার কারনে মোহর ভিতরটা ভয়ে কুকড়ে যায়।।
কেও কিছু বললো না..তাদের ব্যাপার, তারাই মিটিয়ে নিক।।
ফারিশ মোহকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যেয়ে,ভিতর থেকে লক করে দিলো।।
“স্টে হেয়ার..আমি শাওয়ার নিয়ে আসি?? বের হয়ে না পেলে,তোমাকে কি করবো আমি নিজেও জানি না” এই বলে ফারিশ তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।।
২০মিনিট পর ফারিশ বের হলো ওয়াশরুম থেকে..ফারিশের পরনে শুধু ব্ল্যাক কালারের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট..ফর্সা শরীরে বুকের মাঝে বিন্দু বিন্দু পানি..
মোহর দিকে তোয়ালে এগিয়ে বললো,
“মুছো?”
ফারিশ বেডে বসলো..মোহ দাড়িয়ে কাপা কাপা হাতে ফারিশের চুল মুছে দিতে লাগলো..
ফারিশ মোহর কোমর টা ধরে একটু টেনে সামনে আনলো…এই প্রথম তার স্বামীর স্পর্শ এতো কাছ থেকে পাচ্ছে।।
মোহর এরকম কাপাকাপি দেখে ফারিশ আরেকটু কাছে টেনে মোহর কোমর ধরলো..মোহর সালোয়ারের উপর দিয়ে ফারিশের গরম গরম নিঃশ্বাস ফেলছে..
এদিকে মোহর হাত থেমে গেছে আর মুছতে পারছে না সে ফারিশের চুল..তার কলিজাটা মনে হচ্ছে গলার কাছে এসে আটকে গেছে।।
মোহর সহ্য করতে পারছে না ফারিশের নিঃশ্বাস..পা টাও মনে হচ্ছে চলছে না,কোনরকমে সরে আসতে চাইলে ফারিশ আরো শক্ত করে ধরে টেনে এনে,মোহর পেটে মুখ গুজে দিলো..
“ডোন্ট মুভ?? ডু হোয়াট আই সে??মোহর পেটে মুখ গুজে কথাগুলো বলছিলো ফারিশ..
বুঝতে পেরেছে সে আর সরাতে পারবে না..নিজেকে সামলানো বড় দায় হয়ে গেছে তার আজ..কোনরকম ঢোক গিলে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছলো..
বেশকিছুক্ষন এরকম হওয়ার পর,ফারিশ মোহর পেট থেকে মুখ সরিয়ে মোহর হাত ধরে তার সামনে বসালো।।
“বসো..আমি আসছি?” এই বলে ফারিশ আলমারির দিকে গেলো।।
প্যাকেট নিয়ে মোহর সামনে ধরলো,মোহ প্যাকেটের দিকে তাকাচ্ছে একবার আর একবার ফারিশের দিকে।।
ফারিশ নিজে প্যাকেট খুলে দিলো..প্যাকেটের ভিতরে জিনিস দেখে মোহ অবাক হলো।।
কারন,প্যাকেটের ভিতরে ছিল স্বর্নের চুড়ি,নাকফুল,কানের দুল ছোট করে সিম্পল, আংটি আর চেইন।।
“আমি কি করবো এইগুলো?” মোহ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।।
ফারিশ কোন জবাব দিলো না..চুড়ি গুলো মোহর হাতে পরিয়ে দিলো,নাকফুল আগের টা খুলে নিজের আনা পছন্দমতো বালি সিস্টেম নাকফুল পরালো,কানের দুল পরালো..আংটি পরালো..চেইন পরানোর সময় ফারিশ মোহর ঘাড়ে একটা কামড় দিলো..মোহ এমনিতে শিউরে উঠছিলো যখন এইসব পরাচ্ছিলো,এখন ত মনে হচ্ছে এই কামড়ে মরেই যাবে..
ফারিশ যেখানে কামড় দিয়েছিলো সেখানে ঘনঘন চুমু দিলো কয়েকটা..মোহ ফারিশ হাত খামচে ধরেছে।।
বেশকিছুক্ষন পর ফারিশ সরে আসছে,কিন্তু মোহ চোখ বন্ধ করেই আছে।।
“এইগুলো কখনো খুলতে যেন না দেখি??এইগুলো সবসময় পরার জন্য সিম্পলের মধ্যে এনেছি আমি..কখনো খোলা দেখলে খবর আছে”ফারিশ বললো
মোহ চোখ খুললো ঠিকই কিন্তু তাকাতে পারছে না লজ্জায় সে ফারিশের দিকে।।
ফারিশ মোহর সামনে হাটুর ভরে বসে,মোহর কোলে মাথা দিলো..মোহর হাত টেনে নিয়ে নিজের মাথাতে রাখলো।।
মোহ ত অবাকের উপর অবাক হচ্ছে,একদিনে এতোকিছু??সইবে ত?
“জানি আমি ভুল করেছি..ভুল না অন্যায় করেছি কিন্তু ভুলের শাস্তি তুমি যা দিবা মেনে নিব”কোলে মাথা রেখে বলছে ফারিশ।।
“তুমি যদি ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তাও করো?? তোমাকে মেরে মাটিতে আমি পুতে দিব??যে আলাদা করার বিন্দুমাত্র ট্রাই করবে তাকে দুনিয়া থেকে সরাতে আমি দুই সেকেন্ড সময় নিব না..কিন্তু তুমি যদি আমার কাছ থেকে এখন এই মুহূর্ত থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবো আই প্রমিস টু আল্লাহ,আই উইল কিল ইউ..ডোন্ট ইউ এভার ডেয়ার টু স্টে এওয়ে ফ্রম মি..যত পারো সামনে থেকে শাস্তি দাও,আমি তোমার মুখ দেখে সহ্য করে নিব কিন্তু দূরে গেলে কি করবো বলেই দিয়েছি??তুমি আমার..তোমাকে চাই আমি শুধু..মাইন্ড ইট?? ফারিশ কোলের মধ্যে মাথা রেখে এতো কথা বলে গেলো।।
ফারিশ মাথা তুলে মোহর ঠোটে বেশকিছুক্ষন চুমু খেয়ে বললো,
“যা বললাম মাথায় থাকে যেন?”
এইটা বলে ফোন নিয়ে বারান্দায় গেলো ম্যানেজারকে কল করতে কারন আমেরিকা ত সে আর যাবে না..ব্যবাস সব এখানে সেটেল করবে তাই যত দ্রুত সম্ভব এখানে সব শিফট হোক।।
মোহর হাত আপনা আপনি ঠোটে চলে গেলো..খুশির কারনে,চোখ দিয়ে উপচে জল পরলো।।
“তুমি আমার,তোমাকে চাই শুধু ” এইসব শুধু তার কানে বাজছে…
চলবে