Friday, August 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2007



স্বপ্নীল ৫৬,57

0

স্বপ্নীল
৫৬,57
-” তুমি না সুর ওয়ালাকে ভালোবাসো।তাহলে এখন বলছো কেন আমাকে ভালোবাসো?”
নীল বুঝতে পাচ্ছে স্বপ্ন এখন নাটক করছে।সে এখন স্বপ্নের সাথে তাল মিলিয়ে নাটক করে বলল,
-” আমি দুজনকেই ভালোবাসি।”
-“এ্যাঁ!
-” হ্যাঁ!”
-” হবে না।দুজন থেকে যেকোনো একজনকেই ভালোবাসতেই হবে।”
-” না! আমি দুজন কেই ভালোবাসব।”
-“আমাকে ভালোবাসতে হলে সুর ওয়ালাকে ছাড়তে হবে।”
-” কাউকে ছাড়ব না।দুজন কেই ভালোবাসব।দুজনকেই বিয়ে করব।”
-” তাহলে তুমি তোমার পথ দেখো। আমি চলি।”
স্বপ্ন চলে যেতে নিলেই।স্বপ্নের পিছনে শার্টের কলার চেপে ধরে বলল,
-” অভিনয় ভালো করতে পারেন।আমার সুর ওয়ালা যে আপনি।সেটা আমি জানি।”
মুখ ফসকে বলে ফেলে।যখন বুঝতে পারে জিহ্বা কামড় দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
-” না না।”
-” আমি তোমার নানা নই।”
নীল চোখ খুলে ফেলে।স্বপ্ন বলল,
-” প্রাচ্য নাকি রোদ! কে বলছে তোমাকে?”
নীল ছোট করে বলল,
-” প্রাচ্য আপু।”
-” এই জন্য মেয়ে মানুষকে কিছু বলতে নেই।পেটে কথা থাকে না।”
-” বেশ করেছে। বলবে না তো কি করবে।তারা আপনার মত পাষান নয়।”
-” আমি বুঝি পাষাণ! ”
নীল অভিমান করে বলল,
-” তাই!”
হাত টেনে কাছে এনে বলল,
-” এবার বলো কাকে ভালোবাসো তুমি!”
-” সুর ওয়ালার সুরে মোহ পড়েছি। সে মনো মুগ্ধকর মোহ।যেটা ছিল ভালোলাগা।সেই ভালোলাগাকেই ভালোবাসা বলে লাফিয়েছি আমি।পাঁচদিন আপনার সাথে থেকে চলে আসার পর।প্রতিটা মিনিট প্রতিটা সেকেন্ড বাদ নাই।যে আপনার কথা ভাবি নাই।এভাবে কখনো সুর ওয়ালার কথা ভাবি নি।আপনি যখন আমার ফোন ইগনোর করতেন।তখনই বুকের ভিতরে অসহ্য যন্ত্রনা হত।সেই যন্ত্রণা চোখের পানি হয়ে বেরিয়ে আসত।”
লাস্ট কথা গুলো বলতে বলতে নীল কেঁদে দেয়।নীলের গাল বেয়ে যাওয়া লোনা জল গুলো স্বপ্ন ঠোঁট দিয়ে চুষে খেয়ে বলল,
-” কখনো চোখের জল আসতে দিবো না।প্রমিজ।”
নীল হেসে দেয়।স্বপ্ন জড়িয়ে ধরে। নীল বলল,
-” সুর ওয়ালা।একবার বাজাবেন কি আপনার সে মনোমুগ্ধকর সুর।”
-” আজ্ঞে মহারাণী। ”
হেসে দেয় নীল।মাউথ অর্গান পকেট বের করে।বাজাতে থাকে।নীল স্বপ্নের কাঁধে মাথা রেখে স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে।এভাবে রাত থেকে সকাল গড়ায়।
এভাবে নীল আর স্বপ্নের ভালোবাসার নতুন অধ্যায় শুরু হয়।

সোহা এবাড়িতে আসার পর থেকে তামিম ছাড়া কেউ কথা বলছে না।সারাদিন ঘর বন্ধ করে থাকে।তার মাও কথা বলে না।কিভাবে আমেনা কথা বলবে।তার মেয়ে কারণে তাকে কত খারাপ কথা শুনতে হয়েছে।এবাড়ি সবাই তাকে কত ভালোবাসত।এখন সবাই তাকে ভাবে মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছে তামিমে পিছনে।
সোহা থেকে সবাই মুখ ফিরে নিলে তার এত কষ্ট হয়নি।যত কষ্ট হচ্ছে তার মা আর নীল কথা বলছে না দেখে।সে আর পাচ্ছে না।নিজের রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের রুমে যায়। আমেনা বিছানা গুচ্ছাছিল।সোহা পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,
” মা!”
আমেনা কথাটা শুনে না শোনার ভান করে কাজ করতে থাকে।সোহা এবার আমেনা সামনে যেয়ে দাঁড়ায়।সোহাকে দেখে আমেনা চলে যেতে নেয়।সোহা বাধা দেয়।মায়ের হাত ধরে বলল,
-” তুমি আমায় মারো, কাটো।আমি কিচ্ছু বলব না।তবুও তুমি আমার সাথে কথা বলো!”
আমেনা চুপ।সোহা এবার কেঁদে দেয়।মায়ের নিরবতা কিছুতেই মেনে নিতে পাচ্ছিল না।সে করতে চায়নি এভাবে বিয়ে।তামিম জোর করে তাকে বিয়ে করেছে।এখন এই কথা বলে মায়ের কাছে তামিমকে ছোট করতে চায় না।যতই জোর করে বিয়ে করুক। এখন তামিম তার স্বামী।

আমেনার পা জড়িয়ে ধরে সোহা কেঁদে দেয়।কান্না করতে করতে বলল,
-” আমায় মাফ করে দাও মা।”
আমেনা কষ্ট হচ্ছিল।খুব কষ্ট হচ্ছিল।এই মেয়েটা মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে ছিল এতদিন।না হলে কবেই মরে যেত।আমেন ঠোঁট কামড়িয়ে কান্না আটকাচ্ছে। রুমের বাইরে তামিম দাঁড়িয়ে ছিল।এবার সে সামনে এসে বলল,
-” মা! সোহা কোনো দোষ নেই।সোহা কে জোর করে আমি বিয়ে করিছি।”
মা ডাক শুনে আমেনার বুকের ভিতরে ছেৎ করে উঠে।চোখ মেলে তাকায়।আমেনা বলল,
-” একটু আগে তুমি আমায় কি বললে ডাকলে।”
সোহা তামিমের কথা শুনে উঠে দাঁড়ায়।তামিম বলল,
-” মা! ”
আমেনার চোখের পানি ছলছল করতে থাকে।
আমেনা মনে মনে আওড়াতে থাকে, ” মা! “।
তামিম আমেনা জড়িয়ে ধরে বলল,
-” আগে তোমাকে খালা বলে ডাকতাম।তখনই তোমার মেয়ের জামাই ছিলাম না।এখন তোমার একটামাত্র মেয়ের স্বামী আমি।তাই এখন খালা থেকে শ্বাশুড়ি আম্মা। শাশুড়ি কেটে মা।ভালো হয়েছে, না।”
তামিমের কথা শুনে আমেনা হেসে দেয়।তামিম বলল,
-” এবার তো সোহাকে ক্ষমা করে দাও।তুমি কথা বলছে না বলে।সারাদিন,সারা রাত শুধু কাঁদে।ওর ফ্যাঁনফ্যাঁনানি আর ভালো লাগে না।তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দাও।তাহলে যদি ওর কান্না একটু কমে।”
আমেনা সোহার দিকে তাকায়।মাথা নিচু করে আছে সোহা।সোহার মাথায় হাত দিতেই মাথা তুলে তাকায় আমেনার দিকে।’ মা’ বলে কান্না করে জড়িয়ে ধরে।মা – মেয়ের কষ্ট কান্না দেখে তামিমের চোখে কার্নিশে এক ফোঁটা নোনা জল আসে।আঙুলের ডগা দিয়ে ঝেড়ে ফেলে দেয়।এত দিন পর সোহার মুখে হাসি ফুটেছে। সোহার ঘোমড়া মুখটা দেখতে ভালো লাগছিল না, তামিমের।বারান্দা দাঁড়িয়ে নিত্যদিনের মত আজও সমুদ্র সিগারেট ফুঁকছে।রোদ যে এ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।সমুদ্র স্বাভাবিক। তার কোনো পরিবর্তন না দেখে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-” আনরোমান্টিক!”
চলে আসতে চাইলে।সমুদ্র হাত ধরে ফেলে।রোদ সেই জায়গা স্থির হয়ে যায়।সে তো এটাই চাইছিল।সমুদ্র হাত ধরে টেনে দাঁড়া করায় সামনে।রোদের পিঠ ঠেকে সমুদ্র বুকে।বুকের ভিতরে শতবার হার্টবিট করছে।সমুদ্র এক হাতে সিগারেট আরেক হাত দিয়ে রোদকে জড়িয়ে ধরেছে।রোদ বলল,
-” প্লিজ সিগারেট ফেলেন। বমি আসছে আমার।”
সমুদ্র সিগারেট ফেলে দিই।দুইহাত জড়িয়ে ধরে। রোদের চুলে নাক ডুবায়।দুজন চুপ নিরবতা পালন করছে।
সেদিন যখন সমুদ্র বাড়ি ফিরেছে।তখনই রোদ সে কি কান্না করেছে সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে।সেদিন সমুদ্র রোদের কান্না থামাতে বিরক্ত হয়ে পড়েছে।এখন আর রোদ সমুদ্র কাজে বিপরীত কোনো কাজ করে না।ভালোবাসে তো সমুদ্রকে সে।সমুদ্র তাকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু সে সমুদ্র কষ্ট দিতে গেলে।বুক কাঁপে তার।সমুদ্র কষ্টে দ্বিগুন কষ্ট সে পায়।আচ্ছা সমুদ্র এখন কেন তাকে কষ্ট দেয় না।সব সময় সমুদ্র হাসিখুশি রাখতে চায় তাকে।তার মানে কি সমুদ্র এখন তাকে ভালোবাসে।এখন তাকে কষ্ট দিতে গেলে।তার মত সমুদ্র ও বুক কাঁপে।এই জন্য বোধহয় এখন ওরকম ব্যবহার করে না।মাঝে মাঝে রোদ সমুদ্র ওই রকম ত্যাঁড়া কথা গুলো মিস করে।সোজা প্রশ্ন করলে সে উল্টা উত্তর দিতো।
-” রোদ-বৃষ্টি!”
সমুদ্র ডাকে রোদের হুস ফিরে।কিসব আজগুবি চিন্তাভাবনা করছে।হেসে দেয় সে।সমুদ্র বলল,
-” হাসছিস কেন? ”
রোদ হেসে বলল,
-” কিছু না।”
রোদকে তার দিকে ঘুরিয়ে। সমুদ্র বলল,
-” সত্যি কিছু না।”
রোদ মাথা নাঁড়িয়ে ‘ না ‘ জানায়।রোদের চুলের মধ্যে হাত দিয়ে রোদকে আরও কাছে আনে।রোদের গালের সাথে গাল ঘষে দেয়।খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির খোঁচা খেয়ে রোদ ‘ আহ ‘ করে একটা শব্দ করে।সমুদ্র চোখ মেলে তাকিয়ে বলল,
-” ব্যথা পেয়েছিস না’ কি।”
শিহরণ জাগিয়ে দিয়েছে রোদকে।রোদ বলল,
-” এই ব্যথা কিছু নয়।বাসর রাতে চেয়ে এই ব্যথা অতি সামান্য।”
সমুদ্র রোদকে ছেড়ে দেয়। রাগ উঠে যায় তার।মনে পড়ে যায় রোদ তার সম্মান হানী কিভাবে করেছে।তার চরিত্র আজ পর্যন্ত কেউ আঙুল তুলতে পারেনি।রোদ বিনা দোষে।তাকে লুচ্চা,লম্পটের দলে ফেলে দিয়েছে।
এভাবে সরিয়ে দেওয়াতে রোদ চোখ তুলে তাকায় সমুদ্র দিকে।চোয়াল শক্ত করে আছে।কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে। এটা সমুদ্র রাগের লক্ষণ। রোদ তা জানে।সে রেগে যাওয়ার মত কি বলেছে।মুহুর্ত মনে পড়ে যায়। একটু আগের কথা।সমুদ্র হয়তো তার বলা কথায় মিথ্যে অপবাদের কথা মনে পড়েছে।তার ও খারাপ লাগছে।মুখ খুলে কিছু বলার জন্য।তার আগেই সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে আসে।রাতে আর বাসায় ফিরে নি সমুদ্র।বার বার ফোন করেছে।মেসেজে ‘ স্যারি ‘ বলেছে।

কাউছার স্বর্ণা।
গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।তাহলে লেখতে ভালো লাগে।গল্প লেখি আপনাদের জন্য।আপনার যদি না পড়েন।তাহলে লিখে কি করব।

স্বপ্নীল
৫৭
ধূসর মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়েই আছে।সেখানে তার মায়াবতীর ছবি।কি মিষ্টি হাসি তার মায়াবতীর।এই হাসিটা তার হৃদয় কেঁড়েছে।তার হৃদয়ে ঝড় তুলেছে ।এই ছবিটা প্রাচ্য’র গায়ে হলুদের রাতে তুলেছে।স্বপ্ন বলেছে তামিম না কি, তার মায়াবতী কে সেদিনই বিয়ে করেছে।এইজন্য সেদিনের পর থেকেই মায়াবতী তার সাথে বেশি কথা বলত না।যা বলত, শুধু হু, হা করত।
তার মায়াবতীর ভালোবাসা তামিম ছিল।তামিম তার মায়াবতীর জীবনে আগে এসেছিল।মায়াবতীর ভালোবাসা পাওয়া হয়নি তার।ধূসর সব সময় চায় তার মায়াবতী সুখে থাকুক,ভালো থাকুক।ভালো বাসলে পেতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।দূর থেকে ভালোবাসা যায়।ধূসর সেটাই করবে।দূর থেকেই ভালো বাসবে।

সারাদিন স্বপ্ন নীলকে ফোন করে নিই।এখন রাত ১০টায় বাজে।ফোন করা কোনো আশাই দেখছে না।চাতক পাখির মত চেয়ে আছে ফোনের দিকে, নীল।নীল আজকে পণ করেছে যতক্ষণ স্বপ্ন ফোন করবে না, ততক্ষণ সে নিজেও আগ বাড়িয়ে ফোন দিবে না।তখনই স্বপ্ন ফোন আসে।নীল খুশিতে বাকবাকুম হয়ে পড়ে।নীল ফোন কানে তুলে ঠিকই, কথা বলে না।স্বপ্ন বলল,
-” কথা বলবে না বলে কী পণ করেছ না কি।”
নীল রাগ দেখিয়ে বলল,
-” সারাদিন কি করেছিলেন।একবার কী আমার কথা মনে পড়েনি।”
-” শতবার মনে পড়েছে আমার কদমফুলের কথা।”
স্বপ্নের মুখে কদম ফুল নাম শুনলে খারাপ লাগে না। নীলের ভালো লাগে।অন্য কেউ তাকে এই নামে ডাকলে রাগ হতো।কিন্তু স্বপ্নের এই কদমফুল ডাকে যেন।ভালোবাসার মিশ্রিত। স্বপ্ন তাকে কদম ফুল ডাকলে নীলের ঘোর লেগে যায়।কী নেশাতুর কণ্ঠে স্বপ্ন ডাকে।কদম ফুল! হাসে নীল।সে বলল,
-” শতবার মনে পড়ার নমুনা তো দেখলাম।এই জন্য বোধহয় একবার ফোন করেন নিই।”
-” আমি ব্যস্ত ছিলাম। ফোন করতে পারিনি।তুমি করোনি কেন? ”
-” আমি পণ করেছি।”
-” হা হা হা।কথায় কথায় এত পণ কী করে করো তুমি।”
-” কথা ঘুরাবেন।ব্যস্ত ছিলেন নাকি।নতুন কাউকে মেয়ে আমায় ভুলে গেলেন।”
স্বপ্ন ধমকের সুরে বলল,
-” নীল।”
এই নীল নামে স্বপ্ন তাকে ডাকেনা। যখনই ডাকে।তখন রাগের বশে।স্বপ্নের ধমকে নীল কেঁপে উঠে।ভয় পেয়ে যায়।স্বপ্ন বলল,
-” তোমার ভাগ্য ভালো বলে তুমি এখন আমার সামনে নিই। ”
-” স্যরি।আমি না…! মুখ ফঁসকে বলে ফেলেছি।”
-” খবরদার! আর কোনোদিন যেন তোমার মুখে এই কথা না শুনি।তুমি ছাড়া আমার লাইফে আর কেউ আসতে পারে না।তোমাকে ভালোবেসেছি কী ভুলে যাওয়ার জন্য।”
নীল বাধ্য মেয়ের মত বলল,
-” আচ্ছা।”
স্বপ্ন হেসে বলল,
-” গুড। এবার ঝটপট অন্যলাইনে আসো।তোমাকে দেখব।”
নীল কিছু বলার আগেই স্বপ্ন ফোন কেটে দেয়।ডাটা অন করে।তখনই স্বপ্ন ভিডিও কল করে।গায়ে জামা কাপড় ঠিক করে স্বপ্নর ফোন ধরে।
-” এত সময় লাগে ফোন ধরতে।”
নীল কোনো কথা বলল না।শুধু লাজুক হাসি দিই। স্বপ্ন বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলল,
-” কদম ফুল তোমার হাসিটা আমার এখানে এসে লেগেছে। কবে যে তোমাকে বউ করে ঘরে তুলতে পারব।”
শেষটা কথাটা স্বপ্ন আফসোস করে বলল।নীল লজ্জায় টমেটোর মত লাল হয়ে গেল।স্বপ্ন নীলকে আরেকটু লজ্জা দেওয়ার জন্য বলল,
-” তোমাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে।”
নীল ফট করে ফোন কেটে দেয়।ইদানীং স্বপ্ন সাথে কথা বললেই।স্বপ্ন তাকে এমন এমন কথা বলে লজ্জা পড়তে হয়।আগে তো এমন হতো না।এখন কেন স্বপ্ন সব কথায় লজ্জা পায়।বোধহয় এখন তাদের সম্পর্ক বদলে গেছে বলেই।
নীল ডাটা বন্ধ করে অফলাইন চলে আসে।তখনই স্বপ্নর ফোন আসে।স্বপ্ন বলল,
-” তুমি এমন কেন? সব সময় এমন করো কেন আমার সাথে।একটু রোমান্টিক কথাবার্তা বললেই আমাকে মাঝপথে রেখে ফোন কেটে দাও।আগে মত চঞ্চলতা কোথায় তোমার।চঞ্চলতা কেটে গিয়ে লজ্জা পরিনিত হয়েছে না কি।”
-” তুমি সব সময় এমন কথা বলো কেন? আমার ভীষণ লজ্জা লাগে।”
-” তাহলে আর ও বেশি বেশি করে লজ্জা দিতে হবে।”
-” তাহলে ফোনই ধরব না আর।”
-” মাইর চিনো।মাইর দিবো।”
-” নারী নির্যাতন মামলা করব কিন্তু।”
-” ওকে।সমস্যা নেই।”
-” হুম!”
-” খেয়েছো তুমি।”
-” হুম।তুমি খেয়েছো।”
-” মাত্র অফিস থেকে ফিরলাম।”
-” ফ্রেশ হওনি।”
-” খাটে আধোশোয়া হয়ে শুয়ে তোমার সাথে কথা বলছি।”
-” ইয়াক! তুমি সারাদিন কাজ করেছো এখন ফ্রেশ হয়নি।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ডিনার করো।এখনকার জন্য বায়।”
-” আরেকটু কথা বলো।পরে ফ্রেশ হতে যাবো।”
-” নো! আগে ফ্রেশ হও।তারপর খাও।পরে কথা বলব।”
লাইন কেটে দেয় নীল।স্বপ্ন উঠে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য
★★★
কিছুদিন ধরে সোহা নীলের সাথে কথা বলতে আসলেই নীল এটা ওটা বাহানা দিয়ে এড়িয়ে যায়।আজকে ঠিক একই কাজ করেছে নীল।সোহাকে দেখে রুম থেকে চলে যেতে নিলেই সোহা হাত ধরে ফেলে।সোহা মুখটা মলিন করে বলল,
-” তুই আমার সাথে কথা না বললে আমার ভালোলাগে না।দিনটাই কেমন করে যেন কাটে। তারপর কেন এভাবে আমাকে এড়িয়ে যাস তুই।”
নীল মুখ ভার করে বলল,
-” তুই এখন যা।আমার একটু কাজ আছে।”
সোহা নীলের সামনে এসে বলে,
-” আমার ভালো লাগছে না আর।প্লিজ তুই আমার সাথে কথা বল।”
নীল অভিমান করে বলল,
-” আমার সাথে কথা বলতে আসছিস কেন? আমি তোর কে হই।”
-” তুই আমার বেষ্টু।”
-” ওহ! তাহলে তোর মনে আছে আমি তোর বেষ্টু হই।বন্ধুত্বের মানে জানিস তো।বন্ধুরা যেমন সুখে পাশে থাকে তেমনি দুঃখে।তুই কোনটায় আমায় পাশে রেখেছিস।”
সোহা কোনো কথা বলল না।নীল বলল,
-” তোর সুখে আমায় না পাশে রেখেছি, না দুঃখে।”
সোহা পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ফ্লোর খুঁটতে থাকে। মুখ ছোট করে বলল,
-” স্যরি।”
-” আমি তোকে আমার সব কথা শেয়ার করি।তাহলে তুই কেন বলিস নি। বিয়ের কথাটা।সেদিন যদি আমি তোদের বিয়ের কথা জানতাম।তাহলে এরকম পরিস্থিতি হত না।”
সোহা কোনো কথা বলল না।নীল সোহার বাহু ধরে বলল,
-” তাকা আমার দিকে।”
সোহা মুখ তুলে তাকায়। নীল বলল,
-” বিয়ের কথা বলিস নি ভালো কথাটা।এভাবে সেদিন ছেড়ে চলে গেছিস কেন? তুই জানিস না তোকে ছাড়া কতগুলো মানুষ বেঁচে থাকা অসম্পূর্ণ। ভাগ্য ভালো বলেই তো।ধূসর ভাইয়া তোকে পেয়েছে।যদি তুই অন্য কোথায় হারিয়ে যেত-ই। তাহলে তোকে কী খুঁজে পেতাম আমরা।”
-” হারিয়ে গেলে কী হয়েছে।যার নীলের মত বেষ্ট ফ্রেন্ড থাকে।তামিমের মত ভালোবাসার মানুষ থাকে।তারা ঠিকই একদিন না একদিন আমার খুঁজে বের করত।”
-” এত বিশ্বাস।”
-” হুম।”
দু বান্ধবী জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্না করে।তারপর নীল আর সোহা খোশগল্প মেতেই উঠে।নীল স্বপ্নের ব্যাপারে সব বলে।

#কাউছার স্বর্ণা।

জানি না কেমন হচ্ছে গল্পটা।খারাপ হলে বলবেন প্লিজ।

স্বপ্নীল ৫৪,৫৫

0

স্বপ্নীল
৫৪,৫৫

ধূসর ভাবতেই পারেনি সোহার সাথে তার আবার দেখা হবে।মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে! কি নিষ্পাপ লাগছে।আল্লাহ তায়ালা যেন সব মায়া এই মুখটা ঢেলে দিয়েছে।তার মায়াবতী তার সামনে শুয়ে আছে বিশ্বাস হচ্ছে না।ঠোঁটের কোনো হাসি ফুটে উঠে।
বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ধূসর।বারান্দা যে য়ে সোহার দিকে তাকায়।সোহাকে কেন এভাবে উন্মাদের মত হাঁটছিল আর কান্না করছিল।কি হয়েছে সোহার? এখানে আসার পর থেকে রুম থেকে বের হচ্ছে না।সারাদিন শুধু কান্না করে।ঘুমালে শুধু কান্না বন্ধ হয়।কিছু জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না।চুপচাপ থাকে।একদিকে সোহাকে পেয়ে ধূসর খুশি হয়।আবার অন্যদিকে খুব চিন্তা হচ্ছে সোহার এই পরিবর্তনে।কেমন হাসি খুশি মেয়েটা এখন সারাদিন মুখ মলিন করে বসে থাকে।হাসে না!

