স্বপ্নীল ৬৮
স্বপ্নীল
৬৮
লাল বেনারসি শাড়ি পড়ে বধু বেশে বসে আছে নীল।কী অপরুপ লাগছে নীলকে।নাকে নোলক,মাথায় টিকলি।হাত দিয়ে ছুয়ে দেখছে।এই সাজ তো স্বপ্ন জন্য সাজতে চেয়েছিল।এই সাজে স্বপ্নর সামনে যেতে চেয়েছে।ভাগ্যর কি নির্মম পরিহাস।আজ সে বঊ সেজেতে। অথচ এই সাজ অন্য কারো জন্য।দুফোঁটা চোখের জল পড়ে,নীলের হাতের উপরে।
কালকে সারারাত স্বপ্ন কোলে মাথা রেখে শুয়েছিল।ভোর হওয়ার আগেই নীল জোরে করে স্বপ্নমে বের করে দেই।তখন দেখেছে স্বপ্ন’র সেই চাহনি।হৃদয় ভাঙা সেই চাহনি ছিল।তখন শেষ বারের জন্য ঝাপটে ধরেছিল।শেষ বারে জন্য স্বপ্ন তার কপালে চুমু খেয়েছে।অজান্তেই নীলের হাত কপালে চলে যায়।আর কখনো স্বপ্ন তাকে এই জায়গা ভালোবাসা পরশ দিতে পারবে না।কখনো না।
আলমারি ড্রয়ার থেকে বিষের শিশি বের করে।এবার ও চোখ বড় বড় করে বোতলের লেখা ‘ বিষ’ তাকায়।সে তো মরতে চায়নি।সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছে।স্বপ্নকে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছে।তা যদি না হয়।তাহলে বেঁচে থেকে কী লাভ হবে।কার জন্য বাঁচবে।তার বাবা, দাদা যদি জেদ দেখাতে পারে তাহলে যে কেন পারবে না।তাদের শরীরে রক্তই বইছে নীলের শরীর।সে পারবে।আজকে তার নিজের রাগ,জিদকে তার বাবা, দাদার জেদকে হার মানাবে।হারতে হবে তাঁদেরকে।নীলের জিদের কাছে।যেদিন প্রথম তার বাবা তাকে ব্ল্যাক মেইল করেছে।সেদিনে ঠিক করেছে নিয়ে মনে মনে।সে এমন কিছু করবে।যাঁরা এই পরিস্থিতি তৈরী করেছে।তাঁরা যেন একদিন কেঁদে বুক ভাসাক।তাঁরা চাইছে তাকে বিয়ে দিয়ে তার স্বপ্নকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।সেই কষ্ট স্বপ্ন কে একা পাবে কেন।সেই কষ্ট তার বাবা, দাদাকে পেতেই হবে।চরম ভাবে পেতেই হবে।২০ বছরে আগের সেই ঘটনা আবার ঘটবে।২০ বছর আগে তাদের প্রিয় একজন কে হারিয়েছে।আবার সেই ২০ বছর পর তাদের প্রিয় একজনকে হারাবে।
আর কোনো কিছু চিন্তা করেনি নীল।ঢক ঢক করে বিষ পান করে।বিষের প্রভাবে তীব্রভাবে পেট জ্বলছে।দাঁতে দাঁত চেপে সেই যন্ত্রনা সহ্য করছে। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা থেকে এই যন্ত্রনা তার কাছে কিছুই নয়।
ধপাস করে খাটে পড়ে যায়।দু, হাত দুদিকে প্রসারিত করে পড়ে আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যই নীলের সব কিছু অন্ধকার মনে হচ্ছে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।চোখ বন্ধ করা আগে।স্বপ্ন হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠে।নীলের মুখে হাসি ফুটে।অস্পষ্ট সুরে বিড়বিড় করে বলল,
-” বাবা, দাদু।তোমাদের নীল তোমাদের কে হার মানিয়ে দিয়েছে।আমার ভালোবাসাকে তোমাদের কাছে হার মানতে দিই নি।আমার ভালোবাসা জিতেছে।ভালোবাসি সুরওয়ালা।ভালো থেকো।”
বন্ধ হয়ে গেছে নীলের দু চোখ।হৃদস্পন্দন চলা বন্ধ হয়েছে।নীল নামের সেই উড়নচণ্ডী আর ফিরবে না।সে চলে গেছে না ফেরা দেশে।
প্রাচ্য বাধ্য হয়ে আসছে নীলের ঘরে।বড় আব্বু তাকে খুব করে ধমকিয়েছে যখন সে বলেছে নীলকে নিয়ে আসতে পারবে না স্টেজে।বোন কে আনতে গেলে বোনের কালচে চোখ দুটো তার আগে নজর যেতে।এই কয়দিন চেহারা বেহাল দশা করেছে নীল।বোনের ফ্যাকাসে মুখটা দেখলে প্রাচ্যর বুক কেঁপে উঠে। এসব ভাবতে ভাবতে নীলের রুমে আসে।রুমের দরজা ভিজানো ছিল।হালকা ধাক্কা দিতে খুলে যায়।নীলকে এভাবে হাত, পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই অবেলা বিছানায় শুয়ে থাকতে অবাক হচ্ছে।নীলের পাশে বসে ডাকতে চেয়ে আঁতকে যায়।নীলের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে।নীলের পাশে পড়ে আছে বিষের শিশি। হাত বাড়িয়ে হাতে নেয়।
প্রাচ্য খুব জোরে একটা চিৎকার দেই।সেই চিৎকারে।মির্জা বাড়ির প্রতিটা ইট কেঁপে উঠে।সবাই ছুটে আসে। সমুদ্র সবার আগে ছুটে এসে বলল।
-” এভাবে চিৎকার দিলি কেন?”
প্রাচ্য কাঁপা কাঁপা হাতে সবাইকে শিশিটা দেখায়
এটা বলে নীলের দিকে তাকায়।স্বপ্ন ভাবেনি নীল এই কাজ করবে।নীলের মত সাহসী মেয়ে কখনো এই কাজ করতে পারবে না।যা দেখছে সব ভুল।সমুদ্র বলল,
-” নীল।”
মির্জা বাড়ির একটা টঙের দোকানে বেঞ্চিতে বসে বসে চোখে জল ফেলছে।হুঠাৎ করে তার খুব অশান্তি লাগতে শুরু করেছে।বুকের ভিতরে জ্বালা পোড়া করছে।এদিক ওদিক তাকিয়ে হাস ফাস করতে থাকে।যেন তার প্রান ভ্রমরা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।হ্যাঁ যাচ্ছে তো।তার প্রান ভ্রমরা নীল তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।তখনই গ্রামের মানুষ সবাই ছুটতেই দেখতে পায়। কেউ কেউ বলছে মির্জা বাড়ির মেয়ে বিষ খেয়েছে।স্বপ্ন আর এক মুহূর্ত দেরী না করে ছুটছে।তার নীলের কিছু হয়নি তো।তার নীলটা বড্ড জেদী।যদি জেদ বশে নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলে।না, স্বপ্ন ভাবতে পাচ্ছে না।
কিছু পথ যাওয়ার পর স্বপ্ন নিস্তেজ হয়ে পড়ে।শরীর শক্তি নেই।যে দৌড়িয়ে মির্জা বাড়িতে যাবে।সব শক্তি যেন অসাড় হয়ে আসছে। হাটু ভেঙে পড়ে।সে চিৎকার করে বলতে থাকে,” আমায় যেতে হবে!”
আবার উঠে দাঁড়ায়।দৌড়াছে সে। দৌড়াতে দৌড়াতে একটা ভ্যানের সাথে ধাক্কা খায়। লুটিয়ে পড়ে।কপাল কিছুটা কেটে গেছে।গলগলিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।ভ্যান ওয়ালা স্বপ্ন কাছে,আসতেই স্বপ্ন উঠে আবার দৌড়ায়।ভ্যান ওয়ালা স্বপ্ন এমন কান্ড অবাক হয়।সে ভেবেছে হয়তো এই ভদ্রলোক তাকে দুয়েকটা কথা শুনাবে।তা না, এই ভদ্রলোক উন্মাদের মত ছুটছে।ভ্যান ওয়ালা দেখতে পায়।ভদ্রলোক আরেকটু সামনে যেতে আরেকটা ভ্যানের সাথে ধাক্কা খাওয়া আগেই সেই ভ্যান ওয়ালা ভ্যান থামিয়ে
পনেরো মিনিট রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না। বিপদের সময় পথ যেন আগায় নায়।অবশেষে মির্জা বাড়িতে ঢুকে।কেউ নেই।সবার কান্না অওয়াজ শুনা যাচ্ছে।স্বপ্ন’র বুকের ভিতরে মোচড় দিচ্ছে।ছুটে যায় স্বপ্ন।নীলের রুমে।নীলের নিথর দেহটা কোলে নিয়ে বসে আছে সমুদ্র।স্বপ্ন বলে উঠল” নীল”
সবাই চোখ তুলে স্বপ্নের দিকে তাকায়।স্বপ্ন এলো পায়ে এগিয়ে এসে সমুদ্র সামনে বসে।
।নীলের মুখখানা দেখে। নাক, মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে।
-” এভাবে নীলের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে কেন।ও কী আবাদ দুষ্টুমি করছে নাকি।”
প্রাচ্য বলল,
-” নীল বিষ খেয়েছে স্বপ্ন।আর বেঁচে নেই নীল।আমাদের নীল আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।অনেক দূরে চলে গেছে।
চট করে নীলকে কোলে তুলে নেয়।
-” মজা করছিস!
প্রাচ্য অসহায় চোখে বলল,
-” আমি কোনো মজা করছি না,স্বপ্ন।নীল আর আমাদের মাঝে নেই।আর কখনো ফিরে আসবে না।আর কখনো দুষ্টুমি করে কাউকে জ্বালাবে না।”
স্বপ্ন চিৎকার দিয়ে বলল,
-” না,আমার নীল মরতে পারে না।আমার নীল বেঁচে আছে।ও দুষ্টুমি করছে সবার সাথে।”
এটা বলে নীলে গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,
-” এই নীল চোখ খুলো।তোমার স্বপ্ন চলে এসেছে।আর দুষ্টুমি করতে হবে না”
বন্ধুরা সবাই স্বপ্ন পাগলামি দেখে কেঁদে দেয়।স্বপ্ন বলল, ” এই দেখো! নীল, তোমার স্বপ্ন তোমার সামনে।এবার চোখ খোলো।আর দুষ্টুমি করতে হবে না।”
নীলের কোনো পরিবর্তন না দেখে এবার স্বপ্ন নীল বলে আকাশ ফাটানো চিৎকার দেয়, ” নীল!”অসহায় চোখের সমুদ্র দিকে তাকায়।স্বপ্ন সমুদ্র এই চাহনি পড়ে ফেলেছে।
সঙ্গে সঙ্গে পাজকোলে তুলে নেয়।
-” আমার নীলকে আমি ডাক্তার কাছে নিয়ে যাবো।নীল মরতে পারে না।”
স্বপ্ন নীলকে কোলে নিয়ে ছুটছে। তার পিছু মির্জা পরিবারে সবাই ছুটছে। পুরো মির্জা পুরের জন গন ছুটছে।এই নীল এই মির্জাপুর মাতিয়ে রাখত।আর সেই নীলের এই অবস্থা।সবাই দৌড়তে দৌড়াতে হয়রান হয়ে গেছে।কিন্তু স্বপ্ন’র ভালো লাগছে।সে তার প্রেয়সী নিয়ে এই টুকু পথ কেন হাজার মাইল পথ ছুটতে পারবে।স্বপ্ন বলে,
-” কিচ্ছু হবে নীল।আমি তোমাকে ডাক্তারে কাছে নিয়ে যাবো।তোমার স্বপ্ন থাকতে তোমার কিচ্ছু হতে পারে না।”
নীল হাত গুলো দুলছে।স্বপ্ন দৌড়ানোর সাথে সাথে।
সমুদ্র গাড়ি নিয়ে বের হয়।স্বপ্ন পথ আটকে দাঁড়ায়। গাড়ির দরজা খুলে দেয়।স্বপ্ন নীলকে নিয়ে উঠে বসে গাড়িতে।সমুদ্র জানে নীল বেঁচে নেই।তাঁরা যখন রুমে ঢুকেছিল।তখনই মৃত ছিল।নীলের নিশ্বাস, হার্ট বিট, বন্ধ হয়ে গেছে।কিন্তু তার এই উন্মাদ বন্ধুকে এসব বললেই লাভ হবে না।তাই তো স্বপ্নকে সায় দিচ্ছে।তার বিশ্বাস ডক্টর যতক্ষণ পর্যন্ত নীলকে মৃত বলবে না ততক্ষণ পর্যন্ত স্বপ্ন বিশ্বাস করবে না
-” এই সমুদ্র, নীলের শরীর এত শীতল কেন?”
স্বপ্নের কথায় হুস ফিরে। কী বলবে স্বপ্নকে? তাই চুপ হয়ে গেল।
জেলাসদর হাসপাতালে নীলকে আনা হয়।স্বপ্ন ডাক্তার ডেকে পুরো হাসপাতাল মাথা তুলে ফেলে। ডাক্তার নীলের নাভ চেক করে বলল,
-” রোগী আরো দু ঘন্টা আগেই মারা গেছে।”
এই কথা শুনার সাথে সাথে স্বপ্ন চিৎকার করে।সেই চিৎকার মাটি যেন কেঁপে উঠেছে।আকাশ,পাতাল যেন কেঁদে দেই স্বপ্ন’র বুক ফাটানো চিৎকার শুনে।।
★★★
প্রাচ্য ধূসরকে ফোন করে সব জানায়।এই কয়দিন কাজ থাকা ধূসরকে সিলেট যেতে হয়েছে।তাই সবটা ফোনে শুনেছে। কয় ঘন্টা আগে ঢাকা এসে পৌঁছেছিল।এই ঘটনা শুনে সে আর থাকতে পারেনি ফোন দেওয়ার সাথে সাথে ছুটে চলে এসেছে। স্বপ্ন বাবারা চলে এসেছে। নীল দেহটা রাখা হয়েছে মির্জা বাড়ির সামনে।শায়লা, সোহাগী, রোকেয়া কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে।তাদের আদুরের কন্যা মৃত্যু।মেনে নেওয়া কী সহজ? রোকেয়া আহাজারি করে বিলাপ করে কান্না করছে।তিনি কাকে আর ধমকাবে, কাকে আর শাসন করবে।কাকে বলবে, নীল তুমি বড্ড বেড়ে গেছো।তোমার শায়েস্তা করতে হবে।” কাকে এই কথা বলবে।তার কোল খালি করে চলে গেছে। তিনি উঠে দাঁড়ায়।শ্বশুড় আর স্বামির মুখোমুখি দাঁড়ায়।
-” মাথা নিচু করে রেখেছো কেন? মাথা তুলো।এটাই তো চেয়েছিলে।খুশি হয়েছো। তাহলে মুখ এমন গোমড়া কেন? হাসো।হাসো। আচ্ছা তুমি হাসবে না। আমি বরং হাসি।”
এটা বলে তিনি হাসতে থাকে।হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।শায়লা আর সোহাগী দৌড়িয়ে আসে।বড় ভাবিকে ধরতে নিলেই রোকেয়া তাদের ঝামটা মারে।রোকেয়া উঠে দাঁড়ায়।এবার শ্বশুর কে বলল,
-” সারাজীবন নীলকে আহ্লাদ দিয়ে মানুষ করেছেন।কষ্ট ছুতে দেন নি।আর সব চেয়ে বড় কষ্ট আপনি দিয়েছেন বাবা।
নীলের দেহটার দিকে আঙুল তাক করে বলল,
-” নীলের ভালোবাসার মানুষের থেকে আলাদা করতে গিয়ে সব চেয়ে বড় কষ্ট আপনি দিয়েছেন।তাই আমার মেয়েটা সেই কষ্ট সহ্য করতে পারবে না বলেই চলে গেছে।আজীবনের জন্য চলে গেছে।সারাজীবন কেন এত আহ্লাদী পণা করেছে।যদি আপনাদের কারণেই নীলকে মরতে হয়।যেদিন জন্ম নিয়েছে যেদিন কেন গলা টিপে মেরে ফেলেননি।তাহলে আজকে এত কষ্ট হতো না।” তিনি শ্বশুর পায়ের কাছে বসে পড়ে।বিলাপ করতে
করতে বলল,” আব্বা, আব্বাগো।আমার নীল এনে দিন।আমি পারব না নীলকে ছাড়া কে থাকতে।ও যতই দুষ্টুমি করুক পুরো মির্জা ভিলা মাতিয়ে রাখতো।দেখেন আব্বা, নীল চলে না যেতে যেতে।কেমন যেন গুমট হয়ে গেলে মির্জা ভিলা। মির্জা ভিলায় যে নীলকে খুব প্রয়োজন।আপনি আমার মেয়েকে এনে দিন।আপনাদের জন্য আজ আমার মেয়ে শান্তির ঘুম দিচ্ছে।ওকে জাগিয়ে তুলুন।”
এবার তিনি উঠে দাঁড়ায়।চোখের জল মুচে।স্বামী শ্বশুর কে বললেন,” আপনারা দুজন খুনি।আপনারা আমার নীলের খুনি।খুনি আপনারা।আপনাদের কাউকে ছাড়ব না আমি। কাউকে না।”
এসব বলতে বলতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।সবাই ধরে রোকেয়া ঘরে নিয়ে যায়।শাহেদ এসে শামিমকে বলল,
-” শান্তি হয়েছিস শামিম। চেয়ে দেখ নীলের দিকে।কত হবে বয়স।এই বয়সে নীলকে চলে যেতে হচ্ছে।নীলের মৃত্যু একমাত্র কারণ তুই।তোর জন্য আজকে নীলের এই অবস্থা।তোর কারণে আমার স্বপ্নের জীবন থেকে তার ভালোবাসা হারিয়ে গেছে।আমি যদি শিখার খুনি হই।তাহলে তুই তোর মেয়ের খুনি।প্রতিহিংসা আগুনের তোকে অন্ধ করে ফেলেছে।তুই আমার ক্ষতি করতে গিয়ে নিজের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে ফেলেছিস।তুই খুনি শামিম।”
চলে যায় তিনি।শামিম বসে পড়ে।কানে বিধঁছে স্ত্রী বলা খুনি শব্দটা।কখনো ভাবি নি ২০ বছরের আগের ঘটনা আবার ঘটবে।সত্যি সে প্রতিহিংসা বসে নিজের বড় ক্ষতি করে ফেলেছে।কথা আছে অন্যের ক্ষতি করতে গেলে নিজের সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।সেটা শামিমের ক্ষেত্রে হয়েছে।
স্বপ্ন তাকিয়ে আছে নীলের মুখের দিকে।কালকে রাতে নীল তাকে ঝাপটে ধরে শুয়েছিল।নীলের মাথাটা তার কোলে ছিল চোখের অশ্রুবিন্দু ঝরে পড়ছে। স্বপ্ন উঠে দাঁড়ায়।শামিমের সামনে বসে।স্বপ্নকে দেখে চোখ তুলে তাকায়।তার চোখ পানি ছলছল করছে।স্বপ্ন বলল,
-” জানেন আংকেল। নীল কে এত করে ডেকেছি? একবারও সাড়া দিচ্ছে না।ওকে একটু ডেকে তুলুন।ওর সাথে আমার কথা আছে।ওকে ডেকে তুলুন আংকেল।আমার সহ্য হচ্ছে না।নীল কেন এতক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছে।আংকেল।”
চিৎকার দেয়।আবার আকাশ,মাটি,গাছপালা কেঁপে উঠে স্বপ্ন’র চিৎকারে।তাঁরা যেন কাঁদছে।খুব কাঁদছে।প্রকৃতির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে স্বপ্ন জন্য।তাঁরা মেনে নিতে পাচ্ছে না স্বপ্ন’র চোখের পানি।স্বপ্ন’র কান্না দেখে তাদের বুকফেটে যাচ্ছে।
স্বপ্ন বলল,
-” শুধু আপনার জন্য আমার নীল চলে গেছে না ফেরা দেশে।আপনার জন্য।আমাদের ভালোবাসা আপনি যদি মেনে নিতে তাহলে আজ নীল এই পরিনিতি হতো না।হতো না।”
উঠে ছুটতে থাকে।নীলের মাথাটা তার কোলে নিয়ে বলল,
-” এই নীল।উঠো।তোমরা স্বপ্ন চলে এসেছে।তোমাকে নিয়ে যাবে।একবার শুধু উঠো।উঠো না নীল।নীল!”
