Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1880



হঠাৎ হাওয়া (২৩)

0

হঠাৎ_হাওয়া (২৩)

খোলা দরজা দিয়ে মায়া গটগট করে ভেতরে ঢুকে পড়লো, হিমালয় কে অর্নার হাত ধরে থাকতে দেখে ডান ভ্রু উচিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো,হিমালয় হাতটা ছেড়ে দিতেই মায়া আনমনে হেসে ফেললো,হিমালয় বুঝতে পেরে আবার অর্নার হাত ধরে বলল,
—এদিকে এসো অর্না আমি তোমার হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি,
—আমি ঠিক আছি হিমালয় খুব বেশি কাটে নি।
মায়া এগিয়ে গিয়ে বললো,
—আমার সাথে আসুন অভিজ্ঞ ডাক্তার আছে হাতুড়ি ডাক্তারের আবোল তাবোল ওষুধ লাগালে ইনফেকশন করবে,
হিমালয় আহত হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দেখলো মায়ার পেছনে ধ্রুব দাঁড়িয়ে,
—এক্সকিউজ মি, কে হাতুড়ি ডাক্তার?!
মায়া হিমালয়ের চোখে চোখ রেখে বললো
—আপনি,এই ধ্রুব দেখো তো এই আপুটার হাত টা কেটে গেছে,
মায়া রুম পরিষ্কার করতে থাকলো হিমালয় মায়ার পিছু পিছু ঘুরতে ঘুরতে বলল,
—তোমার সাহস তো কম না তুমি আমায় হাতুড়ি ডাক্তার বলো! তুমি জানো আমার রেজাল্ট কি ছিল?আমি কোথা থেকে পিএইচডি করেছি আমার ড্রয়ারে কয়টা জয়েনিং লেটার পরে আছে,ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া?
মায়া ঝাড়ু হাতে হিমালয় দিকে ঘুরে দাড়ালো ওর মুখের সামনে ঝাড়ু নাচিয়ে বলল,
—যেহেতু আপনি কোথাও কর্মরত নন অতএব আপনার ওইসব রেজাল্টের কোনো ভ্যালু নাই।আর এই মুহুর্তে এক্ষুনি যদি সোফায় গিয়ে না বসেন এবং আগামী আধাঘন্টা আমি যদি একটা কথাও শুনি তাহলে বুঝবেন কি হয়, এখন বিদেয় হন।
হিমালয় তাজ্জব হয়ে দাড়িয়ে রইলো,ধ্রুব অর্নার হাত ড্রেসিং করে হিমালয় কে টেনে এনে সোফায় বসিয়ে বলল,
—তুই তো জানিস এই মেয়ে কেমন দোহাই লাগে এখন কথা কইস না বাপ।
হিমালয় সোফায় গা এলিয়ে কটকট করে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে রইলো,মায়া সুন্দর করে ঘর পরিষ্কার করে ড্রয়িং রুমে এসে টেবিলে থাকা প্যাকেট টা নিয়ে ভেতরে গেলো এবং দশ মিনিটের মধ্যে চা নাস্তা নিয়ে ফিরে এলো,ধ্রুব দ্রুত নাস্তার প্লেট হাতে নিয়ে বলল,
—সকাল বেলা মায়া আমার বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছে আমি নাস্তাও করি নি, এই বলে খাওয়া শুরু করলো,
মায়া অর্নার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,
—আপনি অর্না আপু?
অর্নাও একটু হেসে বলল,
—হ্যা, তুমি মায়া?
মায়া সুন্দর করে হাসলো অনেকদিন পর ওর হাস্যার মধ্যে কান্না পেয়ে গেলো ও পানি আনার নাম করে উঠে রান্নাঘরে এসে কেদে ফেললো,অর্না ওকে চেনে তারমানে হিমালয় ওর কথা বলেছে অর্না মায়াকে কি হিসেবে জানে! মায়া একজন প্রতারক! অর্না মেয়েটা খুব সুন্দর ওর খুব কষ্ট হতে লাগলো! মানুষের এত কষ্ট কেন! মায়া এখানে আসার আগে ধ্রুবের বাসায় গিয়ে অর্নার ব্যাপারে সব খোজ নিয়েছে, মেয়েটার স্বভাব খুব শান্ত একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ায় একটা আশ্রম আছে,বিয়ের দু বছরের মাথায় এক্সিডেন্ট করে হাজবেন্ড মারা যায় পালিয়ে বিয়ে করেছিলো বাপের বাড়ি শ্বশুর বাড়ি কোথাও জায়গা হয় নি মেয়েটার,এই এত বড় পৃথিবীতে এই মেয়েটার আপন বলতে কেউ নেই! এখন হিমালয় ওর একমাত্র বন্ধু।মায়া চোখ মুছে পেছনে ফিরতেই দেখলো হিমালয় অসহায় দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
—কাদছ কেন?
মায়া কিছুক্ষণ কঠিন চোখে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো, মনে মনে পঞ্চাশ টা গালি দিলো, কেন দিলো মায়া তা জানে না ওর খালি মনে হচ্ছে এই লোকটা হচ্ছে মহা বদ, বদের বাপ সব কষ্টের কারণ এই লোকটাই,মায়া রান্নাঘর বেরিয়ে যেতে লাগলেই হিমালয় মায়ার হাত ধরে ফেললো,
—তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার কথার জবাব না দিয়ে চলে যাও,
মায়ার কি হলো ও সমস্ত রাগ অভিমান নিয়ে হিমালয়ের গালে একটা চুমু খেলো তারপর জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে গিলে ইচ্ছে করে অনেক বড় একটা দীর্ঘশ্বাস হিমালয়ের মুখের সামনে ছেড়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, হিমালয় হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো এই তো মায়া সেই পাগল মেয়েটা যে কখন কি করে কেউ জানে না!

মায়া ঘর লক করে সোফায় বসে আছে ধ্রুব অর্নাকে বাসায় পৌঁছে দিতে গেছে হিমালয় অস্থির হয়ে ঘরের মধ্যে পায়চারী করছে আর কিছুক্ষণ পরপর মায়ার সামনে এসে দাড়িয়ে বলছে
—চাবি দেবে কি না বলো
মায়া এই প্রশ্নের উত্তর আগেও বহুবার দিয়েছে এখন আর ওর ইচ্ছে করছে না, হিমালয় তেড়ে মায়ার কাছে এসে ওর হাত ধরে টেনে তুলে ওর কোমর জাপটে ধরে বলল,
—তোমার ভয় করে না? তুমি জানো আমি কি করতে পারি?
মায়া দুহাতে হিমালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—আপনি নিতান্তই ভদ্র মানুষ আমি জানি আপনি অনেক কিছুই পারেন কিন্তু কিছুই করবেন না, বরং আপনি ভয়ে আছেন আমি না কিছু করে ফেলি

হিমালয় সরু চোখে চাইলো,মায়া খুব শান্ত সহজ ভঙ্গিতে বলল,
—আপনি একজন ওয়েল কোয়ালফাইড ডক্টর আপনি কেনো বলুন তো এরকম পাগলামি করছেন? আপনি জানেন কত অসহায় মানুষের আপনাকে দরকার?
—হ্যা জানি তাতে কি জানলেই সবকিছু করতে হয়?আমার অসহায়তার কথাও অনেকে জানতো তারা কি করেছে?
মায়া মাথা নিচু করে ফেললো এক হাতে হিমালয়ের শার্টের বোতাম নাড়তে নাড়তে বলল,
—সবাই পাগল হলে আপনিও পাগল হবেন? সবাই গু খেলে আপনিও গু খাবেন?
—খাবো
মায়া হেসে ফেললো
—আপনি চাইলেই কিন্তু সামনের মাস থেকে ধ্রুবদের হসপিটালে জয়েন করতে পারেন, আর সেখানে তো আবির ভাইও আছে
—আমি চাই না
মায়া এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
—কেন, কেন চান না? আপনি চাইলেই সব হবে? হু? আর কারো চাওয়ার কোনো দাম নেই? সব আপনার ইচ্ছা মতো?আপনি কেন বাসায় যান না? আঙ্কেল আন্টির ফোন রিসিভ করেন না? আপনার কোনো বন্ধু বন্ধবের সাথে যোগাযোগ করেন না, কেন?
—আমি চাইলেই সব হয় নাকি?আমি চেয়েছিলাম একটা মেয়ের তুমুল ভালোবাসা হতে আমি চেয়েছিলাম বাবা মায়ের সবচেয়ে ভালো সন্তান হতে আমি চেয়েছিলাম একজন বেস্ট ডক্টর হতে একটা ভালো বন্ধু হতে, এর কোনোটাই আমি কেন হতে পারলাম না মায়া?
মায়া মাথা নিচু করে ফেললো,
—তার জন্যে তো আমি ক্ষমা চেয়েছি আমার দোষ সব আমার ভুল আমি অন্যায় স্বীকার করছি তো,
—তাতে কি? আমি কখনোই এমন একজন দুর্বল মনের মানুষের সাথে আর নিজেকে জড়াবো না যে মাঝ পথে আমাকে ছেড়ে দেয়, সেদিন তোমায় আমি কতবার বলেছিলাম মায়া আমাকে বলো সমস্যাটা কোথায় আমি সব ঠিক করে দেব শুনেছিলে তুমি? কিচ্ছু শোনো নি, বন্ধ দরজার ভেতরে আমি তোমার পায়ে পর্যন্ত পড়েছিলাম তুমি বোঝো নি! তুমি আমাকে কখনোই বোঝো নি মায়া, তুমি মায়ের আবেগী কথায় বোকামি করে ফেললে আবেগ দিয়ে জীবন চলে না মায়া কখনোই না,আমি আর আগের হিমালয় নেই। অতএব এখন আমিই তোমাকে বলছি তুমি ফিরে
যেতে পারো কোনো বাধা নেই।
মায়া এবার উত্তেজিত হয়ে বলল,
—কোথায় ফিরে যাবো আমি! কোত্থাও যাবো না আপনি আগের হিমালয় ই আছেন আপনি আমার হিমালয়, আমার মহারাজ আপনি।
—এখন আর তোমাকে এসব পাগলামি তে মানায় না আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারো ঠিকই বাচতে পারো, তুমি ঠিকই আছো মায়া শুধু আমার জীবন টা হঠাৎ করে এসেই গতি বদলে দিয়েছো
—মহারাজ…
হিমালয় মায়ার ওড়নার আচল থেকে চাবিটা খুলতে খুলতে বলল,
—আমার একটা নাম আছে সেটাতেই ডাকবে, আর অর্না খুব অসহায় ওর খুব আকড়ে ধরার স্বভাব, এই দুনিয়াতে আমি ছাড়া ওর আর কেউ নেই যাকে আকড়ে ও বাচতে পারবে, আমি নিশ্চিন্ত হতে পারি ও আমায় ছেড়ে যাবে না,ওর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আমি ছাড়া ওর কোনো দুর্বলতা নেই অর্না আবেগী নয় বাস্তব বুঝে ও হাল ছাড়বে না।

মায়া স্তব্ধ হয়ে গেলো, হিমালয় চাবি নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো মায়া ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (২২)

0

হঠাৎ_হাওয়া (২২)

মায়া রাতের বেলাতেই শাওয়ার ছেড়ে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো,ও এত কঠিন কথা জীবনে কখনো শোনে নি, এভাবে কেউ ওকে অপমান করে নি আর আজ কি না হিমালয়!ওর সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ ওকে সবচেয়ে নির্মমভাবে আঘাত করলো! কথা দিয়ে আঘাত করার চেয়ে বাজে আর কি হতে পারে,প্রায় দু ঘন্টা পর মায়া ভেজা কাপড়েই বেরিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো,এতদিন হিমালয়কে ছেড়ে থাকতে মায়ার যতটা না কষ্ট হয়েছে তারচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে আজ হিমালয় কে দেখার পর,কতটা বিচ্ছিরি ভাবে মায়া কষ্ট দিয়েছে ওকে! ওর মত একটা ব্রাইট ছেলে যে কিনা নিজের কাজের প্রতি এত ডেডিকেটেড ছিল তার জীবনটা ও এভাবে নষ্ট করে দিয়েছে এটাতো মায়ার প্রাপ্য! মায়া খুব শব্দ করে কাদতে লাগলো,
সারা রাস্তা মায়া এতটাই কেদেছে যে সাহিত্য আর বাড়ি ফেরেনি এখন মায়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মায়ার কান্নার আওয়াজ পেয়ে ওর বুকের ভেতর টা ছিড়ে যাচ্ছে তবে মায়াকে ডাকার সাহস পাচ্ছে না, দরজায় হাত দিয়ে দেখলো দরজা খোলা,তবে মায়াকে দেখে ও ভেতরে ঢুকলো না,মাথা নিচু করে বলল,
—মায়া তুই এক্ষুণি ভেজা কাপড় পালটে ছাদে আসবি এই মুহুর্তেই
মায়া কান্না থামিয়ে চুপ করে গেলো,তবে নড়লো না, তোকে ভেজা কাপড়ে বিচ্ছিরি লাগছে তুই প্লিজ …
মায়া তরল গলায় বলল,
—তুই যা আমি আসছি।

মায়াদের ছাদের একপাশে রেলিং নেই সেখানে পা ঝুলিয়ে সাহিত্য বসে আছে মায়া এসে সাহিত্যের পাশে বসলো,মায়া বরাবর উচ্চতা খুব ভয় পেতো এই পাশটায় কখনোই মায়া আসে না অথচ এখন!সাহিত্য অবাক হয়ে মায়ার দিকে তাকালো ওর হাতে তোয়ালে, মাথা দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছস নাকটাও লাল হয়ে গেছে! মায়াকে অসম্ভব স্নিগ্ধ লাগছে,সাহিত্য মায়ার হাত থেকে তোয়ালে টা নিয়ে মায়ার চুল ভালো করে পেচিয়ে দিলো তারপর নিঃশ্বাস ফেললো ছোট করে, এবার ঠিক আছে এত সৌন্দর্য দেখা যায় না।
—তুইও শেষমেস দেবদাসী হয়ে গেলি? দেবদাসী এর বাগধারা কি রে? দাসীদের দেবী?
মায়া মাথা নিচু করে রইলো,
—সিগারেট খাবি মায়া? এইটা সিগারেট খাওয়ার পার্ফেক্ট সময় এখন তুই ছ্যাকা খেয়ে আছিস সিগারেট খেয়ে দেখি ভাল্লাগবে।
মায়া মিনমিন করে বললো
—তোর কাছে সিগারেট আছে?
সাহিত্য আড়চোখে তাকালো তারপর কটকট করে বলল,
—এক থাবড়া মারব কানে কিচ্ছু শুনবি না যাস্ট কিচ্ছু না।
মায়া চুপ করে রইলো,সাহিত্য নিজেকে সামলে বলল,
—তুই যে এখানে এসে বসলি যদি পড়ে যাস
—পড়ে গেলে তুই ধরবি না?
—পড়ে গেলে আর ধরে কি হবে, পড়ে গেলে তো গেলিই।
মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—একটা গান গাইবি সাহিত্য?
—না।তোর কি মনে হয় এখানে আমি তোকে এন্টারটেইন করতে এসেছি? আমি জোকার
—গাইতে হবে না
—তোর কথা মতো? তোর কথা আমার শুনতে হবে? তুই আমাকে মানা করার কে? তুই মানা করবি আর আমি চুপ থাকব? আমি গান গাইবো অবশ্যই গাইবো চুপ করে শোন,
মায়া জানে সাহিত্য ওর কথা ফেলে না শুধু বুঝতে দেয় না ও এত পাগল কেন!
সাহিত্যের গানের গলা খুব ভালো বরাবরই, ও খালি গলায় গান শুরু করলো

আমার ভিনদেশী তারা
একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে
ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে
তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে
মুখ লুকিয়ে কার বুকে
তোমার গল্পো বলো কাকে
আমার রাত জাগা তারা
তোমার অন্য পাড়ায় বাড়ী
আমার ভয় পাওয়া চেহারা
আমি আদতে আনাড়ী
আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি
কিছু মিথ্যে বাহাদুরি।।
আমার চোখ বেধে দাও আলো
দাও শান্ত শীতল পাটি
তুমি মায়ের মতই ভালো
আমি একলাটি পথ হাটি
আমার বিচ্ছিরি এক তারা
তুমি নাও না কথাখানি
তোমার কিসের এতো তাড়া
সে রাস্তা পার হবে
সাবধানি
তোমার গায়ে লাগেনা ধুলো
আমার দু-মুঠো চাল চুলো।।
রাখো শরীরে হাতে যদি
আর জল মাখো দুই হাতে
প্লীজ ঘুম হয়ে যাও চোখে
আমার মন খারাপের রাতে
আমার রাত জাগা তারা
তোমার আকাশ ছোয়া বাড়ী
আমি পাইনা ছুতে তোমায়
আমার একলা লাগে ভারী।।

শেষের লাইনগুলো গাইতে গিয়ে সাহিত্যের কন্ঠ অদ্ভুত ভাবে কেপে উঠলো, মায়া ঠিক বুঝলো। গান শেষ করার বেশ কিছুক্ষণ পর সাহিত্য বলল,
—এই মায়াকে আমি একটুও চিনি না, আমি জানি মায়া দোষ করলে স্বীকার করে ক্ষমা চায়,যেটা মায়ার সেটা মায়া কখনোই ছেড়ে দেয় না আমি যেই মায়াকে চিনতাম সে প্রাণবন্ত একটা মায়া যে কখনো হার মানে না এত সহজে সে ভেঙে পড়তো না,আচ্ছা তুই বল তুই কি আদৌ সেই মায়া আছিস যাকে হিমালয় ভালোবেসেছিল?

