স্বপ্নীল ৪৭,৪৮

0
1174

স্বপ্নীল
৪৭,৪৮
শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন’র সাথে করে নীলকে আসতে হলো।রাতে এসে নীল কোনো কথা বলল না।স্বপ্ন নীল কে রুম দেখিয়ে চলে এসেছে নিজের রুমে ঘুমাতে।সকাল সকাল স্বপ্ন এসে হাজির হয় নীলের রুমে সামনে।দরজা না আটকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে নীল।স্বপ্ন ঘড়ি দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বেজে গেছে।নীলের পাশে সেন্টার টেবিলে টেনে এনে বসে।আস্তে আস্তে বলল,
-” নীল!”
নীলের ঘুম পাতলা।এক ডাকে সে নড়ে চড়ে উঠে।হাত পা মেলে ঘুম ঘুম চোখে বসে পড়ে।হাই দিতে দিতে বলল,
-” আমি কোথায়? ”
স্বপ্ন বলল,
-” ভুলে গেলে নাকি? ”
স্বপ্ন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায়!
-” আপনি? আপনি আমার রুমে কি করছেন? আর আমার বাসায় কি করে ঢুকলেন?”
স্বপ্ন হেসে দেয়! বলল,
-” কালকে রাতে আমার সাথে এসেছিল আমার বাসায়।ভুলে গেলে না কি? ”
স্বপ্ন কথা শুনে মনে পড়ে যায় তার।মন খারাপ হয়ে যায়।আলসামি করে আবার শুয়ে পড়ে।
-” আরে! কি করছো?”
বালিশে মুখ গুঁজে বলল,
-” আপনি অনেক খারাপ! খুউব!”
নীলের হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসায়।হেসে বলল,
-” আমি সত্যি খুব খারাপ।”
-” আপনি হাসবেন না? আপনি হাসলে আমার গা পিত্তি জ্বলে যায়।”
স্বপ্ন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
-” তাই!”
নীল স্বপ্নর চুল টেনে বলল,
-” তাই!”
স্বপ্ন নীলকে ঢেলে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দেয়।বের হয়ে খাটের এসে শুয়ে পড়ে।স্বপ্ন নীলকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে ডায়নিং বসায়।নীল মনে মনে বলল,
-” শালা! খুব শখ না বউ জামাই খেলার।দেখি আমায় কি করে সহ্য করিস!”
স্বপ্ন বলল,
-” কি খাবে?”
-” ভাত আছে! ভাত খাবো!”
-” সাত সকাল বেলা ভাত পাবো কোথায়? ”
-” ভাত পাবে কোথায়? সেটা আমি জানি না।আমার ভাত চাই এখন চাই। ১০ মিনিট দিলাম ভাত রান্না করেন? ”
-” ১০ মিনিট কি রান্না করায় যায়।”
-” সেটা আমার জানার বিষয় নয়।”
স্বপ্ন কিচেনে যে রান্না বসায়।নীল অন্য একটা চেয়ার এনে পা তুলে দেয়।স্বপ্নকে জিজ্ঞেস করল,
-” বাই দ্য ওয়ে আপনার মা, বাবা কই? ”
-” তারা বাসায়? ”
-” তাহলে আমরা কোথায়?”
-” বাসায়।এটা ও আমাদের বাসা।”
নীল কান্না করতে করতে বলল,
-” আমাকে এভাবে একলা একটা বাসায় এনেছেন আমার ইজ্জত হনন করতে। ”
কিচেনে থেকে বেরিয়ে এসে ধমক দিয়ে বলল,
-” অভিনয় পাক্কা করতে পারো তুমি! হাতে ক্ষমতা থাকলে তোমাকে অস্কার দিতাম।”
নীল আবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়।স্বপ্ন নীলের সামনে বসে বলল,
-” নীল সোনা কান্না থামাও!”
-” আমি কিছু খামু! খিদে পেয়েছে! ”
স্বপ্ন হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পাচ্ছে না।এরকম একটা তারছিঁড়া মেয়েকে সে পাগলের মত ভালো বাসে।
-” ভাত রান্না হোক তারপর খেও।”
-” আমি সকালে ভাত খাই না।”
-” তুমি তো বললেই!”
-” বলছি তো কি হয়েছে।এখন আবার আমার মুড চেঞ্জ হয়ে গেছে।এখন ভাত খামু না।আমার জন্য পিৎজা, বার্গার আনেন।”
ওই খাবার গুলো হোমডেলিবারিতে অর্ডার করে।কিছুক্ষণ মধ্যে চলে আসে খাবার।সেগুলো দেখে নীল বলে এসব খাবার সে খায় না।বমি আসে।খাবার দেখে ওয়াক! ওয়াক করতে থাকে।স্বপ্ন’র পাগল পারা হয়ে যায়।তারপর আবার স্বপ্ন নীলের জন্য নুডলস রান্না করে। তা সে খায় না।এভাবে অনেক রান্না করায় স্বপ্ন’র হাতে।লাস্ট পর্যন্ত নীল সেই ভাতই খায়।শুধু স্বপ্ন কে হয়রান করার জন্য এমন করেছে নীল।

