Friday, August 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2009



স্বপ্নীল ৩২

0

স্বপ্নীল
৩২
নীল সোহার হাতে কয়েকটা পলিথিন ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-” আমার পিছু পিছু আয়।”
– ” কেন? ”
– বেশি কথা বলিস তুই সোহা।যা বলছি তাই কর।”
সোহা জানে এই মেয়ে কে কিছু বলে লাভ নাই।তাই কথা না বাড়িয়ে নীলের পিছু পিছু যায়।মির্জা বাড়ি পিছন কিছু দূরে একটা জঙ্গল আছে।এখানে সচরাচর মানুষ জন যায় না।ঘন জঙ্গল ভরপুর। নীলকে এখানে আসতে দেখে সোহার মাথায় কিছু ঢুকছে না।নীল কেন এই জায়গা আসছে?এখন আবার প্রশ্ন করলে হামকি ধামকি দিবে তার চেয়ে ভালো চুপচাপ হয়ে দেখে যাওয়া ভালো নীলের কার্যক্রম। নীল যেই গাছ পাতার জন্য আসছে সেই গাছটা কিছুতে খুজে পাচ্ছে না।কিছুদিন আগে এই জঙ্গলের সেই গাছটা সে দেখেছে।অনেক বনোজি নাম না জানা গাছ দেখে।হাঁটতে হাঁটতে আর ভিতরে চলে যায়।খুজে না পেয়ে হয়রান হয়ে যায়।তার চোখ যায় কোণার দিকে।কিছু গাছের জন্য দেখা যাচ্ছে না।দ্রুত পায়ে হেঁটে যায়।কাঙ্ক্ষিত গাছ পেয়ে মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়।সোহার হাত থেকে পলিথিন নিয়ে নেয়।পলিথিন ভিতরে ডান হাত ঢুকিয়ে নেয়! বাম হাত দিয়ে ডান হাতে কব্জি তে বাঁধে দেয়।সোহা ভ্রু কুঁচকে নীলের কাণ্ড দেখছে।এবার নীল বাম হাত পলিথিন ভিতরে দিয়ে,পলিথিন সহ বাম হাতটা সোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“ডান হাত যেভাবে বেঁধেছি এই হাত ও সেভাবে বাঁধবি।”
সোহা হাত বেঁধে দিয়ে বলল,
-” হাত বাঁধছিস কেন?
নীল কিছু না বলে সেই গাছে পাতা ছিঁড়তে নিলে সোহা চিৎকার করে বলল,
-” নীল কি করতে যাচ্ছিস তুই! ”
-” দেখতে ত পাচ্ছিস। ”
– “এটা বিছুটি পাতা।এটা সম্বন্ধ কিছু জানোছ তুই।”
-“হ্যাঁ জানি এটা বিছুটি পাতা।এটা জন্যই তো এখানে আসা।”
-” কি?
-” হুম!”
-” এটা গায়ে লাগলে ছুলকাবে!”
– ” ছুলকাবে বলে নিচ্ছি আমি! ”
– ” মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর।”
– না।”
এটা বলে সে বিছুটি গাছ থেকে তিন চারটা পাতা নিয়ে সঙ্গে আনা বাড়তি পলিথিনে নেয়।তারপর বাড়ি ফিরে চলে আসে।সোহা নীলকে যতটুকু জেনে সে খুব ভালো করে বুঝতে পাচ্ছে নীল নির্ঘাত কাউকে শায়েস্তা করার জন্য এত রিস্ক নিয়েছে এই কাজ করছে
ডোকোরেটরে লোক এসেছে বাড়ির সাজানোর জন্য। স্বপ্ন তাদের সাথে কাজ করছে।তাদের দেখেয়ে দিচ্ছে কোথায় কোন জিনিস দিলে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগবে। দরজা সামনে ডোকোরেটের লোক দের কে যেভাবে বলছে সেভাবে হচ্ছে না দেখে সে একটা টুল নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়।লোকদের হাত থেকে ফুল নিয়ে নিজে সাজাচ্ছে।তখনই নীল বাড়ির দরজার সামনে আসে।স্বপ্নে দেখে তার মাথায় দুষ্টুমি মাথায় চেপে বসে।স্বপ্ন পিছনে যেয়ে দাঁড়ায়।স্বপ্ন ফুল গুলো লাগানোর জন্য পা একটু তুলে দাঁড়াতে নীল লাথি মারে।তখনই স্বপ্ন ধপাস করে পড়ে যায় নিচে। স্বপ্নকে এভাবে পড়তে দেখে নীল হেসে দেয়।হাসির শব্দ শুনে তাকায় সে, নীলকে দেখে।তার মানে এই কাজ এই মেয়ে করেছে।নীল ভেঙচি কেটে চলে যেতে যেতে হাসতে থাকে।স্বপ্ন তার বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে বলে।তোমার এই হাসিটা আমার এই বুকে তিঁড়ে মত এসে লাগে।কবে যে বুঝবে আমার ভালোবসার। ধূসর এসে স্বপ্নকে তুলে,
-” দেখার অনেক সুযোগ পাবি।যে কাজটা করছিস সেটা আগে কর।”
এটা বলে ধূসর ভিতরে চলে যায়।ধপাস করে সোফায় বসে।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।বাড়ির চারদিকে সাজানোর দায়িত্ব সে ওও নিয়েছে। এই গরমে মধ্যে এক গ্লাস লেবুর শরবত হলে ভালো হয়।চারদিকে খুজতে থাকে কাউকে বলবে।কিন্তু কেউ নেই।তখনই সোহা উপরে যাচ্ছিল। ধূসর তাকে ঢেকে বলে,
-” মায়াবতী! ”
সোহা দাঁড়িয়ে যায়।পিছন ফিরে তাকায়।ধূসর বলল,
-” এক গ্লাস লেবু শরবত হবে!”
ধূসরের কথার কোনো জবাব না দিয়ে সোহা কিচেনে যায়।শরবত বানিয়ে এনে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।ধূসর সোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গ্লাস নেয়।তখনই সোহার হাতের সাথে ধূসরের হাতের ছোঁয়া লাগে। সোহা কেঁপে উঠে।বাম হাত দিয়ে ওড়না খামচে ধরে ডান হাত আস্তে সরিয়ে ফেলে চলে যায়।ধূসর বাম হাতে গ্লাস নিয়ে শরবত খাচ্ছে।চেয়ে আছে ডান হাতের দিকে।এখানে তার মায়াবতী ছোঁয়া লেগেছে।হাত নিজের বুকের বাম পাশের রেখে অজান্তে হেঁসে দেয়।গ্লাস রেখে চলে যায়।

রোদ বারান্দা দাঁড়িয়ে সমুদ্রকে দেখছিল।কি সুন্দর হাত নাঁড়িয়ে নাঁড়িয়ে সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে। ইস! এই মানুষটার কথা বলার ভঙ্গী এত সুন্দর কেন? প্রেমে পড়ার মত। তখনই সমুদ্র সেখানে থেকে চলে আসে। রোদ বুঝতে পারে সমুদ্র বাসায় ঢুকছে তাই সে জায়গা থেকে চলে এসে সিঁড়ির উপর এসে আড়ালে দাঁড়ায়।সমুদ্র বাসায় ঢুকে আমেনা খালাকে বলে তার জন্য গ্লাস ঠান্ডা পানি উপরে যেন দিয়ে আসে। এটা বলে সে তার রুমে চলে যায়
রোদ তা দেখে নিচে যায়।আমেনা খালা পানির গ্লাস নিয়ে উপরে আসতে নিলে তাকে নানা কথা বুঝ দিয়ে নিজে পানির গ্লাস নিয়ে সমুদ্র রুমে ঢুকে।গরমে পুরো শার্ট ঘেমে ভিজে গেছে।তাই শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে পিছনের দিকে কলার টেনে দেয় যাতে একটু ঠান্ডা লাগে।রোদ দরজাটা আস্তে ঠেলে নিঃশব্দ রুমে ঢুকে।সমুদ্রে এভাবে দেখে আরো একদফা প্রেমে পড়ে সে। কি সুন্দর চোখ বুঝে আছে? ইস! এই মানুষ টা না ফেলে সে মরেই যাবে,মরেই যাবে। সমুদ্র চোখ খুলে দেখে তার সামনে রোদ দাঁড়িয়ে।ঠিক করে বসে বলল,
– ” তুই এখানে! ”
– ” পানি! ”
গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলল।সমুদ্রে গ্লাস নিয়ে এক ঢোকে পানি খেয়ে ফেলে বললো,
– ” তোকে কি আমি বলেছি পানি আনতে।”

রোদ কিছু না বলে হাতের গ্লাস ড্রেসিং রেখে দরজা আঁটকিয়ে দেয়।তা দেখে সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে যায়।রাগী সুরে বলল,
– ” দরজা আঁটকালি কেন?
ধীর পায়ে সমুদ্র দিকে এগিয়ে বলল,
-” কালকে আমার সাথে যা করেছেন তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য! ”
-” আমি আবার কালকে তোর সাথে কি করলাম?”
-” ভুলে গেলেন নাকি! ভুলে গেলে সমস্যা নেই, মনে করিয়ে দিব আমি।”
সমুদ্রকে দুহাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বিছায় ফেলে দিয়ে তার উপরে উঠে শার্টের কলার চেপে ধরে বলল,
– ” ভালোবাসেন আমায়। ”
সমুদ্র রাগী চোখে তাকায়।রোদ তা তক্কায় না করে বলল,
– ” এখন আর ভয় পাইনা আমি আপনাকে।এভাবে তাকিয়ে আমার কথার এড়িয়ে যেতে পারবেন না। আমায় ভালোবাসেন তাহলে কেন এরকম সবসময় বাজে বিহেভ করেন।”
সমুদ্রে রাগে কপালের রগগুলো ফুলে উঠে।চোখের দিয়ে আগুন ফুলকি যেন বের হবে। রোদের এই বেহায়া আদিখ্যেতা তার সহ্য হচ্ছে না। রোদের চুলের মুঠি ধরে নিজের উপর থেকে সরিয়ে সে নিজে উঠে দাঁড়ায়।এক টানে রোদকে নিজের সামনে টেনে আনে।
দাঁতে দাঁত চেপে সে রোদকে বলল,
-” বেহায়া তুই সেটা জানতাম।কিন্তু এরকম চরম লেভেল বেহায়া সেটা জানতাম না।”
কথা রোদের গায়ে লাগলে ও সেটা পাত্তা দেয় না।আজ এই সুযোগে সে সমুদ্র মনে কথা জেনে ছাড়বে।কোনো ভেবে আজকে পার পেতে দিবে না।
-” বেহায়া আমি আপনার প্রেমে।আপনার সাথে বেহায়া গিরি করতে আমার একটু লজ্জা করছে না।কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
সমুদ্র কিছু না বলে চলে যেতে নিলে রোদ তা পথ আঁটকিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
– ” কোথায় যাচ্ছেন? আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান।
– ” কি প্রশ্ন?
– ” সেটা আগেও করিছি।দরকার হলে এখন আবার বলল।ভালোবাসেন আমায় তারপর কেন এমন করেন আমার সাথে?
সমুদ্র রোদের চিবুক ধরে খুব জোরে।ব্যথা পেয়ে চোখে পানি চলে আসে তারপর কিছু বলেনি।সমুদ্র এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” কে বলল? আমি তোকে ভালোবাসি।”
এটা বলে চিবুক ছেড়ে থাক্কা দেয়।রোদ বলল,
-” বলতে হয় না। আপনার আচরণ প্রকাশ পেয়েছে আপনি আমায় ভালোবাসেন।”
-” তাই বুঝি! কি করেছি আমি যার মাধ্যমে তোর মত বেহায়ার জন্য ভালোবাসা আমার প্রকাশ পেয়েছেন।”
-” কালকে আচরণ প্রাকাশ পেয়েছে।ধূসর আমার প্রশংসা করছিল বলে সেটা সহ্য করতে না পেরে আপনি সেই জায়গা জ্বলন্ত সিগারেট ছেঁকা দিলেন। ।তার মানে কি দাঁড়ায়। ”
-” এর মানে এটাই দাঁড়ায়।শরীর দেখিয়ে পুরুষমানুষ টানিস তাই তোর মত বেহায়া কে শাস্তি দিয়েছি।এটা যদি তুই ভালোবাসা ধরে নিস তাতে আমার কিছু করা নেই।আর সব চেয়ে বড় কথা আমি কখনো তোর মত মেয়েকে ভালোবাসব না। না জানি এই বেহায়া গিরি করে কয়জনের সাথে শুয়েছিস।”
রোদ সমুদ্র শার্টের কলার চেপে বলল,
-” চুপ করুন!”
-” কেন চুপ করবো? আমি তোর চরিত্রে গুনগান করছি।এত খুশি হওয়ার কথা।”
-” এত নিচু মন মানুসিকতা আপনার।একবার মুখে বাঁধল না এসব বলতে।
-” না বাঁধল না। তোর মত মেয়েদের কে এসব বলতে খারাপ লাগে না।বরং ভালো লাগে।”
-” এত মিথ্যে অপবাদ কেন দিলেন? কেন? কেন? আপনাকে ভালোবাসি বলে কি আজ আমি বেহায়া হলাম।তাই জন্য বলছেন আমি অন্যকারো সাথে শুতে পারি বেহায়া গিরি করে।এত বড় অপবাদ কেন দিলেন? ”
রোদ কলার ঝাঁকিয়ে কান্না করতে করতে বলল। সমুদ্রে রাগে গজগজ করতে থাকে।সে বলল,
-” কলার ছাড়! ”
– ” না ছাড়ব না।”
এরকম দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হতে থাকে।তখনই সমুদ্রে রাগের বশে রোদকে ধাক্কা দেয়। রোদ ধাক্কা সামলাতে না পেরে ড্রেসিও টেবিলের সাথে বাড়ি খায়।সমুদ্র রাগে গজগজ করতে বের হয়ে যায়।রোদ মাথা তুলে কপালে হাত দিয়ে দেখে রক্ত বের হচ্ছে।রক্ত মাখা হাত দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে।ভালোবাসেন না আপনি আমাকে বিশ্বাস করিনা আমি। আমি জানি না কেন আপনি আমায় এত খারাপ কথা বলছেন।কেন আমি আপনার চোখে এত খারাপ? কিন্তু আমার মন বলছে আপনি আমাকে ভালোবাসে।।
নীল ভাইকে এইভাবে রেগে বের হতে দেখে রুমে এসে দেখে রোদকে। রোদের এই অবস্থা দেখে তার পাশে বসে সে বলল,
-” ভাইকে খুব ভালোবাসো তাই না আপু।
-” হুম।”
-” কিন্তু ভাইয়া তোমাকে পাত্তা দেয় না তাইনা।”
রোদ চুপ করে রয়।কি বলবে সে।এটা ত সত্যি।নীল বলল,
-” ভাইয়াকে তুমি বিয়ে করে ফেলো।”
নীলের এমন কথা শুনে রোদ তার দিকে তাকায়।চোখে পানি মুচে যে বলল,
-” সে তো আমায় ভালোই বাসে না।বিয়ে করবে কি করে?
-” আমার কাছে একটা ভালো আইডিয়া আছে।শুনবে তুমি।
-” বলো!”
-” বাংলা সিনেমাতে হয় যে,নায়ক নায়িকার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।নায়ক নিয়ে একা রুমে এসে নিজের জামা কাপড় ছিঁড়ে হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করে মানুষ জড়
করে বলে। নায়ক তার ইজ্জত ছিনিয়ে নিতে চায়।এরকম করে শাস্তি দেয় নয়তো বা বিয়ে করতে বাধ্য করে।তুমি ও সেটা করবে ভাইয়ার সাথে।”

-” আমি!
-” হ্যাঁ তুমি।
-” এটা করলে তোমার ভাইয়া বিয়ে করা দূরে কথা আমায় মেরেই ফেলবে।তখন আর আমায় ভালোবাসবে না।”
-” বিয়ে করে ফেললে ঠিকি ভালোবাসবে।”
-” তুমি কি ভাবে সিউর হচ্ছে আমি এরকম করলে তোমার ভাই আমাকে বিয়ে করবে।”
-” এটার জন্য তোমাকে প্ল্যান করতে হবে।”
-” প্ল্যান! ”
-” হুম! ”
-” কি প্ল্যান? ”
-” ওই যে সিনেমার নায়িমার মত নায়কের নামে মিথ্যে অপবাদ দেওয়া।”
সমুদ্র নামে মিথ্যে অপবাদ দেওয়া এটা শুনে ভয়ে হাত কাঁপতে থাকে।নিজেকে শান্ত করে সে বলল।সমুদ্র যদি তার নামে মিথ্যে অপবাদ দিতে পারে তাহলে সে কেন পারবে না।।অবশ্যই পারবে।
-” এসব করে লাভ কি হবে!
-” এসব করলে ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করবে।”
-” যদি না করে।
-” করবে করবে।আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি।আজকে রাতে ভাইয়াকে তুমি তোমার রুমে নিয়ে যাবে।একটু জবরধস্তি করবে।তারপর আমি দাদুকে নিয়ে আসব।”
-” তোমার দাদুকে নিয়ে আসবে কেন?
-” দাদু তোমাদের বিয়ে দেবে।তার জন্য দাদুকে প্রয়োজন। ”
-” ও! ”
-” প্ল্যান মত ঠিক ঠাক করবে!তাহলে তোমার আর ভাইয়া বিয়ে ঠেকায় কে?
রোদ ভিতু ভিতু চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে তার হাত ধরে বলে,
-” সত্যি আমায় বিয়ে করবে তো সমুদ্র!
নীল রোদের হাতের উপর দিয়ে হাত রেখে আশ্বাস দেয়।
#চলবে
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/951737161923670/