সোহার এই মলিন মুখটা দেখলে ধূসরের খুব কষ্ট হয়।ভালো লাগে না সোহাকে এভাবে দেখতে।কত রকম কথা বলে সে তারপর একবার ও হাসাতে পারেনি।মেয়েটা প্রান যেন অন্যকোথাও।এখানে যেন দেহটা পড়ে আছে শুধু।

স্বপ্ন কিছুই ভালো লাগছে না।কিসের শাস্তি দিচ্ছে সে নীলকে? অন্যায় সে নিজেই করেছে।নীলের কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।কল করে নীলকে।প্রথমবার ধরেনি দ্বিতীয় বার ফোন বাজতে নীল কল ধরল।কোনো কথা বলল না।স্বপ্ন বলল,
-” হ্যালো!”
শব্দহীন ভাবে কেঁদে চলছে নীল।এতদিন পর স্বপ্নর ফোন পেয়েছে। অন্তরে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।এভাবে নীলকে নিরব দেখে স্বপ্ন আবার বলল,
-” হ্যালো।”
নীল চোখের পানি মুচে! গলা পরিষ্কার করে বলল,
-” হ্যালো!”
স্বপ্নের বুকের ভিতরে ছেৎ করে উঠল।এমন শুনাচ্ছে কেন নীলের কণ্ঠে।নীল কী কান্না করছিল।
-” কেমন আছো? ”
-” ভালো!
আবার দুজন নিরব হয়ে গেল।স্বপ্ন বলল,
-” আমায় জিজ্ঞেস করবে না। কেমন আছি আমি! ”
-” ভালো আছেন বলেই তো এতদিন পর আমায় খোঁজ নিচ্ছেন।”
স্বপ্ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-” আমায় ক্ষমা করো!”
নীল না জানান ভান করে বলল,
-” কেন? ”
-” সেদিনের ব্যবহারে জন্য।”
-” ওহ!”
আবার দুজন নিরব হয়ে যায়।স্বপ্ন যেন কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না।সব কথা যেন হারিয়ে গেল।নীল বলল,
-” কথা বলছেন না যে।”
-” তুমি আমার শর্ত পূরণ করেছো কিন্তু আমি তোমার সুর ওয়ালার সাথে দেখা করাতে পারিনি।তার জন্য ভেরি ভেরি স্যরি।”
নীল কোনো কথা বলল না।সুর ওয়ালা করে এদিন সে লাফিয়ে ছিল। আর এখন সুর ওয়ালা কথা শুনলে কোনো ফিল হয় না।যেন খুব স্বাভাবিক কিছু।স্বপ্ন আজ নীলের মধ্যে উত্তেজনা নেই দেখে বলল,
-” আমি তোমাকে মিথ্যে বলছি।তোমার সুর ওয়ালাকে আমি চিনি না।”
-” সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”
-” তুমি কিভাবে জানতে?”
-” কিছু কথা অজানা থাকাই ভালো।”

স্বপ্ন ধূসরদের বাসায় এসে সোহাকে দেখে বিষ্মিত! সোহা ধূসরে বাসায় কী করে এলো।স্বপ্ন ধূসরের হাত টেনে ফিসফিস করে বলল,
-” এই মেয়ে এখানে কি করে? ”
-” আমার রুমে চল।সব খুলে বলছি।”
স্বপ্ন সোহার সাথে কুশল বিনিময় করে ধূসরের রুমে যায়।স্বপ্ন জিজ্ঞাসাচুক ভাবে তাকাতেই ধূসর বলল,
-” কিছুদিন আগে মাকে নানুর বাড়িতে দিয়ে আসতেই সোহা আমার গাড়ির সামনে পড়ে।অজ্ঞান হয়ে যায়।তাই বাধ্য হয়ে আমার বাসায় নিয়ে আসি।”
-” ভালো কথা! তাহলে ও এখন তোর বাসায় কি করছে।”
স্বপ্নের কথা ধূসর খুব আশ্চর্য হয়।স্বপ্নকে ভালো করে পরখ করে। স্বপ্ন তা বুঝতে পড়ে বলে,
-” না মানে…!”
-” আরে! সোহা কোনো কথাই বলছে না।সারাদিন চুপচাপ থাকে আর কান্না করে।তারপর অনেক কষ্ট কথা বলাই। ওই দিন এত রাতে উন্মাদের মত ছুটছিল কেন? কোনো কিছু বলেনি।তারপর আমি তাকে বাসায় দিয়ে আসতে বলি।সে যাবে ন। মির্জাপুর। অন্যকোথাও চলে যাবে।একটা মেয়ে এই অচেনা শহরে একা কোথায় যাবে। তাই বাধ্য হয়ে আমার বাসায় রেখে দি।”
স্বপ্ন ধূসরের কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
-” ভালো করেছিস।”
এটা বলে স্বপ্ন সমুদ্রকে ফোন করে।কিছুদিন আগেই স্বপ্ন জানতে পারে সোহার আর তামিমের ব্যাপারটা।সমুদ্র বলছে তাকে।এখানে সোহাকে দেখতে পাবে কল্পনার বাহিরে ছিল।দেখা হয়ে ভালোই হয়েছে।অন্তত তামিমকে আর কষ্ট পেতে হবে না। সমুদ্রকে সবটা বলে।সমুদ্র সঙ্গে সঙ্গে তামিমকে ফোন করে জানায়। ধূসরের মাথা দিয়ে কিছু ঢুকছে না। সে প্রশ্ন করল স্বপ্নকে,
-” কাকে খুঁজে পেয়েছিস।আর কাকে বলছি তা জানাতে।”
-” কালকে জানতে পারবি।আর শোন সোহাকে কিছুতে যেতে দিবি না।কালকে অব্ধি আটকে রাখবি।”

এটা বলে স্বপ্ন চলে যায়। সোহা যেতে চাইলে। ধূসরে তাকা যেতে দেয় না।জোর করে রেখে দেয়।ফোন পাওয়ার সাথে সাথে তামিম ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দেয়।দুপুর দুইটায় তারা তিনজন মিলে ধূসরে বাসায় আসে।তামিম দেখে ধূসর অবাক হয়।তামিম সবার আগে বাসায় ঢূকে পড়ে।ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে চারদিকে চোখ বুলায়। সোহাকে দেখার জন্য।দেখতে না পেয়ে।সোহা সোহা বলে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে।সোহা হাটুতে মাথা মুড়ে কান্না করতে থাকে।হঠাৎ করে তার কানে আসে সেই চিরচেনা কণ্ঠ।চট করে উঠে দাঁড়ায়।এই কন্ঠে তার তামিমের।কিন্তু এখানে কি করে তামিমের কন্ঠ শুনবে।সে ভুল শুনে তো।আবার তামিম ডাকে।এবার সোহা বের হয়ে আসে।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তামিম।দৌড়িয়ে যে এ ঝাপটে ধরে।হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।সমুদ্র আর স্বপ্ন মুখে হাসি ফুটে উঠলে ধূসরে মুখে উঠেনি।বুকের ভিতরে আশার আলোটা কিছুটা জেগে উঠেছিল সোহাকে পেয়ে।কিন্তু দৃশ্য দেখে নিভে গেল।বুকের ভিতর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল।কাচ ভাঙা শব্দ হয় মন ভাঙার শব্দ হয় না। আজ আবার তার মনটা ভেঙে গেল।চোখ কোনে বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয়ে এসেছিল।সবার অলোকে মুচে ফেলে।কিন্তু সোহার চোখে সেটা এড়ানি।

-“এভাবে কেন চলে এলে! অপেক্ষা করতে পারলে না আমার জন্য।”
সোহা কোনো কথা বলেনি।দোষটা তারই।সেদিন সবার এত এত খারাপ কথা শুনেছে। ইচ্ছা করেছিল মরে যেতে।কিন্তু পারেনি যে তার অনাগত সন্তান আর তামিমের ভালোবাসা টানে।ভুল করেছে সেদিন সোহা।অপেক্ষা না করে।তাই তো এই কয়দিন বিরহে দিন কাটাতে হচ্ছিল।

# চলবে
কাউছার স্বর্ণা

লেখার আগ্রহ কমে গেছে।আপনাদের কাছে বোধহয় ভালো লাগছে না গল্পটা।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।

স্বপ্নীল
৫৫
সোহাকে নিয়ে মির্জা বাড়িতে তামিমের সাথে সমুদ্র,স্বপ্ন আসে।তাঁরা এখন মির্জা বাড়ির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছে।সোহাগী কিছুতেই সোহাকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিবে না।তিনি বার বার বলেন,
-” একটা কাজের মেয়ে নাকি আমার ছেলের বউ হবে।কি যোগ্যতা আছে সোহার।তামিমের বউ হওয়ার।”
সোহাগী কথায় সোহা মাথা নিচু করেই ছিল।কোনো কথা বলেনি।সে জান তো এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরী হবে।এই ভয়ে তামিমের ভালোবাসা গ্রহন করেনি।শেষ পর্যন্ত তামিমের ভালোবাসার কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে।

সোহার অপমান কিছুতেই তামিমে সহ্য হচ্ছিল না।তামিম বলল,
-” তুমি কিন্তু বার বার সোহাকে অপমান করছো।”
-” এই ছোটলোকদের মান অপমান আছে নাকি। থাকলে এমন কাজ করত না।”
আমেনা এককোণে দাঁড়িয়ে মুখের মধ্যে কাপড় দিয়ে কান্না করছে।তামিমের মেজাজ চটে যায়।তামিম বলল,
-” মা তুমি কি চুপ করবে নাকি আমরা চলে যাবে।”
সোহাগী অবাক হয়ে বলল,
-” আমরা মানে! ”
-” তুমি যদি সোহাকে মেনে না নেও।তাহলে আমরা চলে যাবো।”
-” তুই কেন যাবি? যেতে হলে এই নির্লজ্জ মেয়েটা যাবে।” সোহার দিকে আঙুল তুলে বলল সোহাগী।ছেলের কথায় সোহাগী অবাক হয়! সে আবার বলল,
-” একটা কাজের মেয়ের জন্য তুই এ বাড়ি ছেড়ে।আমাকে ছেড়ে চলে যাবি।”
-” তুমি বাধ্য করেছো মা!”
সোহাগী সোহার কাছে যেয়ে বলল,
-” এই মেয়ে যাদু করে তোকে বশে নিয়েছে।এই মেয়ে কি যাদু করেছিস আমার ছেলেকে!”
সোহা কিছু বলতে নিলেই সোহাগী রাগ করে সোহাকে ধাক্কা দেয়।সোহার ভাগ্য ভালো বলেই সোফায় যেয়ে পড়েছে সে।উপস্থিত সবাই সোহাগীরর কাজে হতবাক হয়।তামিমে দ্রুত যে এ সোহাকে তুলে ধরে দাঁড়ায় করায়।
-” তোর কোথাও লাগে নি তো।”
-” নাহ! আমি ঠিক আছি।”
তামিম মায়ের কাছে এসে মেজাজ গরম করে বলল,
-” সোহাকে কেন তুমি ধাক্কা দিলে।তুমি কি জানো না।সোহা এখন একা নয়।তার সাথে আমার সন্তান আছে।”
সোহাগী বাহবা দিয়ে বলল,
-” সোহা যেমন তোর সন্তান গর্ভে ধারণ করেছে।তেমনি আমি তোকে দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণ করেছি।তোর কাছে যেমন তোর স্ত্রী সন্তান প্রিয়।তেমনি আমার কাছে আমার সন্তান প্রিয়।আমার সন্তানে সাথে খারাপ কিছু হোক সেটা আমি কিছুতে মেনে নিতে পারব না।”
এভাবেই মা ছেলের মধ্যে তর্ক হতে থাকে।সমুদ্র এতক্ষণ দাঁড়িয়ে সব দেখছিল।এখন আর চুপ থাকতে পারছে না।জল অনেক দূর গড়িয়ে যাচ্ছে।এসব কিছু এখানেই থামাতে হবে।সমুদ্র আদেশেরসুরে বলল,
-” তামিম তুই সোহাকে নিয়ে উপরে যায়।”
তামিম কথা বলতে নিলে সমুদ্র বলল,
-” যেটা বলছিস সেটা কর।”
তামিম আর কথা বাড়ায় নি।সোহাকে নিয়ে উপরে চলে যায়।সমুদ্র স্বপ্নকে উপরে যেতে বলে।ছোটমাকে নিয়ে সমুদ্র তার ঘরে যায়।খাটের উপরে ছোট মাকে বসায়।ফ্লোরে বসে সে।ছোট মায়ের চোখের জল মুচে দিয়ে বলল,
-” তুমি যেমন তামিমকে ছাড়া থাকতে পারবে না।তামিম তেমন সোহাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।”
-” আমার চেয়ে ওই মেয়ে তামিমের কাছে বড় হয়ে গেল।”
-” এসব কি বলছ তুমি ছোট মা।তোমার স্থান তামিমের কাছে সবার উপরে।তোমার চেয়ে তামিমের কাছে অন্য কিছু কোনোদিন বড় হবে না।”
-” তাহলে কেন আমার কথার অবাধ্য হয়ে ওই মেয়ের সাথে থাকতে চায়।”
-” ধরে নাও তামিম তোমার কথা রেখেছে।সোহাকে ছেড়ে দিয়েছে।সোহাকে ছাড়া কি তামিম ভালো থাকবে।থাকবে না! গুমড়ে গুমরে মরে যাবে।নিজেকে তিল তিল করে শেষ করে দিবে।এই কয়দিন তামিম যা করেছে তার চেয়ে দ্বিগুন পাগলামো করবে। তুমি মেনে নিতে পারবে তামিমের এভাবে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়া।বলো ছোট মা! তুমি পারবে!”

সোহাগী চুপ।সমুদ্র ভুল কিছু বলেনি।সোহা চলে যাওয়ার পর থেকে সারাদিন রুমে বন্ধ করে থাকত।সিগারেট ছাড়া কিছুই খেত না।দাদুর বারণ ও শুনেনি। এই কয়দিনে ছেলের কী বিবস্ত্র চেহারায় না বানিয়েছে।চোখের নিচে কালশিটে পড়ে গেছে।ছেলের এই কয়দিন এভাবে দেখে তার নিজের ও নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
ছোট মাকে চুপ থাকতে দেখে সমুদ্র বলল,
-” জানি পারবে না।তাহলে কেন তামিমের থেকে সোহাকে আলাদা করতে চাচ্ছো।তামিম যদি সোহাকে নিয়ে সুখে থাকতে চায়।তাহলে কেন তাদের সুখে বাধ্য দিচ্ছো।তুমি চাইবে না তামিম অসুখী থাকুক।”

★★★
খাওয়া দাওয়ার পর সমুদ্র আর স্বপ্ন চাঁদে বসে আলাপ করছিল।তখনই সমুদ্র ফোন আসে।স্কীনে রোদ নামটা ভেসে উঠে।স্বপ্ন বলল,
-” তোর লায়লীকে বলে আসিস নি।এখন হয়তো তোর খোঁজে পাগল হয়ে ফোন দিচ্ছে।”
স্বপ্নের কথায় সমুদ্র মুচকি হাসে।ফোন নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।ফোন ধরেই।রোদ কর্কশ কন্ঠে বলল,
-” তুই কোথায়?রাত বারোটা বাজে এখন বাসায় আসছিস না কেন? ”
-” তুমি তো খুব বেয়াদব মেয়ে।স্বামীকে তুই -তোকারি করছো।”
রোদ এবার কমল কন্ঠে বলল,
-” কখন আসবেন! অনেক রাত হয়েছে?”
-” আজকে আর বাসায় যাবো না?”
-” বুঝেছি। এনার সাথে আজকে থাকবেন।”
-” স্টুপিড গার্ল।সব সময় বাজে কথা।আমি গ্রামের বাড়িতে আছি।”
-” কি? আপনি ঢাকায় নেই।গ্রামে যখন গেছেন।আমায় নিয়ে গেলে কি হত।আমি এখন কি করে একা থাকব।”
-” তুমি তো চাইতে। তোমার থেকে দূরে থাকতে।”
-” তাই বুঝি এত দূরে।”
-” কই এত দূরে।”
-” আপনার কাছে তো অল্পই মনে হবে।”
-” খেয়েছো।”
-” নাহ! আমি ভেবেছি আপনার সাথে খাবো।”
-” স্যরি।একটা কাজে আসতে হয়েছে।তোমাকে জানাতে পারিনি।এখন যে এ তুমি খেয়ে নাও।”
-” কালকে কী বাড়ি আসবেন? ”
-” নাহ!”
সমুদ্র ‘ নাহ’ শুনে রোদ কেঁদে দেয়।সে বলল,
-” আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না।কালকেই চলে আসবেন।”
-” রোদ-বৃষ্টি! আমি কাজে এসেছি।কাজ সেরে গেলে চলে আসব।”
-” আপনি কালকে না আসলে।আমি চলে আসব।”
-” এভাবে কান্নাকাটি করা কি আছে।আমি চলে আসব।”
-” আপনি খুব খারাপ।সব সময় আমার সাথে এমন করেন।আমায় কষ্ট দিতে আপনার ভালো লাগে।”
সমুদ্র কথা বলতে বলতে রুমে চলে আসে।রোদ যতক্ষণ পর্যন্ত ঘুমায় নি।তখন পর্যন্ত কথা বলেছে।সমুদ্র বিড়বিড় করে বলল,
-” কাছে থাকতে বলে দূরে যেতে।এখন যখন দূরে আছে।তখন বলছে কাছে আসতে।পাগলী! ”

আজ আকাশে চাঁদ নেই।আছে শুধু হাজারো তারা।তারায় তারায় ভরে আছে পুরো আকাশে।যেন তারাদের মেলায় বসেছে।তারাদের দিকে তাকিয়ে নীলের কথা ভাবছে স্বপ্ন।এ বাড়িতে আসার পর।ড্রয়িংয়ে শুধু একবার নীলকে দেখেছে।আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে।চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।আগের মত চঞ্চলতা নেই।তখন দেখা হওয়ার পর আর একবার ও দেখা হয়নি।আজকে সবার সাথে খেতে ও আসেনি।

তখনই স্বপ্ন’র পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে।এই তো তার নীলের স্পর্শ।তার মানে নীল তাকে ঝাপটে ধরে আছে।ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠে।হাত ধরে নীলকে সামনে এনে দাঁড়া করা।নীল নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।শব্দহীন ভাবে কাঁদছে।স্বপ্ন চিবুক ধরে মুখ তুলে।নীলের চোখে পানি দেখে বুকের ভিতরে ছেৎ করে উঠে।বুকে ভিতরে হাহাকার করতে থাকে।তার নীল কাঁদছে।স্বপ্ন ঝাপটে ধরে।বুকের ভিতরে মিশিয়ে ধরে। নীল স্বপ্নের শার্ট খাপচে ধরে কান্না করতে করতে বলল,
-” আই লাই ইউ! আমি ভালোবাসি আপনাকে।”
এই শব্দটায় শুনতে চেয়েছে নীলের মুখ থেকে।অবশেষে নীল তাকে ভালোবেসে বলেছে।পেরেছে সে।সুর ওয়ালা বাদেই নীলের মনে জায়গা করে নিতে পারে।

কাউছার স্বর্ণা।
গঠনমূলক মন্তব্য চাই।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন

স্বপ্নীল ৫২,৫৩

0

স্বপ্নীল ৫২,৫৩
সোহাকে খুজে না পেয়ে সেদিন তামিম ফিরে আসে।আজ দুদিন ঘর ছাড়া একটু বের হয়নি।দুইদিন ধরে কেউ কিচ্ছু খাওয়াতে পারেনি।একে একে তিন জা তামিমের জন্য খাবার এনেছে।সবার খাবার ফ্লোরে ছুড়ে মেরে একটা কথা বলে,
-“আগে আমার সোহাকে এনে দাও।তারপর তোমাকে আনার খাবার খাবো।”
কেউ কোনো কথা বলেনি।বলবে কি করে।তারা তো জানে না সোহা কোথায়।ছেলে আজ দুদিন না খেয়ে আছে তা দেখে সোহাগী আহাজারি করে কান্না করছে।মায়ের এই আর্তনাদ তামিমের কানে যায়নি।সে তো সোহার ধ্যানে ছিল।তার মনে হচ্ছে সোহা তার পাশে বসে আছে।আর তাকে বলছে বাবা হতে চলেছে সে।সোহার ভ্রম হয় তামিমের।

কারো মনে অবস্থা ভালো নয়।ভাইয়ের কষ্টে দেখে নীলের বুক ফেটে যাচ্ছে।আগে হলে হয়তো বুঝতে পারতো না ভাইয়ের কষ্টটা।এখন বুঝে!এখন যে একজনকে ভালোবাসে সে।তার ভালোবাসার মানুষটার তার কাছে নেই।কথা বলে না তার সাথে।খুব কষ্ট হয়।কত রাত কান্না করেছে।

ভাতের প্লেট নিয়ে তামিমের সামনে বসে।তামিম নীল কে দেখে বলল,
-” কেন সোহা চলে গেল।বল না!”
ঠোঁট কামড়িয়ে চোখের জল আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
-” চলে আসবে সোহা।তোমার ভালোবাসার টানে আসতেই হবে সোহাকে।”
-” কবে আসবে।আমি যে থাকতে পারছি না আর।দম বন্ধ হয়ে আসছে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
নীল কান্না করে দেয়।
-” ভাইয়া শান্ত হোও।কিছু খেয়ে নাও।”
-” সোহা না আসা পর্যন্ত আমি খাবো না।”
-” সোহা আসবে।সোহা এসে যদি তোমার এই দেবদাস চেহারা দেখে খুব রাগ করবে।সোহা জন্য হলে খাও।সোহাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য বেঁচে থাকতে হবে।”
নীলের জোরাজুরি ভাত খায়। নীল নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে।খাওয়া শেষে পানি গ্লাস এগিয়ে দেয়।ওড়না কোণা দিয়ে তামিমের মুখ মুচে দেয়।
-” খুব শীঘ্র আমরা সোহাকে খুঁজে পাবো।দেখো তুমি।”

নীল ফোন করে কান্না করতে করতে সমুদ্রকে সব বলে।সমুদ্র নীল কে বলে সে তামিমের সাথে কথা বলবে।নীলের সাথে কথা বলার পর তামিমের ফোনে দেয়।
-” হ্যালো!
-” তুই বিয়ে করেছিস।একবার আমাকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করিস নি।”
-” তোর উপর দিয়ে একটা ঝড় গিয়েছিল তাই জানায় নি।”
-” ঢাকা এসেছিস তখন বলতে পারিস নি।”
-” ভেবেছি বাড়িতে এসে সবাইকে জানাবো।তখন তো এমনি জানতে পারবি।”
-” শালা।বিয়ে করিস ভালো কথা।মেয়েটাকে মা বানানোর কি দরকার ছিল।তাহলে এই সিচুয়েশন আসতো না।”
সত্যি তো সে অনেক ভুল করেছে।সোহাকে এত কাছে টানা উচিত হয়নি।সবাইকে জানানো পর সোহাকে কাছে টানা উচিত ছিল।মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে।সে ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে।
তামিমকে নিরব হয়ে যেতে দেখে সমুদ্র বলল,
-” আছিস তুই।”
উদাসিনী হয়ে বলল,
-” হুম!”
-” ভালো করে খুঁজেছিস তো।”
-” এমন কোনো জায়গা নেই এই দুদিন আমি যাইনি।”
-” ওর কোনো বন্ধু বান্ধবের বাসায় যায়নি।”
-” নীল ছাড়া ওর কোনো বন্ধুবান্ধব নেই।”
-” চিন্তা করিস না। পেয়ে যাবি ঠিকই।আমরা সবাই মিলে দরকার হলে খুঁজব।”
লাইন কেটে দেয় তামিম।কারো সাথে কথা বলতে তার ভালো লাগে।একা থাকতে ভালো লাগে।

অনেক রাত হয়েছে তৃণ এখন বাসায় ফিরেনি।প্রাচ্য বুঝতে পাচ্ছে এখন কেন আসছে না।স্বপ্ন, ধূসরকে ফোন করা হয়েছে।তাদের ওখানে যায়নি।তাহলে কোথায় এখন? ড্রয়িং রুমে এসব ভেবে পায়চারী করছে।তখনই ডোরবেল বেজে উঠে।দরজা খুলে তৃণকে দেখে।দরজা ঠৌকাঠ ধরে ঝুকে আছে।
-” এত রাত হলে আজ…!
বাকি টুকু বলার আগেই তৃণ প্রাচ্য’র গায়ে ঢলে পড়ে।প্রাচ্য দুই হাত দিয়ে তাকে সামলাতে চেষ্টা করে।তৃণ এমন আচরণ বুঝতে পাচ্ছে, তৃণ ঠিক নেই।মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আছে।অনেক কষ্ট করে মাতাল তৃণকে রুমে এনে ধপাস করে খাটে পেলে দেয়।প্রাচ্য চলে যেতে নিলের আঁচল ধরে টেনে তার উপরে ফেলে দেয় তৃণ।প্রাচ্য রাগ দেখিয়ে চলে যেতে নিলে কোমর চেপে ধরে।প্রাচ্যকে এভাবে চটপট করতে দেখে তৃণ তার নিচে প্রাচ্যকে ফেলে দেয়।মাতাল কণ্ঠে বলল,
-” এবার চটপট কর।”
-” মাতাল কোথায় কার।মদ খেয়ে মাতলামি করতে এসেছিস।”
-” কে মদ খেয়েছে?”
-” ডং দেখতে বাঁচি না।সর!”
তৃণ তার দু’পা দিয়ে প্রাচ্য’র পা দুটো চেপে ধরে।হাত দুটো নিজের হাতে বন্ধী করে নেয়।
-” আমার ডং দেখলে বাঁচিবে কেন? ওই ছেলের ডং দেখলে প্রেম পায় তোর।কিসের এত মেলামেশা ওই ছেলে সাথে। ”
প্রাচ্য কপাল কুঁচকে যায়।সে বলল,
-” কি যা তা বলছিস তুই।”
-” আমি সব জানি।আমি সব দেখছিস।”
প্রাচ্য রাগ দেখিয়ে বলল,
-” কি দেখছিস বল? ”
-” আমি কেন বলব?”
-” আজব।”
নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে যেতে নিলে তৃণ আবার হেচকা টান দিয়ে ফেলে দেয়।তৃণ বলল,
-” আমি কি তোকে কম ভালোবাসি।তাহলে কেন ওই ছেলের সাথে এত প্রেমালাপ করিস।”
তারপর আবার তৃণ বলল,-” আমি সত্যি তোকে কম ভালো বাসি।তোকে আদর করি না আমি।এই জন্য তো সেদিন রাগ করেছিস।আজ তোকে খুব আদর করব।আদর করলে ওই ছেলের সাথে আর কথা বলবি না তো।”

