Friday, August 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2008



স্বপ্নীল ৪২

0

স্বপ্নীল
৪২
-” কালকে জন্য সরি।”
নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বপ্নকে বলল,
-” ইট’স ওকে।দোষটা আমার। আমি যদি আপনার কথা শুনতাম তাহলে আপনি আমার গায়ে হাত তুলতেন না।”
-” প্লিজ নীল আমায় ক্ষমা করে দিও।তখন আমি রেগে ছিলাম।তোমায় গায়ে তোলা আমার উচিত হয়নি।তোমাকে ভালো ভাবে বোঝালে হয়তো বুঝতে পারতে।”
-” বললামেই তো এটা নিয়ে আর কোনো কথা নয়।”
-” তাহলে কি তুমি আমায় ক্ষমা করে দিয়েছো।”
-” হুম!
দুজন আমার কিছুক্ষনের জন্য নিরব হয়ে গেলো।নীল বলল,
-” আমরা কি বন্ধু হতে পারি না!”
স্বপ্ন যেন ভুতের মুখে রাম রাম শুনছে।নীল তাকে বন্ধু হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে।বিষয়টা বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না।আবার তার মন এইটা ও বলছে,যে হয়তো নীল বদলে গেছে।কালকে রাতে হয়তো সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।স্বপ্ন মুচকি হেসে নীলের সাথে হাত মিলায়।
রাতে খাওয়া দাওয়া পর সবার জন্য নীল লেবুর শরবত বানায়।স্বপ্নের গ্লাসে লেবুর শরবতে সাথে জামের গোঁটা মিশায়।যাতে সারারাত ধরে স্বপ্ন টয়লেট কাটায়। নীল সে ব্যবস্থা করছে।স্বপ্ন নীলের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে মুচকি হেসে গ্লাসে চুমুক দেয়।নীল মনে মনে বলল,
-” খায় চান্দু! পরে টের পাবি।”

ঘুমানো সময় স্বপ্ন পেটের ভিতরে নাঁড়া দেয়।যথারীতি একবার সেড়ে এসে বাথরুমে বাইরে বের হলে আমার পেটে নাঁড়া দেয়।পেট চেপে ধরে আবার বাথরুমে ঢুকে।সে বুঝতে পাচ্ছে না তার এমন ভাবে বাথরুমে ধরছে কেন?আবার বের হলে দৌড়িয়ে যায় বাথরুমে।ধূসর হা করে স্বপ্ন কান্ড দেখছে।কি হচ্ছে বুঝতে পাচ্ছে না।অনেক বার যাওয়া আসার কারণে স্বপ্নর শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে।পেট চেপে খাটে বসে।স্বপ্ন কে এতোবার বাথরুমে যেতে দেখে প্রথমে হাসি ফেলে এখন স্বপ্ন’র চেহারা দেখে ধূসরে চেহারা রঙে চেঞ্জ হয়ে যায়।সিরিয়াস হয়ে বলল,
-” এতত বার বাথরুমে যাচ্ছি! সমস্যা কি? ”
-” জানি না হঠাৎ করে লেবুর শরবত খাওয়ার পর,,,,
এটুকু বলে থেমে যায় স্বপ্ন।স্বপ্ন’র এখন মনে হচ্ছে নীল কিছু মিশাই নি তো।সে ধূসর কে বলল,
-” তুই লেবুর শরবত খেয়েছিস তো।”
-” হ্যাঁ।তোর বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।”
-” লেবুর শরবতের সঙ্গে বাথরুম যাওয়ার কি সম্পর্ক।”
-” লেবুর শরবত খাওয়ার পরে এইভাবে বাথরুমে দৌড়াদৌড়ি করছি।”
-এই শরবত নীল বানিয়েছে।তারমানে ওই তোর গ্লাস ইচ্ছা করে কিছু একটা মিশিয়েছ।”
-” হুম।”
-” কালকে থাপ্পড় মেরেছি তাই তোর এই বেহাল করেছে, শরবত খাইয়ে।”
-” এই শরবত খাওয়ানো জন্য সন্ধ্যা ধরে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে।”
কথা শেষ করার পরে স্বপ্ন আমার ডাক পড়ে বাথরুমে যাওয়ার ।এবাবে অনেকবার দৌড়াদৌড়ি করে। আর না পেরে স্বপ্ন আর বাথরুম থেকে বের হয়নি।ওখানেই সারারাত কাটাবে তার মনাস্তব করে ফেলে।
নীল আজকে একটা শান্তির ঘুম দেবে।আজকে এই বাঁদরটা শায়েস্তা করতে পেয়েছে।তার গায়ে হাত তোলার পরিনাম দেখিয়ে দিয়েছে।

সমুদ্র রুমে ঢুকে দেখে রোদ বারান্দা দাঁড়িয়ে আছে।সমুদ্র রোদের পিছনে যেয়ে রোদের কোমর হাত দেয়।রোদ এতটাই অন্যমনস্ক ছিল কেউ যেয়ে তা কোমর হাত দিয়েছে সেই খেয়াল নেই।সমুদ্র রোদের চুল সরিয়ে ঘাড়ে কামড় বসায়।সমুদ্র কামড়ে রোদের চেতনা ফিরে আসে।নিজের ঘাড়ে হাত দিয়ে সমুদ্র থেকে দূরে সরে যায়। সমুদ্র দিকে তাকায় রোদ। আজকে সমুদ্রকে হিংস্রমত লাগছে না।আগে যেরকম লাগছে সেই রকমই।তার মানে কি সমুদ্র তাকে মাফ করে দিয়েছে।রোদ সমুদ্র দিকে তাকিয়ে সব জল্পনা কল্পনা করতে তাকে।আর সমুদ্র রোদের কোমরে হাত দিয়ে আবার তার কাছে নিয়ে আসে।রোদের গলায় মুখ ডুবায়। সমুদ্র’র এরকম স্বাভাবিক আচারণ রোদের হজম হচ্ছে না।ঘটকা লাগছে।কি করতে চাইছে সমুদ্র? বুঝতে পাচ্ছে না।সমুদ্র হাত দেয় রোদের ব্লাউজে ফিতায়।দুইহাত দিয়ে ব্লাউজ ফিতা খুলে দেয়।সঙ্গে সঙ্গে রোদ বলে উঠল,
-” কি করছেন? ”
সমুদ্র কোনো কথা না বলেই রোদের কাঁধ থেকে ব্লাউজ নামাতে নিলেই রোদ বাঁধা প্রয়োগ করে। রোদের আর বুঝতে বাকি রইল না সমুদ্র কেন এত স্বাভাবিক আচরণ করছে।কিন্তু তার শরীর যে আজ খুবই দুর্বল। কালকের যন্ত্রণা এখন কমেনি। আজকে যদি আবার… তাহলে সে মরেই যাবে।সে অনুনয় সুরে বলল,
-” আমি খুব অসুস্থ। ”
সমুদ্র এই কথা শুনে কাঁধ থেকে ব্লাউজ টেনে ছিঁড়ে ফেলে। সমুদ্র উপরে যেন আবার সেই হিংস্রতা ভর করে।রোদের চুলের মুটি ধরে বলল,
-” তোকে বিয়ে করেছি আমার চাহিদা মিটানোর জন্য।তোর এসব বাহানা শুনতে নয়।”
সমুদ্রকে এভাবে রেগে যেতে দেখে রোদ কান্না করে দেয়।কান্না করতে করতে বলল,
-” আমি সবাইকে বলে দিব আপনি যেয়ে আমার সাথে এরকম করেন? ”
রোদের গালে দুটো চড় মারে সমুদ্র।চড় খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে রোদ ফ্লোরে মুখ থেঁতলে পড়ে।সমুদ্র রোদের চুলের মুটি ধরে দাঁড়া করিয়ে বলল,
-” সবাইকে বলার বাকি রাখছিস কি? সব তো বলে দিয়েছি!কোথায় কোথায় কামড় দিয়েছি।কি কি করেছি তোর সাথে? সব স্বপ্ন আর ধূসর কে বলছিস।ওদের বলে কি লাভ হয়েছে? ওরা এসে আমাকে বোঝাবে আর আমি তোকে ভালো বেসে কাছে টেনে নিব।তাই তো?”

চুলের মুটি শক্ত করে ধরে রোদকে তার কাছে আনে।রোদ ব্যথায় আর্তনাদ করতে থাকে।সেই আর্তনাদ সমুদ্রের কানে পৌঁছেও না।রোদের চুলে নিচে হাত দিয়ে গলায় কামড় বসায়।ব্যথায় রোদ চটপট করতে থাকে।সমুদ্র কিছুটা কৌতুক করে বলল,
-” স্বামী ভালো বেসে গলায়, ঠোঁটে, ঘাড়ে, লাভ বাইট দেয়।সেগুলো কি স্বামীর বন্ধুকে দেখানো উচিত।”
-” জানোয়ারে মত কামড়িয়ে বলছেন এগুলো লাভ বাইট।”
সমুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” জানোয়ার গিরি করার জন্য তুই বাধ্য করেছিস।শরীরে ঝাঁজ মেটানো জন্য আমার কাছে বিলিয়ে দিতে এসেছি স্ব- ইচ্ছা।”
এটা বলে রোদকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় ধপাস করে ফেলে দেয়।রোদ উঠে বসলে সমুদ্র তাকে টেনে শুয়ে দিয়ে বলল,
-” উঠবি না তুই।যতক্ষণ পর্যন্ত আমার চাহিদা মিটানো না হয়।”
-“আমি আপনার দুটো পায়ে পড়ি।আজকে জন্য আমায় ছেড়ে দিন।”
সমুদ্র শুধু তাচ্ছিল্য হাসে।রোদের বুকের উপর থেকে শাড়ি আচঁল সরিয়ে ফেলে।রোদ ছুটার জন্য চটপট করতে থাকে।পা,হাত দিয়ে সমুদ্রককে আঘাত করতে থাকে।তাই সমুদ্র রোদের শরীরে থেকে পুরো শাঁড়ি খুলে ফেলে।সেই শাঁড়ি দিয়ে খাটের সাথে হাত, পা বেঁধে ফেলে রোদের চোখের দিকে তাকায়, চোখে পানি টলমল করছে, চোখে আকুলতা ভরা। চোখে সরিয়ে ফেলে সমুদ্র।রোদ কে নিবারণ করার খেলা মেতে উঠে সে।যে খেলায় একজন সুখ কুঁড়ায় আরেক জন্য অসহ্য যন্ত্রণা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিচ্ছে।

বিছানায় শুয়ে তৃণ চটপট করছে।চোখে ঘুম নেই তার।সন্ধ্যায় রুমের দরজা আটকিয়েছে আর খোলে নি সে।প্রাচ্য সাথে তার মা কি করেছে? সে জানে না।বের করে দিয়েছে নাকি আছে। সে কিচ্ছু জানে না।এত অশান্তি তার ভালো লাগে না।প্রাচ্যকে নিয়ে তার মায়ের কি এত সমস্যা বুঝে না সে।তখনই মাকে চুপ করার জন্যই প্রাচ্য থাপ্পড় মেরেছে।সে তো জানে প্রাচ্য সজ্ঞান কোনোদিন এমন কাজ করবে না।সে যদি তখন প্রাচ্যকে থাপ্পড় না মারত তাহলে তখন জামেলা আরো বাড়ত।প্রাচ্য কে থাপ্পড় দিয়ে সে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে।বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে বাইরে যায়।প্রাচ্য কোথায় আছে দেখার জন্য।নিচে এসে চারদিকে চোখ বুলায়।প্রাচ্যকে না দেখেই তার মনে একটাই প্রশ্ন জাগে। ‘ প্রাচ্য কি চলে গেছে? ‘ চলে আসতে নিলেই তৃণ চোখ যায় সোফায়।সোফায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে প্রাচ্য।তৃণ প্রাচ্য’র কাছে যেয়ে দেখে প্রাচ্য এখন ঘুমায়নি।জেগে আছে! প্রাচ্য পাশে বসে তৃণ।তৃণ দেখেও না দেখার ভান ধরে প্রাচ্য।তৃণ খুকখুক করে কাশে যাতে প্রাচ্য তার দিকে তাকায়।প্রাচ্যকে না তাকাতে দেখে তৃণ বলল,
-” চড় মারার জন্য সরি।”
প্রাচ্য কোনো কথা বলল না।তৃণ নিজের দুইহাত দিয়ে কান ধরে বলল,
-” স্যরি।”
প্রাচ্য উঠে দুহাত দিয়ে তৃণকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।তৃণ দুইহাত দিয়ে প্রাচ্য জড়িয়ে ধরে।অনেক্ষণ প্রাচ্য কান্না করে। প্রাচ্য বলল,
-“আমি ইচ্ছা করে ধাক্কা দিই নি।কিভাবে যেন মা পড়ে গেছে।”
-” আমি জানি। তুই কখনো মাকে ধাক্কা দিতে পারিস না।আমি রাগ করে তোর কথা না শুনে গায়ে তুলেছিস।তুই আমায় ক্ষমা করে দিস।”
-” হুম!
প্রাচ্য নাক টেনে বলল,
-” আমার খুব খিদে পেয়েছে।”
-” আমার ও খুব খিদে পেয়েছে।দেখি তোর শ্বাশুড়ি আমাদের জন্য কিছু রেখেছে কি না।”
দুজনে মিলে উঠে ডাইনিং যায়।টেবিলে উপরে খাবার ডাকা আছে। তৃণ সেই খাবার গুলো গরম করে আনে। খাবার সার্ভ করে দেয়।প্রাচ্য ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
-” খাইয়ে দেয়।”
তৃণ আর্তনাদ সুরে বলল,
-” কিহ!”
-” চড় মারার শাস্তি এটা।খাইয়ে দিতে হবে।”
-” পারব না আমি।”
প্রাচ্য মুখ বাঁকিয়ে বসে থাকে।তৃণ বাধ্য হয়ে খাইয়ে দেয়।প্রাচ্য সে প্লেট থেকে ভাত নিয়ে তৃণকে খাইয়ে দেয়।খাদিজা বেগমের রুমে পানি শেষ হয়ে গেছে।ডাইনিং আসে পানির জন্য।ছেলে আর ছেলের বউয়ের এসব কৃতি দেখে পানি না নিয়ে চলে যায়।আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
-” সামান্য কিছু করে লাভ হবে না বড় কিছু করতে হবে।যাতে এই মেয়ের জায়গা তিন্নিকে আনতে পারি।”
খেয়ে দেয় দুজনে রুমে আসে।প্রাচ্যকে বিছানায় শুতে বলে তৃণ সোফা শুয়ে পড়ে।প্রাচ্য বিছানায় শুয়ে তৃণ দিকে তাকিয়ে আছে।এত ছোট সোফায় তৃণ পা বাঁকা করে জড়োসড় হয়ে শুয়ে আছে।দেখে বোঝা যাচ্ছে কষ্ট হচ্ছে।তার পাশে শুলে কি হয়? তারা তো এখন স্বামী স্ত্রী।প্রাচ্য উঠে এসে বলল,
-” এত বড় বিছানায় দুজন শোয়ার জায়গা আছে।”
-” সুন্দরী মেয়ের সাথে সাথে একই বিছানায় শুলে নিজে কন্ট্রোল করতে পারবো না।এমনিতে তো চরিত্র ঠিক নেই।”
প্রাচ্য বুঝতে পারে তৃণ তাকে খোঁজা মেরে কথা বলেছে।নিজেকে সামলিয়ে সে বলল,
-” মাঝখান দিয়ে বালিশ দিয়ে বর্ডার তৈরী করে দিব।যাতে নিজে তুই কন্ট্রোল রাখতে পারিস।”
আমি এই কথা বলেছিলাম।যাতে দেখতে পারি তুই কি বলিস।আমি নিজের উপরে যথেষ্ট কন্ট্রোল রাখতে পারি।তুই যতটা খারাপ ভাবিস তত টা খারাপ না আমি।তৃণ কোনো কথা না বলে বালিশ নিয়ে উঠে এসে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।প্রাচ্য বিছানায় মাঝখানে বালিশ দিতে দিতে বিড়বিড় করে বলল,” তোকে কে এতটা সতীগিরি করতে বলেছে।আমি তোর বউ।আমাকে ছুঁলে কি হবে? ”
শুয়ে পড়ে সে ও।ইচ্ছা করছে তৃণ বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে।ইচ্ছাটাই ইচ্ছায় রয়ে গেছে।সে বলল,

-” অপাশ করে শুয়ে আছিস কেন? এপাশ হয়ে শোও।”
প্রাচ্য কথামতে তৃণ প্রাচ্য দিকে মুখ করে শোঁয়।প্রাচ্য চোখে দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলে।আজ যদি সব ঠিক থাকত।তাহলে প্রাচ্যকে বুকের খাঁচায়বন্ধী করে জড়িয়ে শুয়ে থাকত।কিন্তু সে তো আর হলো না। সবার সব ইচ্ছা কি পূরণ হয়।তৃণ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে প্রাচ্যকে বলল,
-” গুড নাইট। ”
তারবিনিময় প্রাচ্য কিছুই বলল না।

আজকে সবাই ঢাকা চলে যাবে।সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে।কিছক্ষনের মধ্যে সবাই বের হবে।রোদ বড়দের সবাইকে সালাম করে নেয়।শায়লা আর ঢাকা ফিরবে না বলে দিয়েছে
সমুদ্রকে।এতদিন যে দুই ছেলে মেয়েদের জন্য ঢাকায় থাকা লাগত সে দুই ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।তিনি মনে করেন রোদ যখন আছে তাহলে ঢাকা যাওয়ার আর কোনো প্রয়োজন নেই।তিনি পুরো ফ্যামিলি সাথে গ্রামে থাকতে চায়।গ্রামে নির্মল বাতাসে প্রান জুড়াতে চায় যে কয়দিন বাঁচে।সমুদ্র ঢেকে শায়লা বলল,
-” যা হয়েছে সব ভুলে নতুন জীবন শুরু করবে। রোদের খেয়াল রাখবে।ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না।”
সমুদ্র রোদের কথা শুনতে আগ্রহ নই।সে মাকে বলল,
-” তুমি চলো আমার সাথে।”
-” আমি যাবো মাঝে মাঝে।তোদের নতুন সংসার দেখে আসব। রাত করে বাড়ি ফিরবি না।কাজ সেড়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসবি।আর হ্যাঁ বাইরের খাবার খাবি না।রোদ আমি বলে দিয়েছি বাড়িতে যেন রান্না করে।”
সমুদ্র শুধু মাথা নাঁড়ায়।মাকে সালাম করে বেরিয়ে যায় সে। নীল সমুদ্রকে পিছু ডাকে।সমুদ্র এগিয়ে আসে।
-” কিছু বলবি?”
-” তোমার সাথে কিছু কথা আছে? ”
-” বল!”
-” রোদ ভাবি কোনো দোষ নেই।”
সমুদ্র চুপ করে থাকে।নীল বলল,
-” ভাবি তোমাকে খুব ভালোবাসে।ভাবি তোমার ভালোবাসার পাওয়ার জন্য এই কাজ করেছে।তাতে ভাবি কোনো দোষ নেই।সব দোষ আমার।
তোমার প্রতি ভাবির ভালোবাসা দেখে এই কাজ করতে আমি বলেছি।ভাবিকে কান্না করতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিল।তাই আমি সেদিন ভাবিকে কুবুদ্ধিত দিয়।আমি ভেবেছি দাদু শুধু কিছু কটুকথা বলবে তারপর তোমাদের বিয়ে দিয়ে দেব। আমি বুঝতে পারিনা দাদু এমন কিছু করবে।তোমার সম্মান নিয়ে শুধু ভাবি খেলা করি নি আমি ও করেছি।আমায় তুমি মাফ করে দিও।”
নীল কান্না করতে করতে কথাটুকু শেষ করে।সমুদ্র বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” কান্না করিস না তুই।আমি তোর উপরে রেগে নেই।তোকে কবেই আমি মাফ করে দিয়েছি।”
নীল মাথা তুলে তাকায়।সে বলল,
-” তাহলে রোদ ভাবিকে মাফ করে দিও।”
সমুদ্র কোনো কথা বলল না। নীলকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-” আসি।সবার খেয়াল রাখিস।পাগলামো করিস না।”
রোদ পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রোদ আর স্বপ্ন তাকিয়ে আছে।স্বপ্ন দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।রোদের কাছে এসে বলল,
-” আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমার জন্য ভাইয়া তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।”
রোদ নীলকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” ক্ষমা তুমি কেন চাচ্ছো।তোমার জন্যই তো আমার ভালোবাসার মানু্ষকে নিজের করে পেয়েছি।ভালো থেকো আসি।”
এটা বলে রোদ চলে যায়।স্বপ্ন বলল,
-” এমন পাগলামো করা উচিত না যে সব পাগলামোর মানু্ষকে কষ্ট দেয়।”
নীল আবার নিজের ফর্ম ফিরে আসে।রাগী রাগী ভাব এনে বলল,
-” তাতে আপনার কি? ”
স্বপ্ন নীলের দিকে ঝুকে বলল,
-” আমারই সব।”
নীল স্বপ্নের বুকে দুহাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বলল,
-” জামের গোঁটার শরবত খেয়ে রাত কেমন কেটেছে।”
স্বপ্ন হাসতে হাসতে বলল
-” ভালোই।
নীল ও হেসে দেয়।স্বপ্ন বলল,
-” ফোন দিলে ধরো কিন্তু।”
ধূসর সোহার দিকে তাকায়।যাকে দেখে মনের মনিকোটায় ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে।সেই ভালোবাসা ঝরে গেছে।তার মায়াবতী ভালো থাকুক। সেই দোয়াই করবে সে।চোখে কার্নিশে জমে থাকা পানি মধ্যমা আঙ্গুলের ডগা দিয়ে এনে ঝেড়ে ফেলে দেই।মুচকি হেসে এগিয়ে যায়। ধূসরের সেই কান্নামিশ্রত পানি সোহার চোখে এড়িয়ে যায়নি।

