Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1997



এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৮

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৮
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৩৫
,
,
,
কলেজ থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ একটা গোছল দিলাম তারপর খেয়ে লম্বা একটা ঘুম…… বুধবার হওয়ায় মা আজ জলদি ফিরবেন…. বাবা ও নাকি রাতে ফিরে আসবেন গ্রাম থেকে….. সুফিয়া খালার সাথে কথা বলেই ঘুমাতে চলে গেলাম….. কেন যেনো সুফিয়া খালাকে দেখলে ফুলি খালার কথা ভীষণ রকমের মনে পড়ে…..ঘুম ভেঙে গেলো মায়ের ডাকে….. মাথায় কি সুন্দর করে হাত বুলিয়ে ডাকছেন….. এতে করে ঘুমটা যেন আরো চেপে ধরেছে….. কপালে চুমুর স্পর্শ পেতেই একটা চেনা অনুভূতি ঘুমকে ছাপিয়ে গেলো….. চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম আম্মু আমার মাথার কাছে বসে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন….. মা তার পেছনেই দাড়ানো….. এবারো মা বেশ চিন্তিত….. কপালে চিন্তার ভাজটা স্পষ্ট একেবারে…..
,
,
,
কোনরকম ভনিতা ছাড়াই আম্মুকে সরাসরিই জানিয়ে দিলাম আমার পড়াশোনা শেষ করা অব্দি এখানেই থাকতে চাই….. আমার কথাটা আম্মুর খুব একটা পছন্দ হলো না….. এদিকে কথাটা বলার আগে ভীষণ রকমের টেনশনে ছিলাম মা এ নিয়ে কি বলেন….. বা আম্মুর সামনেই কোন ঝামেলা করে কি না….. কিন্তু না মা তেমন কিছুই বললেন না….. কেবল শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সব কিছু মনোযোগ সহকারে শুনলেন…..
,
,
,
——— রাহেলা তুমি অন্তত কিছু বলো….. টুকিকে বোঝাও
,
,
——— আমি কি বলবো আপা….তুলি তার মা-বাবার কাছে থেকে লেখা পড়াটা শেষ করতে চাইছে….. বিয়ে দিয়েছি বলেই তো আর ঠেলে সরিয়ে দিতে পারি না….. হ্যা… যদি ওর আবদার টা অন্যায় হতো তাহলে আমি কিছুতেই মানতাম না….
,
,
——— টুকি তুই কি আমার বলা কথায় কষ্ট পেয়েছিস!!!
,
,
,
আমি জানতাম আম্মু এমন কিছুই ভাবতেন…..আম্মুর এই ভুল ধারণা টা ভাঙানো বড্ড জরুরি….. তাই আম্মুকে জড়িয়ে ধরেই একে একে বোঝালাম….. এও বললাম বিকেলে অন্যজায়গায় হাটতে না গিয়ে যেনো আমাকে দেখতে আসে রোজ….. তারপর জমিয়ে আড্ডা দেবো…..সেদিনকার মতন আম্মু মন খারাপ নিয়েই বাড়ি ফিরে গেলেন….. আম্মুর এই চলে যাওয়াটা যেনো আমার বুকে কাটা বিধাচ্ছে….. সূক্ষ্মতম চিনচিনে একটা ব্যাথা সারা শরীর জুড়ে বয়ে যাচ্ছে………আম্মু যাবার পর মা আমাকে নিয়ে একদম মুখোমুখি বসলেন….
,
,
,
——— তুলি!!কিছু কি হয়েছে?
,
,
——— না তো মা….
,
,
——— তুলি একটা কথা বলতো?? সাদাফ,আপা ওনারা মানুষ হিসেবে কেমন?
,
,
——— ওনারা মানুষ হিসেবে অসাধারণ বললেও ভুল হবে…. ওনারা অতি অসাধারণ…… এই অতি অসাধারণ মানুষ গুলোর মধ্যে তোমার এই অতি সাধারণ মেয়েটা বরাবরই নগন্য…… তাই কিছুটা সময় নিজেকে দিতে চাই….. পড়াশোনা শেষ করে…..
,
,
,
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই মা বলতে শুরু করলেন….
,
,
——— তুই ঠিক আছিস তো মা!!!!
,
,
,
কেনো যেনো মায়ের এই সামান্য কথাটায় ভেতর থেকে কান্না দলা পাকিয়ে আসছে….. কিন্তু আমি কাদবো না… ঠোঁট কামড়ে একটু হেসেই মাকে জড়িয়ে ধরলাম….. এই জায়গাটা বড্ড প্রশান্তির…. বড্ড
,
,
,
এখন কলেজে যেতে একধরনের অস্বস্তি হয়….. রোজ শ্বশুর বাড়ি নামক বাড়িটার গেইটের সামনে দিয়ে রিক্সায় বসে আসি…… কখন না জানি আবার তার সামনে পড়তে হয়…..রোজই এই ভয়টা নিয়ে জায়গা টা পার করি…. তবে মানুষটার সাথে দেখা না হলেও আম্মু ঠিক ঠিক কলেজে চলে আসেন….. কখনো ক্লাস শুরু হবার আগে গেইটে দারিয়ে থাকেন তো কখনো কলেজ ছুটির পর….. সাথে করে বানিয়ে কিছু না কিছু নিয়ে তো আসবেই…… কেন জানি আম্মুকে দেখলে ওনার কথা বড্ড মনে হয়….. আম্মুর চেহারার সাথে খুব মিল যম ঠাকুর টার…. আচ্ছা ওনি কি আমাকে এভাবে মনে করে!!! এর মধ্যে আম্মু একদিন জিজ্ঞেস করে ফেললেন যে ওনার সাথে আমার কোন ঝগড়া হয়েছে কিনা!!! বা আমাকে বকেছে কিনা!!! আম্মুর কথা শুনে আমি দীর্ঘশ্বাস আড়াল করি ফের নতুন উদ্যমে মানুষ টাকে ভুল বাল মিথ্যে বুঝিয়ে দেই……
,
,
,
এইচএসসি পরীক্ষার আর মাস ছয়েক আছে….. এতোদিন কোন প্রাইভেটের প্রয়োজন পড়েনি….. কারণ যম ঠাকুর একাই একশো…… কিন্তু এখন তো….. থাক সেসব কথা বাদের খাতায়…….. এদিকে কলেজ তারউপর দুই দুইটা প্রাইভেট করে সন্ধ্যা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরি…… তারপর রাতের পড়াশোনা তো আছেই……. ওনার সেদিনের বলা কথাগুলো একেবারে ফুয়েলের মতন কাজ করে….. সারাদিনের ক্লান্তি যে কই যায় টেরই পাই না…… আজকাল মাকে দেখি…… কেন যেনো মাকে দেখলে বড্ড শান্তি পাই….. একটা সময় মায়ের এই চাকরি নিয়ে আমার শত অভিযোগ ছিলো…… আমাকে ঠিক মতন করে সময় দিতে পারতো না…. টিফিন টাইমে স্কুলে টিফিন নিয়ে যেতো না….. দুপুরে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে ও দিতে পারতো না……. একটা সময় তো এই অভিযোগ গুলো কে পাহাড় করে মায়ের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়েই নিয়েছিলাম…. ফের নানি আসলেন…. খুব বুঝাতেন….
,
,
,
——— বইনগো মাইয়া মাইনসের অলংকার স্বোয়ামি হইলেও হাতের জোর হইছে সেই কাগজের টেহা আর সম্মান হইছে পেটের বিদ্যা….. এই দুইডা জিনিস থাকলে পিতিবির কোন বেডা নাই যে গালি দিয়া কতা কইবে….. মায়েরে ভুল বুইজো না বইন….. মায়ের জ্বালা ডা বুজবা একদিন….
,
,
,
নানির কথাটা ঠিকই ছিলো….. মায়ের জ্বালা টা ঠিকি বুঝলাম….. তখন ক্লাস এইটে পড়ি…. বাবার বাজারের গোডাউনে আগুন লেগে সব শেষ…… ছাই ছাড়া কিছুই নাই…. ক্যাশে বেশ নগদ টাকা ছিলো….. সেগুলো ও ছাই….. পরদিনের বাজারের টাকাটা পর্যন্ত নাই।।।।। তার পকেটে ছিলো মাত্র পঞ্চাশ টাকা….. সেই তখন মা এই সংসারের হাল ধরেন….. তার প্রতিমাসে জমিয়ে রাখা বেতন দিয়ে বাবাকে বিদেশ পাঠান….. বাবার বিদেশ যাবার দিন খুব কেদেছিলেন মায়ের হাত ধরে…… কারণ এই চাকরির জন্য মা আমাকে সময় দিতেন না খুব একটা….. সেই নিয়ে খুব বকাবকি করতেন……. আজ বুঝতে পারছি সেইদিনের মায়ের মুখের প্রশান্তির চিলতে হাসিটা…..
,
,
,
৩৬
,
,
,
যত দিন যেতে লাগলো ততই ওনার সেদিনের বলা কথা গুলো আমার কাছে সহজ হতে লাগলো….. কোন রাগ অভিযোগ কিছুই জমাতে পারিনি দূরে সরে এসে….. বরং বারবার মনে এইটাই আসছিলো ওনার এই তেতো কথাগুলিই আমার জীবনের মঙলস্বরূপ…… বাবাকে এখনো কিছুই জানানো হয় নি….. মা হয়তো কিছু বলেছেন….. এদিকে আমার জীবনের গল্পের রচিয়তরা ফের সুযোগ পেলেন নতুন কিছু সমালোচনার…… এইবার শোনা গেলো ———
,
,
,
——— জানা আছে এই পিরিতের বিয়া কয়দিন টেকবে….. পনেরো দিন ধইরা পইড়া রইছে জামাই তো একবার চুপিও দিলো না….. দুইদিনের প্রেমে তিনদিনের সংসার…..
,
,
,
তাদের এইসব কথা শুনে আমি হাসি…. তার সাথে সাথে চোখ গুলা ও বারবার ভিজে আসে…. আর বারবার মনে আওড়াই….. মেয়ে তুমি নারী….. আর জীবন তুমার ছলনাময়ী……
,
,
,
ঊনিশ দিনের মাথায় ওনি এলেন…… বাবার সাথে ওনার সরাসরিই কথা হলো….. কোন ভনিতা ছাড়াই আমাকে বলা প্রত্যেকটা অপমানজনক কথাগুলো পাই টু পাই বলে দিলেন…. জবাবে বাবার গর্জন আর হুংকার…….
,
,
,
——— তুমি আমার মেয়েকে খাবার খোটা দিয়েছো…… আমার এতো টাকা পয়সা, বিষয় সম্পত্তি….. এ-সব কার তুমি জান!!!
,
,
——— আপনার টাকা-পয়সা, বিষয় – সম্পত্তি…. নিতান্তই আপনার….. আপনার মেয়ে আমার স্ত্রী ওসব তুলির নয়….
,
,
——— আমার একমাত্র সন্তান তুলি…. আমার যা আছে সব ওরই…… অন্তত খাওয়া পড়ার কোন কমতি হবে না ওতে….
,
,
——— খাওয়া পড়ার কমতি আমার ইনকামেও আপনার মেয়ের হবে না…. বাবা….. আমি চাইনা তুলি তার স্বামীর রোজগার আর তার বাবার সম্পত্তির উপর নির্ভরশীল হোক….তার দায়িত্ব তার নিজের নিতে হবে….
,
,
——— এ কেমন কথা!!! তার দায়িত্ব যদি তার নিজের ই নিতে হবে তাহলে তাকে আমি বিয়ে দিয়েছি কেন!!!
,
,
——— শুধুমাত্র কি এই ভরনপোষণ এর জন্য ওকে আমার হাতে দিয়েছেন বাবা!!! আমার জানামতে তো আপনার কোন কিছুরই কমতি নেই!!! শুধুমাত্র খেয়ে বাচাই ওর জীবনের লক্ষ্য!!! আমি তো ওকে আমার বাড়ির কাজের লোক হিসেবে নেই নি…. নিয়েছি আমার স্ত্রী করে…. আমার অর্ধাঙ্গিনী করে…. আমি একা খেটে টাকা রোজগার করবো আর দিনশেষে চড়া মেজাজে মা-বাপ তুলে গালাগাল করবো….. পয়সার খোটা দিবো তা নিশ্চয় আপনাদের মেয়ের ভালো লাগবে না…….. তার প্রতিষ্ঠিত হতে যত যাই লাগোক আমি নিঃসন্দেহে করবো…..
,
,
——— কিন্তু সাদাফ তুমি ওকে বুঝাতে পারতে….. ওকে ভালো মন্দটা খুলে বলতে পারতে…..
,
,
——— মা তুলির সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সবেমাত্র আড়াইমাস….. কিন্তু তুলিকে আমি জানি প্রায় পাঁচ বছর হতে চললো….. ওর ওসব ছেলেমানুষীর কাছে সাধারণ বুঝানো হাওয়ায় বাতাসের মতন…. তাই এইবার কঠোর হয়েছি….. এই ছেলেমানুষী কতোদিন মা…. তার তো নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে নাকি!!! যতই থাকুক নিজের বলে একটা কথা আছে…..আপনারা দয়া করে আমায় ভুল বুঝবেন না…..
,
,
,
বাসায় যখন ঢুকলাম তখনো জানি না ওনার উপস্থির কথা….. খাটের উপর আমার বইখাতা ছড়ানো ছিটানো ছিলো…. কিন্তু এখন কোনকিছুই দেখছি না….. তার সাথে টেবিল টাও গোছানো নিশ্চিত সুফিয়া খালার কাজ ভেবে মাথা চড়ে গেলো….যেই ডাকতে যাবো খালাকে অমনি দেখি যম ঠাকুর বাথরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হচ্ছেন…… আমি তখনো আমার রুমের দরজায় দাঁড়ানো…. ওনি আমাকে দেখে…. তোয়ালেটা চেয়ারের হেলানো অংশে মেলে দিয়ে…. গ্লাসে পানি নিয়ে বিছানায় বসলেন…..
,
,
,
——— দাড়িয়ে আছো কেন!!! নিজের রুমে ঢুকতে নিশ্চয়ই আমার অনুমতি চাইছো না………
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৭

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৭
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৩৪
,
,
,
কলেজ শেষ করে বেলা একটার দিকে বাড়ি চলে এলাম….. মা তখনো অফিস থেকে ফেরেনি….. সুফিয়া খালা এসে দরজা খুলে দিলেন….. বাবাও নাকি কি একটা কাজে গ্রামে গেছেন….. আজ ফেরার সম্ভাবনা নেই…. … কাধের ব্যাগটা বেশ ভাড়ি হয়ে আছে…. দেরি না করে নিজের রুমে চলে এলাম….. বেশ অনেকটা সময় পর বাড়ি ফেরা…..অনেকটা শান্তির মধ্যে ও একটা সূক্ষ্ম ব্যাথা চিনচিন করছে বুকের ভেতর….. গায়ের বোরকা খুলে রেখেই বাথরুম থেকে হাত-পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম….. রুমটা এখানো বেশ গোছগাছ….. কোনকিছুই এদিক ওদিক হয় নি…. সব আগের মতো করে রাখা……
,
,
,
সুফিয়া খালাকে এক গ্লাস পানির কথা বলে ড্রয়িং রুমে এসে বসলাম…… ঘড়িতে তাকাতেই দেখলাম দুটো বেজে গেছে…. খালা আমাকে পানির গ্লাস দিতে দিতে ও বাড়ির সবার খোজখবর নিলেন….. আম্মুকে এবাড়ি আসার কথা জানানোর জন্য ফোন দিলাম বাড়ির ফোন থেকে……
,
,
,
———আসসালামু ওয়ালাইকুম আম্মু
,
,
——— ওয়ালাইকুম আসসালাম…. কে!! টুকি না!!!
,
,
——— হ্যাঁ।।।। আম্মু…. আমি কলেজ থেকে এ বাড়ি চলে এসেছি…. তুমি চিন্তা করবে বলেই ফোন দিলাম…..
,
,
——— আম্মুর বকা খেয়ে বুঝি মায়ের কথা মনে পড়ে গেছে!!! তুই কি রাগ করেছিস টুকি!!!
,
,
——— না আম্মু…. একদমই না…. শাষণ করা তো তাকেই মানায় যে ভালোবাসতে পারে……
,
,
——— আচ্ছা….আচ্ছা….. কি পাকা পাকা কথা শিখেছে মেয়ে…. শোন খেয়ে নে…. আর বিকেলে চলে আসিস….. আমি আসবো নিতে!!!
,
,
——— না আম্মু….. তুমি ফুলি খালাকে নিয়ে খেয়ে নাও… রাখছি….আল্লাহ হাফেজ
,
,
——— আল্লাহ হাফেজ
,
,
,
মা বাড়ি ফিরলেন বিকেল চারটার ও পড়ে….. দরজা খুলে আমাকে দেখে বেশ অবাক হলেন….. আমি মুচকি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরতেই….. কাদো কাদো হয়ে প্রশ্নের জাহাজ খুলে দিলেন…. কখন এলি!!! কে নিয়ে আসলো!!! জামাই এসেছিলো কি না!! আর কতো কি….. কলেজ থেকে চলে এসেছি বলে মা কিছুটা অবাক হলেন….. কিন্তু কিছু বললেন না…… দুপুরে খাওয়া মা- মেয়ে মিলে খেলাম পাঁচটায়….. তারপর নামাজ আদায় করে মা আমার রুমে চলে এলেন….আমি তখন আলমিরাতে আমার কাপড় ঘাটতে ব্যাস্ত……
,
,
,
——— তুলি!! সাদাফ কি রাতে আসবেন!!
,
,
——— না মা….
,
,
——— ও…. তোর বড় ননাসের হাত ঠিক হয়েছে!!
,
,
——— হ্যাঁ….. এখন অনেকটাই সুস্থ….
,
,
——— তোর শ্বাশুড়ি কেমন রে মানুষ হিসেবে!!!
,
,
——— খুবই ভালো মা….
,
,
——— আর সাদাফ!!!
,
,
——— সবাই খুব ভালো মা….মা আমাকে আরেকটা বোরকা বানিয়ে দিবা!! গরমে একটা দিয়ে ক্লাস করাটা খুবই মুশকিল…. আমি কথাটা বলে মায়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম কপালে ভাজ পড়ে আছে….. পড়বেই বা না কেন!! তার সদ্য বিবাহিত মেয়ে নিজের প্রয়োজন গুলো স্বামির কাছে না চেয়ে মায়ের কাছে চাইছে…. আমি তাকাতেই মা স্বাভাবিক হয়ে মুখে হাসি টেনে বললো
,
,
——— ঠিক আছে…. তুই ও সাথে চলিস…. পছন্দ করে নাহয় কিনে নিবি….
,
,
,
মায়ের কথা শুনে আমি আবার আমার কাজে মনোযোগ দিলাম….. দীর্ঘশ্বাস টা না চাইতেও লুকাতে পারি নি….. বিয়ে নামক নতুন সম্পর্ক টা একেবারে গোলকধাঁধার মতো লাগছে….. কেমন যেনো সব সম্পর্কেই ঢুকে পড়েছে….. আজ হুট করে এইভাবে আসাটা মা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছে না…. অথচ একসময় এই বাড়িটা আমার ছিলো….. এই বাড়ির বাইরে এক পা রাখার আগে তাদের বলে কয়ে মতামত নিয়ে তারপর বেরুতে হতো….. তারপর প্রশ্ন তো আছেই….. আর আজ বিয়ে হয়েছে বলে একেবারে উল্টো….. এবারে শত সহস্র প্রশ্ন….. হায়রে মেয়ে মানুষ…..
,
,
,
রাতের খাবার খেয়ে ব্যাগ থেকে বই খাতা গুলো একেবারে টেবিলের উপর গুছিয়ে রেখেছি…..মা বলেছিলেন তার সাথে ঘুমানোর জন্য কিন্তু আমি যাই নি…. জানি গেলেই নানা অজুহাতে একথা সেকথা জানতে চাইবে….. তাছাড়া খুব করে একা থাকতে ইচ্ছে করছিলো……. বিছানায় শোয়া মাত্রই দেহ যেনো প্রাণ ফিরে পেলো…..চোখে ঘুম না থাকলে ও তন্দ্রাঘোরে পড়ে ছিলাম…..তখন আম্মুকে ফোনে বলা কথাটা বারবার কানে বাজছে…… শাসন করা তাকেই সাজে যে ভালোবাসতে পারে….. কেনো যেন কথাটা মনে আসতেই ওনার চেহারাটা বারবার চোখে ভাসছে….. কি অদ্ভুত!!! আমার এই অশ্রু সংকটময় চোখ দুটোতে বন্ধ অবস্থায় আপনা আপনিই পানি জমে যাচ্ছে…..
,
,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৬

