Monday, August 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2010



স্বপ্নীল ২২

0

স্বপ্নীল
২২
-“কূপের মতো নাভিটা যখন সবাইকে দেখিয়ে বেরিয়ে আসতে পারলি! তখন কোনো সমস্যা হয়নি এখন সামান্য টপস ছিঁড়ে ফেলছি বলে পিছন ঘুরে যেয়ে ন্যাকামি করছিস!”
নীল তার পেটের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি তার নাভিটা দেখা যাচ্ছে।টপসে উপরে উঠে গেছে!কখন হলো এমন! হয়তো কাজ করতে করতে কখন উঠে গেছে! কিন্ত সমুদ্র এটা কি বলছে, সে নাভি দেখিয়ে বেড়িয়েছে সবাইকে!মানে কি?
পিছন মুখ করে দাঁড়িয়ে রোদ বলল,
-“মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন!কিছু বলছি না দেখে,,,,, ”

তার আগে সমুদ্র একটানে তার দিকে ফিরায় রোদ কে।রোদ লজ্জায় দুইহাত বুকের উপড়ে জড়ো করে।সমুদ্রে তাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
-“হাত সরা!”
সমুদ্রের কথায় রোদ মুখ তুলে তাকায়।সমুদ্র কি করতে চাইছে তার মাথা আসছে না।সমুদ্র ধমকিয়ে বলল,
-“হাত দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছিস!আমি তোর জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছি?তোর সর্বনাশ করছি!”
বেয়াদব ছেলে ছেঁড়ার বাকি কি রাখলি? ইচ্ছা করছে তোকে আচঁড়ে ভক্তা বানিয়ে খেয়ে ফেলতে!কিন্তু আফসোস কিছু করতে পারবো না! মনে মনে বলল রোদ।
-“এভাবে সঙের মতো দাঁড়িয়ে থেকে বিড়বিড় না করে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে যা!”
রোদ খুব অসহায়দের মত করে বলল,
-“আমি কি পড়বো ফ্রেশ হয়ে! ”
-“যেভাবে অসহায়দের মতো বলছি,আমি তো ভাবলাম এক কাপড়ে সারাজীবন পার করছি তুই,,,,,,আর হ্যাঁ, এক কাপড়ে সারাবছর না কাটালে কি হয়েছে?
রোদ তাকিয়ে আছে সমুদ্রের মুখের কথাটা শুনার জন্য।সমুদ্রে উপর নীচ রোদকে ভালো করে তাকিয়ে পরখ করে বলল,
-ছেঁড়া কাপড়,তালি-তোলা কাপড় আজীবন পড়ে কাটাস!”
রোদ এটাই আশা করেছিল। তাকে অপমান করে কথা না বললে সমুদ্রের পেটের ভাত হজম হয়না সেটা সে খুব হাঁড়ে হাঁড়ে জানে।সে আর কিছু না বলে উপরে চলে যায়।সমুদ্র তাকে বলল,
-“মায়ের শাড়ি আছে আলমারিতে, সেখান একটা নিয়ে পড়ে নিবি!আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেন তোকে নিচে দেখি!”
শাড়ি!সে তো শাড়ি পড়তে জানে না। একবার শুধু শাড়ি পড়েছে। তাও মা পড়িয়ে দিয়েছে!এখন কি হবে? কে শাড়ি পড়িয়ে দিবে?
সমুদ্র ফ্রেশ হয়ে এসে কিচেনে যায়।সেখানে রোদকে দেখতে না পেয়ে মায়ের রুমে যায়।রুমে ঢুকে বলল,
-“এখন হয়নি তোর!
এটা বলে তাকায় সে!রোদ দুইহাত দিয়ে কুচি করা চেষ্টা করছে!বুকের উপরে শাড়ি আঁচল রাখা। সাদা ধব ধব পেট দেখা যাচ্ছে। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে।রোদ কুচি করা বাদ দিয়ে হা করে সমুদ্রকে দেখছে।সাদা টি-শার্ট, কালো প্যান্ট যা এক কথা অসাধারণ লাগছে সমুদ্রে। ভেজা চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে!গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।এভাবে তাকে কেউ দেখলে প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে।রোদের খুব ইচ্ছা করছে মানুষটার এই খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো আলতো করে ছুয়ে দিত।ইস!মানুষটা এত সুন্দর না হলে পারতো।এখন যে আরো একবার তার প্রেমে পড়ে গেছে সে।এই মানুষটাকে পাওয়ার জন্য যদি হাজার বার বকা -অপমান তাকে সহ্য করতে তাহলে ও সে করবে।মানুষটাকে সে চাই য়ে- চাই।
-“এভাবে হা করে আছিস কেন? মুখে মশা ঢুকে যাবে তো?
সমুদ্রের কথায় তার ধ্যান ভেঙে।কপাল মুখ কুঁচকে সে মনে মনে বললো,এই মানু্ষকে নিয়ে একটু কল্পনাএ জগৎ ভাসছিলাম।আর সে কি না এরকম কথা বলে মুড নষ্ট করে দিলো।
-“এভাবে পেট দেখিয়ে কি বুঝাতে চাস তুই!”
রোদ এমন কথা শুনে সে ভাবতে থাকে! সমুদ্র ভাইয়া তাকে কি মিন করে কথা বলছে!এই সমুদ্র ভাইয়া সব কথা কিছু না কিছু মিন করে তাকে বলবেই।হাবলার মতো প্রশ্ন করলো সে,
-” কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?
-“বার বার যে পেট বের করে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চাস! সেটা আমি ভালো করে বুঝে গেছি!এসব করে কোনো লাভ নেই রোদপাখি।তুমি কি জানো রোদ পাখি তোমার এই সস্তা জিনিসের প্রতি ইন্টারেস্টিং নেই এই সমুদ্রের!সুমদ্রে যেটাতেই ইন্টারেস্টিং থাকে! সেটা না পেলে জোর করে নিতে জানে!কিন্তু আমি না ফ্রী কোনো কিছু নিয়ে মজা পাইনা।
সমুদ্রের এমন কথা শুনে কান্না করতে ইচ্ছা করছে রোদের।সে কি ইচ্ছা করে এমন করছে নাকি? সমুদ্র ভাইয়া তো নক না করে চলে এসেছে? নাক টানতে টানতে বলল,
-“একটা মেয়ে মানুষ একটা রুমে থাকলে! সেখানে আসতে হলে অন্তত নক করে আসা লাগে! সেটা বোধ হয় আপনি জানে না সমুদ্র ভাইয়া!
-“বাড়িটা যখন আমার! যেখানে সেখানে যেতে পারবো। ”
-“আমি একবার বলেনি বাড়িটা আমার!আমি জানি বাড়িটা আপনার।যেখানে সেখানে যেতে পারবেন। কিন্তু কারো রুমে ঢুকতে হলেই নক করে নেওয়া উচিত।”
-“তোর থেকে আমায় শিখতে হবে এখন এসব।আর কি বললি, আমি নক করে আসিনি কেন? যেখানে দরজা খোলাই ছিল সেখানে নক করে আশার কথা আসছে কোথায় থেকে। ”
এবার রোদের মনে পড়ে গেলো সে তো দরজা আটকায়নি এখন আবার এটা নিয়ে সমুদ্রভাইয়াকে যে একগাদা কথা শুনিয়ে ফেলেছে।আল্লাহই জানে তাকে এখন কি করে সমুদ্র ভাইয়া।তার ভাবনা মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে সমুদ্র ভাইয়া তাকে বলল,
-“আমার খুব খিদে পেয়েছে!দয়া করে নিজে আয় তাড়াতাড়ি!
এটা বলে চলে যেতে নিলে রোদ বলল,
-“সমুদ্র ভাইয়া আমি শাড়ি পড়তে পারি না।”
রোদের কথা শুনে তার দিকে ফিরে তাকিয়ে একপা একপা করে এগিয়ে আসে।তাকে এগিয়ে আসতে দেখে রোদ পিছপা হতে গেলে শাড়িতে পা লেগে পড়ে যেতে নিলেই সুমদ্র তার এলোমেলো শাড়ি কুচি দেওয়া যেখানে ছিলো সেখানে ধরে টান মেরে তার বুকে এনে ফেলে।
-“সিনেমার হিরোদের মত। তোকে শাড়ি পড়াতে এগিয়ে আসছি আমি।এত ভেবে থাকলে, আমি বললো তুই ভুল ভেবেছিস।সমুদ্র এই সস্তা জিনিস হাত লাগিয়ে নোংরা করতে চায় না।”
এটা বলে ধাক্কা মেরে খাটের উপরে ফেলে দেয় রোদকে। খাটের উপরে শুয়ে কান্না করতে করতে থাকে।বার বার সমুদ্র তাকে সস্তা জিনিস বলছে। এই জন্য খুব খারাপ লাগছে তার।কেন সমুদ্র ভাইয়া তার ভালোবাসা বুঝে না? কেন সে এমন করে তার সাথে?কি করেছে আমি? তার জন্য সমুদ্র ভাইয়া কাছে বার বার অপমান হই আমি?

বারবার সেই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসছে।এবার নীল মহাবিরক্ত হয়ে ফোন ধরে কর্কশ কন্ঠে বলল,
-“দেখছেন তো ফোন ধরছি না তবে কেন বার বার ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন?
কোনো কথা বলছে না স্বপ্ন।কি বলবে? আর নীল যদি শুনে আমি ফোন করিছি!যদি সে কারণ জানতে চায়!তাহলে কি বলব?
-“এই আপনি কি বোবা? কথা বলছেন না কেন?
-“না!আমি বোবা নয়।”
-“যাক অবশেষে কথা বলছেন? কিন্ত আপনার গলাটা খুব চেনা চেনা লাগছে? কোথায় যেন শুনেছি?”
-“শুনছেন তো বটেই?
-“তার মানে কি আপনি আমার পরিচিত কেউ?
-“হতে ও পারে!”
-“হেয়ালী না করে ক্লিয়ার করে বলুন! কে আপনি?
-“আমি তো পরিচয় দিবো না! আপনি খুঁজে বের করেন? কে হতে পারি আমি?
-“আমার এত দরকার নাই আপনার খুঁজ বের করার।দয়া করে ফোনটা কাটুন! ”
-“আরে রেগে যাচ্ছেন কেন?
-“রাগবো না তো’কি নাচব নাকি! ”
-“সত্যি আপনি নাচ জানেন!তাহলে যখন আমাদের দুজন দেখা হবে! আমাকে আপনি নাচ পরিবেশন করে দেখাবেন! ”
-“হুম!সখ কত!আমি আপনাকে নাচ পরিবেশন করে দেখাবো!
নীল ব্যঙ্গ করে কথাটা বলল! স্বপ্ন শুধু এই কথা বিনিময় একটু হেসেছে সেটা হয়তো নীলের অজানা।নীল আবার বলল,
-“আমাদের দুজনের দেখা হবে মানে! ”
-“বিধাতা যদি চায়!হয়তো আমাদের দুজনে কোনো একগ্রীষ্মের দুপুরের দেখা হবে!”
-“বাপরে বাপ কি ইচ্ছা আপনার!
-“কেন খারাপ কি বললাম?
-“খারাপ নয় বটে কি? অনেকের অনেক রকম ইচ্ছা দেখলাম! কিন্তু আপনার মতো এরকম ভিন্ন ইচ্ছা পোষণ করা মানুষ দেখিনি!দেখা করার ইচ্ছা আমার সাথে তাও আবার এক গ্রীষ্মের দুপুরে! শরৎ,বসন্ত বাদ রেখে দিয়ে গ্রীষ্মের কাঠখড় রোদে!”
তখনই প্রাচ্য রুমে ঢুকে নীলকে ডাকতে থাকে!
-“নীল কোথায় তুই!”
নীল কানের থেকে মোবাইল সরিয়ে উত্তর দিলো,
-“আপু আমি বারান্দা! এখানে এসো!”
প্রাচ্য বারান্দায় এসে বলল,
-“কার সাথে কথা বলছিস! ”
ফোনের ওপাশে স্বপ্ন প্রাচ্য’র কথা শুনতে পায়। প্রাচ্য যদি নাম্বার টা দেখে বলে দেয় আমার!তাহলে কি হবে।
-“দেখো না আপু! ইদানীং একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে! কিন্তু পরিচয় দিচ্ছে না!কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের চেনা মানুষের মধ্যে কেউ একজন।!
-“তোর ফোনটা দে, ”
নীল ফোনটা বাড়িয়ে দেয় প্রাচ্য’র দিকে।স্বপ্ন এখনো লাইনে আছে।প্রাচ্য মোবাইলে নাম্বারটা দেখে মুচকি হাসে।প্রাচ্যকে হাসতে দেখে নীল ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে বলল,
-“কিব্যাপার আপু তুমি হাসছো কেন?
প্রাচ্য মোবাইলের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলল,
-“এমনি! ”
-“তোমার হাসি টা যেন আমার কাছে রহস্যমূলক ছিলো।”
-“বাব্বাহ!আমাদের নীল কবে থেকে গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করা শুরু করেছে!
-“এখন শুরু করিনি!বাট এখন থেকে চেষ্টা করব।”
প্রাচ্য নীলকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“ফোনটা বোধহয় কেটে গেলো!
নীল হাত বাড়িয়ে ফোন নেয়।প্রাচ্য নীলের রুম থেকে বেরিয়ে স্বপ্নের নাম্বারে ডায়াল করে।স্বপ্ন ফোন ধরতেই প্রাচ্য বলল,
-“বাব্বাহ!আমাদের স্বপ্ন যে তলে তলে প্রেমে ভালো চালিয়ে যাচ্ছে!”
স্বপ্ন এর প্রতিত্তুর কিছু বলল না। শুধু হেসেছে!স্বপ্ন প্রাচ্যকে বলল,
-“তুই বলে দিয়েছিস এটা যে আমার নাম্বার ছিলো।”
-“পাগল নাকি! আমি বলতে যাবো কেন? আর তুই পরিচয় দিসনি কেন?
-“আরে বলব!এখন একটু ফোন করে জ্বালাই।তারপর বলবো।”
-“সময় থাকতে বলে দিস! বেশি সময় নিতে যেয়ে আবার হারিয়ে না ফেলিস।”
-” কিছুতে হারাতে দিবো না! তোর বিয়েতে আসলে বলে দিবো!
-“হুম!আচ্ছা রাখি!
-“প্রাচ্য!
-“হুম! বল।”
-“কেন এমন করছিস!জিদ করে বিয়ে করলে কী সুখে থাকতে পারবি!
-“কে বলল,আমি জিদের বসে বিয়ে করছি!আমি খুব ঠান্ডা মাথায় বিয়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছি।
-“এই সিধান্তর জন্য যদি তোকে কখনো পস্তাতে হয়।
-“বায়! স্বপ্ন। এই বিষয় কথা বলতে ভালো লাগে না।”
-“তুই আমাদের বন্ধু! তোর খারাপ আমরা কেউ কখনো চাইবো না।তোর লাইফের সিদ্ধান্ত তুই -এ নিবি।কিন্ত বন্ধু হিসাবে একটাকথাই বলবো।আরে একবার ভেবে দেখ!যদি কখনো ভুল ভেঙে যায়! তখন তুই চাইলে আর সব ঠিক করতে পারবি না।এখন ও হাতে সময় আছে।বায়!

-“কেন কথা বলছেন না ? আমার সাথে!
-“তোকে কে বলছে আমার রুমে আসতে?
-“আমি এসেছি আমার ইচ্ছায়! কেউ আসতে বলেনি।কেন রাগ করে আছেন আমার উপরে।
তামিম এবার দাঁতে দাত চেপে বলল,
-“আমি তোর উপরে রাগতে যাবো কেন? একটা কাজের মেয়ের উপরে রাগ করব কেন আমি?হুয়াই?
সোহা চোখ তুলে তামিমের দিকে তাকায়।চোখে পানি চিকচিক করছে।কি করে বলতে পারলো তামিম ভাইয়া তাকে এই কথা।এটাই ছিলো তার ভালোবাসা। খুব কষ্টের নিজেকে সংযত করে বলল,
-“আমাকে আমার জায়গা দেখিয়ে দেখার জন্য ধন্যবাদ!
এটা বলে দৌড়িয়ে বেরিয়ে আসে!এতক্ষন যে খুব কষ্টের নিজের কান্না চেপে ধরেছে!এখন তার চোখে দিয়ে অঝোর চোখের পানি ঝরছে।কান্না করতে করতে নিজেই নিজেকে বলছে!!আমি ভুলেই গেলাম! আমি এই বাড়ির কাজের মেয়ের মেয়ে।আর কখনো এই সীমালঙ্ঘন করবো না।আজকে আপনি আমার চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন আমার জায়গা কোথায়।আর কখনো সেটা ভুলব না।

#চলবে
#kawsar sorna
(ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।আপনার পাঠক ভুল ধরিয়ে দিলে তো লেখকরা শুধরে নিতে পারবো।)

স্বপ্নীল ২১

0

স্বপ্নীল
২১

তৃণ, স্বপ্ন, সমুদ্র বসে আছে কেফেতে।সমুদ্র কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
-“হঠাৎ এত জরুরী তোলব?
স্বপ্ন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে বলল,
-“আমরা তোর এত পর হয়ে গেছি সমুদ্র,প্রাচ্য বিয়ে ঠিক করেছি অথচ আমাদের একটু জানানোর প্রয়োজনবোধ করিস নি।
সমুদ্র কিছু বলতে গেলেই তার আগে স্বপ্ন বলে উঠে,
-“ওহ, ভুলে গেলাম আমি! তোদের ফ্যামিলি ব্যাপার তাই আমাদের কেন জানাবি?
স্বপ্ন’রর কথায় কিছুটা রাগ ছিল কিছু অভিমান ছিল।সমুদ্রকে বলল,
-“কি সব বলছিস এসব!তোদের কে জানাবো না’তা কাকে জানোবো!”
– – -“দেখতে পাচ্ছি জানানোর নমুনা!”
– – -“প্লিজ রাগ করিস না ভাই!আগে আমার কথা শুন!তারপর না হয় রাগ করিস!
সমুদ্র খেয়াল করল তৃণ এসেছে পর্যন্ত একটা কথা বলিনি চুপচাপ হয়ে বসে আছে! কফিমগ হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, খাচ্ছে না।তা দেখে সমুদ্র বলল,
-“আর ইউ ওকে তৃণ!”
চোখ তুলে তাকিয়ে সে বলল,
– – – আই আম ওকে!”
– – -“কিন্তু তোকে দেখে মনে হচ্ছে না ঠিক আছিস!কি হয়েছে বল আমায়!”
– – -” নাথিং! কিছু হয়নি আমার!
স্বপ্ন বলল,
– – – ” আরে ওর কিছু হয়নি!আগে বল হুট করে প্রাচ্য বিয়ে ঠিক করে ফেললি, প্রাচ্য’র পছন্দ অপছন্দের একটা ব্যপার সেপার থাকতে পারে।ওর মত নিবি না। ”

সমুদ্র আরেক চুমুক দেয় কফিতে।সে বলল,
– – – “তোরা ট্যুরে থাকতে এসেছিল সম্মন্ধটা! তারপর প্রাচ্য’র মতামত নিয়ে বিয়ের কথা এগিয়েছি।ভাইয়ারা বিদেশ সব কিছু আমাকে দেখা শুনা করতে হয়,সব আত্নীয়স্বজনকে কার্ড দেওয়া, এসব নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলে জানাতেই পারিনি।”
– – -“প্রাচ্য’র মতামত নিয়েছি মানে? প্রাচ্য কি এই বিয়েতে মত দিয়েছে না’ কি!” তৃণ বলল।
– – – “আম্মা তো প্রাচ্য’র মত নিয়ে বিয়ের কথা পাকাপাকি করেছে।প্রাচ্যকে আম্মায় বলেছে তার কোনো পছন্দ থাকলে বলত,তাহলে বিয়ে ভেঙে দিবে।কিন্তু প্রাচ্য বলছে, তার কোনো পছন্দ নেই।আর সে আমাদের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি।”
তৃণ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।আর একুমুহুর্ত্ব দেরী না করে কেফের বাইরে চলে আসে!তৃন এহেম আচারণ সমুদ্র অবাক হলে ও স্বপ্ন হয়নি।সে পিছন পিছন যায়।
– – – ” চলে যাচ্ছিস কেন? সমুদ্রকে যেটা বলতে আসলি সেটা বলে যায়! ”
– – – “সমুদ্র কি বলল দেখলি না,প্রাচ্য’র মতামত নিয়ে বিয়ে ঠিক করা হয়েছে এবং তাকে বলেছে তার কোনো পছন্দ আছে কি ‘না।তারপর সে কি করলো, বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলো।এটা ছিল তার ভালোবাসা।এই টুকু বিশ্বাস ছিলো না তার ভালোবাসার মানুষের উপরে।এখন আমার প্রাচ্য’র ভালোবাসার নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে, সত্যি কি আমায় ভালোবেসেছিল! তাই হোক বাদ দে এসব।ও যদি আমায় ছাড়া ভালো থাকতে পারে, আমি ও দিব্যি ভালো থাকতে পারবো।সমুদ্রকে কিছু বলা প্রয়োজন নেই।”
– – -” প্রাচ্য রাগ করে এমন করেছে! আর এখন তুই জেদ করে সমুদ্রকে কিছু জানাতে বারণ করছিস! অন্তত আমাকে জানাতে দে,
– – – “তোর আমার বন্ধুত্বের কসম রইল! তুই কিচ্ছু জানাবি না সমুদ্রকে।এক প্রাচ্য চলে গেলে কত প্রাচ্য আসবে লাইফে।কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না।জীবন নিজের গতিতে চলতে থাকে।প্রাচ্য’র জন্য আমার জীবন আটকে থাকবে না,অনায়াসে চলে যাবে!আর আমরা সবাই মিলে প্রাচ্য’র বিয়েতে যাবো।খুব খুব মজা করবো।বন্ধুরর বিয়ে বলে কথা!”
এটা বলে চলে যায়।আর একমুহুর্তে স্বপ্নের সামনে থাকলে ধরা পড়ে যেত তার চোখে জল। ভুলে যাবে প্রাচ্যকে!আগের মত বিন্দাস লাইফ যাপন করবে সে।
সমুদ্র বিল প্রে করে এসে বলল,
-“তৃণ কি হলো এভাবে হঠাৎ চলে এলো।
-“আরে বলিস না! মাথাব্যথা করছে তাই চলে গেছে।
-“ওকে দেখে আজকে অন্যরকম লাগছিল।অন্য সময় হলে অনেক হাসিখুশি দেখা যেত।”

★★★

রোদ দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছে! থামার নাম নেই।এতক্ষণ ধরে কে কলিংবেল বাজাছে!কলিংবেলের সুইচটা হয়ত বিরতি দেওয়া হচ্ছে না। বাজিয়ে চলছে। কে এভাবে কলিংবেল বাজাচ্ছে আজ তার খবর বের করিয়ে ছাড়বে।জন্মের মত কলিংবেল বাজানোর শিক্ষা দিব! মনে মনে এসব বির বির করছে আর সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে সমুদ্র!দরজা খুলে দেখে রোদ দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা হটপট নিয়ে।এখন ইচ্ছা করছে রোদকে ঠাটিয়ে চড় মারতে।এত সাত সকাল বেলা এভাবে এসে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে!তার শাস্তি রোদকে পেতেই হবে।দরজার সামনে ফাঁক করে দরজা হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে সমুদ্র বলল,
-“আল্লাহওয়াস্তে মাফ করিবেন!এই মুহুর্তে আপনাকে ভিখা দেওয়ার মত টাকা আমার কাছে নাই! ”
সমুদ্রের মুখে এমন কথা শুনে কেঁদে দিতে ইচ্ছা করছে রোদের ।সকাল সকাল মায়ের হাতে নাস্তা বানিয়ে সমুদ্রের জন্য এনেছে।ভেবেছে হয়তো সমুদ্র তাকে দেখে খুশি হবে। কিন্তু তাকে দেখে এত খুশি হয়েছে সমুদ্র তাই ভিক্ষুক উপাধি দিয়েছে তাকে।সত্যি কি তাকে দেখতে ভিক্ষুকের মত লাগে।না’ কি সমুদ্রকে তাকে অপমান করার জন্য এসব বলে।তারপর বেহায়া হয়ে কথা বলতে গেলে তার আগে সমুদ্র বলে উঠে,
-“বোধহয় সকাল ধরে কিছু খাওয়া হয়নি আপনার!খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন? আসলে টাকা না থাকলে কি হয়েছে আমাদের ফ্রিজে খাওয়ার আছে। সেগুলো খেয়ে যাবেন?আসুন ভিতরে!”

