Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1863



তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১০

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা?
পর্ব-১০
ফাবিহা নওশীন

??
পাখির কিচিরমিচির শব্দে সামুর ঘুম ভেঙে যায়।চোখ মেলে নিজেকে অপরিচিত জায়গায় আবিস্কার করে।পরক্ষনেই ওর মনে পড়ে ও তো আদির সাথে এসেছে।আদিকে খোজতে ঘাড় কাত করতেই দেখে আদি বেডের কর্ণারে পাশ ফিরে শুয়ে আছে।গতকাল রাতে যেভাবে শুয়েছিলো।সামু আদিকে দেখে মুচকি হাসি দেয়।নিজের গায়ে চাদর জড়ানো দেখে।

রাতে বৃষ্টি পড়েছে ওয়েদার কিছুটা ঠান্ডা ছিলো।তাই হয়তো আদি ওর গায়ে চাদর দিয়ে দিয়েছে।কিন্তু আদির গায়ে কিছুই নেই।এই গন্ডারের কি শীত লাগেনা।
সামান্তার ঘুম আসছেনা।ঘড়িতে ৭টা ২১বাজে।উঠে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।উঠার জন্য পা টান দিতেই অবাক।

–ছিঃ ছিঃ সামু তুই আদির পায়ের উপর পা তুলে ঘুমিয়েছিস?মাথা তো ঠিক জায়গায় আছে কিন্তু পা কিভাবে ওখানে গেলো?আদি যদি জানতে পারে আমাকে পচাতে ছাড়বেনা।

সামান্তা আস্তে-ধীরে পা সরিয়ে অতি সাবধানে বেড থেকে নেমে গেলো।তারপর গায়ের চাদর আদির গায়ে দিয়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।চুলগুলো এলোমেলো ভাবে চোখের উপর ছড়িয়ে রয়েছে।একদম কিউটের ডিব্বা।

–ইসস,,আমার বাব্বিটা কি সুন্দর!!একদম বাচ্চাদের মতো কিউট।মাই ডেয়ার কিউট হাসব্যান্ড তুমি যতই কিউট হওনা কেন,,এত তাড়াতাড়ি তোমাকে ধরা দিচ্ছিনা।

সামান্তা ফ্রেশ হয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালো।যতদূর দেখা যাচ্ছে গাছপালা কোনো বাড়িঘর নেই।কোথায় আছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।সামান্তা নিচে গিয়ে পুরো বাড়ি চক্কর দিলো।পুরো বাড়ি ঘুরে যেটা বুঝতে পারলো আদি প্রায়ই এবাড়িতে আসে।তবে একা নয়।টেবিলের উপর এলোমেলো গ্লাস আর ড্রিংক ওয়াইনের বোতল বোতল দেখেই বুঝতে পারছে।
কিচেনে গেলো।যদি খাওয়ার জন্য কিছু পাওয়া যায়।খুব ক্ষুদা পেয়েছে।কাল রাতে একটু কোক খেয়েছে।পুরো কিচেন তন্নতন্ন করেও কিছু পেলোনা।কয়েকটা কফির প্যাকেট ছাড়া।সামান্তা তাড়াতাড়ি কফি বানিয়ে নিলো।

কফির মগ নিয়ে গ্লাসের পাশে গিয়ে দাড়ালো।কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর বাইরেটা দেখছে।সামনেই গার্ডেন।গার্ডেনে অসংখ্য ফুল ফুটে আছে।পাখিরা কিচিরমিচির করছে,রোদেরা আলোছায়ার খেলা করছে।সামুর মনে হচ্ছে ও ওর গ্রামে আছে।কতদিন এমন পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পায়নি।কফি খাওয়া শেষ এখন কি করবে একা একা?
আদি ঘুমাচ্ছে।ওকে ডাকবে?ওকে ডেকে ঝামেলা বাড়ানোর দরকার নেই।এটা সেটা বলে বিরক্ত করবে।তারচেয়ে ঘুমাক একা একাই বসে থাকা ভালো।

হটাৎ আদির ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম ভেঙে নিজের গায়ে চাদর জড়ানো দেখে যেটা রাতে সামুকে দিয়েছিলো।আদি পাশ ফিরে সামুকে খোজে কিন্তু বিছানা ফাকা।আদি লাফ দিয়ে উঠে পড়ে।ওয়াশরুম চেক করে কিন্তু সামু নেই।তাই দৌড়ে নিচে যায় সেখানেই সামুকে দেখতে না পেয়ে জোরে জোরে ডাকে।

–সামু,,সামু!!হয়ার আর ইউ?

সামু আদির চিতকার শুনে মনে মনে বলে,
উঠতে ষাড়।আমাকে এখানে আটকে রেখে এভাবে চিতকার করার মানে কি?
সামান্তা সাড়াশব্দ না দিয়ে ওভাবেই বসে রইলো।আদি খোজতে খোজতে সামুকে পায়।দেখে সামু ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে।সামুকে দেখে ওর রাগ উঠে যায়।

–এই মেয়ে কখন থেকে ডাকছি আর তুমি এখানে বসে আছো?

–কেন ডাকছেন?

–কেন ডাকছি মানে?ঘুম থেকে উঠে দেখি তুমি নেই।

–আর তাই আপনি ভাবলেন আমি পালিয়ে গেছি??হাও ফানি।আপনি আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন আমি কিভাবে পালাবো?

–তুমি যে মেয়ে তোমাকে আটকে রাখা যায় নাকি?বিশ্বাস নেই।
যাইহোক কখন উঠেছো?আমাকে ডাকো নি কেন?

–১ঘন্টা,আপনাকে ডাকবো কেন?আপনি যতক্ষণ ঘুমাবেন ততক্ষণ আমার শান্তি।আপনি আমাকে প্রচুর জ্বালাতন করেন।

আদি সামান্তার কাছে গিয়ে বললো,কি জ্বালাতন করেছি?
আদি সামান্তার দিকে আগাচ্ছে।সামান্তা ভয় পেয়ে তোতলিয়ে বললো,,
–আআমা,,র খুউব ক্ষুধা পেয়েছে।খাবারের অভাবে কিছুক্ষণ পর মারা পরবো।প্লিজ কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করুন।

আদি দূরে সরে গেলো।ঠিকই তো গতকাল ওকে কোচিং থেকে তুলে নিয়ে এসেছি।রাতে একটু কোক খেয়েছে।তাতে কি হয়,,নিশ্চয়ই অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।আমিও না,,তাড়াহুড়ায় খাবার এ আনি নি।

–কিছুক্ষন পর ই খাবার চলে আসবে।তুমি আরেকটু কষ্ট করো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আদি ফ্রেশ হতে চলে গেলো।সামুর পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।

আদি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সামু পেটে হাত দিয়ে বসে আছে।আদি ওর পাশে গিয়ে বসে বললো,,
আমি ফোন করেছি।১০মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে।আরেকটু কষ্ট করো।আই এম রিয়েলি সরি।আসলে তাড়াহুড়ায় এমন,,

সামান্তা শুকনো হাসি দিয়ে বললো,
আমার তেমন ক্ষুধা পায়নি।

আদি জানে ও মিথ্যে বলছে।সময় কাটানোর জন্য বললো,
ঘুম কেমন হলো?
–ভালো।

আদি বাকা হেসে বললো, তা তো হবেই।আমার পায়ের উপর পা তুলে আয়েশ করে ঘুমিয়েছো।

সামু তো অবাক।
–আমি ইচ্ছে করে করিনি।

–বুঝেছি,বুঝেছি,,আমার মতো কিউট ছেলে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারোনি।

সামি ভ্রু কুচকে বললো, কিহ!!কিউট আর আপনি?আপনি একটা জিরাফ।

–জিরাফ!!

–জ্বী হা,জিরাফ!!ছয় ফুট হাইটের জিরাফ।

আদি ইনোসেন্ট মুখ করে বললো, আমার মতো কিউট, হ্যান্ডসাম ছেলেকে তোমার জিরাফ বলতে একটুও বাধলো না।এত বড় অবিচার!!

সামু আদির ফেস দেখে হেসে দিলো।তারপর কিচেনে গিয়ে ৫মিনিট পর আদির জন্য কফি নিয়ে ফিরলো।
আদিকে কফি দিয়ে বললো,আপনি এখানে প্রায়ই আসেন তাই না,,,(কিছুটা থেমে) কফি খেতে??

আদি কফিতে চুমুক দিতে গিয়ে থেমে গেলো।সামান্তা যে ওকে কি মিন কতেছে সেটা ও ভালোই বুঝতে পারছে।কফির নাম নিয়ে যে খুচা মেরেছে সেটাও বুঝতে পারলো।
আদি কিছুনা বলে কফিতে চুমুক দিলো তারপর বললো,
তোমাকে মিথ্যে বলবোনা,আমি এখানে প্রায়ইশ আসি বন্ধুদের নিয়ে।আড্ডা দেই,একসাথে বসে ড্রিংক করি।তুমি জানো আমি ছেলেটা তেমন ভালো না।কি যেনো বলেছিলে লাফাঙ্গা,,হুম ওটাই।তবে এসবের মধ্যে একটা কথা হলো আমার মেয়ে দোষ নেই।আর সবচেয়ে বড় সত্যি হলো তোমার প্রতি আমার যে ফিলিংস সেটা মোহ,মায়া কোনোটাই নয়।তাহলে এতদিনে কেটে যেত।বিয়ের ৫মাস রানিং।৩মাস যাবত আমি তোমাকে ফিল করি।এর আগে কখনো কোনো মেয়ের প্রতি এমন ফিলিংস হয়নি।অনেক মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করেছি,পিছে ঘুরিয়েছি,
ডেটিংএ গিয়েছি।বাট কেউই বেশিদিন টিকে নি।কাউকে ছুতে ইচ্ছে করেনি,পেতে ইচ্ছে করেনি,কেউ আমাকে এতটা টানেনি তুমি যতটা টানছো।তোমাকে আমি সারাজীবনের জন্য চাই।তুমি চাও আর না চাও তোমাকে,,,

কলিং বেল বেজে উঠলো।আদির কথায় ব্যাঘাত ঘটলো।সামান্তা মনোযোগ দিয়ে আদির কথা শুনছিলো ওর ও মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটলো।আদি হালকা হাসি দিয়ে দরজা খোলতে চলে গেলো।
সামান্তা ভাবছে,
এই ছেলেটা এত সুন্দর করে হাসে কেন?এই হাসিই তো আমাকে দূর্বল করে দিবে।এই হাসিতে যে আমি ফিদা হয়ে যাই সে কি জানে??হয়তো জানে না।

দু’জন ছেলে এসে টেবিলের উপর বড়বড় ৪টা প্যাকেট রাখলো।ছেলেগুলোকে বিদায় দিয়ে আদি প্যাকেটগুলো খোলে টেবিলে খাবার রাখছে।
–সামু চলে এসো।তোমার খাবার রেডি।
সামান্তা টেবিলের সামনে গিয়ে চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে।
–আপনার এখানে কদিন থাকার ইরাদা আছে বলুন তো?
–দুপুরেই আমরা বেরিয়ে যাবো।বিকেলের মধ্যে বাসায় পৌছে যাবো।
–তাহলে এত খাবার কেন?
–সব তোমার জন্য।যেটা ইচ্ছে খাও।
–দেখুন এটা সত্যি যে আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে তার মানে এই নয় আমি রাক্ষস।আপনি আমাকে এইভাবে অপমান করছেন?
–আরে বোকা মেয়ে আমি তো তোমার ফুড চয়েজ জানিনা তাই অনেক আইটেম অর্ডার কিরেছি।নেও খেয়ে নেও।

সামান্তা একটা চিকেন ফ্রাই,স্যান্ডউইচ আর এক গ্লাস জুস খেয়ে বললো আমার হয়ে গেছে।
আদি তা দেখে বলে,,ব্যাস!!এই তোমার ক্ষুধা?
তাই তো এমন স্লিম বডি।তোমরা মেয়েরা এভাবেই স্লিম থাকো তাইনা।না খেয়ে খেয়েই এমন হও।
আমাকে দেখো,আমাকে দেখে খাওয়া শিখো।খেয়েদেয়ে গলুমলু হলে আমার প্রব্লেম নেই।নিশ্চিন্তে খেতে পারো।

–কোনো দরকার নেই,,আপনি রাক্ষসের মতো খেয়ে মুটো হন আর পাথরের মতো শক্ত শরীর বানান।

আদি সামুকে ক্ষেপানোর জন্য বললো,
–তোমার শরীর যে এত নরম সেটা কালকে বুঝেছি।কি যে সফট ইচ্ছে করছিলো খেয়ে ফেলি,,,উফফ।

সামান্তা চোখ বড়বড় করে দুহাতের আংগুল খিচে রাগ ঝেড়ে চোখমুখ খিচে বেরিয়ে গেলো।আদি দরজার লক খোলেছে তাই বাইরে বেরিয়ে গেলো।আদি ওর পিছু পিছু হাটা ধরলো।বলা তো যায়না যদি চলে যায়।

সামান্তা বাগানে দাঁড়িয়ে ফুল দেখছে।আদি দূর থেকে দাঁড়িয়ে সামুকে দেখছে।সামান্তার গালের উপর রোদ পড়ে চকচক করছে।সামান্তাকে মোহিত লাগছে।পাশেই একটা পুকুর।পুকুর পাড় শান বাধানো।সামান্তা সিড়িতে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে দিলো।গ্রামের কথা মনে পড়ছে।মনে হচ্ছে গ্রামেই আছে।পানিতে পা ডুবিয়ে বাচ্চাদের মতো খেলছে।
আদি ওর পাশে গিয়ে পা ডুবিয়ে বসে পড়লো।
সামু একবার সেদিকে চেয়ে নিজের খেলায় মন দিলো।

তারপর আদিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
জায়গাটা অনেক সুন্দর।আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।

–তুমি আরো থাকতে চাও?

–থাকতে ইচ্ছে করছে কিন্তু থাকা যাবেনা,,আমার ভার্সিটি আছে।অন্য সময় আসবো।
আবার কিন্তু আসবো হু,,(বাচ্চাদের মতো বায়না করে)

–কার সাথে আসবে?

–কেন আপনার সাথে।

–আমার সাথে কেন আসবে?
আদির কথায় সামান্তা থমকে গেলো।
,(তুই আমার জামাই তাই আসবো,এটা আবার বলা লাগে)
–ঠিক আছে আসবোনা,,আপনি না নিয়ে আসলে কি করার?
আদি সামান্তার আরেকটু কাছে গিয়ে ঘেঁষে বসলো।তারপর বললো,
–আমি তো আসতেই চাই,তুমিই তো চাওনা।আচ্ছা আমাকে কি তুমি করে বলা যায়না?
–উহু।
–কেন?
–জানিনা।
–কেন জানোনা?এখনি তুমি করে বলবে।বলো।
–না,,বলবোনা।
–তাহলে পানিতে ফেলে দিবো।
–ফেলে দিন।
আদি সামান্তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।ওর ধারণা গ্রামের মেয়ে সাতার জানে।সামান্তা ভাবতেও পারেনি আদি এমন একটা কাজ করতে পারবে।ওর ইচ্ছে করছে আদির মন্ডু ফাটিয়ে দিতে।হটাৎ দুষ্টু বুদ্ধি খেললো মাথায়।ও ডুবে যাওয়ার ভান করছে।আর চিতকার করছে আমি সাতার জানি না।
আদি ওর চিতকারে ভয় পেয়ে গেলো।নিজের চুল নিজের ছিড়তে ইচ্ছে করছে।কেন ফেললো ওকে।আদি পানিতে লাফ দিয়ে সামান্তার কাছে যেতেই সামান্তা ডুব দিয়ে কিনারায় চলে এলো।
আদি তো হতবাক।সামান্তা হেসে কুটিকুটি।আদি রাগে ফেটে যাচ্ছে।
আদি ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো।আদিকে দেখে সামান্তার হাসি উবে গেলো।চোখ মুখ শক্ত করে ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।

–তুমি মজা করছো হা?আমার ভয়ে জান যায় আর তুমি মজা করো?কি করে পারো?আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয়না?তুমি জানো আমি কি পরিমাণ ভয় পেয়েছিলাম??

সামান্তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
–সরি,,আমি বুঝতে পারিনি,,,।

–তুমি বুঝবেওনা।কখনোই বুঝবেনা।

আদি পুকুর থেকে উঠে গেলো।
সামান্তা উঠে আদির সাথে যাচ্ছে।আলমারি থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে নিবে তখনই আদিও ওয়াশরুমে ঢুকতে যাচ্ছে তখনই দুজনে ধাক্কা।আদি ওর দিকে চেয়ে আছে।ভিজা জামাকাপড় গায়ে লেপ্টে আছে।ভিজা চুলগুলো গালে,গলায় লেপ্টে আছে।

–সরুন।আমি আগে যাবো।তারপর আপনি।

আদির ঘোর ভাংলো।বাকা হেসে বললো,
–চলো একসাথে যাই,,,।চেঞ্জের সাথে রোমান্স ও হয়ে যাবে।

সামান্তা আদিকে ধাক্কা মেরে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো।আদি হেসে অন্য রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।

দুপুরে খেয়েদেয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।আদি আর সামু পাশাপাশি সিটে বসে যাচ্ছে।সামু বারবার আদির দিকে তাকাচ্ছে আর গতদিনের কথা ভাবছে।

–দেখো আমি জানি আমি অনেক কিউট।তাই বলে এভাবে চেয়ে থাকবে,,আমার কিন্তু লজ্জা লাগছে।
সামান্তা হকচকিয়ে গেলো।আমতা আমতা করে বলল,
–আমি আপনাকে কেন দেখতে যাবো??
–আমাকে আবারো আপনি করে বলছো?দাড়াও তোমাকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার,,।
আদি সামুকে টেনে মুখের কাছে নিয়ে এলো।
সামু ভয় পেয়ে বললো,
–কি করছেন?এটা রাস্তা,ড্রাইভ করছেন,,এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।
–যা খুশি হোক,দুনিয়া জ্বলেপুড়ে যাক,,আমাকে তুমি করে বলো নয়তো এইভাবেই ড্রাইভ করবো।
গাড়ি কিভাবে ব্রেক করছে।আর আদিও ওর মুখের দিকে আরো আগাচ্ছে।কেমন উষ্ণ নিশ্বাস পড়ছে।
সামান্তা ভয় পেয়ে বললো,বলবো বলবো।
–আগে বলো।
–তুতু,,,মি।
–সুইট করে বলো।
–তুমি।
–এইতো গুড গার্ল।
আদি ওকে ছেড়ে দিয়েই গাড়িটা ব্রেক কশে অন্য গাড়ির সাথে ধাক্কা খেতে যাবে তখনই আদি ব্রেক ধরে গাড়িটা সরিয়ে নেয়।
সামান্তা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।কিছুক্ষণ পর চোখ খোলে আদির দিকে কটমট করে চেয়ে বললো,
পাগলামির একটা লিমিট থাকা উচিত।কি করতে যাচ্ছিলেন?নিজেও মরতেন আমাকেও মারতেন।সোজা হয়ে গাড়ি চালান।আর একটা কথা বললে আপনার খবর আছে।

–আচ্ছা আচ্ছা সরি।(এ মেয়ে আমাকে কোনোদিনও তুমি বলবেনা)

আদি গাড়ি চালাচ্ছে সামান্তা বাইরেটা দেখছে।গ্রামের মতো নিরিবিলি রাস্তা।গ্লাস খোলে দিলো। বাতাস বইছে।সামান্তার চুলগুলো উড়ছে।তখনই আচমকা সামনে থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিলো।আদি সামান্তার সামনে নিজের বামহাত রেখে গাড়ি সাইডে নেওয়ার চেষ্টা করছে।সামান্তা চিতকার করে উঠে।গাড়িটা একটা গাছের সাথে লেগে থেমে যায়।সামান্তার মাথা আদির হাতের উপর।সামান্তা চোখ খোলে মাথা তুলে আদির দিকে তাকালো।আদি স্টিয়ারিংয়ে মাথা নিচু করা অবস্থায়।সামান্তা আদিকে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে গেলো।অজানা ভয়ে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।এক হাতে আদির হাত চেপে ধরে অন্য হাত মাথায় রেখে বলল,
–আদি,,,,,!!

আদি চোখ মুখ কুচকে মাথা তুলে সামুর দিকে তাকালো সামুর চোখে পানি।মেয়েটা ভয় পেয়েছে খুব।
–তুমি ঠিক আছো?
–আরে আমি ঠিক আছি।আপনি ঠিক আছেন কিনা বলুন।
–হ্যা,,
সামু আদির কপালে রক্ত দেখতে পেলো।রক্ত দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়লো।রেগে গিয়ে বললো,
–আপনার কপালে রক্ত।কপালে কেটে গেছে।আপনাকে আমি বারবার বলছি মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালান।মনোযোগ দিন।ফাইজলামি বন্ধ করুন।কিন্তু আপনি তো আমার কোনো কথাই শুনছেন না।

আদি কপালে হাত দিয়ে সামনে এনে দেখে রক্ত।সামুকে বলে,,
–ট্রাস্ট মি,,এবার আমার কোনো দোষ নেই।আমি ঠিক ভাবেই চালাচ্ছিলাম।ওই গাড়িটাই মনে হচ্ছে নেশা করে চালাচ্ছে।
সামান্তার মেজাজ সপ্ত আসমানে।গাড়ি থেকে নেমে সামনে থামনো গাড়ির কাছে গেলো।একটা ছেলে বসে আছে সেও হয়তো সামান্য আহত হয়েছে।দেখে মনে হচ্ছে হুশে নেই।

–ওই বের হ।তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বের হ।
ছেলেটা ভ্রু কুচকে সামুর দিকে তাকালো।
–কে রে?বের হবো কেন?
–তোর জম।
সামু গাড়ির দরজা খোলে ছেলেটার কলার ধরে বের করে আনে।ছেলেটা নেশাগ্রস্ত থাকায় সুবিধা হয়েছে।
–ওই গাড়ি চালাস না প্লেন?রাস্তা কি তোর দাদার যে মদ খেয়ে টাল হয়ে গাড়ি চালাবি আর অন্যের গাড়ি উড়িয়ে দিবি?
–ছাড় বলছি।
–শালা,,,সরি না বলে ছাড়তে বলিস?দাড়া।
সামু ওকে ছেড়ে দিয়ে কিছু খোজতে লাগলো। গাছের একটা ডাল পেয়ে গেলো।সেটা তুলে ছেলেটাকে মারতে লাগলো।
–তোর জন্য আমার বরের কপাল কেটেছে৷ কতগুলো রক্ত বের হয়েছে।তোর ও ততখানি রক্ত বের করেই শান্ত হবো।তার আগে নয়।

ছেলেটা ছটফট করছে।
–মারছেন কেন?আমি ইচ্ছে করে করিনি।

আদি গাড়িতে বসে সামুর কান্ড দেখে কপালে হাত।এ কি মেয়েরে বাবা।একে না থামালে মার্ডার করে দিবে।আমার সংসার করার স্বপ্ন শেষ।আদি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে সামুর সামনে গেলো।
ছেলেটা বলছে,
আপু সরি,,মাফ করে দিন।আর এমন হবেনা।
–কিসের সরি??তোকে আজ আমি খুন করবো।মদ খাবি,,টাল হয়ে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবি?চিনিস আমাকে?আমি সামান্তা সেহনুজ চৌধুরী।আজকের পর আমার নামটা আজীবন মনে রাখবি।
–জ্বী আপু কোনো দিন ভুলবোনা।আজীবন মনে রাখবো।
সামান্তা ঘেমে নেয়ে গেছে।কিন্তু থামছেনা।আদি ওকে টেনে নিয়ে এলো।সামান্তা আদির থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
–ছাড়ুন,,ওকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।এইসব লোকের জন্য আজাইরা ফুর্তির জন্য কত এক্সিডেন্ট হয়।কত মানুষ মারা যায়।যদি আজ আপনার কিছু হয়ে যেতো।

আদি সামান্তাকে জোর করে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো।সামান্তা তখনো জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
–আমি ঠিক আছি,,কিছু হয়নি আমার।
সামান্তা আদিকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো।ওর মনে হচ্ছিলো ও আদিকে হারিয়ে ফেলছিলো।সামান্তা শান্ত হলে ওকে গাড়িতে নিয়ে বসায়।আদি লুকিং গ্লাসে নিজের কপাল দেখে।রক্ত কপাল বেয়ে পড়ছে।আদি টিস্যু নিয়ে মুছতে গেলে,,
সামু ধমক দিয়ে বললো,
–আর ইউ ম্যাড?টিস্যু দিয়ে ক্ষতস্থান মুছবেন?টিস্যু কাটা জায়গায় আটকে থাকবে,,ইনফেকশন হতে পারে।মাথা এদিকে আনুন।

সামান্তার ওড়না টিস্যু কাপড়ের।তাই কামিজের কোনা দিয়ে ওর কপাল মুছে দিলো।আদির খুব ব্যথা লাগছে কিন্তু প্রকাশ করছেনা।কারণ এই ব্যথা তার কাছে মধুময় লাগছে।তার প্রেয়সী মলম লাগিয়ে দিয়েছে অলরেডি।

–গাড়ি স্টার্ট দিন।আর সাবধানে চালাবেন।

আদি মৃদু হেসে গাড়ি স্টার্ট দুলো।সামান্তা মুখে যাই বলুক না কেন ও যে আদিকে ভালোবাসে সেটা বুঝাই যাচ্ছে।

সামান্তা চুপ হয়ে গেছে।আদিও কিছু বলছেনা শুধু অনুভব করছে।একটা ফার্মেসী দেখে আদিকে বললো,
–স্টপ দ্যা কার।
আদি গাড়ি থামিয়ে সামুর মুখের দিকে চেয়ে বললো, কি হয়েছে?
–নামুন,,বলছি।
আদি সামুর কথামতো নেমে গেলো।সামান্তার পিছে পিছে গেলো।সামান্তা একটা ফার্মেসীতে গিয়ে একটা ছেলেকে বললো,
ভাইয়া,,ওনাকে একটু ব্যান্ডেজ করে দিন তো।
আদি বললো বাসায় গিয়ে করে নিলেই তো হতো।
–চুপ করুন।
আদি চুপচাপ ব্যান্ডেজ করে নিলো।

–তুমি আমার এতো কেয়ার করো জানতাম না তো?
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিতে।
–এখন এতো কথা না বলে গাড়ি চালান।
কিছুক্ষণ পর বললো, তুমি তো খুব ডেঞ্জারাস।আগে সন্ত্রাসী ছিলে নাকি?

