Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1881



হঠাৎ হাওয়া (১৩)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১৩)

মায়াকে নিজের ঘরে দেখে হিমালয় সরু চোখে তাকালো,
—তুমি এখানে বৌভাতের দাওয়াত দিতে এসেছ?
মায়া হিমালয়ের সাথে ঘেষে বলল,
—নাহ নিজে বউ হয়ে আসার ফাদ পাততে এসেছি, বৌফাদ।
হিমালয় একটু দূরে বসতে বসতে বলল,
—এত ফাদ পাদ করে কোনো লাভ হবে না,আমি পিএইচডি করতে কানাডা তে যাচ্ছি, সো এত শীঘ্রই তোমার বউ হওয়া হচ্ছে না সবে ইউনিভার্সিটি গেছো বই পড়ো কাজে দেবে,
মায়া থমকে গেলো
—কি বললেন?
—শুনতেই তো পেলে,
মায়া হিমালয়ের কোলের উপর গিয়ে বসে দুহাতে হিমালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—ভালোবাসি আমি আপনাকে, আপনাকে ছাড়া আমি একটুও থাকতে পারব না অল্প একটুও না, আর আপনি বলছেন আপনি বিদেশ যাচ্ছেন?
হিমালয় অবাক হয়ে গেলো এই মেয়েতো পুরো মাথা খারাপ!হিমালয় নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করল,
—বিদেশ না কানাডা
মায়া মুখ ছোট করে ফেলল,হিমালয় অনুভব করল মায়ার হাত ঠান্ডা হয়ে এসেছে খুব মায়া হলো ওকে দেখে এর সাথে কঠিন গলায় কথা বলা যায় না একে শুধু ভালোইবাসতে হয় একটু নরম কন্ঠে বলল,
—শোনো মায়া তোমার নিজেরও এখনও অতটা ম্যাচুরিটি আসে নি আর আমার তো খুব বেশিদিনের কোর্স নয় মাত্র ১ বছর, ফিরে এসেই আমরা বিয়ে করব?ততদিন আমরাও নিজেদের সম্পর্ক কে সময় দিতে পারব।
মায়া উঠে দাড়ালো, ওর কিছুক্ষণ সময় লাগলো নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকালো,তারপর হাওয়ার বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, হিমালয় ওর যাওয়ার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটা আসলেই পাগল!এ তো ভালোবাসা ছাড়া কিছুই বোঝে না।ঠোঁট বাকিয়ে হেসে ভাবলো রাতে ফোন করে মান ভাঙাবে।

রাতে হিমালয় মায়াকে অনেক বার ফোন করলেও রিসিভ করলো না,বাধ্য হয়ে ল্যান্ডলাইনে কল করলে মায়ার বাবা ফোন রিসিভ করে বলল,
—মায়া দরজা আটকে সেই যে রুমে ঢুকে ডোন্ট ডিস্টার্বের সাইন ঝুলিয়েছে আর খোলার নাম নেই, আমি নক করার সাহস পাচ্ছি না।
হিমালয় ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—আমি কি একবার বাসায় আসতে পারি আঙ্কেল?
মায়ার বাবা হেসে বললেন,
—সে তো রোজই আসো জিজ্ঞেস করছ কেন!
হিমালয় একটু লজ্জাই পেয়ে গেলো।
মায়ার রুমের সামনে গিয়ে দেখলো একটা প্লাকার্ডে “ডোন্ট ডিস্টার্ব আই এম এংরি নাউ এন্ড রিডিং অলসো হু উইল নক আই উইল ডেফিনিটলি পানিশ হিম/হার।থ্যাংক ইউ।”লিখে টানিয়ে রেখেছে। মোটামুটি একটা থ্রেট আর কি!
হিমালয়ও যথেষ্ট আতঙ্ক নিয়ে দরজায় নক করতেই দাড়াম করে দরজায় কিছু আছড়ে পড়ার আওয়াজ হলো, ভেতর থেকে চিৎকার করে শব্দ এলো,
—বাবাই তুমি বলে দাও সে যে দেশের মহারাজই হোক এক্ষুনি যাতে বিদেয় হয়।আমি পড়ালেখা করছি কোনো ডিস্টার্ব হবে না, অদ্ভুত! মানুষ অশিক্ষিত নাকি!লেখাপড়া করতে পারে না?দরজায় লেখা পড়তে পারে না! নাকি?!
মায়ার বাবা অসহায় ভঙ্গিতে তাকালো,হিমালয় বুঝলো এ যে সেই রাগ নয়, আবার হালকা করে নক করে বলল,
—ম্যাডাম আই এম রিয়েলি সরি ক্যান আই হ্যাভ পানিশমেন্ট প্লিজ?
—গেট লস্ট
মায়ার বাবা এবার বললেন
—আম্মু ও মা একটু দরজা খোলো আম্মু,তুমি তো কিছুই খাও নি সারাদিন
হিমালয় চকিত হয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
—কিচ্ছু খায় নি?
—তুমি তো চেনো না ওকে কিছু হলেই সেই রাগ খাওয়ার ওপর ঝাড়ে,
—আঙ্কেল এই দরজাটার কত দাম পড়েছিল?
—মানে!
—এটা আমি যদি ভেঙে ফেলি তাহলে কি আপনি খুব রাগ করবেন?
মায়ার বাবা হাসলো,
—এক্সট্রা চাবি দিলে হবে?ওর রুমের দরজায় আমি কোনো ছিটকিনি দেই নি,সব লক সিস্টেম।
হিমালয়ও হাসলো।মায়ার বাবা চাবি পকেটে নিয়েই ঘুরছিলেন হিমালয়ের হাতে দিয়ে চলে গেলেন সেখান থেকে।

হিমালয় দেখলো সারাঘর এলোমেলো জিনিসপত্র এদিকওদিক ছড়ানো ছিটানো, মায়া অন্যদিকে মুখ করে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,হিমালয় আস্তে করে মায়ার কোমড় পেচিয়ে ওকে তুলে কোলের উপর বসিয়ে ঘাড়ের উপর থুতনি রেখে বলল,
—এরকম করলে আমি কি করে যাব?মায়া?তুমি কি ভাবো তোমার একারই কষ্ট হয়?আর কারো কষ্ট হয় না?হুম?
মায়া চুপ করে রইলো,
—খাও নি কেন?
—কাল মিষ্টির বৌভাত তো এজন্য পেট খালি রাখছি বেশি করে খাবো,
—আমিও পেট খালি রাখব?
—আপনার ইচ্ছা
—আঙ্কেলেরও পেট খালি
—তার ইচ্ছা
—এটা কি মায়া?মায়া কি এরকম কখনো বলে?
মায়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
—আপনি যান তো
—সত্যি?
মায়া এবার হিমালয়ের দিকে মুখ করে ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো, শব্দ করে কাদতে কদতে বলল,
—আমি তো বলেছিলাম আপনাকে বলি নি? একবার আমি আপনাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেলে পাগল হয়ে যাব, আপনি এখন আমার সাথে এমন করছেন কেন?হোয়াই?
হিমালয় মায়ার মাথায় হাত রেখে বলল,
—সরি
মায়া চেচিয়ে বলল,
—রাগ করি নি আমি কষ্ট পেয়েছি,রাগ করলে সরি বলতে হয়
হিমালয় হেসে ফেলল,
—ও আচ্ছা!আর কষ্ট পেলে কি করতে হয়?
মায়া চেচিয়ে চেচিয়ে বলল
—আদর করতে হয়, কষ্ট দিলে আদর দিতে হয়
হিমালয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো এই মেয়ে তো মানসম্মান কিছুই রাখবে না বাইরে যে ওর বাবা থাকতে পারে সে খেয়াল কি ওর আছে!?
হিমালয় ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলল,
—আচ্ছা আচ্ছা,আর খিদে লাগলে?
মায়া ঝট করে উঠে দাড়ালো এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের কাছে কিচ্ছু পাচ্ছে না হিমালয় আতঙ্কিত গলায় বলল,
—মারবে নাকি মায়া!
—আপনি এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বের হবেন কি? না?
—ডিনার করে যাবো তোমার আর আঙ্কেলের সাথে।
—ডিনার করে বিদেয় হবেন তো?
—হ্যা।
মায়া সবাইকে খাবার বেড়ে খাওয়ালো নিজেও খেল তবে হুলস্থূল কান্ড তরকারির ঝোল, ডাল ফেলে হিমালয় আর ওর বাবার পাঞ্জাবি মাখামাখি হয়ে একাকার দুজনেই হেসে খাবার পর্ব সারলেন। হাত ধোয়া হতে না হতেই মায়া বলল,
—এবার যান।
হিমালয় বলল,
—এগিয়ে দিবে না!
মায়া গটগট করে গেইট পর্যন্ত এসে বুকে হাত বেধে দাড়িয়ে রইলো,হিমালয় গাড়িতে ওঠার আগে মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
—বিয়েটা একবার হোক দেখি কত আদর তুমি নিতে পারো।
বলেই শা করে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো মায়া বেশ কিছুক্ষণ হিমালয় যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো ওর বুকের মধ্যে খালি খালি লাগছে কেন যে সবসময় হিমালয়ের সাথে থাকতে পারে না ও!

বাসায় গিয়ে সবার আগে হিমালয় যেটা করলো তা হলো ওর বাবা মাকে বলল,মায়ার সাথে বিয়ের কথা ওর বাবা মা তেমন কোনো আপত্তি করল না শুধু হিমালয়ের বাবা কে একটু চিন্তিত দেখালো,আর রেহেনা আহমেদ তো কেদেই ফেললেন খুশিতে মায়াকে তার খুব মনে ধরেছে,হিমালয় বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
—বাবা তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?ইউ আর নট লুকিং হ্যাপি
—আই এম হ্যাপি মাই সন ভেরি হ্যাপি ফর ইউ।মায়া খুবই সুন্দর একটা মেয়ে, চঞ্চল আর মিষ্টি আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি ওকে পছন্দ করছ আর যেই সেই পছন্দ না আমার আপত্তি থাকলেও তুমি মানবে না এরকম পছন্দ এম আই রাইট?
হিমালয় হাসলো,
—আই লাভ হার, ওকে ছাড়া আমার থাকা অসম্ভব এরকম টাইপের ভালোবাসা আমার দেখা সবচেয়ে চমৎকার একটা মেয়ে, মায়া।
—অবশ্যই সে যথেষ্ট গুণবতী, যে তোমার মনে দাগ কাটতে পেরেছে।
—বাবা আমি যদি কালই আবিরের অনুষ্ঠানে এইংগেজমেন্ট টা করি?
—তুমি তো মে বি কানাডা যাওয়ার আগে বিয়েটা ই করতে চাইছো সিদ্ধান্ত কি নেওয়া হয় নি এখনো?
হিমালয় হেসে ফেললো
—তুমি সব বুঝে যাও বাবা
—এক্সাক্টলি আমি তোর বাপ মাথায় রাখিস।

এর মধ্যে হিমালয় আর মায়ার সাথে যোগাযোগ করলো না,মায়ার খুব অভিমান হলো,বৌভাতে মায়া এলো মিষ্টি আর সাদা কালারের শেডের একটা গাউন পরে আর সাথে মায়ার আব্বুও সাদা রঙের ম্যাচিং ব্লেজার,মায়া অবাক হয়ে দেখলো সেম ব্লেজার হিমালয় পড়ে আছে!ও একবার হিমালয় আর একবার ওর বাবার দিকে তাকালো,তারপর মুখ ভেংচি দিয়ে গিয়ে মিষ্টির কাছে গিয়ে দাড়ালো।

চলবে…..
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (১২)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১২)

—আবির ভাই আমি তোর বাড়ির সামনে গেট টা কি খুলবি?
—আপনি কে ভাই?!
—শ্বশুরের বাচ্চা শালা আমি হিমালয় আমার নম্বর সেভ নাই তোর কাছে?
—কোন হিমালয়?
—ভাই প্লিজ আমার সাথে মায়া আছে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে
—ওয়েট।

আবির বাইরে এসে মায়াকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলেই হিমালয় বললো
—তুই কি আমায় চিনতে পারছিস না!
আবির মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
—তুমি জানো মায়া এই যে আমাদের প্রায় ৮/৯ বছরের সম্পর্ক এর মধ্যে এই ছেলে ৮/৯ বার আমার বাসায় এসেছে কি না সন্দেহ, আজও নিশ্চয়ই তুমি বলেছ বলেই এসেছে।
মায়া হাসলো,হিমালয় মিনমিন করে বলল,
—ধুর তাইলে থাক আমি গেলাম
আবির মায়ার হাত খপ করে ধরে বললো
—ওকে রেখে যেতে পারলে যাবি, আলবিদা কাল হসপিটালে দেখা হবে।
আবির আর মায়া ভেতরে ঢুকে গেলো, হিমালয় কতক্ষন অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখল মিষ্টি আসছে,মিষ্টি হালকা হেসে বলল
—হিমালয় ভাইয়া চলুন।
—মিষ্টি…
—হ্যা বলুন?
—তোমার কপাল কিসে কাটলো?!
মিষ্টি হেসে বলল,
—হঠাৎ হাওয়ায়।
হিমালয় কিছুক্ষণ মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
—তুমি কিছু লাগাও নি কেন!
—চলুন ভাইয়া আব্বু আম্মু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ভেতরে।
—আবির আর তোমার মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
—আমার তার সাথেই কোনো সমস্যা হয় হিমালয় ভাইয়া যার সাথে সখ্যতা হয়।আপনার বন্ধুর সাথে আমার কোনো সখ্যতা নেই তাই সমস্যা হচ্ছে না। আপনার বন্ধু অতি উচ্চ মানের সাধু ব্যাক্তি সবার বাহবা নেওয়ার জন্য সে আমাকে বিয়ে করেছে ঠিকই কিন্তু আমায় সহ্য করতে পারেন না আমাকে দেখলেই তার আকাশ পাতাল উল্টে যায় সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট শেষ করে রাত পার করে,আচ্ছা ভাইয়া আমি কি আপনার বন্ধুর পা ধরে বসে ছিলাম বিয়ে করব বলে বলুন?
হিমালয় মাথা নিচু করে ফেলল,মিষ্টি হেসে বললো
—আপনি ভাববেন না আমি জানি না যে সে জীবনে ভালোবেসে খুব বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে, সে তা নিজেই স্বীকার করেছে, তার জীবনের চরম বিপর্যয়ের কথা সে আমায় বলেছে,আমি বলছি না সে খারাপ মানুষ, তবে তাকে আমি বুঝে উঠি না সে মুহুর্তেই তরল হয়ে যায় আবার তক্ষুনি কঠিন থেকে কঠিনতম হয়!তার সুন্দর একটা পরিবার আছে আমার শ্বশুর আমায় এত আহ্লাদ করে যা আমার বাবাও করে না, আমার শ্বাশুড়ি পারলে তিন বেলা মুখে খাবার তুলে আমায় খাইয়ে দেয় কেন জানেন? কারণ তাদের ছেলে তাদের সাথে ঠিকমত কথাও বলে না তাদেরও ইচ্ছে করে সন্তান কে স্নেহ করতে।এনিওয়ে ভাইয়া চলুন ভেতরে যাই।
হিমালয়ের মনটা একটু খারাপই হয়ে গেলো এখানে না আসলে সে জানতই না আবিরের বাসায় এরকম পরিস্থিতি।

