Monday, July 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 198



শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১৫+১৬

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
আর্শি বিয়েতে রাজি হয়েছে এই খবরটা শ্রাবণদের বাড়িতে অতিসত্বর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শ্রাবণের বাবা-মা জানিয়ে দিয়েছে উনারা আগামীকাল এসেই আকদ করাবে। কারণ পরশুদিন আরিয়া চলে যাবে। তারপর দিন আর্শির ফ্লাইট। শ্রাবণের মা শ্রাবণকে কথাটা বলে যাওয়ার পর থেকে শ্রাবণ শ*কড হয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে ফোন হাতে নেয় আর্শিকে কল করবে বলে। অতঃপর ব্যালকনির দরজা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত বদল করে। এখন ফোন করবে না। ফোন রেখে ব্যালকনিতে গিয়ে বসে সে।

এদিকে আর্শি, আরিয়া, আশিক ও আদিব মিলে লুডো খেলছে। একেকজনের গুটি কে*টে দিতে দিতে কেউই সামনে এগুতো পারছে না। মিসেস আশালতা এদের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। চা এনে বলেন,

“রাতের দশটা বাজে! আর এদের এখন চা খাওয়ার জোর উঠেছে! নে ধর।”

চারজনেই দাঁত বের করে হেসে একত্রে বলে,
“থ্যাংকিউ সো মাচ!”

“না ঘুমিয়ে চা-ই খা। তারপর রাতভর পেঁ*চার মতো চেয়ে থাকিস।”

ওরা চারজন হেসেই উড়িয়ে দিলো। মিসেস আশালতা বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন। এদের এই খেলা চলল রাত ১১টা পর্যন্ত। অতঃপর যে যার রুমে চলে গেলো। আর্শিও নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

রাত আড়াইটা, ফোনের রিংটোনে ঘুমে হালকা হয়ে যায় আর্শির। আধখোলা চোখে একটু তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে আবার ঘুমানোর প্রয়াস করতেই অপরপাশ থেকে গিটারের শব্দ। আর্শি ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে,

“আপনার কি রাতে ঘুম আসে না?”

শ্রাবণ নিরবে হেসে শুধায়,
“কেন?”

“কেন আবার কী? ঘুম আসলে বুঝি এই রাতের বেলা আপনি গিটার বাজাতেন? আবার সেই গিটার শোনানোর জন্য আমার ঘুম ভাঙাতেন?”

শ্রাবণ ফের হাসে। তারপর অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
“তুমি ঘুমাচ্ছিলে বুঝি?”

কথাটা শুনে আর্শি ফট করে চোখ মেলে তাকায়। এতোক্ষণ চোখ বন্ধ করেই শুনছিল ও কথা বলছিল। কিন্তু শ্রাবণের কাছ থেকে এমন অদ্ভুত একটা প্রশ্ন শুনে তার ঘুম যেন উড়েই গেছে। আ*গুনঝড়া স্বরে বলে,

“এই আপনার কী মনে হয়? এই রাত-বিরেতে আমি পেঁ*চার মতো জেগে আছি? এমন অদ্ভুত মার্কা কথা আপনি কোত্থেকে পান? বলেন তো? নিজে তো ঘুমান না আমার ঘুমটাও নষ্ট করেন। বিয়ের পরও কি এরকম করবেন নাকি?আগে আগে বলে দেন। আমি আব্বু-আম্মুকে বলে বিয়ে ক্যানসেল করে দিচ্ছি।”

শেষোক্ত কথাটা শ্রাবণের মনে লাগে। সে কোনো প্রত্যুত্তর না করে ফোন কে*টে দেয়। আর্শি অপেক্ষা করছিল জবাবের। কিন্তু অপরপাশ থেকে ফোন কে*টে দিতেই সে কিছুটা অবাক হয়। আবার কিছুটা খারাপও লাগে তার। নিজে নিজেই বলে,

“এই লোক রাগ করলো নাকি? আমি এমন কী বললাম যে রাগ করলো? তার তো বোঝা উচিত, এই রাত-বিরাতে কাউকে ফোন করে গিটার শোনানোর কোনো মানে হয়? আমরা তো আর প্রেম করছি না। ধ্যাত! ভাল্লাগে না। কালকে দেখা যাবে কী হয়? এখন পর্যন্ত সে আমার হাজবেন্ড হয়নি। আর না আমার বয়ফ্রেন্ড! সো রাগ করলে করুক! আই ডোন্ট কেয়ার। হাজবেন্ড হলে তারপর ভেবে দেখব।”

অতঃপর সে ঘুমিয়ে পড়ে। এদিকে শ্রাবণ নিস্তব্ধতার মাঝে বসে আছে। এক দৃষ্টিকে অন্ধকার অম্বরপানে চেয়ে আছে। আকাশে থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে হয়তো বা শেষ রাতের দিকেই বৃষ্টি নামবে। ভেবেছিল বিয়ের আগের দিন রাত হিসাবে আর্শি হয়তো এক্সাইটমেন্টে ঘুমাতে পারবে না। তাই রাতভর ফোনের দুইপাশে দুজনে জেগে থাকবে। তারপর আর্শির কণ্ঠস্বর শুনে মনে হয়েছিল যে ঘুমাচ্ছিলই। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে শ্রাবণ নিরব বসে রয়।

________

সকালে ঘুম থেকে উঠে আর্শিকে মেহেদী পড়াতে বারান্দায় মাদুড় পেতে বসেছে আরিয়া। শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি হয়েছিল বিধায় পরিবেশ এখন ঠাণ্ডা। রোদও ঠিক ভাবে উঠেনি। বারান্দার টবে কামিনী ফুলের গাছটাতে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। গাছের নিচে তিন চারটা ফুলও পড়ে আছে। সুঘ্রাণও আসছে কিছুটা। আরিয়া খোশ মেজাজে মেহেদী পড়াচ্ছে। এদিকে আর্শি অনবরত কথা বলেই চলেছে! গতকাল রাতে কী হয়েছে, শ্রাবণ কী ভাবতে পারে, এসবই বলছে। আরিয়া বারবার তাতে মনোযোগ হারাচ্ছে। সে কপাল কুঁচকে মৃদু ধ*মকে উঠে বলে,
“থামো না, আপু! এতই যখন চিন্তা হচ্ছে, তাহলে যখন কলটা কে*টে দিয়েছিল তখন কেন কল ব্যাক করোনি? এখন এসব বলে কী হবে? শ্রাবণ ভাইয়া যখন আসবে তখন সরি-টরি বলে দিও। এখন আমার মনোযোগ নষ্ট করবা না। এখন যদি হাতের মেহেদি খারাপ হয়, পরে নিজেই ঘ্যানঘ্যান করবা।”

“তোর মেহেদী দেওয়ার কাজ দে। আমি কি তোকে বলেছিলাম, আমার হাতে মেহেদী দিয়ে দে? তুই তো নিজেই দিতে এসেছিস।”

“চুপ করে থাকো তো। নাস্তা না খেয়ে তোমাকে মেহেদী দিতে বসেছি। রাতেই দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার….”

আরিয়াকে কথার মাঝে থামিয়ে আর্শি বলে,
“এখন তোর মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে না? চুপচাপ কাজ কর। আমিও কথা বলব না। তুইও কথা বলবি না।”

আরিয়া মুখ ভে*ঙচি দিয়ে মেহেদী পড়াতে থাকে।

_________

দুপুর একটার দিকে শ্রাবণ ও শ্রাবণের পরিবার এসেছে। সাথে শ্রাবণের মামা-চাচাও এসেছেন। আর্শিকে আরিয়া তৈরি করে ফেলেছে। শ্রাবণের পছন্দ করা শাড়িটাতে আর্শিকে দারুণ লাগছে। হালকা মেকআপ তবে ডার্ক আইশেডো ও ডার্ক মেরুন লিপস্টিকে হালকা সাজকেও গর্জিয়াস করে দিয়েছে। আর্শি নিজেকে ভালো করে আয়নায় দেখে নিয়ে আরিয়াকে শুধায়,

“সব ঠিক আছে না? আমার না ভয় করছে!”

আরিয়া তার বোনের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“তোমাকে হুরপরি লাগছে, আপু। আর ভয় পাচ্ছো কেন? রিল্যাক্স। ওখানে গিয়ে তোমাকে কিছু করতে হবে না। কাজী সাহেব যখন তোমাকে কবুল বলতে বলবে তখন এক নিঃশ্বাসে তিনবার কবুল বলে দিবে। তারপর ঝামেলা শেষ। সো ইজি।”

আর্শি আয়নাতে আরিয়ার উদ্দেশ্যে বিরক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। আরিয়া তাতে দাঁত বের করে হেসে তাড়া দিয়ে বলে,
“চলো চলো। আম্মু একটু আগে বলে গেছে, তোমাকে নিয়ে আসতে। এখন আরশিতে এই আর্শিকে(আর্শির থুতনিতে হাত দিয়ে) দেখে আর মন খারাপ করো না। এই আরশি রূপকথার মায়া আরশি না যে তোমার প্রশ্নের জবাব দিবে। একটু হাসো। স্মাইল প্লিজ?”

আর্শি হাসলে আরিয়াকে তাকে নিয়ে বসার ঘরের দিকে যায়।

________
নাম-ঠিকানা বলে কাজি সাহেব আর্শিকে কবুল বলতে বলে। আর্শি মাথা নিচু করে তিন বার লম্বাশ্বাস নেয়। এটুকু সময়েই শ্রাবণ অস্থির হয়ে গেছে। অতঃপর যখন আর্শির কন্ঠস্বরে ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’ শব্দ দুটো শুনে তখন যেন তার হৃৎপিণ্ডটা নিজের স্বাভাবিক গতির থেকে রিদম বাড়িয়ে দিয়েছে। আদিব শ্রাবণের পাশে দাঁড়িয়ে। সে শ্রাবণের ঘাড়ে হাত রাখে। শ্রাবণও ঘাড় ঘুরিয়ে আদিবের দিকে তাকালে আদিব ও-কে ইশারায় শান্ত হতে বলে।
পরপর তিনবার কবুল বলে আর্শি চোখ বন্ধ করে ফেলে। এবার শ্রাবণের পালা। কাজি সাহেব শ্রাবণকে কবুল বলতে বললে শ্রাবণও নিরব! আদিব পাশ থেকে আলতো ধা*ক্কা দিলে শ্রাবণ দ্রুত তিনবার ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’ বলে দেয়। আরিয়া ও আশিক আর্শির পাশে দাঁড়ানো। ওরা দুজন মুখ টিপে হাসছে। অতঃপর উপস্থিত সকলে দোয়া করে। মিস্টার রিয়াজউদ্দীন আরিয়াকে মিষ্টি আনতে বলেন।

মিষ্টি মুখ শেষে এবার খাওয়া-দাওয়ার পালা। আর্শিকে আরিয়া রুমে রেখে এসে শ্রাবণের কাছে গিয়ে বলে,

“ভাইয়া, আপু আপনাকে ডাকছে।”

আশিক পাশ থেকে বোকার প্রশ্ন করে বসে,
“কখন ডাকলো? আমি তো দরজার কাছেই ছিলাম।”

আরিয়া আশিকের দিকে চেয়ে একটা রাগী লুক দেয়। অতঃপর দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“আমার কানে কানে বলেছে। সেটা তুমি কীভাবে শুনবে? শোনার কথা কি তোমার?”

আশিক ভ্যাবলাকান্তের মতো হেসে মাথা নাড়ায়। শ্রাবণ আশিকের কাঁধে দুইবার আলতো চা*পড়ে দিয়ে আর্শির রুমের দিকে যায়। শ্রাবণ যেতেই আরিয়া আশিককে টেনে নিজের রুমে নিয়ে যায়। তারপর দরজা লাগিয়ে কণ্ঠস্বর নিচু করে শা*সানোর সুরে বলে,

“এই! তুমি ব*ল*দের মতো কথা বলো কেন? তোমাকে সকালে বলছিলাম না, যে আপুর সাথে রাতে ভাইয়ার কিছুটা মনমালিন্য হইছে। আমার আপু তো জীবনেও নিজ থেকে কথা শুরু করবে না। তাই আমি একটু হেল্প করছিলাম। সেখানে তুমি….!”

“সরি। আমি বুঝিনি। তুমি তো আমাকে সামান্য হিনটস দিলে পারতে। তাহলে আমি চুপ করে থাকতাম।”

“হয়েছে। বাদ দাও। ওদের ঝামেলা মিটে যাক। কারণ পরশুদিন আপু চলে যাবে। লং ডিস্টেন্স। সামান্য মনমালিন্য মিটে যাওয়াই ভালো।”

আশিক হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়।

_______

শ্রাবণ আর্শির রুমে গিয়ে নক করে। আর্শি দরজার দিকে চেয়ে শ্রাবণকে দেখে বলে,
“আসুন।”

শ্রাবণ রুমের ভেতরে যায়। শ্রাবণ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আর্শি ফের তাকিয়ে শ্রাবণকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
“বসুন!”

শ্রাবণ ধন্যবাদ জানিয়ে বসে। এরপর আবার নিরবতা! আর্শিও কিছুক্ষণ মাথা নিচু করেই ছিল। কিন্তু এই নিরবতা তাকে আরও অস্বস্তিকর পরিবেশে ফেলছে বিধায় নিজেই নিরবতা ভাঙে। বলে,
“কালকে রাতের ঘটনার জন্য, সরি! আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি। আপনি কিছু মনে করবেন না। আসলে এতো রাতের বেলা ঘুম ভেঙে গেলে মেজাজ তো সামান্য খিট*খি*টে হবেই। তাই না?”

শ্রাবণও এবার মুখ খুলে। হালকা হেসে বলে,
“ইটস ওকে। আমারও বোঝা উচিত ছিল। আসলে আমি ভেবেছিলাম, আমি যেহেতু ঘুমাতে পারছি না। তুমিও হয়তো…! যাকগে সেসব বাদ দাও। আমি কিছু মনে করিনি। তুমিও মন খারাপ করে বসে থেকো না।”

অতঃপর দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে হাসি বিনিময় করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
সেদিনের মতো শ্রাবণ ও শ্রাবণের পরিবার চলে যায়। শ্রাবণকে থাকতে বলা হয়েছিল কিন্তু আর্শির দিক থেকে কোনো পজেটিভ সাইন না পেয়ে শ্রাবণ নিজেই থাকতে চায়নি। এদিকে আর্শি সন্ধ্যা থেকে ঘুমিয়ে এখন রাত এগারোটা বাজে ঘুম থেকে উঠে অলস বসে আছে। মিসেস আশালতা খাবার খাইয়ে দিয়ে যান। এখন নামাজ পড়ে এসে ফোন নিয়ে বসেছে। কিছুক্ষণ গেমস খেলে, মিমস দেখে এখন তার বিরক্ত লাগা শুরু হয়েছে। ভাবলো শ্রাবণকে ফোন করবে কী-না! যদি কিছু ভেবে বসে? দোটানায় ভুগছে খুব।
“আমাকে যখন রাত দুইটা-তিনটায় কল করে, তখন সে তো ভাবে না। তো এখন মাত্র বারোটা বাজে। আমি কেন এতো ভাবছি?”

এসব ভেবেই সে শ্রাবণের নাম্বার ডায়াল করে। দুইবার রিং হওয়ার পর শ্রাবণ রিসিভ করে। আর্শি প্রথমে সুন্দর করে সালাম দেয়। শ্রাবণও সালামের জবাব দেয়। আর্শি শুধায়,

“বিজি আপনি?”

“না। এমনি ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিলাম।”

“ওহ। ঘুমাবেন কখন?”

“ঘুমাব। তুমি এই সময়ে না ঘুমিয়ে ফোন করলে যে?”

“আমি সন্ধ্যা থেকে ঘুমিয়ে উঠেছি। একটু পর আবার ঘুমাব।”

“তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো।”

আর্শি কিছুক্ষণ নিরব থাকে। শ্রাবণের কথাতে আগের মতো ভাইব পাচ্ছে না সে। কেমন যেন বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর। আর্শি সন্দিহান স্বরে প্রশ্ন করে,

“আপনার মন খারাপ?”

শ্রাবণ খানিক নড়ে বসে বিপরীতে নিজেও শুধায়,
“মন খারাপ হবে কেন?”

“সে তো আপনি জানেন। আমি কীভাবে বলব? আমি তো জাস্ট এটা ওটা সন্দেহই করতে পারি। সঠিক জবাব তো আপনি জানেন।”

শ্রাবণ নিঃশব্দে ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“কিছুই হয়নি। ঘুমিয়ে পড়ো।”

আর্শি বলে,
“আপনি এখনো গতকাল রাতের কথা ধরে বসে আছেন? সরি তো বললাম।”

শ্রাবণ চোখ বুজে বিছানার হেডবোর্ডে মাথা এলিয়ে বলে,
“তুমি অযথা ভাবছো। আমি ওই কারণে কিছু মনে করে নেই।”

“তাহলে?”

“আসলে আমি পরশুদিন তোমার সাথে ইটালি যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু…”

শ্রাবণকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আর্শি প্রশ্ন করে বসে,
“কেন? আপনি ইটালিতে জব নিচ্ছেন?”

“আরে না। এমনিতেই তোমার সাথে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভিসা এতো জলদি হচ্ছে না। আমার ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড জানালো কম করে দুই সপ্তাহ লাগবে। আরও বেশিও লাগতে পারে। বলা যায় না।”

“ওহ। সমস্যা নেই। আপনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমার ওখানে কোন অসুবিধা হবে না। এক বছর তো ছিলাম। কোনো অসুবিধা হয়নি। তাছাড়া আমি তো একা থাকি না। আমার সাথে আরো পাঁচ-ছয় জন মেয়ে থাকে। এখন আপনি গেলে আমার রুমমেটকে অন্য রুমে শিফট করতে হবে। অথবা আমাকেই আপনাকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য অন্য কোথাও থাকতে হবে।”

শ্রাবণ ছোটো করে বলল,
“হুম। ঘুমাও। পড়ে কথা হবে।”

এই বলে শ্রাবণই কল কে*টে দেয়। আর্শি হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজে নিজেই বলে,
“আমি কিছু বললেই দেখি ওনার খারাপ লেগে যায়। এখন আবার কী এমন বললাম যে ফোন কে*টে দিলো?”

