Monday, July 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 197



শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-৩৫+৩৬

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৫
আরও কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেছে। আর্শি তার বাবা-মায়ের সাথে সময়টা বেশ ভালোই কাটাচ্ছে। শ্রাবণের সাথে এখন বেশি কথা হয় না। শ্রাবণই বলতে চায় না। কাজের চাপ, ব্যাস্ততা দেখিয়ে কথা তাড়াতাড়ি শেষ করতে চায়। কিন্তু আর্শি এখন ইচ্ছে করে গভীর রাত অবধি শ্রাবণের গিটার বাজানো শুনবে। বৃষ্টির রাতে দুজনে ফোনের দুই পাশে নিরব বসে থাকবে। কিন্তু শ্রাবণ ব্যাস্ত বলে সে তাও মেনে নিয়েছে।
অন্যদিকে শ্রাবণ অফিসে এখন চুপচাপ থাকে। বসকে বলে গ্রুপ চেঞ্জ করেছে। সে কোনোভাবেই ইরিনার মুখোমুখি হতে চায় না। কিন্তু ইরিনা হঠাৎ শ্রাবণের এই বদলের কারণ বুঝতে পারছে না। শ্রাবণ যেন তাকে দেখেও দেখে না এমন ভাব ধরে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ইরিনা আজ ভেবেছে শ্রাবণের অফিসরুমে গিয়েই কথা বলবে। অতঃপর লাঞ্চের পরপরই গেলো। শ্রাবণ দরজায় নক পেয়ে ভেতরে আসতে বলে, তারপর ইরিনাকে দেখে ফাইলের দিকে মনোযোগ দিলো। ইরিনা চেয়ার টেনে বসে বলে,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড, সাবন(শ্রাবণ)?”

শ্রাবণ অনিচ্ছাসত্ত্বে প্রত্যুত্তর করলো কিন্তু তাকালো না।
“নাথিং। ”

“ইউ আর ইগোনোরিং মি? টেল মি হোয়াট হ্যাপেন্ড? ”

শ্রাবণ বুঝতে পারছে না, ইরিনা এতো স্বাভাবিক কীভাবে? শ্রাবণ জিজ্ঞাসা করলো,
“ইউ ডোন্ট রিমেম্বার এনিথিং? ”

ইরিনাও পালটা প্রশ্ন করে,
“রিমেম্বার হোয়াট?”

শ্রাবণ সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে ইরিনার দিকে চেয়ে আছে। ইরিনা হাত নাড়িয়ে শ্রাবণের দৃষ্টি ফেরালে শ্রাবণ বলে,
“ফরগেট ইট। আই হ্যাভ লটস অফ ফাইল টু চেক। ইউ প্লিজ গো।”

ইরিনা কিছু বলতে নিবে, তার আগেই শ্রাবণ বলে,
“প্লিজ!”

অতঃপর ইরিনা বেরিয়ে যায়। শ্রাবণের কেবিন থেকে বেরোতেই ইরিনার সামনে আসে ইরিনার বয়ফ্রেন্ড শার্লক। ইরিনাকে মন খারাপ করে দেখে শার্লক শুধায়,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

“ডোন্ট নো। হিজ বিহেভিয়ার ইজ সো মিস্টেরিয়াস। হি ইজ রুড টু মি।”

শার্লক বাঁকা হাসে। ফের নিজের মুখশ্রীতে চিন্তিত ভাব এনে বলে,
“মেবি হি ইজ আপসেট। লেট ইট গো। ইরিনা, অ্যাই হ্যাভ অ্যা সারপ্রাইজ ফর ইউ।”

ইরিনা জিজ্ঞাসু নয়নে তাকায়। শার্লক বলে,
“কাম উইথ মি।”

এরপর ওরা দুজন ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। শার্লক ইরিনাকে একটা ফাঁকা ফ্লাটে নিয়ে যায়। ইরিনা তা দেখে বলে,

“হোয়াই ডিড ইউ ব্রিং মি হেয়ার?”

শার্লক অ্যাপার্টমেন্টটার একটা জানালা খুলে বলে,
“ইটস আওয়ার অ্যাপার্টমেন্ট!”

ইরিনা অবাক হয়। ফের শুধায়,
“রিয়েলি? বাট হাউ? ইউ সেইড, আফটার ওয়ান ইয়ারস উই উড বাই অ্যা স্মল অ্যাপার্টমেন্ট।”

“ইয়েস। বাট আই ব্রট ইট নাউ। আরেন্ট ইউ হ্যাপি?”

ইরিনা হাসার চেষ্টা করলো। এতো টাকা শার্লক কোথায় পেল সেটাই তাকে ভাবাচ্ছে।

________
আজ ছুটির দিন। ছুটির দিনে আর্শি ও তার তিন বান্ধবী মিসেস আশালতার সাথে রান্না করছে। মিসেস আশালতাও আজ বাঙালি খাবারের বাহার করতে চাইলেন। লিসার রান্নার হাতের পারদর্শিতা দেখে মিসেস আশালতা অবাক। লিসা অনেক রান্নাই পারে। এমনকি ছোটো মাছ দিয়ে টমেটো ও বেগুনের ঝোল তরকারিটাও পারে। মিসেস আশালতা বলে,

“লিসা, হাউ ডু ইউ লার্ন ইট?”

লিসা হেসে বলে,
“আশিকে দেকেছি(দেখেছি)।”

“তুমি বাংলা বলতে পারো?”

“ট্রাইং বাট নট প্রপারলি।”

আর্শি ডালের তরকা দিতে রসুন কাটতে কাটতে বলল,
“মা, ও খুব জলদি শিখে। বাংলা অনেকটাই বুঝে তাও আমরা ওর সামনে ইংলিশে বলি। ও এমনিও কম কথা বলে।”

মিসেস আশালতা খুশি হয়ে বলেন,
“ভিষণ মিষ্টি মেয়ে।”

সোহা রান্নাঘরে বসে বসে চিপস খাচ্ছিলো। সে লিসার জন্য কমপ্লিমেন্ট শুনে বলল,
“আমি কেমন আন্টি? আমি একটু বেশি কথা বলি, তবে গুড গার্ল তাই না?”

সবাই হেসে ফেলল। মিসেস আশালতা বলেন,
“দুষ্ট মেয়ে তুমি।”

“নট ডান, আন্টি!”

আর্শি বলে,
“জানো মা, মোনা আমাকে মাঝেমাঝেই বলে আমি যেন ওর সাথে রুম এক্সচেঞ্জ করি। সোহার ননস্টপ কথা বলার জন্য মোনা নাকি তাল মেলাতে পারে না।”

মোনা বলে,
“সি ইজ সো টকেটিভ!”

আবারও হাসির ফোয়ারা বয়। তন্মধ্যে আর্শি ডালে তরকা দিয়ে সব খাবারের ছবি তুলে শ্রাবণকে পাঠিয়ে দেয়।

______

আরিয়ার সব পরীক্ষা শেষ। সে এখন অলস হয়ে ঘরে শুয়ে বসে থাকছে। আশিক এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একটা কোচিংয়ে পড়ায়। আর দুটো এইচএসসি দিবে ছেলেকে পড়ায়। আজ মুশফিকা সকাল থেকে আরিয়ার সাথে আড্ডা দিতে আসেনি। প্রতিদিন এসে গল্প করে, একসাথে কিছু নাটক দেখে। আজ না আসাতে আরিয়া নিজেই মুশফিকার রুমের দিকে যায়। মুশফিকা ও নাহিদের রুমে যেতে সিঁড়ি পেরোতে হয়। আস্তে আস্তে সিঁড়ি পেরিয়ে রুমের সামনে যেতেই দেখে দরজা চাপানো। নাহিদ বাড়িতে থাকলেই মুশফিকা দরজা লক করে। তাছাড়া ঘুমানো ছাড়া লক করে না। সার্ভেন্টরাও উপরে এদিকে আসে না। উপরের ফ্লোরে তিনটা রুম। একটাতে গেস্টের জন্য। আরেকটা মিস্টার হাসান লাইব্রেরি করে রেখেছে। আরিয়া নিঃশব্দে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে মুশফিকা রুমে নেই। আরিয়া ফিরে আসতে নিলে বারান্দার চৌকাঠের কাছে শাড়ির আঁচল দেখা যাচ্ছে। আরিয়া এগিয়ে যায়। বারান্দার কাছে যেতেই দেখে মুশফিকা হাঁটুতে মুখ গুঁজে আছে। কিছুক্ষণ পরপর তার শ*রীর কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে কাঁদছে। আরিয়া সাবধানে বসলো। তারপর মুশফিকার কাঁধে হাত রেখে বলল,

“আপু?”

মুশফিকা তৎপর হয়ে মাথা তুলে। অপ্রস্তুত হয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে,
“তুমি এখানে?”

“তুমি আজ আমার সাথে গল্প করতে গেলে না। আন্টিরও শরীর ভালো না বলে ঘুমাচ্ছেন। তাই আমিই এলাম। তুমি এই ঠান্ডার মধ্যে শীতের কাপড় ছাড়া বারান্দায় বসে আছো যে?”

“এমনিই। ভালো লাগছিল না। তুমি উঠো। ফ্লোরে বসেছ কেন? উঠো উঠো।”

মুশফিকা তাড়াহুড়ো দেখালে আরিয়া ওর হাত চেপে ধরে। ফের শুধায়,
“কাঁদছিলে তুমি? কী হয়েছে?”

মুশফিকা হাসার চেষ্টা করে বলে,
“কিছু হয়নি। কী হবে আর!”

“কিছু তো হয়েছে। নাহিদ কিছু বলেছে?”

“নাহিদ! না। সে তো আমাকে এখন কিছু বলতে চায় না।”

আরিয়া আবার শুধায়,
“একটা সত্যি কথা বলোতো, অনেকদিন যাবত জিজ্ঞাসা করব করব করে করিনি। নাহিদ তোমাকে বিয়ে করলো কেন? এক মাসের বেশি সময় যাবত নাহিদ সিলেটে আছে। সেটাই বা কেন? এর আগে নাহিদ আমায় বলেছিল, তার কাজ এসবে তেমন মন নেই। কিন্তু এখন ভিন্ন চিত্র।”

মুশফিকা উশখুশ করছে। তার খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু ভয়ও হচ্ছে। নাহিদ দিন দিন সা*ই*কোতে পরিণত হয়েছে। যদি জানতে পারে, সে আরিয়াকে বলে দিয়েছে, তবে কী যে করে বসে!
মুশফিকাকে অন্যমনা দেখে আরিয়া ফের ডাকে,
“আপু? বলো?”

মুশফিকা ঢোক গিলে বলে,
“শুনো, সবসময় আমরা যা দেখি, সব কিন্তু সত্যি হয় না। আমাদেরকে সত্যির মতো করে দেখানো হয়।”

আরিয়া বিভ্রান্তির দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর প্রশ্ন করে,
“এটা আমি জানি কিন্তু তুমি কী বুঝালে?”

“কিছু না। বাদ দাও। রুমে চলো। মায়ের কাছেও যাওয়া হয়নি আজ।”

মুশফিকা নিজে উঠে আরিয়াকে ধরে ওঠায়। তারপর মুশফিকা আরিয়াকে নিজের সাথে আসতে ইশারা করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৬(সত্য প্রকাশ)
ইটালিতে রাত প্রায় একটা। আর্শি রিসার্চের বিষয় নিয়ে ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বিছানায় ঢেলান দিয়ে বসে আছে। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কাজ করার ফাঁকে একটু বিরতি নিয়ে ফোন হাতে নিয়েছে। শ্রাবণকে অনলাইন দেখে সরাসরি কল করে বসে। দুইবার রিং হতে শ্রাবণও রিসিভ করে। সালাম বিনিময়ের পর আর্শি জিজ্ঞাসা করে,

“কী করছেন?”

শ্রাবণ মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“জব খুঁজছি।”

আর্শির কপাল কুঁচকে আসে। সে সন্দিহান হয়ে শুধায়,
“মানে? জব খুঁজছেন কেন?”

শ্রাবণ আমতা আমতা করতে বলল,
“আসলে..”

“কী আসলে? এতো ভালো জব থাকতে আবার জব খুঁজছেন?”

“আমি চাইছি তোমার কাছাকাছি চলে আসতে। তাই খুঁজছি।”

আর্শি অবাক হলো যেন। সে বলল,
“আমার কাছে চলে আসতে হুট করে জব ছেড়ে দিবেন? আমি তো কয়েকমাস পর দেশে ফিরে যাব। সত্যি করে বলুন তো, কী হয়েছে? অনেকদিন যাবত আপনার কথা, আচরণে স্বাভাবিকতা নেই। কিছু তো হয়েছে। আপনি আমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন।”

শ্রাবণ মুখে হাত দিয়ে চুপ করে বসে আছে। আর্শি ফোন কেটে ভিডিও কল দিলো। শ্রাবণ রিসিভ করে নিরব হয়ে বসে আছে। আর্শি প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“কিছু লুকাচ্ছেন আপনি। প্রতিদিন আপনার এমন ক্লান্ত, তেজহীন মুখ দেখতে দেখতে এতোটুকু বুঝেছি, খুব বড়ো কিছু হয়েছে। বলুন না।”

শ্রাবণ এবার নিজেকে শক্ত রাখতে পারলো না। আচমকা কেঁদে ফেলল। শ্রাবণকে আচানক কাঁদতে দেখে আর্শি অবাক তো বটেই ঘাবড়েও গেছে। পুরুষ মানুষ নাকি অপরাগ না হলে কাঁদে না। আর্শি ভীতু স্বরে শুধায়,

“বলুন না। কাঁদছেন কেন?”

শ্রাবণ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে মাথা নিচু করে ভেজা কণ্ঠে বলে,
“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বিশ্বাস করো, আমার মনে অন্য নারী নেই। স্বজ্ঞেনে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য নারীকে নিয়ে অযাচিত কিছু চিন্তাও করি না।”

শ্রাবণের কথাগুলো অন্যসময় শুনলে আর্শি হয়তো মনে মনে প্রফুল্ল হতো কিন্তু এখন তার ভীতি কাজ করছে। অশনিসংকেতের আশঙ্কা করছে হৃদয়। যা সে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়, সেরকম কি কিছু? অস্থির হয় আর্শি। শ্রাবণকে আবার নিশ্চুপ দেখে অধৈর্য স্বরে বলে ওঠে,

“এসব কেন বলছেন? কিছু লুকাবেন না। আমি মিথ্যা পছন্দ করি না।”

শ্রাবণ দৃষ্টি নত করে অপরাধীর সুরে বলে,
“ওই রাতে পার্টিতে ডিনার শেষে কোলা খাওয়ার পর কী হয়েছে আমার মনে নেই। আমার শরীর খারাপ করাতে আমাকে শা*র্লক সাময়িক রেস্টের জন্য একটা রুম বুক করে সেখানে রেস্ট নিতে বলে। তারপর আমার কিছু মনে নেই। সত্যি বলতে কিছু মনে নেই। আমি জানিনা কিছু….”

“মেয়েটা কে?”

আর্শির নির্জীব স্বর যেন শ্রাবণের হৃৎপিণ্ডতে হা*তু*ড়ি পে*টা করছে। শ্রাবণ বলতে চাইল,
“আমি সত্যি কিছু….”

ফের একই প্রশ্নে থামতে বাধ্য হলো শ্রাবণ। দুই পক্ষেই এখন নিরবতা। লিসা পাশে ঘুমানো ছিল। সে আধখোলা চোখে চেয়ে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

আর্শি মাথা নাড়ায়। শ্রাবণের থেকে জবাব না পেয়ে ফের ধীর স্বরে শুধায়,

“মেয়েটা কে, শ্রাবণ?”

“ইরি..না!”
শ্রাবণের থেমে থেমে বলা নামটা শুনে আর্শি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। শুধু বলল,
“ওহ! অনেক রাত হয়েছে ঘুমাব আমি!”

বলেই কল কেটে সুইচ অফ করে দেয়। অতঃপর কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়ে। এই আঁধার রাত, নিরবতা, মাথার নিচের বালিশ ও কম্বলই সাক্ষী থাকবে নয়ন যুগলের বোবা যন্ত্রণা! কণ্ঠ দিয়ে বের হতে না পারা বোবা যন্ত্রণা।

_______

নাহিদের আগামীকাল ইটালি ফ্লাইট। সে আজ বাড়িতে এসেছে। ছেলেকে অনেকদিন পর হাসি-খুশি দেখে মিসেস নেহা আগ্রহ নিয়ে ছেলের পছন্দের রান্নাগুলো করছেন। আরিয়া নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছে। মুশফিকা চুপি চুপি নিজের বেডরুমে ঢুকে নাহিদ ঘুমিয়েছে কী-না দেখে নিলো। সন্ধ্যায় কফির সাথে দুইটা ঘু*মের ঔ*ষুধ মিলিয়ে দিয়েছিল। কারণ সে জানে একটা টে*বলেটে নাহিদের ঘুম আসে না। এখন এসে নাহিদকে ঘুমন্ত দেখে কাঁপা কাঁপা হাতে নাহিদের ফোনটা নিলো। নাহিদের ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ফোন আনলক করলো। অতঃপর মেইল, হোয়াটসএপ, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম সব এপস খুঁজতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ খুঁজাখুঁজি করে মেইলে কয়েকটা মেইল পেয়েছে। আর হোয়াটসএপে একটা আ*পত্তিকর ভি*ডিও! মুশফিকা প্রথম একটু প্লে করে আর দেখার রুচি ও সাহস পেলো না। নিজের নতুন নাম্বারে নাহিদের ফোন থেকে ভিডিওটা সেন্ড করে। তারপর মেইল গুলোর স্ক্রিণশট নিয়ে সেগুলোও নিজের নতুন নাম্বারে নিয়ে নেয়। অতঃপর চ্যাট ডিলেট করে গ্যালারি থেকেও স্ক্রিণশট ডিলেট করে এপস হিস্টোরে অল ক্লিয়ার করে ফোন যথাস্থানে রেখে দেয়। কাজ শেষে মুশফিকা বিড়বিড় করে অসহায় স্বরে বলে,

“আমি জীবনে অনেককে ঠকিয়েছি। ঠকিয়েছি টাকার জন্য। আমার ছোটো বোনটার ট্রিটমেন্টের জন্য। কিন্তু এবার আমি একটা অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দিতে পারি না। মাফ করে দিও নাহিদ।”

অতঃপর মুশফিকা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

______

আর্শি পরশু রাত থেকেই কেমন নিরব হয়ে গেছে। মুখে হাসি নেই। কারও সাথে কথা বলতে আগ্রহী না। ভার্সিটি থেকে এসে ঘুম ও ল্যাপটপই তার সঙ্গী। মিসেস আশালতা এটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন। মেয়ে তো তাকে কিছু বলছেও না। কলি বা আরিয়া এখানে থাকলে ঠিক কোনো না কোনো ভাবে জেনে নিতো। তিনি কালও কয়েকবার জিজ্ঞাসা করে কোনো উত্তর পায়নি। তাই আজ বাধ্য হয়ে বিষয়টা আরিয়াকে জানায়। আরিয়া বলে,

“তোমার বড়ো মেয়ে দেখো আবার শ্রাবণ ভাইয়ার উপর রাগ করে বসেছে। দাও তো ফোন ও-কে।”

মিসেস আশালতা ফোন নিয়ে আর্শির ঘরে গেলো। আর্শি ফোন কানে নিতেই আরিয়া বলে,
“এই আপু, তুমি যদি এই সময় এতো রাগ করো তবে আমার ছেলের বউ তো রাগী হবে! হাসি-খুশি থাকো না কেন?”

আর্শি তাও হাসলো না। গম্ভীর স্বরে বলল,
“হুম। কেমন আছিস?”

“আমিতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কাল বিকেল থেকে ঘরের মধ্যে এক প্রকার বন্ধি ছিলাম। নাহিদ এসেছিল যে! আজ চলে গেছে। মুশফিকা আপু বলল ইটালি যাচ্ছে নতুন বিজনেসের কাজে! আমার কথা হলো, আর কোনো দেশ পেলো না! ইটালিতেই কেন?”

আর্শির ভাবান্তর হলো না। সে বলল,
“ওহ।”

আরিয়া আর্শির সংক্ষেপ জবাবে প্রসন্ন হলো না। সে বলল,
“এই আপু? কী হয়েছে? তোমরা সবাই এমন করছো কেন? তুমিও কিছু বলছো না, এদিকে একটু আগে মুশফিকা আপুকে বললাম লু*ডো খেলব, একটু আসো। সেও আসলো না।”

“আমার কিছু হয়নি, আরু। তুই নিজের খেয়াল রাখ।”

“আরে তুমি কি এখন কল কেটে দিবে নাকি? আরেকটু কথা বলো না।”

তখন আরিয়ার দরজায় নক হলে আরিয়া বলে,
“এক সেকেন্ড। মনে হয় মুশফিকা আপু এসেছে। একটু ধরো।”

আরিয়া উঠে দরজা খুলে দেখে মুশফিকাই এসেছে। তবে মুশফিকাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। সে জলদি করে দরজা লাগিয়ে আরিয়াকে হড়বড়িয়ে বলে,
“শুনো আরিয়া, নাহিদ খুব জঘন্য একটা প্ল্যানিং করেছে। সেই প্ল্যানের লাস্ট স্টেপ এক্সিকিউট করতেই সে ইটালি যাচ্ছে। আমি তোমাকে কিছু স্ক্রিণশট ও একটা ভিডিও দেখাব। তুমি দেখো। কাল আমি নাহিদের ফোন থেকে সাবধানে কালেক্ট করেছি।”

আরিয়ার ভ্রু কুঁচকে আসে। সে মুশফিকার ফোনে স্ক্রিণশট দেখতে থাকে। সেগুলো দেখে আরিয়া হতভম্ব হয়ে যায়। আরিয়া বলে,
“নাহিদ শ্রাবণ ভাইয়াকে কেন ফাঁসাতে চায়?”

মুশফিকা বলে,
“কারণ সে প্রতিশো*ধ চায়। শ্রাবণকে আর্শির কাছে খারাপ বানিয়ে তারপর আর্শিকে নিঃশেষ হতে দেখতে চায়। এরজন্য সে একটা ফে-ক ভি*ডিও বানিয়েছে এ*আই এর মাধ্যমে। ফে-ক ভি*ডিওটা আমি পাইনি। তবে রিয়েলটা পেয়েছি। এস শার্লক নামের হোয়া*টসএপ নাম্বার থেকে। ভি*ডিওর মেয়েটাকে নাহিদ কনভেনস করতে পারেনি বলে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে অন্য উপায়ে করিয়েছে।”

আরিয়া ভিডিওটা দেখতে চায়। মুশফিকা দেখাতেই আরিয়া জাস্ট কয়েক সেকেন্ড (ব্লার করা) দেখে বন্ধ করে দেয়। অতঃপর বলে,
“ছিহ্! নাহিদ এতো নিচে নেমে গেছে! আমার আপুর জীবন নষ্ট করতে সে আরও একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলছে!”

কথাটা বলতে বলতে আরিয়ার নিজের ফোনের দিকে নজর যায়। এখনও কল কানেক্টেড। সে তাড়াতাড়ি ফোন কানে নিয়ে শুনতে পায় আর্শির অস্থির স্বর,

“আরু? আরু? কী-সের ভিডিও? নাহিদ কী করেছে শ্রাবণের সাথে? আরু বল?”

আরিয়া বলে,
“ওই ***** নাহিদ একটা মেয়ের এ*মএম*এ*স দিয়ে শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে ফেক ভিডিও বানিয়েছে। তোমার সাথে শ্রাবণ ভাইয়ার সম্পর্ক খারাপ করতে। ছিহ্ কতো জঘন্য মানসিকতা।”

আর্শি যেন আরও অস্থির হয়ে পড়ে। সে শুধায়,
“কোন মেয়ে?”

“ইরিনা নাম। মেয়েটা রাজি হয়নি বলে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে করিয়েছে। বয়ফ্রেন্ডের সাথে মেয়েটার ঘনিষ্ঠ মূহুর্তের ভিডিওতে আ*র্টিফিশি*য়াল ইন্টা*লিজে*ন্টের মাধ্যমে শ্রাবণ ভাইয়াকে বসিয়েছে।”

আর্শি ইরিনার নাম শুনে শ*ক খায়। তবে কী শ্রাবণকে সেই রাতে ড্রিং*ক স্পা*ইক করে ফাঁসাতে চেয়েছিল? এতো এতো চিন্তায় মাথা ঘুরছে আর্শির। সে ফোন হাতে থাকা অবস্থাতেই সে*ন্সলে*স হয়ে যায়!

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-৩৩+৩৪

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৩
দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস। ইটালিতে শীত ঋতুর আগমন ঘটেছে। কয়েক জায়গায় তুষার বৃষ্টিরও খবর এসেছে। আর্শির বসন্তের পর শীত ঋতু একটু বেশি পছন্দ। প্রেগনেন্সির ৪ মাসে পড়বে তার। বাংলাদেশ থেকে খবর এসেছে, আর্শির বাবা-মা, ভাই-ভাবি সবার আগামীকাল ইটালির ফ্লাইট। এতে যেন আর্শি আরও বেশি খুশি। নিজেদের থাকার অ্যাপার্টমেন্টের পাশের অ্যাপার্টমেন্টটা এক মাস যাবত ফাঁকা। তাই সেটাই এক মাসের জন্য ভাড়া নিয়ে নিয়েছে। আর্শি বসে বসে শ্রাবণের সাথে ফোনে কথা বলছে আর ফ্রুট কাস্টার্ড খাচ্ছে। পাশে লিসা কানে ইয়ারফোন গুজে পড়ছে। তখন সোহা ছুটতে ছুটতে আসে। এসেই বলে,

“কালকে তুষার বৃষ্টি হবে।”

আর্শি কথাটা শুনেই আনন্দে চিৎকার করে ওঠে। তারপর বলে,
“সত্যি!”

“হ্যাঁ। মাত্রই আবহাওয়া নিউজে এলো।”

“তাহলে কালকে…”

আর্শির বলার মাঝে ফোনের অপরপাশ থেকে শ্রাবণ বলে ওঠে,
“এই তুমি কিন্তু কাল বেরোবে না। জানো, কতো অ্যাকসিডেন্ট হয় তুষারপাত হলে?”

আর্শি বিরক্ত হলো খানিক। ফের বলল,
“কিছুই হবে না। গতবার আমরা এই সময়ে কতো ঘুরেছি জানেন? এখানে শীতকালে গাড়ির টায়ার অন্যরকম থাকে যাতে অ্যা*কসিডেন্ট ঝুঁকি কমে। যখন হালকা তুষারপাত হয় তখন রাস্তায় লবন ছিঁটানো হয়। আর ভারী তুষারপাত হলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। আমরা হেঁটেই যাওয়া-আসা করি।”

“তাও যাবে না।”

আর্শি রেগে গেল। বলল,
“উফ! আপনি এমন করেন কেন? আমরা ক্লাস শেষে একটু রেস্টুরেন্টে যাব। বাঙালি রেস্টুরেন্ট। মমো, কাবাব এসব খাব। তারপর চলে আসব।”

“ঘরে এনে খাও। ফ্রোজেন সব তো পাওয়া যায়।”

“আপনার যখন এসব খেতে ইচ্ছে করে, আপনি ঘরে বসে খান? নিজে তো কলিগ, ফ্রেন্ডদের নিয়ে পার্টিও করেন। আর আমি একটু বেরোলেই দোষ? এমনভাবে বলছেন, যেন আমি নয় মাসের প্রেগন্যান্ট! আর সব তুষারপাত আমার মা-থার উপরই পড়বে!”

শ্রাবণ লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আঙ্কেল-আন্টি যে আরও দুইদিন পর কেন যাবে, বুঝতে পারছি না! এখন উনারা ওখানে থাকলে তুমি শুধরে থাকতে। তোমার ফ্রেন্ডরা তোমার কী খেয়াল রাখে তা বুঝতেই পারছি!”

আর্শি সোহাকে ইশারায় বলল, ওরা সাথে পরে কথা হবে। সোহাও মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। আর্শি লিসার দিকে একবার চেয়ে দেখলো, লিসা পূর্বের ন্যায় আছে। এবার আর্শি কণ্ঠ কিছুটা খাদে নামিয়ে বলল,
“আপনি সবকিছুতে আমার ফ্রেন্ডদের কেন টানেন বলেন তো? আপনার কি মনে হয়, আমরা সবসময় ঘুরাফেরাই করি?”

শ্রাবণের জবাব,
“না। আমি বলতে চাইছি,”

আর্শি ফের বলে ওঠে,
“বুঝেছি আমি। আমরা কিন্তু খুব একটা রেস্টুরেন্টে যাই না। আমি ছাড়া আমার ফ্রেন্ডরা সবাই পার্টটাইম জব করে। কেউ অনলাইনে রাইটিং সাইটে রিসার্চ আর্টিকেল লেখার জব করে তো কেউ বিভিন্ন শপে স্বল্প সময়ের জন্য। আমিও করেছিলাম, বাংলাদেশ থেকে ফিরে আর করিনি।”

শ্রাবণ এবার হার মেনে নেয়,
“আচ্ছা ঠিক আছে। যাও কিন্তু কেয়ারফুল থাকবে।”

“হুম। আপনাদের যে আজ নাইটক্লাবে পার্টি আছে, যার জন্য জলদি অফিস থেকে ফিরেছেন, সেখানে আবার ড্রিং*ক করবেন না তো?”

“আরে ধুর! আমরা আমাদের সেকেন্ড প্রজেক্ট শেষ করার খুশিতে একটু খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছি। আয়োজনটা করেছে আমার কলিগরাই। এখন আমি না গেলে খারাপ দেখায়।”

“বুঝেছি। আপনি কতো লাকি দেখেছেন, আমি আপনার উপর রাখঢাক দেখাই না। আমি মনে করি, আপনি যে আমাকে জানিয়েছেন, এটাই মেইন। আমাকে না জানিয়েও তো যেতে পারতেন। আর আমি আপনাকে জানালেই আপনি খালি না করেন! হুহ্!”

“তোমার ভালোর জন্যই তো।”

“হয়েছে। এবার ফ্রেশ হোন। অফিস থেকে ফিরেই কথা বলতে লেগে গেছেন। আমিও ঘুমাব। অনেক রাত হয়েছে।”

শ্রাবণ ঘড়িতে সময় দেখে। তাদের রাত নয়টার দিকে পার্টি শুরু হবে। তাই বলে,
“গুড নাইট। আর হ্যাঁ, তোমাকে আরেকটা কথা বলতে ভুলেই গেছি! ফেব্রুয়ারিতে আমি আসছি। তখন দুই মাসের ছুটি তো একমাস কাটিয়েছি। সেটাই সাথে এক্সট্রা এক মাস বাড়িয়ে ইটালিতে আসব।”

আর্শি অবাক হয়ে বলে,
“আপনাকে এতো ছুটি ওরা কীভাবে দেয়?”