হিমালয় উত্তেজিত হয়ে মায়াকে ফোন করে বলল,
—এই মায়া তুমি কি জানো আবির মিষ্টির বৌভাতের জন্য রাজি হয়ে গেছে?
মায়া হাই তুলতে তুলতে বললো মিনিট দশকের মধ্যে ঘর থেকে বের হয়ে দেখবেন আমি আপনার ড্রয়িং রুমে আপনার আব্বু আম্মুকে মিষ্টির বৌভাতের জন্য ইনভাইট করতে এসেছি।
মায়া ফোন কেটে দিলো, হিমালয় হা হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো বিড়বিড় করে বলল,
—এই মেয়ে বলে টা কি! মা যদি মায়ার কথা জানে,সিরিয়ালের ন্যাকা মা দের মত বাসায় কি সিন ক্রিয়েট করবে আল্লাহই জানে!
হিমালয় ড্রয়িং রুমে এসে দেখে মায়া হিমালয়ের মা রেহেনা আহমেদ কে কদমবুসি করছে পাশেই আবির দাঁড়িয়ে, হিমালয় নিচে নামার সাহস পাচ্ছে না সিড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে, দেখলো মায়া রেহেনা আহমেদ কে বলছে
—আন্টি জানেন হিমালয় আপনাকে কত ভালোবাসে? আমি ওকে আড়াইবার প্রপোজ করেছি আর ও কি না বলে ওর মা ই ওর কাছে সব ওর মা যদি আমাকে পছন্দ না করে তাহলে যতই ওর আমাকে একটু একটু পছন্দ হোক ও ওর ভালোলাগা বিসর্জন দিয়ে দেবে ওর মায়ের পছন্দমত মেয়েকেই ও বিয়ে করবে, আন্টি বলুন আমি কি অসুন্দর আন্টি আপনিই বলুন?
আবির পানি খেতে খেতে বিষম খেলো, হিমালয় হা করে তাকিয়ে আছে,হিমালয়ের মায়ের চোখ ছলছল করছে তিনি অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে বললেন,
—হিমালয় এই কথা বলেছে?
—আন্টি আপনার কি আমাকে দেখে মিথ্যেবাদী মনে হচ্ছে?কোনো মেয়ে কি একটা ছেলের কাছে রিজেক্ট হওয়ার কথা কাউকে বলতে পারে?এর চেয়ে অপমানের কিছু আছে? আন্টি আমার মত একটা ইনোসেন্ট মেয়ে কি মিথ্যে বলতে পারে?বলুন?আপনি আপনার ছেলে কে চেনেন না?
—না না মা আমি তো জানি আমার হিমালয় আমাকে কত ভালোবাসে,
—আন্টি আমি যে আড়াইবার আপনার ছেলেকে প্রপোজ করলাম তা কি বৃথা যাবে আন্টি?
হিমালয়ের বাবা এতক্ষণ অবাকের চরম মাত্রা থেকে বের হয়ে বললেন,
—মা সবই তো বুঝলাম কিন্তু আড়াইবার কি করে প্রপোজ করলে?
—আরে আঙ্কেল দুইবার আমি ডাইরেক্ট প্রপোজ করলাম আর প্রথমবার আমার বান্ধবীকে দিয়ে করালাম হলো না?আড়াইবার?
হিমালয়ের বাবা মাথা ঝাকিয়ে বলল,
—হ্যা তাই তো তাই তো।
—আন্টি,আমার আম্মু নেই আন্টি ইচ্ছে হলেই আমি কাউকে মা বলে ডাকতে পারি না এইটা ওইটা রান্না করে খাওয়ার বায়না করতে পারি না, আমি হিমালয়ের মত ভাগ্যবান নই আন্টি, বলুন আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়নি?
হিমালয়ের মা কেদেই ফেললো তিনি পরম মমতায় মায়াকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন
—খুব পছন্দ হয়েছে মা। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
—আর আঙ্কেল আপনার?
হিমালয়ের বাবা আমতা আমতা করে বললো,
—আমারো পছন্দ হয়েছে আর যাইহোক তুমি সরাসরি আমাদের প্রপোজ করেছো আমরা দুজন যদি এখন তোমাকে রিজেক্ট করি তুমি তো সাড়ে চতুর্থ বারের মত রিজেক্ট হবে সেটা কি ভালো দেখায়!?
—ওয়াও আঙ্কেল আপনি তো খুব ব্রিলিয়ান্ট আমার এরকম ব্রিলিয়ান্ট শ্বশুর এমন সুন্দর শাশুড়ি হবে ভেবেই আনন্দ হচ্ছে
—আমারো খুব আনন্দ হচ্ছে মা আমার বৌমা এত ইনোসেন্ট ভেবেই আনন্দ হচ্ছে
মায়া মুখ টিপে হাসলো,হিমালয় উলটো পথে উপরে চলে গেলো এখানে থাকা মোটেই সুবিধের না।
—আঙ্কেল এবার কাজের কথায় আসি
—ও এতক্ষণেও তুমি তাহলে কাজের কথা বলোনি মা?
—না না সেটা তো আবির ভাইয়া বলবে,আন্টি হিমালয় মনে হয় বাসায় নেই তাই না?
হিমালয়ের মা চোখ মুছতে মুছতে বলল,
—আছে তো মা ও, উপরের ঘরে।
—ওহ থাক আমি আপনার পারমিশন ছাড়া ওর সাথে আর কথা বলব না ও আবার আমায় রাগ করবে
—সেকি! তুমি এবাড়ির হবু বউ তুমি ওর সাথে দেখা করবে না কি করে হয়!
হিমালয়ের মা তার অনামিকায় থাকা একটা আংটি খুলে মায়ার মধ্যমায় পড়িয়ে বলল,
—পাশের আঙুলে আমার ছেলে পড়িয়ে দেবে তুমি উপরে উঠে ডান দিকে গেলেই হিমালয়ের ঘর পেয়ে যাবে যাও মা।আমি চা নাস্তা নিয়ে আসি।
মায়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে, রেহেনা আহমেদ রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।মায়া উপর তলায় উঠে গেলো।
এতক্ষনে হিমালয়ের বাবা সোফায় বসতে বসতে বললেন
—কি হলো বলোতো আবির?এটা কি মেয়ে নাকি তেজস্বী?
—তেজস্বী ই বলতে পারেন আঙ্কেল আপনার বরফের মত কঠিন ছেলে এর প্রেমে গলে পুরো বাষ্প হয়ে উড়ছে, রাতদুপুরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
—কয়েকদিন যাবত আমিও হিমালয়ের পরিবর্তন লক্ষ্য করছি!সিলেট থেকে ফেরার পরই, তা একে তোমরা পেলে কই?
—ট্রেনে বিয়ে থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলো
—হোয়াট?!
—আঙ্কেল,এই মেয়ে একটা হীরে একে ধারণ করার ক্ষমতা সবার নেই হিমালয়ের আছে, আপনারা যে কি পেতে চলেছেন আপনারা নিজেও জানেন না।
—মেয়েটা বুদ্ধিমতী
—উহুহ আঙ্কেল ওর সাথে মিশে দেখবেন মেয়েটা অলরাউন্ডার আর এটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।আঙ্কেল আমি এখানে কেন এসেছি জানেন?আমি বিয়ে করেছি বৌভাতের দাওয়াত দিতে।
—হোয়াট, সত্যি আবির!
—অবাক হচ্ছেন আঙ্কেল?ভাবছেন ড্রাগ এডিক্টেড সেই ছেলে টা সংসার করবে কি করে?
—আমি তোমার জন্য খুবই খুশি মাই সন।ইটস ফিল লাইক এ ম্যাজিক
—এন্ড মায়া ইজ দ্যা ম্যাজিশিয়ান হু হ্যাভ ডান দিস।ইওর ফ্যামিলি ইজ সো লাকি আঙ্কেল,হিমালয় চুজ দা রাইট লাইফ পার্টনার।

চলবে…
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (১১)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১১)

মায়া জ্ঞান ফিরে নিজের ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করলো,বিকেলের কথা সব মনে পড়তেই ও লজ্জা পেয়ে কম্বলের নিজে চোখ বুজে রইলো।দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো,মায়ার বাবা ওর রুমে আসতেই মায়া কম্বলের থেকে বেরিয়ে হাসি মুখে ওর বাবার দিকে তাকালো, মায়ার বাবাও একগাল হেসে বললো,
—আর কতবার জ্ঞান হারাবি জীবনে বলতো?
মায়া হেসে গানের সুরে বললো,
—আমি জ্ঞান হারাবো মরেই যাবো বাচাতে পারবে না কেউ।
মায়ার বাবা হেসে বললেন
—ডক্টর হিমালয় ও না!?
মায়াও হেসে আবার কম্বলের নিচে চলে গেলো
—বাবাই তুমি যাও এখান থেকে আমি লজ্জা পাচ্ছি
—এরকম বলে কয়ে কেউ লজ্জা পায় তোকে দেখে বুঝলাম
—যাওওও তুমিইই
—খাবার পাঠিয়ে দেব?
—না,পরে।
—আজও কি ডাক্তার সাহেব আসবে নাকি।
—বাবাইইই যাওও
—আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি
মায়ার বাবা দরজা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল,
—মায়া
—শুনছি না আমি
—আই এম সরি মা,আমি তোর জীবনটা নষ্ট করে দিতে যাচ্ছিলাম।
মায়া মাথা বের করে বাবার দিকে তাকালো, বিছানা থেকে উঠে বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—শোনো,তুমি আমার কাছে এই পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধ মানুষ, তোমার কোনো ভুল থাকতে পারে না।
—তুই বললেই তো হবে না
—আমি বললেই হবে,
—না
—হ্যা,তুমি ভুল করেছ এটা তোমার শাস্তি আমি যা বলব তাইই হবে
—তা তো এমনিতেই হয়,তুই কত আমার কথা শুনিস!
—কিই বললে!
দুজনেই হেসে ফেললো। মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবার বুকের মধ্যে মাথা রাখলো
—খুবই বাজে অভ্যেস তুই আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছিস।
—চুপ করো তো।এত কথা বলো কেন?
মায়ার বাবা হেসে চুপ করে গেলেন।

মায়ার ফোন আসলো রাত দশটার পরে।মায়া স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে নিজে নিজেই বলল,
—হেহ এখন ফোন করার সময় হইছে, আমার সাথে ভাব নিতেছে হুহ।
কল কেটে যেতেই মায়ার আফসোস হতে লাগলো,ফোন হাতে নিয়ে বসে আবার কল আসার অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু হিমালয় আর ফোন করলো না মায়া নিজ মনে বলতে লাগলো,
—কত্ত খারাপ! মানুষ কত্ত খারাপ আরে এক্সিডেন্টলিও তো মানুষ প্রথমবার রিসিভ করতে না পারে আরেকবার তো কল দিতেই পারে!অদ্ভুত!