মায়া বিস্মিত হয়ে সাহিত্যের দিকে তাকালো,সাহিত্য উঠে চলে গেলো মায়া বসে রইলো সারা রাত সেখানেই বসে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলো।

ভোর বেলায় দরজা খুলে হিমালয় দেখলো অর্না দাড়িয়ে আছে, হিমালয় একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
—আমি খুবই দুঃখিত অর্না আমি কাল যেতে পারলাম না, তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না।
অর্না সাথে হিমালয়ের পরিচয় হয় বছর দেড়েক আগে, একদিন হিমালয় মাঝরাস্তায় ফিট হয়ে পড়ে যায় অর্না একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ায় সেখান থেকে ফিরছিলো ও হিমালয় কে হসপিটালে নিয়ে যায়,তাপর হিমালয় একদিন ধন্যবাদ জানাতে অর্নার বাসায় যায় সেখানে কিছু বাচ্চাদের সাথে অর্নাকে খেলতে দেখে জানতে পারে পাশেই একটা আশ্রম অর্না চালায় এরপর থেকে ওদের বেশ ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

অর্না কিছুক্ষণ হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
—সারারাত তুমি ঘুমাও নি হিমালয়?
—ওই আর কি একটু কাজ করছিলাম?
চারপাশে চোখ বুলিয়ে অর্না দেখলো বাড়িঘর বেশ অগোছালো এলোমেলো এখানে সেখানে জিনিসপত্র ছড়ানো কাচের দরজা টা ভেঙে আছে।অর্না কিছু না বলে ঘর গোছাতে গোছাতে বলল,
—কি কাজ? বাড়িঘর ভাঙাচোড়া?
হিমালয় মাথার পেছনে চুলকে বলল,
—ওই আর কি।
দরজার কাচগুলি ঝাড়ু দিয়ে একপাশে করে কিছু কাচ হাত দিয়ে সড়াতে সড়াতে বলল,
—তোমাকে খুব টেনসড দেখাচ্ছে।
হিমালয় গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,
—মায়া এসেছিলো কাল..
হুট করে একটা কাচ অর্নার হাতে বিধে গেলো,হিমালয় পানি খাচ্ছিলো অর্না উফ শব্দ করে উঠতেই ও ছুটে গিয়ে অর্নার হাত ধরে ফেলল বলল,
—তুমি তো আচ্ছা পাগল এসব তোমাকে কেউ করতে বলেছে?

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (২১)

0

হঠাৎ_হাওয়া (২১)

মায়া সব ঘুরে এসে ড্রয়িং রুমে দাড়ালো,ফ্লাট টা খুব চমৎকার ভাবে গোছানো, বরাবরই হিমালয়ের রুচি অসম্ভব ভালো তবে এই ফ্লাটের ডেকোরেশন দেখে মায়া অভিভূত বিশেষ করে বেলকনি বারান্দাটা!ড্রয়িং এর সাথে লাগানো বেলকনি,কাচের দরজা খুলে ম্যাক্সিকান গ্রাসের উপর পা রাখতেই মায়ার গা শিরশির করে উঠলো ,জাদি,এলোভেরা, স্নেক প্লান্ট,জিজি প্লান্ট, ফিলোডেনড্রন,মানি প্লান্ট কি নেই! মনের অজান্তেই মায়ার মনের ভেতর থেকে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো এই মানুষ টা কতটা যত্নশীল! কতটা! ধ্রুব মায়াকে ডাকতেই ও ড্রয়িং রুমে চলে গেলো,
—হিমালয় হয়তো এক্ষুনি এসে পড়বে
সাহিত্য মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, মায়ার উত্তেজনায় গা কাপছে
—তুই ঠিক আছিস মায়া?
মায়া শব্দ করতে পারলো না,
—তোমার কাছে এই ফ্লাটের চাবি সবসময় থাকে,ধ্রুব?
—শুধু আমার কাছে না আমাদের সবার কাছেই ডুপ্লিকেট চাবি করে নিয়েছি আমরা, হিমালয়ের কোনো ঠিক নেই ও কখন কোথায় থাকে,আর আমরা যে যখন পারি চলে আসি,

হিমালয় দরজায় হাত দিতেই দেখলো দরজা খোলা ও স্বাভাবিক ভাবেই ঘরে ঢুকলো, ধ্রুবকে দেখে বলল,
—এই ধ্রুব আদনানের সাথে দেখা হলো কাল নাকি ওর রেফার করা একটা স্পেশাল পেশেন্ট এটেন্ড করার কথা ছিল তোর করেছিলি? তুই…

কথা বলতে বলতে হিমালয়ের চোখ মায়ার দিকে পড়লো… মায়ার গলা শুকিয়ে এলো হিমালয় কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো,এই প্রথম হিমালয়ের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো ও দ্রুত বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো জোরে জোরে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস ফেলে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালালো বড় করে দুটো টান দিয়ে ভেতরে ফিরে গেলো, মায়ার সামনে গিয়ে দাড়ালো মায়া মাথা নিচু করে আছে হিমালয় একটু নিচু হয়ে ঝুকে মায়ার মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলল,
—কেমন আছো মায়া!
হিমালয়ের গলার কম্পন স্পষ্ট শোনা গেলো,ওর মুখ থেকে ভকভক করে সিগারেটের গন্ধ বের হতে লাগলো, মায়ার গা গুলিয়ে উঠলো,একটু পিছিয়ে গিয়ে মায়া অসহায় ভাবে হিমালয়ের দিকে তাকালো! এই কি সেই হিমালয় যে কোনোদিন সিগারেট ছুয়েও দেখেনি! বরাবর খুব গোছালো সেই লোকটা কি এই?এই বাড়িটা যে এত সুন্দর করে সাজিয়েছে সে নিজে এত্ত এলোমেলো কেনো! মায়া চোখের জল আড়াল করে বলল,
—আপনি সিগারেট খাচ্ছেন?
হিমালয় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে পাশে থাকা এস্ট্রে তে ছাই ফেলতে ফেলতে বলল,
—না তো পান করছি, করবে? ধ্রুব মায়াকে নাস্তা দিয়েছিস?
ধ্রুব একটু হতাশ হয়ে বলল,
—হিমালয়, তুই…
—হ্যা বল শুনছি তুই কিছু বলতে চাস?
ধ্রুব খেই হারিয়ে ফেললো কি বলবে ও বুঝতে পারলো না,
—তুই কোথায় ছিলি?
—কোথাও না, অর্না ওর আশ্রমের বাচ্চাদের নিয়ে একটা কালচারাল প্রোগ্রাম করছে তার এরেঞ্জমেন্ট করছিলাম, এনিওয়ে হু ইজ হি?
সাহিত্য কে দেখিয়ে হিমালয় প্রশ্ন করলো,সাহিত্য এগিয়ে এসে হিমালয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
—আমি সাহিত্য,মায়ার…
—বয়ফ্রেন্ড?
বলেই মায়ার দিকে তাকালো, হিমালয় হ্যান্ডশেক করতে করতে বলল,
—মায়ার পছন্দ বরাবরের মতোই পারফেক্ট, ইউ আর রিয়েলি গুড লুকিং সাহিত্য, নাইস টু মিট ইউ,
সাহিত্য অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, ধ্রুব কিছু বলতে গেলেই হিমালয় বলল,
—আমি খুব টায়ার্ড ধ্রুব সন্ধ্যায় অর্নার আশ্রমে যেতে হবে নয়তো ও আমাকে কাচা খেয়ে ফেলবে,আমি একটু রেস্ট নিতে চাই।মায়া তুমি কি ঢাকায় আছো নাকি তোমার প্লান আছে অন্য কোনো?
মায়া নিস্তব্ধ হয়ে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে হিমালয়ের দিকে হিমালয় কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ নামিয়ে মনে মনে বলল,আজও আমি তোমাকে দেখলে খেই হারিয়ে ফেলি!এত্ত বেহায়া আমি!
হিমালয় মায়ার চোখের সামনে তুড়ি মেরে বলল,
—কি ভাবছো এতো!
—মহারাজ..
—হিমালয়, আমার নাম হিমালয় আহমেদ প্লিজ কল মি বাই মাই নেম,
মায়া আর কিচ্ছু বলতে পারলো না ওর গলার কাছে কথা আটকে গেলো, হিমালয় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
—কিছু বলবে?
মায়া মাথা নিচু করেই রইলো চোখ তুলে ধ্রুবের দিকে তাকাতেই ধ্রুব ইশারায় সাহস দিল, তারপর সাহিত্য কে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো,মায়া এবার হিমালয়ের দিকে তাকালো হিমালয়ের খুব কাছে গিয়ে বলল,
—আপনি নাকি আজকাল ভবঘুরে হয়ে গেছেন?
—সেটা আবার কি? এসব কথা তোমাকে কে বলে?আমি একটু ব্রেকে আছি হ্যা পিএইচডি করতে একটু দেরি হয়ে গেছে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য মাস ছয় একটু পিছিয়ে গেছিলাম বাট ৩ মাস হলো কম্পলিট করে দেশে এসেছি আপাতত ব্রেকে আছি রুলস এন্ড রেগুলেশনের জীবন আর কাটাতে ইচ্ছে করে না এই আরকি….
মায়া কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,
—আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি…
—কিসের জন্যে!
—আপনি অনেক পালটে গেছেন অনেক বেশি,
হিমালয় সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসতে বসতে বলল,
—তাই নাকি কই আমার তো মনে হচ্ছে না?আমি তো ঠিকই আছি,তোমার একটু স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে মায়া,তোমাকে বেশ আবেদনময়ী লাগছে আবেদনময়ী এর ইংরেজি জানো তো?
—আপনি ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন?!
—কিসের কষ্ট!তোমার কিসের কষ্ট! তুমি খুব স্বেচ্ছাচারী মায়া স্বেচ্ছাচারীদের কষ্ট থাকে না তবে হ্যা আমি শুনেছি নানান কেচ্ছা থাকে এদের….
মায়া কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর অবাক হওয়ার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে,হিমালয় উঠে এসে মায়ার সাথে ঘেষে দাড়ালো,মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
—তুমি বরাবরের সাহসী আমি জানি, তবে তোমার ভয় করছে না একা মেয়ে একটা ছেলের ফ্লাটে চলে এলে!?এত দুঃসাহস পাচ্ছ কোথায়? নাকি অভ্যাস হয়ে গেছে?
মায়ার মাথার মধ্যে চিনচিন করে উঠলো ওর চোখ ছলছল করে উঠলো ও ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না গিলে কঠিন চোখে হিমালয়ের দিকে তাকালো,
—একজন মানুষের এতটাও অধঃপতন হয়!
হিমালয় ক্রুদ্ধ একটা হাসি দিয়ে মায়ার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
—অধঃপতন দেখতে চাও…?
মায়া কেদে ফেললো আর এক মুহুর্ত সেখানে দাড়ালো না দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো, হিমালয় মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে পড়লো,ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে অর্নাকে একটা টেক্সট পাঠিয়ে দিলো “আমি সন্ধ্যায় আসছি না, তুমি ম্যানেজ করে নিও”। কিছুক্ষণ বসে থেকে হিমালয় পাশে থাকা চিনা মাটির এস্ট্রে টা ছুড়ে মারলো কাচের দরজায়।তারপর ভাবতে লাগলো কতগুলো কঠিন কথা ও মায়াকে বলেছে!মায়া কি খুব কাদছে?মেয়ে টা কঠিন কথা একদম সহ্য করতে পারে না একদম না, হিমালয় দুহাতে নিজের চুল টেনে, শব্দ করে বলে উঠলো
—আজ এতদিন পর তুমি কেন ফিরে এসেছ মায়া? কেন?

