Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1996



এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৮

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৮
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪৮
,
,
,
ওসামাকে আমার থেকে টেনে নিয়ে গেলেন…. ওনার কথায় কিছুটা আহত হলেও এইভেবে হাসি পাচ্ছিলো যে ছেলের লেবাস টাই আমি চেঞ্জ করে ফেলেছি……ওসামাকে কোলে নিয়ে ওনি ও আল্লাদে মেতে উঠলেন….. কিছুক্ষণ পর দেখি ওনি ওসাকে একহাতে কোলে নিয়ে আরেক হাতে ওর ভেজা প্যান্ট নিয়ে ঘড়ে ঢুকছেন…… নিশ্চিত কোলে করেছে হিসু পাজিটা…..
,
,
,
——— তুলিইইইই তুমি ওকে এভাবে মেয়ে সাজালা কেন!!! ভাগ্যিস হিসু করলো নইলেতো আমি ওরে আজীবন মেয়েই ভাবতাম…..
,
,
,
আমি তখন কাপড় ভাজ করছিলাম বিছানার পাশে দাড়িয়ে…… ওনার কথা শুনে কতক্ষণ বিছানায় লুটোপুটি খেয়ে হাসলাম….. ওসামা ওনার কোলে থেকেই বেশ আদুরে ভঙ্গিতে মুখে দু হাত চেপে হেসে যাচ্ছেন….. আর ওনি বেশ অসহায়ের মতোন একবার আমাকে দেখছেন তো একবার ওসামাকে…..হাসাহাসির পাট চুকিয়ে খুব দুষ্টুমি হলো সারা সন্ধ্যে ওকে নিয়ে….সাড়ে সাতটার দিকে এসে ওসামাকে নিয়ে গিয়েছে ওর মা….. বাচ্চাটাকে খুব মিস করছিলাম…… ইচ্ছে করছিলো না ওকে কোল ছাড়া করার…… এদিকে ওনি বগলদাবা করে আমায় নিয়ে পড়তে বসালেন…… কিন্তু পড়া বাদ দিয়ে আমি ওসামার ব্যাপারে বকবকানিতে মেতে উঠলাম…… ফলস্বরূপ যমঠাকুরের বিরাশি আনা ওজনের ধমক…… সে কেন বুঝে না আমার এই পপড়াশুনা একদম ভালো লাগে না…..
,
,
,
——— উফফফ আমার ভাল্লাগে না পড়তে…..
,
,
——— মানে।।।?
,
,
——— মানে…আমি পড়বো না
,
,
——— পড়াশোনা না করলে খাবে কি???
,
,
——— আমি ভিক্ষে করবো……
,
,
———বেশ ভালো বুদ্ধি….. আজকাল খুচরোর অনেক সংকট…… তবে তুমি তো ঠিকঠাক ভিক্ষা ও করতে পারবে না…. অনেক প্যাচাল হয়েছে….. এবার পড়ো….. পরীক্ষার গুনে গুনে আর দুমাস আছে…. এখন ওনি বলছে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ভিক্ষা করবে।।।।। কি সব ভাবনা চিন্তা…. পড়ো জলদি…..
,
,
——— নাহ….
,
,
——— তুলিইইই…..
,
,
——— কিইইই…..
,
,
——— আমি রেগে যাচ্ছি কিন্তু…
,
,
——— কিন্তু আমি একটু ও ভয় পাচ্ছি না….. ওসামাকে বড্ড মিস করছি….
,
,
——— কাল তো আবার আসছেই ওসামা….পড়ো যলদি….
,
,
——— আমাকে একটা ওসামা এনে দিবেন….
,
,
——— কিহহহ….. ওসামা কি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়??? গবেট কোথাকার….. শীঘ্রই পড়া শুরু করো…
,
,
——— এতো পড়াশোনা করে কি হবে বলেন তো….. বিয়ে তো হয়েই গেছে…. সংসার করছি…. এরপর বাচ্চা মানুষ করবো…. তাদের লেখাপড়া করানোর মতো পড়শোনা তো আমি নিজেই করেছি….. তারপর তো আপনি আছেন নি….
,
,
——— সব ঠিক আছে….. যা যা বললে সব তো তোমার আর আমার…. তোমার একলা কি আছে বা থাকবে??? এখন আমার টাকায় তারপর ছেলেমেয়ের টাকায়!!! পরে পরে জীবন পার করে দিবে??? নিজের অস্তিত্ব বলতেও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি….?
,
,
———ওসামার আম্মু তো কিছু করে না…আমার ফ্রেন্ড যাদের বিয়ে হলো তারাও তো এবার এক্সাম দিবে না….. মিলি তো প্রেগন্যান্ট…..
,
,
,
সেরাতে অনেক বকবকানি হলো আর তার সাথে ভাষণ ও…… যমঠাকুর বেশ বুঝে গেছেন আমি বাচ্চার জন্য কতটা ডেস্পারেট হয়ে আছি….. আসলে তখন ওসামাকে দেখলে নিজের ভেতর তৃষ্ণাটা যেনো বেড়ে যায়….. ওকে ছাড়তেই ইচ্ছে করে না…… ইচ্ছে করে লুকিয়ে পিল খাওয়া অফ করে দিলাম।।।।। যমঠাকুর ব্যাপার টা কোন না কোনভাবে জেনে গেছেন…… তারপর তো ভয়াবহ বকা….. আমার এই কাজের শ্বাস্তিস্বরূপ ওনি আর আমার কাছে ঘেষেন না….. আমিও পাত্তা দেই না…… মাঝেমধ্যে খুব রাগ ওঠে যায় তখন ইচ্ছে করে সব ভেঙে ফেলি কেনো ওনি আমার কথা শুনেন না……
,
,
,
পড়াশোনা ফের আগের গতিতে চললো….. পরীক্ষাও সামনে ঘনিয়ে আসছে…… এরই মধ্যে এক রাতে ওনি আমাকে ঘুমের মধ্যেই খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন…… মনে হচ্ছে যেনো কতো যুগ পর পানির পিপাসা মিটেছে…….একেএকে সারা মুখে চুমু খেয়ে আমাকে বাচ্চাদের মতন করে বোঝাতে লাগলেন অল্প বয়সে গর্ভধারণ ঠিক কতটা রিস্কি….. মুখে কোন রা না কাটলে ও আমি আমার সিদ্ধান্ত এ অটল ছিলাম…… সেরাতটাও কেটে গেলো নির্ঘুম ভালোবাসার নামে……..
,
,
,
ওনাকে না জানিয়ে পিল খাওয়া টোট্যালি অফ করে দিলাম….. মাসিকের তারিখটা একেবারে হাতে গুনে ক্যালেন্ডার একে মনে রাখলাম…… কিন্তু বিধিবাম….. গুনে গুনে নয় দিন পিছিয়ে পিরিয়ড সাইকেল অন হয়ে গেলো…… অনেক আশায় ছিলাম…… হয়তো কিছু একটা আশানুরূপ হবে….. কিন্তু তার কিছুই হলো না……. সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে আমাকে জড়িয়ে ধরতেই বেশ ফুসে উঠলাম….. উল্টো পালটা যা মনে ধরেছে বলে দিলাম….. এও বলেছি….
,
,
,
——— আপনি পারেন না….. আপনার দ্বারা কিস্যু হবে না…..
,
,
,
ওনি রাগ করার বদলে হাসলেন…… বেশ হাসলেন…
। ওনার হাসি দেখে যেনো আমার গায়ের চামড়া গলে যাচ্ছে…..আমাকে ফোসফোস করতে দেখে…. ঘামে ভেজা শার্টের সাথে লেপ্টে ধরলেন….. কোমড়ের দুপাশে হাত এমন ভাবে চেপে ধরলেন যেনো ওনার থেকে ছুটতে না পারি….
,
,
,
——— ওহ…. রেইলি!!! আধা ঘন্টাইতো আমাকে সামলাতে পারোনা….. কান্নাকাটি জুড়ে দাও…. আর সেই আমাকেই বলছো আমি পারি না….!!!আর কিস্যু টা হবে কি করে….প্রোটেকশন টা তাহলে কষ্ট করে নিচ্ছি কিসের জন্য?? তুমি যে পিল নিচ্ছো না সেটা তো আমি ভালো করেই জানি…..
,
,
——— আমি যা বলেছি সেটাই সত্যি……???আর মোটেও কথা ঘোড়াবার চেষ্টা করবেন না….
,,
,
,
——— মোটেও কথা ঘোড়াচ্ছি না….. কি পারি না পারি চলো প্রমাণ হয়ে যাক….. অবশ্য তুমি পারবে কিনা আগে সেটা ভাববার বিষয়….. কি পারবে???
,
,
,
ওনার এই খোচামারা কথা শুনে আমি রেগে ফের চেচামেচি জুড়ে দিলাম….. আম্মু একপর্যায়ে রুমেই চলে এলেন….. কি হয়েছে জানতে চাইলে আমি হরহর করে সব বলে দিলাম…. এদিকে আমার কান্ডে আম্মু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আছেন আর যমঠাকুর কপাল চাপড়ে যাচ্ছেন…..
,
,
,
——— এই টুকি…. তোর বয়স কতো হ্যাঁ….. এখনি বাচ্চা নেবার জন্য পাগল হয়ে আছিস…..কই পড়াশোনা করবি…. সময়টাকে উপোভোগ করবি তা না….
,
,
——— ওসামার আম্মু …..
,
,
——— ওসামার আম্মু বিয়ে শেষ হবার পর বিয়ে করেছেন…. এম এ পড়াকালীন সময়ে ওসামা হয়েছে….. আর তোর তো এখনো সতেরোই পেরোয় নি…..তুই নিজেই তো একটা বাচ্চা….. তারউপর আবার বাচ্চা নিয়ে মাথা নষ্ট করছিস….. এখনো অনেক সময় বাকি টুকি….. পড়াশোনা কর…. ঘুড়াঘুড়ি কর….. নিজেকে স্বাবলম্বী কর…. তারপর নাহয় বাচ্চা…..
,
,
,
এবার ওনার সাথে আম্মু ও এসে ভাষণ শুরু করে দিলেন…… রাগটা মাথায় যেনো দপদপ করে বেড়ে যাচ্ছে…….
,
,
,
——— আমাকে তোমরা কেউ ভালোবাসো না….. তাই আমার কথার তোমাদের কাছে কোন দাম নাই….. তোমার সবসময় নিজের সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দাও…… ভাল্লাগে না ধুর……
,
,
,
বলেই রুম ছেড়ে পড়ার ঘরে দরজা আটকে দিলাম।।।।। বই গুলো দেখে আমার পিত্তি জ্বলে উঠছে একেবারে….. এইগুলোর জন্য এতোকিছু….. ইচ্ছে করছে জানালা দিয়ে সবগুলো ঢিল ছুড়ে ফেলে দেই……এদিকে মাথা ব্যাথা আর পেট ব্যাথায় কাহিল লাগছে খুব….. চেচামেচি করলেই মাথা ধরে যায়…… বিছানায় টানা হয়ে শুতে পারলে ভালো লাগতো একটু….. কিন্তু ওরুমে যাবো না আমি….. একপ্রকার জেদ ধরেই টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি…… চোখ মেলে দেখি ওনি ডাকছেন আর আমি বিছানায় শোয়া….. বুঝতে একটু সময় নিলেও সব স্পষ্ট….. উঠে বসতেই ওনার ভেজা গামছা দিয়ে মুখ মুছিয়ে হাতে পানি দিলেন….. তারপর টেবিলের উপর থেকে খাবার নিয়ে মাখিয়ে মুখের সামনে ধরলেন….. রাগটা আমার তখন ও কমেনি…. আমি গ্লাস টা বিছানার পাশের টেবিলে রেখে ফের একপাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম…… ওনি একটা বড়সড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে…..
,
,
,
——— তুলি আমি কিন্তু অফিস থেকে এসে একগ্লাস পানি ও খাই নি…. আর তুমি যদি এখন না উঠো তাহলে গ্যারান্টি দিয়ে বলছি রাতেও খাবো না…..
,
,
,
ওনার কথা শুনে খারাপ লাগা স্বত্তেও আমি উঠলাম না….. ওনিই আমাকে টেনে উঠিয়ে দু-তিন গাল খাইয়ে দিলেন….. আসলে এই সময় মুখের রুচিটা ঠিকঠাক থাকে না….. তাই খাওয়া নিয়ে যমঠাকুর ও বেশি জোর করলেন না……. কিন্তু দুধ আর আপেল ঠিকই নিয়ে এলেন…… অনেক জোর করা স্বত্তেও আমি খেলাম না….. রাতে একপ্রকার টেনে নিয়েই আলতো করে জড়িয়ে ধরে দুষ্টুমি শুরু করে দিলেন….. এলোমেলো ভাবে সারাশরীরে তার হাত বিচরণ করেছে…..
,
,
,
——— বেশি কোমড় ব্যাথা করছে!!! গরম পানির সেক নিবে!!
,
,
——— উঁহু…
,
,
——— রাগ করে আছো??
,
,
——— জানি না….
,
,
——— আমরা বেবি নিবো তুলি….. অবশ্যই নিবো…. যাস্ট তোমার এইজটা একটু পারফেক্ট হোক…. একটা বেবি ক্যারি করার জন্য পারফেক্ট এইজ খুব প্রয়োজন তুলি….. তোমার সবে তো সতেরো….. বিশ বছর হোক….. তারপর আমরা একটা বেবি প্ল্যান করবো…. প্রমিস…..
,
,
——— নাহ…..
,
,
——— আচ্ছা বাপ আমার আগে এইচএসসি টা দিয়ে নাও….
,
,
——— আমি আপনার বাবা না…. বলেই মুচকি হেসে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম……
,
,
,
দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে এলো…… ওনি সারাদিন অফিস করে এসে আমাকে নিয়ে ফের বসে পড়তেন.. ….তারউপর আমার এই বায়না সেই বায়না তো আছেই….. কখনো ওনি খুব ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফিরলে বিছানায় গিয়ে পড়তে বসতাম….. ওনি শুয়ে শুয়েই আমাকে পড়া দেখিয়ে দিতেন।।।।। আর আমি পড়ার ফাকে ব্রেক নিয়ে ওনার পিঠের ওপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়তাম।।।। ওভাবেই পড়তাম কখনো আবার কখনো বাচ্চাদের মতন কোলে বসে ওনার বুকে পিঠ ঠেকিয়ে ওনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতাম….. এক্সট্রা পড়ানোর জন্য শ্বাস্তিস্বরূপ ওনি আমাকে কোলে করে ছাদে নিয়ে গিয়ে চন্দ্রবিলাস করাতেন…..যেদিন যেদিন চাদের আলো থাকতো না সেদিন ওনি খুব খুশি হয়ে ছাদে নিয়ে যেতেন….. প্রথম প্রথম ব্যাপার টা বুঝতে না পারলে ও ওনার এইসব দুষ্ট বুদ্ধি বুঝতে আমার খুব একটা সময় লাগলো না….. দিন গুনে গুনে পরিক্ষা ও শেষ হয়ে গেলো…… ছুটিতে আম্মু, আমি, মা-বাবা আর ফুলি খালা মিলে নানু বাড়ি চলে গেলাম….ওনি যেতে পারে নি ছুটির অভাবে তারপর কোন সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ধরে আমাদের আনতে চলে গেলেন…. সেখান থেকে ফিরে মায়ের কাছে যাবার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো….. ওনাকে বলতে সে কি রাগ…. সপ্তাহের উপর নাকি একা রেখে সবার সাথে থেকে এসেছি এখন কোথাও যাওয়া চলবে না….. রাতে যখন খুব কাছে এলেন তখন খানিকটা প্যানপ্যান আর চালাকি করে মায়ের কাছে যাবার ব্যাপারে রাজি করিয়ে নিলাম….. তবে বেশি দিন আর থাকা হলো না….. দুদিন পরই শ্বাশুড়ি বগলদাবা করে নিয়ে এলেন….. সে রাতে আর নিস্তার পেলাম না….. রোজ রাতে ওনার ভালোবাসার নতুন উপখ্যান শুরু হয় একেকটা করে….. আর তার ছুটির দিনে ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচেতে চষে বেড়ানো….. ব্যাপারটা এমন হয়েছে যে ছুটির দিনগুলোতে আমি তার বস….. যা বলবো তাই এক্ষুনি চাই টাইপ….. ওই দিনগুলোতে শত বুঝিয়ে ও আমাকে এরিয়ে বাসায় রেখে যেতে পারতো না….. কারণ আগেই বলা আছে সকালে বন্ধু বান্ধব কিন্তু বিকাল আমার চাই ই চাই….. জবাবে সে শয়তানি হাসি দিয়ে আর রাতগুলো আমার….. আমি তার কথায় লজ্জা পায় আর সে আমার লজ্জা দেখে হাসে……
,
,
,
রেজাল্টের দিন ওনার টেনশন দেখে কে…. সাথে আম্মুও…. কিন্তু আমি দিব্যি ঘুড়ে বেড়াচ্ছি…. এটা খাচ্ছি সেটা চেখে দেখছি…. যখনি ঘড়িতে ১২ টা বাজলো তখনি শুরু হলো আমার হাউমাউ করে কান্না…. রেজাল্ট এখনো আসে নাই কেন….. ফেইল করি নাই তো আবার…. যথারীতি তার একঘন্টা পর ওনি এক গাদা মিশটি নিয়ে বাসায় এলেন…. তাতে পাশ করেছি ব্যাপারটা আমি নিশ্চিত হয়ে কান্না বন্ধ করে দিলাম….. সেবার রেজাল্ট আমার এসেএসসি থেকে ও ভালো হয়েছে…. ওনি খুশিতে মিস্টির বন্যা বইয়ে দিলেন….. তার দুমাস পড়েই আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী ছিলো…… স্বপরিবারে আমরা রূপসী চলে গেলাম…. সেখানে আম্মু গরীব দের খাওয়ালেন….. আমার আর ওনার মঙল কামনা করলেন……. সে রাতে ওনি আমাকে মুক্তোর নাকফুল উপহার দিলেন….. গভীর রাতে সবার অগোচরে আমরা বাগান বিলাশ করলাম…… আঁচল ভর্তি করে মালা গেথে তাকে পড়িয়ে দিলাম পুকুরের উপর হাট বসানো অজস্র জোনাকিকে স্বাক্ষী রেখে…..
,
,
,
জীবন আসলেই অনেক সুন্দর যদি সেই জীবনের সঙ্গী টি হয় একেবারে মনের মতো….. সাদাফ নামক মানুষ টাও আমার জীবন এ ছিলো সেরকম….. তারকাধে মাথা রেখে একজীবন কেন এমন অসংখ্য জীবন দিব্যি পার করা যায়……সময় যত যাচ্ছে আমি তার প্রেমে আরো গভীর ভাবে হাবুডুবু খাচ্ছি…. তলিয়ে যাচ্ছি….. হারিয়ে ফেলছি ক্রমশ নিজেকে তার মাঝে…..অনার্সের প্রথম বছর শেষ হতেই আমি আবার বাচ্চা নেবার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিলাম….. উপায়ন্তর না দেখে ওনি বাধ্য হয়ে গাইনোকোলজিস্টের কাছে নিয়ে গেলেন পরামর্শ আর চেকাপের জন্য…..ডাক্তার চেকাপের পর ওনাকে চিন্তামুক্ত করলেন যে আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই গর্ভধারণ এ স্বক্ষম…..ডাক্তারের কথা শুনে আমার ভাবনা টা এমন ছিলো যে আমি কালই কনসিভ করে ফেলবো….. এতো সহজ ভাবনাটা সময় আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো যে ব্যাপার টা কতো সাধনার আর কতটা দৈবিক…. প্রতিবার পিরিয়ড সাইকেল পিছানোতে আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে থাকতাম…..৷ হাতে গুনে দিন মনে রাখতাম…… খুব সাবধানে থাকতাম….. যত আচার কুসংস্কার যা মনে আসতো মানতাম…… কিন্তু এতো কিছু করে ও ফলাফল শূন্য।।।।
,
,
,
দেখাযেতো সপ্তাহ খানেক বা দশ দিন পিছিয়ে পিরিয়ড সাইকেল অন হয়ে গেছে…… মন খারাপ হতো…. একদম ভেঙে চুড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতাম….. সেই সময় টাতে ওনি আমাকে একদম বুকে করে আগলে রাখতেন….. খুব বুঝাতেন….. মন খারাপ করে থাকি বলে ছুটি পেলেই এখানে ওখানে বেড়াতে নিয়ে যেতেন….. কিন্তু দিন শেষ এ ওনার বুকে যখন মাথা রাখি তখন মাতৃত্ব নামক খোদাটা আমার তৃব্য থেকে তৃব্যতর হয়ে উঠে…. নিজেকে কোনভাবেই সংবরণ করতে পারি না….. আমার মনের এমন অবস্থা থেকে ওনি আমাকে নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন…. ওনার চোখে আমাদের দুজনের কোন ত্রুটি ধরা না পড়া স্বত্তেও ওনি কিছু টেস্ট দিলেন….. আল্লাহ এক্ষেত্রে আমাদের সহায় হলেন…. টেস্টের সবকিছুই স্বাভাবিক…. খুব সামান্য পরিমাণে মেডিসিন আমাকে প্রেসক্রাইবড করা হলো আর সাথে পরামর্শ….. কেনো যেনো ডাক্তার এর স্বার্নিধ্যে অজানা শঙ্কা থেকে মুক্ত হলাম….. এদিকে আমাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে যমঠাকুর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কক্সবাজার ঘোড়াতে নিয়ে গেলেন…. আম্মুকে চলে গেলেন মেজোভাবির কাছে….. কক্সবাজারে তিন থেকে ফিরে এলাম শতসহস্র ভালো মূহুর্ত আর অনূভুতি নিয়ে…..
,
,
,
অনার্সের ২য় বছরের ফাইনাল দিয়ে বাসায় বসা তখন….. কিন্তু যম ঠাকুর প্রমোশন এর তাগিদে উর্ধশ্বাসে ব্যাস্ত তখন…. এদিকে আমি আর আম্মু মিলে দুই পরিবার নিয়ে খুব সুন্দর একটা পিকনিকের প্লান করে ফেললাম…… এবার যম বেটার রিএকশনের অপেক্ষা মাত্র….

