Monday, August 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2011



স্বপ্নীল ১২

0

স্বপ্নীল
১২

তামিম সোহার হাত মোচড় দিয়ে ধরে ।সোহা ব্যথায় আহঃ করে চিৎকার দেয়।ব্যথাতুর কাতর হয়ে অনুনয় সুরে বলে,
-“আমি ব্যথা পাচ্ছি,প্লিজ ছেড়ে দিন!
-“ছেড়ে দিব! ছেড়ে দেওয়ার জন্য কি তোকে ধরেছি।তুই আমার কথা শুনলি না কেন?কালকে রাতে! কেন বল?
-“এবার ধরে সব সময় শুনবো।
তামিম ধমকের সুরে বলে,
-“আগে বল কালকে কেন? শুনলিনা আমার কথা?তার উত্তর দে।
-“আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!
তামিম আর কিছু না বলে আর জোরে সোহার হাত মোচড় দিয়ে ধরে।সোহা ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠে।তাতে তামিমের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই,
-আহঃ,উহু করছিস কেন??একে তো আমার কথা শুনিস নেই।তার উপরে ডাহা মিথ্যে কথা বলছিস।তুই কি মনে করিস ঘুমে নামে মিথ্যে বানোয়াট কথা বললে আমি বিশ্বাস করে নিবো।
সোহার এবার মেজাজ সপ্তম আকাশে উঠে যায়,
-“আমি কেন আপনার কথা শুনতে যাবো মাঝরাতে,আমি কি আপনার ঘরের বউ, যে আপনি যা বলবেন আমায় তা শুনতে হবে মানতে হবে।
তামিম সোহার হাত ছেড়ে দিয়ে তার দিকে ঘুরিয়ে বলে,
-“আমার ঘরের বউ আজ না বা কাল তোকে হতে হবে।তাই আগে থেকে আমার কথা তোকে শুনতে হবে।
সোহার হাত লাল হয়ে গেছে।সে ভালো করে নিজের হাত দেখছে।কি সুন্দর হাত এভাবে চেপে ধরে লালা বানিয়ে ফেলেছে।আর কিছুক্ষন এভাবে ধরলে হয়তো তার হাত ভেঙে যেত।তাহলে কি হত,এই জানোয়ারের মায়াদয়া বলতে কিছু নেই, কিছুর থেকে কিছু হলে অমনি হাত মোচড়ে ধরে,ইচ্ছা করে তার হাত এভাবে মোচড়ে ধরে ভেঙে দিতে।কিন্তু আফসোস তার সাথে যে সে ফেরে উঠবে না,গণ্ডারের মত যে তার শরীর শক্তি।
সে বললো,
-“যখন বঊ হবো তখন অধিকার দেখাতে আসিয়েন। এখন অযথা বিরক্তি করিয়েবেন না।
এটা বলে চলে যেতে নিলে।তার বেণী ধরে টান মেরে।সোহা ব্যথায় আহঃ বলে দাঁড়িয়ে যায়।তামিম তার বেনুনী ধরে টানতে টানতে তার কাছে নিয়ে আসে।
-“আমি অযথা বিরক্ত করি,,,,,
আর বলতে না দিয়ে সোহা বলে উঠে,
-“তা নয় তো কি? নিচে আমার অনেক কাজ আছে। আর আপনি এখানে অযথা আমায় ধরে রেখে আমার সময় নষ্ট করছেন!ছাড়েন বলছি।
-“ছাড়ব না।
-“ঠিক আছে! আমি বড় মা আর ছোট মাকে এখন চিৎকার করে ডাক দিবো।তখন…

বাকি কথা শেষ করার আগে তামিম ছেড়ে দেয় বেনুণী। সোহা দুষ্টু হেসে বের হয়ে যায় রুম থেকে।
____________________________

ট্রেকিং করেই পৌঁছে গেলো সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে লাগলো সবাই।এখানে দাঁড়িয়ে বকুটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটাই দেখছে ওরা।এত বিশাল প্রান্তের সামনে।বিশাল মহাশূন্য আর রাশি রাশি মেঘ।আসার পথেই কুয়াশার মত মেঘেরা গা ভিজিয়ে দিচ্ছিলো।নীল কেবলই উৎফুল্ল হয়ে উঠছে।চূড়ায় উঠতে উঠতে তারা দেখতে পায় মিজোরাম সিমান্তের পাহাড় সবুজের মিতালি।কংলাকের চূড়ায় উঠে চার পাশে তাকালো রোদ।এত সুন্দর চারপাশের ভিউ দেখে দেখে তার মনে হচ্ছে কোন যান্ত্রিক নগরের দূষিত বাতাস, দূষিত শব্দ এবং কর্কট সমাজে জন্ম নেয়া মানুষ সে।তার মন-প্রান পুলকিত হবে এক বিশুদ্ধ চিন্তা এবং অনুভুতি।

চোখে পলকেই নীলের চার পাশটা ঢেকে গেছে সাদাকালো মেঘে।এ যেন মেঘের উপত্যকা। নিজেকে মনে হবে মেঘের রাজ্যের বাসিন্দা।।হয়তো মনের অজান্তেই খুজতে থাকবে মেঘের মধ্যে পঙ্খীরাজ ঘোড়া চড়ে আসবে রাজ পুত্র,আর সেই রাজ পুত্র যদি হয় সেই সুরওয়ালা।তাহলে তো কথা না,,,ইস! একবার যদি তাকে সে দেখতে পেতো।

তৃণ খেয়াল করে দেখলো একরাশি তুলোর মতো মেঘ উড়ে আসছে।ও ছুটে এসে প্রাচ্যর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড় করালো।প্রাচ্য মুগ্ধতার চোটে কথাই বলতে পাচ্ছে না।এমন মেঘ ও কক্ষনো দেখেনি।মেঘেরা উড়ে আসছে ওদের দিকে।।প্রাচ্য উত্তেজেনা কাঁপছে।।প্রাচ্য তৃণের বুকে পিঠ ঠেকে দাঁড়ালো।তৃণ ওর পিছনে দাঁড়িয়ে হাত দুটো প্রাচ্যর হাতে তুলে নিয়ে সামনে বাঁড়িয়ে দিলো।।প্রাচ্য উত্তেজনা কাঁপতে কাঁপতে তৃণের বুকের উপরে সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়েছে।বিশাল আকাশ আর এই মহাশূন্য মাঝে উড়ে আসা মেঘ দেখে ওর মনে হচ্ছে নিজেই বোধহয় আকাশে উড়ছে।তৃণের হাতের উপর আলতো করে হাত রেখে আবেশে চোখ বুজে ফেললো প্রাচ্য।গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ এসে শরীর ফুড়ে ঢুকে যেতে লাগলো।দুজনকে একসাথে আলিঙ্গন করছে মেঘ।মেঘ স্পর্শ করার অনুভূতি এত সুন্দর হতে পারে প্রাচ্য কখনো কল্পনাও করেনি।অজান্তেই ওর দুচোখে বেয়ে পানি টপটপ করে পড়ছে।বহু প্রতিক্ষীত সেই অনুভূতি। তৃনের স্পর্শে চোখ বুঝে ফেলেছে ও।চোখ মেলেই আবার মিটমিট করে বন্ধ করে ফেললো।মনে হচ্ছে একটু গাঢ় কুয়াশা।শীতল এক অনুভূতি! ভেতরে কাঁপন ধরে গেছে একে বাঁরে।মেঘেদের দল উড়ে চলে যাওয়ার পর প্রাচ্য পিছন ফিরে তৃনকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।ধূসর ওদের মেঘের ভিতরে ছবি তুলে নিয়েছে।তৃণ ফ্যাসফ্যাস করে প্রাচ্যের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

“তোমার কানে পরিয়ে দেবো অগ্নিজবা,পাহাড়িফুল।
একটু তোমায় দেখবো ছুয়ে নাইবা আমার হলো -ই ভুল।
তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে হাতটি আমি ধরবো হাতে
তোমায় পাওয়া পূন হলে ভিজবো দু’জন জলপ্রপাত।

এদিক চেয়ে মিষ্টি হাসে পাহাড়-নদী সকল কিছু।
নরম ঘাসের আলতো ছোঁয়ায় নুঁয়ে আছে জমিন-নিচু।
ফেরার পথে আবার তোমায় গুঁজে দিবো পাহাড়ি ফুল।
আলতো ছোঁয়ায় জড়িয়ে দিবো তোমার পিঠে সোনালি চুল।

-“ইস!!”লজ্জা পেয়ে প্রাচ্য নিজে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে যায়।তা দেখে তৃণ মুচকি হাসে।ধূসর এসে তার পিঠে চাপল মেড়ে বলে,”বাহ রোমান্স তো ভালোই করলি”
এটা বলে ক্যামেরা বাড়িয়ে দিয়ে তার তোলা ছবিটা দেখায়।

নীলের পরনে নীল টপস সাদা প্যান্ট,স্বপ্নর কাছে মনে হচ্ছে নীল আকাশের সাদা মেঘের মধ্যে নীল সাদা পরি এসে দাঁড়িয়ে আছে। স্বপ্নের বার বার মনে হচ্ছে মেঘেরা পথ ভুলে এসেছে তার শুভ্র পরী জন্য।রাজকন্যাকে দেখতেই এসেছে মেঘেরা।নয়ত মেঘগুলো কত নিচে,এত উপড়ে আসে না সব সময় ওরা।তবে উপড়ে সব জায়গায় কুয়াশার মতন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার ইচ্ছা করছে তার নীল সাদা পরী কে চিৎকার করে বলতে “ভালোবাসি, ভালোবাসি”

কংলাক পাহাড়ে পাহাড়িদের দোকান রয়েছে।সেখান থেকে স্বপ্ন সবার জন্য চা নিয়ে আসে। এক কাপ চা ১০ টাকা এখানে।কংলাক পাহাড়ে বেঞ্চে বসে চা খাওয়ার অনুভূতি অন্য রকম।সবাই মিলে চা, পাহাড়িদের কলা, কমলা খেয়ে গলা ভিজায়।

পাহাড়ের চূড়ো তখন হালকা কুয়াশা আচ্ছন্ন,শীতের শেষ বিকেল পেরিয়ে পশ্চিমের আকাশ বিদায়ী সিংহ-সূর্যদেবতা তখন পাহাড়ের কোলে হেলে পড়ছে মাত্র।সূর্যের সোনালি রঙে মোড়ানো সবুজ পাহাড়,দিন শেষে আর শুরুতে এরঙ যেন পুরো পাহাড় কে সোনায় মুড়িয়ে রাখে।অদূর সীমান্তে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের ব্লু মাউনন্টেগুলো।
এত সুন্দর ভাবে সূর্যাস্ত এখানে হয় তা নীলের কল্পনার বাহিরে ছিলো। সুর্যের সোনালি কিরণ যেন তার গায়ে উপছে পড়ছে।সোনালি কিরণ যেন তাকে বরণ করছে।তার এখন সবুজ পাহাড়,নীল আকাশের সাদা মেঘে। এসব নিয়ে কবিতা আবৃতি করতে মন চাচ্ছে।যেই বলায় সেই কাজ। খুব জোরে জোরে সে কবিতা আবৃতি করছে,

পাহাড় ভাবে
আর একটু হলেই আকাঁশ ছোঁবো,
আকাশ ভাবে
ঐতো পাহাড়,দৃষ্টির সীমায়।
সবুজ ভাবে
বৃষ্ট এলো বলে,ঐ তো মেঘ।
হাত বাড়ালেই
আসবে নেমে অঝোর ধারায়
মেঘ আসে না
পাহাড় হাসে না,
নিশ্চল নিশ্চুপ পাহাড়ের
আকাশ ছোঁয়া হয় না।
সাগর ভাবে
ঐ তো বালিয়াডি
পা ছুয়ে দিলাম বলে,
পা আসে না।

পাহাড় কে কষ্ট দিয়ে পুষ্ট হওয়া
এযেন নির্জনতায় মেঘেদের
মস্ত এক লণ্ডভণ্ড খেলা।
বন হরিনীর বেশে।

সবাই করতালি শব্দে নীল পিছনে ফিরে।ধূসর হাত তালিয়ে দিয়ে দিয়ে এসে বলে
-“বাহ্! তুমি খুব ভালো কবিতা আবৃতি করতে পারো।

★★★
সবাই মিলে হোটেলে যায় রাতের খাবার খাওয়ার জন্য।রাতের খাবার ছিলো বাঁশ কুড়ুল সবজি,ব্যাম্বো চিকেন,লইট্রা ফ্রাই,হাসের মাংস ইত্যাদি। খাবার খাওয়ার পর সবাই মিলে সাজেকের সুনশান রাস্তা হেঁটে যায়।।চাঁদের আলো মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে সাজেকে। তাকিয়ে আছে তারা চাঁদের দিকে।কত টা শান্ত করে দিয়েছে তাদের মন,এই মুগ্ধতা তাদের চোখের কোণে ভিজিয়ে দিবে।

#চলবে
কাউছার স্বর্ণা

বিঃদ্রঃ এই গল্পে response কম। তাই ঠিক করেছি।আর এই গল্প লিখবো।

স্বপ্নীল ১১

0

স্বপ্নীল
১১

সোহা তামিমের রুমে এসে দেখে পুরো রুম অন্ধাকার করে রেখেছে।বুঝতে পাচ্ছে না ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে, হাতের ভাতের থালা নিয়ে যেয়ে রুমে লাইট জ্বালিয়ে দেয়। আলো জ্বলে উঠতে তামিম বলে উঠে,
-কে?
-“আমি
তামিম উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল,সোহার কন্ঠ শুনে সে উঠে বসে,
-“তুই কেন এসেছিস?
সোহা খাবারের থালা রাখতে রাখতে বলে,
-“মা বলেছে আপনি না খেয়ে আছেন সারাদিন।তাই খাবার নিয়ে এসেছি।
-“খাবার আরো আগে নিয়ে আসতে পারলে না,খিদে যে আমি মরে যেতে ছিলাম।আরেকটু দেরী করে আসলে হয়তো আমি অক্কা পেতাম।
-“ছি ঃ ছিঃ কি সব বলছেন?মুখে কোনো কথা আটঁকায় না আপনার।যা মুখে আসে তা বলে ফেলেন।

তামিমে ভাত একলোকমা মুখে তুলে বলে,
-“আমি মরে গেলে তোর কি??তুই আর আমায় ভালোবাসিস না?মরে গেলেই তো বাঁছিস।আর আমার জ্বালা তোকে সহ্য করতে হবে না।
সোহা আর কিছু বলে না।তাকে চুপ থাকতে দেখে তামিম বলে,
-“আমায় খাবার দিতে কি মা বলেছে,
সোহা আমতা আমতা করে বলে,
-“আস…লে,,,
তামিম বিরক্ত হয়ে বলে,
-“কোনো কিছু তোকে জিজ্ঞেস করলে তোতঁলাইয়া তোঁতলাইয়া কথা বলিস কেন?আর যদি এমন ভাবে কথা বলিস। থাপ্পড়ি তোর কান গরম করে ফেলব।আমি যেটা জিজ্ঞেস করব স্পর্শ ভাবে তার উত্তর দিবি। খালা পাঠিয়েছে খাবার তাইতো।
সোহা আর কিছু না বলে ঘাড় কাত করে হ্যাঁ জানায়।
ইশিল মাছ ভাজা দিয়ে ভাত খাচ্ছে সে।ইলিশের কাঁটা বাছবে, নাকি খাবে বুঝতে পাচ্ছে না।সে বিরক্ত সুরে বলে,
-“এখানে সঙের মত দাঁড়িয়ে না থেকে এদিকে এসে আমার ইলিশ মাছের কাঁটা বেছে দেয় তো।
-“কি?
-“কানে শুনছ নাই।নাকি আবার বলতে হবে তোকে।
সোহা আর কিছু না বলে তামিম মুখোমুখি বসে খাটের উপরে।
-“তাড়াতাড়ি বেছে দেয়।আমার খুব খিদে পেয়েছে।
-“আপনি ছোট খোকা যে মাছের কাটা বেছে দিতে হবে?
-“ছোট খোকা নয় আমি,তুই জানিস না ইলিশ মাছে কাটা আমি বেছে খেতে পারি না।সব সময় মা বেছে দেয়।এখন মা নেই, তাই তোকে করতেই হবে।
সোহা আর কিছু না বলে মাছের কাঁটা বেছে দিতে থাকে।আর তামিম খেতে থাকে।খাবুসগুবুস করে তা দেখে সোহা বলে,
-“আপনার খাবার কি কেউ নিয়ে যাবে?
তামিম তার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকিয়ে নিজের মুখে ভাতের লোকমা দেয়।
-যে ভাবে ঘাবুসঘুবস করে খাচ্ছেন যেন হাজার জনম ধরে কিচ্চু টি খান নাই।
মুখে ভাতের আরেক লোকমা তুলে বলে,
-“হাজার জনম নাই বা হোক।কালকে রাত ধরে না খেয়ে আছি এটা আমার কাছে হাজার জনম মনে হচ্ছে। তুই এক কাজ কর নিজে গিয়ে আমার জন্য আরেকটু ভাত আর তরকারি নিয়ে আস।
বাধ্য মেয়ের মত সে নিচে গিয়ে ভাত আর তরকারি নিয়ে আসে।তামিম খেয়ে দেয়ে বলে
-“আহ্ পেট ভরে গেছে! কি শান্তি লাগছে।

সোহা খাবার প্লেট গুলো নিয়ে নিচে যাচ্ছিল তখনই তামিম বলে
-“এই গুলো নিচে রেখে এসেছে আমার কাছে আসবি কথা আছে?

——————————-

স্বপ্ন আর নীল অনেক রাত পর্যন্ত হ্যালিপ্যাড ছিল।অনেক রাত হওয়া আজকে তার ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে যায়।কথা ছিল সবাই সকালে সে উঠাবে,কারণ সে খুব ভালো করে জানে তার বন্ধুদের এত তাড়াতাড়ি উঠার অভ্যাস নেই।তাই সে উঠাবে বলে দিয়েছে। কিন্তু সে নিজেই ঠিক সময় উঠতে পারেনি।তাই আজকে সকালে হ্যালিপ্যাডের সূর্যোদয় মিস করে ফেলে। সবাই হোটেল গিয়ে নাস্তা খেয়ে নেয়। তারা কমলর্ক ঝর্না যাওয়ার জন্য তেরী হচ্ছে।তাদের সাথে একজন গাইড আছে তার নাম বিকাশ। সাজেকের মেইন রাস্তার পাশে ডাল হয়ে নিচের দিকে একটা রাস্তা যায় সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়া শুরু হয় কমলক ঝর্ণা।সবার হাতে হাতে একটা একটা করে ৪ফুটের বাঁশ হাতে।

সাজেক এর রুইলুই পাড়া থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা ট্রেকিং করলেই কমলক ঝর্ণা পৌঁছে যেতে পারে।কমলক ঝর্ণা টি অনেকের কাছে কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা বা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিত।
প্রাচ্য আর রোদ কিছুক্ষন ট্রেকিং করে হাঁপিয়ে যায়। তাদের দাঁড়িয়ে যেতে দেখে স্বপ্ন বলে,
-“দাঁড়িয়ে গেছি কেন?
প্রাচ্য হাপাতে হাপাতে বলে,
-“আর হাঁটতে পাচ্ছি না,
ধূসর বিরক্ত হয়ে বলে,
-“তাহলে আসতে গেলি কেন??জানিস না এখানে আসলে ট্রেকিং করতে হয়।
-“আপু এখন একটু কষ্ট হবে,যখন ঝর্ণা দেখবে তখন এই কষ্ট মনে থাকবে না।”বললো নীল।
তৃণ ফোঁড়ন কেটে বলে,
-“কষ্ট করলে মিষ্টি খেতে পারবি।”
-“একটু জিরিয়ে যা,তাহলে আর ওদের কোনো সমস্যা হবে না।”
স্বপ্ন কথা মত সবাই এখানে কিছুক্ষন জিরিয়ে নেয়।স্বপ্ন নীলের দিকে তাকায়,এই মেয়ের মধ্যে নেই কোনো ক্লান্তি, নেই কোনো বিরক্তি। কি আনন্দের সাথে হাঁটছে, সত্যি মেয়ে অন্যরকম!
মাঝে মাঝে সবার মনে হচ্ছে ঠিক মত পথে চলছে!তারপর বিশাল এক ঝিরিপথ। আবার সবার মনে হচ্ছে আদৌ কি এই পথে কোনো ঝর্ণা আছে? এর পরে জাদি পাইর এর মতো একটা ট্রেইল বয়ে নিচে নামতে হবে।সামনে পড়বে হামহাম মত ঝিরিপথ। ঝিরিপথ টি ও সম্ভব সুন্দর, একটু কষ্ট হলেও সবার এডভেঞ্চারটি ভালো লেগেছে সবার।ঝিরিপথ আর বুনো রাস্তা দিয়ে৮০-৮৫ ডিগ্রী খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে আর উঠতে হবে অনেকখানি।এইভাবে আরো কিছুক্ষণ ট্রেক করা পর পৌঁছে যায় ঝর্ণার কাছে। ।