কিছুক্ষণ আকাশ-পাতাল চিন্তা করে আবারও নিজে নিজেই বলতে থাকে,
“উনি কি ভাবছেন আমি উনাকে যেতে মানা করছি? কিন্তু আমি তো উনাকে মানা করিনি। আমি তো উনার চিন্তা কমানোর জন্য বললাম। তাছাড়া সত্যিই তো বলেছি! উনি সেখানে গেলে তো আমার ফ্রেন্ডকে বা আমাকেই উনাকে নিয়ে শিফট হতে হবে। সত্য কথা বললেও মানুষ মাইন্ড করে বসে! ধ্যাত! ভাল্লাগে না।”

এই বলে আর্শি ফোন হাত থেকে রেখে কাঁথা টেনে চোখ খিঁচে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।

ওইদিকে শ্রাবণ ভাবছে,
“আর্শি চাচ্ছে না, আমি ওর সাথে যাই। ওতো সময় চেয়েছিল। ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে প্রেশারাইজড করে আকদের জন্য রাজি করিয়েছে সবাই। আমি তবে ইটালি যাওয়ার প্ল্যান ক্যান্সেল করে দিব?”

নিজের ভাবনা-চিন্তার উপর শ্রাবণ লাগাম টানতে পারছে না। যতোই মনোযোগ হটানোর চেষ্টা করে, ততোই এই চিন্তা তাকে ঝেঁকে ধরছে। অতঃপর মস্তিষ্ককে রেস্ট দিতে লো ডো*জের স্লি*পিং পি*ল খেয়ে নেয়।

________

আজ আর্শির ফ্লাইট। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমে কাতার। তারপর ইটালির ফ্লাইট। সকাল ১০টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাতার যাবে আর্শি। খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে আর্শি ও তার মা-বাবা, ভাই। আরিয়া ও আশিক ওদের বাড়ি থেকে আসবে। শ্রাবণ ও শ্রাবণের পরিবারও আসবে। মিসেস আশালতা আড়ালে কাঁদছেন। আর্শি গাড়িতে মায়ের পাশেই বসে মায়ের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছেন। আদিব ড্রাইভারের সাথে বসা। নয়টার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবে ওরা।

এয়ারপোর্টে পৌঁছে ফ্লাইটের সময়ের অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যে আরিয়া ও আশিক এসে পৌঁছেছে। মিসেস আশালতাকে মাঝে রেখে দুই মেয়ে দুই পাশে বসা। মিসেস আশালতা নিজের আবেগ সামলাতে পারছেন না। এখন তার কাছে দুই মেয়ের একজনও থাকবে না। ছেলেও সারাদিন অফিসে থাকবে। উনার মনের অবস্থা খুবই নাজুক।

সাড়ে নয়টার দিকে শ্রাবণরাও এসে পৌঁছেছে। মিসেস সন্ধ্যা, মিসেস আশালতার পাশে বসে স্বান্ত্বনা দিচ্ছেন। আর্শি ও শ্রাবণ একটু দূরে গিয়ে বসেছে। দুজনেই চুপ। নিরবতা ভেঙে শ্রাবণ বলে,
“তুমি সাবধানে থেকো। আমি জানি এক বছর তুমি সেখানে একাই ছিলে। কিন্তু এজ অ্যা হাজবেন্ড আমারও চিন্তা হয়।”

আর্শি প্রত্যুত্তরে বলে,
“আপনি কি আবার আমার কথায় রাগ করেছেন? দেখুন, আমি আপনাকে যেতে মানা করিনি। আপনাকে জাস্ট টেনশন করতে নিষেধ করেছি। প্লিজ আমার কথাকে অন্যভাবে নিবেন না।”

“অন্যভাবে নেইনি। আমি বুঝতে পারছি। আমাকেও কানাডা ফিরতে হবে। দুই মাসের ছুটিতে এসেছি।”

“কবে ফিরছেন?”

“ভাবছি। জলদি ফিরে যাব। যাতে পরবর্তীতে বেশি ছুটি পাই। এখন যেহেতু ইটালির ভিসা পেতে টাইম লাগবে।”

“ওহ আচ্ছা। আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন। আপনি কানাডাতে আমি ইতালিতে। ছয় ঘণ্টার ডিফরেন্স। তাই কমিউনিকেশনে কিছুটা ঝামেলা হবে। একটা কমন টাইম বের করতে হবে দুজনের।”

“হুম। বের করে নিবো।”

দুজনে আবারও নিরবতার আশ্রয় নিলো। শ্রাবষ কফি আনার বাহানায় উঠে যায়। এই সুযোগে আরিয়া ও আশিক এসে আর্শির পাশে বসে। আশিক প্রথমে শুধায়,
“আপু, শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে তোমার আর কোনো প্রবলেম নেই তো? দেখো, দুজনের মধ্যে লং ডিসটেন্স শুরু হবে। তাই কোনো প্রবলেম থাকলো শর্টআউট করে নাও।”

আরিয়াও একই সুর বলে। আর্শি হতাশ হয়ে বলে,
“আই নো, লং ডিস্টেন্স মেন্টেন করা অনেক টাফ। এজন্যই আমি বলেছিলাম এক বছর পর আকদ, বিয়ে হোক। কিন্তু কেউ শুনলোই না! তাছাড়া আমি যাই বলি, তাতেই এখন উনার খারাপ লেগে যায়। দুইদিনেই উনার মধ্যে হিউজ চেঞ্জ। ডোন্ট নো, হোয়াট উইল হ্যাপেন!”

আরিয়া ও আশিক একে অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টি বিনিময় করে। কিছুক্ষণ পর আর্শিকে যেতে হবে। মিসেস আশালতা তখন বড়ো মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদছেন। পাশ থেকে আরিয়া ও মিসেস সন্ধ্যা উনাকে আগলে রেখেছেন। আর্শিও ইমোশোনাল হয়ে পড়েছে। তাও জোড় করে মাকে ছাড়িয়ে লাগেজ নিয়ে ইমিগ্রেশন পার করে চলে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১৩+১৪

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
আরিয়ার সাথে দেখা করার পর আরিয়াকে চিন্তিত দেখে আর্শি জিজ্ঞাসা করে,
“কী হয়েছে? আবার কিছু করেছে?”

আরিয়া নিজের আশেপাশে আশিক ও নাহিদের কাজিনদের দেখে আর্শিকে হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। আশিকের এক কাজিন বোন শুধায়,
“কী হলো?”

“আপু, একটু আপুর সাথে কথা বলব। ওই কর্ণারের রুমটায় যাই?”

“আচ্ছা যাও। বেশি সময় নিও না। গেস্টরা তো তোমাকে দেখতেই এসেছে।”

আরিয়া মাথা নাড়িয়ে আর্শিকে নিয়ে কর্ণারের রুমটায় যায়। তারপর আরিয়া গতকালকের ঘটনা বলে। সব শুনে আর্শি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে,
“নাহিদের মা যদি তোর সাথে মিসবিহেভ করে? শোন, যদি করেও তুই জবাব দিস না। উনিই বা কী করবে বল? একমাত্র ছেলে উনার।”

“আরে না, আপু। আমি উনাকে কিছুই বলব না। তাছাড়া উনিও আমায় কিছু বলেন না। তবে উনি অনুষ্ঠানে আসেননি। উনার ছেলে আজ চলে যাবে। কাল রাতেই বাড়ি ছেড়ে নাকি হোটেলে ওঠেছে। আমি দুইবার বলেছিলাম আন্টিকে আসতে। কোনো জবাব দেয়নি। পরে আঙ্কেল বললেন আর না ডাকতে।”

আর্শি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন সবকিছু সঠিক হলেই হয়। চল এবার।”

আর্শি ঘুরলে আরিয়া ওর হাত টেনে ধরে বলে,
“আপু, শ্রাবণ ভাইকে দেখছি তোমার আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে। ব্যাপার কী হ্যাঁ?”

আরিয়ার কণ্ঠে স্পষ্ট রম্যতা ও দুষ্টুমি। আর্শি থতমত খেয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে,
“কই কিছু নাতো! উনি আমার পিছনে কেন ঘুরঘুর করছে সেটা আমি কীভাবে জানব?”

আরিয়া তার বোনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“অনেস্টলি আমাকে একটা কথা বলো তো, শ্রাবণ ভাইয়াকে তোমার কাছে কেমন লাগে?”

“কেমন লাগে?”
আর্শি কপাল কুঁচকে প্রশ্নের জবাবে ফের প্রশ্ন করলো। আরিয়া বলে,
“সেটা তো তুমি বলবে, যে শ্রাবণ ভাইয়াকে তোমার কাছে কেমন লাগে। আমি কিভাবে বলবো তোমার কাছে কেমন লাগে?”

“মানুষের মতোই লাগে!”

আর্শি অন্যদিকে ফিরে জবাবটা দিলো। আরিয়া তা লক্ষ্য করে আর্শির মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফের শুধায়,
“অন্যদিকে তাকিয়ে কেন বলছো? আমার দিকে তাকিয়ে বলো, কেমন লাগে?”

“কেন? তোর দিকে তাকালে বুঝি আমার জবাব বদলে যাবে? ”

“বদলাতেও পারে! বলা তো যায় না। তুমি নজর লুকাচ্ছো মিথ্যা ধরা পড়ে যাবে বলে!”

আর্শি আরিয়ার বাহুতে একটা ঘু*ষি বসিয়ে বলে,
“বেশি বুঝিস। স্টেজে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে, আর তুই এখানে আছিস তোর আউল-ফা*উল প্রশ্ন নিয়ে।”

আর্শি ফের যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আরিয়া বলে,
“আব্বু, আম্মু, ভাইয়া নাকি তোমার বিয়ে ঠিক করেছে? তুমি নাকি তাতে রাজিও হয়ে গেছো?”

আর্শি থমকে দাঁড়ায়। বোনকে থেমে যেতে দেখে আরিয়া এগিয়ে গিয়ে বলে,
“সত্যি করে বলোতো আপু, তোমার মনে শ্রাবণ ভাইয়ার জন্য একটুও জায়গা নেই?”

আর্শি জবাব দিতে পারলো না। আর্শিকে মৌন দেখে আরিয়া ফের বলল,
“তুমি কি বুঝো না? শ্রাবণ ভাই যে তোমাকে পছন্দ করে। শুধু পছন্দ না, তোমাকে ভালোবাসে। তোমাকে ভালোবাসে বলেই রাত-বিরেতে তোমাকে ফোন করে গিটার শুনাতো, বৃষ্টি নিয়ে ছন্দ শুনাতো। তুমি কিছুক্ষণ শুনে বিরক্ত হয়ে কল কে*টে দিতে। এগুলো কেন করতো?”

“চুপ কর। ওখানে স্টেজের কাছে মানুষ তোর জন্য অপেক্ষা করছে! আর তুই এখানে এসেছিস শ্রাবণ ভাইয়ার হয়ে গুনগান গাইতে আমার কাছে। চল।”

এই বলে আর্শি আরিয়াকে টেনে নিয়ে রুম থেকে বের হলো। রুম থেকে বেরোতেই দেখে আদিব ও শ্রাবণ রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। আর্শি সন্দিহান হয়ে শুধায়,
“তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

আদিব বলে,
“আরে বাবা আরুকে খুঁজছিল। তুই স্টেজের তোর ননদরা বলল তুই নাকি আর্শিকে নিয়ে এই রুমের দিকে এসেছিস। তাই আসলাম।”

“ওহ আচ্ছা।”

“লাঞ্চের টাইম তো পেরিয়ে যাচ্ছে। আরু ও আশিককে নিয়ে বসতে হবে। জলদি চল।”

আরু পেটে হাত দিয়ে করুণ স্বরে বলে,
“হ্যাঁ ভাইয়া, অনেক জোরে খিদে পেয়েছে। জলদি চলো। ”

আর্শি আরিয়াকে আরেকটা লাগিয়ে বলে,
“তোর খালি খিদেই পায়! তাই না? তুই যে বউ, সেটা তো লেহাজ কর।”

আরিয়া নিজের পক্ষের যুক্তি দিয়ে বলে,
“কেন? বউ বলে কি আমার খিদে লাগতে পারে না? আমিও তো মা*নুষ।”

“হ্যাঁ, তুই মা*নুষ। এবার তো চল!”

অতঃপর ওরা চারজন স্টেজের দিকে যায়।

_________

বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে ফিরতে ফিরতে রাত। অতঃপর ক্লান্তিতে অবসন্ন কায়া বিশ্রামের খোঁজে নিন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আর্শি বাড়িতে তোড়জোড় দেখে মাকে শুধায়,

“আরু তো আজকে যাবে না। দুইদিন তো থাকবে। তাহলে তোড়জোড় কীসের?”

“আজকে তোকে দেখতে আসবে।”

“মানে! কখন ঠিক হলো সব? আমি তো জানতাম না।”

“গতকাল রাতে। তুই তো ঐখান থেকে এসেই টায়ার্ড হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিস। তখন ওরা জানিয়েছে যে আজকে আসতে চায়।”

“আর তোমরা রাজি হয়ে গেলে? আমাকে জিজ্ঞাসা তো করবে তাই না? ”

আর্শি কথাগুলো বলছে উত্তেজিত হয়ে। মিসেস আশালতা বড়ো মেয়েকে শান্ত করতে আরিয়াকে চোখের ইশারা করে। আরিয়া এসে আর্শির কাঁধে হাত ও থুতনি ঠেকিয়ে বলে,

“আরে আপু, সমস্যা কোথায়? দেখতেই তো আসবে। তাছাড়া তোমার তো অন্য কোথাও রিলেশন নেই যে তুমি এতো ভয় পাচ্ছ!”

আর্শি উত্তেজিত অবস্থায় আরিয়াকে নিজের থেকে সরিয়ে কোনো প্রত্যুত্তর না করে নিজের রুমে গিয়ে সজোড়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। মিসেস আশালতা ছোটো মেয়েকে ঘাবড়ানো স্বরে বলেন,

“যা না। দেখ তোর বোন কী করে? নাস্তাও তো করলো না।”

“আরে মা, চি*ল! আমি একটু পর কফি বানিয়ে নিয়ে যাব। মুড ঠিক হোক। আমি আগে পরোটা তিনটে ভেজে ফেলি। আশিককে নাস্তা দিতে হবে তো।”

আশিককে নাস্তা দেওয়ার কথা শুনে মিসেস আশালতা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি ব্যাস্ত স্বরে বললেন,
“ওই কড়াইটাতে হাঁসের মাংস রান্না করে রাখছি। সাথে ডিম ভে*জে দে।”

আরিয়া মাথা নেড়ে পরোটা ভাজতে ফ্রাইংপ্যান নেয়।

________

আর্শি নিজের রুমে কিছুক্ষণ পায়চারি করে ফের বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নেয়। তারপর ডায়াল লিস্টে গিয়ে কয়েকবার শ্রাবণের নাম্বারটা ডায়াল করে আবার কে*টে দেয়। শেষমেশ কল করেই বসে। প্রথমবার কল হয়ে কে*টে যায়। তাতে আর্শির আরও মেজাজ খারাপ হয়। ফোন বিছানায় ছুঁ*ড়ে ফেলে আরও কয়েক দফা পায়চারি করতে থাকে। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর তার ফোন বেজে ওঠে। এবার আর্শি ফোনের কাছে গিয়ে বসে বসে দেখছে কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না। সে বলতে থাকে,

“এবার আমি ফোন রিসিভ করব না। বাজুক।”

ফোন বাজতে বাজতে কে*টে যায়। অতঃপর আবার কল আসে। টানা তৃতীয়বারে আর্শি রিসিভ করে। রিসিভ করে চুপ করে থাকে। অপরপাশ থেকে শ্রাবণ নিঃশব্দে হাসে। সেও নিরব। কিছুক্ষণ আগে আরিয়া তাকে মেসেজ করে জানিয়েছিল যে আর্শি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। প্রায় আধ মিনিটের মতো পেরোলে শ্রাবণ গম্ভীর স্বরে বলে,

“এভাবে চুপ করে থাকতে বুঝি কল করেছিলে?”

আর্শি তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়,
“আমি কল করলাম কই? আপনিই তো কল করলেন! না ধরাতে বারবার কল করেই যাচ্ছেন। তাই রিসিভ করলাম। এখন আপনি চুপ করে থাকলে আমি কি করতে পারি!”

শ্রাবণ ফোন কিছুটা দূরে সরিয়া মুখে হাত দিয়ে হাসলো। অতঃপর কন্ঠে আবার গাম্ভীর্যতা এনে পালটা প্রত্যুত্তর করে,
“ওহ আচ্ছা! প্রথমে আমি কল করেছিলাম? তাহলে তোমার নাম্বার থেকে কল বুঝি ভূ*তে করেছিল?”

“দেখুন ওটা আমি ইচ্ছে করে করিনি। ভুলক্রমে হয়ে গেছে। যদি ইচ্ছাকৃত করতাম তাহলে আপনাকে বারবার কল করতাম। কিন্তু করিনি। আপনি কিন্তু আমাকে তিন বার কল করেছেন।”
কথাগুলো বলে আর্শি লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লো। সে এখন কিছুতেই নিজেরটা বলবে না। শ্রাবণ বলে,

“তাহলে রাখছি। আমার তো কোনো কথা নেই।”

শ্রাবণ কল কা*টবে এমন সময় আর্শি দ্রুত বলে ওঠে,
“আজকে নাকি আমাকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসবে।”

শ্রাবণ মুখ টিপে হাসে। অতঃপর সিরিয়াস মুডে বলে,
“ওয়াও! কনগ্রেটস।”

আর্শি অবাক হয়ে যায়। শ্রাবণের থেকে অন্তত সে এরকম প্রতিক্রিয়াতো আশা করেনি। সেও রেগে বলে,
“ফাইন। থ্যাংকিউ। আমি আজকে বিয়েতে রাজি হবো। ছেলে যদি কা*না-লু*লাও হয়! তারপরও। আপনি আমাকে আর রাত-বিরাতে কল করবেন না। গুড বায়।”

এই বলে আর্শি খট করে ফোনটা কে*টে দেয়। অতঃপর ফোনটা বিছানায় রেখে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। অপরদিকে শ্রাবণও ফোন রেখে হাসতে হাসতে আর্শির নাম্বারটা দেখতে থাকে। তার বৃষ্টি যে এখন প্রচণ্ড রেগে আছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
পরিপাটি হয়ে তৈরি আর্শি। আরিয়া বলছিল একটু সাজতে। কিন্তু আর্শি চোখ রা*ঙালে সে আর জোড়াজোড়ি করে না। মুখ গোমড়া করেই মা ও বোনের সাথে ড্রয়িংরুমে যায় আর্শি। মায়ের কনুইয়ের ধা*ক্কা খেয়ে সালাম দিয়ে ফ্লোর থেকে নজর সামনের দিকে নেয়। ওমনি তার ঠোঁ*ট জোড়া একে অপরের সাথে দূরত্ব তৈরি করে। চোখের পলক ফেলাও যেন সে ভুলে গেছে। কয়েক সেকেন্ডের এই অবাক মিশ্রিত চাহনির অবসান ঘটে পাশ থেকে আরিয়ার ফিসফিস কথায়। আরিয়া বলে,

“শ্রাবণ ভাইয়াকে কি আজকে খুব বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে, আপু?”