প্রাচ্য বুঝতে পাচ্ছে না তৃণ কার কথা বলছে।কার সাথে সে প্রেমালাপ করেছে।সে শিহাবের সাথে কথা বলেছে।তাও অনিচ্ছাকৃত। সেগুলোর কথা কী তৃণ বলছে।কিন্তু সে শিহাবের সাথে প্রেমালাপ করেনি।শিহাব তাকে ডিস্টার্ব করে।একটা উষ্ণ ছোঁয়া তার হুস ফিরে।তৃণ তার ঠোঁটে কিস করেছে।মুখ থেকে মদের বাজে গন্ধ আসছে।পেট গুলিয়ে বমি আসার উপক্রম। রাগ দেখিয়ে দুইহাত দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বলল,
-” মাতলামি করে ভালোবাসা দেখানোর হচ্ছে।”
উঠে দাঁড়ায়।তৃণ ও হেলেদুলে উঠে দাঁড়ায়।
-” বাবু তুই রাগ করিস কেন।তোকে আমি আদর করছিস।”
না! আর একমুহূর্ত থাকা যাবে না।মাতালটার সাথে।কোন সময় কি করে বসে।এসব ভেবে দরজা খুলে বের হতে যাবে তখনই প্রাচ্য’র বাহু ধরে টেনে রুমের মাঝখানে এনে দরজা আটকিয়ে ফেলে।
-” বাবু তুই কোথায় যাচ্ছিস?আজ আমরা প্রেম প্রেম খেলব।”
চরম বিরক্ত প্রাচ্য।মাতালটা থেকে ছাড়া পাচ্ছে না কিছুতেই।প্রাচ্য আবার দরজা খুলতে গেলে হেঁচকা টান দিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশে দাঁড় করায়।তৃণ বলল,
-” বাবু তুই এমন করিস কেন? একটু ও সুন্দর করে আদর করতে দেস না।”
এটা বলে প্রাচ্যকে কাঁধে তুলে নেয়।বিছানায় নামিয়ে দেয়।ঝাপটে ধরে যাতে প্রাচ্য যেতে না পারে।প্রাচ্য’র বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে।প্রাচ্য দাঁত মুখ খিঁচে চুপ করে থাকে।প্রাচ্য নড় চড় না দেখে মুখ তুলে তাকায়।
-” বাবু তুই কি ঘুমিয়ে গেছিস।”
দেখে প্রাচ্য সজাগ।তৃণ আবার বলল,
-” আজকে নো ঘুম।আজকে শুধু রোমান্স হবে।”
এটা বলে প্রাচ্য’র ঠোঁটে চুমু খায়।ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” বাবু এটা কি হলো।আমি শুধু চুমু খাবো। তুমি খাবে না।”
-” তৃণ প্লিজ ছাড় আমায়! আমার এসব ভালো লাগছে না।”
প্রাচ্য’র ঠোঁটে স্লাইড করতে থাকে আঙুল দিয়ে।সে বলল,
-” বাবু তোমার ঠোঁট দুটো এত মিষ্টি কেন? চিনি কী এখানে থেকে উৎপাদন করা হয়।”
প্রাচ্য হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পাচ্ছে না।তৃণ বলল,
-” কি হলো বাবু! বলো না কেন? ”
-” তোর মাথা!”
তৃণ নিজের মাথা হাত দিয়ে বলল,
-” এই তো আমার মাথা।”
প্রাচ্য’র ইচ্ছা করছে তৃণকে এখন পিটাতে।সে ভেবে নিয়েছে যখন তৃণ হুস ফিরবে তখন সত্যি সত্যি এই ব্যাটাকে আস্তো রাখবে না।প্রাচ্য দেখে তৃণ’র হাতের স্পর্শ তার পেটে পাচ্ছে।তৃণ প্রাচ্য’র শাড়ি কুচি খুলে ফেলে।উন্মুক্ত পেট ভেসে উঠছে তৃণ চোখে সামনে।প্রাচ্য জানে আজকে এই মাতাল থেকে রক্ষা পাবে না।তাই চোখ বন্ধ করে চাদর খামচে ধরে তৃণ স্পর্শ গুলো অনুভব করছে।হাতের আঙুল দিয়ে তৃণ কি যেন আকঁছে।অনেক্ষন আঁকা আঁকি করে।নাভির একটু নিচে খুব জোরে কামড় দেয়।প্রাচ্য ব্যথা পেয়ে আর্তনাদ করে উঠে।চোখে কোণে পানি জমা হয়।তৃণ বাচ্চাদের মত হয়ে বলল,
-” ব্যথা পেয়েছো বাবু।”
প্রাচ্য কোনো কথা না বলে তৃণ’র দিকে তাকায়।তৃণ আবার বলল,
-” খুব ব্যথা পেয়েছো!”
প্রাচ্য মাথা নাড়ায় হ্যাঁ বলে।তৃণ খিলখিল করে হেসে বলল,
-” আমার খুব ভালো লাগে।আরেকটা কামড় দি।” বাচ্চাদের মত আবদার করে।

# কাউছার স্বর্ণা
গঠন মূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ।
স্বপ্নীল
৫৩
তৃণ খুব মাথা যন্ত্রনা করছে।দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরেছে।এই জন্য সে ড্রিংক করে না।এই অসহ্য যন্ত্রণা ভুগতে ভালো লাগে না তার।প্রাচ্য তেতুল জল নিয়ে রুমে ঢুকে।গ্লাস তৃণ’র দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-” টক খেয়ে আমায় উদ্ধার কর!”
চোখ তুলে তাকায় তৃণ।প্রাচ্যকে আজকে অন্য রকম লাগছে।বাট এই সাত সকালে কেন প্রাচ্যকে তার অন্য রকম লাগছে।হয়তো মদের নেশা এখন কাটেনি বলেই।হাত বাড়িয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে নেয়।কিছুক্ষণ পর যেন তার মাথা যন্ত্রনা কেটে যায়।প্রাচ্য’র চুলের দিকে চোখ যায়।ভেজা চুল! টুপটুপ করে পানি পড়ে পিঠের দিকে ব্লাউজ ভিজে গেছে।এত সকাল প্রাচ্য কেন গোসল করেছে।এসব ভাবতেই তখন তৃণ’র চোখ যায় নিজের দিকে।যা বুঝার বুঝে গেছে।মাথা যন্ত্রণা যেন বেড়ে গেল।কি করে পারল সে এমন করতে? কালকে রাতে মদ খেয়েছে, প্রাচ্য’র আর শিহাবের এই প্রেমালাপ কিছুতে মানতে পাচ্ছে না।এসব যেন সে ভুলে থাকতে পারে।এখন দেখছে মদ খেয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে।চোরে মত করে তাকায় প্রাচ্য’র দিকে।না প্রাচ্য নিজের সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত।তৃণ উঠে দাঁড়ায়।ওয়াশরুমে যেয়ে গোসল সেড়ে আসে।

মদ খেয়ে মাতাল হয়ে প্রাচ্যকে কাছে টেনে নিয়েছি।অনেক বড় ভুল করেছে।প্রাচ্য’র কাছে তার একবার ক্ষমা চাওয়া উচিত।এসব ভেবেই হাত থেকে তোয়ালে সোফা রেখে প্রাচ্যকে বলল,
-” আ’ম স্যরি।”
তৃণ দেখতে পাচ্ছে আয়নার ভিতরে তার কথা শুনে প্রাচ্য’র কপাল কুঁচকে গেছে।প্রাচ্য উঠে এসে তৃণ মুখোমুখি দাঁড়ায়।মুখ কঠিন করে বলল,
-” তোকে কে বলেছে মদ গিলতে।”
-” আসলে…!”
-” মদ খেয়ে হামলে পড়ে আমায় কিস করেছিস।মদের গন্ধে যেন আমার নাড়িভুঁড়ি বেড়িয়ে আসছিল।”
তৃণ ভেবেছে প্রাচ্য রাগ করবে।কালকে হয়তো জোর করেই প্রাচ্যকে কাছে টেনেছে। এটা নিয়ে অনেক অপমান করবে বাজে কথা শুনাবে।
।তৃণকে চুপ থাকতে দেখে প্রাচ্য বলল,
-” কালকে কি করেছিস মনে আছে তোর।”
প্রাচ্য’র কথা শুনে মুখটা গোমড়া হয়ে যায় তৃণ’র।প্রাচ্য বলল,

-” কি হলো বল?”
অপরাধী মুখ করে তৃণ বলল,
-” রাতের কিছু মনে নেই।সকালে বুঝেছি আমি…!”
তৃণ আর বলতে না দিয়েই প্রাচ্য ব্যঙ্গ করে বলল,
-” রাতের কিছু মনে নেই।মনে থাকবে কী করে।মাতাল ছিলি তো।সব ঝড় তো আমার উপর দিয়ে গেছে।”
-” আ’ম সরি।”
-” তোর স্যরি গুষ্টি কিলাই।রাতে কি সব কথা বলেছিস আমায়।মনে আছে তোর।
-” না।”
প্রাচ্য কোনো কথা বলল না।সোজা গিয়ে তৃণ’র ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল,
-” বাবু তোমার ঠোঁট দুটো এত মিষ্টি কেন? চিনি কী এখানে থেকে উৎপাদন করা হয়। এসব কি কথা।”
তৃণ এসব বিশ্বাস হচ্ছে না।সে বলল,
-” আমি এসব কিছুই করিনি।”
-” করবি কেন? এই দেখ।আমায় কামড় দিয়ে বলেছিস।তোর নাকি কামড় দিতে ভালো লাগে।”
শাড়ি সরিয়ে কামড়ের দাগ গুলো দেখায়।তৃণ সত্যি কামড়ের দাগ দেখতে পায়।দেবে গেছে।প্রাচ্য তৃণ কলার চেপে ধরে খাটের ফেলে দেয়।বুকের মধ্যে কিল ঘুষি দিতে থাকে।
-” কালকে মারতে মারনি।তোর সাথে না পেরে।আজকে সব শোধ নেব।কালকে অনেক জ্বালাইছিস।”
তৃণ আজকে প্রাচ্যকে আটকাচ্ছে না।প্রাচ্য কেন তাকে একবার জিজ্ঞেস করে নাই।তাকে কেন কাছে টেনে নিয়েছে।তার মানে কি প্রাচ্য এতে খুশি ছিল।তাহলে প্রাচ্য কেন এখন আবার শিহাবের সাথে যোগাযোগ করে, দেখা করে।কিছুতে খুশিতে হতে পাচ্ছে না সে।কিছু একটা বাঁধা দিচ্ছে তাকে।অফিস থেকে বের হয়ে রিক্সসা উঠবে তৃণ।তখনই চোখ যায় একটা গাড়িতে।একটা ছেলের ড্রাইভিং করছে।পাশে একটা মেয়ে বসে আছে।হ্যাঁ মেয়েটা প্রাচ্য! সাথে শিহাব।
তৃণ রাগে শিরা উপশিরা টগবগ করছে।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রিক্সাশশার সিটে ঘুষি মারে।রিকশা ওয়ালা কেঁপে উঠে।তৃণদের দিকে তাকায়।তৃণ কিছু না বলে রিকশার চেপে বসে।

সন্ধ্যায় প্রাচ্য বাসায় আসে।রুমে ভিতরে ঢুকলে দেখে।পুরো রুম অন্ধাকার। লাইট জ্বালাতে তৃণকে দেখতে পায়।সোফা বসে আছে।সেন্টার টেবিলে দুইহাত ভর দিয়ে ঝঁকে আছে।সে বলল,
-” লাইট না জ্বালিয়েছে অন্ধাকারে বসে আছিস কেন? মন খারাপ নাকি তোর,,,!”
এটা বলতে প্রাচ্য’র চোখ যায় রুমে।রুমের মধ্যে সব জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে।ফুলদানী ভেঙে পড়ে আছে।প্রাচ্য বুঝতে পাচ্ছে না এসব ভাঙা কেন? সে তৃণকে প্রশ্ন করল,
-” এভাবে জিনিস পত্র ভেঙে ছিস কেন? ”
তৃণ চোখ তুলে তাকায়।প্রাচ্য ভড়কে যায় নীল ওই রক্তিম মাখা চোখ দুটো দেখে।কি ভয়ংকর লাল! চোয়াল দুটো খুব শক্ত করে রেখেছে।প্রাচ্য ভয় পেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
-” তোকে এমন দেখেচ্ছে কেন? কি হয়েছে তোর?”
তৃণ চোখ বুঝে রাগ কন্ট্রোল করে।শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-” কোথায় গিয়েছিস তুই?”
প্রাচ্য ভয় পেয়ে গেলো।প্রাচ্য জানে তৃণ রেগে গেল ভয়ংকর হয়ে যায়।
এখন যদি শিহাবের কথা তৃণ কে বলে।তাহলে উল্টে ভুল বুঝবে। মেজাজ যখন ঠান্ডা থাকবে তখনই না হয় সত্যিটা বলবে।গলা পরিষ্কার করে বলল,
-” আমি রোদের কাছে গেছি।”
তৃণ সুর টেনে বলল,
-” ওহ!”
এটা বলে তৃণ উঠে দাঁড়ায়।প্রাচ্য’র পাশ কেটে নিচে চলে যায়।প্রাচ্য বুঝতে পাচ্ছে না তৃণ’র রেগে যাওয়ার কারণ কি?

কাউছার সুলতানা স্বর্ণা

ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।সাড়া চাই সবার।

https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=967230720374314

স্বপ্নীল ৫১

0

স্বপ্নীল
৫১
তামিম অফিসে এসে দেখে সমুদ্র এখন আসেনি।ফোন দেয়।রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না ।তাই আর ফোন দেয়নি।বিকালে বাসায় এসে সমুদ্র রুমে যায়।দরজা বাইরে থেকে আটকানো ছিল।দরজা লকে মোচঁর দিতে খুলে যায়।রুমে ঢুকে তামিমের চোখ কপালে উঠে যায়।এই হাল কে করেছে সমুদ্র’র।তামিম কে দেখে চোখে ইশারা দেয় তার বাঁধন যেন গুলো দেয়।সকালে রোদ এসে মুখ বেঁধে দিয়ে যায়। যাতে সমুদ্র চিৎকার না করে হেল্প না চাইতে পারে।তামিম বাঁধন খুলে দেয়।বসে পড়ে সমুদ্র! জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। দম যেন এতক্ষণ আটকে ছিল।তামিম বলল,
-” তোর এই হাল কে করেছে! ”
সমুদ্র সেই উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে,
-” শালা বিয়ে করতে মাইনষের কে বলে?”
তামিম মুচকি হাসে।সে বুঝে গেছে সমুদ্র এই বেহাল করার পিছনে রোদ আছে।
-” কেন বউ কি পীড়া দেয় নাকি বেশি।”
-” না।আমার বউ আমায় খুব ভালোবাসে।দেখলি না ভালোবাসার নমুনা।”
এটা বলে ওয়াশরুমে যায়।সন্ধ্যায় তামিম চলে যায়।সমুদ্র আজ ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে আয়োজন করেছে ছাদে।রোদ আসবে না, কিছুতে আসবে না।তাই বাধ্য হয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয় সমুদ্র।।ছাদের মাঝখানে ফুলের পাপঁড়ি উপরে দাঁড়ার করার।রোদের চোখ জুড়ে যাচ্ছে।এত সুন্দর করে সমুদ্র তার জন্য আয়োজন করেছে।ভাবতেই তার খুশি লাগছে।পুরো ছাঁদের ক্যান্ডেল,প্রদীপের ভরপুর ।ছাদের মেজেতে গোলাপি পাঁপড়ি। চোখ যায় দোলনায়।ফুলে ফুলে সাজিয়ে রেখেছে।ছুটে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু যাবে না।সমুদ্র প্ল্যান জল ঢেলে দিবে সে।এটাই মনে মনে ভেবে রেখেছে
সমুদ্র রোদের কানে কাছে ফিসফিস করে বলে,
-” কেমন হয়েছে।”
কানের কাছে সমুদ্র উষ্ণ নিশ্বাস রোদের ভিতরে সত্তাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।চোখ তুলে তাকায় সমুদ্র দিকে।এমন নরম নরম কথায় গললে হবে না। সেই কাজ করতে এসেছি সে কাজ কর আগে রোদ।বার বার এই কথাটাই রোদ নিজেকে নিজে বুঝ দিচ্ছে।সমুদ্র দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ছাদের উপরে টেবিলে রাখা ডিনারে কাছে যায়।একবার টেবিলের দিকে তাকায়।আরেকবার সমুদ্র দিকে।সমুদ্রকে আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে।টেবিলে কার্নিশে হাত দিয়ে উল্টিয়ে ফেলে দেয়।সমুদ্র হাসিমাখা মুখকানা অমাবস্যায় নেমে আসে।রোদ সমুদ্র কাছে এসে বলল,
-” পিরিতি দেখানো হচ্ছে।আমি কি বলছি এসব পিরিতের আয়োজন করতে।”
এটা বলে ছাদের ক্যান্ডল, প্রদীপ গুলো ছুড়ে মারে।সমুদ্র কপাল রগগুলো ফুলে যায়।হাতে পাঁচ আঙুল মুষ্টিবদ্ধ করে।রোদ সমুদ্র দিকে তাকায় তার রিয়েকশন দেখার জন্য।রোদ দেখতে পাচ্ছে সমুদ্র রেগে গেছে।কিন্তু এখন রাগ দেখাচ্ছে না কেন? এতক্ষনের রেগে বোম হয়ে যাওয়ার কথা।কিছু না বলে সমুদ্র রোদের ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে গটগট করে হেঁটে নিচে চলে যায়।রোদ হা হয়ে গেছে। সে তো ভেবেছে এখন ঘূর্ণিঝড় উঠবে।কিন্তু আজ যে ঘূর্ণিঝড় বেশ শীতল হয়ে গেলো।

আয়োজন করা যায়গাটা দেখে রোদ।কিছুক্ষণ আগে কি সুন্দর ছিল? আর এখন…!মন খারাপ লাগছে। সে চায় নি এত সুন্দর আয়োজন এভাবে লণ্ডভণ্ড হোক। সমুদ্রকে শায়েস্তা করা জন্য এমন করল।

সমুদ্র বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। প্যান্টের পকেট থেকে একটা ডায়মন্ড রিং বের করে।সন্ধ্যায় তামিম ছেড়ে এসেছে। তখনই আসার সময় কিনে এনেছে রোদের জন্য।ভেবেছে হাতে রিং পড়িয়েছে।এতদিনের অপ্রকাশিত ভালোবাসা প্রকাশ করবে।
রুমে থেকে বার বার উঁকি দিয়ে সমুদ্রকে দেখছে।বার বার রোদের মন বলছে, ‘ রোদ তুই ঠিক কাজ করিস নি।যা গিয়ে ক্ষমা চায়।” আর মস্তিষ্ক বলছে অন্যকথা।অবশেষে মস্তিষ্ক জিতে গেছে।সে যায় নি সমুদ্র কাছে।

তামিম বাড়িতে এসে সবার সাথে কথা বলে।সবাই একে একে দেখেছে এক মাত্র সোহাকে ছাড়া।মাঝরাতে সোহার রুমে উঁকি দেয়।আমেনা খালাকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পায় না।এই রাতের বেলা কই গেছে সোহা।পরক্ষনে মনে পড়ে যায়।সোহা বোধহয় নীলের রুমে।নীলের রুমে নক করে।নীল দরজা খুলে তামিম দেখে হামলে পড়ে কান্না করতে থাকে।তামিম হতচকিত হয়।বুঝতে পাচ্ছে না নীলের এই কান্নার কারণ কী? বাড়ি সবাই তো ভালোই আছে।তামিম নীলের মাথা হাত বুলায়।চোখে তুলে তাকায় নীল।চোখ দুটো তার লাল হয়ে আছে।তামিম বলল,
-” কান্না করছিস কেন? ভাইয়াকে বল কী হয়েছে?”
শব্দহীন ভাবে কান্না করছে নীল।এই দুইদিন কান্না করতে করতে তার গলা ব্যথা আর চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে গেছে। সে বলল,
-” ভাইয়া সোহা!”
-” কি হয়েছে সোহার? ও কোথায়? খালার রুমে যে নাই।তোর সাথে কি আজ ঘুমাইছে!”
এটা বলে নীলের রুমের বেডের দিকে তাকায়।বেড খালি।নীল আবার কাঁদছে।তামিম নীলের দু গাল ধরে বলল,
-” নীল বোন আমার! কি হয়েছে বল আমার?”
-” ভাইয়া সোহা মা হতে চলেছে।”
এই কথা শুনে তামিমের মুখে হাসি ফুটে উঠে।নীল বুঝতে পাচ্ছে না তামিমের এই কথা শুনে হাসছে কেন?মুখে হাসি বজায় রেখে তামিম বলল,
-” সোহার কোথায় নীল!”
-” ভাইয়া পরশু দিন সোহা মাথা ঘুরে পড়ে যায়।ডাক্তার নিয়ে আসে দাদু।ডাক্তার বলে সোহা না কি মা হতে চলেছে।”
এটা বলে নীল থামে।কিছুটা দম নিয়ে বলল,
-” এটা জানার পর ছোট মা, মা, সবাই অনেক কথা শুনাইছে।অনেক বাজে বাজে কথা শুনাইছে।বিয়ের আগে অবেৈধ বাচ্চার মা হতে চলেছে।ইত্যাদি।
তার ফ্যামিলি সোহাকে এত খারাপ কথা বলছে ভাবতেই
তামিমের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” সোহা এখন কোথায়? ”
নীল কাঁদতে থাকে।ভাইয়ের মুখে দিকে তাকায়।স্পর্শ রাগ দেখতে পাচ্ছে।নীল জানে তার ভাই সোহার বিষয়টা কিভাবে নিবে।এসব জেনে কি আগের মত ভালোবাসবে সোহাকে।তামিম এবার ধমকে দিয়ে আবার সেই কথা বলল।নীল কেঁপে উঠে বলল,
-” সোহা নেই।”
তামিম নীলের বাহু চেপে ধরে বলল,
-” নেই মানে কি? ”
-” সবাই বাহির করে দিয়েছে।”
তামিম চিৎকার দিয়ে বলল,
-” কেন? ”
নীল ভাইয়কে শান্তনা দিয়ে বলল,
-” ভাইয়া তুমি শান্ত হও আগে।”
-” সেই মুহূর্তে কি কি হয়েছে সব বল আমায়।”
-” সবাই সোহাকে আর খালাকে খারাপ কথা বলে।খালা তখন সোহাকে মারে।আর বলল, এই দিন দেখার আগে দুই মরে যেতে পারিলি না কেন? তোর এই কলঙ্ক মুখ কেন দেখালি আমাহ।এতই মুহুর্তে তোর পাপ নিয়ে তুই আমার সামনে থেকে চলে যাবি।তারপর ছোট মা সোহাকে বাহিরে বের করে দেয়।যেন এই বাড়ি চৌকাঠ না ফেরায়।”
তামিমের দুচোখ অশ্রু ভরে গেছে।সে বলল,
-” সোহা বলিনি তার বাচ্চার বাবা কে? ”
-” আমি কতবার জিজ্ঞেস করেছিলাম।একবার বলেনি।”
কেন বলোনি সোহা।তোমার বাচ্চার বাবা আমি।কেন চলে গেলে আমায় একা করে।ফ্লোরে বসে পড়ে কান্না করতে থাকে।আর বলল,
-” নীল অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি।আমার আরো আগে সবাইকে জানানো উচিত ছিল।”
নীল ভাইয়ের সামনে বসে বলে।
-” কি ভুল করে ফেলেছো ভাইয়া।”
-” সোহা আমার বাচ্চার মা হতে চলেছে।প্রাচ্য’র হলুদের দিন আমরা বিয়ে করে ফেলেছি।”
তামিমের কথা শুনে থমকে যায়।কি শুনছে সে।একবার তার বেষ্ট ফ্রেন্ডকে সোহার এই কথা বলতে পারল না।তার বাচ্চার বাবা তামিম।তাহলে অন্তত অনেক কিছু সামলানো যেত।তামিম বলল,
-” তুই কেন সোহাকে আটকে রাখিস নি।”
তামিম কান্না করতে করতে বলে।নীল বলল,
-” ভাইয়া আমি সোহার পিছন পিছন গেছিলাম।তারপর
সোহা আমার নাগালের বাহিরে চলে যায়।”
তামিম উঠে দাঁড়ায় চোয়াল শক্ত করে।কপালের রগ গুলো ফুলে রয়েছে। মায়ের রুমে যায়।মায়ের মুখের সামনে সত্যি টা বলে।সোহাগী তামিমের গালে চড় মেরে বলল,
-” অসভ্য ছেলে।তোর নজর এত নিচু।তুই কাজের লোকের মেয়েকে বিয়ে করিস।আবার বড় বড় মুখ করে আমায় বলতে এসেছি।”
-” সোহা তোমাদের কাছে কাজে লোক হলে ও।আমার কাছে সে ভালোবাসার মানুষ।আর সে আমার স্ত্রী, আমার সন্তানের মা।এটা সোহা পরিচয় আমার কাছে।আমি সোহাকে খুজে বের করে নিয়ে আসব।দেখি তোমার কি ভাবে আটকাও!”
তামিমে চলে যায়।সোহাগী বেগম শ্বশুড়কে সব জানায়।তিনি সাফ সাফ জানিয়ে দেয় সোহাকে কিছু মেনে নিবে না। সোলোমান মির্জা কি বলবে? বুঝতে পাচ্ছে না।এক এক করে কি হচ্ছে তার বাড়িতে।
সোহাগী আমেনার রুমে যেয়ে বলল,
-” কাজের লোক হয়ে আমায় ছেলের পিছনে মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছিস। একটু ও লজ্জা লাগে তোর।মা, মেয়ে মিলে প্ল্যান করে আমার ছেলেকে ফাঁসাইছিস।”
আমেনা বুঝতে পাচ্ছে না সোহাগী কেন কথা গুলো বলছে।সব যেন তার মাথা উপর দিয়ে যাচ্ছে।আমেনা এগিয়ে এসে বলল,
-” ভাবী আপনি আমায় ভুল বুঝছেন।”
-” ভুল! ভুল আমাদের হয়েছে তোদের মতো কাল সাপকে ঠাঁই দেওয়ায়।এই জন্য এখন ছোবল খেতে হচ্ছে।”

পুরো মির্জা পুর খোঁজা শেষ।কোথায় ও সোহার খোঁজ পায়নি।শহরে চলে আসে সে।দৌড়াছে বেপরোয়া ভাবে।তাকে সোহার খোঁজ পেতে হবে।সোহাকে ছাড়া একমিনিট থাকা যে কঠিন তার কাছে।সোহা কেন তার জন্য অপেক্ষায় করে নাই।একটু যদি অপেক্ষায় করে পড়ে থাকতো।তাহলে সব এখন ঠিক করে দিত।কিন্তু এখন সে কোথায় পাবে সোহাকে।সোহা কোথায় আছে।কিভাবে আছে সে জানে না ? খুব কষ্ট হচ্ছে তার। বুকে অসহনীয় যন্ত্রনা হচ্ছে।

#কাউছার সুলতানা স্বর্ণা
( এই রোজার দিন এত কষ্ট করে প্রতিদান আপনাদের জন্য গল্প লেখি তার বিনিময় আপনারা আপনাদের ভালোলাগা খারাপ লাগা জানাতে ইচ্ছুক হোন না।তাহলে আর কি জন্য গল্প লিখি বলুন তো।)

স্বপ্নীল ৪৯,৫০

0

স্বপ্নীল
৪৯,৫০
-” অনেকদিন তো হয়েছে এবাড়িতে এসেছিস।তোর প্রান প্রিয় বর যে একবার আসেনি তোকে দেখতে।”
রোদ মোবাইল স্ক্রল করছিল।রেহানের কথা শুনে চোখ তুলে তাকায়।বিরক্তি নিয়ে বলল,
-” তোকে কী কৈফিয়ত দিতে হবে।”
-” আমার মনে হচ্ছে সমুদ্র মধু পেয়ে গেছে।নতুন করে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত! তাই বোধ হয় তোর কথা ভুলে গেছে।”
-” অসহ্য!”
এটা বলে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।সিঁড়িতে পা রাখবে তখনই ডোরবেল বেজে উঠে।এত রাতে কে আসবে? বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে রোদ।সমুদ্রকে দেখে দরজা আটকে নিতে গেলেই সমুদ্র হাত দিয়ে বাধা দেয়।তাতে রোদ দরজা আটকাতে পারে না।
-” সরুন দরজা আটকাবো।”
-” শ্বশুর বাড়িতে পা না দিতে না দিতে বের করে দিচ্ছিস।”
-” কার শ্বশুড় বাড়ি? ”
-” আমার! ”
এটা বলে রোদের পাশ কেটে রুমে ঢুকে যায়।সোফা থেকে রেহান মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।তা দেখে রোদকে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয় সমুদ্র।রোদ হতভম্ব! চুড়ান্ত অবাক!সমুদ্র গলা ঝাপটে ধরে বলতে থাকে তাকে নামানো জন্য।কিন্তু সমুদ্র কানে সেই কথা কর্ণপাত হয়নি।সোজা গিয়ে রোদকে বিছানায় নামিয়ে দেয়।দরজা আটকিয়ে রোদের কাছে আসে।রোদ চিল্লিয়ে বলল,
-” আপনার বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেন নি।এখন কোন সাহসে আমার বাড়িতে এসেছেন?”
-” যে সাহসে তুমি আমার নামে মিথ্যে বদনাম দিয়েছো সেই সাহসে।”
রোদ বলল,
-” ওয়েট! ওয়েট!কি বললেন আপনি?”
হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে সমুদ্র বলল,
-” কি বললাম?”
-” তুই থেকে তুমিতে!ব্যাপার কি? ”
রোদের কথা শুনে সমুদ্র শুধু একটু হাসে!