–মি.মাথামোটা ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি আমার কলেজের গার্লস লিডার ছিলাম।কত ছেলেকে ধরে পিটিয়েছই জানেন।সব কটা আমাকে ভয় পেতো।যারা মেয়েদের বিরক্ত করতো তাদের বেধে পেটাতাম।অনেক ছেলেকে বিভিন্ন শাস্তি দিয়েছি।

–যেমন??

–শীতের সকালে কলেজে বিশাল পুকুরে ১০টা ডুব দেইয়েছি।কাউকে এ পাড় থেকে ওপারে সাতার কেটে যেতে বলেছি।কাউকে পুরো কিলেজের ওয়াল দিয়ে হাটিয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি। কত্ত মজার ছিলো দিনগুলো।

–আমার তো এখন থেকে সাবধানে থাকতে হবে।কবে আমার হাত-পা ভেঙে দেও।আল্লাহ নোস।
তবে যাই বলো থ্যাংকস গড!!ভাগ্যিস আজকে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো নয়তো জানতেই পারতাম না আমার বউ আমাকে এত্ত ভালোবাসে।

–কিসের ভালোবাসা? কোনো ভালোবাসা ণয়।

–তুমি যাই বলো না কেন,,ইউ লাভস মি,,একদিন স্বীকার করবে।

আদি আর সামু বাড়িতে ঢুকতেই নিশি দোড়ে এসে বললো,
–সামু কেমন সারপ্রাইজ দিলাম?

–অনেক সুন্দর।এত সুন্দর যে আমার জান যায় যায় অবস্থা।

আদির মা এসে বললো,
–মানে?

–মানে,,আমি কোচিং শেষে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি তখন কেউ এসে মুখে রুমাল দিয়ে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় নিজেকে বন্ধ ঘরে আবিষ্কার করি।তারপর ওনাকে দেখি।আমাকে লক করে রেখে দেয়।

আদি ইশারায় বারবার না করছে কিন্তু সামু গরগর করে সব বলে দিচ্ছে।আদির মা এবার আদির দিকে চোখ পাকিয়ে চাইতেই আদি কপাল থেকে চুল সরিয়ে বললো,
এই দেখ এই কারণে ও আমার মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে।
–না মা মিথ্যা বলছে।এটা তো গাড়িতে এক্সিডেন্ট হয়েছে।
–কি বলছিস কিভাবে?
সামান্তা সব খোলে বললো।আদির মা আদিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

.
.
.
.

নিশি আর আদি বসে বসে গল্প করছে তখনই সামু ভার্সিটি থেকে ফিরছে।ওর মুখটা দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।
নিশি সামুকে বললো,
সামু আজ রাতে আমরা পার্টিতে যাচ্ছি।তুই, ভাইয়া আর আমি।
সামু আদির দিকে চেয়ে মুখ ভার করে বললো, আমি যাবোনা আপু,,ভালো লাগছেনা।
সামান্তা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আদি ওকে চেপে ধরলো।সামান্তা আদিকে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে যায়।
–কেন যাবেনা?আমি যাবো তাই? আমার সঙ্গে যেতে প্রব্লেম?
সামান্তা ঠান্ডা গলায় বলল,দেখুন আপনার যা ভাবার ভাবুন কিন্তু আজকে আমি ওই পার্টিতে যাবোনা।

–কেন ওই পার্টিতে কি প্রব্লেম?

–আমার ভালো লাগছে না আমি যাবোনা।আপনার যেতে হয় যান।
সামান্তা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

আদি মনে মনে বলছে,
এভাবে এভয়েড করছো?তোমাকে আগে খাচায় পুরি তারপর দেখবে আদি কি জিনিস,,,

সামু ভার্সিটি থেকে ফিরার সময়,
গেইট থেকে বের হয়েই দেখে রাজ দাঁড়িয়ে আছে।
–আপনি?আপনাকে না ভার্সিটি আসতে মানা করেছি?
–দুদিন যাবত তোমার খবর পাইনি তোমার ফোন অফ।তাই খোজ নিতে বাধ্য হয়েই এসেছি।
–আমি বেচে আছি।মরিনি।
–ফোন অফ কেন?
–প্রথমত বাসায় ছিলাম না।আর দ্বিতীয়ত আমাকে আর ফোন দিয়ে পাবেন না।
–মানে?
–মানে ওইদিন ই বলেছি আদি আপনার ফোন দেওয়া পছন্দ করে না।তাই সিম ভেঙে ফেলেছে।প্লিজ আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না।
–তুমিও সেটাই চাও?
–অবশ্যই কেন নয়?আমি বিবাহিত।আমাকে আমার হাসব্যান্ড শ্বশুর বাড়ির কথা মতো ই চলতে হবে।
সরি,মাফ করবেন।আমি আপনার সাথে ফ্রেন্ডশিপ রাখতে চাইনা।বায়।
সামু কথাটা বলেই চলে আসছিলো। রাজ পিছনে থেকে বললো,
–তুমি না চাইলেও আমি আসবো,তোমার খোজ নিবো।
সামু রেগে গেলো।
–মানে কি,,জোর জবরদস্তি নাকি?
–হ্যা তাই।
–তাহলে শুনে রাখুন,,এসব করলে ঝামেলায় পরে যাবেন।আদি ইস ক্রেজি এবাউট মি,,ও যদি জানে তবে খারাপ হয়ে যাবে।
রাজ চোখ মুখ শক্ত করে বললো, তো জানাও,,,কে নিষেধ করেছে?আদি যদি ক্রেজি হয় তবে আমিও ক্রেজি।যা হওয়ার হবে আই ডোন্ট কেয়ার।
সামু কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে।
সামুর আদির কথাগুলো ভালো লাগেনি।তাই ওর থেকে দুরে থাকাই ভালো।আদি জানলেও ঝামেলা করবে তাই না জানানোই বেটার।

চলবে,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৯

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা?
পর্ব-৯
ফাবিহা নওশীন

সামান্তার জ্ঞান ফিরায় পিটপিট করে চোখ মেলছে।চোখ মেলে নিজেকে শুয়া অবস্থায় আবিষ্কার করে।হটাৎ করেই ওর আগের ঘটনা মনে পড়ে।ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে এটা মনে পড়তেই আতকে উঠে।শুয়া থেকে এক লাফে উঠে বসে।
–ঘুম হয়েছে জানেমন?
–তুতুতু,, মি!!!মানে আপনি?তারমানে আপনি করেছেন এসব?
–তাছাড়া আর কে?কার এতো বুকের পাটা যে আদির বউকে কিডন্যাপ করবে?
সামান্তা আদিকে দেখে স্বস্থি পেলো।কি ভয়টাই না পেয়েছিলো।
((যারা ভেবেছিলেন রাজ তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা))

আদি সামান্তার বিছানার পাশে এসে বসল।সামান্তা ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিলো,,।

–আপনি এতো খারাপ কেন?এভাবে কেউ নিজের বউকে কিডন্যাপ করে?আমি কি ভয়টাই না পেয়েছি।

–আহারে সোনা কাদে না।এ ছাড়া আর কি করতাম তুমি তো ভালো কথার মেয়ে না তাই কিডন্যাপ করাই ব্যাটার মনে হলো।

–আমি কত্ত ভয় পেয়েছিলাম।ভেবেছিলাম কে না কে,,,,

–কেন এখন ভয় পাচ্ছো না?

সামু ভ্রু কুচকে বললো, আপনাকে কেন ভয় পাবো?আপনি বাঘ না ভাল্লুক?

–বাঘ ভাল্লুক বলে নয় তুমি আমাকে ভরসা করো তাই ভয় পাচ্ছোনা।আমার জায়গায় অন্য একটা ছেলে হলে ঠিকি ভয় পেতে।পেতে কিনা বলো।

–(অবশ্যই ঠিক)আমি বাড়ি যাবো।

–বাড়িতো যাওয়া যাবেনা।

–কেন?

–কারণ আমরা বাড়ি থেকে অনেক দূরে আছি।আর এখন অনেক রাত।

–মানে কি?আমরা কোথায় এসেছি?কেন এসেছি?বাসার সবাই চিন্তা করবে আমার জন্য।

–না করবেনা।সবাই জানে আমরা এখানে এসেছি।

সামু ভ্রু কুচকে বললো,
–এখানে কেন এসেছি?

আদি বাকা হেসে বললো, হানিমুন করতে।

–কিহ!!আমি এখনি চলে যাবে।

–ইউ কেন ট্রাই।

সামু রুম থেকে বের হয়ে গেলো।এই ঘরটা দুতলায়।দুতলা থেকে একটা সিড়ি গেছে নিচের দিকে।
সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো।লিভিং রুম,ডাইনিং,কিচেন।মোটামুটি বড়সড় বাড়ি এটা বুঝা যাচ্ছে।বাড়ির দেয়াল বেশিরভাগ গ্লাস দিয়ে তৈরি।বাইরেটা দেখা যাচ্ছে।কি অন্ধকার।বুঝাই যাচ্ছে অনেক রাত হয়েছে।সামু মেইন ডোরের দিকে গেলো।মেইন ডোরের কাছে গিয়ে নানান ভাবে খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই খোলছেনা।

–ওভাবে খোলবেনা বউ।পাসওয়ার্ড দিয়ে খোলতে হয়।
আদি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো।

সামান্তা আদির কথা শুনে পাসওয়ার্ড দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে।উল্টো পাল্টা যা মনে চাইছে চাপছে।কিন্তু কিছুতেই কিছু না।সামান্তা চেষ্টা করতে করতে হাপিয়ে যাচ্ছে।
সোফায় বসে নিজেকে রিলেক্স করছে।আর ভাবছে এই ছেলের সাথে একা এক বাড়িতে থাকা ইম্পসিবল।সবাই আমাকে না জানিয়ে কিভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিলো?

–কি ভাবছো গো?(ছটফটানি পাখি এইবার তোমাকে খাচায় পুরেছি,যাবে কই)

–দরজা খোলেন।

— পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি সকালের আগে মনে পড়বেনা।

–দেখুন,,

–দেখছি তো।সারা রাস্তা দেখতে দেখতে এসেছি,সারারাত দেখবো।আর কত চাও,,(বাকা হেসে)

–আপনি একটা অসভ্য।

–অসভ্য কথায় একটা কথা মনে পড়লো।আমি তোমার অজান্তেই তোমার সাথে একটা অসভ্যতামি করে ফেলেছি।

সামান্তা ধপ করে উঠে গেলো তারপর চোখ বড়বড় করে বললো, কি??কি করেছেন?

–তোমার ঠোঁটে একটা,,

সামান্তা কিছু খোজছে,একটা প্লাস্টিকের হাতল পেলো।সেটা হাতে নিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
–আদির বাচ্চা,,আপনি আমাকে প্রথমে কিডন্যাপ করেছেন,তারপর এখানে আটকে রেখেছেন আর এখন বলছেন ছি,,আমি তো আজ আপনাকে,,

–ও,,এম,,জি,,।বউ ক্ষেপেছে।ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে তৈরি।আদি পালা,,

সামু,আদির পিছনে দৌড়াচ্ছে।উদ্দেশ্য আজ ওকে পেলেই হলো,,পুরো লিভিং রুম,ডাইনিং উপর নিচ দৌড়াচ্ছে কিন্তু আদিকে ধরতে পারছেনা।যে রুমে সামুকে এনে রেখেছিলো সামান্তা সেখানে দাড়িয়ে গেলো।কোমড়ে দুহাত রেখে বড়বড় শ্বাস নিচ্ছে।প্রচুর দৌড়েছে।
আদি সামনে এসে বললো কি হলো টায়ার্ড?
সামু চোখ না তুলে কিছু না বলেই হাতের লাঠি দিয়ে আদিকে মারতে লাগলো।
–সামু,লাগছে,,
আদি সামুকে ধরে ফেললো।হাতের লাঠি নিয়ে দূরে ফেলে দিলো।সামু আদিকে ধাক্কাচ্ছে।আদি সামুর দুহাত এক হাতে চেপে পিছনে ধরে রাখলো।সামু নিজের কাধ দিয়ে আদিকে জোরে ধাক্কা দিতেই তাল সামলাতে না পেরে বেডে পড়ে গেলো।সামুর হাত ধরে রাখার কারণে সামু ওর বুকের উপর পড়ে গেলো।বুকের হাড়ের সাথে নাক লাগায় নাকে প্রচন্ড ব্যথা পেলো।মাথা তুলতে পারছেনা।
আদি বাকা হেসে বললো,
–হাও,,রোমান্টিক!!
সামু মাথা তুলে বললো,
–ক্রেজি ইনশান।
বলে আদির উপর থেকে উঠতে গেলে আদি ওকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দুহাতে ওর পিঠ চেপে ধরলো।সামান্তা উঠতে পারছেনা।পা দিয়ে আদিকে মারছে আর উঠার চেষ্টা করছে।

–ছাড়ুন,,

–ছটফটানি পাখি এতো ছটফট করো কেন?এত কাঠখড় পুড়িয়ে তোমাকে এখানে এনেছি ছেড়ে দেওয়ার জন্য?বাড়িতে তো শুধু ছটফট করো।কথা বলতে গেলে উড়াল দেও।তাই তোমার ডানা কেটে খাচায় বন্দী করেছি।আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না চাইবো তুমি কিচ্ছু করতে পারবেনা।

–কেন এনেছেন এখানে?কি চাই?

–এখনো বুঝো নি??বাসর করতে এনেছি।(বাকা হেসে)

–(দাড়া দেখাচ্ছি মজা)তা করুন বাসর।আজ বাসর করবেন কাল এক হালি বাচ্চার বাপ হবেন।দুজন দু কাধে আর দুজন কোলে নিয়ে ঘুরবেন।।আপনার তো এখনো বিয়ের বয়স ই হয়নি।অথচ ৪টা বাচ্চা আপনাকে বাবা বা বলে পাগল করে দিবে।হাও কিউট!!

–(আমি ভয় দেখাচ্ছি না আমাকে ভয় দেখাচ্ছে?আমিও কম যাই না)তা হোক না।বিয়ে করেছি আর বাচ্চা হবেনা তা তো হয়না।এক হালি বাচ্চা তোমাকে মাম্মি বলে ডাকবে আর আমাকে পাপা বলবে।কত্ত মজা হবে বলো।চলো শুরু করি।

সামান্তা আদির কথায় দমে গেলো।তারপর খুক খুক করে কাশতে লাগলো।
–আমার গলা শুকিয়ে গেছে।আমি পানি খাবো।ছাড়ুন।

আদি সামান্তাকে ঘুরিয়ে বিছানায় শুইয়ে ওর উপর নিজের ভর ছেড়ে দিলো।সামান্তা আদির এহেন কাজে ভয় পাচ্ছে।ওর বুক ধুকপুক করছে।
তোতলাতে তোতলাতে বললো,,
–কি,,করছেন,,টাকি?

হটাৎ আদির চেহারার রং পাল্টে গেলো।হাসিখুশি মুখটা নিমিষেই লাল হয়ে গেলো।দাতে দাত চেপে বললো,
–সব সময় এতো বাহানা খোজো কেন দূরে যাওয়ার,?আমি কি বলেছি শুনোনি?তুমি এখন আমার অধীনে।আমি না চাইলে তুমি কিছু করতে পারবেনা।

সামু আদির চেহেরা দেখে ঘাবড়ে গেলো।আদি রেগে গেছে এখন চুপ থাকাই শ্রেয়।নয়তো রাগের বশে উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলবে।সামান্তা চুপ করে আছে।নড়ছেও না।

আদি বললো,
–যা যা জিজ্ঞেস করবো সুন্দর করে উত্তর দিবে নয়তো,,,,বুঝতেই পারছো কি করবো?

–না,,বলুন।সব উত্তর দিবো।

–রাজের সাথে কি চলছে?

সামু যা ভেবেছিলো তাই।
–কিছুনা।কিছুই চলছে না।

–তাহলে তোমাকে ফোন দিয়েছিলো কেন?

–জানিনা।

–তোমার নাম্বার কোথায় পেলো?

–আমি দেইনি।ওনি আমার ফোন থেকে নিয়েছে।

–তোমার ফোন থেকে কিভাবে নেয় হা?যাইহোক তোমার সিম আমি ভেঙে ফেলেছি।নতুন সিম দিয়েছি।তুমি যদি আর কখনো ওর সাথে কথা বলো তাহলে আদির আসল রুপ দেখবে।
তোমাকে আমি সেদিন ফোন করে মানা করেনি ওর থেকে দূরে থাকতে,,কিন্তু তুমি শুনোনি।এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।

সামান্তা ভয়ে ঢুক গিলে বললো,
প্লিজ,,,।
আদি ওর কথা না শুনে সামান্তার গলায় কুটুস করে কামড় বসিয়ে দিলো।

সামান্তা “আউচ” করে গলায় হাত দিলো।

–কি হলো জানেমন ব্যথা পেয়েছো?

সামান্তা মাথা নেড়ে না বলল।

আদি বাকা হেসে বললো,তাহলে আরেকটা দেই?

–নানায়ায়ায়া,,,আমি ব্যথা পেয়েছি।এমনিতেই আপনি আমার এত সুন্দর নাকটা থেতলে দিয়েছেন।

–আমি কখন তোমার নাক থেতলে দিলাম?

–যখন আমি আপনার উপর পড়েছি,,আপনার এই পাথরের মতো শক্ত শরীর আমার নরম কোমল নাকটা থেতলে দিয়েছে।

–ব্যথা পেয়েছো খুব?দাড়াও আদর করে দিচ্ছি।
আদি আলতো করে সামান্তার নাকে ঠোঁট ছোয়ালো।

সামান্তা আবারো ফ্রিজ হয়ে গেলো।
আদি মৃদু হেসে বললো,আলমারিতে তোমার জন্য জামাকাপড়,প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর তোমার ব্যাগ আছে।ফ্রেশ হয়ে নেও।ফোন আমার কাছে বাসায় গেলে ফেরত পাবে।

সামু আমতা আমতা করে বলল,
–বাসায় কখন যাবো??

–আরে এতো অস্থির কেন হচ্ছো?স্বামীর সাথেই তো আছো?

সামান্তা চুপ করে আছে।
–কি হলো উঠবে না,তোমার কি এভাবে থাকতে ভালো লাগছে?
সামান্তা আদিকে ধাক্কা মেরে উঠে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আদি হাতের উপর মাথা দিয়ে হোহো করে হেসে দিলো।

–সামু,,তোমাকে তো হাসিল করেই ছাড়বো।ভালো লাগুক আর না লাগুক তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।বাসায় গিয়ে বাবার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে ফেলবো।তোমাকে আমার চাই চাই।

সামু আদিকে গালাগাল করছে,
এখনি এমন লুচ্চামি করছে,না জানি সারারাত কি করে??আমি এখানে থাকবোনা।আল্লাহ রক্ষা করো।সব ওই রাজের জন্য হয়েছে।ব্যাটা আমাকে না ফোন দিতো না আমাকে শাস্তি দিতে এখানে নিয়ে আসতো।

সামু আলমারি খোলে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ দেখতে পেলো।সেখান থেকে নীল রঙের একটা লং ড্রেস পড়ে নিলো।ফ্রেশ হয়ে চুল আচড়ে একটু সাজগোজ করতে নিয়েও করলো না।আদি আবার কি না কি ভাবে,,তাই সিম্পল ভাবেই নিচে গেল।

আদি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর ব্লু কালার টিশার্ট পড়ে ডাইনিংয়ে বসে আছে।সামান্তাকে দেখে হাসতে শুরু করলো।
সামু চোখ মুখ কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
হাসছেন কেন?
–তুমি দেখছি আমার সাথে ম্যাচিং করে ড্রেস পড়েছো।
সামু নিজের দিকে আর আদি দিকে চেয়ে অবাক হয়ে বললো,
–আমি ম্যাচিং করে পড়িনি ইটস জাস্ট এন এক্সিডেন্ট।
–বিউটিফুল এক্সিডেন্ট।
আমার খুব খিদে পেয়েছে।চলো খাওয়া শুরু করি?
সামান্তা টেবিলে দু প্যাকেট পিজ্জা,সালাদ আর দুটো কোকের বোতল দেখতে পেলো।
সামান্তা বললো, কি খাবো?
–কেন পিজ্জা,,
সামান্তা ভাবলেশহীন ভাবে বললো,আমি পিজ্জা খাইনা।
আদি অবাক হয়ে বললো,সত্যি না মজা করছো?
–আপনি একজনকে কিডন্যাপ করেছেন কিন্তু সে কি খায় না খায় জানেন না?
–তুমি আসলেই খাওনা?ঠিক আছে তুমি বসো আমি তোমার জন্য বাইরে থেকে কিছু নিয়ে আসি।
আদি উঠে কয়েক কদম বাড়াতেই সামু আদির হাত ধরে ফেললো।
–আরে এখন রাত ১১টা।আর এটা কোনো শহর নয়।এতরাতে বাইরে যেতে হবেনা।আমি ম্যানেজ করে নিবো।
কথা শেষেই হাতের দিকে খেয়াল গেলো।সামু এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে নিলো।
আদি বললো,
–তুমি সারারাত না খেয়ে থাকবে?

সামান্তা বললো,এই দুটো পিজ্জা আপনার, তার বদলে এই দুটো কোক আমার।আপনি একটাও পাবেন না।

–একটুও না?

–না।

সামান্তা কিছু সালাদ খেয়ে দুটো কোক নিয়ে উঠে গেলো।পর্দা সরিয়ে গ্লাসের সামনে দাড়ালো।বাইরে অল্প অল্প বৃষ্টি পরছে।আদি টেবিলে নিজের মতো খাচ্ছে।সামান্তা সেদিকে একবার চেয়ে গান ধরলো।

??
যাও পাখি বলো হাওয়া ছলছল
আব-ছায়া জানালার কাচ।
আমি কি আমাকে হারিয়েছি বাকে,
রুপকথা আনাচে-কানাচ।
আংগুলের কোলে জ্বলে জোনাকি,
জলে হারিয়েছি কান শোনা কি,
জানালায় গল্পেরা কথা মেঘ
যাও মেঘ চোখে রেখো এ আবেগ।

আদির পায়ের শব্দে সামান্তা গান থামিয়ে দিলো।
আদি গান থামানো দেখে বললো,
কি হলো গান থামালে কেন?ভালো গান ই তো গাইছিলে।
সামান্তা কথা ঘুরানোর জন্য বললো,
আপনি কোক খাওয়ার জন্য বেয়াহার মতো এখানে এসে পড়েছেন?

–উহু,,বাইরে বৃষ্টি পরছে।এমন রোমান্টিক মোমেন্টে কোক কেন খেতে চাইবো?

সামান্তা জানালা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পাশের টেবিলে কোকের বোতল রেখে বললো,
–নিয়ে যান।এত বাহানা করতে হবেনা।আমি এতো খেতে পারবোনা।
আদি কিছু বলছে না নড়ছেও না।সামান্তা আদির চোখের দিকে চাইতেই ভয় পেয়ে গেলো।কেমন নেশাভরা দৃষ্টি।কোনো কিছু পাওয়ার তীব্র আকাংখা।সামান্তার কেমন গন্ডগোল লাগছে।এখান থেকে সরে যাওয়াই ব্যাটার মনে হচ্ছে।সামান্তা আদিকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আদি ওকে ধরে ফেলে।
ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।সামান্তার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আদির চোখে সামান্তাকে কাছে পাওয়ার নেশা দেখতে পাচ্ছে।আদি সামান্তার কোমড়ে হাত রেখে সামান্তা নিজের সাথে মিশিয়ে অন্য হাতের দু আংগুল দিয়ে ওর গালে স্লাইড করতে লাগলো।সামান্তা চোখ বন্ধ করে ফেললো।
সামান্তার বিষয়টি ভালো মনে হচ্ছে না।কেমন ভয় ভয় লাগছে।তাই চোখ বন্ধ করা অবস্থায় বললো,
–কি করছেন?
–চোখ খোলো।
–না,,
–খোলো বলছি,,
সামান্তা চোখ খুলল।
–আমি তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম আমি গাড়িতে তোমার সাথে কিছুই করিনি।আমি তোমার সাথে যা করবো তা তোমার সজ্ঞানেই হবে।হোক সেটা তোমার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।বুঝেছো?
সামান্তা কিছু না বুঝেই বললো,
–হুম।
–কি হুম,,?
–আমাকে ছাড়ু,,,,উমম।
সামান্তা পুরো কথা শেষ করার আগেই ওর চুলের ভাজে হাত ডুবিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।সামান্তা চোখ বন্ধ করে ফেললো।কেন জানি সামু বাধা দিতেও পারছেনা।অজানা কোনো কারণে। সামু দুহাতে জামা খাচমে ধরে রেখেছে।আদি পাগলের মতো কিস করছে।১০মিনিট পর আদি সামুকে ছেড়ে দিয়ে সামুর কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।দুজনেই হাপাচ্ছে।
আদি কিছুক্ষন পর কপালে মাথা ঠেকানো অবস্থায় বললো,
–সামু আই রিয়েলি লাভ ইউ।প্লিজ গিভ মি এ চান্স।মেরি মি এগেইন প্লিজ।

??

