Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1862



তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২০

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২০

ফাবিহা নওশীন

??
আদি আধা ঘন্টা পর ঘরে গেলো।সামু শুয়ে আছে কিন্তু জেগে আছে।আদি সামুর পাশে শুয়ে সামুকে হালকা করে ধাক্কা দিলো।
–সামু,,

সামু আদির দিকে ঘুরে আদির দিকে চেয়ে রইলো।
আদি সামুর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো,
–সকালে ডেকে দিও।

সামু চিন্তিত ভংগীতে বললো,
–কেন?কোথায় যাবে?

আদি মুচকি হেসে সামুর গালে চুমু খেয়ে বললো,
অফিসে,,

সামু হা করে রইলো।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।আংগুল দিয়ে কান ঝাকিয়ে বললো,
–আমি কি ঠিক শুনলাম,,আপনি কি আরেকবার বলবেন মি.হাসব্যান্ড?

আদি নাক ফুলিয়ে বললো,
–সামু মজা করো না,তুমি ঠিক শুনেছো?আমি সত্যিই আগামীকাল থেকে অফিসে যাচ্ছি।

সামু খুশিতে গদগদ হয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরলো।ওর চোখে পানি ছলছল করছে।ও ভাবতে পারেনি এতো অল্পতেই আদি ওর কথা শুনবে।এতো কম ডোজেই কাজ হবে।
–থ্যাংক ইউ,,ভেরি ভেরি থ্যাংকস।আইম সো হ্যাপি।

আদি সামুকে সামনে এনে বললো,
–অনলি ফর ইউ,,শুধুমাত্র তোমার কথায়,,,
এন্ড আইম অলসো সরি।আমি এই দুইদিন অনেক উল্টো পাল্টা কাজ করেছি।প্লিজ ফরগিভ মি,,

–তুমি নিজেকে শুধরে নেও,,তাতেই আমি হ্যাপি।তোমার উপর শুধুমাত্র আমার ভবিষ্যৎ নয় আমাদের পুরো পরিবার নির্ভর করবে।

–আমি আর রাত করে বাড়িতে ফিরবোনা।এমন ড্রিংক ও করবোনা বাট আমি এত সহজে ড্রিংক করা ছাড়তে পারবোনা।ইউ নো আমি অনেক এডিক্টেড হয়ে গেছি।সো,,

–আই নো,,এসব এতো সহজে ছাড়া যায়না।তুমি চেষ্টা করো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।চেষ্টার উপর জোর রাখতে হবে।

–ওকে,,তুমি আমার উপর রাগ করে নেই তো,,

–রাগ তো করিনি,,অভিমান করেছিলাম,,ভেবেছিলাম তুমি আজকে আমাকে নিতে যাবে কিন্তু,

–আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু যাই হোক আমি তোমার সব কথা যেমন শুনছি তোমাকেও আমার কথা শুনতে হবে আর আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে,,হু,,

–ওকে ডান,,আমি আমার বরকে ছাড়া আর কাকে ভালোবাসবো।

–কাউকে না।
বলেই সামুকে বুকে জড়িয়ে নিলো।তারপর বললো,
–সামু,,আমি জীবনের এতকিছু বুঝিনা,,আমার কাছে জীবনের মানে নিয়ে চিন্তা করার মতো সময় ছিলো না,,সময় দেইনি জীবনকে।তাই তোমাকে দায়িত্ব দিলাম আমার জীবনের।ভুল করলে শোধরে দিও।

–আচ্ছা,,,

.
.
.
.
.

সামু কয়েকবার আদিকে ডেকেছে কিন্তু সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
সামু আদি পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–আদি উঠো।অনেক বেলা হয়েছে।অফিসে যাবেনা?
–উমম,,
–আদি আমার লক্ষী জামাইটা,,উঠো,,প্লিজ
–উহু,,
–এমন করে না দেখো কয়টা বেজে গেছে মাই সুইট কিউট হ্যান্ডসাম হাসব্যান্ড উঠো,,
–…
বুঝেছি তুমি ভালো কথার ছেলেনা।ভালো কথায় কাজ হবে না।ডোস দিতে হবে,,
সামু একগ্লাস পানি নিয়ে আদির মুখে ছুড়ে মারে।আদি ধরফরিয়ে উঠে বসে।
–সামু,,,এটা কি করলে?

–উঠানোর উত্তর পন্থা।তুমি না অফিসে যাও,,,

–ভালোভাবে ডাকলেই তো পারতে,,

–আল্লাহ,,,কি বলে এই ছেলে,ডাকিনি,,,অনেক আদর সোহাগ করে ডেকেছি কাজ হয়নি,,,,ভালো কথার ভাত নেই তাই এই পন্থা অবলম্বন করেছি।

আদি নামতে নামতে বললো, নিষ্ঠুর বড্ড নিষ্ঠুর,,আরেকটু ভালোবেসে ডাকবে তা নয় চুবানি দিলো সকাল সকাল,,

–হিহি,,

আদি ফ্রেশ হয়ে আসতেই সামু ওর জামাকাপড় এনে দিলো।স্যুট পড়িয়ে,টাই বেধে দিলো।চুল আচড়িয়ে দিয়ে ফোন,ওয়ালেট,গ্লাস এগিয়ে দিলো।শরীরে বডি স্পে লাগিয়ে দিলো।সামুর প্রচুর খুশি লাগছে।আদি অবাক হয়ে সামুকে দেখছে।
–তুমি এত খুশি কেন?

সামু মুচকি হেসে বললো,
–কারন আমার গর্ব করার সময় এসেছে তাই।তুমি জানো মেয়েরা তাদের হাসব্যান্ডের সাকসেসে কত খুশি হয়,,বেশিরভাগ ছেলেরা স্ত্রীর সাকসেস সহ্য করতে পারেনা,স্ত্রী তাদের উপরে উঠবে মেনে নিতে পারে না।কিন্তু মেয়েদের বেলায় উল্টো।

–বুঝেছি বুঝেছি,,কথা দিচ্ছি আমার জন্যও গর্ব করবে।

–মনে হচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলেকে স্কুলের জন্য রেডি করছি,,হিহি,

–প্যাক্টিস করে রাখো একদিন তো করতেই হবে,

সামু লজ্জা পেয়ে কিছু বললোনা।কিছুটা দূরে গিয়ে আদির দিকে চোখ বুলালো।ফরমাল ড্রেসে ড্যাশিং লাগছে।সামুর চোখে তাক লেগে গেচগে তা দেখে আদি বলছে,
–এভাবে নজর দিওনা,,তুমি যদি এভাবে নজর দেও বাইরের মেয়েরা কি করবে?

–নজর দিয়ে দিলাম যাতে অন্য কারো নজর যেন না লাগে,,তারপরও মেয়েদের থেকে দূরে থাকবা,,ওকে,,

–আচ্ছা,,এখন আমাকে গুড উইশ করে দেও তো,,

সামু মুচকি হেসে দুহাত গালে রেখে মাথা নামিয়ে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
–আল্লাহ তোমার সহায় হোক,তোমাকে ধৈর্য শক্তি দান করুন।সফল হও।

–ধন্যবাদ।

আদি আর সামু একসাথে ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতেই সবাই অবাক হয়ে আদিকে দেখছে,,
সামু বললো,
–সবার অবাক হওয়া শেষ হলে একটা কথা বলি আদি আজ থেকে অফিসে যাচ্ছে।
–কিহ!!!(সবাই একসাথে)
সবার খুশি আর ধরে কই।আদি অফিসে যাচ্ছে এ নিয়ে বাড়িতে ঈদ চলছে।

সন্ধ্যা বেলা।আদি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।সামু পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে আদির পিঠে মাথা এলিয়ে রাখলো।আদি সামুর হাত ধরে পিঠের সাথে মিশিয়ে নিলো।
–অফিস ভালো ছিলো কিন্তু কিছুটা বোরিং।

–অফিস তো আর বউনা যে বোরিং লাগবেনা।

–তাহলে আর কি বউকে পকেটে করে অফিসে নিয়ে যেতে হবে।

–আমি রাজি যদি পকেটে নিতে পারো।হিহি,,

আদি সামুকে টেনে সামনে এনে বললো,
–তুমি এতো ফাজিল কেন হুহ,,

–তুমি কম কিসে,,

–আমি ফাজিল,,

–হুহ,,

–ঠিক আছে,,
আদি সামুর থুতনি ধরে উচু করে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।

???

এভাবে কেটে গেলো ৬মাস।আদি এখন আর বন্ধুদের সাথে রাতভর আড্ডা দেয়না।না আগের মতো এত ড্রিংক করে।অফিসের কাজে মনোযোগী হয়েছে।কিন্তু রাগ,জেদ,ইগো,অহংকার সবই এক আছে।সামুর দুনিয়া সংকীর্ণ হয়ে আসছে।আদি ওকে ওর নিজস্ব গন্ডিতে সীমাবদ্ধ রেখেছে।আদি চায় সামুর সবটা জোরে,সামুর পুরো দুনিয়ায় শুধু মাত্র আদির বসবাস থাকবে।ওর চিন্তাভাবনা জোরে শুধু আদি থাকবে।এ নিয়ে অনেক মান-অভিমান চলেছে ওদের মধ্যে।

আদি অফিস থেকে ফিরে এসে দেখে সামু কানে দুল পড়ছে।দেখে বুঝা যাচ্ছে কোথাও যাচ্ছে।
–সামু কোথাও যাচ্ছো?

সামু কানে দুল পড়ে আদির দিকে ঘুরে বললো,
নিশি আপুর সাথে যাচ্ছি।আপুর কিছু কেনাকাটা আছে।

আদি অভিমানের সুরে বললো,
–কই আমাকে তো কিছু জানাও নি আর আমি বাসায় আসার পর ই যেতে হচ্ছে।

–আদি এভাবে বলছো কেন?আমাদের তো প্রি-প্ল্যান ছিলো না।হুট করে আপু বললো ইমার্জেন্সি বাইরে যেতে হবে আমি যেন তার সাথে যাই।আর বেশি টাইম লাগবেনা অনলি ওয়ান আওয়ার।

–যা খুশি করো।
বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
–উফফ ছেলেটা কথায় কথায় অভিমান করে।

,
,
,

রাতের বেলা~
সামুর ফোন বেজেই চলেছে।রুমে ফোন রেখে নিচে গেছে।আদি ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে।বারবার ফোন বেজেই চলেছে।আদি উঠে ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সামুকে ডাকছে।

–সামু কই তুমি,ফোন বাজছে।
আদি সিড়ির সামনে আসতেই সামু বলে পিক করো তুমি।

আদি ফোন পিক করে।
–হ্যালো,,

–এটা কি সামান্তা সেহনুজ চৌধুরীর নাম্বার?

–জ্বী,,আমি ওর হাসব্যান্ড বলছি।

–কিহ!!!সামান্তা মেরিড!!জানা ছিলো না তো,,যাইহোক ওর কোচিং থেকে ফোন করেছি।আমি ওর স্যার বলছি।একটু দরকার ছিলো সামান্তাকে,,

–হোল্ড করুন।ও একটু ব্যস্ত আছে।নয়তো কিছুক্ষণ পর ও ফোন করে নিবে।

–ওকে ধন্যবাদ।
আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।সামান্তা মেরিড কিনা এ নিয়ে এতো বিস্ময় কেন,,যত্তসব ফালতু স্যার।

সামু কফি নিয়ে আদির সামনে রেখে জিজ্ঞেস করে কে ফোন কিরেছে।আদি সব খোলে বললো।লাউডস্পিকার দিয়ে ফোন করো।

–কেন?

আদি আমতা আমতা করে বলল,
দেখি কি বলে,,তুমি ফাকিবাজি করছো কিনা,,

–আচ্ছা দেখো,,,
সামান্তা লাউডস্পিকারে দিয়ে ফোন করলো।সালাম কুশল বিনিময় করার পর স্যার বললেন,
–তুমি বিবাহিত?একটা ছেলে ফোন রিসিভ করে বললো তোমার হাসব্যান্ড।
–জ্বি স্যার আমি মেরিড।আমার হাসব্যান্ড ফোন রিসিভ করেছিলো।
–তোমাকে দেখলে তো বুঝাই যায়না,যে তুমি মেরিড,,,কতদিন হলো বিয়ের?
আদি চোখ পাকিয়ে সামুর দিকে তাকাচ্ছে।সামুর ও মেজাজ খারাপ হচ্ছে।স্যার বেশি পেচাল পাড়ছে তাও আদির সামনে কিছু বলতেও পারছেনা আবার ছাড়তেও পারছেনা।

–জ্বী একবছর হতে চলেছে।কি দরকার ছিলো স্যার?

–ও হ্যা,,শুনো,,
(পড়াশোনা, পরীক্ষার সাজেশন সম্পর্কে অনেক কথা বলে ফোন রাখলো।যেহেতু সামনে ফাইনাল এক্সাম)

ফোন রাখতেই আদি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি আর ওই কোচিং-এ পড়বেনা।

সামান্তা চমকে বললো,কেন?

আদি নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিলো।
–যে কোচিং-এ স্যারদের স্টুডেন্টদের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে এতো ইন্টারেস্ট সেখানে আমার ওয়াইফ পড়বে না।
আর কেন ফোন করেছিলো?

–শুধু আমাকেই না সব স্টুডেন্টদের ফোন করা হয়।এটাই কোচিং-এর রুলস।সামনে যেহেতু এক্সাম।তাই ফোন করে পড়াশোনার খবর নেয়।আর তুমি তো জানো মডেল টেস্ট চলছে আমাদের।

–,যাইহোক তুমি আর ওখানে পড়বেনা।

–আদি,,সামনে আমার এক্সাম।আর তুমি এসব বলছো?

–এর চেয়ে ভালো কোচিং-এ ভর্তি করে দেবো।টপ টিউটরদের লাইন লাগিয়ে দিবো তবুও ওখানে তুমি পড়বেনা।

–তুমি বললেই হলো,,

আদির মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।তবুও রাগটাকে কন্ট্রোল করে ল্যাপটপ রেখে উঠে দাড়ালো।তারপর সামুর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ওর চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,
–তাহলে কে বলবে জানেমন?কে বলবে,,?

সামু চুপ।ও আদির দিকে চেয়ে আছে।আদি যে হাইপার হয়ে গেছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।তাই চুপ করে আছে।

–তুমি আর ওখানে পড়বেনা।এটাই শেষ কথা।

সামুর কান্না পাচ্ছে।আদি যখন একবার বলেছে তো বলেছে কিছুতেই ওকে ওখানে পড়তে দিবেনা।এতদিন যাবত এখানে পড়ছে।নতুন জায়গায় এডজাস্ট করে নেওয়া কতটা ট্রাফ।তাছাড়া কিছুদিন পর পরীক্ষা।নতুন জায়গায় গিয়ে কি করবে,,কিভাবে তাল মিলাবে।সামু বেডে বসে মাথা নিচু করে দুহাত চেপে ধরে রেখেছে।না চাইতেই দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
যদিও বুঝা যাচ্ছে না ও কাদছে।কোনো শব্দ নেই।
আদি নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।হটাৎ সামুর দিকে তাকালো যেভাবে ছিলো সেভাবেই আছে।আর ওর মন বলছে সামু কাদছে।
আদি ল্যাপটপ রেখে উঠে দাড়িয়ে সামুকে হাত ধরে দাড় করালো।ঘটনার আকস্মিকতায় সামু চোখের পানিও মুছার সুযোগ ও পায়নি।তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিলো।আদির চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।সামুর হাত যেভাবে চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে হাড় গুড়া করে ফেলবে।

দাদে দাত চেপে বললো,
–ডোন্ট ক্রাই,,আই হেইট টেয়ারস,,ইউ নো দিস।কান্না থামাও নয়তো খুন করে ফেলবো।

সামু কান্না থামিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–একটা কথা কি জানো,,থাকতে মানুষ কদর করে না,,যখন আমি হারিয়ে যাবো তখন বুঝতে আমি কি ছিলাম,,

আদি সামুর দুবাহু চেপে ধরে বললো,
–হারিয়ে যাবে মানে কি,,,কোথায় যাবে তুমি?হাহ?কোথায় যাবে,,

সামু আদিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো, ধরো মরে গেলাম।
বলেই ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

আদি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।সামান্তার শেষের কথা শুনে ওর বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।কয়েক মিনিটের জন্য পাথর হয়ে গেলো।

সামান্তা আর ঘরে আসে নি।ডিনার টাইমে আদিকে খেতে ডাকতে এসে দেখে আদি বারান্দায় মেঝেতে বসে বেডে মাথা দিয়ে রেখেছে।

সামু গম্ভীর কন্ঠে বললো,
–খেতে এসো।
বলেই ঘুরে হাটা দিলো কিন্তু আদির কোনো হেলদুল নেই।সামু আবারো বললো,
–আদি টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে খেতে এসো।(কিছুটা জোরে)

আদি মাথা তুলে সামুর দিকে তাকালো।শান্ত আর অসহায় সে দৃষ্টি।একদৃষ্টিতে সামুর দিকে চেয়ে আছে।আদির এমন অদ্ভুৎ দৃষ্টি সামুকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।ওর এই দৃষ্টি দেখে সামুর বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।এক নিমিষেই সব রাগ অভিমান হারিয়ে গেলো।সামু আদির পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললো,
–কি হয়েছে জান আমার?

আদি কিছু না বলে সামুকে জড়িয়ে ধরলো।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।সামু কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবার বললো,
–আদি বলো কি হয়েছে?

–তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওনা,,

–কোথায় যাবো?কেন যাবো??

–কিছুক্ষন আগেই তো বলছিলে,,মরে যাবে,,কেন মরে যাবে?(ধরা গলায়)

সামু এবার আসল কাহিনি বুঝতে পারলো।সামু আদুরে গলায় বলল,
–আরে পাগল আমি কি সত্যি সত্যিই বলেছি নাকি?আমি তো রাগের মাথায় বলেছিলাম,,

–প্লিজ আর যাই বলো এমন কথা বলোনা,,আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আমি তোমাকে নিয়ে অনেক ভয়ে থাকি,,তাই কোনো রিক্স নিতে চাইনা।আমি চাইনা কেউ তোমার ছায়াও মাড়াক।তাই এমন করি,,,

–আচ্ছা,ঠিক আছে।ছেড়ে দেবো কোচিং।তোমার আগে আমার কাছে আর কিছুইনা।ছেড়ে দেবো।
(সামু দীর্ঘশ্বাস ফেললো।আদির এমন ইনসিকিউরড ফিলিংস ও আর নিতে পারছেনা।কিন্তু ওর কষ্টও সহ্য করতে পারেনা।কি করবে,,নিজের সব স্বপ্ন ইচ্ছা জলাঞ্জলি দেওয়া ছাড়া।)

–আমার রাগ উঠলে কন্ট্রোল করতে পারিনা।কিন্তু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমি রাগের মাথায় যদি তোমাকে চলে যেতে বলি তুমি কি চলে যাবে?
মাথা তুলে সামুর দিকে জিজ্ঞাস্যুক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। সামু ওর এমন প্রশ্নে অবাক হলো।

তারপর আমতা আমতা করে বললো,
–তুমি তো আমাকে চলে যেতে বলবেনা,,তাহলে এসব কেন বলছো?

–আমি কখনো বলবো না।তুমি চলে যেতে চাইলে আটকে রাখবো,,তবুও বলো না,,

–না যাবো না।

আদি বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে সামান্তার গালে,চোখ,ঠোঁটে চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে বললো,দ্যাটস লাইক মাই গার্ল।আমি জানতাম তুমি কখনো আমাকে ছাড়বেনা।আদি সামান্তার মাথা বুকে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে,

??”নেনা তো পালপাল দিলকো পাস জুরি রহে তুজসে হার এক সাস,,
সিনেসে তেরে সারকো লাগাকে শুনতি মে রহো নাম আপনা “??

সামান্তাও মুচকি হেসে আদির বুকে মাথা রাখলো।

??

সন্ধ্যায় আদি আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে।সামু রুমে ঢুকে ওকে এভাবে রেডি হতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো?

আদি চুল ঠিক করতে করতে বললো,
–ভুলে গেলে,,আজকে বিজনেস পার্টি আছে।নিউ প্রজেক্টের।

–ওহ,,হ্যা।ভুলেই গিয়েছিলাম তা একা যাচ্ছো যে?আমারও তো যাওয়ার কথা ছিলো

–বিজনেস পার্টিতে তুমি গিয়ে কি করবে?

–বাবার সাথে মা গিয়ে কি করবে?

–উফফ সামু সেখানে অনেক মানুষ আসবে তোমার যাওয়ার দরকার নেই।

–কেন,,কেউ কি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে?

–কি বলছো এসব,,দেখো আমার এসব বিজনেস পার্টি ভালো লাগে না কিন্তু যেহেতু প্রজেক্টের দায়িত্ব আমার তাই আমাকে এটেন্ড করতেই হবে।নয়তো যেতাম না।তোমার তো সেখানে কোনো কাজ নেই,,তাই যাওয়ার দরকার নেই,,

–বুঝেছি,,,

সামান্তার দিকে ঘুরে
–কি বুঝেছো?

–যা বুঝার বুঝেছি কিন্তু তোমাকে বলতে চাইনা,,
বলেই সামু ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

মনে মনে আদিকে গালাগাল দিচ্ছে,
আস্ত বিদেশ ফেরত পাগল,,পার্টিতে গেলে কেউ আমাকে নিয়ে যাবে,,কি মনে করে নিজেকে ওর বউ বিশ্ব সুন্দরী,, সবাই ওর বউয়ের জন্য পাগল হয়ে আছে,,।যত্তসব,,,ইচ্ছে করে পাবনা দিয়ে আসি,,কিন্তু পাবনা দিলে কিছুদিন পর আমি নিজেই পাগল হয়ে পড়বো।

রাতের বেলা,,আদি পার্টি থেকে ফিরার পর,, সামু আর আদি শুয়ে আছে সামু কিছু বলার জন্য হাশফাস করছে,তারপর বলেই ফেললো,
–আদি আমি আমাদের বাসায় যাবো,,আম্মু ফোন করেছিলো,,।তুমিও যাবে,,।

–সামু কি বলছো,,দেখছো তো নিউ প্রজেক্ট নিয়ে কতটা বিজি আছি,,আর তুমি বলছো তোমাদের বাড়ি যাওয়ার কথা,,।সম্ভব না,,

–উফফ আমি তো ভুলেই গেছি,আমার হাসব্যান্ড একজন বিজনেস ম্যান,,সে খুব বিজি।

–সব কিন্তু তোমার জন্য।ভুলে যেও না,,

–আমি তা বলিনি,,আসলে আমার খুব যেতে ইচ্ছে করছে। বিয়ের এক বছর হয়ে আসছে।একবারো যাইনি।আম্মু,আব্বু বারবার বলছিলো।আর সামনে পরীক্ষা,, তখন তো আর যেতে পারবোনা।

–বুঝতে পারছি কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

সামু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, তাহলে আর কি আমি একাই যাই,,

আদি চমকে গিয়ে বললো,
–তুমি একা যাবে,?

–তুমি না গেলে কি করবো,,তুমি প্রজেক্ট নিয়ে বিজি।তুমি তোমার কাজ করো আমি কিছুদিন থেকে আসি।পরীক্ষার পর দুজনে এক সাথে গিয়ে কিছুদিন থেকে আসবো।

–কয়দিন থাকবে?

সামু খুশি হয়ে বললো,
–এক সপ্তাহ।

আদি বুকের কাছে হাত রেখে অদ্ভুৎ শব্দ করে বললো,,
–এক সপ্তাহ!!আল্লাহ কি বলে,,??

–কি হলো?

–ছোটখাটো হার্ট এটাক,,

সামু ভ্রু কুচকে বললো, বাপের বাড়ি যাচ্ছি এক সপ্তাহ থাকবো না?

–হুম যাও থাকো এসে দেখবে মরে গেছি,

–ছিঃ কি সব বলো,,আচ্ছা যাও ৫দিন থাকবো,,

–না ৩দিন,,এতদিন আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।

–আদি প্লিজ।

–আচ্ছা ৪দিন।

সামু হতাশ হয়ে বললো, ওকে ডান।

–কবে যেতে চাও?

–কালকেই,,
তুমি কি বলো?

–উমম,আচ্ছা,কালকেই যাও।তবে মাত্র ৪দিন মনে থাকে যেন,,(মন খারাপ করে)
সামান্তা খুশিতে আদিকে ঝাপটে ধরে গালে চুমু খেয়ে বললো, থ্যাঙ্কিউ।

–কি স্বার্থপর রে বাবা,,যেতে বলছি তাই কিস করছে।এমনিতে তো চিনেই না,,

–আদি তুমি মিথ্যা বলছো,,প্রতিদিন সকালে কে দেয়,,

–আমি,,

–উহ,,আমি আর তোমাকে সকালে রেডি করে দেবোনা,,

–আরে বউ তো আমার সত্যি সত্যিই রেগে যাচ্ছে,,আমি তো মজা করছি।চলো একটা চুমু খাই,,

–উমম,,

সামু ভোর বেলা উঠে ব্যাগ প্যাক রেডি হয়ে গেছে।আদি গাল ফুলিয়ে বসে আছে।আদিকে টেনে তুলে রেডি করিয়ে দিচ্ছে অফিসের জন্য।রেডি করা শেষে কপালে কিস করলো।
–একটা কেন?

–তাহলে?

–বাকি তিন দিনের টা?