আর্শি জলদি নজর সরিয়া আরিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। আরিয়া আবার বলে,
“কী হলো? তুমি আমাকে এভাবে দেখছো কেন?”

আর্শিও ফিসফিস করে বলে,
“তুই জানতি। তাই না? জেনেও আমাকে কেন বলিসনি?”

“আমি কি বলবো। তখন বললে বুঝি তুমি নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যেতে? ইগো নিয়ে ঢিট ধরে বসে থাকতে। তাই তোমাকে জানাইনি। স্বচক্ষেই দেখে নেবে।”

আর্শি চোখ ছোটো ছোটো করে কিছু বলতে মুখ খুলবে তার আগেই মিসেস আশালতা মেয়ের হাত ধরে টান দেন। আর্শি নিজেকে সামলে মায়ের সাথে গিয়ে শ্রাবণের বিপরীত পাশের সোফায় বসে। শ্রাবণের মা মিসেস সন্ধ্যা বলেন,

“ভাইজান, কথা আর কী বলব? মেয়ে তো আমাদের আগে থেকেই পছন্দ। এখন আপনারা বলেন। শুভ কাজে দেরি তো করা ঠিক না।”

আর্শির বাবা মিস্টার রিয়াজউদ্দীন বলেন,
“আমরাও তো চাই না দেরি করতে। এখন ছেলে-মেয়ে যা বুঝে।”

মিসেস সন্ধ্যা প্রত্যুত্তরে বলেন,
“বিয়ের অনুষ্ঠান তো এক বছর পরে করার ইচ্ছা। এখন আকদ হবে কী-না সেটা আপনারা বলেন।”

মিস্টার রিয়াজউদ্দীন মেয়ের দিকে তাকান। আর্শি অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। সে এখন সবার সামনে কী বলবে! সময় তো দিতে হবে। মিস্টার রিয়াজউদ্দীন দ্বিধান্বিত স্বরে বলেন,

“সেটা আমরা পরে আপনাদের জানিয়ে দেবো। আলাপ আলোচনা করে নেই।”

“তাহলে আজকে শুধু আংটি পরিয়ে দিয়ে যাই।”

কথাটা বলেই মিসেস সন্ধ্যা উঠে আর্শির কাছে আসেন। আর্শির হাত ধরে আংটি পড়িয়ে দেন। আর্শি বিপরীতে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে চুপ করে থাকে। অতঃপর আরিয়ার বদৌলতে শ্রাবণ ও আর্শির একা কথা বলার সুযোগ হয়। আর্শি শ্রাবণের সাথে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে শ্রাবণ দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আর্শি হা*ম*লা করে বসে! সে দাঁত কিড়মিড় করে শ্রাবণের শার্টের কলার ধরে বলে,

“আপনারা সবাই এতদিন যাবত আমার সাথে মজা নিয়েছেন? সবকিছু জেনেও না জানার ভান করেছিলেন। সকালবেলা তো বলেছিলেন, ওয়াও কনগ্রেটস! এখন বুঝতে পারছি কেন বলেছিলেন। ফা*লতু লোক একটা। এইজন্যই আপনাকে আমার সহ্য হয় না। আমার মন চাচ্ছে আপনাকে একটা ঘু*ষি মে*রে আপনার মুখের নকশা বদলে দেই!”

শ্রাবণ হাসতে হাসতে বলে,
“রাগলে কিন্তু তোমাকে দারুণ লাগে! একদম লাল টমেটো! ”

আর্শি আরও ক্ষেপে যায়। চোখ রাঙিয়ে বলে,
“আপনি আমাকে টমেটো বললেন? এই আপনার সাহস তো কম না!”

“তুমি বুঝি আজকে জানলে যে আমার সাহস কম না! মাঝে মাঝে তুমি এমন ফানি ফানি কথা বলো না বৃষ্টি! ভীষণ হাসি পায়।”

“আর আপনার কথা শুনলে আমার ভীষণ রাগ পায়! মন চায়, আপনার এই সিল্কি চু*লগুলো যদি আমি একদম টে*নে ছিঁ*ড়ে টা*কলা করে দিতে পারতাম! মনে অনেক অনেক অনেক শান্তি পেতাম!”

“ওকে! ছিঁ*ড়ে ফেলো। আমার তো তাতে কোনো সমস্যা নেই। তুমি একটা টা*কলা জামাই পাবে! তখন লোক সমাজে কিভাবে বলবে? যে আমার জামাই টা*কলা! মানে প্রেস্টিজে লাগবে তাই না?”

আর্শি এবার শ্রাবণের কলার ছেড়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রেলিংয়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে,
“এই আপনি এতো বিরক্তিকর কেন? এত অস*ভ্য কেন? সবসময় আমাকে ক্ষেপাতে হয় কেন আপনার?”

বলতে বলতে রেলিংয়ের কাছে পৌঁছাতেই শ্রাবণের দেহের উপরিংশ কিছুটা বাহিরের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অমনি আর্শি ভয় পেয়ে খপ করে শ্রাবণের শার্ট ধরে টান দেয়। শ্রাবণও রেলিং ধরে নিজেকে সামলে নেয়। আর্শি বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর শ্রাবণের দিকে তাকাতেই বোকার মতো বলে,

“আপনি হাসছেন? আপনার ধারণা আছে? এখান থেকে পড়ে গেলে আপনার কি অবস্থা হতো? চারতলার উপর থেকে পড়তেন আপনি। মরতেন কী-না জানিনা! কিন্তু বেঁচে থাকলে হাড়-গোর আস্ত থাকতো না।”

শ্রাবণ রসিকতার সুরে দুই দিকে দুই হাত ছাড়িয়ে বলে,
“শুনো হে দখিনা হাওয়া, আজ এক প্রেমিক তার প্রেয়সীর নজরে নিজেকে হারানোর ভয় দেখেছে। ধন্য তুমি দখিনা হাওয়া! ধন্য!”

আর্শি তৎক্ষণাৎ কোমড়ে এক হাত গুজে আরেক হাত দিয়ে শ্রাবণকে এক ঘা লাগিয়ে বলে,
“ইউ আর টু মাচ! আপনাকে কিছু বলাই বেকার। সরি। কিছু না, আপনার সাথে কথা বলাই বেকার!”

এই বলে আর্শি শ্রাবণকে ছাদে রেখেই নিজে একা নিচে নেমে আসে। শ্রাবণ সেখানে দাঁড়িয়ে হাসছে।

_________

শ্রাবণের পরিবার চলে যাওয়ার পর সবাই মিলে আর্শিকে ঘিরে ধরেছে। আদিব বলে,
“প্লিজ আর্শু, রাজি হয়ে যা বোন।”

আরিয়া বলে,
“রাজি হয়ে যাও না, আপু। শ্রাবণ ভাই কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”

আশিকও বলে,
“রাজি হয়ে যাও, আপু। ভাইয়াটা কতো ভালো।”

এই তিনজনের কথা শুনে আর্শি এবার তার বাবা-মায়ের দিকে তাকায়। উনারা অসহায়ের মতো চেয়ে আছেন। আর্শি বলে,

“কী? তোমরা এভাবে চেয়ে আছো কেন আমার দিকে? আমি কি একবারও মানা করেছি যে আমি বিয়ে করবো না? শুধু বলেছি এক বছর পর।”

মিস্টার রিয়াজউদ্দীন এগিয়ে এসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন,
“বিয়ে তো শ্রাবণকেই করবে। সেটা এখন করো বা এক বছর পর করো। কিন্তু দেখো, এখন আমরা তোমার বিয়েটা দিতে চাইছি কারণ তুমি মানো আর না মানো, আগের তুলনায় আমরা এখন বেশি ভয় পাচ্ছি।”

মিসেস আশালতাও বলেন,
“ঠিক তাই। বলা তো যায় না কিছু। রাজি হয়ে যা, মা।”

আদিব হুট করে বলে ওঠে,
“দেখ আর্শু, রাজি হয়ে যা। তোর জন্য আমার বিয়েটাও পিছিয়ে যাচ্ছে! আমি কলিকে আর কতো বছর অপেক্ষা করাবো?”

ভাইয়ের কথা শুনে আর্শি দৃষ্টি সরু করে তাকায়। ফের তীক্ষ্ণ স্বরে বলে,
“আমি কি তোমাকে বিয়ে করতে মানা করেছি? আমার দোষ দাও কেন? নাকি তোমার আমাকে ঝ*গ*ড়াটে ননদ মনে হয়? যে কলিকে বিয়ে করে আনবে আর আমি প্রতিদিন কলির সাথে ঝ*গড়াঝা*টি করতেই থাকব! আরে ভাই, আমি তো এক বছরের জন্য চলে যাচ্ছি।”

“তুই বুঝতেছিস না। তোর আগে আরিয়ার বিয়ে হয়েছে। এখন যদি তোর আগে আমিও বিয়ে করি লোকে তো আরো খারাপ কথা বলবে। ”

“ফাইন! রাজি আমি। কিন্তু তোমার ওই বে*য়াদ*ব বন্ধুকে বলে দিবে, আমার সাথে যেন পা*ঙ্গা না নেয়। এর কাছে হাজারটা কারণ থাকে আমাকে বিরক্ত করার!”

আর্শির কথাতে সবাই খুশি হয়। আরিয়া বলে ওঠে,
“ওই বিরক্ত করতে করতেই তো তুমি তার প্রেমে এখন হাবুডুবু খাচ্ছো!”

আর্শি তৎক্ষণাৎ আরিয়ার কান ধরে শা*সায়,
“বড্ড বেশি পেকে গেছো তুমি। তোমার বড়ো কিন্তু আমি।”

আরিয়া নিজের কান ছুটানোর প্রয়াস করছে আর বলছে,
“হতে পারো তুমি বড়ো। কিন্তু তোমার আগে আমার বিয়ে হয়েছে। সো রেসপেক্ট মি!”

আর্শি হা হয়ে আরিয়ার কান ধরা হাত শিথিল করে দিলো। তার আগে বিয়ে হয়েছে বলে নাকি তাকে সম্মান করতে হবে! আরিয়া ছাড়া পেয়ে বড়ো বোনের মতিগতি দেখছে। এবার আর্শি ও-কে ধরতে উঠবে তার আগেই আরিয়া উঠে দৌঁড়! আর্শিও ওর পিছে! দুই বোন ডাইনিং টেবিলের চারিপাশে, খাট, সোফা সব ডিঙিয়ে ধাওয়া করে চলেছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১২

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১২
সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণ হলো। আরিয়া বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ফোনে গেইমস খেলছে। তখনি হন্তদন্ত হয়ে রুমে আশিকের আগমন। আরিয়া একবার নজর উঁচু করে দেখে নিয়ে আবার গেইমে মনযোগী হয়। আশিক এসে ফট করে আরিয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয়। আরিয়া চমকে তাকায়। বিস্ময়ের স্বরে শুধায়,
“কী হলো? তুমি ফোন এভাবে নিয়ে নিলে কেন?”

“আরে রাখো তোমার ফোন! এখন যা তোমাকে বলব, তা শুনে তোমার আর এই ফোনের প্রতি ইন্টারেস্ট থাকবে না!”

আরিয়া সন্দিহান দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে হাই তুলতে তুলতে বলে,
“ওহ বুঝেছি। তোমার ভাই! সে নিশ্চয়ই বলেছে, ‘হয় আমি এই বাড়িতে থাকব নয় ওরা! এখুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও!’ তাইতো?”

আশিক মাথায় হাত দিয়ে বসে চিন্তিত হয়ে বলে,
“আরে না। এটা বললে তো সলিউশন বের হতোই। কিন্তু ভাইয়া বলেছে, আমি যেন তোমাকে ডিভোর্স দেই। নয়তো সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে। খালামনি এখন কাঁদছে।”

আরিয়া ক্ষিপ্র গতিতে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,
“ডিভোর্স কি মগেরমুল্লুক নাকি! আজব! সে এসব বলার কে? লাগলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাক। কই সে? এবার গিয়ে তার দুই গা*লে দুটো থা*প্প-র লাগাবো।”

আরিয়া যেতে অগ্রসর হতেই আশিক হাত টেনে ধরে ও-কে বসায়। অতঃপর শান্ত করার প্রয়াসে বলে,
“খালু ডিল করছে ব্যাপারটা। তুমি ব্যাগ গুছাও। আমরা নানুবাড়িতে যাব। ওখানে মামা-মামিরা আছেন। কালতো বউভাত। এই কয়েকদিনে সবটা ঠিক হয়ে যাবে আশাকরি।”

“কেন? তোমার নানুবাড়ি কেন যাব? তোমার বাবার বাড়িতে যাব। তোমার বাবার উচিত এই সময় তোমার পাশে থাকা। শুধু পড়াশোনার খরচ দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।”

আরিয়ার কথাগুলো আশিকের মনের পুরোনো ক্ষ*তকে যেন তাজা করে তুললো। সে আরিয়ার হাত ছেড়ে হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আমার প্রতিটা জন্মদিনে লোকমারফরত আমার জন্য কেক পাঠিয়ে, পড়াশোনার খরচ দিয়ে জন্মদাতার ভূমিকা পালন করেন তিনি। এগুলোই তো বেশি। উনি যদি এগুলো না করতেন, তাহলে তা আমার খরচ খালামণি ও খালুকেই তুলতে হতো। উনি এতোটুকু তো বুঝেন, এই বা কম কী?”

আরিয়া পাশ থেকে আশিককে নিজের সাথে আগলে নিলো। আশিক সবসময় চুপচাপ থাকে, এতোদিন দেখে বুঝেনি যে আশিক ভেতরে ভেতরে এতোটা একা।

ওদিকে মিস্টার হাসান, নাহিদকে বলেন,
“তোমার জন্য তবে আমি দুবাইয়ের ফ্লাইটের টিকেট কে*টে দিচ্ছি চলে যাও। আমি মনে করি, এটাই সবার জন্য ভালো হবে।”

মিসেস নেহা হকচকিয়ে ওঠলেন। স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“কী বলছো? আমাদের একমাত্র ছেলে ও। তুমি ও-কে চলে যেতে বলছো?”

“হ্যাঁ বলছি। তোমার ছেলের ছোটো না যে তার সব অন্যায় আবদার এখনো পূরণ করব! সে যথেষ্ট বড়ো হয়েছে এবং ম্যাচিউর। তার কাছ থেকে এসব বেহুদা ইমম্যাচিওরের মতো আবদার আশা করা যায় না।”

নাহিদ গর্জে উঠে বলে,
“আশিকের সাথে বিয়ে দেওয়ার সময় মনে ছিল না? যে এই মেয়ে এই বাড়িতেই এসে উঠবে। আশিক নিজেই এই বাড়িতে আশ্রিত! তারউপর আমার হবু বউকে বিয়ে করে এনেছে।”

মিস্টার হাসান রাগে ছেলের গায়ে হাত তুলতে চেয়েও নিজেকে সংযত করে নিলেন। তারপর বললেন,
“তোমার কী মনে হয়? আশিকের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই? বরং আমি যদি তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড সবকিছু নিয়ে নেই তাহলে তোমার কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না। আশিকের ঠিকি যাওয়ার জায়গা থাকবে।”

নাহিদ পা*গ*লের মতো রেগে কয়েকবার হাততালি দিয়ে বলে,
“বাহ! এখন তোমার কাছে নিজের ছেলের থেকে আশিক বেশি ইম্পরট্যান্ট হয়ে গেছে? ফাইন! আমিই চলে যাচ্ছি। পরের ছেলে পরই হয় এটা মনে রেখো।”

এই বলে নাহিদ নিজের আলমারি খুলে জামা-কাপড় বের করতে লাগলো। মিসেস নেহা কাঁদছেন। তিনি ছেলেকে আটকাতে যেতে চাইলে মিস্টার হাসান স্ত্রীকে টেনে নিয়ে যান।

__________

আর্শি ফোন হাতে নিয়ে আনমনা হয়ে কিছু ভাবছে। তার ইটালি যাওয়ার দিনও এগিয়ে আসছে। পরিবারের সবাই চাচ্ছে সে বিয়ে করে যাক। এদিকে শ্রাবণের ব্যবহারও তার কাছে কেমন যেন ঠেকছে। লোকটার মনে আবার নতুন করে আশা জাগাচ্ছে নাতো সে? বাবা-মাকে তো বলেছে, তাদের পছন্দেই বিয়ে করবে। তাহলে শ্রাবণ? সে শ্রাবণকে ভালো না বাসলেও শ্রাবণ যে তাকে ভালোবাসে, সেটা সে কিছুটা বুঝতে পারছে। কী করবে সে? এতোসব চিন্তা মাথায় তার জটলা পাকাচ্ছে, তখন রুহি, কলি, নিতুদের গ্রুপ ভিডিওকল আসে। আর্শি লম্বা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে কল রিসিভ করে গল্পে মেতে ওঠে।

ওদিকে শ্রাবণ তার মায়ের সাথে মার্কেটে এসেছে। শ্রাবণের মা তার হবু ছেলের বউয়ের জন্য শাড়ি কিনবেন। বেনারসির দোকানে এসে একের পর এক শাড়ি বেরই করে চলেছেন। একটার থেকে একটা সুন্দর। শ্রাবণ গালে হাত দিয়ে মায়ের কার্যকলাপ দেখছে। শ্রাবণের মা মিসেস সন্ধ্যা কতোগুলো শাড়ি দেখিয়ে বলেন,