রাত ১২টা ৩০।ঘুমানোর জন্য সামু রুম খোজছে।কিন্তু অবাক করা বিষয় সব রুমের দরজা লক করা।এটা কে করেছে, কেন করেছে সামু ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে।আদি বিছানার এক পাশে আয়েশ করে শুয়ে আছে।সামান্তা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে তা দেখে আদি বললো,
–ওখানেই দাড়িয়ে থাকবে না এখানে এসে ঘুমাবে?

সামু মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো,
–আমি আপনার সাথে শুবোনা।আমাকে অন্য রুমের দরজা খোলে দিন।

–সরি সেটা হবেনা।তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।ভয় পেও না আমি কিছু করবোনা।

সামান্তা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।রুমের ভিতরে আসছেনা।আদি উঠে গিয়ে সামুকে কোলে করে এনে বেডে শুইয়ে দিলো।সাথে সাথে সামু উঠে বসলো।
–দেখুন আমি আপনার সাথে এক বিছানায় থাকবোনা।প্লিজ জোর করবেন না।আপনি আমার সাথে থাকতে কম্ফোর্ট হলেও আমি নই।

আদি কিছুটা রেগেই বললো,
–কেন নও?একটু আগেই তো,,,।যাইহোক আমাকে কি তোমার একটুও বিশ্বাস হয়না?বলছি তো কিছু করবোনা।আমি যখন বলেছি আমার সাথে থাকবে ব্যাস,থাকবে।আমি শুধু তোমার সাথে পাশাপাশি ঘুমাতে চাই আর কিছুনা।

বলেই আদি রুমের দরজা লক করে লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করে বিছানার কিনার ঘেষে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।সামান্তাও কোন উপায় না দেখে বিছানার অপর পাশে শুয়ে পরলো।

চলবে,,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৮

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-৮
ফাবিহা নওশীন

??
সামান্তা ডিনার শেষে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ফোন বেজে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে আননোন নাম্বার থেকে ফোন।হয়তো আদি।আদির নাম্বার সেভ করা হয়নি।এতরাতে আদি ছাড়া আর কে ফোন দিবে?
–হ্যালো,,
–হায়,কি করো?
সামু ভড়কে গেলো এতো আদির নাম্বার নয়।
–কে আপনি?
–সামু তুমি আমার নাম্বার এই পর্যন্ত সেভ করোনি?আমি রাজ।
–(এই ব্যাটা ফোন দিছে কেন)না আসলে বিজি ছিলাম ফোন হাতে নেওয়া হয়নি।
–কি নিয়ে এতো বিজি থাকো?
–ফ্যামিলি,পড়াশোনা এই,,
–ডিনার করেছো?
–কিছুক্ষণ আগে।
–ঘুমাবে কখন?
–ফ্রেশ হয়েছি,এখনি ঘুমাবো।আগামীকাল ভার্সিটিতে ক্লাস আছে।
–কাল তোমার ভার্সিটিতে অপেক্ষা করবো।
–আপনি আমার ভার্সিটিতে অপেক্ষা কেন করবেন?
–দেখা করতে?
–আমার কম্পিউটার, ল্যাপটপ সব ঠিক আছে।আপনি প্লিজ আমার ভার্সিটিতে আসবেন না।
–আচ্ছা তাহলে অন্য কোথাও?
–আমার সময় হবেনা।কাল ক্লাস,কোচিং শেষ করে সন্ধ্যা হবে বাসায় ফিরতে।
–তাহলে অন্য দিন।
–দেখা যাবে।
–তুমি কি আমাকে এভয়েড করছো?নিশিতা ভাবী তো এমন করেনা।
–(আমি তো আপনার নিশি ভাবী না)না তা কেন করবো?আমি আপনার সাথে দেখা কেন করবো?আমি বিবাহিত একটা মেয়ে,এটা খারাপ দেখায়।
–কেন খারাপ দেখাবে?আমরা ফ্রেন্ডশিপ করেছি।
–(কখন করলাম)আমার এটা ঠিক মনে হচ্ছেনা তাই।যাইহোক এখন রাখছি।
–আচ্ছা,বায়।

উফফ বাবা বাচা গেলো।ফোন রেখে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলে বেনি করছে সামান্তা।তখন আবার ফোন বেজে উঠলো।সামান্তা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে বললো,
–আমি এখন ঘুমাবো প্লিজ।
–এটা কেমন কথা? ফোন রিসিভ করেই আমি এখন ঘুমাবো প্লিজ।আগে আমার কথা তো শুনবে?
সামু ফোন কান থেকে সরিয়ে স্কিনের দিকে তাকালো।এটা কে?আদির কন্ঠ।
–না মানে।
–কি মানে?
–আপনার কয়টা নাম্বার?একেকদিন একেক নাম্বার,,
–তিনটা।তারমানে তুমি জানতে না এটা আমার নাম্বার?
–না,,
–তাহলে কাকে মনে করে বলেছিলে ঘুমাবে?(রাগান্বিত স্বরে)
–(হায় আল্লাহ ধরা খাইছি)আপনাকে মনে করেই।কারণ এই রাত দুপুরে আপনি ছাড়া আর কে ফোন দিবে?
–ওহহ,,যাইহোক ছাদে এসো।
সামান্তা ভাবছে
(কিসের জন্য ছাদে ডাকছে?তখন যে বললো,,,)
সামান্তা ঢোক গিলে বললো,
–আমি আসতে পারবোনা।
–আরে ভয় পেওনা কিছু করবোনা জাস্ট একটু কথা বলবো।খুব জরুরি কথা।
–রাতদুপুরে কিসের কথা?
–সেটা জানতে হলে আসতে হবে।সময় ৫মিনিট।
বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো।
সামু কনফিউশনে যেন না পরে তাই রাজ ও আদির নাম্বার নাম দিয়ে সেভ করে নিলো।
সামু টিশার্ট চেঞ্জ করে একটা কামিজ পরে ওরনা জড়িয়ে দৌড়।

আদি ছাদের রেলিংয়ে বসে আছে।পড়নে নেভি ব্লু টিশার্ট আর নেভি ব্লু টাওজার।চুলগুলো এলোমেলো।সামু ধীর পায়ে ছাড়ে উঠে।আদিকে রেলিংয়ে বসে থাকতে দেখে।এক পলক ওর দিকে চেয়ে ভয়ে ভয়ে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তারপর আবার থেমে গেলো।ওর ভয়ের কারণ এত রাতে ছাদে একা।আর সেদিন আদির যে রুপ দেখেছে।এখনি নিজের গাল দুটো ঢেকে রাখতে ইচ্ছে করছে।

ওখানে দাড়িয়েই রাত পার করে দিবে?না এই দিকে আসবে?
আদির কথায় ঘোর কাটলো সামুর।সামু সোজা ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো।
–বলুন।
আদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামুর চোখের দিকে চেয়ে আছে।সামুর কেমন জানি লাগছে।এ দৃষ্টি অন্য দিনের চেয়ে আলাদা।তাই চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
–থুম মেরে না থেকে যা বলার বলুন।
–আমি আমার আর তোমার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সামান্তা অবাক হয়ে বললো,
সিদ্ধান্ত?(ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলবেনা তো)
–হ্যা,
আদি সামনে থাকা রাস্তাটা দেখছে।তারপর সামান্তার হাত ধরে কাছে এনে সামান্তার দুহাত নিজের দুহাতে আবদ্ধ করে।সামান্তা অবাক হয়ে আদির কার্যকলাপ দেখছে।
সামান্তার চোখে চোখ রেখে শান্ত কন্ঠে বললো,
–আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না?
সামান্তা আদির চোখের দিকে চেয়ে আছে।অদ্ভুৎ দৃষ্টি সে দৃষ্টিতে কিছুটা কৌতুহল আর অসহায় ছাপ স্পষ্ট।সামু কিছুক্ষণ পর ওর চোখ থেকে চোখ নামিয়ে গম্ভীর ভাবে বললো,
–কিসের জন্য?
–ফর এভরিথিং।
আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।কিন্তু ওই মুহুর্তে আমি আর কি করতাম।বিদেশ থেকে এসেছি।হটাৎ করে বললো গ্রাম দেখাতে নিয়ে যাবে,গেলাম।বিয়ের আগের রাতে বলছে আমাকে আগামীকাল সকালে বিয়ে করতে হবে।যাকে আমি চিনিনা,জানিনা,কখনো দেখিওনি।হুট করে কোনো প্রিপারেশন ছাড়া,,,
আমি মেনে নিতে পারিনি।

সামান্তা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,আমিও তো আপনার সিচুয়েশনেই ছিলাম।আমাকেও তো আগে জানানো হয়নি।কিন্তু আমি তো আপনাকে অপমান করিনি।আপনি আমাকে ঘর থেকে টানতে টানতে বের করে দিয়েছেন।অনেক কথা শুনিয়েছেন।কেন?কারণ আমি মফস্বল থেকে উঠে আসা সাধারণ একটা মেয়ে।আপনার সাথে আমার যায়না,তাইনা?
দুইমাসে একবারো খোজ নেন নি।যে মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিলেন তার কি খবর?কি করছে?আপনার দায়িত্ব ছিলো না।বিয়ে করেছিলেন এটাই হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন? নিজের লাইফ নিয়ে বিজি ছিলেন।কে বাচলো কে মরলো আই ডোন্ট কেয়ার,,এমনটাই তো তাইনা?
আপনি আমাকে একটা মানুষ হিসেবেও মূল্যায়ন করেননি।না মানতে পারতেন,একটু রেস্পেক্ট তো করতে পারতেন?একটা মানুষ হিসেবে,,,

আদি মাথা নিচু করে আছে।কারণ ওর প্রতিটা কথা সত্যি।সামুকে গ্রাম্য মেয়ে বলে অবহেলা করেছে।কিন্তু পরে ওর এটিটিউট দেখে ইম্প্রেশ হয়েছে।ওর প্রেমে পরেছে।কিন্তু আদি আপাতত এটা স্বীকার করতে চায়না।যে করেই হোক সামান্তাকে নিজের দিকে আনতে হবে।

–আমি সব মানছি সব,,আমি অন্যায় করেছি সেটা স্বীকার ও করছি তাহলে ক্ষমা কি পেতে পারিনা?প্লিজ একটা সুযোগ দেও,,আমি সব ঠিক করে দেবো।

–কি ঠিক করবেন?

–যা যা ভুল করেছি সব ঠিক করার চেষ্টা করবো।প্লিজ।আমি আর পারছিনা এভাবে জীবন চলেনা।আমি তোমাকে হ্যাপি একটা লাইফ দিতে চাই,,

–আমি হ্যাপিই আছি।

–কিন্তু আমি নেই।আমি তোমাকে আমার পাশে চাই।তোমার অবহেলা মেনে নিতে পারছিনা।আমি তোমাকে অবহেলা করেছি সে শাস্তি দিচ্ছো?যদি তাই হয় তবে প্লিজ অন্য শাস্তি দেও,,কিন্তু অবহেলা করোনা।দূরে সরিয়ে দিওনা।প্লিজ।

সামান্তার চোখে পানি ছলছল করছে।মনে হচ্ছে এখনি পড়ে যাবে কিন্তু অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে রাখছে।আকাশের দিকে চেয়ে বললো,,
–আমি আমার ভাগ্য মেনে নিয়েছি তাই আমার কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই।আর যেখানে অভিযোগ নেই সেখানে শাস্তির কথা কোথা থেকে আসে,,
আমি যাচ্ছি।

সামান্তা দু কদম আগাতেই আদি পিছন থেকে চিতকার করে বলে উঠলো,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি সামান্তা”

সামান্তা থমকে গেলো।পা যেন আটকে গেছে।না সামনে যেতে পারছে না পিছনে ঘুরতে পারছে।কি করবে?
সামান্তা কিছু সময় পর পিছনে ঘুরে বললো,
–এটা আপনার ভালোবাসা নয়,মোহ।
আদি অবাক হয়ে বললো,
মোহ??না সামান্তা এটা আমার মোহ নয়।মোহ হলে তোমার মোহের ঘোর অনেক আগেই কেটে যেত।কিন্তু আমি তোমার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিনা।

–নিজেকে সময় দিন।তাহলেই কেটে যাবে।আমি হতে পারি শক্ত মনের,,কিন্তু মন তো আছে।মন ভাংলে কষ্ট আমিও পাবো।

–আমি তোমার মন ভাংবোনা।বিশ্বাস করো।

–আগে বিশ্বস্ততা অর্জন করুন।যেটাই তো আমার আপনার উপর নেই।সময় নিন মোহ এমনিতেই পালিয়ে যাবে।আমি আর যাই হই অন্তত কারো কিছুদিনের মোহ হয়ে থাকতে চাইনা।

বলেই সামান্তা সিড়ি বেয়ে নেমে গেলো।আদি হাতের মুঠো শক্ত করে বিরবির করে বললো,
মোহ,ভালোবাসা কিচ্ছু বুঝিনা।শুধু এটুকু জানি আমি তোমাকে চাই।তোমাকে সারাজীবনের জন্য চাই।অন্য কারো কখনোই হতে দেবোনা।তোমাকে তো হাসিল করেই ছাড়বো প্রমিস।

সামু কুশনে মুখ গুজে কাদছে।কেন কাদছে জানা নেই।আজ আদি ওকে ভালোবাসি বলেছে কিন্তু কেন জানি আদিকে মেনে নিতে পারছেনা।কেন জানি ওর মনে হয় আদির কাছে ও শুধুই মোহ।কেন জানি এ শহরের কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনা।কেন জানি মনে হয় এ শহরে ভালোবাসা নেই।এ শহরের ভালোবাসায় বড্ড এলার্জি।

ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।মাথাটা ভারী ভারী লাগছে।টাইম চেক করে দেখে ৮ঃ৪০,,ওহ নো,,আমার ক্লাস।দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মেরুন রঙের একটা টপস,জিন্স,টপসের উপর কটি,চুলগুলো কোনো রকমে ব্রাশ করে,জুতা পড়ে হাতে ব্যগ,ব্যাচ,ঘড়ি আর ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলো।গলায় ব্যাচ পড়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে ভার্সিটির জন্য হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে পিছন থেকে আদির মা বারবার সামান্তাকে নাস্তা করে যেতে বলছে।
–মা,আজকে অনেক দেরি হয়ে গেছে।ক্যানটিনে কিছু নিবো।
সামান্তা বাইরে এসে দেখে আদি গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সামুকে দেখে গাড়ির দরজা ওপেন করে বললো,
–গাড়িতে বসো।আমি তোমাকে ড্রপ করে দেবো।
সামান্তা এদিক সেদিক চেয়ে কোনো গাড়ি না দেখে ওর গাড়িতেই উঠে পড়ে।এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে তর্ক করার মানে হয়না।
আদি ড্রাইভ করছে আর বারবার আড়চোখে সামান্তার দিকে তাকাচ্ছে।সামু বিরক্ত হয়ে বললো,
–এইভাবে বারবার না তাকিয়ে ভালো ভাবে ড্রাইভ করুন।আমার এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।
–তুমি কি করে বুঝতে আমি তোমার দিকে তাকাচ্ছি?তারমানে তুমিও,,(বাকা হেসে)
–জ্বী না,,এটা মেয়েদের একটা গুন।দূর থেকেই অনেক কিছু বুঝতে পারে কোন ছেলে কিভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে।হুম মাঝে মাঝে একটু ভুল হতেই পারে।

–আচ্ছা,এত গুন জানতাম নাতো?
তারপর রহস্যময় হাসি হেসে বললো, তা কি দেখছিলাম জিজ্ঞেস করবে না?

সামান্তা থতমত খেয়ে গেলো।কি দেখছিলো মানে কি,,।কি দেখছিলো।আমার জামাকাপড় তো ঠিকই আছে।
–মা,,,নে?

–কার জন্য রাতভর কেদে বুক ভাসিয়েছো?

এমন কথায় সামু চমকে গেলো।আমতা আমতা করে বলল,
–কাদবো কেন?

–সে আমি কি করে জানবো?তোমার চোখ ফুলে আছে।সারারাত কেদেছো তার প্রমাণ।

–জ্বী না,ঘুম বেশি হয়েছে তাই এমন।

–বেশি ঘুমালে চোখ এমন দেখায় জানতাম না তো,,।

সামু রেগে বললো,
–আপনার এতো জানতে হবেনা।মি.আদিল চৌধুরী যদি আর একটা কথা বলেন তাহলে মুখে ক্লিপ লাগিয়ে দেবো।

–হাহা,,,,
তুমি আমাকে এতবড় নামে ডাকো কেন?আদি বলে ডাকতে পারোনা?

–না পারিনা।এখন চুপ থাকুন।

???

রাতের বেলা-
আদির ঘুম আসছেনা।বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে।তারপর উঠে বসলো ধুরর ঘুম আসছে না কেন?আমি তো এখন তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করে ফেলেছি।এখন যদি ঘুম না আসে তবে তো আগামীকাল সামকে ড্রপ করতে যেতে পারবোনা।
আদি উঠে সিরি বেয়ে নিচে নেমে এলো।সামান্তার রুমের দরজা নক করে।সামান্তা দরজা খোলতেই চমকে যায়।আদি ওর চমকানো অবস্থায় পাশ কাটিয়ে ওর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।সামান্তা ভিতরে এসে বলে,
–এত রাতে আমার ঘরে কি?আর বিছানায় শুয়ে পড়লেন কেন?
–আমি এখানেই ঘুমাবো।
–কি!!মগের মুল্লুক নাকি?
–না বাবার মুল্লুক।আমার ঘরে ঘুম আসছেনা তাই আমি আজ এখানেই থাকবো।
–ঠিক আছে,আপনি এখানে থাকেন আমি নিশি আপুর রুমে যাচ্ছি।
বলেই সামু যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।আদি বিছানা থেকে উঠে সামুকে ধরে ফেলে।
–আরে তুমি কোথায় যাচ্ছো?আমি তোমার ঘরে না তোমার সাথে ঘুমাতে এসেছি।
–অসম্ভব।
আদির এবার সামুর দিকে নজর যায়।সামু শর্ট টিশার্ট আর প্লাজো পড়া।
আদি দুষ্টুমি হাসি হেসে বললো,, বাহ!!তোমাকে তো হট লাগছে,,এখন তো আরো যাবোনা।
সামু আদিকে ছাড়িয়ে ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো।
তারপর সিরিয়াল ভাবে বললো,
–দেখুন অনেক রাত হয়েছে,আপনি আপনার রুমে গিয়ে ঘুমান আর আমাকেও,,,
–আমি যাবোনা।
ওয়েট ওয়েট,,রাত বাজে ১টা।তুমি এত রাত পর্যন্ত জেগে আছো কেন?তুমি না আরো আগে ঘুমাও।
–আমার কাজ ছিলো।
আদি ভ্রু কুচকে বললো, কি কাজ?
–আপনাকে কেন বলবো?
তখনই সামুর ফোন বেজে উঠে বেডের উপর মোবাইলটা ছিলো।দুজনেই ফোনের দিকে চেয়ে স্তব্ধ।সামু তো অলরেডি ভয়ে ঘামছে।ফোনের স্কিনে রাজের নামটা পূর্ণিমা রাতের চাদের মতো চকচক করছে।

আদি ফোন হাতে নিয়ে ঘাড় কাত করে আবার সোজা করে শীতল কণ্ঠে বললো,
এই হলো তাহলে তোমার কাজ তাইনা?রাতভর রাজের সাথে ফোনে,,,

আদির শীতল কন্ঠ যেন সামুর শিরদাঁড়া বেয়ে এক টুকরো হিমশীতল বরফ প্রবাহ বয়ে গেলো।
সামান্তা আমতা আমতা করে বললো,
–আপনি যা ভাবছে তা নয়,,,
আদি চিতকার করে চোয়াল শক্ত করে বললো,
–শাট আপ,,আমাকে বোকা মনে হয় তোমার?এতবড় ধোকা দিতে পারলে? কিভাবে সামান্তা কিভাবে?কাজটা তুমি একদম ঠিক করোনি।একদম না।
সামান্তা চুপ করে আছে।আদি ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন বিছানায় ছুড়ে ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো।ঠাস করে দরজা বন্ধ করলো কিন্তু এতেও ওর শান্তি হলোনা।সর্বশক্তি দিয়ে দরজায় লাথি মারলো।তারপর রাগে ফুসফুস করতে করতে বললো,
“আই ডোন্ট স্পেয়ার ইউ সামু,ইউ চিট মিট।”

সামু ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।রাজকে মনে মনে গালাগাল করছে।বজ্জাত ছেলে ফোন দেওয়ার টাইম পেলোনা।এখনি দিতে হলো।কি টাইমিং।একদম বাশ দেওয়া টাইমিং।কিন্তু আদি তেমন কিছু বললো না কেন?ঘটনা কি?
সামান্তার ফোন আবার বেজে উঠলো।রাজের ফোন।সামান্তার ইচ্ছে করছে রাজকে মৌমাছির চাকের মধ্যে বেধে রেখে দিয়ে আসতে।
রাগে ফুসফুস করতে করতে ফোন রিসিভ করলো।
–সামান্তা ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?
–আমার হাসব্যান্ড চায়নি তাই।
–হাসব্যান্ড মানে?(দশ বস্তা অবাক হয়ে)
–হাসব্যান্ড মানে হাসব্যান্ড।আদিল ইস মাই হাসব্যান্ড।আপনি তো জানেন।
–হ্যা কিন্তু তোমার হাসব্যান্ডের সাথে তো তোমার সম্পর্ক,,
–হ্যা আগে প্রব্লেম ছিলো কিন্তু এখন আর নেই।আমাদের সম্পর্ক এখন খুব ভালো।দোয়া করবেন।আর প্লিজ রাতের বেলায় ফোন দিবেন না।
–সরি বায়।
রাজ ফোন কেটে দিলো।সামান্তা বিজয়ের হাসি দিলো।

অপরদিকে রাজ,,
ফোন কেটে দিয়ে আয়নার দিকে ফোন ছুড়ে মারলো।আয়না ভেঙে কাচের টুকরো গুলো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়লো।
তারপর চিতকার করে বললো,
“এটা হতে পারেনা,কিছুতেই না।সামান্তা আদির হতে পারেনা।আমি হতে দিবো না।”

??
কোচিং শেষে সামান্তা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু গাড়ি আসার নাম ই নেই।বাসায় ফোন করে জানতে পেরেছে গাড়ি পাঠিয়েছে।কোচিংয়ের সবাই চলে গেছে।সামান্তা একা একা ই দাড়িয়ে আছে।এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে।
হটাৎ ওর মুখে কেউ রুমাল চেপে ধরে।কেমন কড়া একটা স্মেল।সামান্তা ছুটার জন্য ছটফট করছে।কিন্তু পারছেনা।হটাৎ ওর শরীর নিস্তেজ হয়ে এলো।হাতের ফোন আর ব্যাগ নিচে পড়ে গেলো।শরীরের ভর ছেড়ে দিতেই কেউ ওকে ধরে ফেলে।চোখ মেলার চেষ্টা করছে কিন্তু চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।সামনে সব ধোয়াশা লাগছে।মাথাটা ভারী হয়ে গেছে।চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।কেউ ওকে কোলে করে গাড়িতে তুলছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে।কিন্তু নড়তে কিংবা চোখ মেলতে পারছেনা।অতঃপর সামান্তা জ্ঞান হারালো।

চলবে,,

(সামান্তাকে কিডন্যাপ কে করলো?আদি না রাজ? না অন্য কেউ?)