এটা বলে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়।আর রোদ ঘরে প্রবেশ করে।রোদ ভালো করে বুঝতে পেরেছে খাওয়ার এনেছে বলেই তাকে সমুদ্রকে একথা বলে বুঝাতে চেয়েছে তাদের ঘরে ও খাবার আছে!রোদ কেন যে তুই দরদ দেখিয়ে খাবার আনতে গেলি?এবার বুঝ ঠেলা,আল্লহাই জানে আজ তোকে কত অপমান সহ্য করতে হয়।সমুদ্র পিছন ফিরে তাকিয়ে বলল,
-“কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?বসে পড়ুন নিচে! আমি খাবার আনছি।”
না আর সহ্য করতে পাচ্ছে না রোদ। তাকে এর প্রতিবাদ করতেই হবে।কিছু বলি নাই বলে সমুদ্রকে তাকে আজ রাস্তা ফকিরে উপাধি দিয়েছে।সাহস সঞ্চয় করে রোদ বলল,
-” কি মনে হয় ভাইয়া আপনার আমাকে! আমি খাবারের জন্য এসেছি!ফকির মনে হচ্ছে আমাকে! ”
সমুদ্র মুখে উপরে রোদ কথা বলেছে তার একদম পছন্দ হয়নি।রোদের হাত থেকে হটপট ফেলে দেয় ফ্লোরে।রোদের বাহু ধরে বলল সে,
-“জানিস রোদ!ইদানীং তুই খুব বড্ড বেয়াদব হয়ে গেছিস।মুখে মুখে তর্ক করছিস!খুব পাখনা গজিয়েছ তোর!ঝাঁটাই করে দিব তোর পাখনা।”
-“আপনি আমায় বার বার অপমান করছেন? তাই বাধ্য হয়ে মুখ খুলতে হয়েছে?
সমুদ্রর ধমকিয়ে বলল,
-“একদম চুপ!
রোদ ভয় পেয়ে যায় সমুদ্রের ধমকানে।রোদের চুল গুলো পনিটেল স্টাইলে বাঁধা ছিল।সমুদ্র রোদের চুল গুলো টেনে-টুনে ক্লিপ খুলে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে।ব্যথার চোখে পানি চলে আসে তার।সমুদ্র তাকে আমার ধমকিয়ে বলল,
-“আমায় কি তোর ফকির মনে হয়?তাই তোর বাসা থেকে খাবার আনবি আমার জন্য।আমার বাসা কি খাবারে অভাব পড়েছে!”
রোদ এবার বুঝতে পাচ্ছে সমুদ্রের রাগ কেন উঠেছে।তার বাসার থেকে খাবার এনেছে তাই বুঝি এমন বিহেভ করবে।প্রাচ্য যখন বলছে তারা গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছে,সমুদ্রকে বিয়ের কয়েকদিন আগে আসবেই।তাই আজ সকাল বেলা খাবারে এনেছে তার বাহানা দিয়ে একটু দেখে যাবে! তাই কত ভালোবেসে খাবার গুলো এনেছে।আর সেই খাবার গুলো ফেলে দিয়েছে! খাবার গুলো ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে তা দেখে রোদের চোখে পানি উপচে পড়ছে।রোদ বসে হটপট হাতে নিয়ে চলে যেতে নিলে সমুদ্রের পিছু ডাকে,
-“দাঁড়া!কইছে যাচ্ছিস তুই! আমার ঘুমের ব্যঘাত ঘটিয়েছিস তুই,তার জন্য তোকে শাস্তি পেতে হবে।”
চোখে পানি মুচে চোখ দ দুটো ছোট ছোট করে রোদ বলল,
-“শাস্তি!
-“হুম শাস্তি! আগে এই ফ্লোরটা মুছবি, যেখানে যেখানে তোর হটপটে খাবার পড়ে নষ্ট হয়েছে সেখানে ভালো করে মুচবি।নোংরা আমি একদম সহ্য করি না।”
-“কিছুক্ষণ আগে ফকির বলে উপাধি দিয়েছেন! আর এখন কাজেল লোক বলে উপাধি দেওয়ার জন্য আমার হাতে এই কাজ করাতে চাচ্ছেন।আমি কিছুতে করবো না এই কাজ।”
-“কেন করবি না? তুই কি প্রধানমন্ত্রী কন্যা, যে তুই এই কাজ করলে তোর জাত যাবে?নে, তাঁড়াতাড়ি কর।এসব করা হলে আমার নাস্তা বানাবি তুই নিজের হাতে?
এটা বলে চলে যায় সমুদ্রে।রোদ আর কি করবে। সে খুব অসহায়, ভালো যখন বেসেছে তখন এইসব করতেই হবে।এসব করেই যদি তাকে একটু পঠানো যায়।তাহলে তাই করতে রাজি সে।ভালো করে মুচে রোদ কিচেনে যায়।কোনোদিন কিচেনে ঢুকেছে কি ‘ না সন্দেহ আছে।গ্যাস স্টোভ চালায় কি করে সেটা জানে না।কোথায় কি আছে? খুজতে খুজতে সে হয়রান হয়ে যায়।উপরে তাক থেকে একটা বয়াম নামিয়ে হাত দিয়ে দেখে, এটা আটার বয়াম।সেটা উপরে রেখে আরেকটা নেয় হাতে, চিনি না কি লবণ টা দেখার জন্য এক চিমটি মুখে দিয়ে থু করে ফেলে দেয়,সেটা চিনি ছিল না লবণ ছিল।এটা রাখতে গেলে হাতের ধাক্কা খেয়ে আটার বয়ামের মুখ না লাগিয়ে তখন রেখেছে দিয়েছে বোদ তাই বয়ামের সব গুলো আটা তার মাথা।সমুদ্র উপরে যেয়ে মনে পড়ে রোদকে বলেনি কি খাবে সে।তাই নিচে এসে রোদের এই অবস্থা দেখে হাসতে থাকে।সোফা পড়ে হেসে লুটেপুটে খাচ্ছে।প্রথমে পলকহীন তাকিয়ে হাসি দেখতস থাকে রোদ।তারপর মেজাজ বিগড়ে তার!সমুদ্রের জন্য তার এই আটায় মাখামাখি অবস্থায় পড়েছে।আর সে হাসছে!তাই আটার বয়াম থেকে একমুঠো আটা নিয়ে সমুদ্রের মাথা ছড়িয়ে দেয়। তা দেখে সমুদ্রে বলল,
-“হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ!
এটা বলে চুলে উপড়ে ছড়িয়ে থাকা আটা গুলো ঝাঁড়তে থাকে।রোদ এবার তার মুখে মাখিয়ে দেয়।সমুদ্রে কড়া চোখে তাকায়, তা দেখে রোদ বলল,
-“আমাকে এভাবে দেখে খুব হাসি পাচ্ছিল, তাই আপনাকে আটা মেখে ভুত বানিয়ে দিলাম।এবার হাসেন বেশি বেশি করে।!
সমুদ্র এবার রোদের কাঁধে হাত দিয়ে টপসে ছিঁড়ে ফেলে।রোদ এমন কিছু’র জন্য মোটে ও প্রস্তুত ছিলো না।সঙ্গে সঙ্গে পিছন ঘুরে যায়।
★★★
অনেক রাতে শায়লা আর প্রাচ্য মির্জা বাড়িতে পৌঁছায়।তাই রাতে রোকেয়া, সোহান, আর সোহাগী সাথে তাদের দেখায়।খাবার টেবিলে প্রাচ্য দাদুকে দেখে অভিমান করে বলল,
-” কদমফুল পেয়ে একবারে এই শিউলিফুলকে ভুলে গেলে।এবার ঢাকা যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করো নাই।”
-“কে বললো,আমি আমার বড় বঊ শিউলিফুলকে ভুলে গেলাম।আগে বড় বউ এই বংশে এসে খুশির জোড়ারে ভাসিয়ে দিয়েছে।তাকে কি ভুলা যায়।তাকে তো বেশি বেশি ভালোবাসা যায়। ”

নীল বলল,
-“দেখলে সবাই, বুড়া কিভাবে বড় বউ পেয়ে!গোল পাল্টে দিলো। এত দিন কদম কদম করতো! আর এখন আমার কোনো প্রয়োজন নেই!
-“এই হিংসুটে!আমার আর দাদুর ভালোবাসায় উপরে নজর দিবি না।দাদু এতদিন তোকে ভালোবেসেছে কিচ্ছু বলিনি।এখন দাদু শুধু তার শিউলিফুল কে ভালোবাসবে।আমাদের মাঝে তুই নট এলাউ!”
নীল ভেঙেচি কেটে খেতে বসে যায়।সবাই মিলে অনেক কথা বার্তা বলে।রোকেয়া প্রাচ্যকে নিজের হাতে খাইয়ে দে।তা দেখে নীল বলল,
-“প্রাচ্য আপুকে দেখে কেউ আমার উপরে নজরই দিচ্ছে না। ওহ! আমি ভুলেই গেলাম, আমি যে পুরাতন হয়ে গেলাম!
রোকেয়া বলল,
-” হিংসে করে লাভ নেই,নিজের হাতে খেয়ে নাও ! কতদিন পর আমার প্রাচ্য মা টা এ বাড়িতে এসেছে!কতদিন তাকে খাইয়ে দিয় না।তোকে রোজ খাইয়ে দি।এখন যতদিন প্রাচ্য এইবাড়ি থাকবে ততদিন আমি নিজের খাইয়ে দিব প্রাচ্য মাকে।”
নীল কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
-“আমি পর হয়ে গেছি। এ্যা.. এ্যা.. এ্যা
মজা করে কান্না করতে থাকে!শায়লা বেগম খাবার প্লেট নিয়ে উঠে যায়।
-“আমার মেয়েকে আমি খাইয়ে দেবো!হা কর নীল মা!”
নীল নিজের মুখে খাবার তুলে নিয়ে শায়লা বেগম জড়িয়ে ধরে বলল,
-“প্রাচ্য আপু তোমাকে আমার মা খাইয়ে দিবে!আর তোমার মা আমাকে খাইয়ে দিবে!কি মজা!”

সোহাগী টেবিলের একোনে দাঁড়িয়ে তাদেরকে দেখছে।আজ তার মেয়ে নাই বলে এভাবে খাইয়ে দিতে পাচ্ছে না সে! না হলে আজকে তার মেয়েকে সবাই প্রাচ্য আর নীলের মত আদর করত।এভাবে সে ও খাইয়ে দিতো।রোকেয়া বেগম তাকায় সোহাগী দিকে।তিনি সোহাগীর মলিন মুখ দেখে বুঝে গেছে কেন মন খারাপ?তিনি সোহাগী বেগমের কাছে যেয়ে বলল,
-“নীল, আর প্রাচ্য কি আমাদের মেয়ে নাকি, ওরা হলো এই বাড়ির মেয়ে।ওদের মা আমরা তিন জা।”
রোকেয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রাচ্য আর নীল সোহাগীকে জড়িয়ে ধরে ‘ছোট মা’ বলে।সোহাগী খুশিতে চোখে পানি চলে আসে।দুজনে বলে উঠল,
-“ছোট মা তোমার দুইটা মেয়ে থাকতে তোমার মন খারাপ কেন? আর কখনো কাঁদবে না বলে দিলাম।”
দুজনের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
-“আর কাঁদবো না!
নীল খাবার প্লেট এনে বলল,
-“তাড়াতাড়ি আমাদের দুজনকে খাইয়ে দাও।”
চোখের পানি মুছে তাদের খাইয়ে দেয়।তামিম সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,
-“বাহ!মেয়েদের সবাই খাইয়ে দিচ্ছি।তাহলে আমি বাদ যাচ্ছি কেন?আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।”
প্রাচ্য আর নীল বলে উঠল,
-“এখানে ছেলেদের কে এলাউ করা হয় না।এখন মায়েরা তাদের মেয়েদের খাইয়ে দিচ্ছি।!
তামিম আর কি করবে! সে শায়লা সাথে কুশলবিনিময় করে খেতে বসে।সোলোমান মির্জা আজ অনেক খুশি। আজ তার পরিবারে সবাই একত্র হয়েছে।বাড়িতে যেন প্রান এসেছে।সবাই মিলে মিশে থাকে পরিবারে সুখ সমৃদ্ধ উপচে পড়ে!সবাইকে খুশি দেখে তার চোখে পানি চলে আসে।

চলবে…

স্বপ্নীল ২০

0

স্বপ্নীল
২০

পাউরুটিতে জেলি লাগিয়ে মুখে দেবে এমন সময় শায়লা বলল
-“প্রাচ্য তোমার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিল।”
পাউরুটি মুখে না দিয়ে নামিয়ে রেখে বলল,
-“বলো!
-“তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি আমরা।”
প্রাচ্য তার মায়ের দিকে একবার তাকায় আবার সমুদ্র দিকে একবার তাকায়।
-“আমার বিয়ে ঠিক করেছে তাও আবার আমার মতামত না দিয়ে। অবাক হলাম তোমাদের কৃতকাজে।”
-“আমরা এখন তাদের ফাইনাল কথা দিয়নি।সমুদ্র বলেছে তোমার মত নিয়ে বিয়েতে এগোতে।তোমার কি এই বিয়ে মত আছে!
-” মা আমি পড়াশুনা করছি! এখনি কি বিয়ে করতেই হবে।
-“বিয়ের পরে পড়াশুনা করবে।তোমার শ্বশুর বাড়ির লোক বলেছে বিয়ের পর তুমি যদি পড়তে চাও তাহলে তাদের অসুবিধা নেই!”
-“তারপর মা….
শায়লা মেয়েকে থামিয়ে বলল।
-“তুমি কি কাউকে পছন্দ করো।যদি করে থাকো বলতে পারো।তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমরা তোমায় বিয়ে দেবো না।”

পছন্দ,,, সেতো আমি একজন করতাম। আর সেই ছিল তৃণ। ভালোবাসতাম আমি তাকে।আর সে আমার ভালোবাসার মর্যাদা কখনো দেইনি। আমি তাকে ভালোবাসি না।ঘৃণা করি আমি তাকে।আই হেইট ইউ।আই হেইট ইউ…
-“মা আমি রাজি বিয়েতে।
এটা বলে টেবিল ছেড়ে বলে যায়।রুমে গিয়ে খাটের উপরে উবু হয়ে শুয়ে বালিশ জড়িয়ে কান্না করতে থাকে।সে এমন চাইনি।সে চেয়েছে লালটুকটুকে শাড়ি পড়ে তৃণ’র বউ হবে।কতশত স্বপ্ন দেখেছে তৃণকে নিয়ে।ছোট একটা সংসার হবে।সেই স্বপ্নের সংসারে ভালোবাসায় আনাচেকানাচে ভরপুর করবে।এক নিমিষে সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে তার।কেন করেছে তৃণ তার সাথে এমন।কেন??
বালিশ ফেলে দিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে।পানি ছেড়ে দিয়ে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।চিৎকার করে কান্না করতে পারছিল না বলে বুক ফেঁটে যাচ্ছিল তার।এখন একটু শান্তিতে বুক ফাটিয়ে কান্না করতে পারবে।অনেকক্ষন কান্না করে।তারপর নিজের চোখে জল মুচে নিজেকে বুঝ দেয়, সে আর কান্না করবে না।কার জন্য কান্না করবে।যে তাকে কোনোদিন ভালোবাসিনি।তার ভালোবাসা কোনো মর্যদা দেয়নি।
★★★
প্রাচ্যকে ছেলে পক্ষে দেখতে এসে আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেছে।১৫ দিন পরে বিয়ে।বিয়েটা তাদের গ্রামের বাড়িতে হবে।সেই জন্য তারা আজকে বিকেলে সবাই গ্রামে বাড়ি চলে যাবে।প্রাচ্য তার বন্ধুদের সবাইকে একজায়গা ঢেকেছে। দেখার করা জন্য
সবাই পার্কে বসে আছে প্রাচ্য’র জন্য।সবাই বুঝতে পাচ্ছে না প্রাচ্য’র হঠাৎ এই জরুরী তোলবে ডাকছে কেন?তৃণ’র মাথা কিছু ঢুকছে না।প্রাচ্য কি করতে চাইছে।কালকে কত বুঝাইছে তারপর প্রাচ্য কিছুতে মানতে রাজি নয়। হাতের নখ দাঁত দিয়ে অন্যমনস্কতা হয়ে কাটছে আর নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
-“তৃণ তোর এই বদ অভ্যাস আর গেলো না! দাঁত নিয়ে নখ কাটা!”রোদ বলল।
তৃণ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে।টেনশনে পড়লে সে সব সময় এরকম করে। হাত সরিয়ে বলল,
-“প্রাচ্য কেন ঢেকে কিছু জানোছ তোরা।”
-“না! বাট কেন জানি মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটাবে প্রাচ্য”
-” তুই যে প্রাচ্যকে ভালোবাসি আগে যদি এই কথা প্রাচ্যকে বলে দিতি। তাহলে আজ এই পরিস্থিতি হতো না।”
স্বপ্ন বলল।তারপর ধূসর বললো,
-“আমার এখন ইচ্ছা করছে টিনা মেয়েটা ঠাস ঠাস করে চড় মেরে আসতাম।ওর জন্য এমন হয়েছে ”
রোদ সন্দেহের দৃষ্টি মেলে বলল,
-“তৃণ যদি এমন কিছু না করে তাহলে খামোখা টিনা এরকম ছবি পাঠাবে কেন? তার কি লাভ!
-“তুই কি বলতে চাস রোদ!
-“যা বলতে চেয়েছি তুই বুঝতে পাচ্ছিস।এই টিনার সাথে ছেলেটা যে তুই সেটা স্পর্শ বুঝা যাচ্ছে।তারপর তুই বলছি ওই ছেলে তুই নয়।”
-“এত বছরে আমায় এই চিনলি।”
-“আসলে আমি,,,,,
ধূসর বলল,
-“তোকে গাধি বলি যে এমনি এমনি বলি না। এখনকার যোগ ডিজিটাল যুগ। ছবি এডিট করে এসব করা অনেক সহজ।তৃণ ছবি এডিট করে টিনা এই কাজ করেছে।”
গাধি বলাতে রোদের রাগ উঠলে ও সে এখন রাগটা প্রশ্রয় না দিয়ে এই বিষয় জানতে হবে।তার বেষ্ট ফ্রেন্ড কষ্ট ভাবে সে দেখতে পারবে না। তাই আবার প্রশ্ন করে ধূসর কে?
-“মানলাম টিনা এই ছবি গুলো এডিট করেছে। সে কেন তৃণ ছবি এডিট করতে গেলো।তার জন্য কি অন্য কোনো ছেলে ছিলো না। আর এডিট করেই প্রাচ্যকে কেন এই ছবি গুলো পাঠাতে হলো।বল আমায়!তোরা”
এই বিষয় সত্যি তারা কিছু ভাবে নি।এসব করে টিনার কি লাভ হবে। স্বপ্ন বলল,
-“ধূসর, তুই না আমায় একদিন বলেছিস তৃণকে টিনা পছন্দ করে।আর প্রেমে প্রস্তাব ও দিয়েছিল।তৃণ তাকে ফিরিয়ে দে,আর প্রাচ্য’র কথা বলে দেয়,
-“হুম!
-“এবার আমি বুঝতে পাচ্ছি টিনা এমন কিছু কেন করেছে?
সবাই এক সাথে বলে উঠে,
-“কেন করেছে?
-“টিনা পছন্দ করত তৃণ কে।তৃণ তাকে প্রাচ্য কথা বলে।টিনাকে প্রত্যাখ্যান করে তৃণ।সে এটা হয়তো মানতে পারেনি।প্রাচ্য যেদিন টিনাকে চড় মেরেছে সেদিনই কিন্তু টিনা প্রাচ্যকে পিক গুলো পাঠিয়েছে।তার মানে কি দাঁড়ায়।প্রাচ্য’র জন্য তৃণকে সে পাচ্ছিলো না।।আর এইভাবে সবার সামনে চড় মারাতেই প্রাচ্য’র থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই এমন করেছে। যাতে প্রাচ্য এমন ছবি দেখে তৃণকে ঘৃণা করে।আমার মনে হয় তার মূল উদ্দেশ্য ছিল।তার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করে তৃন প্রাচ্য’কে ভালোবাসে।তাই তৃণ আর প্রাচ্যকে মধ্যে জামেলা সৃষ্টি করে দুজন থেকে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে।”