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৬
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৩৩
,
,
,
ওনি কথাগুলো বলে আর সেখানে বসলেন না….. দপদপ করে পা ফেলে বেরিয়ে গেলেন…… সে রাতে আম্মু ফিরলেন বেশ দেরি করে….. ঘড়ির কাটার হিসেবে না দেখলেও বেশ বুঝতে পারছিলাম…… পড়ার রুমটা রান্নাঘর থেকে অনেকটা বা পাশে….. আম্মু কিছুক্ষণ রুমের দরজায় দাড়িয়ে ছিলেন…… কিন্তু আমাকে কিছু বলেন নি….. আমিও কিছু বলি নি….. কেন যেনো চুপ থাকতে ভালো লাগছে…… আম্মু চলে গেলেন…… যম ঠাকুর আর সেঘরে এলেন না….. কেমন যেনো ভোতা ভোতা লাগছে সব কিছু….. তবে এতোদিনের সংসার নামক রঙিন চশমা টা একেবারে ঝড়ঝড় করে ভেঙে গেছে…… বাস্তবে যে আবেগ আর কল্পনা গুলো নিতান্তই তুচ্ছ তা একেবারে বেশ বুঝতে পারছি …… কতো কি ভাবতাম আগে….. হাসি পায় কেন!! সেসব মনে করে!!! আমার তো এখান হাসার কথা না……অনেকটা সময় ধরেই ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছি….. বইয়ের পাতা গুলো বাতাসে ওড়ছে….. ওলট পালট হচ্ছে….. আমি নির্বিকার ভাবে প্যারালাইজড এর রোগীর মতন দেখে যাচ্ছি….. আর বারবার ওনার কথা গুলো আওড়াচ্ছি….. আম্মু ফের চেচামেচি করছে….. কিন্তু এবার দুপুরের চাইতেও বেশি….. চায়ের কাপটা ধুতে ভুলে গিয়েছিলাম এর জন্যই কি!!! আমি ভীত পায়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম…… অনেকটা সময় ধরে বসে থাকার কারণে পায়ে একেবারে ঝিঝি ধরে গেছে….. কিন্তু আম্মুর চেচামেচি থামছে না……
,
,
,
——— বাবু আমি এখানে থাকবো না…… তুই আমাকে গ্রামে রেখে আয়…..তারপর তর বউ যা খুশি না হয় করবে…..ও আমার কথা মোটেও শুনছে না বাবু….. সেই সকালে ঘুম থেকে ওঠে দুটো বিস্কুট খেয়েছে সারাদিন গেছে তার আর খাবার কোন খবর নেই….. বাসায় দেরিতে এসেছে বলে বকেছি খুব তাই বলে সে না খেয়ে রাগ করে বইয়ের সামনে বসে আছে…. ওকে আদর করি বলে কি শাসন করার কোন অধিকার নাই আমার…. তুই খেতে বস আমি নিয়ে আসছি ওরে….. শাসনের দেখেছেটা কি ও…. আজকে তো শুধু বকেছি কথা না শুনলে আমি মাইর দিতেও পিছপা হবো না…….
,
,
,
আম্মু রাগে ফোসফাস করতে করতে একপ্রকার হুমকি ধামকি দিয়েই আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিলেন……. ওনি তখন টেবিলেই বসা ছিলেন….. প্লেটে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছিলেন……. আম্মু আমাকে তার পাশে বসিয়ে বকে ধমকে খাওয়ালেন……. খাবার দেখেই খুদাটা জেগে গেলো যেনো….. বেশ অনেকটা খেয়েছি….. বেসিনে হাত ধুতে গিয়ে গরগর করে সব বমি করে ঢেলে দিয়েছি….. কি জানি হয়তো অপমানের ভাত পেটে সইলো না……আমার বমি দেখে আম্মু আবার বকা শুরু করলেন
,
,
,
——— কর কর আরও বমি কর….. সারাদিন না খেয়ে থাক আরো…. পেটে পিত্তি পড়ে যাক….. দেখলি তো কেমন গ্যাস্ট্রিকের জোর দিয়েছে….. কয় দিনে চোখেমুখের কি হাল করেছিস….. তুই ঘুমাতে যা….. তোকে দেখলেই আমার রাগে কান্না পাচ্ছে….. যা হাত ধুয়ে যা শিগ্রি…..
,
,
,
নলের মুখটা খুলে দিয়ে বেসিন পরিষ্কার করে নিজেও মুখ হাত ধুয়ে নিলাম….. রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না….. পড়ার রুমেই চলে আসলাম……. জানালা অফ করে দিয়ে চেয়ার টেনেই বসে পড়লাম গা ছেড়ে চোখ বুঝে …… চোখ খুলে নিজেকে পড়ার রুমের চেয়ারেই খুজে পেলাম…. প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও পরে আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে গেলো…… কয়টা বাজে দেখার জন্য ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখলাম যম ঠাকুর হাটুর উপর দুহাতের মুঠোয় কপাল ঠেকিয়ে রেখেছেন…… একি মাত্র ছয়টা বাজে…. ওনিই বা এই সময় এখানে কি করছেন……. সেখান থেকে চলে আসার সময় টেবিলের সাথে ধাক্কা খাই….. ধাক্কার আওয়াজে ওনি মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন…… ওনার সেই লাল লাল চোখগুলোর ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে চোখাচোখি হয়ে গেলো….. আমি আবার পড়ার ঘরে চলে এলাম….. ডায়নিং থেকে হাত মুখ ধুয়ে এখানে সেখানে ঘুড়াঘুড়ি করছি কিন্তু রুমে যাচ্ছি না….. এদিকে ফুলি খালাও চলে এলেন…. কাজ না পেয়ে ওনার আশেপাশে ঘুরঘুর করছি….. আম্মু এখনো হেটে ফেরেনি……
,
,
,
যম ঠাকুর একেবারে রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন ব্যাগ হাতে…… টেবিলে বসতেই আমি রান্নাঘরে চলে গেলাম….. ততক্ষণে আম্মু ও চলে এসেছেন…… ফুলি খালা ওনাকে নাস্তা বেড়ে দিলেন…… আম্মু হা-পা ধুয়ে আসতে আসতেই ওনি খেয়ে উঠে গেলো…… আমি তখন রান্নাঘরের দরজার আড়ালে দাড়িয়ে…… ওনি আম্মুকে আসছি বলে একবার ঘরের দিকে যেতে নিয়েও ফিরে গেলেন…….
,
,
,
ওনি যাবার পর আমি রুমে গিয়ে গোসল সেরে রেডি হয়ে নিলাম…… সোফার উপর কিছু ধুয়া কাপড় ছিলো সেগুলো ভাজ করে আলমিরাতে তুলে রেখে বিছানার চাদরটা পালটে বিনে রেখে পড়ার ঘর থেকে বই খাতা একেবারে গুছিয়ে ডায়নিং এ চলে এলাম….. আম্মু সবে মাত্র বসেছেন….. ফুলি খালা আসার সময় অনেকগুলো পিঠা নিয়ে এসেছেন…… সেখান থেকে বেশ কয়েকটা পিঠে খেয়ে নিলাম….. তাই নাস্তা না করাতে আম্মুও কিছুই বললেন না….. ওঠে গিয়ে একটা বোতলে সরবত ঢেলে নিয়ে আসলেন আর তার সাথে একটা কেকের প্যাকেট…….
,
,
,
——— টুকি…. যখন খুদা পাবে খেয়ে নিবি……কেকটা একেবারে তাজা….. সকালে যেদিকে হাটতে যাই সেদিকে একলোক সকালে নিয়ে বসে এসব….. তর মাকেও কিনে দিয়েছি…..আসার সময় তোর জন্য ও নিয়ে এসেছি….. প্যাকেট টা যদি ফেরত আসে দেখিস কি করি….. বলেই আম্মু আমার কপালে চুমু খেলেন….. কালকে খুব বকেছিরে মা….. রাগ করিস না….. আম্মুতো বুড়া হয়ে গেছি তাই কি করতে কি করে ফেলি…..এর পর থেকে তুই যদি কথা না শুনিস আর বকবো না….. একেবারে মাইর লাগাবো……
,
,
,
আম্মু এমন ভাবে কথাটা বললেন একেবারে খিলখিল করে হেসে দিলাম…..আমার হাসি দেখে আম্মু ও হেসে দিলেন….. আম্মুকে জড়িয়ে ধরে আসছি বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলাম…..
,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৫

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৫
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৩১
,
,
,
রূপসি থেকে ফিরে এলাম ওনার জয়েনিং এর ঠিক আগের দিন বিকেলে….. এদিকে দুই তিন দিন থেকে আমার খুব একটা পোশালো না……আমার মুখভার দেখে ওনি ফেরার আগের রাতে কোলে করে সারা রাত ছাদে হাটলেন….. একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা অনুভূতি ব্যাপক লজ্জা পাওয়া স্বত্তেও খুব করে চাইছিলাম সময় টা থেমে যাক….. রাত টা চলে না যাক….. ভোরটা দেরি তে আসুক…..ওনার কোলে নেবার ধরন টাও সুন্দর…. একেবারে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে রেখেছে…. কানে ওনার হৃদস্পন্দন আর চোখে আকাশ ভর্তি তারা…. একেবারে ঘোর লেগে যাচ্ছে…… কিছুক্ষণ হাটাহাটির পর ছাদের কোণে রাখা মাচার উপর বসে পড়লো আমাকে কোলে নিয়েই….. তখন এতটাই ওনার উপর নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছিলাম যে বসা মাত্রই ওনার ঘেমে যাওয়া বুকের সাথে লেপ্টে পিঠ ঠেকিয়ে বসে বসে আকাশ দেখে যাচ্ছি…. বলা চলে অনেকটাই নিজের মধ্যে নেই….. ধাতস্থ হলাম ওনার দ্রুত উঠা নামা করা গরম নিঃশ্বাসে…. যা আমার কাধ ভেদ করে ক্রমশ গলায় আর বুকে আছড়ে পড়ছে…. একটা গা নাড়িয়ে দেওয়া শিহরণ সাথে সাথেই সারা শরীর খেলে গেলো….. চারেদিকে শুনশান নীরবতায় ওনার নিশ্বাসের শব্দ শুনে বেশ বুঝা যাচ্ছে যে অনেকটা হাপিয়ে গেছেন….. যাবারই তো কথা….. কত গুলো সিড়ি পেড়িয়ে ইয়া বড় একটা ছাদে বার কয়েক হাটাহাটি চারটে খানি কথা…. তারউপর আবার এভাবে কোল চেপে বসে আছে…. ছিঃ ছিঃ….. বিবেক বিবেচনা এতো লোপ পেলো আমার….. ভাবতে ভাবতেই ওনার কোল থেকে উঠে গেলাম একধরনের অপরাধ বোধ নিয়ে….. মাচায় বসে তখনো বেশ ধীরে সুস্থে দুপাশে দুই হাতে সারা গায়ের ভর ছেড়ে দিয়ে ঢিলেমিভাবে বসে চোখ দুটি পিটপিট করে আমার তাকিয়ে আছে…… আমি একপলক তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো……. বিদ্যুৎ গতিতে কয়েক পা সামনে এগিয়ে গেলাম যেনো কোন বড়সড় চুরির পর ধরা পরে যাচ্ছিলাম….. সামনে এগিয়ে এসেও একপ্রকার ঘোরে পড়ে আছি যেনো….. এই বাড়িটা আসলে বাড়ি না একটা স্বর্গ পুর এতো সুন্দর চারপাশে যে কেনটা রেখে কোনটা দেখবো…..
,
,
,
আমি যখন প্রকৃতির রূপে মজে আছি তখন হুট করে যম ঠাকুর আমার সামনে এসে দাড়ালেন….. ঘোর লাগা নয়নে ওনার চোখে চোখ রেখে দিব্যি দাড়িয়ে আছি…… নেই কোন সংকোচ আর নেই কোন ভয়….. ওনিও ধীরেধীরে গায়ের সাথে ঘেষে মুখোমুখি দাড়ালেন….. দুহাতে কোমড় জড়িয়ে আরও নিবিড়ভাবে গা ঘেষে রইলো আমার……শীতলক্ষ্যার শিরশির করা হাওয়া…. আর তার সাথে আমার ক্রমশ প্রিয় মানুষ টার গায়ের উষ্ণতা….. ঠিক যেন কনকনে শীতের মধ্যে ধুয়াউঠা ভাতের প্রশান্তির মতো…… উষ্ণতা সারা গায়ে লেপ্টে ওনার কপালে আছড়ে পড়া চুল গুলোর অদ্ভুত সৌন্দর্য দেখতে ব্যাস্ত আমি তখন…… পূর্নিমার আলোয় সবকিছু স্পষ্ট…… ওনার ঠোঁটের কোনের সেই মৃদু হাসিটাও….. সব মিলিয়ে এই মূহুর্তে যম ঠাকুরকে পরির মতন সুন্দর লাগছে…. উমমম…. ছেলেরাতো পরি হয় না…..কালে কালে কবিরা মেয়েদের সৌন্দর্যের কত উপমা দিয়ে গেছেন অথচ খোদ ছেলে হয়ে নিজেদের জন্য কোন কিছু রাখলেন না!!! তাতে কি….. কেউ দেয় নি তো কি হয়েছে!!! আমি দেবো…..মেয়েরা পরি হলে ছেলেরা হবে পরা….. হুম যম ঠাকুরকে একেবারে পরার মতন সুন্দর লাগছে…… আমি যখন আমার এইসব হাবিজাবি ভাবনাতে মশগুল ওনি তখন আমার ঠোঁটের গভীরতা মশগুল….. কি হচ্ছে ব্যাপারটা আমার মস্তিষ্কে যখন পৌছালো তখন কোত্থেকে যেন অজানা শীহরন আমার সারা শরীরে খেলা করছে…. তার সাথে শীতলক্ষ্যার ঠান্ডা বাতাস….. সব মিলিয়ে যেনো আমি হিম হয়ে যাচ্ছি…. নিজের ভারসাম্য নিজেই রাখতে পারছি না….. ওনার কাছ থেকে হালকা গা ঘেষা হতেই ওনি ক্ষুদিত পাষানের মতো আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলেন…… খুব ইচ্ছে করছে ওনার পিঠ আগলে চুল খামছে ধরি…..ঘাড়ে বুকে করে দেই শত শত ক্ষত….. আরো নিবিড় ভাবে হারিয়ে যাই…..কিছুক্ষণ পরেই ওনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আড়ষ্টভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন….. তারপর বিনা বাক্য ব্যায়ে আমার দু হাত ওনার বুকের দুপাশে রেখে নতুন উদ্যমে ফের মেতে উঠলেন…….
,
,
,
চারেদিকে শুনশান নীরবতা….. পূর্ণিমার আলোয় এখান থেকেই নদীর ঝিকিমিকি করা পানি গুলো দেখা যাচ্ছে…. আশে পাশে আর কোন দোতলা বাড়ি না থাকায় এতো শত গাছ গাছালী যেনো রাতের সৌন্দর্য আর ও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে….নদীর হাওয়ার সাথে বাগানের সদ্য ফুটা ফুলের মাতাল গন্ধ চারেদিকে ম ম করছে…….. বাড়ির পেছন দিকের পুকুরের উপর তো জোনাকিপোকার হাট বসেছে….. কি যে সুন্দর লাগছে একেকটা জিনিস বলার বাইরে….. এতো শত সৌন্দর্য আমার কাছে ফিকে হয়ে গেলো যম ঠাকুরের বুকের সেই ধুকপুক করে উঠা শব্দটাতে…… একটু আগে কি হয়েছে ভাবলেই কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে….. মাচার উপর ওনার বুকের সাথে পিঠ ঘেষিয়ে বসাতে আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পারছি ওনার সেই ধুকপুকানির উঠানামা…… কেমন যেনো একটা ছন্দের মতন…… এতো ভালো লাগছে কেনো হঠাৎ করে!!!! এর মধ্যেই ওনি শাড়ি গলিয়ে আমার পেটের উপর বা হাত রেখে ডান হাতে ওনার ডান হাত টা গুজে দিলেন…….. চুপচাপ নিরবতায় ও মনে হচ্ছিলো দুটি মন এই চুপচাপ নিরবতায় পাশাপাশিতে চুটিয়ে মন খোলে কথা বলছে…..
,
,
,
৩২
,
,
,
রূপসী থেকে ফেরার পরপরই ওনি ফুল ফর্মে চলে এলেন আগের মতন……. অগত্যা আমাকে আবার বইয়ের কাছেই মাথা ঠুকতে হলো……. এদিকে ওনার নতুন অফিসে জয়েনিং টাও খুব ভালো করে হয়ে গেলো…… অফিসে যাবার সময় রোজকার আমাকে সাথে করে কলেজ পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়া তারপর কলেজ ছুটির পর মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া করা রিকশায় বাড়ি ফেরা….. তারপর বাড়ি ফিরে ঘড়ির কাটা আর দরজা দেখা…..আজকাল মানুষটাকে কেন যেনো খুব মিস করি…. ইচ্ছে করে যেনো সারাক্ষণ ওনার আশেপাশে থাকি নয়তো ওনি আমার সাথে থাকুক…… আগেতো তাও দুপুরে খেতে আসতেন কিন্তু এখন তো একেবারে বিকেল ছয়টায় বাড়ি ফেরেন…….. ওনাকে যতই দেখি ততই অবাক হই….. সারাদিন খাটা খাটুনি করে আমাকে নিয়ে নিয়ম করে টেবিলে বসবে…… রোজ পড়া চেক করবে…….একটু ভুল হলেই বলবে…… কাজের চাপে আজকাল খুব একটা চুমু খাওয়া হচ্ছে না….. তোমার মাথার ভাইটামিন সব কমে গেছে….. আসো আসো ইনস্ট্যান্ট ফ্রেশ ভাইটামিন দেই….. যেই বলা সেই কাজ…… চেপে ধরে ধুম করে চুমু খেয়ে নিচ্ছে….. রাতের বেলায় ও সেই আগের মতোই পেচিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে……কিছু বললেই ওনার সেই বিখ্যাত উক্তি ছাড়বেন
,
,
,
——— তোমার যদি লাথি দেবার ইচ্ছা থাকে এমনিই দু চারটে দাও কিন্তু ঘুমের ঘোরে দানবীয় লাথি আমি নিতে পারবো না….. আর এভাবে ঘুমালে সমস্যা টা কি!! বউদের এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো টা হচ্ছে জামাইগত অধিকার….. আমি আমার অধিকার বুঝে নিচ্ছি….. সো কিপ ইয়োর মাউথ শাট….
,
,
,
এসব বলার পর আর কারই বা কি বলার থাকে……… আমি ও কিছু বলি না…..কি বলবো তাই খুজে পাই না….. তবে ওনার এই জড়িয়ে ধরাটাও আজকাল আমার বড্ড ভালো লাগে……. সারাক্ষণ ইচ্ছে করে ওনাকে নিয়েই ভাবি…..ওনার আশেপাশে থাকি…… পড়াশোনা করতেও ভালো লাগে না…… কেনো করবো পড়াশোনা!!! কই বিয়ে হয়েছে স্বামী সোহাগি হবো, বাচ্চাকাচ্চা বড় করবো….. ছেলেমেয়েদের লেখা পড়া শিখানোর মতোন তো পড়াশোনা পাড়ি নাকি!!!! কিন্তু তা আর যম ঠাকুরের জন্য হচ্ছে না….. কলেজের সব খবরাখবর স্যার রা নিজের মনে করে ওনার কানে দিয়ে দেন…… এখন তো বান্ধবীরআও বাঘা স্যারের বাঘিনী বউ বলে ক্ষেপায়….. তবে ওনার নতুন চাকরি হওয়াতে আমার একটা সুবিধে হয়েছে কলেজের পর চুটিয়ে আড্ডা দিতে পারি….. আগেতো রোবটের মতোন ওনার সাথে চলে আসতে হতো আফসোস করতে করতে…… বন্ধবীরাতো তখন ওনাকে দেখলেই আইলো আইলো বলে ভো দৌড়…… এমনও হয়েছে ওদের সাথে মাঝে মাঝে বসতে চাইলে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যেতো আর বলতো….
,
,
,
——— দেখ তুইল্লা তুই যে বাঘা স্যারের বউ ভুলে গেছিস!!! তরে আড্ডাতে নিলে আমাদের আতঙ্কে থাকা লাগে কখন না আবার ওঠে দৌড়ান লাগে….. দেখ ওইদিন দৌড় দিতে গয়ে হাটু ছুলে কি অবস্থা হইছে তার চেয়ে বরং তুই বাড়ি যা…. স্যার আইতেছে…..
,
,
,
তখন খুব মন খারাপ হতো….. খুব ইচ্ছা করতো ওদের সাথে একটু বসি কিন্তু ভয়ে তো মুখ দিয়ে কথাই বের হইতো না…. তবে আজকাল আমার বেশ স্বাধীনতা হয়েছে…. কলেজের পর চুটিয়ে আড্ডা দিয়ে তারপর ওনার ভাড়া করা রিক্সায় বাড়ি ফিরি….. আর আড্ডার সময় টাতে আশেপাশে মামা ভাড়া নেয়….. কিন্তু আজকে একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছি….. আসার পর থেকেই আম্মু তুলোধুনো করে যাচ্ছে…..
,
,
,
——— টুকি তুই কিন্তু বড্ড বার বেড়েছিস….. তুই রোজ কলেজ থেকে দেরি করে ফেরিস…. কিন্তু আমি তকে কিচ্ছুটি বলি নি…. তাই বলে আজ তুই এতো দেরি করে ফিরবি!!!! তোর সকালের খাওয়া কই!!! দুপুরে কি খাইছিস!!! হ্যা!!! বাবু ঠিক বলে তোকে লাই দিয়ে আমি অসভ্য করে ফেলেছি…..পড়াশোনা নাই কিছু নাই সে গায়ে হাওয়া দিয়ে বেড়াবে….. এই কি খেয়েছিস দুপুরে হ্যা!!
,
,
——— ক্যান্টিনে শিঙারা খেয়েছি
,
,
——— কি বললি তুই….. এই খাওয়ায় তোর আজ বেলা চারটে!!!! আজকে বাবু আসুক তোর বিচার যদি না দিছি…. দেখিস!!! তোর জন্য দজ্জাল শ্বাশুড়িই ঠিক আছে….. সারাদিন কাজ করে পড়তি তাহলে ঠিকই তর সব ঠিক থাকতো….. কিচ্ছু তো করা লাগে না……
,
,
,
কেন যেনো আম্মুর কথা গুলা খুব মনে গেথে গেছে….. ওনি আমাকে শত আদর করা স্বত্তেও ওনার এই কথাগুলো আমি কোনভাবেই হালকা ভাবে নিতে পারছি না…. আর দাড়ালাম না…..রুমে ঢুকে বোরকা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম…. বিছানা টা বড্ড টানছে….. আম্মু এখনো চেচামেচি করছে….. মানুষ টা এমনি….. ওনার স্নেহের যেমন কোন কমতি নেই তেমনি শাষণের ও….. ভুল টা আমিই করেছি….. সব ব্যাপারে এমন গা ছাড়া স্বভাব উচিত নয় এতো দিন সেটা চিন্তা করলে ও এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি…… অপরাধবোধ আর আম্মুর বলা কথা গুলো বারবার মনে বাজছে….. দেরি না করে রান্নাঘরে চলে গেলাম….. যানি রান্নার সব কাজ ফুলি খালা সামলে যান……. চৌবাচ্চায় দুপুরের কতোগুলো বাসন রাখা ছিলো….. দেরি না করে মাজতে বসে গেলাম সেগুলো…. কলের পানি আর বাসনের আওয়াজে আম্মু কিছুক্ষণ রান্নাঘরের দরজায় দাড়িয়ে থেকে চলে গেলেন…… হয়তো আমার এখন কাজ করায় খুব রেগে আছেন……. ভাবছেন ওনার কথায় হয়তো রাগ করেছি….. ফের চেচামেচি জুড়ে দিয়েছেন…….
,
,
,
রান্নাঘরের বাসন মাজা শেষ করে বের হবার সময় দেখি আম্মু টেবিলে উপর খাবারের থালাটা বেরে রাখলেন…. একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর চলে গেলেন…..প্রতিদিনকার রুটিনের মতো বিকেলে আম্মু রেডি হয়ে হাটতে চলে গেলেন…… ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে….. কেন যেনো আর খুদা লাগছে না….. মনে হচ্ছে বিছানায় শুতে পারলেই চলবে….. মেইন দরজা লক করে বেডরুমে এসে শুয়ে পড়লাম….. বেশ আরাম লাগা সত্ত্বেও চোখে কোন ঘুম নেই….. বিকালের সিগ্ধ আলো টা আমার খুব পছন্দের…… ইচ্ছে করছে বাইরে গিয়ে বসি কিন্তু বল পাচ্ছি না……. মন খারাপ টা যেনো সমস্ত শক্তি কে গ্রাস করেছে…..বিছানায় খানিকটা সময় এপাশ ওপাশ করতে করতেই যম ঠাকুর চলে এলেন…….
,
,
,
রোজকার মতোই গলার টাইয়ের নট দরজা থেকে খুলতে খুলতে রুমে চলে গেলেন….. বিছানায় কয়েকটা ফাইল রেখে….. একে একে হাতের ঘড়ি, ওয়ালেট টেবিলের উপর খুলে রাখলেন….. ঘামে ভেজা মেরুন শার্ট টা হ্যাঙারে ঝুলিয়ে লুঙ্গি নিয়ে প্যান্ট চেঞ্জ করতে লাগলেন…… মানুষ টাকে সব পোশাকেই কি দারুণ মানায়….. কিছুটা দ্বীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে….. পানি নিয়ে আসতে আসতে দেখি ওনি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছেন……. হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে তারপর পানিটা শেষ করলেন……. বিকেলে সাধারণত ওনার আদা চা খাবার অভ্যেস আছে তাই চুলায় চা চড়িয়ে দিলাম…… খুদা লাগছিলো বলে দুটো বিস্কুট মুখে দিয়ে পানি খেয়ে তারপর চা নিয়ে গেলাম……ওনি চা শেষ করেই আমাকে পড়তে বসিয়েছেন……
,
,
,
——— এই চ্যাপ্টার টা শেষ করতে বলেছিলাম….. করেছো!!!?
,
,
———………………
,
,
——— কি হলো!!
,
,
——— আ…স…. লে
,
,
——— কলেজ থেকে বাসায় কখন এসেছো!!!
,
,
———………….
,
,
——— কয়টা ক্লাস হয়েছে আজকে!!?
,
,
——— ———
,
,
——— তুমি যখন এন্সার দিবে না বলেই ঠিক করেছো তাহলে আমিই দেই দেখো মিলে কিনা!!!
,
,
——— কলেজ গিয়েছো ১১ টায়….. সেখানে সব গুলো ফ্রেন্ডস মিলে ক্লাস বাঙ্ক করে নিজেদের মতন করে ঘুড়েছো….. আড্ডা দিয়েছো…..যাকে এক কথায় বলে টোটো গিরি করা….. তারপর আমারই ঠিক করে দেওয়া রিক্সা দিয়ে ঠিক চারটে দশ মিনিটে বাড়ি ঢুকেছো….. আই হোপ কোন কিছু আমি মিস করি নি….. ইজ ইট!!
,
,
,
আমি কোন উত্তর দিলাম না…. কি দিবো…প্রতিটি কথাই যে অক্ষরে অক্ষরে সত্য….. আর তাছাড়া আমার কথা বলার ও কোন ইচ্ছে করতেছে না….. কেমন যেনো একটা গা ছাড়া ভাব…. অবিশ্বাস্য রকম ভাবে আমার যম ঠাকুর কে ও ভয় করছে না…… আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ওনি একেবারে রেগে ঘেমে বোম হয়ে আমাকে চেয়ার থেকে টেনে তুলে দিলেন……
,
,
,
——— তোমাকে আমি বসে বসে খাওয়ানোর জন্য আনি নাই….. না এনেছি আমার বাড়ির ঝি গিরি করাতে….. পড়াশোনা না করে টোটো গিরি করতে ও আনি নাই….. টাকা পয়সা কামাই এতো সোজা না….. তবে অন্যের ঘারে বসে বসে খাওয়া খুব সোজা…… আমার পয়সার মায়া এবং কদর দুটোই আছে….. তাই পড়াশোনা করে চাকরি করে সংসারে কন্ট্রিবিউট করবে এবং নিজেকে স্বাবলম্বী করবে….. অন্যের ঘারে বসে খাবার চিন্তা বাদ দাও….. এইটা তোমার বাপের বাড়ি না যে নো চিন্তা ডু ফুর্তি…… আমাকে দেখো আর নিজেকে দেখো….. আজকে আমি কামাই করছি বলে আর তুমি আমার উপর নির্ভরশীল বলে অনায়াসে মুখ ঝামটা দিতে আমার দুবার ও ভাবতে হচ্ছে না…..নিজের পয়সা আর নিজস্ব ইনকাম কতটা প্রয়োজন একটু মোটা মাথাটা খাটিয়ে ভেবো….. শুধু তিনবেলা গো গ্রাসে গেলা আর ঘুম দিয়েই জীবন চলে না……
,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৪