#কাউছার স্বর্ণা
পেইজে মেম্বার ২৬০০ কিন্তু লাইক পড়ে ১০০ বা ১৫০ সাড়া এত কম কেন? সাড়া পাইনা বলে লেখার প্রতি মন উঠে গেছে।

স্বপ্নীল ৪১

0

স্বপ্নীল
৪১
সকালের মিষ্টি আলোয় সোহার ঘুম ভাঙ্গে।বিছানা থেকে উঠতে গেলে দেখে তাকে কেউ সাপের মত জড়িয়ে ধরে আছে। দুই হাত দিয়ে দুচোখ কঁচলাতে থাকে। ভালো করে তাকিয়ে দেখে তামিম তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।কালকে রাতে তামিম তাকে এখানে এনেছে।হঠাৎ করে মনে পড়ে যায়।তাকে কেউ তামিমের ঘরে দেখলে মহা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।তামিমের হাত ছাড়িয়ে উঠতে গেলে তামিম আরো ঝাপটে ধরে তাকে।শেষমেষ উঠতে না পেয়ে সে বলল,
-” আরে ছাড়ুন।”
-” উহু!”
-” সকাল হয়ে গেছে। মা আমাকে হয়তো খুঁজছে।”
-” খুজুক।”
সোহা তামিমকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে নিচে নেমে যায়।গায়ে ওড়না ঠিক করে নেয়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে। তামিমের দিকে ঘুরে ভেঙচি দিয়ে বেরিয়ে আসে।দরজা খুলে উঁকি দেয় কেউ আছে কি না এখানে?কাউকে না দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।আবার পিছন ফিরে তামিমের দিকে একনজর দেখে।বুকের নিচে বালিশ দিয়ে তামিম উপুড় হয়ে শুয়ে আছে বাম দিকে মুখ করে। হেসে দেয় সোহা।তার পর দরজা ভিজিয়ে দেয়।সোহা ফ্রেশ হয়ে কিচেনে আসে।আমেনা বেগম পরোটা ভাজতে ভাজতে মেয়েকে বলল,
-” সকালে কই ছিলি?”
মায়ের কথায় কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না সে।কি বলে এখন মাকে বোঝাবে?ভাবতে ভাবতে মাথায় হুট করে একটা বুদ্ধি আসে।কোনো মত এটা বলে এই যাত্রা বাঁচলে হইছে।
-” আজকে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে গেছে।তাই একটু বাগানে হাটাহাটি করছিলাম।”
পরোটা উঠিয়ে আরেকটা পরোটা তেলে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-” অন্যকোনো দিন আমার আগে তোকে উঠতে দেখিনি তাই আরকি? ”
সোহা কথা ঘোরানোর জন্য বলল,
-” দেখি তুমি সরো তো।অনেক ক্ষন তুমি ছেঁকছিলে এখন আমায় একটু দাও।”
এটা বলে মাকে সরিয়ে নিজে কাজ করতে থাকে।
ভার্সিটি দিন গুলো ছাড়া প্রাচ্য বরাবরে লেট করে ঘুম থেকে উঠে।আজকে সে লেট করে ঘুম থেকে উঠেছে।তার শ্বাশুড়ি বলল,
-” এই নবাবের বেটি।এটা তোমাদের বাড়ি না যে, যখন তখন ঘুম থেকে উঠলে হইছস।এই বাড়িতে থাকতে হলে সাঁত সকাল বেলা উঠতে হবে।”
খাদিজা কথা শুনে কান্না যেন প্রাচ্য’র গলা বেঁধে আসছিল। তাদের বাড়িতে কেউ কখনো এমন কথা বলেনি তাকে। এই সামান্য কথা যেন তার কাছে বিশাল।ছলছল চোখে শাশুড়ি দিকে তাকায়।খাদিজা সেদিকে খেয়াল না করে আবার বলে উঠল,
-” ফজরের নামায পড়েছিলে!”
প্রাচ্য মাথা নেঁড়ে না জানায়।খাদিজা হায় হায় করে বলল,
-” আমার তৃণ! এই কী মেয়ে ধরে এনেছে।যে মেয়ে নামায কালাম ধারে নেই।আমার সংসার বুঝি এই শেষ হলো।”
শাশুড়ি কথায় প্রাচ্য এবার অপমানিত বোধ হয়।নিচের দিকে তাকিয়ে
পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে ফ্লোর খোঁচাতে থাকে। খাদিজা ক্রোধে ফেটে পড়ল।
-” বাপের বাড়িতে মনো হয় নামায কালাম ধারে দিয়ে যাও নি।আমার এই বাড়িতে থাকলে হলে নামায পড়তে হবে নিয়মিত। না হলে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হবে।”
এটা বলে তিনি রান্না ঘরে চলে যায়।প্রাচ্য নিয়মিত ওই বাড়িতে নামায না পড়লে মাঝে মাঝে পড়ত। শাশুড়ি বলা কথা শুনে ঠিক করেছে কাল থেকে আর ফজর নামায মিস দিবে না।এবার থেকে নিয়মিত নামায পড়বে সে। খাদিজা গলা খ্যাঁকিয়ে বলল,
-” সঙের মত দাঁড়িয়ে না থেকে রুটি বেলতে আসো।”
রুটি আবার কেমন জিনিস।যা বেলতে হয়। রুটি বলে মনে মনে আওড়াতে থাকে।স্বাভাবিক কন্ঠে সে বলল,
-” রুটি কি মা? ”
খাদিজা এই কথা শুনে নিজের কাজ রেখে প্রাচ্য দিকে তাকায়।শাশুড়িকে এভাবে তাকাতে দেখে ভড়কে যায় সে।সে কি ভুল কিছু বলেছে না কি? আমতা আমতা করে বলল,
-” আমি কি ভুল কিছু বলেছি নাকি! ”
খাদিজা প্রাচ্য’র পাশ কেটে ড্রয়িং রুমে এসে জোরে জোরে তৃণ বলে ডাকতে থাকে ।মায়ের এই ডাকে তৃণ আর তার ছোটবোন তনয়া রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।তৃণ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
-” কী হয়েছে মা! ”
-” এই মেয়ে তুই যেখান থেকে নিয়ে এসেছি সেখানে ফেলে আস।”
তৃণ প্রাচ্য দিকে তাকিয়ে মাকে বলল,
-” কথা না প্যাঁচিয়ে সোজাসুজি বলো? কি হয়েছে? ”
-” এই মেয়ে আমায় বলে রুটি কি? বুঝতে পাচ্ছি তুই।এই নবাবের বেটিকে বিয়ে করে এনেছিস তুই। আমার সংসার ধংস করার জন্য।এক্ষুনি বের কর।”
তৃণ মহাবিরক্ত নিয়ে বলল,
-” ওহ, মা তুমি কি শুরু করেছো?ওরা কি আর আমাদের মত রুটি আর ভাজি দিয়ে সকালে নাস্তা করে? ও কখনো এসব খেয়ে কি না সন্দেহ আছে? ও হয়তো রুটি কি সেটাই চিনে না।তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করেছে? এটা নিয়ে এভাবে চিৎকার করার কি আছে। ”
খাদিজা ছেলে উপরে খেঁকিয়ে উঠে বলল,
-” চিৎকার করব না তো কি করব। এই মেয়ে রুটি কি সেটাই চিনে না।আমার এখন মনে হচ্ছে এই মেয়ে রান্না ঘরে আদৌ কোনোদিন ঢুকে কি না সন্দেহ আছে? তুই আমার সংসার ধংস করার জন্য এই মেয়ে বিয়ে করেছিস।”
তৃণ চিৎকার করে বলল,
-” বার বার এক কথা বলো কেন মা তুমি?রান্নার না পারার সাথে তোমার সংসার ধংসের সাথে কি মিল রয়েছে?
-” বিয়ে না করতে করতেই মায়ের উপরে জোর গলায় কথা বলছিস।কয়দিন পর মনে হয় এই বাড়ি থেকে আমাদের কে বের করতে দ্বিধা করবি না।”
তৃণ রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।সে বলল,
-” উফ মা! থামো তো।এই সব কি বলছো তুমি?”
প্রাচ্য আর চুপ থাকতে পারলো না।সে তৃণকে বলল,
-” আমাদের বউ শাশুড়ি মধ্যে তুই প্লিজ কথা বলিস না।”
তৃণ রাগে হনহন করে হেঁটে চলে যায়। তার এখন একটাই কথা মনে পড়ছে ‘ যার জন্য করলাম চুরি সে বলে চোর।’ প্রাচ্য এবার শাশুড়ি কে বলল,
-” সোনার চামচ মুখে ম নিয়ে জন্মে ছিলাম। কষ্ট, দুঃখ কেউ ছুঁতে দেয়নি।সবার আদর ছিলাম বলেই ভালোবাসা দিয়ে সবাই আগলে রেখে। নিজের কাজ করার আগে চাকর বাকর হাজির হয়ে যেত। তাই এসব শিখার প্রয়োজন বোধ করিনি।”
এটুকু বলে থেমে আবার বলল সে,”কাজ পারি না। তার মানে এই নয় আমি আপনার সংসার ধংস করব।সংসারে যা যা করতে হয় সব শিখে নিব।”
খাদিজা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-” কাজ শিখে উল্টিয়ে ফেলবে।”
এটা বলে কিচেনে চলে যায়।খাদিজা সব কাজ করছে।প্রাচ্য করতে গেলে তাকে মানা করে।তার রান্না ঘরের কোনো জিনিস যেন হাত নাহ দেয় তার জন্য সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে।

সাজেক যাওয়া নিয়ে অনেকদিন অফিসে যাওয়া হয়নি,আবার প্রাচ্য বিয়েতে যাওয়া নিয়ে অনেকদিন যাওয়া হয়নি। আজকে তৃণ অফিসে যাবে।আয়না দাঁড়িয়ে টাই বাঁধতে থাকে।প্রাচ্য খাটের উপরে বসে আড়চোখে তৃণ দেখছে। ফরমাল ড্রেস আপে কি সুন্দর না লাগছে?তখনই হুট করে একটা মেয়ে এসে তৃণকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।আচমকা এমন ঘটবে প্রাচ্য’র ধারণার বাহিরে ছিল।প্রাচ্য চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। প্রাচ্য উঠে দাঁড়ায়।তৃণ মেয়েটার দিকে ঘুরে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। প্রাচ্য বুঝতে পাচ্ছে না কে এই মেয়ে? আর এই মেয়ে তৃণকেই জড়িয়ে ধরছে আবার তৃণ এই মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরছে।তখনই তৃণ বলল,
-” অফিসে যাবো তিন্নি।এখন ছাড়ো। ”
তিন্নি।তৃণে মায়ের মুখে কালকে শুনেছে তিন্নি নামের কোন মেয়ে সাথে তৃণ’র বিয়ে ঠিক হয়েছে। তার মানে কি এই সেই তিন্নি।প্রাচ্য চোখ আগের চেয়ে দ্বিগুন বড় বড় হয়ে যায়। তৃণ দিকে তাকায়।তৃণ তিন্নি নিয়েই ব্যস্ত। তিন্নি জড়িয়ে ধরা অবস্থাই বলল,
-” আজ অফিসে না গেলে হয় না। চলো না দুজন মিলে শপিং যাই।”
তৃণ প্রাচ্য’র দিকে তাকিয়ে বলল,
-” ঠিক আছে!আজকে অফিসে যাওয়া ক্যানসেল।তোমাকে নিয়ে যাবো।”
তিন্নি খুশিতে গদগদ হয়ে তৃণ গালে চুমু খায়।প্রাচ্য হা হয়ে তাকিয়ে ছিল।তার সামনে তার ভালোবাসার মানুষকে কিস করল অন্য কেউ ভাবতেই পাচ্ছে না।একটু আগে যখন প্রাচ্য তৃণকে আজকে অফিসে যেতে বারণ করেছে তখন তৃণ রাগ দেখিয়ে অনেক কথা বলেছে।আজকে অফিসে না গেলে ক্ষতি হবে।। আর এখন এই মেয়েটা বলছে বলেই কি সুন্দর রাজি হয়ে গেলো। এখন আর কাজে ক্ষতি হবে না।বুক ফেটে কান্না আসছে তার।কত বার মাফ চাইছে তারপর কেন তৃণ তাকে এত কষ্ট দিচ্ছে।তার সামনে অন্য কাউকে গলায় জড়িয়ে ধরে রেখেছে।সে আর একমুহূর্ত দেরী না করে বাথরুমে চলে যায়।প্রাচ্যকে চলে গেলে তিন্নিকে দূরে ঠেলে দেয় তৃণ।তিন্নি বলল,
-” চলো? ”
-” তুমি কখন এসেছো?”
-” এই মাত্র এসেই তোমার কাছে এসেছি। ”
তৃণ আর কিছু বলল না।তারা চলে যাওয়ার পর প্রাচ্য রুমে এসে কান্না করতে থাকে।সন্ধ্যা র দিকে তৃণ বাসায় আসে।রুমে ঢুকে দেখে প্রাচ্যজড়সড়ো হয়ে বসে আছে।প্রাচ্য পায়ের আওয়াজ পেয়ে চোখ তুলে তাকায়। তৃণ আয়নায় দাঁড়িয়ে গলায় টাই খুলছে।প্রাচ্য উঠে যে তৃণ পিছনের শার্ট দুইহাতে টেনে ধরে খাটের উপরে ধাক্কা মারে।তারপর তৃণ বুকের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে।তৃণ ঘটনায় আকস্মিক। বড় বড় চোখে করে তাকায়।প্রাচ্য তৃণ দিকে না তাকিয়ে তৃণ’র কলার দুহাতে চেপে ধরে বলল,
-” ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ে সাথে শপিং যাওয়া হচ্ছে।আমি মরে গেছি নাকি। অন্য মেয়ের সাথে শপিং যাবি তুই?”
তৃণ’র বুকে মারতে মারতে বলল প্রাচ্য।তৃণ প্রাচ্যকে বুকের উপরে থেকে সরিয়ে বিছানার সাথে দুইহাত চেপে ধরে।
-” তিন্নি অন্য মেয়ে না।সে আমার হবু বউ।”
-” তাহলে আমি কে? ”
-” সেটা তুই খুব ভালো করেই জানছ!”
-” অন্য মেয়েকে বিয়ের করার যদি এত শখ হয়ে থাকে।তাহলে আমায় বিয়ে করেছিলি কেন? আমার জীবন নষ্ট করার জন্য।”
-” আমি তোকে বিয়ে করতে চাইনি।স্বপ্ন জন্য করেছি।”
-” স্বপ্ন, স্বপ্ন,আমি ফোন করে এখন স্বপ্নকে জিজ্ঞেস করব।ও কেন তোকে বলেছে আমায় বিয়ে করতে? জানতে চাইবো।”
তৃণ উঠে দাঁড়ায়।প্রাচ্য উঠে মোবাইল হাতে নেয়।স্বপ্ন নাম্বার ডায়লা করতে যেয়ে থেমে যায়। স্বপ্নকে এসব জিজ্ঞেস করে তৃণ কে স্বপ্ন কাছে ছোট করার হবে।স্বপ্ন হয়তো তাদের দুজনকে এক করার জন্য এমন করেছে। প্রাচ্য এসব মনে মনে ভাবতে থাকে।রাগ করে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে।তৃণ বলল,
-” ফেলে দিলি কেন? ফোন দিবি না স্বপ্নকে?
প্রাচ্য অন্যদিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়িয়ে কান্না করতে থাকে।চোখে পানি মুচে ফেলে তৃণ’র দিকে তাকায়।ধীর পায়ে এগিয়ে এসে তৃণ সামনে দাঁড়ায়।অনুরোধ করে বলল,
-” সব কিছু ভুলে কি আমরা সংসার করতে পারি না।”

তৃণ কাটকাট জবাব,
-” না।”
এটা বলে তৃণ ওয়াশরুমে চলে যায়।প্রাচ্য রাগ করে সেন্টার টেবিলের রাখা ফুলদানীটা ছুঁড়ে মারে।ফুলদানী ড্রেসিং আয়নার পড়ে। আয়না ফেটে চৌচির ভাগ হয়ে যায়।খাদিজা আর তনয়া শব্দ পেয়ে উপরে দৌড়িয়ে আসে।খাদিজা এই অবস্থা দেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে থাকে। প্রাচ্য চুলের মুটি ধরে বলল,
-” এটা কি তোর বাপের বাড়ি।যে যখন ইচ্ছা তখন ভাঙবি।তোদের মত আমরা এত বড়লোক নই যে মিনিটে মিনিটে ভাঙব আবার কয়েক মিনিট নতুন কিনে আনব।”
চুল ধরাতে প্রাচ্য ব্যথা পায়।শাশুড়ি হাত থেকে চুল ছাড়াতে গেলেই প্রাচ্য হাতে ধাক্কা খেয়ে খাদিজা পড়ে যায়।তৃণ কিছু ভাঙ্গার শব্দ পেয়ে বেরিয়ে আসে।তখনই দেখে তার মা পড়ে আছে নিচে।তৃণ হ্যান্তধ্যান্ত হয়ে মাকে উঠিয়ে বলে,
-” মা তুমি কিভাবে পড়লে?”
খাদিজা কান্না করে বলল,
-” সেটা তোর বউ কে জিজ্ঞেস কর?”
তৃণ জিজ্ঞেসাসূচক ভাবে প্রাচ্য’র দিকে তাকায়।প্রাচ্য এগিয়ে আসে বলার জন্য তার আগে খাদিজা বলে উঠল,
-” আয়নার দিকে তাকায় তুই!”
তৃণ আয়নার দিকে তাকায়।এবার বুঝতে পাচ্ছে।কিসের ভাঙার শব্দ পেয়েছে সে? প্রাচ্য তার রাগ আয়নার উপরে দিয়ে উঠিয়েছে?
খাদিজা বলল,
-” তোর বউকে দুটো কূটো কথা বলছিলাম।আর তোর বউ আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছি।এই মেয়ে তোর মায়ের গায়ে হাত তুলেছে।এবার তুই তার বিচার কর।না হলে আমি এই বাড়ি থেকে চলে যাবো?
রাগী চোখে তাকিয়ে তৃণ বলল,
-” প্রাচ্য, মা যা বলছে তা কি সত্যি!”
-” আসলে,,,,
তার আগে প্রাচ্য গালে দুটো চড় পড়ে।প্রাচ্য হতভম্ব! গালে হাত দিয়ে অবিশ্বাস মত তাকিয়ে আছে।তৃণ তাকে মেরেছে।বিশ্বাস হচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে সে যেন ঘোরে মধ্যে আছে?তৃণ চিৎকারে তার ঘোর কাটে।
-” আমার রাগ তুই আমার মায়ের উপরে দেখাছ? তোর এত সাহস আমার মাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিস!”
এট বলে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে প্রাচ্যকে।তারা সবাই ও বেরিয়ে আসলে।তৃণ সবার মুখের উপরে নিজের রুমের দরজা আটকিয়ে ফেলে।কোনো কিছুই তার ভালো লাগে না।মনে যাচ্ছে এই সব কিছু ছেড়ে কোথাও চলে যেতে।যেখানে এত সমস্যা, জামেলা থাকবে না।থাকবে শুধু শান্তি আর শান্তি? কোথায় গেলে সে এই শান্তি পাবে?