“তুই একটু পছন্দ করে দে না।”

“তুমি করছো তো। করো না।”

“সবগুলোই সুন্দর। তোর কোন ডিজাইনটা ভালো লাগে দেখ।”

শ্রাবণ শাড়ি গুলোর দিকে নজর বুলিয়ে বলে,
“সবগুলো তো লাল রঙের।”

“কই সব লাল রঙের? হালকা গাড়ো আছে তো। তোর যেটা ভালো লাগে বল। বিয়েরটা লাল নিব। বৌভাতেরটা যোকোনো কালারের শাড়ি বা ওর যা ভালো লাগে।”

“মা, এখন সর্বোচ্চ আকদ হতে পারে। তাই লাল বোনারসি নিও না। অনুষ্ঠানতো পরে হবে।”

“তোর লাল পছন্দ হচ্ছে না? এটাই এখানের সবচেয়ে বড়ো দোকান। দেখ আরও কতো শাড়ি আছে। যেটা পছন্দ হয় নে।”

শ্রাবণ শাড়ির তাকগুলোর দিকে আস্তে আস্তে নজর বুলাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর তার নজর পর একটা ডার্ক ওয়া*ইন রঙের বেনারসি শাড়ির উপর। শাড়িটা দোকানিকে বের করতে বলে। দোকানি শাড়িটা মেলে ধরে। খুব গর্জিয়াস কাজ না কিন্তু তামাটে সুতার সরু লতানো কাজ সাথে গুটি গুটি ফুল। শ্রাবণ তার মাকে বলে,

“এটা নাও।”

মিসেস সন্ধ্যা শাড়িটাতে হাত বুলিয়ে আশ্চর্য হয়ে বলেন,
“তোর পছন্দ তো অনেক সুন্দর! আমি তো লালের চক্করে অন্য রঙের দিকে নজরই দিইনি।”

শ্রাবণ চো*রা হেসে বলে,
“হয়েছে না? শাড়ি কেনার কাজ শেষ? বাড়ি চলো তবে।”

“দাঁড়া। তাড়া কীসের। কসমেটিকস, জুয়েলারি বাকি আছে তো।”

শ্রাবণ ক্লান্ত স্বরে বলল,
“মা! আগে সব ঠিক তো হোক। আর্শিরও তো রাজি হতে হবে।”

“ও হয়ে যাবে। তুই দাম মিটিয়ে আয়। আমি গোল্ডের দোকানে যাচ্ছি। এঙ্গেজমেন্ট রিং তো কিনতে হবে। আর্শির হাতের আঙুলের মাপ আমি জানি।”

এই বলে মিসেস সন্ধ্যা শাড়ির প্যাকেট নিয়ে উঠে দাঁড়ান। শ্রাবণ ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে দোকানিকে দাম মিটিয়ে মায়ের পিছু যেতে থাকে।

__________
পরদিন সকালে নাস্তা শেষে সবাই তৈরি হতে বসেছে। বৌভাতের অনুষ্ঠানের ভেন্যু প্রায় আড়াই-তিন ঘণ্টার পথ। তাড়াতাড়ি রওনা হতে হবে। আর্শির কাজিনরা ভেবেছিল পার্লারে যাবে কিন্তু সেখানে দেরি হবে বলে আগে আর বুকিং দেয়নি। নিজেরাই বাসায় তৈরি হচ্ছে। আর্শি হালকা গোলাপি রঙের গাউন পড়েছে। শাড়ি পড়বে ভেবেছিল কিন্তু সামলাতে কষ্ট হবে বলে গাউন পড়ে নেয়। জলদি করে হালকা মেইকওভার করে তৈরি হয়ে নেয়।

বৌভাতের ভেন্যুতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর দুইটা বেজে গেছে। আর্শি গাউন ঠিক করে গাড়ির নিজের পাশের দরজা খুলবে তার আগেই বাহির থেকে কেউ একজন দরজা খুলে দেয়। আর্শি সেদিকে চেয়ে দেখে শ্রাবণ হাস্যজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে। আর্শি মৃদু হাসি বিনিময় করে বের হতে নিলে শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে দেয়। আর্শি শ্রাবণের হাত দেখে আবার শ্রাবণের মুখের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকায়। শ্রাবণ ইশারায় হাত ধরতে বললে আর্শি ইতস্তত করে একাই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। অতঃপর বলে,

“দেখুন আপনি আমার বয়ফ্রেন্ডও হন না, আমার হাজবেন্ডও হন না। আপনি যে এভাবে গাড়ির কাছে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন! এটা যদি আত্মীয়-স্বজনরা দেখে তাহলে তারা কী ভাববে?”

শ্রাবণ ফিচলে হেসে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
“কী ভাববে?”

“আপনি বুঝেন না কী ভাববে?”

“না! তুমি বুঝিয়ে বলো।”

আর্শি সহসা বিরক্ত হয়ে শ্রাবণের আর কোনো কথার জবাব না দিয়ে ও-কে রেখেই চলে যায়। শ্রাবণ সেখানে দাঁড়িয়ে মাথা নুইয়ে হেসে নিজেও আর্শির পেছনে যেতে থাকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১১

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১১
সকাল আটটার পর আরিয়ার ঘুম ভাঙে। চোখ খুলেই প্রথমে আশিকের চোখে চোখ পড়ে। আশিক এক হাতে ভর দিয়ে তারই দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে। আরিয়া হাত নাড়িয়ে আশিকের নজর হটানোর চেষ্টাতে বলে,

“গুড মর্নিং। এভাবে শুয়ে আছো কেন?”

আশিক অনড়ভাবে মোহিত স্বরে বলে,
“তোমাকে দেখছিলাম।”

আরিয়া মুখশ্রী ঈষৎ রক্তিম আভা ফুটে ওঠে। নজর অন্যদিকে ফিরিয়ে উঠে বসে বলে,
“আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসি।”

এই বলে আরিয়া দ্রুত পলায়ন করে। আশিক হাতের ভর ছেড়ে বিছানায় দুই হাত ছাড়িয়ে শুয়ে পড়ে আপন মনে বিড়বিড় করে,
“সি ইজ মাই ওয়াইফ নাউ! হাউ লাকি আই অ্যাম।”

এদিকে নাহিদ নিজের ঘরে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে এক হাঁটু ভাজ করে বসে আছে। হাতে তার ফোমের বল। র*ক্তিম চক্ষু নিয়ে সম্মুখে নিষ্পলক নিরুদ্দেশ চেয়ে আছে। সারারাত ঘুমোয়নি সে।
মিসেস নেহা ছেলের জন্য নাস্তা নিয়ে দরজায় নক করে। নাহিদের তাতেও কোনো হেলদোল নেই। মিসেস নেহা বারকয়েক ডাকলেন। তাতেও সাড়া না পেয়ে খানিক ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি এবার চিৎকার, চেঁচামেচি করে মিস্টার হাসান, আশিক সবাইকে ডাকলেন। আরিয়া বাদে সবাই এসে উপস্থিত হয়। মিস্টার হাসান ও আশিকও ডাকাডাকি করে। কিছুক্ষণ পর নাহিদ নিজ থেকেই দরজা খুলে দেয়। নাহিদ বেশ শব্দ করে দরজা খোলাতে সেই শব্দ আরিয়া ডাইনিং টেবিল থেকেও শুনতে পেয়েছে। সে বলে,

“বলেছিলাম না? আপনারা অযথা চিন্তা করছেন। খুললো তো।”

আশিক তাড়াহুড়ো করে আরিয়ার কাছে গিয়ে বলে,
“দেখো, তুমি এভাবে বলো না। খালামণির খারাপ লাগে। খালামণির একমাত্র ছেলে। জানি তোমার মনে ভাইয়ের প্রতি অনেক তিক্ততা জমে আছে। খালামণির সামনে শো করো না। তুমি তোমার মতো থাকো।”

“আমার মতোই আছি, আশিক। এখন তোমার ভাই এসে কোন সিনক্রিয়েট না করলেই হয়।”

“করবে না। ভাইয়া এখানে আসবে না। তাইতো খালামণি ভাইয়ার জন্য খাবার নিয়ে ঘরে গেছে। ”

“তাহলে তোমরা কেন বসে আছো? নাস্তা করে নাও।”

আরিয়া চেয়ার টেনে বসে। একে একে আশিক ও মিস্টার হাসানও এসে বসেন। নাহিদ দরজায় দাঁড়িয়ে আরিয়ার কথাগুলো শুনে মায়ের হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। মিসেস নেহা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসে।

_________

আরিয়ার সাথে ফোন কলে কথা বলে নিশ্চিন্ত হয়ে বসলো আর্শি। বেশ চিন্তায় ছিল সে আরিয়াকে নিয়ে। এখন মিসেস আশালতা এখন ছোটো মেয়ের সাথে কথা বলছেন। আর্শি চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় বসলো। রাতে বৃষ্টির কারণে ফ্লোর ভেজা। আর্শি চেয়ারে পা উঠিয়ে বসে চা খাচ্ছে। এমন সময় গেইট দিয়ে শ্রাবণের বাইক ঢুকতে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়। অতঃপর চায়ের কাপ রেখে রুমে প্রবেশ করে মাকে জিজ্ঞেসা করে,

“এই শ্রাবণ ভাই কেন আসছে? ভাইয়া তো বাসায় নেই।”

মিসেস আশালতা ইশারায় বলে যেন গিয়ে দেখে। তখনি কলিংবেল বেজে ওঠে। আর্শি দরজা খুলতে যায়। দরজা খুলে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,

“ভাইয়া বাড়িতে নেই। আপনি ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে আসেননি?”

শ্রাবণও কম যায় না। দেয়ালের সাথে পাশ হেলান দিয়ে বুকে দুই হাত আড়াআড়িভাবে গুজে জবাব দেয়,
“যদি বলি তোমার ভাইয়ার জন্য আসিনি! তবে?”

আর্শি থতমত খেয়ে দরজা থেকে হাত সরিয়ে বলে,
“তো কেন এসেছেন?”

শ্রাবণ হাই তোলার ভাণ করে বলল,
“এত লজ্জা পেতে হবে না। তোমার কাছে আসিনি। আদিবের জন্যই এসেছি। ও আমাকে বলেছে দশ-পনেরো মিনিট পর চলে আসবে।”

“ওহ আচ্ছা।”

“কী আচ্ছা? তুমি এখনো দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছো। আমাকে ঢুকতে তো দিবে! নাকি তোমার ভাইয়া আসা পর্যন্ত বাহিরেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে?”

আর্শি দ্রুত সরে দাঁড়ায়। শ্রাবণও ওর পাশ কাটিয়ে বাসার ভেতরে ঢোকে। অতঃপর আদিবের রুমের দিকে যেতে যেতে বলে,
“আমার জন্য এক কাপ চা বানাও তো!”

কথাটা বলে শ্রাবণ এক সেকেন্ডও দাঁড়ায়নি, ফিরেও তাকায়নি। সোজা আদিবের রুমে চলে গেছে। আর্শি মুখ ভে*ঙচি দিয়ে রান্নাঘরে চা বানাতে যায়।

______

“আরু, শোন না মা। তোর আপুরও বিয়ে ঠিক করেছি। তুই কাল এসে ও-কে আকদের জন্য রাজি করাবি।”

মায়ের কথা শুনে আরিয়া বসা থেকে এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। কিছুটা জোরেই বলে ফেলে,
“কী বলছো? তোমরা আপুর বিয়েও ঠিক করে ফেলেছো? কখন? কীভাবে? কার সাথে বিয়ে ঠিক করলে? কই তোমরা আমাকে তো কিছু বলনি এই নিয়ে?”

“শান্ত হ তুই। এখনো সেরকম ভাবে ঠিক হয়নি। আমরা দিতে চাইছি আর কি। এখন তোর বোনকে তোকেই রাজি করাতে হবে।”

আরিয়া হতাশ স্বরে বলে,
“আমার মনে হয় না, আপু রাজি হবে! তাও যখন বলছো তবে বলে দেখব। দুলাভাইয়ের ছবি তো পাঠাও। আমার একমাত্র দুলাভাই বলে কথা! যদিও তার শ্যালিকার আগে বিয়ে হয়ে গেছে।”

মিসেস আশালতা মুচকি হেসে দরজার দিকে নজর দিয়ে দেখে নেয় আর্শির উপস্থিতি আশেপাশে আছে কী-না। তারপর গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“ছেলে তো ঘরের ছেলে। তোর ভাইয়ের বন্ধু শ্রাবণ আছে না? শ্রাবণের সাথেই বিয়ের কথা হচ্ছে।”

আরিয়া চোখ যেন বিস্ময়ে কোটরাগত হওয়ার দশা। সে বিস্মিত স্বরে বলে,
“শ্রাবণ ভাইয়া? আপু তো উনার নাম শুনলেই চিড়চিড় করে ওঠে।”

“সেটাইতো ভয়রে। তবে তোর বোন বলেছে আমরা যেই ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছি ও সেই ছেলেকে বিয়ে করবে কিন্তু পরে বিয়ে করবে। কিন্তু আমরা সবাই চাইছি ইটালি আবার যাওয়ার আগে আকদটা হয়ে যাক।”

আরিয়া হতাশচিত্তে বলল,
“শ্রাবণ ভাইয়ের নাম শুনলে আরও আগে চলে যাবে। দেখো কী হয়!”

মিসেস আশালতা ফের চিন্তায় পড়ে গেলেন।

_______

আর্শি চা বানিয়ে এখন চায়ে চিনি গুলাচ্ছে। ইচ্ছে করে চায়ে হাফ চামচ চিনি বাড়িয়ে দুই চামচ দিয়েছে। শ্রাবণ চায়ে দেড় চামচ চিনি খায় তা আর্শি জানে। কিন্তু ও একটু শিক্ষা দিতে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর চা নিয়ে ভাইয়ের রুমের দিকে যায়। শ্রাবণ আদিবের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তাই আর্শি নক করে। শ্রাবণ দরজা খুলে চায়ের কাপ নিয়ে বলে,

“থ্যাংকিউ। ”

“ওয়েলকাম।”

আর্শি চলেই যাচ্ছিল। শ্রাবণ তাকে আটকায়। অতঃপর বলে,
“এই দাঁড়াও দাঁড়াও। চায়ে চিনি ঠিকমতো হয়েছে কি-না সেটা তো চেক করে নেই। বলা তো যায় না তুমি আমার উপর রাগ থেকে চায়ে চিনি কম-বেশিও দিতে পারো।”

আর্শি শ্রাবণের দিকে পেছন ঘুরা অবস্থাতেই দাঁত দিয়ে জি*ভ কা*টে। দ্রুত সটকে পড়তে নিলে শ্রাবণ খপ করে আর্শির হাত ধরে ফেলে। তারপর বলে,
“কী হলো? পালাচ্ছো কেনো? চা টেস্ট তো করে নিই।”

এই বলে শ্রাবণ আর্শির হাত ধরা অবস্থাতেই চায়ের কাপে চুমুক দেয়। আর্শি চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ রেখেছে। শ্রাবণ এক সিপ চা পান করতেই মুখ লটকিয়ে বলে,

“এটা চা? চিনি নেই একদম! এই মেয়ে, তোমার বাড়িতে কি চিনির অভাব পড়েছিল? চিনি দাওনি কেন?”

আর্শি চট করে ঘুরে তাকায়। অবাকমিশ্রিত স্বরে বলে,
“চিনি হয়নি মানে! চিনি তো বেশি হওয়ার কথা!”

“তাহলে কি আমি মিথ্যে বলছি? তুমি নিজেই টেস্ট করে দেখো। ”

আর্শি শ্রাবণের হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে সেটাতে ডান হাতের এক আঙ্গুল সামান্য ডুবিয়ে মুখে নিয়ে বলে,
“কই ঠিকই তো আছে।”

“এভাবে এক আঙ্গুল ডুবালে কি চায়ের স্বাদ পাওয়া যায় নাকি?”

আর্শি সরু দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“তো কি এখন আমি আপনার চায়ের কাপে চুমুক দিব নাকি?”

শ্রাবণ বাঁকা হেসে বলে,
“দিতেই পারো। আমার তাতে কোন প্রবলেম নেই।”

আর্শি তেজি কণ্ঠে বলল,
“কিন্তু আমার প্রবলেম আছে। আমি আপনার চুমুক দেওয়া চায়ের কাপে কেন চুমুক দিব? যদি চা খেতে ভালো না হয়, তাহলে আমি ফেলে দেই।”

এই বলে আর্শি চায়ের কাপ নিয়ে যেতে চাইলে শ্রাবণ খপ করে চায়ের কাপটা নিয়ে নেয়। যার দরুণ সামান্য চা শ্রাবণের হাতেও পড়ে। শ্রাবণ ‘আউচ’ করে উঠলে আর্শি কণ্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,

“পড়লো তো! এতো টানাটানি করেন কেন? জ্বা-লা করছে না?”

“না। কিছু হয়নি।”

“কী কিছু হয়নি? আপনি বসুন। আমি এখনই বা*র্নার ক্রিম নিয়ে আসছি।”

এই বলে আর্শি বার্নার ক্রিম আনতে ছুট লাগায়। আর্শিকে এতো বিচলিত হতে দেখে শ্রাবণ হালকা হাসে। অতঃপর চায়ের কাপে ফের চুমুক দেয় এবং বলে,
“মিষ্টি ইচ্ছা করেই বাড়িয়ে দিয়েছে মেয়েটা।”

চলবে ইন শা আল্লাহ,

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১০

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
বাড়ি ফিরে নাহিদ এতো বড়ো শ*ক পাবে, তা সে কল্পনাও করতে পারেনি। আরিয়া আশিকের হাত ধরে বধূবেশেই সোফায় বসে আছে। নাহিদ আরিয়াকে দেখে প্রথমে বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা। সে একপ্রকার ছুটে এসে আরিয়ার পাশ থেকে আশিককে উঠিয়ে নিজে বসে। অতঃপর অস্থির স্বরে আরিয়ার হাত ধরে বলে,

“তুমি এখানে? এদিকে আমি তোমার ফোন বন্ধ পাচ্ছি। তোমার ভাইয়াও ফোন পিক করছে না।”

আরিয়া এক ঝা*ড়া দিয়ে নাহিদের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো স্বরে বলে,
“আমার হাত ধরার আগে আপনি আমার থেকে পারমিশন নিয়েছেন?”