–চালাক,,প্রচুর চালাক,,
সামু গুনে গুনে আরো তিনটা কিস করলো,,
–সামু আবারো বলছি অনলি ৪দিন।এর বেশি হলে সাইক্লোন হয়ে যাবে।মাইন্ড ইট।

তারপর দুজন দুজনের গন্তব্যের দিকে ধাবমান।

চলবে…..

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১৯

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা?

পর্ব-১৯

ফাবিহা নওশীন

??
রাত ১০টা সামু ক্লাসের পড়া তৈরি করছে।আদি পাশে এসে বসলো।সামু একবার আদিকে দেখে আবার পড়ায় মনোযোগ দিয়ে বললো,
–কি জনাব,,আজ বন্ধুরা পাত্তা দেয়নি?
–কেন?এমন কেন মনে হচ্ছে?
–কারণ রাত ৩টার গাড়ি থুরি মানুষ ১০টায় বাড়ি ফিরলো যে,,
— তখন তো বউ ছিলো না।এখন বউ আছে তাই বাইরে মন টিকে না,,
–উহো..
–কি করো?
–পড়ছি,,তোমার মতো শিক্ষিত হতে হবে তো,,
–এত পড়তে হবেনা,,একটু আমার দিকে নজর দেও,,
সামু চোখ ঘুরিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো।
–নজর দেওয়া শেষ।
আদি মুখ ফুলিয়ে বললো, হুহ,,

আদি বারান্দায় চলে গেলো।সামু মুচকি হেসে পড়া রেখে ওর পিছনে পিছনে গেলো।আদি রেলিং ধরে আকাশের দিকে চেয়ে আছে।বড় গোলাকার চাদ উঠেছে।
সামু পিছনে থেকে বললো,
–আদি আমি ভাবছি কি এখানে একটা বেড আনা দরকার,,
আদি চমকে বলে,
–বেড??
–হুম।আমাদের বারান্দাটা অনেক বড়।আর খোলা বারান্দা।একপাশে একটা সিংগেল বেড থাকবে যেখানে চাদ উঠলে আমরা দুজনে জোস্না বিলাশ করবো।
–গুড আইডিয়া।কালই চলে আসবে।কিন্তু সিংগেল বেড কেন?জায়গা হবেনা,,ডাবল আনি।
–সিংগেল বেড নামেই সিংগেল।সেখানে খুব ভালো ভাবে ই দুজন মানুষের জায়গা হয়।ডাবল বেড এনে জায়গা খাপাতে চাইনা।আর ওপাশে একটা ঝুলা আইমিন দোলনা থাকবে।ওপাশে তোমার রকিং চেয়ার।
–আর এখানে তুমি পছন্দ করে কিছু অর্কিড আর গোলাপের ফুল গাছ এনে রাখবে।ছোটখাটো গার্ডেন হবে।জোস্নারাতে দারুণ লাগবে।
–বাহ!!আমাদের সাজানো সংসার।
–হুম আমাদের সংসার।বাই দ্যা ওয়ে তুমি এখানে কি করো পড়তে বসো নয়তো স্যার,মেমিরা ক্লাসে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখবে।ছিঃ
সামু ভেংচি কেটে চলে গেলো।

সকালে নাস্তার টেবিলে,,
আদির বাবা আদিকে বলছে,
–অনেক তো হলো আদি,আর কত?এবার অন্তত একটু নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবো।২৬বছর হতে চলেছে এখন তো আর বাচ্চা নও।বিয়ে করেছো কদিন পর নিজেই বাচ্চার বাবা হয়ে যাবে।এবার একটু দায়িত্ব নিতে শিখো।আমার বয়স হয়েছে আমার পড়ে তো তোমাকেই সব দেখতে হবে।তাই বলছি অফিসে বসে সব বুঝে নেও।কয়েকদিনের মধ্যেই তুমি অফিসে যাচ্ছো আর কোনো বাহানা চলবেনা।মনে রেখো।

আদি আর যাইহোক বাবার সামনে হু হা করতে পারেনা।কিছু না বলে কাটা চামচ প্লেটে ঘুরাচ্ছে।সামু ব্যাপারটা বুঝতে পারছে।আদির বাবা ডাইনিং ছাড়তেই আদি কাটা চামচ টুং শব্দ করে প্লেটে ফেলে দিয়ে ডাইনিং ত্যাগ করলো।সামু বিষয়টিতে একদম অবাক হয়নি।নাস্তা শেষে রুমে গিয়ে দেখে আদি রাগে ফুসছে।

–হুয়াট হ্যাপেন্ড আদি?প্লিজ কাম ডাউন।

–কাম ডাউন?লাইক সিরিয়াসলি?
বাবা আমাকে বিয়ে দেখাচ্ছে।বিয়ে করেছি দায়িত্ব কেন নিচ্ছি না?অফিসে কেন যাচ্ছিনা?এবার বুঝতে পারছি বিয়ের জন্য কেন হটাৎ পাগল হয়েছিলো,,

বলেই আদি সামুর দিকে তাকালো।সামুর মুখ ভার করে রেখেছে।
আদি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,
–সামু সরি,,বাট আমি তোমাকে মিন করে কিছু বলিনি।না আমাদের বিয়ে নিয়ে কিছু মিন করেছি আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছি আমার বিয়ে টিয়ে কিছুই না বাবা অফিসে বসানোর জন্য আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উতলা হয়েছেন।আমি তো বলছিনা যে আমি দায়িত্ব নিবোনা কিন্তু এখনি কেন?আর এর সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক?

–তুমি কি আমাকে দিয়ে আসবে?না আমি ড্রাইভার নিয়ে চলে যাবো?

আদির মনে হচ্ছে সামু রাগ করেছে।ওর সাথে যাওয়া উচিত।যেতে যেতে রাগ ভাংগাবে।আর সামু ভাবছে আমার সাথে চলো যেতে যেতে তোমার রাগ ঠান্ডা হলে ঠান্ডা ভাবে কিছু বুঝাবো।

–না চলো আমিই যাচ্ছি।লেটস গো।

গাড়িতে কিছুক্ষণ পর,,,

–আদি দেখো সবসময় সামান্য বিষয়ে এত ভায়োলেন্ট হওয়া ঠিক না।তোমার অফিসে বসতে ইচ্ছে করছেনা বাবাকে সুন্দর করে বলবা যে তোমার সময় দরকার।তুমি এখনি দায়িত্ব নিতে চাওনা।ব্যাস।কিন্তু এ দায়িত্ব তো তোমাকে নিতেই হবে।স্টাডি শেষ করে ছেলেরা নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবে।তোমাকেও ভাবতে হবে।চিল্লাচিল্লি করে,ভায়োলেন্ট হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়না বরং সমস্যা আরো বেরে যায়।
দেখো তুমি ভাবতে পারো যে তোমার বাবার অনেক আছে তুমি কেন কাজ করবে?কিন্তু একটা কথা কি জানো বসে খেলে রাজার ধনও শেষ হয়ে যায়।

বিকেলে-
সামু ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরেছে।বাসায় এসে যে আদিকে পাবেনা জানে।ফ্রেশ হয়ে আসতেই আদির মেসেজ।
“সামু বারান্দা চেক করো,তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
মেসেজ পেয়ে সামুর চোখ চকচক করছে।এক দৌড়ে বারান্দা।বারান্দায় গিয়ে অবাক।গতকাল রাতে যেমনটা বলেছিলো ঠিক তেমন ভাবেই সাজানো।সুন্দর একটা বেড,তাতে অনেক গুলো কুশন সুন্দর করে সাজানো।একপাশে দোলনা।বারান্দায় লাইটিং করা হয়েছে।ফেরি লাইট লাগানো।সবকিছু সামু ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।আদির আরেকটা মেসেজ এলো।

“গার্ডেনে অনেক গুলো ফুলের গাছ আছে।সেখান থেকে তোমার পছন্দ মতো গাছ এনে বাগান সাজাও।আমি এসে দেখবো”

সামু নিয়ে চলে গেলো।সেখানে অনেক গুলো চারা গাছের টপ।দেখেই মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে আনা হয়েছে।সামু পছন্দ মতো অনেকগুলো গাছ সিলেক্ট করে সার্ভেন্ট দিয়ে নিয়ে উপরে নিয়ে গেলো।তারপর সাজানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

??

রাত ১২টা,
সামু একা বারান্দায় বেডে শুয়ে শুয়ে আকাশের চাদ দেখছে।যদিও চাদ আদির সাথে দেখার কথা ছিলো কিন্তু আদি বাসায় ফিরেনি।একবার ফোন করেছিলো কিন্তু আদি পিক করে নি।তাই আর অভিমান করে ফোন দেয়নি সামু।ডিনার টেবিলে কিছু একটা বলে এড়িয়ে গেছে।সামু অপলকভাবে চাদের দিকে চেয়ে আছে।রাত বেড়েই চলেছে,,১.৪৫মিনিট।সামু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মিনমিন করে বললো,
“আদি আজ তোমার ঘরের নেশা নেই,,বাইরের নেশায় আসক্ত হয়েছো।”

??

ফুটলো সন্ধ্যামণির ফুল আমার মনের আঙিনায়
ফুল-ফোটাতে কে এলে ফুল ঝরানো সাঁঝ-বেলায়।।
আজ কি মোর দিনের শেষে
উঠলো চাঁদ মধুর হেসে
কৃষ্ণা তিথির তৃষ্ণা মোর মিটলো ওই জোছনায়।।
আজ যে আঁখি অশ্রুহীন কি দিয়ে ধোয়াই চরণ
সুন্দর বরের বেশে এলে কি আমার মরণ!
দেখ বসন্তের পাখি
কোয়েলা গেছে ডাকি
আনন্দের দূত তুমি ডাকিয়া ফুল ফোটায়।

___কাজী নজরুল ইসলাম??

????

আদি বাড়িতে ফিরলো রাত ২৳.৩০মিনিটে।রুমে এসে দেখে বেড ফাকা।সাথে সাথেই বারান্দায় গেলো।সামান্তা গুটিশুটি হয়ে নতুন আনা বেডে ঘুমিয়ে আছে।আদি মুচকি হেসে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা টিশার্ট আর টাওজার পড়ে বারান্দায় এলো।সামুর পাশে গিয়ে বসে ফিসফিস করে বললো,
–আদি তোর কপালে শনি আছে।বউ তোকে মেরে হাড্ডি ফাটিয়ে দিবে।চুপচাপ কোলে নিয়ে বেডে নিয়ে চল।জাগানোর দরকার নেই।ঝড় তুফান,সাইক্লোন,টর্নেডো সব কাল সকালে দেখা যাবে।

আদি সামুকে আস্তে করে কোলে তুলে বেডে নিয়ে শুইয়ে দিলো।ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো।

??
সকালবেলা-
ঘুম ভাংতেই সামু নিজেকে বেডে আবিষ্কার করে।পাশেই আদি অঘোরে ঘুমাচ্ছে।রাতে আদিই ওকে তুলে এনেছে বুঝতে বাকি নেই।একবার ওর দিকে চেয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিলো।আদির দিকে একবারো তাকায়নি।না জাগিয়েছে।বড্ড অভিমান হচ্ছে।রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।অভিমানের দেয়াল ভেদ করে ভালোবাসা জেগে উঠছে।উফফ কি জ্বালা।সামু আদির সামনে গিয়ে ওকে মন ভরে দেখে নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।ওর ইচ্ছে করছে আদির কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিতে কিন্তু আবার অভিমান এসে ভর করলো।সামু হনহন করে বেরিয়ে গেলো।

আদির ঘুম ভাংতেই সামুকে খোজতে লাগলো।কিন্তু সামু বিছানায় নেই।রুমেও কোথাও নেই।আদি বিছানায় হাতরে ফোন খোজছে।ফোন পেতেই হাতে নিয়ে দেখে ১০টা বেজে গেছে।তারমানে সামু ভার্সিটি চলে গেছে।
আদি উঠে বসে,
–সামু আমাকে না বলেই চলে গেলে,অন্তত ডেকে যেতে পারতে।
একটা ফোন করি,,নাহ এখন তো ক্লাস চলছে।বরং মেসেজ করি,,
“সামু আমাকে না বলে চলে গেকে,রাগ কিভখুব বেশি করেছো,,যদি বেশিই রাগ করে থাকো তাহলে ঘুম থেকে তুলে রাগ দেখিয়ে যেতে পারতে।”

সামু অফ পিরিয়ডে ফোন হাতে নিতেই আদির মেসেজ পেলো।কোনো উত্তর দিলোনা।সামু আসায় আছে আদি ওকে আজ নিতে আসবে।ওর অভিমান ভাংগাবে।আদিও ভাবছে সামুকে আজ সন্ধ্যায় কোচিং থেকে আনতে যাবে।কিন্তু কিছুতেই সময় কাটছেনা।তাই বাইরে গিয়ে বইবন্ধুদের সাথে চিল করে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলো।কিন্তু হলো উল্টো সেখানে গিয়ে ফেসে গেছে কিছুতেই আসতে পারছেনা।অপর দিকে সানু হতাশ হয়ে ড্রাইভারের সাথে বাড়ি ফিরে গেলো।বাড়িতে গিয়ে আদিকে পেলোনা।ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।

১১টায় রাতের খাবার খেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।কিছুক্ষণ পর সামু দরজা খোলার শব্দ পেলো।বুঝতে পারলো আদি এসেছে।চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে রইলো।
আদি সামুকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ফোনের স্কিনে তাকালো।১১টা৩৬বাজে।

–যা বাবা,আজ তো তাড়াতাড়িই এলাম।তবুও সামু ঘুম।না আজ যে করেই হোক কথা বলতে হবে।

আদি সামুর পাশে গিয়ে বসে মুখ থেকে চাদর সরিয়ে গালে হাত রেখে বললো,
–সামু,উঠো।সামু ময়না আমার,,লক্ষীসোনা বউ আমার।উঠো প্লিজ।

সামুর অনেক হাসি পাচ্ছে আদির কথা শুনে কিন্তু হাসলে চলবেনা।হাসি তো ফাসি,,
–সামু কলিজা আমার।জানু উঠ না,,প্লিজ।

সামু নড়েচড়ে উঠলো তারপর ঘুম ঘুম চোখ করে বললো,
–কি হয়েছে,বিরক্ত করছো কেন?

–জান আমার উঠো।আমি জানি তুমি অনেক রাগ করে আছো।প্লিজ সরি।

–জান আমার,,আমি এখন উঠবোনা,,সরো এখান থেকে,,
আদি সামুকে একটানে উঠে বসালো।সামু চোখ পাকিয়ে আদির দিকে তাকালো।আদি ৩২দাত বের করে হাসি দিলো।সামুর রাগ আরো বেরে গেলো,,
–হুয়াট দ্যা হেল ম্যান,,

–জান প্লিজ,,সরি এই দেখো কান ধরছি,(দুহাত কানে ধরে)

সামু ফিক করে হেসে দিলো কিন্তু সামুর কাছে আদির হাফভাব ভালো লাগছে না।কথা কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে।আদির মুখের দিকে চেয়ে আছে।আদি সামুর দুগাল ধরে ঠোঁটের দিকে এগুতেই সামু কড়া বাজে গন্ধ পেলো।গন্ধে ওর পেটের ভিতরে সব গুলিয়ে আসছে।সামু আদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নাক চেপে ধরলো তারপর বললো,
–ড্রিংক করেছো?

–হুম একটু বেশি।একদম এটুকু,,(হাতের আংগুলের দুকড়ি দেখিয়ে)

সামান্তা ওর কাছে গিয়ে শুকে বললো,
–একটু,,?তুমি যে কি পরিমাণ খেয়েছো তা তো বুঝাই যাচ্ছে।এর জন্য তোমার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে,,আদি এসব কি?

–সামু এমন রিয়েক্ট কেন করছো তুমি তো সব জানোই,,আমি ড্রিংক করি,,আমার লাইফ স্টাইল সব জানো তবুও এমন রিয়েক্ট করছো কেন?

–যা খুশি করো বাট এসব করে আমার কাছে এসোনা।

–কেন আসবোনা?

চোখমুখ শক্ত করে বললো,
–আমি নিষেধ করেছি তাই।আর কি বললে আমি রিয়েক্ট কেন করছি?কোনো মেয়ের হাসব্যান্ড ড্রিংক করে মাঝরাতে বাড়িতে ফিরবে তা নিয়ে নিশ্চয়ই সে গর্ব করবেনা।দেখো তোমার আর আমার সম্পর্ক একদম আগের মতো হয়ে গেছে।কতটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।শুধু পার্থক্য এটাই আগে গেস্ট হাওজে থাকতাম আর এখন তোমার রুমে।এই জন্য দিনে একবার দেখা হচ্ছে।এই,,।আগে যে তোমার এই বিহেভিয়ার নিয়ে আমার কোনো আপত্তি ছিলো না এটা কে বলেছে,,আগে এ নিয়ে কিছু বলার অধিকার ছিলো না।আমি তোমার স্ত্রী হলেও তুমি আমাকে অধিকার দেওনি।তাই কিছু বলতে পারিনি।তুমি এখন আমাকে স্ত্রীর সম্মান, অধিকার দিয়েছো তাই বলছি।বলার সাহস পাচ্ছি।সব মেয়েই চায় তার হাসব্যান্ড সবার চেয়ে বেষ্ট হোক আমিও যদি সেটা চাই তাহলে এতে আমার দোষটা কোথায় আদি?টেল মি,,,

–কিন্তু সামু আমি আমার লাইফস্টাইল এমন, এতেই আমি অভস্ত্য।চেঞ্জ করতে পারবোনা।আর আমি খারাপ কিছু করছিনা।এই বয়সে ছেলেরা বন্ধুবান্ধব নিয়ে একটু বিজি থাকবে স্বাভাবিক।

–বন্ধুদের ছাড়ার কথা আমি বলিনি,,আমি শুধু বলেছি,,তোমার পরিবার আছে,বউ আছে তাদেরকেও তোমার সময় দেওয়া উচিত।তারাও তোমার কাছ থেকে কিছু আশা করে।আর এই যে মাঝরাতে ড্রিংক করে বাড়ি ফিরা কোনো ভদ্রতা নয়।সেটা যে সোসাইটি হোক।সারারাত বন্ধুদের সাথে থাকতে হবে তা তো নয়।আর এই যে এতো ড্রিংক করো,,নেশাখোরদের মতো,,তুমি ছেকা খেয়েছো,,লাইফ নিয়ে হতাশা আছে তোমার?কোনো কিছুর অভাব আছে তোমার?নেই তো তাহলে,, হুয়াই?

–আমার অভ্যাস হয়ে গেছে,,,

–ভালো ভদ্রলোকের ছেলের লেইট নাইট ক্লাবে না গেলে চলেনা,,
এক কাজ করি আদি কালকে গিয়ে আমিও মেম্বার হয়ে আসি।তারপর লেইট নাইটে পার্টি করে,ড্রিংক করে বাড়ি ফিরবো,,কি বলো?

আদির চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো।চিতকার করে বললো,
–সামু,,,!!

–উহু,,একদম চিতকার করবেনা,,এখন কেন লাগছে,,আমি এসব করলে তুমি বাহবা দিবে না কিন্তু আমার কাছ থেকে বাহবা আশা করবে,,,ইজ ইট এ জোক?
যাইহোক তোমাকে এসব বলে লাভ নেই।আমার ভার্সিটি আছে সকালে উঠতে হবে,,আমি তো দুপুর পর্যন্ত আরামসে ঘুমাতে পারবোনা,,

সামু কথাটা বলেই ঘুরে শুয়ে পরলো।আদি উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ইচ্ছেমতো চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় চলে গেলো।সামুর বলা কথাগুলো ভাবছে।

কিছুক্ষণ সামুর উপস্থিতি টের পেলো।সামু ওর পাশে বসে ঠান্ডা গলায় বলল,
–আমি জানি আমার কথাগুলো তোমার ভালো লাগেনি,কিন্তু এটাই বাস্তব কথা।আমি তোমার ভালোর জন্যই এসব বলেছি।তুমি এখন ছোট না,তোমার দায়িত্ব নেওয়ার বয়স হয়ে গেছে।এখন বাবা আছে তোমার কাধে হাত রাখার জন্য কিন্তু একসময় তিনি থাকবেন না নিজেকে এখনি তৈরি করো যাতে তুমি তোমার প্রজন্মের কাধে হাত রাখতে পারো,,সব মেয়েরা দায়িত্বশীল স্বামী পছন্দ করে,,আমার কথায় কষ্ট পেলে সরি।কিন্তু আমার যা মনে হয়েছে তাই বলেছি।
এসো ঘুমাবে,,

–তুমি যাও আমি আসছি।

–আচ্ছা,,

আদি সামুর কথার সারাংশ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে।সামু চায় ও দায়িত্ব নিক।

চলবে,,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১৮

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা?

পর্ব-১৮

ফাবিহা নওশীন

??
সামুর পিছনে আদি হাতা ফোল্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছে।তা দেখে নিশি হা হয়ে আছে।দুজন নামতেই নিশি কিছু একটা খোজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।সোফার সামনে পিছনে, নিচে,উপরে,সেন্টার টেবিলের উপরে,নিচে খোজছে।তা দেখে সামু জিজ্ঞেস করলো,
–আপু কি খোজ?

নিশি কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে বললো,
–চশমা খোজি,,ইদানীং মনে হচ্ছে একটু বেশি দেখি।

সামু অবাক হয়ে বললো,বেশি মানে?

–কি আর বলবো দুঃখের কথা,,ইদানীং যা চোখের সামনে না থাকে তাও দেখি।যেমন দেখ আমার মনে হচ্ছে তোর পিছনে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে তাও ভাইয়ার মতো চেহেরা,,কিন্তু তোর পিছনে তো কেউ নেই তাইনা,,এত সকাল সকাল কি ভাইয়া উঠে বল?

সামু আর আদি এবার আসল কাহিনী বুঝতে পারলো।সামু মুখে হাত চেপে হাসছে।আদি এসে নিশির চুল ধরে টান দিলো।তারপর বললো,
–মজা করা হচ্ছে না?তোর চুল ছিড়ে কাকের বাসায় দিয়ে আসবো।

নিশি চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
–সে না হয় দিস,,কিন্তু এখন ছাড়,,একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে,,

–কি কাজ?

–সূর্য্যি মামাকে দেখবো?

আদি চুল ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,,
–কেন?সূর্যকে দেখার এত তাড়া কেন?

–আরে দেখতে হবে না সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে,,যে আমার ভাই সকাল সকাল লিভিং রুমে হাজির,,

–তবে রে,,!!

নিশি দৌড় দিলো ভাইয়ের মার খাওয়ার আগে।সামু হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।তা দেখে আদি বলছে,
–হাসলে কি পেট ভরবে?পেট ভরার জন্য খেতে হবে,,

–হুম,,
সামু বুঝতে পারলো আদি ওর কথা ওকেই শুনাচ্ছে।কিন্তু হাসি চেপে রাখতে পারছেনা।মুখে হাত দিয়ে আটকে রেখেছে।তা দেখে আদি বললো,
–ভালোভাবেই হাসো,,নয়তো হাসি আটকে রাখার ক্রাইমে মরে যাবে।

সামান্তা হাত সরিয়ে জোরে জোরে হেসে দিলো।আদি মুখ ফুলিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো।সামু হাসতে হাসতে নিশির কাছে গেলো।দূর থেকে বড়রা ওদের কান্ড দেখে হেসে যাচ্ছে।আদির মা বললো,
–আমার পরিবারের খুশিতে যেন কারো নজর না লাগে।দোয়া করি এভাবেই খুশি থাকুক সবাই।

নাস্তা শেষে সামু মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।
–আম্মু আর কিছুদিন থেকে গেলে হয়না?
–মেয়ের শ্বশুর বাড়ি কতদিন থাকবো?
–কি বললে এটা তুমি?
–আরে মজা করলাম রাগ করিস কেন?কতদিন ধরে এসেছি।সামিরের স্কুল আছে।জানিসই তো তোর ভাই তোর চেয়ে বড় ফাকিবাজ।পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে অন্য সময় আবার আসবো।তোর সময় হলে তুই আদিকে নিয়ে ঘুরে আসিস।
আর শোন,,আহনাফ ভাই আর ভাবি খুব ভালো মানুষ।তোকে খুব ভালোবাসে।অনেক কপাল করে এমন শ্বশুর শাশুড়ী পেয়েছিস।সবসময় তাদের মেনে চলবি।সব কথা শুনবি।খেয়াল রাখবি।সম্মান করবি।যত কষ্ট হোক না কেন নিজের আগে পরিবার এটা মনে রাখবি।নিশিও তোকে খুব ভালোবাসে।ওর খেয়াল রাখবি।কষ্ট পায় এমন কিছু করবিনা।আর হ্যা,,লাস্ট টাইম যা করেছিস,,এমন কাজ কাউকে না জানিয়ে করবিনা।ভাগ্য ভালো ছিলো তাই বেচে গেছিস কিন্তু সবসময় কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়না।বুঝলি,,কোনো কিছু করার আগে আদিকে জানাবি।
আর হ্যা,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আদিকে নিয়ে।ও তোর হাসব্যান্ড।সবকিছুতে ওর প্রায়োরিটি আগে দিবি।ওর বয়স কম,ম্যাচুরিটির অভাব আছে।কিছুটা বাচ্চামি স্বভাবের।বয়সের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।ওর দিকে খেয়াল রাখবি।ছেলেটা তোকে খুব ভালো বাসে।শুনেছি অনেক রাগী, জেদি।যখন রাগারাগি করবে তখন মুখে মুখে তর্ক করবিনা।দুজন রেগে গেলে চলবেনা একজনকে অন্তত ঠান্ডা থাকতে হবে।তাই যখন রেগে যাবে চুপ থাকবি।পরে বুঝিয়ে বলবি।ওর সব কথা মেনে চলবি।ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখবি।স্বামীকে খুশি রাখতে না পারলে নারীর জীবন বৃথা।সংসারে স্বামীর অবস্থান প্রথমে। বুঝেছিস?