ধূসর বলল,
-“আম আই রাইট! এই মেয়েকে পাই তারপর মজা দেখাবো।এই রোদ টিনা ভার্সিটি আসছে আজকে।
-“না! অনেক দিন হয়েছে আসে না।
-“টিনা পালিয়েছে।ও বুঝে গেছে আমাদের সামনে পরলে নিজেকে আর রক্ষা করতে পারবে না।তাই পালিয়েছে।এই তৃণ টিনার বাসার ঠিকানা আছে তোর কাছে?
তৃণ রাগি রাগি চোখে তাকায় ধূসর দিকে।ধূসর বলল,
-“আরে এভাবে তাকাস কেন? তুই যেটা ভাবছিস সেটা বলি নাই।
-“তাহলে কি বলতে চেয়েছিস?
-“ওর বাসার ঠিকানা থাকলে। ওর বাসায় যেয়ে পিঠিয়ে আসতাম। তাই জিজ্ঞেস করেছি।
-“না, নেই।তোরা সবাই একটু প্রাচ্যকে বুঝিয়ে বললে হবে।টিনাকে পরে দেখে নেওয়া যাবে!”
-“ওই দেখ প্রাচ্য আসছে!”
রোদের দৃষ্টি অনুসরণ করে সবাই সেদিকে তাকায়।রোদ বলল,
-“তোরা একটু প্রাচ্য’র হাতের দিকে তাকা তো।
ধূসর বলল,
-“প্রাচ্য’র হাতে একটা লাল কার্ডের মত লাগছে?কিসের কার্ড এটা! ”
স্বপ্ন বলল,
-“প্রাচ্য আসলে বুঝতে পারবি এটা কিসের কার্ড!এখন চুপ কর তোরা।
প্রাচ্য এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়।তার বন্ধুদের দৃষ্টি তার হাতে রাখা কার্ডের দিকে।তা দেখে মুচকি হেসে বলল,
-“কেমন আছিস তোরা সবাই!
-“আমরা সবাই ভালো আছিস! বাট তোর চেহারা এই অবস্থা কেন?”স্বপ্ন বলল।
প্রাচ্য কিছু বলতে গেলে তার আগে রোদ বলল,
-“তোর হাতে কি এটা প্রাচ্য?
প্রাচ্য নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“ওহ,এটা!এটা হলো আমার বিয়ে কার্ড।
বিয়ের কার্ডটা তৃণ দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল।
সবাই একসঙ্গে বলে উঠে,
-“বিয়ের কার্ড!”
তৃণ তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায়।এই মেয়েটা কি বলছে।কাঁপা কাঁপা হাতে তৃণ কার্ড নিতে গেলে স্বপ্ন হাত বাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-“বিয়ের কার্ড মানে! ”
-“বিয়ের কার্ড মানে বিয়ের কার্ড! নাম শুনিস নাই মনে হয় তোরা যেভাবে রিয়েক্ট করলি!
-“হ্যাঁ শুনিস!তোর বিয়ে মানে কি? তোর বিয়ে ঠিক হলো কবে। “স্বপ্ন বলল
-“পরশু।
এটা বলে ব্যাগ থেকে আরো কার্ড বের করে সবার হাতে একটা একটা করে দিয়ে বলল,
-“আমি আসি।তোরা সবাই বিয়ের সাতদিন আগে চলে যাবি আমার গ্রামের বাড়িতে।”
এটা বলে চলে যেতে নিলে তৃণ হাত ধরে ফেলে প্রাচ্য’র।ঝাঁড়া দিয়ে হাত ফেলে বলল,
-“ডোন্ট টার্চ মি? তোর ওই পাপ হাতে ছোঁয়ার চেষ্টাও করবি না।”
প্রাচ্য’র দুইবাহু চেপে ধরে চিৎকার করে তৃণ বলল,
-“তোকে ছোঁয়ার অধিকার শুধু আমার।তুই বউ সাজলে শুধু আমার জন্য সাজবি।আর
কারো জন্য নয়।”
প্রাচ্য নিজেকে ছাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠে।কিন্তু পেরে উঠছে না তৃণ সাথে।দাঁত মুখ খিচিয়ে বলল,
-“ব্যথা পাচ্ছি আমি ছাড় বলছি!”
-“ছাড়বো না। তোর এই ব্যথার চেয়ে দ্বিগুন ব্যাথা আমি পাচ্ছি,আমার হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা কি হবে।সেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করা একমাত্র যে উপায় তুই!প্লিজ এমন পাগলামি করিস না তুই!তোকে ছাড়া আমি একমূহুর্তে থাকতে পারবো না।খুব কষ্ট হবে আমার।”
বাহু ছেড়ে আলতো করে দুইহাত প্রাচ্য’র গাল ছুয়ে বলল,
-“সব দোষ আমার আমি মেনে নিচ্ছি।তুই আমায় শাস্তি দে,তারপর এভাবে ছেড়ে যাস না।তোকে অন্যের হতে দেখতে পারবো না।তোকে নিয়ে যে স্বপ্ন বুনেছি সেগুলো মিথ্যে হতে দিস না।ভালোবাসি আমি তোকে।এবার সুযোগ দে প্লিজ,,,,

গাল থেকে হাত সরিয়ে ফেলে প্রাচ্য ।তার নিজের তর্জনী আঙুল তৃণ হার্ট বরাবর রেখে বলল,
-“এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না, বিশ্বাস কর তৃণ আমার হত।কি বললি, তুই আমাকে অন্যের হতে দেখতে পারবি না ,তাহলে আমি কি করে সহ্য করতাম। যখন তুই আমার সামনে দাঁড়িয়ে অন্য মেয়ের সাথে ফ্লাটিং করতি।তখন আমার কষ্ট হত।বিশ্বাস কর খুব কষ্ট হতো আমার।খুব,,,,,,আমার সব স্বপ্ন গুলো ভেঙে দিয়েছিস তুই,তোকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।”
এটা বলে সেখান থেকে চলে যায় কান্না করতে করতে।তৃণ ধপাস করে মাটিতে পা ফেলে বসে যায়।এভাবে বসতে দেখে সবাই আতঁকে উঠে। স্বপ্ন তৃণ কাছে এসে বলল,
-“তুই চিন্তা করিস না ! আমি প্রাচ্যকে বোঝালে প্রাচ্য বুঝবে।”
স্বপ্ন ইশারায় ধূসর বলে তৃণ কাছে আসার জন্য।স্বপ্ন দৌড়িয়ে যায় প্রাচ্য’র কাছে।তার পথ আগলিয়ে দাঁড়ায় স্বপ্ন।তা দেখে প্রাচ্য বলল,
-“স্বপ্ন পথ ছাড়!
-“আগে আমার কথা শুন!
-“কারো কথা শুনার প্রয়োজন নেই আমার । বাসায় যেতে হবে আমায় দেরী হয়ে যাচ্ছে আমার।!
প্রাচ্য’র দুইবাহু ধরে স্বপ্ন শান্ত সুরে বলল,
-“তুই জানিস প্রাচ্য ধূসর আর তৃণ কেমন।এরা একটু আকটু মেয়েদের সাথে ফ্লাটিং করে তার মানে…..
-“তার মানে কি? বলবি এই ছবি গুলো মিথ্যে এটাই তো।প্লিজ আমি আর কিছু শুনতে চাই না এই বিষয়।আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে যায় প্রাচ্য।স্বপ্ন একটা হতাশার নিশ্বাস ফেলে তৃন কাছে আসে।তাকে দেখে ধূসর বলল,
-“কি হলো,,,
-“যে নিজে থেকে বুঝতে চায় না তাকে হাজার বুঝালে বুঝবে না।”
-“আচ্ছা সমুদ্রকে তৃণ আর প্রাচ্য’র ব্যপারটা বললে কেমন হয়।”
রোদ বলল।তার সাথে তাল মিলিয়ে ধূসর বলল,
-“সমুদ্রকে বললে হয়তো বিয়ে ভেঙে দিতে পারে।
তৃণ উঠে দাঁড়ায়।সে বলল,
-“কোনো দরকার নাই।যে যেতে চায় তাকে আটকানোর কারো সাধ্যে নেই।”

#চলবে
#কাউছার স্বর্ণা।

স্বপ্নীল ১৯

0

স্বপ্নীল
১৯
-“আমি ভেবেছি স্বপ্ন ক্রাশ খেয়েছে নীলের উপরে।আর এখন আমি কি শুনছি।স্বপ্ন রীতিমত প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে।”
ধূসর বলল।তার সাথে তাল মিলিয়ে তৃণ বলল।
-“আমি আগে বুঝছি।স্বপ্ন এবার নীলের প্রেমে মার্ডার হবে।”
-“হ! তুই না জানলে কে জানবে আমায় বল! ”
ফোঁড়ন কেটে প্রাচ্য বলল।রোদ বলল,
-“আমাদের তৃণ হলো প্রেম বিষয়ক পি এইচ ডি প্রাপ্ত। ”
তৃণ গর্বকরে বলল,
-“ঠিক বলেছিস রোদ! এত দিনে আজকে একটা রাইট কথা বললি দোস্ত।তার জন্য তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আর হ্যাঁ!তোদের যদি প্রেম বিষয়ক কোনো পরামর্শ লাগে আমার সাথে যোগাযোগ করবি।তোদের এই পি এইচডি প্রাপ্ত বন্ধু থাকতে নো চিন্তা।
তার কথা শুনে প্রাচ্য ভেঙচি কাটল।তৃণ বলল,
-“শোন প্রাচ্য, তোকে আমি স্পেশাল ভাবে প্রেম বিষয় পরামর্শ দিব। আজ থেকে আমায় সময় দিবি তুই।পুরো পাক্কা প্রেমিকা বানিয়ে ছাড়বো।”
প্রাচ্য দুহাত জোর করে বলল,
-“ক্ষেমা করেন আমায়! আমায় প্রেমিকা হওয়ার দরকার নাই।”
-“আরে ভয় পাচ্ছি কেন তুই……
তার আগে তৃণকে কেউ এসে জড়িয়ে ধরে।হঠাৎ করে এরকম হওয়াতে তৃণ সাথে সবাই হতভম্ব।
-“আই মিস ইউ তৃণ বেবি।তুমি জানো আমি তোমাকে কত মিস করেছি।”
এই কথা শুনে তৃণ বুঝতে পারল তাকে জড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি হলো টিনা।টিনার এই ন্যাকামি দেখে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে প্রাচ্য’র।সহ্য হচ্ছে না তার।তৃণ প্রাচ্য’র দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে ফুসছে সে। যেকোনো সময় বোম ব্রাস্ট হতে পারে। টিনাকে নিয়ে আর জামেলা চায় না।এবার নিজের মনে কথা প্রাচ্যকে বলে দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে।
হুট করে টিনা তাকে ছেড়ে দিয়ে তার গালে কিস করে বসে সবার সামনে।তৃণ ভাবতে পারিনি টিনা এমন কিছু করবে।তৃণ ভয়ে ঢোক গিলছে প্রাচ্য এটা কি ভাবে নিবে।ভয়ে তাকাতে প্রাচ্য’র দিকে। প্রাচ্য’র চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।প্রাচ্য এগিয়ে এসে টিনা বাহু ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে ঠাস ঠাস করে চড় মারে।প্রাচ্য এমন কিছু করবে ভাবতে পারিনি তার বন্ধুরা।তৃণ এগিয়ে এসে বলল,
-“এ কি করেছিস তুই”
প্রাচ্য কান্না করতে করতে বলল,
-“খুব ভালো লাগে তোর এসব। তাই না!”
-“প্রাচ্য আমি,,,,
-“চুপ,একদম চুপ! কোনো কথা বলবি না তুই আমার সাথে! ”
কান্না করতে সেখান থেকে প্রস্থান করে।তার পিছন পিছন স্বপ্ন ছুটে যায় প্রাচ্যকে আটকানোর জন্য।রোদ আর ধূসর ছুটে যায়।
-“টিনা আমি তোমার কাছে প্রাচ্য হয়ে ক্ষমা যাচ্ছি। আই অ্যাম রিয়েলি সরি!
তৃণ এটা বলে চলে যায়।টিনা রাগে ফুঁসতে বলল,
-“তুমি এই টিনার গায়ে হাত তুলেছো।তার পরিণাম তোমাকে ভোগ করতেই হবে।ভালোবাসো না তুমি তৃণকে।
একটা শয়তানি হাসি দেয় সে।তৃণ স্বপ্ন কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
-“প্রাচ্য কোথায়?”
– ধূসর বলল,
-“চলে গেছ”
-“আটকাতে পারলি না তোরা।”
-“আমরা আসার আগেই চলে গেছে।”
রাগে নিজের চুল ছিঁড়তে মন চাচ্ছে। বাম হাত দিয়ে চুল মুট করে ডান হাতে ফোন নিয়ে প্রাচ্যকে ফোন দিচ্ছি।বার বার কেটে দিচ্ছে প্রাচ্য।এবার ফোন বন্ধ বলছে। তৃণ রাগ করে মোবাইল সেখানে আঁচড়ে ভেঙে ফেলে।তৃণ কাঁধে স্বপ্ন হাত রেখে বলল,
-“চিন্তা করিস না।প্রাচ্য রাগ কমে গেলে ও নিজেই তোকে ফোন করবে।”

প্রাচ্যদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দা দিকে বার বার তাকাছে একবার যদি প্রাচ্য দেখায় পায়।দুই ঘন্টা যাবত দাঁড়িয়ে আছে খবর নেই।আসার সময় মার্কেট থেকে নতুন মোবাইল, নতুন সিম কিনে প্রাচ্যকে ফোন করে।রিং হয়ে হওয়ার সাথে সাথে ফোন তুলে প্রাচ্য।সে বলল
-“হ্যালো!
-“হ্যালো!
-“তোর ফোন ধরছি না বলে নতুন সিম কিনে আমায় ফোন দিচ্ছি।কোন সাহস তুই আমায় ফোন দিচ্ছিস।”
-“প্লিজ প্রাচ্য ফোন কাটিস না।”
– – -” তোর সাথে আমার কোনো কথা নাই।”
প্রাচ্য ফোন কেটে দেয়।তৃণ মোবাইলে দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। প্রাচ্যকে ফোন করে বুঝানো যাবে না। যা বোঝাতে হবে সামনাসামনি। পাইপ বেয়ে প্রাচ্য’র বারান্দা আসে।সে জানে না প্রাচ্য এখন তাকে দেখে কি ভাবে রিয়েক্ট করবে।আর সমুদ্র যদি জানতে পারে তার বন্ধু মাঝরাতে পাইপ বেয়ে তার বোনের কাছে এসেছে।তাহলে কি ভাব্বে সমুদ্র ।
-“ভুত!”
খুব জোরে বলল প্রাচ্য।তৃণ তাড়াতাড়ি প্রাচ্য’র কাছে এসে তার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে।
-“চুপ কর।এত জোরে চিৎকার দিচ্ছিস কেন? আমি তৃণ, ভুত নয়!”
প্রাচ্য ফোঁপাতে থাকে।তার ফোঁপাতে দেখে তৃণ হাত সরিয়ে বলল,
-“সরি”
প্রাচ্য জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।দম যেন আটকে আসছিল! রাগি চোখে তৃণ দিকে তাকায়,
-“তুই আমার রুমে কোন সাহস আসছিস! বের হ্ও!
-“প্লিজ আমার কথা শুন…
-“বের হবি ।
-“না ”
-“আমি কিন্ত এখন সমুদ্র ভাইয়াকে ঢেকে আনব।তার বন্ধুর কৃতকর্ম দেখার জন্য।”
-“যা গিয়ে ঢেকে আন।আমি বলব তুই আমায় ঢেকে এনেছিস।”
এটা চলে ধপাস করে শুয়ে পড়ে।প্রাচ্য’র রাগ সপ্তম আকাশে। এই ছেলে কে একটু সহ্য হচ্ছে না তার।
-“এই উঠ!আমার বিছানা থেকে উঠ।”
-“এই বিছানা তো আমারে একদিন হবে।আজ থেকে না হয় শোয়া ধরলাম।”
-“তোর মত নোংরা মানুষ এই জীবনে দেখিনি।”
-“নোংরা মানুষ দেখছ নাই।তাহলে আমায় দেখে দুনয়ন ভরে নেয় ”
-“ছিঃ!”
এটা বলে চলেচযেতে নিলেই তৃণ হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে তার বুকের উপরে প্রাচ্যকে ফেলে।তার একহাত প্রাচ্য’র কোমর জড়িয়ে ধরে, আরেক হাত প্রাচ্য’র মাথা নিচের দিয়ে প্রাচ্য’র মুখ তার উপরে ধরে।প্রাচ্য ছুটার জন্য অনেক চেষ্টা করে। তা দেখে তৃণ বলল,
-“যেতে যেন না পারিস তার জন্য এভাবে আকঁড়ে ধরেছি!তারপর এমন ছটপট করছিস কেন? ”
-“ছাড়! বলছি,”
-“এমন করছিস কেন? একটু দেখি না তোকে!”
-“আমায় দেখতে যাবি কেন? তুই দেখিবি টিনা কে?সর বলছি!”
-“এখানে আমার দোষ কোথায় প্রাচ্য?টিনা নিজেই আমায় কিস করেছে!আমি তো আর করি নাই।
-“ও তোকে কেন কিস করবে?ওর এত স্পর্ধা হত না, যদি তুই টিনাকে প্রশ্রয় না দিতি! ”
-“আমি কোথায় প্রশ্রয় দিয়েছি।ও হুট এরকম কিছু করবে আমি ভাবতে পারিনি।এতে আমার দোষ কোথায়?”
-“তুই প্রশ্রয় দেস নি? ”
-“না
-“তুই প্রশ্রয় দিয়েছিস বলে তোকে হুট করে কিস করতে পেরেছে। ওখানে তুই বাদে স্বপ্ন আর ধূসর ছিল।তাদের কেন করেনি! আনসার মি?
তৃণ চুপ করেছে আছে।সে কি বলবে! বলার কিছু রেখেছে।প্রাচ্যকে জ্বালানোর জন্য টিনার সাথে ফ্লাটিং করত।আর এভাবে টিনা এমন কিছু করবে ভাবতে পারিনি।এভাবে তৃণকে চুপ থাকতে দেখে রাগ উঠে যায় প্রাচ্য’র।যে ছুটে চলে যেতে নিলে তৃণ আর শক্ত করে আকঁড়ে ধরে।
-” শান্ত হো! এত হাইপার হচ্ছিস কেন? কিস করেছে তার বদলের থাপ্পড় মেরেছিস তো।শোধবোধ হয়ে গেছে!তাহলে কেন রাগ করছিস?
-“তোর গার্লফ্রেন্ড কে থাপ্পড় মেরেছি বলে গায়ে লাগছে নাকি তোর।
-“গায়ে লাগবে কেন? তুই না মারলে আমি মেরে দিতাম। গায়ে পরা মেয়ে, ন্যাকামিতে ভরপুর। ”
-” হায়! কি শুনি আমি।তৃণ শেখ তার স্মার্ট , সুন্দরী প্রেমিকাকে বলছে গায়ে পড়া, ন্যাকামোতে ভরপুর। ব্যাপার কি?
-“ব্যাপার কিছু একটা আছে?
হাসে সে।তার সাথে হেসে দে প্রাচ্য।
-“ছাড় না প্লিজ! অস্বস্তি লাগছে। ”
-“উহুম।”
-“কি”
তৃণ কোনো কিছু না বলে উলটে ঘুরিয়ে প্রাচ্যকে তার নিচে ফেলে দেয়।প্রাচ্য’র বুকে মাথা পেতে হৃদস্পন্দন শুনে।
-“কি করছিস?
মাথা তুলে প্রাচ্য’র ঠোঁটে তর্জনী আঙুলে রেখে ‘হুস ‘বলল।আমার সে আগের স্থানে ফিরে যায়।প্রাচ্য’র মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে যায়।আজ পর্যন্ত কোনো পুরুষ এত কাছে আসেনি তার।হার্টবিট মিস হয়েছে। বড় বড় করে নিশ্বাস ফেলছে।তৃণ নিশ্বাস তার গলায় ঘাড়ে উপচে পড়ছে।বিছানার চাদর খামচে ধরে।এভাবে অনেক্ষন ধরে প্রাচ্য’ বুকে কান পেতে রয়েছে।বুকের হৃদস্পন্দন বলছে ‘ভালোবাসি ‘।

প্রাচ্য’র ফোনে টিং টাং আওয়াজ আসে।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে হোয়াটস এ্যাপসে মেসেজ আসছে।মোবাইলের স্কিনে টিনা নাম ভেসে উঠছে।মোবাইলে হাতে নিয়ে একবার তৃণ দিকে তাকায়, এখন ওই ভাবে ঝাপটে ধরে আছে।তা দেখে মুচকি হাসে প্রাচ্য!আবার মোবাইল আসা মেসেজ আওয়াজে মোবাইলের দিকে নজর দেয়। টিনা তাকে মেসেজ করছে। কেন করছে?