গগনবিহারী চিৎকার। এই চিৎকার এখানে উপস্থিত থাকার সবার মন কেঁপে উঠে।স্বপ্ন সাথে সাথে সবাই ডুকরে কেঁদে উঠে।
★★★
নীলের দিকে তাকিয়ে আছে সমুদ্র।এই তো তার দুষ্টুবোন।আজকে আর সে দুষ্টুমি করছে না।খুব শান্ত হয়ে শুয়ে আছে। সে যতবার মির্জাবাড়িতে আসত।অনেক গুলো চকলেট আনতো।এনে লুকিয়ে রেখে বলত।তাঁর জন্য কিছুই আনা হয় নি।এটা শুনে নীল কান্না করা ভান করে।তাঁর নামে সবার কাছে বিচার দিত।তার পর সমুদ্র চকলেট বক্স বের করে দিলে।গালে চুমু খেয়ে বলত।” আমার বেষ্ট ভাইয়া!” আজকের পর কেউ এরকম করবে না।আজকে পর কেউ বলবে না “লাভ ইউ ভাইয়া! আমার বেষ্ট ভাইয়া।” কেউ বলবে না।হারিয়ে গেছে সে।কান্না ভেঙে পড়ে সমুদ্র।আজ তার মনে হচ্ছে সে মরে যেত।কিচ্ছু করতে পারেনি বোনের জন্য।ভাবতেই পারেনি নীল এমন করবে।নীলের মত সাহসী মেয়ে এই কাজ করবে।
তৃণ প্রাচ্যকে ধরে রেখেছে।প্রাচ্য কান্না করছে।তার আদুরে ছোট বোনটা মারা গেছে
মেনে নিতে পারছে না।তৃণ চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে প্রাচ্য’র মাথায় উপরব।।এই দুষ্টু মেয়েটার সাথে সাজেকে যাওয়ার সময় দেখা হয়েছে।কতটা দুষ্টুমি করেছে।আর সেই মেয়েটার নিথর দেহটা পড়ে আছে।
ধূসর ভাবতে আছে স্বপ্ন কী হবে।সে জানে ভালোবাসা না পাওয়া কষ্ট।আর স্বপ্ন তো ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে।স্বপ্ন কী করে সহ্য করবে।এই কষ্ট সহ্য করার যে খুব কষ্ট।খুব কষ্ট।
তামিম নীলের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।এই বোনটা মাতিয়ে রাখতো সবাইকে। সে সিগারেট খেলে। দাদু কে বলে দিবে বলে তার কাছ থেকে টাকা নিত।কে তাকে থ্রেড দিয়ে টাকায় আদায় করবে।কে করবে? কে? এই বোনটা আজকে চিরদিনের জন্য রেখে আসবে।চিরদিনের জন্য।নীল বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠে তামিম।
নীল যদি রোদকে ওই আইডিয়াটা না দিতো।তাহলে আজকে সে সমুদ্রকে পেতে না।হ্যাঁ, আইডিয়া যতই খারাপ হোক।সে সমুদ্রকে পেয়েছে।নীলের জন্য।আজ সেই মেয়েটা শান্তির নিদ্রায় গেছে।
কাঁদছে আপন জন, কাঁদছে গ্রামের মানুষ।কাঁদছে সবাই।নীলের মৃত্যু শামিম তার ভুল বুঝতে পেরেছে।নইলে সে বুঝতে পারত না।মানুষের জীবনে কিছু কিছু ক্ষেতে বড় কিছু ধাক্কা প্রয়োজন হয়।তাহলে বুঝতে পারে সে কত ভুল করেছে বা করতে চলেছে।
আতর গোলাপ সুগন্ধি লাগিয়ে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রেখেছে নীলকে।নীলের খাটিয়া
মির্জা বাড়ির সেই কদম ফুল গাছের নিচে রাখা হয়েছে।স্বপ্ন তার পাশে বসে আছে।নীলের গালে হাত দিয়ে বলল,
-” এই নীল, উঠ না।তোমার স্বপ্ন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।কথা বলো না কেন নীল।তুমি জানো। তুমি কথাটা না বললে আমার খুব কষ্ট হয়।খুব কষ্ট হয়।অনেক ধরে তোমার সাথে কথা বলছি।একটা কথা বললে না তুমি।আজকে কেন এত চুপ করে আছো।”
শাহেদ স্বপ্ন কাঁধে হাত দেয়।স্বপ্ন বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” বাবা।তুমি নীলকে বলো আমার সাথে কথা বলতে।নীলের এই নিরবতা আমি মেনে নিতে পাচ্ছি না।”
-” শান্ত হো বাবা।”
-” কি শান্ত হবো।আমার নীল কথা বলছে না।তোমরা বলছো শান্ত হতে।” এটা বলে আবার নীলের পাশে বসে।সে বলল,
-” তুমি খুব খারাপ নীল।কথা দিয়ে কথা রাখলে না।আমার হাত ধরে চলবে বলে আমায় ছেড়ে চলে গেলে।আমায় একা রেখে কেন চলে গেলে? তুমি ছাড়া এই দুনিয়াতে স্বপ্ন নিঃস্ব। কি করে বাঁচব আমি নীল।কি করে বাঁচব? কেন এই কাজ টা করলে? এই কাজ টা না করে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলতে।তাহলে আমি এত কষ্ট পেতাম না।তবু জএই একই পৃথিবী নিশ্বাস নিতে পারতাম দুজনে।একবার কী তোমার বুক কাঁপল না? একবার কী তোমার এই স্বপ্ন কথা মনে পড়ল না।কী করে বাঁচব তুমি হীন?”
উন্মাদের মত বিলাপ করতে থাকে।সে আবার বলল,
-” তুমি আগে থেকে প্ল্যান করেছি।আমায় একা রেখে চলে যাবে।তাইতো ওভাবে আমায় বিয়ে করলে। আমি এতোটা বোকা কালকে তোমার বলা কথাএকফোঁটা ইঙ্গিত বুঝতে পারিনি।কেন এমন করলে?”
আলতো করে নীলের গালে হাত দিয়ে বলল,এই নীল তুমি না বলেছো আমায়।আমায় বিয়ে করবে। আমাদের প্রথম ছেলে হোক বা মেয়ে হোক।তার নাম রাখবে স্বপ্নীল।আমাদের দুজনের নাম একত্র করে একটা নাম বানিয়েছিলে।আমাদের সন্তানের নাম রাখার জন্য।তাহলে কেন চলে যাচ্ছে।আমাকেকে একটা স্বপ্নীল গিফট না করেই চলে গেলে।”
উন্মাদের মত বকতে থাকে।
বন্ধুরা মুখ চেপে কান্না করছে বন্ধুর কান্না দেখে।রোদ সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরেছে।সে বলল,
-” আমার আর সহ্য হচ্ছে না।কেন আল্লাহ তায়ালা এমন করলে? স্বপ্ন মত ভালোমানুষের সাথে এতটাই খারাপ হলো কেন? ”
স্বপ্ন চোখ যায় নীলের নাকে তুলা দেওয়া,কানে তুলা দেওয়া। সে গুলো খেলে ফেলে দিয়ে বলল,
-” এগুলো কে দিয়েছে? আমার কদমফুলের কী কষ্ট হচ্ছে না নিশ্বাস নিতে।এসব আজে বাজে জিনিস দেবে না কেউ।”
সমুদ্র এসে বলল,” এগুলো দেওয়া প্রয়োজন আছে এখন।”
সমুদ্রকে ধমকিয়ে স্বপ্ন বলল,” প্রয়োজন আছে মানে।এগুলো দিলে তো নীলের দম আটকে যাবে।তুই কী চাস আমার নীল দমকে আটকে মরে যাক।”
স্বপ্ন কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। স্বপ্ন কাঁধে হাত দিয়ে বলল,” অনেক্ষন হয়েছে তো।এবার নীলকে নিয়ে যেতে হবে।”
-” না,আমার নীলকে আমি কোথাও নিতে যেতে দিব না।আমার নীল ঘুমাচ্ছে।ঘুম থেকে উঠে আমায় খুঁজবে।খুঁজে না ফেলে আমায় উপরে রেগে যাবে।”
-” নীল আর কখনো উঠবে না।তোর ডাকে আর সাড়া দিবে না।নীল চির নিদ্রায় গেছে।”
-” চুপ কর।কি সব বলছিস?আমার নীল উঠবে।আমায় সুর ওয়ালা বলে ডাকবে।”
পাগলামী করছে। সীমাহীন পাগলামি করছে স্বপ্ন।কেউ বোঝাতে পাচ্ছে না।স্বপ্ন একই কথা।নীল ঘুমাচ্ছে।ঘুম থেকে জাগবে।নীলের খাটিয়ে নেওয়া সময় হয়ে গেছে।কিন্তু স্বপ্ন কিছুতে খাটিয়ে ছাড়বে না।নীলকে কোথায় নিয়ে যেতে দিবে না।কিন্তু স্বপ্ন তার কদম ফুল নিয়ে যেতে দিবে না।সবাই মিলে স্বপ্নকে ধরে রাখে।তারপর শাহেদ ডাক্তার কে ফোন দেই।ডাক্তার এসে স্বপ্নকে ইনজেকশন পুশ করে দেয়।
স্বপ্নকে ঘুম পাড়িয়ে দেই।এইটা না করলে নীলকে নিয়ে যেতে দিবে না,স্বপ্ন।তাই সমুদ্র বাধ্য হয়ে এমনটা করেছে।
সমুদ্র, তামিম,তার বড় আব্বু,তার চাচা কাউকে নীলের খাটিয়ে ধরতে দেয়নি। যাদের জন্য তাদের প্রানকে আজকে চিরদিনের জন্য রেখে আসবে।তাদের খাটিয়ে ধরা অধিকার নেই।
পিতার কাছে সব চেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে।সন্তানের খাটিয়া কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া।সন্তানের দেহ বহন করা সেই ক্ষমতা কোনো পিতার নেই।এখন তার আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে তার সন্তানের খাটিয়া তাকে ধরতে দেয়নি।তার এখন মনে হচ্ছে তার কেন মরণ হয়নি এই দিন দেখার আগে।তার কারণে হয়েছে।
একজন সারাজীবনে জন্য চিরনিদ্রায়য় চলে গেছে।আরেক জন্য সাময়িক জন্য নিদ্রারত। তাদের ভালোবাসার করুন পরিণিত হয়েছে।দুটি দেহের মিলন না হোক।দুটি অন্তরে, দুটি মনে মিল অবশ্যই হয়েছে।স্বপ্নের পৃথিবীতে নীল আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেহর মৃত্যু হলে ও আত্নার মৃত্যু হয়নি।দুটি হৃদয়ের আত্না এখন বেঁচে আছে।
সমাপ্ত।
এই গল্পটা কাল্পনিক। এই গল্পের কোনো বাস্তবতার ছিঁটেফোঁটা ও নেই।কল্পনার রঙ তুলি দিয়ে একেছি এই স্বপ্নীল গল্পটা।তাই বাস্তবের সাথে মিল খুঁজবেন না।কল্পনিক ভেবেই পড়বেন।
আশা করছি আজকে নিরব পাঠিকারা তাদের মতামত জানাবেন।কেমন হয়েছে বলবেন।আজ যদি কেউ সমালোচনা করতে চান।তাহলে করতে পারেন।উন্মুক্ত আছে।আপনাদের জন্য।আপনাদের সমালোচনা থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারব।
গল্পা লেখার আগেই আমি শেষে কী হবে ভেবে তারপর গল্প লেখি।এই গল্পের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
জানুয়ারি এক তারিখে এই গল্পটা শুরু করেছি।
দীর্ঘ ৫ মাস ধরে যারা আমার পাশে থেকেছেন গল্পটা পড়েছেন।উৎসাহ দিয়েছেন।তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সবাইকে ইদের শুভেচ্ছা। ইদ মোবারক
স্বপ্নীল ৬৭
স্বপ্নীল
৬৭
কারো পায়ের আওয়াজ শুনে নীল ঘুরে তাকায়।স্বপ্ন দাঁড়িয়ে আছে।স্বপ্নকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।কেমন যেন একটা উষ্কখুষ্ক লাগছে। চেহার কী বেহাল করেছে? স্বপ্ন নীলের পাশে বসে।নীলের হাত দুটো নিজের হাতের বন্দি করে বলল,
-” আমি জানি ওই গুলো তোমার মনে কথা ছিল না। তোমাকে সবাই বাধ্য করেছে?”
নীল চোখ বন্ধ করে।গড়িয়ে পড়ছে চোখের পানি।হঠাৎ করে স্বপ্নকে ঝাপটে ধরে।কান্না করে দেই। স্বপ্ন নিরবে কান্না করছে।স্বপ্নের চোখের পানি নীলের ঘাড়ে পড়ছে।নীল বুঝতে পাচ্ছে স্বপ্ন কান্না করছে।তার স্বপ্ন কান্না করছে।মানতেই পারছে না।কেন এমন হলো? কী দোষ করেছে তাঁরা।তাঁরা শুধু ভালো বেসেছিল।কেন তাঁদের ভালোবাসায় সবাই এত বাঁধা দিচ্ছে।আগের পুরানো কথা ভুলে যেয়ে নতুন করে সম্পর্ক করলেই হয়।কিন্তু তাঁরা সেটা করবে না।তাঁরা উঠে পড়ে লেগেছে তাঁদেরকে আলাদা করার জন্য।তাদের কে আলাদা করে কী সুখ পাবে?
নীল স্বপ্নকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-” চলে যাও স্বপ্ন।”
-” চলে যাওয়ার জন্য আসিনি।যেতে হলে তোমাকে নিয়েই যাবো।”
-” দাদু যদি জানতে পারে তুমি আমায় রুমে।তোমায় মেরেই ফেলবে।”
-” তোমার সামনে মরতে ও রাজি আছি।”
-” সেটা সহ্য করার ক্ষমা নেই আমার।তুমি চলে যাও।দু’দিন পর আমার বিয়ে।”
দুহাতের আঁজলা দিয়ে নীলের মুখটা তুলে স্বপ্ন বলল,
-” তুমি না বলেছো। তুমি লালবেনারসি পড়ে আমার বউ হয়ে আমার ঘরে আসবে।তাহলে এখন কেন এমন করছো।”
-” সময় এখন আমাদের সাথে নেই।”
-” সময় আমাদের সাথে আছে।তুমি চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমাকে এক্ষুনি আমি নিয়ে চলে যাবো।”
এটা বলে হাত ধরে টান দিয়ে দাঁড়ায় করায় নীলকে।নীল হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-” স্বপ্ন পাগলামি করো না।তুমি চলে যাও এখন।”
-” পাগলামি না, নীল।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।তুমি বউ হয়ে অন্যের ঘরে যাবে মানতে পারব না আমি।শেষ হয়ে যাবো আমি।”
-” একদিন দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।”
স্বপ্ন নীলের পায়ের কাছে বসে পড়ে।নীল আঁতকে উঠে। সরে যায়।স্বপ্ন বলল,
-” আমি তোমার পায়ে পড়ি, নীল।তুমি চলো আমার সাথে।আমরা পালিয়ে যাবো অনেক দূরে। কেউ আমাদের খুজে পাবে না।”
নীল স্বপ্নের সামনে মেজেতে বসে পড়ে।স্বপ্ন হাত ধরে বলল,
-” স্বপ্ন তুমি যদি একটু হলে ও আমায় ভালোবেসে থাকো।তাহলে তুমি কখনো আমার সামনে আসবে না।”
-” এই নীল। তুমি এসব কী বলছো।তুমি জানো না তোমার সুর ওয়ালা তোমাকে কত ভালোবাসে।”
-” জানি না আমি।জানতে চাই না।তুমি যদি এখন না বের হও।তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।”
স্বপ্ন আঁতকে উঠে বলল,
-” এসব বলো না নীল। এসব শুনলে আমি সইতে পারব না।আমি চলে যাচ্ছি।কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি নীল।আমি আবার আসব নীল।”
এটা বলে স্বপ্ন বারান্দা দিয়ে নেমে চলে যায়।নীল মেজেতে পড়ে কান্না করতে থাকে।স্বপ্ন সাথে এভাবে কথা বলতে তার খুব কষ্ট হয়েছে।
স্বপ্ন কিছুতে গ্রাম ছেড়ে যাবে না। গাড়ি রাস্তার পাশে রেখে।গাড়ির ডিকিতে উঠে শুয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।রোজ নিয়ম করে নীলের সাথে কথা বলা।একদিন লেট করে ফোন করলে। বকা-ঝকা করা।ঠিকমত খাওয়া দাওয়া না করলে বউয়ের মত ঝারি মারত
নীলের বিয়ে হয়ে গেলে কে তাকে আদর করে বকা দিবে।কে তাকে বলবে নিয়ম করে খেতে।চোখের কার্নিশ বেয়ে গাড়ির ডিকিতে স্বপ্নর চোখে জল পড়ছে।কেউ রুমের মধ্যে কান্না করছে।কেউ রাতে কালো আকাশকে স্বাক্ষীরে প্রেয়সী জন্য কান্না করছে।
-” আমি সহ্য করতে পাচ্ছিনা নীলের কষ্ট।ওর কষ্ট যেন আমার বুকের ভিতরে এসে লাগে!” সোহা চোখের জল বির্সজন দিয়ে বলল।তামিম সোহার কাছে এসে বলল,
-” এই সময় তোমায় এসব নিয়ে চাপ নেওয়া উচিত হবে না।তুমি শুধু শুধু টেনশন করো না।আমরা কিছু একটা করব।”
-” প্লিজ তুমি কিছু একটা করো।আমি জানি নীল স্বপ্নকে কতটা ভালোবাসে।স্বপ্নকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করলে নীল জীবন্তলাশ হয়ে যাবে। বেঁচে থেকে ধূকে ধুকে মরণ যন্ত্রনা ভোগ করবে।”
তামিম সোহাকে জড়িয়ে ধরে।সে বলল,” চিন্তা করো না।আমাদের নীলের সাথে খারাপ কিছু হবে না।আল্লাহ রহমতে।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এটা বলে সে কিছুক্ষন চুপ হয়ে যায়।দাদা, বড় আব্বু কেন এমন করছে? তাঁরা কী দেখতে পাচ্ছে না তাদের আদুরে মেয়ের কষ্টে। নাকি রাগে, জেদে সেই বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে।অন্যায়ের খারাপ করতে গেলে নিজের বেশি খারাপ হয়।তাদের এই জেদের কারণে না তাদের কে পস্তাতে হয়।তামিমের মন বলছে খুব খারাপ কিছু হবে।
★★★
-” ভাই কিছু একটা কর।স্বপ্ন এই কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছে না।” তৃণ সমুদ্র কাঁধে হাত দিয়ে বলল।সমুদ্র মাথা কিছু আসছে না। কী করবে সে? নীল যদি এই বিয়েতে রাজি না থাকত কিছু একটা করা যেত।আর বাড়ির সবাইকে তে মানানো চেষ্টা করেছে,দাদা, চাচাদের জেদে কাছে তাকে হার মানতে হয়েছে।তৃণ আবার বলল,
-” স্বপ্ন সব সময় আমাদের উপকার করে এসেছে।আজ তার এই দুর্দিনে আমরা কিছুই করতে পাচ্ছি না।”
প্রাচ্য রোদের কোলে মাথা রেখে কান্না করছে।একদিকে তার বোন, আরেকদিকে তার প্রান প্রিয় বন্ধু।তার প্রিয় দুটো মানুষ আজকে খুব কষ্টে আছে।তাদের কষ্টে যেন প্রাচ্যর বুক ফেঁটে যাচ্ছে।ইচ্ছা করছে সব কিছু উর্ধেই রেখে নীল আর স্বপ্নকে এক করে দিতে।তৃণ কথা শুনে প্রাচ্য উঠে সমুদ্র কাছে এসে বলল,
-” ভাইয়া আমি আর সহ্য করতে পাচ্ছি না।তুমি কিছু করো।”
এটা বলে সমুদ্র বুকে হামড়ে পড়ে কান্না করতে থাকে।সমুদ্র জড়িয়ে নেয় প্রাচ্যকে।উপরে দিকে তাকিয়ে চোখের জল আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে। রোদ ও কান্না করছে।কেন তাদের প্রিয় বন্ধুর সাথে এমন হচ্ছে।তাদের বন্ধুমহল প্রিয় হলো স্বপ্ন।আজ সেই স্বপ্নর কষ্ট।সব বন্ধুরা উপলব্ধি করছে।কষ্ট আর চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই করার নেই কারো।
সমুদ্র স্বপ্নকে ফোন দিয়ে বলল,
-” তুই কোথায় স্বপ্ন।”
-” তোদের বাড়ির সামনে।”
-” তুই ওখানে থাক। আমরা আসছি।”
কিছুক্ষণ আগে শাহেদ সমুদ্রকে ফোন করেছে।এই দুইদিন স্বপ্ন কিছু খায়নি।সমুদ্র কে বলেছে জোর করে হলে কিছু খাওয়াতে। রোদ একটা হটপট করে স্বপ্ন’র জন্য রান্না করার ভাত,মাংস নিয়ে নেয়।বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় শামিম পিছু ডাকে তাঁদের কে? তিনি বললেন,
-” কোথায় যাচ্ছো তোমরা।”
সবাই চুপ হয়ে যায়।শামিম বলল,
-” আমার বাড়ি ছেলেমেয়ে হয়ে তোমরা ওই খুনি ছেলের জন্য ভাত নিয়ে যাচ্ছো।তোমাদের সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।”
সবাই মুখকাচু মাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু সমুদ্র পারল না।সে বলল,
-” বড় আব্বু।সব কিছু একটা সীমা আছে। সেই সীমা লঙ্ঘন করা ঠিক না।”
শামিম হংকার ছেড়ে বলল,
-” বেয়াদব ছেলে।আমার মুখে মুখে তর্ক করো।”
-” আমি কোথায় তর্ক করলাম।আমি তোমাকে জাস্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছি।”
শামিমের উচ্চবাক্যের কথা শুনে বাড়িরর সবাই বেরিয়ে আসে।শামিম এবার দ্বিগুন হুংকার ছেড়ে বলল,
-” তোমার স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি।”
-” অবাক আমরা হচ্ছি।২০ বছর পুরানো একটা কাহিনি টেনে এনে সবার জীবন দুর্বিষহ করতে উঠে বসে লেগেছো।”
সোলোমান মির্জা ধমকের সুরে বললেন,
-” সমুদ্র।”
-” এভাবে ধমকিয়ে কয়জনকে চুপ করে রাখবে।একবার ভেবে দেখেছো।তোমাদের জেদে বসে নেওয়া এই সিন্ধান্ত ভবিষ্যৎ নীলের জীবন হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”
শামিম এসে বলল,
-” তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।আমার মেয়ে জীবন নিয়ে ভাবার জন্য আমি আছি।”
-” নীল যদি তোমার মেয়ে হয়ে থাকে।তাহলে সে আমার বোন।আমার বোনের লাইফ নিয়ে ভালোখারাপ বলার অধিকার আছে।”
এটা বলে সে একটু নরম গলায় দাদুকে বলল,
-” তোমার কাছে যখন স্বপ্ন’র বদনাম আমি করেছি।তখন কিন্তু তুমি আমাকে বুঝিয়েছো। স্বপ্ন খুব ভালো ছেলে। স্বপ্ন সাথে নীলের বিয়ে হলে খুব সুখি হবে নীল।তাহলে এখন কেন এমন করছো।দুটো জিবন। তোমাদের প্রতিহিংসা আগুন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।”
-” তখন জানতাম না স্বপ্ন কার ছিল?”