মায়ার ফোনে টেক্সট আসলে মায়া ওপেন করে দেখলো লেখা”আমাকে বকাঝকা আর নিজে বিড়বিড় করা শেষ হলে বলো আমি কল করবো”।মায়া একটু আহত হলো এই লোকটা বুঝে গেলো কি করে!মায়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কল করলো, হিমালয় কেটে কল ব্যাক করতেই মায়া ও আবার কেটে কল ব্যাক করলো,
—তুমি ফোন কেটে ব্যাক করলে কেন?
—আপনি করলেন কেন?
—তুমি এমন কেন মায়া?
—যাতে আপনি এই প্রশ্ন করতে পারেন তাই।
হিমালয় চুপ করে রইলো।
—কিই?সাইলেন্ট মুডে চলে গেলেন কেন?
—এখন কেমন আছো?
—আপনাকে বলব কেন?আপনি আমাকে রেখে চলে গেলেন কেন?আপনার উচিত ছিল না আমার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত আমার পাশে বসে থাকা?
—কাল রাতে তুমি ঘুমাও নি একটুও তাছাড়া তুমি মেন্টালি খুব ডিস্টার্ব ও ছিলে এত বড় ডিশিসন নিয়ে তুম টায়ার্ড তাই তোমাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল আমি জানতাম তোমার ঘুম কতক্ষণ নাগাদ ভাঙবে।
—আপনি আমায় ইনজেকশন দিয়েছেন!ইনজেকশন!
—তুমি ইনজেকশন ভয় পাও নাকি?
মায়া আমতা আমতা করে বললো
—নাহ!নাতো!আমি বলতে চাচ্ছি আপনি কেন আমায় ইনজেকশন দেবেন?আমি এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলাম আপনার কি আমার পাশে থাকা উচিত ছিল না?হুম?বলুন?
—তুমি কি এজন্য রাগ করেছ?
—হ্যা আমি খুব রাগ করেছি।
—এরকম বলে কয়ে কে রাগ করে মায়া?
—আমি করি।
—আচ্ছা ঠিকাছে।
—কি আচ্ছা ঠিকাছে!!!আমি রেগে আছি! রাগ ভাঙাবেন না?
—ফোনে ফোনে তো আমি রাগ ভাঙাতে পারি না।
—তাহলে চলে আসুন
—আমি তোমার বাসার নিচে।
—বাসার নিচে ঢুকলেন কিভাবে?
দুজনেই হেসে ফেললো
—এরকম অদ্ভুত কথা পাও কোথায় তুমি?
—আপনি দু মিনিট দাড়ান আমি রেডি হয়ে আসছি।
—না রেডি হতে হবে না গোছানো তুমির থেকে এলোমেলো তুমি আমার বেশি প্রিয়।
মায়ার পুরো শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো, কত সহজ স্বাভাবিক একটা কথা অথচ শুনতে কি ভালো লাগে!
মায়া চুলগুলো হাতখোপা করে একটা হালকা শাল গায়ে জড়িয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালো,দূর থেকে হিমালয় ওর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো হিমালয়ের সামনে দাড়াতেই ওর শরীর কাপতে লাগলো।হিমালয় কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো মায়া তাকাতে পারলো না, ওর খুবই লজ্জা লাগছে, হুট করে মায়া হেসে ফেললো,হিমালয় জিজ্ঞেস করলো,
—হাসছো কেন?
—চলুন আবির ভাইয়াদের বাসায় যাই
হিমালয় অবাক হয়ে বললো
—কেন!
—বাহরে! আমি যে প্রেমে পড়লাম এটা মিষ্টিকে বলতে হবে না?
—এখন কয়টা বাজে তুমি জানো মায়া?
—কত আর? এগারোটার মত।
—আবিরের বাবা মা কি ভাববে বলোতো?
—কি ভাববে?যে আমার ভালো ড্রেস নেই? আরে আমি কি হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকা যে রাতের বেলায় গয়না মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে যাবো?অন্যএকদিন সুন্দর একটা ড্রেস পড়ে গেলেই ওনারা বুঝবেন যে এটা আমার বাসায় পড়ার ড্রেস।
—কিন্তু…
মায়া নাকি সুরে বলতে লাগলো
—ওহ, প্রথম দিনেই আপনি কেন কিন্তু করছেন?এত্ত কিপটা কেন আপনি বলি ওদের বাসায় যেতে কি আপনার গাড়ির তিনমণ তেল পুড়বে?বেশ যেতে হবে না। থাকুন আপনি।
মায়া উলটো পথে হাটা ধরলো,হিমালয় হাল ছেড়ে দিল এই মেয়ের সাথে পারা যাবে না দৌড়ে গিয়ে মায়ার সামনে দাড়ালো,
—ঠিকাছে চলো।
মায়া মুখ ভেংচি দিয়ে বললো
—না আমি রেগে গেছি।
হিমালয় হাসলো মেয়েটা আসলেই পাগল,
—তোমার রাগ কি সরি বললে ভাঙবে?
—না আমার রাগ ভাঙবেও না, ছিড়বেও না।
হিমালয় এক গাল হেসে রাস্তার উপর দুই হাটু গেড়ে কানে হাত দিয়ে বসে মায়ার মুখের দিকে চেয়ে বললো,
—মহারানীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ এই যে আপনার কাছে এই অধম ক্ষমা প্রার্থীএই বিষয় বিবেচনা করিয়া ক্ষমা মঞ্জুর করে আমায় বাধিত করুন।
মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!শুকনো ঢোক গিলে বাচ্চাদের মত হিমালয়ের হাতদুটো হিমালয়ের গালের দুপাশে রাখলো,ওর চোখ ছলছল করছে দেখে হিমালয় উঠে দাঁড়িয়ে বিচলিত হয়ে বললো
—কি হয়েছে মায়া! তুমি কাদছো কেন?
—আই এম সরি।
—কেন!
—আমি তো মজা করছিলাম,
—আমি তো জানি তুমি মজা করছিলে!তুমি কাদছ কেন?
—আপনি এত সুন্দর করে আমার রাগ ভাঙাতে চাইলেন অথচ আমি মিথ্যেমিথ্যি রাগ করে আছি! আমি সত্যি সত্যি রাগ করলে তো, সেই বাঘ আর রাখাল বালকের মত আপনি আমার রাগ ভাঙাবেন না।আপনি তো ভাববেন আমি মজা করছি!
হিমালয় হেসে মায়ার হাত দুটো ধরে বললো,
—তোমার মিথ্যেমিথ্যি রাগ ভাঙাতেও আমার ভালোলাগে, তুমি সত্যি রাগ করলে আমি আরো সুন্দর করে তোমার রাগ ভাঙাবো।
—সত্যি!?
—হ্যা
—আর আপনি রাগ করলে আমি কি করবো?
হিমালয় মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
—শুধু শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরো, ছুটে যেতে দিও না।
মায়া মাথা নিচু করে হাসলো….

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (১০)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১০)

হিমালয়ের হসপিটালের বাইরে মায়া দাঁড়িয়ে আছে…ওর সাথে আছে দিহান আর ধ্রুব কাল রাতের সব কথা ওদের জানিয়েই এখানে নিয়ে এসেছে,সব কথা শুনে দিহান একগাল হেসে বলল,
—হিমালয় তো খুব এডভান্স আমাকে একটা চান্স ও নিতে দিলো না!
ওরা তিনজনই হেসে ফেললো,ধ্রুব মায়াকে বলল,
—এবার বলো তোমার প্লান টা কি?
সেটা ভেতরে গেলেই দেখতে পাবে তুমি শুধু একটু কষ্ট করে সবাইকে ডেকে এক জায়গা করবে আর মহারাজ কে বলবে না আমি এসেছি।ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে বলল
—যো হুকুম মহারানী

হসপিটালের প্রায় সব ডাক্তার নার্স স্টাফদের একজায়গায় দেখে হিমালয় একটু ভ্রু কুচকে তাকালো, পাশেই পুষ্পকে বললো
—কি ব্যাপার বলতো হয়েছে টা কি?
—বুঝতে পারছি না,তুই বেরোচ্ছিস নাকি?
এপ্রোন খুলে হাতে নিতে নিতে হিমালয় বললো
—হ্যা রে কাজেম আঙ্কেল কে একটু দেখতে যাবো
—কথার আব্বু? কেন অসুস্থ নাকি?
পাশে আবির আর নিরব আসতে আসতে বললো
—কথা আর ধ্রুব কে তো দেখছি না
হিমালয় বলল,
—কথা দুপুরেই চলে গেছে কাজেম আঙ্কেল একটু অসুস্থ, বাবাও সকালে শুনলাম যাবেন দেখতে বলছিলো।আর ধ্রুবই তো দেখছি সবাইকে ডেকে ডেকে আনছে।
সবাই একজায়গায় আসতেই ধ্রুবও এসে দাড়ালো।হিমালয় ধ্রুবকে ডেকে বললো
—কি হইছে তোর বিয়ে করবি নাকি?
—হ, কার্ড ছাপানোর টাকা নাই তাই সবাইকে এভাবে ইনভাইট করব।

ভীড় ঠেলে মায়া এসে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে চেচিয়ে বলল,
—এটেনশন প্লিজ…
হিমালয় মায়াকে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লো, সারাদিন ও মায়াকে কল করেনি ও ভেবেছিলো হয়তো মায়াই ওকে কল করে দেখা করার কথা বলবে, কিন্তু এই মেয়ে তো ডাইরেক্ট হসপিটালে চলে এসেছে!
মায়া হিমালয়ের সামনে এসে দাঁড়ায় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে
—আমি সত্যি খুব দুঃখিত আমি জানি আপনারা সবাই খুব ব্যাস্ত সবারই দায়িত্ব আছে আলাদা আলাদা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোনো ইনটেনশন আমার নেই আমি যাস্ট দু মিনিট সময় নেব।
মায়া ভ্রু নাচিয়ে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়।হিমালয় পুরো ভড়কে যায় এ মেয়ে করবে টা কি!
—মিঃআহমেদ আপনি বাস্তবিক আমি ওতোটা বাস্তবিক নই খুবই আবেগী আহ্লাদী একটা মেয়ে, অনেক কিছু বুঝি না বেশিরভাগ কাজই করি না বুঝে এই ধরুন খুশির ঠ্যালায় ঘোরেতে, বিয়ে থেকে পালিয়ে যাই, গান শুনে প্রেম প্রেম পায়,ঘুমের ঘোরে কথা বলি, খাবার না গুছিয়ে দিলে খেতে পারি না, অল্প কথায় আমি কথা শেষ করতে পারি না তাই বড় করেই বলছি। এই এক ঘর, সরি সরি এক হসপিটাল লোকের সামনে বলছি আমি ভালোবাসি আপনাকে যদি আপনার সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাই আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না একদিনও না কিছুতেই না।আপনাকে না পেলে আমি কাদব,আপনাকে পেলে পাওয়ার খুশিতে আমি কাদব, আমি খুব আকড়ে ধরা টাইপ মানুষ মহারাজ একবার যদি আমি আপনাকে আকড়ে ধরি আমার ভালোবাসার যদি শিকড় গজিয়ে যায় তবে কিন্তু আমি আর সেই শিকড় উপড়ে ফেলে বাচতে পারব না।আপনি ডাক্তার হতে পারেন তবে মনে রাখবেন আমার শরীরের থেকে বেশি অসুখ হয় মনে, হুটহাট আমার মন খারাপ হয় অকারণে আমার খুব রাগ হয় অযথাই আমি রেগে যাই তখন কিন্তু আপনার পেসক্রাইব করা ওষুধে আমার রোগ সারবে না, খুব অসুখ করলে আমায় কিন্তু খসখস করে কাগজে কলমে লিখে ওষুধ দিতে পারবেন না ভালোবাসা দিতে হবে পারবেন?সবার সামনে বকতেও পারবেন না।
মায়া হিমালয়ের হাত ধরে এক হাটু গেড়ে বসে পড়ে,
—এবার বলুন বিয়ে করবেন আমায়?ভালোবাসবেন আমায়? ভালোবাসার ওষুধ দিয়ে বাচিয়ে রাখবেন আমায়?আমার মনের ডাক্তার হবেন আপনি?

হিমালয় মিটিমিটি করে হাসছে ওর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে অদ্ভুত ভালোলাগায় ওকে কাবু করে ফেলেছে। বুকের ভেতর চিনচিন একটা ব্যাথা হচ্ছে এই পাগল মেয়ে টা যে ওর সামনে নত হয়ে আছে সারাজীবন ওকে বুকের মধ্যে গেথে রাখতে চায়।
হসপিটালের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে সবাই অপেক্ষা করছে হিমালয়ের জন্য ও কি বলবে শোনার তীব্র আগ্রহ সবার মধ্যে। নিরব এতক্ষণে টের পেলো পুষ্প ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে শক্ত করে বাহু খামচে দাড়িয়ে আছে।
মায়া উঠে দাড়ালো সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মায়া একগাল হেসে বললো,
—এখনই কিছু বলতে হবে না, আপনি বরং ভাবুন ভেবে আমায় জানাবেন। আমি আসছি,
মায়া পা বাড়িয়ে চলে যেতে চাইলেই হিমালয়ের অন্য ছেলে কলিগরা বলে উঠলো
—না!
হিমালয় অবাক হয়ে তাকালো,তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো
—ডক্টর আহমেদ আপনি কোনো ভাবাভাবির সময় পাবেন না এখুনি আপনি যদি ম্যাডামকে জবাব না দেন তাহলে কিন্তু এই ম্যাডামের বাসায় আমি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো
দিহান বলে উঠলো
—এহ আমি সিরিয়ালে আগে আছি
ধ্রুব দিহানের দিকে তাকিয়ে বললো
—এহ তুমি কি আমার আগে আছো নাকি!?
সবাই হেসে ফেললো।
হিমালয়ও হেসে মায়াকে হাতধরে টেনে একদম কাছাকাছি নিয়ে এসে বললো
—তোমাকে তো ছেড়ে দেওয়া হেব্বি রিস্ক হবে কি করি বলো তো
—ধরে থাকুন,
হিমালয় মায়ার কপালে চুমু খেয়ে বললো
—এই ধরলাম আর কখনোই ছাড়বো না

সবাই হাতে তালি দিলো,হিমালয় মায়াকে বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিলো,মায়ার শরীর অবশ হয়ে এলো।
—মায়া,এই মায়া?শুনতে পাচ্ছো?
পুষ্প এগিয়ে এসে বললো
—কি হয়েছে!?
হিমালয় হেসে ফেললো,
—সেন্সলেস হয়ে গেছে।
বলেই হিমালয় মায়াকে কোলে তুলে নিলো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (৯)

0

হঠাৎ_হাওয়া (৯)