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৭

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-৭
ফাবিহা নওশীন

গতকালই নিশির এনগেজমেন্ট ছিলো।সব মেহমানরা চলে গেলেও আদির ফুপ্পি আয়েশা খান থেকে গেছেন।ওনি নাকি কিছুদিন ভাইয়ের বাসায় থাকবেন।
গভীর রাত সামান্তা ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।আকাশে রুপালী চাদের সাথে অসংখ্য তারার আলোয় ভরপুর।চাদের আলোয় কেমন চারদিক চকচক করছে।আকাশের শুভ্র নির্মল মেঘ চুপটি করে আছে।সামু চাদের আলো গায়ে মেখে দূর প্রান্তে দেখছে।সামনের রাস্তায় অসংখ্য আলো জ্বলছে।
এই শহর কতটা ব্যস্ত তা জানান দিচ্ছে ওই রাস্তাটা।ছুটে চলার যেন শেষ নেই।এত রাত্রেও মানুষ কিংবা যানবাহনের থামা নেই।সবাই ছুটছে নিজের গন্তব্যে।
সামুর ভিষণ মন খারাপ।কিছুক্ষণ আগেই বাবা-মা আর ভাইয়ের সাথে কথা বলেছে।তাদেরকে খুব মিস করছে।মিস করছে ওই বাড়িটাকে যেখানে ওর শৈশব কৈশোর কাটিয়েছে।যেখানে প্রতিটি কোনায় তার পদচিহ্ন।মিস করছে নিজের ঘরকে যেখানে মিশে আছে হাজারো স্মৃতি।
নিজের গ্রাম,যেখানে রোজ বিকেলে বন্ধুদের সাথে ছুটে বেরিয়েছে,দস্যিপনা করেছে।মিস করছে কলেজ,কলেজের বন্ধুদের যেখানে শুধু তার রাজ চলতো।এসব ভাবতেই সামান্তার বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
দিনদিন যেন এই শহরের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেনা।শহরটাই এমন।এখানে পা রাখার সাথে সাথেই নিজের কোমলতা হারিয়ে কঠোরতায় রুপ নেয়।কঠোর না হলে বাচতে পারবেনা।এই ইট পাথরের মাঝে যেন সব চাপা পড়ে যাচ্ছে।সমস্ত অনুভূতি,অস্তিত্ব সব।
এখানে যে ভালো নেই তা নয়।সবার ভালোবাসা পেয়েছে তবুও দিনশেষে নিজেকে নিঃসঙ্গ একা লাগে।
সামান্তাকে এখন আদির বিহেভিয়ার গুলো প্রচুর ভাবায়।বুঝতে পারেনা কি চায় ছেলেটা।মাঝেমধ্যে মনে হয় ভালোবাসে আবার মাঝেমধ্যে,,,,।ওর কনফিউশন বেরেই চলেছে।না বুঝে আগানো ঠিক হবেনা।পরে নিজেকেই প্রস্তাতে হবে।সামান্তা গতকালের ঘটনার পর আদির কাছ থেকে দূরে থাকে।
আদিকে আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলো না।মাঝেমধ্যে হেসে হেসে মজা করে,খেপায় আবার হুট করেই চেঞ্জ।রেগে আগুন হয়ে যায়।প্রচন্ড জেদি।আর তারচেয়ে বেশী ভাবায় ও নিজের কথাই ভাবে।নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে।অন্যকে নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।নিজেরটা হলেই চলবে।

সামু এসব ভাবছিলো তখনই সার্ভেন্ট এসে ডাক পাঠায়।
–মেম,আপনাকে ডিনারের জন্য ডাকছে।
–আসছি।
সামু ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেলো।ডাইনিংয়ে সবাই বসে খাচ্ছে।সামু কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।আদি,আদির মা,বাবা,ফুপ্পি।আদির ফুপ্পিকে সামুর পছন্দ হয়নি।মহিলা অনেক অহংকারী।কিভাবে যেন কথা বলে,সামুকে পছন্দই করেনা।কেন করবে সামুর বাবার তো প্রতিপত্তি নেই।তাহলে কেন মাথায় করে রাখবে।

নিশি ফোন হাতে হাসতে হাসতে চেয়ার টেনে বসলো।তা দেখে আদি বললো,
–কিরে মাথা গেছে নাকি?
পাগলের মতো হাসছিস কেন?
–আমার কথাটা শুনলে সবাই হাসবে।কি হয়েছে জানিস?
আদির বাবা আগ্রহের সাথে বললো,তা কি হয়েছে বল,আমিও শুনি।
নিশি হাসতে হাসতে বললো,
সামু,,
আদি ভ্রু কুচকে তাকালো।
সবাই আগ্রহের সাথে নিশির দিকে চেয়ে আছে।
–জয়ের এক কাজিন আছে রাজ।গতকাল এসেছিলো।ও কানাডায় ইঞ্জিনিয়ার।সামুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।হাহা,,,।
কথাটা শুনে সামু বিষম খেলো।আদির হাত থেকে কাটা চামচ প্লেটে পড়ে টুং করে শব্দ হলো।
আহনাফ চৌধুরী মেয়ের কথায় হেসে দিলো।

নিশি আবারো হেসে বললো,ওরা ভেবেছে সামু আমার কাজিন।অবিবাহিত।ও যে আমার ভাবী সেটা ভাবতেই পারেনি।কি করেই বা বুঝবে সামু তো বাচ্চা একটা মেয়ে।
আমাকে যখন জয় বলেছে আমি হাসি থামাতেই পারছিলাম না।

আহনাফ ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললো,
তুমি তো কদর ই করোনা,দেখেছো ওর জন্য তোমার চেয়ে ভালো ছেলের সমন্ধ এসেছে।সময় থাকতে কদর না করলে,,,প্রস্তাতে হবে।
আদি চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে চেয়ার টেনে খাওয়া ছেড়ে চলে গেলো।
আদির ফুপ্পি বললো,
–ভাইয়া তুমি কি বলোতো ছেলেটা খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলো।এসব না বললেই কি হতো না।ওই ছেলের পছন্দ হয়েছে বলে আদির তবে তাতো নয়।মাঝখান থেকে না খেয়ে চলে গেলো।
–দুই একদিন না খেলে কিছু হয়না।
সামুরও খাওয়ার ইচ্ছে নেই।ডাইনিং ওভারটেক করে নিজের রুমে চলে গেলো।

??
আজকাল সামুর কোনো কিছুই ভালো লাগেনা।ভার্সিটি,কোচিং,বাসা কোনো কিছুই ভালো লাগেনা।কিসব ভাবনার মধ্যে ডুবে থাকে।নিশির সাথেও আগের মতো আড্ডা দেয়না।কেমন চঞ্চলতা হারিয়ে গেছে।
লিভিং রুমে বসে বসে পড়ছিলো কিন্তু মন বসাতে পারছেনা।তাই বই নিয়ে নিজের রুমে যাচ্ছে।আনমনে কিসব ভাবছে তখনই ধাক্কা খেলো।সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে আতকে উঠলো।তার হাতের ফোনটা ফ্লোরে পড়ে গেছে।আর তিনি চোখ পাকিয়ে চেয়ে আছে।মনে হচ্ছে এখুনি গিলে খাবে।তিনি হলেন আদির ফুপ্পি আয়েশা খান।তিনি তার লন্ডনে বাসরত মেয়ের সাথে কথা বলছিলেন।আর তখনই সামুর সাথে ধাক্কা লাগে আর ফোনটা ফ্লোরে পড়ে যায়।সামান্তা ফোন তুলে দেখে ফোনের এক কোনা ফেটে গেছে।এটা দেখে ওনি ভিষণ ক্ষেপে যায়।এমনিতেই সামুকে দেখতে পারেনা তার উপর ধাক্কা দিয়েছে,ফোন ভেঙেছে।
তিনি গজগজ করতে করতে আচমকা সামান্তার গালে সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারে।সামান্তার গাল মনে হচ্ছে ফেটে যাচ্ছে।বাবা-মা কখনো ওর গায়ে হাত তুলে নি।মার খাওয়ার অভ্যাস নেই।গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে ছলছল চোখে চেয়ে আছে।ওনি যে ওকে থাপ্পড় দিতে পারে সেটা ভাবতেই পারেনি।ভেবেছিলো হাজারটা কথা শুনাবে।

আয়েশা খান কড়া গলায় বললো,
–চোখ কি আকাশে রেখে হাটো যে মানুষ চোখেই পড়েনা,,তা পড়বে কিভাবে।গ্রাম থেকে এসে রাজপ্রাসাদে উঠেছে,,পাখা গজিয়েছে না,,এখন আর কাউকে চোখে পড়বে নাকি?
লো সোসাইটির মানুষের এই সমস্যা বড়কিছু পেলেই উপরে পড়ে।মাটিতে পাই পড়েনা,,।এখানে কিসের জন্য পড়ে আছো শুনি,,,।বেয়াদব মেয়ে গায়ের উপর এসে পড়ে।

বলেই তিনি সামনে হাটা দিলো সামান্তা গাল ধরেই দাড়িয়ে আছে।তারপর চারদিকে চেয়ে চোখ মুছে নিজের রুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়ে কল ছেড়ে কাদতে লাগলো।আর ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে করছে কাউকে জড়িয়ে একটু হাওমাও করে কাদতে পারতো।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।ফরসা গালে চার আংগুলের ছাপ স্পষ্ট।এ অবস্থায় বাইরে বের হওয়াও মুশকিল।তখনই আহনাফ চৌধুরী দরজায় নক করলো।
–কে?
–আমি,,তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ এসো অপেক্ষা করছি।গতকাল খাওনি আজ আর তা হবেনা।
–আসছি।
এখন কি করবে,এই গালের দাগ কিভাবে সরাবে।জ্বালাও করছে খুব।মুখে পাউডার মেখে নিলো।তারপর গালের উপর চুল এনে রাখলো।রুম থেকে বের হতেই আদির ডাক।
–সামান্তা এদিকে এসো,কথা আছে।(সিরিয়াস ভংগীতে)
–(এই লোক আর ডাকার সময় পেলোনা।আর এমন সিরিয়াস লাগছে কেন,কি করবো,যাবো না যাবো না।কি করি)
–তাড়াতাড়ি,,
–আসছি।
সামু ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো কিন্তু মুখটা একটু কাত করে রাখলো।নিজেকে লুকানোর চেষ্টা আর কি।
আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো সামান্তা ওর দিকে তাকাচ্ছেনা তাই।
–গালের উপর এমন চুল এনে রেখেছো কেন বিশ্রী লাগছে।
বলেই একটানে হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিতেই সামান্তা ব্যথায় আহ করে উঠলো।আদি হকচকিয়ে গেলো।
–সরি সরি লেগেছে,আমি বুঝতে পারিনি।

ওর গালে হাত রাখতেই সামান্তা ভয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো তারপর নিজের হাতে গাল ঢেকে ফেললো।আদির কেমন সন্দেহ হলো কি এমন হলো যে এত ব্যথা পেলো আবার সরেও যাচ্ছে।

–দেখি এদিকে ঘুরো।(নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল)
সামান্তা গালে হাত দিয়েই রেখেছে।আদি টান মেরে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে আতকে উঠে।কিছুক্ষণ গালের দিকে চেয়ে রইলো।
–সামান্তা এসব কি?
সামু আমতা আমতা করে বলল,
–ইয়ে মানে,,,এলার্জি প্রব্লেম।
–তুমি আমাকে বোকা পেয়েছো?এটা এলার্জি?কে মেরেছে বলো?
–আশ্চর্য আমাকে কে মারবে?
ঝাঝালো গলায় বলল,
–আমি তো সেটাই জানতে চেয়েছি কে মেরেছে।
সামান্তা শান্তস্বরে বললো,
–বললাম তো কেউ মারেনি।

আদি বুঝতে পারলো ও স্বীকার করবেনা।ওকে টানতে টানতে ডাইনিংয়ের সামনে নিয়ে গেলো।সামান্তা বাধা দিচ্ছে কিন্তু শুনছেনা।রাগে আদির শরীর কাপছে।চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।সামান্তাকে এই বাড়ির কেউ মারতে পারে সেটা ও বিশ্বাস ই করতে পারছেনা।
ডাইনিংয়ে নিশি,আদির বাবা,মা,ফুপ্পি বসে আছে।
ডাইনিং এর সামনে গিয়ে সামান্তাকে নিয়ে দাড়ালো তারপর শান্ত গিলায় জিজ্ঞেস করলো,
–সামান্তাকে কে মেরেছে?
আহনাফ চমকে উঠলো,
–কি বলছিস আদি,,সামান্তাকে কে মেরেছে মানে?
আদি সামান্তাকে সামনে নিয়ে গাল দেখালো।
তিনিও অবাক।সামান্তা সবার আদরের কে মারবে।
–সামু কে মেরেছে,,?
–বাবা কেউ মারেনি এলার্জি,,
আদি ধমক দিয়ে বললো,
–একদম মিথ্যা বলবেনা।সত্যি না বললে এখানে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো।
আদি আবার ওনাদের দিকে চেয়ে বললো,আমি জানতে চাই কে মেরেছে?

আহনাফ নিশির দিকে চাইলো, নিশি ইশারায় মানা করলো,,আদির মাও মানা করলো।সবাই তখন আয়েশা খানের দিকে চাইলো।তিনি মাথা নিচু করে আছে।
–আয়েশা,,
আয়েশা খান কাচুমাচু করে বললো,
–ভাইয়া ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফোন ফেলে দেয় তাই রাগ উঠে গিয়েছিলো।
–তাই বলে তুই ওকে মারবি?কি অদ্ভুত কথা।ও এ বাড়ির বউ।

আদি বললো, ছি ফুপ্পি,,তুমি এতটা নিষ্ঠুরতম কাজ কি করে করলে?ধাক্কা নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে দেয়নি।তুমি এভাবে মারতে পারলে?
–ও ইচ্ছে করেই,,
–ফুপ্পি সামান্তা এতটা বেয়াদব নয় বড়দের ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে?তোমার সাথে ওর কি শত্রুতা যে ও তোমাকে ফেলে দিবে?
–আদি,আমি বুঝতে পারিনি,এত জোরে লাগবে।
–বুঝতে পারোনি কিন্তু থাপ্পড়ের দাগ দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি কোনো ক্ষোভ ঝেড়েছো।
তোমাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি কিন্তু তার মানে এই নয় সামান্তার সাথে খারাপ বিহেভিয়ার আমি মেনে নিবো।
–(এই ছেলে আবার এত বউ পাগল কবে হলো ফুপ্পি মনে মনে বলছে)আমি তো বলছি,,
–তোমার আর বলা লাগবেনা।নেক্সট টাইম আমি আমার ওয়াইফের গায়ে ফুলের টুকাও সহ্য করবোনা।সবার উদ্দেশ্যে বলছি।
সামু কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই আদি আবার ধমকে উঠে,,
–তোমাকে না চুপ থাকতে বলেছি।
আদি সার্ভেন্টকে আইস প্যাড নিয়ে ওর রুমে আসতে বললো।
ফুপু সাথে সাথেই ফুসফুস করতে করতে খাবার টেবিল ত্যাগ করলো।বাকিরা আদির কথা শুনে স্তব্ধ।আদির বাবা মৃদু হেসে বললো,
যাক,,আমার ছেলে তবে লাইনে এসেছে।বউকে প্রটেক্ট করছে।

আদি সামান্তাকে ওর রুমে নিয়ে বসালো।তারপর রাগান্বিত সুরে বললো,
–সামান্তা তোমাকে দেখে তো অবলা নারী মনে হয়নি।আজ যা করলে তুমি শ্যাম অফ ইউ।এই তোমার নীতি?নাকি তোমার যত রাগ আর ঘৃনা আমার উপর তাই আমার উপর সব ঝাড়ো বাকিদের সাথে ঠান্ডা।

সামান্তা মাথা নিচু করে আছে।ও চায়নি কোনো ঝামেলা হোক।তাই কিছু বলতে চায়নি।চুপ ছিলো।কিন্তু ঝামেলা তো একটা হয়েই গেলো।

–এই মেয়ে চুপ করে আছো কেন?বোবা হয়ে গেছো?(চিতকার করে)

সামান্তা কেদে দিলো।এই প্রথম সামান্তাকে কাদতে দেখলো।এত শক্ত একটা মেয়ে কাদছে।আদি এটা মেনে নিতে পারছেনা।ওর কান্না দেখে আদির বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।হটাৎ ও সামান্তাকে বসা অবস্থায় জড়িয়ে ধরলো।সামান্তাও বাধা দেয়নি।ও নিজেও জড়িয়ে ধরলো।ওর কাউকে প্রয়োজন ছিলো জড়িয়ে ধরে কাদার জন্য।আদিকে জড়িয়ে ধরেই কাদছে।

সার্ভেন্ট দরজায় এসে নক করতেই আদি সামান্তাকে ছেড়ে দিলো।আইস প্যাড এনে গালে কিছুক্ষণ রাখে তারপর ওষুধ লাগিয়ে দিলো।সামান্তা বারবার আদির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।সামান্তার বর্তমানে আদিকে খুব আপন মনে হচ্ছে।আদি ওর হাত ধরে বললো,
–চলো ডিনার করবে।
সামান্তাকে নিয়ে নিচে এলো।দুজনে একসাথে বসেই ডিনার করলো।সামান্তা চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলো।

সামু বিছানায় শুয়ে ভাবছে ওনি কি আমাকে ভালোবাসেন?নাকি মোহ?

??

নিশি বাবার সামনে দাড়িয়ে আছে,,
–বাবা একটা কথা ছিলো?
–হুম বলো।
–বাবা জয় একটা পার্টি দিয়েছে।দেশে ফিরা উপলক্ষে।ওর ফ্রেন্ডস,কাজিনদের নিয়ে।আমাকে,ভাইয়া আর সামুকে যেতে বলেছে।
–তো যাও।
নিশির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
–সত্যি!!
–কেন নয়?তোমার হবু বর যেতেই পারো।আদিকে জানিও।সামুকে সাথে নিয়ে যেও।মেয়েটার এমনিতেই মন খারাপ।
–আচ্ছা।

নিশি আদিকে বলেছে কিন্তু তার নাকি অন্য কাজ আছে সে যাবেনা।সামান্তা আর নিশি রেডি হয়ে পার্টিতে গেলো।সামু যেতে চায়নি কিন্তু সবার জোরাজুরিতে বাধ্য হয়েছে।
পার্টিতে ওদের ভালো ভাবেই ওয়েলকাম করেছে।জয় নিশি আর সামান্তার সাথে কথা বলে ওদের ড্রিংক দিতে বলে জয় ওর ফ্রেন্ডদের ওয়েলকাম করছে।
নিশি আর সামু বসে আছে।তখনই রাজ এলো।নিশি সামুকে ইশারা করলো।
–হাই বিউটিফুল গার্লস!!
–হায়!!(নিশি)
–আমি আসলে সামান্তাকে সরি বলতে এসেছি।সামান্তা একটু এদিকে আসবে প্লিজ।২মিনিট কথা বলতে চাই।
নিশি যেতে বললো।

–সামান্তা আই এম রেইলি সরি।আমি জানতাম না তুমি মেরিড।আসলে আম্মুর তোমাকে দেখে খুব পছন্দ হয়েছে।আর আমিও তোমার সাথে ওইদিন কথা বলেছিলাম আম্মু দেখেছে।তাই বিয়ের কথা বলে,,তোমার সাথে কথা বলে তোমাকে ভালোই মনে হয়েছে,, তাই,,,,,,।প্লিজ সরি।
–ইটস ওকে।আমি কিছু মনে করিনি ভুল হতেই পারে।
–আসলে ওইদিন তোমার সাথে তোমার হাসব্যান্ডকে একবারো দেখিনি আর তাছাড়া তুমি নিশিতা ভাবির কাজিন পরিচয় দিয়েছিলে।কেন দিয়েছিলে?
–আসলে আমাদের বিয়ে হলেও আমাদের সম্পর্ক তেমন নয়।তাই আর কি।
–মানে??
সামান্তা চুপ করে আছে আর কিছু বলতে চাইছেনা।
রাজ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,
বুঝতে পেরেছি আজকেও সাথে আসেনি।এতে বুজাই যায়,,,যাইহোক সরি।তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো?
–জ্বী।
–আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
–মানে??
–মানে কম্পিউটার,ল্যাপটপ জনিত কোনো প্রব্লেম হলেই আমি আছি।সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইউ নো।
–ওকে।ধন্যবাদ।
–আচ্ছা আমার নাম্বারটা রাখো।
সামান্তার ওর নাম্বার নেওয়ার একটুও ইচ্ছে নেই কিন্তু মুখের উপর নাও করতে পারছেনা।
–কি হলো ফোন বের করো নয়তো কিভাবে নেবে?
–সামান্তা ভদ্ররা দেখিয়ে ফোন বের করে ডায়াল লিষ্ট বের করতেই রাজ ফোন কেরে নিয়ে নিজের নাম্বার তুলে নিজের নাম্বার ডায়েল করে সামুর নাম্বার ও নিয়ে নিলো।সামান্তা হতবাক।কিছু বলার আগেই ফোন দিয়ে চলে গেলো।সামান্তা মনে মনে চোদ্দগুষ্টি উদ্দার করছে।
নিশির কাছে গিয়ে সব জানালো।নিশি বললো,বাদ দে।না তুই ওকে ফোন দিবি না ও দিবে।

আদি ড্রাইভ করছে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছে।হটাৎ ই গাড়ি চালানো থামিয়ে দেয়।
–ওহ,নো এ আমি কি করেছি?সামুকে একা যেতে দিয়েছি।ওখানে তো সেই রাজ না বাজ আসবে।আর তাছাড়া কত ছেলেরে আসবে,সামুর সেইফটি নিয়ে টেনশন হচ্ছে।কেন যে গেলাম না।আদি তুই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছিস।
আদি তাড়াতাড়ি ফোন বের করে সামুকে ফোন দিলো।

সামু একা একা বসে আছে।তখনই ফোন বেজে উঠলো।
–হ্যালো।
–আমি আদি।
–বলুন।
–পার্টি শেষ?
–কিছুক্ষন পরেই শেষ হবে।
–ওকে শুনো,,যতক্ষণ আছো নিশির সাথে থাকবে।ওকে দেখার লোক থাকলেও তোমার দেখার কেউ নেই।তাই তুমি নিশির সাথেই থাকবে।ওখানে সব ইয়াং ছেলেরা এসেছে।সো বি কেয়াফুল।সাবধানে থাকবে।কোনো সমস্যা হলেই আমাকে ফোন দিবে।আমি আশেপাশেই আছি।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো আদি বললো।তারপর জোরে নিশ্বাস নিলো।

সামুর হাসি পাচ্ছে।তবুও নিজেকে সামলে বললো,
–আচ্ছা।
–আর ওই রাজ না বাজ তার থেকে দূরে থাকবে নয়তো ওইদিনের কথা মনে আছে,,?
–মনে আছে।
তালে তালে বলে ফেললো।
আদি বাকা হেসে বললো,
–কি মনে আছে?
–(হায় হায় তালে তালে কি বলে ফেললাম)না,কিছু মনে নেই।
–তাই?ঠিক আছে বাসায় আসো মনে করিয়ে দিবো।
সামান্তা ঢুক গিলে বললো,রাখছি।
আদি হাহা করে হেসে দিয়ে বললো,বায়।তাড়াতাড়ি এসো।
সামান্তা ফোন রেখে বড়বড় শ্বাস নিচ্ছে।
–আজ যে রাজের সাথে আমার কথাই নয় ফোন নাম্বার এক্সচেঞ্জ হয়েছে সেটা জানলে আমাকে আস্ত খেয়ে ফেলবে।

চলবে,,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৬

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-৬
ফাবিহা নওশীন

??
চৌধুরী বাড়িতে আয়োজন চলছে।রাতে আদির বন্ধুরা আসবে ডিনার করতে।তাই সার্ভেন্ট থেকে শুরু করে আদির মা,বোন পর্যন্ত ব্যস্ত।তারা লিভিং রুমে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে সার্ভেন্টদের কাজ তদারকি করছে।
তখনই আদি ঝড়ের বেগে বাড়িতে ঢুকে।তারপর নিজের রাগ কমাতে সামনের টেবিলে একটা লাথি মারে।টেবিলটা পড়ে কাচের অংশটুকু ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।তারপর সোফায় গিয়ে বসে পড়ল।
আদির মা দৌড়ে এসে বললো,
–আদি,বাবা কি হয়েছে।
আদি কোনো উত্তর না দিয়ে দরজার দিকে চেয়ে আছে।
নিশি এসে বললো,
–ভাইয়া,তুই এমন ভাবে রেগে আছিস কেন?কি হয়েছে সব ঠিক আছে তো?
এবারো উত্তর দিলোনা।এক ধ্যানে মেইন ডোরের দিকে চেয়ে আছে।
ওরা বুঝলো কোনো উত্তর পাবেনা।তাই চুপ করে দাড়িয়ে আছে এটা দেখার জন্য আদি কার জন্য অপেক্ষা করছে আর কেন?

তখনই সামান্তা কতগুলো শপিং ব্যাগ হাতে বাড়িতে ঢুকে।আদি উঠে সামান্তার হাত ধরে।সামান্তা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হয়েছে?
আদি কোনো উত্তর না দিয়ে ওকে নিয়ে যেতে লাগলো।আদিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও অনেক রেগে আছে।ওর হাত কাপছে।সামান্তা ব্যাগগুলো নিচে রেখে দিয়ে যেতে যেতে নিশির দিকে তাকালো।
নিশি ইশারায় জানালো ও কিছু জানেনা।আদি সামান্তার হাত খুব জোরে চেপে ধরেছে আর জোরে জোরে কদম ফেলছে তাতে সামান্তা ওর সাথে তাল মিলাতে পারছেনা।কিন্তু আদির সেদিকে খেয়াল নেই।
আদির মার কাছে অবস্থা ভালো ঠেকছেনা তাই তিনি আদিকে বললো,
–আদি ওকে ছেড়ে দে।কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
বলেই ওদের দিকে এগুতে নিলে সামান্তা নিজেই ইশারা করে না করে।
সামান্তার মনে হচ্ছে হাত ছিড়ে যাচ্ছে।আদি উপরের সিড়িতে সামান্তা ২সিড়ি নিচে থাকায় হাতে টান পড়ছে।
নিশি মাকে বললো, ভাইয়াকে যেমন দেখাচ্ছে তাতে সামুর কপালে শনি,রবি,সোম,মঙ্গল সব আছে।

আদি নিজের রুমে সামান্তাকে ছুড়ে ফেলে দরজা লক করে দেয়।সামান্তা ফ্লোরে পড়তে গিয়েও পড়লোনা।
আদি এসে সামান্তার সামনে দুহাত ভাজ করে শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।ওর দৃষ্টি শান্ত থাকলেও যে ও শান্ত নেই সেটা সামান্তা ভালোই বুঝতে পারছে।সামান্তা জিজ্ঞাস্যু দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলো কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছেনা।তাই জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
–কি হয়েছে?আমাকে এভাবে এখানে কেন আনলেন?
আদি চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে চোখ খোলে বললো,
–এখনো বুঝতে পারছোনা কেন এনেছি?
–না,আমি কি করেছি?
–মনে করে দেখো কি করেছো?
সামান্তা মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছেনা।আজ সারাদিনে মাত্রই দেখা হলো তাহলে কি হলো,কিছুই তো করেনি।আর আগের কোনো ঝামেলাও অপূর্ণ নেই।তাহলে?
–কি করেছি?আজকে সারাদিনে এই মাত্র দেখা হলো তাহলে কি করতে পারি?

