Tuesday, July 8, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1882



হঠাৎ হাওয়া (৩)

0

হঠাৎ_হাওয়া (৩)

শুকতারা রিসোর্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মায়া দেখছে ভোরের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সব আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে মায়া ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতেই ওর চোখ ভিজে উঠলো, মায়া চোখ মুছে নিজেকে শক্ত করলো তারপর রিসোর্টের মধ্যেই হাটাহাটি করতে লাগলো বনাক কোর্টের উপর দাঁড়িয়ে মায়ার মনটা ভালো হয়ে গেলো চারিদিকে সবুজের হাতছানি, দূরে সুরমা নদী, মেঘালয় রেঞ্জ! মায়ার মনটা দারুণ ফুরফুরে হয়ে গেলো,আনমনে মায়ার চোখে মুখে আনন্দ ফুটে উঠলো, মায়া প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবলো এই রিসোর্টের পাশেই তো হযরত শাহপরাণের মাজার ও কি একবার ঘুরে আসবে নাকি রিসোর্টের সামনের টিলাটায় একবার যাবে, মায়া আনমনেই রিসোর্টে চক্কর লাগাতে লাগলো ও নিচে নামতে নামতে খেয়াল করলো পাশের রেস্টুরেন্টে সম্ভবত কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে দেখে তো বিয়ে মনে হচ্ছে, মায়া দেখলো একজন বয়স্ক লোক চোখমুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে সম্ভবত কোনো অসুবিধা হয়েছে মায়া একটু এগিয়ে গিয়ে লোকটার কাছে দাড়ালো, মায়া একটু গলা খাকারি দিয়ে বলল,
—আঙ্কেল কোনো সমস্যা?
লোকটা চোখমুখ কুচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
—না বলেই ভেতরে দিকে ঢুকতে লাগলো
মায়ার মাথায় দুষ্টুমি চেপে বসলো মায়া লোকটাকে অনুসরণ করে ভেতরে গিয়ে বললো
—আঙ্কেল এখানে কি কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে,?
লোকটা বেশ বিরক্ত হলো মায়ার কথার জবাব দিলো না,ভেতর থেকে একজন মহিলা বের হয়ে কাদো কাদো স্বরে লোকটিকে বলল,
—মিষ্টি তো রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছে খুলছে না
তারা দুজনেই খুবই আপসেট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মায়া এবার ওনাদের কাছে গিয়ে একটু কড়া সুরে বলল,
—কি সমস্যা? বলছেন না কেন? আপনারা কি জোর করে মেয়ের বিয়ে দিতে চাচ্ছেন না কি?
এবার মহিলাটি বলল,
—না মা আসলে আজ আমাদের মেয়ে মিষ্টির গায়ে হলুদ ও ওর ভাইয়া কে খুব ভালোবাসে ওর ভাইয়ার ইচ্ছে ছিল বিয়ে ঢাকাতেই হবে কিন্তু ছেলেপক্ষ চায় বিয়ে সিলেটেই হবে দিহানের বাবা তো আমাদের জোর করে নিয়ে এসেছেন কিন্তু দিহান আসে নি আর মিষ্টি এখন জেদ করে আছে ভাইয়া না এলে ও কিছুতেই ঘর খুলবে না।

মায়া ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—আপনি কি একটু আমায় মিষ্টির ঘরের সামনে নিয়ে যাবেন?
লোকটি এবার চোখ কুচকে বলল
—তুমি সেখানে গিয়ে কি করবে
মায়া ভ্রু কুচকে মিষ্টির বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
—কিছুই তো বোঝেন না দেখছি যা আপনি করেন নি তাই করবো।
মিষ্টির মা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
—এই লোকটা সবসময় এরকম করে তুমি এসো আম্মু আমার সাথে,
মায়া মিষ্টির রুমের দরজার সামনে এসে দাড়ালো একটু নক করতেই ভেতর থেকে কেউ বলল,
—প্লিজ মা বিরক্ত করবে না আমার কথার কোনো নড়চড় হবে না
মায়া নরম কণ্ঠে বলল,
—মিষ্টি আমি মায়া, তোমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দরজা টা খোলো
মিষ্টির মা অবাক হয়ে মায়ার দিকে তাকালো ওপাশ থেকে মিষ্টি তড়িঘড়ি করে দরজা খুললো ভীত চোখে বলল,
—কোথায় বাবা কোথায়?!
মায়া ভেতরে গিয়ে মিষ্টিকে নিয়ে দরজা লাগিয়ে বলল,
—প্রশ্ন পরে করবে তোমার বাবা একদম পারফেক্ট আছে, দরজা খুলছিলে না তাই একথা বলেছি।
মিষ্টি ভ্রু কুচকে মায়ার দিকে তাকালো,মায়া সে নজর উপেক্ষা করে বলল,
—তোমার ভাইয়াকে কল লাগাও দেন স্পিকার অন করো
—ভাইয়া ফোন রিসিভ করবে না
—আচ্ছা বেশ নম্বর দাও
মিষ্টি তেমন কিছু না বলে নম্বর টা দিলো মায়া ওর ফোন থেকে কল করতে দুবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ হলো,ওপাশ থেকে কেউ একজন বলল
—হ্যালো কে?
—আমি মায়া
—কে মায়া
—সেটা আপনি চিনবেন না
—আপনার বোন দরজা আটকে বসে আছে ভেতরে কোনো সাড়াশব্দ নেই হয়তো কোনো দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে,
—হোয়াট!
মিষ্টি চোখ বড়বড় করে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মায়া একটু চুপ থেকে বলল,
—আপনি কি আসতে পারবেন?
—আমি আমি এক্ষুনি আসছি! মিষ্টি!
—দুঃখিত এরকম কিছুই হয় নি, মিষ্টি একদম ঠিক আছে
—কিইইহ! আপনি কে! আমার সাথে মশকরা করছেন?হাও ডেয়ার ইউ
—এরকম বাজে মশকরা করার জন্য আমি খুবই দুঃখিত তবে একটু ভেবে দেখুন এরকম হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক? আপনি অহেতুক জেদ ধরে ঢাকায় বসে আছেন কাল আপনার ছোট বোনের বিয়ে,আপনি তো জানেন সে আপনাকে কত ভালোবাসে আজ যদি মিষ্টি এরকম কিছু করে তাহলে কি সেটা খুব অস্বাভাবিক হবে?
অপরপাশে নিরবতা…. মায়া একটু থেমে বললো
—আপনি মিষ্টির বড় ভাইয়া কাল মিষ্টির জীবনের বিশেষ দিন আপনি নিজের জেদের জন্য আপনার বোনের এতবড় একটা দিনে তার পাশে থাকবেন না? মিষ্টির শ্বশুর বাড়ির সবাই তো এ নিয়ে সারাজীবন মিষ্টিকে কথা শোনাতে পারে সবার চোখে মিষ্টি ছোট হয়ে যাবে, বাবার উপর রাগ করে আপনি আপনার বোনের অসম্মান করবেন?
ওপাশে কোনো কথা নেই।মায়া ছোটো করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল
—আপনি কি শুনছেন?
—শুনছি
মায়া ফোনটা মিষ্টি কে দিয়ে বললো একবার তোমার ভাইয়া কে ডাকো দেখো সে তোমার ডাক অগ্রাহ্য করবে না মিষ্টি মায়ার থেকে ফোন টা নিয়ে কান্নামাখা কণ্ঠে বলল,
—তুই আসবি না ভাইয়া?
—আমি আসছি ৪ ঘন্টার মধ্যে আমি তোর সামনে থাকবো।
মিষ্টি আর মায়া দুজনেই একটু হাসলো।

কথা আর হিমালয় কর্টেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে কথা হিমালয়ের পাশে ঘেষে বলল,
—তোর কি মন খারাপ?
হিমালয় দৃষ্টি পাহাড়ের দিকে রেখে বলল,
—তুই আমাকে এত বুঝিস কি করে?
কথা একটু হেসে বললো
—সেটা তুইও জানিস
হিমালয় কথাকে একটু পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে বলল,
—ওই মেয়েটাকে তো অনেক্ষণ দেখছি না
—মায়া
—হুম
ধ্রুব ওদের কাছে আসতে আসতে বলল,
—আমিও অনেক্ষণ মায়াকে দেখিনি কোথায় গেলো বলতো!
তখনই আবির এসে বললো
—তোরা যে কেন এত ঝামেলার জড়াস আমি বুঝি না যে মেয়ে বাড়ি থেকে পালায় সে সব জায়গা থেকেই পালাতে পারে,
নিরব আস্তে বলল,
—তুমি তো জানো আবির মেয়েটা কেন পালিয়েছে
আবির ঝাঝালো কণ্ঠে বলল,
—কারণ মেয়েটা একটা স্টুপিড, ও ওর কথাগুলো ওর বাবাকে বললেই পারতো গাধা একটা ও জানে আজকাল রাস্তায় কত বিপদ! সবাই তো তোদের মত ভালো না
কথা পশ্রয়ের সুরে বলল,
—মেয়েটা নিতান্তই ছোট মানুষ

মায়া ওদের পেছনে এসে হালকা কেশে বলল,
—অনেক হয়েছে মায়া নিয়ে আলোচনা, আপনারা কি আজ কোথাও যাবেন নাকি এখানেই থাকবেন আমি কিন্তু বেড়াতে এসে বসে থাকতে পারবো না।
হিমালয় মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো কাল রাতের মতো পরিণত লাগছে না আজকে মেয়েটাকে সদ্য কিশোরীর মত লাগছে তবে চমৎকার! হিমালয় চোখ ফিরিয়ে নিলো, ধ্রুব মায়ার কাছে গিয়ে বলল,
—তা আপনি গিয়েছিলেন কোথায় মিস চুমকি
মায়া নিজের জামার গলাটায় হাত দিয়ে বলল,
—ইশ কলার নেই
তাও একটু ভাব নিয়ে বলল,
—সমস্যা সমাধান করতে,
বলেই নিজের চুল গুলো সামনে থেকে পেছনে ছুড়ে মারলো,আবির চোখমুখ শক্ত করে বিড়বিড় করে বলল,
—নিজেই তো আস্ত এক সমস্যা
মায়া চোখ সরু করে মাজায় হাত রেখে বলল,
—এই যে আবির ভাই আমি কিন্তু রেগে যাবো এভাবে বিধিয়ে কথা বললে হুম।
আবির চোখ বড় বড় করে বলল
—ভয় দেখাচ্ছো পিচ্চি মেয়ে?
মায়া আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
—আমি কি ডাইনী বুড়ি যে ভয় দেখাবো?
ওমনি অন্য সবাই হেসে ফেললো, পুষ্প মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে রইলো দূরে ধ্রুব এগিয়ে এসে বলল,
—ওয়েট ওয়েট তুমি আবিরকে ভাইয়া বললে!
—হ্যা তো!
—প্লিজ আমি সুন্দরী মেয়েদের মুখে ভাইয়া ডাক সহ্য করতে পারি না আমার পেট খারাপ হয়ে যায়
মায়া মাথা চুলকে বলল,
—তবে দুটো এমোডিস খেয়ে নেবেন!
—না তুমি অবশ্যই আমাকে ভাইয়া বলবে না, আমাকে তুমি নাম ধরেই ডাকবে
—তাতে কিন্তু খুব লাভ হবে না,
—সে পরে দেখা যাবে
—আচ্ছা, তাহলে আমি কাকে কি ডাকবো?আমি কিন্তু নিরব ভাইয়া কে ভাইয়াই ডাকবো
নিরব একগাল হেসে বলল
—অবশ্যই
পুষ্প মনে হয় খুশি হলো এবার ও এগিয়ে এসে নিরবের পাশে দাড়ালো।
মায়া এবার হিমালয়ের কাছে গিয়ে বলল,
—আর আপনাকে কি ডাকবো মহারাজ?
ধ্রুব পেছন থেকে বলল,
—ওর এটিটিউড রাজকুমারের মতোই তুমি ওকে মহারাজ রাজকুমার একটা ডাকলেই হলো।
মায়া বলল,
—আপনারা কি আজ সত্যি কোথাও বের হবেন না!
হিমালয় মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো সবাই রেডি হও আজ খাদিমনগড় ঘুরে আসি, হিমালয়ের বলতে দেরি আছে মায়ার দৌড় লাগাতে দেরি নেই।ওরা জীপে খাদিমনগর জাতীয়উদ্যানে এলো মায়া, জীপ থেকে নামতে গিয়ে একবার জামায় বেধে হোচট খেয়েছে,হিমালয় বাহু না ধরে ফেললে নিশ্চিত আছাড় খেয়ে মানসম্মান যেতো, মায়া আকাবাকা রাস্তা পার হয়ে চা বাগান ঘুরে ঘুরে দেখছে ধ্রুব ওর ক্যামেরা নিয়ে প্রকৃতির ছবি তুলছে ফাকে ফাকে মায়ার ছেলে মানুষিরও, পুষ্প নিরবের পাশে হাটতে হাটতে বলল,
—নিরব তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
নিরব বরাবরের মত চুপ রইলো, পুষ্প নিরবের হাত ধরে ওকে থামিয়ে বলল
—আমার কথা শোনো
—বলো,শুনছি তো
—তুমি সামনে কি করবে ভেবেছো
—হ্যা এই ট্রিপটার পর পুরোপুরি ক্যারিয়ার নিয়ে পড়বো আগামী দুবছর আমি নিজেকে সময় দেবো
—তারপর?
—তারপর মানে?
—প্লিজ নিরব আমার ধৈর্যের আর পরীক্ষা নিও না তুমি কি বুঝতে পারো না আমাকে?
নিরব এবার সরাসরি পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বললো
—পুষ্প কিছু জিনিস বুঝেও না বুঝে না জেনে থাকতে হয়,
—আমি তোমাকে ভালোবাসি
নিরব এবার চোখ সরিয়ে সারি সারি বাগান পেরিয়ে দিগন্তে চোখ রাখলো।
—চোখ ফিরিয়ে নিও না
নিরব পুষ্পের দিকে না তাকিয়েই বললো
—ছোটবেলা থেকে আমি বৃত্তি উপবৃত্তির টাকা দিয়ে পড়ালেখা করেছি পুষ্প, ডাক্তারির কোচিং করার জন্য আমার মা তার একমাত্র সোনার চুড়ি জোরা বিক্রি করে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলো,
আমি তোমার মত সোনার চামচ মুখে,প্রাচুর্য আর প্রাপ্তির মধ্যে বড় হই নি পুষ্প, আমি যতদূর জানি তোমার বাবা বংশ, গৌরব এসব খুব মানেন,তোমার বাবার সাথে পাল্লা দেওয়ার মতো কোনো যোগ্যতাই আমার নেই।আমি মানছি হয়তো একসময় আমার অবস্থার পরিবর্তন হব্র কিন্তু তোমার বাবার কাছে আমি দিনমজুর পুত্রই থেকে যাবো।আর এটাও তোমার সামান্য মোহ একসময় কেটে যাবে।

অনেকগুলো কথা বলে ফেলেছে নিরব ও পুষ্পকে পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে গেলো, মায়া পুষ্প আর নিরবকে খেয়াল করলো পুষ্প মুখ গোমড়া করে রইলো।হিমালয় এসে মায়ার কাছে দাঁড়িয়ে বললো
—ধ্যানে বসেছো নাকি?
মায়া বেখেয়ালে বলল,
—পুষ্প আপু নিরব ভাইয়া কে খুব ভালোবাসে না?
হিমালয় একটু চমকালো
—তুমি কি করে বুঝলে?
—নিরব ভাইয়াও পুষ্প আপুকে ভালোবাসে কিন্তু….
—কিন্তু কি?
মায়া হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে খুব উৎসাহে বললো
—আপনার মনে হয় না এদের একসাথে থাকা উচিত! বন্ধুর চেয়ে ভালো কি আর কোনো জীবনসঙ্গী হতে পারে?
হিমালয় ধীরে বললো
—জীবনসঙ্গী হওয়া এত সহজ না, ভালো বন্ধু যে জীবনসঙ্গী হিসেবে ভালো হবে এরকম না,
—কিন্তু এদের ক্ষেত্রে তো তাই
—সেটা এরাই ভালো বুঝবে
বলেই হিমালয় হাটা ধরলে মায়া হিমালয় কে ডাকে
—মহারাজ!
হিমালয় দাড়িয়ে যায় মায়া মাথা নিচু করে হিমালয়ের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,
—দুজন ভালোবাসার মানুষ এক আকাশের নিচে আলাদা আলাদা বেচে তো থাকে ভালো থাকে না, আপনি কি চান আপনার বন্ধুরা কষ্টে থাকুক?
বলেই মায়া দৌড়ে সেখান থেকে চলে এলো,

চা বাগান ঘুরে ওরা রেইনফরেস্ট, রাতারগুল ঘোরাঘুরি শেষ করে রিসোর্টে ফিরলো সন্ধ্যা নাগাদ মায়া এতক্ষণ বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলেছে, পুষ্প একদম চুপচাপ। নিরব হিমালয় খেয়াল করলেও কিছু বললো না।সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর মায়া ওর কর্টেজের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো হিমালয়ের রুমের জানালা দিয়ে মায়াক্র দেখা যাচ্ছে, মায়া কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অল্প পরিচিত কণ্ঠস্বরে পেছনে ফিরলো,মিষ্টি।হিমালয় দেখলো একটা মেয়ে সম্ভবত আজ মেয়েটার গায়ে হলুদ আর ওর পাশের একটা ছেলে মায়ার সাথে কথা বলছে,দিহান এগিয়ে মায়ার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,
—তুমিই মায়া?
মায়া ছেলেটার দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো
—আপনি মিষ্টির ভাইয়া?
দিহান হেসে মাথা নেড়ে বলল,
—হ্যা
হিমালয় বাইরে বেরিয়ে এলো…

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া (২)

0

হঠাৎ_হাওয়া (২)