রাতের কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ধূসর।আকাশে আজ নেই কোনো তারার মেলা, নেই কোনো চাঁদ। তারপর ধূসর তাকিয়ে আছে নিকষ কালো আকাশটা দিকে।চোখে কোণে বিন্দু বিন্দু পানি চিক চিক করছে।বাম হাত দিয়ে মুছে ফেললে ই আবার ভরে যায়।কেন সোহার সাথে আরো আগে দেখা হলো না।যখন ভালোবেসেছে তাকে।তাহলে কেন তার কপালে সোহা নেই।ভালোবাসি বলার আগে মন ভেঙ্গে গেছে তার।সে মনকে বোঝাতে পাচ্ছে না।তার সোহাকে তাকে ভালোবাসে না।সোহা জীবনে তার আগেই অন্য কারো আগমন ঘটে।
সেদিন রাতে সোহাকে নিয়ে ছাদে যায়।নিজের মনে কথা খুলে বলার জন্য।সোহা হয়তো বুঝতে পেরেছে সে যে কি বলবে?এই জন্য বোধহয় তাকে বলতে না দিয়ে সোহা সেদিন বলল,
-” আমি খুব ভালো করে জানি আপনি কি বলতে চান।কিন্তু আপনার আগে আমার জীবনে অন্য কেউ আগমন ঘটেছে।তার সাথে হৃদয় দেওয়া নেওয়া হয়ে গেছে।আমি আপনাকে বলব।আমার প্রতি যদি আপনার কোনো ফিলিংস থেকে থাকে তাহলে সেই ফিলিংস মুচে ফেলেন।নতুন করে জীবন শুরু করেন? ভালোবাসলে যে পেতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।পারলে আমায় মাফ করবেন।” এটা বলে সেদিন সোহা চলে যায়।একবারের জন্য তাকায় নিয়ে তার দিকে।তাকালে দেখতে পারতো ধূসরের চোখের পানি।হাটু গেঁথে কান্না করেছে সেদিন ছাদের।
ধূসর মুচে ফেলতে পারবে না সোহার প্রতি ফিলিংস।তার প্রথম প্রেম।প্রথম ভালোবাসা।এত সহজে মুচে ফেলা যায়।থাক না তার এক তরফা ভালোবাসা।কত মানু্ষ একতরফা ভালোবেসে পায় না।তারা কি বেঁচে নেই,বেঁচে আছে তারা।তাহলে সে ও পারবে।সারা জীবন একতরফাই ভালোবেসে যাবে।তামিমের রুমে পানি শেষ হয়ে গেছে।পানি খাওয়ার জন্য নিচে নামে।তখনই আমেনা খালাকে দেখে।চিন্তিত মুখে বেসিন থেকে পানি নিচ্ছে।তামিম খালার পাশে এসে বলল,
-” খালা!
আমেনা অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছিল। তামিমের কথায় কানে যায়নি।তামিম এবার একটু জোরে বলল,
-” খালা!”
-” কে?ও! তামিম!এত রাতে নিচে এলে যে!”
-” পানি খেতে এসেছি।রুমে পানি শেষ।”
তামিমের চোখ যায় খালার হাতে ছোট কাপড়ে টুকরা দেখে।হাতে ছোট একটা বাটির করে পানি নিচ্ছে।কারো কি আবার জ্বর হলো নাকি।সে জন্য বোধ হয় জলপট্টি দেওয়ার জন্য পানি নিল।কিন্তু কার জ্বর এসেছে!
-” জ্বর কার এসেছে খালা!”
-” আর বলো না।মেয়েটাকে সারাদিন দেখেছিলাম ভালো আর এখন হাড় কাঁপানো জ্বর এসেছে।”
তামিমের বুকের ভিতরে ধুকধুক করে উঠল।তার প্রেয়সী জ্বর অথচ সে জানে না।জানবে কি করে।সন্ধায় ভালো দেখেছে।আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সোহার ঘরে দিকে চলে গেলে।রুমে যেয়ে সোহার মাথা হাত দিয়ে আঁতকে ঊঠল।পাঁজাকোলা করে নিজের রুমে নিয়ে আসে।আমেনা অবাক! তামিমের এহেন কান্ড।তামিমের পিছু আমেনা ও যায়।সোহাকে শুয়ে দিয়ে কাঁথা টেনে দেয় ।জলপট্টি আনতে গেলে আমেনাকে দেখে।আমেনা হাতে জলের বাটি দেখে সেটা নিয়ে সোহার পাশে বসে।কাপড়ে টুকরা ভিজিয়ে সোহার মাথা দেয়।আমেনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে।তামিম বলল,
-” খালা! সোহা রাতে কিছু খেয়েছে!
-” খেয়েছে!
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমেনা বলল,
-” শুধু শুধু নিচ থেকে কেন আনতে গেলে?সোহাকে তোমার রুমে দেখলে সবাই নানা প্রশ্ন করব।”
আমেনার কথায় তামিমের হুস ফেরে। কি বলবে সে এখনা আমেনাকে?উঠে এসে খালার সামনে দাঁড়ায়।বলল,
-” কেউ কিছু বলবে না।আমি ওর মাথা জলপট্টি দিয়ে দেব।আমার কাছে জ্বরে ওষুধ আছে খাইয়ে দিলে জ্বর কমে যাবে।আমি ওর সাথে আছি।তুমি বরং ঘরে গিয়ে ঘুমায়।”
আমেনা কিছু বলতে গিয়ে ও আর বলল না।অগত্যা নিচে নেমে আসল।দুচিন্তা নিয়ে ঘুমাতে গেলো।তামিম সোহার মাথা হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।সোহা চোখ খুলে তাকায়।তামিম বলল,
-” সন্ধ্যায় ভালো দেখলাম।জ্বর আসল কেন হঠাৎ!”
সোহা খুব আস্তে করে বলল,
-” জানি না!”
-” এখন কেমন লাগছে।”
-” ভালো! কিন্তু শরীর ব্যথা করছে খুব ! ”
তামিমের মনে পড়ে যায় কালকে রাতে তাদের মিলনে কথা।হয়তো সোহার শরীর সে ধকল সহ্য করতে পারেনি তাই হয়তো জ্বর চলে এসেছে।এতটা কাছে আসার কি দরকার ছিল।আর সোহা তাকে মানা করলে হতো।জ্বরে ওষুধ সাথে ব্যথার ওষুধ খাইয়ে দেয়।মাথা আবার পানি দিতে থাকে। গড়গড় করে তামিমের গায়ে বমি করে দেয়।

