Tuesday, July 8, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1861



“অনুভূতি ” সূচনা পর্ব

0

“অনুভূতি ”
সূচনা পর্ব
মিশু মনি
.
১.
– “আপনার রেইনকোট টা দিবেন প্লিজ? আমার বৃষ্টি সহ্য হয়না”
একেবারেই নিঃসংকোচ আবেদন! চমকে ফিরে তাকালো মেঘালয়। মেয়েটাকে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। একজন অচেনা অজানা লোকের কাছে এভাবে কিছু চাওয়া যায় সেটা একদম ধারণার বাইরে ছিলো।
বিস্ময় কাটিয়ে মেঘালয় বলল, “সরি, বুঝলাম না।”
– “আমার বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসে।”
– “তো?”
মেয়েটি করুণ গলায় বললো, “দশটার মধ্যেই ডিউটি তে পৌছতে হবে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বোধহয় পৌছতে পারবো না।”
মেঘালয় স্পষ্ট ভাষায় বলল, “আজ না হয় একটু দেড়িতে যাবেন।”
মেয়েটি আরো করুণ গলায় বলল, “আসলে রেগুলার দশটার মধ্যেই পৌছাতে পারলে মাস শেষে একটা বোনাস পাবো। সেজন্যই।”
মেঘালয় একটু ভেবে বললো, “আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু আমার কোট তো আপনার গায়ে হবেনা মেয়বি।”
– “উপায় তো নেই। প্লিজ দিন না। মানবতার খাতিরে এই উপকার টা করা উচিৎ।”
মেঘালয়ের হাসি পেলো। হাসি চেপে রেখে গা থেকে রেইনকোট টা খুলতে খুলতে বলল, “তাহলে একটু মানবতা দেখানোই উচিৎ। এই নিন।”
মেয়েটি রেইনকোট টা হাতে নিয়ে এখানেই গায়ে পড়ে ফেললো। ছোটখাটো এই পুঁচকে মেয়েটাকে এতবড় সাইজের রেইনকোটের ভিতরে একদম এলিয়েন এলিয়েন লাগছে। তবুও বেশ কিউট কিউট ভাব চলে এসেছে। রেইনকোট টা পড়েই জোরে একবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটা ছোট্ট ধন্যবাদ দিয়ে রাস্তায় গিয়ে নামলো।
মেঘালয় বেশ অবাক হলো। আরে রেইনকোট তো নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা কি একেবারেই দিয়ে দেয়া হবে? মোটেও না।
মেঘালয় চেঁচিয়ে ডাকলো, “এইযে শুনুন।”
মেয়েটি পিছন ফিরে তাকাতেই মেঘালয় বলল,”আমার কোট টা অবশ্যই ফেরতযোগ্য। কোথায় গেলে পাবো?”
মেয়েটি ঝটপট উত্তর দিলো “কৃষি মার্কেটে ইভা সুপার শপে গেলেই আমাকে পাবেন।”
কথাটা বলেই আর এক মুহুর্ত ও দাঁড়াল না। হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। মেঘালয় অবাক হয়েই দাঁড়িয়ে রইলো বিল্ডিং এর নিচে। মেয়েটি এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো। মেঘালয় আসামাত্র ই নিঃসংকোচে রেইনকোট টা চেয়ে বসলো। কিজানি সঠিক ঠিকানা দিয়েছে নাকি ভূল! তবে কারো উপকার যদি হয় তো হোক না।
২.
দুপুরে বাসায় ফেরার সময় কৃষিমার্কেটের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো মেঘালয়। ভাবলো ইভা সুপার শপে গিয়ে দেখা যাক মেয়েটিকে পাওয়া যায় কিনা। দেখে তো বেশ সৎ ই মনেহয়েছিলো।
ভিতরে ঢুকে একটু সামনে যেতেই দেখলো মেয়েটি একটা গোলাপি রঙের টি শার্ট পড়ে মাথায় ওড়না দিয়ে কাস্টমারের সাথে কথা বলছে। তারমানে সে এখানেই চাকরী করে। যাই হোক, ভূল ঠিকানা অন্তত দেয় নি। মেঘালয় একটু কাছে যেতেই মেয়েটি মিষ্টি করে হাসলো। তারপর বললো, “ওয়েলকাম স্যার।”
মেঘালয় কণ্ঠটা শুনেই একটু ভড়কে গেলো। একদম অফিসিয়াল হয়ে গেছে গলার স্বরটা। আর অনেক স্পষ্ট উচ্চারণ ও। অথচ সকালবেলা এরকম ছিলোনা।
পাশের কাস্টমার টি চলে যেতেই মেয়েটি বললো, “আপনার রেইনকোট টা এখানে দিতে পারবো না। একটু কষ্ট করতে হবে আপনাকে।”
মেঘালয় বাঁকা ঠোটে হেসে বলল, “আবার বৃষ্টি আসবে নাকি?”
– “না মানে এখানে কোট টা আপনাকে দিলে বস দেখে ফেলবে। আর তখন আমাকে জিজ্ঞেস করবেন আপনি আমার রিলেটিভ কিনা। আমি কোনোকরম জেরার সম্মুখীন হতে চাইছি না।।”