-” বাবার পরিচয় জানার পর স্বপ্ন খারাপ হয়ে গেছে।এখন তো দেখছি তুমি দুমুখো সাপ।”
এটা বলার সাথে সাথে শামিম সমুদ্র গালে চড় মারে।উপস্থিত সবাই হকচকিয়ে যায়।শামিম চিৎকার করে বলল,
-” অসভ্য ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করে নষ্ট হয়ে গেছিস।বড়দের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তা বোধহয় দিন কে দিন ভুলে যাচ্ছো।”
-” ভুলতে তোমরা বাধ্য করছো।”
এটা বলে বেরিয়ে যায়।তার পিছন পিছন সবাই যায়।স্বপ্ন কাছে সবাই পৌঁছায়।
প্রাচ্য আর রোদ জোর করে স্বপ্ন কে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।
সমুদ্র বলল,
-” কী করবি এখন?”
-” নীল আমায় বলছে তাকে যেন ভুলে যাই।এত করে বুঝিয়েছি আমার সাথে চলে আসতে।কিন্তু নীল আমায় বলছে।আমি যদি তাকে ভালোবেসে থাকি।তাহলে যেন তার সামনে আর না যাই।”
তৃণ বলল,
-” হঠাৎ করে নীল কেন বদলে গেল? সকালে দেখেছি নীলকে।নীল বিয়ে করবে না বলেই চিল্লাচিল্লি করছে।আর সন্ধ্যায় তোর মুখের উপরে তোকে অনেক কথা বলেছে। এভাবে বদলে গেল কেন?”
প্রাচ্য বলল,
-” নিশ্চয়ই দাদু , বড় আব্বু নীলকে ব্লাকমেইল করেছে। তাই হয়তো বাধ্য হয়েছে।”
সবার মনে ধরেছে প্রাচ্য কথায়।স্বপ্ন আবার যায় নীলের রুমে।নীল স্বপ্নকে যা নয় তা বলে অপমান করে।পরে নিজের হাতে ছুরি চালিয়ে দিয়ে বলল,
-” তুমি এখন এখান থেকে না যাও।তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।” এটা বলে নীল হাতে মধ্যে চালিয়ে দেই।তখন স্বপ্ন নীলের হাত থেকে চুরি ফেলে দিয়ে বলে।সে কখন আর আসবে না।
সবাই মিলে নীলের কাছে জানতে যায় আসলে তাকে কোনো ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে কী না।নীল তাদের সবাইকে যা নয় তা বলে অপমান করে।সবাই হেরে যায়।যেখানে নীল নিজেই চায় বিয়ে হোক। তাহলে অন্যরা কীভাবে সেটা আটকাবে।★★★
গায়ে হলুদের দিন রাতে নীল আবার তার বাবা, দাদুর কাছে যায় বাবার পায়ের কাছে ধরে বলল,
-” একদিন নিজেকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি।কিন্তু আমার মন স্বপ্নকে ছাড়া কিছুই মানছে না।আব্বু স্বপ্নকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে পারব না। তোমরা এই বিয়ে ভেঙে দাও।”
শামিম মেয়েকে টেনে দাঁড় করিয়ে চড় মারে।কোনোদিন এই ফ্যামিল কেউ তার গায়ে হাত তুলেনি।আজ সবাই তার গায়ে হাত তুলছে।শামিম চিৎকার করে বলল,
-” নিলর্জ্জ মেয়ে।বাবা সামনে এসব বলতে লজ্জা করছে না তোমার।”
-” না, আমার লজ্জা করছে না।একবার কেন একশো বার বলতে পারব। আমি এই বিয়ে করব না।দরকার হলে পালিয়ে যাবো।”
এটা বলে চলে যেতে নিলেই শামিম ডাকে দাঁড়িয়ে যায় নীল।তিনি বললেন,
-” তুই যদি এই বিয়ে না করিস। পালিয়ে যাস।তোর পালিয়ে যাওয়ার কথা যখন শুনব।তখন এই বিষ খেয়ে আমি মরে যাবো।” বিষের শিশি দেখিয়ে বলল।নীল বিষের শিশির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।বোতলের গায়ে লেখা আছে ‘ বিষ’ সেদিন তার বাবা তাকে এইটা বলে ব্ল্যাক মেইল করেছে।তাই বাধ্য হয়ে সবার সামনে স্বপ্নকে অপমান করেছে। তিনি আবার বললেন,
-” এবার তোর হাতে আমার জীবন। বাবার জীবন বাঁচাতে চাস না কি পালিয়ে যেয়ে স্বপ্নকে বিয়ে করবি।”
কি করবে নীল বুঝতে পাচ্ছে না। আবার সে বিষের বোতলের দিকে তাকায়।সে বলল,
-” যাবো না আমি পালিয়ে।বিয়ে করব আমি।কিন্তু তোমরা পরে খুব আফসোস করবে।খুব আফসোস করবে।”
এটা বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায়নি।শামিমের মুখে হাসি ফুটে উঠে।এটা বিষের শিশি হলে।ভিতরে সব পানি ছিল।ভালোবাসা না পেয়ে তার বোন যেমন আত্নহত্যা করেছে।তেমনি এভাবে শাহেদ ছেলে কাছ থেকে ভালোবাসা কেড়ে নিবে।তার বোনের মর করুণ নিয়তি যেন স্বপ্ন হোক।তিনি স্বপ্ন চোখে দেখে নীলের প্রতি অপূরন্ত ভালোবাসা।নীলকে না ফেলে স্বপ্ন জীবন দুর্বিষহ হবে। এটা তিনি নিশ্চিত জানেন।
শামিম কড়া গার্ড ব্যবস্থা করে।স্বপ্ন যেন কিছুতেই এই বাড়িতে ঢুকতে না পারে। গায়ে হলুদের অনুষ্টান শেষ হয়ে যায়।সবাই ফ্যাকাশে মুখ করে নীলের গায়ে হলুদ ছোঁয়া।নীল চোখের পানি টপটপ করে পড়তে থাকে।
অনুষ্টান শেষ হয়ে যাওয়ার পর।বারান্দা বসে নীল কাঁদছে।এই হলুদ স্বপ্ন নামে তার কপালে, গালে উঠার কথা।কিন্তু আজকে অন্য কারো নামে তার গায়ে হলুদ উঠেছে।বেশি স্বপ্ন দেখে ফেলেছে বলেই কিছুতে পূরণ হচ্ছে না।কথা আছে কোনো কিছু নিয়ে বাড়তি আশা করতে নেই।যখন সেই বাড়তি আশা,স্বপ্ন পুরণ হয়না।তখন খুব কষ্ট হয়।সে কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না।
নীলের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্ন।খুব কষ্ট সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এসেছে। স্বপ্ন ডাকে,
-” কদম ফুল।”
একটু আগে সোহার ফোন থেকে স্বপ্নকে ফোন করে। যাতে তার রুমে একটি বারে জন্য আসে।কদম ফুল নাম শুনে নীলের বুকের ভিতরে উথালপাতাল শুরু করে।এই ডাক সে আর শুনতে পাবে না।আজকের পর থেকে স্বপ্ন মুখে এই আদুরে ডাক শুনতে পাবে না।ভাবতে বুকের ভিতরে মোচড় দিচ্ছে নীলের।উঠে দাঁড়ায়। ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয়।
-বিয়ে করবে আমায় স্বপ্ন।”
-” আমি তোমার মুখ থেকে এই কথাটা শুনতে চেয়েছি। চলো।”
-” আমরা নিজেরা নিজেরা বিয়ে করব।এই আকাশ, এই রাত,এই চাঁদকে সাক্ষী রেখে।”
বারান্দা দিয়ে আকাশ,আর চাঁদকে দেখিয়ে স্বপ্নকে বলল, নীল। নীল বলল,” বিয়ে করবে আমায়।”
স্বপ্ন বুঝতে পাচ্ছে না নীল কী করতে চাচ্ছে।স্বপ্ন বলল,
-” এভাবে বিয়ে পরে করব।আগে আমার সাথে চলো।”
-” তোমার সাথে যেতে পারব না। কালকে আমার বিয়ে।”
-” তাহলে কেন বলছো বিয়ে করতে।”
-” আমরা এই আকাশ, চাঁদকে স্বাক্ষী রেখে বিয়ে করব।”
-” এখন এসব পাগলামি করার সময় নয়, নীল।”
নীল বলল,
-“১০১ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করিয়া আপনি শাহেদ চৌধুরী পুত্র স্বপ্ন চৌধুরী, শামিম মির্জার কন্যা নীলাদ্রী নীলকে বিয়ে করতে রাজি থাকিলে বলুন ‘ কবুল’। ”
স্বপ্ন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল,
-” এসব কেমন পাগলামি নীল।”
-” এসব কোনো পাগলামী না স্বপ্ন।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।যাতে আমার থেকে তোমাকে কেউ আলাদা করতে না পারে।”
-“কিন্তু তুমি তো বিয়ে করে আলাদা হয়ে যাবে।”
নীল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-” আমি বিয়ে করছি তার একটা কারণ আছে।কিন্তু তুমি আমায় ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।তুমি শুধু এই নীলের।অন্য কারোর নয়।তাই তো যাওয়ার আগে তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”
স্বপ্ন হয়তো বুঝতে পাচ্ছে না নীল কোণ যাওয়ার কথা বলছে।স্বপ্ন বলল,
-” কালকে তোমার বিয়ে। তুমি কালকে অন্য কারো বউ হয়ে যাবে।আজকে বলছো তুমি আমায় বিয়ে করবে।তা এভাবে।”
-” এ বিয়ের কথা তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানবে না।”
-” এই হয়না নীল।আমি তোমাকে বিয়ে করবে।আর কালকে আমার সামনে তুমি অন্য কাউকে কবুল বলে আবার বিয়ে করবে।আমি তা সহ্য করতে পারব না।”
নীল স্বপ্ন পায়ে কাছে বসে বলল,
-” আমার এই শেষ ইচ্ছা তুমি পূরন করো স্বপ্ন।আর কখনো কোনো ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াবো না তোমার সামনে।”
স্বপ্ন নীল উঠে দাঁড় করায়।নীলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” কবুল, কবুল, কবুল!”
নীলের চোখ পানি।মুখে হাসি। জড়িয়ে ধরে সে স্বপ্নকে।সে বলল,-” এবার আমি যেভাবে বলেছি তুমি সেভাবে আমায় বলো? ”
-” কেন? ”
-” বাহরে।আমায় কবুল বলতে হবে না।”
-” ১০১ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করিয়া আপনি শামিম মির্জার কন্যা নীলাদ্রী নীল, শাহেদ চৌধুরী পুত্র স্বপ্ন চৌধুরী সাথে বিবাহ রাজি থাকিলে বলুন,কবুল
-” কবুল, কবুল,কবুল।
চলবে
কাউছার স্বর্ণা
?
স্বপ্নীল ৬৪, ৬৫,৬৬
স্বপ্নীল
৬৪, ৬৫,৬৬
সমদ্র বাসায় এসে দেখে রোদ ড্রয়িং রুমের সোফায় শুয়ে আছে।রোদের কাছে যেয়ে রোদকে কোলে তুলে নেয়।রোদের এই মাত্র চোখটা লেগে এসেছে।সমুদ্র স্পর্শই জেগে গেল।দুহাত দিয়ে সমুদ্র গলা জড়িয়ে ধরেছে।সমুদ্র বলল,
-” আমার কোলে উঠার জন্য ঘুমের ভান করে শুয়েছিলে। ”
-” তা না।তোমার জামা কাপড় ভিজা কেন? ”
রুমের এসে রোদকে নামিয়ে দেই।সে বলল,
-” অনেক কাহিনি আছে পরে বলব।এখন যাই ফ্রেশ হয়ে আসি।”
সমুদ্র ফ্রেশ হয়ে এসে রোদকে নিয়ে ছাদে যায়। রোদকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।রোদ বলল,
-” এবার বলো।”
সমুদ্র সব কাহিনি বলে।রোদশুনে হাসতে থাকে।মুগ্ধ হয়ে রোদের হাসি দেখতে থাকে সমুদ্র।কোনোর রকম হাসি থামিয়ে বলল,
-” বেশ করেছে তাঁরা।তোমার একটা ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।”
-” আজকে রাত আমার কাছে অনেক বেশি স্পেশাল। এই জন্য তাদের কথা মেনে নিতে বাধ্যই হয়েছি,নইলে তাঁরা আমায় কিছুতেই ছাড়তো না।”
-” সব বুঝলাম।বাট আজকে রাত তোমার কাছে স্পেশাল কেন? ”
সমুদ্র কোনো কথা বলল না।রোদের চুলে নাক ডুবায়।ঘাড়ে চুমু খায়।কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-” ভালোবাসি তোমায় রোদ -বৃষ্টি -ঝড়।”
রোদ চমকে যায় এই কথা শুনে।ঘাড় ঘুরিয়ে সমুদ্র দিকে তাকায়।সে বলল,
-” কী বললে তুমি।”
এটা বলে দাঁড়িয়ে যায়।সমুদ্র দাঁড়িয়ে যায়।রোদের হাত টেনে কাছে এনে বলল,
-” ভালোবাসি।”
রোদের বিশ্বাস হচ্ছে না সমুদ্র এটা বলছে।এই একটা শব্দ শোনার জন্য সমুদ্র পিছনে কত ছুটেছে।সমুদ্র নামে মিথ্য বদনাম দিয়েছে।চোখে পানি চলে আসে।সমুদ্র রোদের চোখে পানি মুচে দিয়ে বলল,
-” কান্না করছো কেন? ”
রোদ কিছু না বলে সমুদ্র কে জড়িয়ে ধরে।পাগললের মত বিলাপ করে বলল,
-” ভালোবাসি তোমায়।খুব ভালোবাসি।নিজের থেকে ভালোবাসি।তোমার মুখ থেকে অনাঙ্ক্ষিত শব্দ শুনে খুশিতে চোখের পানি চলে আসে।এটা সুখের কান্না।”
-” আমায় ক্ষমা করে দাও রোদ।তোমাকে আমি খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”
-” ক্ষমা তুমি আমার করে দাও।আমি তোমার নামে মিথ্যেই বদনাম রটিয়েছি।তোমার মান-সম্মান নষ্ট করেছি।”
সমুদ্র দুহাতের আঁজলা দিয়ে রোদের মুখটা উপর তুলে বলল,
-” ভুলে যাও রোদ। তোমার জীবনে সেই কালো অধ্যায় ভুলে যাও। গতবছরে এই দিনে তোমার সব স্বপ্ন আমি ভেঙে দিয়েছি।আজকে মনে করবে আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটেনিই।সবার জীবনে যেভাবে স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ে হয়।সেই ভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে।আজকে আমরা দুজন অতীতের গ্লানি মুচে দিয়ে নতুন অধ্যায় সূচনা করব।”
-” ভুলে যাবো।তুমি ও ভুলে যেও।”
-” হুম।
সমুদ্র কোলে মাথা রেখেই শুয়ে আছে রোদ।সমুদ্র বলল,
-” রোদ!
-” হুম।”
-” আজকে আমাদের বিবাহ বার্ষিক।”
-” হুম।”
-” তাহলে সেই অনুযায় আজকে আমাদের বাসর রাত।”
-“বাসর রাত মানু্ষের জীবনে একবারেই আসে।আমাদের জীবনে সেটা এসেছে এবং চলে গেছে।”
-” সেই বাসর রাতে আমাদের জন্য স্পেশাল কিছুই ছিল না।কিন্তু আমরা চাইলে আজকে
মনে রাখার মতো কিছুতে করতে পারিই।”
রোদ সুরু চোখে তাকিয়ে বলল,
-” আমি বুঝিছি, আপনার স্পেশাল বলতে কী বুঝিয়েছেন।আজকে সে সব কিছুই হবে না।আজকে আমরা এখানে বসে গল্প করব।
সমুদ্র মন খারাপ করে বলল,
-” ওহ!”
-“আচ্ছা, তুমি কখনো থেকেই আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছো।”
এটা বলে উঠে বসে রোদ।সমুদ্র সামনাসামনি বসে বলল,
-” বলো।”
সমুদ্র রোদের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল,
-” আজকে তোমাকে সব বলব।”
এটা বলে রোদকে জড়িয়ে ধরে।রোদের কাঁধে থুতনি রেখে সমুদ্র বলল,
-” তোমাকে আমি অনেকদিন আগেই থেকেই ভালোবাসতাম।”
-” তাহলে আমায় সব সময় ইগনোর করতেন কেন? বাজে ব্যবহার করতেন কেন? ”
-” তোমার মনে আছে কী না আমি জানি।তোমাকে আমি তোমার কাজিন রেহানে সাথে একবার মিশতেই মানা করেছিলাম।কিন্তু তুমি আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রেহানের সাথে আরো বেশি বেশি মিশতে। তুমি অন্য কোনো ছেলের সাথে মিশবেই সেটা আমি মেনে নিতেই পারতাম না।আমরা বন্ধুরা ছাড়া তুমি অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে আমার গা জ্বলে যেত।সেইদিন তোমার উপরে খুব রাগ হয়েছিল।তোমার এই সব আচারণ কারণেই কখনো আমার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করিনি।তুমি কথা বলতে আসলে আমার গা জ্বলে উঠত।”
-” আমি তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রেহানে সাথে কথা বলতাম।কারণ আমি দেখতে চাইতাম,আমার প্রতি তোমার কোনো ফিলিং আছে কী না। যখন দেখলাম তুমি এই বিষয় কোনো জেলাস ফিল করতে না।তখন আমার খুব রাগ হতো।তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রেহানের সাথে মিশতাম বেশি।”
-” ভালো করেছো।এই জন্য তোমাকে আমার সহ্য হতো না।”
-” শয়তান ছেলে।”
-“তোমার এই চাল -চলন আমার ভালো লাগত না।তোমার এই ছেঁড়া শার্ট -প্যান্ট পড়া।স্লিপলেস টি-শার্ট পড়া।এই জামা কাপড়ে পড়লে তোমার শরীর বুঝা যেত।তুমি কী জানো। তোমার এই বুকের তিলটা কতবার দেখিছি আমি!এবার ভাবো, আমি যদি অনেকবার দেখি তাহলে যারা তোমার সাথে বেশি মিশতো।তাঁরা কতবার দেখেছে।তোমাকে আমি ভালোবাসতাম।তোমার সব জিনিস দেখার অধিকার আমার ছিল। কিন্তু তোমার এই চাল-চলন আমার ভালোলাগতো না বলেই। তোমাকে আমার কাছে অসহ্য লাগত।”
তিলের কথা শুনে রোদ তার বুকের দিকে তাকায়।শাড়ি ঠিক করে দেই। সমুদ্র হেসে দেই রোদের কান্ডই।রোদ সমুদ্র কানে লতিতে চুমু খেয়ে বলল,
-” তোমাকে কখনো সরাসরি বলি নাই তোমার জামা কাপড় নিয়ে।তোমাকে আমি কথার ছলে অনেকবার বলিছি শাড়ি পড়া কথা।জিন্স, শার্ট পড়ার জন্য তোমাকে বাজেই ভাবে অপমান করিছি।কিন্তু অপমান কেন করতাম তুমি বুঝতেই না।তোমার এই মোটা মাথা সেটাই ঢুকতো না।
-” সুন্দর করে একটু বললে কী হতো।পরে কিন্তু আমি নিয়মিত শাড়ি পড়িছিলাম।তখন কিন্তু কথা শুনাইছেন।”
-” তোমাকে কথা শুনাইনি।তোমার প্রশংসা করেছিলাম।
-” এ্যাঁ!এটা কেমন প্রশংসা ছিল।ওইটারে যদি প্রশংসা বলে তাহলে প্রশংসা কী বলবে?”