কাউছার শ্বর্ণা

( গল্প

স্বপ্নীল ৪০

0

স্বপ্নীল
৪০
ছাঁদের দক্ষিণ কোণে একটা ছায়া দেখতে পায় স্বপ্ন।ছায়াটা মানুষের সে বুঝতে পেরে এগিয়ে যায়।ছায়া একটা মেয়ে মানুষের তাই আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যায় দেখার জন্য।কাছাকাছি আসতে স্বপ্ন থমকে দাঁড়ায়।চাপা সুরে কেউ কান্না করছে। কেই বা রাতে ছাদে এসে কান্না করবে।অন্ধকারে পিছন থেকে বুঝা যাচ্ছে না, কে? তাই ছায়াটার সামনে এসে দাঁড়াতে আবার থমকে যায়।উত্তেজিত হয়ে বলল,
-” রোদ!”
তার পাশে কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছে সেই খেয়াল ছিল না রোদের। চাপা সুরে কান্না করতে থাকে।এত লোক জনের মাঝে সে মন খুলে কান্না করতে পাচ্ছিল না।স্বপ্নকে দেখে হতচকিত হয়।চোখে পানি মুছে বলল,
-” স্বপ্ন তুই।”
-” হুম আমি।কান্না করছিস কেন? কি হয়েছে তোর।”
-” কিছু হয়নি।”
-” কিছু না হলে এখানে লুকিয়ে কান্না করছিস কেন? কি হয়েছে আমায় বল!”
ধূসর এই মাত্র ছাদে উঠেছিল। স্বপ্ন’র কথা শুনে ধূসর এগিয়ে যায়।
-” স্বপ্ন তুই ছাদে আছিস…
এটুকু বলতেই ধূসরের চোখ যায় রোদের দিকে।রোদের এই ফোলা ফোলা চোখ দেখে ধূসর বলল,
-” চোখের এই অবস্থা কেন তোর? ”
-” আমি ও জিজ্ঞেস করেছি কি হয়েছে? বলছেই না। না বললেই বুঝতে পারবো কি করে? কোনো সমস্যা হলে বল আমাদের? সলভ করে দিব।”
রোদ কিছু না বলে স্বপ্ন’র বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কান্না করে। স্বপ্ন আর ধূসর হতচকিত যায়।স্বপ্ন ধূসরে দিকে তাকায়! ধূসর এগিয়ে এসে বলল,
-” কান্না করলে বুঝব কি করে?
রোদ আরো কিছুক্ষণ কান্না করে। তারপর স্বপ্ন’র বুক থেকে মাথা তুলে চোখে পানি ডান হাত দিয়ে মুছে। মাথার থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলে,মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে ফেলে।গলায়, গালে ঘাঁড়ে সব কামড়ের দাগ দেখতে পায় তারা দুজন।তারপর রোদ তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
-” দেখ তোরা তোদের বন্ধু আমার কি অবস্থা করেছে? ”
তারা দুজন কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না।সমুদ্র এসব করছে ভাবতে পাচ্ছে না।রোদ কান্না করতে করতে বলল,
-” জানোয়ারে মত সে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।এরকম জানোয়ারের মত আচরণ না করে যদি আমাকে বলত সুন্দর ভাবে।তাহলে কি আমি ওকে মানা করতাম।কিন্তু,,,,,,”
এটুকু বলে রোদ আবার কান্না করতে থাকে।স্বপ্ন এগিয়ে এসে চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,
-” আমি যতটুকু চিনি সমুদ্র এমন করার ছেলে না। ”
-” হুম! সে তো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন ব্যবহার করছে।আমি তার নামে মিথ্যে বদনাম দিয়েছি তাই।”
ধূসর বলল,
-” তুই কেন ওর নামে মিথ্যে বদনাম দিয়েছিস? আমি যতটুকু জানি সমুদ্র তোর সাথে এমন কিছু করেনি যার জন্য চিল্লাবি।আর যদি ও বা খারাপ কিছু করে থাকে তাহলে কি হয়েছে।তুই তো সমুদ্রকে ভালোবাসিস।ভালোবাসার মধ্যে একটু আকটু কাছে আসা হয়েই থাকে। তাই জন্য তুই,,,,
-” মাথা ঠিক ছিল না আমার! ”
-” তাহলে আমি বলব।সমুদ্রর এখন মাথা ঠিক নেই।এই জন্য বোধ হয় এমন জঘন্য কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেনি।”
-” ধূসর চুপ কর!”
স্বপ্ন এবার রোদ কে তার সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে বলল,
-” তুই সমুদ্রকে ভালোবাসি।তাহলে কেন ওর নামে মিথ্যে বদনাম দিয়েছিস। বল! ”
রোদ কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।স্বপ্ন কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
-” আমার কথা উত্তর দেয়।”
-” ওইদিন যখন সমুদ্র আমাকে অপমান করে যায়। তখনই নীল এসে আমায় বলে।”
-” কি বলছে নীল তোকে? ”
রোদ সবটা খুলে বলল।ধূসর রোদের হাত ধরে তার সামনে এসে দাঁড় করিয়ে বলল,
-” মন যাচ্ছে তোকে চড় মেরে শিক্ষা দিয়ে দিতে।সিনেমা আর বাস্তব এক।এই নীল মেয়েটা একটা পাগল।ওই পাগলের কথা শুনে সমুদ্র ক্ষতি করেছিস তার সাথে নিজের ও।”
-” এত বাজে ভাবে আমায় অপমান করেছে তাই মাথা কাজ করেনি আমার।তাই নীলের কথা রাজি হয়েছি।”
-” মাথা যখন কাজ করেনি এবার সমুদ্রকে সামলা তুই।”
স্বপ্ন খুব রাগ হচ্ছে নীলের উপরে।এই মেয়ের আজ একটা ব্যবস্থা করেই ছাড়বে।রোদ কে কুবুদ্ধি কেন দিয়েছে আজ তাকে বলতে হবে? আজ এর বিহিত করেই ছাড়বে।সব নষ্টের মুল নীল।তার এই বাজে বুদ্ধির জন্য সমুদ্র আর রোদকে পস্তাতে হচ্ছে।স্বপ্ন যেয়ে রোদের এক হাত চেপে ধরে নিচে নেমে আসে।রোদ আর ধূসর বুঝতে পাচ্ছে না স্বপ্ন কি করছে যাচ্ছে।রোদ বার বার হাত ছাঁড়া কথা বলে।তারপর স্বপ্ন হাত ছাড়েনি তার।স্বপ্ন নীলের রুমের দরজা এসে নক করে।এবার কিছুটা বুঝতে পারে তারা দুজন।তাদের দুজনে মুখে কিছুটা আতংকের চাপ দেখা যাচ্ছে।তারা খুব ভালো করে জানে স্বপ্ন রেগে গেলে কতটা ভয়ংকর হয়।নীল এসে দরজা খুলে দেয়।তাকে কিছু বলার আগেই স্বপ্ন তাকে ঠেলে রুমে ঢুকে যায়।তাতেই নীলের মেজাজ চটে যায়,
-” এভাবে কেউ রুমে ঢুকে?আর রাত বিরাতে এভাবে দরজা নক করছেন কেন অসভ্যের মত।”
স্বপ্ন রোদের হাত ছেড়ে দেয়।নীলের দিকে তাকায়।স্বপ্নকে এভাবে তাকাতে দেখে কিছুটা ভয় লাগছে তার।চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, কপালে রগগুলো ফুলে উঠেছে।নীল বলল,
-” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? বের হোন রুম থেকে আমি ঘুমাবো এখন?”
স্বপ্ন দপ করে নীলের হাত চেপে ধরে। বলল,
-” রোদকে যা যা শিখিয়ে দিয়েছো তুমি।তোমার ফ্যামিলি কাছে সব শিকার করবে তুমি! ”
এমনিতে স্বপ্নর তখনকার ব্যবহার স্বপ্ন উপরে রেগে ছিল। আর এখন আবার ওরকম করাতে রাগ যেন দ্বিগুন বেড়ে গেলো।নীল ঘ্যাড় বাঁকা করে বলল,
-” যদি না করি! ”
এবার স্বপ্ন’র রাগ মাথা উঠে যায়।আরো জোরে হাত চেপে ধরে।নীল ব্যথা পেয়ে বলল,
-” হাত ছাড়েন।
-” চলো!সমুদ্রকে বলবে তুমি। রোদের মাথা কুবুদ্ধি গুলো তুমি দিয়েছে?”
নীলের খুব রাগ উঠে যায়। সে স্বপ্নকে ধাক্কা মারে,
-” আমি কিছুই বলল না। দেখি কি করতে পারেন?”
স্বপ্ন পড়ে যেতে নিলে নিজেকে সামলিয়ে ফেলে।রোদ আর ধূসর এই মেয়ে সাহস দেখে অবাক।নীল বলল,
-” আমি কি ভাইয়ার নামে মিথ্যে ঘটনা রটাইছি, যে আমি সবার কাছে শিকার করবো।”
স্বপ্ন দাঁতে দাঁত চেপে নীলের হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
-” আমি যখন বলেছি তোমাকে তো বলতেই হবে।চলো! ”
নীল তার ডান পা দিয়ে ল্যাং মারে স্বপ্নকে। নিজেকে সামলাতে নীলের হাত ছেড়ে দেয় স্বপ্ন।রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছু বলতে গেলে তার আগেই নীল চিল্লিয়ে বলল,
-” এই মুহূর্তে যদি আমার রুম থেকে বের না হয়ে গেছেন।আমি এখন চিৎকার করে ডাকব সবাইকে।আর বলব আপনি আমার সাথে অসভ্যতামী করতে এসেছেন।”
বলে শেষ করলে নীল।স্বপ্ন তার গালে চড় মারে। চড়ের আওয়াজতে রোদ আর ধূসর কেঁপে উঠে। এই মেয়ের গায়ে স্বপ্ন হাত উঠিয়েছে।আল্লাহই জানে এই মেয়ে কি করে বসে!নীল গালে হাত দিয়ে স্বপ্ন’র দিকে তাকায়।স্বপ্ন বলল,
-” অসভ্য মেয়ে।তোমরা এই বাঁদরামি তোমার ফ্যামিলি সাথে করবে।আদর দিয়ে বাদর বানিয়েছে তোমাকে।তাই আজ অবস্থা তোমার।”
এটা বলে বেড়িয়ে যায় সে।তারপর পিছনে তারা দুজন ও বেড়িয়ে আসে।
দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আজ পর্যন্ত কেউ তাকে চড় মারেনি আর এই বাইরে একটা ছেলে তার গালে চড় মেরেছে।মানতে পাচ্ছে না সে।খুব রাগ লাগছে তার।কিছুতে রাগ কমছে না তার।তাই রুমে সব কিছু ছুড়ে ফেলে। ধপাস করে বসে পড়ে খাটে।দাঁতমুখ খিঁচে রাগ কমাতে থাকে।এই ছেলে তো সে ছাড়বে না।তাকে চড় মেরেছে, এত সাহস!

-” তোর কাছ থেকে এসব আশা আমি মোটে করিনি। ”
স্বপ্নের কথার প্রতিত্তুরে সমুদ্র কিছু বলল না।আয়েশী বঙ্গীতে সিগারেট টানতে থাকে।স্বপ্ন কপালে বিরক্তি রেখা দেখা যাচ্ছে,সে বলল,
-” এখানে রোদের কোনো দোষ নেই।তোর বোন রোদকে কুবুদ্ধি দিয়েছিল বলে রোদ এমন করেছে।”
আরেকটান দিয়ে, হাতে সিগারেট নিয়ে বলল,
-” নীল যদি রোদকে বলে বিষ খাওয়ার জন্য তাহলে কি রোদ বিষ খেতে? খেতে না।কারণ বিষ খেলে তো সে মারা যেত।বিষ খেয়ে সে নিজের ক্ষতি কোনো দিন করত না।”
-” কিসের সাথে কি মিলাচ্ছিস তুই?”
-” কেন মিলাচ্ছি সেটা তোর অজানা নয়।তুই ঠিকই বুঝতে পাচ্ছিস!একটু আগে বললি না নীল রোদকে কুবুদ্ধি দিয়েছিল বলে এই কাজ করেছে।আমি মানছি নীল এটা বলেছে। নীল আর রোদের মধ্যে অনেক তাফাৎ আছে।নীলের মধ্যে এখনো ছেলেমানুষি ভরা, আর রোদ মধ্যে ম্যাচিউরিটি আছে।রোদ খুব ভালো করেই জানে কোন কাজটা করলে কি রকম ফল পাওয়া যাবে।তারপর কেন নীলের কথা শুনে আমার নামে বদনাম দিয়েছে?”এখন ও বলবি নীল বলেছে বলেই। ”
-” তোর বোন এতটা ছোট নয়, যে এসব বুঝে না।নীল যদি রোদের মাথায় এমন কিছু না ঢুকাতো তাহলে রোদ এই কাজ করার দুঃসাহস কখন দেখাতো না।”
-” তোকে আমি এর আগে নীলের আর রোদের ব্যাপারে বিষ দিয়ে ক্লিয়া করে দিয়েছি।আমার সম্মান নষ্ট করতে বলেছে বলে করছে,যদি আমার সম্মানে জায়গা নীল বিষের কথা বলতো তাহলে,,,,
-” তাহলে বিষ খেতে না।রোদ এই কাজ করেছে তোকে বিয়ে করার জন্য।সে তোকে ভালোবাসে। যেটা হয়ে গেছে সেটা ভুলে যা।রোদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলে কি সেটা ফিরে পাবি।”
-” স্বপ্ন তুই এখন যা।আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।”
স্বপ্ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
দরজা নক করার আওয়াজ পেয়ে সোহার ঘুম ভেঙে যায়।এত রাতে কে দরজা এভাবে নক করছে সে বুঝতে পাচ্ছে না।দরজা খুলে দেয়।সাথে সাথে কেউ একজন তাকে পাজাকোলে তুলে নেয়।ঘটনায় আকস্মিক হয়। চিৎকার দিতে গেলে তামিম মুখ চেপে ধরে ফ্যাঁস ফ্যাঁস গলায় বলল,
-” আমি! ”
সোহা তামিমের হাত সরিয়ে ফেলে বলল,
-” আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।ছাড়ুন।”
-” ছেড়ে তো দুইরাত দিয়েছি।আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।”
-” ছাড়ুন বলছিস।মা জেগে গেলে খুঁজবে আমায়।”
-” শ্বাশুড়ি মা এখন গভীর ঘুমে । ঘুমের মধ্যে আমার শ্বশুড়কে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে।”
-” ছিঃ। কিসব কথাবার্তা। ”
কথা বলতে বলতে তারা রুমে চলে আসে।সোহাকে খাটের উপরে নামিয়ে দেয়।সোহা নেমে যেতে নিলে তামিম ধরে ফেলে।
-” সবার আগে আমি বিয়ে করছি! কিন্তু আমি এখন বাসরেই করতে পারলাম না।”
-” কিসের বিয়ে এই বিয়ে আমি মানি না।”
-” ৫ লক্ষ টাকার কাবিন দিয়ে বিয়ে করছি।আর তুই বলছিস মানিস না। বললে হলো।”
-” কেন বুঝতে পাচ্ছেন না আপনি? বাড়ির সবাই জানলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
-” বাড়ি বাড়ি,,,
এটা বলে সামনে রাখা ফুলদানী টা আঁচাড় মারে। সোহা ভয়ে কাঁপতে থাকে।কয়েক মিনিট দম ধরে থাকে। সোহার কান্না কানে আসতে তামিম সোহার দিকে তাকায়।হ্যান্তত্যান্ত হয়ে ছুটে আসে।চোখের পানি মুচে দিয়ে সোহাকে বুকে চেপে ধরে।
-” কান্না করিস না প্লিজ।”
সোহা আর জোরে কান্না করে দেয়। তামিম জোরে ধমক দেয়।ভয় পেয়ে হেঁচকি উঠে যায় তার।
-” ভয় পাচ্ছিস কেন তুই? আমি তোর কান্না থামার জন্য ধমক দিয়েছি।সোহা আমার একটা কথা উত্তর দেয়।তুই কি আমায় ভালোবাসি না? ”
সোহা কোনো কথা বলল না। এখন ও তার মনে ভিতরে ভয় আঁচড়ে আছে।তামিমের কোনো কথাই তার কানে আসে না।তামিম আবার ডাক দেয়।এবার ও হেঁচকি তুলে তোতলিয়ে বলল,
-” কি?
-“তোকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি?
সোহা ভ্যাবলার মত উত্তর দেয়,
-” কি?”
তামিমের খুব রাগ উঠে।তার কথা সোহা শুনেনি।রাগ সংযত করে সে বলল,
-” সোজাসুজি একটা কথা উত্তর দে তুই।আমায় কি তুই ভালোবাসি না।”
কি উত্তর দিবে সোহা ভেবে পায় না।সে তামিম কে ভালোবাসে।কিন্তু এই সমাজ কি তাকে মেনে নেবে।আর সবচেয়ে বড় কথা দাদু জানলে কি হবে?সবাই যখন জানবে তাদের বিয়ে কথা।তখনই কি হবে? পরিস্থিতি কি সে সামলাতে পারবে?
তামিম অধৈয হয়ে বলল,
– আন্সার দিচ্ছিস না কেন?
-” আমার খুব ভয় লাগছে।এই বিয়ের পরিনিতি কি হবে?”
তামিম তার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছে।তাই সোহার কাছে এসে থুতনি ধরে মুখ উপরে তুলে বলল,
-“এখন বাড়িতে পরিস্থিতি ভালো নয়।না হলে সবাইকে জানিয়ে দিতাম।সব কিছু ঠিক হোক। সবাইকে জানিয়ে দিব পরে।”
সোহা উদাসিনী হয়ে বলল,
-” হুম”
তামিম লাইট অফ করে সোহাকে বিছানায় শুয়ে দেয়।সোহার খুব লজ্জা লাগছে।একই বিছানায় তামিমের সাথে থাকত।আর এখন যদি তামিম তার কাছে স্বামীর অধিকার চায়।তাকে কি মানা করে দেওয়া উচিত।দরজা নক করে এসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে। সোহার ভিতরে অদ্ভুত একটা কাঁপুনি দিতে থাকে।সারা শরীর যেন অবশ হয়ে যায়।তামিমের হাত সরিয়ে সে বিছানায় বসে পড়ে।তামিম উঠে বসে।সোহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
-” কেউ যদি জানতে পারে আমি আপনার সাথে ছিলাম তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
তামিম সোহাকে টেনে এনে এক হাত কোমরে দেয় আরেক হাত গলায় দিয়ে সোহার চুলে নাক ডুবিয়ে বলল,
-” কেউ কিছু জানতে পারবে না? ”
তামিমের স্পর্শ সে যেন শীতল হয়ে যাচ্ছে।সত্যি কি এখন তামিম তাকে চাইবে।না তামিম কে কিছু বলতে হবে? সাহস জুগিয়ে এক নিশ্বাসে বলল,
-” প্লিজ আমায় সময় দিন।”
তামিম সোহাকে ছাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-” কিছুই করব না। শুধু জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চাই।সেটা দিবি তো।”
সোহা কোনো কথা বলল না।তামিম বলল,
-” নিরবতা সম্মতি লক্ষণ। ”
সোহার খুব লজ্জা লাগছে। তামিমের দিকে ঘুরে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।তামিম মুচকি হেসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে।

কাউছার স্বর্ণা…
গল্প লেখতে এখন আর ভালো লাগে না।লেখার মধ্যে।মন বসাতে পাচ্ছি না।

স্বপ্নীল ৩৯

0

স্বপ্নীল ৩৯

তৃণ কালকে রাতে খাদিজা বেগমকে ফোন করে বলে সে বিয়ে করছে।তার ছেলে তাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে শুনে জ্ঞান হারায়। তিনি কিছুতেই মানতে পাচ্ছে না প্রাচ্যকে বিয়ে করেছে তৃণ।ছেলের দুই মেয়ে বন্ধুকে তার কোনো কালেই ভালো লাগত না।মেয়ে মানুষ হয়ে ছেলের সাথে ডলাডলি করত।ছেলেদের সাথে কিসের এত ভাব!
বার বার মানা করেছে এই মেয়ে দু’টো থেকেই দূরে থাকার জন্য।আর এখন সেই মেয়েদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করেছে।প্রাচ্যকে তো মোটে ও পছন্দ করে না তিনি।পাঠ কাঠির মত শরীর, ব্রয়লার মুরগির মত সাদা,পোষাক-আষাকের কী ছিরি। আর অতি বড় লোকের মেয়ে মানে অহংকারী। এদের মধ্যে অহংকার বেশি থাকে।এই জন্য তৃণকে খাদিজা বেগম মানা করে তার বন্ধুদের যেন সে এই বাড়িতে না নিয়ে আসে।আর সব চেয়ে বড় কথা তিনি তার বোনের মেয়ের সাথে তৃণ বিয়ে ঠিক করেছে।তৃণ জানত তাহলে কেন তৃণ বিয়ে করেছে?আর তৃণ তো এই মেয়ের বিয়েতে গেছে তাহলে কেন সে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে?
পরে ফোন করে জানায় এই মেয়েকে তিনি মানবেন না। তার সাথে যেন এই বাড়িতে নিয়ে না আসে।তারপর বাড়ির দরজা খুলে এই মেয়েকে দেখতে ভাবে তিনি কল্পনাও করিনি।
-“তোকে ফোনে আমি বলেছিলাম না।তোর সঙ্গে করে এই মেয়েকে যেন না আনিস।তারপর কেন এনেছিস?”
শ্বশুর বাড়ির দরজা সামনে দাঁড়িয়ে ছিল প্রাচ্য।তৃণ’র মায়ের কথা শুনে প্রাচ্য অবাক হয়।অবাক চোখে তাকায় তৃণর দিকে।প্রাচ্য খুব ভালো করে জানতো তৃণ মা একটু খিটখিটে মেজাজের।তিনি কেন জানি তৃণ’র বন্ধু বান্ধব কে দেখতে পারেন না।খাদিজা বেগম বলল,
-” এই মেয়ে তোমার বিয়ে তো অন্য কারো সাথে হওয়ার কথা ছিল।তাহলে তুমি আমার ছেলেকে বিয়ে করলে কেন?”
শ্বাশুড়ির ঝাঁঝানো কথা শুনে প্রাচ্য একটু ভড়কে যায়।কি উত্তর দিবে সে?তৃণ এগিয়ে যায় মায়ের কাছে। সে বলল,
-” মা তুমি আগে আমার কথা শোনো।”
-” তোর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।তুই কেন এই মেয়েকে বিয়ে করতে গেলি।তুই জানিস না তোর বিয়ে আমি তিন্নির সাথে ঠিক করে পেলেছি।তারপর,,,,!”
এটুকু বলে তিনি থেমে যায়।শ্বাশুড়ি কথা শুনে প্রাচ্য তৃণের দিকে তাকায়। তৃণর বিয়ে ঠিক করা ছিল। তাহলে সে কেন কাউকে বলেনি?এই প্রশ্ন তার মনে জাগল।তৃণ তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” মা আমি বিয়ে করতে চাইনি।প্রাচ্য’র যার সাথে বিয়ে হওয়ার ছিল সে আসে নি।তাই,,,!”
-” তাই তুই বিয়ে করেছিস।তুই কেন করবি।এই মেয়ের ফ্যামিলি বা কেমন? বিয়ে দেওয়ার আগে খোঁজ খবর নিবে না।আসলে বড়লোকদের এসব ব্যাপার স্যাপার বোঝা বড় দ্বায়।আমার মনে হচ্ছে এই মেয়ে কোনো সমস্যা আছে তাই ছেলেটি বিয়ে করেতে আসেনি।তাই মেয়েটির ফ্যামিলি তোর কাঁধে এই মেয়েকে চাপিয়ে দিয়েছে।”
প্রাচ্য নিচের দিকে তাকিয়ে চোখে জল মুছে।তিনি আবার বললেন,