আদির মাথায় আবার ধপ করে আগুন জ্বলে গেলো।সামান্তার কাছে গিয়ে ওর দুবাহু চেপে ধরে চিতকার করে বললো,
–আমাকে কেন দেখবে?দেখার মানুষের কি অভাব আছে?আদিল চৌধুরীর বউ মার্কেটে গিয়ে অন্য পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করবে আর তা আদিল চৌধুরী মেনে নিবে?
সামান্তা দু’হাতে কান চেপে ধরেছে।কানের সামনে এসে এত জোরে চিতকার করছে,মনে হচ্ছে কান ফেটে যাচ্ছে।রুমটা সাউন্ড প্রুভ হওয়ায় বাইরে শব্দ যাচ্ছেনা।
সামু কান থেকে হাত সরিয়ে ছলছল চোখে বললো,
–আমি ঢলাঢলি করেছি?
আদি দাতে দাত চেপে বললো,
–ঢলাঢলি করোনি করার সুযোগ তো দিয়েছো?ওই ছেলে তোমার শরীরে বারবার হাত দেয়নি?তুমি ওকে একবারো বাধা ফিয়েছো?
বিবাহিত একটা মেয়ে একটা অন্য পুরুষের সাথে কিভাবে শপিংয়ে যায়?বুঝাও আমাকে?
বলেই সামান্তার বাহু ছেড়ে দিলো।
সামান্তা ভয়ে ভয়ে বললো,ও আমার ফ্রেন্ড।খুব ক্লোজ তাই,,,
আদি আরো জোরে চিতকার করে বললো,
–ফ্রেন্ড মাই ফুট।তুই যদি আর ওই ছেলের সাথে কথা বলিস তোকে কি করবো নিজেও জানিনা।মেয়েদের গায়ে হাত দেয় তারা সভ্য পুরুষ হতে পারেনা।তুই আগামীকালই ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ ব্রেক করবি।নয়তো আমি ওকে খুন করবো।

সামান্তা আতকে উঠলো।তারপর বললো,ঠিক আছে।
আদি সামান্তার মাথা দু’হাতে ধরে মুখের সামনে গিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
মনে থাকে যেন।আদার ওয়াইস,,
সামান্তা চোখ বন্ধ করে বললো, মনে থাকবে।
আদি সামান্তার মাথাটা ছেড়ে দিয়ে চিতকার করে বললো, নাও লিভ।
সামান্তা চোখের কোনের পানি মুছে আদির রুম থেকে বের হয়ে হনহন করে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো।নিশি আর মা ওকে দেখছে।ওকে খুব বিধস্ত দেখাচ্ছে।সামান্তা কিছু না বলে ব্যগগুলো তুলে নিজের রুমের দিকে আগাচ্ছে নিশি আর মা বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে উত্তর দিচ্ছেনা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাদতে শুরু করলো।আর বলছে,

–আমাকে এসব কথা বলতে পারলো?কি করেছি আমি?ও আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড।ওর ছোয়ার মধ্যে আমি কখনো খারাপ কিছু অনুভব করিনি।ওকে আমি ছেলে ভাবিনা শুধু মাত্র বন্ধু ভাবি।তাই হয়তো?
যতই বন্ধু হোক,ছোয়ায় যতই পবিত্রতা থাকুক।আমার দূরত্ব বজায় চলা উচিত ছিলো।ভুলে গেলে চলবেনা আমি বিবাহিত।আমার হাসব্যান্ড কেন কোন হাসব্যান্ড এসব মানবেনা?কিন্তু ওনি কি আদো আমার হাসব্যান্ড?ওনি কি আমাকে ভালোবাসবে?
সামান্তা মাথা চেপে কাদছে,জানিনা আমি কিচ্ছু জানিনা।ওনি আমার সাথে এমন কি করে করলো।একটু কষ্ট হলো না।সুন্দর করে তো বুঝিয়ে বলতে পারতো?তা না করে এত রাগ,,রাগ তো আমারো আছে,,,,

নিশি ঘটনা বুঝার জন্য আদির রুমে চোখ বুলালো।আদি একটা স্পঞ্জের বল দেয়ালে ছুড়ে খেলছে।আদির কোনো অনুতাপ নেই।বরং ওর মনে হচ্ছে আরো কিছু করা উচিত ছিলো।

সামান্তা আর বিকেলে বের হয়নি।রাতে আদি লিভিং রুমে ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।বন্ধুদের সাথে ওদের গার্লফ্রেন্ডরাও আছে।নিশি টেনেটুনে সামান্তাকে লিভিং রুমে নিয়ে আসছে।
সামান্তার কথা আদির কানে ভেসে আসছে।
–আপু প্লিজ ছেড়ে দেও।ভালো লাগছেনা আমার।আমি ওখানে গিয়ে কি করবো?
,–বসে থাকবি।মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকতে দিবো নাকি?
আদি আড়চোখে তাকালো।সামু কালো রঙের একটা ড্রেস পড়েছে।চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ।কারণও আদির অজানা নয়।আদি এখনো সামান্তার উপর রাগ করে আছে।তাই ওর দিকে খেয়াল না করে বন্ধুদের সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।নিশি জোর করে ওর পাশে বসিয়ে দিলো।নিশি গার্লদের সাথে গল্প করছে।সামান্তা একবার আড়চোখে আদিকে দেখে নিলো সে হেসে হেসে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে।
চুপ করে বসে রইলো কিছুক্ষণ তারপর বললো,
–আমি কফি নিয়ে আসি
বলেই উঠে কিচেনে গেলো।

সামু যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আদির এক ফ্রেন্ড বললো,
–আদি,হু ইজ দ্যা গার্ল?
নিশি কিছু বলার আগেই আদি বললো,
–কাজিন।আব্বুর ফ্রেন্ডের মেয়ে।
নিশি ভ্রু কুচকালো।সামান্তা কফির ট্রে হাতে সব শুনতে পেলো।
ওকে কাজিন হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে এটা ওকে খুব কষ্ট দেয়।তাই আর না এসে কিচেনে ফিরে যায় আর সার্ভেন্টকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।আদি সার্ভেন্টকে দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,
–সামান্তা কই?
–ওনার নাকি শরীর ভালো লাগছে না তাই আমাকে দিয়ে পাঠালো।
আদি বলে উঠলো,
–শরীর ভালো না নাকি এভয়েড করে গেলো?
আরেক ফ্রেন্ড বললো,
–যাই বলিস আদি,তোর এই কাজিন কিন্তু দেখতে সেই?পুরাই স্টোবেরি!সিট খালি আছে নাকি,,,,
আদি হুট করে বলে উঠে,
–ওই,,,কি বলছিস এইসব?সামলে।

নিশি মনে মনে বলছে, এখন কেন জ্বলে,এবার বুঝো ঠেলা!!
উঠে চলে গেলো নিশি।

–কি হলো আদি?রেগে যাচ্ছিস কেন?তোর অন্য কিছু লাগে নাকি?
–আমার কি লাগে না লাগে তা তোদের ভাবতে হবেনা।আমার বোন লাগুক,বউ লাগুক,জিএফ লাগুক,যা খুশি লাগুক।তোরা একদম বাজে নজর দিবিনা।
অন্য এক মেয়ে ফ্রেন্ড বললো,
তলে তলে এত কিছু,আর আমরা কিছুই জানিনা?কবে থেকে চলছে এসব?
আদি বোকার মতো চেয়ে বলে,কিসব?
–কি আবার প্রেম?
বলেই সবাই জোরে হেসে উঠে।
–দেখ কোনো প্রেম ট্রেম চলছেনা।কবে চলবে জানিনা।তবে ও আমার কাছে অনেক স্পেশাল কেউ।আই লাভ হার।সো রেস্পেক্ট হার।
–স্পেশাল!!লাভ!!বুঝেছি।
–হুম অনেক স্পেশাল।

সামান্তা রুমে গিয়ে কাদছে।
আমি কাজিন?কাজিন লাগি আমি।আমার সামনে চিতকার করে নিজেকে বর বলে,আমাকে বউ বলে দাবি করে কিন্তু অন্যের সামনে কোনো স্বীকৃতি দিতে পারেনা।তারমানে এসব অভিনয়।টাইম পাসিং।আর আমি কি ভাবতে শুরু করেছিলাম,এতো বোকা কেন আমি।আমার আর এসব বর-বউ খেলা ভালো লাগছে না।সামু সব ভুলে যা নিজের লাইফ নিজের মতো চালা।আদিকে ভেবে কষ্ট পাসনা।

??

সামু ভার্সিটি যাচ্ছে।যাওয়ার আগে সার্ভেন্টকে দিয়ে আদির রুমে শপিং ব্যাগগুলো পাঠিয়ে দেয়।আদি ঘুম থেকে উঠে কতগুলো শপিং ব্যাগ দেখে।ব্যাগ খোলে অনেকগুলো টিশার্ট আর শার্ট পায়।
আদির মাথায় ঢুকছেনা এসব কে রেখে গেছে।প্রতিটা শার্ট,টি-শার্টই সুন্দর।কালার গুলোও সুন্দর।আদির খুব ভালো লাগছে।হটাৎ একটা চিরকুট পেলো তাতে লিখা,

“এগুলো কিনার জন্যই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম যাতে হেল্প পাই।যাইহোক রাখার ইচ্ছে হলে রাখবেন নয়তো ফেলে দিয়েন।দেওয়ার জন্য এনেছিলাম তাই দিয়েছি।বাকিটা আপনার ইচ্ছে।”

আদি বুঝতে পারলো সামান্তা দিয়েছে।এটাও বুঝলো ছেলেটাকে কেন নিয়ে গিয়েছে।

বিকেলবেলা,,
জয়ের ফ্যামিলি এসেছে।জয় নিশির বিএফ।আর মায়ের বান্ধবীর ছেলে।বিদেশে ছিলো এতদিন পড়াশোনার জন্য।বিদেশ থেকে এসেই নিশির বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।নিশির পরিবার আগেই ওদের ব্যাপারে জানে।আর নিশির পছন্দ মেনেও নিয়েছে।তবে নিশির বাবা বলেছেন আপাতত এনগেজমেন্ট করে রাখবে।পরীক্ষা শেষে বিয়ে।তারাও মেনে নিয়েছে।সামনের ওইকে এনগেজমেন্ট।নিশি তো বেশ খুশি।
সামু বাসায় আসছেই নিশি ওকে জরিয়ে ধরে লাফালাফি করছে।
সামু কিছু বুঝতে পারছেনা।নিশি সবকিছু খোলে বলে।সামান্তা ওকে কংগ্রেস জানায়।নিশির জন্য আদি সামান্তার সাথে কথা বলার সুযোগ হারায়।সামান্তা নিজের রুমে চলে যায়।

সন্ধ্যা বেলা-
সামান্তা লিভিং রুমে বসে কফি খেতে খেতে পড়ছে।তখনই আদি ওর পাশে এসে বসলো।সামান্তা আড়চোখে একবার দেখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের পড়ায় মনোযোগ দিলো।
–সামান্তা?
–জ্বি বলুন।
বইয়ের দিকে চেয়েই।
–পাচ মিনিট কথা বলতে চাই।
–আমি এখন পড়ছি।
–ইটস আর্জেন্ট।
সামু ভ্রু কুচকে বললো,
–আর্জেন্ট,,আমার সাথে আপনার কি আর্জেন্ট কথা থাকতে পারে?আর্জেন্ট হওয়ার মতো কোনো সম্পর্ক কি আছে আমাদের?আমি এখন কথা শুনতে পারবোনা।প্লিজ যান।
–ইগনোর করছো?
–ইগনোর?
আদিকে এই মুহুর্তে ওর অনেক বিরক্ত লাগছে।
দেখুন মি.আদিল চৌধুরী।আমি অতি সামান্য সাধারণ একটা মেয়ে।আমার আপনার মতো এত বড়মাপের একজনকে ইগনোর করার যোগ্যতা আছে?
–সামান্তা,প্লিজ।আমি সেদিনের জন্য,,
–আমি আপনার কথা শুনতে কোনো দিক থেকে বাধ্য নই।না আপনার আমাকে বাধ্য করার অধিকার আছে।
–সত্যিই অধিকার নেই?
ভ্রু কুচকে বললো,
–কিসের?আমার তো মনে পড়ছেনা।
–সামান্তা আই এম ইউর হাসব্যান্ড।এটা তোমার ভুলে গেলে চলবেনা।
–হাসব্যান্ড বললেই হাসব্যান্ড হওয়া যায়না।একটা কাগজে সাইন করলেই বিয়ে হয়ে যায়না।না আপনি আমার হাসব্যান্ড না আমি আপনার ওয়াইফ।আমাদের একটাই পরিচয় কি বলছিলেন গতকাল ওহ হ্যা,আমি আপ্নার বাবার বন্ধুর মেয়ে আপনার কাজিন।
আদি এবার বুঝতে পারলো সামু খেপে আছে কেন।
–এটুকুই শুনেছো,পরের কথা শুনো নি?
–প্রয়োজন মনে করিনি।
–যদি শুনতে,,
–আমার আপনাকে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।প্লিজ চলে যান আমাকে একটু পড়তে দিন।
আদির রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
–আদি তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখিয়েছে বলে তোমার ভাব বেড়ে গেছে তাইনা?
সামু তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
আপনাকে ইন্টারেস্ট কে দেখাতে বলেছে?আমার আপনার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই আর না আমি চাই আপনি আমার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখান।আপনি আপনার মতো থাকুন আর আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।আমি আজ পর্যন্ত আপনার লাইফে ইন্টারফেয়ার করিনি আপনিও করবেন না।সে অধিকার আপনাকে দেইনি।

আদি দাঁড়িয়ে গেলো।তারপর চোখমুখ লাল করে বললো,
–আদিকে অধিকার দেওয়া লাগে না,আদি আদায় করে নিতে পারে।
বলেই টেবিলের উপরে রাখা কফির মগটা ছুড়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

এত রাগ,,বাবা এই দুনিয়ায় আর ছেলে পায়নি আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য,এই এরোগেন্টকেই পেলো।
সামান্তাও রাগে ফুসতে ফুসতে বই হাতে নিজের রুমে চলে যায়।

আদি নিজের রুমে পাইচারি করছে।কপালে হাত ঘষে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চাইছে কিন্তু পারছেনা।তাই সজোরে দেয়ালে লাথি মারে।
কি ভাবে কি নিজেকে,,এতো দেমাক কিসের?আমি ওর কেউনা?আমাকে অধিকার দেয়নি?আমাকে অধিকার দিতে এসেছে?আমাকে অধিকার দেওয়ার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।

???

আজকে নিশির এনগেজমেন্ট।এই এক সপ্তাহে আদি,সামু কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।এমনিতেও নিশির এনগেজমেন্ট নিয়ে সবাই বিজি ছিলো।শপিং,প্লানিং এসব নিয়ে সামান্তা নিশির সাথে বিজি ছিলো।আদি আর সামুর দেখা হয়ে গেলেও দুজন দুজনকেই এড়িয়ে গেছে।এমন ভাব কেউ কাউকে চিনেই না বা দেখেইনি।
বাড়িতেই এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।সবাই কনের(নিশি)জন্য অপেক্ষা করলেও আদির দুচোখ সামান্তাকে খোজছে।সামান্তা নিশ্চয়ই আজ সেজেছে।ওকে আগে কখনো সাজে দেখেনি তাই ওকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
হটাৎ ই আলো নিতে গেলো।সিড়ির উপর লাইটের আলো পড়ছে।দুজন পরী ধীর পায়ে হেটে হেটে আসছে।যেন মাত্রই আকাশ থেকে নেমে এসেছে।সেই পরী দুজন নিশি আর সামু।নিশি সামনে সামু পিছনে।আদি হা হয়ে দেখছে।ঘোর লাগা চোখে দেখছে।
–হায়,,মে তো মারজাবা।

নিশি মেজেন্টা কালার লেহেঙ্গা পরেছে।তাতে ডার্ক মেজেন্টা কালারের পাথর পুতির কাজ।সামু পড়েছে পিংক কালেরের মধ্যে গ্রিন আর গোল্ডেন কালারের পাথর পুতির কাজ।চুলগুলো সামনে ফুলানো বেনি করা।বেনির উপর মতির মালা,ছোট ছোট ফুল।ভাড়ি গয়না,ভারি মেকাপ।দুহাতে মেহেদী।নিশি আর সামুর সেইম সাজ।নিশিই বলেছে দুজনেই সেইম সেজে সবাইকে কনফিউজড করে দিবো।দুজনকেই অসাধারণ লাগছে।সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছে।
সামান্তার অনেক আনইজি লাগছে।এর আগে কখনো এমন পার্টি এটেন্ট করেনি।চারদিকে আলোর ছড়াছড়ি,তাক লাগানো ডেকোরেশন,কত নামি-দামি মানুষজন সব মিলিয়ে আনইজি লাগছে।আদি সামান্তাকেই দেখছে।পলক নিতেও ভুলে গেছে।নিচে নামতেই সবাই এগিয়ে এলো ওদের দিকে স্টেইজে নেওয়ার জন্য।নিশি সামান্তার হাত চেপে ধরলো।
–কি হলো আপু?
–তুই আমার সাথে যাবি।
–আমি ওখানে গিয়ে কি করবো?
–আমি জানিনা,তুই ও আমার সাথে বসে থাকবি।
সামান্তা নিশির সাথেই গেলো।

স্টেইজে উঠতেই একটা ছেলে বলে উঠলো,
–জয় তোর বউ কে ইনি না ওনি?
সামান্তা মুচকি হেসে নিশিকে দেখিয়ে বললো,
–নিশিতা আপু।
ছেলেটি বললো,
–সরি।আসলে সেইম সাজ তাই কনফিউজড ছিলাম।
সামান্তার কেন জানি হাসি পাচ্ছে।নিশি যা বলেছিলো তাই।অনেকেই কনফিউজড হচ্ছে।হেসেই ফেললো।
–ইটস ওজে।নিশিতা আপু ইচ্ছে করেই এমন করেছে।
–ওহ আচ্ছা।
আমি রাজ জয়ের কাজিন।আপনি?
–আমি সামান্তা নিশি আপুর,,,,
থেমে গিয়ে বলল কাজিন।
আদি দূর থেকে সামান্তাকে দেখছে।হটাৎ করেই ওর চকলেটের মতো চেহারাটা হাওয়া হয়ে গেলো।সামান্তাকে রাজের সাথে গল্প করতে দেখে ওর রাগ হচ্ছে।
সামু নিশির পাশেই বসে গেলো আংটি বদলের পর সবাই ড্রান্স ফ্লোরে যাচ্ছে।রাজ সামান্তাকে ড্রান্সের জন্য বলে।সামান্তা না করে দেয়।রাজ বলে,
–কেন আপনার সাথে ড্রান্স করলে আমাকে মানাবে না,আমি কি দেখতে এতটাই খারাপ?
–না তা হবেন কেন?আমার এমনিতেই ভালো লাগছে না।
নিশি সামুকে একপাশে নিয়ে বলে,
সানু ড্রান্স কর,ভাইয়াকে জ্বালানোর ভালো উপায়।
–কিন্তু,
–কোনো কিন্তু না।কেউ আপত্তি করবেনা কারণ আমাদের সুসাইটিতে এসব পান্তাভাত।না করিস না যা।
সামান্তা এমনিতেই আদির উপর রেগে ছিলো তাই রাজি হয়ে গেলো।

???

আদি সামান্তাকে রাজের সাথে ড্রান্সফ্লোরে দেখতে পেয়ে মাথায় যেন আগুন ধপ করে জ্বলে গেলো।বোনের এনগেজমেন্ট তাই কিছু বলতে পারছেনা।নয়তো সামান্তাকে শিক্ষা দিয়ে দিতো।ওয়াইনের বোতল নিয়ে চুমুক দিলো।এক চুমুকে সবটা শেষ করে ছুড়ে ফেলে দিলো।

সামান্তা একা এক জায়গায় বসে আছে।তখনই রাজ এসে পাশে বসলো।সামান্তা নড়েচড়ে বসে।
–একা বসে আছেন যে,,,
–এমনি,
–কি করেন আপনি পড়াশোনা?
–হ্যা,অনার্স ফার্স্ট ইয়ার।
–আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
–বাহ!!
–জ্বী।
সামান্তা কথা বলতে গিয়ে অন্য দিকে চোখ পড়তেই দেখে আদি একদৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আদিকে খুব কিউট লাগছে।একদম চকলেট বয়।এমনিতেই সুন্দর আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।সামান্তা ক্রাশ খেলো।কিন্তু ওর দৃষ্টি দেখে ক্রাশ খাওয়ার কথা ভুলে গেলো।ওর দৃষ্টি দেখে ওর কলিজা শুকিয়ে গেলো।
খুক খুক করে কাশতে লাগলো।
–রাজ, আমি পানি খেতে যাচ্ছি।বায়।
বলেই সামান্তা কেটে পড়েছে।সিড়ি দিয়ে উঠে নিশির রুমের দিকে যাচ্ছে এটাই আপাতত ওর জন্য সেইফ জায়গা।নিশির রুমে গিয়ে পানি খেতেই ঠাস করে দরজা লাগানোর শব্দে ঘুরে দাড়ালো।
–আআপপ,,,নি।
–কেন কাকে আশা করেছিলে?
ওই ছেলেকে?
(সামান্তার দিকে আগাতে আগাতে)
সামান্তা পিছাতে পিছাতে বললো,
–না,, মা, নে,,।আপনি আমার দিকে কেন আগাচ্ছেন?
–বর তার বউয়ের দিকে কেন আগায়?
–মা,,,নে,,?
দেয়ালে ঠেকে গেলো।অসহায় ভাবে আদির দিকে তাকালো।
আদি বাকা হেসে ওর একদম কাছে চলে গেলো।সামু খিচে দাড়িয়ে আছে।আদি বা হাতে সামুর কোমড়ের ডান পাশে হাত রাখে।সামান্তা কেপে উঠে।আদির দিকে অসহায় ভাবে চেয়ে আছে।আদি কোমড়ের হাত একটানে ডান পাশে নিয়ে চেপে ধরে সামান্তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।একজনের নিশ্বাস অন্য জনের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
সামান্তা কাপা কাপা গলায় বলল,
–কিহহহ,,করছেন,,,?
–বুঝতে পারছো না?
বলেই সামান্তার গালের পাশের চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিলো।সামান্তা বার বার ওর ছোয়ায় কেপে উঠছে।চোখ বন্ধ করে ফেলল।
আদি ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,
–তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।যেন আস্ত একটা ডল।আদির ডল।আমি তো পুরো সময় তোমাকেই দেখে যাচ্ছি।
বলেই আদি ওর ঠোঁটে আংগুল ছোয়ালো।সামু কিছু বলতে যাবে তখনই আদি ওর ঠোঁটের উপর আংগুল রেখে বললো,
–হিসস,,,।
সামান্তা আর কথা বলতে পারছেনা।পারে তো কেদে দেয় কিন্তু কাদতেও পারছেনা।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।
আদি টুপ করে ওর গালে একটা কিস করে।সামান্তা বড়বড় চোখ করে আদির দিকে তাকায়।পলক যেন পড়ছেই না।ফ্রিজ হয়ে গেছে তা দেখে আদি মুচকি হেসে ওর ঠোঁট থেকে আংগুল সরিয়ে বললো,
–একসাথে এত ডোজ নিতে পারবে না তাই আজকের মতো তোমাকে ছেড়ে দিলাম।তোমার লিপস্টিকটা নষ্ট করতে চাইনা।আর এত মানুষের মধ্যে ঠোটে লিপস্টিক নিয়ে ঘুরলে আমাকে লোকে কি বলবে?এটা পরেরবার।
সামান্তা গালে হাত দিয়ে কাদো কাদো হয়ে বললো, আপনি কাজটা ঠিক করেন নি,,আমি,,
–তুমি কি বাবাকে বলবে?বলো।চলো আমিও তোমার সাথে যাই।
–….
আদি সামান্তার মুখের সামনে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,আদি আদির অধিকার আদায় করে নেয়।তোমার উপর শুধু আমার অধিকার।
–আপনি কি কিছু খেয়েছেন?এমন গন্ধ,,,
–হ্যা,একটু তবে হুশে আছি।কেন খেয়েছি জানো তোমার জন্য।তুমি ওই ছেলেটার সাথে এত কি কথা বলছিলে?আর ড্রান্স করছিলে কেন?তুমি শুধু আমার সাথে ড্রান্স করবে।চলো এখনি ড্রান্স করবে।
বলেই আদি সামান্তার হাত ধরে ড্রান্স করতে রুমের মাঝখানে নিয়ে এলো।সামান্তা কোনো উপায় না পেয়ে ওর সাথে ড্রান্স করছে।না করলে আবার কি না কি করে?
সামান্তার আদির সাথে ড্রান্স করতে ভালোই লাগছে।আদির প্রতিটা নিশ্বাস,ছোয়া অনুভব করছে।তখনই আদির ফোন বেজে উঠলো।হাতে ফোন নিয়ে দেখে বাবা ফোন করেছে।রিসিভ করে,,,।
–….
–বাবা আমি এখনি আসছি।
সামুর দিকে চেয়ে বললো,নিচে চলো।মেহমানরা চলে যাচ্ছে।
–আপনি আগে যান।
আদি সামুর কাছে গিয়ে কিছু বুঝার আগেই অন্য গালে কিস করে মৃদ্যু হেসে বেরিয়ে গেলো।
সামু আবারো ফ্রিজড হয়ে গেলো।দুগালে হাত দিয়ে বললো,
“লুইচ্চা”

চলবে,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৫

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-৫
ফাবিহা নওশীন

সামু গার্ডেনে দাঁড়িয়ে বিরবির করে কবিতা পড়ছেঃ

তুমি হবে ভীষণ একরোখা
একবার প্রেমে পড়েছো তো ব্যস পড়েছো
সাধ্যি কার এই জন্মে সেই প্রেম থেকে তোমায় ফেরায়!

আমি হবো চরম বেহায়া
দিনের মধ্যে চৌদ্দ বার ঝগড়া করবো
রাত্রি নামলে আদুরে গলায় তোমার কাছেই ফিরবো!
#কলি_ফাহমিদা

তখনই নিশি এসে বললো,
সামু,,সাইকেল আনার পর তো তোকে আর সাইকেল চালাতে দেখলাম না।

–সময় পেলাম কই?