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (২০)

0

হঠাৎ_হাওয়া (২০)

বিকেলে মায়া সাহিত্যের সাথে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো সাহিত্য সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকে বসে আছে বের হওয়ার নাম নেই
—ওই ফুপ্পার বাচ্চা সাহিত্য বের হবি তুই আজকে? ডাক্তার কি তোর দুলাভাই লাগে? তোর জন্য বসে থাকবে?
—মায়া যত কথা বলবি তত দেরি হবে তুই চুপ থাক প্লিজ,
মায়া বিরক্ত হয়ে উঠে বাইরে গিয়ে দাড়ালো ওর ফোনে আননোন নম্বর থেকে একটা কল আসলো মায়া ঠিক বুঝতে পারলো না কি করবে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ শোনা গেলো
—মায়া! আমি আমি হিমালয়ের মা!
মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেললো
—কেমন আছেন আন্টি?
—তোর সাথে আমার দেখা করা খুবই দরকার মায়া, এই দুই বছরে আমি হাজার বার চেষ্টা করেছি তোর সাথে যোগাযোগ করার।
—আন্টি এখন আর আপনাকে সাহায্য করার মত তো আমার কিছু নেই
—মায়া,আমায় ক্ষমা কর মা, অনেক বড় ভুল আমি করেছি তোকে আমার খুব দরকার
মায়া ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো সবারই শুধু দরকার,
—আন্টি আমি ঢাকায় থাকি না বড়জোর দুদিন আছি আপনার দরকার আমি কিভাবে মেটাতে পারি বলুন
—আমি জানি মায়া আমার উপর তোর খুব রাগ, আমি তখনও অসহায় ছিলাম এখনো অসহায়,

সাহিত্যকে দূর থেকে আসতে দেখে মায়া বলল
—আমার নম্বর কি আপনাকে আবির ভাই দিয়েছে
—হ্যা, আমরা সবাই তোকে খুজেছি তোর ফিরে আসাটা যে আমাদের জন্য কতটা আনন্দের ভাবতে পারবি না তুই
—আমি একটু বাইরে আছি আন্টি আপনি একসময় বাসায় আসবেন আমরা কথা বলব।
রেহেনা আহমেদ এবার অসহায় কণ্ঠে বলল,
—তোকে খুব দরকার মায়া আমার অন্যায়ের শাস্তি আমার ছেলেটা…
মায়ার দম বন্ধ হয়ে গেলো, ও শুনতে চায় না ওই মানুষটার কথা ও জানতে চায় না
—আমি রাখছি।
মায়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চোখের জল আড়াল করে বলতো
—আর দুই ঘন্টা বসে থাকতি
—শুধু শুধু বাথরুমে কেন বসে থাকব!অদ্ভুত কথা বলিস আমার কি বাড়িঘর নাই?
মায়া গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,
—ডাক্তার কি এখন আছে?
—থাকলে থাকবে না থাকলে তুই তো আছিসই ডাক্তারদের দেবী
—সবসময় মজা করবি না
—আচ্ছা কোন সময় করব তুই বলে দিস।
—সাহিত্য হসপিটালে পৌছানোর আগে তুই যদি একটা শব্দ করিস আমি গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যে যাবো আর খুজে পাবি না।
সাহিত্য আর একটা কথাও বলল না,মায়াকে ও যথেষ্ট ভয়ই পায় শুধু বুঝতে দেয় না।

সাহিত্য আড়চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে ওরা যে নিউরোলজিস্ট এর সামনে বসে আছে সে ধ্রুব।মায়া সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলো,ধ্রুবকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে
—তুমি কিন্তু এখনো বলছো না তুমি এতদিন কোথায় ছিলে
—বলতে চাচ্ছি না ধ্রুব, কারণ আমি আবার ফিরে যাবো
—তুমি জানো মায়া কত কিছু পালটে গেছে
—কই? তুমি তো সেই আগের ধ্রুবই আছো এখনো শুনলাম মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করো বিয়েশাদীর প্লান নেই
ধ্রুব ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—তুমি মেয়েটা খুব খারাপ
—জানিতো
ধ্রুব ওর পিএ কে ডেকে সমস্ত এপোয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করে দিতেই সাহিত্য ঘাবড়ে বলল,
—প্লিজ ডাক্তার আমি খুব বিজি মানুষ অনেক প্লান বাদ দিয়ে আজ এসেছি আমার এপোয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করবেন না, আমার দেখানোর ওতো গরজ নেই তবে বাসায় ঢুকতে হলে আমার ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঢুকতে হবে
—তুই কিসের বিজি
—স্টপ, তুই আর কখনোই আমার সাথে হসপিটালে আসবি না
মায়া অসহায় ভাবে তাকাতেই ধ্রুব হেসে বললো
—তোমার ফাইলটা দাও
সাহিত্য ফাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
—ডক্টর আদনান আমায় সাজেস্ট করেছে আপনার কাছে আসতে
ধ্রুব হেসে হেসে ফাইল দেখছিলো ওর মুখটা শুকিয়ে গেলো, মায়া অধীর হয়ে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে রইলো,সাহিত্য হেসে বললো
—কিছু বলবেন ডক্টর? আমি কিন্তু সব জানি।কিচ্ছু করার নেই।
ধ্রুব একটু গলায় জোড় এনে বলল
—অনেক কিছুই আছে, আমি একটু স্টাডি করতে চাই তোমার ব্যাপারে তারপর তোমাকে জানাবো।
—শুধু শুধু সান্ত্বনা দিচ্ছেন ডক্টর
—সাহিত্য শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়তে নেই, এটা আমরা অনেকেই বুঝে উঠি না
ধ্রুব এবার মায়ার দিকে তাকালো
—আবির তোমাকে কি বলেছে আদৌ কিছু বলেছে কি না আমি জানি না, তোমার সাথে এখানে দেখা না হলেও আমি তোমার বাসায় যেতাম
মায়া চোখ নামিয়ে নিলো,
—আমরা এখন আসি ধ্রুব…
—হিমালয় কোথায় জানতে চাও না?
মায়ার গলা শুকিয়ে গেলো এই একটা নামের প্রতি ওর তীব্র আকর্ষণ ও জানতে চায়, তাকে একবার দেখতে চায় কিন্তু….
—তুমি যে একটা স্টুপিড সেটা কি তুমি বোঝো?সব তোমার ইচ্ছে মত হয়? তুমি জানো আজ দেড়বছর হিমালয় ওর বাসায় যায় না, ও তোমাকে কত খুজেছে তোমার কোনো ইয়াত্তা আছে?কি করে পারলে বলোতো মায়া একজন জীবন্ত মানুষকে নিষ্প্রাণ করে দিতে..
মায়া ভয়ে ভয়ে বলল,
—মানে!…উনি কানাডাতে যান নি! কথা আপু আর উনি….
—তুমি কি বোকা মায়া? লাইফটা কি সিনেমা? যে তুমি সরে গেলেই সব স্মুথ হয়ে যাবে? হিমালয় পাগল হয়ে গিয়েছিলো মায়া তোমার প্রত্যাখ্যান ও মানতে পারে নি ওর বিস্ফোরক আচারণ দেখে আমরা সবাই হতভম্ব ছিলাম, রাগের মাথায় সেদিন ও চলে এলেও পরে তোমার বাসায় গিয়ে দেখে তুমি নেই…. প্রথম ছয়মাস ওর মানসিক অবস্থা এক্কেবারে খারাপ ছিলো প্রচুর ড্রাগ নিতে শুরু করেছিলো,আমাদের চোখের সামনে আমাদের যে বন্ধুটার সবচেয়ে ব্রাইট ফিউচার সে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো,অথচ আমরা কিচ্ছু করতে পারছিলাম না…. অতিরিক্ত ড্রাগ নেওয়ার কারণে হসপিটালে এডমিট হতে হয়েছিলো তখন আন্টি খুব ভেঙে পড়ে আর আঙ্কেলের কাছে সবটা জানায় তোমার আর আন্টির মধ্যে যা কথা হয়েছিলো সে সম্পর্কে, সবকিছু জানাজানি হওয়ার পর কথাও খুব ভেঙে পড়ে, এটা ঠিক কথা ছোট বেলা থেকে হিমালয় কে খুব ভালোবাসতো কিন্তু ও কখনোই চায় নি তোমার আর হিমালয়ের মধ্যে বাধা হতে…।আমরা তোমার আব্বুর কাছে তোমার খোজ নিয়ে গেলে জানতে পারলাম তুমি তার সাথেও যোগাযোগ রাখো না! তুমি এরকম কিভাবে করতে পারো মায়া!
মায়া বিস্মিত হয়ে গেলো ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো, ও সবসময় বোকামি করে সবসময়! ও কেন ভাবলো না হিমালয় ওকে ভালোবাসে! কেন ও হিমালয়ের সাথে অন্যায় করলো!
—ধ্রুব…. মহারাজ! এখন কোথায়?!
ধ্রুব হালকা হাসলো,
—এখন তার খোজ করছ মায়া! এখন কি চাইলেই তুমি তাকে পাবে?সবকিছু কি চিরস্থায়ী মায়া?তুমি হিমালয়ের জীবনে একটা হঠাৎ হাওয়ার মতো এসে ওর পুরো জীবন ওলটপালট করে দিয়ে পালিয়ে গেলে অদ্ভুত না! একটা ছেলে তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসলো তার কাছে সকাল দুপুর মাঝরাত সব তুচ্ছ হয়ে গেলো তোমার জন্যে আর তুমি….
মায়ার কান শো শো করতে লাগলো ও কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ওর কাছে পৃথিবী পুরো অন্ধকার হয়ে আসছে, এতবড় পৃথিবীতে ও একটুও নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না!

সাহিত্য অবাক হয়ে ওদের কথা শুনছে, এতদিন ও শুধু মায়ার ভালোবাসার গভীরতাটা দেখেছে আজ বুঝতে পারছে যাকে মায়া এত ভালোবাসে তার কাছে ভালোবাসার ভান্ডার আছে তার সামনে সাহিত্য অতি নগন্য!

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (১৯)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১৯)

অসম্ভব এখানে থাকলে মায়া পাগল হয়ে যাবে! মায়া দুইহাতে নিজের মাথা ধরে মেঝেতে বসে পড়লো,চোখ বন্ধ করতেই হিমালয়ের সেদিনের কথাগুলো কানে বাজতে লাগলো

—তুমি বিয়ের জন্য না করে দিয়েছ মায়া?
—হ্যা
—কেন?
মায়া চুপ করে আছে, হিমালয় ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে,চিৎকার করে বলল
—চুপ থাকবে না আমি জিজ্ঞেস করছি কেন?

দরজার বাইরে থেকে ওসমান চাচা মায়ার বাবাকে বলছে,
—ভাইজান, ডাক্তার আব্বা মামনিরে রাগ করতেছে,মামনি তো অসুস্থ হইয়া যাবে।
মায়ার বাবা ভীষণ বিধ্বস্ত হয়ে বলল,
—তোমার মামনিকে আমি ঠিক বুঝি উঠি না ওসমান, কিছু বলতেও পারি না,তাই যে পারে তাকে বাধা দিচ্ছি না।

হিমালয় এবার ভেঙে পড়ল,মায়াকে এভাবে ও কখনোই নির্বিকার থাকতে দেখেনি,মায়ার কাছে একদম কাছে গিয়ে বলল
—এই মায়া, কি হয়েছে বলো প্লিজ কোথায় সমস্যা তুমি এমন করছ কেন?তুমি আমাকে বলো আমি সব ঠিক করে দেব,
—আপনি শুধু এটুকু করুন এখান থেকে চলে যান আর কক্ষনো আসবেন না,কানাডাতে যাচ্ছেন খুব পড়াশোনা করুন জীবনে খুব সফল হন।
হিমালয় মায়ার দুই বাহু ধরে মায়ার খুব কাছে গিয়ে বলল,
—আমি শুধু তোমাকে চাই মায়া শুধু তোমাকে
—আমি চাই না।
হিমালয় অসহায় ভাবে মায়ার দিকে তাকিয়ে মেঝেতে বসে মায়ার পা নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে বলল,
—আমায় তুমি নিঃস্ব করে দিও না মায়া,আমি পাগল হয়ে যাবো
মায়ার শরীর কেপে উঠলো নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে বলল
—এটা তো হিমালয় আহমেদ নয়,আপনি তো এত ছেলেমানুষ নন,আপনি স্ট্রং আত্মবিশ্বাসী একজন সামান্য মেয়ে কি করে আপনাকে নিঃস্ব করার ক্ষমতা রাখে।
হিমালয় বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে রইলো দুজনেই নিঃশ্চুপ,
—তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ মায়া?
মায়া দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলল
—হু
—পরিষ্কার করে বলো
—হ্যা
হিমালয়ের কপালের রগ স্পষ্ট হয়ে উঠলো নিজের স্বকীয় ফিরে পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মায়ার কাছে গিয়ে ওর কোমর পেচিয়ে ধরে বলল,
—ভেরি গুড ভাগ্যিস বিয়ের আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ,মনে আছে তোমায় আমি বলেছিলাম আমায় কোনোদিন চলে যেতে দিও না,বাট ইউ ফুল!ইউ ডিসাইড টু লিভ মি!ওকে দেন গুড বাই।

হিমালয় আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেলো আর কক্ষনো, কক্ষনো ও মায়ার সাথে যোগাযোগ করে নি একবারের জন্যেও না!

সাহিত্য ফিরে এসে দেখলো মায়া নিজের ঘরে হাউমাউ করে কাদছে ও দৌড়ে মায়ার কাছে গিয়ে বলল
—কি হয়েছে! মায়া! এই মায়া কাদছিস কেন তুই!
মায়ার কান্না থামার কোনো নাম নেই,এদিকে সাহিত্য অস্থির হয়ে উঠেছে,মায়ার কান্না ও একটুও সহ্য করতে পারে না রীতিমত পাগলামি শুরু করে দিয়েছে
—মায়া আমায় বল কি হয়েছে আমি, আমি সব ঠিক করে দেব মায়া এই মায়া,তুই প্লিজ কান্না থামা,
মায়া কি করে বোঝাবে আর কিচ্ছু ঠিক হওয়ার নেই কোনোদিন আর ফিরবেনা সে!এই ঘরে এই ঘরেই তার সাথে বিচ্ছেদ হয়েছিল মায়ার এখানে দাড়িয়েই মায়া দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল!
সাহিত্য নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পেরে পাশে থাকা ফ্লাওয়ার বাস্ক টা ছুড়ে ফেলতেই মায়া চমকে উঠলো নিজেকে সামলে উঠে দাড়িয়েই চোখ মুছলো,অদ্ভুত ওর সাথেই এরকম হয় ওর শান্তি মত কান্না করার ও কোনো জায়গা নেই!এতটাই হতভাগ্য ওর!মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে সাহিত্যের মাথায় হাত রেখে বলল,
—শান্ত হ এই দেখ আমি কাদছি না!ওষুধ খেয়েছিস তুই!
সাহিত্য জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে মায়া সাহিত্যের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
—প্লিজ, আমাকে মেরে ফেলিস না শান্ত হ, ডাক্তার তোকে উত্তেজিত হতে না করেছে,এত দায় নিয়ে আমি বেচে থাকতে পারি না আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে, কেন বলতো আমার কোনো কঠিন অসুখ হয় না! আমি কি এতটাই খারাপ যে সৃষ্টিকর্তাও আমাকে চান না!
সাহিত্য করুন চোখে মায়ার দিকে তাকালো,
—কঠিন অসুখ করলে কি হয় জানিস মায়া? এই যেমন ধর তোর ব্রেনে টিউমার হলো তুই পৃথিবীর কোথাও গিয়ে অপারেশন করতে পারবি না,এভাবেই থাকতে হবে যখন তুই জানতে পারবি একসময় এই টিউমার টা ব্লাস্ট করে তুই মারা যাবি তখন সব কিছু সুন্দর লাগে, তোর আশেপাশের সবচেয়ে নিষ্ঠুর মানুষটাকেও জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, আরো কিছুদিন বেচে থাকতে ইচ্ছে করে প্রিয় মানুষটার খুব কাছে গিয়ে একটু নিঃশ্বাস নিতে ইচ্ছে করে…. আফসোস!

এবার মায়াও কেদে ফেললো সাহিত্যের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার মধ্যেই ও একটু বাকা করে হাসলো,
—আমায় করুণা করিয়া না প্লিজ মায়া, আমি সহ্য করতে পারি না, আজকাল সবাই আমাকে করুণার চোখে দেখে এই যে আমি মাকে এত কঠিন কঠিন কথা বলি মা প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে যায় আমি দেরি করে বাড়ি ফিরলে কেউ কিছু বলে না আমার বন্ধুরা আমায় পচায় না, এরা সবাই আমাকে পদে পদে বুঝিয়ে দেয় আমি আর বেশিদিন থাকবোনা, বিশ্বাস কর মরে যাওয়ার থেকেও এই কষ্ট বেশি, একমাত্র তুই ছিলি যে আমাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতি,আমি তোকে ভালোবাসি বললেই তুই প্রতিবাদ করতি তুই আমায় অপমান করতি, তবে আজকাল তুইও….