,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৭

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৭
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪৭
,
,
,
দুতলার সবটা জুড়েই আমাদের সাজানো গোছানো সংসার…… এতো গুলো রুম আমাদের প্রয়োজন নেই স্বত্তেও ওনি ভাড়ায় দিতে রানি নন…… ওনার মতে ভাড়িটিয়া আর বাড়িওয়ালার মধ্যে একটা লিমিটেড লাইন থাকা প্রয়োজন….. তাতে করে সম্পর্ক ভালো থাকে….. আর তাছাড়া প্রাইভেসি বলেও একটা ব্যাপার আছে….. যার যার রুমে থাকবে এতে করে যে কি প্রাইভেসি ক্ষুন্ন হবে তা আমি বুঝে পাই না….. আম্মুর আর আমাদের লিভিং রুম ছাড়াও আরও দুটো লিভিং রুম রয়েছে…. তারউপর স্টাডিরুম….. একটা রুম তো মাস কাবারি বাজার আর প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রে ভরপুর…… অবশ্য দুতলার ফ্ল্যাট টা এমন ভাবে প্ল্যান করে করা হয়েছে যে আলাদাকরে ভাড়াটিয়া দিতে গেলে ওয়াল ভেঙে দরজা করে দিতে হবে…… সবচেয়ে বড় কথা আমার প্রয়াত শ্বশুর তার সব ছেলেদের কথা ভেবেই এই দুতলার রুম গুলো বানিয়েছেন…… আর সেজন্যই বিশেষ করে যমঠাকুর ভাড়াটিয়া দিতে রাজি নন….. যদিও ব্যাপার টা আম্মুর থেকেই জানা…..
,
,
,
নিচ তলায় দুখানা কমার্শিয়াল ইউনিট করা হয়েছে বাড়ি ভাড়ার জন্য৷৷ …… তারই একটাতে নতুন ভাড়াটিয়া উঠেছে দুদিন হলো…… হাজবেন্ড ওয়াইফ আর তাদের একবছরের একটা ছোট্ট ছেলে…… ছেলেটা এতো সুইট ঠিক তার মায়ের মতোই নাদুসনুদুস….. গাল দুটো দেখলেই আমার রসগোল্লার কথা মনে পড়ে…..যদিও ওর নাম ওসামা….. আগে ওনারা ফরিদপুর থাকতেন।।।।। ওবামার বাবা সরকারি চাকরির বদলি হয়েই এখানে আসা তাদের……… ওসামার মা টা ভিষণ মিশুকে…… মাঝে মাঝে ওসামাকে দিয়ে যায় ওনার গোছল করার টাইমে……
,
,
,
বাচ্চাটা যেমন আদুরে তেমন মিশুকে…… দুই তিন দিনেই কেমন মিশে গেছে আমার সাথে আর আম্মুর সাথে….. ফুলি খালাকে দেখলেই কেমন চটে যায়…. ছোট ছোট দাত দিয়ে ওনার আঙুল টেনে নিয়ে কামড় বসায়…..ফুলি খালা যখন জোর করে কোলে নিতে চায় তখন ওসামা চিল্লাতে চিল্লাতে হিসু করে দেয়….. ছেলেটা ফুলি খালাকে জ্বালাতে ভীষণ রকমের পছন্দ করে….. খালা যখন তার উপর খুব বিরক্ত হয় তখন তার কি খিলখিল করে হাসি….. মাথায় হালকা হালকা চুল….. খুব সুন্দর ছাটে কাটা…..দেখলেই মনে হয় খেয়ে ফেলি ওকে….. আমি তো ওকে রসগোল্লাই ডাকি….. যখন বলি রসগোল্লা টা কইরে….. তখন একদমে হামাগুড়ি দিয়ে আমার উপর জাপটে পড়ে……. মাঝেমধ্যে ওড়না দিয়ে ওসামাকে সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দেই…… আম্মু একটু একটু করে রাগ করে আর আমি হাসি।।।।। ওসামা এক হাতে নিজের শাড়ির আঁচল ধরে আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে…… যখন আমাদের হাসতে দেখে তখন সেও তাল মিলিয়ে আমাদের সাথে হাসতে থাকে….. বাচ্চাদের হাসি যে এতো স্নিগ্ধ আর নির্মল দেখলেই যেনো হৃদয় জুড়িয়ে যায়…….. এর মধ্যে একদিন ওসামা সাহেব ঘুমিয়ে আমাদের রুমের বিছানা ভিজিয়ে দিয়ে গেছেন…… বেছে বেছে ওনার জায়গা টাই সে ভিজিয়েছে……
,
,
,
সন্ধ্যের দিকেই ওনি চলে এলেন অফিস থেকে….. আমি তখন আম্মুর কাছে বসে ড্র‍য়িং রুমে বকুনি খাচ্ছিলাম পড়ার জন্য….. ওনাকে দেখে আম্মু অটোমেটিক চুপ হয়ে গেলেন….. আমাদের এমন হঠাৎ করে চুপ হয়ে যাওয়ায় ওনি অদ্ভুত দৃষ্টি ফেলে আমাদের দেখতে দেখতে রুমে চলে গেলেন…..
,
,
,
——— তুলিইইইই এক গ্লাস পানি নিয়ে আসোতো……
,
,
,
রুমে ঢুকতেই দেখি ওনি আয়নার সামনে দাড়িয়ে শার্টের বোতাম খুলছেন এক হাতে…… আমার হাত থেকে পানি টা নিয়ে একদমে শেষ করে গ্লাস ফেরত দিয়ে খুব বিরক্ত হয়ে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কয়েকবার দেখলেন…..
,
,
,
——— শাড়ি পড়ছো না কেনো এখন?
,
,
——— ইচ্ছে করে না পড়তে…কেনো?
,
,
——— বউ বউ লাগে না একদম….. মনে হয় স্কুল পড়োয়া পিচ্ছি একটা বাসায় ঘুড়াফেরা করছে….
,
,
———- তাই নাকি বেশ ভালো তো…… আর তাছাড়া আম্মুও বলেছে বাসায় এইসব পড়াই যায়…..
,
,
——— তার মানে এখন থেকে তুমি এই বাচ্চাদের পোশাক পড়বা???
,
,
——— আমি খুব সুন্দর করে হেসে তাকে হ্যা বলে দিলাম……
,
,
,
ব্যাস ওতেই শুরু হয়ে গেলো……. বিয়ের পর নাকি মেয়েদের শাড়ি পড়া মেন্ডাটরি…… সব শেষে ঠিক করলাম রাতে শুধু পরবো…. উম্মম তাতেও তার চলবে না…. সে সারাদিন অফিস করে বাসায় থাকেই রাত টুকো শাড়ি আমাকে রাতেই পড়তে হবে…… কি আর করার…. মেনে নিলাম….. যতই বিরক্ত লাগোক না কেন…. কেন যেনো ওনার এই আবদারটা খুব ভালো লাগছিলো আমার….…কেমন যেনো একটা অনুভূতি…. ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না……. রাতে শুতে গিয়ে ওনি প্রায় চেচিয়ে উঠলেন….. ওনার জায়গায় ভেজা ভাবটা বুঝতে পেরে….. তার পর সব খুলে বললাম….. ওসামাকে ওনি দেখলেও তার যে এই বাসায় আনাগোনা সেটা জানতেন না….. রাতে ওনার সাথে ওসামাকে নিয়ে সেদিন অনেক কথা হলো….. যদিও এটাকে একতরফা বকবকানি বলা চলে….. আমি আমার মতো কথায় মগ্ন আর ওনি আমাতে…..
,
,
,
ওসামার মা বাবা বাজার করতে যাবে বলে এক বিকালে তাকে আমার কাছে রেখে গেলেন….. আম্মু তখন সবে মাত্র হাটতে বের হয়েছে…..বই নিয়ে বসে ছিলাম সবে…. ওমনিই ওসামার আগমন…..ব্যাস আর কি লাগে…. ওসামাকে নিয়ে চলে এলাম আমার রুমে….. আম্মু কে দিয়ে আমার এক পুরাতন ওরনার ফ্রক বানিয়েছিলাম অনেক বলে কয়ে……. কেন যেনো ওসামাকে মেয়ে সাজাতে আমার খুব ভালো লাগতো….. ওর চেহারাটা ওর মায়ের মুখের আদলেই কিনা….. যদিও আম্মু আমাকে পই পই করে বারণ করেছিলেন ওর মায়ের সামনে যেনো এসব না করি….. কারণ সবাই এক রুচি বা মনমানসিকতার নাও হতে পারে……ফাকা পেয়েই নিজের ইচ্ছে-পূরণ যাকে বলে…..
,
,
,
ব্যাস ওকে খাটের মাঝখানে বসিয়ে ফ্রক টা পাড়িয়ে দিয়ে সুন্দর করে ঝুটি করে দিলাম দুইটা…. তারপর কাজল দিয়ে সুন্দর করে কপালে টিকা দিলাম…… লাল ফ্রকে একেবারে ছেলে টাকে পরীর মতো লাগছে….. রসগোল্লা টা যদি মেয়ে হতো না…. ওফফফ….. ওকে নিয়েই দুষ্টুমি করতে করতে আম্মু চলে এলেন।।।।। রসগোল্লা টাকে দেখে আম্মুর সে কি হাসি….. আম্নু এটাসেটা বলে আল্লাদ করছে আর সে ও হাসিতে মেতে উঠছে……সন্ধ্যের দিকে ওনিও চলে এলেন….. ওসামাকে কোলে নিয়েই আমি দরজা খুলে দিলাম….. ওনি কিছুটা ভিমড়ি খেলেন মনে হলো…… কিন্তু মুখে কিছু বললেন না…… রুমে গিয়ে ফের ডাকতে শুরু করলেন…..
,
,
,
——— তুলিইইইই এক গ্লাস পানি নিয়ে আসোতো…..
,
,
,
আমি ওসামাকে কোলে করেই ওনার জন্য পানি নিয়ে গেলাম…… ওনি ততক্ষণে কাপড় পালটে ফ্রেশ হয়ে এলেন।।।।। আমার সামনে এসে দাড়াতেই ওসামা বড়সড় চোখ করে খুব মনোযোগ দিয়ে ওনাকে দেখছে….কোলে চড়ার ধান্দা আর কি……
,
,
,
——— দেখেন তো আমাদের কেমন লাগছে.?
,
,
——— লাইক কদু নিয়েছে লাউকে….নিজের জান নিয়েই ঠিক মতন চলতে পারে না….. দাও ওকে আমার কাছে দাও….. কখন যেনো আবার ফেলে দাও তার ঠিক নাই…..আসেন প্রিন্সেস আপনি আমার কাছে আসেন….
,
,
,
বলেই ওসামাকে আমার থেকে টেনে নিয়ে গেলেন…. ওনার কথায় কিছুটা আহত হলেও এইভেবে হাসি পাচ্ছিলো যে ছেলের লেবাস টাই আমি চেঞ্জ করে ফেলেছি……ওসামাকে কোলে নিয়ে ওনি ও আল্লাদে মেতে উঠলেন….. কিছুক্ষণ পর দেখি ওনি ওসাকে একহাতে কোলে নিয়ে আরেক হাতে ওর ভেজা প্যান্ট নিয়ে ঘড়ে ঢুকছেন…… নিশ্চিত কোলে করেছে হিসু পাজিটা…..
,
,
,
——— তুলিইইইই তুমি ওকে এভাবে মেয়ে সাজালা কেন!!! ভাগ্যিস হিসু করলো নইলেতো আমি ওরে আজীবন মেয়েই ভাবতাম…..
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৬