সেদিন স্বপ্ন নীলকে নিয়ে শপিং যায়।অনেক গুলো শাড়ি কিনে দেয়।স্বপ্ন’র দেওয়া শাড়ি থেকে সোনালী পাড়ের লাল শাড়িটা তুলে নেয়।শাড়ির সাথে মিলিয়ে লাল ব্লাউজ পড়ে।হাতে রেশমি চুড়ি পড়ে।খোপায় চারটা লাল গোলাপ দেয়।ঠোঁটে রেড কালারে লিপস্টিক দেয়।আয়না নিজেকে ভালো করে দেখে নেয়।তখনই নীলের কানে কলিংবেলের শব্দ আসে।সিঁড়ি দিয়ে দৌড়িয়ে যায়।দরজা খুলে দেয়।স্বপ্ন দাঁড়িয়ে আছে।স্বপ্ন চোখে সরছে না।মাতাল হয়ে যাচ্ছে।যেন কোনো অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে।নীল লজ্জায় তাকাতে পাচ্ছে না।খুব লজ্জা লাগছে। আড়চোখ তাকায় সে।স্বপ্ন নিজেকে সামলিয়ে বলল,
-” সুন্দর লাগছে।”
এটা বলে উপরে উঠে যায়।নীলের মনটা খারাপ হয়ে যায়।যার জন্য সেজেছে সেই একটু দেখল না।সে তো ভেবেছে স্বপ্ন আর কিছু বলবে।এখন আর ‘ভালোবাসি’ বলে না স্বপ্ন।কেন বলে না তাকে ভালো বাসে? দরজা লাগিয়ে উপরে আসে।
নিজের রুমে না যেয়ে স্বপ্ন রুমে যায়।স্বপ্ন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।চুপি চুপি হেঁটে যায় নীল।দরজা আটকিয়ে স্বপ্ন কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।নীলের স্পর্শ পেয়ে স্বপ্ন বলল,
-” নীল ছাড়ো!”
স্বপ্ন ঘুরে দাঁড়ায়।নীলের হাত টেনে পিছন থেকে সামনে এনে বলল,
-” এত রাতে তুমি এখানে!”
নীল স্বপ্নকে জড়িয়ে ধরে।বুকে মুখ লুকিয়ে অভিমান করে বলল,
-” আপনি এখন আর আমায় ভালোবাসেন না।”
স্বপ্ন কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না। নীল তাকে ভালোবেসে ফেলেছে বুঝে গেছে। স্বপ্ন নীলের থুতনি ধরে বলল,
-” তুমি সুর ওয়ালা কে ভালোবাসো।আমাকে তো নয়।”
নীল কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না।সত্যি তো সে সুর ওয়ালাকে ভালো বাসত।কিন্তু সেই জায়গা যে এখন স্বপ্ন আছে।এই কয়দিন স্বপ্ন সাথে থাকতে থাকতে সুর ওয়ালা কথা ভুলে গেছে।সে এখানে এসেছে সুর ওয়ালা জন্য।কিন্তু এখন স্বপ্ন তার শয়নে স্বপ্নে বিরাজ করছে।
নীলের চোখে যায় স্বপ্নের ঠোঁটের দিকে।সে কাতর কন্ঠে বলল,
-” আমায় একটু আদর করেন প্লিজ।”
স্বপ্ন চোখ উঠে যায় চড়ক গাছে।এই মেয়ে কি বলছে? মাথা ঠিক আছে তো।একদিন কিস করার জন্য তাকে কি মাইর টায় দিল।আর এখন নিজে থেকে আবদার করছে।মনে হচ্ছে সে কল্পনায় আছে।নীলের কথা তার হুস ফিরে।
-” একটা কিস করেন প্লিজ!”
স্বপ্ন মাথা নাড়া দেয়।সে বলল,
-” তুমি ঠিক আছো?”
-” আমি ঠিক নেই।একদম ঠিক নেই।”
স্বপ্ন’র ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল নীল।স্বপ্ন হাত সরিয়ে বলল,
-” রুমে গিয়ে ঘুমাও।”
-” না! আমাকে আদর না দিলে যাবো না।”
-” উফঃ!”
নীল স্বপ্নকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে দিয়ে।তার উপরে চড়ে বসে।স্বপ্ন উঠতে গেলে চেপে ধরে।স্বপ্ন খুব কষ্টে নিজেকে সংযত করছে।এই মেয়ে কেন বুঝছে না? এভাবে কোনো ছেলে কাছে আসলে কন্ট্রোল করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।নীল তার তর্জনী আঙুল রাখে স্বপ্ন’র কপালে,কপাল থেকে নাকে! নাক থেকে ঠোঁটে এসে থামে নীলের আঙুল। ঝুকে পড়ে! নীলের উষ্ণ নিশ্বাস স্বপ্ন মুখে পড়ছে।মাতাল করে দিচ্ছে।ঘোর লেগে যাচ্ছে তার।ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় নীলকে।বিছানার সাথে দুইহাত চেপে ধরে।দুজন দুজনের চোখ অনেক্ষন তাকিয়ে মাতাল হয়।নীলের চোখে ভাষা বুঝতে স্বপ্ন দেরী হয়নি।এই চোখের ভাষা কি বলছে তাকে।চোখ সরিয়ে ফেলে।নীলের ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়া।নীলের সবাঙ্গ কেঁপে উঠে।চোখ বন্ধ করে ফেলে।স্বপ্ন নিজের পা দিয়ে নীলের পা প্যাঁচিয়ে ধরে।চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।নীলের কমলার কোয়ার মত ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরে।নীল স্বপ্নকে চুল খামচে ধরে।

পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ফেলে নাভিতে মুখ ডুবায়।চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।শাড়ির কুচি গুলো খুলে ফেলে।তখনই স্বপ্ন হুস ফেরে।কি করতে যাচ্ছিল সে।নীল না হয় কাছে এসেছে !তাই বলে সে!কিন্তু সে নিজেকে কেন কন্ট্রোল করতে পারিনি।এভাবে বিয়ের আগে তার ভালোবাসাকে কিভাবে অপবিত্র করতে গেছিল।রাগে নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করে।উঠে বাহিরে চলে যায়।নীল স্বপ্ন স্পর্শ না পেয়ে সে চোখ খুলে।স্বপ্নকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায়।অনেক্ষণ স্বপ্ন জন্য অপেক্ষা করে। স্বপ্নকে আসতে না দেখে উঠে বসে।শাড়ি গায়ে প্যাঁচিয়ে কান্না করতে থাকে।কেন স্বপ্ন চলে গেছে।

নীল সকালে ঘুম থেকে উঠে নিচে যায়।স্বপ্ন দিকে তাকায়! স্বপ্ন তার দিকে একবার ও তাকায়নি।স্বপ্ন নীলকে বলল,
-” নাস্তা খেয়ে ব্যাগপ্যাক গুজিয়ে নাও।”
নীল স্বাভাবিক ভাবে বলল,
-” কেন? ”
-” তুমি বাড়িতে যাবে ১০ টার ট্রেনে।”
-” মানে কি? আপনি বলছেন সাতদিন যেন আপনার সাথে থাকি।এখনও দুদিন বাকি আছে।”
-” থাকুক।তুমি আজকে বাড়ি চলে যাবে এটাই আমার শেষ কথা।”
নীল জেদ ধরে বলল,
” আমি যাবো না।”
” যাবে মানে কি? প্রাচ্য’র সাথে কথা হয়েছে।প্রাচ্য তোমার দাদুকে জানিয়ে দিয়েছে তুমি আজকে বাড়ি ফিরবে?”
নীল রাগ দেখিয়ে বলল,
-” আমি যাবো না।”
স্বপ্ন রাগ দেখিয়ে সামনে রাখা নাস্তা ফেলে দিয়ে বলল,
-” তুমি যাবে।এক্ষুনি গিয়ে রেডি হও।”
এটা বলে উঠে যায়।নীল কান্না করতে থাকে।কেন স্বপ্ন এমন করছে? সুর ওয়ালাকে ভালোবাসে বলেই।
দুজন গাড়িতে বসে আছে।কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।নীল জানালার দিকে তাকিয়ে চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করছে। প্লাটফর্ম এসে গাড়ি থামে।লাগেজ স্বপ্ন হাত থেকে নীল নিয়ে যায়। বলল,
-” নিজের বোঝা নিজে টানতে পারি।”
স্বপ্ন আর কিছু বলল না।প্লাটফর্ম প্রাচ্য ছিল।বোন কে জড়িয়ে ধরে ট্রেনে উঠে যায়।ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।যদি স্বপ্নকে একবার তাকে ডাক দেয়।যদি বলে ফিরে আসতে কিন্তু স্বপ্ন বলেনি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কেবিনে যায়।স্বপ্ন প্রাচ্যকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায়।
নীল বাড়িতে গিয়ে মন মরা হয়ে থাকে।কারো সাথে কোনো কথা বলছে না।৫ দিনের স্মৃতিকে যেন তার কাছে পাঁঁচ বছরে জমানো স্মৃতি মনে হচ্ছে। নীল একটা বিষয় খুব আশ্চর্য হয়।বাড়িতে আসার পর থেকে সুর ওয়ালার কথা এবারও মনে পড়েনি। মিনিট মিনিট শুধু স্বপ্ন কথাই মনে পড়েছে।তার মানে কি সুর ওয়ালার সুর ছিল একটা মোহ, ভালোলাগা।আর স্বপ্ন তার ভালোবাসা।হ্যাঁ স্বপ্ন তার ভালোবাসা।কিন্তু এত দেরী হয়ে গেলো কেন? নিজের মনে কথা বুঝতে।
বাড়িতে এসেছে ১৫ দিন হয়েছে। একবার ও স্বপ্ন তাকে ফোন দেয়নি।তাই বাধ্য হয়ে স্বপ্নকে সে ফোন দেয়।কেটে দেয়।আবার দিলে বন্ধ বলে।মোবাইল বিছানায় ফেলে হাউ মাউ করে কান্না করতে থাকে।

সোহার কেন জানি খুব অশান্তি লাগে? কিছু খেতে পারে না।বমি আসে তার।বুঝতে পাচ্ছে না তার কেন এমন হচ্ছে।মাথাটা ঘুরাচ্ছে।তামিম বাড়িতে থাকলে হয়তো তার সমস্যা গুলোর কথা বলতে পারত।কিন্তু তামিম এখন ঢাকায় আছে।

রান্না ঘর থেকে বের হতে মাথায় ভিতরে চক্কর দিয়ে উঠে। মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।নীল পানি খাওয়ার জন্য আসলেই দেখে সোহা নিচে পড়ে আছে।চিৎকার দিয়ে বাড়ি সবাইকে ঢেকে আনে।আমেনা মেয়ে অবস্থা দেখে কান্না করতে থাকে। সোলোমান মির্জা তাদের ফ্যামিলি ডক্টর কে ফোন করে আনে।সোহাকে দেখে আমেনাকে বলল,
-” আপনার মেয়ে মা হতে চলেছে।”
উপস্থিত সবার মাথায় যেন ঠাডা পড়েছে।এমন মনে হচ্ছে তাদের।কারো মুখে কোনো কথা নেই।পরিবেশটা থমথমে হয়ে উঠেছে।

কাউছার স্বর্ণা
স্বপ্নীল
৫০
বার বার সমুদ্র রোদকে জড়িয়ে ধরছে।রোদ বার বার ঝামটা মেরে ফেলে দেয় সমুদ্র দুহাত দিয়ে।সমুদ্র এবার শক্ত করে রোদকে জড়িয়ে ধরে।
-” এবার দেখি কি করো!”
কিছুক্ষণ টানা হিঁচড়া করতে থাকে।পা দিয়ে সমুদ্র’র পায়ে আঘাত করে।সমুদ্র রোদকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় শুয়ে দেয়।আজ খুব আলতো করে রোদকে স্পর্শ করছে।রোদ ইচ্ছা মত সমুদ্র পিঠে কিল ঘুষি দিতে থাকে।সমুদ্র মুখ উঠিয়ে বলল,
-” এমন করছো কেন? ”
রোদ রাগ দেখিয়ে বলল,
-” চাহিদার মিঠানোর প্রয়োজন হয়েছিল বলে আমার কাছে এসেছেন?”
-” তুমি যদি তাই মনে করো।তাহলে তাই!
-” কিন্তু আপনার চাহিদা মিঠানোর ইচ্ছুক আমার নেই।ছাড়ুন! কি পেয়েছেন আমায়? ”
সমুদ্র ছাড়ার বদলে আরো ঝাপটে ধরে।আজ খুব আলতো করে স্পর্শ করছে।সমুদ্র ছোঁয়া আজ কোনো হিংস্রতা নেই।আছে শুধু ভালো বাসা।তারপর এখন আর রোদের এই ভালোবাসাময় স্পর্শ গুলো নিতে খারাপ লাগছে।নিতে পাচ্ছে না!

সোহার মা হতে চলেছে! কি করে? বিয়ের আগে মা অসম্ভব! তার মানে কি সোহার সাথে কেউ জোর করেছে? কে এমন খারাপ কাজ করবে? সোহার এই কথা ভাইয়া জানলে কিভাবে রিয়েক্ট করবে।বার বার নীলের মনে এসব প্রশ্ন আসছে।এসব ভাবতে ভাবতে সারারাত নির্ঘুম কেটে যায়।

সকাল গোসল করে রোদ রুম থেকে বের হয়।বারান্দ দিয়ে নিচে নামতে নিলেই রেহান তার হাত ধরে দেওয়ালে সাথে চেপে ধরে।রোদ বলল,
-” রেহান, তোকে কয়বার বলছি আমার আশে পাশে আসবি না।এখন যদি হাত না ছাড়ছ।সবাই ডেকে এনে তোর লুচ্চা মার্কা চরিত্রটা দেখাবো।”
রেহান বাঁকা হেসে রোদের কোমরে হাত দেয়।রেহানের স্পর্শ রোদের পুরো শরীর ঘিনঘিন করে উঠে। চোখ বন্ধ করে মোচড়ামুচড়ি করছে।রেহান তাকে ঝাপটে ধরে।তার কোমরে স্লাইড করতে থাকে।নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।বার বার আল্লাহকে ডাকে।যেন এই লুচ্ছা ব্যাটার থেকে ছাড়া পেতে পারে।রেহান কিছু বুঝে উঠার আগে কেউ তার পিছন থেকে টি-শার্ট টেনে ধরে।মুখ ঘুরালেই তার নাক বরাবর ঘুষি পড়ে।মুখ থেঁতলে ফ্লোরে পড়ে।ক্রোধান্বিত গলায় বলল,
-” তোর এত বড় সাহস আমার বউকে স্পর্শ করিস।তোর ভাগ্য ভালো বলেই আজ এর চেয়ে বেশি কিছু করলাম না।নেক্সট টাইম রোদের আগে পিছে তোকে যেন না দেখি।”
এটা বলে রোদের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে।ধাক্কা মেরে খাটে ফেলে দেয়।রোদ উঠতে গেলেই সমুদ্র ধমক দেয়।শুয়ে তাকে তাই।টিস্যু বক্স নিয়ে রোদের পাশে বসে।পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে রেহানে যে জায়গা স্পর্শ করছে সেই জায়গা বার বার টিস্যু দিয়ে মুচতে থাকে।রোদ হেসে দেয় সমুদ্র কান্ড কারখানা।তার মুখটাকে শক্ত করে ফেলে শাড়ি ঠিক করে কঠিন করে কথা বলে,
-” এত প্রেম দেখানোর প্রয়োজন নেই! ”
-” আমার জন্য কি মেয়ের অভাব পড়ছে নাকি! তোকেই প্রেম দেখাতে যাবো।”
সমুদ্র কথা রোদের মেজাজ চটে যায়।সে বলল,
-” এক্ষুনি এই মুহূর্ত আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন!”
রোদ কে কাছে টেনে বলল,
-তুই চল আমার সাথে।তাহলে আর এই বাড়িতে আসব না।”
সমুদ্রকে ধাক্কা মেরে রোদ বলল,
-” বাড়িতে যখন ঢুকতে দেন নাই।তখনই মনে ছিল না।”
-” রাগে বশে করিছি আমি এগুলো।”
-” এখন আমি খুব ঠান্ডা মেজাজে বলছি।আপনার সাথে আমি কখনো ফিরব না।”
সমুদ্র রোদকে কাঁধ তুলে নিয়ে বাড়িতে থেকে বের হয়ে যায়।

তৃণ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়।আজও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে শিহাব,কানে ফোন।তৃণ চোখ তুলে তাকায়।প্রাচ্য বারান্দা দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।তৃণ আবার দুজনকে জহুরী চোখে দেখে।যা বোঝার সে বুঝে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাছে যায়।
তৃণকে চলে যেতে দেখে শিহাব কান থেকে ফোন সরিয়ে রহস্যময়ী একটা হাসি দেয়।প্রাচ্যকে ফোনে কথা বলতে দেখে।তৃণ কে দেখানোর জন্য নিজের কানে ফোন ধরে।যাতে প্রাচ্যকে নিয়ে তৃণ’র মনে সন্দেহ ঢুকে।

এতদিন সমুদ্র পিছনে একটু ভালোবাসার জন্য অনেক ঘুরেছে।সমুদ্র ভালোবাসার বদলে তাকে অনেককটু কথা বলেছে।নানা ভাবে তাকে অপমান, অপদস্থ করেছে।এখন আসছে ভালোবাসা দেখাতে।বউ বউ বলে মাথা খেতে।এত সহজে সমুদ্র ভালোবাসা সে গ্রহণ করবে না।তাকে যেমন ভাবে ঘুরিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে, সমুদ্রকে তাই ফেরত দেবে।সমান সমান হয়ে গেলে।তারপর সমুদ্র ভালোবাসা গ্রহণ করবে।সুখে সংসার করবে।রোদ রুমের দরজা আটকিয়ে এসব ভাবতে আছে।সমুদ্র বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে দরজা খোলার জন্য।সমুদ্র নিরুপায় হয়ে বের হয়ে যায়।বিকালে ৪ টায় একটা মিটিং আছে।তামিম আর সে যাবে মিটিং।

সমুদ্র সহ ডিনার করেছে এসেছে তামিম।শুয়ে বিছানায় চটপট করতে থাকে।বাড়িতে থাকলে তার বুকে গুটিসুটি মেরে সোহারানি শুয়ে থাকত।এই কয়দিন তার বুকটা খুব খালি খালি লাগে।তাই ঘুম আসে না।সারা রাত সোহার স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দেয়।পরশু বাড়িয়ে চলে যাবে।তারপর সবাইকে জানিয়ে দিবে তাদের বিয়ে কথা।সেদিন হয়তো অনেক বড় ঝড়ের মুখে পড়তে হবে তাকে।মাঝরাতে রোদের ঘুম ভেঙে যায়।একটা দড়ি এনে খাটের সাথে সমুদ্র হাত পা বেঁধে দেয়।
বাথরুম থেকে পানি এনে সমুদ্র গায়ে ঢালে।পানি পড়াতে সমুদ্র আতঁকে উঠে।উঠে বসতে গেলে বাঁধা পায়।হাত,পা তার বাঁধা। ।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাত, পা নাড়াতে থাকে। কার এত বড় সাহস তার সাথে এমন করছে।চোখ পড়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা একটা অবয়ব উপরে।সে অবয়ব মুখে হাসি।যেন সে বিশ্বজয়ী করেছে,এরকম কান্ড করে।সে অবয়ব আর কেউ নয়।সে হলো রোদ।
কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
-” রোদ, বৃষ্টি ঝড় কি এখন রুমের ভিতরে হয় নাকি!”
রোদ হাতে রাখা বালতি রেখে লাইট অন করে।সে বলল,
-” শুধু ঝড় নয়।।এখন সুনামি হবে রুমে ভিতরে।”
এটা বলে পাশে রাখা বালতি হাতে নেয়।যথা দ্রুত বাথরুমে যায়।আরেক বালতি পানি এনে ঢেলে দেয়।সমুদ্র লম্বা চুল গুলো চোখে এসে পড়ে।
-” কি হচ্ছে রোদ!”
-” তুই আমায় শারীরিক নির্যাতন করেছিস।এখন থেকে তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোকে মানুষিক নির্যাতন করব।”
-” রোদ তোর এত বড় সাহস তুই আমাকে ‘ তুই ‘ করে কথা বলিস।খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু। ”
সমুদ্র ভেজা চুলগুলো মুঠো করে ধরে বলল,
-” এক বার কেন একশো বার তোকে ‘ তুই ‘ বলল।তুই, তুই, তুই….!”
-” একবার ছাড়া পাই শুধু, তোর ‘তুই ‘ বলার বার করব।”
-” আগে তো ছাড়া পায়।তারপর পারলে যা পারিস তাই করিস।কিচ্ছু টি বলব না তোকে।”
সমুদ্র ধমক দিয়ে বলল,
-” রোদ!”
সমুদ্র চিবুক ধরে বলল,
-” এই তুই নিজেকে কি মনে করিস! তোর ধমকে রোদ ভয়ে চুপসে যাবে।নো ওয়ে! তোকে এক টানা চারদিন গৃহবন্দী করে রাখব।”
এটা বলে রোদ চলে যায়।সমুদ্র নিজেকে গালাগাল করতে থাকে।কেন সে রোদের প্রতি দরদ দেখাতে গেছে।এই মেয়েদের কে যদি ছেলেরা একটু পাত্তা দেয় তাহলে তারা মাথা চড়ে বসে।যেমন এখন রোদ সমুদ্র মাথা বসে নাচতেছে।রাগ হচ্ছে! খুব রাগ হচ্ছে।ইচ্ছা করছে আস্তো চিবিয়ে খেতে রোদকে
এখন এই স্যাঁতস্যাঁতে বিছানায় দেখে তার গা গুলিয়ে আসছে। একমুহূর্ত থাকা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে।তাহলে চারদিন কিভাবে থাকবে।

# কাউছার স্বর্ণা
গঠনমূলক মন্তব্য চাই।

স্বপ্নীল ৪৭,৪৮

0

স্বপ্নীল
৪৭,৪৮
শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন’র সাথে করে নীলকে আসতে হলো।রাতে এসে নীল কোনো কথা বলল না।স্বপ্ন নীল কে রুম দেখিয়ে চলে এসেছে নিজের রুমে ঘুমাতে।সকাল সকাল স্বপ্ন এসে হাজির হয় নীলের রুমে সামনে।দরজা না আটকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে নীল।স্বপ্ন ঘড়ি দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বেজে গেছে।নীলের পাশে সেন্টার টেবিলে টেনে এনে বসে।আস্তে আস্তে বলল,
-” নীল!”
নীলের ঘুম পাতলা।এক ডাকে সে নড়ে চড়ে উঠে।হাত পা মেলে ঘুম ঘুম চোখে বসে পড়ে।হাই দিতে দিতে বলল,
-” আমি কোথায়? ”
স্বপ্ন বলল,
-” ভুলে গেলে নাকি? ”
স্বপ্ন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায়!
-” আপনি? আপনি আমার রুমে কি করছেন? আর আমার বাসায় কি করে ঢুকলেন?”
স্বপ্ন হেসে দেয়! বলল,
-” কালকে রাতে আমার সাথে এসেছিল আমার বাসায়।ভুলে গেলে না কি? ”
স্বপ্ন কথা শুনে মনে পড়ে যায় তার।মন খারাপ হয়ে যায়।আলসামি করে আবার শুয়ে পড়ে।
-” আরে! কি করছো?”
বালিশে মুখ গুঁজে বলল,
-” আপনি অনেক খারাপ! খুউব!”
নীলের হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসায়।হেসে বলল,
-” আমি সত্যি খুব খারাপ।”
-” আপনি হাসবেন না? আপনি হাসলে আমার গা পিত্তি জ্বলে যায়।”
স্বপ্ন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
-” তাই!”
নীল স্বপ্নর চুল টেনে বলল,
-” তাই!”
স্বপ্ন নীলকে ঢেলে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দেয়।বের হয়ে খাটের এসে শুয়ে পড়ে।স্বপ্ন নীলকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে ডায়নিং বসায়।নীল মনে মনে বলল,
-” শালা! খুব শখ না বউ জামাই খেলার।দেখি আমায় কি করে সহ্য করিস!”
স্বপ্ন বলল,
-” কি খাবে?”
-” ভাত আছে! ভাত খাবো!”
-” সাত সকাল বেলা ভাত পাবো কোথায়? ”
-” ভাত পাবে কোথায়? সেটা আমি জানি না।আমার ভাত চাই এখন চাই। ১০ মিনিট দিলাম ভাত রান্না করেন? ”
-” ১০ মিনিট কি রান্না করায় যায়।”
-” সেটা আমার জানার বিষয় নয়।”
স্বপ্ন কিচেনে যে রান্না বসায়।নীল অন্য একটা চেয়ার এনে পা তুলে দেয়।স্বপ্নকে জিজ্ঞেস করল,
-” বাই দ্য ওয়ে আপনার মা, বাবা কই? ”
-” তারা বাসায়? ”
-” তাহলে আমরা কোথায়?”
-” বাসায়।এটা ও আমাদের বাসা।”
নীল কান্না করতে করতে বলল,
-” আমাকে এভাবে একলা একটা বাসায় এনেছেন আমার ইজ্জত হনন করতে। ”
কিচেনে থেকে বেরিয়ে এসে ধমক দিয়ে বলল,
-” অভিনয় পাক্কা করতে পারো তুমি! হাতে ক্ষমতা থাকলে তোমাকে অস্কার দিতাম।”
নীল আবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়।স্বপ্ন নীলের সামনে বসে বলল,
-” নীল সোনা কান্না থামাও!”
-” আমি কিছু খামু! খিদে পেয়েছে! ”
স্বপ্ন হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পাচ্ছে না।এরকম একটা তারছিঁড়া মেয়েকে সে পাগলের মত ভালো বাসে।
-” ভাত রান্না হোক তারপর খেও।”
-” আমি সকালে ভাত খাই না।”
-” তুমি তো বললেই!”
-” বলছি তো কি হয়েছে।এখন আবার আমার মুড চেঞ্জ হয়ে গেছে।এখন ভাত খামু না।আমার জন্য পিৎজা, বার্গার আনেন।”
ওই খাবার গুলো হোমডেলিবারিতে অর্ডার করে।কিছুক্ষণ মধ্যে চলে আসে খাবার।সেগুলো দেখে নীল বলে এসব খাবার সে খায় না।বমি আসে।খাবার দেখে ওয়াক! ওয়াক করতে থাকে।স্বপ্ন’র পাগল পারা হয়ে যায়।তারপর আবার স্বপ্ন নীলের জন্য নুডলস রান্না করে। তা সে খায় না।এভাবে অনেক রান্না করায় স্বপ্ন’র হাতে।লাস্ট পর্যন্ত নীল সেই ভাতই খায়।শুধু স্বপ্ন কে হয়রান করার জন্য এমন করেছে নীল।