রুমে আসার পর থেকেই মায়া বেঘোরে ঘুমুচ্ছে বিকেল পর্যন্ত সবাই ওদের বাসাতেই ছিলো হিমালয় শুধু ওর বাবার সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত কথা বলে তারপর উঠেছে।তনয় মায়ার বাবাকে কিচ্ছুই জানায়নি,ট্রেনেই হিমালয়ের তা সন্দেহ হয়েছিল, হিমালয় কোনোভাবে এক ফাকে ছবি তোলার নাম করে মায়ার ফোন নিয়ে সেখান থেকে ওর বাবার নম্বর নিয়ে সবটা জানিয়েছে, আর ও যে রাতেই ফোন খোলা রাখে সেটাও হিমালয়ই জানিয়েছে।মায়া এখনো সেসব কিচ্ছু জানে না ওর ওসব বিষয়ে কথা বলার কোনো আগ্রহও নেই আসার পর থেকে ও যথেষ্ট স্বাভাবিক ব্যাবহার করেছে। রাত ১০ টা নাগাদ মায়ার ফোনে একটা কল আসলো,ঘুমের ঘোরেই মায়া রিসিভ করলো,ঘুমঘুম ভাব নিয়ে মায়া বললো,
—হ্যালো কে?
—আমি দিহান
—পরে কথা বলব, আমি ঘুমাই।
বলেই মায়া ফোন কেটে দিলো।কিছুক্ষণ পর আবার কল আসলো মায়া রিসিভ করে বলল,
—দিহান প্লিজ আমি এখন ঘুমাই পরে আমি তোমাকে ব্যাক করব।
—আমি হিমালয়।
—ওইতো দিহানের জায়গায় হিমালয় লাগিয়ে বুঝে নিন,আমি ঘুমাবো প্লিজ।
মায়া ফোন না কেটে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। হিমালয় মায়ার ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে বুঝে ফেললো মায়া ঘুমিয়েই পড়েছে।হিমালয় একটু হাসলো। তারপর কল কেটে আবার ব্যাক করলো। মায়া ন্যাকা কান্নার সুরে এবার বলল,
—কি ভাই আপনার সমস্যা কি?আমি ঘুমাইতে চাই বাংলা বোঝেন না?
হিমালয় ধমক দিয়ে বলল,
—হোপ! বলছি না ন্যাকা কান্না কাদবে না ওঠো অনেক ঘুম হয়েছে।
—মহারাজ!
মায়া অবাক হয়ে উঠে বসলো স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তারপর আবার ফোন কানে নিয়ে বলল,
—আপনি আমার ফোন নম্বর কই পেলেন!
—কেন তুমি কি সুপারস্টার নাকি যে ফোন নম্বর পাওয়া যাবে না
—না তা নয় কিন্তু আপনি!
—ওঠো দুপুরে খাওনি এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আমায় কল ব্যাক করো।
—এখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে খাবার দেওয়ার কেউ নেই
—তোমাকে খাবার দিতে হবে তারপর খাবে?
—হ্যা!
হিমালয় ফোন কেটে দিলো মায়া কিছুই বুঝলো না কি হলো। ও বালিশের ওপর উপর হয়ে শুয়ে চোখ বুজে রইলো। কিছুক্ষণ পর আবার রিংটোন বাজতে শুরু করলো ওপাশ থেকে কেউ বললো
—মেইন গেইট খোলো আমি বাইরে।
মায়া কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দৌড়ে বের হলো।ও কল করলেই দারোয়ান কাকা গেট খুলে দিতো কিন্ত সেসব ওর মাথায় নেই ও গেটের সামনে গিয়ে গেইট খুলে দেখলো হিমালয়, মায়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো হিমালয় দ্রুত হেটে গেটের ভেতর ঢুকে পড়লো, মায়া গেট ধরেই দাঁড়িয়ে রইলো, হিমালয় কিছুদূর গিয়ে আবার মায়ার কাছে এসে ওর কবজি ধরে টেনে ভেতরের দিকে নিয়ে গেলো।ডাইনিং রুমে দাঁড়িয়ে মায়াকে বললো
—আলো জ্বালাও।
মায়া ধীর পায়ে হেটে আলো জ্বেলে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো পেছনে ফিরলো না ওর মনে হলো পিছনে ফিরলেই দেখবে হিমালয় নেই সবটা এতক্ষণ স্বপ্নই ছিলো মায়া জড়তা নিয়ে পেছনে ফিরে দেখলো সত্যি সেখানে হিমালয় নেই।হিমালয় রান্নাঘরে ফ্রিজ হাতাচ্ছে,খাবার বের করে ওভেনে ঢুকিয়ে মায়ার সামনে এসে দাড়ালো,এলোমেলো চুল অগোছালো জামাকাপড়ে মায়াকে দেখে হিমালয় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো, ভাবলেশহীন ভাবে মুখ ফিরিয়ে যেতে যেতে বললো,
—তোমাকে খুব ন্যাচারাল লাগছে। ইউ আর লুকিং প্রিটি
মায়া কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হিমালয়ের পিছু পিছু গেলো।নিজের স্বকীয়তায় ফিরে এসে কোমরে হাত রেখে বললো,
—আপনি এত রাতে এখানে কিভাবে!
—এই ধরো প্রথমে বাসা থেকে হেটে নিচে নামলাম তারপর গাড়ীতে উঠে তোমদের বাসার সামনে আসলাম তারপর হেটে তোমাদের বাড়ির ভেতরে।
মায়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
—আমি সেটা জানতে চাই নি।
হিমালয় প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে মায়ার দিকে তাকালো ওর একটা কল আসতেই কপাল কুচকে পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরলো,
—হ্যা কথা বল এত রাতে কোনো দরকার?
—হ্যা,
—যদি খুব ইম্পর্টেন্ট না হয় তাহলে কি কাল সকালে সাক্ষাতে বলবি? আমি একটু ব্যাস্ত আছি
—এত রাতে তুই কিসের ব্যাস্ত?
—আমি একটু বাইরে
—এত রাতে বাইরে কি করিস?
হিমালয় সরাসরি মায়ার চোখের দিকে তাকালো মায়া সেই চোখে চোখ পড়তেই ওর বুক ধক করে উঠলো,
—চাঁদ দেখি।আমি রাখছি।
হিমালয় ফোন কেটে পকেটে রেখে, মায়াকে বললো,
—টেবিলে গিয়ে বসো।

হিমালয় মায়ার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললো,
—মায়া আমি খুব একটা আবেগী নই। তোমার মত তো নয়ই।আমি কারো প্রতি দুর্বল নই শুধু একজন বাদে, আমি আমার মা কে খুব ভালোবাসি আমার বাবা খুব ব্যাক্তিত্ববোধ সম্পন্ন একজন মানুষ আমার আইডল মা সম্পূর্ণ তার বিপরীত অনেকটা বোকাসোকা ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে ওস্তাদ, ছোটবেলা থেকে খুব ইচ্ছে ছিলো ডিফেন্সে জব করব মা চাইলো আমি ডাক্তার হই আমি ডাক্তার হলাম, এই যে সবাই মিলে ঘুরতে যাবো সবার প্লান ছিল দেশের বাইরে যাবো শুধু মা বললো আমাকে সে কিছুতেই দেশের বাইরে যেতে দেবেন না আমি সিলেট চলে গেলাম সবাইকে রাজি করে।

মায়া হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে একবারো চোখ সরিয়ে নিচ্ছে না, মনোযোগ দিয়ে হিমালয়ের কথা শুনছে,
—তুমি কি শুনছো মায়া?
—হু
—আমি খুব বেশি প্রশংসা করতে পারি না।তুমি খুব উৎফুল্ল একটা মেয়ে, খুব চঞ্চল, তবে তোমার মধ্যে মমতা আছে তুমি তোমার আশেপাশের মানুষগুলো নিয়ে ভালো থাকতে জানো।আমি যে তোমাকে ছাড়া বাচব না এমন না তবে আমার তোমাকে দরকার। আমি তোমার মত মেয়ে দ্বিতীয়টা খুজে পাবো না।ওতো ভনিতা আমি করতে পারবো না আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই
—বলুন
—আমি কি সারাজীবন তোমাকে এভাবে খাবার গরম করে খাওয়াতে পারি?বিয়ে করবে আমায়?
মায়া খাবার মুখে নিয়ে বসে আছে চিবুচ্ছে না।শুধু মুখে নিয়েই যাচ্ছে।চোখ বড়বড় করে মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে বসে আছে।হিমালয় হেসে ফেললো।হাত ধুয়ে, মুছে, মায়ার হাতে পানি ধরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,
—এখন কিছুই বলতে হবে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো,তোমার তো ঘুম এসেছে তাই না?
হিমালয় ঠোঁট বাকিয়ে হেসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে চলে গেলো।ও খুব জানে মায়া আর ঘুমাতে পারবে না।মায়া হিমালয়ের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।মুখভর্তি খাবার হিমালয় একবার পেছনে ফিরে মায়ার মুখের দিকে তাকালো ওর খুব হাসি পেলো ও দ্রুত বেরিয়ে গেলো।

চলবে…
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (৮)

0

হঠাৎ_হাওয়া (৮)

হিমালয় কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—যদি কাল নাইটে ফিরে যাই তোদের অসুবিধা হবে?
সবাই হিমালয়ের দিকে তাকালো,কারো মুখ দেখে মনে হচ্ছে না আপত্তি আছে।শুধু কথা উঠে দাড়ালো হিমালয়ের সামনে, হিমালয়ের চোখে চোখ রেখে বললো
—তুই বলেছিলি আগামী চারটা দিন পুরোটা সময় তুই আমাদের সাথে থাকবি।
—আমিই বলেছিলাম তবে চারটা দিন সিলেটেই থাকব এরকম কিছু কি বলেছিলাম?আমাদের সাথে যে মায়াও যে আসবে তা কি জানতাম?এখানে এসে আবিরের বিয়ে হয়ে যাবে তা কি ভেবেছিলাম?এনিওয়ে আমি যেহেতু বলেছিলাম আমি তোদের সাথেই থাকব বাট সেটা ঢাকায় ফিরে। তোদের কারো আপত্তি আছে?
কথা চুপ করে গেলো আর কিছুই বললো। ওদিকে মায়া কেদেই চলেছে, দিহান মায়াকে বারবার থামতে বলছে তাতে মায়ার কান্নার বেগ আরো বেড়ে যাচ্ছে, হিমালয় ভ্রু কুচকে মায়াকে এক ধমক দিয়ে বললো
—চুপ আর একটা বাজে সাউন্ড যেন না শুনি, কি আজকে কি ক্রন্দন দিবস নাকি? এই কয়দিন তো একবারো কাদতে শুনলাম না, সমস্যা কি? এখন কি বাবার ফোন পেয়ে আহ্লাদের ঠ্যালায় কাদতেছো নাকি?
মায়া বড় বড় চোখ করে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যা করে কেদে ফেললো।হিমালয়ের বন্ধুরা সব মিটিমিটি হাসছে শুধু কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে কথা।হিমালয় এবার এগিয়ে গিয়ে মায়ার কবজি ধরে টেনে সেখান থেকে মায়াকে আলাদা নিয়ে এলো।দিহান পিছু পিছু যেতে চাইলে ধ্রুব বাধা দিয়ে বললো,
—বাদ দাও হিমালয় সামলে নেবে।

হিমালয় মায়াকে কর্টেজের অন্যপাশটায় নিয়ে বলল,
—এক্ষুনি থামতে বলেছি কিন্তু, চুপ
মায়ার কোনো ভাবান্তর হলো না
—কি সমস্যা কাদো কেন?
মায়া কাদতে কাদতেই বললো
—আপনি বকেন কেন আমাকে?আপনি জানেন আমার বাবাই কখনোই আমাকে বকে নাই?আপনি সবার সামনে আমায় বকেন!আমার কি প্রেস্টিজ নাই?
হিমালয় হেসে ফেললো,মায়া হিমালয়ের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো,এই লোকটা খুব কম হাসেন অথচ হাসলে কত সুন্দর লাগে তাকে! সে কি জানে!হিমালয় হাসতে হাসতেই বললো
—তোমার বাবা খুব স্মার্ট তাই না?
মায়ার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মুহুর্তেই, মায়া সোৎসাহে বললো
—হ্যা খুব স্মার্ট আর খুব ভালো, আপনি বাবাকে কি বললেন?
—তেমন কিছুই না বললাম পরশু দুপুরে আমরা সবাই তোমাদের বাসায় লাঞ্চ করব।
—এই কথা বললেন?!
—হ্যা কেন?
—বাবা জিজ্ঞেস করলো না আপনি কে!?
—করলো তো
—আপনি কি বলেছেন?
—সেটা আমাদের সিক্রেট তোমাকে কেন বলব?
—আমার বাবা সাথে আপনার কিসের সিক্রেট।
হিমালয় হাসলো,
—তাতো বলব না, আর এখন থেকে আর সবার সামনে বকব না।আড়ালে বকব ঠিক আছে?
সরু চোখে তাকিয়ে বললো
—মানে!?
—মানে কি সত্যিই বোঝো নি? বুঝিয়ে বলব?
মায়া কিছুক্ষণ স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,
হিমালয় মায়াকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো
—শুনেছি কর্টেজের পেছনের দিকটায় অশরীরী না কি যেন দেখা গেছে, তুমি সঙ্গ দিতে চাইলে থেকে যাও।
মায়া দৌড়ে হিমালয়ের আগে সেখান থেকে বেরিয়ে সবার কাছে গিয়ে দাড়ালো।হিমালয়ের মুখ হাসিখুশি মায়ারও।মিষ্টি হয়তো ওদের দেখে কিছু বুঝতে পারলো।আর পুষ্পও, পুষ্প বুঝে একটু হাসলো পরক্ষনেই কথার দিকে তাকিয়ে কি একটা চিন্তায় পড়ে গেলো।কথা হিমালয়ের পাশে গিয়ে দাড়াতে দাড়াতে বললো,
—তোকে খুব খুশি লাগছে মনে হয়।কি ব্যাপার?
—তুই তো আমাকে খুব ভালো বুঝিস তুই বল কি ব্যাপার?
কথা হিমালয়ের দিকে চেয়ে রইলো,কথা সত্যি বুঝতে পারছে না,
—আমি বুঝলাম না তুই বল
—কিছুদিন যাক সবাইকেই বলব।
দিহান মায়ার পাশে এসে দাড়াতে দাড়াতে বললো
—কি ব্যাপার কান্না থেমে গেলো?
—হ্যা।
— কি করে?
—চলতে চলতে তেল শেষ তাই।
—মানে!
মায়া দিহানের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললো
—এত মানে মানে করেন কেন?
—বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে….
—তেজপাতা?
দিহানের কথা শুনে দুজনেই হেসে ফেললো।হিমালয় ওদের দিকে চিকন চোখে তাকিয়ে রইলো।ধ্রুব আর আবির হয়তো বুঝতে পারলো।মিষ্টির হঠাৎ ভয় হলো যদি দিহান মায়ার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে! আবির আর মিষ্টি দুজনেই চিন্তিত ভঙ্গিতে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে ফেললো।ধ্রুব দিহান কে ডেকে বললো,
—দিহান ভাই তুমি আমার পাশে এসে বসো, কি এত হাসির কথা বললে আমরাও শুনি।
হিমালয় ধ্রুবর দিকে তাকাতেই ধ্রুব ইশারায় আশ্বস্ত করলো।