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৬
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪৬
,
,
,
একদিন ভোরে ঘুম ভেঙে দেখি ওনি নামাজে বসে দুহাত তুলে ফুপিয়ে কেঁদে কেঁদে আমার সুস্থতার আহাজারি করে যাচ্ছেন……. ওনার শরীরের প্রতিটা কাপুনি যেন বুকে গিয়ে ঠেকছে আমার…… ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে ওনার বুকে নিজেকে পিষে ফেলি….. আর জড়িয়ে ধরে বলি
,
,,
,
——— দেখুন আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি….. আপনি দয়া করে কাদবেন না আমার খুব কষ্ট হচ্ছে……. এভাবে কেউ কাদে বলেন…….

,
,
,
মনে মনে এসব বলে কষ্ট পেলেও কোথাও যেনো এই কষ্টের সুতোটা কেটে গিয়ে নিজেকে পরম সৌভাগ্যবতী মনে হচ্ছে…… কয়জন মেয়ের এমন ভাগ্য হয় যে সে তার অসুস্থতার জন্য স্বামীর মোনাজাতে অশ্রু হয়ে ঝড়ে……… বাবা ঠিক বলেছিলেন সেদিন……. মানুষটা কোন হিরে মানিকের থেকে কম না…….. এমন একটা মানুষকে কেউ হয়তো বর্ননায় ও চাইতে পারে না….. আমার কোন জন্মের পূন্যের ফল হিসেবে আমি এমন একটা মানুষের সার্নিদ্ধ্য পেয়েছি…… নাহলে তো ওনাকে চাইবার মতো ক্ষমতা ও আমার নাই……..মা সবসময় বলতেন ——— যখন উপরওয়ালার কাছে তুমি কোন কিছু চেয়ে না পাও মনে রাখবে সেই জিনিস তোমার জন্য তিনি তৈরীই করেন নি আর যা করেছেন তা তোমার চাহীদার চেয়ে হাজার গুন ভালো……..
,
,
,
ভোর থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো……. প্রায় দু’সপ্তাহের ভ্যাপসা গরমের পর এই এক পশলা বৃষ্টির ঘনঘটা ঠিক অমৃতের মতোই দূর্লভ…….. জানালা ফুড়ে বৃষ্টি দেখাটা তখন আমার পোষাচ্ছিল না…… তাই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম বারান্দায়…… জানি হাত বাড়ালেও অভিমানীদের ছুতে পারবো না….. তারপরও বেহায়ার মতোন হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সেদিন গ্রিল গলিয়ে……. বৃষ্টি ছুতে না পারার কষ্ট টা কেটে গেলো আবছা গায়ে লাগা বৃষ্টির ছাটে…… প্রায় দু’সপ্তাহের উপর হতে চললো আমার গোসলের কোন হদিস নেই…… সেক্ষেত্রে বোঝাই যাচ্ছে বৃষ্টি টা আমার কাছে ঠিক কতটা প্রিয়…….. আনমনে বাইরে অভিমানীনিদের ঝড়ে পড়া দেখতে দেখতেই ধাতস্থ হলাম আর নিজেকে পেলাম ওনার কোলে…… স্বজ্ঞানে সেই প্রথম তার কোলে চড়া আমার…… আলতো করে বিছানায় বসিয়ে দিলেন…… মহাশয়ের আজ যে ছুটির দিন আমার তো খেয়াল ই ছিলো না……. জানি ভেতরে ভেতরে খুব রেগে ফেটে পড়ছেন কিন্তু আমাকে দেখাবেন না…… অদ্ভুত রকমের সত্যি টা হলো আজকাল আর ওনি আমাকে বকাবকি করে না…… বিগত তেরো দিনে তাকে আমি খাবার নিয়ে যে কি পরিমাণ জ্বালিয়েছি তা শুধুমাত্র আমি আর তিনিই জানি……. কি জানি তখন কি হতো আমার এক কথা দুবার বললেই মনে হতো ঘ্যানঘ্যান করছে…… ভালো করে কথাও বলতাম না কারো সাথে…… মাঝে মাঝে আম্মু আর ফুলি খালার উপর ও খুব বিরক্ত হয়ে যেতাম…… কিন্তু তারা হতেন না….. একবার তো এমন ও হয়েছে ওনি আস্ত আপেল ধুয়ে নিয়ে এসেছেন আমাকে খেতে দেবার জন্য….. কারণ কাটা আপেল আমি খেতে পারি না…… আমার কি হলো জানি না ওনার হাত থেকে আপেল টা নিয়ে আমি জানালা দিয়ে ঢিল দিয়ে ফেলে দিয়ে ওনাকে রুম থেকে বের করে দরজার নব লক করে রেখেছি….. তারপর কতক্ষণ নিজেই একা একা বসে কেদেকেটে ঘুমিয়ে পড়েছি…… দরজা খুলেছিলাম ঘুম থেকে উঠে সেই রাত আটটায়…… ভেবেছিলাম হয়তো খুব বকা খাবো কিন্তু ওনি একদম স্বাভাবিক ছিলেন…… রুমে ঢুকে সবার আগে কিসের চাবি খুজে বের নিজের চাবির গোছায় রাখলেন…… এরপর থেকে যতবার রুম থেকে আমাকে ছাড়া বের হতেন ততোবারই অই গোছা সাথে নিতেন….. তার থেকে বেশ বুঝতে পারলাম রুমের চাবি ওটা…….
,
,
,
পক্স গুলো অনেকটা শুকিয়ে এসেছে বলে আম্মু আর ফুলি খালা ডাক্তারের কাছ থেকে কনফার্ম হয়ে নিজেদের যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে আমাকে গোছল করালেন…… সেই সাথে আমাদের রুমের বিছানার কভার থেকে শুরু করে জানার পর্দা এমনকি পাপোশ পর্যন্ত বদলিয়ে ফেললেন……… তার সাথে আমার আর ওনার গামছা টা ও নতুন হলো……. পুরো ঘড় ডেটল আর গরম পানি দিয়ে ফুলি খালা আর ওনি মিলে পরিষ্কার করলেন সাথে আরও একজন মানুষ নিয়ে…….বাড়ির সবাই কাজ নিয়ে ব্যাস্ত আর এদিকে আমি বসে বসে এটা খাই তো সেটা……
,
,
,
পক্স এখনো পুরোপুরি শুকায় নি বলে আম্মু নতুন কাপড়ের কয়েকটা লম্বা ফ্রক বানিয়ে দিলেন পায়ের পাতা পর্যন্ত…….গোছলের পর থেকেই একটা পড়েছিলাম……. আয়নায় নিজেকে দেখে পুরাই টাস্কি……খেয়ে খেয়ে গাল দুটো একেবারে টেনিস বল হয়ে গেছে……. চুল থেকে গামছা খুলে বারান্দায় মেলে দিয়ে রুমে আসতেই ওনি বাথরুম থেকে গোছল সেরে বেরুলেন…… আমার দিকে কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে আয়নার সামনে চলে গেলেন……..
,
,
,
আমার গোছল করার দিন দুয়েক পর মা এলেন হুট করে হাতভর্তী এটা সেটা নিয়ে…… কয়দিন ধরেই নাকি আমাকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখছেন খুব…… সময় করে উঠতে পারছিলো না বলেই সেদিন একেবারে অফিস থেকেই চলে এসেছেন……… এসে সবকিছু শুনে খুব রাগ করলেন ওনাকে কিছু না জানানোর জন্য……..
,
,
,
——— তুলি বিয়ে দিলে মেয়েরা কেনো এতো পর হয়ে যায় তা আমি হাড়ে হাড়ে আজ বুঝলাম……. আর কেউ না হোক তুই কি আমাকে একটু জানাতে পারতি না……
,
,
,
মা সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলেন সাথে আমিও……. মনে হচ্ছিলো যেনো একেকটা কাচের টুকরো থলথলে হৃতপিন্ডে ক্রমশ গেথে যাচ্ছে…… আসকে মাকে যে এ ব্যাপারে জানানো হয় নি তা আমি জানতাম না….. আর ওনারা জানান নি মা খামোখা টেনশন করবেন বিধায়।।।।। মা যাবার আগেই ওনি অফিস থেকে ফিরে এলেন…… তারপর খুব আয়েশ করে শ্বাশুড়ি তার জামাতাকে বকলেন।।।।। জামাতাও খুব ভালো ভাবে শ্বাশুড়ির রাগ ভাঙালেন……. সেবার মা আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন আমার ও খুব বাড়ি বাড়ি করছিলো মনটা….. কিন্তু ওনি খুব সুন্দর করে মাকে মানিয়ে সাত পাঁচ চৌদ্দ দেখিয়ে যাওয়া টা নাকচ করে দিলেন…..রাতে ঘুমুতে গিয়ে মায়ের কথাগুলো ভেবে খুব খারাপ লাগছিলো…… আসলেই হয়তো খুব স্বার্থপর মানুষ আমি……এসব ভেবে যখন মন খারাপে মশগুল আমি তখন ওনি পেছন থেকে খুব করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন…….
,
,
,
——— মন খারাপ….
,
,
——— উঁহু
,
,
——— তাহলে কষ্ট হচ্ছে কেনো এখানটায়…..
,
,
,
ওনার কথাশুনে ওনার দিকে তাকানো মাত্রই ওনি ওনার বুকের বা পাশ টা হাতে ইশারা করলেন……আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই…..
,
,
,
——— আসলে হেডকোয়ার্টার এ কিছু একটা সমস্যা হয়েছে….. তাই আমার ব্রাঞ্চে ঝামেলা হচ্ছে…..
,
,
,
আমি ফিক করে দিলাম…..ওনার দিকে ঘুরে স্মিত হেসে বললাম ———
,
,
——— ঝামেলা!!! আগুন লাগলো কিনা চেক করেন শিগগির……
,
,
,
——— মনে হয় লাঘবে…. বলেই আমাকে ঠিক আগের মতো করে বুকের সাথে পিষে ফেললেন….
,
,
——— উফফফ…. ব্যাথা পাই তো….
,
,
——— কিচ্ছু করার নাই আগে আগুন নিভানো ফরজ কাজ……
,
,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৫

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৫
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪৫
,
,
,
ওনাকে দেখে যেনো আমার কষ্ট আরও বহুগুণে বেড়ে গেছে….. চোখের কোনা বেয়ে উপচে পানি পড়ছে….আমার গায়ে হাত ঠেকিয়ে কিছুটা শিউরে উঠলেন….
,
,
,
——— এএএএই মেয়ে কখন থেকে এতো জ্বর… ডাকলে না কেনোওঅঅ…
,
,
,