স্বপ্নীল ৩১

0

স্বপ্নীল
৩১
সিঙ্গারার বানানোর আলু মধ্যে বয়ামের অর্ধেকের চেয়ে ও বেশি মচিরের গুড়া ঢেলে দেয়।আলু সাথে মরিচের গুড়া গুলো মিক্সড করতে থাকে। আলু গুলো লাল টক টক হয়েছে । সোহা কিচেনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নীলের কান্ড দেখছে।সোহা বুঝতে পাচ্ছে না নীল এসব করছে কেন?তাই প্রশ্ন করে বসে।
-“এগুলো এরকম করছিস কেন? ”
নীল তর্জনী আঙুল উঠিয়ে ইশারা করে বলল,
-“সসসস! আস্তে কথা বল।কেউ শুনে ফেলবে।”
সোহা ফিসফিস করে বলল,
-” কি করবি এগুলো দিয়ে বল!”
নীল হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে ড্রয়িং রুম দেখিয়ে বলল,
– “এদের কে মরিচের গুড়া নতুন রেসিপি সিঙ্গারা খাবাবো।”
সোহা আঁতকে উঠে বলল,
– ” কি?
-” আস্তে কথা বল!”
-” নীল!”
নীল সোহার কথা কর্ণপাত না করে নিজের কাজে মনযোগ দিয়ে করতে থাকে।সোহা বার বার মানা করতে থাকে।যাতে এই কাজ না করে।নীল তার কথা পাত্তাই দেয় না।সিঙ্গারা বানানোর শেষে ট্রে তুলে নিয়ে সাজিয়ে নেয়।
সোহাকে নীল বলল,
– ” চল! এখন দেখবি আসল মজা।”
এটা বলে ট্রে নিয়ে চলে আসে।সোহা ও টার পিছন পিছন চলে আসে।নীল ট্রে টা টি- টেবিলের উপরে রেখে বলল,
– “সবার জন্য গরম গরম সিঙ্গারা আনলাম!”
সমুদ্রে একটা সিঙ্গারা নিতে গেলে নীল বাঁধা দেয়।কারণ এখানে দুই রকম সিঙ্গারা আছে। ঝাল দেওয়া, আর না ঝাল না দিয়ে বানানো।সেখানে মরিচের গুড়া দেয়নো সেখান থেকে একটা সিঙ্গারা নিয়ে সমুদ্রেকে দেয়।সমুদ্রে তার বন্ধুদের কে বলে,
-” নীলের হাতের সিঙ্গারা দারুণ মজা।একবার খেলে বলবি আবার বানিয়ে আনতে।”
সবাই মাথা সায় দেয়।নীলের বড় ভাইয়া একটা সিঙ্গারা খায়।স্বপ্ন নীলের দিকে তাকায়।স্পর্শ দেখতে পায় নীলের চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসির রেখা।তারপর নজর যায় সিঙ্গারা গুলো দিকে ত।কেন যেন একটা লাল লাল দেখা যাচ্ছে?সিঙ্গারা গুলো দেখে তারর মনে হচ্ছে এগুলোর মধ্যে কিছু একটা ঘাবলা আছে।তৃণ সিঙ্গারা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালে স্বপ্ন হাত ধরে ফেলে।নীল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
-“হাত ধরলে কেন তৃণ ভাইয়ার।উনার হাত ছাড়ুন ! ”
এটা বলে ট্রে থেকে একটা ঝাল সিঙ্গারা তৃণ হাতে তুলে দিয়ে বলল,
-” ভাইয়া খান! ”
স্বপ্ন তৃণ কাছে ফিসফিস করে বলল,
-“সিঙ্গারা খাইছ না।হাতের মধ্যে রেখে নাড়াচাড়া করবি।”
ধূসর তার কথা শুনে বলল,
-“কেন?
স্বপ্ন বলল,
-” যেটা বলছি সেটা কর দুজনে।”
স্বপ্ন নীলকে বলল,
-” তুমি আমাদের জন্য এত কষ্ট করে সিঙ্গারা বানালে। তুমি খাবে না।”
-” না আমি খাবো না।”
-” ওমা! সেটা কেমন কথা।”
– ” তুমি একটা খাও।”
প্রাচ্য বলল,
-” হ্যাঁ নীল খা তো।সবাই মিলে খেলে মজা বেশি।”
নীল আসতে নিলে সোহা হাত টেনে ধরে।তখনই স্বপ্ন ট্রে ওদলবদল করে ফেলে।ঝাল গুলো জায়গা ভালো গুলো রাখল।ভালো গুলোর জায়গা ঝাল গুলো। স্বপ্ন খুব ভালো করে জানে নীল ঝাল না ওয়ালা গুলো খাবে। নীল হাত ছাড়িয়ে সোহাকে বলল,
-” ঝাল সিঙ্গারা খেলে মরে যাবে ওরা।”
– ” মরলে আমি খুশি!হাত ছাড়!”
এটা বলে নীল সিঙ্গারা নেয়।প্রাচ্য আর রোদ ও সেই ঝাল সিঙ্গারা গুলো থেকে একটা একটা করে নেয়।নীল বলল,
– ” আপনারা খাচ্ছে না কেন? ”
স্বপ্ন বলল,
-” খাচ্ছি!”
কারণ তারা আগের ঝাল সিঙ্গারা রেখে দিয়ে ভালো গুলো থেকে নেয়।
সবাই খেতে থাকে নীল ভ্রু কুচঁকে তাকায় তাদের দিকে। এত ঝাল দিলাম এই ব্যাটা হা হুতাশ কিছু করে না ঝালে।এতক্ষণে তো ঝাল খেয়ে দৌড়া দৌড়ি করা কথা।না কি ঝাল খেয়ে চেপে আছে। কিছু বুঝতে পাচ্ছি না। নীল সোহার দিকে তাকায়।সোহা ইশারা বলে সে ও কিছু বুঝতে পাচ্ছে না।স্বপ্ন নীলকে বলল,
-” বাহ! খুব দারুণ বানিয়েছো সিঙ্গারা।অনেক মজা হয়েছে।”
নীল বুঝতে পাচ্ছে না ঝাল সিঙ্গারা খেয়ে বদ ব্যাটা তার প্রশংসা করছে।তৃণ বলল,
-” কি ব্যাপার নীল তুমি খাচ্ছো না কেন? ”
-” খাচ্ছি! খাচ্ছি।”
এটা বলে সিঙ্গারা এক কামড় বসাতে চিৎকার দিয়ে উঠে।নীলের বড় ভাইয়া বলল,
-“চিৎকার করছিস কেন নীল?”
এক কামড় খেয়ে তার খুব খারাপ অবস্থা।জিহ্বা যেন জ্বলে যাচ্ছে।নাক, কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে।কারো কথা বুঝতে পাচ্ছে না সে।তার পর বলল,
-” ভাইয়া খুব ঝাল! ”
-” কোথায় ঝাল।আমি তো দেখছি ঠিক আছে সব!”
-” না, ভাইয়া সত্যি জাল।”
নীলের ভাই তাকে ধমক দিয়ে বলল,
-“বেয়াদব ! সব কিছু নিয়ে ফাজলামো করিস। কারো কাছে ঝাল লাগলো না।শুধু তোর কাছে নি ঝাল লাগে।ভদ্রতার লেশ মাত্র নেই তোর কাছে। সব সময় এমন করিস!”
ভাইয়ার সবার সামনে নীলকে অপমান করে।তাই রাগ করে হাতে থাকা বাকি সিঙ্গারা খেয়ে ফেলে খপখপ করে।ঝালের চোটে চোখে দিয়ে পানি চলে আসে। কান ঝাঝা করছে।চোখ দিয়ে ঝাপসা হয়ে আসছে।তারপর স্বপ্ন দিকে একবার তাকায়। রহস্যময়ী হাসি দেয় স্বপ্ন! নীলের আর বুঝতে বাকি রইল না এসব পিছনে স্বপ্নর হাত রয়েছে।তার মানে সে ট্রে বদলে দিয়েছে।। ঝাল সিঙ্গারা তুলে নিয়েছে সে ভুল করে।আর এক মিনিট না দাঁড়িয়ে দৌড়িয়ে চলে যায় বেসিনের সামনে। বমি করে ভাসিয়ে ফেলে।টেবিলের উপরে জগ থেকে পানি খেতে থাকে।কিছু পানি মুখে যাচ্ছে বাকি পানি জামা ভিজিয়ে দিয়েছে। না! আর এক মুহুর্তে এখানে থাকা যাবে না।এক জগ পানি নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
নীলের ভাইয়া উঠে চলে যায়।প্রাচ্য নিজের হাতে থাকা সিঙ্গারাটা মুখে দিলে ‘ঝাল ‘ বলে একটা চিৎকার করে থুথু করে মুখের ভিতরে সিঙ্গারা ফেলে দেয়।
ঝাল সিঙ্গারা মুখে দেবে বলে কামড়াচ্ছিল তখনই প্রাচ্য চিৎকার শুনে দৌড়িয়ে আসে।
-” কি হয়েছে?”
– “পানিইইইইইই!”
ধূসর দৌড়িয়ে যে য়ে পানি আনে! এক গ্লাস পানি প্রাচ্য’র দিকে এগিয়ে দেয়।পাচ্য ঢকঢক করে পানি পান করে।গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-” আরো আন! ”
ধূসর আবার দৌড়ালো।এভাবে পাঁচ গ্লাস পানি এনে দিল।তাতে প্রাচ্য ঝাল কমলো না। স্বপ্ন ফ্রিজ থেকে মিষ্টি এনে দিয়ে বলল,
-” ধর মিষ্টি খা! তাহলে ঝাল কমে যাবে।”
দুহাত দিয়ে মুখে মিষ্টি মুখে নেয়।সমুদ্র মাথা কিছু আসতেছে ঝাল কোথায় থেকে আসছে।সে তো সিঙ্গারা খেয়েছে ঝাল তো লাগেনি।তাহলে এরা কেন ঝাল ঝাল বলে চিল্লাছে।মিষ্টি খেয়ে একটু ঝাল কমেছে প্রাচ্য’র। সে তৃণ দিকে তাকায়।সবাই তার এই অবস্থা দেখে এটা ওটা এনে দিয়েছে খেয়ে ঝাল কমানোর জন্য।আর তৃণ দেখে বুঝা যাচ্ছে যে এখানে কিছুই হয়নি।সব স্বাভাবিক।কি সুন্দর করে সিঙ্গারা খাচ্ছে?অন্য সময় সবার আগে তৃণ ছুটে যেত।আর আজ,,,,,, একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।এতই ঘৃণা করিস তুই আমায়!আমার এই অবস্থা দেখে তোর কোনো হেলদুল হলো না।ভাববো না আর তোর কথা।তুই যদি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারিস, আমি ও পারবো। নিজেকে ঠিক করে সে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
-” এই জন্য নীল বার বার সিঙ্গারা খেয়ে ঝাল ঝাল বলছিল।আমি সামান্য একটু খেয়ে এই অবস্থা হয়েছে।নীল পুরো খেলো কেমনে? তার এখন কি অবস্থা?
সমুদ্র বলল,
-” সিঙ্গারায় ঝাল আসল কোথায় থেকে? আমার থেকে তো জ্বাল লাগে নি।তোদের কেন ঝাল লাগল?”
তৃণ বলল,
-” তোর বোন নীল,সে আমাদের জন্য ঝাল ঝাল সিঙ্গারা বানিয়ে এনেছে খাবাবে বলে।স্বপ্ন তার উল্ট চাল দিয়ে তাকে কুপোকাত করে দিয়েছে!”
-” কিন্তু আমার টায় ঝাল ছিল না।”
– “হুম ! তুই নীলের ভাই।তোকে কি করে সে জেনে শুনে ঝাল সিঙ্গারা খাবাবে।সে খুব ভালো করে জানে। এই সিঙ্গারায় ঝালের পরিমাণ কেমন ছিল!”
– ” আমি খেয়ে বুঝেছি এখানে কেমন ঝাল ছিল।তোরা যখন বুঝতে পেরেছিস এখানে ঝাল সিঙ্গারা ছিল।আমায় বলবি না কেন?জেনে শুনে আমাকে ঝাল সিঙ্গারা খাবালি।এখন ও জিব্বা জ্বলে যাচ্ছে।”
-” সিঙ্গারা অদলবদল হওয়া বুঝতে পারিনি তোরা ঝাল সিঙ্গারা নিয়েছিস নাকি ভালো গুলো! ”
রোদ তার হাতের সিঙ্গারা থেকে একটু চিমটি মুখে দিয়ে দেখে তারটা ও ঝাল,থু মেলে ফেলে দিয়ে বলল,
– ” আমার টা ও ঝাল।যাক বাবা একটু জন্য বেঁচে গেলাম।না হয়ে আমি খেলে আমার একই অবস্থা হতো।”
প্রাচ্য বলল,
-” স্বপ্ন তুই তো জানতি মনে হয় নীল হাতে ঝাল সিঙ্গারা ছিল।”
-“হু!
-” তুই নীল কে আঁটকালি না কেন? না জানি নীলের এখন কি অবস্থা।বেচারী মনে ঝাল চোটে মরে যাচ্ছে।”
ধূসর বলল,
-” কেন আঁটকাবে স্বপ্ন।হোয়াই? তোর বোন আমাদের ঝাল খাইয়ে মারতে চাইছিল।এখন বুঝুক এই ঝাল খেলে আমাদের কি হতো।”
-” ধূসর! নীল না বুঝে করেছে তাই বলে তোরা,,,,,
-“একদম ঠিক করেছি।বোনের হয়ে সাফাই গাইবি না। না হলে এখন বাকি ঝাল সিঙ্গারা তোকে খাইয়ে দিব।”

নীল দুইহাত দিয়ে নিজের চুল খামচে ধরছে।এখন ও ঝাল কমার নাম নেই। রাগে শেষ হয়ে যাচ্ছে।বিছানার চাদর, বালিশ সব ছুড়ে ফেলছে ঝাল কমছে না বলে।জগের পানি ও শেষ হয়ে যায়।সোহা তাকে আবার পানি এনে দেয়। পানি খেতে খেতে নীল হয়রান হয়ে যায়।শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়।ফ্লোরে হাত, পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে। জগ উবু করে মুখের উপর পানি ঢালতে থাকে।আবার জগের পানি শেষ হয়ে যায়!পাশে জগ রেখে উপরে থাকিয়ে হা করে ঝাল মুখের উপরে ডান হাত দিয়ে বাতাস করে ঝাল নিবারণ করে।তখনই স্বপ্ন তার রুমে ঢুকে।নীলকে এভাবে দেখে তার হাসি পায়।নীলে কাছে এসে বসে বলল,
-” গর্ত করলে কার জন্য? সে গর্ত তুমি-ই পড়লে!”
নীল স্বপ্ন দিকে তাকায়।এখন তার ইচ্ছা করছে জগ দিয়ে স্বপ্ন’র মাথা পাঠিয়ে ফেলতে।কিন্তু শরীরে সেই শক্তি ও নেই।তাই শুধু রাগী চোখে তাকয়ে আছে।
-“ইস! এভাবে তাকাবে না প্লিজ।আমার দিলে এসে লাগে।
অভিনয় করে নিজের বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে স্বপ্ন বলল।রাগে নীলের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।স্বপ্ন স্ট্রং হয়ে বলল,
-“আমায় কুপোকাত করতে এসে নিজে কুপোকাত হয়ে গেলে। সো স্যাড়!”
লাস্ট কথা নীলকে বিদ্রুপ করে বলল স্বপ্ন। নীল হাত দিয়ে স্বপ্ন গলা আঁকড়ে ধরে কামড় বসায়।স্বপ্ন মোটে প্রস্তুত ছিল! এমন কিছু হবে ধারণার বাহিরে ছিল।নীল নিজের সর্বোশক্তি দিয়ে স্বপ্ন গলায় কামড় বসায়।একসময় সে হয়রান হয়ে ছেড়ে দেয়।স্বপ্ন ব্যথা পেয়ে ও একটা শব্দ করল না। নিজের হাত রাখে গলায়। গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। হাতের আঙ্গুল ডগায় রক্ত দেখে নীলকে বলল,
– ” রক্ত বের করে ফেলল,ভ্যাম্পায়ার লেডি না কি তুমি?
– ” এটা খুবই কম কিছু।আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার শোধ তুলব।ওয়েট এন্ড ওয়াচ! ”
এটা বলে নীল চলে যায়।এখন যাবে তার দাদুর রুমে।তার বড় ভাইয়ের নামে নালিশ জানাতে।সবার সামনে তাকে বকাঝকা করে ছোট করেছে।সোলোমান মির্জা কাছে এসে কাঁদো কাঁদো হয়ে ভাইয়ের নামে কিছু সত্যি বলছে, কিছু মিথ্যে বলে বিচার দেয়।সোলামান মির্জা নাতনী মাথা হাত ভুলিয়ে সাত্বনা দিয়ে বলে।ভাইয়ের বিচার করবে পরে।দেখা হলে ইচ্ছা মত বকাঝকা করবে কেন তার নাতনী কে বকছে।নীল খুশি হয়ে দাদু গালে চুমু খেয়ে নাচতে নাচতে চলে যায়। নাতনী এই পাগলামি দেখে তিনি হাসে।তার দুই নাতনীর দুইরকম স্বভাব।

কাউছার স্বর্ণা

ভুল হলে মাফ করবেন।একদিন পর পর গল্প পাবেন সবাই
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/925662824531104/

স্বপ্নীল ৩০

0

স্বপ্নীল
৩০
রোদের হাত পা সব গুলো বেঁধে রেখেছে। মুখের মধ্যে টেপ মেরে দিয়েছে সমুদ্র।পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ফেলে।ড্রয়ার থেকে সিগারেট নিয়ে লাইটার দিয়ে জ্বালায়।সিগারেট টানতে থাকে রোদের এই ধবধবে ফর্সা পেটের দিকে তাকিয়ে। রোদ বুঝতে পাচ্ছে না সমুদ্র এসব কেন করছে? কি সুন্দর করে তাকে কোলে করে নিয়ে আসছিল।তখনই রুমে এনে ধপাস করে ফেলে দিয়ে এভাবে বাঁধে ফেলে। রোদ উঁহু উঁহু করতে থাকে!সমুদ্র তাদ দিকে তাকায়। সে ইশারা বলল, মুখ থেকে টেপটা সরাতে।সমুদ্র সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে চোখ বন্ধ করে সিগারেট টান মারে।আধখাওয়া সিগারেট হাতে নেয়।এগিয়ে যায় রোদের পেটের দিকে।রোদ বড় বড় চোখ করে তাকায়।কি করতে যাচ্ছে সমুদ্র? জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে পেটের তিলটার উপর। যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠে!দাঁত মুখ খিঁচে সহ্য করে নেয়। ব্যথায় পুরো শরীর চটপটানি শুরু করে। চোখে বেয়ে পানি পড়তে থাকে। কোরবানের গরুকে যেমন দশ-পনেরো জন ধরে গলায় ছুরি চালায় যখন পশুটা পা মেলে চটপট করতে থাকে।এখন সেই পশুর মত রোদের ও সেইম অবস্থা।

সিগারেট ফেলে দিয়ে হাতের বাঁধন, মুখ থেকে টেপ সরিয়ে ফেলে।তখন রোদকে ধমক দিয়ে বলল,
-” গেট আউট! ”
চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।এখন সে আগের শুয়ে আছে।ব্যথায় যন্ত্রণা মরে যেতে ইচ্ছা করছে তার।উঠে বসার শক্তি যেন পাচ্ছে না সে।তা দেখে সমুদ্র তার হাত ধরে টান দিয়ে খাটের উপরে বসায়।
-“এক্ষূনি বের হয়ে যাবি আমার রুম থেকে।”
ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে সে সমুদ্র’র দিকে।কি এমন করেছে সে যার জন্য সমুদ্র এমন বিহেভিয়ার করল।খাঁট থেকে আস্তে আস্তে নেমে যায়। দরজা সামনে যেয়ে পিছনে তাকায়। সমুদ্রকে একবার দেখে কান্না করতে করতে জোরে দৌড়িয়ে বেড়ে যায় সে।সমুদ্র খাটে পা ঝুলিয়ে বসে চাদুর খামচে ধরে।
★★★
এক এক করে সবাই চলে যায় শান বাঁধানো ঘাট থেকে। শুধু প্রাচ্য আর তৃণ রয়ে যায়।ঘাটে দাঁড়িয়ে তৃণ কার সাথে কথা বলছে।তার জন্য অপেক্ষা করছে প্রাচ্য।অনেকক্ষণ যাবত কথা বলছে তৃণ! কথা শেষ হওয়ার নাম ও নেই।তাই সে কপট রাগ দেখিয়ে তৃণ হাত থেকে মোবাইল নেয়।তৃণ বলল,
– ” কি সমস্যা!”
লাইন কেটে তৃণ হাতে মোবাইল দিয়ে বলল,
– ” সমস্যা অনেক! এত কথা কার সাথে বলছ!”
কপাল কঁচকে তাকিয়ে তৃণ বলল,
– ” কৈফিয়ত চাইছিস! ”
-” যদি মনে হয় কৈফিয়ত!তাহলে তাই।”
-“কোন অধিকারে জোরে কৈফিয়ত চাস।”
প্রাচ্য তৃণ কাছে এসে বলল,
– ” ভালোবাসার অধিকারে।”
তৃণ তাচ্ছিল্য হাসল।তারপর বলল,
-” ভালোবাসা।”
প্রাচ্য দুহাত দিয়ে তৃণকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“ভালোবাসি তোকে।খুব ভালোবাসি।”
প্রাচ্য হাত পিঠ থেকে সরিয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে তৃণ বলল,
– ঘৃণা হচ্ছে না তোর।একটা লুচ্চা ছেলেকে ভালোবাসার কথা বলতে। লজ্জা করছে না তোর।”
-” প্লিজ চুপ কর। ”
– ” কেন? যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। শুধু একজনের ইজ্জত কেঁড়ে নি নাই আমি।রোজ রাতে নিয়ম করে পতিতালয় যাই। আমার যে এক জনে চাহিদা মিটে না।”
প্রাচ্য কিছু না বলে শুধু তৃণ দিকে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে সে।এসব মিথ্যে অপবাদ সে ভুল বুঝে তৃণকে এক সময় দিয়েছে।শুধু অপবাদ নয়!দুই দু বার থাপ্পড় মেরেছে। তৃণ অতি কষ্টে সে কথা গুলো বলছে তাকে।
তৃণ আবার বলল,
-” ফারদার তোর মুখ যেন ভালোবাসা কথা না শুনি। মাথা গেঁথে নেয়,আমি তোকে ভালোবাসি না।আর কখনো বাসবো না। যেটা শেষ হয়ে গেছে সেটা আর কিছুতে শুরু করতে চাই না।”
এটা বলে হনহনিয়ে চলে যায়।প্রাচ্য বসে পড়ে সেখানে কান্না করতে থাকে।জেদ করে এসব বলছে তৃণ।একটা বার ও ভাবছে না জেদ করে থাকার সময় এখন নয়। এভাবে চলতে থাকলে শিহাবকে বিয়ে করে ফেলতে হবে।তৃণকে ছাড়া সে কাউকে নিজের জীবনে মানতে পারবে না।রাগের বশে না হয় সে ভুল সিধান্ত নিয়েছে।কিন্তু এখন তৃণ জেদ করে এমন করছে।
প্রাচ্য বাসায় এসে দেখে রোদ উবু শুয়ে বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে।কেন কাঁদছে রোদ। ভাইয়া কিছু করেনি তো।ভাবতে ভাবতেই রোদের কাঁধ হাত দেয়।রোদ ঘাড় ঘুড়িয়ে প্রাচ্যকে দেখে তাকে ঝাপটে ধরে কান্না করতে থাকে।প্রাচ্য রোদের পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
– ” কান্না থামিয়ে বল কি হয়েছে!কেন কাঁদছিস।”
রোদ চোখের পানি মুঁচে ফেলে। পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ক্ষত স্থান প্রাচ্যকে দেখায়।প্রাচ্য আঁতকে উঠে বলল,
-” এত কেয়ারলেস কেন তুই? দেখে শুনে চলতে পারিস না। ইস! পুড়ে কি এক অবস্থা করেছে! ”
রোদ কিছুই বলল না।প্রাচ্য কিছু একটা ভেবে সে আবার বলল,
-” এটা তো কোনো এক্সিডেন্ট ভাবে ঘটেনি।কেউ ইচ্ছা করে এমন করেছে? কে করেছে তোর এমন? ”
চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল।রোদ হেচঁকি তুলে বলল,
– ” তোর ভাইয়া।”
প্রাচ্য হতবিহ্বল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রোদের দিকে।তারপর রোদের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় সমুদ্রের রুমে।
-” ভাইয়া তুমি কি মানুষ।!”
সমুদ্র এখন ও সেই আগের অবস্থা বসা ছিল।প্রাচ্য’র কথা শুনে তার দিকে তাকায়।তারপর রোদের দিকে তাকায়, সে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে ফ্লোরে দিকে।সমুদ্র চোখ নামিয়ে ফেলে আগের অবস্থায় ফিরে যায়।তা দেখে প্রাচ্য বলল,
-” কি হলো উত্তর দাও।রোদের সাথে এমন করলে কেন?”
সমুদ্র চুপচাপ দেখে প্রাচ্য আবার গলা খ্যাঁকিয়ে উঠে বলল,
-” এভাবে চুপ থেকে আমার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে পারবে না।চুপ না থেকে বলো।”
সমুদ্র কিছু না বলে উঠে এসে রোদ আর প্রাচ্য’র হাত ধরে টেনে দরজার বাহিরে দাঁড় করিয়ে মুখের উপরে দরজা লাগিয়ে দেয়।প্রাচ্য’র প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ভাইয়ের উপরে।রোদকে নিজের রুমে এনে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দেয়।ভাইকে ইচ্ছা তরফে বকতে থাকে।আর রোদ কে বলল,
– ” বাংলাদেশে তোর জন্য কি অভাব পড়ছে ছেলের। তাই আমার ভাইকে ভালো বাসতে গেলি। জানোয়ার একটা! মনে দয়া মায়া বলতে কিচ্চু টি নেই।”
রোদ শুধু মুচকি হেসেছে। আজ সমুদ্র আচরণে রোদের একটু ও বুঝতে বাকি রইল না সমুদ্র যে তাকে ভালোবাসে।ভালোবাসে বলে নিজের প্রিয় মানুষের সৌন্দর্য অন্য কেউ প্রশংসা করছিল বলে আজকে এই শাস্তি তাকে দিল।যদি সমুদ্র তাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে এটা তার কিছুই নয়।তাহলে এটা হবে ভালোবাসার উপহার তার কাছে।