ট্রেনের কামরা পুরো জোৎস্নায় মাখামাখি এত্ত গাঢ় জোৎস্না এর আগে মায়া কখনো দেখেনি! মায়া চোখমুখ উজ্জ্বল করে জোৎস্না দেখছে হিমালয় ওর সামনা সামনি বসা হিমালয়ের পাশেই কথা।মিষ্টি পাশ থেকে মায়াকে বলছে,
—মায়া?
—হ্যা বলো,
—ঢাকায় ফিরে তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে তো?
মায়া মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো,
—সেটা তখন বোঝা যাবে যখন তুমি আমাকে তোমার বৌভাতে ইনভাইট করবে।
মায়া আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো
—কি আবির ভাই? আপনি আমাকে ইনভাইট করবেন নাকি পূর্ব অপছন্দতার জের ধরে বাদ রাখবেন।
আবির হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে তারপর মায়ার দিকে চেয়ে বললো
—তোমার জন্যে বউ পেলাম আর তুমি বৌভাতে দাওয়াত পাবে না তাই হয় নাকি?
মায়া একটু ভাব নিয়ে বললো
—বাহ! কোথায় বিয়ে করে এতদিনে হানিমুন করে ঘরসংসার করার কথা ছিল আমার! আর আমিই বিয়ের ইনভিটিশনে কোথা থেকে সস্তায় গিফট কিনব সেই টেনশনে অসুস্থহ, হাইরে বদনসিব!
বলেই দাতে জিভ কাটলো মায়া, হিমালয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মায়ার দিকে।তারপর শীতল কন্ঠে বললো
—অসুবিধা নেই আশেপাশে এত ডাক্তার তোমার চিকিৎসার খরচ তো বেচে যাবে।
ধ্রুব একটু গলা খাকারি দিয়ে বললো
—বোঝ না কেন মায়া? তোমার তো এই দুনিয়ার বেস্ট একজন হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে পরিচিত হওয়া বাকি ছিলো।
দিহান কথা কেটে বললো
—সেটা কি তুমি?
ধ্রুব উৎসাহ হারিয়ে বললো
—একটু তো ভাব নিতে দে ভাই।
ওমনি সবাই হেসে ফেললো।পুষ্প হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় অবস্থা।মায়া পুষ্পকে বললো
— পুষ্প আপু তুমি গান গাও।
—আমি কেন গান গাইব?তার চেয়ে বরং তুই নাচ কর।তুই তো দারুণ নাচিস
ওমনি সবাই আবার হেসে ফেললো।মায়া মুখ গোমড়া করে বললো
—তোমার মন ভালো করার জন্যই তো ওমন করলাম!যার জন্য চুরি করলাম সেই পুলিশ নিয়ে এলো!হুহ ভালো মানুষের আজকাল এক্কেরে দাম নাই।
পুষ্প মিটিমিটি হেসে বললো
—হয়েছে হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।
পুষ্প এতক্ষণ নিরবের পাশাপাশি বসেছিলো ঘুরে ওর সামনের সিটে বসে নিরবের চোখে চোখ রাখলো, নিরব একটু ভড়কে গেলো।পুষ্প নিরবের হাত দুটো হাতের মধ্যে নিয়ে একটু হাসলো।
মায়া মুখ ঘুরিয়ে বললো
—দেখো সবাই আমি বললাম গান করতে এই ম্যাডাম রোমান্স শুরু করে দিয়েছে।
হিমালয় মায়াকে বললো
নিরব লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
—তুমি তো পুষ্পের চেয়েও বাচাল! এত কথা বলো কেন!
পুষ্প রাগী চোখে তাকিয়ে বললো
—আমি বাচাল হিমালয়!?
হিমালয় ওকে অগ্রাহ্য হ
করে বাইরে তাকালো,পুষ্প কটকট করতে করতে বললো,
—অভিশাপ দিলাম আমার চেয়ে বেশি বাচাল মেয়েটাই যেন তোর কপালে জোটে।
কথা অবাক হয়ে তাকালো,হিমালয় জানালার দিক থেকে মায়ার চোখে চোখ রেখে ঠোঁট বাকিয়ে হালকা হাসলো।পুষ্প নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে গান ধরলো….

এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি..

দেখো ওই ঝিলিমিলি চাঁদ,
সারারাত আকাশে সলমা-জরি
এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি।

জাফরানি ওই আলতা ঠোঁটে,
মিষ্টি হাসির গোলাপ ফোটে
মনে হয় বাতাসের ঐ দিলরুবাতে,
সুর মিলিয়ে আলাপ ধরি।
দেখো ওই ঝিলিমিলি চাঁদ,
সারারাত আকাশে সলমা-জরি
এই মন জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি।

এই রূপসী রাত আর ঐ রূপালী চাঁদ
বলে জেগে থাকো
এ লগন আর কখনো ফিরে পাবে নাকো।
মখমলের ঐ সুজনি ঘাসে,
বসলে না হয় একটু পাশে
মনেহয় মহুয়ারই আতর মেখে,
তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ি
দেখো ওই ঝিলিমিলি চাঁদ,
সারারাত আকাশে সলমা-জরি

এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি,
ও.. এসো না গল্প করি…।

সবাই মুগ্ধ হয়ে পুষ্পের গান শুনছিলো, আবির আড়চোখে মিষ্টির দিকে গানের ফাকে বারকয়েক নজর দিলেও মিষ্টি আবিরের থেকে চোখ সরিয়ে ফেলে নি।নিরব এখনো বিস্ময় নিয়ে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে আছে, ধ্রুব পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বললো
—তুই এত্ত ভালো গান করিস কোনোদিন বলিস নি তো!
—তোরা কোনোদিন জানতে চেয়েছিস?
তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
—এবার মায়া বল কেমন লাগলো?
মায়া খুব মিষ্টি একটা হাসি হেসে বললো
—তুমি যে ধরণের গান করেছো তাতে তো আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
সবাই মায়ার দিকে অবাক হয়ে তাকাতেই বললো
—আরে শান্ত থাকো, এরকম হয় আমাদের মনে কেউ নেই কোনো ছবি নেই তবুও বিশেষ কিছু মুহুর্তে মানুষ একটা অবয়ব তৈরি করে নেয় সে চায় তার নিজসঙ্গ জীবনে কেউ সঙ্গ দিক।
সবাই মায়ার দিকেই তাকিয়ে আছে মায়া ঠোঁট টিপে হেসে এক হাতে মুখ ঢেকে বললো
—প্লিজ এবার আমি লজ্জা পাচ্ছি কিন্তু!
হিমালয় বিড়বিড় বললো তবে সবাই শুনলো
—তুমি লজ্জাও পাও!
মায়ার তেড়ে কিছু বলতে আসার আগেই হিমালয় পেছনে হ্যালান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (৭)

0

হঠাৎ হাওয়া (৭)

রাত অনেক মায়া বাইরের বেঞ্চিতে বসে আছে। পাশে পুষ্প,মায়া পুষ্পের হাতের মধ্যে হাত নিয়ে বসে আছে, পুষ্পের খুব জ্বর। পুষ্প একা একাই এখানে বসে থাকতে চাচ্ছিলো মায়া নাছোড়বান্দা সবাইকে বিদেয় করতে পারলেও ওকে পারে নি তবে পুষ্প খুব বুঝছে ওর বন্ধুরাও আশেপাশেই আছে কেউ ঘুমুতে যায় নি পুষ্প আনমনে একটু হাসলো, মায়া এতক্ষণ পুষ্পের হাতটা ধরে ছিল, পুষ্পের দিকে তাকিয়ে ওর হাসিতে হেসে বলল,
—হাসছ কেন আপু?
পুষ্প মায়ার দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—আমি খুব বিশ্রী একটা মেয়ে তাই না মায়া?
মায়া পুষ্পের থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে চেয়ে বলল,
—আমার থেকেও বেশি?
পুষ্প মায়ার চিবুকে হাত রেখে বলল,
—এত ভালো হয়ে কি হবে? একটু বিশ্রীই ভালো।
বলতেই দুজনে হেসে ফেললো। পুষ্প ছোট করে হেসে বলল,
—গান গাইতে পারো মায়া?
—নাহ, নাচতে পারি নাচবো?
বলেই মায়া এক লাফে উঠে দাড়িয়ে কোমড়ে ওড়না পেচিয়ে হাত পা নেড়ে লাফাতে লাগলো
পুষ্প হেসে ফেললো,হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় অবস্থা মায়া পুষ্পের দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে বলল,
—দেখলে কেমন পারি?
—হ্যা দেখলাম খুব পারো
—এবার তুমি গান শোনাও
—আমি গান পারি তোমাকে কে বলল?
মায়া চোখেমুখে ভাব ফুটিয়ে বলল
—জানো না তো কার সাথে আছো,হেহ
—কে?সবজান্তা সমশের?
মায়া অবাক চোখে চেয়ে বলল,
—সমশের আবার কে?
—কেউ না।
পুষ্প মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো, মায়া পেছনে তাকিয়ে দেখলো মিষ্টি এসে দাঁড়িয়ে পেছনে দিহানও আছে,কথা, আবির,ধ্রুব। শুধু একটু তফাতে নিরব দাড়ানো তার পাশেই সেই লোকটা যাকে মায়া দেখতে চায় না।ধ্রুব আঙুল ইশারা করে মায়াকে চুপ থাকতে বললো।মায়া চোখ সরিয়ে পুষ্পের দিকে চাইলো।
পুষ্প চোখ বন্ধ করে গান গাইলো,

সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না।
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা?
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।।
সবাই তো সুখী হতে চায়

আশায় আশায় তবু এই আমি থাকি,
যদি আসে কোনোদিন সেই সুখপাখি ।।
এই চেয়ে থাকা আর প্রাণে সয় না।।
সবাই তো সুখী হতে চায়

ভালোবেসে সুখী হতে বলো কে না চায়?
রাধা সুখী হয়েছিল সেই শ্যাম রায়। ।
আমিও রাধার মতো ভালোবেসে যাবো,
হয় কিছু পাবো নয় সবই হারাবো
এই চেয়ে থাকা আর প্রাণে সয় না।।

সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না।
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা?
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।।
সবাই তো সুখী হতে চায়……।