ওনার কথা গুলো কেমন যেনো জ্বড়িয়ে যাচ্ছে…..হুড়োহুড়ি করে রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে আম্মুকে নিয়ে ফিরে এলেন…. নিজেকে তখন এতো অসহায় লাগছিলো…. আম্মু আমার পাশে বসে গলায় কপালে হাত ঠেকিয়ে কাধ থেকে কাপড় সড়িয়ে কাধে পিঠে পেটে কি যেন দেখতে লাগলেন…..
,
,
,
——— এগুলো তো জল বসন্ত….. কিরে টুকি…. আগে কি তোর কখনো পক্স হয়েছে….??
,
,
,
আমি মাথা নাড়িয়ে মাকে না করলাম….. সারা গায়ের মাংস গুলো জায়গায় জায়গায় যেনো খুচিয়ে খুচিয়ে উঠছে…… চামড়া গুলো যেনো একেবারে জ্বলে উঠছে…….. আম্মু এখনো গায়ে হাত দিয়ে কাপড় সরিয়ে দেখে যাচ্ছে……
,
,
,
——— টুকি একটু ঘুমুতে চেষ্টা কর তো….. দেখবি মাথাটা হাল্কা লাগবে….
,
,
,
আম্মু মাথায় আস্তেধীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন….. আরাম পেয়ে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…….. হুট করেই একপ্রকার ঘুমটা ভেঙে গেলো …. আস্তে আস্তে উঠে বিছানা ছেড়ে দাড়াতেই চোখে আধার দেখছি যেনো….. অনেকক্ষণ বিছানায় বসে থেকে তারপর বাথরুমে ঢুকে পড়লাম…. অমনি আম্মু ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে পড়লো…..
,
,
,
——— টুকি সাবধানে গামছা নিঙড়ানো করে পরে গা মুছবি গোসল একদম করা যাবে না……..
,
,
,
আম্মুর কথা মতন ই ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম কিন্তু কাপড়ের ঘষায় জায়গাগুলো যেনো জ্বলে উঠছে….. বেশিক্ষন হাটতে ও পারি না…. গায়ের প্রতিটা জয়েন্ট এ ছেয়ে গেছে যেনো….. সেদিন বিকালে আম্মু কোথথেকে যেনো একটা রংচটা পাতলা মেক্সি হাতে করে নিয়ে এলেন…..
,
,
,
——— টুকি শাড়ি খুলে এটা পড়ে নে দেখবি আরাম পাবি….মিন্নির যখন বাচ্চা হয় তখন ওকে কয়েকটা বানিয়ে দিয়েছিলাম…… এটা রেখে গিয়েছিলো….. আলমারি ঘেটে তোর মাপ মতন সেলাই করে নিয়ে এসেছি একেবারে…… পুরাতন জিনিস দিয়েছি বলে আবার মন খারাপ করিস না…. পাতলা কাপড়ে তোর আরাম হবে বলেই দিয়েছি….
,
,
,
প্রথমে কিছুটা আমতাআমতা করলেও শারীরিক প্রশান্তির কথা ভেবে পড়ে নিয়েছি……আয়নায় নিজেকে দেখতে গিয়ে যেনো ভূত দেখার মতো চমকে ছিলাম…… সারা গায়ে যেনো অভিশাপ ভর করেছে….. নিজের দিকে নিজের ই তাকাতে কেমন যেনো ঘেন্না লাগছে……আম্মু আমার কান্নাকাটি শুনে ছুটে চলে এলেন…. তারপর বেশ কিছুক্ষণ বুঝিয়ে শুনিয়ে এটা সেটা মুখে তুলে দিলেন……. যম ঠাকুর সেদিন অন্যান্য দিন থেকে বেশ জলদিই ফিরে এলেন…….
,
,
,
কষ্ট হয়তো পাওয়া ঢের বাকি ছিলো…… সেদিন সন্ধ্যায় পিরিয়ড সাইকেল টাও গুনে গুনে সাত দিন পিছিয়ে অন হয়ে গেলো……… পক্স গুলোর জন্য গরম পানির ছেকা ও নিতে পারলাম না…… সারারাত বিছানায় ছটফট করেছি আর দুমড়েমুচড়ে শেষ হয়েছি…… আমার এই অবস্থা দেখে ওনি ঠিক করে ফেললেন এম্বুলেন্স খবর দিয়ে হাসপাতালে এডমিট করাবে কিন্তু আম্মুই সামলে নিলেন……. পরদিন থেকে ওনি তিনগুণ ভিজিট দিয়ে বাড়িতেই ডাক্তার ডাকালেন আমার যাতে হেটে হেটে কোন কষ্ট না পেতে হয়…….. গরমে যেনো কষ্ট না পাই তার জন্য আলাদা করে টেবিল ফ্যান কিনে এনেছেন…. খাবার এর কথা তো বলা বাহুল্য……. যখন যা বলছি সব দু’হাতে ভরে নিয়ে আসতো……. দুধ,ডিম, হরলিক্স,বাটার কিচ্ছু বাদ যায় নি…….. রাতে যখন একসাথে ঘুমুতে যেতাম তখন ওনি কেমন যেনো দূ্রে সরে থাকতেন…… আর আমায় বারবার বলতেন তুমি আরাম করে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেভাবে ইচ্ছে ঘুমাও…… কেন যেনো ও কথাখানা শুনে আমার বুকের ভেতর কষ্ট হতো……. খুব অভিমান হতো ইচ্ছে করতো ছুটে গিয়ে ওনাকে ঝাপি দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি…. পরক্ষণেই নিজের মনের কষ্ট মাটি চাপা দিয়ে শুয়ে থাকি…… মাঝে মাঝে ওনি হাতে গলায় এখানে সেখানে পক্স গুলো দেখতেন…… টান ধরেছে কিনা……এই সময় গুলোতে ওনার সামনে বেশি যেতে চাইতাম না….. কেমন যেনো নোংরা মনে হতো নিজেকে….. অনেকে টা লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতাম….. কেন যেনো ওনি আমার দিকে তাকালেই অস্বস্তি হতো…… মনে হতো মরে যাই…… কিন্তু এ তো সাক্ষাৎ যমঠাকুর….. ওনার থেকে পালিয়ে বাচা তো আমার সাধ্যে নেই…… ঠিক খুজে বের করে নিতেন…..
,
,
,
——— এতো হাটাহাটি করছো কেনো তুলি…. গরমে তো ঘামিয়ে যাবা….. এখানটাই বসো….নিজের কষ্ট টাও কি বুঝো না…. আসোতো…..
,
,
,
বলেই টেবিল ফ্যানের দিকে বসিয়ে দিতেন…. ফল ফলদি তো বিছানার পাশের টেবিল টার উপর সব সময় থাকতো….. চুল ঠিকঠাক করে রাখতাম না বলে আম্মু আর ফুলি খালা মিলে আস্তে আস্তে চুল আচড়ে পরিপাটি করে দিতো….. গামছা দিয়ে গা মুছে দিতো….. গোসল তো করতে পারতাম না……. তারউপর পিরিয়ড…….. একদিন ভোরে ঘুম ভেঙে দেখি ওনি নামাজে বসে দুহাত তুলে ফুপিয়ে কেঁদে কেঁদে আমার সুস্থতার আহাজারি করে যাচ্ছেন……. ওনার শরীরের প্রতিটা কাপুনি যেন বুকে গিয়ে ঠেকছে আমার…… ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে ওনার বুকে নিজেকে পিষে ফেলি….. আর জড়িয়ে ধরে বলি
,
,,
,
——— দেখুন আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি….. আপনি দয়া করে কাদবেন না আমার খুব কষ্ট হচ্ছে……. এভাবে কেউ কাদে বলেন…….

,
,
,
চলবে
??????
#এক পশলা বৃষ্টি আর সে
#লেখনিতে:চৈত্র রায়
#পর্ব-২৪

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৪

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৪
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪৪
,
,
,
নাস্তা শেষ করে ওনি অফিস চলে গেলেন সেই আগের মতো দরজা অব্দি গিয়ে পানির জন্য ডেকে নিয়ে পানি খেয়ে কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে পরলেন….. যাবার আগে বলে গেলেন টেবিলের উপর প্যারাসিটামল রেখে গেছেন…. গরম পানি দিয়ে যেনো খেয়ে নিই….. আমি কিছু বললাম না….. কিছু বলতেও ইচ্ছে করছিলো না….ব্যাথায় সারা গা টলমল করছে….. ঘুমটা ফের চেপে ধরেছে…. কিচ্ছু ভালো লাগছে না একেবারে…….. সারা গা যেনো বিছানা বিছানা করে গুমরে গুমরে উঠছে…… টেবিলে ফিরে এসে সব কিছু গুছিয়ে রেখে ফের রান্নাঘরে গেলাম…. যেহেতু ফুলি খালা নেই রান্নার বন্দোবস্ত তো নিজেদেরই করতে হবে….আম্মু ততক্ষণে ডায়নিং এ চলে এলেন…. রান্নার সবজি বের করে গুছিয়ে নিয়ে বসেছেন….. পাশে আমি ও হাতে হাত লাগালাম……
,
,
,
———- কিরে টুকি তোর কি শরীর খারাপ লাগছে!!
,
,

——— না আম্মু…. মাথাটা একটু ধরেছে….
,
,
——— চা খাবি!! করে দিবো…
,
,
——— না না এই ভরদুপুরে চা খাবো না….. ভালো লাগছে না
,
,
——— তুই বরং গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নে দেখবি হালকা লাগবে মাথাটা.. চোখ গুলিও কেমন লাল হয়ে আছে…. যা যা উঠে পর….
,
,
——— রান্নাটা হোক তারপর একটু ঘুমাবো নাহয়…
,
,
——— রান্নাতো আমিই করবো…. শুধু শুধু তুই বসে থেকে কি করবি…. সবজি তো সব কেটেই দিয়েছিস….. কিছু লাগলে ডাক দিবো….. যা গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নে…. নাহলে সারাদিন শশরীর খারাপ লাগবে…. যা উঠ….
,
,
,
আম্মুর কথায় সেখান উঠে রুমে চলে এলাম….. হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় বসে পড়লাম….. বেশ ক্লান্ত লাগছে…….শাড়ির আঁচল টা পিঠ থেকে টেনে বালিশে মেলে দিলাম…. ফ্যনের স্প্রিড আগেই বাড়িয়ে রেখেছিলাম…… এই সময় টাতে বেশ গরম পড়ে…… খোপা খুলে বালিশের উপর ভেজা চুল মেলে দিয়ে শুয়ে পড়লাম…… ঠিক যেন স্বর্গীয় সুখ….. বিছানার চাদরে হাত মেলে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম চাদরটা ওনি সকালে চেঞ্জ করেছেন….. ও হ্যা সে তো আমি দেখেছিলাম ই…. ভুলে গিয়েছিলাম….. রাতে মানুষ টাকে বড্ড বাচ্চা মানুষের মতোন লাগছিলো…… কেমন যেনো অস্থিরতা…. কতো বারতো মিলেমিশে একাকার হয়েছি মানুষটাতে….. কই এমন তো কখনো দেখি নি……হয়তো চাহিদাটাই সেদিনগুলোর থেকে ভিন্ন ছিলো….
,
,
,
ঘুম ভেঙে গেলো আম্মুর ডাকে……. সেই কখন থেকে নাকি ডেকে যাচ্ছে….. এদিকে আমার সারা গা কেন যেনো অসার লাগছে….. পিটপিট করে চোখ খুলতে দেখে আম্মু আমার পাশে এসে বসে গালে হাত দিয়ে বেশ শিউরে উঠলেন. ———
,
,
,
——— একিরে টুকি গা তো বেশ গরম…… জ্বর দেখি গায়ে….. কিরে জ্বর কখন থেকে ………
,
,
,
আম্মুর কথার উত্তর দেবার মতো ইচ্ছে বা শক্তি কোনটাই আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই।।।।। আম্মু ফের বলতে শুরু করে দিলেন……
,
,
,
——— সেই কখন থেকে ডাকছি….. দুপুরেও খেলি না…..এই ভর সন্ধ্যায় উঠছিলি না দেখে ডাকতে এসেছিলাম….. এখন দেখি এই অবস্থা দেখি উঠ…. কিছু খেয়ে নে….
,
,
,
আম্মু জোর করে উঠিয়ে আমাকে বিছানা থেকে নামালেন…..
,
,
——— আম্মু একটু আস্তে ধরো ব্যাথা পাচ্ছি….
,
,
ওনি আমাকে বাথরুম পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে নিজে দাড়িয়ে থেকে হাত মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে রুমের সোফায় বসিয়ে দিলেন….. তারপর নিজ হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দিলেন জোর করে…….. সবকিছু বিস্বাদ লাগার পরে ও পেটের খুদার কাছে হার মেনেছে….আম্মু খাইয়ে দিয়ে চলে গেলেন…… কেনো যেনো হঠাৎ করেই রুমে থাকতে ভয় করছিলো ভীষণ…… তাই আস্তে আস্তে উঠে আম্মুর রুমে চলে এলাম….. আম্মু তখন কি যেনো করছিলো…..
,
,
,
——— আম্মু আমি একটু তোমার রুমে শুই….. আমার কেন যেনো একা থাকতে ভয় করছে….
,
,
——— ওমা ডাকতি আমায়…. জ্বর নিয়ে উঠে আসতে গেলি কেনো…..আয় বস এখানে…..
,
,
,
যদিও আম্মু বসতে বলেছিলো কিন্তু বসার ইচ্ছে আমার ছিলো না….. আমি সাথে সাথেই শুয়ে পড়েছি…… আম্মু কথা বলছিলেন আমি হা হু করে যাচ্ছিলাম….. ফের কেমন যেনো একটা ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছে…… যখন চোখ মেললাম তখন দেখি নিজের রুমে শুয়ে আছি…… ওনি মাথায় পানি ঢালছে…… আম্মু হাতে পায়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছিলেন…… চোখ মেলে তাকাতেই আম্মু হুড়মুড় করে মুখের সামনে চলে এলেন…..
,
,
,
——— কিরে টুকি তোর এতো শরীর খারাপ একবার বলবিতো আমায় নাকি….একা থাকতে ভয় লাগছে বলে আমার রুমে গিয়ে শুলি…. আমিতো ভেবেছিলাম ঘুমোচ্ছিস…… বাবু অফিস থেকে ফিরে সেই কখন থেকে ডাকছে তোর কোন হেলদোল নেই….. হেলদুল থাকবেই বা কি করে জ্ঞান থাকলে তো…..তারপর বাবুই তো কোলে উঠিয়ে তোকে এই রুমে নিয়ে এলো….
,
,
,
আম্মুর কথা শুনে আমি নিজেই অবাক বনে গেলাম….. জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম….??? কিন্তু কখন??? তখন তো আমার কেমন মাথা ঝিম ঝিম করে ঘুম পাচ্ছিলো…. ওনি তখনো আমার মাথায় পানি ঢেলে যাচ্ছে……
,
,
,
——— আম্মু তুমি বসো এখানে….. আমি বরং তুলির জন্য দুধটা গরম করে নিয়ে আসি….
,
,
——— না বাবু তুই বোস….. আমি নিয়ে আসছি….
,
,
,
ওনি আর কিছু বললেন না…… আম্মু উঠে চলে গেলেন……
,
,
,
——— আর পানি দিবো না।।।। শীত করতেছে……
,
,
,
মাথার চুল ভালো করে মুছিয়ে দিয়ে আমাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলেন…..
,
,
,
——— সকালে যে পাই পাই করে বলে গিয়েছিলাম মেডিসিন নেবার কথা…. নাও নাই কেন?
,
,
——— ঘুমিয়ে পড়েছিলাম….. মনে ছিলো না….
,
,
——— এগুলাই করবা তুমি….. মনে রাখলে তো সুস্থ হয়ে যাবা…. মনে রেখে কি লাভ…. তারচেয়ে আমাকে খাটাবা…. নিজের সেবা করাবা…..
,
,
,
কেন যেন ওনার এই কপাল কুচকে বিরক্তি প্রকাশ করাটা খুব ভালো লাগছিলো……. ইচ্ছে করছিলো গাল দুটো আচ্ছা করে টেনে দেই….. মুখ চোখ কেমন হয়ে আছে…. অফিস থেকে ফিরে নিশ্চিত নাস্তা করে নি…… কখন এলো কিছুই টের পেলাম না…… রাতে শুধু দুধ পাউরুটি খেলাম…..আম্মু আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে ওনিও খাওয়া সেরে নিলেন…… খাবার পর প্যারাসিটামল খাওয়ার পর গায়ের ব্যাথা কিছুটা লাঘব হলো কিন্তু তাপমাত্রা কোনভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না….. রাতে আম্মু আমার সাথেই থাকতে চেয়েছিলেন….. কিন্তু ওনিই জোর করে পাঠিয়ে দিলেন….. যাই হোক হাই ব্লাড প্রেশারের রোগী…… ঠিক মতোন ঘুম না হলে কোন বিপদ আপদ ঘটে যেতে পারে…… আম্মুকে রোমে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও কেমন যেনো ভয় পাচ্ছে…… কিন্তু আমার কেনো যেনো নিজেকে খুব স্বাভাবিক ই লাগছে….. কিন্তু বিছানা থেকে দাড়ালেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না…..
,
,
,
মাঝ রাতে প্রবল শরীর ব্যাথায় ঘুম ভেঙে গেলো……. গোঙানি টা ইচ্ছে করে ও দমাতে পারছিলাম না…… রাতে হয়তো ওনি লাইট আর অফ করে নি ওনি…… ওনার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম বেঘোরে……. আমার গোঙানির আওয়াজ শুনে না আবার ঘুম ভেঙে যায়……. এদিকে শরীরে কোন জোর ই পাচ্ছি না যে উঠে অন্যকোথাও চলে যাবো…… যা ভেবেছিলাম……
,
,
,
——— উমম…. তুলি…. কি হয়েছে?? কোথায় কষ্ট হচ্ছে…..
,
,
,
ওনাকে দেখে যেনো আমার কষ্ট আরও বহুগুণে বেড়ে গেছে….. চোখের কোনা বেয়ে উপচে পানি পড়ছে….আমার গায়ে হাত ঠেকিয়ে কিছুটা শিউরে উঠলেন….
,
,
,
——— এএএএই মেয়ে কখন থেকে এতো জ্বর… ডাকলে না কেনোওঅঅ…
,
,
,
ওনার কথা গুলো কেমন যেনো জ্বড়িয়ে যাচ্ছে…..হুড়োহুড়ি করে রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে আম্মুকে নিয়ে ফিরে এলেন…. নিজেকে তখন এতো অসহায় লাগছিলো…. আম্মু আমার পাশে বসে গলায় কপালে হাত ঠেকিয়ে কাধ থেকে কাপড় সড়িয়ে কাধে পিঠে পেটে কি যেন দেখতে লাগলেন…..
,
,
,
——— এগুলো তো জল বসন্ত….. কিরে টুকি…. আগে কি তোর কখনো পক্স হয়েছে….??
,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব ২৩