টিনা এমন কিছু পাঠাবে প্রাচ্য ভাবতে পারেনি।টিনা কিছু ছবি সেন্ট করেছে। ছবি গুলোতে টিনা আর তৃণ অন্তরঙ্গ অবস্থায়।তা দেখে কয়েক ফোঁটা চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে।তৃণ দিকে তাকায় সে। সে মনে করেছে তৃণ আর যাই করুক এমন কিছু করতেই পারবে না। তার বিশ্বাস ছিল।এভাবে ভেঙে দিল। আর এখন ভালোবাসা দেখাচ্ছে। ছিঃ, কি করে টিনার সাথে,,,,,,
আর কিছু ভাবার আগেই তৃণকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বুকের উপর থেকে।প্রাচ্য’ এহেম কান্ড তৃণ হতভম্ব হয়। হঠাৎ কি হয়েছে প্রাচ্য এমন করছে।প্রাচ্য’ দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখে জল। হ্যাঁ প্রাচ্য’র চোখে জল।কিন্তু কেন কাঁদছে প্রাচ্য? সে তো এমন কিছু করেনি যার জন্য প্রাচ্য কাঁদবে।তার মানে কি প্রাচ্য’র বুকে মাথা রেখেছি বলে কান্না করছে,,,
তৃণ উঠে যেয়ে প্রাচ্য’র গাল ছুতে নিলে,প্রাচ্য চেঁচিয়ে উঠে,
-“ছুবি না আমায় তুই, তোর নোংরা হাতে স্পর্শ করবি না আমায়।পাপ হবে আমার।”
কি বলছে প্রাচ্য।তৃণ মাথায় কিছু ঢুকছে না।খুব শান্ত গলায় বলল,
-” কি হয়েছে প্রাচ্য তোর।”
তৃণ’র শার্টের কলার চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলল,
-“কি হয়েছে জানতি চাস! এই দেখ!”
এটা বলে মোবাইলের পিক গুলো দেখায়।তৃণ একবার প্রাচ্য’র দিকে তাকায় আবার ছবি গুলো দিকে।প্রাচ্য’র হাত থেকে মোবাইল নিয়ে ভালো করে দেখে বলল,
-” বিশ্বাস কর প্রাচ্য!এই ছেলেটা আমি না।
-“মিথ্যেবাদী , জানোয়ার।একটা কথা বলবি না।বের হও!
-“বিশ্বাস কর,,,
-“কি বিশ্বাস করব!হ্যাঁ কি বিশ্বাস করব।জলজ্যান্ত ছবি গুলো।এগুলো তো মিথ্যে হতে পারে না।
-“হ্যাঁ এগুলো মিথ্যে!আমার আর টিনার মধ্যে এমন কোনো সম্পর্ক ছিলো না যে আমি ওর সাথে অন্তরঙ্গ হব।”
-“ও রিয়েলি! তোদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিলো না।”
তাচ্ছিল্য হেসে বলল প্রাচ্য।প্রাচ্য’র গালে আলত ভাবে হাত ছুয়ে বলল,
-“ছিলো না। ওর সাথে থাকবে কি করে।আমার এই মন প্রাণ জুড়ে তুই ছিলি।ভালো যেয়ে আমি তোকে ভালোবাসি।”

স্বাভাবিক পরিস্থিতি যদি তৃণ এই কথা প্রাচ্যকে বলতো। তাহলে এখুনি প্রাচ্য, তৃণ বুকে ঝাঁকিয়ে পড়ত।এত দিন তৃণ মুখে এই কথা শুনার জন্য প্রাচ্য’র মন ব্যাকুল ছিল।এই দিনের অপেক্ষাই ছিল।কিন্তু আজ সে তৃণকে বিশ্বাস করবে না। কি ভাবে করবে। তার ভালোবাসার মানুষকে এভাবে অন্যএকজনের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখিল কেই বা ঠিক থাকতে পারবে।

প্রাচ্য কান্না করতে করতে তৃণ বুকে ইচ্ছা মত আঘাত করতে থাকে।
-“ভালোবাসিস।ভালোবাসার নমুনা দেখতে পাচ্ছি আমি।”
-“তোর মনে হয় টিনার সাথে আমি এমন করব”
-“কেন মনে হবে না। আমায় যদি জোর করে কিস করতে পারিস। তাহলে টিনার সাথে এমন করতে পারবি!
ঠাস করে একটা চড় মারে প্রাচ্য’র গালে তৃণ।দেওয়ালে সাথে লাগিয়ে প্রাচ্য’র গলা টিপে ধরে বলল,
-“এত সাহস হয় কোথায় থেকে তোর।এই টিনার সাথে নিজেকে তুলনা করার।তুই জানিস, আমার কাছে কত দামি তুই।এই বাজের মেয়ের সাথে নিজের তুলনা করছিস।

গলা ছেড়ে দেয় সে।আর একটু হলে নিশ্বাসবন্ধ হয়ে যেত।জোরে জোরে হাঁফাতে থাকে।তৃণ প্রাচ্যকে জড়িয়ে ধরে।প্রাচ্য ফেরে উঠছে না।তৃণ বলল,
-“তোকে ভালোবাসি বলে নিজের সইচ্ছায় কিস করেছি।আর রইল টিনা।টিনার সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক ছিলো না ।যার জন্য ওকে আমি কিস করব, আর এই সব।সব চেয়ে বড় কথা টিনা জানতো আমি তোকে ভালোবাসি।

ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল প্রাচ্য,
-” ভালোবাসা মাই ফুট।ভালোবাসতি তুই আমায়, তাই আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিস।এটা তোর ভালোবাসার নমুনা ছিল।”
তৃণ প্রাচ্য দিকে এগিয়ে আসলে প্রাচ্য তাকে থামিয়ে বলল,
-“আমার কাছে আসবি না তুই”
-“আসবো না।তোর কথা আনসার শুন। তোকে আমি ফিরিয়ে দিয়েছি তার কারণ আমি চাইনি হই এই মুহুর্তে আমাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক হোক। সম্পর্ক করলে তোর পড়াশুনার ক্ষতি হত।তাই ফিরিয়ে দিয়েছি। তার মানে এই নয় আমি তোকে ভালোবাসতাম না।আমি তোকে ভালোবাসতাম। আমি তোকে বুঝতে দিতাম না।চেয়েছিলাম তোর পড়াশুনা শেষ হলেই একবারে বউ করে ঘরে তুলে আমার অনুভূতি কথা জানাবো।”
-“চুপ কর!তোর মুখ থেকে কিছু শুনতে চাই না।এই মুহুর্তে বের হয়ে যায়।না হলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।
-“কি বলছি এসব তুই”
-“বের হও।
-“হ্যাঁ যাচ্ছি।কিন্তু বিশ্বাস কর টিনার সাথে এমন কোনো কিছু হয়নি আমার।আর আমি জানি কেন? টিনা এই মিথ্যে ছবি গুলো পাঠিয়েছে।তার কৈফিয়ত টিনাকে দিতেই হবে।

চলে যায় তৃণ।প্রাচ্য কান্না করতে করতে বসে পড়ে। এরকম চায়নি সে। তাহলে কেন এমন হয়েছে।কেন হয়েছে?ভালোবেসেছিল বলেই!
#চলবে
@কাউছার স্বর্ণা

স্বপ্নীল ১৮

0

স্বপ্নীল
১৮
সারারাত ঘুমাতে পারিনি সে।চোখে সামনে নীলের ছবি ভেসে উঠছে।তাইই সকাল না হতে না হতেই নীলকে দেখার জন্য ছুটে আসে প্রাচ্যদের বাসায় সে।প্রাচ্যদের এখানে এসে উঁকিঝুঁকি মারছে সে। বুঝতে পাচ্ছে না কেন? দেখা মিলছে না নীলের। সে কি এখন উঠেনি। সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবো।
কিছু একটা ভেবে সে বলল,না থাক! সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করলে আবার কি মিন করে বসে থাকে। সমুদ্র বোন যদি নীল না হত।তাহলে তার কথা বলতে পারত সমুদ্রকে।কিন্তু এখন নীলের ব্যপারে সমুদ্রর কাছে বলবে না কি, বলবে না।এটা নিয়ে স্বপ্ন দ্বিমতপোষণ করছে।
“-যাকে খুজছিস সে নেই।”
স্বপ্ন পিছননে দাঁড়িয়ে প্রাচ্য বলল,স্বপ্ন ভয়ে আছে প্রাচ্য কিছু বুঝে ফেলেনি তো।এখন সে কি জবাব দিবে।
-“আমি কাকে খুজবো।আমি তোকে খুজছিলাম।”
-“জানিস স্বপ্ন।তুই মিথ্যে বলা এখন পুরোপুরি শিখতে পারিস নি।আগে শিখে নে,তারপর না হয় মিথ্যে বলিস”
-“সত্যি বলছি আমি তোকে,,,
প্রাচ্য হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে স্বপ্নর কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে সে বলল,
-“আমি জানি তুই এভাবে উঁকিঝুঁকি দিয়ে নীলকে খুঁজছিস।”
স্বপ্ন আর কিছু বলল না।প্রাচ্য’র কথা বিনিময় সে শুধু হেসেছে।তার চুল হাতড়াতে হাতড়াতে বলল,
-” তাকে যে দেখছি না সে কোথায়।”
-“নীল চলে গেছে।”
স্বপ্ন আতঁকে উঠে বলল,
-“কোথায়? ”
-“মির্জাপুর। ”
যাকে দেখার মনটা তার ব্যাকুল ছিল।নীল একবার দেখে তার মনের ব্যাকুলতা দূর করবে ভেবেছে। ভেবেছে তার হাসি মাখা মুখটা দেখে পরাণ জুড়াবে।কিন্তু সে চলে গেছে,,,কেন নিজের মনের কথায় জানায়নি নীলকে সে।ভেবেছিল আরো কয়টা দিন যাক তারপর জানাবে।কিন্তু হুট করে চলে গেল কেন?
-“স্বপ্ন!”
স্বপ্নের কাঁধে হাত দিয়ে বলল প্রাচ্য।স্বপ্ন তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“কখন গেলো।”
-“কালকে বিকালে চলে গেছে।”
ছোট করে স্বপ্ন বলল,
-“ওহ!”
এটা বলে আর এক মিনিট আর দাঁড়ায় নি।স্বপ্ন এভাবে চলে যাওয়াতে প্রাচ্য কিছুটা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তার যাওয়ার পানে।
★★★
-“তোর জন্য সাজেকে সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত গুলো ভিডিও করে এনেছি।”
-“কই দেখা।”
-“এই নে ধর।”
সোহার হাতে মোবাইলটা দিয়ে খাটের উপরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে।সুরওয়ালার সাথে দেখা হবে তো তার।আচ্ছা সুরওয়ালা দেখতে কেমন হবে। তার চেয়ে কি সুন্দর হবে।হয়ত হবে।আবার সুন্দর হতে না পারে।। যদি সুরওয়ালা ভুঁড়িওয়ালা পেট থাকে। আরে,, না,, না কি সব ভাবচি আমি।আমার সুরওয়ালা পেট থাকবে স্লিম। কোনো ভুঁড়ি টুড়ি থাকবে না।সব আজগুবি চিন্তা আমার।
-“এত সুন্দর জায়গা সত্যি মিস করে ফেলেছি আমি।জায়গা টা সত্যি খুব সুন্দর।”
আফসোস নিয়ে বলল সোহা।নীল শোয়া থেকে উঠে বলল,
-“আমার সাথে যাওয়ার জন্য বলেছি তোকে।তুই শুনিস নি।”
-“আমি কি জানতাম এত সুন্দর হবে জায়গাটা।”
-“নো টেনশন বেবি, তোমার আর ভাইয়ার হানিমুনের ব্যবস্থা করব ওই সাজেকে। আমার জানা মত এই জায়গা পার্ফেক্ট হানিমুন করার জন্য।”
লজ্জা মাথা নুয়ে ফেলল সোহা।তা দেখে নীল হেসে দিল।
-“বাব্বাহ!আমার সোহারানি দেখি লজ্জা আছে।”
-“কিসব বলছিস না তুই। ”
এটা বলে দৌড়ায় পালায় সে।দৌড়াতে দৌড়াতে ছাদে উঠে যায়। হাটুতে হাত ভর দিয়ে হাপাতে থাকে সে।এভাবে তাকে হাঁফাতে দেখে তামিম প্রশ্ন করে।
-“কুকুরে তাড়া দিল বুঝি তোকে।”
এইরাতে বেলা ছাদে কে থাকতে পারে।এইদিক ওইদিক তাকায়।সামনে তাকিয়ে দেখে তামিম।ছাদের রেলিঙ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একহাত সিগারেট ধরে রেখেছে আর মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে। এই সিগারেট দেখলে গা পিত্তি জ্বলে যায় তার। সিগারেট ধোয়া তার সহ্য হচ্ছে না।
-“আপনি সিগারেট খাচ্ছেন।”
-“দেখতেই পাচ্ছো।”
-“দাদু শুনলে কষ্ট পাবে।”
-“দাদু দেখলে তো কষ্ট পাবে।”
-” এইসব বাজে জিনিস খান কেন?ছেড়ে দিতে পারেন না।”
হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে সোহার কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে বলল,
-“তোর ভালোবাসা দিলে ছেড়ে দিব।”
সোহা ছাড়া জন্য চট পট করছে । বার বার নিজের কোমর থেকে তামিমের হাত ছুটাছে।
-“ছাড়ুন বলছি!
-“ছাড়বো না আমি।কেন ভালোবাসি না আমায় তুই।তোর ভালোবাসা পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে আমায়। তোর অবহেলা গুলো আমার বুকের এখানে লাগে।
-“ছাড়ুন বলছি।চিৎকার করব আমি।
-“হুমকি দিচ্ছি আমায়।
-“হুমকি দিব কেন? আপনাকে হুমকি দেওয়ার এত সাহস আমার নেই।”
আকুলতা নিয়ে তামিম বলল,
-“কেন বুঝিস আমার ভালোবাসা তুই।
-“কেন? সেই কারণ আপনি জানের।বাক্ষ্মণ হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার সেই দুঃসাহস আমার নেই।”
-“বার বার এক কথার দোহাই দিয়ে তুই আমায় ফিরি দিস তুই।”
-“ছাড়ুন বলছি এক্ষুনি আমায়, না হলে আমি এখন চিৎকার করে দাদুকে ডাকবো।”
নিজেকে ছাড়া জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে সোহা।তাকে আটকে রাখা জন্য সোহা তামিম মধ্যে ধস্তাধস্তি চলতে থাকে।সোহা নিজেকে ছুটাতে গিয়ে বেখেয়ালে তামিমের গালে থাপ্পড় পড়ে যায়।তখনই তামিম তাকে ছেড়ে দেয়।সোহা ভয় পেয়ে কান্না করে দে।সে নিজের হাত বাড়িয়ে তামিম গাল ছুতে নিলে তামিম দুইকদম পিছিয়ে যায়।কান্না করতে করতে বলল,
-“আমি ইচ্ছা করে থাপ্পড় দিয়নি বিশ্বাস করুন।কিভাবে যেন আপনার গালে আমার হাত লেগে গেছিল।”
উন্মাদের মত আচরণ করতে থাকে সে।তামিমের চোখে দিয়েআগুন বের হচ্ছে।সে আর এক মুহুর্ত দেরী না করে সেইস্থান প্রস্থান করে।পিছন থেকে অনেক বার সোহা তাকে ডাকে।কান্না করতে করতে সেখানে বসে পড়ে।

বিশ্বাস করুন আপনি।আমি সজ্ঞানে আপনাকে আঘাত করিনি। কিভাবে আমি আপনাকে আঘাত করব।ভালোবাসি যে আমি আপনাকে।আপনি আমার ভালোবাসার মানুষ, আপনাকে আঘাত করব সেটা স্বপ্নে ভাবতে পারি না। আপনি জানতে চান না কেন আপনাকে বার বার ফিরিয়ে দিয়।আজ আমি বলবো, আপনার ভালোবাসা গ্রহন করলে দুজন কষ্ট ছাড়া কিছু পাবো না।একটা কাজের মেয়ের সাথে আপনার সম্পর্ক কেউ মেনে নিবে না।এখন সম্পর্ক করলে ও একদিন না একদিন দুজনকে আলাদা হতেই হবে।তার চেয়ে ভালো সম্পর্ক না জড়ানোই।ভালোবেসে যদি আপনাকে হারিয়ে ফেলি সেই ভয়ে আপনাকে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছি। আপনাকে আঘাত করার ইচ্ছা ছিল না।আপনাকে আঘাত করেই তার দ্বিগুন কষ্ট আমি পাচ্ছি।
★★★
দিন দিন কি আমার বুদ্ধি লোভ পাচ্ছে। মাথা কোনো কাজ করছে না। সকালে প্রাচ্য’র থেকে নীলের মোবাইল নাম্বারটা নিতে পারতাম।তা না করেই ওই ভাবে হুট করে চলে আসলাম।নাম্বার থাকলে হয়ত কথা বলে অস্থিরতা কিছু কাটাতে পারতাম।হায়! স্বপ্ন একটা মেয়ে তোকে পাগল বানিয়ে রেখেছে।কি সব পাগলামো করছিস তুই।তোর ২৬বছর জীবনে প্রেমে হাওয়া গায়ে কে মাখতে বলল।এবার ঠেলা সামলা। উফ! আর ভাবতে পাচ্ছি না।কি করে যোগাযোগ করব আমি। যোগাযোগ করতে না পারলে আজকে রাতটা নির্ঘুম কাটবে।
স্বপ্ন খাটের উপরে হাত পা চারটা ফেলে শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করে।কিছু একটা মনে করে হুট করে বসে পড়ে।মোবাইল খুজতে থাকে। মোবাইল ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা ছিল।সেখান থেকে মোবাইল নিয়ে খট খট করে টাইপিং করে প্রাচ্যকে টেক্সট দে।অপেক্ষা আছে প্রাচ্য’র টেক্সট । দুইমিনিট পর প্রাচ্য’র টেক্সট আসে।নাম্বার পেয়ে একটা বড় নিশ্বাস ফেলে সে।নাম্বার তুলে কল করে।

মুভি দেখছিল নীল।মোবাইল বাজছে তার খবর নেই।সোহা বলল,
-“নীল ফোন বাজছে তোর।”
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। কে ফোন দিবে তাকে।ভাবতে ফোন কেটে গেলো।দ্বিতীয় বার ফোন আসতে ধরল সে।
-“হ্যালো!
-“………..
-“হ্যালো!”
কোনো কথা বলছে না স্বপ্ন।নীলের কন্ঠ শুনে তার হৃদয়ের আগুন নিভল।নীল ফোনের অপাশ থেকে নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছু শুনতে পাচ্ছে না। বিরক্ত সুরে বলল,
-“কথা যখন বলবেন না।তাহলে অযথা ফোন করে বিরক্ত করেন কেন? আজিব!”
খট করে ফোন কেটে দেয় সে।স্বপ্ন বুঝতে পারেনি এভাবে ফোন কেটে দিবে নীল। একটা দ্বীঘ নিশ্বাস ফেলে আবার কল করে।নীল আবার ফোন হাতে নিয়ে দেখে আগে নাম্বার থেকে ফোন আসছে। লোকটা ফোন করে কথা বলছে না।আবার বার বার ফোন দিচ্ছি তাই বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয় সে।অনেক সুন্দর একটা মুভি দেখিল সে। ফোন আসায় মুভি দেখায় মনোযোগ ব্যাঘাত ঘটছে তাই ফোন বন্ধ করে ফেলল। শান্তিতে মুভিটা অন্তত দেখতে পাচ্ছে সে।ফোন Switch of বলছে, যত বার স্বপ্ন ফোন দিচ্ছে তত বারেই।ফোন ফ্লোরে ছুয়ে ফেলে দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে।আর ভাববে না ওই মেয়ের কথা সে।

সোহা অনেক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে তামিমের সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু তামিম তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।মনের সুখে মোবাইলে গেমস খেলে যাচ্ছে।তার রুমে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে তার খবর নেই।দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ধরে আসছিল সোহার।তাই আর নিরব না থেকে মুখ খুলল,
-“সরি!
-“…………
সোহা এবার তামিমের কাছে যেয়ে দাঁড়ায়।সাহস করে মোবাইল কেঁড়ে নিয়ে বলল,
-“অনেক্ষন ধরে আপনাকে কিছু বলছি আমি।
তামিম সোহার দিকে তাকায় একবার। আরেকবার তার হাতের মোবাইল দিকে।সোহা ভয়ে ঢোক গিলে বলল,
-“আম,,আম,,আপনি আপনার কথা শুনছেন তাই তো মোবাইল নিলাম।
তামিম মোবাইল কেঁড়ে নিয়ে বলল।
-“বের হও আমার রুম থেকে!”
ধমক শুনে ভয় পেয়ে যায় সে।আজ যতই ভয় পাক তামিমের রাগ না ভাঙিয়ে সে এখান থেকে এক পা নড়বে। সাহস জুগিয়ে বলল,
-“যাবো না আমি ”
তামিম কিছু না বলে সোহার বাহু ধরে টানতে টানতে রুমে দরজা বাহিরে দাঁড় করিয়ে দরজা আটকাতে নিলে সোহা দুহাত বাধা দেয়।
-“প্লিজ আমার কথাটা শুনন। একবার আমার কথা শুনন।”
হাত সরিয়ে ধুম করে দরজা আটকিয়ে দেয়। দরজা আঘাত করে সোহা বলল,
-“দরজা খুলুন! আপনার সাথে আমার কথা আছে।
-“……….
-“দরজা খুলুন
-“……
-“দরজা যতক্ষন পর্যন্ত খুলবেন না ততক্ষন পর্যন্ত আমি এক পা নড়বো না।প্লিজ দরজা খুলুন।”
কান্না করতে করতে দরজার সাথে ঘেঁষে বসে পড়ে।
-“আমি নড়বো এখান থেকে।দেখব কতক্ষন পর্যন্ত দরজা আটকিয়ে বসে থাকেন আপনি।”

রাত ২.০০ বাজে তখন নীল পানি খেয়ে উপরে আসতে নিলে সোহাকে তামিমের রুমের দরজা সামনে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে বলল,
-“এই সোহা! তুই কি সজাগ আছিস, নাকি ঘুমে!
সোহা চোখ পিটপিট করে তাকায়।মাত্রই চোখ লেগে এসেছিল।
-“কি?
-“এখানে ভাইয়া রুমের সামনে পড়ে ঘুমাছ কেন?
এতক্ষণ মনে পড়ল সে দরজার সামনে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে।বাড়ি অন্যকোনো সদস্যা দেখে ফেললে কি যে হত।আমতা আমতা করে বলল,

-“আমি…..
তাকে বলতে না দিয়ে নীল রসিকতা করে বলল,
-“হায়! কি প্রেম,,,প্রেমিকের রুমে সামনে বসে প্রেমিকা তাকে পাহার দিচ্ছে। কত কি দেখতে হবে।”