পুষ্পের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে অনবরত ওর বন্ধুরা স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে,পুষ্প যে এত ভালো গান করে ওদের জানা ছিলো না!হিমালয় এই প্রথম পুষ্পের কষ্টের গাঢ়ত্ব বুঝতে পারলো আবির আর ধ্রুবও মমতা নিয়ে মেয়েটিকে দেখছে ওরা জানতো পুষ্প বরাবরের জেদী, অহংকারী আর বাচাল একটা মেয়ে।নিরব একমনে চেয়ে আছে এই মুহুর্তে ওর মনে হচ্ছে পৃথিবী আর কোনো মানুষ এত গুরুত্বপূর্ণ না ওর সামনে থাকা মেয়েটি থাকলেই চলবে।নিরব ছোটো করে নিঃশ্বাস ফেলে পুষ্পের সামনে গিয়ে দাড়ালো,পুষ্পের সামনে দুহাটু গেড়ে বসলো। পুষ্প চোখ খুলে দেখলো ওর সামনে সেই প্রতিক্ষিত মানব,নিরব এবার মুখ খুললো এতক্ষণে ও নিরবতা ভাঙলো।পুষ্পের হাত দুহাতের মধ্যে নিয়ে বললো,
—তোমার খুব জ্বর পুষ্প।
পুষ্প মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো, মায়া আস্তে সেখান থেকে উঠে দূরে গিয়ে দাড়ালো,দিহান মায়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো
—তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে
মায়া দিহানের দিকে না তাকিয়েই বলল
—ট্রাজেডি শেষ এখন ক্লাইম্যাক্স চলছে কথা পরে চুপচাপ দেখে যান।
দিহান হা হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর নিরব আর পুষ্পের দিকে তাকালো।হিমালয় আড়চোখে দিহান আর মায়াকে দেখছে মায়া এখনো একবারো হিমালয়ের দিকে তাকায়নি।
পুষ্প নিরবের দিকে না তাকিয়ে বললো
—আমার জ্বর সেটা আমি মনে হয় বুঝি।আমি অবুঝ নই
—আমি কখনোই জানতাম না তুমি এতটা অবুঝ।
পুষ্প নিরবের দিকে তাকালো,নিরব পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বললো
—তুমি একটা পাগল মেয়ে পুষ্প, তুমি এমন একজন কে ভালোবাসছ যে সম্পূর্ণ তোমার বিপরীত।
—আমি দুঃখিত আমি ভুল করেছি, আমার কোনো অনুভূতি যদি তোমাকে কোনোভাবে হার্ট করে থাকে দেন আই এম রিয়েলি সরি প্লিজ গেট লস্ট।
পুষ্প নিরবের হাত থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিতে চেয়েও পারলো না।নিরব হালকা হেসে বলল,
—আমি হাত ধরেছি ছেড়ে দেব বলে না।
পুষ্প নিরবের দিকে তাকালো,মায়া খুশিতে বাকবাকুম করছে ওর চোখ ছলছল করছে হাত পা কাপছে অদ্ভুত ও এরকম কেন করছে! মায়ার চোখমুখ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।নিরব পুষ্পের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—সরাসরি বিয়ে করবে নাকি প্রেম করার ইচ্ছে আছে?
—তুমি কি আমাকে প্রপোজ করছ?
—সেরকম মনে হচ্ছে?
—এটা প্রপোজ?
—না, প্রপোজ করলে ডিনাই করে দেওয়ার চান্স থাকে এখানে তা নেই শুধু দুটো অপশন আছে।কিছুক্ষণ শান্ত চোখে চেয়ে হুট করে পুষ্প নিরবের চুল টেনে ওর বুকে কিল ঘুষি মেরে বলল,
—বেয়াদব, আই হেট ইউ আমাকে এত্ত কষ্ট দিলে তুমি…
আবির কথা দৌড়ে গিয়ে পুষ্প কে থামিয়ে কথা বলছে
—তুই তো খুব দস্যি মেয়ে, এই ভালোবাসা না পেয়ে মরে যাচ্ছিলি এখন ভালোবাসা পেয়ে ওকে মেরে ফেলছিস!
সবাই হেসে ফেললো….।ধ্রুব পুষ্পের কাছে এসে বললো
—এত স্মার্ট একটা ছেলে রেখে তোর চোখে নাকি এই গবেট টাই পড়ল! অদ্ভুত!
সবাই আরেক দফা হেসে নিলো।মিষ্টি সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো অদ্ভুত ভালোলাগা ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো! দিহান মায়ার হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো, হিমালয় ব্যাপারটা খেয়াল করলো,
—মায়া শোনো কথা টা খুব ইম্পর্টেন্ট
—আরে কি কথা?
—আমি বুঝলাম না তুমক এদের কি হও?
—এটা জরুরি কথা?
—হ্যা
—কেউ না।
—মানে?
—মানে আমি বিয়ে থেকে পালিয়েছিলাম এরা আমাকে সঙ্গে নিয়েছে
—কি!
—আপনার মানে কি পরে শুনবো এখন ওদিকে চলুন।
দিহান কিছুক্ষণ মুর্তির মত দাঁড়িয়ে থেকে আবার সবার সাথে যোগ দিলো।সবাই বেশ জমজমাট আড্ডা শুরু করেছে, পুষ্প অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেছে। হুট করে মায়ার ফোনে একটা কল এলো।সবাই চুপ হয়ে গেলো,মায়া শুধু রাতের বেলায় ফোন অন রাখে বাকিটা সময় অফই রাখে।মায়ার খুব নার্ভাস লাগছে ও কলটা রিসিভ করে বললো
—হ্যালো
ওপাশ থেকে মায়ার বাবা বললেন
—মামনি?
মায়া ঠোট বাকিয়ে ফেললো সবাই মায়ার দিকেই চেয়ে আছে।
—বাবাই
—তুমি এমন কেন মায়া?
মায়া ফুপিয়ে কেদে উঠলো তারপর খুব ছোট্ট করে বলল
—আই এম সরি।
—তুমি কোথায়?
—সিলেটে
—তুমি কেমন আছো মা?
মায়ার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো,মায়া হাউমাউ করে কাদতে কাদতে বললো
—আমি তোমার কাছে যাবো বাবাই এক্ষুনি যাবো তুমি আমাকে নিয়ে যাও বাবাই।
স্পবাই হতভম্ব হয়ে গেলো।হিমালয় শুধু উঠে গিয়ে মায়ার কান থেকে ফোনটা নিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাড়ালো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (৬)

0

হঠাৎ_হাওয়া (৬)

জাফলং ডাওকি নদীর দিকে এক মনে চেয়ে আছে মায়া,নদীর তলানি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে,হিমালয় মায়াকে ডেকে বললো
—চলো যাবে না?
—কোথায়?
—চা বাগান দেখে আসি
মায়া ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। হিমালয় ভ্রু কুচকে বলল,
—আবার কি হলো?
—আপনার চিন্তা হচ্ছে না?
—কি জন্য?
—এই যে পুষ্প আপু আমাদের সাথে এলো না ওর তো জ্বর
—তুমি ভুলে যাচ্ছ ও নিজেই একজন ডাক্তার, তাছাড়া…
মায়া হিমালয়ের সামনে থেকে হাটা ধরলো, হিমালয় বড়সড় একটা লেকচার দিবে ভাবছিল ও একটু আহতই হলো মেয়েটা ওকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে চলে গেলো! হিমালয় আহমেদ কথা বলছে সে কথা শেষ হওয়ার আগেই মেয়েটা চলে গেলো!হিমালয় মায়ার পাশে হাটতে হাটতে বললো
—কি হলো!?
—আপনার যুক্তি তর্ক দিয়ে বোঝানো কথা এই মুহুর্তে আমার একটুও শুনতে ইচ্ছে করছে না লেকচার শোনার মুডে আমি মোটেও নেই।
হিমালয় মেয়েটার দিকে তাকালো,আর ভাবলো এরকম অনেক লেকচার ও কথার সামনে দিয়েছে কথা কোনোদিন বলে নি হিমালয় থাম আর শুনতে ইচ্ছে করছে না! আর এই মেয়েটা কিনা ওকে সরাসরি বলছে! অথচ মায়ার এই ক্যারেক্টার টাই ওর ভালোলাগছে! এই মেয়েটার সাথে হিমালয়ের কথা বলতে ইচ্ছে করছে! মায়ার তাচ্ছিল্য কে অগ্রাহ্য করে হিমালয় বললো
—তুমি এখন কিসের মুডে আছো?
—ওই কাচের নদীতে নৌকা নিয়ে ভাসতে।
বলেই মায়া দৌড়ে কথার সাথে হাটতে লাগলো, কথা আর দিহান টুকটাক আলাপ করছিলো,
দিহানের আব্বু আম্মু আজ সকালেই ঢাকায় চলে গেছে মিষ্টি দিহানকে যেতে দেয় নি দিহান নিজেই অবশ্য মিষ্টি কে এভাবে একা রেখে যেতে চায় নি।দিহানের আব্বু আম্মু যাওয়ার পরই ওরা জাফলং এর জন্য বেরিয়েছে, শুধু পুষ্প আসেনি, পুষ্প বললো ওর নাকি জ্বর ও আজ কোথাও বের হবে না অল্প রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে আর কেউ যেন ওর জন্য ঘোরাঘুরি বাদ না দেয় তবে ও রেস্ট না নিয়ে সবার সাথে যাবে এতে যা হয় হবে, সাধারণত পুষ্প কখনো কঠিন কথা বলে না তবে আজ ওর কথাগুলো খুব কঠিন লাগছিল।
মায়া ওদের পাশে গিয়ে হাটতে হাটতে বললো,
—তোমরা কি কথা বলো?
কথা দিহান দুজনেই হেসে ফেললো, কথা বললো
—আমরা বলছিলাম আমাদের দেশে যেমন এই যে পাথর তোলা হচ্ছে এখান থেকে এভাবেই খনি থেকে সোনা তোলা হয়।
মায়া মুখ বাকিয়ে বলল,
—ওও এই কথা
দিহান হেসে বললো
—তুমি কি কথা বলতে চাও?
—আমি বলতে চাই মিষ্টি এই পাথর, বালি পার হয়ে হাটতে পারছে না,আবির ভাইয়া মিষ্টি আপুকে হাত ধরে নিয়ে এই পথটুকু চাইলেই পাড় করতে পারে,পুষ্প আপুর জ্বর হলো নিরব ভাইয়া চাইলেই আমাদের কিছু না বলে হুট করে রিসোর্টে ফিরে যেতে পারে, অদ্ভুত এসব কিছুই হচ্ছে না!
কথা আর দিহান একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। দিহান কথাকে অতিক্রম করে একবার মায়ার দিকে তাকালো ওর চিন্তাভাবনা সীমিত ও সারা বিশ্ব নিয়ে ভাবছে না ও ভাবছে ওর আশেপাশের মানুষগুলো নিয়ে! ওর চিন্তাভাবনা বিস্তর নয় কাছের মানুষগুলোর কষ্টটাই ওর কাছে বিশাল!ধ্রুব মায়ার পাশে এসে বললো
—কি ব্যাপার আমাদের চুমকি রাগ কেন?
—রাগ নয় বিরক্ত
—কেন বিরক্ত কেন?
—খুবই বাজে অবস্থা বুঝেছ ধ্রুব আমরা মানুষ খুবই স্বার্থপর প্রাণী এই যে আমরা যা কিছু করি নিজের জন্য করি।
ওরা সবাই চা বাগানের পাশে এসে একসাথে দাড়ালো, বাগানে কেউ ঢুকছে না সবাই মায়ার কথা শুনছে, মায়া ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বলল,
—আমরা সহজ জিনিসও খুব জটিল করে ফেলি দু কদমের দূরত্ব আমরা কিছুতেই পাড় হতে পারি না! অল্প একটু আত্নমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে আমরা পাশের মানুষটার হাতটা ধরতে পারি না! কাঙ্খিত মানুষটাকে আপন করার জন্য আমরা ঠুনকো নিয়ম ভাঙতে পারি না বরং ইট কাঠ পাথর জোগাড় করে দেই সামনের মানুষটাও যাতে ভাঙতে না পারে।আমরা তাই করি যা করতে চাই বাদবাকি কোনো কারণ ই কারণ নয় ওগুলো সব বাহানা।অদ্ভুত! খুবই অদ্ভুত!
সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে মায়ার কথাগুলো কানে ঢুকালো এক বার করে নিজের সাথে মিলিয়ে নিলো,মেয়েটার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।নিরব ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ভাবলো ও চাইলেই পুষ্পকে একটা অন্তত কল করতেই পারে। আবির মিষ্টি চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো।কথা হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।হিমালয় পকেটে দুটো হাত ঢুকিয়ে মুখ ফিরিয়ে রইলো অন্যদিকে মনোযোগ মায়ার কথাগুলোতে ও ভেবে নিয়েছে কি করতে হবে।
মায়া বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধ্রুবর হাতে ক্যামেরা টা দিয়ে বাগানের মধ্যে দৌড় লাগালো,
—অযথা হা করে তাকিয়ে না থেকে ছবি তোলো, ধ্রুব।

চা বাগান থেকে ঘুরে ওরা নৌকা করে নদী পার হলো পাশের মার্কেট এ ঢুকলো, নিরব উশখুশ করছে তবে ফিরে যাওয়ার কথা কাউকে বলতে পারছে না।মিষ্টি দিহানের পাশাপাশি হাটছে, দিহানের জ্যাকেটের হাতা দুহাতে ধরে বলছে
—এই ভাইয়া
—বলতে থাক শুনছি
—ওই
—আরে বল, খুত খুত করছিস কেন?
—ওয়াশরুমে যাবো।
—কিইহ!
—হুউ
—এখানে ওয়াশরুম কোথায়?
—তুই দ্যাখ,
—তোর বরকে বল যা ফোট
মিষ্টি দিহানের হাত ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বের হওয়ার সময় ওদের খেয়াল হলো মিষ্টি সাথে নেই! দিহানের মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল একটা স্রোত বেয়ে গেলো ও জানে মেয়েটা কত জেদী কত অভিমানী, আবির আর দিহান কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না দুজনেরই খুব অপরাধবোধ হচ্ছে,কোথায় খুজবে ওরা বুঝতেও পারছে না।মায়ার মেজাজটা চরম খারাপ হচ্ছে এদের সাথে ওর একটুও থাকতে ইচ্ছা করছে না প্রত্যেকটা মানুষ খুব ভণিতা করতে পারে এরা কেন সহজ হতে পারছে না! মিষ্টি কিছুক্ষণ বাদে হাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে ফিরে গেলো।দিহান খুব রেগে মিষ্টির মাথায় টোকা মেরে বলল
—কই গেছিলি?
মিষ্টি দিহানের দিকে না তাকিয়ে বললো
—আমার না বিয়ে হয়ে গেছে?সো তুই আর আমার সাথে কথা বলবি না, তোকে আমি কোনো উত্তরই আর দেব না আমার থেকে দূর হ।
আবির এগিয়ে এসে মিষ্টির সামনে দাড়ালো মিষ্টি মাথা নিচু করে ফেললো, আবিরেরও খুব রাগ হচ্ছে ও রাগ দমিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল,
—আমায় বলো কোথায় গেছিলে?
—প্রথমে গেছিলাম পাশের একটা হোটেলে ওয়াশরুমে যেতে, তারপর ফেরার পথে আমার ছেলের জন্যে আর তার বউয়ের জন্যে দুটো শাল কিনলাম।
সবাই হা হয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো! দিহান চেচিয়ে বললো
—তোর আবার ছেলে কিসের!
মিষ্টি মুখ ঘুরিয়ে রইলো
আবির বললো,
—বুঝিয়ে বলো
—আপনার আব্বু আম্মুর জন্য।
আবির এবার খুব লজ্জা পেয়ে গেলো, ওর আব্বু আসলে একটু বাচ্চাসুলভ কেউ কোনো গিফট দিলে খুব খুশি হয় অথচ ও কখনোই বাবার জন্যে কিচ্ছু কেনে না এই মেয়েটা কিনেছে! মায়া এবার অধৈর্য হয়ে বললো,
—ধ্রুব তুমি কি একবার পুষ্প আপুকে কল করবে?আমার কাছে নম্বর নেই।
মায়ার কন্ঠে রাগ স্পষ্ট। ধ্রুব অনেকবার কল করলো কিন্তু পুষ্প রিসিভ করলো না। নিরব অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।মায়া সকলের দিকে একবার নজর দিয়ে বললো,
—আপনারা তো এখন নাস্তা করবেন তাই না? প্লিজ কন্টিনিউ।আমি রিসোর্টে ফিরে যাচ্ছি।
বলেই মায়া আর কাউকে কিচ্ছু না বলে সেখান থেকে চলে এলো।
হিমালয় অনেকবার মায়াকে ডাকলো মায়া কথা শুনলো না।হিমালয় দৌড়ে মায়ার হাত ধরে বললো,
—কি সমস্যা তোমার?
—কোনো সমস্যা নেই
—তুমি কি ভাবছ, পুষ্পের জন্য তোমার একারই কষ্ট হচ্ছে? তুমি কি বাড়াবাড়ি করছ না?! তুমি ভুলে যাচ্ছ পুষ্প আমাদের বন্ধু তোমার কেউ না, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না মায়ের চেয়ে মাস্যার দরদ বেশী?
মায়া অবাক হয়ে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো এত কঠিন কথা ও কোনো দিন শোনে নি ওর মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো, নিঃশ্বাস ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে, সবার সামনে হিমালয় ওকে এতগুলো কথা বললো! হিমালয় মায়ার হাত তখনো ধরে ছিলো, হুট করে মায়া সব শক্তি হারিয়ে ফেললো ওর শরীর অবশ হয়ে মায়া জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।হিমালয় মায়াকে পড়ার আগেই ধরে ফেললো, মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে ওর খুব মায়া হলো ও একটু বিব্রত বোধ করলো আসলেই তো ও এতগুলো কথা মায়াকে কেন বললো!ওর বন্ধুরা সবাই ছুটে এলো, সবাই বিশেষ করে মিষ্টি মায়ার জ্ঞান ফেরানোর জন্য অস্থির হয়ে পড়লো।হিমালয় সবাইকে সরিয়ে হালকা করে পানির ঝাপটা দিলো মায়ার মুখে।কিছুক্ষণ পর মায়া জ্ঞান ফিরে নিজেকে হিমালয়ের বাহুতে আবিষ্কার করলো।ও আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—আমি ঠিক আছি, প্লিজ আমি ফিরতে চাই।
ধ্রুব কিছু বলতে গেলেই মায়া থামিয়ে বলল,
—প্লিজ ধ্রুব, প্লিজ।