রাতের কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ধূসর।আকাশে আজ নেই কোনো তারার মেলা, নেই কোনো চাঁদ। তারপর ধূসর তাকিয়ে আছে নিকষ কালো আকাশটা দিকে।চোখে কোণে বিন্দু বিন্দু পানি চিক চিক করছে।বাম হাত দিয়ে মুছে ফেললে ই আবার ভরে যায়।কেন সোহার সাথে আরো আগে দেখা হলো না।যখন ভালোবেসেছে তাকে।তাহলে কেন তার কপালে সোহা নেই।ভালোবাসি বলার আগে মন ভেঙ্গে গেছে তার।সে মনকে বোঝাতে পাচ্ছে না।তার সোহাকে তাকে ভালোবাসে না।সোহা জীবনে তার আগেই অন্য কারো আগমন ঘটে।
সেদিন রাতে সোহাকে নিয়ে ছাদে যায়।নিজের মনে কথা খুলে বলার জন্য।সোহা হয়তো বুঝতে পেরেছে সে যে কি বলবে?এই জন্য বোধহয় তাকে বলতে না দিয়ে সোহা সেদিন বলল,
-” আমি খুব ভালো করে জানি আপনি কি বলতে চান।কিন্তু আপনার আগে আমার জীবনে অন্য কেউ আগমন ঘটেছে।তার সাথে হৃদয় দেওয়া নেওয়া হয়ে গেছে।আমি আপনাকে বলব।আমার প্রতি যদি আপনার কোনো ফিলিংস থেকে থাকে তাহলে সেই ফিলিংস মুচে ফেলেন।নতুন করে জীবন শুরু করেন? ভালোবাসলে যে পেতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।পারলে আমায় মাফ করবেন।” এটা বলে সেদিন সোহা চলে যায়।একবারের জন্য তাকায় নিয়ে তার দিকে।তাকালে দেখতে পারতো ধূসরের চোখের পানি।হাটু গেঁথে কান্না করেছে সেদিন ছাদের।
ধূসর মুচে ফেলতে পারবে না সোহার প্রতি ফিলিংস।তার প্রথম প্রেম।প্রথম ভালোবাসা।এত সহজে মুচে ফেলা যায়।থাক না তার এক তরফা ভালোবাসা।কত মানু্ষ একতরফা ভালোবেসে পায় না।তারা কি বেঁচে নেই,বেঁচে আছে তারা।তাহলে সে ও পারবে।সারা জীবন একতরফাই ভালোবেসে যাবে।তামিমের রুমে পানি শেষ হয়ে গেছে।পানি খাওয়ার জন্য নিচে নামে।তখনই আমেনা খালাকে দেখে।চিন্তিত মুখে বেসিন থেকে পানি নিচ্ছে।তামিম খালার পাশে এসে বলল,
-” খালা!
আমেনা অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছিল। তামিমের কথায় কানে যায়নি।তামিম এবার একটু জোরে বলল,
-” খালা!”
-” কে?ও! তামিম!এত রাতে নিচে এলে যে!”
-” পানি খেতে এসেছি।রুমে পানি শেষ।”
তামিমের চোখ যায় খালার হাতে ছোট কাপড়ে টুকরা দেখে।হাতে ছোট একটা বাটির করে পানি নিচ্ছে।কারো কি আবার জ্বর হলো নাকি।সে জন্য বোধ হয় জলপট্টি দেওয়ার জন্য পানি নিল।কিন্তু কার জ্বর এসেছে!
-” জ্বর কার এসেছে খালা!”
-” আর বলো না।মেয়েটাকে সারাদিন দেখেছিলাম ভালো আর এখন হাড় কাঁপানো জ্বর এসেছে।”
তামিমের বুকের ভিতরে ধুকধুক করে উঠল।তার প্রেয়সী জ্বর অথচ সে জানে না।জানবে কি করে।সন্ধায় ভালো দেখেছে।আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সোহার ঘরে দিকে চলে গেলে।রুমে যেয়ে সোহার মাথা হাত দিয়ে আঁতকে ঊঠল।পাঁজাকোলা করে নিজের রুমে নিয়ে আসে।আমেনা অবাক! তামিমের এহেন কান্ড।তামিমের পিছু আমেনা ও যায়।সোহাকে শুয়ে দিয়ে কাঁথা টেনে দেয় ।জলপট্টি আনতে গেলে আমেনাকে দেখে।আমেনা হাতে জলের বাটি দেখে সেটা নিয়ে সোহার পাশে বসে।কাপড়ে টুকরা ভিজিয়ে সোহার মাথা দেয়।আমেনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে।তামিম বলল,
-” খালা! সোহা রাতে কিছু খেয়েছে!
-” খেয়েছে!
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমেনা বলল,
-” শুধু শুধু নিচ থেকে কেন আনতে গেলে?সোহাকে তোমার রুমে দেখলে সবাই নানা প্রশ্ন করব।”
আমেনার কথায় তামিমের হুস ফেরে। কি বলবে সে এখনা আমেনাকে?উঠে এসে খালার সামনে দাঁড়ায়।বলল,
-” কেউ কিছু বলবে না।আমি ওর মাথা জলপট্টি দিয়ে দেব।আমার কাছে জ্বরে ওষুধ আছে খাইয়ে দিলে জ্বর কমে যাবে।আমি ওর সাথে আছি।তুমি বরং ঘরে গিয়ে ঘুমায়।”
আমেনা কিছু বলতে গিয়ে ও আর বলল না।অগত্যা নিচে নেমে আসল।দুচিন্তা নিয়ে ঘুমাতে গেলো।তামিম সোহার মাথা হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।সোহা চোখ খুলে তাকায়।তামিম বলল,
-” সন্ধ্যায় ভালো দেখলাম।জ্বর আসল কেন হঠাৎ!”
সোহা খুব আস্তে করে বলল,
-” জানি না!”
-” এখন কেমন লাগছে।”
-” ভালো! কিন্তু শরীর ব্যথা করছে খুব ! ”
তামিমের মনে পড়ে যায় কালকে রাতে তাদের মিলনে কথা।হয়তো সোহার শরীর সে ধকল সহ্য করতে পারেনি তাই হয়তো জ্বর চলে এসেছে।এতটা কাছে আসার কি দরকার ছিল।আর সোহা তাকে মানা করলে হতো।জ্বরে ওষুধ সাথে ব্যথার ওষুধ খাইয়ে দেয়।মাথা আবার পানি দিতে থাকে। গড়গড় করে তামিমের গায়ে বমি করে দেয়।

স্বপ্ন দুই মগ কফি নিয়ে নীলের রুমে যায়।নীল প্রথমে খাবে না বলছে। পড়ে নেয়।কফিতে চুমুক দিয়ে নীল বলল,
-” কবে দেখা করাবেন সুর ওয়ালার সাথে!”
কফির মগে চুমুক দিতে যাবে এমন সময় নীল কথাটা বলল।চোখে তুলে তাকায় স্বপ্ন। বলল,
– “বলেছিলাম তো, সবুরে মেওয়া ফল।”
ফর্সা মুখটা নিকষিত হয়ে যায়।মাথা চুলকিয়ে ভাবতে থাকে।তখনই স্বপ্ন বলল,
-” চুল গুলো আঁচড়াতে পারো না।”
নীল তাকায় স্বপ্ন’র দিকে। ঠোঁট উলটিয়ে বলল,
-” না!”
স্বপ্ন কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
-” এভাবে মাথা চুলকাচ্ছো কেন? উকুন আছে বুঝি?”
নীল ফিঁচলে হেসে বলল,
-” উকুন আ ছে? বেছে দিতে পারবেন? প্রচণ্ড চুলকাচ্ছে?”
স্বপ্ন হেসে বলল
-” তুমি চাইলে পারব।”
কফি মগ রেখে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চিরুনি আর তেল আনে।স্বপ্ন খাটে বসে নীল মেঝেতে।নীলের লম্বা লম্বা চুল গুলো আঁচড়ালে গেলে টান খেয়ে ব্যথা ফেলে নীল তার সেই ভয়ংকর গালি গুলো দেয়।স্বপ্ন হেসে আরো যত্ন করে চুলের তেল লাগিয়ে দেয়।নীল বলল,
-” এবার উকুন ধরেন! ”
স্বপ্ন অনেক্ষন ধরে মাথা এপাশ ওপাশে চুল গুলো দেখে।কিছু পায় না।তারপর অনেক কষ্টে একটা বড় উকুন ধরে নীলের হাত দেয়।নীল সেই উকুন স্বপ্ন চুলে ছেড়ে দেয়। স্বপ্ন রিয়েক্সশন দেখে নীল হেসে কুটিকুটি।নীলের হাসি দেখে স্বপ্ন গম্ভীরা কেটে যায়।নীলের সাথে পাল্লা দিয়ে হাসতে পারে।স্বপ্ন নীলের থুতনি ধরে ঘোর লাগা চোখে বলল,
-” হাসনি বুড়ি! কি করে এত হাসো।তোমার এই ভয়ংকর হাসির প্রেমে পড়ে বার বার মরেছি! ”
নীল স্বপ্ন’র চোখের দিকে তাকায়।এই চোখে গভীরতা মাপার চেষ্টা করে।কি আছে এই চোখে?বার বার তাকালে যে অতল সাগরে সে হারিয়ে যায়।খুব যে কষ্ট হয় সেই সাগর থেকে সাঁতার কেটে উপরে উঠতে।চোখে নামিয়ে লাজুক হেসে কথা ঘোরানোর জন্য বলল,
” এবার আমার চুলে বেনুনি করে দেন? ”
নিজেকে স্বাভাবিক করে স্বপ্ন নীলের চুলে হাত দেয়।বার বার ট্রায় করে বেণি করার জন্য,কিন্তু পারে না।প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে কোনো রকম করে দেয়।
নীলের কেন জানি এখন আর স্বপ্নকে বিরক্তি লাগে না।তার সাথে মিলে এরকম খুনসুটি করতে বেশ ভালোই লাগে।নীল উঠে দাঁড়ায়।সে এবার স্বপ্ন চুল আঁচড়ে দিবে।স্বপ্ন মানা করার সত্ত্বেও বলল,-” আপনি এত কষ্ট করে আমার চুল বেঁধে দিয়েছেন।এবার আমার পালা।কোনো কথা বলবেন না। আর ডিস্টার্ব করার যাবে না।”
স্বপ্ন চুপ হয়ে যায়।মনোযোগ সহকারে চুলে তেল লাগিয়ে দেয়।নীলের আলত স্পর্শ স্বপ্ন যেন ঘুম পাচ্ছে।সে যেন গভীর ঘুমে আছন্ন হয়ে যাচ্ছে।নীল হাতে একটা রাবার ব্যান্ট নেয়।ছোট বাচ্ছাদের যে ভাবে ঝুটি করে সেভাবে স্বপ্ন চুলে ঝুটি করে দেয়।মনে মনে হেসে খুন হয় নীল।

স্বপ্ন নড়াচড়া না দেখে নীল উঠে এসে দাঁড়ায়।তাকিয়ে দেখে স্বপ্ন ঘুমে তলিয়ে গেছে।স্বপ্নকে ভাবে দেখে তার মাথা দুষ্টু বুদ্ধি চাপে।তার ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে রাখে।মেকআপ বক্স থেকে মেকআপ দিয়ে সাজিয়ে দেয়।ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে গেলেই স্বপ্ন সজাগ হয়ে যায়।চোখ মাত্র লেগে এসেছে তার।ঘুম ঘুম চোখে স্বপ্ন বলল,
-” কি করছ আমার সামনে?”
হাতের লিপস্টিকে চোখ যায় নীলের।লুকিয়ে ফেলে।উঠে দাঁড়িয়ে মোবাইল বের করে স্বপ্ন ছবি তুলে নেয়।মোবাইল ফ্ল্যাশলাইট আলো পড়তেই চোখে উপরে হাত দিয়ে বলল,
-” আরে কি করছো?ছবি তুলছো কেন? ”
নীল হেসে বলল,
-” আয়না গিয়ে দেখেন?”
এটা বলে সে পালায়।স্বপ্ন দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।দর্পনে নিজের চেহারা দেখে নীলের পিছু পিছু ছুটে তাকে ধরার জন্য।স্বপ্ন বলল,
-” নীল দাঁড়া ও।তুমি ছবি গুলো ডিলিট করো?”
নীল সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলল,
-” ডিলিট করব না।এফবিতে আপলোড করব!”
স্বপ্ন চিৎকার দিয়ে বলল,
-” না নীল।এমন করো না।”
-” আমি এমন করব!”
স্বপ্ন আর নীল দুজনে ছুটা ছুটি করে।স্বপ্ন নীলের হাত থেকে মোবাইল নিতে চায়।নীল তা দিতে চায় না।নীলকে ঝাপটে ধরে স্বপ্ন মোবাইল নেওয়ার জন্য।নীল কিছুতেই দিবে না পণ করেছে।হাতড়াহাতড়ি মধ্যে দুজনে ধপাস করে সোফা পড়ে যায়।নীল ভয়ে স্বপ্ন’র শার্ট খামচে ধরে।চোখে খুলে তাকাতে দুটো চোখ তাকে মোহময় আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে।নীলের চোখ যায় স্বপ্ন’র ঠোঁট উপরে।সে বুঝতে পাচ্ছে না ছেলেদের ঠোঁট কিভাবে এত গোলাপি হয়।বেশিভাগ ছেলেরাই সিগারেট খেয়ে ঠোঁট কালো কুচকুচে করে ফেলে।স্বপ্ন ঠোঁট দুটো যেন তাকে টানছে।খুব করে টানছে! ঘোর লেগে যায় তার।মাতাল কণ্ঠে সে বলল,
-” আপনি সিগারেট খান না? ”
-” না!
-” কেন খান না? ”
-” এমনি ভালো লাগে না আমার?”
-” আজ থেকে প্রতিদিন এক প্যাকেট করে সিগারেট খাইবেন? ”
-” কি? ”
স্বপ্ন কথা যেন নীলের মাথায় ঢুকছে না। সে তো ঠোঁট গুলো মোহয়ে আটকে আছে!সে বলল,
-” আপনি কি ঠোঁটে লিপস্টিক লাগান!”
নীলের এই আবল তাবল কথা স্বপ্ন মাথায় ঢুকছে না।স্বপ্ন নীলের চোখের দিকে তাকায়।সেই চোখে দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখে তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে নীল।স্বপ্ন উঠে যেতে নিলেই নীল কলার খামচে ধরে একহাতে।আরেক হাত দিয়ে স্বপ্ন চুল খামচে ধরে। স্বপ্ন মাথা ঝুঁকিয়ে ধরে।চোখ বন্ধ করে আগাতে নিলেই স্বপ্ন বাঁধায় দেয়।বাঁধা পেয়ে চোখ খুলে তাকায়।তার ঠোঁটে স্বপ্ন’র হাত! এই হাত দিয়ে তাহলে বাঁধা দিয়েছে।হাতের বাঁধন আলগা পেতেই স্বপ্ন উঠে দাঁড়ায়।চলে যায় সে।

নীল লজ্জা মরে যাচ্ছে।কি করতে যাচ্ছিল সে।এ লোকটা এখন তাকে কি মনে করবে।যাগকে! যা মনে করার করুক।এত সুন্দর ঠোঁট দেখলে কেউ কি কন্ট্রোল করতে পারো।

কাউছার স্বর্ণা

স্বপ্নীল
৪৮
ইদানীং কিছুদিন ধরে রোদের দেখা পাচ্ছে না সমুদ্র।আগের মত এখন আর অফিসে আসে না।ফোন করে মাঝ রাতে বিরক্তি করে না।যতই সমুদ্র বলুক তার এগুলো ভালো লাগে না।কিন্তু তাকে রোদের পাগলামিগুলো খুব টানে এখন।বার বার খালি রোদের কথা মনে পড়ে।অফিসে থাকা অবস্থা মনে হয়।এই বুঝি রোদ এসে বলল,” এনার সাথে ভালোই লটরপটর করতে পারেন।এই জন্য আমায় ভুলে গেছেন?” এখন আর কেউ এসে এই কথা বলে না।কোনো কাজে মন বসে না।রোদ তাকে ইগনোর করছে মানতেই পাচ্ছে না।

অফিসে থেকে ফিরে এসে ক্লান্ত শরীর বিছানা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে করলেই রোদের চেহারা মনে পড়ে।এই কয়দিন তাকে একমিনিট শান্তিতে থাকতে দেয়নি।যতই ঝারি দেখ, ধমক দেখ, কোনো কাজ হয়নি।রোদ সে গুলো গায়ে না মেখে বার বার তার কাছে ছুটে এসেছে।মাঝে মাঝে ঠোঁট কামরিয়ে দিত।

পকেট থেকে মোবাইল বের করে গ্যালারীতে যায়।সেখানে রোদের অসংখ্যা ছবি আছে।বিয়ের দিনে একটা ছবির উপরে চোখ যায় তার।ধূসরে জোরাজুরি তে রোদের কাঁধে হাত দিয়েছে।এটাই তাদের প্রথম কাপল পিক ছিল।

ডায়াল ও যে রোদের নাম্বারে ফোন দেয়।রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না কেউ? কয়েকবার রিং হওয়ার পর কেটে দিচ্ছে।সমুদ্র আবার ফোন দেয় আবার কেটে দেয়।সে খুব ভালো করে বুঝেছে রোদ তাকে ইগনোর করছে।বুক ছিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এফবি আইডি লগ ইন করে! সাথে সাথে নিউজফিইউ রোদের কিছু হাস্যোজ্জ্বল ছবি ভেসে উঠে।রোদের সাথে রেহান আছে।
মুহূর্ত মধ্যে সমুদ্র মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।ছুড়ে মারে মোবাইল। রোদের চিন্ত বাদ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

নীল বার বার স্বপ্নকে জোর করছে সিগারেট খাওয়ানোর জন্য।কিন্তু স্বপ্ন খাচ্ছে না কিছুতেই।নীল কালকে রাতে পণ করেছে স্বপ্ন’র গোলাপি ঠোঁট গুলোকে কালচে বানিয়ে ফেলবে।স্বপ্নকে সিগারেট খাইয়ে।কিন্তু স্বপ্ন রাজি হচ্ছে না।নীল বলল,
-” এই সিগারেট প্যাকেট যদি আমার তামিম ভাইয়া বা সমুদ্র ভাইয়াকে দিতাম তাহলে তারা খুশিতে ১০০০ টাকা দিত।আর আপনি! ”
স্বপ্ন প্যাকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে নীলের হাতে দিয়ে বলল,
-” টাকার দরকার তো টাকা নাও।তারপর আমায় মাফ করো।এই সিগারেট আমি কিছুতে খেতে পারবো না।”
নীলের অপমানে রাগে দঃখে কান্না আসছে।তার ভাইয়াদের সিগারেট খাওয়া মানা। তারা সব সময় লুকিয়ে সিগারেট খায়। যদি সে স্ব-ইচ্ছা ভাইদের কে সিগারেট দিতো….তাই জন্য কথা বলছে সে।টাকা গুলো ছুড়ে মারে স্বপ্ন মুখের উপরে।বলল,
-” আমার কি আপনার ছোটলোক মনে হয়।আপনার থেকে আমি টাকা নেব।”
এটা বলে হনহন করে বেরিয়ে যায়।

সকালে অফিসে যাওয়ার সময় জ্যামে আটকা পড়ে সমুদ্র।তার পাশে এসে আরেকটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়।সেই গাড়ির জানালার গ্লাস নেমে যেতে দেখতে পায় রোদকে।রোদ ড্রাইভিং করছে তার পাশের চিটে রেহান বসে আছে। কিভাবে তারা গাড়িতে বসে হাসি তামাশা করছে! সমুদ্র খুব রাগ হচ্ছে।এখনই কেন জ্যামে আটকা পড়তে গেলে।ইচ্ছা করছে ছেলেটাকে গাড়ির ভিতর থেকে টেনে এনে ভক্তা করে ফেলতে।সিগন্যাল শেষ হতেই সমুদ্র’র গাড়ি চলে যেতে দেখে রোদ রেহানের থেকে দূরে সরে যায়।সমুদ্র কে দেখেই ইচ্ছা করে রেহানে ঘা ঘেঁষে বসেছে।

শার্ট জিন্স পড়ে প্রাচ্য ভার্সিটি যাওয়ায় জন্য বের হয়।তখনই ডায়নিং কাছ থেকে খাদিজা এসে বলল,
-” এসব কেমন বেশভূষা! ”
তৃণ ডায়নিং থেকে প্রাচ্যকে দেখছে।প্রাচ্য মুখে বিরক্তি নিয়ে খাদিজাকে এড়িয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই খাদিজা বলল,
-” তৃণ দেখছিস কী অসভ্য মেয়ে।আমি কথা বলছিস তা না শুনেই চলে যাচ্ছে।”
প্রাচ্য খাদিজার দিকে তাকিয়ে বলল,
-” প্রতিদিন এককথা শুনতে ভালো লাগে না।নতুন কিছু আপডেট করলে ভালো হয়।”
প্রাচ্য চলে যায়।খাদিজা পিছন থেকে হাক দিয়ে বলল,
-” বাইরে যাচ্ছে।স্বামী সামনে বসে আছে।একবার তাকে বলার প্রয়োজনবোধ করে না।”
তৃণ আর খেতে পারেনি সে উঠে দাঁড়ায়।রোদকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে। প্রাচ্য কোথায় গেছে।রোদ বলেছে প্রাচ্য ভার্সিটি যাচ্ছে।এক্সাম আছে প্রাচ্য’র।

ভার্সিটি যায় তৃণ।প্রাচ্যকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে।অনেক্ষন ভার্সিটি গেইট দাঁড়িয়ে থাকে।প্রাচ্যকে আসতে না দেখেই তৃণ ক্যাম্পাসে ঢুকে।কতদিন হয়েছে সবাই মিলে ক্যাম্পাস আসা হয় না।ক্যান্টিন ঢুকে দেখে।একই টেবিলে দুজন মানু্ষ বসা।প্রাচ্য’র সামনে চেয়ারে শিহাব বসে আছে।তৃণ চোখ যায় টেবিলে রাখা দু’টো হাতের দিকে।শিহাব প্রাচ্যর হাত ধরে আছে।
সে আর একমুহূর্ত দেরী না করেই ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায়।আর থাকা যাবে না এখানে।ইদানীং প্রাচ্য বাসায় থাকলে মোবাইলে বেশি সময় দেয়।মাঝে মাঝে বারান্দা দাঁড়িয়ে কথা বলে।তার মানে কি শিহাবের সাথে কথা বলে।এই জন্য তাকে এড়িয়ে যাচ্ছস
এসব ভাবতেই ভাবতে কখন যে ভার্সিটি গেইট পেরিয়ে মেইন রাস্তা চলে এসেছে তার কোনো খেয়লা ছিল না।সিএনজি সাথে ধাক্কা খায়। হাত, পা কপাল ছিঁলে যায়।পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা পায়।স্বপ্ন ঢাকার বাইরে যাবে সেজন্য প্রাচ্যকে ঢেকে আনে নীলের সাথে থাকার জন্য।দুইবোন মিলে রান্না করে।নানা বিষয় আড্ডা দিয়ে ঘুমাতে যায়।নীলের চোখ ঘুম নেই।বিছানা এপাশ ওপাশ করতে থাকে।চোখ বন্ধ করলেই স্বপ্ন’র হাসিমাখা চেহারা ভেসে উঠে।আজান্তে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।

দুইদিন পর প্রাচ্য বাসায় ফিরে।খাদিজা তাকে দেখে অনেক বকা ঝকা করে।রুমে এসে তৃণকে দেখে।মাথা ব্যান্ডেজ করার।পায়ে গোড়ালিতে ব্যান্ডেজ করার।পা মেলে শুয়ে আছে খাটে।পেটের উপরে ল্যাপটপ রাখা।কাজ করছে।প্রাচ্যকে রুমে ঢুকতে দেখে ও তাকায়নি সে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৃণকে আড়চোখে দেখতে থাকে।প্রাচ্যর কেন জানি জড়তা কাজ করছে তৃণ সাথে কথা বলতে।তৃণ এই অবস্থা তাকে একবার জানায়নি।আর সে একবারের জন্য দুদিন তৃণ কে ফোন করে নি।তৃণ পাশে এসে বসে বলল,
-” কি ভাবে এমন হয়েছে তোর?”
একবারের জন্য তৃণ তাকায়নি।নিজের কাজে সে ব্যস্ত।তৃণ বাহুতে হাত দিলে তৃণ এক ঝটকা মেরে ফেলে দেয়।ল্যাপটপ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।সেন্টার টেবিলে ল্যাপটপ রেখে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে নিচে যায়।সেদিন গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে হাত, পা কপাল ছিঁড়ে যায়।পায়ের গোড়ালিতে একটু বেশি ব্যথা পাওয়াতে ব্যান্ডেজ করে দেয় ডক্টর।