সোহা উঠে দাঁড়ায়।
-” তুই যা ভাবছিস তা নয়।ঘুম আসছিল না তাই বের হলাম।”
-“আমি ছোট খুকি নয়,আপনি যা বুঝ দেবেন তাই বুঝব।”
-“নীল…
-“থাম!আচ্ছা তোর ঘুম আসছে না।তাহলে চল আমার সাথে?
-“কোথায়!”
-“ডান্স করবো।
নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সোহা বলল,
-“মাঝ রাতে মজা করছিস।”
-“সত্যি মজা করছি না।আমার ঘুম আসছে না।আর অনেকদিন হলো তুই আর আমি নাচানাচি করি না।মাঝরাতে লাউড বলিউড দিয়ে গান বাজাবো।আর দুজন মিলে ডান্স করব।হেব্বি মজা হবে।চল”
-“মাথা খারাপ হয়ে গেছে নীল।”
-“না। একদম ঠিক আছে! ”
-“সবাই ঘুমাচ্ছে।এত রাতে এরকম করলে লাটিঝাটা করবে সবাই তোকে।
-“কেউ কিছু করবে না।আমাদের দুজনে ঘুম আসছে না।কিন্তু মির্জাবাড়ি চাকর-বাকর থেকে পরিবারে সব সদস্য ঘুমে মগ্ন।আমাদের যখন ঘুম আসছে না তাদের কে ঘুমাতে দেওয়া হবে না।রাত একলা কেন আমরা জাগব।জাগলে সবাই এক সাথে জাগব। কাউ কে ঘুম যেতে দিব না।আরামের ঘুম হারাম করব সবার।”
-“লাইক সিরিয়াসলি! প্রেমে পড়ে তোর মাথা গেছে।”
এটা বলে সোহা হাঁটা ধরে তার রুমে দিকে।এই মেয়ে সাথে আর একমুহুর্ত থাকা যাবে না।না হলে এই মুহুর্ত সবার ঘুম হারাম করতে উঠে বসবে।মানে মানে কেটেই পড়াই ভালো।না হলে রক্ষা নেই।মাঝ রাতে গান ছেড়ে নাচা শুরু করবে।এই মেয়ের পক্ষে সবই সম্ভব।
#চলবে…
@কাউছার স্বর্ণা

স্বপ্নীল ১৭

0

স্বপ্নীল
১৭
-“চলে যাওয়ার আগে বাড়ি কথা কী মনে ছিলো না।কোন সাহস তুই এই বাড়ির চৌকাঠে পা রাখলি।”
রোকেয়া নিজের মেয়ের উদ্দেশ্য বলল।নীল বাড়িতে পা রাখতেই মির্জা পরিবারে সবাই নিচে বসার করে উপস্থিত হয়।সবাই শীতল চাউনি মেলে তাকে দেখল।সবার মুখ কথা নেই।যেন সবাই নিরবতা নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে তাই কথা বলছে না।তাই রোকেয়া বেগম প্রথমেই মুখ খুলল।তার চুপ করা মানায় না।তাকে যে এবার কড়া শাসন করতেই হবে।মায়ের এমন কথা শুনে নীল কিছু ঘাবড়ে যায়।নিজের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে মায়ের দিকে এগিয়ে যেয়ে ঝাপটে ধরে।
-“আমি জানি তুমি আমার উপরে রেগে আছো। রেগে থাকাই স্বাভাবিক। ”
মাকে চুপ থাকতে দেখে বাবার কাছে যায় নীল।
-“বাবা আমি চলে এসেছি।আর কখনো তোমাদের কে এভাবে ছেড়ে যাবো না।তোমাদের আর কষ্ট দিব না।”
তার বাবা ও কোনো কথা বলল না।দাদুর পায়ের কাছে বসে সে বলল।
-“ও দাদু!দেখো না বাবা,মা কেউ কথা বলছে না আমার সাথে।তুমি ও কি কথা বলবে না আমার সাথে।
সোলোমান মির্জা হাতের লাঠিতে দুইহাত রেখে খুব গম্ভীর হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।নীল আবার বললো,
-“ও দাদু! কথা বলছে না কেন?সবাই কেন এত চুপচাপ আছে।
রোকেয়া বেগম মেয়ের কাছে এসে বলল,
-“এক্ষুনি বের হয়ে যায় তুই এই বাসায় থেকে।তোর সাথে এই পরিবারে কোনো সম্পর্ক নেই।”
মায়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাদুর কাছে এসে বসে আগের জায়গা।সে খুব ভালো করে জানে এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচানো জন্য তার দাদুকে প্রয়োজন।তাই দাদুকে পটাতেই হবে।আদুরে নাতনীর কান্না দেখলে দাদু সহ্য করতে পারবে না। তাই সে কাঁদোকাঁদো কণ্ঠে বলল,
-“দাদু এবার থেকে তুমি আমার কদমফুল বলে ডাকলে। এটা নিয়ে কোনোদিন আর ঝগড়া করবো না। তারপর তুমি কথা বল।”
নীল বুঝতে পাচ্ছে এবার পালিয়ে যাওয়াতে দাদু খুব হার্ট হয়েছে তাই পটাতে দেরী হচ্ছে।এবার কান্না করতে করতে বললো,
-“তোমার কেউ আমায় ভালোবাসো না। এতদিন ধরে সবাই আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছে।মুখে যত বলে ভালোবাসি।কিন্তু মোটে ও তোমরা আমায় ভালোবাসো না।”
সোহান সাহেব কাঁদো কাঁদো মুখে নীলের মাথায় হাত ভুলিয়ে বলল,
-“কান্না করিস না মা,তোকে কেউ ভালো না বাসলে তোর এই অধম কাকাই তোকে খুব ভালোবাসে।”
নীল কাকাই বলে জড়িয়ে ধরে।কান্না করতে করতে বলল।
-“সত্যি কেউ আমায় ভালোবাসে না।যদি ভালোবাসতে তাহলে আমার এই ছোট ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিত।”
রোকেয়া বলল,
-“বিয়ে থেকে পালিয়ে যাওয়ার তোর কাছে ছোট কোনো বিষয় মনে হচ্ছে।তোর কথা শুনে আশ্চর্য না হয়ে থাকতে পারলাম না।”
নিজের কথা আবার দ্বিমতপোষণ করে বলল,
-“ওহ! আমি ভুলেই গেলাম।তোর কাছে তো এটাই ছোট মনে হবেই।ছোট খুকি তুই তাই।”
মায়ের উপর রাগ উঠছে তার।সবার মন একটু গলিয়ে আসতে নিলে তার মা মাঝখান দিয়ে এসে ব্যাঘাত ঘটায়।রোকেয়া বলল,
-“এই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবি এখন তুই।”
নীল উঠে দাঁড়ায়।চোখে পানি মুছে ফেলে বলল,
-“হ্যাঁ আমি চলে যাবো।যেখানে কেউ আমায় ভালোবাসে না সেখানে থাকার ইচ্ছা ও নেই আমার।”
এটা বলে দরজা দিকে পা বাড়ায় সে।সোহাগী এতক্ষণ চুপ থাকলে এবার সে মুখ খুলল।নীল বিয়ে থেকে পালিয়ে যাওয়াতে যে একটু কষ্ট ফেলে ও এখন নীলের চোখে পানি দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।নীল কে তার মেয়ের আসন জায়গা দিয়েছে সে।
-“বড়ভাবি নীল চলে যাচ্ছে।ওকে আটকায় ও।”
নীল আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তার খুব রাগ হচ্ছে এখন কেন দাদু ডাকল না তাকে।আর যদি না ডাকে তাহলে কোথায় যাবে সে।আবার কি ঢাকা ফিরে যেতে হবে।সোহাগী তার শ্বশুরে কাছে এসে বলল,
-“বাবা নীল চলে যাচ্ছে।নীলকে ছাড়া এই বাড়ি হাহাকার করে।এই বাড়ি একমাত্র আদরের মেয়ে নীল। তাকে ছাড়া আমরা কিভাবে থাকব।এবারে মত তাকে ক্ষমা করে দেন।”
তামিম চুপ করে দাঁড়িয়ে মায়ের কথা শুনছে।সেদিন নীলকে পালাতে সাহায্য করায় তাকে থাপ্পড় মেরেছে।এখন পর্যন্ত ভালোভাবে কথা বলছে না।আর এখন নীলের জন্য তার মায়ে দাদুর কাছে দিয়ে বলল নীল যেন ক্ষমা করে দেয়।সত্যি সবাই কত না ভালোবাসে নীলকে।দরজা চৌকাঠ দাঁড়িয়ে আছে নীল।তখনই সোলোমান মির্জা বলল,
-“দাঁড়াও।”
এটার অপেক্ষাই ছিল নীল।দৌড়ে গিয়ে দাদুকে জড়িয়ে ধরে।
-“ধন্যবাদ দাদুভাই।আমি জানি আমার দাদু ভাই আমার কত ভালোবাসে।আমার দাদু ভাই কিছুতে রাগ করে থাকতে পারবে না তার কদমফুলের উপরে।
-“আমার ভালোবাসার মর্যদা রেখেছি দাদুভাই।”
দাদুর কথা নীলের মুখ ফানসে হয়ে যায়।
-“সরি দাদু।”
-“সরি বললে হবে না।আমায় কথা দিতে হবে।”
-“আমি তোমায় সব কথা দিতে রাজি। ”
-“বাড়ি সবার সামনে আমার মাথা হাত রেখে বলতে হবে।তুমি কখনো কোনো পরিস্থিতে পালিয়ে যাবি না বাড়ি থেকে এবং আমরা যায় বলব তাই শুনতে হবে।”
উপস্থিত সবার মুখে থম থম অবস্থা।নীল সবার দিকে চোখ ভুলায়।সবাই ভাবছে নীল কিছুতে কথা দিবে না।তাতে আমার সোলোমান মির্জা কষ্ট পাবে।সবাইকে অবাক করে দিয়ে নীল তার দাদু মাথা হাত দিয়ে বলল।
-“এই তোমার মাথা ছুয়ে বললাম।তোমাদের সব কথা শুনবো আর,,,,
সবার দিকে আবার চোখ ভুলায় সে।সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে সে কি বলবে।
-“আর কোনোদিন বাড়ি থেকে পালাবো না।”
সবাই খুশি হয়। সোলোমান মির্জা নাতনীর হাত ধরে বলল।
-“দাদু কে কিন্তু কথা দিয়েছে তুমি।কথার খেলাফ যেন না হয় তোমার।”
জড়িয়ে ধরে বলল,
-“কখনো কথার খেলাফ করব না।”
-“অনেক জার্নি করে এসেছো। রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।তোমার কাকি মা তোমার খাবার ঘরে দিয়ে আসবে।”

সোহা খাটের উপরে শুকনা কাপড় গুলো ভাজ করছিল।তখনই নীল চুপি চুপি হেঁটে যেয়ে পিছন থেকে সোহাকে জড়িয়ে ধরে।
চিৎকার করে বলল,
“-সোহা!
সোহা পিছন ফিরে অবাক হয়।
“-তুই কখন এসেছিস।”
নীল তার হাত থেকে কাপড় গুলো খাটের উপরে রেখে তাকে টেনে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে বললো।
-“মাত্রই এসেছি।
“-বাড়ি সবাই কিছু বলেনি পালিয়ে যাওয়ার জন্য”
“-সেটা কি আর বাদ আছে।সব জামেলা মীমাংসা করেই এখানে এসেছি।”
“-তো কেমন কেটেছে ওখানে।”
-“খুব! খুব! ভালো কেটেছে।”
-“এত ভালো কাটার কারণ কি?ওখানে গিয়ে হিরো কে খুজে পেয়েছিস নাকি ”
তখনই মনে পড়েছে যায় তার সুরওয়ালার কথা।সোহা বলল,
“-কিরে!পেয়েছিস নাকি? নিরবতা কিন্তু সম্মতি লক্ষণ।তাহলে কি আমি ধরে নিব,,,,
-“হ্যাঁ”
নীল জড়িয়ে ধরে বলল,
-“সত্যি। ফাইনালি কাউকে তোর মনে ধরেছে।জিজু নাম কি, থাকে কোথায়, প্রথম দেখা হয়েছে কোথায়। ছবি দেখা।”
খুশিতে গদগদ হয়ে হাজারখানেক প্রশ্ন করে সে।সোহার এত প্রশ্ন শুনে হুমড়ি খাওয়ার অবস্থা নীলের।
-“বাপরে বাপ এক সাথে এত প্রশ্ন। কোনটা ছেড়ে কোনটার আন্সার দেবো।”
-“এক এক করে বলা শুরু করে দেয়।আগে বল নাম কি?
-“জানি না ”
সোহা ভ্রু কঁচকে তাকায়।নীল বলল,
-“সত্যি জানি না আমি ”
গোয়েন্দা মতো নজরদারী করে বলল,
-“সত্যি জানিস না, নাকি আমায় বলবি না।”
-“আমার এমন কোনো কথা আছে যে তোকে বলি নাই।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।নাম জানিস না কিন্তু ছবি বোধ হয় তুলেছিস।”
আবার সেই হতাশার নিশ্বাস ফেলল নীল,
-“জানি না।”
-কি জানি তুই, মনে মানুষ পেয়েছিস কিন্তু নাম ধাম কিছু জানিস না।কিন্তু বাড়ি কোথায় সেটা জানিস। ”
নীল মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।বান্ধবীর এহেম কান্ড খুব রাগ হচ্ছে সোহার।নিজেকে খুব শান্ত করে বলল,
-“কী ভাবে দেখা হয়েছে তোর।”
-“দেখা হয়নি। ”
-” কি বলছিস।দেখা যদি না হয়। তাহলে কিভাবে প্রেমে পড়েছিস।মাথায় কিছু ঢুকছে না।সব গুলে যাচ্ছে আমার।
-“ঠান্ডায় মাথায় আমার কথা শুন, তাহলে বুঝতে পারবি।”
নীলের কথা শুনার জন্য খাটের উপরে পা দুটো জড় করে বসে,
“-হুম বল!”
“-যার প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি তাকে আমি চিনি না।”
এটা বলে থামে সে।সোহা মুখে দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আমি জানি তুই কি ভাবছিস।আমি যাকে চিনি না তাকে কি ভাবে ভালোবাসলাম।সত্যি আমি ও জানি না কি করে ভালোবাসলাম।”
“-হেয়ালি না করে সব ক্লিয়ার কর আগে?”
-“সাজেকে রাতেবেলা সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে ঘুমাতে গেলাম।তখন আমি শুনতে পেলাম একটা মধুর সুর।সুরটা ছিল নেশাধরানোর মত।সে সুরে মাদকতা বিরাজমান করছিল।সেই সুর শুনে আমি কিছুতে ঘুমাতে পারছিলাম না। চটপট করছিলাম বিছানায়।শেষমেশ না পেরে সেই সুরে টানে ছুটে যাই । সুরটা কোথায় থেকে আসছে তা দেখার জন্য সুরে উৎস খুজতে খুজতে বারান্দ পৌঁছায়।ওখানে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে সুর শুনছিলাম। এতটাই ওই সুরে মগ্ন ছিলাম আমি কখন যে সুরটা থেমে গেলো বুঝতে পারিনি।ধ্যান ভাঙার পর সুরওয়ালাকে সেখানে তন্নতন্ন করে খুঁজলাম।কিন্তু ফেলাম না।তারপর হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হলো রুমে।
এটুকু বলে থামল নীল।সোহা বলল,
“-সুরটা কিসের ছিল!বাঁশির!”
“-মাউথ অর্গান।”
-“সেটা আবার কি? ”
“-ওইটার মাধ্যমে মানুষ তার প্রিয়গান তুলে রাখে আগেই তারপর বাজায় ।”
“-ওহ!তারপর কি হলো”
-“সেদিন রাত নির্ঘুম কেটেছিল আমার।পরেদিন রাত সেইম একই কাহিনি।আমি সেই সুরওয়ালাকে খুজতে বের হই।আমি বারান্দা থেকে সেই সুরওয়ালাকে সেখানে একটা স্থানে দোলনায় বসে মাউথ অর্গান বাজাতে দেখেছি।অন্ধকারে তা মুখ দেখা যাচ্ছে না বলে আমি নিচে যাওয়ার জন্য পা বাঁড়াই ঠিক তখনই প্রাচ্য আপু কান্না করতে করতে তার একবন্ধুর রুমে ঢুকছে তার পিছনে আর বাকি বন্ধগুলো ছিল।প্রাচ্য আপুকে এভাবে কান্না করছে কেন?তা জানার জন্য সবার পিছন আমি যাই।সেখানে জামেলা মিটিয়ে যখন সেই স্থানে আসি।তখন দেখি সেই সুরওয়ালা নেই।তাকে সেখানে আমি হন্য হয়ে খুজেছি।তারপর না পেয়ে ফিরত আসতে হলো।সেদিন সারারাত আমি কেঁদেছি।তাকে পাইনি বলে আর কখনো পাবো না সেই জন্য। সেদিন সকালে আমরা সেখান থেকে আসার সাথে সাথে হারিয়ে ফেলেছি তাকে, একবার বলতে পারিনি দুইটারাত তার সুরের টানে ছুটে এসেছি। শুধু একবার তাকে দেখার জন্য।বলতে পারিনি আমি তার সুরে প্রেমে পড়েছি। সেই মধুর সুরওয়ালার প্রেমে পড়েছি আমি।”
তার চোখে কোনো পানি চিকচিক করছে। সোহা বুঝতে পারে সত্যি তার বান্ধবী কষ্ট পাচ্ছে।তাকে ঝাপটে ধরে বলল,
-“দেখিস তার সাথে দেখা হবে তোর খুব শীঘ্রই”
“-তাই যেন হয় সোহা।তাকে যে এই কয়দিনে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি।”
“-তোর এই বান্ধবী তোকে দোয়া করে দিয়েছে।ঠিক একদিন না একদিন তোর সুরওয়ালার সাথে দেখা হবে।”

#চলবে…
@কাউছার স্বর্ণা

স্বপ্নীল ১৬

0

স্বপ্নীল
১৬
রাঙামাটি শহরের প্রধান আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত ব্রিজ।সাধারণত রাঙামাটি গিয়ে এই ঝুলন্ত ব্রিজ না দেখে কেউ ফিরে আসে না।রাঙামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই লেকের একাংশ ৩৩৫ ফুট লম্বা এই ব্রিজটি।পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্পর্ট।এ সেতুকে বলা হয় ‘symbol of Rangamati’।নয়নাভিরাম বহুরঙা এই ঝুলন্ত সেতুটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে দিয়েছে হৃদ্দিক সম্পর্ক।সেতু পারাপারের সময় সৃষ্ট কাঁপুনি নীলকে এনে দিয়েছে ভিন্ন দ্যেতনা।এখানে দাঁড়িয়েই কাপ্তাই হৃদের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে পারবে পাচ্ছে সবাই। কাপ্তাই হৃদে মুগ্ধ হতে বাধ্য সবাই।ওপারে রয়েছে আধিবাসিদের গ্রাম।এবার সকলের মিশন হলো হাতিমাথা ও দেবতারপুকুর।হাতিমাথা যাওয়ার জন্য স্বপ্ন সি এন জি ঠিক করেছে জামতলা পর্যন্ত।চেঙ্গি নদীর ঘাট পর্যন্ত ১৫ টাকা করে নিবে।নৌকায় ৫ টাকা দিয়ে পার হয়ে হাঁটা শুরু করে তারা।অল্প কিছু যাওয়ার পর একটা দোকান পায়। সেখানে সবাই পানি খেয়ে নেয়।যখন তারা হাতিমাথা পৌঁছে যায় তখন খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। এই বৃষ্টির ভিতরেই ১ ঘন্টা ২৫ মিনিট ট্রেকিং শেষে পৌঁছে যায় হাতিমাথা।বৃষ্টি না হলে আরো কম সময় লাগত।২৭৩ সিঁড়ি বেয়ে যখন উপরে উঠল তারা তখন শুরু হয়েছে ঝড়ো বাতাস।এই বাতাসের ভিতরেই সিঁড়ি শেষে আরোও উপরে যাবে তারা ভাবলো।১.৫ফিট পিচ্ছিল রাস্তা দুইপাশে খাদ সাথে বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাস থ্রিলার জন্য আর কি লাগে। উঁচু জায়গা পর্যন্ত উঠছিল তারা।তারপর নেমে আসে।ফিরে আসার পথে সবার দেবতার পুকুর দেখার জন্য যায়।দেবতার পুকুর ঘোরা শেষে খাগড়াছড়ি ফিরে আসে সবাই।তারপর সন্ধায় খাগড়াছড়ি শহরটা একটা চক্কর দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ৯টার বাসে সবাই উঠে পরে বাড়ি ফেরা উদ্দেশ্য।

★★★
সারারাত জার্নি করে সবাই প্রাচ্যদের বাসায় উঠে। দিনের ৩.০০টা বাজে এখন সবাই গভীর ঘুমে আচন্ন। কারো সাড়া শব্দ নেই। কয়েকবার সমুদ্র এসে ঢেকে যায় স্বপ্নদের কে। এই কয়েক রাতের ঘুম দিচ্ছে সবাই আজকে। দিনের এতটা বেঝেছে তাই বাধ্য হয়ে এবার সমুদ্র তাদের উঠাতে আসে।হাতে একমগ পানি আছে। সে জানে তাদেরকে এখন এমনি এমনি ডাকলে উঠবে না।তার বন্ধুদের চোখে মুখে পানির ছিঁটা পড়লে সবাই হুড়মুড় করে উঠবে।পানি ঢালতেই স্বপ্ন বাদে আরদুজন উঠে বসে। ধূসর ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন আর তৃণকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,
-“আরে উঠ তোরা। বৃষ্টি হচ্ছে ভিজে যাচ্ছি আমরা।”
ধূসর কথা শুনে সমুদ্র হাসে।সে আবার পানি ঢালা শুরু করে।ধূসর ধাক্কা খেয়ে তৃণ খাট থেকে পড়ে যায়। ব্যথা কোমর ধরে নিচে থেকে উঠে বলে,
-“কোথায় বৃষ্টি হচ্ছে শালা,আমি দেখি সমুদ্র পানি ঢালছে।”
ধূসর ভালো করে দুহাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে বললো,
-“ও,আমি ভেবেছি,,,,
তার কথা কেঁড়ে নিয়ে তৃণ বললো,
-“রাখ তোর ভাবা ভাবি, আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে কোমরের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছিস। ”
সমুদ্র স্বপ্ন মুখে পানি ঢেলে দিতেই ধড়াম করে উঠে বসে স্বপ্ন।কি হয়েছে মাথা ঢুকছে না। এভাবে উঠাতে মাথা হ্যাং হয়ে গেছে তার। পাক্কা ৫ মিনিট লেগেছে বুঝতে। রাগি দৃষ্টিতে সমুদ্রর দিকে তাকায়।সমুদ্র অভিনয় করে বলে,
-“এভাবে তাকাইস না ভাই, ভয় পাইতেছি। মনে হচ্ছে গিলে খেয়ে ফেলবি।”
-“এভাবে কেউ করে। ”
নিজের হাতের মগটা সেন্টার টেবিলে রেখে বলে
-“কি করব শালা। তোদের অনেক্ষণ যাবত ডাকছি খবর নাই তোদের।তাই বাঁকা পথ ধরতে হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আস সবাই।”
চলে যেতে নিলে আবার দুইকদম পিছিয়ে এসে বলল সে।
-“নাস্তা খাবি নাকি ভাত। ”
স্বপ্ন উঠে ওয়াশরুমে যেতে বললো,
-“নাস্তা খাবো না এখন। আন্টি বল ভাত দিতে।”