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৪
লেখনিতে: চৈত্র রায়

২৮
,
,
,
যম ঠাকুর তার কথায় বহাল রইলেন এবং পরদিন যথারীতি আমাকে টেনে হিচড়ে গাইনি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেন….. বলা বাহুল্য আমার সমস্যা গুলো আমার থেকে ওনি বেশ সাবলীল ভাবেই মহিলা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করলেন….. আমার অবস্থা দেখে ডাক্তার কয়েক মিনিটের জন্য ওনাকে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন….. তারপর একেএকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেই ক্ষান্ত হলেন….. কোন সমস্যা না পেয়ে ওনি বেশ কিছু কায়দা আর নিয়ম শিখিয়ে দিলেন….. কিভাবে চলতে হবে কি কি এরিয়ে চলতে হবে….. সব…. এবং ব্যাটা যম ঠাকুর সব গুলা কথা পারে না একেবারে হা করে গিলছে…..আমিই শুধু বসে বসে লজ্জায় কাচুমাচু খাচ্ছি…..
,
,
,
দুদিন পর আম্মু ফিরে এলেন ফুলি খালাকে নিয়ে….. সাথে করে নিয়ে এলেন রাজ্যার সব ফলফলাদি….. বড় আপুর শ্বাশুড়ি ই সব নাকি নিজে দাড়িয়ে থেকে গাড়িতে বোঝাই করে দিয়েছেন…… আম্মু বাড়ির নিচ তলায় দাড়িয়েই সব ভাগ বাটোয়ারা করতে শুরু করে দিলেন…. বাড়ির দাড়োয়ান থেকে শুরু করে ভাড়াটিয়া, নতুন রান্নার খালা এমনকি ড্রাইভার পর্যন্ত ও এর ভাগ পেয়েছেন….. সেদিন ফুলি খালাকে আর আটকান নি আম্মু…. ওনাকে ওনার ভাগ বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন….. সেদিন সন্ধ্যায় যম ঠাকুর ফিরে এসে আম্মুকে দেখেই ঘেমে নেয়ে যাওয়া শরীরে বেশ অনেকটা সময় জড়িয়ে ধরে রইলেন….. আম্মু ও বাবু এটা, বাবু সেটা… হাজার হাজার গল্পের ঝুড়ি নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন…. ওনিও বেশ গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে যাচ্ছে…. তাদের মা ছেলের এতো স্বতঃস্ফূর্ত সম্পর্ক দেখে মনে হচ্ছে আমি টিভি চ্যানেলের কোন জনপ্রিয় পারিবারিক মূহুর্ত উপভোগ করছি…..আশেপাশের সকল দুনিয়া ভুলে ওনারা মা ছেলেতে মন উজার করে শত শহস্র গল্পের হাট খুলে বসেছেন….. রাতে খাবার টেবিলে বসে আম্মু বড় আপুর বাড়ির গল্প ফের জুড়ে দিলেন….. ওনার কথা শুনেই বেশ বুঝা যাচ্ছেন খুব মিস করছেন আপুকে…..আমি মানুষটাকে দেখে বারংবার অবাক হই…..আপুতো তার নিজের সন্তান নয়….. অন্যার সন্তানের জন্য এতো মায়া….!!! মানুষটাকে যতবার দেখি ততবারই মনে হয় এখনো অনেক অবাক হবার বাকি আছে আমার…..
,
,
,
খাবার টেবিল গুছিয়ে ড্রয়িং রুমে যেতেই দেখলাম আম্মুর পায়ে মালিশ করে দিচ্ছেন ওনি….. আমাকে দেখেই বললেন টুকি যাতো নারকেল তেলের বোতল টা নিয়ে আয়….. আজ বড্ড শ্বাশুড়ি হয়ে সেবা যন্ত নিতে ইচ্ছা করছে….জামাই বউ মিলে হাত চালা জলদি…..আম্মুর কথা শুনে আমার পেট ফেটে হাসি আসছে…. এতো মজা করে কথা বলতে পারেন…. আমি খুব আগ্রহ নিয়ে আম্মুর মাথায় তেল মালিশ করছি…. আর যম ঠাকুর পায়ের কাছে বসে পা মালিশ করে দিয়ে আম্মুর পায়ের নখ কেটে দিচ্ছেন…… ওনি ওনার কাজ শেষ করে সোফায় বসেই বললেন……
,
,
,
——— শ্বাশুড়ি সেবা শেষ করে একটু পতি সেবায় নিয়োজিত হবা বুঝলা….!পতি সেবা হচ্ছে পরম ধর্ম….
,
,
——— বাবু স্ত্রীর যত্ন নেওয়া কিন্তু একজন আদর্শ পতির কর্ম…. জানিস তো!!! তুলি তোকে তেল মালিশ করে দেবার পর তুই ও ওর মাথায় তেল দিয়ে দিবি!! নাকের উপর থেকে আঙুলের ডগায় করে চশমা টা চোখে পড়ে….
,
,
——— তোমার কপাল ভালো বুঝলে…. আমার মতোন একখানা জামাই পাইছো….
,
,
——— সে তো তর কপাল ও বড্ড ভালো রে বাবু…. আমার মতন একখানা এতো ভালো মা আর টুকির মতোন একখানা লক্ষিমন্ত বউ পেয়েছিস
,
,
——— বাহ…. দল করা হচ্ছে…. বউ শ্বাশুড়ি মিলে!!!আগে তো ফুলি খালাকে হেল্পার করেছিলে…. তা এই মাথা মোটা টাকে কি পদ দিলে!!
,
,
——— খবর দার বাবু আর যদি দেখেছি আমার মন্ত্রীর মাথায় চটি মারতে….তুই পেয়াদা পেয়াদার মতন থাক….. বেশি বেশি করলে কিন্তু শোলে চড়াবো…..
,
,
——— না…. বেশ নির্যাতন হয়ে যাচ্ছে আমার উপর….. তোমরা অত্যাচারী স্বৈরশাসকেরা বেশি দিন না…. তারপর আমিও দল ভারি করছি আমার…. আমাকে চোখ মেরে
,
,
,
ব্যাপার টা কি হলো ঠিক কিছুই বুঝলাম না….. আম্মুর দিকে তাকাতেই দেখলাম ওনি মুখ টিপে লুকিয়ে হেসে যাচ্ছেন….. ততক্ষণে আমি যম ঠাকুরকে মাথায় তেল মালিশ করে দিচ্ছি….
,
,
,
——— কিরে টুকি আসার পর থেকেই লক্ষ্য করে যাচ্ছি তোকে কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।।।। চোখ কেমন বসে আছে….. খাওয়া দাওয়া করিস না ঠিক মতো!!
,
,
——— আম্মু ও তিনদিন ধরেই সিক…. কিন্তু তোমার টুকি সময় পেলেই জান জীবন দিয়ে ঘুমাচ্ছে….
,
,
——— ও দূর্বলতার থেকে হচ্ছে….
,
,
আম্মু ওনার সাথে কথা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় করতেই আমিও ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম…..ওনি কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে চলে গেলেন আর যাবার আগে বলে গেলেন যম ঠাকুরকে যেনো দুধ গরম করে দেয় আমকে….এই দায়িত্ব টা যে ওনি বেশ ভালো ভাবেই করে তা তো আর আম্মু জানতেন না…..সেদিন সব কাজ শেষ করে যখন আম্মুর কাছে গিয়েছিলাম কিছু লাগবে কি না দেখতে…. গিয়ে দেখি আম্মু সজাগ….. আমি যেতেই আমাকে পাশে বসিয়ে নিজে উঠে বসলেন….. তারপর পাশের টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললেন ———
,
,
,
——— এই কয়দিন খুব ধকল গিয়েছে রে টুকি তর উপর…… মেয়েটাও এমন ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লো…… তর ও তো নতুন জায়গা…… এরপর থেকে আমি মাথায় রাখবো রে টুকি……
,
,
——— না আম্মু….. আমার কোন সমস্যা হয় নাই….. ওনি আমাকে কাল জোড় করে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে এসেছে….. খুব লজ্জা পেয়েই কথাখানি বললাম
,
,
——— বেশ ভালো করেছে….. জানিস আমাদের বাড়ির সবাই কিন্তু বিজ্ঞানের ছাত্র….. সাদাফ যখন নাইনে পড়ে তখন আমাকে একদিন হুট করে এসে জিজ্ঞেস করছে আম্মু এই ঋতুস্রাব কি!! এইটা নাকি শুধু মেয়েদেরই হয়…..প্রথমে কিছুটা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই বললো বইয়ে নাকি পেয়েছে…… তারপর ওকে যখন সব খুলে বললাম ওমা ছেলের সেকি কান্না…… কাদতে কাদতে জড়িয়ে ধরে বলছে আম্মু তোমার খুব কষ্ট হয় না!!! এরপর থেকে আমাকে বলবা আমি তোমার সব কাজ করে দিবো তোমার কিছু করতে হবে না…… এরপর থেকে শুরু হয়েছে এই নিয়ে তদারকি…. আম্মু এটা খাবা… এটা করবা না…. এই নাও এটা খাও….. সারাদিন আমার পেছনে ঘুরঘুর করতো……. তারপর তো ইন্টার দিয়ে আমার আধখানা কলিজা ছিড়ে এই ঢাকায়…… ছেলেটা বড্ড নরম মনের রে….. ওরে কোনদিন কষ্ট দিস না টুকি…..নিজের ছেলে বলে বলছি না….. একদিন তুই নিজের মুখে স্বিকার করবি…..তুই কি পেয়েছিস…… নে যা এবার ঘুমাতে যা….. কথা শেষ করে পেছন থেকে দুটো বেণি ঘাড়ের দুপাশে ফেলে……
,
,
,
এই দুই বেণি দেখে যম ঠাকুর সমানে খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে….. বিছানার সামনে যেতেই বেণি দুইটা টেনে একদম নিজের কোলের উপর নিয়ে শুয়ে পড়লো…..
,
,
,
২৯
,
,
,
সময় যে কিভাবে পার হয়ে যাচ্ছে টেরই পাই না….. দিনের বেলা ফুলি খালা আর আম্মুর সাথে জমিয়ে আড্ডা….. বিকেলে আম্মুর সাথে হাটতে বের হওয়া….. মাঝেমধ্যে মায়ের সাথে দেখা করতে যাওয়া আম্মু আর ফুলি খালাকে নিয়ে….. বা কখনো মা-বাবার স্বয়ং উপস্থিতি এভাবেই দিব্যি কেটে যাচ্ছিলো সময়…….যম ঠাকুর গুনে গুনে সাত দিন পর বগলদাবা করে আমাকে নিয়ে কলেজে ছুটলেন…..কই বিয়ে করেছি সংসারি করবো বাচ্ছাকাচ্চা মানুষ করবো তা না…. এখনো এই পড়াশোনা আমার পিছু ছাড়লো না……. রোজ সাথে করে কলেজ নিয়ে যাবে…. আমার সাথে ফিরতে না পাড়লে গেইট থেকে রিক্সা করে দিবেন….. তারপর বাড়ি ফিরে আদর্শ লিপির বাচ্চাদের মতন বই নিয়া বসাবেন….. তখন বাই এনিচান্স ওনার কোন বন্ধু ফোন করলে আমার ইজ্জতের জগাখিচুরি বানিয়ে বলবেন ———
,
,
,
——— নারে ভাই বউটারে মাত্র পড়তে বসাইছি….. ছোট মানুষ…. একটু পর আবার খাইয়ে ঘুম পাড়াতে হবে…… হাহ…. আমার কতো কাজ….. আগের মত আছি বল!! এখন বিয়ে করেছি….. বউকে তো কোলে পিঠে করে মানুষ করা লাগবে…. নাকি!!! অনেক দায়িত্ব…. ফোন রাখ…. ডিস্টার্ব করবি না….
,
,
,
ওনার এই কথা শুনে আমি লজ্জায় পারিনা টেবিলের নিচে ঢুকে বসে থাকি….. কোন মানে হয় এই বাজে কথা গুলোর….. একেতো আমি বিবাহ শোক পালন করছি বই নিয়ে তার উপর ওনি এভাবে আমাকে নাস্তানাবুদ করছেন….. রোজই এভাবে চলে তার এই পড়াশোনার অত্যাচার….. বই নিয়ে না বসলে আম্মু ও বকা দেয়…. আমি মন খারাপ করি…. খুব মন খারাপ হয়…. এর মধ্যেই একদিন বারোটা বাজে মা ফোন দিয়ে জানালেন যে নানু মারা গেছেন। আমি সবেমাত্র কলেজ থেকে ফিরেছি….. মা-বাবা রউনা দিয়েছেন….. ফোনে আম্মুর সাথে কথা বলে শুধু নানির চেহারাটাই চোখে ভাসছে…. ওনার বলা প্রতিটি কথা রেকর্ডের মতোন কানের কাছে বেজেই চলেছে….. মনে হচ্ছে নানি নিজে প্রত্যেকটা কথা আমার পাশে বসে বলছেন….. এই একটা মানুষ যার কাছে আমি সাবলিল…. যে আমাকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিতো…. বিয়ের কথা নানিকে জানানোর পর সর্বপ্রথম নানি মাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি রাজি আছি কি না….. বিয়ের পর প্রথম যেদিন গেলাম যম ঠাকুর কে দেখে আমার কাছে চুপিচুপি বসে কত কথা বলেছেন….
,
,
——— বইন জামায়ের মন রক্ষা কইরা চলবা…. শ্বাশুড়ি যা মানতে বলে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবা…. মায়েরা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না বইন….. জামাই তোমার লাখে একটা…. খুব বালা মনের মানুষ…. আমি জানি হেয় বাইচা থাকতে তোমার কোন কষ্ট হবে না…..
,
,
,
কতো কথা বলেছেন….. কত মশকরা করেছেন….. অথচ মানুষ টা নাকি নাই….. আমার হাউমাউ কান্না শুনে আম্মু ছুটে এলেন সাথে ফুলি খালাও….. হেচকি তুলতে তুলতে সব খুলে বললাম….. আম্মু মাকে ফোন করে বললেন এক সাথে যাওয়ার কথা কিন্তু তারা বেশ অনেকটা এগিয়ে গেছেন…… এদিকে আম্মু আমাকে নিয়ে একা যাবার সাহস করতে পারছেন না…. তারউপর ওনি ও সেদিন ফোন বাসায় ফেলে গেছেন ভুলে….. আমি কোনমতেই নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না কি করেই বা পারবো….. দাদা দাদির কথা মনে নাই…. নানু খুব ছোটবেলাতে মারা গেছেন….. মায়ের চাকরির জন্য নানির কাছেই আমার বেশি থাকা হয়েছে…… এই মানুষটা যে আমার কত বড় অবলম্বন তা আমার আল্লাহ জানে….. অথচ এই মানুষ টাই নাই….. কেমন যেন দুঃস্বপ্ন লাগছে সব কিছু…..ওনি ফিরে এলেন দুপুর দুটোর দিকে….. আমি তখন আম্মুর বুকের উপর মাথা রেখে এলোমেলো হয়ে বসে আছি…..
,
,
,
——— আম্মু তুলির কি হয়েছে!! ও এভাবে বসে আছে যে!!!
,
,
——— বাবু টুকির নানি ভোরে মারা গেছেন
,
,
,
আম্মু আর ফুলি খালা মিলে সবটা খুলে বললেন ওনাকে….. সব কিছু শুনে ওনি ঠিক করলেন আমাকে নিয়ে যাবেন……কিন্তু ততক্ষণে বাবা ফোন করে জানালেন নানিকে মাটি দেওয়া হয়ে গেছে….. কথাটা শুনেই নানির কাফনে ঘেরা মুখটা আমার মানসপটে ভেসে উঠলো …… নিজেকে আর কোনমতেই আটকে রাখতে পারলাম না….. নানিকে শেষ দেখাটা হলো না….. আমাকে এতো ভালোবাসতো মানুষ টা…. তার মুখটা দেখার ভাগ্য হলো না আমার….. আমি কি পাপ করেছিলাম আল্লাহ….. এভাবে শাস্তি কেন দিলা আল্লাহ….. আম্মুকে ছেড়ে আমি মাটিতে লুটিয়ে কান্না করে যাচ্ছি…. কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে….. কারো কোন খেয়াল নেই আমার….. আম্মু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে থামানোর চেষ্টা করলেন….
,
,
——— টুকি থাম মা…. এভাবে কাদতে নাই…. মা…
,
,
——— আম্মু আয়ায়ায়ামিইই ক্ককি করবো….. আমারতো ভভেতর টা ছিড়ে যাচ্ছে….. নানিকে আমি শেষবারের মতন দেখতে পারলাম আম্মু….. আমি…..
,
,
——— কাদিস না মা আমার মাথা ব্যাথা করবে…. অসুস্থ হয়ে পড়বি……
,
,
,
হাউমাউ করে কান্না করার পর একপ্রকার নেতিয়ে আগের মতোই আম্মুর বুকেই হেলান দিয়ে বসে আছি….. গলার স্বর বসে গেছে…..মাথা কোনমতেই সোজা করতে পারছি না….. রুমে আর কে আছে আমার কোন হেলদোল নেই…..ফুলি খালা এসে আমার কাধে কাপড় তুলে দিলেন কোল থেকে…… চোখ খুলে নিজেকে রুমে পেলাম….. ওনি তখন রুমেই ছিলেন….. স্টাডি টেবিলের চেয়ারটায় বসে হাটুর উপর দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে আছে….আমাকে উঠতে দেখে আমার কাছে এগিয়ে এলেন…..
,
,
——— এখন কেমন লাগছে!!! আম্মুর কাছেই ঘুমিয়ে পড়েছিলে…..
,
,
আর কি বললো আমার মাথায় ঢুকছে না….. ভেতর টা হু হু করে উঠছে…. কি যেনো নাই নাই একটা হাহাকার….. হুট করেই ওনি আমায় জড়িয়ে ধরলেন……
,
,
——— এবার আমি ভয় পাচ্ছি তুলি….. তুমি প্লিজ একটু স্বাভাবিক হও…..
,
,
ওনার কথা বলার মাঝেই আম্মু রুমে খাবার নিয়ে এলেন….. সাথে ফুলি খালাও…..ওনাদের দেখে যম ঠাকুর আমায় ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে গেলো….. ফুলি খালা একটা ভেজা গামছা দিয়ে মুখ মুছিয়ে হাতে জলের গ্লাস দিলেন…… আম্মু ভাত মাখিয়ে মুখের সামনে ধরতেই আমি পিছিয়ে গেলাম….
,
,
——— টুকি সেই কোন সকালে কয়টা পাউরুটি খেয়েছিস….. এখন রাত নটা বাজে মা….. একটু খেয়ে নে….. তোর ঘুম দরকার ছিলো বলেই আমি জাগাই নি….. আম্মুর কথা রাখবি না…!!! একদিন তো আম্মু ও নানির মতন চলে যাবো….. তখন কে এভাবে খাতির করবে বলতো…..
,
,
আম্মুর কথাটা আর বাড়াতে দিলাম না…. দুই তিন নলা মুখে নিয়ে আর খেলাম না…. আম্মু ও আর জোড় করলেন না….. রাতে হাত মুখ ধুইয়ে কিছু সময় বারান্দায় বসে ছিলাম….. যম ঠাকুর তখন খেতে গিয়েছে….. নানির কথা ফের মনে পড়ছে….. নানা মারা যাবার পর প্রায়ই একটা কথা বলতেন…..
,
,
——— বইন তোর নানা রোজ রাইতে আমার স্বপ্নে আসে…. আমায় শিয়রের পাশে বইয়া সবার কথা জিগায়…..
,
,
নানির এই কথা শুনে তুলি কতো বুঝিয়েছে ওগুলো স্বপ্ন নানি…. তুমি নানাকে সারাদিন ভাবো তো তাই অমন দেখো…. কিন্তু কে শুনে কার কথা…. নানি বিশ্বাস করতেন নানা সত্যিই আসেন…..
,
,
,
রাতে ওনি রুমে এসে আমার পাশে বসতেই বললাম ———
,
,
——— আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন তখন কার মতন করে….. ভেতর টা না আমার খুব পুরছে…. আমার বলা কথা ওনি বুঝা মাত্রই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন….তারচেয়ে বেশি শক্তি দিয়ে আমিই ওনাকে খামচে আকড়ে ধরলাম…. আমার মাথায় ওনার হাত বুলিয়ে যাওয়াটা একেবারে পরম শান্তির মতন লাগছিলো সেদিন.
,
,
,
৩০
,
,
,
নানি মারা যাবার পর থেকেই আমার উদাসীনতা আর অন্যমনস্কতা বেড়ে গেলো….. যম ঠাকুর ও আগের মতন জোর করে না পড়াশোনা নিয়ে…..এর মধ্যে দুদিন আমাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছেন ওনি…..কেন যেন কোন কিছুতেই নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছিলাম না….. নানির কথাগুলো হুটহাট কানে বাজে…. তখন মনে হয় আশেপাশেই আছে….. ভুলতে পারি না….. কিভাবেই বা ভুলবো…. আমার নিজের মা ও আমাকে ওতোটা যত্ন করে নি যতটা নানি করেছেন…… ওনার মৃত্যুটা খুব পুড়ায় আমায়….. তার চেয়ে বেশি পুড়ায় ওনাকে শেষ বারের মতোন না দেখাটা…. মা এর মধ্যে এসেছিলেন আমাকে নিতে…. কয়দিন বাড়ি ঘুরে এলে হয়তো ভালো লাগবে….. কিন্তু যম ঠাকুর দেয় নি….. আম্মু ও বাধ সাধেন….. মা সেদিন সারাদিন আমার সাথে থেকে একাই ফিরে গেলেন……
,
,
,
ওনার জয়েনিং ডেট এগিয়ে এসেছেন….. কলেজের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন….. হাতে সপ্তাহ খানেকের সময় থাকায় আম্মু ঠিক করলেন আমাদের নিয়ে গ্রামে যাবেন….. ওখানে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা প্রয়োজন…… এতে করে হাওয়া বদল হবে…..আমার সব গোছগাছ আম্মু আর ফুলি খালা মিলে করে দিলেন….. মা বাবাকে ও আম্মু সাথে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মায়ের চাকরি বাবার কি যেন কাজ পড়েছে তাই আর যাওয়া হয় নি…..
,
,
,
রূপসী গ্রাম টা একেবারে জীবনানন্দের রূপসী বাংলার মতন…. গ্রামের মাটিতে পা দিতেই কেমন যেন পরিশুদ্ধ লাগছে সতেজ নির্মল মনে হচ্ছে নিজেকে….. এতো নির্মল পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্য আর শুদ্ধতার মধ্যে যম ঠাকুরকে একেবারে নতুন করে আবিষ্কার করলাম যেনো ….. যেকটা দিন ছিলাম মানুষ টা একেবারে দু’হাতে আগলে রেখেছেন আমায়……এখানে এটা চলে না…. ওনার সাথে ওভাবে কথা বলবে…. মাথায় ঘুমটা টানো…. এটা এভাবে করবে সব…. তারপরে রাতের বেলায় লুকিয়ে বাগান বিলাশ তো আছেই….. ওনার এই আগলে রাখা,কথা না শুনলে চোখ রাঙানো… ধমক দেওয়া, হুটহাট করে কাছে আসা,জড়িয়ে ধরে পিষে ফেলা, বিনা নোটিশে চুমু খাওয়া সবকিছুতেই কেমন যেনো একটা ভালোলাগা ধরে গেছে…..আজকাল তো ওনার মুখে নিজের নামের উচ্চারণ টার ও প্রেমে পড়ে গেছি…..ভালোবেসেছি কি না জানি না…. তবে ওনাকে যে আমি আমার সর্বস্বদিয়ে নিজের মধ্যে ধারণ করছি তা আমি স্পষ্ট টের পাচ্ছি….
,
,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৩