ঝরনার কাছে পৌছতে খুব বেশি সময় লাগলো না। নীল ছপছপ করে এগিয়ে গেলো ঝরনার দিকে। সবাই ওর স্টামিনা দেখে অবাক হয়ে যায়। যেখানে ট্রেকিং শেষে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সেখানে ও আনন্দে উল্লাস করে।
নীল ঝরনায় গিয়ে দ্রুত পানি ছিটিয়ে খেলা করতে লাগলো। পানিতে বসে পা দুটো মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিতে লাগলো। পাহাড় থেকে শো শো শব্দ হচ্ছে। ঠিক শো শো শব্দও বলা যায়না। কেমন যেন ঝিরঝির একটা শব্দ। ঝরনার অন্যরকম একটা শব্দ আছে। নীল চোখ বন্ধ করে ঝরনার জলে ভিজতে লাগলো। বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছে আর পানিতে নেমে বসে আছে। বরফ শীতল জলে পা কেটে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। এত ঠাণ্ডা কেন এই জল! অবশ্য বেশ আরাম ও লাগছে। ঝরনার মাঝে কেমন একটা ভালোবাসা মিশে থাকে যেন।

স্বপ্নর স্পর্শে চোখ খুললো মিশু। তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে আর কেউ নেই,শুধু স্বপ্ন বাকিরা সবাই অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছে। নীল অবাক হয়ে বললো, “হোয়াটস আপ?”
স্বপ্ন ওকে টেনে তুলে এনে ঝরনার নিচে দাড় করিয়ে দিলো। একসাথে খুব জোরে পানির ঢল মাথার উপর পড়ছে যেন। মাথার তালু ফেটে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু বেশ ভালো লাগছে। স্বপ্ন নীলকে চিবুক ধরে দুহাতে ওর মুখটা ধরলো। তারপর ঝরনার মাঝেই চোখ মেলে ওকে দেখার চেষ্টা করলো। নীলের গালে লেগে থাকা পানির বিন্দুগুলো দেখে আজকে স্বপ্নর হিংসে হচ্ছে। ইস! সেযদি জল হতো ঠিক এভাবেই ছুয়ে থাকত নীলের গালে,ঠোঁটে,চুল।

এত সুন্দর ঝরনা দেখে নীলের সত্যেন্দনাথ দত্ত ঝর্না কবিতা কথা বার বার মনে মনে পড়ছে।তার নিজের অজান্তে মুখ দিয়ে কবিতা বের হয়ে যায়,
ঝর্না!ঝর্না!সুন্দরী ঝর্ণা!
তরলিকা চন্দ্রিকা!চন্দন বর্ণা!
অঞ্চল সিঞ্চিত গৈরিকে স্বর্ণে,
গিরি -মুল্লিকা দোলের কুন্তলে কর্ণে,
তনু ভরি’যৌবন,তাপসী অপর্ণা,
ঝর্ণা!

পাষানের স্নেহধারা!তূষারের বিন্দু!
ডাকে তোরে চিত-লোল উতরোল সিন্ধু!
মেঘহীন জুঁইফুলী বৃষ্টির ও-অঙ্গ
চুমা-চুমকীর হারে চাঁদ ঘেরে রঙ্গে,
ধূলা-ভরা দ্যায় ধরা তোর লাগিয়ে ধর্ণা!
ঝর্ণা!

এস তূষার দেশে এস কলহাস্যে-
গিরি-দরি-দহিরিনী হরিনী লাস্যে,
ধুসরের ঊষরের কর তুমি অন্ত,
শ্যামলিয়া ওপরশে কর গো শ্রীমন্তী,
ভরা ঘট এস নিয়ে ভরসা ভর্ণায়
ঝর্ণা!

শৈলের পৈঠৈয় এস তনুগত্রী
পাহাড়ের বুক চেরা এস প্রেমীদাত্রী
পান্নার অঞ্জলি দিতে দিতে আয় আয় গো,
হরিচরণ -চ্যুতা গঙ্গায় প্রায় গো,,
স্বর্গের সুধা আনে মর্ত্যের সুপর্ণা,
ঝর্ণা!

মঞ্জুল -ও হাসির বেলোয়ারি আওয়াজ,
ওলো চঞ্জলা! তোর পথ হল চাওয়া যে,
মোতিয়া মোতির কুঁড়ি মূরছে ও-অলকে,
মেখলায়,মরি মরি রামধনুর ঝলকে,
তুমি স্বপ্নের সখী বিদ্যুৎ পর্ণা

ঝর্ণা!
-সত্যেন্দনাথ দত্ত

কতই না কাব্যিকভাবে ঝর্ণার ছবি এঁকেছেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। বাংলা সাহিত্যজুড়ে ঝর্ণার রূপ বর্ণনা বুঝি অন্য কোনো কবির কবিতায় এতটা জীবন্ত হয়ে ওঠেনি। বহুবিধ অলংকার, উপমায় ভূষিত করে ছন্দের জাদুকর পাহাড়ি ঝর্ণাকে উপস্থাপন করেছেন। ছন্দ তুলে ছুটে চলা ঝর্ণার রূপে কবি মুগ্ধ হয়েছেন। শুধু কবি নয়, এমন কোনো প্রকৃতিপ্রেমী নেই যার কণ্ঠ গুনগুন করে ওঠে না ঝর্ণার ছুটে চলা ছন্দ-সুরে। নেচে নেচে প্রবাহিত হওয়া পাহাড়ি ঝর্ণায় প্রকৃতিপ্রেমীরা যেন খুঁজে পান উচ্ছ¡াস, উল্লাস, মুগ্ধতা, যৌবন, অনুপ্রেরণা, বাধা-বিপত্তি জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র।

-“চমৎকার

ঝর্ণার সৌন্দর্য এতটাই বিভোর ছিল, সে যে কবিতা আবৃত্তি করছে বুঝতে পারেনি, স্বপ্নের চমৎকার বলায় তার ঘোর ভাঙে।স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে সে মৃদু হেসে আগে ন্যায়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।

#চলবে
#kawsar_sorna

স্বপ্নীল ১০

0

স্বপ্নীল
১০
নীল অনেক্ষন ধরে খেয়াল করছে মাউথ অর্গান সুর আসছে।সুর টা খুব মধুর।তার কাছে যেন মনে হচ্ছে এই সুর দিয়ে তার ভালোবাসার মানুষকে ডাকছে।এই সুরটা তাকে মাতাল করার জন্য যথেষ্ট । শোয়া থেকে উঠে বসে।তার জানতে হবে কে এত সুন্দর করে মাউথ অর্গান বাজাচ্ছে।ঠিক এখন তার মনে হচ্ছে এই সুরে মালিক দেখার উচিত।যে এত সুন্দর করে বাঁশি বাজাতে পারে।সে নিশ্চয় দেখতে অনেক সুন্দর হবে।সুর টা যে তাকে পাগল করে দিচ্ছিল।কিছুতে ঘুমেতে দিচ্ছিল না।সুর টা যেন টাকে টানছিল।আর এক মুহুর্ত দেরী না করে সে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কোন দিক থেকে সুর আসছে তা জানার জন্য। এ এগিয়ে যাচ্ছে সুরটা খুব কাছ থেকে শুনা যাচ্ছে। সে রিসোর্ট পিছনে অনেক গুলো সিঁড়ি রয়েছে।সেখানে চলে আসে। সেখানে অনেক গুলো বসার জায়গা ছিলো। কে বাজাচ্ছে মাউথ অর্গান তাকে খুজার জন্য সে এগিয়ে যায়।কিন্তু হঠাৎ করে সুরটা বন্ধ হয়ে যায়।তখনই তার মন খারাপ হয়ে যায়।আসে পাশে দেখতে থাকে।তখনই তার কাঁধে কারো হাঁতের স্পর্শ পায়।নীল কিছুটা ঘাপড়ে যায়।তার কেন যেন মনে হচ্ছে ভুত, পেত্নী তার কাঁধে হাত রেখেছে ঘাড় মটকিয়ে দেওয়ার জন্য।সে এই জন্য অন্ধকারে কোথায় বের হয় না।অন্ধকারে সে খুব ভয় পায়।চাঁদের আলো এই জায়গাটা যেন ঝিকমিক করছে। তাই সে এখানে এসেছে ভয় ডর উপেক্ষা করে।কিন্ত তার কাঁধে কে হাত রেখেছে।ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখার সাহস হচ্ছে না। ভয়ে সব কিছু হজম হয়ে যাচ্ছে।এই সাজেকে কি ভুতেরা বসবাস করে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
-“কে???
-“……….
কথা বলছে না দেখে তার ভিতরে ভয় আর ঢুকে যায়।এই শীতের রাতে তর তর করে ঘামছে সে।কেন যে বের হতে গেল।সাহস যুগিয়ে বলে
-“কে??
-“আমি
তার এই কন্ঠ খুব চেনা।এটা স্বপ্ন কন্ঠ তার চিনতে ভুল হলো না।তাই সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে স্বপ্ন দাঁড়িয়ে আছে।কিন্ত এখন তার হাত পা কাপছে। এখন ঘেমে চুপচুপ।তাকে এভাবে দেখে স্বপ্ন বলে উঠে,
-“এই শীতের মধ্যে ঘামছেন কেন??
নীলের মুখে দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। যদি এখানে স্বপ্ন না থেকে সত্যি সত্যি ভুত থাকত।তাহলে সে ভয়ে হার্টফেল করে ফেলত।
-“কি হলো কিছু বলছেন না কেন??
-“আ….আ..
-“কি?
নীল একনিশ্বাসে বলে ফেলে,
-“আমি মনে করেছি আমার কাঁধে কোনো ভুত তুত হাত রেখেছে।তাই আর কি??
নীলের কথা শুনে স্বপ্নে হেসে দেয়।নীল বুঝতে পাচ্ছে না সে হাসি কি বলেছে।যার জন্য ওই ছেলে হাসছে।তার এমনিতে এখন যেন হাত পা কাঁপছে।আর এই ছেলে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে।তার খুব রাগ হওয়ার কথা কিন্ত তার রাগ হচ্ছে না।বরং খুব ভালো লাগছে। এই ছেলের হাসি দেখতে।নীল হালকা ঘাড় কাত করিয়ে স্বপ্ন হাসি দেখছে।
স্বপ্ন হাসতে হাসতে বলে,
-“আপনি ভুতে ভয় পান??
নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
-“কেন ভুতে ভয় ফেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে।
স্বপ্ন এবারও মুখে হাসি বজায় রেখে বলে,
-“যে মেয়ে বিয়ের আসর থেকে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে আসতে পারে।সে মেয়ে নাকি ভুতে ভয় পায়।কি আশ্চর্য ব্যাপার।
-“বিয়ে থেকে পালানো সাথে ভুতের কি সম্পর্ক।
-“আমি দেখছি, আপনার ঘটেও বুদ্ধি নেই।রাতে অন্ধকারে যে মেয়ে পালিয়ে কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড আসতে পারে সে মেয়ে নাকি ভুতে ভয় পায়।বিশ্বাসের করতে পাচ্ছি না।আমি আপনাকে খুব সাহসী ভেবেছি।
-“হ্যাঁ আমি সাহসী মেয়ে।
-“সাহসী মেয়েরা বুঝি ভুতে ভয় পায়।
-“প্রথমত আমি অন্ধকারে খুব ভয় পাই ছোট থেকে।আর দ্বিতীয়ত,বিয়েরদিন রাতের অন্ধকার আমার বন্ধু আর ভাইয়া আমার সাথে ছিল।তারপর গাড়িতে করে এসেছি।তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।নির্জন জায়গা রাতে বেলা আমার খুব ভয় লাগে।আর এখানে আমি ভুত মনে করিছি কেন জানে।এখানে আমি ছাড়া কাউকে দেখিনি।হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে গেলাম।তাই সবার আগে ভুতের কথা মনে পড়ছিল এই মাঝরাতে।আমার দাদিবু বলতেন ভুত পেত্ন নাকি মাঝরাতে আসেন।তাই আর কি??

স্বপ্ন ছোট করে বলে,
-“ও”
তখনই নীলের মনে আসে সে মাউথ অর্গানের সুর শুনে এখানে এসেছিল।কিন্তু তাকে দেখতে পায়নি।
-“আপনি এত রাতে এখানে কেন??” বললো স্বপ্ন।
-“এখান থেকে আমি কাউকে মাউথ অর্গান বাজাতে শুনেছি।সেই সুর কোথায় থেকে আসছে তার সন্ধান করতে করতে এখানে এসেছিলাম। কিন্ত এখানে এসে দেখি সুর হাওয়ায় মিলে গেলো।কাউকে দেখছে পাচ্ছি না, আপনি কি কাউকে মাউথ অর্গান বাজাতে দেখেছেন?”
নীল স্বপ্নে জিজ্ঞেস করে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।সে এখানে ছিল।হয়তো তার আগে এসেছিল এখানে।তার আগ পর্যন্ত এখানে সুরটা বাজছিল।আগে এসে থাকলে হয়ত শুনে থাকবে।সেই আশায় প্রশ্ন করে বসে।তার যেই সুরওয়ালা মানুষ টাকে চাই।
তার সুরে টানে যে ঘর ছেড়ে তাকে আসতে হয়েছে। সেই মানুষ তাকে একটা নজর যে তাকে দেখতে হবেই।তার সুরে প্রেমে যে পড়ে গেছে।তার অনেক দিনের ইচ্ছা তার স্বপ্নের রাজপুত্র তার রাজপ্রাসাদে বাগানে বসে বাঁশি বাজাবে।আর সেই বাঁশির সুর শুনে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে একধ্যানে তাকিয়ে তার পাগল করা বাঁশির সুর শুনবে।কিন্তু এখানে বাঁশি নাই হোক মাউথ অর্গানের এত পাগল করা সুর তাকে যেন পাগল করে দিচ্ছে।
স্বপ্ন তা কথার আন্সার না দিয়ে উল্টা প্রশ্ন করে বসে।
-“আপনি সে মানুষটা কেন খুজচ্ছেন।??
-“আজব তো।কেন খুচ্ছি মানে?যে এত সুন্দর করে মাউথ অর্গান বাজাতে পারে।তাকে খুজবো নাতো কাকে খুজব।
-“আপনার কি মাউথ অর্গানের সুরটা ভালো লেগেছে।
নীল খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
-“ভালো লেগেছে মানে।আমি তারে এখন পাইলে বিয়ে করে ফেলতাম।
-“আপনি কি কিছু বলেছেন?
তার এক্ষুনি মনে পড়ে সে খুশিতে লাফিয়ে এই ছেলে সামনে তার সুরওয়ালা ক্রাশ কে বিয়ে করা কথা বলে ফেলেছে।তারপর স্বপ্নে কে বলে
-“না কিছু বলি নাই”
-“ও”
নীল আলত পায়ে হেঁটে যায় দুই কদম।উদাসীন মনে বিড়বিড় করে বলে,
-“ইশ……কি সুন্দর করে না বাজাচ্ছিল। তার পিছন ফিরে স্বপ্নে দেখে তাকে বলে,
-“আপনি আমার উত্তর দিলেন না কিন্তু..
-“কিসের উত্তর?
-“এখানে আপনি কাউকে দেখেছেন মাউথ অর্গান বাজাতে।
স্বপ্ন কাটকাট কথা বলে,
-“না।
-“কেন আপনি দেখেননি? আপনি তো আমার আগে এসেছিলেন।”হতাশ হয়ে বলে নীল।
-“আমি তোমাকে এত রাতে এখানে আসতে দেখে এসেছি।
-“তার মানে আপনি আমার পরে এসেছেন?
-“হুম।
-“এই জন্য দেখেনি। কেন যে আমি আরো আগে আসলাম না।না হলে তো তার সাথে স্বাক্ষাত হয়ে যেত।এটা বলে নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যেতে নীলে।স্বপ্নে পিছু ঢেকে বলে,
-“শুনন
-“জ্বী বলুন
-“যাবেন আমার সাথে?
-“কোথায়।
-“যেয়ে দেখে নিবেন।

স্বপ্ন তাকে হ্যালিপ্যাডে নিয়ে এসেছে।সে চারপাশ তাকিয়ে নিজের মনে মনে জায়গাটার সৌন্দর্য বর্ণনা দিতে থাকে।আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের চূড়ো দাঁড়িয়ে চেনা রাত কে অচেনা মনে হচ্ছে।পাহাড়ের রহসো ডানা মেলতে হিম হাওয়া রাতে,হাজার ফুটের পাহাড় পেরিয়ে রাতের দিগন্ত পূর্নিমার শীতল আলো।জোৎস্নার আলো ঢেকে আছে পুরো প্রকৃতির অরণ্য। গভীর অরন্য যেন ঢেকে রেখেছে পুরো উপত্যকা। রাতের আকাশে মেঘ উড়ে যাচ্ছে থেমে থেমে,যেন মেঘ গ্রাস করে নিচ্ছে চন্দ্রের মায়াবী আলো।।নিঃশব্দের মত জেগে আছে পুরো অরণ্য প্রকৃতি। পাহাড়ের নির্জনতায় কেবলই জেগে থাকা পাখিরা,রাতের অদূর থেকে ভেসে আসছে অচেনা পাখির ডাক।রাত জাগা পূর্নিমার রাতের পাখির ছন্দ যেন অরণ্যের চেনা রুপ।হ্যালিপ্যাডে চূড়োয় বসে এমন রাত পাওয়ায় সত্যি বিমুগ্ধ করে।পাড়া বসবাসরত লুসাই আর ত্রিপুরা বসতি গুলো তখন ঘুমের রাজ্য,গভীর রাত যেন পূর্নিমার আলো গাঢ় পাহাড়ের গ্রাম-অরণ্য-প্রকৃতি।ধবধবে পূর্নিমার আলো আলোকিত পুরো উপত্যকা। ধীরে ধীরে মেঘ জমছে সাজেক উপত্যকার ভাজে ভাজে,মেঘের সাদা রঙ ঢেকে যাচ্ছে সবুজ বনানী।পূর্নিমার রাতে মেঘ যেন বৃত্তের মত চারপাশ ঘিরে রাখছে হ্যালিপ্যাড।

-“কেমন লাগছে?
-“কি বলব বুঝতে পাচ্ছি না,আপনি আমায় এখানে না নিয়ে আসলে এত সুন্দর চাঁদের আলোর প্রকৃতি ভিউ দেখাটা মিস করে ফেলতাম। আমার যে কি ভালো লাগছে ,,,,,
-“সমতল ভুমি থেকে সাজেকের হ্যালিপ্যাড থেকে চাঁদ অনেক স্পর্শ দেখা যায় আর,,,
স্বপ্ন মুখে কথা কেঁড়ে নিয়ে নীল বলে,
-“আর অনেক বড় দেখা যায়।
স্বপ্ন আর কিছু না বলেই সেখানে শুয়ে পড়ে মাথার নিচের দিকে এক হাত দিয়ে,এই চাঁদনী রাতে তার আকাশের চাঁদ দেখে লাভ নেই,,তার সামনে যে মস্তবড় একটা চাঁদ বসে আছে,তার সৌন্দর্য সে আটকে পড়েছে,কি করে আজকে এই চাঁদকে বাদ দিয়ে আকাশের চাঁদকে দেখবে।নীল তাকিয়ে দেখে স্বপ্ন শুয়ে আছে,তার ইচ্ছা করছে এভাবে শুয়ে আকাশের তারা গুনতে,তাই সে শুয়ে পড়ে স্বপ্নে পাশে, এই মেয়ের এহেম কান্ড স্বপ্ন অবাক হয়, সে নীলকে তার পাশে শুতে দেখে আরেকটু সরে যেয়ে দুরুত্ব বজায় রাখে। নীলের কোনো দিকে খেয়াল ও নেই সে তো চাঁদ, তারা দেখতেই ব্যস্ত।তারপর বল উঠে,

-“আপনার গানটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
স্বপ্নর এই কথা বদলে কি বলা উচিত সে বুঝতে পাচ্ছে না।
-“গান ভালো লাগে
-“গানের চেয়ে ও আমার মাউথ অর্গান, পিওনোর সুর ভালো লাগে।এক কথা আমার মিঊজিক ভালো লাগে”।
এটা বলে নিজের ভাবনার অতল সাগরে ডুব দেয় সে।তার এখন মনে হচ্ছে সেই সুরওয়ালাকে যদি খুজে পেত,তাকে দরকার হলে ধরে নিয়ে আসত এখানে।এই চাঁদনী রাতে এরকম একটা রোমান্টিক পরিবেশে তার ওই সুরওয়ালা মাউথ অর্গান বাজাতো। আর সে এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে তার সুর শুন ত।কিন্তু সে খুজে পায়নি, আর পাবে কি না সেতো জানে না।ওই সুরওয়ালা কি আর বাজাবে ওইখানে বসে মাউথ অর্গান।তার দেখা কি পাবে সে।এটা ভেবেই তার মন খারাপ হয়।কিন্তু সে এখন মন খারাপ করে এত সুন্দর মুহুর্ত নষ্ট করবে না।

নীলের অনুরোধে স্বপ্ন আরেকটা গান গাইল।দুজন হ্যালিপ্যাডে শুয়ে আকাশ দেখতে লাগল।মাথার উপরে রাশি রাশি নক্ষত্র। তারাগুলো দেখে মনে হচ্ছে সব গুলো মাথার উপর দিয়ে ঝুলে আছে,মনে হয় একটা ঢিল ছুড়লেই টুপ করে গায়ে উপরে পড়বে।এত কাছ থেকে,চাঁদ নক্ষত্র, কখনো দেখেনি নীল।ওর এত পরিনাম সুখ সুখ লাগছে!মাঝে মাঝে মেঘ গায়ের উপর দিয়ে উড়ে এসে চলে যায়।এত সুন্দর কেন সবকিছু!