নাহিদ হতবাক হয়ে কয়েক সেকেন্ড আরিয়ার মুখের দিকে চেয়ে থেকে নিজেও উঠে দাঁড়ায়। তারপর অবাক কণ্ঠে শুধায়,
“তুমি এভাবে কেন বলছো? আজ আমাদের বিয়ে। সরি আমার লেট হওয়ার জন্য। একটা কাজে সিলেট গিয়েছিলাম। তারপর কীভাবে যে ঘুমিয়ে পড়েছি।”

“খুব ভালো করেছেন যে আপনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কারণ আমি তো আপনাকে বিয়ে করতাম না। তাছাড়া অলরেডি আমার বিয়ে হয়েও গেছে।”

“মানে? তুমি আমায় বিয়ে করতে না মানে? আর তোমার বিয়ে হয়ে গেছে মানেটা কী?”

নাহিদের বিস্ময়ে বিমূঢ় মুখশ্রীকে আরো একটু আশ্চর্যজনক করতে আরিয়া নাহিদকে পাশ কাটিয়ে আশিকের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর আশিকের হাত ধরে মুচকি হেসে বলে,

“মিট উইথ মাই হাসবেন্ড, মিস্টার আশিক জামান।”

নাহিদ হতভম্ব হয়ে যায়। আরিয়া মুখাবয়বে হাসির রেখা ফুটিয়ে রেখেই আশিকের হাত ধরে আশিকের রুমের দিকে যেতে থাকে। আশিক পিছু ফিরে নাহিদের প্রতিক্রিয়া দেখছে সেই সাথে খানিক ভয়ও পাচ্ছে।
আরিয়া আশিককে নিয়ে নিজেদের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলে নাহিদের হুঁশ ফিরে। সে উ*ন্মাদের ন্যায় নিজের চুল টেনে সেদিকে যেতে নিলে মিস্টার হাসান আহমেদ তার হাত টেনে ধরেন। মিস্টার হাসান আহমেদ প্রশ্ন ছুঁড়েন,

“তুমি ওইদিকে কোথায় যাচ্ছ?”

নাহিদের অসহনশীল জবাব,
“তুমি দেখতে পাচ্ছ না? আমি কোথায় যাচ্ছি!”

মিস্টার হাসানের বুলিতে নমনীয়তা নেই। তিনি কঠোর স্বরে প্রত্যুত্তরে বলেন,
“দেখতে পাচ্ছি বলেই জিজ্ঞাসা করছি। ওদিকে কেন যাচ্ছ? ওরা এখন স্বামী-স্ত্রী। ওদের মাঝখানে ঝামেলা তৈরি করার চেষ্টাও করো না।”

নাহিদ চিৎকার করে র*ক্তবর্ণ চোখে চেয়ে বলল,
“কী-সের স্বামী-স্ত্রী? আরিয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ও আমারই স্ত্রী হবে।”

মিস্টার হাসান তাচ্ছিল্য হেসে বলেন,
“তোমার কি মনে হয়, আরিয়ার সাথে আশিকের বিয়ের কারণ তুমি সময় মতো এসে পৌঁছাওনি। এই কারণ?”

বাবার কথায় নাহিদ সন্দিগ্ধ ও প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চাইলো। মিস্টার হাসান হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের স্ত্রীর ছেলের জন্য অসহায় বনে যাওয়া মুখটা দেখে নিলেন। অতঃপর বললেন,
“আরিয়ার সাথে আশিকের বিয়ে হয়েছে আরো সপ্তাহ খানেক আগে। এবং সেটা আরিয়ার মর্জিতেই হয়েছে।”

“হোয়াট!”

“ইয়েস, এন্ড দ্যা রিজন বিহাইন্ড ইট ইজ অনলি ইউ। বিকজ অফ ইউর ডিড, আরিয়া গট ম্যারিড টু আশিক।”

নাহিদ ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে সে। মিস্টার হাসান কিয়ৎক্ষণ ছেলের দিকে চেয়ে থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সেখান থেকে চলে যান। মিসেস নেহা ছেলের পাশে এসে বসেন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে অসহায়, হতাশচিত্তে বলেন,

“দোষটা আসলে আমার! আমিই তোমাকে শিক্ষা দিতে পারিনি, মেয়েদেরকে কীভাবে সম্মান করতে হয়। আমার অতিরিক্ত আদর, যত্ন, ভালোবাসা তোমার মনে কবে যে নিজেকে নিয়ে উচ্চাভিলাষ, অহংকার তৈরি হয়েছে, বুঝতেই পারিনি। মা হয়ে নিজেকে নিজের কাছেই ছোটো লাগছে আমার। যখন তোমার করা কাজগুলো অন্যের মুখে ঘৃণাবাক্যে শুনেছি, তখন তোমার থেকে বেশি নিজেকে দোষী লাগছিল। একমাত্র ছেলে বলে কখোনো তোমাকে শা*সন করিনি। এখন মনে হচ্ছে, যখন ছোটোবেলায় তোমার নামে স্কুল থেকে কমপ্লেন আসতো, তখন যদি শা*সন করতাম। তাহলে আজকে এই দিন না তোমার দেখা লাগতো, আর না আমার দেখা লাগতো।”

এই বলে মিসেস নেহাও স্থান ত্যাগ করেন। নাহিদ একা সেখানে বসে রয়। তার মনের মধ্যে নিজেকে নিয়েই যু*-দ্ধ চলছে।

________

আরিয়া শাড়ি বদলে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে,
“আশিক, আমার এখন ভীষণ খিদে পেয়েছে। মনে হচ্ছে পেটের মধ্যে ইঁ*দুর দৌড়াচ্ছে!”

আশিক এতক্ষণ বিছানার কর্নারে থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে বসেছিল। আরিয়ার কথা শুনে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে,
“তোমার জন্য আগে থেকে খাবার ঢাকা দিয়ে রাখা আছে। তুমি যে ফুডি, সেটা তো আমি ভালো করেই জানি। তাই আমি খাবার আগে থেকেই এনে রেখেছি। জানতাম তুমি তখন না খেলেও এমন সময় ক্ষুধা লাগবে যখন তুমি কাউকে বলতেও পারবে না।”

আরিয়া ভীষণ খুশি হয়ে বলে,
“থ্যাংকিউ। থ্যাংকিউ সো মাচ। আসলে তখন খিদে বুঝতে পারিনি। এখন যখন রিল্যাক্স হয়েছি, জোড় খিদে পেয়েছে।”

“ওই যে আমার স্টাডি ডেস্কে খাবার রাখা আছে।”

আরিয়া এক প্রকার ছুটে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। তাড়াতাড়ি খাবারের ঢাকনা উঠিয়ে আশিককে জিজ্ঞাসা করলো,
“এখানে তো একজনের খাবার। তুমি খাবে না?”

“আমি খেয়েছি। তুমি খাও এখন।”

“ওকে। তাহলে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।”

আশিক কোনো জবাব দিলো না। আরিয়াও খেতে শুরু করলো।

_________

মধ্যরাতে আননওন নাম্বারের কলে ঘুম ভেঙে যায় আর্শির। সেই সাথে বাহিরে ঝড়ো বৃষ্টি। ব্যালকনির দরজা খোলা থাকায় ঠান্ডা বাতাসও আসছে। আর্শি ঘুমঘুম চোখে ফোনের স্ক্রিণে দেখে। আননওন নাম্বার তাই কল কেটে ব্যালকনির দরজা লাগাতে ওঠে। দরজা লাগিয়ে আবার বিছানায় আসতেই, আবার একই নাম্বার থেকে কল। আর্শি ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে নিজে নিজেই বলে,

“কী রকম বেয়াদব! দেখছে কল কে*টে দেওয়া হয়েছে, তারপরও আবার কেন কল করে? এটা কোনো কল করার সময়? রাত বাজে আড়াইটা! এখন আননওন নাম্বার থেকে কল আসে। আ*জব কমনসেন্স মানুষের!”

এই বলে আবার কল কে*টে দেয়। নাম্বার ব্লকলিস্টে দিতে যাবে, তার জন্য ফোনের লক খুলতে সামান্য দেরি হয়েছে হাত ভিজা থাকার কারণে। এটুকু সময়ে আবার কল আসে একই নাম্বার থেকে! আর্শি নাম্বারটার দিকে কয়েক সেকেন্ড বিরক্তি নিয়ে চেয়ে থেকে কী ভেবে শেষ মূহুর্তে রিসিভ করে চুপ করে থাকে। অপরপাশ থেকেও নীরবতা কিন্তু ঝমঝম বৃষ্টির ধ্বনি আসছে সাথে গিটারের থেমে থেমে মৃদু ঝংকার। আর্শি প্রায় মিনিট খানেক কিছু না বলে ফোন কানে ধরে রেখেছে। এবার সে জিজ্ঞাসা করে,

“এই মাঝরাতে আপনি আমাকে গিটার আর বৃষ্টির শব্দ শোনাতে ফোন করেছেন? শুধুমাত্র ভাইয়ার বন্ধু বলে আপনাকে কিছু বলছি না।”

এবার অপরপাশ থেকে মৃদু হাসির ধ্বনি শোনা গেলো। শ্রাবণ হিমানো স্বরে শুধালো,
“বুঝলে কীভাবে?”

“গিটারের আপনার সবচেয়ে প্রিয় টোন হচ্ছে, ‘তুম পাস আয়ে’ এই গানের টোন। যতোবার আমাকে গিটার শোনাতে ফোন করেছেন বা শুনিয়েছেন, ততোবার একই টোন। তারউপর বৃষ্টি। তাছাড়া রাতজাগা আপনার স্বভাব। অন্য কোনো পা*গলের তো খেয়ে-দেয়ে কোনো কাজ নেই যে মধ্যরাতে একটা অচেনা মেয়েকে গিটার বাজিয়ে শোনাবে, তাও বৃষ্টির রাতে!”

শ্রাবণ মুচকি হাসে। কাউচে বসে থেকে অবিরত বর্ষণমুখর আঁধার অম্বরে দৃষ্টি স্থির রেখে বলে,
“চিনেছো তো। চার বছরেও আমার স্বভাব মানে তোমার ভাষায় বাজে স্বভাব যে ভুলোনি, এইতো অনেক। মানুষ চার দিনে ভুলে যায়!”

আর্শি বালিশ বেডের হেডবোর্ডে ঠেকিয়ে আরাম করে বসে। অতঃপর বলে,
“আচ্ছা, ভাইয়া কি জানে? আপনি তার বোনকে এই মধ্যরাতে বৃষ্টি আর গিটারের শব্দ শোনাতে ফোন করেন।”

“ও জেনে কী করবে?”

“তাইতো! ভাইয়া জানলে তো আপনার থো*তমা আ*স্ত থাকবে না!”

আর্শি রম্যস্বরে কথাটা বলে ঠিক কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা করে, সেও তো কখোনো তার ভাইকে বিষয়টা বলার চেষ্টা করেনি। তাহলে প্রশ্রয় কী সে দিয়েছে?
আর্শির হঠাৎ নিশ্চুপতায় শ্রাবণ বলতে শুরু করে,
“পাঁচ বছর আগে গিটারটা কিন্তু আমি তোমার জন্যই কিনেছিলাম। যখন তোমার মুখ থেকে শুনেছিলাম, তোমাদের ভার্সিটিতে প্রতি বৃহস্পতিবার তোমাদের ক্লাস শেষ হওয়ার পরও আধঘণ্টা অপেক্ষা করো ছাদে একদল তরুণের গিটারে গান শোনার জন্য।”

আর্শি সম্বিতে ফেরে। ফিচলে হেসে বলে,
“তাই! দেখুন, ওরা আমার জুনিয়র ছিল। সিনিয়রদের গিটার শুনতে আমরা যেতাম না। তাহলে উনারা কী না কী ভেবে বসবে!”

শ্রাবণ ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে,
“তোমার ছেলেদের প্রতি এই স্ট্রিক্ট পার্সোনালিটির ভরসাতে চার বছর দূরে ছিলাম। চার বছর তোমাকে বিরক্তও করিনি। দুইবার কল করেছিলাম, এক বার রিসিভ করেছ। আরেকবার কেটে দিয়েছো। অভিমান জমেছিল কিন্তু বিশ্বাস ছিল তুমি অন্যকারও মায়ায় তো জড়াবে না। কিন্তু!”

আর্শির চোখে-মুখের হাসি উবে গেলো। এই লোকটা তাকে পছন্দ করে তা সে কিছুটা বুঝতো। কিন্তু কিছু কারণে লোকটাকে দেখলেই রাগ লাগতো। তারপর চার বছরের দূরত্ব। বিষয়টা নিয়ে সে নিজেও ভাবেনি। ছেলেদের প্রতি স্ট্রিক্ট পার্সোনালিটি তো তার ছিলোই। কিন্তু ওই একটা ছেলের বাহিরের কেয়ারিং আবরণে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে সে আজ এই স্থানে। আর্শি নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলে,

“ওহ! তাহলে সব জেনে গিয়েছেন। আমার ভাগ্যে ছিল আমি এমন একটা ধাক্কা খাব, খেয়েছি। মানুষের স্ট্রিক্ট পার্সোনালিটিও কারও কারও মিথ্যা খোলসের কাছে হার মানে। সে আমাকে বলেনি সে আমায় ভালোবাসে। সে বলেছিল, আমি তার খুব ভালো বন্ধু। এমনটাই ভালো বন্ধু ছিল যে ২৪ ঘন্টায় আমি কী করছি না, করছি সবকিছুর কৈফিয়ত আমার তাকে দিতে হতো! আমি বুঝতে পারিনি যে এগুলো সে সব করছে আমার বোনের খবর জানতে! জানলে অন্তত এই মিথ্যে মায়া জড়াতাম না।”

থামলো আর্শি। শ্রাবণও অপরপাশ নিরুত্তর। বৃষ্টির তেজও খানিক কমে আসছে। দুই পাশে আবারও শিতল নীরবতা।আরো কিছুক্ষণ সময় এভাবেই বেরিয়ে যায়। ঘড়ির কাঁটায় তিনটার ঘণ্টা বাজতেই নীরবতা ভেঙে শ্রাবণ বলে,

“ঘুমাও, বৃষ্টি।”

অতঃপর অপরপাশ থেকে কল কাটার শব্দে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে কান থেকে ফোন নামায়। পর্দার আড়াল থেকে বৃষ্টি ভেজা জানালার কাচে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বসা অবস্থাতেই চোখ বন্ধ করে রয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-০৯

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
“আমরা তোরও বিয়েটা এবার দিয়ে দিতে চাইছি। তুই বিয়েটা করে ইটালি চলে যাবি। এক বছর পর আসলে অনুষ্ঠান করাও হবে। তোর কোনো স্ট্রেস নিতে হবে না।”

মিস্টার রিয়াজউদ্দীন একদমে কথাগুলো বলে থামলেন। এবার মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে পরিস্থিতির অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু আর্শির মুখশ্রীতে অবাক বা উত্তেজিত হওয়ার কোনো লক্ষণ না দেখে স্ত্রী ও ছেলের সাথে ইশারায় ব্যাপারটা ব্যাক্ত করেন। আর্শি শান্ত স্বরে বলে,

“আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না। যদি পালিয়েই যেতাম, তবে এবারও আসতাম না। কারণ আমি তো জানি, আমি দেশে আসব আর তোমরা বিয়ের কথা বলবে না? তা আবার হয় নাকি? এই কয়দিনে, মা অন্তত চৌদ্দবার বিয়ের কথা তুলেছে। তাই হাইপার হওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছি। তোমরা যতোই বলো যে স্ট্রেস নিতে হবে না। এটা মিথ্যা। বিয়ে মানেই একটা আলাদা স্ট্রেস। এক বছর পর যখন অনুষ্ঠান করবেই, তাহলে তখনি বিয়ে দিও। যেদিন আমার মাস্টার্স ডিগ্রিটা হাতে দিবে, ওই দিনের টিকেট কেটেই চলে আসব। তাও এখন লং ডিস্টেন্স রিলেশন মেন্টেন করতে বলো না। প্লিজ!”

আদিব বোনের সামনে পড়ার টেবিলের চেয়ার টেনে বসে বলে,
“ছেলে ভালো। দেখতেও খুব হ্যান্ডসাম। তাছাড়া ছেলে তোকে পছন্দ করেছে এবং চাইছে এখন আকদটা হয়ে যাক। সেও এক বছরে নিজেকে গুছিয়ে নিবে। তারপর আনুষ্ঠানিক বিয়ে।”

“ভাইয়া, প্লিজ। আমি যে সন্দেহবাতিক! তুমি জানোনা? টেনশন করতে করতে দেখবে আমি আরও শুকিয়ে গেছি। চোখের নিচে কালি সুরমার মতো ডার্কসার্কেল পড়ে যাবে। বুঝেছ? চোখের সামনে থাকা আর হাজার হাজার মাইল দূরে থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে।”

আর্শির কথা শুনে ওর বাবা-মা, ভাই একে অপরের দিকে অসহায়ের মতো তাকাচ্ছে। আর্শি এদের চোখে-মুখের অসহায়ত্ব বুঝতে পেরে হতাশ স্বরে বলে,
“তোমরা চাচ্ছো, আমি ওই ছেলেকেই বিয়ে করি?”

তিনজন একত্রে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। আর্শি ফুঁস করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“ওকে। তাকেই বিয়ে করব। আমি নিজে উনার সাথে কথা বলব। তাকে বুঝাব যেন আকদ এখন না করে।”

আদিব বিড়বিড় করে বলে,
“সে বুঝলে তো! ইটালি যাওয়ার আগে যা ঘটনা ঘটিয়ে গেছো! তা শুনে বান্দার মা*থা খারাপ হয়ে গেছে!”

আর্শি শেষোক্ত কথাটা আবছা শুনে ভাইকে জিজ্ঞাসা করে,
“কার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, ভাইয়া?”

আদিব থতমত খেয়ে মিথ্যে হাসি দিয়ে বলে,
“আমার! আসলে কী করব বুঝতে পারছি না!”