–গতকাল তো ভার্সিটি অফ ছিলো কিন্তু তুই ঘরবন্দী হয়ে বসে ছিলি।আমি সাইকেল নিয়ে এসেছি।

সামু ঘুরে দেখে নিশি সাইকেলটা ফুল আর বেলুন দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।সাইকেল দেখেই মন ফুরফুরা হয়ে গেলো।
সাইকেল হাত দিয়ে ছুয়ে দিলো তারপর চুলগুলো খোপা করে সাইকেলে উঠে বসে।পুরো গার্ডেন জোরে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে।আর নিশি ওর পিছে পিছে দৌড়ে হাপিয়ে দাড়িয়ে যাচ্ছে।

আদি কফির মগ নিয়ে বারান্দায় এসে দাড়িয়ে হা করে আছে।
আরে দজ্জাল বউ সাইকেল চালাচ্ছে।
আদি কফি রেখে নিচে আসছে।

–সামু থাম,থাম।
সামু সাইকেল নিয়ে নিশির কাছে এলো।
–কি হয়েছে?
–আমি উঠবো প্লিজ প্লিজ আমাকে উঠা।
সামান্তার ওকে পিছে নিয়ে সাইকেল চালাতে সমস্যা হবে।তবুও বললো,
— ঠিক আছে উঠো।শক্ত করে ধরো।তবে পরে গেলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবেনা।
–ওকে ডান।
নিশি খুশিতে গদগদ হয়ে উঠে বসে।
সামান্তা সাইকেল চালাচ্ছে আর নিশি দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে আছে।
–আপু,আমাকে ধরো নয়তো পরে যাবে।
–আরে কিচ্ছু হবেনা।

আদি নিচে নেমে দেখে সামান্তার পিছনে নিশি।
এই শুকনো পাতা আটার বস্তাকে সাইকেলে উঠিয়েছে না পরে গেলেই হয়।
নিশি দুহাত মেলে কাত হচ্ছে,এদিক সেদিন নড়ছে।এমনই কাত হলো ধপাস করে দুজনেই,,,

আদি হাত দিয়ে চোখ ঢেকে বললো,,
–ওহহ,নো।
চোখ মেলে দেখে দুটোই নিচে পড়ে আছে আর সাইকেল ওদের উপর।
আদি দৌড়ে গিয়ে সাইকেল সরালো।তারপর সামুর হাত ধরে টেনে তুলে।তখনই নিশি বলে,,
–ভাই,,আমিও পড়েছি।
–ওহহ,,সরি সরি
বলেই নিশিকে তুলে।সামু জামাকাপড় ঝাড়ছে তখনই হাতের কনুইতে টান লাগলো আর জ্বলে উঠে।হাত সামনে এনে দেখে ছিলে রক্ত বের হচ্ছে।
আদি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
আরে তোমার তো কেটে গেছে।
নিশি বললো,
–সামু,রক্ত বের হচ্ছে।
আদি তখন নিশির দিকে রেগে বললো,
সব তোর দোষ,তুই আটার বস্তা এই পিচ্ছি মেয়ের পিছনে উঠেছিস কেন?তারউপর ঢং করে হাত মেলে নাচছে।

–ভাইয়া তুমি আমাকে বকছো কেন?আমি কি ইচ্ছে করে সামুকে ফেলে দিয়েছি।

–তোর সেন্স নেই।এত বড় মেয়ে,,,

হয়েছে হয়েছে,,সামান্তা থামিয়ে দিলো।
আমার হাতে সামান্যই ছিলেছে মেডিসিন লাগালেই ভালো হয়ে যাবে।
আদি বললো,হ্যা চলো।
সামান্তা হাটতে গিয়েই আহ বলে হাটুতে হাত দিলো।
আদি বড়বড় চোখ করে বললো,
ওখানেও কেটেছো?
–সামু ভেরি সরি,আমার জন্য এমন হলো।
নিশি মন খারাপ করে বললো।
–বাদ দেও।চলো।
বলেই পা টেনে টেনে হাটতে লাগলো।
আদি আচমকা সামুকে কোলে তুলে নিলো।সামু বড়বড় চোখ করে আদিকে দেখছে।
–আরে মিয়া,,কি করছেন?ছাড়ুন।
নামার জন্য ছটফট করছে।
–শোন আরেকবার হাত-পা নড়াবে তো উপরে তুলে আছাড় মারবো।তখন আর উঠে দাড়ানোর অবস্থায় থাকবেনা।কোমড়,পা ভেঙে সোজা হসপিটালে।
সামান্তা আর কিছু না বলে নিশির দিকে অসহায় ভাবে চাইলো।নিশি মুচকি হেসে চোখ মারলো।

আদি লিভিং রুমে গিয়ে সার্ভেন্টকে ডেকে ফার্স্ট এইড বক্স আনালো।তারপর বক্স খোলে তুলো নিয়ে স্যাভলন নিতেই সামান্তা বললো,
আমি করে নিতে পারবো।
–তোমাকে কে জিজ্ঞেস করেছে?
বলেই আদি ওর বা হাতে ধরে ডানহাত তুলো ছুয়াতেই সামু আহ করে নড়ে উঠে।
–বাঘিনী এই সামান্য আঘাতেই কুকড়ে যাচ্ছে।
–আরে আমার জ্বলে যাচ্ছে আর আপনি মজা করছেন?
–মজা কই করলাম?আমি তো মেডিসিন লাগাচ্ছি।
বলেই মেডিসিন আবার লাগালতেই সামু আদির বাহাত জোরে চেপে ধরে ইচ্ছে করে খামচি দেয়।
আদি আহ করে উঠে।সামু হাত সরিয়ে নেয়।
নিশি বলে,
কিরে ভাইয়া,বউয়ের ব্যথায় তুই ও কি ব্যথিত?
আদি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই নিশি চুপ হয়ে গেলো।সামান্তা মিটিমিটি হাসছে।
–হাসো হাসো,,সামান্তারানী।আমিও এর শোধ নেবো।
–পাজামা তুলো,,হাতের কাজ শেষ।
–কি??
–ওপস সরি।নিশি বাকিটা তুই করে দিস।আমি ওকে রুমে দিয়ে আসি।
বলেই আদি সামুকে কোলে তুলে নিলো।তারপর পায়ের মধ্যে চিমটি কাটলো।
সামান্তা আউচ বলতে গিয়েও থেমে গেলো নয়তো নিশিকে এর উত্তর দিতে হবে।
চোখ পাকিয়ে আদির দিকে তাকাচ্ছে।আদি মুচকি হাসছে।

আদি শাওয়ার নিয়ে আলমারি খোলছে।তখনই ওর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো সামুকে খেপানোর।আজও টকটকে হলুদ পড়বে আর সামুর আসেপাশে ঘুরে বেরাবে।সামু হলুদ কালার একদম পছন্দ করে না।

আদি নিচে গিয়ে দেখে সামান্তা টিভি দেখায় ব্যস্ত।কোনো দিকে তার হুশ নেই।আদি টিভির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে যায় আর সামান্তার টিভি দেখায় ব্যাঘাত ঘটে।রেগে আদির দিকে তাকায় কিন্তু আদির দিকে চেয়ে ওর মেজাজ আরো বিগড়ে যায়।আজকেও হলুদ পড়েছে।
–সমস্যা কি?সামনে থেকে সরুন।
–কেন সরবো,আমার বাড়ি আমার ঘর,আমার টিভি যা ইচ্ছে করবো।
সামান্তা রিমোট রেখে এগিয়ে গেলো।
–তাই বলে টিভির সামনে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রা দেখাচ্ছেন।
–যাত্রা মানে কি হাহ?
–যাত্রা মানে কি এটাও জানেন না মি.সরিষা ক্ষেত?
–তুমি আমাকে আবারো সরিষা ক্ষেত বললে?
–আপনি যতবার হলুদ পড়বেন আমি ততবারই বলবো,,,,,মি.সরিষা ক্ষেত।
কেন আপনার কি অন্য রংয়ের জামাকাপড় নেই?
আদি মুচকি হেসে বললো,
–না নেই,,তুমি কিনে দিও।
–ইশশ,,,আমার তো ঠেকা পড়ছে?সরুন তো টিভি দেখতে দিন।

দূর থেকে আহনাফ চৌধুরী সবটা দেখছে।ওদের এভাবে কথা বলতে দেখে তিনি অবাক।আদি সামুর সাথে কথা বলছে?
নিশি পিছনে থেকে বললো,
–বাবা তুমি কি অবাক হচ্ছো?
–কেন তুই হচ্ছিস না?
–নাহহ,কারণ এসব আমি কয়েকদিন ধরেই দেখে আসছি।তোমার ছেলে সামুর পিছু পিছু ঘুরঘুর করে।
আহনাফ চৌধুরী খুশি হয়ে বললো,
তাই নাকি?

নিশি প্রতিউত্তরে ছোট্ট করে হাসি দিলো।

সামান্তা ভার্সিটির ক্লাস শেষে শপিংয়ে গেছে রাহুলের সাথে।রাহুল ওর খুব ভালো ফ্রেন্ড।আদির জন্য শপিং করবে।কিন্তু ছেলেদের পছন্দ সম্পর্কে ওর কোনো আইডিয়া নেই।আর তাছাড়া আদি হাইক্লাস ফ্যামিলির ছেলে।নিশ্চয়ই সবকিছু ব্যান্ডের পড়ে।এসব সম্পর্কে রাহুলের ভালো অভিজ্ঞতা আছে।তাই রাহুলকে নিয়ে যাচ্ছে।বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে ফিরতে দেরি হবে।
বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে শপিং করছে।আদির জন্য কিনাকাটা শেষ হলে নিজের কিছু কেনাকাটা আছে তাই গার্লস স্টলে ঢুকে সাথে রাহুলও ছিলো।আদি তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো আজ ওর বন্ধুরা ডিনারে আসবে তাই ওদের জন্য গিফট কিনতে এসেছে।সামুকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে স্টলে ঢুকতে দেখে।আদি ওদের ফলো করে।সামুর সাথে কেউ নেই শুধু একটা ছেলে ছাড়া।একটা ছেলের সাথে শপিংয়ে এসেছে এটা দেখে রাগে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।চোখমুখ লাল বর্ন ধারণ করেছে।ও চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে ওদের দেখছে।ওর রাগ আরো বেরে যায় যখন দেখে ছেলেটা বারবার ওর গায়ে হাত দিয়ে কথা বলছে,পিঠে হাত রাখছে কিন্তু সামান্তা কিছুই বলছে না।নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা।ওর ইচ্ছে করছে ওই ছেলেকে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে সামুকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে কিন্তু সিনক্রিয়েট হবে,এতে সামুর বদনাম হবে তাই হাতের মুঠো শক্ত করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে ওখান থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয় আর বিরবির করে বলে,
এর শোধ আমি বাড়িতে তুলবো।

চলবে,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৪

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-৪
ফাবিহা নওশীন

আদি সরিষা ক্ষেত লিখে গুগলে সার্চ দিলো।সাথে সাথে কতগুলো হলুদ রংয়ের ফুলের বাগানের ছবি চলে এলো।চাষ পদ্ধতি ইত্যাদি ইত্যাদি।আদির চিনতে ভুল হলো না।কারণ সামান্তাদের গ্রামে এমন ফুলের বাগান দেখেছে।বাগান বলতে খেত।সেখানে অনেক ছবিও তুলেছে।
নিজের টিশার্টের দিকে তাকাতেই ফিক করে হেসে দিলো।এই জন্য সরিষা ক্ষেত বলেছো,,।তুমি মাইরা আসলেই ফাজিল।

আদি কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর ফোন নিয়ে বিজি।তখনই বাবার রুম থেকে জোরে জোরে চিতকার আর হাসির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর পর নিশি ৬বলে চিতকার করছে আর হাসছে।বাবাও চিতকার করছে।আদি উৎসুক হয়ে রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো।সবাই লুডু খেলায় ব্যস্ত,নিশি একটু পর পর লাফিয়ে উঠছে।বাবা গুটি খেলেও চিতকার করে উঠছে।সামান্তা ওদের দেখে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।হাসি থামাতে না পেরে বারবার উঠে দূরে চলে যাচ্ছে নিজেকে শান্ত করে ফিরে আসছে।সবার কাহিনি দেখে আদিও দরজার সামনে দাড়িয়ে হাসছে।তখনই কাধে কারো হাত পড়লো।পিছনে ঘুরে নিজের মাকে দেখতে পেলো।
–দেখো মা এরা কি করছে,বাবার কি অবস্থা?এদের কাহিনি দেখে আমারো হাসি পাচ্ছে।
–সবই সামান্তার জন্য।সামান্তা বাড়ির পরিবেশ পাল্টে দিয়েছে।আর তুই তো মেয়েটাকে দেখতেই পারিসনা।
–মা তুমি একে মেয়ে বলছো?মেয়ে নয় আস্ত একটা বোম।
–তোর জন্য এমনটাই দরকার।পারফেক্ট ম্যাচ।একদিন ঠিক স্বীকার করবি যে তোরা মেইড ফর ইচ আদার।
–হয়েছে।
বলেই আদি নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে মা কি ঠিক বলছে,মেয়েটা সব দিক দিয়েই ঠিক ছিলো কিন্তু যেই পাজিরে বাবা।আমার চেয়েও বেশি।
আমাকে বলে কিনা সরিষা ক্ষেত।এগুলো ভাবা যায়,,আর কি কি বলবে খোদাই জানে।

রাতে আদি ছাদে উঠে দেখে সামান্তা রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখে মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসে।পা টিপে টিপে ওর পিছনে গিয়ে ভেও করলো।সামান্তা ভয় পাওয়া তো দূরে থাক নড়েওনি।আদি ভেবেছিলো সামান্তা চিতকার করে উঠবে।কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে পিছনে ঘুরে দুহাত ভাজ করে বুকের উপর রেখে বললো,
–ভেরি ফানি।
–তুমি ভয় পাওনি?
–একটুওনা।
–আমি তো ভেবেছিলাম,,
–কি ভেবেছিলেন ভয় পেয়ে চিতকার করে বিল্ডিং ফাটিয়ে ফেলবো।এতবড় ধামড়া ছেলে বাচ্চাদের মতো ভেও করছে।শেম।
–তোমার সমস্যা কি?সবসময় এভাবে কথা বলো কেন?একটু সুন্দর করে কথা বলতে পারোনা?
–পারি তবে সেটা বিপরীতে থাকা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে।
–উফফ,আমার এত ধৈর্য কোথ থেকে এলো?প্রথম থেকে তুমি আমার সাথে যে ব্যবহার করছো তাতে অন্য কেউ হলে ছাদ থেকে ফেলে দিতাম।
সামান্তা তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,
–ভয় দেখাচ্ছেন?
বলেই ঘুরতে যাবে তখনই আদি ওর দুবাহু চেপে ধরলো।সামান্তা কেপে উঠলো।এই প্রথম আদির ছোয়া পেলো।সারা শরীরে কারেন্ট বয়ে গেলো।চোখ তুলে আদির দিকে তাকাতেই ওর সমস্ত সাহস উবে গেলো।আচমকা আদি ওকে রেলিংয়ের সাথে ঘেঁষে নিচের দিকে ঝুকিয়ে ধরে রাখলো।আদির হাসি মুখটা রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।এভাবে নিচের দিকে হেলিয়ে রাখা আর ওর এই হিংস্র মুখটা দেখে সামান্তার ভয় হতে শুরু করলো।না জানি সত্যিই ফেলে দেয়।সামান্তা একবার কাত হয়ে নিচের দিকে চেয়ে চোখ খিচে বললো,
–কি করছেন,সত্যিই ফেলে দিবেন নাকি?
–তোমার কি মনে হয়,আমি মজা করছি?
বলেই হাত দিয়ে আরো জোরে চাও দিয়ে নিচের দিকে নিয়েই
সামান্তা চোখ মেলে দু’হাতে আদির দুহাত আকড়ে ধরলো।
–প্লিজ ছাড়বেন না।
আদি ওকে ভয় পেতে দেখে বাকা হাসি দিয়ে ওর এক হাত ধরে বাহু ছেড়ে একটানে তুলে নিলো।সামান্তা হুমড়ি খেয়ে ওর বুকে পড়লো।বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে।বেচারি ভয় পেয়ে গেছে।
যখন নিজেকে আদির খুব কাছে আবিষ্কার করলো ছিটকে গিয়ে দূরে দাড়ালো তারপর বললো,
–পাগল নাকি আপনি,একটা মানুষকে মার্ডার করতে যাচ্ছিলেন?
আদি বাকা হেসে বলে,
–বোকা নাকি তুমি?আমি তোমাকে মেরে জেলে যাবো নাকি?
সামান্তা চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলো।
আদি হোহো করে হাসছে।সামান্তার রাগ মাথায় চড়ে গেলো।একটা মানুষের সাথে কেউ এমন মজা করতে পারে।ইচ্ছে করছে আদিকে ছাদ থেকে ফেলে দিতে।
সামান্তা রাগে ফুসফুস করতে করতে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
আদি তখনো হাসছে।
যাক তোমাকেও একটু ভয় দেখাতে পারলাম।পাজি মেয়ে।আদি তুই কি সামথিং সামথিং ফিল করতে পারছিস?কিছু তো একটা ফিল অবশ্যই করতে পারছি নয়তো ওর স্পর্শে এমন ফিলিং কেন হচ্ছে?
এটাও কি গুগলে সার্চ করে জানবো?হাহা।

ভার্সিটি অফ।লেট করে ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারলো ওর জন্য সাইকেল এসে গেছে।কোনোদিক না চেয়ে দৌড়ে গার্ডেনে চলে গেলো সাইকেল দেখতে।কিছুদূর যেতেই আদির ডাক শুনতে পেলো।
–উফফ এই লোক আবার ডাকে কেন?আমাকে কি একটু শান্তি দিবেনা।কালরাতে যে ভয় দেখিয়েছে।
ভাবতে ভাবতেই আদি ওর সামনে এসে দাড়ালো।চোখমুখ শক্ত করে ওর দিকে চেয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে কোনো কারণে রেগে আছে।কিন্তু হাজার অনুসন্ধান করেও কোনো কারণ মাথায় এলোনা।
আদি কটমট করে ওর দিকে তাকাচ্ছে।তারপর কড়া গলায় বলল,
–এই মেয়ে কি পোশাকে বের হয়েছো?আর ওড়না কই?
আদির কথায় নিজের দিকে চেয়ে নিজেরই হুশ উড়ে গেলো।সাইকেলের আনন্দে লাফাতে বেরিয়ে এসেছে।যেভাবে রাতে ঘুমিয়েছিলো সে পোশাকেই চলে এসেছে চেঞ্জ না করে।শর্ট টিশার্ট আর প্লাজো পড়া।চারদিকে কালো পোশাক পড়া লোকগুলো ঘুরে বেরায়।এদের সামনে এভাবে,,।
লজ্জায় সামান্তার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।তবুও নিজের লজ্জা প্রকাশ না করে আদিকে যাচাই করার জন্য নিজের চুলগুলো দুভাগ করে সামনে আনতে আনতে বললো,

–ওড়না না পড়া একটা ফ্যাশন।এ যুগের ছেলের মুখে এসব কথা মানায়না।এ যুগে কয়টা মেয়ে ওড়না পড়ে?ইটস নট এ বিগ ডিল।

সামান্তার কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে গেলো আদির।সামান্তার দুবাহু চেপে ধরে চিতকার করে বললো,
–সারা দুনিয়ার মেয়েরা জাহান্নামে যাক তুমি এমন পোশাক পরে বাইরে বের হবেনা।আমি যদি ফারদার এমন পোশাক পড়ে বের হতে দেখেছি তবে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা।

এমন ভাবে চিতকার করছিলো সামান্তার কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার অবস্থা।সামান্তা চোখ করে মাথাটা দূরে সরানোর চেষ্টা করছে।আদি তখনই ওকে ছেড়ে দিলো।
এক গার্ডকে বললো সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করতে।আদি টিশার্টের উপর শার্ট পড়া ছিলো।নিজের শার্ট খোলে সামান্তাকে জোর করে পড়িয়ে দিলো।সব গার্ডরা এক জায়গায় জড়ো হতেই আদি রাগে ফুসফুস করতে করতে চিতকার করে বললো,
–এই বাড়ির বউ,মেয়েরা যখন বের হবে তখন সবার দৃষ্টি যেন নত থাকে অন্যথায় আমি চোখ তুলে নিতে দুবার ভাববোনা।

তারপর সামান্তার হাত টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো।সামান্তা টু শব্দ করার সাহস পেলোনা।ও শুনেছে এই ছেলে অনেক জেদি,রাগী, হটাৎ হটাৎ রাগ উঠে যায়,রাগ উঠলে আশেপাশের মানুষকে তোয়াক্কা করেনা।কিন্তু তা দেখার সৌভাগ্য এর আগে হয়নি।
বাড়ির ভিতরে নিয়েই সামান্তার হাত ছেড়ে দিলো।সামান্তা এক দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।আদির সেদিকে পাত্তা দিলো।ওর তো সামান্তাকে ঠাটিয়ে চড় মারতে ইচ্ছে করছে।এমন পোশাকে কেন বের হবে।দূর থেকে এক গার্ড ওর দিকে বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছিলো যা দেখেই আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।ও চাইলেই সেই গার্ডকে ডেকে আচ্ছামত ধোলাই দিয়ে পারতো কিন্তু এতে সামান্তা অস্বস্তিবোধ করতো।
এমন লুচ্চা গার্ডকে রাখবেনা আদি।ওকে বিদায়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছে।

সামান্তা দরজা বন্ধ করে কাদছে।তবে এ কান্না কষ্টের না সুখের।আজ ওর বর ওর উপর অধিকার দেখিয়েছে।ওকে শাসন করেছে।সামান্তা আদির দেওয়া শার্টটাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
সারাদিনে সামান্তা আর আদির সামনে পড়েনি।আদি অনেকবার সারা বাড়ি ঘুরঘুর করেছে সামুকে দেখার জন্য কিন্তু দেখা মিলেনি।সারাদিন ছটফট করেছে একটু দেখার জন্য কিন্তু মেয়েটা ঘর থেকেই বের হয়নি।

রাত১টা।সামান্তার ফোন বেজে উঠলো।ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করলো কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।সামান্তা নাম্বার চেক করে দেখে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।ফোন কেটে দিলো।মাঝরাতে বখাটে ছেলেরা নেশাটেশা করে অপরিচিত নাম্বারে ফোন করে।এসব ভেবেই কেটে দিলো।কিছুক্ষণ পর আবারো ফোন বেজে উঠলো।সেম নাম্বার।সামান্তা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করলো কিন্তু অপরপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।সামান্তার প্রচুর রাগ হচ্ছে।

রাগে গজগজ করতে করতে বললো,,
–ওই কোন আবাল রে,,মাঝরাতে ফোন দিয়ে ইতরামি করিস?সামনে পাইলে থাপড়াইয়া দাতের পাটি হাতে ধরাইয়া দিতাম।বেয়াদব।

–এইগুলো কি ধরনের ভাষা? ছি।

–আবার ছি কস?সামনে আয়,মাঝরাতে মেয়েদের ফোন দিয়ে লুচ্চামি করতে চাস?
শালা বখাটে।
বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো।আদি কানে থেকে ফোন সরাতে ভুলে গেলো।কি ভাষায় গালাগাল করলো কিছু বলার সুযোগ দিলোনা।

কিছুক্ষণ পর সামান্তার দরজায় নক পড়লো।সামান্তা দরজা খোলে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
–আআপপনি,,?
আদির ভিতরে গিয়ে বেডে আয়েশ করে বসে বললো,
–তুমিই তো আসতে বললে।
সামান্তা তাড়াতাড়ি ওড়না খুজতে লাগলো।ওড়না জড়িয়ে বললো,
–আপনি আমাকে ফোন করেছিলেন?
–তোমার ভাষা এত খারাপ কেন হা?কি আজেবাজে কথা বলো।
–মাঝরাতে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন আর কিছু বললেই দোষ?
–আমি বিরক্ত কই করলাম।
–এখন আপনি যান আমি ঘুমাবো।
–কি আশ্চর্য তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন?
–তাহলে কি করবো?
–একটু গল্প করতে পারো কিংবা বলতে পারো আজকে যেন এখানেই থেকে যাই।
বলেই আদি চোখ মারলো।
সামু চোখ বড় বড় করে চাইলো।
–বের হোন।তাড়াতাড়ি বের হোন।মাঝরাতে ফাজলামো করতে আসছেন?
–না একটু প্রেম করতে আসছি আফটার অল আই এম ইউর হাসব্যান্ড।
সামু আদির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।নিজেকে সামলে বললো,
–কোনো হাসব্যান্ড টাজব্যান্ড নাই।নো হাসব্যান্ড নো প্রেম।আউট।তাড়াতাড়ি বের হোন নয়তো আমি এক্ষুনি বাবাকে ডাকবো।
–আরে যাচ্ছি যাচ্ছি।এমন করো কেন?বাট আবার আসবো।বউ বলে কথা।
সামু চোখ পাকিয়ে বললো,
যাবেন?
–গুড নাইট মাই ওয়াইফ।
বলেই আদি বেরিয়ে গেলো।সামান্তা দরজা লাগিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে আদির বলা কথাগুলো ভাবছে।
আমাকে বউ বলেছে।নিজেকে হাসব্যান্ড দাবি করেছে।আমি কি স্বপ্ন দেখছি??