-” এটা তোর জন্য!”
সোহা তামিমের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। সে বলল,
– ” কি আছে এখানে? ”
– ” প্যাকেট খুলে নিজেই দেখে নেয়।”
-“আমি কেন খুলতে যাবো?”
এটা বলে চলে যেতে নিলে তামিম হাত ধরে আঁটকায়।প্যাকট থেকে শাড়ি বের করে সোহার মাথা ধরে ঘোমটা দিয়ে বলল,
– ” দারুন মানাবে তোকে।পছন্দ হয়েছে নি তোর।”
সোহা মাথা উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে মুটোবন্ধ করে তামিমের মুখের উপরে ছুড়ে ফেলে বলল,
– ” কাজের মেয়ে প্রতি কিসের এত আধিখ্যেতা। ”
তামিম মুখের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে বলল,
– ” শাড়ি ফেলে দিলে কেন?”
– ” তাহলে কি এটা নিয়ে আমি নাচব!”
সোহার বাঁকা কথা শুনার কোনো ইচ্ছা তামিমের নেই।তাই সোহা হাতে শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– ” এটা কালকে যেন পড়তে দেখি তোকে। ”
হনহন করে বেড়িয়ে যায়।সোহা শাড়ি তা খাটের উপরে ফেলে দেয়।তারপর সেটা কে আলমারিতে রেখে দেয়।মা দেখলে প্রশ্ন করে বসবে এই শাড়ি কই পাইছে সে।।তার চেয়ে ভালো আলমারির এককোণ ধলামোচড়া হয়ে পড়া থাকা।সে কিছুতেই এই শাড়ি পড়বেনা।মরে গেলে না!তামিম কথা সে ভাববে না।

রোদ শাড়ি পাল্টিয়ো একটা লং থ্রি পীজ পড়ে নিচে নামে।সবাই ড্রয়িংরুম বসে আছে।বিয়ের ব্যবপারে কথা বলছে। কি ভাবে কি করবে।কি ভাবে সাজাবে বাড়ি টাকে।কালকে সকালে ডোকোরেটের লোক আসবে বাড়ি সাজানোর জন্য এই নিয়ে সবার মধ্যে আলোচনা করছে সমুদ্র।রোদ নিঃশব্দে এসে বসে তার বন্ধুদের পাশে।রোদকে দেখে তৃণ বলল তার বন্ধুদের কে,
– ” তোরা সবাই কি রোদের দিকে খেয়াল করেছিস!”
সবাই তৃণ দিকে তাকিয়ে থাকে উৎসুক হয়ে।তৃণ আবার বলল,
– ” রোদের মধ্যে কিছুটা চেঞ্জড হয়ে গেছে।”
ধূসর বলল,
– ” কি রকম!”
– ” রোদের মধ্যে বাঙালী বাঙালী ভাব চলে আসছে।বাঙালী নারী মত শাড়ি পরিধান করে বেশিভাগ এখন।আগে মত ওয়েস্টার্ন ড্রেসাপ নেই!”
তৃণ কথা কিছুটা স্লান হাসল রোদ।আড়চোখে তাকায় সমুদ্র দিকে। না তার বন্ধুদের কোথায় ভ্রুক্ষেপ নেই।সে নিজের কাজে ব্যস্ত।মনে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।
ধূসর বলল,
– ” কি রোদ প্রেমে পড়েছিস নাকি।”
রোদ উঠে এসে ধূসের কানে ফিসফিস করে বলল,
– ” ডং টা একটু কম করে করলে ভালো হয়।কার প্রেমে পড়েছি সেটা তোরা জানিস।তাই নতুন করে কিছু বলতে চাই না।”

আবার সবাই আড্ডা দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়।এই কথা রেখে সেই কথায় যায়।এভাবে আড্ডা টপিক চেঞ্জ হয়!আড্ডা মশগুল হয় সবাই শুধু মাত্র একজন বাদে।সেই একজন চোখ হচ্ছে রান্না ঘরে দিকে।তার প্রিয়াতমা যে রান্না করতে ব্যস্ত। রান্না ভাপে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।সে ঘাম গুলো মুক্তর মত চিকচিক করছে। রান্ন ঘরটা যেন আলোকিত করছে।রান্না করার মাঝে সোহার চোখ যায় ড্রয়িরুমে।কেউ একজন তার দিকে চেয়ে আছে।আর সে কেউ একজন আর কেউ নয়!সে হলো ধূসর।দুজনায় চোখাচোখি হয়। সোহা চোখ নামিয়ে ফেলে রান্না মন দেয়।কেমন একটা অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।তার দিকে এভাবে তামিম ছাড়া আর কেউ তাকায় নি।আড় চোখে আমার সে ধূসরে দিকে তাকায়।এখন ধূসর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
দূর থেকে কেউ একজন তার দৃষ্টি স্থির রেখে দেখে যাচ্ছে তাদের চোখাচোখি প্রেম। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
#চলবে,,
#স্বর্ণা
গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ।তাহলে লেখার আগ্রহ জাগে।

https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/924628711301182/

স্বপ্নীল ২৯

0

স্বপ্নীল
২৯
-” কালকে স্বপ্নকে এভাবে মারলি কেন?
প্রাচ্য কথায় নীল তার দিকে তাকিয়ে ফিরে বলল,
– ” তোমার ওই বজ্জাত বল্টুকে যখন এটা বলেছে তাকে আমি মেরেছি, তাহলে নিশ্চয় বলেছে তাকে কেন মেরেছি আমি ”
রোদ বলল,
– ” স্বপ্ন বলেছে,আর স্বপ্ন তোমাকে কিস করেছে তার কারণ তুমি জানো!তুমি তাকে গোবরে স্তুপ না ফেললে সে এই কাজ টা করতো না।”
– ” মানছি আমি এটা করেছি তার মানে এটা না যে হুট করে অপরিচিত একটা মেয়েকে কিস করে বসবে।শালা একটা লুচ্চা ব্যাটা! আল্লাহইই জানে তোমাদের এই লুচ্চা ফ্রেন্ড না জানি কত মেয়েকে এই ভাবে কিস করেছে! ”
-” ব্যাস!”
প্রাচ্য হাত উঠিয়ে রাগি সুরে বলল।বোনকে রাগতে দেখে নীল চুপ হয়ে যায়।রোদের ইচ্ছা করছে নীলকে আচঁড়ে বক্তা বানিয়ে ফেলতে।কত সাহস হলে মেয়েটা আমাদের সামনে আমাদের স্বপ্নকে লুচ্চা বলে।চরিত্রের দাগ লাগায়।আজ সমুদ্রের বোন বলে সব কিছু সে হজম করে নিল।প্রাচ্য এবার খুব শান্ত সুরে বলল,
– ” স্বপ্ন খুব ভালো ছেলে। সে সবার থেকে আলাদা। তুই তাকে চিনতে ভুল করছিস।”
নীল তার ঠোঁট দেখিয়ে বলল,
-” এই দেখো তোমার ভালো ফ্রেন্ড স্বপ্নের কাণ্ড।কামড় দিয়ে ঠোঁট কেটে ফেলেছে।
-“ওই সব বাদ দে!এবার বল তুই কাকে ভালোবাসি? কে সেই ব্যক্তি?
নীল এবার কোলের উপর থেকে বালিশ সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।জানালার খুলে দিয়ে বাহিরে দিকে তাকিয়ে বলল,
– ” তাকে আমি চিনি না।এবার ও দেখা হয়নি।সে দেখতে কেমন তাও আমি জানি না।শুধু জানি তাকে ভালোবাসি আমি।”
প্রাচ্য বসা থেকে উঠে এসে নীলের কাঁধে হাত দিয়ে তার দিকে ঘুরিয়ে বলল,
– “সে জানে তুই তাকে ভালোবাসি! ”
– ” তার নাগাল ফেলে তো জানবে।”
– ” আমি না কিছু বুঝতে পাচ্ছি না।কিছই জানে না তাহলে এটা কেমন ভালোবাসা। আর তোর সাথে পরিচয় কি ভাবে হয়েছে।”
নীল সব খুলে বলল।প্রাচ্য শুনে হতভম্ব।সে বলল,
-“কার জন্য অপেক্ষা করবি তুই।তুই তাকে চিনিস না! সে ও তোকে চিনে না। আর দেখা হবে কি না আল্লাহই জানে?”
নীল একটা দ্বীঘশ্বাস ফেলে।তার প্রাচ্য আপু তো ভুল কিছুই বলে নি।সত্যি কি তার সাথে দেখা হবে না। একবার কি বলতে পারব না ভালোবাসি তাকে।নিজের অজান্তে মন দিয়ে ফেলেছে।তার সুর যে হৃদয়ের গেঁথে গেছে।
রোদ বলল,
-” নীল তুমি এই যুগের মেয়ে হয়ে একটা সুরে প্রেমে পড়ে একজন অচেনা লোককে ভালোবেসে ফেলেছো।আর সেই সুর ওয়ালা তো বিবাহিত কোনো পুরুষ হতে পারে! আবার সে কোনো মেয়ে হতে পারে! ”
নীল এবার রোদের দিকে তাকায়।কি বলবে সে এদের কে? উত্তর দেওয়ার মত কিছু নেই! প্রাচ্য বলল,
– ” ধর, তুই তাকে খুজে পেয়েছিস সে যদি কোনো টাকলা, ভুঁড়িওয়ালা হয়। তখন কি তাকে ভালোবেসে বিয়ে করতি যাবি।”
নীল ভ্রু কুঁচকে তাকায় প্রাচ্য’র দিকে।সে বলল,
– “এমন ও হতে পারে সে কোনো হ্যান্ডসাম যুবক।”
-” হতে পারে সে তুই কত পার্সেন শিওর দিয়ে বলতে পারবি।”
-“আমি এত কিছু জানি না।আমি তাকেই ভালোবাসি।আমার মন বলছে তার সাথে আমার দেখা হবে।তখনই দেখে নেবো সে দেখতে কেমন?দয়া করে এ নিয়ে তোমরা এখন কোনো কথা বলবে না।এখন তোমরা আসতে পারো! ”
প্রাচ্য খুব ভালো করে জানে তার বোনকে বুঝিয়ে লাভ নেই।তার মাথা কিছু ঢুকলে বের করা সম্ভব নয়।জোঁকের মত মাথা ঝেকে বসে থাকে।তারা দুজন নীলের রুম থেকে বেরিয়ে এসে স্বপ্ন রুমে আসে।রোকেয়া বেগম নিজের হাতে স্বপ্নকে স্যুপ খাওয়াচ্ছে জোর করে।তার পাশে তার ছোট মাও আছে।প্রাচ্য তাদের দেখলে প্রান জুড়ে যায়।তিন জা’র কি মিল।সবার ছেলে মেয়েকে সমান তালে ভালোবাসে।সবাই মিলেমিশে একান্নবর্তী পরিবারে বাস করে।এখন একান্নবর্তী পরিবার দেখাই যায় না।সবাই অনু বা একক পরিবার গড়ে।প্রাচ্য কে রুমে ঢুকতে নিলে রোকেয়া বেগম বলে,
-” দেখো ত প্রাচ্য মা! তোর এই বন্ধু টা কিছুতে খেতে যাচ্ছে না।”
-” হ্যাঁ রে স্বপ্ন! কেন খেতে যাচ্ছিস না।আমার বড় মা তোকে কত ভালো বেসে খাওয়াচ্ছে।তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়।”
– “আর কত খাবো।সেই তখন থেকে খেয়ে যাচ্ছি।”
স্বপ্নকে খাইয়ে দিয়ে তারা চলে যায়।তখনই ধূসর আর তৃণ সেখানে আসে।স্বপ্ন বলল,
– “কিছু জেনে ছিস নীলের কাজ থেকে। ছেলেটা কে? ”
প্রাচ্য স্বপ্নকে পাশে বসে মন খারাপ করে বলল,
-” হুম!”
সবাইকে সব টা খুলে বলে সে।তারপর বলল,
-” স্বপ্ন তুই নীলকে ভুলে যায়।আমি জানি নীল তোর ভালোবাসা কিছুতে গ্রহণ করবে না।তোর আগে সে অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলেছে।”
এটা বলে সে স্বপ্ন’র দিকে তাকায়! হ্যাঁ সে সত্যি দেখতে পাচ্ছে স্বপ্ন মুখে হাসি।কিন্তু সে ত হাসি কিছু বলে নি।যে টা বলেছে সেটা শুনে স্বপ্ন’র মন খারাপ হওয়া উচিত। কিন্ত……তখনই সে রোদের দিকে তাকায়।রোদ ইশারা বুঝায় সে কিছু বুঝতে পাচ্ছে না এদের হাসির কারণ কি? রোদের ইশারা সে তৃণ আর ধূসর দিকে তাকায় তারা ও হাসছে।তার মানে কি?
– ” বুঝতে পাচ্ছি না হাসছিস কেন তোরা? ”
ধূসর প্রাচ্য’র মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
– ” তোরা দুই গাধা জীবনে কিছু বুঝতে পেরেছিস! যে আজকে বুঝতে পারবি।”
প্রাচ্য চোখ গরম করে তাকায়। রোদ বলল,
– ” আমরা গাধা হলে,তোরা হলি গাধী। ”
এটা বলে রোদ প্রাচ্যকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
-” আমাদের এত বুঝার দরকার নাই।তোরা দুজন বসে বসে বুঝপাতা খা!”
-“সাজেকের সেই মাউথ অর্গানের সুরওয়ালা আমি।”
স্বপ্ন বলল।তারা দুজন দরজার সামনে ছিল।স্বপ্ন’র কথা থমকে দাঁড়ায়।সঙ্গে সঙ্গে তাদের দিকে ঘুরে দুজনে এক সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে বলল,
– ” কি?
দুজন এবার তাদের সামনে এসে বলল,
-” মানে? ”
তৃণ বলল,
-“মানে খুব সিম্পল।নীলের সেই সুর ওয়ালা আর কেউ নয়।সে হলো স্বপ্ন।”
দুজনে অবাক হয়ে জোরে চিল্লিয়ে বলল,
– ” কি?
তার পর প্রাচ্য বলল,
– ” কি করে এটা সম্ভব।”
ধূসর বলল,
– ” অসম্ভবের কি আছে?”
রোদ বলল,
-” স্বপ্ন মাউথ অর্গান বাজায় আর সেটা আমরা জানি না! সেটা কি করে হয়।”
– ” সব কিছুতে তোদের মেয়েদের কে বলতে হবে না কি! ”
প্রাচ্য বলল,
– ” তাহলে ত এই খবর নীলকে দেওয়া লাগে! ”
স্বপ্ন বলল,
– ” প্লিজ এখন কিছু বলিস না।”
– ” কেন?
স্বপ্ন কিছু বলল না।শুধু রহস্যময়ী একটা হাসি দিল।তাতে সব বন্ধু বুঝে গেলো স্বপ্ন কিছু একটা করতে চাইছে।
★★★
– “১৫ হাত শাড়ি প্যাঁচিয়ে সারাবাড়ি এরকম ঘুরঘুর করিস যেন এটা তোর শ্বশুর বাড়ি।সদ্য বিয়ে করে এসেছিস।”
সমুদ্রের প্রথম কথা রোদের কপাল কিছুটা কুঁচকে গেলো পরে ঠিক হয়ে যায়।রোদ কিছুতে বুঝতে না এই ব্যাটার সমস্যা টা কোথায়? যখন জিন্স টপস পড়ত তখন কথা শুনাতো আর এখন শাড়ি পড়েছি তাতে শুনাচ্ছে।আরে ব্যাটা তুই কি জানিস? এই রোদ সেদিন তোর কাছ থেকে যাওয়ার পর থেকে বিউটি পার্লার থেকে লোক এনে ৫ দিন ধরে শাঁড়ি পড়া শিখেছি।কোথায় তুই একটু মিষ্টি হেসে বলবি,বাহ! তোকে যে শাড়িতে খুব ভালো মানায়। পুরো বঊ বউ লাগে।তা না করে বলিস শাড়ি প্যাঁচিয়ে হাঁটি।আরে শালা হৃদয়ের চোখ মেলে একটা বার তাকাতে পারিস না। আন্টি যে কেন জানি তোর জন্মের সময় নিমপাতা রস খাইয়েছে।মিষ্টি কিছু খাওয়াইলে তো আজ মিষ্টি মিষ্টি কথা বের হতো।এত তেতো কথা বলতে পারতি না।

সমুদ্র তুড়ি বাজিয়ে রোদের হুস ফিরায়।
-” কার ধ্যানে মগ্ন ছিলি?
-“আপনার ধ্যানে!”
মিনমিন করে সে বলল।সমুদ্র বলল,
-” কি বললে তুই! ”
-” না কিছু না! ”
– ” আমার সাথে চল!”
– ” কোথায়? ”
– ” জাহান্নামে!”
-” জাহান্নামে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।জান্নাতে হলে যেতে পারতাম।”
সমুদ্র কিছু না বলে রোদকে নিয়ে যায় তা রুমে।তার জামা কাপড় কত গুলো আলমারি থেকে নিয়ে তাকে দিয়ে বলল,
-” এ গুলো ধুয়ে নিয়ে আস!”
” কি?
-“যা বলসি শুনতে পেয়েছিস।তাই দ্বিতীয় বার রিপিট করতে চাই না।”
– ” আপনার কি আমাকে কাজে বেটি জরিনায় মনে হয়।”
– ” কাজের ব্যটি জরিনা না, রহিমা মনে হয়। আমাদের বাড়িতে খেতে হলে কাজ করে খেতে হবে। ফ্রীতে কাউকে খাবার দি না।”
-” আপনি আমায় খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছেন? ”
– ” এই জন্য লোকের ভালো করতে নেই।সমুদ্র তুই যে কেন রোদের ভালো করতে গেলি! ”
রোদ বুঝতে পাচ্ছে না সমুদ্র তার কি এমন ভালোর কথা বলছে। তাই অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকে।সমুদ্র বলল,
– ” রোদ তুই কি জানিস! তোর পেটের মেদ বেড়ে যাচ্ছে।তোর শরীরের ফিটনেস রাখার জন্য কাজ করতে বলছি।তাতে তোর পেট এরকম ভুড়ি দেখা যাবে না।”
রাগে দুঃখে তার কান্না আসছে। তার এই সুন্দর ফিগার।আর তার পেটে কোনো মেদ নেই, স্লিম! আর সমুদ্র কি বলছে।তার পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে সমুদ্রকে বলল,
-” সমুদ্র ভাই এবার ভালো করে আমার পেট দেখে বলেন! সত্যি কি আমার পেটে মেদ জমেছে!”
সমুদ্র কত ক্ষণ বিচক্ষণদের মত তাকিয়ে বলল,
– ” বেশি বেশি করে কাজ করবি।তাহলে তোর ফিটনেস ঠিক থাকবে।”
এটা বলে জামা কাপড় গুলো ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– ফলো মি!”
এতগুলো কাপড় নিয়ে সে একা কি ভাবে নিয়ে যাবে।নতুন নতুন শাড়ি পড়েছে সে। শাড়ি পড়ে এত কাপড় চপড় নিয়ে হাঁটা মুশকিল।সে বলল,
-” সমুদ্র ভাই! আপনি যদি কিছু কাপড় চপড় নিতে তাহলে একটু ভালো হত।এত গুলো কাপড় নিয়ে হাঁটতে পারি না।”
সমুদ্র রাগী চোখে তাকায়।তা দেখে সে বলল,
– ” আমি নিজে নিতে পারবো।”
এটা বলে সে সমুদ্রের পিছন পিছন সিঁড়ি বেয়ে নামে।সোহাগী বলল,
– ” এ কি তুমি কাপড় চোপর নিয়ে কোথায় যাচ্ছো।”
রোদ ফানসে গলায় বলল,
– ” ধুতে! ”
– “ধুবে ভালো কথায়। তাই বলে তুমি যাচ্ছো কেন? ”
সমুদ্র এগিয়ে এসে বলল,
-” ছোট মা! তুমি জানো রোদ কত সুন্দর করে কাপড় চোপড় ধুতে পারে। আর সব চেয়ে বড় কথা রোদ এই কাজ টা করতে ভালো বাসে। রোদ আমার রুমে যেয়ে কি বলে জানো ছোট মা! ”
– ” কি বলে!”
– ” বলে সমুদ্র ভাইয়া। আমি জামা কাপড় ধুতে যাচ্ছি।তোমার কাপড় চোপড় গুলো দাও আমি ধুয়ে নিয়ে আসব।আমি কত বার মানা করলাম তারপর জোর করে কাপড় চোপড় নিয়ে আসল।আমার কোনো কথাই শুনলো না সে।”
রোদ দাঁড়িয়ে তার প্রান প্রিয় ভালোবাসার মানুষের বানোয়াট , মিথ্যে কথা শুনছে।
সমুদ্র আবার বলল,
-” ছোট তোমার কোনো কাপড় ধোয়া লাগবে।”
– ” হ্যাঁ, লাগবে। কেন?
-” সে গুলো নিয়ে আসো।রোদ খুব সুন্দর করে ধুয়ে দিবে।”
রোদ বলল,
– এ্যা
-” দেখলে ছোট মা! রোদ হ্যাঁ বলছে।কি রোদ ধুয়ে দিবে তো।”
সমুদ্রের চোখে ইশারা করে! জেনে সে ‘হ্যাঁ ‘ বলে।রোদ পড়ছে বিপাকে! কি বলবে সে।এখন যদি সত্যি বলে তাহলে এই বদ টা তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।তাই সে বলল,
– ” জ্বী আন্টি দিন।আমি আপনার মেয়ের মতই।মেয়ে হয়ে কি মায়ের কাজ করতে পারি না।”
সোহাগী আর কি বলবে।সমুদ্র তাকে অনেক কিছু বুঝ দে।তার সমুদ্রে নিজে গিয়ে সব কাপড় এনে রোদের কাছে দেয়।তখনই নীল আসে বলল,
– ” রোদ আপু সবার জামা কাপড় যখন ধুয়ে দিচ্ছো।তাহলে আমি কেন বাদ যাবো।এই নাও এগুলো ধুয়ে দিবে ভালো করে।”
এটা বলে নীল একক গাধা কাপড় রোদের কাছে দিয়ে উপরে চলে যায়।রোদ মনে মনে বলল,যেমন ভাই তেমনই মন।সব বদের হাড্ডি।
ভালোবেসে লাস্ট পর্যন্ত তাকে ধোপা গিরি করতে হচ্ছে।সমুদ্রকে পাওয়ার জন্য তা করতে সে রাজি।

শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে পুকুরের শান বাঁধানোর ঘাটে রোদ জামা কাপড় ধুচ্ছিল।এটা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করছিল।ধূসর পট পট করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।তখন রোদের কানের কাছে এসে বলল,
-” সমুদ্র তোকে ধোপা বানিয়ে ছাড়ল। হায়রে এই তুই কাকে ভালো বাসলি।”
এটা বলে সে সরে আসে।রোদ তার দিকে রাগী রাগী চোখে তাকায়।আবার কাজে মন দেয়। তার পর সমুদ্রের দিকে তাকায়,স্বপ্ন আর সমুদ্রে কি নিয়ে কথা বলছে।সমুদ্র হাত নাঁড়িয়ে নাঁড়িয়ে কথা বলছে।ইস! কি সুন্দর লাগছে।।এই মানুষটার জন্য সে সব কিছু করতে পারবে।
– ” রোদ তোর পেটের এত সুন্দর একটা তিল আছে। না দেখলে বুঝতে পারতাম না।হেব্বি লাগছে কিন্তু তিলটা।”
ধূসর বলল। রোদ একবার ধূসরে দিকে তাকালো একবার পেটের দিকে তাকালো।হাতের কাপড়টা ঘাটে রেখে ধূসরে দিকে তেরে আসে।আর ধূসর দৌড়াতে দৌড়াতে বলল,
-” আরে ভাই দৌড়াছ কেন? সুন্দরের প্রশংসা দেখি করা যাবে না!”
সবাই তাদের দৌড়ানি দেখে হাসতে থাকে।শুধু একজনের মুখ খু গম্ভীর হয়ে যায়।রোদ বলল,
– ” বজ্জাত! তোকে কে বলছে আমার পেটের তিলে প্রশংসা করতে?এটা করবে আমার স্বামী।রুপের প্রশংসা করতে পারলি না।ওই দিকে চোখ দিলি কেন? ”
– ” আমি কই চোখ দিলাম।তুই দেখিয়ে রাখলে তো চোখ যাবে।”
রোদের দৌড়ানি খেয়ে সে আবার ঘাটে চলে আসে। উপরে দিকে থেকে রোদ নিচে পানি তাই দাঁড়িয়ে যায় ধূসর।রোদ এসে মারতে থাকে তাকে।হাতাহাতির মধ্যে দুজনে পানিতে পড়ে যায়।সবাই দৌড়ে আসে ঘাটে।তাদের দুজনকে তোলার জন্য! তৃণ আর প্রাচ্য হাঁত বাঁড়ায়। তখনই দুজন দুজনার ছোঁয়া পায়।কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে চোখ নামিয়ে ফেলে।তার দুজনকে টেনে তুলে।
ধূসর বলল,
– ” বজ্জাত মাইয়া একে বারে পানিতে ফেলে দিলি।”
ভিজে গেছে তাই শাড়ি রোদের শরীরে লেপ্টে গেছে। শাড়ি টেনে দেয় গায়ে।তখনই তার চোখ যায় সমুদ্রের দিকে। লাল লাল চোখে তাকিয়ে আছে। চোখে দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।এক্ষুনি যেন তাকে ভস্ম করে দিবে।পৃথিবী ধংস করে দিবে।রোদ ভয় পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।
সমুদ্র সবাইকে অবাক করে দিয়ে রোদকে কোলে তুলে নেয়। সমুদ্র কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।তার বন্দুরা অবাক পানে তাকিয়ে আছে সমুদ্রে কাজে।তাদের মনে হচ্ছে না এটা তাদের বন্ধু সমুদ্র।
রোদ সমুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে।আজকে তার মনে হচ্ছে পৃথিবীর সে সবচেয়ে বেশি সুখী মানূষ।কোনোদিন ভাবে নি সে এটা।ভাবনার বাহিরে অনাঙ্কিত কিছু ঘটে গেলে। সবার কাছে থেকে ভালো লাগে।আর সে অনাঙখিত জিনিস যদি ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে পায়। তাহলে সেটা ভাষায় বলে প্রকাশ করা যাবে না।

https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/921248394972547/

স্বপ্নীল ২৮

0

স্বপ্নীল
২৮
নিজের ঠোঁট দিয়ে স্বপ্ন’র ঠোঁট আকঁড়ে ধরে।তখনই স্বপ্ন নীলের ঠোঁট কামড়ে ধরে তাতে নীলের চোখ গুলো ছানাবড়া হয়ে যায়।চোখ খুলে তাকায় স্বপ্নের দিকে। তার চোখে মুখে দুষ্টুমির আভা।নীলের বুঝতে আর বাকি রইল না।এতক্ষণ স্বপ্ন ভং ধরেছে! যাতে সে কিস করেছে।নীলের খুব কান্না পাচ্ছে।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।স্বপ্ন তাকে দুহাত দিকে ঝাপটে ধরে রেখেছে!নিজের হাত দিয়ে স্বপ্ন’র বুকে,পেটে আঘাত করতে থাকে। তারপর স্বপ্ন ছেড়ে দেয়।স্বপ্ন বলল,
– “এটা হলো আমাকে গোবর খাওয়ানোর শাস্তি! ”
নীল কান্না করতে দেখে স্বপ্ন বুঝতে পারে এটা ঠিক হয়নি করা।নীল বলল,
-” কেন আমার এত বড় সর্বনাশ করলেন?
নীলের এই কথা স্বপ্ন’র হৃদপিন্ড ছেদ করে উঠে।নীল কে হারানোর ভয় বুকের ভিতরে চেপে ধরে।
– “মেয়েদের কে স্পর্শ করা একমাত্র অধিকার থাকে তার স্বামীর! আর আপনি,,,,,
এটা বলে নীল কেঁদে দেয়।স্বপ্ন নীলের হাত ধরতে নিলেই ঝামটা মেরে ফেলে দেয়।
– ” আমি তোমায় সেই অধিকার দেবো?
নীল চোখ তুলে তাকায় স্বপ্নের দিকে।চোখে পানি মুছে বলল,
– ” মানে?
– ” যেদিন তোমার লালশাড়িতে বধুবেশে দেখেছি সেদিনে আমার হৃদস্পন্দন আমায় জানিয়ে দিয়েছে তুমি আমার।তোমার জন্মই হয়েছে আমার জন্য!ভালো বেসে ফেলেছি খুব বেশি তোমায়।ভালোবেসে সেই অধিকার দিতে চাই তোমায়।ভালো বেসেছি বলে এত বড় স্পর্ধা দেখাতে পেরেছি তোমার সাথে! না হলে এমন কিছু কোনো দিন এই স্বপ্ন করতেই না।তোমার সাথে এরকম করার কারণ হলো তুমি আমার হৃদয়ের রানি।আমার বউ যদি কেউ একমাত্র হয় সেটা শুধু তুমি। ”
নীল নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। আজ এই ছেলেরা জন্য তার সব শেষ হয়ে গেলো।তার সুরওয়াল এসব জানলে কি তাকে কখন গ্রহণ করবে। এই ছেলের জন্য তার চরিত্রহীন তকমা লেগেছে।কিছুতে ছাড় বে না এই ছেলেকে।এর শাস্তি এক্ষুনি দিয়ে ছাড়বে।চোখে পানি মুছে স্বপ্ন শার্টের কলার টেনে ধরে বলল,
-” কি করে তুই ভাবলি আমি তোকে ভালোবাসব!তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো! কেন তুই আমায় ছুয়েছিস!”
এটা বলে নীল হাতের নখ দিয়ে স্বপ্ন’র গাল দুটো আঁচড়ে দেয় খুব জোরে।স্বপ্ন ব্যথা ফেলে কিছু বলে না।নিজেকে খুব শক্ত করে রেখেছে। নীল বদ্ধ পাগল, উন্মাদের মত আচরণ করে। খুব জোরে জোরে স্বপ্ন’র বুকে মারতে থাকে। স্বপ্ন চুল ধরে জোরে জোরে টানতে থাকে তাতে সে ক্ষেমৎ হয় না।দিঘির পাড়ে উঠে এসে মোটা একটা লাঠি নিয়ে আসে।লাঠি দিয়ে খুব জোরে জোরে আঘাত করে স্বপ্নকে।স্বপ্ন তার দুটো হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে আঘাতের ব্যথা গুলো সহ্য করছে। একটা বার বাঁধা দেইনি সে নীলকে।নীল নিজের সব রাগ লাঠি দিয়ে মেরে ঝাড়তে থাকে।এক সময় সে হয়রান হয়ে যায়! লাঠি ফেলে দিয়ে স্বপ্নর চুল টেনে বলল,
– আমার মারে কথা মনের থাকলে আর কোনো মেয়েকে ছোঁয়ার স্পর্ধা করবি না।আর রইল তোর ভালোবাসার আন্সার।কান খুলে শুনে রাখ আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি।তোকে ভালোবাসার কথা প্রশ্নেই উঠে না।”
এটা বলে চলে যায় নীল।স্বপ্ন কানে নীলের একটা কথা বাজছে ‘ আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি ‘ লাঠির আঘাতে চেয়ে নীলের বলে যাওয়া এই কথার আঘাত সে বেশি পেয়েছে। তার হৃদয় যেন কেউ ছুরি দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিলো ।জীবনে প্রথমবার কারো প্রেমে পড়েছে সে।আর সেই ভালোবাসা কথা বলার জন্য এভাবে পিটুনিয়ে খেয়ে রিফিউজি পেয়েছে।

– ” বিয়ে করবি আমায়? ”
প্রাচ্য কথায় তৃণ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে থাকায়।কিন্তু প্রত্যুত্তর কিছু বললো না।প্রাচ্য আবার বলল,
-” বিয়ে করবি আমায়? ”
– “আর ইউ ম্যাড!
এটা বলে চলে যেতে নিলে প্রাচ্য তার হাত ধরে আঁটকিয়ে বলল,
– ” তখনকার ঘটনার জন্য আমি সরি।”
– ” তৃণ এত ছোট তুচ্ছ বিষয় মনে রাখে না! হাত ছাড় যাবো আমি! ”
-” আমার কথা উত্তর ফেলাম না আমি! ”
– ” উত্তর পাওয়ার মত কোনো কথা বলিসনি ”
– ” কেন এত হেয়ালি করছিস! বিয়ে করবি আমায়?
– ” তোর বর কি ভেগে গেছে নাকি?
এরকম একটা সিরিয়াস কথায় প্রাচ্য তৃণ থেকে এরকম কথাই আশাই করে নি।
– ” আমি তোকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না?
– ” বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটা ভেবে নেওয়া উচিত ছিল।কিন্তু এখন ত আমি তোকে বিয়ে করব না। ”
প্রাচ্য বুক ফেটে যাচ্ছে তৃণ এরকম কথায়।আজ তার জন্য তৃণ অভিমান করে এসব বলছে।
– ” জানি ভুল করিছি আমি! এখন ও সময় আছে শুধরে নেওয়ার। ”
– ” আমি তো শুধরাবো না।আর এসব বলছিস কেন তুই? তোর মুখে এসব মানায় না! একটা দুশ্চরিত্র ছেলে কে বিয়ে করতি চাস কেন?
– ” ভালোবাসি বলে! ”
এটা বলে তৃণকে জড়িয়ে ধরে।তৃণ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তাকে। তাচ্ছিল্য হেসে তৃণ বলল,
– ” ভালোবাসা মাই ফুট!তোর জন্য জমে থাকা সব ভালোবাসা কালকে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মুচে সাফ করে এসেছি। এই হৃদয়ে ভালোবাসার ফুল ঝরে গেছে! ”
– ” আমি ফুটাবো তোর হৃদয়ে ভালোবাসার ফুল! ”
– ” আমি চাইনা আমার হৃদয়ে ঝরে যাওয়া কোনো ফুল ফুটুক।বাই দ্য ওয়ে তোকে এসব বলে আমার লাভ নেই।তোকে লাস্ট বারের জন্য বলছি আমার সামনে এসে এসব ন্যাঁকা ভালোবাসা কথা বলতে আসবি না।”
– ” কেন অভিমান করে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিস?”
– ” যেখানে ভালোবাসা থাকে সেখানে অভিমান সাজে! তোর আর আমার মধ্যে কোনো ভালোবাসা নেই তাহলে অভিমান আসবে কোথায় থেকে? ”
প্রাচ্য তৃণ দুইহাত নিজের হাতে মুঠোয় নিয়ে তার গালে লাগিয়ে বলল,
– ” আমি তোকে থাপ্পড় মেরেছি তুই তার বদলে হাজারটা থাপ্পড় মার!আমি কিছু মনে করবো না।তারপর তুই আমায় ফিরিয়ে দিস না।আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না ”
তৃণ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে চলে যায়। আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে যে কষ্ট আমায় দিয়েছিস! আজ থেকে সেই কষ্ট তুই উপভোগ করবি।আমি চাই তোর বিয়ে অন্য কারো সাথে হোক।আমাকে না পাওয়ার আগুন জ্বলে তুই ছাই হয়ে যাস এটাই চাই আমি।
প্রাচ্য সেখানে বসে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।ভুল করে ডিসিশন নিলে তাহলে পস্তাতে হয়।কোনো কিছু করার আগে অন্তত দশবার ভাবা উচিত।এই কাজে ভবিষ্যৎ তার উপরে কি ফল আসবে। ভেবে চিনতে সব কাজ করতে হয়! হুট করে কোনো ডিসিশন নেওয়ার জীবনের জন্য ঝুঁকি পূর্ণ।যেমনটা প্রাচ্য’র ক্ষেতে ঘটছে।তৃণ ছাড়া কাউকে তার লাইফে কল্পনা করতে পারবে না বলেই তারপর রাগের বসে ঝুঁকিপূর্ণ সিধান্ত নেয়।তার ফল সে পাচ্ছে।

স্বপ্নকে এভাবে পাগলাটে অবস্থ রুমে ভিতরে ঢুকতে দেখে সমুদ্র বলল,
-” মনে হচ্ছে বাসর ঘরে বিড়াল মারতে গিয়ে স্বপ্ন’র এই অবস্থা হয়েছে! ”
এটা শুনে তৃণ আর ধূসর হেসে দেয়।স্বপ্ন চোখ তুলে তাদের দিকে তাকায়।সমুদ্র বলল,
– ” বেচারা স্বপ্ন’র খুব কষ্ট হয়েছে তোর তাই না! মুখের কি হাল করেছে।”
ধূসর সমুদ্র পিঠে চাপল মেরে বলল,
– ” হ্যাঁ রে স্বপ্ন! দিনে কি বাসর ঘর সেরে ফেলনি নাকি!রাতে জন্য কিছু বাকি রাখতি
স্বপ্ন চোখ বড় বড় করে তাকায় তাদের দিকে তখনই তৃণ বলল,
– “সেই সৌভাগ্য বতী মেয়েটা কে?কার সাথে মধুচন্দ্রিমা করে তোর এই হাল হয়েছে।”
স্বপ্ন ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়ায়।নিজের মুখে আঁচড় গুলো দেখে।গলায়, ঘাড়ে, গালে সব নখের আঁচড় গুলো দেখলে যে কেউ বলবে সে বাসর করেছে। আর বন্ধুরা হলে তো কথাই নেই।তার গালে এক বিভৎস অবস্থা।সমুদ্র তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
-” বললি না মেয়েটা কে?
-” মেয়েটা তোর বোন!
এটা বলে আয়নার নিজেকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে যায়।সমুদ্র সিরিয়াস হয়ে যায়।তৃণ আর ধূসর দিকে তাকায়।তারা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।স্বপ্ন দিকে তৃণ তাকায়?
-” আমার বোন মানে?
-” তোর বোন আমার এই হাল করেছে।
– ” কে?
– ” কে? আবার! যার দ্বারা এই কাজ সম্ভব সেই।”
সমুদ্র খুব ভালো করেই জানে এই কাজ প্রাচ্য জীবনে করবে না।স্বপ্ন আর প্রাচ্য মধ্যে বোঝা পড়াটা ভালো।এই কাজ একজনে দ্বারায় সম্ভব। আর সে হলো নীল।তারেই কাজ হবে।
– ” নীল করেছে?
এটা বলে হাসতে থাকে।স্বপ্ন বলল,
– ” হাস ভালো করে! আমার তো মুখের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে?
– ” আমি যতটুকু জানি নীলের পিছন কেউ না লাগলে সে এ রকম করবে না। তুই কি করিস ওর সাথে?
– ” কিছু করিনি! সুধু বলেছি ভালোবাসি! ”
– ” কি?
সমুদ্র খুব জোরে চিৎকার করে বলল!সবাই চুপসে যায়।সবার এই ফানসে মুখ দেখে সমুদ্র অট্রহাসিতে ফেটে পড়ে।তার হাসি দেখে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খায়।সমুদ্র স্বপ্ন’র বাহুতে চাপল মেরে বলল,
– ” আরে আমি বাংলা সিনেমার নায়িকাদের ভিলেন ভাই না যে বোনের প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়াবো।”
★★★
শরীরের ব্যথায় স্বপ্ন রাতে হাঁড় কাঁপানো জ্বর আসে।সবাই স্বপ্নের রুমে উপস্থিত। রোকেয়া বেগম স্বপ্ন’র মাথা জলপটি দিতে থাকে।স্বপ্ন বলল,
– ” আন্টি আমার গায়ে সামান্য জ্বর! সেরে যাবে রাতেই এটা নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই।”
রোকেয়া ধমকিয়ে বলল,
– ” চুপ করো! গা পুড়ে যাচ্ছে তোমার! আর বলছো সামান্য। ”
শায়লা বলল,
-” বেড়াতে এসে গায়ে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলেছো!”
-” আন্টি আমি ঠিক আছি?তোমরা সবাই গিয়ে শুয়ে পড়ো! সমুদ্র আছে তো!”
নীল এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল।এখন স্বপ্ন উপর থেকে রাগ কমেনি।ইচ্ছা করছে এখন কামড়িয়ে দিতে।জ্বর এসেছে ভালো হয়েছে।এই বজ্জাত মরলে সে বেশি খুশি হবে।কত বড় সাহস আমার ঠোঁট কাঁমড়িয়ে ধরে। মির্জা ফ্যামিলি সবাই চলে যায়।সমুদ্র তার রুমে যায় স্বপ্ন’র জন্য মুভ আনার জন্য।প্রাচ্য যেয়ে স্বপ্ন পাশে বসে। বলল,
-” বিকালে তো ঠিক দেখলাম, হঠাৎ করে জ্বর এলো কেন? ”
এটা বলে স্বপ্ন বাহু ধরে।স্বপ্ন আহ্ করে আর্তচিৎকার দেয়।সবাই বুঝতে পারল না স্বপ্ন হঠাৎ করে কেন চিৎকার করলো? প্রাচ্য হতভাগ যে এত জোরে ধরেনি স্বপ্ন ব্যথা পাবে।
– ” কি হয়েছে তোর! চিৎকার করলি কেন?”
স্বপ্ন বলল,
– ” ও কিছু না! ”
-“ও কিছু না হলে বুঝি তুই এত জোরে চিৎকার করলি ও।শার্ট খোল! বাহুতে কি হয়েছে আমি দেখবো।”
স্বপ্ন খুলতে দেয় না।সে খুব ভালো করে জানে শার্ট খুললে মাইরে দাগ গুলো স্পর্শ দেখা যাবে। মাইরে দাগ দেখলে জিজ্ঞেস করবে ? কিভাবে হয়েছে? আর সে কিছুতেই নীলকে ছোট করতে দিবে না।।অসুস্থ বলে কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু প্রাচ্য আর রোদ জোর করে শার্ট খুলে ফেলে।শার্ট খুলে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। মাইরে দাগ গুলো কালো হয়ে নীলচে হয়ে গেছে।প্রাচ্য স্বপ্নকে ঘুরিয়ে দেখে পিঠে ও সেইম অবস্থা।স্বপ্ন অবস্থা দেখে সবার মুখে অমাবস্যা নেমে আসে।তাদের প্রান প্রিয় বন্ধুর এই অবস্থা কে করেছে?
-“তোকে কে এইভাবে আঘাত করেছে।”
প্রাচ্য বলল।কিন্তু স্বপ্ন কিছু বললো না।তৃণ বললো,
– ” চুপ করে থাকিস না কে করেছে বল একবার! তার পর তাকে মজা দেখাবো।”
রোদ বলল,
-” স্বপ্ন তুই শুধু নামটা বল!
ধূসর বলো,
-” আমি বুঝতে পাচ্ছি কে করেছে? ”
সবাই এক সঙ্গে বলে উঠে,
-” কে করেছে? ”
– ” স্বপ্ন গালের অবস্থা যখন নীল করেছে তার মানে এই আঘাত গুলো নীলই করেছে! ”
প্রাচ্য আতঁকে উঠে বলল,
-” নীল কেন এসব করতে যাবে?
ধূসর বলল,
-” সেটা আমার চেয়ে ভালো স্বপ্ন বলতে পারে?”
সবার এবার দৃষ্টি স্বপ্নর দিকে।জোঁকের মত স্বপ্নকে ঘিরে ধরে।বাধ্য হয়ে একপ্রকার জোর করে সবাই স্বপ্ন’র থেকে কথা বের করে। স্বপ্ন সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলে।তখনই ধূসর বলল,
– “শালা তোরা কি? দুজনই তোরা মেয়েদের হাতে মাইর খাইলি।কেউ মাইর খায় প্রাচ্য হাতে আর কেউ মাইর খায় নীলের হাতে।আর প্রাচ্য তোরা দুইবোন কি মাইর ছাড়া কিছু জানি না। তুই থাপ্পড় দিয়ে দিয়ে তৃণ গালের বেহাল করেছিস। আর নীল সেতো লাঠি দিয়ে পিটাইছে।”
ধূসরের কথা প্রাচ্য ‘র চাঁদমাখা মুখ খানা অমাবস্যা নেমে আসে।প্রাচ্য তৃন দিকে তাকায়।এখন হাতের আঙ্গুলের চাপ দেখা যাচ্ছে। চোখে পানি টলমল করতে থাকে।তৃণ বলল,
-” তার মানে আমাদের স্বপ্ন ফার্স্ট কিস সেরে ফেলেছে।”
ধূসর বলল,
-” কেমন ফিল করলি স্বপ্ন! বল না প্লিজ!”
– ” ফিল আসবে কি করে? যে মাইরটা না দিলো আমায়! মাইরের চোটে ফিল পালাইছে।”
রোদ বললো,
-” আমার মাথা আসছে না স্বপ্ন ‘র মত ছেলেকে নীল রিফিউজ করেছে। ভাবতে অভাব লাগছে।”
– ” আমার মাথায় আসছে না! ”
ধূসর বলল!তখনই স্বপ্ন বলল,
– -” সে নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে!”
প্রাচ্য আতঁকে উঠে বলল,
– ” কি বলছিস তুই? ”
-” নীল নিজের মুখে বলেছে! ”
– ” নীল অন্য কাউকে ভালোবাসলে অন্তত আমায় বলতো!”
তৃণ বলল,
-” নীল ত মিথ্যে বলতে পারে! ”
ধূসর বলল,
-” হতে ও পারে।কারণ স্বপ্ন তাকে জোর করে কিস করেছে বলে মিথ্যে বলতে পারে।”
প্রাচ্য বলল,
-“আমি কালকে সকালে জেনে নিব।নীল মিথ্যে বলছে কি না সত্যি বলছে!”
তখনই সমুদ্র রুমে ঢুকে।স্বপ্ন এই অবস্থা দেখে বিস্মিত হয় সে।তাঁরা সবাই তাকে সব কিছু খুলে বলে।প্রাচ্য ওয়েন্টমেন্ট এনে আঘাতের জায়গা গুলো লাগিয়ে দেয়। তার সবাই চলে যায়।