আর্শি বিভ্রান্তির দৃষ্টিতে চাইলে আদিব তড়িঘড়ি করে ফের বলে,
“আসলে ছেলের বাবা-মা যদি না মানতে চান! মানে সেজন্য আরকি! তোকে বোঝাতে পারছি না। তুই বরং নিজেই কথা বলিস।”

এই বলে আদিব জলদি করে সেখান থেকে সটকে পড়ে। তারপর আর্শির বাবা-মাও। আর্শি দরজা লক করে মাথায় হাত দিয়ে সটান হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

_________

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নাহিদের ঘুম ভাঙে তাও অফিসের পিয়নের ডাকে। সে ঘুম থেকে উঠে কপাল কুঁচকে আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে পিয়নকে জিজ্ঞেসা করে,

“আমি ঘুমালাম কখন?”

পিয়ন জবাব দেয়,
“সেটাতো জানিনা, স্যার। আমি তো অফিস তালা লাগাতে আসছি। এসে দেখি আপনি ঘুমাইতেছেন। স্যারের কী শরীর খারাপ?”

“না।”
তখনি তার বিয়ের কথা মনে পড়ে। সে চট করে দেয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পিয়নকে শুধায়,
“এই ঘড়ি কি ঠিক? এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে?”

পিয়ন ঘড়ির দিকে চেয়ে বলে,
“হ স্যার। তাই জন্যেই তো আমি তালা দিতে আইছি।”

নাহিদ ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
“হোয়াট? আর ইউ কিডিং মি? এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে?আজ আমার বিয়ে, গ*বে*ট! আর তুমি আমাকে এখন ডাকতে এসেছো? এতো সময় কী করছিলে? যখন দেখেছিলে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম ডাকলে না কেন?”

পিয়ন ভয় পেয়ে যায়। এক পা পিছিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলে,
“স্যার, আমি তো জানতাম না যে আজকে আপনার বিয়ে। আপনে বিয়ে রাইখা এখানে আসছেন, এটা জানলে আমি কি আপনারে আগে ডাকতাম না?”

নাহিদ টেবিলে জোড়ালো ঘু*ষি দিয়ে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। ফোনে জলদি করে ঢাকার জন্য ফ্লাইটের টিকেট কা*টে।

———–

সন্ধ্যার একটু আগেই আরিয়াকে নিয়ে আশিক ও নাহিদের বাবা-মা, তাদের বাড়িতে পৌঁছেছে। নাহিদ ও আশিকের কাজিনরা আরিয়ার সাথে গল্প করছে। নাহিদের বাবা মিস্টার হাসান আহমেদ খবর পেয়েছেন, নাহিদ অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছে। নাহিদ আসার আগে আরিয়াকে আশিকের রুমে রেখে আসতে হবে। বাড়ি ফিরতে নাহিদের কম করে সাড়ে নয়টা বাজবে। মিসেস নেহা স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে বেশ ভয় পাচ্ছেন, কী হতে চলেছে ভেবে।

আশিক আরিয়ার পাশে এসে বসে ফিসফিস করে বলে,
“ভাইয়া ঢাকার জন্য বেরিয়ে পড়েছে। তুমি আজকে ভাইয়ার সামনে যাবে না।”

“কেন? মা*রবে নাকি? এতো সাহস?”

আরিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে মৃদু স্বরে কথাটা বলে। আশিক কাজিনদের দিকে জোরপূর্বক হাসি বিনিময় করে আরিয়ার হাত ধরে ব্যালকনিতে নিয়ে যায়। যা দেখে কাজিন মহলে একপ্রকার হাসির রোল পড়ে যায়। আশিক বলে,

“ভাইয়ার মা*থা ঠিক থাকবে না। কী করতে কী করে ফেলবে জানিনা। খালামনি তো বলতেছে, আজকে কোনো হোটেলে গিয়ে থাকতে। দেখো ভাইয়ার রাগ কিন্তু অনেক খারাপ।”

“শোনো, তোমার ভাইকে আমি মোটেও ভয় পাই না। সে যা খুশি করুক। আমাকে কিছু বলতে আসলে আমি তো মুখের উপর জবাব দেবো। দেখি সে কী করতে পারে। বেশি হলে বলবে যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও! তো যাব। তোমাকে নিয়েই তো যাবো। না?”

“তুমি বুঝতেছো না। ভাইয়া যদি জাস্ট বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে তাহলে তো সমস্যা নেই। আমার মায়ের নামে আমার নানু ভাই একটা ফ্ল্যাট রেখেছেন। ওটা সবসময় তালাবদ্ধই থাকে। বছরে তিন কি চারবার পরিষ্কার করতে একটু খোলা হয়। কিন্তু…”

আরিয়া হাতে তু*ড়ি বা*জিয়ে বলে,
“তাহলে তো হলোই। তোমার ভাই বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমরা সেখানে গিয়ে ওঠব। তবে তোমার ভাইকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। তার চোখের সামনে আমি তোমার বউ হয়ে ঘুরে বেরাব। যদিও আমি মন থেকে চাই, তার মুখটাও যেন আমায় না দেখতে হয়। গতকাল রাতে আমি ভাবলাম, ওই একটা লোকের জন্য আমি আমার মানসিক শান্তি কেন নষ্ট করব? তার সাথে যেচে গিয়ে আলাপ রচানোর আমার আর ইচ্ছা নেই। সে তার মতো যা খুশি করুক। সময় থাকতে যে আমি রেহাই পেয়েছি, তাতেই শুকরিয়া।”

“হুম। আচ্ছা, তোমার কি ক্ষুধা পেয়েছে? কিছু খাবে? খালামনি জিজ্ঞাসা করতে বলেছে।”

“না। এখন কিছু খাব না।”

“আচ্ছা। তাহলে শাড়ি বদলে রেস্ট করতে পারো। আমার রুম তো আর সেরকম ভাবে সাজাবে না। নাহিদ ভাইয়ার রুমটা সাজানো। রিংকি, সানি, মিয়ানরা বোধহয় ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে দিবে।”

আরিয়া মাথা নেড়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে যায়।

_______

ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে নাহিদ প্রথমে বিয়ের কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা করে। সেখানে গিয়ে জানতে পারে, বিয়ে হয়ে গেছে! নাহিদের মাথায় কিছু ঢুকছে না। সে যদি সবে এসে পৌঁছায়, তাহলে বিয়েটা কীভাবে হলো? দ্রুত সে তার বাবাকে ফোন লাগায়। মিস্টার হাসান এতক্ষণ যাবত ছেলের ফোনের অপেক্ষাই করছিলেন। তিনি ফোন রিসিভ করে নাহিদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রথমেই গম্ভীর স্বরে বলেন,

“বাড়ি এসো তুমি।”

“বাবা, এরা কী বলছে? বিয়ে নাকি হয়ে গেছে? বিয়ে কীভাবে হলো? আমি তো মাত্র এসে পৌঁছালাম। তাহলে বিয়ে কীভাবে হয়?”

মিস্টার হাসান ছেলের উত্তেজিত অবস্থা বুঝতে পারলেন। তিনি তাও শান্ত ও গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,
“সব প্রশ্নের উত্তর তুমি বাড়ি আসলেই পাবে। তোমাকে সবাই কতবার ফোন করেছে সেটা দেখেছ? ফোন তো মনে হয় সাইলেন্ট করে রেখে দিয়েছ!”

নাহিদ চিৎকার করে নিজের মা*থার চু*ল টেনে বলে,
“আমার মা*থায় কিছু ঢুকছে না, আমার মা*থায় সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। কী হচ্ছে? কী হয়েছে? ক্লিয়ার করে বলো।”

মিস্টার হাসান এবার ধমকে উঠে বলেন,
“বাড়ি এসো তুমি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছ কেন? সবাই তোমার মতো অভদ্র না। বাড়ি এসো।”

এই বলে মিস্টার হাসান ফোন ডিসকানেক্ট করে দেন। নাহিদ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে এপসের মাধ্যমে উবার ডাকে। অতঃপর দশ-পনেরো মিনিট পর উবার আসলে তাতে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-০৮

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
বধূবেশে স্টেজে বসে আছে আরিয়া। ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলে চলেছে। আর্শিও এতক্ষণ বোনের সাথে থেকে কিছু লাগবে কী-না এবং ছবি তুলছিল। এবার সে মায়ের কল পেয়ে স্টেজ থেকে নেমে মায়ের কাছে যাচ্ছে। এদিকে যে কেউ তার দিকে অবাক ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে আছে তা সে জানেও না। সেই কেউ একজনের নাম শ্রাবণ! আজ সকালেই সে চার বছর পর কানাডা থেকে দেশে এসেছে। এসেই বন্ধুর বোনের বিয়েতে চলে এসেছে। আদিব মেহমানদের খাবারের দিকে দেখে এসে শ্রাবণের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

“কী হলো? তুই দাঁড়িয়ে রইলি কেন? তুই না বললি ছবি তুলবি? যা ছবি তোল। এখন ফাঁকা আছে। এখনো আরুর কাছে সবাই এসে পৌঁছায়নি। মেহমানরা খাচ্ছে তো, ভীড়টা একটু কম। এখনই ছবি-টবি তুলে ফেল। পরে আর ফাঁকা পাবি কী-না!”

শ্রাবণ এখনও আর্শির যাওয়ার পানে চেয়ে আছে। আদিব লক্ষ্য করলো, শ্রাবণ অন্যদিকে তাকানো যেদিকে চেনা কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আদিব শ্রাবণের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
“কই দেখিস?”

শ্রাবণ এবার হুঁশে ফিরে। সে হড়বড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“বিয়ে কার?”

“কেন? তুই সামনে দেখতে পাচ্ছিস না? কার বিয়ে।”

“আরুর?”

“হ্যাঁ। বউ সাঁজে তো আরুই বসা।”

“আমি ভাবলাম….! বড়ো বোনের আগে ছোটো বোনের বিয়ে? নাকি ওর বিয়ে আগেই হয়ে গেছে?”

শ্রাবণের কণ্ঠস্বরে উৎকণ্ঠার কারণ বুঝতে পেরে আদিব খানিক মশকরা করতে চাইলো। হাসি চেপে রেখে মুখ-চোখে গাম্ভীর্যতা এনে বলল,
“আর্শির বিয়ে তো….”

আদিব কথা শেষ করার আগেই শ্রাবণ হকচকিয়ে অস্থির হয়ে শুধালো,
“কার সাথে? তুই তো বলিসনি। ও তো ইটালি গিয়েছিল।”

আদিব এবার ফিক করে হেসে ফেলে। শ্রাবণ হতবুদ্ধির মতো আদিবের হাসি দেখছে। তার রাগও হচ্ছে প্রচণ্ড। আদিবকে ঘু*ষি মা*রতেই নিবে তার আগেই আদিব সরে গিয়ে বলে,

“রিল্যাক্স। আর্শির বিয়ে হয়নি। আর্শির আগে কেন আরুর বিয়ে দিচ্ছি সেটাও জানতে পারবি। এখন কি তুই আরুর সাথে ছবি তুলবি? নাকি….”

শ্রাবণ মাথার পেছনে হাত দিয়ে ঘাড় নুইয়ে হেসে বলে,
“একটু পর। আগে এই শ্রাবণের বৃষ্টিকে দেখে আসি।”

“যা যা। শুধু তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড বলে বেঁচে গেলি।”

শ্রাবণ হেসে আর্শি যেদিকে গেছে সেদিকে যেতে থাকে। আর্শি তার মাকে দেখে এসে এখন ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে চুল ঠিক করতে। খোঁপার ফুলের মালাটা খুলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তার। হঠাৎ কেউ একজন তাকে হেঁচকা টানে একটা কর্ণারে নিয়ে যায়। আচমকা এমন হওয়াতে আর্শি আঁতকে উঠে চিৎকার করতে নিবে, তার আগেই আগুন্তকটি তার মুখ চেপে ধরে বলে,

“কেমন আছো, বৃষ্টি?”

আর্শি এবার তার মুখ ও হাত চেপে ধরে রাখা ব্যাক্তিটির দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো। তাকে দেখেই চোখ যেন পুরো ছানাবড়া! আরেক হাত দিয়ে শ্রাবণের হাত নিজের মুখ থেকে সরিয়ে তেজি স্বরে বলল,
“আপনি? আপনি এখানে কীভাবে এলেন?”

“সে যেভাবেই আসি। তবে এসে শান্তি লাগছে। তিন-চার দিন থেকে খুব অশান্তিতে ছিলাম। কিন্তু এখন তোমাকে দেখে সব অশান্তি দূর হয়ে গেছে।”

আর্শি কপাল কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কেন? আমি আবার কী করলাম যে আপনার অশান্তি দূর হয়ে গেছে?”

শ্রাবণ আর্শির হাত ছেড়ে দেয়ালে এক পা ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে পকেটে দুই হাত গুঁজে দাঁড়ায়। অতঃপর আর্শিকে উদ্দেশ্য করে চোখ মে*রে হেসে বলে,
“এইযে বিয়ে করছো না! তুমি এই শ্রাবণের জন্য রহমতের বৃষ্টি বুঝলে, বৃষ্টি?”

আর্শি ফের কপাল কুঁচকে শুধায়,
“আমি বিয়ে করছি, কে বলল? আর আপনি আমাকে একদম বৃষ্টি! বৃষ্টি! বলবেন না। আমার নাম ‘আর্শি হক’। বৃষ্টি না। আপনি চাইলে বার্থ সার্টিফিকেটও দেখিয়ে দিব।”

শ্রাবণ বাঁকা হেসে বলে,
“আমার কাছে তো তুমি ‘বৃষ্টি’, ‘আয়না’, ‘আর্শি’ সব। কিন্তু বৃষ্টি নামটা একান্ত আমার দেওয়া ছিল যে! আন্টির কোলে সদ্য জন্ম নেওয়া তুমিটাকে দেখে তেইশ বছর আগের ছোটো আমিটা তোমাকে প্রথম ‘বৃষ্টি’ বলেই সম্বোধন করেছিল। তুমুল বৃষ্টির সন্ধ্যায় শ্রাবণের শেষ শুক্রবার তোমার জন্ম হয়েছিল সেদিন। আদিবের কাছ থেকে ওর বোন হওয়ার কথা শুনে বৃষ্টির মধ্যেই তোমাকে দেখতে ভীষণ জেদ করে আম্মুকে নিয়ে হসপিটালে ছুটেছিলাম। তখন থেকেই তুমি বৃষ্টি। তুমি বৃষ্টির মতো স্নিগ্ধকর আমার জীবনে। শ্রাবণের বৃষ্টি!”

আর্শি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
“আপনাকে এখানে কেউ বৃষ্টি নিয়ে রচনা লিখতে বলেনি। আপনার বৃষ্টি ভালো লাগলেও, আমার মোটেও ভালো লাগে না। তাই আমাকে বৃষ্টি বলে ডাকবেন না। যদি ‘আর্শি’ নামে ডাকতে না পারেন, তবে আমাকে ডাকারই দরকার নেই।”

“তোমাকে আমি সারাজীবন ‘বৃষ্টি’ বলেই ডাকব।”

আর্শি বিরক্ত হয়ে বলে,
“উফ! এজন্যই আপনাকে আমার অসহ্য লাগে। দূর হোন এখান থেকে!”

আর্শি শাড়ি ধরে সেখান থেকে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। শ্রাবণ সেখানেই অনড়ভাবে দাঁড়িয়ে স্বগোতক্তি করে,
“আর না। এবার তোমাকে আর দূরে যেতে দিব না। ছাড়ও দিব না। মনের মধ্যে একবার যখন ভয় ঢুকে গেছে, সেটা না মেটা অবধি শান্তি নেই।”

অতঃপর শ্রাবণ আশেপাশে নজর বুলিয়ে স্থান ত্যাগ করে।

________

ওদিকে নাহিদ দুপুর একটার দিকে সিলেটের ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং শেষে কফি খেয়ে বেরোনোর চিন্তা করেছিল। কিন্তু কফি খেয়ে ডেস্কেই ঘুম! সেই ঘুম এখনও জারি রয়েছে। বেচারা জানেও না, আজকে তার জন্য কী সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে!
এদিকে আশিক, হাসান আহমেদ, মিসেস নেহা সবাই বরযাত্রী পৌঁছে গেছে। মিস্টার হাসান তার আত্মীয়দের সবাইকে বলেছে যে, ‘নাহিদের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনও নটরিচেবল। তাদের ছেলের জন্য একটা মেয়ের পরিবারের সম্মানহানি তো করতে পারে না।’ কেউ কেউ নাহিদের জন্য চিন্তিত হলেও মিস্টার হাসান সব সামলে নিয়েছেন।

কাজি সাহেব আবারও আরিয়া ও আশিকের বিয়ে পড়ায়। এবার বিদায়ের সময় উপস্থিত। আরিয়া তার বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে গাড়িতে ওঠে। নতুন জীবনের জন্য, নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছে সে। ভয়তো কিছুটা হবেই। মিসেস আশালতা, ছোটো মেয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে পড়েছেন। আর্শি নিজের মাকে সামলে গাড়িতে ওঠায়। তারপর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে।

_______

সন্ধ্যায় আর্শি বসে বসে ফোন দেখছিল তখন তার দরজায় টোকা পড়ে। আর্শি উঠে দরজা খুলতেই দেখে তার বাবা-মা, ভাই দাঁড়ানো। তিনজনকে একসাথে দেখো আর্শি জিজ্ঞাসু নয়নে তাকায়। আদিব বোনকে পাশ কাটিয়ে রুমে প্রবেশ করে বিছানায় বসে। আর্শি ঘুরে বলে,
“কী ভাইয়া?”

মিসেস আশালতা ও মিস্টার রিয়াজউদ্দীনও রুমে প্রবেশ করেন। আর্শি এবার তিনজনের সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত গুঁজে শুধায়,

“কী হয়েছে তোমাদের? হঠাৎ তিনজনে মিলে আমার রুমে এসে হানা দেওয়ার কারণ কি জানতে পারি?”

মিসেস আশালতা খানিক হাসার চেষ্টা করে বললেন,
“কেন আমরা কি তোর রুমে আসতে পারি না?”

“সে তো পারোই কিন্তু তিনজনে একসাথে কেন? কোন কারণ তো আছেই। কোন কারণ ছাড়া তোমরা তিনজনে কখনোই আমার রুমে একসাথে আসো না। ব্যাপারটি কি বলতো? কোন সিরিয়াস কিছু? গন্ডগোল আছে কিছু?”