“তুই যখন এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাস নি তাহলে এই মেয়েকে তুই ডিভোর্স দিয়ে তিন্নি কে বিয়ে করবি।”

ডিভোর্স শব্দটা শুনে প্রাচ্য মনে মনে কয়েকবার আওড়াতে থাকে।বিয়ে না হতে হতে তার ডিভোর্স হয়ে যাবে।মায়ের কথা কী তৃণ তাকে সত্যি ডিভোর্স দিয়ে দেবে।তার খুব কান্না পাচ্ছে।তৃণ খাদিজা কে বুঝানো জন্য প্রাচ্যর বিয়ের পরিস্থিতি কথা বলেছে।এখন দেখে সে বলে আরো বিপদে পড়েছে।প্রাচ্যকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে স্বপ্ন’র সামনে দাঁড়াবে কী ভাবে।আর সমুদ্র…না সে আর ভাবতে পাচ্ছে না।
-” মা তুমি এসব কি বলছো! ”
-” যা বলছি শুনতে পেয়েছিস।এক্ষুনি এই মেয়েকে বিদায় কর আমার বাড়ি থেকে।”
এটা বলে তিনি প্রাচ্য’র হাত ধরে বাইরে বের করে দিবে তখনই নিয়াজ সাহেব এসে খাদিজা বেগমের হাত ধরে ফেলে।
-” তুমি আমার হাত ধরেছো কেন?”
-” তোমার কাজে বাঁধা দেওয়ার জন্য?কি করতে যাচ্ছো তুমি।”
-” দেখতে যখন পাচ্ছো, জিজ্ঞেস করছো কেন?
-” খাদিজা! এদিকে আসো।
নিয়াজ সাহেব স্ত্রীকে টেনে এককোণ এনে বলল,
-” এই মেয়েকে বের করে কী তুমি, তোমার ছেলের ক্ষতি করতে চাও।”
খাদিজা ভ্র কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-” আবল তাবল কি বলছো? মাথা ঠিক আছে তোমার! ”
-” আমার মাথা ঠিক আছে।তুমি জানো এই মেয়ে কে?”
-” এত টুকু জানি ধনী ফ্যামিলির নষ্ট হয়ে যাওয়া মেয়ে।”
-” এখন যদি এই মেয়েকে তুমি বাড়ি থেকে বের করে দাও।এই মেয়েটার ফ্যামিলি মেম্বাররা কি তোমায় ছেলেকে ছেড়ে দিবে?”
-” আমার ছেলে বিয়ে করতে চাইনি।তারা তাদের মেয়েকে ঘাঁড়ে চাপিয়ে দিয়েছে!”
-” তোমার ছেলে ছোটখোকা নয়। তাকে ধরে বিয়ে পড়িয়ে দিবে তারা।রাজি ছিল বলেই সে বিয়ে করেছে।সে যদি বিয়ে না করত তাহলে মেয়েটার ফ্যামিলি কেউ তোমার ছেলে সাথে বিয়ে দিত না।এখন নিচে যেয়ে তুমি বলবে প্রাচ্যকে মেনে নিয়েছো।”
-” কিন্তু তিন্নি সাথে,,,
-” ছেলের ক্ষতি না চাইলে এখন মেনে নাও।পরে ওসব ভাবা যাবে।”
খাদিজা বেগম কিছুক্ষন ভেবে বলল,
-” ঠিক আছে। ”
এটা বলে চলে যায়।নিয়াজ সাহেব মুচকি হাসে স্ত্রী কান্ড।তার স্ত্রী নিজেকে সব চেয়ে বুদ্ধিমান মনে করে।কিন্তু তার কাছে আসলে বোকা একটা নারী।এখন যেমন গোলখাইয়ে প্রাচ্যকে মেনে নিতে বলেছে। সেভাবে রাজি হয়েছে গেছে।
প্রাচ্যকে বরণ করে ঘরে তুলে। প্রাচ্য তৃণ রুমের ভিতরে ঢুকে চার পাশে চোখ ভুলায়।বছর খানেক হয়েছে এই বাসায় সে এসেছে।পুরো পরিপাটি এই রুমটা।রুমটা এতটা বড় নয়।রুমের মধ্য আলমারি, ড্রেসিং, এক সেট সোফা, আছে।
-” আগে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।তারপর আলমারিতেতে জামাকাপড় গুছিয়ে রাখিস।”
-” একটা কথা বলার ছিল! ”
তৃণ সোফায় বসে মোবাইল টিপতে টিপতে বলল,
-” বলে ফেল।”
প্রাচা আমতা আমতা করে বলল,
-” তোর বিয়ে ঠিক ছিল আমাদের কে বললি না কেন? ”
মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে প্রাচ্য’র দিকে তাকায়।তৃণকে এভাবে তাকাতে দেখে ভঁড়কে যায় সে।তৃণ দাঁড়িয়ে যায়।সে বলল,
-” মসজিদের মাইক এনে সবাইকে বলব আমার বিয়ে ঠিক।”
-” এভাবে কথা বলছিস কেন? ”
-” আমি এভাবে কথা বলি? ”
প্রাচ্য নিজেই বুঝতে পাচ্ছে না এখন কেন জানি তৃণকে দেখলে ভয়ে তার শরীরে
লোমগুলো শিহরণ দেয়।আগে এরকম হতো না। নাকি সম্পর্ক বদলে গেছে বলেই।না তাকে স্বাভাবিক হতে হবে।কেন শুধু শুধু সে তৃণকে ভয় পাবে।আগের মত যেভাবে ব্যবহার করত সেভাবেই করবে।একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করে আগে ফর্মে চলে যায়।
-” আগে খুঁটি নাটি সব কিছু আমাদের কে বলতি।তাহলে এত বড় একটা খবর তুই আমাদের জানাস নি কেন? ”
-” জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি।”
প্রাচ্য মেজাজ গরম হয়ে যায়। সে বলল
-” তাই! কেন প্রয়োজন মনে করবি।চুপি চুপি ওই তিন্নি কে বিয়ে করে ঘরে তুলতে চেয়েছিস। যাতে ঘরেটা ঠিক থাকে আর বাইরে ওই হারামি গিরি করতে পারিস। ”
এটুকু বলে জিভে কামড় দেয়।বিয়ে আগে এই ভাবে তৃণকে সে বলত।কিন্তু এখন সে জানে তৃণ তাকে ভালো বাসে।তাহলে কি করে এই সব বলছে?না জানি তৃণ এখন কি ভাবে রিয়েক্ট করবে?তৃণ দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আসলে সরি আমি এভা,,,,!”
তার আগেই তৃণ তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।তারপর চিৎকার করে সে বলল,
-” তাতে তোর কি যায় আসে। তুই ঠিকি ধরেছিস। এই জন্য কাউকে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলিনি।যদি পাঁচ কান হয়ে যায় কথাটা।তাহলে মেয়েদের সাথে হারামি গিরি করতে পারব না।”
তৃণ চলে যায়। প্রাচ্য কান্না করতে থাকে।ধাক্কা খেয়ে রুমের ড্রেসিং টেবিলে বাড়ি খায়।রক্ত বের না হলে ব্যথা পেয়েছে।ফুলে যাবে মনে হচ্ছে।

নীলের মোবাইলে আবার সেই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে।সেই বিরক্ত নিয়ে ফোন ধরে বলল,
-” কি সমস্যা? ফোন দিচ্ছেন কেন? মানা করেছিলাম না! ”
-” মেজাজ বুঝি আজকে হট আছে। ”
-” ফালতু কথা রাখেন! আর ফোন করবেন না।”
এটা বলে খট করে ফোন কেটে দেয়। স্বপ্ন হাসতে থাকে। নীলকে ছাদে দেখে ইচ্ছা করে স্বপ্ন ফোন দিয়েছে আড়ালে যেয়ে। নীলের পাশে গিয়ে সে বলল,
-” যাকে এত মেজাজ দেখালে সে হয়তো ভয় পেয়েছে আর তোমাকে ফোনেই দেবে না।”
নীল স্বপ্নকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।এক আপদকে ঝারি দিয়ে শেষ না করতেই আরেক আপদ এসে পৌঁছেছে।চরম বিরক্ত সে।কোনো কথা না বলে চলে যেতে নিলে স্বপ্ন হাত ধরে ফেলে।
-” হাত ছাড়ুন!”
হাত আরো শক্ত করে ধরে নীলকে টান দিয়ে তার বুকের উপরে ফেলে।চুল দিয়ে পুরো মুখ ডেকে যায় নীলের।স্বপ্ন তার ডান হাত দিয়ে নীলের কোমড় জড়িয়ে ধরেছে, বাম হাত দিয়ে নীলের মুখে আসা চুল গুলো সরিয়ে কানে পিছনে গুঁজে দিতে নিলে, নীল তিরিক্ষি মেজাজে স্বপ্ন হাত সরিয়ে ফেলে।আবার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে মুখে পড়ে।
-” গুঁজে দিব না।এমনিতে তোমাকে দেখতে দারুণ লাগে।”
-” আমার কোমড় ছাড়ুন।না হলে ভালো হবে না।”
নীল আর কিছু না বলে স্বপ্ন বুকে এলোপাথাড়ি ভাবে মারতে থাকে।স্বপ্ন দুইহাত দিয়ে নীলের।কোমর চেপে ধরে। নীলের মার খেতে রাজি সে।মারতে গেলে নীলের স্পর্শ পায় বুকে সে।নীল এবার বুদ্ধিখাটিয়ে স্বপ্নর পায়ে জোরে পাড়া দেয়।স্বপ্ন ব্যথা পেয়ে ‘ আহ’ করে চিৎকার দেয়।নীল ছাড়া পেয়ে চলে যেতে যেতে বলল,
-” লুলা বানিয়ে ফেলব দ্বিতীয় বার যদি এই কাজ করেন! ” তার কথার বিনিময় স্বপ্ন শুধু হেসেছে।স্বপ্ন এই হাসিটা যেন নীলের বুকে এসে লাগে।কেন এত এই ছেলের হাসি তার ভালো লাগে? সে তো সুরওয়ালাকে ভালোবাসে।

রাতে খেতে যাওয়ার সময় তৃণর মা খাদিজা বেগম তাকে অনেক কথা শোনা।বাজে মেয়ে বলে তাকে সম্মোধন করে। বাজে মেয়ে বলেই বর বিয়ে করতে আসবে বলে আসে নি।তৃণ কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিল।প্রাচ্য খুব করে চেয়েছিল তৃণ কিছু বলুক? কিন্তু সে নিরব ছিল।
খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর খাদিজা বেগম নিজের বোনকে ফোন করে।যাতে কাল সকালেই তিন্নিকে এই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

কাউছার স্বর্ণা
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।তাতে লেখার উৎসাহ পাই

স্বপ্নীল ৩৮

0

স্বপ্নীল ৩৮
বিবস্ত্র অবস্থা বিছানায় পড়ে আছে রোদ।সাদা বিছানায় লাল রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।সমুদ্র নামক স্বামী তার পাশে বসে সিগারেট টানছে, আড়চোখে বার বার রোদকে দেখছে।রোদের এই অবস্থা দেখে বিন্দুমাত্র দয়াও হচ্ছে না সমুদ্রের।কিন্তু রোদের এই অবস্থা দেখে তার কামনা ক্রমশ প্রখর হচ্ছে,,,, রোদকে দিয়ে নিজের কামনা মেটানোর পর ও কেন জানি শান্তি নেই সমুদ্র।তার এখন আবার রোদকে চাই।একরাত নয় প্রতিরাতে চাই রোদকে তার।রোদকে তার বিষাক্ত ছোবল খেতেই হবে। এক প্যাকেট সিগারেট খেয়ে শেষ করে রোদকে নিজের কাছে টেনে নিল সমুদ্র।রোদের মিনিমাম কথা বলার শক্তি টুকু নেই। চুপচাপ চোখের জল ফেলছে।সমুদ্র আবার তার কামনা মিটাতে ব্যস্ত। আর বারবার ব্যথায় কুঁকড়িয়ে ওঠছে রোদ। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ দেখাচ্ছে না সমুদ্র। সে নিজের কাজে ব্যস্ত। সমুদ্র প্রত্যেকটা স্পর্শ কেবল রাগ আর ক্ষোপ মিশে রয়েছে। একটু ও ভালোবাসা নেই। অসহ্য যন্ত্রনা মুখ বুঝে সহ্য করছে রোদ।বিয়ের প্রথম রাতে সমুদ্র এই ব্যবহার মানতেই পারছে না।বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

রাতের প্রায় শেষ দিকে সমুদ্র ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।কিন্তু রোদের চোখে ঘুম নেই।বিছানায় ব্যথায় কাতরাতে থাকে। স্বপ্ন ও ভাবেনি সমুদ্র এটা করবে তার সাথে।অপেক্ষা করছিল সে সমুদ্র জন্য।ভেবেছিল সে তার অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইবে।কিন্তু সমুদ্র সেই সুযোগ তাকে দেই নি।সমুদ্র হুট করে রুমে ঢুকে তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।এসব ভাবতেই তার কান্না আসছে।

