Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1864



বালির সংসার পর্ব-২৩ (শেষ পর্ব)

0

#বালির_সংসার
পর্ব-২৩ (শেষ পর্ব)
.
সকাল হতেই আয়ান এসে হাজির।
হাতে একটা পেপার। কিছু একটা হয়েছে।
চোখেমুখে লেপ্টে আছে হাসি।
আদিত্য কাগজ দেখে আরো খুশি হলো।
অর্থির এডমিশন হয়ে গেছে। সাথে আয়ানের। আদিত্য, আয়ানের সাথে অর্থি পাড়ি দিলো কানাডায়।
.
লেখাপড়া আদিত্য, আয়ান, সংসার নিয়ে বেশ ভালো আছে অর্থি।
মাঝেমধ্যে বাবা মা আসে। প্রথমে তো মায়ের সাথে আয়ান কথাই বলতে দিবে না।।
এখন কেনো মেয়ের প্রতি আহ্লাদ আসছে তার? সবাই বুঝানোর পর সব ঠিকঠাক হয়, মা নিজেও অনুতপ্ত।
রুশার ব্যাপার টা জানার পর অর্থি বেশ রেগে যায়।
এটা আশা করেনি।
কিন্তু আয়ানের সাথে পেরেও উঠেনি।রুশার শাস্তি কমাতে পারেনি।
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো দুই বছর।
অর্থি কে আগের মতো অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু ওই যে দাগ?
অর্থি কে অতীত ভুলতে দেয় না।
আদিত্য অধিকার চায়নি অর্থি ও দেয় নি।
অর্থি আশেপাশে আছে এটাই অনেক।
তাছাড়া কিছু সময় দেওয়া প্রয়োজন।
.
..
ছুটির দিন রান্নায় সবাই অর্থি কে সাহায্য করছিলো।
আটা মাখাতে গিয়ে আদিত্য আয়ানের সাথে অর্থির যাচ্ছে তাই অবস্থা।
অর্থি দুজন কে কিচেন থেকে বের করে দিয়েছে।
অর্থি ইদানীং বেশ জনপ্রিয় লেখিকা।
জীবনে পাওয়া শিক্ষা, অবস্থা, পরিবেশ মেয়েটিকে অনেক শিখিয়েছে। তাছাড়া এখন সে সিরিয়া নিয়ে বেশ লেখালেখি করে আলোচনায় উঠে এসেছে।
.
আয়ান, আদিত্য ওর পি এ এর কাজ করছে।
এত এত মেইল, ম্যাসেজ, ভয়েস ক্লিপ চেক করছিলো দুজন৷
কিচেনের ভিতরে টেবিলে বসে এসব করছিলো।
হঠাৎ একটা ভয়েস ক্লিপ দেখে।
সেন্ড ফ্রম বাংলাদেশ।
হয়তো কোন ফ্যান দিয়েছে৷ অর্থির রান্না শেষ। টেবিলে খাবার দিতেই আদিত্য রেকর্ড অন করে।
.
.
– কেমন আছো অর্থি? আশা করি অনেক ভালো। চিনতে পেরেছো? হয়তো বা হয়তো না।
আমি নিশি। যে তোমার সব কেড়ে নিয়েছিলাম।
জানো তো অর্থি যখন তোমার বাচ্চারা মারা গেলো তখন আমি মনে মনে বেশ খুশি হয়েছিলাম। কেনো হবো না?
রুপ কে যে পিছুটান থেকে মুক্তি দিয়েছে ওরা। হয়তো ওরা বেঁচে থাকলে কখনো রুপ আমার হতো না।
কিন্তু সন্তান হারানোর কষ্ট যে কি! বোন আমি এখন বুঝি।
জানো তো তুমি চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারি আমি কন্সিভ করেছি।
জানো তো! খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন। কারণ আমার সব স্বপ্ন পূর্ণ হতে চলেছে।
কিন্তু!
কিন্তু যখন আটমাস চলছে তখন দ্রুত ছুটতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে যাই।আমার বাচ্চাটা মরে যায়। ডক্টর বলে আমি আর মা হতে পারবো না।
এক রাতের মধ্যে আমি সব হারিয়ে ফেলেছি৷
কেনো সব বলছি জানো
? পরে বলছি। আগে শুনো।
রুপ তোমার জায়গায় আমাকে কখনো দেয় নি।
আমি যখন দেশে ফিরে এলাম, রুপ কে ছাড়া আমি থাকতে পারছিলাম না। যেকোন মূল্যে হোক আমার ওকে চাই। তাই আমি ওকে প্রতিদিন কফির সাথে একটু একটু ড্রাগ দিতে থাকি।
যখন ও অবচেতন হয়ে যেতো শুধু আমার থাকতো। এছাড়াও তোমার নামে বাজে কথা তো ছিলোই৷
ধীরেধীরে রুপ আমার হলো। যেদিন তুমি এসেছিলে রুপ তোমায় মেরেছিলো সেদিন রুপ হুশে ছিলো না।
যখন সব মনে পড়ে তোমার কাছে যেতে চাইলেও পারেনি।
ডিভোর্স দিয়ে চলে গেলে। রুপ কে একবার ও জিজ্ঞেস করলে না।
অপরাধ বোধ ওকে শেষ করে দিচ্ছিলো।
যখন শুনে তোমাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন পাগলের মতো খুজতো। আমি তখন আর ড্রাগ দিতাম না। কারণ রুপ তখন লিগ্যালি আমার।
কিন্তু সেটাই হয়তো ভুল ছিলো।
একদিন হঠাৎ জানতে পারে তোমার নাম সিংগাপুর যাওয়ার ফ্লাইটের প্যাসেঞ্জার লিস্টে পাওয়া গেছে।
আগপাছ কিছু না ভেবেই দ্রুত যাওয়ার জন্য বের হয়৷
রাস্তায় এক্সিডেন্টে অবস্থা খুব খারাপ।
আমি দ্রুত পায়ে ছুটতে গিয়ে পড়ে যাই। আমার বাচ্চা মারা যায়।
রুপ এক বছর এগারো মাস কমায় ছিলো।
হঠাৎ একদিন ভালো হয়। এই বুঝি আমার কপাল ফিরলো কিন্তু কথায় আছে না? মানুষ মারা যাওয়ার আগে একদম সুস্থ হয়।
তাই হয়েছিলো।
আজ সাতদিন রুপ মারা গেছে। মারা যাওয়ার আগে তোমার লিখা পড়তো। নামের অংশে যখন লিখা দেখতো
– অর্থি আদিত্য আহমেদ
তখন কেদে উঠতো আর বলতো
রানী সাহেবা তুমি সুখি হও। আদিত্য তোমার পায়ে সব সুখ এনে দিবে। এটা আমার বিশ্বাস।
.
শেষ ইচ্ছে ছিলো অরুনীমা, আরশের পাশে কবর যেনো হয়।
অর্থি মাফ করো বলবো না কারণ যা করেছি আমার ক্ষমা হয় না।
তোমার সাজানো গুছানো সংসার বালির সংসার ছিলো না।
সংসার তো আমি বালির সাজিয়েছিলাম। যা আজ নেই। তোমার সংসার কেড়ে নিলেও তোমার ছিলো কিন্তু আমার সংসারের কোন অস্তিত্ব নেই।
আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি হিসেবে সব কেড়ে নিয়েছে।
ভালো থেকো বোন। অনেক অনেক সুখী হও।
.
.
ভয়েস রেকর্ড টা শেষ হয়ে গেলো। অর্থির হাত কাপছে আদিত্য, আয়ান দুজন দুহাত ধরে।
অর্থি বলে আমি ঠিক আছি। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর আদিত্য একটু বের হও৷
সিগারেট খেতে হবে। খুব প্রয়োজন।
.
আয়ান- মোনাপাখি ঠিক আছো?
অর্থি- হুম।
– অতীত হাতড়ে বেড়াচ্ছো?
– মানুষটা মরে গেছে আয়ান। ওর কোন দোষ ছিলো না।
– আদিত্য দার কি দোষ?
– মানে?
– আদিত্যদা কে কেনো কষ্ট দিচ্ছো? অতীত ফিরে আসবে না, আদিত্য দা এর মতো কেউ তোমাকে ভালোবাসবে না। রুপের ভুলের শাস্তি তাকে দিও না। আগের পিচ্চি হয়ে যাও। পিছুটান রেখে লাভ নেই। বালি দিয়ে নয় ভালোবাসা দিয়ে সংসার সাজাও।
.

অর্থি আয়ানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এই বুঝি কেঁদে দেয়।
আয়ান অর্থির মাথা বুকে নিয়ে বলে
– জানো তো! তোমার মাথা আমার বুকে রাখলেই সব চিন্তা মুক্তো হয়৷ তাহলে আদিত্য দা কতটা শান্তি পায় তুমি যখন তার বুকে মাথা রাখো?
মোনাপাখি! সাজাও না আবার সংসার। দেখে এ দুচোখ জুড়াক।
আর শুনো আমি এখন বের হচ্ছি। রাতে ফিরবো না। কান্না কাটি করলে খবর আছে কিন্তু।
.
আয়ান বেরিয়ে যাওয়ার পর অর্থি চুপচাপ বসে থাকে। সত্যি কি আদিত্য দা কে সে ঠকাচ্ছে?
বিয়ে করে আদিত্য দা আমার উপর দয়া করছে না তো?
না! দয়া করলে আজকের অর্থি কখনো মিসেস অর্থি আদিত্য আহমেদ হতো না।
.
আদিত্য বাসায় ফিরেছে। রাত হয়েগেছে।
রুমে ঢুকে সিগারেট খাচ্ছে।
এখানে আসার পর অর্থি শাড়ি পড়ে না। সালোয়ার-কামিজ পরে কিংবা জিন্সের সাতে লং কামিজ।
আজ হঠাৎ শাড়ি পড়েছে।
আদিত্য কে আরো ভিতরে ভিতরে পুড়াচ্ছে।
.
অর্থি ব্যলকনি তে এসে আদিত্যর সামনে পাশে দাঁড়ায়।
– আচ্ছা আদিত্য দা! তোমার মনে হয় না এখন আমাদের বেবি হওয়া দরকার। বয়স তো কম হলো না। তারপর আবার দেরীতে হলে মানুষ বাবুকে তোমার নাতী নাতনী বলবে।
.
.
আদিত্য অর্থির দিকে তাকিয়ে থেকে আবার সিগারেটে টান দেয়। সে জানে অর্থি কোন রোমান্টিক উপন্যাস লিখছে হয়তো তাই এমন কথা বলছে কারণ এমন উদ্ভট কথা প্রায়ই শোনা যায়। পরে বলে গল্পের প্লট ছিলো।
.
অর্থি জবাব না পেয়ে হুট করে আদিত্য কে টেনে ঠোঁট রাখে ওর ঠোটে।
সিগারেটের সব ধোয়া ওর মুখের ভিতরে যেতেই কাশতে কাশতে ছেড়ে দেয়।
আদিত্য দ্রুত পানি নিয়ে এসে পানি খাওয়ায়।
চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। রেগে বলে
– এমন কেউ করে?
– তুমি খাও কেনো?
– চুপ।
– না।
– পানি খাও।
– উহু। তোমার ঠোঁট….
– আমার ঠোঁট? ( ভ্রু কুচকে)
– কিছু না৷ জ্বালাই খুব তাই না? থাকো আমি গেলাম
.অর্থির ব্যবহার যেনো সেই পিচ্চি অর্থির মতো হয়ে গেছে।
হাত ধরে আদিত্য বলে
– ভালোবাসি পিচ্চি।
– মাই গড। ভালোবাসো? আবার বলো? কান কে বিশ্বাস হচ্ছে না। চিমটি দাও। আমি মেবি স্বপ্ন দেখছি। না হলে আদিত্য দি গ্রেট আহমেদ ভালোবাসি বলছে।
দাও দাও চিমটি দাও।
.
আদিত্য অর্থির নাকে কামড় দেয়।
– উহু লাগলো তো।
– লাগুক। এত জ্বালাস কেনো? এত পুড়াস কেনো রে?
– পুড়তে না জানলে পোড়ায় কেনো? পুড়াতে না জানলে পুড়ো কেনো?
– কথা দিচ্ছি আজ থেকে জ্বালাবো ও পুড়াবোও৷
– পারমিশন গ্র‍্যান্টেড৷
.
আদিত্য অর্থি কে কোলে উঠিয়ে নেয়।
অর্থি বলে
– অতীত সহ মেনে নিতে পারবে আমায় আজ?
– অতীত পাল্টানো যায় না। যদি যেতো তাহলে জীবন থেকে চারটে বছর মুছে দিতাম।
ভবিষ্যৎ হয়ে থাকবো। এত ভালোবাসবো সব ভুলিয়ে দিবো।
.
অর্থি জানে আদিত্য ছাড়বে না। সংসার টা এবার ভালোবাসা দিয়ে শক্ত করে গড়বে। হুম সমুদ্রের তীরে বালি দিয়েই গড়বে কিন্তু ভিত্তি শক্ত থাকবে৷
দমকা হাওয়ায় যেনো ভেংগে না যায়।
আজ থেকে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। নতুন করে বেঁচে থাকা।
.