স্বপ্ন দুই মগ কফি নিয়ে নীলের রুমে যায়।নীল প্রথমে খাবে না বলছে। পড়ে নেয়।কফিতে চুমুক দিয়ে নীল বলল,
-” কবে দেখা করাবেন সুর ওয়ালার সাথে!”
কফির মগে চুমুক দিতে যাবে এমন সময় নীল কথাটা বলল।চোখে তুলে তাকায় স্বপ্ন। বলল,
– “বলেছিলাম তো, সবুরে মেওয়া ফল।”
ফর্সা মুখটা নিকষিত হয়ে যায়।মাথা চুলকিয়ে ভাবতে থাকে।তখনই স্বপ্ন বলল,
-” চুল গুলো আঁচড়াতে পারো না।”
নীল তাকায় স্বপ্ন’র দিকে। ঠোঁট উলটিয়ে বলল,
-” না!”
স্বপ্ন কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
-” এভাবে মাথা চুলকাচ্ছো কেন? উকুন আছে বুঝি?”
নীল ফিঁচলে হেসে বলল,
-” উকুন আ ছে? বেছে দিতে পারবেন? প্রচণ্ড চুলকাচ্ছে?”
স্বপ্ন হেসে বলল
-” তুমি চাইলে পারব।”
কফি মগ রেখে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চিরুনি আর তেল আনে।স্বপ্ন খাটে বসে নীল মেঝেতে।নীলের লম্বা লম্বা চুল গুলো আঁচড়ালে গেলে টান খেয়ে ব্যথা ফেলে নীল তার সেই ভয়ংকর গালি গুলো দেয়।স্বপ্ন হেসে আরো যত্ন করে চুলের তেল লাগিয়ে দেয়।নীল বলল,
-” এবার উকুন ধরেন! ”
স্বপ্ন অনেক্ষন ধরে মাথা এপাশ ওপাশে চুল গুলো দেখে।কিছু পায় না।তারপর অনেক কষ্টে একটা বড় উকুন ধরে নীলের হাত দেয়।নীল সেই উকুন স্বপ্ন চুলে ছেড়ে দেয়। স্বপ্ন রিয়েক্সশন দেখে নীল হেসে কুটিকুটি।নীলের হাসি দেখে স্বপ্ন গম্ভীরা কেটে যায়।নীলের সাথে পাল্লা দিয়ে হাসতে পারে।স্বপ্ন নীলের থুতনি ধরে ঘোর লাগা চোখে বলল,
-” হাসনি বুড়ি! কি করে এত হাসো।তোমার এই ভয়ংকর হাসির প্রেমে পড়ে বার বার মরেছি! ”
নীল স্বপ্ন’র চোখের দিকে তাকায়।এই চোখে গভীরতা মাপার চেষ্টা করে।কি আছে এই চোখে?বার বার তাকালে যে অতল সাগরে সে হারিয়ে যায়।খুব যে কষ্ট হয় সেই সাগর থেকে সাঁতার কেটে উপরে উঠতে।চোখে নামিয়ে লাজুক হেসে কথা ঘোরানোর জন্য বলল,
” এবার আমার চুলে বেনুনি করে দেন? ”
নিজেকে স্বাভাবিক করে স্বপ্ন নীলের চুলে হাত দেয়।বার বার ট্রায় করে বেণি করার জন্য,কিন্তু পারে না।প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে কোনো রকম করে দেয়।
নীলের কেন জানি এখন আর স্বপ্নকে বিরক্তি লাগে না।তার সাথে মিলে এরকম খুনসুটি করতে বেশ ভালোই লাগে।নীল উঠে দাঁড়ায়।সে এবার স্বপ্ন চুল আঁচড়ে দিবে।স্বপ্ন মানা করার সত্ত্বেও বলল,-” আপনি এত কষ্ট করে আমার চুল বেঁধে দিয়েছেন।এবার আমার পালা।কোনো কথা বলবেন না। আর ডিস্টার্ব করার যাবে না।”
স্বপ্ন চুপ হয়ে যায়।মনোযোগ সহকারে চুলে তেল লাগিয়ে দেয়।নীলের আলত স্পর্শ স্বপ্ন যেন ঘুম পাচ্ছে।সে যেন গভীর ঘুমে আছন্ন হয়ে যাচ্ছে।নীল হাতে একটা রাবার ব্যান্ট নেয়।ছোট বাচ্ছাদের যে ভাবে ঝুটি করে সেভাবে স্বপ্ন চুলে ঝুটি করে দেয়।মনে মনে হেসে খুন হয় নীল।