#চলবে
#কাউছার স্বর্ণা
(প্লিজ গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।তাহলে আমি বুঝতে পারবে কেমন লাগছে এই গল্প টা আপনাদের)

স্বপ্নীল ০৯

0

স্বপ্নীল
০৯

কি করেছি আমি।যার জন্য আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিবে।আমি তো শুধু আমার বোনের আবদার রেখেছি।আমার বোন একটা আবদার করেছে। আমি ভাই হয়ে সেটা কি করে না করি।ওকে পালাতে যেমন আমি সাহায্য করেছি তার জন্য দাদু আমায় সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছে।অন্যায় শাস্তি দিয়েছে।তাহলে কেন মা তুমি আমার খাওয়া বন্ধ করে দিলে।আমি আর না খেয়ে থাকতে পারতেছি না।আমার পেটের ভিতরের ইঁদুর লাফালাফি করছে।সারাদিন না খেয়ে আছি।আর থাকতে পারবো না।
তামিম এসব বলে পা টিপে টিপে নিজের রুমের বাহিরে আসে।উপর থেকে নিচে তাকিয়ে দেখে সবাই ডাইনিং বসে খাচ্ছে।সবার খাওয়া দেখে তামিমের খিদে যেন আরো বেড়ে গেলো।সবাই খাচ্ছে অথচ তাকে কেউ এবার ও ডাকে নি।সে বুঝে গেছে তার মানে আজকে কপালে খাবার জুটবে না। নিজের পেটে হাত দিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার ঘরের ঢুকে যায়।

খাটের উপরে শুয়ে মোবাইল ঘাটাঘাটি করছিল তখনই সমুদ্র ফোন করে। ফোন রিসিভ করে।সে কথা বলার আগে সমুদ্র বলে উঠে,
-“কিরে মামা, তোকে নাকি আজ সারাদিন খেতে দেয়নি।
তামিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“তুই আমায় কাটা গায়ে নুনের ছিঁটা দিচ্ছিস মামা,
-“আমি
-“হ্যা তুই,সারাদিন না খেয়ে আছি। কোথায় বাড়ি সবাইকে বলে মেনেজ করবি আমায় যেন খেতে দেয়।তা না করে আমায় জিজ্ঞেস করছি।’আমায় নাকি সারা দিন খেতে দেয়নি’ এটা কি কাটা গায়ে নুনের ছিঁটা না।”
-“হ, মা বুঝচ্ছি।এখন কি খিদে বেশি লাগছে।
-“কালকে রাত ধরে খাওয়া বন্ধ।
-“একটা কাজ কর আমি তোকে মেসেঞ্জারে কিছু খাবারের পিক পাঠাচ্ছি।ওই গুলো মন ভরে দেখে নিবি।তাহলে পেট ভরে যাবে।
-“মজা নাও,, ভালো।আমার সময় আসবে।
-“একটা কাজ কর হোটেলে থেকে খাবার অর্ডার কর।হোম ডেলিভারি করে দিয়ে যাবে।
-“এটা তোদের ঢাকা শহর নয়, যে রাত বিরতে খাবার অর্ডার করলে ডেলিভারি করে দিয়ে যাবে।এটা হলো মির্জাপুরের মির্জা বাড়ি।
-“হো,আমি ভুলে গেলাম।এখন কি করবি।
-“কিছু একটা ব্যবস্থা করে নিব।
___________________
-“দেখ তোরা কি কুত্তা মাইরি।আমার হাতের একটা অংশ কামড়িয়ে নিয়ে গেলো।মনে হয় জীবনে গোশত চোখে দেখেনি।”তৃণ তার বন্ধুদের হাত দেখিয়ে বলে।
-“নারে, আমি বাপের জনমে গোশত খাইনি।তাই আজকে তোকে কামড়িয়ে গোশত খাওয়ার স্বাদ মিটাইছিলাম।হেব্বি টেস্টিং ছিলো।”প্রাচ্য বলে
-“কুত্তা কোথাকার। আমার হাতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
-“বেশ করেছি।
-“এখন নো ঝগড়া।এখন হবে গানের আড্ডা। “ধূসর গিটার নিয়ে আসতে আসতে বলে।
প্রাচ্য তৃণ কে ভেংচি কেটে।ধূসর কে বলে,
-” গানের আড্ডা বেশ জমবে, বসে পড় তাড়াতাড়ি।
রোদ বলে উঠে,
-“গান গাইবে কে?
-“কে আর গাইবে। বরাবর যে গান গায়।
নীল উদ্বিগ্ন গলায় বলে,
-“আপু গান গাইবে কে?
-“স্বপ্ন
নীল স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“উনি কি গান গাইতে পারে।
-“গাইতে পারে মানে পুরো পাটিয়ে দেয়”রোদ বলে
ধূসর গিটারে টং টাং আওয়াজ তোলে।স্বপ্ন নীলের দিকে তাকিয়ে গান গায়,

“কথা হবে দেখা হবে প্রেমে প্রেমে মেলা হবে।
কাছে আসা আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে।
ভালোবাসা বাসি আর হবে না।

নীল স্বপ্নের গান শুনে মুচকি হাসে, । ধূসর ইশারা তৃণ দেখায়।স্বপ্নের দিকে যেন তাকায়।স্বপ্ন এখন নীলের চোখে দিকে তাকিয়ে আছে।নীলের চোখের মোহ আটকে গেছে।এই মোহ যে ছাড়বার নয়। জনম জনম যে এই চোখে দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে চায়।নীল বেহায়ার মত স্বপ্নের চোখে দৃষ্টি নিজের দৃষ্টি মিল্লাচ্ছে। এই যেন চোখের শুভ দৃষ্টি হচ্ছে দুজনের। উপস্থিত সবাই তাদের দৃষ্টি বিনিময় দেখছে।ধূসর ফ্যাস ফ্যাস গলায় তৃণ কে বলে,
-“কি বুঝলি!
-“যা বুঝার বুঝে গেছি।
রোদ বলে উঠে,
-“আমি ও বুঝে গেছি।
দুজনে ভ্রু কুচকে রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুই আবার কি বুঝলি!
-“স্বপ্নে যে প্রেমে পড়েছে।
– তৃণ খ্যাঁক খ্যাঁক করে কাশি দেয়।তাদের দুজনকে সবার উপস্থিত বুঝানোর জন্য।দুজনের কাশির শব্দ ঘোর কাটে।বন্ধুদের এহেম কান্ড স্বপ্ন কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়।নিজের মাথার চুল হাঁতড়া হাঁতড়া তাদের দিকে তাকায়।
প্রাচ্য বলে,
-“শুভ দৃষ্টি বিনিময় শেষ হলে, দয়া করে গান গাওয়া শুরু করনে।
স্বপ্ন মুচকি হেসে আবার গান গায়।

“শতরাত জাগা হবে থালে ভাত জমা রবে,
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না,
হুট করে নিয়ে এসে লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে জানো না,
তখন প্রাচ্য কথা শুনে নীল খুব লজ্জা পেয়ে নিচে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।যে অনেক বার পালিয়ে ছিল। অনেক জায়গা একা একা ঘুরে বেরিয়ে ছিল। অনেক সুন্দর সুন্দর ছেলেদের সাথে মিশে ছিল।তাদের প্রতি কোনো ফিলিং ছিল না কিন্তু এবার কেন স্বপ্ন নামের ছেলেটা প্রতি অন্যরকম ফিলিং হচ্ছে।বার বার না চাইতে এই ছেলের সাথে তার দৃষ্টিবিনিময় হচ্ছে।

“আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না।
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না”

গান গাওয়া শেষ প্রাচ্য বলে উঠে,
-“প্রতিবারে মত এবার ওপাটিয়ে দিয়েছিস।কিন্তু এবার যেন একটু ভালোবাসা, আবেশ সংমিশ্রণ দিয়ে গানটা গাইলি।এর পিছনে কি বিশেষ কোনো ব্যাপার আছে না কি।
তৃণ বলে,
-“হয়তো আছে।
স্বপ্নে তার বন্ধুদের কথা শুনে নীলের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা এখন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।নীল তাকাতে আবার দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।মুহুর্ত মধ্যে নীল চোখ নামিয়ে ফেলে।

-“এবার গান খাইবো আমি।এই গানটা আমি তৃণকে ডেডিকেটেড করে খাইবো।”
প্রাচ্য একথা শুনে সবাই ভ্রু কুচকে তাঁকায় তার দিকে।ধূসর বলে উঠে,
-“আমাদের সবাইকে ছেড়ে হঠাৎ তৃণকে ডেডিকেটেড করে গান গাইবি।ঘটনা কি??
ত্ৃন দিকে তাকিয়ে বলে
-“ঘটনা কিছু না,,,রোদ গানের সাথে তাল মিলাবি কিন্ত…

“আল্লাহ দিছি তোরে সাড়ে ষোলো আনা,
সোনার বাংলার তোর চেয়ে কে আছে সেয়ানা,,,
তুই এমন একটা পোলা,
তোর আশি টাকা তোলা,
তুই দিলি আমায় দিলে দোলা।
তুই সাড়ে ষোলো আনা পোলায়া,,য়া

এটুকু গেয়েই ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমি হাসি রেখে তৃণ দিকে তাকিয়ে চোখ মারে। তৃণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এবার সে বুঝেছে কেন তাকে ডেডিকেট করে প্রাচ্য গান গাইছে।তার ইজ্জতের ফালুদা উঠাতে।

বোনের এমন গান শুনে নীল হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে।তার হাসির মুক্ত কুড়াচ্ছে অন্যকেউ সে বুঝতে পাচ্ছে না। গানের দ্বিতীয় কলি সে গায়,

” তোর সুইট সুইট হাসি,
আমি বড় ভালোবাসি।
তুই মিষ্টি করে ডাকলে কাছে,বৃষ্টি হয়ে আসি।

নীল হেসে হেসে গানের এই তিন লাইন গায়।তার খুব হাসি পাচ্ছে।হাসি জন্য তার মুখে দিয়ে গানের লাইন বের হচ্ছিল না।তারপর হেসে হেসে একটু বেসুরেলা ভাবে গায়।তার পর ও স্বপ্ন কাছে যেন মনে হচ্ছে, কি সুন্দর ভাবে মুক্তা ঝড়া হাসি দিয়ে গানটা গাইল।এখন মেয়ে টার মুখে হাসি লেগে আছে।এই মেয়েটার এত হাসে কেন??এতো হাসে যে তার বিরক্তি লাগে না, তাই হোক না কেন? মেয়েটার হাসি প্রেমে পড়ার মত।

“তুই সাড়ে ষোলো আনা,
তোর নেই যে তুলনা,
সোনার বাংলা তোর চেয়ে কে আছে সেয়ানা।”
রোদের গাওয়া শেষ হলেই হাসির রোল যেন পড়ছে।সবাই হেসেই যাচ্ছে।ধূসর হেসে হেসে বলে,
-“হায়রে তৃণ , প্রাচ্য কিভাবে তোকে গানের মধ্যে পিঞ্চ মেরেছে দেখেছিস?লাস্ট পর্যন্ত গানের মধ্যে ছাড়ল ও না এরা তোকে।”
-“হিংসে হচ্ছে তো তাই,

হিংসে হবে। একশোবার হিংসে হবে।মেয়েদের সাথে তুই ঘেঁষাঘেঁষি করিস আমার রাগ হয়।ইচ্ছা করে তোকে ঠাঁটিয়ে চড় মারি।আমি তোকে ভালোবেসেছিলাম।আমি তোকে নিজে গিয়ে আমার ভালোবাসার কথা জানিয়েছি।আর তুই,,, তুই আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করেছিস।এখন কেন তোর এই টিনা, মিনা রিনা দের সাথে এতো ঘেঁষাঘেঁষি করিস।নিজেকে খুব হ্যান্ডসাম ভাবিস তাই না।আমি এবার ঢাকা গিয়ে তোকে দেখিয়ে দিব।আমি চাইলে হাজার টা প্রেম করতে পারি।হু
প্রাচ্য অধরে হাসি রেখা টেনে বলে,
-“আমি কেন তোকে হিংস করতে যাবো। বয়ে গেছে আমার
তৃণ আর কিছু না বলে ধূসর কে বলে
-” রেডি তো
ধূসর ঘাড় কাত করে হ্যাঁ জানায়।

আখ ক্ষেতে ছাগল বন্ধী,জলবন্দী মাছ

তৃণ গান শুনে সবার মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়।ধূসর তাদেরকে ধমকিয়ে বলে,
-“হাসলে গান গাইবে কি করে তৃণ।
সবাই চুপ হয়ে যায়।কিন্তু মুচকি মুচকি হাসছে নীল।

নারী কাছে পুরুষবন্ধী ঘোরায় বারোমাস।
সখি গো……আমার মন ভালো নেই।
কালার সাথে পিরিত কইরা,
সুখ পাইলাম না,
এই লাইনটা তৃণ গাওয়া হলে তার সাথে গলা মিলিয়ে স্বপ্ন আর ধূসর গায়।
যে নারী গোসল করে চুলে দিলো ঝাঁড়া,
এক জামাই থাকতে তাহার,
হাজার জামাই খাড়া,
সখি গো,,,,আমার মন ভালো নেই।
কালার সাথে পিরিত কইরা সুখ পাইলাম না।

একজাতির নারীর আছে লম্বা কালোচুল
সে নারী বছরাবছর ঘরের ফুটায় ফুল।

এই কলি গাওয়ার পর তৃণ প্রাচ্য দিকে তাকিয়ে চোখ মারে।প্রাচ্য লজ্জা যেন মাটির সাথে মিশে যেত ইচ্ছা করছে। সে খুব ভালো করে বুঝতে পাচ্ছে। এইরকম একটা গান গাওয়ার মানে কি?? তার এখন ইচ্ছা করছে তৃণ নাক বরাবর ঘুষি মারতে। কি বাজে গান গাইছে। তার জন্য গানের অভাব পড়ছে। গানের কি ছি রি।কিছু না বলে তার গান হজম করে নিচ্ছে সে।

সখী গো আমার মন ভালা না,,,,,,,

-“থাম!থাম!আর গাওয়া দরকার নাই।অনেক গেয়েছিস।” বললো রোদ।
-“কেন কি হয়েছে?
-“সখি গো আমার মনে ভালা না…কি হয়েছে তৃণ।টিনা মিনা কি ব্রেকআপ করে দিয়েছে নাকি??তাই দুঃখে কাতর হয়ে এই সব গান গেয়ে কষ্ট কমাচ্ছিস।

চলবে
# Kawsar_Sorna

স্বপ্নীল ০৮

0

স্বপ্নীল
০৮

এক দিকে সূর্য অস্ত আর অন্যদিকে পূর্নিমার চাঁদের আগমন। রক্ত লাল সূর্য ডুবে গেলো আর অপূর্ব সন্ধ্যা নিয়ে সাজেকের এল পূর্নিমার চাঁদ।সাজেকের এই সন্ধ্যাটাকে মনোরঞ্জন করা জন্য তারা ব্যবস্থা করেছে।
ফানুশ উড়ানো, ক্যাম্প ফায়ার, বার বি কিউ পার্টি, আয়োজন করছে ।আজকে রাতে এগুলো করে কাটাবে তারা।
এই রাত কে আরো স্মৃতিময় করে রাখতে তারা সবাই মিলে ফানুশ সাথে মনে সুপ্ত ইচ্ছাটি ও উড়িয়ে দেয়।বিশাল আকাশের ক্যানভাসে নানান রঙের রঙ তুলিতে আঁকা পাহাড়ের রুপ আর মধ্যরাতে সাজেকের আকাশে উড়ে যাওয়া ছোট বড় আলোরর সাথে নীলের মন ঊড়াল দিয়েছে।

স্বপ্ন, তৃণ, আর ধূসর মিলে ক্যাম্প ফায়ারে তৈরী করছে।আজ এই পূর্নিমার রাতে সবাই মিলে আড্ডা দিবে।সারারাত হেলিপ্যাডে কাটাবে। ছেলেরা কিছু কাঠেরর ব্যবস্থা করে, কাঠের টুকরা গুলোকে জড় করে তাদের মাথা আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে সবার মাঝ খানে রাখে।এই শীতের কনকনে ঠান্ডা, পাহাড়, অরণ্য মধ্যে ক্যাম্প ফায়ারের মজাই আলাদা। চাঁদের আলোই চিকমিক করছে। স্বপ্নের পাশে নীল বসেছে তার পাশে প্রাচ্য, এভাবে সবাই গোল হয়ে বসেছে।

সবাই মিলে হাসি ঠাট্টা করছে।তাদের পাশ থেকে নীল উঠে যায় তা দেখে প্রাচ্য বলে,
-“কদম কোথায় যাচ্ছিস তুই।
বার বার সবাই তাকে কদম বলে, এতোবার মানা করার শর্ত। সে বুঝতে পারে না এই নামের মধ্যে কি আছে, এত মানা করার পরে সবাই কেন এই নামে ডাকবে।তার কতো সুন্দর নাম নিলাদ্রী নীল,এই কদম ফুল,,,, আর কিছু না ভেবে মেজাজ গরম করে বলে,
-“আর কখন যদি তুমি আমায় এই কদম ফুল বলে ডেকেছো তাহলে তোমার খবর আছে,এই আমি বলে দিলাম!”
এটা বলে সে দোলনা বসে পড়ে,
প্রাচ্যকে উদ্দেশ্য করে রোদ বলে,
-“তোর এই বোনের কদম নাম নিয়ে তো এলার্জি কেন???”
-” এই নামের পিছনে ইতিহাস আছে তাই।”
ধূসর বলে,
-“প্রাচ্য আমার একটা জিনিস মাথায় আসছে না।তোর এই বোন বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে, তোর চাচাতো ভাই সাহায্য করেছে বোনকে পালাতে।তাও আবার একবার নয় এই নিয়ে ৩৬ বার। তোর কথা অনুযায় তখন বুঝলাম সে বাসায় ফিরে গেলে তোর ফ্যামিলি কেন তাকে কিছু না বলে তার ফিরে আসাতে আনন্দে আটখানা হয়।
-“বড়সর একটা ব্যাপার স্যাপার আছে তাই।
-“তো শুনি সে কি বড়সর ব্যাপার সেপার”
-“এই তার কদম ফুল নাম শুনলে এলার্জি মতো তার গা ছুলকায়।এই তুই মাত্র বললি না, ফ্যামিলির কেউ কিছু বলে না কেন?। এসব পিছনে ইতিহাস আছে”