“দেয়। কারণ আমি এই অফিসে প্রায় দুই-আড়াই বছরের মতো আছি। আমি ছুটি কাটাইনি। বছরে একটা লিমিটেশন ছুটি থাকলেও আমি সেগুলো নেইনি। আর রইল ঘুরাঘুরি, সেসব তো মাস্টার্স করাকালীন করেছি।”

“ওহ! ভালো। তবে আমার মনে হয় ছুটিটা ফেব্রুয়ারির লাস্টে নিয়েন। ডেলিভারি যদি জলদি হয় তাহলে তখন থাকতে পারবেন।”

“উমম, ভেবে দেখি। ততোদিনে তোমার কন্ডিশনেও বুঝা যাবে। এখন রাখছি। তুমি ঘুমাও। রাত জেগো না।”

এরপর আর্শিও বায় বলে ফোন রেখে পানি খেয়ে শুয়ে পড়ে।

_______

সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করছে আরিয়া। হঠাৎ তলপেটে সামান্য ব্যাথা শুরু হয়। আরিয়া ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে সামান্য ব্লি*ডিং হচ্ছে। তাতেই আরিয়া ভয় পেয়ে যায়। আরিয়া আশিককে চিৎকার করে ডাকে। আশিক পড়ছিল। এগারোটায় তাদের পরীক্ষা। ঘণ্টা খানেক পড়ে তারপর ভার্সিটিতে যাবে। আরিয়ার চিৎকার শুনে আশিকও কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সে তড়িঘড়ি করে উঠে ওয়াশরুমের কাছে যায়। তারপর দরজায় নক করে উৎকণ্ঠিত হয়ে শুধায়,

“কী হয়েছে? তুমি ঠিক আছো?”

আরিয়া দরজা খুলে বলে,
“আশিক, আমি এখনি ডাক্তারের কাছে যাব। আমার ভয় করছে।”

“কেন কী হয়েছে?”

“ব্লি*ডিং হচ্ছে।”

আশিক আরও ঘাবড়ে যায়। আরিয়ার এখন সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার চলে। আশিক জিজ্ঞাসা করে,
“বেশি হচ্ছে? পেইনও হচ্ছে?”

“পেইনও একটু হচ্ছে। ব্লিডিংও একটু হচ্ছে।”

“একটু অপেক্ষা করো, আমি খালামণিকে বলি। খালামণির পরিচিত গাইনোকলিজিস্ট আছে। তোমাকে বারবার বলি, এতো টেনশন নিও না। কাল জোড় করে পরীক্ষা শেষে ঝাল ফুচকা খেলে! আমার কথাই শুনো না তুমি!”

আরিয়া চোখ বন্ধ করে বলে,
“যা করার তাড়াতাড়ি করো। আমাদের দশটার দিকে ভার্সিটিতেও যেতে হবে।”

আরিয়াকে বিছানায় বসিয়ে আশিক তার খালামণিকে বলতে যায়। মিসেস নেহা ও মুশফিকা চা খাচ্ছিলো। আশিককে হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতেদেখে মুশফিকা বলে,

“আস্তে নামো।”

আশিক হড়বড়িয়ে বলে,
“আরিয়ার ব্লি*ডিং হচ্ছে। খালামণি, তুমি তোমার পরিচিত গাইনোকলিজিস্টকে বলে ইমার্জেন্সি একটু চেকআপ করতে আসতে বলো না।”

মিসেস নেহা ও মুশফিকা উভয়ই ঘাবড়ে যায়। মিসেস নেহা উৎকণ্ঠা নিয়ে শুধায়,
“বেশি পেইন হচ্ছে না তো?”

“বলল তো সামান্য।”

“আমি এখনি কল করছি।”

মুশফিকা ইতোমধ্যে আরিয়ার কাছে চলে গেছে। আরিয়া ভয়ে বারবার পানি খাচ্ছে। মুশফিকা বলে,
“তুমি শান্ত হও। টেনশন কমাও। কিছু হবে না। মাঝেমাঝে এমন হয়।”

“আমার ভয় করছে অনেক। আমার বেবি…”

আরিয়া বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছে। মুশফিকা ওকে শান্ত করতে ব্যাস্ত। মিসেস নেহা ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে আরিয়ার কাছে আসেন। তিনিও আরিয়াকে শান্ত থাকতে বলছেন। অতঃপর আরিয়াকে নিয়ে উনারা হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা করে।

________

যথারীতি ডিনার শেষে শ্রাবণ ও তার কলিগরা পানীয় পান করছে। শ্রাবণ কোকের গ্লাস নিয়েছে। বাকিরা অ্যা-লকো*হল নিয়েছে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ শ্রাবণের শরীর খারাপ লাগলে সে বলে,

“হেই গাইজ, অ্যাই অ্যাম ফিলিং আনকম্ফর্টেবল। অ্যাই অ্যাম ফিলিং অ্যা হেডেক এন্ড অ্যা লিটল ডিজি।”

ইরিনা সন্দিহান কণ্ঠে বলে,
“বাট ইউ টেকিং কোক অনলি!”

শ্রাবণ মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“ইয়াহ বাট অ্যাই অ্যাম নট ফিলিং ওয়েল। অ্যাই ওয়ান্ট সাম রেস্ট।”

তখন ইরিনার বয়ফ্রেন্ড বলে,
“ওকে। ইউ ক্যান টেক রেস্ট ইন হোটেল রুম।”

শ্রাবণ সম্মতি দিলে ওয়েটারকে ডেকে একটা রুম বুকড করে। শ্রাবণ সেখানে গিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ঘুমিয়েও যায়।
_____

ডাক্তার আরিয়াকে চেকআপ করে বলেন,
“আপনাকে সাবধানে থাকতে হবে। তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এই ধরণের সমস্যাতে কিন্তু মি*সক্যা*রেজও হয়। কিছু মেডিসিন দিচ্ছি।”

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে মিসেস নেহা বলেন,

“দেখলি? এতো বলি সাবধানে থাক। শুনিস তো না।”

আরিয়া মন খারাপ করে বলে,
“সব শুনব।”

“হুম। এখন ভার্সিটিতে যা। টেনশন করবি না। এই আশিক, তোরা গাড়িতে করে যা। আমি আর মুশফিকা রিক্সা করে চলে যাব।”

আশিক মাথা দুলিয়ে আরিয়াকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৪
(সেনসিটিভ পর্ব, ইগনোর করলেও করতে পারেন।)
সকালে প্রচণ্ড মা*থা যন্ত্রণা নিয়ে ঘুম থেকে উঠে শ্রাবণ। চোখ মেলে নিজের আশেপাশে নজর বুলানোর সময় পাশে ইরিনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়। তৎপর মস্তিষ্ক বিষয়টা ভালোভাবে লক্ষ্য করলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে সে! গতকাল রাতের তার যতোটুকু মনে আছে, তাতে সে রুমে একা এসেছিল। রেস্ট নিতে এসেছিল। তাহলে এখানে ইরিনা কীভাবে এলো? ইরিনার তো এখানে আসার কথা না। হঠাৎই ফ্লোরে নজর গেলে দেখতে পায়, গতকাল ইরিনার পড়নের টপ ও শ্রাবণের শার্ট নিচে পড়ে আছে। যা দেখে শ্রাবণের অক্ষিযুগল বৃহতাকার ধারণ করেছে। তার ভয় হতে শুরু করে। শরীর বেয়ে শীতল ঘম্রস্রোত বয়ে যাচ্ছে। সে যা সন্দেহ হচ্ছে তা যদি হয়! তৎক্ষণাৎ সে বিছানা ছেড়ে উঠে নিজের মা*থার চু*ল ধরে টানতে থাকে। অতঃপর শার্টটা উঠিয়ে তাড়াহুড়ো করে পড়ে নিয়ে হোটেল রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

শ্রাবণ বেরিয়ে যেতেই ইরিনাে বয়ফ্রেন্ড ওয়াশরুমের দরজার আড়াল থেকে বের হয়। শয়*তানি বাঁকা হেসে নাহিদকে মেসেজ করে দেয়,
“অল ডান!”

অপরদিকে নাহিদ সিলেটে নিজের বেডরুমে বসে উচ্চস্বরে হাসছে। কিছুক্ষণ পর নিজে নিজেই হিসহিসিয়ে বলতে থাকে,

“আমি জানি মিস্টার শ্রাবণ, আপনি ইনোসেন্ট। কিন্তু আপনার আপনজনেরা জানবে আপনি ক্যারেক্টারলেস! এন্ড ইউর প্রেগন্যান্ট ওয়াইফ! উফ আর্শি! নিজের হাসবেন্ডের এমন অ*ন্তর*ঙ্গ ভিডিও যখন দেখবে, তখন তোমার রিয়াকশন কেমন হবে? আমার তো সামনাসামনি লাইভ সেটা দেখতে ইচ্ছে করছে। কী করব? কী করব?”

নাহিদ আবার উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করে। এই সময় নাহিদের আচরণ দেখে যে কেউ বলবে নাহিদ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। হিং*স্র হয়ে উঠেছে সে।

________

আর্শি সকাল থেকে খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে। তাদের অ্যাপার্টমেন্টের বাহির থেকে সব বরফে আবৃত। ভার্সিটিতেও আজ ক্লাস কম। দুপুরে ওরা সবাই বাঙালি রেস্টুরেন্টে খিচুড়ি ও গো*শ*ত ভুনা খেতে এসেছে। মোনা, লিসা, হ্যারি, পিটার এরা সবাই বিদেশি হয়েও আর্শি ও সোহার সাথে বাঙালি খাবার খুব মজা করে খায়। হ্যারি একটু ঝাল কম খায়। তাই সে ঝোল কম নেয়। বাকিরা ভালোই ঝাল খেতে পারে। ওরা ছয় জন খুব আনন্দে সময়টা পার করলো। বিকেলে এই রেস্টুরেন্টেই মমো খেতে আসবে। এখন ভার্সিটিতে গিয়ে ল্যাবের কাজ করবে।

সন্ধ্যা হতেই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আর্শি নিজের ফোন চেক করে হতাশ হয়। শ্রাবণ বলেছিল আজ তার অফিস নেই। তাহলে একবারও কল করলো না। বিকেলে বেরোনোর আগে আর্শি চেক করেছিল, শ্রাবণ অনলাইনে নেই। মেসেজ করেছিল, সেটাও সিন করেনি। আর্শি একটা আপেল খেতে খেতে সোহাকে বলে,

“তোর জিজু আজ আমাকে ভুলেই গেছে। গতকাল রাতে কতো সতর্কতা বাণী শুনিয়েছিল। অথচ আজ একটা বারও কল, মেসেজ কিচ্ছু না!”

সোহা মজা করে বলল,
“এই? ভাইয়ার আবার অ্যা*লকোহ*লের নে*শা আছে নাকি? বললি তো, কাল নাকি পার্টি ছিল।”

আর্শি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলে,
“আরে না! উনার এসবের নে*শা নেই। ভার্সিটিতে থাকতে সি*গারে*টের নে*শা হয়েছিল। আমার ভাইয়েরও। ওরা তো আমাদের বাড়িতেই বেশি আড্ডা দিতো। তো আমি একদিন ভাইয়ার রুম গুছাতে গিয়ে খাটের দেয়ালের সাইডের কর্ণারে সিগরেটের একটা অংশ পেয়েছিলাম। তারপর সেই নিয়ে যা কান্ড! উনার পরিবার, আমার পরিবার মিলে এমন ধো*লাই দিলো যে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। উনাদের তখন টাকা গুনে গুনে দিতো। যাওয়ার ভাড়া, আসার ভাড়া। আর খাওয়ার জন্য বাসা থেকে খাবার দিতো। তুই বল, ছেলে মানুষকে এভাবে কেউ টাকা দেয়? এই অত্যা*চা*রে বেচারারা সি*গরেট ছেড়েছে। এরপর কলিও বলল যে ভাইয়া আর সি*গরেট খায় না।”

সোহা বলল,
“তাহলে তো ভালোই। তবে পার্টির ব্যাপার তো। ভুল বশতও খেয়ে ফেলতে পারে। তুই এইসব চিন্তা করিস না। আজ তো আঙ্কেল-আন্টিদের ফ্লাইট। পাশের ফ্লাটটা একটু ক্লিন কি করাবি না?”

“তাই তো! ক্লিনার আন্টিকে কল করে বলতে হবে। কাল সকাল সকাল যেন এসে ক্লিন করে দিয়ে যায়। আর পিটার না বলেছিল, দুইটা ম্যাট্রেসের ব্যাবস্থা করে দিবে।”

“মনে করা পিটারকে।”

আর্শি পিটারকে কল করে।

________

শ্রাবণ সকাল থেকে এখন দুপুর, নিজের রুম থেকে বেরোয়নি। ফোনও অফ করে রেখেছে। তার খুব ভয় হচ্ছে। এসব আর্শি জানলে? শ্রাবণের আরেক ফ্ল্যাটমেট গ্রিণ এসে লাঞ্চের জন্য ডেকে গেছে। কিন্তু শ্রাবণের হুঁশ নেই। এভাবেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল। শ্রাবণের হাঁসফাস লাগছে। সে বেঁহুশ অবস্থায় একটা মেয়ের সাথে অন্যায় করেছে, এটা যতোবার ভাবছে ততোবার নিজেকে জঘন্যতম মানুষ মনে হচ্ছে তার। অনেক সাহস করে সে ফোন হাতে নিয়ে আর্শিকে কল করলো। আর্শি ল্যাপটপে রিসার্চের টপিকের সার্চ করছিল, শ্রাবণের কল আসাতে ল্যাপটপ অফ করে বসলো। রিসিভ করে নিজেই প্রথমে বলল,

“কাল পার্টিতে বুঝি অনেক টায়ার্ড হয়ে গেছিলেন? সারাদিনে আপনার কোনো খোঁজ নেই?”

শ্রাবণ ঢোক গিলে ভাঙা স্বরে বলল,
“আর্শি.. আমি..”

শ্রাবণের কণ্ঠে অস্বাভাবিকতা বুঝতে পারে আর্শি। সে চিন্তিত হয়ে শুধায়,
“কী হয়েছে? আপনার কণ্ঠস্বর এমন শোনাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ আপনার?”

শ্রাবণের এখন অসহ্যরকমের কষ্ট হচ্ছে। ভয়ও হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে, আর্শি তাকে ছেড়ে চলে যাবে। সে লয়াল হতে পারেনি। এসব ভাবনা গুলো তার মস্তিষ্ককে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আর্শি জবাব না পেয়ে ফের জিজ্ঞাসা করে,

“শ্রাবণ, কী হয়েছে? কথা বলছেন না কেন?”

শ্রাবণ এবার আকুল স্বরে বলে,
“তুমি আমায় ভালোবাসো তো? সব পরিস্থিতিতে আমার সাথে থাকবে তো?”

আর্শি অবাকের সাথে বিভ্রান্তও হয়। জবাবে বলে,
“অবশ্যই ভালোবাসি। আপনি এভাবে বলছেন কেন? কিছু হয়েছে? অফিসের ঝামেলা?”

“তুমি সবসময় আমার সাথে থাকবে সেটা বলো।”

আর্শি বুঝতে পারছে না, শ্রাবণ এরকম কেন করছে। শ্রাবণকে শান্ত করতে বলে,
“আমি আপনার সাথেই তো আছি। বাহ্যিকভাবে দূরে হলেও মানসিক ভাবে আমরা কাছে। এখন আপনি বলুন, আপনি এমন করছেন কেন?”

শ্রাবণ হড়বড়িয়ে বলে,
“কিছুনা! কিছুনা! আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”

“জানিতো। আপনি আমাকে নিয়ে এই ভয় পাওয়াটা কমান তো। এতো চিন্তা করতে আছে? কালই তো আব্বু-আম্মু, ভাইয়া ও কলি আসবে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।”

শ্রাবণ ভীতু স্বরে ফের শুধায়,
“যদি কোনোদিন জানো, আমি মানুষটা ভালো না। তখন কি আমায় ছেড়ে যাবে?”

আর্শির এবার আরও চিন্তা হচ্ছে। শ্রাবণকে এভাবে কথা বলতে সে আগে শোনেনি। আজকের ব্যাবহার স্বাভাবিক না। আর্শি বলে,
“সময় কাকে কোথায় এনে দাঁড় করায় তা কেউ জানেনা। আমিও জানিনা। তবে আপনার সম্পর্কে না জেনে তো আমি বিয়েতে রাজি হইনি। আর বারবার ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন কেন? নিজেকে এমন ভাবে রাখুন যাতে এই প্রশ্নটাই আপনার মনে না আসে। আপনার কথাবার্তাতে কেমন ভীতু ভাব শোনা যাচ্ছে। কিছু হয়েছে? বলুন না। শেয়ার করলে হালকা হতে পারবেন।”

শ্রাবণ একটু সময় নিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। অতঃপর বলে,
“আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। ঘুমাব। তুমি চিন্তা করো না। একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে তোমাকে কল করেছিলাম।”

“ওহ আচ্ছা। খারাপ স্বপ্ন দেখলে তিনবার ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পড়বেন। তাহলে এই স্বপ্ন আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (মুসলিম, হাদিস: ২২৬২)”

“হুম। রাখছি। তুমি টেনশন করো না। এভরিথিং ইজ ফাইন।”

আর্শি নিরবে হাসলো। শ্রাবণও কল ডিসকানেক্ট করে কিছুক্ষণ বসে থেকে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে অজু করতে গেলো।

_______

পরের দিন আর্শির বাবা-মা, ভাই-ভাবি সবাই এসে পৌঁছেছে। সবাইকে দেখে আর্শি অনেক খুশি। মিসেস আশালতা মেয়ের জন্য দেশ থেকে এতো এতো খাবার, আচাড়, নাড়ু, শীতের পিঠা বানিয়ে এনেছেন। সেসব এখন লাগেজ থেকে বের করছেন। জামা-কাপড় বলতে শীতের পোশাক দুয়েকটা আর নিত্যদিনের পড়নের কাপড় এনেছেন। এখান থেকে যা লাগে কিনে নিবেন বলে বেশি কাপড় আনেননি। মোনা, লিসা, সোহাকেও মিসেস আশালতা নিজের মেয়ের মতো আদর করে পিঠেপুলি খেতে দিয়েছেন। পুরো অ্যাপার্টমেন্টে যেন উৎসবের আমেজ। মিসেস আশালতা, হ্যারি ও পিটারকেও ফোন করে আসতে বলেছেন। এই ভিনদেশে এরাই তো তার মেয়ের সুখ-দুঃখের সঙ্গী।

ওদিকে নাহিদ A*I এর মাধ্যমে ইরিনা ও ইরিনার বয়ফ্রেন্ডের ক্লিপ এ*ডিট করে শ্রাবণকে বসিয়ে দিয়েছে। ভি*ডিওটা দেখে খালি চোখে একদম রিয়েল লাগছে। আপ*ত্তিকর অংশগুলো ইরিনার বয়ফ্রেন্ড ব্লার করেই পাঠিয়েছে। নাহিদ এডিট করা ভিডিওটা প্লে করে সব ঠিক কীনা চেক করে নিলো। আরও দুয়েকদিন পর এটা আর্শির কাছে পৌঁছাবে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-৩১+৩২

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩১
ইটালিতে এখন প্রায় গভীর রাত। বাহিরে বেশ হাওয়া বইছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে। বারান্দার দরজা খোলা রেখে আর্শি বিছানার সাথে গা এলিয়ে শ্রাবণের ফোনের অপেক্ষা করতে করতে কখন যে তার চোখ লেগে গেছে খবর নেই। শ্রাবণকে কল করেছিল একবার, রিং বেজেছে কিন্তু রিসিভ হয়নি। আর্শি জানে, শ্রাবণ ফোন সাইলেন্ট করে রাখে। তাই বারবার কল করেনি। দেখলে নিজেই কলব্যাক করবে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলে ঘুম ছুটে যায় আর্শির। তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নিয়ে দেখে শ্রাবণে ভিডিও কল। আর্শি বিছানা ছেড়ে ডাইনিং রুমে এসে কল রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করতে দেরি শ্রাবণের হড়বড়িয়ে বলা কথাগুলো কানে আসতে দেরি হয় না আর্শির! শ্রাবণ বলে,

“ইজ ইট ট্রু? তুমি রিয়েলি প্রেগন্যান্ট? আর ইউ ট্রায়িং টু প্র্যাংক উইথ মি?”

শেষোক্ত কথাটা আর্শির মন খারাপ করে দেয়। কণ্ঠস্বরে মন খারাপের রেশ ধরেই বলে,
“আপনার কেন মনে হয় আমি আপনার সাথে প্র্যাংক করব? আমি কি এটুকু বুঝি না, কোনটা সিরিয়াস ম্যাটার আর কোনটা ফানি ম্যাটার? টেস্টের রিপোর্ট সহ আপনাকে দিলাম, তারপরও যদি আপনার কাছে এটা ফানি মনে হয়! দ্যান আই হ্যাভ নো ওয়ার্ড টু সে ইউ। যখন বিশ্বাস হবে তখন কল করবেন। বায়!”

শ্রাবণ তাড়াহুড়া করে বলে,
“আরে শুনো তো! রাগ করছো কেন? আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তাছাড়া তুমি আমি দুজনেই এখন পড়ালেখা, জব নিয়ে বিজি। বাট দ্যা মেইন ফ্যাক্ট ইজ, বর্তমানে আমরা দুইজন দুটি ভিন্ন দেশে থাকি। এমনকি আমাদের সাথে আমাদের পরিবারও নেই। তুমি আমার কনসার্নটা বুঝতে পারছ না।”

“বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তো আর ইচ্ছে করে বেবি নেইনি।”

শ্রাবণ মুখে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ক্লান্তিকর স্বরে বলে,
“ফরগেট ইট! কী করবে এখন?”

শ্রাবণের প্রশ্নের বিপরীতে আর্শিও পালটা প্রশ্ন করে,
“আপনি কী করতে বলছেন? এমন কোন কথা বলে বসবেন না, যেটার পর আমি আপনার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিব!”

শ্রাবণ বিস্মিত স্বরে বলে ওঠলো,
“আমার কথা শুনলে তুমি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে? তুমি এটা বলতে পারলে?”

“হ্যাঁ পারলাম। শ্রাবণ, আপনার কি মনে হচ্ছে না আপনি দিনকে দিন বদলে যাচ্ছেন? আপনি বাবা হতে চলেছেন, শ্রাবণ! কিন্তু আপনার মধ্যে সেটার কোনো উচ্ছাসতা নেই। আমি প্রথম থেকেই একটা বিষয়ে লক্ষ্য করেছি, আপনার মন মতো সবকিছু হলে সব ভালো। আপনার মন মতো একটা কিছু না হলে, কিছুই ভালো না। ইটস আওয়ার বেবি। আমি যদি সাহস করতে পারি, নিজের খেয়াল রাখতে পারি। তাহলে আপনি কেন ভয় পাচ্ছেন?”

“তুমি বুঝতে পারছ না…”

শ্রাবণকে কথা শেষ করতে দিলো না। ফোন কেটে আর্শি ইন্টারনেট অফ করে সেখানেই নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। নিজে নিজেই স্বগোতক্তি করছে,
“বেবিতো আমিও এতো জলদি চাইনি। তাই বলে কি এখন…! উনি এটা মিন না করলেও পারতো। আরিয়াও তো প্রেগন্যান্ট। আশিক তো কতো খুশি। উনি কেন খুশি হতে পারলো না?”

কিছুক্ষণ নিরবে মন খারাপ করে থেকে পানি খেয়ে রুমে চলে গেলো। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শ্রাবণ বেবি না চাইলেও সে মানবে না। সকালে শ্রাবণের বাবা-মাকে কল করবে। যা বলার উনারাই বলুক।

________

পরেরদিন, শ্রাবণ অফিসে চিন্তিত হয়ে বসে আছে। নিজের ডেস্ক থেকে ইরিনা ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে। তারা একসাথে কয়েকজন একটক প্রজেক্টে আছে। প্রজেক্টের কাজ শেষই প্রায়। ফাইনাল রিপোর্টটা জমা দিবে। প্রজেক্টটাতে তাদের প্রায় বিশ দিনের মতো লেগেছে। এই কয়েকদিনের ভিতর শ্রাবণকে কখনো আজকের মতো উদাস ও চিন্তিত দেখেনি ইরিনা। ইরিনা শ্রাবণের কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বলে,

“হেই শ্রাবণ, হোয়াট হ্যাপেন্ড? ইউ লুকিং টেনসড। এনিথিং রং?”

শ্রাবণ ইরিনার দিকে একবার তাকিয়ে কম্পিউটারে স্থির ডাটাবেজের শিটটার দিকে চেয়ে বলে,
“নো, আই অ্যাম ফাইন।”

“ডোন্ট হেজিটেট। প্লিজ টেল মি, হোয়াট হ্যাপেন্ড? ইউ নো? শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং? হোয়েন ইউ শেয়ার ইউর প্রবলেম, ইউ উইল ফিল বেটার।”

শ্রাবণ উঠে দাঁড়ালো। তারপর বলল,
“কফি?”

“ইয়াহ শিউর।”

দুজনে অফিস থেকে বেরিয়ে একটা কফিশপে যায়।

_____

এদিকে শ্রাবণের বাবা-মা বেজায় খুশি। তাঁরা দাদা-দাদী হবেন। উনারা তো চাইছেন, ইটালি গিয়ে আর্শির সাথে কিছুদিন থেকে আসবেন। কিন্তু শ্রাবণের অসন্তুষ্টির কথা শুনে মিসেস সন্ধ্যা বললেন,

“শোনো, তুমি একদম শ্রাবণের কথায় মন খারাপ করবে না। ও হয়তো টেনশনে আছে। দুইদিন ওর সাথে কথা না বলে দেখো, একদম লাইনে চলে আসবে। আর তুমি কিন্তু ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করবে। হেলদি খাবার খাবে। যদিও জানি, তুমি হেলদি খাবারই খাও। আর রাত জাগবে না। আমার ফা*জিল ছেলের জন্যও রাত জাগবে না।”

আর্শি মৃদু হেসে বলে,
“জি মা। আমি নিজের খেয়াল রাখব। তাছাড়া আমার তিনজন রুমমেটও অনেক কেয়ারিং। তাছাড়া হেলেনা আন্টি, মানে আমার ফ্রেন্ড হ্যারির মা আজ সকালেই আমাকে দেখতে এসেছিলেন। সাথে করে নিজে রান্না করে কতোকিছু নিয়ে এসেছেন। তাই আপনারা চিন্তা করবেন না।”

শ্রাবণের বাবা বলেন,
“আমার ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করবে না। ওর জন্য ওর বাপই যথেষ্ট। দিনকে দিন একরোখা হয়ে গেছে। ফোন করে ওকে ধো*লাই দিতে হবে।”

মিসেস সন্ধ্যা ফোড়ন কে*টে বললেন,
“তুমি কিছুই বলতে পারবে না! তোমার মুখ দিয়ে কথা বেরোয়? নিজে একরোখা কম? ও-কে তো আমি শায়েস্তা করব। আর আর্শি মা, তুমি খালি নিজের খেয়াল রেখো। পড়াশোনাটাও মন দিয়ে করো।”

“জি মা।”

“তাহলে রাখি এখন। তোমার তো ক্লাস আছে।’

“আজ আর নেই। এখন অ্যাপার্টমেন্টে ফিরব।”

“সাবধানে যাও।”

অতঃপর সালাম বিনিময় করে ফোন কা*টে আর্শি। পাশে বসা সোহা বলে,
“এখানকার এক রেস্টুরেন্টে ফুচকা পাওয়া যায়। যদিও টেস্টে বাংলাদেশের ফুচকার মতো হবে না। দই ফুচকা, মিষ্টি টকের ফুচকা। খেয়ে আসি চল। শুনেছি নতুন আইটেম হিসেবে ফুচকাটা যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশি ওয়েটারও বেশি সেখানে। যাবি?”

আর্শি ভেবে দেখলো, প্রস্তাবটা মন্দ না। অতঃপর মোনা, লিসা, হ্যারি ও পিটারকেও জানালো। তারপর ছয় জন মিলে সেখানে গেলো।

_______

রাত থেকে ইরিনা খুব ভয়ে আছে। তার কাছে একটা মেইল এসেছে। যদিও মেইল আইডিটা সে ট্র্যাক করতে ব্যার্থ হয়েছে। মেইলটাতে এমন লিখা ছিল যে, সে যদি শ্রাবণকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে ফাঁ*সাতে পারে, তবে বিনিময়ে সে পঞ্চাশ হাজার কানাডিয়ান ডলার পাবে। ইরিনা তাই খু্ব ভয়ে আছে। টাকার প্রতি তার লোভ নেই। কারণ সে জব থেকে যা বেতন পায় তা দিয়ে তার বেশ ভালো ভাবেই চলে যায়। তার উপর পরিবারেরও টেনশন নেই। সে এতিম। ইতোমধ্যে কিছুদিন আগে সে এনগেইজড হয়েছে। ছয় মাস পর তার বিয়ে। তাহলে তাকে কেন এরকম বাজে কাজের অফার দেওয়া হচ্ছে? নাকি চাকরিক্ষেত্রে নতুন এমপ্লয়ি হিসেবে কেউ তার সাকসেসে ঈর্ষান্বিত? এজন্য তাকে ফাঁ*সাতে জাল পেতেছে? কথাটা সে তার ফিয়ন্সেকে শেয়ার করলে তার ফিয়ন্সেও তাকে একই কথা বলেছে এবং এসব থেকে দূরে থাকতে বলেছে।
ভয় থেকে ইরিনা কাজে একটা ভুলও করে ফেলেছে। তখন ইরিনার ফিয়ন্সে ওর কাছে এগিয়ে আসে। ইরিনার ফিয়ন্সে ইরিনার কলিগ। সে এসে বলে,

“রিল্যাক্স ইরিনা, কনসানট্রেট ইন ইউর জব। স্টপ ওভারথিংকিং। ফোকাস ইন ইউর ওয়ার্ক।”

ইরিনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।

অপরদিকে নাহিদ ইরিনার উত্তরের অপেক্ষা করছে। যদি রাজি না হয় তবে টাকার এমাউন্ট আরও বাড়িয়ে দিবে। কিন্তু কাজটা তার করাতেই হবে। আর্শির প্রেগনেন্সির খবরটাতে নাহিদকে আরও ক্ষে*পিয়ে তুলেছে। সবাই নিজেদের লাইফে খুশি, শুধুমাত্র সে ছাড়া। এটাই সে কোনো ভাবে মেনে নিতে পারছে না।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩২
আজ তিন দিন শ্রাবণ আর্শির কণ্ঠস্বরও শুনতে পারছে না। মূলত আর্শি শ্রাবণের কল রিসিভ করছে না। শেষমেশ শ্রাবণ আরিয়াকেও ফোন করেছে আর্শিকে মানানোর জন্য। কিন্তু শ্রাবণ বাচ্চা রাখতে রাজি না। আরিয়া শ্রাবণকে বুঝাতে চেয়েও পারেনি। উলটো বলছে, আর্শি বাচ্চা রাখতে চাইলে দেশে ফিরে যাক! এসব আরিয়া আর্শিকে জানালে আর্শি রেগে নিজেই শ্রাবণকে কল করে। শ্রাবণ তখন অফিসে। কিন্তু কাজে খুব একটা মন নেই। বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। ফোন সাইলেন্টও করেনি। আর্শি কল আসাতে সাথে সাথে রিসিভ করে। প্রথমে আর্শিই রুক্ষ স্বরে বলে,

“আপনি কি জানেন, শুধু ভালোবাসা দিয়ে পুরো জীবন চলে না। মিউচুয়াল রেসপেক্ট থাকতে হয়। কিন্তু আমার জন্য আপনার মনে কোনো রেসপেক্ট নেই। আমি মানুষ। কোনো বস্তু না যে, আপনার মনমতো চলব! আমারও কিছু ইচ্ছে, কথা আছে।”

শ্রাবণ বুঝে গেছে কালকের আরিয়ার সাথের কথাগুলো আর্শি জেনেছে। সে নিজের পক্ষে বলে,
“আমি তোমার ভালোর জন্য বলছি। তোমার জন্য আমি, তোমার বাবা-মা, ভাই-বোন, আমার বাবা-মা সবাই চিন্তা করবে। তুমি এটা বুঝতে পারছো না?”