স্বপ্ন নড়াচড়া না দেখে নীল উঠে এসে দাঁড়ায়।তাকিয়ে দেখে স্বপ্ন ঘুমে তলিয়ে গেছে।স্বপ্নকে ভাবে দেখে তার মাথা দুষ্টু বুদ্ধি চাপে।তার ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে রাখে।মেকআপ বক্স থেকে মেকআপ দিয়ে সাজিয়ে দেয়।ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে গেলেই স্বপ্ন সজাগ হয়ে যায়।চোখ মাত্র লেগে এসেছে তার।ঘুম ঘুম চোখে স্বপ্ন বলল,
-” কি করছ আমার সামনে?”
হাতের লিপস্টিকে চোখ যায় নীলের।লুকিয়ে ফেলে।উঠে দাঁড়িয়ে মোবাইল বের করে স্বপ্ন ছবি তুলে নেয়।মোবাইল ফ্ল্যাশলাইট আলো পড়তেই চোখে উপরে হাত দিয়ে বলল,
-” আরে কি করছো?ছবি তুলছো কেন? ”
নীল হেসে বলল,
-” আয়না গিয়ে দেখেন?”
এটা বলে সে পালায়।স্বপ্ন দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।দর্পনে নিজের চেহারা দেখে নীলের পিছু পিছু ছুটে তাকে ধরার জন্য।স্বপ্ন বলল,
-” নীল দাঁড়া ও।তুমি ছবি গুলো ডিলিট করো?”
নীল সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলল,
-” ডিলিট করব না।এফবিতে আপলোড করব!”
স্বপ্ন চিৎকার দিয়ে বলল,
-” না নীল।এমন করো না।”
-” আমি এমন করব!”
স্বপ্ন আর নীল দুজনে ছুটা ছুটি করে।স্বপ্ন নীলের হাত থেকে মোবাইল নিতে চায়।নীল তা দিতে চায় না।নীলকে ঝাপটে ধরে স্বপ্ন মোবাইল নেওয়ার জন্য।নীল কিছুতেই দিবে না পণ করেছে।হাতড়াহাতড়ি মধ্যে দুজনে ধপাস করে সোফা পড়ে যায়।নীল ভয়ে স্বপ্ন’র শার্ট খামচে ধরে।চোখে খুলে তাকাতে দুটো চোখ তাকে মোহময় আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে।নীলের চোখ যায় স্বপ্ন’র ঠোঁট উপরে।সে বুঝতে পাচ্ছে না ছেলেদের ঠোঁট কিভাবে এত গোলাপি হয়।বেশিভাগ ছেলেরাই সিগারেট খেয়ে ঠোঁট কালো কুচকুচে করে ফেলে।স্বপ্ন ঠোঁট দুটো যেন তাকে টানছে।খুব করে টানছে! ঘোর লেগে যায় তার।মাতাল কণ্ঠে সে বলল,
-” আপনি সিগারেট খান না? ”
-” না!
-” কেন খান না? ”
-” এমনি ভালো লাগে না আমার?”
-” আজ থেকে প্রতিদিন এক প্যাকেট করে সিগারেট খাইবেন? ”
-” কি? ”
স্বপ্ন কথা যেন নীলের মাথায় ঢুকছে না। সে তো ঠোঁট গুলো মোহয়ে আটকে আছে!সে বলল,
-” আপনি কি ঠোঁটে লিপস্টিক লাগান!”
নীলের এই আবল তাবল কথা স্বপ্ন মাথায় ঢুকছে না।স্বপ্ন নীলের চোখের দিকে তাকায়।সেই চোখে দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখে তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে নীল।স্বপ্ন উঠে যেতে নিলেই নীল কলার খামচে ধরে একহাতে।আরেক হাত দিয়ে স্বপ্ন চুল খামচে ধরে। স্বপ্ন মাথা ঝুঁকিয়ে ধরে।চোখ বন্ধ করে আগাতে নিলেই স্বপ্ন বাঁধায় দেয়।বাঁধা পেয়ে চোখ খুলে তাকায়।তার ঠোঁটে স্বপ্ন’র হাত! এই হাত দিয়ে তাহলে বাঁধা দিয়েছে।হাতের বাঁধন আলগা পেতেই স্বপ্ন উঠে দাঁড়ায়।চলে যায় সে।