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৩
লেখনিতে: চৈত্র রায়

২৭
,
,
,
তারমানে ওনি এতো দিন আমাকে মিথ্যে ভয় দেখিয়েছেন….. কিন্তু কেন!!!
,
,
——— আপনি এতো দিন আমাকে মিথ্যে ভয় দেখিয়েছেন!!! আপনি…. ছাড়োন…. আমাকে ছাড়োন বলছি।।
,
,
——— ভয় তুমি তুমার দোষেই পেয়েছো….. বাসর রাতের উপহার নিয়ে ছুটছিলে শ্বাশুড়ির কাছে… জিজ্ঞেস করতে…. সিরিয়াসলি তুলি!!! আমি কতটা লজ্জায় পরতাম ভেবে দেখেছো!!! তাছাড়া বাড়ি সুদ্ধো লোক জানে কোমড়ের বিছা টা আমি তুমায় দিয়েছি…. অথচ তুমিই জানো না….. কি পরিমাণ গবেট একবার ভেবে দেখেছো!!
,
,
——— হ্যা আমি গবেট ই…. আমি তো আর দশ পনেরো টা বিয়ে করে বাসর করি নি যে এতো কিছু জানবো….
,
,
——— কেন!!! বিয়ের পর সক্কাল সক্কাল হুদাই গোছল করতে হয় এইটা বাপের বাড়ি থেকে যখন জেনে আসতে পারছো….. বাসর রাতে বরের উপহার দেবার কথা জেনে আসতে পারলে না…..আর হোয়াট ডু ইউ মিন বাই দশ পনেরো টা বিয়ে!! তুমি এতো গুলো বিয়ে করো নাই বলে কি আমাকে মিন করছো!!
,
,
——— হ্যা করেছি..উপহার মানুষ দেয় হাতে হাতে…. এইভাবে চোরের মতন কে দেয়!!!!
,
,
——— আমি…. আমি দেই….. যার বউ দুনিয়া ভুলে গাধার মতো ঘুমাতে পারে বাসর রাতে তাকে এভাবে চোরের মতন ই উপহার দিতে হয়…..
,
,
——— আমি গাধার মতোন ঘুমাই….. আপনি আমাকে ছাড়েন…. ছাড়েন বলছি…. আমাকে আর আপনি জড়িয়ে ধরে ঘুমাবেন না….. আমি গাধার মতো ঘুমাই…এখন থেকে আরও বেশি করে ঘুমাবো….
,
,
——— একশো বার জড়িয়ে ধরবো আর হাজার বার লতার মতন পেচিয়ে ঘুমাবো…. বললেই হলো নাকি…. এতো দিন কোলে পিঠে করে এতো কষ্ট করে লেখা পড়া শিখিয়ে গাধিকে পিটিয়ে মানুষ বানিয়েছি কি এমনি এমনি নাকি…
,
,
——— আমার কিন্তু এবার ভিষণ রাগ লাগছে আপনি ছাড়েন আমায়….. আমার প্রতি তো আপনার নূন্যতম দয়ামায়া ও নাই….. একবার ও খেয়াল করেছিলেন আমার অবস্থা টা!!
,
,
——— সে আর বলতে…. আমি তো ভয়েই ছিলাম শেষ পর্যন্ত না পাগলের সাথে সংসারি করা লাগে…..
,
,
——— করা লাগবে না সংসারি….. আমি আর থাকবোই না এখানে….. আম্মু আর ফুলি খালাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি চলে যাবো…..
,
,
——— কি বললে আবার বলোতো শুনি….ছেড়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে….
,
,
——— আমি আপনার সাথে এই বাড়িতে থাকেবোউউউ…. উউউউউমমম্মম
,
,
——— যতবার বলবে ততবারই রিপিট হবে…..রিপিট করতে অবশ্য আমার কোন আপত্তি নাই…..
,
,
——— আপনি….. আপনি…..
,
,
——— এইতো তোমার সামনে আছি…. দেখা যাচ্ছে না বুঝি….বলেই কিছুটা আমার মুখের উপর ঝুকে গেলো…
,
,
——— এই সরেন বলছি….. আপনি ব্রাশ না করে ইয়ে করলেন কেন আমাকে….. ছিঃ
,
,
——— কই কি করেছি!!! আমিতো বসে ছিলাম…. আমিতো কিছু করি নাই তো..
,
,
——— আরে মিথ্যা বলছেন কেন!!! আপনি তো একটু আগেই আমাকে ইয়ে করলেন…
,
,
———- ইয়ে!!!!এই ইয়েটা আবার কি!!!!কখনো তো শুনি নি…খেতে অনেক টেস্ট বুঝি!!!!
,
,
——— উফফফফফ।।।।।আপনি আমায় চুমু খেলেন কেন!!!ছিঃ দাত ব্রাশ না করেই….. ওয়াক….
,
,
——— ও লিসেন মিস….. উম্মম না…. মিসেস দাত ব্রাশ তুমিও করো নি….. সো কাটাকাটি….. এখন মন দিয়ে কান খুলে একটা কথা শুনে মাথায় গেথে রাখো….যতোদিন আমি বেঁচে আছি ততোদিন সংসারি টা আমার সাথেই করতে হবে ইভেন আমি মরার পর ও….. সো এসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো…. ওকে
,
,
,
কথা গুলো বলেই ধুম করে আবার চুমু খেয়ে নিলো কপালে….. তারপর হনহন করে বাথরুমে ঢুকে পড়লো….. নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে আমার উপর হুকুম তামিল করে গেলো
,
,
,
——— আমি গরম জল করে নিয়ে আসছি….. ওতেই গোসল করবে….. টাংকির পানি বেশ ঠান্ডা এখন…. রাতে তো কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলে…. এসে যেনো রুমেই পাই….
,
,
,
আমি কোন কথাই বলি নি….. কোনমতে বিছানা টা গুছিয়ে গুটিশুটি মেরে দারিয়ে আছি….. গোসল করার জন্য গা নিশপিশ করছে…… এদিকের কোমড় আবারো ভার হয়ে আছেন….. যম ঠাকুর গামলা ভর্তি করে গরম পানি বালতিতে ঢেলে দিয়ে গেলেন…… আমি কাপড় চোপড় নিয়ে সোজা বাথরুমে…… গোসল সেরে যেনো জান্নাতের সুখ পাচ্ছি….. গায়ের মেজমেজ ভাব টা ও কমে গেছে….. সাথে কোমড়ের ভার টা কিছুটা কমেছে….. কিন্তু ব্যাথাটা বাড়ছে তৃব্য গতিতে….. মাথায় গামছা পেচিয়ে শাড়ি নিয়ে রুমে চলে এলাম…. মূলত এই সময় টাতে ওনি রুমে আসেন না….আর বাথরুমে ভালো করে শাড়ি পড়াও যায় না….ভিজে একাকার হয়ে যায়…… ভেজা গামছা টা চুল থেকে খুলে বারান্দায় মেলে দিয়ে ওনার গামছা টা পেচিয়ে শুয়ে পড়লাম….. ইশ কি যে শান্তি লাগছে…… ঘুমে দু চোখ ভেঙে আসছে একেবারে …..ঘুম ভাঙলো এগারো টার দিকে….. পেটের উপর থেকে হট ব্যাগটা হাতে নিতেই…..
,
,
,
——— ওটা কোন জ্বিন দিয়ে যায় নাই….. আমি দিয়েছি….. আর মাথার টাওয়েল টাও আমিই খুলে নিয়েছি…..কারণ ওটা আমার ছিলো আর আমি গোসলে যাব তাই…..
,
,
আমি আর কিছু বললাম না….. কিন্তু অবাক হলাম….. যম ঠাকুর ও ব্যাখ্যা করে আজকাল….. বাহ…. রাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে রাগই ভালো….. বিছানা টান করে রেখে আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম….. রান্নাঘরে ঢুকে দেখলাম নতুন মহিলা রান্না করছে…… আম্মু দের খুব মিস করছি….গতকাল ফোন দিয়ে বললেন আপু এখন কিছুটা সুস্থ আছে….. দুই এক দিনের মধ্যেই ফুলি খালাকে নিয়ে চলে আসবে……. এদিকে খুদায় পেটে ছুচু লাফালাফি করছে…. হঠাৎ করে মনে হলো সকাল থেকে তো কিছুই খাই নি…. পেটের আর কি দোষ……খাবার টেবিলে ও কিছু নাই…. খালাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো সকালের নাস্তা বানাতে নাকি যম ঠাকুর ই না করেছেন….. এখন কি খাবো….
,
,
——— তুলিইইই…. এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও
,
,
অগত্যা কোন উপায় না পেয়ে নিজেও একগ্লাস পানি খেয়ে যম ঠাকুরের জন্য পানি নিয়ে রুমে গেলাম……. ওনিও কি সকালে কিছু খায় নি নাকি….. না খেলে না খাবে….. তাও আমি জিজ্ঞেস করবো না……. গ্লাস নিয়ে ফেরার সময় দেখি খালা দরজায় বাটি হাতে দারিয়ে আছেন…..
,
,
——— কি খালা কিছু লাগবে!!!!
,
,
——— ভাইজান কইছিলেন….
,
,
——— খালা ভেতরে আসেন…. এখানে রেখে যান….
,
,
,
ওকি দিয়ে খালার বাটিতে কি আছে দেখতেই দেখলাম বড় বড় দুইটা হাসের ডিম ওতে….. এমা…. নিশ্চয় এগুলো এখন আমাকে গেলাবে…… মানে মানে কাট তুলি এখান থেকে……
আমার সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে যম ঠাকুর দরজা আটকে আমাকে টেনে নিয়ে খাটে বসালেন…..
,
,
——— নিশ্চয় সকালের মতন ইয়ে খাবার ইচ্ছা নেই….. থাকলে বলতে পারো আই ডোন্ট মাইন্ড……. দুষ্টু হেসে আমার মুখের সামনে ডিম খানা ধরে…..
,
,
,
ব্যাস ও কথাতেই আমার কাজ হয়ে গেলো….. বাধ্য মেয়ের মতোই কামড় বসালাম ডিমে…..ঠান্ডা পানি না খাবার জন্য একেবারে কড়া করে নিষেধ করে দিলেন…..এতেকরে নাকি চকলেট সিস্ট আর ক্যান্সারের ছত্রাকের সংক্রামক বাড়ে….যম ঠাকুর টা যে কতো কিছু যানে আল্লাহ…. বেলা বারোটার দিকে রেডি হয়ে ওনি কলেজ চলে গেলেন…… এদিকে খালা ও তার কাজ শেষ করে চলে গেছেন…… আমি ড্র‍য়িং রুমে বসেই এক চোট ঘুমিয়ে নিলাম….. ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে…. রুমের এটা সেটা পরিষ্কার করতে করতেই যম ঠাকুর চলে এলেন……দরজা খুলে বাইরে মুখ বের করে উকি দিতেই ওনি ধুম করে আবার গালে চুমু খেলেন….. আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে ভেতরে চলে আসি….. ওনি আমার এই ভ্যাবাচেকা খাওয়া মুখ দেখে বেশ মজা নিয়ে হাসছেন…. আমার হাতে ওনার ওয়ালেড আর ঘড়ি ধরিয়ে দিয়ে শার্টের ইং খুলে বোতাম খুলতে খুলতে রুমে চলে গেলেন…..ভয়ে আর রুমে যায় নি….. এই লোকের আজ হয়েছে কি…. সকাল থেকে যখন তখন চুমু খাচ্ছে…… কিন্তু সে আর বেশিক্ষণ হলো না…. এর মাঝেই ওনি গলা ফাটিয়ে ডাকতে শুরু করলেন…..
,
,
——— তুলিইইইইইইইইই
,
,
জল চাইবে ভেবেই আমি একেবারে ড্রয়িং রুম থেকে পানির গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকলাম….
,
,
——— বাহ… বউতো বেশ বুদ্ধিমতি হয়ে গেছো…. আমার চুমুতে অনেক ভাইটামিন আছে বুঝলা…. একদিনেই কেমন তরতর করে বুদ্ধি বেরে গেলো….. বলেই ওনি এক ঢুকে পানিটা শেষ করে আমার হাতে দিয়ে দিলো…….. গায়ের শার্ট টা খুলে হ্যাঙারে রেখে আমি হাতে লুঙ্গি ধরিয়ে দিয়ে খুব ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় হাত ছড়িয়ে বসে বললো….
,
,
,
——— উফফফ…. খুব কাহিল লাগছে….প্যান্ট টা একটু চেঞ্জ করে দাও তো…আমার দিকে তাকিয়ে
,
,
——— হ্যাঁ।।।। এ…. আস্তাগফিরোল্লাহ…. বলেই এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম….. ওনি এটা কি বললো….. এদিকে ড্রয়িং রুম থেকে ওনার খিলখিল করে হাসির শব্দ আসছে….. ওনি জেনেশুনে ইচ্ছে করে আমাকে এভাবে হেনস্তা করেন….. মনে মনে ওনাকে খুব বকলাম খুব…..
,
,
,
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ওনি আবার বেরিয়ে গেলেন….. দরজা লাগিয়ে হাতে মুখে পানির ঝাপটা দিলাম বেশ কয়েকবার….. আবার দুনিয়া অন্ধকার করে ঘুম নামছে চোখে….. এদিকে গায়ের গয়না গুলো যেন মনে হচ্ছে কয়েক মন…… গলার, হাতের,কানের গায়ের যত গয়না আছে সব খুলে টেবিলের উপর রেখে খুব স্বস্তির একটা ঘুম দিলাম….. ঘুম ভাঙলো যম ঠাকুরের ডাকে….. চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি ওনি আলুথালু বেশে আমার পাশে বসে আছেন বাইরের পোষাকে…. একি!!! ওনি ভেতরে আসলো কিভাবে!!! আমিতো রুম লক করে….
,
,
——— এভাবে কেউ ঘুমায় তুলি!!! দরজা কতক্ষণ ধরে নক করছিলাম…. কত কিছু মাথায় আসছিলো….. ভ্যাগ্যিস আমার কাছে এক্সট্রা কি ছিলো….. একটু তো কান খাড়া রাখতে হয় নাকি…..
,
,
ওনি ওঠে চলে গিয়েও আবার আমার পাশে বসে পড়লো….. চোখ টেনে চোখের ভেতর কি যেনো দেখলো…. আবার হাতের কবজি চেপে ধরে ঘড়ি তাক করলো….. ওনার হাত ঘড়িতে তাকাতেই দেখলাম আটটা বাজে,….. ইশ এতো সময় নিয়ে ঘুমালাম….. সেরাতে খাবার পর ওনি একগ্লাস দুধ আর আস্ত একটা আপেল খাওয়ালেন…..তারপর টেবিলের উপর থেকে গয়না গুলো এনে একে একে সবগুলো পরিয়ে দিলেন…. কোমড়ের বিছা আর পায়ের নূপুর টা পরিয়ে দিয়ে বললেন……
,
,
,
——— যত যাই হোক এগুলো তোমার গা থেকে খুলার একমাত্র হকদার আমি….. আর কেউ না তুমি ও না….
,
,
ওনার কথা শুনে মুখের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম ওনার রাগের পরিমাণ টা…. যা ওনি ক্রমশ দাতে দাত চেপে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন……. সেরাতে আবার ও আগের মতো লতার মতো পেচিয়ে ধরে শুয়ে ছিলো….. তবে সেভাবে ঝেকে ধরে নি….. ওনার বুকেরসাথে আমার পিঠ একেবারে লেপ্টে আছে….. সারা মুখে ওনার গরম নিশ্বাস ছড়িয়ে পরছে….. ওনার বা হাতের উপর আমার মাথা রেখে ডান হাতটা শাড়ির আঁচল গলিয়ে পেটের উপর রাখলেন…..
,
,
,
——— তুলি!!!
,
,
——— হু
,
,
——— আজকে কি খুব বেশি ব্লিডিং হয়েছে!!! তোমাকে বেশ দূর্বল দেখাচ্ছে….. কালকে একবার ডাক্তারের কাছে যাবে!!!
,
,
,
ওনার কথা শুনে লজ্জায় আমি শেষ….. লোকটার মুখে কি কোন কিছুই আটকায় না….. ওনি কিন্তু বেশ বুঝেন আমি লজ্জা পাচ্ছি কিন্তু তার পর ও এগুলো বলবেন….যম ঠাকুরটা দিনকে দিন লজ্জাদায়ক মহামারী হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য…উফফফফ….
,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১২