আর্শি চোখ বন্ধ করে ঘন নিঃশ্বাস ছাড়লো। অতঃপর শান্ত স্বরে বলল,
“আমি ছোটো বাচ্চা না, শ্রাবণ! আপনি আমার ফ্রেন্ডদেরকে বিশ্বাস করেন না, ইটস অকে। আমি তো করি। আমি আর ৭-৮ মাস ইটালিতে থাকব। তারপর দেশে ফিরেই যাব। আর থিসিসের কাজ আরও আগে শেষ হলে আরও জলদি ফিরতে পারব। তাই বলে আপনি আমাকে এমন অযৌক্তিক শর্ত দিতে পারেন না। বাচ্চা আমি ক্যারি করব, তাই এখানে আমার মতামতটা বেশি প্রায়োরিটি পাবে। সবসময় আপনার ইচ্ছে, মতামত আমার উপর চাপাতে পারেন না।”

“তাহলে তুমি শুনছো না? বেবি রাখবেই?”

“হ্যাঁ, বেবি রাখব আমি।”

“ঠিক আছে। ওই কথাই রইল! থাকো তুমি তোমার মতো!”

অতঃপর শ্রাবণ ফোন কেটে দিলো। আর্শি নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে। শ্রাবণ শেষে এটা কী বলল? কী বুঝাতে চাইলো? আর্শির মস্তিষ্ক কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কেমন এলোমেলো সব। পাশ থেকে সোহা আর্শিকে আগলে নিয়ে বলে,
“তুই অতো চিন্তা করিস না। এমন কিছু ছেলে আছে যারা তাড়াতাড়ি বাচ্চা চায় না। মূল কারণ হচ্ছে ওরা চায় বউয়ের সাথে রো*মান্টিক মূহুর্ত যাতে নষ্ট না হয়। আমার ফ্রেন্ড অনার্স থার্ড ইয়ারে বিয়ে করেছিল। গ্রাজুয়েশনের আগ পর্যন্ত তো ও তেমন চিন্তাও করেনি, কিন্তু যখন গ্রাজুয়েশনের পর ওর হাসবেন্ড বেবি নিতে চাইতো না। বেবি নেওয়ার কথা বললেই রাগারাগি করতো। অথচ ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও-কে প্রেশার দিচ্ছিল। এই চার মাস আগে ও কনসিভ করেছে। মূলত ও ওর হাসবেন্ডের বিরুদ্ধে গিয়েই বেবি নিয়েছিল। প্রথমদিকে ওর হাসবেন্ড তেমন খুশি ছিল না। তবে এখন নাকি ওর কেয়ার করে। দেখবি ভাইয়াও কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। তোদের বিয়েরও তো বেশি সময় হয়নি।”

আর্শি বিপরীতে কিছু বলল না। তার কিছু ভালো লাগছে না। মন খারাপের রেশ নিয়ে রুমে গিয়ে জানালার ধারে বসলো। লিসা আজ মাথাব্যাথার কারণে জলদি ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু আর্শির ঘুম আসছে না। শ্রাবণের কথা শুনে এখন তারও মাথা ধরছে। কড়া করে কফি খেতে চাইলো কিন্তু বেবির কথা চিন্তা করে সেটাও বাদ দিতে হলো। নিজে নিজেই বলতে থাকে,

“অভাগা যেদিকে যায় সাগর সেদিকেই শুকায়! এমনও তো আমি চাইনি। তাও আমার সাথেই এসব হয়।”

চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ থাকতে চাইলেও এসব চিন্তাই ঘুরেফিরে তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তাই অবশেষে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে একটা বই নিয়ে বসলো। এখন তাকে খুশি থাকতে হবে। মন খারাপ করলেও বেবির উপর এফেক্ট পড়বে।

_______
দেখতে দেখতে আরও কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেছে। আজ ইটালিতে রাতভোর লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। আর্শি ফজরের নামাজ পড়ে আধো উষালগ্নের সূচনার সময় হালকা পাতির লেবুচা করে নিয়ে ব্যালকনিতে বসেছে। তার আগে খালিপেটে দুইটা খেঁজুর ও পানি খেয়েছে। ভোরের স্নিগ্ধ সময়টা তার খুব ভালো লাগছে। হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও আজ তার ভালো লাগে। কী আশ্চর্য! কাউকে ভালোবাসলে, তাকে প্রতিনিয়ত মনে করলে বুঝি তার পছন্দের সবকিছু নিজের অজান্তেই ভালো লাগতে শুরু করে? যদি সেটা নিজের অপছন্দ হয়! তবুও? চা খেতে খেতে ব্যালকনির গ্রিলের বাইরে হাত গ*লিয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখলো। তৎক্ষণাৎ তার সমস্ত কায়াতে যেন অদৃশ্য বিদ্যুৎ খেলে গেল।
গতকাল রাতেই তার শ্রাবণের সাথে কথা হয়েছে। শ্রাবণ এতোদিনে আর্শিকে বুঝতে পেরেছে। খুশি হয়েছে। যদিও নৈপথ্যে তিনটি মানুষের অবদান ছিল। আদিব, কলি ও ইরিনার। আদিব ও কলি নিজেদের বিয়ের রাতে বাসর ঘরে বসে নিজেদের বন্ধুদের ভালোর কথা ভেবেছে। আদিব শ্রাবণকে ফোনযোগে বুঝিয়েছে। ওদিকে কানাডায় ইরিনাও বুঝিয়েছে। অবশেষে তাঁরা সফলও হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আদিব অফিস থেকে পনেরো দিনের ছুটি নিয়ে পুরো পরিবারে ইটালিতে বেড়াতে যাবে। আদিব ও কলি ইটালির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। আর আর্শির বাবা-মা এক মাস বড়ো মেয়ের কাছে থাকবে। আর্শি শুধু চাইছে, এই দিনগুলো জলদি চলে যাক। তার বাবা-মা জলদি তার কাছে চলে আসুক। তার মনও তো এই সময় মাকে কাছে চায়।

______

আরিয়া মিসেস নেহার কোলে মাথা রেখে আচাড় খাচ্ছে। মুশফিকা বারবার নিষেধ করছে এতো আচাড় না খেতে, কিন্তু আরিয়া কি শোনে? তার ভাইয়ের বিয়ের সব অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে গত তিন দিন আগে। আজই সে মায়ের বাড়ি থেকে এখানে এসেছে। সামনে সেমিস্টার ফাইনাল। এখন কুইজ, এসাইনমেন্টের বাহার চলছে। আরিয়ার এসাইনমেন্ট অবশ্য সে নিজে করবে না। আশিক করে দিবে। আরিয়া শুধু মুখস্থ করে যাবে। মিসেস নেহা আরিয়াকে শুধায়,

“হ্যাঁ রে, তোর বোনের কী অবস্থা? মেয়েটা সেখানে একা থাকে।”

আরিয়া আচাড় খেতে খেতেই জবাব দেয়,
“এখন আপু খুব ভালো আছে। শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে সব স্বাভাবিক। আর বারো-তেরো দিন পর আব্বু, আম্মু, ভাইয়া, ভাবি সবাই যাবে। আমারও যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছি কই? পরীক্ষাটার জন্য পারছি না।”

“তোরই তো কিছুদিন পর পাঁচ মাস হবে। তুই কীভাবে যাবি?”

“এমনিই যেতাম। সবাই যেভাবে যায়!”

তখন আশিক তার খালামণির রুমে এসে বলে,
“খালামণি, তুমি ওর সাহস জানো না! সত্যি সত্যি সেমিস্টার ফাইনাল না থাকলে যেতে জেদ করতো!”

আশিক আসতে আসতে কথা কিছু শুনেছিল। আরিয়া মুখ ফুলিয়ে বলে,
“বেশি কথা বলো তুমি! যাও এসাইনমেন্ট করো!”

“হ্যাঁ তাই করি! শুকরিয়া করো যে সব এসাইনমেন্টের গ্রুপ আমি তোমার সাথে করেছি। নয়তো কীভাবে করতে?”

“কেন? তোমারগুলোও তুমি করতে, আমারগুলোও তুমি করতে। সিম্পল!”

“তা তো বুঝাই যাচ্ছে। ভাগ্যিস! পরীক্ষাগুলো তুমি নিজেই দিবে!”

আরিয়া এবার উঠে বসে নালিশ করার সুরে মিসেস নেহাকে বলল,
“দেখো, খালামণি, তোমার এই ছেলেকে কিছু বলো। একটু এসাইনমেন্টে আমার টপিকগুলোও সে করছে বলে প্রতিনিয়ত কথা শুনাচ্ছে। আমি যে তার বাচ্চাকে একা পেটে নিয়ে বেরাচ্ছি! আমি কি বলেছি, তুমিও অর্ধেক নাও?”

আরিয়ার কথা শুনে মিসেস নেহা, আশিক, মুশফিকা সবাই হেসে ওঠলো! আর আরিয়া রাগ করে দুইটা আচাড়ের বয়াম নিয়ে হনহনিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে যাচ্ছে। পিছন থেকে আশিক বলতে বলতে আসছে,

“আস্তে হাঁটো! পড়ে যাবে তো। তোমার আচাড় কেউ খাবে না।”

আরিয়া তো শোনার পাত্রী নয়। সে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। আশিক দরজা নক করে,
“আরে আমি এসাইনমেন্ট করছিলাম তো। দরজা খুলো।”

অতঃপর আরিয়া দরজা খুলে ল্যাপটপটা আশিকের হাতে ধরিয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দিয়েছে! বেচারা আশিক হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে।

________

নাহিদ এখন সিলেটে আছে। সে বাড়িতে খুব কম থাকে। সিলেটের বাবার কম্পানির ব্রাঞ্চে বেশি সময় দেয়। সেই সাথে নিজের শেয়ার করা কম্পানিতেও। তার ইটালি যাওয়াটাও কিছু কারণে পিছিয়েছে। ওদিকে ইরিনাও তার প্রস্তাবে রাজি হয়নি। তাই সে নতুন প্ল্যান করতে সময় নিচ্ছে। ইদানীং তার নিজেকে শান্ত রাখতে হাই ডো*জের মে*ডিসিন নিতে হচ্ছে। হাই ডো*জের ঘুমের ঔ*ষুধ নিয়েও তার ভালো ঘুম হয় না। তার কাছে মনে হয়, সে সবচেয়ে বড়ো ফেইলর। তার জিততে হবে। সবাই তাকে হারিয়ে দিচ্ছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৯+৩০

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৯
আশিক নিজেকে সামলে নেয়। তারবর আরিয়াকে ওই অবস্থাতেই আগলে নিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে দরজা লাগায়। অতঃপর আরিয়াকে সোজা করে দাঁড়া করিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেসা করে,

“কী হয়েছে, আরু? তুমি হঠাৎ এরকম করছো কেন? কেউ কি কিছু বলেছে?”

আরিয়া মাথা নিচু করে না বোধক মাথা নাড়িয়ে চুপ করে আছে। তাতে যেন আশিকের চিন্তা আরও বাড়লো। সে আরিয়ার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ উঁচু করে ফের শুধায়,
“কী হয়েছে বলো না? তুমি এমন চুপ করে থাকলে তো আমার চিন্তা বাড়বে।”

আরিয়া বেড সাইড টেবিল থেকে প্রেগনেন্সি কিটটা এনে আশিকের হাতে দেয়। আশিক কিটটা দেখেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার চোখ-মুখের অবস্থা দেখে আরিয়া ধারণা করতে পারছে না, আশিকের মনে কী চলছে? আরিয়া বিছানায় বসে বলে,

“আমরা দুজনেই এখনও স্টুডেন্ট। বিয়েটাও হয়েছে একটা কাহিনীর মাধ্যমে। তুমি বিয়ের জন্যও প্রিপেয়ার ছিলে না, এখন নিশ্চয়ই বাচ্চার জন্যও প্রিপেয়ার না। সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ না, আমি জানি। আমি নিজেও বুঝতেছি….”

আরিয়ার কথার মাঝেই আশিক বলে উঠে,
“কতো কিছু গুছাতে হবে। তোমাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। এই তুমি বাড়ি এসে কিছু খেয়েছ? চোখ-মুখ ফ্যাকাশে লাগছে।”

আরিয়া অবাক হয়ে আশিকের মুখপানে চেয়ে আছে। আশিক তবে মেনে নিলো? আরিয়াকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে আশিক এগিয়ে আসলো। অতঃপর হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে আরিয়ার গালে হাত দিয়ে বলল,

“টেনশনে খাওনি তাই না? একটু বসো, আমি খাবার নিয়ে আসছি। এই সময় এতো কেয়ারলেস হলে হয়? একটু নিজের খেয়াল রাখতে হবে তো। তুমি একটু রাখবে, বাকিটা আমি রাখব।”

বলতে বলতে আরিয়ার দুই গালে সামান্য বাচ্চাদের মতো টেনে দিয়ে উঠে গেলো। আরিয়া সেখানেই অবাক হয়ে বসে আছে। আশিক এতো সহজে মেনে নিবে তা নিয়ে তার সন্দেহ ছিলো। যতোই হোক, এখনও গ্রাজুয়েশন শেষ করেনি। অজান্তেই আরিয়া হেসে ফেলল। জলদি করে বিছানা থেকে ফোন উঠিয়ে নিজের মাকে কল লাগালো।

_____

আর্শি, সোহা ও লিসা অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেছে। সোহার মন খারাপ খুব। কারণ রিক আজ তাকে নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিট করিয়েছে! রিক বুঝতে পেরেছিল, সোহা তার প্রতি মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই সোহাকে বুঝাতে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে সাথে করে নিয়ে এসেছিল। সোহা এখন মন খারাপ করে ফ্রেশ না হয়েই একদিকে মুখ করে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। আর্শি ও লিসা ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারলো। লিসা বলল,

“সি রিয়েলি ব্রোকেন। টাইম উইল হিল হার।”

“ইয়াহ।”

দুজনেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। আর্শি কিনে আনা ফ্রোজেন ফুডগুলো ভাজতে কিচেনে যায়। রান্না করার এক পর্যায়ে আর্শির মনে পড়ে তার শাশুড়িকে কল করার কথা। সে লিসাকে ডেকে একটু রান্নার দিকটা দেখতে বলে কিচেন থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে যায় কল করতে। মিসেস সন্ধ্যা তখন নেটে না থাকাতে আর্শি ফিরে আসে। ভাবলো পরে কল করবে।

______

আরিয়ার প্রেগনেন্সির খবর শুনে মিসেস আশালতা বেজায় খুশি। তিনি তো এই রাতের বেলাতেই আরিয়ার শ্বশুরবাড়ি যাবেন বলে মনস্থির করেছিলেন। অতঃপর স্বামী ও ছেলের কথা শুনে আগামীকাল যাবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু এখন থেকেই মেয়ের পছন্দের সবকিছু রান্না করবেন বলে কাজে লেগে পড়েছেন।
আরিয়ার খবরটা পেয়ে মিসেস নেহা ও মিস্টার হাসানও বেশ খুশি। তারাও দাদা-দাদী হবেন। খবরটা এখনও অবধি নাহিদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। খাবার টেবিলে আরিয়া বাদে সবাই উপস্থিত। তখনি মিসেস নেহা কথাটা তুললেন।

“শোন আশিক, কাল একবার আরিয়াকে নিয়ে হসপিটালে ডাক্তার দেখিয়ে আসিস। সব নরমাল কী-না, কোনো কম্পলিকেশন আছে কী-না জানা যাবে।”

আশিক খেতে খেতে মাথা নাড়ায়। তখন মুশফিকাও বলে উঠে,
“মা, আমিও সাথে যাই? আশিক একা পারবে? প্রথমবার বলে কথা। দুজনেই নার্ভাস থাকবে। সাথে আরেকজন থাকলে ভালো হয় না?”

মিসেস নেহা খুশি হলেন। ইদানীং উনার কাছে মুশফিকাকে ভালোই লাগছে। স্বামীর বলা চরিত্রের সাথে এই মুশফিকার মিল দেখছেন না। মানুষ বদলায়, কথাটা তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বললেন,

“হ্যাঁ যাও। ওরা দুজনই ছোটো। এসব ব্যাপারে খুব একটা কিছু বুঝবে না। তুমি সাথে গেলে ভরসা পাবে।”

নাহিদ খেতে খেতে সবার দিকে একবার করে চোখ বুলাচ্ছে। সে সবার আরিয়াকে নিয়ে এতো কেয়ারের কারণটা ঠিক ভাবে ধরতে পারছে না। তখন মিস্টার হাসান বলে উঠেন,

“তুমিও সাথে যাও, নেহা। যাকে ভরসা করে পাঠাচ্ছো, তারও তো এসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই। তিনজনেই এসব বিষয়ে অনভিজ্ঞ। তুমি অভিজ্ঞ, সাথে গেলে আরও সাহস পাবে। বাড়িতে প্রথম নাতি-নাতনি আসতে চলেছে বলে কথা!”

নাহিদ এবার থমকালো। মুশফিকার দিকে তাকায় তো একবার মায়ের দিকে, তো আরেকবার আশিকের দিকে। মিস্টার হাসান সেটা লক্ষ্য করে বলেন,

“এভাবে তাকাচ্ছো কেন? তুমিও জেঠা হচ্ছো।”

নাহিদ অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“আরিয়া প্রেগন্যান্ট?”

মিসেস নেহা বললেন,
“হ্যাঁ। প্রেগনেন্সি কিট দিয়ে টেস্ট করে জেনেছে। কালকে মেডিকেল টেস্ট করলে একদম শিউর হওয়া যাবে।”

নাহিদ আবার খাওয়া শুরু করলো। তৎক্ষণাৎ কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। খাবার টেবিলে উপস্থিত সবাই কিছুটা অন্যরকম দৃষ্টিতে চাইলো। নাহিদের খাওয়া প্রায় শেষের দিকেই ছিল। সে খাওয়া শেষ করে উঠে যেতে যেতে আশিককে বলল,

“কংগ্রাচুলেশনস। বেস্ট অফ লাক।”

অতঃপর উপরে উঠে চলে গেলো। নাহিদ যেতেই মিসেস নেহা বললেন,
“ও মেনে নিতে শুরু করেছে। যাক ভালো লাগছে।”

মুশফিকা বাদে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও, মুশফিকা মনে মনে হাঁসফাস করছে। নাহিদের পরিকল্পনা তো সে জানে!

______

আর্শির কাছেও আরিয়ার খবরটা পৌঁছে গেছে। আরিয়াই কল করে বলেছে। আর্শি তো মহা খুশি। তার ছোট্টো বোনটা কী-না মা হতে চলেছে! তার খুশির তুলনা হয় না। আরিয়া কিঞ্চিত মন খারাপ করে বলে,

“আপু, ভেবেছিলাম আমি আগে খালা হবো। তোমার বাচ্চাকে নিয়ে কতো প্ল্যান ছিল আমার। কিন্তু দেখো তুমিই আগে খালা হচ্ছো। আর আমার খালা হওয়ার কোনো লক্ষণই আমি দেখতে পাচ্ছি না। এটা কি ঠিক বলো?”

আর্শি হেসে উঠলো। বলল,
“তোর দুলাভাই থাকে সুদূর কানাডায়। আর আমি থাকি ইটালিতে। তোর খালা হতে দেরি আছে।”

“তাই বললে হবে? তোমাদের এতো রোমান্টিক একটা হা*নিমু*ন ট্যুর ছিল। আর আমি খালা হবো না? নট ফেয়ার!”

আর্শি কিঞ্চিত রাগ দেখিয়ে বলল,
“চুপ! বড়ো বোনের সম্পর্কে এভাবে বলে? দিন দিন তুই ঠোঁ*টকা*টা স্বভাবের হয়ে যাচ্ছিস!”

আরিয়া সেসবে পাত্তা দিলো না। বলল,
“সে যাই হই। আমার ছেলের সাথে তোমার মেয়ের বিয়ে দিব! বুঝলে?”

আর্শি অবাক হয়ে বলল,
“তোর ছেলেই এখনও দুনিয়াতে আসলো না! আর তুই বিয়ের চিন্তা করিস! এই তুই ফোন রাখ। অনেক রাত হয়েছে।”

“না না। তুমি আগে বলো।”

“ঘুমা বোন। মানুষের ভাগ্য কি আমরা বলতে পারি? যা ভাগ্যে আছে হবে। ঘুমা। রাখছি।”

“আচ্ছা।”

আর্শি মুচকি হেসে বিদায় জানিয়ে কল কে*টে দেয়। বাংলাদেশে এখন রাত এগারোটা। তাহলে আজকে আর তার শাশুড়ি ও ননদের সাথে কথা বলা হলো না। এতো রাতে কল করাটাও নিশ্চয়ই ভালো দেখাবে না। তাহলে আগামীকাল সকালেই কল করবে। স্নিগ্ধা আপু কেন তার উপর রাগ, তা সে নিজেও জানে না। পূর্বে কোনো ভুল করেছে কী-না যে এর জন্য রাগ? তা তো তার জানতে হবে। ফুঁস করে ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে খানিক হাসলো। বোনের কথাগুলোই তার এই হাসির কারণ।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩০
দেখতে দেখতে প্রায় মাস খানেক সময় পেরিয়ে গেছে। আর্শির সাথে স্নিগ্ধার সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়ে গেছে। হয়েছে সেটাও শ্রাবণের বদৌলতে। নয়তো স্নিগ্ধা তো আর্শির সাথে কথা বলবে না! কিশোরী বয়সের ছোটো কিছু কথার জের যে স্নিগ্ধা মনে গেঁথে রেখেছে! সেটাও আর্শি ঘুণাক্ষরে টের পায়নি। ছোটো কিছু কথাই তো আর্শি বলেছিল,
“আপু, তোমার ভাই এতো ছ্যাঁ*চড়া কেন? আমাদের বাড়িতেই সারাক্ষণ পড়ে থাকে! আবার আমার সাথে বড়ো মুখ করে তর্ক করে! আমার যে বিরক্ত লাগে, সেটা কি তোমার ভাই বুঝে না? তোমার ভাইকে না করে দিবে। আমার এসব মোটেও পছন্দ না। ভাইয়ার অন্য ফ্রেন্ডরা তো এতো ঘন ঘন আসে না! আর যারা মাঝেমাঝে আসে, তারা আমাকে বিরক্তও করে না। যেমন সুমন ভাই, সুমন ভাইয়াও তো ভাইয়ার ছোটো বেলার বন্ধু। কই উনি তো আমাকে রাগায় না। তোমার ভাইটাই এমন কেন?”

আর্শি তখন স্কুলে পড়তো। কিশোরী বয়সে অনেক কিছুই চক্ষুশূল হয়। আর স্নিগ্ধা তখন এইচএসসি দিয়েছে। দুজনের মধ্যে তখন থেকেই সম্পর্কের অবনতির শুরু। কিন্তু এখন দুজনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই ননদ-ভাবির কথা হয়।

ইদানীং আর্শি শরীরও বেশ খারাপ করছে। ভার্সিটি থেকে ফিরে শরীর একদম নেতিয়ে যায়। ঘুমও বেড়েছে প্রচুর। খাওয়া দাওয়াতেও প্রচুর অনীহা। আর্শির এসব অসুস্থতার কথা শুনে মিসেস আশালতা ভীষণ চিন্তিত। উনি যা ভাবছেন, তা যদি হয় তবে ভীণদেশে তার মেয়েটা একা কীভাবে সামলাবে? এদিকে ছোটো মেয়েকেও নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন। আর কয়েকদিন পর ছেলের বিয়ে। উনার উপরও চিন্তার শেষ নেই। মিসেস আশলতা বললেন,

“কাল একবার ডাক্তারের এপোয়েনমেন্ট নিস।”

আর্শি মায়ের সাথে ফোনে কথা বলার সাথে সাথে শসার আচার ও লিসার বানানো চিকেন বিরিয়ানি খাচ্ছিলো। সকালে যে একবার বমি করে ভার্সিটিতে গিয়েছে সেটা আর মাকে বলেনি। এখন মায়ের কথা জবাবে বলে,

“আরে মা, একটু প্রেশারে আছি বলে শরীর খারাপ করছে হয়তো। ঠিক হয়ে যাবে। আর এখন তো খাচ্ছি।”

“তুই বুঝতে পারছিস না। একটু চেকআপ করিয়ে নিলেই বা কী হয়? না জেনে কোনো ঔষুধ কিন্তু খাবি না। শ্রাবণকে বলেছিস?”

মায়ের কথা শুনে আর্শির হাসি পেয়ে গেলো। সে বলল,
“তোমার মেয়ে জামাই ইদানীং অনেক ব্যাস্ত থাকে। কী একটা প্রজেক্টের কাজ পেয়েছে। ৫-৬ জন মিলে সেটা করছে। আর তুমি এমন ভাবে বলছো যেন আমি প্রেগন্যান্ট! তুমিও না, মা! আমার রিসার্চের লেখালেখিতে কিছুদিন যাবত রাত জাগতে হচ্ছে বলেই এমন হচ্ছে। তুমি তো জানোই, আমার ঘুম কত পছন্দের।”

মিসেস আশালতা তারপরও চিন্তিত। এরকম নজরআন্দাজ করাতো ঠিক না। তারপরও তিনি মেয়েকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু আর্শির খাওয়া শেষ হতেই আর্শি রিসার্চের লেখা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে বলে বেশি কথা বলা হয় না।

______

এদিকে নাহিদকে এতোদিন পর এতো খুশি দেখে মুশফিকাও খুশি হলো। কিন্তু সে মনে মনে সন্দিহান! নাহিদ এতো খুশি মানে নাহিদের মনে কিছু তো চলছেই। মুশফিকা কফি নিয়ে নাহিদের কাছে গিয়ে বসলো। অতঃপর কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলল,

“আজ তোমাকে অনেক খুশি খুশি লাগছে। কিছু কী হয়েছে?”

নাহিদ কফির মগ নিয়ে তাতে এক চুমুক দিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
“আমি নিজস্ব একটা ছোটো কম্পানি খুলেছিলাম শেয়ারে। বাবা জানে না সেটা। সেটার একটা ব্রাঞ্চ ইটালিতে নেওয়া হয়েছে। আমরা ৭ জন পার্টনার। এতোদিন ৬ জন ছিলাম। সপ্তম জনকে কিছুদিন আগে এড করলাম। সে ইটালিতে সিটিজেন প্রাপ্ত। তাই এখন ব্রাঞ্চ সেখানেও হচ্ছে।”

মুশফিকা হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তুমি কি শুধু তোমার কোম্পানির জন্য হ্যাপি? নাকি অন্য কোনো কারণেও?”

নাহিদ বাঁকা হেসে বলে,
“তোমার কী মনে হয়? অবিয়েসলি আমি এই কারণ সহ অন্য কারণেও হ্যাপি। তুমি তো জানোই। আর হ্যাঁ, তুমি না বলেছিলে তোমার কিছু টাকা লাগবে। আমি পঞ্চাশ হাজার তোমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছি।”

এই বলে নাহিদ উঠে ব্যালকনিতে চলে গেলো। মুশফিকা হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বসে রইল।

_____

শরৎকালের আমেজ প্রকৃতিতে। মনোরোম আবহাওয়া। ক্যাম্পাসে একাকি বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে আর্শি। আজ পিটারের জন্মদিন। পিটার সবার জন্য নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে এসেছে। তার আনা খাবার গুলোর মধ্যে সবই হাফ বয়েল। মাছের একটা আইটেম এনেছে হালকা তেল ও আঁচে গোলমরিচ দিয়ে রান্না করা। আর্শি কিছুদিন যাবত হাফ বয়েল কোনো মাছ-মাং*সই খেতে পারছে না। বেশি করে মশলাদি না দিলে সে খেতে পারে না। এইতো পিটার যখন আর্শিকে মাছের ওই আইটেমটা টেস্ট করতে বলল, আর্শি পিটারের মন রাখতে একটু মুখে নিতেই যেন তার মনে হচ্ছিলো, পেটের ভিতর সব উলটে আসছে। আর্শি ছুটে গিয়ে ডাস্টবিনের কাছে বমি করলো। আর্শিকে বমি করতে দেখে সবাই উদ্বিগ্ন। পিটার বার বার সরি বলেছে আর্শিকে। তারপর আর্শির জন্য ভ্যানিলা আইসক্রিম এনে দিয়েছে। আইসক্রিম খেতে খেতে আর্শি নিজেই ভাবলো একবার টেস্ট করেই দেখবে। যদি সত্যি সত্যি সে প্রেগন্যান্ট হয়? যদিও পিরিয়ড মিস করা নিয়ে সে তেমন একটা চিন্তিত ছিল না কারণ তার মাঝেমাঝেই দেরিতে হয়। কিন্তু গতকাল মায়ের বলা কথাগুলো এখন ভাবছে।

বন্ধুদের বলে নিজেই নিকটস্থ হসপিটালে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে টেস্ট করালো। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর টেস্টের রিপোর্ট তার হাতে আসে। আর্শি এখনও খুলে দেখেনি। ভীষণ ভয় করছে তার। ইতোমধ্যে লিসা, সোহা, মোনা, হ্যারি ও পিটারও হসপিটালে চলে এসেছে। সোহা বলছে,

“রিপোর্টটা খুলে দেখ?”