সকালে পাখির কিচিকিচি তৃণ ঘুম ভাঙ্গে।চোখ খুলে দেখে সে দোলনায়।কেউ দেখার আগে তাড়াহুড়া করে নেমে আসে। রুমে ঢুকে দেখে, প্রাচ্য খাটের হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। দেখে না দেখার ভান করে ওয়াসরুমে ঢুকে দরজা জোরে লাগিয়ে দেয়।দরজা শব্দ প্রাচ্য ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে কান্না করতে করতে কখন এখানে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ালই ছিল না তার। এভাবে শোয়াতে শরীরটা ম্যাচম্যাচে করছে। উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার সামনে যায়।এখন সেই বিয়ের সাজেই আছে।চোখের কাজল ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।
গলা,হাতে, কানে সব ভারী ভারী গয়না খুলে রাখে। তখনই তৃণ গোসল সেরে বের হয়।দুজনের চোখাচোখি হয়।প্রাচ্য কিছু না বলে আলমারি থেকে একটা লং থ্রি পিজ নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।তৃণ’র ঘাড় ব্যথা করছে ওভাবে দোলনা শুয়েছিল বলে।হাতের তোয়ালে সোফায় ছুড়ে ফেলে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়ে। প্রাচ্য গোসল করে বের হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে পানি নেওয়ার জন্য চুল নাড়াচাড়া করে।তখনই প্রাচ্য’র চুলের পানি তৃণ মুখে এসে পড়ে।তৃণ বিরক্ত নিয়ে বলল,
-” পানি নেস ভালো কথা।এই জন্য আমায় মুখে চুলের পানি ফালাবি।”
-” আমার রুম। আমি যা ইচ্ছা করমু তোর কি? তোর সমস্যা হলে বাইরে যা।”
তৃণ ‘র খুব রাগ উঠল।তাই সে আর এক মুহূর্ত দেরী না করে বেরিয়ে যায়।প্রাচ্য জাস্ট সহ্য হয় না তার এখন।রুম থেকে বেরিয়ে যেতে ধূসরের সাথে দেখা হয়।ধূসর দুষ্টুমি করে বলল,
-” বাহ! একে বারে গোসল তোসল সেড়ে বেরিয়েছিস।গুড তার মানে রাতে বিড়াল মারতে পেরেছিস।ভাই কি ভাবে বিড়াল মেরেছিস একটু বল না প্লিজ।”
তৃণ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ধূসরে দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-” এদিকে আস! তোকে বুজাচ্ছি কিভাবে বাসর রাতে বিড়াল মারে, কি ভাবে?
ধূসর পালাতে যেতে স্বপ্ন সাথে ধাক্কা খায়।স্বপ্ন বলল,
-” কি ব্যাপার তৃণ তোকে তাড়া করছে কেন? ”
ধূসর নালিশের সুরে বলল,
-” আচ্ছা আমরা সবাই বন্ধু।আমি ওরে বাসর কথা কি জিজ্ঞেস করতে পারিনা?ও বাসর করেছে।তাই জিজ্ঞেস করেছি বিড়াল মারছে কিভাবে? আগে থেকে শিখে রাখলে তো নিজের বাসর রাতে বিড়াল মারতে সুবিধা হবে।”
-” তুই খুকু তো,এসব বিষয় জানিস না।এখন আমায় থেকে এসব শিখতে এসেছি।”
-” থাক তোকে বলতে হবে না।সমুদ্র থেকে জেনে নেব।”
সমুদ্র কথা বলতেই স্বপ্ন মনে পড়ে কালকে সমুদ্র বলেছে পরে যাবে।পরে কি সমুদ্র গেছে। খুব চিন্তায় পড়েছে সে।চিন্তিত কন্ঠে সে বলল,
-” সমুদ্র দেখেছিস।”
ধূসর বলল,
-” সারারাত জেগে জেগে বোধ বিড়াল মেরেছে তাই এখন উঠেনি কেউ সে।”
স্বপ্ন আর কিছু না বলে সে স্থান ত্যাগ করব।
উঠে যেয়ে ফ্রেশ হবে শরীরে সেই শক্তি পর্যন্ত নেই রোদের শরীরে। যন্ত্রনা মরে যাচ্ছে সে। তারপর অনেক কষ্ট উঠে বসে চাদুর মুড়িয়ে দিয়ে।নামার জন্য পা বাড়াবে তখনই সমুদ্র হাত টেনে বিছানা ফেলে চেপে ধরে বলল,
-” কোথায় যাওয়া হচ্ছে।”
সমুদ্র সাথে তার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। নিজের ছাড়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে।সমুদ্র এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখেছিল।এখন চোখ খুলে তাকায়।তাচ্ছিল্য ভাবে বলল,
-” খুব কষ্ট হচ্ছে তোর,,!
কথা বলার শক্তি নেই।তাই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।সমুদ্র একহাতে রোদের মুখ চেপে ধরে গলায় অনেক জোরে কামড় বসায়।
-” কষ্ট যাতে তুই পাস তার জন্য এই ব্যবস্থা।আর হ্যাঁ তুই কেন কষ্ট পাবি।তোর সুখ পাওয়ার কথা।এটার জন্য আমার কাছে নিজেকে বিয়ের আগে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিস।খুব শখ ছিল না আমার আদর সোহাগ পাওয়ার।এখন কান্না করছিস কেন? এত আদর সোহাগ করেছি… তোর কি মন ভরেনি।না ভরলে বল, আমার শরীরে যথেষ্ট এনার্জি আছে এখন তোকে আদর করার। করবে কি? ”
রোদ কেঁদে দেয়।সমুদ্র রক্তচক্ষু হয়ে বলল,
-” তুই নিজে ও জানিস তুই কি ভুল করেছিস।আমার সম্মানে দাগ লাগিয়ে দিয়েছিস তুই।
তার শাস্তি তোকে পেতেই হবে।প্রতিটি রাতে তোকে এই নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে।আমি দেখতে চাই তুই কত সহ্য করতে পারিস।ভালোবাসি না আমাকে।ভালোবাসার আগুনে তোকে জ্বলে পড়ে ছাই করে দিব।”
এটা বলে উঠে যায় সে।ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় দরজা অনেক জোরে শব্দ করে লাগায়।সেই শব্দ রোদ কেঁপে উঠে। হাউমাউ করে কান্না করে।সে অনেক বড় ভুল করেছে।সে অনেক বড় অন্যায় করেছে।অন্যায় ভাবে সে সমুদ্রকে পেয়েছে। তার শাস্তি যেয়ে তাকে পেতেই হবে।এত সহজ সমুদ্র তাকে ছাড়বে না।সে খুব ভালো করে চেনে এই বদরাগী সমুদ্রকে।মস্ত বড় ভুল ফেলেছে সে নীলের কথা শুনে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুলের পানি ঝাড়তে থাকে সমুদ্র।বলল,
-” এভাবে বসে থেকে কী প্রমান করতে যাস।”
রোদ ছলছল চোখে তাকায়।সমুদ্র বিদ্রূপ করে হাসতে থাকে।চোখ নামিয়ে ফেলে, সে কান্না করতে থাকে। সমুদ্র রোদের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
-” এভাবে তাকালে এই সমুদ্র আগুনে তুই ভস্ম হয়ে যাবি।”
অনেক কষ্টে রোদ কথা বলল,
-” আগুনকে কিন্তু পানিয়ে ঠান্ডা করতে পারে।”
সমুদ্র রোদের কথা বুঝতে পেরে একটা ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।ওয়াশরুমে যেয়ে রোদ নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।ঠোঁট ফেটে যেয়ে রক্ত জমাট বেধেছে, গলায় অসংখ্য কামড়, দাগ, সব গুলো দাগে সে হাত ছোঁয়ায়।এই দাগ গুলো তার স্বামীর ভালোবাসার চিহ্ন। শরীরে পানি পড়তে পুরো গায়ে জ্বালা শুরু হয়ে যায়।চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছা করছে তার।ছোট থেকে বড় হওয়ার পর্যন্ত তার গায়ে কেউ একটু টোকাও দেয়নি।ব্যথা কি জিনিস সে জানে না? আজকে তার কাছে এসব মরণ যন্ত্রণার সমান মনে হচ্ছিল। কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি পড়ে সে।তার সাথে কালো থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ পড়ে যাতে হাতে দাগ গুলো দেখা না যায়।বুকের উপরে শাড়ির আচঁল ভালো করে দিল, যাতে সেই দাগ গুলো দেখা না যায়।লম্বা চুল গুলো পিঠময় ছড়িয়ে, লম্বা ঘোমটা দেয়, কিছু চুল ছ দিয়ে গালের পাশে কামড় দাগ ঢেকে রাখে।আয়নার ভালো ভাবে দেখে নেয়। দাগ গুলো দেখা যাচ্ছে কী না।দেখা যাচ্ছে দেখে একটা স্বস্তি নিশ্বাস ফেলে। নিচে নেমে কিচেনে যায়।তার শ্বাশুড়ি মায়ের পাশে দাঁড়ায়।শায়লা তাকে দেখে কিছু বলল না।এই মেয়ে মিথ্যের কারণে তার ছেলেকে নিজের শ্বশুর অন্যায় ভাবে মেরেছে। রোদ বুঝতে পাচ্ছে না সে কি করবে। কেউ তো তার সাথে কথা বলছে না।সোহাগী বেগম বলল,
-” সমুদ্র কি উঠেছে? ”
-” হুম! সে তো অনেক্ষন আগে নিচে নেমে এসেছে।”
-” কোথায় সে দেখতে পাচ্ছি না যে।”
রোদ কিছু বলল না।শায়লা বলল,
-” সমুদ্র বাগানে আছে।”
রোদ জিজ্ঞেস করে শায়লা কে,
-” আন্টি আমি হেল্প করি! ”
শায়লা কাজ করতে করতে বলল,
-” কোনো দরকার নাই।আমেনা আছে আমাকে হেল্প করার জন্য।”
শ্বাশুড়ি কথা শুনে রোদের মন খারাপ হয়।সে বেরিয়ে এসে নিজের রুমে চলে যায়। স্বপ্ন আর ধূসর কিছুক্ষণ পর তার রুমে যায়।রোদকে দেখে ধূসর বলল,
-” কালকে রাতে সমুদ্র বুঝি বেশি ক্ষুধার্ত ছিল।”
-” মানে! ”
-” মানে তোর এই ছিঁলে যাওয়া ঠোঁটেই বলে দিচ্ছে।”
ধূসর কেন এটা বলছে আর বুঝতে বাকি রইল না।সব দাগ কিছু না কিছু দিয়ে লুকিয়েছে কিন্তু ঠোঁটের এই দাগ লুকাতে ভুলে গেছে সে।কিছু টা নার্ভাস ফিল করে। অন্য সময় হলে ধূসরে বেহাল করে ছাড়ত সে।আজকে কিছু করতে ইচ্ছা করছে না।ধূসর বলল,
-” রাতে কি সমুদ্র শালা তোকে মানা করছে। চুপচাপ থাকার জন্য।কথা বলছিস না কেন? ”
তারপর সে কিছু বলল না।ধূসর পাশ কাটিয়ে রোদের পাশে বসে স্বপ্ন।খাটের উপরে থাকা রোদের হাতের উপরে স্বপ্ন তার একটা হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বলল,
-” কোনো ব্যাপারে কী তোর মন খারাপ? ”
রোদ চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,
-” না! ”
-” তাহলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি।”
রোদের আর বুঝতে বাকি রইল না স্বপ্ন তাকে কি প্রশ্ন করবে। সে বলল,
” আমি জানি তুই কি বলবি।কিন্তু এই মুহূর্ত সেই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না তোকে।কিন্তু অবশ্যই তোদের সেই প্রশ্নের উত্তর দিব। অন্য এক সময়। এখন প্লিজ আমায় একটু একা থাকতে দেয়।”
স্বপ্ন আর কথা বাড়ালো না।সে বুঝতে বাকি রইল না। ওদের মধ্যে কিছু একটা জামেলা হয়েছে।যার জন্য রোদের মন খারাপ। তারপর দুজন চলে যায়।
খাবার টেবিলে রোদকে না দেখে সোলোমান মির্জা সমুদ্রকে বলল,
-” রোদ কোথায়? ”
সমুদ্র কোনো কথা না বলে চুপচাপ খাচ্ছিল।স্বপ্ন সমুদ্র দিকে তাকায়। সমুদ্রকে বুঝতে চেষ্টা করে সে।শায়লা বলল,
-” তার খাবার আমি সোহাকে দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
-” মেজ বউ মা তুমি কি জানো না এই বাড়ির নিয়ম! ”
-” হ্যাঁ বাবা আমি জানি।তাকে এখানে আসার জন্য আমি সোহাকে আর নীল
পাঠিয়েছি।সে নিজে বলেছে তার খাবার উপরে পাঠিয়ে দিতে।সে নিচে যাবে না। ”
সোলোমান মির্জা আর কথা বাড়ালো না।সবাই চুপচাপ খেয়ে যার যার কাজে চলে যায়।
বিকালে দিকে প্রাচ্য আর তৃণ চলে যায় সবার থেকে বিদায় নিয়ে।

চলবে…

অনেক নূপুর গল্পের কথা জিজ্ঞেস করেন।তাদের কে বলছিস।স্বপ্নীল শেষ হলেই সেই গল্পটা দিব আবার।অবশই সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।আপনাদের মন্তবেই আমি লিখতে উৎসাহ পাই।

স্বপ্নীল ৩৭

0

স্বপ্নীল
৩৭

রোদ আর সমুদ্র বিয়ে অনেক্ষন আগে হয়ে গেছে।কিন্তু শিহাবের মা-বাবা চলে এসেছে শিহাব এখন আসেনি।তাই প্রাচ্য আর শিহাবের বিয়ে এখন হয়নি।এভাবে আরো দুইঘন্টা কেটে যায়।শিহাবের বাবার মোবাইলে তখনই একটা মেসেজ আসে।মেসেজে লেখা ছিল ‘ বাবা আমি এই বিয়ে করতে যাবো না।তোমার ফিরে এসো।’
এই মেসেজ দেখে শিহানের বাবা কিংকর্তব্যবিমূঢ় । তিনি বুঝাতে পাচ্ছে না শিহাবের এই মেসেজে কারণ।তারা বাড়িতে দেখে শিহাব এই বিয়ে করার জন্য কত পাগল।আর এখন সে ছেলে বলছে বিয়ে করবে না।হিসেব গড়মিল লাগছে।শিহাবের বাবা ছেলের মোবাইল ফোন দে।বন্ধ বলছে।মাথা কাজ করছে না।মির্জা বাড়ির লোক আর অপেক্ষা করতে পারল না।গ্রামের লোক কানা ঘোষা শুরু করে দিয়েছে।নীলের বাবা বলল,
-” শিহাবের আসতে আর কতক্ষণ লাগবে।মেহমান সবাই বিরক্তি বোধ করছে।ফোন করে জিজ্ঞেস করেন? কত দূর এসেছে।”
শিহাবের বাবা কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না।কি জবাব দেবে সে মির্জা ফ্যামিলির কাছে।নীলের বাবা বলল,
-” কি হলো!”
তিনি ফোন বাড়িয়ে দেয়।নীলের বাবা মেসেজে পড়ে একবার তার দিকে তাকায়।আরেকবার নিজের ফ্যামিলিরর দিলে।ভাইকে এভাবে তাকাতে দেখে তামিম বাবা এগিয়ে এসে মোবাইল টা নিয়ে মেসেজ দেখে।তিনি রাগান্বিত হয়ে বলল,
-” এসব মানে কি? ”
-…..”
-” আপনাদের ছেলে বিয়ে করবে না আগে বললেই হতো এত তামাশা করে আমাদের ফ্যামিলি মান সম্মান ডুবানোর অধিকার কে দিয়েছে? ”
এভাবে মির্জা ফ্যামিলি সবাই তাদের কে অপমান করে।তিনি মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়।আজ নিজের ছেলের জন্য অপমানিত হওয়া লেগেছে।সোলোমান মির্জা কাছে ছেলে হয়ে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নেয় তারা।মেয়ে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে শুনে শায়লা জ্ঞান হারায়।তার ছেলে সাথেই বা এমন কেন হলো? প্রথমে ছেলে তারপর মেয়ে।এসব না মানতে ফেরে অসুস্থ হয়ে যায়।সবাই শায়লা রুমে নিয়ে যায়।সোলামান মির্জা বুকের ব্যাথা উঠে যায়।ডাক্তার এসে তাকে দেখে যায়। টেনশন করতে মানা করে। বিশ্রাম নিতে বলে।

শায়লা জ্ঞান ফিরলে স্বপ্ন তার সাথে দেখা করতে যায়।স্বপ্নকে তিনি নিজের ছেলের মতই দেখে।শুধু স্বপ্ন সবাইকে। শায়লা স্বপ্নকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।স্বপ্ন তার মাথা হাত বুলিয়ে দেয়।সুযোগ বুঝে স্বপ্ন শায়লা তৃণ আর প্রাচ্য কথা বলল।তিনি বিস্মিত হয়ে বলল,
-” কি বলছো তুমি।প্রাচ্য যদি আগে থেকে তৃণকে পছন্দ করে থাকে তাহলে সে মিথ্যে কেন বলেছে আমায়? সে কাউকে ভালোবাসে না।”
-” আসলে আন্টি তখনই ওরা কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলেনি।প্রাচ্য তখনই তৃণ বলেনি কথাটা আর তৃণ বলেনি।তাই প্রাচ্য সেদিন বলেছে তার পছন্দ কেউ নেই। তারপর তৃণ যখন শুনে প্রাচ্য বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তখনই প্রাচ্যকে বলে।কিন্তু প্রাচ্য তখন মানা করে দেয় আপনাদের সম্মান কথা ভেবে।”
স্বপ্ন মিথ্যে বলে।কারণ যদি শায়লা বেগম শুনে তাদের মধ্যে জামেলা অন্য কিছু নিয়ে।তাহলে বিয়েতে কিছুতে রাজি হবে না।তিনি কেন অন্য কোনো মায়ে রাজি হবে না।বলবে যাদের মধ্যে এখনই এত জামেলা বিয়ের পর না জানি কি হয়।এই জন্য স্বপ্ন মিথ্যে বলল।
দুজন দুজনকে যখন ভালোবাসে তখন বিয়ে হয়ে গেলে জামেলা মিটে যাবে।
শায়লা প্রাচ্য ঢেকে পাঠায়।স্বপ্ন যেটা বলছে সেটা সত্যি কি না জানার জন্য।প্রাচ্য তাই বলল।তৃণ প্রথমে বিয়ে রাজি ছিল না। কিন্তু স্বপ্ন তাকে তখন বলল,
“তুই যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে তোর সাথে আমাদের কারো সম্পর্ক থাকবে না।”
এই কথা শুনে বন্ধুত্ব রক্ষার্থে রাজি হয়।তার কাছে স্বপ্ন শুধু তার বন্ধু না।তার ভাই।এরকম একটা বিয়ে কেন? হাজার বিয়ে করতে পারবে? যদি স্বপ্ন তাকে বলে।

তার শায়লা বেগম শ্বশুর কে সব বলল।সবাই মত দেয়।যেখানে প্রাচ্য রাজি সেখানে তারা অমত করে কি লাভ? মির্জা সোলোমান কখনো নাতনী মনের বিরুদ্ধ কিছু করে না।

মির্জা বাড়িতে তিন তিনটা বিয়ে হয়।একটা সবার অজানা। দুটো বাসর ঘর সাজানো হচ্ছিল।ফুলে ফুলে মৌ মৌ করছে বাসর ঘর।ফুলের বিছানায় বঊ সেজে বসে আছে প্রাচ্য।অপেক্ষা করছে তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য।অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তৃণ রুমে প্রবেশ করল। প্রাচ্য’র দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।ফ্রেশ হয়ে বাইর হলে প্রাচ্য’র তার কাছে আসে।কথা বলতে তার জড়তা কাজ করছে,আগে বন্ধু ছিল যা নয় তা বলা যেত এখন স্বামী। স্বামী বলতে তার পুরো শরীর শিহরিত হয়।
তৃণ’র পা ছুয়ে সালাম করার জন্য নিচু হয়ে হাত বাড়ালে তৃণ দূরে সরে যায়।প্রাচ্য উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-” পা সরিয়ে নিলি কেন? ”
-” এসব করার দরকার নেই।”
-” এটা নিয়ম বাসর ঘরে স্বামীকে সালাম করার।”
তৃণ তার কোনো কথার উত্তর না দিয়ে দরজা খুলতে হাত বাড়ায় বাহিরে যাওয়ার জন্য।তখনই প্রাচ্য বলল,
-” তুই এখন কোথায় যাচ্ছিস?
-” বাইরে! ”
-” মাত্র বাইরে থেকে এলি।এখন আবার বাইরে যাবি কেন? ”
-” তোকে বলতে হবে আমি কেন বাইরে যাবো! ”
প্রাচ্য এই কথা প্রতিত্তুর কিছু বলল না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-” আজকে আমাদের বাসর রাত! ”
তৃণ বলল,
-” তো! ”
তৃণ এই কথায় অপমানবোধ করে সে। কথাটা এভাবে বলাতে তার গায়ে লাগে।তৃণ তিরিক্ষ মেজাজে বলল,
-” বাসর রাত মাই ফুট। এই বিয়ে না আসলে ভালো হত।অন্তত এই জঞ্জালটা মধ্যে পড়তাম না।”
-” আমাকে বিয়ে করা তোর জঞ্জলার মনে হচ্ছে।”
-” তাহলে কি হবে? তোকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা ছিল না আমার? শুধু বন্ধুত্ব বাঁচাতে স্বপ্ন কথা রাখতে বিয়ে করেছি তোকে?
-” তার মানে দয়া করে আমায় বিয়ে করে আমায় বিয়ে করেছিস।
-” তো কি ভালোবেসে বিয়ে করতে যাবো তোকে? আর তুই কেন আমায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস? আমি লুচ্চা,চরিত্র খারাপ,লম্পট, আর জানি কি কি বলেছিস।তাহলে বিয়ে এত খারাপ ছেলে কে বিয়ে করলি কেন?”
প্রাচ্য কান্না করতে করতে বলল,
-” আমি ভুল বলেছি! প্লিজ মাফ করে দেয়।”
তৃণ অট্রহাসি দিয়ে বলল,
-” হা হা হা। ভুল বলছ নয় তুই।তুই ঠিক ছিলি।আমি নিজে ও জানি কত মেয়ে সাথে আমার রিলেশন।আর শুয়েছি তো কতে মেয়ে সাথে,,,
প্রাচ্য দুইহাত দিয়ে কান চেপে ধরে বলল,
-” প্লিজ চুপ কর! ”
তৃণ প্রাচ্য’র কান থেকে হাত সরিয়ে বলল,
-” আরে শোন।এখন আরো বলার বাকি আছে? সেগুলো শোন।
প্রাচ্য কান্না করতে করতে বলল,
-” আমি শুনতে চাই না কিছু। ”
তৃণ আর কিছু বলল না।সে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।প্রাচ্য তার যাওয়াএ দিকে তাকিয়ে থেকে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।তৃণ কাছে সে জঞ্জলা, স্বপ্নের জন্য তাকে তৃণ বিয়ে করেছে। এসব মানতেই পাচ্ছে না সে।তৃণ ছাদের যেয়ে দোলনা ধপ করে বসে পড়ে। সিগারেট খেতে থাকে।প্রাচ্য তার এমন না করলে আজকের রাতটা অন্য রকম হতো।প্রাচ্য করা অপমান, চড় সব মুখ বুঝে সহ্য করেছিল।তারপর প্রাচ্য সহ্য সীমা ফেরিয়ে গেছে।যখনই প্রাচ্যকে মন থেকে সরিয়ে দিয়েছে।ভাববে না তার কথা তখনই প্রাচ্য’র ভুল ভাঙ্গল।ভিডিও গুলো দেখে প্রাচ্য’র ভুল ভেঙ্গেছে।কিন্তু তার কথা নয়।তার মানে প্রাচ্যকে বিশ্বাস করে না।যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা নেই।তার জীবনে প্রাচ্য কোনো জায়গা নেই।

কাউছার স্বর্ণা

গল্পেটা দুপুরে পোষ্ট করেছিলাম।আমি মনে করেছি পোস্ট হয়েছে গেছে।তাই মেমোর থেকে ডিলেট করে দিয়েছি।এখন দেখি নাই।আমার মাথা আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।কিছুতে মাথা আসছে ৩৭ পর্ব কিভাবে লিখব।অনেক আগে লিখে রেখেছি তার এই পর্ব কি লেখেছি আমার মনে নেই।কিছুতে মনে করতে পাচ্ছি না।৩৭ পর্ব অন্যান্য পর্ব গুলো থেকে দ্বিগুন বড় করে লিখেছি।আর সেটার এই অবস্থা হয়েছে।খুব খারাপ লাগছিল।এখন এইটুকু কি লেখছি না লেখছি মাথা আসে না।

স্বপ্নীল ৩৬

0

স্বপ্নীল
৩৬
রোদের মা বাবা মির্জা বাড়িতে আসে।তারা প্রথমে রাজি না হলে পরে রাজি হয় মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।একমাত্র মেয়ে রোদ তাদের! কোনোদিন কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেনি।যেখানে মেয়ে নিজের কোনো আপত্তি নাই।সেখানে উনার আর কি আপত্তি করবে!কিন্তু এভাবে বিয়ে হচ্ছে দেখে কিছুটা তাদের মন খারাপ।

সবাই মিলে প্রাচ্যকে সাজাচ্ছে। লাল লেহেঙ্গা দারুণ লাগছে তাকে।নাকে নোলক, মাথায় টিকলি,গলায় জড়োয়ার ভারী ভারী গয়না।সব কিছু কমপ্লিট করে নীল বলল,
-” বাহ! খুব সুন্দর লাগছে আমার আপু টাকে।শিহাব ভাইয়া বাসর ঘরে ঢুকে আপু দেখে চোখ সরাতে পারবে না।”
প্রাচ্য আয়নার নিজের খুটিখুটি দেখছে।এই সাজে সাজতে চেয়েছে তৃণ জন্য।কিন্তু সেটা আর হয়ে ঊঠল না।ভাগ্য যদি সহায় না হয় তাহলে আর কি করার আছে।শিহাব সাথে কিছুক্ষণ পর সারাজীবনের জন্য বাঁধা পড়ে যাবে।শিহাবই হবে তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। তৃণ তার অতীত হয়ে যাবে।আজকে থেকে সে অতীত ভুলে বর্তমান নিয়ে বাঁচবে।তৃণকে ভুলে যাবে।মনে করবে না সে আর তৃণ নামে কাউকে ভালোবাসত একসময়।

সোহা আর নীল মিলে রোদ কে সাজাতে যায়।বিয়েটা হুট করে ঠিক হয়ে বলেই লেহেঙ্গা কিনতে পারেনি।রোকেয়া বেগম লাল কাতান শাড়ি এনে দিয়ে রোদকে। এটা যেন পড়ে নেয়।এই কাতান শাড়িতে রোদকে কম লাগছে না।অপূর্ব লাগছে।সাজানো শেষ হয়ে গেলে দুজন নিচে নেমে যায়।