রাতে দুজন দুইপাশ করে শুয়ে আছে।কারো মুখে কথা নেই।তখনই প্রাচ্য’র মোবাইলে ফোন আসে।মোবাইলটা তৃণ পাশে রাখা ছিল বলে মোবাইলে স্কীনে শিহাবের নামটা দেখতে পায়।প্রাচ্য মোবাইলটা নিয়ে উঠে বারান্দা চলে যায়।প্রাচ্য বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরে বলল,
-” বললাম না, আমায় যেন আপনি ফোন না দেন!”
-” বিশ্বাস করো প্রাচ্য!সেদিন আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি।তোমাদের বাড়ি উদ্দেশ্য বের হয়ে ছিলাম।কিন্তু তোমার বন্ধুরা আমায় তুলে নিয়ে আমার ফোন থেকে এরকম মেসেজ করেছে।তাতে আমার কি দোষ।দোষ তোমার বন্ধুদের।তারা প্ল্যান করে আমার সাথে এরকম করেছে।”
-” এই কথা আর কয়বার বলবেন।”
-” যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমার কাছে আসবে না।তুমি ওই তৃণকে ছেড়ে আমায় কাছে চলে আসো।আমি তোমাকে ভালোবাসি।বিয়ে করতে চাই তোমাকে।”
-” কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না। দ্বিতীয় বার যেন আপনার থেকে যেন ফোন না আসে।”
-” আমি যখন তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে তো আমার হতে হবে।”
-” থ্রেড দিচ্ছেন!”
-” তোমাকে আমি না পেলে কাউকে পেতে দিব না।তাই ভালোয় ভালোয় বলছি আমার কাছে চলে আসো।”
প্রাচ্য ফোন কেটে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। শিহাবের একটা কথা বার বার ভাবাচ্ছে।সেদিন ভার্সিটি তে শিহাব বলছে বন্ধুরা এরকম করেছে।তার মানে কি শিহাব বিয়ে করতে না আসা ওদের প্ল্যান ছিল।যাতে আমার আর তৃণ বিয়ে হয়।সেই প্ল্যান কি তৃণ যুক্ত ছিল।যদি বা তৃণই যুক্ত থাকে তাহলে তৃণ কেন বলছে স্বপ্ন জন্য তাকে বিয়ে করেছে।তার মানে কি এই প্ল্যান তৃণ জানত না।তৃণকে জিজ্ঞেস করলেই শিওর হওয়া যাবে।খাটের হেলান দিয়ে বসে প্রাচ্য বলল,
-” শিহাব কে যে কিডন্যাপ করছে স্বপ্ন।সেটা কি তুই জানতি।”
তৃণ ভ্রু কুঁচকে যায়।সে বলল,
-” গাঞ্জা খেয়েছিস নাকি।স্বপ্ন কেন শিহাবকে কিডন্যাপ করাতে যাবে।শিহাব তোকে বিয়ে করতে চাইনি তাই তো মেসেজ করেছে তার বাবা মাকে!”
-” শিহাব বলছে সেই মেসেজ তার মোবাইল থেকে তোরা করছিস।”
তৃণ মেজাজ গরম করে বলল,
-” এত শিহাব শিহাব করছিস কেন? আমি এসব কিছু জানি না।আমায় এই ব্যপারে কিছু জিজ্ঞেস করবি না।”
প্রাচ্য মোবাইল খুলে স্বপ্নকে কল করে।শিহাবের কে যে কিডন্যাপ করা হয়েছে তা জিজ্ঞেস করে।স্বপ্ন বলল,
-” কি করব আমরা।তোদের দুজনকে বোঝাতে বোঝাতে হয়রান হয়ে গেছি।তাই তো লাস্ট পর্যন্ত আমাদের কিডন্যাপার হতে হয়েছে।”
-” তাই বুঝি এরকম করবি!”
-” কেন? শিহাবের জন্য কি তোর দরদ উতলে পড়ছে নাকি! ”
-” না! ”
-” শোন এই প্ল্যান আমাদের কে তোর ভাইয়ে দিয়েছে।”
-” কি? ভাইয়া জানত।”
-” হুম!”
-” তৃণ কি জানত।?”
-” না।তৃণ কে জানালে প্ল্যান ভেস্তে দিত ।তাই তোরা দুজন ছাড়া আর সবাই জানত।”

সকালে বিকালে শিহাব তৃণদের রুমে সামনে বারান্দা বরাবর রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকত।প্রাচ্য মাঝে মাঝে দেখত।কিন্তু ইদানীং এখন আর শিহাব তাকে ফোন দেয় না।শিহাব কি তার জন্য এখানে আসে নাকি অন্য কোনো কারণে প্রাচ্য বুঝতে পারে না।এসব কিছু তৃণ’র চোখ এড়ায় না।

#কাউছার স্বর্ণা

স্বপ্নীল ৪৬

0

স্বপ্নীল
৪৬
তামিম ঢাকা থেকে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়।বাড়ি ফিরে রুমে ঢুকে সোহাকে দেখতে পায়।তামিমের দেওয়া সেদিনের শাড়ি পড়েছে সোহা।শাড়ির সাথে মিলিয়ে গয়না পড়েছে ।সোহা তামিমের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলে।লজ্জা লাগছে খুব! সাথে জড়তা কাজ করছে।না জানি তামিম কি মনে করে বসে।ক্লজেট থেকে টি-শার্ট আর ট্রাউজার এনে বাড়িয়ে দেয় তামিমের দিকে।
তামিম সোহার হাত থেকে জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।সোহা ভাত বাড়তে নিলেই তামিম বাধা দিয়ে বলল,
-” আমি খেয়ে এসেছি।”
সোহা চোখ তুলে তাকায়।বোঝার চেষ্টা করে তামিম এখন কি রাগ করে আছে তার উপরে।তামিম বলল,
-” খাবো না আমি।এগুলো নিয়ে যা।”
সোহা বলল,
-” কখন খেয়েছেন তার ঠিক আছে? এখন খেতে হবে।ছোট মা বলেছে আপনি আসলে আপনাকে খেতে দিতে।”
-” মা বলছে বলেই খেতে দিতে এসেছিস। নিজে থেকে আসিস নি।”
-” আসলে না নয়!”
-” তাহলে কি? ”
সোহা কিছু বলল না।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তামিম বলল,
-” আমি এখন ঘুমাব। রুম থেকে যা!”
কথাটা শুনে সোহার মন খারাপ হয়ে যায়।তামিম কি বুঝতে পাচ্ছে না তার এই সাজ গোজের কারণ কি? তামিমের কথা মতই সে শাড়ি পড়ে এসেছে।সোহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তামিম ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ”
-” আপনি কি আমার উপরে রাগ করে আছেন?”
ভ্রু,কপাল কুঁচকে তামিম বলল,
-” তোর উপরে রাগ করে থাকব কেন আমি? ”
সোহা তামিমের সামনে বসে পড়ে।কান্না করতে করতে বলল,
-” আমি আসতে চেয়েছিলাম।মা জেগে গেছিল বলে আসতে পারিনি।আজকে আপনার কথা মত সেজে এসেছি।তারপর কেন রাগ করে আছেন? ”
সোহার কান্না তামিম কোনোদিন সহ্য করতে পারে না।প্রেয়সী চোখে জল মুচে দিয়ে বলল,
-” কান্না করার লাগবে না।রাগ করে নেই আমি। ভাত দে,”
সোহা চোখ মুচে খাবার দেয়।তামিম নিজে ও খাচ্ছে সোহাকে খাইয়ে দিচ্ছে।খুশিতে সোহার চোখের জল উপছে পড়ছে।
তৃণ সবাইকে রাতে ডিনারে দাওয়ার দেয় তাদের বাড়িতে।সমুদ্র ছাড়া সবাই এসেছে।খেয়ে দেয় সবাই ছাদে আড্ডা দিতে থাকে।নীল বার বার স্বপ্ন সাথে কথা বলতে যায়।কিন্তু স্বপ্ন যেন তাকে না দেখার ভান করে কেটে পড়ে।স্বপ্নকে এবার একা পেয়ে নীল বলল,
-“আমাকে যদি এড়িয়ে যাওয়ার ছিল।তাহলে ফোন করে ঢাকা আনার মানে কি? ”
-” তাহলে বলতে হয় তুমি আমার জন্য ঢাকা এসেছো।”
নীল তোতলিয়ে বলল,
-” আপনার জন্য কেন হবে? আমি সুর ওয়ালা জন্য এসেছি?”
-” হুম!”
-” ধূসর ভাইয়া ছাড়া আপনার সাথে কাউকে দেখি নাইই আসতে।তাহলে সুর ওয়ালা কোথায়?আপনি বলছেন সুর ওয়ালাকে তৃণ ভাইয়াদের বাসায় নিয়ে আসবেন? ”
-” সবুর কর ও! সবুরে মেওয়া ফল! জানো!”
চরম বিরক্তি হচ্ছে নীলের।স্বপ্ন বলল,
-” তোমার সুর ওয়ালা তোমার সামনে হাজির করব একটা শর্তে?”
নীলের সমস্ত মুখ কুঁচকে যায়।সে বলল,
-” কি শর্ত?”
-” ৭ দিন আমার সাথে আমার বাসায় থাকতে হবে স্বামীর স্ত্রী মত।”
নীল আর্তনাদ করে বলল,
-” কি? ”
স্বপ্ন দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বলল,
-” আস্তে কথা বলতে পারো না।”
-” পাগল হয়ে গেছেন আপনি।কি সব বলছেন? ”
-” ভেবে চিন্তই বলছি।তুমি রাজি আছো কি না বলো!”
নীলের কাট কাট জবাব,
-” না।আপনি ভাবলেন কি করে।আপনার বাজে প্রস্তাবে রাজি হবো।আমায় কি আপনার বেশ্যা পাড়া মেয়ে মনে হয়।এরকম একটা জঘন্য কাজ করতে রাজি হবো।আর সব চেয়ে বড় কথা।আপনার বেশ ভুশা দেখে যতটা ভদ্র লোক মনে আপনি তত নয়।ভুল জায়গা আপনি ভুল প্রস্তাব দিয়েছেন।”
স্বপ্ন বুঝতে পাচ্ছে নীল তার কথার অন্য মিন বের করছে।নীল বোঝানোর জন্য বলল,
-” তুমি আমায় ভুল বুঝছো।”
নীল উপহাস করে বলল,
-” ওহ তাই!”
-” হুম।আমার প্রস্তাব আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলি।স্বামী স্ত্রী মত থাকতে হবে আমি বুঝিয়ে ছি,৭ সাত দিন আমায় সময় দিতে হবে।একজন স্ত্রী যেমন স্বামী কে দেয়।”
-” সেই একই কথায় দাঁড়িয়ে ছে?”
-” না! তোমাকে আমি ভালোবাসি! তোমার সম্মানে হানি হবে এমন কোনো কাজ আমি করব না।এক সাথে থাকা মানে কি? ফিজিক্যাল রিলেশন। আমি তোমাকে যেটা বুঝাতে চেয়েছি তুমি তার অন্য কিছু মিন করেছো…
স্বপ্ন বাকি টুকু বলার আগেই নীল বলল,
-” তাই বুঝি।”
এভাবে তাদের মধ্যে অনেক তর্ক বিতর্ক চলতে সাথে।নীল সাফ সাফ জানিয়ে দেয়।তার সুর ওয়ালা সেই নিজেই খুঁজে বের করবে।স্বপ্ন কোনো সাহায্য দরকার নেই।মনে মনে স্বপ্নকে গালি দিয়ে নীল যেয়ে প্রাচ্য সব বলে।স্বপ্ন আগেই থেকেই প্রাচ্যকে বলে রেখেছে এসব।নীলের মনে স্বপ্ন সুর ওয়ালা হয়ে জায়গা করতে চায় না।স্বপ্ন কেই যেন নীল ভালোবাসে কাছে টেনে নেয়।তাই নীলকে তার সাথে সাত দিন থাকার প্রস্তাব দেয়।প্রাচ্য স্বপ্নকে সাপোর্ট করে।প্রাচ্য খুব ভালো করে জানে।স্বপ্ন এমন কোনো কাজ করবে না।নীলের সম্মান হানি হয়।স্বপ্ন সাথে থাকলে নীল স্বপ্ন প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে।

প্রাচ্য নীলকে অনেক্ষন বুঝায়।যাতে স্বপ্ন প্রস্তাবে রাজি হয়।নীল কিছুতেই রাজি হয় না।প্রাচ্য বলল,
-” সুর ওয়লা কে খুঁজে পেতে হলে তোকে স্বপ্ন প্রস্তাবে রাজি হতেই হবে।না হলে কোনো দিন ও সুর ওয়ালাকে খুজে পাবি না।তার চেয়ে ভালো রাজি হয়ে যায়।”
প্রাচ্য’র কথা শুনে নীল ভাবতেই থাকে।প্রাচ্য ভুল কিছুই বলে নি।সত্যি সে খুঁজে পাবে কি করে।কোনো ক্লু তোনেই।যে সেই পথ ধরেই আগাবে।অবশেষে
স্বপ্ন প্রস্তাবে রাজি হওয়া ছাড়া কোনো পথই নেই।নীল ভিতু কন্ঠে বলল,
-” আপু আমার খুব ভয় করছে।এই ছেলে যদি আমার কোনো ক্ষতি করে ফেলে।”
প্রাচ্য আশ্বাস দিয়ে বলল,
-” আমায় বিশ্বাস করিস তো তুই।”
-” হুম!”
-” তাহলে আমি বলব।তুই রাজি হয়ে যায়।স্বপ্নকে তুই যতটা খারাপ ভাবছিস ততটা খারাপ নয়।ও খুব ভালো।আমার সব বন্ধুদের চেয়ে আমি আর রোদ স্বপ্নকে বেশি বিশ্বাস করি।”
নীল আর কোনো কথা বলল না।

সোহা আর তামিমে জোৎন্সা বিলাস করে।মধ্যে রাতে ঘরে ফিরে আসে তারা।তামিম যখন দরজা আটকিয়ে সোহার দিকে এগিয়ে আসছিল।তখন সোহার বুকের ভিতরে ঢিপঢিপ শব্দ করতে থাকে।দুই হাত দিয়ে বিছানার চাদর খামচে ধরে।তামিম তার পাশে বসে পড়ে।সোহা দিকে তাকায়! লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।মুচকি হাসে তামিম!এক হাত সোহার কোমরে দিয়ে কাছে টেনে আনে।।তামিমের স্পর্শ সোহার সবাঙ্গ কেঁপে উঠে।হাত পা কাপতে থাকে।সোহার থুতনি ধরে তার দিকে ঘুরায়।প্রথমে লজ্জা চোখ নামিয়ে ফেলে।একটু একটু করে তামিমের চোখের সাথে শুভদৃষ্টি বিনিময় করে।তামিমের চোখ যায় সোহার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের উপরে।থর থর করে কাঁপছে।তামিম মুচকি হাসে।সোহা চোখ নামিয়েই ফেলে।তামিম দু’হাতের আঁজলা দিয়ে সোহা মুখ তোলে।নিজের ঠোঁট বাঁড়িয়ে দেয় সোহার গোলাপি রাঙ্গা ওষ্ঠাদ্বয়ে।চুষে নিতে থাকে সুধা! সোহা দুহাত দিয়ে তামিমের চুল খামচে ধরে।তামিমের সঙ্গে পাল্লা দিতে থাকে।

তামিমছেড়ে দেয় সোহাকে।দুজনে মিলে হাঁপাতে থাকে।সোহা লজ্জা উঠে দাঁড়ায়।পা বাড়ায় বারান্দা দিকে। বাঁধা পড়তেই দাঁড়িয়ে যায়।পিছন ঘুরে তাকায়! তামিম তার শাড়ি আঁচল ধরে আছে।শাড়ি আঁচল ধরে টানতে থাকে।সোহা পিছু হঠতে হঠতে তামিমের কোলে এসে পড়ে।দু হাত দিয়ে সোহার কোমর চেপে ধরে।চুলে নাক ডুবায়।হিসহিসিয়ে বলল,
-” কোথায় যাওয়া হচ্ছে।”
লজ্জা কোনো কথা বলতে পারেনি সোহা।চোখ বন্ধ করে তামিমের স্পর্শ অনুভব করে।তামিম সোহার পেটে হাত দিয়ে স্লাইড করতে থাকে।সারা শরীরে বিদ্যুৎ ন্যায় শিহরণ জাগায়।শিরা উপশিরা শীতল হয়ে আসে।অন্য হাত দিয়ে সোহার কান থেকে দুল খুলে বিছানার এক পাশে রাখে।গলায় থেকে তার দেওয়া লকেট খুলে নেয়। সোহা ঠোঁট কামড়িয়ে নিজেকে ঠিক রাখছে।পিষ্ঠদেশ থেকে চুল গুলো সরিয়ে সামনে দেয়।ব্লাউজের ফিতা খুলে দেয়।সোহার বুকের ভিতরে ধুক ধুক করে শব্দ করতে থাকে।নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে আসে বারান্দা। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।তামিম উঠে এসে এক হাত দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।সোহা পিঠে ঠোঁট ছোঁয়া। কেঁপে উঠে!তামিমের হাত খামচে দিয়ে ধরে।পিঠে পিঠে অসংখ্য চুমু দেয়।সোহার কাঁধ ধরে তার দিকে ঘুরায়।সোহা শাড়ি খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।তামিম মুচকি হেসে সোহাকে পাঁজাকোলা তুলে নেয়।বিছানায় শুয়ে দেয়।লাইট অফ করে সোহার উপরে ভর দিয়ে শোয়।তামিম ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,
-” সোহা!”
সোহা বন্ধ চোখ খুলে তাকায়।দুজন দুজনার দিকে মোহময় দৃষ্টি তাকায়!তামিম সোহার নাকের সাথে নাক ঘোষে বলল,
-” তোর কোনো আপত্তি নেই তো।”
সোহা দু’হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
-” জানি না।”
তামিম মৃদু হাসে।এই জানি না মাধ্যমে বুঝে গেছে সোহা কি চায়।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে মধু মিলন আলিঙ্গন করছে তারা দুজন।

কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙ্গে তাদের।তামিমের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে সোহা।আজ এই মেয়েটা পুরো পুরি তার হয়ে গেছে।যতই বাঁধা আসুক তাদের সম্পর্ক কোনো শেষ হয়ে যাবে না। তার সোহা রানিকে ছেড়ে যাবে না।সুখ,দুঃখে পাশে থাকবে।
আঙ্গুল দিয়ে সোহা মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়।মাথা একটু উঁচু করে সোহার কপালে চুমু খায়।সোহা নড়ে চড়ে উঠে।নিভু নিভু চোখ খুলে তাকায়।চোখ সরিয়ে তামিমের বুকে মুখ লুকায়।লজ্জা সে মরে যাচ্ছে।কিভাবে তামিমের চোখের দিকে সে তাকাবে।তামিমের ডাকে,
-” সোহামনি!”
এ ডাকে শুধু ভালোবাসা খুঁজে পায় সোহা।তামিমের দিকে না তাকিয়ে আগের চেয়ে দ্বিগুন ভাবে ঝাপটে ধরে।তামিম বলল,
-” তাকাবে না।”
অনেক্ষন পর সোহা আস্তে বলল,
-” না! ”
তামিম হেসে দিয়ে বলল,
-” লজ্জা পাচ্ছিস!”
সোহা উঠে চলে যেতে নিলে নিজের এই অবস্থা দেখে আবার ঝাপটে ধরে তামিম কে।তামিম খিলখিল করে হেসে বলল,
-” কি হলো!”
-” কিছু না।”
তামিম দু ‘হাত দিয়ে সোহাকে জড়িয়ে ধরে।তামিমের বুকে মুখ গুঁজে বলল,
-” ফ্রেশ হবো আমি।”
-” যাও।”
-” উঁহু!
-” কি? ”
-” এ ভাবে আমি যেতে পারব না।আমার লজ্জা লাগছে।”
-” লজ্জা পাওয়ার কি আছে।আমি তোমার স্বামী তো, আর কালকে রাতে ওসবের পর কিসের এত লজ্জা।”
ইস! এই ছেলেটা কেন বার বার কালকের রাতে ঘটনা মনে করে দেয়।তার খুব লজ্জা লাগছে।এই ছেলেটা কি বুঝে না।না’ কি জেনে শুনে বার বার লজ্জায় ফেলে তাকে।তামিম বলল,

-” এত লজ্জা কই পাস তুই!”
সোহা কোনো কথা বলল না।তামিম বিছানার পাশ থেকে হাঁতড়িয়ে শাড়ি নিয়ে সোহার হাতে তুলে দিয়ে বলল,
-” এটা কোনো রকম প্যাঁচিয়ে ওয়াশরুমে যায়।”
শাড়ি হাতে নিয়ে সোহা বলল,
-” আপনি চোখ বন্ধ করুন!”
তামিম এমনভাবে সোহার দিকে তাকায়।সোহা লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।তামিম নিজের এক হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
-” এবার হয়েছে?”
-” চিটিং করার যাবে না”
-” আচ্ছা!”
সোহা ওয়াশরুম থেকে বের হলে তামিম যায়।যাওয়ার আগেই বলে যায়।সে আসা ছাড়া রুম থেকে যেন না বের হয়।কালকে রাতে যে জামা পড়ে এসেছে যে জামাটা পড়ে নেয়।তামিম গোসল করে বের হয়ে আয়নার সামনে এসে বলল,
-” কি রাক্ষুসীরে তুই! এই ভাবে জামাইর পিঠে মাংস নিয়ে নেয়।” আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘাঁড় ঘুরিয়ে পিঠে খামচের দাগ গুলো দেখে বলল।সোহার চোখ যায় তামিমের পিঠের দিকে।ইশ! কি এক অবস্থা! সাদা পিঠদ্বয়ে লালচে দাগ হয়ে পড়েছে।হাতে রাখা তোয়ালে টা সোফায় রেখে।ড্রয়ার থেকে মলম নিয়ে বলল,
-” বসেন! ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি।”
তামিম বসলেই।সোহার খুব যত্ন করে দাগ উপরে মলম লাগিয়ে দেয়।লাগানো শেষ হলে সোহার হাত থেকে মলম নিয়ে বলল,
-” তুই ও বস!”
সোহার ঘাড়ের কামড়ের দাগ গুলোয় মলম লাগিয়ে দেয়।মলম ড্রয়ারে রেখে বলল,
-” দাগ গুলো যে দেখা যায়।কারো চোখে পড়লে কি বলবি।”
চিন্তায় পড়ে যায় সোহা।আয়নার সামনে দাঁড়ায়।গলায় ঘাড়ে অসংখ্য দাগ।ঠোঁট এককোণা কেটে গেছে।আঙুল দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।তামিম পিছন দিয়ে সোহাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” কেউ জিজ্ঞেস করলে? বলবি তোর স্বামীয়ে দিয়েছে।”
সোহা তামিম কে ধাক্কা দিয়ে।লজ্জামিশ্রত একটা হাসি দেয়।চুল দিয়ে, ওড়না দিয়ে ঢেকে দেয়।তামিম মাথা চুলকিয়ে ঠোঁট কামড়িয়ে হেসে দেয়।

কাউছার স্বর্ণা।

আপনাদের সাড়া দেখে গল্প লেখার মন মানুষিক হারিয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন।ভালো লাগছে না লেখতে।এত কষ্ট করে আপনাদের জন্য লেখি আপনার সাড়াই দেন না।তাহলে লেখে কি লাভ।সর্বশেষ বলব,ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন

স্বপ্নীল ৪৫

0

স্বপ্নীল
৪৫
প্রাচ্য রুমের দরজা আটকিয়ে এসে তৃণ বুকের উপরে বসে। বলে,
-” সোজাসুজি উত্তর দে,কি চাস তুই?
তৃণ হতভম্ব! বিস্মিত! চোখ যেন তার কোটর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।প্রাচ্য আবার বলল,
-” আজকে তোর কথা উপরে নির্ভর করবে আমাদের সম্পর্ক? কি চাস বল!”
রাগী সুরে বলল তৃণ,
-” সর বলছিস।”
-” আগে আমার কথার আন্সার দেয়।”
তৃণ প্রাচ্যকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
-” রাত বি রাতে ডং করছিস?”
এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়াতে প্রাচ্য’র রাগ উঠে যায়।কান্না করতে করতে ফুল গুলো ছিঁড়ে ফেলে।চাদরের উপরে ফুলের পাঁপড়ি গুলো নিচে ফেলে দেয়।চাদর, বালিশ ছুঁড়ে ফেলে।তারপর প্রাচ্য’র রাগ কমছে না।তৃণ বারান্দা দাঁড়িয়ে এসব দেখছে।কিছু বলছে না।এত কিছু ফেলে প্রাচ্য খ্যান্ত হয়নি। খোঁপা থেকে বেলিফুলের গাজরা ছুড়ে মারে ফ্লোরে।দু হাত দিয়ে নিজের চুল খামচে ধরে রাগ কমাতে থাকে।তৃণ দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-” ডিভোর্স চাই আমার? কালকের মধ্যে ডিভোর্স দিতে হবে।”
তৃণ কল্পনার বাহিরে ছিল এই কথাটা।বার বার কথাটা তার কানে যেন বাজছে ” ডিভোর্স চাই আমার!”
কান দুটো যেন তার ঝনঝন করছে।তার মনে হচ্ছে সে ভুল শুনেছে।তাই জিজ্ঞেস করে,
-” কি বলছিস তুই।”
-” কানে কালা নাকি তুই, শুনিস নি আমার কথা।না শুনলে আবার বলছি।কান খুলে শোনে রাখ।আমার ডিভোর্স চাই।”
এটা বলে গদগদ করে হেঁটে রোদের কাছে যায়।রোদকে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠে।রোদ প্রাচাকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।কেন তাদের সাথে এমন হয়েছে।তাদের ভালোবাসার মানুষ কেন তাদের কে বুঝে না।সব সময় কষ্ট দেয়।
বাসর ঘর সাজিয়ে দিয়েছে যাতে তাদের দুজনে মধ্যে মনোমালিন্য দূর হয়ে যায়।এক জন আরেক জনের কাছে আসতে পারে যেন।কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়ে গেছে।
সকালে প্রাচ্য ব্যাগ প্যাক করে বেড়িয়ে যেতে নিলে তৃণ বাধা দেয়।
-” কোথাও যাবি না তুই!”
-” আমি তো যাবো। এবং তোকে ডিভোর্স দিয়ে ছাড়ব।”
-” এক পা যদি এই বাড়ির বাইরে দেস তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
প্রাচ্য কিছু বলল না। রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।রোদ তৃণ কে বলল,
-” তোর থেকে কালকে রাতে এরকম কিছু আশাই করিনি।ভালো বাসি তো প্রাচ্যকে।তাহলে বার বার কেন এত কষ্ট দেস।”
রোদ বেরিয়ে আসার পরের তৃণ ও বেড়িয়ে আসে।প্রাচ্য’র হাত ধরে বলল,
-” আমি আবার ও বলছি কোথাও যাবি না তুই।”
খাদিজা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করছে আপদ যেন বিদায় হয়।এই আপদ বিদায় হলে তিন্নিকে ছেলে বউ করে আনবে।ছেলের উপরে তার মেজাজ গরম হচ্ছে আপদ যখন নিজে থেকে চলে যাচ্ছে।ছেলে কেন আটকাচ্ছে।
প্রাচ্য চোয়াল শক্ত করে বলল,
-” হাত ছাড়, না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
-” ছাড়ব না।”
-” আমি কিন্তু এখন নিজেকে শেষ করে দিব।হাত না ছাড়লে
হাত ছেড়ে দিয়ে তৃণ বলল,
-” তুই নিজেকে শেষ করা লাগবে না।আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দিব।”
এটা বলে ডায়নিং দিকে এগোয় তৃণ।ফল কাটা ছুরি হাতে নেয়।হাতের মধ্যে টান মারে। ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ে।খাদিজা ছেলে কান্ড দেখে আহাজারি করে কান্না করতে থাকে।
-” আমার ছেলেটা কে এই মেয়ে শেষ করে ফেলবে।কত রক্ত পড়ছে?এই তিন্নি, তনয়া ব্যান্ডেজ আন।”
তৃণ মায়ের হাত থেকে হাত সরিয়ে ফেলে।রোদ দৌড়িয়ে যায়।তৃণ হাত নিজের হাত নিয়ে নেয়।শাড়ি আঁচল দিয়ে রক্ত আটকানোর চেষ্টা করে।তনয়াকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসতে দেখে দৌড়ে গিয়ে তার হাত নিয়ে আসে।ব্যান্ডেজ করতে নিলে তৃণ হাত সরিয়ে ফেলে।রোদ চোয়াল শক্ত করে বলল,
-” হাত সরালে মেরে ফেলব তোকে।ব্যান্ডেজ করতে দেয়।”
তৃণ আর হাত সরায় নি।প্রাচ্য সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।সে তৃণকে ভয় দেখানোর জন্য বলছে।আর তৃণ সত্যি সত্যি হাত কেটে ফেলেছে।
রোদ ব্যান্ডেজ করতে করতে বলল,
-” বাচ্চাদের মত এসব পাগলীমির মানে কি? ”
তৃণ কোনো কথা বলল না।রোদ ব্যান্ডেজ করে দিয়ে উঠে এসে প্রাচ্যকে বলল,
-” চলে গেলে সব সমস্যা দূর হয় না।কিছু সমস্যা সামনা সামনি থেকেই ফেস করতে হয়।ভালো থাকিস! ”
তৃণ দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আসি! ”
রোদ চলে যায়।খাদিজা এসে বলল,
-” কাল নাগিনী নজর পড়েছে আমার সংসারে।”