-” তুমি জানো না তোমার সমুদ্র একজন ইউনিক পার্সেন। দেখোনা আমার সব কিছুই ইউনিক,তাই আমার প্রশংসা ইউনিক ছিল।”
-” আইছে আমার ইউনিক পার্সেন।”
-” জানো রোদ তুমি একটা ভালো কাজ করেছো? ”
-” কী”
-” এই যে আমায় বাধ্য করেছো বিয়ে করতে।নইলে কোনো দিন আমি তোমাকে বিয়েই করতাম না।”
-” কেন? ”
-” তোমার চাল-চলন আমার কাছে বিরক্তিকর লাগতো। তোমার ওই ছেলেদের সাথে মিশায়।ছেলেরা তোমার রুপের প্রশংসা করত।
তোমার রুপের প্রশংসা যদি কেউ করতো আমার মাথা আগুন জলে উঠত।তখন তোমার উপরে আমার রাগ উঠত।অন্য কেউ কেন তোমার প্রশংসা করবে।এসব মানতেই পারতাম না।তাই ভেবেছি তোমার ভালোবাসা কখনো আমি গ্রহন করব না।এটাই থাকবে তোমার শাস্তি।তাই তো তোমার ভালোবাসা বুঝে ও না বুঝার ভান ক
করে থাকতাম। তুমি জোর করেছো বিধায় আজ আমরা এক হতে পেরেছি। নইলে কোনোদিন তোমাকে আমি বিয়ে করতাম না।”
রোদ উঠে দাঁড়ায়। সে বলল,
-“ছেলেদের সাথে মিশতাম শুধু আমার বন্ধুদের সাথে।অন্য কারো সাথে না।”
-” রেহান।”
-” রেহান আমার কাজিন।ওর সাথেই কথা বলতেই হতো।
-” তুমি কী জানো? রেহান তোমার ভালোবাসত।”
-” না। রেহান আমায় ভালোবাসলে আমায় কী যায় আসে।আমি তোমায় ভালোবাসতাম।
-” কিন্তু আমায় যায় আসে।”
-” ও তোমার ভালোবাসত।তোমায় অন্য নজরে দেখত।আর তোমার ওই ছেলের সাথে কিসের এতঘেঁষাঘেঁষি ছিল।”
রোদ সমুদ্র দিকে তাকায়।সমুদ্র চেহারা বদলে যাচ্ছে।রোদ বলল,
-” আমি তোমায় ভালোবাসি সমুদ্র।আমি জানতাম না রেহানে মনে এমন কিছু ছিল। আজকে প্রথম তোমার মুখে শুনিছি।আমি আর কোনোদিন রেহানের সাথে কথা বলব না। আই প্রমিজ।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে নিচে যাবো।”
সমুদ্র আর কোনো কথা বলল না।মুচকি হেসে রোদকে কোলে করে রুমে নিয়ে যায়।রোদ রুমে যেয়ে দেখে।ফুলে ফুলে সাজিয়ে রেখেছে রুমটা।পিছন ঘুরে বলল,
-” তুমি করেছে এটা।”
সমুদ্র দরজা আটকিয়ে বলল।
-” হুম।আজকে আমাদের ফুলসজ্জা রাত।ফুল না হলে কী চলে।”
রোদ লজ্জা পায়।শাড়ি আঁচল মাথা তুলে নেয়।বিয়ে রাতে সমুদ্রকে সালাম করতে পারিনি।সালাম করতেই নিচু হতেই সমুদ্র ধরে ফেলে,
-” আরে কী করছো?”
-” সালাম করছি।”
-” তোমার স্থান পায়ে না। তোমার স্থান বুকে।এরকম কাজ কখনো করবে না।”
জড়িয়ে ধরে সমুদ্রকে।পকেট থেকে আংটি বের করে পড়িয়ে দেই।রোদের কপালে চুমু একে দেই।আজকে তাদের মধ্যেই ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে।
★★★
সোলোমান মির্জা স্বপ্ন মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে।তিনি জানিয়েছেন সোলোমান মির্জাকে।তাদের পরিবার নিয়ে ঢাকা চলে আসতে।এখন ঘরোয়া ভাবেই আংটি বদল করিয়ে রাখবেন স্বপ্ন আব্বু বিদেশ থেকেই ফিরলে।
সবাই ঢাকা চলে আসে।শুধু সোহা আসিনি।সোহার দেখভাল করার জন্য তামিম রয়ে গেছে।সোহার ডেট গনিয়ে আসছে।তৃণ আর প্রাচ্য চলে আসে তাদের বাসায়।স্বপ্ন মা, স্বপ্ন আসে সমুদ্রের বাসায়।নীলকে দেখে যায়। আংটি বদলের ডেট ফিক্সড করে যায়।
ঘরোয়াভাবেই আংটি বদল যখন হবে।তখনই বাড়িতে কিছুটা ডেকেরেশন করে সবাই।নিকট আত্নীয়ের ডাকা হয়।স্বপ্ন, স্বপ্ন মা আগে দিয়ে চলে আসে।স্বপ্ন ভাবা সোহাগ উদ্দীনের কিছু জরুরী কাজ পড়েছে। তাই তিনি বলেছেন কাজ সেড়েই যথা সময় চলে আসবেন।
স্বপ্নকে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখেই ধূসর বলল,
-” খুজে লাভ নেই।সে এখন সাঁজতে ব্যস্ত।কিছুক্ষনের মধ্যই চলে আসবে।তখন মন ভরে দেখে নিলেই চলবে।”
ধূসরের কথায় স্বপ্ন মুচকি হাসে।কিছুক্ষনের মধ্যেই ড্রয়িং রুমে নীলকে প্রাচ্য আর রোদ নিয়ে আসে।স্বপ্ন চোখ তুলে তাকায়।লাল একটা শাড়ি পড়েছে নীল।খুব সুন্দর লাগছে।নীল স্বপ্ন দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে।স্বপ্ন হেসে দেই।নীলকে স্বপ্ন পাশে বসায়।হাত বাড়িয়ে স্বপ্ন নীলের হাত ছোঁয়।নীল লজ্জায় হাত ছাড়িয়ে নেয়।স্বপ্ন বলল,
-” হাত ছাড়িয়ে নিলে কেন? ”
-” এখানে বড়রা সবাই আছে।দেখে ফেললে কী বলবে?”
-” তুমি দেখতে পাচ্ছো না বড়রা কথা বলতে ব্যস্ত।”
ফিসফাস করে তাদের কথোপকথন চলতে থাকে।সোহাগী বেগম স্বপ্নের মায়ের উদ্দেশ্যি বললেন,
-” আফা,আপনার স্বামী আসবে কখন।অনেক্ষণ তো হলো।”
স্বপ্ন মা স্বপ্নকে বলল,
-” স্বপ্ন,তোমার বাবাকে ফোন করো।জিজ্ঞেস করো কতদূর এসেছে।”
স্বপ্ন পকেট ফোন বের করে সোহাগ কে ফোন দেই।ফোন ধরেই স্বপ্ন বলল,
-” আব্বু, তুমি এখন আসছো কেন? ”
-” তোমার দেওয়া ঠিকানা আমি এসে গেছি।গেইটের বাইরে আছি।”
-” আমি আসছি আব্বু।”
স্বপ্ন বাইরে গিয়ে তার আব্বুকে এগিয়ে নিয়ে আসে।ড্রয়িং আসতেই স্বপ্ন বলল,
-” এই তো আমার আব্বু।”
মির্জা বাড়ির সবাই শাহেদকে দেখে অবাক হয়।শাহেদ মির্জাবাড়ির সবাইকে দেখে অবাক হয়।কতবছর পর তাদের দেখা হয়েছে।
কাউছার স্বর্ণা।
স্বপ্নীল
৬৫
শাহেদ দেখেই শামিম মির্জা বলল,
-” তুই কোন সাহসে আমাদের বাড়িতে পা রেখেছিস।”
উপস্থিত ছোটোরা কিছুই বুঝতে পাচ্ছে না।সমুদ্র
বলল,
-” বড় আব্বু।তোমরা কী পূর্বপরিচিত। ”
সোহাগের দিকে তাকিয়ে কটমট করে বলল,
-” হুম!”
-” তাহলে তো ভালোই।”
সমুদ্র কথার প্রত্তুতর নীলের আব্বু কিছুই বলল না।তিনি তার বাবা সোলোমান মির্জা দিকে তাকায়।সোলোমান মির্জা লাঠি ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।তিনি শাহেদের
সামনে এসে দুটো চড় মারে।সবাই হতভম্ব! স্বপ্নের মা উঠে দাঁড়ায়।স্বপ্ন বুঝতে পাচ্ছে না কী হচ্ছে।কয়েক সেকেন্ড পরে সে বুঝে উঠতে পারে।সে বলল,
-” দাদু এই আপনি কী করেছেন?”
নীল আর্তনাদ করে বলল,
-” দাদু।”
সোলোমান মির্জা সেই দিকে খেয়াল না করে তিনি শাহেদ
কে বলল,” একবার তুই আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস।তখন তোর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে।ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি।এখন আবার তোর ছেলে আমার নাতনির পিছনে লেলিয়ে দিয়ে আমার নাতনীর জীবন নষ্ট করার জন্য।দ্বিতীয়বার সেই ভুল আমরা করব না।”
দাদু বলা ‘ আমার মেয়ে’ এই কথাটা তাদের সব কাজিন মনে মনে আওড়াতে থাকে।দাদার মেয়ে মানে তো তাদের ফুফু।কিন্তু ছোট থেকে জেনে এসেছে তাঁরা।তাদের কোনো ফুফু নেই।তাদের দাদুর তিনছেলে।তাহলে দাদু কেন ‘ আমার মেয়ে ‘ বলছে।আর দাদু কেন-ই বা এসব বলছে।
সমুদ্র বলল,
-” দাদু তুমি এসব কী বলছো?”
শাহেদ সোলোমার মির্জাকে বলল,
-” কাকা আপনি আমায় ২০ বছর আগেই ভুল বুঝেছেন,এখন ও।আমি জানতামই না স্বপ্ন যে মেয়েকে ভালোবাসে।সেই মেয়েটা আপনার নাতনি।”
স্বপ্ন বুঝতে পাচ্ছে না একটা কথাও।সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে।শামিম এসে বলল,
-” ভুল তো আমরা করেছি।তোর মত শয়তান কে বিশ্বাস করে।তোর জন্য আমার বোনকে হারিয়েছি।”
-” সে কথা ২০ বছর আগেই আমি তোদের কে বলছি।এখন আর সেই কথা বলতে চাইনা।এখানে আমরা যেই কাজে এসেছি।সেই কাজ সেড়ে ফেলতে চাই।”
-” তুই কী করে ভাবলি।স্বপ্ন তোর ছেলে জেনেই।তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিব।”
-” ওদের কী দোষ।অতীত টেনে এনে ওদের জীবন কেন দুর্বিষহ করতে চাইছিস।”
নীল বলল,
-” বাবা আমি স্বপ্নকে আমি ভালোবাসি।এসব তুমি কী বলছ?”
শামিম নীলকে ধমক দিয়ে বলল,
-” চুপ কর বেয়াদব মেয়ে।”
নীল কান্না করতে থাকে।কী হচ্ছে? কেন হচ্ছে এসব।সে স্বপ্নের দিকে তাকায়।স্বপ্নের চোখ অশ্রু।শামিম চিৎকার করে বলল,
-” এই মুহূর্তে তোর পরিবার কে নিয়ে বেরিয়ে যাবি।তোর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক হতেই পারে না।”
স্বপ্ন এসে বলল,
-” আংকেল আপনি এসব কী বলছেন? জানি না আমার আব্বুর সাথে আপনাদের কী নিয়ে জামেলা হয়েছে।তাতে আমার আর নীলের কী দোষ?কেন আপনারা আমাদের দুজনকে আলাদা করতে চাচ্ছেন?”
-” দোষ তোমার একটাই।তুমি ওই লোকটার ছেলে।আজকে থেকে তোমার সাথে নীলের কোনো সম্পর্ক নেই।কোনো যোগাযোগ করবে না।আর যদি শুনি তুমি নীলের সাথে যোগাযোগ করেছো তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
নীল কান্না করতে করতে দাদুর কাছে এসে বলল,
-” আব্বু এসব কী বলছে, দাদু।তুমি কিছু বলো?”
-” তোমার আব্বু যেই সিন্ধান্ত নিয়েছে সেটা ঠিক।”
নীল ছুটে যায় ছোট চাচ্চুর কাছে।সে বলল,
-” ছোট আব্বু, তুমি বাবাকে থামাও।আমি স্বপ্নকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”
তামিমের আব্বু কী বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না।এক দিকে বোনের হত্যকারী।অন্য দিকে তাদের আদুরে মেয়ের ভালোবাসা।ছোট আব্বুকে কিছু বলছেনা দেখে সমুদ্র কাছে সে বলল,
-” ভাইয়া তুমি কিছু বলো।”
সমুদ্র বলল,
-” বড় আব্বু কী হচ্ছে? তোমরা স্বপ্ন বা আংকেল এভাবে অপমান করতে পারো না।”
সোলোমান মির্জা ধমকিয়ে বলল,
-” ছোট ছোটর কত থাকো।যেটা জানো না। সেটা নিয়ে কথা বলবে না।”
নীলের আব্বু দারোয়ানকে ডাকতে থাকে।তার আগেই স্বপ্নরা বেরিয়ে যায়।নীল কান্না করতে করতে রুমে চলে আসে।সবাই নীলের পিছনে ছুটে।প্রাচ্য নীলের মাথা হাত বুলিয়ে বলল,
-” সব ঠিক হয়ে যাবে।একটু সময় দে।”
নীল ঝাপটে ধরে বলল,
-” সবাই কেন স্বপ্ন পরিবারকে এভাবে অপমান করল।”
রোদ বলল,
-” হয়তো দু ‘পরিবারে মধ্যেই দ্বন্দ্ব আছে।”
সমুদ্র বলল,
-” দাদু তার মেয়ের কথা বলছে।কিন্তু আমরা সবাই জানি দাদু কোনো মেয়ে ছিল না।তাহলে এই কথা কেন বললো।”
-প্রাচ্য বলল,
-” কিছু একটা রহস্য আছে ভাইয়া।যা আমরা কেউ জানি না।”
-” সেটাই জানতে হবে।”
নীলের মাথায় হাত দিয়ে সমুদ্র বলল,
-” তোর এই ভাইয়া থাকতে তোকে চোখের পানি ফেলতে হবে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
★★★
-” স্বপ্ন ফ্যামিলিকে এইভাবে ডেকে এনে অপমান করার মানে কী, দাদু।” সমুদ্র বলল।
নীলের আব্বু বলল,
-” এর আগেই যদি জানতাম।স্বপ্ন ওই শয়তানটার ছেলে তাহলে এই পর্যন্ত কখনো আগাতো না।”
প্রাচ্য বলল,
-” দাদু,তোমাদের সাথে স্বপ্নদের পরিবারে সাথে কী নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল?”
সমুদ্র বলল,
-” সবচেয়ে বড় কথা।দাদু তোমার মেয়ে মানে কী? আমরা জানি আমাদের কোনো ফুফু নেই।”
নীল বাদে সবাই এক এক করে প্রশ্ন করতে থাকে।
স্বপ্ন তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তাকে জানতে হবে মির্জা বাড়ির সাথে তার বাবার কী সম্পর্ক ছিল।তার বাবার গায়ে হাত তুলেছে।বাবা কিছুই বলিনি কেন?
-” আমি জানতে চাই বাবা। তুমি মির্জা পরিবার কে কিভাবে চিনো।তোমার গায়ে কেন তাঁরা হাত তুলেছে?আর তুমি চুপ করে সব কিছু মেনে নিলে কেন? ”
শাহেদ চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকায়।নিজের অতীত এত দিন পর সামনে আসবে ভাবতেই পারেনি।
শামিম বলল,
-” তোমাদের জানার যখন এতই ইচ্ছা তাহলে তোমাদের সবাই কে বলব!শাহেদ ছিল আমার বন্ধু।জানের দোস্ত ছিল।ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়িতে মানুষ হয়েছে
এটা বলে তিনি একটু থামেন,”শিখা ছিল আমাদের তিনভাইয়ের আদরের ছোটবোন।সবাই চোখের মনি ছিল শিখা।শিখা ভালোবাসতো শাহেদেকে।কিন্তু শাহেদ অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে? সেটা শিখা মানতে না পেরে আত্নহত্যা করে।”
এটা বলে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।হাতের উল্ট পিঠে দিয়ে চোখের পানি মুচে।সমুদ্র বলল,
-” এতে শাহেদ আংকেল কী দোষ? দোষ তোর সব আমাদের শিখা ফুফুর ছিল?”
-” দোষ যাই হোক! শাহেদের কারণেই আমাদের শিখা মারা গেছে। শিখার খুনির ছেলের কাছে কিছুতেই আমার মেয়ে বিয়ে দিব না।”
শামিম সোলোমান মির্জার দিকে তাকিয়ে বলল,
-” বাবা আমরা কালকেই বাড়ির যাবো।বাড়িতে গিয়ে নীলের বিয়ে সিফাতে সাথে দিব।তুমি সিফাতে বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে।!”
এটা বলে তিনি হনহন করে হেঁটে চলে যায়।পিছন ফিরে তাকায় নিয়ে।নীল তার দাদুর পায়ের কাছে এসে বলল,
-” আমি স্বপ্নকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারব না,দাদু। ”
সোলোমান মির্জা লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে যায়।
শাহেদ বলল,
-” মির্জা পরিবারে সবাই আমাকে শিখার খুনি ভাবে।যেদিন শিখা মারা যায়। সেদিন মির্জা বাড়ির সবাই আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেই।সেদিন তোমার আম্মুকে নিয়ে মির্জা বাড়ি ছেড়ে এসেছি।আজ পর্যন্ত নিজের দেশের বাড়িতে যাওয়া হয়নি।
স্বপ্ন বলল,
-” শিখা ফুফু যখন তোমায় ভালোবাসত তাহলে তুমি বিয়ে করলে কেন? ”
-” কারণ আমি জানতাম না শিখা আমায় ভালোবাসত!জানলে ও কিছু করার থাকতো না।আমি তোমার আম্মুকে ভালোবাসতাম।”
স্বপ্ন তার বাবার সামনে হাটু গেঁথে বসে বলল,
-” বাবা তোমার অতীত যে আমার ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।আমি নীলকে ছাড়া থাকতে পারব না।”
-” আমি যেয়ে তোর ভালোবাসা তাদের কাছে ভিক্ষা চাইব।”
★★★
নীল রুমে দরজা আটকিয়ে কান্না করতে থাকে।রুমের সব জিনিস ভেঙে ফেলে।নিজের মাথার চুল সব টেনে ছিঁড়ে ফেলে। ফ্লোরে শুয়ে পড়ে কান্ত হয়ে।তখনই স্বপ্ন ফোন আসে।নীল ফোন ধরে কান্না করে বলতে থাকে,
-” স্বপ্ন এই কী হয়ে গেল?”