সমাপ্ত….
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-২২

0

#বালির_সংসার
পর্ব-২২
.
আদিত্যর রাগ, মান- অভিমান,সহ্য শক্তি, ভালোবাসা,অবহেলা সব কিছুর মাফ কাঠি অর্থি।
হ্যাঁ! হয়তো সে ভুল করেছিলো কিন্তু চার বছর শুধু কষ্ট পেয়েছে, শুধু কি তাই? যে অর্থির গায়ে নিজেই জোড়ে স্পর্শ করতো না তার উপর কি সব বয়ে গেছে।
.
অর্থির স্পর্শ তার জন্য সব কিন্তু প্রত্যাখ্যান? মোটেও মেনে নেওয়া যায় না।
অর্থির ঠোঁট কাপছে
ধীরেধীরে বললো
– স্পীড বোর্ডে কেউ আসছে।
.
আদিত্য তাকিয়ে দেখে সত্যি কেউ আসছে। অর্থি কে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে আসে।
– শ্যাম্পু করে জলদি বের হবি। নইলে…
– নইলে কি? আবার মারবে? মেরেই ফেলো না।
.
আদিত্য কিছু না বলে অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বের হয়। আদিত্য খাবার অর্ডার করেছিলো। তাই নিয়ে এসেছে।
.
১৫ মিনিট হয়ে গেলো মেয়েটা বের হয়নি।
ভেজা কাপড়ে কাপুনি ধরে গেছে।
কি পড়বে? কাপড় কই?
আদিত্যর হঠাৎ মনে হলো
ঈশ কাপড় তো দেওয়া হয়নি।
নক করে কাপড় দিয়েই চলে এলো।
খাবার টেবিল গুছাচ্ছিলো সে। অনেক দিন পর আজ আবার দুজনে একসাথে।
.
অর্থির ডাকে রুমে ঢুকতে নিলে অর্থি বলে
– বাইরেই থাকুন। বলি যে শুধু শাড়ি কিভাবে পড়বো?
– মানে?
– মানে শুধু শাড়ি দিয়েছেন।
আদিত্য রুমের ভিতরে ঢুকতেই ছানাবড়া।
অর্থি টাওয়াল প্যাচিয়ে দাড়িয়ে আছে। চুল থেকে টপটপ পানি পড়তেছে।।
যেকোন প্রেমিক পুরুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের জন্য যথেষ্ট নয় কি?
অর্থির গাল দুটো মনে হচ্ছে কমলা লেবু৷
খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
.
আদিত্য চুপচাপ অর্থি কে সব দিয়ে বাইরে চলে আসে।
চোখ জ্বলছে। গা গরম হয়ে গেছে। চোখ দুটোও লাল।
বড্ড কষ্ট হচ্ছে আজকে নিজেকে শান্ত করতে।
.
.
বেশ খানিক্ষন পার হলেও অর্থি আসে না।
আদিত্য গিয়ে দেখে শুয়ে আছে।
কোলে তুলে নিয়ে খাবার টেবিলে
– কথায় কথায় কোলে তুলেন! ভার লাগে না,?
আদিত্য চুপচাপ! খাবার মুখে দিতেই অর্থি সরিয়ে দিয়ে বলে
– আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন? নিজের রক্ষীতা বানানোর জন্য?
.
এবার রাগ উঠে। কষিয়ে থাপ্পড় মারে। এই নিয়ে তিনবার থাপ্পড় খেলো। অর্থি চুপচাপ বসে আছে। আদিত্য আবার খাবার এগিয়ে নিয়ে দিতেই চুপচাপ খেয়ে নিলো।
.
.
দেখতে দেখতে দুদিন কেটে গেলো। আদিত্যর সাথে এখানে আছে তবুও শুধু আদিত্য খাওয়ার সময় ওর কাছে আসে।
খাইয়ে দিয়ে চলে যায়। মাঝেমধ্যে কথা বলতে নিলেই দুজনের ঝগড়া লাগছে৷ অর্থির এক কথা কেনো সে এখানে।
.
.
গোসল সেরে স্কাইব্লু কালারের শাড়ি পরে অর্থি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়েছিলো।
নাভি থেকে চার আংগুল নিচে দাগ। বড্ড বেশি পোড়ায় তাকে।
.
কায়া দেখলে মায়া বাড়ে কথায় আছে না? আদিত্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে সিগারেটের সাথে।
ফোন নিতে রুমে এসে অর্থি কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।
চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে কোমরে।
চলে যেতে নিলে অর্থি শার্টের কলার চেপে ধরে আদিত্যর পায়ের উপর দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে
– কেনো করছেন এসব?
– জানি না!
– ভালোবাসেন আমায়?
– জানিস না?
– সারাজীবন আপনাকে সবাই আমার দ্বিতীয় স্বামী বলবে! পারবেন মেনে নিতে? সমাজের সব খোটা?
– কবুল।
– পারবেন আমার নাভির নিচের এই দাগ টা সহ আমাকে গ্রহণ করতে?
– কবুল।
– পারবেন কুমারিত্ব হীন অর্থি কে মেনে নিতে?
– কবুল।
.
আদিত্যর কথা শুনে নিজের প্রতি আরো রাগ হয় অর্থির। সে রুশাকে ঠকাচ্ছে যে।
আদিত্য অর্থি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। পায়ের উপর ভর দিয়েই নিয়ে যায় ব্যলকনিতে।
পরিবেশ টা বড্ড বেশিই সুন্দর৷ আদিত্যর সেই চিরচেনা গন্ধ যেনো অর্থি কে বার বার বলছে
– আদিত্য তোর ছিলো। ফিরিয়ে দিস না। কিন্তু রুশা?
.
.
দূর থেকে স্পীড বোর্ডে৷ করে কেউ এলো৷ ফুল এগিয়ে দিয়ে বললো
– কংগ্রেস মিসেস. অর্থি আদিত্য আহমেদ ।
.
.
আয়ানের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে অর্থি। কি বলছিস এসব?
– তুমি এখানে আসার পর কোথাও সাইন করেছো?
– হুম।
– ওটা তোমাদের রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো মোনাপাখি।
– মানে কি?
-মানে যা তাই।
– জোড় করে বিয়ে করে লাভ নেই। রুশা আপুকে কষ্ট দিতে পারবো না।
.
তার থেকে বরং মরেই যাই। রুশা অন্তত সুখী হবে৷
আদিত্য,আয়ান একটু দূরে ছিলো। অর্থি ছুড়ি ততক্ষনে হাতে চালিয়ে দিয়েছে৷
দৌড়ে এসে ধরাতে বেশি লাগেনি। জায়গা মতো লাগলে খবর ছিলো।
আদিত্য রেগে আয়ান কে বলে আয়ান প্লিজ কিছুক্ষণ সময়ের জন্য বাহিরে গিয়ে সব ব্যবস্থা করো। আমি চাই না তোমার সামনে তোমার বোন কে কষ্ট দিতে।
.
আয়ান অর্থির মাথার কাছে বিছানায় বসে ছিলো। বোনের কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায়।
.
আদিত্য দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে বেডরুমের দরজা লাগায়৷ অর্থি চুপচাপ শুয়ে আছে। সে জানে এখন বেশি তিরিং বেরিং করলে বারোটা বাজাবে৷
আদিত্য এসে চুপচাপ অর্থির পাশে শুয়ে পড়ে।
এ যেনো ঝড়ের পূর্বাভাস। কিছুক্ষণ পর
অর্থি উঠতে নিলেই আদিত্য ধমক দিয়ে শুয়ে থাকতে বলে।
শুয়ে শুয়েই আদিত্য এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করছে।
ঘর ধোয়ায় ভরে গেছে।
আদিত্যর রাগ অর্থি জানে, এখন তাকে শান্ত করা প্রয়োজন৷
চুপচাপ সরে গিয়ে আদিত্যর বুকে মাথা রাখতেই আদিত্য হাতের সিগারেট অর্থির পিঠে লাগে।
বেশ চেচিয়ে উঠে।
চিৎকার বন্ধ করতে আদিত্য ঠোঁট রাখে অর্থির ঠোঁটে।
.
.
ছয় মাস সতেরো দিন পর রুপ অর্থির খোজ পেয়েছে।
আল্লাহ তার ডাক শুনেছে। সে কি না করেছে ওর সাথে।
নাহ্ অর্থি কে আর দূরে রাখবে না সে। দরকার হলে ওর পায়ে ধরে মাফ চাইবে।
তবুও তার অর্থি কে চাই। অর্থির বুকেই যে সে পেয়েছিলো সব থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের স্থান।
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-২১