প্রাচ্য কথা প্যাঁচাচ্ছে দেখে তৃণ বিরক্তি বোধ করে,দুইহাত জড় করে প্রাচ্যকে বলে,
-“কথা না প্যঁচিয়ে দয়া করে ওদের সবাইকে ইতিহাস শুনা।না হলে ওদের কারো ঘুম আসবে না আজকে। বিশেষ করে রোদ আর ধূসরের
ধূসরে এবার বলে,
-“আমার ঘুম আসবে না, নাকি অন্য কারো সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে।
তার সে প্রাচ্য বলে,
-“বলে ফেল তোদের ফ্যামিলি ইতিহাস”
প্রাচ্য একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“আমাদের বংশে ছেলের সংখ্যা বেশি। বড় আব্বুর তিন ছেলে, আমার দুই জন ভাই, জন্ম হওয়ার পর। যখন দাদুর বংশে কোনো মেয়ে জন্ম হয়না। দাদি অনেক ওঝা কবিরাজের কাছে তাদের তিনবঊমাকে নিয়ে যায় অনেক ঝাড় ফু দেয়।তার পর জন্ম নেয় সমুদ্র ভাইয়া আর তামিম ভাইয়া।তাদের জন্ম পর দাদু দাদি নিরাশ এবারও তারা নাতনির মুখ দেখতে পায়নি। তারপর আমার জন্ম হয়। আমায় পেয়ে তারা হাতের চাঁদ পেয়েছে। কিন্তু আব্বু, দাদুর ঢাকার ব্যবসা গুলো দেখভাল করত।বড় ভাইয়া ভার্সিটি পড়ত ঢাকা। তাই মা আমায় নিয়ে ঢাকা চলে আসে।মাঝে মাঝে সবাই আমায় দেখে যেত।।তাদের আদর স্নেহ আমি কম পেয়েছি । আমাদের বাড়ির সামনে অনেক পুরানো একটা কদম গাছ আছে। বর্ষাকাল আসলে সেই গাছে অনেক কদম ফুল ফুটে। কদম গাছটায় যখন ফুলে ফুলে ফুটে উঠত অনেক সুন্দর লাগত।এক কথা বলা যায় বর্ষাকাল আসলে কদম গাছটার কারণে মির্জা বাড়ির সৌন্দর্য বেড়ে যেত।দাদি অনেক প্রিয়া ছিল সেই গাছটা।মাঝে মাঝে দাদি বারান্দা দাঁড়িয়ে কদম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করত।এরকম একদিন বর্ষাকাল নীলের জন্ম হয়।সেদিন যেন গাছটা দ্বিগুণ কদম ফুল ফুটেছে।দাদির প্রিয় গাছে এই দ্বিগুন ফুল ফুটেছে বলে সেই ফুলের নাম অনুযায় তার নাতনির নাম রাখে কদম ফুল।দাদু রাখে নীল নামটা।নীলের জন্ম দিন মুষলধারে বৃষ্টি ছিলো। বিকালে দিকে বৃষ্টি কমে গিয়ে আকাশের সাঁত রং ধনু উঠেছিল।দাদুর আবার রং্ধনু প্রিয়।তার রং্ধনু সবচেয়ে প্রিয় রং ছিল নীল।তাই তিনি ঠিক করেন তার নাতনির নাম নীল রাখবে। দাদু আর দাদির মধ্যে অনেক ঝগড়া হয় নাম নিয়ে।দাদু বলে নীল নাম রাখার জন্য,দাদি বলে কদম ফুল।এই নিয়ে অনেক ঝগড়া হয়। তারপর শেষ ঠিক হয় নীলের দুইটার নাম রাখা হবে। ফ্যামিলি অর্ধেক মানুষ দাদুর রাখা নামে নীল কে ডাকবে।আর অর্ধেক মানুষ দাদির রাখা নামে ডাকবে।সেই হিসাবে কেউ নীলকে কদম বলে আর কেউ নীল বলে
।দাদি মারা যাওয়ার পর দাদু দাদির রাখা নামেই নীলকে এখন ডাকে।কিন্তু নীলের এই কদম ফুল নাম ভালো লাগে না।তারা বন্ধুবান্ধব সবাই কে বলত তার নাম কদম সবাই তারএই কদম নাম নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত।তাই সবাইকে মানা করে যাতে কেউ তাকে কদম ফুল নামে না ডাকে।
কথা বলে প্রাচ্য তার বন্ধুদের দিকে তাকায়।বন্ধুদেরকে এভাবে তাকাতে দেখে বলে
-“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন???
তৃণ বলে,
-“ভাবছি
-“কি”
-“কি আর ভাববো। তোর বইন যে একটা ইতিহাস। সেটাই ভাবছিস।একটা নামের পিছনে এতো লম্বা ইতিহাস হয় আমার জানা ছিলো না।
তৃণ কথা শুনে মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায় তার।কিছু বলতে নিলি তার মাঝে স্বপ্ন বলে উঠে,
-” আমার একটা হিসাব কিছুতে মিলছে না।
-“কি হিসাব।
-“তোর কথা অনুযায় তো।তোর দাদুর বংশে প্রথম নাতনি তুই।আমার অভিজ্ঞাত যত টুকু বলছে,যাদের অনেক গুলো ছেলে সন্তান হওয়ার পর তাদের বংশের প্রথম মেয়ে সন্তান হলে তাদের অনেক আদরের থাকে সেই সন্তানটা। তাই সবাই সবার প্রিয় নামে সেই মেয়ের নাম রাখে।কিন্ত তুই তোদের বংশের প্রথম মেয়ে সন্তান হয়ে তোর নাম রাখা উচিত ছিলো নীলের নামের মত করে। তোর ক্ষেতে সেটা হয়নি কিন্ত নীলের ক্ষেতে কেন হয়েছে।সেই হিসাব এখনও বুঝলাম না।”

-“আমি তোদের কে বলছি, ছোট থাকতে আমি ঢাকা চলে আসি।দাদু, দাদির নাম রাখার সময় ফেলে কই।

তৃণ বলে,
-“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।বংশের প্রথম মেয়ে যদি তুই হোস! তাহলে তারা তোকে আদর করে কোনো না কোনো নামে নিশ্চয় ডাকে।কিন্তু তুই আমাদের এখন বলতে চাস না।
-“আমি সত্যি বলছি।
-“আপু মিথ্যে বলছে। নীল বলে উঠে।সে আগের জায়গা বসতে বসতে বলে।
-“আপু মিথ্যে বলছে,,আপু আরেকটা নাম আছে সেটা দাদু দাদি রেখেছিলে।
-“দেখলি তো, তোরা।আমি ঠিক বলিছি প্রাচ্য আরেকটা নাম আছে তার দাদু দাদির দেওয়া।নীল বলে ফেলে তো প্রাচ্য নাম টা। নিশ্চয় খুব ইউনিক হবে”।তৃণ বলে।

-“হুম ইউনিক তো বটেই।”এটা বলে প্রাচ্য দিকে তাকায় নীল।প্রাচ্য চোখে ইশারা দিয়ে মানা করে যেন তার নাম না বলে। নীল তার ইশারা উপেক্ষা করে বলে
-“তুমি যখন আমার নামের ইতিহাস তোমার ফ্রেন্ড কে বলে দিয়েছো।তাহলে তাদের ও তো জানা উচিত।প্রাচীয়া প্রাচ্য আরেক নাম যে শিউলিফুল।”

-“কি নাম বললে” তৃণ বলে।
-“শিউলি ফুল।
এই কথা শুনে রোদ, তৃণ , ধূসর হাসতে থাকে। স্বপ্ন তার বন্ধুদের হাসি দেখে মুচকি হাসে।তার এই মুচকি হাসা মুগ্ধ ভাবে পরোখ করছে নীল।নিজের গালে হাত দিয়ে বলে,
ইশ,,উনি হাসলে উনার গালে খাদ হয়ে যায়।কি সুন্দর টোল পড়ে। উনার টোল পড়ার গালের হাসি দেখে যে কেউ ফিদা হয়ে যাবে।
তৃণ হাসতে হাসতে সুরেলা গলায় বলে,
-” শি….উ লি ফু— ল।দারুণ নাম।প্রাচ্য এরকম একটা নাম আছে নীল না বললে জানতে পারতাম।
তার সাথে তাল মিলিয়ে রোদ বলে,
-“শিউলি ফুল, কদম ফুল দুই বোনের দুইটা ইউনিক নাম আছে।

প্রাচ্য খুব ইচ্ছা করছে তার বোনকে দুই টা থাপ্পড় মারতে। সে এই জন্যই তার নামটা বলতে চায়নি তার বন্ধু মহলে।তারা যে এই নাম নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করবে। তার খুবই জানা ছিল।খুব জোরে চিল্লিয়ে বলে,
-“এভাবে দাঁত বত্রিশ গা ভেটকিয়ে হাসা কি আছে।
ধূসর বলে,
-“আহা প্রাচ্য চেতস কেন তুই। তোর কি সুন্দর একটা নাম শুনছি। তার জন্য তো একটু আকটূ হাসা লাগেই।এবার ধরে আমরা তোকে প্রাচ্য বলে ডাকবো না। শিঊলি ফুল বলে ডাকবো। কি বলিস তোরা।

কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে প্রাচ্য বলে উঠে।
-“শিউলি ফুল নামে আমায় যে ডাকবে।তার হাত কামড়িয়ে দেবো আমি।হু
-“হাত কামড়া বা পা কামড়া যাই করিস না কেন আমরা তোকে শিউলি ফুল বলে ডাকবো।”তৃণ বলে
-“আর একবার তুই বল শিঊলি ফুল।তার পর দেখিস কি করি আমি।
তৃণ প্রাচ্যকে ক্ষেপানোর জন্য আবার বলে,
-“শিউলি ফুল
প্রাচ্য আর কিছু না বলে তৃণ দিকে তেড়ে আসে।প্রাচ্য তার দিকে এগোতে দেখে তৃণ উঠে দাঁড়ায়। পিছন থেকে সবাই প্রাচ্যকে ডাকে কিন্তু প্রাচ্য তাদের কথা কোনো উত্তর না দিয়ে তৃণ কে ধাওয়া করে।তৃণ দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে যায় তাই বসে পড়ে। প্রাচ্য এসে তৃণ পাশে বসে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে তৃণ দিকে তাকায়। প্রাচ্য এই সুযোগে তৃণ হাত কামড় দে।তৃণ আর্তনাদ করতে থাকে।প্রাচ্য আচমকা এরকম করবে সে ভাবতে পারেনি। কামড় দিয়ে উঠে চলে যেতে যেতে বলে,
-“কান খুলে শুনে রাখ আমার নাম প্রাচীয়া প্রাচ্য।”

#চলবে
#Kawsar_sorna

(আমার সামনে ফাইনাল এক্সাম। তাই গল্প দিতে অনেক লেট হবে।গল্প টা ভালো হচ্ছে নাকি খারাপ হচ্ছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।আপনার গঠনমূলক কমেন্ট করে গল্পটা সম্পর্কে কিছু বলবেন প্লিজ)

স্বপ্নীল ০৭

0

স্বপ্নীল
০৭
সাজেকের প্রথম এবং প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে মেঘের মধ্যে বসবাস।তুলার মতো মেঘের সঙ্গে খেলতে কেমন লাগবে তা অনুধাবন করার জন্য সাজেকে আপনাকে যেতেই হবে।পাহাড়, ঝর্ণা,নদী,গাছ-গাছালি,লতা-পাতা প্রভৃতি নিশ্চয়ইই ভালো লাগবে।অপ্রত্যাশিত ভাবে বৃষ্টি ভেজা কিংবা কুয়াশা চাদরে ঢাকা পরার অভিজ্ঞতা যোগ করবে ভিন্ন মাত্রা।

রুইলুইপাড়া শিবমন্দির দেখার জন্য সবাই বের হয়।রুইলুইপাড়া দুই পাশে সুন্দর লাল সবুজ রঙের বাড়ি।সবকিছু একদম ছবির মতো সাজানো গুছানো আর সুন্দর।পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘ জমে আছে,মেঘ আটকে আটকে আছে সব খানে।কিছু মেঘ ধীরে ধীরে উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে একপাহাড়ের উপর দিয়ে আরেক পাহাড়।দূর থেকে এসব দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যেতে চায়।চোখে আপনা আপনি পানি চলে আসে।

সাজেকে প্রবেশ মুখের ডান পাশে অবস্থিত সুপ্রাচীন এই শিবমন্দির। মূলত মন্দিরটি সকলের রুইলুইপাড়া শিব মন্দির নামে চিনে থাকে।প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন ও খুব আয়োজিত। দেখলেই মন ভরে যায়।এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব সময় হৈহুল্লোড় ও হট্রগোল লেগেই থাকে।সকলে মিলে শিব মন্দির টা দেখে।মন্দির পেরুলে সামনে দোকানিরা বেচাকেনার ভিড় জমে যায়।বিভিন্ন প্রকারে দেশি ও বিদেশি পন্য ক্রয় বিক্রয় হয়। এর শেষ প্রান্তে হচ্ছে মেঘ মাচাং কটেজ। সকালে মেঘ মাচাং কটেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় নীচের পাহাড় গুলো সাদা মেঘের ভিড়ে হারিয়ে যায়।দূরে উঁচু উঁচু পাহাড়ের চূড়া দ্বীপের মতো করে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়।মূলত সে গুলো হলো ইন্ডিয়ান মিজোরাম পাহাড়!মাঝ খানে মেঘের বিশাল সমুদ্র।

নীল এগুলো খুঁটি খুঁটিয়ে দেখচ্ছে।তার ইচ্ছে করছে, দৌড়িয়ে যেয়ে এগুলো ছুঁয়ে দিয়ে আসতে।তার কাছে সব কিছু স্বপ্নমত লাগছে।তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।এতো সুন্দর জায়গা এই বাংলাদেশের আছে।এসব দেখে নিজেকে মাতাল মনে হচ্ছে। তার মনে যাচ্ছে এখানে একটা বসতি করে সারাজীবনের জন্য এখানে থেকে যেতে।এই আদিবাসীদের সাথে জীবন যাপন করতে।

সবাই শিব মন্দির দেখে ফিরে যাচ্ছে।তখনই রোদ প্রশ্ন করে
– “এখন আমরা কোথায় যাবো।
রোদের কথা উত্তর স্বপ্ন দেয়,
– “এখন যাবো পশ্চিমের গ্রামে,তারপর বিকেলের হেলিপ্যাডে সূযাস্ত দেখবো।
ধূসর বলল,
-” হেলিপ্যাডের সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটো অনেক সুন্দর।মনে গেঁথে যাওয়ার মত।আর এই সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত খুব কাছ থেকে দেখায় যায়।
প্রাচ্য বলে,
-“তুই আর আমাদের কে লোভ দেখানো লাগবে না। কিছুক্ষন পর আমরা নিজের স্বচক্ষে দেখে নিব।”
-” এই জন্য তোদের মত কিছু শয়তান মেয়েদের ভালো করতে নেই।ভালো জন্য বলেছিলাম।”
রোদ বলে,
– ” আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, তুই আর তৃণ কি আদৌ আমাদের বেস্টু।সব সময় তোরা দুজন আমাদের লেকফুল করিস।
তৃণ বলে,
– ” তোরা কি করিস আমাদের বেলায়,চাইয়া চাইয়া দেখিস আমাদের কে,একটা সুযোগ ফেলেই পিঞ্চ মেরে কথা বলতে ছাড় দেস আমাদের, তাহলে আমরা কেন ছাড় দিবো।শোধবোধ করে দি।
রোদ আর কিছু না বলে মুখ ভেংচি কেটে দিয়ে স্বপ্নর পাশে দিয়ে হেঁটে যায় আর বলে,
– ” বন্ধু হলে স্বপ্নই আমাদের বন্ধু।ওর মতো হতে পারিস না তোরা।
তৃণ বলে,
-“সবাই যদি স্বপ্ন মতো ভদ্র সভ্য হয়।তাহলে এই সমাজে অভদ্র লোকের অভাব পড়ে যাবে।যাতে এই সমাজে অভদ্র লোকের অভাব না পড়ে তাই আমি আর ধূসর অভদ্র লোকের খাতায় নাম লিখেছি।কি বলেছিস ধূসর।
-“হ্যাঁ একদম রাইট বললি।
স্বপ্ন এসে দুজনের পাশে দাঁড়িয়ে রোদ আর প্রাচ্য উদ্দেশ্য করে বলে,
-“তোরা যাই বলিস। ওরা আছে বলেই আমাদের বন্ধমহল এখন জমজমাট ও সতেজ আছে। না হলে ফানসে ফানসে হয়ে যেত কবেই।এই জন্য তোদের উচিত তাদের কে ধন্যবাদ দেওয়া।
প্রাচ্য মুখ ভেংচি কেটে বলে,
-“ধন্যবাদ দিতে বয়ে গেছে আমাদের।
ত্ৃন বলে,

– ” তুই যে কিপ্টুস সেটা আমাদের জানা আছে।সামান্য ধন্যবাদ মুখে দিয়ে বের হয় না।সব সময় মুখে দিতে তেতো তেতো কথা বের হয়।এবার বাসায় ফিরে সমুদ্র সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করবো। কেন প্রাচ্য জন্ম হওয়ার পর তারা ওর মুখে মিষ্টি বদলে নিমপাতার রস ঢেলে দিয়েছে।।”

– “মোটে না,, তোদের মতো বদের হাড্ডিদের সাথে এভাবে তেতো তেতো হয়ে কথা বলা উচিত।আর আমার কাছে কেন? বা তুই মিষ্টি কথা আশা করিস।এই মিষ্টি কথা গুলো তোর ওই শাঁকচুন্নি গার্লফেন্ড গুলো থেকে শুনবি।

ধূসর এবার বলে উঠে,
– ” তোরা সব সময় কেন, তৃণ পিছনে লাগছ ওর গার্লফেন্ড নিয়ে।
– “আরে বুঝিস না ওদের হিংসা হয়।এখন পর্যন্ত কাউকে জুটাতে পারেনি বলে”

তৃণ কথা শুনে প্রাচ্য মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায়।তাই আর কিছু না বলে সবার আগে গদগদ করে হেঁটে চলে যায়।প্রাচ্য এভাবে মেজাজ গরম করে যাওয়া দেখে তৃণ মুচকি হাসে।রোদ এসে বলে,
-“আমরা ওকে হিংসা করতে যাবো কেন?? “কেমন একটা চেহার নাম রাখছে পেয়ারা” তোদের চেয়ে ভালো ছেলেদের কে বিয়ে করে দেখাবো আমরা”

ধূসর বলে,
-“বুঝলাম আমাদের চেয়ে ভালো ছেলেদের বিয়ে করবি, আমাদের কথা না হয় বাদ দিলাম,, সমুদ্র থেকে ভালো ছেলে কে বিয়ে করবি।
রোদ রাগি চোখে তাকায়। ধূসর দিকে,সবাই তার ভালোবাসা নিয়ে ঠাট্টা করে, যে মন প্রান উজার করে যাকে ভালোবাসে।সেই সব সময় তাকে অপমান করে।কেন সে এমন করে।আমায় একটু ভালোবাসলে তার ক্ষতি কিসের।

প্রায় ঘন্টা খানের হাঁটার পর তারা ভারতে লুসাই পাহাড়ের উপরে একটা গ্রামে এসে পৌঁছায়। সেই গ্রামের নাম কংলাক।তিনটি লুসাই জনগোষ্ঠী দ্বারা গঠিত এই কংলাক পাড়া। এর হেড ম্যান চৌমিংখাই লুসাই। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাড়া দেখা দেয়।। যেখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে কর্ণফুলী নদী।

পাহাড়ের উপরে অসাধারণ একটা জনবসতি। চমৎকার সুন্দর ও অতি সাধারণ একটি গ্রাম এই কংলাক।গ্রামের মানুষ গুলো অসাধারণ ও অতি মিশুক প্রকৃতির।তারা খুব আপন প্রকৃতি ও অনেক অতিথি পরায়ণ ও বটে

কংলাক গ্রাম থেকে সাজেকের রুইলুই পাড়ার দৃশ্য অতি মনোরম, দূর থেকে লাল। নীল ঘর গুলো পোস্টারে মতে লাগছিল!আসলে সাজেকের এর অপরুপ এই সৌন্দর্য শুধু
মাত্র কংলাকে আসলেই দেখা যায়।।মূলত সাজেক আসার মূল্য রহস্য এই কংলাক গ্রামটি।

হেলিপ্যাডে ঢোকার আগেই ছোট একটা পার্ক সামনে পড়ে।পার্কের ভিতরে একটা দোলনা আছে।চারদিকে যত দূর যায় শুধু সবুজ আর সবুজ।সামনে বিশাল আকাশ।পাহাড়,আকাশ, সবুজের মিশ্রনে এক অপূর্ব শোভা তৈরী হয়েছে।দোলনা দেখে আর একমুহুর্ত দাঁড়ালো না নীল,ছুটে গিয়ে দোলনা বসে পা দোলাতে লাগলো।তার এহেম কান্ড সবাই অবাক হয়। ছেলে মানুষী সব স্বভাব এই মেয়ের ভিতরে।না হলে কি এই মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালাতে পারে,কারো মান সম্মানের কথা না ভেবে।
সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে।কি যে অপরুপ লাগছে এই প্রকৃতিটাকে!দূর থেকে রুনময় রিসোর্ট দেখতে ভালো লাগছে।রুনময় রিসোর্ট কাছে হেলিপ্যাড।রিসোর্ট সামনের রাস্তা গুলো খুব সুন্দর।রাস্তা গুলো এতো সুন্দর কেন??পুরো ছবির মতো সুন্দর।নিজের দেশ ছেড়ে সবাই কেন অন্যাদের দেশে যায় ঘুরতে।

সবাই যায় হেলিপ্যাডের দিকে। নীল দোলনা বসে দোল খায়। তারা চারজন মিলে আবার সেই ঝগড়ার লেগে যায়।এই ঝগড়া লাগে এই আবার সবার মধ্যে কতভাব। স্বপ্ন তার।বন্ধুদের কান্ড দেখে অবাক হয়।তারা কিভাবে পার এই ভাবে প্রাচ্য আর রোদের পিছনে লাগত।
নীল উঠে দাঁড়ায় স্বপ্নকে বলে,
– ” এতবড় আকাশ আমি কখনো দেখিনি।সামনে যত দূর চোখ যায় শুধু পাহাড়ের চূড়া আর আকাশ।আমরা সব পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছি তাইনা।”
– “এখানে তিনবেলা এলে তিনরকম সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সকালের সূর্যোদয় এক রকম, বিকেল বেলা অন্যরকম,আর সূর্যাস্ত ভিউ আবার অন্যরকম।

– ” আপনি এখানে আগে ও এসেছেন তাই না
-” হুম।আমরা সবাই লম্বা লম্বা ছুটির দিন গুলো এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়।আর সাজেকে আরো একবার এসেছি

সবাই মিলে চলে আসে হেলিপ্যাডের সূর্যাস্ত দেখার জন্য। হেলিপ্যাডে আরো অনেক লোক জন ছিলো সবাই অপেক্ষা করছিল সূর্য কখন অস্ত যাবে। হেলিপ্যাডের সূর্যাস্ত একদম অন্যান।বিশালা প্রান্তরে সূর্য ধীরে ধীরে ডুবে যায়।মাথার উপরে শুধুই মহাশূন্য। সামনে পাহাড়, আর গাঢ় সবুজ।চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। সামনে ছোট ছোট ঘর চোখে পড়ে।লাল সবুজের ঘরের চালা।প্রকৃতি নিস্তব্ধ হয়ে রুপের ডালা সাজিয়ে রেখেছে এখানে।এই মুহুর্তটা আর দেরী করল না নীল,তার ক্যামেরা বন্ধী করার জন্য,তার প্রান প্রিয়া বান্ধবী কে দেখাতে হবে। তাকে সে কত বার বলেছে তার সাথে সাজেকে আসার জন্য।কিন্ত সোহা কিছু আসবে না,না এসে কি মিস করেছে। তাকে সেটা দেখাতে হবে না, তাই সে প্রতি মুহুর্ত ক্যামেরা বন্ধী করে রাখে তার জন্য।

স্বপ্ন বুঝতে পাচ্ছে কেন তার বার বার চোখ যায় এই মেয়েটার দিকে। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েদিকে এভাবে নজর দিয়ে তাকানি। কিন্তু এইমেয়ের ক্ষেতে না চাইলে তাকাতে হয়। তার দৃষ্টি বার বার আকর্ষণ করে কেন এই মেয়ের প্রতি।
স্বপ্ন নীলের পাশে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে।নীল ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে স্বপ্ন নামের ছেলেটা তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।এভাবে তাকাতে দেখে বলে,
– ” কি দেখছেন এভাবে?”