সোহার সাথে বাকিরাও তাল মেলালো। আর্শি ভীত স্বরে বলল,
“ইফ দ্যা রেজাল্ট ইজ পজেটিভ, দ্যান?”

“ইফ ইট ইজ পজেটিভ, দ্যান ইট উইল বি গুড নিউজ। ডোন্ট বি স্কেয়ার্ড।”

লিসার সাথে বাকিরাও তাল মেলালো। আর্শি লম্বা শ্বাস নিয়ে রিপোর্টটা খুলল। প্রথমেই নজর গেলো, “পজেটিভ” লেখাটার উপর। সাথে সাথে আর্শি রিপোর্টটা উলটে মুখে হাত দিয়ে বসে রইল। আর্শি প্রতিক্রিয়াতে সোহা বিষয়টা বুঝতে পারলেও বাকি চারজন এখনও উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সোহা আর্শির কাঁধে হাত রেখে নরম কণ্ঠে শুধালো,

“পজেটিভ?”

আর্শি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো। সোহা সাথে সাথে হইহই করে বাকিদেরও খবরটা বলে দিলো। হসপিটালের অন্যান্য রোগীরা উৎসুক হয়ে এই ছয়জন ছেলে-মেয়ের গ্রুপটাকে দেখছে।

হসপিটালের বাহিরে এসে আর্শি চিন্তিত সুরে বলল,
“শ্রাবণ, এমনিতেই কতো টেনসড থাকে আমাকে নিয়ে। এখন ওকে কীভাবে বলি?”

লিসা এখন বাংলা অনেকটাই বুঝতে পারে। সেই সাথে মোনাও। লিসা বলে,
“রিল্যাক্স। উই আর হেয়ার উইথ ইউ। নাউ ইউ হ্যাভ টু বি রিল্যাক্স এন্ড এভরিথিং উইল বি ফাইন, ডিয়ার।”

আর্শি খানিক হাসলো। রিপোর্টটার ছবি তুলে শ্রাবণকে পাঠিয়ে দিলো। যদিও জানে শ্রাবণ লাঞ্চ ব্রেকের আগে দেখবে না।

_____

বড়ো মেয়ের প্রেগনেন্সির কথা শুনে মিসেস আশালতা খুশি তো হলেন কিন্তু সেই সাথে চিন্তার অন্ত নেই। ছোটো মেয়ের খেয়াল নে নিজে কাছ থেকে রাখতে পারছেন, কিন্তু বড়ো মেয়েতো সেই সুদূর ইউরোপে থাকে। তিনি বললেন,
“সাবধানে থাক, মা। তোর তো নিজের প্রতি যত্নই থাকে না। এসময় আবার ওখানে একা।”

“আমি খেয়াল রাখব, মা। তুমি চিন্তা করো না তো। ভাইয়ার বিয়ের আর কিছুদিন বাকি। চিন্তা করে প্রেশার বাড়িয়ে ফেলো না। সন্ধ্যা থেকে আমার তিন বান্ধবী একটু পরপর এটা ওটা নিয়ে হাজির হচ্ছে! জানো, হ্যারি কী করেছে? হ্যারি তার নানির বানানো আচার আমাকে এনে দিয়ে গেছে। হ্যারির মা নাকি পাঠিয়েছে। তারপরও বলো, এখানে আমার কেউ নেই? তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না। তুমি এতো চিন্তা করলে আমারও চিন্তা হবে। এদিকে তোমার মেয়ে জামাই কম? আমাকে চিন্তায় রাখতে! আর হ্যাঁ, আমার হবু ভাবি, মানে কলিকে বলবে, সে যেন তোমাকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলতে নিজেও বেবি নিয়ে বসে!”

বলেই আর্শি হাসতে শুরু করে। মিসেস আশালতাও হেসে ফেলে। পাশে বসা আরিয়া নুডুলস খাচ্ছে আর মা-মেয়ের বার্তালাপ শুনছে। সে এবার খানিক বিরক্ত হয়ে বলে,

“উফ মা! আমাকেও একটু কথা বলতে দাও! সব কথা কি তুমিই বলবে?”

“নে নে ধর। আমি তোর বাপকে মশারি টাঙিয়ে দিয়ে আসি। তোর তো এই রাতের বেলা নুডুলস খেতে মন চেয়েছে! ঘুমানোর নাম-গন্ধ নেই!

অতঃপর মেয়ের হাতে ফোন ধরিয়ে তিনি চলে গেলেন। আরিয়া ফোন কানে নিয়ে কেশে বলে,
“দেখ আপু, এবার কিন্তু কনফিউশন হয়ে গেলো!”

“কী রকম?”

“এই যে কার ছেলে হবে? যদি আমার মেয়ে হয়, আর তোর ছেলে হয়, তবে তো তোর ছেলে ছোটো হবে। তখন কেমন বেক্ষাপ্পা হবে না? যদিও তোর চলে সিক্স উইক। আর আমার টেন উইকস।”

আর্শি কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“তোর মাথায় সারাক্ষণ এসবই ঘুরে?”

“হ্যাঁ!”

“ফোন রাখ! তোর এই উদ্ভট হিসাব তুই নিজে নিজে মিলা। আমার মা*থা খারাপ করিস না। ঘুমা এখন।”

অতঃপর আরিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল ডিসকানেক্ট করে দেয় আর্শি। এখন সে অপেক্ষা করছে শ্রাবণের কলের। শ্রাবণের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে ভাবতেই অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৭+২৮

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৭
মিলানের অলিগলিতে ঘুরেফিরেই দুটো দিন যে পেরিয়ে গেছে শ্রাবণ ও আর্শির। তিন দিন থাকার কথা থাকলেও আজই ভেনিসে বেড়াতে যাচ্ছে ওরা। ট্রেণের জানালা দিয়ে ছবির মতো পিছিয়ে যাওয়া প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে আর্শি। পাশ থেকে শ্রাবণের হাত জড়িয়ে শ্রাবণের কাঁধে মাথা এলিয়ে হাস্যজ্জল চাহনিতে প্রকৃতি দেখছে। শ্রাবণ জিজ্ঞাসা করলো,

“কফি খাবে?”

আর্শি মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলে শ্রাবণ উঠে কফি আনতে যায়।

ভেনিসে বিকেলের দিকে পৌঁছায় ওরা। আদ্রিয়াটিক সাগরের উপকূলে ইতালির এই ভেনিস শহরটি জলে ভাসমান। মূলত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টিতে শরটিতে। শহরটিতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড়ে কোলাহলিত থাকে। ভেনিসের শিল্প, সাহিত্য বেশ নজরকারা ও নান্দনিক। রং-বেরঙের কারুকার্য নিয়ে প্রাচীন প্রাসাদ গুলো নীল স্বচ্ছ জলের উপর মাথা উঁচু করে নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেনিসকে ইউরোপের সবচেয়ে রোমান্টিক শহরও বলা হয়। ভেনিস শহরটি গড়ে ওঠার পেছনেও রয়েছে একটা ইতিহাস। জ*লদ*স্যুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রবাসীরা এখানে বসতি করে তুলেছিল। এখানে বাহন বলতে নৌকা। পুরো শহরে লতার মতো লেকে বেষ্টিত।
হোটেলে উঠেই ফ্রেশ হয় লাঞ্চ করে আর্শি ও শ্রাবণ একটু হাঁটতে বেরোয়। আজ ওরা খুব একটা ঘুরবে না। শুধু আশেপাশে একটু ঘুরবে। ভেনিসের দীর্ঘ খালের পাশ দিয়ে হাঁটছে। খালটির উপর চারটি ব্রিজ আছে। তারমধ্যে রিয়াল্টো ব্রিজটি বিখ্যাত। আর্শি হাঁটছে শ্রাবণের হাত জড়িয়ে। তার চোখে-মুখে আশেপাশের পরিবেশের মুগ্ধতা। এর আগেও একবার ভেনিসে আসলেও এবারেরটা সম্পূর্ণ আলাদা। এবার তার সঙ্গী তার আপন মানুষ। যাকে সে একটু একটু করে গভীর ভাবে ভালোবাসতে শুরু করেছে। যাকে দেখলে এখন তার মনে হারানোর ভয় কাজ করে। তাইতো হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।
আর্শি আশেপাশে চঞ্চল নজর বুলালেও শ্রাবণের বিরামহীন নজর আর্শিতে। এই দুইদিন যাবত মেয়েটার মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন সে লক্ষ্য করছে। পরিবর্তনটা হচ্ছে আর্শির চোখের ভাষার। লাজুকতা, প্রেমময়ে পূর্ণ এক অদৃশ্য অধিকারবোধে আচ্ছন্ন। শ্রাবণ প্রশান্তচিত্তে হাসে। অতঃপর ভেনিসের ফুটপাতে এক ফুল বিক্রেতার থেকে আর্শির মিষ্টি রঙের জামার সাথে মিলিয়ে সেই রঙেরই একটা গোলাপ কিনতে দাঁড়ায়। আর্শি তা দেখে মুচকি হাসলো। ফুলটা শ্রাবণ আর্শির কানের কাছে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

“প্রপোজ না করে কানের পিঠেই গুঁজে দিলাম। লাল গোলাপের সামনে এই গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করলে যদি লাল গোলাপ অভিমান করে বসে আমাদের ভৎসনা দেয়?”

আর্শি এবার মুখে হাত দিয়ে হেসে ফেলে। ফের বলে,
“ফুলকেও ভয় পাচ্ছেন? দারুণ ভীতু তো আপনি!”

শ্রাবণ ঠাট্টার ছলে বলে,
“ভয় পাব না? ফুল পবিত্র। আর পবিত্র কিছুকে দুঃখ দিলে আমার কপালে শনির দশা পড়বে না, বলো? মাত্র মাত্রই তো বউয়ের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসার দেখা পাচ্ছি। বউ আমাকে কাঁধছাড়া করতে চাইছে না বলে বগলদাবা করে ঘুরছে! একটা ফুলের অভিশা*পে যদি এই সুখ হারিয়ে ফেলি?”

আর্শি থেমে হা করে শ্রাবণের মুখের দিকে চেয়ে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ আর্শির অবস্থা দেখে হেসে আর্শির থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে দিয়ে বলে,

“মুখ বন্ধ করো। মা*ছি ঢুকতে পারে! প্রেমের শহর বলে কথা! যদি মা*ছি তোমাতে মুগ্ধ হয়ে তোমার মুখের ভেতর ঢুকে যেতে চায়? বলা তো যায় না। তখন তোমার….!”

আর্শি এবার ক্ষেপে গেলো। বলে,
“ত্যা*ড়া টাইপ ককথাবার্তা আপনাকে বলতেই হবে? কেন না বললে পেটের ভাত হজম হয় না?”

“না হয় না!”

আর্শি এবার অনবরত শ্রাবণকে কি*ল, ঘু*ষি মা*র*তে লাগলো। শ্রাবণ হাসতে হাসতে কিছু দূর দৌঁড়ে চলে গেলো।

_______

মুশফিকা নাহিদের পাশে বসে আছে। নাহিদ ফোনে কথা বলছে। অপরপাশ থেকে একজন বলছে,
“মেয়েটার সমস্ত ডিটেইলস আপনাকে ইমেইল করছি। মেয়েটা অরফেন। চার্চে বড়ো হয়েছে।”

নাহিদ বাঁকা হাসে। অতঃপর বলে,
“থ্যাংকস। ইউ উইল গেট ইউর মানি।”

ফোন কে*টে নাহিদ লম্বা করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“এটলাস্ট মেয়েটার খোঁজ পেলাম।”

মুশফিকা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“কিন্তু তুমি…”

নাহিদের চোখ চোখ পড়তেই থেমে গেল। মাথা নিচু করে বলল,
“সরি!”

নাহিদ ফিচলে হেসে বলল,
“সেদিন রেগে থাকাতে বলেছিলাম। তুমি করেই বলতে পারো।”

মুশফিকা যেন আনন্দিত হলো। ইদানীং সে নাহিদকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। নাহিদ কোনোভাবে তারউপর অসন্তোষ থাকুক তা সে চায় না। যদিও এর আগেও কিছু পুরুষের সান্নিধ্যে সে ছিল কিন্তু কথায় আছে না, ‘শ*রী*র ছুঁ*তে পারলেও মন সবাই ছুঁ-তে পারে না।’ তেমনি মুশফিকা এর আগে কারও জন্য এতোটা গভীর অনুভব করেনি। সে চায় না, এক বছর পর তাদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাক কাগজের সম্পর্কের মতো। সারাজীবন সে নাহিদের সাথেই থাকতে চায়।
মুশফিকার অপলক চাহনি ও নিরব দেখে নাহিদ ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“কী হলো?”

মুশফিকা সাথে সাথে স্বাভাবিক হয়। নিজেকে ধাতস্থ করে শুধায়,
“ওই মেয়েটা যদি রাজি না হয়?”

নাহিদ আয়েশ করে বেডের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বলে,
“হবে হবে। টাকা ছাড়লেই হবে। মেয়েটা আবার অরফেন। টাকার দরকার তার হবে। নয়তো সেখানে একটা ছোটো অ্যাপার্টমেন্টে কিনে দিব। রাজি হবে।”

মুশফিকা হাসলো। নাহিদের মেয়েদের প্রতি চিন্তাভাবনা তারও খারাপ লাগে। সে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
“তোমার কেন মনে হয়, ওই মেয়ে লো*ভে পড়ে তোমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে কাজটা করবে? এমনও তো হতে পারে, মেয়েটা যেহেতু এতিম। সে নিজের দ্বারা অন্যের ক্ষতি করতে চাইলো না।”

নাহিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“নিজের দিকে চেয়ে কথাটা বলো! তুমি করছো না, টাকার জন্য?”

এই বলে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মুশফিকা মলিন হেসে সেখানেই বসে রইলো। মুশফিকা নিজে নিজেই বলতে লাগলো,
“দাদী বলতো আমি আমার মায়ের চরিত্র পাব। মা যেমন অন্যের সংসার ভেঙে নিজেরটা গড়েছে। আমিও তো অন্যেরটা ভেঙে নিজেকে গড়তে চাইছি। দাদী সত্যিই বলতো। আমি কারও ভালো করতে পারি না। স্বভাবত প্রচণ্ড স্বার্থপর যে।”

অতঃপর সেখানেই অনড় বসে রইল।

_______

ক্লাস টেস্টের জন্য আরিয়া ও আশিক পড়ছে। তখন আশিকের ফোন বেজে উঠলে আরিয়া সতর্ক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়। তার সন্দেহ, জেবিন মেয়েটা কল করেছে। ওদিকে আশিককে তার বন্ধু ক্লাস নোটের জন্য কল করেছে। আশিক ফোন কানে রেখেই আরিয়াকে বলে,

“তোমার খাতা থেকে পরশুদিনের ক্লাসের নোটটা ছবি তুলে একটু দাও তো আমাকে। জিদান চাইছে।”

আরিয়া নিজের চিন্তাকে ভুল প্রমান হতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে খাতা থেকে ছবি তুলে আশিককে মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয়। বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
“নাহ্! এই জেবিনের একটা ব্যাবস্থা করতে হচ্ছে। কালই ওকে ধরব। কী চায় সে? আমার স্বামী, কয়দিন পর আমার বাচ্চার বাপও হবে! তার দিকে কী-না নজর দিয়ে বসে আছে! বে*হা*য়া মেয়ে! একদম গ*লার টু*টি চেপে ধরব! হুহ্!”

আশিক আরিয়াকে কলমেে নিভ দিয়ে খাতায় আ*ঘা*ত করতে দেখে সন্দিহান দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। তারপর শুধায়,
“তুমি এমন করছো কেন?”

“হু?”

“খাতায় কলম দিয়ে গু*তাচ্ছ কেন? কার উপর রাগ ঝা*ড়ছো?

আরিয়া এবার থতমত খেয়ে যায়। ফের আমতা আমতা করে বলে,
“কিছুতেই মনে থাকছে না। বারবার ভুলে যাচ্ছি। তাই…”

“ওহ! মনোযোগ দিয়ে পড়ো। মনের মধ্যে অবান্তর চিন্তা বাদ দাও। পড়াতে ফোকাস করো।”

আরিয়া মাথা দুলিয়ে পড়তে আরম্ব করলো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮
সময় কতো দ্রুত পেরিয়ে যায়। যেন চোখের পলকেই দিন পেরিয়ে সপ্তাহ কেটে যায়। সময়ের সাথে সাথে ব্যাস্ততাও যেন বাড়তে থাকে। তখন মনে হয়, ২৪ ঘণ্টার বদলে যদি দিনে ২৭ ঘণ্টা পাওয়া যেত! আর্শির বর্তমান অবস্থাও তেমনি। আগামীকাল কোর্সের মিড পরীক্ষা। তাই নাকেমুখে পড়ছে অবস্থা। কয়েকদিন ঘুরাফেরার কারণে অনেক পড়া জমে গিয়েছিল। তাইতো তিন-চার দিন যাবত শ্রাবণ আর্শিকে কল করেও পাচ্ছে না। পেলেও দশ-পনেরো মিনিটের বেশি আর্শি কথা বলতে পারে না। তারউপর কানাডা ইটালির থেকে ছয় ঘণ্টা পেছনে। সময়ের গ্যাপে দুজনের কথাবলার টাইমটেবিলও পরিবর্তন হয়েছে। আর্শি ভেনিস থেকে মিলানে ফিরেছে দুই সপ্তাহ হয়েছে। শ্রাবণও সেখান থেকে কানাডার ফ্লাইটে চলে গেছে।

আর্শি ও লিসা নিজেদের রুমে পড়ছে, তখন পাশের রুম থেকে সোহার চিৎকার শুনে দুজনেই হকচকিয়ে তাকায়। লিসা বলে,

“হোয়াই ইজ সি স্ক্রিমিং?”

“ডোন্ট নো।”

বলে আর্শি উঠে গেলো। পিছু পিছু লিসাও গেল। সোহার রুমে গিয়ে দেখলো সোহা ফোন নিয়ে এক প্রকার নাচছে! মোনাও অবাক হয়ে দেখছে। আর্শি ও লিসা, মোনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড টু হার?”

মোনা জবাবে বলে,
“ডোন্ট নো। সাডেনলি সি স্টার্টেড বিহেভিং লাইক দিস।”

অতঃপর তিনজনেই কিছুক্ষণ সোহার পা*গলামো দেখতে থাকে। সোহা ওদেরকে এভাবে নিজের দিকে বিরক্তি ও কৌতুহলের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে শান্ত হয়ে বসে। ফের এক্সাইটমেন্ট নিয়ে বলে,

“রিক, জাস্ট সেন্ড মি এ মেসেজ, টুমোরো হি উইল কাম টু মিট উইথ মি! ইটস জাস্ট আনবিলিভেবল!”

ওরা তিনজন একে অপরের দিকে চেয়ে থেকে কোনো প্রত্যুত্তর না করে যে যার কাজে চলে যায়। সোহা তার বন্ধুদের এতো নির্বিকার দেখে আশাহত হয়ে যায়। তখন তার হঠাৎ খেয়াল হয়, কাল তার পরীক্ষা! আর সন্ধ্যা থেকে এক ঘণ্টা সে পড়তে বসেনি। রিকের সাথে কথা বলেছে!

_____

পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আর্শি শ্রাবণকে কল করে। ক্যাম্পাসের একটা নিরব স্থানে বসেছে সে। সোহা গেছে রিকের সাথে দেখা করতে। সাথে করে লিসাকেও নিয়ে গেছে। মোনার পরীক্ষা সবেই শুরু হবে। কানাডায় এখন সকাল নয়টা। শ্রাবণ অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলো। এমন সময় কল আসে। সে কোট পড়তে পড়তে স্ক্রিণে আর্শির নাম দেখে রিসিভ করে বলে,

“পাঁচ মিনিট পর কল করছি। একটু ওয়েট করো।”

অতঃপর কল কেটে দেয়। আর্শি বুঝলো যে শ্রাবণ এখন অফিসের জন্য বেরোবে। ক্যাব হয়তো চলে এসেছে। আর্শি বসে বসে ফোনের গ্যালারিতে ভেনিসে ঘুরাঘুরির শেষ দিনের ছবিগুলো দেখছে। দুজনে একসাথে নৌকার এক সাইডে আগেপাছে করে বসে দুই হাত ছড়িয়ে তোলা ছবি। শ্রাবণ আর্শিকে নৌকাতেই লাল গোলাপের তোড়া দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে প্রপোজ করার ছবি। ক্যান্ডেল নাইট ডিনারের ছবি। আরও কিছু সুন্দর মূহুর্তের ছবি। মূহুর্তগুলো আর্শির দৃশ্যপটে ভেসে উঠে। অজান্তেই আর্শি লাজুক হাসে। আজ তার পরীক্ষা শেষ হলো। তিনটা সাবজেক্টের পরীক্ষা পরপর তিন দিনে দিয়েছে। এখন আগামীকাল ক্লাস নেই।
কিছুক্ষণের মধ্যে শ্রাবণ কল করে। আর্শি রিসিভ করে বলে,

“সরি, কালকে ইন্টারনেটে ছিলাম না। আপনি কল করেছিলেন।”

“পরীক্ষা কেমন হলো তাই বলো।”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“দুপুরে খেয়েছ?”

“না। খাব। আচ্ছা শুনুন না, আপনি তো বলেছিলেন স্নিগ্ধা আপুর সাথে কথা বলতে। আমি মাকে কল করলে আপুর সাথে কথা বলতে পারব? আসলে সরাসরি আপুকে কল করতে ভয় করছে। যদি রিসিভ না করে?”

শ্রাবণ খানিক ভাবলো। ফের বলল,
“করতে পারো। আপুতো মায়ের কাছেই আছে। ঝামেলা মিটিয়ে নিও।”

“হুম।”

“এখন অ্যাপার্টমেন্টে যাও। আমি অফিস থেকে ফিরে কল দিব। তারপর…”

বলতে বলতে শ্রাবণ ফোন কান থেকে নামিয়ে ক্যাব ড্রাইভারকে বলে,
“স্টপ স্টপ।”

ড্রাইভার গাড়ি থামালে শ্রাবণ অর্ধনমিত গাড়ির কাঁচ পুরোটা নামিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়ানো এক তরুণীকে ডাকে,
“হেই ইরিনা,”

মেয়েটি বারবার হাতঘড়িতে সময় দেখছিল। হঠাৎ নিজের নাম শুনতে পেয়ে সেটা অনুসরণ করে তাকায়। অতঃপর পরিচিত চেহারা দেখে এগিয়ে আসে। শ্রাবণ তাকে জিজ্ঞাসা করে,
“হোয়াই আর ইউ স্ট্যান্ডিং হেয়ার?”

মেয়েটি জবাবে বলল,
“একচুয়ালি, আই বুকড এ ক্যাব বাট আনফরচুনেটলি ক্যাব ড্রাইভার সাডেনলি গট সিক।”

“ওহ। সো ইউ আর গেটিং লেট। ইউ ক্যান কাম উইথ মি। উই আর ইন দ্যা সেম অফিস!”

ইরিনা খানিক বিব্রত হলো। তা দেখে শ্রাবণ বলল,
“কাম। ডোন্ট ফিল হেজিটেটিং।”

ইরিনা কৃতঙ্গতা স্বরূপ হেসে গাড়িতে শ্রাবণের পাশে উঠে বসলো। অতঃপর ধন্যবাদ জানালো।
এদিকে আর্শি এখনও কলে। সে দুই পক্ষের কথোপকথনই শুনেছে। শ্রাবণ ফোন কানে নিয়ে বলল,

“রাতে কল করছি। বায়।”

আর্শি মৃদু স্বরে ‘বায়’ বলে কল রেখে দিলো। অতঃপর ভাবতে লাগলো। শ্রাবণ তাকে ইরিনা নামের একটি মেয়ের গল্প বলেছিল। শ্রাবণ তাকে বলেছিল, মাস্টার্স করাকালীন ইরিনা নামের এক মেয়ে শ্রাবণকে একবার প্রপোজ করেছিল। মেয়েটি শ্রাবণের এক ইয়ারের জুনিয়র ছিল। তাহলে কি এই সেই ইরিনা? নাকি অন্য ইরিনা? কিন্তু ইরিনা যে শ্রাবণের কলিগ, এটা তো বলেনি! প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে আর্শির মস্তিষ্কে। নিজেকে শান্ত করতে নিজে নিজেই বলে,

“হোয়াটেবার! শ্রাবন তো বলেছেই, মেয়েটি তাকে প্রপোজ করার পর সে সাথে সাথে না করে দিয়েছিল। তারপর মেয়েটি আর কখনো তার কাছে প্রপোজাল নিয়ে আসেনি। তাহলে আমি অযথাই ভাবছি। ধুর!”

উঠে দাঁড়ালো আর্শি। লিসা ও সোহাকে খুঁজতে লিসার ফোনে কল করলো। লিসা জানালো তারা একটা ক্যাফেতে আছে। সেখানেই যেন সে আসে। আর্শিও সেই পথে যেতে লাগলো।

________

রাত প্রায় সাড়ে আটটা। আরিয়া ভয়ে ভয়ে চুপসে মুখ লুকিয়ে বিছানায় বসে আছে। আশিক টিউশনি থেকে এখনও ফেরেনি। ভার্সিটির থেকে ফেরার পর তার শরীর খুব খারাপ করেছিল। বমিও হয়েছে। তারপর কাজের মেয়েটা তাকে এমন এক কথা বলল, যা শুনে সে সত্যি ঘাবড়ে গিয়েছিল। তারপর নিজেরও কিছু মনে হওয়াতে কাজের মেয়েটাকে দিয়েই ফার্মেসি থেকে প্রেগন্যান্সি কিট কি*নিয়ে আনে। অতঃপর টেস্ট করে রেজাল্ট দেখে এখন দরজা লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কাজের মেয়েটা রেজাল্ট জানতে কয়েকবার ডেকেও গেছে কিন্তু আরিয়া সাড়া দেয়নি। আরিয়া নিজেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত। যদিও তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই মাস। কিন্তু এতো জলদি বেবি নেওয়ার ইচ্ছে তো তার ছিলো না। এখনও গ্রাজুয়েশনের কিছু মাস বাকি।

ঘড়ির কাঁটায় নয়টা বাজতেই দরজায় নক হলো। আরিয়ক জানে এখন আশিক এসেছে। সে দ্রুত উঠে এক প্রকার ছুটে গিয়ে দরজা খুলল। তার ধারনা সত্যি করে দরজার অপরপাশে আশিকই ছিল। আরিয়া দরজা খুলেই কোনো বাক্যব্যয় ছাড়াই আশিকের বুকে একপ্রকার ঝাঁ*পিয়ে পড়লো। আচমকা এমন হওয়াতে আশিক এক পা পিছিয়ে গিয়ে আরিয়াকে আগলে ধরে। আশিক বুঝতে পারলো না আরিয়ার এমন করার কারণ। এদিকে সিঁড়ি দিয়ে নাহিদ উঠছিল। দুই ভাই একসাথেই বাড়িতে ফিরেছে। নাহিদের নজর না চাইতেই আশিকের রুমের দরজার দিকে যেতেই সে পরিবেশ দেখে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ায়। তার রাগ হচ্ছে। সিঁড়ির হাতলে মুষ্টিমেয় আ-ঘা*ত করার পর উঠে যেতে নিলেই একদম উপরের সিঁড়িতে দাঁড়ানো মুশফিকার সাথে নজরবন্দি হয়। অতঃপর নাহিদ মুশফিকাকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

মুশফিকা কলিংবেলের শব্দে নিচে নামছিল। তার আগেই কাজের মেয়েটা দরজন খুলে দেওয়াতে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু পথিমধ্যে আরিয়ার আচমকা কাণ্ডও তার নজর কেড়েছে। সেই সাথে নাহিদের রাগের বহিঃপ্রকাশও। মুশফিকা কিছুটা সন্দেহ করে। আরিয়ার শরীর খারাপের ব্যাপারে সে জানে। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে জানতে পারে, আরিয়া প্রেগন্যান্সি কিট আনিয়েছে। তাই আরিয়ার আচরণে ধারণা করে নিয়েছে, মেয়েটা প্রেগন্যান্ট। মুশফিকা মৃদু হাসলো। কিন্তু পরক্ষণেই মুখ জুড়ে নেমে এলো কালোমেঘের ছায়া! ভয় হচ্ছে তার, নাহিদ ওদের কোনো ক্ষতি করবে না তো?

চলবে ইন শা আল্লাহ,

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৫+২৬

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৫
হোটেলে এসেই শ্রাবণ প্রথমে শাওয়ার নিতে গেলো। আর্শি ব্যালকনিতে গিয়ে আশেপাশের ভিউ দেখছে। শ্রাবণ তিন দিন এই মিলান শহরে থাকবে। তারপর আর্শিকে নিয়ে ভেনিসে দুইদিনের জন্য বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান তার। আর্শিও বলেছে ছুটি নিয়ে নিবে। এইটুকু তো বুঝেছে এই ছেলে যেমন জেদি তেমন মুডি! সামান্য এদিক-সেদিক হলে তিলকে তাল ভেবে গোমড়া হয়ে বসে থাকবে। ফুঁস করে ক্লান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ো বারান্দা ছেড়ে রুমে প্রবেশ করলো। ঘাড়ে ব্যাথা হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে প্রেশার কমেছে। রুম সার্ভিসে কল করে কিছু খাবার অর্ডার করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

শ্রাবণ শাওয়ার নিয়ে শুধু ট্রাউজার পড়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে বলল,
“এতক্ষণে ভালো লাগছে। খিদেও পাচ্ছে। তোমার খিদে পাচ্ছে না?”

বলতে বলতে চেয়ে দেখলো, আর্শি ঘুমিয়ে গেছে। কেবল সন্ধ্যা ৭টার কাছাকাছি এখন। অসময়ে ঘুমাতে দেখে শ্রাবণ এগিয়ে গিয়ে আর্শির কপালে হাত রাখলো। না স্বাভাবিকই আছে। কিন্তু জাগাতে ইচ্ছে হলো না। ভাবলো কিছুক্ষণ ঘুমাক। ততক্ষণে কেক যে অর্ডার করে রেখেছে আগে, সেটাও চলে আসবে। শ্রাবণ রুম সার্ভিসে কল করে জানতে পারলো আর্শি কিছু খাবারও অর্ডার করেছে। তাই বলে দিলো, কিছুক্ষণ পরেই যেন কেকের সাথে একসাথে পাঠায়।

______

প্রায় আধঘণ্টা পর কলিংবেলের আওয়াজে আর্শির ঘুম ছুটে। ঘুম ঘুম চোখ সামান্য খুলে জড়ানো স্বরে বলে,
“কে এসেছে?”