বিয়ের বাড়ির গ্রামের লোকদের মেহমানদারী করছে ধূসর আর স্বপ্ন।এত দৌড়াদৌড়িতে হাফিয়ে যায় সে। এক গ্লাস লেবুর শরবত নেয় সে।তখনই নীল সেখানে আসে।গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর নীল কে দেখছে। মেরুন কালারে লেহেঙ্গা ততটা খারাপ লাগছে না।গলায় সিম্পল একটা চেইন, হাতে, ডজন খানা চুড়ি,চোখের কাজল যেন তার সৌন্দর্য দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। লাল লিপস্টিকটা যেন ঠোঁটটাকে আর ও ফুটিয়ে তুলে রেখেছে।চুল গুলোর এক পাশে ৪টা গোলাপ দিয়ে খোপা করেছে।খোপাটা বেশ লাগছে।স্বপ্ন আজকে নীলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।

নীল তার বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।তাদের খেতে যেতে বলে।তারা চলে যায়। নীল পিছন ঘুরে স্বপ্নকে দেখে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে সে। স্বপ্ন আজকে সোনালি সুতোয় কাজ করা কালো পাঞ্জাবী পড়েছে। হাতা গুলো কনুই পর্যন্ত গুটানো। সিল্কি চুল গুলো কপালে পড়ে আছে।হাতে সবসময় মত ব্যান্ডেড ঘড়ি আর ব্রেসলেট। ফর্সা শরীরে কি মারাত্মক লাগছে এই কালো রঙটা। ঠোঁটে কোণে ঝুলে আছে সেই হাসিটা।নীল আজ সত্যি বুঝতে পাচ্ছে না সে কেন স্বপ্নকে এভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। তারেই বা কেন ভালো লাগছে এভাবে স্বপ্নকে দেখতে।
-” এভাবে কি দেখছ!”
-” আপনাকে! ”
নীল বিড়বিড় করে বলল।
-” আমাকে দেখছ মানে? ”
নীল আবার স্বপ্ন দিকে তাকায়।এই ছেলে তার সামনে আবার কতক্ষণে এসেছে।আর সেই আবল তাবল কি বকছে।
-” কিছু না! ”
-” কিছু না বললেই হলো।আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি তুমি কি বলেছ।”
-” ক- কি ব- বলেছি আমি!
স্বপ্ন নীলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
-” আমাকে দেখছিলে।”
নীল চোখ বড় বড় করে তাকায়। স্বপ্ন আবার বলল,
-” আমাকে কেন দেখছ তুমি! তোমার তো তাকে দেখার কথা যাকে তুমি ভালোবাসো।তার মানে কি আমি ধরে নিব তুমি আমার প্রেমে পড়েছ তাই আমাকে এভাবে গিলে খাচ্ছিলে।”
নীলের কপাল সুক্ষ্ম ভাজ পড়ে।তার বিরক্তি হয়ে বলল,
-” নিজে আয়না দেখেছেন কখন।এরকম একটা বিচ্ছিরী চেহারা দিকে এই নীল মির্জা তাকাবে। ”
-” একটু আগেই আয়না দেখে এসেছি।এখন আর আয়নার দেখতে ইচ্ছা করছে না। এই বিচ্ছিরি চেহারা দেখে দিনে কত মেয়ে আমার প্রেমে পড়ে তুমি জানো।”
-” জানি আমি।এখন চাপা মারবেন।কত মেয়ে আপনার পিছনে লাইন দিয়ে থাকে।স্বপ্ন বলতে তারা অজ্ঞান। ”
-” রাইট নীল।তার প্রমান আমি তোমাকে দেখাচ্ছি।লুক!”
নীল দেখছে তার বন্ধুরা সবাই স্বপ্ন দিকে তাকিয়ে আছে।তাকে নিয়ে কথা বলছে সে বুঝতে পাচ্ছে।স্বপ্ন বলল,
-” কিছু বুঝতে পারলে নাকি! ”
নীল কিছু না বলে চলে যায়।স্বপ্ন হাসতে থাকে।বিয়ে পড়ানো সময় হয়ে গেছে।প্রাচ্য আর রোদকে নেওয়া হয় স্টেজের দিকে।রোদকে সমুদ্র পাশে বসায়।আর প্রাচ্য বসে অন্য পাশে! তার পাশে জায়গাটা খালি দেখে সে তার মানে শিহাব এখন আসেনি।রোদ আড় চোখে সমুদ্রকে দেখছে।সোনালী আর খয়েরী মধ্যে শেরওয়ানী। সোনালি রঙের চুড়িদার। বেশ সুন্দর লাগছে।কিন্তু সমুদ্র তার দিকে একবার তাকায় নি।অন্য পাশে তাকিয়ে আছে।তার পাশে কেউ আছে সেটা সমুদ্রকে দেখে বুঝায় যাচ্ছে না। তা দেখে খুব কষ্ট পায় সে।আজ তাদের বিয়ে তারপর একবারের জন্য সমুদ্র তার দিকে ফিরে তাকালো না।তৃণ আর ধূসর এসে অনেকগুলো সেলফি তুলল সমুদ্র সাথে।ধূসর বলল,

-” সমুদ্র রোদের কাঁধে হাত দেয়। তাহলে না তোদের কাপল পিক সুন্দর হবে।”
রোদ সমুদ্র দিকে তাকায় তার রিকেশন দেখার জন্য।সমুদ্র চোখ গরম করে ধূসর দিকে তাকায়।তৃণ যেয়ে সমুদ্র একহাত টেনে নিয়ে রোদের কাঁদে রাখে।রোদের সবাঙ্গর কেঁপে উঠে।শাড়ি মুট করে ধরে।সমুদ্র আর কিছু বলে না।
-” স্মাইল প্লিজ!
নীল এসে বলল।।সে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।তার প্রাচ্য’র পাশে গিয়ে ছবি তুলে।প্রাচ্য এতক্ষণ বসে তৃণ দেখছিল। কি হাসি খুশি।মুখের সে দুষ্টুমি ভরা হাসিটা
লেগে আছে। চোখে সরিয়ে ফেলে সে।মনে মনে একটা দীঘশ্বাস ফেলে।সবার এসে তাদের সাথে ছবি তুলে।।কিন্তু তৃণ তুলল না প্রাচ্য’র সাথে।

স্বপ্ন অনেক্ষণ ধরে নীলের পিছন পিছন হাঁটছে নীল তা খেয়াল করল।তাই এবার সে থেমে যায়।স্বপ্ন ও দাঁড়িয়ে যায়।নীল পিছন ঘুরে। তখনই আবার স্বপ্ন নীলের পিছনে যেয়ে দাঁড়ায়।নীল আবার স্বপ্ন’র মুখামুখি হওয়ার জন্য তার দিকে তাকায়। স্বপ্ন আবার সেই একই কাজ করে।নীল বুঝতে পাচ্ছে না স্বপ্ন এমন করছে কেন? তার পিছনে কেন যে দাঁড়ায়।খারাপ কোনো মতলব নেই তো।নীল আর পিছন না ঘুরে সামনে তাকিয়ে বলল,
-” এসব ডং করা মানে কি? আমার পিছন না দাঁড়িয়ে সামনে আসেন।”
-” সামনে যেতে পারবো না।পিছনে দাঁড়িয়ে আছি যা বলার বলো! আমি শুনছি।”
নীল মেজাজ চটে যায়।
-” পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন কোন মতলবে।লুচ্চামি করার জন্য আর কোনো মতলব খুজে পাননি।তাই এভাবে,,,,,”
-” তোমার পিঠের ব্লাউজের হুক খুলে গেছে।”
স্বপ্ন কাট কাট জবাব দেয়। স্বপ্ন মুখে এই কথা শুনে নীল পিঠে হাত দেয়।পুরো পিঠে খালি।হায়! আল্লাহ।এভাবে সে সারা দুনিয়ার হেঁটে বেড়াইছে।সবাই কি ভাবছে তাকে।সব দোষ এই স্বপ্ন’র সে কেন তাকে আরো আগে বলেনি।
-” আর আগে বলতে পারেন নি।আর বলবেন কেন? আরো আগে বললে কি আমার পিঠে দেখতে পারতেন।মন মতো দেখে গিলে খেয়েছেন লুচ্চা কোথায় কার।”
-” উপকারে নামে থাপ্পড়। উপকার করেছি সেটা শিকার না করে আমার নামে লুচ্চা বদনাম দিচ্ছো ।বাহ! তোমার তারিফ না করে পাচ্ছি না। ”
-” যেটা বলেছি সেটাই ঠিক।”
-” ভালো! এখন দোয়া করে হুক লাগালে ভালো হবে! ”
-” আপনি যান এখান থেকে আমি লাগিয়ে নিব।”
স্বপ্ন চলে যায়।নীল হাত দিয়ে লাগাতে যেয়ে দেখে হুক খুলে পড়ে গেছে।এখন কি করবে সে।এখন আবার ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে। দূর ভালো লাগছে না।
-” কি হয়েছে? ”
-” আপনি আবার এখানে! ”
-” দেখতে পাচ্ছো তো আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে।”
নীল ফানসে গলায় বলল,
-” ধ্যাত! ভালো লাগে না!এখন আবার ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।”
-” কেন?
-” হুক খুলে পড়ে গেছে।”
-” এতে ড্রেস চেঞ্জ করার কি আছে।পিন দিয়ে লাগিয়ে নিলে হয়।”
সত্যি তো। সেফটিপিন দিয়ে লাগিয়ে নিলে আর ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে না।এই কথা কেন তার মাথা আসল না? এই স্বপ্ন’র মাথায় আসত গেলো কেন? নীল এখন কার হাতে সেফটিপিন লাগাবে। কাউকে খুজে পাচ্ছে না সে। সবাই কাজে ব্যস্ত।অন্য কেউ ছাড়া তো লাগাতে পারবে না ।কাউকে তো প্রয়োজন। স্বপ্ন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নীল বলল,
-” হেল্প করতে পারবেন?
-” বলো!
-” সেফটিপিন দিয়ে একটি লাগিয়ে দিবেন ব্লাউজ টা।”
স্বপ্ন কিছুটা সময় নিয়ে হ্যাঁ বলল।নীল তাকে তার রুমে আসতে বলল।ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে বক্স ভিতরে থেকে একটা সেফটিপিন নিয়ে স্বপ্ন’র দিকে বাড়িয়ে বলল
-” নিন ধরুন! ”
এটা বলে পিছন ফিরে যায়।স্বপ্ন নীলের পিঠে হাত দেওয়ার সাথে নীল কেঁপে উঠে।নীল বুঝতে পাচ্ছে না তার এই অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে কেন? এই ছেলের ছোঁয়ার তার হাতের লোম গুলো দাঁড়িয়ে যায়।হাতের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্ট করছে কি ঘটছে তার সাথে।নীলের নাড়াচাড়া তে সেফটিপিনটা মাথা নীলের পিঠে লেগে যায় নীল ‘আহ’ করে উঠে।
-” সরি!
-” কিসে সরি।আমার পিঠটা ফুটো করে দিলেন।”
স্বপ্ন দেখছে হালকা একটু রক্ত জমেছে।হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে মুচে জায়গটায় হাত ভুলিয়ে দেয়।নীল আর পাচ্ছে না সহ্য করছে।তার ভিতরে উম্মাদনা সৃষ্টি হচ্ছে।ঠোঁট কামড়িয়ে নিজের শান্ত করার চেষ্টা করছে।
-” আর কতক্ষণ!”
-” এই তো হয়ে গেছে!”
স্বপ্ন সেফটিপিন লাগানো হলে নীলের কানে কাছে এসে বলল,
-” এরকম শর্ট লেহেঙ্গার ব্রাউজ পড়লে কেন?কারিনা কাপুরের মত পেট আর নাভি দেখানোর জন্য।”
নীল চোখে খুলে তাকায়।স্বপ্নকে তার এত কাছে দেখে দূরে সরে যায়।নিজের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” কারিনা, ক্যাটরিনা, দীপিকা, সবার মত । তাতে আপনার সমস্যা কি?
-” আমার সামনে এসব পড়লে সমস্যা নেই।বাইরে লোক তোমার এসব দেখবে তাতে আমার সমস্যা। আমার জিনিস কেন অন্য কেউ দেখবে।”
-” একশোবার যাবো এসব পড়ে তাতে আপনার কি।আমার বারণ করার আপনি কে?
স্বপ্ন আর কিছু না বলে নীলের কোমর ধরে ফেলে।নীলের খোপা খুলে ফেলে। কানের পিছন থেকে গোলাপ ছুড়ে ফেলে।তা দেখে নীল
-” ইউ,,,,
তার আগে নীলকে থেমে যায় স্বপ্ন দিকে তাকিয়ে।তারপর নীলকে
দেওয়ালে সাথে লাগিয়ে ধরল স্বপ্ন।তারপর নীলের দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে চেপে ধরল।এতোই জোরে চেপে ধরেছে যে নীল খুব ব্যথা পাচ্ছে।কিন্তু কিছুই বলতে পাচ্ছে না।নীলের শরীরের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্ন। একদম নীলের চোখ,মুখ,ঠোঁটে গিয়ে স্বপ্নর উত্তপ্ত নিশ্বাস গুলো বাড়ি খাচ্ছে।স্বপ্নর চোখে দিকে তাকাতেই আরেকদফা বুক কেঁপে উঠল নীলের।চোখে যেন আগুন ঝরছে স্বপ্নর।নীল হঠাৎ করে এটা দেখে ভয় লাগছে।কেন লাগছে সে জানে না? কিন্তু সে কিছুই তে ভয় পায় না।তাহলে আজকে কেন স্বপ্ন’র এই ভয়ংকর চাহনি দেখে ভয় পাচ্ছে?
-” এটাই যেন শেষ হয়।এমন কথা যেন তোমার মুখে আর না শুনি।তোমার সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধুমাত্র আমার।আর কারোর না।”
এটা বলে চলে যায় স্বপ্ন।এতক্ষন যেন নীলের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে হয়ত দম আঁটকে মরে যেত।মনে মনে স্বপ্নকে ভয়ংকর একটা গালি দেয়।

কাউছার স্বর্ণা
কেমন হয়েছে জানাবেন।গঠনমূলক মন্তব্য করবেন আশা করি

স্বপ্নীল ৩৫

0

স্বপ্নীল ৩৫
পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া চাবুক অনেক বছর ধরে মির্জা সোলোমান ব্যবহার করে না।আজ সেই চাবুক সে নিজের কাছে লাগাচ্ছে।এই চাবুক দিয়ে সমুদ্র পিঠ রক্তাক্ত করে দিচ্ছে মির্জা সোলোমান।সবাই মুখে কাপড় দিয়ে কান্না করছে।কেউ সাহস পাচ্ছে না এগুতে।বউয়ের জানে তার শ্বশুর রেগে গেলে কি ভয়ংকর হতে পারে তেমনি ছেলে আর ভালো করে জানে তাদের বাবা কেমন? তাই কেউ সাহস পাচ্ছে না।সমুদ্র কিছু বলছে না? মুখ বুঝে আঘাত সহ্য করছে। রোদ আর সমুদ্র কষ্ট দেখতে পাচ্ছে না।সে কান্না করতে করতে দাদুর পায়ে পড়ে,
-” দাদু প্লিজ আপনি ওকে আর মারবেন? আপনার দোহাই লাগে।আপনি থামুন প্লিজ।”
নীল তার এই জীবনে দাদুকে কখন এভাবে রেগে যেতে দেখেনি।তাই সাহস পায়নি এগিয়ে যেতে।রোদ দেখে সে দাদুর পায়ে পড়ে বলল,
-” দাদু ভাইয়াকে ছেড়ে দাও!”
প্রাচ্য ভাইয়ের কষ্ট দেখে নিজে কান্না করতে করতে দুনয়ন ভাসিয়ে দেয়।
-” দাদু আমার ভাইটা খুব কষ্ট পাচ্ছে।প্লিজ দাদু আমার ভাইটাকে এভাবে মেরে না। ”
সোলামান মির্জা হাতের চাবুক ফেলে দেয়।হাঁফাতে থাকে।সবার উদ্দেশ্য করে সে বলল,
-” কালকে এবাড়িতে দুটো বিয়ে হবে।আর শুনো মেয়ে।তোমার মা -বাবা খবর দাও এক্ষুনি যাতে কালকে সকালে তারা চলে আসে।বড় খোকা আমায় একটু ঘরে দিয়ে আয়! ”
নীলের আব্বু তাকে নিয়ে যায়।।শায়লা বেগম প্রথমে সমুদ্রকে ভুল বুঝলেও এখন ছেলের এই অবস্থা দেখে সহ্য করতে পাচ্ছে না।শাড়ির আঁচল দিয়ে ছেলের রক্ত পিঠ মুচে দিতে থাকে।সমুদ্র মা কে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।যাওয়ার সময় রোদের দিকে রাগী চোখে তাকায়।তার বিনিময় রোদের চোখের চাহনি ছিল অসহায়।সবাই রোদের দিকে রাখি চক্ষু তাকিয়ে সমুদ্র পিছন পিছন চলে যায়।রোদ ভাবতে থাকে একটু আগের ঘটনা।
সমুদ্র কোল্ড ড্রিংক সে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। এটা খাওয়ার পর সমুদ্র ঘুমের ঝোঁক বেড়ে যায়।তখনই রোদ তাকে ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়।নিজের শাড়ির কুচি খুলে ফেলে।ব্লাউজের হাতা ছিঁড়ে ফেলে।নীল যেভাবে বলছে যে ভাবে করছে সে
সমুদ্রেকে নিজের সামনে দাঁড়ায় করায়।সমুদ্র ডুলমুল হয়ে রোদের গায়ে পড়ে যায়।তখনই সে সুযোগে চিৎকার করে
-” সমুদ্র ছাড়ো কি করছো?
এটা শুনে সমুদ্র নিজেকে একটু ঠিক করে দাঁড়িয়ে বলল,
-” চিৎকার করছিস কেন?”
রোদ এবার আরো জোরে চিৎকার করে।তখনই নীল তার দাদুকে নিয়ে উপরে আসে কিছু একটা বাহানা দিয়ে।এই চিৎকার শুনে দাদু বলল,
-” কে চিৎকার করছে?
-” জানি না দাদু! ওই রুম থেকে আসছে।চলো যেয়ে দেখি।”
কারো আসার শব্দ শুনে আবার রোদ অভিনয় করতে থাকে।সমুদ্রকে সে জড়িয়ে ধরে।ঘুমের ওষুধের ডোজ বেশি ছিল বলে সে বুঝতে পাচ্ছে না কি করছে রোদ।দাদুকে দেখে সমুদ্রকে সরিয়ে দিতে বলল,
-” আমার এত বড় সর্বনাশ তুমি করো না সমুদ্র ছাড়ো!”
আবার সে ঢোলে পড়ে রোদের দিকে।তখনই সেই রুমের লাইট জ্বলে উঠে।মির্জা সোলোমান তাদের এই অবস্থা দেখে রাগ ঊঠে যায়।সমুদ্র কাঁধে হাত দিয়ে তার দিকে ঘুরায়।
-” দাদু……..
তার আগে তার দুইগালে দুইটা থাপ্পড় মারে।সমুদ্র হতভাগ।
-” আমার বংশের ছেলে হয়ে এসব করিস তুই।বংশের নাম ডুবিয়ে ফেলেছিস।
ঘুমঘুম চোখে সমুদ্র কিছুই বুঝতে পাচ্ছে না সে।রোদ দাদুকে দেখে কান্না করতে থাকে। রোদ কান্না করতে দেখে।তার দিকে ভালো ভালো করে তাকিয়ে দেখে রোদের অবস্থা বিবস্ত্র। কি ভাবে হয়েছে রোদের এই অবস্থা?চোখ দুটো কচলাতে থাকে।নীল বলল,
-” রোদ আপু তোমার এই অবস্থা কে করেছে?
রোদ কান্না করতে থাকে।হেচকি তুলে ফেলে সে বলল,
-” সমুদ্র।”
সমুদ্র মাথায় যেন সপ্তম আসমান ভেঙ্গে পড়েছে।রোদের এই কথা শুনে তার ঘুমের ডোশ কেটে গেছে।চিল্লিয়ে বলল,
-” মিথ্যে বলছিস কেন তুই রোদ।আমি কখন তোর গায়ে হাত দিয়েছি।”
রোদ কান্না করতে থাকে।মির্জা সোলোমান মেয়েটার এই অবস্থা।আর সমুদ্রকে এভাবে দেখে তার যা বুঝার বুঝে গেছে।সমুদ্র রোদকে চুপ থাকতে দেখে মাথায় তার রাগ উঠে যায়।চড় মারতে হাত উঠায়।তখনই মির্জা সোলামান হাত ধরে ফেলে।
-” এত বড় সাহস তোর।তুই মির্জা বাড়িতে দাঁড়িয়ে মেয়েদের সম্মান নষ্ট করেছিস।আজ তোর পিঠের ছাল তুলে খেলব।”
এটা বলে সমুদ্রে নিচে নিয়ে আসে।সমুদ্র বুঝাতে যাচ্ছে সে এমন কিছু করেনি।কিন্তু দাদু মানতে নারাজ।তার নাতি ধরা পড়ে এখন মিথ্যে বলছে।। চিল্লাচিল্লি শুনে সবাই ছাঁদ থেকে নেমে আসে। খান্দানি চাবুক এনে মারতে থাকে।
-” দাদু বিশ্বাস কর! রোদ যা বলছে আমি এমন কিছু করিনি।”
শায়লা এসে বলল,
-” বাবা আপনি সমুদ্রকে মারছেন কেন?
-” তোমার ছেলে ওই মেয়েটাকে একা পেয়ে তার সম্মান কেড়ে নিতে চেয়েছে তার শাস্তি দিচ্ছি আমি।আর সবাই এখন থেকে যাও।ওকে আজকে বুঝিয়ে দেব।মির্জা বাড়ির ছেলে হয়ে কেন মেয়েদের অসম্মান করেছে।আজ তাকে বুঝিয়ে দেব।”
বাবাকে রাগতে দেখে কেউ সাহস যোগাচ্ছে না আগাতে।স্বপ্ন, তৃণ ধূসর ছুটে আসে।কিন্তু কেউ কথা বলতে পারেনি।তারা দমে যায় সোলোমান মির্জা রাগে কাছে।