আদি নিজের রুমে পাইচারি করছে।এই মেয়েটা এমন করে কেন?আমি পরেছি জ্বালায়।কিভাবে যে এই মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।না জানি কপালে কি দুর্গতি আছে।ও তো আমাকে পাত্তাই দেয়না।সবসময় রাগচন্ডি।যেভাবে তাকায় যেন গিলে খাবে।

ভাবতে ভাবতে আদি ঘুমিয়ে পরলো।স্বপ্ন দেখছে গোধুলি বেলায় একটা মেয়ে ছাদ থেকে নিচের দিকে ঝুকে আছে।তার লালচে আঁকাবাকা খোলা চুলগুলো উড়ছে।চুলগুলো দুভাগ হয়ে এক ভাগ নিচের দিকে ঝুলে পরেছে অন্যভাগ পিঠের উপর।চেহারা দেখা যাচ্ছে না।মেহেদী দেওয়া ফরসা হাতে রেলিং ধরা।আদির মেয়েটির মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে।আদি সামনে গিয়ে হাত ধরে টান দিয়ে ঘুরিয়ে দেয় মুখটা দেখার জন্য।
আদি মুখটা দেখে অবাক হয়ে যায়।এ তো সামান্তা।

কিন্তু সামান্তা চোখ পাকিয়ে চেয়ে আছে।রাগে ফুসফুস করছে।
–আপনার সাহস তো কম নয় আমার হাত ধরেছেন।
বলেই ঠাসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
আদি গালে হাত দিয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে।চারদিকে চোখ বুলায় সামান্তার চিহ্নও নেই।

–আমাকে স্বপ্নেও জ্বালাচ্ছে।কি ভয়ানক স্বপ্ন!!

চলবে,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৩

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-৩
ফাবিহা নওশীন

আদি হাত-পা ছড়িয়ে চাদর জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।
সামান্তা ছলছল চোখে বলছে,
আপনি এতটা স্বার্থপর?কিভাবে এমন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন।আমাকে ভালো না বাসতেন একটু সম্মান তো করতে পারতেন।
আদি ধরফরিয়ে উঠে বসে কিন্তু রুমে কেউ নেই।দরজা লক।আদি চোখ মুছে আবারো পুরো রুমে চোখ বুলালো।কোথাও কেউ নেই।
শালা,স্বপ্ন দেখেছি।

আদি ফোন হাতে নিয়ে সময় চেক করলো।সকাল ৮টা ৩০মিনিট।উঠে ফ্রেশ হলো।কিছুক্ষণ পর সামান্তা বের হবে।ওকে দেখতে ইচ্ছে করছে আদির।তাই ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার কথা ভেবে আবার থমকে গেলো।তার ইগো তাকে থামিয়ে দিলো।এই সকালে নিচে গেলে সবাই কি বলবে।ভাব কমে যাবেনা।

তাই বারান্দা থেকে দেখার চিন্তা করলো।বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো কিন্তু সামান্তার খবর নেই।আদি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ধৈর্য হারা হয়ে যাচ্ছে।
এই মেয়ের একটু আগে বের হলে কি হয় কখন থেকে অপেক্ষা করছি।

অবশেষে সামান্তা বের হলো বেগুনি রঙের ড্রেস,, ডার্ক বেগুনি রঙের কটি,জিন্স,আঁকাবাকা লালচে খোলা চুল,সেই আগের গেটাপে।মুখে কোনো সাজগোজ নেই।গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালো ড্রাইভার দরজা খোলে দিলো সামান্তা গাড়ির ভিতরে গিয়ে বসলো।
আদি রেলিংয়ে ভর করে গালে হাত দিয়ে সামান্তাকে দেখছে।হটাৎ গাড়ি ছেড়ে দিলো।আদির রাগ হচ্ছে ড্রাইভারের উপর।আরেকটু পর ছাড়তে পারলো না।আর কিছুক্ষণ থাকলে কি হতো?

প্রতিদিন সকাল সকাল বারান্দায় দাঁড়িয়ে সামান্তাকে দেখা আদির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।ঠিক সময়ে যেন ঘুম ভাংগে তাই ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখে।মিস করা যাবেনা।ঘুম থেকে উঠে যেমন এক কাপ কফি না হলে চলে না তেমনি আড়াল থেকে সামান্তাকে না দেখলে চলেনা।
কিন্তু আদি তো জানে অপর দিকে সামান্তাও রোজ তাকে ফলো করছে।গাড়িতে বসে আড়চোখে বারান্দায় আদির উপস্থিতি সে রোজই টের পায়।ওর একি কথা,
–মেরি হাসব্যান্ড তু তো গায়া,,

আদির রোজ রোজ দূর থেকে দেখতে ভালো লাগেনা।ও সামান্তাকে সামনাসামনি দেখতে চায়।আর পুরনো হিসাব আছে সেটাও মিটাতে চায়।কি করা যায় সেটায় ভাবছে।হটাৎ ওর অবচেতন মনে প্রশ্ন জাগে,,
আদি তুই ওই মেয়েকে দেখার জন্য এমন বেহায়াপনা করছিস কেন?তুই আদি,,হাজার মেয়ের ক্রাশ।এসব ছাড়,,দেখাদেখি বাদ দে।কেন বাদ দিবো আমার বিয়ে করা বউ দেখতেই পারি সে রাইট আমার আছে।অবশ্যই আছে।দেখতেই তো চাচ্ছি আর কিছুনা।কিন্তু কিভাবে?সেদিন না হয় পায়ে হেটে সুযোগ আমার কাছে ধরা দিয়েছে কিন্তু আজ??

আজ আর কি আমাকে পায়ে হেটে সুযোগের কাছে যেতে হবে।
অসহায় ভাবে বললো।

সকাল সকাল রেডি হয়ে সিড়ি দিয়ে দুম দুম করে নামছে সবাইকে জানান দিচ্ছে মিস্টার আদিল চৌধুরী আসছে।সামু,নিশি,আদির বাবা-মা সবাই মিলে নাস্তা করছে।সবাই নাস্তা বাদ দিয়ে সিড়ির দিকে চেয়ে আছে।ডাইনিং সিড়ি থেকে কিছুটা দুরত্বে আর কিছুটা ভিতরে।তবুও এভাবে নামার কারণে সবার দৃষ্টি সেদিকে যায়।
সামান্তা স্যান্ডউইচয়ে কামড় দিয়ে সেটা আর গিলতে পারছেনা।
আদি ক্রিম কালার টিশার্টের উপর ব্লু কোট,ব্লু জিন্স,সো,চুলগুলো স্পাইক করা,হাতে ব্যান্ডের ওয়াচ,,টিশার্টে সানগ্লাস গুজা।আদির কোনো দিকে খেয়াল নেই।সে লিভিংরুমে বসে বসে ফোন টিপছে।সামান্তা হাত দিয়ে মুখ ডেকে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।ও চায়না আদির সামনে পড়তে।

আদিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আহনাফ চৌধুরী ডাইনিং থেকেই জোরে জোরে বললো,,
–তা এত সকাল সকাল কোন রাজকার্যে যাচ্ছেন নবাব সাহেব?

আদি ফোনের দিকে চেয়েই বললো,,
–একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।

তাচ্ছিল্যের সুরে বাবা বললেন,
তাইতো বলি দুপুরের ট্রেনের সকাল দেখা কি করে মিললো?

নিশি বললো,
–ভাই তোর ইম্পর্ট্যান্ট কাজটা কি সোফায় বসে ফোন টিপা?

আদি এবার বোনের দিকে চেয়ে বললো,শাট আপ।আমি বন্ধুর ফোন কলের অপেক্ষা করছি।ফোন এলেই চলে যাবো।

নিশি বাবার দিকে ইশারা করে কিছু একটা তারপর বলে,
তাহলে এভাবে বসে না থেকে এক কাজ কর সামান্তাকে ভার্সিটি ড্রপ করে আয়।তাহলে তোর সময় কেটে যাবে।

আদির বাবা বললো, হ্যা,সামু তোর তো নাস্তা করা হয়েই গেছে।তুই আদির সাথে চলে যা।

সামান্তা কিছু বলতে যাবে তখনই নিশি বললো,, সমস্যা কি?চলে যাও।

সামান্তার মনে হচ্ছে বাপবেটি মিলে ওকে বাশ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছে।সেদিন তো না চিনার ভান করে এত কথা শুনিয়েছে আজ কি আদি ছাড়বে?

আদি তো মহা খুশি।মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেছে।কিন্তু এত সহজে তো হ্যা বলা যাবেনা সবাই সন্দেহ করবে।তাই ভাব নিয়ে বললো,
–কেন?আজো কি ড্রাইভার নেই?

আদির বাবা ঝাঝালো গলায় বলল,
–আছে কি নেই সেটা তোমার দেখতে হবেনা।তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছি নিয়ে যাও।

আদি বাধ্য ছেলের মতো বললো,আচ্ছা।আমি বাইরে আছি।গাড়ি বের করছি।আসতে বলো।
বলেই উঠে বাইরে গিয়ে গাড়ি বের করলো।
ওর গাড়ি ও নিজেই চালায়।গাড়িতে অপেক্ষা করছে।

সামু উঠে রুম থেকে ব্যাগ নিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে।তখনই নিশি বললো,
–কিরে,,এমন বিড়াল হয়ে গেলি কেন?ভাই আমার বাঘ নয় তোকে কামড়াবে না।

সামু মনে মনে বলছে, কি যে করবে সেটা আমিও জানিনা।সেদিন কি করেছি সেটা তো জানোনা।
তারপর আবার ভাবলো,,
আমি কেন ভয় পাচ্ছি?আমি সামান্তা,,ভয় পাওয়ার মেয়ে না।

নিশির দিকে চেয়ে হালকা হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

নিশি বাবাকে বলছে,বাবা,,আই হেভ এ ডাউট?আমার কি মনে হয় জানো,তোমার ছেলের ইম্পর্ট্যান্ট কাজটা হলো সামুকে ভার্সিটি দিয়ে আসা।
–তাই নাকি??
নিশির মা বললো,যদি তাই হয়,তবে আলহামদুলিল্লাহ।ছেলের সুবুদ্ধি হয়েছে।

সামান্তা যেই গাড়ির পিছনের সিটের দরজা খোলতে যাবে,,সামনে থেকে আদি বললো,
–সামনে এসো।
–আমি পিছনেই ঠিক আছি।
আদি ভ্রু কুচকে বললো,তোমার কি আজো আমাকে ড্রাইভার মনে হচ্ছে,সামনে এসে বসো।

সামান্তা নিরুপায় হয়ে সামনে গিয়ে বসলো।ও যতটা না ভেবেছিলো তার চেয়ে বেশি নার্ভাস লাগছে।যতই হোক এই প্রথম এভাবে পাশাপাশি সিটে বসেছে।তাও নিজের স্বামী,নিজের ভালোবাসা মানুষের সাথে।হ্যা,,এই কয়দিনে সামান্তা আদিকে ভালোবেসে ফেলেছে।বিয়ে এমন একটা পবিত্র সম্পর্ক যেখানে আল্লাহর রহমত থাকে।সেই রহমতের দ্বারায় না চাইলেও কিছুটা দূর্বলতে এসে যায়।আর এই দূর্বলতা থেকে কারো কারো ভালোবাসাও হয়ে যায়।সামান্তারও তাই হয়েছে।রোজ সকালে ঘুম ভেঙে উঠে আদির মুখ দেখতে দেখতে মায়ায় পরেছে সে মায়া থেকে ভালোবাসার টান সৃষ্টি হয়েছে।
সামান্তা বাইরের দিকে চেয়ে আছে।একহাত দিয়ে আরেকহাত খুটছে।এ ছাড়া আর কোনো কাজ খোঁজে পাচ্ছেনা।আদি সামান্তাকে আড়চোখে দেখছে আর মুচকি হাসছে।
তখনই সামান্তার ফোন বেজে উঠলো।সামান্তা ফোন বের করে দেখে ওর ফ্রেন্ড জানভি ফোন করেছে।ওর নাম জানভি হলেও বন্ধুরা ওকে জান বলে ডাকে।সামান্তার ফোনেও জান দিয়েই সেভ করা।সামান্তা ফোন বের করে রিসিভ না করেই কেটে দিলো।আদি আড়চোখে ফোনের কল করা ব্যক্তির নাম জান দেখে চমকে উঠে।আবারো ফোন করেছে।

আদি কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,পিক আপ দ্যা ফোন।

সামান্তা রিসিভ করে ফিসফিস করে বললো,
–আই এম অন দ্যা ওয়ে।ডোন্ট কল মি এগেইন।
সামান্তার মুখে এমন কথা শুনে আদির সন্দেহ ঘোরতর হতে লাগলো।

আদি সামান্তাকে উদ্দেশ্য করে,
–তুমি যে ভার্সিটি গিয়ে দুচারটে জান পাতিয়ে ফেলেছো সে কথা কি বাবা জানে?

–মানে কি?

আদি চোয়াল শক্ত করে বললো,
–মানে হলো তোমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছে পড়াশোনা করার জন্য আর তুমি জান জান করছো?বাবা কি জানে?

–অদ্ভুৎ,আর আমি ভার্সিটি গিয়ে কি পাতাবো সেটা আমার ব্যাপার।

–গতকালই তো বলছিলে তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।আজ কোথ থেকে এলো?

–আশ্চর্য মশাই।বয়ফ্রেন্ড মানে কি?

–মানে তোমার জান,,যার সাথে কথা বলছিলে।

সামান্তার এবার ব্যাপারটা বোধগম্য হলো।সামান্তা ফোন বের করে জানের নাম্বারে ফোন দিয়ে লাউডস্পিকারে দিয়ে আদির সামনে ধরলো।ওপাশ থেকে রিসিভ হলো,,
–ওই তুই না মাত্র ফোন দিতে মানা করলি,, আবার ফোন দিছোস কেন?
আদি মেয়ে কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো।
–সরি জানভি,ভুল করে চলে গেছে।আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে যাবো।বাই।
আদি আর কিছু বলার ভাষা পাচ্ছেনা।পুরাই বোকা বনে গেলো।সামান্তা বিরবির করছে।

কিছুক্ষণের নীরবতার পর সামান্তাকে বললো,
–তা সেদিন কি বলছিলে যেন?

সামান্তা মনে মনে বলছে,এই রে গেছি রে।

–কি হলো বলো,,আজ চুপ কেন?আমার গুনগান করবে না।তা কজনকে আমার নামে বদনাম করে বেরিয়েছো?

সামান্তা বললো,,
যা সত্যি তাই বলেছি।আর ক’জনকে বলেছি,,,উমম(আংগুলের মাথা ধরে হিসেব করার ভান ধরে) হিসেব রাখিনি।যে জিজ্ঞেস করেছে তাকেই বলেছি।
–কিহ!!
–কিহ না জ্বি।
–আশ্চর্য মেয়ে,,তুমি তো অপরিচিতদের ধরে ধরেও আমার বদনাম করে বেরাও।যেমনটা সেদিন আমাকে না চিনে বলেছিলে।তাহলে আর হিসেব কিভাবে রাখবে।
–যে যেটার যোগ্য।
সামান্তা বিরবির করে বললো।
–আমার সামনে আমার বদনাম করছো?তোমার ভয় লাগছেনা।
সামান্তা ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বললো,
ভয় কেন লাগবে?আপনি কি বাঘ না ভাল্লুক?আপনি কি আমাকে খেয়ে ফেলবেন?
আদি চোখমুখ শক্ত করে বললো,
–তোমাকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেবো।
–তো দিন।ফেলে দিন।এসব আজাইরা থ্রেটে আমি ভয় পাইনা।

সামান্তার কথা শুনে আদির মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। রাগে গজগজ করছে।এই মেয়ে ওকে ভয় পাচ্ছেনা,,মানা যায়।রাগে স্পিড বাড়িয়ে ড্রাইভ করছে।গাড়ি শুশু করে চলছে।যেন গাড়িনা রকেট।সামান্তার একটু ভয় লাগলেও প্রকাশ করছেনা।
এই ব্যাটা নিজেও মরবো আমারেও মারবো।ভার্সিটির গেইটের সামনে এসে আদি বললো, নামো,কুইক।

সামান্তা নেমে গেলো তারপর ওর পাশের জানালার কাচে টুকা দিলো।আদি কাচ খোলতেই সামান্তা মাথাটা ঝুকে বললো,
আপনাকে একটা কথা বলি,,সিক্রেট।আমাকে যারা সামান্য অপমান করে কথা বলে তাদের চেহারা আমি কখনোই ভুলিনা।আর আপনি তো আমাকে সেই লেভেলের অপমান করেছেন,আপনাকে ভুলি কি করে?
–তারমানে গতবার তুমি জেনে বুঝেই,,
সামান্তা হালকা হাসি দিয়ে গেইটের সামনে চলে গেলো।
আদি বোকার মতো বসে রইলো।
মেয়েটা আমাকে এভাবে বোকা বানালো।আমি তো ভেবেছিলাম খেত কিন্তু এতো স্মার্টের চেয়েও ওভার স্মার্ট।

??

সন্ধ্যাবেলা।
সামান্তা,নিশি আর আহনাফ চৌধুরী লুডু খেলবে।সামান্তা লুডু নিয়ে আসার সময় কারো সাথে ধাক্কা লাগে আর হাতে থাকা লুডুর গুটির বক্সটা পরে গিয়ে গুটি গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।সামান্তা একবার গুটির দিকে চেয়ে ধাক্কা দেওয়া মানুষটার চেহারার দিকে চাইলো।আদিকে দেখে সামান্তার মেজাজ চংগে উঠে গেলো।
–আরে মিষ্টার চোখ কি আকাশে রেখে হাটেন?
–আমি নাহয় আকাশে দিয়ে হাটি তুমি কোন দিকে চেয়ে হাটছিলে?
–মিষ্টার সরিষাক্ষেত আমি চোখ আকাশে-পাতালে যেখানে খুশি রেখে হাটবো তাতে আপনার কি?আমি তো আর আপনাকে ধাক্কা দেইনি?
–সরিষাক্ষেত মানে কি?
–গুগল ইট।(হলুদ পড়ে বেরাবে আর জিজ্ঞেস করবে সরিষা ক্ষেত কি?)
যাইহোক গুটিগুলো তুলে দিন।
–আগে তুমি সরিষা ক্ষেতের মানে বলো।আমি কেন তুলে দেবো?
–কারন আপনি ফেলেছেন।মানুষ ভুল করলে শোধরে নিতে হয়,অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হয়।আপনি ভুল করলে এটা হলো শোধরানো, আর অন্যায় করলে শাস্তি।নিন তুলুন।
–অসম্ভব।
তখনই আদির বাবা ডাকলো,,সামান্তা কি হয়েছে?
সামান্তা আদিকে বললো, বাবাকে বলি,,
তারপর সামান্তা জোরে বললো,বাবা লুডুর গুটি,,,
–চুপ,,দিচ্ছি তুলে।
–এইতো গুড বয়।
সামান্তা কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। আদি দাতে দাত চেপে গুটিগলো একটা একটা করে নিচ থেকে তুলে দিলো।
সামান্তা গুটিগলো একটা একটা করে গুনে নিয়ে আদির দিকে চেয়ে ব্যঙ্গ করে হেসে বললো,
–থ্যাংক ইউ মিষ্টার সরিষা ক্ষেত।
বলেই পগারপার।
–এই দাড়াও,,,
ফাজিল মেয়ে।
তারপর আদি নিজের ফোন নিয়ে বিরবির করে বললো,
“আদি গুগল ইট।”

চলবে,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা?
পর্ব-২
ফাবিহা নওশীন

এভাবেই দুমাস কেটে গেছে।সামান্তা আদিলের সামনে এই দুইমাসে একবারো পরেনি।একপ্রকার ইচ্ছে করেই আড়ালে থেকেছে।তবে রোজ সকালে নিয়ম করে আদিলের ঘরে গিয়ে চুপিচুপি আদিলকে দেখে আসে।আদিল তখন ঘুমে তলিয়ে থাকে।
সামান্তাকে একমাস যাবৎ একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে।ভার্সিটি,বাসা এ নিয়ে বেশ আছে।নিশি শুধু ননদই নয় খুব ভালো বন্ধু।আর আদিলের বাবা-মা নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে।আদিলের মা সামান্তাকে বলে দিয়েছে,
–ও যেন কখনো নিজেকে এই বাড়ির বউ না ভাবে বরং মেয়ে ভাবে।
সামান্তা এখন ওনাদের আংকেল আন্টির বদলে মা আর বাবা ডাকে।

অপরদিকে আদিল আর খোঁজ নেয়নি সামান্তা এই বাড়িতে আছে কিনা চলে গেছে।এই ব্যাপারে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি।ওর ঘুম ভাংগে দুপুর ১২,১টায়।বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে ফিরে মাঝরাতে।ও ওর লাইফ নিয়ে ব্যস্ত।তাই বাসায় কে আছে না আছে সেটা ওর পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
সামান্তা ৯টায় ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে যায় ফিরে ২-৩টায়।কোনোদিন সন্ধ্যাও হয়।তাই দুজনকে সামনাসামনি হতে হয়না।তারউপর সামান্তা নিচের রুমে থাকে।ও হাল ছেড়ে দেয়নি বরং হাল ধরার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।প্রস্তুতি ছাড়া বড় খেলায় নামা বোকামি ছাড়া কিছুইনা।তাই এই খেলায় নামার আগে সবটা বুঝে নিচ্ছে।এখানকার পরিবেশ,ইচ্ছে-অনিচ্ছে,রুচি সবটাই আয়ত্ত করার চেষ্টা করছে।

ভার্সিটি অফ।বেকার বসে আছে।সামান্তার খোলা জায়গা খুব প্রিয় কিন্তু এই কালো পোশাকের গার্ডদের দেখলেই অস্বস্তি হয়।বাগানে গিয়ে যে একটু হাওয়া খাবে তারোও কোনো উপায় নেই।কারণ বাগানে কোনো প্রাইভেসি নেই।এখানে সেখানে বন্ধুক নিয়ে ঘুরতেই থাকে।তাই ছাদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
ছাদে গিয়ে রেলিং ঘেঁষে নিচের দিকে ঝুকে আছে।এটা ওর পুরনো অভ্যাস।ঝুকে থাকায় অর্ধেক চুল পিঠে আর বাকি অর্ধেক চুল নিচের দিকে ঝুকে আছে।চেহারাও দেখা যাচ্ছেনা।শুধুমাত্র ফরসা হাত দেখা যাচ্ছে যা দাড়া রেলিং ধরে আছে।
আদিল ফেসবুকিং করতে করতে ছাদে এলো ছাদে এসেই এই দৃশ্য দেখতে পেলো।একটা মেয়ে আকাশি রংয়ের ড্রেস পড়া।ছাদে নিচের দিকে ঝুকে দাড়িয়ে আছে।সবকিছুই আগের মতো শুধুমাত্র সেদিনের মতো হাতে মেহেদী পড়া নেই।

আদিলের বুঝতে বাকি রইলো না এটা কে,,।সামান্তা যে এখনো এই বাড়িতেই আছে সেটা বুঝতে পেরে রাগে ফেটে যাচ্ছে।তারপর আস্তে আস্তে পা ফেলে সামান্তাকে বুঝতে না দিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো।

আদিল ওর রুমে বেডের উপর হাতের মুঠো শক্ত করে বসে আছে।তারপর উঠে গিয়ে ফুলদানিটা দেওয়ালে ছুরে মারলো।
–আমাকেই কিছু করতে হবে।ওই মেয়ের সাথে কথা বলতে হবে।ওকে আমার লাইফ থেকে বের করতে হবে।

আদিলের মা আদিলের বাবাকে বললো,
–সামু,ভার্সিটি যাবার জন্য রেডি হচ্ছে কিন্তু ড্রাইভার একটা কাজে গেছে এখনো ফিরেনি।
আহনাফ চৌধুরী পেপার পরছিলো।পেপারে থেকে চোখ তুলে বললো,
–তোমার ছেলে কই?ছেলেকে ডাকো।
–আদি তো এখনো উঠে নি।তুমি তো জানো দুপুরের আগে ওর ঘুম ভাংগে না।
–ওকে ডেকে তুলো।আমার বাড়িতে এসব নবাবি চলবেনা।বউ ভার্সিটি যাবার জন্য মানুষ পায়না আর সে পড়ে পড়ে ঘুমায়।
ওকে বলো সামুকে ভার্সিটি দিয়ে আসতে।

–আদি,,এই আদি।উঠ বাবা।
–কি হলো মা,এই সকাল সকাল ডাকছো কেন?
–তোর বাবা অনেক রেগে আছে তুই যদি এখন না উঠিস তোর বাবা কেয়ামত ঘটিয়ে দিবে।
আদি উঠে বসলো,
–মা,আমি এখন উঠে কি করবো?
–ফ্রেশ হ,,সামান্তাকে ভার্সিটি দিয়ে আসবি।ড্রাইভার নেই।
আদির ঘুম উবে গেলো।
–কি!!!আদিল চৌধুরী এখন ড্রাইভারি করবে?আমি কাউকে কোথাও দিয়ে আসতে পারবোনা।
–আদি,,,ও তোর বউ।
আদির হটাৎ মনে পড়লো ওর তো সামান্তার সাথে কথা বলা প্রয়োজন তাই আর কথা না বারিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

আদি গাড়িতে বসে আছে।অপেক্ষা করছে সামান্তার জন্য।
সামান্তা রেডি হয়ে বে হতে গেলেই নিশি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
–সামু,ড্রাইভার কিন্তু আজ ভাই স্বয়ং।সো বি কেয়ারফুল।
–আচ্ছা,তাই নাকি।পেয়েছি সুযোগ।তোমার ভাইকে অল দ্যা বেষ্ট বলে এসো,আমাকে ভয় না দেখিয়ে।