শ্রাবণ দরজা খুলতে খুলতে বলে,
“খাবার অর্ডার করেছিলে যে।”

“ওহ হ্যাঁ।”

আর্শি উঠে বসে চুলগুলো পরিপাটি করে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যায়। শ্রাবণ এই ফাঁকে জলদি করে রুম কিছুটা ডেকোরেশনের কাজে লেগে পড়ে। কিন্তু হঠাৎই কিছু মনে পড়াতে ওয়াশরুমের দরজায় নক করে। ভেতর থেকে আর্শি বলে,
“আসছি!”

“পরে আসবে। আগে দরজা খুলো।”

“কেন?”

“এক সেকেন্ডের জন্য খুলো।”

বাধ্য হয়ে আর্শি দরজা খুলতেই শ্রাবণ পেছন থেকে একটা বক্স সামনে এনে বলে,
“পড়ে আসো।”

আর্শি বক্সটা হাতো নিয়ে ভ্রুঁ কুঞ্চন করে বলে,
“কী আছে এতে?”

“খুলেই দেখো। আর কোনো কোশ্চেন করবে না। যা আছে পড়ে আসো।”

আর্শি দরজা লাগিয়ে বক্স খুলে দেখে তাতে ল্যাভেন্ডার কালারের একটা ফিনফিনে জর্জেট শাড়ি। শাড়িটা তার পছন্দ হলো কিন্তু কাপড়ের ম্যাটেরিয়ালটা মোটেও না। বিস্ময় নিয়ে দরজা খুলতেই শ্রাবণ ছুটে এসে দরজা চেপে ধরে বলে,

“রেডি হয়ে একেবারে বের হবে।”

আর্শি দরজায় হাত রেখে বলে,
“এটা অনেক পাতলা!”

“তো সমস্যা কই?”

আর্শি তীর্যক স্বরে বলল,
“সমস্যা কই মানে? এই শাড়িতে…. এই আমি এটা পড়ব না!”

শ্রাবণ বলে,
“আই অ্যাম ইউর হাজবেন্ড। তোমাকে কি এই শাড়ি পড়ে বাইরে যেতে বলেছি? তুমি যেতে চাইলেও আমি দিব না। শুধু আমি দেখব।”

“শাড়িটা…”

শ্রাবণ দরজা সামান্য খুলে আর্শির কথা শুরু হওয়ার পূর্বেই বলে,
“প্লিজ! আমি জানি তুমি শাড়িতে কম্ফোর্টেবল না প্লাস এতো পাতলা শাড়িতে তো নাই! তাও রিকুয়েস্ট করছি।”

আর্শি শ্রাবণের মুখপানে চেয়ে লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“ওকে!”

অতঃপর দরজা বন্ধ করে শাড়িটা পড়ে নেয়। শ্রাবণও বার্থডে কার্ড দিয়ে দেয়ালে লাগায়। ফুল দিয়ে বারান্দার টেবিলটা সাঁজায়। ল্যাভেন্ডার রঙের কেকটাও সেখানে রাখে। কয়েকটা ক্যান্ডেল গ্রিলের উপর রাখে। যদিও সেগুলো আর্টিফিশিয়াল ক্যান্ডেল। সব সাঁজিয়ে শ্রাবণ ভীষণ খোশ মেজাজে বলে,

“অল ডান। এখন বৃষ্টি এসে সারপ্রাইজ হয়ে যাবে পুরো। আসছে না কেন?”

অতঃপর বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে নক করে বলে,
“হয়েছে?”

আর্শি কুঁচি ঠিক করছে। জর্জেট শাড়ি পড়তে সুবিধা কিছুটা। আর্শি জবাব দেয়,
“হয়ে গেছে। আসছি।”

আর্শি কুঁচি ঠিক করতে করতে বক্সটা হাতে নিয়ে বেরোয়। শ্রাবণ হা করে তাকিয়ে আছে আর্শির দিকে। খোলা চুলে বিনা সাঁজে ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়িতে স্নিগ্ধ ফুলের মতো লাগছে আর্শিকে। শ্রাবণের বিরতিহীন দৃষ্টিতে আর্শি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। এই দৃষ্টি যেন সাধারণ না। ঘোর লাগানো। এই ঘা*য়েল করা নজর থেকে বাঁচতে সে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। চিড়ুনী উঠিয়ে চুল আঁচড়ায়। বক্স থেকে চুড়িগুলো বের করে হাতে পড়ে নেয়। কানেও ঝুমকো পড়ে নেয়।

শ্রাবণের দৃষ্টি এখনও আর্শিতেই। সে এগিয়ে গিয়ে আর্শির পেছনে দাঁড়ায়। সামান্য ইতস্তত করে আর্শির কাঁধে প্রথমে হাত রাখে। আর্শি দৃষ্টি নিচু করে নেয়। শ্রাবণ আর্শির কানের কাছে মুখ নিয়ে স্মিত স্বরে বলে,

“মে আই?”

আর্শি মুখে জবাব দিতে পারলো না। আয়নায় শ্রাবণের চোখের দিকে একবার চেয়ে তৎপর দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। শ্রাবণ আর্শির হাত ধরে ও-কে বারান্দায় নিয়ে যায়। তারপর চেয়ারে বসিয়ে নিজে বিপরীত পাশের চেয়ারে বসে। ফোনে এই আলো-আঁধারিতে আর্শির কয়েকটা ছবি তুলে বলে,

“কেকটা কাটো। পছন্দ হয়েছে না?”

আর্শি কেকটা দেখলো। অতঃপর স্মিত হেসে বলল,
“সব একদম মিলিয়ে এনেছেন? ফ্লাওয়ার ভাসেও ল্যাভেন্ডার ফ্লাওয়ার।”

শ্রাবণ মাথা চুলকে বলল,
“আসলে আমি তোমার জন্য তিনটা রং সিলেক্ট করেছিলাম। এখানে এসে আজকের দিনে প্রথমে তোমাকে ল্যাভেন্ডার রঙে দেখে মনে হলো, আজকের দিনটা তোমার জন্য ওই রংটাতেই সাঁজাই। লুক, তোমাকে কতোটা স্নিগ্ধ লাগছে তুমি নিজেও জানো না।”

আর্শি লাজুক হাসে। শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে আর্শির সামনের চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়। কপোল ও কানে শ্রাবণের হাতের ছোঁয়া লাগতেই কেঁপে উঠে আর্শি। শ্রাবণও তা বুঝে ফিচলে হাসে। আর্শি সামান্য তোঁতলানো স্বরে বলে,

“কে–ক কা*টি! মেল্ট হয়ে যাবে তো!”

“হু হু।”

আর্শি কেক কে*টে প্রথমে শ্রাবণকে খাওয়ায়। অতঃপর শ্রাবণও আর্শিকে খাওয়ায়। দুপুরের মতো দুজনে দুজনকে খাইয়ে দেওয়ার পর রুম সার্ভিসে কল করার পর ওরা বাকি কেক ও খালি ডিশ গুলো নিয়ে যায়। আর্শি ব্যালকনিতে বাইরের দিকে মুখ করে একটা ল্যাভেন্ডার ফুল ফুলদানি থেকে উঠিয়ে হাতে নিয়ে বসে আছে। মুগ্ধতার চোখে কোলো অম্বরে চাদরের মতো বিছিয়ে থাকা তারকারাজি দেখছে। সাথে আছে অর্ধচন্দ্রমা। শ্রাবণ পেছন থেকে এসে সামান্য নিচু হয়ে আর্শির কাঁ*ধে থুতনি ঠেকিয়ে নিরব থাকে। তৎক্ষণাৎ আর্শি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে সামান্য নড়ে উঠে। শ্রাবণ বলে,

“পূর্ণিমাতেই আকাশের ওই চাঁদটা অনেক সুন্দর দেখায়। কিন্তু আমার কাছে এই অর্ধ চন্দ্রমাকেও মোহনীয় লাগছে। কারণ কী জানো?”

আর্শি মাথা নাড়ায়। শ্রাবণ ঘোরলাগা কণ্ঠে জবাব দেয়,
“কারণ, আমার মনের আকাশের চাঁদটা আমার সামনে বসে আছে! আকাশের চাঁদ যেমন একটাই থাকে। আমার মনেও তুমি একমাত্র চাঁদ। এই চাঁদের সৌন্দর্যে কোন পূর্ণিমা লাগে না। সে সব ক্ষেত্রেই মোহনীয়। এই চাঁদকে ছোঁ*য়ার একমাত্র অধিকার আমার আছে তাই না? ”

আর্শি এবার যেন নড়ন ক্ষমতাও হারিয়েছে। শ্রাবণের শীতল ঘোর লাগা কন্ঠস্বর আর্শিকে যেন বরফ করে দিয়েছে। শ্রাবণ ফের বলে,

“আমি আমার মনের আকাশের চাঁদটাকে একদম নিজের করে পেতে চাই। তাকে খুব গভীরতম ভাবে ছুঁ*য়ে দেখতে চাই। তার আড়ষ্ট ভঙি আমাতেই থাকুক।”

আর্শি নিরব। শ্রাবণ কিয়ৎক্ষণ অপেক্ষার পর আর্শিকে লজ্জায় আরও মুষড়ে পড়তে দেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজের বক্ষমাঝারে আগলে দেয়। ভালোবাসা তো স্নিগ্ধতার প্রতিরূপ। ঠিক আকাশের ওই চাঁদটার মতো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৬
ভেজা চুলে ব্যালকনিতে বসে আছে আর্শি। স্নিগ্ধ সকালে উদিত সূর্যের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে আছে সে। রুমে শ্রাবণ উঁবু হয়ে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎই তাকে মন খারাপের রেশ ঘিরে ধরেছে। তবে কি শ্রাবণের হুটহাট মন খারাপের রোগটা তাকেও পেয়ে বসলো? প্রশ্নটা মনে হতেই মৃদু হেসে ওঠলো। কিছুক্ষণ আগে শ্রাবণকে বলেছিল, একটু হাঁটতে বেরোবে। সকালের নাস্তাটা বাহিরে করবে। কিন্তু শ্রাবণের বেরোতে ইচ্ছে করছে না। ঘুম পাচ্ছে। আরও কিছুক্ষণ পর রুমেই খাবার অর্ডার করে নিবে বলে মনস্থির করে ঘুমিয়ে পড়লো। আর্শির খিদেও পেয়েছে। সে এবার উঠে দাঁড়ালো। তারপর রুমে গিয়ে শ্রাবণের হাত ধরে টানতে শুরু করলো। শ্রাবণ পিটপিট করে চেয়ে শুধায়,

“কী হয়েছে?”

“আমার খিদে পেয়েছে।”

“তাহলে আসো!”

আর্শি ভ্রুঁ কুঁচকে শ্রাবণের পিঠে একটা কি*ল দিয়ে বলে,
“আমার সত্যি খিদে পেয়েছে। আপনি যদি না যান তবে বলেন। আমি একাই চলে যাব। সোজা গিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে উঠব। আপনি এখানে পড়ে পড়ে ঘুমান!”

এই বলে আর্শি রেগে বিছানা থেকে নেমে যেতে ধরলে শ্রাবণ ওর হাত টেনে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে। আর্শি ঝুঁকে পড়ে শ্রাবণের মুখের কাছে। শ্রাবণ সম্মোহিত দৃষ্টিতে চেয়ে আর্শির সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলে,

“তুমি জানো? রাগলে তোমাকে কেমন লাগে?”

আর্শি মাথা নাড়িয়ে না জানায়। শ্রাবণ ফের বলে,
“রাগলে তোমাতে ঐশ্বরিক সৌন্দর্য ভর করে। সবাই হাসি মুখের প্রেমে পড়ে, আমি তোমার রাগান্বিত মুখটাতে বারবার প্রেমে পড়ি! কেনো বলো তো?”

আর্শি নজর হটিয়ে কিঞ্চিত হাসলো। অতঃপর জিজ্ঞাসা করলো,
“কেন?”

শ্রাবণ হেসে জবাব দেয়,
“তোমার চোখ দুটোতে তখন মায়া ভর করে। আরও শত শত কারণ আছে, যা আমি বলে শেষ করতে পারব না।”

“ওহ আচ্ছা! তুমি নাহয় সেই মায়াতে ডুবে থাকতে পারো। কিন্তু আমার কী হবে?”

আর্শির হাস্যজ্জ্বল মুখে এহেনো কথা শুনে শ্রাবণ সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আর্শি শ্রাবণের হাত ছাড়িয়ে সোজা হয়ে বসে তীক্ষ্ণ মেজাজে বলে,
“এখন কি তবে আমি আয়নার সামনে গিয়ে নিজের চোখ দেখতে থাকব? যাতে করে নিজের চোখের মায়ায় নিজেই ডুবে গিয়ে দিন-দুনিয়া ভুলে, খিদে ভুলে থাকতে পারি!”

শ্রাবণ এবার বুঝলো। সে ঢোক গিলে বলে,
“কয়টা বাজে?”

“দশটা!”

“এতো! আমি তো ভাবলাম ৮টা বাজে।”

আর্শি কিছু না বলে শুধু শ্রাবণের দিকে এক পলক তাকালো। শ্রাবণ তাতেই উঠে সুরসুর করে ওয়াশরুমে হাত-মুখ ধুঁতে চলে গেলো। আর্শি মুখে হাত দিয়ে হাসলো।

_________

আরিয়া ক্যাম্পাসের একটা জায়গায় মন খারাপ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর ফোন দেখছে আর বিড়বিড় করছে। এদিকে আশিক আরিয়াকে খুঁজছে। সে আরিয়ার সাথে ভার্সিটির থেকে বেরোচ্ছিল, তখনি এক জুনিয়র মেয়ে তাকে একটা কাজে আর্জেন্ট ডেকে নিয়ে যায়। আশিক আরিয়াকে বলেছে যাতে সে ক্যান্টিনে গিয়ে অপেক্ষা করে। আরিয়া প্রায় আধা ঘণ্টা যাবত ক্যান্টিনে অপেক্ষা করেছে। তারপরও আশিক না ফেরাতে আরিয়া এখন ক্যাম্পাসের একটা কোনায় গিয়ে বসে আছে। বিড়বিড় করে বলছে,

“কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে এতক্ষণ লাগে করতে? যদি রিসার্চের কাজের জন্যই মেয়েটা ডেকে থাকে তাহলে সারাটা দিন কী করেছে? এই মেয়েটার হাবভাব আমার মোটেও ভালো লাগে না। বিরক্তিকর!”

আশিক আরিয়াকে কল করে। আরিয়া ফোন রিসিভ করতেই আশিক বলে,
“তুমি ক্যান্টিনে নেই। আমি তোমাকে ক্যান্টিনে খুঁজে এলাম।”

আরিয়া দাঁতে দাঁত পি*ষে বলে,
“তুমি এখন গেছো? ঘড়িতে সময় দেখতো।”

আশিক বুঝলো বউ তার রেগে গেছে। তাই সরাসরি জানতে চায়,
“কোথায় তুমি এখন?”

আরিয়া তারপর স্থান বললে আশিক কল কেটে সেখানে যায়। গিয়ে দেখে আরিয়া গালে হাত দিয়ে বসে আছে। বিকেলের পড়ন্ত রোদ তীর্যকভাবে আরিয়ার মুখের উপর পড়ছে। হালকা গোলাপি হিজাবে রোদের মধ্যে আরিয়াকে কোনো গাল ফুলানো পুতুল বললে ভুল হবে না। আশিক মুগ্ধ নজরে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে মৃদু হেসে ফোনের ক্যামেরা অন করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। অতঃপর ছবিগুলো জুম করে দেখে বলে,

“মা শা আল্লাহ। ভাগ্য করে একটা গুলুমুলু পুতুল পেয়েছি। এখন পুতুলের রাগ ভাঙাতে হবে।”

আশিক এগিয়ে গিয়ে আরিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। আরিয়া তা দেখে একটু সরে বসে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। আশিক তা লক্ষ্য করে দুষ্ট হেসে বলে,

“ওই মেয়েটা অযথাই আমাকে এতক্ষন বসিয়ে রেখেছে। কাজটা কিন্তু ও নিজে চাইলেও করতে পারতো। বা শোয়েবকে দিয়েও করাতে পারতো। কিন্তু সে যে চাইছিল আমাকে দিয়েই করাবে! আমার সাথেই করবে! তাইতো দেরি হয়ে গেল।”

আরিয়া ফুঁসছে আর আশিক মিটমিটি হাসছে। আরিয়া ব্যাগ থেকে কলম বের করে মুহূর্তের মধ্যে আশিকের গ*লার কাছে খোলা ক*লম ধরে অসহিষ্ণু স্বরে বলে,

“কেন? ওই মেয়েটার তোমাকেই কেন লাগবে কাজের জন্য? ওই মেয়ে কি জানে না, তুমি বিবাহিত? আমি বহুদিন থেকে লক্ষ্য করছি, ওই মেয়েটা তোমার আশেপাশেই ঘুরঘুর করে। এতো কী? এক ফ্যাকাল্টির কাছে রিসার্চ পড়েছে বলে কি সারাক্ষণ সে তোমার পেছনেই ঘুরবে কাজের জন্য? আরও তো আছে রিসার্চমেট। তাদের সাথে তো আমি ওই মেয়েকে দেখি না!”

আশিক ভয় পাওয়ার ভান করে হাত উঁচিয়ে সরল মুখ করে বলে,
“আমি কীভাবে বলব বলো? জুনিয়র দরকারে ডাকলে তো না করতে পারি না। তুমি বলো কীভাবে না করব?”

“কেন? তোমার মুখ নেই? মুখ দিয়ে না করবে। আল্লাহ তোমাকে মুখ দিয়েছে না? ওহ হ্যাঁ! জুনিয়রদেরকে না কীভাবে করবে? তাই না? ওরা এতো মধুর স্বরে ‘ভাইয়া! ভাইয়া!’ করে যে তুমি গলে পানি হয়ে যাও! সুন্দরীদের ডাক বলে কথা! ওয়েট, জেবিন তাই না? দাঁড়াও!”

শেষোক্ত কথাগুলো এক প্রকার ব্যাঙ্গ ও রাগ নিয়ে বলেই আরিয়া উঠে যেতে নিলে আশিক ওর হাত চেপে ধরে। অতঃপর বলে,
“তুমি এতো হাইপার হয়ে জেবিনের কাছে যাচ্ছো? ও তো চলে গেছে।”

“চলে গেছে না? তাহলে কালকে ওইটার চু*ল ধরে দে*য়ালে কয়েকটা বা*ড়ি মা*র*ব! অন্যের স্বামীর দিকে এতো ব*দনজর কেন? তাও আবার সিনিয়র আপুর স্বামীর দিকে! বা-*ড়ি দিতে দিতে মুখের ন*কশাই বদলে দিব। ডা ই নি একটা!”

আশিক এবার আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না। আরিয়ার হাত ছেড়ে গা দুলিয়ে হাসতে লাগলো। আরিয়া চমকে তাকিয়ে বিস্ময় নিয়ে আশিককে দেখছে। তাও আশিকের হাসি থামছে না, বরং বাড়ছে। আরিয়া কোমড়ে দুই হাত গুঁজে ক্ষীপ্র দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কিয়ৎক্ষণ বাদে আশিকের হাসির দমক কমে এলে সে বলে,

“তুমি এতো জেলাস! ও মাই গড! বিশ্বাস হচ্ছে না।”

আরিয়া নিজের ব্যাগটা উঠিয়ে আশিকের গায়ে ছুঁ*ড়ে মে*রে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“হ্যাঁ তাই তো! বিশ্বাস হবে কেন? আমি তো সবসময় তোমাকে বিয়ের আগে ইগনোর করেছি। তাই বিয়ের আগে যারা পাত্তা দিতো তাদের রেখে আমাকে কেন গুরুত্ব দিবে? থাকো তুমি!”

এই বলে আরিয়া হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে। আশিক আবারও হেসে ফেলে। আরিয়া পিছু ফিরে ফের আশিককে হাসতে দেখে জেদ করে বড়ো বড়ো কদম ফেলে চলে যাচ্ছে।

“বউ আমার ভীষণ রেগে আছে। দৌঁড়ো আশিক!”

এই বলে আশিক নিজেরটা সহ আরিয়ার ব্যাগ উঠিয়ে ছুট লাগালো। ততক্ষণে আরিয়া ভার্সিটির গেটের কাছে চলে গিয়ে বেরও হয়ে যাচ্ছে! আজ বুঝি আশিকের ক*পালে ভীষণ দুঃখ আছে!

চলবে ইন শা আল্লাহ,

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৩+২৪

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৩
দেখতে দেখতে দুটো দিন পেরিয়ে গেলো। আরিয়া ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেছে সবে। আশিক গিয়েছে টিউশনিতে। আরিয়া পানি খেয়ে ফ্রেশ হতে যাবে তখনি দরজায় টোকা পড়ে। আরিয়া বসা থেকেই বলে,

“আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। পরে খাব।”

তারপর আর টোকা পড়ে না। আরিয়া ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোয়। এখন বিকেল প্রায় পাঁচটা বাজতে চলল। ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে দেখে আরিয়ার পছন্দের খাবারে টেবিল ভরপুর! আরিয়া খানিক অবাক হয়। ভাবতে থাকে, সে তো মিসেস নেহাকে তার পছন্দের আইটেমের কথা বলেনি। আরিয়ার ভাবনার মাঝে মুশফিকা হাতে কাবাবের প্লেট নিয়ে হাজির। অতঃপর বলে,

“বসো বসো। কতো লেট করে এলে। ওভেনে সামান্য গরম করেছি।”

আরিয়া অবাক হয়ে মুশফিকার দিকে চেয়ে রয়। আরিয়াকে চেয়ে থাকতে দেখে মুশফিকা আরিয়ার হাত ধরে চেয়ারে বসায়। তারপর প্লেটে গরম গরম খিচুড়ি বাড়তে বাড়তে বলে,

“দুপুরে কি কিছু খেয়েছিলে? দেখে তো মনে হচ্ছে না খেয়েছ।”

আরিয়া মৌনতা ভেঙে প্রশ্ন করে,
“এগুলো আন্টি রান্না করেছেন?”

“না। আমি রান্না করলাম। মা তো বাতের ব্যাথার জন্য এতোকিছু করতে পারবে না। বুয়ার হাতের রান্নাই সবাই খায়। তাই ভাবলাম আজ আমি রান্না করি। নাউ, শুরু করো।”

আরিয়ার ভিমড়ি খাওয়া অবস্থা! তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে মুশফিকা তার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে। আরিয়া কিছুটা কৌতুহলী হয়ে শুধালো,
“এগুলোই কেন রান্না করলে?”

“তোমার পছন্দের খাবার তো। খেয়ে দেখো, তোমার ভালো লাগবে।”

আরিয়ার সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন,
“তুমি কি করে জানলে, এগুলো আমার পছন্দের খাবার?”

এবার মুশফিকা চমকে যায়। থতমত খেয়ে কিছু বলতে নিয়েও সুর বদলে বলে,
“তোমার আন্টি বলেছেন। আমিও বা কিভাবে জানব, যদি মা না বলেন আমাকে এগুলো। তুমি কথা বলো না তো, খাও।”

আরিয়া বুঝতে পারলো যে মুশফিকা মিথ্যা কথা বলছে। কিন্তু সে আর কথা বাড়াতে চাইলো না। তার সত্যিই অনেক ক্ষুধা লেগেছে। খাওয়া-দাওয়া শেষে মুশফিকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরিয়া নিজের রুমে রেস্ট নিতে চলে গেল।

আরিয়া যেতেই মুশফিকা নিজের ঘরে গিয়ে নাহিদকে কল করলো। নাহিদ কল রিসিভ করেই প্রথমে জিজ্ঞাসা করে,
“আরিয়া খেয়েছে?”

“হ্যাঁ। খুব মজা করে খেয়েছে।”

“গুড। ওর সাথে আরও বেশি বেশি করে মিশবে। ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবে।”

“ঠিক আছে।”

“আর শোনো, আরিয়া কিন্তু প্রচুর প্রশ্ন করে। তাই কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ করে নেবে সবকিছু। তাছাড়া তুমি ইন্টেলিজেন্ট। তাই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।”

“ওকে। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আর আমার একাউন্টে….”

নাহিদ মৃদু ধ*মক দিয়ে মুশফিকাকে থামিয়ে দেয়। অতঃপর বলে,
“সেটা তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না। সময়মতো সব পেয়ে যাবে।”

“ওকে।”

মুশফিকা কল কে*টে এবার তার শাশুড়ির ঘরে যায়।

________

এদিকে পরেরদিন সকালে শ্রাবণকে সারপ্রাইজ করে দিয়ে ওর ভিসা হয়ে যাওয়ার খবর জানায় ইরাদের বন্ধু। শ্রাবণ যদিও মাঝে বলেছিল ভিসা লাগবে না। কিন্তু ইরাদই তার বন্ধুকে বলেছিল যাতে শ্রাবণের কথা না শুনে। কারণ শ্রাবনের হুটহাট পরিকল্পনা বদল হয়। মন ভালো থাকলে এক, মন খারাপ থাকলে এক। ভিসা পেয়ে শ্রাবণ সবার আগে ইরাদকে কল করে। ইরাদ রিসিভ করেই বলে,

“ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমি জানি আমি তোর অনেক বড়ো উপকার করেছি। এইযে তোর মন বুঝে ভিসার কাজ চালিয়ে যেতে বলেছি।”

শ্রাবণ হেসে বলে,
“তুই আর আদিব, এই দুইজন যে আমার লাইফে কী, সেটা আমি বলে বুঝাতে পারব না।”

“হইছে এবার থাম। প্যাকিং শুরু কর। পরশু ফ্লাইট। আর্শির বার্থডের আগেরদিন।”

ইরাদের কথায় শ্রাবণ বলে,
“তোকে সামনে পেলে….”

“ছিহ্ শ্রাবণ! তুই এখন বিবাহিত। আমারও গার্লফ্রেন্ড আছে। এসব নষ্ট কথাবার্তা বলবি না।”
বলেই ইরাদ নিজেই ফিক করে হেসে ফেলে। শ্রাবণ বলে,

“আমি ট্রিট দিতাম বলতাম। যাই হোক। থ্যাংকিউ দোস্ত। আমি তো মানা করেই দিয়েছিলাম। তুই যদি না বলতি তবে…”

“ওকে ওকে। এতো মাখন লাগাতে হবে না। আমার মেয়ের সাথে তোর ছেলের বিয়ে দিবি এটা যেন মনে থাকে।”

শ্রাবণ হেসে হেসে সম্মতি দিয়ে ফোন রাখে। এবার আর্শিকে কল লাগায়। আর্শি ঘুমাচ্ছে। ইতালিতে এখনও সূর্য উঠেনি। ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে সবে। শ্রাবণের কথায় আর্শি ফোনের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে না। যদিও শ্রাবণ তাকে বলেছে অসময়ে কল করবে না। তাও এই ছেলের কখন মুড সুয়িং হয় বলা যায় না। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর্শি হঠাৎ ফোনের রিংটোনে ধড়ফড়িয়ে ওঠে! বুকে হাত দিয়ে কয়েকবার শ্বাস-প্রশ্বাস ছেড়ে ফোন উঠিয়ে দেখে শ্রাবণ কল করেছে। আর্শি সময় দেখে হতাশ হয়ে বিড়বিড় করে বলে,

“আমার ঘুমের সাথে এর সত্যি সত্যি শত্রুতা আছে। এটা আমার ঘুমও বুঝে গেছে! ঘুমের মাঝে ফোন বাজলেই হৃৎপিণ্ডটা যেন বের হয়ে আসার অবস্থা হয়।”

ফোন বাজতে বাজতে কেটে যায়। দশ সেকেন্ড পর আবার কল আসে। আর্শি রিসিভ করে,
“হ্যালো।”

“গুড মর্নিং। তুমি এখনও ঘুমাচ্ছিলে? নামাজ পড়েছ?”

আর্শি চোখ-মুখ কুঁচকে বলে,
“মাত্র ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে। আমার এলার্ম আরও ১৭ মিনিট পর।”

“তুমি তো তাহলে ঘুমিয়ে ছিলে।”

“হুম।”

“সরি। যেহেতু উঠেই গেছো, নামাজ পড়ে নাও। তারপর কথা বলব।”

“ওকে।”

আর্শি ফোন কেটে ওজু করতে যায়।
________

নামাজ পড়ে আর্শি ফোন নিয়ে কিচেনে যায়। চা বানাবে। মোনালিসা এখনও ঘুমাচ্ছে। পাশের রুমে সোহা ও মোনাও ঘুমাচ্ছে। আর্শি তাই রান্নাঘরেই কাজ করতে করতে শ্রাবণের সাথে কথা বলছে। চা বানিয়ে কিছু ভেজিটেবলও কে*টে রাখছে।
শ্রাবণ কথার ফাঁকে আর্শির প্রতিক্রিয়া জানতে জিজ্ঞেসা করে,

” তুমি তো এক বছর যাবত ইটালিতে আছো। তোমার গত বছরের জন্মদিনটাও ইটালিতে কে*টেছে। কেমন এন্জয় করেছিলে?”

আর্শির হাসি পেয়ে যায়। সে বলে,
“আমরা ভেনিসে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমরা মানে আমরা চারজন ও দুইজন ছেলে হ্যারি ও পিটার। সেখানে ফাউন্টেন দেখে সোহার ইচ্ছে হয় শর্ট ভিডিওতে যে দেখায় ফাউন্টেনের সাথে ছবি তুলে, তেমনটা তুলবে। তো ও পিটারকে ক্যামেরার এঙ্গেল সেট করে দিয়ে দৌঁড়ে যায়। ও যেতে যেতেই ফাউন্টেন অফ হয়ে যায়। ও যতোবার যায়, ততোবারই এমন হচ্ছিলো। এদিকে আমি মোনা, লিসা ও হ্যারি হাসতে হাসতে রাস্তায় বসে পড়েছি। পিটার প্রথমে হাসছিল কিন্তু পরে ওরও একটা জেদ চাপে যে ও ছবি তুলেই ছাড়বে। দুজনের লাগাতার ধৈর্যে একটা ছবি তুলতে পারে তবে তখন ফাউন্টেন বন্ধ হবে হবে ভাব এমন।”

শ্রাবণ কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,
“তুমি তুললে না কেন?”