মায়া অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলো সাহিত্যের দিকে,তারপর মাথা নিচু করে বলল,
—কেন বল তো!আমার কাছের মানুষ গুলো দূরে চলে যায়! আমাকে কি বিধাতা একা করেই পাঠিয়েছেন! বিশ্বাস কর একা থাকার মত বড় অভিশাপ আর কিচ্ছু নেই!
—আমি তোর কাছের মানুষ মায়া….
মায়া মৃদু হেসে বলল,
—বিকেলে তোর এপোয়েন্টমেন্ট আছে না?
সাহিত্য ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—হু
—আমি যাবো তোর সাথে
—না!
—কেন!
—তুই ডাক্তারদের কাছে খুব ফেমাস তুই গেলেই সবাই তোর সাথে গল্প করতে বসে যায় এমন ভাব আসমান থেকে ডাক্তারদের দেবী মাটিতে পা রাখছে! অসহ্য খুব অসহ্য!
মায়া মুখ বিকৃত করে বললো
—ওহ! ইউ আর গেটিং জেলাস!
—তুই একটা ভাঙ্গা গেলাস, হেহ তোরে দেইখা আমি জেলাস হবো?তোর আছে টা কি?গান গাইতে গেলে কাউয়ার মত কাউ কাউ করস রান্নাও তো শিখস নাই রান্না করতে গেলে বাড়ি ঘরে আগুন ধরায় দিস এলাকার মানুষরে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা লাগে, আর যাও একটু চেহারা তাও দিন দিন যাইতেছে, পারিস ওই একটু পড়ালেখা ওই ধুয়ে কি পানি খাবি? হেহ!
মায়া আহত হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
—তোর মত বেয়াদব আমি আর একটাও দেখি নাই
—তার জন্য চোখ থাকা লাগে
মায়া বিরক্ত হয়ে উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল,
—ভাবছিলাম দুপুরে তোর প্রিয় গরুর কালাভুনা দিয়ে তোকে ভাত খেয়ে যেতে বলব,বাট সরি টু সে তুই এখন বাড়ি যেতে পারিস আমি বিকালে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় তোর বাসা থেকে তোকে পিক করে নেব।
—কিইহ! কালাভুনা!
—গেট আউট
—ইয়ে মানে মায়া শোন তুই খুব ভালো চা বানাস
—আমি কিছু শুনতিছি না
—আর তুই ভালো কবিতাও লিখিস মাঝে মাঝে
—গোসলে যেতে হবে বাই…
—মায়া শোন একজন মৃত্যু পথযাত্রীর মুখের সামনে থেকে কালাভুনা কেড়ে নিয়ে তুই খেতে পারবি তোর পেট খারাপ হবে না!?
মায়া থমকে দাড়ালো, প্রচন্ড বিরক্তি আর হতাশা নিয়ে বলল,
—আর কতভাবে বলতো আমায় কষ্ট দিবি?
—মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সর্বভাবে, তাও আমার কষ্টের কাছে তোর কষ্ট কিছুই না আমার আক্ষেপ আমৃত্যু দেবী অপ্রাপ্তির।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (১৮)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১৮)

যে ডক্টর মায়ার বাবার অপারেশন করেছেন তার কেবিনে মায়া আপাতত বসে আছেন তিনি আরেকটা অপারেশন করে মায়ার সাথে দেখা করবেন, মায়ার বাবার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। এদিকে মায়া থরথর করে কাপছে ওর হাত পা পুরো ঠান্ডা হয়ে গেছে, ইচ্ছে করছে এখান থেকে ছুট্টে বের হয়ে যেতে, মায়া কিছুক্ষণ মোচড়া মোচড়ি করে ভাবলো চলে যাবে এক্ষুনি ও এখান থেকে চলে যাবে বাবার তো অপারেশন শেষ হয়েছে, মায়া দরজা খুলে বের হতে গিয়েই থমকে গেলো,
—পালাচ্ছো নাকি মায়া?
মায়া আমতা আমতা করে বলল,
—না আসলে, আবির ভাই আপনি তো আসতে খুব দেরি করছিলেন আমি একটু ওয়াশরুমে যাব ভাবছিলাম, তাই আরকি….
—এখন ওয়াশরুমে যেতে চাও?
—না, না ঠিক আছে আমি পরে যাবো,
—এসো বসো,
আবির গায়ের এপ্রোন টা খুলে চেয়ারে রেখে বসলো,মায়া মাথা নিচু করে আছে মাথা তোলবার সাহস ওর হচ্ছে না আবির শান্ত চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
—কেমন আছো মায়া?
মায়া মাথা নিচু করে রইলো,ও কি বলবে?ভালো আছি? সহজ একটা উত্তর এর পর আর পালটা প্রশ্ন হবে না এরকম একটা জবাব?নাকি সত্যি? আচ্ছা সত্যি কি? এই যে মায়া ভালো নেই একটুও ভালো না ওর জীবন ঠিক দুবছর আগেই থমকে আছে?নিয়ম করে সকাল দুপুর রাত হয় কিন্তু মায়ার কিছু যায় আসে না? অনেকদিন হলো মায়া একটু শান্তিতে ঘুমুতে পারে না,বুকের মধ্যে খুব বড় একটা অংশ জমাট বেধে আছে, ঠিক মতো নিঃশ্বাস ফেলতে পারে না, একথা কি মায়া বলবে? মায়ার এসব কথা কি কেউ শুনবে? বিশ্বাস করবে?মায়া খুব বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
—ভালো।
—এই ভালোটুকু বলতে এত সময় কেন লাগলো মায়া?
—আপনারা কেমন আছেন আবির ভাই?
—আমরা বলতে কারা মায়া?
মায়া কিছু বলতে পারলো না চুপ থাকলো,
—মিষ্টি চার মাস হলো কন্সিভ করেছে।
মায়ার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মনে হলো কতদিন ভালো কিছু শোনে না, মায়া খুব সুন্দর করে একটু হাসলো
—কংগ্রাচুলেশনস, আমি খুব খুশি হয়েছি।নিরব ভাইয়া আর পুষ্প আপু কি বিয়ে করেছে?
—হ্যা বছর দেড়েক হলো ওরা এখন স্পেনে আছে নিরব ওখানে এক হসপিটালে স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করতে গেছে পুষ্পও ওর সাথে আছে নেক্সট মান্থে ফিরবে হয়তো ওরা।
—ওহ! পুষ্প আপুর বাবা তাহলে সবটা মেনে নিয়েছে?
—না
—তাহলে?!
—তুমিতো জানো পুষ্প কি জেদী মেয়ে, অনেক কাহিনী বেশ ভালোই ঝামেলা হয়েছিলো ওদের বিয়েতে, কিন্তু পুষ্প নিরবকে শক্ত করে আকড়ে ধরেছিলো।ছেড়ে দেয় নি।
—যাক ভালোই হয়েছে আঙ্কেলও একসময় মেনে নেবেন,
—হ্যা হয়তো,ধ্রুব আপাতত দেশেই আছে,এই হসপিটালেই, বিয়ে শাদী করেনি ওর ভাব দেখে মনে হয় না ওর কপালে বিয়ে আছে
মায়া হেসে বলল,
—এখনো কি কোনো চুমকির দেখা পায় নি?
—ওর আর পাওয়া,ওহ ভালো কথা দিহানের দিন পনের পর বিয়ে তুমি এটেন্ড করবে নাকি?
মায়া মৃদু হেসে বলল,
—আমি চলে যাবো,আবির ভাই। এই শহর আমার ভালো লাগে না।
—আর কারো কথা শুনবে না?
মায়া উঠে দাড়ালো ওর খুব ইচ্ছে করছে জানতে কথা আর হিমালয় বিয়ে করেছে কি না! কতদিন বিয়ে করেছে ওরা?ওদের সংসার টা কি খুব সুন্দর স্বপ্নের মত!? হিমালয় কি কথা আপুকে তুমুল ভালোবাসে,পাগল করা ভালোবাসা! মায়ার দম বন্ধ হয়ে এলো ওদের কথা শোনার সাহস মায়ার নেই, চলে যাওয়াই ভালো ওকে ফিরে যেতেই হবে।তবে দরজা পর্যন্ত আর যাওয়া হলো না মায়ার তার আগেই জ্ঞান হারালো,

জ্ঞান ফিরে মায়া দেখলো সাহিত্য বুকে হাত বেধে দাঁড়িয়ে আছে,
—তুই জিজ্ঞেস করেছিলি না স্টেশনে যে তুই প্রতিবন্ধী কি না আমি বলছি তুই আসলে প্রতিবন্ধী, তুই হলো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু
—শিশু?
—এক থাপ্পড়ে দাত খুলে ফেলব মুখে মুখে কথা বললে,খাওয়া দাওয়া করিস তুই ঠিক মতো?মরতে চাস? মরতে চাইলে বল, এক কাজ কর ওঠ সিড়ি বেয়ে এই ১০ তলা হসপিটালের ছাদ থেকে তোকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই,
—সিড়ি বেয়ে না উঠে লিফটে যাওয়া যাবে না?না মানে শরীর দুর্বল তো, তাই বলছিলাম আর কি
সাহিত্য কটকট করে তাকিয়ে থেকে বলল,
—মামার যে ডক্টর অপারেশন করেছে সে স্পেশালি তোকে ট্রিট করছে কেন?
—ওইটা আবির ভাইয়া হিমালয়ের বন্ধু।
—বাহ! বেশ তো ডাক্তারে ডাক্তারে দেশ দুনিয়া ভইরা গেছে, সারাজীবন তো ফ্রি ট্রিটমেন্ট করা যাবে, তুই তো খুব লাকি রে!

মায়া পাশ ফিরে শুয়ে মুখে চাদর টেনে নিলো দ্রুত এখান থেকে ফিরে যেতে হবে, খুব দ্রুত।
তবে দ্রুত আর মায়ার ফেরা হলো না ওর বাবার অনুরোধে এবার এমন কিছু ছিল মায়া সহজে ছাড়া পেলো না এ কদিন একবারো মায়া ওর বাসায় আসেনি ফুপির বাসাতেই ছিলো আজ ওর বাবাকে রিলিজ করায় বাসায় এসেছে সাহিত্য এসে সব গুছিয়ে দিয়ে গেছে বাবাকে তার ঘরে দিয়ে খাওয়া শেষ করে ওষুধ দিয়ে মায়া নিজের ঘরে এলো, সবকিছু একদম পরিপাটি ঠিক যেমন মায়া রেখে গিয়েছিলো, জীবনের সবচেয়ে সুন্দর আর সবচেয়ে বিস্বাদ স্মৃতি এখানে মায়ার এই ঘরে, মায়া জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলো তবে দীর্ঘশ্বাসই বেরিয়ে এলো,চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো, যদি সেদিন হিমালয়ের মা না আসতেন বা ও যদি সেদিন বাসায় না থাকতো! তাহলে কতকিছু অন্যরকম হতো! হিমালয়ের সাথে মায়ার বিয়ের তারিখ যেদিন ঠিক হলো, মায়া ঘরে আসতেই হিমালয় ওর পিছু পিছু এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো,মায়া একদম অবাক হয়ে গেলো এই কঠিন মানুষ টার ভেতরটা কত্ত নরম! মায়া ফিক করে হেসে বলল,
—কি ব্যাপার? আপনার কি আফসোস হচ্ছে নাকি কাদছেন কেন!
হিমালয় কিছু বলল না শুধু মায়াকে জড়িয়ে ধরে রইলো শুধু যাওয়ার সময় বলল,
—আমার সাতাশ বছরের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া তুমি।অনেক কিছু আমি পারি না আর আজকাল তার মধ্যে অন্যতম একটা হচ্ছে তোমাকে মাথা থেকে বের করতে, এক সেকেন্ডের জন্যেও না।
হিমালয় কিছু তীক্ষ্ণ সুখকর কথা বলে বেরিয়ে গেলো।
যেদিন বিয়ে তার ঠিক আগের দিন হিমালয়ের মা এলেন, মায়ার বাবা একটু বিস্মিত হয়ে বললেন
—ভাবি আপনি?
—মায়া বাসায় আছে ভাইজান?
—হ্যা উপরে
—আচ্ছা আচ্ছা বিয়ের কিছু প্লান ওর সাথে করতে হবে তো তাই…আমি উপরে যাচ্ছি।

হিমালয়ের মাকে দেখে মায়া খুব খুশি হলো, মহিলাটা খুবই সহজ সরল যাকে দেখলেই মমতা নজরে আসে,তবে মায়ার খুশি বেশিক্ষণ থাকলো না
—আন্টি আপনি?আন্টি জানেন সেদিন আপনি যে আংটিটা আমায় দিয়েছিলেন ওটা কিন্তু আমি খুলে ফেলি নি,দেখুন দুটো আংটিই আমার হাতে আছে,
হিমালয়ের মা মায়ার খুব কাছে গিয়ে মায়ার মাথায় হাত রেখে বলল,
—মারে আজ আমি এই আংটিটা ফেরত নিতে এসেছি
মায়া একটু ভ্রু কুচকে তাকালো হিমালয়ের মা মায়াকে বিছানায় বসে হাতে হাত রেখে বলল,
—জানিস মায়া, এই পৃথিবী যদি আমাকে কিছু মাত্র দিয়ে থাকে তাহলে সেটা হিমালয়, আমার যখন বিয়ে হয় তখন সতের কি আঠারো বছর বয়স মামার বাড়িতে থাকতাম বাবা মা বেচে নেই বুঝিসই তো তাহলে আমার ছেলেবেলা কেমন সুখের ছিলো, যার সাথে বিয়ে হলো সেখানে স্বামী রুক্ষ মেজাজী ভোগপন্য শাশুড়ি কাছে আমি বিনি পয়সায় পাওয়া কাজের লোক, উনিশ বছরে যখন বুঝলাম আমার মধ্যে কারো অস্তিত্ব আছে সে শুধুই আমার তখন মনে হলো এবার বুঝি দুঃখ ঘুচলো, তবে পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমার স্বামী জোর করে আমার সন্তান নষ্ট করালেন, ব্যাস দুঃখ আরো তীব্র হলো তারপরের ৭ বছরেও আর আমার সন্তান হলো না শ্বশুর বাড়ির জায়গা হারালাম,আমাদের এলাকায় কাজেম ভাই দের বাড়ি তিনি তার বিরাট বড়লোক বন্ধুর সাথে আমার জন্য সম্বন্ধ আনলেন বিপত্নীক, এক সন্তান আছে মাস ছয়েক বয়স,মানে বুঝিস তো তাদের একজন লিগ্যাল আয়া লাগবে,ছোট্ট বাচ্চাটাকে যেদিন আমার কোলে তুলে দেওয়া হয় সেদিন মনে হলো এই তো পেয়েছি সুখ আমায় স্বয়ং ধরা দিয়েছে, বেশ কিছু বছর আমার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল না তিনি তার প্রথম স্ত্রীকে এতই ভালো বাসতেন যে শোক সামলে উঠতে উঠতে তার বছর লেগে যায় কিন্তু আমি সুখী ছিলাম স্বামী পাবার আগে আমি সন্তান পেয়েছিলাম আমার সন্তান হিমালয়! আমি ওর মা,
মায়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে, রেহেনা আহমেদ মায়ার হাত শক্ত করে ধরলেন,
—কাজেম ভাইয়ের কাছে আমার বিরাট বড় ঋণ মায়া, এই পৃথিবীতে এখন আমি আর হিমালয়ের বাবা বাদে তিনিই তৃতীয় ব্যাক্তি যে জানেন আমি হিমালয়ের সৎ মা, তোর সাথে হিমালয়ের বিয়ে হলে,কথা খুব কষ্ট পাবে তিনি হিমালয় কে জানিয়ে দেবেন মায়া, বাকি জীবন হিমালয়ের কাছে আমার সৎ মা পরিচয়ে বেচে থাকতে হবে,
হিমালয়ের মা মায়ার পা ধরে বসে পড়লেন
—মা তুই দয়া কর আমায়, এই বিয়েটা তুই করিস না আমি তোর কাছে আমার সন্তান চাচ্ছি মায়া আমার হিমালয়
মায়া কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে বসে রইলো ওর মাথার মধ্যে কিচ্ছু ঢুকলো না, মায়া জানে হিমালয়ের কাছে ওর মা কি! আর কতটা, মায়া এটাও জানে যে মায়ার কাছে হিমালয় কি! মায়া ভাবলো ওর সাথেই বারবার কেন এরকম হয় ওর কি দোষ! ওর কোথায় অন্যায় মায়া হিমালয়ের মায়ের সামনে মাটিতে বসে পড়লো, অনেকটা সাহস নিয়ে বলল,
—আপনি তো মহারাজ কে চেনেন আন্টি, উনি কখনোই আপনাকে….
—আমি জানি আমার হিমালয় কেমন কিন্তু মায়া আমি আমার স্বামীর কাছে দ্বিতীয় স্ত্রী হয়ে থাকতে পারলেও আমার সন্তানের কাছে কিভাবে দুই নম্বর হয়ে বেচে থাকব!
—আন্টি আমি মহারাজ কে ভালোবাসি
—কথাও হিমালয় কে খুব ভালোবাসে মায়া, সেই ছোটবেলা থেকে….কিন্তু হিমালয়…