0

#বালির_সংসার
পর্ব-২১
.
.
তাহাজ্জুদ নামাজের সিজদাহ্ তে শুধুই অর্থির ফিরে আসা চায় ওর বাবা।
দিন যে ফুরিয়ে আসছে তার খুব ভালোভাবে সে বুঝে।
মেয়েকে না দেখে মরেও শান্তি পাবেনা।
.
.
আয়ানের ব্যবহারে আদিত্য অবাক হয় মাঝেমধ্যে।
সে কি সত্যি জানেনা অর্থি কোথায়? না কি বলতে চাচ্ছেনা।
.
.
আজকাল দিন গুলো বড্ড ক্লান্তিকর যায় অর্থির। সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে যখন বিছানায় ঘুমায়,ঘুম চলে আসে।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়, দুজন মানুষের স্মৃতি বড্ড পোড়ায়। না! সে আদিত্য, রুপ কে নিয়ে ভাবে না। ওর চিন্তায় তাদের অস্তিত্ব নেই কিন্তু অরুনীমা, আরশ কে সে ভুলতে পারে না। এখানে সবাই ওকে মা বলে ডাকে কিন্তু তবু তৃপ্তি বিষাদচূড়ায়।
হ্যাঁ! অর্থি বেঁচে আছে। ছোট্ট একটা চাকুরী করেই দিন চলছে। বেতন বেশি না সাত হাজার টাকা। তবুও লাগে না অর্থির। অনাথাশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম এক সাথেই এখানে। তাদের সবার দেখাশুনার দায়িত্বে আছে।
সারাদিন সবার মা ডাক শুনতেই দিন কেটে যায়।
পরিবার, সন্তান হারিয়ে এদের নিয়েই বেঁচে আছে সে। তবুও কোন অভিযোগ নেই।
.
সকালে উঠে সব কাজ অন্য একজন কে বুঝিয়ে বেরিয়ে গেলো অর্থি।
যাওয়ার সময় পাশে দোকান থেকে মোমবাতি,আগরবাতি কিনে নিলো। আজকে যে তার সন্তানদের জন্মদিন।
একবছর আগেই তাকে নিঃস্ব করতে পৃথিবীতে এসেছিলো তারা।
মাঝেমধ্যে ভাবে ভালোই হয়েছে মরে গেছে। না হলে এই দুনিয়া বড্ড বেশি ভয়ংকর।
.
.
সন্তানদের কবরের পাশে বসে নিরবে কাদঁছে সে।
হাত দিয়ে স্পর্শ করাতে আর নিরব থাকতে পারলো না। চিৎকার করে কাদঁতে লাগলো।
মসজিদের ইমাম সাহেবের বউ এসে মাথায় হাত রাখলো। কিছুই অজানা নয় তার৷
মেয়েটার কষ্ট দেখে সত্যি কষ্ট হচ্ছে।
.
.
দূর থেকে আদিত্য কাউকে দেখতে পাচ্ছে। খুব সময় লাগলো না তার।
দৌড়ে কাছে গিয়েই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে৷
ছাড়িয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চমকে যায় সে। দ্রুত চলে যেতে নিলে আদিত্য কষিয়ে থাপ্পড় মারে।
টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় অর্থি।
.
কাল রাত থেকে কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো অর্থি আজকের দিনে এখানে আসবে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক না কেনো? আজ যে তার সন্তানদের জন্মদিন।
ভাগ্যিস সময় থাকতে এসেছিলাম।
.
.
অর্থি কে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আদিত্য কাউকে কল দেয়৷
কিছুর ব্যবস্থা করতে বলে। তারপর অর্থি কে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে নেয়। না হলে উঠলে চেচামেচি করবে।
.
.
টানা সতেরো মিসডকল দেখে চমকে যায় আয়ান।
মোনাপাখি ঠিক আছে তো?
সিকিউরিটি গার্ড কে কল দিতেই বলে কেউ একজন অর্থি ম্যাম কে নিয়ে গেছে।
আয়ান রাগে ফেটে যাচ্ছে তার থেকে বেশি ভয়।
কিন্তু? কে নিলো? বোন কই আছে আয়ান শুরু থেকেই জানে। ওর সাথে সব সময় ছদ্মবেশে সিকিউরিটি গার্ড থাকে। আজকেও ছিলো। যেখানে ও ছিলো খুশি ছিলো তাইতো আয়ান ওকে নিজের মতো সময় দিয়েছে তবে আজকে কে এলো? তবে কি?
ছবি পাঠাতেই আয়ান সিউর হলো। আদিত্য দা।
গার্ডদের না করে দিলো কিছু করতে৷
কারণ তার বোন এখন সবচেয়ে নিরাপদ মানুষের কাছেই আছে।
.
.
অর্থির ঘুম বেশ খানিক্ষন পর ভাঙে। কিছু কিছু মনে আছে৷ ব্ল্যাক জিন্স, স্কাইব্লু শার্ট, আদিত্যদা!!!!!
হ্যাঁ আদিত্যদা ছিলো।
উঠে বসতেই দেখে বারান্দার সাদা পর্দাগুলো বাতাসে সরে সরে যাচ্ছে।
সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য।
উঠতে দেখেই ফিরে এলো তার কাছে।
কিন্তু অর্থি তাকে স্পর্শ করতে দিতে নারাজ।
কেনো করবে সে?
কোন অধিকারে।
বেশ খানিকটা তর্কবির্তক হয়।
অর্থির এক কথা সে অপবিত্র কেনো তাকে আদিত্য স্পর্শ করবে?
তার থেকে তাকে মেরে ফেলুক। কারণ সে তো আত্নহত্যাও করতে পারছে না।
.
আদিত্য রেগে গিয়ে বলে
– মরবি? মরতে চাস? আচ্ছা মারবো। তার আগে এখানে সিগ্নেচার কর।
– এটা কি?
– তোর মৃত্যুর পর তোর শরীর তুই স্বেচ্ছায় দান করছিস।
.
.
অর্থি একবারো চিন্তা না করে সাইন করে দেয়৷
তারপর আদিত্য তাকে হাত ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে যায়।
বাহিরে গিয়ে অর্থির চোখ ছানাবড়া। কি দেখছে এসব? । চারপাশে শুধু পানি আর পানি। পানির মধ্যে ভাসমান কটেজে? তার মানে কি আদিত্যদা ওকে নিয়ে সিংগাপুর আছে?
কেননা বিয়ের পর ওদের এখানে আসা নিয়ে আদিত্যর প্ল্যান ছিলো। পানি খুব ভয় পায় সে। হাত পা খুব কাপছে৷ আদিত্য হাত ধরেই পিছনে দাঁড়িয়ে। খুব কান্না পাচ্ছে অর্থির। সে যে আরেক টা নিশি হতে চায় না। চাইছে না সে রুশাও তার মতো কষ্ট করুক। আদিত্য দা কেনো বুঝছে না।
উপরওয়ালা কেমন পরীক্ষা নিচ্ছে?
অতীত থেকে ছুটতে গিয়ে অতীতে জড়িয়ে যাচ্ছে সে।
.
আদিত্য হাল্কা ধাক্কা দিতেই পানিতে পড়ে যায় অর্থি।
আদিত্যর মুখে পৈশাচিক হাসি।
– তুই তো মরতে চাস তাই না? নে মরে যা।
.
অর্থি পানির মধ্যে হাত পা ছুড়তে থাকে সে যে সাতার পারে না। যাক বেশ ভালোই হলো মরেই যাচ্ছে সে।
.
আদিত্যর বড্ড হাসি পাচ্ছে। অনেকদিন পর অর্থি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। অনেকটা পানি খেয়ে নিয়েছে।
আদিত্য অর্থি কে ডিভানে শুয়িয়ে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়ে।
বড্ড জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
অর্থির পানিতে ফোবিয়া আছে।৷ বেশি পানি প্রচন্ড ভয় পায়৷ সেবার সবাই মিলে সেন্টমার্টিন গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য আদিত্যর হাত ছাড়েনি। আদিত্যর হাত ছাড়তে হলে আগে আয়ান এসে এক হাত ধরতো তারপর।
.
.
অর্থি কিছুটা শান্ত হয়েছে। অর্থির অস্থিরতা আরেকটু বাড়াতে ক্ষতি কি।
অর্থি কে সুযোগ না দিয়েই আদিত্য ঠোঁটে ঠোঁট রাখে।
একে তো পানি থেকে উঠেছে, আরেক আদিত্যর এমন ব্যবহারে অর্থির বেশ কষ্ট হয় দম নিতে।
আদিত্য বুঝে অর্থি অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে।
আদিত্যর ঠোঁট অর্থির গলায় নেমে এলে কিছুক্ষণ পর যখন ওর বুকে মাথা রাখবে তখন অর্থি আদিত্য কে সরিয়ে দেয়।
আদিত্য অর্থির এমন ব্যবহারে প্রচন্ডরকম রেগে যায়। এক হাত দিয়ে
গলায় চাপ দিয়ে বলে
– এই বুকেই রুপ মাথা রাখতো তাই না? তাই তুই এমন করছিস?
.
এবার অর্থির সত্যি মনে হচ্ছে ও মরে যাবে।
.
আয়ান জলদি জলদি সব কিছু গুছাচ্ছে৷ দ্রুত সিংগাপুর যেতে হবে।
আপু ওখানে আছে। যেতে সারে চার ঘন্টার মতো লাগবে।
এক মুহূর্ত ভাবলো আবার কি ভেবে যেনো আজকের টিকিট ক্যান্সেল করে দিলো।
হুম প্রয়োজন আছে।। আদিত্য অর্থি কে একা কিছু সময় থাকতে দেওয়া প্রয়োজন৷
হয়তো সব ঠিকঠাক হবে৷ কিন্তু সে তো তার বোন কে চিনে। এত সহজে মানবে না।
আল্লাহ আদিত্য দা কে সহ্য করার ক্ষমতা দিক। কারণ অর্থি ইমোশনাল হলে সামনের মানুষের মাথা কাজ করার মতো থাকে না তার করা কাজে । নিজেকে যে সে বর্বর ভাবে অত্যাচার করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মিয়েছে।
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-২০