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১২
লেখনিতে: চৈত্র রায়

২৫
,
,
,
পরীক্ষা শেষ হবার পাঁচদিনের মাথায় বিয়ে হবার দরুন পড়াশোনা আর করা হয় নি……এদিকে কলেজে ও বেশ লম্বা ছুটি চলছে…..কিন্তু এর মধ্যেই যম ঠাকুর আমায় পড়ার ঘর দেখিয়ে দিলেন…… তবে আম্মু বাধ সাধলেন এতে…. একেবারে কলেজ খুলার পরই যেনো পড়াশোনা শুরু করি এও বলে গেলেন……
,
,
,
——— আম্মু তুমি বুঝতে পারছো না…. এখন তো আগের মতো সময় ও নেই সিলেবাস কমপ্লিট করা মুশকিল হয়ে যাবে ওর জন্য…. তাছাড়া এখন আর কাজটাই বা কি যে ওকে তুমি এভাবে লাই দিচ্ছো…..
,
,
——— সিলেবাস কমপ্লিট হবে না কেন!!! তুই আছিস তাহলে কিসের জন্য!!! এই কয় দিন একটু রেস্টে থাকুক….. বিয়ের ধকল টা কি কম নাকি…..সাথে ফুলি খাকা ও সায় দিলেন…. ব্যাস
,
,
———তোমাদের আর কিচ্ছু বলার নাই….যা খুশি তা করো…. এই মাথা মোটা টা যখন ফেল মারবে তখন আমি মসজিদে মিষ্টি বিলোবো দেখে নিয়ো…. আমার মাথার পিছনে চটি মেরে….
,
,
——— এই তোর সাহস তো কম না তুই আমার সামনে ওকে মারছিস!!!!! বাবু তোকে আদর করি বলে ভাবিস না আমি শাষণ করা ভুলে গেছি…..আর কক্ষনো যাতে এমন না দেখি….
,
,
,
ব্যাস অনুমতি পেয়ে গেলাম….. উফফফ গা টাই ফুরফুরা হয়ে গেলো…. বিয়ে আর অসুস্থতার আনন্দ টা এখন একেবারে খুব ভালো করে পাচ্ছি….. আগে জানলে তো কবেই বিয়ে করে নিতাম….. আহহহহ কতো শান্তি….. কিন্তু আমার শান্তি আর যম ঠাকুর বেশিক্ষণ টিকতে দেয় না….. একটু পরেই চিল্লিয়ে ডাকা শুরু করে দেয় ………
,
,
,
——— কি ব্যাপার গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছো কেন!!! লাগেজ তিনটা এখনো আগের মতোই পড়ে আছে…. এগুলো গোছাচ্ছো না কেন!!
,
,
——— আসলে আম্মু বলেছিলেন গোছিয়ে দিবেন….
,
,
——— নিজের কাজ নিজের করা জানতে হয় তুলি….. আম্মুর বয়স হয়েছে….. ওনাকে দিয়ে ফারদার আর এসব করাবা না…. ইভেন ফুলি খালাকে দিয়ে ও না….আমি লাগেজ বিছানার উপর তুলে দিচ্ছি তুমি একে একে আমার হাতে কাপড় গুলো দেবে ঠিক আছে….
,
,
,
অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলাম….. যম ঠাকুরের যা রাগ দেখা গেলো না করার জন্য আমার মাথা চিবাতে বসে গেছেন…… কিন্তু এখানে তো আমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ও আছে কিভাবে কি করবো…… এদিকে ওনি ওনার জামা কাপড় গোছিয়ে আমাকে কাপড় রাখার জায়গা করে দিলেন…..
,
,
,
——— কি হলো দাও…
,
,
,
মা ফেরার সময় গিফটের সব শাড়ি দিয়ে দিয়েছেন…… তারপর এই বাড়ি এসেও অনেক গুলো শাড়ি পেয়েছি….. আম্মু দিয়েছে, বড় আপু দিয়েছেন…. মেঝো ভাবি ও দিয়েছেন…… আলমিড়ার এক তাক অলরেডি ভর্তি হয়ে গেছে শাড়ি দিয়েই….. আরেক তাকে শাড়ি আর সালোয়ার কামিজ…… শেষ পর্যন্ত কিছু কাপড় ওনার কাপড়ের পাশে রেখেছেন……
,
,
——— বাকি কাপড় গুলো তুমি গোছাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি…..
,
,
ওনার কথায় কিছুটা স্বস্তি পেলাম….. হয়তো আমার অস্বস্তি তার চোখে পড়েছিলো সেদিন….. তবে যম ঠাকুর তাকে মেনে নিতে, এই সম্পর্ক টাকে মনে ধারণ করতে অনেক ছাড় দিয়েছেন অনেক এফোর্ট দিয়েছেন যা আমি আজ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি…… দিনকাল বেশ কাটছে….. আম্মুর সাথে আর ফুলি খালার সাথে….. তার সাথে যম ঠাকুর তো আছেন ই……..জ্বিনের ভয়ে রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে না….. তাছাড়া ওনি বাসায় না থাকলে আমি আম্মুর রুমেই শুয়ে বসে থাকি….. ওনি প্রতিদিন বাসায় ফিরে রুম থেকে চেচিয়ে চেচিয়ে ডাকবেন জল দেবার বাহানায়….. আজকাল কেন জানি ওনার এই চেচিয়ে চেচিয়ে আমার নাম ধরে ডাকাটাকে খুব ভালো লাগে….. নিজেকে কেমন যেনো গিন্নি গিন্নি লাগে…..একদিন তো আমার সাথে খুব রেগে গেলেন রুমে থাকি না কেন”!! কেন বারবার আমাকে তার ডাকতে হয়…. চুপ করে ছিলাম সেদিন…..৷ মুখের রা টা ও কাটি নি…. কি বলবো!! আপনার রুমে ভূত আছে…. আমার এই রুমে আসতে ভয় করে…. বললেই সেরেছে….. কিলিয়ে আমাকেই ভূত বানিয়ে দিবেন….. যা রাগ বাবা….
,
,
,
ডাক্তার পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার বয়ান দেবার পর থেকেই সকালে সেদ্ধ দুইটা হাসের ডিম আর রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ হয়েছে আমার খাবারের তালিকায়…… টেবিলে খাবার নিয়ে তালবাহানা করি বলে আম্মু রোজ সকালে খাবার পর ফুলি খালাকে দিয়ে ডিম রুম পাঠিয়ে দেন….. যম ঠাকুর তখন যমের মতন এই ডিম আমাকে জ্বিনের ভয় দেখিয়ে গেলান…. রাতেও সেইম কাহিনি……. খেতে না চাইলেই বলবে….. জ্বিনটা আমাকে বড্ড ভালোবাসে…. কেউ যখন আমার কথা শুনে না…. তখন সে খুব রাগ করে….. আর রাত বেরাতে রুমের মধ্যে বড়সড় পা ফেলে হাটে আর চেচামেচি করে….. নয়তো বলবে….. গায়ের যা চিকন চিকন হাড্ডি আমার তো তোমার উপর হাত পা রাখতেই ভয় করে না জানি আবার ভেঙে যায়…..আমি চুপচাপ শুনি আর দুধ গেলি….. সুযোগ পেলে আয়নায় নিজেকে দেখি আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি……
,
,
,
রাতে একেবারেই ঘুম হচ্ছে না…… কোনমতে চোখ বুঝে পড়ে থাকা যাকে বলে…… এদিকে যম ঠাকুর রোজ আমাকে পেচিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছেন…… সারা রাত একটু ও নাড়তে পারি না….. সকালে উঠে হাতেপায়ে প্রচন্ড ব্যাথা হয়….. আজকাল ভয়টাও যেনো বড্ড বেড়েছে….. রাতে রুমের লাইট অফ করতে দেই না….. মাঝেমধ্যে ওনি ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলে আমিও দরজার বাইরে দারিয়ে থাকি…… প্রায় রাতেই ওনি আমার মাথায় বিলি কেটে দিয়ে ঘুমাতে সাহায্য করেন কিন্তু ঘুম আমার চোখে নামে না….. সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ওনার বলা কথা গুলো বাজে….. সারাদিন ঝিমুতে থাকি….. চোখের নিচের কালি দিনকে দিন গাঢ়ো হয়েই চলেছে…… আজকাল আর যম ঠাকুর আমাকে ভয় দেখিয়ে কোন কিছু করান না….. সারাক্ষণ দেখি কিছু একটা নিয়ে টেনশনে থাকে…..
,
,
,
এর মধ্যে একদিন যশোর থেকে বড় আপুর শ্বাশুড়ি ফোন দিয়েছেন…… আপু নাকি সিড়ি থেকে পড়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছেন……আম্মু তো কান্নাকাটি করে অস্থির…… শেষ পর্যন্ত ওনি ফুলি খালাকে নিয়ে গাড়ি করে যশোর রউনা দিলেন….. সাথে ওনিও যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমার জন্যই রয়ে গেছেন তাছাড়া আম্মুও রাজি হচ্ছে না….আম্মুরা যেদিন গেলেন সেদিন ওনি আর বাইরে যান নি….. সারা বাড়িতে যেনো কেমন একটা গোমট ভাব চলে এসেছে….. একটা গা ছমছমে ভাব…… সারাদিন ভয়ে যম ঠাকুরের পেছন পেছন ই ছিলাম…….. বিকাল থেকেই হাত-পা ব্যাথা করছিলো বেশ…..ওনি স্টাডি রুমে গিয়ে ফাইল পত্র নাড়ছিলেন….. আর আমি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম……. কেন যেনো আজকে ড্রয়িং রুমে বসে ও ভয় করছে…… বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছি….. মনে হচ্ছে পেছনে কেউ আছে….. এসব ভাবতে ভাবতেই একেবারে ঘামিয়ে যচ্ছি….. দুই চার মিনিট পর দেখলাম ওনি দুইটা ফাইল নিয়ে এসে আমার পাশে বসলেন ………… কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি বলতেই পারবো না….. ঘুম ভাঙলো ওনার ডাকে….. ভালো করে তাকিয়ে দেখি সোফায় ই আছি এখনো….. মাথার নিচে বালিশ দেওয়া….. ওনি ফাইল পত্র গুছিয়ে উঠে পড়লেন…. ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি দশটা বেজে গেছে…… গা ট বেশ ভাড়ি ভাড়ি লাগছে….. কোমড়ের দিকের শীড়দাড়া একেবারে টান হয়ে ব্যাথা করছে….. বেসিন থেকে পানি মুখে চোখে ছিটিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়েয় মুছে নিলাম…… রুমের দরজা টা ও দেখতে কেন যেনো ইচ্ছে করছে না….. খাবার সব গরম করে….ওনাকে ডেকে এসে প্লেটে সব খাবার তুলে দিয়ে নিজেও বসে পড়লাম…..কিন্তু খাওয়া আর গলা দিয়ে নামছে না…..চারটে ভাত ডাল দিয়ে মুখে গুজে ওঠে পড়লাম…… সব কিছু গুছিয়ে….. ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় বসতেই দেখলাম যম ঠাকুর দুধ নিয়ে হাজির….. কিছু বলার আগেই নিজের হাতে দুধের গ্লাসটা মুখে তুলে দিলেন…… কেনো যেনো মানুষটাকে আজকাল বড্ড আপন মনে হয়….
,
,
,
২৬
,
,
,
রাতে ঘুম ভেঙে গেলো প্রচন্ড পেট ব্যাথায়…… ব্যাথাটা খুব পরিচিত….. তারিখ মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়লো পিরিয়ড সাইকেল মিস করছি প্রায় সপ্তাহখানেক….. তলপেটের ব্যাথা টা আস্তে আস্তে যেনো প্রতি জয়েন্টে জয়েন্টে গেড়ে বসছে…..পেটের উপর ওনার হাত টাকে কয়েক মণ ভারি মনে হচ্ছে…… সারা গা অসার হয়ে আসছে….. প্রতি বারই এতো ব্যাথা….. মা কে বড্ড মনে পড়ছে….. আমার গোঙানির আওয়াজ শুনে ওনার ঘুম ভেঙে গেলো….. আমাকে পেট চেপে গোঙাতে দেখে কিছুটা হকচকিয়ে উঠে বসলো……. পিরিয়ডের ব্যাপারটা বুঝতে ওনার খুব বেশি সময় লাগলো না…. আলমিরা থেকে কাপড় নিয়ে আমাকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলেন ফ্রেশ হবার জন্য….. ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখি ওনি নতুন বেডশিট পাতছেন….. ব্যাপার টা দেখে বেশ লজ্জা পেলাম…… রাতেই কেন হলো…. দিনে ও হতে পারতো….. লজ্জায় কোন ভাবেই ওনার দিকে তাকাতে পারছিলাম না….. ভোরের পাখির ডাক শুনা যাচ্ছে বাইরে….. ভোর কি হয়ে গেছে তাহলে!! ঘড়িতে তাকাতেই দেখলাম চারটে পঞ্চাশ বাজে……
,
,
,
যম ঠাকুর হুট করে এসে আমার চুলের ভাজ থেকে গামছা টা খুলে দিলো……
,
,
,
——— ভেজা গামছা চুলে বেশি সময় রাখতে নেই…. মাথা ব্যাথা হয়….. এখন একটু ঘুমিয়ে পড়ো….. আর এটা নরমাল…. এ নিয়ে এতো লজ্জা পাবার কিছু নেই….কিছু লাগলে আমাকে ডেকো…. বলেই আমাকে টেনে শুইয়ে দিয়ে নিজেও আমার পাশেই শুয়ে পরলেন….
,
,
,
প্রতিবারই পিরিয়ডের সময় টাতে জ্বর জ্বর ভাব,অরুচি সহ হাত পা ব্যাথার নানা উপসর্গ দেখা দেয়….. প্রথম তিনদিন তো ভালো কথাকেও চিরতা মনে হয়….. কতো চিল্লাচিল্লি করতাম মায়ের সাথে….. মা চুপচাপ সহ্য করতেন….. উল্টো এটা সেটা মুখের কাছে এনে ধরতেন…… সকালের ঘুমটা ভাঙলো মাকে স্বপ্নে দেখেই….. পাশে তাকিয়ে দেখি যম ঠাকুর নেই….. রুমের দরজা হা করে খোলা…… ফ্রেশ হয়ে বাইরে যেতেই দেখি ওনি রান্নাঘর থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বের হচ্ছেন….. বাইরে মুষল ধারায় বৃষ্টি পড়ছে…..আকাশ এখনো কালো হয়ে আছে….. কাল বৈশাখি ঝড়ের পূর্বাভাস…. ওনি আমাকে চোখের ইশারায় ওনার পেছনে আসতে বলে আমাদের রুমের বারান্দায় চলে এলেন….. বারান্দায় তারের পেচানো দুটো মোড়া আর একটা ছোট গোল টেবিল ছিলো….. আমি রীতিমতো অবাক বনে গেলাম ছোট্ট টেবিলটার উপরে একটা প্লেটে খাবার সাজানো….. সেদ্ধ ডিম…. ছেকা পাউরুটি,কলা,মিস্টি বিস্কুট আর টোস্ট…. পাশে একটা পানির গ্লাস…..
,
,
,
——— তুলি জলের জার টা নিচে রাখো তো…. টেবিলে জায়গা হচ্ছে না……
,
,
,
জলের জার টা নামিয়ে রাখতেই ওনি একটা চায়ের কাপ আমার দিকে রেখে আরেকটা নিজের দিকে রাখলেন…… আদা চা দেখেই মুখের ভাব ভঙ্গি পালটে গেলো….. গরম গরম দুধ চা খাবার ইচ্ছা ছিলো প্রচন্ড….. কি আর করার এইটা তো আর আমার বাড়ি না…. তবে বাসায় হলে এতোক্ষণে সুফিয়া খালা বেশ কিছু শুনে ফেলতেন……
,
,
,
——— গরম গরম চা টা শেষ করো তুলি….পেট ব্যাথা অনেকটা কমে যাবে….
,
,
চা শেষ করার পর একে একে পাউরুটি হাসের ডিম সবই ঠুসে ঠুসে খাওয়ালেন আমায়….. সাথে নিজেও খেলেন….. হাসের ডিমের আস্টে গন্ধে গা গুলাচ্ছে….. যতবারই বলেছি খাবো না…. ততোবারই বলছে
,
,
,
——— এই সময় কতটা ব্লাড লস হয় কোন ধারণা আছে….. মাথা ঘুরিয়ে তো পড়ে যাবে শেষে….. তাই হাই প্রোটিন মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট….. হারিয়াপ….
,
,
,
ওনার একেকটা কথা শুনে আমি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি….. যতই এই ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে যাচ্ছি ততই ওনি খোলামেলা ভাবে প্রসঙটা টেনে আনছেন…… খাবার শেষ হবার পর আমি একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই প্লেট কাপ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম…….. সিংকে যখন থালা বাসন ধুতে ব্যাস্ত তখন যম ঠাকুর পানির গ্লাস হাতে আমার পাশে এসে দাড়ালেন…….
,
,
——— পানি না খেয়ে চলে এলে কেনো!!! এই বাজে অভ্যাস টা যেনো আর না দেখি আমি…. হাত ধুতে হবে না….. আমি খাইয়ে দিচ্ছি….
,
,
,
বাসন ধুয়া শেষ করে রুমে ঢুকার সময় কলিং বেল টা বেজে উঠলো….. দরজা খুলতেই দেখলাম একজন মহিলা দারিয়ে আছেন…… গতকাল ফুলি খালাই ওনাকে ঠিক করে দিয়ে গেছেন রান্না করার জন্য…..ওনাকে রান্না ঘরের সব কিছু দেখিয়ে দিয়ে রুমে চলে এলাম….. রুমের দরজার নব ঘুড়াতেই মনে হলো কেউ হ্যাচকা টানে টেনে নিলো ভেতরে আমাকে….. আচমকা এমন হওয়ায় ভয়ে আমার চোখ নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে গেছে….. একজো হাত যখন আমার কোমড়ে আবিষ্কার করলাম ঠিক তখনি চোখটা খুলে গেলো আপনা আপনি….. কপালে মুখে গরম নিশ্বাস পড়ছে ক্রমাগত…… এতো স্বচ্ছতা যম ঠাকুরের চোখে আজই যেনো প্রথম টের পেলাম…… বেশ লম্বা হওয়ায় ঘাড় উঁচিয়ে ওনাকে দেখতে হচ্ছে…..নিজেকে ঠাহর করতেই দেখলাম হাত দুখানা ওনার বুকে খুব সাবলিল ভাবে রাখা….. ছাড়াতে চাইলাম কিন্তু যম ঠাকুর ছাড়লো না…. তিনি আরো পাকাপোক্ত করে আমার কোমড় আগলে ধরলো…… কপালের উপর থেকে আধ ভেজা চুলের গোছাটা কানের পিঠে গুজে দিতে দিতে বললেন…..
,
,
,
——— এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন!!! আমাকেই এতো লজ্জা!! অবিশ্বাস্য হলেও একটা কথা কিন্তু সত্যি তুলি…. তোমার সব কিছু…. ছোট থেকে ছোট কথা গুলো ও জানার রাইট আছে আমার…. ঠিক তো!!!
,
,
আমি মাথা নিচু করেই মাথা নাড়লাম…..
,
,
——— আচ্ছা কাল রাতে যদি আমার ঘুম না ভাঙতো তাহলে তো এতো লজ্জা পেতে না…. তাই না!!! তুমি যেই ব্যাপারটার জন্য এতো লজ্জা পাচ্ছো সেই ব্যাপার টা আমি ক্লাস নাইন থেকেই আমার পাঠ্য বইয়ে পড়ে আসছি….এই ব্যাপারে জানার জন্য আমি প্রথম কাকে প্রশ্ন করেছি জানো!!! মাকে….. মা কিন্তু আমাকে সাবলীল ভাবেই আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন…… মেয়েদের কিভাবে রেসপেক্ট করতে হয় সেই শিক্ষা টা কিন্তু আমি আমার মায়ের কাছেই পেয়েছি…..এরপর হায়ার স্টাডির জন্য ইউনিভার্সিটি তে আসা….. সেখানে অনেক মেডিকেল ক্যাম্পিং করেছি….. সেই সুবাদে অনেক ট্রেনিং ও পেয়েছি….. এবং আমি হলফ করে বলতে পারি পিরিয়ড সম্পর্কে সচেতনতা তোমার থেকে আমার ই বেশি জানা…..আর সেই তুমি আমাকেই লজ্জা পাচ্ছো!!!
,
,
,
হায় হায় ওনি বলে কি এইসব….. ওনার প্রতি টা কথাই যেনো লজ্জা হয়ে আমার উপর বর্ষিত হচ্ছে….কাচোমুচো করে ওনার থেকে সরে যাবার চেষ্টা করতেই ওনি একেবারে দম বন্ধ হয়ে যাবে এমন ভাবে চেপে ধরলেন……
,
,
,
——— এই মেয়ে এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন…. লজ্জা পেতে পেতে তো তোমরা এটাকে ট্যাবু বানিয়ে ফেলেছো….. অথচ মানব জীবনের সূচনা কিন্তু তোমাদের এই সো কল্ড লজ্জা থেকে….. এরপর থেকে কিন্তু আমার কাছ থেকে আর লুকানোর চেষ্টা করবে না…..বলেই আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে নাকটা টেনে দিলেন …..
,
,
,
সেদিন ও সারাদিন ওনি বাসা থেকে আর কোথাও যান নি….. একটু পর পর পানি নিয়ে আসছেন নাহয় কোন ফল….. এতো দিনকার চেনা মানুষ টাকে নতুন করে আবার জানছি….. আগের সেই রাগি রাগি সাদাফ নামক মানুষ টার সাথে আজকের আমার সামনে বসা মানুষ টার কোন মিলই নেই….. বিয়ে ঠিক হবার পর যতবার ই বলেছি মাকে ওনার রাগের কথা ততোবারই মা হেয়ালি করে উড়িয়ে দিয়েছেন আর বলেছেন টিচার হিসেবে যেমন সাদাফ খুবই ভালো তেমনি মানুষ হিসেবে সাদাফ এক কথায় অনন্য….. আসলেই অনন্য তিনি….. এতো স্বচ্ছ আর প্রাণবন্ত মানুষ টা…. সবার সাথে একদম নিজের মতন করে মিশে যায়….. বাবা তো আজকাল সাদাফ নাম শুনেই দুই ঢোক জল বেশি খায়…..
,
,
,
সন্ধ্যার দিকে ওনার এক বন্ধু ফোন দিয়ে বেরুতে বললে উনি কোন হেয়ালি না করেই বলে দিলেন….. নারে আমার বউটা অসুস্থ…. আজ আর আসবো না….. আমি তখন সোফাতে হেলান দিয়ে বসে টিভি দেখছিলাম….. ওনার এই কথা শুনে আবার ও মনে হলো এক বালতি লজ্জার মধ্যে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি…. তবে ওনার সেই আমার বউ কথা টা খুব মনে ধরেছিলো আমার….. আসলেইতো আমি ওনার বউ…. সাদাফের বউ……
,
,
,
বের হবে না বলেও সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর ওনি লুঙ্গি পড়েই কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবো বলেই বেরিয়ে গেলেন…. এদিকে আমার অবস্থা খারাপ ভয়ে…. রুমের দরজা লক করে…. ড্রয়িং রুমে ফুল ভলিউমে টিভি অন করে রেখেছি…. সমানে পায়চারি করছি তো কখনোই দরজার সামনে গিয়ে দারিয়ে আছি….. পাক্কা পয়ত্রিশ মিনিট পর ওনি ফিরে এলেন…..দরজা খুলার পরই সিগারেটের গন্ধটা সবার আগে নাকে লাগলো….. ও তার মানে ব্যাটা খচ্চর যম ঠাকুর সিগারেটের হাওয়া গেলার জন্য আমারে জ্বিনের কাছে রেখে গেছে…..এএএএ সাদাফ মানুষ হিসাবে অনন্য…. দেখে যাও তোমাদের অনন্য মানব জনাব সাদাফ মিয়া সিগারেট খায়….
,
,
,
রাতে আর কোমড় ব্যাথার জন্য বিছানা ছেড়ে দাড়াতে পারিনি…..কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলাম….. ওনি নিজেই খাবার গরম করে প্লেটে করে রুমে নিয়ে এসে আমাকে বেশ কয়েকবার ডাকলেন….. খাবার কোন ইচ্ছে ছিলোনা বলে আর খাই নি…. ওনিও তাই বেশি জোর করলেন না….. সেখানে বসেই নিজের খাওয়া শেষ করে….. আমাকে একগ্লাস দুধ খাওয়ালেন নাছড়বান্দা হয়ে…..সে রাতে আর আমার উপর হাত পা রাখে নি….. তবে বেশ গা ঘেষে শুইয়ে ছিলেন…… সকালে ঘুম ভাঙার পর বিছানা থেকে নামতেই নুপুরের ঝমঝম আওয়াজ স্পষ্ট শুনলাম….. যম ঠাকুর তখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন….. মনের ভুল ভেবে সামনে এগুতেই আবার শুনলাম….. আশেপাশে তাকাতে তাকাতে যখন নিজের পায়ের দিকে চোখ পড়লো তখন নিজেই ভয়ে আধমরা হয়ে গেলাম……
,
,
,
আমার পায়ে নূপুর কোত্থেকে এলো…… আমি তো পড়িই নি….. তাহলে কি জ্বিন টা আবার….. এবার হাউমাউ করেই কান্না জুড়ে দিলাম….. বিছানার পাশে মেঝেতে বসে….. যম ঠাকুরের ঘুম ততক্ষণে ভেঙে গেছে….. ওনি একপ্রকার পরিমরি করেই আমার কাছে ছুটে এলেন….
,
,
——— এইইইইই তুলি… কি হয়েছে এভাবে কাদছো কেন”!! কষ্ট হচ্ছে!! কি হয়েছে বলবে তো!!
,
,
——— আয়ায়ায়ামি এএএএখানেএএএ আর্রর থাকবোওঅঅঅঅ না…. আমি বাড়ি চলে যাবো…..
,
,
——— কি বলছো কি সক্কাল সক্কাল আবোলতাবোল….
,
,
——— ওই জ্বিন টা আবার এসেছে…. আমার পায়ে নূপুর…. এই দেখুন….. আমি আর এখানে থাকবো না…. রোজ রোজ ভয়ে ভয়ে আমার থাকতে ভালো লাগছে না…. বলেই আবার কান্না শুরু দিলাম…..
,
,
,
ওনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরলেন…….
,
,
——— তুলি…….এই ঘরে কোন জ্বিন নেই….. নূপুর টা আমিই তোমাকে পড়িয়ে দিয়েছি কাল রাতে….৷ তুমি ঘুমিয়ে ছিলে বলে টের পাওনি….
,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১১