মায়া তাজ্জব হয়ে বসে রইলো মনে হচ্ছে এক্ষুনি দুনিয়া অন্ধকার হয়ে ও পড়ে যাবে, অদ্ভুত! ও ঠিকই বসে রইলো মধ্যমা থেকে আংটিটা খুলে রেহেনা আহমেদেএ হাতে দিয়ে বলল,
—আপনার ছেলে একান্তই আপনার আন্টি আমি অতি নগন্য আমার কোনো ক্ষমতা নেই আপনাদের সংসার নষ্ট করার।আপনি কাজেম আংকেলকে বলবেন আন্টি, কথা আপুকে আমিও খুব ভালোবাসি, কথা আপু আমায় বড় বোনের মত ভালোবাসা দিয়েছে,আমি দুদিন এসে কোনো অধিকার রাখি না তার পৃথিবীটা নষ্ট করে দেওয়ার।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (১৭)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১৭)

হালকা আবছা আলো আঁধারের একটা খেলার মধ্যে মায়া ট্রেন থেকে নামলো, ওর শহরে এই শহরে ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা একসময় থাকতো, আচ্ছা হিমালয় কি দেশে আসে?কথা আপু সাথে থাকে?মায়া আকাশ পাতাল চিন্তা মাথা ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলো এজন্যই এই শহরটা ওর ভালো লাগে না, খুব বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া স্টেশনে দাড়িয়ে রইলো তবে বেশিক্ষণ না একটা পরিচিত অবয়ব দেখতে পেলো জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওর দিকে হেটে আসছে, মায়া নিজ মনেই একটু হাসলো, ছেলেটা পাগল নাকি? এত ভোরে ওর ঘুম ভাঙলো কি করে?
—দে তোর পা টা দে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করি এই শহরে তুই তোর পায়ের ধুলো দিলি এই শহর ধন্য হয়ে গেলো
মায়া হাসলো,
—তুই তোর পা এগিয়ে দে, এত সকালে তোর ঘুম ভাঙলো,
সাহিত্য নির্বিকার ভাবে উদাস গলায় বলল,
—আমি রাতে বাসায় যাই নাই।
মায়া এবার অবাক হলো ভীষণ অবাক, তবে কিছু বলল না,
—বাবাই এর কাছে এখন কে আছে?
—তোর ফুপি
—আমার ফুপি তোর কি হয় সাহিত্য?
—এ চুপ কর তো, তোর লেকচার আমার শুনতে ইচ্ছা করে না।
—আচ্ছা এই চুপ করলাম, আর লেকচার দিব না।
—তোর ব্যাগ কই
মায়া হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝালো আনে নি,সাহিত্য চোখ ছোট করে বলল,
—কি? জাদু দেখাচ্ছিস? তুই প্রতিবন্ধীর মত হাত পা নাড়াইলেই ব্যাগ চলে আসবে?
মায়া শীতল চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
—আমি প্রতিবন্ধী?
—আমি বললেই কিছু হয়ে যায় না মায়া, আমার বেশিরভাগ কথাই ইগনোর করবি,
মায়া চোখ নামিয়ে ফেলল, এই ছেলেটা এমনই যখন মায়া মজা করে কিছু বলে ও সিরিয়াস হয়ে যায় আর মায়া যখন সিরিয়াস হয় তখন এমন সব কথা বলে মায়ার সিরিয়াসনেস আর টেকে না সাহিত্য হাই তুলতে তুলতে বলল,
—চল ভাই এখন যাই আর ভাল্লাগতেছে না, ব্যাগ তো আনিস নাই তাই না?
মায়া আর কিছু বলল না হাটতে থাকলো, খুবই ক্লান্ত ভঙ্গিতে, সকাল বেলাটা মায়ার খুব প্রিয় ওর কাছে সকাল মানে মন খারাপের সময় একান্ত ব্যাক্তিগত কিছু সময়,আচ্ছা ওর কি মন ভালো করার সময় আছে এখন?কিসে ওর মন ভালো হয়?সাহিত্য একমনে মায়ার দিকে চেয়ে রইলো,সকাল ওর খুব একটা কপালে জোটে না তবে সকালটা সুন্দর তার চেয়েও সুন্দর এই মৃদু কুয়াশায় হেটে যাওয়া রমনীটা এই মেয়ের দিকে হাজার বছর এভাবেই তাকিয়ে থাকা যায় কোনো ক্লান্তি আসে না ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে সাহিত্য মায়ার সাথে হাটতে থাকলো,
—চা খাবি সাহিত্য?
—কি জন্যে?এই যে তোরে নিতে আসলাম তার জন্য পে করতিছিস?তুই কি ভাবছিস দশ টাকার চা খাওয়াইলে শোধবোধ হয়ে যাবে এত সহজ?
মায়া আর কিছু বলল না, এরে কিছু বইলেও লাভ নাই।সাহিত্য একটা টং এর সামনে এসে দাড়ালো মাত্রই দোকানদার দোকান খুলেছে,
—মামা দেরি হবে নাকি?
—পানি বসাইছি মামা
—আচ্ছা দুইটা চা দিয়েন একটা লাল চা আরেকটা দুধ চা, লাল চা তে কড়া লিকার দিবেন মিষ্টিও বেশি
—তুই খালি পেটে দুধ চা খাবি?এসিডিটি হবে না?
—আমার সাথে ডাক্তারি দেখাইতে আসবি না, রোগ শোক তাদের হয় যাদের ডাক্তারের সাথে পরিচয় থাকে আমার পরিচিত কোনো ডাক্তার নাই অতএব আমার ওইসব কিছু হয় না।

মায়া শকড হয়ে তাকিয়ে রইলো এই ছেলেটা দেখতে যতটা সুন্দর ওর কথাগুলো ততটা তিক্ত, ও এমন সহজ ভাবে কঠিন কথা বলে যে কলিজা এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় আর ও এমন নির্বিকার থাকে যেন কিছুই হয় নি।মায়ার চোখ ছলছল করে উঠলো চোখের পানি লুকাতে মায়া একটু তফাতে গিয়ে দাড়ালো, এই ছেলের সামনে কেদে ফেললেও ঝামেলা, এখনো চারপাশ পরিষ্কার হয় নি আলো পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি মায়া দিগন্তে দৃষ্টি রেখে চোখ ভর্তি পানি বাচ্চাদের মত মুছে ফেলল,সাহিত্য মায়ার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,
—কাদিস না মায়া তুই কান্না করলে আমার সহ্য হয় না,
মায়ার চোখের পানি এবার আর বাধ মানলো না,সাহিত্য মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো বটলগ্রীন কালারের গোল জামার উপরে সাদা রঙের চাদর জড়ানো বেণির ফাকে বেরিয়ে আসা এলোমেলো চুলের একটা মেয়ের এই আবছা ভোরে কান্নার দৃশ্য খুবই অপ্রীতিকর অথচ অদ্ভুত সুন্দর।
—আই এম সরি মায়া,তুই কাদিস না প্লিজ আমি দুধ চা খাবো না দাড়া এক্ষুনি লাল চা বলে আসছি,সামান্য একটা চা খাওয়া নিয়ে তুই যদি এভাবে পরীক্ষায় ফেল করার মত কাদিস তাইলে তো সমস্যা তাই না?
মায়া কপট রাগ নিয়ে তাকালো সাহিত্য বুকের ডানপাশে হাত দিয়ে বলল,
—আহ! ভয় পাইছি হার্ট ধুকপুক করতেছে দেখ?
মায়া খুবই আহত ভঙ্গিতে বলল,
—হার্ট বাম পাশে থাকে
তারপর দুজনেই একসাথে হেসে ফেললো।

প্রাইভেট হসপিটালের একটা কেবিনে আপাতত মায়ার বাবা আছেন ডাক্তার বলেছেন হার্টে রিং বসাতে হবে, তবে যে ডাক্তার অপারেশন করবেন তিনি একটা সেমিনারের জন্য জাপানে আছেন তাই ডাক্তার ফিরলে দুদিন পরেই অপারেশন টা হবে, মায়া ওর বাবার কেবিনে গিয়ে বাবার পাশে বেশ কিছুক্ষণ বসে রইলো ওর বাবার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবলো ওর জন্যেই হয়তো বাবার এত চিন্তা খুব কষ্ট দিয়ে ফেলে ও বাবাকে, খুব বেশি।মায়ার বাবা ঘুম ভেঙে মেয়েকে দেখে শুকনো করে হাসলো,মায়ার বুকের ভেতর গিয়ে হাসিটা বিধলো
—আমি তোমার বুকের ওপর একটু মাথা রাখব বাবা?
—তোর কি মনে হয় তোর বাবা খুব দুর্বল নারে মা?
—উহুহ আমার কাছে আমার বাবা সবচেয়ে শক্তিশালী,
—আমি যতই দুর্বল হই তোকে ধারণ করার ক্ষমতা আমার আছে, আয় তো মা আমার কাছে আয়,
মায়া আলতো করে ওর বাবার হাতের উপর মাথা রাখলো মায়ার বাবা অনুভব করলো তার মেয়েটা কাদছে
—মায়া
—হু
—কষ্ট হচ্ছে মা?
—উহুহ,তোমার কষ্ট হচ্ছে বাবা?
—আমার মেয়েটাকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে।মা?
—হু?
—তুমি তোমার কষ্ট আমাকে বলো না কেন?
মায়া চুপ করে রইলো,
—পৃথিবী এমন কেন বাবা, খুব আকাঙ্খার জিনিসগুলো এত কষ্ট দেয় কেন বাবা?আমি কেন তোমায় এত কষ্ট দেই?
মায়ার বাবা চুপ করে রইলেন তার মেয়েটা আসলে বড় হয় নি এখনো এলোমেলো কথাই বলে।

মায়া ফুপির হাতে হাত রেখে বলল,
—থ্যাংক ইউ ফুপি তুমি বাবার খুব যত্ন করেছো আমি তোমার প্রতি খুব গ্রেটফুল,
মায়ার ফুপি মায়াকে দেখে মুখ ঝামটা মেরে বলল,
—এসেছিস তাহলে?তা কতদিন থাকবি ব্যাগ রেডি রাখিস পালাইতে সুবিধা হবে, তোর তো লুকোচুরি খেলা খুব প্রিয়।আর তোর বাবা আমার ভাই হয় কথাটা ভুলিস না তোর গ্রেটফুল থাকার জন্য আমি কিছু করি নি।
মায়া মাথা নিচু করে বসে রইলো ওর কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না সাহিত্য কঠিন মুখ করে বলল,
—কি করবে মা, বলো যে হারে ছ্যাচড়া চোর ডাকাত বেরে গেছে ওর বাধ্য হয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়, বলাতো যায় না কে কখন কি প্লান বানায়।তুমি কি জন্য মামাকে দেখছো তাও তো বলতে পারি না।
—সাহিত্য! আজকাল খুব মুখে মুখে তর্ক করো তুমি।ভুলে যাচ্ছ আমি তোমার মা।
—ইশ যদি ভুলতে পারতাম!ভাইয়া কি সুন্দর ভুলতে পারলো আমি যে কেন পারি না!
মায়ার ফুপি চোখ গরম করে বলল,
—তনয়টার মাথাটাতো তো ওই বেয়াদব মেয়ে ছেলেটার পাল্লায় পড়ে এক্কেবারে গেছে
—ভাবির সম্পর্কে বাজে কথা বলো না মা।এই মায়া তুই কি চলে যাবি?
—নারে অপারেশন টা যতদিন না হয় থাকি, বাবাইকে দেখে খুব মায়া হচ্ছে
—তুই তো ড্রেস ফ্রেস কিছু আনিস নাই এই এক কাপড়েই থাকবি নাকি? সন্ন্যাসী হবি?এই কাপড়েই খাবি, ঘুমাবি?গোসল করে একাই শুকাবি?এই প্লান
মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—কিনে নেব দু একটা।
—তাহলে বসে আছিস কেন চল।মামা তো এখন ঘুমুচ্ছে, আমি অনেক ব্যস্ত সারাদিন তোর পেছনে ঘুরতে পারব না।
মায়ার ফুপি রাগ করে বললেন,
—দিন তো শেষ ই সাহিত্য তুই তো সারাদিনই এখানে।
—অনেক শেষ মানেই সমাপ্ত না মা, আফসোস তুমি এসব বোঝো না। তোর কি চেয়ারের সাথে প্রেম হয়ে গেছে এইখানেই থাকবি? তাইলে থাক আমি গেলাম।

সাহিত্য কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এসে মায়ার হাত ধরে টেনে তুলে নিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকলো
—কিছুই বুঝিস না তুই মায়া কিচ্ছু না।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (১৬)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১৬)