0

#বালির_সংসার
পর্ব-২০
.
সময় প্রবাহমান। কেটে গেছে দুই মাস।
দুই মাস সময়ের মধ্যে একটা দিন ও রাতে ঘুমের মেডিসিন ছাড়া ঘুমাতে পারেনি অর্থির বাবা।
মাইনর এট্যাক হয়েছে দুইবার। মুঠো ভর্তি মেডিসিন বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে।
ছেলে মেয়ে দুটো কই আছে জানে না সে।
বেশি চিন্তা হয় মেয়ের জন্য।
আচ্ছা সত্যি কি মেয়েটা মরে গেছে?
চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠে সেই রাতের স্মৃতি……
.
.
কিছুক্ষণ পর শুরু হবে আদিত্য রুশার বিয়ে। সামাজিক ভাবে বেশ কয়েকজন মানুষ এসেছে বিয়েতে।
আদিত্য আজ অফ হোয়াইট পাঞ্জাবী পড়েছে আর রুশা অফহোয়াইট লাল পাড়ের শাড়ি। বেশ মানিয়েছে দুজন কে।
সারাদিন আয়ান বাসায় ছিলো না।
বাসায় ঢুকেই চিৎকার শুরু করে।
রেগে অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে।
মায়ের কাছে গিয়ে হাতে শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে আসে ড্রয়িং রুমে
– তুমি যদি আমার মা না হতে না? তাহলে আমি ঠাটিয়ে তোমার দুগালে দুটো থাপ্পড় মারতাম। নিজেকে কি মনে করো? দায়িত্ব? দায়িত্ব দেখাচ্ছো রুশার প্রতি? নিজের মেয়েকে ওসব বলতে বাধলো না?
আমার মোনাপাখির যদি কিছু হয় আমি তোমাদের সবাই কে জেলের ভাত খাওয়াবো বলে রাখলাম।
.
শান্তশিষ্ট আয়ানের এই রুপ দেখে সবাই অবাক। আদিত্য থামাতে গেলে আদিত্য কে বলে
– উহু স্পর্শ করবে না। তোমার বিয়েতে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য সরি। বিয়ে করে নাও। আমি একাই যাবো মেয়ে টাকে খুজতে। তুমি বিয়ে করো। আর হুম! শুনো তোমরা! গুড নিউজ আছে।
অর্থি কে খুজে পাচ্ছি না। আমাদের সোকল্ড মা তোমার বিয়েতে ঝামেলা না হয় সেজন্য ওকে চলে যেতে বলেছে আর রুপ কে ডিভোর্স দিয়ে ওর বাসর সাজিয়ে কোথায় গেছে আমি জানি না। আমি ওকে পাচ্ছি না।
আল্লাহর কাছে দোআ করো। ও যেনো মরে যায়। ওর লাশ যেনো না পাই।
আদিত্যর রুশা আছে রুপের নিশি। ওর তো কেউ নেই৷ অলক্ষী কুলক্ষী মরাই ভালো।
.
সেই যে আয়ান চলে গেলো আজ অবধি আসেনি। মেয়েটা ছেলেটাকে আগলে রাখতো কিন্তু ভাই যে বোন কে এভাবে ভালোবাসতে পারে জানা ছিলো না। হুম্ভ রুশা তাদের দায়িত্ব। কোন দিন তফাৎ করেনি ভাতিজি আর মেয়ের মাঝে৷ ভাইটা অকালে মরে গেলো। দায়িত্ব দিয়ে৷ দায়িত্ব কি ফেলে দেওয়া যায়?
.
.
চোখ লেগে এসেছিলো অর্থির বাবার। হঠাৎ কারো চিৎকারে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে ড্রয়িং রুমে ।
আয়ান চুলের মুঠি ধরে টেনে হিচড়ে নামাচ্ছে রুশা কে।
চোখে মুখে রাগ।
কোমর থেকে বেল্ট খুলে ইচ্ছামতো পেটাচ্ছে, রুশা চিৎকার করছে কিন্তু লাভ হয়নি।
.
আয়ান জোড়ে জোড়ে বলতে থাকে
– ঠিক এইভাবে রুপ আমার বোন কে মেরেছিলো। কষ্ট হচ্ছে? আরো হবে। তুই তো সুস্থ, আমার বোন অসুস্থ ছিলো। দেখ কেমন লাগে।
.
আদিত্য বাইরে থেকে এসে থামাতে চাইলে বলে
– আয়ান কি হচ্ছে কি ছাড় ওকে।

– ওহ মিঃ আদিত্য আহমেদ! আপনার স্ত্রী কে মারছি বলে লাগছে? হ্যাঁ লাগবেই তো। যতই হোক পবিত্র মেয়ে বলে কথা৷ কিন্তু কি জানেন? শরীর কখনো পবিত্র হয় না। পবিত্র হয় মন। আজকে ওর জন্য আমার বোনের এই অবস্থা। এতটা হিংসে?
যে আমার বোনের সম্মান নিয়ে এত কিছু৷
.
.
ততক্ষণে পুলিশ এসে গেছে। রায়ান কে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। রায়ানের ল্যাপটপ ঘেটে জানা গেছে রায়ান সব ফেক ভিডিও, ছবি বানিয়েছিলো। কিন্তু রুশার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই।
তখন আয়ান ল্যাপটপে ফুটেজ চালু করে।
যেখানে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রুশা কাউকে বলছে যে আদিত্য আয়ান সব জেনে গেছে যে ভিডিও ছবি ফেক ছিলো।
.
রুশা অনেক মাফ চাইলেও এবার আর মাফ করলো না অর্থির বাবা। ভাগ্যিস আয়ান টা ছিলো। না হলে এসব জানতো না৷ কাল রাতে কি মনে করে যেনো ফুটেজ চেক করছিলো আয়ান । তখন এসব চোখে পড়ে। রুশা ভাইয়া কেবল রায়ান কেই বলে। রায়ানের ফ্ল্যাটে যেতেই দেখে নেশায় টাল হয়ে পড়ে আছে। ল্যাপটপ ঘেটে সব পায়।
এতটা রাগ হয়েছিলো না? সব প্রমাণ নিয়ে সকাল অবধি অপেক্ষা শুধু।
.
.
বাবা- মা কে খুজে পেয়েছিস আয়ান?
আয়ান- তাতে তোমাদের কি? আদিত্য, রুশা আছে তো তোমাদের ছেলে মেয়ে। আমরা মরি বাঁচি তোমাদের কি? আর হ্যাঁ মিঃ আদিত্য আহমেদ আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেনো আপনার স্ত্রী কে আমি সহজে ছাড়বো না। আপনি দেখেন আমিও দেখে নিবো।
আগে তো মেয়েটাকে খুজে পাই তারপর কাউকে ছাড়বো না। না আপনাকে, না রুপ কে। গুনেগুনে হিসেব নিবো ভালো থাকবেন৷
.
.
আদিত্য – দাড়াও আয়ান। অনেক কথা বললে জানি রাগ করে। যে ছেলে এত কিছু জানে সে কি এটা জানেনা আমি রুশা কে বিয়ে করিনি? জানে কিন্তু রাগের দৃষ্টিতে বলছো কি না।
তুমি যেমন তোমার মোনা পাখি কে খুঁজছো আমিও আমার পিচ্চিকে দিন রাত খুঁজতেছি। আমরা সবাই ওকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।
.
আয়ান তাচ্ছিল্যের সাথে হাসে আর বলে
– অসম্পূর্ণ হলে সেদিন ওকে অবিশ্বাস করতে না।
.
.
দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো চার মাস।
এখনো কেউ জানে না মেয়েটা কোথায় আছে। কিন্তু মনের কোথাও একটা আশা নিয়ে আছে হয়তো মেয়েটা ফিরে আসবে। কিন্তু যদি মরে যায়? না বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-১৯