নীল কান্না শব্দ শুনে স্বপ্ন বুকে এসে লাগল। স্বপ্ন নীলকে বলল,
-” সব ঠিক হয়ে যাবে নীল।
-” কিচ্ছু ঠিক হবে না স্বপ্ন।কালকেই আমরা গ্রামে চলে যাব।বাবা গ্রামে যেয়ে আমায় বিয়ে দিয়ে দেব।আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারব না।”
-” আমি থাকতে তোমায় অন্য কেউ বিয়ে করতে পারবে না।”
-” আমায় খুব ভয় লাগছে স্বপ্ন।তোমাকে যদি আমি হারিয়ে ফেলি।তোমাকে হারিয়ে ফেললে আমি বাঁচব না।”
স্বপ্ন বলতে ইচ্ছা করছে নীলকে, “তুমি আমার অক্সিজেনে।মানুষ যেমন অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে না।তেমনি আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।” কিন্তু সে বলতে পারিনি।এসব বললে নীলে আরও ভেঙে পড়বে।সে নীলকে শান্তনা দিতে থাকে।
পরেদিন সকাল বেলা শাহেদ আসে মির্জা পরিবারে কাছে। কিন্তু মির্জা পরিবার সবাই তাকে অপমান করে।শাহেদ আকুতিমিনুতি করে বলল,
-” ২০ বছর আগে যা হয়ে গেছে।তা টেনে এনে কেন বাচ্চাদের জীবন নষ্ট করবি।স্বপ্নের কাছ থেকে নীলকে আলাদা করিস না শামিম।তাহলে আমার স্বপ্ন মরেই যাবে।”
শামিম বলল,
-” তোর জন্য আমার কলিজার টুকরা বোন মরেছে।তুই বুঝিস নি বোন হারানো কষ্ট।কিন্তু এবার যখন তোর ছেলে ভালোবাসা হারিয়ে ধুকে ধুকে মরবে।তখনই বুঝবি আপন মানু্ষ হারিয়ে ফেলার কষ্ট ।”
-” আমি তোর পায়ে পড়ি, শামিম।তুই ওদের আলাদা করিস না।ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।”
কিন্তু শামিম শুনতে নারাজ।শাহেদকে অপমান করে বের করে দেই।বাবার কাছে সব শুনে স্বপ্ন ভেঙে পড়ে যায়।কি করবে বুঝতে পাচ্ছে না? নীলকে ছাড়া সে বাঁচবে না।
কাউছার স্বর্ণা
স্বপ্ন বাবা নাম সোহাগ দিয়েছিলাম।কিন্তু আমা র মনে ছিলো না নীলের চাচির নাম সোহাগী দিয়েছি।তাই নাম চেঞ্জ করছি।
স্বপ্নীল
৬৬
সবাই গ্রামে চলে যায়।সোলোমান মির্জা বাড়িতে আসার সাথে সাথেই সিফাতের আব্বুকে খবর দেই।তাঁরা বিয়ে ঠিক করে ফেলে।নীল তার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে দাদুর কাছে এসে বলল,
-” দাদু আমি এই বিয়ে করতে পারব না।তুমি যদি আমাকে মরে যেত বলে তাহলে তাই করব।কিন্তু তুমি আমায় বিয়ে করতে বলো না।”
-” তোকে বিয়ে করতে হবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।”
-” দাদু তোমরা এত নিষ্টুর হয়ো না। একটু দয়া করে দাদু।”
-” নীল এখন তুমি তোমার রুমে যাও।”
-” তোমার কষ্ট হচ্ছে না, দাদু।এই দেখো তোমার কদম ফুল কান্না করছে।তাঁর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।তার বুক ফেঁটে যাচ্ছে।তোমার কী একটু কষ্ট হচ্ছে না।তোমার কদম ফুলের চোখের পানি দেখে।”
-” হচ্ছে না।তুই এখন যা।”
-” সারাজীবন তোমরা আমার সব অন্যায় আবদার মেনে এসেছো।এবার না হয়, আমার এই অন্যায় আবদার মেনে নাও।”
-” তোমার এই অন্যায় আবদার মেনে এসেছি বলেই।তুমি মাথা চড়ে বসেছো।একবার বিয়ে থেকে পালিয়ে যেয়ে আমার মান -সম্মান ডুবিয়েছো।”
এটা বলে তিনি বের হয়ে যায়।ড্রয়িং এসে সোফার কুশন সব ফেলে দেই।ফুলদানি সব ছুড়ে ফেলে দেই।ডায়নিং টেবিলের ক্লথ টেনে ফেলে দেই।গ্লাস গুলো ভেঙে ফ্লোরে পড়ে যায়। পাগলে মত ছুটতে থাকে।আর কিছু না পেয়ে ড্রয়িংরুমের মেজেতে হাটু মুড়ে বসে চিৎকার দিয়ে বলল,” আমি স্বপ্নকে ভালোবাসি! স্বপ্নকে আমি ভালোবাসি।”
নিজের হাত দিয়ে চুল, গাল খামচে ধরে। তামিম, সমুদ্র দুজন নীলের চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসে।বোনের এই অবস্থা দেখে ছুটে আসে।দুজন দুদিক থেকে জড়িয়ে ধরে।এতক্ষন তাঁরা দুজন সবাইকে বুঝিয়েছে যাতে নীলের বিয়ে না দেই।কিন্তু তাদের কথা কেউ শুনেনি।তাদের একগাধা বকাঝকা তার বিনিময় শুনতে হয়েছে
সমুদ্র বলল,
-” নীল শান্ত হো।”
-” ভাইয়া! তুমি সবাইকে বলো।আমি বিয়ে করব না।আমি স্বপ্নকে ভালোবাসি।স্বপ্নকে ছাড়া আমি বাঁচব না।”
রোকেয়া নীলের কান্না দেখছে দূর থেকে।তার মেয়ে কান্না করছে। কষ্ট যেন তা বুকে বিঁধছে।স্বামীক্ব অনেক বুঝিয়েছে কোনো লাভ হয়নি।তিনি দেখেছেন শিখার মৃত্যুতে তার স্বামী কতটা কেঁদেছেন।শিখার মৃত্যু সময় পাগল হয়ে গিয়েছিল।বোনটাকে কত ভালোবাসতেন। নিজের মেয়েকে ও ভালোবাসে। তিনি মনে করেন শাহেদ তার বোনের খুনি।বোনের খুনি ছেলের কাছে মেয়ের বিয়ে দিয়ে বোনেকে অশ্রদ্ধা, অপমান করা হবে।কিছুতেই ওই পরিবারে সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে না।সেই পরিবারে কারণের আজ তার বোন তাদের মাঝে নেই।শিখা যেমন ভালোবাসা হারিয়ে মরে গেছে।তিনি চান শাহেদের ছেলের ভালোবাসা হারিয়ে কোনো করুণ পরিণত হয়।
এক প্রকার জেদ মাথা চেপে গেছে।তাই রোকেয়া হাজার বোঝানোর চেষ্টা করে লাভ হয়নি।স্বামী তার কথা বোঝার চেষ্টা করেনি।তার স্বামীর একটা কথা, স্বপ্নের কাছে তিনি মরে গেলে বিয়ে দিবেন না,নীলকে।’
নীল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।সমুদ্র কোলে তুলে নীলকে রুমে নিয়ে যায়।নীলের যখন জ্ঞান ফিরিয়ে তখন সে স্বপ্নকে ফোন করে বলল,
-” স্বপ্ন আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, আব্বু।আমি কিছুতেই বিয়ে করব না।”
এই কথা শুনে স্বপ্নের পায়ের তলের মাটি সরে গেছে। এত দ্রুত এত কিছু!নীল তার হবে না সেটা ভাবতেই পাচ্ছে না।নীলকে নিয়ে কতশত স্বপ্ন বুনেছে সে।নীলকে নিয়ে স্বপ্নের রঙিন আকাশে উড়বে।কিছুতে হবে না।না! নীল শুধু তার।চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে।চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে।নীল বলল,
-” স্বপ্ন, কথা বল!”
-” নীল আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।
-” আমি তোমাকে ছাড়া ভাবতেই পারিনা।স্বপ্ন ছাড়া নীলের জীবন বৃথা।”
একটু থেমে বলল,
-” স্বপ্ন আমরা পালাবো,নইলে কেউ আমাদের এক হতে দিবে না।আমায় সিফাতে সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে! তুমি চলে আসো আমায় নিতে।আমি,,!”
তার আগেই সোলোমান মির্জা নীলের হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয়।ফোন আঁচড়ে ফ্লোরে ভেঙে ফেলে।নীল চিৎকার করে বলল,
-” দাদু!”
সঙ্গে সঙ্গে নীলের গালে চড় পড়ে।শামিম মেরেছে মেয়েকে।নীল গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
-” তুমি আমায় মারলে বাবা।”
-” এই চড় তোমায় আরো আগে দেওয়া উচিত ছিল।”
সোলোমান মির্জা শামিম কে বলল,
-” তুই এখান থেকে যা।আমি নীলের সাথে কথা বলছি।”
শামিম চলে যায়।নীলের হাত ধরে সোলোমান মির্জা তার পাশে বসায়।তিনি বললেন,
-” সিফাতের সাথে যখন তোমার বিয়ে ঠিক হয় প্রথমবার।তখন তুমি পালিয়ে যাও।কিছুদিন পর তুমি বাড়িতে এসেছিলে।”
এটুকু বলে তিনি থামেন।নীল ভাবছে তার দাদু সেই পুরানো কথাগুলো কেন বলছে? তিনি বললেন,
-” তুমি ভাবছ তো কেন এই কথা গুলো বলছি।”
নীল হকচকিয়ে যায়।তিনি আবার বললেন,
-” তখন তুমি আমার মাথা হাত দিয়ে বলছিলে।পরে বার তুমি এমন কোনো কাজ করবে না যাতে আমরা ওখুশি হই।আমি যা বলব। তুমি তাই মেনে নিবে।তুমি ভুলে গেছো সেই কথা!”
নীল অশ্রুসিক্ত চোখে দাদুর দিকে তাকিয়ে বলল,” না,ভুল-ই নেই আমি।”
-” তাহলে কেন তুমি এখন আবার পালিয়ে যাওয়া কথা ভাবছ।একবার পালিয়ে তুমি আমাদের এতদিনে মান সম্মান ধুলে মিশিয়ে দিয়েছো।আমার মাথা ছুয়ে যে কথা তুমি দিয়েছো।আশা করি, তুমি যদি তোমার এই দাদুকে ভালোবেসে থাকো, তোমার এই পরিবারকে ভালোবেসে থাকো।তাহলে আমাকে দেওয়া কথা তুমি রাখবে।
আর এই বিয়ে করবে।পালানো কথা মুখে আনবে না।”
এটা বলে তিনি বেরিয়ে যান।নীল কান্না করতে থাকে।ছোট থেকে সে সবার অবাধ্য ছিল।কিন্তু এই পরিবার, এই দাদু তার সব মেনে নিয়েছে হাসি মুখে। না, চাইতে সবাই সব কিছু চোখের সামনে হাজির করেছে।তার জন্য গ্রামে কত মানুষ তার দাদুকে অপমান করেছে।বিয়ে থেকে পালিয়ে যেয়ে সম্মান নষ্ট করেছে।সবাই সব সময় সে দুঃখ দিয়েছে।সুখ কখনো দিতে পারেনি।তাই সে ঠিক করেছে। এই বিয়ে সে করবে।এই বিয়ে করলে যদি অন্তত সবাইকে খুশি হয়,তাহলে সে করবে।।কোনোদিন কেউ তার কোনো কাজে খুশি হইনি।এবার না হয় অন্তত তাই করবে।দাদুর কথা রাখবে সে।ভুলে যাবে তার ভালোবাসা।
হঠাৎ করে লাইন কেটে যায়।তারপর স্বপ্ন কল ব্যাক করে।কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। স্বপ্ন মন বলছে। নীলের সাথে খুব খারাপ কিছু হচ্ছে।স্বপ্ন তার বাবার কাছে দৌড়িয়ে যায়।শাহেদ ছেলেকেকে এই এভাবে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়।তিনি বললেন,
-” কী হয়েছে স্বপ্ন!”
-” বাবা ওরা আমার নীলের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।আমাকে আটকাতেই হবে এই বিয়ে।আমি এখন মির্জা বাড়িতে যাবো।”
এটা বলে স্বপ্ন আর একমুহূর্ত দাঁড়ানি।ছূটে চলে যায়।গাড়ি স্টার্ট দেই।তার গন্তব্য মির্জা বাড়ি।শাহেদ ছেলের পিছন পিছন অন্য গাড়ি করে আসে।স্বপ্ন ড্রাইভিং করছে আর নীলের সাথে কাটানো স্মৃতির কথা মনে পড়ছে। নীল ছাড়া সে অসম্পূর্ন।
বুকের ভিতরে জ্বালা করছে।দাউ দাউ করে জ্বলছে স্বপ্ন বুক।কী যেন হারিয়ে যাচ্ছে? না নীলকে হারাতে দিবে না।নীল যদি কারো বউ হয়।তাহলে একমাত্র তার বউ হবে।
-” নীল! নীল তুমি কোথায়? তোমার স্বপ্ন চলে এসেছে তোমার কাছে, নীল।”
মির্জা বাড়ির ড্রয়িংরুম দাঁড়িয়ে চিৎকার করে স্বপ্ন বলতে থাকে।তখনই বাড়ি সবাই নিচে উপস্থিত হয়।শাহেদ এসে পড়ে। নীল স্বপ্ন’র ডাক শুনে দৌড়িয়ে আসে।তখন পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় শামিম।তিনি বললেন,
-” যা বলিছি মনে আছে তো।”
নীল বাবার দিকে তাকায়।মাথা কাত করে জানায় মনে আছে তার।স্বপ্ন এগিয়ে এসে নীলের হাত ধরে বলল,
-” তোমাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে এসেছি।চলো।”
নীল হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-” আমি কোথাও যাবো না।”
স্বপ্ন ঘুরে নীলের দিকে তাকায়।নীল বহু কষ্ট বলল,
-” আমি যাবো না।তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাও।”
স্বপ্ন রেগে উঠে বলল,
-” যাবে না বললেই হলো।তুমি চলো আমার সাথে।তোমার পরিবারে কেউ আটকাতে পারবে না!”
-” কেন আমি তোমার সাথে যাবো। কে হয় তুমি?”
-” আমি তোমার ভালোবাসা নীল।এই সব তুমি কি বলছো।”
-” ভুল করেছি তোমাকে ভালোবেসে।আগে তোমার পরিচয় জানতে পারিনি।এখন তোমার পরিচয় আমি জেনেছি।তুমি আমার ফুফির খুনি ছেলে। তা জেনে আমি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখব।তুমি ভাবলে কী করে?”
স্বপ্ন অবাক হচ্ছে। খুব অবাক হচ্ছে। সে বলল,
-” নীল তুমি কয়েক ঘন্টা আগে তুমি আমায় বলছিলে।তুমি আমায় ছাড়া বাঁচবে না।আমি এসে যেন তোমায় নিয়ে যাই।আর এখন তুমি এসব কেন বলছো? তোমার পরিবার তোমাকে বাধ্য করেছে তাই।”
-” আমার পরিবার কেন আমায় বাধ্য করবে? তারা আমায় জোর করেনি।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তুমি চলে যাও।”
এটা বলে নীল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে।এতক্ষন গলায় যেন কাটা আটকে ছিল।চোখের অশ্রু যেন বহু কষ্টে আটকিয়েছে।এখন যেন কাঁদছে।মন-প্রান উজার করে কাঁদছে।
শামিম বলল,
-” এবার আমার বাড়ি থেকে বের হও।”
স্বপ্ন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শাহেদ এসে বলল,
-” কেন এমন করছিস শামিম?আমার অন্যায়ের শাস্তি আমায় দেই।তারপর আমার ছেলে এভাবে শাস্তি দিস না।তোর কাছে আমার ছেলের ভালোবাসা ভিক্ষা চাই।নীলকে তুই আমায় দিয়ে দেই।”
শামিম স্বপ্নকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” দু’দিন পর আমায় মেয়ের বিয়ে।আমি চাইনা তাতে কোনো হট্রগোল হোক।আর হট্রগোল করতে চাইলে তাকে আমি জানে মেরে ফেলব।”
★★★
-” তুই বিয়ে করতে রাজি হইছিস।কোন মুখে।” প্রাচ্য বলল।নীল তার মুখে কঠিন একটা ভাব এনে বলল,
-” তোমরা কী করে ভাবলে! আমার ফুফুর খুনির ছেলে কে ভালোবাসব। এসব জেনে ও।”
প্রাচ্য বলল,
-” ফুফুকে তো শাহেদ আংকেল গলা টিপে হত্যা করেনি।ফুফু নিজ ইচ্ছায় আত্নহত্যা করেছে।এখানে শাহেদ আংকেলের কোনো দোষ নেই।”
-” ফুফির আত্নহত্যার কারণ কিন্তু স্বপ্নের বাবাই ছিল।”
-” এই কথা যদি ধরেনি।তাহলে এখানে স্বপ্ন’র কী দোষ? স্বপ্নকে ভালোবেসে এখন অন্য কাউকে বিয়ে করবি কেন? ”
-” আমার ইচ্ছা হইছে তাই করছি।তোমরা এখন যাও! ”
তৃণ এগিয়ে এসে বলল,
-” নীল তুমি স্বপ্নকে ভালোভাবে একবার দেখেছো।এই কয়দিনে নিজের কী হাল করেছে।তুমি এভাবে ওকে ছেড়ে চলে গেলে।স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।”
-” যাক, তাতে আমার কী?দয়া করে সবাই বের হও। কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।”
সবাই বের হয়ে যায়।নীল বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে কান্না করতে থাকে।কী করবে সে? দাদুর কথা রাখতে হলে তার ভালোবাসা জলাঞ্জলি দিতে হবে।
কাউছার স্বর্ণা।
স্বপ্নীল ৬১,৬২,৬৩
স্বপ্নীল
৬১,৬২,৬৩
সমুদ্র নির্দেশে শিহাবকে তার গোডাউন তুলে এনে চেয়ারে সাথে হাত,পা বেঁধে রাখে।কাজ শেষ করেই গোডাউনে আসে।হাতে তার হকিস্টিক।এগিয়ে যায় শিহাবের দিকে।শিহাব কে যেই চেয়ারে সাথেই বেঁধে রাখা হয়েছে সেই চেয়ারে হাতলে বাম পা তুলে দিয়ে ঝুঁকে পড়ে শিহাবের দিকে।শিহাবের মুখের টেপ দিয়ে বাঁধা ছিল।সমুদ্র ডান হাত দিয়ে খুব জোরে সেই টেপ টেনে সরিয়ে ফেলে।শিহাব খুব জোরে চিৎকার দেয়।সমুদ্র দাঁত খিঁচে শিহাবের চিবুক শক্ত করে বলল,
-” কুল ডাউন।এখন কিছুই করেনি।তাতেই এত চিৎকার।”
শিহাব ছটপট করতে থাকে।সমুদ্র রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-” প্রাচ্য’র বাসায় কেন গিয়েছি।” চিবুক ছেড়ে দিয়ে আবার সমুদ্র গর্জন করে বলল,
-” বল! কেন গিয়েছিস।”
-” প্রাচ্য আমাকে যেতে বলেছে তাই।”
হাতের হকিস্টিক দিয়ে খুব জোরে আঘাত করে শিহাবকে সমুদ্র।শিহাব আর্তনাদ করে উঠল।সমুদ্র বলল,
-” সত্যি কথা না বললেই আজকে লাশ ছাড়া এখান থেকে তুই বের হতে পারবি না।ওই বাড়ির কে তোকে সাহায্য করেছে।তার নাম বল?”
-” কেউ করেনি।প্রাচ্য আমাকে যেতে বলেছে।তার কথা মত আমি পাইপ বেয়ে গিয়েছি।”
সমুদ্র বার বার আঘাত করতে থাকে।শিহাব তখনই মুখ খুলে বলল,
-” বলব আমি।”
-” বল।”
-” তিন্নি।
সমুদ্র মনে মনে কয়েকবার ‘ তিন্নি’ নামটা আওড়াইতে থাকে।যাওয়ার আগে তার লোক দের কে বলল,
-” হাড্ডি গুলো গুড়ো করে ফেলবি।পরে যেয়ে ওর বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে আসবি।”
এটা বলে সমুদ্র শিহাবকে বলল,
-” তুই ভুলে গেছিস কার বোনে সাথে লাগতে এসেছি।
সমুদ্র মির্জা বোনের চরিত্র মিথ্যে বদনাম রটাইছিস।তোকে কী ছেড়ে দেওয়া যায়। আজকে এই অবস্থা যদি তোর মনে থাকে।তাহলে কোনো দিন।কোনো মেয়ের সাথে দ্বিতীয় বার এসব করার আগেই হাজার বার ভাববি।”আঙুল তুলে শাসিয়ে যায়।
-” তিন্নি, তিন্নি!” বলে চিৎকার দিচ্ছে সমুদ্র। তৃণদের বাড়ির ড্রয়িং দাঁড়িয়ে আছে সে।সমুদ্র চিৎকার শুনে সবাই বের হয়। সমুদ্র যাকে খুঁজছে তাকে না পেয়ে আবার দ্বিগুন হুংকার ছেড়ে বলল,
-” তিন্নি তুই বেড়িয়ে আস,নইলে তোকে খুঁজে বের করে খুন করব।”
খাদিজা হুংকার ছেড়ে বলল,
-” অভদ্র মত তিন্নিকে ডাকছ কেন? ”
তখনই তিন্নি বের হয়।সমুদ্র যেয়ে তিন্নির গলা চেপে ধরে।সবাই মিলে সমুদ্রকে ছুটায়।তিন্নি ছাড়া পেয়ে নিশ্বাস নিতে থাকে।ফর্সা গলায় হাতের দাগ বসে গেছে।আর কয়েক মুহুর্ত থাকলে বোধহয় সে মারাই যেত।”
তৃণ দিকে তাকিয়ে অগ্নি চোখে বলল,
-” ভালোবাসি তুই প্রাচ্যকে। তোর ভালোবাসায় বিশ্বাস ছিল না।যদি থাকত তাহলে জানোয়ারে মত আচারণ করতে পারতি না? ”
এটা বলে তিন্নি দিকে আঙুল তুলে বলল,
-” সেদিন ওই ঘটনা ঘটেছে এই মেয়ে।সেদিন প্রাচ্যর চা’য়ে এই মেয়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছে। এই সুযোগ নিয়ে এই মেয়ে নিজের রুম দিয়ে শিহাবকে প্রবেশ করায়। প্রাচ্য’র রুমে শিহাব কে পাঠায়।”
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তিন্নি দিকে।বেশি অবাক হচ্ছে খাদিজা।এই এরকম একটা বাজে কাজ করেছে!
তিন্নি কিছুদিন ধরেই শিহাব কে খেয়াল করেছিল। কিছুদিন ধরে ছেলেটা রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকত।একদিন তিন্নি যেয়ে শিহাবের সাথে কথা বলে।তাদের দুজনে একটাই উদ্দেশ্যই ছিল তৃণ আর প্রাচ্যকে আলাদা করা।দুজনে মিলে হাত মিলিয়ে প্ল্যান করে।
তিন্নি ধরা পড়ে গেছে ভয়ে ঘামতে থাকে।সমুদ্র যেয়ে তিন্নি হাত ধরে টেনে এনে বলল,
-” আজকে তুই মেয়ে না হয় বরং ছেলে হতেই।হাড্ডি মাংস সব আলাদা করে ফেলতাম।মেয়ে হয়েছিস বলেই বেঁচে আছিস এখন।”
এটা বলে চলে যেতে নিলে ঘুরে তাকিয়ে তৃণ উদ্দেশ্যই বলল,
-” খুব শিগগির ডিভোর্স পেপার আসবে।আশা করি কোনো জামেলা ছাড়া সাইন করবি।”
তিন্নি দুই গালে দু’টো চড় মেরে তৃণ বলল,
-” কেন করেছিস এমন? কী ক্ষতি করেছি তোর আমি?”