–হুম।(এতো টিপিক্যাল কেন তুমি।মাথা ঘুরছে এসব শুনে)

সামু নিশির রুমের পাশ দিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতেই নিশি হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এলো।তারপর সামুকে ধরে গান গাইছে,,
আগার তুম মিল যায়ে জামানা ছোর দেংগে হাম,,

–সকাল সকাল পাগল হয়েছো?

–ওই পাগল হবো কেন হা?খুশিতে তো তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস,,

–মানে,,

তোর ফেইস দেখেই সবাই সব বুঝতে পারবে।এতো গ্লো করছো কেন গো ভাবি?
[ভ্রু নাচিয়ে ]

–তুমি নিশ্চয়ই গতরাতের গল্প শুনতে চাইছো?

–অবশ্যই,,,

–তাহলে চলো আমার রুমে।তোমার ভাইয়ের সামনে বসিয়ে বলবো।

–ওই,,কি বলিস।যা সর,,

–হিহি,,

সামু রুমে গিয়ে দেখে আদি ঘুমাচ্ছে।সামু আদির পাশে বসে চেক করছে আদি কি সত্যিই ঘুমাচ্ছে কিনা,,
সামু আদিকে একটা চিমটি কাটলো।কোনো হেলদোল নেই।তাই বুঝতে পারলো বেচারা ঘুমের রাজ্যের রাজা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে।উঠে যাবে তখনই আদি সামুকে টান মেরে নিজের বুকে ফেলে দিলো।সামু আদির কাছে এমন কিছু আশা করেনি।ও তো ভেবেছিলো আদি ঘুমাচ্ছে।
আদি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হু,,,চিমটি কাটা হচ্ছে?
–তুমি ঘুমাও নি?
–ঘুমাতে কই দিলে?চিমটি কাটছো কেন?
–আমি ভেবেছি ঘুমাচ্ছ?
–ওহহ আচ্ছা,আমি ঘুমিয়ে গেলেই চিমটি দেও,,
–এই না,,আমি তো চেক করছিলাম ঘুমিয়েছ কিনা?
–ঘুমালে কি করতে?ঘুমের মাঝে আমার ইজ্জত লুটে নিতে?(বাকা হেসে)
–ছিঃ ছাড়ো।
–চলো একটু রোমান্স করি,,
–সারাক্ষন একি কথা রোমান্স আর রোমান্স,,
সত্যি করে বলো তো এর আগে কার সাথে রোমান্স করেছ?
–এর আগে তো আর বিয়ে করিনি,,রোমান্স ও জাগেনি,,,রোমান্স কিভাবে করবো?
রোমান্স করতে বউ দরকার।আর এখন সুন্দর একটা বউ আছে কিন্তু বউ আমার রোমান্স ই করতে চায়না।কি কপাল আমার,,, (বাচ্চাদের মতো মুখ করে)

সামু আদির ফেস দেখে হাহা করে হেসে দিলো।
–বউ এভাবে হেসো না বুকে বড় লাগে,,
–কি লাগে বুকে,,
–তীর,,
–কোথায়?
–এই যে এইখানে (আংগুল দিয়ে দেখালো)
সামু আদির বুকে কিস করতেই আদি হা,,
আদি কিছু বলতে যাবে তখনই সামু আদির মুখ চেপে ধরলো।
–নো মোর টক।
বলেই সামু আদির বুকে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইলো।আদি মুচকি হেসে সামুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
কয়েকঘন্টা পর সামুর ঘুম ভাংলো।আদির নিশ্বাস উঠানামা করছে।তারমানে ঘুমাচ্ছে।সামু আদিকে ছাড়িয়ে উঠে গেলো।

.
.
.

বিকেলে সামুর আম্মু,আব্বু,সামির চলে যাচ্ছে।মেইন ডোরের সামনে দাড়িয়ে সামু কাদছে।সামুর আম্মু,আব্বু অনেক বুঝিয়ে সামুকে শান্ত করেছে।সামুর আব্বু আদিকে বললো,
–বাবা,তুমি ওকে দেখে রেখো।
–আংকেল চিন্তা করবেন না।আমি আছি।

.
.
.

রাতের বেলায় সামু অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।দৃষ্টি শূন্যে স্থির।না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কোনো কিছুর শব্দে চোখের পানি মুছে নিলো।আদি এসে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখলো।
–মন খারাপ?
–হু,
–মন খারাপ করোনা আমি আছি তো,,
সামু ঘুরে আদির বুকে মাথা রাখলো।কেমন অন্য রকম প্রশান্তি পাচ্ছে।আদির শার্ট খামচে ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করছে।
–তুমি আছো বলেই আমি এতটা শান্ত,,জানো যখন এখানে এসেছি প্রথম প্রথম নিজেকে প্রচন্ড একা লাগতো।মা,বাবা,নিশি আপু আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে,অনেক সাপোর্ট দিয়েছে,
আমার জন্য সবকিছু সহজ করে দিয়েছে যাতে আমি অস্বস্তিবোধ না করি।এতকিছুর মাঝেও কোথাও একটা কিন্তু থেকে যেতো।দিনশেষে একা লাগতো।খুব করে চাইতাম নিজের একজন হোক,সম্পূর্ণ নিজের।এখন যেমন তুমি আছো।নিজের একজন।আমার নির্ভরতার জায়গা।

আদি সামান্তার মুখ তুলে ধরে বললো,হুম সারাজীবন থাকবো,একে অপরের নির্ভরতা হয়ে।
দুজনের দৃষ্টি স্থির।একে অপরের চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করছে।আদি মুচকি হেসে সামুর কোমড়ে এক হাত দিয়ে অপর হাত চুলে ডুবিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।সামু আদির চুল খামচে ধরেছে।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর সামুকে রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।আদির উষ্ণ ছোয়া সামান্তার গলা,ঘাড়ে,বুকে পড়ছে।দুজন দুজনের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

.
.
.
.

গভীর রাত সামু পরম নির্ভরতায় আদির বুকে ঘুমিয়ে আছে।আদির চোখে ঘুম নেই।আদি অপলক নয়নে চেয়ে আছে।কিছু ভাবছে।আদি সামুকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে চাদর ভালো ভাবে জড়িয়ে দিয়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে।তারপর কল ছেড়ে চোখে মুখে পানি দিচ্ছে।অস্থিরতার সাথে মুখে পানি দিচ্ছে।আয়নায় পানি পড়ে ঘোলা হয়ে গেছে।আদি হাত দিয়ে একটানে পানি মুছে ফেলে।তারপর স্থীর দৃষ্টিতে নিজেকে দেখে।তারপর বিরবির করে বলে,
–আদি,,প্রথমে সামু তোর মোহ ছিলো।তুই ওর রুপে,ওর এডিটিউটে মুগ্ধ হয়েছিলি,,ওর মোহে ডুবে ছিলি,,তারপর যখন ও তোকে পাত্তা দিতোনা তখন ও তোর জেদ ছিলো,ওকে হাসিল করার জেদ।কিন্তু এখন কি?এখন ও তোর কাছে কি?
(আয়নার প্রতিচ্ছবিকে প্রশ্ন করছে)
কিছুক্ষণ স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
নাও আই নো,আই লাভ হার,,ইয়েস আই ডো।আদি ইউ লাভস সামু।সি’জ মাইন।আই কান্ট লিভ উইথ হার।
(এই ব্যাটার মনে কি চলে আমি লেখিকাও জানিনা।তবে প্রথম থেকেই সামুর প্রতি ওর মোহ,জেদ ছিলো।পরবর্তীতে ফিলিংসের নাম দিতে পারেনি।মুখে মুখে ভালোবাসি বলেছে কিন্তু বুঝতে পারেনি।প্রথম থেকেই কিন্তু আদি হাসিল শব্দটা ব্যবহার করতো)

বলেই হাসি ফুটিয়ে শান্ত মনে সামুর কাছে গেলো।চাদরের ভিতরে ঢুকে সামুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,সামু আইম ইন লাভ উইথ ইউ।উম্মাহ।

সকালে ঘুম ভাংতেই সামু নিজের ঠোঁটে সুরসুরি অনুভব করে।আদি সামুর ঠোঁটে হাত বুলাচ্ছে।সামু পিটপিট করে চোখ মেলে আদির আংগুল দেখতে পায়।হুট করেই হা করে আদির আংগুলে কামড় দেয়।আদি আউচ করে উঠে।
সামু ভ্রু নাচিয়ে বলে,
কি?হা?ঘুমের সুযোগ নিচ্ছো?
–আমার বিয়ে করা বউ আমি যা খুশি করবো কার বাবার কি!!
–আপাতত আমার অনেক কিছু।আজকে ভার্সিটি যেতে হবে।উফফ,,সরো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সামু উঠেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলো।আদির কেন জানি খুব খুশি লাগছে।অন্যরকম ফিলিংস।

সামু আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে।আদি ফ্রেশ হয়ে এসে সামান্তার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কোমড়ে হাত রেখে সামান্তার হাত নিজের কাধে রেখে গান গাইছে আর সামুকে নিয়ে ড্রান্স করছে।সামান্তা আচমকা ভ্যাগাচ্যাগা খেয়ে যায়।তবুও হাসি মুখে আদির সাথে তাল মিলিয়ে ড্রান্স করছে।

Mujshe dur kahi na ja…
Bas ehi kahi reh jah,,

meih teri dibani re…
apsos tujhe hein keya…

Teri meri kahani naye ban gayi
Tu mera hogaia mein teri hogayee…

–সকাল সকাল কি হলো?
এত খুশি কেন?
–,বিকজ আই এম ইন লাভ উইথ ইউ,,
–নতুন কিছুনা।সেটা অনেক আগেই বলেছো।
–না মানে এখন ভালোবাসাটা আরো বেরেছে তাই,
–আচ্ছা,
–হুম তাই আমি এতো খুশি,,
–পাগল,,
–তোমার জন্য,,
নেও এবার রেডি হও।আমি তোমাকে দিয়ে আসবো।

সামু-আদি রেডি হয়ে নাস্তা করে বেরিয়ে যায়।সামু লাল কুর্তি পড়েছে,,কানে ঝুমকো,চুলগুলো ছাড়া,হাতে চুড়ি পড়েই আছে।আদির কড়া নির্দেশ বিয়ের চিহ্নগুলো যাতে না খোলে।তাই ওর দেওয়া চেইন,নাক ফুল,আংটিগুলো ও পড়া।লেডিস সু,লেডিস ব্যগ কাধে ঝুলানো।গলায় আইডি কার্ড।নো সাজগোছ।ঠোঁটে জাস্ট একটু লিপস্টিক।
আদি কালো টি-শার্ট-প্যান্ট পড়া।টি-শার্টের উপর কোর্ট।হাতে ওয়াচ,চোখে গ্লাস।চুলগুলো স্পাইক করা।পারফেক্ট কাপল।

ভার্সিটির গেইটের সামনে গাড়ি থামাতেই সামু আদির গালে শব্দ করে একটা কিস করে কোনো দিক না চেয়ে নেমে পালালো।

আদি অবাক হয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে বসে আছে।তারপর অস্ফুটস্বরে বলল,
–“যাক বউটা একটু রোমান্টিক হচ্ছে।”

চলবে….??

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১৭

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১৭

ফাবিহা নওশীন

??
‘সামু চেঞ্জ করে শাড়ি পড়ে নিস।বিয়ের প্রথম দিন আর বাড়ি ভর্তি মেহমান আছে।তাই চেঞ্জ করে একটা শাড়ি পড়ে নিস”
নাস্তার টেবিলে সামুর মা সামুকে বললো।

সামু খেতে খেতে বললো,
আচ্ছা আম্মু।

সামু খাওয়া শেষ করে নিশির কাছে শাড়ি নিয়ে যায়।নিশি ওকে গুছিয়ে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।সাথে হালকা করে সেজে নেয়।নিজেকে আয়নায় বারবার দেখছে।একদম বউ বউ লাগছে।
মনে মনে ভাবছে,
এভাবে আদির সামনে গেলে আদি আর রাগ করে থাকতে পারবে না।

সামান্তা আর নিশি লিভিং রুমে বসে গল্প করছে তখনই নিশি সামুকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
–দেখ নিষ্টুরনি,,,আমার ভাইয়ের কি অবস্থা করেছিস?একদিনেই মুখ শুকিয়ে গেছে।

সামু সেদিকে চেয়ে দেখে আদি চোখ ডলতে ডলতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে।মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে।যেন সদ্য ছেকা খেয়েছে।কোনোদিন না চেয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলের গিয়ে বসে পড়লো।মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছে।সামু আর নিশি দুজনেই ওকে পরখ করছে।
আদি খাওয়া শেষ করে সিড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে।

নিশি সামুকে ধাক্কা মেরে বললো,
তাড়াতাড়ি যা,,আবহাওয়া ভালো ঠেকছেনা।

সামু কাদো কাদো হয়ে বললো,
–আপু এই আবহাওয়ায় আমাকে পাঠাতে চাও,,?তোমার কি দয়ামায়া নেই এই বাচ্চা মেয়েটার প্রতি।

–তোকে খেয়ে ফেলবে না,,,

সামু ভেংচি কেটে রুমের দিকে পা বাড়ালো।আদি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলে ব্রাশ করছে।সামান্তা পিছনে গিয়ে গলা খাকারি দিলো।আদি দেখেও দেখলোনা।ফোন নিয়ে সোফায় বসে পড়ল।সামান্তা পাত্তা না পেয়ে ওর পাশে গিয়ে বসে আবারো গলা খাকাড়ি দিলো।

আদি বিরক্ত হয়ে ফোন থেকে মুখ তুলে ভ্রু কুচকে বললো,
–কি চাই,,

–আমাকে দেখে কি তোমার ভিক্ষুক মনে হচ্ছে,, যে বলছো কি চাই?

আদি কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে বারান্দায় পা বাড়ালো।সামুও পিছু পিছু হাটা ধরলো।আদি আবার রুমে চলে এলো।সামু পিছনে থেকে মজা করে বললো,
–রাগ করেছো গো সোয়ামী??

আদি চমকে সামুর দিকে চেয়ে বললো,
–ছি,,এইগুলা কি ধরনের ল্যাংগুয়েজ সামু?

–আমার সাথে কথা না বললে আমি এমন ভাষাই এপ্লাই করবো?

–তোমার সাথে কথা বলবোনা।গতকাল রাতে কি করেছো ভুলে যাইনি,,,আমাকে দিয়ে খাটিয়ে নাক ডেকে ঘুমিয়েছো।

সামু দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে তারপর বললো,
–সেজন্যই তো সরি বলতে এসেছি।প্লিজ একসেপ্ট মাই সরি।

–নট একসেপ্টেড,তুমি সরি বললেই কি আমার ওয়েডিং ফার্স্ট নাইট ফিরে আসবে?

সামু অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বললো,, না,,
তারপর মাথা উচু করে টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
–তবে একটা কাজ করতে পারি,,চলুন আবার বিয়ে করি।হিহি,,,

আদির সামুর কথা শুনে প্রচুর হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসি চেপে ওর দিকে তাকাতেই নাক ফুলটা চোখে পড়ে।সামুর নাকে নাক ফুলটা জ্বলজ্বল করছে।নাক ফুলটা ওর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।আদি সামান্তার নাকে হাত দিয়ে বললো,
–নাক ফুলটা তো তোমাকে দারুণ মানিয়েছে।

সামান্তা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
–আর শাড়িতে?

আদি এতক্ষণে সামুকে খেয়াল করলো।কিছুটা দূরে গিয়ে সামুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলালো।
সামু মিষ্টি কালার শাড়ি পড়েছে,নাকে ওর দেওয়া নাকফুল,গলায় প্লাটিনামের চেইন,,হাতে রিং আর দুহাতে দুটো চিকন সোনার চুড়ি,,চুলগুলো বেনি করে একপাশে রাখা।চোখে হালকা শেডের সাথে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দেওয়া।একদম সদ্যবিবাহিত নারী।
সামুকে ভালোভাবে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
— তোমায় একদম হট লাগছে।

সামুর মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।
–কি জঘন্য কমপ্লিমেন্ট,,,

আদি বাকা হেসে সামুর সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ল।সামু ওর কান্ডকারখানা কিছুই বুঝতে পারছেনা।আদি একবার সামুর দিকে চেয়ে সামুর পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ঠোঁটের পরশ দিলো।সামু ফ্রিজড।আদি গভীর ভাবে সামুর পেটে চুমু আকছে।সামু চোখ বন্ধ করে নিজের শাড়ির আঁচল দু’হাতে মুঠোয় পুরে রেখেছে।

তখনই দরজায় নক করলো কেউ।কিন্তু সেদিকে আদির খেয়াল নেই।সামু দরজায় নক শুনে আদিকে দু’হাতে সরিয়ে নিলো।
আদি সামুর দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো।
–দরজায় কেউ নক করছে,,

আদি বিরক্ত হয়ে উঠে দরজা খোলে দিলো।সাভেন্ট বললো,
–স্যার,আপনার দুজন বন্ধু এসেছে।
–আচ্ছা,বসতে বলো আসছি।

আদি বিরক্তি নিয়ে সামুর দিকে চেয়ে বললো,
–শেষে বন্ধুরা আমার রোমান্সে ভিলেন হলো।

সামু মুচকি মুচকি হাসছে।তারপর বললো,
–কি সুইট আপনার বন্ধুরা,,, একদম সময় মতো চলে এসেছে।

সামান্তা শাড়ি ঠিক করে কেটে পড়লো।

সামু নিচে নেমে দুজন সুদর্শন ছেলেকে লিভিং রুমে বসে থাকতে দেখলো।তারা নিজেদের মতো করে কথা বলছে।সেদিকে সামুর আগ্রহ নেই।সামু সামিরের রুমে গেলো।বেচারা একা একা বোর হচ্ছে ভিষণ তাই সামু ভাইয়ের সাথে সময় কাটাবে।
সামিরের সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে।মিনিট ২০পর সামুর ফোনে টুং শব্দে একটা মেসেজ এসেছে।আদির মেসেজ।
“সামু,বাইরে যাচ্ছি,কখন ফিরবো ঠিক নেই।”

সামান্তা মেসেজ পড়ে মুচকি হাসে।আর ভাবছে যাক অন্তত যাওয়ার আগে বলে তো যায়।সামু দুপুরে লাঞ্চ করে সার্ভেন্টকে দিয়ে নিচের গেস্ট রুম থেকে নিজের জিনিসপত্র,জামাকাপড়, বইপত্র সবকিছু উপরে আদির রুমে পাঠায়।রুমে গিয়ে পুরো রুমে চোখ বুলায়।

এখন থেকে এটা আমার ঘর।অবশেষে আমি এই ঘরের অধিকার পেয়েছি।
তারপর সবকিছু নিজের পছন্দ মতো গুছিয়ে নেয়।নিজের জামাকাপড়, বইপত্র সবকিছু গুছাতে গুছাতে বিকেল হয়ে যায়।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা আদির আসার নাম নেই।সামান্তা ভাবছে,

–আদিকে এবার এই বন্ধুদের আড্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে।বন্ধুদের পেলে সারা দুনিয়া ভুলে যায়।বন্ধ ছাড়া জীবন চলেনা কিন্তু সব ফেলে সারাদিন তাদের লেজ ধরে বসে থাকলে তো চলবেনা।নিজের পার্সোনাল একটা লাইফ আছে,ফ্যামিলি,রেসপনসেবলিটি আছে সেগুলো তো পালন করতে হবে।বিয়ে হয়েছে সংসার হয়েছে এখন একটু পরিবর্তন হতে হবে।মাঝরাতে বাড়ি ফিরা,দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো,,তারপর বন্ধুদের আড্ডা,ক্লাব,পার্টি এসব আর চলবেনা তবে তাড়াহুড়ো নয়,সবকিছু ধীরে ধীরে করতে হবে।

সন্ধ্যায় নাস্তা করে বন্ধুদের কাছ থেকে ক্লাসের পড়া জেনে নিয়েছে সামান্তা।বিয়ের জন্য ভার্সিটি যাওয়া হয়নি কতদিন।ওকে যে সবদিক দিয়ে পার্ফেক্ট হতে হবে।তাই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে।বইপত্র নিয়ে পড়তে বসে গেলো।পড়া শেষ করে শাড়ি চেঞ্জ করে সালোয়ার কামিজ পরে১০টা নাগাদ নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখে আদি চলে এসেছে,,সামিরের সাথে কথা বলছে।সামু আদির পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলো,
–কখন এলে?
–এইতো কিছুক্ষণ আগে।
–ওহহ,,যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।
আদি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।

ডিনার শেষে সামু রুমে গিয়ে দেখে আদি নেই।ফ্রেশ হয়ে এসে আদিকে খোজে কিন্তু আদি ঘরে নেই।সামান্তা বারান্দায় গিয়ে দেখে আদি রকিং চেয়ারে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আদিকে এই সময় এভাবে ঘুমাতে দেখে অবাক হয়ে যায়।যে ছেলে রাত ২-৩টা ঘুমায় সে রাত ১২টায় এমন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।সামান্তা আদির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে ডাকে,,
–আদি,,,
নো সাড়াশব্দ।
আবার ডাকে একটু জোরে,,
–আদি,,
–হু(ঘুম ঘুম চোখে)
–এখানে এভাবে ঘুমাচ্ছো কেন?বেডে গিয়ে ঘুমাও,,।
–উহু,,
–কেন?
–উহু,,
–কি জ্বালা শুধু উহু উহু করছে।উঠো বলছি নয়তো পানি ঢেলে দিবো।
আদি ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে চোখ মেলে সামুকে নিজের কোলে বসিয়ে,পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে, ওর পিঠে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।

–এত ঘুম কেন?

–কালকে সারারাত ঘুমাইনি।শোক পালন করেছি।তুমি তো আরামসে নাক ডেকে ঘুমিয়েছো।

–হিহি,,
আদি আরো জোরে ঝাপটে ধরে মাথা রাখলো।
তা দেখে সামান্তা বললো,
–আদি আমাকে কি তোমার বালিশ মনে হচ্ছে?

–হু,,তোমার পিঠ বালিশের মতো সফট।পাথরের মতো শক্ত নয়।

আদির কথা শুনে সামু উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।হাসির শব্দে আদির চোখের ঘুম উবে গেলো।হাসির ঝংকার ওর কানে বাজছে।সামুকে এভাবে প্রাণ খোলে কখনো হাসতে দেখেনি।আদি মাথা তুলে সামুর পিঠে নাক ঘষে বললো,
তুমি হাসতেও জানো?তোমাকে এর আগে এভাবে হাসতে দেখিনি?প্রাণ খোলা উচ্ছল হাসি।

সামু আদির কোল থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,
–এভাবে হাসতে দেখোনি,এবার থেকে দেখবে।মাত্র তো শুরু,,,অনেক কিছু বাকি আছে দেখার,,।

আদি উঠে দাড়িয়ে বাকা হেসে বললো,
–ইউ আর রাইট,, অনেক কিছু এখনো বাকি,,

আদির কথার মানে সামুর ব্রেইন এখনো ধরতে পারেনি।ব্রেইন ধরতেই দেখে আদি ওর দিকে এগিয়ে আসছে।
সামান্তা আমতা আমতা করে বলল,,
–না মানে,,,আমি আসলে বলছিলাম,,

আদি সামান্তাকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ওর গালে নাক দিয়ে স্লাইড করতে করতে মাতাল করা কন্ঠে ফিসফিস করে বললো,
–কি বলছিলে,,?

সামান্তার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা।সব কথা গলায় এসে আটকে যাচ্ছে।
আদি সামান্তাকে কোলে তুলে নিলো।সামান্তা আদির শার্ট খামচে ধরে ওর বুকে মুখ লুকালো।ধীর পায়ে রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে নিজের ভর ওর উপর ছেড়ে দিয়ে চোখে,ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ালো,,,।

❤ ❤ ❤ ❤
❤ ❤ ❤
❤ ❤

ঘুম ভেঙে সামু নিজেকে আদির বুকে আবিষ্কার করে।ঘুমঘুম চোখে আদির দিকে তাকাতেই হার্ট এটাক হওয়ার অবস্থা।আদি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।আদিকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
–এত সকালে ঘুম ভেঙে গেলো কিভাবে?

–ঘুমাইনি।সারারাত জেগে জেগে তোমাকে দেখেছি।

–মিথ্যুক,,ঘুমের রাজ্যের রাজা না ঘুমিয়ে আমাকে দেখবে,,,?

–হুম,,
বলেই সামুর কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।সামু আদিকে ছাড়িয়ে উঠতে গিয়ে আবার শুয়ে পরলো।তারপর আদির দিকে অসহায় ভাবে তাকালো।

আদি বাকা হেসে বললো,
–কি হলো জান যেতে ইচ্ছে করছে না?আমার কাছে আরো থাকতে ইচ্ছে করছে?

