Tuesday, July 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1952



প্রতারক part 6

0

প্রতারক part 6
#Roja_islam

সকালে ভার্সিটি ঢুকতেই কই থেকে নিতু এসে আমার গালে পাঁচ আঙুল বসিয়ে দিলো। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম চড় খেয়ে।না আজ আমার কান্না আসছেনা আজ আমি অবাক চরম অবাক নিতু কি করে পারলো?? আমার গায়ে হাত তুলতে?? মাঠের সবাই এখন আমার দিকে তাকিয়ে!! আমি নিতুর দিকে তাকিয়ে চিনার চেষ্টা করছি এটা সেই আমার চিরোচেনা নিতু!যাকে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে জানতাম?? না আজ এই নিতুকে আমার কোনো এঙ্গেল এই পরিচিত মনে হচ্ছে না। নিতু এবার চেঁচিয়ে উঠলো।
— এই তোর এতো বড় সাহস হলো কি করে আমার হ্যাসবেন্ড কে এতভাবে ফাঁসানোর বল লনি কই। কোন নাগর কে দিয়ে গায়াব করে আমার হ্যাসবেন্ড কে ফাঁসাচ্ছিস বল??
.
আমি কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিনা কি বলা উঠিৎ আমার আমি ঠিক করতে পারছিনা
এতো নোংরা ভাষায় কেউ আমার সাথে কখনো কথা বলেনি। আর নিতুও যে এভাবে কথা বলতে পাড়ে আমার জানা ছিলো না। নিতু আবার চেঁচিয়ে উঠলো।
— আরে কি হলো বলিস না কেনো??নাকি আমার হ্যাসবেন্ড এর দেওয়া ছ্যাঁকা খেয়ে বোবা হয়ে গেছিস??
.
এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার এই মুহূর্তে নিজের অজান্তেই সেই ছেলেটার কথা মনে পড়ছে সেই তো জানে লনি কই। আমি সারা বিল্ডিং তাকে খুঁজে এসেছি অন্যদিন তাকে দেখলেও আজ তার দেখা মেলেনি। এর মধ্যে শিহাব কই থেকে এসে আমার হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে ফাঁকা ক্লাস রুমের দিকে। আমার কোনো হেলদুল নেই আমি রবোট হয়েগেছি।যে যেদিকে টানছে আমি সে দিকেই যাচ্ছি।
.
ফাঁকা ক্লাসে এনেই শিহাব আমাকে ধাক্কা মারে। ফলে আমি পড়ে যেতে নেই কিন্তু আমাকে শিহাব নিজেই ধরে ফেলে।
— এই এত্ত ইনোসেন্ট সাজিস না তো যেমন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিস না। তোকে তো ভালো মনে করেছিলাম আর তুই!! নিতু ঠিক বলেছিলো ছোট লোকের বাচ্চা রা এমনি হয়। ঠিক তোর মতো অন্যের জিনিশ এ নজর দেয় যেই দেখলি আমি তোকে ছেড়ে নিতুর সাথে ভালো আছি অমনি নতুন আশিককে দিয়ে লনি কে গায়াব করে দিলে যানো ওর ভাই আমায় ধরে?কারণ তুই তো ভালো করে জানিস দোষ আমার উপরি আসবে। তাই না ছিঃ হীর ছিঃ। এতো ছোটলোক তুই???
তাড়াতাড়ি বল লনি কই!!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আমার বেশ সময় লাগছে শিহাবের কথা গুলি হজম করতে। আল্লাহ এগুলা শুনবার ও যোগ্য ছিলাম আমি। আমি না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আমার কান্না দেখে শিহাব তাচ্ছিল্য স্বরে বললো।
— এই তোর ড্রামা বন্ধ কর তো তোর ড্রামা দেখার টাইম আমার নেই। যা আমার সামনে থেকে। তোর ফেইস দেখতে চাইনা। কাল যদি লনি কই না বলতে পারিস তো। এই কলেজে আর ঢুকতে পারবিনা।আর শোন তুই যাই করিস না কেনো তোর মতো থার্ডক্লাস ছোটলোক মেয়ের কাছে এই শিহাব ফিরবে না!!আমি আমার ক্লাস এর মেয়েকে বিয়ে করেছি আর সেটা নিতু।আউট!!
.
আমি খুন হয়ে গেছি আজ শিহাবের কথায়। আর আমার জিন্দা লাশটা। শিহাবের কথা শুনে আর এক মিনিট দাঁড়ায় নি দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দৌড়াতে থাকি আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমি পাগলের মতো দৌড়াচ্ছি। শিহাব এর কথা গুলো কানে বাজছে আমি থার্ডক্লাস ছোটলোক। মানে শিহাব নিতু বড় লোকের মেয়ে বলে তাকে বিয়ে করেছে?? আর ভাবতে পারছিনা আমি টাকাই সব। টাকা দিয়ে ভালোবাসা হয়?? নিতু পারবে আমার মতো ভালোবাসতে শিহাব তোমাকে??? একদিন আজ কের কথা গুলোই তোমার উপর ভারি পড়বে শিহাব তুমি দেখে নিও এই টাকাই তোমার কাল হয়ে দাঁড়াবে। তুমি চাইলেই তখন কিচ্ছু করতে পারবে না।
.
আর একটা জিনিষ ও ভাবাচ্ছে কি পেলো ছেলেটা লনিকে গায়াব করে কেনো এতো অপমান করালো আমার। আমি হু হু করে কাঁদছি আর দৌড়াচ্ছি।
.
বাসায় এসে রুমে ঢুকে ইচ্ছামত কাঁদলাম। মা অনেক ডেকেছে শুনি নি। আমি কিছু শোনবার মন মানুষিকতায় নেই। আমি ভাবতে পারছিনা শিহাব কি করে আমায় এতো অপমান করলো আর নিতু?? আমি সারাবিকেল সারারাত কেঁদেই পাড় করলাম। ভোর ৪ টার দিকে। কালকের সেই নাম্বার টা থেকে কল এলো। কাল রাতে শুভাকাঙ্ক্ষী বলে ফোন কেটে দিয়েছিলো!!
আমি কি জানি কি ভেবে ফোন রিসিভ করলাম।
— হ্যালো??
— উফফ এই কান্নাকরা কণ্ঠ….!
— কি বলছেন?? কে আপনি!!
–…….
— হ্যালো কথা বলছেন না কেনো কে আপনি??
— শুনছি!!
— আশ্চর্য। আমি রাখছি নেক্সট টাইম রাত বিরাতে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করবেন না। প্লিজ।
— কল কাটার চিন্তাও করো না!!
— কেনো কাটলে কি করবেন?? কে আপনি বলুন!!
— না বললে??
— না বললে আর কল দিবেন না। অপরিচিত মানুষ এর সাথে কথা বলি না।
— অপরিচিত ছেলেকে ভালো ঠিকি বাসতে পারো তাই না??
— কি বলতে চাইছেন কে আপনি। দেখুন আমার মন ভালো না প্লিজ শুধু শুধু রাগাবেন না!!
— ওহ হও তোমার ও রাগ আছে??রাগ থাকলে তোমাকে কেউ থার্ডক্লাস বলে যায় তোমার সামনে আর তুমি কিছুই বলো না তাকে!!
— আপনি কে?? কি করে জানেন এসব??
— আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী!!
— না মিথ্যে আমি জানি আপনি কে??
— কে আমি??
— রাহুল আপনি তাই না!!
— রাহুল?? কে রাহুল??আমি কোনো রাহুল কে চিনিনা!!
— মিথ্যে আপনি রাহুল। বলুন লনিকে লুকিয়ে আমাকে অপমান করাচ্ছেন কলেজ ভর্তি মানুষের সামনে। আর রাতের আধারে শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে দিচ্ছেন??
— তুমি ভুল আমি রাহুল নই। আমি সত্যি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী!!
— মিথ্যে আপনি রাহুল। অসভ্য ছেলে আপনি বলুন লনি কই??
— আমি রাহুল নই আবারো বলছি!!
— আমি আপনাকে ছাড়বো না!!
— ঠিক আছে আমাকে ছেড়ো না। কিন্তু ঐ প্রতারক গুলাকে ছেড়ে দিবে যারা তোমার সাথে। রাত দিন প্রতারণা করে গেছে। ঐ প্রতারক গুলাকে কিছু করবে না??
— কি চান আপনি বলবেন প্লিজ এসব কেনো বলছেন??
— বন্ধু হতে চাই!
— প্রপোজ করলেও না রাজী হয়ে যেতাম হয়তো। কিন্তু বন্ধু বা বান্ধবী আর চাই না আমার!!
বন্ধু বান্ধবী মানেই প্রতারক বুঝেছে আপনি নিজেও এসব থেকে দূরে থাকুন!!
— হাহা তোমাকে বন্ধত্বের সঠিক মানে বুঝাতে চাই। দিবে একটা সুযোগ??
— নো!!
কোনো দিন না আমার আর কাউকে চাইনা কাউকে!!
.
বলেই কেটে দিলাম ফোন এটা আবার কোন প্রতারক আমার লাইফে এলো?? কি চায় আমার কাছে?? এটা কি রাহুল ছিলো নাকি অন্য কেউ?? এই রাহুল কেই বা কই পাবো আর কেনো দেখি না এই ছেলেকে। কেনো লনিকে গায়াব করে এই অপমানের শিকার করলো আমায়?কেনো? কেনো??এর থেকে ভালো ঐদিন লনি….!!আবার কেঁদে দিলাম আমি কাদার মাঝেই শুনলাম।
.
আজান দিচ্ছি আজানে ধনী মন প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছে। নামাজ পড়ে চুপিচুপি ছাদে চলে গেলাম।মা দেখলেই কেঁদে দিবে। রাতে ভাইয়া মা অনেক ডেকেছে আমি দরজা খুলিনি। কারণ কান্নাকাটি করে আমার চোখ মুখ এর অবস্থা খারাপ ছিলো। মা ভাইয়া এভাবে দেখলে আমায় না জানি কি করতো সেই ভয়ে খুলিনি। ছাদে এসে হাটছি আর ভাবছি। লাইফ টা একটা প্রশ্নে আটকে গেলো আমার। কেনো এসব হচ্ছে আমার সাথে কি দোষ ছিলো আমার???আমি তো কোনোদিন কাউকে কষ্ট দেই নি তাহলে এমন কেনো হচ্ছে আমার সাথে?? আজ নিজেকে বড্ড ভালোমানুষ মনে হচ্ছে কারণ ভালোমানুষ দেরই নাকি কষ্ট বেশী থাকে কি জানি!!
একা একা কথা বলতে বলতে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছি আর চিন্তা আকাশপাতাল চিন্তা মাথা যেমন মৌমাছির মতো ভোনভোন করছে।
.
হঠাৎ চিন্তার মাঝে বুঝলাম আমার ঘাড়ে কাউর নিশ্বাস পড়ছে। মুহূর্তে ভূতের ভয় আমায় গ্রাস করলো। হায় আল্লাহ সকাল সকাল আমায় কি তবে ভূতে ধরলো? আমি পিছন ফিরে দেখার শক্তি পাচ্ছি না।হাত পা অবশ হয়ে গেছে মিনিটেই। বিড়বিড় করছি হেল্প হেল্প আল্লাহ হেল্প। আমার এসব ফালতু চিন্তা দূর করে হঠাৎ কাউর কণ্ঠ কানে এলো।
— এই যে ভিতুরডিম আমি! ভূত না আমি!
.
মুহূর্তে সব ভয় গায়াব হয়ে গেলো। মাথায় ঢুকলো একরাশ প্রশ্ন। আমি সাথে সাথে পিছন ফিরে বললাম।
— আপনি কি ভূত??
.
উনি হু হা করে হাসছে পেটে হাত দিয়ে।হাসির চটে সিল্কি চুল গুলা কপাল লেপ্টে যাচ্ছে।উনার চুল গুলা না কেমন আজব টাইপ কাটিং পিছনে ছোট হলেও সামনে দিয়ে বড়বড়। এক্টু নড়াচড়া করলেই কপাল ছুঁয়ে যায়।আর উনি আঙুল এর সাহায্য খুব সুন্দর করে পিছনে ঠেলে দেয় খুব সুন্দর লাগে। মনে হয় চুল গুলা খুব স্ফট। ভালোই লাগে দেখতে। হঠাৎ ধ্যান এলো আমি কেনো এসব ভাবছি?? আশ্চর্য!! আশ্চর্য!!ছিঃ ছিঃ তাও এমন সিচুয়েশনে এসব চিন্তা?? এই ছেলের থেকে কত কিছু জানার বাকি আর আমি পড়ে আছি এই অসভ্য ছেলে চুল? চুল নিয়ে। আর ভাবতে পারলাম না কিছু নিজেকে ধিককার দিয়ে।
মুখে বিরক্তি এনে বললাম।
— থামুন!! আমি ভিতুর ডিম না!!
— দেখতেই পারছি। তা মনে হলো আমায় খুঁজছিলে??
.
বুঝলো কিভাবে জানিনা কিন্তু এই মুহূর্তে মন চাইছে উনাকে বলতে লনির মতো নিতু আর শিহাব কে সেইম ভাবে পিটিয়ে গায়াব করে দিতে। ভাবতেই চোখে পানি টলমল করছে কেনো জানিনা। আমি টলমল চোখেই বললাম।
— লনি কোথায় কি করেছেন ওকে??
ও বাসায় যায়নি কেনো।
— সেই অবস্থায় রাখিনি বলে!!
— মানে?লনি কই?
.
আমার প্রশ্ন শুনে উনার চোখ মুখ সাথে সাথে শক্ত হয়ে গেলো আমি স্পট বুঝলাম সেটা।রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে উনি বললেন।
— হোয়ায়??
— ওর ভাই খুঁজছে ওকে তাই।
— মাডার করেছি ওর [হাত দেখিয়ে] নিজের হাতে মেরেছি ওকে।
.
আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।হাত পা কাঁপছে বিষণ ভাবে কাঁপছে। এই কথা যদি সত্যি হয় তো কি হবে আমার কলেজ কিভাবে যাবো আমি?? আরো অপমানিত হতে হবে!! আর যদি কেউ জেনে যায় আমার জন্য লনিকে মেরেছে তো? আমার চোখের টলমল করা পানি গড়িয়ে পড়লো। তা দেখেই রাহুল…..
.
চলবে?
[ হয় তো আর রেগুলার দিতে পারবোনা কিছুদিন তারজন্য আগে ভাগেই সরি বলছি।আর যারা গল্প নাম ছাড়া বা নিজের নাম দিয়ে চালাচ্ছেন তাদের বলছি। এইসব কাজ থেকে দূরে থাকুন দোয়া করে। তা না হলে আমি যদি দেখি কিছু না জানিয়েই আমার রিডার দের বললো আইডিতে রিপোর্ট দিতে।আর আমার নাম ঠিক রেখে গল্প যেখানে খুশী দিন আপত্তি নেই।ধন্যবাদ?]
Roja Islam