তিন্নি গালে হাত দিয়ে বলল,
-” ক্ষতি! সব চাই বেশি আমার হয়েছে।তোমাকে আমি ভালোবাসি।তোমার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।আর তুমি ওই মেয়েকে বিয়ে করে এনেছো।ওই মেয়েকে যদি বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করতে চেয়ে ছিল।কেন আমার মনে তোমার জন্য ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছো।সেই প্রশ্নে উত্তর চাই।কেন আমার মন ভেঙে দিলে।কী ক্ষতি আমি তোমার করেছি।”
শেষ কথা গুলো তিন্নি তৃণর শার্টের কলার চেপে ধরে বলল।তৃণ তিন্নির হাত থেকে কলার ছেড়ে নিয়ে বলল,
-” তোমাকে আমি কোনোদিন বিয়ে করতে চাইনি।আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে তোমার খালা।সেই প্রশ্নের জবাব আমার কাছে না চাইলে ভালো হবে।তোমার খালাকে জিজ্ঞেস করো।কেন তোমার মন ভেঙেছে।”
তিন্নি খাদিজার দিকে তাকায়।খাদিজা মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে।তৃণ আঙুল তুলে শাসিয়ে বলল,
-” তোমাকে আর কোনোদিন যেন এ বাড়ি সীমানায় না দেখি। এক্ষুনি এই মুহূর্ত বাড়ি ত্যাগ করলে ভালো হবে।”
খাদিজা মুখ খুলে বলল,
-” এত রাতে কী ভাবে যাবে।”
-” সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।যে মেয়ে এত জঘন্য কাজ করতে পারে সে মেয়ের এক মুহূর্ত জন্য তার চেহারা দেখতে চাই না।
★★★
তৃণ কানে বার বার সমুদ্র বলার শেষ করা বাজতে।’ খুব শিগগির ডিভোর্স পেপার আসবে’ ভুল করেছে সে।কেন সে প্রাচ্য কথা বিশ্বাস করেনি।কী করে বিশ্বাস করবে।নিজের চক্ষে যা দেখেছে তা কী করে মিথ্যে হতে পারে। সত্যি মানুষ সব সময় যা দেখে তা সত্যি হতেও না পারে।চোখে দেখার আড়ালে অনেক সময় কিছু সত্যি লুকিয়ে থাকে।না প্রাচ্য’র কাছে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ায়।শার্ট গায়ে চাপিয়ে রওনা হয় সমুদ্র বাড়ি উদ্দেশ্যই।
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।গেটে দাঁরোয়ান।তাকে কিছুতে ঢুকতে দিচ্ছে না।সমুদ্র মানা করেছে তৃণকে যেন কিছুতে বাড়িতে ঢুকতে না দিই। তৃণ বিড়বিড় করে বলল,
-” সমন্ধী সমুদ্র।আমার সময় ও আসবে। তখনই তোকে নাকানিচুবানি খাওয়াবো।”
এটা বলে বাড়ির পিছনে যায়।বাড়ির দেওয়ালে উঠে। ভিতরে লাফ দিতে শব্দ হয়।তখনই বাড়ির গার্ডরা আসে।তাদের দেখে বাড়ির বাগানে ঝোঁপে ভিতরে লুকিয়ে যায়।তাঁরা কিছুক্ষণ খুঁজে সেই স্থান ত্যাগ করে।বড় একটা দীঘ শ্বাস ফেলে ঝোঁপের ভিতর থেকে বের হয়। চোখ কান খোলা রেখে এগিয়ে যায়।পাইপ বেয়ে প্রাচ্য’র রুমে ঢুকে। দেখতে পায় প্রাচ্য।বারান্দার রাখা দোলনা শুয়ে আছে। তৃণ প্রাচ্য কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানা শোয়ায়।তখনই প্রাচ্য’র ঘুম ভেঙে যায়।চোখ মেলে তৃণ কে দেখতেই পায়।উঠে বসে প্রাচ্য।বলল,
-” তুই এখানে!কী করে এসেছিস।”
-” পাইপ বেয়ে।”
-” কেন এসেছি তুই।”
তৃণ প্রাচ্য দুহাত মুঠোয় নিয়ে বলল,
-” আমি তোর প্রতি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।তুই আমায় যা শাস্তি দিবি মাথা পেতে নিব।তবু তুই আমায় ডিভোর্স দিস না।তোকে ছাড়া থাকতে পারব না।”
তখনই দরজা নক পড়ে।দরজা ওপাশে সমুদ্র দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ আগে গার্ডরা বলেছে। কেউ একজন কে বাড়ির দেওয়াল টপকে ঢুকতে দেখেছে।সমুদ্র দারোয়ান জিজ্ঞেস করে।কাউকে ঢুকতে দেখেছে কী না। দারোয়ান বলে কাউকে দেখে নি।কিন্তু কিছুক্ষণ আগে তৃণ এসেছে বাড়িতে ঢুকার জন্য।দারোয়ান ঢুকতে দেয়নি।দারোয়ানের কথা শুনে সমুদ্র যা বোঝার বুঝে গেছে।তখনই ছুটে এসেছে সমুদ্র প্রাচ্যর ঘরে।সমুদ্র চিৎকার করে বলল,
-” প্রাচ্য দরজা খোল।”
সমুদ্র বাড়ি এসে বলেছে তৃণ সাথে যাতে কোনো যোগাযোগ না করতে।ডিভোর্স ব্যাপারে সব বলে।প্রাচ্য এই ব্যাপারে কিছু বলেনি।কী ভাবে বলবে?সেই মুখ কী তৃণ রেখেছে।
প্রাচ্য হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-” তৃণ তুই এখান থেকে যায়।ভাইয়া আসলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
-” তুই আমায় ক্ষমা করে দে প্লিজ।”
-” এখন এসব কথা বলার সময় নয়।তুই এখন…! ”
প্রাচ্য আর বলতে পারিনি।তার আগেই দরজা ধাক্কিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে সমুদ্র।তৃণ আর প্রাচ্য উঠে দাঁড়ায়।সমুদ্র এসেই তৃণ’র পেট বরাবর ঘুষি দেয়।হুংকার ছেড়ে বলল,
-” তোর স্পর্ধা দেখেই আমি অবাক হচ্ছি।কোন সাহসে তুই আমার বোনের রুমে ঢুকেছিস।”
এটা বলে নাক বরাবর ঘুষি দিতে নিলেই তৃণ ধরে ফেলে।সে বলল,
-” সমন্ধী বলে এতক্ষণ সম্মান করেছি।কিন্তু তুই সম্মান নিতে পারিস নি।হাত ধরতে বাধ্য হয়েছি।আমি তোর বোনের রুমে ঢুকি না।আমি আমার স্ত্রী রুমে ঢুকেছি।স্বামী স্ত্রী রুমে ঢুকবে। এতে সাহসের প্রয়োজন হয় না।”
সমুদ্র রাগে ফুঁসতে ফুসতে বলল,
-” তোর সাথে প্রাচ্য’র কোনো সম্পর্ক নেই।”
-” তুই বললেই হল না কি।আমাদের বন্ধন পবিত্র বন্ধন।এত সহজে ছিন্ন করতে পারবে না তোর কত ভিলেন ভাইয়ে।আমি এক্ষুনি প্রাচ্যকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।”
এটা বলে প্রাচ্য’র হাত ধরে তৃণ।সমুদ্র আর তৃণ মধ্যে প্রাচ্য আর রোদ যেন দর্শক।তাঁরা ভালো শ্রোতা হয়ে ওদের ব্যাক্তব শ্রবন করছে। সমুদ্র হুংকার ছেড়ে বলল,
-” হাত ছাড়তে বলছি, আমি।”
তৃণ দ্বিগুন সাহস নিয়ে বলল,
-” ছাড়ব না হাত আমি।হাত ছাড়ার জন্য ভালোবাসিনি আমি।
প্রাচ্যকে আমি বিয়ে করেছি হাত ধরে বাঁচার জন্য।”
-” ভালোবাসি তুই।এই জন্য বোধহয় জানোয়ার মত আচরণ করেছিস।”
-” মানলাম আমি জানোয়ার।তাহলে তুই কী। তোকে ও জানোয়ার বলার উচিত।তুই তো রোদকে ভালোবাসতি।তাহলে কেন রোদের উপরে নির্মম অত্যাচার করেছিস।তোর ভাষ্য মতে আমি জানোয়ার হলে।তাহলে তুই ও জানোয়ারে কাতারে পড়িস।রোদ যখন তোর কাছে ফিরবে না বলেছে।তখনই তুই যদি রোদ কে কাঁধে তুলে করে তোর বাড়িতে নিয়ে আসতি পাররছ।তাহলে আমি কেন পারব না? ”
এটা বলে প্রাচ্যকে কাঁধ তুলে নেয়।আর আঙুল তুলে বলল,
-” অবশই পারব। তোর শেখানোর টেকনিক কাছে লাগিয়েছি।গুড বায় শালা বাবু। উফ! সরি।সমন্ধী বাবু।”
এটা বলে চলে যায়।সমুদ্র নির্বাক।তৃণ এমন কিছু করবে আশাই করেনি সে। রোদ তৃণ কথা শুনে মুখ টিপে টিপে হাসছ্র।সে খুব খুশি হয়েছে।সমুদ্র মুখে ঝাঁমা মেরে দিয়েছে।
সমুদ্র এতক্ষন পরে চেতনা ফিরে। রাগে প্রাচ্য রুমে ফুল দানী গুলো ছুড়ে ফেলে।
কাউছার স্বর্ণা।
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন।ভালো খারাপ দুটো দিক নির্দ্বিধা বলতে পারেন
স্বপ্নীল
৬২
সমুদ্র তাকে ভালোবাসে।সত্যি কী তাকে সমুদ্র ভালোবাসে।কবে থেকে ভালবাসে সমুদ্র তাকে।আগের কথা রোদ জানে না, কিন্তু এখনকাকার সমুদ্রকে দেখলে রোদের বার বার মনে হত।সমুদ্র তাকে ভালো বাসে। বিছানায় গুটি শুটি মেরে শুয়ে শুয়ে তৃণ বলে যাওয়া কথা গুলো ভাবছে রোদ।তখনই সমুদ্র রোদকে টেনে আনে তার বুকের উপরে।দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” কোন সাহসে ওপাশ ফিরে ঘুমাচ্ছো।তোমাকে বলেছি না,আমার বুকের উপরে মাথা রেখে ঘুমাবে,নইলে আমার ঘুম আসে না।”
রোদ বুঝতে পারে না এই রাগী মানুষটার ভালোবাসা।কখনো হুংকার ছেড়ে কথা বলে, কখনো বাঁকা বাঁকা কথা, কখনো আবার খুব মিষ্টি করে কথা বলে।
রোদ বলল,
-” একটা কথা বলি।”
সমুদ্র চোখ মেলে রোদের পানে তাকায়।সে বলল,
-” বলো।”
-” আপনি কী আমায় ভালোবাসেন।”
-” তোমার কী মনে হয়।”
-” আমি বুঝতে পারি না আপনাকে।”
সমুদ্র কোনো কথা বলল না।রোদ আবার বলল,
-” যদি আমি ধরেনি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।তাহলে কবে থেকে ভালোবাসেন।”
-” তোমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে।”
-” হুঁ।
-” বলব।সব বলব।সময় হোক।”
-” কবে আসবে সেই সময়।”
-” খুব শিগগির। এখন ঘুমাও।”
-” আরেকটা কথা বলি।”
সমুদ্র জবাব দেওয়ার আগেই রোদ বলল,
-” তৃণ-প্রাচ্যকে আলাদা করবেন প্লিজ।স্বামী-স্ত্রী মধ্যে জামেলা হতেই পারে।মিটামাট করে নিলে জামেলা শেষ হয়ে যায়।”
-” তৃণ এটা কী করে করতে পারল।”
-” তৃণ জায়গা আজকে আপনি থাকলে সেইম কাজ করতেন।এবং আপনি সেটা করেছেন।রেহান যেদিন আমার স্পর্শ করতে গিয়েছিল সেদিন কী আপনি রেহানকে মারেনি।কারণ আপনি সহ্য করতে পারেনি।আমাকে অন্য কেউ ছুঁবে মানতেই পারেনি।তেমনি তৃণ সেটা সহ্য করতে পারেনি।কারণ তৃণ প্রাচ্যকে ভালোবাসে।ভালোবাসার মানুষটার সাথে অন্য একটা ছেলেকে দেখেছে। তাই তৃণ মাথা ঠিক রাখতে পারেনি।”
-” তোমার কথা সঠিক।কিন্তু তৃণর উচিত ছিল প্রাচ্যকে জিজ্ঞেস করা।”
-” হ্যাঁ।এই সামান্য ভুল তৃণ করেছে!”
-” তোমার কাছে এটা সামনে মনে হচ্ছে।”
রোদ মনে মনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।সে বলল,
-” বন্ধুদের মধ্যে এত ভুলবোঝাবুঝি থাকলে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।”
-” যাক।ওকে বন্ধু বলতেই আমার বাঁধে এখন।”
-” তৃণ ভুল করেছে।মাফ করে দিন।”
-” তুমি অনেক কথা বলে ফেলেছো।এখন ঘুমাও”
সোহার সাত মাস চলছে।পেট কিছু উঁচু হয়েছে।হাঁটা চলা করতেই তার খুব কষ্ট হয়।
তামিম কোনো কাজ সোহাকে করতে দেই না ।বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে সব কিছু মেনে নিয়েছে।বিশেষ করে সোহাগী। নিজের বংশের প্রথম প্রদীপ আসতে চলেছে। তামিমের অনাগত সন্তানের কথা ভেবেই সোহাগী সব কিছুতে মেনে নিয়েছে।কিন্তু সোহার সাথে কোনো কথা বলে না।
প্রতিদিন তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে তামিম বাড়ি ফেরে।সোহার দেখা শুনা যতক্ষণ পর্যন্ত তামিম বাড়ি থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই করে।তামিম না থাকলে নীল সারাক্ষণ লেগেই থাকে। বিকেলে তামিম সোহার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠায়।তামিম বলল,
-” খুব কী কষ্ট হচ্ছে তোমার।”
-” এত গুলো সিঁড়ি বেয়ে উঠা কী এখন চারটি খানি কথা।”
-” সারাদিন ঘরে থাকো। একটু বাইরে বের হতে পারো না। বাহিরে আলো বাতাস শরীর মাখলে শরীর সতেজ হয়ে উঠে।”
-” দূর! এখন আর এগুলো ভালো লাগে না আমার।”
নীল পিছন থেকে বলল,
-” দিন কে দিন তুই বুড়ি হয়ে যাচ্ছি ত সোহা।তোর কথা মধ্যে কেমন যেন বুড়ি বুড়ি গন্ধ পাই।”
-” তোর কাছে যদি আমাকে বুড়ি মনে তাহলে তাই।”
তামিম বলল,
-” এক বাচ্ছার মা হয়ে বুড়ি হয়ে গেল কী হবে। পরবর্তী বাচ্ছার প্ল্যানিং তাহলে বাদ দিতে হবে।”
-” দরকার হলে তাই করবে।”
কথা বলতে বলতে সবাই ছাদে পৌঁছে যায়।সোহাকে দোলনা বসায়।সোহার দু পাশে দুজন বসে।নানার রকম গল্প করতে থাকে। হুট করে সোহা ‘ আহ’ করে আর্তনাদ করে।তামিম উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
-” কী হয়েছে? কোথায় ব্যাথা পেয়েছো।”
-” তোমার দুষ্টু ছেলে কিক মেরেছে।”
-” মোটে না।আমার ছেলে কখনো তার মাকে কষ্ট দিতেই পারে না।”
-” তাই বুঝি।”
-” হুম।আচ্ছা তুমি দেখো।আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করছি। সে তার মাকে আঘাত করেছে কী না।”
এটা বলে ছাদের মেজেতে হাটু গেঁথে বসে সোহার মাথায় কান পেতে তামিম।মাথা তুলে মুচকি হেসে বলল,
-” আমার ছেলে বলছে।সে তার মাকে ইচ্ছা করে আঘাত করেনি।”
নীল সোহার আর তামিমের কান্ড দেখে।মুচকি হাসে। তামিম সরিয়ে সে বলল,
-” এবার আমি কান পেতে শুনব।দেখি আমার ভাতিজা আমার কী বলে?”
কিছুক্ষণ পর সোহা নীল বলল,
-” কী বলেছে?”
-” শুনবি।”
-” বল!”
-” বলছে।সে খুব শিগগির দুনিয়াতে আসতে চলেছে।আর ফুফির সাথে খেলা করবে।”
★★★
প্রাচ্য দুহাত তৃণ তার দুহাতের মুঠোয় নিয়ে।করুণ কণ্ঠে বলল,
-” আমাকে ক্ষমা করে দে।তোকে অবিশ্বাস করা আমার ঠিক হয়নি।সেদিন মাথা ঠিক ছিল না।কোনটা বিশ্বাস করব।কোনটা অবিশ্বাস করব।বুঝতে পারিনি।
ঠিক-ভুল বুঝতে বিচার করার অবস্থায় ছিলাম না।রাগের মাথা তোর উপরে নির্মম অত্যাচার করেছি আমি।”
প্রাচ্য কোনো কথা বলল না।তৃণ আবার বলল,
-” এভাবে চুপ করে আছিস কেন? কিছু তো বল!তোর এই নিরবতা আমি মেনে নিতে পারছি না।”
প্রাচ্য হাত ছেড়ে নেয়।তৃণকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।তৃণ জড়িয়ে ধরে প্রাচ্যকে।এত দিন প্রাচ্য তার কাছে ছিল।মনে হয়েছে কত বছর ছিল না।কত বছর যেন দেখা হয়নি।
প্রাচ্য কান্না করতে করতে বলল,
-” তুই খুব খারাপ।তুই আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিস।”
তৃণ দুহাতের আজঁলা দিয়ে প্রাচ্য মুখটা তুলে বলল,
-” আজ তোকে কথা দিলাম।আর কখনো তোকে কষ্ট দিব না।শুধু ভালোবাসব।”
প্রাচা আবার কেঁদে দেই।দুজন দুজনকে ঝাপটে ধরে। এভাবেই তাদের ভুল বোঝাবুঝি মিটে যায়।এখন তাদের মধ্যে কোনো বাঁধা নেই।আছে শুধু ভালোবাসা।
★★★
বিয়ে করবে না বলে বিয়ের আসর দেখে পালিয়ে ছিল নীল।এখন আবার সেই সিফাতের বাবা,মা আবার এসেছে নীলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।নীল পালিয়ে গেছে । তারপর তাদের এটা নি কোনো আপত্তি নেই।সিফাতে বাবা -মা চায় নীলকে।নীলকে তাঁদের পুত্রবধূ করে ঘরে তুলতে চায়।সিফাতে বাবা যখন সোলোমান মির্জা কাছে আবার প্রস্তাব দেয়।তখনই সোলোমান মির্জা কোনো কথা দেই নি।বলেছে নীলের মতামত জানিয়ে তারপর তাঁদেরকে জানাবে।আগের বার নীলের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে ঠিক করেছে।নীল পালিয়ে গেছে।যদি আগের বার মত পালিয়ে যায়। এবার নীলের মত নিয়ে বিয়েতে আগাবেন।
নীল বসে আসে তার দাদুর সামনে।সোলোমান মির্জা তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।দাদু নীলকে বলল,
-” তোমার আংকেল সিফাতে সাথে তোমার বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।”
নীল বলল,
-” তুমি কী বলেছো।”
-আগে বার সিফাতের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছিলাম।তুমি পালিয়ে যেয়ে আমাদের সম্মান রাখোনি।এবার সেই ভুল করতে চাই না।তোমার মতামত জানতে তোমাকে ডেকে এনেছি।”
-” দাদু আমি এই বিয়ে করতে পারবে না।”
-” কারণ কী?”
-” দাদু আমি একজনকে ভালোবাসি।” নির্দ্বিধা বলে ফেলল নীল।”
-” কে সে? ”
নীল আমতা আমতা করে বলল,
-” স্বপ্ন।”
-” সমুদ্র বন্ধু স্বপ্ন।”
-” হ্যাঁ!
-” তুমি এখন যাও।”
সোলোমান মির্জা স্বপ্ন কে খুব ভালো লাগে।যে কয়দিন এই বাড়িতে ছিল।তিনি দেখেছেন।এই ছেলের অমায়িক আচারণ! স্বপ্ন মত একটা ছেলের হাতে নীলকে তুলে দিতে পারলে তিনি খুব খুশি হবেন।তিনি বাড়ির সবাইকে জানায়।বাড়ির সবাই সোলোমান মির্জা মতই মত দিয়েছে।সোলোমান মির্জা খুব শিগগির নীলের বিয়েটা দিতে চায়।নাতি নাতনী সবার বিয়ে হয়ে গেছে।এখন বাকি আছে নীল।মৃত্যু আগে তার প্রিয় নাতনী বিয়ে দেখে যেতে চায়।দিনকে দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি।হঠাৎ করে কোনদিন চলে যায় ওপাড়ে।ভালো পাত্র সন্ধান যখন পেয়েছে তখনই শুভ কাজটা দ্রুত করতে চান।
তিনি সমুদ্রকে ফোন করে সব জানায়।সমুদ্র রেগে গিয়ে বলল,
-” নীলের জন্য আর কোনো ছেলে ফেলে না।স্বপ্ন কে বেছে নিতে হয়েছে।স্বপ্ন ছাড়া অন্য কোনো ছেলের সাথে নীলের বিয়ে দাও।তাতে আপত্তি নেই আমার।”
-” নীল তো স্বপ্নকে ভালোবাসে।স্বপ্নকে ছাড়া নীল কাউকে বিয়ে করবে না।”
-” দাদু তুমি কবে থেকে ছোটের সিদ্ধান্ত নিজের সিদ্ধান্ত মনে করো।নীল এখন আবেগ বশেই ভুলভাল কী বলল।আর তুমি তাতে সায় দিয়ে দিলে।”
-” নীলের এই সিদ্ধান্ত আপত্তি জানানো প্রয়োজন বোধ করলে অবশ্যই করতাম।কিন্তু স্বপ্নকে আমি দেখেছি।ও খুব ভালোছেলে।বাড়ির সবার স্বপ্নকে পছন্দ হয়েছে।তোমার বন্ধু তোমার সবার আগে পছন্দ হওয়ার কথা।”
-” আমার বন্ধু।তাই তো মানা করছি।তোমার থেকে স্বপ্নকে বেশি চিনি আমি।
কয়দিন হলো স্বপ্নকে চিনেছো।তাতেই তোমার ভালো মনে হয়েছে।মোদ্দকথা,নীলকে স্বপ্ন কাছে ছাড়া অন্য যে কারো কাছে বিয়ে দাও আমার আপত্তি নেই।”
এটা বলে লাইন কেটে দেয়।এক বোনকে বন্ধু কাছে বিয়ে দিয়েছে।বন্ধু কী হাল করেছে।দ্বিতীয় বার এই ভুল করতে চায় না।স্বপ্ন যত ভালোই হোক।বন্ধুদের কাছে বোন বিয়ে দিয়ে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চায় না।
কাউছার স্বর্ণা
( ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।অনেক মেসেঞ্জারে আমায় নক করছে।নূপুর গল্পটা দেওয়ার জন্য।তাদের উদ্দেশ্যই বলছি।খুব শিগগির আসতে চলেছে নূপুর গল্পটা।এতদিন যখন অপেক্ষা করতে পেরেছেন।আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন)
স্বপ্নীল
৬৩
আজকে সমুদ্র আর রোদের বিবাহ বার্ষিক।দেখতে দেখতে বিয়ের এক বছর পার হয়ে গেছে।এই দিনে সমুদ্র সাথেই রোদের বিয়ে হয়েছে।শুধু তাদের বিবাহ বার্ষিক নয়।আজকে প্রাচ্য আর তৃণ’র বিবাহ বার্ষিক।
সমুদ্র বাড়িতে ছোটখাটো একটা আয়োজন করছে।আজকে রোদ সবার জন্য নিজের হাতে রান্না করছে।প্রাচ্য আর তৃণ এই মুহূর্ত এখানে নেই। সে জন্য রোদের মনটা কিঞ্চিৎ খারাপ।খাওয়া দাওয়ার পর সমুদ্র সহ সবাই বের হয়ে যায়।রোদ প্রাচ্যকে শুভেচ্ছা জানায়।প্রাচ্য ও জানায়।
সমুদ্র রোদের জন্য গিফট কিনার জন্য যাচ্ছে মার্কেটে।সাথে স্বপ্ন, ধূসর আছে।স্বপ্ন সমুদ্র’র পাশে বসায়।হঠাৎ করে স্বপ্ন বলল,
-” গাড়ি থামা!