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব ২৩
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪৩
,
,

,
বাড়ি ফেরার পর সেদিনের কেনাকাটা গুলো খুব সন্তর্পণে লুকিয়ে চুরিয়ে উঠিয়ে রেখে দিলাম আলমিরায়……ওনার প্লান ছিলো সবাইকে এক সাথে করে ছোট খাটো একটা খাওয়ার আয়োজন করবেন…… কথা খানা শুনে বেশ খুশিই হয়ে গেলাম….. ফের এক সাথে হবো সবাই…… আম্মুকে একথা জানাতেই ওনি মাস খানেক পর করতে বললেন….. মেঝো ভাইয়ার কি একটা যেন কাজ পড়ে গেছে….. সেই কথাই বহাল রইলো……
,
,
,
সে রাতে আমার উপহার টা আমি পেয়ে গেলাম……. আকাশি রঙা একটা স্বর্নকাতান….. তারউপর গোল্ডেন সুতো বুনা…. মিনা করা পাকা একটা শাড়ি….. শাড়ীটা দেখে আমি হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম….. ওনি আলাদা করে অন্যপাশে শাড়ি দেখেছেন সেটা আমিও দেখেছি কিন্তু এই শাড়ি টা কখন কিনলেন ওনি….. মায়ের জন্য আম্মুর জন্য বড় আপু আর মেজো ভাবির জন্য মোটামুটি মহিলা প্রায় সকলের জন্যই শাড়ি কেনা হয়েছে…. কম করে হলেও দেড়শো খানেক শাড়ি ঘাটা হয়েছে কিন্তু এতো সুন্দর শাড়িটা তো চোখেই পড়লো না….আমাকে এতো কিছু ভাবতে দেখে ওনি ফের কি যেন একটা আমার হাতে তুলে দিলেন…. ছোট্ট একটা বক্স… এমা এইটা আবার কি…. তাজ্জব হয়ে দেখতে দেখতেই ওনি আমার হাতেই বক্সটা খুলে দিলেন…. খুব সুন্দর মুক্তোর নাকফুল… আমার বোচা নাকে একেবারে মানানসই যাকে বলে…..সেরাতে ওনার আব্দার রক্ষার্থে বেশ ঘষামাজা করে পুরাতন টা খুলে নতুন টা পড়া হলো…. ঘষামাজাই নাক একেবারে লাল টমেটো হয়ে আছে…. তবে আয়নায় নাকের সেই লাল অংশটার মাঝে নাকফুল টা দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম…. আহামরি কিছু না এই ছোট্ট একটা জিনিসে সৌন্দর্য যেনো আরও বেড়ে গেছে……. ওনি পেছন থেকে এসে কাধে হাত রাখলেন….
,
,
,
——— খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম…
,
,
——— কিছু কষ্ট পেতেও আনন্দ….
,
,
——— আচ্ছা….
,
,
——— হুম…
,
,
,
আর কথা না বাড়িয়ে জিনিসপত্র ঠিকঠাক রেখে ফ্রেশ হয়ে একেবারে শুয়ে পড়লাম…… ওনিও সেই রোজকার মতোই জড়িয়ে ধরলেন….. পেটের উপর হাত দিয়ে কি যেন সব আঁকিবুঁকি করে যাচ্ছে…..
,
,
——— শিমুল ভাইয়াকে কি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসতে…..???
,
,
,
ওনার কথা শুনে অবাক হতে গিয়েও হই নি……. কারণ শিমুল ভাই আমার জীবনের কোন কালো অধ্যায় না যা নিয়ে আমি লুকোচুরি করবো….. তবে শিমুল ভাইকে নিয়ে ঘটা করে কিছু বলার মতোও আমার কাছে নেই…. কিভাবেই বা থাকবে? আর কিই বা থাকবে?? যা ছিলো তা সবই একপাক্ষিক……. একপাক্ষিক অনুভূতির কি কোন বৈধতা আছে??? নেই….. ওসব আমার……
,
,
,
——— তুলি তোমার এই দীর্ঘশ্বাস গুলো ও কি তোমার শিমুল ভাইয়ের জন্য??
,
,
——— উঁহু আমার দীর্ঘশ্বাস গুলো একান্তই আমার…..এর ভাগীদার আমি কাউকে করি নি….
,
,
——— আগের প্রশ্নের উত্তর দিলে না যে?
,
,
——— একসাথে কি দুজন মানুষকে একই জায়গায় রাখা যায়? আর তুলনা দুটো ভিন্ন জিনিসে হয় না…..শিমুল ভাই হচ্ছে আমার কল্পনার বাস্তব….. যা কেবলি একপাক্ষিক…. তবে একে ভালোবাসা না বলে বিশেষ ভালোলাগা বলা যেতে পারে……
,
,
——— বিশেষ ভালোলাগা!!! তা সে কি এখনো বিদ্যমান!!!
,
,
——— ভালোলাগা তো ভালোলাগাই তার কি কোন এখন তখন আছে নাকি!!
,
,
——— আলবাত আছে….. আমার বউ তার বিশেষ ভালোলাগা দেখে মুখ গম্ভীর করে বসে থাকবে আর আমি সেটার এখন তখন দেখবো না!!!
,
,
,
ওনি কিছুটা রেগে আমাকে ওনার দিকে ফিরিয়ে রাগি রাগি চোখ করে কথা গুলো বলছিলেন…… কেন যযেন আজ এই রাগে ভয় হচ্ছে না…. মনে হচ্ছে চোখ দুটোতে বেশ অভিযোগ জমা হয়েছে….. ওনি আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফের বলতে শুরু করলেন ———
,
,
,
——— আচ্ছা আমাকে আর তোমার শিমুল ভাইকে যদি অপশনে রেখে বিয়ের জন্য তোমার মতামত চাইতো তাহলে তুমি কাকে সিলেক্ট করতে!!!
,
,
——— পায়েস আর নিমতিতার মধ্যে পছন্দ কোনটা জানতে চাইলে পাগলও তার পছন্দ পায়েস ই বলবে….. সেখানে আমি তো সুস্থ সবল অবলা রমণী….
,
,
——— আমি নিমতিতা!!!
,
,
——— হুম তারসাথে একেবারে মানুষরুপি যমঠাকুর…
,
,
——— তুলি…. আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি…
,
,
——— উফফফফ আমারতো ভীষণ রকমের ভয় করছে এই রাগ দেখে….. বলে খিলখিল করে হাসতে লাগলাম…..
,
,
,
উনি খুব বিরক্ত ভঙ্গিতে চোখমুখ কুচকে গায়ের অর্ধেক ভার আমার উপর ছেড়ে দিলেন….. আমি তখন গা কাপিয়ে হেসে যাচ্ছি…..
,
,
——— হাসবে না একদম….. হাসি বন্ধ….
,
,
এই কথা শুনে দাত কেলিয়ে হাসি শুরু করে দিলাম…..
,
,
——— ইশশ ছিঃ…..কি লাল দাত…..আজকে ফেরার সময় এক পাগল ঠিক এইভাবে তুমার মতোই সেইম লাল দাত কেলিয়ে হে হে করে হাসছিলেন…… একেবারে মিলে গেছে….একিইইই দাতে লাল শাক আটকে আছে…..
,
,
,
ব্যাস আমার হাসি উবে গেলো….. শেষ পর্যন্ত কিনা এক রাস্তার পাগলের সাথে তুলনা দিলো…..
,
,
,
——— উফফফ সরেন তো উপর থেকে….. দম বন্ধ হয়ে আসছে…..
,
,
,
এই কথা শুনে বেশ ভালো করে চেপে ধরলেন…… কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে বাহাতে গাল দুটো চেপে ধরে নিয়ে –
,
,
——— আমি নিমতিতা আর কি যেনো যমঠাকুর…… নিমতিতা স্ব্যাস্থের জন্য আর যমঠাকুর পড়াশোনার জন্য খুবই উপকারী বলেই ঠোঁট চেপে ধরলেন……. সেরাতে আর নিস্তার পাওয়া হলো না আমার……. সারারাত খুনশুটি আর ভালোবাসায়ই ভোর হয়ে গেলো…… ভোরের দিকে ওনার ঘামে লেপ্টে যাওয়া লোমশ বুকের উপর খুব চুপচাপ শুয়ে ছিলাম…… বুকের ধুপধাপ আওয়াজ টা যেন চারপাশ ছাপিয়ে যাচ্ছিলো……. একসময় মনে হচ্ছে আমার হৃদস্পন্দন আর ওনার হৃদস্পন্দন ঠিক একি তালে একি সময়ে স্পন্দিত হচ্ছে……মানুষটার সব কিছুতেই যেনো আমি সুখ খোজে পাই খুব সহজে…..বুকের উপর আঁকিবুঁকি করছিলাম আনমনে আর ওনি আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন…… কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি বলতেই পারি না…… বেশ কিছু সময় ধরে ডাকছেন ওনি উঠার জন্য কিন্তু আমি তো ঘুমের জন্য চোখ ই টেনে খুলতে পারছি না শুধু হু হা করে যাচ্ছি…… ওনার উপর থেকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ফের খুব আদর করে ডাকতে শুরু করে দিলেন ———
,
,
,
——— তুলি….. এই……. এইইইই তুলিইইইই…… আরে আম্মুও মনে হয় উঠে গেছে….. সকাল হয়ে গেছে বউ…. বলছেন আর অসভ্যের মতোন যেখানে সেখানে চুমু খাচ্ছে…… আমার উপর তখন মরার ঘুম ভর করেছে….. হাত পা ছড়িয়ে বেধর ঘুমাচ্ছি….. তবে আধো জাগরণের মধ্যে ওনার কথা গুলো কাজ গুলো বেশ বুঝতে পারছি….
,
,
——— এই বুচি…. নাক বুচি উঠবা নাকি…. বলেই নিজে উঠে হাত টেনে ধরলেন…….
,
,
——— ধুর বাল…..বালের প্যাচাল শুনতে ভাললাগছেনা কিন্ত……. আমারররর সারায়ায়ায়ায়া গায়ায়ায়া ব্যাথায়ায়ায়ায়া করতেছেএএএ প্রচুর…… আমি এখন উঠতে পারবো নায়ায়ায়া…. প্লিইইইজ্জজ্জ
,
,
,
কথাগুলো বলেই গোঙাতে গোঙাতে একপাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম…… ওনিও আর দেরি না করে নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেলো…… ফ্রেশ হয়ে এসে আমাকে একেবারে বিনাবাক্য ব্যয়ে টেনে তুললেন……..
,
,
,
——— শরীরের প্রতিটা জয়েন্ট যেনো ব্যাথায় একেবারে পচে আছে….. কোমড়ের শীড়দাড়া বেয়ে একেবার ঘাড় পর্যন্ত…….. হাটু গুলো একেবারে অসার হয়ে আছে….. বিছানা থেকে কাপড় ঠিকঠাক করে নেমে দারিয়ে আস্তে আস্তে পা ফেলে আলমিরারর দিকে যেতেই ওনি বলে উঠলেন ওয়াশরুমে আগেই সব রেখে এসেছেন…….. গোসলের পানি গায়ে ঢালতেই বুঝতে পারলাম ঈষৎ গরম পানি….. গরমে গরম পানিটা বেমানান লাগছিলো তবে ব্যাথায় খুব আরাম পাচ্ছিলাম…… গোছল শেষ করে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে শাড়ি টা কাধের উপর ফেলে রুমে চলে আসলাম……. ওনি তখন বেডশিট চেঞ্জ করে বিনে রাখছিলেন…. শাড়ি টা পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম ভালো করে আঁচল জড়িয়ে….. ওনি তখন আমার পেছনে দাড়ানো ছিলেন…….
,
,
,
আম্মু হেটে ফিরেছেন সবে….. ফুলি খালা দুদিনের ছুটিতে আছেন…… রুটি বানাতে একদম ইচ্ছে করছিলো না….. গায়ে কোন বলই পাচ্ছি না………. ঘুমে চোখ দুটো জ্বলে যাচ্ছে…… বিস্কুটের বয়ামে পাউরুটির প্যাকেট দেখে বেশ স্বস্তি পেলাম….. ডিম চারটে সিদ্ধ বসিয়ে সালাদ কেটে টেবিলে গিয়ে দেখি কলাও আছেন….. আম্মু মনে হয় সকালে নিয়ে এসেছেন সাথে আরেকটা প্যাকেট….. নিশ্চিত কেইক হবে…….হলোও তাই…. কেইক গুলো প্লেইটে সাজিয়ে টেবিলের উপর রেখে আবার রান্নাঘরে চলে এলাম।।।। চুলোয় হালকা আছে দুধ বসিয়ে পাউরুটি আর জেলির বয়াম নিয়ে টেবিলে রেখে একে একে ডিম সেদ্ধ আর দুধ ও নিয়ে এলাম….. আম্মু ততক্ষণে চলে এসেছে…..
,
,
,
——— কিরে টুকি হাসপাতালে ব্রেকফাস্ট সাজালি দেখি…..
,
,
——— আম্মু ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে…..
,
,
——— তাহলে বাবুকে বলতি দোকান থেকে নাস্তা কিনে আনতো…. তুইতো এসব খেতে পারিস না…..
,
,
——— নাহ তুমিতো কেইক এনেছো…. ওতে হয়ে যাবে আমার….
,
,
——— এক কাজ করি আমি নাহয় চট করে কয়েকটা পরোটা ভেজে আনি…. ভেতরে চিনি দিয়ে….
,
,
——— নাহ আম্মু তুমি বসো….. একদিন একটু কম খেলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না….
,
,
,
ততক্ষণে ওনি ও চলে এসেছেন…… কেইক, কলা আর পানি দিয়ে নাস্তা সারতে চেয়ে ও পারলাম না…. আম্মু জোর করে অর্ধেক ডিম খাইয়ে দিলেন….. দুধ খাবার জন্য না করতেই মা ছেলে মিলে বকে ধমকে খাইয়ে ছাড়লেন…..নাস্তা শেষ করে ওনি অফিস চলে গেলেন সেই আগের মতো দরজা অব্দি গিয়ে পানির জন্য ডেকে নিয়ে পানি খেয়ে কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে পরলেন….. যাবার আগে বলে গেলেন টেবিলের উপর প্যারাসিটামল রেখে গেছেন…. গরম পানি দিয়ে যেনো খেয়ে নিই….. আমি কিছু বললাম না….. কিছু বলতেও ইচ্ছে করছিলো না….ব্যাথায় সারা গা টলমল করছে….. ঘুমটা ফের চেপে ধরেছে…. কিচ্ছু ভালো লাগছে না একেবারে…..