সামু মুখ ইনোসেন্ট করে বললো,
–তুমি চোখ বন্ধ কর।
–কেন?
–বন্ধ করো।
–উহু,,
সামু কাদো কাদো হয়ে বললো,
–প্লিজ,,
আচ্ছা,,আদি চোখ বন্ধ করলো।সামু আদির মুখের উপর চাদর দিয়ে নিজের জামাকাপড় ঠিক করে এক দৌড়ে ওয়াশরুম।

আদি চাদর সরিয়ে হেসে দিলো।তারপর মনে মনে বলছে,
–আজ অনেক শান্তি লাগছে।অবশেষে তোমাকে নিজের করেই ফেললাম।বলেছিলাম না তোমাকে হাসিল করেই ছাড়বো।করে ফেলেছি।

সামান্তা শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ওর আজ নিজেকে পরিপূর্ণ লাগছে।

সামান্তা শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঝাড়ছে।আদি পিছনে থেকে এসে সামুকে জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ঘষছে।
–আদি ছাড়ো,,ফ্রেশ হয়ে নেও।
–উহু,,

সামান্তা জোর করে আদিকে সরিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো।
আদি ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে।আদিকে ভেজা চুলে এভাবে বের হতে দেখে সামান্তা অপলক তাকিয়ে আছে।আদি কাছে এসে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
–কি দেখো বউ?
–কিছুনা,,তাড়াতাড়ি নিচে এসো।
–নিচে গিয়ে কি করবো?
–সবার সাথে নাস্তা করবে।
আদি সামান্তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–আমার তো শুধু তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে।
সামান্তা নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
–দেখাদেখিতে পেট ভরবেনা।রেডি হয়ে নিচে আসুন।
সামান্তা রুম থেকে বের হয়ে যায়।
আদি বিরবির করে বললো,বউটা এতো আনরোমান্টিক কেন?

চলবে…

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১৬

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১৬

ফাবিহা নওশীন

??
সামুর খটকা লাগছে এই রাজের বাবা বলে গেলো রাজ কোমায় আছে এটা কি সত্যি না পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এমন বলছে।
কাকে জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছেনা।নিশিকে জিজ্ঞেস করবে,,কিন্তু নিশি কি জানে,,আদির সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলো।
আদিকে মেসেজ করলো,

“হলুদ শেষে দেখা করবে কথা আছে”

অপর দিকে নিশি জয়কে বলছে,
–দেখো জয়,তুমি যদি ভেবে থাকো আমি রাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিবো তবে ভুল ভাবছো,,আমি রাজকে শাস্তি দিয়েই ছাড়বো।তুমি কিংবা তোমার ফ্যামিলি এ বিষয় নিয়ে আমাকে রিকুয়েষ্ট করোনা।লাভ হবেনা।কারণ আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি এখন আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে একচুল ও নড়বোনা।একটা মেয়ের কাছে তার সম্মানের চেয়ে বড় কিছু নেই।সো,,

–রিলেক্স,রিলেক্স,,,কাম ডাউন।আমি এসব কিছু বলবোনা।না আমি বলবো না আমার ফ্যামিলি।আমি যা বলার গতকাল রাতেই বাবাকে জানিয়ে দিয়েছি এটাও বলেছি রাজ আর আমার ভাই নয়,ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।বাবাও সব কিছু শুনে আমাকে সাপোর্ট করেছে।তোমাকে সাপোর্ট করেছে।ওনারা এখানে তোমাকে রিকুয়েষ্ট করতে নয় ফ্যামিলি মেম্বার হিসেবে তোমার ভাইয়ের বিয়ে এটেন্ড করতে এসেছে।আর কিচ্ছু নয়।
আর তাছাড়া তুমি আমার বউ,,বিয়ে হয়নি তাতে কি,,আমি তোমাকে আমার বউ মানি।কেউ আমার বউয়ের দিকে,আমার প্রপার্টির দিকে হাত বাড়াবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো?ইম্পসিবল। আমি কেন কোনো ছেলেই পারবেনা।সো রিলেক্স।তুমি যেখানে আই উইল বি দেয়ার।

নিশি মুচকি হেসে জয়কে জড়িয়ে ধরলো।
–লাভ ইউ।
–লাভ ইউ টু।এন্ড মোর দেন ইউ।

সামান্তা হলুদের শাড়ি পড়া অবস্থায় আদির জন্য অপেক্ষা করছে।মুখে,শরীরে,হাতে হালকা হলুদের আভা রয়ে গেছে।অনেকক্ষন পর আদি এলো।তা দেখে সামু চোখ কুচকে বললো,
–এতক্ষনে আপনার আসার সময় হলো?

আদি বাকা হেসে বললো,
— চোখে হারাচ্ছো দেখছি?একটু সবুর করো,,কালকে রাত থেকে পার্মানেন্ট আমি তোমার।

সামু চোখ বড়বড় করে নাক ফুলিয়ে বললো,
–জ্বি নো,,আমি না চোখে হারাচ্ছি আর না তোমার মতো বিয়ে নিয়ে এতোটা ডেস্পারেট হচ্ছি।আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তাই ডেকেছি।

–আচ্ছা,আচ্ছা,,কি গুরুত্বপূর্ণ কথা? এই ওয়েট ওয়েট,,এখন আবার এটা বলো না যে বিয়ে করবে না,,

–উফফ,,এত বেশি কথা কেন বলো,,?আর আমি যদি বলি বিয়ে করবোনা তুমি শুনবে?শুনবে না সো এসব কেন বলবো?বলার প্রশ্নই আসেনা,,আগেরবার মজা করে বলে ফেসে গেছি।আর না,,

আদি সামুর কোমড় জরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে সামুর গালে নিজের গাল মিশিয়ে বললো,
–তুমিও তো দেখছি আমার মতো বিয়ে নিয়ে ডেস্পারেট।বাট প্রকাশ করোনা।

সামু চোখ বন্ধ করে নিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো,
–আমাকে ছাড়ুন,, একটু দূরে সরুন।

আদি সামুর গালে স্লাইড করতে করতে বললো,
–কেন?

সামু আদির ছোয়ায় বারবার কেপে কেপে উঠছে।চোখ বন্ধ করে নিলো।তারপর বললো,
আমার কেমন জানি লাগছে,,

আদি মৃদু হেসে বললো,
–কেমন লাগছে?

–জানিনা,,

আদি সামুর গাল ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকাতেই দেখে সামু চোখ বন্ধ করে আছে।আর কেমন কাপছে।
–কি বলতে এসেছিলে?

সামু চোখ খোলে বললো,
–রাজের বাবা এসে বললো যে রাজ নাকি কোমায় চলে গেছে এটা কি সত্যি?

আদি সামুর কথা শুনে সামুকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বললো,
–দিলে তো মুডটা খারাপ করে,,

সামু বুঝতে পারলো না কি এমন বলেছে যে মুড খারাপ হয়ে গেলো।ও তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিজ্ঞেস করেছে।
–কি এমন বললাম,, আমি তো জাস্ট জানতে চাইলাম সত্যি কিনা,,নাকি এসব ড্রামা,,

আদি কিছু না বলে চলে গেলো।
–যাক বাবা, কি এমন বললাম এমন রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।সামু তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে।বিয়ে করার জন্য দুনিয়ায় আর ছেলে পাসনি।কথায় কথায় রাগ করে,,।
এ রাগ না জানি কি ধ্বংস ডেকে আনে।

সামু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।আগামীকাল ওর বিয়ে কেমন অদ্ভুৎ এক অনুভূতি কাজ করছে।কিন্তু আদি হুটহাট রাগ করে বসে।সুন্দর মুহুর্তগুলো হটাৎ করেই মিলিয়ে যায়।

সামু শুয়ে শুয়ে ভাবছে,
ভালোবাসো কতটুকু জানিনা।তার গভীরতাও আমি মাপতে পারিনা।হয়তো তুমিই মাপতে দেওনা।আমাকে কনফিউশনে রাখো।

সামুর ফোন বেজে উঠলো।আদির ফোন।রিসিভ করতেই আদি বললো,
সামু তুমি এমন কেন?আমি যে রাগ করেছি তুমি বুঝোনি?অবশ্যই বুঝেছ।কিন্তু তুমি আমার রাগ ভাংগানোর চেষ্টা করলে না।কেন?হুয়াই?

–আদি সরি,,আমি বুঝতে পারিনি।তুমি যে রাগ করেছো বুঝেছি কিন্তু কেন রাগ করেছো সেটা আমি এখনো মিলাতে পারছিনা তাহলে তোমার রাগ আমি কিভাবে ভাংগাবো?

–তুমি বুঝোনি,,আমি তোমাকে বলেছি রাজের নাম মুখে নিবেনা,,আর তুমি এমন সুন্দর একটা মুহুর্তে রাজের নাম নিয়ে আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলে।

এবার সামুর আক্কেল এসেছে।
–উপপপ!!সরি।আমি ভুলে গিয়েছিলাম।প্লিজ সরি।আসলে আমি কোমায় যাওয়ার কথা শুনে কিছুটা সারপ্রাইজ হয়েছিলাম তাই,,

–ও সত্যিই কোমায়।পুলিশ চেক করেছে।সুস্থ হলেই ওকে এরেস্ট করা হবে।গুড নাইট বায়।
বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো।

সামান্তা কানে ফোন গুজে কিছুক্ষণ বসে রইলো তারপর ফোন সরিয়ে বললো,
–এটা কি হলো ফোন রেখে দিলো। আমি কি ফোন করবো?নাকি আবার রাগ করবে?কি করবো?আমি যে ওই ছয় ফুটের জিরাফকে বুঝতে পারিনা।উফফ,,
শালার জামাই তুই এমন কেন?
তোর মন কেন বুঝিনা?
#তোর_শহরে_ভালোবাসা এমন কেন?

বিয়ের আমেজ শুরু হয়ে গেছে।চারদিকে সাজসজ্জা লোকজন।রিসিপশনে সামুর বাড়ির মানুষ, আদি,আদির ফ্যামিলি,বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয় স্বজনরা অপেক্ষা করছে।কনেদের আসার পালা।একটা গাড়ি এসে থামলো।ভারী লেহেঙ্গা আর ভারী মেকাপে নিশি গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো।তারপর আদিকে ইশারা করলো।আদি এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজার সামনে দাড়ালো।গাড়ির দরজা খোলতেই আদি সামুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।সামু আদির হাতে হাত রাখলো।
তারপর আস্তে আস্তে বাইরে পা রাখলো।আদি সামুকে নামানোর চেয়ে ওকে দেখায় ব্যস্ত বেশি।সামুকে একদম পুতুলের মতো লাগছে।ভারী লেহেঙ্গা,জুয়েলারি,মেকাপ একদম একটা পুতুল লাগছে।চোখ সরাতে পারছেনা।তা দেখে সামু কিছুটা বিব্রতবোধ করছে।

–ভাই আগে ওকে নিয়ে চল।পরে দেখিস,দেখার প্রচুর সময় আছে।
নিশির কথায় আদির ঘোর কাটলো।সামান্তার হাত ধরে বসার জায়গায় নিয়ে গেলো।
সামুর মা সামুর কপালে চুমু খেয়ে নজর উতরে দিলো।

সবার নজর এই কাপলের দিকে।কিন্তু হ্যান্ডসাম বয়ের নজর তার বউয়ের দিকে।সামান্তার মনে হচ্ছে আদি ওর দিকে চেয়ে আছে।তাই মাথা ঘুরাতেই দেখে আদি সত্যিই ওর দিকে চেয়ে আছে।সামান্তা সামনের দিকে চেয়ে হাসি হাসি মুখ করে আস্তে করে বললো,

–মাই হ্যান্ডসাম হাসব্যান্ড,,প্লিজ সামনের দিকে তাকান।সবাই আমাদের দেখছে।আপনি যে হ্যাবলার মতো আমাকে দেখছেন এটাও সবাই দেখছে।সো প্লিজ।

আদি সামনে তাকিয়ে সামুর মতোই হাসি হাসি মুখে বললো,
–কি করবো ইউ আর লুকিং হট।দেখতেই ইচ্ছে করছে।

সামুর আদির কথা শুনে রাগ হলো।বিরবির করে বলছে,
— লেহেঙ্গা পড়েছি তাও হট।লেহেঙ্গা পড়লে কাউকে হট লাগে,,বলতে পারতো ইউ আর লুকিং সো গর্জিয়াস।তা না হট।

–এইটা কোনো কমপ্লিমেন্ট হলো?ভালো কিছু বলতে পারতে না?

–পরে বলবো।

–কখন?

–বলবো কথা বাসর ঘরে,,,

–চুপ করে বসে থাকো আরেকটা কথা বললে তোমার খবর আছে।

–হাহা,,বউ আমার রেগে গেছে।বউকে আজ রাগানো ঠিক হবেনা।

.
.
.

সামি আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।ভারী লেহেঙ্গা আর গয়নার ভার টানতে টানতে মনে হচ্ছে নিজের ওজন ৫কেজি কমে গেছে।পুরো গা ভর্তি গহনা।সামু বিরক্তি নিয়ে গহনা খোলছে।তখনই আদি পিছনে এসে দাড়ালো।
–তোমাকে যা লাগছেনা,ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি।
সামু ভ্রু কুচকে বললো,
–এইগুলো কোন ধরনের কথা?আমি কি চকলেট আইসক্রিম যে খেয়ে ফেলবে?আমি জলজ্যান্ত একটা মানুষ।
–বউ বুঝি রেগে আছে।
সামু কাদো কাদো হয়ে বললো,
–একটু হেল্প করোনা।আমার অনেক বিরক্ত লাগছে।
–আগে বলবা তো,,
আদি সামুর গয়না খোলতে সাহায্য করছে।গয়নার পর চুল।দীর্ঘ সময় পর চুল খোলতে পারলো।চুলে লেহেঙ্গার ওড়নার এক কোনা লাগানো।সেটা খোলতেই ওড়না নিচে পড়ে গেলো।লেহেঙ্গার পিছনে সামুর পিঠের অর্ধেক অংশ উন্মুক্ত।
আদি সামুর দুবাহু চেপে ধরে পিঠে নাক ঘষছে।হটাৎ এমন কিছুতে সামু চমকে উঠে।শিহরণে চোখ বন্ধ করে নেয়।
আদি মাথা তুলে আয়নায় নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখে।সামুর বন্ধ চোখের লজ্জা মাখা মুখ দেখে বাকা হেসে বললো,
–আমার দাজ্জাল বউ দেখি আবার লজ্জা পায়।

সামু হুট করে ঘুরে ভ্রু কুচকে বললো,
–আমি দাজ্জাল,,,ওকে।নো টাচ,,
বলেই একটা কুর্তি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

আদি হতবাক হয়ে সামুর পিছু পিছু গেলে সামু ঠাস করে মুখের উপর ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
–যাক বাবা,,কি হলো এটা??

৩০মিনিট পর সামান্তা শাওয়ার নিয়ে বের হলো চুল মুছতে মুছতে।
আদি এগিয়ে গিয়ে বললো,
–সামু আমি তো মজা করেছি,,রাগ করোনা প্লিজ।

সামু বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে হাই তুলতে তুলতে বললো,
–ইটস ওকে,,গুড নাইট।

আদির মাথায় হাত।
–সামু আজকে আমাদের ফার্স্ট নাইট।তুমি আমার সাথে এটা করতে পারোনা।

–লাইট অফ করো।চোখে বিধছে।অনেক ঘুম পাচ্ছে বিরক্ত করোনা।আর হ্যা,আমাকে হেল্প করার জন্য ধন্যবাদ।নয়তো এতো শান্তির ঘুম দিতে পারতাম না।গুড নাই ডিয়ার।

–ডিয়ার মাই ফুট,,প্লিজ সরি,,প্লিজ।

সামুর সাড়া শব্দ নেই।
–তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?
–….(সামু চোখ বন্ধ করে মুখ টিপে হাসছে)
আদি একবার বসছে আরেকবার দাড়াচ্ছে।আবার সামুকে ডাকছে।
কিছুক্ষণ পর সামু ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

সকালে ঘুম ভেঙে গায়ের উপর কারো ভারী স্পর্শ পেলো।আদি ওর কোমড় জরিয়ে পিঠে মুখ গুজে ঘুমাচ্ছে।
সামু আদির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আদির চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে গালে একটা কিস করে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
–গুড মর্নিং মাই লাভ।

ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেলো।আয়নার সামনে মুখে পানি দিতেই কিছু একটা জ্বলজ্বল করছে।ভালোভাবে দেখলো নাকে সাদা পাথরের নাকফুল।ডায়মন্ডের হবে হয়তো।গলায় প্লাটিনামের চেইন।একটা ছোট লকেট।লকেটে ছোট ছোট পাথর।সেটাও ডায়মন্ডের হবে।হাতে একটা ডায়মন্ডের রিং।আদির বাসরঘরের গিফট।হয়তো ঘুমিয়ে যাওয়ার পর পড়িয়ে দিয়েছে।সামান্তার এখন খুব খারাপ লাগছে।গতরাতে আদির সাথে এমন মজা না করলেও পারতো।

তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।নিচে নামতেই নিশি বললো,
–একা কেন,ভাইয়া কই?
–তুমি জানোনা তোমার ভাইয়ের ঘুম,,
–হুম তা অবশ্য ঠিক।আজ তো আরো উঠবে না।ফার্স্ট নাইট বলে কথা।তা কেমন হলো,,
–সরম করো বড় ভাবি হই,,
–আইছে বড় ভাবি,, তাড়াতাড়ি বল,,
–শুনতে চেওনা হার্ট এটাক হবে।
–তবুও শুনতে চাই।
–তবে শুনো,,সামু সব খোলে বলল।
নিশি ভ্রু কুচকে বললো,
আমার সত্যিই হার্ট এটাক হচ্ছে।তুই এতটা হার্টলেস,,
সামু টেডি স্মাইল দিলো।

চলবে….?

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১৫

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১৫

ফাবিহা নওশীন

??
ছাড়ুন,,, আম্মু-আব্বু।হু হু!!

ডাকো যাকে ইচ্ছে ডাকো।আমি তোমাকে ছাড়ছিনা।কি বলেছিলে আমি জিরাফ?রোমান্স ছাড়া আর কিছু পারিনা??

সামান্তা আদির সাথে দৌড়ে পারেনি।ছাদে উঠার সিড়ির কাছে যেতেই পিছনে থেকে ধরে ফেলে।এখন নিজের সাথে মিশিয়ে পিছনে থেকে দু’হাতে সামান্তার পেট চেপে ধরে রেখেছে।সামান্তা ছুটার চেষ্টা করছে আর আম্মু আব্বু করছে,,,।

আদি এবার সামুর গলায় হালকা করে ঠোঁট ছুয়াচ্ছে।আর সামান্তা দু’হাতে ওকে সরানোর চেষ্টা করছে।
সামান্তা না পেরে বললো,
–এভাবে জোর জবরদস্তি রোমান্স করাকে কি বলে জানেন?
আদি মুখ তুলে মনোযোগের ভান করে বললো,
–কি বলে জান?
–লুচ্চামি!!
–ছি,,ছি,,এভাবে বলে না।একে লুচ্চামি না বরের আদর বলে।
তারপর আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
–ছাড়ুন,,কেউ দেখবে,,
সামান্তা আদির হাত টেনে জোরে একটা কামড় দিলো।আদি আহ করে ছাড়তেই সামু এক দৌড়ে নিচে চলে আসে।আদিও পিছনে আসে।
–দাড়াও,,তোমার চুল ছিড়ে ফেলবো।
–আমার চুল ছিড়ার শখ নেই।
সামু গিয়ে আদির মায়ের পিছনে গিয়ে লুকালো।
–মা দেখুন আপনার ছেলে আমার চুল ছিড়তে এসেছে।
আদির মা রেগে গিয়ে আদিকে বললো,
–কিরে আদি,,তুই ওর চুল ছিড়তে এসেছিস তোর সাহস তো কম না।যা এখান থেকে নয়তো তোর সব চুল ছিড়ে নিবো।
–মা জানো ও কি করেছে?
আদির মা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
–কি করেছে?
–ও,,,(হায় আল্লাহ আমি কি ওর মতো পাগল হয়ে গেছি)কিছুনা।
সামু মুচকি মুচকি হাসছে।আদি সামুর দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে।
আদি মনে মনে বলছে এর শোধ পরে নিবো।
আদি নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।নিশির কি হলো জানতে হবে।ও কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা জানতে হবে।
আদি চলে যাওয়ার পর আদির মা জিজ্ঞেস করে,
–কি করেছিস সামু?
–কিছুইনা,,কিছু করলে তো বলতোই।হুদাই আমার চুলের পিছনে পড়েছে।

দূর থেকে সামুর মা সবটা দেখছিলো আর ভাবছে মেয়েটা আমার অনেক ভাগ্যবতী।এত ভালো শাশুড়ি পেয়েছে,,আদিও ভালো।সামুর মতোই বাচ্চামো করে।সামুকে ভালোবাসে খুব।

.
.
.
.

জয় রাতে বাড়িতে ফিরতেই জয়ের বাবা এগিয়ে এসে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো,
–সারাদিন কোথায় ছিলে?তোমার ফোন বন্ধ কেন?তোমার হসপিটালে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু যাওনি কোথায় ছিলে?

–নিশিতাদের বাসায়,,

–হুয়াট!!তুমি হসপিটালে না গিয়ে নিশিতাদের বাড়িতে,,,জয় তোমার ভাই রাজ হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।তোমার চাচার অবস্থাটা বুঝা উচিত।আমাদের এখন ওদের পাশে থাকা উচিত আর তা না করে তুমি নিশিতাদের বাসায় ছিলে।

–হুম ছিলাম।রাজের যা খুশি হোক আই ডোন্ট কেয়ার।ওর মতো মানুষের বেচে থাকা উচিত নয়।

–জয়,,রাজ তোমার ভাই,,,

–ভাই কিসের ভাই?ও আমার ভাই না,,ওর আমার ভাই হওয়ার যোগ্যতা নেই।ও যা করেছে তাতে,,,

–কি করেছে,,হাহ,,কি করেছে রাজ?অসুস্থ একটা মানুষকে নিয়ে এসব বলতে বাধলোনা।

–না বাধলো না।আমি নিতান্তই বিবেক বর্জিত মানুষ নই,আমার শিক্ষা এতটা খারাপ নয় তাই আমি ওর মৃত্যু কামনা করতে পারছিনা।তবে ও যা করেছে তার শাস্তি ওকে পেতেই হবে।আগে হাসপাতাল থেকে ফিরুক।

–জয়,,কি বলছিস,,আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা।ওরা তোকে কি বুঝিয়েছে জানিনা।

–ওরা আমাকে কি বুঝাবে,,আমি কি বাচ্চা ছেলে যে যা বুঝাবে তাই বুঝে নিবো।আমি সবকিছু নিজের চোখে দেখেছি,নিজের কানে শুনেছি।

–কি করেছে?

–ও একজনের স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য অন্য একজনের স্ত্রীর ভিডিও বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে।
জয়ের গলা ধরে আসছে কথাগুলো বলার সময়।
রাজ আমাদের এনগেজমেন্টের দিন নিশির ভাবিকে দেখে পছন্দ করে কিন্তু রাজ জানতো না ওনি নিশির ভাবি,আমিও জানতাম না কারণ এর আগে আমি দেখিনি ওর ভাবীকে।রাজ আমাকে জানায় ওর একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে আমি যেন নিশির সাথে এ নিয়ে কথা বলি।নিশির সাথে কথা বলে জানতে পারি ওনি ওর ভাবি।তারপর রাজকে জানাই ভেবেছি রাজ এসব ভুলে যাবে।কিন্তু না রাজ ভাবীর পিছনে পড়ে থাকে।ওনার নাম্বার কালেক্ট করে ফোন করতো।ভাবি বিরক্ত হতো কিন্তু ননদের হবু শ্বশুর বাড়ির লোক তাই কিছু না বলতে পেরে নাম্বার বদলে দেয় তখন ভার্সিটিতে পিছু করতো।ভাবী বাসায় কিছু জানাতে পারেনি আদির ভয়ে।আদি হাই টেম্পার হয়ে থাকে কখন কি করে ফেলে।
তারপর,,
কিছুক্ষণ থেমে বললো,, তোমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে নিশি আসে।আর রাজ ইচ্ছে করেই নিশিকে ট্রাপে ফেলে।ওর উপর এত পরিমাণে ড্রিংকস ফেলে যে বাধ্য হয়েই ওকে চেঞ্জ করতে হয় আর সেই ওয়াশরুমে রাজ হিডেন ক্যামেরা সেট করে।আর সে ভিডিও দিয়ে ভাবিকে ব্ল্যাকমেইল করে।

–কিহ!!!

–হ্যা,বাবা।হ্যা।বলছিলে না ভাই,,,আমার ভাই আমার বউয়ের সম্মান নিয়ে খেলেছে।নিজের ভাবীর সম্মান। নিজের বাড়ির সম্মান।ওর ভাইয়ের হলুদের দিন ভিডিও পাঠিয়ে ভাবিকে ব্ল্যাকমেইল করে।এমনকি তার পিছনে লোক লাগিয়ে দেয়।হুমকি দেয় এটা বলে যে রাজের সাথে দেখা না করলে ভিডিও লিক করে দেবে।কাউকে বলার চেষ্টা করলেও ভিডিও লিক করে দেবে। তুমি বলেছিলে না ভাবীর চরিত্র খারাপ রাজের সাথে নোংরামি করতে গিয়েছিলো?
না সে তো নিশিকে বাচাতে প্রুভ কালেক্ট করতে গিয়েছিলো আর নিজের সেইফটির জন্য আদিকে ক্লু দিয়ে গিয়েছে।
প্রুভ কালেক্ট করার পর আদি ভাবিকে সেফ করে।আদি সবটা জেনে প্রচুর রেগে যায়।যাবেই তো আমারো একটা বোন আছে কেউ যদি ওর সাথে এমন করতো আমি কি করতাম বাবা?