আদি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।আমি আদিল চৌধুরী স্বয়ং ড্রাইভার হয়ে অপেক্ষা করছি আর ম্যাডামের খবর নেই।উফফ,,কতক্ষণ বসে থাকবো।
আদি বিরক্ত হয়ে গ্লাস খোলে বাড়ির দিকে চাইলো।সামান্ত আসছে।সাদা রংয়ের লং টপস,টপসের উপর গোল্ডেন কালারের ডিজাইন করা কটি,কালো জিন্স,লেডিস সো,কাধে লেডিস ব্যাগ,সাদা হ্যান্ড ওয়াচ,আঁকাবাকা লালচে চুলগুলো উড়ছে।মুখে কোনো সাজগোজ নেই তবুও স্বিগ্ধ লাগছে।
আদি পলকহীন ভাবে সামান্তাকে দেখছে।সামান্তার কোনো খেয়াল নেই।সে গাড়ির দরজা খোলে সোজা উঠে বসলো।সামনে কে আছে,কি আছে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি।
গাড়িতে বসে ব্যাগ থেকে ফোন আর হেডফোন বের করে কানে গুজে দিলো।
আদির অনেক অস্বস্তি হচ্ছে সামান্তার সাথে যেতে।সামান্তার অবস্থা বুঝার জন্য লুকিং গ্লাসে চোখ রাখলো।সামান্তাকে নরমাল লাগছে।সে দিব্যি কানে হেডফোন গুঁজে দু’হাতে ফোন টিপছে।মাঝে মাঝে ফোনের দিকে চেয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু পড়ছে আর মুচকি হেসে আবারো টাইপ করছে।আদি স্পষ্ট বুঝতে পারছে সামান্তা চ্যাটিং করছে।
সামান্তার গা থেকে পারফিউমের মিস্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে।আদির অবাক হয়ে ওকে দেখছে।
মেয়েটা এত নরমাল ভাবে কি করে বসে আছে,সামনে কে আছে তাতে যেন কিছু এসে যায়না।কিন্তু আদির তো অনেক অস্বস্তি হচ্ছে।যাকে বউ হিসেবে মেনে নেয়নি তার সাথে একা গাড়িতে করে যাচ্ছে।তাও তাকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে।কি অদ্ভুৎ।
আদি তো সামান্তার সাথে কথা বলার জন্য এসেছে কিন্তু কি বলবে,কিভাবে বলবে বুঝতে পারছেনা।তার চেয়ে বড় কথা ওর এখন কিছু বলতে মনে চাইছেনা।এসব ভাবনায় বিভোর হয়ে গাড়ির স্পিড কমিয়ে দিয়েছে।
সামান্তার ৯টা ২০মিনিটের মধ্যে ভার্সিটি গেইটে উপস্থিত থাকতে হবে।নয়তো ঢুকতে পারবেনা।এভাবে গাড়ি চালালে নির্ঘাত ফিরে আসতে হবে।

কানে থেকে হেডফোন সরিয়ে বললো,
–এক্সকিউজ মি,,আপনি নতুন নাকি,,?বাবা যে কোত্থেকে এসব ড্রাইভার নিয়ে এসেছে আল্লাহ ই জানে।একটু জোরে ড্রাইভ করুন।আমার দেরি হয়ে যাবে।

আদি সামান্তার কথায় চমকে গেলো।আবার রাগ ও হলো আদিল চৌধুরীকে ড্রাইভার বলা হচ্ছে।পিছনে ঘুরে বললো,
আমাকে দেখে তোমার ড্রাইভার মনে হচ্ছে?
সামান্তা চোখ তুলে ওর দিকে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে বললো,
–না আপনাকে ঠিক ড্রাইভার মনে হয়না,,কারণ ড্রাইভারদের ফেসে একটা ইনোসেন্ট ভাব থাকে যেটা আপনার ফেসে নেই।
আপনাকে কোথাও দেখেছি বলে মনে হচ্ছে।কোথায় দেখেছি বলুন তো?দূর,,বাদ দিন।ওসব পরে ভাবা যাবে।আপনি এখন প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করুন।আমার ফ্রেন্ডরা অপেক্ষা করছে।

আদি অবাকের সপ্তম আকাশে উঠে গেলো।এই মেয়ে আমাকে চিনে না।আদি পাল্টা প্রশ্ন করলো,
–তোমার কয়জন ফ্রেন্ড?
–৭-৮জন।
–কয়দিন যাবত ক্লাস করছো?
–একমাস।
–এই কয়দিনে ৭-৮টা ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছো?
–এ তো কম ই।আমার কলেজে ৫০জনের মতো ফ্রেন্ড ছিলো।
–ও,,এম,,জি,,(আমারো তো পুরো লাইফে এত ফ্রেন্ড হয়নি।)কয়টা বয়ফ্রেন্ড ছিলো?
–একটাও না।প্রেম করার আগেই তো বাবা ধরে এক লাফাঙ্গার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো।
আদি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–হুয়াট ডু ইউ মিন বাই লাফাঙ্গা?
–লাফাঙ্গা মানে জানেন না?লাফাঙ্গা মানে হলো এই ধরুন উৎশৃঙ্খল,বখাটে,অহংকারী,একগুঁয়ে,
বদমেজাজি,অভদ্র,বেয়াদপ টাইপ ছেলে যারা বাপের পয়সায় ফুটানি করে।

আদি দাতে দাত চেপে সামান্তার সব কথা হজম করছে।ও সামান্তার সামনে নিজের পরিচয় দিতে চসিছে না এই মুহুর্তে।ও জানতে চায় আসলে সামান্তা ওকে কি ভাবে,,
তাই নিজের রাগ সব হাতের মুঠোতে রাখা স্টেয়ারিংয়ের উপর ঝাড়ছে।

তারপর ফুসফুস করতে করতে বললো,
–এতোই যখন অপছন্দ তবে বিয়ে করেছিলে কেন?

–ওই মিয়া আপনি কি বয়রা?কানে কম শুনেন?

আদি হকচকিয়ে গেলো।
–মানে কি?

–আমি কি বলেছি আপনি শুনতে পান নি?আমি বলেছি বাবা ধরে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।নয়তো এই বয়সে কেউ বিয়ে করে?একটা প্রেম ও করতে পারলাম না।সামু তোর কপালই খারাপ।

আদি সামান্তার মনের কথা জানার জন্য।একটু বাজিয়ে দেখার জন্য বললো,
–তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দেও।

–আরে আপনি তো ওই লোকের মতোই?

–কোন লোকের মতো?

–যেই গন্ডারের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।বাইয়াদ প্রাণী।মাই হাসব্যান্ড।

আদির সামান্তার মুখে হাসব্যান্ড কথাটা শুনে কেমন অদ্ভুৎ ফিলিংস হচ্ছে।

–তারপর আমি ওই লোকের মতো মানে?

–এই বিয়েকে ছেলে খেলামনে করছেন।মনে চাইলে একজনকে বিয়ে করে নিলাম আর ভালো লাগলো না ডিভোর্স দিয়ে দিলাম।বিয়ে হলো আল্লাহর দেওয়া পবিত্র সম্পর্ক।একটা কাগজ কিংবা একটা সাইন এই সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেনা।
যাইহোক আপনার সাথে আমার আর কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।চুপ করে গাড়ি চালান।
শহরের সব ছেলেরা এক।কোনো কিছুর মূল্য এদের কাছে নাই।
বিরবির করে কথাগুলো সামান্তা আদিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো।
সামান্তার কথাগুলো আদিকে খুব ভাবাচ্ছে।আদি চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলো,
–তারমানে তুমি তাকে ছাড়বে না?

সামান্তা কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছেনা।বাইরের দিকে চেয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুটা জোর করেই বললো,
–জানিনা,,যে ছেলে মেয়েদের নূন্যতম সম্মান দেয় না তার সাথে আমি সত্যিই জানিনা।আমাকে বিয়ে করেছে ভালো না বাসতো,,আমি তো ভালো বাসতে বলিনি,,একটু সম্মান তো দিতে পারতো,,সেটাও দেয়নি।
সামান্তাকে গলা ধরে এলো।চোখের কোনে পানি জমেছে।আদির চোখে তা এড়ায়নি।ওর কেন জানি খুব মায়া হচ্ছে।কোনো মেয়েই তার স্বামীর কাছে থেকে অবহেলা সহ্য করতে পারেনা।সে স্বামী যেমনই হোক।

গাড়ি এসে ভার্সিটির গেইটের সামনে থামলো।সামান্তা গাড়ি থেকে নেমে পিছনে না চেয়েই হাটা ধরলো।ওর জন্য ২টো ছেলে,২টো মেয়ে অপেক্ষা করছে।ও তাদের সাথে ভিতরে যাচ্ছে।

আদি তখনো সামান্তার দিকেই চেয়ে আছে।কেন জানি অদ্ভুৎ ফিলিংস হচ্ছে।সবকিছু এলোমেলো লাগছে।অস্থির লাগছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
বারবার সামান্তার কথাগুলো কানে বাজছে।ওর ছলছল চোখগুলো বারবার ভেসে উঠছে।

চলবে,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা?
পর্ব-১
ফাবিহা নওশীন

“এই মেয়ে শোনো,আমার ঘরে কিংবা আমার মনে কোথাও তোমার কোনো জায়গা নেই।শুনতে পাচ্ছো তুমি?”
বরের এমন কথা শুনে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে সামান্তার।নিজের রাগকে সামলে রাখতে না পেরে ঝাঝালো গলায় জবাব দিলো,
–শুনেছি,ভালো করেই শুনেছি।আমি বয়রা না।এভাবে চেচাচ্ছেন কেন?না গেলাম আপনার ঘরে।আপনার ঘরে যাওয়ার জন্য আমি মরে যাচ্ছিনা।যাবো না আপনার ঘরে।অদ্ভুৎ।
আন্টি আপনাদের বাসা দেখে যথেষ্ট বড় মনে হচ্ছে।আমাকে অন্য রুম দেখিয়ে দিন।আর নয়তো বলুন আমি চলে যাচ্ছি।এ বাড়িতে পড়ে থাকার জন্য আমি মরে যাচ্ছিনা।

সামান্তার কথা শুনে আদিল থ হয়ে গেলো।ও সামান্তার কাছ থেকে এমন উত্তর আশা করেনি।ও ভেবেছিলো সামান্তা মাথা নিচু করে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলবে,জ্বি।কিন্তু এ তো পুরাই লাল মরিচের গুড়ো।

সামান্তার ননদ নিশি বললো,,তুমি একা বাসায় যেতে পারবে?

সামান্তা বললো,
–কেন পারবোনা?আমি ওত পড়াশোনা না জানলেও বাসায় যাওয়ার মতো যথেষ্ট বিদ্যে আমার পেটে আছে।

সামান্তার শাশুড়ী আমতা আমতা করে সামান্তাকে বললো,,
–না না মা,তোমাকে কোথায় যেতে হবে না।আমি তোমাকে অন্য রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।
সামান্তা শাশুড়ীর পিছু পিছু হাটা ধরলো।
আদিল ফ্যালফ্যাল করে সামান্তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

কিরে কি দেখিস ভাইয়া?
নিশির কথায় ঘোর ভাংলো। তারপর বললো,
–মেয়ে দেখেছিস কি তেজ?
নিশি বললো,
–দেখতে হবে না বউটা কার?
বলেই নিশি ভাইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।
আদিলের প্রচুর রাগ হচ্ছে।নিজের চুল নিজের ছিড়তে ইচ্ছে করছে।কেন গিয়েছিলো গ্রামে ঘুরতে।

সামান্তা দরজা লক করে ওড়না ছুরে ফেলে দিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।প্রচুর রাগ হচ্ছে।মাথা গরম হয়ে গেছে।মাথায় ইচ্ছেমতো পানি দিয়ে মাথা ঠান্ডা করলো।তারপর হাতমুখ ধুয়ে রুমে এসে ফুল পাওয়ারে ফ্যান অন করে চুলের খোপা খোলে নিজের চুলগুলো এলিয়ে দিয়ে হাতপা সটান করে শুয়ে পরলো।

রাগে ফুসফুস করছে আর বলছে,,,
শালা,এই সামু কত ছেলেকে সোজা করেছে আর তুই তো,,,,বর বলে গালিটা দিলাম না।যাইহোক তোকে যদি নাকে দড়ি দিয়ে না ঘুরিয়েছি তবে আমার নাম ও সামু না।আজ থেকে আমার একটাই টার্গেট জামাই তোকে টাইট দেওয়া।তোর এটিটিউটের কিমা বানিয়ে তোকে গিলাবো।যদি না পারি তবে নিজের নাম ছকিনা রাখবো।

অতীত,,

আদিল চৌধুরী,বিখ্যাত পলিটিশিয়ান এবং বিজনেসম্যান আহনাফ চৌধুরীর ছেলে।বয়স ২৫।সাত বছর পর পড়াশোনা শেষে নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরেছে।আহনাফ চৌধুরী দীর্ঘসময় পর ছেলেকে পেয়ে যতটা না খুশি তার চেয়ে বেশি সংকিত ছেলের চালচলন দেখে।আদিল যথেষ্ট হাসিখুশি হলেও অনেক অহংকারী।আশেপাশের কাউকে পাত্তা দেয়না।নিজের মতো চলে।নিজের জিদ আর ইগো বজায় রাখতে সবকিছু করতে পারে।পছন্দসই কিছু না হলেও ভাংচুর শুরু করে।
রাতবিরাতে বাড়ি ফিরে কোথায় যায়,কি করে তা সবার অজানা হলেও আহনাফ চৌধুরীর অজানা নয়।আদিল পুরো দুনিয়ায় কাউকে পরোয়া না করলেও বাবাকে ভিষণ ভয় পায়।বাবার সামনে মাথা নিচু করে কথা বলে।কিন্তু আহনাফ চৌধুরীর পক্ষ ছেলেকে সারাক্ষণ শাসন করা সম্ভব নয়।তিনি ব্যস্ত মানুষ।তাই তিনি ছেলেকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করার সিদ্ধান্ত নেন।আর মেয়ে হিসেবে বাল্যবন্ধু মিরাজের মেয়ে সামান্তাকে তার মনে ধরেছে।মেয়েটা খুব ভালো।মেয়েটা যেমন শক্ত প্রয়োজনে তেমনি নরম,যথেষ্ট বুদ্ধিমতী,সুন্দরী।

ডিনার সময়-
চৌধুরী ম্যানশনে পুরো পরিবার একসাথে ডিনার করছে।
আহনাফ চৌধুরী বললো,
–আদিল,আগামীকাল আমরা গ্রামে বেড়াতে যাচ্ছি।তুমিও যাবে সব গোছগাছ করে রাখবে।
আদিল খাওয়া থামিয়ে বললো,
–গ্রামে?
–হুম।আমার বন্ধুর বাড়ি।
আদিলের গ্রামে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই।বরং ও অনেক এক্সসাইটেড।ও বিদেশে থাকতে বন্ধুদের কাছে থেকে গ্রাম সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছে।তাতে ওর গ্রাম দেখার আগ্রহ বেড়ে যায়।
–ওকে বাবা।আই হেভ নো প্রব্লেম।

আদিলের ছোট বোন নিশিতা।বয়স ২১।অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে।মেয়েটা খুবই মিশুক।আদিলের একদম উল্টো।সহজ,সরল অহংকার বলতে কোনো কিছু তার মধ্যে নেই।গ্রামে যাওয়ার কথা শুনে সকাল থেকেই গুছানো শুরু করে দিয়েছে।
আদিলের মা নয়ন তারা।তিনিও মেয়ের মতোই নিরংকারী,সুন্দর মনের মানুষ।

দীর্ঘ সময়ের জার্নি শেষে একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো।দেয়ালে ঘেরা দুতলা বাড়ি।বাড়ির চারপাশে অসংখ্য গাছগাছালি।দরজার সামনে থেকেই সৌজন্যের সাথে সবাইকে ওয়েলকাম করলো চৌধুরী পরিবারকে।যথেষ্ট আদর আপ্যায়ন করা হলো।সবাইকে রুম দেখিয়ে দেওয়া হলো।আদিলের সবকিছু ভালো লাগলেও গ্রামের গরম সহ্য হচ্ছেনা।এখানে এসি নেই।ফ্যানের ফুল পাওয়ার দিয়েও শরীর ঠান্ডা করতে পারছেনা তাই শাওয়ার নিতে গেলো।কিন্তু বাথরুমে বাথটাব নেই।কোনো রকমে শরীর ঠান্ডা করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে ভাইবোন মিলে গ্রাম দেখতে বের হলো।সাথে গিয়েছে সামান্তার ছোট ভাই সামির।বয়স ১৩।সামির ওদেরকে গ্রাম দেখাচ্ছে।নিশি তো সেল্ফি তুলতে তুলতে শহিদ হয়ে যাচ্ছে।
আদিলের গ্রাম খুব ভালো লাগছে।আঁকাবাকা পথ,গাছগাছালি,পুকুর-ডোবা,পুকুরে হাস পাক পাক করছে,খোলা আকাশ,ধান খেত,বিভিন্ন নাম না জানা শস্য ফলে রয়েছে।
হিমেল হাওয়ায় আদিলের চুল উড়ছে।অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।বেশ ভালো লাগছে।মাঝে মাঝে ছবি তুলছে।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে গ্রামের পাশে বয়ে যাওয়া নদী।নদীতে ছোট ছোট নৌকা চলছে।নিশি তো নৌকায় চড়বে বলে জিদ ধরেছে।কিন্তু সন্ধ্যা নেমে আশায় ওদের আর নৌকায় চড়া হলো না।

সামান্তা গিয়েছে মামার বাড়ি।এইস.এস.সি. রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে।গ্রেট পয়েন্ট ভালো না হওয়ায় মন খারাপ তাই মামার বাড়ি ঘুরতে গেছে।গ্রেট পয়েন্ট ভালো কি করে হবে।যে মেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দস্যিপনা আর উদ্ভট কাজ করে বেড়ায় সে আর কি রেজাল্ট করবে।তবে এ নিয়ে বাবামায়ের কোনো আক্ষেপ নেই।বড় আদরের মেয়ে।

আদিল আর নিশি গ্রাম দেখে খুশি মনে বাড়ি ফিরেছে।সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে দিতে আহনাফ চৌধুরী মিরাজকে নিজের ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ের কথা বললো।প্রথমে মেয়ে ছোট বলে আমতা আমতা করলেও বন্ধুর রিকুয়েষ্ট রাখতে রাজি হয়ে গেলেন।সামান্তাকে যে আহনাফ প্রচন্ড ভালোবাসে সে তার অজানা নয়।মেয়ের সাথে তার অনেক সখ্যতা।
সামান্তার মায়ের সাথে আহনাফের প্রস্তাবের কথা জানালে তিনি অমত করেনি।
মিরাজ সাহেব মেয়েকে ফোন করে বাড়ি ফিরতে বললেন।সামান্তা সকালের নাস্তা সেড়েই বাড়িতে এসে পড়লো ড্রয়িংরুমে আহনাফ আংকেলকে দেখে খুশিতে দৌড় দিলো।আহনাফও সামান্তাকে দেখে বেশ খুশি।
সামান্তা আহনাফ আংকেলের পাশে বসেই রাজ্যের গল্প জোরে দিলো।আহনাফ আংকেলও সাথে গল্প করেই যাচ্ছে থামার নামে নেই।দুপুরে তাদের গল্প থামলো।সামান্তা নিজের রুমে গিয়ে একটা মেয়েকে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কে আপনি?
নিশি ওকে দেখে অবাক হয়ে বললো,
–তুমি কে?
–আমি সামু,,মানে সামান্তা।এই বাড়ির মেয়ে।এইটা আমার রুম।
–ওহ,,বুঝতে পেরেছি।আমি নিশিতা।তুমি আমাকে নিশি বলে ডাকতে পারো।
সামান্তা উৎসাসিত হয়ে বললো,
–তুমি নিশি আপু।আহনাফ আংকেলের মেয়ে?
–হুম।
–আই এম সরি।আমি জানতাম না যে তুমিও এসেছো।
–ইটস ওকে।আমি কি তোমার রুমে থাকতে পারি?
— অবশ্যই কেন নয়।

দুজনে মিলে প্রচুর গল্প দিলো।মিশুক মনের হলে যা হয়।একজন যেন অন্য জনের বান্ধবী।কতদিনের চেনা।দুজনের মধ্যে বেশ ভাব হয়ে গেছে।

দুপুরের খাবার খেয়ে সামান্তা ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরলো।তাই নিশি আর ওকে ডাকেনি।আদিল,আর সামিরের সাথেই গ্রাম দেখতে বের হলো।এর মাঝে আদিলের সাথে সামান্তার একবারো দেখা হয়নি।
নিশি আজ নৌকায় উঠেছে।পানিতে হাত দিচ্ছে আর বলছে সামির তুমি আরেকটু বড় হলেনা কেন?
সামির বললো,
–কেন আপু?
–তুমি আরো বড় হলে আমি তোমাকে বিয়ে করে এখানে থেকে যেতাম।
আদিল সেটা শুনে বললো,
–শাট আপ নিশি গ্রাম বেড়ানোর জন্য পারফেক্ট আজীবন থাকার জন্য নয়।
–উহহ,,
সামির তোমার বোন তো বেশ কিউট একদম তোমার মতো।
আদিল জিজ্ঞেস করলো,
ওর আবার বোন আসলো কই থেকে? দুদিনে তো কাউকে দেখিনি।
–মামা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো।আজ সকালে এসেছে।দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছে তাই আর ডাকিনি।মেয়েটা এত্ত ভালো কি বলবো।দেখতেও বেশ।
আদিল নিশির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো, তুই একটা চিজই।সব মেয়েই তোর কাছে কিউট।নিজেকে একটু বদলা খেত কোথাকার।

আদিল বাসায় ফিরে ছাদে উঠে দেখে একটা মেয়ে ছাদ থেকে নিচের দিকে ঝুকে আছে,কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছে।লালচে আঁকাবাঁকা খোলা চুল।ঝুকে থাকায় আর চুল খোলা থাকায় ফেস দেখা যাচ্ছেনা।পিঠের কাছের চুলগুলো ভাগ হয়ে একভাগ নিচের দিকে হেলে পড়েছে আর একভাগ পিঠের উপর রয়েছে।হালকা গোলাপি রঙের ড্রেস পড়া।এক হাত দেখা যাচ্ছে।ফরসা হাতে মেহেদী দেওয়া।আদিল বুঝতে পারলো এটা সামিরের বোন নিশি যার কথা বলেছিলোআদিলের ওর মুখটা দেখার ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু নিজের ইগো আর অহংকারের জন্য ছাদ ত্যাগ করলো একটা গ্রামের মেয়েকে দেখার জন্য বেহায়া হবেনা।

রাতের বেলায় ডিনার শেষে আদিল শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে তখনই মা আর বোনের প্রবেশ।
–কিছু বলবে মা?
–ভাইয়া,ফোন রাখ।খুবি গুরুত্বপূর্ণ কথা।ইটস আর্জেন্ট।
আদিল ফোন রেখে নিশির মুখের দিকে চাইলো।ওর মুখ দেখে বুঝতে পারলো সিরিয়াস কিছু একটা হয়েছে।
আদিলের মা আমতা আমতা করে বলল,
–তোর বাবা তোর বিয়ে ঠিক করেছে সামান্তার সাথে।
আদিল শুয়া থেকে উঠে বললো,
–হুয়াট!!ইটস এ জোক?
–ভাইয়া সিরিয়াস।আগামীকাল সকালে বিয়ে।বাবা তোকে জানাতে বলেছে তাই জানালাম।
–ইম্পসিবল।আমি গাইয়া কোনো মেয়েকে বিয়ে করবোনা।আর আমার বয়স কত ২৫।এটা কি বিয়ের বয়স?
–তাতে কি সামুরও তো ১৮বছর।মেয়েটা খুব সুন্দরী আর খুব ভালো।বিয়ে করে নে।
–চুপ করবি তুই।
–আমাকে চুপ করিয়ে লাভ নেই।বিয়ে তোকে করতেই হবে।

সত্যিই করতে হয়েছিলো।পরেরদিন সকালে বাধ্য হয়েই বিয়ে করতে হয়েছে।বিয়ে করেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
সামান্তার বাড়িটা বেশ পছন্দ হলেও বাড়ির বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কালো পোশাকের গার্ডগুলোকে পছন্দ হলোনা।
নিশি সামান্তাকে আদিলের ঘরে দিয়ে এসে।আর আদিল ফ্রেশ হয়ে সামান্তাকে দেখেই খেপে যায়।এই প্রথম ও সামান্তাকে দেখলো তবে ভালো করে নয়।ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গিয়ে কথাগুলো বললো।

বর্তমান —
চিতকার চেচামেচিতে সামান্তার ঘুম ভেঙে গেলো।
আহনাফ চৌধুরী সব জানতে পেরে অনেক রেগে যায়।আর নিশিকে পাঠায় আদিলকে ডাকতে।
নিশি ডাকতে গেলে আদিল বলে,
–আমি কোথাও যাবোনা,তুই বাবাকে গিয়ে বল ওই মেয়েকে বিদায় করতে।
–বাবা তোকে বিদায় করে দিলেও সামান্তাকে করবেনা।তোর সমস্যা কি মেয়েটা দেখতে সুন্দর, চেহারার কাটিন ভালো সব দিকেই পারফেক্ট।
–সুন্দরী হলেও আদিলের বউ হওয়া যায়না।যোগ্যতা লাগে।
–তুই কি ওর সাথে মিশেসিছ?তাহলে কি করে বুঝলি
–আমার বুঝার দরকার নেই।তুই বের হ।

নিশি বাবার কাছে গিয়ে সব বললেই ওনি আরো রেগে যায়।
আদিলের মা বললো,
–তোমার ছেলে বোমের মতো। কখন বিস্ফোরিত হয় বলা মুশকিল।
আহনাফ চৌধুরী ছেলের ঘরের দিকে যেতে নিলেই সামান্তা বাধা দেয়।
–আংকেল।ছেড়ে দিন।আমি ঠিক আছি।আমি জোর করে কিছু চাইনা।
–কিন্তু,,
–কোনো কিন্তু নয়।আমার উপর ভরসা রাখো।তোমার ছেলে যদি বোম হয় তবে আমি বারুদ।আমি ওকে সোজা করেই ছাড়বো।যদি না পারি তবে আমার নাম পাল্টে ছকিনা রাখবো।

আহনাফ চৌধুরী সামান্তার কথা শুনে হেসে দিলো।
তারপর ওর মাথায় হাত রেখে বললো,
–আমি জানি তুই ই ওকে সোজা করতে পারবি।এই বিশ্বাস আমার আছে।দোয়া করি সুখী হ।

চলবে,,,,,