ছেলে সবাই খাওয়ার টেবিলে এসে পৌঁছায়।নীল বাদে ওরা সবাই উঠে যায়।প্রাচ্য আর রোদ কে আসতে দেখে নীলকে দেখার জন্য স্বপ্ন তাদের দিকে তাকায়।এইদিক ওইদিক তাকিয়ে ও নীলকে দেখতে পায় না সে। তাদের দেখে সমুদ্র বললো,
-“নীল কোথায়!তাকে যে দেখছি না।”
প্রাচ্য চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
-“এখন ঘুমাচ্ছে।”
-“উঠাবি না ওকে।”
ভাতের একলোকমা মুখে তুলে বলল,
-“ওহ!ভাইয়া।তুমি কি নীল কে চিনো না”
প্রাচ্য পাশে রোদ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে বললো,
-“তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোকে কি আমন্ত্রণ করে খাওয়ার টেবিলে বসাতে হবে।”
রোদ গদগদ করে হেটে যেয়ে ধূসর পাশে বসে।সে কিছুতে বুঝতে পারে না সমুদ্র কেন তার সাথে এমন করে। কারো সাথে আর এমন ব্যবহার করে না।তার সাথেই কেন? সে বুঝে উঠতে পারে না কিছুতেই।
-“সবাই তো হাজির। আই অ্যাম লেট।”
ডাইনিং রুমে আসতে আসতে বলল নীল।তাকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
-“কেমন আছিস বোন আমার।”
-“এখন তো ভাইয়া ভালো আছি।বাট বাড়ি গেলে কি হবে বুঝতে পাচ্ছি না।”
চেয়ার টেনে সমুদ্র পাশে বসে।সমুদ্র বললো,
-” টেনশন করার কোনো দরকার নেই।তুই বাড়ি নেই সেই টেনশনে সবাই হার্টফেল করার অবস্থা।তোকে দেখলে সবাই খুশিতে আহ্লাদ ফেটে পড়বে।”
-“তাই যেন হয় ভাইয়া।”
সমুদ্র সবার উদ্দেশ্য করে বললো,
-“সাজেকে কেমন কাটল তোদের সবার।কি রকম অনুভূতি ফিল করলি। ”
নীল খুব এক্সাইটেড হয়ে বলল।
-“আমি তো সাজেক নিয়ে বলার মত ভাষা খুজে পাচ্ছি না।অনেক মজা করেছি।তুমি সাথে গেলে আরো ভালো হত।

-“কাজে প্রেশার থাকায় আমি যেতেই পারি নি।পরের বার যাবার চেষ্টা করবো।”
রোদ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে আর সমুদ্র কথা শুনছে।তার দিকে তাকানো সাহস নেই।যে কোনো কিছু বলে অপমান করতে তার বাধবে না।মিনমিন করে বলল রোদ।
-“খাটাশ ব্যাটা তুই যাসনি বলে আমি সুন্দর মত আনন্দ করতে পেরেছি।না হলে আমার আনন্দ মাটি হয়ে যেত।
-“রোদ কি কিছু বললি আমায়।”

রোদ চোখ তুলে তাকায় সমুদ্র দিকে। তার কথা শুনতে ফেলে তাকে আজকে আস্তো গিলে ফেলবে।তার পর মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বলল,
-“সমুদ্র আমি তোকে কি বলবো।”
সমুদ্র রাগি দৃষ্টি তাকিয়ে বললো,
-“তুই আমাকে ‘তুই বলে সম্মোধন ‘ করছিস কোন সাহসে।আর আমার নাম ধরে ডাকিস কেন? আমি কি তোর সমবয়সী যার জন্য আমার নাম ধরে ডাকবি।”
সমুদ্র এত জোরে কথা শুনে রোদের সারা শরীর কাঁপুনি দেয়।ভয়ে হাত পা থরথর করে কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। অপমানে তার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।কি এমন বলেছে সে যার জন্য সবার সামনে এভাবে অপমান করছে।
তৃণ মজার ছলে বললো,
-“আরে ভাই থাম।তোর এত জোরে ধমক শুনে হয়তো রোদ ভয়ে প্রেশাব করে দিয়েছে।”
তার এই কথা শুনে।ধূসর হাসি ফেটে পড়ে।স্বপ্ন তাকিয়ে দেখে রোদ কাঁদছে।তাই ওদের ধমক দিয়ে বলল।
-“খাওয়ার টেবিলে কি শুরু করলি। আর সমুদ্র তোকে কেন রোদ নাম ধরে ডাকতে পারবে না।”
সমুদ্র ভাত একলোকমা মুখে তুলে বললো।
-“রোদ হলো প্রাচ্য বেষ্ট ফ্রেন্ড। আমার নয়।সে হিসাবে আমি রোদের বন্ধুর ভাই হই।আর বন্ধুর ভাইয়ের নাম ধরে কেউ ডাকে।তোরা বলল!”
সবাই চুপ।সমুদ্র আবার বলল।
-“আমি শুধু রোদকে তাই মনে করিয়ে দিয়েছি। আমি তার বন্ধু না।যে সে আমায় নাম ধরে বা আমায় ‘তুই ‘বলে সম্মোধন করবে ন।”
প্রাচ্য তার ভাইয়ের উপরের খুব রাগ লাগছে।তার ভাই কেন রোদের সাথে এত বাজে বিহেভিয়ার করে।শান্ত হয়ে বলল,
-“তাহলে তোমায় কি বলে সম্মোধন করা উচিত ভাইয়া।”
খাওয়া শেষ করে পানি খেয়ে হাত মুছে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বুকের সামনে শার্টের বোতাম দুটো খুলে। কলার ঝাঁকিয়ে বলল,
-“কেন? জানে না রোদ।আচ্ছা ও না জানলে তার জন্য আবার বলছি।আমায় আপনি বলে সম্মোধন করবে। আর ভাইয়া বলবে।গড ইট রোদ।”
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বললো,
-“তোরা আয় আমার রুমে।কথা আছে।”
পর পর সবাই খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায়।প্রাচ্য উঠে এসে রোদের পাশে দাঁড়ায়।
সান্ত্বনার সুরে বললো,
-“ভাইয়ার হয়ে আমি তোকে সরি বলছি।তুই জানিস আমার ভাইয়াটা এমন।”
চোখ ঝলঝল করে প্রাচ্য দিকে তাকিয়ে সে বলল,
-“তোর ভাইয়া এমন কেন।সে কেন এমন করে আমার সাথে?সে কেন বুঝে না আমি তাকে ভালোবাসি।সে কি কোনোদিন বুঝতে না আমার ভালোবাসায়।”
নীল বললো,
-“বুঝবে, বুঝবে ভাইয়া তোমার ভালোবাসা তার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।”
নীলের কথায় রোদ মনে সাহস পায়।চোখে পানি মুছে ফেলে।তার ভালো বাসা একদিন না একদিন বুঝতেই হবে সমুদ্রকে।সেই দিনটার জন্য সে অপেক্ষা করবে।অপেক্ষা তাকে করতেই হবে।সে যে এরকম ঘ্যাড়ত্যাড়া সমুদ্রকে ভালোবেসেছে। একটু তো কষ্ট করতেই হবে।

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে নীল।কোলাহলময় শহরটাকে দেখছে সে।রাস্তা যেন গাড়ি গিজগিজ করছে।গাড়ি ছাড়া আর কিছু তার চোখে পড়ে না এই শহরের।এই ঢাকা শহরের সব কিছু ভালো লাগলেই এই একটা জিনিস তার ভালো লাগে না সেটা হলো এই গাড়ির কোলাহল।জাস্ট অসহ্যকর লাগে।কোথায় বের হলে জ্যামে বসে থাকতে হয়। তাই সে ঢাকা আসলে কোথায় ও বের হয় না বেশিভাগ।তার ভালো লাগে গ্রামের সেই হিমহিম শীতল বাতাস। যা শরীর ও মন জুড়িয়ে দেয়।গাছপালাময় সবুজের সমারোহ। নির্মল বাতাস আর এই শহরে দূর্ষিত বাতাসের তার দম আটকিয়ে আসছে।তার ছুটে চলে যেতে মন যাচ্ছে মির্জাপুর। গাছ, পাখির দের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে।এই শহরে পাখিদের আনাগোনা নেই, নেই কোনো বড় বড় গাছ।যা আছে ছাদের সামন্য গার্ডেনে। এই সময় তার খুব মনে পড়ছে মায়ের কথা।দাদুর কথা,সোহার কথা,কাকামণি, কাকি সবাইকে খুব মিস করছে সে।নীল তার কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে ,
-“মেজমা।”
বলে তাকে জড়িয়ে ধরে।সায়লা নীলের মাথা হাত ভুলিয়ে বলল,
-” পাগলী মেয়ের কি মন খারাপ।”
-“একটু খারাপ।”
-“বাড়ি কথা মনে পড়ছে।”
-“হুম”
-“ফোন দিয়ে কথা বলে নেয়।”
-“তামিম ভাইয়া ছাড়া আর কেউ ফোন ধরছে না আমার।এবার সবাই আমার উপরে রাগ করে আছে”
-“রাগ করা কি স্বাভাবিক না মা।তুমি কি এখন ছোট নয় মা।এবার তুমি কোনো ছোটখাটো ব্যপারে পালিয়ে আসোনি।বিয়ের থেকে পালিয়ে এসেছো।এই বিয়ের সাথে তোমার দাদূর সম্মান জড়িয়ে ছিল।মির্জার বাড়ি সম্মান জড়িয়ে ছিল।তাই হয়তো সবাই রেগে আছে।কিন্তু তুমি ফিরে গেলে তারা রাগ করে থাকতে পারবে না।বিশেষ করেই তোমার দাদুর।”

মেজমায়ের কথা গুলো ফেলে দেওয়ার মত নয়।সত্যি তো সে অনেক ভুল করেছে।একটাবার ভাবেনি সে বিয়ে না করলে তার পরিবারের সম্মান কোথায় যেয়ে নামবে। আর তার দাদুর কিভাবে এসব পরিস্থিতি সামলিয়েছে।এবারে জন্য কি সবাই তাকে ক্ষমা করবে।
নীল মুখ তুলে তাকায় মেজমায়ের দিকে,
-“মেজ মা সত্যি আমি এবার অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।”
-“হুম।ভবিষ্যৎ যেন এরকম আর না নয়।তুমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে,বুঝতে শিখেছো।”
-“আমি আর এরকম কিছু করবে না যাতে দাদু কষ্ট পায়।”
-“গুড গার্ল।”

★★★
-“কিছু হলেই এরকম ফ্যানফ্যানি শুরু করছ কেন তুই।”
রোদ বিরক্ত হয়ে বলল।
-“এখন আমি আবার কি করেছি।”
-“তুই কি না করে বেড়াছ।কিছু হলেই চোখে জলের পানি দিয়ে নদী বানিয়ে ফেলিস।”
রোদের খুব ইচ্ছা করছে বলতে। আপনি কেন এভাবে আমায় অপমান করে কাঁদান। তাই জন্য আমার চোখে জল আসে।ভালোবাসার মানুষ যদি এভাবে অবহেলা, অপমান করে তাহলে কি চোখের জল আসবে না।আপনার কারণ তো আমার চোখে জল থাকে।গলা অব্দি আসলে মুখ দিয়ে বের করার সাহস রোদের নেই।সমুদ্র বললো,
-“একদিক দিয়ে ভালো হয়।”
রোদের মনে প্রশ্ন জাগে।তার আগে সমুদ্র বলে উঠে।
-“খরা অভাবে যদি নদীর পানি শুকিয়ে যায়।তাহলে তোর চোখের জল কাজে লাগবে।চোখে পানি দিয়ে খরা অভাব পূরণ করা যাবে তাহলে খরা কবলিত হয়ে দূর্ভিক্ষ দেখা যাবে না।একদিক দিয়ে তোর চোখে পানি সবার উপকার আসবে।কি বলিস তুই!”
রোদ কিছু বলতে যেয়ে থেমে যায়।সে জানে এই বদ রাক্ষসটার সাথে কথায় পেরে উঠবে না সে।তাই কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই সমুদ্র পিছন ডাকে।তাই বাধ্য হয়ে থেমে যেতে হয়।সমুদ্র তার সামনে এসে বলল,
-“জানিস রোদ তোকে এখন কেমন দেখতে লাগছে।”
রোদ ভেবেছে এতদিন পর হলে তাকে তো সমুদ্র চোখে লেগেছে।তাই জানার উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কেমন?
-“রাস্তায় ভিক্ষুক দেখিস।”
রোদ বুঝতে পাচ্ছে না ভিক্ষুক দেখার সাথে তাকে কেমন লাগছে তার সাথে কিসের সম্পর্ক।তাই বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছে।
-“দেখিছি।”
-“তাহলে এটাই দেখেছিস।ভিক্ষুক পাঞ্জাবীতে অনেক তালি থাকে।আর পায়জামা হাটু দিয়ে ছিঁড়া থাকে। নানা ররঙবেরঙ কাপড় দিয়ে তালি দিয়ে তাকে।”
রোদ বিরক্ত হয়ে বলে,
-“আমায় কেন এসব বলছেন আপনি। ”
-“তোকে বলার কারণ আছে”
-“কি কারণ”
-“কারণ তোকে সেই ভিক্ষুক দের মত লাগছে।”
রোদ খুব জোরে চিৎকার করে বলল,
-“কি”
সমুদ্র কানে দুইহাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,
-“আস্তে আস্তে আমার কানের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বি তুই।”
-“কোন দিক দিয়ে আমায় ভিক্ষুকদের মত লাগছে আপনার কাছে।”
-“এই ভিক্ষুকদের মত হাটু ছেঁড়া প্যান্ট পড়ে আছি।তালি -তোলা দিয়ে। যেন তুই সেই ভিক্ষুকদের কাতারে একজন।”
খুব রাগ হচ্ছে রোদের।তার পর ও নিজেকে শান্ত করে সে বলল,
-“এই যে মিস্টার ভাইয়া আপনি কি ভুলে গেছেন এটা হলো ফ্যাশন।”
তার কথা পাত্তা না দিয়ে সমুদ্র বললো
-“টাকার অভাবে যখন তোর বাপে ভালো জামা কাপড় কিনে দিতে পারে না।তাহলে আমায় বলতে পারতি।আমি তোকে বসুন্ধরায় নিয়ে মার্কেট করিয়ে নিয়ে আসতাম।”
রোদের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।সে কি করে এরকম একটা ছেলে কে ভালো বাসতে পারল।যার মন এত নিচু।তার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সমুদ্র একহাজার টাকার দুইটা কচকচে নোট রোদের হাতে গুজিয়ে দিয়ে বললো,
-“শতহোক তুই আমার বোনের বান্ধবী।তোকে কি আর নিজের চোখে সামনে ভিক্ষুকদের মত ছেঁড়া জামা কাপড় পড়তে দেখতে পারি।এই নে দু হাজার টাকা দিলাম।বাড়ি যাওয়ার সময় অন্তত দুই সেট সেলোয়ার কামিজ কিনে নিস।”
এটা বলে সমুদ্র সেখান থেকে প্রস্থান করে।রোদ হা হয়ে তাকিয়ে থাকার ছাড়া কিছু করা ছিলো না।রাগ করে টাকা গুলো মুচড়ামুচড়ি করে গোল করে ফেলে দিতে নিলে মনে পরে যায় তার ভালোবাসা মানুষ এই প্রথম নিজের হাতে তাকে কিছু দিয়েছে।ভালোবেসে না দিলে এটা তার কাছে সমান।দলা মোচড়া খুলে টাকা গুলো খুব যত্ন করে তার পার্সে রেখে দেয়।

@কাউছার স্বর্ণা
(ভুল -ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টি দেখবেন)

স্বপ্নীল ১৫

0

স্বপ্নীল
১৫

-“ভ্যাঁ ভ্যাঁ না করে কান্না থামা।একটু দেখতে দে পা টা আমায়” তৃণ বিরক্তি হয়ে বলে।
-” আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করি, তুই কি করে বুঝবি আমি কেন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করছি।ব্যাথা তো আমি পাইছি।”
এটা বলে আবার ন্যাকা কান্না করতে থাকে। প্রাচ্য’র উপর খুব রাগ লাগছে তৃণ। কিন্তু তা প্রকাশ না করেই তার পা টা টেনে এনে ডান হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ধরে।এবার প্রাচ্য’র দিকে তাকিয়ে জোরে মোচড় দেয়।প্রাচ্য ব্যাথায় আহ্ করে উঠে,
-“মাগো আমার পা টা এই শয়তানটা ভেঙে দিল।আমি আর হাটতে পারবো না।সবাই আমাকে পঙ্গু প্রাচ্য বলবে।”
প্রাচ্য কে এরকম করতে দেখে তৃণ’র ইচ্ছা করছে মাথায় একটা ঠাটিয়ে মারতে।প্রাচ্য পা টেনে নিয়ে আসতে ব্যাথা অনুভব না করাই অবাক হয়।নিজের পায়ে ব্যথার জায়গা হাত দিয়ে দেখে ব্যথা নেই।একবার তৃণ’র দিকে তাকায় একবার পায়ের দিকে।একটু আগে ব্যাথার জন্য পা নাড়াচাড়া করতে পাড়েনি আর এক্ষন সম্পূর্ণ সুস্থ।বিষ্মিত হয়ে তাকায় সে তৃণ দিকে।স্মিত হেসে তৃণ বলল,
-“আমার কাছে জাদু আছে মেডাম।ম্যাজিক করে সারিয়ে দিয়েছি ব্যাথা।”
প্রাচ্য ভেঙচি কাটে।তৃণ বলল,
-“আর কোথায় কোথায় ছিঁলে গেছে দেখা তো।অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলে ভালো হয়ে যাবে।”
ওয়েন্টমেন্ট কেড়ে নিয়ে বলে,
-“অনেক সেবা করেছেন।দয়া করে আর লাগবে না।এখন যেয়ে আপনার টিনা মিনার সেবা করুন।”
-“সব কথা মাঝে ওদের কে টানছিস কেন?
-“ওদের টানবো। একশোবার টানব।তোর কি?”
-“আমার কিছু না।তোর যত ইচ্ছা হবে তত টানবি।এবার শান্ত হয়ে বস।আর ছিঁলে গেছে কোথায় সেটা বল।”
কোমর থেকে টপস একটু উঠিয়ে বলল,
-“এখানে।”
ছিঁলে যাওয়া জায়গা লাল হয়ে গেছে। হাতের মধ্যে ওয়েমেন্ট নিয়ে ছিঁলে যাওয়া জায়গা লাগাতেই জ্বলে উঠে। প্রাচ্য সাথে সাথে চোখে বন্ধ করে ফেলে তৃণ’র অন্য একহাত খামচি দিয়ে ধরে।আলতো হাতে ছিঁলে যাওয়া জায়গা ওষুধ লাগিয়ে দেয়।
-“আর কোথায় আছে?
প্রাচ্য মাথা ঝাঁকায়।তৃণ বলল,
-“কোথায়?
-“পিঠে,কাঁধে আছে।”
তৃণ চোখ যায় টপসের চেইনের দিকে।সেখানে হাত দিলে প্রাচ্য বলে উঠে,
-“কি করছিস? ”
-“কি করছিস দেখতে পাবি।চুপ থাক! কোনো কথা বলবি না।কাজ করতে দে,
চেইন খুলে ফেলে সাদা ধবধবে পিঠটা ফেসে উঠে।পিঠে মাঝখানের মেরুদণ্ড পাশেই একটা লাল তিলে উপরে চোখ আটকে যায় তার।হাত দিয়ে ছুয়ে দেখে।তারপর যেন মনে হচ্ছে হাত দিলে ছুঁয়ে তার মন ভরবে না ঠোঁট দিয়ে ছুলে মন ভরবে। কিন্ত প্রাচ্যর পিঠে ঠোঁটে ছুয়ালে তাকে ফাসি দিবে।আগের বার সব বন্ধুদের বলে দিয়ে তার প্রেস্টিজ পাংচার করে দিয়েছে। নিজেকে সংযত করেই ওষুধ লাগাতে থাকে। ওষুধ লাগানো শেষ হলেই প্রাচ্য দিকে তাকায় সে দেখে চোখবন্ধ করে রেখেছে।এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাল তিলটাই ঠোঁট ছোঁয়ায়।পিঠে শীতল অনুভব করে প্রাচ্য তাই চোখ খুলে বলে,
-“কি করেছিস এখন! ”
-“কি আর করব ওষুধ লাগিয়েছি।
খাটের উপর থেকে উঠে।টপসের চেইন লাগাতে লাগাতে বলল,
-“আমার মনে হয়েছে তুই আমার পিঠে ঠোঁট ছোঁয়ালি। ”
এই রে বুঝে গেলো,এখন কি করব। যাই বলি না কেন, সত্যি শিকার করা যাবে না।
-” ইদানীং তোর যা তা মনে হচ্ছে।আমি ঠোঁট ছোঁয়াতে যাবো কেন।ওইদিন আমার শিক্ষা হয়েছে।”
-“হলেই তো ভালো। এখন যা।”

সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।ছেলেরা তিনজন একসাথে,মেয়েরা তিনজন একসাথে ঘুমিয়েছ। নীলের কিছুতে ঘুম আসছে না। বিছানার এপাশ অপাশ করতে থাকে।ঘুম আসছে না দেখে উঠে বসে।নীলকে উঠতে দেখে রোদ উঠে বলে,
-“ঘুম আসছে না।”
অনেক চুপ থেকে তার পর উত্তর দেয়,
-“না।”
-“বাড়ি জন্য কি মন খারাপ।”
মন খারাপ।সে তো ওই সুরওয়ালা জন্য।দুইরাত সাজেকে ছিলাম। দুটো রাত ঘুমেতে গেলেই সেই সুর বেজে উঠত।সেই সুরের টানে ছুটে যেত।কিন্তু আজকে সেই সুর শুনছি না। হারিয়ে গেলো সেই সুরওয়ালা। খুঁজে কি পাবে তাকে । নিজের মনকে সে আবার বুঝ দিয়ে বলে, পাবে সে। তার মন বলছে খুজে পাবে।
-“কিছু কি ভাবছ নীল।”
রোদের কথা নীল তার দিকে তাকায়। মুচকি হেসে বলল,
-“না। মন খারাপ নয়।ঘুম আসছে না আজকে।
-“মেবি তিনজন এক বেড শেয়ার করছি। তাই বোধ হয়।”
নীলের খুব মন খারাপ। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।রোদের কথায় সুর মিলিয়ে বলল,
-“মনে হয়।”
-“আজকে রাতে কষ্ট করে শেয়ার কর।কালকে রাতে আমরা ঢাকা পৌঁছে যাবো।ঘুমিয়ে পড়। গুড নাইট। ”
-“গুড নাইট। ”
বলে সে ব্যাঙ্কেট টেনে শুয়ে পড়ে।
★★★