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১১
লেখনিতে: চৈত্র রায়

২২
,
,
,
ফিরানিতে যাবার সময় আম্মুকে খুব জোর করলাম সাথে যাবার জন্য কিন্তু তিনি গেলেন না…. উল্টো আমার কথা শুনে হেসে কুটি কুটি….. ছেলে বউয়ের সাথে নাকি এখন শ্বাশুড়ি ফিরানিতে যাবে….. লোক হাসানো যাকে বলে….. এসব বলছে আর হাসছেন…… যম ঠাকুর আম্মুর রুমে আসতেই আম্মু ওনাকে সব বলে দিলেন….. আমিও একপ্রকার জেদ ধরেই ওনাকে বললাম আম্মুকে যেনো বুঝিয়ে বলেন আমাদের সাথে যাবার জন্য……আমার এই কথা শুনে মা ছেলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলেন….. আমি অবাক হয়ে ওনাদের কান্ড দেখছি…. কি এমন বলেছি যে দুজন মিলে যুক্তি করে হাসছে!!! আমি মুখটা কালো করে খালার কাছে গিয়ে বললাম….. খালা আম্মুকে রাজি করিয়ে দিন না!!! সাথে আপনিও চলেন…. আপনাদেরকে আমার সাথে নিয়ে যাবো…. ওমা খালাও দেখি হাসে….. ওনি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন….. যাবো মা জান…. অবশ্যই যাবো….. তবে আজকে না…. আজকে মায়েরা ছেলে মেয়েদের সাথে যাবার যে নিয়ম নেই মা জান….. লোকে তো হাসবে…… খালার কথা বলার মাঝেই আম্মু আসলেন…… ফুলি তোর মা জানরে বুঝা….. মেয়ে নাকি আমারে নিয়ে যাবে ফিরানিতে….. বল!! এতো অবুঝ….. তবে একদিকে ভালোই হয়েছে বল…. তুই আর আমি মিলে ওর গাল টেনে, চুল টেনে, পিটিয়ে পিটিয়ে সংসারি শিখিয়ে দিবো কি বল….. আমি আম্মুর দিকে ভয়ে তাকাতেই আম্মু খুব সুন্দর করে হেসে কপালে চুমু খেয়ে বললেন…. মনে করে কিন্তু মায়ের কাছে বিচার দিয়ে আসিস….. তরে যে মেরে ধরে সংসার শিখানোর কথা বলেছি…..বলেই দুজন আমাকে মাঝ খানে রেখে জড়িয়ে ধরলেন….. এই তিনদিনে মানুষ গুলোকে যত দেখছি ততই তাদের প্রতি ভালোলাগাটা বেড়ে যাচ্ছে….. ফুলি খালার প্রতি আম্মুর নির্ভরতা আর বিশ্বাস দেখে আমি ভুলেই গিয়েছি যে ওনি এখানে কাজ করেন…..আম্মু আমাকে বিয়ের পরদিন রাতে…. যেদিন ফুলি খালার সাথে আমার প্রথম কথা হলো সেদিন ই….. আড়ালে ঢেকে নিয়ে বলেছেন……
,
,
,
——— তুলি আমি কখনো তোকে বউমা ডাকবো না….. কথাটা শুনে বেশ চমকে ছিলাম…. আম্মু আমাকে আরও চমকে দিয়ে বললেন আমি তোর মাকে কথা দিয়েছি তোকে আমি আমার মেয়ে করে রাখবো….. যদি তোকে বউমা বলে ডাকি তাহলে তো নিজেকে তোর শ্বাশুড়ি মনে হবে মা না….. আমি চাই না আমি তোর সাথে শ্বাশুড়ি হয়ে থাকি তোকে কোন কষ্ট দেই….. তোকে আমি আগেও যেমন টুকি ডেকেছি এখনো ডাকবো কেমন!!তোকে যেমন আমি বউ ভাবি না তেমনি ফুলিকে ও আমি কাজের লোক ভাবি না….. ও আমাকে আপা ডাকে…. আর আমি ওকে আমার ছোট বোন ভাবি….. টুকি তুইও কখনো ওকে কাজের লোক ভাবিস না মা….. ওর সাথে তোর তুলনা করলাম বলে নিজেকে ছোট ভাবিস না বা আমার উপর রেগে থাকিস না….. আমি সব মানুষ কেই এক ভাবি….. পরম আল্লাহ আমাদের নিজ হাতে বানিয়েছেন….. তার সৃষ্টিকে সামান্য কয়টা টাকার জন্য কিভাবে ভেদাভেদ করি বলতো….. বরং তারা আছে বলেই আমরা এতো ভালো আছি, সুখে আছি বল…..সত্যি কথা বলতে আমার নিজের ছেলেমেয়ের থেকে এদের অবদান বেশি আমার জীবনে….. ছেলে মেয়ে মানুষ করেছি তারা বড় হয়েছে নিজেদের মতো করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে….. কতটুকু কাছে পেয়েছি ওদের!! এরাই ছিলো তখন….. দেখভাল করেছে…. হাতে হাতে কাজ করেছে….. হ্যা বলতে পারিস টাকার বিনিময়ে কিন্তু ওদের পারিশ্রমিক এর বিনিময়ে এই কয়টা টাকা খুবই নগন্য……
,
,
,
সেদিন অবাক হয়ে শুধু আম্মুর কথাই শুনে গেছি….. মানুষ টা শুধু সরল না অনেক সুন্দর মনের অধিকারি….. এই মানুষটাকে যতবার দেখি ততবারই আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়…..হয়তো আমার কোন জন্মের পূন্যের ফল তিনি…..
,
,
,
সকালে একবার মা ফোন দিয়ে দিয়েছে এখনো কেনো বের হচ্ছি না….. আম্মু আমাকে রেডি করাতে নিয়ে গেলেন আর যম ঠাকুরকে সব বলে গেলেন কি কি নিয়ে আসতে হবে বাজার থেকে…… আফটার অল ব্যাটা প্রথম বার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে বিয়ের পর….. এদিকে ওনি আম্মুর সাথে রেগে বোম হয়ে আছেন….
,
,
,
——— আম্মু একসাথে দুজন রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলেই তো হয়….. যাবার পথে বাজার থেকে সব কিনে নিয়ে যাবো….. তাহলে তো আর বাসায় উল্টো সব নিয়ে ফিরতে হচ্ছে না
,
,
,
——— একদম না….. বাজারের ভেতরে টুকিকে রিক্সায় বসিয়ে তোমার বাজার করতে হবে না…….. এমনিতেও বাইরে অনেক রোদ ও ঘামিয়ে যাবে….
,
,
——— আর আমি এখন বাইরে গেলে মনে হচ্ছে পুষ্পবৃষ্টি হবে……. আম্মু কি শুরু করলা বলোতো!!!
,
,
——— তুই গেলি!!!!
,
,,
,
ওনি রাগে গজগজ করতে করতে বাজারে চলে গেলেন…… আমি রেডি হয়ে আম্মুর রুমেই বসে ছিলাম…… যম ঠাকুরের ঘরে আর আসি নি।।।।। অই জ্বিনের ভয়ে…… আজকে শাড়ি পড়িয়ে দেবার সময় ও আম্মু কোমড়ের বিছা খানা দেখেছেন কিন্তু কিছু বলে নি….. বেশ ওশখোশ লাগছে…. ঠিক করলাম আম্মুকে সব টা খুলেই বলি….. ঠিক তখনি যম ঠাকুর চেচিয়ে আমায় ডাকতে লাগলেন তাকে একগ্লাস পানি দেবার জন্য….. হুইহহহ…. নিজের কাজ নিজের করতে হয় বলে আমাকে আবার জ্ঞান দেয়….. অথচ নিজেই সামান্য পানির জন্য কিভাবে চেচাচ্ছে দেখো….ডায়নিং থেকে পানির গ্লাস নিয়েই ঘরে ঢুকলাম….. ওনি দরজার দিকে মুখ করে ফ্যানের নিচে দারিয়ে শার্টের বোতাম খুলছে….. ঘামিয়ে একেবারে গোসল সেরে নিয়েছে যাকে বলে…… পানির গ্লাস টা এক ঢুকেই খালি করে আমার হাতে ধরিয়ে একেবারে হ্যাচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এলেন….. ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটিয়েছে যে আমি হকচকিয়ে ওনার দিকেই তাকিয়েই আছি….
,
,
,
——— তখন মায়ের পিছনে দারিয়ে মিটিমিটি হাসা হচ্ছিলো তাই না!!! খুব হাসি পায় নাহ!!! নিজে বেশ সেজেগুজে ফ্যানের নিচে আছো…. আর আমি যে গরমে ঘেমে এলাম!!! একটুও মায়া দয়া নাই নাহ বরের জন্য!!! একেবারে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে
,
,
,
——— আয়ায়ায়ামি
,
,
,
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের মাথার ঘাম টা আমার ডান কাধের ব্লাউজের উপর মুছে ফেলতে ফেলতে বললেন শাস্তি শেষ হয় নাই বাকি আছে…. খবরদার বাথরুম থেকে বেরিয়ে যেনো রুমে পাই….. যম ঠাকুর টা সেদিন বাথরুম থেকে বেরিয়ে গামছা দিয়ে তার হাত-পা মুছিয়েছেন….শার্টের বোতাম লাগিয়েছেন… হাতের ঘড়ি টা ও বাদ রাখেন নি…..এমন কি মানিব্যাগ টা আমাকে দিয়ে তার পকেটে ঢুকিয়েছেন……
,
,
,

শাস্তি দেবার বেলায় এই ব্যাটা আসলেই অনন্য…..কোথা থেকে যে বের করে আনে এসব…..বাকিগুলো ঠিক ই ছিলো কিন্তু শার্টের বোতাম লাগানোর সময় মনে হচ্ছিলো দর্জি শার্টে এতোগুলা বোতাম না লাগিয়ে চেইন ই তো লাগায় দিতে পারে…… এদিকে একেকটা বোতাম লাগাতে গিয়ে মনে হচ্ছিলো এই বুঝি হার্ট টুপ করে বেরিয়ে গেলো যে হারে বাজনা বাজাচ্ছে…..একেবারে কাপাকাপি অবস্থা যাকে বলে…..
,
,
,
২৩
,
,
,
আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম….. আমাদের সাথে যম ঠাকুরের সব বন্ধু বান্ধব ও যাচ্ছে…..সেদিন একসাথে বাড়ির মোড়ে সাতটা রিকশা আর সবার সামনে একটা ভ্যান গাড়ি ঢুকেছে….. আশেপাশের লোকজন তো হা করে তাকিয়ে দেখছে….. যম ঠাকুর ভ্যান গাড়ি ভর্তি করে বাজার করে নিয়েছে….. মিষ্টির কার্টুনেই অর্ধেক ভ্যান গাড়ি ফিলাপ করে ফেলেছে……মা তো গিয়ে বসার সাথে সাথে আপ্যায়ন শুরু করে দিয়েছে ওদের….. এত শত ব্যাস্ততার মাঝেও ফাকে ফাকে আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছেন….. আমি হাসছি কি না খেয়াল করছেন।।।।। বিয়ে উপলক্ষে আসা আত্নীয় স্বজন সবই রয়ে গেছে আমাদের বাড়িতে….. যার জন্য হৈ- হোল্লার টাও বেশি….. আমাকে যেই দেখছে সেই বলছে কিরে তুলি তুই তো একেবারে চকচক করছিস…… আর বাকি গুলো….. কিরে তুলি তোর শাশুড়ী আর জামাই তো হেব্বি কাজের….. গিয়েছিলি তো হাগতে হাগতে পাটকাটি হয়ে তিনদিনেই একবারে মানুষ করে দিলো….. এই শুনে রাখো নেক্সট কারো হাগার ব্যামো হলে বদনাটা বগলদাবা করে ওর শশুর বাড়ি চলে যাবা….. ওর জামাই আর শাশুড়ী মিলে যত্নআত্নি করে সুস্থ করে দেবে…..এগুলো আমাকে আর কোন দিকেই ছাড়লো না….. শেষ পর্যন্ত আমার অত ভালো শাশুড়ী টাকে নিয়েও এরা মজা করে….. এদের ভালো হবে না…. অভিশাপ দিলাম তোদের সবার কোষ্ঠকাঠিন্য হোক….. আমার হাগা নিয়ে তো তোদের অনেক আনন্দ….. নে তোরা এবার না হাগতে হাগতে মর…. হাড়ে বজ্জাত সব…….
,
,
,
আসার পর থেকেই দাদি আমাকে ইশারা ঈংিতে ডেকে যাচ্ছেন কিন্তু প্রতিবারই যম ঠাকুর আমাকে কিছু না কিছু বলে আটকে দিচ্ছেন…… এদিকে আসার পর থেকেই সবার মুখে মুখে যম ঠাকুরের নামে গুনগান চলছে…. কি ভালো ছেলে….. একদম নিজের খরচে বিয়ে করেছে….. মেয়ের বাবাকে এক পয়সা ও খরচ করতে দেয় নি…. দেনমোহর বিয়ের দিনই শোধ করেছে….. সবার সাথে কি সুন্দর কথা বলছে….. না মেয়ে জামাই পেয়েছে ভাগ্য করে…… বাহ যম ঠাকুরের তো বেশ সুনাম চলছে সবার মুখে মুখে…… চলবেই বা না কেন….. ছোট বড় সবার সাথে ওনি কি সুন্দর করে হাশি ঠাট্রা করতে করতে কথা বলছেন….. নানি তো আমাকে ওনার সামনেই বলে দিলো….. তোর জামাইয়ের অঙ্গে রসে ভর্তি লো তুলি কোন কথা ছেমরা আর মাটিতে পরতে দেয় না…..সামলায়া রাখিস বইন তোর জামাইরে….এদিকে সমান তালে ওনিও বলে যাচ্ছেন ———
,
,
,
——— ইশশশ নানি আপনারে আগে দেখা হলে ত নিশ্চিত এই বিয়ে হইতো না……নানি এবার যাবার সময় তুলিকে রেখে যাবো….. সংসারি টা আমি আপনার সাথেই করতে চাই নানি….
,
,
——— রসের আলাপ বন্ধ করো নাত জামাই…. এক পা কবরে আর আরেক পা কবর স্থানের দরজায়…. যারে দিছি তারে নিয়াই সুখি হও ভাই….. আজকে তোমার নানা বাইচা থাকলে খুব খুশি হইতো বুঝলা….. তুলি যে তার কি আদরের ছিলো….. অন্যান্য নাতি দের ও করতো কিন্তু তুলি নাকি তার মায়ের মতন দেখতে হয়েছে….. কত কাধে নিয়ে বেড়িয়েছে!! কখনো নাম ধরে ডাকতো না…. ছোট বেগম…. ব্যাস এই ডাকটা শুনলেই মেয়ে রেগে বোম হয়ে যেতো…… বুঝলে ভাই মানুষ টা সবসময় বলতো রাণু তোমার আগে যেনো আল্লাহ আমাকে নেয়….. তোমার মরণ আমি সহ্য করতে পারবো না….. আল্লাহ তার ফরিয়াদ কবুল করেছে ভাই….. কিন্তু আমার টা শুনছে না……রোজ রাইতে তারে স্বপ্ন দেখি আমার পাশে আইসা বইসা রইসে….. তার যাবার সময় আমি কান্নাকাটি করি…… সে আমারে বুঝায়…. বলে রাণু আর বেশি দিন নাই….. তুমি কান্নাকাটি কইরো না তো…..
,
,
,
ড্রয়িং রুম থেকে তুলিদের খাবার রোম একেবারে স্পষ্ট দেখা যায়….. তুলি সেখানে দারিয়েই মায়ের সাথে কথা বলছে….. সেতো ঘুনাক্ষরে ও বলতে পারবে না এক জোড়া চোখ তার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…… সাদাফ নানির সাথে কথা শেষ করে বন্ধুদের সাথে গিয়ে বসলো একেকটার অবস্থা একেবারে নাজেহাল….. সকালে খাইয়েই এদের এই অবস্থা বাকি তো আর ও দুইবেলা রয়েছে…..
,
,
,
সবার জন্য চা নিয়ে রুমে ঢুকার পর আর বেরুতে দেয় নি তারা….. সবার একটাই কথা এখানে বসে তাদের সাথে আড্ডা দিতে হবে….. সবগুলো যম ঠাকুরের বন্ধু মেয়ে বলতে আমি একা…. বেশ আনইজি ফিল করছি…. যম ঠাকুর টা আমার হাতের কনুই টেনে আমাকে তার পাশে বসিয়ে দিলেন….. আমি পিঠের উপর আঁচল টেনে বসে পড়লাম….
,
,
,
——— শালা খুওওওব বউ এর পাশে বসা শিখে গেছো না….!!!এমনিতে তো লোকাল বাসে ও কোন মেয়ের পাশে দাড়াও না….
,
,
———এইটাই আমার চরিত্র…. যাহা ফুলের চেয়েও পবিত্র….. এতোকাল আমার পাশে থেকেও তো কিচ্ছু শিখতে পারলি না…..বিয়ের পর তো চিরকাল বউএর সন্দেহের তালিকায় থাকবি…… আর শোন তুলির সামনে আর কখনো গালি দিবি না…. আমার বউটা নেহাৎ ই বাচ্চা মানুষ….. আমি চাই না তার উপর কোন বাজে প্রভাব পরুক…. আফটার অল এতোদিনকার কোলে পিঠে করে মানুষ করা বউ আমার…. কতো খেটেছি বলতো….. তোর যদি গালিই দেবার থাকে আমাকে আগে বলবি…. আমি ওর কান চেপে ধরে রাখবো দেন তুই গালি দিবি….ঠিক আছে!!
,
,
,
ওনার এই কথা শুনে একেকজন পারে না হাসতে হাসতে খাট আর ফ্লোর ফাটিয়ে ফেলে…..কথায় কথায় কি এক পাইছে কোলে পিঠে করে মানুষ করা বউ…… সবসময় ই আমাকে নিয়ে তার হাসি ঠাট্টা…..
,
,
,
——— আচ্ছা এসব বাদ তোদের লাভ স্টোরি টা বল শুনি
,
,
——— আমাদের প্রেম কাহিনি টা বলো তো তুলি সুন্দর করে….
,
,
——— নাউজুবিল্লাহ….. আস্তাগফিরোল্লাহ…. ইন্নালিল্লাহ…..প্রেম আর আমি তাও ওনার সাথে তওবা তওবা….. কথা গুলো বলে আর আমি ওখানে এক দন্ড ও অপেক্ষা করি নি….. বেরিয়ে এসে পড়েছি….. ওনার কথা শুনে রাগে আমার গা সমানে কেপে উঠছে…… কি সুন্দর করে বলে প্রেম কাহিনি বলতে….. প্রেম!!! ওনি প্রেম করেছে আমার সাথে!!! পান থেকে চুন খসলেই বেতের বাড়ি মিস হতো না….. মেরে মেরে আমার ঠ্যাং খুড়া করে ছেড়েছে….. আবার বলে প্রেম কাহিনি বলতে……. যা করলাম না তাই আমাকে বলতে হবে….. এবং চারেদিকে তাই রটে গেছে….. এতো ভালো ক্যান আমার কপাল…. ক্যান!
,
,
,
২৪
,
,
,
সেদিন রাতে যম ঠাকুর আমার রুমেই ঘুমালেন…..ওনি খেয়ে আগেই শুয়ে ছিলেন….. আমি একটু দেরি করেই রুমে এসেছি….. মায়ের সাথে কথা বলে…. রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শোয়া মাত্রই ওনি আমাকে পেট আগলে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন….আমার বাম কাধটায় মাথ রাখলেন বালিশ থেকে সামান্য নেমে….. গলায় বুকে ওনার গরম নিশ্বাস গুলো পড়া মাত্রই এক আলাদা শিহরণ জাগাচ্ছে সারা গায়ে….. আমি বিন্দু মাত্র নড়লাম না….. ওনি আমাকে অবাক করে দিয়ে শাড়ির আঁচল গলিয়ে পেটের উপর হাত রাখলেন….. এতোক্ষণ ওনার হাতটা শাড়ির উপর ই ছিলো…..
,
,
,
——— তখন এতো রাগের কি ছিলো!!! আমি কিন্তু পরে ওদের সব বুঝিয়ে বলেছি…..এভাবে কিন্তু হুটহাট রেগে যাওয়া একদম ই ঠিক না তুলি….. এতে করে অজান্তেই আমরা অন্যদের হার্ট করে ফেলি….. কি ব্যাপার কিছু বলছো না কেন!!
,
,
——— আপনি একটু সরে ঘুমাবেন প্লিজ!! শাড়ি পড়ে আমার বড্ড গরম লাগছে……
,
,
——— আচ্ছা…. বলেই ওনি আমার পায়ের উপর এক পা তুলে দিলো…..
,
,
——— এইটা কি হলো!! আমি তো আপনাকে সরতে বললাম নাকি!!
,
,
——— বেশি গরম লাগলে কাপড় খুলে ঘুমাও…. এমনিতে ও তোমার যা ঘুম…. ঘুমালে তো হুশ ই থাকে না… কাপড় গায়ে আছে নাকি চান্দে!!এর থেকে বেশি সরে ঘুমানো আমার পক্ষে পসিবল না…. কারণ আমার কোন প্রকার লাথি খাবার ইচ্ছা নাই…..
,
,
——— ঠিক আছে…. আমি নিচে বিছানা করে ঘুমাচ্ছি…
,
,
——— সে তুমি ঘুমাতেই পারো…. তবে মাঝরাতে খাটের নিচে বা নিজের পাশে কাউকে ঘুমাতে দেখলে আবার চেচামেচি করে লোক সজাগ করো না যেনো….
,
,
——— মানে…
,
,
——— আগেই বলেছিলাম আমাদের বাড়ির জ্বিন টা আমায় খুব সমীহ করে….. আমি রাতে যেখানে থাকি সে ও সেখানে থাকে…. খাটের নিচে…. ঘরের কোনে… মাঝেমধ্যে তো পায়ে শুরশুরি ও দেয়….
,
,
,
ওনার কথা শুনে ভয়ে আমি আরো ওনার সাথে সেধিয়ে গেলাম…..ঘুমের মধ্যে আমার পায়ের পাতায় ওনার পায়ের ছোয়া লাগলেই ঘুম ভেঙে কেপে উঠছি….. ব্যাপার টা ওনি ঘুমের মাঝেই খেয়াল করে আমি আমি বলে আমার কপালে চুমু খেয়ে বলতেন ঘুমিয়ে পড়ো…. কিন্তু ঘুম গাড়ো হচ্ছিলো না কোন মতেই….. রাতে ওয়াশরুমে যাবার সময় ও ওনাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে ওয়াশরুমের বাইরে দার করিয়ে তারপর ওয়াশরুমে যেতাম…. এমন করেই দুদিন কেটে গেলো বাপের বাড়িতে….. রাতে না ঘুমানোর জন্য দিনের বেলা বসে বসে ঝিমুতাম….. এতে সবাই বেশ হাসাহাসি করতো….. যম ঠাকুর আমাকে সুযোগ পেলেই রুমে নিয়ে এসে ঘুমাতে বলতো…. কিন্তু আমি ঘুমাতে পারতাম না…. চোখ বুজলেই মনে হতো কেউ তাকিয়ে আছে…. কখনো ঘুমিয়ে পড়লেও মনে হতো ঘুমের মধ্যেই গায়ে হাত দিচ্ছে….. কাপড় ধরছে…. কিছুতেই রুমে এসবের মধ্যে ঘুম হতো না….. তবে রাতে ওনার পাশে শুয়ে আধো ঘুম আধো জাগরণে থাকতাম…
,
,
,
বাড়ি থেকে ফেরার পথে যম ঠাকুর আমাকে ডাক্তারের কাছে চেকাপ করিয়ে আনলেন….. কোন সমস্যা না পেয়ে স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেতে বলেছেন দুর্বলতার জন্য…..সেদিন বাড়ি ফেরার পর আম্মু আমাকে অনেক্ক্ষণ জড়িয়ে ধরে বসে রইলেন….. আর বার বার করে বললেন টুকি এখন থেকে তুই যেখানে যাবি আমাকেও সাথে করে নিয়ে যাবি বুঝলি….. আমার একা বাড়িতে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এই তিন দিনে….. তুই এই কয়দিনেই আমার অভ্যাস পুরো পালটে দিয়েছিস রে….. অথচ যেই আমি এতোকাল একা একা থেকে এসেছি সেই আমিই কিনা একা থাকতে ভয় পাচ্ছি…. কথা দে আমাকে সাথে নিয়ে যাবি যেখানে যাস…. আমিও হেসে সেদিন আম্মুকে জড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষণ……
,
,
,
চলবে……