,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২২

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২২
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪১
,
,
সে রাতের ভালোবাসা নামক গভীর বিষয় আমাকে মনে প্রাণে দেহে এক ঝটকায় বড় করে দিলো…… এতো দিন নিজেকে গিন্নি ভাবলেও সেদিনের পর থেকে একেবারে নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে আবিষ্কার করলাম….. মানুষটার প্রতিটা ছোয়ায় নিজেকে খুব স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে হয়…….. অফিসে যাবার পর চাতকের মতো অপেক্ষা করি কখন ফিরবে…. কখন দেখতে পাবো….. ওনার সান্নিধ্যের লোভ আমার কাছে দুই মিনিট ও দুই বছরের মতোন দীর্ঘ…… আজকাল খুব করে চাই ওনার চোখে চোখে থাকতে।।।। ওনার পছন্দের রান্নাটা শিখে প্রশংসা পেতে….. ওনার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে…..আমার সব কিছু যেন ওনাকে দিয়ে শুরু হয় এমন ভাবনা এমন খেয়াল প্রতিমূহুর্তে আমার মনে আসে….. ভালোবাসার একেবারে ভরাডুবি হয়েছে আমার যাকে বলে…..
,
,
,
দফায় দফায় ভালোবাসাবাসি তে ওনার সাথে সখ্যতা আর সহজতাটা খুব ভালোভাবে হয়ে গেলো আমার….. মানুষ টাকে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসি নি….. হুট করে কিভাবে যেনো ওনার প্রতি ভালোবাসা টা পেয়ে বসলো আমায়….. ইজ ইট ম্যাজিক্যাল!!! জানি না….. আমি কিচ্ছু জানি না…..শুধু জানি এই মানুষটার সাথে আমার আরও অনেক গুলো সময় কাটানো দরকার……
,
,
,
সাদাফ নামক যমঠাকুর রূপি মানুষটা বিছানায় যেমন একজন ভালোবাসায় পরিপূর্ণ স্বামী তেমনি পড়ার টেবিলে উগ্রবাদী যমঠাকুর….. একটু এদিক ওদিক হলেই তুলোধুনো করে দেয়…… যদিও আজকাল খুব একটা সুযোগ পায় না…. তবে আমাকে ভাগে পাবার জন্য যেনো একেবারে মুখিয়ে থাকে……বকাবকির পরিমাণ বেশি করে ফেললে একদম ঘাপটি মেরে আম্মুর রুমে বসে থাকি….. সেরাতে আর রুমে ফেরা নাই……. পরদিন সকাল থেকে শুরু হবে একেবারে অফিসে যাবার আগপর্যন্ত অত্যাচার ……
.
,
,
——— তুলিইইই আমার ব্যাগ কই…
,
,
——— তুলিইইইইই আমার সেন্ডো গেঞ্জি টা পাচ্ছি না…..
,
,
——— ওয়ালেট টা খুজে দেবার জন্য আরেকটা বিয়ে করতে হবে…… আম্মু পাত্রী দেখা শুরু করো….. এইবার‍ যেটাকে বিয়ে করবো সেটা যেন আগের মতো না হয়…..
,
,
,
কথাগুলো বলছে আর আড় চোখে তাকাতে তাকাতে ঘড়ির বেল্ট বাধছেন….. আম্মু ও কেমন মিটিমিটি হাসেন ওনার এসব কথা শুনে……হাসবেন নাই বা কেন হাড়েমজ্জায় তো ওনার বাদড়ামি…… তারপর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে রোজকার রুটিন মোতাবেক শেষ অত্যাচার টা করেন…..
,
,
,
——— তুলিইইইইই এক গ্লাস পানি নিয়ে জলদি আসো আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে….
,
,
,
আমি ইচ্ছা করে দাতে দাত চেপে ঢিলেমি করে পানি নিয়ে যাই….. ওনি দরজার নব ধরে বেশ আরামসে বিরক্তি ভাব নিয়ে পানিটা শেষ করেন….. তারপর গ্লাস ফেরত দেবার সময় কানের কাছে ফিসফিস করে ওনার বিখ্যাত হুমকি…..
,
,
,
——— আজ হচ্ছে তোমার…. শুধু ফেরার অপেক্ষামাত্র….
,
,
দুই একটা ঢুক মনে মনে গিলে ভেংচি কেটে চলে আসি….. তারপর সে রাত টা বর্ণণাতীত……পরের দিন আবার সেই ঢুলাঢুলি শুরু….. যেখানে বসি সেখানেই ঘুম…. উফফফ কি যে এক লজ্জাজনক ব্যাপার….. যদিও এই রীতি বেশি দিন চলে নি…… বকাবকি শেষে দেখা যেতো উল্টো থ্রেট দিয়ে যেতো…..
,
,
,
——— যদি আজ রাতে আম্মুর ঘরের দিকে তাকাও ও তাহলে তোমার কোন দিন আসবে না…. রাতের পর রাত শুধু রিপিট হবে…..
,
,
,
নয়তো কখনো আম্মুর রুমের পাশে ঘাপটি দিয়ে থাকতো….. সেখান থেকে জোর করে টেনেটুনে নিয়ে আসতো…… মাঝেমধ্যে তিরিং বিরিং করে বের হয়ে আম্মুর পাশে শুয়ে পড়লেও ঘুমের মধ্যে বাচ্চাদের মতন করে কাধে মাথা ফেলে বুকের সাথে মিশিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাবে…….. এরপর আম্মুর কাছে রাগ করে যাওয়া টাও লজ্জায় পরিনত হয়েছে….. একদিন তো বলেই ফেললো ———
,
,
,
——— রাতে আমার পাশে ঘুমিয়ে তো সকাল দেখতে পারিস না….. কি লাভ বল এই রাগের….. মাঝখান থেকে ছেলেটার মাঝরাত্রিরে কসরত করতে হয়……
,
,
,
আম্মুর এই কথায় ওনি বেশ খুশিতে গদগদ করছিলেন….. আর সুযোগ পেলেই চোখ মারছেন…..
,
,
,
৪২
,
,
,
ওনার নতুন স্যালারি পাবার পর আমাকে নিয়ে বের হলেন বড়দের জন্য কেনাকাটা করবে বলে…..বলেছিলাম সাথে আম্মুকে নিয়ে নিই কিন্তু তাতে এক্কেবারেই রাজি হলেন না…. বললেন এটা নাকি সারপ্রাইজড….. যাই হোক আর কথা বাড়ালাম না….. সবুজ আর কালো মিশেলে একটা শাড়ি পড়লাম কালো ব্লাউজ দিয়ে….. বিয়ের পর একদিনে যে গায়ের রঙ বেশ ফুটেছে বুঝতে আর বাকি রইলো না….. কালো ব্লাউজ আর কালো পাড় টা যেনো আমার গায়ের উজ্জ্বল মেটে রংটাতে ফুটে উঠেছে ভারি….. কপালে ছোট্ট করে কালো টিপ আর খোলা বেণুণি….. চুল খোলে বাইরে যাওয়া টা যেমন আম্মু পছন্দ করেন না তেমনি ওনিও…. তাছাড়া চুল হচ্ছে পিঠ পর্যন্ত….. যার দরুন বেণি করার কারনে অনেকটা উপরে উঠে গেছে….ওনি গল্প বা সিনেমার কোন নায়কের মতো করে আমার সাথে মিলিয়ে কোন পোশাক পড়ে নি….. ব্লু জিন্সের সাথে ফুল হাতা এশ কালারের একটা ফতুয়া পড়েছেন….. বেশ লাগছে দেখতে….. আমার হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতে করতেই হাত দিয়ে চুল গুলোকে উলটে আচড়ে ঘড়ি পড়ে নিলেন…… তারপর বের হবার সময় আম্মু আটকে দিলেন……..
,
,
,
——— টুকি ধরতো এখানে হাজার দুয়েক টাকা আছে….. কোন কিছু পছন্দ হলে কিনে নিবি….
,
,
——— আম্মু আমি তো সাথেই যাচ্ছি…..
,
,
——— তুই চুপ কর….. আর শোন রিক্সায় শাড়ির আঁচল কোলে নিয়ে বসবি মনে করে….. আর বাবু শোন সাবধানে যাস….. খেয়াল রাখিস ওর…..
,
,
,
আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে সোজা শপিংমলে ঢুকে পড়লাম…… গুনে গুনে যতো গুরুজন আছেন সবার জন্য কেনাকাটা শেষ করে বেরুণোর সময় শিমুল ভায়ের সাথে দেখা হয়ে গেলো….. দেখা হলো বলতে ভুলই হলো….. শিমুল ভাই ই ডেকে দাড় করিয়েছেন….. পাশে ওনার বউ ও ছিলো….. অনেকটা মুটিয়ে গেছেন আগে থেকে……. পেট টাও বেশ ভরাট লাগছে….. যা ভাবছিলাম তাই….. পাঁচ মাসের গর্ভবতী তিনি….. শিমুল ভাইয়ের মুখ থেকে যেনো হাসির ঝিলিক সরছেই না….. তবে ভাবিকে দেখে খুব ক্লান্ত লাগছিলো…… ইন্টার্নি নাকি এখনো শেষ হয় নি….. তাই ভাইয়া রোজ অফিসের পর সাথে করে নিয়ে যায়….. খুব কথা হলো সেদিন….. ওনি আর শিমুল ভাই তো বেশ মাতিয়ে রেখেছিলেন আড্ডা টা….. ভাবিও বেশ মিশুক….. কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন….. এসবের মাঝে শিমুল ভায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকাতে আমার কোন ভুল হয় নি….. ওনার মুখের দিকে তাকাতেই কেন যেনো আগের সব ভাবনা গুলো দৃষ্টি ঝাপসা করে দিলো……. এই মানুষটাকে নিয়ে একদিন কতো জল্পনা কল্পনা না করে ছিলাম….. বিয়ে হবে…..প্রেম হবে…….. ছোট্ট একটা সংসার হবে….. তারপর আমার কোলজুড়ে একটা ছোট্ট বাচ্চা আসবে….. মা মা বলে ডাকবে….. অচিরেই একটা গোপন দীর্ঘশ্বাস আড়াল করে গেলাম…… বাস্তবতা টা বড়ই ভিন্ন হয়ে গেলো………
,
,
,
টেবিলের উপারে আমার কল্পনা তার ভালোবাসা আর অনাগত সন্তান নিয়ে বেশ সুখে আছে….. আর টেবিলের এপাড়ে আমি মানুষটা…. ভাবতেই নিজের অজান্তেই খাম খেয়ালে পাশে তাকিয়ে দেখি মানুষটা বড্ড সুন্দর করে হেসে হেসে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলে যাচ্ছে…..ওনার হাসিটায় নিজেও না চাইতেই হেসে দিলাম….. নাহ….. আমি খারাপ নেই…..মানুষটা আমাকে খারাপ থাকতে চাওয়া স্বত্তেও জোর করে ভালো রেখেছে এইযে নাচাওয়া হাসিটার মতোই…… ভালোবাসা মনে হয় এমনি….. কোন কারণ লাগে না….. অকারণেই হাসিতে হাসা যায় আবার অকারণেই কান্নাতে কান্না করা যায়……আমার তোমার বলে আলাদা কোন স্বত্তা নেই….. দুয়ে মিলে এক যাকে বলে….. আবারও বুক চিড়ে নাক ফোড়ে একটা বড়সড় দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো….. তবে এইবারের দীর্ঘশ্বাস টা জানান দিয়ে গেলো আমি ভালো আছি…. এই যে আমার পাশে বসা মানুষ টা আমাকে ভালো থাকতে বাধ্য করেছে….. বাধ্য করেছে তাকে ভালোবাসতে….. বাধ্য করেছে তাকে নিয়ে আরো হাজার টা বছর বাঁচার আকাঙ্ক্ষা করতে….. আর যাই হোক এমন একটা মানুষের সাথে নিশ্চয় খুব করে চেয়েও খুব একটা খারাপ থাকা যায় না….. সেদিন শিমুল ভাইকে পেছন ফেলে আসতে আসতে আরো একটা জিনিস উপলব্ধি করলাম আমার বুকটা ধ্বক করে উঠে নি ওনাকে দেখে….. সেই চিনচিন ব্যাথাটাও হচ্ছে না…..
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২১