স্বপ্ন থতমত খেয়ে অন্যদিকে তাকালো।এই প্রথম যে কোনো মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলো আর সে এমন ভাবে কথা গুলো বলেছে তার খানিকটা লজ্জা পড়ে।কেন সে বেহায়া পুরুষের মত এই মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল।কত মেয়ে তো তাকে প্রোপোজ করেছে কিন্তু সেকোনো দিন ফিরে তাকায় নি।তাহলে কেন বার বার এই মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাজার বছর কাটিয়ে দিতে মন চাচ্ছে।

গোধূলি বিকেল দেখতে খুবই আনন্দ লাগছে নীলের। প্রাচ্য আর রোদ এসে হেলিপ্যাডের সুর্যাস্ত দেখছে।গাঢ় সবুজ ঘাসের উপরে বসে খুনসুটি করছে আর খিলখিল করে হাসছে নীল। স্বপ্ন’রও ইচ্ছে করছে এভাবেই খুনসুটি করতে।কিন্তু কার সাথে। কোনো উত্তর খুজে পাচ্ছে না সে।সে খুব ভালো করে বুঝতে পাচ্ছে নীলের প্রতি তার ভালোলাগা তৈরী হচ্ছে।ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসা হয়।তার মানে কি সে নীল কে…….না,, না সে কি করে হয়।কিসব উলটা পাল্টা চিন্তা ভাবনা তার।কিসব বাজে চিন্তা করছে।

প্রাচ্য তাকিয়ে তৃণ দেখে,ধূসর আর রোদের সাথে দাঁড়িয়ে কি সুন্দর করে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে। সবার সাথে খুব সৌহার্দ পূর্ণ কথা বার্তা বলে একমাত্র সে ছাড়া।তার সাথে কথা বলতে আসলে পিঞ্চ মেরে কথা বলে।কেন সে কি আমার সাথে একটু সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারে না।কেন সব সময় আমার সাথে এরকম করে। আমার এখন খুব ইচ্ছা করছে দোলনা বসে তোর কাঁধে মাথা রেখে এই রকম সুন্দর মুহুর্ত উপভোগ করতে। সে চাইলে সব সম্ভব হত।

তৃণ এতক্ষন সবার সাথে কথা বলছিল হঠাৎ করে চোখ আঁটকে যায়, তার দিকে কেউ একজন পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। বুঝা যাচ্ছে এই পলকহীন ভাবে তাকিয়ে তাকে তার ধ্যানে নিয়ে কল্পনার জগৎ পাড়ি দেওয়া হচ্ছে। তৃণ আস্তে আস্তে হেঁটে এসে প্রাচ্য পাশে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বর বলে,
-“কাকে নিয়ে কল্পনার সমুদ্র পাড়ি দেওয়া হচ্ছে।
তৃণ কথা তার ধ্যান ভাঙে এবার তার পাশে তাকায় এবার সামনে রোদের দিকে তাকায়,
– “তুই এখানে কখন এসেছিস।তুই না ওখানে,,,,
প্রাচ্য কথা বাজ পাখির মতো ছোঁ মেরে নিয়ে যায় তৃণ,
-“আপনি যখন অন্য কাউকে নিয়ে কল্পানার জগৎ পাড়ি দিচ্ছেন তখন এসেছিলাম।তাই আর কি, আপনি বলতে পারেন নি
প্রাচ্য কিছুটা লজ্জা পায়।কিন্তু বুঝতে দেয় না তৃণকে।তৃণ বলে,
– ” তো কাকে নিয়ে ধ্যানে নিয়ে ভাবা হচ্ছিল।

প্রাচ্য খুব ইচ্ছে করছে বলতে ‘ আমি তোকে নিয়ে দিনে রাতে যখন তখন স্বপ্নের জগৎ পাড়ি দিয়।আমার স্বপ্নে, আমার কল্পানায় তুই ছাড়া আর কে থাকবে,, তোকে তো আমি হৃদয় নামক স্থান জায়গা দিয়েছি’ কিন্তু সেটা না বলে রাগি ভাষার বলে,
– ” তোকে বলতে যাবো কেন?? কে হোস তুই আমার?

#চলবে…
কাউছার স্বর্ণা

স্বপ্নীল ০৬

0

স্বপ্নীল
০৬
যত দূর দৃষ্টি যায়,ছোট বড় সবুজ পাহাড়।ওপর থেকে দৃষ্টি মেললে যেন সবুজ সমুদ্রের ঢেউ।একটি থেকে আরেকটি পাহাড়ের মাঝে সাদা তুলোর মতো আটকে আছে মেঘ।দেশের মধ্যে পর্যটনের এই অপরুপ স্থান হলো সাজেক।

রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটু ইউনিয়ন এটি।সাজেকের অবস্থান।খাগড়াছড়ি জেলা থেকে উত্তর -পূর্ব দিকে আর ভারতের রাজ্য মিজোরাম সীমান্ত থেকে দূরত্ব মাত্র থেকে ১৫ কিলোমিটার। পাহাড়ি সাজেকে আছে ‘রুইলুই’ ও ‘কংলাক’ নামে দুটি বসতি বা পাড়া।এখানে লুসাই, পাংখোয়া,ও ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে।

সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এখানে যাতায়াত খাগড়াছড়ি থেকে সহজ
খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। সাজেকের রুইলুইপাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট।আর ২১০০ ফুট উচ্চতা অবস্থিত কংলাকপাড়া।ভ্রমন পিপাসুদের জন্য সাজেক সারা বছর বর্ণিত সাজে। সেজে থাকে।তবে,বর্ষা , শরৎ,হেমন্ত
সাজেকের চার পাশে মেঘের দেখা যায় বেশি

তাদের গাড়ি এসে পৌঁছায়য় সাজেকে।অনেক গুলো রিসোর্ট আর রেস্টুরেন্ট দেখতে পায় রাস্তা দুইপাশে। রাস্তার বাম পাশে সেনাবাহিনী কর্তৃত্ব সাজেক রিসোর্টটা সাজেকে ঢুকতে সবার চোখে পড়ে।স্বপ্ন সবার উদ্দেশ্য করে বলে,
-“এটা হলো সেনাবাহিনীদের সাজেক রিসোর্ট
নীল ভালো করে তাকিয়ে দেখে,
-“এই রিসোর্ট দেখতে খুব সুন্দর।এই রিসোর্টের রুমে বুকিং দাম মনে একটু বেশি হবে।

-“হুম, সেনাবাহিনীদের পরিচালিত এই সাজেক রিসোর্টটি এসি আর নন এসি প্রতিটি রুম ভাড়া ১০০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা।রিসোর্টটির দ্বিতীয় তলায় আছে সব মিলিয়ে চারটি রুম।সাথে আছে খাবারে ব্যবস্থাও। সাজেক রিসোর্টটি এমন ভাবে তৈরী করা যে রুমের ভিতর থেকে তাকালেই বাহিরে সাজেকের পুরো টা রুপ খুজে পাওয়া যায়।তাই বেশিভাগ কাপলরা প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে এই রিসোর্টটি বেছে নেয় সবার আগে।
নীল ছোট করে বলে,”ওহ”
প্রাচ্য বলে,
-“আমি যতটুকু জানি সাজেকের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নের তিনটি রিসোর্ট।
-“হুম। রুইলুইয়ে সেনাবাহিনী উদ্যোগ গড়ে উঠেছে তিনটি রিসোর্ট । এগুলো হলো, সাজেক, রুনময়,ঝারবুজ। এর মধ্যে বিলাসবহুল সাজেক ও
রুনময় রিসোর্ট রয়েছে পাঁচটি কক্ষ। অপর দিকে ঝারবুজ রিসোর্ট আছে চারটি কক্ষ।
রুনময় রিসোর্ট রুইলুইপাড়া শেষ প্রান্তে অবস্থিত।সেখানে আশে পাশে কোনো বসতি নেই।

রোদ বলে,
-“আমরা কোন রিসোর্ট উঠবো
-“রুনময়।
-“আগে থেকে বুকিং করেছিস, না কি এখন যেয়ে বুকিং করবি।
ধূসর রোদের মাথায় হালকা থাপ্পড় মেরে বলে,
-“এই জন্য তোকে আমি গাধা বলি।এই রকম গাধার মতো প্রশ্ন করিস দেখেই সমুদ্র তোর ভালোবাসা আজ ও বুঝতে পারেনি।
-“আমি কি গাধার মত প্রশ্ন করেছি”
-“কি করিসনি, সেটা আমায় বল,
তারপর ধূসর ব্যঙ্গ করে রোদের কথা বলে,
-“আগে থেকে বুকিং করেছিস, না কি এখন যেয়ে বুকিং করবি, এটা কি গাধার মত প্রশ্ন না,কিরে তূর্ন বল,এটা কি গাধার মতো প্রশ্ন করেনি রোদ।
তূণ বলে,
-“ধূসর ঠিকই বলছে, সাজেকের উন্নত মানে রিসোর্ট হলো রুনময়। এই রিসোর্ট থাকার জন্য অন্তত একমাস আগে বুকিং করতে হয়। আর তুই কি বলেছিস ‘এখন যেয়ে বুকিং করবি’ তোকে তো ধূসর গাধা না বলে বলদ বলা উচিত ছিল।

এবার নীল বলে,
-“তূন ভাইয়া, ধূসর ভাইয়া।তখন থেকে আপনার স্ত্রী লিঙ্গ ব্যবহার না করে পুরুষলিঙ্গ ব্যবহার করছেন।এখানে রোদ আপু ক্ষেত্রে গাধা হবে না,গাধি বা বলদী হবে,

ধূসর বলে,
-“ছেলের মতো শার্ট, জিন্স পড়ে, ছেলেদের মতো চাল -চলন তাকে অন্তত আমার মেয়ে মনে হচ্ছে না।লম্বা চুল গুলো না থাকলে পুরো ছেলেদের মত দেখা যেত।তাই আমি স্ত্রী লিঙ্গ ব্যবহার না করে পুরুষ লিঙ্গ ব্যবহার করেছি।ওর ক্ষেতে পুরুষলিঙ্গ মানাইসই।কি বলিস তূণ,
তূর্ণ ও ধূসর সাথে একমত হয়ে বলে,
-“তূর্ণ কথা একদম ঠিক বলেছে”
রোদ এবার ক্ষেপে যায়।উঠে গিয়ে ধূসর মাথার দুইহাত দিয়ে চুল মুঠো করে টেনে ধরে। প্রাচ্য আর নীল মিলে থামায় রোদকে।তারপর রোদ বলে,
-“আমার ক্ষেতে পুরুষ লিঙ্গ মানাইসই হলে তোর ক্ষেতে হিজড়া লিঙ্গ মানাই সই।
তূণ প্রথমে ডান গালে হাত দিয়ে বলে,
-“আস্তাগফিরুল্লাহ,
তারপর আবার বাম গালে হাত দিয়ে বলে,
-“আস্তাগফিরুল্লাহ।কিসব বলছিস তুই রোদ।অন্য কেউ যদি এই কথা শুনতো তাহলে ধূসর কোনোদিন বিয়ে করতে পারবে না।সবাই ওকে হিজড়া ভেবে কেউ আর মেয়ে বিয়ে দিবে না।
-“বেশ করেছি।
তখনই চান্দের গাড়ি থেমে যায়।তার এ নিয়ে কেউ কথা বলতে পারেনি।
স্বপ্ন বলে,
-“এসে গেছি আমরা,তোরা সবাই নাম।

সবাই মিলে একে কে নেমে যায়। নীল নেমে এদিক ওইদিক তাকায়। তার রুনময় রিসোর্ট ভালো করে দেখে।তারপর নিজের ফোন বের করে।তামিম কে ফোন করার জন্য। এখানে পৌঁছে গেছে তা জানাতে হবে।না হলে তামিম যে টেনশন থাকবে, ঠিক করে পৌঁছে কি না,তাই তামিম কে ফোন করতে নিলে নের্টওয়াক পাওয়া যায় না।বার বার চেষ্টা করে তার পর নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। সবার থেকে একটু দূরে যেয়ে মোবাইল উপরে একটু তুলে নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য কিন্ত সিগন্যাল নাগালের বাইরে। দূর থেকে স্বপ্ন নীল দেখছে। বুঝতে পাচ্ছে না, স্বপ্নে এসে নীলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-“কোনো সমস্যা ”
নীল উপর থেকে হাত নামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
-“কিছু বলেছেন
-“কোনো সমস্যা। এভাবে যে মাথার উপর মোবাইল তুলে রেখেছেন।”
-“ওহ,আসলে আমার মোবাইল নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখানে এসে মোবাইল একটু উপরে তুলে সিগন্যাল পাওয়ার চেষ্টা করছি।”
-“আপনি কি সিম ইউজ করেন”
-” gp
-“এই জন্য বোধহয় আপনি সিগন্যাল পাচ্ছে না।এখানে গ্রামীণসিমের নেটওয়ার্ক পাওয়ার যায় না।সাজেক আসার সময় রবি বা টেলিটক সিম ছাড়া আর কোনো সিমের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।
নীল মুখটাকে অসহায় করে বলে,”ওহ”
-“আমি সবাইকে বলে দিয়েছে সাথে করে যেন রবি বা টেলিটক সিম নিয়ে আসে।আপনাকে প্রাচ্য কিছু বলেনি।
-“প্রাচ্য আপু কিছু বলেনি আমায়।

প্রাচ্য ওদের দেখে এখানে এসে বলে,
-“তোরা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে।চল নীল ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিবি।
-“আপু তামিম ভাইয়া কে একটু ফোন দিলাম ও। কিন্তু আমার মোবাইলে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পাচ্ছি না।
-“কেন?? এখানে কি নেটওয়ার্ক সমস্যা দেয় স্বপ্ন।
-“তোদের কে আমি আগে বলে দিয়েছি।সাজেকে আসার সময় সঙ্গে কি কি নিয়ে আসবি। আর যার যার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো যেন সাথে নিয়ে আসবি।
-“হ্যাঁ বলেছিস তো।কিন্তু এখানে কি জিপির নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।
-“না।
-“এই যা আমার ও সেইম সিম।এখন কি করবো। বাড়িতে কিভাবে খবর দিবো ”
-“আমি সবাইকে বার বার বলে দিয়েছি এখানে জিপির নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।জিপি সিম যাদের তারা যেন অন্য সিম নিয়ে আসে”
-“ভুলে গেলাম আমি।
তখনই রোদ এসে বলে,
-“আমি রবি সিম নিয়ে এসেছি।আমার ফোন থেকে ফোন করে বাসায় বলে দেয়।”
স্বপ্ন বলে,
-“পাওয়ার ব্যাংক এনেছিস তো সাথে।
-“হ্যাঁ”
-“ভালো করেছিস।এখানে সোলার বিদ্যুৎ। মাঝে মাঝে জেনারেটর ব্যবহার করে।সব সময় জেনারেটর থাকে না।তাই পাওয়ার ব্যাংকের প্রয়োজন পড়ে।তোর কথা বল।আমি রিসোর্ট রিসিপশনে যেয়ে কথা বলি।
এটা বলে স্বপ্ন চলে যায়।নীল রোদের থেকে ফোন নিয়ে তামিমের নাম্বারে কল করে।
তামিম ফোন ধরে বলে,
-“হ্যালো, কে??
-“ভাইয়া আমি
-“নীল তুই।পৌঁছেছিস
-“হ্যাঁ ভাইয়া মাত্র এসেছি।গাড়ি থেকে নেমে তোমায় ফোন দিয়েছে।
-“ভালো করেছিস।আমি তোর ফোনের অপেক্ষাই ছিলাম।কোনো অসুবিধা হয়নি তো।
-“না ভাইয়া। ভাইয়া ওইদিকে খবর কি??
-“খবর আর কি হবে। সবার একটু রেগে আছে।
-“ওহ
-“তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
-“ভাইয়া তোমাই কি দাদু কি বকেছে।
-“না, আমার কিছু বলেনি,
-“আচ্ছা, রাখছি। পরে কথা বলবো।
-“বায়।
টু টু করে ফোন কেটে গেলে।সবাই মিলে রিসেপশনে যায়।
স্বপ্ন এসে বলে,
-“রুনময় রিসোর্ট রুম হচ্ছে পাঁচটা। কিন্তু আমাদের সদস্য সংখ্যা হলো ৬জন।যে কেউ দুইজন একরুম শেয়ার করে থাকতে হবে।

কেউ রাজি হয় না। রুম শেয়ার করার জন্য। তারপর প্রাচ্য আর নীল একরুমে থাকবে বলছে। স্বপ্ন রিসিপশনে গিয়ে বলে প্রাচ্য রুমে এক্সট্রা একটা বেড দিতে। যাতে আরেকজন থাকতে পারে।সেচসবার হাতে সবার রুমের চাবি ধরিয়ে দেয় স্বপ্ন।সবাই চলে যায়।লাগেজ টেনে নিয়ে রুমে ঢুকে,
প্রাচ্য কে বলে,
-“আপু তুমি আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো তার পর আমি যাবো।

নীল জানালার পাশে যেয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে তার চোখ আটকে যায়।সাদা সাদা অজস্র মেঘের ভেলা পালা করে ছুটে আসছে,চারদিকে মেঘ আর মেঘ।জানালা থেকে একটু দূরে ঘরের নিচে শুধু মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া পাবে।কিন্তু জানালা থেকে অনেকে নিচে মেঘ গুলো।ছোঁয়া যাচ্ছে না।এত কাছ থেকে মেঘ দেখতে পাবে কল্পনাও করিনি নীল।।নীলের এই দৃশ্য দেখে মাতোয়ারা হয়ে যায়।তখনই প্রাচ্য বের হয়ে আসে।আর নীল যায় ফ্রেশ হতে।
স্বপ্ন ফ্রেশ হয়ে সবাইকে ডাকতে আসে।সবাই চলে আসে প্রাচ্য আর নীল বাদে।
কিছুক্ষন পর তারাও চলে এসেছে। নীল পিংক কালারে একটা টপস পড়েছে সাথে জিন্স। প্রাচ্যকে পিঞ্চ করে তূর্ণ বলে,
-“বের হয়েছিস কেন?? আরো আধা ঘন্টা লেট করে আসতি।
-“এখন তো মনে হচ্ছে তাই করা উচিত ছিলো।
নীল বলে,
-“একটা ওয়াশরুম আমরা দুজনকে ব্যবহার করতে হয়েছে।লেট হবে না তো কি হবে।
স্বপ্ন বলল,
-“এখন চলো
ধুসর বলে,
-“হুম চল, ওরা পড়ে ঝগড়া করুক। আমরা খেয়ে দেয়ে আসি।