–জয়ের বাবা চুপ।তিনি ভাবতে পারছেন না রাজ এতটা নিচ।

–ও আরো অনেক মেয়ের জীবন নিয়ে খেলেছে।সব প্রুভ আদির কাছে আছে।ওরা পুলিশ কমপ্লেইন করবে।আর আমিও ওদের সাথে আছি।রাজ সুস্থ হলে জেলে থাকবে।
নিশি আজই এসব জেনেছে আর ভেঙে পড়েছে।আমার ওর পাশে থাকা বেশি জরুরি ছিলো ওই কালপিটের সাথে নয়।
রাজের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।ও আজ থেকে আমার কেউনা।যে আমার সম্মানে হাত দেয় সে আমার ভাই হতে পারেনা।নেভার।এখন তুমি রাজেএ সাপোর্ট করবে না নিজের ছেলে আর ছেলের বউয়ের সাপোর্ট করবে ডিসিশন ইস ইউস।গুড নাইট।

জয়ের বাবা নির্বিকার।তার ভাইয়ের ছেলে এমন বিগড়ে গিয়েছে সেটা তিনি জানতেন ই না।অবশ্যই অন্যায়ের সাথ তিনি দিবেন না।জয়ের সাপোর্টার তিনি।

চৌধুরী বাড়ির ডিনার টেবিল-
সবাই একসাথে খেতে বসেছে।খাবার মুখে তুলতে তুলতে আদি বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,
–বাবা কি ব্যবস্থা নিলে?
–তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা।আমার কমিশনারের সাথে কথা হয়েছে,,,সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।হ্যারেজমেন্টের জন্য কেইস করা হবে।সব প্রুফের কপি পাঠানো হয়েছে।রাজ সুস্থ হলেই জেলে থাকবে ইনশাআল্লাহ।তুমি তোমার বিয়েতে ধ্যান দেও।

আদির মা বললো, হুম,,এবার যেনো আর কোনো সমস্যা না হয়।ভালোয় ভালোয় আগামীকাল হলুদ,তারপর বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়।

আদি সামুর দিকে চেয়ে বললো,, মা তুমি এত চিন্তা করোনা তো,,সব ঠিক হবে এবার।আমাদের লাইফের ভিলেনকে সামু ধরাসাই করে দিয়েছে।
সামান্তা ভিষণ লজ্জা পাচ্ছে।সবাই হোহো করে হেসে দিলো।

??
পরেরদিন সন্ধ্যা–
সামুকে কাচি হলুদরঙ, সবুজ রঙের পাড়ের শাড়ি পড়ানো হয়েছে।ফুলের গয়না,ভারী মেকাপে সামুকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।সামুর হলুদ রং একদম পছন্দ নয় তবে সবার জোরাজোরিতে পড়েছে।হলুদের দিন নাকি হলুদ না পড়লে গায়ে হলুদ হলুদ ফিল আসেনা।সামুর তো নিজেকে সরিষা ক্ষেত ফিল হচ্ছে।

আদি হালকা বাদামী রংয়ের পাঞ্জাবি পড়েছে।সামনের দুটো বোতাম খোলা,হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি,,চুলগুলো স্পাইক করা।
সামান্তা রুম থেকে বের হতেই আদিকে দেখে পুরাই ক্রাশ।আদির দিকে হা করে চেয়ে আছে।তা দেখে আদি বলে,,
–খেয়ে ফেলবে নাকি এমন হা করে আছো কেন মিস.সরিষা ক্ষেত?
আদির কথায় সামু কিছুটা লজ্জা পেলেও রাগটাই বেশি হলো।এত সুন্দর করে সেজেছে কই ভালো কমপ্লিমেন্ট দিবে তা নয় হলুদ পড়ায় সরিষা ক্ষেত উপাধি দিয়ে দিলো।আদির মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে।ওর কথা ওকেই ফিরিয়ে দিলো।

সামান্তা নাক ফুলিয়ে কিছু না বলেই হাটা দিলো।কয়েকপা এগুতেই ঘাড়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলো।হাত দিয়ে দেখলো হলুদ।পিছু ফিরতেই দেখে আদি দাত কেলিয়ে হাসছে।

সামু ভ্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হলো?
–হলুদ দিলাম,,আমার বউকে আমিই আগে হলুদ ছোয়ালাম।
সামু মনে মনে বলছে,,
আমাকে ইনসাল্ট করে হলুদ লাগানো হচ্ছে।
মুখ ভেংচি কেটে হাটা ধরলো।আদি বুঝতে পারলো না সামু এমন কেন করলো,, বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।

নিশিও শাড়ী পড়ে সেজেগুজে হাজির।তখনই জয় ও তার ফ্যামিলি হাজির।জয়ের ফ্যামিলিকে দেখে নিশি উচ্ছ্বসিত।হিয়ের ফ্যামিলিকে এখানে আসা জরে নি।নিশি এগিয়ে গিয়ে সবাইকে অভ্যর্থনা জানালো।তারপর জয়ের দিকে তাকাতেই জয় ইশারায় সব ওকে জানালো।

নিশি চলো ওদের সাথে আমরাও বিয়েটা করে ফেলি,,
জয় বাকা হেসে নিশিকে বললো।
নিশি ভ্রু কুচকে বললো,
–মাথা ঠিক আছে?
–এত সুন্দর করে সেজেগুজে সামনে দাড়িয়ে থাকতে কোন ছেলের মাথা ঠিক থাকে।
নিশি জয়ের মাথায় গাট্টি মেরে বললো,
–১বছর ওয়েট করো।তার আগে এসব ভুলেও বলোনা।

সামান্তা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।তখনই ওর ফোনে টুং করে একটা মেসেজ এলো।আদির মেসেজ,,

“তোমাকে এত্ত সুন্দর লাগছে আমি চোখ ফিরাতে পারছিনা।হলুদরঙ তুমি এত অপছন্দ করো কেন?তোমাকে হলুদে ভিষণ ভালো লাগে।একদম হলুদ পরী।লাভিউ উম্মাহ”

মেসেজটি দেখে সামান্তার মুখে হাসি ফুটে।
মুচকি মুচকি হাসছে।আদি সেটা দেখে নিজেও হাসে।

কিছুক্ষণ পর রাজের বাবা আসে।এসেই আদির বাবাকে বলে,
আমার ছেলের এমন একটা অবস্থা করে আপনারা আনন্দ উৎসব করছেন?রাজ কোমায় চলে গেছে।আপনারা আবার ওর নামে কেস করেছেন?
আদি উঠে এসে বললো,
–আপনার কি মনে হয় আমরা আপনার ছেলের জন্য শোক পালন করবো?ওর কপাল ভালো ও কোমায় চলে গেছে।এসি রুমে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকবে।নয়তো জেলে পচে মরতে হতো।আপনি কোন মুখে এসব বলতে এসেছেন?আপনার ছেলে এমন একটা কাজ করেছে আপনার লজ্জা হওয়া উচিৎ।

তিনি আমতা আমতা করে বলল,
–তোমরা কেসটা তুলে নেও।প্লিজ।

নিশি এগিয়ে এসে বলল,সরি আংকেল।কে কি করবে জানি না কিন্তু আমি এটা কক্ষনো হতে দেবো না।আমি আপনার মেয়ে হলে কি করতেন?কিংবা আপনার মেয়ের সাথে এমন হলে কি করতেন?আমি ওর শাস্তি চাই।

রাজের বাবার আর কিছু বলার নেই।তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেলো।

চলবে,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১৪

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-১৪

ফাবিহা নওশীন

??
আদির মা,বাবা,সামান্তার মা,বাবা আদির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।আদির বাবা হটাৎ বলে উঠে,,

–আদি তুই বেশ করেছিস,,ওই কুকুরের বাচ্চাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিস।ও সুস্থ হলে আমি ওকে জেলে পুরব।ওর এত্ত বড় সাহস আহনাফ চৌধুরীর বাড়ির মেয়েদের ইজ্জতের দিকে হাত দেয়।আমি শুধু শুধু সামান্তার উপর অভিমান করে ছিলাম।এতটুকু বাচ্চা মেয়ে নিজের কথা না ভেবে,,নিশির কথা ভেবেছে,আমার পরিবারের মান সম্মান নিয়ে ভেবেছে।আর আমি ওর উপর অভিমান করে ছিলাম।ও কতটা সাহস দেখিয়েছে।

আদির মা কাদতে কাদতে বললো,,
–নিশি যেনো এসব না জানতে পারে।তাহলে ও অনেক কষ্ট পাবে।মেয়েটা আমার অনেক নরম মনের সামুর মতো সাহসী নয়।ওকে তোমরা জানিওনা।

আদি ওর মাকে শান্তনা দিয়ে বললো,
মা প্লিজ কান্না থামাও।নিশি এসব জানবে না।ওকে জানাবো না বলেই তো তোমাদের আলাদা করে নিয়ে কথা বললাম।সামুও এর জন্য তোমাদের কাউকে কিছু জানায়নি।যাতে নিশির কানে এসব না যায়।আমিও জানাতাম না কিন্তু তোমরা সামুকে ভুল বুঝতেছিলে তাই বাধ্য হয়েই বললাম।

আদির মা কান্না থামিয়ে বললো,
সামু আমাদের কিছু বলে নি,,আমরাও সত্যি না জেনে মেয়েটাকে ভুল বুঝেছি।

সামুর মা এসব শুনে অনুতপ্ত হচ্ছেন।কিছু না জেনেই নিজের মেয়েকে ঘরভর্তি মানুষের সামনে চড় মেরেছে।
–ভাবি,,আপনার কথা না হয় বাদ দিন।আপনার ছেলের শোকে মাথা কাজ করে নি কিন্তু আমি তো ওকে ঘরভর্তি মানুষের সামনে দুটো চড় মেরেছি।মেয়েটা আমার অনেক কষ্ট পেয়েছে।আমি ওর গায়ে হাত তুলেছি কবে মনে পড়ছেনা।ভুল করলে বকুনি দিয়েছি কিন্তু হাত তুলিনি,,কিন্তু কাল আমি ওর গায়ে,,,।

আদি,আদির বাবা,সামুর মা চড় মারার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।

সামুর বাবা বলে,,কি বলছো?তুমি ওকে মেরেছো কেন?তুমি কি করে পারলে আমার মেয়ের গায়ে হা তুলতে? আমি ছোট থেকে ওর গায়ে ফুলের টুকাও পড়তে দেইনি আর তুমি,,,

আদির বাবা বললো,,
–কাজটা ভাবি আপনি আসলেই ঠিক করেন নি।

আদিও অনুতপ্ত।ও নিজেও সামুকে অনেক জোরে একটা থাপ্পড় মেরেছে।বেচারি কোনো দোষ না করেও তিনটি থাপ্পড় খেলো।

সামুর মা বললো,
–সামু কই,,আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইব।আমি তো ওর মা।আমি তো ওকে চিনি।আমার তো ওকে সাপোর্ট করার কথা ছিলো।

আদি সামুর মাকে বলে,
–আন্টি,,আমি সামুকে আপনার রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।ও নিশির সাথে নিশির রুমে আছে।

আদি নিশির রুমে গিয়ে সামুকে ডেকে নিলো।
–কাজ শেষ?
–হু,,তুমি তোমার আম্মুর কাছে যাও।তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।কিছু বলবে তোমাকে।

সামান্তার মুখ কালো হয়ে গেলো।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,
–যাচ্ছি।
আদি পিছনে থেকে বললো,
–উনি খুব অনুতপ্ত আমার মতো।
সামু আদির কথা শুনে মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

সামু মাকে জড়িয়ে আছে।সামুর মা সামুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।সামুর কাছে ক্ষমা চাইতেই সামু মাকে জড়িয়ে কেদে দেয় আর বলে,,
তোমার কোনো দোষ নেই আম্মু তোমার জায়গায় আমি থাকলে একি কাজ করতাম।ভুলে যাও,,আর আমাকে একটু আদর করে দেও।

নিশির মন খারাপ।আদি বিষয়টি খেয়াল করছে।আদি নিশির সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলো।ওর কি হয়েছে জানতে হবে।

রাতে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসেছে।আদির খাওয়া শেষ সামু তখনো খাচ্ছে।আদি সামুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–ডিনার শেষে আমার ঘরে এসো কথা আছে।

সামু মাথা না তুলে খেতে খেতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।তারপর একবার মাথা তুলে সবার দিকে চাইলো।ওর ভিষণ লজ্জা লাগছে আদি এক টেবিল মানুষের সামনে ওকে ওর ঘরে যেতে বললো।আলাদাভাবে বললে কি হতো,,সবাই কি ভাবছে,,,পরক্ষণেই ভাবলো স্বামীর ঘরে যাবো লজ্জা কিসের?বউ স্বামীর ঘরে যাবে স্বাভাবিক।

আদি নিশির রুমে গেলো।নিশি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।আদি ওর কাধে হাত রাখতেই নিশি পিছনে ঘুরে আদির দিকে চেয়ে স্মিত হাসি দিয়ে বললো,
–ভাইয়া তুই,,কিছু দরকার?
–তার আগে বল আমার বোনের মুখে হাসি নেই কেনো?কি হয়েছে তার?সে কি তার ভাইয়ের কর্মের জন্য সাফার করছে?

–কি বলছিস ভাইয়া এসব?আমি ঠিক আছি।তুই এমন উল্টো পাল্টা ভাবছিস কেন?

–নিশি মিথ্যা বলিস না,আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি কিছু হয়েছে।জয় কিছু বলেছে?তুই এখন আমাকে বলবি না জয়কে ফোন করে জানবো?
বলেই আদি ফোন বের করলো।

নিশি আদিকে বাধা দিয়ে বললো,
–ফোন দিস না,আমি বলছি,,জয় কিছু বলে নি কিন্তু ওর ফ্যামিলি ওর উপর অনেক প্রেশার দিচ্ছে।ওর চাচা মানে রাজের বাবা জয়কে অনেক প্রেশার দিচ্ছে।জয়ের বাবা-মা ও প্রেশার দিচ্ছে ওকে।রাজের ফ্যামিলি জয়কে তোর ব্যাপার নিয়ে,আমাদের ফ্যামিলি নিয়ে অনেক কথা শুনাচ্ছে।ও অনেক হেরিটেজ ফিল করছে।

আদি চুপ করে আছে।কি করা যায় তাই ভাবছে।
নিশি হটাৎ কেদে দেয়।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।
–নিশি কাদছিস কেন?কান্না থামা।

–ভাইয়া আমি জয়কে খুব ভালোবাসি।ও যদি এখন ফ্যামিলির চাপে বিয়ে না করে,,আমার কি হবে?আমি কিভাবে ওকে ছাড়া থাকবো?আমি পারবো না।

–নিশি,,স্টপ ক্রায়িং।আমি যখন মেস করেছি আমিই সব কিছু ঠিক করে দেবো।তুই জয়কে বিয়ে করতে চাস তো,,আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি তোর ইচ্ছে পূরণ করবো।আমি কথা বলবো জয়ের সাথে।প্রমিস করছি সব ঠিক করে দেবো।তোর এই ভাইয়ের উপর তোর বিশ্বাস আছে তো?বল,,

নিশি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।

–তাহলে কান্নাকাটি বন্ধ কর।আমি কালকেই সব ঠিক করে দেবো।

.
.
.
.

সামান্তা আদির বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে আছে।আদি রুমে নেই।বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে।আকাশে কতশত তারা জ্বলজ্বল করছে।
আদি রুমে ঢুকে সামান্তাকে না পেয়ে রেগে গেলো।
–ওকে আমি সবার সামনে বলে এলাম আসার জন্য আর ও আসেনি,,।

আদি ফোন হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে যায় সামুকে ফোন করার জন্য।তখনই বারান্দায় কারো ছায়া দেখতে পায়।ফোন রেখে বারান্দায় আসে।সামু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে আছে।আদি সামুকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বিরবির করে বলে,
“পাখি আমার এতটাও অবাধ্য নয়”

আদি সামান্তার পাশে এসে দাড়ায়।সামান্তা মাথা না ঘুরিয়েই বললো,
–কোথায় ছিলে?
আমাকে আসতে বলে কোথায় চলে গিয়েছিলে?
–নিশির ঘরে।

সামান্তা আদির কথা শুনে চমকে ঘুরে জিজ্ঞেস করে,
–নিশি আপুর ঘরে!!কেন?
তারপর আদি সামুকে সবকিছু বললো।

–এখন কি করবে?

–জয়ের সাথে কথা বলবো।ওর সাথে আমার কিছু হিসেব বাকি আছে,,সেটা পরিশোধ করতে হবেনা,,

–মানে কি?জয় ভাইয়া তো কিছুই জানে না।

–কেন জানবে না?ওর বাড়িতে আমার বোনের সাথে এতবড় ঘটনা ঘটে গেলো,,আর ও কোনো খবর ই রাখলো না।এভাবে আমার বোনের খেয়াল রাখবে,,সারাজীবন কি করবে,,এভাবে ছেড়ে দিবে একা?(রাগান্বিত সুরে)

সামান্তা কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
–তোমার যা ভালো মনে হয় তাই কর।কিন্তু নিশি আপু যেনো কষ্ট না পায় সেটা দেখবে।

–বোন আমার অবশ্যই দেখবো।ওর ক্ষতি কিংবা কষ্ট আমি মেনে নিবোনা।

–তোমার উপর গতকাল থেকে অনেক ধকল গেছে রেষ্ট করো।আমি তাহলে এখন যাই,,
বলেই সামান্তা পা বাড়ালো।
আদি সামান্তার হাত ধরে ফেললো।

–কোথায় যাচ্ছো?আসল কথাই তো জিজ্ঞেস করা হলো না।

সামান্তা নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো,
–তার জন্য অনেক সময় আছে।আগামীকাল বলবে।

–না আমি এখনি জানতে চাই।আন্টি কি বলেছেন?তুমি কি ক্ষমা করেছো?

–কি বলছো এসব,,আমার আম্মু হয়।আমাকে শাসন করার অধিকার তার আছে।তাই বলে কি আমি আম্মুর উপর রাগ করে থাকবো?আম্মু যেমন বকেছে,মেরেছে তেমনি আদরও করে দিয়েছে।
বলেই সামু হালকা হাসি দিলো।

–আমিও তো মেরেছি তাহলে আমিও একটু আদর করে দেই।

সামান্তা আদির কথা শুনে ঢোক গিলে বললো,,
তুমি থাপ্পড় মেরে আবার সরি বলেছো,গালে কিস করেছো সব শোধ।আমি এখন ঘরে যাবো।

আদি সামুকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
এত্ত পালাই পালাই করো কেন?তুমি না সাহসী দ্যা গ্রেট সামান্তা?

–জ্বী আমি অনেক সাহসী।

–তাহলে আজকে তুমি আমার সাথে ঘুমাবে।

সামু চোখ বড়বড় করে বললো,
–কি বলছো?সবাই কি ভাববে?

–কি ভাববে?আমি কি পরপুরুষ? আমার ঘরে তোমাকে কেউ আসতে মানা করেছে?আমিই তো থাকতে দেইনি।এখন পারমিশন দিচ্ছি।তুমি থাকবে ব্যাস।

-…..

আদি সামান্তা ছেড়ে দিয়ে বললো,
আমার খুব ঘুম পেয়েছে,,,আমি গতকাল সারারাত ঘুমাইনি।(মুখে ইনোসেন্ট ভাব এনে)

–ঠিক আছে।

সামান্তা আদি পাশাপাশি শুয়ে আছে।ডিম লাইটের আলোয় আদি সামান্তার মুখটা দেখছে।

–এভাবে চেয়ে থাকলে ঘুমাবো কিভাবে?

–আমার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে কি করবো?

–তোমার না খুব ঘুম পাচ্ছে।

–হুম তোমার জন্য আসতে পারছেনা।

–তাহলে আমি চলে যাই?

আদি প্রতি উত্তরে সামান্তাকে টেনে বুকের মাঝে নিয়ে নিলো।
–এবার ঘুম আসবে।

সামান্তা মুচকি হেসে আদির বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো।আদি সামান্তার মাথায় একটা চুমু খেয়ে বললো,
–গুড নাইট মাই ডিয়ার।
–হুম।
আদি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমে তলিয়ে গেল।দুদিনের ক্লান্তি,,সারারাত বাইরে ছিলো।সামু আদির নিশ্বাসের উঠা নামা অনুভব করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো।

সামুর ঘুম ভেঙে যেতেই নিজেকে আদির বুকে আবিষ্কার করলো।আদি ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।ওর নিশ্বাস সামুর চুলে এসে বাড়ি খাচ্ছে।ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া।৮টা বাজে।সামু ভেবেছিলো সবার উঠার আগে ভোর বেলায় আদির রুম ছেড়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়বে।কেউ কিছু বুঝতে পারবেনা।এখন??

সামু আদির কাছ থেকে নিজেকে অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে উঠে দাড়ালো।তারপর আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে একবার আদির দিকে চেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আদি কিছুই টের পেলোনা।যে ঘুমকাতুরে ছেলে।সামান্তা সিড়ির কাছে গিয়ে আবার দৌড়ে ফিরে এলো।লিভিং রুমে সবাই জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।নিচে নামতে দেখলেই হাজার প্রশ্ন করবে,,উপরে কি করছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও এসব সামান্তার ধারণা।

–এখন কি করি?আমার এতো লজ্জা লাগছে কেন?নিজের হাসব্যান্ডের রুমেই তো ছিলাম।লজ্জা লাগছে কি করবো?কেটে কুচিকুচি করে খেয়ে ফেলবো? উফফফ,,!!

সামান্তা উপায় না পেয়ে নিজের চুল নিজেই ছিড়ছে।তারপর গুটিগুটি পায়ে নিশির রুমে গিয়ে দেখে নিশি ঘুমাচ্ছে।সামু নিশির পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো।কখন ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো নিজেও জানেনা।
নিশির ডাকে ঘুম ভাংলো।
–তুই কখন এলি?