গতরাত থেকে মায়া ফোন রিসিভ করছে না এদিকে হিমালয় হসপিটাল,পাসপোর্ট, ভিসা সবকিছু মিলিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে,হিমালয় চেম্বারে বসে বেশ কয়েকবার মায়াকে ফোন করেও পেলো না,এমন সময় পুষ্প এসে নক করলো,ওর পিছুপিছু ধ্রুবও এলো, ধ্রুব এলো বলতে পুষ্পই ওকে জোর করে নিয়ে এসেছে
—কিরে ব্যাস্ত নাকি তুই
—আরেহ না আয়,মায়াকে কল দেই ও তো রিসিভই করে না,
বলে ধ্রুবের দিকে তাকাতেই ধ্রুব হিমালয় কে একটা মুখ ভেংচি দিল, হিমালয় উঠে একহাতে কুনুই দিয়ে ধ্রুবের গলা পেচিয়ে ধরে বলল,
—এমনিই মায়ার ঢং এর জ্বালায় আমি বাচি না এখন ওর সাথে মিশে তুইও ঢং শুরু করছস না?আমার সাথে এই কয়দিন কথা বলিস নাই ক্যান
—তুইও তো এক্কেরে মাথা মোটা, কি খাইয়ে তুই টপ রেজাল্ট করতি আমি বুঝলাম না আমি যে তোর উপর রাগ করছি এইডাও তো বুঝস না আমারই আসা লাগলো তোর কাছে,আর তুই যে মায়ারে ঢঙ্গী কইছস এইডাও আমি ওরে বলব
—মহারানী ফোন রিসিভ করলে তো বলবি
—সে তো তোর ফোন রিসিভ করে না,আমার সাথে তো একটু আগেও কথা হইছে,
পুষ্প পেপার ওয়েট দিয়ে খেলতে খেলতে বলল,
—আমার সাথেও তো সকালেই কথা হলো
হিমালয় অবাক হয়ে বলল
—মানে কি! আমার সাথে কাল রাত থেকে কথা হয় না!
পুষ্প এবার বলল,
—বিয়ে নিয়ে আবার ঝামেলা করছিস নাকি
—কই না তো! আমি তো বলেছি যাওয়ার আগে আকদ হবে আমি ফিরলে অনুষ্ঠান, ইভেন বাসায়ও তো সেভাবেই সব ঠিকঠাক
—তাহলে দেখ তোর সাথে দেখা করার বাহানা, মেয়েটা তোকে পাগলের মত ভালোবাসে, তোকে ছাড়া থাকার কথা ও ভাবতেই পারে না,
হিমালয় মিটমিটি হাসলো, ধ্রুব চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
—আমার তো ভয় করছে হিমালয় চলে গেলে ও কান্নাকাটি করে ভয়ংকর পরিস্থিতি না তৈরি করে, আর মায়াকে বিশ্বাস নেই দেখা গেলো ও আবার না তোর কাছে চলেই যায় দুদিন পর,দেখা গেলো একদিন খুব ঠান্ডায় দরজা খুলে তুই দেখলি বরফ পড়ছে আর মায়া কেপে কেপে বলছে,মহারাজ আমায় জড়িয়ে ধরুন তো আমি ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি!
তিনজনেই সশব্দে হেসে উঠলো, আবির আর নিরবও এসে যোগ দিলো,পুষ্প এবার গম্ভীর হয়ে বলল,
—শোন, মজা পরে হবে যে কথা আমি বলতে চাচ্ছি,তা হলো আমরা কিন্তু কথার সাথে খুবই অন্যায় করছি,
হিমালয় চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
—কি রকম?
পুষ্প নিজের চেয়ারটা সামনে টেনে হিমালয়ের দিকে একটু ঝুকে বসে বলল,
—দেখ হিমালয় এটা তো তুইও জানিস যে কথার তোর প্রতি যে ফিলিংস সেটা কখনোই শুধু বন্ধুত্ব না, হ্যা এটা ঠিক যে তুই কখনো ওকে প্রশ্রয় দিস নি বা তোর তরফ থেকে সরাসরি সেটা না ই ছিল কিন্তু ইদানীং স্পেশালি মায়া তোর লাইফে আসার পর থেকে কিন্তু তুই টোটালি ওকে ইগনোর করছিস,
হিমালয় টেবিলের উপর ভর করে উঠে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
—তোদের সবারই কি সেম ধারণা
কেউ কোনো কথা বলল না হিমালয় এবার বলল,
—ওকে দেন আমি ধরে নিচ্ছি মৌনতা সম্মতির লক্ষণ, তাহলে তোরা আমাকে বল আমি কি একাই কথা কে ইগ্নোর করছি না তোরা সবাই লাস্ট তোদের কার কবে কথার সাথে যোগাযোগ হয়েছে একটু মনে করে বলতো,
সবাই এবার খেই হারিয়ে ফেলল,যে অভিযোগ নিয়ে ওরা সবাই হিমালয়ের কাছে এসেছিলো সেম দোষে যে ওরাও দোষী হিমালয় ওদের তা বুঝিয়ে দিলো, হিমালয় এবার টেবিলের উপর ভর দিয়ে পুষ্পের দিকে ঝুকে শান্ত চোখে তাকালো,
—আচ্ছা চল বাদ দিলাম তাও এবার আসি কথা আর আমার বন্ধুত্ব বা বন্ধুত্বের বেশি কিছু সম্পর্কে এবং তার সাথে মায়া,কথা বরাবর খুব বুঝদার মেয়ে খুব গোছালো খুবই হেল্পফুল কোনো কথা ওকে বোঝাতে হয় না যথেষ্ট বুদ্ধিমতী কথাও কম বলে মোট কথা একটা বাড়ির বউ হিসেবে একজন স্ত্রী হিসেবে ও পার্ফেক্ট, বাট আমি কখনোই ওকে সেভাবে দেখি নি ও বরাবরই আমার খুব ভালো একজন বন্ধু ছিলো মায়া যদি আমার লাইফে নাও আসতো তাহলেও ওর সাথে আমার কিছু হবার কোনো সম্ভাবনা ছিল না যতই আমার বাড়ির লোক যাই বলুক শেষ পর্যন্ত হয় কিন্তু সেটাই যেটা আমি বলি,আমি নিজে খুব গোছানো একজন মানুষ, আমাকে গুছিয়ে দেবার কারো দরকার নেই আমার দরকার এমন কেউ যে আমাকে এলোমেলো করে দেবে যাকে আমি গুছিয়ে দেবো, যার জন্য আমারও পাগলামি করতে ইচ্ছে হবে যে কথায় কথায় কষ্ট পাবে যার রাগ হবে অভিমান হবে, ঠিক যেমন টা মায়া।কিন্তু কথা এসব কিছুর উর্ধ্বে।আর বেশ কিছুদিন আঙ্কেল অসুস্থ তাই কথা ছুটিতে ছিল আমাদের রেগুলার কথা হয়েছে হ্যা ইদানীং আমি খুব ব্যস্ত থাকি কারো সাথেই আমার কথা হয় না তোদের সাথেও না ইভেন দেখ মায়াও আমার উপর আপসেট।আর কথা নিজেই আমাকে ইগনোর করে আর আমি যাস্ট ওকে স্পেস দিচ্ছি যাতে আমাদের বন্ধুত্বটা ভালো থাকে।এম আই ক্লিয়ার মিস পুষ্প হায়দার?
পুষ্প ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেললো ও জানে এটাই হিমালয় যে সহজে কথা বলে না আর যে কথা বললে তার কথার উপর বলার কিছুই থাকে না।
সন্ধ্যায় মায়া ড্রয়িং রুমে সোফার উপর সটান হয়ে শুয়ে কোলের মধ্যে কুসন নিয়ে মোবাইলে হিমালয়ের সাথে ওর ছবিগুলো দেখে নিজেই বিড়বিড় করছিলো, এমন সময় কলিংবেল বাজলে মায়া খুব বিরক্ত হলো এখনই তো বাবার আসার কথা না কে এলো? মায়া বিরক্ত হয়ে ডাকলো
—ওসমান চাচা দেখো তো কে
ওসমান চাচা দরজা খুলতেই হিমালয় ইশারায় না করলো কে এসেছে জানাতে, ওসমান চাচাও একগাল হেসে দরজা বন্ধ করে ভেতরে চলে গেলেন
—কে এসেছে চাচা?
মায়া কোনো সাড়া পেলো না, নিজের ভ্রু কুচকে ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়েই ও হিমালয়ের সাথে নিজের একটা ছবি ছবি দেখতে পেলো মিষ্টির বৌভাতের দিন তোলা যেখানে হিমালয় এক হাত মায়ার পিঠে অন্য হাত পকেটে ঢুকিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে আর মায়া এক হাতে হিমালয়ের ব্লেজারের কলার চেপে ধরে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,হিমালয় সোফার পেছনে দাঁড়িয়ে মায়ার দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে,মায়া কপাল কুচকে ছবিটা জুম করে বলতে থাকলো
—কিই ক্যামেরা ম্যানের কি রূপ জ্বালাইছে?এই যে,আমি এত সুন্দরী একটা মেয়ে যে লজ্জার মাথা খেয়ে আপনার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আছি সেইটা খেয়াল করছেন!আহারে! কি পোজ নিছে মনে হয় এইটারে সিভিতে দিয়ে উনি মেয়ের বাড়ি পাঠাবে হেহ! একটুও ভাল্লাগতেছে না আরে ক্যাবলা লাগতেছে ক্যাবলা,ফালতু লোক একটা,
বলে মায়া নিজেই মুখ ভেংচি দিয়ে মুখ ফেরাতেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলো! হিমালয় এক ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো
—কাকে ফালতু বলছো মায়া?
মায়া খেয়াল করলো সাদা শার্ট কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে এক হাতে ভাজ করা এপ্রোনটা নিয়ে পাশের দেয়ালে হ্যালান দিয়ে হিমালয়ই দাঁড়িয়ে আছে!
মায়া ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলো এটাও নিশ্চয়ই কল্পনা ও কদিনে এরকম হাজার বার হিমালয় ওর কল্পনায় এসেছে আর হাজার বার মায়ার মন খারাপ করিয়ে চলে গেছে, মায়া নির্বিকার ভাবে সোফা থেকে উঠে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগলো হিমালয় অবাক হয়ে গেলো, মায়াকে কত ক্লান্ত লাগছে!
—মায়া?
মায়া এবার চমকে পেছন ফিরে তাকালো!বিস্মিত হয়ে বলল,
—আপনি কি সত্যি এসেছেন মহারাজ!
হিমালয় চরম বিস্ময় নিয়ে বলল,
—মিথ্যে করে আবার আসা যায় নাকি?!
মায়া দৌড়ে হিমালয়ের বুকের উপর আছড়ে পড়লো হিমালয় টাল সামলে দাড়ালো! মায়া হাউমাউ করে কেদে ফেললো,হিমালয় এক হাত মায়ার মাথায় রাখলো,ও বিস্ময়ের চরম সীমা কাটিয়ে উঠতে পারছিলো না এই মেয়েটা ওকে কতখানি ভালোবাসে! ফোন রিসিভ না করার জন্য যতখানি রাগ অভিমান, সারাদিনের যত ক্লান্তি নিয়ে হিমালয় এসেছিলো সব হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে লাগলো!হিমালয়ের নিজের বুকের মধ্যেই চিনিচিনি করে উঠলো এই মেয়েটাকে ছেড়ে ও কি করে থাকবে! ও তো নিজেই পাগল হয়ে যাবে!মায়া বরফের মত ঠান্ডা হাতে হিমালয়ের গাল স্পর্শ করে বলল,
—আমার একটুও ভালোলাগে না আপনাকে না দেখলে, সারাদিন মনে হয় কি যেন নেই কিচ্ছু নেই! আমি একা একাই আপনার ওপর অভিমান করে বসে থাকি আমার কি অসুখ হলো বলুনতো!আমি কি এই অসুখে মরেই যাবো!
হিমালয় মায়ার এক হাত মায়ার ঠোটের উপর চেপে হাতের অপর পৃষ্ঠে একটা চুমু খেয়ে বললো
—এত সহজেই তুমি মরে যাবে মায়া?আমার ট্রিটমেন্ট নেবে না?
মায়া অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলো…..শান্ত কন্ঠে বলল,
—একবার চোখের আড়াল হলেই আপনার আর খোজ থাকে না আপনি ব্যস্ত মহা ব্যস্ত হয়ে পড়েন আমার ভালোলাগে না একটুও না, মহারাজ আপনি চাকরিটা ছেড়ে দিন তো, আপনার কোনো ডিগ্রী ফিগ্রী আনতে হবে না
হিমালয় অবাক হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো,
—তোমার কি হয়েছে মায়া?এরকম করছ কেন! তোমার শরীর কি খারাপ কই এসো তো দেখি,
মায়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
—কোনো শরীর খারাপ নেই আমার, আমার শুধু মনে হয় আপনাকে আমি পাব না, আপনার খুব কাছে এসে আমি আপনাকে ছুতে পারব না, আমার গলা শুকিয়ে আসে আপনি আমার না হলে আমি কি করব!
মায়া খুব জোড়ে হিমালয় কে জড়িয়ে ধরে বলে,
—আমার মনে হয় এত ছোট জীবন এত কম সময় আমি আপনাকে কাছে পাই! যদি আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলি!আপনি কিন্তু আমার মহারাজ আপনি শুধুই আমার,
হিমালয় মায়ার বাহু ধরে ওকে শান্তু করে বলল,
—কি হয়েছে মায়া?
মায়া অসহায়ের মত হিমালয়ের বুকে ঢলে পড়লো খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লোএক হাতে হিমালয়ের শার্টের বোতাম নাড়তে নাড়তে বলল,
—কিচ্ছু না খুব খিদে পেয়েছে, আমাকে খাইয়ে দিন তো,
হিমালয়ের কেমন মায়া হলো,মেয়েটা যে কেমন করে ওর সবটা তোলপাড় করে দেয় যত নিজেকে পরিপাটি করে হিমালয় ওর সামনে আসে ঠিক ততটাই ভেঙে গুড়িয়ে দেয় মেয়েটা ওকে ওর সবটা এলোমেলো করে দেয়।বাবাকে বলতে হবে বিয়ের ডেট টা এগোতে এই মেয়ে এভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে।

চলবে…
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (১৫)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১৫)