নীল লজ্জা মরে যাচ্ছে।কি করতে যাচ্ছিল সে।এ লোকটা এখন তাকে কি মনে করবে।যাগকে! যা মনে করার করুক।এত সুন্দর ঠোঁট দেখলে কেউ কি কন্ট্রোল করতে পারো।

কাউছার স্বর্ণা

স্বপ্নীল
৪৮
ইদানীং কিছুদিন ধরে রোদের দেখা পাচ্ছে না সমুদ্র।আগের মত এখন আর অফিসে আসে না।ফোন করে মাঝ রাতে বিরক্তি করে না।যতই সমুদ্র বলুক তার এগুলো ভালো লাগে না।কিন্তু তাকে রোদের পাগলামিগুলো খুব টানে এখন।বার বার খালি রোদের কথা মনে পড়ে।অফিসে থাকা অবস্থা মনে হয়।এই বুঝি রোদ এসে বলল,” এনার সাথে ভালোই লটরপটর করতে পারেন।এই জন্য আমায় ভুলে গেছেন?” এখন আর কেউ এসে এই কথা বলে না।কোনো কাজে মন বসে না।রোদ তাকে ইগনোর করছে মানতেই পাচ্ছে না।

অফিসে থেকে ফিরে এসে ক্লান্ত শরীর বিছানা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে করলেই রোদের চেহারা মনে পড়ে।এই কয়দিন তাকে একমিনিট শান্তিতে থাকতে দেয়নি।যতই ঝারি দেখ, ধমক দেখ, কোনো কাজ হয়নি।রোদ সে গুলো গায়ে না মেখে বার বার তার কাছে ছুটে এসেছে।মাঝে মাঝে ঠোঁট কামরিয়ে দিত।