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১০

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১০
লেখনিতে: চৈত্র রায়

১৯
,
,
,
দুপুরের দিকে বড় আপু এসে আমাকে শাড়ি গয়না দিয়ে গিয়েছেন আর যাবার সময় বলে গেছেন তিনি মেঝো ভাবি কে পাঠিয়ে দিচ্ছে ততক্ষণে আমি যেনো হাত-পা ধুয়ে রেডি হয়ে থাকি…… এর মধ্যেই যম ঠাকুরকে দেখলাম বকতে বকতে বড় আপু রুমে পাঠালেন……. রুমে ঢুকে মুখটাকে বাংলার পাচের মতন করে দারিয়ে আছেন….. হয়তো খেয়াল ই করে নাই আমি যে রুমে আছি…… ওনাকে এভাবে দেখে আমি পেটে হাত চেপে হু হু করে হেসে উঠলাম…… যা লাগছে না দেখতে একেবারে পেঁচামুখি……হাসির আওয়াজ শুনে আমার দিকে কপাল কুচকে তাকালেন….ওনার এভাবে তাকানো তে আরও বেশি করে হাসি পাচ্ছে….. অবস্থা বেগতিক দেখে মুখে হাত চাপা দিলাম কিন্তু তাও হাসি থামাতে পারছি না…..ওনি ঝট করে আমার সামনে দাড়িয়ে নিজের কোমড়ের দু পাশে হাত ঠেকিয়ে কটমট করে জিজ্ঞেস করলেন ———
,
,
,
——— হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ” বাল ” তুলি!!!!কাল রাতে কিন্তু আমি শব্দটা স্পষ্ট শুনেছি….
,
,
,
ব্যাস ওতেই আমার হাওয়া টাইট যাকে বলে…..হাসি যে কর্পূরের মতো করে কখন উবে গেছে নিজেই টের পাই নি…. কাল রাতের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম….. এখন কি হবে!!! ওনি তো স্পষ্ট শুনেছেন গালিটা….. এখন আমার পিলে না চটকায় আবার…..আমাকে ভ্যাবাচেকা খাওয়াতে পেরে সেই তখন থেকেই শয়তানি হাসি হেসে যাচ্ছে…… মনে মনে যম ঠাকুরের তুলোধুনো করে মুখটাকে নিষ্পাপ করে রাখলাম…… ওনি বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বলে গেলেন আলমিরার ২য় তাক থেকে যেনো শপিং ব্যাগ টা বের করে রাখি….. ব্যাটা খচ্চর সকালে ত খুব ডায়লগ বাজি করেছিলেন……. নিজের কাজ নিজে করতে….. নিজের বেলায় কি!!! হারে বজ্জাত কোথাকার….. ওনার শপিং ব্যাগ বের করে বিছানায় রাখতে রাখতেই মেজো ভাবি এসে আমাকে তাড়া দিয়ে রেডি করাতে শুরু করলেন….
,
,
,
——— এমা তুলি!! চুল এখনো শুকাউ নি কেন!! তুমি কি আবার গোসল করলে নাকি গো!!!
,
,
——— না ভাবি……গোসল তো সেই সকালে করেছি ঘুম থেকে উঠে…..
,
,
——— তাই নাকি!! তা এতো সক্কাল সক্কাল গোসল!! ব্যাপার টা কি!! তুলির কাধে হালকা ধাক্কা দিয়ে….
,
,
——— আমার নানি বলে দিয়েছিলেন….. বিয়ের পর নাকি সকাল সকাল গোসল করতে হয় এটা নাকি নিয়ম!!! ভাবি আপনাদের কি আরো সকালে গোসল করার নিয়ম!!!
,
,
——— সাদাফ ঠিকই বলে তার বউ নিতান্তই বাচ্চা…. তুলির কপালে চটি মেরে….তা সাদাফ কাল রাতে কি উপহার দিলো ঘুমটা তুলে….. এই তুমি সালাম করেছিলে মনে করে!!
,
,
——— হু….. ঘুমটা তুলে কি উপহার দিয়েছে জিজ্ঞেস করতেই তুলির মন খারাপ হয়ে গেলো…… যম ঠাকুর তো কোন উপহার দেয় নি….. সে তো আমার উপর উপহাস করাতে ব্যাস্ত ছিলো…. (মনে মনে)
,
,
——— কি দিয়েছে বললে না তো… এই তুলি তোমার কোমড়ের বিছা টা তো বেশ সুন্দর….. কত খানি রূপা লেগেছে!! বিয়েতে পরো নি নাকি!!! কাল রাতে তো দেখলাম না….. ও বুঝেছি এইবার….. এই তাহলে…. আর কথা না বাড়য়ে তুলিকে শাড়ি পড়াতে শুরু করলেন মুচকি হেসে….
,
,
,
এদিকে তুলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কোমড়ের বিছার দিকে….. এটা কোত্থেকে এলো….. মা তো কোন বিছা পড়ায় নি তাকে!! সেইবা কখন পড়লো এটা!!! যতটুকু মনে আছে কেউ তাকে বিছা দেয় নি তো!! তাহলে এটা কোমড়ে আসলো কি ভাবে!! কখন ই বা পড়লো!! এর জন্যই সকাল থেকে কোমড় ভাড়ি লাগছিলো!! সকালে তো এতো খেয়াল করে নি…. গোছল করেই কোন রকমে শাড়ি পেচিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম…. তাহলে!!!
,
,
——— তুলি…. চুল গুলো বেশিই ভেজা বোন…. এখানে বসে চুল টা শুকিয়ে নাও তারপর গয়না গুলো বেরোনোর আগে পড়ে নিয়ো…. আমি একটু ওদিকটায় দেখে আসি কেমন!!
,
,
,
তুলি মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই ওনি চলে গেলেন….পিঠের আচল ফেলে চুল গুলো পিঠে ছড়িয়ে দিলেন…. বেশি লম্বা না হওয়ায় কোমড়ের উপরেই ছড়িয়ে আছে….. এর মধ্যেই সাদাফ বেরিয়ে এলো গামছা হাতে নিয়ে…… প্যান্ট সে একেবারে বাথরুম থেকে পড়েই বেড়িয়েছে….. গায়ে মেলানো গামছাটা চেয়ারের হোল্ডারে রেখে সেন্ডু গেঞ্জি টা পড়ে নিলো জলদি….. তুলি তখনও সাদাফ কে খেয়াল করে নি…. সে আপন মনে চুলের ভেতর আঙুল চালিয়ে চালিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে….. সাদাফ শপিং ব্যাগ থেকে নতুন শার্ট বের করে ক্লিপ খুলে একদম তুলির পেছনে ড্রেসিং টেবিলের বরাবর দাড়ালো….. তুলি তখন হাতে বালা পড়ছিলো….. বা হাতে বালা ঢুকাতে গিয়ে বেশ মুশকিল হচ্ছে……. সকালে ক্যানেলা করার জায়গাটাতে বাথরুমের দরজায় বাড়ি খেয়েছিলো তার জন্যই ফুলে আছে….. কাইকুই করে বালা ঢুকাতে হচ্ছে….
,
,
,
——— এই হাতে বালা পড়া লাগবে না…. ডান হাতেই দুইটা পড়ে ফেলো….এই হাত শাড়ির নিচেই থাকবে কেউ খেয়াল করবে না…..
,
,
,
ওনার কন্ঠটা শুনে আয়নায় তাকালাম….. ওনি আমাকে ওনার দু চোখ বুঝে মাথাটা সামান্য হেলিয়ে আস্বস্ত করলেন….. সাথে হালকা ঠোঁট ছড়ানো হাসি….. বেশ লাগছে তো যম ঠাকুরকে…. এই গোলাপি শার্টে….. কালারটা যেনো গায়ের রঙের সাথে মিশে গেছে…… বেশিক্ষন তাকাতে পারলাম না…. কেননা যম ঠাকুর তার নিজের থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে আয়নায় তাকালেন হাতা ফোল্ড করতে করতে….. এবার আমি নিজের দিকে তাকালাম….. কলাপাতা আর লাল পাড়ের মিশেলে একটা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন ভাবি….. লিপস্টিক আগেই দিয়ে ফেলেছি…. তাই কানে ঝুমকা পড়তে শুরু করে দিলাম…… গলায় বিয়ের জড়োয়া নেকলেস টা পড়ার সময় ওনি বাধা দিয়ে বললেন কাল রাতে যেই নেকলেস টা পড়েছি সেটা যেনো পড়ি….. ওনার কথা মতোই ড্রয়ার থেকে বের করে পড়ে নিলাম…… তারপর ওনি আলমারি থেকে একটা চেইন এনে আমার গলায় নিজ হাতে পড়িয়ে দিলেন…… এটা মা বাবা ওনাকে দিয়েছিলেন…… আমি ওনার দিকে তাকাতেই বললেন ইসলামে তো ছেলেদের স্বর্ণ পড়া হারাম তাই এটা আমি তোমায় দিয়ে দিলাম …….. আমি আর কিছু বললাম না…. চেনের লকেট টা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছি….. বাংলা হরফে সাদাফ নামটা সম্পূর্ণ স্বর্ণ দিয়ে লিখা…… মা জুয়েলার্সের দোকান থেকে ডবল মুজুরি দিয়ে লকেট টা গড়িয়েছিলেন…… খুব অন্যরকম একটা ভালোলাগছিলো…. যমঠাকুর এখনো আমার পেছনেই দারানো ওনার মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না….. কিন্তু আড়চোখে বুকের দিকটায় তাকিয়ে আছি খুব করে….. কেনো যেন খুব পরিপূর্ণ লাগছিলো তখন নিজেকে….. সব কিছু আমার….. এই মানুষ টা আমার….. এই ঘড় টা আমার….. এইটা আমার সংসার….. এই যে আমার সামনের আয়নায় দুটো মানুষের প্রতিচ্ছবি!! এইটাই আমার ভবিতব্য…. এটাই আমার সংসার….. এই মানুষটার বউ আমি…. অর্ধাঙ্গিনী….. সহধর্মিণী…….
,
,
,
এতোসব ভাবনা ভেবে পরক্ষণে নিজেই বোকা বনে গেলাম…… যেই মানুষটাকে কাল ও আমি আমার জীবনে স্বাভাবিক ভাবে মানাতে পারছিলাম না আজ তাকে জুড়েই এতো সব বিশেষণ জুড়ে দিলাম নিজের সাথে…..
,
,
,
২০
,
,
,
আম্মু নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব নিয়ম কানুন পালন করলেন আমাকে আর যম ঠাকুরকে দিয়ে….. বিকেলের দিকেই প্রায় সব আত্নীয় স্বজন চলে গেলেন….. বড় আপু চলে গেলেন সন্ধ্যায়….. মেজো ভাবিরা কাল ভোরে রউনা দিবেন….. ভাইয়ার ছুটি শেষ আজকেই…. আম্মু অনেক চেচামেচি করে ওনাকে রেখেছেন…… এদিকে আমার অবস্থা ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাচি….. আম্মু আমার অবস্থা বুঝতে পেরে আমাকে ঘরে পাঠিয়ে দিলেন….. কাপড় খুলার সময় আবারো কোমড়ের বিছাটা চোখে পড়লো….. কে না কে দিলো…. তার চেয়ে বরং আম্মু কে দেখিয়ে নিলে ভালো হবে…. ভেবেই বিছাটা খুলে হাতে নিয়ে বের হলাম বাথরুম থেকে….. ওনি তখন রুমেই ছিলেন….. আপুদের স্টেশন ছেড়ে সবে মাত্র রুনে এসেছেন…… প্যান্টের ভাজ থেকে শার্টের ইং ছাড়িয়ে বুকের দিকের দুটো বোতাম খুলে পকেট থেকে মানিব্যাগটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে ———
,
,
,
——— তুলি একগ্লাস পানি দাও তো…
,
,
——— দিচ্ছি
,
,
পানি খেয়ে আমার দিকে গ্লাস ফিরিয়ে দিতে গিয়ে খেয়াল করলেন হাতের বিছাটা…. আমি গ্লাস টা টেবিলে উপর রেখে দরজার দিকে এগুতেই ———
,
,
,
——— কোথায় যাচ্ছো!!
,
,
——— আম্মুর কাছে এটা দিতে….. আমাকে কে যেনো উপহার দিয়েছে এইটা মনে করতে পারছি না….
,
,
——— মানে!!
,
,
——— দুপুরে মেজো ভাবি শাড়ি পড়াতে গিয়ে কোমড়ে বিছাটা দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন….. তখনই প্রথম খেয়াল করলাম…. কিন্তু কখন কিভাবে পড়লাম কিছুই মনে পড়ছে না….
,
,
——— ওমা সেকি তোমাকে আম্মু, বড় আপু কেউ কিছু বলে নি!!!
,
,
——— কি বলবে!!
,
,
——— এই বাড়িতে….. ইনফেক্ট আমার রুমেই থাকে…
,
,
——— কে থাকে!!! আশেপাশে তাকিয়ে
,
,
——— জ্বিন…… খারাপ না কিন্তু….. এবাড়িতে যারা নতুন সদস্য হয়ে আসে তাদের সে কিছু না কিছু উপহার দেয় আর কি….. আমাকে তো খুব স্নেহ করে…..ওনিই তোমাকে এইটা দিয়েছে…..
,
,
——— ম্মমানে!!!!
,
,
——— মানে এতোক্ষণ যা বললাম….. তুমি এটা খুলেছো কেন!! কোনক্রমে যদি বুঝতে পারে যে তার দেওয়া উপহার তুমি খুলে রেখেছো তাহলে একেবারে অনর্থ করে ফেলবে….. জলদি পড়ো…… ওয়েট আমি পড়িয়ে দিচ্ছি….. আর যেনো খুলতে না দেখি…. মানে আর খোল না যেনো।।।।।
,
,
,
ওনার কথা শুনে হতবিহ্বল আমি….. এক যম ঠাকুর কি কম ছিলো যে তার উপর আবার জ্বিন এসে জুটেছে….. এ কোন বাড়িতে বিয়ে দিলে মা….. দুনিয়াতে কি আমার উপযুক্ত এই ভুতুইরা বাড়ির যমদূত ই ছিলো…. যদি ও বা ছিলোই তাও কেন এই পোলার কাছে আমাকে বিয়ে দিলা…..!!! আমার প্রাণের মায়া তোমাদের নাই…!!! তোমাদের তো আমি একটা মাত্রই সন্তান ছিলাম নাকি!! ….. দেখে যাও ভূতের প্রিয় হয়ে গেছে এখন তোমাদের মেয়ে…..ভূতেরা এখন তোমাদের মেয়েকে উপহার দিয়ে যায়….. কোমড়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম বিছাটা একদম শাড়ির ভাজে সুন্দর করে পড়ে আছে……
,
,
,
রাতের খাবার খেয়ে ফ্রেশ হয়ে মাত্র রুমে ঢুকেছি….. এর মধ্যেই যম ঠাকুর স্যালাইন নিয়ে রুমে ঢুকলেন…… ফার্মেসি বন্ধ হয়ে যাবে বলে খাবার টাও পর্যন্ত খেয়ে যায় নি…..একটু আগে ভাবি এসে রুমে খাবার ঢাকা দিয়ে গেছেন…… আমার ক্যানেলা ফিট করবার কথা মনে হতেই গা কাটা দিচ্ছে…..গায়ে হলুদের দিন অই কম্পাউন্ডার কয় ডজন গুতা দিয়েছে তা বলা বাহুল্য….. বেচারার ই বা কি দোষ নার্ভই খুজে পাচ্ছিলেন না……ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম ওনি ডান পাশে স্টানের দিকে স্যালাইন ঝুলিয়ে বাধছেন….. বা পাশে দেওয়াল অইপাশে ফিট করতে পারবেন না বলেই এপাশে বাধলেন……. স্যালাইন ঝুলানো শেষে ওনি আমার পাশে এসে বসে শার্টের উপরের দিকের দুটো বোতাম খুলে দিলেন….. পিঠের দিকটায় একেবারে ঘেমে লেপ্টে আছে…… কিছুটা জিড়িয়ে আমার বা হাতটা নিজের তালুতে নিয়ে একেবারে কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন ———
,
,
,
——— কি অবস্থা হাতের!!! এতো গুলো সিরিঞ্জের ফুটোর দাগ কেন!!! হাতই বা এতো নিল হয়ে ফুলে আছে কেন!!
,
,
,
——— বাথরুমের দরজায় সকালে লেগেছিল
,
,
——— সিরিঞ্জের ফুটো গুলো!!
,
,
——— ওগুলো ক্যানেলা ফিট করার সময় হাতের রগ খুঁজে পায় নাই বলে….
,
,
,
আর কিছু না বলে পাশ থেকে উঠে একেবারে রুমের বাইরে চলে এলেন….. কিছুক্ষণ পর বাটিতে করে বরফ এনে বাটি সহ হাতের উপর হালকা চেপে ধরলেন…… বেশ কিছুক্ষণ বরফ ছেকা দেবার পর নিজেই প্রসেসিং করে দুইবারের মাথায় ক্যানেলা ফিট করলেন…… তারপর স্যালাইন অন করে দিলেন…..আমাকে শুইয়ে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আমার পাশেই এসে বসলেন…..মাঝে মাঝে স্যালাইনের ফ্লু চেক করে দিচ্ছেন….. লোকটার যে কত গুণ……. মেডিক্যাল ক্যাম্প এটেন্ড করে ট্রিটমেন্ট এর ফাস্ট স্টেপ গুলুও জেনে নিয়েছেন…… এতো গুনী লোকের কপালে কিনা আমি গাধী জুটলাম….. ছে যম ঠাকুর আপনার কপাল বড্ড খারাপ…..
,
,
,
২১
,
,
,
পরদিন ভোরবেলা মেজো ভাই -ভাবি চলে গেলেন….. সেদিন ও আমি দেখলাম যম ঠাকুরকে টেবিলে পড়ে পড়ে ঘুমাতে….. এতো কিযে পড়াশোনা ওনার আল্লাই জানে….. ভাইয়া ভাবিকে সিএনজি তে তুলে দিয়ে ওনি বিছানায় এসে শুলেন….. আমাকে বললেন যেন ওনাকে দশটার আগে না ডাকি….. ঠিক আছে ডাকলাম না….. কোন রকমে গোছল সেরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম….. একা রুমে থাকতে ভীষণ রকমের ভয় করে এখন….. তার উপর যম ঠাকুর টা ঘুমে….. অই জ্বিন ব্যাটা যদি এর মধ্যে এসে হাজির হয়….. তাই আর রিস্ক নিলাম না….. বেরিয়ে চলে গেলাম আম্মুর রুমে…..বুয়া নাস্তা বানাচ্ছেন আর আম্মু পাশে বসে মটর ছুলে ডিপ ফ্রিজিং এর প্রসেসিং করছে….. আমাকে দেখে মুচকি হেসে কাছে ডেকে বুয়ার সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন আর বলে দিলেন তাকে যেনো খালা বলে ডাকি……
,
,
,
যম ঠাকুর যখন ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং এ এলেন তখন আমি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলাম….. হাতের ক্যানেলা দেখে যদিও মা আমাকে ভারি কিছু নিতে দিচ্ছেন না….. এর মধ্যেই মা-বাবা আম্মুর কাছে ফোন দিলেন আমার আর যম ঠাকুরের ফিরানির কথা বলতে….. আম্মু কথা দিলেন কালকেই আমাদের পাঠিয়ে দিবেন….. আমাকে আর পায় কে….. ইশ মনে হচ্ছে যেনো কত বছর ধরে বাড়ি যাই না তাদের দেখি না…..
,
,
,
বুয়া তিনবেলার রান্না করে সব কিছু পরিষ্কার করে একেবারে সন্ধ্যার পর ফিরেন….. সারাদিনে তিনজন বেশ জমিয়ে আড্ডা দিলাম….. খালা চেয়ারে বসে আম্মুর মাথায় তেল দিয়েছে আর আম্মু একসাথে মুড়ায় বসে আমার মাথায় তেল দিয়েছেন….. এক মিনিটের জন্যও মনে হয় নি আমি আমার থেকে বড় কোন মুরুব্বির সাথে আছি….. কারণ আম্মু মানুষ টাই একদম শিশুর মতন সরল….. বিকালের দিকে যম ঠাকুর আবার স্যালাইন নিয়ে ফিরলেন…. এসেই হাক ডাক শুরু…. এখনি স্যালাইন নিতে হবে আমার…. এদিকে স্যালাইন ফিট করে দিয়ে ওনি আবার রেডি হতে যাচ্ছেন…. কোথায় নাকি বের হবেন…… তারমানে আমাকে একা একা এই রুমে থাকতে হবে….. শুরু হলো কান্নাকাটি….. কোন্মতেই আমি এই রুমে একা থাকতে রাজি হলাম না….. উপায় না দেখে যম ঠাকুরই আমার পাশে বসলেন…….
,
,
,
কান্নাকাটি করে একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম….. ঘুম ভেঙে দেখি ওনি ক্যানেলা থেকে স্যালাইন খুলে দিচ্ছেন তারমানে স্যালাইন শেষ!!! আমি এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছিলাম!!! জানালার দিকে তাকাতেই দেখলাম সন্ধ্যা হয়ে গেছে….. সেদিন আর তিনি বের হলেন না…. কিন্তু রুমে থেকেই একটু পর পর আমাকে বেশ ভয় দেখালেন……
,
,
,
রাতে খাওয়ার পর ই আমার মন টা বেশ ভালো হয়ে গেলো….. আর মাত্র কয়েক ঘন্টা সকাল হতে…. ইশ তারপর ই আমি বাড়ি যাবো…… একপ্রকার ক্যাংগারুর মতোই লাফিয়ে লাফিয়ে খাটে উঠে ঘুমাতে গেলাম…… যম ঠাকুর তখন টেবিলে বসে কি যেনো ঘাটছিলেন বইয়ে….. আমার এই কান্ডে তিনি বই থেকে চোখ সরিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন…. তাকিয়ে থাকলে থাকুক…. আমিও সময় নষ্ট না করে ঘুমিয়ে পড়লাম……
,
,
,
সকালে ঘুম ভাঙলো একেবারে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে যাবে এমন অবস্থায়….. চোখ খুলে তো একেবারে চড়কগাছ…… ওনি একেবারে আষ্টেপৃষ্টে হাত পা দিয়ে চেপে ধরে ঘুমাচ্ছেন…… পেছন থেকে জড়িয়ে ধরার কারনে ওনার গরম নিশ্বাস গুলো আমার গালে পড়ছেন…… নিজের দুই পায়ের মাঝখানে আমার পা একেবারে সেধিয়ে রেখেছে….. এক হাত শাড়ির ভেতর দিয়ে নিয়ে পেটের উপর আর আরেক হাত আমার ঘাড়ের নিচে…… এমন ভাবে পেচিয়ে ধরেছে যে চুল পরিমান ও নড়তে পারছি না…..প্রায় মিনিট দশেক এর মতো একইভাবেই রইলাম তার ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় কিন্তু না তিনি তো সর্বস্ব দিয়ে ঘুমাচ্ছে….. এদিকে আমার শরীর ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে…..আমার ছটফট করাতে ওনার ঘুমটা ভেঙে গেলো…… আমাকে ছেড়ে দিয়ে বালিশে ভালো মতোন শুতে শুতে….
,
,
,
——— সাত সকালে কি শুরু করলে তুলি!!! রাতে ঘুমের মধ্যে যে ভাবে হাত পা ছুড়তে থাকতো ফুটবল টিমে ঢুকিয়ে দশ বারোটা গোল এমনিতেই হয়ে যেতো…… স্বপ্নে কি ফুটবল খেলো নাকি!!!! দুই রাত এই উস্টা লাথি খাবার ভয়ে টেবিলে বসে বসে ঘুমিয়ে ঘাড় ব্যাথা করে ফেলছি….. আমার পক্ষে আর সম্ভব না টেবিলে ঘুমানো…… কাল রাতে ওভাবে হাত পা না আটকালে নিশ্চিত মাঝরাতে কোমড় ভেঙে পঙ্গু হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে থাকতে হতো….. তোমার কি আর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে!!! থাকলে দু সেকেন্ড এর মধ্যে করো…. আমি আরও আধ ঘন্টা ঘুমাবো….,
,
,
,
আমার প্রশ্নের অপেক্ষা না করেই যম ঠাকুর ঘুমিয়ে পড়লেন…. ওনার বলা প্রতিটি কথা আমার মাথায় রিপিট হচ্ছে বারবার….. আসলে একা ঘুমাতে ঘুমাতে আমার এই বদ অভ্যাসটা হয়েছে….. ইশ মানুষ টা আমার জন্য দু রাত পড়ার টেবিলে ঘুমিয়েছেন….. আর আমি উল্টাপাল্টা কতোকিছু ভেবে গেছি…… কথা গুলো ভাবতেই ওনার দিকে তাকালাম….. ওনি মাথা নিচে এক হাত আর বুকের উপর এক হাত রেখে মুখটা হাসি হাসি করে শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন…..আর তার এলোমেলো চুল গুলো ফ্যানের বাতাসে কপালে উপর অগোছালো হচ্ছে…… আমি দেখছি তাকে…… কেন যেনো চোখ সরাতেই ইচ্ছে করছে না…..
,
,
,
,
চলবে…….