রোদ যতই মনে মনে পণ করুক সে আর সমুদ্র কাছে যাবে না।কিন্তু তার মন যে মানছে না।বার বার মন বলছে সমুদ্র কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য।বাড়ি তে থাকলে শরীরে দুনিয়ার সব অশান্তি নেমে আসে।।সমুদ্র ছাড়া তার কিছু ভালো লাগছে না।তাই সমুদ্রকে দেখার জন্য অফিসে আছে।অফিসের দারোয়ান কিছুতেই রোদকে ঢুকতে দিচ্ছে না।অবশেষে রোদ বলল,
-” আমি আপনার সমুদ্র স্যার স্ত্রী।এবার তো আমাকে ঢুকতে দিবেন?”
স্যার স্ত্রী শুনে দারোয়ান ভয়ে কাঁপতে থাকে।আগের ব্যবহার জন ক্ষমা চায়।স্ব-সম্মানে দারোয়ান গেইট খুলে দেয়।রোদ অফিসে ঢুকে সমুদ্র কেবিন সামনে দাঁড়ায়।কেবিনে সামনে সমুদ্র নেইম প্লেট হাত দিয়ে নাড়িয়ে দেয়।নক না করে ঢুকে যায়।
সমুদ্র অফিসে একজন মেয়ে স্টাফের সাথে জরুরী কথা বলছিল।তখনই রোদকে দেখে বলল,
-” তুমি!”
তারপর সেই মেয়েটা বলল,
-” তুমি এখন যাও এনা।পরে কথা বলছি।”
এনা বের হয়ে গেলে।সমুদ্র চোয়াল শক্ত করে রাগী সুরে বলল,
-” তুই কেন অফিসে।”
রোদ এগোতে এগোতে বলল,
-” বাড়িতে যাওয়া মানা আছে? অফিসে আসতে মানা নেই?”
সমুদ্র চিল্লিয়ে বলল,
-” গেট আউট!”
-” যাবো না আমি! ”
কেবিন থেকে বের হয়ে এসে রোদের হাত ধরে বলল,
-” এক্ষুনি বের হবি।”
রোদ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সমুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে ঝাঁপটে ধরে।স্পাইক করা চুল গুলো এলোমেলো করে দেয়।শার্টের ইন নষ্ট করে দেয়।টাই লুস করে দেয়।
রাগে সমুদ্র শিরা উপশিরা টগবগ করছে।দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল,
-” ইউ…!
বাকি টুকু বলার আগেই রোদ সমুদ্র ঠোঁট আকঁড়ে ধরে।ইচ্ছা করে কামড়িয়ে দেয়।সমুদ্র ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখে রক্ত বের হচ্ছে।রোদ কৌতুক করে আদুরি গলায় বলল,
-” ওলে বাবু!ব্যথা পেয়েছো! আমি ও খুব ব্যথা পেয়েছিলাম।যখন আপনি আমাকে কামড়িয়েছেন?
শেষ কথাটা কঠোরতা ছিল।ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
-” এই এনা তোর কেবিনে এত বার আসে কেন? কি চলছে তোর এনার সাথে?”
-” তুই আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছিস।তোর সাহস দেখে আমি অবাক হই।”
রোদ ঠোঁট কামড়িয়ে বলল,
-” আমায় খারাপ বলছিস।তুই কি সাধু পুরুষ? অফিসে স্টাফ সাথে লটর পটর করছিস।তুই কি ভেবেছিস আমি কোনো খোঁজ রাখি না আমি।”
সমুদ্র ধমকিয়ে উঠে বলল,
-” রোদ!”
রোদ সে সব কিছু তোয়াক্কা না করেই সমুদ্র গালে আবার কামড় বসায়।উঠে দাঁড়িয়ে সে বলল,
-” লাভ বাইট একেঁ দিলাম।বায়।”
রোদ চলে যায়।সমুদ্র সেন্টার টেবিলের ফুলদানী ছুঁড়ে মেরে রাগে ফুঁসতে থাকে।

রাতে রোদ তার বাবা মা, চাচা চাচির, কাজিন রেহানের সাথে খেতে বসেছে।সবাই খেয়ে উঠে যায়।রোদ বসে বসে হাড্ডি চাবাচ্ছে।তখনই সে খেয়াল করে টেবিলের নিচে দিয়ে কেউ তার পা চেপে ধরেছে।হাড্ডি চাবানো বন্ধ করে তাকায় তার সামনে বসা মানু্ষটার দিকে।রেহান ছাড়া আর কেউ নেই।তার মানে রেহান!বিরক্তি নিয়ে বলল,
-” পা সরা!”
রেহান এবার দু পা দিয়ে রোদের পা দুটো চেপে ধরে।বলল,
-” গেলি বিয়ের দাওয়ার খেতে একবারে বিয়ে, বাসর করে ফিরেছিস! তো বাসর ঘরে কি ভাবে কিভাবে আদর সোহাগ করছে তোর সোয়ামী। ”
রোদ তিরিক্ষি মেজাজ দেখিয়ে উঠে চলে যায়।এই রেহান কে তার একদমই সহ্য হয় না।কেমন একটা গায়ে পড়া। আর এর চাহনি একটা অসভ্যের মত।দিন দিন এর অসভ্যতামি বেড়েই যাচ্ছে।আগে তো এমন ছিল না।এখন দিন কে দিন লুচ্চা হয়ে যাচ্ছে।

সোহা যতবার তামিমের সাথে কথা বলতে গেছে ততবার তামিম এড়িয়ে যাচ্ছে।কোনো ভাবে তার সাথে কথা বলছে না। তার খুব কান্না পাচ্ছে।সে চেষ্টা করেছে আসার জন্য।কিন্তু কখন যে পরে ঘুমিয়ে গেছে টের ও পায়নি।রুমে গিয়ে মুখে ওড়না দিয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠে।ভালোবাসায় কেন এত যন্ত্রণা, গোলাপ যেমন ছিঁড়তে গেলে কাঁটার আঘাত খেতে হয়।তেমনি ভালোবাসলে কষ্টে পেতে হয়।কষ্ট ছাড়া ভালোবাসা মিষ্টি হয় না।

নীল ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাড়িতে কান্না কাটি করে।প্রাচ্যকে দেখতে যাবে।প্রথমে কেউ রাজি হয়নি।নীলের এই কান্না দেখে দাদু বলছে তামিমকে,নীল কে যেন ঢাকায় দিয়ে আসে।বিকেলেই তাড়া বের হবে।নীল খুশিতে ব্যাগ প্যাক করতে থাকে।খুশি যেন তার উঁছলে পড়ছে।সুর ওয়ালা দেখতে পারবে ভাবতে তার খুশি খুশি লাগছে।
যথারীতিতে তামিম বিকালে নীলকে নিয়ে চলে যায়।রাতে সোহা চুপি চুপি তামিমের ঘরে যায়।তামিম যে জায়গা দিয়ে শোয়।সেই জায়গা টা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয়।ক্লজেট থেকে তামিমের শার্ট বের করে নিজের জামা উপর দিয়ে পড়ে।তার মনে হচ্ছে তামিমের শাট নয় তামিম তাকে জড়িয়ে আছে।চোখ বন্ধ করে ফিল করতে থাকে।

নীল প্রাচ্যদের বাসায় এসেছে দুইদিন হয়েছে।তনয়া নীলের সম বয়সী! তার সাথে নীলের খুব ভালো সম্পর্ক হয়।খাদিজা নীলকে কিছু বললে। নীল তার প্রতিত্তুরে জবাব দেয়।খাদিজা নীলের মত ঠোঁটকাটা মেয়ে দুটো দেখেনি।তার কথা বিনিময় নীল তাকে অপদস্থ করে।সেই ভয়ে খাদিজা এখন আর প্রাচ্য পিছনে লাগে না। নীল তিন্নি মেয়েটাকে দেখতে পারে না।সারা দিন তৃণ পিছনে আটার মত লেগে থাকে তাই।কেন তার বোন আর দুলাভাইর মধ্যে কাব্ব মে হাড্ডি হতে যায়।নীলের ইচ্ছা করছে তিন্নি মেয়েটার সব চুল ছিঁড়ে ফেলতে।এ বাড়ির মেহমান বলে তাই এই কাজ করছে না সে।না হলে এই মেয়েকে দেখে ছাড়ত।
ওইদিনে পর প্রাচ্য তৃণ কে এড়িয়ে চলে।তৃণ কিছু বললে তার উত্তর দেয় না।যা দেয় তা সব বাঁকা বাঁকা কথা।তাই দরকার ছাড়া প্রাচ্য’র সাথে কথা বলে না।এতে যেন প্রাচ্যই খুব খুশি হয়।

কাউছার স্বর্ণা।
একদিনে দুই পর্ব দেওয়ায় কি রেসপন্স কমে গেছে।
এই গল্পে কার কোন জুটি ভালো লাগে। বলবেন প্লিজ।

স্বপ্নীল ৪৪

0

স্বপ্নীল
৪৪
সেদিন ঢাকায় আসলেই সমুদ্র রোদকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।রোদ সারাদিন বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। যদি সমুদ্র এসে তাকে বাড়িত্ব ঢুকতে দেয়।কিন্তু সমুদ্র আসেনি।

সন্ধ্যা নিজের বাপের বাড়িতে ফিরে আসে। বাপের বাড়িতে ফিরে এসেছে আজ সাঁতদিন হয়েছে।ঘর থেকে কোথায় বের হয়নি।সমুদ্রের শারীরিক অত্যাচারে শরীর যে খুবই দুর্বল ছিল।এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়াই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে।তার ভুল ছিল। ক্ষমা ও চেয়েছে তারপর কেন সমুদ্র তাকে কাছে টেনে নিতে পারল না।

রোদকে বাড়িতে আসতে দেখেই তার বাবা -মা অনেক প্রশ্ন করে সমুদ্র আসে নাই কেন? সে বাবা -মাকে কোনো রকমে এটা সেটা বলে বোঝ দিয়েছে।তার বাবা মা ও আর কোনো কথা বলে না।
প্রাচ্য ফোন করল রোদ কে।অনেক্ষন ধরে তাদের কুশল বিনিময় হয়।প্রাচ্য বলল,
-” নীলের কথা শুনে এত বড় একটা কাজ করতে যাওয়ার আসে আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করিস নি।”
-” তখনই মাথা ঠিক ছিল না।”
-” স্বপ্ন না বললেই জানতেই পারতাম না ভাইয়া তোর সাথে এমন আচরণ করেছে?
রোদ কিছু বলল না।তার বলার মত কিছু নেই।প্রাচ্য আবার বলল,
-” ভাইয়া আর তোর মধ্যে সব ঠিক ঠাক আছে তো? ”
রোদ তাদের ব্যাপারের কিছু বলল না।সুধু বলছে সে এখন বাপের বাড়িতে আছে।কয়েক দিনে জন্য বেড়াতে এসেছে।আগের থেকে সমুদ্র এখন স্বাভাবিক আচরণ করে তার সাথে এইটুকু বলেই মিথ্যেই বলল।সে সত্যিটা প্রাচ্যকে জানিয়ে সমুদ্রকে ছোট করতে চায় না।তাদের জামেলা তারা দুজনেই মিটমাট করবে। বন্ধুদের জড়িয়ে বন্ধুত্ব নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।রোদ ঘোরানোর জন্য বলল,
-” তোদের বাসরে কি কি হয়েছে এখন যে আমায় বললি না।”
প্রাচ্য উদাসীন হয়ে বলল,
-” আর বাসর! ”
-” কেন তোদের হয়নি। ”
-” না! ”
রোদ আর্তনাদ কর বলল,
-” কি? তৃণ তোর সাথে কিছু করে নি সেটা আমায় বিশ্বাস করতে হবে।?”
-” সত্যি আমাদের মধ্যে কিছু হয়নি।”
রোদ এবার সিরিয়াস হয়ে বলল,
-” তোদের মধ্যে কি এখন আগে ওগুলো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।”
প্রাচ্য রোদকে সব খুলে বলল। রোদ বলল,
-” বাসর হয়নি হবে।আমি আজকেই বিকালেই আসছি তোদের বাসায়।ফুলে ফুলে সাঁজিয়ে দিব তোদের বাসর।”
এভাবে অনেক কথা হয়।প্রাচ্য সাথে কথা বললেই কেন জানি তার মন ভালো হয়ে যায়।তার বান্ধুবীটা কত ভালো। আর বান্ধুবির ভাই টা আস্তো একটা খেঁচর। সে পণ করেছে যতদিন সমুদ্র তাকে নিতে আসবে না ততদিন ফিরে যাবে না তার কাছে।ফিরে না গেলে সমুদ্র উপরে নজর দারি করবে ঠিকই।স্বামী তারেই নজর রাখা উচিত।যদি কেউ তার জায়গা দখল করে নেয় সে না থাকা অবস্থায়।

তামিম সোহাকে কিচেনে দেখে এগিয়ে আসে।পিছন থেকে সোহাকে ঝাপটে ধরে।প্রথমে আঁতকে উঠলে ও পরে তামিমকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সোহা।তামিম সোহার কানের লতিতে কামড় দিয়ে বলল,
-” কি রান্না করছো? ”
-” কৈ মাছের ঝোল।”
–” ভালো তো।তাহলে পেট ভরে খেতে হবে আজকে।”
সোহা শুধু হেসেছে।তার মনে হলো তারা বন্ধ করে ভিতরে নয়।তারা কিচেনে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে তাদের কেউ দেখে ফেললই কেলেঙ্কাররী হয়ে যাবে।নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে সে বলল,
-” ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে।”
-” সব সময় এভাবে ছাড়ুন , ছাড়ুন না করে।এটা ও বলতে পারিস একটু ধরুন।”
সোহা লজ্জা নুইয়ে গেলো।সে বলল,
-” ধ্যাত! আপনার মুখে কিছু আটকায় না।”
-” এত লজ্জা কোথায় থেকে তুই পাস? একটু বলবি আমায়? জানলে একটু উপকার হতো।”
সোহা যেন লজ্জায় মরে যায়।তার মন যাচ্ছে এখান থেকে দৌড়িয়ে রুমে যেতে।রান্না জন্য তাও করতে পাচ্ছে না সে।তামিম বলল,
-” সোহা!”
-” হুম!”
-” তুই শাড়ি পড়তে পারিস না।”
-” আপনার কাছে আমি বিবাহিত হলে অন্য আট দশ জনের কাছে আমি অবিবাহিতা। অবিবাহিতা মেয়েরা শাড়ি পড়লে অনেক কথা বলবে।তাই পড়ি না।”
-” আমার না খুব ইচ্ছা করছে তোকে একবার বউ রুপে দেখতে।”
স্মিত হাসে সোহা।আবার রান্না মনোযোগ দেয়।তামিম আবার সোহাকে ডাকল।
-” আজকে শাড়ি পড়ে আমার ঘরে আসি। অপেক্ষা থাকব আমি। ”
সোহা কোনো কথা বলল না দেখেই।তামিম আবার বলল,
-” আসবি তো!”
তাদের এভাবে দেখে নীল খুকখুক করে কেশে উঠে।কারো উপস্থিত বুঝতে ফেরে তামিম সরে যায়।নীল কে দেখে সোহা লজ্জায় নুইয়ে যায়।আল্লাহ জানেই নীল এখন তাকে কি বলে? তামিম নীলকে দেখে মুচকি হেসে চুল হাঁতাতে হাঁতাতে বের হয়ে যায়।সোহা কাজ করতে থাকে। না জানি নীলের কি প্রশ্নে মুখে তাকে পড়তে হবে।যার জন্য এমন পরিস্থিতি পড়েছে সে কি সুন্দর ভাবে হেসে কেটে পড়েছে।নীল আবার খুকখুক করে কাশে।সে বলল,
-” কি করছিস!”
সোহা তোতলাতে তোতলাতে বলল,
-” রান্না করছি।”
-” ভাইয়ার সাথে কি করছিস।”
সোহা নীলের দিকে ঘুরে তাকায়।আমতা আমতা করে বলল,
-” কিচ্ছু না! ”
-” আমি কিন্তু দেখে ফেলে ছি।”
সোহার পেটের ভিতরে কামড় মারে। যেন তার পায়খানার চাপ এসেছে।আসলে কিন্তু তা নয়।সে বলল,
-” আ…আমি….!”
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই নীল তাকে জড়িয়ে ধরে।সোহা হতভম্ব!নীল বলল,
-“অবশেষে ভাইয়া আর তোরা ভালোবাসা বাসি হয়েছে।”
সোহা একটা স্বস্তি নিশ্বাস ফেলে।নীল বলল,
-” আমাকে এত ভয় পাওয়ার কি আছে? এত ভয় ফেলে কি জীবন চলে।”
সোহার খুব ইচ্ছা করছে নীল বলতে তাদের বিয়ে কথা। কিন্তু তামিমের কথা ভেবেই আর বলে নি।তামিম যেদিন বলবে সেদিনে সবাইকে বলবে।
রাতের বেলায় সোহা যখন তামিমের রুমে আসার জন্য বিছানা থেকে নামল।তখন আমেনা উঠে বসে।ঘুম ঘুম চোখে মেয়েকে বলল,
-” কোথায় যাচ্ছিস তুই?
মাকে এভাবে উঠতে দেখে সোহা ঘাবড়ে যায়।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে।মেয়েকে এভাবে ঘামতে দেখে আমেনা বলল,
-” গরম বেশি পড়ছে না,তাহলে তুই এভাবে ঘামছিস কেন? ”
ভয়ে সোহার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।হাত, পা রীতিমত কাঁপছে।হাতের মধ্যে ওড়না এককোণা নিয়ে দলামোচোরা করছে।আমেনা বিরক্ত সুরে বলল,
-” কথা বলছিস না কেন?”
সোহা আমতা আমতা আমতা করে বলল,
-” কিছু না! ”
-” কোথায় যাচ্ছিলি তুই?”
-” পা- পানি খেতে! ”
খাটের পাশে পানির জগের দিকে তাকায় আমেনা।জগ ভর্তি পানি আছে।সোহার চোখ যায় পানির জগের উপরে।ভুল ভাল মিথ্যে বলে ফেলেছে।মা না জানি এখন আবার কি প্রশ্ন করে বসে তাকে
-” পানি এখানেই আছে বাহিরে যাওয়ার দরকার নেই।খেয়ে নিয়ে শুতে আয়।রাত অনেক হয়েছে।”
সোহা কাঁপা হাতে এক গ্লাস পানি ঢেলে ঢক ঢক করে করে খেয়ে ফেলে।ওড়না দিয়ে মুখ মুচে মায়ের সাথে শুয়ে পড়ে।বিছানায় শুয়ে তামিমের কথা ভাবতে থাকে।নিশ্চয়ই তামিম তার অপেক্ষা করছে।কথা দিয়েছিল সে তামিমকে।কিন্তু কথা রাখতে পারেনি।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ে সোহা।তামিম অপেক্ষায় থাকে।সোহা বলছে আজ শাড়ি পড়ে তার ঘরে আসবে।

রোদ সন্ধ্যা বেলায় তৃণদের বাসায় চলে আসে।রোদকে দেখে খাদিজা মনে ভিতরে গাঁইগুঁই করছে অনেক্ষণ।দুই বান্ধবী অনেক্ষন সুখ, দুঃখের কথা বলে।রোদ প্রাচ্যকে তনয়ার রুমে নিয়ে আসে।কিছুক্ষনের জন্য ওই রুমে থাকতে বলছে রোদ, প্রাচ্যকে।তনয়া আর রোদ মিলে তৃণ’র রুম ফুল দিয়ে সাজিয়ে ফেলে।সাদা বিছানার উপর গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে লাভ শেভ বানায়।সেই লাভের ভিতরে প্রাচ্য আর তৃণ নাম লেখে।পুরো ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়।লাইট অফ করে বের হয়ে আসতেই তৃণ সাথে দেখায় হয় রোদের।অনেক্ষণ কথা হয় তাদের মধ্যে।তৃণ রুমে ঢুকতে নিলেই রোদ বাঁধা দেয়।মানা করে দেয় এখন রুমে ঢুকা যাবে না।তৃণ দরজা সামনে দাঁড় করিয়ে রোদ রুমে ঢুকে ক্লজেট থেকে পাঞ্জাবী আর পায়াজামা এনে দিয়ে বলল,”অন্য বাথরুমে যেতে।এই বাথরুমে এখন যাওয়া যাবে না।”রোদের কথা শুনে তৃণ’র ভ্রু কুঁচকে যায়।রোদ সেদিকে তোয়াক্কা না করে তৃণকে ঠেলে মেলে বাড়ির গেস্টরুমে বাথরুমে পাঠিয়ে দেয়।তারপর সোনালি পাড়ে একটা গোলাপি শাড়ি দেয় প্রাচ্যকে পড়ার জন্য।প্রাচ্য বলল,
-” শাড়ি পড়ে আছি।আবার চেঞ্জ করে এটা পড়ব কেন? ”
রোদ বিরক্ত নিয়ে বলল,
-” উফফ!কোনো কথা বলবি না। যা বলছি তাই কর।”
প্রাচ্য অনেকবার এসব করার কারণ জানতে চায়।রোদ কোনো কথা না বলে প্রাচ্যকে শাড়ি পড়াতে থাকে।অনেক বড় গলায় একটা সোনালী ব্লাউজ পড়তে বলে। বাধ্য হয়ে প্রাচ্যকে পড়তে হলো।ব্লাঊজের ফিতা লাগিয়ে দেয়, চুল গুলো খোঁপা করে বেলিফুলের গাজরা লাগিয়ে দেয়।ঠোঁটে গাঢ় করে গোলাপি লিপস্টিক লাগিয়ে দেয়।টানা চোখ গুলো কাজল পড়িয়ে দেয়।প্রাচ্য বিরক্তি নিয়ে বলল,
-” অসহ্য লাগছে? আর কতক্ষণ লাগবে।”
শাড়ি কুঁচি ঠিক করতে করতে বলল,
-” হয়ে গেছে! আর একটু বাকি?”
শাড়ি ঠিক করে একটু চিকন করে তুলে বুকের উপর দিয়ে।তখনই প্রাচ্য শাড়ি মেলে ধরে।রোদ বিরক্তি নিয়ে বলল,
-” এমন করছিস কেন? ”
-” যেভাবে শাড়ি পড়াচ্ছিস তুই।কোমর,পেট সব স্পর্শ ভাবে দেখা যাচ্ছে।খুব বাজে লাগছে।”
-” এগুলো যাতে দেখা যায়।সেজন্য এভাবে পড়াচ্ছিস তোকে?”
প্রাচ্য আর্তনাদ করে বলল,
-” কি? ”
-” হুম!যাতে এসব দেখিয়ে তৃণ কে ঘায়েল করতে পারিস।
রোদ আবার প্রাচ্যকে ওই ভাবে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।প্রাচ্য ঠিক করতে গেলে হাত ধরে ফেলে।প্রাচ্যকে রুমে নিয়ে যায়।প্রাচ্য এসব আয়োজন দেখেই অবাক।আবার কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তৃণ কি ভাববে?
-” কি দরকার ছিল এসব করার।”
-” দরকার ছিল বলে করেছি!তুই থাক তৃণ নিয়ে আসি।”
দরজার কাছে যে এ ফিরে আসে রোদ।প্রাচ্যকে বলল,
-” শোন আজ যে করেই হোক নিজের অধিকার আদায়ই করে নিব।”
-” কিন্তু…!”
তার আগের রোদ বলে উঠল,
-” কোনো কিন্তু তিন্তু নয়।তৃণ তোর কাছে না আসলে তুই যাবি।এত লজ্জা পাওয়া কিছু নেই।তৃণ তোর স্বামী।অন্য কোনো পর পুরুষ নয়।কেউ একজন আগে কাছে আসলেই চলে।তোর মত সুন্দরী তৃণ কাছে গেলে মুখ ফিরে থাকতে পারবে না ।”
প্রাচ্য লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।রোদ বেরিয়ে যায়।প্রাচ্য ঠিক করে নেয়।আজকে দরকার পড়লে সেই নিজেই যাবে তৃণ কাছে।