পুরো ট্রেনে শুনশান নিরবতা সবাই টুকটাক ঘুমিয়ে পড়েছে,মায়া দ্বিতীয়বার খুব বড় একটা দীর্ঘশ্বাস নিতেই হিমালয় বলল,
—এত্ত বড় দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার মত কিছুই হয় নি ওঠার পর থেকেই দেখছি বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছ কারণ টা কি?
মায়া চমকে উঠলো, বেশ ভয় পেয়েছে ও আশা করেনি কেউ জেগে আছে মায়ার বুকের মধ্যে খুব ধুক ধুক করছে,
—আরে কি সমস্যা ভয় পেয়েছ নাকি?
—আপনি ঘুমান নি?
মেয়েটার কণ্ঠটা ভয়ংকর রকমের সুন্দর এই মেয়েটার কথায় এক অদ্ভুত মায়া আছে, কেমন তীক্ষ্ণ এক ধার আছে, একজন মেয়ের কণ্ঠ এত সুন্দর হতে পারে হিমালয় তা কখনো ভাবে নি মেয়েটার গানের গলা নিশ্চয়ই সুন্দর।
—হ্যা ঘুমিয়েছি তো আমার ঘুমের ঘোরে কথা বলার অভ্যেস আছে সেই অভ্যেস থেকে তোমার সাথে কথা বলছি।
মায়া একটু দমে গেলো নিজের বোকামির ওপর নিজেই হেসে ফেলল।কিন্তু ও হুট করে ভয় পেয়ে গেছে এখনো কেমন গা কাপছে ওর এই এক বদ অভ্যেস অল্পতেই ভয় পেয়ে যায়।মায়া একটু আমতা আমতা করে বলল
—ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আমি একটু আপনাকে ছুতে পারি?
হালকা একটা আলো আছে ঠিক গাঢ় জোৎস্না নয় কেমন যেন একটা ম্লান আলো সেখানে শুধু অবয়ব বোঝা যাচ্ছে মায়া বুঝলো,হিমালয় ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে,
—চাইলে হ্যান্ডশেক করতে পারো কিন্তু প্লিজ ছুয়ে দিলে ভয় চলে যাবে এরকম কথা ভেবে ছোয়ার দরকার নেই।
মায়া একটু ইতস্তত করে হাতটা বাড়িয়ে বলল,
—মানুষের কিছু কিছু বিশ্বাস থাকে যা থেকে সে বেড়িয়ে আসতে পারে না কখনোই পারে না আমি সেরকম একটা স্টুপিড গার্ল বলতে পারেন।
মায়া হিমালয়ের হাত ছুয়েই কেপে উঠলো কেন কে জানে!শুধু মায়া না হিমালয় ও কেপে উঠলো,
হিমালয় কণ্ঠে যথেষ্ট চিন্তা নিয়ে বলল,
—কি ব্যাপার তোমার হাত এত্ত ঠান্ডা কেন!এত ঠান্ডা মানুষের হাত কি করে হয়?!
—চিন্তা করার কিছু নেই আসলে ভয় পেলে বা টেনশন করলে আমার হাত পা খুব ঠান্ডা হয়ে যায়, আমার বমি পায় আমি খেতে পারি না খুব বেশি হলে সেন্সলেস হয়ে যাই, এগুলো নর্মাল এখন অভ্যেস হয়ে গেছে।
বলেই মায়া একটু নিঃশ্বাস ফেলল,
—আবার?
এবার মায়া হেসে ফেলল
—হাসছ কেন?
—আসলে মানুষের যখন অনেক চিন্তা হয় তখন মানুষের মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হয় সেই অভাব টা পূরণ করতে মানুষ জোরে শ্বাস নেয় আর বিনিময়ে খুব বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে একে আমরা দীর্ঘশ্বাস বলি
—এটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?
—কি জানি জানিনা, আমি একটা ব্যাখ্যা দাড় করালাম।
—তুমি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলবে না
—আরে মুশকিল তো আপনি তো এই নিয়ে খুব জ্বালাতন করছেন,একদম বাবার মতো ডিস্টার্ব করছেন।
বাবার মত কথাটা বলেই মায়া থেমে গেলো ও খুব ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো,আস্তে আস্তে মায়ার মন ভারী হয়ে আসছে ও সবটা গুলিয়ে ফেলছে এমনটা ও নাও করলে হতো বাবার সাথে কথা বললেও হতো বাবা সবটা বুঝতো, তাড়াহুড়ো করে ও এটা কি করল?মায়া আস্তে উঠে দাড়ালো এবং দৌড়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো,হিমালয় কিছু বুঝে উঠল না মেয়েটার কি হলো ও উঠে মেয়েটার পিছু নিলো।হিমালয় দেখলো মায়া ট্রেনের দরজা দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে এই মেয়েটা কি লাফিয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নাকি! হিমালয় মায়ার বাহু ধরে টেনে বলল
—পাগল নাকি কি করছ?!
—আমি নামব
—এখান থেকে নামতে চাইলে সোজা উপরে চলে যাবে
—উপরে মানে!
হিমালয় একটু বিরক্ত হলো মেয়েটা নিতান্তই ঘোরের মধ্যে বাড়ি ছেড়েছে একে এখন কি বোঝাবে,এ একেবারেই ছেলেমানুষ ধরণের মেয়ে
হিমালয় দরজার সাথে হ্যালান দিয়ে আড়িয়ে এক হাত দিয়ে দরজা আটকে মায়ার দিকে তাকালো তারপর বলল,
—তোমার যে ভাইয়ার সাথে বিয়ে ঠিক হলো তার সাথে যোগাযোগ করেছো? সে তোমার থাকার কোনো ব্যাবস্থা করে নি?
—তনয় ভাইয়া তো ফোন রিসিভ করছে না মনে হয় ব্যাস্ত,বাড়িতে কি একটা অবস্থা ভাবা যাচ্ছে!
হিমালয় মাথা নিচু করে ফেললো মেয়েটার কণ্ঠে অদ্ভুত ঘোর আছে…হিমালয় আস্তে জিজ্ঞেস করলো,
—বাসায় যেতে চাও নাকি?ব্যাবস্থা করব?
মায়া কিছুক্ষণ এদিকওদিক তাকাতাকি করলো তারপর বলল,
—না যেতে চাই না।
হিমালয় অবাক হয়ে বললো
—একটু আগেই না ট্রেন থেকে লাফিয়ে বাড়ি যেতে চাচ্ছিলে
—ভুল করছিলাম, মানুষ একবার যখন ভুল করে তারপর ভুল করতেই থাকে।
বলেই মায়া আবার একটা নিঃশ্বাস ফেললো তারপর হেসে ফেললো,হিমালয় অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো মেয়েটা অদ্ভুত মুহুর্তেই হাসছে মন খারাপ করছে কথা বলছে চুপ থাকছে!মায়া আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
—চলুন ভেতরে যাই নয়তো সবাই ভাববে আমি আবার আপনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছি
হিমালয় হালকা হেসে বলল,
—সবাই জানে,হিমালয় আহমেদ কে কিডন্যাপ করা ওতো সহজ না আর তোমার মত একটা খুকি পক্ষে তো না ইই।
—আমি খুকি!
—অবশ্যই, একটু পরেই ভোর হবে তুমি ভেতরে গেলে যাও আমি যাচ্ছি না
—আমি আগে এসেছি আমি এখানেই থাকবো
হিমালয় বিড়বিড় করে বলল,
—আচ্ছা মুসিবত তো
—কিই বললেন?
—বললাম আমার পুশিক্যাট এর কথা খুব মনে পড়ছে
মায়া চুপ করে গেলো ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো মনে মনে ভাবছে কি হবার ছিলো আর কি হয়ে গেলো, মায়া আনমনে হিমালয়ের সামনে ট্রেনের দেয়ালে হ্যালান দরজা দিয়ে বাইরে তাকালো, আস্তে আস্তে অন্ধকার কেটে বাইরে ফর্সা হচ্ছে মায়া বাইরে তাকিয়ে আছে ওর চোখ ছলছল করছে, হিমালয় অবাক হয়ে মেয়েটিকে দেখছে, মেয়েটিকে সকালের প্রথম আলোয় কি চমৎকার লাগছে!

স্টেশন থেকে নেমে ওরা সবাই হালকা ফ্রেশ হয়ে একটা চায়ের দোকানে বসলো, সাজ ধুয়ে ফেলার পর মায়াকে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে, নিরব বরাবর চুপ থাকলেও বলে উঠলো
—সাজ তুলে ফেললে যে একটা মেয়েকে এতটা চমৎকার লাগতে পারে আমি কখনো ভাবিনি!
মায়া লজ্জা পেয়ে একটু মাথা নিচু করে ফেললো
নিরবের বন্ধুরা সবাই যতটা না মায়াকে দেখে মুগ্ধ হলো তারচেয়ে বেশি নিরবের প্রশংসা শুনে অবাক হলো, নিরব পারতপক্ষে কথাই বলে না! সবাই নিরবের দিকে চেয়ে আছে দেখে নিরব বলল,
—এত অবাক হওয়ার কি আছে! তোমরা এমন ভাব করছ আমি বোবা আর হঠাৎ করেই আজ কথা বলছি,
পুষ্প আড় চোখে নিরবের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে রইলো।
মায়া এতক্ষণ চায়ের কাপটা হাতের মধ্যে নিয়ে বসে ছিল, মুখে দিতেই পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো ও চা টা রেখে দিলো, মনে পড়লো কাল সারাদিন ও কিছুই খায় নি।ধ্রুব খেয়াল করে বলল,
—তুমি কি সারাদিন কিছু খেয়েছিলে?
মায়া ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে দেখলো দেখতে আধুনিক হলেও ছেলেটার বাচনভঙ্গিতে কোনো ভান নেই মায়া একে একে সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো, ওদের মধ্যে নিরব একমাত্র সম্পূর্ণ ফরমাল ড্রেসে, আবির মুডি ধরণের, কথার একটা সুন্দর ব্যাক্তিত্ব আছে সব দারুণ ম্যানেজ করতে পারে, পুষ্প খুব দুরন্ত বয়সের সাথে ছেলেমানুষি যায় নি আর হিমালয় একে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কখনো নরম তো কখনো ভাব নিচ্ছে, ধ্রুব মায়ার জবাবের আশা ছেড়ে দিয়ে বললো
—আমাদের সবাইকে পর্যবেক্ষণ শেষে কি সিদ্ধান্ত নিলে?
মায়া চমকে উঠলো, সবাই মায়ার দিকে তাকিয়ে ধ্রুব আবার বলল,
—তুমি মেয়েটা যে এতটা শাখা না তা বোঝাই যাচ্ছে,এর আগে সিলেট এসেছো?
মায়া এবার জোর দিয়ে বলল,
—হ্যা!
—বেশ আমাদের দেখে কি মনে হলো আমাদের সাথে যাওয়া যায়?
মায়া একগাল হেসে বলল,
—খুব যায়
মায়া লাফিয়ে উঠে বলল,
—গেট রেডি ফর এন এমেইজিং ট্রিপ,
সামনে এগোতেই মায়া শাড়ির সাথে পেচিয়ে হোচট খেয়ে নিজেকে সামলে নিলো,ওমনি সবাই হেসে ফেললো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

হঠাৎ হাওয়া পর্ব- ০১

0

হঠাৎ_হাওয়া
পর্বঃ ০১

দুবছর টানা দুবছর হয়ে গেছে এই শহরের বাইরে মায়া কোথাও যায়নি, স্টেশনে এসে ওর একটু বিব্রত লাগছে, কখনোই ও ঢাকায় যেত না যদি না ওর বাবার শরীরটা এতটা খারাপ হতো, মায়া একাই পুরো একটা কেবিন নিয়ে যাচ্ছে,ট্রেন ধীরে ধীরে তার গতি বাড়াচ্ছে মায়াও ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে ওর অতীতের দিকে, ট্রেনে এটা ওর চতুর্থবারের মত ওঠা প্রথমবার ওর ট্রেনে ওঠার অভিজ্ঞতা ছিলো ওর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ের একটা, স্বপ্নের মত মায়া কিছুক্ষণ বই টই ঘাটাঘাটি করলো কিন্তু মন বসাতে পারলো না ওর ঘুরেফিরে পুরোনো কথাই মনে পড়তে লাগলো ও হালকা করে চোখ বুঝে মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো
তুমি আমার ক্ষণে ক্ষণে নেওয়া
দীর্ঘশ্বাসের করুণ সুর….
তুমি আমার হঠাৎ হাওয়া
খুব মন খারাপের একলা দুপুর।
মুহুর্তেই হঠাৎ খানিকটা হাওয়া ট্রেনের জানালা দিয়ে ভেতরে এসে মায়ার মুখে লাগলো একে একে পুরোনো সব স্মৃতি, এরকমই একটা ট্রেনের কেবিনে ওর দুনিয়া খুজে পাওয়ার স্মৃতি জড়িয়ে ধরতে লাগলো। মায়া চোখ বন্ধ অবস্থায়ই ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো কি বিব্রতকর অবস্থাটা ছিল!

বেনারসী পড়া এক মেয়ে টিটির সাথে কিছু একটা নিয়ে তর্ক করছে,বেশ কিছু লোক জড়ো হয়েছে, নিশ্চয়ই মেয়েটার সাজের জন্য,কথা টয়লেট থেকে ফিরছিল ও কিছুটা আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেল,এবার বুঝল মেয়েটা তর্ক করছে না ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বকা শুনছে, যা বুঝল কথা তার সারমর্ম এই যে মেয়েটা টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠে পড়েছে এবং সে যতই বলছে সামনের স্টেশন এ নেমে যাবে টিটি তা মানতে নারাজ,তাছাড়া মেয়েটা যে বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে এটাও সবাই বেশ বুঝতে পারছে এবং আকারে ইঙ্গিতে মেয়েটাকে অপমান করতেও ছাড়ছে না,কথা একবার মেয়েটার দিকে তাকালো মেয়েটা কে দেখতে যথেষ্ট ভদ্র এবং সম্ভ্রান্ত ঘরেরই লাগছে বেশ দামী একটা বেনারসি পড়েছে। আশেপাশের সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই মজা দেখতে ব্যাস্ত তারা মেয়েটার হয়ে কথা বলবে বলে মনে হচ্ছে না,এবার আর চুপ থাকতে না পেরে কথা বলল,
—ও আমাদের সাথে এসেছে,
অন্য সবাই সহ মেয়েটিও বেশ অবাক হয়ে কথার দিকে তাকালো,কথা সামান্য এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির পাশে দাড়ালো তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—আমরা এই লেনের সামনে গিয়ে ডানদিকের প্রথম কেবিনটায় আছি ও আমাদের সাথেই এজন্যই ওর কাছে টিকিট নেই,
টিটি একটু দমে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই কথা বলল,
—আপনারা প্লিজ এখন যার যার কাজে যেতে পারেন এখানে ভীড় না করে।আর আপনি, আপনি যে যাত্রীদের সাথে মিসবিহেভ করেছেন তার জন্য আপনার বিরুদ্ধে একশন নিতে বাধ্য করবেন না আশা করি,
এবার টিটি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
—সরি আপনারা যেতে পারেন।
কথা মায়াকে নিয়ে ওদের কেবিনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
—এরপর থেকে টিকিট ছাড়া উঠবেনা কেমন?সবসময় তোমাকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না, এসো এইদিকে,শোনো আমরা বন্ধুবান্ধবেরা মিলে জাফলং যাচ্ছি এই ট্রেনে , ওরা এখন তোমাকে দেখে অনেক রকম প্রশ্ন করতে পারে তুমি তৈরি তো?
মায়ার তেমন কোনো ভাবান্তর হলো না
কথা ওদের কেবিনে ঢুকতেই সবাই হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে অবশ্য ওর দিকে না ওর সাথে থাকা মেয়ের দিকে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।কথা,আবির,ধ্রুব, নিরব,পুষ্প, হিমালয় ওরা সবাই সিলেট যাচ্ছে ঘুরতে মাঝে মাঝেই ওরা বন্ধুরা মিলে ঘুরতে বের হয়ে যায় এরকম হুটহাট বের হতে ওদের হাজার বাধা তবে কেউ থেমে থাকে না একবার প্রকৃতি ডাকলেই ওদের আর আটকানো যায় না।
সবার আগে ধ্রুব লাফিয়ে উঠে কিছু একটা বলতে যাবে, কথা ওকে হাতের ইশারায় থামতে বলে, মায়ার হাত থেকে ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে একপাশে রাখলো তারপর ওকে জানালার পাশে বসতে দিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসল,
—নে তোরা এবার তোদের প্রশ্ন শুরু কর
পুষ্প চিৎকার করে বলল,
—প্রশ্ন শুরু কর মানে কি!এই মেয়ে কে, তুই তো টয়লেটে গেছিলি, তাহলে একে পেলি কোথায়? টয়লেটে গিয়েও তোর বন্ধুত্ব করতে হয়?কার বউ কে ভাগিয়ে এনেছিস?
আবির এবার ধমকে বলল,
—তুই থামবি? এত কথা বলিস কেন?
—আমি বেশি কথা বলি? তুই দেখতে পারছিস না? কথা কি ব্লান্ডার করেছে!কার না কার বউকে ধরে নিয়ে এসেছে? এবার তো পুলিশ কেস হয়ে যাবে,আমরা সিলেট যেতে পারব তো!
হিমালয় ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে মুখ করে আছে এখনো পর্যন্ত ও কথা বলার প্রয়োজন মনে করছে না
ধ্রুব কথার সামনা সামনি বসে ছিল,ও সামান্য ঝুকে এসে বলল,
—এই একমাত্র মেয়েকে আমি দেখলাম যে পুরো ট্রলি ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে,ফুল প্রুফ প্লান,মেয়েটা বেশ বুদ্ধিমতী,
আবির এবার বলল,
—মেয়েটার নাম কি কথা?
—জানিনা তো এখনো শোনা হয় নি।
নিরব বরাবরই শান্ত বেশি কথা বলতে পছন্দ করে না,সবাইকে তুমি তুমি করে ভদ্রভাবে কথা বলে, এবার নিরবও নিরবতা ভেঙে বলল,
—তুমি ওকে চেনো না! তাহলে ওকে আনলে কেন?
কথা এবার কিছুক্ষণ আগে ঘটা সব ঘটনা খুলে বলল,ওর বন্ধুরা সবাই কথার দিকে চেয়ে আছে,
পুষ্প চেচিয়ে বলল,
—ওরে আমার জননেত্রী কথামনিরে , তোরে কে বলছিল সেধে ঝামেলা ঘাড়ে নিতে?
—প্লিজ পুষ্প মেয়েটা বিপদে পড়েছিল আমি চুপ থাকতাম কি করে?
—যে মেয়ে নিজের বিয়ে থেকে পালায় সে বিপদে পড়ে না সে বিপদ নিয়ে ঘোরে তুই এই মেয়েকে এক্ষুনি বিদেয় করবি কি না বল
—না করব না, আর তোদের যদি খুব সমস্যা হয় তবে বলে দিস পরের স্টেশনে আমি ওকে নিয়ে নেমে যাব
মেয়েটি এবার অবাক হয়ে কথার দিকে তাকিয়ে আছে,কথার বন্ধুরাও সবাই এবার যেন একটু দমে গেলো।
—লাইট টা অফ কর প্লিজ আমার মাথা ধরেছে খুব।বলেই কথা লাইটটা অফ করে দিল,খুব জোৎস্না বাইরে জানালা বেয়ে ট্রেনের কামড়াতে একটা ঘোরলাগা পরিবেশ তৈরী করছে সবাই চুপচাপ ঘন্টা খানেক হয়ে গেছে, হয়তো ঘুমিয়ে গেছে,কথা হালকা করে মেয়েটিকে নাড়া দিয়ে বলল,
—ঘুমিয়ে পড়েছ?
—উহুহ
—নাম কি তোমার?
—মায়া
কথা চমকে তাকালো,এই প্রথম মেয়েটার মুখে কথা শুনলো একটা শব্দই উচ্চারণ করেছে কিন্তু মেয়েটার কন্ঠটা মারাত্মক সুন্দর, এতক্ষণ মেয়েটাকে দেখে কথার যতটা না মায়া হচ্ছিল ওর নাম শুনে ওর উচ্চারিত শব্দ শুনে তা আরো বেড়ে গেছে কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক থেকে কথা বলল,
—তুমি আমার বন্ধুদের কথায় কিছু মনে করো না প্লিজ, ওরা তোমার হঠাৎ আসাটাকে এখনো মানিয়ে নিতে পারে নি, মন থেকে কিন্ত ওরা সবাই খুব ভালো।
—আমি কিছু মনে করি নি,আমি জানি ওনারা সবাই খুব ভালো,তা না হলে একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়ে যার নামটাও কেউ জানে না তাকে থাকতে দিত না,মনে মনে ওনারা সবাই আমাকে করুণা করেছে,
মেয়েটার কণ্ঠটা চমৎকার অন্ধকারে তা আরো সুন্দর শোনাচ্ছে এই মেয়েটার কথায় ধার আছে বেশ বোঝা যাচ্ছে,
—মায়া
—হু
—বাড়ি থেকে পালিয়েছো কেন? বিয়েতে মত নেই? অন্য কোনো পছন্দ আছে?
মায়া এবার অনেক্ষণ চুপ করে আছে কথা মায়াকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
—বলতে না চাইলে জোর করব না, কোনোকিছু না জেনেই আমি তোমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করব,জানিনা কেন তোমার প্রতি আমার এক অদ্ভুত মায়া জন্মে গেছে
মায়া আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
—আজ আমার বিয়ে ছিল টানা ১৫ দিনের অনুষ্ঠান শেষে আজ সেই দিন ছিল,ছোটবেলা থেকে সাজানো হাজার স্বপ্ন আজ সত্যি হওয়ার দিন,কিন্তু আজ সকালেই জানতে পারি যাকে ঘিরে আমার এত্ত স্বপ্ন সে আমাকে ভালোবাসে না, যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে সম্পর্কে আমার ফুপাতো ভাই হয়, ফুপিই বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন বাবা কিছুতেই রাজি নন এখনই আমায় বিয়ে দিতে মাত্রই কয়েকমাস হলো আমি ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছি, কিন্তু ফুপিই বাবাকে বোঝালেন যে বাবার শরীর ইদানীং ভালো যাচ্ছে না, তনয় ভাইয়াও খুব ভালো মানুষ ভালো একটা জবও পেয়েছেন সবকিছু মিলে বাবাও অমত করে নি,আর আমিও বাবাকে খুব ভালোবাসি তাই বাবার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি মাম্মাম মারা যাবার পর বাবা ই আমাকে বড় করেছেন আমার জন্যে বিয়েও করে নি,বাবা আর আমি একদম বন্ধুর মতো,
আজ সকালেই তনয় ভাইয়া আমার সাথে দেখা করে বলেন,
—দেখ মায়া তুই খুব ভালো মেয়ে ছোট বেলা থেকে আমি তোকে খুব পছন্দ করি
—তুমি কি এখনো আমায় তুই করে বলবে তনয় ভাইয়া?
—তুইও তো ভাইয়া বলছিস,
—দেখ মায়া কিছু সম্পর্কের একটা আলাদা জোন থাকে সেখানেই সেটা মানায়, আমি জানি কথাটা বলতে আমি খুব দেরি করে ফেলেছি কিন্তু তোকে অনেকটা ঠকিয়েছি কিন্তু না বললে তোকে সারাজীবন ঠকানো হবে
—তুমি এসব কি বলছ আমি বুঝতে পারছি না
—মায়া তুই এখনো খুব ছোট, তোর সামনে এখনো অনেক পথ বাকি হয়তো এখন তুই আমাকে ভুল ভাববি কিন্তু একদিন তুই ঠিক সবটা বুঝবি দেখ মায়া আমি একজন কে ভালোবাসি তোকে আমি কখনো বোনের বাইরে কিছুই ভাবি নি, ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যেটা হয়ে যায় আর যাকে প্রতিরোধ করা যায় না আমি তিন্নি কে ভালোবাসি আমাদের ৩ বছরের সম্পর্ক আমি কিছুতেই ওকে ভুলতে পারব না।
—তুমি এসব কি বলছ তনয় ভাইয়া আর এগুলো এখন কেনো বলছ? ফুপি কি এসব জানে?
—মা সব জানে মায়া মা জোর করে আমাকে এই বিয়েটা করাতে চাচ্ছে তোদের সম্পত্তির লোভে, মা খুব ভালো করেই জানে মামার অবর্তমানে সমস্ত সম্পত্তির মালিক তুই আর তোর সাথে বিয়ে হলে আমি,কিন্তু বিশ্বাস কর মায়া আমি এসব কিচ্ছু চাই না আমি তিন্নি কে চাই
—আমি এখন কি করব তনয় ভাইয়া?
—জানিনা মায়া আমি কিচ্ছু জানিনা তুই যাই কর শুধু এই বিয়েটা হতে দিস না প্লিজ এতে তিনটে জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।মায়া তুই পালিয়ে যাবি প্লিজ?
—তুমি এসব কি বলো তনয় ভাইয়া, আমি এমন কিছু করলে বাবা মরেই যাবে
—তুই তো আমার মাকে চিনিস কেমন জেদী মা কিছুতেই বিয়েটা আটকাতে দেবে না, শুধু তুই পালিয়ে গেলে বিয়েটা ভেঙে যাবে মায়ের কিছু করার থাকবে না, আর আজই আমি তিন্নি কে বিয়ে করব মায়ের ও কিছু বলার থাকবে না, প্লিজ মায়া আমার এই উপকার টুকু কর আমি সারাজীবন তোর কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব,আমি তোকে কথা দিচ্ছি এক সপ্তাহ, এক সপ্তাহ সময় তুই আমাকে দিলে আমি সবটা গুছিয়ে নেব আর মামাকেও সবটা বুঝিয়ে বলব প্লিজ মায়া।