“সোহার মতো ধৈর্য আমার নেই। আমার তখন প্রচুর খিদে পেয়েছিল কিন্তু সোহার জন্য লেট হয়েছিল। তারপর যদি আমি আবার যেতাম তাহলে আবার লেট হতো।”

শ্রাবণ বিরস স্বরে বলে,
“তুমি এতো নিরামিষ কেন?”

আর্শি সাথে সাথে জবাব দেয়,
“নিরামিষ বেশি খাই তাই!”

“যাও! তুমি আসলেই নিরামিষ।”

“তাই ভালো। আপনি না বলেছিলেন, ছুটি ক্যান্সেল করেছেন। আপনার ফ্লাইট কবে?”

শ্রাবণ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“কালকে।”

আর্শি অবাক হয়। বলে,
“আপনি তো আমাকে জানালেন না। আপনার কথাবার্তায় তো মনে হচ্ছে না, আমি জিজ্ঞাসা না করলে আপনি আমাকে জানাতেন।”

“জানাতাম তো। তোমার কথা শুনতে শুনতেই মা*থা থেকে বেরিয়ে গেছে।”

“ভালো। ইশরাকরা কি তবে আজকে খুলনা থেকে চলে আসবে? পরশুই না গেল!”

“না। আমি মানা করেছি। পরশুই গেল। ভিডিওকলে কথা বলে নিব।”

“ওহ আচ্ছা।”

আর্শি ফোনে সময় দেখে ফের বলে,
“দেখলেন, কীভাবে কীভাবে ৫২ মিনিট হয়ে গেল। এবার রাখি। ওরা এতক্ষণে উঠে গেছে।”

“ওকে টেক কেয়ার।”

আর্শি মুচকি হাসে। বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে এতক্ষণ বানানো নাস্তা নিয়ে ছোটো টেবিলটাতে রাখে। শ্রাবণের সাথে কথা বলতে বলতে সে নিজেই আজকে নাস্তা বানিয়ে ফেলেছে।

শ্রাবণ ফোন রেখে অনলাইনে আর্শির জন্য কিছু অর্ডার করে। যাতে আজকের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়া হয় সেই ব্যাবস্থা করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৪
ইতালিতে এখন প্রায় দুপুর। আজ আগষ্টের ১২ তারিখ। আর্শি ও তার বন্ধুরা ক্যাম্পাসের রাস্তাতে হাঁটছে। এখানের রাস্তাটাও দারুণ সুন্দর। ইউনিভার্সিটির গার্ডেন থেকে চুপিচুপি কয়েকটা ল্যাভেন্ডার ফুল নিয়েছিল। এখন সেগুলোকে কানের কাছে খোলা চুলের সাথে ক্লিপ দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে। আজ তার সাঁজসজ্জাতেও আজ ল্যাভেন্ডারের ছাঁপ। একটা জর্জেটের ঘেরালো ও ফুল স্লিভসের ল্যাভেন্ডার রঙের গাউন ও কেডস। ল্যাভেন্ডার রঙের একটা শিফন ওড়না দুই প্যাঁচ দিয়ে গলায় সামনের দিকে ঝুলিয়ে রেখেছে। পিটার সামনে গিয়ে বলে,

“আশি, স্মাইল!”

পিটার ফটাফট আর্শির কয়েকটা ছবি তুলে আর্শিকে এনে দেখাচ্ছে। তখনি হুট করে একজন সামনে এসে এক মুঠো অর্কিড দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল আড়াল করে হাঁটু গেড়ে বসেছে আর্শির সামনে। আর্শি সহ ওর বন্ধুরা খানিক চমকে ওঠে। কিন্তু সামনের ব্যাক্তিটি যখন মুখের সামনে থেকে ফুলগুলো নামালো তখন আর্শির মুখাবয়বে অবাক মিশ্রিত হাসি ফুটে ওঠে। আর্শি মুখে হাত দিয়ে বিস্মিত স্বরে বলে,

“শ্রাবণ!’

শ্রাবণ ফুলগুলো নিতে ইশারা করে বলে,
“হ্যাপি বার্থডে, বৃষ্টি।”

আর্শি ফুলগুলো নিয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
“থ্যাংকিউ। বাট, আপনি এখানে?”

শ্রাবণ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“সারপ্রাইজ ছিল। তুমি খুশি হওনি?”

“হয়েছি।”

“মনে হচ্ছে না।”

আর্শির হাসি মিলিয়ে যায়। শ্রাবণ কি তবে আবার অভিমান করলো? সে তো সত্যি খুশি হয়েছে। এদিকে শ্রাবণ ভাবছে, ‘ও তো খুশি প্রকাশ করলো না!’ আর্শি শ্রাবণকে অণ্যমনা দেখে হাত ধরে বলল,

“আমি খুব খুশি হয়েছি, শ্রাবণ। আপনার কেন মনে হলো, আমি খুশি হইনি? আমি সত্যি জানিনা।”

শ্রাবণ মুখশ্রীতে হাসি ফুটিয়ে বলে,
“লেট ইট গো। তোমার ফ্রেন্ডের সাথে ইন্ট্রোডিউস করাবে না?”

“অফকোর্স।”

অতঃপর আর্শি সবার সাথে শ্রাবণের পরিচয় করায়। আর্শি বলে,
“আজকে আর আমি ক্লাস করছি না। সোহা, ক্লাস চুপিচুপি রেকর্ড করে নিস। যদিও লিসা আছে। তাও।”

শ্রাবণ বলে,
“ক্লাস করতে পারো।”

“উম.. না। চলুন তো।”

এই বলে আর্শি শ্রাবণকে নিয়ে কাছেরই একটা রেস্টুরেন্টে গেলো। নিরিবিল দেখে একটা টেবিলেই বসলো। ছিমছাম বেশ সুন্দর। আর্শি খাবার অর্ডার করে শ্রাবণের হাত ধরে শুধায়,
“আপনি আবার মন খারাপ করে আছেন? কিন্তু কেন? তাছাড়া আপনারই বা কেন মনে হল আমি খুশি হইনি?”

শ্রাবণ হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“তুমি এখনও আমাকে ভালোবাসতে পারোনি?”

আর্শি শ্রাবণের হাত ছেড়ে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। শ্রাবণ মনে মনে ছটফট করছে আর্শির বলার। মিনিট দুয়েক পর আর্শি মাথা উঠিয়ে বলে,

“আমি জানিনা, আপনার কাছে ভালোবাসার অর্থ কী? আপনার মনে নিশ্চয়ই এই ভয়টা কাজ করে যে, ও আমার থেকে অনেক দূরে আছে। যদি আমাকে ছেড়ে যায়? তাই না? কিন্তু কেন? আপনি বিয়ের আগে ভাবতেন যদি আমি(আর্শি) অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলি। তাইজন্য আমার পুরো পরিবারকে রাজি করিয়ে আমাকে রাজি করালেন। এখন বিয়ের পর ভাবছেন, যদি আমি ছেড়ে চলে যাই? কেন?”

শ্রাবণ নিজের দিকটা ব্যাখ্যা করতে চাইলো।
“তুমি ভুল ভাবছো। আমি…”

আর্শি বলতে দিলো না। থামিয়ে নিজে বলে,
“আমি সরল সম্পর্ক চাই, শ্রাবণ! আপনিই জটিল করছেন। আমি আপনার মতো অতিরিক্ত ভালোবাসতে না পারলেও ভালো যে বাসি না, এমনও না। ইউ আর মাই হাজবেন্ড। এন্ড আই লাভ ইউ। কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না। ভয় যে আমার হয় না, এমনটাও না। আমি ভয়ের জন্য…. থাক বাদ দিন। আমার মনে হয়, আপনি যতো দ্রুত নিজের জবে ঢুকবেন, ততো আপনার মনের জন্য ভালো। আপনি সারাদিন ফ্রি থাকেন বলে আপনার ব্রেণ উলটা-পালটা চিন্তায় মশগুল থাকে।”

শ্রাবণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আই থিংক সো।”

ইতোমধ্যে অর্ডার করা খাবার এসে গেছে। আর্শি নিজের প্লেট থেকে চামচে করে রাইস ও মাশরুমের এক পিস নিয়ে শ্রাবণের মুখের সামনে ধরে। শ্রাবণ নিজের প্লেটের খাবার থেকে মুখে নিচ্ছিলো তখন সামনে আর্শিকে খাবার ধরে থাকতে দেখে মুচকি হেসে খাবারটা নিয়ে নেয়। অতঃপর নিজের হাতের খাবারটা আর্শির দিকে বাড়িয়ে দেয়। আর্শি মুখে নিয়ে নেয়। খেতে খেতে বলে,

“আমরা কি হোটেল বুক করব? নাকি পিটারের বাড়িতে উঠব। যদিও পিটারকে বলিনি।”

শ্রাবণ সাথে সাথে জবাব দেয়,
“হোটেলেই উঠি। কাউকে বোদার করার দরকার নেই।”

“ওকে।”

দুজনেই দুপুরের খাবার শেষে আর্শিদের ফ্লাটের দিকে গেলো। শ্রাবণ বলল,
“তুমি উপরে গিয়ে ব্যাগ প্যাক করে নিয়ে এসো।”

আর্শি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“আপনি যাবেন না?”

“মেয়েদের অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়াটা কেমন দেখায়। তুমি ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে এসো।”

“অ্যাপার্টমেন্টে এখন কেউ নেই। তাই আপনাকে এতো লজ্জা পেতে হবে না। লম্বা জার্নি করে এসেছেন। একটু রেস্ট নিবেন। আমি এর মধ্যে ব্যাগ গুছিয়ে নেব।”

“তুমি যাও। আমি এখানে ঠিক আছি।”

“উঁহু। আমি আপনাকে সাথে করে নিয়েই যাব। আমার ব্যাগ গোছাতে কম করে হলেও আধা ঘন্টা লাগবে। ততক্ষণ আপনি নিচে দাঁড়িয়ে থাকবেন? আশেপাশের লোকজন তখন কিছু ভাববে না? শুধু অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকলেই ভাববে? আমি দারোয়ানকে বলে যাবো তো।”

“আচ্ছা চলো!”

শ্রাবণ বাচ্চাদের মতো মুখ করে রাজি হয়। যা দেখে আর্শি হালকা হেসে শ্রাবণের গুছিয়ে রাখা চুলগুলো খানিক এলোমেলো করে দিয়ে দারোয়ানকে বলে উপরে গেলো।

_______

সন্ধ্যায় আরিয়া বিছানায় হেডবোর্ডের সাথে আরাম করে বসে পড়ছিল। আর আশিক নিজের ডেস্কে বসে। তখন দরজায় নক হলে আরিয়া বলল,
“উঠো। দরজা খুলে দেখো।”

আশিক উঠে দরজা খুলতে গেলো। দরজা খুলে দেখলো মুশফিকা দাঁড়ানো। হাতে একটা ছোটো ট্রেতে দুই মগ কফি। মুশফিকা হেসে বলল,
“দরজা ধরেই দাঁড়িয়ে থাকবে?”

আশিক হাসার চেষ্টা করে সরে দাঁড়ায়। মুশফিকা রুমে প্রবেশ করে আরিয়ার কাছে বসে। আরিয়াকে এক মগ কফি দিয়ে আরেকটা আশিককে নিতে ইশারা করে। ফের বলে,

“তোমরা পড়ছিলে, তাই ভাবলাম তোমাদের জন্য কফি করে আনি।”

আশিক আরিয়ার দিকে তাকায়, আরিয়া আশিকের দিকে তাকায়। তারপর আরিয়া ওষ্ঠকোণে কৃতিম হাসি টেনে বলে,
“তুমি কেন কষ্ট করতে গেলে, ভাবি। আমাদের দরকার পড়লে আমরা বানিয়ে নিতাম।”

“এটা আবার কষ্ট কী? আমি কি আমার দেবরের মতো ভাই, ও দেবরানীর মত বোনের জন্য এটুকুও করতে পারি না?”

“না পারো। তুমি তো সারাদিন রান্না করেছো। এখন রেস্ট নিবে। তিন-চার দিন যাবত তো তুমিই রান্না করছো। কতো কষ্ট করছো।”

“আরে তেমন কিছু না। চপিং সব তো মেইড করে দেয়। আমি শুধু দুটো আইটেম রান্না করি। ডালটা আবার মা রান্না করেন। ওটা নাকি বাবার খুব পছন্দের।”

“তাও তো করছো। আমি তো শুক্রবার, শনিবার ছাড়া সুযোগই পাই না।”

“তাহলে ওই দুইদিন তুমি রান্না করো। বাকি পাঁচদিন আমি রান্না করলাম। দুই জা তে মিলেমিশে রান্না করলাম।”

মাঝ থেকে আশিক বলে,
“এটা আপনি ঠিক বলেছেন, ভাবি।”

মুশফিকা খানিক মশকরা করে বলল,
“দেখেছ আরিয়া, আশিক চায় তোমার হাতের রান্না খেতে। তাই বলছে।”

আশিক মাথা নুইয়ে লাজুক হেসে ডেস্কের কাছে চলে যায়। আশিককে লজ্জা পেতে দেখে আরিয়াও লজ্জা পায়। মুশফিকা তাড়া দিয়ে বলে,
“আচ্ছা, তাহলে তোমরা পড়ো। আমি যাই এবার। তোমাদের আর ডিস্টার্ব না করি।”

আরিয়া বিপরীতে মুচকি হাসে। মুশফিকাও চলে যায়। আরিয়া দরজা লাগিয়ে এসে আশিকের ডেস্কের কাছে গিয়ে বলে,
“আমার না ভাবির মতিগতি কিছুই বুঝে আসছে না। উনি আমাদের সাথে যেরকম বিহেভ করছে, উনি কি আসলেই তেমনটা? আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।”

আশিক অভয় দিয়ে বলে,
“তুমি এত নেগেটিভ ভাবছ কেন? ভাবি আমাদের সবাইকে আপন করে নিতে চাইছে।”

“আরে, মা*থামো*টা!”

আরিয়া কথাটা বলা মাত্রই আশিক সরু দৃষ্টিতে চাইলে আরিয়া এক কানে হাত দিয়ে বলে,
“সরি! তোমার ভাইয়া যে হুট কর বিয়েটা করেছে। নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে। আবার তোমার ভাবি যে এত ভালোমানুষি দেখাচ্ছে এরও কোনো কারণ আছে। নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে, ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।’ এর পিছনেও কিছুতো আছেই।”

আশিক কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে,
“দয়া করে, তুমি এসব চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে পড়ো। তোমার না পরীক্ষা?”

“পাত্তা দিচ্ছো না-তো?”

“না দিচ্ছি না। যাও পড়তে বসো।”

আরিয়া গাল ফুলিয়ে নিজের জায়গায় এসে বসে। থেমে থেমে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর চিন্তা করছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২১+২২

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২১
শ্রাবণ বাহিরে বের হবে বলে রেডি হচ্ছিলো। তখন কল আসাতে ফোনটা বিছানা থেকে উঠিয়ে আর্শির নাম্বার দেখে খানিক অবাকের সাথে মৃদু হাসেও। রিসিভ করে প্রথমেই বলে,

“কী ব্যাপার? আজকে এই সময় কল করলে? তুমি এখন ভার্সিটিতে না?”

সোহা মুখ চেপে হাসে খানিক। ফোন লাউডস্পিকারে দেওয়ার দরুণ আর্শি প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে মুখ খুলবে, তার আগেই সোহা আর্শির মুখ চেপে ধরে প্রথমে সালাম দিয়ে বলে,

“ভাইয়া, আমি আর্শির ফ্রেন্ড সোহা। ফোনটা আর্শির ফোন থেকে আসলেও ফোনটা আমি করেছি। আর্শি করেনি।”

শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে সালামের জবাব দিয়ে বলে,
“একচুয়ালি আমি…”

কথা সম্পূর্ণ করার আগেই সোহা মাঝে বলে ওঠে,
“আপনি বুঝতে পারেননি। তাই তো? আসলে আমিই আর্শিকে জোর করেছি, যে এখন কল করি। আমাদের এখন লাঞ্চ ব্রেক তো। মানে একচুয়ালি লাঞ্চ ব্রেক না। এমনিই ক্লাস ব্রেক। আমরা একটু পর লাঞ্চ করব আরকি!”

শ্রাবণ খানিক হাসার চেষ্টা করে বলে,
“ওহ আচ্ছা।”

সোহা মোটেও দমবার পাত্রী নয়! সে ফের বলে ওঠে,
“আপনি লাঞ্চ করেছেন না, ভাইয়া?”

“জি।”

“আপনার সাথে একটু গল্প করতে ফোন করলাম। আপনি কি বিজি?”

শ্রাবণ সৌজন্যে বলে,
“না না, আপু। এমনিই একটু…”

আবার শ্রাবণকে তার পুরো কথা শেষ করতে দেয় না সোহা! পুনরায় বলে,
“আপনার ও আর্শির বিয়ের সম্পর্কে আগে থেকে জানতাম না। হুট করে আর্শি বলে যে ওর বিয়ে হয়ে গেছে। মানে টোটালি একটা সারপ্রাইজিং ব্যাপার। আপনার সাথে পরিচয়ও নেই। শ্যালিকা হিসেবে দুলাভাইয়ের সাথে একটু টুকটাক পরিচয় থাকতে হয়। তাই না?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ!”

“তো ভাইয়া আপনি বিয়ের পরপরই বউকে এতো দূরে একা পাঠিয়ে দিলেন! একসাথে টাইম স্পেন্ড করারও তো একটা ব্যাপার আছে।”

সোহার কথায় এবার আর্শি ভীষণ বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
“শ্রাবণ, আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে কল করব। একচুয়ালি আমার ফোনের ব্যাটারি প্রায় ডেড! টুকটাক কিছু খেয়ে লাইব্রেরীতে গিয়ে একটু চার্জ দিবো ফোনটা।”

শ্রাবণ স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে,
“ওকে। আমিও একটু বেরোচ্ছি।”

“ওকে। সাবধানে যাবেন। টাটা।”

শ্রাবণও ‘বায়’ জানায়। আর্শি কল ডিসকানেক্ট করে সোহার গ*লা চে*পে ধরে বলে,
“এই তুই এতো বকবক কীভাবে করিস রে? কী সব বলছিলি? আজব!”

সোহা নিজের কাঁধের কাছের চুলগুলো পিছনে ঠেলে ডোন্টকেয়ার মুডে বলে,
“কী এমন বললাম? একটু আলাপ করছিলাম, যা তোর পছন্দ হলো না। আর ইউ জে*লাস, বেবি!”

আর্শি মুখ কুঁচকে নেয়। আর বলে,
“জেলাস! তাও তোর এসব ননসেন্স কথাবার্তায়! শ্রাবণ লিটারেলি বিরক্ত হচ্ছিলো।”

সোহা খানিক অভিমানের ভাণ ধরে।
“মোটেও না। ভাইয়া কী সুন্দর করে আমার প্রত্যেকটা কথার জবাব দিচ্ছিল।”

“তোর মা*থা। সে জাস্ট ভদ্রতা দেখাচ্ছিল।”

“হুহ্”

“উঠ এবার। লিসা ও মোনা চলে এসেছে।”
বলতে বলতে আর্শি উঠে দাঁড়ায়। সাথে সোহাও। এরপর ওরা ক্যান্টিনের দিকে হাঁটতে থাকে।

________

শ্রাবণ তার বোন, বোনজামাই ও ভাগ্নেকে নিয়ে এসেছে একটা পার্কে। এসেই ফুচকা অর্ডার করে। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে শুধায়,
“ভাইয়া, তুমি ফুচকা খাবে?”

“হ্যাঁ।”

“তুমি ফুচকা খাও? কখনো তো খেতে দেখলাম না!”

শ্রাবণ আমতা আমতা করে উত্তরে বলে,
“কখনো খাইনি তো কি হয়েছে? এখন খাব! ফুচকা খাওয়া তো আর নিষিদ্ধ কিছু না! এটা খুব টেস্টি একটা খাবার।”

“আমি জানি এটা খুব টেস্টি একটা খাবার। কিন্তু তোমাকে কখনোই খেতে দেখিনি। তোমার মনে আছে, স্কুলে যে তুমি আমাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে দেখেছিলে তখন তুমি কলেজ থেকে ফিরছিলে। আমাকে ফুচকা খেতে দেখে তোমার সেই কী রাগ! বলেছিলে, ‘এই পচা পানিতে চুবিয়ে মানুষের পায়ের ময়লা দিয়ে বানানো ফুচকা খাচ্ছিস? তোর পেট খারাপ হবে না তো? কার পেট খারাপ হবে?’ আর আজ সেই তুমি! নিজে ফুচকা খাচ্ছ!”

শ্রাবণ থতমত খেয়ে আশেপাশে তাকায়। অতঃপর ফুচকাওয়ালার দিকে নজর যেতেই দেখে ছেলেটা তার দিকে কেমন কেমন করে দেখছে! শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,

“একসময় পছন্দ ছিল না। এখন পছন্দ হয়েছে। মানুষের পছন্দ বদলাতেই পারে। তাই না?”

স্নিগ্ধা মাছি তাড়ানোর মতো করে বলে,
“তোমার পছন্দ আবার বদলায়! হাহ্! বলো, আজ সূর্য হয়তো বিপরীত দিকে উঠেছে! তাই তোমার আজ ফুচকা খেতে মন চেয়েছে। সমস্যা নেই। খাও।”

শ্রাবণ আর তার বোনের সাথে কথা বাড়ালো না। ফুচকাওয়ালা ছেলেটাকে বলল,
“শোনো, বোম্বাই দিয়ে বানাবে। ঝাল ঝাল যেন হয়। খুব মজা করে বানাবে কিন্তু।”

স্নিগ্ধার চোখ যেন এবার কপালে ওঠার জো*গার! সে তার স্বামীকে ধরে বলে,
“এই শোনো, আমাকে একটা চি*মটি কা*টো তো! আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। কী হচ্ছে আশেপাশে! ভাইয়ার কী হলো?”

ইরফান সত্যি সত্যি চি*মটি কে*টে বসলো। তার বউ এই প্রথমবার তাকে চি*মটি কা*টতে বলেছে! তাও স্বেচ্ছায়! এই সুযোগ সে কিভাবে মিস করতে পারে! চি*মটিটা বোধহয় বেশ জোরেই ছিল! স্নিগ্ধা মৃদু চিৎকার করে ইরফানের বাহুতে দুটো কি*ল বসাতে বসাতে বলে,

“এত জোরে চি*মটি কা*টতে বলেছি তোমাকে? আস্তে কা*টা যেত না?”

ইরফান নিজের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে মিনমিন করে বলে,
“সরি! বুঝতে পারিনি।”

বাবা-মায়ের এই কান্ড দেখে ইশরাক মুখ চেপে হাসছে। এদিকে শ্রাবণ ফুচকার অপেক্ষায়। আজ সে আর্শিকে দেখিয়ে দেবে, সেও ঝাল ঝাল বোম্বাই ম*রিচ দিয়ে ফুচকা খেতে পারে। এদিকে ফুচকাওয়ালা ছেলেটার স্নিগ্ধার কথাগুলো ইগোতে খুব লেগেছিল। তাই সে ভেবে নিয়েছে, শ্রাবণের ফুচকাতে সে ভর্তি করে মরিচ দেবে! বেচারা শ্রাবণ তো আর ফুচকাওয়ালার মনের খবর রাখে না!

তিন প্লেট ফুচকা চলে আসার পর শ্রাবণ, স্নিগ্ধা ও ইরফান নিজেদের প্লেট নিয়ে নেয়। ইশরাক এদিকে চকলেট খাচ্ছে। স্নিগ্ধা তো ফুচকা দেখেই প্রথমে একটা টপ করে মুখে পু*ড়ে নিলো। ইরফানও আস্তে আস্তে খাচ্ছে। কিন্তু শ্রাবণ একটা ফুচকা হাতে নিয়ে ফুচকার চেহারাটা ভালো করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে! আর নিজের বোন ও বোন জামাইয়ের প্লেটের দিকেও তাকাচ্ছে। তার প্লেটের ফুচকাগুলো একটু ভিন্ন ভিন্ন লাগছে। মনে হচ্ছে, কাঁচা-পাকা মরিচের পরিমাণটা খানিক বেশি!
ভাইকে এভাবে তাকাতে দেখে স্নিগ্ধা ইশারায় খেতে বলে। শ্রাবণ ঢোক গিলে স্নিগ্ধা কীভাবে খাচ্ছে তা দেখে সেটা অনুসরণ করে একটা মুখে দেয়। সাথে সাথে তার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড়ো বড়ো হয়ে যায়! ফুচকাওয়ালা ছেলেটা এইটা দেখে নিজের গলার গামছাটা একটু ঝাড়া দিয়ে আবার গলায় পড়ে নেয়। শ্রাবণ একবার ভাবছে, মুখ থেকে ফেলে দিবে নাকি খেয়ে নিবে। তার জিহ্বা জ্ব*লে যাচ্ছে! স্নিগ্ধা বিষয়টা লক্ষ্য করে মুখেরটা গি*লে বলে,

“কী ভাইয়া? এমন দম ধরে বসে আছো কেন? মুখেরটা গি*লো।”

শ্রাবণ অসহায় দৃষ্টিতে জোরপূর্বক হেসে কোনোমতে গি*লে নেয়। অতঃপর মুখ চেপে ধরে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রেখেছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে জলও গড়াতে শুরু করেছে। স্নিগ্ধা মিটিমিটি হেসে তার ভাইয়ের প্লেট থেকে একটা ফুচকা উঠিয়ে সুন্দর করে টক পানিতে ডুবিয়ে বলে,

“একটা খেয়েই এই অবস্থা তোমার? আমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখো, আর মাত্র দুইটা বাকি আছে। তুমি একটা খেয়েই কেঁদে ভাসাচ্ছো। নাও নাও, আরেকটা জলদি জলদি মুখে পু*ড়ে নাও! রেশ থাকতে থাকতে খেয়ে ফেললে ঝালটা কম লাগে।”

এই বলে স্নিগ্ধা তার ভাইয়ের মুখে থেকে হাতটা সরিয়ে আরেকটা ফুচকা মুখের ভেতরে ঠু*সে দিলো। এবারেরটা শ্রাবণ আর গিলতে পারল না! সে মুখ থেকে ফেলে দিয়ে এক হাত মাথায় দিয়ে ফুচকাওয়ালার মাঝারি সাইজের পানির কলসিটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো। স্নিগ্ধা তো হেসেই পড়ে যাচ্ছে। ইরফান প্লেট রেখে এগিয়ে গিয়ে শ্রাবণের পিঠে আলতো মালিশ করছে। ইশরাকও তার মামার অবস্থায় একটা চকলেট এগিয়ে দিলো। শ্রাবণও সেটা লুফে নিলো।

ফুচকাওয়ালা ছেলেটা বলে,
“মামা আফনেই তো কইলেন, বেশি বেশি কইরা বোম্বাই ম*রিচ ঝাল দিতে। আমি তো তাই দিছি। আফনে কইবেন না, যে আপনি জাল খাইতে পারেন না। কইলেই তো আমি আঢনেরে ম*রিচ দিতাম না।”

শ্রাবণ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“তুমি আমার প্লেটে এত মরিচ দিয়েছো? ওরা তো ঠিকই খেতে পারছে।”

“আফনেই না কইলেন! নাইলে আমার কি এতো শখ! নিজের বিজনেসের লস করমু! মরি*চের দাম জানেন আফনে!”

ইরফান বলে,
“হয়েছে হয়েছে। তোমার কত টাকা হলো?”

“তিনটা প্লেটের ১৫০ টাকা।”

ইরফান নিজের মানিব্যাগ খুলে টাকা দিতে নিলে শ্রাবণ বাধা দেয়। বলে,
“আমি তোমাদের ফুচকা খাওয়াতে এনেছি। সো বিলটা আমি দিবো।”

অতঃপর শ্রাবণ ফুচকাওয়ালার বিল মিটিয়ে চলে যেতে নিলে স্নিগ্ধা বলে,
“দাঁড়াও ভাইয়া, ফুচকাগুলো খেয়ে নেই। তোমরা খেতে না পারো, আমি তো খেতে পারবো। আমি তো ঝাল খেতে পারি।”

বলেই স্নিগ্ধা প্রথমে ইরফানের প্লেটের বাকি ফুচকা গুলো খেয়ে নেয়, তারপর শ্রাবণের প্লেটের একটা মুখে নিয়ে বলে,
“এটা একটু বেশি ঝাল তবে মজাও।”

স্নিগ্ধার খাওয়া দেখে শ্রাবণ মাথায় হাত দিয়ে টুলে বসে পড়ে। ভাবতে থাকে, আর্শির সাথে যদি ফুচকা খেতে যায়, আর এরকম ঝালের ফুচকা যদি খেতে দেয়। সে তো খেতে পারবে না। তখন আর্শি তার মজা উড়াবে! ভেবে ভেবেই মনে মনে ভীষণ দুঃখ পেলো শ্রাবণ! স্নিগ্ধার খাওয়া শেষ হলে ওরা চারজন পার্কে হাঁটতে থাকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২২
হোটেল থেকে বেরিয়ে কিছুটা হাঁটতেই আরিয়ার মন ভালো হয়ে গেলো। হোটেলে ঢোকার সময় আশিকের সাথে তর্ক করতে করতে ঢুকেছিল। বেচারা আশিক তর্কে হার মেনে নিয়েছিল যদিও। দুজনে এখন হালকা ভেজা সবুজ ঘাস সম্বলিত রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। একটা দোকানে বসে চা খেয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। এখন একটু উঁচু জায়গা থেকে সূর্যাস্ত দেখার অভিলাষে যাচ্ছে। তাদের রিসোর্টটাও সুন্দর। রাতে সেখানে বসে দুজনে তারা দেখবে। পড়ন্ত বিকেল। দুজনে একে অপরের হাত ধরে নিরবে হাঁটছে। কোলাহোলও বেশ কম। আরিয়া নিরবতা ছিন্ন করে বলে,

“আশিক, আমাদের বিয়ে হলো দুই সপ্তাহ হলো। তাই না?”

“আকদের দুই সপ্তাহ।”

“ওই একই। এই দুই সপ্তাহে আমি তোমার সাথে বেশিরভাগ সময় ঝগড়াই করেছি। তাই না?”

আশিক নিরবে হাসে। আরিয়া হালকা ঝুঁকে আশিককে হাসতে দেখে নিজেও হাসে। অতঃপর বলে,
“বিয়ের আগে আমাকে দেখে তোমার মনে হতো, আমি এত ঝ*গড়ুটে?”

আশিক জবাবে বলে,
“মোটেও না। তুমি সবসময় শান্ত থাকতে।”

আরিয়ার পালটা প্রশ্ন,
“তাহলে এখন কি তোমার মনে হচ্ছে না, যে মেয়ের প্রেমে পড়েছিলে, এই মেয়েটা সেই মেয়েটা না!”