মায়া বাকি কথা বলার আগেই ওর বাবা এসে ডেকে বলল,
—আমি তো চলে যাচ্ছি মায়া তুমি কি থাকবে?
—না, আমিও যাবো চলো যাই।
হিমালয় মায়ার হাত মুঠোর মধ্যে নিয়ে ধীরে বলল
—পারলে যাও,
মায়ার আর যাওয়া হলো না হিমালয়ের বন্ধুরা আজ কেউই বাড়ি যাবে না তাই ওরা মায়াকেও যেতে দিল না বড়রা সবাই চলে গেলো,হিমালয় মায়া আর ধ্রুব বাহির পর্যন্ত এলো ওদের আব্বু আম্মুকে এগিয়ে দিতে, মায়ার বাবা গাড়ি রেখে যেতে চাইলে হিমালয় জানালো ওর সাথে বাইক আছে মায়াকে বাইকেই ড্রপ করে দিয়ে আসবে।ধ্রুব ঢোক গিলে বলল
—তুই বাইক বের করছিস কেন?মনে নাই একবার কি হইলো, আন্টি তোরে বাইক আনতে দিল?এই মায়া তুমি ওর সাথে বাইকে উঠবা না
মায়া উৎসুক হয়ে চাইলো,
—আরে বাবার গাড়িতে কিছু কাজ ছিল গ্যারেজে নিছে বাবা আর মা আমার গাড়িতে আসছে,আর তুই তো জানিস সেদিন আমি আবিরের উপর কত্ত রাগ ছিলাম এইজন্যই এত বাজেভাবে এক্সিডেন্ট টা হইছিল
—হ্যা আর তোর ওই এক্সিডেন্ট এর পরই তো আবিরও ড্রাগ নেওয়া ছাড়লো তোরা দুইজন একসাথে সুস্থ হইলি,
—থাক ধ্রুব ওইসব কথা এখন দেখ আমাদের আবির কত্ত হ্যাপি!আমি কোনোদিন ভাবি নাই যে ও এত তাড়াতাড়ি মিষ্টির সাথে স্বাভাবিক হবে,ওহ মায়া তুমি বললে না তো কি করে হলো?
মায়া আর ধ্রুব চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরয়ে নিলো, মায়ার হঠাৎ করেই ভয় হতে শুরু করলো,ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে,মায়া ধ্রুবর দিকে তাকাতেই হিমালয় ভ্রু কুচকে তাকালো,
—কি হয়েছে মায়া তুমি কি আমাকে কিছু বলবে?
অনেক্ষণ হলো ওদের তিনজনকে দেখতে না পেয়ে নিরব পুষ্প আর দিহানও বাইরের দিকে এসে দেখলো ওরা তিনজন এক জায়গায়,
মায়া ভয়ে ভয়ে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলল,
—আসলে,
ধ্রুব ওমনি বাধা দিয়ে বলল,
—আরে যেভাবেই হোক হয়েছে তো এখন এসব বলার সময়? সব গেস্ট চলে গেছে মিষ্টি আর আবির একা হয়ে গেছে চল আমরা ভেতরে যাই অনেক ঠান্ডাও পড়তে শুরু করেছে আর…
হিমালয় ধ্রুব কে থামিয়ে বলল,
—তোরা আমার থেকে কিছু আড়াল করছিস,ধ্রুব আগামী পাচ মিনিট তুই কোনো কথা বলবি না,মায়া তুমি বলো আবির কেন এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলো?
মায়া হিমালয়ের হাত ধরে বলল,
—প্লিজ মহারাজ আপনি রাগ করবেন না, আমি জানি আবির ভাই একজনকে মনে প্রাণে খুব ভালোবাসতো আর কোনো কারণে সে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে মারা গেছেন আর এরপর আবির ভাই পাগলপ্রায় হয়ে যান, তিনি প্রচুর ড্রাগ নেন তার স্বাভাবিক লাইফ স্থির হয়ে যায়,তখন আপনিই আবির ভাই কে সামলান,
মায়া খেয়াল করলো হিমালয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে ওর কপালের রগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তবুও যথেষ্ট শান্ত কণ্ঠে বলল,
—মায়া এসব কথা তো তোমার জানার কথা না তাই না? এগুলো আমাদের বন্ধুদের মধ্যেকার ব্যাপার এসব তুমি কিভাবে জানলে আর এর সাথে আজকের সম্পর্ক টা কোথায়?
ধ্রুব ভয় পেয়ে গেলো ওর মনে হলো এখানে আবিরের থাকা দরকার হিমালয় রেগে যাবে এক্ষুনি, ধ্রুব ছোট করে আবিরকে মেসেজ করলো ইমিডিয়েট বাইরে আসার জন্য।পুষ্প আর নিরবও মুখ চাওয়াচাওয়ি করে এগিয়ে এসেছে,
—মহারাজ আমি জানি এতে হিতের বিপরীত হতে পারতো, আবির ভাই তার কোনো কাছের মানুষের কাছে ঘুমের ওষুধ দেখলে সহ্য করতে পারেন না তিনি রিয়েক্ট করে ফেলেন,সেদিন রাতে আমি মিষ্টি আর আপনার কথা শুনে ফেলেছিলাম আমার মনে হলো মিষ্টি খুবই ডিপ্রেসড,আমি মিষ্টি কে বলেছিলাম যাতে এক পাতা ঘুমের ওষুধ এনে ওর বেডসাইডের টেবিলে রাখে, এতে যদি আবির ভাই ওর প্রতি কিছু ফিল…
হিমালয় মায়ার হাত ছাড়িয়ে ফেললো মায়া আরো কিছু বলার জন্য হিমালয়ের হাত ধরতে গেলে হিমালয় ছিটকে দূরে সরে যায়,এক প্রকার চেচিয়েই বলে
—আর ইউ ম্যাড মায়া! মানে তোমার কি নূন্যতম কোনো কমনসেন্স আছে যে যদি এর উলটো কিছু হতো?যদি স্নিগ্ধার কথা আবিরের মনে পড়ে যেত? তুমি জানো স্নিগ্ধা কে ও পাগলের মত ভালোবাসত! যদি ও আবার আবোল তাবোল কিছু করত! তুমি জানো ওর সেসব দিনগুলো কিভাবে কেটেছে? তুমি জানো না আমি জানি আমি কাছে থেকে ওকে দেখেছি আরেহ! এখনো আবির কাউকে ভালোবাসতে ভয় পায়,ওর বাবা মায়ের কি অবস্থা ছিল তুমি জানো! এখনো আবির তাদের সাথে ঠিক মত কথা বলে না! তুমি সবসময় এরকম করো কেন মায়া! সবই কি ছেলে মানুষি!
মায়া কেদে ফেললো,ও বারবার হিমালয়কে ধরে বোঝাতে চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু হিমালয় কিছুই শুনতে নারাজ, ধ্রুব নিরব পুষ্প সবাই অনেক চেষ্টা করলো ওকে বোঝাবার,আবির সবটা বোঝার চেষ্টা করছিল একটু দূরে দাঁড়িয়ে
—ধ্রুব তুই আমার সামনে থেকে প্লিজ সর আমি কিন্তু কিছু করে ফেলব তুই প্লিজ সর আমি জানি এসব তুই মায়াকে বলেছিস
—ধ্রুবর কোনো দোষ নেই
—ইউ শাট আপ, তোমার কাছে আমি কোনো এক্সপ্লেইনেশন চাই না, যাস্ট গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার।তুমি কি ভাবো সব তোমার ইচ্ছে মতো? আমি তোমার সব কথা শুনি মানে কি? তুমি যা ইচ্ছে করবে? আরে এটা আবির আর মিষ্টির মধ্যেকার ব্যাপার একটা সময় ওরা ঠিক সামলে নিত তোমাকে কেউ বলেছে মাথা ঘামাতে?আমি তোমার সাথে কথা বলছিই বা কেন, আমি বুঝলাম না নিরব তুমি কেন এভাবে আমাকে ধরে রেখেছো? এই পুষ্প সর প্লিজ।
দিহান এগিয়ে এসে হিমালয় কে ধরে বলল,
—হিমালয় প্লিজ শান্ত হও আমি জানি হয়তো খারাপ কিছু হতে পারতো কিন্তু কিছু তো হয় নি তাই না?
হিমালয় চুপ করে রইলো ও কারো কথা শুনছে বলে মনে হচ্ছে না, আবির এগিয়ে এসে বলল,
—কি ব্যাপার এত চেচামেচি কিসের,মায়া তুমি কাদছ কেন?
মায়ার কান্নার বেগ বেড়ে গেল ওর এবার ভয় হতে লাগলো, মায়া শব্দ করে কাদতে লাগলেই হিমালয় এবার সশব্দে ধমক দিয়ে উঠলো ও এত জোড়ে ধমক দিলো যে সবাই হচকচিয়ে গেলো মায়া কেপে উঠলো আবির হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।মায়া চুপ করে গেলো ও আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে না, হিমালয় নিরবের হাত ঝাকুনি দিয়ে ছাড়িয়ে বাইকের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো এবার আবির ভয় পেয়ে গেলো আগের বারের কথা ওর খুব ভালো মনে আছে আবির চেচিয়ে উঠলো
—তুই যদি বাইকে উঠিস আমি সত্যি কথা তোর সাথে আর কোনোদিন কথা বলব না
হিমালয় কারো কথা শুনছে বলে মনে হলো না, ও বাইক স্টার্ট দিতেই বুঝলো কেউ একজন উঠে বসেছে পেছন থেকে কেউ ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে, হিমালয় যথেষ্ট শান্ত কণ্ঠে রাগ নিয়ে বলল,
—এমনিতেই অনেক বড় অন্যায় তুমি করে ফেলেছো মায়া প্লিজ এখন নেমে যাও আমি একা থাকতে চাই,আমি তোমাকে অনেক খারাপ কথা বলে ফেলেছি এখানে থাকলে আরো বাজে কথা বলে ফেলব যা তুমি সহ্য করতে পারবে না আর না আমি সহ্য করতে পারব,
আবির আর এগিয়ে গেল না ওরা একটু তফাতেই দাঁড়িয়ে রইলো,মায়া হিমালয়ের কথা শুনলো না ও খুব শক্ত করে হিমালয় কে জড়িয়ে ওর পিঠে মুখ লুকিয়ে অঝোরে কেদে চলেছে
—মায়া নামো,
—আমি আপনার সাথে যাবো
—তোমাকে নিয়ে আমি এই মুহুর্তে বাইক চালাতে পারব না
মায়া আরো শক্ত করে পেছন থেকে মুঠো ভরে হিমালয়ের ব্লেজারের কলার চেপে ধরে কান্নার বেগ বাড়িয়ে বলল,
—আপনি আমাকে বকুন আরো বকুন দরকার হলে আপনি আমাকে মেরে ফেলুন,কিন্তু আপনি এখান থেকে কোথাও যেতে পারবেন না কোথাও না, আমি ভুল করেছি ছেলে মানুষি করেছি সব আমার দোষ আপনি আমাকে শাস্তি দিন কিন্তু আপনাকে আমি ছাড়ব না আমাকে ছাড়িয়ে আপনি কোথাও যেতে পারবেন না। কোত্থাও না।আমি কিন্তু মরে যাবো সত্যি মরে যাবো…
হিমালয়ের হঠাৎ মনে হলো মায়ার হাত আলগা হয়ে আসছে… ও এক হাতে মায়ার হাত ছুটে যাওয়ার আগেই চেপে ধরলো মায়া ওর শরীর হিমালয়ের উপর ছেড়ে দিলো হিমালয় চেচিয়ে আবিরকে ডাকলো এবার সবাই দৌড়ে এলো হিমালয় ধ্রুব কে বলল,
—বাইক টা ধর,ও অজ্ঞান হয়ে গেছে।

হিমালয় আবিরদের বাড়ির একটা ঘরে সোফায় বসে আছে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে, ওর খুবই অনুশোচনা হতে লাগলো বারবার ও মায়াকে কষ্ট দিয়ে ফেলে, কথাগুলো ও মায়াকে বুঝিয়েও বলতে পারতো যেখানে মায়ার বাবা ই কখনো ওকে কিচ্ছুটি বলে না সেখানে হিমালয় কতবার মায়াকে বকে ফেলেছে, অথচ এই মেয়েটা একটু জোরে কথা সহ্য করতে পারে না,হিমালয় ওর পাশের দেয়ালে মুঠো পাকিয়ে জোড়ে আঘাত করলো,পাশে খুলে রাখা ব্লেজারটা ছুড়ে ফেলল,নিজের চুল নিজেই টানতে লাগলো,নিজের ওপরই এবার ওর নিজের রাগ হতে লাগলো।এমন সময় হিমালয় দেখলো মিষ্টি দরজায় নক করছে, হিমালয় মিষ্টির দিকেও তাকাতে পারলো না, মিষ্টি ভেতরে এসে মায়াকে দেখে হিমালয় কে জিজ্ঞেস করলো
—ওর কতক্ষণ নাগাদ জ্ঞান আসতে পারে কিছু জানেন ভাইয়া?
হিমালয় উঠে দাড়িয়ে বলল,
—কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে, তুমি চিন্তা করো না আসলে…
—আমার চিন্তা কখনোই আপনার থেকে বেশি না,আমি আমার একটা নরমাল ড্রেস নিয়ে আসছি ওকে চেঞ্জ করিয়ে দেবো এত ভারী ড্রেস পড়ে আছে,
—আমি একটু বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছি মিষ্টি আসলে আমার কাছে আবির যে কি আমি তোমাকে বোঝাতে পারব না
—হয়তো এজন্যই মায়া চেয়েছিলো আপনার বন্ধু আবির ভালো থাকুক
হিমালয় আর কিছু বলতে পারলো না,মিষ্টি বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবির আসলো,
—নিরব পুষ্প ওরা সবাই তো চলে যেতে চাচ্ছে কি বলব?
—জানি না।
—আচ্ছা
—আবির…
—হুম বল,
—তুইও কি আমার উপর রেগে আছিস?
—জানিস হিমালয় যখন আমি আমার বেডসাইডের টেবিলে এক পাতা ঘুমের ওষুধ দেখলাম আমার ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো কারণ তার কিছুক্ষণ আগেই আমি মিষ্টির সাথে খুবই দুর্ব্যবহার করেছি,মিষ্টি কখনোই আমাকে বলে নি ওকে বিয়ে করতে যা করার আমি করেছি আমি শুধু ওকে কষ্টই দিয়েছি যা ওর কখনোই প্রাপ্য না, আমি ওষুধ গুলো দেখে যখনই মিষ্টি কে জিজ্ঞেস করলাম ওগুলোনকার আর মিষ্টি বলল ওষুধ গুলো ওর আমার কি হলো আমি জানিনা আমি শক্ত করে মিষ্টি কে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললাম অশান্ত হয়ে গেলাম, আমাকে শান্ত করলো মিষ্টি। তখন বুঝলাম ভালোবাসা হুটহাট ই হয়ে যায় কিছু কিছু শূন্যতার মধ্যে দিয়েই ভালোবাসা আসে…
এপর্যন্ত বলেই আবির মায়ার দিকে তাকালো মায়া স্থির চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আবির আর কিছু বললো না ও খেয়াল করলো মায়ার চোখ টলটল করছে, মায়া ওর মুখের ওপর কম্বল টেনে নিলো অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো,আবির হেসে ফেললো হিমালয়কে ইশারায় মায়ার দিকে দেখিয়ে ও ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।হিমালয় ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে মায়ার বিছানায় গিয়ে বসলো,
—এইদিকে ঘোরো মায়া
—আমার এখনো জ্ঞান ফেরে নি
হিমালয় হেসে ফেলল,
ওর মুখের উপর থেকে কম্বল টা সরিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—কখন ফিরবে?
মায়া চোখ বন্ধ করে আহ্লাদে কেদে ফেললো নিচের ঠোট কামড়ে কান্না আটকে বলল,
—আমি চাই কোনোদিন যাতে না ফেরে,
হিমালয় বুঝলো অভিমানের পাল্লা অনেক বেশি ভারী হয়ে গেছে, তাতে কি পুরো রাত পরে আছে মহারানীর এই অভিমান মহারাজ ঠিক ভাঙিয়ে নেবে।মায়া হিমালয়ের হাত ছাড়িয়ে উঠে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে মাথা নিচু করে রইলো হিমালয় মায়ার সামনে মেঝেতে দুই হাটু গেড়ে বসে মায়ার মুখ দুহাতে আজলা ভরে নিয়ে বলল,
—কতবার ভুল করে দেখেছো, দ্যা গ্রেট হিমালয়কে কতবার তোমার সামনে সরি বলতে হয়?এর পর থেকে কাউন্ট করে রাখবে ঠিক আছে?
মায়া কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিল তবে শব্দ করল না,এমন সময় মায়ার ফোন বেজে উঠলো,মায়া দেখলো ওর বাবা কল করেছে মায়া রিসিভ করে বেলকনিতে চলে গেলো,বাবা কে কিছু বুঝতে দিল না কথা শেষ করে ও আর রুমে আসলো না হিমালয় ই বারান্দায় গিয়ে দেখলো মায়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে চলেছে,হিমালয়ের নিজের কাছে নিজেকে খুব বেশি ছোট লাগছিলো কতটা কষ্ট ও মায়াকে দিয়ে ফেলেছে কতটা! হিমালয় মায়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো মায়া কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও ছাড়িয়ে নিতে পারল না হিমালয় শক্ত করে মায়ার হাত ধরে বলল,
—ছাড়িয়ে চলে যেতে চাও
মায়া আর নড়লো না,শব্দ করে কেদে ফেললো আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
—আপনি আবার আমকে বকেছেন,সবার সামনে বকেছেন, আপ্নি জানেন আপনার ধমক শুনে আমার গা কেপে উঠেছিল?আমার কত কষ্ট হচ্ছিল?, আবার আপনি বাইকে উঠে চলে যাচ্ছিলেন আমাকে ফেলে? একবার এক্সিডেন্ট করে তো সবাইকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন এখন আবার যাচ্ছিলেন আমার কত ভয় লাগছিল আপনি জানেন?আপনার এত রাগ এর আগে আমি কোনোদিন দেখি নি।আপনার ভালোবাসার মত আপনার রাগও ভয়ংকর।
হিমালয়ের ভালোই লাগছিলো মায়ার বাচ্চা বাচ্চা কথা গুলো,মায়ার মুখের সাথে গাল ঘষে আদুরে গলায় বলতে লাগলো
—আমার মহারানী কি খুব রেগে আছে? খুব? তাকে কি সরি বলতে হবে? নাকি সে কষ্ট পেয়েছে অনেকখানি আদর করে দিলে হবে?
মায়ার গা শিরশির করে উঠলো ও আর কোনো কথা বলতে পারলো না, হিমালয় মায়াকে বলল,
—তুমি কিন্তু আমায় যেতে দাও নি মায়া কি এক বাধনে তুমি আমায় বেধে ফেলেছো তুমি নিজেও জানো না কারো কথা না শোনা আমি তোমাকে কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারি না এত রাগের মধ্যেও আমি ভাবছিলাম তোমাকে যাতে আমি কষ্ট না দিয়ে ফেলি তাই সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলাম বিশ্বাস কর তখন চলে গেলে আমার ঠিক কিছু একটা হয়ে যেত কিন্তু তোমাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেননি।

হিমালয় মায়ার ঘাড়ে একটা চুমু খেতেই মায়া কেপে উঠলো হিমালয় স্পষ্ট তা বুঝতে পারলো,হালকা হেসে বলল,
—এখন শুধু তখন দেওয়া ধমকটা শোধ করলাম বাকিটা খুব শীঘ্রই শোধ করে দেবো বিয়েটা হোক।তোমার সব কষ্ট আমি আদর দিয়ে বিলীন করে দেব,আমি বাইরে যাচ্ছি তুমি চেঞ্জ করে ঘুমিয়ে পড়ো তোমার রেস্ট প্রয়োজন এখন বাসায় গেলে আঙ্কেল বুঝে যাবেন আমি সকালে এসে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেবো,
মায়া হিমালয়ের হাত ধরে বলল,
—আপনি চলে যাবেন!
হিমালয় হালকা হেসে বলল
—চিন্তা করো না আমি অন্য রুমে আছি তুমি দরজা লক করে দাও।কোনো অসুবিধা হলে আমায় কল করো
হিমালয় বেরিয়ে গেলো, মায়া তারপরেও অনেক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে রইলো মনে মনে বললো আপনি দূরে গেলেই আমার অসুবিধা হয় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এ কেমন অসুখ মহারাজ আপনি এ কেমন ওষুধ বলুনতো!