সবাই বের হয় তৈদু ছড়া ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্য। প্রাচ্য আর তৃণ বাদে সবাই যায়।কালকে রাতে হালকা একটু জ্বর এসেছিল তার গায়ে। সেটা শুনে তৃণ তাকে যেতে দেয় নি।তাই মুখ ভার করে খাটের উপরে দুইহাটু জড়ো করে বসে আছে।তৃণ তার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছে খাওয়ার জন্য। সে কিছুতে খাবে না বলে দিয়েছে। তৃণ তার দিকে দুই মিনিট তাকিয়ে তার পাশে এসে বোঝানোর জন্য বসে।

-“প্লিজ প্রাচ্য নাস্তা করে নেয়। নাস্তা না খেলে সকালের ওষুধ খেতে পারবি না। ওষুধ না খেলে তো জ্বর কমবে না।রাতে অনেক জার্নি করতে হবে।এই শরীর
রে জার্নি করতে কস্ট হবে তোর।”

এখন ও কিছু না বলে আগের অবস্থা আছে।তৃণ এবার প্রাচ্য হাত নিজের হাতের মুঠো নিয়ে বললো,
-“আমি তোর ভালো জন্য বলছি।
নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে প্রাচ্য বললো,
-“আমার তেমন কোনো বেশি জ্বর হয়নি। যার জন্য ওষুধ গিলতে হবে।তোর জন্য ঝর্ণা দেখাটা আমার মিস হয়ে গেছে।”
-“পরে বার আমি তোকে তৈদুছড়া ঝর্ণা দেখার জন্য নিজ দায়িত্ব নিয়ে আসব।
-“যার ঢাকা গেলে ফ্রেন্ডের খোঁজ নেওয়ার সময় থাকে না। সে আবার নিজ দায়িত্ব আমায় নিয়ে আসবে। ভাবা যায় এ গুলা।”
এটা বলে ঠাস করে বাথরুমের দরজা আটকায়। তৃণ বুঝতে পারে এত জোরে দরজা লাগানোর কারণ কি?তার রাগ সব বেচারা দরজা উপরে গিয়ে ঝাড়ছে।

খাগড়াছড়ি জেলারর দিঘিনাল উপজেলায়য় সবুজ পাহাড় আর বুনো জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত নয়নাভিরাম ঝর্ণার দুটির নাম তৈদুছড়াঝর্ণা। ত্রিপুরা ভাষায় তৈদু মানে পানি দরজা আর ছড়া মানে ঝর্ণা। অসাধারণ সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রতা এই ঝর্ণা দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।খাগড়াছড়িতে যে কয়টা দার্শনিক স্থান রয়েছে তৈদুছড়া তাদের মধ্যে অন্যতম। জঙ্গলের মধ্যে আকাঁবাঁকা পাহাড়ের ভাঁজ দিয়ে বয়ে চলে তৈদুছড়া ঝর্ণার জল।শীতল স্বচ্ছ টলমলে জলের কলকল করে ছুটে চলার শব্দে মুখরিত হয় চারপাশ।৩০০ফুট উঁচু পাহাড় হতে গড়িয়ে পড়া পানি এসে পড়ে পাথুরে ভূমিতে।অন্য সকল ঝর্ণার মত এর পানি সরাসরি উপর হতে নিচে পড়ে না।পাহাড়ের গাঁয়ের সিঁড়ির মত তৈরী হওয়া পাথুরে ধাপ গুলো অতিক্রম করে নিচে পড়ে তৈদুছড়া ঝর্ণার পানি।

তৈদুছড়া ঝর্ণার ডান পাশ দিয়ে পাহাড়ের উপরব রয়েছে আরেকটি ঝর্ণা যার নাম থাংঝাং ঝর্ণা। এখানে প্রায় ৮০-৮৫ ডিগ্রি এঙ্গেলের ঢাল বেয়ে ১০০ফুট উপরে উঠতে হবে। উপরে উঠলে প্রথমে চোখে পড়বে ঝর্ণার মুখ যেখান থেকে তৈদুছড়া ঝর্নার পানি পড়ছে। থাংঝাং ঝর্ণা হতে ঝিরি পথে পানি আসছে এখানে। ঝিরিপথ ধরে আঁধাঘন্টা হাঁটলে পরে পৌঁছানো যায় থাংঝাং ঝর্ণাটিতে। এই চলার পথটি যেমন কষ্টকর তেমনই রোমাঞ্চকর ও সুন্দর হয় প্রিয়মানুষ সাথে থাকলে।উপর থেকে প্রচন্ড বেগে পানি নামছে এখানে।এই পানি বেগ ঠেলে বরাবরই হাঁটতে হয় সবাইকে। ডানে বায়ে যেখানে পানি স্রোত কম হয় সেখানে শ্যাওলা জমেছে। একটুতেই পা পিছলে যায় স্বপ্ন’র।
স্বপ্ন ধূসরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“ধূসর, রোদের হাত আঁকড়ে ধরে হাট না হলে পড়ে যাবে সে।আমি নীলকে সামলাছি।”
-” আমি নিজেই যেন পড়ে যাবো বোধ হয়।রোদ কি আর সামলাবো।”
-“চেষ্টা কর হাঁটার জন্য।”
স্বপ্ন নীলের হাত নিজের হাতের মুঠোবন্দী করে পা টিপে টিপে হাঁটছে অনেক সাবধানে। মাঝে মাঝে এখানে পানির স্রোত খুব বেশি যে ধাক্কা দিয়ে নিচে নিয়ে যেতে চায়। একবার পিছলে গেলে কয়েকশ হাত দূরে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। নীল পড়ে যেতে নিলে স্বপ্ন তাকে সামলাতে যেয়ে দুজন মিলে পড়ে যায় অনেক দূরে পানির স্রোতে।তাদেরকে পড়ে যেতে দেখে ধূসর রোদ কে ছেড়ে স্বপ্ন স্বপ্ন বলে চিৎকার করে আর রোদ পানির স্রোতের ধাক্কা সামলাতে না পেরে পা পিছলে পড়ে যায়। ধূসর দেখে রোদ পড়ে যেতেছে তাকে আকঁড়ে ধরতে যেয়ে সে পড়ে যায়। স্বপ্ন একহাত দিয়ে নিজের বুকে আঁগলে ধরেছে নীলকে যাতে পাথরে সাথে আঘাত না খায়।অন্যহাত দিয়ে পাথর আকঁড়ে ধরার চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুতে পাড়ছে না।তাই দুজন মিলে স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। দুজন ঘোরাতে ঘোরাতে পাথর সাথে ধাক্কা লেগে আটকে যায়। দুহাত ঝাপটে ধরে আছে নীলকে।নীল ভয়ে স্বপ্ন’র শার্ট আকঁড়ে ধরে আছে।তারপর ঘোরাতে ঘোরাতে রোদ আর ধূসর পৌঁছায়।রোদের হাত পা ছিঁলে যায় পাথরে ঘোঁষায়। ধূসর উঠে বসে।বিরক্তি সুরে বললো,
-“মন চাচ্ছে মাথা কয়েক গা মারতে।”
রোদ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
-“আমি কি করেছি।”
-“কি করেছিস নি তুই। তুই পড়েলি কি ভাবে।তুই না পড়লে আমি ও পড়তাম না।
-“আমি কি ইচ্ছা করে পড়েছি।এত স্রোতে যে কেউ পড়ে যাবে।”
স্বপ্ন বললো,
-“থাম তোরা!এখন চল।
রোদ উপর দিকে তাকায়। আগের জায়গা থেকে তার অনেক দূরে আছে। এখন আবার এত পথ হাঁটতে হবে। কেন যে পড়ে যেত গেলো।
-“এত পথ এখন আবার হাঁটতে হবে।”
ধূসর উঠে দাঁড়ায়। সে বললো,
-“পড়ার সময় মনে ছিলো না।”
স্বপ্ন পিছন নীলের দিকে তাকায়।তার শরীর কোনো ক্লান্ত নেই। সে চার পাশ মুগ্ধ হয়ে দেখছে।স্বপর চোখ যায় নীলের কনুই দিকে। পাথরে ঘোঁষা খেয়ে চাড়মা ছিঁলে গেছে।সে নীলের পাশে এসে দাঁড়ায়। বললো,
-“তোমার হাত ছিঁলে গেছে তো দেখি।
-” হুম, একটু!”
– রিসোর্ট গিয়ে ওষুধ লাগিয়ে নিও।”
-“হুম।”

এখান থেকে আরো উপরে উঠতে হবে। চলার পথে পাড়ি দিতে হবে বড় বড় পাথর আর কোমর সমান পানি। অতপর পেয়ে যায় তারা দ্বিতীয় তৈদুছড়াঝর্ণা।অপূর্ব অসাধারণ আর ননয়নাভিরাম সে ঝর্ণা। এটা এতই দৃষ্টিনন্দন আর ব্যতিক্রম কারো আর তড় সইবে না।ঝর্ণার নিচে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঝর্ণাটি প্রায় ৮০ ফুট উঁচু। ঝর্ণার পানি এসে সরাসরি যেখানে পড়ছে। সেখানে সিঁড়ির মত অনেক গুলো পাথুরের ধাপ রয়েছে।ধাপগুলো বেয়ে পানি নিচে গড়িয়ে পড়ছে। ধাপগুলোতে দাঁড়িয়ে অনায়েসেই গোসলের কাজটি সেরে নেয় তারা। দীর্ঘ ক্লান্তকর হাটার কষ্ট মুহুর্তেই ধুয়ে যাবে ঝর্ণার জলে।ঝর্ণার জলের শীতল পরশ সবাইকে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে।

চলবে
#কাউছার স্বর্ণা
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

স্বপ্নীল ১৪

0

স্বপ্নীল
১৪

সবাই হ্যালিপ্যাডে দাঁড়িয়ে আছে।সূর্যোদয় হওয়ার অপেক্ষা। চারদিকে শো শো বাতাসের শব্দ। সামনের পাহাড় গুলো সাদা মেঘ ডুবে যাচ্ছে খুব দ্রুত।মেঘগুলো কে তুলোর পাহাড় মনে হবে।সূর্য উঠছে এবার।খুব আয়োজন করে।সাদা মেঘের ভিতর দিয়ে।আলোর রেখায় সাদা মেঘ গুলো চিক চিক করছে।সূর্য মেঘের উপরে উঠে গেলো। আর পুরো মেঘ ছড়িয়ে গেলো তাদের পাশে।এত সৌন্দর্য! নীল বিশ্বাস করতে পারতো না, না দেখলে।পুরো সময়টা চুপ করে বসে দেখা ছাড়া আর কোনো কথা আপনার মুখে আসবে না।

সূর্য উঠে গেছে তাই সবাইকে ফিরে আসতে হবে রিসোর্ট। নাস্তা করে ফিরতে হবে।সকাল ১০টার মধ্যেই চান্দের গাড়ি ছাড়বে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্য। ব্যাগ গুছিয়ে চান্দের গাড়িতে উঠতে সবার একটু খারাপ লেখেছে।সাজেকের দুপুর, সাজেকের বিকেল,সাজেকের পূর্নিমার রাত।কংলাক পাহাড়ের স্মৃতি সবাইকে ফিরে যাওয়ার পুরো সময় টাকে সবাইকে বিষন্ন করে তুলেছে।এসব চেয়ে নীলের একটা স্মৃতি তারা করবে তাকে।আর সেই স্মৃতি হলো মধ্যরাতের মাউথ অর্গানের সেই সুরওয়ালা। তার খুব কান্না পাচ্ছে। তার সুরওয়ালা কে একবার দুইনয়ন ভরে দেখতে ফেলে না। আর কখনো দেখা হবে কি জানে না সে।কিন্ত তার মন বলছে অবশ্যই কোনো ভাবে তার সুরওয়ালা সাথে দেখা হবে।কিন্তু ব্রেন বলছে, কিভাবে সম্ভব? সে তো সুরওয়ালাকে চেনে না জানে না।
এই জায়গাটা ছেড়ে যেত তার খুব কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছা করছে এখানে থেকে যেত।এখানে থেকে তার সুরওয়ালাকে খুজে বের করে বাড়ি ফিরবে।

ফেরার পথে সেনাবাহিনীর চেকপোস্টের সামনে গাড়ি রেখে সবাই কিছুক্ষন ঘুরে আসল স্টোন গার্ডেন থেকে।ছোট একটা জায়গা নিয়ে তৈরী করা স্টোন গার্ডেন।ওখানে দেখার মতন মূলত রয়েছ ছোট একটি ব্রিজ ও বড় একটি দোলনা।তবে সবার কাছে ব্রিজ থেকে দোলনা টা বেশি ভালো লেগেছে,পাহাড়ের গাঁ ঘেষে তৈরী করা হয়েছে যার ফলে, ওখানে চড়ার পর ভালো একটি অনুভূতি কাজ করে।তবে ওখানে বসার পর যখন দোলনাটি সামনে যায় তখন খুব ভয় লাগে সবার” মনে হয় এই বুঝি সামনে পাহাড়ের নিচে পড়ি যাচ্ছে”।

গার্ডেন থেকে বের হয়ে গাড়িতে করে আবার যাত্রা শুরু করে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্য। আবার সেই পুরানো পথ আকাঁবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা।প্রচণ্ড রোদের সাথে গা ভাসিয়ে চলা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়।দুটি চেক পোস্ট সহকারে দিঘিনালা পৌছাই দুপুর দুইটায়।গাড়ি থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে দুপুরে খাবার খেয়ে নেয় তারা দিঘিনাল বাজারে।খাবার শেষ করে যাত্রা শুরু করে রিসাং ঝর্না দেখার জন্য।

খাগড়াছড়ি জেলায় রাঙামাটি উপজেলার সাপমারা গ্রামে অবস্থিত একটি পাহাড়ি ঝর্ণা।খাগড়াছড়ি শহর থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ১০ কি.মি.। এই ঝর্ণার প্রায় উচ্চতা ১০০ফুট।রিসাং শব্দটি এসেছে খাগড়াছড়ির মারমা সসম্প্রদায়ের ভাষা থেকে।মারমা ভাষায় রিং শব্দের অর্থ পানি আর ছাং এর অর্থ উঁচু স্থান হতে কোনো কিছু গড়িয়ে পড়াকে বুঝায়। অর্থাৎ রিসাং শব্দ দ্বারা উঁচু স্থান হতে জলরাশি গড়িয়ে পড়াকে বুঝায়।এর অপর নাম তেরাং তৈকালাই।

খাগড়াছড়ি জেলায় সদর ১১কি.মি. আর রাঙামাটি উপজেলায় ১০কি.মি. দুরুত্বে খাগড়াছড়ি -ঢাকামূল সড়ক হতে আর ১কি.মি দক্ষিণে রিসাং ঝর্ণা অবস্থিত। মূল সড়ক থেকে পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে,ঝর্ণার পথে ২৩৫ ধাপের সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয়।বর্ষাকালে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ঝর্ণার শব্দ শুনা যায়।উঁচু পাহাড়ের গাঁ ঘেঁষে যেতে যেতে যে কার দৃষ্টি আটকে যাবে পাহাড়ি সবুজ সমারোহ।

-“এই ঝর্ণাটি কত সালে আবিষ্কৃত হয় জানা যায়।”
নীল এরকম প্রশ্ন শুনে সবাই দাঁড়িয়ে যায়। ধূসর ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,
-“তুমি কি এই ঝর্ণার ইতিহাস জানতে এসেছো এখানে।ইতিহাস নিয়ে পড়ছো না কি
-“তা, না,
ধূসর কিছু বলতে নিলে প্রাচ্য তাকে থামিয়ে বলে,
-” নীলের সব বিষয় একটু আগ্রহ বেশি।তাই জানতে চেয়েছে।।
তারপর প্রাচ্যকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“আনুমানিক ১৯৯৩-৯৪ সালে এই প্রাকৃতিক ঝর্ণাটি আবিষ্কৃত হয় বলে জানা যায়,জুম চাষের সুবাদে ঝর্নাটি সবার নজরে আসে।”
নীল ছোট করে বলে,
-“ও”

-“দ্রুত পা চালিয়ে আস”।স্বপ্ন তাড়া দিয়ে বলে সবাইকে।

রিসাং ঝর্ণা যাওয়ার পথে ট্রেকিং সময় চোখে পড়ে রাস্তা দুই পাশে সবুজের সমারোহ।দুইপাশে নাম না জানা অচেনা অনেক গাছ রয়েছে।তার মাঝখান দিয়ে চিকন একটা রাস্তা দিয়ে সবাই হেঁটে যাচ্ছে।তারপর সামনে পড়ে সিঁড়ি।২৩৫সিঁধি অতিক্রম করে তারা পৌঁছে যায় রিসাং ঝর্না। এত গুলো সিঁড়ি অতিক্রম করে সবাই হাঁফিয়ে যায়। ঝর্ণা দেখে সেই কষ্ট দূর হয়ে যায়।নীল ছুটে চলে যায় ঝর্ণার কাছে।সবাই তাকে পিছু ডেকে বলে সামধানে যেতে।কারণ এখানে বর্ষাকালে জায়গাটা পিচ্ছিল থাকে।
১০০ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ছে ঝর্নার জলধারা।ঝর্ণার সেই জলধারা নিচে দাঁড়িয়ে আছে নীল।শীতল পানিতে এত ক্ষন ট্রেকিং করা সব ক্লান্তি দূর করছে। পাহাড়ের মাঝে ঝর্ণা দেখে দেখে সব ক্লান্তি যেন দূর হয়ে গেছে। তার কষ্ট যেন সফল হয়েছে।পানি গতি পথ ঢালু হওয়ায় প্রাকৃতিক ওয়াটার স্লাইডিং – এর সৃষ্টি হয়েছে,যা এই ঝর্ণার প্রথম আকর্ষণ। শুধুই ঝর্ণা টি নয়,ঝর্ণার অভিমুখ সমগ্রযাত্রা পথটা দারুণ

রোমাঞ্চকর।ঝর্ণার পথে পাহাড়ের ঢালু রাস্তা,আর সিঁড়ি এবংচারদিকের সবুজের সমারোহ বেশ আকর্ষণীয়।

বৃষ্টি ছিল না তারপরে ও যে পরিমান পানি ছিল তাতে নীল ভালোভাবে অনুভব করা যাচ্ছে বৃষ্টির সময় কি পরিমাণ পানি হতে পারে এখানে।ঝর্ণার পানিতে সবাই গা ভাসিয়ে দিয়ে শরীর কে শীতল করছে।নীল সবাইকে পানি ছিটাচ্ছে। পানিতে খেলা করছে। কেউ তার এই ছেলেমানুষি গুলো অপরুপ ভাবে তাকিয়ে আনন্দ উপভোগ করছে।নীলকে দেখে স্বপ্নর মনে ছন্দের শব্দ ঝট বেঁধেছে।

“তোমার শরীর ভিজিয়ে দিবে ঝর্ণার জল,স্রোতধারা
উছলে উঠা আবেগ এসে করবে তোমায় আত্নহারা
তোমার কাছে ছুটবো আমি এক নিমিষে ডুব সাঁতারে
চতুর্দিকে আলোক শিখা ছুটবেই এই পাথারে,

নীল পানির ছিঁটা মারে স্বপ্ন মুখে তাতে তার ধ্যান ভেঙে যেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মাথার চুল হাতড়াতে থাকে।কিছক্ষন পর চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নীল হাসছে।সেই পাগল করা হাসি যেন তা বুকে এসে লাগছে।তাতে যেন বুকের বাঁ পাশ টা চিন চিন করে উঠে।

ঝর্ণা দেখা শেষ করে সবাই আবার গাড়িতে চড়ে বসে।কারণ এখন তাদের দুইটো জায়গা ঘুরে দেখা বাকি আছে।