প্রতারক part 5

0

প্রতারক part 5
#Roja_islam

— খুব ভালো লাগে তোমার ছেলেদের শরীল দেখাতে???
.
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর গম্ভীর কণ্ঠের এই কথায় আমার শরীল কাঁপতে লাগলো ভয়ে। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম ছেলেটার দিকে তাকিয়ে। ছেলেটা একদৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কেঁদে যাচ্ছি। লিফট খুলতেই তার যেমন ঘোর কাটে। এবার সে অগ্নিমূর্তি হয়ে তাকায় আমার দিকে। আমি ভয়ে লিফট থেকে বেরুতে নিলেই সে আমায় টেনে ছাদে নিয়ে যায় আর দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
.
— এই মেয়ে প্রবলেম কি?? হ্যাঁহ কি প্রবলেম তোমার কোথায় কোথায় কাঁদো কেনো ড্যাম ইট!
.
কথা গুলি বলেই দেয়ালে সজোরে ঘুষি মারে। আমি অবাক হয়ে কান্না থামিয়ে চোখ বড়বড় করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকি।
এবার সে আমার বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলে উঠে।
— শুধু আমি বেড বয় সেটাই বুঝো আর কিছুনা?? একটা মেয়ের কিভাবে রুম থেকে বা বাড়ী থেকে বেরুতে হয় সেটাই জানো না বুঝো না?? এতো টা ইরিস্পন্সিবল কিভাবে হলে??
.
এই অসভ্যের কথার আগামাথা না বুঝে নিজের দিকে তাকাতেই আমি বেহুশ। ছিঃ আল্লাহ তুমি মাটিফাকা হয়ে যাক আমি ঢুকে পড়ি। আমি প্লাজু আর গেঞ্জি পড়ে আছি। আমি এভাবেই নিচেও গিয়েছিলাম ভাবতেই আমি লজ্জায় কেঁদে দিলাম আবার!! কাঁদতে কাঁদতেই বললাম।
.
— আমি সত্যি বলছি আমি বুঝি নি মানে খেয়াল করিনি ভুল হয়ে গেছে!
— তোমার ভুলের জন্য। আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে!!
.
আমার কান্না থেমে গেলো। অবাক হয়ে বললাম।
— মানে???
— মানে তোমাকে অনেক হট লাগছে!!
— ছিঃ!! আমিও কাকে এক্সপ্রেইন করছি।
.
কথাটা বলতেই সে আমার দুই দিকে হাত রাখলো। আমি ভয়ে কাচুমাচু করছি।
— ছেলেটা কে ছিলো??
.
আমি অবাক হলাম এই প্রশ্নে কিছুটা অসস্তিও।
— ন না নান ওফ ইউর বিজনেস!!
— তুমি দেখছি। ভিতুডিম সাথে তুললাও!!
.
বলেই হাসতে লাগলো নিজের চুপ ঠিক করতে করতে। কি সুন্দর হাসি আমি অবাক চোখে দেখছি যেমন এতো সুন্দর হাসি আগে কখনো দেখিনাই!! হঠাৎ সে চুটকি বাজালো আমার সামনে আমি অসস্তি তে পড়ে গেলাম। আমি চেঁচিয়ে বললাম।
— শুনুন আমার থেকে দূরে থাকুন। একদম আমার কিছুতে ইন্টাফের করবেন না। আমি যা খুশী তা করি আপনার কি??
.
সে বাঁকা হেসে আমার উত্তর না দিয়ে চলে গেলো। আমি সস্তির নিশ্বাস নিলাম। তারপরপরই চিঠিটার কথা মনে হলো। তাড়াতাড়ি সেটা খুলে পড়ি শুরুকরলাম।
চিঠিতে লেখা।
.
—– তোর ফোন কেনো অফ সারাদিন তো কল দিয়ে জ্বালাস এখন কি হইছে?? আমাকে বিপদে ফেলে ফোন অফ করে রেখেছিস তাইনা? লনি কই কি করছিস ওরে?? ওর বড় ভাই আমাকে পুড়া একদিন আটকা রাখছে। তাড়াতাড়ি ফোন দিয়ে বল লনি কোথায় না হয় ভালো হবে না হীর!!—–
.
আমার মাথা ঘুরাচ্ছে এই টাইপ চিরকুট পড়ে। হা হা হা আমিও ভাবছিলাম কি শিহাবের আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে আর শিহাব। এটা আসলেই শিহাব তো?? নাকি অন্য কেউ?? এই শিহাব কেই আমি পাঁচ বছর ধরে ভালোবাসি? কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলাম। মা নামাজ পড়ছে। আমার ও মন চাইলো পড়তে। কাঁদতে কাঁদতে নামাজ পড়লাম অজু করে। হাল্কা লাগছে। তারপর হঠাৎ মাথায় এলো। লনি কই?? কি করেছে ছেলেটা?? মেরে ফেলেনি তো?? আল্লাহ আমি কি করবো তাহলে। নিশ্চয় লনির ভাই শিহাব কেই মেরে ফেলবে!! উফফ কি করি আমি??
.
লনি সব সময় আমায় ডিস্টার্ব করলে শিহাব ই আমায় বাঁচিয়েছে। সেই সুবাদে অনেক বার দুজনের মধ্যে মারামারি ও হয়েছে কলেজের সবাই এসব জানে। নিশ্চয় লনি কে পায়না বলে সবাই ভাবছে শিহাবি কিছু করেছে। আমি আর কিছু না ভেবে। ছেলেটার উদ্দেশ্য বের হলাম ফ্লাট থেকে। তারপর ছাদের কথা মনে পড়তেই চেঞ্জ করে নিচে গেলাম। দোকানের সামনে নেই। উনাদের ফ্লাটেও তো ঢুকতে পারবোনা!! আমার কান্না পাচ্ছে।
.
নিজেদের ফ্লাটে চলে এলাম। মার কাছে গেলাম।
— মা আমার ফোন দিয়েছে ছেলেটা??
— কোন ছেলে??
— ঐ আমাকে হসপিটাল নিয়ে গেলো যে!!
— আরে ওর নাম রাহুল।
— রাহুল!! আচ্ছা যাই হোক আমার ফোন দেয় নাই?? কাউর কাছে?
— তোর ভাইয়া যানে এসব!!
আমাকে তো ফোন দেয় নাই।
— উফফ ভাইয়া কই এখন??
— বাইরে আর কই সারাদিন বাসায় থাকে?? তুই ও রুমে পড়ে থাকিস। মাটা একা পড়ে থাকে খবর নিস না।
.
মার অভিমানী কথা শুনে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সত্যি বাবা চলে যাওয়ার পড় আমি ভাইয়া নিজেদের মতো বিজি থাকি পড়াশোনা নিয়ে নিজেদের কষ্ট নিয়ে বুঝিনা মা কত একা। মার ও কষ্ট আছে। ভাবতেই চোখে পানি চলে এলো। মাকে জরিয়ে ধরলাম!!
— সরি মা ক্ষমা করে দাও। এক্টু সময় দাও আমায় আমি আবার আগের মতো হয়ে যাবো সত্যি।
— আমি জানি!! হীর আমি জানি না তোর কি হইছে কিন্তু সব ভুলে যা পুড়ানো সব নতুন করে শুরু কর। তোর বাবা বলতো না অতীত মনে রাখতে নেই।
— মা এতো সহজ না অতীত ভুলা। যার সাথে বর্তমান ও জরিয়ে আছে।
— তুই কত বড় হয়ে গেছিস হীর।
–….
— একটা কথা বলবো হীর??
— হুম।
— তুই এখন সবি বুঝিস তাই আমি আর তোকে নতুন করে কিছু বলবো না। তুই যেভাবে ভালো মনে করিস কর। আমার মেয়ের উপর আমার বিশ্বাস আছে।
.
আমি মাকে ধরে ইচ্ছে মত কাঁদছি। আর ভাবছি সব ভুলতেই হবে প্রতারক দের ভেবে জীবন নষ্ট করার মানেই হয় না। কিন্তু আমি যে আশা ছাড়তে পারিনা স্ট্রং হয়েও হতে পাড়ি না মা পাড়ি না। সেদিন খুব বড় মন দিয়ে শিহাবের বিয়ে দেখতে গেলেও শেষ এ আমি পারিনি মা। কি করে পারবো। যার সাথে কলিজা টা ভাগ করেছি সেই নিতু কি করে ……! আর ভাবতে পারছি না আল্লাহ আমায় শক্তি দেও প্লিজ শক্তি দাও আর পারছিনা এই প্রতারক দের দেওয়া পাইন নিতে।
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


.
রাহুল নিজের ফ্লাটে বসে আছে যেখানে হীর কে এনেছিলো। একটা ছেলেকে নিজের ফোন থেকে একটা পিক দেখালো।
— এই মেয়েটার সব কিছু জানতে চাই। তোমাদের ভার্সিটি তেই পড়ে এক্টু খোজ নাও। বুঝতে পারছো তো মানে পাস্ট সম্পর্কে খোজ নাও!!
— ভাইয়া বুঝেছি আমি পাড়বো যেহেতু একি ভার্সিটি তে আছি।
— সেই জন্যই তোমাকে কাজ টা দেওয়া প্লিজ আমার হোপ ডাউন করোনো।
— আইল ট্রায় মায় বেস্ট! ব্রো!!
— গুড লাক ব্রো। ইউ ক্যান গোঁ নাউ!!
— শিয়র!!
.
ছেলেটা চলে গেলে রাহুল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে রক্তচক্ষু নিয়ে।কেনো এতো রাগ তার এই মেয়ের উপর তা সে জানে না শুধু জানে শেষ করে দিতে হবে। সব শেষ করে দিতে হবে।
— রিভেঞ্জ তো অবশ্যই নিতে হয়। নাহলে পাপ বেড়ে যায়। আমি তা হতে দিবো না।
.
বলেই বাঁকা হাসে রাহুল।
.
রাতে ভাইয়া এলে ভাইয়ার থেকে ফোন পাই। পেয়ে ফোন অন করতেই নিতুর কল। রিসিভ করবো কি করবো না ভাবতে ভাবতে দুই বার ফোন কেটে গেলো। মনের সাথে যুদ্ধ করে রিসিভ করতেই।
— এই তুই আমার হ্যাসবেন্ড….!
.
এটুকু শুনেই কল কেটেদি!! আর শোনার সাহস হলো না। আমি ভার্সিটি যাবো কি করে?? নিশ্চয় নিতু তার দল বল নিয়ে ধরবে আমায়। আর শিহাব ও তো কিছুই করবেনা। কেনো দুজন এমন করলো আমার সাথে কি দোষ আমার তা আজ ও অজানা। এর মধ্যে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। প্রায় আসতেই থাকে। ঠিক মতো কাঁদতেই দিচ্ছে না। না পেরে ধরেই বসলাম কাঁপা কাঁপা হাতে।
— হ্যাঁলো??
–…
— হ্যাঁলো কে বলছেন??
— শুভাকাঙ্ক্ষী!!
— মানে…
.
.
চলবে?
[ নিতু শিহাব দুই টারে কি শাস্তি দেওয়া যায় এক্টু হেল্প করেন ?!]

প্রতারক part 4

0

প্রতারক part 4
#Roja_islam

আমার বিল্ডিং এর প্রায় অর্ধেক ব্যক্তি আমার সামনে উপস্থিত। এর মধ্যে সবাই পরিচিত কারণ অনেল দিন ধরেই থাকি সবাই এক বাড়ীতে কিন্তু। অবাক হলাম বাড়ীর মালকিন কে দেখে এই মহিলা বজ্জাত টাইপ। মানে বুঝাচ্ছি। ক্লাসে যেমন শিক্ষক রা স্টুডেন্ট দের ধমকির উপর রাখে। যে সবাই চুপ কথা বললে ক্লাস থেকে বের করে দিবো হেন তেন!! এই মহিলাও তেমনি আমাদের হুমকি ধমকি দিতেই থাকি হুহ। একদম পছন্দ না আমার। সবাই আমাকে নানান কিছু নিয়ে দেখতে এসেছে।এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। আমি শুধু মাথা দুলাচ্ছি। কিন্তু আমার মাথা অন্য চিন্তার ভর সেই ছেলে সবাইকে বলে দেয়নি তো লনি আমাকে তুলে নিয়ে….! যদি সব বলে দেয় তাহলে তো কিছু ভালো কিছু গুণী আন্টি আছে ওরা পুড়ো শহর আউলিয়ে দিবে। তখন আর এই শহরে থাকতে পারবোনা আমরা এমন অবস্থা হবে। কিছু না হলেও হয়ে যাবো আমি তাদের গায়না বাজনার জন্য ধর্ষিতা। না না আর কিছু ভাবতে পারছিনা আল্লাহ বাঁচাও আমাকে। অটোমেটিক আমার হাত আমার মাথায় চলে গেলো। আর কিছু চিন্তা করতে পারছিনা। গুনি আন্টিদের কথা ভেবে। ভালোকিছু না পারুক খারাপ কিছু পেলেই তারা ভাইরাল করে দেয়। আমি ভাইরাল হতে চাইনা। আমি মাথা নিচু করে আছি। মার কান্নাকাটি কানে আসছে।ভাইয়া শান্ত করার চেষ্টা করছে মাকে। আমার খুব খারাপ লাগছে নিশ্চয় ছেলেটা আমায় বদনাম করে দিয়েছে তাই তো মা মরা কান্না করছে। কি হবে আমার এখন। আমি আবার কেঁদে দিলাম।
.
এর মধ্যে সেই ছেলেটা হঠাৎ এসে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো।
— ওহ মাই গড আপনারা সবাই কেবিন কি করছে। প্লিজ রোগী কে স্পেস দিন। দেখুন মেয়েটা কাঁদছে!!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


সবাই চলে গেলো শুধু বাড়ীওয়ালা আন্টি বাদে। হঠাৎ ছেলেটার কথায় আমি থমকে গেলাম।
— মম তোমায় কি আলাদা করে ইনভাট দিতে হবে। বাইরে যাওয়ার জন্য??
— আই এম গোয়িং রাহুল!! বিহেভিয়ার ঠিক করো তুমি।আর তুমি কিন্তু এখনো বলোনি তুমি হীরকে কোথায় পেলে??
— কাম অন মম। তোমায় বলি আর তুমি পৃথিবীসহ সবাই কে তা জানাও?? তাও ঢোল পিটিয়ে??
— রাহুল!!
— মিথ্যে কি? বললাম মম। মেয়েটা অসুস্থ বলায় তুমি বিল্ডিং এর সবাইকে নিয়ে হাজির। আর… উফফ আর নাই বলি। বাসায় যাও ড্রাইভার ওয়েট করছে।
— যাচ্ছি। তুমিও চলো!!
— আমি বাচ্চা না। আমি বাইক নিয়ে আসছি লেইট ও হতে পারে। ইউ গোঁ!!
.
মহিলা আমার দিকে রক্ত চক্ষুনিয়ে একবার তাকিয়ে রেগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ছেলেটার দিকে!! কি অসভ্য ছেলে কোনো মেনার্স নেই বড়দের সাথে মানে নিজের মার সাথে কি করে কথা বলতে হয়?? কিন্তু বড়সড় ধাক্কাটা কিছুক্ষণ পড় খেলাম যখন মাথায় এলো। বাড়ীওয়ালা আন্টিকে ছেলেটা মা ডাকছিলো। তার মানে এই মহিলার ছেলে। আল্লাহ গজব পুড়াই!! তাই তো বলি বিল্ডিং এ এই পুলা আসলো কই থেকে। মহিলাও বজ্জাত ছেলে তো তার থেকে বেশী। আমি ৪৪০ এর ঝটকা হজম করে শেষ করতেই। ছেলেটা আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।
.
— আমাকে লাইক করো না তার কারণ আমি জানি বাট মম কি করছে তোমার সাথে?? মম কে কেনো পছন্দ করো না??হোয়ায়??
— হয়তো আপনার মা বলে!!
.
কথা বলেই আমি মুখ চেপে ধরলা দু হাতে। যতক্ষণে বুঝলাম আমি কোন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি ততক্ষণে অনেক লেইট হয়ে গেলো। আমি ভয়ে ভয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম। বাঁকা হাসছে ছেলেটা!!
— আমি খারাপ আমার আম্মু ও। আর সেই জন্যই তোমাকে…..!
.
এইটুকু বলেই চুপ করে রইলো সে।
আমি বুঝলাম না আমার মনের কথা বুঝলো কেমনে। ঐ সময় মা ভাইয়া। আর বিল্ডিং এর এক বান্ধবী রাইসা এলো। মা আমাকে দেখেই কান্না জুরে দিলো। ভাইয়া ধমক দিয়ে উঠলো।
— মা প্লিজ স্টপ আর কত কাঁদবে। বোন কে দেখবো নাকি তোমাকে বলোতো??
.
আমি ভাইয়াকে থামিয়ে মাকে এক হাতে টেনে পাশে বসালাম। আমার এক হাতে সেলাইন পুশ করা বেশী কথা বলা নিষেধ। তাই এক হাতে মাকে শুধু জরিয়ে ধরলাম। মা শান্ত হলো। এবার ভাইয়া ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলো।
.
— তুমি ফোন করেছিলে??আমাকে??
— ইয়াহহ!!
— তুমি কই পেলে হীরকে ও কই ছিলো।
.
আমার ভয় করছে বলে দিবেনা তো। তাহলে শুধু শুধু মা ভাইয়া টেনশন করবে। আমি ভয়ার্থ চেহারা নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম। কিন্তু সে আমায় অবাক করে দিয়ে বললো।
— বাইরে এসো বলছি!!
— শিয়র!! মা থাকো আসছি!!
.
এই কথা শুনে আমার ভয় বেড়ে গেলো।আল্লাহ নিশ্চয় বলে দিবে। ইশ কি করি কি করি এর মধ্যে মা ওয়াশরুমে গেলেই।রাইসা এসে পাশে বসে বলে।
— কত্ত হ্যান্ডছাম না ছেলে টা?? ইশ সো হ….
.
লাগাম ছাড়া কথা শুনে বললাম!!
— এই এই থাম! কার কথা বলছিস??
— আরে এখন যে বাইরে গেলো হিরা ভাইয়ার সাথে। কত্ত কিউট দেখছিস। আমি তো প্রেমে পড়ে গেছি। এই এক্টু নাম্বার টা নিয়ে দে না।তোর এই অভাগা single বান্ধবী কে এক্টু হেল্প কর আর কত বয় ফ্রেন্ড ছাড়া থাকবো বল তো??
.
আমার রাগ উঠে গেলো। মনে হচ্ছে রেগে বেহুস হয়ে যাই এক দেখায় প্রেম সিরিয়াসলি??
— এই তুই ছ্যাঁচড়ামি থামাবি নাকি কানের নিচে দিবো?? কান খুলে শুনে রাখ আমি না আমার শত্রুকেও এই ছেলের পাশে দেখতে পারবোনা সেই যায়গায় তুই আমার ফ্রেন্ড। হুহ।
— কেনো এই ছেলের সাথে কি প্রবলেম??
— কারণ….! আমি বলতে পারবোনা। তুই বুঝেনে ছেলেটা ভালোনা একদম না।
— তুই মিথ্যে বলছি বুঝেছি তুই ছেলেটার উপর ক্রাশ খেয়েছিস। তাই না। তুই নিজেই…
— থাম থাম আর একটা কথা না। জাস্ট শুনে রাখ পৃথিবীতে সব ছেলে মরে গেলেও এই ছেলের উপর আমি ক্রাশ তো পড়ে বাঁশ ও খাবো না।
— আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ বাঁচাইছে রাস্তা ক্লিয়ার। তুই যাই বল আমি তো প্রেম করমু এই হটির সাথে হোয়াটা পারসোনালিটি, এট্যটিউট উফফ জাস্ট কিলার বয়।
.
কিলার বয় কথাটা শুনে লনিকে মারার দৃশ্যটা স্পট ভেসে উঠলো চোখে। কি জঘন্য ভাবেই মেড়েছে। ভাবতেই বুক কেঁপে উঠলো।
— কি রে কই হারিয়ে গেলী।
— না ভাবছি!!
— কি সত্যি ছেলেটা কিলার বয়!!
— ইয়াহ আমার কিলার বয়।?
.
আমি রাইসার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকায় রইলাম কি মেয়েরে বাবা।এর মধ্যে মা চলে এলো। তারপর এক্টু রাইসার বকবকানি কমলো। আল্লাহ বাঁচাইছে। ভাইয়া আর ছেলেটাও চলে এলো। কিন্তু সব ঠিকঠাক ই মনে হলো তাই চিন্তা মক্ত হলাম। সকালে বাসায় চলে এলাম রাতেও ছেলেটা ওখানেই ছিলো। ভাইয়াকে অনেক হেল্প করেছে রাইসাও ছিলো আমার সাথে। মেয়েটা অনেক কথা বলতে চেষ্টা করেছে ঐ অসভ্য ছেলেটার সাথে। কিন্তু ছেলের যেই ভাব জেনো এই জীবনে কোনো মেয়ের সাথে সে কথা বলবে না ভাব দেখলে বাঁচি না।
.
.
বাসায় আসার পড় দুদিন পার হয়ে যায় সব নরমাল আমি ও সুস্থই আছি কিন্তু মন কেমন আছে জানা নেই। দু দিনে অনেক বার ফোন দিতে ইচ্ছে করছিলো শিহাব কে কিন্তু দেই নি থাক না সে ভালো শুধু তাকে ডিস্টার্ব করে কি লাভ সেই ভেবেই আর দেই নি। সন্ধ্যের এক্টু আগে বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। আশপাশ দেখতে লাগলাম। বাড়ীর এক্টু সামনেই চায়ের দোকানে চোখ আটকে গেলো। সেই ছেলেটা চার পাঁচ জন ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে হাসছে। হাসি দেখে রাইসার বলা প্রশংসা গুলা মনে পড়লো। সত্যি ছেলেটার কোয়ালিটি আছে বলতে হবে অসম্ভব হ্যান্ডছাম। হাসিটাও বাধিয়ে রাখার মতো। ওদের এক্টু পিছনে তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া। শিহাব তার বাইক এ বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে রক্তচক্ষু নিয়ে। হ্যাঁ এখনো আমি দূর থেকেই বুঝতে পারি শিহাব এর মুড কেমন। আমার চোখে পানি চলে এলো। নিশ্চয় কালকে ব্যাপার টা জানাইনি বলে রেগে আছে আমার উপর!! মম চাইছিলো। দৌড়ে জরিয়ে ধরে ইচ্ছে মতো কাঁদি। শিহাব আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বাইক নিয়ে এগিয়ে আমাদের গেইট এর সামনে এলো আমি দৌড়ে নিচে গেলাম। নিচে যেতেই আমাকে অবাক করে দিয়ে শিহাব একটা কাগজ আমার মুখে ছুঁড়ে ফেলে বাইক নিয়ে চলে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি খুব কষ্ট পাই। তাও চিঠিটা নিচ থেকে তুলে পিছন ঘুরলেও দেখি সেই ছেলে তাকিয়ে আছে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। আমি কোনো রকম পাশ কেটে ভেতরে গিয়ে লিফট এর অপেক্ষা করি চিঠিটা হাতে বারবার তাকাচ্ছি। লিফট খুলতেই আমি ভতরে দাঁড়ালাম। আমার পিছনে ছেলেটাও লিফট চলতে শুরু করলেই। ছেলেটা তার ব্লেক শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতে শুরু করে। আমি ভয়ে ঢোগ গিলি দু চার টা আমাকে পেটাতে শুরু করবে না তো এই অসভ্য ছেলে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে……
.
চলবে?
[ছোট করে দেই? তাহলে একদিন পরপর দিবো বড় করে!! রাজী??]