বন্ধুরা যেয়ে দেখে সমুদ্র দরজা আটকিয়ে ফেলেছে তাদের যাওয়ার আগে।তাই কেউ তাকে ডেকে ডিস্টার্ব করেনি।সবাই চলে যায়।সবাই খুব ভালো করে জানে সমুদ্র এটা কিছুই করবে না। আর রোদ,,, তাহলে রোদ কি মিথ্যে বলেছে।কিন্তু রোদ তো এমন। না।তাহলে মিথ্যে বলার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।সবাই রোদ কে খুজতে এসে দেখে রুমের দরজা বন্ধ।বন্ধুদের উদ্দেশ্যই সে বলল,
-” এখন কেউ তোরা রোদকে কিছু জিজ্ঞেস করিছিস না।পরিস্থিতি শান্ত হোক তার পর না হয়ে জিজ্ঞেস করব কি হয়েছে।চল সবাই! ”
রোদ বালিশ জড়িয়ে কান্না করতে থাকে। সে এখন হায়! হায়! করছে! এখন তার সামনে চাবুক মারা দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠতে দুই হাত দিয়ে বালিশ খামচে ধরে কান্না করতে থাকে।এরকম পরিস্থিতি হবে জানলে সে এমন কাজ করত না।সে ভেবেছে এরকম করলে হয়তো দুই চারটা চড় থাপ্পড় মারবে। সমুদ্র এই অন্যায় করার জন্য বলবে তাকে বিয়ে করার জন্য। বিয়ের প্রসঙ্গে ত উঠেছে। কিন্তু সমুদ্র কি বিয়ে করবে? তার নামে মিথ্যে বদনাম দেওয়ার পরে ও।সমুদ্র কি মেনে নেবে তাকে?হাজার টা প্রশ্ন মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে রোদের।

-” আমাদের বিয়ের কথা কাউকে এখন বলার দরকার নেই।এবং কি নীলকে না। ”
বাইক থামিয়ে বলল তামিম।সোহা বাইক থেকে নেমে যায়।কোনো কথা না বলে হাঁটা ধরে বাড়ির ভিতরে।সে ভাবতে পারেনি তার সাথে আজকে এমন কিছু ঘটবে।কিছুক্ষণ আগে তামিম তাকে জেলা সদরের কাজি অফিসে নিয়ে যায়।সেখানে তাদের বিয়ে হয়।এখন তার কাছে সব দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখবে এটা সত্যি দুঃস্বপ্ন। কিন্তু না এটা স্বপ্ন নয়।এটাই বাস্তব।এখন সে তামিমের সহধর্মিণী। অবিবাহিত থেকে বিবাহিত খাতায় নাম উঠে গেছে।কেন করেছে তামিম এসব?সবাই জানলে খুব কষ্ট পাবে!আর মা….মা কিভাবে রিয়েক্ট করবে।খুব কষ্ট পাবে মা।বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে আমাকে আগলে রেখে বেঁচে আছে।এটা শুনলে খুব কষ্ট পাবে।কিন্তু আমি এটা চাইনি।আর সবাই….মেনে নেবে তো সবাই আমাদের সম্পর্ক।এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় ভিতরে পা দিবে তখনই তামিম হাত ধরে ফেলে।
-” ধূসর আশে পাশে তোকে যেন না দেখি।দূরত্ব বজায় থাকবি! ”
-“…….
-” যা বলছি কানে ঢুকিয়ে নেয়।দ্বিতীয় বার যেন এর চেয়ে খারাপ কিছু করতে না হয়।”
সোহা চোখ তুলে তাকায় তামিমের দিকে।চোখে পানি টলমল করতে থাকে।তামিম সেগুলো তোয়াক্কা না করে সোহা রেখে ঘরে ঢুকে যায়।
-” মা বাড়ির পরিবেশ এত ঠান্ডা কেন? কিছু কি হয়েছে? ”
সোহাগী বেগম ছেলেদের দিকে ছলছল চোখে তাকায়।তামিম মায়ের কাছে এসে বলল,
-” তোমার চোখে পানি কেন? কি হয়েছে।”
সোহাগী ছেলেকে ধরে কান্না করে দেয়।তামিম বুঝতে পাচ্ছে না কি হয়েছে।হলুদের অনুষ্ঠান এত তাড়াতাড়ি শেষ কেন? মা-ই বা এভাবে কান্না করছে কেন? কোনো জামেলা হয়নি তো।সোহাগী চোখের পানি মুচে তামিমকে একটু আগে ঘটনা খুলে বলে।এসব শুনে মাথা গরম হয়ে যায়।
-“দাদু কি সমুদ্র কে চেনে না।দাদু কি করে ওই মেয়েটার কথা বিশ্বাস করল।আর তোমরা কি সমুদ্রকে চিনো না।তাহলে কিভাবে সমুদ্র উপরে দাদু করার অন্যায় মেনে নিলে।”
-” বিয়ের করে আসার পর থেকে কখন তোর দাদুকে এভাবে রেগে যেতে দেখিনি আমি।কিন্তু আজ দেখলাম।ভয়ে কেউ আগাতে পারেনি। ”
-” আচ্ছা তুমি এখন কান্না থামাও।আমি যেয়ে দেখি আসি সমুদ্রকে!”

স্বপ্নর কিছু ভালো লাগছে না।কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করছে।কিছুক্ষণ একা থাকা দরকার। তাই সে বাগানে দোলনায় বসে পড়ে।আকাশের অর্ধপূর্ণ চাঁদের দিকে তাকায়।চাদের পাশে কিছু কালো মেঘ ঘুরঘুর করছে।কিছু ক্ষন পর কালো মেঘ এসে চাঁদটাকে লুকিয়ে ফেলে। স্বপ্ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কিছুত্ব ভুলতে পাচ্ছে না কিছুক্ষণ আগের ঘটনা।আর দাদু বলে যাওয়া কথা।কালকে সমুদ্র আর রোদের বিয়ে।সমুদ্র কি সহজ ভাবে মেনে নিতে পারবে। প্যান্টের পকেটের থেকে মাউথ অর্গান বের করে বাজাতে জন্য।যখনই মন খারাপ থাকে তখনই এই মাউথ অর্গান তার মন খারাপের সঙ্গি হয়।মাউথ অর্গানের সুর তুলে সে।
হ্যাঁ,,,, এই তো সেই মাউথ অর্গানের সুর।এই সুর আমি সাজেকে শুনেছি।কিন্তু এই সুর এখানে কি ভাবে হলো।নাকি আমার কল্পনা।না,,, না সুরটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে
এটা কল্পনা হতেই পারে না।সত্যি কি সে এসেছে।নীলের মুখে হাসি ফুটে উঠে।সুরের উৎস খুঁজতে খুজতে পৌঁছে যায় বাগানের সামনে নীল।সে দেখতে পাচ্ছে দোলনা বসে কেউ বাজাচ্ছে মাউথ অর্গান।শাড়ি উপরে তুলে দৌড়তে থাকে দোলনা কাছে আসার জন্য।স্বপ্ন নীলকে এখানে আসতে দেখে সরে যায়।নীল দোলনার কাছে এসে দেখে কেউ নেই।কিন্তু এই মাত্র আমি কাউকে দেখেছি এখানে।এখন কোথায় গেলো?এখানে বসে তো বাজাচ্ছিলে।এখন কোথায় গেলো?পাগলের মত খুজতে থাকে।দোলনা ধপাস করে বসে কান্না করতে থাকে।কেন এসে চলে গেলেন? একটা বার ও দেখা করে চলে যেতেন পারতেন।কেন চলে গেছেন? স্বপ্ন গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে নীলের কার্যকম দেখছিল আর মুচকি মুচকি হাসছিল।এত পাগল আমার জন্য। এত ভালোবাসো আমায়।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তোমার কাছে ধরা দিব না আমি।

শায়লা তুলের মধ্যে স্যাভলন লাগিয়ে সমুদ্র ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিতে থাকে।ক্ষত স্থানে স্যাভলন লাগাতে জ্বলে উঠে।আহ করে উঠে।
-” একটু সহ্য কর! এগুলো লাগালে ক্ষত স্থান সেরে যাবে।”
সমুদ্র কিছু বলল না।শায়লা পুনারায় আবার লাগাতে থাকে।তামিম তখনই ঘরে ঢুকে।
-” দাদু কি মানুষ? এভাবে কেউ মারে!
সমুদ্র পাশে বসে তামিম বলল।শায়লা ছলছল চোখে তাকায়।তামিম তার চোখের জল মুচে দিয়ে বলল,
-” রোদ মেয়েটাকে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত।তোর নামে মিথ্যে বদনাম দেওয়ার পরিণাম বুঝিয়ে দিলে ভালো হবে। ”
-” কোনো দরকার নাই।হেতে বিপরীত হবে।তোর দাদু বলল কালকে নাকি সমুদ্র আর রোদের বিয়ে।
-” বিয়ে মাই ফুট।এই সমুদ্র তুই কিছুতে এই বিয়ে করবি না।”
-” তোদের দাদু একবার যখন বলে দিয়েছে বিয়ে হবে তার মানেহবে।তাই মেনে নেওয়াই ভালো।আজ পর্যন্ত উনার কথার উপর কোনো কথা কেউ এই বাড়ির লোকে বলেনি।
-” কিন্তু মেজ মা!
সুমদ্র বলল,
-” কোনো কিন্তু নয় তামিম।আমি এই বিয়ে করব। দাদুকে জানিয়ে দিও মা।”
রোদ তুই সাপের লেজে পা দিয়েছিস ছোবল তোকে খেতেই হবে।আমি সমুদ্র বলছি,আমার নামের মিথ্যে বদনাম দিয়ে আমার সম্মান ধুলে মিশিয়ে দিলি পরিবারে কাছে।তার শাস্তি তোকে পেতে হবে।আমাকে বিয়ে করার জন্য তুই এমন করেছিস তাই না।একদিন তুই বলবি আমাকে বিয়ে করাই তোর সব চেয়ে ভুল হয়েছে।কালকের পর তোর জীবনে নরকে পরিনাম হবে

কাউছার স্বর্ণা
কেমন হচ্ছে জানাতে কিন্তু ভুলবেন না।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন ধন্যবাদ)

স্বপ্নীল ৩৪

0

স্বপ্নীল
৩৪
আজ মির্জা বাড়ি নানার রকমের আলো বাতি জ্বলছে।বাতির আলো ঝিকমিক করছে বাড়ির চারপাশ।মির্জা বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা।নীলের বিয়ে কি আয়োজন করেছে তার দ্বিগুণ আয়োজন করেছে সোলোমান মির্জা প্রাচ্য’র বিয়েতে।কোনো কিছুতে কমতি রাখেনি। তিনি যে তার নাতনীদের খুব ভালোবাসে।

লাল পাড়ের একটা কাঁচা হলুদ শাড়ি পড়েছে তার সাথে লাল হলুদ চুড়ি মিক্সড করে।
সিঁথি এক পাশে করে কিছু চুল পিঠ অব্ধি কিছু ডান পাশে সামনে এনেছে।চোখের উপরে আইলাইনার টেনে দেয়।নীল কাজল পড়া পছন্দ করে না তারপর হালকা ভাবে চোখের নিচে কাজলের রেখা টেনে দেয়।আয়নায় ভালো করে তাকিয়ে দেখে কাজলের রেখা বেশি বুঝা যাচ্ছে কি না!বুঝা যাচ্ছে না দেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে লাল লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁট লাগাতে থাকে। উপর ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ভালো করে লিপস্টিক মিক্স করে।আয়নার দাঁড়িয়ে এই দিক ওইদিক নড়ে আয়নার ভিতরে নিজে দেখে সব ঠিক আছে কি না ।তার চুল গুলোতে আরো একবার হাত ভুলায় সে।তারপর রুম থেকে বের হওয়ার সময় স্বপ্ন সাথে দেখা হয়।কিছুক্ষণ তাদের চোখাচোখি প্রেম হয়।নীলের এই ব্রাউন কালার চোখের নেশায় সে পড়ে যায়।দিন দিন এই নেশা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।বুকের ভিতরে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে।কবে যে সেসে নীল নিজের করতে পারবে।নীল আঁড়চোখে স্বপ্ন একবার পরখ করে দেখে নেয়।নীল পাঞ্জাবী আর সাদা পায়জামা দারুণ লাগছে।হাতে কালো ব্যান্ডের ঘড়ি।এই ঘড়ি হাতের সৌন্দর্য যেন বাড়িয়ে তুলেছে।কপালে সিল্কি চুলগুলো লেপ্টে আছে।ইশ! এই ছেলেটা যদি তার সুরওয়ালা হতো।তবে খারাপ হতো না।ছেলেটা অত খারাপ না।শুধু শুধু সে নিজে এই ছেলেটা পিছনে লাগতে গেছে।কেন যে সে এত হ্যান্ডসাম ছেলে কে গোবরে চকলেট খাওয়াতে গেলো।গোবরের চকলেট হি হি হি! নীল তুই পারিস ও বটে । কি আজ গুবি কথা বার্তা বলছ তুই।তখনই স্বপ্ন কিছু না বলে নীলের পাশ কেটে চলে যায়। নীল মুখটা হা করে তাকিয়ে থাকে।এই ছেলে তাকে এ্যাটিটিড দেখিয়ে চলে গেলো।কত বড় সাহস তার? আমাকে? দেখে নেব তোকে হুম!

গায়ে হলুদের কনে সমুদ্র দেওয়া সেই শাড়িটা পড়েছে।হলুদ শাড়ির সাথে হলুদ- সাদার মধ্যে কাঠগোলাপের ফুলের গয়না দিয়ে প্রাচ্যকে সাজিয়ে দিয়েছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে প্রাচ্যকে। যেন কাঠগোলাপের রানি স্বয়ং এখানে বিচারণ করছে।
প্রাচ্যকে নিয়ে সবাই স্টেজে যাচ্ছে তখনই তৃণ সাথে তার দেখা হয়।প্রাচ্য তৃণর দিকে একবার তাকায়।নীল পাঞ্জাবী দারুন মানাচ্ছে। কিন্তু তৃণ তাকে দেখে ও না দেখার ভান করে মোবাইল টিপতে ব্যস্ত থাকে।প্রাচ্য জল যেন উপচে পড়বে।তখনই রোদ বলল,
-” কান্না করলে চোখের কাজল নষ্ট হয়ে যাবে!আর কান্না করলে সবাই ভাব্বে তোকে? চল! ”

প্রাচ্য যাওয়ার পর তৃণ মোবাইল থেকে নজর সরায়।প্রাচ্য দিকে তাকিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে সে।আজকে সব ছেলে রা নীল পাঞ্জাবী আর সাদা পায়জামা পরিধান করছে।প্রাচ্যকে সেই ফুলের সিংহাসন বসিয়ে রোদ কুচি ঠিক করতে করতে এ গুচ্ছিল তখনই সে সমুদ্র কে দেখে থমকে যায়। বুকের ভিতরে ঢিপ ঢিপ শব্দ করতে থাকে।কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে।কি মারাত্মক সুন্দর লাগছে।ইচ্ছা করছে ছুয়ে দিতে একটুখানি।
আজকে সে নীল জামদানী শাড়ি পড়েছে। কিন্তু তার সেই প্রিয় মানুষটা নীল পাঞ্জাবী পরিধান করেছে। না চাইতে দুজনে একই রঙ্গের জামা কাপড় পরিধান করেছে।এটা ভাবতে রোদের মন খুশির ঝিলিক দেয়।তার পাশ কেটে সমুদ্র চলে যার প্রাচ্য কাছে যায়।সমুদ্র তার দিকে একবার ফিরে তাকালো না তা দেখে তার খুবই খারাপ লাগে।সে কি দেখতে সুন্দর নয়।হ্যাঁ অবশ্যই সুন্দর! তাহলে কেন সমুদ্র চোখে পড়ে না সেই সৌন্দর্য। মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে তার সৌন্দর্য নিয়ে কেন কিছু বলে না?খুবই কান্না পাচ্ছে তার কিন্তু সে কাঁদবে না।কাঁদলে তার কাজল গেঁটে যাবে।এমনি সে কাজল লাগাতে পারে না সোহা লাগিয়ে দিয়েছে।এত সুন্দরী হয়ে যখন তার দিকে সমুদ্র ফিরে তাকালো না তখনই কাজল লেপ্টে যাওয়ার বান্দুরীকে তার চোখেই লাগবে না।আজকে তার ব্যবস্থা করমু! তারপর দেখিস!তামিম এতক্ষণ ধরে সোহার অপেক্ষা করছিল।কিন্তু সে বুঝতে যাচ্ছে না আজ কেন সোহার এত লেট! সবাই চলে এসেছে এখন তার দেখা যাচ্ছে না।সে বার বার না চাইতে ছাদের দরজার দিকে চোখ যাচ্ছে তার।কারো আসার শব্দ শুনে তামিম।একটু নড়ে চড়ে দাঁড়ায়।তখনই সোহা ছাঁদের দরজায় সামনে আসে।দুজনের চোখাচোখি হয়।সোহা চোখ নামিয়ে ফেলে।তারপর তামিমের চোখ যায় সোহার পড়ে থাকা শাড়িটার দিকে।এটা তো তার দেওয়া শাড়ি নয়।তাহলে সোহা আমার দেওয়া শাড়ি পড়েনি।তামিম এগিয়ে যেয়ে সোহার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে ছাদের এক কোণে।রাগ কন্ট্রোল করে বলল,
-” আমার দেওয়া শাড়ি পড়িস নি কেন?”
সোহা তামিম রাগ কে ডোন্ট কেয়ার করে।নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সে বলল,
-” আমি কি আপনার হুকুমের চাকর!যে যা করতে বলবেন তাই করতে হবে।এটা ভেবে থাকলে ভুলে যান।”
এটা বলে সোহা সামনে এগিয়ে যেতে ধূসরে দেখা হয়।ধূসর হেসে বলল,
-” হেই মায়াবতী। তোমাকে কিন্তু আজ দারুণ লাগছে।চোখ সরাতে পাচ্ছি না। ”
সোহা বিনিময় শুধু এসেছে।দূর থেকে তামিম এসব দেখে রাগে ফুসতে থাকে।আজ সে সোহার একটা বিহিত করে ছাড়বই। আমার সাথে কথা বলতে আসলই তার মুড খারাপ হয়।আর এই ধূসরের সাথে কিসের এত হাসাহাসি।

স্টেজে বসে প্রাচ্য এদিকে ওদিক তাকাচ্ছে তৃণকে দেখার জন্য।কিন্তু তৃণকে কিছুতে এখানে দেখা যাচ্ছে। আজকের পর থেকে সে তৃণ দেখতে পারবে না।কালকের পর সে অন্য কারো স্ত্রী হয়ে যাবে।এতটা ভেবে সে মনে মনে কান্না করতে থাকে।আজ নিজের দোষে তৃণকে হারিয়ে ফেলেছে।এত দিনে তৃণরর জন্য হৃদয়ের কৌঠোরে সব ভালোবাসা জমে রেখেছিল।কোনো দিন সেই ভালোবাসার রঙ্গে তৃণ কে রাঙ্গিয়ে দেবে।সে টা আর হলো না।