– “ওহ আচ্ছা। তা আমাকে এখন আপনার বাসায় যেতে হবে নাকি?”
– “না, আপনি একটু পাশের রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে বসুন কষ্ট করে। আমি দুই মিনিটের মধ্যেই লাঞ্চের জন্য বেরোবো। তখন আপনাকে দিয়ে দিবো।”
মেঘালয় হেসে বলল, “বাহ! জিনিয়াস তো। ওকে, আমি ওয়েট করছি রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে।”
– “ধন্যবাদ স্যার।”
– “স্যার স্যার করাটা কি আপনার মুদ্রাদোষ নাকি? একটু আগেও একজন কে স্যার স্যার বলছিলেন।”
– “আসলে সম্মান প্রদর্শনের জন্য বলা হয় আরকি।”
মেঘালয় ভ্রু কুঁচকে বলল, “বেশ ভালো। তো দোকানদার ম্যাডাম, আমি তো আপনাকে রেইনকোট টা দিয়ে উপকার করেছি। সেই সুবাদে একটু ছাড় দিয়ে একটা কিছু বিক্রি করা যায়না?”
মেয়েটি মৃদ্যু হেসে বলল, “আমার রিলেটিভ হলে আমি কথা বলিয়ে একটু ছাড় দিয়ে দিতে পারতাম। আর রেগুলার কাস্টমার দের জন্য একটু ছাড় দেয়া যায়। আপনি আমার রিলেটিভ সেটা তো কিছুতেই বলা যাবেনা। বললেই বস জেরা করবেন।”
– “কেন জেরা করবেন?”
– “আপনি একজন বিখ্যাত ব্যক্তি, আপনার সাথে আমার কেমন আত্মীয়তা সেটা জানতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক।”
মেঘালয় বেশ অবাক হয়ে বলল, “আমি বিখ্যাত ব্যক্তি আপনাকে কে বলেছে?”
– “আসলে আপনার রেইনকোটে একটা আরোহী আরোহী গন্ধ পাচ্ছিলাম।”
মেঘালয় হেসে বলল, “সিরিয়াসলি?”
মেয়েটিও মিষ্টি করে হেসে জবাব দিলো, “আসলে আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছিলো। ট্রেকার ও পর্বতারোহী মেঘালয়ের মত দেখতে আপনি। তাই গুগলে এটা দিয়ে সার্চ দিয়েই পেয়ে গেলাম। ছবি দেখে তো আমি একদম অবাক! একজন পর্বতারোহী’র কোট আমার গায়ে! উফফ নিজেকেও মুহুর্তের জন্য আরোহী মনে হচ্ছিলো।”
মেয়েটি খুব উৎফুল্ল হয়ে কথাগুলো বললো। মেঘালয়ের বিস্ময় বেড়ে যাচ্ছে। ও অবাক হয়েই বলল, “বেশ তো। এবার তাহলে কিছু বিশেষ ছাড় দিয়ে বেঁচুন।”
মেয়েটি মৃদু হেসে বলল, “আচ্ছা কিছু নিন। আমি কথা বলে কমাচ্ছি। বলুন কি নেবেন?”
মেঘালয় একটু ভেবে বললো, “এমন একটা বডি স্প্রে দিন যেটা দিয়ে বের হলে মেয়েরা হুরহুর করে কাছে আসবে।”
মেয়েটি হেসে বলল, “ওকে স্যার।”
এরপর দ্রুত গিয়ে হাতে করে তিনটা বডি স্প্রে এনে দিয়ে বলল, “স্যার কোনটা নেবেন? তিনটাই ভালো।”
– “কোনটা ভালো হবে বেশি?”
– “আপনি নিশ্চয় ই ব্যবহার করেছেন আগে। আপনার জানার কথা।”
মেঘালয় হাসি দিয়ে একটা স্প্রে তুলে নিয়ে বলল, “ওকে তাহলে বাইরে ওয়েট করছি।”
– “আচ্ছা বসকে বলছি আপনাকে একটু ছাড় দিয়ে দিতে।”
– “থ্যাংকস। আগে রেগুলার কাস্টমার হই, তারপর সুবিধা ভোগ করবো। আমি বিধা কারণে সুবিধা নেইনা। এনিওয়ে, রেইনকোট টা নিয়ে আসুন।”
কথাটা বলেই মেঘালয় বিল পরিশোধ করে বাইরে বেড়িয়ে গেলো। মেয়েটিও কয়েক মুহুর্ত অবাক চোখে চেয়ে থেকে লাঞ্চের কথা বলে রেইনকোট নিয়ে পাশের রেস্টুরেন্ট এ চলে এলো।
মেঘালয় একটা টেবিলে বসে আছে। মেয়েটি এসেই বললো, “এই নিন আপনার কোট। অসংখ্য ধন্যবাদ।”
– “স্বাগতম। বসুন একসাথে নাস্তা করি।”
– “সরি, আসলে বস হঠাৎ এখানে এসে দেখে ফেললে আমার সমস্যা হবে। উনি আমাকে প্রশ্ন করবেন।”
– “বসকে এত ভয় পান কেন?”
– “চাকরী হারানোর জন্য।”
– “চাকরী গেলে যাবে। তাই বলে এত ভয় পেতে হবে। আবারো আরেকটা চাকরী পেয়ে যাবেন।”
মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “এই শহরে চাকরী পাওয়াটা সোনার হরিণের মত। আর এটাই আমার পরিবারের একমাত্র ইনকাম সোর্স। তাই হারাতে চাইনা।”