প্রতারক part 3

0

প্রতারক part 3
#Roja_islam

লনি এগিয়ে এসে যেই আমার হাত ধরতে যাবে। ওমনি সেই ছেলে টা লনির কলার চেপে ধরে পিছন থেকে তারপর পিছনে টেনে ফ্লোলে ছুঁড়ে ফেলে খুব জোরে লনি চিৎকার করে উঠে। ছেলেটা আস্তে আস্তে লনির কাছে যায়। ছেলেটার চেহারায় যেমন মুহূর্তে কোনো সিরিয়াল কিলার এর মতো ভয়ংকর আর হিংস্রতা ফুটে উঠেছে। এবার আমার লনির থেকে ছেলেটাকে ভয় করছে। ছেলেটা লনির কাছে গিয়ে এক পা ভেঙে হাটু গেড়ে বসে। বেশী কিছুনা কান টা কিভাবে ধরলো।আর লনির চিৎকার এ পুরো শহর যেমন কেঁপে উঠলো। তারপর দাঁড়িয়ে এলোপাথাড়ি লাথি দিতে শুধু করলো। প্রায় ১০ মিনিট লাথি দিয়েই যাচ্ছে এবার আর আমি চুপ থাকতে পারলাম না চিৎকার করতে লাগলাম।
— প্লিজ স্টপ। মরে যাবে ছেড়ে দিন ওকে!!
.
লনি অনেক আগেই জ্ঞান হারিয়েছে। আর ছেলেটা থার্ডক্লাস গুন্ডাদের মতো হিংস্র থেকে হিংস্র হয়ে মেরেই যাচ্ছে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা হাত পেছন থেকে বাধা পাও বাধা দাঁড়াতে ও পারছিনা তাই। বেড থেকে ইচ্ছে করে পড়ে গেলাম।
— আহহহহ!!
আমার চিৎকার কানে যেতেই সাথে সাথে সে আমার দিকে তাকালো রক্ত চোক্ষু নিয়ে ভয়ে আমি ব্যথা ভুলে গেলাম ঢোগ গিললাম বড়সড় কয়টা। ছেলেটা তেড়ে এলো আমার দিকে আমি হেছরিয়ে পিছন যাচ্ছি। সে খপ করে আমার দু বাহু চেপে ধরে গর্জিয়ে উঠলো।
— কষ্ট হচ্ছে মাড়ছি বলে লাভার কে?? বলো কষ্ট হচ্ছে থামাচ্ছো কেনো হোয়ায়?? ছে সামথিং ইডিয়ট। আমার জান যাচ্ছিলো আর…..!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


এটুকু বলেই থামলো ছেলেটা। আমি ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছি ভয় করছে আমার। রাগের চোটে ফসফস শব্দ বের হচ্ছে তার ভেতর থেকে। আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আঙুল এর সাহায্য সিল্কি চুল গুলা পিছনে ঠেলে ঠিক করে। কাকে জেনো ফোন দিলো। তারপর আমার পায়ের বাধন খুলে দিলো। কিন্তু হাত খুললো না। হাতে কুনুই টেনে বাইরে নিয়ে গেলো সাথে সাথে গার্ড টাইপ কিছু লোক রুমে ঢুকলো। হয় তো লনিকে হসপিটাল নিতে হবে। যা লাথি দিয়েছে জীবনের সব রাগ মনে হয় লনির উপর ঝেড়েছে। কিন্ত আমি ছেলেটাকে থার্ডক্লাস গুন্ডা ভেবেছিলাম। কিন্তু এতো ফার্স্ট ক্লাস গুন্ডা বের হলো। গার্ড ও আছে! ভাবতে অভাক!
.
টেনে হিচড়ে নিয়ে আমাকে গাড়ীতে ধাক্কা দিয়ে ফেললো। আমি ব্যথা পেলাম কিন্তু চুপ করে রইলাম। আমার কোনো ফিলিংস হচ্ছে না। শুধু ভাবছি কত বড় বিপদ থেকে বেঁচে ফিরেছি। মা নিশ্চয় টেনশন করছে আমার জন্য কিন্তু ফোন কোথায় আমার জানি না আর ছেলেটার কাছে কিছু চাইতে রুচিতে বাধলো। ছেলেটা গাড়ী তে বসে ড্রাইভ করছে আমার মনে হচ্ছে সে হ্যালিকপ্টর উড়াচ্ছে!! এভাবে কেউ ড্রাইভ করে। এক্টু পর দেখলাম এটা বাসার রাস্তা না!! ছেলেটা অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে আমাকে!!
আর চুপ থাকতে পাড়লাম না।
— কই নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে??
–……
— কথা বলছেন না কেনো??
–…….
— বুঝেছি লনির থেকে বাঁচিয়ে নিজেই কিডন্যাপ করছেন?? সব ছেলেই প্রতারক।
–……..
— স্টপ দ্যা কার!! আমি নামবো প্লিজ??
— আর একটা কথা বললে!! আমি তোমার ঠোঁট কামড়িয়ে খেয়ে ফেলবো!!
.
আমার নাক কান গরম হয়ে গেলো এই কথা শুনে। ছিঃ কি অসভ্য ছেলে না জানি কি করতে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে হাত টাও খুলছে না লনির থেকে এই গুন্ডা কে আমমার ভয় করছে। খুব ভয়! বিষণ ভয়! আমি ভয়ে গুটিসুটি মেরে চুপ করে রইলাম। না জানি করে বসে। এক্টু পড় একটা বাড়ীর সামনে গাড়ী থামলো।সেই আগের মতো টেনে নিয়ে গেলো বাড়ীর ভেতরে। আমার কান্না পাচ্ছে প্রচুর। ছেলেটা আমায় একট রুমের ওয়াশরুমে নিয়ে টেনে নিয়ে গেলো। শাওয়ার এর নিচে দাড় করিয়ে শাওয়ার অন করে দিলো!!
— কি করছেন আপনি? ভিজে যাচ্ছি তো?
— একদম চুপ!! নো সাউন্ড!!
.
আমাকে ভিজিয়ে তাতেও তার শান্তি হলো না হাতে সাবান লাগিয়ে সে আমমার দিকে এগিয়ে এলো।
আমি চিৎকার করে বললাম।
— না প্লিজ আপনি আমায় ট্যাচ করবেন না। প্লিজ দূরে থাকুন!!
.
আমার কোনো কথার পাত্তা না দিয়ে আমার কাছে আসে আর হাতে গলায় মুখে সাবান ঘষতে লাগলো। আমি এবার চিৎকার করে কাঁদছি। সে ইচ্ছা মতো সাবান ঘষছে জেনো চুইংগাম লেগে আছে শরীলে আমার তাই সে তুলছে ঘষে ঘষে। আমার কান্নাও তার কানে যাচ্ছেনা। আমার খুন করতে মন চাইছে এই ছেলেকে। এক্টু পড় আচমকা সে আমার মুখ চেপে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে শক্ত করে। আমি চোখ বড়বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। সে হিসহিসিয়ে বললো।
— শুধু কাঁদতেই পারো?? বাচ্চাকাচ্চা রাও আজ কাল প্রতিবাদ করতে পাড়ে। আর তুমি ছিঃ অনার্স পড়ুয়া মেয়ে। আমি তোমার সাথে এতোকিছু করছি আর তুমি কই একটা থাপ্পড় লাগাবে। তা তো দূর একটা ধমক দিতে বা আমায় থামাতে পারছো না শেম অন ইউ!!
.
আমি বোবা বনে গেলাম!! আর কিছু বলা বা করার কি আমার আছে?? আমি বুঝতে পাড়লাম না। এটাও বুঝতে পারলাম না। সে কৌশলে আমার চিৎকার থামালো নাকি আমার ভালোর জন্য বললো কথা গুলো। এবার ছেলেটা আমার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে আমার গালে হাত রাখলো। যেখানে লনি থাপ্পড় দিয়েছিলো। সেখানে হাত দিয়ে স্লাইড করছে। আমি কেঁপে উঠলে সে আবার বলে।
— হীর লাস্ট স্টেজে এসেও মানুষকে বাঁচার চেষ্টা করতে হয়। এতো সহজে হেরে গেলে চলে?? তুমি এক্টু ও ট্রায় করনি লনির থেকে বাঁচার। এতো দুর্বল কেনো তুমি হোয়ায়?? বি স্ট্রং অল দ্যা টাইম।
.
আর কিছু শোনার আগেই আমার সব অন্ধকার হয়ে এলো। আমি ছেলেটার বুকেই লুটিয়ে পড়লাম।শুধু নিজের নাম টাই কানে এলো।
— হীর………
.
.
— হিরা হিরা তুই এসেছিস!!
— হ্যাঁ মা!! কি হয়েছে এতো ট্যান্স কেনো লাগছে তোমায়?? হীর কই??
.
হীরের মা কেঁদেই যাচ্ছে।হিরা বাসায় খুজলো বোন কে। হীরকে ফোন দিলো বন্ধ। এবার হিরা রেগে বললো।
— মা বলবে তো কি হয়েছে?? হীর কই??
— হীর সকালে ভার্সিটি তে গেছে এখনো আসেনি কখনওই লেইট করে না এতো। আমার মেয়েটাকে এনেদে তুই।
— কি বলছ এসব?? আমাকে আগে জানাওনি কেনো??
.
হীর এর মা শুধু কাঁদছে। হিরা হীরের সব বন্ধ বান্ধবী দের ফোন দিচ্ছে হীরকে তারা ভার্সিটি তে দেখেছিলো আর কিছু জানে বলে রেখে দিচ্ছে। হিরা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো মার পাশে। মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। বন্ধুদের ফোন দিচ্ছে এর মধ্যে হঠাৎ ফোন এলো হিরার ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে রিসিভ করে কানে দিতেই।
— হীর সিটি হসপিটাল আছে কাম হ্যায়ার!!
— হু আর ইউ?? হী….
— আমি কে সেটা ম্যাটার না। হসপিটাল চলে এসো!!তোমাদের প্রয়োজন হীরের।
.
হিরা আর কথা বাড়ালো না মা কে নিয়ে রৌনা হলো হসপিটাল এর উদ্দেশ্যে। হিরার প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে কি হলো হীর এর।তার চোখ ভিজে যাচ্ছে বার বার। হীরের মাও কেঁদে কাহিল।
.
জ্ঞান ফিরতেই আমি অবাক। আমার চোখ কটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম আল্লাহ!!
.
.
চলবে?
[ট্রাস্ট মি ধৈর্য নিয়ে এক্টু পরুন। সব ক্লিয়ার করা হবে নিতু, শিহাবের শাস্তি ও হবে। ছেলেটাকে তার পরিচয় ও। আপনাদের তাড়াহুড়োর জন্য যদি সব কিছু এখনি লিখে ফেলি না সাজিয়ে ভালো হবে কি? আর এমনিতেও আমার গল্প বেশী বড় হয় না অনেকেই পড়েছেন আমার গল্প জানেন। তাই বলছি ট্রাস্ট মি নিরাশ করবো না গল্পের নামের সাথে মিল রেখে লিখছি লিখতে দিন।]