সমুদ্র রাস্তা সাইডে যেয়ে গাড়ির থামায় সে বলল,
-” হঠাৎ কেন গাড়ি থামাতই বললি।”
সমুদ্র কথার কোনো উত্তর দিলো না স্বপ্ন।স্বপ্ন ইশারা ধূসর কিছু একটা বলে।ধূসর ইশারা পেয়ে হাতে রাখা রুমালটা দিয়ে সমুদ্র নাকে চেপে ধরে।
-” আরে কী করছি? রুমাল দিয়ে নাক চেপে ধরে কী মেরে ফেলার প্ল্যান করেছি না কি।”
এটা বলে সমুদ্র জ্ঞান হারায়।দুজনে হেসে দেয়।স্বপ্ন যেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে।সমুদ্র নিয়ে যায় কাঙখিত জায়গা।
সমুদ্র মিটমিট করে চোখ দুটো খুলল।আবার বন্ধ করে ফেলল।সব কিছু যেন ঝাপসা মনে হচ্ছে তার।দ্বিতীয় বার চেষ্টা করে চোখ খুলে।দেখতে পায় তিনজন মানব কে।দাঁড়িয়ে আছে তাঁরা সামনে।তৃণ বলল,
-” শালা বাবু চোখ মেলতে পাচ্ছে না।মাথায় বোধহয় পানি ডালতে হবে।”
এটা বলে হাতে রাখা বালতিরর পানি সমুদ্র মাথা ঢেলে দেই।সমুদ্র ভিজে চুপচুপ হয়ে গেছে।সে চোখ মেলে তাকায়। নিজেকে বন্ধী অবস্থা দেখে।হাত, পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে।বন্ধুদের দিকে তাকায়।তিনবন্ধু হাসছে।মাথা কিছু ঢুকছে না। সে তো মার্কেট যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে।তাহলে এখানে বন্ধী অবস্থা কেন? ওরাই বা হাসছে কেন? আর তৃণ কোথায় থেকে এলো।তৃণ বলল,
-” কেমন দিলাম শালা বাবু।”
সমুদ্র তৃণ কথায় প্রত্তুতর কিছুতে বলেনি।উল্টা স্বপ্নকে প্রশ্ন করে,
-” এসবের মানে কী? আমায় এভাবে বেঁধে রেখেছিস কেন? খুলল তাড়াতাড়ি?
-” খুলব না।”
-” ফাজলামো করছিস। এসব কোন ধরনের ফাজলামো।
-” শালা! তোকে রামদা দিয়ে পেটানো উচিত।”
তৃণ বলল,
-” আমাকে ঘুষি মেরেছে।আজকে তার শোধবোধ নেব।”
স্বপ্ন তৃণকে বলল,
-” ওর সাথে আগে আমার হিসাব মিটাই তারপর তোর হিসাব মিটাবি।”
সমুদ্র বলল,
-” কিসের হিসাব মিটাবি।”
ধূসর বলল,
-” আরে ভাই তাড়া কিসের তোর।আস্তে আস্তে বলবে।স্বপ্ন শুরু কর?”
স্বপ্ন একটা চেয়ার টেনে সমুদ্র সামনে বসে।বলল,
-” তুই জানিস আমার আর নীলের ব্যাপারে।তাহলে এখন যখন তোর দাদু আমাদের বিয়ে কথা বলছে।তুই কেন মানা করলি?সবাই যখন রাজি তাহলে তুই বিগড়ে দিলি কেন? সমস্যা কী।বোনের ভালোবাসায় ভিলেন ভাই হিসাবে পরিচয় দিতে চাস।”
সমুদ্র রাগ দেখিয়ে বলল,
-” তো কী করব।প্রাচ্যর বিয়ে সময় শিহাব কে কিডন্যাপ করেছি।যাতে তৃণ’র সাথে প্রাচ্য’র বিয়ে হয়।বিয়ে দিয়ে কী লাভ হলো।জীবনে কোনোদিন আমার বোনের গায়ে
ফুলের টোকা পর্যন্ত দিই নেই।আর তৃণ আমার সেই বোনকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।তোর কাছে আবার আমার বোনকে বিয়ে দিয়ে সেই ভুল আবার করার মানুষ নই আমি।”
-” সেটা তৃণ আর তোর ব্যাপার।আমাদের ভালোবাসায় মধ্যে তুই বিগড়ে দিলি কেন? তোর আমার এমন মনে হয়।আমি নীলের গায়ে হাত তুলব।”
-” এমন তৃণকে মনে হয়নি।কিন্তু তৃণ এখন তার আসল চেহারা দেখিয়ে দিয়েছে।”
ধূসর বলল,
-” তৃণ অন্যায় করেছে সেটা আমরা মানছি।তুই নিজেই তৃণকে মারছস
তৃণ এই ব্যবহার করার একটা কারণ ছিল। তাই বলে তুই স্বপ্ন আর নীলের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবি।”
-” অবশ্যই দাঁড়াব।”
-” তাহলে সারাজীবন তোকে এভাবেই বেঁধে রাখব।তোর রোদ প্রেয়সী কাছে যেতে দিব না।রোদের সাথে রোদের একটা কাজিন আছে না তার সাথে সেটিং করে দিব।” স্বপ্ন বলল।
সমুদ্র ধমক দিয়ে বলল,
-” স্বপ্ন।”
-” ধমকে কোনো কাজ হবে না।”
ধূসর বলল,
-” একটা কাজ কর স্বপ্ন।সমুদ্রকে এখানে বেঁধে রাখ। এই ফাঁকে তুই নীলকে বিয়ে করে নেয়। হানিমুন করে ফিরে আসলে তারপর সমুদ্রকে ছাড়ব।”
-“ভালো হবে না কিন্তু।একবার ছাড়া পাই।তোদের তিনজনের অবস্থা খুব খারাপ হবে।”
তৃণ বলল,
-” আগে ছাড়া পায়।তারপর না হয় প্ল্যান করেছিস।”
-” স্বপ্ন ছাড় আমায়! রোদ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
ধূসর বলল,
-” বাব্বাহ।আমাদের সমুদ্র যে প্রেয়সী কাছে যাওয়ার জন্য চটপট করছে।”
স্বপ্ন বলল,
-“-” রোদকে ছাড়া তুই যেমন থাকতে পারবি ননাতেমনই আমি, আমরা কেউ কারো ভালোবাসার মানুষ বিহীন থাকতে পারব না।”
সমুদ্র কোনো কথা বলল না।তখনই স্বপ্নর ফোন বেজে উঠে।পকেট থেকে ফোন বের করে।তখনই মোবাইলের স্ক্রিনের রোদের নাম ভেসে উঠে।ধূসর বলল,
-” কে ফোন করেছে!”
সমুদ্র দিকে তাকিয়ে বলল,
-” রোদ।
স্বপ্ন ফোন ধরে বলল,
-” হ্যালো।”
রোদ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
-” সমুদ্র কোথায়? স্বপ্ন।ফোন দিচ্ছি ধরছে না।এত রাত হয়ে গেলো এখন যে ফিরছে না।তোরা কী বলতে পারবি সমুদ্র কোথায়?”
রোদের এই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শুনে সমুদ্র বুকের এসে লাগল।গত বছর এই রাতে সে রোদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল।নির্মম অত্যাচার করেছিল।সে চেয়েছিল এই রাত টা রোদকে উপহার দিবে।আজ রোদকে সব বলবে।মনে জমে লুকায়িত ভালোবাসার কথা।সমুদ্র করুন চোখে তাকায় স্বপ্ন দিকে।স্বপ্ন রোদকে বলল,
-” সমুদ্র আমাদের সাথেই আছে।কিছুক্ষণ মধ্যেই বাসায় পৌঁছে যাবে।”
ফোন কেটে দেয়।ধূসর বলল,
-” এবার সমুদ্র পালা।জলদি ফোন দে তোর দাদুকে।বলবি তুই, নীলের আর স্বপ্নের বিয়েতে কোনো দ্বিমত নেই।”
সমুদ্র বাধ্য হয়ে তাই করতে হলো।যে জানে তারা বন্ধুরা কেমন।দাদুকে ফোন দিয়ে বলে খুব দ্রুত স্বপ্ন আর নীলের বিয়ের ব্যবস্থা করতে।সোলোমান মির্জা বলল,
-” কালকেই বললি তোর মত নেই।অন্য কোথায় যেন নীলকে বিয়ে দিই।এখন আবার উল্টা গীত খাইছিস।”
-” আরে দাদু।আমি জানতাম নীল আর স্বপ্নর ব্যপারটা।আমি স্বপ্ন বিরুদ্ধ মিথ্যে কথা বলিছি।দেখতে চেয়েছি তুমি কী বলো।”
এভাবেই দাদা -নাতি কথা চলে।ফোন কেটে সমুদ্র বলল,
-” এবার হইছে।”
সবাই হেসে সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে।সমুদ্র হেসে দেয়।তৃণ বলল,
-” আরে! সমুদ্রকে ছাড় তোরা।সমুদ্রকে না দেখেই বোধহয়।আমাদের রোদ বৃষ্টি ঝড় এখন হার্ট এ্যাটাক করে ফেলেছে”
-” তোরা একদমই ওকে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় বলে ডাকবি না।এই নামে ওকে শুধু আমি ডাকব।”
সবাই একত্রে হেসে বলল,
-” বাব্বাহ! কী প্রেম মাইরি।”
কাউছার স্বর্ণা
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।
স্বপ্নীল ৫৮, ৫৯,৬০
স্বপ্নীল
৫৮, ৫৯,৬০
রাত ১১ টার দিকে তৃণ বাসায় ফিরে।রুমে ডুকে দেখে রুমটা অন্ধকার।দেওয়ালে হাঁতড়িয়ে লাইট অন করে।বিছানার দিকে তাকিয়ে চমকে যায়।কেউ কিছুতে মেনে নিতে পারবে না তার ভালোবাসার মানুষ একজন পর পুরুষে সাথে একই বিছানা শুয়ে থাকবে ।তাও আবার জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।ঠিক এক-ই অবস্থা পড়ে আছে বিছানায় প্রাচ্য।
মাথা রক্ত উঠে যায়।চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। কপালে রগ গুলো ফুলে উঠেছে।দাঁতে দাঁত চেপে তৃণ চিৎকার দিয়ে বলল,
-” প্রাচ্য।”
তৃণর চিৎকারে যেন পুরো ঘর কেঁপে উঠল।প্রাচ্য ঘুম ঘুম চোখে চোখ মেলল।প্রাচ্য ঘুম কাতুরে কন্ঠে বলল,
-” এভাবে চিৎকার করছিস কেন? ”
এটা বলে প্রাচ্য খেয়াল করে, পেটের উপরে কারো হাত।তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।হুড়মুড় করে উঠে বসে।শাড়ি ঠিক মত গায়ে জড়িয়ে নেয়।
তাকিয়ে দেখে শিহাব।গায়ে শার্ট নেই।তার বিছানায় শিহাব কী করে এলো।সে একাই রুমে ছিল।শিহাব তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল।তৃণ তা দেখেছে।ভাবতেই বুকের ভিতরে ভয় করছে।
প্রাচ্য তৃণর দিকে তাকিয়ে ভয়ে ঘামতে থাকে।এই মূহূর্তে তার মাথা কাজ করছে না।তোতলিয়ে বলল,
-” শিহাব এখানে কী করে এলো।”
হংকার ছেড়ে তৃণ বলল,
-” সেই প্রশ্ন আমার তোকে কথা উচিত। ”
বাসার সবাই ছুটে আসে তৃণ এই উচ্চ আওয়াজে কথা শুনে।সবাই অবাক হয় প্রাচ্যর রুমে অন্য একটা ছেলে কে দেখে।শিহাব এতক্ষণ ঘুমে ভান করে ছিল। তৃণ শিহাবের কলার চেপে ধরে উঠায়। শিহাব এমন হাব ভাব করছে। যেন সে কিছু করেনি।আর এখানে কী হচ্ছে বুঝতেই পাচ্ছে না।
-” তোর এত বড় সাহস তোর।তুই আমার বেডরুমে এসেছিস।তোকেই আমি মেরেই ফেলব।”
ঘুষি উঠায় তৃণ।শিহাব হাত ধরে ফেলে বলল,
-” তোমার স্ত্রী আমাকে এখানে ডেকেছে।তাতে আমার দোষ কী।নিজের স্ত্রীকে শারীরিক সুখ দিতে পারো না।তাই সে আমাকে ডেকে এনেছে।”
এটা বলে তৃণর হাত থেকে কলার ছেড়ে নিই।প্রাচ্যর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হেসে দিয়ে বেরিয়ে যায়।প্রাচ্য এতক্ষণ সব বুঝতে পেরেছে।শিহাব তার আর তৃণ সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য এমন একটা বাজে চাল দিয়েছে।কিন্তু শিহাব এবাড়ি কীভাবে ঢুকল।
তৃণ রুম থেকে সবাইকে বের করে দিই।রুমের দরজা আওয়াজ করে আটকায়।হুস ফিরে প্রাচ্যর।তৃণ সেই ভয়ংকর চাহনি।এখনই যেন এখানে সব ধংস করে দিবে।প্রাচ্য মুখ খুলে কিছু বলবে বলেই তার আগেই তৃণ প্রাচ্যর চুলের মুটি ধরে।খাট থেকে হেঁচড়ে টেনে নামায়।প্রাচ্য ব্যথায় কুঁকড়িয়ে যায়।তৃণ বলল,
-” বাইরে প্রেমলীলা করিয়ে বেড়িয়েছিস কিছু বলেনি।লাস্ট পর্যন্ত প্রেমিকে আমার বেড রুমে এনেছিস।তোর সাহস দেখে অবাক হয়েছি।”
তৃণর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে প্রাচ্য। বলল,
-” বিশ্বাস কর তৃণ। আমি জানি না শিহাব কী করে রুমে এসেছে।”
-” তোকে বিশ্বাস করলে তাহলে নিজেকে অবিশ্বাস করতে হবে আমাকে।”
ব্যথায় প্রাচ্যর চোখ দিয়ে পানি টপ টপ করে পড়তে থাকে।তৃণ সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।কী করে সে প্রাচ্যকে বিশ্বাস করবে।নিজের চোখে শিহাবের সাথে দেখা করা, কথা বলতে দেখেছে।এইগুলো মনে পড়তেই। রাগ যেন দ্বিগুন বেড়ে যায়।প্রাচ্যকে তুলে দেওয়ালে সাথে দাঁড় করিয়ে গলা টিপে ধরে।
-” ক্যান্টিনে শিহাব তোর হাত ধরে রাখা।প্রতিদিন নিয়ম করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা।রাতে ফোনে প্রেম আলাপ করা।স্ব-চক্ষে দেখেছি।তারপর তোকে বিশ্বাস করব।”
প্রাচ্য দম আটকে আসছিল।নিশ্বাস নিতে পাচ্ছিল না।তৃণকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়।তৃণ দিকে তাকিয়ে বলল,
-” তুই যা দেখিস তা একটা ও ভুল নয়।সেদিন ভার্সিটি হঠাৎ করেই শিহাব আসে।সৌজন্যর খাতির কথা বলি।সে আমায় বলে তার কাছে ফিরে যেতে। বিয়েতে তাকে স্বপ্ন আর ভাইয়া কিডন্যাপ করেছে, এগুলো বলে।আমি বিশ্বাস করিনি।তাই জোর করে আমার হাত ধরে।সব সময় আমায় ফোন করে জ্বালা তো।আর থ্রেট দিতো।আর তুই ভেবেছিস আমি তার সাথে প্রেমালাপ করেছি।এই বিশ্বাস ছিল তোর ভালোবাসার প্রতি।”
-” বিশ্বাস ছিল বলেই তো।তোকে কিছুই জিজ্ঞেস করিনি।যেদিন তোকে জিজ্ঞেস করিছি। তুই সেদিন মিথ্যে বলেছি।অফিস থেকে ফেরার সময় তোকে আমি শিহাবের সাথে দেখেছিস।বাড়ি আসার পর তোকে যখন জিজ্ঞেস করলাম।তুই তখন কী বলেছি।কী উত্তর দিয়েছি।মনে আছে তো। না কি ভুলে গেছিস।”
-” সেদিন তোকে রেগে যেতে দেখে। সত্যিটা বলার সাহস পায়নি।”
তৃণ দুহাত দিয়ে হাত তালি দিতে থাকে।
-” কয়েক মিনিটে ভালোই গল্প বানিয়েছি তুই।মিথ্যে বলার জন্য তোকে নোবেল দেওয়া যাবে।”
-” বিশ্বাস কর সেদিনের মিথ্যে ছাড়া আর কিছু মিথ্যে বলিনি। ও আমায় সেদিন বলেছে।লাস্ট বারে মত দেখার করার জন্য।আর কখনো রাস্তায়,ফোন করে আমায় জ্বালাবে না।তাই বাধ্য হয়ে সেদিন শিহাবের সাথে দেখা করেছি।তুই যখন আমায় জিজ্ঞেস করেছিস।হ্যাঁ মিথ্যে বলেছি।সেদিন তোর রাগ দেখে আমি খুব ভয় পেয়েছি।তাই মিথ্যে বলেছি। ভেবেছি পরে সত্যিটা বলে দিব তোকে।”
প্রাচ্যর কথা শুনে তৃণয় ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে।প্রাচ্য ভয় পেয়ে যায়।এই হাসিটা তার কাছে খুব হিংস্র মনে হচ্ছে।প্রাচ্যর হাত ধরে কাছে টেনে এনে তৃণ বলল,
-” তুই জানিস।তুই ভালো গল্প বানাতে পারিস।এসব কাহিনী তুই গল্প উপন্যাস লেখতে পারিস।অনেক পুরুষ্কার পেতি তুই।”
-” বিশ্বাস কর তৃণ।আমি মিথ্যে বল…!”