আদিব উঠে দাঁড়িয়ে বোনের মাথায় একটা চা*টা মে*রে বলে,
“তোর সব সময় এসব চিন্তা-ভাবনা কেন করতে হয়? আপনার নরমালি আসতে পারি না?”

“পারো তো। লাস্ট এসেছিলে যেদিন আমি ইটালি চলে যাব, তার আগের দিন রাতে তোমরা চারজনে মিলে এসেছিলে। কিন্তু আজকে আসার কারণটা বুঝতে পারছি না। কারণ কালকে আমি ইটালি যাচ্ছি না। আমি যাচ্ছি আরো পাঁচ-ছয় দিন পর।”

মিস্টার রিয়াজউদ্দিন মেয়ের হাত ধরে মেয়েকে নিজের পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“দেখ মা, আজকে তোর ছোট বোনের বিয়ে গেল। আত্মীয়-স্বজনরা তো বলাবলি করছে, কেন আমরা তোর বিয়ের আগে আরিয়ার বিয়ে দিলাম?”

আর্শি ভ্রু কুঁচকে জবাবে বলে,
“তো বলতে দাও না! আল্লাহ তাদের জবান দিয়েছেন, তারা তো বলবেই।”

“তুই বুঝতে পারছিস না। বলুক তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু আজ বা কাল তোকে তো বিয়ে দিতেই হবে তাই না।”

“দিও কিন্তু এখন না। আমি কি না করেছি যে আমি একবারেই বিয়ে করবো না?”

মিসেস আশালতা এবার মেয়ের পাশে এসে বসেন। অতঃপর বলেন,
“দেখ, একদিন না একদিন তো বিয়ে করবিই সেটা…”

“সেটা কী, মা?”

আর্শির পালটা প্রশ্নে মিসেস আশালতা, স্বামী ও ছেলের দিকে তাকান। আর্শিও উত্তর জানতে ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-০৭

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
দেখতে দেখতে চার-পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। আজ আরিয়ার মেহেদী অনুষ্ঠান হচ্ছে ঘরোয়া ভাবে। আরিয়ার মামা-চাচা, খালা-ফুফিরা এসেছে সব। বড়ো বোন হিসেবে আর্শির কাজও বেড়ে গেছে। মা, খালা, মামি, চাচি, ফুফিদের সাথে রান্নার দিকে টুকটাক দেখতে হচ্ছে। ভুনা খিচুড়ির সাথে কাবাব ও হরেক রকমের ভর্তা হচ্ছে। আবার আরিয়ার একহাতে মেহেদী পড়িয়ে এখন নাস্তা বেড়ে দিচ্ছে সবাইকে। আর্শি একটা বাটিতে আরিয়ার জন্য নুডুলস বেড়ে এনে ওর পাশে বসে ও-কে খাইয়ে দিচ্ছিলো তখন আরিয়ার ফোন ভাইব্রেটিং শুরু করে। আরিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,

“এই নিয়ে দশবার! এতোবার কল করার কী আছে? বিকেলে তো বললাম কল না করতে। তারপরও!”

“থাম না। নাহিদ কারও কথা শোনার বা বুঝার পাত্র নয়। তার নিজের যা ইচ্ছে হয়েছে তাই করছে। দে ফোন বন্ধ করে দেই।”

আরিয়া বাঁকা হেসে বলে,
“উঁহু। ফোন তো এখন বন্ধ করব না। করুক। যতো পারে কল করুক। ধৈর্যের পরীক্ষা দেক আজ। দেখি কতক্ষণ কল করতে পারে! আমি তো কল রিসিভ করব না। আমার মেহেদী পড়া হয়ে গেলে একবার কল করে বলে দিব যে খুব বিজি ছিলাম, ফোন কাছে ছিল না, তাই ধরতে পারিনি। আর এখন খুব ক্লান্ত, আমি ঘুমাব বলে কল কেটে দিব।”

আর্শি সহ ওর কাজিন ও ফ্রেন্ডরা হেসে ওঠে। কলি বলে,
“তুই পারিসও আরু! আর্শির উচিত তোর থেকে শেখা।”

“সেটা তুমি ঠিকই বলেছ। আপুর উচিত আমার কাছ থেকে শেখা। তবে তুমিও তো তোমার ফ্রেন্ডকে কিছু শিখাতে পারোনি, ভাবি! তুমি যে আমার ভাইকে কিভাবে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোড়াও! তোমার ফ্রেন্ড হয়ে আপু কিছুই শিখতে পারেনি। আপুর বিয়ের পর দেখবো আপু দুলাভাইয়ের কথায় উঠছে আর বসছে!”

আর্শি আরিয়ার মাথায় আলতো চা*টা মে*রে বলে,
“মোটেও না। বেশি কথা বলিস তুই। চুপচাপ খা। হাতের উলটো পৃষ্ঠাতে মেহেদী লাগানো এখনও বাকি।”

আরিয়া হাসতে হাসতে খেয়ে নিলো।

_________

নাহিদ কপালে হাত দিয়ে নিজের রুমে বসে আছে। সে আরিয়ার হঠাৎ বিহেভিয়ারের চেঞ্জটা বুঝতে পারছে না। আরিয়াকে তাকে ইগনোর করে চলছে। আগে এক বার কল করলে প্রথমবার কলেই আরিয়া রিসিভ করতো। ক্লাসে থাকলেও রিসিভ করে বলতো ক্লাসে আছে। কিন্তু এখন! এতবার কল করলেও কল রিসিভ করে না। যদিও অনেক সময় পর রিসিভ করে, তখনও ঠিকমতো কথা বলে না। এসব নাহিদকে খুব ভাবাচ্ছে। সে তো আরিয়ার মধ্যে এমন মনোভাব দেখতে চায়নি। সবসময় যেমন স্বভাবের মেয়ে চেয়েছে, আরিয়া ঠিক তেমনটাই ছিল। হঠাৎ কী হলো? এসবে আর্শির হাত আছে কী-না তাই ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে বিরক্ত হয়ে আর্শির নাম্বারে কল করলো। আর্শি তখন আরিয়াকে খাইয়ে নিজেও নুডুলস খাচ্ছে। এমন সময় নাহিদের নাম্বার থেকে কল আসতে দেখে ভ্রুকুঞ্চন করে তাকায়। আর্শির পাশে কলি বসা। কলিও ফোনটা দেখে বলে,

“তোকে কল করছে এখন?”

“তাই তো দেখছি। কে*টে দেই।”

আর্শি কল কাটতেই যাচ্ছিলো, কলি বাধা দেয়,
“এই না না। কা*টিস না। রিসিভ কর। দেখ কী বলে।”

আর্শি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“কী আর বলবে! বলবে যে, আমি আরুকে কোনো কানপ*ড়া দিয়েছি কী-না? এসবই।”

“তাহলে তো ভালোই হয়। এখানে আরুও আছে।”

অতঃপর কলি আরিয়াকে ডাকে,
“আরু, নাহিদ এখন আর্শিকে কল করছে।”

আরিয়া হেসে উঠে বলে,
“রিসিভ করো তো। দেখি কী বলে ”

আর্শি রিসিভ করলো। রিসিভ করে আর্শি হ্যালো বলতেই অপরপক্ষ থেকে বাঁজখাই কণ্ঠে ভেসে আসে,
“সত্যি করে বলো, তুমি আরিয়ার মা*থায় কী ঢুকিয়েছ?”

আর্শি হাসি চেপে রেখে গম্ভীর স্বরে বলে,
“মানে? আমি আবার কী বলব? আপনি এজন্য আমাকে কল করে চিৎকার করছেন?”

“ডোন্ট লাই, আর্শি। আরিয়া সাডেনলি আমাকে ইগনোর করা শুরু করেছে। ও এমন না। তুমিই কিছু করেছ।”

“রিয়েলি! আপনার মনে হয়, আরু আমার কথায় এসব করবে? আমি আপনাকে কী বলেছিলাম? আমার বোনকে আমি ভালো করে চিনি। ওর যখন যাকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজনীয় মনে হয়, ও তখন তাকে গুরুত্ব দেয়। এখন আপনাকে গুরুত্ব না দিয়ে ওর হাতে মেহেদীতে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে, তাই হাতের মেহেদীকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আপনাকে দিচ্ছে না। এটা নিয়ে এতো জলঘোলা করার কী আছে? আপনি কি জানেন না? আজকে ওর হাতে মেহেদী পড়ানো হচ্ছে। তাহলে বারবার কলই বা করছেন কেন? আপনাকে তো বিকালের দিকে আমার সামনেই কলে বলল।”

নাহিদ চুপ করে শুনে যায়। অতঃপর কোনো জবাব না দিয়ে কল ডিসকানেক্ট করে দেয়। আরিয়া সাথে সাথে বলে,

“এখন জবাব দেওয়ার মতো কিছু নেই তাই খট করে কল কে*টে দিয়েছে। নিজেরটা ষোলআনা। নিজেকে কোথাকার সম্রাট মনে করে, আল্লাহ জানে। আমাকে নিজের ইশারায় নাচাতে চায়! ভেবেছিলাম, মেহেদী শুকিয়ে গেলে নিজ থেকে কল করব। কিন্তু না। করব না। সে যদি কল করে তবে ভেবে দেখব রিসিভ করব কী-না!”

“যা ইচ্ছে হয় করিস। এর নাম্বার আমি ব্লক করব। বিরক্তিকর একটা।”

আর্শি নাহিদের নাম্বার ব্লক করে নিজের এক হাতে মেহেদী লাগাতে শুরু করে।

_____

পরদিন সকাল থেকে হলুদের অনুষ্ঠানের তদারকি শুরু। সন্ধ্যার মধ্যেই হলুদ দেওয়া সব শেষ করবে। তারপর আরিয়াকে রেস্ট করতে দেওয়া হবে। সকালে আশিকের সাথে ঘণ্টা খানেক ফোনে কথা বলে আরিয়া একটু ঘুমাচ্ছিল তখন আবার নাহিদ ফোন করে। ফোনের রিংটোনে আরিয়ার ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। সে বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে বিরক্তির স্বরে প্রথমেই বলে,

“কী সমস্যা? এতো কল করেন কেন? সারাক্ষণ আপনার জন্য আমার ফোনটাও রেস্ট পায় না।”

কথাটা শুনে নাহিদের মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায়। চোখ আপনাআপনি কুঁচকে যায়। সে শুধায়,
“কী হয়েছে তোমার? কিছুদিন যাবত তোমার মধ্যে অনেক চেঞ্জড দেখতে পাচ্ছি। তুমি আমাকে আগের মত ঠিকভাবে কেয়ার করো না। কথা বলতে চাও না।”

আরিয়ার চোখে মুখে অবজ্ঞা ফুটে ওঠলো। সে কৃতিম স্বাভাবিক স্বরে বলল,
“কই ঠিকি তো আছে। আমার মনে হয় আপনার মধ্যে একটু বেশি পাত্তা চাওয়ার স্বভাবটা আছে। তাই আপনি একটু বেশি এক্সপেক্টেশন রাখছেন আমার কাছ থেকে। এতো এক্সপেক্টেশন রাখতে নেই। জীবনে সবার সব এক্সপেক্টেশন পূরণ হয় না।”

নাহিদ অবাক হয়ে বলে,
“এভাবে বলছো কেন? আমাদের কাল বিয়ে।”

“কীভাবে বললাম? এখন রাখুন তো। ঘুমাচ্ছিলাম আমি। বায়। ঘুমাব। দুপুরের পর থেকে সাঁজগোঁজে সময় যাবে। সন্ধ্যায় হলুদের অনুষ্ঠান।”

নাহিদ প্রত্যুত্তরে কিছু বলবে তার আগেই আরিয়া কল ডিসকানেক্ট করে মোবাইল সুইচঅফ করে রেখে দিয়েছে। নাহিদ বিরক্তিতে চ সূচক উচ্চারণ করে ফোন বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে। আশিক নাহিদের রুমের বাহিরে দাঁড়ানো ছিল। আরিয়াকে কল করাতে তার নিজের কাছেও রাগ লাগছিল কিন্তু কালকের দিন ছাড়া তো নাহিদকে এই ধা*মাকাদার খবরটা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সবটা চেপে দিয়ে হাসি মুখে নাহিদের ঘরে গিয়ে বলে,

“ভাইয়া, তোমার শেরোয়ানি এসেছে। সাথে আমারটাও।”

“তুই যা। আমি আসছি।”

“আচ্ছা।”

আশিক চলে আসে। অতঃপর নিজের জন্য অর্ডার করা সাদার ভেতরে সাদা কারচুপির কাজ করা শেরোয়ানিটা আগেই নিজের ঘরে নিয়ে যায়। নয়তো নাহিদ যদি দেখে আবার প্রশ্ন তোলে! বলাতো যায় না।

নাহিদ ড্রয়িংরুমে এসে শেরোয়ানি নিয়ে রুমের দিকে আবার চলে যাচ্ছিল তখন মিস্টার হাসান বলেন,
“সকালে তোমাকে একটু সিলেট যেতে হবে।”

নাহিদ ঘুরে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট? কাল আমার বিয়ে।”

“আমি জানি। জাস্ট হাফ এন আওয়ারের কাজ। তাছাড়া বরযাত্রী বের হবে দুইটার দিকে। তুমি এসে পৌঁছেও যেতে পারবে। তোমাকে তো গাড়িতে যেতে বলছি না।”

“তুমি চলে যাও। আমি যাচ্ছি না।”

“কাজটা তোমার বলেই বলেছি। ক্লায়েন্টরা কালকেই লন্ডন ফিরে যাবে। এখন দেখো কী করবে। আমার বলার দরকার ছিল বলে দিয়েছি।”

নাহিদ কিছু সময় দাঁড়িয়ে ভাবলো। এরইমধ্যে তার মাথায় একটা শ*য়তা*নী বুদ্ধিও এসেছে। বরযাত্রী দেরি করে গিয়ে আরিয়াদের চিন্তায় ফেলে দিবে। অন্তত তিন ঘণ্টা দেরি করে যাবে। তখন আরিয়ার পরিবারের চোখ-মুখের অবস্থা দেখার মতো হবে। এটা ভেবেই বাঁকা হেসে বাবাকে হ্যাঁ বলে দেয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-০৬

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৬
মিসেস নেহা ও মিস্টার হাসান এসেছেন আরিয়াদের বাড়িতে। উনারা এসেছেন তো খুশি মনে কিন্তু এখানে এসে নিজেদের ছেলের কীর্তিকলাপ শুনে মা*থায় হাত দিয়ে বসে আছেন। এবার আরিয়া সাফ সাফ জানিয়ে দেয়,

“আমি আপনাদের ছেলেকে বিয়ে করব না। কিন্তু তারই সামনে দিয়ে ওই দিনই বিয়ে করব!”

আরিয়ার কথা শুনে ঘরসুদ্ধ লোকজন অবাক হয়ে যায়। রিয়াজউদ্দীন নিজের মেয়েকে জিজ্ঞেসা করেন,
“কী বলতে চাইছো তুমি?”

“কেন? আর পাঁচদিন পর বিয়ের সব অনুষ্ঠান শুরু হবে। কার্ড ছাঁপানোর জন্যও দেওয়া হয়ে গেছে। এলাকাবাসীরা জানে যে কিছুদিন পর আমার বিয়ে। তাও আবার আমার বড়োবোনের আগে। নাহিদ আপুকে যেই ভয় দেখাচ্ছে সেটাতে আমি তাকে সাকসেসফুল হতে দিব না। আমি নাহিদের খালাতো ভাই আশিককে বিয়ে করতে চাই। আশিক যদি মানা করে তাহলেও সমস্যা নেই। ওইদিনই আমি কাউকে না কাউকে বিয়ে করব।”

অতঃপর আরিয়া তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কার্ড ছাঁপানো বন্ধ করে দাও, বাবা। যা দাওয়াত যাবে সব মুখেমুখে। গুটিকতক আত্মীয় ছাড়া কেউ তো বরের নাম জানেনা।”

আরিয়ার উদ্ভট কথা শুনে আর্শির মাথা ঘুরাচ্ছে। সে আরিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“এখন হুট করে কাকে বিয়ে করতে রাজি করাব আমরা? এর থেকে ভালো, তোর ভার্সিটিতে কথা বলে দেখ। ক্রেডিট ট্রান্সফার করা যায় কী-না? তুইও আমার সাথে চল।”

“না, আপু। এক বছর আগে তোমার উচিত ছিল আমাকে অন্তত সবটা জানানো। তাহলে আজ এসব হতোই না। তুমিও কিন্তু কিছুটা হলেও দায়ি। আই নো, তুমি হার্ট ছিলে। কিন্তু আমাকে অন্তত বলতে পারতে। ছোটো থেকে সবসময় তোমার সিক্রেট আমাকে বলতে। আমারও ভুল ছিল! সবসময় তোমার কষ্ট পাওয়ার কারণ জানতে আমি অনেক কিছু করি। কারণ তুমি নিজের হ্যাপিনেস স্প্রেড করতে ভালোবাসো কিন্তু….! যাইহোক, আমি যা ভেবে নিয়েছি তাই করব। তোমার মতো সবকিছু থেকে পালাব না।”

আর্শি মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। আরিয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মিস্টার হাসানকে বলে,
“আঙ্কেল, আপনি আশিককে ফোন করবেন? নাকি আমি করব? আপনার নিজের ছেলের জন্য খারাপ লাগতে পারে। তাহলে ফোনটা আমিই করি।”

আরিয়া ফোন হাতে নিয়ে আশিককে কল করতে নিলে মিস্টার হাসান বাধা দেন। তিনি বলেন,
“আমিই কল করছি। আশিকের গার্ডিয়ানও তো আমরাই। ওর মায়ের মৃত্যুর পর খুব ছোটোবেলাতেই ও-কে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিলাম। ওর বাবা ওর খরচ দেয়।”

আরিয়া প্রত্যুত্তর করলো না। মিস্টার হাসান আশিককে কল করলেন। আশিক ক্লাসে ছিল বলে প্রথমে কল রিসিভ করেনি। অতঃপর স্যারকে বলে ক্লাসের বাহিরে এসে কল রিসিভ করে। মিস্টার হাসান প্রথমেই প্রশ্ন ছুঁড়েন,

“তুমি আরিয়াকে বিয়ে করবে?”