—ব্যাস আমিও পার্লারে সাজতে যাওয়ার নাম করে পালিয়ে এলাম সাথে কাজিনরা ছিল তাই সাজতেই হলো, একসময়সুযোগ বুঝে আমি ওদের পাঠিয়ে দিলাম এই বলে যে তনয় ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে আর আমি বেরিয়ে পড়লাম। আমার তেমন কোনো দুঃখ নেই এক জীবনে মানুষ সবটা পায় না পেতে নেই, শুধু বাবার জন্য চিন্তা হচ্ছে বাবা আমাকে সবচেয়ে ভালোবাসে বিশ্বাস করে অথচ আজ জানবে তার মেয়ে বিশ্বাস ঘাতক।
মায়া এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে দম নিলো,কিন্তু অদ্ভুত শক্ত মেয়েটা কাদছে না পাথরের মতো নির্জীব হয়ে আছে! কথা কি বলবে খুজে পাচ্ছে না যদিও ওর প্রতি কথার একটা টান অনুভব হচ্ছিল তবুও মনে মনে ওর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসাটাকে ভালো চোখে দেখে নি,হঠাৎ কেবিনের লাইট জ্বলে উঠল,নিরব ধ্রুব বাঙ্কার থেকে নেমে আসলো, সবাই একরকম গোল হয়েই বসে আছে পুষ্প অবাক চোখে চেয়ে আছে মায়ার দিকে,
—তোরা সবাই ঘুমাস নি? আমি তো ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছিস,
হিমালয় এই প্রথম মায়ার দিকে তাকালো মেয়েটাকে এতক্ষণ ও খেয়ালই করে নি, বেশ মোহনীয় লাগছে মেয়েটাকে
ধ্রুব কথাকে উপেক্ষা করে,মায়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
—মায়া, তারমানে তুমি এখন কোথায় যাবে তা জানোনা?
মায়া হালকা করে ঠোট বাকিয়ে হাসলো মেয়েটার হাসি নিঃসন্দেহে সুন্দর,
—কত কিছুই তো জেনে শুরু করছিলাম শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয় নি,হঠাৎ হাওয়ায় সবটার মোড় ঘুরে গেছে,এখন থেকে না হয় না জেনেই শুরু করি?
হিমালয় কিছু বলল, তবে খুব আস্তে তবে সবাই শুনলো
—সিলেট যাবে মায়া?
মায়ার নজর এবার হিমালয়ের দিকে পড়ল শুরু থেকেই চুপচাপ ছেলেটা কিছু একটা বলেছে মায়াও শুনেছে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মায়াও খুবই আস্তে বলল,
—কি জানি!জানি না।
হুট করে কিছুটা হাওয়া জানালা দিয়ে আসলো মায়া হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো, তারপর ট্রেনে সবার দিকে ঘুরে,এক গাল হেসে বলল,
—যদি আমি জাফলং যাই?
কি জানি সবার কি হলো মাত্র ঘন্টা চারেকের পরিচয় অথচ সবাই খুশি হয়ে গেলো,
ধ্রুব লাফিয়ে উঠে বলল,
—বেশ হবে এদের সাথে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছি সুন্দরী মেয়ের সঙ্গ পেলে মন্দ হবে না
মায়া মুখ টিপে হেসে বলল,
—কি জানি নাম মেয়েটার চুমকি?
ওমনি সবাই হেসে ফেলল।
ধ্রুব হাত বাড়িয়ে মায়াকে বলল,
—আমি ধ্রুব,
মায়া হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে গেলেই ধ্রুব হাত সরিয়ে নিয়ে বলল
—ওহ, নেভার মাইন্ড বেটার ট্রাই নেক্সট টাইম

মায়া কিছুক্ষন বোকা সেজে বসে থেকে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো,ওমনি আপন মনে মুচকি হাসল।
আবির কিছুটা মুখ গোমড়া করে আছে হয়তো ও খুশি না মেয়েটাকে সাথে নেওয়া হচ্ছে বলে,পুষ্প কথাকে ঠেলে সড়িয়ে মায়ার পাশে গিয়ে বসলো,
—এই মায়া, এতক্ষনে সবার নাম তো তুমি জেনেই গেছো আমি তোমায় সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ওই যে দেখতে পাচ্ছ গোল চশমা ঝাকড়া চুল ক্যাবলা কান্ত এইটা হচ্ছে আমাদের গ্রুপের সবচেয়ে নিরীহ বান্দা তুমি দেখবে ওর নামের মতোই ও তোমার সাথে শুধু পরিচয় হতেই ওর এক সপ্তাহ লাগবে এটাই আমাদের নিরব অতিরিক্ত ব্রিলিয়ান্ট আর কি যাকে বলে, সে যাই হোক এক দিক দিয়ে ভালোই ওর পেছনে বসেছিলাম বলেই টেনেটুনে পাশ করে গেছি সেদিক থেকে বলতে গেলে,, এই নিরব শোন,তোকে থ্যাংকস।

নিরব হা হয়ে পুষ্পের কথা শুনছিল এবার হয়তো জবাবে কি বলতো তার আগেই পুষ্প আবার শুরু করল,
—আর ওই যে দেখছো গোমড়া মুখো ওইটা আবির ওর জন্য আমার একটাও বয়ফ্রেন্ড হচ্ছে না ওর মতে আমরা ৬ জন বাদে এই দুনিয়ার সব ছেলে মেয়েই খারাপ এই যে তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছ এইটা কিন্তু ও মানতে পারছে না বিশ্বাস না হলে শুনে দেখো,

আবির কড়া চোখে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বলল,
—এই তুই থামবি? কত কথা বলিস?
—এই তুই চুপ কর তো আমায় বলতে দে
পুষ্প বকবক করেই যাচ্ছে এর আর কোনো থামাথামি নাই,আবির ধমকে উঠে বলল,
—চুপ এবার লাইট নিভিয়ে না ঘুমালে কিন্তু আমি স্টেশন থেকেই ব্যাক করব।
সবাই জানে আবির এক কথার মানুষ পুষ্প মায়ার কানে কানে বলল বাকি কথা পরে বলব, এখন তুমি রেস্ট নাও,
বাতি বন্ধ হয়ে গেলো,
মায়া খুব বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল কেন জানি খুব হালকা হালকা লাগছে পা দুটো তুলে, সিটে হেলান দিয়ে জানালার দিকে মুখ করে রইলো,লাইফটা যে এভাবে মোড় নেবে কখনোই ভাবে নি এখন কান্না পাচ্ছে খুব কান্না পাচ্ছে অথচ মায়া তো স্ট্রং ওর কেন কান্না পাবে?

চলবে…..
সামিয়া খান মায়া

হয়তো_ভালোবাসি Part_24

0

হয়তো_ভালোবাসি
Part_24

#Writer_Eshetaq_Nora

নীড়ঃ আরে এরজন্য রাগ করে থাকতে হবে নাকি আজব।

নেশাঃ ??

নীড়ঃ আচ্ছা নেশা তোমার মনে হচ্ছে নাহ আমরা ক্রিমিনাল কাপল হয়ে যাচ্ছি??

নেশাঃ হুহ?

নীড়ঃ সব তোমার জন্য।।এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি যার দুইজন প্রেমিকা আছে।।এখন আবার প্রেমিকার বোন এসেছে খুন করতে??

নেশাঃ তো এমন মেয়েকে বিয়ে করতে বলেছিলো কে।।আমার দুইজন প্রেমিক আছে তাই নাহ।।আমি ওদের সাথে কি নিজে গিয়ে প্রেম করেছি।।ওরা আমার পিছনে লাগলে আমার কি দোষ।।আর আমাকে নিয়ে যখন আপনার এতোই সমস্যা তো আমায় বিয়ে করলেন কেন।।আমি তো বিয়ে করতে চাইনি।

নীড়ঃ আরে নেশা আমি ওইভাবে বলিনি।।আমি তো যাস্ট মজা করছিলাম।

নেশাঃ ???

নীড়ঃ আরে পাগলি কান্না করছো কেন।আমি সত্যিই মজা করছিলাম।।

নেশাঃ আমারই সব দোষ তাই নাহ নীড়।।আমার জন্যই আজ আপনাকে একজন খুনি হতে হলো।

নীড়ঃ আরে নাহ।।ভিলেনরা মারলে খুনি হয়।।হিরো রা কখনো খুনি হয় নাহ।।তারা যতোই মারুক নাহ কেন।।এইটাই আমাদের সমাজ??

নেশাঃ, তা সত্যি।। কিন্তু নিহা আপুর খুনটা বাড়িতে কিভাবে বলবেন।

নীড়ঃ যা সত্যি তাই বলবো।আচ্ছা তুমি ওইদিন বুঝলে কিভাবে যে নিহা আকাশের বোন

নেশাঃ আসলে ওইদিন আমি কথা মামনির সাথে মিলে নিহা আপুর ঘরে গিয়েছিলাম।আপুর হাতে আকাশের ছবি ছিলো।।আমাদের দেখে ভয়ে লুকাতে গিয়েছিলো।।বাট আমি ঠিকই খেয়াল করে ফেলেছিলাম।

নীড়ঃ আরে বাহ।।আমার গোয়েন্দা গিন্নী ??তাই তুমি ওইদিন বাইরে গিয়েছিলে তাই নাহ।

নেশাঃ হুম।।আমার ডাউট হয়েছিলো।।তাই খবর নিতে গিয়ে জানতে পারি।।আকাশ আর নিহা ভাইবোন।।আর আমার চাচাতো ভাইবোন

নীড়ঃ হোয়াট আ কোয়ানসিডেন্ট তাই নাহ।।নিজের চাচাতো বোন কে কিনা পছন্দ করেছিলো আকাশ।

নেশাঃ হুম

নীড়ঃ আচ্ছা ওইসব বাদ দাও।।রেডি হয়ে নাও।।পার্টি শুরু হয়ে যাবে।।

নেশাঃ হ্যা।

( আসলে নীড় আর নেশার আবার বিয়ে দেয়া হবে।।পারিবারিক ভাবে)


( এখন সবার কনফিউশান দুর করে দেই।।আকাশ আর নিহা ভাইবোন এইটা তো সবাই বুঝলে।কিন্তু আকাশের সাথে নেশার আরো একটা সম্পর্ক ছিলো।।তা হলো তারা চাচাতো ভাইবোন।।

নেশার জন্মের আগেই আকাশের বাবাকে তেজ্যপুত্র করে।।কারন সে ড্রাগসের ব্যবসা করতো।।তাই নেশা তাদের চিনতো নাহ।। কিন্তু আকাশ প্রথম থেকেই জানতো।কিন্তু নেশাকে জানায়নি।।কিন্তু আবিরকে জানাতে গিয়ে নেশা আড়াল থেকে শুনে নিয়েছিলো।।তাই আকাশের মরার জন্য নেশা বকে যতোই হোক রক্তের টান বলে কথা।

আর নিহা ফিরে এসেছিলো আকাশের খুনের প্রতিশোধ নিতে।।সে ভেবেছিলো নীড়কে বিয়ে করে তারপর প্রতিশোধ নিবে।।কিন্তু তার আগেই নেশা এসে সব প্লেন নষ্ট করে দেয়।।তাই নেশাকে মারার প্লেন করে।।নেশা নীড়কে সব জানায়।।আর তারপর কি হয়েছে সব তো জানেনই।)

ভালোভাবেই বিয়েটা সম্পুর্ন হলো।

রাতে-

নেশা সেই কখন থেকে বাসর ঘরে বসে আছে।।বাট নীড়ের আসার খবরই নেই।।ঘরের চারদিকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।

হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজ হলো।

নেশা ঘোমটাটা আরো টেনে মুখ ঢেকে রাখলো।।

নীড়ের কোন আওয়াজ নাহ পেয়ে উকি মেরে তাকালো।।নীড় চুপচাপ দাড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে।।

নেশাঃ কি হলো ঘোমটা খুলবেন নাহ?

নীড়ঃ দুর রাখো তোমার ঘোমটা।।আগে বলো বিড়ালটা কোথায়।।আজ তো বিড়াল মারবো??

নেশাঃ মানে?

নীড়ঃ ওমা তুমি জানো নাহ।।আমি তো ওইসময় শুনলাম।হিয়া ভাবি তোমায় বলছিলো বিড়াল মারার কথা?