“না। আমি এন্জয় করি এসব। খালুজান আমাকে একটা কথা বলেছিল, ‘মেয়ে জাতি ইচ্ছে করে পুরুষকে রাগায় যাতে তাদের ধৈর্য দেখতে পারে। কারণ পুরুষের রাগ ভয়ানক। আবার ভালোবাসাও। রাগটা নারীকে না দেখানোই শ্রেয়।’ তাও অনেক অনেক সময় পারিপার্শ্বিক কারণে রাগটা দেখিয়ে ফেলি।”

আরিয়া লাজুক ও নিরব হাসলো। অতঃপর আশিকের হাত ছেড়ে বাহু জড়িয়ে সামনের দিকে চেয়ে প্রশস্ত হেসে নির্বিকারে হাঁটতে লাগলো। যেন আশিক কিছু বললেও তার কিছু যায় আসে না। আশিকও চো*রা হাসে। আজ সূর্যাস্তটা বুঝি আরও রাঙাবে!

________

পরদিন রাতে আর্শি শ্রাবণের সাথে কথা বলছে। তখন শ্রাবণ বলে,
“তোমার কাছে কোনো নীল শাড়ি আছে?”

“না। কেন?”

শ্রাবণ অবাক হয়ে শুধায়,
“সত্যি নেই? মেয়েরা তো নীল শাড়ির প্রতি দিওয়ানা থাকে। ওরা নিজেদের আকাশের রঙে সাঁজাতে চায়।”

আর্শি গালে হাত দিয়ে বলে,
“আমি তো শাড়িই পড়ি না। আমার নিজস্ব শাড়ি বলতে এখন দুটো। একটা হালকা টিয়া রঙের। আরেকটা আকদেরটা। শাড়ি সামলানো সো টাফ।”

শ্রাবণ মৃদু ধ*মকে বলল,
“কীসের টাফ! কোনো টাফ না। তুমি শাড়ি পড়বে।”

আর্শিও মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“পড়ব না। আমার ভাল্লাগে না। আরুর বিয়ের দিন মায়ের অনেক বলার পর পড়েছি। এখন আপনি এসব বলবেন না তো!”

“আমি তোমাকে শাড়িতে দেখতে চাই। তাই চিন্তা করছি…”

আর্শি শ্রাবণকে কথাে মাঝপথেই থামিয়ে বলে,
“আপনার চিন্তা আপনি আপনার কাছেই রাখেন! আমি শাড়ি পড়ছি না। বায়!”

বলে কল কেটে দিলো। পাশে সোহা গালে হাত দিয়ে বসা। সোহা বলল,
“এমন করিস কেন? তোর শাড়ি পড়া যে কয়েকটা ছবি দেখেছি, তোকে কিন্তু শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগে।”

“লাগুক। আমার ঝামেলা লাগে। আর তুই এই লোককে চিনিস না। আমার তো ভয় হচ্ছে, এ না আমার জন্য খালি শাড়িই আনে! অনেক জেদি সে।”

সোহা উঠে দাঁড়ায়। রুম থেকে বেরোতে বেরোতে বলে,
“তোর কি জেদ কম নাকি! কথায় আছে না, যেমনটার সাথে তেমনটা মিলে!”

“কী বললি তুই?”
আর্শি ক্ষেপে গেলো। তেড়ে যেতেই সোহা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। আর্শি মুখ গোমড়া করে কিছুক্ষণ বসে থেকে বই নিয়ে বসে।

________

দুইদিন পর আরিয়া ও আশিক ঢাকায় ফিরে এসেছে। ওরা একদিন আরও বেশি থেকেছে। সাজেক দুই রাত থেকে পরদিন নীলগিরিতে গিয়েছিল। ভেবেছিল সাজেকে একরাত থাকবে কিন্তু আরিয়ার কারণে বেশি থাকতে হলো। এসেই দেখে নাহিদ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসা! নাহিদের পাশে একটা মেয়ে লাল শাড়ি পড়ে বসা। অপরপাশের সোফায় মিসেস নেহা ও হাসান আহমেদ গম্ভীর মুখে বসে আছেন। কাজের মেয়েটি আরিয়া ও আশিকের জন্য দরজা খুলে দিয়ে বলে,

“ছোটো ভাই, ভাবি, বড়ো ভাইয়ে তো বিয়া কইরা লইয়া আইছে। ওইযে দেহেন পাতলা শাড়ি পইড়া বইসা আছে মাইয়াটা, বারবার ঘোমটা ঠিক করার নামে কী যে করতাছে! চাচায় তো বহুত রাইগ্গা আছে।”

আশিক বলে,
“খালামণিও মানছে না?”

কাজের মেয়েটি জবাব দেয়,
“আফনে কোনোদিন চাচিআম্মারে দেখছেন, বড়ো ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু কইছে? আইজও কিছু কয় না। চাচাজানরে মানানোর চেষ্টা করতাছে।”

আরিয়া বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এখন যাও।”

কাজের মেয়েটি চলে যেতেই আরিয়া আশিককে বলে,
“তুমি ড্রয়িং রুমে উনাদের কাছে গিয়ে বসো না হয়। আমি ব্যাগ পত্র নিয়ে রুমে যাচ্ছি। আর শোনো, ছেলের বউ মানবে কি মানবে না। এটা উনাদের ব্যাপার। তুমি কিছু বলতে যেও না।”

“হুম। ভাইয়া এমনিতেই আমার উপর ক্ষ্যাপা।”

আরিয়া ব্যাগ নিয়ে রুমে চলে গেলো। আশিক ড্রয়িংরুমে যেতেই মিসেস নেহা উঠে এসে ধিমি স্বরে বলেন,
“তোর খালুকে একটু রাজি করা না, বাপ। তোর খালু মানবে না বলে দম ধরে বসে আছে। তোর ভাইও জেদ ধরে বসে আছে। আমি কী করব?”

“ভাইয়ার বিয়ে তো তোমরা একসময় না একসময় দিতেই। আর তোমরা এও জানো ভাইয়ার পছন্দ করা মেয়ের সাথেই বিয়ে দিতে হতো। তাহলে এখন মানছে না কেন?”

“মেয়েটা তোর খালুর সিলেটের অফিসের।”

“এজন্যই মানছে না? দাঁড়াও কথা বলি। তুমি খালুকে একটু উনার রুমে আসতে বলো।”

“আচ্ছা।”

ওদিকে নাহিদ আশিককে দেখে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। আশিককে এখন তার সহ্য হয় না। কিন্তু তারই বাবা-মা আশিককে মাথায় তুলে রাখে।
মিস্টার হাসান স্ত্রীর কথা শুনে নিজের রুমে যান। সেখানে আশিক জিজ্ঞাসা করে,

“খালু, ভাইয়া যখন বিয়েটা করেই ফেলেছে তাহলে….”

“থাম তুই। জানিস তুই মেয়েটার ব্যাপারে কিছু? আমার অফিসে রিসেপশনে বসে মেয়েটা। সেটা আসলে সমস্যার কথা না। তোর কী মনে হয়, অফিসের কানাঘুষা আমি কিছু জানি না? মেয়েটার সম্পর্কে ভালো কোনো কথা আমার কাছে আসেনি। আমি মেয়েটাকে কয়েকবার সাবধান করেছিলাম। অফিস কাজের জায়গা এখানে এসে রং-তামাশা করার না। আর তোর ভাই সেই মেয়েকেই বিয়ে করে এনেছে।”

“কিন্তু খালু, এখন তো কিছু করার নেই। বিয়েটা তো হয়ে গেছে। আর ভাইয়ার জেদ তো তুমি জানোই। এখন যদি তুমি কিছু না মানো তাহলে হিতে বিপরীত হবে।”

“কিন্তু এই মেয়েকে ঘরে তুললে অশান্তি আরও বাড়বে।”

“কিন্তু ঘরে যদি না তোলো, ভাইয়া তো এই মেয়েকে নিয়েই অন্য কোথাও থাকবে। এখন যদি এই মেয়েটার ভাইয়াকে কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে সে বাহিরে থাকলে আরও বেশি করতে পারবে। ঘরে থাকলে কিছু তো ভয়ে থাকবে।”

“তুই আর তোর খালা, দুজনেই নরম মনের। তোর ভাইয়ের কোনো ক্ষতি এই মেয়ে করবে না। তোর ভাই এই মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে আমাদের উপর শো*ধ তুলতে।”

“কী আর শো*ধ তুলবে? আমাকে ও আরিয়াকে বাড়ি ছাড়া করবে তো? ভাইয়া যদি বলে তাহলে আমি আজকেই আরিয়াকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাব।”

“খবরদার! তোর মাকে তোর খালা কথা দিয়েছে, তোকে কখনো নিজের ছেলের থেকে নিচু নজরে দেখবে না।”

মিস্টার হাসান কষ্ট থেকেই কথাটা বললেন। আশিক মলিন হেসে তার খালুর কাঁধে হাত রেখে বলে,
“মেনে নাও। যার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। ভাইয়া এমনিতেই তোমাদের উপর রাগ। এখন যদি তোমরা মেনে না নেও, তাহলে সেই রাগের আগু*নে আরো ঘি পড়বে।”

মিস্টার হাসান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে হতাশ কণ্ঠে বলেন,
“এই ছেলেই আমার নাম ডুবাবে!”

অতঃপর রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে যান। আশিকও পিছু যায়। তিনি ড্রয়িংরুমে গিয়ে বলেন,
“তোমাদের মেনে নিলাম কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে। মুশফিকা(নাহিদের বউ) আর অফিসে যাবে না। যদি মানতে পারো তবেই মুশফিকা এই বাড়িতে থাকবে। নয়তো না।”

নাহিদের জবাব দেওয়ার আগে, মুশফিকাই জবাব দেয়,
“আমি রাজি, বাবা। আপনি যে আমাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়েছেন এটাই তো অনেক।”

মুশফিকার কণ্ঠে এত নম্রতার ছাঁপও মিস্টার হাসানের মন গলাতে পারেনি। তিনি বলেন,
“নাহিদ, তুমি তোমার বউকে নিয়ে তোমার ঘরে যাও। অনেক রাত হয়েছে।”

নাহিদ কিছু না বলে মুশফিকার হাত ধরে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১৯+২০

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর শ্রাবণ বলে,
“সরি!”
আর্শির মন কৌতুহলী হয় ভীষণ। হঠাৎ শ্রাবণ তাকে সরি কেন বলছে? সে শুধায়,
“হঠাৎ সরি বলছেন কেন?”

“আমি ভাবছিলাম, তুমি আমাকে পছন্দ করো না বলে…”

কথার মাঝে শ্রাবণকে থামিয়ে দিয়ে আর্শি চটপট বলে ওঠে,
“কী ভাবছিলেন? এটাই যে, আমি যেভাবেই হোক আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই?”

শ্রাবণ চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আর্শি জবাব না পেয়ে বলে,
“আপনি আমাকে আগে যেভাবে ভালোবাসতেন, এখনও তেমন ভাবেই ভালোবেসে যান। আমি কথা দিচ্ছি, আমি অন্তত অন্যকারও প্রতি আসক্ত হবো না। আই নিড অ্যা লয়াল ম্যান, হু লাভস মি মোর দেন আই লাভ হিম।”

শ্রাবণের হৃদপ্রাঙনে উত্তাল ঢেউ বইলো। মনের মধ্যে থাকা অশান্তি গুলো যেন কর্পূরের ন্যায় উড়ে যেতে লাগলো। বাকরুদ্ধ অবস্থা তার। আর্শির কথার বিপরীতে যে মুখ ফুটে কিছু বলবে, সেই শক্তিটাও পাচ্ছে না। আর্শি অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে শ্রাবণের জবাবের। তার মনে খুঁতখুঁত করছে। আর্শি মনে মনে বলে,

“প্লিজ শ্রাবণ, কিছু তো বলুন। ভালোবাসা পাওয়ার থেকেও আমার বেশি ভয় ধো*কার! আমি চি*টেড হতে চাই না। আমাদের মাঝে দূরত্ব থাকাটাই যে বেশি ভয়ের। আমার পার্সপেক্টিভ আপনি বুঝলে আমাকে এই ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো না।”

ফোনের দুই পাশে দুইজনই নিরব। শ্রাবণ বেডরুম থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় গিয়ে বসলো। বারান্দায় বসে প্রাকৃতিক শীতল হাওয়ায় ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বলল,

“তুমি শুধু আমার হয়ে থেকো। আমি তোমায় যেকোনো পরিস্থিতিতে আগলে রাখব।”

শ্রাবণের কণ্ঠে হয়তো মা*দকতা ছিল, নয়তো আর্শি লজ্জা পেয়ে ফোন কান থেকে নামিয়ে রাখতো না। অপরদিকে শ্রাবণও প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা করছে। সে “হ্যালো! হ্যালো!” করতেই আর্শি ফোন কানে নিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,

“ভালোবাসতে আমার সময় লাগবে। আবার এমনও হতে পারে, পরমুহূর্তেই ভালোবেসে ফেললাম!”

“আমি আরও ধৈর্যশীল হবো।”

হাসলো আর্শি। অতঃপর বলল,
“আমাদের মাঝে এই যে বর্গমাইল বর্গমাইল দূরত্ব! রূপকথার ভাষায় বলা যায়, সাত সমুদ্র তেরো নদীর দূরত্ব! এটাও তো বুঝতে হবে। গানে-কবিতায় বলে, ‘দূরত্ব নাকি ভালোবাসা বাড়ায়।’ যেমন বাড়ায় তেমনি শেষও করে। একটু সহ্য করে নিয়েন। আমার স্বভাব আপনার জানা। সব জেনেই তো ভালোবেসেছেন।”

“হুম। তুমি এক বছর স্টাডিতে মনোযোগ দাও। আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হলে চলে যাব তোমার কাছে।”

দুজনের মুখে লেগে আছে মানসিক প্রশান্তি। একজনের অপেক্ষার, আরেকজনের ভরসার। অপেক্ষা ও ভরসা, দুইই তো ভালোবাসার পূর্ণরূপ।

________

“আশিক! তুমি বাসের পেছনের দিকে সিট নিয়েছ কেন?”

আরিয়া একটু জোড়েই বলাতে আশিক থতমত খেয়ে যায়। ঢোক গিলে বলে,
“সামনের বা মাঝের দিকে পাইনি। কিছু হবে না। আমাদের সিটের পর আরও দুটো সারি আছে তো।”

আরিয়া তেড়ে এসে বলে,
“আমার ভমিটিংয়ের প্রবলেম আছে। এটা আবার এসি বাস। যদি….”

আরিয়ার বলা প্রথম কথাটাতেই আশিক আঁতকে ওঠে! সে বিস্ময় নিয়ে বলে,
“কী বলছো! তোমার বমি হবে? প্লিজ প্লিজ! বমি করো না। দেখো বমির গন্ধ আমার সহ্য হয় না।”

“সিট নেওয়ার সময় এটা মা*থায় আসেনি?”

“আমি কি জানতাম নাকি! তুমিও তো বলোনি।”

“আমার সবসময় বমি হয় না। আমার মাঝেমাঝে হয়। ঝাঁকিতে হয়। জার্নিতে আমি আপুর কাঁধে সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকি।”

আশিক তাড়াহুড়ো করে বলে,
“আমার কাছে বমির ঔষুধ আছে। দেই? খেয়ে নাও। আর আমার কাঁধে ঘুমিয়ে থেকো। ঘুমের ঔষুধও আছে। ওটা খাবে? তাহলে ঝাঁকি টেরও পাবে না। তুমি আমার কোলেই ঘুমিয়ে থেকো।”

আরিয়া চোখ-মুখ কুঁচকে আশিকের বাহুতে মে*রে বলে,
“এতো ভয় পাচ্ছো কেন? এতো ভীতু হলে চলবে? তোমার বউ একটু বমি করবে, তুমি সামলাতে পারবে না?”

“সত্যি বলতে, না! আমার এসবে পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। মেডিসিন দুটো খেয়ে নাও। স্লিপিং পিলটা মাইল্ড। কিছু হবে না। তোমারও কষ্ট কম হবে।”

আলো আঁধারিকে আশিকের অসহায় মুখশ্রী দেখে আরিয়া হেসে ফেলল। ওদিকে ড্রাইভারের হেলপার বলছে এখনি বাস ছাড়বে। আরিয়া আশিককে মেডিসিন দিতে বলল। অতঃপর খেয়ে নিয়ে আশিকের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

_______

পরদিন ঘুম থেকে উঠে নাস্তার টেবিলে শ্রাবণ ইরাদকে বলে,
“তোর ফ্রেন্ডকে বল যেন ইটালির ভিসার ব্যাবস্থা করে দেয়। জলদি।”

ইরাদের জবাবের আগেই স্নিগ্ধা বলে ওঠে,
“তুমি না বললে যাবে না।”

“এখন বলছি যাব।”

স্নিগ্ধা আবার কিছু বলতে নিলে ইরফান টেবিলের নিচ দিয়ে স্নিগ্ধার বাম হাত ধরে কিছু না বলতে ইশারা করে। স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রুটি ছিঁড়ে মুখে পু*ড়ে নেয়। ইরাদ বলে,

“ওকে। আমি কথা বলে দেখছি।”

“হুম।”

তারপর শ্রাবণ আর কিছু না বলে খেতে শুরু করে। শফিক সাহেব খাওয়ার শেষের দিকে শ্রাবণকে জিজ্ঞেসা করেন,
“তুমি কি কানাডাতে সেটেল হওয়ার চিন্তা করছো?”

“হ্যাঁ বাবা। ওখানের জবটা ভালো। সিকিউর। আমি চাই সেটেল হয়ে গেলে তোমাদেরও নিয়ে যাব। স্নিগ্ধাও তো সিংগাপুরেই থাকে। তোমরা দেশে একা একা কী করবে!”

মিসেস সন্ধ্যা বলেন,
“কিন্তু দেশেই তো শান্তি।”

“আচ্ছা, মা। টপিক বাদ দাও। আমি ইরাদকে নিয়ে বেরোবো। ইরাদ, এমন ইঁ*দুরের মতো খুঁটে খুঁটে না খেয়ে জলদি খা!”

শ্রাবণের কথা শুনে ইরাদ ক্ষেপে গেলেও ইশরাক ফিক করে হেসে ফেলে বলে,
“চাচু, তোমার দাঁত কি ইঁদুরের মতো?”

ইরফান হাসি কন্ট্রোল করে রেখেছে। স্নিগ্ধা বাদে সবাই ইরাদকে নিয়ে হাসলেও স্নিগ্ধা গম্ভীর হয়ে খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ে। ইরফান তা দেখে নিজেও উঠে যায়।

নিজের রুমে গিয়ে স্নিগ্ধা থম মে*রে বসে আছে। ইরফান দরজা লাগিয়ে স্নিগ্ধার পাশে বসে জিজ্ঞেসা করে,
“তুমি এরকম করছো কেন? দেখো, তোমার ভাইয়া নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে। এখন এটা নিয়ে ঝামেলা করো না। যা হওয়ার তাই তো হয়েছে। বিয়েটা তো হয়ে গেছে। তাইনা?”

স্নিগ্ধা অসন্তোষ নিয়ে বলে,
“আমার ভাই না হয় ওই মেয়ের জন্য দিওয়ানা! কিন্তু আমার বাবা-মাও ও-কে বোঝালো না। আর্শিকে আমি খুব ভালো করে চিনি। খুব ক্লোজ ছিল আমার। ও সব সময় আমার কাছে ভাইয়াকে নিয়ে নিন্দা করতো। একদিন তো আমাকে বলে ফেলেছিল, আমার ভাই নাকি ছ্যাঁ*চড়ার মতো করে! সাত বছর আগের কথা। সেই দিন থেকে আমি ওর সাথে কথা বলি না। কারও ফিলিংসকে সে ছ্যাঁচ*ড়ামো বলতে পারে না।”

ইরফান স্নিগ্ধাকে শান্ত করতে বলে,
“তুমিও কি বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বসে আছো! সাত বছর আগে, আর্শির বয়সই বা কত ছিল! কলেজে পড়তো এমন। তখন তো মানুষ কতো কথাই বলে।”

“তাই বলে আমার কাছে আমার ভাইয়েরই নিন্দা করবে! তাও এভাবে! ওর তো এটা বোঝা উচিত ছিল, আমার ভাইয়ের নামে নিন্দা ও আমার কাছেই বিশ্রি ভাবে করছে।”

“স্নিগ্ধা, শান্ত হও। তুমিও কিন্তু এটা অস্বীকার করতে পারো না যে তোমার ভাই আর্শির জন্য সেসময় আদিবদের বাড়িতেই সারাক্ষণ পড়ে থাকতো। আর্শির এসব ভালো লাগতো না। মুখের উপর কতোবার বলেছিলও মেয়েটা। তারপরও তোমার ভাই, সেখানেই পড়ে থাকতো। ইরাদ আমাকে এসে বলতো।”

“তুমি ওই আর্শির হয়ে ওকালতি করবে না। এতোই যখন ওর আমার ভাইয়াকে অপছন্দ তাহলে এখন বিয়েটা করলো কেন? না করতো বিয়েটা। আমার ভাইয়ের জন্য মেয়ের লাইন লেগে যেত।”

“বাদ দাও না। ওরা ওদের মত ওদের সম্পর্কটাকে গুছিয়ে নিক। তুমি আর্শির প্রতি রাগ করে থেকো না। তোমার ভাইয়া এই বিষয়টাকে ভালোভাবে দেখে না। তোমার এটাও বোঝা উচিত।”

“আমি মেয়েকে কিভাবে দেখবো না দেখবো সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। ভাইয়ার এতে ভালো লাগলো কী লাগলো না সেটা আমার দেখার বিষয় না। সে তো আর বিয়ের সময় আমার অপিনিয়ন নেয়নি। সে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছে।”

ইরফান মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“ঠিক আছে! তুমি তোমার অপিনিয়ন, তোমার পার্সপেক্টিভ সব নিয়ে থাকো। কোন সমস্যা নেই। শুধু তোমার ভাইয়ের সামনে গিয়ে এসব কথাবার্তা বলো না। তুমি নিজের লাইফে হ্যাপি আছো কী-না সেটা নিয়ে ভাবো। তোমার ভাইয়েরটা তোমার ভাই বুঝে নেবে।”

এই বলে ইরফান উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। স্নিগ্ধা বেজার হয়ে বসে থাকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২০
সাজেক পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেছে আরিয়া ও আশিকের। দুপুরের খাবার খেয়ে আরিয়া ক্লান্তিতে হোটেল রুমের বিছানায় গা এলানো মাত্রই আশিক আয়নার সামনে হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে চটজলদি বলে,

“জলদি রেডি হও। আমরা এখনই বেরোবো।”

আরিয়া অবাক হয়ে উঠে বসে বলে,
“এখুনি? এখুনি কেন? তুমি বাহিরে তাকিয়ে দেখো, কী কড়া রোদ! আমি তো এখন বেরোবো না।”

আশিক বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“মানে কী? আমরা কি এখানে হোটেল রুমে ঘুমাতে এসেছি? আমরা এসেছি ঘুরতে। শুকরিয়া করো যে রোদ উঠেছে, বৃষ্টি পড়ছে না। জলদি রেডি হও। হারি আপ!”

“আমি একটু ঘুমাব। প্লিজ।”

আরিয়া কিউট ফেস করে গাল ফুলিয়ে বললেও আশিক ওর কাছে গিয়ে ওর গাল টেনে দিয়ে বলল,

“না। তুমি তো বাসে ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছ। এখন ঘুমাবে না।”

“স্লি*পিংপি*লের এফেক্ট কমেনি। আমার টায়ার্ড লাগছে।”

আশিক বাধ্য হয়ে কোন উপায়ান্তর না দেখে আরিয়াকে টেনে তুলল। অতঃপর নিজেই ব্যাগ খুলে একটা সাদা ও টিয়ার মিশেলে একটা গাউন(গোঁড়ালির উপর পর্যন্ত) বের করে দিলো সাথে হিজাব ও জিন্স বের করে বলে,

“ফটাফট রেডি হয়ে আসো। আমরা আজকে আশেপাশে ঘুরব। ছবি-টবি তুলব। তারপর আগামীকাল কংলাক পাহাড়, নীলগিরি যাব। তাই এই দুই দিনের জন্য তোমার ঘুমকে ছুটি করে দাও। যাও যাও!”

আরিয়াকে একপ্রকার ঠেলেই ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে পাঠিয়ে দিল আশিক। অতঃপর নিজে হাঁফ ছেড়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো।

_______

আর্শি মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। পেছন থেকে সোহা আর্শির চুল ধরে টান দেয়। যার দরুণ আর্শি পিছনে ফিরে সোহার হাতে কলম দিয়ে বা*ড়ি দিতেই সেটা ক্লাস টিচারের নজরে আসে। অতঃপর ক্লাস টিচার দুজনকেই ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বলে। আর্শি সরি বলে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু সোহা ও-কে একপ্রকার টেনেই নিয়ে যায়। বাহিরে এসে আর্শি সোহাকে দুই ঘা লাগিয়ে বলে,

“ক্লাসে এটা কী করলি?”

“আরে চিল! ইয়ার! আমি চাচ্ছিলাম তোর সাথে গল্প করব। দেখ, তোর সাথে গল্প করার জন্য সকালবেলা ট্যুর থেকে ফিরে আমি ভার্সিটিতে এসেছি ক্লাস করতে! ডু ইউ ইমাজিন? এই সোহা! তাও এতো পাংচুয়াল!”

আর্শি মুখ বেঁকিয়ে প্রত্যুত্তর করে,
“হজম করতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তুই ট্যুর থেকে এসে একটু সিরিয়াস হবি।”

“উফ আর্শি! আমি আর সিরিয়াস! ইটালিতে মাস্টার্স করতে এসেছি কি শুধু পড়তে নাকি! একটু ঘোরাফেরা করব! ট্যুর দিব! বাই দ্যা ওয়ে, তুই লিসার মুখটা দেখেছিস? আমি যখন তোকে নিয়ে বের হয়ে আসছিলাম তখন ওর মুখটা জাস্ট দেখার মতো ছিল। মনে হচ্ছিল, চোখ দিয়েই আমাকে গি*লে খা*বে!”

“ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছিল, সোহা! আমি কতগুলো দিন ক্লাস মিস করেছি তুই জানিস? এই লিসাই আমাকে নোটগুলো দিয়েছে। তোর থেকে তো নোটের আশা করাই বেকার! তুই নিজেই পরীক্ষার আগে দিয়ে লিসার হাতে পায়ে ধরে নোটগুলো নিস। তারপর পড়িস।”

সোহা আর্শির গোমড়া মুখখানা নিজের দিকে ঘুরিয়ে আদুরে স্বরে বলল,
“এখন প্লিজ এই মুখ গোমরা করে থাকিস না। আজকে তোকে অনেক কথা বলার আছে। তারপর আবার শুনলাম তোর বিয়েও হয়ে গেছে। তাহলে তো তোরও অনেক কথা জমে আছে। তাই না? এখানে তুই বাঙালি, আমিও বাঙালি। আমরা দুজনে দুজনের সাথে মনের কথা খুলে বলতে পারব। কিন্তু লিসার সাথে কথা বলতে গেলে যতোই হোক মন খুলে বলা যায় না। যদিও লিসা মনোযোগী শ্রোতা। চল না, ক্যাম্পাসের ওইদিকটায় (আঙুল দিয়ে দেখিয়ে) বসি।”

সোহার কিউট পাপি ফেস ও অকাট্য যুক্তি শুনে আর্শি হেসে ফেলল। অতঃপর মৌন সম্মতি দিয়ে সেদিকে আগাতে লাগলো।

_______

সকাল থেকে শ্রাবণের খুব ইচ্ছে হচ্ছে ফুচকা খাওয়ার! তাও বোম্বাই ম*রিচ দিয়ে! হঠাৎ নিজের এই অদ্ভুত ইচ্ছেতে নিজেই অবাক হয়ে পারছে না। এই ইচ্ছে হওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে, আর্শি সকালে ক্লাসে যাওয়ার আগে তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে বলতে ফেসবুকে একটা বোম্বাই ম*রিচের ফুচকার ছবি দেখে সেটা তাকে সেন্ড করেছে। আর বলেছিল,

“এখন এই ভীণদেশে আমি এসব কই পাব? এসব আমার সামনেই কেন পড়ে?”

শ্রাবণ জবাবে বলেছিল,
“কোথাও যদি না পাও, তাহলে বানিয়ে খাও।”

“আমি যদি এত টেস্টি করে বানাতেই পারতাম, তাহলে তো কথাই ছিল না। এখানে সর্বোচ্চ রেডিমেট ফুচকার চিপস পাওয়া যায়। ওটা দিয়েও না হয় কাজ চালানো যায়। কিন্তু ফুচকার টকটা! ওটাই তো আসল। ওটাই তো আমার হয় না।”

“তো এখন কী করবে?”

“কী আর করব! এক বছর অপেক্ষা করব। তারপর দেশে ফিরে টিএসসির মোড় সহ আমার ভার্সিটির ওখানে জমিয়ে বোম্বাই ফুচকা খাব। এই আপনি ঝাল খেতে পারেন তো? যদিও জানি আপনি ঝাল খান, কিন্তু ওই ঝালের সাথে বোম্বাই মরিচের ঝালের মধ্যে পার্থক্য আছে তো। ”

শ্রাবণ তৎক্ষণাৎ ভ্রুঁ কুঁচকে নিয়েছিল। আর বলেছিল,
“শোনো, আমি বরিশালের ছেলে। আমাদের মুখে এই সামান্য ঝাল কিছুই না! এক দুইটা মরিচ তো এমনিতেই…”

আর্শি দ্রুত শ্রাবণকে থামিয়ে বলেছিল,
“বুঝেছি! আর বলতে হবে না। আপনাদের মুখে প্রথম খাবার ম*রিচই দেয়! মানুষ যে বরিশালের নাম বলে কী বোঝাতে চায়! যেন ঝালখো*রের ঝালখো*র! আমার এক বান্ধবী ছিল। জানেন ও বলতো যে, ‘আমি বরিশালের মেয়ে অনেক ঝাল খেতে পারি!’ কিন্তু আমাদের সাথে ফুচকা খাওয়ার সময় কেঁদেকেটে একাকার! আর আপনি তো মনে হয় পাঁচ বছরেও একবার বরিশালের মুখ দেখেন না!”

“তুমি কিন্তু আমাকে চ্যালেঞ্জ করছো।”

“হ্যাঁ করছি। এখন থেকে বসে বসে ঝাল খাওয়ার প্র্যাকটিস করতে থাকেন। আমি ফোন রাখছি। আমার ক্লাস আছে। বায়!”