ফুল গুলো হাত দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখে প্রাচ্য।তখনই রোদ তৃণকে নিয়ে ঘরে ঢুকে।প্রাচ্য ঘুরে তাকায় তাদের দিকে।তৃণ দিকে তাকায়,গোলাপি রঙের পাঞ্জাবী, সাদা পায়াজামা।দারুন লাগছে তৃণকে।চোখ তুলে তৃণ দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেলে লজ্জায়।

তৃণ প্রাচ্যকে এভাবে দেখে ঘোর লেগে যায়। কি অপূর্ব লাগছ।চোখ ফেরাতে কষ্ট হচ্ছে।নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে রোদকে বলল,
-” এসব কি? ”
-” তুই ছোট খোকা, যে এসব বুঝিস না?”
-” সে কথা নয়।এসবের মানে কি? ”
-” এসব মানে হলো।আজকে তোদের বাসর।খুব সুন্দর হয়েছে তাই তো।এর জন্য আমাকে ধন্যবাদ সকালে দিতে পারবি।এখন এত কথা বলে টাইম নষ্ট করা মানে নিই।আমি চলে যাচ্ছি।দরজা আটকাইছ প্লিজ।”
তৃণ কে কথা বলতে না দিয়ে রোদ একনাগাতে কথা গুলো বলে বাইরে বের হয়ে যায়।কয়েক মিনিট পড়ে এসে বলল,
-” বাসর কিন্তু হতেই হবে। সকালে যদি দেখি তোদের মধ্যে কিছু হয়নি।আমার এই বাসর সাজানো বৃথা গেছে তাহলে তোর সাধের চুল একটা মাথায় থাকবে না।”
এটা বলে রোদ চলে যায়।তৃণ এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় প্রাচ্য’র দিকে।তৃণ তার দিকে এগোতে দেখে প্রাচ্য পিছাতে থাকে।প্রাচ্য পিছাতে পিছাতে দেওয়ালে সাথে লেগে যায়। প্রাচ্য থেকে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে তৃণ বলল,
-” রোদ যখন এসব করছিল তখন মানা করতে পারিস নি।”
-” আমি কি জানতাম রোদ এসব করছে? আর জানলেই বা কি হয়েছে? এতে সমস্যা কি? ”
-” সমস্যা কি জানিস না তুই।”
-” না।”
ঘাড় এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বলল,
-” ওয়াশরুমে যেয়ে এসব সাজ গোজ তুলে এসে রুমটা পরিষ্কার কর।”
প্রাচ্য মন খারাপ হয়ে যায়।প্রাচ্য না যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।তৃণ বলল,
-” এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে যেটা বলছি সেটা কর!”
প্রাচ্য চোখ তুলে তাকায়।তৃণ চোখ সরিয়ে ফেলে। কাঁদো কাঁদো বলল,
-” কেন এমন করছিস? ”
-” আমি আবার কি করলাম?”
-” আমি কি চাই তুই বুঝিস না।”
-” তুই যেটা চাই সেটা দিতে পারব না আমি তোকে।”
-” কেন? ”
-” বলতে আমি বাধ্য নই।”
-” আমি তোর স্ত্রী। আমাকে বলতেই তুই বাধ্য।আমি আমার অধিকার চাই।”
-” তোর অধিকার আমি দিছি তোরে।”
-” আমি তোর ভালোবাসা চাই।”
প্রাচ্য কথায় তাচ্ছিল্য হাসে তৃণ।প্রাচ্য তৃণ’র পাঞ্জাবী মুঠো করে ধরে বলল,
-” হাসার কিছু বলি নাই।হাসছি কেন? ”
-” ভালোবেসে যখন তোকে চেয়েছিলাম তখন তুই আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিস।তাহলে এখন কেন আমার ভালোবাসা চাস তুই।”
-” ভুল করেছি আমি।”
তৃণ কথা না বাড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।প্রাচ্য তৃণ দিকে তাকায়।প্রাচ্য মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে আজকে তাদের সম্পর্কের এপাড় করবে না হলে ওপাড়।। আজকে না হলে দুজন ভালোবাসে এক হবে, না হলে সারাজীবনে জন্য আলাদা হয়ে যাবে।কখনো আর আসবে তৃণ কাছে।

কাউছার স্বর্ণা।

আপনার যদি সাড়া দেন তাহলে প্রতি দিন একপর্ব করে দেওয়ার চেষ্টা করব।এখন আপনার সাড়া দেওয়ার উপরে ভিত্তি করছে।গল্পের পর্ব।

স্বপ্নীল ৪৩

0

স্বপ্নীল
৪৩
প্রাচ্য জামা পড়ে দেখে সে জন্য খাদিজা বেগম অনেল বকাঝকা করে।খাদিজা প্রাচ্যকে বলে দিয়েছে।যদি এই বাড়িতে বউ হিসেবে থাকতে চায় তাহলে শাড়ি পড়তে হবে।শাড়ি ছাড়া অন্য কোনো জামাকাপড় যেন না পড়ে।প্রাচ্য মাথা নিচু করে খাদিজা কথা শ্রবন করেছিল।কারণ সে শাড়ি ক্যারি করে চলতে পারে না।সবচেয়ে বড় কথা সে শাড়ি পড়তে পারে না।সব জায়গা সে লেহেঙ্গা পড়ে যেত।শুধু গায়ে হলুদের রাতে শাড়ি পড়েছে।তাও তিনজনে মিলে শাড়ি পড়িয়েছে।এখন এবাড়িতে তাকে কে শাড়ি পড়িয়ে দিবে।শ্বাশুড়ি যদি বলে সে শাড়ি পড়তে জানে না।তাহলে একগাদা বকা শুনতে হবে।তাই ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি পড়তে থাকে।অনেক রকম ভাবে টাই করে।কিছুতে পাচ্ছে না।এক সময় সে হয়রান হয়ে যায়।বসে পড়ে টুলে।

তৃণ গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে প্রাচ্য এলোমেলো হয়ে বসে আছে।বুকে শাড়ি নেই,পেট, পিঠ স্পর্শ দেখা যাচ্ছে।প্রাচ্য’র পিঠে সেই কালো তিলটা চুম্বক মত টানছে।নিজেকে সামলিয়ে খাটের উপরে বসে পড়ে তৃণ।তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে থাকে।আয়নার ভিতরে তৃণ দেখে প্রাচ্য উঠে আসে।এলোমেলো শাড়ি হাতে নিয়ে তৃণ সামনে এসে দাঁড়ায়।তৃণ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।প্রাচ্য বিরক্ত নিয়ে বলল,
-” শাড়ি পড়তে পাচ্ছি না।একটু পড়িয়ে দেয় প্লিজ।”

হাতের থেকে তোয়ালে রেখে তৃণ বলল,
-” আমি শাড়ি পড়াতে পারি না।”
-” তুই শাড়ি পড়াতে পারিস বলেই তোর কাছে এসেছি।”
-” কে বলছে আমি শাড়ি পড়াতে পারি!”
-” তুই নিজেই একবার বলেছিস।এখন এত কথা না বলেই শাড়ি পড়িয়ে দেয়।”
প্রাচ্য’র পেটে দিকে গভীর চোখে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয় তৃণ ।এখন যদি সে প্রাচ্য কে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।তাহলে নিশ্চয়ই এখন কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।সে প্রাচ্যকে কাটকাট জবাব দেয়,
-” বলছি তো আমি পারি না।”
প্রাচ্য মন খারাপ করে চলে যায়।আয়না দাঁড়িয়ে আবার টাই করতে থাকে শাড়ি পড়ার জন্য।তৃণ কতক্ষণ ধরে দেখে এসব,বিরক্ত নিয়ে এগিয়ে আসে। প্রাচ্য হাত থেকে শাড়ি কুচি গুলো নিয়ে নেয়।প্রাচ্য মুচকি হাসে।প্রাচ্য’র সামনে হাটু গেঁথে বসে কুচি করতে থাকে।কুচি করার শেষে কুচি গুলো প্রাচ্য’র হাত দিয়ে বলল,
-” গেঁথে নে।”
প্রাচ্য ভেবেছে হয়তো তৃণই গেঁথে দিবে।কিন্তু তা না করে তার হাতে তুলে দেয়।মনে মনে বিড়বিড় করে সে বলল,
-” আমায় স্পর্শ করলে কি জাত যাবে না’কি তোর।”
তৃণ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।প্রাচ্য হেসে বলল,
-” না তাকিয়ে কাজ কর।”
তৃণ খুব সুন্দর করে প্রাচ্যকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।প্রাচ্য আয়না দাঁড়িয়ে চোখে কাজল দেয়।ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক দেয়।লিপস্টিক দিতে আঁড়চোখে তৃণ দিকে তাকায়।না তৃণ তার দিকে তাকাচ্ছে না।তাকালে কি হবে? বউ তারেই।একটু আদর করলে কি হয়? যখন বউ ছিলাম না তখন তো ঠিকই সাজেকে কিস করেছিস আর এখন বউ হয়ে কাছে একবার ও আসি না।তুই কাছে আসলে কি বারণ করবে নাকি? আমি এক জন মেয়ে মানুষ! আমি নিজে তোর কাছে যেতে পারি নাকি।
প্রাচ্য যেয়ে তৃণ সামনে দাঁড়ায়।তৃণ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।প্রাচ্য বলল,
-” কেমন লাগছে আমায়!”
-” বাঁদুরে মত!”
প্রাচ্য তৃণ চুল টেনে ধরে বলল,
-” আল্লাহ কি তোকে মানা করছে সুন্দর ভাবে প্রশংসা না করার।”
তৃণ চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,
-” সুন্দর লাগলে অবশই বলতাম।তোকে যেমন লাগছে তেমনি বলছি।”
প্রাচ্য আবার চুল খামচে ধরে।তৃণ এবার প্রাচ্য পেট খামচে ধরে।ব্যথা পেয়ে প্রাচ্য তৃণ’র চুল ছেড়ে দেয়।চেহারা কাঁদো কাঁদো করে বলল,
-” কুত্তা!আমার মাংসে নিয়ে ফেলছিস।”
-” কামড় দি নই তার জন্য শোকর কর। দ্বিতীয় বার চুল ধরলে তোর পেটে অবস্থা বেহাল করে ফেলব।”
-” তোর চুল একটা আজ রাখব না।সব ছিঁড়ে ফেলে টাক করব।”
এটা বলে এগিয়ে যায় প্রাচ্য।তৃণ নিজেকে বাঁচাতে খাটের উপরে উঠে যায়।প্রাচ্য শাড়ি তুলে খাটের উপরে উঠে আসে।হাতাহাতির মধ্যে তৃণ বুকের উপরে প্রাচ্য পড়ে যায়।প্রাচ্য’র ঠোঁট যেয়ে লাগে তৃণ’র গালে।এমন ঘটনায় প্রাচ্য লজ্জা পায়।চোখ তুলে তৃণ দিকে তাকায়।তৃণ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।লজ্জা মাথা নুয়ে ফে লে তৃণ’র বুকে।দুহাত দিয়ে তৃণ শার্ট খামচে ধরে।তৃণ একহাত চলে যায় প্রাচ্য’র কোমরে।প্রাচ্য সারা শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠে।শিরা উপশিরা শিহরণ জাগায়।
প্রাচ্য কে নিচে ফেলে তৃণ নিজের ভর ছেড়ে দেয় প্রাচ্য’র উপরে।কপালে উপর থেকে ভেজা চুল গুলো আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে ফেলে।কপালে চুমু খায়।প্রাচ্য তৃণ’র পিছনের শার্ট খামচে ধরে।তৃণ প্রাচ্য’র ঘাড়ে চুমু খায়।বুকের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে যেখানে চুমু খায়।পেটের উপরে থেকে শাড়ি সরিয়ে ফেলে।খামচে দেওয়া জায়গা লাল হয়ে গেছে।রক্ত জমাট ধরেছে।সেখানে চুমু খায়।প্রাচ্য’র নাভিতে মুখ ডুবায় তৃণ।প্রাচ্যদুহাত দিয়ে তৃণ’রর চুল খামচে ধরছে।ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে প্রাচ্য।সে ভাবতেই পারেনি তৃণ তার এত কাছে আসবে।তৃণ প্রতিটা ছোঁয়া শিহরণ জাগাচ্ছে।তৃণ কামড় বসায় প্রাচ্য’র পেটে।ব্যথায় ‘আহ ‘ করে উঠে।তৃণ প্রাচ্য দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকায়। তৃণ যেন হুস জ্ঞান বলতে কিছু নেই।ঘোর লেগেছে প্রাচ্যকে এভাবে দেখে।চোখ যায় প্রাচ্য’র ঠোঁটের দিকে। ঠোঁট দুটো খুব কাঁপছে। আর তৃণকে খুব করে টানছে।এগিয়ে যায় প্রাচ্যর ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরার জন্য।প্রাচ্য’র চোখ যায় দরজা দিকে।দরজা খোলা।এভাবে তারা এত কাছে। হুট করে যদি কেউ চলে আসে।ব্যপার খারাপ লাগছে।তৃণ প্রাচ্য’র ঠোঁট গুলো এমন সময় নিজের দখলে নিবে তখন প্রাচ্য বলল,
-” কি করছিস তৃণ! প্লিজ ছাড়,,,,!”
প্রাচ্য এই কথাটে তৃণ হুস ফেরে!ঘোর কেটে যায়।নিজের দিকে তাকায়।সে প্রাচ্য বুকের উপরে।প্রাচ্যর নিশ্বাস তার মুখে আঁচড়ে পড়ছে।দ্রুত উঠে পড়ে।অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আ’ম স্যরি।প্লীজ আমায় ভুল বুঝিস না।ক্ষমা করে দিস।দ্বিতীয় বার আবার একই ভুল করেছি।প্লিজ ক্ষমা করে দিস।”
এটা বলে তৃণ বেরিয়ে যায়।প্রাচ্য কান্না করে দেয় তৃণ কথা শুনে।প্রাচ্য খুব ভালো করেই বুঝেছে তার এই কথাতেই তৃণ খুব খারাপ লেগেছে।তৃণ হয়তো ভেবেছে প্রাচ্য আগের মত রিয়েক্ট করবে।প্রাচ্য কে যে তৃণ বাকি কথা শেষ করতে দেয়নি।তার আগেই… সে তো তৃণকে বলছে চেয়েছে ‘দরজা খোলা আছে কেউ চলে আসবে।’ পুরো কথা শেষ করার আগেই তৃণ… সে নারাজ ছিল না এসবের জন্য।সে নিজেই চেয়েছে তৃণ তার কাছে আসুক,ভালোবাসুক।তাহলে তার সাথে কেন এমন হয় সবসময়।

চোখে পানি মুচে, ঠোঁটের লিপস্টিক মুচে নিচে নামে।সবাই খেতে বসেছে।তৃণ পাশে তিন্নি বসে আছে।তাই সে তনয়ার সাথে বসে।খাবার খাচ্ছে আর আড়চোখে তৃণকে দেখছে। তৃণ তার দিকে তাকাচ্ছেই না।তার খুব খারাপ লাগে। সে কয়েক লোকমা খেয়ে উঠে চলে যায়।তৃণ প্রাচ্য’র যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনে যোগ দেয়।

সবাই মিলে লুডু খেলছে।।প্রাচ্য দুপুরের পর থেকে রুম থেকে আর বের হয়নি।ড্রয়িং হাসি আওয়াজ পেয়ে সে বের হয়।তৃণ আর তিন্নি দুজন দুজনে গা ঘেঁষে বসে কথা বলছে আর লুডু লেখছে।প্রাচ্য খুব খারাপ লাগছে।চোখের পাতা বন্ধ করে দুফোটা অশ্রু ফেলে। সে ভেবেছে তৃণ হয়তো খেয়ে রুমে আসবে।কিন্তু আসে নি।প্রাচ্যকে দেখে তনয়া বলল,
-” ভাবি দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো আমাদের সাথে!”
তিন্নি বলল,
-” ওর এখানে কোনো কাজ নেই।তুমি যেয়ে খালামণিকে রান্না কাজে সাহায্য করো।”
প্রাচ্য যায়নি। সে দাঁড়িয়ে থাকে।প্রাচ্য ভেবেছে হয়তো তৃণ তাকে ডাকবে।কিন্তু তৃণ মন দিয়ে খেলছে।প্রাচ্য যে এখানে আছে তৃণের চোখেই পড়ছে না।কিচেনে খাদিজার কাছে যায়।খাদিজা প্রাচ্যকে চা বসাতে বলেই রুমে চলে যায়।প্রাচ্য ওদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কাজ করছে।শাড়ির আঁচলটা গ্যাসের চুলায় লেগে আগুন ধরে যায়।তৃণ খেলার মাঝে মাঝে প্রাচ্য দিকে তাকায় প্রাচ্যর অলক্ষ্য। প্রাচ্য শাড়ি আগুন লেগেছে দেখে সে দৌড়িয়ে যায়।হাত দিয়ে আগুন নিভাতে থাকে।প্রাচ্য ভয় পেয়ে কেঁদে দেয়।তৃণ ধমকের সুরে বলল,
-” কাজ করতে যখন পারিস না তখন কিচেনে ঢুকিস কেন? ”
খাদিজা চেঁচামেচি আওয়াজ শুনে বেরিয়ে আসে।আগুনের কথা শুনে প্রাচ্যকে কয়েকদফা বকতে থাকে।তৃণ মেজাজ গরম করে বলল,
-“মা তোমার এই বকাবকি ছাড়া কি কোনো কাজ নেই।কিছু একটা ফেলেই শুধু বকে যাও।প্রাচ্য’র শুধু দোষ গুলোই ধরতেই থাকো।ওর গুণ গুলো কি তোমার চোখে পড়ে না।তোমার মন রাখার জন্য শাড়ি পড়ে।তোমার মন রাখার জন্য ভোর পাঁচটা ঘুম থেকে উঠে।তারপর কেন এমন করছো প্রাচ্য’র সাথে।”
ছেলেকে রেগে যেতে দেখে খাদিজা আর কোনো কথাই বলল না।চুপচাপ সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।সবাই বেড়িয়ে যায় তারাদুজন ছাড়া।তৃণকে এভাবে রেগে যেতে দেখে প্রাচ্য খুব ভয় পেয়ে যায়।নিচের দিকে তাকিয়ে নিরব কান্না করতে থাকে।
-” কোথাও লাগেনি তো, তোর? ”
তৃণ’র এই শীতল কন্ঠে শুনে প্রাচ্য চোখ তুলে তাকায়।প্রাচ্য মাথা নাঁড়িয়ে ‘ না ‘ জানায়।তৃণ এগিয়ে এসে প্রাচ্য’র চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,
-” শাড়ি পড়ার প্রয়োজন নেই। ”
-” মা বকবে।”
-” বকুক।আমি যা বলছি তাই করবি। একটু জন্য কতবড় বিপদ থেকে বাঁচলি।”
প্রাচ্য’র চোখ যায় তৃণ হাতের দিকে।হাত পুড়ে গেছে।প্রাচ্য তৃণ হাত ধরে দেখে অনেক খানি পূড়ে গেছে।প্রাচ্য ফ্রিজ থেকে বরফ এনে লাগিয়ে দেয়। কান্না করতে করতে বলল,
-” আমার জন্য তোর হাত পুড়ে গেছে।”
-” আরে পাগলী কান্না থামা।সামান্যই পুড়ে গেছে। কিছু হবে না আমার।”
নীলের কেন জানি বার বার স্বপ্নের কথা মনে পড়ছে।সে তো স্বপ্নকে ভালোবাসে না।তাহলে কেন এত স্বপ্নকে তার মনে পড়ছে। সে তো সুরওয়ালা কে ভালোবাসে। আর কারো কথা ভাবলেই কি ভালোবাসা হয় না’ কি।কি সব ভাবছে?
তার এসব ভাবনার ব্যাঘাত ঘটায় মোবাইলের রিংটোন আওয়াজে।সেই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসছে।এই ফোন সব সময় ভুল সময়ে আসে।বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরে।ওপাশ থেকে বলল,
-” আমায় নিয়ে এতক্ষণ ভাবছিলে তাই তো।”
নীল ভ্রু দুটো সাথে কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে।রুক্ষ কন্ঠে বলল,
-” আজিব।কে আপনি? যে আমি আপনাকে নিয়ে ভাববো। ”
-” আমি তোমার সব।আজকেই আসার সময়ই বলছি।”
নীল চুপ হয়ে যায়।এই কথাটা স্বপ্ন তাকে বলছে।তাহলে এই ছেলে কি করেই জানে।তারমানে কি,,,,,
-” আপনি।”
-” চিনেছো তাহলে!”
-” এত দিন আপনি আমায় ফোন করে বিরক্তি করেছেন? এটা যদি আরো দুদিন আগেই জানতাম তাহলে আপনার বারোটা বাজাতাম।”
স্বপ্ন হেসে বলল,
-” আবার কি জামের গোঁটার শরবত খাইয়ে বারোটা বাজাতে।”
-” দরকার হলে তাই করতাম।”
-” এভাবে অচেনা সেজে আমার সাথে কথা বলার মানে কি? ”
-” ভালোবাসি তাই।”
-“আমি বলছি না, আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।”
-” তাতে কি? আমি তোমাকেই ভালোবাসি।”
নীলের মেজাজ গরম হয়ে যায়।সে বলল,
-” কুত্তা ফোন কাট।না হলে ঢাকা যেয়ে তোর বেহাল করে আসবো।”
-” দাওয়াত রইল তোমার।এসো কিন্তু ঢাকাতে।অপেক্ষায় থাকব।”
নীল ফোন কেটে দেয়।রাগে গজ গজ করতে থাকে।স্বপ্ন আবার ফোন করে।আবার কেটে দেয়।এভাবে অনেকবার ফোন করে স্বপ্ন।বার বার নীল কেটে দেয়।শেষের বার নীল ফোন তুলে অনেক বাজে ভাবে গালি দিতে থাকে।গালি দিতে দিতে নীল হয়রান হয়ে যায়।স্বপ্ন বলল,
-“হয়েছে অনেক গালি দিয়েছো।আর দেওয়া লাগবে না।”
নীল এখন রাগে ফুঁসতে থাকে।স্বপ্ন বলল,
-” যে কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি সেই কথা শোন।”
নীল চিৎকার দিয়ে বলল,” কি?”
স্বপ্ন’র যেন কান ফেটে গেলো।তারপর সেই বিষয় কিছু না বলে স্বপ্ন বলল,
-” তোমার সুরওয়ালা কে জানো? ”
সুরওয়াল কথা শুনে নীলের রাগ গলে বরফ হয়ে যায়।সে উত্তেজিত হয়ে বলল,” কে আমার সুরওয়ালা।বলেন? ”
-” আরে! বলার জন্যই তো বলছি তোমাকে।”
-” কে আমার সুর ওয়ালা।বলেন প্লিজ।”নীলের কন্ঠে আকুলতা থাকে।
-” ঢাকাই আসলে বলল!”
-” না প্লিজ এখন বলেন? ”
-” এখন বলব না!
-” আচ্ছা এটা বলুন। সুরওয়ালা দেখতে কেমন? ”
-” বেশ হ্যান্ডসাম।তোমার সাথে ভালোমানাবে।”
-” ওহ!”
নীল এবার সন্দেহ চোখে বলল,
-” আপনি আমার সুরওয়ালাকে কিভাবে চিনেন।”
-” তোমার সুর ওয়ালা আমার বন্ধু। ”
-” মিথ্যে কথা বলছেন কেন? আমি আপনার সব বন্ধুদের কে চিনি।”
-” আরে তাকে তুমি দেখো নাই।”
-” বিশ্বাস করি না আপনার কথা।”
-” আচ্ছা তুমি আমার একটা কথা উত্তর দাও তো?”
-” হুম।”
-” সুর ওয়ালার সুর তুমি প্রথম কোথায় শুনেছো?”
-” সাজেকে?”
-” রাইট সাজেকে।সাজেকে পর তুমি আর কোথায় সুরওয়ালার সুর শুনেছো।”
-” প্রাচ্য আপুর বিয়ের রাতে।”
-” এবার তুমি বলো।সুরওয়ালা সুর শুনেছো সাজেকে। সে তো তোমাকে দেখেনি।তুমি তাকে দেখো নাই।তার মানে সেই সুর ওয়ালা জানে না তার সুর শুনে কেউ তার প্রেমে পড়েছে। সুর ওয়ালার কাছে এগুলো অজানা।তাহলে সে কিভাবে তোমাদের বাড়িতে এসেছে? আর সুর বাজিয়েছে।”
নীল ভাবতেছে স্বপ্ন তো একটা মিথ্যে কথা বলেনি।সত্যি তো সুর ওয়ালা কিভাবে তাদের বাড়ি চিনেছে। সত্যি কি প্রাচ্য আপুর বিয়ে রাতে সেই সুর ওয়ালা এসেছে।
সুর ওয়ালাকে সে যেমন দেখিনি সুর ওয়ালা তেমন ভাবে তাকে ও দেখিনি।তাহলে কি স্বপ্ন সত্যি বলছে।
নীল চুপ থাকতে দেখে স্বপ্ন বলল,
-” নীল আছো! ”
-” হুম!সুর ওয়ালা সত্যি কি এসেছে।
-” হুম।তোমার মুখে সেই সুরে বর্ণনা শুনে তাকে আমি তোমাদের বাড়িতে এনেছি। ”
-” তাহলে আমার সাথে দেখা করে নি কেন? ”
-” আমি মানা করেছি তাই?”
নীল উত্তেজিত হয়ে বলল,
-” কেন আপনি মানা করেছেন?”
-” আমি এত কষ্ট করে তোমার সুর ওয়ালা খুজে বের করেছি।তাকে কি এমনি এমনি তোমার হাতে তুলে দেব নাকি।”
-” কি চান আপনি?”
-” ঢাকায় আসলে বলব।এখন বায়।”
নীল কেন জানি স্বপ্ন কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।তাই নীল প্রাচ্যকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে সুরওয়ালাকে স্বপ্ন সত্যি সত্যি চিনে কি না। প্রাচ্য বলেছে, স্বপ্ন যা বলেছে সব সত্যি।নীলের সুর ওয়ালা স্বপ্নের বন্ধু।
# চলবে
# কাউছার স্বর্ণা।
পাষাণ হৃদয় যখন লিখছিলাম তখন ৪০০ উপরে সাড়া পেয়েছিলাম।আর এখন ২০০ উপরে উঠতে কষ্ট হয়।আপনার কি জানেন আপনা সাড়া দিলে লেখার উৎসাহ বাড়ে। ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।