প্রতারক part 2

0

প্রতারক part 2
#Roja_islam

কথা শেষ হতেই ছেলেটা আমার কাছে এসে দু হাতে ঝাপটে জরিয়ে ধরলো। পেটে কোমরে হাত বুলাতে লাগলো। ঘটনা আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব হয়ে গেলেও পেটে ছেলেটার হাতের স্পর্শ পেটে পেয়ে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
— ছাড়ুন কি করছেন!! ছাড়ুন বলছি অসভ্য ছেলে কোথাকার!!!
.
দু হাতে তাকে ছাড়ানোর চেষ্টায় আমি বারবার ব্যর্থ।ক্রমশ নড়াচড়া করে যাচ্ছি তাতেও লাভ হচ্ছেনা।আমি এবার শব্দ করে কেঁদে দেই। আর সাথে সাথেই ছেলেটা আমাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। আমি ছাড়া পেয়ে ১ সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে দৌড়ে নিচে এসে পড়ি।রুমে ঢুকে কাঁদতে থাকি। মা আমায় রুমে এভাবে ঢুকতে দেখে দৌড়ে আসে লাইফে ফার্স্ট টাইম আমি মাকে ধরে কেঁদে দেই।
— কি হয়েছে হীর বল আমাকে। কাঁদছিস কেনো কই গিয়েছিলি তুই??
— মা আমার সাথেই কেনো এমন হয়??
— কি হয়েছে বলবি তো!!
— এই বিল্ডিং এ নতুন কেউ এসেছে মা!
— কেনো কেউই তো আসেনি!! কেনো রে মা!
— এমনি!! তুমি যাও।
.
মাকে রুম থেকে জোর করেই বেড় করে দিলাম। সারা সন্ধ্যা কেঁদেই কাটিয়ে দিলাম। ছেলেটার আচরণ এ কিছু বলতে না পারলেও মেনে নিতে পারছিলাম না। আবারো দু দিন বাসা থেকে রুম থেকে বেরুলাম না। কিন্তু সামনে ফাইনাল এক্সাম তাই ভার্সিটি যেতেই হবে।
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আমরা ৪ তালায় থাকি।বাড়ীটায় লিফট সিরি দুটাই আছে। আমি লিফটে উঠে পড়লাম ৩০ সেকেন্ড পরে ৩ তালায় লিফট থামলো। আর সাথে সাথে সেই ছেলেটা লিফটে ঢুকে পড়লো। চরম অসস্তি আর ঘৃণা আমাকে ঘিরে ধরলো। খুব রাগ লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো কটা কড়া কথা শুনিয়ে দেই কিন্তু আমি!! আমার ধারা এসব সম্ভব না। আড়চোখ এ একনজর ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখি ছেলেটা আমার দিকে সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কেমণ যেনো সেই চাহনি আমার ভয় ভয় লাগে। রাগ হলো কিছু বললাম না এসব থার্ডক্লাস ছেলেদের কিছু বলেও লাভ নেই। এদের যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া ভালো!!! লিফট নিচ ফ্লোরে থামলে আমি যেই বেরুতে নিবো ওমনি ছেলেটা আমার হাত ছ্যাঁচকা টেনে তার বুকে উপর ফেললো। তারপর দু হাত আমার গালে রেখে শব্দ করে কপালে চুমু খেলো।তারপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো জেনো সে কিছুই করে নি!! বিষণ রাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম লিফট থেকে।কে এই ছেলে জানতেই হবে বিচার দিতে হবে ভাইয়ার কাছে। এভাবে তো আর চলে না। কে জানে ফাজিল ছেলে কখন কি ক্ষতি করে বসে।
.
ভার্সিটি চলে এলাম কোনো মতে। ৪ তালায় আমাদের ক্লাস আমিও ধীরেসুস্থে হেটে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার মুখচোখ লাল হয়ে গেলো।দ্রুত শ্বাস ফেলছি হাত পা চলছে না। শিহাব কিছুদূর সামনে দাঁড়িয়ে চোখে পানি চলে আসছিলো। কোনোমতে আটকিয়ে উপড়ে আসলাম। ক্লাসে আর মন দিতে পারছিলাম না। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিলো। ক্লাস শেষে সবাই বেরিয়ে গেলেও আমি বসে রইলাম চিন্তা করলাম এক্টু রিলেক্স হয়ে তারপর বের হবো। দু হাতে বেঞ্চে রেখে মুখ ঢেকে বসে ছিলাম। কাউর কথায় সামনে তাকালাম।
.
— অনেক তো হলো হীর এবার একটা চ্যান্স দেওয়া যায় না আমায়??
— তুমি কেনো আমার পিছন পড়ে আছো লনি?? প্লিজ স্টে আওয়ে ফ্রোম মি!
— নেভার হীর নেভার!! তুমি টাইম চেয়েছিলে আমি দিয়েছি!! বাট এখন এসব বলে আমায় রাগাচ্ছো তুমি এর ফল তুমি পাবে!!
— তুমি যা খুশী করো আই ডোন্ট ক্যায়ার লনি। জাস্ট আমার পিছু ছাড়ো। আমি কোনো দিন তোমার সাথে কোনো রিলেশন এ যাবো না কেনো বুঝতে চাও না তুমি??
— আর একবার জিজ্ঞেস করছি!! ক্যান ইউ এক্সসেপ্ট মি??
— মরে গেলেও না!!
— ওকে ফাইন এবার তুই আমার আসোল রুপ দেখবি। তোর মতো মেয়েকে কি করে বস করতে হয় আমি তা ভালো করেই জানি।খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে!!
.
.
লনি চলে যায়।আমি ঐ ছেলের কাজে আর লনির কথায় রেগে এতো গুলী কথা বললেও আমার ভয়ে হাত পা কাঁপছে। প্রচণ্ড ভয় করছে। শিহাব কে খুব মনে পড়ছে আজ শিহাব আমার সাথে এমন না করলে লনি এসব করতে পারতো না কখনোই।শিহাব সব সময় আমাকে হেল্প করেছে লনির পাগলামো থেকে বাচতে কিন্তু আজ একা করে অন্য কাউকে নিয়ে সুখেই আছে।আচ্ছা প্রতারক রা এতো সুখি হয় কি করে?? আমি কোনো রকম চলে আশি। আসার সময় ও আমি শিহাব কে দেখতে পাই ছুটে জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু শিহাব আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি!! কতো নিষ্ঠুর শিহাব ভাবতেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল।
.
আজ এক্টু বেশী অসহায় লাগছে নিজেকে। ফোন হাতে নিয়ে কল দিলাম শিহাব কে তুললো না। সারারাত ই কলের উপর কল দিলাম তুললো না!!
.
.
— নিতু?
— বলো!!
— হীর ফোন দিচ্ছে আমাকে ধরবো??
— একদম না।
যত্তসব ছ্যাঁকা খেয়ে হয়নি এখন বকা খেতে মন চাইছে এই ফালতু মেয়ের।
— দেখোনা ডিস্টার্ব করছে!!
— বল্ক করে দাও!!
— ওকে!!
.
.
কল দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি আমি একসময়। সকালে ভার্সিটি যাওয়ার সময় ঐ ছেলেটা দেখি বাইকে বসে আমার দিকে সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেনো এই ছেলে তাকিয়ে থাকে এভাবে মাথায় আসেনা।চরম বিরক্তি হয়ে ভার্সিটি চলে এলাম ক্লাস শেষ করে করে বাসায় ফিরবো কোনো রিকশা পাচ্ছিনা।তাই হাটছিলাম একা একা হঠাৎ কই থেকে এক মাইক্রো থামলো একদম আমার গা ঘেসে আর আমি পাশ ফিরে তাকানোর আগেই। কেউ আমার হাত টেনে তুলে নিলো গাড়ীতে। আমি চিৎকার করতে যাবো। মুখে কি স্প্রে করলো আর আমি সিটে লুটিয়ে পরলাম। আর কিছু মনে নেই সব অন্ধকার হয়ে গেলো।
.
জ্ঞান ফিরতেই দেখলাম হাত পা বাধা একটা বেডে পড়ে আছি।বুঝতে বাকী নেই কেউ ইচ্ছে করে তুলে এনেছে।কিন্তু এই জঘন্য কাজ কে করবে?? ভয়ে আমি চিৎকার করতে লাগলাম।
— কেউ আছেন এখানে?? প্লিজ হেল্প করুণ….!
.
আমি আর কিছু বললার আগেই কেউ ঝড়ের বেগে এসে আমার গালে ঠাশ করে পাঁচ আঙুল এর ছাপ বসিয়ে দিলো। এতো জোরেই ছিলো থাপ্পড় যে আমার ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে গেলো। কানে ঝিনঝিন করতে লাগলো। আমি অনেক কষ্টে মাথা তুলে দেখি লনি!! ওকে দেখে আমি কেঁদে দিলাম।
— ছিঃ লনি এই জঘন্য কাজ টা তাহলে তোমার?? আমি ভাবতে পারছি নাহহ!!
— হ্যাঁ আমি বলেছিলাম না। এবার আমার খারাপ রুপ টা দেখতে পাবি তুই??
— প্লিজ লনি আমাকে দেতে দাও। ভালো হবে না বলছি এর ফল!!
— কি করবি তুই তোর আশিক ও এবার তোকে বাঁচাতে আসবে না। আর এখানে তোকে বাঁচানোর মতো আপাদত কেউ আসবে না।যতক্ষণে আসবে তোতক্ষনে আমি যা চাই তা ঠিক আদায় করে করে নিবো তোর থেকে।
.
লনির এসব কথা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা।বুঝতে পারছি আরো জঘন্য কাজ করতে চাইছে লনি আমার সাথে। কি করে বাঁচবো লনির হাত থেকে মাথায় আসছেনা। তাই মিনুতির স্বরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
— প্লিজ লনি ছেড়ে দাও। আম সরি!!
— নো নো….নো সরি! আজ কেনো সরি বলছিস?? কম ঘুরিনি আমি তোর পেছনে। কিন্তু আজ আর কোনো ঘুরাঘুরি নেই তোর রুপের অহংকার আজ আমি ভেঙে গুড়িয়ে দিবো।
— প্লিজ….
.
আর কিছু বললার আগেই লনি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।ঠিক তখনি ঠাশ করে দরজা খুলার শব্দ হলো। আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদছি। লনি আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। দেখার জন্য কে দরজা খুলেছে। আমিও সুযোগ পেয়ে উঠে বসে হাত পা গুটিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই। আমি অবাক সেই ছাদের ছেলেটা দরজায় এক হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আপন মনে সিগেরেট খাচ্ছে মাথা নুইয়ে।আমি এক্টু ভরসা পেলাম ছেলেটাকে দেখে নিশ্চয় আমাকে বাঁচাতে এসেছে। লনি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো ছেলাটাকে দেখে। তারপর বললো।
— তুই কে এখানে কি করে এলি? যা এখান থেকে ইঞ্জয় টাইম নষ্ট করবিনা।?
.
এবার ছেলে মাথা তুলে যা বললো। তা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আর জীবনে কাউকে ভরসাও করবোনা বলে মুহূর্তেই ঠিক করে নিলাম। কারণ ছেলে টা আমার ভরসায় পানি ঢেলে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বাঁকা হেসে বললো।
— আরে তারিয়ে দিচ্ছো কেনো?? এসেছি তোমার সাথে ইঞ্জয় করতে দু জন মিলে ইঞ্জয় করি?? কি বলো!!
.
ছেলেটা কথার জবাবে লনি বিস্রি একটা হাসি দিলো তারপর দুজনি আমার দিকে এগিয়ে এলো আমি চিৎকার করে কাঁদছি।
.
.
চলবে?
[কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবা সবাই।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন এডিট করিনা আমি গল্প তাই ভুল এক্টু বেশীই হয়।]

প্রতারক part 1

0

পাঁচ বছর রিলেশন আমার শিহাব এর সাথে।আর আজ আমি সেই ভালোবাসার মানুষ টার বিয়ে নিজ চোখে দেখতে যাচ্ছি। কিভাবে আমাকে ঠকিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে তা দেখতে চাই। বুকে পাথর রেখে ড্রেসিং এর সামনে গেলাম। আমি ওতো সাজি না। কিন্তু আজ ভাবছি ডাবোল মেকআপ করবো।চোখে ফোলা মুখে দুঃখনি ভাব লুকাতে হবে। কিন্তু ডাবল মেকআপ কেমনে করে তা তো আমি জানি না!! কষ্ট পেলাম। কিন্তু হাল ছাড়লাম না। নিজের বুদ্ধি দিয়ে নিজের মত সাজ কমপ্লিট করলাম। তারপর একটা লাল শাড়ী গায়ে জরালাম।শিহাবের পছন্দের রঙ লাল ছিলো।তাই লাল ই পড়লাম তার বিয়েতে। আয়নায় নিজেকে দেখছি না ডাবল মেকআপ এ খারাপ লাগছে না। মাকে মিথ্যে বললাম বান্ধবীর বিয়েতে যাচ্ছি। চিৎকার করে যদিও বলতে ইচ্ছে করলো। আম্মু যেই ছেলে তোমার মেয়ের মন ভেঙেছে তার বিয়েতে যাচ্ছি দোয়া করিও জেনো তার বিয়ে নিজ চোখে দেখতে পারি আর ঠকবাজ টাকে নতুন জীবনের শুভেচ্ছা দিতে পারি।কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি চোখের পানি লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
.
একটা রিকশা নিয়ে চলে গেলাম শিহাব দের কমিউনিটি সেন্টারে। যেখানে শিহাবের বিয়ে হচ্ছে। লোক জন ভিড় ঠেলে স্টেজের কাছটায় গেলাম। সবাই যে যার মতো ইনজয় করছে । শিহাব কে দেখতে পেলাম না কোথাও। না তার বৌ তাই আমি হাটাহাটি করছিলাম। আর কাল সকালের কথা ভাবছি।
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