–আদির সাথে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করে তোমার রুমে এসে শুয়ে পড়েছি।ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকিনি।
নিশি মুচকি হেসে বললো,,
–ভাইয়ের রুমে থাকলেই তো পারতি।এমনিতেও ওই রুমেই থাকার কথা ছিলো গতকাল।

–(ও রুমেই ছিলাম,সেটা তোমাকে কি করে বলি)আমি যাচ্ছি।

সামু নিচে নামতেই আদির মা বললো,
–সকালে তোকে তোর রুমে গিয়ে খোজে এলাম কই ছিলি?
–নিশি আপুর রুমে।
–ফ্রেশ হয়ে আয়।নাস্তা করবি।
–আসছি।

জয় লিভিং রুমে বসে আছে।নিশির মায়ের সাথে কথা বলছে।সামু আদিকে ডাকতে গেছে।আদি তখনো ঘুমে।বেলা বাজে ১২টা তার উঠার নাম নেই।সামান্তা আদির কাছে গিয়ে আদিকে ডেকেও কোনো লাভ হয়নি।
সামু এবার ঝাকাতে লাগলো।
–আদি,,উঠো।আদি উঠো।
–…..???
সামু আদির কানের কাছে গিয়ে চিতকার করলো,
–আদিইইই,,,!!
–কি,,কি,,,হয়েছে।
–এক ঘন্টা ধরে ডাকছি।উঠার নাম নেই।
–এত সকাল সকাল কেন ডাকছো?
–১২টা বাজে ১২টা।উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও।
–৩০মিনিট।
–জয় ভাইয়া এসে বসে আছে।
আদি জয়ের নাম শুনে লাফিয়ে উঠলো।
–আগে বলবা না?
–,সুযোগ পেলাম কই।
আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।

আদি ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে জয় বসে আছে।আদি ওর মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–মা নিশি কই?
–ভার্সিটিতে গিয়েছে।
–গুড।জয় প্লিজ কাম উইথ মি।বিশেষ কথা আছে।
জয় উঠে দাড়ালো।আদি সামান্তাকে বললো,
–তোমার ফোন নিয়ে আমার রুমে এসো।

সামান্তা ফোনের কথা শুনে হকচকিয়ে গেলো। আদি কি করতে চাইছে সেটা বুঝতে পারছেনা।কি আর করার ফোন নিয়ে আদির ঘরে গিয়ে দেখে দুজনেই চুপ করে বসে আছে।সামান্তাকে দেখে আদি মাথা তুলে বললো,,
ভিডিও অন করে ফোন ওর হাতে দেও।
জয় বুঝতে পারছেনা কিসের ভিডিও,, ও প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো আদির দিকে।সামান্তা আদির দিকে চেয়ে আছে।
কি বলছে কি,,বোনের ভিডিও দেখাতে বলছে।সামু কাচুমাচু হয়ে বললো,
–কি বলছো?ওনাকে,,
–তুমি দেখাও কোনো সমস্যা নেই,,ও তো নিশির হবু স্বামীই।
সামান্তা হাতের আংগুল ঘষছে।কিছুক্ষণ পর আদি আবার ইশারা করলো।জয় তো কিছুই বুঝতে পারছেনা।

সামু ভিডিও অন করে জয়ের হাতে দিয়ে বললো,
ভিডিও প্রেস করুন।জয় ফোন হাতে নিয়ে প্রেস করে কয়েক সেকেন্ডের মাথায় চোখ বন্ধ করে ফোন উল্টো করে টেবিলের রেখে দিয়ে চোখ রক্তবর্ণ করে বললো,
–হোয়াট দ্যা হেল,,এসব কি?(চেহারা স্পষ্ট না হলেও ওর বুঝতে বাকি নেই এটা নিশি)
আদি টেবিলে চাপড়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে চিতকার করে বললো,
–আমিও জানতে চাই এসব কি?
–মানে?
–মানে,,,এই সিকিউরিটি তুমি আমার বোনকে দিয়েছো?
–আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
–তোমার বাড়িতে,তোমার ভাই আমার বোনের ড্রেস চেঞ্জিং ভিডিও বানায় আর তুমি কি করছিলে?
–এসব রাজ করেছে?
–হ্যা,,ওই ব্লাডি বিচ এটা করেছে।আমার বোনের সম্মান নিয়ে খেলছে।
–রাজ,,
–হ্যা,,,ও নিশিকে ট্রাপে ফেলে ওর ভিডিও বানিয়ে, নিশির কাছ থেকে সামুর নাম্বার নিয়ে ওকে ভিডিও পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে।আর এই জন্য আমি ওই কালপিটকে মেরেছি।

–কি!!!
একটা শব্দে সবাই দরজার দিকে তাকালো। নিশি দাড়িয়ে আছে ওর হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেছে।
সবাই দাঁড়িয়ে গেলো।ওর ক্লাস শেষ হতে বিকাল কিন্তু এই সময়ে বাসায় ফিরবে কেউ বুঝতেও পারেনি।
নিশি এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,, কিসের ভিডিও? তারমানে যা হচ্ছে সব আমাকে নিয়ে?সামু তুই আমাকে মিথ্যা বলেছিস?
–না আপু,,,তুমি ভুল বুঝছো,,তুমি যা ভাবছো,,
–ভিডিও দেখা,,(কড়া গলায়)
সামু আদির দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। আদি টেবিল থেকে ফোন তুলে পকেটে নিয়ে বললো,,
–কোনো ভিডিও নেই,,তুই ভার্সিটি থেকে ফিরেছিস,,ফ্রেশ হ।
–ভাইয়া তুই যদি না দেখাস এখন আমি কি করবো নিজেও জানিনা।

জয় শান্ত কন্ঠে বললো,
–আদি,ওকে ফোনটা দেও।
আদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামুর হাতে ফোন দিলো।সামু ভিডিও বের করে কাপা কাপা হাতে নিশিকে দিলো।

নিশি ভিডিও দেখে কয়েক সেকেন্ডের মাথায় হাত থেকে ফোন ফেলে দিয়ে দু’হাতে চোখ মুখ ডেকে মেঝেতে বসে পড়ল।ওর সারা শরীর কাপছে।দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।সামু ওর পাশে বসে বললো,
–নিশি আপু কান্না থামাও,,কেউ দেখেনি এসব।আদি রাজের ফোন,ল্যাপটপ থেকে ভিডিও নষ্ট করে দিয়েছে।প্লিজ।

জয় এগিয়ে এসে নিশির পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–আমাকে ক্ষমা করো নিশি,আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারিনি,তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি।নিজের ভাইয়ের কুদৃষ্টি থেকে বাচাতে পারিনি।আমাকে মাফ করো।
নিশি ওকে ধাক্কা দেয়।
–ছুবেনা আমায় তুমি ছুবেনা।আমি কাউকে ক্ষমা করবো।
–নিশি প্লিজ এমন বলোনা,আমি ভালোবাসি তোমাকে,তোমায় ছাড়া থাকতে পারবোনা।প্লিজ।তুমি যা বলবে আমি তাই করবো,,কিন্তু আমাকে ক্ষমা করো,আমাকে দূরে সরিয়ে দিওনা।

–আমি ওর বিচার চাই।এতে যা হবার হবে।আমার বদনাম হোক, তুমি আমাকে ছেড়ে দেও আই ডোন্ট কেয়ার।

সামুর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে।নিশি যে ভয় পেয়ে কুকড়িয়ে না গিয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ও যদি ওর বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করে তবে শুধু নিশিই না অন্য সব মেয়েরাও বিচার পাবে।তারা নতুন করে বাচার আশা পাবে।

জয় বললো,,
–অবশ্যই,শাস্তি ওকে পেতেই হবে।ও তোমার সম্মান নিয়ে খেলেছে।আমার ভালোবাসা আমার হবু বউয়ের সম্মান নিয়ে খেলেছে।শাস্তি ওকে দিয়েই ছাড়বো।

সামু আদিকে ইশারা করলো বাইরে যাওয়ার জন্য।আদি সামুর পিছু পিছু বাইরে চলে এলো ওদের একা ছেড়ে।

জয় নিশিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে ওর মাথায় অসংখ্য বার ঠোঁট ছুইয়ে মাফ চাইলো।

সামান্তা মুচকি মুচকি হাসছে।আদি সেটা খেয়াল করে বললো,
–তুমি এত খুশি কেন?
–আসলে আপনি যখন জয় ভাইয়াকে ভিডিও দেখাতে বলেছিলেন তখন আমি মনে মনে আপনাকে বেক্কল উপাধি দিয়েছিলাম।কিন্তু এখন দেখছি ভালোই হয়েছে,,নিশি আপু জেনে অন্য রকম রিয়েক্ট করেনি বরং সাহস দেখিয়েছে।জয় ভাইয়াও সাপোর্ট দিচ্ছে।সব মিলিয়ে ভালোই হয়েছে।সত্যিও সবাই জেনেছে।ওদের রিলেশনও ঠিক হয়েছে।

–তুমি আমাকে এতটা বেক্কল ভাবো জানতাম না তো,,

সামু দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো,,
–আমি তো ভেবেছিলাম এই ছয় ফুটের জিরাফ রোমান্স ছাড়া আর কিছুই জানে না,,

আদি চোখমুখ কুচকে বললো,
–তুমি আমাকে আবার জিরাফ বললে,,দাড়াও,,

সামু বুঝতে পারছে অবস্থা খারাপ যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে তাই কেটে পড়াই শ্রেয়।
সামু মুখ ভেংচি কেটে দৌড়,,,

–ওই পালাচ্ছো কেন দাড়াও,,আজকে আমি তোমাকে দেখাবো রোমান্স কাকে বলে,,,
আদিও সামুর পিছে দৌড়,,,।

ওরা গোল্লাছুট খেলুক,,,, ?

চলবে,,,,,?

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১৩

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১৩

ফাবিহা নওশীন

??

সামান্তা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আদিকে চিতকার করে ডাকছে।কিন্তু আদি পাত্তা না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।ওর মাথায় এখন অন্য কিছু চলছে।আদির গাড়ি চলে গেলো।সামান্তা আবার দরজায় গিয়ে ধাক্কা মারছে।হাতের বাধন খোলার চেষ্টা করছে।পিছনের দিকে বাধায় খোলতে পারছেনা।হাত মোচড়ামুচড়ি করছে।

সামু কাদতে কাদতে মেঝেতে বসে সোফায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।নিশি দরজা খোলে সামুকে ওই অবস্থায় দেখে চমকে যায়।তাড়াতাড়ি ওর হাতের বাধন খোলে ওর শরীর ঝাকালো।সামান্তা ধীরে ধীরে চোখ মেললো।সামান্তা অস্থিরতার সুরে বললো,
–আআদি,,আদি কোথায়?
নিশি চুপ করে আছে।
–কি হলো নিশি আপু,,কথা বলো আমার ভয় লাগছে।আদি কোথায়?সব ঠিক আছে তো?

নিশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করলো।
ভাইয়া রাজকে অনেক মেরেছে।মেরে হাত-পা,নাক-মুখ ফাটিয়ে ফেলেছে।ওকে গুলিও করেছে কিন্তু বাবার লোকেরা সময় মতো যাওয়াতে গুলিটা লাগেনি।ভাইয়াকে অনেক কষ্টে আটকিয়েছে।জানিসই তো ভাইয়া কত জেদি।রাজকে বাবার লোকেরা তাৎক্ষনিক হসপিটালাইজ করে।ওর অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল।জানিনা কি হবে,,,তবে মরে গেলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।জানিস ই তো জয়ের বাবা আর রাজের বাবাও প্রভাবশালী লোক।বাবা যদি নিজের ক্ষমতায় ছেলেকে বিপদমুক্ত করতে যায় তবে সমালোচনার মুখে পড়বেন।কারণ বাবা একজন রাজনীতিবিদ,সমাজসেবী।রাজের বাবা এসব জানার পর পুলিশ কমপ্লেইন করেছে।

–আদি??আদি এখন কই?

–থানায়,,,ডিসির রুমে বসিয়ে রেখেছে।বাবা আর তার চেনাজানা লোকেরা ভাইয়ার কাছে যাচ্ছে।তোর আব্বুও সাথে গিয়েছে।জানিনা কি হচ্ছে।এতক্ষণে হয়তো পৌছে গেছে।ভাইয়াকে ছাড়ানোর জন্য উকিলের সাথে কথা বলে জামিনের ব্যবস্থা করবে।এখন রাত ১২টা বাজে,,জানিনা ছাড়াতে পারবে কিনা।জয়ের কাছে খোজ নিয়েছি রাজের অবস্থা অনেক খারাপ।কোনো ভরসা নেই।

সামু দৌড়ে নিচে গেলো।নিচে থমথমে অবস্থা।সবাই চুপটি করে বসে আছে।যেখানে আজ হৈ-হুল্লোড় করার কথা ছিলো সেখানে শোকের ছায়া।সামান্তাকে দেখে সামান্তার মা এগিয়ে এলো।
তিনি রাগান্বিত ভাবে বললো,
–সামু এসব কি?আদি এমন কাজ কেন করেছে?সত্যি করে সব বল।তুই কেন গিয়েছিলি ওখানে?ওই ছেলের কাছে কেন গিয়েছিলি?

সবাই সামান্তার মুখের দিকে উত্তরের জন্য চেয়ে আছে।কিন্তু সামু কি বলবে?কি করে বলবে,,কেন গিয়েছিলো,,আদি কেন এমন করেছে?আদি যাওয়ার সময় বলে গেছে যেন নিশি এসব না জানে,,।

সামুর মা সামুকে ধরে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
–কথা বল,,চুপ করে আছিস কেন?

সামুর ব্রেইন স্টপ হয়ে গেছে।কিছুই মাথায় আসছেনা।এতো টেনশন আর এমন সিচুয়েশনে ব্রেন স্টপ হওয়ার ই কথা।তাই মুখে যা এলো তাই বলে দিলো,,
–আসলে রাজ আমাকে বিরক্ত করছিলো,,ফোন করে আজেবাজে কথা বলছিলো,,তাই আমি গিয়েছিলাম।
এক নিশ্বাসে বলে দিলো।

–আর তাই তুমি নিজের গায়ে হলুদ রেখে,বাড়িভর্তি মেহমান রেখে কাউকে কিছু না জানিয়ে ওকে জবাব দিতে চলে গেলে?

সামু মাথা নিচু করে আছে।কিছুই বলছেনা।
–কথা বলছিস না কেন?
সামু তাও চুপ করে আছে।আদি ফুপ্পি বলে উঠে,
–এ মেয়ে তো অনেক ডেঞ্জারাস।ঘরে বর আর বাইরে আরেক ছেলেকে ফাসিয়েছে,,আর নিজের বরের হাতে সে ছেলেকে মারিয়েছে।কি শিয়ান মেয়েরে বাবা,,,

সামুর মায়ের এবার আর সহ্য হলো না।তিনি কষিয়ে সামুর দুগালে দু চড় বসিয়ে দিলেন।তার এহেন কাজে চারদিক স্তব্ধ।
সামান্তাও ছলছল চোখে মায়ের দিকে করুন ভাবে চেয়ে আছে।ওর মা ওকে মেরেছে যেন ওর বিশ্বাস ই হচ্ছে না।কোনো ভুল বা অন্যায় করলে তিনি সামুকে বকুনি দিতেন,,কড়া গলায় শাসন করতেন।দুতিনদিন কথা বলতেন না।এভাবেই শাস্তি দিতেন কখনো গায়ে হাত তুলতেন না।

সামুর মা চিতকার করে বললো,,
–তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি,,,??তোর জন্য আজ এই বাড়ির এমন অবস্থা।আদি তোর জন্য এতবড় ভুল করেছে।কি করলি এটা তুই সামু?এই মানুষগুলোর ভালোবাসা দাম এভাবে দিলি?

সামুর মা আবার সামুর দিকে এগুতেই নিশি বললো,,
–আন্টি কি করছেন?ও কি ইচ্ছে করে করেছে?বুঝতে পারেনি ভুল হয়ে গেছে।আপনি শান্ত হোন।

সামির এসে মাকে সামলাচ্ছে।
–আম্মু প্লিজ রুমে চলো।
সামির ওর মাকে টেনে নিয়ে গেলো।

নিশি সামান্তাকে আদির রুমে নিয়ে গেলো।সামান্তা যেন পাথর হয়ে গেছে।আদির মা একবারও সামুর কাছে আসেনি,কথা বলেনি।সামুর নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।

আদির জিনিসপত্র ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।বারান্দায় বসে একদৃষ্টিতে গেইটের দিকে চেয়ে আছে।ভোর হয়ে এসেছে।সামু ওভাবেই বসে আছে।কিন্তু আদি এলোনা।কাদতে কাদতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে।সকাল ৮টায় ঘুম ভাংলো।কিচুক্ষন পরে নিচে গেলো।কিন্তু কেউ ওর সাথে কথা বলছেনা।কিভাবে যেন তাকাচ্ছে।সামু নিশির ঘরে গেলো।
নিশি ঘুমিয়ে আছে।গালে চোখের পানি শুকিয়ে দাগ বসে আছে।নিশ্চয়ই ভাইয়ের জন্য কেদেছে।সামুর ইচ্ছে করছে না ওকে ডাকতে,,
সামু ভেবে পাচ্ছেনা কি করবে,,কিভাবে আদির খোজ নিবে।সামু আবার আদির রুমে গিয়ে বসলো।

ঘরটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।তারচেয়ে বেশি বুকের ভিতর ফাকা লাগছে।
সব আমার জন্য হয়েছে।সবকিছুর জন্য আমি দায়ী।

কিছুক্ষণ পর সামু আবার নিশির রুমে গেলো।নিশি শুয়ে আছে সামুর আসার শব্দে উঠে বসে।
–আপু,,এখনো কেউ এলো না কেন?
–এতরাতে জামিন করতে পারেনি।চলে আসবে।কিছুক্ষণ পর জামিন হয়ে যাবে।তুই চিন্তা করিস না।তবে খারাপ খবর এই যে রাজের অবস্থার অবনতি ঘটেছে।মরে গেলে সমস্যা হবে।দোয়া কর ও যেন বেচে যায়।
সামান্তা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদির রুমে আসে।

??
দুপুর ১২টা।নিশি খাবার নিয়ে সামুর রুমে এসেছে।মেয়েটা গতকাল দুপুরে খেয়েছে তারপর আর কিছুই খায়নি।
সামান্তা মেঝেতে হাটু মুরে বসে আছে।
–সামু,,,
সামু মুখ তুলে নিশিকে দেখলো।
–তোর জন্য খাবার এনেছি খেয়ে নে।
–আমার ক্ষুধা নেই।
–সামু এমন করেনা,,কিছু খেয়ে নে।গতকাল দুপুরে লাষ্ট খাবার খেয়েছিস,,এমনি বাড়িতে এই অবস্থা তার উপর যদি তুই অসুস্থ হয়ে পড়িস বুঝতেই পারছিস,,
নিশি জোর করে ওকে কিছুটা খাবার খাইয়ে দিলো।
তারপর বললো,,
–ভালো লাগছেনা,,, বাড়িতে কেমন দম বন্ধ করা পরিস্থিতি।এসব না হলে আজ তোদের বিয়ে হতো।সবাই কত মজা করতাম।এই মুহুর্তে সাজগোজ এটাসেটা নিয়ে বিজি থাকতাম।
নিশি অভিমানের সুরে বললো।

–আর আমি সব নষ্ট করে দিলাম।

নিশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো,,
–কি এমন হয়েছিলো সামু,,সিরিয়াস কিছু যে হয়েছে আমি শিওর নয়তো তুই ওভারে যেতে পারতিনা।

–(আপু তোমাকে কি করে বলবো কি হয়েছিলো)
পার্টিতে নাম্বার নেওয়ার পর থেকেই আমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতো তাই নাম্বার চেঞ্জ করি।কিন্তু ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে থাকতো।আমি এভয়েড করতাম।তারপর জানিনা নাম্বার কই পেলো,,আমাকে ফোন করে উল্টো পাল্টা কথা বলছিলো।

–নাম্বার আমি দিয়েছি,,,

সামু চমকে গিয়ে বললো,
–তুমি!!

–হ্যা,,কিন্তু আমি এসব জানতাম না।বিয়েতে ওদের ইনভাইট করা হয়েছে।রাজ আমাকে ফোন করে বলে,,তুই বিয়ে করসিছ আর ওকে একবার ও পার্সোনালি ইনভাইট করিস নি।তুই আর ও নাকি খুব ভালো ফ্রেন্ড।তোর নাম্বার নাকি ডিলিট হয়ে গেছে তাই তোর নাম্বার চায় আর আমিও দিয়ে দেই কিন্তু ভাবিনি ও এসব করবে।ও তোকে ডিস্টার্ব করে।আমাকে ক্ষমা করিস।

–না আপু তোমার কোনো দোষ নেই কুকুরের কাজ কামড় দেওয়া।আর ও তাই করেছে।তুমি না দিলে অন্য ভাবে কালেক্ট করতো।
দেখো,,কি আশ্চর্যজনক ব্যাপার আমি ওকে ঘৃণা করি কিন্তু বারবার আল্লাহর কাছে ওর সুস্থতা কামনা করছি।

–এছাড়া আর উপায় ও নেই।

.
.
.

বিকেল ৪টা।আদি বাড়িতে ফিরেছে।সবাই একসঙ্গে বাড়িতে ফিরেছে।আদির মা আদিকে জড়িয়ে কাদছে।একদিনেই চেহেরার কি হাল হয়েছে।আদির চোখ সামুকে খোজছে।কিন্তু সামু আসেপাশে নেই।হয়তো অভিমান করে দূরে আছে।আদি নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারপর সামুর অভিমান ভাংগাবে।
বাড়িতে যেন আবার খুশি উপচে পড়েছে।

আদি নিজের রুমে গিয়ে কাবার্ড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে আবার থেমে গেলো।মাথা ঘুরিয়ে সোফার দিকে চাইলো।সামু একটা কুশন কোলে নিয়ে সোফায় বসে বসে ঘুমাচ্ছে।আদি মুচকি হেসে সামুর দিকে এগুলো।সামুর পাশে বসে।সামুর ঘুমন্ত চেহারায় বিষন্নতা ও ছাপ স্পষ্ট।আদি সামুর চোখে জোরে জোরে ফু দিচ্ছে।ফু দেওয়ার ফলে সামু কিছুটা নড়েচড়ে উঠে।ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় কপালে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে।আদি মুখ টিপে হাসছে।তারপর আরও জোরে জোরে ফু দেয়।সামান্তা বিরক্ত হয়ে চোখ খোলে নেয়।সামান্তা আস্তে আস্তে চোখ মেলে।ছোট ছোট করে চোখ মেলে সামনে আদিকে দেখতে পায়।তারপর ভালো করে চোখ মেলে আদি হাস্যজ্বল মুখটা দেখে।সামু ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলে,,

–আপনি,,,মানে তুমি,,,??
তুমি কি সত্যিই চলে এসেছো,,না স্বপ্ন দেখছি?

আদি হালকা হেসে সামান্তার গালে এক হাত রাখলো।সামান্তা নিজের গালে আদির ছোয়া অনুভব করে বুঝতে পারলো আদি সত্যিই ওর সামনে এটা স্বপ্ন নয়।সামান্তা আদির হাতের উপর নিজের হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নিলো।ওর চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে।

–সামু কাদছো কেন?আমি ঠিক আছি,চলে এসেছি।কান্না বন্ধ করো।নয়তো ভালো হবেনা।

বলেই নিজের হাত সরিয়ে দুহাতে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।সামান্তা আদিকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
–সবকিছু আমার জন্য হয়েছে,,এসবের জন্য আমি দায়ী।আমার জন্য তুমি,সবাই এতো সাফার করছে।

–এতে তোমার কোনো দোষ নেই।তুমি শুধু সিচুয়েশনের স্বীকার।ওই কুকুরের বাচ্চাটা এভাবে অনেক মেয়ের জীবন ধ্বংস করেছে।আমি ওকে ইচ্ছেমতো মেরে ওর স্বীকারোক্তি নিয়েছি।ও যদি বেচেও যায় পুলিশে দেবো ওকে।অনেক মেয়েকে ও এভাবে ব্ল্যাকমেইল করেছে।যদিও ও তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো।ওর কত্তবড় সাহস ও আমার বউয়ের দিকে নজর দেয়।ওকে মেরেই ফেলতাম যদি বাবার লোকেরা বাধা না দিতো।

–হুম তারপর জেলে গিয়ে আজীবন কাটিয়ে দিতে।আমি কতবার না করলাম শুনলেই না।

–আমাকে আটকে রাখার মতো কোনো জেল তৈরি হয়নি বুঝেছ,,।
যাইহোক আমার কেমন জানো লাগছে,,শাওয়ার নিতে হবে।তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
সামান্তা আদিকে ছেড়ে দিলো।
–কোথাও যাবেনা কিন্তু,, আমি যেনো এসে তোমাকে দেখি,,
–আচ্ছা।
আদি উঠে গিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেলো।সামুর অনেক ভালো লাগছে।আদি এসে পড়েছে।ওর অপেক্ষার অবসান হয়েছে।

আদি শাওয়ার নিয়ে কালো টাওজার,সাদা টিশার্ট পড়ে বের হলো।চুল দিয়ে টিপটিপ করে পানি পড়ছে।আদি তোয়ালে নিয়ে সামুর কাছে চলে এসে ওকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।
তারপর তোয়ালে দিয়ে বললো,,
–নেও চুল মুছে দেও।স্বামীর একটু সেবা করো।

সামু মুচকি হেসে ওর হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে আদির চুল মুছতে লাগলো।আদি এক নজরে সামুকে দেখছে পলকই পড়ছেনা।বিষন্নতা যেন ওর চেহারার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।সামান্তার চুল মুছা শেষে আদির দিকে তাকিয়ে দেখে আদি ওর দিকে চেয়ে আছে।এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে অস্বস্তিতে পড়ে।

–এভাবে চেয়ে আছো কেন?

আদি কিছু না বলে সামান্তার মাথা ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলালো।আকস্মিক ঘটনায় সামু হতবাক।ওর হাত থেকে তোয়ালে পড়ে গেলো।সামু আদির কাধ খামচে ধরে।
কিছুক্ষণ পর আদি সামুকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,
–আই লাভ ইউ সামু।
সামু আদির বুকে মুখ গুজে জবাব দেয়,,
–আই লাভ ইউ টু।
আদি ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।

কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর সামান্তা বললো,
–আদি,,
–হুম।
–সবাই আমাকে ভুল বুঝছে।আমাকে নানা প্রশ্ন করছে কিন্তু আমি জবাব দিতে পারিনি।কেউ আমার সঙ্গে কথা বলছেনা।আমার খুব খারাপ লাগছে।
–ডোন্ট ওরি,,আমি এসে পড়েছি,,আমি সব ঠিক করে দেবো।
–আজ আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।
–হুম,,,তোমাকে যখন বলেছি বিয়ে করবো,,করবোই।তবে সময় দরকার।
–কোনো ব্যাপার না।এখন কি করবে?আপু বলছিলো রাজ মরে গেলে তোমার সমস্যা হবে,,।
আদি কড়া গলায় বললো,,
–ওর নাম তুমি উচ্চারণ করবেনা,,।তোমার মুখে যেন আমি ওর নাম না শুনি।ও না মরলেও ওকে আমি মারবো।শালা নষ্ট পুরুষ।ইচ্ছে করছে ওকে গিয়ে হসপিটালে মেরে আসি।
–শান্ত হও,,।তুমি আর কোনো ঝামেলায় যাবেনা প্লিজ।
–তুমিও ওর নাম আর নিবেনা।
–ঠিক আছে নিবোনা।
তারপর আবার আমতা আমতা করে বলল,
নিশি আপুর ভি,,
–নষ্ট করে ফেলেছি।শুধু তোমার ফোনে আছে।
–ফোন তো রা,,,,মানে ওইখানেই ফেলে এসেছি।
–আমি নিয়ে এসেছি।
–ডিলিট করেন নি,,আমার ফোন থেকেও ডিলিট করে দিয়েন।বলা তো যায়না কার হাতে পড়ে যায়।
–উহু,,ওটা থাক।ওটা দরকার হতে পারে।তুমি শুধু সাবধানে রেখো।
–আচ্ছা।

দরজায় টুকা পড়লো।সামান্তা আদিকে ছেড়ে বললো,,
–দেখে আসি,,কে এসেছে।
সামু দরজা খোলে নিশি এসেছে।আদিকে খেতে ডাকছে।আদির খাওয়া শেষ হতেই সবাই ওর উপর হামলে পড়ে।বিশেষ করে ওর বাবা।

–বাবা,,আমার জায়গায় তুমি থাকলে তুমি ওকে খুন ই করে দিতে।তোমরা কেউ আসল ঘটনা জানোনা।আমি অযথা ওকে মারি নি।
তুমি,মা,আংকেল,আন্টি, আপনাদের আমার কিছু জানানোর আছে।আপনারা শুধু শুধু সামুকে ভুল বুঝছেন।আপনাদের সত্যিটা জানা দরকার।

চলবে,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১২

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১২

ফাবিহা নওশীন

??
সামান্তা গাড়িতে বসে আছে।রাজ ওর কাছে কি চাইতে পারে সেটা রাজের আচরণে স্পষ্ট।সামান্তার কিছুটা ভয় লাগছে।যদি রাজ ওর সাথে খারাপ কিছু করে।তাহলে?
কিছু ভাবতে পারছেনা।চোখের সামনে রাজের দেওয়া নিশির ভিডিওটা ভেসে উঠছে।সেদিন পার্টিতে এসব করেছে রাজ।যে পার্টিতে না যাওয়া নিয়ে আদি রাগ করেছিলো।
ভিডিওতে নিশি ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করছিলো।সম্ভবত ড্রেসে কিছু পরেছিলো আর এটা যে রাজ ফেলেছে সেটা অজানা নয়।নিশির ফেইস প্রথমে স্পষ্ট না হলেও শেষের দিকে টিস্যু নেওয়ার জন্য ক্যামেরার দিকে ঘুরে যেখানে নিশি স্পষ্ট।সামান্তাকে নিশি খুব ভালোবাসে।তাই সামুও নিশির সাথে কোনো প্রকার অন্যায় হতে দিবেনা।

অপরদিকে নিশি সামান্তাকে খোজে পাচ্ছেনা।বারবার ফোন করছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা।আদি নিশিকে চিন্তিত চেহারায় দেখে জিজ্ঞেস করে,,

–নিশি এনিথিং রং?