এটা বলে সবাই চলে যায় সিনারী হোটেল।সাজেক আসলে সবাই সাজেকের ঐতিহ্যবাহী খাবার খায়।তারা জুমের ভাত,নানা রকমের পাহাড়ি ভক্তা।বিভিন্ন শাক-সবজি,ডাল।পাহাড়ি মুরগী মাংস দিয়ে দুপুরে খাওয়া খায়।স্বপ্ন রাতে খাবার অর্ডার দিয়ে আসে। সাজেকের রেস্টুরেন্ট গুলো তে খাবার আগে অর্ডার দিতে হয়।এখানে আগে রান্না করা হয় না।পর্যটক আসলে তাদের অর্ডার অনুযায় রান্না করে।
সবাই রিসোর্ট যায়।এত দূর জার্নি করে এসেছে এখন সবাই একটু রেস্ট নিবে।তার বিকালে রুইলুইপাড়া শিবমন্দির দেখতে যাবে।নীল রুমে না গিয়ে রুনময় রিসোর্ট পিছনের দিকে যায়।সেখানে অনেকগুলো সিঁড়ি থাকে।বসার ব্যবস্থা থাকে।সেখানে দাঁড়িয়ে পাহাড় ভিউ দেখে সে মুগ্ধ হয়ে যায়।
মেঘের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমিয়ে আছে।কিংবা নীল বলতে পারে পাহাড়ের গায়ে মোড়ানো মেঘের চাঁদর।সাজেক আসলে মেঘ পাহাড়ে রাজ্য। নীলের মনে হচ্ছে,একসময় মেঘ দেখতে দার্জিলিং যেত,শিলং যেত।এই এই চির সবুজের বাংলাদেশেই এমন জায়গা আছে যেখানে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘের সমুদ্র অবগাহন করতে পারে। তার মনে হচ্ছে এবার পালিয়ে এসে, সে সার্থক হবে।এতো সুন্দর জায়গা সে আর দেখেনি, পালিয়ে সে অনেক জায়গা গেছিল কিন্তু এতো সুন্দর ভিউ সে দেখেনি।তার যদি ডানা থাকত সে উড়ে যেত এই মেঘ আর পাহাড়ের মধ্যে।তাদের ছুয়ে ছুয়ে দেখত।এরকন সুন্দর ভিউ অনেক গুলো ছবি তুলে নেয় সে।
#চলবে
#কাউছার স্বর্না

স্বপ্নীল ০৫

0

স্বপ্নীল
০৫
পুরোটা পথজুড়ে সবুজ পাহাড় যেন নিজেকে ঢেকে রেখেছে কুয়শার নরম চাদরে। সাজেক যাওয়ার পথে কয়েকবার যাত্রাবিরতি।পথে প্রথম বিরতি বাঘাইহাট বাজার।পাহাড় কোল ঘেঁষে এই পাহাড়ি বাজারে পাশ দিয়ে চলে গেছে কাচালং নদী।

,,

গাড়ি গুলো সিরিয়াল ভাবে দাঁড় করানো হয়েছে মাঠে।রাস্তায় যেন জ্যাম না লাগে সে জন্য সব গুলো গাড়ি মাঠের একত্রিত করা হয়েছে।বাঘাইহাট আর্মি ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রত্যকেটি গাড়িকে আলাদা ভাবে টোকেন নিতে হবে এবং সেই টোকেনটি সাজেক থেকে ফেরার সময় বাঘাইহাট আর্মি ক্যান্টনমেন্ট জমা দিয়ে যেতে হবে।

স্বপ্ন গাড়ি থেকে নেমে ক্যাম্প দিকে এগিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে নাম, ঠিকানা এবং কোন রিসোর্ট উঠবো সব কিছু বলে টোকেন নিয়ে এসে দেখে।নীল এই বাঘাইহাঁট ভিউ ভিডিও করছে।তা দেখে নীলের কাছে দ্রুত হেঁটে যায়।
-“আর্মিদের অনুমিত ছাড়া এই জায়গাটা ভিডিও করা যায় না।।
-“অনুমিত না, নিলেই তারা কি শাস্তি দিবে আমায়।
স্বপ্ন ভয় দেখানো জন্য বলে,
-“একবছর জেলা খাটতে হবে।
স্বপ্ন কথা শুনে নীল মোবাইল থেকে চোখে সরিয়ে স্বপ্ন সামনে এসে খুশিতে গদগদ করে বলে
-“সত্যিইইইইইইই!আমার তো অনেক ইচ্ছা ছিল একটা রাত জেলে কাটানোর। আমি বুঝতে পারেনি এই ভাবে আমার জেলে কাটানোর স্বপ্নটা পুরন হয়ে যাবে।
এই বলে আমার খুশিতে লাফিয়ে আবার ভিডিও করে।

স্বপ্ন ভেবেছে গ্রামে মেয়ে হয়ত জেলে কথা শুনে ভয়ে হাত পা কাঁপাকাঁপি করে দিবে।কথা বলতে গিয়ে তোতলাতে থাকবে। কিন্তু এই মেয়ে দেখে সব উল্ট। ভয় পাওয়া তো দূরে কথা। জেলে কাটানো নাকি তার একটা স্বপ্ন।এসব ভেবে স্বপ্ন মনে মনে কিছুটা হেসে দেয়।তারপর নীলের থেকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে বলে
-“জেলে যাওয়া সেটা তোমার স্বপ্ন হলেই।আমাদের কিন্তু তা নয়।১০টা বেজে গেছে এখন গাড়ি গুলো ছেড়ে দিবে।”
এটা বলে চলে যায়।

স্বপ্ন কান্ড দেখে নীল অবাক।সে সোহার জন্য ভিডিও করছিল।আর ওই ছেলে
তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়েছে।এখন তার এই ছেলে উপরে রাগ হচ্ছে।ইচ্ছে করছে।নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিতে। রাগ কে নিয়ন্ত্রন করে হাঁটা দেয়।

এখানে কিছুক্ষন বিরতি শেষ করে আবার চলা শুরু হয়।মূলত সাজেকের ভ্রমণার্থীদের নিরাপত্তা কথা বিবেচনায় রেখেই বাঘাইহাট বাজার থেকে সাজেক পর্যন্ত সবগুলো জিপ কে নিরাপত্তা পৌঁছে দেন নিরাপত্তাবাহিনী কর্মীরা।বাঘাইহাট বাজারের পর গঙ্গারাম মুখ।দু’পাশ থেকে বয়ে আসা দু’টি নদী এক হয়েছে এখানে।পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া সর্পিল নদী বয়ে গেছে বহুদূরে

তাদের জিপ মাচালং আর্মি ক্যাম্প সামনে।রাস্তা একপাশে অসংখ্যা জিপ সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।তা দেখে নীলের মনে হাজার প্রশ্ন উঁকিঝুকি দিচ্ছে।পেটের ভিতরে হাত জমে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,
-“রাস্তা একপাশে কেন গাড়ি গুলো দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধভাবে।
ধূসর বলে
-“এখানে গাড়ি গুলো সকাল ১০টায় সাজেক থেকে ছেড়েছে এসেছে।এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ হচ্ছে আমাদের যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।কারণ হচ্ছে এখানে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় ডাবল লাইনে গাড়ি চালানো সুযোগ নাই।ডাবল লাইনে গাড়ি চালালে বিপদ হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

মুখ ছোট করে -“ওহ বলে

নিজে কে নিজেই হাজার গালমন্দ দিচ্ছে। কেন সে এই সহজ জিনিস জানতে চেয়েছে।এখন তারা ভাব্বে,আমি কিছু জানি না।নীল তুই আস্তো একটা গাধী।সামান্য কথা পেটে চেপে রাখতে পারলি না।সব কিছু তোকে জানতেই হবে।কিছু কথা পেটের ভিতরে রাখলে তোর কি হয় নীল।

উড়োবাজার, গঙ্গারাম মুথ,নন্দরাম এসব পাহাড়ি পাড়া পেরিয়ে তাদের দ্বিতীয় যাত্রাবিরতি মাচালং বাজার।পাশের সিমান্তঘেঁষা ভারত থেকে আসা মাচালং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে এই ছোটখাটো মাচালং বাজার।এই এলাকা সাজেক ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্রস্থল। পাহাড়ে জুমের ফসল বিক্রি আর্দশ স্থান হলো মাচালং বাজার।

সবাই মিলে নামে মাচালংবাজারে নাস্তা করার জন্য। নাস্তা সেরে সবাই কিছুক্ষন উপজাতি বাজারে হেঁটে দেখে।মাচালং বাজার খুবই দুর্গম একটি বাজার।এখানে বাঙালিদের কোনো বসবাস নেই। এখানে একমাত্র পাহাড়িরাই বসবাস করেন।দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে বিদ্যুৎ কোনো সংযোগ নেই।।শুধু মাত্র সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎতে ব্যবস্থা করেছে।পাহাড়ি এলাকায় একজায়গা থেকে আরেক জায়গার ব্যবস্থা হচ্ছে মোটর সাইকেল।

চান্দের গাড়ি চলতে থাকে আবার নিজ গতিতে।স্বপ্ন সোনাবাহিনির গেস্ট হাউজ দেখিয়ে বলে
-“এটা হলো সেনাবাহিনীদের গেস্ট হাউজ।।
সবাই ভালো করে তাকিয়ে দেখে বিশেষ করে নীল।সে সেনাবাহিনীদের গেস্ট হাউজে ক্লিক করে একটা ছবি তুলে নেয়। বাসায় গিয়ে সবাইকে দেখাতে হবে না সাজকে গিয়ে কি কি দেখেছে।আরেকটু সামনে আসতেই। রোদ বলে
-” গাড়িতে করে পানি টাঙ্কি এগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
রোদের এই প্রশ্ন শুনে তৃণ বলে
-“যারা এরকম গাধা গাধা প্রশ্ন করে তাদের কে সাজেকে নিয়ে এই টাঙ্কিগুলোতে ডুবিয়ে মারা হবে।
রোদ চোখ গরম করে তাকায়।নীল বলে
-“আচ্ছা ভাইয়া আপনারা কি সোজা কথা সোজা উত্তর দিতে পারেন না।
ভাইয়া ডাক শুনে তৃন আর ধূসর একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। স্বপ্ন তাদের দেখে মনে মনে হাসে।ধূসর বলে
-” কোন এঙ্গেলে আমাদের কে তোমার কাছে ভাইয়া মনে হয়।
-“কেন??আপনার তিনজন আমার সমুদ্র ভাইয়া,তামিম ভাইয়া সমবয়সী হবেন।আমি তো তাদের কে ও ভাইয়া বলে ডাকি।সেই হিসাবে আপনার আমার ভাইয়া।

-“তুমি আমদের কে ভাইয়া বলবে না। আমাদের সবার বোন আছে।তারা আমাদের কে ভাইয়া বলে ডাকে।আর কারো ভাইয়া হওয়ার সখ নেই।

নীল এদের কথা শুনে অবাক হয়।ভাইয়া বললে আমাদের গ্রামের সবাই কতো খুশি হয়।আর এরা বলছে ভাইয়া বলে ডাকতে না।কি আজব!ব্যপার সেপার
তৃণ অসহায় মুখ করে বলে
-“পৃথিবী সব মেয়ে যদি আমাদের ভাইয়া বলে ডাকে। আর তারা যদি আমাদের বোন হয়।তাহলে বউ হবে কে???
-“তাহলে আমি আপনাদের কি বলে ডাকবো???
-“নাম বলে ডাকবে
-“আপনাদের মতো হাতিদের কে আমি নাম ধরে ডাকবো।ছি: ছি:আমি এতো খারাপ না যে বড় দের কে নাম ধরে ডাকবো।আমি আপনাদের ভাইয়া বলেই ডাকবো এটাই আমার শেষ কথা!
-“না, না
-“হ্যাঁ
-“না,না না
-“হ্যাঁ
এদের দুজনকে এভাবে চিল্লাতে দেখে সবাই অবাক।ভাইয়া নিয়ে তৃণ এতো ঝগড়া করছে।তার এই ভাইয়া ডাকাতে কি এতো এলার্জি। কেঊ তাকে ভাইয়া ডাকলে তার সাথে পায়ে পা লেগে ঝগড়া করবে।আজ সেইম কাজ করছে সে।
স্বপ্ন জোরে ধমক দিয়ে বলে,
-“চুপ করবি তৃণ। ছোট বাচ্চা নাকি তুই।

স্বপ্ন ধমক শুনে নীল ঘাপড়ে যায়। স্বপ্ন রোদের উদ্দেশ্য করে বলে।
-“সাজেক যেহেতু উঁচু উপত্যকা তাই সেখানে কোনো পানি ব্যবস্থা নেই।পাহাড়ে সাধারণত পানি ব্যবস্থা বলতেই ঝরণা কে বুঝানো হয়।।সাজেকের উপরে কোনো ঝরণা নেই।সেজন্য সাজেকের থেকে তিন কিলোমিটার নিচে মানে এখানে একটা ঝরণা থেকে পানি সংগ্রহ করে সাজেকে নিয়ে যাওয়া হয়।এখানে যে পানি ট্যাঙ্কি গুলো দেখতে পাচ্ছিস।এগুলো কিছুক্ষন মধ্যে উপরে নিয়ে যাওয়া হবে।প্রতিটি হোটেল এবং প্রতিটা ঘরেই এই পানি ব্যবহার করা হয়।তবে এখানে স্থানী যারা বসবাস করে তারা নিজের পানি নিজেরাই সংগ্রহ করে।তারা এই পানি সংগ্রহ করার জন্য দুই -তিন কিলোমিটার নিচে পানি সংগ্রহ করে আমায় উপরে আসে।
-“বাবাগো বাবা দুই তিন কিলোমিটার নিচে যেয়ে পানি সংগ্রহ করে।আমি হলে মারাই যেতাম।নীল বলে
রোদ বলে উঠে
-“নোয়াখাইল্লা আবার কবে থেকে হানি কে পানি বলে???
-“ঠিকই বলেছিস রোদ। নোয়াখাইল্লারা প উচ্চারণ হ করে।যেমন:পেঁপে তারা বলে হাবিয়া।পানি বলে হানি। খুব সুন্দর না রোদ।এটা বলে ধূসর হো হো হো করে হেসে দেয়।তার সাথে তৃণ যোগ দেয়।তৃন স্বপ্ন কে বলে
-“কিরে স্বপ্ন তোদের নোয়াখাইল্লারা এসব বলে নাকি।প রে হ

-“প্রথমত,আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলাতে হলে আমি কখনো যাইনি এবং আব্বু আম্মু কখন যায়নি। ছোট থেকে ঢাকাই বড় হয়েছি।তাই আমি জানি না এগুলো আদৌ কি নোয়াখালীর ভাষা।

নীলের এবার খুব রাগ হচ্ছে। তাকে নিয়ে এরা সবাই ব্যাঙ্গ করছে।ইইচ্ছে করছে তাদের সবার মাথা পাঠিয়ে দিতে।শুধু প্রাচ্য আপু সম্মানে কথা ভেবে নীল কিছু বলছে না।।ঠোঁট কামড়িয়ে বলে
-“রোদ আপু।তোমার না সমুদ্রভাইয়াকে বিয়ে করা ইচ্ছে।সমুদ্রভাইয়া বাড়ি ও কিন্তু নোয়াখালীতে। ভাইয়া কিন্তু বিয়ে করে বৌকে নিয়ে নোয়াখালীর মির্জা বাড়িতে বসবাস করবে।তোমার কি উচিত নিজের হবু শুশড় বাড়ি জেলা নিয়ে এভাবে ব্যাঙ্গ করা।আর সমুদ্রভাইয়া যদি জানে তুমি তাদের নোয়াখালী নিয়ে এই ভাবে ব্যাঙ্গ করেছো তাহলে ভাইয়া তোমার কি অবস্থা করবে আল্লাহই ভালো জানে।

নীলের কথা শুনে রোদ ভয়ে ঢোক গিলে।নীল যা বলেছে সবই তো সত্যি। আর সমুদ্র যদি জানতে পারে।তাহলে কি অবস্থা করবে তার ভাবলেই তার গা কাঁটা দিয়ে শিহরিত হয়।
রোদের ফানসে যাওয়া চেহারা দেখে নীল মনে মনে বলছে,”ইয়েস, ইয়েস, ফেরেছি, রোদ আপুকে জব্দ করতে পেরেছি।হেতেরা আমার জেলা নিয়ে ব্যাঙ্গ করবে আর আমি চাইয়া চাইয়া তাদের মুখখানা দেখবো তাই কি হয়।”এবার নীল ধুসর করে বলে
-“ধুসর ভাইয়া আপনি কি জানে এই নোয়াখাইল্লা যে পানিকে যে হানি বলে এটা তাদের একটা আর্ট।যা সবাই পারে না।যেমন আপনাদের মতো ঢাকাইয়ারা পারবে না।এটা শুধু নোয়াখাইল্লা পারে।হহু
-“আমার এই নোয়াখাইল্লাদের ভাষা শেখার ইচ্ছে নেই।প উচ্চারণ হ করে। এটাকে নাকি আর্ট বলে।
নীলের এবার রাগ উঠে যায়।চিল্লিয়ে বলতে থাকে
-“এই সাদা বিলাইর দল। তোদের তিনজনে দেখবি নোয়াখালীতে বিয়ে হবে।আমাদের নোয়াখালীকে ঘৃনা করিস।তাই দোয়া করেই দিলাম তোদের তিনজনের যেন পাগলাকুকুর মতো নোয়াখাইল্লা মাইয়াদের পিছন ছুটতে হয়।
-“আমাদের জন্য কি বাংলাদের আর ৬৩ জেলার মেয়ের অভাব পড়ছে।তাই তোমাদের এই নোয়াখালী জেলাতেই বিয়ে করতে যেতেই হবে।
-“আমি যখন বলেছি হবে।তার মানে হবে।
-“তুমি কি আল্লাহ পীর নাকি,যে তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে।

নীল এবার মহাভাবনাই পড়েছে।সত্যি তো সে পীর নয়।কিন্তু এখন তার কথা ফলাবে কি করে।কিছুক্ষন ভেবে বলে
-“পাইছি
সবাই ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে কি পাইছে
-“হ্যাঁ পেয়েছি।।ধুসর ভাইয়া সাথে যদি প্রাচ্য আপু বিয়ে হয়। তাহলে তো আমার কথা ঠিকই হবে।
একথা শুনে প্রাচ্য বর বড় চোখে করে তাকায় তৃণ দিকে।তার রিয়েক্সশন দেখার জন্য।কিন্ত তৃণ খুব স্বাভাবিক দেখে।প্রাচ্য খুবখারাপ হয়।বাহিরে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। যাতেই সবাই বুঝতে পারে তাদের কথা দিকে প্রাচ্য মন নেইই।নীল আবার বলে
-“তৃণ ভাইয়ার সাথে সোহার বিয়ে হলে ভালো হবে আর সমুদ্রভাইয়া সাথে তো রোদ আপু আছে।
তৃণ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে বলে
-“সোহা কে
-“সোহা হলো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।এবার দেখলেন তো কি ভাবে আপনাদের মিল হবে নোয়াখালীতে।আর নোয়াখালী কার কার সাথে আপনাদের বিয়ে হবে।

রোদ বলে,
-“এখন তো একজন বাকি আছে।স্বপ্নর কার সাথে বিয়ে হবে

রোদের কথা শুনে নীল আবার ভাবতে বসে।সত্যি তো সে এই সুন্দর ছেলে টা কথা কেন ভাবেনি।এখন এই সুন্দর আরে এই ভালো ছেলে সাথে কার মিল দেওয়া যায়।কার মিল দেওয়া যায়।আর কেউ তো নেই তার জানা।তাহলে এই সুন্দর ছেলে বিয়ে কার সাথে দিবে।না সে আর ভাবতে পারছে না