কাল সকালেও শিহাব ভালো ছিলো আমার সাথে সব সময় এর মতো নরমাল। সকালে ঘুম থেকে উঠেও ওর কল পাই।ঘুম ঘুম কণ্ঠে হ্যালো বলতেই!
— গুডমর্নিং জান।
— গুডমর্নিং।
— কয়টা বাজে?
— উঠছি তো!
— ফার্স্ট ব্রেকফাস্ট করে কল দাও কথা বলবো।
— ওকে।
— কয় মিনিট লাগবে?
— শিহাব প্লিজ সব সময় তোমার দেওয়া টাইমে করতে পারিনা কাজ কমপ্লিট। তাই আজ ৩০ মিনিটস লাগবে।
— নো ওয়ে হীর!! ১০ মিনিটস এ কল দিবা আমি এতো ক্ষণ ওয়েট করতে পাড়বো না সরি।
— প্লিজ শিহাব …..
— বায়!! ১০ মিনিটস পড় কথা হচ্ছে!!
.
যাহহ কেটে দিলো। সব সময় আমাকে তার টাইম মেনে কাজ করতে হবে??? যেমন আমি ওর অফিসে জব করি হুহ। যাই হোক ১০ মিনিটে কল তো দিতেই হবে তা না হলে আবার প্রবলেম।বলবে আজ ঠিক টাইমে ফোন দিতে পারিসনি। কাল সকালে খেয়ে কল দিবি।তার আগে না তুইতুক্কারি শুরু করবে।তখন আরো প্রবলেম উফফ পারিনা আর।
.
সকাল পার হলো ভালো মতোই। বিকেলবেলা কল দিয়ে বললো। ক্যাফে আসতে। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো গেলাম দেখা করতে। যদিও সব সময় লেইট লতিফ শিহাব কিন্তু। আজ তাড়াতাড়ি চলে এসেছে ক্যাফে পৌঁছে দেখি সে বসে আছে। খুশী হয়ে গেলাম। দৌড়ে গিয়ে তার সামনে বসলাম।
— আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে শিহাইব্বা??
–…….
— কি হলো?? চুপ করে আছো কেনো???
— উঁহু!!
— কিছু কি হয়েছে??
.
আমার এতো প্রশ্নে শিহাব ঠাশ করে বলে উঠলো।
— হীর!! আমি বিয়ে কড়ছি!!
— মানে??
— মানে কাল আমার বিয়ে!!
.
আমি কেনো জেনো কিছুই বলতে পাড়লাম না। ৫ বছরে শিহাবের সাথে আমার কুটিবার ঝগড়া হয়েছে কিন্তু এরকম কথা সে দুষ্টামি করেও বলেনি। আমার বুক টা ধুকধুক করছে। সারা শরীলে রক্ত টগবগ করছে ভয় টেনশন আর….। শিহার সব সময় খারাপ কাজ করুক আর ভালো। কিন্তু আমাকে জানিয়ে করবে। আজও কি তাই সত্যি শিহাব বিয়ে করবে??শিহাব মাথা নিচু করে আছে। আমিও ঠাস করে বললাম।
— দাওয়াত দিবে না!!
— হীর!!
.
এবার আমি কেঁদেই দিলাম।
— প্লিজ বলো মজা করছ। আর এই রকম বিদঘুটে মজার জন্য আমি তোমাকে কঠিন শাস্তি দিবো শিহাব। প্রমিস!!
.
আমার চোখ দিয়ে এবার বন্যা বইছে। শিহাব আমার কান্না দেখে চোখ মুখ শক্ত করে বললো।
— আমি মিথ্যে বলছিনা হীর সব সত্যি!! কাল আমার বিয়ে। দাওয়াত চাই তো কাল আমাদের কমিউনিটি সেন্টার এ চলে এসো দাওয়াত রইলো।
.
বলেই উঠে হন হন করে চলে গেলো শিহাব। আমি ওর এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারিনি। পুরো ক্যাফে ভর্তি মানুষের সামনে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। এই ক্যাফে তেই আমি শিহাব রোজ আসতাম দেখা করতে তাই পরিচিত হয়ে গেছে অনেকটা। ক্যাফেরি এক ভাইয়া আমার অবস্থা দেখে এগিয়ে আসলো। অনেক বুঝালো। আমি কান্না থামাতেই পারছিলাম না। কান্না করতে করতেই দৌড়ে বেরিয়ে যাই ক্যাফে থেকে। সারা রাস্তার মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমার সে দিকে বিন্দু পরিমাণ খেয়াল নেই আমি মরা কান্না করছি। মরেছেই তো আমার ভালোবাসা মরে গেছে আজ। সব শেষ করে দিয়েছে শিহাব। আমি এমন অবস্থায় কি করবো মাথায় না ধরায়। আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর বাড়ী চলে যাই দরজা খুলতেই। নিতু কে জরিয়ে খুব কাদি কিন্তু নিতু অন্য সময় এর মতো আমাকে কেনো জেনো শান্তনা দিচ্ছে না ওর চোখে চরম বিরক্তির ছাপ। নিতুর মাও কেমন কপাল কুঁচকে রেখেছে জেনো আমায় সহ্য হচ্ছে না। আমি এরকম টা আশা করিনি। তাই বেরিয়ে আশি। এতো অসহ্য লাগছিলো বলে বুঝাতে পারবোনা। বুকে ব্যথা করছিলো। বাসায় এসে চুপিচুপি নিজের রুমে ঢুকে কাঁদতে কাঁদতে থাকি চিৎকার করে। আর রাত গিয়ে দিন গিয়ে। আমার ভালোবাসার বিয়ের রাত চলে আশে।
.
এখন ব্যস বিয়েটাই দেখার পালা। যদিও জানাই আছে সিনেমার মতো বিয়ে তো আর আটকাবে না কেউ। ছেলেরা পারেও কাল ব্রেক আপ আজ বিয়ে। এক্টু পর দেখতে পেলাম শিহাব আমার দিকেই আসছে।আমি নিরিবিলি এক জায়গায় বসে। আমি আমার মতো কোল্ড ড্রিঙ্ক খাচ্ছি। ওকে বুঝাতে চাই না আমি দুঃখীনি। শিহাব এসেই বললো।
— কেনো এলে এখানে সারা রাত ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করে হয়নি।
— ওহ দেখেছো তাহলে?? আচ্ছা আচ্ছা। সরি আর দিবো না। আর এখানে এসেছি বিরিয়ানি খেতে।তোমার বিয়ের বিরিয়ানি মিস করতে চাই না।তুমি তো জানো বিরিয়ানি কত পছন্দ আমার।
— হীর যাও এখান থেকে।
— বৌ না দেখে যাচ্ছি না।দেখতে হবে না কার জন্য তুমি আমায় ঠকালে।
— হী……..!
.
শিহাব কিছু বলবে আমাকে এর মধ্যে পাশ থেকে একজন মেয়ে কণ্ঠ শুনতে পাই।চিনা চিনা লাগছে কণ্ঠ টা।
— বৌ দেখতে চাস। এই দেখ বৌ তোর শিহাবের বৌ আমি!!
.
আমি পাশ ফিরে মেয়েটাকে দেখে। বিস্মিত আকস্মিক ভাবে হতভম্ব। আমার পায়ের নিচে মাটি অবশিষ্ট নেই। আমি পরে যেতে নেই মাথা ঘুরে। শিহাব ধরতে এলে বাধা দেই। নিজের চোখের পানি মুছে নিজেকে যথাসম্ভব ঠিকঠাক করে বলি।
— তোদের দু জনি আমার ভালোবাসার মানুষ ছিলি। এভাবে প্রতারণা না করলেও পারতিস।
আর নিতু তুই!! তুই একটা মেয়ে হয়ে আর একটা মেয়ের সাথে এমন না করলেও পারতি।চলি ভালো থাকিস। আর শিহাব অসংখ্য ধন্যবাদ আমার মন এভাবে ভাঙার জন্য।
.
আমি চলে আশি ওদের সামনে থেকে। শিহাবের চোখে অপরাধ বোধ আর চোখে পানি চিকচিক করছিলো। কিন্তু নিতু এক পৈশাচিক হাসি দিচ্ছিলো। তবে আমি বুঝে গিয়েছি শিহাব ও আমায় ভালোবাসে না। নিতুর মতোই দুদ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি। ভালোবাসলে এরকম কোনো দিন আমার সাথে করতে পারতো না শিহাব।
.
যদিও অনেক স্ট্রং হয়ে গিয়েছিলাম বিয়ে দেখবো প্রতারক টার কিন্তু।নিতুকে দেখে আমি প্রথমের থেকে বেশী ভেঙে পরলাম। হেটে চলার শক্তি টুকু নেই। আমার ডাবল মেকআপ আমার চোখের বন্যায় ধুয়ে মুছে গেছে সব।অনেকেই তাকিয়েছি সব অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে যাই কোনোরকম। দু তিন বার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করি। এই যেমন হাত কাটা স্লিপিং পিল এক সাথে অনেক গুলা খাওয়া কিন্তু মার জন্য বেঁচে যাই।ফ্যামিলি তে ভাইয়া মা ছাড়া কেউ নেই ভাইয়া মা কান্নাকাটি করে অনেক জিজ্ঞেস করে কেনো আমি এসব করছি তখনো বলতে পারিনি কিছুই। কেটে যায় দুটি মাস। ডিপ্রেশন কাটিয়ে দেই দুটিমাস আজ এতো গুলা দিন পর ভার্সিটি যাবো। আসলে আগেই যেতাম কিন্তু শিহার আর নিতুর মুখোমুখি হতে চাইনি। জীবনে সব কিছু সহ্য করা যায় হয়তো। কিন্তু প্রতারণা শিকার হলে সেটা অন্যকথা মিনে নিতে কষ্ট হয়। আর সেটা যদি প্রিয়জন রা দেয় তাহলে তো কথাই নেই। এই দু মাসে শিহাব কে যতো ভুলতে চেয়েছি ততোই মনে পরেছে। আর সব থেকে বেশী মনে পড়েছে বাবার কথা। শিহাবের সাথে রিলেশন চলা কালিনি। বাবা মারা যায়। ঐসময় ও আমি ডিপ্রেশন এ ভুগি। শিহাবি আমায় হেল্প করে ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে!! কিন্তু আজ সেই আমার ডিপ্রেশন এর কারণ। আমি বাবাকেই বেশী ভালো বাসি। বাবা একবার বললে আমার কলিজাও হাজির। আজ যদি বাবা বলতো। মা সব ভুলে যা। আমি হয়তো ভুলে যেতাম কিন্তু এখন তো কেউ জানেইনা আমি কেনো ডিপ্রেশন এ আছি।বাবাকে মিস করি বাবা আমার মন বুঝতো যাই হোক আমায় সাপোর্ট করতো সব সময়।
.
ভার্সিটি গিয়ে সব ভুলে মন দিয়ে ক্লাস করলাম। চিনা জানা ফ্রেন্ড গুলা তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে আমি জানি তার কারণ। চুপচাপ ক্লাস করে বেরিয়ে আসছিলাম। হঠাৎ কেউ সামনে এসে দাঁড়ালো মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি। লনি!!
— কি দিলোতো ছ্যাঁকা। বলেছিলাম না এমনি হবে???
— ওরা যা করেছে ঠিক করেছে লনি। প্লিজ সামনে থেকে সরে যাও।
— এক্সসেপ্ট মি হীর!!
— নো ওয়ে!!
.
পিছন থেকে দিনা আমাদের ক্লাসমেট এসে আমাকে ধরে বললো।
— প্লিজ লনি। কেনো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিচ্ছিস?? ও অবস্থা দেখছিস না?? বুঝতে পারছিস না??
— ওকে বল দিনা আমাকে একটা চান্স দিতে।
— এসব পরে লনি ওকে টাইম দে। যেতে দে এখন।
— ফাইন!! গেলাম তবে আমার আসবো হীর। আর আমার উত্তর হ্যাঁ চাই ই চাই।
.
বলেই লনি চলে যায় আমি দিনাকে ধরে কেঁদে দেই। আমাকে ফাঁকা ক্লাস এ নিয়ে বসায় দিনা। পানি দিলে আমি ঢকঢক করে খেয়ে নেই গলা শুকিয়ে কাঠ মনে হচ্ছিলো।
— জানিস হীর। তোর সাথে চোখ মিলাতে আমাদেরই লজ্জা লাগছে কি করে করলো এমন নিতু, শিহাব।
.
ওর কথা শুনে আমি এবার শব্দ করে কেঁদে দিলাম। দিনা কিছু বলতে পারছিলো না। কিছুক্ষণ পড় বললাম।
— আমি বাসায় যাবো দিনা আসি।
— শোন কিছু বললার ভাষা নেই তবে এটাই বলবো ভুলে যা সব। নতুন করে শুরু কর হীর। আমি জানি তুই পারবি।
— আমি পারবোনা দিনা আমি পারবোনা। এতো শক্তি আমার নেই আর সেটা শিহাব ভেঙে ফেলেফে।
.
দৌড়ে বেরিয়ে আসি ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে আবার আগের মতো চুপচাপ হয়ে যাই রুম থেকে কেউ বের করতে পারেনা । মা আমার উপর চরম বিরক্ত। সেটা সব সময়ি। মার আমার চলা ফেরা খাওয়াদাওয়ার স্টাইল কোনোকিছুই পছন্দ না।মা আর আমি শত্রুদের মতো ঝগড়া করি। কিন্তু এই দু তিন মাসে মা এটা সেটা বললেও আমি চুপচাপ ছিলাম ঝগড়া করার মন মানুষিকতা নেই।মা ও আমার এই চুপ চাপ মেনে নিতে পারেনা। মা শুধু কাদে মার অবস্থা দেখে নিজেকে এক্টু নরমাল করেছি এখন আমি অনেক টা ভালো দেখতে গেলে কিন্তু মনের কষ্ট মনি জানে।
.
ঘুম থেকে উঠে দেখি কেমন অন্ধকার লাগছে রুম তাই উঠে বারান্দায় গেলাম। দেখি আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে আছে।চারদিক শিরশির ঠান্ডা বাতাস এদিকওদিক বইছে। অনেক দিন পর বিকেল টা মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম ছাদে গেলে কেমন হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। বাড়ী টা মোট ছয় তালা ভাড়া থাকি আমরা এ বাড়ীতে অনেক বছর। বেশী আসিনা ছাদে আশা হয়ে উঠেনা ব্যস্ততায়। কিন্তু আজ ছাদে এসে মনে হলো কি মিসটাই না করেছি। ছাদে দু হাত মেলে ঘুড়ছি। মাথা এক্টু ঘুরে উঠায় বাচ্চামোটা বাদ দিলাম। আশপাশ টা দেখতে লাগলাম। ছাদটা অন্যসব ছাদের মতোই স্পেশাল কিছুনেই তবে উপরের খোলা আশার আর নিচে আমি উফফ। সামনেই একটা বিল্ডিং এই ছাদ থেকে সব স্পট দেখা যায়। আর আশেপাশে ছোটবড় বিল্ডিং এর অভাব নেই শুধু সবুজ গাছপালা ছাড়া। এসব দেখতে দেখতে হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি পড়তে লাগলো। ঝুম বৃষ্টি গা ছুঁয়ে দিতে লাগলো। আমি যেমন নেচে উঠলাম সেই খুশীতে ভাবী নি ভিজবো। কিন্তু খুব শান্তি লাগছে ভিজে যেমন দুঃখ গুলা বৃষ্টির পানির সাথে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। হাত মেলে ভিজতে লাগলাম। প্রায় অনেক্ষন ভিজার পড়। কাউর কণ্ঠ এলো কানে।
.
— ঢং করে বৃষ্টিতে ভিজে কাকে শরীল দেখাচ্ছো??
.
কথাটা কানে যাওয়া মাত্র আমার লোমলোম দাঁড়িয়ে গেলো আৎকে উঠলাম আমি।এভাবে অপমান কেউ করেনি আমায়। আমি তৎখনাৎ পিছন ফিরে দেখি। কালো টিশার্ট, ট্রাউজার পোড়া একটা ফর্সা ছেলে ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে। যার চুল গুলো লেপ্টে আছে কপালে বৃষ্টির পানিতে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার দৃষ্টি ফোলো করে নিজের দিকে তাকাতেই আৎকে উঠলাম। আমার পেট বরাবর তাকিয়ে আছে ছেলেটা একদৃষ্টে। বৃষ্টিতে ভিজার কারনে পিংক গেঞ্জি ভেদ করে শরীল দৃশ্যমান আমার। চরম লজ্জায় আর অসস্তিতে পড়ে গেলাম । আমি দৌড়ে চলে আসবো সেই ব্যবস্থাও নেই দরজার দাঁড়িয়ে ছেলেটা। আমি নিজেকে ঢেকে ঢুকে নিলাম যত টুকু পাড়ি। তাতে কি অসস্তি কাটে??তাও দরজার দিকে পা বারাতেই দেখি ছেলেটা নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বালালো। যা দেখে আমি আর এগুনোর সাহস পাচ্ছিনা।
.
ভাবতে লাগলাম কে বলেছিলো ছাদে আসতে। এসেছিলাম এসেছিলাম এই সিগারেট খোর কই থেকে আসলো?? বৃষ্টির মধ্যেও ছেলেটা বেশ আয়েশ করে সিগারেট ফুঁকছে। উফফ অসহ্য গন্ধ কিছুক্ষণের মধ্যে ছাদটা ভরে গেলো।এদিকে এবার বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে শীত লাগছে তাই না পেরে বললাম।।
— নিচে যাবো সরুন।
— টেক্স লাগবে।
— কিসের টেক্স??
— আমার ছাদে এসেছো আবার নিচে যাবে তাই!!
.
রাগ হলো ফাউল কথা শুনে তাই রেগে বললাম।
— আশ্চর্য!! ছাদকি আপনার একার?
— এই বাড়ী এই ছাদ এই ছাদে থাকা সব কিছুই আমার!!
.
এমন কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। আমি এবার এই পাগলের ভয়ে বললাম।
— ঠিক আছে আপনার ছাদে আর আসবো না।আর মেয়েদের সম্মান দিয়ে কথা বলবেন এখন শীত লাগছে যেতে দিন।
.
কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ছেলেটা…
.
প্রতারক
#Roja_islam
#part 1
[বি:দ্র – আপনাদের ভালো না লাগলে লিখবো না।]

অস্পষ্টতা – পর্ব : ১

0

অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গার মতো বিরক্তিকর ব্যাপার এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। ছোটবেলায় আপা আমাকে ঘুম থেকে টেনে তুলতো। এরপর আপার বিয়ে হয়ে গেল, অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। আমার জীবনে আসলো সে, আমাকে ঘুম থেকে টেনে তোলার দায়িত্বটাও হলো তার। ইশ, জীবনটা যদি আগের মতো হতো! এখনো যদি তার ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠতে পারতাম! যাইহোক, এখন তার কথা ভেবে কাজ নেই। বিছানা থেকে নেমে পরি।

ওয়াশরুমে গিয়ে দেখি নতুন একটা টুথব্রাশ, সম্ভবত বিদেশি। মা আমার ভীষন স্বাস্থ্য সচেতন। প্রতি মাসে নিয়ম করে সবার জন্যে নতুন টুথব্রাশ বের করেন।

বেশ অনেকক্ষণ ধরেই ব্রাশ করলাম, ব্যাপারটার মধ্যে অদ্ভুত এক শান্তি লুকোনো। এরকম ছোট ছোট শান্তি উপভোগ করতে ভালোই লাগে।

আজ পরেছি গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ি। টিপ দেওয়া যেতে পারে। নাহ্! আমি কি  ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট না-কি , যে টিপ দিয়ে ঘুরে বেড়াবো!

তৈরি হয়ে ঘর থেকে বাইরে এসে দেখি মা টেবিলে নাস্তা দিচ্ছে।

আমি শান্ত গলায় বললাম, “গুড মর্নিং মা!”
মা আমাকে দেখে কিছুটা চমকে উঠে বলল, “ও উঠেছিস? গুড মর্নিং!”
“মৌসুমী কোথায়?”
“একটু ছাদে পাঠিয়েছে। ফুলের চারাগুলো মরে যাচ্ছে। তাই বললাম, যা ছাদে গিয়ে টবগুলোতে পানি দিয়ে আয়!”
“ভালো করেছো। জবা উঠেছে?”
“তোর জবা কি আর বেলা দুইটা তিনটার আগে ঘুম থেকে উঠবে?”
“ঘুমাক, উঠেই বা করবে কি? আচ্ছা মা তোমাকে যেটা বলবো বলবো ভাবছি, মৌসুমী ঠিকমতো কাজ করে তো? একা সামলাতে পারে সবকিছু? না পারলে বলো, আমি আরেকটা লোক ঠিক করি।”
“কোনো দরকার নেই। মৌসুমী একাই সবদিক সামলে রাখে। আর আরেকটা লোকের দরকার হলে তো তোকে বলবোই!”
“বলবে কিন্তু!”
“ঠিকাছে বলবো। এখন তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নে! অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।”
“ওহ্ হ্যাঁ, সাড়ে আটটা তো বেজেই গেলো!”

আমাদের জীবনটা এখন অনেক গোছানো, শান্তিময়। অথচ একটা বছর আগেও এতটা গোছানো ছিলো না। একটু একটু করে গুছিয়ে নিয়েছি, এখনো গোছাচ্ছি।

অফিসে পৌঁছে দেখি আমার পিএস মিস. নায়লা, আমার কেবিনে বসে আছে। আমাকে দেখেই সে ব্যস্ত ভঙ্গিমায় উঠে দাঁড়ালো।

ভদ্রভাবে বলল, “গুড মর্নিং ম্যাডাম।”
“গুড মর্নিং।”
“ম্যাডাম, আজকে কিন্তু আপনাকে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে।”
আমি মুখে বিচিত্র হাসির আভাস নিয়ে বললাম, “এই একই কথাটা প্রতিদিন বলো। টায়ার্ড লাগে না?”
“আপনি তো সুন্দরই। সুন্দরের প্রশংসা প্রতিদিন না করে কি উপায় আছে? আপনি জানেন, অফিসের সবাই আড়ালে আপনাকে কি ডাকে?”
“জানি। বিউটি বস!”
নায়লা চমকে উঠে বলল, “জানলেন কিভাবে?”
“একই অফিসে কাজ করি, এতটুকু জানবো না? আচ্ছা সেসব বাদ দাও। এখন বলো এত সকালে আমার কেবিনে কি করছো? কিছু বলবে?”
“ম্যাডাম, নেক্ট প্রজেক্টের ফাইল রেডি হয়ে গেছে। আপনাকে দিতে এসেছি।”
“কোন প্রজেক্ট বলো তো।”
“উনিশ তারিখে যেটা সাবমিট করার কথা।”
“ও আচ্ছা। ফাইলটা কে রেডি করেছে?”
“খোরশেদ ভাই।”
“তাহলে ফাইলটা রেখে যাও। খোরশেদ সাহেব যেহেতু রেডি করেছে, নিশ্চই অনেক কারেকশন বের হবে। আমি ধীরেসুস্থে দেখে জানাচ্ছি।”

এই হলো আমার কর্মজীবন। নামী দামী এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির আমার। আমার নামে লেখা হলেও শুরু থেকে এর মালিক আমি ছিলাম না।

অফিসের সবাই আমাকে ‘বস’ ডাকে। এই ডাকটা শুনলেই মনে হয়, বিরাট কিছু অর্জন করে ফেলেছি। কিন্তু ঠিক পরের মুহূর্তেই আবার মনে হয়, কিসের অর্জন! জীবনের সবথেকে বড় অর্জনটাই তো হাতছাড়া করে ফেললাম।

অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি, জবা আমার বিছানার ঠিক মাঝখানে বসে বসে। বাইরের মানুষের কাছে জবা একটা কুকুরছানা হলেও, আমার কাছে সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন। জবা যে জাতের কুকুর, সে জাতটার নাম পোমেরানিয়ান। এই জাতের কুকুরগুলো দেখতে সুন্দর হলেও, চেহারায় কোনো মায়া থাকে না। তবে আমার জবার চেহারা যথেষ্ট মায়াবী।

আমাদের বাসায় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির নষ্ট হওয়া লেগেই থাকে। ফ্যানের রেগুলেটর, বাল্বের সুইচ, মাইক্রোওয়েভের সুইচ, ফ্রিজের লাইট – এগুলো নষ্ট হওয়া আমাদের কাছে সাধারন ব্যাপার। শুক্র এবং শনিবার, এই দুইটা দিন আমি বাসায় থাকি। রাজ্যের যত মেকানিক-মিস্ত্রী আছে, সবাইকে এই দুই দিনেই খবর দেওয়া হয়। আমি বাসায় না থাকলে আবার আমার মা আবার বাইরের লোক ঢোকান না। মাঝে মাঝে চিন্তায় পড়ে যাই, সে আমার গুরুজন না-কি আমি তার গুরুজন।

বর্তমানে আমার ঘরের টিভি নষ্ট, স্ক্রিন ঝিরঝির করছে। আগামীকাল শুক্রবার, মেকানিক আসবে। আমাদের বসার ঘরে আরেকটা টিভি আছে। সেখানের সোফায় জবা কোলে নিয়ে বসে টিভি দেখছি।

ওদিকে মা ডাইনিং টেবিলে বসে সবজি কাটাকাটি করছে। মৌসুমী মায়ের ফোনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে এসে তাকে ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলল, “খালাম্মা, ভাইজান ফোন করছে!”