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২১
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪০
,
,
মনে মনে বারংবার ভালোবাসিতো বললেও মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলতে পারতাম না….. কেদে কেদে চোখ ভাসিয়ে বারবার আল্লাহ কে ডাকতাম আর বলতাম ওনাকে ক্যান অসুস্থ করে দিলে… ক্যান….. এই ফোলা ফোলা চোখ গুলা নিয়ে যখন ওনার সামনে যেতাম ওনি তাকিয়ে থাকতেন….. ওনার তাকানোতে খুব লজ্জা পেতাম খুব….. জ্বর হবার পর থেকে ওনাকে রাতে খাইয়ে দেবার ভার টা আম্মু আমার উপর দিলেন….. ভালোবাসি জানা স্বত্তেও কেন জানি বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যেতাম……… ওনিও কেমন করে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকতো আর মুচকি মুচকি হাসতো…. ইচ্ছে করতো থুতনি পর্যন্ত ঘুমটা টেনে দেই মুখের উপর…… কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না…… মাঝে মধ্যে আমাকে এমন কাচুমাচু করতে দেখে ওনি খুব জোরে হাসতেন…… আর তখন ওনার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকালেই খুব জোরে দুই গাল টেনে লাল করে দিতেন….
,
,
,
দুদিনের মাথায় মাঝরাতে জ্বর টা যেন মাথা গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে……এতো রাতে জ্বর দেখে মাথায় সব উদ্ভট খারাপ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে….. আমার কাদোকাদো মুখটা দেখে কিছুটা জোর করেই টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো….. তারপর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখলেন…… ওনার গায়ের তাপটা তখন আমার বোধগম্য…… ওনার নিশ্বাস টা যেন আমার সারা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাচ্ছে……
,
,
,
——— আচ্ছা আমি মারা গেলে কি খুব কষ্ট হবে তোমার!!???
,
,
এমন সময় এই কথা টাকে বড্ড বেমানান লাগছিলো….. বুকের ভেতর টা একেবারে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে যেনো…. ওনার দিকে ঘুরে বসে চোখে চোখ রেখেই কেদে কেদে বলে দিলাম….
,
,
,
——— ভালোবাসিতো….. ক্যানো এসব বলেন……
,
,
ওনি মুচকি হেসে আমার কপালে চুমু খেলেন….. তারপর খুব করে জড়িয়ে ধরলেন…… অন্যদিনের জড়িয়ে ধরাটা যেনো আজকের থেকে ব্যাপক ভিন্ন….. কেমন সুখ সুখ লাগছে সারা গায়ে….. ওভাবে জড়িয়ে ধরেই আমাকে নিয়ে শুয়ে পড়লেন….. শাড়ির আঁচল গলিয়ে পেটের উপর হাত রেখে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন…… ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় সেদিন জেনেছিলাম আমি…… জ্বরের ঘোরে লোকটা যে উন্মাদনায় মত্ত ছিলো তা বেশ বুঝতে পারছিলাম…… ঘামে লেপ্টে যাওয়া নগ্ন লোমশ বুকটার ধুকপুকানির শব্দটাতেও কেমন সুখ লেগে যাচ্ছে…..সেদিন থেকে ওনি নামক মানুষ টাকে ভেতর থেকে সাদাফ নামে ডাকতে শুরু করলাম….. সাদাফ…… আমার ভালোবাসার আরেক নাম…. আমার স্বামী….৷ যাকে আমি বৈধ ভাবে মনে প্রাণে গ্রহণ করেছি…..
,
,
,
সারারাত না ঘুমানো স্বত্তেও ভোরে আমার চোখে ঘুম নামলো না……কিন্তু মানুষটা দিব্যি আমায় বুকে আগলে রেখে কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে…… রাতের ঘোর টা এখনো আমার চোখেই রয়ে গেছে…… ওনার বুকে থুতনি ঠেকিয়ে খুব সন্তর্পণে দেখে যাচ্ছি ওনাকে….. কেনো যেনো একটুও ভয় করছে না….. বরং ভেবে খুশি হচ্ছিলাম এই মানুষ টা আমার জীবন সঙ্গী…… আমি ওনার সহধর্মিণী……. আজকাল ভাবনা গুলো ও খুব প্রাশান্তিদায়ক মনে হয়…..এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতেই ওনার থেকে সরে আসলাম….. জ্বর আছে কি না দেখার জন্য কপালে হাত রাখতেই… হাত খানা কপাল থেকে টেনে নিয়ে নিজের দুহাতের মাঝে রেখে তাতে মাথা রেখে বেশ আরাম করে শুয়ে পড়লেন…..
,
,
,
——— রাতে একটুও ঘুমাতে পারি নাই বউ….. যন্ত্রণা করে না…. আসো তুমিও ঘুমাও ঘুম পাড়িয়ে দেই…..
,
,
ওনার এই কথা শুনে বেশ হাসি পেলো…. ঘুমের মধ্যেই বাচ্চাদের মতন করে হাত বাড়িয়ে আছে…. আরো মিনিট দশেক ওনার গা ঘেষে থেকে উঠে পড়লাম…… কিন্তু বিছানা থেকে নামতেই কোমড় থেকে সারা পা যেন ব্যাথায় অবশ হয়ে আসছে….. কোন রকমে নিজেকে টেনে নিয়ে ঢুকে পড়লাম বাথরুমে…… গোছল সেরে বের হতেই দেখি ওনি বিছানা গুছিয়ে উঠে বসেছে…..
,
,
,
——–বিয়ের পর সক্কাল সক্কাল গোছলের মানে টা বুঝলে তো!!! এতো দিন তো নানির কথা মুখস্থ করেছো….. যাই আমার এতোদিনের সত্যিকারের ফরজ গোছল টা সেরে আসি….
,
,
,
বলেই আমায় চোখ মেরে বাথরুমে ঢুকে গেলেন….. এদিকে আমার অবস্থা কাহিল….. একেতো ব্যাথায় কোমড়ের ধার ছিড়ে যাচ্ছে তার উপর ঘুম….. যেখানে বসছি সেখানেই ঘুমে ঢুলছি…..সকালে খাবার সারার পড়েই ওনি আবারো চেচিয়ে ডাকতে শুরু করলেন…… সবেমাত্র হাত ধুয়ে টেবিল গোছাতে বসেছিলাম….. কিন্তু ওনার ডাক শুনে আম্মু আমায় রুমে পাঠিয়ে দিলেন….. রুমে ঢুকতেই আমায় টেনে নিয়ে দরজা আটকে দিলেন……
,
,
,
——— ঘুম চোখে বউটাকে তো বড্ড মিষ্টি লাগে….. কিন্তু চোখ গুলা এমন লাগছে কেনো!!! দেখিতো বলেই আমার চোখ টেনে বিজ্ঞ ডাক্তারের মতো দেখতে শুরু করে দিলেন…… তারপর খুব গম্ভীর মুখ করে বলছেন ——— হুম….. ভাইটামিনের যথেষ্ট ঘাটতি আছে……
,
,
ওনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম…… কি বলছে এইসব…… আর কিছু ভাবতে পারলাম না তার আগেই ওনার এতো সব নাটকের মূল কাহিনি বের হয়ে গেলো….. হাত দিয়ে যাতে বাধা দিতে না পারি সেজন্য দুহাত আগেভাগেই আটকে রেখেছেন….. পাক্কা সাত মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে শয়তানের মতোন করে মিটি হেসে যাচ্ছে….. আমি রাগে ফোস ফোস করছি দেখে একদম ঘর কাপিয়ে হাসি ধরলেন…… তারপর পানির গ্লাস টা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে টেবলেটের পাতা থেকে টেবলেট খসিয়ে হাতে দিলেন……..
,
,
,
——— খেয়ে নাও…. ব্যাথা কমে যাবে….. আর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও আমি আম্মুকে বলে দেব কিছু একটা……
,
,
,
শুয়েছি সবেমাত্র মুখ হাত ধুয়ে….. অমনি আম্মু আমায় ডাকতে ডাকতে রুমে চলে এলেন…..
,
,
,
——— টুকি…. টুকি শোননা!!!
,
,
——— আম্মু তুলি ঘুমিয়েছে একটু…. সারারাত ঘুমাতে পারে নি তো….
,
,
——— সারারাত ঘুমাতে পারে নি!! কিন্তু কেনো!!
,
,
——— মাঝরাতে জ্বর টা আবার উঠেছিল তো… অই আরকি…
,
,
——— আমায় ডাকলি না কেনো!! ও তো ছোট মানুষ…. এখন নিশ্চয়ই শরীর খারাপ লাগছে…..
,
,
——— নাহ আম্মু ঘুমিয়ে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে….
,
,
——— আয়াচ্ছা থাক ঘুমোক….. হ্যারে… তুই কোথাও যাবি!!
,
,
——— নাতো!!
,
,
——— তাহলে এমন কলার অব্দি বোতাম লাগিয়ে শার্ট পড়েছিস কেনো!!
,
,
——— ইয়ে মানে….
,
,
——— দেখি জ্বর আসছে নাকি!! নাহ তো…..
,
,
,
আমি পাশ ফিরে শুয়ে শুয়ে শুধু মজা নিচ্ছি…… এবার বুঝুক মজা…. সবসময় আমায় নিয়ে ইয়ার্কি….. বেশ হয়েছে….. আমার কি!! আমি ঘুমোই….