নেশাঃ আরে ভাবি তো……( নেশা বলতে গিয়েও থেমে গেল)

নীড়ঃ কি ভাবি?

নেশা বুঝতে পারলো নীড় মজা করছে।

নেশাঃ বলেছে যে আপনাকে বাইরে গিয়ে একটা বিড়াল নিয়ে আসতে আজ রাতে?

নীড়ঃ ইসস বললেই হলো।।আজ আমি বাইরে কেন যাবো।।আর ভাবি এই কথা বলেছে বুঝি ভাবি তো বলেছে তোমায় আদর করে বিড়াল মারতে

নেশাঃ নীড় প্লিজ।।বাজে কথা বলবেন নাহ।

নীড়ঃ এগুলো বুঝি বাজে কথা হয়ে গেল।আজ তো প্রেকটিকেলি বাজে কাজ গুলো করবো?

নেশাঃ ??

নীড়ঃ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।।নামাজ পরবো একসাথে।

নেশা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।।তারপর দুইজন মিলে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলো।

নেশা গিয়ে গয়না গুলো খুলতে লাগলো।।নীড় গিয়ে হেল্প করলো।।গহনা খুলার ছলে বার বার নেশার ঘাড়ে গলায় হাত বুলাতে লাগলো।।প্রতিবারই নেশা কেপে উঠলো।।

নীড় নেশার হাতে একটা আংটি পড়িয়ে দিলো

নীড়ঃ সব সময় নিজের হাতে যাতে এইটা দেখতে পাই ওকে।

নেশাঃ হুম।

নীড়ঃ নেশা

নেশাঃ জি!

নীড়ঃ মে আই

নেশা কিছু বললো নাহ।।নীড়ের বুকে মুখ লুকালো।।নীড় তার জবাব পেয়ে গেছে।।নেশাকে কোলে তুলে খাটের দিকে এগিয়ে গেল।।নেশাকে খাটে শুইয়ে তার উপর নিজের ভর ছেড়ে দিলো।।

নেশার গলায় নিজের মুখ ডুবালো।নীড় এক হাত দিয়ে রুমের লাইট টা নিভিয়ে দিলো।।

তারপর আর আপনাদের জিলাপি আপু কিছু দেখতে পায়নি।।আসলে খুব অন্ধকার ছিলো তো?।।থাক আর দেখা লাগবো নাহ।।ওদেরকে ওদের মতো রোমান্স করতে দিন।।আমরা বরং যাই।।

সমাপ্ত ?

হয়তো_ভালোবাসি Part_23

0

হয়তো_ভালোবাসি
Part_23
#Writer_Eshetaq_Nora

নেশাঃ কি হলো নিন।।আচ্ছা থাক আমিই মেরে দেই কি বলেন।

নীড়ঃ তুমি আমায় মারবে??।যদি পুরো পৃথিবীর মানুষ একসাথে বলে তাহলেও আমি বিশ্বাস করবো নাহ।

নেশাঃ আপনাকে নাহ মারতে পারি কিন্তু নিজেকে তো মারতে পারি।(নিজের মাথায় বন্দুক ধরে)।আপনি এবার আর আমায় আটকাতে পারবেন নাহ নীড়। আজ আমায় যেতে নাহ দিলে আমি নিজেই নিজেকে শুট করে দিবো।আমাকে যেতে দিন।

নীড়ঃ নাহ তোমায় কিছু করতে হবে নাহ। আমি যাচ্ছি।

নীড় চলে যেতে নিলে আবার কিছু একটা ভেবে ফিরে আসে।

নেশাঃ আমি কিন্তু সত্যি গুলি করে দিবো।

নীড়ঃ আচ্ছা আমি যদি তোমায় ছেড়ে দেই তুমি তো চলে যাবে।।তাই নাহ।

নেশাঃ হ্যাঁ

নীড়ঃ তাহলে তুমি বেচে থাকলেও আমার থেকে সেই দুরেই চলে যাবে তাই তো?

নেশাঃহ্যাঁ।

নীড়ঃ তাহলে আমি তোমায় যেতে দিলেই কি লাভ হবে। সেই তো দুরেই চলে যাবে।

নেশাঃ ???

নীড় কথার জালে প্যাচাতে প্যাচাতে নেশার হাত থেকে গান টা নিয়ে নিলো।।

নেশাঃ আপনি???দিন বন্দুক দিন।

নীড়ঃ পাগলামো করো নাহ নেশা।।আর আমার রাগ উঠিও নাহ।।তুমি জানো আমার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে নাহ।

নেশাঃ ????

নীড়ঃ এইতো গুড গার্ল।।।চুপচাপ রুমে থাকো।।আমি বাইরে থেকে লক করে যাচ্ছি।।পালানোর চেষ্টা করবে৷ নাহ।।আর আরেক কথা।।আমার রুম সাউন্ডপ্রুফ করা।।সো চিল্লাচিল্লি করো নাহ।।আমি যাবো আর আসবো।। ওকে??

নেশাঃ হু???

নীড় নেশাকে রুমে রেখে বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে চলে গেল।।

একটুপর রুমের দরজা খুলার শব্দ পেল।।নেশা ভাবলো নীড়।

নেশাঃ আমাকে দরজা দিয়ে রেখে নিজে হিরো সেজে বাইরে যাওয়া।। দাড়া তোর মজা দেখাচ্ছি।

যেই নাহ দরজা খুললো নেশা টেনে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।।কিন্তু মানুষটিকে দেখেই

নেশাঃ আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া?????

নেশাঃ আন্টি আমি আসলে ভেবেছিলাম নীড়??

কথাঃ ???।।তা আমার ছেলেকে বুঝি এইভাবেই চেপে ধরতে??

নেশাঃ না মানে আসলে আন্টি ওইয়ারকি???

কথাঃ ??।।আচ্ছা বাদ দে।।তোর সাথে কথা বলতে এলাম।

নেশাঃ কি কথা আন্টি?

কথাঃ বসতে বলবি নাহ?

নেশাঃ হ্যাঁ কি যে বলো।।বস বস।তোমাদেরই তো বাড়ি।।

কথাঃ এইটা তোর ও বাড়ি।

নেশাঃ আমার!!!

কথাঃ নীড় আমাদের সবই বলেছে।।তোদের যে৷ বিয়ে হয়েছিলো।।তো তুই আমাদের বাড়ির বউ।আর আমার মেয়ে?

নেশাঃ ধন্যবাদ আন্টি।

কথাঃ এখনো আন্টিই বলবি?

নেশাঃ নাহ মানে আসলে?

কথাঃ নেশা যা হয়ে গেছে তা ভুলে যাই।।নতুন করে কি সব শুরু করা যায় নাহ?

নেশাঃ বাট আন্টি…

কথাঃ নেশা এখানে নীড়ের কোন দোষ ছিলো নাহ।।ও এক প্রকার বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছিলো।।বাট জানো ও যে তায় কতো টা ভালোনাসা তা আমরা নিজের চোখে দেখেছি।।আমাদের আগের সেই হাসিখুশি নীড়কে হারিয়ে ফেলেছিলাম আমরা।।তোমার ফিরে আসায় নীড় আবার আগের মতো হয়ে গেছে।।আমি চাই তুমি ওর সাথেই থাকো।।কথা দাও আমার কথা টা রাখবে।

নেশাঃ কিন্তু নিহা

কথাঃ আরে নিহাও এই বিয়েতে রাজি ছিলো না।আমরাই জোর করে রাজি করেছি।।তুমি আসায় তো ও খুব খুশি হয়েছে।।

নেশাঃ ওহহ।। নিহা আপু এখন কোথায়।।

কথাঃ ও নিচের রুমেই আছে।।

নেশাঃ ওহহ।।

কথাঃ দেখা করবে?

নেশাঃ হুম

কথাঃ আচ্ছা চলো।

কথা নেশাকে নিয়ে নিহার রুমে গেল।

একটুপর নীড় ফিরে এলো।।সোজা নেশার রুমে ঢুকলো।আর দরজা খুলা দেখেই ভাবলো নেশা চলে গেছে।রুমে নেশাকে না পেয়ে দৌড়ে বাইরে যেতে নিবে তখনই নেশার সাথে ধপাস।নেশা রুমে ঢুকতে যাচ্ছিলো।

নেশাঃ উফফ দেখে চলতে পারেন নাহ।।চোখ কি মাথায় নিয়ে হাটেন।।

নীড়ঃ কোথায় ছিলে তুমি

নেশাঃ জাহান্নামে

নীড়ঃ সোজা কথা বলতে পারো নাহ

নেশাঃ নাহ পারি নাহ

নীড়ঃ অসহ্য?

নেশাঃ কয়দিন না যেতেই অসহ্য হয়ে গেলাম।।ভালো খুব ভালো।

নীড়ঃ কি সব বলছো তুমি।।তুমি কি ঝগড়া লাগতে চাইছো?

নেশাঃ ধুর আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।

নীড়ঃ হুহ।।দরজা খুললো কিভাবে।।

নেশাঃ ভুত এসে খুলে দিয়ে গেছে।।

নীড়ঃ ??

নেশাঃ ???

কয়েকদিন পর-

কথাঃ নীড় নিহাকে দেখেছিস?

নীড়ঃ কই নাহ তো?

কথাঃ মেয়েটা গেল কোথায়।।দেখ নাহ ভালো করে খুজে পাস কিনা।

নীড়ঃ দুনিয়ায় থাকলে তো পাবে( বিড়বিড় করে)

কথাঃ কি বললি?

নীড়ঃ কই কি বললাম।খুজে দেখ আবার কোথায় পালিয়ে গেছে আমাদের না বলে।

নীড় কথা টা বলেই ঘরে ঢুকে গেল।।তার পথ আটকালো নেশা।

নীড়ঃ কি?

নেশাঃ নিহা আপু কোথায় নীড় কি করেছেন আপনি ওর সাথে???

নীড়ঃ মেরে ফেলেছি??

নেশাঃ হোয়াট!! আপনি কি পাগল।ওকে কেন মারলেন?মানুষ খুন করা পাপ তা কি আপনি জানেন নাহ।

নীড়ঃ কি করবো বলো পাপ টা তো করে ফেলেছি।।এখন তুমি পাপ টা মুছে দাও?

নেশাঃ মানে??

নীড়ঃ আমাকে নিজের করে নাও??

নেশাঃ হুহ।।ছাড়ুন আমায় [নীড়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে]

নেশাঃ আপনি দিন দিন পেশাদার খুনি হয়ে যাচ্ছেন।।প্রথম আকাশ, তারপর আবির এখন আবার নিহা আপু।।কেন করছেন আপনি এইসব।

নীড়ঃ তো কি করবো জান।।আমার আর তোমার মাঝখানে যে আসবে তাকে আমি এইভাবেই সরিয়ে দিবো?

নেশাঃ বাট এইসব ঠিক নাহ নীড়।আচ্ছা কিভাবে মারলেন।

নীড়ঃ খুব যত্ন করে।নিজের হাতে মেরেছি।।

নেশাঃ লাশ ভালো করে গায়েব করেছেন তো?

নীড়ঃ ইয়েস মাই সুইটহার্ট।। লাশ ও গায়েব করেছি আর প্রমান ও।।তোমার চিন্তা করতে হবে নাহ।

নেশাঃ ??

নীড়ঃ উফফ এতো রিয়েক্ট করছো কেন।।মনে হচ্ছে তুমি খুশি হওনি

নেশাঃ নাহ হইনি।।যতোই হোক ও আমার শিকার ছিলো।।আপনি গিয়ে মেরে দিলেন এইটা হলো??।

নীড়ঃ আমি থাকতে আমার জানের কষ্ট করার দরকার কি জান??



চলবে?

( কি কিছু বুঝেন নাই।।নাহ বুঝলে নাই।। ?।বুঝলে বুঝপাতা।।না বুঝলে তেজপাতা?।কথা কি ক্লিয়ার নাকি ভেজাল আছে)

হয়তো_ভালোবাসি Part_22

0

হয়তো_ভালোবাসি
Part_22
#Writer_Eshetaq_Nora

রাতে-
নীড় নেশাদের বাড়ি ঢুকলো
।নীড় ভালো করেই জানে নেশা এখন এই বাড়িতেই থাকবে।নীড়ে রুমে যেতে যাবে তখনই ছাদ থেকে গিটারের আওয়াজ পেল।

Dard dilon ke kam ho jaate
Main aur Tum agar hum ho jaate

Kitne haseen aalam ho jaate
Main aur Tum gar Hum ho jate

Tere bina na aaye sukoon
Naa aaye qaraar mujhe
Door wo saare bharam ho jaate
Main aur Tum gar Hum ho jate

নেশা গান গাইছে।। নীড় পিছনে দাড়িয়ে শুনছে।।নেশা গান থামিয়ে দিলো।।নীড় যে তা পিছনে আছে তা নেশা ভালো করেই বুঝে গেছে।কিন্তু নেশা পিছনে তাকালো নাহ

নীড়ঃ থামলে কেন।। ভালোই তো লাগছিলো।

নেশাঃ………..

নীড়ঃ কি হলো চুপ কেন।।[ নেশার পাশে বসে]

নেশা উঠে রুমে যেতে নিলো।নীড় টেনে বসিয়ে দিলো।

নীড়ঃ আরে বাবা রাগ তো আমার করার কথা।।আমার থেকে লুকিয়ে ছিলে।

নেশাঃ তো রাগ করুন আমি তো ধরে রাখি নি।

নীড়ঃ ইসস।।আমার এই কিউট বউটার উপর আমি রাগ করবো নাকি।।একে তো আমি আদর করবো

নেশাঃ কেন নিহাকে দিয়ে হয়নি বুঝি আমার কাছে এসেছেন।

নীড়ঃ তুমি কি বলছো এইসব নেশা

নেশাঃ ভুল কিছু কি বললাম।।এতোক্ষণে হয়তো আপনার বিয়ে হয়ে আপনার বউ আপনার ঘরে থাকতো।।সব আমার জন্য ফল্প হয়ে গেল।

নীড়ঃ নেশা তুমি যা ভাবছো তেমন টা নাহ।।আসলে মামনি জোর করে…

নেশাঃ আপনার জায়গায় যদি আমি থাকতাম তাহলে আপনি কি করতেন নীড়

নীড়ঃ ??

নেশাঃ আমার জীবনে ও ভালোবাসা এসেছিলো নীড়।।আবির আর আকাশ যতোই খারাপ হোক তারা আমাকে সত্যি ভালোবাসতো। হয়তো তাদের ভালোবাসার প্রকাশ অন্যরকম ছিলো।।তবুও আমি তাদের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে শুধু আপনায় ভালোবেসেছি।।২ বছর আপনার থেকে দুর থেকেও আপনায় ভালোবেসেছিলাম।।কিন্তু আপনি আমার জন্য ১ বছরও ওয়েট করতে পারলেন নাহ।।মানছি আপনার বাবা মা আপনাকে জোর করেছে।।আপনি চাপে পরে রাজি হয়েছেন।আমার মা বাবা ও আমাকে নতুন করে জীবন শুরু করতে বলেছিলো।।কিন্তু আমি তাদের কথা না রেখে সিডনিতে চলে যাই।।আপনি অস্বীকার করতে পারবেন এই সব কিছুর পিছনে আপনি দায়ী নাহ।।আমার জীবনে যতো প্রবলেম হয়েছে তার জন্য কোন নাহ কোন ভাবে আপনিই দায়ী ছিলেন।।তবুও আমি আপনাকেই ভালোবেসেছি।।আর আপনি আজ আরেকজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন।।তবুও আপনি বলছেন আমি রাগ করবো নাহ।।আপনার জন্য আমি মৃত ছিলাম আর মৃতই আছি।।কাল সকালেই আমি সিডনি ব্যাক করবো।।আপনি নিহাকে নিয়ে খুশি থাকুন।।

নেশা বলেই চলে গেল।

নীড় আর আটকালো নাহ।।কি বলে আটকাবে সে।সত্যিঅ তো নেশার জায়গায় নীড় থাকলেও কি এইসব মেনে নিতো সে।।

।।

।।

।।

।।

।।

।।

।।

।।

নেশা নিচে এসে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলো । কোথা থেকে নীড় এসে ঝড়ের বেগে তাকে কোলে তুলে নিলো।তারপর গাড়িতে নিয়ে গেল।।ব্যাপারটা এতোটাই তাড়াতাড়ি হলো যে নেশা কিছু করতেই পারলো নাহ।

নেশাঃ একি আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।।দরজা খুলুন লক করে কেন রেখেছেন।।।আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো নাহ।।দরজা খুলুন বলছি।

নীড় কিছুই বললো নাহ।।কারন জানে এখন বলে কিছুই হবে নাহ।।

নীড় নেশাকে নিয়ে সোজা নিজের বাড়িতে গেল।।তারপর গাড়ির দরজা খুলে নেশাকে ঘরে নিয়ে গেল।

পুরো বাড়ি সাজানো দেখেই নেশার মাথা আবার গরম হয়ে গেল।

নেশাঃ আমি আপনার সাথে যাবো নাহ।

নীড়ঃ তোমাকে যেতেই হবে জান।ভুলে যেও নাহ তুমি আমার বিবাহিত বউ।।তুমি চাইলেই আমায় ছেড়ে যেতে পারবে নাহ।

নেশাঃ বউ লাইক সিরিয়াসলি।। এতোদিন কই ছিলো আপনার বউ।।বেশ তো বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন।।এখন আবার বউ এর উপর এতো দরদ উতলে উঠলো।

নীড়ঃ ছি কি সব ভাষা বলছো নেশা দিন দিন তোমার অবনতি ঘটছে।।

নেশা কিছু বল্যে যাবে কথা এসে হাজির হয়।।

কথাঃনীড় তুই কোথায় ছিলি সব গেস্ট চলে গেছে।।এইটা কোন কাজ হলো।।তোর ফোন ও অফ ছিলো।

হঠাৎ কথার চোখ গেল নেশার দিকে।

কথাঃ নেশায়ায়ায়ায়ায়া??????

নীড়ঃ ???

কথাঃ নেশা তুমি বেচে আছো।

নেশাঃ জি আন্টি।। এখনো পর্যন্ত ?

কথাঃ নীড় এইটা কিভাবে সম্ভব। আর ওকে কই পেলি।

নীড়ঃ মামনি আমি সব পরে বলছি।।আগে উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেই।।

নীড় নেশাকে নিয়ে উপরে চলে গেল।।আর এই দিকে সবাই থ হয়ে গেছে।।

রুমে

নেশা বসে দাত কটমট করছে।।নীড়ের সেদিকে খেয়াল নেই।।সে আরাম করে বসে মোবাইল টিপছে।।

নেশাঃ আমি বাড়ি যাবো

নীড়ঃ হ্যাঁ বাড়িতেই তো আছো।।

নেশাঃ আমি আমার বাড়ি যাবো

নীড়ঃ এইটা তো তোমার বাড়িই।

নেশাঃ ??