নীল ঘুমাতে পাচ্ছে না বার বার আজকে ঘটনা চোখের সামনে ভাসছে।চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে।কিন্তু সে চায় না এই বাজে ঘটনা মনে রাখতে।তাই ভুলার জন্য ঘুমাতে চায়।কিন্তু আজকে তার চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে যায়।খাট থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়।ডান হাতটা ঠোঁটের উপরে রাখে।এইখানে আজ ওই বজ্জাত ব্যাটার কাঁমড়ে দিয়েছে।ভাবতে তার গা গিনগিন করে উঠে।টেবিলে রাখা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে ঠোঁট মুচতে থাকে।কয়েক হাজার বার যে তার ঠোঁট টিস্যু দিয়ে মুচেছে। রাগে দুঃখে তার চোখে পানি বের হয়ে আসে।নীলের বার বার মনে হচ্ছে স্বপ্ন’র শাস্তি খুব কম হয়ে গেছে তার আর বাকি শাস্তি দেওয়া উচিত।হ্যাঁ,নীল তাকে আর ও শাস্তি আর দিবে।এই নীলকে ছুয়েছে তার মাশুল একবার না হাজার বার দিতে হবে। টেবিলের রাখা ফুলদানি ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দেয়।

#চলবে
#স্বর্ণা

https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/920600391704014/

স্বপ্নীল ২৭

0

স্বপ্নীল
২৭
-“তৃণ তোমার গালে কি হয়েছে! ”
শায়লা বেগমের কথায় তৃণ কিছুটা ঘাপড়ে যায়। কি বলবে এখন সে।গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে কি বললে সবাই বিশ্বাস করবে তার কথা।শায়লা আবার বলল,
-“দেখে মনে হয়েছে চড় মেরেছে কেউ তোমায়! আঙ্গুলের চাপ বসে লাল হয়ে গেছে!”
এবার তৃণ আরো বেশি ঘাপড়ে যায়।কি উত্তর দিবে সে।আমতা আমতা করে বলল,
– আ – আ -আন্টি!এখানে প্রচুর মশা।মশাকে মারতে যেয়ে ঠাস করে নিজের গালে চড় মেরে ফেলেছি।তাই হয়তো লাল হয়ে গেছে!”
মুখে কৃত্রিম হাসি জুলিয়ে বলল।শায়লা তৃণের কথা মৃদু হেসে বলল,
-” বাচ্চাদদের মত কেউ এমন করে। স্বপ্ন আর ধূসর কোথায়?
তখনই তারা রুমে ঢুকে!ধূসর বলল,
-“এই তো আন্টি আমরা! ”
শায়লা পিছন ঘুরে তাদের দেখে বলল,
-” এই বৃষ্টির দিনে তোমাদের জন্য গরম গরম পাখোড়া আর চা বানিয়েছি! নিচে এসো সবাই।”
এটা বলে তিনি চলে যায়।তখনই সমুদ্র এসে রুমে ঢুকে বলল,
– ” বৃষ্টি কমে গেছে বিকালে আমরা সবাই বের হবো! ”
ধূসর বলল,
– ” কোথায় যাবি? ”
– “ডেটে যাবো! যাবি তোরা আমার সাথে!
স্বপ্ন বলল,
-” তুই ডেটে যাবি তাও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। ”
– ” তাও ঠিক বলেছি! এসব ডেটিং পেটিং ভালো লাগে না আমার! তাই প্রেম ভালোবসা তুলে রেখেছি বউয়ের জন্য! একে বারে সব ভালোবাসা বঊ কে দিবো!
ধূসর আর স্বপ্ন চাপা হাসে।সমুদ্র খেয়াল করলো তৃণ চুপচাপ ভাবে বসে আছে! কোনো কথা নেই।তৃণ গালের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তোর গালে কি হয়েছে? ”
– ” ও কিছু হয়নি! ”
ধূসর এসে বলল,
-“দেখে তো মনে হয় চড় মেরেছে কেউ!ভাই কোনো মেয়ে মারিনি তো চড় তোকে।”
তৃণ রাগী চোখে তাকায়।ধূসর ভয়ে ঢোক গিলে কথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিতে বলল,
-“আমি বলছিলাম কি………
তার আগেই তৃণ বলল,
– “মশা কে মারতে গিয়ে নিজের হাতের চড় নিজের গালে পড়েছে তাই এই অবস্থা।”
তার কথায় সবাই হু হু করে ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে।ধূসর বলল,
-” মশা তোর গালে বসেছে তোকে চুমু খাওয়ার জন্য।আর তুই তাকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজের গালের এই হাল করেছিস! ”
সমুদ্র সন্দেহজনক ভাবে বলল,
– ” তুই যাই বলিস, আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না তোর কথায়। ”
স্বপ্ন’র কেন জানি সমুদ্রের সাথে একমত! তার ও কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না তৃণ কথায়।কিছু একটা হয়েছে! হয়ত প্রাচ্য সাথে কিছু হয়েছে বলেই সমুদ্রের সামনে আমাদের কাছে মিথ্যে বলেছে! তৃণ বলল,
-” মিথ্যে বলতে যাবো কেন তোদের কাছে? ”
– “সেটা তুই ভালো করে জানিস।হয়তো আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকানোর জন্য।এখানে আমরা একজন আরেক জনের বন্ধু।কেউ কারো কাছ থেকে কোনো কিছু লুকাইনি আজ পর্যন্ত। কারো সাথে খারাপ কিছু ঘটলে শেয়ার করতাম!তা সবাই মিলে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করতাম।”
তৃণ সমুদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলল,
-” কিচ্ছু লুকাচ্ছি না আমি তোদের কাজ থেকে! ”
-” তাই যেন হয়।এখন চল নিচে! ”
সমুদ্র বলে যায়।স্বপ্ন তৃণ কাঁধে হাত রেখে বলল,
– ” কি হয়েছে প্রাচ্য’র সাথে তোর?
কাঁধ থেকে স্বপ্ন’র হাত সরিয়ে বলল,
– ” কিছু হয়নি আমার! ”
-“আমি জানি কি হয়েছে! ”
-” রোদ তুই?
স্বপ্ন বলল।রোদ দরজা দাঁড়িয়ে বলছিল কথাটা।তাদের কাছে এসে বৃষ্টিতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল।ধূসর বলল,
-” ওই ভিডিও দেখে ও প্রাচ্য তৃণকে থাপ্পড় মেরেছে বিশ্বাসে হচ্ছে না।”

– “ভিডিও টা দেখানোর জন্য সুযোগ পেয়েছি নাকি আমি! ”
স্বপ্ন বলল,
-” মানে?
– ” মানে খুব সোজা। প্রাচ্য কে বলতে যেয়ে পারিনি কিছু বলতে।আজকে এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর জোর করে একটু আগে ভিডিও টা দেখিয়েছি।”
– ” ও! ”
তৃণ এতক্ষণ দাঁড়িয়ে বন্ধুদের কথা শুনছিল।কি ভিডিও কথা বলছে তার বন্ধুরা মাথায় কিছু ঢুকছে না ।তৃণ বলল,
-“কিসের ভিডিও কথা বলছিস তোরা? ”
রোদ সব খুলে বলে তৃণ কে।তৃণ ধমকিয়ে বলল,
– ” কে বলেছে তোকে পণ্ডিত করতে? কে বলেছে ওকে ভিডিও দেখাতে?আমি বলছি ওর ভুল ভাঙাতে।ওর ভুল নিতে ও থাকতো।পণ্ডিত করতে গেলি কেন তুই? আর তোদের সবাইকে বলি প্রাচ্য’র কথা কোনোদিন কেউ আমাকে বলবি না! ”
তৃণ হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে যায়।তৃণ এহেম আচরণ করে যখন সে রেগে থাকে।তার বন্ধুরা খুব ভালো করে জানে।রোদ মুখ ভেঙচি কেটে বলল,
– ” উপকার নামে চড়! যা বলে আর কি? ”
এটা বলে চলে যায় সে।স্বপ্ন কিছু বুঝতে পাচ্ছে কি থেকে কি হয়ে গেছে।স্বপ্ন ভালো করে বুঝতে পাচ্ছে তৃণ প্রাচ্যর উপরে রেগে আছে। তৃণ যদি একবার কারো উপরে রেগে যায় তাহলে খুব সহজ হতে পারে না তার উপরে। এখন প্রাচ্য’র হয়তো ভুল ভেঙে গেছে।কিন্তু তৃণ…..স্বপ্ন মাথা আউলাজাউলা হয়ে যাচ্ছে!তৃণকে এখন আর বুঝাতে কেউ পারবে না সেটা খুব ভালো করেই জানে।।এখন তাকে কিছু একটা করতে হবে সবার অগোচরে।

★★★
প্রাচ্য’র বিয়ের ফুলের অর্ডার দিয়ে বাড়ি আসার পথে স্বপ্ন’র সাথে নীলের দেখা হয়।স্বপ্ন তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।তা দেখে ভ্রু দুটো যোগ করে কপাল কুঁচকে তাকায় নীল।স্বপ্ন বলল,
-” কালকের জন্য সরি! আসলে তুমি যেমন আমায় ভাবছো আমি কিন্তু তেমন নই।
নীল মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– ” হুম!তুমি যেমন ভাবছো আমি কিন্তু তেমন নই!তাহলে আপনি কেমন গো একটু শুনি আমি ! ”
– ” আসলে,,,,
-” আসলে কি? কালকে তো বিস্তারিত বলে দিয়েছি এখন আবার পথ আঁটকিয়ে রাখছেন কেন? ”
– “তুমি কিন্ত এখন আমায় ভুল বুঝছো!”
নীল এবার স্বপ্ন’র দিকে তাকিয়ে কটমট করে নিজের মনে মনে বলল,তোকে আমি শাস্তি দিবো বজ্জাত ব্যাটা, তুই আমায় কিস করতে এসেছিস।এত বড় স্পর্ধা তোর!
এটা বলে তার পাশে রাস্তার সাইডে একটা গোবরের স্তুব দেখে!তখন নীলের মাথা দুষ্টুবুদ্ধি খেলে।নীল স্বপ্ন’র কাছে এসে বলল,
-” বিশ্বাস করুন আমি ভুল বুঝিনি।আমি বুঝেছি ইচ্ছা করে আপনি আমার কাছে আসেনি। ”
এটা বলে একধাক্কা মারে স্বপ্নকে গোবরের দিকে।স্বপ্ন বুঝতে পারেনি নীল এমন কিছু একটা করবে! নীল এখন দাঁড়িয়ে আছে মুখবর্তী গোবর মাখামাখি স্বপ্ন’র মুখ খানা দেখার জন্য।নীল স্বপ্ন’র কাঁধে হাত রেখে তার মুখ ঘুরায়। একটু দূরে সরে গিয়ে হু হু হু করে ভুবন কাঁপিয়ে হাসতে থাকে নীল।চোখ গুলো ছাড়া স্বপ্ন’র কিছু দেখা যায় না। মুখে,শার্টে গোবরে মাখামাখি কি এক অবস্থা।নীল হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়।লাস্ট পর্যায় রাস্তা বসে পড়ে হাসতে হাসতে।স্বপ্ন তার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।নীল খুব কষ্ট করে নিজের হাসি দমিয়ে রেখে আদুরের গলায় বলল,

-” আমার বাবুটা খুব শখ ছিল আমাকে কিস করার।তাই গরু গোবর খাইয়ে সাধ মিটিয়ে দিলাম। মুখ মিষ্টি একটা জিনিস খাইলা বাবু! কেমন হইছে? বাবু টা বললা না তো!”
অট্রহাসিতে ফেটে পড়ে নীল এটা বলে।স্বপ্ন ও সুযোগে সদ ব্যবহার করবে।কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায় সে।মুখের গোবর সরিয়ে বলল,
– “অন্যায় যখন করিছি শাস্তি ত পেতে হতো!বাই ওয়ে আমাকে একটা পুকুর দেখিয়ে দিতে পারবে।”
– “কেন?
– “এগুলো নিয়ে ত বাসায় যেতে পারবো না তাই ধুয়ে নিতাম আর কি? ”
পুকুর কথা শুনে নীলের মাথায় আরেকটা দুষ্টুবুদ্ধি আঁটে!স্বপ্ন তো ঢাকা থাকে! ঢাকার ছেলেরা তো আর সাঁতার জানে না। তাহলে এই স্বপ্ন ব্যাটাকে এবার পুকুরে পানিতে চুবিয়ে আরেকটা শিক্ষা দেওয়া যাবে।স্বপ্ন দিকে তাকিয়ে বলল,
– ” আমার পিছন পিছন চলুন! ”
নীল ইচ্ছা করে তাদের গ্রামের সব চেয়ে বড় দিঘিটার কাছে আনে স্বপ্নকে যাতে ভালো করে ডুবিয়ে মারতে পারে! দিঘির শানবাঁধানো ঘাটে সামনে এসে বলল,
– ” যান ধুয়ে আসুন! ”
স্বপ্ন কোনো কথা না বলে সিঁড়ির একধাপ একধাপ করে এগিয়ে যায়।একটু উবু হয়ে হাত দুটো এক করে আঁজলা ভরতে পানি নিয়ে মুখে ছিঁটাতে থাকে।উপর থেকে নীল দেখতে থাকে। এই হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে আজকে সে গোবর খাইয়েছে ভাবতেই তার খুশি খুশি লাগছে,খুশিতে এখানে ডান্স করতে ইচ্ছা করছে।এখব আবার চুবানি খাবে! খুশিতে নীলের মন গদগদ করছে।পা টিপে টিপে স্বপ্ন’র দিকে এগিয়ে যায়। যাতে স্বপ্ন কিছু টের না পায়।স্বপ্ন পিছন দাঁড়িয়ে তার দুইহাত দিয়ে স্বপ্নকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।ঝাঁপ করে একটা শব্দ হয়।আর নীল তো সেই খুশি।মনে মনে রাজ্য’র গালি দিতে থাকে।স্বপ্ন হাঁত উঠিয়ে বঁাচার অনেক টাই করতে থাকে।কিন্তু পারে না সে কিছু ক্ষণ পর হাত দুটো ডুবে যায়।নীলের বুঝতে বাকি রইল না স্বপ্ন ডুবে যাচ্ছে। ডুবে গেলে মরে যাবে! আর মরে গেলে তার ফাঁসি হবে।তার ফাঁসি হলে সুরওয়ালা কি হবে। বজ্জাত ব্যাটাকে শায়েস্তা করতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছে!
তাই হাতের পার্স আর মোবাইল রেখে দিঘিতে সে ঝাঁপ দেয়।সাঁতার কেটে স্বপ্নর কাছে যায়! সাঁতরিয়ে সাঁতরিয়ে অনেক কষ্ট করে ঘাটে আনে স্বপ্নকে।পানিতে ভারি কিছু হালকা ওজন হয় তাই হয়তো ৯০ কেজি ওয়ালা ব্যাটাকে আনতে পেড়েছে।না হলে মরে কিছুক্ষণ পর ভাসা দিত।সাঁতার কাঁটায় সে হাঁফিয়ে যায়।জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। ঘাড় ঘুড়িয়ে স্বপ্ন’র দিকে তাকায়। অজানা ভয় আঁকড়ে ধরে তার মনে।অনেক বার স্বপ্ন’র শরীর ঝাঁকাতে থাকে।কিন্তু স্বপ্ন হুস নেই।সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। কি করবে ভেবেছে পাচ্ছে না নীল।স্বপ্ন হয় তো পানি খেয়েছে সেগুলো তো বের করতে হবে।দুইহাত দিয়ে স্বপ্ন’র পেটে চাপ দেয়। কিন্তু হালকা একটি বেড়িয়েছে আসে ।স্বপ্ন’র মুখের সামনে আসে।নিশ্বাস চেক করে দেখে নিশ্বাস আছে।কিন্তু জ্ঞান ফিরাবে কি করে।মাথা কিছু আসছে তার। নিজেকে সে গালি দিচ্ছে কেন এই আপদ কে পানিতে ফেলাতে গেলো।হঠাৎ মনে পড়ে যায়।প্রাইমারী থাকতে বইয়েতে পড়েছে।কেউ পানি পড়ে গেলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া লাগে। পানি খেলে পেটে চাপ দিয়ে বের করতে সেটা করে ফেলেছে।আর বাকি রইল মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়া। অনেক সিনেমায় সেটাই দেখেছে।ছিঃ এখন কে লাগাবে এই বজ্জাতে মুখে মুখ।চারদিকে তাকিয়ে কাউকে খুজতে থাকে।কিন্তু পায় না। অনেক সময় ফেরিয়ে যায় তাতে স্বপ্ন’র হুস ফিরে না।তাই বাধ্য হয় সে ঠিক করে নিজেই এই কাজ করবে।কেন করলি নীল এটা তুই।এখন ঠ্যালা সামলা। এটা বলে স্বপ্ন মুখের উপরে ঝুকে পড়ে।নীলের চোখ যায় স্বপ্ন ঠোঁটের দিকে।এবার নিজের হাতে নিজের ঠোঁট ধরে সে বলল,খুব করে চেয়েছিলাম এই ঠোঁটে সবার আগে সুর ওয়ালা ঠোঁটে মিশাবো।কিন্তু এখন একে বাঁচাতে হলে,,,,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় স্বপ্ন’র দিকে।ঝুকে পড়ে সে।কান্না করতে ইচ্ছা করছে।নিজের দোষে এই শাস্তি পাচ্ছে। নিজের ঠোঁট গুলো দিয়ে স্বপ্ন’র ঠোঁট আকঁড়ে ধরে।

#চলবে
কাউছার

স্বপ্নীল ২৬

0

স্বপ্নীল
২৬
মোবাইল ভিডিও টা দেখে ধপাস করে খাটে বসে যায় প্রাচ্য।হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায় খাটের উপরে।কত বড় ভুল করেছে সে!শুধরাবে কি করে।ভুলের সীমালঙ্ঘন করে ফেলেছে সে আজকে তৃণকে থাপ্পড় মেরে।তৃণ কি তাকে কোনো ক্ষমা করবে!প্রাচ্য রোদের দিকে তাকায় করুন চোখে! তা দেখে রোদ বলল,
-“যখন থেকে এখানে এসেছি আমি তখন থেকে তৃণ ব্যাপারে বলতে চেয়েছিলাম।তুই বলছি আমি সাফাই গাইতে আসছি তৃণ হয়ে।আমি এই ভিডিওটা দেখাতে এসেছিলাম যাতে তোর ভুল ভাঙ্গে!আর তুই কি করলি!”
রোদ প্রাচ্য’র পাশে এসে খাটে বসে প্রাচ্য’র কাঁধে হাত রেখে বলল,
-” তুই নিজে ও জানিস তোকে তৃণ কতটা ভালোবাসে! কিন্তু তৃণ সেটা প্রকাশ করেনি।তুই তৃণকে দেখে যতটা স্ট্রং মনে করিস!তার চেয়ে বেশি কষ্ট তার মনে জমে আছে!ওর কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয় না।দেখলি না এখানে আসার পর থেকে সেই আগের তৃণ খুজে পেয়েছিস।কিন্তু আমি জানি তৃণ মনে কি কষ্ট নিয়ে সবার সাথে হাসি তামাশা করছে।তার কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয় না,নিজের ভিতরে সে কষ্ট লালিত করে।”
প্রাচ্য দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে!রোদ প্রাচ্য’র চোখে পানি মুচে বলল,
-“আমি জানি ভুল বোঝাটা স্বাভাবিক তোর!তোর জায়গা আমি থাকলে সেইম কাজ করতাম। কোনো মেয়েই পারবে না তার ভালোবাসা মানুষকে অন্যের কারো বুকের উপরে।এতে তোর কোনো দোষ নেই!কিন্তু তোর দোষ এটাই তুই সত্যিটা যাচাই করিসনি!”
প্রাচ্য কান্না করতে করতে বলল,
-“আমি ভাবতেই পারিনি টিনাকে আমি থাপ্পড় মেরেছি বলেই সে এত খারাপ একটা কাজ করলো! ছিঃ মানুষের এত নিচু মন মানুসিকতা!ওর বিবেকে বাধঁলো না নিজের নামে এত বড় বদনাম করতে!”
-” তৃণ পিছন ঘুর ঘুর করত!কিন্তু তৃণ তাকে পাত্তাই দেয়নি তাকে বলে দিয়েছে তৃণ তোকে ভালোবাসে! কিন্তু টিনা মানতে নারাজ ছিল। সেদিন তুই ওকে থাপ্পড় মেরেছি বলে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এরকম কাজ করছে!”
-“আমার এখন ইচ্ছা করছে টিনা শাঁকচুন্নি টা কে মাথা ন্যাঁড়া করে দিতে।”
-“সেটা তোকে করতে হবে না!স্বপ্ন আর ধূসর তার ব্যবস্থা করে নিয়েছে!তখন ভিডিও করিছি তোর ভূল ভাঙ্গান জন্য।”
-” তৃণ কি জানে এসব!”
-” না! ”
-“দোস্ত এখন কি হবে!আমি যে তৃণ গায়ে হাত তুলেছি! ক্ষমা করবে তো আমায়!”
-“ভালোবাসে তোকে তৃণ! ক্ষমা না করে যাবে কোথায়? যা জামা কাপড় চেঞ্জ করে আয়! ঠান্ডা লেগে যাবে। ”
প্রাচ্য খুব খুশি! যে বার বার আল্লাহ্‌ কাছে প্রার্থনা করেছে! এটা যেন ভুল প্রামানিত হয়। আজ সেটাই হয়েছে।কিন্তু এখন খুব আফসোস হচ্ছে যেদিন রোদ এটা বলতে এসেছে সেদিন শুনলে আজ এই অঘটন ঘটতো না।হাতে দিকে তাকিয়ে বলল, এই হাত দিয়ে আমি তোকে আঘাত করেছি!একবার ওও আমার হৃদয় কাঁপলো না।তুই আমার অন্যায়ের যা শাস্তি দিবি তাই মাথা পেতে নেব।