মাও ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ফোনটা রিসিভ করলেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম। মা যখন ওর সাথে ফোনে কথা বলে, তখন আমি চারপাশে ঘুরঘুর করি। জানি, সে কখনো আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইবে না, কিন্তু তাও। যদি একবার মনের ভুলে কথা বলতে চায়, এই আশায়!

বেশ অনেকটা সময় ধরে মা তার সঙ্গে কথা বলল। “তুই কেমন আছিস?”, “রান্নাবান্নার কি করেছিস?” – এ ধরনের নানান প্রশ্ন করলো তাকে। সে কি উত্তর দিলো, কে জানে!

কথা শেষ হলে আমি মায়ের সামনের চেয়ারটাতে বসতে বসতে বললাম, “তারিফ কেমন আছে মা?”
“যেমনটা থাকে সবসময়।”
কথাটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বললাম,  “খুব ভালো আছে না?”
মা কিছু বলল না। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করার চেষ্টা করেও পারলো না।
আমি ঠোঁটে কৃত্রিম এক হাসি নিয়ে বললাম, “ভালো থাকা তো ভালোই! এতে এতো মন খারাপ করার কি আছে?”
মা আহত গলায় বলল, “একটা মানুষকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকা কি ঠিক?”
“তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছ মা, কষ্ট আমি ওকে দিয়েছিলাম ও আমাকে দেয়নি।”
“কিন্তু তারপরও, শেষ পর্যন্ত কষ্ট তো তুই-ই পেয়েছিস।”
“আমি কষ্ট পাইনি মা, প্রতিদান পেয়েছি।”

অর্জনের কথা বলছিলাম না? তারিফ, আমার জীবনের সবথেকে বড় অর্জন। ছেলেটার সাথে প্রথম দেখা হয় চার বছর আগে, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরীতে। দিনটা ছিল, শুক্রবার। এই দিনটায় লাইব্রেরীতে যথারীতি বসার কোনো জায়গা নেই। বহু কষ্টে একটা সিট যোগাড় করলাম। আমার পাশের সিটটাতে বসে ছিল সে। অতি মনোযোগ সহকারে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বইয়ের পাতার দিকে।

আমি বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেটা উঠে চলে গেল। ভাবলাম, এই বুঝি তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা। প্রথম দেখায় আমি তার প্রেমে পড়িনি, তবুও উঠে চলে গেল বলে বেশ খারাপই লাগলো। আমি বই পড়ায় মনোযোগী হলাম।

লাইব্রেরীর বই ছাড়াও আমার সঙ্গে আরেকটা বই ছিল। সেই বইটা আমার নিজের। বইয়ের নাম, ‘কলিকাতায় নবকুমার’। পঞ্চম জন্মদিনে বাবা উপহার দিয়েছিলেন। সেটাই ছিল বাবার সঙ্গে উদযাপন করা আমার শেষ জন্মদিন।

বইটার দিকে তাকিয়ে দেখি, বেশ চকচকে লাগছে। আমার পুরোনো ছেড়া বইটাকে নতুন মনে হচ্ছে কেন?

বইয়ের কভার উল্টে প্রথম পাতায় চোখ পড়তেই আমার চোখমুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল।
প্রথম পাতায় লেখা, “প্রিয় তারিফ, তোমাকে বইমেলার শুভেচ্ছা।”

সর্বনাশ! এতো আমার বই না। আমি ব্যস্ত হয়ে বইটার পাতা উল্টাতে লাগলাম। অবশেষে শেষ পৃষ্ঠায় একটা ফোন নম্বর পেলাম। ফোন নম্বরের নিচে ব্র্যাকেট দিয়ে লেখা, ‘আমার ২য় নম্বর’। তৎক্ষণাৎ সেই নম্বরে ফোন করলাম।

প্রথমবারে স্যার ফোন তুললেন না। দ্বিতীয়বারে তুললেন।

তারিফ ওর অপূর্ব কণ্ঠে বলল, “হ্যালো? কে বলছেন?”

আমি এক মুহূর্তের জন্যে চিন্তায় পড়ে গেলাম। এত সুন্দর পুরুষ কণ্ঠ কি এর আগে কখনো শুনেছি? নাহ্! শুনিনি।

আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম, “হ্যালো, আমার নাম আশফা।”
“স্যরি এই নামে আমি কাউকে চিনি না, রং নাম্বার।”
“না, না রং নাম্বার না। রাইট নাম্বার! আপনি ভুল করে আমার বই নিয়ে গেছেন!”
“কখন? কোন বই?”
“আরে, এই মাত্র আপনি যখন লাইব্রেরীতে বসে ছিলেন তখন ভুল করে আমার কলিকাতায় নবকুমার বইটা নিয়ে গেছেন। আমার কাছে এখন আপনার বই!”
“ওহ্, এই বই আপনার? আমিও তখন থেকে ভাবছি আমার নতুন বইটা ছিড়ে গেল কিভাবে?”
“দেখেন, আমি অত কিছু বুঝি না। আমার বইটা লাগবে।”
“আপনার কাছে যা আমার কাছেও তো তাই! বরং আমার বইটা নতুন এবং অক্ষত, আপনার পড়তে সুবিধা হবে।”
“সুবিধা অসুবিধা দিয়ে আমার কোনো কাজ নেই! আমার নিজের বইটাই লাগবে। ওই বইটার সাথে আমার কতো স্মৃতি জড়িত আপনি জানেন?”
“তো কি হয়েছে? নতুন বইয়ের সঙ্গে নতুন স্মৃতিও জড়িয়ে নেবেন!”
“আমি আপনাকে আমার বইটা ফেরত দিতে বলছি, আপনি দেবেন! এত কথা বলছেন কেন?”
তারিফ অসহায় কণ্ঠে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। আজকে তো আর সম্ভব হবে না, কালকে না হয় একই জায়গায় আপনার বইটা নিয়ে যাবো।”

পরের দিন আবার গেলাম লাইব্রেরীতে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। ছেলেটা আসবে কি আসবে না, এই নিয়ে মনে শঙ্কা তৈরি হলো।

অবশেষে তিনি এলেন। আমি তাকে খেয়াল করিনি, আমার হাতে বইটা দেখে সে-ই আমাকে শনাক্ত করলো।

আমার কাছে এসে শান্ত গলায় তারিফ বলল, “আপনি আশফা?”
আমি চমকে উঠে বললাম, “জি? জি।”
তারিফ আমার বইটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এই নিন আপনার বই!”
আমি দ্রুত ওর হাত থেকে বইটা নিয়ে বললাম, “থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ! এই বইটা যে আমার কাছে কতটা প্রেশিয়াস, আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো।”
“বোঝাতে হবে না, বুঝতেই পারছি।”
আমি ওর বইটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, “আপনার বই!”

তারিফ আমার হাত থেকে তার বইটা নিল।
আমি আবার বললাম, “এখন কোথায় যাবেন?”
“আমার অফিসে। আপনি?”
“আমি বাসায় যাবো কিন্তু বৃষ্টিই তো থামছে না।”
“এখানে কিন্তু অনেক ভালো লেবু চা পাওয়া যায়, খাবেন?”
“হুঁ!”

আমি চা পছন্দ করি না। তবু যে কেন হুঁ বলেছিলাম কে জানে! হয়তো বা তার সঙ্গে আরেকটু বেশি সময় কাটানোর জন্য।

মিনিট কয়েকের মধ্যেই জনাব প্লাস্টিকের গ্লাসে চা নিয়ে হাজির।

আমি তার হাত থেকে চা নিতে নিতে বললাম, “তা, আপনি কি করেন?”
“আমার বাবার কোম্পানির বর্তমান মালিক আমি। বিজনেস দেখাশোনা করি। বেকার বলতে পারেন।”
“ওমা, বেকার বলবো কেন?”
“সে মানুষটা বাইশ তেইশ বছর লেখাপড়া করে বাবার বিজনেস সামলায়, তাকে বেকারই বলে।”
আমি চুপ করে রইলাম।
তারিফ আবার বলল, “আপনি কি করেন?”
“আমি ঢাকা ইনিভার্সিটি থেকে এম.এ করছি। বিজনেস ডিপার্টমেন্টে, লাস্ট ইয়ার। আর কয়েকদিন পর আমিও বেকার হয়ে যাচ্ছি।”
“আপনার বাবার আবার বিজনেস আছে না-কি? থাকলেও খবরদার! সেই বিজনেসের দায়িত্ব নিতে যাবেন না!”
“আমার বাবা নেই, আর বাবার বিজনেসও নেই।”
তারিফ লজ্জিত কণ্ঠে বলল, “আই অ্যাম স্যরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি।”
“ইটস ওকে, বুঝতে পারার কথাও না।”

তারিফ চুপ করে আছে। আমিও চুপ করে আছি।
নীরবতা ভঙ্গ করে আবার বললাম, “আপনার বাসায় কে কে আছে?”
“আমি আর আমার মা। আপনার বাসায়?”
“আমি ছোটবেলা থেকে মামার কাছে মানুষ হয়েছি। আমার বয়স যখন পাঁচ, তখন আমার বাবা মারা যায়। বাবার মৃত্যুতে মা খুবই বিষন্ন হয়ে পরে। সংসারধর্ম থেকে তার মন উঠে যায়। এরপর একদিন আমাদের দুই বোনকে মামার কাছে রেখে তিনি আমেরিকায় চলে যান। সেখানে নিজের ক্যারিয়ার গরেছেন, বাড়ি করেছেন, নতুন এক জীবন শুরু করেছেন। এ বছর সেও মারা যায়।”

মাত্র দুদিনের পরিচয়ে তারিফকে এতগুলো কথা কেন বলেছিলাম, কে জানে! এতটুকু বলতে পারি, তার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগছিলো। এতটা মনোযোগ দিয়ে এর আগে কেউ আমার কথা শোনেনি।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত দুটো বাজে। তারিফের কথা একবার ভাবা শুরু করলে সময় সে কিভাবে কেটে যায়, বুঝতেই পারি না।

রবিবার অফিসে ফিরে দেখি, সবার মধ্যে একধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। সবাই প্রাণপন চেষ্টা করছে নিজেদের স্বাভাবিক রাখার, কিন্তু পারছে না। কেবিনে গিয়ে নায়লাকে কল করলাম।

নায়লা আমার কেবিনে আসলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কি মেইল চেক করেছ?”
নায়লা বলল, “না মেইল তো চেক করা হয় নি। কেন ম্যাডাম?”
“করোনার কারনে কালকে থেকে আমাদের অফিস বন্ধ। ম্যানেজমেন্ট সাথে বসে ডিসিশন নিয়েছি, এখন থেকে বাসায় বসেই অফিস করবো। ওয়ার্ক ফ্রম হোম। ভালো হলো না?”
“বাহ্! বেশ ভালো হলো। আমি তো আমার মাকে নিয়ে টেনশনে ছিলাম, বয়স্ক মানুষ!”
“আচ্ছা, আজকের মধ্যে কি আমরা ওই এর প্রজেক্টটা শেষ করতে পারবো?”
“একটু বেশি সময় লাগবে, কিন্তু মনে হয় পারবো।”
“ঠিক আছে তাহলে প্রেজেক্টে যারা যারা কাজ করছে তাদের নিয়ে ইমিডিয়েট একটা মিটিং কল করো।”

প্রজেক্টের কাজ সেরে বাসায় ফিরতে ফিরতে বেজে গেল রাত আটটা। সাধারনত এত দেরি কখনো হয় না। বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই মায়ের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়ে গেলো।

মা চিন্তায় অস্থির হয়ে বলল, “কিরে এত দেরি হলো কেন? আমি কতবার ফোন করলাম, ফোনটাও তো ধরলি না।”
“আমাদের অফিস ছুটি আজকে থেকে। হাতে শেষ যে প্রজেক্টের কাজ ছিল, সেটা একবারে শেষ করে আসলাম। তাই দেরি হয়ে গেল। আর ফোনের চার্জটাও শেষ, তাই তোমার ফোনটা ধরতে পারিনি।”
“অফিস ছুটি দিয়েছিস? ভালো হয়েছে। তোকে নিয়েই চিন্তায় ছিলাম।”
“হুঁ, হয়েছে। আর চিন্তা করতে হবে না। শোনো, কালকে থেকে কিন্তু আমি বাইরে বের হবো না। তুমিও যাবে না। আর যদি খুব দরকার হয়, তাহলে মাস্ক পরে বাইরে যাবে।”
“মাস্ক?”
“হুঁ! মাস্ক।”
মা অসহায় গলায় বলল,“মা শোন না, মাস্ক পরলে না আমার গরম লাগে। দম বন্ধ হয়ে আসে।”
“ঠিক আছে তোমাকে মাস্ক পরতে হবে না, বাইরেও যেতে হবে। জরুরী দরকার হলে আমিই যাবো বাইরে।”
“আচ্ছা। জানিস আজকে দুপুরে তারিফ ফোন করেছিলো। ওর অফিসেও না-কি ছুটি দিয়ে দিয়েছে।”
আমি হেসে বললাম, “মিস্টার আনস্টপেবেল তাহলে এখন চব্বিশ ঘণ্টা বাসায় বন্দী হয়ে থাকবে?”
“হ্যাঁ! করোনা সবাইকে শিক্ষা দিয়ে ছাড়লো।”
“দেখো, তোমার ছেলে শেষ পর্যন্ত বাসায় থাকে কিনা। একবার যদি ঠিক করে বাসা থেকে বাইরে যাবে, তাহলে সেটা করেই ছাড়বে।”
“একদম ঠিক বলেছিস! ওকে নিয়েই তো আমার যত ভয়!”
“মা?”
“হুঁ?”
“তারিফ আমার কথা জিজ্ঞেস করে?”
মা লজ্জিত ভঙ্গিমায় চুপ করে বসে রইলেন।

কিছুক্ষণ পর মুখ খুলে বললেন, “আসলে হয়েছে কি…”
আমি মাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “থাক মা, বলতে হবে না আর।”

(চলবে)

অতন্দ্রিলার_রোদ (পর্ব : ৯ – বন্ধু হবে বলে যাও))

0

পর্ব ৯ – (বন্ধু হবে বলে যাও)
লেখা : শঙ্খিনী

শীতের সকাল। চারিদিকে বইছে দমকা হাওয়া। সমুদ্রের তীরে থাকা সাত-আট জন মানুষ ঠকঠক করে কাঁপছে।
কিন্তু অতন্দ্রিলা কাঁপছে না। কফির মত রঙের একটি চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে আছে সমুদ্রের তীরে। অতন্দ্রিলা চিন্তা করছে, এই সুবিশাল সমুদ্রে ভয়ংকর এক পাপীকে যদি চুবিয়ে আনা হয় তাহলে কি হবে? তার সব পাপ ধুয়ে যাবে? নাহ্! ত্বকে এসিডের দাগ আর মনের পাপ কখনই সম্পুর্নভাবে ধোয়া যায় না। কিছু না কিছু চিহ্ন থেকেই যায়।

অতন্দ্রিলার পাশে বসে চায়ের কাপে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে রোদ, চাটা বেশ ভালোই লাগছে তার।