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১৯
.
.
দাদুমণি চলে যাওয়ার পর কথা গুলো বুঝতে অর্থির কিছুটা সময় লাগলো।
সময় লাগলেও সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগলো না।
যাই হোক সে রুপের কাছে ফিরে যাবে না।
আদিত্য করুক বিয়ে! আমি তো না করিনি! কেনোই বা করবো? তার পবিত্র, কুমারী মেয়ে চাই। যার উপর শুধুই তার স্পর্শ থাকবে। আমার শুধু বিয়ে নয়, দুই সন্তান জন্ম দিয়েছিলাম। তার কথা মতো না আমি পবিত্র না কুমারী। আমি চারপাশে থাকলেও অবশ্যই তার কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।
আর রইলো রুপ কে মাফ করার? হুম করবো মাফ! একবারে করবো।
.
.
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নেয় অর্থি।
বের হয়ে দেখে মা বসে আছে
– অর্থি! আমার কথায় তোর হয়তো মনে হবে আমি তোর মা হয়ে এসব বলছি কেনো? তবুও বলবো। জানিস তো মেয়েদের জীবন বড্ড বেশি ভয়ংকর। রুপ তোর স্বামী। হয়তো সন্তানদের হারানো কিংবা কোন এক কারণে ভুল পথে পা দিয়েছে কিন্তু স্ত্রী হিসেবে তোর উচিৎ তাকে সুযোগ দেওয়া।
হয়তো ভুল শুধরে নিবে। বড় কথা আদিত্য রুশার বিয়ে৷ তুই এখানে থাকলে হয়তো হবে না এই বিয়ে। আমার কথা বুঝার চেষ্টা করিস।
রুপ কে ছাড়বি? কার ভরসায়? আজ বাবা -ভাই পাশে আছে কাল হয়তো থাকবে না। আর আমার এ বাড়িতে কি সারাজীবন থাকতে পারবি?
হয়তো তোর খারাপ লাগছে। তবুও বলবো তুই ফিরে যা। রুশা কে সুখী হতে দে।
আর যদি না যাস তাহলেও অনন্ত আজকের দিনের জন্য যা।
.
.
মা কথা গুলো বলে যাওয়ার পরেই রুশা আসে।
তার একটা কথাই
– আদিত্য কে খুব কষ্টে পেয়েছি কিন্তু এখনো তোকেই চায়। প্লিজ আদিত্য কে আমাকে ফিরিয়ে দে। তুই থাকলে ও কোনদিন আমার হবে না। আমি তোর কাছে আদিত্য কে ভিক্ষে চাইছি প্লিজ।
.
রুশার কান্না দেখে অর্থির দম বন্ধ হয়ে আসে। আদিত্য কেনো তাকে চাইবে? সে তো অপবিত্র!
এই ঘরে আরশের অনেক কিছুই আছে। অর্থি আরশের ছবি আর একটা খেলনা নিয়ে কিছু না বলেই বেরিয়ে পড়ে। সে জানে তার কোন জায়গা নেই এই বাড়িতে।
রুশার মুখে ফুটে উঠে বিশ্বজয়ের হাসি।
.
.
অর্থি আবার ফিরে এলো রুপের বাড়িতে। কই যাবে? কি করবে? এই আশায় হয়তো রুপ মাফ চাইবে, আবার সব ঠিকঠাক হবে। কিন্তু সব চাওয়াই কি পূর্ণতা পায়?
.
.
বাসার অবস্থা নাজেহাল। জিনিসপত্র ভাঙা, খাবার টেবিল অপরিস্কার আরো কতকি? বাইরের থেকে খাবার আনিয়ে খেয়েছে হয়তো।
অর্থি চাল ধুয়ে ভাত চুলোয় দেয়। অন্যটায় ডাল সিদ্ধ। ভাতের সাথে আলু সিদ্ধ হচ্ছে। একে একে ডিম সিদ্ধ করে বেগুন পুড়িয়ে নেয়।
রান্নার ফাকে ফাকে সব গুছিয়ে ফেলে। শুকনো মরিচ ভাজার সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে আসে রুপ আর নিশি।
কিছু বলতে না দিয়েই বলে
– আপনারা বসুন খেয়ে নিন তারপর কথা বলা যাবে।
.
চুপচাপ বসে খাবার খায়। অর্থির গলা দিয়ে খাবার নামছে না।
বিষম খেলে রুপ পানি দেয় কিন্তু অর্থি নেয় না।
.
খাওয়া শেষে
– আপনারা বিয়ে করে নিন। বাহিরে মেলামেশা করলে ভালো দেখায় না।
– তাহলে তুমি? (নিশি)
– আপনাদের আশ্রিতা হয়ে না হয় এখানে থাকবো।
– না তা হয় না। আমি তোমাকে আমার সামনে কিভাবে সহ্য করবো? আমি পারবো না। আমি আমার স্বামীকে কারো সাথে ভাগ করবো না।
.
বিনিময়ে অর্থি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
– তাছাড়া তোমার সামনে জীবন পড়েই আছে। তুমি যদি এখানে থাকো তাহলে তোমার কষ্ট হবে বোন।
– আমি আপনার স্বামীর উপর অধিকার দেখাতে যাবো না। আপনারা বলেন না যে আমি আশ্রিতা তাই বলেছিলাম।
– তুমি বললে কি হবে? আমি সতীন নিয়ে সংসার করতে পারবো না।
আমাদের বিয়ের আগে তোমাদের ডিভোর্স হওয়া দরকার।
– তাহলে উকিল কে বলুন। আমার সমস্যা নেই।
.
.
অর্থি, নিশির মাঝে রুপ একটা কথাও বলেনি। অর্থি দুই ঘন্টার মধ্যে পুরো বাসাকে নতুন বউয়ের মতো সাজিয়েছে সাথে নিশি কেও। এই প্রথম মনে হয় কোন মেয়ে তার সতীন কে কনে সাজে সাজিয়ে দিলো।
রান্না,মিষ্টি, বাসর সব রেডি। রুপ কে সাদা পাঞ্জাবী তে বেশ মানিয়েছে।
ঈশ! এভাবে তাকিয়ে থাকলে অর্থির নজর লেগে যাবে রুপের।
অর্থির খুব ইচ্ছে করছিলো রুপ কে ছোয়ার কিন্তু নিশি হয়তো ভালো চোখে দেখবে না।
অর্থি নিজেই অধিকার ছেড়ে দিচ্ছে কারণ রুপ চায় না তাকে।
উকিল এলো ডিভোর্স হলো। রুপ একটা বার না করলো না। একটা কথাও বললো না।
অর্থির কান্না পাচ্ছে খুব৷ আর রুপের প্রতি অধিকার রইলো না। সবটা ভুলে নতুন শুরু করা জীবন আজ শেষ।
কাপাকাপা হাতে নাক ফুল খুলে এগিয়ে দিলো অর্থি নিশির দিকে।
নিশি- এটা তুমিই রাখো। আমি তোমার ব্যবহার করা জিনিস ব্যবহার করবো না।
.
মুখে হাসি ফুটিয়ে অর্থি বলে
আমার ব্যবহার করা স্বামী ব্যবহার করবেন এটা তো শুধু নাকফুল মাত্র।
.
.
পিছন ফিরে তাকায়নি সে। আরশের জিনিস গুলো নিয়ে চলে এসেছে। মাঝ রাস্তায় বসে জীবনের হিসেব কষতে থাকে। কি পেলো কি হারালো? পাওয়ার কিছুই নেই শুধুই হারানো। ছোট্ট পিচ্চি অর্থির জীবনে আদিত্য এলো। কিশোরী বয়স থেকে আগলে রাখলো হঠাৎ সব তছনছ হয়ে গেলো এক রাতে। তারপর রুপের সাথে সংসার। অরুনীমা, আরশ এলো চলেও গেলো আবার নিশির ঝড়ো হাওয়ায় গুছানো সংসার বালির সংসারে পরিণত হলো। আজ সে সংসার আর নেই।
ডান দিকে যে রাস্তা গিয়েছে তার বাবার বাসার সামনে? সেই বাসায় হয়তো এতক্ষণে আদিত্য রুশার বিয়ে শুরু হয়ে গেছে আর বামে রুপ নিশির।
সবার গুছানো জীবনে কোন জায়গা নেই। চোখ মুছে সামনের রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছে।
হয়তো আর কখনো ফিরবে না এই শহরে। হয়তো তার মৃত্যুর খবর আসবে না সুখী মানুষ গুলোর জীবনে, লাশের দাফন হবে বেওয়ারিশ হিসেবে…

.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-১৮

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১৮
.
.
সকাল হতেই রুশা চলে যায় অর্থিদের বাসায়। কাল রাতে রায়ান বলেছে তো সব ঠিক হয়ে যাবে। হুম্ম তার ভাই সব ঠিক করে দিবে। আদিত্য কে সে আর ওই বাসায় থাকতে দিবে না।
আংকেল বললেও না। আর রেজিস্ট্রি হওয়া অবধি ও নিজেও থাকবে সেখানে।
আদিত্য সহ একবারে বেরিয়ে আসবে৷
.
অর্থির মাথার কাছে ওর বাবা বসে আছে।
মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। এখনো পুরোপুরি ভাবে হুশ ফিরেনি। কেউ কিছুই জানে না। শুধু আয়ান ছাড়া। আয়ান মুখ খুললো৷ সবটা জানার পর চক্ষু সবার চড়ক গাছ।
আয়ান শুরু থেকেই সব টা জানে।
তিন বছর আগে তখন যদি সে থাকতো এত কিছু হতো না।
বান্দরবান ছিলো। এটার সুযোগ নিয়েই অর্থি কে কেউ ফাসিয়েছে।
ফিরে এসে সব জেনে খুব কষ্ট করে রুপের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড পায় সে। আর সেই রেকর্ড পাঠিয়ে দেয় আদিত্য, বাবা মায়ের কাছে৷
আদিত্য এত দিন জানতো অর্থি ট্রাপে পড়েছিলো। কিন্তু ফুটেজ কে দিয়েছিলো সেটা অজানা ছিলো । তাহলে সে আয়ান?.
.
আয়ান বোনের পাশে গিয়ে হাত ধরে আবার বলতে থাকে।
– টাকায় সব কিছু হয়৷ নিশি ছয় মাস যাবত এসেছে৷ যখন আপুর আটমাস চলছে। ওই বাসার সব ক্যামেরার ফুটেজ রেকর্ড আমার কাছে প্রথম থেকেই আছে। আপু বেশ মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিলো। রুপ বেশ ভালো। কিন্তু! নিশির প্রতি আসক্তি খুব।
.
তারপর আয়ান বেবি হওয়ার পর দিন থেকে কাল রাত অবধি সব কিছু বলে।
সবার চক্ষু চড়কগাছ। আদিত্য রাগে ফুসছে। সে জানতো রুপ মেরেছে৷ কিন্তু এতসব জানতো না।
রাগে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই অর্থির জ্ঞান ফিরে।
হাতে ঈশারা করে।
আদিত্য কাছে যেতেই হাত বাড়িয়ে বাবা, আয়ান, আদিত্যর হাত নিয়ে বলে
– রুপ কে কিছু বলো না তোমরা। আমিই অলক্ষী, আমি আমার সন্তানদের মেরেছি।
বলেই ঢুকরে কান্না করে।
আয়ান দ্রুত যায় খাবার নিয়ে আসতে। মা অর্থি কে ওয়াশ রুমে নিয়ে গোসল করাতে চাইলো। আদিত্য না করলেও অর্থি শাওয়ার এর নিচে দাঁড়িয়ে যায়।
.
একবার অর্থি সুস্থ হোক তারপর দেখে নিবো রুপ কে আর তখন কে ওর সাথে এমন করছে তাকে টেনে ছিড়ে ফেলবো।
.
.
কথাগুলো শুনে রুশার হাত পা কাপছে।
আদিত্য দা জেনে গেছে ভিডিও ওসব ফেক ছিলো।
কাপতে কাপতে রায়ান কে কল দেয়।
.
রুশা-হ্যালো ভাইয়া
রায়ান- মণি বলো
রুশা- আদিত্য দা সব জেনে গেছে।
রায়ান- মানে কি? কি হইছে? শান্ত হও! ক্লিয়ার করে বলো
রুশা- ভিডিও, ছবি যে ফেক ছিলো সেইটা সবাই জেনে গেছে।
রায়ান- কিভাবে?
রুশা- এত জানি না! তবে সব জানার পিছনে আয়ান আছে।
রায়ান- তোমাকে ওরা কিছু বলেছে? তোমার কিছু করেনি তো? ওরা কি জানে আমরা এসব করেছি।
রুশা- না! আমরা করেছিলাম এসব তা জানে না।
রায়ান- যাক বাবা বাঁচালে। শুনো রিলাক্স করো। কিছুই হবে না।
রুশা- কিন্তু মনে হয় না অর্থি এ বাসায় থাকলে আদিত্য আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে৷ (রুপের সব কথা বলে)
রায়ান- চিন্তা করো না। কাল দাদু আসছে সব ঠিক হয়ে যাবে৷
.
.
রাতের দিকে অর্থি অনেকটা সুস্থ। বারান্দায় বসে ছিলো। বাবা মা এসে অনেক কথা বলে গেলো। বাহিরে আদিত্য রুশার বিয়ের প্রিপারেশন নেওয়া হচ্ছে।
হায়রে নিয়তি! হায়রে ভাগ্য! নদীর একূল ভাঙে আর ও কূল গড়ে৷ এমন টাই হচ্ছে।
অর্থির সংসার ভেঙে যাচ্ছে আর আদিত্যর সংসার গড়ছে৷
বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা করছে৷
আয়ান এসে অর্থির মাথা চুপচাপ ওর বুকের সাথে লাগিয়ে ধরে।
হাতে ফোন দিয়ে বলে
– নাও তো মোনা
– কি?
– ফোনে দেখো!
.
ফোনের গ্যালারি তে শুধুই শিনচ্যান কার্টুন।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও দেখা শুরু করে। দেখতে দেখতে এক সময় অর্থি হাসতে থাকে। আয়ানের বুকের মাঝে থেকে হাজার টনের বোঝা নেমে যায়।
.
.
সকাল হতেই রুশার দাদী মানে অর্থির চাচাতো দাদী আসে। অর্থির সব কথা শুনে বেশ চেচামেচি করে।
অর্থির মা বাবা উনাকে খুব সম্মান করে আর এর সুযোগ সে বারবার নেয়।
রেগেমেগে অর্থির রুমে যায়৷
গিয়েই ঘুম থেকে টেনে তুলে মেয়েকে।
বলতে থাকে
– কি রে মুখপুড়ী? মুখ পুড়িয়ে এখন এখন এখানে এসেছিস আমার রুশার সংসার ভাংতে? নিজের সন্তানদের তো খাইছিস। এখন এই শুভ একটা দিনে…..
.
.
অনেক কথা অর্থি কে বলে, যার সারমর্ম এই যে অর্থি একটা অলক্ষী মেয়ে। নিজের সন্তান কে নিজে মেরেছে। স্বামী কে আটকে রাখতে পারেনি। সে শুভ দিনে এখানে থাকলে রুশা আদিত্যর খারাপ হবে। তাকে এখনি বাসা থেকে অন্তত আজকের দিনের জন্য হলেও দূরে যেতে। আর রুপ কে মাফ করে নিজের সংসার করতে। পুরুষ মানুষের একটু আধটু এমন শখ থাকবেই৷ মেনে নিতে হয়।
.
অর্থির নিজের মায়ের দিকে খুব আশা নিয়ে তাকায় কিন্তু মনে হয় তার মায়েও এই কথায় সম্মতি আছে।
দাদী চলে যাওয়ার পর মা বলে
– বিয়ে তো কোন ছেলে খেলা নয়। রুপ কে আবার সুযোগ দে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-১৭