রোদ প্রাচ্য রুম থেকে বের হতে কেউ একজন হেচকা টান দিয়ে তার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে।প্রথমে বুঝতে না পারলে পরে বুঝে! তাকে আর কেউ এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে না!স্বয়ং সমুদ্ররাজা এই কাজ।এই কাজে তার মেজাজ চটে যায়।এমনিতে তৃণ আর প্রাচ্য ব্যাপার নিয়ে মেন্টালে ডিস্টার্ব আছে। এখন আবার তৃণ কি করবে আল্লাহই জানে।কেন যে প্রাচ্য আর এই কাজ করতে গেলো? সমুদ্র তাকে একটা রুমে এনে ধাক্কা মারে! ধাক্কা খেয়ে হুস ফিরে। রোদ রাগি চোখ বলল,
-“এরকম অসভ্যতামীর মানে কি?
সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায়।রোদ আবার বলল
-“আবাল মার্কা সব কাজ কর্ম!যত্তসব! ”
এটা বলে চলে যেতে নিলেই সমুদ্র তার হাত ধরে আঁটকিয়ে তার সামনে এনে বলল,
-“তোর দেখি মুখে বুলি ফুটেছে!ভুলে যাচ্ছিস তুই কার সামনে দাঁড়িয়ে এরকম কথা বলছিস।”
রোদের খুব রাগ হচ্ছে।ইচ্ছা করছে সমুদ্র ব্যাটার মাথা পাটিয়ে দিতে।কোন দেশের মহারাজা সে তার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবে না।
-“ভাবনার জগৎ থেকে বের হলে ভালো হয় মেডাম!
সমুদ্র বলল।রোদ ভ্রু কুচকে তাকায়। মনে মনে বলল, এইব্যাটা শান্তিতে কল্পনা করতে দিবে না।রোদ,,,রে রোদ এই তুই কারে ভালোবাসলি।তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে একে ভালোবাসার জন্য।সমুদ্র বলল,
-“যা প্রশ্ন করবো তার উত্তর দিবি।উলটা পালটা কথা বললে থাপ্পড় একটা ফ্লোরে পড়বে না। ”
রোদের মাথা কিছু ঢুকছে না।কি প্রশ্ন করবে তাকে।সমুদ্র বললো,
-“প্রাচ্য আর তৃণ মধ্যে কোনো প্রেম বা ভালোবাসা বাসি এধরনের সম্পর্ক আছে নি।”
।ভয়ে হাত পা তরতর করে কাঁপছে।কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। সে খুব ভালো করে জানে এই প্রশ্ন উত্তর তাকে দিতে হবে। সমুদ্র এই প্রশ্ন করবে রোদ ভাবতে পারনি।এখন কি উত্তর দিবে সে হ্যাঁ, নাকি না।সবার সাথে কথা না বলা ছাড়া হ্যাঁ বলা উচিত হবে না।রোদ ভয় পাবি না! সাহস যোগা! সমুদ্রকে অন্য কিছু দিয়ে বুঝ দিতে হবে।এখন কিছু জানানো যাবে না এই ঘ্যাড়ত্যাড় কে! গলা ঝেরে যে ভ্রু কুচকে বলল,
-“মানে?
-” মানে কি বলছি সেটা আমার চেয়ে তুই ভালো জানিস।একটু আগে বাহিরে থেকে প্রাচ্যকে বাসা ঢুকতে দেখলাম! তার পিছনে তুই ছিলি।কিছুক্ষণ পর দেখি মন খারাপ করে তৃণ ঢুকছে।তোরা তিনজন ছিলি! তার মানে তুই জানিস। বল কি আছে তাদের মধ্যে? ”
-” আজব! কি আজব কথা বার্তা!আমরা বন্ধু তিনজন কি এসঙ্গে থাকতে পারি না? ”
-” কথা ঘোরানো চেষ্টা করবি না।আর আমি জানি তোরা তিনজন বন্ধু! এত প্যাঁচাল না করে সত্যি টা বল! ”
সমুদ্র হাত ঝামটা মেরে ফেলে দিয়ে মেজাজ গরম করে বলল,
-” বাল! কি সত্যি বলবো!
এটা বলে চলে যেতে নিলেই। রোদের হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে খাটের উপরে ফেলে দেয় সমুদ্র। রোদ ব্যথায় কুঁকড়োতে থাকে। মাগো,,,,, এই হাতিটা আমার কোমরে হাড়গোড় সব ভেঙে ফেলল।এটা বলে খাটের উপরে বসতে নিলেই সমুদ্রে এসে খাটের সাথে দুইহাত চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

-” ফাঁপর নিস আমারর সাথে! মেরে ফেলল তোকে আমি!এবার বল ওদের মধ্যে কি চলছে। ”
রোদ কথা বলছে না। কি ভাবে কথা বলবে ৮৫ কেজি ওয়ালা আটা বস্তা যদি তার উপরে পড়ে তাহলে কি জায়গায় থাকার কথা!দম যেন আটঁকে আসছে।সমুদ্র ভার নিতে পাচ্ছে না সে।খুব আস্তে করে অনুনয় সুরে বলল,
-“সমুদ্র ভাইয়া আমার উপরে থেকে একটু সরবেন প্লিজ!”
সমুদ্র ভ্রু কুচকে তাকায়।রোদ আবার বলল,
-“আমি আপনার ভার নিতে পাচ্ছি না ”
এবার সমুদ্র পুরো ভার ছেড়ে দিয়েছে।রোদের মেজাজ খারাপ পর্যায়। সে কেন এই ঘ্যাঁড়ত্যাড়া কে বলতে গেলো? সে খুব ভালো করে জানে এটাকে যেটা বলে তার উল্টা কাজ করে বসে।ঘ্যাঁড়ত্যাঁড়া নাম্বার ওয়ান।হুম!
-“আমার ভার নিতি পারিস না।তোর স্বামীর ভার নিবি কি করে?
রোদ সমুদ্র কথা না বুঝে উত্তর দেয়,
-” আমার স্বামী ভার নিতে যাবো কেন? ”
-“জানিস না কেন নিতে হয়।নাকি আমি প্যাক্টিকেলে দেখি দেব।”
রোদ ভাবতে পাচ্ছে না সমুদ্র তাকে এসব বলছে।নিশ্বাস যেন তার আটকে আসছে।এখুনি সে মরে যাবে। ফ্যাঁস ফ্যাঁস করে বলল,
-“সরেন প্লিজ! ”
-“যদি না সরিয়ে যাই। ”
ভ্রু কুচকে বলল সমুদ্র। রোদ নিজের পা গুলো দিয়ে সমুদ্রকে ধাক্কাতে নিলেই সমুদ্র তার পা দিয়ে রোদের পা গুলো আবদ্ধ করে নেয়। সমুদ্র হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে রোদের কপালে ঘষতে থাকে।সমুদ্রের স্পর্শ রোদের শরীরের শিহরণ জাগিয়ে দিচ্ছে!মাতাল করা একটা স্পর্শ।এই প্রথম সমুদ্র তার এত কাছে এসেছে।কপাল থেকে সমুদ্রের তর্জনী আঙুল নাকে এসে থামে তাতে রোদের হৃদপিন্ড ধুপধুপানি করা শুরু করে দেয়।সেকেন্ড মধ্যে উঠানামা করছে।খুব জোরে যেন শব্দ পাচ্ছে।সমুদ্র কি সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছে না? তখনই সমুদ্রের আঙুল রোদের ঠোঁটে পড়ে।তার ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠে। অসম্ভব রকম কাঁপছে তার ঠোঁট।যেন তীব্র শীতে খালি গায়ে আছে তাই ঠোঁট দুটো কাঁপনি দিয়ে কাঁপছে।এরকম ভাবে রোদের ঠোঁট দুটোকে কাপঁতে দেখে সমুদ্রের মাথা দূষ্টু বুদ্ধি চাপে।তাই তর্জনী আঙুল দিয়ে ঠোঁটে উপরে স্লাইড করতে হবে। রোদ আর থাকতে পারছে না! এই শিহরণ যে তাকে মেরেই ফেলবে।তাই একহাত অটোমেটিক ভাবে সমুদ্রের পিঠে উঠে যায় খামছি দিয়ে পিঠের টি-শার্ট ধরে। আরেক হাত দিয়ে বিছানার চাদর চেপে ধরে।সমুদ্র এবার নিজের মুখটা এগিয়ে নেয় রোদের ঠোঁটে দিকে।সমুদ্রের নিঃশ্বাস যেন উপছে পড়ছে তার মুখে।মনে ভিতরে সব কিছু উতাল পাতাল করে দিচ্ছে।রোদ আবেশে তার চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। এটা দেখে সমুদ্রে বুঝতে বাকি রইল না তার ডাকে হয়তো রোদ সাড়া দিবে।তাই চোখ বন্ধ করে সম্মিত দিচ্ছে।
অনেক্ষণ পর রোদ চোখ খুলে। সে যেটা ভেবেছে সমুদ্র সেটা করেনি।তাই লজ্জা সমুদ্রের চোখে দিকে তাকাতে পাচ্ছে না! লজ্জা যে মরে যাচ্ছে।সমুদ্র নিজের পিঠ থেকে রোদের হাত সরিয়ে ফেলে। এটা দেখে লজ্জা অপমানে রোদের মরে যেতে ইচ্ছা করছে।এত কাছে এসে সমুদ্রে ফিরে দিলো!আর সমুদ্র কি ভাববে!তাকে সম্মিত দিয়েছি আমি!এটা নিয়ে এখন জানি কি ঠাট্টা করে, মরে যেতে ইচ্ছা করছে।ইচ্ছা করছে বিছানা ভেঙে তারপর ফ্লোর ভেঙে মাটির ভিতরে ঢুকে যেতে!এত বড় অপমান!
রোদকে কথা বলছে না দেখে সমুদ্র বলল,
-” তুই কি করে ভাবলি আমি তোর এই পচা ঠোঁটে কিস করে আমার ঠোঁটের টেস্ট নষ্ট করব। ”
রোদের বলতে ইচ্ছা করছে তাহলে কেন এসেছেন এত কাছে।কেন শিহরণ জাগিয়ে দিলেন আমার শরীরে?কেন মাতাল করে দিচ্ছেন। কিন্তু আফসোস সে বলতে পারেনি।এখন তার অপমানে কান্না করতে ইচ্ছা করছে! কিন্তু সে এই সয়তানে সামনে কান্না করে আর কোনো ভাবে অপমানিত হতে চায় না।সমুদ্র বলল,
-” আমি তোকে প্যাক্টিকেল দেখাছিলাম কি করে তোর স্বামী তার শরীর ভর ছেড়ে তোকে আদর করবে।আগে থেকে সহনশীল হওয়া ভালো।তাহলে তোর স্বামী বেচারীকে আর কষ্ট করতে হবে না।”
রোদ ঠোঁট কাঁড়মিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।কিছুতে এই জানোয়ার সামনে কাঁদবে না।এর মনে মায়া দরদ বলতে কিছু নেই।রোদ দুইহাত দিকে সমুদ্রের বুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।সমুদ্র বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে যায়!রোদ যেতে নিলেই সমুদ্র তার হাত ধরে ফেলে হেঁচকা টান মেরে বুকের উপরে ফেলে।টান খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রোদ।রোদের নাক আঘাত খায় সমুদ্রের বুকে। হাত দিয়ে নাক ঘষতে ঘষতে কটমট করে তাকায় সমুদ্রের দিকে।সমুদ্র তার এই চাহনি তোয়াক্কা না করে বলল,
-“কথা আমার শেষ হয়নি।”
এটা বলে রোদের কোমরে চেপে ধরে সঙ্গে সঙ্গে রোদ সমুদের বুকের টি-শার্ট খামচে ধরে।করুণ চোখে তাকায় সমুদ্রের দিকে।
-“এভাবে তাকিয়ে আছি কেন?
-“আমার অস্বস্তি লাগছে ছাড়েন!”
– ” আমি আবার তোকে কখন ধরলাম!”
সমুদ্রের কথা রোদ খুব অবাক হয়।এখন সমুদ্র’র হাত তার কোমরে। আর এখন বলছে সে ধরেনি কি মিথ্যুক ভাবা।রোদ নিজের হাত দিয়ে সমুদ্র হাত কোমর থাকে ছাড়াতে থাকে।কিন্তু পাচ্ছে না সে!সমুদ্র আরো শক্ত করে চেপে ধরেছে।খামছি দিয়ে ধরেছে!ডেপে যাচ্ছে মাংসর ভিতরে।রক্ত বের হচ্ছে ব্যথায় চোখে দিয়ে পানি চলে আসে।তা দেখে সমুদ্র বলল,
– “সামনে ব্যথা সহ্য করতে পাচ্ছি না!যখন তোর স্বামী ফিজিক্যাল রিলেশন করবে তখন কি করে সহ্য করবি!তাই আমি বলছি কি! এখন থেকে একটু আকটু ব্যথা সহ্য করে নেয়।তাহলে পরে তোর স্বামীর কাজে ব্যাঘাত ঘটবে না।আর জানিস তো ছেলেরা ওইসব কাজে ব্যাঘাত ঘটা সহ্য করতে পারে না।মজা পায় না ব্যাঘাত করলে! ”

রাগে ঘেন্না চোখে পানি পড়তে থাকে সমুদ্রের কথা রোদের।এত নিচু মনে মানুষ সমুদ্র।কি সব বলছে।মুখে একটু বাঁধছে না তার।এসব কিছু তোয়াক্কা সমুদ্র না করে তাই আবার বলল,
-“এবার কাজে কথা বলি।সত্যি তো প্রাচ্য আর তৃণ মধ্যে কোনো সম্পর্ক নাই বন্ধুত্ব ছাড়া!
রোদ কোনো কথা না বলে মাথা ন্যাঁড়িয়ে না জানায়।সমুদ্র তাকে খাটের ফেলে উঠে দাঁড়ায়। সে বলল,
-” আমি জানি তুই সত্যি কথা বলছিস না। কোনো ব্যাপার না এটা জানতে বেশি সময় লাগবে না আমার। ”
এটা বলে বেড়িয়ে যায়।আর রোদ ক্ষত জায়গা হাত দিয়ে কান্না করতে থাকে।আর মনে মনে সমুদ্রকে অভিশাপ দেয়। তার যেন একটা শাঁকচুন্নি বঊ কপালে জুটো।যাতে সমুদ্র জীবন তেজপাতা করে দিতে পারে!সেতো আর পারেনি।

# চলবে
#কাউছার স্বর্ণা

স্বপ্নীল ২৫

0

স্বপ্নীল
২৫
এখন দুপুর ৩.৪৫বাজে। ।মনে হচ্ছে গভীর রাত এখন। ।
নীল আকাশটা কালো মেঘে চেয়ে গেছে।মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শব্দ শোনা যাচ্ছে।চারদিক দিয়ে অন্ধাকার ঘিরে রয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টির জন্য আশ পাশের সব কিছুই ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।বারান্দা দাঁড়িয়ে নীল এতক্ষণ বৃষ্টি পানি নিয়ে খেলছিল।হাত বাঁড়িয়ে বৃষ্টি ফোঁটা হাতের তালুতে নিচ্ছে। বৃষ্টি তার যেমন প্রিয় তেমনি অপ্রিয় ও। অপ্রিয় হওয়ার একটাই কারণ সেটা হলো কলেজে যাওয়ার সময় যখন বৃষ্টি হয় তখন বৃষ্টি পানিতে রাস্তা ঘাট কর্দমা ভরে যায়।হাঁটা যায় না।আর প্রিয় এই কারণেই বৃষ্টি পানিতে ভিজতে ভালো লাগে তার। বৃষ্টি হলে ছাদের ছুটে চলে যায়। যাতে কেউ তাকে বৃষ্টিতে ভিজতে না দেখে!একবার বৃষ্টিতে ভিজে একটানা ১৫ দিন জ্বর ছিল। তাই তাকে দাদু বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলে বকা বকি করে।

নীল ছুটে চলে যায় ছাদে! আজকে সে বৃষ্টিতে ভিজবে! অনেকদিন হইছে সে ভিজতে পারে না।তাকে এভাবে ছাদের দিকে ছুটতে দেখে স্বপ্ন।তার পিছন পিছন স্বপ্ন যায়।ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুহাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজছে।চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানি অনুভব করছে।খুশিতে গলার ওড়নাটা ছুড়ে ফেলে।ওড়না যেয়ে স্বপ্ন’র মুখে উপরে পড়ে।স্বপ্ন এতক্ষণ ছাদের দরজায় পা প্যাচিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মনোমুগ্ধকর ভাবে তাকিয়ে নীলকে দেখছে।ওড়নাটা স্বপ্ন’র মুখের থেকে সরিয়ে মুটো করে হাতে নেয়।নীলের দিকে তাকায়, সে এখন দুটো আঁখি বন্ধ করে আছে।আরেকবার ওড়নার দিকে তাকায়,ওড়না মুখে কাছে নিয়ে গন্ধ শুকতে থাকে।মাতাল করা একটা ঘ্রান পাচ্ছে স্বপ্ন।নেশা ধরিয়ে দিচ্ছি নীলে এই ওড়না। ওড়নার থেকে চোখ সরিয়ে নীলের দিকে তাকায় সে।নীল কে খুব আবেদনময়ী লাগছে!ওড়না নিয়ে পা বাড়ায় স্বপ্ন নীলের দিকে।

নীলের ঠান্ডায় হাত পা কাপঁছ তরতর করে।হাতের লোমশ গুলো দাঁড়িয়ে গেছে।তারপর ভিজতে তার ভালোলাগছে।এই মুহুর্ত তার সুরওয়ালা কথা মনে পড়ছে।ইশ! এখন যদি তার সুরওয়ালা থাকত তাহলে কী ভালোই না হতো। পিছন ঘুরতে স্বপ্ন’র সাথে ধাক্কা খায় সে! স্বপ্ন এতটাই অবেচতন মন নিয়ে এগিয়ে আসছিল তাই ধাক্কা খেয়ে টাল সামলাতে না পেয়ে দুজনে হুমড়ি খেয়ে ছাঁদে পড়ে!স্বপ্ন নীলের সব ভার ছেড়ে দিয়ে নীলের ধ্যানে মগ্ন হয়ে যায়।স্বপ্ন নীলের এই ব্রাউন কালারে চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।এতদিন সে খেয়ালী করেনি নীলের চোখেরমনি ব্রাউন কালার। এই চোখে কারণে যেন নীলের সৌন্দর্য উপছে পড়ছে! চোখের নেশা যে ডুবে যাচ্ছে।