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_০৯

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_০৯
লেখনিতে: চৈত্র রায়

১৭
,
,
,
ওনার এমন ধরনের ঠাট্টায় খুব অভিমান হলো আমার……. অসুস্থ হবার পর থেকেই যে যেভাবে পারছেন আমার সাথে মশকরা করে যাচ্ছেন……. অথচ একবার ও কেউ ভেবে দেখছেন না যে আমার উপর দিয়ে কি গিয়েছে এই কয়দিন……… আমার অসুস্থতা আমার মন মানষিকতা কি হতে পারে তাদের কি আদৌ কোন ধারণা আছে!!! ঠাট্রা করতে পারলে হাসি তামশা করতে পারলেই।শুধু হলো……. তাদের এতো সব আয়োজন এতো সব আনন্দ সব কিছু আমাকে ঘিরে আমার বিয়েকে ঘিরে অথচ সেই আমি টাই অসুস্থ এই নিয়ে তাদের কোন হেলদোল নেই……. মনে হচ্ছে মেইন কালপ্রিট আমি….. আমার অসুস্থতার জন্য আমি দায়ী যম ঠাকুর ও এভাবে বললো!!! আজকে তো তার সাথে ও এমন টা হতে পারতো নাকি…….. না আর ভাল্লাগছে না….. আবার গা গুলাচ্ছে…… আমি বিছানায় বসে গেলাম….. যম ঠাকুরকে দেখলাম পেছনে ফিরে পাঞ্জাবির পকেট থেকে মানি ব্যাগ টা টেবিলের উপর রাখলো…… এতো ক্ষনে ভালো করে খেয়াল করলাম তাকে…… একটা অফ হোয়াইট পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা….. এই পোষাকেই তো বিয়ে করতে গিয়েছেন তিনি…… ইসসসস কি ভাব দেখো না….. যেনো কোন মন্ত্রী মিনিস্টার তিনি….. হলে হতেই পারে….. এই ব্যাটার যা বুদ্ধি…… এই পর্যন্ত যতবার ই অযুহাত দিয়েছি ততবারই ধরে ফেলেছেন…… আর মিথ্যা কথা তো ঠোঁটে আনার আগেই গজরাতেন……. বলা যায় এতোদিন আমাকে ওনার আঙুলের ডগায় ই রেখেছেন……. কেন যেনো এসব ভাবতে আর ভালো লাগছে না…..যম ঠাকুর কে কোন ভাবেই আমার জীবনে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছি না…..ঘোর টা ভাঙলো ওনার ডাকে……
,
,
,
——— ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ো…… আর খাটের বাম দিকে শুবে….. ওপাশে আমি ঘুমাতে পারি না……
,
,
,
বলেই হন হন করে বাথরুমে ঢুকে পড়লো…… এদিকে সারা গা আমার ছেড়ে দিয়েছে….. হেলে দুলে যম ঠাকুরের কথা মতো বা পাশে দেয়ালের দিকে শুয়ে পড়লাম…… পুরো খাটটা রজনীগন্ধা আর থোকা থোকা গোলাপ দিয়ে সাজানো…… চাদরের উপর গাদা ফুল আর গোলাপ ফুলের পাপড়ি…… সারা ঘর জুড়েই ফুলের মিষ্টি গন্ধ মৌ মৌ করছে…… এর মধ্যে রজনী গন্ধাই তার গন্ধ বিলিয়ে বেশি রাজত্ব করছে…..
বাইরে মেঘের বেশ গুড়গুড় ডাক শুনা যাচ্ছে….. মনে হয় বৃষ্টি নামবে….. বিছানার ফুল গুলো নাড়াচাড়া করতে করতে করতেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম…… সবে মাত্র ঘুম টা গাড় হলো ঠিক তখনি মনে হলো কে যেনো ডাকছে….. আমি এদিকে ঘুমের জন্য চোখ টেনেও খুলতে পারছি না….. খুব কষ্ট করে চোখ খুলতেই ওনি আমাকে টেনে বসিয়ে দিলেন….. কাচা ঘুম থেকে টেনে উঠিয়ে দেবার কোন মানে আছে!!! খুব চটে গেলাম….. মাথায় ভেতর যেনো চিকন ঘাম ঝড়ছে….ওনি পানির গ্লাস আর মেডিসিন গুলো আমার সামনে ধরতেই রেগে গিয়ে বললাম……
,
,
——— ধুর বাল কি শুরু করেছেন এগুলা সাদাফ ভাই…… কাচা ঘুম থেকে ডেকে তুলে আপনি আমাকে পানি খাওয়াচ্ছেন!!!!আমি ঘুমাবো সরেন তো….
,
,
——— দুই সেকেন্ড পর যেনো মেডিসিন গুলো আমার হাতে না থাকে…… এক প্রকার হুমকি দিয়ে….
,
,
,
এতো ক্ষনে আমার হুশ হলো আমি কার সামনে বসে আছি…..আড় চোখে ওনার দিকে তাকাতেই ওনার চোখে চোখে চোখ পড়ে গেলো….. কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ মেডিসিন নিয়ে নিলাম……. ওনি গ্লাস রেখে বিছানার দিকে আসার আগেই আমি মাথা মুখে আচল ঘুড়িয়ে শুয়ে পড়লাম…… বাপরে ঘুমের ঘোরে কি বলে ফেলেছি….. এখন না আবার বিছানা থেকে নামিয়ে পিটানি শুরু করে….. একদম শক্ত হয়ে ঘাড় গুজে ছিলাম…… কখন ঘুমিয়েছি বলতে পারি না…..
,
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি যম ঠাকুর তার পড়ার টেবিলে মাথা ফেলে ঘুমাচ্ছে……. বাপরে এই লোকের দেখি বুড়া বয়সে ও পড়াশোনা করা লাগে…… পড়াশোনা শেষ চাকরি করছে….. বিন্দাস চলবে তা না সেই বইয়ের মাঝেই পড়ে আছে….. যম ঠাকুরকে উপদেশ দিতে দিতে নিজের দিকে তাকাতেই ভুলে গিয়েছি প্রায়….. রাতে বড় শাড়িতে কাধের দিকটায় সেপটিপিন করে দিয়েছিলো……ব্লাউজ ছিড়ে সেপটিপিন শাড়ীতে আটকে আছে…. আর আচল পড়ে আছে পিঠের নিচে….. আচল ঠিক মতো টেনে বিছানা থেকে নেমে দাড়াতেই খেয়াল করলাম মাড়ের নতুন শাড়ি কুচকে দলা হয়ে ফুলে একেবারে লুঙ্গি হয়ে আছে….. আমি বেক্কেলের মতো শাড়ির দিকে তাকাই একবার আরেকবার তাকাই যম ঠাকুরের দিকে….. কোন মতে শাড়ি ঝেড়ে ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে দিলাম বাথরুমে দৌড়……. বাথরুম থেকে বেড় হতেই দেখলাম যম ঠাকুর ঘাড় হাতে মালিশ করছেন সাথে আড়মোড়া দিচ্ছেন…… আমি চুলে গামছা পেচাতে পেচাতে বারান্দায় গিয়ে ভেজা কাপড় গুলো মেলে দিলাম…… এর মধ্যেই ওনি বিছানার চাদড় সহ সব ফুল এক সাথে করে বারান্দার কোনায় এনে রাখলেন……. আর আমাকে বললেন বিছানার উপর চাদর রাখা আছে……. যেনো সেটা বিছিয়ে দেই….. আমি মাথা নেড়ে রুমে চলে এলাম…. আর ওনি গামছা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো…….
,
,
,
১৮
,
,
,
সকালে বড় আপু আমাকে এসে নিয়ে গেলেন খাবার জন্য….. আমার জড়তা দেখে আপু আমাকে বেশ বুঝিয়ে শুনিয়ে বললেন তারা সবাই আমার আপন….. এতো জড়তা কিসের…… স্বাভাবিক ভাবেই যেন চলাফেরা করি ঠিক যেভাবে বিয়ের আগে চলাফেরা করতাম……
,
,
,
যমঠাকুরের পরিবারে বৌভাত নামক কোন আচার নেই….. বিয়ের পরদিন পরিবারের সব বড়দের নতুন বউ পাত বেড়ে খাওয়ায়… আমার ক্ষেত্রেও তা বহাল রইলো…… সকাল থেকেই তাদের আশেপাশের নিকতস্ত আত্নীয় স্বজন আসছে আমাকে দেখে যাচ্ছে….. এর মধ্যেই যম ঠাকুর আমাকে ঢেকে রুমে নিয়ে এলেন স্যালাই অন করার জন্য….. কারণ ডাক্তারের কথা অনুযায়ী আমার আরও তিনটা স্যালাইন নেওয়া বাকি আছেন…… এদিকে আমার অবস্থা পুরাই কাচোমাচো…..বাড়ি ভর্তি লোকজন….. এর মধ্যে যে কেউ যখন তখন আমার সাথে এসে দেখা করে যাচ্ছে…….. এই মূহুর্তে স্যালাইন…… অনেকটা সাহস সঞ্চয় করেই যম ঠাকুরকে বললাম যেন আজ স্যালাইন না দেওয়া হয়….. কথাটা বলতে দেরি হয়েছে আর আমার দিকে কটমট করে তাকাতে দেরি হয় নাই…..
,
,
——— আয়নায় দেখেছো নিজের অবস্থা!!! শরীরের কোন ব্যালেন্স রাখতে পারছো কি!! একটু আগেই তো মাথা ঘুরে পড়তে নিয়েছিলে…. আম্মা পাশে থাকায়…. নইলে তো এতোক্ষণে হাসপাতাল নিয়ে দৌড়াতে হতো….
,
,
——— না মানে…. আমি তো না করি নি…. এখন তো বাড়িতে অনেক মানুষ এরর মধ্যে আমি ঘরে একা একা বসে থাকবো!! রাতে দেই বরং…. হাত মুচরাতে মুচরাতে…
,
,
——— হাত টা খুলে যাবে তো!! বলেই আমার দুই হাত ছাড়িয়ে দিলেন….. ঠিক আছে রাতেই স্যালাইন নিয়ো….. তবে সাবধানে চলাফেরা করবে….. হুটহাট করে বসা থেকে না উঠে আস্তেধীরে উঠবে….. নইলে মাথা ঘুরে উঠবে ….. বাড়ি ভর্তি মেহমানের সামনে আছাড় খেয়ে আবার রুই কাতলের ভাজি খাওয়াতে যেও না….
,
,
এর মধ্যেই বড় আপুর হাসবেন্ড এসে দরজায় নক করলেন সাথে গলা ঝাড়লেন…..
,
,
,
——— কি শালাবাবু….. একদিনেই বউকে চোখে হারাচ্ছো
,
,
——— তা আর বলতে দুলাভাই……. এতো দিন কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি বউকে চোখে তো হারাবই….. টান বলে তো একটা ব্যাপার আছে নাকি!!
,
,
——— একেবারে গড়ে পিঠে নিয়েছো বলো
,
,
——— সে আরো সময় লাগবে ভাই….. এতো জলদি কি!! ছোট মানুষ সময় তো লাগবেই তাই না৷…
,
,
——— তা তুমি জন্মের সময় নাও শালাবাবু….. আই ডোন্ট হ্যাভ এনি অবজেকশন….. আপাতত বউকে আমাদের জন্য ছাড়ো….. বাদ বাকি শিখানো পড়ানো টা নাহয় রাতেই করো বন্ধ ঘরে কেউ আর ডিস্টার্ব করবে না…..
,
,
——— সে করাই যায়…… নিয়ে যেতে চাইছেন যখন নিয়ে যান…… ছোট মানুষ তো সামলে রাখবেন নিজের বউ মনে করে না শালা বউ মনে করে……
,
,
——— এই সাদাফ আমি তোমার বোনের হাজবেন্ড হই কিন্তু মনে রাইখো মিয়া….. সুযোগ পেলেই দেখি চরিত্র নিয়া টান মারো….
,
,
——— আরে কি যে বলেন ভাই…..
,
,
,
ওনাদের কথা গুলো কথা না এক একটা লজ্জার বালতি ছিলো আমার জন্য…….. ওনারা মুখ থেকে বর্ষণ করছেন আর আমার মাথায় সেগুলো পড়ছে……যম ঠাকুর কে তো আমি যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি….আমার তো বেশ সন্দেহ হচ্ছে ওনার কো জমজ ভাই আছে নাকি….. এদিকে দুলাভাই আমাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এলো…… ওনিও আমাকে ছাড়ছেন না…..কেউ জড়িয়ে ধরতে এলে বা গায়ে হাত ছুয়াতে এলেই বলছেন এই আস্তে আস্তে সাদাফের কোলে পিঠে মানুষ করা বাচ্চা বউ….. সাবধান….. কিছু হলে তো পরে আমারেই জবাবদিহি করতে হবে….. আমিই তো ওর কাছ থেকে নিয়ে এলাম কিনা….এই কথা শুনে ছেলে বুড়ো সবাই সমানে হেসে যাচ্ছে….. যম ঠাকুর ও তাদের রসিকতার সাথে পালটা রসিকতা করছে….. আমি দেখছি…. এখনো মনে হয় অনেক অবাক হওয়ার বাকি আছে……
,
,
,
চলবে…..