রিসোর্টে ফিরতে ফিরতে বিকাল প্রায় শেষের পথে ওরা দেখলো পুষ্প একটা কম্বল গায়ে জড়িয়ে বাইরে বেঞ্চিতে বসে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে চা বা কফি জাতীয় কিছু খাচ্ছে।নিরব ব্যাস্ত ভঙ্গিতে পুষ্পের কাছে গিয়ে বললো,
—কি ব্যাপার তুই ফোন কেন রিসিভ করছিস না?
পুষ্প নিরবের কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলো।মায়া এগিয়ে গিয়ে দেখলো পুষ্পের চোখমুখ ফুলে লাল হয়ে আছে।মায়ার হঠাৎ খুবই কান্না পেয়ে গেলো ও পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো, কে তা ও নিজেও বুঝলো না! পুষ্পও মায়াকে দু হাতে জড়িয়ে ধরলো ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল,
—তুমি কি জানো মায়া যখন কথা তোমাকে নিয়ে ট্রেনের কামড়াতে ঢুকলো আমার খুব রাগ হচ্ছিলো!আজব তো! তুমি কাদছ কেন পাগল মেয়ে?
মায়া ফোপাতে ফোপাতে বলল,
—তুমি আগে বলো তুমি কেনো কেদেছো?
নিরব এবার পুষ্পের মুখের দিকে তাকালো এতক্ষণে বুঝলো ওকে কতটা ক্লান্ত লাগছে!
— তুমি আমার থেকেও বেশি বাচাল আমার থেকেও তুমি বেশি ছেলেমানুষ,মায়া, এই মায়া?
মায়া কিছু বললো না অবিরত কাদতে লাগলো, হিমালয় বুঝলো মেয়েটা খুব অভিমান করেছে সহ্য করতে পারছে না। হিমালয়ের বন্ধুরা সবাই অবাক হয়ে মায়াকে দেখছে মেয়েটা এমন কেন!

চলবে…
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (৫)

0

হঠাৎ_হাওয়া (৫)

হিমালয় আর আবির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, হিমালয় সবসময় আবিরকে সাপোর্ট করেছে সবটা ক্ষেত্রে হিমালয় কে কিছু না বলতে দেখে আবির একটা সিগারেট জ্বালালো,লম্বা একটা টান দিয়ে আকাশে ধোয়া ছেড়ে বলল,
—কিছু বলবি?
—বুঝতে পারছি না, মানে তুই বিয়ে করে ফেলেছিস তুই!
—বিশ্বাস হচ্ছে না তাইনা?অথচ আমার পক্ষের সাক্ষী তুই।
—হচ্ছে,
তারপর কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ থাকার পর হিমালয় বলল,
—তুই সবটা মানিয়ে নিতে পারবি,সবটা ভুলে নতুন করে শুরু করতে?
—সিগারেট খাবি?
—কথা চেঞ্জ করিস না, তুই জানিস আমি এসব খাই না।
—তুই তো আমাকে আমার চেয়ে বেশি চিনিস তুই বল পারব কি না?
হিমালয় চুপ করে থেকে বলে উঠলো
—আমি জানি তুই পারবি।চল মিষ্টির কাছে যাবি।

প্রায় মাঝরাত দিহান ওদের রিসোর্টের সামনে একটা বেঞ্চে বসে আছে। পাশে মিষ্টি নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে দিহানের খুবই কষ্ট হচ্ছে মিষ্টির কষ্ট ও কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।কিছুক্ষণ বাদে মায়া,হিমালয় আর ওর বন্ধুরা সবাই ওদের কাছে এলো আবির মিষ্টির কাছে গিয়ে ওর সামনে আবিরের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
—আমার আব্বু তোমার সাথে কথা বলতে চায় তুমি কি একটু কথা বলবে?
মিষ্টি হাত বাড়িয়ে ফোন টা নিয়ে কানের কাছে ধরলো কান্না সামলে বলল,
—হ্যালো
ওপাশ থেকে আবিরের আব্বু বলল,
—কি কারণে কি হয়েছে আমি কোনোদিন জানতে চাইবো না, আমার একটাই ছেলে ওর জীবনেও দূর্ঘটনা ছিল, আমার মা বেচে নেই এতই হতভাগ্য ভেবেছিলাম একটা মেয়ে হলে তাকে মা ডাকবো তা বাদ দিয়ে ওই গাধার বাচ্চাটা জন্ম নিলো,
মিষ্টি হেসে ফেললো সাহস নিয়ে বলল,
—গাধা টা তবে কে?
এপাশ থেকে সবাই মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,আবিরের বাবা বলল,
—আমার মা তো খুব কথা জানে,তুই হবি আমার মা?
মিষ্টি এবার কেদে ফেললো
—উহু কান্নাকাটি করা যাবে না চোখ মুছে ফেলো সময় নাও তারপর তোমার বাড়ি ফিরে এসো আমি আমার মায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবো।
কল কেটে মিষ্টি মাথা নিচু করে রইলো,ধ্রুব একটু রসিকতা করতে বলল,
—পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এত মানুষের কার্বন ডাই অক্সাইডে তোমরা সবাই একটু জায়গা টা খালি করে দাও আবির আর মিষ্টি একটু অক্সিজেন নিক।
দিহান কিছু না বলে আস্তে উঠে দাড়ালো সবকিছু এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছে যে আসলেই বিব্রতকর।দিহান আবিরের সামনে দাড়িয়ে বলল,
—আমি জানি না ঠিক করেছি না ভুল প্লিজ আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিও না, ছোট থেকে ওকে কক্ষনো কোনো কষ্ট দেই নি ওর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না।
হিমালয় এবার এগিয়ে দিহানের কাধে এক হাত রেখে বলল,
—ও জীবনে এত বড় কষ্ট পেয়েছে যে আর কাউকে কষ্ট দেওয়ার ক্ষমতা ওর নেই।
কথা এগিয়ে গিয়ে বলল,
—চলো আমরা বরং ভেতরের দিকে গিয়ে কথা বলি।

দিহানের সাথে এতক্ষণ সবাই ভাব জমিয়ে ফেলেছে, কথায় কথায় জানা গেলো পুষ্প আর দিহান দুজনেই উত্তরা ৯ নং সেক্টরে থাকে অথচ পরিচিত হলো এখানে এসে। নিরব আড়চোখে দেখছে পুষ্প ওর দিকে একবারো তাকাচ্ছে না মেয়েটা খুব জেদী।সবাই কথা বলছে শুধু মায়া চুপচাপ, একফাকে মায়া উঠে পাহাড়ের কিনারে গিয়ে দাড়ালো ওর দৃষ্টি বহুদূরে ভাবনা এলোমেলো, ওর খুবই কান্না পাচ্ছে।হিমালয় মায়ার পাশে গিয়ে দাড়ালো, মায়ার বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে, হিমালয় আশেপাশে থাকলেই ওর এরকম লাগে কেমন জানি হিমালয়ের সামনে ওর কষ্টগুলো ঝেড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
—এখানে কি করো
—দাঁড়িয়ে আছি
—ও আচ্ছা আমি তো দেখতেই পাই নি দাড়িয়ে আছো।
মায়া চুপ করে রইলো, হিমালয় মায়ার দিকে তাকালো,তারপর বলল,
—তোমার হাতটা দাও তো
মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে হিমালয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো,
হিমালয় মায়ার হাত ওর হাতের মধ্যে নিয়ে দেখলো খুবই ঠান্ডা, হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
—কোনো সমস্যা?টেনশন করছ কেন?
মায়া জোড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—টেনশন করছি না, ভাবছি।
—ও আচ্ছা, টেনশন করছ না ভাবছো খুবই ভালো।
—আপনি কি ডাক্তার?
—কেন বলো তো?
—না তখন দেখলাম মিষ্টির ভাইকে কি যেন সাজেস্ট করছিলেন মিষ্টি সেন্সলেস হয়ে গেছে বলে, যদিও তখন স্পষ্ট শুনিনি।
হিমালয় হালকা হেসে বললো,
—আমরা ছয় জনই ডাক্তার একই মেডিকেল কলেজ থেকে গতবছর পাশ করেছি।
মায়া অবাক হয়ে হিমালয়ের দিকে তাকালো, তারপর বিস্ময় নিয়ে পেছনে ঘুরে আড্ডায় মশগুল হিমালয়ের বন্ধুদের দিকে তাকালো
হিমালয় হাসিমুখে বলল,
—এত অবাক হচ্ছ কেন! কোনোদিন ডাক্তার দেখো নি?
মায়া আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
—আমি কাল থেকে এতগুলো ডাক্তারের সাথে আছি!
—তুমি এমন ভাবে বলছ যেন তুমি খুনীদের সাথে আছো!
মায়া মুখ ফিরিয়ে খুশি খুশি ভাব নিয়ে বললো
—যাক সারাজীবনে আর চিকিৎসার জন্য কোনো খরচ করতে হবে না।
হিমালয় অদ্ভুত ভাবে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো এই মেয়েটার কণ্ঠে অদ্ভুত মাদকতা আছে, হিমালয় প্রতিবার চুম্বকের মত মেয়েটার দিকে আকর্ষিত হয়, এই মেয়েটার সঙ্গ পেতে ওর ভালোলাগে মেয়েটার বাচ্চা স্বভাব মেয়েটার গুরুগম্ভীর কথা সব হিমালয়ের ভালো লাগে!

মিষ্টি কাচা হলুদ রঙের জামদানী পড়েছিল চিকন সবুজ পার, ম্যাচিং ব্লাউজ, হাত ভর্তি সোনার চুড়ি,কানে ছোট্ট সোনার দুল ব্যাস এটুকুই ওর বিয়ের সাজ! কত্ত দামী শাড়ি কত ভারী গহনা কত্ত সরঞ্জাম বিয়ের জন্য কত্ত প্লান অথচ ওর বিয়েটা নাকি এভাবে হলো! নিজের জন্যেই ওর মুখে এক টুকরো তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো, শাড়ির আচল ঘাড়ের উপর তুলল একটু কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। আবির পাশে বসা মেয়েটাকে এবার চেয়ে দেখলো,
—তোমার কি ঠান্ডা লাগছে?
মিষ্টি মাথা নিচু করে বসে রইলো, এমনিতে আবির রগচটা খুব অথচ একটা মেয়ে সমানে ওকে ইগনোর করছে আর ওর রাগ হচ্ছে না অদ্ভুত!
—মিষ্টি আমি তোমার সাথে কথা বলছি
—বলুন, আমি শুনছি
—তোমার কি ঠান্ডা লাগছে?
মিষ্টি খুব কান্না পেয়ে গেলো গলায় কান্না আটকে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
—না।
—ঘরে যেতে চাও?
—আমি আপনার বাসায় যেতে চাই
—তুমি আমার বাসায়ই যাবে, আমরা এখানে ৪ দিনের প্লান করে এসেছিলাম আজ সকালেই এলাম, আমি যদি কাল চলে যেতে চাই ওদেরও ফিরে যেতে হবে।
—বেশ তাহলে চারদিন পরই যাবো।
—ধন্যবাদ
মিষ্টি শব্দ করে হেসেই কেদে ফেললো তারপর বললো
—আপনাকে ধন্যবাদ আমার পরিবারের সম্মান বাচানোর জন্য আমাকে দয়া করার জন্য।
আবির মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল
—আমি কাউকে দয়া করি নি
—তাহলে কি করেছেন? একপলক দেখেই নিশ্চয়ই আপনি আমাকে ভালোবেসে ফেলেন নি।
—না।এমনকি আমি আর কোনোদিন কাউকে ভালোবাসতেও পারব না।
—তাহলে?
—আমি জানিনা।
—বেশ কোনোদিন জানলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন।
—আমি জানি অল্প কিছু সময়ে তোমার পুরো পৃথিবীটাই পালটে গেছে স্পব মেনে নিতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে
—অদ্ভুত! আপনার সব মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে না!
—না আমার আর কষ্ট হয় না।
মিষ্টি এবার আবিরের দিকে তাকালো ওর পাশে বসে থাকা লোকটি এখন ওর স্বামী দেখতে নিঃসন্দেহে সুপুরুষ,ব্যাক্তিত্বও অসাধারণ লোকটির! অথচ তার চারপাশে অদৃশ্য দেয়াল সে তুলে রেখেছে যা কেউ অতিক্রম করতে পারে না!আবির পরিবেশ হালকা করতে রসিকতার সুরে বললো
—এভাবে তাকিয়ে থেকো না প্রেমে পড়ে যাবে।
মিষ্টি চোখ ফিরিয়ে নিলো না দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে তাকিয়ে রইলো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (৪)