কথাটা শুনেই মেঘালয়ের কেমন যেন অনুভূত হলো। মনে মনে ভাবলো, এটা পরিবারের একমাত্র ইনকাম সোর্স? কতই আর বেতন দেয়, বড়জোর সাত আট হাজার। তাতেই সংসার চলে? কথাটা খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু প্রশ্নটা কেন যেন করতে পারলো না। মুখে এসে আটকে যাচ্ছে। মেয়েটি গিয়ে পাশের টেবিলে বসে পড়লো। টিফিন বক্স খুলে খাবার খেতে শুরু করলো। মেয়েটার বয়স অল্প, সতের হবে হয়ত। কত ফুটফুটে আর চঞ্চল একটা মেয়ে, উজ্জল শ্যামলা বর্ণের মেয়েটিকে দেখলেই মায়া লাগছে। এরকম ফুটফুটে একটা মেয়ে কিনা চাকরী হারানোর ভয়ে সবসময় তটস্থ হয়ে থাকে? দেখতেই খারাপ লাগে।
মেঘালয় উঠে এসে জিজ্ঞেস করলো, “চাকরী পার্ট টাইম নাকি ফুল টাইম?”
– “ফুল টাইম। ১২ ঘন্টা ডিউটি।”
কথাটা শুনে আরো মনটা কেমন করে উঠলো। মেয়েটা নিতান্তই বাচ্চা বাচ্চা। এরকম পুঁচকে একটা মেয়ে কিনা মাত্র সাত হাজার টাকার জন্য সকাল থেকে রাত অব্দি ১২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে? কাস্টমার দের কাছে প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য নানান কথা বলতে হয়, আবার বসের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকতে হয়! এইটুকুন একটা মেয়ে। কেমন যেন মায়া লাগছে মেয়েটির জন্য।
মেঘালয় খেয়াল করে দেখলো মেয়েটি মোটা চালের ভাতের সাথে ভর্তা টাইপের কিছু একটা আর ছোট্ট এক পিস ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খাচ্ছে। বোধহয় একটা ডিম ভেজে তিন ভাগ করা হয়েছে। এত পরিশ্রম করে এরকম স্বল্প বেতন পেয়ে, এইসব খেয়েও তার মুখে হাসি! হায়রে দুনিয়া!
মেঘালয়ের অনেক কিছুই জানতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু কিছুই বললো না। মেঘালয় নিজেও অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছে। তাই কাউকে একটু খারাপ অবস্থায় দেখলে মায়া লাগে তার জন্য। কেমন যেন ব্যথা অনুভূত হয়। মেয়েটিকে দেখে আরো বেশী হচ্ছে। ফুটফুটে একটা মেয়ে,যার এখন বন্ধু বান্ধব নিয়ে এনজয় করার বয়স। ওর বয়সী মেয়েরা পিজ্জা হাটে পিজ্জা খেতে খেতে মুখ বাঁকা করে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দেয়,হৈ চৈ করে কলেজে যায় আর এই মেয়ে কিনা এরকম ভর্তা ভাত খেয়ে ১২ ঘন্টা ডিউটি করছে! খুবই চিনচিন করে উঠলো ভিতর টা। মেয়েটির জন্য কিছু করতে পারলে বেশ হতো। মেঘালয়ের অনেক পরিচিত জায়গা আছে, কোথাও একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দিতে পারলে বোধহয় অনেক উপকার হবে মেয়েটার। অবশ্য সে যদি করতে চায় আরকি!
মেঘালয় বলল, “এই মেয়ে,”
মেয়েটি মুখ তুলে তাকালো। মেঘালয় মাথাটা ঝাঁকিয়ে বলল, “সরি নাম জানিনা আপনার।”
– “জি আমার নাম মিশু।”
– “আচ্ছা মিশু, আপনার পড়াশোনা কতদূর?”
– “উচ্চ মাধ্যমিকের ডিঙি টপকেছি, এখন অনার্সে ভর্তি হবার পালা।”
– “আচ্ছা থ্যাংকস।”
– “ভাত খাবেন?”
– “না, আপনি ই খান।”
মেঘালয় হেসে রেইনকোট টা নিয়ে বেড়িয়ে আসলো। আসার সময় মেয়েটির ব্যাপারে কত সন্দেহ ছিলো। অথচ এখন তার অসহায় অবস্থা দেখে খুব ইচ্ছে করছে কিছু করার। মানব মন এত বিচিত্র! মিশু নামের মেয়েটি সবসময় হাসিতে উৎফুল্ল অথচ তার মুখ দেখেই মেঘালয় বুঝে গেছে ওর ভিতরের অবস্থা। কেন যেন মেঘালয়ের অনুভূতি গুলো খুবই তীব্র, অন্যের কষ্ট দেখে সেটা নিজের ভেতরে অনুভব করতে পারে।
বাসায় ফিরে রেইনকোট টা মেলে দিতেই এক ধরণের গন্ধ নাকে লাগলো এসে। মিষ্টি পারফিউমের সুগন্ধ! নিশ্চয় ই মিশুর গায়ের। কথাটা মনে পড়তেই মেঘালয় ফোন হাতে নিয়ে দুয়েকজন লোকের সাথে যোগাযোগ করলো কোথাও কোনো কাজের সুযোগ আছে কিনা। তারপর ফ্রেশ হতে গেলো।
চলবে..