পকেট থেকে মোবাইল বের করে গ্যালারীতে যায়।সেখানে রোদের অসংখ্যা ছবি আছে।বিয়ের দিনে একটা ছবির উপরে চোখ যায় তার।ধূসরে জোরাজুরি তে রোদের কাঁধে হাত দিয়েছে।এটাই তাদের প্রথম কাপল পিক ছিল।

ডায়াল ও যে রোদের নাম্বারে ফোন দেয়।রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না কেউ? কয়েকবার রিং হওয়ার পর কেটে দিচ্ছে।সমুদ্র আবার ফোন দেয় আবার কেটে দেয়।সে খুব ভালো করে বুঝেছে রোদ তাকে ইগনোর করছে।বুক ছিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এফবি আইডি লগ ইন করে! সাথে সাথে নিউজফিইউ রোদের কিছু হাস্যোজ্জ্বল ছবি ভেসে উঠে।রোদের সাথে রেহান আছে।
মুহূর্ত মধ্যে সমুদ্র মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।ছুড়ে মারে মোবাইল। রোদের চিন্ত বাদ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

নীল বার বার স্বপ্নকে জোর করছে সিগারেট খাওয়ানোর জন্য।কিন্তু স্বপ্ন খাচ্ছে না কিছুতেই।নীল কালকে রাতে পণ করেছে স্বপ্ন’র গোলাপি ঠোঁট গুলোকে কালচে বানিয়ে ফেলবে।স্বপ্নকে সিগারেট খাইয়ে।কিন্তু স্বপ্ন রাজি হচ্ছে না।নীল বলল,
-” এই সিগারেট প্যাকেট যদি আমার তামিম ভাইয়া বা সমুদ্র ভাইয়াকে দিতাম তাহলে তারা খুশিতে ১০০০ টাকা দিত।আর আপনি! ”
স্বপ্ন প্যাকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে নীলের হাতে দিয়ে বলল,
-” টাকার দরকার তো টাকা নাও।তারপর আমায় মাফ করো।এই সিগারেট আমি কিছুতে খেতে পারবো না।”
নীলের অপমানে রাগে দঃখে কান্না আসছে।তার ভাইয়াদের সিগারেট খাওয়া মানা। তারা সব সময় লুকিয়ে সিগারেট খায়। যদি সে স্ব-ইচ্ছা ভাইদের কে সিগারেট দিতো….তাই জন্য কথা বলছে সে।টাকা গুলো ছুড়ে মারে স্বপ্ন মুখের উপরে।বলল,
-” আমার কি আপনার ছোটলোক মনে হয়।আপনার থেকে আমি টাকা নেব।”
এটা বলে হনহন করে বেরিয়ে যায়।

সকালে অফিসে যাওয়ার সময় জ্যামে আটকা পড়ে সমুদ্র।তার পাশে এসে আরেকটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়।সেই গাড়ির জানালার গ্লাস নেমে যেতে দেখতে পায় রোদকে।রোদ ড্রাইভিং করছে তার পাশের চিটে রেহান বসে আছে। কিভাবে তারা গাড়িতে বসে হাসি তামাশা করছে! সমুদ্র খুব রাগ হচ্ছে।এখনই কেন জ্যামে আটকা পড়তে গেলে।ইচ্ছা করছে ছেলেটাকে গাড়ির ভিতর থেকে টেনে এনে ভক্তা করে ফেলতে।সিগন্যাল শেষ হতেই সমুদ্র’র গাড়ি চলে যেতে দেখে রোদ রেহানের থেকে দূরে সরে যায়।সমুদ্র কে দেখেই ইচ্ছা করে রেহানে ঘা ঘেঁষে বসেছে।

শার্ট জিন্স পড়ে প্রাচ্য ভার্সিটি যাওয়ায় জন্য বের হয়।তখনই ডায়নিং কাছ থেকে খাদিজা এসে বলল,
-” এসব কেমন বেশভূষা! ”
তৃণ ডায়নিং থেকে প্রাচ্যকে দেখছে।প্রাচ্য মুখে বিরক্তি নিয়ে খাদিজাকে এড়িয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই খাদিজা বলল,
-” তৃণ দেখছিস কী অসভ্য মেয়ে।আমি কথা বলছিস তা না শুনেই চলে যাচ্ছে।”
প্রাচ্য খাদিজার দিকে তাকিয়ে বলল,
-” প্রতিদিন এককথা শুনতে ভালো লাগে না।নতুন কিছু আপডেট করলে ভালো হয়।”
প্রাচ্য চলে যায়।খাদিজা পিছন থেকে হাক দিয়ে বলল,
-” বাইরে যাচ্ছে।স্বামী সামনে বসে আছে।একবার তাকে বলার প্রয়োজনবোধ করে না।”
তৃণ আর খেতে পারেনি সে উঠে দাঁড়ায়।রোদকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে। প্রাচ্য কোথায় গেছে।রোদ বলেছে প্রাচ্য ভার্সিটি যাচ্ছে।এক্সাম আছে প্রাচ্য’র।