স্বপ্নকে এই মুহুর্তে ছাঁদে দেখে নীল কিছুইটা অবাক হয়।তার চেয়ে অবাক হয় স্বপ্নের এই ছাউনি দেখে।কেমন যেন নেশা লাগিয়ে দেখছে তাকে। স্বপ্ন’র চোখ যায় নীলের গোলাপি ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে।কেমন তিরতির করে কাঁপছে! আর যেন নীলকে টানছে!কেমন যেন নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে।নিজের ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নেয়! যখন নীলের ওষ্ঠদ্বয় ডুব দেবে।তখনই নীল ধাক্কা মেলে ফেলে দে তার উপর থেকে।নীল উঠে দাঁড়ায়!রাগি চোখে স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আছে। স্বপ্ন নীলের ধাক্কা খেয়ে হুস ফিরে। কি করতে যাচ্ছিল সে। নীল এটা নিয়ে তার মনে আমাকে নিয়ে খারাপ ধারণা পোষণ করবে! না তার আগেই ভুল ভাঙাতে হবে! স্বপ্ন উঠে দাঁড়ায়।নীলকে বলতে নিলেই নীল তাকে বাধা দিয়ে বলল,
-” দেখে তো খুব ভালো বুঝা যায়।যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারে না। কিন্তু আসলে একটা লুচ্চা আপনি।কি করতে যাচ্ছিল আপনি।মেয়ে দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন। তাই হায়নারদের মত ঝাঁপিয়ে পড়েন।”
-“তুমি আমায় ভুল বুঝছো!”
-“আমি ঠিক বুঝেছি!ছাদের কি করছেন আপনি? কেন এসছেন ছাদের?
-“আসলে! ”
-“আসলে কী?জানি এখন কি বলবেন আপনি।আপনি ইচ্ছা করে করেনি? কেমনে জানি হয়ে গেছে?হ্যান ত্যান এসবই বলবেন! আমি জানি ছেলেরা ধরা পড়লে এসব বলে।লুচ্চা ব্যাটা!
স্বপ্ন বার বার বলতে যাচ্ছে কিছু কিন্তু নীল তাকে কোনো সুযোগ দিচ্ছে না কথা বলার।নীল তাকে অনেক গাল মন্দ করছে।স্বপ্ন দাঁড়িয়ে সব হজম করছে! নীল অনবরত বলে যাচ্ছে রেডিও মত।বন্ধ হওয়ার নাম নেই।কোনো মেয়ে এত কথা বলতে পারে স্বপ্ন’র জানা নাই। নীলকে দেখেই সে বুঝেছে।হঠাৎ নীলের চোখ যায় স্বপ্নের হাতে দিকে তার ওড়না স্বপ্নের হাতে।এবার নিজের দিকে তাকায় ওড়না গায়ে নেই সে খেয়াল ছিল না।বৃষ্টিতে ভিজে জামাকাপড় ছুপছুপ অবস্থা।নিজের শরীরে প্রতিটা অঙ্গ বোঝা যাচ্ছে।আর এইভাবে সে এই বজ্জাতের সামনে দাঁড়িয়ে বকবক করছে।এই লুচ্চা ব্যাটা তার সব দেখে নিয়েছে।এখন কি হবে তার।কান্না করতে ইচ্ছা করছে!কিন্তু সে এখন কান্না করবে না! এর শাস্তি যথাসময় সুযোগ বুঝে দেবে! নীল আচমকা খপাস করে স্বপ্ন’র হাত থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে প্যাচিয়ে নেয়।নীলের এহেম আচারণে হতভম্ব হয়।
-“বেয়াদব ছেলে তুই আমার সব দেখে নিয়েছিস!তোর বারোটা আমি পরে বাজাচ্ছি।
এটা বলে এক ছুটে ভৌ -দৌড়!তাকে আর কে পায়। স্বপ্ন নীলের কথা শুনে বুঝতে পেরেছে।নীল লজ্জা পেয়েছে। এটা ভেবে সে মুচকি হাসছে।

প্রাচ্য বারান্দা দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। প্রাচ্য’র কেন জানি মনে হচ্ছে আকাশের এখন খুব মন খারাপ তার মতন। কি সুন্দর রৌদ্দুর ছিল।নীল আকাশের সাদা মেঘের খেলা ছিল ঘণ্টা দুয়েক আগে আর এখন অঝরে বৃষ্টির পানি ঝরছে।আকাশে কোনো কারণে মন খারাপ বলে সে কান্না করছে! আকাশের চোখে জল গুলো বৃষ্টির পানি হয়ে ঝরছে।তার কষ্টের পানি গুলো আমরা উপভোগ করি।এসব ভাবতে ভাবতে প্রাচ্য’র চোখ যায় নিচে তাদের বাগানের দিকে।সেখানে বেঞ্জ মধ্যে বসে আছে কেউ একজন।ভালো করে বুঝার চেষ্টা করছে কে সে।হঠাৎ করে প্রাচ্য বলে উঠে’তৃণ’!হ্যাঁ তৃণ এখানে বসে আছে।এই বৃষ্টির মধ্যে কেন ভিজছে সে?

প্রাচ্য রুম এসে একটা ছাতা নিয়ে নিচে যায়।ছাতা খুলে বাইরে বের হয়।প্রচণ্ড বৃষ্টিরগতি! বৃষ্টির ফোঁটা গতিতে যেন ছাতা ছিদ্র হয়ে যাবে।প্রাচ্য সেখানে যেয়ে তৃণ মাথার উপরে ছাতা রাখে।বৃষ্টির পানি মাথা পড়ছে না দেখে মুখ উপরে তুলে দেখে প্রাচ্য দাঁড়িয়ে আছে। তৃণ স্থির চাউনি দেখে প্রাচ্য’র কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছিল।নিজেকে স্বাভাবিক রেখে প্রাচ্য বলল,
-“এখানে বসে আছিস কেন? ঘরে চল!”
তৃণ কিছু বলছে না তার দৃষ্টি এখন প্রাচ্য’র দিকে।প্রাচ্য আবার বলল,
-“বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বাহিরে থাকা এখন বোধহয় ঠিক হবে না ঘরে চল।”
এখন তৃণ মধ্যে নিরবতা! প্রাচ্য এবার তৃণ হাত ধরে বলল,
-“চল!
তৃণ পা নড়ছে না! এক জায়গা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রাচ্য এখন মহাবিরক্ত লাগছে।তারপর নিজেকে শান্ত করে বলল,
-“ঘরে চল!
তৃণ প্রাচ্য হাত ধরে তার বুকে টেনে এনে ধরে।।হাত ফসকে ছাটা উড়ে যায়।দুজনে ভিজছে!কারো মধ্যে কোনো কথা নেই।প্রাচ্য তাকিয়ে আছে তৃণ চোখের দিকে।চোখ দুটো অসম্ভব লাল।তার মানে কি তৃণ এতক্ষণ ধরে বৃষ্টির পানিতে নিজের চোখে জল বিসর্জন দিচ্ছিল। প্রাচ্য এক সত্তা এটা বললে ও অন্য আরেক সত্তা বলছে,’না প্রাচ্য তৃণ মত ছেলে কাঁদবে! এটা তোর ভুল ধারণা! ‘ তার মধ্যে কিছুক্ষণ আগে মন খারাপে রেষমাত্রা খুজে পায়নি সে। কি হাসি খুশি ছিল তৃণ।
প্রাচ্য’র দুটো সত্তা দুইরকম কথা বলছে। মাথা ভিতরে সব কিছু হুমড়ি খাচ্ছে।ঠিক ভুল বুঝতে পাচ্ছে না সে।প্রাচ্য তৃণ থেকে ছুটার চেষ্টা করছে কিছুততে পারছে না।তৃণ দুহাত আঁকড়ে ধরে রেখেছে।কিছুক্ষন হাসপাস করে নিজে কে ছাড়া চেষ্টা বন্ধ করে দেয়।খুব রাগ হচ্ছে কেন সে দরদ দেখিয়ে ছাতা আনতে গেলো!তৃণ প্রাচ্য’র দুবাহু আকঁড়ে ধরে বলল,
-“মরে যাবো আমি তোকে ছাড়া! কেন বুঝিস না! খুব কষ্ট হচ্ছে আমার!দম আঁটকে আসছে, নিশ্বাস নিতে পাচ্ছি।তুই চলে গেলে আমি মরে যাবো। ”
প্রাচ্য বিদ্রূপ করে বলল,
-“মরে যাবি কেন? তুই মরলে তোর টিনা বেবি কি হবে।বেচারা তোকে ছাড়া মরেই যাবে!তার জন্য হলে তোকে বাঁচতে হবে।”
তৃণ খুব রাগ হচ্ছে।প্রাচ্য এভাবে কথা বলা দেখে। তার নিজের রাগ যথাযথ সংযত করে বলল,
-“এই তুই আমাকে জিনিস!এই তোর ভালোবাসা!একটু বিশ্বাস পর্যন্ত তুই আমায় করতে পাচ্ছিস না।আমার ভালোবাসায় না হয় খাদ ছিল।কিন্তু তোর ভালোবাসা তো কোনো খাদ ছিল না।তাহলে কেন তুই আমায় একটু ও বিশ্বাস করতে পাচ্ছিস না। কেন বল?
-“বিশ্বাস করার মত কোনো কাজ করেছিস তুই!আগে যেমন ছিলি মেয়ে পাগলা এখন আছিস। স্বভাব যায়না ধূলে একটা প্রবাদ আছে।তোর ক্ষেতে সেটাই যথার্থ।”
-“কি করলে তুই আমায় বিশ্বাস করবি বল?
-“তোকে আমি বিশ্বাস করতাম।নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস তোকে করতাম।আমি ভেবেছি টিনার সাথে ফ্লাটিং করতি আমায় জেলাস ফিল করা জন্য।কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিলো! সেটা তোর আর টিনার ছবি গুলো প্রমাণ করে দিয়েছে।”
-“ওই গুলো মিথ্যে ছিল প্রাচ্য!টিনা,,,,,
তৃণকে বলতে না দিয়ে প্রাচ্য বলল,
-“মিথ্যে ছিল!ছবি গুলোর মধ্য তুই টিনার বুকে উপরে ছিলি। এগুলো মিথ্যে।তুই পারতি আমাকে কোনো ছেলের বুকের উপরে দেখতে।বল পারতি!
কান্না করতে করতে প্রাচ্য বলল।সত্যি তো সে কখন প্রাচ্যকে অন্য কারো বুকে উপরে দেখতে পারতো না।কখনোই না।কিন্তু এগুলো ভুয়া ছবি ছিল।কি করে প্রাচ্যকে সে বুঝাবে।প্রাচ্য এতটা অবুজ ছিল না আগে তাহলে কেন এত অবুজপণা করছে সে এখন।প্রাচ্য আবার বলল,
-“তাহলে আমি কি করে তোকে অন্যের বুকের উপরে তোকে দেখতে পারতাম।”
তৃণ বলল,
-“প্রাচ্য এগুলো টিনা ভুয়া ছবি তৈরী করেছে?
প্রাচ্য ঠাস করে তৃণ গালে থাপ্পর মেরে দেয়।তৃণ প্রাচ্য’র ব্যবহার হতম্ভব।বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে নিজের গালে হাত দিয়ে।প্রাচ্য তাকে থাপ্পড় মেরেছে। প্রাচ্য চিল্লিয়ে বলল,
-“ভুয়া! এই ছবি গুলো ভুয়া ছিল!ধরা পরে গেছিস বলে মিথ্যে বলা শিখে গেলি তুই।নিজেকে বাঁচানোর জন্য অন্যের উপরে দোষ দেস।টিনা কেন তোর নামে মিথ্যে বলবে।কোনোই মেয়ে পারবেন না নিজেকে এভাবে অন্যছেলে সাথে জড়িয়ে এসব করতে।তুই নিশ্চয় করেছিস বলে টিনা বলেছে।নিজের দোষ শিকার করিস না,অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাস।”
হঠাৎ করে রোদ এসে প্রাচ্য’র হাত টেনে ধরে নিয়ে যায়। প্রাচ্য রোদকে বলল,
-“হাত ছাড়! আমার
রোদ রাগি চোখে তাকিয়ে বলল,
-“হাত ছাড়বো! আগে রুমে চল।”
এটা বলে টেনে নিয়ে যায়।তৃণ দাঁড়িয়ে প্রাচ্য’র কথা গুলো হজম করছিল। আর কখনো ভালোবাসি বলে প্রাচ্য সামনে যাবে না মনে প্রতিজ্ঞা করছে সে।প্রাচ্য নামে কাউকে সে ভালোবেসেছে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবে।প্রাচ্য’র কথা ভেবে সে কখনো আর কষ্ট পাবে না। আজ পর্যন্ত কেউ তার গায়ে হাত তুলে নি।প্রাচ্য তার গায়ে হাত তুলে দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলেছে।আজ থেকে ভুল যাবে সে।এখন থেকে প্রাচ্য তার কাছে জাস্ট ফ্রেন্ড ছাড়া কিছু না।এই বৃষ্টির মধ্যে প্রাচ্য’র প্রতি সব অনুভূতি, ভালোবাসা সব বিসর্জন দিবে।ধুয়ে মুচে সাফ করে দিবে তার জীবন থেকে প্রাচ্যকে।

#চলবে
#কাউছার স্বর্ণা
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন

,

স্বপ্নীল ২৪

0

স্বপ্নীল
২৪
তামিম এসে সোহার হাত চেপে ধরে।এত জোরে হাত চেপে ধরেছে তার হাত ছিঁড়ে যাওয়ার পথে।চোখ তুলে তাকায় সোহা তামিমের দিকে।সোহা স্পর্শ দেখতে পাচ্ছে তামিমের কপালের রগ গুলো খাঁড়া হয়ে গেছে।সোহা খুব ভালো করে জানে তামিম যখন রেগে যায় তখন এমন হয়।তামিমের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে যেন তাকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিবে। ভয়ে ঢোগ গিলে! গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।ভয়ে শীরদার দিয়ে শীতল স্রোত বেয়ে যাচ্ছে।তামিম তাকে টানতে টানতে বাগানের দিকে নিয়ে আসে!গাছের সাথে সোহার এক হাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে তামিম বলল,
-“এই ছেলে কি বলছে তোকে!
সোহা চুপ থাকতে দেখে তামিম দ্বিগুন রাগ নিয়ে বলল,
-“কথা বলছিস না কেন?
আমি কেন উনাকে ভয় পায়।উনার কথা শুনতে বাধ্য নই। যা!সোহা উনার মুখে উপর বলে দে! ভয় ফেলে চলবে না তোকে।তুই কি তা হুকুমের গোলাপ নাকি! সাহস যুগিয়ে সোহা মুখ খুলল,
-“ওই ছেলেটা আমায় যাই বলুক! আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই।”
তামিম একহাত দিয়ে শক্ত করে সোহার চিবুক ধরে বলল,
-“বাধ্য!তুই আমাকে বলতে বাধ্য!
সোহা ব্যথা কুকঁড়িয়ে উঠে!নিজের বাম হাত দিয়ে তামিম হাত চিবুক থেকে সরিয়ে ফেলে।বড় বড় করে নিশ্বাস নিয়ে!চোখ রাঙিয়ে সোহা তামিমের দিকে তাকায়
-“কিসের বাধ্য!কাজে মেয়ে বলে কি আপনাকে আমার ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করতে হবে।নো মিস্টার তামিম!নো!”
সোহা কান্না করতে করতে চলে যায়।তামিম নিজের হাত গাছের সাথে ঘুষি মারে রাগের চোটে।
-“স্বপ্ন! আমি যা দেখছি তুই কি তা দেখছিস?”
ধূসরের কথা সবাই সেখানে দাঁড়িয়ে যায়।সবাই ভ্রু যুগল যোগ করে তার দিকে তাকায়!স্বপ্ন বলল,
-“কি দেখছি তুই!
-“আমার মনে হয় প্রাচ্য আমাদেরকে কোনো রাজপ্রাসাদে নিয়ে এসেছে ভুল করে”
প্রাচ্য এসে বলল,
-“ভুল হবে কেন? তোকে আমাদের মির্জা প্যালেস নিয়ে এসেছি।”
-“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটা শাহি আমলের রাজপ্রাসাদ।”
তৃণ বলল,
-“রাজপ্রাসাদ জীবন দেখিসনি তুই!তাই প্রাচ্য রাজ প্রাসাদে নিয়ে এসেছে তোকে দেখানোর জন্য।”
তৃণ কথা প্রতিত্তুর না করে প্রাচ্যকে আবার ধূসর বলল,
-“হে রে প্রাচ্য তোদের কে রাজ ছিলো!তোর দাদু নাকি!
-“নারে ভাই! আমার দাদার বাপের দাদা ছিলো!
সমুদ্র পিছন থেকে বলল। সমুদ্র দেখে হেসে দে ধূসর। সমুদ্র তাদের কাছে এসে বলল,
-“আমাদের রাজপ্রাসাদের ইতিহাস পরে জানতে পারবি।এখন উপরে চল!”
সবাই উপরে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে সবার সাথে পরিচয় হয়ে কুশল বিনিময় করে।সবাই সমুদ্রের সাথে গ্রামে বেড়াতে যায়।তারা তিনজন কখনো গ্রামে আসেনি।গ্রামের নির্মূল বাতাসে প্রান ভরে শ্বাস নেয়!সন্ধ্যা হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা ঘোরাফেরা করে। তারপর বাড়ি ফিরে যায়।সমুদ্র বাসায় ঢুকতে সামনে পড়ে রোদ।ভ্রু যুগল যোগ করে রোদের আগ পিছ ঘুরে তাকে পর্যবেক্ষণ করে সমুদ্র!তার কিছু না বলে চলে যায় সে।রোদ কপালের সুক্ষ্ম ভাজ ফেলে বলল,
-“অদ্ভুত! ”
হাসির শব্দ শুনে রোদ পিছন ফিরে তাকায়!নীল হাসছে!নীল তার কাছে হাসতে হাসতে এসে বলল,
-“কি বুঝলে রোদ আপু! ”
রোদ কিছু না বলে রাগ করে চলে যায়। নীল আবার হাসছে।উপর থেকে কেউ তার হাসির মুক্ত কুড়াছে।নীল যদি একবার উপরের দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পেতে স্বপ্ন রেলিং উপরে কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে তাকে হা করে দেখছে।কিন্তু আফসোস নীল উপরে না তাকিয়ে কিচেনে চলে যায়। স্বপ্নের কাঁধে হাত রেখে তৃণ বলল,
-“কিরে শালা! এভাবে হা করে না দেখে ওকে যেয়ে বলে দে,”
স্বপ্ন তৃণর মুখোমুখি হয়ে বলল,
-“বলবো! ”
যদি বলি নোয়াখালীতে আসলে নোয়াখালী বলে কোনো এলাকা নেই।মানে নোয়াখালী বাংলাদেখের একমাত্র জেলা যার নিজ নামে কোন শহর নেই।নোয়াখালী জেলা শহর এর নাম মাইজদি নামে পরিচিত। নদীগর্ভে মূল শহর বিলীন হয়ে গেলো ১৯৫০ সালে জেলা সদর সপ্তর মাইজদি স্থানান্তর করা হয়।নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া।নোয়াখালীর সদর থানা আদি নাম সুধারাম।
সবাইকে বের হয়েছে নীল নোয়াখালীর দার্শনিক স্থান গুলো দেখানোর জন্য।নোয়াখালী জেলার আনাচেকানাচে সব চেনে নীল।এমন কোনো জায়গা নেই সেখানে সে যায়নি। তামিম বাদে সবাই এখানে উপস্থিত আছে।পাশের গ্রামে দাদুর বন্ধুকে বিয়েতে নিমন্ত্রণ করতে গেলো সে।
তৃণ বলল,
-“কই গো নীল তোমাদের নোয়াখালী জেলার কি দেখাতে নিয়ে আসলে! আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না!”
নীল তীক্ষ্ণ নজরে তৃণ দিকে তাকিয়ে বলল,
-” এত তাড়া কিসের! ”
তৃণ শার্টের দুইটা বোতাম খুলে মেয়েদের মত দুইটা ফু দিয়ে বলল,
-“বাপরে বাপ আমি খুব ভয় পেয়েছি তোমার তাকানো দেখে!মনে হচ্ছে এক্ষুনি তুমি আমায় গিলে খেলে ফেলবে।”
স্বপ্ন আর ধূসর হু হু হু করে হেসো দিলো তৃণ কথায়।নীল রাগে ফুঁসতে থাকে।সোহারর খুব রাগ লাগছে তাদের কোথায় তাই সে ঠেস মেরে বলল,
-“নীল এমন কিছু বললেনি যার জন্য দাঁত কেলিয়ে হাসার আছে।”
ধূসর বলল,
-“আমাদের দাঁত আছে বলে তাই কেঁলিয়ে হাসছি।তুই দাঁত কেলিয়ে হাসতে পারো! আমরা কিছু মনে করবো না।
সোহা আর কিছু না বলে ভেঙছি কেটে সামনে চলে যায়।তৃণ শার্টের বোতাম খোলায় লোমশ বুকটা দেখা যাচ্ছে।লোভনীয় ভাবে তাকিয়ে আছে।তার পাশে কি হচ্ছে তার ধ্যানজ্ঞানের বাহিরে। হুট করে তৃণ চোখ যায় প্রাচ্য উপরে।প্রাচ্য দৃষ্টি তার বুকের দিকে তা দেখতে পেয়ে চট জলদি শার্টের বোতাম আটকিয়ে ফেলে।প্রাচ্য চোখ তুলে তৃণ দিকে তাকিয়ে লজ্জা নুয়ে যায় সে। কেন সে এভাবে তাকাতে গেলো।এখন তৃণ কি ভাববে।এটা বলে পাশ কেটে চলে যায় সে।তৃণ আবার। বলল,
-“নীল তোমাদের এখানে কয়টা পর্যটন স্থান আছে? ”
-“আছে অনেক গুলো তার মধ্যে হলো নিঝুম দ্বীপ,শহিদ ভুলু স্টোডিয়াম,বজরা শাহি মসজিদ, গান্ধী আশ্রম,ম্যানগ্রোভ বন অঞ্চল,চর জব্বর,মহাত্মা গান্ধী জাদুঘর, আমতলী মেলা, ননদিয়া মেলা,মূসাপুর বেড়িবাঁধ, ভূঞা দিঘী,চর এলাহি, সূবর্ণচর।
ধূসর ঠাট্টা করে বলল,
-“এত কম কেন নীল?
নীল কিছু বলে না।স্বপ্ন বলল,
-“আমরা এখন কোথায় যাবো?
-“নিঝুম দ্বীপ দেখতে!”
নিঝুম দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে উঠা এক নিঝুম অঞ্চল।প্রথমে স্থানীয় জেলেরা এই দ্বীপ আবিষ্কার করে।শীতকালে হাজার হাজার অতিথি পাখির সমাবেশ ঘটে।জেলেদের ধরা নানা রকমের মাছ শুকানোর জন্য এটি একটি আর্দশ স্থান হিসাবে ব্যবহার হয়।নিঝুম দ্বীপে ছয়টি বাজার আছে। নীল সবাইকে নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য বর্ণনা করে দেখাচ্ছে।এখান থেকে তার সোজা চলে যায় গান্ধী আশ্রম। গান্ধী আশ্রম নোয়াখালীর একটি দর্শনীয় ঐতিহাসিক নিদর্শন। জেলা সদর মাইজদী কোর্ট হতে প্রায় ২৫ কিঃমিঃ উত্তরে সোনামুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশেই এর অবস্থান। তৎকালীন জমিদার প্রয়াত ব্যারিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষের বাড়িতে উক্ত গান্ধী আশ্রম স্থাপিত হয়। ১৯৪৬- এর শেষভাগে সারা ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে। তখন পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নোয়াখালীতে প্রভাব পড়ে। ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর চৌমুহনী রেলস্টেশনে প্রথম মহাত্মাগান্ধী নোয়াখালীর মাটিতে পদার্পন করেন। ধারাবাহিকভাবে চলল তার পরিক্রমা। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি জয়াগ গ্রামে এসে পৌঁছেন। সেদিনই নোয়াখালী জেলার প্রথম ব্যারিস্টার জয়াগ গ্রামের কৃতী সন্তান হেমন্ত কুমার ঘোষ মহাশয় তার জমিদারির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জনকল্যাণ খাতে ব্যয়ের উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধীর নামে উৎসর্গ করেন। আশ্রম পরিচালনার ভার দেওয়া হয় গান্ধীজীর স্নেহভাজন, জনসেবা ব্রতী, চিরকুমার শ্রীযুক্ত চারু চৌধুরী মহাশয়ের ওপর। বর্তমানে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিব হিসাবে কর্মরত আছেন শ্রীমতি ঝর্ণা ধারা চৌধুরী (৭২)।

নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী হতে সোনাইমুড়ী গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস/ সিএনজি অটোরিক্সা যোগে সম্মুখে জয়াগ বাজার নেমে যার তারা। রিক্সা না দিয়ে সবাই নানা ধরনের কথা বলতে বলতে পায়ে হেঁটে আধা কিলোমিটার পুর্বে গেলে গান্ধী আশ্রমে পৌঁছে যায় তারা।সবাই গান্ধী আশ্রমের কিছুক্ষণ সময় কাটায়।হাঁটা হাঁটা করে সবাই মিলে সেলফি তুলে।গান্ধী আশ্রম থেকে বের হওয়ার সময় ধূসর বলল,
-“নোয়াখালীতে মনে রাখার জন্য এই গান্ধী আশ্রমটাই আছে। গান্ধী আশ্রমের উসিলায় তোমাদের এই নোয়াখালীকে তবু ওকয়েক জন্য চিনে, না হলে কেউ জানতে ও পারত না।বাংলাদেশে নোয়াখালী বলে কোনো জেলা আছে।”
-“ভালো হয়েছে।”নীল বলল
আমতলী মেলায়, মূসাপুর বেড়িবাঁধ সেখানে যেও একনজর চোখ ভুলিয়ে আসে।বাসায় আসতে আসতে তাদের সন্ধ্যায় হয়ে যায়।
#চলবে
#কাউছার

স্বপ্নীল ২৩

0

স্বপ্নীল
২৩
প্রাচ্য’র বিয়ের দিন গনিয়ে আসছে তাই সমুদ্র ঢাকার ব্যবসার কাজগুলো ম্যানেজার কে বুঝিয়ে এসেছে।সব ঠিক ঠাক ভাবে করার জন্য।কোনো প্রয়োজন পড়লে তাকে জানাতে।সমুদ্র মির্জাপ্যালেসে এসেছে পৌঁছেছে কালকে রাতে! তাই সঙ্গে করে আনা গিফট গুলো দিতে পারেনি কাউকে ।সবার সাথে একসঙ্গে নাস্তা খায় সকালে।নীল,আর প্রাচ্যকে বলে সবার জন্য আনা গিফট গুলো নিয়ে আসতে নিচে।দাদুকে পাঞ্জাবী দিয়ে সালাম করে দোয়া নেয়। নীলের হাতের থেকে শাড়ির প্যাকেট গুলো নিয়ে তাদের দিয়ে বলল,
-“বড় মা,ছোট মা এগুলো তোমাদের জন্য।”
এটা বলে রোকেয়া আর সোহাগী কে সালাম করতে নিলে।রোকেয়া ধরে বলল,
-“কি করছো বাবা!তোমার স্থান পায়ের নিচে না আমাদের বুকে।
এটা বলে রোকেয়া বেগম সমুদ্রের কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দে।সমুদ্রে দুজনকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।বড় আব্বু, কাকাই, সবাইকে দেওয়া হয়।তামিমের দিকে তার প্যাকেট এগিয়ে বলল,
-“পছন্দ হয়েছে কি’ না বলিস!”
তামিম বলল,
-“তুই এনেছিস!পছন্দ হবে না সেটা কি হয়।”
আমেনা বেগমের কাছে এসে সমুদ্র বলল,
-“আমেনা খালা এটা তোমার।
-“কি দরকার ছিলো বাবা! এসব করার।”
-“দরকার আছে!তুমি আমাদের পরিবারের একজন।আমি আমাদের পরিবারে সবার জন্য এনেছি।তাহলে তুমি বাদ যাবে কেন? ”
এই ফ্যামিলি সবাই কেউ তাকে বুঝতে দেয় না আমেনা এই বাড়ি কাজের লোক।প্রতিটা ঈদে বা যেকোনো উৎসবে সবার জন্য যা কেনা হয় জামা কাপড় তাদের মা -মেয়েকে সেটাই কিনে দেওয়া হয়।তাদের পছন্দের অনুযায়।সোহার পড়াশুনার খরচ এই ফ্যামিলির সবাই চালায় না হলে মা -মেয়ে না খাইয়ে মরতে হতো।
-“আমেনা খালা তুমি কাঁদছো কেন? ”
আমেনা চোখের পানি মুছে বলল,
-“নাহ!বাবা।এটা দুঃখের কান্না নয়।এটা সুখের কান্না।
আমেনা খালাকে জড়িয়ে ধরে সমুদ্র বলল,
-“আর কখনো কাঁদবে না তুমি। আমরা থাকতে কিসের কষ্ট তোমার।যখন কোনো কিছু প্রয়োজন হবে আমাদেরকে জানাবে।”
সমুদ্র সবার উদ্দেশ্য বলল,
-“এগুলো আমার তরফ থেকে প্রাচ্য’র বিয়ে উপলক্ষে গিফট।”
নীল তেড়ে এসে বলল,
-“সবার জন্য কিছু না কিছু এনেছে।কিন্তু আমার গিফট কোথায় ভাইয়া!”
-“তোর জন্য আনতে ভুলে গেছি।পরের বার আসতে আনবো।
-“দেখোছ তোমরা।তোমাদের ছেলে আমার জন্য কিছু আনে নাই।আমার কথা ভুলে গেছে।থাক! আমার জন্য আনার দরকার নাই।তোমার গিফট আমার লাগবে না।
এটা বলে রাগ করে চলে যেতে নিলেই সমুদ্র নীলের হাত ধরে বলল,
-“আমাদের কদমফুল যে হেব্বি রেখে গেছে!
এটা বলে নীলের দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” দেখ তো পছন্দ হয়েছে কি’ না!”
সমুদ্রের হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেখে একটা মেরুন কালারে লেহেঙ্গা।তা দেখে খুশিতে সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“Thank you ভাইয়া! তুমি এই পৃথিবীর চেষ্ট ভালো ভাইয়া।!
-“হ্যাঁ আমি চেষ্ট ভালো ভাইয়া!একটু আগে কেউ একজন আমার নামে সবার কাছে নালিশ করল!
অভিমান করে সমুদ্র পরের কথাটা বলল।নীল তাকে বলল,
-“আমি জানতাম আমার ভাইয়ের সবার জন্য কিছু না আনলে ও আমার জন্য তারা কিছু না কিছু আনবেই ।তুমি যেমন আমার জন্য গিফট এনে ও মজা করছিলে।তেমনি আমি মজা করেছি।সমান সমান হয়ে গেছে।”
গোল্ডের আর পিংক কালারের একটা লেহেঙ্গা সোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“এটা তোমার জন্য। পছন্দ হয়েছে কি’ না দেখো।”
সোহা ভালো করে নাড়িয়ে ছাড়িয়ে দেখে বলল,
-“আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”
প্রাচ্য বলল,
-“সবার টা দেওয়া হয়ে গেছে।আমার কই।”
-“বিয়ের কনের তোমার জন্যই আনার হয়েছে।”
এটা বলে একটা প্যাকেট প্রাচ্য’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” এটা তোর।”
প্রাচ্য খুলে দেখে কাঁচা হলুদে রঙের একটা শাড়ি।সমুদ্র বলল,
-“শাড়ি এনেছি তোর গায়ে হলুদের জন্য।পছন্দ না হলে ফেরত দিয়ে আসব।”
-“আমার ভাইয়া আমার জন্য এনেছে তা পছন্দ না হয়ে থাকতে পারে।”
★★★
সোহা আয়নার সামনে লেহেঙ্গটা তার সামনে ধরে আয়না খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।লেহেঙ্গাটা ভারী পছন্দ হয়েছে তার।কিন্তু তার গায়ের রঙ নীলের মতো ওতটা ফর্সা নয়।একটু চাপা।তাই বার বার আয়না দেখছে দ তাকে মানাবে কি না।হঠাৎ করে আয়নার ভিতরে চোখ যায় সোহার! তামিমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সোহা ঘুরে দাঁড়ায়!ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে তামিম তার দিকে।তার চোখের দিকে তাকাতে তার অস্বস্তি লাগছে।তাই চোখ নামিয়ে হাতের লেহেঙ্গাটা ভাজ করে রেখে দিয়ে চলে যায় তামিমের পাশ কেটে।তামিম পিছু ডাকে!সোহা দাঁড়িয়ে যায়।তামিম বলল,
-“একগ্লাস লেবু শরবত দিয়ে যা আমায়।”
এটা বলে সোহার পাশে কেটে চলে যায়।সোহা শরবত নিয়ে তামিমের রুমে যেয়ে দেখে তামিম রুমে নেই।তাই খাটের পাশে রাখতে গেলেই ঠাস করে দরজা লাগানোর আওয়াজ কানে যায় তার!ঘুরে তাকিয়ে দেখে তামিম দরজা সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সোহা তামিমের কাছে এসে দরজা খুলতে গেলেই তামিম তার হাত ধরে ফেলে তার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে।যে বুঝতে পাচ্ছে না হঠাৎ করে তামিম এমন করছে কেন?খুব শান্ত গলায় সে বলল,
-“হাত ছাড়ুন আমি যাবো!”
সোহা বলল!কিন্তু তামিম হাত ছাড়া তো দূরে কথা হাত আরো শক্ত করে ধরে।সোহা বিরক্ত নিয়ে বলল,
-“একটা কাজের মেয়ের হাত ধরা এভাবে মানায় না।
এটা বলে হাত ছাড়িয়ে নেয়।তামিম এবার সোহার কোমর ধরে কাছে এনে বলল,
-“কালকে আমার কথায় তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো।আমি ওভাবে বলতে চাইনি। আই আম স্যরি সোহা”!
কোমরে থেকে তামিমের হাত সরিয়ে বলল,
-“ভুল কি বলেছেন? যা সত্যি চাই বলেছেন।এতে স্যরি বলার কিছু নেই।”
এটা বলে দরজা খুলে বের হয়ে যায় সোহা।তামিম অসহায় হয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।কেন কালকে সে সোহাকে এটা বলতে গেলো।সোহা খুব কষ্ট পেয়েছে।রাগে নিজের চুল গুলো টানতে থাকে তামিম।

★★★
প্রাচ্য, নীল,সোহা,তামিম টেন ষ্টেশনে বসে আছে। আজকে স্বপ্নরা আসবে।নীল মহাবিরক্ত নিয়ে বলল,
-“আপু আর কতক্ষন অপেক্ষা করতে হবে।”
-“এত দেরী হওয়ার কথা নয়!কেন যে দেরী হচ্ছে বুঝতে পাচ্ছি না! “প্রাচ্য বলল
-“তোরা বস!আমি একটু দেখে আসি তারা আসছে কি’ না।”
এটা বলে তামিম দাঁড়ায় যাওয়ার জন্য। তখনই সে জায়গা দাঁড়িয়ে যায়। প্রাচ্যকে বলল,
-“আর যেতে হবে না। তোর বন্ধুরা চলে এসেছে!
তামিমের কথা শুনে সবাই দাঁড়িয়ে যায়।তামিমের দৃষ্টি অনুসরণ করে সবাই তাকায়।নীল স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আছে।স্কাই কালার শার্ট, সাদা প্যান্ট, এক হাতে ভাজ করা ব্লু ব্লেজার আরেক হাতে লাগেজ। বাতাসে স্পাইক করা চুল গুলো উড়ছে। যেন সিনেমার হিরো হেঁটে আসছে তারর কাছে।চোখে সরছে না তার।তখনই স্বপ্ন তাদের কাছে এসে বলল,
-“কেমন আছো তামিম?”
এটা বলে জড়িয়ে ধরে তামিম কে?
-“ভালো আছি ব্রো! তোমাদের আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো!”
-“আরে না কোনো সমস্যা হয়নি।”
এটা বলে নীলের দিকে চোখ যায়। স্বপ্নের সাথে চোখাচোখি হতেই নীল চোখ নামিয়ে ফেলে লজ্জায়।নিজেই নিজেকে বলে সে,কেন নীল এত বেহায়া হয়ে প্রাচ্য’আপুর বন্ধুর দিকে তাকাতে গেলি!সে এখন কি ভাব্বে তোকে! বলবে এই মেয়ের লাজ শরম কিছু নেই, কি ভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলি ছিঃ ছিঃ।তোর চোখ সংযত কর!তুই শুধু এই দুই চোখ দিয়ে সুরওয়ালা দেখবি।কার কাউকে দেখবি না।
-“কেমন আছো নীল!”
স্বপ্নর কোথায় ধ্যান ভাঙে নীলের।নীল মৃদু হেসে বলল,
-“জ্বী ভালো আছি।”
-“তোমার পাশের জন্য বোধ হয় সোহা! এম আই রাইট!”
নীল মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ জানায়।রোদ দৌড়িয়ে এসে প্রাচ্যকে জড়িয়ে ধরে।
-“বিয়ের করার আগে আমাকে ভুলে গেলি!বিয়ে করার পর মনে হয় আমায় দেখলে তুই বলবি রোদ নামের কাউকে তুই চিনিস না।”
প্রাচ্য রোদের কথা শুনে শুধু মুচকি হেসেছে।ধূসর বলল,
-“হায়! হায়! প্রাচ্য তুই এটা কি করলি! রোদকে ভুলে যাওয়া তোর উচিত হয়নি।তোর ১০ না, ৫ না, একটা মাত্র বেষ্ট ফ্রেন্ড।ওকে তুই এভাবে ভুলে যাওয়া উচিত হয়নি।ঘোর অন্যায় করেছিস। ”
রোদ বলল,
-“ধূসর ঠিক বলেছে!তুই ঘোর অন্যায় করেছিস! ”
-“হ্যাঁ, আমি মেনে নিয়েছি আমি ঘোর অন্যায় করেছি।এখন আপনি আমায় যা শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেবো।”
-“নাহ থাক!আমার বেষ্টু কয়দিন পর চলে যাবে আমাকে ছেড়ে তাকে কি এখন শাস্তি দেওয়া যায়।”রোদ বলল।
প্রাচ্য সবাইকে দেখছে কিন্তু তৃণকে দেখছে না।সে কি আসেনি। এদিক ওদিক তাকায় তৃণকে দেখার জন্য। কিন্তু দেখতে পায় না। হুট করে তৃণ এসে বলল,
-“ভেবেছিস আমি আসবো না তোর বিয়ে তে তাই এদিকে ওদিক খোঁজা হচ্ছে আমাকে!”
হুট করে তৃণ কথাটা বলাতে প্রাচ্য ঘাপড়ে যায় কিছুটা।
-“একটা মাত্র বেষ্টুর বিয়ে বলে কথা না এসে পারি।”প্রাচ্য’র গাল দুটো টেনে বলল তৃণ।তৃণ এমন আচারণ আগে হলে তার কাছে স্বাভাবিক লাগত।কিন্তু এখন কি করে তৃণ এই স্বাভাবিক আচারণ করছে তার সাথে। তৃণ চোখের দিকে তাকায় সে,চোখে খুশির ঝিলিক।প্রাচ্য ভেবেছে হয়তো তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনে তৃণ খুব কষ্ট ভাবে। এটা ভেবে সে এতদিন প্রতিটা রাত কেঁদেছে।কিন্তু তৃণ কে দেখে বুঝায় যাচ্ছে না তার প্রিয় মানুষটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।কি হাসি খুশি সে।উপর থেকে নীচ পর্যন্ত ভালো করে চোখ ভুলায় তৃনের উপরে প্রাচ্য।গ্যাবাডিন কালারে প্যান্টের সাথে কালো শার্ট পরেছে সাথে আছে ঝাঁকড়া চুল।সৌন্দর্য যেন তার উপচে পড়ছে।
-“এভাবে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিস কেন? আমার খুব লজ্জা লাগছে! ”
তৃণ বলল।প্রাচ্য আবার তৃনের দিকে তাকায়।এখন হাসছে তৃণ।চোখ নামিয়ে ফেলে প্রাচ্য!তৃণ প্রাচ্যকে বলল,
-“আমাকে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে তাই না প্রাচ্য।”
প্রাচ্য তৃণ দিকে তাকায়।তৃণ আবার বলল,
-“তোর বিয়েতে অনেক মেয়ে আসবে।ফ্লাটিং করতে হবে না। তাদের পছন্দ হতে হবে তো,,,,,
আর বলার আগে প্রাচ্য সেখান থেকে চলে আসে।সবাই গাড়িতে উঠে যায়।নীল বলল,
-“কি তৃণ ভাইয়া আসতে হলো তো আমাদের নোয়াখালীতে।”
-“হুম!
-“কালকে আপনাদের সবাইকে আমাদের এই নোয়াখালী জেলায় ঘুরাবো।”
সবাই রাজি হয়। রোদ বলল নীলকে,
-“নীল তুমি বলেছো প্রাচ্য’র সাথে ধূসরের বিয়ে দেবে।এখন তো প্রাচ্য’র অন্য কোথায় ও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।!
নীল বলল,
-“সমস্যা নেই! ধূসর ভাইয়া সাথে আমার বেষ্টু সোহার বিয়ে দেবো।”
এটা বলার সাথে সাথে সোহা বিষম খায়। নীলের কথা বিষম খাওয়া মেয়েটাকে দিকে ধূসরের চোখ যায় শ্যামবর্ণের হৃদয় হৃরণ কারী ।আনমনে ধূসরব মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে ‘মায়াবতী ‘ কথাটা।ধূসরের এরকম বেহায়া চাউনি সোহার কিছুটা অস্বস্তিবোধ হচ্ছে!সোহা একটা চিমটি কেটে নীলকে বলল,
-“এসব কি বলছিস তুই!”
নীল ফিসফিস করে বলল,
-“আরে!তোকে বিয়ে দেবো আমার তামিম ভাইয়ের সাথে।এখানে আমি ড্রপ মারছি!”
রোদ বলল,
-“নীল তুমি কি ভুলে গেলে!”
নীল সন্দিহান গলায় বলল,
-“কি?
-“তুমি না সাজেকে যাওয়ার সময় বললে,তৃণ সাথে তোমার ফ্রেন্ড সোহার বিয়ে দেবে।এখন বলছো ধূসরের সাথে!”
নীল জিহ্বা কামড় দিয়ে বলল,
-“এই যে ভুলে গেলাম!সব দোষ প্রাচ্য আপুর!তার জন্য সব গণ্ডগোল হয়ে গেছে।প্রাচ্য আপু তোমার উচিত ছিলো ধূসর বা তৃণ ভাইয়াকে বিয়ে করার তাহলে আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতাম আমাদের জেলাকে ব্যঙ্গ করার।”
প্রাচ্য তৃণ দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল,
-“নীল তুই কোনো চিন্তা করিস না!আমাদের তৃণ মেয়ে পঠানোর খুব ওস্তাদ। দেখবি আমার বিয়েতে কাউকে না কাউকে ঠিক পটিয়ে ফেলবে।আমার বিয়েতে মেয়ে পঠানো মানে আমাদের গ্রামের।আর আমাদের গ্রামের মানে আমাদের নোয়াখালী জেলার।তাহলে তোর ইচ্ছা পূরণ হয়ে যাবে।”
তৃণ বলল,
-“শোন প্রাচ্য!এই তৃণকে মেয়ে পটাতে হয় না।মেয়েরা এমনিতে তাকে দেখলে পটে যায়।”
প্রাচ্য ঠোঁট বাকা করে অন্য দিকে তাকায়।সোহা নীলের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে!তা দেখে নীল বলল,
-“শোন উনারা আমাদের নোয়াখালী জেলাকে অনেক ব্যঙ্গ করে কথা বলেছে।তাই আমি অভিশাপ দিয়ে বলেছি তাদের যেন নোয়াখালী জেলাতে বিয়ে হয়।আর পাত্রী খুজে ও দিয়েছি।তোর সাথে তৃণ ভাইয়ার বিয়ে হবে।আমার না তখন খুব রাগ হয়েছিল তাই হুট করে তোর নাম বলে দিয়েছি।রাগ করিস না সোহামণি!

স্বপ্ন এতক্ষণ নীলের খামখেয়ালীপণা কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনছিল।আর মুখ টিপে টিপে হাসছিল।

কথা বলতে বলতে তারা পৌঁছে যায় মির্জা প্যালেসে।সবাই লাগেজ নিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়।ধূসর যাওয়ার সময় সোহার কানে কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে সে বলল,
-“মায়াবতী! ”
সোহা সেখানে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বার বার তার কানে বাজছে মায়াবতী কথাটা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সোহা তার দিকে।ধূসর মুচকি হেসে বাসার ঢুকে যায়। তামিম গাড়ি পার্ক করে এসে দেখলো সোহা আর ধূসরকে এই অবস্থা। হাতের আঙুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।রাগান্বিত হয়ে এগিয়ে আসে সোহার দিকে।

#চলবে
#kawsar_sorna
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।শুধরানো চেষ্টা করব।