নীড়ঃ আচ্ছা বাবা চলে যেও।।কাল তো এমনিতেই চলে যাবে।।আজ না হয় এইখানে থেকে যাও।।

নেশাঃ কিন..

নীড়ঃ আর কোন কিন্তু নাহ।।এইটাই ফাইনাল।আচ্ছা তুমি বস আমি খাবার নিয়ে আসি
।খুব খিদে পেয়েছে।।

নীড় নিচে চলে গেল।।গিয়ে দেখলো সবাই বসে আছে। নীড়কে দেখেই সবাই চেপে ধরলো।

কথাঃ এখন বল।।কিভাবে কি হলো।

নীড় সবাইকে সব খুলে বললো।।সবাই তো অবাক।।ওইটা যে নেশা ছিলো নাহ ওইটা তো ওরা টেরই পায়নি।।।

সকালে-

নেশা ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে নীড় চেপে ধরে তাকে ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো

নীড়ঃ তুমি কোথাও যাবে নাহ।

নেশাঃ আজব তো আমি এখানে কেন থাকবো।

নীড়ঃ কেন থাকবে মানে।।তুমি আমার বউ।। তুমি এখানে থাকবে নাহ তো কোথায় থাকবে।

নেশাঃ ওহহ এই কথা তো ঠিকাছে ডিবোর্স লেটার আপনি খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন।।এখন আ।আয় যেতে দিন।

নীড়ঃ নাহ তুমি যাবো নাহ।

নেশাঃ আমি যাবো।

নীড়ঃ নাহ তুমি যাবে নাহ।।তুমি চলে যেতে চাইলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।বলেই টেবিল থেকে ছুড়ি টা নিয়ে নিজের হাতে ধরলো।

নীড় ভেবেছিল নেশা বিয়ের দিনের মতো ভয় পেয়ে এখানে থেকে যাবে।।কিন্তু আজ তার কিছুই হলো নাহ।।নেশা একটু ও ভয় পাচ্ছে নাহ।

বরং জোরে নিশ্বাস ছেড়ে নিজের সাইড ব্যাগ থেকে একটা গান বের করলো।তারপর নীড়ের সামনে ধরলো।

নেশাঃ এইটা দিয়ে মরুন ভালো হবে।।ছুড়ি দিয়ে হাত কাটলে বাঁচার চান্স থাকে।গান দিয়ে মাথায় গুলি করুন।।বাচার চান্স কম থাকবে।।চিন্তা করবেন নাহ লাইসেন্স আছে।।পুলিশ কেস হবে নাহ।

নীড়ঃ হ্যাঁ!!!!! ???( অবাক হয়ে)

চলবে?

??????????

হয়তো_ভালোবাসি Part_21

0

হয়তো_ভালোবাসি
Part_21
#Writer_Eshetaq_Nora

নীড়ের মনে হচ্ছে এটা নেশাই।।চোখ গুলো যে নীড়ের চিনা।।।কিন্তু সে নেশার পিছনে যেতে পারছে নাহ।।তার শরীর যে অবশ করা।।নীড় অনেক বার নেশাকে ডাকলো কিন্তু কোন লাভ হলো নাহ।।

এইদিকে

আবিরঃ তুমি বেচে আছো নেশা।।বাট এটা কিভাবে পসিবল??

আবির সেই কখন থেকে নেশাকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে।।আর নেশা সে তো দুইহাত থুতনিতে রেখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।।কোন প্রশ্নের জবাবই সে দিচ্ছে নাহ।গভীর কোন চিন্তায় আছে সে।

আবিরঃ আমি তোমায় কিছু বলছি নেশা।।তুমি কি বয়রা হয়ে গেলে নাকি।

নেশাঃ বালাইশাট।।বয়রা কেন হবো।।আমি সব শুনতে পাচ্ছি।।আসলে আমি ভাবছি।।??

আবিরঃ কি ভাবছো এতো।

নেশাঃ আসলে তোমায় কিভাবে মারবো তা ভাবছি।

আবিরঃ ??।তুমি আমায় মারবে।।লাইক সিরিয়াসলি।। যে আমার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করে নাহ সে নাকি আমায় মারবে।।হাও ফানি।

নেশাঃ তোমার ওভার কনফিডেন্স টা গেল নাহ আবির।।

আবিরঃ তা মরার আগেও যাবে নাহ।।তুমি জানো আমাকে পাঁচ মিনিট আটকে রাখার ক্ষমতা ও তোমার নেই।।

নেশাঃ তাতো জানিই।তাই তো ভাবছি কিভাবে মারবো।আমি জানি তুমি এখানে এসেছো একদম প্রোটেকশন ছাড়া।ভেবেছো নীড়কে মেরে চলে যাবে।।

আবিরঃ তাতো ভেবেছিলামই।।কিন্তু তা আর হতে দিলে কোথায়। সে যাই হোক।।তুমি বেচে আছো তাতেই হবে।।।কিন্তু এতো নজর রাখার পরও তুমি সবাইকে ফাকি দিলে কিভাবে।।

নেশাঃ এইসব হ্যান্ডেল করা আমার কাছে ব্যাপার নাহ তা তুমি জানো আবির।

আবিরঃ হুম তাতো জানিই।।আজ আবার তোমার প্রেমে পড়ছি নেশা।।এই নতুন নেশার নেশায় পড়ছি?।।তুমি আমায় তুমি করে বলছো সেই জন্য আই এম সো হেপি?।।

নেশাঃ ????

আবিরঃ আচ্ছা একটা কথা বলো তুমি বাচলে কিভাবে।?

নেশাঃ ম্যাজিক ?

আবিরঃ ???

নেশাঃ আরে বলছি বলছি।।এইভাবে তাকানোর কি আছে।।

ফ্লাশব্যাক

যেইদিন নেশাকে হসপিটালে নেয়া হয়েছিলো সেইদিন নেশা সত্যিই সুইসাইড করতে চেয়েছিলো।আর ওর ব্রেন স্ট্রোক টাও সত্যি ছিলো।নেশার প্লেনই ছিলো নাহ বাচার।।কিন্তু ডাক্তার রা যখন ওর শরীর থেকে বিষ সরিয়ে ফেলেছিল তার পর নেশার ব্রেন স্ট্রোক হয়।।অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য তার হুস ছিলো।।নেশা খুব ভালো করেই জানতো আবির একদিন না একদিন নীড়কে মারবে।।।তাই নেশা রি প্লেন টা করে।।নেশার অপারেশন টা পুরোপুরি সাকসেসফুলি হয়নি।।সে কোমায় চলে গিয়েছিলো।।নেশা জানতো যে সে যদি পুরপুরি সুস্থ নাও হয় তাহলেও তাকে আবির নিয়ে যাবে।।তাই অপারেশন এর আগেই ডাক্তারদের টাকা খাইয়ে রেখেছিলো।।যাতে তারা তার মরার খবর দেয়।।ডাক্তাররা তাই করে।।নেশা জানতো আবিরের লোক চারদিকে ছড়িয়ে আছে।।তাই নেশা নীড়কেও সত্যি টা জানাতে পারেনি।।

ডাক্তার নেশাকে সরিয়ে আরেকটা লাশ এনে রাখে।।নেশা জানতো নীড় লাশটির সামনে আসলেই বুঝে যাবে এটা নেশা নয়।।তাই ডাক্তারদের বলে নীড়কে হাই ডোস এর ঘুমের ওষুধ দেয়।।কিন্তু তবুও আধা ঘন্টা পরই নীড়ের ঘুম ভেঙে যায়।।কিন্তু ঘুমের ডোজটা বেশি থাকার কারনে বেশিক্ষণ সজাক থাকতে পারে নাহ।।সবাই ভাবে অজ্ঞান হয়ে গেছে।

আবিরঃ বাহ বেবি।। কি প্লেনটাই নাহ করেছো।।এই নাহ হলে আমার রানী।

নেশা মুচকি হাসলো।

আবিরঃ তুমি তো আমায় মারতে এনেছো তো মারছো নাহ কেন বেবি?

নেশাঃ তুমি ওতো পালাতে পারবে।।তাহলে পালাচ্ছো নাহ কেন।

আবিরঃ কারন আমি জানি তুমি আমায় মারতে পারবে নাহ?

নেশাঃ ইয়েস আবির।।এইটাই প্রবলেম আমি তোমায় মারতে পারবো নাহ

[ আসলে আবির আর আকাশ দুইজনই নেশাকে নতুন করে বাচতে শিখিয়েছে।।হয়তো বা তাদের উদ্দেশ্য খারাপ ছিলো কিন্তু যতোই হোক তারা নেশার বিপদে তার পাশে ছিলো।।আর আবির খুব ভালো করেই জানে নেশা এই কারনে তাকে চাইলেও নিজের হাতে মারতে পারবে নাহ।।কারন সে আকাশকেও মারতে পারেনি।।
এখন আপনারা পাঠক রা বলতে পারেন নেশা বেশি ন্যাকামি করছে।।সেটা আপনাদের ব্যাপার।। কিন্তু আমি নেশাকে সার্থপর বানাতে পারলাম নাহ।।যদি আমরা কারো দ্বারা উপকৃত্ব হই তাহলে যদি সে আমাদের শত্রুও হয় তাহলে ও তাকে সম্মান জানানো উচিত।।এটা আমি মনে করি?]

নেশাঃ আবির এইটা তে একটা টিপ দাও প্লিজ।।[ একটা রিমোট হাতে দিয়ে]

আবিরঃ এইটা কি বেবি।

নেশাঃ দিয়েই দেখ নাহ।

আবির কিছু নাহ ভেবে টিপ দিয়ে দিলো।।

আবিরঃ নাও দিলাম তো।

নেশাঃ ??

আবির কিছু বলতে যাবে তার মোবাইলে একটা কল আসলো।।
আবির রিসিভ করলো।কথা গুলো শুনেই আবিরের মাথা নষ্ট হয়ে গেল।।রাগি চোখে নেশার দিকে তাকাল.।

আবিরঃ কাজটা তুমি ঠিক করলে নাহ নেশা।

নেশাঃ তোমার ওভার কনফিডেন্সই তোমায় ধ্বংস করেছে আবির।।তোমার ভেবে প্রেস করা উচিত ছিলো

আসলে রিমোট টা বোমের রিমোট ছিলো।।নেশা আবিরের সব অফিস, গোডাউন আর বাড়িতে বোম লাগিয়ে রেখেছিলো।।আবির রিমোটে প্রেস করার সাথে সাথে সেগুলো ব্লাস্ট হয়ে যায়।নেশা আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো।আবির এইদিক থেকে টিপ দিলেই ওইদেশের একজন লোক সব ব্লাস্ট করে দিবে।।নেশা আগে থেকেই সেখানে লোক ঠিক করে রেখেছিলো।

নেশাঃ তোমার মৃত্যু আমার হাতে না হলে ও তোমার ধ্বংস আমার হাতে আবির??।

আবিরঃ আমি ভাবতেও পারিনি তুমি এতো বড় কাজটা করবে।।আমি অবাক।।সত্যিই তুমি পাল্টে গেছো নেশা।।তুমি একা হতে পারো নাহ।।তোমার সাথে আরো কেউ আছে তাই নাহ।

নেশাঃ আপাদত কেউই নেই।

আবিরঃ আপাদত মানে।

নেশাঃ মানে একটু পর তোমার মৃত্যু তোমার সামনে আসছে।।

আবিরঃ মানে!!

নেশা পিছনে তাকালো।।

আবিরও দেখলো।।তাদের সামনে নীড় দাড়িয়ে আছে।।

নেশাঃ আরে এইতো এসে গেছে।

আবিরঃ!!!!!

নেশাঃ হাই নীড়

নীড় কিছুই বলছে নাহ।।তার চোখ আবিরের দিকে।।

নেশাঃ জানো নিজেকে নায়িকা নায়িকা মনে হচ্ছে।।আমার জন্য এতো মানুষ পাগল হবে তা আমার জানাছিলো নাহ।।বাট ভালোই হলো।তোমাদের দুইজনের মধ্যে আজ যদি তুমি বেচে থাকো তাহলে আমি তোমার[ আবিরের কানে ফিসফিসিয়ে বললো কথাটা]

আবির অবাক হয়ে নেশাকে দেখছে।।এই নেশাকে সে চিনে নাহ।।কেমন করে যেন কথা বলছে নেশা আজ।।আজ নেশার চোখে বিন্দু মাত্র ভয় দেখতে পারছে নাহ আবির।।যেই মেয়ে কিনা ঝগড়া মারামারি পছন্দ করতো নাহ সে কিনা চাইছে খুনাখুনি।।

নেশা আবিরের অবাক হওয়ার কারন টা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে উঠে গিয়ে নীড়কে জড়িয়ে ধরলো।।নীড়ের হুস আসলো।।এতোক্ষণ এক ধ্যনে আবিরের৷ দিকে তাকিয়েছিলো।।এই আবিরের জন্য নীড়ের একটা বছর নষ্ট হয়ে গেছে।।এক বছর সে নেশাকে ছাড়া থেকেছে।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই নেশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আজ একবছর পর নেশাকে পেল সে।

আবিরের ব্যাপারটা ভালো লাগলো নাহ।।নীড়ের পিছন দিকে গিয়ে তাকে মারতে যাবে নীড় ঘুরে শুরু করলো মাইর।।নেশা মুচকি মুচকি হাসছে।।এইটাই তো চেয়েছিলো সে।।নীড় এখন আহত সিংহ হয়ে আছে।।আবিরকে যে সে কিছুতেই ছাড়বে নাহ তা সে ভালো করেই জানে।

নীড় মেরে আবিরের অবস্থা খারাপ করে দিলো।।আফটার অল ও আমাদের হিরো।।আবির অজ্ঞান হয়ে গেল।

নীড় আবিরকে ছেড়ে নেশার সামনে এসে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেল নেশা পিছিনে সরে গেল।

নীড়ঃ নেশা!!

নেশাঃ সাদী মোবারক নীড়?

নীড়ঃ নেশা তুমি..

নেশাঃ আপনার তো বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই নাহ।।আই এম সরি আমার জন্য আপনার বিয়েতে বাধা পড়লো।আর কোন সমস্যা আসবে নাহ।

বলেই নেশা চলে যেতে নিলো।।যতোই হোক নীড়ের প্রতি একটা অভিমান জন্ম নিয়েছে নেশার মনে।

অপারেশনের ৫ মাস পর নেশা কোমা থেকে বেরিয়ে আসে।।নেশা ভেবেছিলো নীড়ের কাছে আগে খবরটা দেবে।।কিন্তু সে জানতে পারে নীড়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাও আবার নিহার সাথে।।নেশা এতে খুব বেশি কষ্ট পায়।।নীড় নেশার মরার একবছর ও ওয়েট করলো নাহ।।বরং বিয়ে করতে যাচ্ছে।।নেশা রাগে আর নীড়ের সামনে যায়নি।।কিন্তু সে সবসময় নীড়ের আর আবিরের খবর রাখতো।।নেশা জানতো আবির একদিন নাহ একদিন নীড়কে মারার প্লেন করবেই।

নেশা জানে নীড় নিজের ইচ্ছায় বিয়েতে রাজি হয়নি।।বরং তাকে জোর করা হয়েছে।।কিন্তু যতোই হোক নেশা মানতে পারছে নাহ।।নেশাকে তার মা বাবা ও নতুন করে জীবন শুরু করতে বলেছিলো।।কিন্তু নেশা তো পারেনি।।সে তার বাবা মার কথা নাহ মেনে নীড়কেই ভালোবেসে গেছে।।তাহলে নীড় কেন পারলো নাহ।

নীড় নেশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।।

আবিরঃ পাবে নাহ তুই ও নেশাকে পাবি নাহ??

নীড় ঘুরে আবিরের দিকে তাকালো।।কথা ও বলতে পারছে নাহ ভালো করে।।তবুও হাসছে লোকটা।।

নীড় রাগে ছুড়ি দিয়ে আবিরের বুকে ঢুকিয়ে দিলো।একবার নাহ।।বার বার ঢুকিয়ে আবিরের বুকটা ক্ষতবিক্ষত করে দিলো।।আবির মারা গেল।।

নেশা খুব অবাক হলো।।নীড় যে এইভাবে আবির কে মেরে ফেলবে তা নেশা ভাবেনি।।কিন্তু কিছু নাহ বলে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।।

নীড়ঃ নেশা শুধু আমার।।।নেশাকে আমি নিজের করেই ছাড়বো।।ওর যতো রাগই থাকুক নাহ কেন সব ভুলিয়ে দিবো।।।

চলবে

( কেউ কিছু বলবা?।।)

হয়তো_ভালোবাসি Part_20

0

হয়তো_ভালোবাসি
Part_20
#Writer_Eshetaq_Nora

বডিগার্ডঃ স্যার নেশা ম্যাম মারা গেছে।

লোকটিঃ হোয়াট?

বডিগার্ডঃ জি স্যার ম্যাম সুইসাইড করেছে।

লোকটিঃ ওহহ এখন নেশা কোথায়?

বডিগার্ডঃ স্যার ম্যামকে কবর দেয়া হয়ে গেছে।।আমি সেখান থেকেই আসলাম।

লোকটিঃ আর নীড়?

বডিগার্ডঃ ওনাকে ওইখানে দেখিনি।।যত দুর শুনেছি ম্যাম এর মৃত্যুর খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছে।।আর জ্ঞান ফিরেনি।

লোকটিঃ ওকে তুমি যাও।

বডিগার্ডঃ স্যার নীড় স্যারের খুনের ব্যাপার টা?