প্রাচ্য আর কিছু বলতে পারেনি।তৃণ তাকে ধাক্কা মারে।টাল সামলাতে না ফেরে দেওয়ালে ভারি খায়।মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।তা চোখে পড়ছে না তৃণর। তৃণ রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।এতক্ষন ধরে রাগ কন্ট্রোল করে রেখেছে সে।প্রাচ্য’র মিথ্যে কথা গুলো হজম করতে পাচ্ছে না।হিংস্র হয়ে উঠে।প্রাচ্যকে টেনে দাঁড় করায়।
-“সব মানলাম।বিশ্বাস করলাম।কিন্তু আজকে কী করলি তুই।আমি তোকে শারীরিক সুখ দিতে পারি না।তাই তুই এই ছেলেকে ডেকে এনেছিস।এইটা ছিল তোর ভালোবাসার নমুনা।”
প্রাচ্য কান্না করতে করতে বলল,
-” শিহাব মিথ্যে কথা বলছে।আমি তাকে ডেকে আনি।”
-” তাহলে সে কীভাবে বাসায় ডুকল।”
-” জানি না আমি।”
-” তোর পাশে শুয়েছিল।তোকে জড়িয়ে ধরে।তুই জানিস না।তাহলে জানবে কে?আমি জানব।”
এটা বলে প্রাচ্যকে দুটো চড় মারে।প্রাচ্য হতভম্ব।সে বিস্মিত! অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।কোনো কথা বলছে না।শুধু চোখ দিয়ে নোনা জল বের হচ্ছে।তৃণ প্রাচ্যর চুলে মুঠি ধরে ফ্লোরে ধাক্কা মারে।তৃণ প্যান্টের বেল খুলে,প্রাচ্যকে মারতে থাকে।প্রাচ্য জোরে জোরে চিৎকার করছে।সেই আর্তনাদ তৃণ কানে পৌঁছায়নি।তৃন বলতে থাকে।
-” তোকে এত ভালোবাসার পর।তোর কাছ থেকে অপমান ছাড়া কিছুই পাইনি।তোকে সম্মান করে বলেই এত কিছু দেখেই কখনো কোনো বাজে কথা বলি নাই।আর তুই কী করলি এটা।আমার বেড রুমে পর পুরুষের সাথে। ছিঃ! সব সীমা ত আজকে লঙ্ঘন করে ফেলছিস তুই।”
মারতে মারতে হয়রান হয়ে যায়।বেল ছুড়ে মেরে ফেলে দেয়।দরজা খুলে বেড়িয়ে যায়।খাদিজা আর তনয়া এতক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কা দিয়েছিল।খুলল না তৃণ।এখন খাদিজা ছেলেকে দরজা খুলে বাইরে যেতে দেখেই।রুমে ঢুকে আতঁকে উঠে প্রাচ্যকে দেখে।রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে।ছেলেকে যখন রেগে যেয়ে তাদের কে বাইর করে দিয়েছে তখনই ভেবেছে খুব খারাপ কিছু হবে।কিন্তু এত খারাপ কিছু হবে ভাবতেই পারেনি।
মাথা পেটে রক্ত বের হচ্ছে প্রচুর। খাদিজা প্রাচ্যর নিশ্বাস চেক করে।বেঁচে আছে দেখে।স্বামীকে ফোন করে।তারা সবাই মিলে প্রাচ্যকে হসপিটালে ভর্তি করায়।
কাউছার স্বর্ণা।
গল্প ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।
স্বপ্নীল
৫৯
প্রাচ্যকে ICU তে নেওয়া হয়।।ডক্তর জানায় প্রাচ্যর অবস্থা।
প্রাচ্য’র ক্রিটিকাল অবস্থা দেখে তৃণ’র বাবা সমুদ্র কে ফোন দিই।তৃণকে অনেকবার ফোন দিয়েছে।কিন্তু তৃণ ফোন বন্ধ।সমুদ্র ছুটে আসে।প্রাচ্য এই অবস্থা দেখে তৃণর ফ্যামিলি সবাইক হুমকি দেয়।কে করেছে প্রাচ্য এই অবস্থা? তিন্নি বলে উঠে তৃণ মেরেছে প্রাচ্যকে।সমুদ্রকে এভাবে রেগে যেতে দেখে।রোদ স্বপ্নকে আর ধূসরকে ফোন করে।তারা কয়েক মিনিট পর হাসপাতালে আসে। তিন্নি কথা শুনে সমুদ্র হাসপাতালে হুংকার ছাড়ে।হুমকি দিতে থাকে।স্বপ্ন আর ধূসর সমুদকে আটকায়।স্বপ্ন সমুদ্রকে বলল,
-” এখন এসব করার সময় নয়।আগে প্রাচ্যকে সুস্থ করতে হবে।”
এর মধ্যে ডক্টর এসে জানায়।প্রচুর ব্লাড লস হয়।এই মুহূর্ত প্রাচ্যকে ব্লাড দিতে হবে।সমুদ্র আর প্রাচ্য’র ব্লাড গ্রুপ এক।সমুদ্র রক্ত দিতে যাওয়ার আগেইখাদিজা বেগম বলে,
-” আমার বোনের যদি কিছু হয়।আমি শুধু তৃণকে নয়।আপনার পুরো ফ্যামিলি শেষ করে দিব।”
চলে যায়।সবাই বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে।ধূসর এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে হিসাবে মিলাতে থাকে।তৃণ আর প্রাচ্য’র মধ্যে কী এমন হয়েছে যার জন্য তৃণ প্রাচ্য এই বেহাল করেছে।কিছুতে মিলাতে পাচ্ছে না দেখেই।স্বপ্ন পাশে বসে।স্বপ্নকে জিজ্ঞেস করে।
-” তুই কী কিছু জানিস ওদের ব্যাপারে।”
-” কিছুদিন ধরে তৃণ সাথে কথা হয়না আমার।এর আগে তৃণ এই ব্যাপারে কিছু জানি না আমি।”
রোদ বলল,
-” মির্জা বাড়ির সবাই জানলে খুব কষ্ট পাবে।”
-” হুম।আমি শায়লা আন্টিকে কথা দিয়েছি।তৃণ সাথে প্রাচ্য সুখে থাকবে।তাদের বিয়ের সব কিছু আমি ফাইনাল করছি।আন্টি যখন প্রাচ্য’র এই অবস্থা দেখবে। তখনই কীভাবে আন্টিকে মুখ দেখাবো।”
ধূসর বলল,
-“গ্রামে এখন কিছু না জানালে ভালো হবে।”
রোদ একমত হয়ে বলল,
-” ঠিক বলেছি।”
স্বপ্ন বলল,
-” সমুদ্র কী না জানিয়ে থাকবে।”
-” সেটাও ভাবার বিষয়।সমুদ্র যেভাবে ক্ষেপেছে।আল্লাহই জানে তৃণকে ফেলে কী করবে?”
রোদ বলল,
-” তৃণ এখন কোথায়?”
স্বপ্ন বলল,
-” আন্টি বলেছে।এই কাণ্ড ঘটিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে।ফোন দিয়েছি।বন্ধ বলছে।”
রোদ বলল,
-” এখন ফোন দেয়।”
স্বপ্ন ফোন দেয়।বন্ধ!মেসেজ করে জানায় প্রাচ্যর অবস্থা।
মধ্যরাতে বাড়ি ফেরে তৃণ।রুমে যায়নি সে।ছাদে শুয়েছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে বাসায় কেউ নেই।নিজের রুমে যায় ফ্লোর রক্ত দেখে আঁতকে উঠে।প্রাচ্যকে খুঁজতে থাকে। প্রাচ্য জন্য মনের ভিতরে ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।কিন্তু ফ্লোরে রক্ত দাগ দেখে।তৃণ মনে পড়ে যায়। প্রাচ্য সাথে কী জানোয়ারে মত ব্যবহার করেছে।কিছুতে কালকে রাতে রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনি।পারবে কী করে।কালকে প্রাচ্যকে এই অবস্থা দেখে তার জায়গা যে কেউ থাকলে এমন করত।
প্রাচ্যকে পুরো বাড়িতে খুঁজে। কোথাও পায় না।বাড়িতে কেউ নেই।প্রাচ্য নেই? মনে ভিতরে অজানা একটা ভয় ঢুকে যায়।প্রাচ্য যাই করুক।কালকে রাতে সে একটু বেশি করে ফেলেছে।
চোখ যায় খাটের উপরে মোবাইল দিকে।মোবাইল হাতে নেয়।বন্ধ দেখে খুলে। মিস কল এলার্ড ছিল বলেই। সবার আসার ফোন গুলো দেখতে পায়।তখনই আসে স্বপ্ন দেওয়া মেসেজ।প্রাচ্য অবস্থা খারাপ।আর হাসপাতালে ঠিকানা দেওয়া ছিল।তৃণ আর এক মুহুর্ত দেরী করেনি।
সমুদ্র তার বাসায় কাউকে কিছু জানায় নি।সবাই এতটা নিয়ে টেনশন করবে।প্রাচ্য এখন জ্ঞান ফিরেনি।সবাই বাইরে বসে অপেক্ষা করছে।তখনই তৃণ প্রবেশ ঘটে।স্বপ্নকে দেখে তৃণ বলল,
-” প্রাচ্য কী হয়েছে?”
সমুদ্র রোদের কাঁধে মাথা দিয়ে বসা ছিল।তৃণ কণ্ঠ শুনে উঠে দাঁড়ায়।স্বপ্ন কিছু বলার আগেই সমুদ্র তৃণর শার্টের কলার চেপে ধরে তার কাছে এনে।নাক বরাবর ঘুষি দিই।।তৃণ ফ্লোরে পড়ে যায়।সমুদ্র তাকে উঠিয়ে দাঁড় করায়।নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
সমুদ্র হুংকার ছেড়ে বলল,
-” তোদের এক করার জন্য শিহাব কে বিয়ের দিন কিডন্যাপ করেছি।আর তুই আমার বোন কে মেরে মৃত্যু দুয়ারে পাঠিয়ে দিয়েছিস।আজ তোকেই মেরেই ফেলব।”
এটা বলে সমুদ্র আবার ঘুষি দিতে নিলেই স্বপ্ন ধরে ফেলে।বাঁধা দিয়ে বলল,
-” কী করছি? পাগল হয়েছিস না কি।”
সমুদ্র স্বপ্নকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
-” স্বপ্ন তুই বাধা দিবি না আমায়।ওকে মেরেই ফেলব।”
আবার তেড়ে যায় সমুদ্র। ধূসর আর স্বপ্ন তাকে ধরে রাখে।স্বপ্ন বলল,
-” এটা একটা হাসপাতাল।কি শুরু করেছি।প্রাচ্য’র কিন্তু এখন জ্ঞান ফিরেনি।সেই চিন্তা না করে।মারামারি করছিস।”
সমুদ্র চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করছে।স্বপ্নকে সমুদ্র বলল,
-” স্বপ্ন, ওরে বল এক্ষুনি এই মুহূর্তে আমার চোখে সামনে থেকে যেতে।নয়তো খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
তৃণর বাবা যেয়ে তৃণ গালে চড় মারে।তিনি বললেন,-” এই শিক্ষা তোকে আমি দিয়েছি।তোর মায়ের গায়ে আমি কখনো হাত তুলেছি।দেখেছি তোরা।আমার ছেলে হয়ে কী করে পারলি এমন করতি।”
খাদিজা ফোঁস করে জ্বলে উঠল,
-” সবাই যেভাবে ইচ্ছা সেইভাবে মারবে আমার ছেলেকে।আমার ছেলে কী সাধে ওই মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে।ওই মেয়ে অন্য একটা পূরুষ মানুষ নিজের স্বামী বেডরুমে আনবে।জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকবে।যে কেউ এইভাবে দেখলে রাগ উঠবে।”
তৃণ নাকের পাশের রক্ত মুচে দিতে দিতে বলল খাদিজা কথাটা।কথাটা শেষ হওয়ার দেরী। সমুদ্র আগুন চোখে তাকিয়ে বলল,
-” মুখ সামলে কথা বলুন।নয়তো বড় ছোট কিছুই মানব না।”
তৃণ আর প্রাচ্য মধ্য কী জামেলা হয়েছে সমুদ্র তা জানে না।তনয়া কে যখন রোদ জিজ্ঞেস করেছে কী হয়েছে।তনয়া যতটুকু জানে ততটুকু বলে।রোদ পরে স্বপ্ন, ধূসরকে জানায়।
রোদ বাধা দিয়ে সমুদ্র বলল,
-” একজনের জ্ঞান এখন ফিরেনি।কোথায় সবাই মিলে দোয়া করবে তার জন্য। তা না করে এখানে মারামারি শুরু হয়েছে।প্লিজ বন্ধ করুন আপনি এসব।”
সমুদ্র খাদিজা আর তৃণ মুখোমুখি হয়ে বলল,
-” এক্ষুনি আপনারা সবাই হাসপাতাল ত্যাগ করবেন।আপনাদের ফ্যামিলি কাউকে যেন না দেখি।”
এটা বলে সমুদ্র ঘুরে দাঁড়ায়।কি মনে করে আবার উল্ট ঘুরে বলল,
-” আমার বোন আপনাদের বাড়ি চৌকাঠ কোনো দিন ফেরুবে না আর।আল্লাহ আমায় যথেষ্ট দিয়েছে।আমার বোনকে দেখার সার্মাথ্য আছে।দয়া করে এখন স্ব -সম্মানে যেতে পারেন।নয়তো ঘাড় ধরে বের করে দিব।”
খাদিজা আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় নি।ছেলেকে টানতে টানতে নিয়ে বের হয়ে যায়।অবশই তৃণ যেতে চায় নি।সমুদ্র এমন একটা সিন্ধান্ত কেউ খুশি না হলে। একজন খুশি হয়েছে।তার পথ এখন ক্লিয়ার।
কাউছার স্বর্ণা।
গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।
স্বপ্নীল
৬০
প্রাচ্যর দু ঘন্টার পর জ্ঞান ফিরে।সাঁতদিন এভাবে হাসপাতালে থাকে।এই সাঁতদিন তৃণ অনেক বার এসেছে।কিন্তু সমুদ্র তাকে ঢুকতে দেয় নি।তৃণকে মারতে যায়।রোদ এসে বাঁধা দিই।আজকে প্রাচ্য রিলিজ করে দিই।সমুদ্র প্রাচ্যকে বাসায় নিয়ে আসে।রোদকে মানা করে দেই।কিছুতেই যেন তার অনুপস্থিত তৃণকে বাসায় ঢুকতে না দেই। এক প্রকার সমুদ্র হুমকি দিয়ে এসব কথা বলে।
তৃণ হাসপাতালে আসে প্রাচ্যকে দেখতে।নার্স বলে আজকে প্রাচ্যকে রিলিজ করে দিয়েছে।মন খারাপ করে ফিরে আসে।ধূসর আর স্বপ্ন প্রাচ্যকে দেখতে আসে।তাদের কে দেখে প্রাচ্য খাটের হেলান দিয়ে বসে।ধূসর বলল,
-” কেমন আছিস?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রাচ্য বলল,
-” ভালো!তোরা কেমন আছিস?”
ধূসর বলল,
-” ভালো আছি বলেই তো দেখতে আসতে পেরেছি ,নয়তো তোর মত আমাদেরকে বিছানা পড়ে থাকতে হতো।”
প্রাচ্য স্লান হেসে বলল,
-” কে বলল? আমি বিছানা পড়ে থাকি।”
“কেউ বলতে হয় না? দেখতেই পাচ্ছি নমুনা।”
তখনই রোদ রুমে আসে।সবার উদ্দেশ্যই বলল,
-” নাস্তা বানানো শেষ।তোরা সবাই নাস্তা করতে আয়।”
প্রাচ্য বলল,
-” খাবো না এখন!”
স্বপ্ন বলল,
-” এমনি অসুস্থ।এখন তোর বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত।”
এটা বলে হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে প্রাচ্যকে নামায়।এক প্রকার জোর করে প্রাচ্যকে টেবিলে নিয়ে আসে।সমুদ্র আগে থেকেই বসা ছিল।সবাই নানান কথা বলছে আর খাচ্ছে।তখনই সমুদ্র প্রাচ্যকে বলল,
-” তোর আর তৃণ ডিভোর্স ব্যবস্থা করতেছি।”
সবাই খাওয়া ছেড়ে সমুদ্র দিকে তাকায়।প্রাচ্য কিছু না বলে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যায়।স্বপ্ন বলল,
-” এসবে মানে কী? ”
-” মানে খুব সিম্পল। তৃণ কাছে প্রাচ্য আর পাঠাবো না।”
-“;তুই বললেই হল।ওরা একজন আরেক জন ভালোবাসে।কোথায় ভাই হয়ে ওদের ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে দিবি।তা না করে ওদের ডিভোর্স ব্যবস্থা করছিস।”
-” ভুল আমার প্রথম হয়েছে ওদের বিয়ে দেওয়া,নয়তো আজকে প্রাচ্য এই হাল হত না।”
-” ডিভোর্স হয়ে গেলে কী সব সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।তোর ফ্যামিলির লোক জানলে এতে কষ্ট পাবে।”
-” সেটা আমি হ্যান্ডেল করে নিব।”
এবার ধূসর বলল,
-” তৃণ এমন করার ছেলেই নয়।কেন এমন করেছে তা না জেনেই।এত বড় ভুল করার ঠিক হবে না।”
কোনো কথা বলল না সমুদ্র।ধূসর আবার বলল,
-” সব চেয়ে বড় কথা।প্রাচ্য কী চায়? ”
-” প্রাচ্য চাওয়া না চাওয়া কিছু যায় আসে না। আমি যা বলছি তাই হবে। ওই জানোয়ার ফ্যামিলিতে আমার বোনকে আর যেতে দিব না।”
★★★
প্রাচ্য সবাইকে সব টা খুলে বলল।ধূসর বলল,
-” শিহাব যখন তোকে থ্রেড দিয়েছিল।তখনই তৃণকে জানানো উচিত ছিল।তাহলে আজকে এত বড় সমস্যা হত না।”
-” সেটাই বড় ভুল ছিল।আমি কী ভেবেছি শিহাব এরকম বাজে একটা কাজ করবে?”
স্বপ্ন বলল,
-” তোর রুমে যখন ওই ছেলে ঢুকেছে তুই টের ফেলি না কেন? ওই ছেলেই বা কী করেই বাড়িতে ঢুকছে।”
– ” আমি টের পাবো কী করে।সন্ধ্যায় সবার জন্য চা করেছি।আমি নিজে খেয়েছি।চা টা খাওয়ার পর।প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল।চোখ মেলে তাকানো দুষ্কর হয়ে উঠেছিল।অনেক কষ্টেই বিছানা চেয়ে শুয়েছি।তারপর যখন ঘুম থেকে উঠি। তৃণকে আর শিহাব কে দেখি।”
রোদ বলে উঠল,
-” চা গেলে ঘুম পায় না কী কারো।”
-” বিশ্বাস কর তোরা।প্রচুর ঘুম পাচ্ছিল। ”
ধূসর বলল,
-” কেউ তোর চায়ে আবার ঘুমের ওষুধ মিশায় নি তো।”
রোদ বলল,
-” হতে পারে।”
স্বপ্ন বলল,
-” কেউ কেন প্রাচ্য চায়ে ঘুমের ওষুধ মিশাবে।তার কী লাভ হবে।”
রোদ বলল,
-” হবে হবে।কারণ প্রাচ্য শ্বাশুড়ি।মানে তৃণ মা।প্রাচ্যকে একদম সহ্য করতে পারে না।তিনি চেয়েছিলেন।তৃণের সাথে তার বোনের মেয়ে তিন্নি বিয়ে দিতে।আমারর মনে হচ্ছে প্রাচ্যর শাশুড়ি এমন করছে।”
-” তাহলে আমার মনে হয় তাদের শিহাবের সাথে হাত ছিল।ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রাচ্যকে ঘুম পাড়িয়ে দেই।সেই সুযোগে শিহাবকে তারাই রুমে ঢুকিয়েছে!”
রোদ বলল,
-” হতে পারে!”
বন্ধুদের এত ভাবনা দেখে।প্রাচ্য’র মাথা যন্ত্রনা করছে।সে মাথা হাত দিয়ে বলল,
-” প্লিজ চুপ কর।এসব আমার ভালো লাগছে না।”
কেউ আর কোনো কথা বাড়ানি।সমুদ্র ডিভোর্স কথা বলেছে সেটা জানায় নি।তারা আরো কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।
সমুদ্র বাসায় আসলে রোদ শিহাবে ব্যপারে সব বলে।থ্রেড , রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকা,ফোন করা সব কিছুই বলল।সমুদ্র এসব শুনে তার মাথা একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে কী ভাবে শিহাব রুমে ঢুকেছে।
মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টির জন্য চার পাশ সব কিছুই ধোঁয়াশা লাগছে।প্রাচ্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাশ করছে।তখনই চোখ যায় রাস্তায়।কেউ তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির জন্য সে মানবের চেহারা বুঝা যাচ্ছে না।কিন্তু প্রাচ্য মন বলছে। বৃষ্টির দাঁড়ানো মানব টা,তৃণ।কেন দাঁড়িয়ে আছে তৃণ? তাকে দেখার জন্য।প্রাচ্য অবচেতন মন তাই বলছে।প্রাচ্য সেদিনে তৃণর হিংস্রতার কথা মনে পড়ে যায়।সে এক মূহূর্ত দেরী না করে রুমে চলে আসে।বিছানা উবু হয়ে শুয়ে বালিশ জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠে।প্রতিদিন এভাবে লুকিয়ে প্রাচ্যকে দেখে যায় তৃণ।আজকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল।সব কিছুতে ঝাপসা দেখা যায় বলেই।আজকে আড়াল যেয়ে দাঁড়ায় নি।মনে করেছে বৃষ্টির ঝাপসা কারণ প্রাচ্য হয়তো তাকে দেখবে না।কিন্তু প্রাচ্য এভাবে চলে যেতে দেখেই টনক নড়ে।প্রাচ্য কী তাকে দেখতে পেয়েছে?
-” আমার না বৃষ্টি ভিজতে ইচ্ছা করছে।”এক হাতে ফোন কানে দিয়ে।অন্য হ
হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা নেয়।স্বপ্নকে উদ্দেশ্য করে বলল কথাটা।স্বপ্ন বলল,
-” পাগল না কী।রাত কত তুমি জানো এখন।”
-” মাত্র রাত দুটো।”
-” তোমার কাছেই মাত্রই মনে হচ্ছে।”
-” হুম।এই মাঝ রাতে বৃষ্টিতে ভিজায় মজাই আলাদা।”
-” হুম।”
নীল বলল,
-” এই শোনো।”
-” বলো!”
-“বিয়ের পর মাঝরাতে যদি বৃষ্টি হয়।তুমি আমি দুজনে বৃষ্টিবিলাশশ করবো।তখন কিন্তু আপত্তি করতে পারবে না।”
-” তখনই তুমি থাকবে।আপত্তি করার কোনো মানে আছে।”
-“ইশ!”
এভাবে তাদের ফোনে কথা চলতেই থাকে।
কাউছার স্বর্ণা
( ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।কেমন হয়েছে বলবেন।ভালো খারাপ মন্তব্য করবেন)