–না,,,

–কিছু তো হয়েছে,,,তোকে চিন্তিত লাগছে।

–ভাইয়া আসলে সামুকে পাওয়া যাচ্ছেনা।
নিশি চোখ বুঝে একদমে বলে ফেলল।
আদি ফ্যালফ্যাল করে নিশির দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
–পুরো বাড়ি খুজেছি।বারবার ফোন করছি কিন্তু পাচ্ছিনা।

অজানা আতংকে আদির বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বললো,, এদিকেই আছে কোথাও তুই টেনশন করিস না।আমি দেখছি।

আদি ফোন বের করে কল দিতে গিয়ে সামান্তার একটা মেজেস দেখে।সামান্তা পার্স নেওয়ার বাহানায় অনেক কষ্টে আদিকে ছোট করে একটা মেসেজ করে।
“আদি আমি রাজের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি”

আর কিছু লিখতে পারেনি কারণ তখন ওর দরজার সামনে কয়েকজন ছিলো এখন এরা কি মেহমান না রাজের লোক জানেনা।ফোন থেকে সাথে সাথেই মেসেজ ডিলিট করে বের হয়ে যায়।আদিকে রাজের কথা জানিয়ে রাখে যাতে কোনো বিপদে পড়লে ওকে রিস্কিউ করতে পারে।

মেসেজটা দেখে আদির গায়ে আগুন জ্বলে উঠে,চোখমুখ হিংস্র রুপ ধারণ করলো।সাথে সাথেই একজনকে ফোন করে।
–হ্যালো আমি মেসেজ করে একটা নাম্বার পাঠাবো সেটা ট্রাক করে লোকেশন জানাও এস সুন এস পসিবল।
–ওকে।

আদি নিশিকে বলে গেলো যাতে কাউকে কিছু না বলে।আদি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।সাথে কিছু গার্ডকে।

সামু,,হাও কুড ইউ ডু দিস?ইউ হেভ টু প্রে ফর দিস।আমার ভালোবাসা বুঝিস নি।দাম দেস নি।একবার তোকে পাই তোর যে কি হাল করবো?তুই বিয়ে রেখে আমাকে রেখে রাজের কাছে গিয়েছিস?এই জন্য ই আমাকে এতো অবহেলা করেছিস?সব কিছুর মূল্য দিতে হবে তোকে।চরম মূল্য।

সামু গাড়িতে বসে অতি সাবধানে গাড়িতে বসা লোককে ফাকি দিয়ে নিজের পার্সের ভিতরে অন্য একটা ফোনে রেকর্ডার অন করে রাখলো।তারপর নিজের ব্যবহৃত ফোনটা হাতে রেখে দিলো।
গাড়িটা একটা নিরিবিলি জায়গায় এসে থামলো।সামু বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চার করে কাপা কাপা পায়ে গাড়ি থেকে নামলো।একটা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে।ঢুকতে ইচ্ছে করছে না তবুও আল্লাহর নাম নিয়ে ঢুকে গেলো।ভিতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে।কি করবে বুঝতে পারছেনা। কাউকে দেখা যাচ্ছেনা।

অপর দিকে আদির ফোন বেজে উঠলো।
–পেয়েছো?
–…
–ধন্যবাদ।অনেক ধন্যবাদ।একাউন্টে বিল চলে যাবে।
আদি ফোন রেখে বিজয়ের হাসি দিলো।
আসছি সামান্তা,তোর আর তোর আশিকের কাছে।

ওয়েলকাম সামান্তা,ওয়েলকাম।আমি জানতাম তুমি আসবে,,দাঁড়িয়ে আছো কেন এসো,,ভিতরে এসো।

সামান্তা ঘৃণার দৃষ্টিতে রাজের দিকে চাইলো।

–এভাবে চেও না বুকে বড় লাগে,,,

–আপনি এতটা নিকৃষ্ট,,আপনি এভাবে কথা বলছেন কিভাবে?মানুষ এতটা নির্লজ্জ কিভাবে হয়?
যাইহোক কি চান বলুন?

আগে তো বস।তোমাকে দেখে অনেক বিধ্বস্ত লাগছে।বস।
সামান্তা কিছু না বলে বসে পড়ল।
–ও হ্যা,,আজ তো তোমার গায়ে হলুদ ছিলো তাই না?ইসস সেটা আর হলো না।

–ফালতু না বকে বলুন কি চান?

–তোমাকে!!

–মানে কি হা?

–ওয়েট ওয়েট তোমার ফোন দেও,,দেখি কাকে ফোন দিয়ে রেখেছো।রাজ সামুর ফোন কেরে নিয়ে গেলো।সামু জানতো এমনটাই করবে।চেক করে কিছুই পেলোনা।তখনই আদির ফোন এলো।রাজ কেটে ফোন সুইচ অফ করে দিলো।
–গুড গার্ল।কি জানি বলছিলে কি চাই,,,আমি তোমাকে চাই।আই ওয়ান্ট টু মেরি ইউ।সিম্পল।

রাজের কথা শুনে সামুর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। চিতকার করে বললো,
–হাও ডেয়ার ইউ,,,আর ইউ ম্যাড?আমি মেরিড।ভুলে গেছেন?

–সো হুয়াট!!ডিভোর্স দেবে।

সামু দাতে দাত চেপে বললো,
–কালকে আমার আদির সাথে পুনরায় বিয়ে।আর আমি বিয়ে করবো।ডিভোর্স তো দূরে থাক।

–ভুলে যেওনা,,আমার কাছে কি আছে?

–কি আছে?(তাচ্ছিল্যের সুরে)

–তোমার নিশি আপুর চেঞ্জিং ভিডিও।

–যে ছেলে মেয়েদের ওয়াশরুমে ক্যামেরা সেট করে ভিডিও বানায়।আমি তাকে বিয়ে করার জন্য আদিকে ছেড়ে দিবো?হাসালেন আমায়।হাহা,,

–যা করেছি তোমার জন্য করেছি।

–কিভাবে করলেন,,আপনার ভাইয়ের বউ সে।আপনার ভাইকে কি জবাব দিবেন?আপনার একটুও ভয় হলোনা?

–প্রথমত,ট্রাপটা তোমার জন্য ছিলো।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তুমি যাওনি।তাই নিশি ভাবিকেই ফাসাতে হলো।আর জয় জানবেওনা।

–তার ড্রেস আপনি নষ্ট করেছেন ইচ্ছে করে?

–হ্যা,আমি ওনার উপর পুরো ট্রে ভর্তি ড্রিংক ফেলে দিয়েছি।যাতে ওয়াশরুমে যেতে বাধ্য হয়।চেঞ্জ করতে হয়।

–ছিঃছিঃ

–হাহা,,নাইচ প্ল্যানিং তাই না??

–খুবই জঘন্য কাজ করেছেন আপনি এর জন্য আপনার শাস্তি পাওয়া উচিত।আপনি আপুর ভিডিও কিছুই করবেন না।আমি এখন বাসায় যাবো ফোন ফেরত দিন।

–তোমার কি মনে হয় তোমাকে এমনি এমনিই এখানে এনেছি?তুমি আর ফিরে যেতে পারবেনা।তুমি এখানেই থাকছো।না আজ তোমার হলুদ হবে না কাল তোমার বিয়ে।পরশুদিন ফিরে যাবে আর বলবে তুমি ডিভোর্স চাও আর আমাকে বিয়ে করবে।

–কখনো না,,আপনি আমাকে যতটা দূর্বল ভাবছেন আমি তা নই,,

–আই নো দিস।বাট তোমার কাছে আর কোনো রাস্তা নেই।কন্ডিশন এটাই।তুমি আদিকে বিয়ে করছোনা আমি নিশিতা ভাবির ভিডিও ও ভাইরাল করবোনা।অন্যথায়,,,,

সামান্তা কি করবে বুঝতে পারছেনা।রাজকে কিছু সময়ের জন্য থামিয়ে রাখতে হবে।যাতে কিছু না করে বসে ভিডিও নিয়ে।কারণ সামুর কাজ শেষ।এখন কাউকে প্রয়োজন কিন্তু কিভাবে কি করবে।এখানে কতক্ষন বসে থাকবে।বাসায় সবাই চিন্তা করছে।মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।

তখনই হুড়মুড় করে আদি ভিতরে ঢুকে।রাজ তা দেখে বলে,,
–ইউ চিট অন মি,,
সামান্তা আদিকে দেখে প্রান ফিরে পায় তবে খুশি হতে পারে না আদির রক্তিম হিংস্র ফেইস দেখে।আদির চোখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে ওই চোখ দিয়ে সামুকে পুরিয়ে ধ্বংস করে দিবে।সামান্তা ভয়ে ভয়ে উঠে দাড়ায়।আদি সামান্তাকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মেরে বসে।সামান্তা অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।তারপর চিতকার করে বলে,,

–তোর এত বড় কলিজা তুই আমাকে ধোকা দিস।কিছুক্ষণ আগেও তোকে সাবধান করেছিলাম কিন্তু তুই শুনিসনি।না করা স্বত্তেও এই ছেলের সাথে তুই প্রেমলীলা চালিয়ে গিয়েছিস?একবারও আমার কথা ভাবলি না?আমার ভালোবাসা তোর চোখে পড়লো না?তুই বিয়ে করবিনা বলে প্রেমিকের কাছে চলে এসেছিস?পালিয়ে থাকতে পারবি?তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে এই ছেলের হাতে তুলে দেবো?এতটা মহান আমি নই,,আমার বিয়ে করা বউকে তার প্রেমিকের হাতে তুলে দেবো।
সামান্তার চোখে পানি ছলছল করছে।

গার্ডদের ইশারা করে বললো,, ওকে(রাজকে)নিয়ে যাও তোমরা।ওকে তো পড়ে দেখবো আগে একে(সামু) দেখে নেই।

সামান্তার আদির সাথে কথা বলার সাহস হচ্ছেনা।আদি সামুকে টানতে টানতে গাড়িতে ছুড়ে মারে।তারপর নিজেও গাড়িতে উঠে বসে।সামনে ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে।পাশেই আদি।সামুর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।আদির সারা শরীর রাগে কাপছে,,হাতের মুঠো শক্ত করে আছে।রাগে নাকের ডগা এতটাই লাল হয়ে আছে যে সে লাল আভা পুরো মুখ জোরে ছড়িয়ে পড়েছে।দাতের সাথে দাত চেপে বসে আছে।সামান্তা ঢোক গিলে বললো,,
–আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন,,,।আপনি যা ভাবছেন তা নয়,,ওর সাথে,,

আদি দাতে দাত চেপে সামনের দিকে চেয়েই বললো,,
–চুপ করবি তুই??না চাইছিস এই লোকগুলোর সামনে তোকে অপদস্ত করি।মুখ দিয়ে যদি আর একটা টু শব্দ বের হয় তবে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা।
সামান্তা ভয়ে চুপ হয়ে গেলো কারণ ও জানে আদির রাগ আদির কন্ট্রোলের বাইরে।কি করবে নিজেও জানেনা।
তারপর আদি একা একাই বলছে,,
আমারই ভুল।আমি চেয়েছিলাম সোসাইটিতে বিয়েটাকে স্বীকৃতি দিতে।সবাইকে জানাতে।ওকে ওর প্রাপ্য মর্যাদা দিতে কিন্তু ভুল করেছি।এ তো এর যোগ্যই না।

সামু কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।গাড়ি বাড়ির সামনে আসতেই আদি নেমে সামুকে টেনে গাড়ি থেকে বের করে।সামু পার্সটাকে আঁকড়ে ধরে রাখে।
সামু আদিকে বিভিন্ন কথা বলছে কিন্তু আদি কানেই নিচ্ছেনা।ওকে এভাবে টানতে দেখে সবাই অবাক।সবাই এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,,
কি হয়েছে,,ওকে এভাবে টানছিস কেন?

আদি কারো উত্তর না দিয়ে সিড়িতে পা রাখে তারপর পিছনে ঘুরে চোয়াল শক্ত করে বলে,,

আজকে আমার আর সামুর মাঝে কেউ এলে আমি এই বাড়ি জ্বালিয়ে দেবো।কেউ আসবে না পিছনে।ওর সাথে আমার বুঝাপড়া আছে।হাসব্যান্ড ওয়াইফের মাঝে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আমি সহ্য করবোনা।
বলেই উপরে দিকে যাচ্ছে।সামুর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।
সামুর বাবা-মাও নির্বাক।তারা কিছুই বুঝতে পারছেনা।মেয়ের জন্য ভয় পাচ্ছে।আদির বাবা সামুর বাবার কাধে হাত রাখলেন।

আদি সামান্তাকে নিজের রুমে নিয়ে দরজা লক করে বিছানায় ছুড়ে মারলো।সামান্তা মাথা তুলে কাদছে।তারপর আদির দিকে ঘুরে।আদি নিজের গায়ের টিশার্ট খোলছে।সামু আদির এহেন কাজে ভয় পেয়ে যায়।এক লাফে উঠে বসে।কাপা কাপা গলায় বলল,
–কিহহহ,,,,করর,,,ছে,,ন??

আদি টিশার্ট ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে সামুর দিকে এগিয়ে বললো,
–কি করছি বুঝতে পারছোনা?ছাদে কি প্রমিস করেছিলাম ভুলে গেছো?
সামান্তা ভয়ে পিছাতে পিছাতে বেডের কোনায় চলে গেলো।কান্নার গতি বেড়ে গেলো।দু’হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বললো,
–প্লিজ,স্টপ দিস।প্লিজ।

আদি একটানে সামান্তাকে বিছানায় চেপে ধরলো।তারপর চোয়াল শক্ত করে বললো,,
–আমি তোর হাসব্যান্ড।কিসের কমতি আছে আমার মাঝে?কেন আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে রাজের সাথে সম্পর্ক করেছিস?বল?

–ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই?ছাড়ুন আমাকে,,আমার কথা,,,শুনুন, (কাদতে কাদতে বললো)

সামু নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আদি ওর হাত দুটো শক্ত করে ধরলো।সামান্তার দু’হাত ব্যথায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
–চুপ,,এসব বলে তুই আর পার পাবিনা।আমি তো ভেবেছিলাম তুই আমাকে ভালোবাসিস কিন্তু না তুই আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছিস,,প্রতিশোধ নিয়েছিস।

বলেই আদি সামান্তার গলার ওড়না টেনে ছুড়ে ফেলে দেয়।সামান্তা চিতকার করে উঠে।আদির মুখের গরম নিশ্বাস ওর মুখের উপর পড়তেই সামান্তা চিতকার করে বলে,
–আদি প্লিজ,,আমার কথা শুনো।আমি ওকে ভালোবাসিনা,,ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।ওর সাথে আমি পালিয়ে যাইনি।ওর সাথে পালানোর হলে তোমাকে মেসেজ করে জানাতাম না।

আদি থমকে গেলো।মাথাটা হালকা উঁচু করে সামুকে দেখছে,,।আস্তে আস্তে সামুর হাত ছেড়ে দিচ্ছে।সামান্তা ওকে আদি বলেছে,,তুমি করে বলছে,,,যেকিনা সব সময় টাইটেল সহ নাম বলতো।আর হ্যা ঠিকই তো,,,সামু পালানোর হলে রাজের নাম বলতোনা।কারণ সামু ভালো করেই জানে আদি ওকে খুজবে।তাহলে কি ছিলো??

সামান্তা হাত আলগা পেয়ে আদির পিঠে দুহাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।

–তুমি এখন রেগে আছো।রাগের বশে এমন কিছু করোনা,যাতে পরে পস্তাতে হয়।আমার উপর তোমার অধিকার আছে তুমি আমার সাথে যা খুশি করতে পারো কিন্তু আগে আমার কথা গুলো শুনো,,আমাকে বিশ্বাস করো।আমি ওকে ভালোবাসি না,,ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।ট্রাস্ট মি,,,

–তাহলে কি এসব?কেন গিয়েছিলে?

সামান্তা আদিকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে চোখ মুছে বলতে শুরু করে,,

–আপনি ছাদ থেকে আসার পর একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে।পরে জানতে পারি রাজ।নাম্বার কোথায় পেয়েছে জানিনা।আমাকে ও একটা ভিডিও পাঠায়,,

ভিডিওয়ের কথা শুনে আদির বুকে মোচড় দেয়।তারপর কাপা কাপা গলায় অস্থির হয়ে বলে,,
ভিডিও!!!

সামান্তার চোখে আবার পানি এসে পড়ে।ও বলে,,
–যেদিন পার্টিতে আমি যাইনি সেদিন ও নিশি আপুর ড্রেস চেঞ্জের একটা ভিডিও বানায়।আর ওটা দিয়েই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে।

আদির হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আছে।চেহেরা আবার হিংস্র রুপ ধারণ করে।ওর বোনের ভিডিও বানিয়েছে।ওর ইচ্ছে করছে রাজকে এখুনি খুন করে পুতে দিতে।
কড়া গলায় জিজ্ঞেস করে,, তারপর??

–ও আমাকে বলে ওর সাথে দেখা করতে।যদি না যাই বা কাউকে জানাই তাহলে নেটে ভিডিও ছেড়ে দিবে।আর ও যে এসব করেছে তার প্রুভ ও রাখবেনা।এ বাড়িতে কয়েকজন ছিলো যারা আমাকে ফলো করছিলো তাই আমি কাউকে কিছুই বলতে পারিনি।আপনাকে ছোট করে জাস্ট মেসেজ লিখে যাই যাতে আপনি আমার খোজ করেন।

আদি শান্ত স্বরে বললো, তারপর ও তোমাকে কি বলেছে?

সামান্তা একবার আদির চোখের দিকে চেয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রেকর্ড শুনালো।রেকর্ড শুনে আদির মেজাজ টুংগে।
রেকর্ড শুনে সামান্তার বাহু চেপে ধরে বললো,, আমাকে আগে জানাওনি কেন?কতদিন ধরে চলছে এসব?

সামান্তা আমতা আমতা করে বলল,,
আপনার সাথে ফার্ম হাউস থেকে আসার পরের দিন ভার্সিটির সামনে দেখি।আমি ওনাকে বলি ওনার সাথে আমি কোনো ফ্রেন্ডশিপ করতে চাইনা।ওনি যেন আমাকে আর বিরক্ত না করে।অনেক রাগারাগি করি।কিন্তু তারপর দুদিন গেইটের সামনে দেখি।আমি না দেখার ভান
করেই চলে আসি।আমার মনে হচ্ছিলো ব্যাপারটা আপনাকে জানানো দরকার।তাই কালকে ভার্সিটি থেকে ফিরে আপনাকে জানাতে চাই কিন্তু বাড়িতে অনুষ্ঠান,, আব্বু আম্মুকে দেখে বিষয়টি মাথা থেকে বেরিয়ে যায়।আজকে সকালে আপনার ঘরে গিয়েছিলাম কিন্তু আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন।তারপর দুপুরে যখন দেখা হলো তখন বিয়ের কথা শুনে আর বলতে পারিনি।ভেবেছিলাম পরে বলবো।আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি এমন কিছু হবে।রাজ ছেলেটা এত খারাপ কিছু করবে।সত্যি বলছি।

–এত কিছুর পর তুমি একা চলে গেলে?তোমার সাহস তো কম না?তোমার ভয় লাগলো না?ও যদি তোমার সাথে কিছু করে দিতো? আমি যদি না যেতাম?

–আমার তখন শুধু নিশি আপুর কথাই মনে হচ্ছিলো।আর আমি জানতাম আপনি যাবেন।আর না গেলে,,,

–না গেলে কি??

সামান্তা কোমড় থেকে মিনি পিস্তল বের করে বললো,,
–ও আমার সাথে খারাপ কিছু করতে চাইলে আমি ওর পায়ে গুলি মেরে দিতাম।

–তুমি এটা কই পেলে?

–আপনার রুমের ড্রয়ার থেকে নিয়ে গেছি।

আদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামুর হাত থেকে পিস্তলটা নিয়ে নিজের কোমড়ে গুজে উঠে দাড়ালো।আর বললো,, নিশিকে এসব বলোনা।ও খুব সরল।মানতে পারবেনা।

তারপর নিজের টিশার্ট ঠিক করে পড়ে নিলো।
সামু বুঝতে পারছে আদি কোথাও যাচ্ছে।
–কোথায় যাচ্ছেন?

আদি টিশার্ট পড়ে সামান্তার ওড়না তুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বললো,,
–তোমার মুখে তুমিটাই ভালো লাগে।

তারপর ওর গালের দিকে চেয়ে অপরাধীর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।বাম গাল লাল হয়ে ফুলে উঠেছে।রাগের মাথায় সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মেরেছে।
আদি সামুর বামগালে নিজের ঠোঁট ছোইয়ে বললো,,
সরি সামু,আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি রাগের মাথায় না জেনে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।প্লিজ ক্ষমা করো।

আদি উঠে দাড়ালো।সামান্তা আবারো প্রশ্ন করলো,,
–কোথায় যাচ্ছো?
আদি ঘুরে রহস্যময় হাসি হেসে বললো,,
ওকে একটু সাইজ করে আসি।ও আদির বোন আর স্ত্রীর সম্মানে হাত দিয়েছে।ও নিশির,,,,,।আমি ওর কলিজা কেটে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো।
শেষের কথাগুলো বলার সময় আদি অদ্ভুৎ ভাবে কাপছে।

সামান্তা বুঝতে পারছে আদি ভয়ানক কিছু ঘটাবে।সামু ওর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বললো,
–তুমি কোথাও যাবে না,কিচ্ছু করবেনা।ওকে পুলিশের হাতে তুলে দেও,যা করার আইন করবে।

আদি সামুর হাত ছাড়িয়ে বললো,
–তাতে আমার শান্তি হবেনা।
সামু আদিকে আবার আটকে দিলো।আদি বুঝতে পারলো সামু ওকে বাধা দিবেই।আদি সামুর ওড়না নিয়ে ওর দুহাত বাধছে।

–কি করছেন?হাত বাধছেন কেন?ছাড়ুন।
সামান্তা ছুটার জন্য ছটফট করছে।কিন্তু আদির শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারেনি।

আদি সামুকে বেধে বেডে রেখে বললো,, সরি জান।এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।তুমি রেস্ট করো।

আদি উঠে বেরিয়ে গেলো।সামু চিতকার করে আদিকে ডাকছে।আদি দরজা বাইরে থেকে লক করে চলে গেলো।সামান্তা উঠে দরজার সামনে গিয়ে দরজা মাথা দিয়ে,কাধ দিয়ে,বাহু দিয়ে ধাক্কাচ্ছে আর চিতকার করছে।রুম সাউন্ড প্রুভ হওয়ায় কেউ শুনতে পাচ্ছেনা।
সামান্তার মনে কু ডাকছে।খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে কিন্তু ও অসহায়।

আদি হনহন করে সিড়ি দিয়ে নামছে।সবাই ওকে দেখে উঠে দাড়িয়ে এগিয়ে আসছে।আদি বাবা আদিকে জিজ্ঞেস করলো,,
–সামু কই?
–আমার ঘরে।
–ও ঠিক আছে তো?ওর সাথে কিছু করিস নি তো?
–বাবা আমি ওর সাথে কি করবো?সামু আমার বউ,,আমি ওকে ভালোবাসি।ওর সাথে কিছু করার কথা ভাবতে ই পারিনা।কিছু জানার ছিলো জেনেছি।এখন আমার কাজ আছে আমি যাচ্ছি।
নিশি কেউ যেন আমার ঘরের দরজা না খোলে,,সামুকে কেউ যেন বিরক্ত না করে।তাহলে ভালো হবেনা।

–আচ্ছা।

আদির বাবা চিতকার করছে,,আদি কোথায় যাচ্ছ তুমি?