চলবে…
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (১৪)

0

হঠাৎ_হাওয়া (১৪)

মায়া মিষ্টির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—দেখেছো আমার প্লান কেমন কাজে দিলো
মিষ্টিও হেসে বললো
—আমি কিন্তু খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম মায়া যদি হিতে বিপরীত হতো?
—হয় নি তো?
ধ্রুব ফিসফিস করে বলল,
—মায়া তুমি কিন্তু প্লিজ হিমালয় কে বলো না, আসলে ও আবিরের সাথে ইমোশনালি খুব এটাচড, আর এবার কিন্তু তুমি একটু রিস্কই নিয়ে ফেলেছো
মায়া মুখ শুকনো করে বললো
—উনি কি খুব রাগ করবে?
ধ্রুব আশ্বাস দিয়ে বলল
—তুমি শুধু ওকে কিছু জানিও না, ও আমাকেও রাগ করবে কেননা আমি তোমাকে কথাগুলো জানিয়েছি,
মিষ্টি মায়ার হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
—থ্যাংক ইউ মায়া,থ্যাংকইউ ফর এভ্রিথিং।
মায়া হাসলো,আবির এসে বলল,
—এই ধ্রুব তুই সবসময় মেয়েদের সাথে কি করিস বলতো,
—তুই বুঝবি না আমার মত হ্যান্ডসাম ছেলের কম্পানি সব মেয়েরাই চায়, ইভেন তোর বউ আর হিমালয়ের গার্লফ্রেন্ডও
নিরব হেসে বলল,
—দিনের মধ্যে কত ঢপ তুমি দাও ধ্রুব?
ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বলল,
—তোদের জ্বালায় শালা একটু ভাবও নিতে পারি না,
ওরা সবাই একসাথে হেসে ফেললো।
হিমালয় মায়ার বাবার সাথে ওর বাবা মায়ের পরিচয় করিয়ে দিল,হিমালয়ের বাবা হ্যান্ডশেক করতে করতে বলল,
—হিমালয় চাইছে এইংগেজমেন্ট টা নাকি আজই করবে,ছেলে মেয়ে কখন কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না,
—হাবিব সাহেব, আপনি তো একবারও মায়া সম্পর্কে খোজ নিলেন না!রাজি হয়ে গেলেন যে?
—সত্যি করে বলুন মায়াজ সাহেব আপনি কি হিমালয় সম্পর্কে কোনো খোজ নিয়েছেন?
—আমি একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেছি, আমি চাই এবার মায়াই ওর জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিবে,তবে কিছু কথা বাবা হিসেবে আমার আপনাদের জানানো দরকার কিন্তু এই পরিবেশে!এখনই এইংগেজমেন্ট আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,
—আমি সব জানি মায়াজ সাহেব,সবচেয়ে বড় কথা আমার ছেলের মায়াকে পছন্দ হয়েছে এর বেশি আর কিচ্ছু আমার জানার নেই,আপনি চিন্তা করবেন না আপনার মেয়ে সর্বোচ্চ সুখী হবে,আমার ছেলে কিন্তু অতটা খারাপ নয়
—হিমালয় একটা আস্ত সিন্দুক হাবিব সাহেব,যে মায়াকে আগলে রাখবে, আমি জানি মায়ার জন্য ও বেস্ট।

হিমালয়ের হসপিটালের প্রায় ডাক্তারই মায়াকে সেদিন চিনে ফেলেছেন,আবিরের অনুষ্ঠানে সবাই ইনভাইটেড,মিষ্টির পাশাপাশি সবাই মায়ার সাথেও আলাপ করছে,কথা একটু অবাক হয়ে পুষ্পকে জিজ্ঞেস করল,
—কিরে ওরা মায়াকে চেনে নাকি?
কথার বাবার অসুস্থতার জন্য কদিন ও ছুটিতে ছিল বলে ও সেদিন মায়ার হসপিটালে যাওয়ার কথা কিছুই জানে না,পুষ্প একটু আমতা আমতা করে বলল,
—জানিসই তো ও মায়া সবার সাথেই খাতির করে নেয়,
কথার বাবা আর হিমালয়ের বাবা কলেজ থেকেই ফ্রেন্ড সে হিসেবে কথার আর হিমালয়ের ফ্যামিলি বন্ড ও অন্যরকম, কথা গিয়ে হিমালয়ের বাবা মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করছিল মায়ার বাবার সাথেও পরিচিত হলো, হিমালয় বারবার মায়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কোনো লাভ হচ্ছে না, বাধ্য হয়ে হিমালয় আবিরের কাছে গিয়ে বলল
—আমি একটা এনাউন্সমেন্ট করতে চাই এখানে তো বেশিরভাগ আমাদের হসপিটাল কলিগই করব?
—তুই দাড়া এনাউন্স টা আমি করি
—তুই কি করবি?
—সেটা দেখতেই পাবি
আবির স্টেজ থেকে নেমে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অনলি লেডিস এটেনশন প্লিজ এন্ড এমোং দেম মিস মায়া প্লিজ কাম হেয়ার বিসাইড মি
মায়া বিস্মিত হয়ে আবিরের পাশে গিয়ে দাড়ালো ফিসফিস করে বলল,
—অনলি লেডিস কেন এটেনশন দেবে আবির ভাই?
—আরে বুঝিস না কেন লেডিস যেদিকে তাকায় জেন্টেলম্যান ও সেইদিকেই তাকায়
—ও আচ্ছা! আমি কি নাচব নাকি আবির ভাই
—না মায়া প্লিজ!
—তুমি এভাবে চমকে উঠলে কেন?
—তুই কি আমাকে কথা বলতে দিবি?
—আচ্ছা,
আবির আবারা সবার উদ্দেশ্যে বলল,
—আমি আশা করি এট লিস্ট আমাদের হসপিটালের মোটামুটি সবাই আমার পাশে দাঁড়ানো মেয়েটিকে চেনেন,এবং আপনারা ইতিমধ্যেই তার পাগলামিও দেখে ফেলেছেন, এবার দেখবেন তার পাগলামির প্রভাব, সো আর ইউ রেডি?
সবাইকেই খুব উৎফুল্ল দেখালো কথা এদিক ওদিক হিমালয় কে কোথাও খুজে পেলো না, মায়া দেখলো হিমালয় ওর দিকেই আসছে ও মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যেতে গেলেই হিমালয় হাত ধরে আটকালো,সবার সামনে মায়া হচকচিয়ে গেলো,
—ডিয়ার বিউটিফুল লেডি আই এম সো সরি ফর ব্রেকিং ইওর হার্ট, ক্যান ইউ গিভ অনলি ফাইভ মিনিট ফর হিল ইট উইথ লাভ?প্লিইজ?
মায়া মুখ ঘুরিয়ে রইলো,হিমালয় সবার উদ্দেশ্যে বলল,
—আমি জানি এখানে সবাই মিষ্টির বৌভাতের জন্য ইনভাইটেড এন্ড আপনারা একটা গিফট নিয়েই এসেছেন, তবে এই একটা গিফটেই আপনারা আরো একটা ইভেন্ট এটেন্ড করবেন জেনে খুশি হন।আমি জানি আমার কলিগ রা সবাই খুব অবাক হচ্ছেন আমাকে দেখে, যেহেতু আমি এত কথা একবারে কোনোদিন বলি নি, তবে একটা কথা আছে আপনারা শুনে থাকবেন সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে আমার বর্তমান অবস্থাও তাই,এই যে আমার পাশে যেই রমনী দাঁড়িয়ে আছেন তার সঙ্গ দোষে ইদানীং আমি ভেসে গেছি, গত সাতাশ বছরে আমি যা কোনোদিন করি নি আজকাল তাই করতে ইচ্ছে করে সবসময় মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করা আমি আজকাল হৃদয় থেকে ভাবতে শুরু করেছি, প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ অনুভূতি এগুলো কোনোদিন আমাকে স্পর্শ করত না আমি ভাবতাম ভালোবাসা একান্ত ব্যাক্তিগত জিনিস তা এত ঘটা করে সবাইকে না জানালেও চলবে আমি এই রমনীকে প্রেম নিবেদন করেছিলাম রাতের বেলায় চার দেয়ালের মধ্যে তিনি অভিযোগ করেননি,আমাকে চমকে দিয়ে তিনি সেখানে গিয়ে আমায় প্রেম নিবেদন করেছে যেখানে আমার পরিচিতি আছে তিনি সবাইকে জানিয়েছেন আমি একমাত্র তার যাতে অন্যকেউ আমার উপর অধিকার খাটাতে না পারে, এক্ষেত্রে তিনি খুব বুদ্ধিমতী বলতে হয় আর যথেষ্ট সাহসীও,যেই জায়গায় সবাই আমাকে দেখলে আতঙ্কে থাকত এখান সেখানে আমাকে দেখলে তারা মুখ টিপে হাসে তবে সত্যি বলতে আমার তখন খুবই ভালো লাগে মনে এক ধরণের শান্তির বাতাস বয়ে যায়। আমার মনে হয় এই রমণীরও সেই শান্তি পাওয়ার অধিকার আছে ঠিক যেরকম আমি তার সেও যে একান্তই আমার এটা সবাইকে জানতে হবে,আপনাদের সবাইকে সাক্ষী রেখে আমি এই প্রিটি লেডিকে কিছু বলতে চাই।
মায়া থরথর করে কাপছে মায়ার বাবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার আজ খুব আনন্দের দিন,হিমালয় মায়ার বা হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রেখে বলল,
—এখান থেকে বলছি ম্যাডাম ভালোবাসি আমি আপনাকে, যতটা ভালোবাসলে আর কিচ্ছু বোঝারা ক্ষমতা থাকে না ততটা আমার ইচ্ছে করে আপনার সামনে সমস্ত ব্যাক্তিত্ব ভেঙে দাঁড়িয়ে ছেলেমানুষি করতে, আপনার মতই আজগুবি সব কথা বলতে, ম্যাডাম রাগ যদি ভেঙে থাকে আপনি কি আমায় অনুমতি দেবেন,আপনার শূন্য অনামিকায় একটা ছোট্ট গিট বাধতে?কথা দিচ্ছি যা আপনি চাইবেন যেরকম আপনি চাইবেন সব সেরকম হবে প্লিজ আর রাগ করে থাকবেন না।
হিমালয় মাথা নিচু করে ফেললো,হিমালয়ের মা কেদেই চলেছে হিমালয় অনুভব করলো মায়ার হাত ঠান্ডা হয়ে এসেছে মায়ার দিকে মুখ করে তাকিয়ে আস্তে বলল,
—প্লিজ মায়া সেন্সলেস হইও না মোমেন্ট টা নষ্ট হয়ে যাবে, আর কাদছ যে তোমার মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে
—আমি মেকাপ করি নি।
—ওহ তাহলে কাদো আমি কি আংটি টা পড়িয়ে দেব?
—আমিই এখন আংটি কোথায় পাবো?
মায়ার বাবা এগিয়ে এসে তার আঙুল থেকে প্লাটিনামের আংটিটা খুলে মায়ার হাতে দিলো,
হিমালয় মায়ার আংটি বদল সেখানেই হয়ে গেলো।
সবাই জোরে হাতেতালি দিলো মায়া আর হিমালয় কে অভিনন্দন জানাতে লাগলো।কথা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মুর্তির মত, ওর বাবা কাজেম দেওয়ান গিয়ে হিমালয়ের বাবাকে বলল,
—হাবিব এসব কি হচ্ছে?
—তোর কথা ঠিক বুঝলাম না,
—তুই কি ভুলে গেছিস আমরা ভেবেছিলাম কথা আর হিমালয়ের বিয়ে দেব ওরা বড় হলে!
—আমি কিছুই ভুলি নি কাজেম, আমরা কিন্তু বলেছিলাম যদি দুজনের সম্মতি থাকে তাহলেই ওদের বিয়ে দেব কখনোই আমাদের সিদ্ধান্ত ওদের ওপর চাপিয়ে দেব না। যদি বড় হয়ে ওরা দুজন মনে করে ওরা ওদের বন্ধুত্বকে বিয়ের বন্ধনে বাধবে তবেই।কিন্তু হিমালয় মায়াকে ভালোবাসে আমার ছেলেকে এর আগে আমি এরকম কখনো কোনো মেয়ের জন্য করতে দেখি নি,তাছাড়া হিমালয় কথাকে বন্ধু হিসেবেই দেখে।আমি আশা করব আমার ছেলের খুশিতে তুইও খুশি হবি।

কাজেম সাহেব আর কোনো কথা বললেন না,একটু দূরে দাড়িয়ে কথা সব শুনছিলো।

হিমালয় মায়ার কনিষ্ঠা আঙুল নিজের আঙুল দিয়ে ছুয়ে ফিসফিস করে বললো
—খুশি হয়েছো তুমি মায়া?
মায়া হিমালয়ের ব্লেজারের কলারে একহাত রেখে বললো
—খুউব আপনি জানেন খুশিতে আমার মারা যেতে ইচ্ছে করছে?
—সেখানে কিভাবে যেতে হয় চলো যাই।
মায়া আড়চোখে চেয়ে মুখ কুচকে বললো
—এত খারাপ কেন আপনি?
—শুধু তোমার জন্যে আর সবার জন্য কিন্তু আমি খুব শান্ত ভদ্র ইউ নো খুব আকাঙ্ক্ষিত
মায়া কটকট করে চাইতেই হিমালয় মুখ টিপে হাসলো,
—বাই দা ওয়ে একটা কথা বলো, আবির এই অঅনুষ্ঠানের জন্য রাজি হলো কি করে?
মায়া মাথা নিচু করে ফেললো হিমালয় ভ্রু কুচক্র তাকিয়ে বললো,
—কি হয়েছে মায়া?
মায়া ভয়ে ভয়ে বললো
—এবার আমি একটু খারাপ কাজ করেছি,
হিমালয় ডান ভ্রু বাকিয়ে বলল,
—কি রকম?

চলবে….
সামিয়া খান মায়া