ভার্সিটি যায় তৃণ।প্রাচ্যকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে।অনেক্ষন ভার্সিটি গেইট দাঁড়িয়ে থাকে।প্রাচ্যকে আসতে না দেখেই তৃণ ক্যাম্পাসে ঢুকে।কতদিন হয়েছে সবাই মিলে ক্যাম্পাস আসা হয় না।ক্যান্টিন ঢুকে দেখে।একই টেবিলে দুজন মানু্ষ বসা।প্রাচ্য’র সামনে চেয়ারে শিহাব বসে আছে।তৃণ চোখ যায় টেবিলে রাখা দু’টো হাতের দিকে।শিহাব প্রাচ্যর হাত ধরে আছে।
সে আর একমুহূর্ত দেরী না করেই ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায়।আর থাকা যাবে না এখানে।ইদানীং প্রাচ্য বাসায় থাকলে মোবাইলে বেশি সময় দেয়।মাঝে মাঝে বারান্দা দাঁড়িয়ে কথা বলে।তার মানে কি শিহাবের সাথে কথা বলে।এই জন্য তাকে এড়িয়ে যাচ্ছস
এসব ভাবতেই ভাবতে কখন যে ভার্সিটি গেইট পেরিয়ে মেইন রাস্তা চলে এসেছে তার কোনো খেয়লা ছিল না।সিএনজি সাথে ধাক্কা খায়। হাত, পা কপাল ছিঁলে যায়।পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা পায়।স্বপ্ন ঢাকার বাইরে যাবে সেজন্য প্রাচ্যকে ঢেকে আনে নীলের সাথে থাকার জন্য।দুইবোন মিলে রান্না করে।নানা বিষয় আড্ডা দিয়ে ঘুমাতে যায়।নীলের চোখ ঘুম নেই।বিছানা এপাশ ওপাশ করতে থাকে।চোখ বন্ধ করলেই স্বপ্ন’র হাসিমাখা চেহারা ভেসে উঠে।আজান্তে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।

দুইদিন পর প্রাচ্য বাসায় ফিরে।খাদিজা তাকে দেখে অনেক বকা ঝকা করে।রুমে এসে তৃণকে দেখে।মাথা ব্যান্ডেজ করার।পায়ে গোড়ালিতে ব্যান্ডেজ করার।পা মেলে শুয়ে আছে খাটে।পেটের উপরে ল্যাপটপ রাখা।কাজ করছে।প্রাচ্যকে রুমে ঢুকতে দেখে ও তাকায়নি সে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৃণকে আড়চোখে দেখতে থাকে।প্রাচ্যর কেন জানি জড়তা কাজ করছে তৃণ সাথে কথা বলতে।তৃণ এই অবস্থা তাকে একবার জানায়নি।আর সে একবারের জন্য দুদিন তৃণ কে ফোন করে নি।তৃণ পাশে এসে বসে বলল,
-” কি ভাবে এমন হয়েছে তোর?”
একবারের জন্য তৃণ তাকায়নি।নিজের কাজে সে ব্যস্ত।তৃণ বাহুতে হাত দিলে তৃণ এক ঝটকা মেরে ফেলে দেয়।ল্যাপটপ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।সেন্টার টেবিলে ল্যাপটপ রেখে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে নিচে যায়।সেদিন গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে হাত, পা কপাল ছিঁড়ে যায়।পায়ের গোড়ালিতে একটু বেশি ব্যথা পাওয়াতে ব্যান্ডেজ করে দেয় ডক্টর।