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১৭
.
প্রতিবার মেয়ের জন্মদিনে বাবা দুই হাত ভর্তি করে চকলেট দেয়৷
এবারো তাই। বাবা কয়েক রকমের চকলেট নিয়ে এসেছে।
কিন্তু অর্থির ছোট্ট ছোট্ট হাতে বেশি চকলেট আটে না।
বাবা এবারো হেসে দেয়। আর বলে
– মা! আমি তো তোমাকে চকলেট বেশি করেই দিতে চাই। কিন্তু তোমার হাতেই তো আটে না।
.
অর্থি চারপাশ ঘুরে যেনো কি দেখে।
তারপর বাবা কে বলে নিজের সাথে যেতে।
আদিত্য ড্রয়িং রুমে বসে নিউজপেপার পড়ছিলো।
অর্থি গিয়ে আদিত্যর হাতের নিচে নিজের দুই হাত দিয়ে বাবার দিকে বাড়িয়ে দেয়
– এখন তো বেশি দিতে পারবে? আদিত্যদার হাত বড় আছে। তো তুমি এখন চকলেট দাও।
অর্থির বাবা তাই দিলো৷ আদিত্য পুরোই অবাক, সাথে লজ্জাও পেলো।
অর্থির বাবা দাড়ালো না। সে চলে যাওয়ার পর
অর্থি নিজের ওড়না আঁচলের মতো করে আদিত্যর সামনে ধরলো
– এখন আমাকে আমার চকলেট ফিরত দাও।
– কেনো? এগুলো তো আমার হাতে, সো চকলেট আমার।
– মানে কি?
– মানে কিছুই না৷ দিবো না। এগুলো আমার।
– লাগবে না৷
বলেই অর্থি নিজের রুমের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়৷
আদিত্য চকলেট হাতে নিয়েই হাত সামনে বাড়িয়ে অর্থি কে পিছন দিক থেকে ধরে। ঠিক যেনো আবদ্ধ করে নিলো। আদিত্য হাত দুটো আলাদা করেনি। হাত ভর্তি চকলেট।
বুকের সাথে মিশে আছে অর্থির পিঠে ছড়ানো কোমর অব্ধি লম্বা চুল।
– নে পিচ্চি, চকলেট।
– নিবো না।
– নিবি না?
– শুনো না?
আদিত্য উত্তর না দিয়েই ওকে উঁচু করে।
অর্থি বলে
– আদিত্যদা আমাকে নামাও! হয় আমি পড়বো না হয় চকলেট।
– চুপ।
দোলনায় বসিয়ে দিয়ে ওর কোলে চকলেট রাখে। টুল টেনে নিয়ে বসে চকলেট মুখে পুড়ে দেয়৷
– পিচ্চি তোর বয়স কতো হলো?
– ১৭
– কি গিফট চাই?
– যা চাইবো দিবে?
– কি?
– কি!
– কি চাই বল?
– বুঝো না?
.
আদিত্য অর্থির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারে কি চাইছে।
– এখন না পরে।
– পরে কবে?
– পরে মানে পরে।
– সরি।
– আবার কি হলো?
– তোমাকে সব সময় বিরক্ত করি।আর করবো না। ভালো থাকো।
– মানে কি?
– মানে কিছুই না! তুমি তো চাও আমি তোমার থেকে দূরে থাকি। তাই থাকবো। ভালোবাসো বলতেও হবে, কাছেও আসতে হবে। আসলে তোমার জন্য রুশা আপুই ভালো হবে। মানাবে ভালো। স্টাইলিশ, স্মার্ট মেয়ে, আমার মতো না।
যেমন টা তোমার পছন্দ। ভালো থাকো, রুশা আপুকেই নিয়ে।
.
.
কথা গুলো বলেই অর্থি উঠে যেতে নেয়। কোলের সব চকলেট পড়ে যায়।
এক পা এগুতেই আদিত্য অর্থি কে হাত ধরে টেনে এনে বসিয়ে গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
অর্থি এমন কাজে অভ্যস্ত না৷ কেউ ভুলেও মারেনি৷ মাথা ঝিমঝিম করছে।.
.
.
আদিত্য বেশ রেগে গেছে। কখনো সে রুশা কে নিয়ে এসব ভাবে নি। কেনো ওর কথা উঠবে এখানে? কিছু না বলতে বলতে বেশি কথা বলে ফেলে৷
যখন হুশ হলো আদিত্য অর্থি কে মেরেছে।
আদিত্যর নিজের প্রতি রাগ আরো বেশি হতে থাকলো। আজ বাচ্চামেয়েটার জন্ম দিন, সব থেকে বড় কথা ও কিভাবে পারলো এই পিচ্চি মেয়েকে মারতে। নিজের প্রতি রাগ আরো বেশি হলো।
দেয়ালে কয়েকটা ঘুষি দিলো। আবার দিতেই সামনে দাড়ালো।
আদিত্য কে কখনো এত রাগ করতে দেখেনি। কিভাবে শান্ত করবে জানে না।
অর্থির কান্নার মুখ দেখে আদিত্য অর্থিকে বসিয়ে দিয়ে এক হাত দিয়ে অর্থির মাথা এগিয়ে নিয়ে এসে অন্য হাতে দুই হাত ধরে।
– ভালোবাসি এটা বলতে হবেই? প্রপোজ করতেই হবে? তোকে নিয়ে আমার অনেক ইচ্ছে। প্রপোজ করবো, সরাসরি বিয়ের জন্য।
ভালোবাসি বলবো যেদিন তোকে পূর্ণ করবো।
পূর্ণ সেদিন করবো যখন তুই নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা রাখবি।
.
আদিত্যর রাগ কিছুটা কমে এসেছে। অর্থি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে
– তো করো না আমায় পূর্ণ, বলো না ভালোবাসি।
– পূর্ণ করা মানে বুঝেছিস?
– না!
– তুই এখনো বাচ্চা আগে বড় হয়ে নে।
.
.
আদিত্যর ঘুম ভেঙে যায়। ইদানীং সে স্বপ্নে শুধু অতীত হাতড়ে বেড়ায়।
ফেব্রুয়ারি মাসের হালকা শীতে ঘেমে গেছে অর্থি। শরীরের উপর থেকে ওড়না সরাতেই ক্ষত গুলো চোখে পড়ে।
রেগে ফেটে যাচ্ছে সে। এসব হয়েছে রুশার জন্য। মনে হচ্ছে ওকে চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে এসে ঠিক এভাবে মারতে।
না ও ওসব ভিডিও, ম্যাসেজ আদিত্য কে দিতো না এসব হতো।
অর্থির ভিডিও দেখে আদিত্যর মাথায় রাগ জেকে বসে।
কিন্তু ভুল তো ভাঙবেই৷ ভেঙেছিলোও।
কোন একটা অজানা নাম্বার থেকে সেন্ড করা রুপের বাসার সিসি টিভি ফুটেজ সব ভুল ভেঙে দেয় তার। ঈশ! রাগ হয় তখন নিজের প্রতি। কেনো সে অর্থি কে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু ততদিনে রুপ অর্থির বিয়ে হয়ে গেছে।
দেশে ফিরে এসে জানতে পারে অর্থির বেবি হবে।
আদিত্য তারপর কত রাত ঠিক মতো ঘুমায়নি।
অর্থি দের বাসায় এসে থাকতে চায়নি কারণ চারপাশে শুধুই স্মৃতি। কিন্তু আংকেলের কথা ফেলতে পারেনি।
ভাগ্যের সমীকরণে সে পরাজিত। আজ বাদে কাল সেই রুশার সাথেই তার বিয়ে। না সে রুশা কে চায় না কিন্তু ওই যে বাংলাদেশের সব বাবার হার্ট খুব দুর্বল। একটু হলেই এট্যাক হয়।
.
.
অন্ধকার রুমে বসে রুশা কেদেই চলেছে। আজকে আদিত্য খুব খারাপ ব্যবহার করেছে।
রুশার কান্না শুনে ওর ভাই দৌড়ে আসে।
– কি হয়েছে আপু?
– আদিত্য!
– কি?
– ও এখনো অর্থিকে ভালোবাসে
– কাল তো তোদের রেজিস্ট্রি, তারপর আদিত্য ভাইয়া শুধুই তোর।
– তুই যা এখান থেকে, আমি বাঁচি মরি তাতে তোর কি রে ভাই?
– তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারিনা বলেই কিন্তু অর্থি আপুর ওসব ফেক ভিডিও, ফটো বানিয়ে আদিত্য, কাকা, কাকী সবাই কে দিয়েছিলাম। আর তুই এখন এসব বলছিস?
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-১৬

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১৬
.
সমুদ্রের তীরে বালি দিয়ে বানানো ছোট্ট একটা ঘর৷
হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢেউ কিংবা বাতাসে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে।
অর্থির চোখের সামনে শুধু তাই ভেসে উঠছিলো।
সে মনে করেছিলো, ভালোবাসা, যত্ন, ত্যাগ দিয়ে এই সংসার কে বাচাবে। হোক না ঘর বালির! তাতে কি? ভালোবাসা তো সব পারে।
ইট, কাঠ, সিমেন্ট দিয়ে শুধু ঘর হয়। সংসার তো হয় না।
কিন্তু সংসার ও যে বালির হয় আজ সে বুঝতে পারছে৷
হাতে হাতে গড়ে তোলা তার এই বালির সংসার নিশি নামক ঝড়ো হাওয়ায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
.
( আশা করছি নামের অর্থ খুজে পেয়েছেন। যাদের গল্পের নাম নিয়ে সমস্যা হচ্ছিলো)
.
.
রুপের সাথে নিশির সম্পর্ক অনেক বছরের। কথা ছিলো নিশির পর পর রুপ কানাডা চলে যাবে। সব ঠিক ছিলো। যাওয়ার পনেরো দিন আগে বাবা মা মারা যায়৷ তারপর নিজের জন্যে অর্থির এমন অবস্থা দেখে নিজেকে অপরাধী মনে হতো। অর্থির দায়িত্ব নিলো।
সম্পর্ক ধীরেধীরে ভালোবাসায় পরিবর্তন হয়েছিলো। কিন্তু নিশির ফিরে আসা যেনো ধমকা হাওয়া মতো।
নিশিও যে খুব কাছের।
কেনো যেনো আজ কাল অর্থি কে চিন্তা করতে পারে না। মাথায় ঝিরিঝিরি ব্যথা হয়।
কিন্তু নিশির পরশে সব ভুলে যায়।
সাফল্য তো নিশির। আফটার অল কানাডা থেকে মেডিসিন নিয়ে এত কিছু পড়ে এসে সে যদি নিজের কাছের মানুষকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে না পারতো তবে এত লেখা পড়া করে কি লাভ?
রুপ কে সে পেয়েছে। হোক না নেশার ঘোরেই, হোক না অবচেতন মনেই তবুও তো কেড়ে নিয়েছে।
কারণ নিশি জানে রুপ সজ্ঞানে অর্থি কে ছাড়বে না। কিন্তু তার রুপ কে সে কাউকে দিবে না।
.
.
সারাদিন ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছিলো আয়ান! কাল পাগলীটার জন্ম দিন। ঘড়িতে কাটায় কাটায় দশটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট।
বেশি কিছু নেয়নি। stargazer ফুল,কিছু চকলেট আর ছোট ছোট পুতুল। এগুলো দিলেই বোন খুশি৷ Stargazer বলতে তো পাগল। এই ফুল দেখলে মুখে হাসি ফুটবেই৷
মেয়েটা কয়েকদিনে কেমন হয়ে গেছে। রেস্টুরেন্ট থেকে অর্থির প্রিয় চিজ কেক সাথে স্পেশাল বিরিয়ানি নিয়ে বাসায় ঢুকে আয়ান।
সারাদিন বোনের খেয়াল রাখতে পারেনি। সকালে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেই চলে গেছে।
দুপুরের দিকে মন টা খুব ছটফট করছিলো কিন্তু এক্সাম ছিলো তাই আসতে বা কল দিতে পারেনি।
অর্থির রুমে গিয়ে দেখে অর্থি নেই।
হয়তো ঘুমের মধ্যে আদিত্যদার রুমে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে না পেয়ে বেশ ভয় পায়।
সারা বাসায় নেই।
চিৎকার করে ডাকলেই মা বলে নিজের বাসায় গেছে।
মায়ের প্রতি প্রচন্ড রাগ হয় আয়ানের।
– তোমার মাথা ঠিক আছে? তুমি কোন আক্কেলে আপু কে যেতে দিছো? একটা দিন সামলাতে পারলা না? আল্লাহ জানে আমার বোন কেমন আছে! ওর কিছু হইলে তোমারে ছাড়বো না।
.
আয়ান দৌড়ে গিয়ে রুম থেকে কিছু একটা নিয়ে বের হয়ে যায়। আয়ানের হঠাৎ এমন রেগে যাওয়া দেখে মা বেশ চমকে উঠে।
গাড়ি নিয়ে অর্থির বাসার সামনে যেতেই দারোয়ান গেট খুলে দেয়৷
ওর কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে অর্থি কে খুজতে থাকে। আত্নায় যেনো পানি নেই।
বেডরুমের দিকে যেতে দেখে অর্থি পড়ে আছে। রক্ত জমাট বেধে গেছে৷ চোখ খুলছে না।
ভয় হয় আয়ানের।
কিছু না বলেই উঠিয়ে গাড়িতে নিয়ে আসে। দারোয়ান চাচা শুধু দেখছিলো।
.
আধ ঘন্টা পর অর্থির জন্ম দিন। কতই না পাগলামো করতো। আদিত্যর ফোনের গ্যালারি তে শুধু ওর ছবি। সেই পিচ্চি অর্থি, আবদার গুলো বড্ড পোড়ায়। কেনো সেদিন আদিত্য একটু ধৈর্য্য ধরলো না? সে কেনো ভুলে গিয়েছিলো যা দেখা হয় সব সত্যি না।
এসব ভাবতে ভাবতে আদিত্যর ফোনে কল আসে আয়ানের।
– আদিত্য দা! নরমাল এক্সিডেন্ট হলে যা যা মেডিসিন প্রয়োজন সেসব নিয়ে প্লিজ বাসায় আসো।
.
আয়ানের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই কেটে যায়।
আচ্ছা অর্থির কিছু হয়নি তো?
.
.
অর্থির রুমে ঢুকে আদিত্যর পিলে চমকে উঠে।
মাথায় কাটা দাগ, গালে কেটেছে। বাম হাতের কনুইয়ে কাচের টুকরো গেথে আছে। নাকের ভিতরে রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে। হাটুর অংশে সালোয়ার রক্তে লাল আরো পুরো শরীরে মারের দাগ৷ অজ্ঞান হয়ে আছে।
আয়ান আদিত্য দুজনে মিলে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে শুয়িয়ে দিলো। আদিত্য ডান হাতে ধরে বসেছিলো। বা হাতে স্যালাইন চলছে৷
ঘড়ির কাটায় বারোটা।
ফুলগুলো এগিয়ে দিয়ে ঘুমন্ত অর্থির কপালে চুমু দিয়ে উইশ করলো
– শুভ জন্মদিন আমার পিচ্চি আপু৷ দেখিস তোর এই ছোট ভাই তোর সব কষ্ট দূর করে দিবে।
.
.
চলবে।
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-১৫

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১৫

নিশি কে দেখে অর্থি বেশ খানিকটা চমকে যায়। চিৎকার করে বলে উঠে
– এই মেয়ে, এই তুমি এখানে? এভাবে কি করছো?
.
অর্থির গলার স্বর শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে রুপ।
নিশিও অবাক।
হয়তো কেউ কাউকে এভাবে আশা করেনি।
অর্থির হাত পা কাপছে। সব কিছু তার কাছে জলের মতো পরিস্কার।
– কতদিন যাবত চলছে এসব? কি হলো বলো? আর তোমার লজ্জা করে না এসব করতে.?
.
রুপের দিকে ঘুরে বলে
– তোমার শরীরে এত ঝাজ? আমি কি মরে গেছিলাম? এই তোমার ব্যস্ততা?
.
কিছুটা তর্কবির্তক হয় অর্থি নিশির সাথে।
অর্থির মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায়। রুপ চুপচাপ। মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
অর্থি- অন্যের স্বামীর দিকে নজর দিতে তোমার বুক কাপলো না?
নিশি- অর্থি, প্লিজ বি ইন ইউর লিমিটস! ভুলে যেও না তুমি শুধুই রুপের আশ্রিতা
– আমি রুপের আশ্রিতা নই! স্ত্রী! ইউ গট দ্যাট? স্ত্রী থাকতে যে নারী অন্যের স্বামীর সাথে থাকে তাকে রক্ষীতা বলে৷ আর তুমি তাই।
.
.
রুপ কথাটা শেষ হওয়ার আগেই অর্থিকে সজোরে থাপ্পড় মারে। সামলাতে না পেরে অর্থি নিচে বসে পড়ে।
রুপ বুঝে না। কার কথায় ওর রাগ হচ্ছে। নিশি অর্থিকে আশ্রিতা বলেছে এতে না কি অর্থি নিশি কে রক্ষীতা বলেছে এতে।
রুপের প্রচন্ড রাগ হয়৷ অর্থি কে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিশি টাওয়াল ছেড়ে ততক্ষণে কাপড় পড়ে বেরিয়ে এসে বলে
– দেখলে তো কার স্থান কোথায়? আশ্রিতা আশ্রিতাই হয় স্ত্রী হতে পারে না।
বলেই নিশি চলে যায়।
অর্থির কষ্ট হচ্ছে খুব। ভেসে উঠছে তিন বছর আগের সেই স্মৃতি গুলো।
.
.
আদিত্য চলে যাওয়ার পর অর্থির একা একা লাগতো। সব জায়গায় আদিত্যর স্পর্শ পেতো।
ছেলেটা সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে গেছে। নিয়ম করে বাসার সামনে ফুসকাওয়ালা মামা আসে। ফুলওয়ালী মেয়েটা ফুল দেয়। আরো কত কি।
বেশ ভালোই চলছিলো দিন৷ সারাদিন ক্লাস, এসাইনমেন্ট রাতে আদিত্যর সাথে ফোনে কথা, কথা শেষে ওর বিছানায় গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়া।
.
বাসায় ফিরছিলো অর্থি। তখন জানতে পারে ওদের সিনিয়র রুপ ভাইয়ার মা,বাবা দুই জনেই এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। মন খারাপ লাগে ভাইয়ার জন্য।
বাসায় ফিরে আসিতে নিলেই সব বান্ধবীরা বলে যাবে। ও রাজি হয় না। পরে সবাই বলে ওদের বাসায় যাওয়ার সময় গলির প্রথম বাসাটাই রুপের বাসা।
.
অর্থি ভাবে একই রাস্তায় তাহলে একটু যাওয়াই যায়।
বাসায় গিয়ে দেখে লাশ দাফন হয়ে গেছে। রুপ চুপচাপ বসে আছে। বাসায় আর কেউ নেই। ওরা কিছুক্ষণ বসে চলে আসে। কিছুদূর গিয়ে দেখে অর্থি এসাইনমেন্ট ভুলে রেখে এসেছে।
নিতে গিয়ে দেখে রুপ বসেই আছে। কাধে স্পর্শ করতেই রুপ জড়িয়ে ধরে অর্থির বুকে মাথা রেখে প্রচন্ড কান্না করে।
এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ অর্থি জানে না৷ আদিত্যদা জানলে আমাকে মেরে ফেলবে কিন্তু রুপ যেনো ভরসার জায়গা খুজে পেয়েছিলো।
.
সেদিনের মতো অর্থি চলে আসে। ভয়ে ভয়ে সব টা আদিত্য কে বললে আদিত্য কিছু বলে না।
.
.
তিন দিন পরের কথা। অর্থি আদিত্যর রুমে বসে ওদের কিছু ছবি দেখছিলো। হঠাৎ কল আসে। নাম্বার দেখে মনে হয় কানাডার কোড।
রিসিভ করতেই ভেসে উঠে নিশির গলা।
নিশি অর্থির সিনিয়র।
বার বার অনুরোধ করতে থাকে সে যেনো একবার গিয়ে রুপ কে দেখে আসে।
নিশি তখন কেবল কয়েকদিন হলো কানাডা স্কলারশিপ নিয়ে গেছে।
তখন রাত বারোটা। অর্থি রাজি হয় না। কিন্তু নিশির কথাও ফেলে না।
আদিত্যর শাল টা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছিলো।
.
ঈশ সেরাতে যদি না বের হতো! তাহলে হয়তো এমন হতো না।
.
রুপের বাসায় গিয়ে দেখে রুপের খুব জ্বর। যখন আদিত্য কে কল দিবে তখন খেয়াল হলো ফোন আদিত্যর রুমেই রেখে এসেছে৷
তাই নিজে যা পারলো করলো। রুপের জ্বর কিছুটা কমে এলো। এদিকে সকালের সূর্য উঠে গেছে।
অর্থি চলে যাবে এমন সময় হলো আরেক বিপত্তি। রুপ বমি করে সব নষ্ট করে দিলো।
রুপ কে পরিস্কার করে নিজে রুপের মায়ের এক শাড়ি পড়ে রুপের ফোন হাতে নিয়ে বাহিরে এলো।
কিছুতেই কারো নাম্বার মনে করতে পারছিলো না। শুধু আদিত্যর নাম্বার মনে ছিলো। বাসাও কাছে কিন্তু রুপ কে রেখেও যেতে পারছিলো না।
আদিত্যর নাম্বারে কল দিতেই রুশা ফোন ধরলো।
সবটা বলে অর্থি জোড়ে শ্বাস নিলো। যাক বাবা কিছুক্ষণ পর আসছে তাহলে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত হলো। এলো না।
ডক্টর বলে গেলো রাতে জ্বর বাড়তে পারে। সাথে কাউকে থাকতে।
রুপের আত্নীয় মানুষ কাউকে অর্থি চিনে না। তাই বাধ্য হলো থাকতে।
পরদিন রুপের জ্বর কমতেই অর্থি বাসায় ফিরে এলো।
অর্থির বাবা মা কি মনে করে যে তাকে ঘরেই ঢুকতে দিলো না কে জানে? ওর কথা শুনলোই না। দৌড়ে গিয়ে আদিত্য কে কল দিতেই আদিত্য তাকে অনেক কথাই বলেছিলো – শেষ কথাটা ছিলো
– আর যাই হোক! বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কে কোন অপবিত্র মেয়েকে মেনে নেওয়া যায় না।
.
সেদিন রুশাই ছিলো শেষ ভরসা। কিন্তু ও বলেনি কিছুই। এককান দুই কান করে কথাটা ছড়িয়ে যায়।
রুপ শুনে এগিয়ে যায় সব টা বলতে যে তাদের ভুল হচ্ছে।
কিন্তু গিয়ে দেখে অর্থির মা ওর হাত ধরে টেনে বাহির করে দিচ্ছে আর বলছে
– তুই যেমন আমার বুক খালি করলি আল্লাহ তোর সন্তান তোর থেকে কেড়ে নিবো।
.
.
রুপের প্রচন্ড রাগ হয়৷ অর্থির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে৷
তিনদিন অর্থি রুম থেকে বের হয়নি। রুপ জোর করেনি। সব টা তার জন্যই তো হলো।
আদিত্য কে অনেক কল করে লাভ হয়না।
রুপ নিজ থেকেই অর্থির দায়িত্ব নেয়। কারণ ততদিনে কথাটা অন্য দিকে মোড় নিয়ে নেয়।
.
.
ছয়মাস পর অর্থি রুপের বিয়ে হয়। ভালোই চলছিলো। রুপ অধিকার চায়নি না অর্থি। কিন্তু একটা সময় মনে হয় যে দুজন দুজনকে পরিপূর্ণ করার সামর্থ্য রাখে। ঠিক তখন এগিয়ে যায় সম্পর্ক।
একদিন অর্থি নিজেকে আশ্রিতা বলেছিলো বলে রুপ না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো!
আর আজ?
অর্থির বেশ জানতে ইচ্ছে করে রুশা কেনো এমন করেছিলো। আর মা বাবা না হয় বাদ আদিত্যদা যদি কথাগুলো শুনতো …..
.
চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা লাগে। গোংরানির আওয়াজ টা ধীরেধীরে কমে যাচ্ছে। অর্থির বড্ড বেশি ইচ্ছে হচ্ছে রুপ কে তার দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিতে৷
.
.
চলবে
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-১৪

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১৪
.
আদিত্যর এই কয়েকটা শব্দ যেনো বিষের মতো লাগলো অর্থির।
চিৎকার করে কাদতে লাগলো আর বলছিলো এর মানে কি? আরশ কে তার চাই। তার সন্তান তার বুক খালি করে এভাবে মারা যেতে পারে না।
কম বেশি সবাই জানতো আরশ বাঁঁচবে না।
রুপ কে সেদিন বুঝিয়েছিলো রুপ বলেছিলো দেশের বাহিরে নিয়ে যাবে। কিন্তু কোন লাভ হতো না।
বাচ্চার পাকস্থলী,হৃদপিণ্ড এতটা সক্রিয় ছিলো না।
প্রথমত ওরা টুইন বেবি ছিলো যার ফলে ওদের কারো গ্রোথ ঠিক মতো হয়নি৷ দ্বিতীয়ত প্রেগ্ন্যাসির সময় কিছু কমপ্লিকেশন + সঠিক পরিমানের পুষ্টি না থাকায় আজ এই পরিনতি।
.
অর্থি এক সময় আদিত্যর বুকের শার্ট খামছে ধরে শুধু আকুতি করতে থাকে
– আদিত্যদা প্লিজ আমার আরশ কে ফিরিয়ে দাও। তুমি যা বলবে আমি করবো। কোন দিন তোমার সামনে আসবো না।আমি মরে গেলেও আসবো না প্লিজ এনে দাও।
.
কিছুক্ষণ পর দেখে রুপ কে। সেখানে গিয়েও পাগলের প্রলাপ শুরু করে।
– শুনো না! আমি প্রমিজ ঠিক মতো খাবার খাবো। সব খাবো। মাছ,দুধ,ডিম সব। যা বলবে সব শুনবো। প্লিজ আমার সন্তান এনে দাও।
.
.
সবাই অর্থি কে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলো তখন অর্থির মা এসে অর্থির কাধে হাত রাখে।
অর্থি যেনো এবার আরো ক্ষেপে উঠে।
মা কে জড়িয়ে ধরে বলে
-মা!মা! তুমি কেনো অভিশাপ দিলা? আবার দুই সন্তান কে কেড়ে নিলা? আমি কি ক্ষতি করছিলাম তোমার? আল্লাহ আমার দুই সন্তান কেড়ে নিলো, তোমার অভিশাপে? মা আরেক টা অভিশাপ দেও না। দাও না মা…..
বলো না… আল্লাহ কে আমাকেও নিয়ে যেতে। আমিও যেনো মরে যাই৷ মা
বলো না গো….
.
.
অর্থি মা কে ছেড়ে উঠে দাড়াতেই জ্ঞান হারায়।। রুপ, আদিত্য দুজনেই দৌড়ে গিয়ে ধরতেই আদিত্যর বাম হাতদিয়ে অর্থি কে জড়িয়ে তুলে নেয়।
আদিত্য এবার আর রুপ কে কিছু বলে না৷ চুপচাপ গাড়িতে করে বাসায় নিয়ে আসে।
.

.আরশ কে কবর দেওয়া হয়েছে অরুনীমার পাশেই।
এবার অর্থি কে নিয়ে যাওয়ার সাহস পায়নি অর্থির বাবা৷
কিভাবেই পাবে? তার ছোট্ট মেয়েটার জীবনে কি সব হচ্ছে?
আল্লাহ তুমি একটু রহমত নাজিল করো।
বুকের বাম পাশে প্রচন্ডরকম ব্যথা হয় ইদানীং। তবুও মালুম করছে না সে।
.
.
আদিত্যর রাত গুলো এখন সিগারেটে কেটে যায়।
রাত গুলো যখন গভীর হয় অর্থির রুম থেকে ভেসে আসে চাপা চিৎকার।আয়ান বোনের মুখের দিকে তাকাতে পারে না। খুব কষ্ট হয় কিছু খাওয়াতে। তবুও তো খেতে হবে? রুপ কখনো আসে, কখনো আসেনা। বড্ড ব্যস্ত। কোথাও না কোথাও সে বাচ্চাদের মৃত্যুর জন্য অর্থি কে মানে। নিশির কথা গুলো বড্ড তাকে ভাবায়। মা চাইলে সব পারে তবে কেনো অর্থি নিজের ভুলের জন্য ওর সন্তানদের মেরে ফেললো? কি হতো যদি একটু কেয়ারফুল থাকতো?
এসব ভাবলে মাঝেমধ্যে খুব রাগ হয় রুপের। আবার মনে হয় জন্ম,মৃত্যু সব তো আল্লাহর হাতেই।
মেয়েটার দিকে তাকানো যায় না। চোখের নিচে কালি,মুখ শুকিয়ে গেছে। চুল উস্কশুস্ক।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো ১ মাস।
আদিত্য, রুশার বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে।
আদিত্যর বিয়ের কথা মনে হলে অর্থি না চাইতেও
বড্ড কষ্ট হয়।
রুশা আপুর ভাগ্য অনেক ভালো! সে আদিত্য দা কে পেয়েছে। রুশা আপুর তো অর্থির সব পছন্দ হতো তাই হয়তো আদিত্য দা কেও পছন্দ হয়েছে।
যাক ভালোই হলো, আদিত্য দা এক পবিত্র মেয়ে কে বিয়ে করবে, সংসার করবে। অর্থির মতো অপবিত্র মেয়েকে না৷

.
অর্থির বাসায় বড্ড বিরক্ত লাগছে। তাই চুপচাপ নিজের বাসায় চলে এলো৷ আসার সময় মা কে বলে এসেছে।
আয়ান, আদিত্য কারো মুখোমুখি হয়নি। কারণ এরা আসতে দিতো না।
বাসা ভিতর থেকে লক। অর্থির কাছে চাবি ছিলো।
আজ প্রায় চার মাস পর বাসায় এলো অর্থি।
বড্ড অচেনা লাগছে। হয়তো অনেকদিন পর এলো তাই এমন লাগছে।
বেখেয়ালি ভাবে হাটতেই পায়ের সাথে কারো জুতো লাগে। মেয়ে জুতো। কিন্তু এ জুতো তো অর্থির নয়।
দ্রুত পায়ে বেডরুমের দিকে গিয়ে চোখ আটকে যায়।
বিছানায় রুপ শুয়ে আছে। আর ওয়াশরুমে কেউ শাওয়ার নিচ্ছে। অবশ্যই সে কেউ মেয়ে।
কারণ বাহিরে থেকে কিছুটা বুঝা যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর অর্থি কে অবাক করে দিয়ে টাওয়াল প্যাচিয়ে বেরিয়ে এলো রুপের বেস্ট ফ্রেন্ড নিশি।
.
.
চলবে।
.
Sabiya moon