★★★
এদিকে পশ্চিম আকাশে সুর্য মামা হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের মাঝে।চারপাশে অন্ধকার হতে শুরু করেছে।মনে হচ্ছে কিছুক্ষণে মধ্যে দিনের আলো নিভে যাবে।ইতিমধ্যে চলে আসল খাগড়াছড়ি শহরের আরেক পরিচিত জায়গা তারেং।তারেং হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেখান থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহর কে দেখা যায়।তারেং দেখে খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড পাড়া ভালোভাবে দেখা যায়।উপর থেকে নিচের মানুষ গুলো দেখা যায় ক্ষুদ্র পিপালিকার মত। সন্ধ্যার আলো নিভে যাচ্ছে আর ঝিঝি পোকার আলোর মত দেখা যাচ্ছে দূরের এই শহরে লাইট গুলো।তারেং দেখে বেরিয়ে সবাই চলে যায় আলুটিলা দেখতে। অপরুপ বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা। এনৈস্বর্গিক ভরপুর পর্যটন সম্ভাবনাময় ওপাহাড়ের রানি খ্যাত পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় পর্যটন স্পর্ট আলুটিলা গুহা।পাহাড়বাসিদের কাছে যেমনই পরিচিত তেমনই দেশ-বিদেশীদের পর্যটক কাছে শতবছরের বটমূল ও আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র,রহস্যময় গুহার কারণে ‘আলুটিলা’খুব পরিচিত।
খাগড়াছড়ি শহর হতে প্রায় ৮ কি.মি পশ্চিমে মাটিরাঙা উপজেলায় আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে একটি রহস্যময় গুহা।স্থানীয় একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা।তবে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত বলে পর্যটকরা একে আলুটিলা গুহা নামে চিনে।এটি খাগড়াছড়ির একটি নামকরা পর্যটন কেন্দ্র।এটি একটি চমৎকার পিকনিক স্পর্ট।তাই এখানে সারাবছর ভিড় লেগে যায়।এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়, যা হৃদয় ছুয়ে যায়।আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সব চেয়ে উঁচু পর্বত।নামে এটি টিলা হলে ও মূলত এটি একটি পর্বতশ্রেণী। আলুটিলার পূর্ব নাম ছিল আরাবারী পর্বত।এর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্র সমতল হতে প্রায় ৩০০০ ফুট।আকাশ, পাহাড় আর মেঘের মিতালী এখানে মায়াবী আবহ তৈরী করে।আলুটিলা রহস্যময় সুগঙ্গে যেতে হলে প্রথমই সবাইকে পর্যটন কেন্দ্রের টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। ফটেকের দুইপাশে দুটি শত বর্ষী বট বৃক্ষ আছে যা সবাইকে স্বাগত জানায়। গুহার ভিতরে সূর্যের আলো ভিতরে যেতে পারে না তাই যাবার পূর্বে মশালের ব্যবস্থা করে নেয় স্বপ্ন।যাতে ভিতরে কোনো অসুবিধা না হয়। এই সুউচ্চ পর্বতের সর্পিল আকারে আকাঁবাকাঁ রাস্তার দু’ধারে সবুজ বনাঞ্চল সারি সারি উঁচু নিচু পাহাড় আর লুকিয়ে থাকা মেঘ যা সবার মন কে চুরি করে নিয়েছে।রাস্তা দিয়ে মিনিট খানেক হাঁটলেই চোখ পড় বে একটি সুরু পাহাড়ি পথ।পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে গেছে এই পথটি।।এই পথটি বেয়ে নিচে নামলে চোখ পড়বে একটি ছোট ঝর্ণায়।ঝর্ণার পানি নেমে যাচ্ছে ঝিরি বরাবর। তবে এখানে পাহাড় লোকজন ঝর্ণার পানি আটকে রাখার জন্য বাঁধ দিয়েছে।তারা এই পানি খাবার ও অন্যান্য কাজ ব্যবহার করে থাকে।পাকা রাস্তা শেষ হয়েছে এবার সবাইকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে।প্রায় ৩৫০টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে পরে পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত সেই আলুটিলা গুহা।আলুটিলা গুহা যাওয়ার জন্য আগে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে হতো গুহা মুখে।কিন্তু এখন বাংলাদেশ পর্যটন কেন্দ্র কর্পোরেশন একটি পাকা রাস্তা করে দিয়েছে।যার ফলে খুব সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় গুহা মুখে।
এটি একেবারেই পাথুরে গুহা,তাই খুব সামধানে পা ফেলে সামনে এগুতে হয়।কারণ সুড়ঙ্গ ভিতরে কোনো আলো নেই। সুরঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল ও পাথুরে। এর তলদেশে ছোট একটি ঝর্ণা প্রবহমান। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূ-গর্ভস্থ টানেলের মত যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটির উচ্চতা মাঝে মাঝে কম হওয়া নতজানু হয়ে হেঁটে যেতে হয়। নীল মশাল হাতে নিচে হেঁটে যাচ্ছে সে উচ্চতা দিকে খেয়াল না রেখে এতে যাচ্ছিল বেখেয়ালে মাথা বাড়ি খেতে নীলে স্বপ্ন তার মাথার উপর দিয়ে হাত রেখে দেয়।তার মাথা গিয়ে স্বপ্ন হাতে ঠেকে।সে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে স্বপ্ন।
-“খেয়াল করে হাঁটবে তো। যেখানে উচ্চতা কম যেখানে নতজানু হয়ে হাঁটবে।
প্রাচ্য বলতে থাকে,
-“এক্ষুনি তো একটা বিপদ ঘটিয়ে ফেলতি।”
এটা বলে সামনে ঘুরে হাঁটতে নিলে পা ফসকে পড়ে যায়। ব্যাথা ‘আহ্’ করে ঊঠে । সবাই হেঁটে তার পাশে যায়।তৃণ বার বার তাকে উঠানো চেষ্টা করে কিন্তু ব্যথা কুঁকড়ে উঠে।
-“দেখে হাটবি না “।
তৃণ ধমক দিয়ে উঠে।স্বপ্ন তার ঘাড়ে হাত রেখে শান্ত হতে বলে।প্রাচ্য উদ্দেশ্য বলে,
-“ব্যাথা কোথায় পেয়েছিস ”
প্রাচ্য কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
-” পা ব্যথা করছে,অনেক জায়গা ছিঁড়ে গেছে।”
এটা বলে হাত কনুই দেখায়।যা পাথরে সাথে লেগে ছিঁড়ে গেছে।তৃণ প্রাচ্য পায়ে হাত দিলে প্রাচ্য হাত সরিয়ে ফেলে।তৃণ বুঝতে পারে কালকে রাতের ঘটনার জন্য এখনকার ন বোধ হয় প্রাচ্য রেগে আছে।তাই শান্ত কন্ঠ বলে,
-“দেখে শুনে হাঁটলে এমন হত না।”
-” হাঁটতে পারবি তো। ” স্বপ্ন বলল
প্রাচ্য উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করতে নিলে ব্যাথা কুকঁড়ে যায়।তাই আবার বসে পড়ে।ব্যাথাতুর কাতর হয়ে বলে,
-“বোধ হয় আমার পা টা মোচকে গেছে।এখন আমি হাঁটবো কি করে?”
ধুসর শান্ত্বনা দিয়ে বলে,
-“আমরা তিনজন থাকতে তোর এত চিন্তা কিসের। আমাদের মধ্যে কেউ একজন তোকে কোলে করে নিয়ে যাবে।”
তৃণ বলে উঠে,
-“আমি নিয়ে যাবো।”
প্রাচ্য আপত্তি জানিয়ে বলে,
-“আমি কিছুতে তৃণ কোলে করে যাবো না।ধূসর তুই আমার কোলে নেয় তো।”

এটা বলে ধূসর দিলে হাত বাড়িয়ে দেয় সে।ধূসর কোলে নিতে গেলে তাকে সরিয়ে প্রাচ্য কোলে তুলে হাঁটা ধরে গুহার ভিতরে তৃণ। আকস্মিক এমন করবে তৃণ প্রাচ্য বুঝতে পারেনি।প্রথম তৃণ ঘাড় খামচিয়ে ধরে প্রাচ্য তাকে কোলে তোলার জন্য।তারপর হয়রান হয়ে থেমে যায়।

পা ফসকে গেলে আহত হতে হবে। তবে অন্য কোনো ভয় নেই। গুহাটি একে বারেই নিরাপদ। আলুটিলার এই মাতাই হাকড় দেবতা গুহা সত্যই প্রকৃতি একটি আশ্চর্য খেয়াল।গুহাটির ভিতরে জায়গা জায়গা পানি জমে আছে, রয়েছে বড় বড় পাথর। গুহাটির এই পাশ দিয়ে ঢুকে ওই পাশ দিয়ে বের হতে সময় লাগে ১০-১৫মিনিট মত।

চলবে…
# Kawsar_sorna

স্বপ্নীল ১৩

0

স্বপ্নীল
১৩

“কি জানি কি মন্ত্র দিয়া জাদু করিল,,,সোনাবন্ধে!
সোনাবন্ধে আমারে পাগল করিলো,
সোনাবন্ধে আমারে দিওয়ানা বানালো

ওই গানটার মাউথ অর্গানের সুরে বাজছে। নীল উইন্ডোর পাশে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছিল। হঠাৎ করে মাউথ অর্গানে গানটার সুর শুনতে পায়। গানের সুরে যেন তাকে ডাকছে।বার বার মনে হচ্ছে এই সুরে পাগল করে দিচ্ছে তাকে। কি আছে এই সুরটায়।তাকে কেন এত টানে,সে কি এই সুরওয়ালা এত মনোমুগ্ধকর সুরের প্রেমে পড়েছে।হয়ত পড়েছে।না হলে কেন তার মনে ভিতরে এত আনচান আনচান করছে। আর দেরী করা যাবে না, তাহলে কালকের মত আবার সেই সুরওয়ালা কে মিস করব।

সুরওয়ালাকে খুঁজতে সে বের হয়ে যায়।তাকে বের হতে দেখে প্রাচ্য পিছন থেকে অনেকবার ডাকে কিন্তু সে যে এতই সুরে প্রেমে মগ্ন ছিল প্রাচ্য ডাক তার কান অব্দি পৌঁছায়নি।

★★★
প্রাচ্য রুমে তৃণ আসে প্রাচ্যর পাওয়ার ব্যাংক টা নেওয়ার জন্য।সে রুমে এসে দেখে প্রাচ্য মাত্র গোসল করে বের হয়েছে।ভেজা চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে আয়নার সামনে যায়।প্রাচ্য আয়নার ভিতরে তৃণ দেখে তার দিকে ফিরে বলে,
-“এতরাতে তুই আমার রুমে কেন??”
তৃণ কোনো কথা না বলে প্রাচ্যর দিকে এগিয়ে যায়।প্রাচ্য ভেজা চুল থেকে পানি পড়ছে টুপটুপ করে। নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সে পানি নিজের হাতে নিচ্ছে।তা দেখে প্রাচ্য বলে উঠে,
-“করছিস কি তুই?”
তৃণ হুস করে একটা শব্দ করে প্রাচ্যর ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল রাখে।সাথে সাথে প্রাচ্যর সর্ব
অঙ্গ কেঁপে উঠে,হাতের থেকে তোয়ালে পড়ে যায়।তার পিঠ আয়নায় ঠেকে যায়।তৃণ একহাত আয়নায় রেখে আরেক হাত প্রাচ্য’র চুলের পানি নিয়ে খেলা করছে সে।
-“এত রাতে গোসল করলি কেন?
তার এত কাছে তৃণ।যেন তার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। মুখে দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।প্রাচ্য কিছু বলছে না দেখেই তৃণ নিজের দৃষ্টি চুলের পানি থেকে সরিয়ে প্রাচ্যর দিকে তাকায়। কি সিগ্ধতা এই মুখে, মায়া ভরপুর এই মুখে। এই সিগ্ধতার মোহ সে পড়েছে যাচ্ছে। নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের মধ্যে প্রাচ্য’র অধরের ওষ্ঠদ্বয়গুলো বন্ধ করে নেয়।মুহুর্তের মধ্যে কি হয়ে গেলো প্রাচ্য কিছু বুঝে উঠতে পারেনি।নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারে তৃণ কে।ধাক্কা খেয়ে সে নিজে হুসে ফিরে। কি করছিল সে এতক্ষন, সঙ্গে সঙ্গে প্রাচ্য’র দিকে তাকায়।প্রাচ্য’র দুচোখ দিয়ে নোনাজল গাল বেয়ে পড়ছে। বিচলিত হয়ে যায় সে। উঠে দাঁড়া সে,প্রাচ্যর দিকে এগিয়ে যেতে নিলে প্রাচ্য বলে উঠে,

-“তুই খারাপ সেটা জানতাম।এতটা খারাপ সেটা জানতাম।এত নিচ মন মানসিকতা তোর,ছিঃ।আমি সবাই বলে দিবো কি করছিস তুই আমার সাথে।
এটা বলে সে আর থামেনি দৌড়িয়ে বের হয়ে যায়।পিছন থেকে প্রাচ্য প্রাচ্য বলে অনেকবার ডাকে তৃন।তারপর প্রাচ্যর পিছন পিছন সে ও ছুটে যায়।

★★★

রিসোর্ট পিছনে বারান্দায় নীল আসে।কিন্তু আজকে এই খান থেকে কোনো সুর আসছে না। সে ভেবেছে হয়ত কালকের মত এই জায়গা তার সুরওয়ালা এখানে বসে মাউথ অর্গানের সুর তুলছে।তাই সে এখানে আসে। আবার সে সুর ওয়ালা কে খুজছে খুজতে পৌঁছে যায় রিসোর্ট হ্যালিপ্যাডের মুখকরা বারান্দায়। সে বারান্দা এসে দাঁড়ায় ।এখান থেকে হ্যালিপ্যাড দেখা যাচ্ছে।হ্যালিপ্যাডের দোলনায় কেউ একজন কে বসে থাকতে দেখে।আর সেই বসে থাকা ব্যাক্তি যে মাউথ অর্গান বাজাচ্ছে,বুঝা যাচ্ছে। মুহুর্তের মধ্যে তার মন আনন্দ পুলকিত হয়ে উঠে।অবশেষে তার সুরওয়ালাকে খুজে পেয়েছে।তাকে সামনে দেখে দেখতে পাবে।ইস!

সে বারান্দা থেকে পা বাড়ায় সে জায়গা থযাওয়ার জন্য।হঠাৎ সে শুনতে পায় প্রাচ্য গলা।স্বপ্ন স্বপ্ন বলে চিৎকার করে ঢেকে যাচ্ছে।কন্ঠ যেন কান্না মিশানো বুঝতে পারলো সে।তাই যে দিকে যাচ্ছিল সে দিকে না যেয়ে প্রাচ্য ডাক শুনে তার কাছে যাওয়ার জন্য উলটে দিকে যাচ্ছে।কি হয়েছে এত রাতে,প্রাচ্য কেন এভাবে চিৎকার করে সবাইকে ডাকছে।সবাইকে দেখে সে স্বপ্নের রুমে ভিতরে ঢুকতে, তাই সে ঢুকে দেখে প্রাচ্য কান্না করছে। বোনকে কান্না করতে দেখে তার পাশে গিয়ে বলে,
-“কি হয়ে আপু,কান্না করছ কেন?
তখনই স্বপ্ন তার রুমের ভিতরে তড়িঘড়ি করে ঢুকে বলে,
-“কি হয়েছে?
স্বপ্নে দেখে প্রাচ্য হামলে পড়ে তার বুকে,কুপিয়ে কুপিয়ে কান্না করতে থাকে।।প্রাচ্য মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-“কান্না থামা! বল কি হয়েছে তোর।

প্রাচ্যর কান্না গতি যেন আরো বেড়ে গেছে।প্রাচ্য কিছু বলছে না দেখে সে তার বন্ধূদের দিকে তাকায়। প্রাচ্য কি হয়েছে জানার জন্য।রোদ,আর ধূসর বলে তারা কিছু জানে না।তারপর স্বপ্ন চোখ যায় তৃণ দিকে।সে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে কাচুমাচু হয়ে।স্বপ্নের আর বুঝতে পেরেছে হয়ত তৃণ সাথে কিছু হয়েছে তার জন্য প্রাচ্য এমন করছে।কিন্তু তাদের মধ্যে বেশিভাগ পিঞ্চ মেরে একজন আরেকজন কে নানা কথা বলতে।কিন্তু আজকে তাদের মধ্যে কি হয়েছে যার জন্য প্রাচ্য এভাবে কাঁদছে।নিশ্চয় বিরাট কিছু ঘটে যার জন্য প্রাচ্য…

প্রাচ্য সব কথা খুলে বলে সবাইকে।এটা শুনে স্বপ্নের মেজাজ বিগড়ে যায়।প্রাচ্যকে সরিয়ে তড়িৎ গতিতে ছুটে যায় তৃণ দিকে।তৃণ শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
-“কেন করছিস এমনপ্রাচ্য সাথে।সবাইকে আমি বলে দিয়েছিলাম না, যা করবি বাইরে করবি আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কারো সাথে এমন কোনো খারাপ আচরণ করবি না।যাতে তাদের সম্মানহানি হয়।
-“বিশ্বাস কর স্বপ্ন! আমি ইচ্ছা করে এসব করিনি।
-“কেন? করলি তুই এসব।
-“ছেড়ে দে স্বপ্ন ওকে”ধূসর এসে স্বপ্নের হাত থেকে তৃণ শার্টের কলার ছেড়ে নেয়।স্বপ্নে রুমে এককোনে নিয়ে ফ্যাসফ্যাস গলায় বলে
-কি করছিস স্বপ্ন!
স্বপ্ন কিছু না বলে রাগি চোখে তাকায় ধূসরের দিকে। ধূসর ঘাবড়ে যায়।শান্তনার সুরে বলে,
-“আমি বুঝতে পাচ্ছি তোর রাগ হচ্ছে।রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু তুই তো এটা জানিস।তৃণ প্রাচ্যকে ভালোবাসে। ভালোবাসার ক্ষেতে এসব কিসটিস হয়ে থাকে। এটা কি স্বাভাবিক নয়।
-“আমি মানছি তৃণ প্রাচ্যকে ভালোবাসে।কিন্তু তৃণ আজকের কাজ টা কি প্রাচ্যর ইচ্ছার বিরুদ্ধ করা কাজ। ও কেন প্রাচ্যকে জোর করে এসব করতে গেলো।আর তুই বলছিস ভালোবাসার ক্ষেতে এসব একটু আকটু হয়ে থাকে।ওদের মধ্যে তেমন কোনো সম্পর্ক আছে।যার জন্য তৃন এই কাজ করবে।তৃণ প্রাচ্যকে ভালোবাসে।প্রাচ্য কি তৃণকে ভালোবাসে?
-“বাসে!প্রাচ্য ও তৃণকে ভালোবাসে।।দেখিস না তুই,তৃণ মুখে টিনা মিনার কথা শুনলে প্রাচ্য ক্ষেপে যায়। তৃণ মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনলে প্রাচ্যর হিংসা হয়,সহ্য করতে পারে না।এই জন্য পিঞ্চ মেরে কথা বলে তৃণকে।তুই ওদের মাঝে আর কথা বলিস।ওদের দুজন ব্যপার দুজনকে বুঝতে দে।
এটা বলে ধূসর যেয়ে প্রাচ্য পাশে দাঁড়ায়।সে বললো,
-“তোদের দুজন ব্যাপার তোরা দুজন বুঝে নেয়।আর প্রাচ্য তুই , তোর সাথে যা অন্যায় তৃণ করেছে তার শাস্তি তুই নিজেই ডিসাইড করে তৃণকে দিস।
এটা বলে তৃণ শার্টের কলার টেনে এনে প্রাচ্য’র পাশে দাঁড় করিয়ে বলে,
-“এই নে তোর আসামী কে।তুই কি করবি শাস্তি দিবি দে,,
প্রাচ্য কিছু না বলে বের হয়ে যায়।
-“যা গিয়ে মান ভাঙা।”
ধূসর কথা শুনে তৃণ স্বপ্নের দিকে তাকায়, স্বপ্নে ইশারা বুঝায় যেতে। তারপর দৌড়িয়ে যায় প্রাচ্য পিছন পিছন।প্রাচ্য যেয়ে রিসোর্টের পিছনে সিঁড়ি গুলোয় যেয়ে বসে।তার পাশে তৃণ বসে।তৃনকে বসতে দেখে দুইহাত দূরে সরে যায়, তৃণ আবার সেই দুইহাত দূরুত্ব ব্যবধান সরিয়ে আবার প্রাচ্য’র গা ঘেঁষে বসে।এবার প্রাচ্য সরে যেতে নিলে তার কোমর জড়িয়ে ধরে তৃণ।তার হাতে কিল দিতে দিতে কান্নাভেজা কন্ঠে প্রাচ্য বলে,
-“স-রা হাত, ভালো হবে বলছি।
-“হাত সরালে তো চলে যাবি তুই।আগে বল আমার কথা শুনবি। তাহলে হাত সরাবো।
-“প্রশ্নেই উঠে না।কোন দুঃখে আমি তোর কথা শুনতে যাবো। নোংরা মন মানসিকতা কোনো মানুষের সাথে আমার কোনো কথা নেই।
-“বিশ্বাস কর। আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি। হঠাৎ করে তোকে এভাবে দেখেই,,,,
-“কি এভাবে দেখে,,আল্লাহই জানে আমার আগে কয়জন মেয়েকে তুই এভাবে জোর করে কিস করেছিস।নিশ্চয়ই তোর ওই গালফেন্ড কে কিস করেছিস।
-” কি সব উলটা পাল্টা কথা বলছিস তুই।তোকে প্রথম কিস করেছি।
-“তুই বললে আমি বিশ্বাস করবো।যে বন্ধুকে কিস করতে পারে।আর সে ছেলে নাকি গার্লফেন্ডকে কিস করেনি এখনো।বিশ্বাস করতে হবে এখন আমায় এই কথা। আমার তো মনে হচ্ছে তোর এই টিনার সাথে রুমডেট করা হয়ে গেছে।
-“প্রাচ্য!” এটা বলে জোরে চিৎকার দিয়ে থাপ্পড় উঠায় প্রাচ্য’র জন্য।কিন্তু নিজের রাগ দাঁতে দাঁত চেপে সংযত করে হাত নামিয়ে ফেলে। এত জোরে ধমক শুনে প্রাচ্য কেঁদে দেয়।প্রাচ্য’র গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,

-“বিশ্বাস করতে পাচ্ছি না তুই আমাকে।তোকে কি দোষ দিবো,দোষ তো আআমার।আমিতো নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছি তোর সামনে । তাই তুই আমাকে বিশ্বাস করতে পাচ্ছিস না। আমি শুধু লাস্ট এই কথা বলবো।যত যাই করি না কেন আমি,তোকে আজ পর্যন্ত কাউকে কিস দূরে কথা কাউকে টার্স পর্যন্ত ও করিনি।
এটা বলে তৃণ চলে যায়।প্রাচ্য বসে বসে কান্না করতে থাকে।
-“কিস করবে আমাকে আর ভালোবাসবে ওই টিনা কে।টিনাকে যখন ভালোবাসি তাহলে কেন আমায় কিস করলি, কেন, কেন?আমায় ভালোবাসা রিফিউজ করে টিনা ভালোবাসা গ্রহণ করেছিস তুই।আমার থেকে দেখতে বেশি সুন্দরী বলে।

হ্যালিপ্যাডের সব জায়গা তন্নতন্ন করে খুজেছে নীল।খুজে হয়না হয়ে গেছে সে। দোলনায় বসে ভাবছে সে।এই কিছুক্ষন আগেই এখানে তার সুরওয়ালা মাউথ অর্গানের সুর বাজছিল।কিন্তু এখন আবার কোথায় হারিয়ে গেলো। কোথায় চলে গেলো।তার খুব কান্না পাচ্ছে।একটু জন্য হারিয়ে ফেলেছে। আর কি দেখা পাবে সে। কালকেই তো চলে যাবে সে এখান থেকে। সুরওয়ালা আরো কতক্ষণ এখানে বসে থাকলে কি হত। বেশি কি ক্ষতি হয়ে যেত। সুরওয়ালাকে দোষ দিয়ে কি লাভ। সে কি জানে তার সুরের প্রেমে পড়েছে কেউ একজন।তার সুরে প্রেমে পড়ে বার বার তাকে দেখার জন্য ছুটে এসেছে।যদি জানত তাহলে নিশ্চয় অপেক্ষা করত।
নানা রকম চিন্তা ধারণা করেই।অবশেষে হতাশ হয়ে রিসোর্ট ফিরে যেতে হয়।

#চলবে
#কাউছার স্বর্ণা