লোকটিঃ ওটা পরে দেখা যাবে তুমি এখন যাও।

বডিগার্ডরা চলে গেল।।লোকটি গিয়ে নেশার ছবির সামনে দাড়ালো। পুরোটা রুম জুড়েই নেশার ছবি।

লোকটিঃ তুমি এটা ঠিক করলে নাহ নেশা।।আমাকে ছেড়ে গিয়ে তুমি ঠিক করলে নাহ।।কি ভেবেছো তুমি মরে গেলেই আমি নীড়কে ছেড়ে দিবো।।ভুল নেশা।।যে তোমাকে আমার থেকে আলাদা করেছে তাকে আমি কিভাবে ছাড়ি।।তাকে তো আমি আরো আগে মেরে ফেলবো।।কিন্তু এখন নাহ।।এখন নীড়কে মারলে তো হবে নাহ।।তোমার মরার কারনে আমি যতোটা জ্বলছি ওতোটা ওকেও জ্বলতে হবে।। তাহলে আমার শান্তি।। মারলেই তো খেলা শেষ।।এতো তাড়াতাড়ি মারবো নাহ।।আগে ভিতর থেকে মরুক তারপর বাইরে থেকে মারবো।।কি বলো সুইটহার্ট

নেশার ছবির সামনে দাড়িয়ে কথা গুলো বলেই বাঁকা হাসলো লোকটি।।




১ বছর পর-

আজ নীড়ের বিয়ে।পুরোবাড়িতে আনন্দে বন্যা বয়ে যাচ্ছে।।চারপাশে মেহমানরা গিজগিজ করছে। হিয়া আর রিয়া মিলে কনেকে সাজাচ্ছে। হঠাৎ রুমে প্রবেশ করলো কথা।কনের হাতে একজোড়া বালা পড়িয়ে দিলো।

কথাঃ এগুলো নীড়ের বাবা নিয়ে এসেছে। কনের জন্য।।বালা গুলো সবসময় নিজের হাতে পরে রাখবে কেমন।

কনেঃ জি মামনি।

কথাঃ তোমায় কিছু কথা বলি।।তুমি তো জানোই নীড় এই বিয়েতে রাজি নাহ।।আমার জোড়াজুড়িতে রাজি হয়েছে।।বাট নেশার মারা যাওয়ার পর নীড় নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছে।।আমি চাই তুমি নতুন করে ওর জীবন সাজিয়ে তুলো।।পারবে তো তুমি নিহা।

[জি নীড়ের সাথে নিহার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।নেশার মরার কিছু দিন পরই নিহা ফিরে এসেছে।।কারন ওইছেলে নিহাকে ধোকা দিয়েছে।।তাই নীড়ের বাড়ি এসে সবার কাছে ক্ষমা টমা চায় আরকি।।আর সবাই ক্ষ্মা করে দেয়
।নতুন নায়িকা এনে টাইম নষ্ট করার দরকার কি।।তাই ভাবলাম পুরানোটাই চালায় দেই???।]

নিহাঃ হ্যা মামনি আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো নীড়কে আগের নীড় করে তোলার।।তোমরা যে আমায় এতো বড় ভুলের পর আবার বিশ্বাস করেছো এইটাই তো অনেক।।আমি তোমাদের বিশ্বাসের ভরসা রাখবো। কথা দিলাম।।

কথাঃ শুনে খুশি হলাম।।আচ্ছা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।।আমি দেখি নীড় রেডি হলো কিনা।

নীড়ের রুমে-

কথা রুমে ঢুকে দেখলো নীড় খাটে বসে নেশার ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে।।আজ আর সে কাদছে নাহ।।হয়তো চোখের পানি গুলো শুকিয়ে গেছে এতোদিনে।।
চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।।দাড়িগুলো বড় হয়ে গেছে।।কথা অনেক চেষ্টা করেও কাটাতে পারেনি।।ছেলেটা আজকাল কোন কথাই শুনে নাহ।।কারো সাথে কথাই বলে নাহ শুধু চুপ করে রুমে বসে থাকে।কথা এসে নীড়ের পাশে বসলো।।কিন্তু নীড়ের খবর নেই।। সে একমনে ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।।

কথাঃ নীড় বাবা রেডি হয়ে নে।।একটু পর তো বিয়ে।

নীড়ঃ হুম।

কথাঃ বাবা আর কতো দিন এইভাবে থাকবি।। আজ তো একটু হাসো।।তুই কেন বুঝিস নাহ তুই এভাবে থাকলে আমাদের কতোটা কষ্ট হয়।

নীড়ঃ বুঝছি তো মামনি।।তাই তো বিয়ে করছি তোমাদের খুশির জন্য।

কথাঃ নীড় এই সব কিছু তোর খুশির জন্য হচ্ছে নীড়।।

নীড়ঃ আমার খুশি কিসে তা তোমরা জানো মামনি

কথাঃ জানি কিন্তু নীড় এইভাবে আর কতোদিন।।নীড় যে চলে গেছে তাকে তো আর ফিরিয়ে আনতে পারবো নাহ।।নতুন করে সব শুরু করা যায় নাহ।

নীড়ঃ আমি রেডি হয়ে আসছি তুমি যাও।

কথা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চলে গেল। এই ছেলেকে কিছু বলেই লাভ হবে নাহ।।

কথা চলে যাওয়ার পর ও নীড় নেশার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।

নেশা বেচে থাকার সময় একদিন নীড় নেশাকে বলেছিল নেশাকে ছাড়া ও বাচবে নাহ।।উত্তরে নেশা বলেছিলো

নেশাঃ এইটা ভুল নীড়।।কাউকে ছাড়া কেউ বাচবে নাহ এইটা মিথ্যা।। দেখুন আমিও তো ভেবেছিলাম মামনি বাবাইকে ছাড়া আমি বাচবো নাহ।।দেখুন আমি দিব্বি বেচে আছি। মানুষের বাচার কোন না কোন লক্ষ্য ঠিকই এসে যায়।

সত্যিই তো নীড় এখনো বেচে আছে নেশাকে ছাড়া।।কিন্তু বেচে থাকার লক্ষ্য তো পায়নি।।মা-বাবার চাপে পরে আজ আবার বিয়েতে রাজি হতে হচ্ছে তাকে।কতো বার নেশার কাছে চলে যেতে চেয়েছে।।এইনিয়ে হয়তো ৮ বার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।।কিন্তু প্রতিবারই কোন নাহ কোন ভাবে বেচে গিয়েছে।নেশাকে বাচাতে পারলো নাহ অথছ আমাকে দিব্বি বার বার বাচিয়ে তুলছে।।।ব্যাপারটা নীড়ের কাছে খুব অবাক লাগে।।।

নীড় চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই কে যেন পিছন থেকে মাথায় বাড়ি দিলো।নীড়ের আর কিছু মনে নেই।

জ্ঞান ফিরার পর নীড় দেখলো সে একটা রুমের মধ্যে বন্দী। সামনে সেই লোকটি বসে আছে।

লোকটিঃ হেই নীড় হোয়াটস আপ ম্যান

নীড়ঃ কে আপনি।।আর আমায় এখানে কেন এনেছেন?

লোকটিঃ ওয়েট ওয়েট এতো প্রশ্ন একসাথে।।

নীড়ঃ ফাজলামো করছেন আপনি।।আমাকে এখানে কেন এনেছেন।

লোকটিঃতোমায় মারতে।

নীড়ঃ মারতে?।।প্লিজ কিল মি।।অনেকদিন ধরে মরার চেষ্টা করছি।।কিন্তু কোন না কোন ভাবে বেচেই যাচ্ছি।।আপনি ও ট্রাই করুন।।

লোকটিঃ মরতে তোমায় হবেই নীড়।।আমাকে জ্বালিয়ে তুমি বিয়ে করে সুখে থাকবে তা কি করে হয়।

নীড়ঃ মানে?

লোকটিঃ ভেবেছিলাম তুমি নেশার মৃত্যুতে কষ্টে থাকবে অথছ তুমি তো বিয়েও করে নিচ্ছো।।তা কি করে হয়।।আমাকে কষ্টে রেখে তোমাকে আমি সুখে থাকতে দেই কি করে

নীড়ঃ কিসের কষ্টে রেখেছি।।আমি তো আপনাকে চিনিই নাহ।।আর নেশার মরার সাথে আপনার যোগা সুত্র কি?

লোকটিঃ তুমি তো দেখা যায় তাহলে কিছুই জানো নাহ মি.নীড়।

নীড়ঃ কি জানবো??

লোকটিঃ নেশা কেন মরেছে জানো?

নীড়ঃ আমার সাথে রাগ করে!

লোকটিঃ ??নাহ নীড়। তোমায় বাচাতে।

নীড়ঃ মানে?

লোকটিঃ উফফ নীড় তুমি তো দেখা যায় কিছুই জানো নাহ।।আচ্ছা আমি তোমায় সব বলছি।।মরার আগে এইসব জানার অধিকার আছে তোমার।।আমি হলাম আবির।।আবির চৌধুরী।। লর্ড অফ ওল্ফ গ্রুপ।।
নেশার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় সিডনিতে ৩ বছর আগে।

।।।
।।।

।।।

চলুন আমরা ও যেনে নেই

৩ বছর আগে।
নেশা যখন সিডনিতে গিয়েছিলো আকাশের সাথে তখন আবিরের সাথে দেখা হয়।।আকাশ একজন বড় মাফিয়া হলেও আবিরের তুলানায় কিছুই নাহ।।আবির তার থেকেও বড় মাফিয়ার একজন।।কিন্তু আবিরের সাথে আকাশের ভালো বন্ধুত্ব ছিলো।তারা প্রায় সময়ই একে অন্যের বাড়ি যেত।।একদিন আকাশ নেশাকে আবিরের বাড়িতে নিয়ে যায়।।সেদিনই নেশাকে আবিরের ভালো লেগে যায়।।কিন্তু নেশা তাকে ভয় পেত।।নেশার বাবা মা মারা যাওয়ার পর নেশা এমনিতেই সবাইকে ভয় পেত।। আকাশ তাকে নর্মাল করার জন্য তার সাথে নিয়ে ঘুরতো।।আকাশ আবিরের সাথে নেশার সব কথাই শেয়ার করলো।আবির নেশাকে দেখে ভালো লাগে তাই আকাশকে বলে সে নেশাকে ট্রেইনিং দিতে চায় তার সকল ভয় দুর করার জন্য।।আকাশও তাকে বিশ্বাস করলো।।আর নেশাকে প্রতিদিন পাঠাতো।।আবির নিজের হাতে নেশাকে বন্দুক চালানো,চাকু চালানো সব শিখিয়েছিলো।। নেশাও খুব তাড়াতাড়ি সব শিখে গিয়েছিলো।কিন্তু সে আবিরকে খুব ভয় পেত।।আবিরকে সে অনেক বার খুন কর‍তেও দেখেছে।।সব কিছুর ভয় কাটিয়ে উঠতে পারলেও আবিরের প্রতি ভয় টা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। যতোটা সম্ভব তার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করতো।। কিন্তু কয়েকদিনে আবির নেশার প্রতি আরো দুর্বল হয়ে যায়।।নেশার প্রতি সে অদ্ভুত মাদকতা লাগতো।।সে নেশাকে বুঝাতো যে তার নেশাকে ভালো লাগতো।।কিন্তু নেশা তাকে এতোটাই ভয় পেত যে কথা তো দুরের কথা তার সামনে থাকলেই কাপাকাপি শুরু করতো।। আবির আকাশের সাথে কথাগুলো বলতে যাবে তার আগেই আকাশ আবিরকে তার ভালোবাসার কথা জানায়।।সে যে নেশাকে ভালোবাসে তা আবিরকে জানায়।।আবির আর নিজের কথা বলতে পারে নাহ।।নিজের বন্ধুত্বের কারনে নেশাকে আকাশের জন্য ছেড়ে দেয়। নেশা আবির আর আকাশের কথা আড়াল থেকে শুনতে পায়।।আর তখনই জানতে পারে যে আকাশ নীড়ের বাবা মা কে খুন করেছে।।সে দিন থেকেই নেশার নাটক শুরু হয়।। আকাশকে ভালোবাসার নাটক।।
সেদিনের পর থেকে আবির আর তাদের সাথে যোগাযোগ রাখে নি।।।কিন্তু যখন জানতে পারে আকাশ মারা গেছে তখন আবির আবার নেশার জীবনে ফিরে আসে।।আর পরের সব কিছু তো আপনারা জানেনই।।

নীড় সব কিছু শুনে অবাক।।

নীড়ঃ তারমানে ওইদিন নেসগার বার্থডে তে আপনি ওই গিফট টা দিয়েছিলেন।

আবিরঃ হুম আমিই ছিলাম।আসলে আমার নেকড়ে খুব পছন্দ।। আমার অনেক গুলো নেকড়ে আছে।।আর আমার গ্রুপের নাম ও ওল্ফ গ্রুপ।

নীড়ঃ তাহলে নেশা পিঠে ওই টেটুটা?

আবিরঃ হ্যা ওইটা আমারই আকা।।আমি জানতাম নাহ আকাশ ওকে ভালোবাসে।।তাই একদিন ওর পিঠে আমি ওটা একে দেই।ভেবেছিলাম ওকে আমার রাজ্যের রানি বানাবো।।ও হবে আমার কুইন।যদি ও নেশা তখন জানতো নাহ।।ওকে আমি অজ্ঞান করে নিয়েছিলাম।ও পরে জানতে পারে।।

নীড়ঃ তারমানে নেশা আপনার জন্য মরেছে?

আবিরঃ ইয়েস।।ও ভেবেছে ও মারা গেলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো।কিন্তু ও জানে নাহ আমি যখন বলেছি তোমার জান নিবোই?

নীড়ঃ তার মানে তুই আমার নেশার খুনের জন্য দায়ী।

আবিরঃ আরে কুল কুল।।এতো রাগলেও কিছু করতে পারবে নাহ।।তোমার বডিপার্টস আধা ঘণ্টার জন্য অবশ হয়ে থাকবে।।আর তার আগেই তুমি মরে যাবে।।?

বলেই নীড়ের দিকে বন্দুক তাক করলো।

আবিরঃ বায় বায় নীড়।।পরকালে সুখে থেকো।

বলেই বন্দুকের ট্রিগার টিপতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কেউ একজন আবিরের হাতে গুলি লরে দেয়।।আবিরের হাত থেকে বন্দুক টা পরে যায়।আবির আর নীড় দুইজনেই খুব অবাক।।আবর ভেবেছিলো কেউ জানে নাহ।।তাই কোন বডিগার্ড সাথে আনেনি।।কিন্তু কে নীড় কে বাচাতে এসেছে ভেবেই পিছনে তাকালো।।নীড় ও তাকালো।।

সামনে বন্দুক হাতে দাড়িয়ে আছে একজন।।য়ার সাথে কয়েকটা বডিগার্ড। ফেস টা দেখা যাচ্ছে নাহ।।ধীরে ধীরে সামনে এলো।।নীড় আর আবির দুইজনেই অবাক।।এটা কিভাবে সম্ভব।
সেই চিরোচেনা চোখ।।কিন্তু এই লুকে একদম অন্যরকম লাগছে।।মোটা করে কাজল দেয়া চোখে।।কয়েকজনকে ইশারা করলো তারা আবিরকে ধরে নিয়ে গেল।

মানুষটি কিছুক্ষণ নীড়ের দিকে তাকিয়ে চলে গেল।।যেন নীড়কে সে চিনেই নাহ।।

নীড়ঃ ননননেশায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া

চলবে?

( কিছু কইতাম নাহ।।সবার মনোভাব শুনমু)

হয়তো_ভালোবাসি Part_19

0

হয়তো_ভালোবাসি
Part_19
#Writer_Eshetaq_Nora

নীড় গিয়ে ডাক্তার নিয়ে আসলো।

ডাক্তার চেপ আপ করে বললো-

ডাক্তারঃ উনি প্রচন্ড পরিমানে মেন্টাল ট্রেস এ আছে।।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেনি অনেক দিন যাবত হয়তো।।বিপি অনেক লো।পরের বার থেকে খেয়াল রাখবেন।

নীড়ঃ ওকে ডাক্তার।

ডাক্তারঃ টেনশনের কোন ব্যাপার নেই।।একটু পরেই জ্ঞান ফিরে আসবে।।বাট একটা কথা।

নীড়ঃ জি বলুন।

ডাক্তারঃ আসলে ওনার শরীরে অনেক দাগ দেখলাম।।উনাকে কি ফিজিক্যালি টর্চার করা হয়?

নীড়ঃ নাহ ওইরকম কিছু নাহ।।আসলে কাল রাগে ওইরকম হয়ে গেছে??

ডাক্তারঃ আপনার এইসব ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত ছিল।উনি মেন্টেলি অনেক দুর্বল। তারউপর এই ঘটনার কারনে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।।পরেরবার থেকে রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করবেন।

নীড়ঃ জি ডাক্তার

ডাক্তারঃ ওকে এখন আমি আসি।

নীড়ঃ চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।

নীড় ডাক্তারের সাথে চলে গেল।

এইদিকে নেশার জ্ঞান ফিরে গেল।জ্ঞান ফিরতেই গলায় খুব ব্যাথা অনুভব করলো।ভালো করে তাকিয়েই খেয়াল করলো সেই লোকটি তার সামনে।

নেশার গলায় শক্ত করে খামচি দিয়ে মাথাটা বালিশ থেকে উঠিয়ে নিজের মুখের সামনে আনলো।

লোকটিঃ বলেছিলাম নাহ নীড়ের থেকে দুরে থাকতে।

নেশাঃ আআমি ইইচ্ছা ককরে ওওর ককাছে যাইনি।।( কাপা গলায়)

লোকটি কিছু নাহ বলে নেশার গলায় কামড়াতে লাগলো।ঠিক যেখানে যেখানে নীড় কামড় দিয়েছিলো সেখানে।।লোকটি যেন চাইছে নীড়ের ছোয়া গুলো মুছে ফেলতে।।পারলে হয়তো নেশার চামড়াটাই তুলে ফেলে।।

এইদিকে নেশার অবস্থা এমনিই খারাপ ছিলো।।শরীরটাও দুর্বল। তারপর এই লোকও আবার একই কাজ করছে।।নেশার ব্যাথায় কুকড়ে উঠছে।।কিন্তু লোকটি কে সরিয়ে দেয়ার মতো শক্তি সে পাচ্ছে নাহ।।

লোকটিঃ তোর শরীরে অন্য কারো গন্ধ কেন থাকবে।।আজ আমি তোর শরীরে অন্য কারো গন্ধ কেন পাচ্ছি বল।বল কেন পাচ্ছি।।কেন ও তোর এতো কাছে আসবে।।কেন তুই ওকে মেরে ফেললি নাহ বল।।তুই শুধু আমার। তোর প্রতিটা লোমকুপও আমার।তোর মাঝে শুধু আমার বিচরণ হবে। অন্য কেউ সেখানে বিচরণ করলে তাকে আমি মেরে ফেলবো।।নীড় ও মরবে।।তোর কাছে আসার শাস্তি ওকে পেতে হবে।।

( নেশাকে কথাগুলো ঝাকাতে ঝাকাতে বললো।নেশার প্রচন্ড খারাপ লাগছে।ব্যাথায় মরে যাচ্ছে ও।।তবুও অনেক কষ্ট কথা বললো)

নেশাঃ পপ্লিজ। আমায় কিছু দিন টাইম দিন।।আমি আপনার কাছে চলে যাবো।।নীড়ের কিছু করবেন নাহ দয়া করে।।

লোকটিঃ এতো ভালোবাসা।।এতো ভালোবাসা আসে কোথা থেকে।।তো…….