      রোদ উৎসাহিত গলায় বলল, “অতন্দ্রিলা, তুমি কি গুগলপ্লেক্স সম্পর্কে জানো?”
       অতন্দ্রিলা ভ্রু সামান্য কুঁচকে বলল, “কি সম্পর্কে?”
        “গুগলপ্লেক্স।”
        “সেটা কি? গুগলের নতুন কোনো অ্যাপ?”
         রোদ ঠোঁটের কোনো হাসি নিয়ে বলল, “না। গুগলপ্লেক্স হলো একটা সংখ্যা।”
          “সংখ্যা? সংখ্যার এমন নাম কেন?”
           “এই সংখ্যাটি এত বড় যে, তা লিখে রাখার মতো জায়গা এই মহাবিশ্বে নেই। ১০ হিসাবে ১০ এর শক্তি হিসাবে ১০০ হিসাবে  ব্যাখ্যা করা হয়েছে। 10(¹⁰^¹⁰⁰)।”
            “আসলেই কি এই সংখ্যা লিখতে গেলে মহাবিশ্ব সমান জায়গা লাগবে?”
            “কিছুটা সেরকমই। গুগলপ্লেক্স সংখ্যাটি শুনতে তোমার ৩১,০০০ বছর সময় লাগবে।”
           “অসাধারন ব্যাপার তো! ভালোবাসার পরিমাণ বোঝাতে,গুগলপ্লেক্স উদাহরন হিসেবে ব্যাবহার করা যেতে পারে। যেমন, আমি তোমাকে গুগলপ্লেক্সের সমান ভালোবাসি।”

রোদ কোনো জবাব দিলো না। এতে অতন্দ্রিলা কিছুটা বিব্রত বোধ করল। ভালোবাসার প্রসঙ্গ তোলাটা বোধ হয় ঠিক হয়নি।

        অতন্দ্রিলা অস্পষ্ট গলায় বলল, “আবার ঘৃণার কথাও বলা যায়। আমি তোমাকে গুগলপ্লেক্সের সমান ঘৃণা করি।”
         “গুগলপ্লেক্স অনেক বৃহৎ, অনেক। একটা মানুষের প্রতি আরেকটা মানুষের এতটা ঘৃণা থাকতে পারে না।”
         “ভালোবাসা থাকতে পারে?”
         “পারে।”
         “কেন?”
         “কারন ভালোবাসা মানুষকে আনন্দ দেয়। মানুষ ভালোবাসতে ভালোবাসে, তাই ভালোবেসে যায়। কিন্তু ঘৃণা মানুষকে আনন্দ দেয়, বরং তার দুঃখকে কয়েক গুন বাড়িয়ে দেয়। তাই একপর্যায়ে ঘৃণা ফুরিয়ে যায়। কিন্তু ভালোবাসা ফুরোয় না।”

মূল কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ইনানী বীচ। এই বীচ অন্যান্য বীচের থেকে যে আলাদা তা নয়। তবুও মানুষ কক্সবাজারে বেড়াতে এলে সেখানেই যাবেই।
অতন্দ্রিলা এবং রোদও যাচ্ছে।
অতন্দ্রিলার ধারনা, মানুষ ইনানীতে যায় বীচটাকে উপভোগ করার জন্যে নয়। বরং সেখানে যাওয়ার রাস্তাটাকে উপভোগ করার জন্যে।
রাস্তার ডানদিকে সমুদ্র এবং বামদিকে পাহাড়। প্রকৃতির দুই আশ্চর্যজনক সৌন্দর্য মুখোমুখী। তবে প্রকৃতির এই দুই সৌন্দর্যকে মুখোমুখি দেখা যাচ্ছে মানুষের কারনেই। মানুষ যদি বুদ্ধি করে পাহাড় ও সমুদ্রের মাঝে রাস্তা তৈরি না করতো, তবে এত সুন্দর দৃশ্য দেখতে হতো না।

সেই রাস্তা দিয়ে চলছে অতন্দ্রিলাদের জিপ গাড়ি। অতন্দ্রিলা বসেছে রোদের সামনে।

      অতন্দ্রিলা আগ্রহ নিয়ে বলল, “আপনার কোনটা পছন্দ, পাহাড় নাকি সমুদ্র?”
       “যখন যেটার কাছাকাছি থাকি, তখন সেটাই প্রিয়।”
       “এখন তো দুটোরই কাছাকাছি আছেন!”
       “তাহলে এখন দুটোই প্রিয়। তোমার পছন্দের কোনটা?”
        “সমুদ্র।”
        “কেন?”
        “কারন ঢাকায় সমুদ্র নেই। সমুদ্র দেখতে আসতে হয় কক্সবাজারে। তাই সমুদ্রের প্রতি অন্যরকম একটা টান আছে।”
        “ঢাকায় পাহাড়ও তো নেই!”
        “পাহাড় নেই কিন্তু আপনাদের বাগান আছে। সবুজে ঘেরা ওই বাগানটা আমাকে পাহাড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।”
        রোদ অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, “ইরাও একই কথা বলত।”
         “আপনার এই ব্যাপারটা না আমার অনেক ভালো লাগে।”
         “কোন ব্যাপারটা?”
         “এইযে বারবার ইরাবতীর কথা বলা এবং আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া যে আপনি তাকে ভোলেননি, এখনো তার জন্যে অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যাতে আমি আপনার মনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা না করি।”
    
রোদ চুপ করে রইল।

ইনানী বীচে পৌঁছে গেছে তারা। অতন্দ্রিলা এখন সমুদ্রের জলে পা ভেজাচ্ছে। অতন্দ্রিলার দেখাদেখি রোদও স্যান্ডেল জোড়া খুলে হাতে নিয়েছে, পা ভেজাতে।

       অতন্দ্রিলা স্বাভাবিক গলায় বলল, “রোদ সাহেব?”
       “হুঁ।”
       “আপানার ধারনা ভুল, সম্পূর্ণ ভুল। আমি ইরাবতীর জায়গা নিতে চাই না।”
      “আমার এমন কোনো ধারনা নেই।”
      “আমি আপনার স্ত্রী হতে চাই না। আমি আপনার বন্ধু হতে চাই।”

রোদ নিশ্চুপ। অতন্দ্রিলাও কথা বলছে না।
নীরবতার সঙ্গে পা ভেজাচ্ছে।

সূর্যাস্ত হয়েছে। চারিদিকে অন্ধকার নেমে এল।

      রোদ স্বাভাবিক গলায় বলল, “চল এবার যাই।”
       “যাচ্ছি। তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দেবেন?”
        “কি প্রশ্ন?”
        “বন্ধু হতে পারি?”
        রোদ সঙ্গে সঙ্গে বলল, “পারো, চাইলেই পারো।
        “ধন্যবাদ।”
        “তাহলে আমিও কি তোমাকে আমার বন্ধু ভাবতে পারি?”
         “ভাবতে পারেন না। আপনি আমার বন্ধু, আমিও আপনার বন্ধু। এর মধ্যে ভাবাভাবির কি আছে?”
       

ফাইভ স্টার হোটেলগুলোর নাস্তা তেমন একটা ভালো লাগে না অতন্দ্রিলার। নাস্তায় এত আয়োজন অসহ্য লাগে। তার মতে, “দিনের প্রথম আহারটি হওয়া উচিত সাদামাটা ধরনের। যা দেখে চোখ শান্তি পাবে, যা খেয়ে মন শান্তি পাবে।”

আজ অতন্দ্রিলাকে একাই নাস্তা করতে হচ্ছে। রোদ গেছে ক্যাম্প ফায়ারের আয়োজন করতে।
সন্ধ্যা ফোন করেছে, অতন্দ্রিলা নিতান্ত অনিচ্ছায় টেলিফোন তুলল।
 
        সন্ধ্যা উৎসাহিত গলায় বলল, “কিরে তোদের হানিমুন কেমন চলে?”
        অতন্দ্রিলা বিরক্ত গলায় বলল,“কি কেমন চলে?
         “হানিমুন! আরে শোন না আমাদের হানিমুনের সময়ে কি হয়েছে। আমরা গিয়েছিলাম সিলেটে। কনকনে ঠান্ডা! তোর জাভেদ ভাইয়ের মাথায় সারাক্ষণ কমলা রঙের মাফলার পেছানো। ছবি তোলার সময়ও মাথায় ঘোমটা দিয়ে রেখেছিল। তাই রাগে, দুঃখে হানিমুনের ছবিগুলো আর প্রিন্টই করিনি। রোদ আবার সেরকম কিছু করছে না তো?”
        “তোমার কি মনে হয় আপা?”
        “আমার তো মনে হয় করছে না।”
        “তাহলে করছে না!”
        “আচ্ছা তোকে একটা কাজের কথা বলি! শোন সবসময় রোদের কাছাকাছি থাকবি, বিশেষ করে বিয়ের প্রথম বছরটা। কখনো ওকে চোখের আড়াল করবি না। পারলে ওর কাছে ঘেঁষে থাকবি। এতে হবে কি, ও আর অন্য মেয়েদের দিকে তাকানোর সুযোগ পাবে না।”
     অতন্দ্রিলা স্বাভাবিক গলায় বলল, “আপা তোমার তো খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই, তুমি গিয়ে জাভেদ ভাইয়ের কাছে ঘেঁষে থাকো। আমি রাখলাম।”

সন্ধ্যাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অতন্দ্রিলা টেলিফোন রেখে দিল।

রাতে সমুদ্রের তীরে ক্যাম্প ফায়ার করা হয়েছে, তাবু খাটানো হয়েছে। তাবুর পাশে আবার রয়েছে বারবিকিউয়ের ব্যাবস্থা।
তাবু খাটানোর কোনো অর্থ নেই, রোদ অতন্দ্রিলা কেউই রাতে সেখানে থাকবে না।
তবুও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যে খাটানো।

অতন্দ্রিলা সেখানে বসে আছে। রাতের সমুদ্রে এক অন্যরকম রহস্য রয়েছে। সমুদ্রের জলকে জল মনে হচ্ছে না, মনে হচ্ছে পারদ। পারদ দেখতে চকচকে তবে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাকে ধরতে গেলেই ছুটে পালায়।
সমুদ্রের জলও কি এখন ধরতে গেলে ছুটে পালাবে? ব্যাপারটা পরীক্ষা করা দরকার।

রোদ এসে অতন্দ্রিলার পাশে বসল।
       আনন্দিত গলায় বলল, “আয়োজন কেমন হয়েছে অতন্দ্রিলা?”
         “এই অর্থহীন তাবুটাকে বাদ দিলে, ভালো।”
        “আচ্ছা তোমার নামটা কে রেখেছে?”
        “আমার বাবা। আমাদের তিন ভাইবোনের নামই উদ্ভট। আমার বাবা মনে করেন, উদ্ভট নামের অধিকারীকে মানুষ মনে রাখে। সাধারন নামের অধিকারীদের মানুষ অন্য কারও সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে।”
       “অতন্দ্রিলা নামের অর্থ কি?”
       “যাকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না।”
       “তোমাকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না?”
       “এখন পারে কিন্তু হয়তো আমার জন্মের পরপর পারতো না। তাই এমন নাম রাখা হয়েছে আমার। তা, হঠাৎ এই নামের প্রসঙ্গ?”
       “না মানে, বারবার তোমার নামটা উচ্চারন করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।”
        “কষ্টসাধ্য ব্যাপার হলেও কিছু করার নেই। অতন্দ্রিলা বলেই ডাকতে হবে।”
         রোদ বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “আচ্ছা তুমি তো আমাকে অত ডাকতে মানা করেছো। কিন্তু অ-তন্দ্রি-লা থেকে যদি শুধু ‘তন্দ্রি’ ডাকি, তাহলে কি তোমার কোনো আপত্তি আছে?”
           অতন্দ্রিলা ঠোঁটভর্তি হাসি নিয়ে বলল,  “আপত্তি থাকবে কেন? আমার নামের ভেতরেই যে এত সুন্দর একটা নাম লুকিয়ে আছে, তা আগে খেয়ালই করিনি!”
    
রোদ আজ প্রথম অতন্দ্রিলাকে হাসতে দেখছে। বেশির ভাগ মানুষ যখন হাসে, তখন কেবল তাদের ঠোঁট হাসে। চোখ হাসে না। অতন্দ্রিলার চোখ এবং ঠোঁট একসঙ্গে হাসছে।

       অতন্দ্রিলা বলল, “আপনার দেওয়া নামটা আমার অস্বাভাবিক পছন্দ হয়েছে। এই পৃথিবীতে আমাকে ‘অত’ নামে ডাকার অধিকার আছে ছয়জন মানুষের। তারা হলেন আমার বাবা, মা, দাদি, আপনার মা, শহর এবং জরিনা। কিন্তু আমাকে ‘তন্দ্রি’ নামে ডাকার অধিকার শুধুমাত্র আপনার। কারন এই নামটা আপনি দিয়েছেন।”
        “তাহলে তো আমি ধন্য, তন্দ্রি।”
        “বেশিবেশি তন্দ্রি ডাকবেন। যতবার শব্দটা শুনি, আমার ভালো লাগে।
আমি এতটাই আনন্দিত যে এখন আপনাকে গান শোনানো হবে।‌ আমি যখন কারও ওপর অনেক বেশি খুশি হই, তখন তাকে গান শোনাই।”
         “গান পারো নাকি?”
         “যে মানুষ কথা বলতে পারে, সে গানও গাইতে পারে। গুনুন তো এখন।”

               এতদিন যে বসেছিলেম
              পথ চেয়ে আর কাল গুনে,
              দেখা পেলেম ফাল্গুনে।

স্বর্গে মানুষের মতো দেহবিশিষ্ট সুকন্ঠী গায়িকাদের বলা হয় কিন্নর। এদের থাকে ত্রিকাল ভুলানি কণ্ঠ। অতন্দ্রিলা জন্মেছে কিন্নর কণ্ঠ নিয়ে।

রোদ আজ দেখল অন্য এক অতন্দ্রিলাকে। খুশি হলে যে একটা মানুষ এতটা বদলে যেতে পারে তা রোদের জানা ছিল না।

    রোদের খুব ইচ্ছে হচ্ছে অতন্দ্রিলাকে বলতে, “তুমি কি সারাক্ষণ এভাবে হেসে গেয়ে থাকবে?”
অতন্দ্রিলা মুখের ওপর “না” বলে দিবে অথবা সঙ্গে সঙ্গে মুখটা আবার গোমড়া করে ফেলবে ভেবে, রোদ আর বলল না।