রোদ আবার বলে,
-“কি হলো বলো স্বপ্নরটা।

নীল আর ভাবতে পারছেনা। ছট জলদি বলে ফেলে
-“উনার সাথে আমার হবে বিয়ে।
স্বপ্ন এই কথা শুনে সে কাশতে থাকে।এই মেয়ে জানে না কোথায় কি বলতে হয়।
সবাই স্বপ্ন কে দেখছে।স্বপ্ন ভ্র কুচকে জিজ্ঞেস করে
-“এভাবে তাকিয়ে আসিস কেন???
-“মেয়েটা কি বলেছিস। শুনেছিস।
-“আরে পিচ্ছি একটা মেয়ে কি থেকে কি বলেছে।আর তোরা এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস যেন আমি এই মেয়েকে বিয়ে করে ফেলছি তোদের না জানিয়ে।
প্রাচ্য নীলের কথা শুনে একবার স্বপ্ন দিকে তাকায় একবার নীলের দিকে তাকায়।কিছু মনে কথা বলেছে তার যেন আনন্দ হচ্ছে।প্রাচ্য মনে মনে বলে
নীলের জন্য পুরো পারফেক্ট হলো স্বপ্ন।স্বপ্নই পারবেই নীলের এই ছেলে মানুষী গুলো দূর করতে।স্বপ্ন মতো ম্যাচিউর কেউ নীলের জীবনে দরকার।
তৃণ স্বপ্ন কাছে ফিসফিস করে বলে
-“মেয়েটা কিন্ত হেব্বি।তোর সাথে ভালোই মানাবে।কিন্তু একটু পাগল টাইপের । এটাই সমস্যা।
স্বপ্ন এবার নীলের দিকে তাকায়। এই মেয়ে কোনো ব্যাপার সিরিয়াস না।যে কোনো কিছু ছেলেমানুষি ভেবেই করে ফেলে।এই মেয়ের বুঝা উচিত এই সব করার বয়স এখন না।কিন্তু এই মেয়েটা হলো উড়নচণ্ডী স্বভাবের।

মাচালং বাজার থেকে সাজেকের দূরুত্ব ১৮ কিলোমিটার । বন্ধুর পথেই দু’পাশেই আকাশচুম্বী পাহাড়ের বুকে দেখা মিলবে বৃক্ষরাজির।মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন বসতি।নীল আকাশ আর পাহাড়ে মেঘের গড়াগড়িতে দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাবেন মেঘের রাজ্য সাজেকে।

#চলবে
#কাউছার সুলতানা স্বর্ণা
(ভুল -ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সাজেকের কোনো তথ্য যদি ভুল হয়ে থাকে।তাহলে কমেন্ট ভুলটা ধরিয়ে দিবেন।আসলে আমি কখন সাজেক যাইনি।সাজেক কেনো জীবন এখন কোথাও ঘুরতে চাইনি।আর একটা কথা, কষ্ট করে যখন কমেন্ট করেন তাহলে দয়া করে নেক্সট, নাইছ কমেন্ট করবেন।গল্প যখন দিয়েছি নেক্সট তো দিবোই।আমি দুই তিন ঘন্টা কষ্ট করে আপনাদের জন্য লেখি।আর আপনা একটু গঠনমূলক কমেন্ট করতে পারেন না।। অবশেষে এটাই বলবো ভুল হলে ক্ষমা চোখে দেখবেন।নতুন লেখিকা তো তাই)

স্বপ্নীল ০৫

0

স্বপ্নীল
০৫
পুরোটা পথজুড়ে সবুজ পাহাড় যেন নিজেকে ঢেকে রেখেছে কুয়শার নরম চাদরে। সাজেক যাওয়ার পথে কয়েকবার যাত্রাবিরতি।পথে প্রথম বিরতি বাঘাইহাট বাজার।পাহাড় কোল ঘেঁষে এই পাহাড়ি বাজারে পাশ দিয়ে চলে গেছে কাচালং নদী।

,,

গাড়ি গুলো সিরিয়াল ভাবে দাঁড় করানো হয়েছে মাঠে।রাস্তায় যেন জ্যাম না লাগে সে জন্য সব গুলো গাড়ি মাঠের একত্রিত করা হয়েছে।বাঘাইহাট আর্মি ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রত্যকেটি গাড়িকে আলাদা ভাবে টোকেন নিতে হবে এবং সেই টোকেনটি সাজেক থেকে ফেরার সময় বাঘাইহাট আর্মি ক্যান্টনমেন্ট জমা দিয়ে যেতে হবে।

স্বপ্ন গাড়ি থেকে নেমে ক্যাম্প দিকে এগিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে নাম, ঠিকানা এবং কোন রিসোর্ট উঠবো সব কিছু বলে টোকেন নিয়ে এসে দেখে।নীল এই বাঘাইহাঁট ভিউ ভিডিও করছে।তা দেখে নীলের কাছে দ্রুত হেঁটে যায়।
-“আর্মিদের অনুমিত ছাড়া এই জায়গাটা ভিডিও করা যায় না।।
-“অনুমিত না, নিলেই তারা কি শাস্তি দিবে আমায়।
স্বপ্ন ভয় দেখানো জন্য বলে,
-“একবছর জেলা খাটতে হবে।
স্বপ্ন কথা শুনে নীল মোবাইল থেকে চোখে সরিয়ে স্বপ্ন সামনে এসে খুশিতে গদগদ করে বলে
-“সত্যিইইইইইইই!আমার তো অনেক ইচ্ছা ছিল একটা রাত জেলে কাটানোর। আমি বুঝতে পারেনি এই ভাবে আমার জেলে কাটানোর স্বপ্নটা পুরন হয়ে যাবে।
এই বলে আমার খুশিতে লাফিয়ে আবার ভিডিও করে।

স্বপ্ন ভেবেছে গ্রামে মেয়ে হয়ত জেলে কথা শুনে ভয়ে হাত পা কাঁপাকাঁপি করে দিবে।কথা বলতে গিয়ে তোতলাতে থাকবে। কিন্তু এই মেয়ে দেখে সব উল্ট। ভয় পাওয়া তো দূরে কথা। জেলে কাটানো নাকি তার একটা স্বপ্ন।এসব ভেবে স্বপ্ন মনে মনে কিছুটা হেসে দেয়।তারপর নীলের থেকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে বলে
-“জেলে যাওয়া সেটা তোমার স্বপ্ন হলেই।আমাদের কিন্তু তা নয়।১০টা বেজে গেছে এখন গাড়ি গুলো ছেড়ে দিবে।”
এটা বলে চলে যায়।

স্বপ্ন কান্ড দেখে নীল অবাক।সে সোহার জন্য ভিডিও করছিল।আর ওই ছেলে
তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়েছে।এখন তার এই ছেলে উপরে রাগ হচ্ছে।ইচ্ছে করছে।নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিতে। রাগ কে নিয়ন্ত্রন করে হাঁটা দেয়।

এখানে কিছুক্ষন বিরতি শেষ করে আবার চলা শুরু হয়।মূলত সাজেকের ভ্রমণার্থীদের নিরাপত্তা কথা বিবেচনায় রেখেই বাঘাইহাট বাজার থেকে সাজেক পর্যন্ত সবগুলো জিপ কে নিরাপত্তা পৌঁছে দেন নিরাপত্তাবাহিনী কর্মীরা।বাঘাইহাট বাজারের পর গঙ্গারাম মুখ।দু’পাশ থেকে বয়ে আসা দু’টি নদী এক হয়েছে এখানে।পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া সর্পিল নদী বয়ে গেছে বহুদূরে

তাদের জিপ মাচালং আর্মি ক্যাম্প সামনে।রাস্তা একপাশে অসংখ্যা জিপ সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।তা দেখে নীলের মনে হাজার প্রশ্ন উঁকিঝুকি দিচ্ছে।পেটের ভিতরে হাত জমে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,
-“রাস্তা একপাশে কেন গাড়ি গুলো দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধভাবে।
ধূসর বলে
-“এখানে গাড়ি গুলো সকাল ১০টায় সাজেক থেকে ছেড়েছে এসেছে।এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ হচ্ছে আমাদের যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।কারণ হচ্ছে এখানে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় ডাবল লাইনে গাড়ি চালানো সুযোগ নাই।ডাবল লাইনে গাড়ি চালালে বিপদ হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

মুখ ছোট করে -“ওহ বলে

নিজে কে নিজেই হাজার গালমন্দ দিচ্ছে। কেন সে এই সহজ জিনিস জানতে চেয়েছে।এখন তারা ভাব্বে,আমি কিছু জানি না।নীল তুই আস্তো একটা গাধী।সামান্য কথা পেটে চেপে রাখতে পারলি না।সব কিছু তোকে জানতেই হবে।কিছু কথা পেটের ভিতরে রাখলে তোর কি হয় নীল।

উড়োবাজার, গঙ্গারাম মুথ,নন্দরাম এসব পাহাড়ি পাড়া পেরিয়ে তাদের দ্বিতীয় যাত্রাবিরতি মাচালং বাজার।পাশের সিমান্তঘেঁষা ভারত থেকে আসা মাচালং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে এই ছোটখাটো মাচালং বাজার।এই এলাকা সাজেক ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্রস্থল। পাহাড়ে জুমের ফসল বিক্রি আর্দশ স্থান হলো মাচালং বাজার।

সবাই মিলে নামে মাচালংবাজারে নাস্তা করার জন্য। নাস্তা সেরে সবাই কিছুক্ষন উপজাতি বাজারে হেঁটে দেখে।মাচালং বাজার খুবই দুর্গম একটি বাজার।এখানে বাঙালিদের কোনো বসবাস নেই। এখানে একমাত্র পাহাড়িরাই বসবাস করেন।দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে বিদ্যুৎ কোনো সংযোগ নেই।।শুধু মাত্র সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎতে ব্যবস্থা করেছে।পাহাড়ি এলাকায় একজায়গা থেকে আরেক জায়গার ব্যবস্থা হচ্ছে মোটর সাইকেল।

চান্দের গাড়ি চলতে থাকে আবার নিজ গতিতে।স্বপ্ন সোনাবাহিনির গেস্ট হাউজ দেখিয়ে বলে
-“এটা হলো সেনাবাহিনীদের গেস্ট হাউজ।।
সবাই ভালো করে তাকিয়ে দেখে বিশেষ করে নীল।সে সেনাবাহিনীদের গেস্ট হাউজে ক্লিক করে একটা ছবি তুলে নেয়। বাসায় গিয়ে সবাইকে দেখাতে হবে না সাজকে গিয়ে কি কি দেখেছে।আরেকটু সামনে আসতেই। রোদ বলে
-” গাড়িতে করে পানি টাঙ্কি এগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
রোদের এই প্রশ্ন শুনে তৃণ বলে
-“যারা এরকম গাধা গাধা প্রশ্ন করে তাদের কে সাজেকে নিয়ে এই টাঙ্কিগুলোতে ডুবিয়ে মারা হবে।
রোদ চোখ গরম করে তাকায়।নীল বলে
-“আচ্ছা ভাইয়া আপনারা কি সোজা কথা সোজা উত্তর দিতে পারেন না।
ভাইয়া ডাক শুনে তৃন আর ধূসর একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। স্বপ্ন তাদের দেখে মনে মনে হাসে।ধূসর বলে
-” কোন এঙ্গেলে আমাদের কে তোমার কাছে ভাইয়া মনে হয়।
-“কেন??আপনার তিনজন আমার সমুদ্র ভাইয়া,তামিম ভাইয়া সমবয়সী হবেন।আমি তো তাদের কে ও ভাইয়া বলে ডাকি।সেই হিসাবে আপনার আমার ভাইয়া।

-“তুমি আমদের কে ভাইয়া বলবে না। আমাদের সবার বোন আছে।তারা আমাদের কে ভাইয়া বলে ডাকে।আর কারো ভাইয়া হওয়ার সখ নেই।

নীল এদের কথা শুনে অবাক হয়।ভাইয়া বললে আমাদের গ্রামের সবাই কতো খুশি হয়।আর এরা বলছে ভাইয়া বলে ডাকতে না।কি আজব!ব্যপার সেপার
তৃণ অসহায় মুখ করে বলে
-“পৃথিবী সব মেয়ে যদি আমাদের ভাইয়া বলে ডাকে। আর তারা যদি আমাদের বোন হয়।তাহলে বউ হবে কে???
-“তাহলে আমি আপনাদের কি বলে ডাকবো???
-“নাম বলে ডাকবে
-“আপনাদের মতো হাতিদের কে আমি নাম ধরে ডাকবো।ছি: ছি:আমি এতো খারাপ না যে বড় দের কে নাম ধরে ডাকবো।আমি আপনাদের ভাইয়া বলেই ডাকবো এটাই আমার শেষ কথা!
-“না, না
-“হ্যাঁ
-“না,না না
-“হ্যাঁ
এদের দুজনকে এভাবে চিল্লাতে দেখে সবাই অবাক।ভাইয়া নিয়ে তৃণ এতো ঝগড়া করছে।তার এই ভাইয়া ডাকাতে কি এতো এলার্জি। কেঊ তাকে ভাইয়া ডাকলে তার সাথে পায়ে পা লেগে ঝগড়া করবে।আজ সেইম কাজ করছে সে।
স্বপ্ন জোরে ধমক দিয়ে বলে,
-“চুপ করবি তৃণ। ছোট বাচ্চা নাকি তুই।

স্বপ্ন ধমক শুনে নীল ঘাপড়ে যায়। স্বপ্ন রোদের উদ্দেশ্য করে বলে।
-“সাজেক যেহেতু উঁচু উপত্যকা তাই সেখানে কোনো পানি ব্যবস্থা নেই।পাহাড়ে সাধারণত পানি ব্যবস্থা বলতেই ঝরণা কে বুঝানো হয়।।সাজেকের উপরে কোনো ঝরণা নেই।সেজন্য সাজেকের থেকে তিন কিলোমিটার নিচে মানে এখানে একটা ঝরণা থেকে পানি সংগ্রহ করে সাজেকে নিয়ে যাওয়া হয়।এখানে যে পানি ট্যাঙ্কি গুলো দেখতে পাচ্ছিস।এগুলো কিছুক্ষন মধ্যে উপরে নিয়ে যাওয়া হবে।প্রতিটি হোটেল এবং প্রতিটা ঘরেই এই পানি ব্যবহার করা হয়।তবে এখানে স্থানী যারা বসবাস করে তারা নিজের পানি নিজেরাই সংগ্রহ করে।তারা এই পানি সংগ্রহ করার জন্য দুই -তিন কিলোমিটার নিচে পানি সংগ্রহ করে আমায় উপরে আসে।
-“বাবাগো বাবা দুই তিন কিলোমিটার নিচে যেয়ে পানি সংগ্রহ করে।আমি হলে মারাই যেতাম।নীল বলে
রোদ বলে উঠে
-“নোয়াখাইল্লা আবার কবে থেকে হানি কে পানি বলে???
-“ঠিকই বলেছিস রোদ। নোয়াখাইল্লারা প উচ্চারণ হ করে।যেমন:পেঁপে তারা বলে হাবিয়া।পানি বলে হানি। খুব সুন্দর না রোদ।এটা বলে ধূসর হো হো হো করে হেসে দেয়।তার সাথে তৃণ যোগ দেয়।তৃন স্বপ্ন কে বলে
-“কিরে স্বপ্ন তোদের নোয়াখাইল্লারা এসব বলে নাকি।প রে হ

-“প্রথমত,আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলাতে হলে আমি কখনো যাইনি এবং আব্বু আম্মু কখন যায়নি। ছোট থেকে ঢাকাই বড় হয়েছি।তাই আমি জানি না এগুলো আদৌ কি নোয়াখালীর ভাষা।

নীলের এবার খুব রাগ হচ্ছে। তাকে নিয়ে এরা সবাই ব্যাঙ্গ করছে।ইইচ্ছে করছে তাদের সবার মাথা পাঠিয়ে দিতে।শুধু প্রাচ্য আপু সম্মানে কথা ভেবে নীল কিছু বলছে না।।ঠোঁট কামড়িয়ে বলে
-“রোদ আপু।তোমার না সমুদ্রভাইয়াকে বিয়ে করা ইচ্ছে।সমুদ্রভাইয়া বাড়ি ও কিন্তু নোয়াখালীতে। ভাইয়া কিন্তু বিয়ে করে বৌকে নিয়ে নোয়াখালীর মির্জা বাড়িতে বসবাস করবে।তোমার কি উচিত নিজের হবু শুশড় বাড়ি জেলা নিয়ে এভাবে ব্যাঙ্গ করা।আর সমুদ্রভাইয়া যদি জানে তুমি তাদের নোয়াখালী নিয়ে এই ভাবে ব্যাঙ্গ করেছো তাহলে ভাইয়া তোমার কি অবস্থা করবে আল্লাহই ভালো জানে।

নীলের কথা শুনে রোদ ভয়ে ঢোক গিলে।নীল যা বলেছে সবই তো সত্যি। আর সমুদ্র যদি জানতে পারে।তাহলে কি অবস্থা করবে তার ভাবলেই তার গা কাঁটা দিয়ে শিহরিত হয়।
রোদের ফানসে যাওয়া চেহারা দেখে নীল মনে মনে বলছে,”ইয়েস, ইয়েস, ফেরেছি, রোদ আপুকে জব্দ করতে পেরেছি।হেতেরা আমার জেলা নিয়ে ব্যাঙ্গ করবে আর আমি চাইয়া চাইয়া তাদের মুখখানা দেখবো তাই কি হয়।”এবার নীল ধুসর করে বলে
-“ধুসর ভাইয়া আপনি কি জানে এই নোয়াখাইল্লা যে পানিকে যে হানি বলে এটা তাদের একটা আর্ট।যা সবাই পারে না।যেমন আপনাদের মতো ঢাকাইয়ারা পারবে না।এটা শুধু নোয়াখাইল্লা পারে।হহু
-“আমার এই নোয়াখাইল্লাদের ভাষা শেখার ইচ্ছে নেই।প উচ্চারণ হ করে। এটাকে নাকি আর্ট বলে।
নীলের এবার রাগ উঠে যায়।চিল্লিয়ে বলতে থাকে
-“এই সাদা বিলাইর দল। তোদের তিনজনে দেখবি নোয়াখালীতে বিয়ে হবে।আমাদের নোয়াখালীকে ঘৃনা করিস।তাই দোয়া করেই দিলাম তোদের তিনজনের যেন পাগলাকুকুর মতো নোয়াখাইল্লা মাইয়াদের পিছন ছুটতে হয়।
-“আমাদের জন্য কি বাংলাদের আর ৬৩ জেলার মেয়ের অভাব পড়ছে।তাই তোমাদের এই নোয়াখালী জেলাতেই বিয়ে করতে যেতেই হবে।
-“আমি যখন বলেছি হবে।তার মানে হবে।
-“তুমি কি আল্লাহ পীর নাকি,যে তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে।

নীল এবার মহাভাবনাই পড়েছে।সত্যি তো সে পীর নয়।কিন্তু এখন তার কথা ফলাবে কি করে।কিছুক্ষন ভেবে বলে
-“পাইছি
সবাই ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে কি পাইছে
-“হ্যাঁ পেয়েছি।।ধুসর ভাইয়া সাথে যদি প্রাচ্য আপু বিয়ে হয়। তাহলে তো আমার কথা ঠিকই হবে।
একথা শুনে প্রাচ্য বর বড় চোখে করে তাকায় তৃণ দিকে।তার রিয়েক্সশন দেখার জন্য।কিন্ত তৃণ খুব স্বাভাবিক দেখে।প্রাচ্য খুবখারাপ হয়।বাহিরে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। যাতেই সবাই বুঝতে পারে তাদের কথা দিকে প্রাচ্য মন নেইই।নীল আবার বলে
-“তৃণ ভাইয়ার সাথে সোহার বিয়ে হলে ভালো হবে আর সমুদ্রভাইয়া সাথে তো রোদ আপু আছে।
তৃণ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে বলে
-“সোহা কে
-“সোহা হলো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।এবার দেখলেন তো কি ভাবে আপনাদের মিল হবে নোয়াখালীতে।আর নোয়াখালী কার কার সাথে আপনাদের বিয়ে হবে।

রোদ বলে,
-“এখন তো একজন বাকি আছে।স্বপ্নর কার সাথে বিয়ে হবে

রোদের কথা শুনে নীল আবার ভাবতে বসে।সত্যি তো সে এই সুন্দর ছেলে টা কথা কেন ভাবেনি।এখন এই সুন্দর আরে এই ভালো ছেলে সাথে কার মিল দেওয়া যায়।কার মিল দেওয়া যায়।আর কেউ তো নেই তার জানা।তাহলে এই সুন্দর ছেলে বিয়ে কার সাথে দিবে।না সে আর ভাবতে পারছে না