আর কিছু বলতে যাবে কারো আসার পায়ের শব্দ শুনতে পায়।।তাই নেশাকে ছেড়ে জানলা দিয়ে পালিয়ে যায়।।

নীড় ঘরে ঢুকেই দেখে নেশার জ্ঞান ফিরেছে।।নেশার কাছে ছুটে যায়।।নেশার পাশে বসেই একটা অন্যরকম ঘ্রাণ পায় নীড়।।গন্ধটা ওর অচেনা।

নীড়ঃ কেউ কি এসেছিলো এখানে?

বলতে বলতে নেশার দিকে চোখ যায়।।নেশা চোখ বন্ধ করে আছে।।কিন্তু চোখ দিয়ে পানি ঠিকই পড়ছে।।

কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীড়ের নজর যায় নেশার গলার দিকে।। সকালে তো এতটা ক্ষত ছিলো নাহ।।এখন আরো বেশি মনে হচ্ছে রক্ত বের হয়ে পুরো গলা লাল হয়ে গেছে।নীড়ের বুকটা কেপে উঠলো।।

তারাতারি ড্রেসিং করে দিলো।।কিন্তু এখন এমনটা কেন হলো নীড় কিছুই বুঝতে পারলো নাহ।কারন লোকটা কামড় গুলো নীড়ের কামড়ের উপরেই দিয়েছে।।যার কারনে বুঝারও উপায় নেই।।নীড় ভাবলো তার কামড়েই হয়তো এমন হয়েছে।

নীড়ঃ নেশা খুব জ্বালা করছে তাই নাহ??

নেশা কিছুই বলছে নাহ।।একমুহূর্তে কথা বলার অবস্থায় নেই সে।।মাথায় অসহ্য ব্যথা করছে।।সব অন্ধকার লাগছে তার।
লোকটা যখন বলেছে নীড়ের ক্ষতি করবে তখন নীড়ের কোন ক্ষতি অবশ্যই করবে।।কি করবে এখন নেশা।নীড়ও তাকে ছাড়বে নাহ। যদি নীড়কে সব খুলে বলে তাহলে আরো আগে যেতে দিবে নাহ।।নেশা কথাগুলো ভেবেই পাগল হয়ে যাচ্ছে।নীড়ের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তার কি হবে।।নীড়ের পরিবারকেই বা কি জবাব দেবে সে।ওর মাথায় কিছুই আসছে নাহ।।

নীড়ঃ নেশা প্লিজ কথা বলো জান।।।তোমার এখন কেমন লাগছে।। কিছু তো বলো [ নেশার মাথায় হাত বুলিয়ে ]

নেশাঃ আয়ামমার ভভালো ললাগগছে বনাহ নননীড়[ অসুস্থ গলায়]

নীড়ের বুকটা কেপে উঠলো।। নেশার এই ফেস নীড়ের সহ্য হচ্ছে নাহ।

নীড়ঃ ডাক্তার ওষুধ দিয়ে গেছে নাস্তা করে খেয়ে নাও।।আমি খাবার নিয়ে আসছি।তারপর ওষুধ খেয়ে নিও।।

নীড় খাবার নিতে চলে গেল।।।এইদিকে নেশা কোন রকমে ধীর পায়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।।বেসিনে মাথা দিয়ে কতোক্ষন মাথায় পানি ঢাললো।।মাথাটা এখন একটু কম ব্যাথা করছে।।হঠাৎ নেশার চোখ গেল ওয়াশরুমে রাখা ফিনাইল এর দিকে।

নীড় একটুপর খাবার নিয়ে এলো।একটু লেট হয়ে গেছে।।নিচে রহিম চাচার সাথে একটু কথা বলছিলো।। রহিম চাচার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।।অনেকদিন ধরেই বিয়ের জন্য পাত্র খুজছিলো। রহিম চাচা অনেক খুশি। নীড়ের মনটা ও ভালো হয়ে গেল।

ভাবলো নেশাকে গিয়ে খবরটা দিলে হয়তো তার ও একটু ভালো লাগবে।।

কিন্তু নীড় যখন রুমের দিকে পা বাড়ালো খাটের দিকে তাকালো।আর যা দেখলো তা দেখে নীড় কি রিয়েকশন দিবে তা সে ভুলে গেছে।।মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে।। কিন্তু এইরকম ভয়ংকর স্বপ্নও যে নীড় দেখতে পাবে নীড় হয়তো ভাবে ও নি।

নীড় বাস্তবে ফিরে আসলো নেশার নিশ্বাসের আওয়াজে। নীড় দৌড়ে নেশাকে গিয়ে ধরলো।।নেশার নাক মুখ দিয়ে অনর্গল রক্ত পড়ছে।।নীড়ের শার্ট খামছে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।। যেন প্রাণভোমরা টা উড়ে যাবে এখনই।

নীড়ঃ নেশা ততোমার ককিছু হহবে নাহহহ।।ননেশা এই নেশা।

নেশাঃ বভাললোববাসি ননীড়।।খুবব ভভাললোবাসসি।

বলেই নেশা জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলো।

নীড়ঃ আমি ও ভালোবাসি নেশা।।তুমি একদম চিন্তা করো নাহ।। সব ঠিক হয়ে যাবে।

বলেই নীড় নেশাকে কোলে তুলে নিলো। দ্রুত ড্রাইভ করে হসপিটালে নিয়ে গেল।।

নেশাকে ওটিতে ঢুকানো হলো।।নীড়ের পুরো পরিবার এসেছে হসপিটালে।।নীড় পাগলের মতো করছে।।

নীড়ঃ মামনি প্লিজ নেশাকে এনে দাও।।ও কেন এমন করলো মামনি।। ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাহ তো

কথাঃ কিছু হবে নাহ নীড়। ডাক্তাররা আছে নাহ।।

নীড়ঃ নাহ মামনি ডাক্তাররা যদি ওর কিছু করে দেয়।।আচ্ছা কেন আমায় ছেড়ে চলে গেল নাহ।।আমি কি খুব পচা।। আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় নাহ।আমি কি এতোই খারাপ।।না হয় একটু ভুল করে ফেলেছি।।কিন্তু তাই বলে আমায় এতো বড় শাস্তি কেন দিলো মামনি।।

নীড় কাদছে আর কথা গুলো বলছে।।সবাই নীড়ের কান্না দেখে আরো খারাপ লাগছে।

নীড়ের বাবা এসে নীড়ের কাধে হাত রাখলো।

কবিরঃ বাবা কুলডাউন।।নেশা ঠিক হয়ে যাবে।।আর তুমি তো আমার স্ট্রং বয় তাই নাহ।

নীড়ঃ বাবা আমি পারছি নাহ।।।বাবা প্লিজ ওকে আমার কাছে এনে দাও।। আমি যে মরে যাবো বাবা।।প্লিজ ওকে এনে দাও।। আমি আর কিছু চাই নাহ।।।বাবা দাও নাহ আমায় এনে।।।আমি সত্যি আর কিছু চাইবো নাহ কোন দিন।।শুধু নেশাকে আমার কাছে এনে দাও..বাবা আমি যে বাচবো না ওকে ছাড়া ওকে আমার কাছে এনে দাও নাহ।। ও বাবা।।তোমার ছেলেরই এই কথাটা রাখো নাহ।।অনেক কষ্টে আমি তাকে খুজে পেয়েছি।।এইবার ও আমায় রেখে গেলে আমি যে আর সহ্য করতে পারবো নাহ।।ওর সাথে যে আমিও শেষ হয়ে যাবো।।

কবির আর সহ্য করতে পারলো নাহ।।ঠাস করে নীড়ের গালে চড় বসিয়ে দিলো।।কিন্তু নীড় উল্টো কবিরকে জড়িয়ে ধরেই হাউমাউ করে কেদে দিলো।

নীড়ঃ বাবা এনে দাও নাহ নেশাকে।।আমি আর ওকে কষ্ট দিবো নাহ কথা দিচ্ছি।

নীড় বরাবরই খুব হাসিখুশি।। কিন্তু আজ যে সে বাচ্চাদের মতো কাদঁছে তা দেখে সবারই কান্না পাচ্ছে।।নেশা যখন প্রথম তাকে ছেড়েছিলো তখন নীড় নিজেকে শান্ত রাখতে পেরেছিলো।।কিন্তু আজ পারছে নাহ।।ভালোবাসাটা যে আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে নেশার প্রতি তার।।

হঠাৎ ওটি থেকে একজন নার্স বের হলো। সবাই ওর সাথে কথা বলতে চাইলো।।নার্স কথা না বলে চলে গেল।।

একটুপর ফিরে এলো হাতে একটা পেপার নিয়ে।

নার্সঃ এখানে উনার পরিবারের লোক কি আপনারা?

কবিরঃ হ্যা আমরাই।

নার্সঃ এই পেপার টাতে সাইন করে দিন

কবিরঃ কিসের পেপার এইটা?

নার্সঃ এইটা তে লিখা আছে যে পেশেন্টের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমরা কোন ভাবেই দায়ী থাকবো নাহ।

কবিরঃ কিসব বলছেন।।কিছু হবে মানে ডাক্তার কোথায় উনাকে ডাকুন।

ডাক্তারঃ আসলে নেশা শুধু বিষ খায় নি।।পাশাপাশি ব্রেন স্ট্রোক ও হয়েছে।।আর ওর পালস রেট খুব কম।ব্রেনে রক্ত জমে গেছে।।অনেক দিন ধরে উনি কোন মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন হয়তো।।তাই আমাদের অপারেশন করে সেই রক্ত গুলো সরাতে হবে।

কবিরঃ তো এর জন্য সাইনের কি দরকার?

ডাক্তারঃ আসলে এইটা খুব বড় একটা অপারেশন। এখানে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে আবার সৃতিশক্তি ও হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মারাও যেতে পারে।

নীড় রেগে গিয়ে ডাক্তার এর কলার চেপে ধরলো।

নীড়ঃ আমার নেশার কিছু হবে নাহ।।তুই মিথ্যা বলছিস।।নেশার এমন কিছুই হয়নি।।আমার থেকে আলাদা করার জন্য মিথ্যা বলছিস তাই নাহ।

কবিরঃ নীড় বাবা তুই শান্ত হো।।ডাক্তার ভালোর জন্যই বলছে।।ডাক্তার আপনি অপারেশন শুরু করুন আমি সাইন করে দিচ্ছি।

নীড়ঃ নাহ।। আমি নেশাকে একা ছাড়বো নাহ।এরা নেশাকে একা পেলে মেরে ফেলবে।। আমার থেকে নিয়ে যাবে।।আমি ও যাবো ভিতরে।।

বলেই নীড় ওটি তে ডুকে গেল।

ডাক্তারঃ আরে আপনি কি করছেন।।রোগীর সাথে থাকলে রোগীর আরো ক্ষতি হতে পারে।

কবিরঃ প্লিজ নীড় কে ভিতরে থাকতে দিন।।ওর মাথা টা এখন ঠিক নেই।।।ও শুধু দাড়িয়ে থাকবে।।

ডাক্তারঃ আচ্ছা আমরা দেখছি।।

এইদিকে

নীড় রুমে ঢুকেই দেখলো নেশা খাটে শুয়ে আছে।।মুখে অক্সিজেন মাস্ক।। নীড় গিয়ে নেশাকে জড়িয়ে কেদে দিলো।।

নীড়ঃ কোন আমায় এতো বড় শাস্তি দিলে নেশা।।এর থেকে তুমি নিজের হাতে আমায় মেরে ফেলতে।। কিন্তু এইভাবে আমায় ছেড়ে চলে গেলে আমি বাচবো কিভাবে।

ডাক্তার রুমে ঢুকে দেখলো নীড় নেশাকে জড়িয়ে ধরে কি যেন বলছে।।ডাক্তার আর নার্সরা মিলে নীড়কে সরালো।

অপারেশন শুরু হলো।কিন্তু নীড় সবাইকে জালিয়ে খাচ্ছে।।প্রশ্ন করে করে সবার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।।বাধ্য হয়ে নীড়কে ঘুমের ওষুধ দিয়ে একটা কেবিনে রাখা হলো।

১ ঘন্টা পরই নীড়ের ঘুম ভেঙে গেলো। চেয়ে দেখলো এইটা ওটিতে নাহ।।নীড় দৌড়ে ওটির সামনে গেল।।

নীড়ঃ মামনি আমার নেশা কোথায়???

কথাঃ ওর অপারেশন চলছে নীড়।। ও সুস্থ হয়ে যাবে।।।তুমি শান্ত হও।

নীড়ঃ এইটা কি করলে তোমরা মামনি।।আমায় রেখেই নেশার অপারেশন শুরু করে দিলে।।ও হয়তো আমায় ছাড়া ভয় পাচ্ছে।।।আমি ভিতরে যাবো

বলেই নীড় দরজায় ধাক্কা দিতে নিবে ডাক্তার বেরিয়ে এলো রুম থেকে।।

নীড়ঃ ডাক্তার আমার নেশা???

ডাক্তারঃ we are sorry Mr. Nir। উনি মারা গেছে।।।আমাদের অপারেশ সাকসেসফুলি হয়নি।

নীড়ঃ পপাগল ননাকি আপনি।।।আমমায় রেখে আমার ননেশা ককোথাও যযযেততেই পাররে ননাহ। সরুন আপনি।

ডাক্তারকে সরিয়ে রুমের ভিতর ঢুকে পড়লো নীড়।

নেশার মুখে ব্যান্ডেজ করা।।নীড় চুপ করে তাকিয়ে আছে।।এই সময় কি করা উচিত সে তা জানে নাহ।।শুধু নেশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।।কথা রুমে ঢুকে নীড়কে জড়িয়ে ধরলো।।

নীড় এখন আর কান্না করছে নাহ।।শুধু নেশার দিকে তাকিয়ে আছে।।

নীড়ঃ মামনি ও মামনি নেশা আমায় ছেড়ে চলে গেল।।কেন চলে গেল।।আমি এতোই খারাপ।।ও মামনি আমার নেশাকে এনে দাও নাহ।।দেখ কেমন চুপ করে আছে।।আমার সাথে কথা বলতে বলো নাহ ওকে।।আমার কলিজাটা যে ছিড়ে যাচ্ছে।।ও মামনি কিছু তো বলো।[ খুব আস্তে আস্তে কথা গুলো বললো নীড়।সে এখন আর শক্তি পাচ্ছে নাহ।।সারা শরীর অবশ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।।ঘুমের ওষুধের রিয়েকশনটাও ভালো করে কাটেনি এখনো।]

কথাঃ বাবাই তুমি শক্ত হও। কিছু হবে নাহ।। সব ঠিক হয়ে যাবে।

নীড়ঃ কিভাবে ঠিক হবে মামনি নেশা যে চলে গেল
।আমায় রেখে।।আম…..

নীড় আর কিছু বলতে পারলো নাহ অজ্ঞান হয়ে কথার উপর ঢলে পড়লো।

চলবে

( এতোদিন ধরে গল্প পড়ছেন তো আশা করি এখনো পাশে থাকবেন।।।মৃত্যুই সব সময় শেষ হতে পারে নাহ।।কোন নতুন কিছুর সুচনাও হতে পারে।।নেশা মরে গেছে হয়তক নতুন কিছুর সুচনা হবে তাই মারা গেছে।সো আমাকে বকাঝকা কইরেন নাহ?।

হয়তো_ভালোবাসি Part_18

0

হয়তো_ভালোবাসি
Part_18
#Writer_Eshetaq_Nora

নীড় নেশার জামা কাপড় নিয়ে ফিরে এলো।।খেয়াল করলো দরজার লক খোলা।।নীড়ের মাথায় তো বাজ পড়লো। নেশা আবার চলে গেল নাহ তো তাকে ছেড়ে।

নীড়ঃ রহিম চাচা,চাচা।

রহিমঃ কি হয়েছে বাবা?

নীড়ঃ দরজার লক খুললো কে??

রহিমঃ আমি তো জানি নাহ বাবা।।আমি তো নিচেই ছিলাম।।কাউকে তো দেখি নি।

নীড়ঃ নেশা কোথায়?

রহিমঃ নেশা তো মনে হয় উপরেই।

নীড় দৌড়ে উপরে গেল।।দেখলো নেশা খাটে বসে আছে।নীড় চিন্তা মুক্ত হলো।নেশাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। নেশার ঘোর কাটলো। নীড় যে তার সামনে ছিলো তা নেশার খবরই ছিলো নাহ।

নীড়ঃ দরজার লক খোলা দেখে ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছো।।খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।

নেশাঃ ওহহ।

নীড়ঃ কে জানে কে লক খুলে রেখেছিলো।

নেশাঃ মনে মনে- উনি ছাড়া আর কেউ নাহ?

নীড়ঃ কি হলো কিছু বলছো নাহ কেন।

নেশাঃ কি বলবো আমার ধম বন্ধ হয়ে আসছে এভাবে।।আর আপনি আমায় এইভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন কেন।। অসহ্য।[ নীড়ের থেকে সরে এসে]

নীড়ঃ অসহ্য!!! আমার কাছে থাকলে তোমার ধম বন্ধ হয়ে আসে?

নেশাঃ হ্যাঁ অসহ্য। আপনার সাথে থাকলে আমার ধম বন্ধ হয়ে আসে।।মনে হয় কেউ গলা চেপে ধরেছে আমার।

নীড়ঃ এই নেশা কেন এমন করে কথা বলছো। কি হয়েছে আমায় বলো নাহ প্লিজ।( নেশার গালে হাত দিয়ে)

নেশাঃ কিছু হয়নি আমার।। সারাক্ষণ খালি ছোয়ার ধান্দা।।টাচ করবেন নাহ আমায়।।আপনার স্পর্শ আমার সহ্য হয় নাহ তা আপনি বুঝতে পারেন নাহ।[ নীড়ের হাত সরিয়ে ]

নীড়ঃ আমার স্পর্শ সহ্য হয়নাহ তোমার??!!

নেশাঃ নাহ নাহ নাহ।।আপনার কিছুই সহ্য হয়নাহ।।আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করে নাহ আমার।[ চিৎকার করে]

নীড়ঃ কেন নেশা কি এমন হলো।সব তো ঠিক ছিলো তাহলে?