আশিক হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে হতবাক হয়ে যায়। প্রায় মিনিট খানেক উত্তর করতে পারে না। মিস্টার হাসান ফের শুধালে আশিক উত্তরে বলে,
“তোমরা কী চাও?”

“মান-সম্মান বাঁচাও, এটাই বলব। যদি রাজি থাকো তবে দুই ঘণ্টার মধ্যে আরিয়াদের বাড়িতে চলে এসো। আজকেই আকদ করানো হবে। অনুষ্ঠানের দিন নাহিদকে কৌশলে সরিয়ে দেওয়া হবে।”

আশিক ফোন কে*টে ক্লাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করলো। অতঃপর ক্লাসে ঢুকে স্যারকে ইমার্জেন্সির কথা বলে বেরিয়ে পড়ে।

_______

ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে সব রেডি। আশিক ও আরিয়া পাশাপাশি বসে আছে। কাজি সাহেব প্রথমে আরিয়াকে কবুল বলতে বলে। আরিয়া কবুল বলার পর আশিকও বলে। তারপর কাবিননামাতে সাইন করানো হয়। মিস্টার হাসান এবার বলেন,

“আপনারা ভাবছেন হয়তো কেন আমরা নিজের ছেলের বিপক্ষে গেলাম? আমাদের ছেলে তো! তার স্বভাব-চরিত্র জানা। ভেবেছিলাম, আরিয়াকে সত্যি ভালোবেসে শুধরে গেছে। কিন্তু ভুল ছিলাম। বুঝতে পারিনি এতোকিছু।”

আরিয়ার বাবা রিয়াজউদ্দীন বলেন,
“আমরাও বুঝতে পারিনি। জানলে বিয়ের কথাতেই আগাতাম না।”

“তাহলে আমরা এবার উঠি।”

মিস্টার হাসান, মিসেস নেহা ও আশিক উঠে দাঁড়ায়। আরিয়া বলে,
“বিয়ের ব্যাপারে কাউকে জানাবেন না। নাহিদকেও না। সে সহজ-সরল আরিয়াকে দেখেছে কিন্তু আমার খারাপ রূপ দেখেনি।”

মিসেস নেহা করুণ দৃষ্টিতে চাইলেন। আজ তাকে তার স্বামী, ছেলের হয়ে একটা কথাও বলতে দেননি। বিয়ের দিন ছেলের মনের অবস্থা ভেবে ভেতরে ভেতরে দুমড়ে-মুচরে যাচ্ছেন তিনি। তাও মুখে কিছু বলতে পারছেন না।

________

নাহিদের পরিবার চলে যাওয়ার পর আরিয়া নিজের রুমে গিয়ে বসে। আর্শি তার পাশে বসে উৎকণ্ঠিত হয়ে শুধায়,
“ওই বাড়িতেই বউ হয়ে যেতে হবে কেন তোকে? আমাদের কথা শুনতে পারতি।”

“কী শুনব? তুমি আমাকে জানালে না কেন?

“দোষটা কিন্তু তোরও। আমি তো আর জানতাম না, নাহিদ এই প্ল্যানিং করেছে। কিন্তু তুই কেন বিয়ের কথা চলাকালীন আমাকে ছেলের নাম-ছবি দেখালি না? এক্সসাইটমেন্ট, ফ্যান্টাসি এসবে ভালোর থেকে খারাপটাই বেশি হয়।”

“বাদ দাও, আপু। আমারটা আমি বুঝে নিব। তাছাড়া আশিক আমাকে পছন্দ করে। প্রপোজও করেছিল। দেরিতেই হোক, একসেপ্ট করে নিলাম। এখন এই টপিক রাখো। আমাকে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে দাও।”

আর্শি হতাশ হয়ে বসে থাকে। আরিয়া বাহিরে বাহিরে চুপচাপ ও শান্ত স্বভাবের হলেও রেগে গেলে তখন বা*ঘিনীর রূপ ধারণ করে।

_______

সন্ধ্যার সময় প্রতিদিনকার মতো নাহিদ আরিয়াকে কল করে। কিন্তু ফোন ওয়েটিং বলছে। নাহিদ ভ্রুকুটি করে আবার ডায়াল করে। আবারও ওয়েটিং বলছে। তারপর আরিয়ার নাম্বারে মেসেজ করে। আবার পাঁচ মিনিট পর কল করে। তখনও আরিয়ার নাম্বার ওয়েটিং পায়। নাহিদের এবার রাগ ধরে যায়। সে নিজের মায়ের রুমে গিয়ে বলে,

“আরিয়ার মাকে কল করো।”

মিসেস নেহা শুয়ে ছিলেন। ছেলের কথা শুনে উঠে বসে বলেন,
“কেন?”

“আরিয়া কার সাথে ফোনে কথা বলছে? সেটা জানতে। আমি এতক্ষণ যাবত কল করছি কিন্তু ওয়েটিং!”

মিস্টার হাসান ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলেন। তিনি টিভি বন্ধ করে এসে বলেন,
“সে যার সাথে খুশি কথা বলুক, তাতে তোমার কী?”

নাহিদ হতবাক কণ্ঠে বলে,
“মানে কী? আমি তার উডবি হাজবেন্ড। আমার অধিকার আছে।”

“উডবি হাজবেন্ড। হাজবেন্ড তো না। বিয়ের এক সেকেন্ড আগ পর্যন্ত আরিয়ার উপর তোমার অধিকার নেই। সে তার সিদ্ধান্ত বদলাতে অধিকার রাখে।”

বাবার কথা পছন্দ হলো না নাহিদের। সে রেগে সেখান থেকে চলে আসে। রুমে এসে আবারও কল করে। কিন্তু এবারও একই অবস্থা। রাগে নাহিদ ড্রেসিংটেবিলের সামনের স্টিলের ফুলদানিটা ফেলে দেয়।
ছেলের ঘর থেকে ঝনঝন শব্দে মিসেস নেহা ঘাবড়ে ওঠেন। ছেলের কাছে যেতে চাইলে, মিস্টার হাসান বাধা দেন। বলেন,

“থামো। যা ইচ্ছা করুক। তুমি যাবে না। ওরকম ছেলে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো!”

“কী বলছো! আমাদের একটাই ছেলে।”

“একটা ছেলে বলেই তো আশকারা দিয়ে বিগড়ে দিয়েছ। বাবা-মায়ের মানসম্মানের কথা ভাবে না। মেয়েদের সম্মান করতে জানে না। এবার আরও বড়ো ঝড়ের জন্য প্রস্তুত থাকো।”

মিস্টার হাসান আবারও ড্রয়িংরুমে চলে যান। মিসেস নেহা ছেলের কথা ভেবে করে চিন্তায় পড়ে যান।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-০৫

0

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
আশিক ফোন হাতে নিয়ে চিন্তা করছে কী করবে। তখন হাসান আহমেদ আশিককে ডেকে বলেন,
“তোমার ভাইটা কোথায় গেছে, আশিক?”

“ছাদে।”
মুখ ফসকে কথাটা বলে নিজেই নিজের মুখে হাত দিয়ে ফেলে আশিক। তৎক্ষণাৎ সুর পালটে বলে,
“মনে হয় ছাদে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখেছিলাম।”

হাসান আহমেদ নিজের ছেলের উপর বিরক্তি প্রকাশ করতে করতে সোফায় বসে ফোনে খবর দেখছেন। আশিকও হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

_______

নাহিদের পরিবারকে বিদায় দিয়ে মিসেস আশালতা মেয়ের শাড়ি দেখতে বসেছেন। বেশ পুরাতন ডিজাইনের ঘন কাজের শাড়ি। মিসেস আশালতা সন্তুষ্টিচিত্তে বলেন,

“শাড়িটা সত্যি খুব সুন্দর মানাবে আরুর গায়ে। দেখ আর্শি, তোর গায়েও কিন্তু মানাবে!”

“আমার গায়ে মানাতে হবে না। তুমি রাখো শাড়ি। তোমার না কোমড় ব্যাথা করতেছে? যাও গিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকো।”

আর্শি চোখে-মুখ কুঁচকে কথাটা বলল। মিসেস আশালতা বেজার কণ্ঠে বলেন,
“বিয়ে ইঙ্গিত শুনলেই তোর মনে হয় গরম তেলে পানি ছিঁটার অবস্থা হয়। বিয়ে তো করতে হবে। তোর ছোটোবোনের বিয়ে আগে দিচ্ছি বলে যে তোকে বিয়ে দিবো না, এমন তো না। নেহাৎ নাহিদের পরিবার বিশেষ অনুরোধ করলো বলে।”

“হয়েছে, থামো না! তোমার রেস্ট করতে হবে না। শাড়ি নিয়েই বসে থাকো! আমি গেলাম!”

আর্শি উঠে চলে যায়। মিসেস আশালতা ছোটো মেয়ের সাথে বড়ো মেয়ের রাগ, একগুঁয়েমির কথা বলতে লাগলেন।

_______

সন্ধ্যায় নাস্তা শেষে আরিয়া ফোনে বাংলা টেলিফিল্ম দেখছিল তখন আর্শি ইতস্তত করে আরিয়ার পাশে বসে। কিছুক্ষণ বসে থেকে নিজেকে ধাতস্থ করে ডাকে,

“আরু!”

“হু”

আরিয়া ফোনেই দৃষ্টি রেখে জবাব দেয়। আর্শি আবার ডাকে,
“আরু, শোন না!”

“হুম বলো। শুনতেছি।”

“ফোন রেখে আমার দিকে তাকা।”

আরিয়া মানা করে কিউট ফেস করে অনুরোধ করে,
“একটু পর, আপু। টেলিফিল্মটার মাঝে অন্যদিকে মনোযোগ দিতে পারছি না। তাহলে মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।”

আর্শি নিরবে নিরববাক্যে মেনে নেয়। প্রায় আধঘণ্টা পর আরিয়া ফোন রেখে শুধায়,
“বলো এবার। কী যেনো বলবে বলছিলে?”

আর্শি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে,
“না না। কিছু না। ভুলে গেছি আসলে।”

“উফ! আপু, তুমিও না! মনে পড়লে বইলো। আমার কালকে ক্লাস আছে। একটু পড়ি।”

আর্শি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। অতঃপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

______

পরদিন আরিয়া ভার্সিটিতে যায়। একটা ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে এসে বসতেই আশিকও সেখানে এসে দাঁড়ায়। আশিক ইতস্তত করে বলে,

“আরিয়া, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

আরিয়া চা খেতে খেতে ইশারা করলো বসতে। আশিক বসে চুপ করে আছে। আরিয়া বলে,
“বলো।”

“না মানে। যদি তোমার বান্ধবীদের একটু…..”

“কেন? বান্ধবীরা থাকলে প্রবলেম কী?”

আরিয়ার সাথে সাথে ইশা ও রিনি নামের ওর ফ্রেন্ডরাও তাল মেলালো।
“আমরা থাকলে কী প্রবলেম? তুমি বলতে পারো।”

আশিক অনুরোধ করে,
“প্লিজ তোমরা কিছু মনে করো না। আমি জানি তোমরা ছেলেদের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলো না। আই রেসপেক্ট দ্যাট। খুব আর্জেন্ট না হলে বলতাম না।”

আরিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আচ্ছা, চলো। ক্যাম্পাসে গিয়ে কথা বলি।”

“ইশা, রিনি, তোরা দশ মিনিট বস। আমি আসতেছি।”

তারপর আরিয়া তার ফ্রেন্ডদের রেখে আশিকের সাথে যায়। দুজনে একটা জায়গায় গিয়ে বসে। আরিয়া জিজ্ঞাসা করে,
“বলো এবার।”

আশিক লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে বলে,
“তোমার সাথে আমার কাজিনের বিয়ে হচ্ছে। কয়েকদিন পর তুমি আমার ভাবি হবে। দুই বছর আগে যদিও আমি তোমায় প্রপোজ করেছিলাম। যেটা আমার করা উচিত হয়নি, সরি। ওটা মনে রেখে আমাকে জাজ করো না। তখন জাস্ট সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছিলাম আর তোমাকে ভালো লাগতো বলে বন্ধুদের বুদ্ধিতে প্রপোজ করে ফেলেছিলাম।”

“তুমি এগুলো বলতে ডেকেছো?”

“না না। অন্যকিছু।”

“তাহলে বলো। পুরোনো কথা টেনো না। তোমার প্রতি আমি কোনো রাগ-ঘৃণা রাখিনি। আমি ভুলে গেছি সেসব, তুমিও ভুলে যাও।”

আশিক জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে খানিক দম নিয়ে বলে,
“আমি তোমাকে কিছু বলব না। কিন্তু কিছু শোনাতে চাই। জানিনা এরপর তোমার রিয়াকশন কেমনটা হবে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে তোমাকে এটা জানানোটা জরুরী। আফটারঅল এটা তোমার সারা জীবনের প্রশ্ন। এজ অ্যা ফ্রেন্ড, অন্ধকারে থেকে তুমি নতুন জীবন শুরু করো, এটা আমি চাই না। তাই তোমাকে জানানোর জন্য মনে অনেক সাহস নিয়ে আমি এখানে এসেছি। প্লিজ পুরোটা শুনবে। তারপর রিয়েক্ট করবে।”

আরিয়া সম্মতি জানিয়ে বলে,
“ঠিক আছে।”

আশিক আশ্বস্ত হয়ে ফোনে রেকর্ডটা অন করলো। বেশি না, মাত্র চার-পাঁচ মিনিটের একটা রেকর্ড। আরিয়া প্রথমেই তার আপুর কন্ঠ শুনে বলে,
“এটা আপু?”

“হ্যাঁ। শোনো আগে। পুরোটা শুনে কথা বলবে। তার আগে না।”

আরিয়া মাথা নাড়িয়ে আবার রেকর্ডটা চালু করলো। রেকর্ড চলতে চলতে আরিয়ার মুখভঙ্গিও বদলাতে শুরু করলো। পুরোটা শুনে সে বলল,
“আমার আপুর চরিত্রে প্রশ্ন তোলা! তোমার ভাইকে এই অধিকার কে দিয়েছে? এই যে আমি তোমার সাথে এখানে বসে আছি, কথা বলছি, তার মানে কি এই যে আমার চরিত্র খারাপ হয়ে গেছে? আমার আপু যাদের সাথে ঘুরতে গিয়েছে তাদের মধ্যে একজন আমার কিছুটা দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই। মানে আম্মুর চাচাতো বোনের ছেলে। রাকিব ভাইয়া। ভাইয়া ছিল বলেই, আম্মু আপুকে পারমিশন দিয়েছিল। ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা জাস্ট ফ্রেন্ডের নামে অনেক খারাপ কিছু করে। মানলাম। কিন্তু তাই বলে সবাই তো না। উনার যেহেতু আমার আপুকে পছন্দ না, সরাসরি মানা করে দিতে পারতো। আমার আপুর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না। এখন যদি আমি তোমার ভাইয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলি তখন? তোমার ভাই তো আমাকে ডিজার্ভ করে না। তোমার ভাইয়ের উচিত এমন কাউকে বিয়ে করা, যে মেয়ে তার কথায় উঠবে বসবে। যেহেতু তোমার ভাই ভাবে, আমার আপুর চরিত্র খারাপ! তাহলে আমার জন্য বাড়িতে বিয়ে প্রস্তাব পাঠানোর কোন দরকার ছিল না। এখন তো আমার মনে হচ্ছে, তোমার ভাই আমাকে বিয়ে করার জন্য আমার আপুকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করছে। কারন তোমার ভাই বলেছে আমাকে বিয়ে করছে আমার আপুর বিয়ের আগে। আমার পরিবারের বদনাম হতে পারে ভেবে, আমার আপু সেই বদনামের ভয়ে কাউকে না বলতে পারে। হাউ চিপ!”

আশিক বলে,
“দেখো আমার মনে হয়েছে, তোমার আপু তোমাকে এটা শত চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত হয়তো বলতে পারবে না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে তোমার এটা জানা উচিত। তাই তোমাকে আমি জানিয়ে দিলাম। আরেকটা কথা, আমার ভাই মেয়েদেরকে তেমন একটা সম্মান করে না। সেটা আমি জানি কিছুটা। কিন্তু এরকম কাহিনী জানতাম না। এখন কী করবে না করবে তোমার ব্যাপার।”

“হুম। থ্যাংকিউ। আপু আমাকে দুইবার বলার চেষ্টা করেছে, বলতে চেয়েছে আমার মনে হয়। কিন্তু বলতে পারেনি। কাইন্ডলি এই অডিও রেকর্ডটা আমাকে সেন্ড করে দাও। আর সময় থাকতে সত্যটা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।”

এই বলে আরিয়া সেখান থেকে উঠে সোজা বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।

______

বাড়ি পৌঁছে আরিয়া চিৎকার করে তার বাবা-মা, বোনকে ডাকে। হঠাৎ আরিয়ার এভাবে চিৎকার শুনে সবাই কিছুটা ঘাবড়ে যায়। মিসেস আশালতা রান্নাঘরের কাজ রেখে ছুটে এসে মেয়েকে হরবড়িয়ে জিজ্ঞাসা করেন,

“কী হয়েছে? তুই এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি?”

“আপু কই?”

আর্শি এসে জিজ্ঞেসা করে,
“কী হয়েছে?”

আরিয়া আর্শির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে দৃষ্টি মিলিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“নাহিদই সেই লোক?”

আর্শি আঁতকে ওঠে।
“মানে?”

“সত্যি করে বলো আপু। নাহিদই কী সেই লোক? যে তোমার আত্মসম্মানে আ*ঘাত করেছিল কারণ তুমি তাকে প্রপোজ করেছিলে!”

মিসেস আশালতা ও মিস্টার রিয়াজউদ্দীন একে অপরের মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকান। মিসেস আশালতা হতচকিত কন্ঠে শুধান,
“কী বলছিস এসব?”

আরিয়া তার মাকে বলে,
“বলব। সব বলব।আগে এখনই নাহিদের বাবা-মাকে কল করো। ”

“কিন্তু…”

“কোনো কিন্তু না, মা। উনাদেরকে আগে থেকেই কিছু বলবে না। শুধু বলবে জরুরী কথা আছে যেন বাসায় আসে। সাথে উনাদের ওই ছেলেকে না আসলেও হবে।”

মিসেস আশালতা মাথায় হাত দিয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে পড়লেন।

চলবে ইন শা আল্লাহ,