খট করে আর্শি কল কেটে দেয়। শ্রাবণ বেচারা তখন থেকেই মনে মনে জিদ চেপে বসেছে সে ঝাল খেয়ে আর্শিকে দেখিয়ে দিবে। সেই থেকে এখন বিকেল প্রায়। ভাবছে বোন ও বোনজামাই নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে আজ ঝাল ফুচকা খাবে।

____

সোহা নিজের ট্যুরের বিশদ বিবরণ শুরু করলো। আর্শি গালে হাত দিয়ে শুনছে। ট্যুরে সোহার এক ছেলের সাথে ভাব হয়েছে। সেই ছেলে রোমে থাকে। কিন্তু ইটালিয়ান না। ছেলে পর্তুগিজের। নাম এল্যান রিক। সোহাকে অনেক হেল্প করেছে, গল্প করেছে। সোহা ভেবেই নিয়েছে, এবার তার সিঙ্গেল জীবনের ইতি ঘটতে চলেছে। স্কুল-কলেজ, ভার্সিটি, সবজায়গাতে প্রেম হয়নি কারণ তার যেমন ছেলে পছন্দ ওমন কেউ তাকে প্রপোজই করেনি! তারাই প্রপোজ করতো, যাদেরকে সোহা চোখ বন্ধ করে রিজেক্ট করতে পারে। সোহা এক্সাইটমেন্টে বলছে,

“এবার বল না, আমি রিকের সাথে কীভাবে কথা শুরু করব? ওর সাথে ইন্স্ট্রা, ফেসবুকে এড তো হয়েছি কিন্তু ওই ছেলে তো আজ এখনও মেসেজ করলো না।”

আর্শি বলল,
“করবে নাহয় পরে। একটা ট্যুর থেকে ফিরেছে। টায়ার্ড মেবি। রেস্ট নিচ্ছে।”

কিন্তু সোহার উৎকণ্ঠা কমলো না। বরং আরেক ধাপ এগিয়ে বলল,
“আমিও তো ট্যুর থেকে ফিরেছি। আমি তো ক্লাস করতে এসেছি। নাকি ট্যুর শেষ তাই আমার কথা ভুলে গেছে? কে জানে, হয়তো গার্লফ্রেন্ড আছে। আমিতো এটা জিজ্ঞাসাই করিনি।”

আর্শি ভাবলেশহীন জবাব দেয়,
“থাকতেও পারে! হু নোওজ?”

“এভাবে বলিস না। আমি প্রথমবার নিজের মন মতো ছেলের চোখে আমার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখেছি।”

“তাহলে ধৈর্য রাখ। সে পড়াশোনা করে?”

“হ্যাঁ। বলল জাস্ট মাস্টার্সের রিসার্চের একটু কাজ বাকি। সাথে পার্টটাইম জবও করে। সাইকোলজিতে পড়ে।”

“ওয়াও! হলে তুই ১০০% সিওর থাক, ওই ছেলে তোর চোখ-মুখের ভাষা সব বুঝেই গেছে। যদি এখন সে তোর প্রতি ইন্টারেস্টেড থাকে তাহলে নিজেই যোগাযোগ করবে। আবার তোকে টেস্ট করতে পারে যোগাযোগ নাও করতে পারে। এসব তাদের রিসার্চের অংশও হতে পারে।”

“এখন আমি কী করব?”

“চুপচাপ বসে থাক। ক্লাস টাইম শেষের পথে। লিসার হাতে কে*লানি খেতে তৈরি থাক। মোনারও বোধহয় এরপর পরপর ক্লাস নেই। একসাথে লাঞ্চ করা যাবে।”

সোহা মুখ ভাড় করে বসে রইল। আর্শি এতক্ষণ ভাঁজ করে রাখা পা দুটো মেলে দিলো। রোদের তীব্রতা এখন প্রখর। ইটালির সাথে বাংলাদেশের ঋতুর কিছুটা মিল রয়েছে। জুন থেকে আগষ্ট ইটালিকে গ্রীষ্মকাল। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর শরৎকাল। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি শীত কাল। মার্চ থেকে মে বসন্ত কাল। ওদের আনুষ্ঠানিক বর্ষা কাল নেই তবে মিলান ও ভেনিসে প্রায় সারা বছর বৃষ্টির দেখা মিলে। কিন্তু অন্যান্য শহরগুলোতে শীতকালে বৃষ্টি বেশি হয়। আর্শি আছে মিলানে। এখন আগষ্ট মাসের শুরু। এই আগষ্টের ১২ তারিখ তার জন্মদিন। হাতে আছে আর ৬দিন। মিলানে এই মাসে এখন অবধি সে বৃষ্টির দেখা পেলো না। যদিও তার পছন্দ না।
এদিকে সোহা নিজের মাইন্ড চেঞ্জ করতে উশখুশ করছে। সে আর্শিকে নিরলস বসে থাকতে দেখে খপ করে আর্শির কোল থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো। আর্শি চমকে তাকিয়ে শুধালো,

“কী হলো? ফোন নিলি কেন?”

“তোর হাজবেন্ডকে কল করব।”

আর্শি আরও অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়তে ছুঁড়তে সোহার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিলো।
“কেন? উনাকে কেন কল করবি? তুই কি এখন শ্রাবণকে কল করে তোর এই নিউ ক্রা*শের কথা বলবি?”

সোহা চোখে-মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল,
“উফ! না রে। আমি আমার মাইন্ড চেঞ্জ করতে ভাবলাম, জিজুকে কল করি, গল্প করি। আর তুই এখানে কী না আবার একই টপিকে নিয়ে আসছিস!”

“দরকার নেই।”

“চুপ! জিজুর সাথে আলাপ করাবি না? এতো ইনসিকিউর কেন তুই? আমি তোর জামাইয়ের দিকে নজর দিবো না। আমার নজর এতোও খারাপ না।”

সোহার কথা শুনে আর্শি

বিড়বিড় করে বলে,
“নজর দিলেও লাভ হবে না। এই ছেলে কেমন জানি! নিজেও ঠিক ভাবে বুঝি না!”

“কিছু বললি?”

“না।”

“ফোনটা দে না। একটু গল্প করব। লিসা, মোনাও সাথে যোগ দিবে।”

“ফোনে এমনিই চার্জ কম। তাই নিজেও বের করছি না। নে ধর। বেশি বকবক করবি না। তোর তো বকবকানি শেষ হয় না!”

“ওকে ওকে।”

বলেই দাঁত বের করে হাসলো সোহা। অতঃপর আর্শি নিজেই শ্রাবণকে কল লাগালো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১৭+১৮

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
বাংলাদেশে এখন রাতের শেষাংশ। ভোরের দিকও বলা যায়। আর্শি মাত্রই ইটালিতে সে যেই অ্যাপার্টমেন্টে থাকে সেখানে পৌঁছালো। এই সময় ফোন না করে সে তার বাবা, ভাই ও শ্রাবণের মেসেঞ্জারে মেসেজ করে জানিয়ে দিলো। তার নিজেরও দীর্ঘ জার্নির কারণে খুব ক্লান্ত লাগছে বিধায় রুমমেটদের সাথে হাই-হ্যালো করে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো।

সকালে একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙে আর্শির। ঘুম থেকে উঠেই বেডের কাছে মোনালিসাকে কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসে আর্শি। বলে,

“গুড মর্নিং, লিসা।”
মোনালিসাও হালকা হেসে বলে,
“গুড মর্নিং, আশি! লিসেন, ড্রিংক দিস কফি এন্ড গেট রেডি কুইকলি। ইউ আর অলরেডি লেইট। উই হ্যাভ ক্লাস এট টেন এম। গো ফার্স্ট।”

আর্শি পূর্ব দিকের দেয়ালে ঘড়িটার দিকে চেয়ে কপালে হাত দিয়ে বলে,
“ও ইয়াহ! আই টোটালি ফরগেট! জাস্ট ওয়েট কাপল অফ মিনিটস।”

আর্শি জলদি করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ফোনের ইন্টারনেট কানেকশন অন করতেই ফোন কেঁপে ওঠে। ভাইয়ের, বাবার, আরিয়ার আইডি থেকে একবার করে কল। শ্রাবণের আইডি থেকে দুইবার কল। মোনালিসা বলে,

“কুইকলি এটেন্ড দ্যা ফোন কল দেন প্লিজ গেট রেডি ফার্স্ট।”

অতঃপর মোনালিসা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর্শি প্রথমে কাকে কল করবে এই নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলো। কয়েক সেকেন্ড চিন্তা-ভাবনা করে ভাবল প্রথমে বাবাকেই কল করবে। তাছাড়া তার ভাইয়া ও আরিয়া এখন অফিস ও ভার্সিটিতে। ওদের সাথে ভার্সিটি থেকে এসেই কথা বলা যাবে। কিন্তু শ্রাবণকে প্রথমে কল করলে বাবাকে কল করার সময় পাবে না। হাতে সময়ও বেশি নেই। চটজলদি বাবাকে কল করলো। দুই মিনিটের বেশি কথা বলল না। অতঃপর লম্বাশ্বাস নিয়ে শ্রাবণকে কল লাগালো। প্রথমবার রিসিভ হলো না! আর্শি ভাবলো আবার দুই মিনিট পর কল করবে। এখন জলদি তৈরি হয়ে নিক।

এদিকে শ্রাবণ তার বোনের ছেলের জন্য চকলেট আনতে গেছে। তার বোন নিজের স্বামী-সন্তান নিয়ে আজকে সকালেই সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে। শ্রাবণের আকদের সময় আসতে চেয়েও পারেনি। চকলেট নিয়ে বাড়ি ফিরে শ্রাবণ ফোনের ইন্টারনেট অন করে দেখলো প্রায় চার মিনিট আগে আর্শি তাকে কল করেছিল। তারপর আর কল করেনি। শ্রাবণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। ফোনটা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধরলেই তখনি ফোনটা বেজে ওঠে। শ্রাবণ ফোনটা উঠিয়ে দেখে আর্শি কল করেছে। শ্রাবণ রিসিভ করে। আর্শি সালাম দিয়ে বলে,

“কিছুক্ষণ আগে যে আপনাকে কল করলাম, তখন কই ছিলেন?”

শ্রাবণও সালামের জবাব দিয়ে বলে,
“ইশরাকের জন্য চকলেট কিনতে গিয়েছিলাম।”

“ইশরাক এসেছে? তার মানে স্নিগ্ধা আপুও এসেছে।”

“হ্যাঁ। আজ সকালেই।”

“ওহ। আচ্ছা শুনুন, ভোর রাতে আপনি কল করেছিলেন। আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম। তাই কল রিসিভ করতে পারিনি। এখন ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছি। হাতে বেশিক্ষণ সময় নেই। বাড়ি ফিরে আবার কল করব। আপনি ইশরাক, স্নিগ্ধা আপুদের সাথে এখন সময় কাটান। কতো বছর পর আসলো। টাটা।”

“হুম। টেক কেয়ার।”

অতঃপর কল কে*টে দেয়। আর্শি দ্রুত বেড়িয়ে পড়ে। শ্রাবণ ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আরেকটু কথা বললেও পারতো!”

মন খারাপ করে ফোন রেখে ইশরাকের কাছে চলে যায়।

______

ভার্সিটির এড়িয়ার কাছে পৌঁছে মোনালিসার সাথে হাঁটছে আর্শি। নিরবতা দুজনের মধ্যে। মোনালিসা কম কথা বলে। কিন্তু এবারে মোনালিসাই প্রথমে বলে,

“সো ইউ গট ম্যারিড?”

আর্শি ওর দিকে চেয়ে হালকা হেসে বলে,
“ইয়াহ।”

“হোয়াট এবাউট, নাহিদ?”

“আই উইল টেল ইউ এভরিথিং আফটার দ্যা ক্লাস।”

“আর ইউ হ্যাপি নাউ?”

আর্শি খানিক থামলো। ফের বলল,
“একচুয়ালি, আই ডিডেন্ট ওয়ান্ট টু গেট ম্যারিড ইন সাচ এ শর্ট টাইম। বাট মাই ফ্যামিলি ওয়ান্টেড ইট এন্ড দে রিকুয়েস্টেড মি। সো আই হ্যাড টু। বাট শ্রাবণ ইজ গুড গায়। হি লাভস মি।”

“হোয়াট এবাউট ইউ? ডু ইউ লাভ হিম?”

আর্শি আকাশের দিকে চেয়ে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো। অতঃপর বলল,
“টু বি অনেস্ট, আই ডোন্ট নো। ইয়াহ আই হ্যাভ সাম ফিলিংস ফর হিম। ইজ ইট লাভ? আই রিয়েলি ডোন্ট নো।”

আর্শির জবাব শুনে মোনালিসা মুচকি হেসে বলে,
“ইউ উইল। জাস্ট গো উইথ ফ্লো।”

বিনিময়ে আর্শিও মৃদু হাসে। অতঃপর দুজনে নিজেদের ক্লাসরুমের দিকে চলে যায়।

________

স্নিগ্ধা তার মায়ের রুমে বসে আছে। ড্রয়িংরুমে শ্রাবণ ও ইশরাক ভিডিও গেম খেলছে। স্নিগ্ধার স্বামী ইরফান ঘুমাচ্ছে। স্নিগ্ধা তার মাকে বলে,

“মা, তুমিও কি ভাইয়ার মতো বোকা হয়ে গেলে? আর্শির সাথে ভাইয়ার বিয়ে দিলে? যেই আর্শি কখনোই ভাইয়ার মন বুঝতে চায়নি! আবার শুনলাম নাহিদ নামে একটা ছেলের সাথে ওর কিছু একটা ছিল। পরে ওই ছেলে ওকে ডি*চ করে আরিয়াকে বিয়ে করতে এসেছিল। তোমরা তার সাথেই ভাইয়ের বিয়ে দিলে? এতগুলো বছরেও আর্শি একবারের জন্যও ভাইয়ার ফিলিংস বুঝতে চায়নি। আই ডোন্ট নো, হোয়াট উইল হ্যাপেন?”

মিসেস সন্ধ্যা বলেন,
“তুই চিন্তা করিস না। ওরা দুজনে এখন স্বামী-স্ত্রী। নিজেদের মধ্যে সবকিছু এমনিতেই ঠিক করে নিবে। তাছাড়া তুই তো তোর ভাইকে চিনিসই। আমরা কি ওকে কম মেয়ের ছবি দেখিয়েছি? ওর পছন্দ আর্শিই। ও যদি আর্শিকে নিয়ে সুখে থাকতে চায় তো থাকুক না।”

“মা, তুমি সকাল থেকে ভাইয়ার মুখখানা একবার দেখেছ? কেমন মুষড়ে পড়েছে। আর্শি কি চাইলেই পারতো না, ইটালি যাওয়াটা আরো কিছুদিন পিছাতে? ও চাইলেই পারতো। কিন্তু ও ইচ্ছে করেই করেনি। ভাইয়া কতো করে চেয়েছিল সেও আর্শির সাথে ইটালিতে যাবে। এমনকি ইরাদকেও ফোন করেছিল যাতে ইরাদের বন্ধুর সাথে কথা বলা যায়। ইরাদের ফ্রেন্ড বলেছিল, সে এক-দেড় সপ্তাহের মধ্যে ট্রাই করবে। সে করতেও পারতো।”

মিসেস সন্ধ্যা হতাশ স্বরে বলেন,
“বাদ দে সেসব। আর্শির দিকটাও দেখ। তোর ভাইয়ের জেদের কারণেই আর্শির পুরো পরিবার আর্শিকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছে। তাছাড়া আর্শির ভার্সিটিতে এমনিতেই দুই সপ্তাহের মতো ক্লাস মিস হয়ে গেছে। কী-ই বা বলার আছে।”

“তোমরা ভাইয়ার জেদকে প্রায়োরিটি না দিয়ে আমার কথা শুনে যদি অহনার সাথে ভাইয়ার বিয়েটা দিতে তাহলে ভাইয়া কিছুদিন পর এমনিতেই আর্শিকে ভুলে যেত। অহনা কতো সুইট একটা মেয়ে। ও আমার নিজের ননদ না কিন্তু ও অনেক কেয়ারিং।”

“দেখ স্নিগ্ধা, ভাগ্যে যা ছিল তা হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে আর কথা বাড়াস না। এখন দোয়া করি, আর্শি ও শ্রাবণের মধ্যে সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়ে যাক। আর মাত্র একটা বছরই তো। তারপর আর্শি ফিরে আসবে।”

“দেখো কী হয়! ওই মেয়ের উপর আমার ভরসা নেই।”

এই বলে স্নিগ্ধা সেখান থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। স্নিগ্ধা ড্রয়িংরুম ক্রস করার সময় শ্রাবণ একবার আঁড়চোখে তার বোনের দিকে তাকায়। তার বোন যে আর্শিকে নিজের ভাইয়ের বউ হিসেবে পুরোপুরি ভাবে মেনে নিতে পারছে না, সেটা তার অজানা নয়। কোনো এক অজানা কারণেই স্নিগ্ধা আর্শিকে অপছন্দ করা শুরু করে দিলো। যেই স্নিগ্ধা আর্শিকে খুব কেয়ার করতো, সেই স্নিগ্ধা আর্শির নাম শ্রাবণের মুখে শুনতেই পছন্দ করে না। শ্রাবণ এখনও ভেবে পায় না, যে স্নিগ্ধা ও আর্শির মধ্যে আসলে কী হয়েছে?

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
সন্ধ্যা নাগাদ অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আর্শিরা। আর্শি মোনালিসাকে জিজ্ঞাসা করে,
“হোয়ার ইজ সোহা? আই ডিডেন্ট স হার।”

“সি ওয়েন্ট অন অ্যা ট্রিপ। টুমোরো উইল বি ব্যাক।”

আর্শি মাথা নেড়ে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হতে যায়। মোনালিসা এই ফাঁকে কিচেনে চলে যায়। আর্শি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আরিয়াকে কল করে। আরিয়ার আবার মেসেজ এসেছিল। আরিয়া ফোন রিসিভ করে ব্যাক ক্যামেরা অন করে কিছুটা এক্সাইটমেন্টে বলে,

“দেখো আপু, আমরা সাজেক যাচ্ছি। আজ রাত বারোটায় বাস।”

আরিয়া নিজেদের লাগেজ গুলো দেখাচ্ছে। পাশ থেকে আশিক আর্শিকে বলে,
“আপু, ও-কে কিছু বলো। দুইটা লাগেজ ও একাই নিচ্ছে ওর জামা কাপড়ের জন্য! ও ওইখানে গিয়ে নাকি কিছুক্ষণ পরপর ড্রেস চেঞ্জ করে ছবি তুলবে! আমরা যাচ্ছি ঘুরতে। আর এটা বর্ষাকাল। আমরা ঘুরব নাকি ও বারবার ড্রেস চেঞ্জ করবে?”

আরিয়া মৃদু ধ*ম*ক দিয়ে বলে,
“বর্ষাকাল বলেই তো এত এত জামাকাপড় নিচ্ছি! আরে বলা তো যায় না, কখন পা পিছলে পড়ে গেলাম! ড্রেস নোংরা হয়ে গেল! তখন তো লাগবে।”

“বুঝেছি। তোমার চক্করে আমার ঘোরা হবে না।”

আর্শি বসে বসে ফোনের অপরপাশে এদের ঝ*গ*ড়া দেখছে। কেউ কারও থেকে কম না। আর্শি এদের থামাতে বলে,
“এই থামো! কী শুরু করছো? একটা জায়গায় তোমরা ঘুরতে যাচ্ছো, তার আগেও এরকম ঝ*গড়াঝাঁ-টি শুরু করছো! আর আরু, জামা-কাপড় কয়েকটা কমা। কয়দিনের ট্যুরে যাচ্ছিস তোরা?”

আশিক জবাব দেয়,
“২ দিন। মানে ওখানে পুরো ২দিন ঘুরবো। পরেরদিন সকালে রওনা হবো।”

এবার আর্শি আরিয়ার দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়। আরিয়া আমতা আমতা করে বলে,
“আসলে, আপু। তুমি তো জানোই আমার সবসময় ব্যাগ বড়ো হয়। এবার কিন্তু প্রতিবারের থেকে কম নিয়েছি। মাত্র ছয় সেট জামা কাপড় নিয়েছি। আর যে লাগেজ দেখছো না, হয়তো ক্যামেরাতে বড়ো দেখাচ্ছে। কিন্তু বড়ো লাগেজ না। এগুলো ছোটো লাগেজ। আসলে হ্যাট, জুতো, কসমেটিকস। আর ছয় সেটের মধ্যে তিনটা তো শাড়িই! শাড়ির সাথেও তো আরও কাপড় লাগে। একটা গাউন, একটা থ্রিপিস ও একটা জিন্সের সাথে শর্ট গাউন। আর রাতে ঘুমানোর জন্য দুটো জামা এক্সট্রা।”

“তুই এখনি দুইটা ড্রেস কমাবি। আজব! ঘুরতে যাবি, একেকটা জায়গায় যেতে যেতেই সময় চলে যাবে। তুই তবে এতো চেঞ্জ করবি কখন? ফ্যামিলি ট্যুরে তোর এক্সট্রা লাগেজ ভাইয়া টানতো। তুই তো একটা টানতেই যেন ম*রে যাস! তাহলে এখন আশিককে দিয়ে টানাবি? ড্রেস কমা। আর তোর লাগেজে জায়গা ফাঁকা করে ওখানেই আশিকের ড্রেস নিয়ে নে। দুটোই তো বেশি।”

আশিকও তাল মেলায়।
“আমি বেশি কিছু নিব না। অল্প জায়গা হলেই হবে।”

আরিয়া আশিককে রাগী লুক দিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“ফাইন! একটা শাড়ি কমাচ্ছি। এরইমধ্যে তোমাকে নিজের ড্রেস নিতে হবে।”

“তোরা ফোন রেখে ঝ*গ*ড়া কর। আর বেস্ট অফ লাক। বায়।”

এই বলে আর্শিই ফোন কেটে দেয়। ওদিকে আরিয়া ও আশিক নিজেদের ক্যা*টফাই*ট চালিয়েই যাচ্ছে।

আর্শি এবার শ্রাবণকে কল করলো। সাথে সাথে রিসিভও হলো। আর্শির আগেই একটা বাচ্চা ছেলে কণ্ঠে সালাম ভেসে আসে। আর্শিরও বুঝতে বাকি থাকে না, এটা ইশরাক। আর্শি সালামের জবাব দিয়ে শুধায়,

“ইশরাক, কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি এখন কল রাখো। আমি ক্যান্ডিক্রেশ খেলছি।”

এই বলে ইশরাক ফোন কে*টে দেয়। আর্শি বোকার মতো ফোন চোখের সামনে এনে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। অতঃপর আবার কল করে। এবার ইশরাক ফোন রিসিভ না করেই কে*টে দেয়। আর্শি নিজে নিজেই বলে,

“যাহ্ বাবা! এই পুচকে ইশরাক বারবার আমার কল কেটে দিচ্ছে। ওতো গেম খেলছে। কিন্তু ওর মামাকে কে বুঝাবে?এই লোকের হুট করে এতো গম্ভীর হয়ে যাওয়া আমার মোটেও সুবিধার লাগছে না। এইজন্যই আমি বারবার বলছিলাম, না আমি এখন বিয়ে করবো না। এক বছর পর দেশে ফিরে গিয়ে বিয়ে করব। এই লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ সামলানো অনেক কষ্ট। রাগ করবো আমি, কিন্তু তা না! এই লোক গম্ভীর হয়ে বসে আছে। সে কল করলে কল না উঠালেই হলো! ভাল্লাগে না!”

আর্শি ফোন বেডে ঠেলে দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো সন্ধ্যার কফি ও রাতের ডিনার তৈরি করতে।

________

শ্রাবণ ড্রয়িংরুমে বসে ইরফান ও ইরাদের সাথে কথা বলছে। ইরাদ একটু আগেই এই বাসায় এসেছে। ইরাদ গাজিপুরের দিকে জব করে ও সেখানে একটা ফ্লাট নিয়ে কয়েকজন ব্যাচেলর থাকে। ইরফান ও ইরাদের বাবা-মা থাকে খুলনাতে। কথায় কথায় ইরাদ বলে,

“শ্রাবণ, তুই চাইলে এক সপ্তাহে তোর ভিসা হয়ে যাবে ইটালির। তুই তো চেয়েছিলি। তারপর হঠাৎই মন বদলে ফেললি।”

শ্রাবণ কৃতিম হেসে বলে,
“না থাক। কানাডার ফ্লাইটের টিকেট কে*টে ফেলেছি। এই এক-দেড় সপ্তাহ পর চলে যাব।”

ইরফান অবাক হয়ে শুধায়,
“কী বলছো? স্নিগ্ধা তো বলল তুমি মাসখানেক থাকবে।”

শ্রাবণ ইতস্তত ভাবে বলল,
“আসলে ভাইয়া, পরবর্তীতে আবার যখন আসব, তখন এই ছুটিটা নিয়ে নেব। এজন্য ছুটিটা আর নষ্ট করছি না।”

ইরাদ বলে,
“ভাইয়া-ভাবি তো পরশু খুলনা যাবে। আমিও যাব। আমাদের সাথে তবে চল। একটু ঘোরাও হবে।”

“এখন আবার খুলনা যাব? দরকার নেই। বাসায় রেস্ট করি।”

মাঝ থেকে স্নিগ্ধা এসে বলে,
“চলো ভাইয়া। ভালো লাগবে। মা-বাবাও যাবে।”

“তোরা যা। আমরা গেলে এখনি কেমন দেখায়। তোরা কতো বছর পর এসেছিস।”

শ্রাবণের বাবা শফিক সাহেব এসে বলেন,
“আমিও তাই বলি। আচ্ছা ইশরাক নানুভাই কই?”

“ও আমার রুমে, বাবা। ফোনে গেমস খেলছে।”

শ্রাবণের জবাব শুনে স্নিগ্ধা বলে,
“ওর হাতে ফোন দিয়েছ! ও গেমস খেলতে বসলে কল আসলেও কেটে দেয়। আর রাতের সাড়ে এগারোটার বেশি বাজে, এখনও নাকি গেম খেলছে! দাঁড়াও, দেখছি ও-কে।”

বলেই স্নিগ্ধা শ্রাবণের রুমের দিকে যাচ্ছে। শ্রাবণের তখন মনে হলো, আর্শি তাকে কল করেছে কী-না? তাই সেও নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরলো।
স্নিগ্ধা গিয়ে ইশরাকের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে শক্ত কণ্ঠে বললো,

“তুমি আজকে সারাদিন গেম খেলেছো। আর কতো গেমস খেলবে? জার্নি করে এসেছ, একটু ঘুমিয়েছ?”

ইশরাক কাকুতি-মিনতি করে বলল,
“আরেকটু, আম্মু। আরেকটু। আমি এই লেভেলটা এখনই আপ করে ফেলব।”

“নো। এখনি ঘুমাতে যাবে। সারাক্ষণ খালি গেমস আর গেমস! চলো!”

“প্লিজ, আম্মু!”

“নো! চলো।”

স্নিগ্ধা ইশরাককে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রুম থেকে বেরোনোর আগে শ্রাবণের ফোনটা শ্রাবণের হাতে ধরিয়ে দিয়ে যায়। শ্রাবণ জলদি করে মেসেঞ্জার চেক করে দেখে আর্শি দুইবার কল করেছিল। একবার রিসিভ হয়েছে, আরেকবার কে*টে দেওয়া হয়েছে। শ্রাবণ জলদি কলব্যাক করে।
আর্শি কফির মগ পাশে রেখে পড়তে বসেছে। আর একটু একটু কফি করে খাচ্ছে। রাতের খাবারের জন্য সবজি কেটে রেখে এসেছে। তখনি ফোন বেজে উঠলে ফোন উঠিয়ে দেখে শ্রাবণ কল করেছে। আর্শি রিসিভ করে সালাম দেয়। শ্রাবণও জ

  • বাব দিয়ে বলে,

    “সরি। ফোনটা ইশরাকের কাছে ছিল। ও গেম খেলার সময় কেউ কল করলে কল কেটে দেয়।”

    “হুম। ও বলল, তুমি এখন কল রাখো। আমি ক্যান্ডিক্রেশ খেলছি।”
    বলেই হাসলো আর্শি। শ্রাবণও মৃদু হেসে বলল,
    “মাত্রই স্নিগ্ধায় এসে ওকে নিয়ে গেল। ও-কে তো ওখানে খুব লিমিটের মধ্যে একটা সময়ে ফোন দেওয়া হয় গেমস খেলতে। তার জন্য এখানে আমার ফোন পেয়ে নিজের পছন্দ মতো তিন-চারটা গেমস নামিয়ে বসেছে।”

    “ওহ আচ্ছা। খেয়েছেন? আপনাদের তো ওখানে এখন ঘড়িতে বারোটার ঘর ছুঁই ছুঁই।”

    “হ্যাঁ। তুমি খেয়েছো?”

    “কফি খাচ্ছি। ভেজিটেবল কে*টে রেখে এসেছি। লিসাও দেখলাম পাউরুটি বানাতে ইস্ট এক্টিভ করতে দিয়েছে।”

    “ওহ আচ্ছা। এখন কী করছো?”

    “পড়ছি একটু।”

    “তাহলে পড়ো। রাখছি!”

    আর্শি দ্রুত বলে ওঠে,
    “এই এই রাখবেন না। আপনার কী হয়েছে? আগে সেটা বলেন। বিয়ের আগের শ্রাবণের সাথে এখনকার শ্রাবণের আমি মিল পাচ্ছি না। আপনি সত্যি করে বলুন তো, আপনি আমার কোন কথায়, কাজে হার্ট হয়েছেন? দেখুন, যদি হার্ট হয়ে থাকেন সেটা বলে দিন। কারণ আমি এতো দূর থেকে আপনার মন পড়তে পারব না। লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপে আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের দুজনের মধ্যে আমি কোনো আন্ডারস্ট্যান্ডিং দেখছি না। আপনার প্রিভিয়াস বিহেভিয়ারের সাথে প্রেসেন্ট বিহেভিয়ারে আমি মিল পাচ্ছি না। আপনি বিয়ের আগে থেকো আমাকে ভালোবাসেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তেমনটা না। এখন আপনি যদি হুট করে এভাবে বদলে যান তাহলে আমার জন্য বিষয়টা আরও টাফ হয়ে যাবে। আমি প্রথমেই লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ মেন্টেন করতে পারবো না বলে মনে হওয়াতে বিয়েটা এখনি করতে চাইছিলাম না। আপনি বুঝতে পারছেন?”

    শ্রাবণ খুব মনোযোগ দিয়ে আর্শির কথাগুলো শুনলো। অতঃপর ভাবতে লাগলো।

    চলবে ইন শা আল্লাহ,

    ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।