রোদ আবার বলে,
-“কি হলো বলো স্বপ্নরটা।

নীল আর ভাবতে পারছেনা। ছট জলদি বলে ফেলে
-“উনার সাথে আমার হবে বিয়ে।
স্বপ্ন এই কথা শুনে সে কাশতে থাকে।এই মেয়ে জানে না কোথায় কি বলতে হয়।
সবাই স্বপ্ন কে দেখছে।স্বপ্ন ভ্র কুচকে জিজ্ঞেস করে
-“এভাবে তাকিয়ে আসিস কেন???
-“মেয়েটা কি বলেছিস। শুনেছিস।
-“আরে পিচ্ছি একটা মেয়ে কি থেকে কি বলেছে।আর তোরা এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস যেন আমি এই মেয়েকে বিয়ে করে ফেলছি তোদের না জানিয়ে।
প্রাচ্য নীলের কথা শুনে একবার স্বপ্ন দিকে তাকায় একবার নীলের দিকে তাকায়।কিছু মনে কথা বলেছে তার যেন আনন্দ হচ্ছে।প্রাচ্য মনে মনে বলে
নীলের জন্য পুরো পারফেক্ট হলো স্বপ্ন।স্বপ্নই পারবেই নীলের এই ছেলে মানুষী গুলো দূর করতে।স্বপ্ন মতো ম্যাচিউর কেউ নীলের জীবনে দরকার।
তৃণ স্বপ্ন কাছে ফিসফিস করে বলে
-“মেয়েটা কিন্ত হেব্বি।তোর সাথে ভালোই মানাবে।কিন্তু একটু পাগল টাইপের । এটাই সমস্যা।
স্বপ্ন এবার নীলের দিকে তাকায়। এই মেয়ে কোনো ব্যাপার সিরিয়াস না।যে কোনো কিছু ছেলেমানুষি ভেবেই করে ফেলে।এই মেয়ের বুঝা উচিত এই সব করার বয়স এখন না।কিন্তু এই মেয়েটা হলো উড়নচণ্ডী স্বভাবের।

মাচালং বাজার থেকে সাজেকের দূরুত্ব ১৮ কিলোমিটার । বন্ধুর পথেই দু’পাশেই আকাশচুম্বী পাহাড়ের বুকে দেখা মিলবে বৃক্ষরাজির।মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন বসতি।নীল আকাশ আর পাহাড়ে মেঘের গড়াগড়িতে দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাবেন মেঘের রাজ্য সাজেকে।

#চলবে
#কাউছার সুলতানা স্বর্ণা
(ভুল -ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সাজেকের কোনো তথ্য যদি ভুল হয়ে থাকে।তাহলে কমেন্ট ভুলটা ধরিয়ে দিবেন।আসলে আমি কখন সাজেক যাইনি।সাজেক কেনো জীবন এখন কোথাও ঘুরতে চাইনি।আর একটা কথা, কষ্ট করে যখন কমেন্ট করেন তাহলে দয়া করে নেক্সট, নাইছ কমেন্ট করবেন।গল্প যখন দিয়েছি নেক্সট তো দিবোই।আমি দুই তিন ঘন্টা কষ্ট করে আপনাদের জন্য লেখি।আর আপনা একটু গঠনমূলক কমেন্ট করতে পারেন না।। অবশেষে এটাই বলবো ভুল হলে ক্ষমা চোখে দেখবেন।নতুন লেখিকা তো তাই)

স্বপ্নীল ০৪

0

স্বপ্নীল
০৪
পরেদিন সকাল সাড়ে ছয়টা সবার ঘুম ভেঙে যায়।তাদের গাড়ি খাগড়াছড়ি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে।সমতল থেকে কতটুকু উপরে যা কেউ নিদিষ্ট করে বলতে পারবে না।বেশ উপর দিয়ে যাচ্ছে এইটুকু বলতে পারবে সবাই।নিচে তাকালে ছোটবড় অনেক পাহাড় দেখা যায়।

খাগড়াছড়ি যাওয়া পথে এমন রাস্তা দেখলে মনে হবে।শত শত বছর ধরে যেন কেউ পাহাড় কেটে রাস্তা ব্যবস্থা করে রেখেছে।সত্যি এক কথা অসাধারণ। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হবে,নৌকা যেমন দুই দিকে দুলে তেমন গাড়ি যেন দুই দিকে দুলছে।কারন রাস্তা কন্ডিশন হচ্ছে আঁকাবাঁকা।কিন্তু কোয়ালিটি ছিলো অনেক ভালো। কোথায় ও রাস্তা ভাঙাচুরা নেই।

-“এই মাইয়াদের ফাঁন্দের পড়ে কেন যে এসি বাস নিলাম না।তাহলে কালকে রাত বরফে মতো আমার শরীর জমে যেত না” ধূসর বলে।
প্রাচ্য আর রোদ কিছু বলে না।কি আর বলবে কালকে রাতে ঠাণ্ডা তাদের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আছে। নীল, সবুজ ছোট বড় পাহাড় দেখে মনোমুগ্ধকর ভাবে তাকিয়ে আছে।তার এখন’ই ছূটে যেতেই মন চাচ্ছে। নীল খেয়াল করে তার গায়ে উপরে একটা জ্যাকেট দেওয়া।একবার স্বপ্ন দিকে তাকায় এবার জ্যাকেট দিকে তাকায়। তা দেখে স্বপ্ন বলে
-“কালকে রাতে তোমার ঠান্ডা লাগছিল তাই দিয়েছিলাম
নীল ছোট করে বলে,
-“ওহ”
-“জ্যাকেট পড়ে নাও।তাহলে ঠান্ডা কম লাগবে।
নীল জ্যাকেট পড়ে নেয়।প্রাচ্য কে বলে
-“আপু আর কতো সময় লাগবে সাজেক যেতেই। আমার যে বসতে বসতে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে।
তখনই তৃণ বলে
-“তুমি কুমিল্লা থেকে উঠেছো তারপর বলছো কোমর ব্যথা হয়ে গেছে। আর ঢাকা থেকে উঠলেই তোমাকে খুজে পাওয়া যেত না।
নীল কিছু বলতে গেলেই স্বপ্ন বলে
-“কিছুক্ষন পর আমরা খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ড নেমে যাবো। শাপলা চত্বর থেকে চান্দের গাড়ি নিয়ে দিঘিনাল।দিঘিনাল থেকেই বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প। তারপর মাচালং বাজার থেকে সাজেক ভ্যালি।
-“এখন অনেক পথ।আচ্ছা আপনি এখানে আর এসেছেন।
-“আমি, ধূসর,সমুদ্র এসেছিলাম।
-“সমুদ্র ভাইয়া এসেছিল।
-“হুম
রোদ বলে,
-“এবার কেন সমুদ্র আসলো না। আসলে তো অনেক মজা হতো।
তৃণ বলে উঠে,
-“সমুদ্র কেন আসেনি জানিস??
-“কেন???
-“সমুদ্র এবারব ট্যুরে আসতে চেয়েছে যখন শুনেছে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, এবার আমাদের সাথে ট্যুরে যাবে।তাই আসে নি।
-“কি বললি ও আমার জন্য ট্যুরে আসেনি।এই খাটাশ বুঝি আমার জন্য ট্যুরে আসে নাই। ও গতবার সাজেক ট্যুরে কি করেছে।আমায় বাদ দিয়ে সবাই কে নিয়ে ট্যুর প্ল্যান করেছে।আমি কতো কান্না করেছি যেন আমায় নেয়। কিন্তু নেয়নি।আমার বদল হয়ে স্বপ্ন, তাকে request করেছে তারপর আমায় নেয় নি। আমাকে ট্যুরে নেয়নি বলে প্রাচ্য আর সেই ট্যুরে যায়নি।স্বপ্ন, ধূসর, সমুদ্র গেছে।।আমার ইচ্ছা করছিল খাটাশটারে আলুভর্তা বানিয়ে খেয়ে ফেলি।।
ধূসর বলে,
-” সমুদ্র কে খাটাশ বলেছিস আমি এতক্ষন তোর কথা গুলো রেকর্ড করেছি। এখন রেকর্ডটা সেন্ট করে দিবো সমুদ্র কাছে।
– রোদ এবার নিজের সিটে উঠে পিছন ফিরে ধূসরে চুল টেনে ধরে বলে,
-“কি বললি??? তুই সমুদ্র কাছে রেকর্ড পাঠাবি । আজ আমি তোর চুল একটা রাখবো না।বন্ধু হয়ে বন্ধু ভালোবাসায় কাঁটা হয়ে দাঁড়ালি।সমুদ্র যদি শুনতে পায়।আমি তাকে খাটাশ বলেছি সে কি আমায় আস্ত রাখবে।
স্বপ্ন আর প্রাচ্য মিলেই রোদ কে ছুটায়।ধুসর নিজের মাথার চুলে হাত দিয়ে। বলে
-“গুন্ডি মেয়ে।আমার এতো সুন্দর চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলত আর একটু হলেই।আমি তোকে অভিশাপ দিলাম। সমুদ্র যেন তোর ভালোবাসা কোনোদিন বুঝতে না পারে।সারাজীবন যেন সমুদ্র পিছন পিছন ঘুরিস।
-“সমুদ্র গলায় ঝুলতে না পারলে তোর গলাই ঝুলবো।
-“এ্যাঁ,শখ কতো।আমার জন্য দুনিয়াতে মেয়ের অভাব পড়ছে। আমি তোর মতো গুন্ডি মেয়েকে আমার গলায় ঝুলাবো।
-“তোর কপাল ভালো বলেই আমার মতো সুন্দরী মেয়ে তোর কপালই ঝুটবে।

তৃণ বলে,
– তোদের কে সুন্দরী বলে না।তোদেক বলে মেকাপ সুন্দরী। আটা ময়দা মেখে সুন্দরী হোস।আটা আর ময়দার দাম যে হারেবেড়ে গেছে।
রোদ বলে,
-“তোর গার্ল ফ্রেন্ড টিনা, মিনা রিনা তারা কি মাখে।তারা তো আমাদের চেয়ে দ্বিগুন মেকাপ করে।আর ঠোঁটে কি বিশ্রি লাল টুকটুক লিপস্টিক দেয়।নির্ঘাত গার্ল ফ্রেন্ড কে কিস করতে গেলেই। ওই পঁচা লিপস্টিক খেয়ে তোর পেট খারাপ হবে।

রোদের মুখে এই কথা শুনে নীল খিলখিল করে হেসে দেয়।।হাসি থামিয়ে বলে
-“লিপস্টিক খেলে বুঝি পেট খারাপ হয়।তাহলে মুভিতে নায়ক নায়িকাকে কিস করতো না।
প্রাচ্য ধমকের সুরে বলে
-“চুপ কর নীল।আর শোন রোদ,কারো কথা কান দিবি না। মেজো ভাইয়া বিদেশ গেছে । তাই সমুদ্র ভাইয়াকে অফিসে নিয়মিত এখন যেত হবে। তাই আসেনি।এই ধূসরে কথায় কান দিবি না।

সবাই আর কোনো কথা বলেনি।৮.৩০তাদের গাড়ি খাগড়াছড়ি পৌঁছে।তাদের গাড়ি ট্রাফিকজ্যাম আটকে, তাই তাদের এক ঘন্টা লেট হয়।তাই ৭.০০পৌঁছানোর কথা সেই জায়গা ৮.৩০পৌঁছায়।সাজেক আশার ক্ষেতে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ।

খাগড়াছড়ি থেকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পৌঁছাতেই হবে। কারণ বাঘাইহাট থেকে সাজেক যেতেই বাকিটুকু রাস্তায় সেনাবাহিনির এসকর্টে করে যেতে হবে। সেনাবাহিনী এসকর্ট দিনে দুইবার পাওয়া যায়।সকাল ১০.০০টায় একবার, বিকাল ৩.০০টা একবার।
কোনো ভাবেই যদি সকালের এসকর্ট মিস করেন।তাহলে বিকাল তিনটার এসকর্টে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।সেনাবাহিনী এসকর্ট ছাড়া কোনো ভাবেই সাজেক যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হবেনা।সেনাবাহিনী এসকর্ট ঘাট দিতে দিতে নিয়ে যাবেই।যাতে পর্যটকদের কোনো সমস্যা না হয়। পাহাড়ি উপজাতি দের কোনো সমস্যা না হয়। তাই সাজেক আসার ক্ষেতে সময় ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে।

নিজের সব জিনিস পত্র নিয়ে সবাই নেমে যায় খাগড়াছড়ি। স্বপ্ন বলে
-“প্রাচ্য এখানে একটা ওয়াশরুম আছে।তোরা সবাই যা ফ্রেশ হয়ে আয়।আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছে।

নীল,রোদ, প্রাচ্য চলে যায়।
তৃন বলে,
-“স্বপ্ন চান্দের গাড়ি কই আসছে না যে।

ধুসর বলে
-“আগেই থেকে কি চান্দের গাড়ি খবর দিয়ে রেখেছি।
-“আগের বার যার চান্দের গাড়ি দিয়ে গেলাম।যাওয়ার সময় তার ফোন নাম্বার নিয়ে গেলাম। তাই এবার যখন সবাই মিলে আসছি।ওদের যাতে সমস্যা না হয়। তাই আগেই ফোন দিয়ে জানিয়ে রেখেছি তাকে, সে যেন শাপলা চত্বর এসে দাঁড়ায়।
-“ভালো করেছিস।
-“ওই দোকানটায় চল।ওরা আসতে আসতে আমরা এক কাপ চা খাই। তাহলে শরীর গরম থাকবে।
-“চল

প্রাচ্য এসে বলে
-“তোরা আমাদের কে রেখে চা খেয়ে ফেললি কেন???
স্বপ্ন বলে
-“তোরা কি চা খাবি নাকি??

-“টঙের দোকানের চা খাওয়ার মজাই আলাদা।কলেজে যাওয়ার সময় করিমচাচার দোকানে কতোবার যে রং চা খেয়েছি। আদা দেওয়া চা শীত কালে খেলে শরীর গরম হয়ে যায়।
নীল একথা বলে প্রাচ্যর পাশ কেটে গিয়ে দোকানদার কে বলে
-“মামা এক কাপ চা দেন তো।
নীল এবার রোদে দিকে তাকিয়ে বলে
-“আপনি খাবেন
-“হুম
ছয়জন মিলে চা খায়।খাওয়া শেষ সবাই শাপলা চত্বরে যায়।সেই খানে অনেক অনেক চান্দের গাড়ি থেকে। ফুল প্যাকেজ আটহাজার বা নয় হাজার করে নেয় ।অফ সিজনে ১০০০টাকা মত কম রাখে। চান্দের গাড়ি সবোর্চ্চ ১০-১২জন বসতে পারে। যাদের ট্যুরে সদস্য সংখ্যা কম থাকবে তারা শাপলাচত্বর থেকে শেয়ারে চান্দের গাড়ি নিতে পারে।।

-“তোরা সবাই এখানে দাঁড়া আমি আসছি।এটা বলে স্বপ্ন চলে যায়। চান্দের গাড়ি ড্রাইভার কে ফোন করে।
-“তুমি কোথায়।
-“সাহেব আমি আপনার পিছন
স্বপ্ন পিছন ঘুরে তাকে দেখে।ফোন কেটে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।”তোমার গাড়ি কোথায়???
-“ওইতো সাহেব।
-“তুমি গাড়িতে যাও।আমি সবাইকে নিয়ে আসছি।
-“জ্বী

স্বপ্ন সবার কাছে গিয়ে বলে,
-“চল সবাই।চান্দের গাড়ী ওইদিকে
নীল অনেকবার শুনেছে চান্দের গাড়ি কথা।সে জানে চান্দের গাড়ি করে সাজেকে যেতেই হয়।। চান্দের গাড়ী নিয়ে অনেক কল্পনা জল্পনা করে ফেলে। কি রকম দেখতে চান্দের গাড়ি। আবার তার নাম কেন রেখেছে চান্দের গাড়ি।হয়তো চাঁদের মত দেখতে।
সবার আগে আগে হেঁটে যায় নীল।সবাই এক এক করে গাড়ি উঠে যায়।নীল এইদিক ওইদিক খুজতে থাকে কোথায় চান্দের গাড়ি। আর সবাই কেন জিপে উঠছে কেন??প্রাচ্য আপু বন্ধু বলেছে চান্দের গাড়ি করে যাবে।তাহলে জিপ কেন??
নীলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্বপ্ন বলে
-“তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন উঠো
রোদ গাড়ি ভিতর থেকে বলে,
-“কদমফুল উঠে আসো।????

-“আমি এই গাড়ি করে যাবো না।আমি চান্দের গাড়ি করে যাবো।
নীল কথা শুনে সবাই হাসে।স্বপ্ন মুচকি হেসে বলে
-“এটাই চান্দের গাড়ি।
নীল কিছু লজ্জা ফেলো। কিন্তু কাউকে তার লজ্জা বুঝতে না দিয়ে আমার প্রশ্ন করে।
-“এটা কি করে চান্দের গাড়ি হয়।এটা তো একটা জিপ গাড়ি।
আরেকদফা সবাই হেসে দেয়।এবার নীলের রাগ হচ্ছে।তাই জোরে বলে
-“এতো হাসি কি বলছি।
স্বপ্ন নীলের কাছে এসে বলে।
-“এখানে উপজাতি কাছে এই গাড়ি চান্দের গাড়ি নামে পরিচিত। আমরা এটাকে জিপ গাড়ি বলে থাকি।
এটা কথা শুনে নীলের মুখ ফানসে যায়।
সেই কতো কি ভেবেছে চান্দের গাড়ি নিয়ে।আর তার ভাবনা ঠিক উল্টো হয়েছে।এই সব ভাবতে ভাবতে নীল গাড়িতে উঠে। চান্দের গাড়ি নিজ গতি চলতে থাকে।

শাপলা চত্বর থেকে সাজেক যাওয়ার জন্য মাহেন্দ্র, সি এন জি, চান্দের গাড়ি ব্যবহার করে। সি এন জি করে গেলে পাহাড়ি প্রকৃতি ভালো ভাবে দেখা যায় না।তাই সবাই চান্দের গাড়ি ব্যবহার করে যাতে পাহাড়ি পরিবেশ উপভোগ করতে পারে।খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের রাস্তাটা দেশের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা গুলো মধ্যে অন্যতম। পুরো রাস্তা অপরুপ পাহাড়ি সাজে সজ্জিত। দুইপাশে মাঝে মাঝেই পাহাড়িদের মাচাং।আর এমন অপরুপ রাস্তায় চান্দের গাড়ি করে যাতায়াত এক রোমাঞ্চকর যাতায়াত।

তাদের চান্দের গাড়ি যখন দিঘিনাল আর্মি ক্যাম্প দিয়ে যায় তখন স্বপ্ন সবাইকে বলে
-“এটা হলো দিঘীনাল আর্মি ক্যাম্প। আগের বার যখন আমরা সাজেক গিয়েছিলাম তখন, এখান থেকে অনুমিত নিয়ে যেতে হতো।এখন সব কাজ বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে।

স্বপ্ন কথা শুনে সবাই জায়গাটা ভিউ ভালো করে দেখে।নীল বলে
-“প্রাচ্য আপু আমার না খুব খিদে পেয়েছে।
ধূসর খোঁচা মেরে বলে,
-“কিরে প্রাচ্য নোয়াখালী থেকে কি খাদক নিয়ে আসলি তুই। সে যে সুধু খাই খাই করে।

-“আপনি খাদক,,বিলাই শাকচুন্না, রাক্ষসের নানা, হনুমানের শ্বশুড়, বানরের বাপ।এই শাকচুন্না তুই খাদক। আমি কতোক্ষন খাই খাই করেছি।।কালকে রাত ধরে না খাই আছি।তারপর আমায় বলিস আমি খাদক।
নীলের এই ভাষা শুনে প্রাচ্য বাদে সবাই শোকাহত।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।প্রাচ্য সবার চেহারার এই অবস্থা দেখে অট্রহাসিতে ফেটে পড়ে
ধুসর প্রাচ্য কানে কাছে এসে ফিসফিস করে বলে
-“তোর বোন এই সব ভাষা কোথায় থেকে শিখেছে।
-“ওরে চেতাইস না।না হলে আরো আফ্রিকান ভাষা শুনতে হবে তোকে। তার চেয়ে ভালো চুপ হয়ে যায়।
প্রাচ্য, স্বপ্নকে বলে
-“আমার ও খুব খিদা পেয়েছে।
–“মাচালং বাজারে একটা হোটেল আছে ওই খানে সকালে নাস্তা খাবো।
তৃণ বলে
-“স্বপ্ন বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প তো ১০টার আগে পৌঁছাতে হবে।
স্বপ্ন ঘড়ি দিকে তাকিয়ে বলে,
-“হুম।খাগড়াছড়ি থেকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প যেতেই প্রায় দেড় ঘন্টা লাগে। এখন বাজে নয়টা। আমাদের হাতে আরো একঘন্টা সময় আছে। সময় মতো পৌঁছে যেতেই পারবো। কোনো সমস্যা হবে না।

#চলবে
#kawsar_sorna