রাতে দুজন দুইপাশ করে শুয়ে আছে।কারো মুখে কথা নেই।তখনই প্রাচ্য’র মোবাইলে ফোন আসে।মোবাইলটা তৃণ পাশে রাখা ছিল বলে মোবাইলে স্কীনে শিহাবের নামটা দেখতে পায়।প্রাচ্য মোবাইলটা নিয়ে উঠে বারান্দা চলে যায়।প্রাচ্য বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরে বলল,
-” বললাম না, আমায় যেন আপনি ফোন না দেন!”
-” বিশ্বাস করো প্রাচ্য!সেদিন আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি।তোমাদের বাড়ি উদ্দেশ্য বের হয়ে ছিলাম।কিন্তু তোমার বন্ধুরা আমায় তুলে নিয়ে আমার ফোন থেকে এরকম মেসেজ করেছে।তাতে আমার কি দোষ।দোষ তোমার বন্ধুদের।তারা প্ল্যান করে আমার সাথে এরকম করেছে।”
-” এই কথা আর কয়বার বলবেন।”
-” যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমার কাছে আসবে না।তুমি ওই তৃণকে ছেড়ে আমায় কাছে চলে আসো।আমি তোমাকে ভালোবাসি।বিয়ে করতে চাই তোমাকে।”
-” কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না। দ্বিতীয় বার যেন আপনার থেকে যেন ফোন না আসে।”
-” আমি যখন তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে তো আমার হতে হবে।”
-” থ্রেড দিচ্ছেন!”
-” তোমাকে আমি না পেলে কাউকে পেতে দিব না।তাই ভালোয় ভালোয় বলছি আমার কাছে চলে আসো।”
প্রাচ্য ফোন কেটে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। শিহাবের একটা কথা বার বার ভাবাচ্ছে।সেদিন ভার্সিটি তে শিহাব বলছে বন্ধুরা এরকম করেছে।তার মানে কি শিহাব বিয়ে করতে না আসা ওদের প্ল্যান ছিল।যাতে আমার আর তৃণ বিয়ে হয়।সেই প্ল্যান কি তৃণ যুক্ত ছিল।যদি বা তৃণই যুক্ত থাকে তাহলে তৃণ কেন বলছে স্বপ্ন জন্য তাকে বিয়ে করেছে।তার মানে কি এই প্ল্যান তৃণ জানত না।তৃণকে জিজ্ঞেস করলেই শিওর হওয়া যাবে।খাটের হেলান দিয়ে বসে প্রাচ্য বলল,
-” শিহাব কে যে কিডন্যাপ করছে স্বপ্ন।সেটা কি তুই জানতি।”
তৃণ ভ্রু কুঁচকে যায়।সে বলল,
-” গাঞ্জা খেয়েছিস নাকি।স্বপ্ন কেন শিহাবকে কিডন্যাপ করাতে যাবে।শিহাব তোকে বিয়ে করতে চাইনি তাই তো মেসেজ করেছে তার বাবা মাকে!”
-” শিহাব বলছে সেই মেসেজ তার মোবাইল থেকে তোরা করছিস।”
তৃণ মেজাজ গরম করে বলল,
-” এত শিহাব শিহাব করছিস কেন? আমি এসব কিছু জানি না।আমায় এই ব্যপারে কিছু জিজ্ঞেস করবি না।”
প্রাচ্য মোবাইল খুলে স্বপ্নকে কল করে।শিহাবের কে যে কিডন্যাপ করা হয়েছে তা জিজ্ঞেস করে।স্বপ্ন বলল,
-” কি করব আমরা।তোদের দুজনকে বোঝাতে বোঝাতে হয়রান হয়ে গেছি।তাই তো লাস্ট পর্যন্ত আমাদের কিডন্যাপার হতে হয়েছে।”
-” তাই বুঝি এরকম করবি!”
-” কেন? শিহাবের জন্য কি তোর দরদ উতলে পড়ছে নাকি! ”
-” না! ”
-” শোন এই প্ল্যান আমাদের কে তোর ভাইয়ে দিয়েছে।”
-” কি? ভাইয়া জানত।”
-” হুম!”
-” তৃণ কি জানত।?”
-” না।তৃণ কে জানালে প্ল্যান ভেস্তে দিত ।তাই তোরা দুজন ছাড়া আর সবাই জানত।”

সকালে বিকালে শিহাব তৃণদের রুমে সামনে বারান্দা বরাবর রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকত।প্রাচ্য মাঝে মাঝে দেখত।কিন্তু ইদানীং এখন আর শিহাব তাকে ফোন দেয় না।শিহাব কি তার জন্য এখানে আসে নাকি অন্য কোনো কারণে প্রাচ্য বুঝতে পারে না।এসব কিছু তৃণ’র চোখ এড়ায় না।

#কাউছার স্বর্ণা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে