Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1865



বালির সংসার পর্ব-১৩

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১৩
.
সব কথা শোনার পর রুপের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে।
দম টা বন্ধ হয়ে আসছে।
মনে হচ্ছে কে যেনো ধারালো ছুড়ি দিয়ে অনবরত তার গলায় চালিয়ে দিচ্ছে।
নিজেকে কিছুটা শান্ত করে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো…
.
– দেশের বাহিরে নিয়ে যেতে পারি! সিংগাপুর! অথবা লন্ডন?
পুরো ঘর জুড়ে নিরবতা। অর্থির বাবা মা, আয়ান, আদিত্য, রুপ আর তিন জন লোক।
নীরবতা ভেংগে বয়স্ক একজন বলে উঠলো
– মিঃ রুপ! নিজেকে সামলান। আপনার সামনে বাংলাদেশের বেস্ট কার্ডিওলজিস্ট আদিত্য আহমেদ রয়েছে। পরীক্ষাটি বার বার করা হয়েছে।
কিন্তু রিপোর্ট এক৷
.
রুপ কি বলবে বুঝতে পারছে না। অর্থির বাবা চুপ হয়ে আছে, মা কাদঁছে। আয়ান কি করবে বুঝছে না আর আদিত্য? তার হাতে কিছুই নেই।
তিন জন লোক ডক্টর। আদিত্যের হয়তো রিপোর্ট বুঝতে ভুল হবে সবার তো হবে না।
.
বয়স্ক ডক্টর বেরিয়ে যাওয়ার সময় আদিত্যর কাধে হাত রেখে বললো
– আদিত্য! বাচ্চাকে মায়ের কাছে দিয়ে দাও। ক্ষত গভীর হওয়ার আগেই মলম দিতে হয়। মায়ের ভালোবাসায় মিরাক্কেল হলেও তো হতে পারে।
.
.
অর্থি বাচ্চার কান্নার স্বরে জেগে উঠে।
তাকিয়ে দেখে রুপ ছেলে কে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে বুকে দিতে বলে।
রুপ তাই দেয়
– আসসালামু আলাইকুম! মাশাল্লাহ! আল্লাহ তোমাকে দুনিয়ার সব সুখ পায়ে এনে দিক। যাতে তুমি এগিয়ে যেতে পারো ইসলামের পথে।
আল্লাহ তোমাকে আমার মাথার চুলের সমান হায়াত দিক। তোমার এই ছোট্ট ছোট্ট হাত পা দিয়ে পাড়িয়ে তুমি যেনো আমার কবরে মাটি দিতে পার।
.

.
অর্থির এসব কথা শুনে রুপ নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। কিভাবে বলবে সে যে তাদের হয়তো সন্তান বাঁঁচবে না।
কি করে বলবে যে তাদের ছেলের শরীরের ভিতরের অংশ গুলো যে ঠিক ভাবে তৈরি হয়নি। যে কোন সময় মারা যাবে তাদের ছেলে।
.
খুব কষ্টে কান্না চেপে রুম থেকে বেরিয়ে এলো রুপ।
আজকে আসার সময় রুপের সাথে নিশি এসেছিলো। গেস্ট রুমে আছে। রুপ দৌড়ে গিয়ে নিশি কে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাদতে থাকে।
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো ২ মাস।
আদিত্য অর্থির রুমে যায় না। বাচ্চা যখন দেখার হয় নার্স কে দিয়ে আনিয়ে নেয়।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আলাদা মায়া জন্মে গেছে।
কোলে নিতেই অনুভূতি হয় ভিন্ন। অর্থির অংশ যে সে। যদি আদিত্য একটু মাথা ঠান্ডা রাখতো তাহলে হয়তো আজ আদিত্য অর্থি বেবি প্ল্যান করতো। এসব ভাবতেই আদিত্যর খারাপ লাগে।
.
রুপ- আদিত্য ভাইয়া! প্লিজ একটু রানী সাহেবার কাছে আসবেন? আসলে অর্থির মা,বাবা,আয়ান কেউ নেই। আমার একটু কাজ পড়ে গেছে জরুরি আপনি যদি…..
.
অনিচ্ছাসত্ত্বেও আদিত্য কে যেতে হয়।
অর্থি বাবুকে তেল দিয়ে দিচ্ছিলো। আদিত্য কে দেখে চমকে উঠে।
আদিত্য আরো বেশি কষ্ট পায় কারণ এই মেয়েটা তার কাছেই নিজেকে সব থেকে নিরাপদ মনে করতো। আর আজ……
.
আদিত্য – নাম কি রেখেছিস বাবুর?
অর্থি- আরশ
আদিত্য- আরশ?
অর্থ – আদিত্য -আ, রুপের – র আর শাওন – শ।
আদিত্য – শাওন? কে?
অর্থি- আয়ানের আরেক নাম শাওন। বিয়ে করছো কবে?
আদিত্য – করবো না। কোন সমস্যা তোর?
অর্থি- রুশা আপু ভালো মেয়ে। পবিত্র মেয়ে। সংসার করার মতো মেয়ে। রাত বিরাতে তাকে অন্যের বুকে পাওয়া যায় না।
বিয়ে করে নাও সুখী হবে।
.
আদিত্য কিছু বলার আগে আয়ান চলে আসে। তিনজনে মিলে ভালোই আড্ডা দিতে থাকে। আদিত্য, অর্থি আরশের আনসেন্সরড কিছু ছবি তুলে আয়ান।
ইদানীং রুপ নিশির সাথে ভালো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে। বাচ্চাদের জন্য এমন একটা মেডিসিন রুপ আর রুপের মেডিসিন টিম বানাতে চাচ্ছে যা থাকলে প্রিমেচিউর বেবি অথবা টুইন বেবি জন্ম নিলে এদের যে কমপ্লিকেশন হয় এগুলো যাতে না হয়৷
নিশিও মাঝে মধ্যে বাসায় আসে। বেশ ভালো আড্ডা জমে।
রুপ এদিকে ধীরে ধীরে নিশির নেশায় আসক্ত হচ্ছে।
নিশির ছোট ছোট আবদার গুলো পাগলামি গুলো নিয়ে রুপের বেশ ভালোই কাটছিলো। আর অর্থির ওর বাচ্চা কে নিয়ে।
সামনের মাসে আদিত্য, রুশার বিয়ে।
রুশা খুব খুশি। কিন্তু আদিত্য?
সে নিজের রাগ, জেদের জন্য যে কাজ করেছিলো তার জন্য এখনো কষ্ট পায়। হয়তো মুহূর্ত ছিলো অমূল্য কিন্তু অনুতাপ যে অসহ্য।
.
.
একদিন সন্ধ্যে বেলায় অর্থির রুমে ঠিক তেমন আড্ডা জমে উঠেছিলো। আদিত্য কে রুশা জোর করেই নিয়ে আসে।
অর্থি আরশ কে ফিডিং করার জন্য উঠে যেতে চাইলে রুপ বাধা দেয়।
তাই আদিত্য, রুপ বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরাতেই অর্থি চিৎকার করে উঠে।
আদিত্যর বুঝতে বাকী রইলো না।
দৌড়ে গিয়ে বাচ্চা কে কোলে নেয়।
আরশের খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। নিশি
রুপ, আদিত্য দৌড়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়।
পিছনের গাড়িতে আসে অর্থি, আয়ান, রুশা আর বাকী সবাই।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর অর্থির বাবা আদিত্য কে জিজ্ঞেস করতেই আদিত্য বলে
– আংকেল he is no more… He expired..
.
.
চলবে…..
.
.

Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-১২

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১২
.
রুপ কে দেখে অর্থির কলিজায় পানি ফিরে এলো৷
আদিত্যর এমন ব্যবহারে অর্থি মোটেও অভ্যস্ত নয়৷
চিন্তা করতেই ভয় লাগছে। এই কি সেই আদিত্য? ভাবতেই ঢুকরে কান্না করে উঠে অর্থি।
রুপ কাছে এসে বসতেই অর্থির কান্নার বেগ বেড়ে যায়।
অর্থির হাত দুটো কাপছে। রুপ খুব যত্ন করে জড়িয়ে নিলো।
হালকা ভাবে জড়িয়ে রুপ অর্থির মাথায় হাত রেখে বলে
– পাগলি! কি হয়েছে? কাদছো কেনো?
অর্থির গলায় মনে হচ্ছে কেউ অদৃশ্য হাত দিয়ে চেপে ধরেছে।
খুব কষ্ট হচ্ছিলো। ও যে রুপ কে ঠকিয়েছে। ইচ্ছে করে না হলেও তো। এখন ওর উপর শুধুই রুপের অধিকার।
আদিত্যদা অতীত। সে নিজে ছেড়েছিলো অর্থি কে।
আজ কেনো অধিকার দেখাতে আসছে।
যেখানে অধিকার নেই সেখানে কেনো জোড় করছে।
.
কিছুটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পর অর্থি কিছুটা শান্ত হয়।
রুপ ছাড়ে না। চুপচাপ ধরেই রাখে।
অর্থি আধো আধো গলায় বলে
– ক্ষিধে পেয়েছে।
এবার রুপের হাসি পেলো।
রুপ- এই জন্যই বুঝি কাদছো? ঠিক সেদিনের মতো?
অর্থি- কোন দিনের মতো?
রুপ- কন্সিভ করার ২৩ দিন পর রাতে ফুসকা খাওয়ার জন্য কেদেছিলে মনে আছে? রাত দুটোর সময় ফুসকা এনে দিতে হয়েছিলো।
অর্থি- ও এখন খোটা দেওয়া হচ্ছে?
রপ- রানী সাহেবা খোটা দিতে পারি? তাহলে তো গর্দান যাবে।
.
অর্থি এবার হাসলো। হুম অর্থি এই মানুষ টাকে ভালোবাসে। না! এর ভালোবাসা,দায়িত্ব, কেয়ার কে ভালোবাসে।
সে যে অতীত হাতড়ে মরতে চায় না।
স্বামী সন্তান নিয়ে বাঁচতে চায়।
.
.
রুমে এসে আদিত্য কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিলো না।
রাগ,জেদের বসে সে এসব কি করেছে?
পিচ্চির সাথে এতটা খারাপ ব্যবহার?
সেই মেয়েটাকে জোড় করে অধিকার খাটিয়েছে যে মেয়ে আদিত্য কে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করে?
কতই তো আদিত্যর রুমে এসে ঘুমিয়ে থাকতো মেয়েটা। কত ঝড়ের রাত অর্থি আদিত্যর বুকে কাটিয়েছে। তখন আদিত্যর ভিতরে বাহিরে সমান তালে ঝড় বয়ে গেছে।
কই তখন তো আদিত্য এমন করেনি?
নিজের প্রতি বড্ড ঘেন্না হচ্ছে। কেনো পারলো আদিত্য নিজের ভিতরের জানোয়ার টা কে আটকে রাখতে? জানোয়ার? হ্যাঁ! তাই।
কোন মুখে যাবে অর্থির সামনে?
অর্থির কান্না দেখে আদিত্য বেশ বুঝে গিয়েছিলো যে আদিত্যর কাজের জন্যই অর্থি কাদছিলো।
যে আদিত্য সব সময় চাইতো অর্থি কে পবিত্র রাখতে আজকে তার জেদ, রাগ, অপেক্ষা নিয়ে সে নিজেই কি অর্থি কে অপবিত্র করে দিলো?
তার স্পর্শ যে অর্থি কে দগ্ধ করেছে খুব ভালোভাবে সে বুঝছিলো।
সব টা ওই রুশার জন্য। ওর কথায় অর্থি নার্ভাস হয়ে গেছিলো আর অর্থির কথায় আদিত্যর মাথা।
নিজের অনুশোচনা বোধ তাকে এতটাই শেষ করছিলো যে নিজে দেয়ালে কয়েক বার হাত বাড়ি মারে।
গ্রিলে লেগে হাত বেশ নীল হয়ে গেছে।
.
একের পর এক সিগারেট শেষ করছে আদিত্য।
সে নিজেও বুঝছে না অর্থির সাথে এখন কি করা উচিৎ?
একটু অবিশ্বাস তার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে।
কিন্তু সে যে অর্থি কে রুপের সাথেও দেখতে পারছে না।
.
.
ফ্ল্যাটে এসে ফোন টা জুড়ে ছুড়ে মারলো রুশা। কি কি না করেছে আদিত্য কে পাওয়ার জন্য।
কিন্তু আদিত্য ফিরেও তাকায়নি। শুধু অর্থি, অর্থি আর অর্থি। অসহ্য লাগছে। এত কস্টের পর আদিত্য কে সে পেতে যাচ্ছিলো আবার সেই মেয়েই।
না! আগে বাড়ি থেকে সম্পত্তি থেকে আদিত্যর জীবন থেকে সরিয়েছিলো এবার দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিবে।
.
.
রুপ যেনো বারবার মরে যায় অর্থির ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে।
কিছু তো আছে যে মেয়েটাকে তার দিকে টানে।
এমন সময় নিশি এসে ঢুকে। হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে যায়।
.
নিশি- একটু আদর কর না!
রুপ- মাথা খারাপ তোর? তুই এখানে কেনো?
নিশি- ভালোবাসতে এসেছি। জড়িয়ে ধর আমি চলে যাবো। না হলে অর্থি উঠলে কিন্তু দোষ তোর।
.
রুপ কোন উপায় না দেখে নিশি কে জড়িয়ে ধরে।
এই মেয়েটা কেনো ওকে এত ভালোবাসে রুপ বুঝে না। ওর কোন কমতি নেই। তবুও কেনো বারবার অপমান হতেই ফিরে আসে?
নিজের অজান্তেই কপালে চুমু দেয়।
নিশি- ঠোঁটে দিলে কি ফুরিয়ে যাবে?
কথা বলে এক সেকেন্ড দেরি করে না সে।
.
.
আদিত্য রকিং চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। শেষ কথাটা শুনে চমকে উঠে।
.
কিছুক্ষণ আগে তো সে অর্থির ঠোঁট ছুয়েছিলো বলে এত কান্না করলো আর এখন রুপ কে বলছে?
এতটাই পর সে? হুম্ম। এখন সে সত্যি পর।
.
কিছুক্ষণ পর আদিত্য এসে অর্থির রুমে নক করে। ইচ্ছে করে করেনি। বাধ্য হয়েই করেছে।
.
দরজায় নক শুনে রুপ নিশিকে ছাড়িয়ে নেয়।
দরজা খুলে দেখে আদিত্য। ততক্ষণে নিশি বারান্দায় সরে গিয়েছে।
আদিত্যর কথায় অর্থি জেগে উঠে। রুপ বেরিয়ে যেতে নিয়ে ফিরে এসে অর্থির কপালে চুমু দেয়।
অর্থিকে আবার ঘুমোতে বলে। মেয়েটা এতটাই দুর্বল যে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
.
আদিত্য – আমাকে লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। আপনি….
রুপ- আই নেভার কিসড হার লিপস বিকজ?
আদিত্য – মানে?
রুপ- স্ত্রীর অধিকার দিলেও ওই ঠোঁটের অধিকার নেই। চাইয়ো না। কারণ রানী সাহেবা বলে ভালোবাসার বিশুদ্ধ প্রকাশ কপালের চুমুতেই হয়।
.
আদিত্যর মাথায় শুধু ঘুরতে থাকে তাহলে কিছুক্ষণ আগে যা শুনলো তা কি? কিছু দূর এগিয়ে যেতেই দেখলো কেউ একজন দ্রুত পায়ে অর্থির রুম থেকে গেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছে।
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon.

বালির সংসার পর্ব-১১

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১১
.
.
কিরে অর্থি? আদিত্যদার কোলে উঠার অভ্যেস টা এখনো গেলো না? রুপ ভাইয়াকে বলতি কোলে নিতে? এবার তো আমার স্বামীকে ছাড়। এই সিড়ি বেয়ে উঠতে মরে যাবি না।
.
.
আদিত্যর বুক থেকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে রুশা কথাগুলো বলছে। ওর খালাতো বোন।
স্বামী? রুশার স্বামী? কথাটা শুনে আদিত্যর বুকের শার্ট টা খুব জোরে খামছে ধরেছে।
আদিত্য দা বিয়ে করে নিয়েছে? অহ্!
.
রুশা- কি চিন্তা করিস?
অর্থি- কিছুনা। হুম যেতে পারবো।
রুশা- তাহলে যা! আদিত্য দা ওকে নামিয়ে দাও।
অর্থি- আমাকে নামাও আদিত্য দা। আমি যেতে পারবো।
.
এতক্ষণ অর্থি আদিত্যর বুকের সাথে মিশে ছিলো। তাই বুঝেনি। চোখ তুলে তাকাতেই দেখে আদিত্যর চোখ লাল হয়ে গেছে। কোন কারণে সে প্রচন্ডরকম রেগে আছে।
রুশার কথার পাত্তা না দিয়ে আদিত্য অর্থি কে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
আর অর্থি বলছে
– আমায় নামাও আদিত্য দা। আমি যেতে পারবো। আর নিজের বউয়ের সামনে অন্য মেয়েকে কোলে নেওয়া ঠিক না। তাছাড়া এটা ভালো দেখায় না।
বিয়ে করেছো বলোনি তো। যাই হোক তোমরা খুব সুখী হবে। অনন্ত পবিত্র মেয়েকে পেয়েছো। আর যাই হোক বিয়ে নামক সম্পর্কে তো অপবিত্র মেয়ে কে মেনে নেওয়া যায় না।
.
শেষের কথায় আদিত্য থমকে দাঁড়ায়। বেশ বুঝতে পারে আদিত্যর কথা ওকেই ফিরিয়ে দিলো।
আদিত্য রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। অর্থির হাত পা কাপছে। এটা নতুন কিছু না। হুটহাট কোন শকিং খবর পেলে মেয়েটা এমন করে।
আরো কিছু বলতে নিলেই
আদিত্য সুযোগ না দিয়ে ঠোঁট রাখে অর্থির দুই ঠোঁটে।
সারা শরীর কাপুনি দিয়ে উঠে অর্থির। কিন্তু আদিত্য ছাড়ে না। অর্থি নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই পারে না।কিভাবে পারবে? ও তো এখনো আদিত্যর কোলেই আছে।
.
বেশ খানিকটা সময় পার হয়ে গেলেও অর্থি কে ছাড়ার নাম নেই আদিত্যর।
মনে হচ্ছে কত জনমের পিপাসা ছিলো। আজ সব শোধ করে নিচ্ছে সে।
.
দরজায় বেশ খানিকক্ষণ যাবত ধরে কড়া নাড়ছে রুশা।
সেদিকে কোন খেয়াল নেই।
আদিত্য অর্থিকে বিছানায় নামিয়ে দিতেই মুখ ডুবালো ওর গলায়। কিছুক্ষণ পর অর্থি আদিত্য কে থামিয়ে কাপা কাপা স্বরে বলে
– আমায় এভাবে শেষ করে দিও না। আদিত্য দা! প্লিজ! দরজা খুলো। তোমার বউ দরজার বাহিরে।
.
আদিত্যর চোখ আবার লাল হয়ে গেলো। অর্থি কে ছেড়ে দরজা খুলেই দেখে নার্স, রুশা দাঁড়িয়ে আছে।
নার্স কে উদ্দেশ্য করে আদিত্য বলে
– ম্যাম কে ফ্রেশ হতে সাহায্য করুন। গোসল করাবেন না। শুধু শ্যাম্পু করে দিবেন চুলে।
.
.
রুশার হাত ধরে নিয়ে সাথে সাথে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আদিত্য।
– আমি তোর স্বামী? আমি তোর স্বামী না! বিয়ে ছাড়া অন্য জন কে স্বামী বলতে বাধে না? আর বলেছি না আদিত্য দা বলে ডাকবি না। ওই ডাক শুধুই অর্থির। তোর সাথে শুধু আমার বিয়ের কথা হচ্ছে। বিয়ে না।
লিমিট ক্রসের চেষ্টাও করবি না। তাহলে খুন করতে আমার হাত কাপবে না।
.
.
রুশাকে কথাগুলো বলেই আদিত্য নিজের রুমে চলে গেলো। লম্বা শাওয়ার নিয়ে ফিরে এসে সিগারেট ধরাতেই নার্স এসে বললো
– স্যার! ম্যাম বেবির কথা জিজ্ঞেস করছে। কিছু খায়নি। মেডিসিন দিতে হবে। যদি একটু…….
.
.
আদিত্য রুমে এসে দেখে অর্থি শুয়ে আছে।
নার্সকে বলে, আপনি নিচে বসুন। আমি দেখছি।
.
অর্থি হালকা ঘুমে রয়েছে। নিজের উপর হালকা ভর অনুভব করে তাকানোর আগেই অর্থির দুই ঠোঁট আদিত্যর দখলে।
পৃথিবীর সব উপেক্ষা করার শক্তি থাকলেও আদিত্য কে বাধা দেওয়ার শক্তি কেনো সে পাচ্ছে না? শরীর ভালো না। আর রুপ কে সে ঠকাচ্ছে৷ খুব চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করে।নিজের উপর ঘেন্না হয় অর্থির। আদিত্য অতীত,রুপ তো বর্তমান। আদিত্য দা তো এমন ছিলো না। কেনো এমন করছে?
.
.
আদিত্যর ঠোঁট তখন অর্থির গলায়। কামিজের কাটার ভিতর দিয়ে কোমরে চাপ দিতেই অর্থি চিৎকার দিয়ে উঠে।
আদিত্য হুশে ফিরে। কি করছিলো সে?
দ্রুত উঠে বসে উপর থেকে কম্বল সরিয়ে নিতে নিতে বলে
– বাবু আমি সত্যি! খেয়াল ছিলো না। ব্যথা পাইছো তুমি? ড্যামেড! কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো। আমার একটু খেয়াল ছিলো না।
কি করবো? তোকে দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।
তিন বছর পর পেয়েছি।
.
– আমি ঠিক আছি।
.
এবার আদিত্য এসে অর্থির পাশে বসে।
কম্বল টেনে দিতে গিয়ে দেখে অর্থির কামিজ অনেকটা ভেজা।
ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
– চুল ঠিক করে মুছিস নি? কামিজ ভিজে গেছে।
– আদিত্যদা! আমার ছেলে কোথায়? ওকে এনে দাও। ওর খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

.
আদিত্য কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। মা হওয়া সত্যি খুব কস্টের। কত হরমোনের হেরফের হয়! ছেলের কথা কি বলবে আদিত্য? বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠছে। পরীটা যখন জানবে তখন হয়তো মরেই যাবে এবার।
.
ঘোর কাটে গাড়ির হর্নে। রুপ এসেছে বুঝতে অসুবিধা হয় না।
আদিত্য দ্রুত আলমারী থেকে লম্বা কটি এনে অর্থি কে উঠিয়ে পড়িয়ে দেয়।
কোমর অবধি কম্বল দিয়ে অর্থির মাথার চুল বেধে মাথায় কাপড় দিয়ে রাখে।
.
কি অদ্ভুত! অর্থি রুপের স্ত্রী। যার উপর সব অধিকার রুপের কিন্তু আদিত্য চাইছেনা রুপ অর্থি কে অন্য অবস্থায় দেখুক। হায়রে ভালোবাসা। হায়রে পুরুষ!
.
চলবে
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-১০

0

#বালির_সংসার
পর্ব-১০
.
দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো তিনটে বছর।
অর্থির প্রশ্নের উত্তর আজো আদিত্য দেয়নি। একবারে দিবে। ভালোবাসি বলেও নি। অর্থি এখন আর জিজ্ঞেস করে না। সংসারের মাঝেই ছোট্ট একটা সংসার সাজিয়েছে অর্থি।সব আদিত্য কে নিয়েই। ভার্সিটি আদিত্য নিয়ে যায়। নিয়ে আসে। ওদের মেলামেশা তে দুই পরিবার দ্বিমত করেনি। দুই বন্ধু সম্পর্কে জড়াবে এতে সবাই খুশি কিন্তু এখনো কোন কথা হয়নি। সবাই বুঝে তাইতো এত দিনেও কোন ঝামেলা হয়নি। আদিত্য অর্থি কে নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছে। খুব ভালোবাসে কিন্তু কখনো বলেনা। ভালোবাসি কথাটা বলতেই হবে এমন তো নয়।
আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে আদিত্য ২ বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে।
এই বিষয়ে আগ্রহ বেশি ছিলো অর্থির কিন্তু এখন সব থেকে চুপচাপ সে নিজেই৷
মাঝের তিনটি বছর অনেক কিছু হয়েছে কিন্তু পালটায় নি আদিত্য।
অর্থির নিস্পাপ ঘুমন্ত চেহারার কাছে বার বার পরাজিত হয়েছে ভিতরের কামুক পুরুষ টা।
বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো।
আদিত্য দেখতে আগের থেকে আরো বেশি সুঠাম সুন্দর দেখতে।
অর্থি কম যায় না। একটু লম্বা হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধি আগের মতই।
আদিত্যর পিচ্চিই আছে।
এলোমেলো চুলে এসে আদিত্যর সামনে দাঁড়ায়।
বুঝাই যাচ্ছে কান্না করেছে।
কিছু না বলেই চুপচাপ আদিত্য কোমর জড়িয়ে কোলে উঠিয়ে নেয়।
অর্থির পুরোভর আদিত্য উপর। চুপচাপ আছে।
– সিগারেট টা ফেলো।
.
আদিত্য বাধ্য ছেলের মতো তাই করে। আদিত্যর বুকে মাথা রেখে
অর্থি বা হাতের বড় বড় নখ দিয়ে আদিত্যর হাতে কিছু একটা লিখছে।
-অর্থি?
– হুম!
– আজ রাত পরেই চলে যাবো।
অর্থি এবার শক্ত করে ওর হাত ধরে।
– আজ রাতে যদি আমি একটু স্বার্থপর হই মেনে নিবি?

অর্থি কিছু বলেনা। আদিত্য ওকে উঠিয়ে দিয়ে হাতে শপিং ব্যাগ দেয়।
অর্থি দেখে শাড়ি।সেদিনের পর থেকে আর শাড়ি পড়েনি।আদিত্যর আবদার দেখে সেইদিনের কথা মনে পড়ে গেলো। কি বাচ্চামি টাই না করেছিলো।
– আজকেও কি আমার সামনেই চেঞ্জ করবি?
– সেদিন করেছিলাম তুমি কিছু দেখেছিলে?
– আমার চোখ বন্ধ ছিলো।
– আয়নাতে আমি সব দেখেছি। কিন্তু সেদিন শুধু শাড়ি পাল্টেছি। আজ পারবো না।
.
কিছুক্ষণ পর অর্থি এলো। আদিত্য আবার সিগারেট হাতে নিয়েছে। অর্থি ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়।
– আবার?
– সরি। খুব সুন্দর লাগছে।
– পেত্নীরা সুন্দর হয় না।
– কিছু চাইলে দিবি?
– কি?
– তোর ওই ঠোঁটের অধিকার।
অর্থি কিছু বলেনা। অবাক বেশি হয়। আদিত্যদা কখনো এমন কথা বলেনি৷ কখনো না। ঘুমন্ত অর্থি নিজেকে কতবার আদিত্যর বুকে পেয়েছে। হিসেব নেই৷
কিন্তু আজ কি হলো?
.

.আদিত্য কিছু না বলেই কোমর জড়িয়ে নেয়।
অর্থি আদিত্যর পায়ের উপর দাড়াতেই আদিত্য দেরি করেনা। অর্থির ঠোঁটে যাদু নয় নেশা আছে। সিগারেটের থেকেও অধিক।
কিছুক্ষণ পর আদিত্য ছেড়ে দেয়।
আদিত্যর বুকের উপর ঘুমন্ত অর্থি কে দেখে পার হয়েছিলো সারা রাত।
.
.
.
অর্থির ঘুম ভেঙে গেলে দেখে আদিত্য হাত ধরে বসে আছে।
ঘুমন্ত চেহারায় বারবার অর্থি প্রেমে পড়ে।
কিন্তু এখন আর এসব মানায় না।
আদিত্যদা! কেনো তুমি আমাকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলে? কেনো সেদিন আমার কথা বিশ্বাস করোনি!
.
বাচ্চা টা কেদে উঠে। আদিত্যর ঘুম ভাংগে। এতক্ষণ তাহলে সে অতীত হাতড়ে বেড়াচ্ছিলো যা শুধুই মরীচিকা।
.
.
সারা রাতেও রুপ নিশি কে বুঝাতে পারেনি।
কিন্তু এখন আর হয় না। অর্থি যে তার দায়িত্ব। আজ রুপের জন্য মেয়েটার এই অবস্থা।
ভালোবাসা ত্যাগ করা যায় কিন্তু দায়িত্ব যায় না।
পুরুষ মানুষ পৃথিবীতে এমন এক প্রাণী যারা চাইলেও মন খুলে কাদতে পারে না।
নিশি তার প্রথম ভালোবাসা। সব ঠিকঠাক চললে আজ অর্থির জায়গা তে নিশি থাকতো।
কিন্তু কেনো এমন হলো? নিশির প্রশ্নের উত্তর রুপের কাছে নেই৷
বিধাতা না নিয়তি কে খেলছে এই জীবন গুলো নিয়ে?
.
ফোনের রিংটোন বাজছে। রুপ ফোন হাতে নিয়ে দেখে আদিত্যর কল।
– হ্যালো! ডক্টর। অর্থি ঠিক আছে?
– জ্বী। কিন্তু আপনি পারলে আসুন। কিছু কথা ছিলো।
– এনিথিং সিরিয়াস!
– বলতে পারেন।
– প্লিজ বলুন।
– সামনাসামনি বলবো।
– যতটা দ্রুত সম্ভব আমি আসছি। প্লিজ অর্থি কে দেখে রাখবেন।
.
আদিত্য কল কেটে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। এই ১০ দিন সে বাসার দিকে যায়নি। অর্থিকে নিয়েই বাসায় ফিরছে।
.
অর্থি কে বাসায় নিয়ে আসা হয়।
দোতলায় অর্থির রুমে যেতে হলে সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে। তাই আদিত্য চুপচাপ অর্থি কে উঠিয়ে নেয়। আজো অর্থি আদিত্যর স্পর্শে কেপে উঠে। ইচ্ছে করছিলো চিৎকার করে কেদে আদিত্য কে জিজ্ঞেস করতে
– কেনো তার সাথে এমন করলো? এই সে তার পিচ্চি কে চিনেছিলো?
.
কি রে অর্থি? আদিত্যদার কোলে উঠার অভ্যেস টা এখনো গেলো না? রুপ ভাইয়া কে বলতি কোলে নিতে। এবার তো আমার স্বামীকে ছাড়। এই সিড়ি বেয়ে উঠতে মরে যাবি না।
.
.
চলবে( টুইস্ট ?)
.
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-০৯

0

#বালির_সংসার
পর্ব-০৯
.
স্কুলে সবাই জেনে গেছে আদিত্য অর্থির বয়ফ্রেন্ড।
পাকনা পোলাপান দের কিছু বলতে হয় না। একাই বুঝে।
অর্থি যেনো দিন রাত শুধুই আদিত্য কে চাই।
অর্থির মা বাবা কিংবা আদিত্যর ফ্যামিলি কারো কোন সমস্যা নেই।
দেখতে দেখতে অর্থির ফাইনাল টেস্ট চলে এলো৷
স্কুলে বসে কথা হচ্ছিলো বান্ধুবীদের।
– আদিত্য ভাইয়া তোকে কিস করেছে,?
– কেনো? তা করবে কেনো?
– বাহ্ রে তোর বয়ফ্রেন্ড আর কেনো?
– উনি আমার বয়ফ্রেন্ড হবে কেনো? মাথা গেছে?
– আমরা বুঝি। থাক বলতে হবে না। দেখিস আবার যেনো ভ্রমরা মধু খেয়ে উড়াল না দেয়।
.
সেসময় আদিত্য চলে আসে। আদিত্যর বাইকে উঠে আজকে কাধে হাত রাখতে অস্বস্তি হচ্ছে। আদিত্য খেয়াল করেই জোড়ে ব্রেক কষে। অর্থি হুড়মুড়িয়ে আদিত্যর উপরে পড়ে।
– সমস্যা কি? আদিত্যদা
– তোর সমস্যা কি?
অর্থি সব বলে। আদিত্য কিছু বলেনা।
সেদিন থেকে আদিত্য অর্থিকে দূরে দূরে রাখছে।
অর্থি বিষয় টা বুঝেও কিছু বলে না। এখন আর সারা রাস্তা অর্থি আদিত্য কে কথার জুড়ির গল্প বলে না। দেখতে দেখতে ১৩ দিন পার হয়ে গেলো। এক্সাম শেষ। আদিত্য বসে বসে পড়ছিলো।
অর্থি আজ শাড়ি পড়েছে।
চুপচাপ এসে আদিত্যর বিছানায় শুয়ে পড়ে। আদিত্যর রাগ ভাংগানোর এর থেকে উপায় পায়নি সে। অর্থি কে এতদিনে একবারো আদিত্যর রুমে আসতে দেখেনি।
খুব ক্লান্ত ছিলো অর্থি। এক্সাম দিয়ে। তারউপর বাহিরে ঠান্ডা পড়েছে।
বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে গেছে।
অর্থি কে ছাড়া আদিত্যর থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু কখনো তো ওকে ওভাবে স্পর্শ করেনি। চাইলে সে অনেক কিছু পারতো। কিন্তু তাও মেয়েটা কেনো এমন কথা বললো।
সিগারেট ফেলে দিয়ে আদিত্য বিছানায় যেতেই অর্থি কে দেখে চমকে যায়।
চুলগুলো এলোমেলো মুখে ছড়িয়ে আছে। শাড়ী টা একটু উপরর উঠে সাদা ধবধবে পা বেড়িয়ে আছে।
এইমেয়ে টা নিজের সর্বনাশ নিজেই ঢেকে আনবে। এমনিতেই মেজাজ ভালো না তার উপর এই মেয়ের এসব।
বাচ্চা মেয়ে কিছুই বুঝে না আসে পাকনামি করতে। কোলে তুলে নিতেই আবার কি যেনো হলো।
বেশ খানিকটা জোড়েই খাটের উপর ফেলে দেয় অর্থি কে।
ঘুম ভেংগে যায়। দেখে আদিত্য বারান্দায় দাঁড়ানো।
মাথাটা বেশ ঝিমঝিম ধরছে।
উঠতে গিয়ে শাড়িতে পারা লেগে পড়ে যায়। আদিত্য আসেনা।
অর্থির কানে শুধু বাজতে থাকে
– তোমার বাসায় আছি বলে কিন্তু তোমার আয়া না। যে তোমার সব আমাকে করতে হবে। তুমি কি সত্যি ঘুমের মধ্যে হাটো না অন্য কিছু? প্রতিদিন ড্রামা। ইউজলেস ফেলো। মাঝরাতে ঢং। যত্তসব।
.
আদিত্য ইচ্ছে করেই এমন টা করে।
দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায়। কিন্তু সে চায় না তার ভালোবাসার মানুষকে অপবিত্র করতে।
.
.
অর্থি আর আদিত্যর ঘরে যায় না। কিন্তু অদ্ভূত ভাবে ঘুমে’র মধ্যেও সে এখন আর যায় না।
সিড়ি দিয়ে নেমে চুপচাপ রান্না ঘরে শুয়েছিলো।
বাসার সবাই এটা নিয়ে চিন্তিত। কারণ এমন টা হলে যেকোন সময় মেইনগেটের বাহিরেও যেতে পারে।
.
সবার সমস্যার সমাধান অর্থি নিজেই দেয়।
– আমাকে তালা মেরে রাখো। আমি চাইলেও বের হতে পারবো না।অর্থির কথাতে কেউ রাজি হয় না। আদিত্য বুঝে তার উপর রাগ করেই এসব বলছে অর্থি।
মেয়ের জিদের কাছে হার মানে সবাই। অর্থি খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠে যায়৷
– আমার খাবার টা পাঠিয়ে দিও। যেহেতু এক্সাম তাই সারাদিন রাত সবসময় ঘরেই থাকবো। পড়াশোনা হবে আর কোন ঝামেলা হবে না।
.
আদিত্যর বেশ খানিক টা রাগ হয়। এটা কেমন কথা? আংকেল মেনে নিলো কেনো? মেয়ের জেদ তাই কি মানতে হবে?
.
আজ প্রায় এক মাস যাবত অর্থি নিজের রুমেই থাকে। বের হও না। টিউটর এসে পড়িয়ে যায় কিন্তু ও বের হচ্ছে না।
মেয়েটাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে আদিত্য।
গভীর রাত গুলোতে যখন অর্থির পড়ার শব্দ আসে না তখন বাকী রাত সিগারেটের সাথে কাটে।
দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো এক মাস।
অর্থি কে না দেখতে পেয়ে আদিত্য পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছে।
ওর ঘুমন্ত চেহারা যে আদিত্যর ঘুমের ঔষধ।
.
সেদিন অর্থির বিদায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা।
হালকা আকাশী থ্রিপিস, খোলাচুলে বেরিয়ে এলো অর্থি।
মেয়েটাকে দেখে আদিত্যর বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে।
চোখের নিচে কালী, শুকিয়ে গেছে।
কোন কথা না বলে চলে যায় আদিত্যর সাথে। রাস্তায় কোন কথা বলেনি।
ফিরে এসে আবার রুমে চলে গেছে।
নাহ্! আজ রাতে আদিত্য আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। রাত ১ টার দিকে তালা খুলে রুমে গিয়ে দেখে মেয়েটা খাটের নিচে শুয়ে আছে।হাত টা হ্যান্ডকাফ লাগানো।
হাত টা নীল হয়ে গেছে। রাতে যেনো অন্য কোথাও না যায় এর জন্য এই অবস্থা?
আগে উঠো তারপর এই ফালতু জিনিস কে এনে দিয়েছে তার ব্যবস্থা করবো।
বলে আদিত্য কোলে নিয়ে খাটে শুয়িয়ে দেয়। মেয়েটা সারাদিন কিছুই খায়নি। খাবার টাও ওমনি পড়ে আছে।
নিজেকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।
ঘুম ভাংগার পর অর্থি আদিত্য কে দেখে আবার ঘুমাতে যাওয়ার সময় চোখ তুলে তাকায়!
আপনি? এখানে কেনো? যান এখান থেকে।
– যাওয়ার জন্য আসিনি! থাকবো বলে এসেছি।
– মানে? কিছুই না। সাইডে চাপো বসতে দাও। আর তুমি ঘুমাও তো।
.
পরদিন সকালে আংকেলের সাথে কথা বলে আদিত্য। এবার আদিত্যর জেদের কাছে অর্থি হার মানে।
.

বারন্দায় দাঁড়িয়ে ঠান্ডা বাতাসে জমে যাচ্ছিলো অর্থি।
এক্সাম টেনশনে ঘুম হারাম৷ এমনিতেও ঘুমাতে চায় না। কি একটা বাজে অভ্যেস। যেদিন টেনশন অথবা মন খারাপ থাকলে এমন হয়।
.
হঠাৎ নিজের কোমরের দুইপাশে দুই হাতের স্পর্শ অনুভব করে।
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পিছনে দাঁড়ায় আদিত্য।
– এই পিচ্চি! তুমি তো লম্বা হয়ে গেছো।
অর্থি কিছু বলেনা। আদিত্য জড়িয়েই থাকে। অর্থি ছাড়িয়েও যায় না।
– মন খারাপ?
– আপনি চলে যান।
– যাবো বলে আসিনি।
– কিন্তু যেতে হবে।
– উহু। সেদিন এভাবে জড়িয়ে নেইনি বলেই তো এত রাগ।
– আমি রাগ করিনা।
– তাহলে! এত নাটক কেনো?
– আপনার গার্লফ্রেন্ডের কাছে যান। আমার কাছে কি?
.
এতক্ষণে অভিমানের কারণ বুঝে।
কিছু না বলেই আদিত্য গান ধরে
.
মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা,
মন খারাপ হলে কুয়াশা ধোয় ব্যাকুল হলে তিস্তা।
মন খারাপের খবর আসে——- মন খারাপের খবর আসে,
বন পাহাড়ের দেশে, চৌকনো সব বাক্সে, যেথায় যেমন থাকে সে।
মন খারাপের খবর পড়ে, দারুণ ভালবেসে ———
বাগান শেষে সদর দুয়ার, বারান্দাতে আরাম চেয়ার।
গালচে পাতা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি।
সেথায় এসে মেঘ পিয়নের সমস্ত ব্যাগ খালি।
মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা,
মন খারাপ হলে কুয়াশা ধোয় ব্যাকুল হলে তিস্তা।
.
আদিত্য অর্থি কে ধরেই আছে। বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে।
অর্থি! এই পিচ্চি!
ঘুমিয়ে গেলে না কি? উহু!
জেগেই আছে। আদিত্য কিছু না বলেই উঠিয়ে নেয়।
– আচ্ছা! আদিত্য দা আমাদের সম্পর্কের নাম কি? তুমি কি একটু স্বার্থপর হতে পারো না।
.
.

চলবে (আগামী পর্ব থেকে রুপ আবার এন্ট্রি নিচ্ছে।)
.
Sabiya moon

বালির সংসার পর্ব-০৮

0

#বালির_সংসার
পর্ব-০৮
.
আদিত্য কে দেখেই অর্থি হাত বাড়িয়ে দিলো।
মেয়েটা যেদিন থেকে আদিত্য কে পেয়েছিলো সেদিন থেকেই অসুস্থ হলে এভাবে হাত বাড়িয়ে দিতো। আন্টি কে আজ অনেক বলে বাসায় পাঠানো হয়েছে।সব সময় দেখার জন্য নার্স রয়েছে।
আদিত্য তো আছেই। হঠাত করে জ্বর কেনো আসলো বুঝলাম না।
জ্বর আসলে তো অর্থি আদিত্যর সাথে পাগলামি করতো।
যা সকালে উঠেই ভুলে যেতো।
এখনো কি তাই করে?
মেডিসিন দেওয়ার পর মেয়েটা একটু ঘুমিয়েছে হাত ছাড়েনি।
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘোর লাগা ভালোবাসা কাজ করে। অতীত ফিরে আসে।
.
মেডিক্যাল লাইফ টা প্যারাময়। দুদিন পর পর এক্সাম। পড়তে পড়তে কাহিল অবস্থা।
পড়ার টেবিল ছেড়ে সবে মাত্র উঠবে। বিছানায় অর্থি কে দেখে বেশ চমকে গিয়েছিলো।
তারপর মনে হলো এটা নতুন নয়।
প্রথম যেদিন অর্থিকে নিজের বিছানায় পায় সেদিন মাত্র ১৭ দিন হলো এই বাসায় এসেছে।
অর্থিকে নিজের পাশে দেখে ভয়ের থেকে অবাক হয় বেশি। এই মেয়ে তো আমার সাথে ঠিকঠাক কথাই বলে না। তার থেকে বড় লোকলজ্জার একটা বিষয় আছে। আমি ছেলে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ও তো মেয়ে। ছেলেদের চরিত্র রঙিন কাপড়ের মতো যেখানে কাদার ছিটা লাগলে বুঝা যায় না। কিন্তু একটা মেয়ের চরিত্র তো সাদা কাপড়ের মতো।
একটু দাগ লাগলেই সবার নজরে পড়ে।
ধীর পায়ে সেদিন আংকেল আন্টি কে ডেকে এনেছিলো।
উনারা হেসে ফেলে আদিত্যর চেহারা দেখে।।
– বুঝলে বাবা! মেয়ে আমার ঘুমের মধ্যে হাটা চলা করে।
– স্লিপিং ওয়াক!
– হ্যাঁ। তুমি কিছু মনে করো না।
.
সেদিনের পর থেকে আজকে তিন দিন।
এর পর আসলে আদিত্য আর আংকেল আন্টি কে ডাকেনি।
নিজেই ওর ঘরে দিয়ে এসেছে।
এবারো তাই করতে যাচ্ছিলো। স্পর্শ করতেই বুঝতে পারলো শরীর খুব গরম।
সামনে ফাইনাল এক্সাম। জ্বর বাধিয়ে বসেছে। আদিত্যদা বলেই ডাক দিতেই ওর দিকে চোখ তুলে তাকায়
– আদিত্যদা! আমায় একটু আদর করবে?
.
অর্থির এমন আবদারে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খায় আদিত্য। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
– এই পিচ্চি কি বলো এইসব৷ চলো নিজের ঘরে চলো।
– আমি মরে গেলে খুশি হও তাই না?
– কি বলছো এসব।
– তাহলে যা বলছি করো।
– মাথা গেছে পুরোপুরি।
অর্থি কিছু বলে না। কিছুক্ষণ পর উঠে যেতে নিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো। আদিত্য ধরে ফেলে।
– থাক আর দয়া দেখাতে হবে না।
.
আদিত্য কোন পাত্তা না দিয়ে কোলে উঠিয়ে নিয়ে যায় রুমে।অর্থির মা কে ডাকার পর দেখে ওর জ্বর। আন্টি পানি আনতে গেলে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে – এই নাও করলাম আদর। খুশি?
.
পরদিন সকালে….
-জ্বর কমেছে মা? (বাবা)
– হুম।
– বলোনি কেনো? আদিত্য না বললে তো জানতামই না। নিজের খেয়াল রেখো আর আজ স্কুলে যেয়ো না।
– আজ ফাইনালের প্রবেশ পত্র দিবে। যেতেই হবে।
– আজ থেকে আয়ানের এক্সাম শুরু! আমি যেতে পারবো না! তোর বাবার মিটিং আছে। আচ্ছা আমি আসার সময় নিয়ে আসবো। একা যাওয়ার দরকার নেই।
– তোমার কাছে দিবে না মা। জানোই তো নিয়ম কানুন।
– আন্টি! কিছু মনে না করলে আমি নিয়ে যেতে পারি।(আদিত্য)
– কিন্তু তোমার ক্লাস?
– সমস্যা নেই।
.
আদিত্য বাইক কিনেছে। বাবার এত টাকা অথচ বাইক? বাবার বন্ধুর ছেলে বাবার মতোই কিপটে।
– কি ভাবছো?
– আমি আবারো কাল রাতে আপনার…
– শুধু কি তাই? সুন্দরী? তুমি তো বেশ আবেদনময়ী!
.
এসব ভাষা অর্থি বুঝে না। তাই চুপচাপ রইলো।
ফিরে আসার সময় ওর বান্ধবীরা এগিয়ে দিতে এসে আদিত্য কে দেখে তো পুরাই ফিদা।
কালো জিন্সের সাথে হালকা নীল শার্ট, দাড়িগুলো ছোট করে কাটা। চুল, বডি সব মিলিয়ে তামিল হিরো।
একেক জনের একেক কথা শুনে অর্থি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
ওদের কে আর সামনে না নিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে চলে।
– চলুন।
– তোমার বান্ধবীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে না তো?
– কি দরকার? কোন দরকার নেই।
আদিত্য বুঝে কিন্তু তবুও কিছু বলে না।
.
.
কয়েকমাস পর
.

এখন অর্থিকে সব জায়গায় আদিত্য নিয়ে যায়।
সকালে যাওয়ার সময় স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তারপর ও ক্লাসে যায়। আসার সময় নিয়ে আসে।
আদিত্য যেদিন পারে না সেদিন অর্থির বাবা যায়। একা ছাড়তে ইচ্ছে করে না। আদিত্য ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলো। সেসময় অর্থি এসে সামনে দাঁড়ায়।
একদম সামনে।
নীল শাড়ী, খোলাচুল,হাতে চূড়ি। লাল লিপস্টিক। আদিত্য হার্টবিট মিস করে।
– কেমন লাগছে আমায়।
– পুরোই হারপিকের বোতল।
– মানে কি? (রেগে গিয়ে)
– শুকনো মেয়ে, নীল শাড়ী, লাল লিপস্টিক। পুরোই হারপিকের বোতল না?
.
অর্থি যেনো সহমত।
– কিন্তু এখন?
– আর শাড়ি নেই।
অর্থি উত্তর না দিয়ে আদিত্য কে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যায়। আলমারি খুললে আদিত্য দেখে পুরো শাড়ির দোকান।
– আমার জন্মের পর থেকে বাবা মায়ের জন্য যখন যখন কিনে আমার জন্য কিনে। বলুন কোনটা পড়বো৷
.
আদিত্য কালো শাড়ী বের করে হাতে দেয়।
– পড়তে পারো?
– হুম।
– যাক কিছুতো পারো। নাহলে আমার আবার পড়িয়ে দিতে হতো।
– হুহ! তাতে কি? আমি কি আপনাকে ভয় পাই?
– তাই বুঝি?
– জ্বী! আমি চাইলে আপনার সামনে শাড়ি চেঞ্জ করতে পারবো।
আদিত্য হেসে চলে যেতে নিলে অর্থি ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে হাত। ওর এক হাতের সাথে হ্যান্ডকাফ বিছানায় লাগিয়ে দেয়।
– কি করছো কি?
– চ্যালেঞ্জ করেন কেনো?
– পিচ্চি মেয়ে তুমিই লজ্জা পাবে। যেতে দেও আমায়।
– যদি পারি?
– পারলে পারলা! আমায় যেতে দেও।
– উহু। বলুন কি দিবেন?
– কি চাই?
– তেতুলের আচার! যা আপনি আমাকে পাঁচ মাস যাবত খেতে দিচ্ছেন না।
.
.
চলবে ( আদিত্য প্রেমীদের জন্য সামনে সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে) ??
.
Sabiya Moon

বালির সংসার পর্ব-০৭

0

#বালির_সংসার
পর্ব-০৭
.
এই যে দেখুন! ভুলেও আমাকে আপনার বউ ভাববেন না। আব্বু যতই আপনাকে বাবা আর আমাকে মা বলুক না কেনো তবুও কিন্তু আমি আপনার বউ নই।
কথাটা মাথায় রাখবেন।
.
রাজশাহী থেকে ঢাকা এসে বেশ খানিকটা খারাপ লাগছিলো আদিত্যর। সবে সে এই বাসায় এসেছে। জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার সময় পিছন থেকে মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে।
পিছনে তাকিয়ে বেশ রীতিমতো চমকে যায়।
চৌদ্দ পনেরো বছর বয়সী মেয়ে। কোমড় অব্ধি চুল। দেখতে অপরুপ। চোখের নিচে, নাকের বা পাশে তিল। ঠোঁট গুলো হালকা বেগুনি।
হালকা মিষ্টি রঙের থ্রিপিস পড়া।
দেখতে একবারে পরীর মতো।
মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো মিষ্টিপরী।
.
– কি বললেন?
– কিছুই না। তাছাড়া আমার বউ হওয়ার বয়স আপনার হয়নি। পিচ্চি মেয়ে।
আদিত্য নিজেকে সামলে নিয়েছে। এই গুণ অনেক টা রক্তে মিশে আছে।
– হুহ! তাহলে সমস্যা নেই। শুনলাম আপনি না কি এই বাসায় থাকবেন? লজিং মাষ্টার?
.
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকায়
– এই পিচ্চি! তুমি লজিং মাষ্টার বুঝো?
– না! গল্পে পড়েছি।
– আচ্ছা।
– বললেন না তো?
– কি?
– লজিং মাষ্টার?
– ধরে নাও তাই৷
.
আদিত্যর বেশ খানিক টা সময় লেগেছিল এই মেয়েকে বুঝতে। সত্যি কি কিছু বুঝে না? না কি না বুঝার ভান করে?
কিছুদিন যেতেই বুঝে না এই মেয়েটা সত্য এমন।
একদিন রাতে….
.
আদিত্য বসে পড়ছিলো। হঠাৎ মনে হলো কেউ যেনো কাদছে।
আন্টি বাসায় নেই। আয়ান কে নিয়ে গ্রামে গেছে৷
আংকেল ফিরেনি। খালা বাজারে গেছে ফিরেনি।
তবে কে কাদঁছে?
রুম থেকে বেরিয়ে বুঝতে পারে কান্নার শব্দ টা অর্থির রুম থেকে আসছে।
দৌড়ে রুমের কাছে গিয়ে ভিতরে ঢুকতেই অর্থি আদিত্য কে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমের চলে যায়।
ওক ওক করে বমি করতে করতে পেটে হাত দিয়ে বসে পড়ে।
আদিত্য ধরে রুমে নিয়ে এসে শুইয়ে দেয়। সেদিন প্রথম কোন মেয়েকে এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।
অনুভূতি? বলার ছিলো না।
.
কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে বিষয় টা।
কিচেনে গিয়ে গরম পানি এনে দেয়।
– ছ্যাক নেও কমে যাবে।
– আমি পারবো না। আমার বমি আসছে।
– আমি মনে হয় বাঁচবো না। আম্মুকে ডেকে দিন। আমার সময় শেষ।
.
আদিত্য প্রায় হেসে ফেলে। হাসি থামিয়ে বলে
– আগেও এমন ব্যথা হতো? না আজকেই প্রথম৷
– আজকেই প্রথম৷ আম্মু বলতো রাস্তার কিছু খাবি না। কিন্তু আমি আজকে তেতুলের আচার খেয়েছি। মনে হয় তাতে কাচের গুড়ো ছিলো। আমার পেটের নাড়িভুঁড়ি কেটে রক্ত বের হচ্ছে। আমি আর বাঁচবো না।
.
– তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
– ও আল্লাহ! তুমি দড়ি ফালাও আমি উঠি! আমি মরি আর সে বলে কোন ক্লাসে পড়ি। নাইনে পড়ি৷ নাইন বুঝেন? আল্লাহ গো! তুমি কই? আমারে নেও। এত কষ্ট দিয়া নিবা ক্যান? আমি কি দোষ করছি।
.

বলেই কান্না শুরু করে দিলো। আদিত্য হাসছিলো। বললো
– চুপচাপ শুয়ে থাকবে৷ এইটা নাও। এখানে ধরে থাকবে। আমি আসছি। বাইরে থেকে লক করে দিয়ে যাবো৷ আমি আংকেল ছাড়া কেউ এসে মরে গেলেও খুলবা না।
.
কিছুক্ষণ পর আদিত্য আসে। অর্থির হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে চলে যায়। ততক্ষণে পেট ব্যথা কিছুটা কমেছে।
অর্থি প্যাকেট খুলে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। বই তে পড়েছিলো বটে কিন্তু আজকের দিন সে কিশোরী থেকে ধীরেধীরে যৌবনে পা রাখতে চলেছে।
.
কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে আদিত্য বসে আছে।
– চুল গুলো ঠিক করে বাধো তো। বিনুনি করো।
অর্থি তাই করলো। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে৷
আল্লাহ তুমি দড়ি ফালাও আমি উঠি।
আদিত্য অর্থির হাত ধরে বসে ওকে সব টা বুঝিয়েছিলো। অর্থি মাথা নিচু করে বসেছিলো কিন্তু ভয় পাচ্ছিলো না।
সেদিনের পর থেকে পালটে যায় সম্পর্ক। শুরু হয় বিশ্বাসের পথ চলা। তারপর বাকী ৫টা বছর। অর্থি কে কখনো ব্যথায় কাদতে হয়নি। আদিত্য ছিলো তো!
.
.
স্যার… স্যার…
– হুম!
বসে বসেই স্মৃতিতে অস্তিত্বশীল হয়ে উঠেছিলো আদিত্য।
– স্যার! ম্যামের প্রচন্ড পেইন হচ্ছে। খুব কান্না করছে৷
.
আদিত্য জানতো এটাই হবে। জেনেটিক ভাবেই মায়ের থেকে রোগ পেয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদিত্য দ্রুত পায়ে ছুটে চললো কেবিনের দিকে।
.
সারাদিন কাজ করে ফার্মহাউসে ফিরে খুব ক্লান্ত লাগছে রুপের।
গা এলিয়ে দিতেই কারো স্পর্শ অনুভব করছে।
হুম অর্থির স্পর্শ। যখন যখন বাইরে থাকে, মনে হয় অর্থি আশেপাশে আছে৷ কিন্তু চোখ খুললেই দেখে কেউ নেই।
হাতটা ধীরেধীরে রুপের শার্টের বোতাম খুলতে থাকলেই রুপ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
হ্যাঁ নিশি। এবারের ধাক্কা টা বেশ জোড়েই লেগেছে। নিচে বসে পড়েছে।
– তোর সমস্যা কি নিশি?
– তোর কি সমস্যা? তুই কেনো আমার সাথে এমন করছিস? তুই কি জানিস না? বুঝিস না? সব টা ভুলে গেলি?
– না ভুলিনি। সব মনে আছে কিন্তু এখন অর্থি আমার দায়িত্ব, আমার কর্তব্য, আমার ভালোবাসা,আমার স্ত্রী।
– স্ত্রী? হাসালি রুপ। ভুলে গেছিস? তুই কখনো অর্থি কে ভালোবাসিস নি। তোদের বিয়ে কোন প্রেমের নয়৷ যা হয়েছিলো সব পরিস্থিতির সৃষ্টি। তুই শুধুই ওর আশ্রয়দাতা, সেদিন তুই ওকে আশ্রয় না দিলে হয়তো আজ ওর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেতো না। ও শুধুই তোর আশ্রিতা। আর আশ্রিতা কখনো স্ত্রী হতে পারে না৷ আমি মানি না। তুই শুধু আমার৷ ভুলে যা তিনটে বছর। প্লিজ৷ না হলে আমি যে মরে যাবো। রুপ প্লিজ……..
.
.
চলবে… ?
.
Sabiya Moon

বালির সংসার পর্ব-০৬

0

#বালির_সংসার
পর্ব-০৬
.
রুপ যতটা দ্রুত পারলো নিশি কে নিজের থেকে দ্রুত ছাড়িয়ে নিলো। বেশ খানিক টা৷ জোড় করেই ধাক্কা দেয় নিশিকে। লিফটের দেয়ালে সজোড়ে ধাক্কা খায় নিশি। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। খানিক টা সময় লাগে ঝটকা সামলাতে। লিফট এসে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমেছে। দরজা খোলার পর নিশি রুপের হাত ধরে টেনে নিয়ে হসপিটালের ক্যান্টিনের পাশেই একটা রুমে ঢুকে।
নিশি- তুই এভাবে আমাকে ধাক্কা দিলি ক্যান?
-তুই এখানে কি করছিস? আর এসব কি?
নিশি- তোর ফোন অফ। আর আমি পারছি না তোকে ছাড়া থাকতে। বড্ড ভালোবাসি রে।
রুপ- ভালোবাসা! ভালোবাসা মাই ফুট। আমি তোকে ভালোবাসি না। অর্থি আমার স্ত্রী। আমি শুধু ওকে ভালোবাসি।
– আমি আমার ভালোবাসা আদায় করে নিতে জানি রুপ।।
– কিভাবে? শ্যাম্পেন খাইয়ে,ক্লিভেজ দেখিয়ে?
– তুই ছাড়া আমার দেহ কেউ স্পর্শ করে নি। তুই জানিস।
-তোর জন্য আমার মেয়ের দাফন টা করতে পারিনি। পাগলী টা মরেই গিয়েছিলো প্রায়। তোকে কোন দিন মাফ করবো না।যা তুই এখান থেকে যা।
.
.
রাগে রুপের হাত পা কাপছে। সাহস হয় কি করে? বেস্ট ফ্রেন্ড তো কি? স্ত্রী তো নয়। সেদিন যা হয়েছে সব নেশার ঘোরে।
হ্যাঁ একসময় নিশিকে খুব কাছে চাইতো কিন্তু অতীত।
সেরাতে যদি বের হয়ে না যেতো তাহলে হয়তো মেয়েটা আজ বেঁচে থাকতো। স্বামী হিসেবে সে হয়তো খারাপ কিন্তু বাবা হিসেবে সে আজ খুনী।
.
.
আদিত্য কেবিনে ঢুকেই দেখলো অর্থি বেবি কে ফিডিং করছে।
চোখ নামিয়ে নিলো। কিন্তু তার কাছে এই মুহূর্ত যেনো অমূল্য।
.
অর্থি- আদিত্যদা। দাঁড়িয়ে আছো কেনো? এসে বসো।
.
আদিত্য – পরে আসি!?
অর্থি- উহু! হয়েগেছে আসো। তুমি না কি আমার ছেলেকে কোলে নাওনি? কেনো বলতো,?
আদিত্য- আমি বাচ্চা সামলাতে পারি না। তুই তো জানিস!
অর্থি- তুমি না চাইল্ড স্পেশালাইজড!!
আদিত্য – কার্ডিওলজিস্ট।
অর্থি- সে যাই হোক। নাও তো আমার ছেলেকে।
.
আদিত্য উঠে গিয়ে কাছের চেয়ারে বসে। অর্থি খুব সাবধানে কোলে দেয়।
আদিত্যর অনুভূতি টা ভিন্ন ছিলো না। অরুনীমা কে কোলে নিয়েছে সে। মনে হচ্ছে এরা যেনো আদিত্যর অংশ।
.
.
অর্থির কাছে এসে রুপ চুপচাপ দেখছে। অর্থির হাত রুপের হাতে। সে চাইছে অর্থি কে সব টা বলতে। কিন্তু কিছুটা সময় দরকার।
ঠিক সে সময় হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো আবির।
স্যার স্যার বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে গেছে।
স্যার আপনাকে এখনি খুলনা যেতে হবে।
– কেনো?
– স্যার কিছু সমস্যা হয়েছে ফ্যাক্টরি তে।
– তোমরা আছো কি করতে?
আমি যাবো না।
– স্যার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
.
কিন্তু রুপ তার কথায় অনড়। সে যাবে না। অর্থিকে সে দুই দিনের জন্য ছেড়েছিলো। দুইদিন অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে আর না। অর্থির কথা রুপ ফেলতে পারলো না।তাকে যেতেই হচ্ছে।
অর্থির ফ্যামিলি আশ্বাস দিয়েছে খেয়াল রাখবে কিন্তু রুপের মন কু গাইছিলো।
.
.
আদিত্য চেম্বারে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে অটি করে এসেছে।
চোখে শুধু সেই ১৫ বছর বয়সী অর্থি। কানে বাজছে তার ডাক
আদিত্য দা!
.
এই যে দেখুন! ভুলেও আমাকে আপনার বউ ভাবনেন না। আব্বু যতই আপনাকে বাবা আর আমাকে মা বলুক না কেনো তবুও কিন্তু আমি আপনার বউ নই।
কথাটা মাথায় রাখবেন।
.
.
চলবে
.
.
-Sabiya moon

বালির সংসার পর্বঃ০৫

0

#বালির_সংসার
পর্বঃ০৫

সাদা বেড শিটের অনেক টা রক্তে লাল হয়ে গেছে । ব্যথায় মেয়েটা কুকড়ে যাচ্ছে ।
ইন্টারনাল ব্লিডিং বেশ ভালোই হয়েছে। কমপ্লিকেশন তো আগেই ছিলো। শরীরে রক্ত কম থাকায় জরুরী ভিত্তিতে অর্থীর শরীরে রক্ত দিতে হবে। ভাই, বাবা যেনো মরিয়া হয়ে উঠেছে। কি করবে? মা তো নাতি কে কোলে নিয়ে পাথর হয়ে বসে আছে। রুপ দাঁড়িয়ে আছে আইসিইউর সামনে।
আদিত্য দিশেহারা হলেও যথেষ্ট শান্ত রয়েছে। আচ্ছা পারবে তো সে তার ছোট্ট পরী টা কে বাঁচাতে?
.
ব্লিডিং কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। ১৯ তম ব্লাড ব্যাগ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব ব্লিডিং বন্ধ করতে হবে।
.
রুপ শুধু তাকিয়ে দেখছিলো।খুব কান্না পাচ্ছে। বারবার না করেছিলো। কিন্তু মেয়েটা শুনেনি। রুপ তো চায়নি বাচ্চা! কেনো সব সময় জেদ করতো? কিন্তু যখন কন্সিভ করলো! সেদিন আলাদা অনুভূতি ছিলো। কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলা
” এই যে সিনিয়র চৌধুরী জলদি আপনার জুনিয়র চৌধুরী আসছে। আমি যে মা হতে চলেছি। ”
.
রুপের হুশ ফিরে আদিত্য আহমেদ এর কথায়। অর্থির ভাইকে কিছু একটা আনতে বলছিলো।
রুপ- আমি যাচ্ছি।
আদিত্য – আয়ান তুমি জলদি যাও।
.
আয়ান চলে যাওয়ার পর
আদিত্য – এই দায়িত্ব টা যদি কাল রাতে দেখাতে! তাহলে আজ তোমার মেয়েও বেঁচে থাকতো আর অর্থির এ অবস্থা হতো না।

.
সারা রাত কেউ চোখের পাতা এক করতে পারেনি। আদিত্য সব সময় অর্থির পাশেই ছিলো।
সাদা একটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো অর্থি কে জড়িয়ে ধরে কাদতে।কিন্তু সে তো তার অধিকার নয়।
সাদা তে সব সময় মেয়েটাকে ভালো লাগে আদিত্যর কিন্তু আজকের সাদা বড্ড বেশি ভয়ংকর।
কিছুক্ষণ পর পর আদিত্যর হাত স্পর্শ করছে অর্থির হাত।
শুধুই কি পালস চেক করার জন্য? না কি পরী টা কে ছোয়ার আশায়।

একজন সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মায়ের যে পরিমাণ কষ্ট হয় যদি সৃষ্টিকর্তা মায়ের শরীরে ধৈর্য্য না দিতো তাহলে কোন নারী সন্তান কে জন্ম দিতে পারতো না।
তাই তো বলে মায়ের প্রসবকালীন সব যন্ত্রণা মুছে যায় যখন সে সন্তানের দিকে তাকায়।
দুইদিন সময় লাগে অর্থির উঠে বসতে।
কেবিনে শিফট করার পর রুপ সবাই কে অনুরোধ করে বাইরে চলে যেতে।
অর্থির মা বাচ্চাকে রুপের কোলে দেয়। অসুস্থ হওয়ার পর সে যে বাচ্চাকে দেখেনি পর্যন্ত। ছেলেকে পাশে শুইয়ে দিয়েই রুপ অর্থির বুকে মাথা রাখে।
বাচ্চাদের মতো কান্না করতে থাকে। শক্ত করে জড়িয়ে আছে সে।
অর্থি কখনো রুপ কে এভাবে কাদঁতে দেখেনি।
হ্যাঁ দেখেছিলো যেদিন রুপের বাবা মা একসাথে এক্সিডেন্টে মারা যায়। দাফন করে আসার পর খুব কেঁদেছিল রুপ।
সেদিন অর্থির বুকে প্রথম মাথা রাখে রুপ। সম্পর্ক ছিলো না কিছুই। তবুও যেনো রুপ ভরসা,সাহস সব খুজে পেয়েছিলো।
তারপর থেকেই তো ধীরেধীরে পথচলা।
.
.
এদিকে বাচ্চাটাও কান্না শুরু করে দিয়েছে।
ভাংগা ভাংগা গলায় দুর্বল অর্থি বলে….
– কি করছো? বাপ ছেলে মিলে কান্নাকাটি শুরু করে দিলা ক্যান?
শুনো, ছেলেকে আমার কোলে দেও। আর উঠো না!
.
রুপ উত্তর না দিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সে ছাড়া যে আর কেউ নেই তার।
.
– আরে উঠো না! ছেলের গলা শুকিয়ে গেলো তো।
রুপ উঠে ছেলে কে কোলে দিয়ে অর্থির কপালে চুমু দেয়। অপরাধ বোধ যে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। বিনিময়ে অর্থি হাসে আর বলে
আমি তো একা পারবো না৷ মা কে পাঠাও না!
.
রুপ বেরিয়ে অর্থির মা কে পাঠিয়ে দেয়।লিফটের সামনে দাড়াতেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য খুলে যায় দরজা।
সেই সময় হাত ধরে টান দিয়ে কেউ রুপ কে লিফটে নিয়ে নেয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই তার আয়েত্তে চলে যায় রুপের ঠোঁট জোড়া।
রুপ বেশ বুঝতে পারে এ স্পর্শ শুধুই নিশিতার।
.
চলবে
.
– Sabiya moon

বালির সংসার পর্বঃ০৪

0

#বালির সংসার
পর্বঃ০৪
.
ছোট্ট অরুনীমা কে অর্থির কোল থেকে নিয়ে নিলো ডক্টর আদিত্য আহমেদ।
গ্রামের শুরুতেই কবরস্থানে নেওয়া হবে।
খুব বেশি কেউ না। অর্থির বাবা, ভাই, কাকা, হুজুর সাহেব আর আদিত্য।
এই কয়েকজন মিলেই জানাজা পড়ে দাফন করলো অরুনীমা কে।
ছেলেটা অর্থির মায়ের কাছে ছিলো। শুধু ভাবছিলো আচ্ছা? সত্যি কি আমার অভিশাপ লেগেছে? না! সে তো এমন চায় নি। কোন মা তার সন্তানের এত বড় ক্ষতি চায় না। অর্থির ছেলে যে তার অনন্য পাওয়া। সারাজীবন আগলে রাখবে।
.
.
দাফন শেষ করতেই দূর থেকে শোনা যাচ্ছে অর্থির চিৎকার।
আদিত্য ঠিক যে ভয়টা পেয়েছিলো তাই হলো।
অতিরিক্ত স্ট্রেস আর কান্নার কারণে অর্থির অবস্থা ভালো না।
রাস্তায় আসার সময় ঝাকুনি লেগেছে।
আল্লাহ জানে সেলাইয়ের কিছু হলো কি না?
.
.
সকালে ঘুম ভেংগে নিশিতা দেখে রুপ তার পাশে নেই।
কাউচের উপর ঘুমিয়ে আছে।
আচ্ছা? ও এমন কেনো?
নিজে থেকে কি কখনো কাছে আসতে পারে না? সবসময় কি জোড় করতে ভালো লাগে?
মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় ওর হাত ধরে হারিয়ে যেতে।
প্রথম দেখাতে যে শুধু ছেলেরা প্রেমে পড়ে এমন নয়।
মেয়েরাও পড়ে। ঠিক যেমন অরিয়েন্টেশন ক্লাসের দিন নিশিতা পড়েছিলো।

স্বাভাবিক মতো লম্বা, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। চোখে আলাদা একটা মায়া। জিম করা বডি দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো আর মুখে হালকা দাড়ি তাও স্টাইল করে কাটা। চুল গুলো? উফফফ সেখানেই তো মরণ হলো।।
তারপর কিভাবে যেনো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।
বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু মনের কথা জানাতে পারেনি নিশিতা। তার আগেই এলো অর্থি।
আচ্ছা? অর্থি কি সত্যি নিজে এসেছিলো? না কি আমিই নিয়ে এসেছিলাম? এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রুপের কাছে চলে এএসেছে খেয়াল করেনি।
মাথায় হাত দিতেই জেগে উঠলো রুপ।
অর্থির কপালে হাত দিয়ে দেখে নিলো জ্বর আছে কি না?
না এখন আর জ্বর নেই।
দেরি না করে বেরিয়ে পড়লো ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে।। আজ যে তার প্রিয়ভাষিণীকে নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে।
.
.
ক্লিনিকে এসে কেবিনে কাউকে না দেখে বেশ ঘাবড়ে যায় রুপ।
খবর নিয়ে সব টা জানার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
কোন মুখে যাবে রুপ অর্থির সামনে?
কোথায় খুজবে? কি হলো? কিছু বুঝতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে রিসিপশনের এক পাশে।
কিছুক্ষণ পর লিফটে নামতেই খেয়াল হয় অর্থির ভাই এম্বুল্যান্স থেকে নেমে আসছে।
এম্বুল্যান্স এর ভিতর থেকে কোলে করে অর্থি কে নামালো আদিত্য।
স্ট্রেচারে শুয়িয়ে দিয়েই বললো দ্রুত নিয়ে যেতে।
.
ঠিক সে সময় ঘটলো বিপত্তি।
বিদ্যুৎ না থাকায় লিফট বন্ধ। স্ট্রেচারে করে ছয় তলায় উঠানো পেশেন্ট কে? সম্ভব না।
এত কিছু ভাবার সময় নেই। অনেক টা ব্লিডিং হয়ে গেছে। দ্রুত নিতে হবে।
ডক্টর আদিত্য কিছু না ভেবেই অর্থি কে কোলে নিতে উঠানোর সময় কেউ এসে তার হাত ধরে বলে
– আমার স্ত্রী! আমি নিতে পারবো।
.
রুপের মুখের দিকে তাকিয়ে আদিত্য কিছু বলতে নিয়েও নেয় না।
এখন সময় টা অধিকারের নয়, দায়িত্বের নয়। এখন সময় হলো এই পরী টা কে বাঁচানোর।
কিছুক্ষণ আগেই তো আদিত্য ছোট্ট একটা পরীকে নিজ হাতে দাফন করে এলো। সে এখন চায় না তার মিষ্টি পরী কে হারাতে।.
.
চলবে
.
Sabiya moon