আদি কোনো জবাব না দিয়ে বেরিয়ে গেলো।ছেলের এমন অবস্থা দেখে আহনাফ চৌধুরীর ভয় হচ্ছে।তিনি তার লোকদের আদির পিছে পাঠালো।

চলবে…..?

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১১

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১১

ফাবিহা নওশীন

??
২দিন পরের ঘটনা।আজও রাজ ভার্সিটির গেইটের সামনে দাড়িয়ে ছিলো।সামু না দেখার ভান করে চলে আসে।সামুর প্রচন্ড বিরক্ত লাগে।আজ আদিকে জানিয়ে দিবে।ভাবতে ভাবতে গাড়ি বাড়ির ভিতরে ঢুকে অবাক।বাড়িতে লাইটিং করা হচ্ছে।কেন করা হচ্ছে বুঝতে পারছেনা।কৌতুহল নিয়ে বাড়িতে ঢুকে আরেক দফা অবাক।কতগুলো মেয়ে শাড়ি,লেহেঙ্গা,গাউন দেখাচ্ছে।
কতগুলো লোক বিভিন্ন বক্স বের করে গয়না দেখাচ্ছে।বাড়ি না শপিং মলে আছে বুঝতে পারছেনা।সামান্তা অবাক হয়ে দেখছে।নিশি এটা সেটা দেখেই যাচ্ছে।ওর চোখ মুখ চকচক করছে।
সামু নিশির দিকে আগাবে তখনই নিজের মা,বাবা আর ভাই সামীরকে দেখে।

–আম্মু,,আব্বু!!!

ওনারা সামুর কন্ঠ পেয়ে ঘুরে তাকায়।তাদের চোখ মুখ খুশিতে ঝলমল করছে।সামু বাবাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।সামুর মা সামুকে চুমুয় চুমুয় ভরিয়ে দেয়।সামান্তা বাবা-মাকে পেয়ে কেদে দেয়।

–আপু আমি এখনো বাদ আছি,,আমাকে হাগ দেও নাই।
সামু চোখ মুছে সামীরকে হাগ করে।
–কেমন আছিস?
–আপু তুমি তো রোজ কথা বলো,তুমি তো জানো আমি কেমন আছি তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন?

সামু ভাইয়ের কান মলে বললো, এইটা ফরমালিটি।গতকাল বলিস নি কেন আজকে আসবি?
আম্মু,আব্বু তোমরা বলো নি কেন আজকে আসবে?

কেউ কিছু বলার আগেই সামীর বললো,। সারপ্রাইজ!!
–ভালো ছিল।
তোমরা কখন এসেছো?
খাওয়া দাওয়া করেছো?

সামুর আব্বু বললো, সকালে এসেছি।তোর কি মনে হয় আমাদের না খাইয়ে রেখেছে?যা তুই ফ্রেশ হয়ে নে।

সামু ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আর নিশির সাথে কথা হলোনা।আদি উপর থেকে সামুকে এতক্ষণ দেখছিলো।
সামু ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই নিশি ওকে ধরে নিচ থেকে উপরে নিয়ে এলো।
–নিশি আপু উপরে নিয়ে যাচ্ছো কেন?আর কি হচ্ছে এই বাড়িতে?
–বিয়ে।
–বিয়ে!!হটাৎ?? জয় ভাইয়ের আর তর সইছেনা? তোমার পড়াশোনা শেষে না বিয়ে হবে তবে হুট করে কি হলো?
–হুট করে বিয়ের রোগে পেয়েছে।যাইহোক এখন দেখ কোন শাড়ি পরবি?(নিশির রুমে এনে)
–শাড়ি?
বিয়ের পর একদিন ও শাড়ি পড়িনি।
–তাই আজ পড়বি।আমিও পড়বো।
–বুঝতে পারছিনা।কোনটা পড়বো?
–আচ্ছা দাড়া।আমি আসছি।সামান্তা বুঝতে পারছেনা কোনটা পড়বে।এখানে ১০টার মতো শাড়ি আছে।
কিছুক্ষণ পর নিশি আদিকে নিয়ে হাজির।
–ভাইয়া তোর বউকে শাড়ি সিলেক্ট করে দে।
সামু ঘুরে নিশির কথা শুনে আর আদিকে দেখে শকড।
সামু আর আদি একে অপরের দিকে বোকার মতো চেয়ে আছে।
–এভাবে চেয়ে থাকবি না শাড়ি সিলেক্ট করবি?শাড়ি পড়ার পর চেয়ে থাকিস।যত ইচ্ছে।
সামু নিশির কথায় লজ্জা পেলেও আদি ভাবলেশহীন।
আদি অনেক দেখে সামুর জন্য ডার্ক বেগুনি রঙের একটা শাড়ি সিলেক্ট করলো।শাড়ি সিলেক্ট করার সাথে সাথেই নিশি আদিকে ঘর থেকে বের করে দিলো।
–সামু ব্লাউজ,পেটিকোট পড়ে আয়।
সামু ব্লাউজ,পেটিকোট পড়ে এলে নিশি ওকে শাড়ি পড়াতে যায়।
–তুমি শাড়ি পড়াতে পারো?
–হেই গার্ল,ডোন্ট ফরগেট মাই নেইম ইজ নিশিতা চৌধুরী।আমি সব পারি!!
–ইম্প্রেশিং।

শাড়ি পড়া শেষে সামুর দু’হাতে মেহেদী দিয়ে দেওয়া হয়েছে।মেহেদীতে আদির নাম লিখে দেওয়া হয়েছে।সামুর অদ্ভুৎ লাগছে।নিশিও দু’হাতে মেহেদী দিয়ে বসে আছে।
সামু তোর ক্ষুধা পেয়েছে?
–হুম।খুব।
–আচ্ছা,বস।আমি হাত ধুয়ে ফেলবো।কেমন চুলকাচ্ছে।তোর জন্য তারপর খাবার নিয়ে আসবো।
–আচ্ছা।
নিশি হাত ধুয়ে নিচে গেলো।

সামু পড়েছে আরেক সমস্যায় মেহেদী দিয়ে নিশির হাত চুল্কাচ্ছে আর ওর পিঠ।দু’হাতে মেহেদী তাই কিছু করতেও পারছেনা।নিশি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।হটাৎ নিশির পায়ের শব্দ পেয়ে চিতকার করে বললো,
–নিশিপু,,তাড়াতাড়ি এসো,,পিঠে চুলকাচ্ছে।পিঠ চুলকিয়ে দেও।
ঠান্ডা হাত সামুর পিঠ স্পর্শ করলো।
–পিঠে হাত দিয়ে বসে আছো কেন? চেইন খোলে শিরদাঁড়া বরাবর চুলকিয়ে দেও।
ঠান্ডা হাতটা চেইন খোলে শিরদাঁড়া বরাবর চুলকিয়ে দিলো।
সামু তৃপ্তি পেয়ে বললো,বাচলাম।তারপর হুট করেই সন্দেহ নিয়ে বললো,
নিশি আপু,তোমার হাত এত শক্ত কিভাবে হলো?একদম পাথরের মতো,,,।
তারপর হাসির শব্দ শুনে ঘুরতেই সামু “আহহহহহ” করে চিতকার করলো।

–আপনি,,ছিঃ,,,
বলেই দু’হাতে গলা চেপে ধরতে গিয়ে থেমে গেলো।অসহায় ভাবে দু’হাতের মেহেদীর দিকে চাইলো।এখন গলা চেপে ধরতে গেলে এত সুন্দর ডিজাইনের মেহেদী নষ্ট হয়ে যাবে।সামু তো মেহেদী পাগলী।

–হাত দিয়ে কিছু করতে যেওনা বেবি,মেহেদী নষ্ট হয়ে যাবে।

–তাইতো আপনি বেচে গেলেন।নয়তো আজকে আপনাকে খুন করতাম।

আদি বাকা হেসে সামান্তার উপর চোখ বুলিয়ে বললো,
–তোমার এই লুকে অলরেডি খুন হয়ে গেছি। শাড়িতে তোমাকে যা লাগছেনা।একদম পিচ্ছি বউ।
আদি কথাটা বলেই সামান্তার কোমড় জরিয়ে ধরলো।
–ওই কি করছেন? সুযোগ নিচ্ছেন?
আদি ভ্রু কুচকে বললো,সুযোগ কেন নিবো?আমি কি পরপুরুষ?

–দেখুন,,ভালো হবেনা।ছাড়ুন।আমার এত স্বাদের মেহেদী নষ্ট হলে খারাপ হয়ে যাবে।

–আহ,,তুমি নড়াচড়া করোনা তো,, করলেই তোমার মেহেদী শেষ।কি বিদঘুটে দেখা যাবে বুঝতে পারছো?

আদি সামান্তার দুগালে হাত রাখলো।সামু নিজের মেহেদী দেওয়া দুহাত দু’দিকে সরিয়ে মাথা নাড়িয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
–ছাড়ুন,,বজ্জাত ছেলে।
আদি মুচকি হেসে উষ্ণ নিশ্বাস ছেড়ে সামান্তার গলায় কিস করলো।
সামান্তা শিওরে উঠে।কাপা গলায় বলল,
–আপনি কি করছেন?ছাড়ুন গন্ডার কোথাকার।
আদি সামুর কথা পাত্তা না দিয়ে সামুর থুতনিতে হালকা করে কামড় দিয়ে বললো,
–আমি গন্ডার,বজ্জাত না?
সামান্তা ধাক্কা দিয়ে বললো,
আপনি শুধু বজ্জাতই নন,আপনি একটা লুইচ্চা।একটা মেয়েকে একা পেয়ে ছি,,।

বলেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।বের হতেই নিশিকে দেখলো,,
–কিরে বিরবির করে কাকে গালাগাল দিচ্ছিস?
–কাকে আবার তোমার ওই লুইচ্চা ভাইকে।
–ওই কি বলিস,,?আমার ভাই লুইচ্চা?
–তা নয়তো কি?তুমি জানো সে আমার সাথে কি করেছে?আমি ভেবেছি তুমি তাই বলেছি ব্লাউজের চেইন খোলে পি,,,,
আর বলতে পারলোনা নিশি ওর মুখ চেপে ধরে।ফিসফিসিয়ে বললো,
–তুই আমার ভাবি,,আমার বড় ভাই তোর সাথে কি করেছে সেটা তুই মাইক নিয়ে আমাকে বলছিস?লজ্জা করেনা,লাজ লজ্জা কি চান্দের দেশে গেছে?ভাইয়া তোর পিছনে দাড়িয়ে আছে এবার সামলা।
নিশি উল্টো হাটা ধরলো।

সামু ঢোক গিলে পিছনে তাকালো।আদিক চোখ মুখ কুচকে ওর দিকে চেয়ে আছে।সামু জোর করে স্মিত হাসি দিলো।
–কি বলছিলে আমার বোনকে? আমি লুইচ্চা,,আমি তোমার সাথে কি করছিলাম সেটাও বলছো?হায় আল্লাহ এ মেয়ে বাসরের পরের দিন সবাইকে বলে বেরাবে,,আমার মান ইজ্জত প্লাস্টিকের কারখানায় পাঠাবে?

–না মানে,,,

–না মানে কি?

–আমার ক্ষুধা লেগেছে।নিচে যাচ্ছি।

–খাওয়াচ্ছি তোমাকে,,,
আদি আচমকা আলতো করে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ালো।সামান্তা ফ্রিজ হয়ে গেছে।এ লোক আজকে ভালো সুযোগ পেয়েছে।

–যাও,,এবার সবাইকে বলো গিয়ে আমি কি করেছি।

সামান্তা চোখ পাকিয়ে বললো,
–আদি,,কলার কাদি।বেহায়া,বেশরম,নির্লজ্জ,লুইচ্চা,বদমাইশ।জিরাফ,গন্ডার,ছিলা সাদা মুরগী,উগান্ডা,
জলহস্তী।

আদি চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে।সামু দৌড়ে নিচে চলে গেলো।
মেহেদী অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই যায়।সামু নিজের হাতে সারাক্ষণ আদির নাম দেখেই কাটিয়ে দেয়।রাজের কথা আর এতকিছুর মধ্যে বলা হয়না।

সামান্তার ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে গেছে।ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখে সবাই ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করছে।সামান্তা আদিকে খোজছে।নিশি ওকে দেখে নাস্তা করার জন্য ডাকে।

–আজকে ভার্সিটি যাওয়া হবেনা।নাস্তা করে আমাকে হেল্প করবি।

–আচ্ছা।(ভালো হয়েছে আজ যেতে হবেনা।আদির সাথে কথাও বলা যাবে)

সামান্তা নাস্তা করে সবার চোখ ফাকি দিয়ে উপরে গিয়ে আদির রুমের দরজা খোলার চেষ্টা করতেই দরজা খোলে গেলো।আদি দরজা লক না করেই ঘুমায় বেশিরভাগ।সামান্তা দরজা একটু ফাক করে ঘরের ভিতর চোখ রাখে।আদি ঘুমাচ্ছে।সামু পা টিপে টিপে আদির বিছানার কাছে গেলো।আদি কুশন জড়িয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ছেড়ে ঘুমাচ্ছে।সামান্তা ঘরে পাইচারি করছে আর ভাবছে আদিকে ডাকবে না ডাকবে না,,?
তারপর আদির ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে ভাবলো,
–ঘুমাচ্ছে,ঘুমাক।পড়ে বলা যাবে।

সামান্তা ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।নিচে লিভিং রুমে সবাই বসে আছে।বসে আছে বললে ভুল হবে,,শাড়ি দেখছে কে কোনটা পড়বে।নিশি উচ্ছ্বসিত ভাবে একটা শাড়ী হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখছে।সামু পা টিপে টিপে সিড়ি দিয়ে নেমে নিশির সামনে দাড়ালো।
–দেখতো সামু শাড়িটা কেমন?
–অনেক সুন্দর তোমাকে খুব মানাবে।
–ওকে,,তোর জন্য এই শাড়িটা দেখেছি।(অন্য একটা শাড়ি দেখিয়ে)
–কিন্তু আপু এটা তো তোমার শাড়ির চেয়ে বেশি গর্জিয়াছ।
–আমার চেয়ে গর্জিয়াছ পড়তে সমস্যা কি?তুই এই বাড়ির বউ একটা ব্যাপার আছেনা।
–আচ্ছা।
–চুপিচুপি ভাইয়ার রুমে গিয়েছিলি?পুরনো অভ্যাস গেলোনা?
সামু খুক খুক করে কাশতে লাগলো।নিশি দেখে ফেলেছে।

আদি,সামু সবাই মিলে একসাথে লাঞ্চ করছে।সামু আদির সাথে কথা বলার জন্য সুযোগ খোজছে।লাঞ্চ শেষে সামু ডাইনিং ছাড়তে যাচ্ছে তখনই নিশি বললো,,
–বিয়ের কনে,,রেডি থেকো কিছুক্ষণ পর পার্লার থেকে সাজাতে আসবে।

–বিয়ের কনে!!কি বললে তুমি?

নিশি মুখ টিপে হেসে বললো,
–বিয়ের কনে।বিয়ের কনে কে বিয়ের কনে বলবো না তো কি,,

সবাই মুখ টিপে হাসছে।এমনকি আদিও।সামান্তা সবটা খেয়াল করে বললো,, কি হচ্ছে আমাকে একটু খোলাসা করে বলবে,,?

আদি নিশিকে কিছু একটা ইশারা করলো যা সামুর চোখ এড়ায়নি।আদি ইশারা করেই সামিরকে বললো, চলো একটু হেটে আসি।তারপর দুজনে হাটা ধরল।

নিশি বললো,,
–সামু একচুয়েলি,,বিয়েটা তোর।আমার না,

সামু অবাক হয়ে বললো,, আমার বিয়ে?কি বলছো,কার সাথে?

–ওই কার সাথে মানে কি?আমার ভাইকে কি চোখে পড়েনা?নাকি অন্য কাউকে চাস?

সামান্তা পিছনে ঘুরে আদির দিকে চাইলো।আদি পিছনে ঘুরে সামান্তাকে চোখ মারলো।সামান্তা মুচকি হেসে সামনে ঘুরলো।

–তুই এতো বোকা কেন হা?বাড়িতে ঢুকার সময় দেখিস নি বড়বড় করে লিখা আদিল উইডস সামান্তা?
সামান্তা লজ্জায় মরেই যাচ্ছে।কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
–আহারে!!ভাবি আমার লজ্জা পেয়েছে?

সবাই একসাথে হেসে দিলো।

বিকেল বেলা-
সামান্তা উপরে গিয়ে ছাদে গিয়ে দাড়ালো।ওর বাইরেটা দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু লজ্জায় যেতে পারছেনা।তাই ছাদে উঠেছে।গেইটের সামনে সামনে জ্বলজ্বল করছে আদিল উইডস সামান্তা।

ইসস,এতোবড় লিখাটাও আমার চোখে পড়েনি?আমি এমন কানা হয়ে গেলাম?সব দোষ রাজের।ওর জন্য মেজাজ খারাপ ছিলো তাই চোখে দেখিনি।আচ্ছা এখন কি আদিকে রাজের কথা বলবো?আজ হলুদ,কাল বিয়ে এখন এসব না বলাই ভালো।ওর মুড নষ্ট করার দরকার নেই।কালকের দিনটা যাক তারপর ওই রাজকে দেখে নিবো।

পুরো বাড়ি সাজানো শেষ।লন-গার্ডেন সব কিছু কত সুন্দর লাগছে।সব কিছু আভিজাত্যপূর্ণ।সামান্তা মুগ্ধ হয়ে দেখছে।

পিছন থেকে আদি কাধে হাত রাখলো।হটাৎ এভাবে কেউ ধরাতে সামান্তা ভয় পেয়ে ছিটকে সরে যায়।আদিকে দেখে সামু নিজের বুকে হাত রেখে ভীত চেহারায় বলে,
–আপনি কি আমাকে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলতে চান?
–তুমি আবার ভয় পাও?জানতাম না তো,,।
আর কি বলছিলে তোমাকে মেরে ফেলবো?তোমাকে মেরে বউ হারা হবো নাকি?এমনিতেই এখানো আমার তোমার সাথে বাসর করা হয়নি।(মুখ ইনোসেন্ট করে)

সামান্তার আদির এমন লাগামহীন কথা শুনে থ মেরে গেলো।
(এই ছেলে এতো লাগামহীন কেন?)
–আপনি এখানে কেন এসেছেন?
–বিয়ের আগে বউয়ের সাথে প্রেম করতে।
বলেই আদি সামান্তার একদম কাছে চলে গেলো।সামান্তা দুহাত আদির বুকে রেখে আস্তে ধাক্কা দিয়ে বললো,
–দূরেএএএ,,।দূরে থাকুন।আদি দূরে দাড়িয়ে বললো,
–ঠিক আছে থাকলাম,,তবে আগামীকাল রাতে কিন্তু দূরে থাকবোনা।তুমি চাইলেও সরাতে পারবেনা।
বলেই বাকা হাসলো।

সামান্তা চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলো।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।সামান্তা গলায় হাত রাখলো।

–কি গো পানি খাবে?তোমার জন্য বাসর ঘরে এক ড্রাম পানি রাখবো।

–শখ কতো?
আগে বিয়ে তো হোক।পরে বাকি প্ল্যান করবেন।হু।?

–এই তোমার মাথায় কি উল্টো পাল্টা কিছু চলছে?যদি কিছু চলে ঝেড়ে ফেলো।নয়তো ভালো হবেনা।(সিরিয়াস ভংগীতে)

সামান্তা আদির সিরিয়াস ভংগী দেখে বললো,
–বিয়ে না করলে কি করবেন?

–বেশি কিছুনা,,বিয়ে ছাড়াই বাসর করে ফেলবো প্রমিস।আগের লাইসেন্স তো আছেই।
(বাকা হেসে)

সামান্তা চোখ মুখ কুচকে বললো,
–আপনি এই বাসর ছাড়া কিছু বুঝেন না?কথায় কথায় বাসর??

–অবশ্যই বুঝি।আমি তোমার হাসব্যান্ড তুমি আমার ওয়াইফ।আমাদের বাসর হবে।ছোট ছোট বাচ্চাকাচ্চা হবে।তারা আমাদের মাম্মি পাপা বলে ডাকবে।তারা বড় হবে।বিয়ে হবে।নাতি-পুতি হবে।আমাদের দা,,,,

–হয়েছে,,হয়েছে৷থামুন।এখনি এখান থেকে যান,,নয়তো আপনার বকবক শুনতে শুনতে পাগল হয়ে ছাদ থেকে লাফাবো,,তারপর আপনার বিয়ে,বাসরের স্বপ্ন শেষ।

আদি হোহো করে হেসে দিলো।ওর সামান্তাকে রাগাতে ভালোই লাগে।হাসি থামিয়ে বললো,, আজ যাচ্ছি,,,।বিয়ের পর কিন্তু সরাতে পারবেনা।সো প্রিপেইড হও।

বলেই আদি ছাদ ত্যাগ করলো।আদি যেতেই সামান্তাও হেসে দিলো।এতক্ষণ অনেক কষ্ট করে নিজের হাসি চেপে রেখেছিলো।সামান্তাও চায় ওর আর আদির সম্পর্কের পরিপূর্ণতা পাক।ওদের জীবনটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হোক।

হটাৎ ই সামান্তার ফোন বেজে উঠলো।
–হ্যালো,,
–শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে,,,,বিয়ের দাওয়াত দিলেনা?এতো স্বার্থপর তুমি?
–কে বলছেন?
–এখনো বুঝতে পারোনি?
–রা,,,,জ??
–হাও সুইট,,তুমি আমাকে চিনতে ভুল করোনি।
–আমার নাম্বার কই পেলেন?আর কি চাই?
–সে না হয় নাই জানলে,,,তোমার ফোনে একটা ভিডিও সেন্ড করেছি।চেক করো।
বলেই ফোন কেটে গেলো।

সামান্তা তাড়াতাড়ি ফোন চেক করলো।একটা ভিডিও সেটা দেখে সামান্তা ঘামছে আর বলছে,,
নো,,,নো,,,এদিকে ঘুরোনা,,,নো নো।
বলেই কাদতে কাদতে ছাদে বসে পড়লো।হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেলো।

কিছুক্ষণ পর আবার ফোন বেজে উঠলো।
সামান্তা ফোন রিসিভ করে বললো,,
–আপনি এতো বড় অমানুষ?আমি আপনাকে নিতান্তই ভদ্র ছেলে ভেবেছিলাম।আপনি তো একটা শয়তান।

–সে তুমি যাই বলো।আমি সত্যিই এরকম কিছু করতে চাইনি,,তুমি বাধ্য করেছো,,,,আর এখন তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য।নয়তো এক মিনিটে ১মিলিয়ন ভিউ হবে।তোমার শ্বশুর একজন রাজনীতিবিদ,,,তার সম্মান কোথায় যাবে ভাবতে পারছো?আর তোমার নিশি আপু সে তো সুসাইট করবে।কারণ জয় ভাইয়া বিয়ে করবেনা,,আর সে মুখ দেখাতে না পেরে আত্মহত্যা করবে।তোমার শ্বশুর শাশুড়ী ও সমাজে মুখ দেখাতে পারবেনা।লজ্জায় অপমানে তারাও আত্মহত্যা করবে।পুরো ফ্যামিলি ফিনিসড।
হাহা,,,।

—নাহ,,,নিশি আপু আপনার ভাবি হয় ভুলে যাবেন না।

–আই ডোন্ট কেয়ার।ভাবি দিয়ে কি করবো?আর এসব কে করেছে তার কোনো প্রমাণ ও কেউ করতে পারবেনা।আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এসব টেকনিক আমার জানা আছে।সব প্রমাণ লোপাট করে দেবো।

–কি চান আপনি?

–সেটা দেখা করে বলবো।তোমাকে একটা এড্রেস টেক্সট করছি চলে এসো।

–আমি কোথাও আসবো না।

–ওকে।নো প্রব্লেম।আমি এখুনি ভিডিও ছেড়ে দিচ্ছি।কিছুক্ষণ পর তুমিও নেটে পেয়ে যাবে।

–না,,এমন করবেন না প্লিজ।

–তাহলে দেখা হচ্ছে সময় খুব কম।বাইরে তোমার জন্য লাল একটা গাড়ি অপেক্ষা করছে। আমি অপেক্ষা করবো।আর হ্যা,,একদম চালাকির চেষ্টা করবেনা,,তোমার পিছনে আমার লোক আছে।তুমি এখন ছাদে দাড়িয়ে আছো তাই না?আমার লোকেরা তোমাকে ফলো করছে।কাউকে জানানোর চেষ্টা করলে কিংবা কারো সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে সত্যি বলছি খারাপ হয়ে যাবে।

সামান্তা কাপা কাপা গলায় বললো,
–না,আমি কিছুই করবোনা।আ,,,মি আসছি।

সামান্তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ভাবছে ও কি করবে,,সময় কম,ওকে আবার ফলোও করা হচ্ছে।
সামান্তা আদির রুমে গিয়ে দেখে কেউ নেই। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলো।বাড়ি ভর্তি মানুষ।নিচে গিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কে বা কারা ওকে ফলো করছে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছেনা।

সামান্তা উপায় না দেখে নিজের পার্স নিয়ে সবার চোখ ফাকি দিয়ে বেরিয়ে গেলো।সামান্তাও দেখতে চায় ও কি করে,,, বাইরের লাল গাড়িতে উঠে বসলো।সাথে সাথেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।

চলবে………