0

হঠাৎ_হাওয়া (৪)

দিহান একটু হেসে বলল
—তুমিই তো আমাকে কল করেছিলে
মায়া একটু লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল,
—আসলে আমি খুবই দুঃখিত, বাট সিচুয়েশানটাই এমন ছিল যে আমার তখন এটাই ভালো মনে হচ্ছিল,
দিহান পশ্রয়ের হাসি হেসে বলল,
—শুনলাম মিষ্টিকেও নাকি বাবা অসুস্থ বলে দরজা খুলিয়েছো
মায়া মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
হিমালয় বাইরে বের হয়ে ওদের কথা কিছু বুঝতে পারলো না মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
—কি হয়েছে, কোনো সমস্যা?
দিহান হ্যান্ডশেকের উদ্দেশ্যে হাত এগিয়ে বলল,
—আমি সৈয়দ দিহান।
হিমালয় হ্যান্ডশেক করতে করতে বলল,
—হিমালয় আহমেদ।
—আসলে আজ আমার বোনের গায়ে হলুদ, কাল বিয়ে, একটু ফ্যামিলি প্রবলেম ছিল এই ম্যাডাম সলভ করে দিয়েছে,
হিমালয় হেসে বলল,

—ও আচ্ছা!
—তো আমার বোন চাইছে যাতে মায়া ওর বিয়েতে এটেন্ড করে,
মিষ্টি মায়ার হাত ধরে বলল,
—তুমি এলে আমি খুবই খুশি হবো, তোমার জন্যেই ভাইয়া এলো না হলে ওর যে জেদ কেউ ওকে বোঝাতে পারে না
মায়া হেসে বলল,
—তোমার ভাইয়া তোমার জন্য এসেছে মিষ্টি তার জেদের থেকেও তুমি তার কাছে ইম্পর্টেন্ট।
—তুমি আসবে তো?
—আমি তো একা নই মিষ্টি আমার সাথে আরো অনেকে আছে
দিহান বলল,
—আর কে?হিমালয় তো? তুমি অবশ্যই ওকে নিয়ে এসো
মায়া হাত নেড়ে বলল
—না না শুধু মহারাজ নয়,কথা আপু,পুষ্প আপু,নিরব ভাইয়া, আবির ভাই, ধ্রুব
মায়া বড় একটা দম ফেললো হাপিয়ে গেছে এমন ভাব,হিমালয় ওকে থামিয়ে বলল,
—আহা মায়া তুমি ওনাদের বিরক্ত করছ কেন! এতগুলো মানুষ হুট করে বললেই হয়? তুমি বরং এটেন্ড করো
দিহান হেসে বলল,
—না না মায়া বলছে যখন তখন তোমরা সবাই ইনভাইটেড, ডু সামথিং কল দেম আমি নিজে ওদের সবাইকে বলতে চাই।
হিমালয় আমতা আমতা করে বলল,
—ওকে লেট মি কল।

হিমালয়ের কল পেয়ে সবাই বাইরে বের হয়ে এলো দিহান ওদের বলল আপনারা সবাই আসুন এখনই হলুদের প্রোগ্রাম শুরু হবে মায়া অবাক হয়ে বললো
—রেডি হবো না!
দিহান হেসে বলল,
—আচ্ছা আচ্ছা রেডি হয়েই এসো।

দিহান চলে যেতেই সবাই মায়াকে ঘিরে ধরলো ঘটনা শোনার জন্য মায়া বলল,
—সব পরে হবে এখন একটা কম্পিটিশন করে দেখি কে আগে রেডি হয় চলো।
বলেই মায়া দৌড় লাগালো কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সবাই মেয়েটার কান্ড দেখে চেয়ে রইলো হঠাৎ ধ্রুব দৌড় লাগিয়ে বলল,
—আমি হারতে রাজি নই তোরা থাক।

মায়া হলুদরঙা গোল জামা পড়ে চুল পোনিটেইল করে গায়ে একটা সাদার উপরেই সাদা সুতোর কাজ করা চাদর জড়িয়ে বাইরে এসে দাড়িয়েছে ও এসে দেখলো সাদা প্যান্ট আর শার্টের সাথে হলুদরঙা একটা ব্লেজার পড়ে হিমালয় আগে থেকেই বাইরে দাঁড়িয়ে হিমালয় আড় চোখে তাকিয়ে ঠোট বাকিয়ে হেসে বলল,
—আমি জিতে গেছি
মায়া একরাশ বিরক্তি নিয়ে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
—কোনো প্রুভ আছে?
হিমালয় অবাক হয়ে বলল,
—মানে!
—মানে এখনো কেউ আসে নি, আপনি আর আমি ছাড়া কেউ জানে না আমাদের মধ্যে কে আগে এসেছে
হিমালয় খুবই আহত হয়ে বলল,
—তার মানে?
—এত মানে মানে করছেন কেন আমি কি বলছি তা আপনিও বুঝতে পারছেন আমিও পারছি
হিমালয় হাল ছেড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—হাউ মিন!
মায়া মুখ যথাসম্ভব কঠিন করে বলল,
—দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন না দীর্ঘশ্বাস ফেলার মত কিছুই হয় নি।
পরে দুজনেই একসাথে হেসে ফেললো তখন একে একে সবাই বের হতে লাগলো,ধ্রুব বিরক্ত মুখে বলল,
—হেরে গেলাম নাকি! জিতলো কে?মায়া নিশ্চয়ই?
মায়া হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
—না মহারাজ।
হিমালয় মায়ার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।

হলুদের প্রোগ্রাম বেশ বড়সড় ই মনে হচ্ছে একটা বড় গাছের নিচে মিষ্টির গায়ে হলুদের স্টেজ করা হয়েছে সামনে কাঠ দিয়ে আগুন জ্বেলে তার চারপাশে সম্ভবত এখানকার আদিবাসী নাচ করছে, মিষ্টির বাবা এসে মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
—মায়া
—হ্যা আঙ্কেল বলুন
মিষ্টির বাবা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন কি বলবেন হয়তো গুছিয়ে নিতে পারছে না মায়া একগাল হেসে বললো
—ইউ আর ওয়েলকাম আঙ্কেল এন্ড ইটসওকে
মিষ্টির বাবা একটু বিব্রত ভঙ্গিতে হাসলেন।তারপর সস্নেহে বললেন
—আমাদের খুব বেশি আত্মীয় আসতে পারে নি তোমরা নিজের মনে করেই আমাদের পাশে থেকো।
সবাই মিষ্টির কাছে গিয়ে একে একে হলুদ মাখালো শুধু আবির গেলো না ও একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলো, মায়া খেয়াল করে আবিরের কাছে গিয়ে বললো
—আবির ভাই
আবির কিছু না বলেই এক মনে সামনে জ্বলন্ত আগুনের দিকে তাকিয়ে রইলো,মায়া আবিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
—যখন আমার মাম্মাম মারা যায় আমার বাবা একদম একা হয়ে যায় আমি ছাড়া আমার বাবার দুনিয়াতে কিন্তু সত্যি বলতে আপন কেউ নেই তার নিজের বোনও আছে তার সম্পত্তির লোভে।আমি যে কি না বাবার একমাত্র আপন মানুষ সেও বাবাকে একা ফেলে চলে এসেছি তাও অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে, সেক্ষেত্রে আমি বিশ্বাসঘাতক তাইনা?
আবির এবার সরাসরি মায়ার দিকে চাইলো কন্ঠ নিচু করে বলল,
—তোমার উচিত তোমার বাবাকে একটা ফোন করা করেছিলে?
—এমন অনেক কিছুই আমাদের উচিত আমরা কি তা করি? আবির ভাই আমি এখানে আসার পর আপনার অন্য সব বন্ধুরাই কিন্তু একবার না একবার তার বাসায় কথা বলেছে এমনকি অল্পভাষী নিরব ভাইয়াও তার মাকে আমার সামনেই ২/৩ বার কল করেছে আপনি কি একবারো আপনার বাসায় কল করেছেন?
—এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে চাই না।
—আচ্ছা ঠিকাছে বলবেন না। আমিই বলছি কিছু কিছু ভালোবাসা থেকে দায়িত্ববোধ জন্মায় আর কিছু কিছু দায়বদ্ধতা মায়া তৈরি করে যার শক্তি ভালোবাসার অনেক উপরে। কেউ আপনার সাথে বেইমানী করেছে বলে, আপনাকে ভেতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে বলে আপনি সবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন এটা সমাধান নয়।বরং আপনি সুযোগ খুজুন অসহায় কারো অবলম্বন হওয়ার।হয়তো আপনি কল করবেন না জেনেও আপনার বাসায় আপনার আম্মু ফোনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে। এটুকুই বলার ছিল।আমি বরং মিষ্টির কাছে যাই।
মায়া দৌড়ে আবিরের সামনে থেকে চলে গেলো আবির মায়ার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো।হিমালয় এতক্ষণ একটু দূরে দাড়িয়ে ওদের কথা গুলো শুনছলো ও এসেছিলো আবির কে ডাকতে আবির একমাত্র হিমালয়েরই যা একটু কথা শোনে, হিমালয় এগিয়ে আবিরের কাধে হাত রেখে বলল,
—কি ভাবছিস?
—অনেক কিছুই যা আরো আগে ভাবা উচিত ছিল,তোরা যা আমি আম্মুকে একটা কল করে আসি।

আবির ফোন করে ফিরে আসতেই দেখলো ভেতরে একটা জটলা মতো হয়েছে বেশ কিছু কান্নাকাটির শব্দও শোনা যাচ্ছে ও এগিয়ে হিমালয়ের কাছে দাড়িয়ে কারণ জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো মিষ্টির যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সে নাকি বাড়িতে নেই, বিয়ে হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। মায়া ভাবলেশহীন ভাব্র দাড়িয়ে আছে , মিষ্টির মা কান্নাকাটি করছেন দিহান রাগে কাপছে হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুড়ে মারছে হিমালয় ধ্রুব এগিয়ে গিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে, মিষ্টি এতক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলো পাথরের মতো হঠাৎ ও এক ছুট লাগালো, দিহান দৌড়ে ওর পিছু নিলো বেশিদূর মিষ্টি যেতে পারলো না তার আগেই আবির বা হাত দিয়ে শক্ত করে মিষ্টির ডান হাতের কব্জিটা ধরে ফেললো, মিষ্টি হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।পড়ে যাওয়ার আগেই আবির ওকে ধরে ফেললো। আবির বুঝলো মেয়েটার সারা শরীর খুব ঠান্ডা হয়ে গেছে। দিহান দৌড়ে এসে মিষ্টিকে কোলের মধ্যে নিলো পানির ছিটা দিয়ে ওর জ্ঞান ফেরানো হলো, দিহানের বুকের মধ্যে মুখ নিয়েই মিষ্টি কেদে ফেললো।হুট করে আবির একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, ও দিহানের দিকে তাকিয়ে বললো
—আমি মিষ্টি কে বিয়ে করতে চাই।
ওর বন্ধুরা সবাই আবিরের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো, মিষ্টির বাবা মাও বেশ অবাক হলো দিহান কিছু বলার আগেই মিষ্টি কঠিন করে বললো,
—আমি কারো দয়া চাই না।
আবির মিষ্টির দিকে না তাকিয়ে দিহানের চোখে চোখ রেখে বলল,
—আপনারা এটা কে দয়া বা করুণা মনে করবেন না, অনেক কিছুই আমরা ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিয়ে সময় নিয়ে শুরু করি আবার কিছু জিনিস হুট করেই হয়। আমি নিজেও জানিনা আমার এরকম সিদ্ধান্তের কারণ কি,একটু আগেই মায়া আমাকে বলছিলো অনেক ভালোবাসা থেকে দায়িত্ববোধ জন্মায় আর কিছু কিছু দায়িত্ববোধ এমন মায়া তৈরি করে যা ভালোবাসার অনেক উর্ধ্বে। ছেলে হিসেবে বা পরিবার হিসেবে কোনো দিক দিয়েই মনে হয় না আমি মিষ্টির অযোগ্য হবো। বাকিটা আপনারা বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
মিষ্টির বাবা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
—তোমার পরিবার?
—আমার সিদ্ধান্তই আমার পরিবারের সিদ্ধান্ত। মিষ্টির বাবা একটু থেমে বলল,
—আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না যা দিহান ভালো বোঝে।
দিহান আবিরের চোখে তাকিয়ে বলল,
—তুমি কি আজ রাতে বিয়ে টা করতে পারবে আবির?
—হ্যা পারবো,আপনি আজ রাতের মধ্যে চাইলে আমার সম্পর্কে খোজ নিয়ে জেনে নিতে পারেন আমার ব্যাকগ্রাউন্ড।
—আমার কিছু জানবার নেই জেনে বুঝে তো অনেকে অনেক কিছু করলো। তোমার মধ্যে লয়ালিটি আছে এন্ড দ্যাটস এনাফ,
মিষ্টি দিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—ভাইয়া!
দিহান মিষ্টির মাথায় হাত রেখে বলল,
—ভাইয়ার ওপর বিশ্বাস আছে না?
মিষ্টি আর কিছু বলল না সেদিন রাতে গায়ে হলুদের কাপড়েই মিষ্টির বিয়ে আবিরের সাথে হয়ে গেলো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া