মির্জা বাড়ির সব সদস্য এসে এক এক করে স্টেজে যেয়ে প্রাচ্য গায়ে হলুদ ছোঁয়ায়।নতুন জীবনের জন্য দোয়া করে। মিষ্টিমুখ করে।প্রাচ্য দুই পাশে নীল আর সোহা উঠে।।দুজনে মিলে প্রাচ্য গালে,কপালে, হাতে হলুদ ছোঁয়ায়।সামনে রাখা মিষ্টির প্লেট কাঁটাচামচ করে একটা মিষ্টি নিয়ে প্রাচ্য মুখের সামনে ধরে।প্রাচ্য হা করে যখন মুখে নেবে তখনই নীল তার হাত সরিয়ে ফেলে নিজের মুখে মিষ্টি পুরে দেয়।তখনই হাসির হট্রগোল শোনা যায়। হি হি হি করে হেসে উঠে।প্রাচ্য কিছুটা লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসে।স্বপ্ন হলুদের বাটি থেকে কিছু টা হলুদ হাতে নিয়ে নেয়।নীল স্ট্রেজ থেকে নামার সময় স্বপ্ন তার হাত ধরে নিয়ে যায়।নীল হাত ছাড়াতে চাইলে স্বপ্ন আরো জোড়ে চেপে ধরে।ছাঁদের এক কোণে নিয়ে রেলিঙ সাথে মিশে দাঁড় করায়।
-” একটুর জন্য হাত ছিঁড়ে যেত আমার!”
-” সমস্যা নেই।তোমার এক হাত কেন? দুই হাত না থাকলে আমার বউ করে নিব।”
-” ও হ্যালো! জেগে জেগে নি স্বপ্ন দেখেন!
-” নামটাই আমার স্বপ্ন! স্বপ্ন দেখা আমারই সাজে।”
এবার নীল রাগি সুরে বলল,
-” আপনাকে আমি বলেছি না, আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি তারপর কেন পিছু ছাড়ছেন না।”
-” আমি তোমাকে জোর করিনি আমায় ভালোবাসতে।তুমি যাকে খুশি তাকে ভালো বাসতে পারো!কিন্তু বঊ তোমাকে আমার হতে হবে।”
-” ধ্যাত! পাগলে সাথে কথা বলে লাভ নেই! ”
এটা বলে চলে যেতে নিলে স্বপ্ন তার হাত ধরে আঁটকায়।তার কাছে নিয়ে এসে হাতের হলুদ গুলো নীলের গালে লাগিয়ে দেয়।
-” তোমার প্রেমে আমি শতবার পাগল হতে রাজি।”
নীল নিজের গালে হাত দিয়ে বলল,
-” হলুদ লাগানে কেন?
-” আমার ভালোবাসার হলুদ রঙ্গে তোমায় রাঙ্গিয়ে দিলাম।যাতে তোমার ওই সুরওয়ালা আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে না পারে।”
এটা বলে স্বপ্ন সে জায়গা থেকে পদস্থান করে। নীল রাগ দেখিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে গালে লেগে থাকা হলুদ মুচে ফেলে।
তামিম ধূসর, রোদ স্বপ্ন, এক কে সবাই প্রাচ্য গায়ে হলুদ ছোঁয়ায়।
এবার তৃণ পালায়।সেই স্টেজে উঠে হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে আলত করে প্রাচ্য নাকে, হাতে হলুদ ছোঁয়ায়।প্রাচ্য তৃণ দেখতে থাকে।সত্যি কি তৃণ কষ্ট হচ্ছে না।নিজের ভালোবাসার মানুষ নিজের বিয়ে তে গায়ে হ্লুদ ছোঁয়ায়।এর চেয়ে কষ্টের কি আছে? মরে যাওয়া ভালো।চোখ বন্ধ করে শেষবারে মত তৃণ হাতের ছোঁয়া অনুভব করে।তৃণ ফিসফিস করে বলল,
-“আজকে শিহাবে তোকে দেখলে চোখ সরাতে পারত না।”
প্রাচ্য চোখ খুলে তৃণ দিকে তাকায়।প্রাচ্য চোখে পানি টলমল করতে থাকে।গাল গড়িয়ে চোখের পানি বেয়ে পড়ে।তৃণ বলল,
-” দেখ সমুদ্র!তোর বোন কান্না করছে!শ্বশুর বাড়ির যাওয়ার জন্য!
সবাই তৃণ কথায় হেসে দেয়। তৃণ প্রাচ্য র মাথা হাত দিয়ে বলল,
-“ওলে বাবু কাঁদে না!কালকে শ্বশুর বাড়িতে দিয়ে আসব।”
প্রাচ্য দু হাত দিয়ে তৃণ কে মারতে থাকে।
-” শয়তান ছ্যামড়া!সব কিছু নিয়ে মজা করিস!
নীল এসে প্রাচ্য দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-” শিহাব ভাইয়া ফোন করেছে! তোমার সাথে কথা বলবে।”
প্রাচ্য তৃণ দিকে একবার তাকিয়ে মোবাইল নিতে যাবে তখনই তৃণ মোবাইল নিয়ে নেয়।ভিডিও কলের ওপাশে শিহাব থাকে।
-” এইটা আমাদের দুলাভাই! কেমন আছেন? ”
-” ভালো তুমি কেমন আছো। ”
-” আমি ভালো আছি! কিন্তু আপনার হবু বউ ভালো নেই! ”
-” কেন? কি হয়েছে প্রাচ্যর! ”
-” আপনার বিরহে কাতর!আর যে অপেক্ষা করতে পাচ্ছে না সে।”
-” হি হি হি! ”
প্রাচ্য তৃণর হাত থেকে মোবাইল কেঁড়ে নেয়।তৃণকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” যার সাথে বিবাহ! তার বিরহে কাতর না হয়ে কি তোর বিরহে কাতর হবো।যত্তসব! ”
তৃণ আর কিছু না বলে নেমে যায়।সবাই মেহমানদের অপ্যায়ণ করতে চলে যায়।মেহেদীর ডিজাইনের লোক আসে।তারা সবার হাতে মেহেদী ডিজাইন করতে থাকে।আর প্রাচ্যর এক হাতে ডিজাইন করছে অন্য হাতে ভিডিও কলে শিহাবের সাথে কথা বলছে।তৃণ এক কোণে দাঁড়িয়ে প্রাচ্য দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানতে থাকে।মেহেদী ডিজাইন লোক বলল,
-” আপু আপনার বরের নামের প্রথম অক্ষর বলুন! ”
-” হুম!”
তখনই শিহাব ফোনের ওপাশ থেকে বলল,
-” আমার সাথে যে কথা বলেছে সে কি তোমার ফ্রেন্ড!”
-” হুম! ”
-” নাম কি তার? ”
মেহেদী ডিজাইন লোক বলল,
-” আপু নামটা বলুন!”
প্রাচ্য শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” তৃণ! ”
মেহেদির ডিজাইন মেয়েটা মনে করেছে তাকে নামটা বলেছে সে।তাই সে প্রাচ্য’র হাতে T লেখে দেয়।নীল নিজের হাতের মেহেদি লাগানোর শেষ হয়ে যায়।তাই সে প্রাচ্য’র হাতে মেহেদির দেখতে যেয়ে টি দেখে আঁতকে উঠে।
-” এটা আপনি কি করছে?
নীলের কথা শুনে প্রাচ্য তার হাতের দিকে তাকায়।কি সুন্দর করে হাতে মধ্যে টি দিয়ে ডিজাইন করেছে। কিন্তু টি কেন? শিহাবের নামে প্রথম অক্ষর তো s।
নীল বলল,
-” আপু বরের নাম শিহাব। এস হবে আপনি টি দিলেন কেন?
-” আমাকে উনি বলছে তৃণ লেখতে! ”
-” আরে আমি আপনাকে বলি নি শিহাবকে বলছি।”
-” আই আ’ম সরি ম্যাম।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি এক্ষুনি মুচে দিচ্ছি।”
প্রাচ্য তার কথায় সায় জানায়।টিস্যু দিয়ে টি মুচে ফেলে।কিন্তু এতক্ষণ টি তাতে রঙ ধরে গেছে।টি লাল টুকটুক হয়ে গেছে।তা দেখে মেয়েটা বলে,
-” আই আ’ম সরি ম্যাডাম!”
-” সমস্যা নেই।তুমি এটা বাদ দিয়ে ডিজাইন আঁকো।”

-” তোমার কাজল কালো আঁখি প্রেমে পড়ে গেছি মায়াবতী! ”
সোহা মুচকি হেসে বলল,
-” থ্যাংকস! ”
-” হুম।
ছাঁদে দাঁড়িয়ে সোহা আর ধূসর অনেকক্ষণ যাবত কথা বলতে থাকে।ধূসর কথা বলার ফাঁকে নিজের অজান্তে সোহার হাত ধরে ফেলে।তখনই তামিম এসে ধূসর কে বলল,
-” তোমাকে সমুদ্র ডাকে?
-” কেন? ”
-” সেটা জানি না।তোমাকে যেতে বলেছে।”
-” সমুদ্র এখন কোথায়?
-” নিচে! ”
ধূসর সোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।তামিম সোহার কাছে এসে বলল,
-” অনেকবার সাবধান করেছি শুনিস নি আমার কথা।আজকে তোকে মজা দেখাবো তামিম কথা না শুনার পরিণাম কি? চল! ”
সোহার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসে।সোহা নিজের হাত তামিমের হাত ছাড়ার জন্য জোরে চিমটি কাটে।তামিম রাগী চোখে তাকিয়ে সোহার হাত ছেড়ে দিয়ে তাকে কাঁধে তুলে নেয়।সোহা দুহাত দিয়ে তামিমের পিঠে মারতে থাকে।
-” আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়েন বলছি না হলে ভালো হবে না।”
-” কাজি অফিসে নিয়ে যাচ্ছি তোমায়। ”

-” কাজি অফিসে আমরা যাবো কেন?

-“বিয়ে করতে!আজ তোমার আর আমার বিয়ে হবে! ”
#চলবে
#কাউছার স্বর্ণা

স্বপ্নীল । ৩৩

0

স্বপ্নীল
। ৩৩
ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে রাত বারোটা বেঝে গেছে।নীল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নেয়।সেই আগের মত পলিথিন হাতে বেঁধে নেয়।বিছুটি পাতা হাতে নিয়ে রওনা দেয় স্বপ্ন রুমে দিকে।রুমের দরজার সামনে এসে দেখে দরজা আটকানো। তাহলে সে কি ভাবে রুমে ঢুকবে।রুমে ঢুকতে না পারলে তার সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে।না না কিছুতে প্ল্যান ভেস্তে দেওয়া যাবে না।এই স্বপ্নের আজ একটা বিহিত করেই ছাড়ব।আমায় ঝাল সিঙ্গারা খাওয়ানো।নীলাদ্রী নীলের সাথে পাঙ্গা নেওয়ার মজা দেখামু শালা তোকে।আমার সাথে লাগতে এসেছিস। না নীল এসব ভাবার সময় পাবি অনেক।এখন আগে রুমে ঢুকার ব্যবস্থা কর।রুমের দরজা দুইহাত দিয়ে ঠেলতে যাবে তার আগে দরজা খুলে যায়।তা দেখে নীলের মনে খুশির ঝিলিক দেখা দেয়। বাহ! মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।সে আমার জন্য দরজা খুলে রেখেছে।আমাকে আর অযথা কষ্ট করতে হবে না।আমার শক্তি ও অপচয় করতে হবে না।রুমে ঢুকে পা টিপে টিপে, যাতে স্বপ্ন টের না পায়। ল্যাম্পের আলোয় স্বপ্ন মুখটা দেখতে পায়।স্বপ্ন পাশে গিয়ে বসে।কিছুক্ষণ স্বপ্ন মুখের দিকে চেয়ে থাকে।এই মুখটা যেন মায়ায় ভরপুর। কি সুন্দর করে বালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।যেন বালিশটা তার বঊ।বঊ কে বুকের ভিতরে আবেশে জড়িয়ে ধরে সুখে ঘুম যাচ্ছে। কিন্তু এই নীল থাকতে তোকে কি ভাবে সুখে ঘুম যেতে দিয়।তোর এই ঘুমের তেরোটা বাজাবো আমি।আস্তে করে স্বপ্ন হাত থেকে বালিশ সরিয়ে ফেলে।তাতে স্বপ্ন একটু নড়ে উঠে। নীল খানিক ভয় পেয়ে যায়।নিজের কাঁপা হাতটা স্বপ্ন’র বুকের উপরে রাখে।স্বপ্ন’র শার্টের বোতাম খুলতে থাকে।আবার স্বপ্ন কিছু নড়াচড়া করে তা দেখে নীল হাত সরিয়ে ফেলে।নাড়াচাড়া বন্ধ হলে আবার হাত দেয় শার্টের বোতাম খোলার জন্য। একসময় সে সব গুলো বোতাম খুলে ফেলে। ল্যাম্প আলোয় স্বপ্ন’র লোমশ বুকটা ভেসে উঠে। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। নীল এই প্রথম এরকম লোমশ বুক কারো দেখে।এত সুন্দর কি করে হয়? কেন বা এই ছেলে হতে গেলো।অন্য কারো হলে এতক্ষণ হাত ছুয়ে দিত।কিন্ত এই ছেলে তার শত্রু। শত্রু সব কিছুই শত্রু। এই ছেলে এসব দিকে তাকাবে না সে।
না চাইতে স্বপ্ন লোমশ বুকের দিকে নীলের চোখ যায়। কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল সে জানে না।স্বপ্ন নাড়াচাড়া করতে তার ধ্যান ভাঙে।নিজের চোখের নজর স্বপ্ন দিকে যায় কেন? তাই জন্য চোখের নজর কে মনে মনে সাংঘাতিক একটা গালি দেয়।টেবিল উপর থেকে পাতা গুলো এনে স্বপ্ন খালি গায়ে লাগিয়ে দেয়।তখনই স্বপ্ন চোখ খুলে তাকায়।নীল তাড়াহুড়া করে উঠতে গেলে স্বপ্ন তার হাত ধরিয়ে ফেলে ডান হাতে।আর বাম হাত দিয়ে গা ছুলকাতে লাগে।স্বপ্ন বলল,
-” কি লাগালে আমার গায়ে তুমি।শরীর যে চুলকাচ্ছে।
নীম তোতলাতে তোতলাতে বলল,
– ” কিছু না!
স্বপ্ন নীলের হাত ধরে টান মেরে তার উপরে ফেলে।তারপর সুযোগ বুঝে বিছানার সাথে চেপে ধরে।দুজনার মধ্যে হাতড়াহাতড়ি চলতে থাকে।এই হাতড়াহাতড়ি মধ্যে বিছুটি পাতা গুলো নীলের গালে, গলায়, লেগে যায়।সেখানে চুলকাতে থাকে কিন্তু নিজের হাত দুটো স্বপ্ন চেপে ধরেছে।স্বপ্ন দেখতে পায় নীলের হাত পলিথিন বাঁধা।তা দেখে ভ্রু কচকে তাকায় সে নীলের দিকে।
-” কি করতে চাইছো তুমি!”
এটা বলে ডান হাত দিয়ে নীলের হাতের পলিথিন খুলে ফেলে।হাতের পাশে দেখে কিছু পাতা।তাই সে নীলের হাত ছেড়ে দিয়ে পাতা গুলো ধরতে নিলে নীল তার আগে হাত বাড়িয়ে ধরে নেয়।খালি হাতে ধরেছে বলে হাত চুলকাতে লাগে।স্বপ্ন বাম হাত দিয়ে নিজের শরীর চুলকাতে লাগে।তার চেয়ে বেশি নীলের করুন অবস্থা।গায়ের ওড়না ফেলে সে দুইহাত দিয়ে ঘাড় গলা,গাল হাত চুলকাতে লাগে। নীলকে এমন করতে দেখে স্বপ্ন বলল,
-” তুমি ঠিক আছো নীল।”
নীল কোনো জবাব দিল না সে চুলকাতে ব্যস্ত।স্বপ্ন যেয়ে লাইট অন করে।সে নিজের শরীর চুলকাতে চুলকাতে বলল,
-” হঠাৎ সারা শরীর চুলকাচ্ছে কেন বুঝতে পাচ্ছি না,,,, ”
তার চোখ যায় ফ্লোরে বিছুটি পাতার দিকে। সে আৎকে উঠে বলল,
-” বিছুটি পাতা,,,,
এটা বলে সে নীলের দিকে তাকায়।নীল পাতার গুলোর দিলে তাকিয়ে একশো একটা গালি দেয়।বদ ব্যাটাকে শায়েস্ত করতে এসে নিজের শায়েস্ত হয়ে গেছে।তার কান্না পাচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।এই চুলকানো জ্বালায় মরে যাচ্ছে।
-” তুমি বিছুটি পাতা এনেছো আমার শরীরে লাগানোর জন্য,,,,”
এটা বলে স্বপ্ন থেমে যায় নীলের অবস্থা দেখে।গাল গুলো লাল হয়ে গেছে।হাতের অবস্থা করুণ।তার সামান্য চুলকাচ্ছে।কিন্তু নীলের বেশি।সে আর একমুহুর্ত দেরী না করে নীলকে টেনে নিয়ে যায় বাথরুমে। শাওয়ার ছেড়ে দেয়।★★★
নীলের সারা গায়ে রেস বেড়িয়ে গেছে।তার এই অবস্থা দেখে দাদু ডাক্তার আনে সঙ্গে সঙ্গে।ডাক্তার এসে কিছু মেডিসিন দিয়ে যায়।।রোকেয়া আর নীলের বড় ভাই এসে তাকে বকাঝকা করে আর সবাই জিজ্ঞেস করেছে কিভাবে এরকম হয়েছে।বিছুটি পাতার কথা শুনে সবাই জিজ্ঞেস করে কিভাবে গায়ে লেগেছে।সে কিছু না বলে চুপচাপ ছিল।কিন্তু সোহার বুঝতে একটু বাকি রইল না কিভাবে নীলের এই অবস্থা হয়েছে।স্বপ্ন তেমন কিছু হয়নি।নীলের অবস্থা দেখে তার নিজের কথা ভুলে গেছে।সে যদি জানত নীলের হাতে বিচুটি পাতা ছিল কিছুতে নীলের গায়ে লাগত দিত না।তার খুবই খারাপ লাগছে।নিজের প্রিয় মানুষটার এই অবস্থা দেখে বুক ফেটে তার কান্না আসছে।বুকের ভিতরে অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে!বার বার কালকে রাতে নীলের কান্না মাখা ফেইসটা ভেসে উঠছে।

নীল বালিশ জড়িয়ে বসে আছে আর ভাবছে কালকে রাতে যার ক্ষতি সে করতে গেছে।সে তার এই অবস্থা দেখে পাগলের মত হয়ে গেছে।সবাইকে মাঝরাতে ঢেকে আনে।ডক্টর কল করে। তার এই বিবস্ত্র চেহারা এখন চোখের সামনে ভাসছে।
সোহা দেখছে নীল নিজে নিজে হেসে যাচ্ছে।নীলের পাশে বসে সে বলল,
-” এত হাসির কারণ কি? ”
নীল চোখ তুলে তাকায় সোহার দিকে।
-” কিছু না!
সোহা পানির গ্লাস আর ওষুধ নীলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-” কিছু না বললেই হলো! ”
নীল ওষুধ মুখে দিয়ে তারপর পানি মুখে দিয়ে ওষুধ খায়।তার গ্লাস সোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” সত্যি কিছু না! ”
সোহা গ্লাস টা টেবিলে রেখে আবার নীলের পাশে বসে সে বলল,
-” আমি জানি তো!কালকে স্বপ্ন ভাইয়ার ক্ষতি করতে যেয়ে নিজের ক্ষতি করে এসেছিস।একবার দেখেছিস আয়নার মধ্যে নিজেকে।হাতে, গালে, গলায় রেস বেড়ে গেছে।রাতে প্রাচ্য আপু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান আর তোর এই অবস্থা।বার বার মানা করার সত্ত্ব শুনলি না।”
নীল সোহার গাল টেনে ধরে বলল,
-” ডোন্ট ওয়ারি সোহা বেবি।এই সামান্য কিছু জন্য কি আপুর বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ মাটি হবে। হবে না।তুই জানিস নীলের এত সহজে কিছু হয় না।”

#চলবে
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।শুধরে নিব।
একটা জিনিস আমি খেয়াল করলাম।সেদিন একটু রোমান্টিক কথা থাকে পর্ব সেদিন লাইক কমেন্ট বেশি পড়ে।কিন্তু এখন আবার প্রশ্ন এটা। সেদিন কোনো রোমান্টিক কথাবার্তা থাকে না পর্বে তারা কি সেই পর্ব পড়ে না? আর যদি বা না পড়ে তাহলে পরবর্তী পর্ব পড়ে মজা পায়নি?ধরে নিলাম সেই প্রতি পর্বে পড়ে।কিন্তু দেখা যায় রোমান্টিক পর্ব লাইক বেশি হয়।আর সে গুলো এমনি পর্ব সে গুলো ত কম পড়ে।এখন কি ধরে নিব আমি পাঠকরা রোমান্টিক পর্ব হলে লাইক দেয়।আর রোমান্টিক না হলে লাইক দেয় না।কিন্তু কেন? আমাদের স্বপ্নীল এই গত দুটা পর্ব লাইক দেখে ব্যবধান বুজেছি।গল্প যখন পড়েন।তখনই যদি কমেন্ট করতে কষ্ট লাগে অন্তত একটা লাইক তো দেওয়া যায়।নাকি সেটা ও কষ্ট লাগে আপনাদের