,
,

,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২০

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২০
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৩৮
,
,
,
পরদিন সকালে বাবা নিজে গিয়ে আম্মুকে নিয়ে এলেন সাথে করে…. সারাদিন সবাই মিলে কাটিয়ে বিকেলের পর আম্মু আর ওনার সাথে রউনা দিলাম…… এতোগুলো দিন কাটিয়ে যাবার সময় মনে হচ্ছে দ্বিতীয় বিদায় আমার…….. মায়ের অফিস থেকে ফেরার আর অপেক্ষা করা হবে না….. বাবার জন্য চা করা হবে না….. ভেতরে তুমুল ঝড় বয়ে যাচ্ছে যেনো……. যম ঠাকুর আর সেখানে বেশি সময় দাড়ালেন না…. আম্মুকে আর আমাকে সিএনজি তে বসিয়ে দিয়েই নিজে গিয়ে বাবার সাথে কথা বলে তারপর গাড়িতে ওঠে এলেন…..বাড়ি ফিরে কেমন যেনো স্যাতস্যাতে লাগছে সবকিছু….. যেনো কোন কিছুতেই প্রাণ নেই…. ওনি একেবারে বইপত্র নিয়ে পড়ার ঘরে চলে এলেন……আমি কিছুক্ষণ সেখানে দাড়ানোর পরই আম্মু পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন….. এই ঊনিশ দিনের মধ্যে এমন একটা দিন ও নাই যে মানুষ টা আমাকে দেখতে কলেজ যায় নি….
,
,
,
——— টুকি আমি কিন্তু বাবুকে অনেক বকেছি জানিস!!! ওকে জন্মের পর ও এভাবে বকি নি কখনো…. যখন যখন তোর কথা মনে পড়তো তখন তখন বকেছি….. এই কয় দিনে একেবারে মায়া লাগিয়ে দিয়েছিস রে টুকি….. আর এমন করিস না মা….. আমি খুব কষ্ট পেয়েছি জানিস…. ঠিক মতো খেতে পারতাম না…. তাই তো এটা সেটা তোর জন্য নিয়ে কলেজে ছুটে যেতাম…… আমি চোখ বুঝি তারপর তোদের যা ইচ্ছা করিস…..
,
,
,
আম্মুকে আমি জড়িয়ে ধরে বসে রইলাম কতোক্ষণ….. সব মায়েদের গায়েই একটা প্রশান্তিকর গন্ধ আছে….. মায়ের কথাটা বেশ মনে পড়ছে…… রুমে এসে একেবারে সব পরিপাটি পেলাম…..সেদিনের গোসলের পর ভেজা কাপড় গুলো সুন্দ করে সোফায় ভাজ করে রাখা……..গামছাটা চেয়ারের উপর….. দেরি না করে কাপড় চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলাম ফ্রেশ হয়ে…… ওনি তখন রুমে ঢুকে শার্টের বোতাম খুলতে ব্যাস্ত…… চেঞ্জ করা কাপড় গুলো সোফায় মেলে রেখে…. ডায়নিং চলে এলাম পানি খেতে….. ওমনি চেচিয়ে ডাকা শুরু…..
,
,
,
——— তুলিইইইই…. একগ্লাস পানি নিয়ে আসোতো….
,
,
কেন যেনো মনে হচ্ছে বহুযুগ পর নিজের নামটা এভাবে শুনছি….. পানি নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি বাথরুমে ঢুকে পড়েছে…..বিছানা টা বড্ড টানছিলো…. পানিটা টেবিলে রেখেই বিছানায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছি……. ঘুম ভেঙে গেলো মুখের উপর গরম নিশ্বাস আর পানির ফোটায়….. চোখ মেলে দেখি…. ওনি একেবারে আমার মুখের উপর ঝুকে আছে…..চুল মুখ থেকে পানি চুইয়ে মুখের উপর পড়ছে….. আমি পানির ফোটা গুলা মুখ থেকে মুছে সোজা হয়ে বসতেই ওনি আমার আঁচল টেনে নিয়ে গামছারমতন করে মুছে যাচ্ছেন…. …তারপর আমাকে দিয়ে নতুন করে পানি আনিয়ে খেলেন……
,
,
,
রাতে আর নতুন করে কিছু রান্না করতে হয় নি….. মা আসার সময় সব কিছু বাক্স বন্ধি করে সাথে দিয়ে দিয়েছেন…… রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে এসে একেবারে আমি শুয়ে পড়লাম….. দরজা লাগানোর ধৈর্য্যটাও যেনো আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই….. এক ঘুমে রাত ভোর করে সজাগ হতেই দেখলাম….. যম ঠাকুরের দু পায়ের মাঝে আমার দুই পা…. সারা বিছানায় শাড়ি ছড়িয়ে আছে শুধু আমার গায়েই নেই….. অনেকদিন পর শাড়ি পড়ার দরুন যা হয় আরকি….. এদিকে নড়েচড়ে উঠতে ও পারছি না…. কাধের শাড়ি সব ওনার পিঠের নিচে….. ঘুমের মধ্যে ওনাকে এমন আষ্ট্রেপৃষ্ঠে জাপটে ধরে ঘুমিয়েছি ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে খুব….. আমার নড়াচড়া দেখে ওনার ঘুম ভেঙে গেলো….. চোখ না খুলেই কপালে হাত দিয়ে কি যেন চেক করছে…. তারপর চোখ মেলে আমার দিকে ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে…..
,
,
,
——— গুড মর্নিং….. লেডি….. তোমার জন্য রাতে একটু ও ঘুমাতে পারি নাই…. পা ব্যাথা ব্যাথা করে সারা রাত পা টিপিয়েছো….৷ এদিকে হালকা জ্বর ও ছিলো….. নিশ্চয়ই এসে ভর সন্ধ্যায় গোছল করেছিলে….
,
,
,
ওনার কথা শুনে অনেকটা অবাক হয়ে ও হলাম না…. কারণ সন্ধ্যে থেকেই হাত পা ব্যাথায় কাহিল ছিলাম….. ইশ লোকটা শেষে কিনা পা টিপলো সারারাত….. ওনি ওনার পিঠের নিচে থেকে কাপড়ের আঁচল টা টেনে সরিয়ে ফের শুতে শুতে বললেন…….
,
,
,
——— আস্তে ধীরে উঠে কাপড় গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও…. আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো….
,
,
,
ওনার এই সাধারণ কথাটায় অসাধারণ লজ্জা পেলাম….. আমার এই উদ্ভব ঘুম টা যে কবে যাবে আল্লাহ মালুম…. ঝটপট ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে….. ওনিও বেশ কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে একেবারে অফিসে যাবার জন্য রেডি হয়ে বেড়িয়ে গেলেন আগের সেই রোজকার রুটিনে…..
,
,
,
৩৯
,
,
,
দুটো প্রাইভেট থেকে একটা যম ঠাকুর অফ করিয়ে দিলেন ফিরতে রাত হয়ে যায় বলে…. তারউপর এখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে…..৷ আম্মু রোজ আমাকে সাথে করে প্রাইভেট পড়াতে নিয়ে যায়…… ব্যাপার টাতে আমি আর আম্মু দুজনেই বেশ মজা পাই….. আমার ছোট বেলা থেকেই খুব ইচ্ছে ছিলো সবকিছুতেই মাকে পাবো…. কিন্তু তেমন তো খুব একটা হয়ে উঠেনি বললেই চলে….. এদিকে আম্মুর ও বিয়ের পর বড় আপু আর ভাইয়ারা কলেজ পড়ুয়া….. ওনি যখন হয় তখন আম্মু একেবারে পাক্কা গৃহিণী তাছাড়া ও বাড়িতে বৌদের বাইরে বের হবার চল ছিলো না খুব একটা…… ওনার বাবা মানে আমার শ্বশুরমশাই তার সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের জন্য লোক ঠিক করে দিয়েছিলেন তখন স্কুলে নিয়ে আসার জন্য….. তাই আম্মুর ইচ্ছেটাও তখন অপূর্ণ রয়ে গেছে……. ফেরার সময় তো আমরা ইচ্ছে করেই হেটে ফিরতাম…. গল্প করতে করতে…. আচার… আইস্ক্রিম…. লজেন্স এটা সেটা খেতে খেতে….. আম্মু আসলেই খুব মজার মানুষ….. রাস্থায় কোন কিছু দেখলেই বলবে…..টুকি যাবার সময় কিনে খাবো মনে রাখিসতো…. বা কখনো দোকানিকে জিজ্ঞেস করতেন অমুক সময় পর্যন্ত ওনি থাকবে কিনা…… প্রাইভেটের সব স্টুডেন্ট দের মুখে মুখে আম্মুর প্রশংসা আর আমার সৌভাগ্যের আলোচনা….. আসলেই আমি সৌভাগ্যক্রমেই এমন একটা মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম……..
,
,
,
আম্মুকে সাথে করে নিয়ে ইচ্ছে পূরণ হলেও বেশ ঝামেলায় পড়তে হয় বলা চলে….. ওনি প্রাইভেটের লাস্ট বেঞ্চে নয়তো কখনো স্যারের চেয়ারের পাশে বা কখনো বারান্দায় দাড়িয়ে সব খেয়াল করেন….. আমি ঠিকঠাক পড়া দিচ্ছি কিনা?? ফাকি বাজি করছি নাতো সব….. তারপর বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে একগ্লাস দুধ হাতে ধরিয়ে সামনে বসে পড়তেন….. যতক্ষণে শেষ না করবো ততক্ষনে একপা ও নড়বে না…..যম ঠাকুরের নতুন অফিস থেকে ফিরতে সাতটা আটটা বেজে যায় বলে…. ঘন্টা খানেক বিরতি দিয়েই আমাকে পড়ার ঘরে টেনেটুনে নিয়ে বসাবে….. কখনো পাশের চেয়ারে বসে থাকবে নয়তো কখনো তজবি হাতে পায়চারি করবে…. আর যেদিন কোনক্রমে পড়া এদিক ওদিক হয় তাহলে তো হয়েছেই….. সারা রাস্তা হুমকি ধামকি দিতে দিতে আনবে…… ওনার দেওয়া হুমকির মধ্যে বেস্ট হুমকি হচ্ছে.———
,
,
,
——— ফিরোক আজ বাবু….. তারপর একে একে সব বলবো আমি তোর সারাদিনের রুটিন….. দেখে নিস
,
,
,
ব্যাস ওটুকুতেই আমি কাদোকাদো হয়ে ওনার পেছনে ঘুরঘুর করতাম সারা সন্ধ্যে…… এর মধ্যে ঢাকা সহ সারাদেশে শুরু হলো টানা বর্ষন….. এই বৃষ্টি ভিজে রাতভর জ্বরে ভোগে ওনি অফিস থেকে তিনিদিনের ছুটি পেলেন…….. জ্বরে ভোগা ওনার এই জীর্ণ শীর্ণ চেহারা দেখে বেশ বুঝতে পারলাম ওনার প্রতি আমার ভালোবাসার গভীরতা টা…… ওনাকে যতবার দেখেছি ততবারই কেদে বুক ভাসিয়ে মনে মনে বলেছি
,
,
,
——— ভালোবাসিতো….
এই যে দেখেন বুকের বা পাশটায় কেমন ব্যাথা হচ্ছে……
,
,
,
,
,
চলবে

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৯

0

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১৯
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৩৭
,
,
,
ওনার কথাখানি শুনেই মাথা তুলে তাকালাম…… বাহ বেশ তো চকচক করছে….. কচি পাতা কালারের টি-শার্ট এ একেবারে গ্রিক দেবতাদের মতন দেখতে লাগছে….. কোথাও কোন শোকের আভাটি পর্যন্ত নেই……আমিই একলা বেকুবের মতন শোক পালন করছি কম খেয়ে….. আর দাড়ালাম না….. ব্যাগখানা কাধ থেকে চেয়ারে নামিয়ে …… হিজাব আর বোরকা খুলতে চেয়েও খুলতে পারলাম না….. কেন যেন ওনার উপস্থিতি টা এইমূহুর্তে খুব অস্বস্তিতে ভুগাচ্ছে….. তাই কাপড় চোপড় নিয়েই বোরকা সহ বাথরুমে ঢুকে পড়লাম….. সেখানের ঘোলাটে আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম…… চোখের নিচে কালি পড়তে শুরু করেছে….. গালে কপালে ব্রণ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে….. হুট করেই যেনো নিজের মধ্যে বার্ধক্য খুজে পাচ্ছি…….. আমার চোখের আমির সাথে এই আইনার আমিটার কোন মিলই নেই…….
,
,
,
সেই কথাগুলোর জন্য ওনার প্রতি আমার কোন ঘৃণা নেই…..তবে এই মূহুর্তে একরাশ অভিমান আর রাগ চেপে ধরেছে আমায়….. এই রাগ আর এই অভিমানের কি কারণ আমি সেটাও খুজে পাচ্ছি না….. শুধু বুঝতে পারছি আমার খুব রাগ লাগছে……কোন কিছুই ভালো লাগছে না….. গোছল সেরে গা মুছতে গিয়ে খেয়াল হলো কাপড়ের সাথে কোন তোয়ালে আনা হয় নি…..তোয়ালে টা তখন যম ঠাকুরের হাতে দেখেছিলাম…… তাই ভেজা গায়েই কাপড় পড়ে বেড়িয়ে এলাম…..ওনি তখন পড়ার টেবিলে আমার বই ঘাটতে ব্যাস্ত….. এক নজর দেখেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে এলাম….. অমনি ওনি পেছন থেকে তোয়ালে নিয়ে এসে মাথা মুছিয়ে তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে দিলেন……
,
,
,
——— জামা চেঞ্জ করে আসো….
,
,
——— না….
,
,
——— কি না…. চুলের জলে জামার পিঠ কোমড় ভিজে আছে…. না চেঞ্জ করলে এগুলো গায়ে শুকিয়ে জ্বর ঠান্ডা বাধাবে….. শিগগির বাথরুমে যাও….
,
,
——— কি হলো…. বসে আছো কেন!!!
,
,
,
এই মূহুর্তে ওনার এই চিন্তাটা আমার কাছে খুব অসহ্য লাগছে….. ইচ্ছে করছে দুই হাতের মুঠোয় চুল টেনে জিজ্ঞেস করি এতোদিন এই চিন্তা কই ছিলো…. কিন্তু এতো যম ঠাকুর….. চিন্তা বাস্তব করতে গেলে দেখা যাবে আমিই দুনিয়াতে নাই…..
,
,
——— এই নাও কাপড়….
,
,
——— আমার জন্য আপনার এতো ভাবতে হবে না…… আমার কিসে ভালো হবে বা কিসে মন্দ হবে তা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য আমি আছি…..
,
,
——— লিসেন মিসেস….. তুমি এখনো অতোটাও বড় হও নি…. যে নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নিবে…..ভালোই ভালোই ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করবে নাকি…!
,
,
——— নাকি!!!
,
,
——— কিছুনা…. বলেই ঠেলে আমায় ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে হাতে কাপড় ধরিয়ে দিলো…..
,
,
,
রাতে খাবার পর ওনার আর বাবার সব কথা মা আমাকে খুলে বললেন…… পাশে বাবাও ছিলো…..
,
,
——— তুলি তোমার জন্য আমি আর তুমার মা একজন ভালো জীবনসঙ্গী খুজে এসেছি….. কিন্তু আল্লাহ আমাদের হিরের সন্ধান দিয়েছে মা…..ও ছেলে লাখে একটা….
,
,
——— সাদাফের প্রতি কোন রাগ রাখিস না মা….ও তোর ভালোর জন্যই কঠোর হয়েছে…..
,
,
——— হুম…. তুমি আর রাগ করে থাকবে না…. রোজ রোজ ছেলে টা বাড়ির সামনে রাত ভোর করে বাসায় ফেরে…. এমনি চললে তো বিপদ আপদ ঘটবে…..
,
,
,
বাবার কথায় আমি কিছুটা অবাক হলাম…. রাত ভোর করে বাড়ি ফেরে মানে!! মায়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম তারা মুখ টিপে হাসি লুকাচ্ছে….. ব্যাপারটা তখনও আমার মাথার উপর ঘুর ঘুর করছে…..তাদের সাথে কথা বলে রুমে ঢুকতেই দেখি ওনি প্যান্ট চেঞ্জ করে লুঙ্গি পড়েছে…… টিশার্ট চেঞ্জ করে পড়েছে সাদা সেন্ডো গেঞ্জি…… হাতে কাধে…. লাল লাল ফুশকুরি….. তিল ফেলার মতো ও ফাক ফোকড় নেই……
,
,
,
——— আপনার গায়ে এগুলো কি”!!
,
,
——— তোমাদের এলাকার মেম্বার কাজের না তুলি…. এলাকার মোড়ে দাড়ানোর মতো না….. এতো মশা…. তাদেরই জামাই আদর এসব…. আফটার অল এলাকার জামাই বলে কথা…. তাই মশারাও জামাই আদরে ত্রুটি রাখে নাই…..
,
,
,
ওনার এই কথাগুলোর সাথে বাবার বলা কথাগুলো মাথায় আপনা আপনি ই প্যাচগোচ খাচ্ছে…… আমাকে এতো অন্যমনস্ক দেখে ওনি একপ্রকার বকে ধমকে বিছানায় নিয়ে গেলেন ঘুমাতে……. ঠিক সেই আগের মতো করে পেচিয়ে ধরে শুয়ে আছেন আমাকে তার সাথে মিশিয়ে…… সব প্যাচগুলো মাথায় এক এক করে খুলে যাচ্ছে……আমার মাথাটা ওনার বা কাধের উপর থাকায় খুব অনায়েসেই ওনার মুখ খানা দেখতে পাচ্ছিলাম….. ওনি তখন আমার মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে সিলিং এ তাকিয়ে আছেন….. ঠোঁট চেপে কান্নার শব্দ সংবরণ করতে পারলে ও চোখের জল কে কোনমতেই আটকে রাখতে পারলাম না….. একপাশ হয়ে শুয়াতে দুচোখের জল একত্রে ওনার কাধে পড়ছে….. হঠাৎ করেই ওনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন….. ওনার তাকানো মাত্রই আমি চোখ বুঝে রইলাম…… বন্ধ দুচোখের আঁখি পল্লবে চুমু খেয়ে আগের চেয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন ———
,
,
,
——— তোমার গলির রাতের মশারাও কিন্তু টের পেয়েছে আমার ভালোবাসার…..
,
,
,
চলবে