সাইকো_বরের_রোমান্টিক_অত্যাচার

2

#সাইকো_বরের_রোমান্টিক_অত্যাচার
#পর্ব:২

লেখিকা -তাসদিদ সরকার আরিনা

আমি বসে বসে কাদতে লাগলাম। এই মেঘ কি সেই মেঘ যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। মেঘকে আর কি দোষ দিবো। আমি ওর সাথে যে ধরণের বিহেভ করেছি, তাতে আমার সাথে ওর ভালো বিহেভ করার প্রশ্নই আসে না। ভালোবাসাও একটা সময় ঘৃণায় পরিণত হয়। আর আমি তো মেঘকে সবসময় অবহেলা করে এসেছি, তার ভালোবাসাকে সবসময় প্রত্যাখান করে এসেছি।
তার থেকে আমার এমনই বিহেভিয়ার পাওয়া উচিত। সব দোষ আমার, আমি কেনো ওকে এতো ইগনোর করতাম, যদি ওর প্রপোজাল টা মেনে নিতাম তাহলে আজ আমার এই অবস্থা হতো না। না আমি কাঁদবো না। আমার সাথে এমন হওয়াই উচিত। এটা আমার নিয়তি। আমাকে আমার মা বাবার কথা ভেবেই এগুলো মেনে নিতে হবে।
আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে একদিন না একদিন ঠিক ওর মনে আবার জায়গা করে নিবো। আমি চোখ মুছে ফার্স্ট এইডের বক্সটা খুজে বের করলাম। রক্তটা মুছে মলম লাগিয়ে একটা ওয়ান টাইম বেন্ডেজ লাগিয়ে নিলাম।
হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো, পিছনে ঘুরতেই দেখি মেঘের ছোট্ট বোন দাড়িয়ে আছে।মেঘের একটা মাত্র বোন। ওর নাম বৃষ্টি।
বৃষ্টি– কি ভাবি, ভিতরে আসতে বলবে না, বুঝি?
আমি হেসে দিয়ে বললাম,
অথৈ– ও মা,, রুমে আসতে পারমিশন নিতে হয় নাকি। সোজা চলে আসবে। আমি আসাতে তোমার নিয়মের কোনো পরিবর্তন হবে না।।
কথাগুলো বলতে বলতে বৃষ্টিকে টেনে এনে সোফায় বসালাম। তারপর দুজনেই হেসে দিলাম।
বৃষ্টি আমার কপালের দিকে তাকিয়েই আবাক হয়ে গেলো।।
বৃষ্টি– ভাবি,, তোমার কপালে কি হয়েছে?
আমি চুল দিয়ে ঢেকে দিলাম,ক্ষতটা।।
অথৈ– না কিছু না। পড়ে গিয়ে একটু কেটে গেছে আর কি।
বৃষ্টি– কি কিছু না। আজকেই তোমাকে ব্যাথা পেতে হলো। একটু পড়েই সব মেহমান রা আসতে শুরু করবে। তোমার বাড়ি থেকেও তো সবাই আসবে।। আর ওরা এসে যদি তোমার কপাল কাটা দেখে তাহলে ভাববে তুমি আসতে না আসতেই আমরা তোমার পর অত্যাচার শুরু করে দিয়েছি।
ওর কথা শুনেই আমি হেসে দিলাম আমার সাথে বৃষ্টিও হেসে দিলো।
তারপর আমার হাতে কতোগুলো ব্যাগ ধরিয়ে দিলো।
বৃষ্টি– ভাবি, এইগুলো মা পাঠিয়েছে।আজকে পড়ার জন্য। একটু পর আমি এসে তোমাকে সাজিয়ে দিবো।।
“তোর সাজাতে হবে না, উনি নিজেই আটা ময়দা মাখতে এক্সপার্ট। ”
কাথাটা শুনেই আমরা দরজার দিকে তাকালাম। মেঘ দাড়িয়ে আছে।
বৃষ্টি একটু হেসে দিলো।।
বৃষ্টি– ভাইয়া তুই মেয়েদের কথার মধ্যে কথা বলবি না। ভাবি নিচে চলো, সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
কথাগুলো বলেই বৃষ্টি আমার হাত ধরে টানতে লাগলো।
অথৈ– আরে বৃষ্টি,, একটু দাড়াও। বলেই আমি হাত ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে কপালের ব্যান্ডেজ টা খূলে নিলাম। কারন ব্যান্ডেজ দেখলে নানান জনে নানান কথা বলবে। অল্পই কেটেছে তাও আবার চুল দিয়ে লোকানো যাবে এমন একটা জায়গায়। তাই আমি চুল দিয়ে আবার লুকিয়ে নিলাম সাথে মাথায় কাপড় ও দিলাম যাতে বুঝা না যায়। তারপর বৃষ্টির কাছে গিয়ে বললাম
অথৈ– এবার চলো।
মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
বৃষ্টি– বাহ্ ভাবি,, চলো।।
আমি নিচে নামতেই সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো।। বৃষ্টি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আর আমি সালাম করতে লাগলাম।।উফফ,, এর মামা মামি, চাচা চাচি কত্তো মানুষ। সালাম করতে করতে আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে গো।।তবে মানুষগুলো খুব ভালো, খুব মিশুক। এরই মধ্যে আমার শাশুরি চলে আসলেন। আমি ওনাকে সালাম করলাম। ওনি আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে নাকি জিজ্ঞাস করলেন।তারপর খাবার খাওয়ার জন্য টেবিলে বসিয়ে দিলেন। আমার সামনের চেয়ারটাতে মেঘ বসে খাচ্ছে। বৃষ্টি আমার সাথে বসে খাচ্ছে। সবাই খাচ্ছে কিন্তু আমার গলা দিয়ে তো খাবার নামছে না। আম্মু আব্বু আর ভাইয়ের কথা কথা মনে পড়ছে খুব।। অল্প খেয়েই উঠে পড়লাম, নতুন বউ বলে নয়,, আমার মন বলছে আমার বাড়িতে কিছু হয়েছে। আমি উঠে পড়াতে বৃষ্টি ও উঠে পড়ে। আমি বৃষ্টিকে বললাম যে আমি একটু বাড়িতে কথা বলতে চায়। বৃষ্টিকে নিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। আম্মুকে কল দিলাম।
অথৈ– হ্যালো,, আম্মু,,
আব্বু ফোন ধরলো।
আব্বু– অথৈ, কেমন আছিস মা??
অথৈ– ভালো আছি বাবা, তুমি কেমন আছো? আম্মু কেমন আছে?
আব্বু– আমরা ভালোই আছি।
অথৈ– আম্মু কোথায়,, আম্মুর ফোন তুমি ধরলে কেনো??
আব্বু — তো, তোর আম্মু একটু অসুস্থ।
আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। আমি জানতাম।। একটু না অনেকটাই অসুস্থ।
অথৈ– আমাকে বলোনি কেনো? কখন হয়েছে এমন??( কান্নার কারনে কথায় বলতে পারছি না)
আমি কান্না করছি দেখে বৃষ্টি আবাক হয়ে গেলো। সে আমার পাশে বসে বলতে লাগলো,,”ভাবি কাদছো কেনো??”
আমি তো কেদেই চলছি।। আব্বু ওপাশ থেকে আমাকে বুঝালো যে আম্মু ঠিক আছে। একটু অসুস্থ হয়েছে।তারপর ফোন কেটে দিলো।
বৃষ্টি– ভাবি কি হয়ছে কান্না করতাছো কেনো??
আমি বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে আবার কেদে দিলাম।
অথৈ– আ আমার আম্মু খুব অসুস্থ।
বৃষ্টি– ভাবি দাড়াও আমি আম্মুকে এখনি গিয়ে বলছি।
বৃষ্টি উঠে চলে যেতে চাইলে আমি বৃষ্টির হাত ধরে ফেললাম। আমি ওকে মাথা নেড়ে না করলাম এই কথা বলার জন্য। বৃষ্টি আমার পাশে বসে পড়লো,
বৃষ্টি– ভাবি,,
বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আমার চোখের পানি মুছে ফেললাম।
অথৈ– দেখ আজ এই বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান। এই কথা শুনলে সবাই বলবে আমাকে চলে যাওয়ার জন্য। তাতে সবার মন খারাপ হবে। তার থেকে কাউকে না বলাই ভালো।
বৃষ্টি আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এর মধ্যেই মেঘ রুমে ডুকলো।
বৃষ্টি– ভাবি তুমি এখানেই থাকো। কেউ তোমাকে ডিস্টার্ব করবে না। আমি সামলে নিবো সবাইকে।।
কথাগুলো বলে আমার চোখ মুছিয়ে দিলো বৃষ্টি।। তারপর চলে গেলো।
মেঘ অনেক্ষন আমাকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলো। তারপর আমার পাশে বসে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে খেতে লাগলো।। সিগারেটের ধোয়া আমার মুখের উপরে ছাড়তে লাগলো। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। তাই এখান থেকে উঠে গেলাম বেলকুনিতে দাড়ালাম। আমার ভাগ্যটাই খারাপ। এমন একটা স্বামী পেলাম যে কিনা আমার কষ্ট গুলো বুঝেই না, উল্টো আরও কষ্ট দিবে।
বেলকুনিতে বসে আছি। হঠাৎ বৃষ্টি এর কয়েকজন মেয়ে এলো। ওরা আসতেই মেঘ রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ওরা সবাই আমাকে সাজিয়ে দিলো। বৃষ্টিও সাজলো। তারপর অন্যরা চলে গেলেও বৃষ্টি গেলো না। ও আমার পাশেই বসে থাকলো। আমি অনেকবার বললাম তারপরেও গেলো না। আমি একা থাকলে মন খারাপ করবো বলে।একটু পর নিচে নামলাম।। দেখি সবাই এসে গেছে।
সবাই আমার সাথে ছবি তুলছে।। কথা বলছে।।
হঠাৎ আমার চোখ গেলো মেঘের উপর।। অনেক সুন্দর লাগছে মেঘকে। মেরুন রংয়ের পাঞ্জাবী তে অসাধারন লাগছে।। মেঘ আমার পাশে এসে বসলো।।
মেঘ– ওই বউ,, কি হয়েছে তোমার?? একটু হাসো না।।
অথৈ– হুম।।
মেঘ– কি ভাবছো??
আমি মেঘের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।।
অথৈ– নাহ্ কিছু না।।
মেঘ মুচকি হেসে
মেঘ– আমি কিন্তু ভেবে রেখেছি আজ রাতে কি কি হবে??
আমি মেঘের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। সবাই আমার আর মেঘের ছবি তুলছে।।
এর মধ্যে ভাইয়া আর আমার কাজিনরা চলে আসলো। বাবা আসে নি।। আমি ভাইয়া কে বললাম আজকে আমাকে সাথে নিয়ে যেতে কিন্তু ভাইয়া বললো কালকে যেতে।। সবাই চলে গেলো।। আমি রুমে এসেই একটু শুয়ে পড়লাম। অনেক ক্লান্ত লাগছে। বৃষ্টি এসেছিলো। কিন্তু শুয়ে আছি বলে চলে গেলো।। আমার ননদটা খুব ভালো। জামাইটার মতো হারামি না।
চলবে,,,

সাইকো বরের রোমানটিক অত্যাচার

0

#সাইকো_বরের_রোমান্টিক_অত্যাচার
#পর্ব_: ১

#কল্পনাবিলাসি_লেখক

আমি অথৈ,,, বউ সেজে বাসর ঘরে বসে আছি। আজ আমার বিয়ে হয়েছে,একটা অজানা অচেনা লোকের সাথে বিয়ে। শুধু তার নামটা জানি……কিন্তু তাকে কোনোদিন দেখিনি। বাবা অবশ্য বিয়ের আগে দেখা করতে বলেছিলো কিন্তু আমি দেখা করতে চাই নি। আমি বিয়ে করতে চাই নি,আারও পড়ালেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু হলো না। আমি সেই মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম জানি না। হঠাৎ আমি অনুভব করলাম কে যেন আমার ঠোটে ঠোট দিয়ে চেপে ধরেছে। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি তাকে সরাতে চাইছি। নাহ পারছি না,, অবশেষে জোরে ধাক্কা দেওয়াতে সে ছিটকে পড়ে বিছানার এক পাশে। আমি উঠে বসে হাপাতে লাগলাম।
অথৈ- পাগল নাকি, আপনি।
সে কিছুই বললো না। শুধু এসে আমাকে আবার জোর করে শুইয়ে দিলো, আমার গলায় ঠোটে পাগলের মতো চুমু দিচ্ছে, চুমু না কামড় বসাচ্ছে বুঝতে পারলাম, আর আমি তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছি, অসহ্য ব্যাথা, আর আমার চাপা গোঙ্গানী। নাহ্ সে আমার কেনো বাধায় মানলো না। অবশেষে আমি তার শক্তির কাছে হেরে গেলাম, সে বিজয়ী হলো। সে উঠে বেলকুনিতে চলে গেলো। আগুনের মতো কি যেনো জলচ্ছে। বুঝতে পারলাম সিগারেট খাচ্ছে। রুমটা অন্ধকার,আমি তার মুখটা দেখতে পারছি না, আর খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছিলো কেনো আমার সাথে এরকম করলো?আমি ওনার কি ক্ষতি করেছিলাম? আমি এতক্ষণ শুয়েই ছিলাম, বিছানা থেকে উঠতে গেলেই মাথাটা ঘুরে গেলো। আমি ফ্লোরে পড়ে গেলাম।। তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন চোখ খুললাম তখন দেখি সকাল হয়ে গেছে। আমি চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম কেউ নেই। কিন্তু আমি তো ফ্লোরে পড়ে গেছিলাম তাহলে বিছানায় উঠলাম কখন? হয়ত সেই জানোয়ারটা বিছানায় তুলেছে। ছিঃ,,বিয়ের বাবার মুখে যে ধরণের বর্ণনা শুনেছিলাম, আজ কেনো জানি তা মিথ্যা মনে হচ্ছে। কালকের এই ঘটনার পর আমি তাকে কোনো দিনও স্বামী হিসাবে মেনে নিবো না। আচ্ছা মানুষটা কি একটা রাত ও অপেক্ষা করতে পারলো না।। কাদতে কাদতে রুমের চারপাশটাই আবার চোখ বুলালাম। রুমটা দেখে বুঝাচ্ছে মানুষটা খুব সৌখিন।খুব গোছালো একটা রুম। এই রুমের সব জিনিস গোছানো, শুধু আমিই অগোছালো হয়ে পড়ে আছি। বিছানা থেকে উঠে নিজেকে গুছিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা শাওয়ার নিলাম। শরীরের কাল রাতে জানোয়ারের দেওয়া দাগ গুলো তুলতে বৃথা চেষ্টা চালালাম অনেকক্ষন। কড়া নীল রঙয়ের শাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলাম।। আবার রুমে চোখ বুলিয়ে নিলাম, নাহ্ কেউ নেই। ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিলাম। কোমড় পর্যন্ত চুলগুলো ছড়িয়ে পড়লো।
“বাহ্, তোমার চুল গুলো তো তোমার থেকেও সুন্দর।এই জন্যেই কি হিজাব পড়তে নাকি!!”
আমার এই কন্ঠ স্বরটা খুব চেনা। আমি আগেও বহুবার এই কন্ঠস্বরটা শুনেছি। কিন্তু কার?? আমি ঘুরে দাড়ালাম। কিন্তু কন্ঠস্বরের মালিককে দেখে আমি চমকে গেলাম। আরে এতো মেঘ। যে আমাকে পাবার জন্য আট আটটা বছর আমাকে প্রপোজ করে আসছে, আর আমি বারবার না করছি। সেই স্কুল লাইফ থেকে ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি আমার পরিবারকে কস্ট দিতে পারবো না বলে ওকে বারবার না করেছিলাম। ও আমার ভাইয়ার হাতে মাইর ও খাইছে, তারপরেও আমাকে ভূলে নি।
অথৈ– এ, একি তুমি?? তুমি এখানে কি করছো?
মেঘ মুচকি হেসে আমার কাছে এসে মুখে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে বললো,
মেঘ– কেনো এখানে কি অন্য কারো থাকার কথা ছিলো নাকি???
অথৈ– না মানে,,,,
আমাকে ও কোনো কথায় বলতে দিলো না। ও বলতে শুরু করলো,

মেঘ– বাবু, আট আটটা বছর তুমি শুধু আমাকে কষ্টই দিয়ে গেছো। তোমার কারনে আমি না ভালো করে খেতে পারতাম না ঘুমুতে পারতাম। তোমাকে ভূলার জন্য আমি সব ধরনের নেশা করেছি। কিন্তু কি বলতো, তোমার নেশাটাই প্রখর ছিলো। অন্যসব নেশা কেটে যেত তোমার কথা ভাবতেই। তোমার জন্য আমার বাবা মাও অনেক কষ্ট পেয়েছে। তোমার ভাইয়ের হাতে মাইর ও খেলাম শুধু তোমার জন্য। সেদিন যদি আমি একবার বলতাম তাহলে তোমার ভাইয়ের লাশ পড়ে যেতো। কিন্তু আমি তোমার ভাইয়ের উপর নয় আমি তোমার উপর সব প্রতিশোধ নিবো বলে ঠিক করেছিলাম। এবার প্রতিশোধের পালা, তুমি তৈরি হও, মাই ডিয়ার বউ। কাল রাত থেকেই শুরু হয়ে গেছে। বুঝতে পারবে কষ্ট কাকে বলে।।।

অথৈ–বউ!!!!
মেঘ— হুম,, বউ। তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে আর অন্য কেউ নয়,, সেই মানুষটা আমি। আমি তেমাকে শুধু ভালোবাসি বলে বিয়ে করি নি, আমার প্রত্যেকটা কষ্টের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যও বিয়ে করেছি। (গল্প প্রেমি বন্ধু এড হইতে পারেন ,,,) ভালোবাসা আর প্রতিশোধ দুটোই পাবে আমার কাছ থেকে।।

কিছুই বুঝতে পারছি না, সব কিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো, আজ সে আমাকে কষ্ট দেবার জন্য করেছে।।আমি কান্না জড়িত গলায় বললাম
অথৈ– তার মানে তুমি আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই বিয়ে করেছো??

মেঘ– হুমম,,শুধুই কষ্ট দিবার জন্য।

ওর কথাগুলো শুনে আমি কেদে দিলাম। ও আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,,
মেঘ– আরেহ, এখনো তো কিছুই করলাম না তার আগেই কেঁদে দিলা। কান্না থামাও বাবু।। প্লিজ।।
কিন্তু আমার কান্না তো থামছেই না।
এবার মনে হয় ও রেগে গেলো।
মেঘ– এই কান্না থামাতে বলছি না তোকে,, কান্না থামা,
একটু জোরে ধমক দিলো। আমিও কান্না থামিয়ে ফেললাম। মেঘ আমাকে দেখে হেসে দিলো।
মেঘ– ভালো ভাবে বললে কাজ করে না,, ।। ,,
হঠাৎ করেই ও আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো, আমার হাতগুলো দেয়ালের সাথে চেপে ধরাতে আমি আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি। কিন্তু ও আমাকে ছাড়ছে না।। ও আমার ঠোট ওর ঠোট দিয়ে চেপে ধরলো, আমি ওর থেকে মুক্তি পাবার জন্য হাত গুলো ছাড়ানোর চেষ্টা করছি লাভ হচ্ছে উল্টে হাতে চুড়ি থাকায় হাত কেটে যাচ্ছে। অনেক্ষণ পর ছেড়ে দিলো।
মেঘ– দেখ সব সময় এমন ছটফট করবি না। তুই আমার বউ। তাই আমার সম্পূর্ণ অধীকার আছে, তোকে আদর করার। আমি যখন ইচ্ছা তখন তোকে মারতে পারবো, আবার ইচ্ছা হলে আদর ও করতে পারবো। তোর এই শরীরটা এখন আমার বুঝলি।।
কথাগুলো বলেই ও আমাকে জোরে ধাক্কা মারলো। আমি নিজের উপর ব্যালেন্স না রাখতে পেরে পরে গেলাম এবং ড্রেসিং টেবিলের কোণায় ধাক্কা খেলাম। কপালে হাত দিয়ে দেখি কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে। মেঘ হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তার আগে ফাস্ট এইড বক্সটা কোথায় আছে তা বলে গেলো।
আমি বসে বসে কাদতে লাগলাম। এই মেঘ কি সেই মেঘ যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। মেঘকে আর কি দোষ দিবো। আমি ওর সাথে যে ধরণের বিহেভ করেছি, তাতে আমার সাথে ওর ভালো বিহেভ করার প্রশ্নই আসে না। ভালোবাসাও একটা সময় ঘৃণায় পরিণত হয়। আর আমি তো মেঘকে সবসময় অবহেলা করে এসেছি, তার ভালোবাসাকে সবসময় প্রত্যাখান করে এসেছি।

চলবে,,,