নেশাঃ কিসের কি ঠিক ছিলো।কিছুই ঠিক ছিলো নাহ।সব নাটক ছিলো।।আমাদের মাঝে কখনো কিছু ছিলো নাহ।কিছু নাহ।

নীড়ঃ সব ছিলো। আর এখনো আছে।।ভালো তুমিও আমায় বাসো।কিন্তু কোন একটা কারনে তুমি খুব ডিস্টার্ব আছো।।আমায় বলো নাহ কি সমস্যা। দুইজন মিলে সলভ করি।

নেশাঃ হ্যাঁ সমস্যা আছে।। সমস্যাটা হলো আপনি।। আমি মুক্তি চাই আপনার থেকে।আই ওয়ান্ট ডিবোর্স

কথাটা বলার সাথে সাথেই নীড় নেশার গালে চড় মেরে দিলো।নেশার দুগাল চেপে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

নীড়ঃ মরে গেলেও ডিবোর্সের কথা উচ্চারণ তো দুর নিজের মাথায়ও আনবি নাহ।। আর নাহ আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববি।।তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে নাহ।

নেশাঃ চলে তো আমি যাবোই।।

নীড়ঃ স্বপ্নেও ভাবিস নাহ এটা।।দরকার হলে তোর পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো। তবুও তোকে কোথায় যেতে দিবো নাহ।।তুই শুধু আমার সাথে থাকবি।। আমার চারপাশে থাকবি।।শুধু আমার হয়ে থাকবি।

[ নীড় কথাগুলো নেশার গাল চেপে ধরে বলছিস।।নীড়ের রাগে চোখ গুলো রক্তবর্ণ হয়ে গেছে।।নেশাকে ছাড়া নীড় নিজেকে ভাবতেও পারে নাহ।।এইদিকে নেশা যে ব্যাথা পাচ্ছে সেদিকে নীড়ের খবর নেই।তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে।।নেশা তাকে ছেড়ে কোথায় যেতে পারবে না]

হঠাৎ রহিম চাচা নিচে থেকে রাতের খাবারে জন্য ডাক দিলো।।

নীড়ঃ তুমি বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।

বলেই নেশাকে ছেড়ে নীড় নিচে চলে গেল।

নীড় চলে যাওয়ার পর নেশা কান্নায় ভেঙে পড়লো।।

নেশাঃ কি করবো আমি এখন।।নীড় যে আমায় কিছুতেই যেতে দেবে নাহ।।কিন্তু নীড় যদি আমায় যেতে নাহ দেয় তাহলে উনি যে নীড়ের ক্ষতি করে দিবে।পালিয়ে যাবো।হ্যা এটাই ভালো উপায়।।নীড় আমাকে খুজে পাবে নাহ তাহলে।কিন্তু যদি খুজে পায় তখন কি করবো???

একটুপর নীড় খাবার নিয়ে রুমে এলো। দেখলো নেশা বসে বসে কাদছে।।নেশাকে কাদতে দেখেই নীড়ের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। এতোক্ষনে রাগটাও একটু কমে গেছে।। গিয়ে নেসার পাশে বসলো।

নীড়ঃ একি জান তুমি কাদছো কেন?

নীড় নেশার দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখলো নেশার ফর্সা গাল গুলোতে আঙুলের চাপের জন্য লাল হয়ে গেছে।।নীড় ভাবলো নেশা এই জন্য ব্যাথায় কান্না করছে।

নীড়ঃ ইসস দেখেছো কেমন লাল হয়ে গেছে।।আই এম সরি জান।।সত্যি আমি ইচ্ছা করে কাজটা করিনি।।কি করবো বলো তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা বললে তাই রাগ টা কন্ট্রোল করতে পারিনি।প্লিজ মাফ করে দাও।

দেখলো নেশা এখনো থামছে নাহ।
নীড় হুট করে নেশার গালে কিস করে দিলো।নেশা কান্না থামিয়ে নীড়ের দিকে হা করে তাকালো।

নীড়ঃ কি হলো আরেকটা লাগবে বুঝি।এই নাও।
বলেই আরেক গালে কিস করে দিলো।নেশা কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।নীড় হেসে দিলো।

নীড়ঃ আচ্ছা অনেক হয়েছে।চলো খেয়ে নিবে।

নেশাঃ আমি খাবো নাহ।।

নীড়ঃ নেশা এইরকম জিদ ভালো লাগে নাহ।।আমি ব্যাথা দিয়েছি তো আমায় মারো।।খাবার তোমার কি দোষ করলো।

নেশাঃ আমার খিদে নেই।।আপনি খেয়ে নিন।।

নীড় উপায় না পেয়ে নেশাকে মুখ টিপে খাইয়ে দিলো।

খাওয়াদাওয়ার পর।

নীড়ঃ আজ আমার খুব শান্তি তে ঘুম হবে। কেন জানো

নেশাঃ ??

নীড়ঃ তোমার সাথে যে ঘুমাবো?

নেশাঃ মমানেহহ কি।। আমমার সাথে ককেন ঘুমাবেন।

নীড়ঃ ওমা এখন কি আর আমরা অচেনা নাকি।।এখন তো আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ।তো একসাথেই তো ঘুমাবো।আর রোমান্স করবো?

নেশাঃ নননাহ একসসাথে ঘুমানো যযাবে নাহহ

নীড়ঃ তোমার থেকে অনুমতি চেয়েছি নাকি।।?

নেশাঃ ??

নীড়ঃ উফফ নেশা এইভাবে তাকিয়ে থেকো নাহ।।কেন বুঝো নাহ আমার কিছু কিছু ফিল হয়?

নেশাঃ আমমার ঘঘুম পাচচ্ছে?

নীড়ঃ ???

নীড় লাইট অফ করে দেখলো নেশা অন্যদিকে ঘুরে ঘুমিয়ে আছে।।নীড় একটানে নেশাকে টেনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।নেশা ছুটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে।

নীড়ঃ এই দেখ বেশি মোচড়ামুচড়ি করবা নাহ সাপের মতো।। আমার কিন্তু কিছু ফিল হচ্ছে।

নেশা কথাটা শুনে চুপটি মেরে গেল।।নীড় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো।


রাত ১২ টায়

হঠাৎ কিছুর শব্দে নীড়ের ঘুম ভেঙে গেল।।খাট থেকে উঠে জানালা দিয়ে দেখলো একটা গাড়ি বের হচ্ছে বাড়ি থেকে।।হঠাৎ নীড়ের নেশার কথা মনে হলো।।নেশা তো এখানেই ছিলো। তাহলে কোথায় গেল।।নীড় টেবিলে একটা চিঠি দেখতে পেল।।

চিঠিতে।

প্রিয় নীড়,

আমি আপনাকে আগেই বলেছি আমি এই বিয়েতে রাজি নাহ।।আর আমি আপনায় ভালোবাসি নাহ। তাই আপনার সাথে এই সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা আমার সম্ভব নাহ।আর আপনি হয়তো আমায় ডিবোর্স ও দিবেন নাহ।।তাই আমি সব কিছু ছেড়ে চলে যাচ্ছি।প্লিজ আমায় খুজবেন নাহ।।আর আপনি নতুন করে আপনার জীবন শুরু করুন।। আমি আমার সব অধিকার ছেড়ে দিলাম।।ভালো থাকবেন।

ইতি
নেশা।

চিঠি টা পড়ে নীড়ের কপালের রগ ফুলে গেল। নীড় ভুলেই গেছিলো নিচের দরজার লক টা কেউ খুলে ফেলেছিলো।তাই নেশা সহজেই পালাতে পারবে।

নীড়ঃ তোমার এতো সাহস কি করে হলো নেশা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার।। এর শাস্তি তোমায় পেতে হবে নেশা।।আমার সুখের মধ্যে তুমি বাধা দিতে পারবে নাহ।তোমার অধিকার নেই আমাকে ছড়ে যাওয়ার।

নীড় ও গাড়ি নিয়ে নেশার গাড়ির পিছনে পিছনে গেল।।কিছুক্ষণ ড্রাইভ করেই নেশার গাড়ি দেখতে পেল।।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে নেশার গাড়ির সামনে ব্লক করে রাখলো।

নীড়ের এই গাড়টা এই বাড়িতে ছিলো বলে নেশা এই গাড়িটা চিনে নাহ।।সে ভাবলো অন্য কেউ হবে হয়তো।
নেশা গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো।

নেশাঃ এই যে মি. দেখে চলতে পারেন নাহ।।রাস্তার মধ্যে এইরকম করে রেখেছেন কেন।।সমস্যা কি।

হঠাৎ নীড় কে গাড়ি থেকে বের হতে দেখে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল।

নীড়ঃ সমস্যাটা তো তুমি।

নীড় নেশার হাত শক্ত করে ধরে নিজের গাড়িতে বসালো।

নেশাঃ আমি আপনার সাথে যাবো নাহ।।গাড়ি থামান।।থামান বলছি।

নীড় কিছু বলছে নাহ।।চুপচাপ গাড়ি চালাছে।।কিন্তু অনেক স্পিডের। নেশার ভয় লাগতে শুরু করে।।কি করবে নীড় এখন তার সাথে।।

নীড় বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে নেশাকে টেনে রুমে নিয়ে গেল।আর খাটে ছুড়ে মারলো।

নীড়ঃ খুব সাহস হয়েছে তোর তাই নাহ।।আমার জানকে আমার থেকে কেরে নেয়ার অধিকার কে দিয়েছে তোকে হ্যাঁ।। বল কে দিয়েছে[ চিৎকার করে]

নেশা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়।।একে তো নীড়ের চেহারা দেখে ওর প্রচন্ড ভয় লাগছে।।কারন নীড় কে কখনো নেশা এতো রাগতে দেখেনি।।রাগে নীড়ের পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে।।মনে হচ্ছে এখনই নেশাকে চোখ দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে।।নেশা ভয়ে কিছু বলতেই পারছে নাহ

নীড়ঃ খুব সখ নাহ তোর সব অধিকার ছেড়ে দেয়ার। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার। দেখি আজকের পর থেকে তুই কিভাবে আমাকে ছেড়ে যাস।।।আজ তোর এমন অবস্থা করবো যে তুই আমাকে ছেড়ে কেন এই রুম থেকেই বের হতে পারবি নাহ।।

বলেই নেশার ঠোঁট চেপে ধরলো নিজের ঠোঁট দিয়ে।।নেশা ধাক্কাচ্ছে নীড় কে সরানোর জন্য কিন্তু পারছে নাহ।যতোই হোক একটা ছেলের শক্তির সাথে কি পারা যায়।।নীড় নেশার ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবালো।। কামড় কিসে ভরে দিতে লাগলো।।কাধ থেকে জামা সরিয়ে সেখানে কামড় দিলো।।সারামুখে পাগলের মতো কিস করছে।।।নীড়ের কোন হুস নেই।।সে শুধু নেশাকে নিজের করে পাওয়ায় মত্ত।আজ সে নেশার চোখের পানিও দেখতে পারছে নাহ।।একটা সময় নেশা হাল ছেড়ে দেয়।নীড়ের ও রাগটা ধীরে ধীরে কমে যায়।।নেশাকে আলতো করে ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে।

মাঝরাতে-??

নীড় খাটের সাথে হেলান দিয়ে নেশার দিকে তাকিয়ে আছে।।এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে নেশা।।বাইরের লাম্প পোষ্টের আলো পুরো রুমটা আলোকিত করে রেখেছে।।নেশার মায়াবী মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।।নীড় সেদিকে তাকিয়ে আছে।।তার চোখে কোন রাগ নেই।। শুধু নেশার মায়াবী মুখটা দেখছে।।কিছুই করতে পারেনি আজ।। তার আগেই নেশা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।।নীড় নেশার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নেশার কাধের দিকে তাকালো।।নেশার কাধের জামাটা অনেক টাই নিচে নেমে গেছে।।নীড় জামাটা টেনে ঠিক করতে যাবে হঠাৎ খেয়াল করলো সেই কালো জিনিসটায়।।সেইদিনও নীড় এইটা দেখেছিলো।।কিন্তু পরে আর মনে ছিলো নাহ ব্যাপার টা।। এখন আবার দেখে মনে পড়ে গেল।। মোবাইলের লাইট টা জ্বলিয়ে নেশার কাধের সামনে ধরলো।।পুরোটা দেখা যাচ্ছে নাহ।।নীড় জামাটা আরও একটু নিচে নামালো।।

নীড় অবাক হয়ে জিনিসটা দেখছে।।একটা টেটু।কালো নীল আর সবুজের মধ্য কম্বাইন্ড করে আকা।।নেশার ফর্সা পিঠে খুব সুন্দর করেই ফুটে উঠেছে।।কিন্তু টেটু টা খুব অদ্ভুত।। একটা নেকড়ের মুখের টেটু।নীড়ের মুখটা খুব চিনা চিনা লাগলো।


নীড়ঃ এই মুখটা কোথায় যেন দেখেছি।।হ্যাঁ মনে পড়েছে।ওই চিঠি টাতে।। ওইটাতেও এই রকমই ছিলো।।

ওইদিন চিঠিটাতে যেমন নেকড়ের মুখ ছিলো ঠিক সেই রকমই টেটুর টা।। কিন্তু শুধু একটু পরিবর্তন আছে।।।ওইখানে কিং লেখা ছিলো এইখানে কুইন লিখা।।।

নীড় খুব বেশি অবাক হচ্ছে।।।নেশার কাধে এমন একটা জিনিস আছে তা নীড় ভাবেনি।।অবশ্য নেশার এতো কাছেও যায়নি।

নীড়ঃ যদি নেশার কাধে টেটুটা আগে থেকেই থাকে তাহলে সেটা আমাকে নাহ দেখনোর কারন কি।ওইইদিন দেখতে চেয়েছিলাম বলেই হয়তো নেশা তা আড়াল করেছিলো।।কিন্তু কেন।।আর তাছাড়াও নেশা তারমানে চিঠিটা সম্পর্কেও জানে।।তাহলে আমার থেকে লুকালো কেন, আমায় বললো নাহ কেন।।।নেশার সাথে কি হয়েছে এই ২ বছর।।নাহ আমায় জানতেই হবে।।কালই জানতে হবে সব।।

নীড় নেশার দিকে তাকালো।।কপালে একটা চুমু দিয়ে কাধের জামাটা ঠিক করে দিলো।।

সকালে?

সূর্যের আলো চোখে লাগায় নেশার ঘুম ভেঙে গেলো। ঠোটে আর গলায় অসহ্য ব্যাথা করছে।। নেশা খেয়াল করলো কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।।।।নেশা মুখ উচু করে তাকিয়ে নীড়ের ঘুমন্ত চেহারা টা দেখতে পেল।।নীড়ের গলায় নেশার নাক লেগে আছে।।।নীড়কে দেখেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল নেশার।।নীড়কে ছাড়িয়ে খাটের এককোনায় চলে গেল।।

নড়াচড়ায় নীড়ের ঘুম ভেঙে গেল।।কাল কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো মনে নেই।।নেশার দিকে খেয়াল করে নেশা খাটের এক কোনায় বসে আছে।।আর বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।।আর জামা ঠিক করছে।।নীড় খুব অবাক হলো।।নেশা এমন কেন করছে।।

নীড়ঃ নেশা তুমি ঠিক আছো? কখন ঘুম ভাঙলো। [ নেশার কাছে গিয়ে নেশাকে ধরতে যাবে]

নেশাঃ ছছোবেনন ননাহহ আমমায়।দদুররে থথাকুনন।

বলেই নিজেকে গুটিয়ে নিলো।।নীড় তো মহা অবাক।।।নেশা যে কাল রাতের জন্য ভয় পেয়ে আছে সেটা তার মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।।নীড় ভেবেছিলো নেশা হয়তো রাগ করবে কিন্তু নাহ নেশা তো উল্টো ভয় পাচ্ছে।।নীড়ের চোখ গেল হঠাৎ নেশার মুখের দিকে।।রাতে ওতোটা খেয়াল করেনি আর বুঝাও যায়নি।।সারা মুখে আর গলায় কামড়ের দাগ,আর আচড় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।অনেক জায়গায় কেটে রক্ত ও বের হয়ে গেছে।

দেখেই নীড়ের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।

নীড়ঃ মনে মনে- নিশ্চয়ই খুব জ্বালা করছে নেশার।।সত্যিই আমি মানুষ নাহ।।।

নীড় গিয়ে নেশাকে ধরতে যাবে নেশা পিছাতে পিছাতে খাট থেকে পড়ে যায়।।খাটের পাশের ছোট টেবিলের সাথে লেগে কপালে কেটে যায়।

নীড় গিয়ে তাড়াহুড়ো করে নেশাকে ধরে উঠায়।

নীড়ঃ ঠিক আছো তুমি।।দেখলে তো কপাল কতো টা কেটে গেল। বসো এখানে আমি ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসছি।

নীড় বক্স নিয়ে এসে নেশার পাশে বসে ব্যান্ডেজ করতে নিলো।
কিন্তু নীড় যতো নেশাকে ধরার চেষ্টা করছে নেশা ততো দুরে সরে যাচ্ছে।।

নীড়ঃ কি শুরু করেছো তুমি ব্যান্ডেজ করবো তো।দেখছো নাহ রক্ত বের হচ্ছে।[খানিকটা রেগে বললো]

নেশা আরো ভয় পেয়ে গেল নীড়ের ধমকে।একদম চুপটি মেরে গেল।।নড়াচড়া বন্ধ করে।।
নীড় সামনে এসে নেশার কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিলো।।নেশা ভয়ে কেপে উঠলো। নীড় ধীরে ধীরে কাটা জায়গায় ওষুধ দিতে লাগলো।
এইদিকে নেশার প্রচন্ড ভয় লাগছে।।বার বার রাতের ঘটনা গুলো মনে পরছে।হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।।।মনে হচ্ছে নীড় এখনই আবার ওর উপর ঝাপিয়ে পড়বে।।

নেশা বেশিক্ষণ এই প্রেসার আর নিতে পারলো নাহ।।অজ্ঞান হয়ে নীড়ের বুকে ঢলে পড়লো।

নীড় নেশাকে কোলে তুলে ঠিক করে খাটে শুইয়ে দিলো।।

তারপর কপালে ব্যান্ডেজ করে দিলো।।তারপর কামড়ের দাগ গুলোতে মলম লাগিয়ে দিলো।।নীড়ের চোখ গেল নেশার হাতের দিকে।।পুরো কালচে নীল হয়ে আছে।।নিশ্চয়ই কাল জোরে চেপে ধরার ফলে এমন হয়েছে।।নীড় হাত টাতে অজস্র চুমু একে দিলো।।কেন জানি নীড়ের খুব কান্না পাচ্ছে।। ভালোবাসার মানুষটা যদি তাকে ভয় পেতে শুরু করে তারকাছে আসতে নাহ চায় তাহলে হয়তো তার থেকে খারাপ কিছুই নেই।

চলবে

(কয়েকটা আপু আমারে পেচানো আপু নাম দিছে। আমার ক্রাশ আরো অনেকেই আমাকে জিলাপিই বলে।।সো তোমরাও বলতে পারো নো প্রবলেম?।।বাট মাক্স নাহ পড়ে আমার গল্প পড়তে আসলে জরিমানা দিতে হবে কিন্তু?)