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৯(লাষ্ট)

3

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২৯(লাষ্ট)

#ফাবিহা_নওশীন

??

আদি!!!!
সামু রাগে,ক্ষোভে চিতকার করে উঠলো।

আদি কানে হাত দিয়ে বললো,
–ওকে,রিলেক্স আমি নিশিকে বলছি তোমাকে ড্রেস দিতে।আর আপাতত তুমি আমার একটা টিশার্ট পড়ে নেও।

আদি সামুকে নিজের একটা টিশার্ট দিলো।সামু সেটা ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে।তখনই আদি বললো,
–এই দাড়াও তোমার এই নতুন উদ্ভাবিত ড্রেসটার একটা পিক নিয়ে নেই।

সামু চোখ পাকিয়ে চাইতেই আদি মুখ চেপে হেসে বেরিয়ে গেলো নিশির কাছে।নিশিকে সব খোলে বলতেই নিশি নিজের কয়েকটা ড্রেস সামুর রুমে নিয়ে যায়।সামু আদির টিশার্ট পড়ে বসে আছে।নিশির দেওয়া ড্রেস থেকে একটা ড্রেস নিয়ে পড়ে রেডি হয়ে নিচে গেলো।

ডক্তর এসেছে বাবার রোজকার চেকাপ করতে।নার্স তো আছেই সবসময়ের জন্য।আর একজন স্পেশাল ডক্টর রাখা হয়েছে এক্সারসাইজ করানোর জন্য।রোজ হালকা পাতলা এক্সারসাইজ করানো হয়।এভাবে যত্ন নিলে তিনি খুব শীঘ্রই হাটতে পারবেন।সামু নিচে নামতে নামতে দেখছে।
সামু নিচে যেতেই আদি আদিবাকে কোলে নিয়ে বললো,
–চলো।

সামু সবার থেকে বিদায় নিয়ে আদিবার স্কুলে ভর্তি করার জন্য বেরিয়ে গেলো।স্কুলে ভর্তি করে আসার পথে সামু আর আদিবার জন্য কেনাকাটা করে এসেছে।

রাতের বেলা রুমে গিয়ে সামু দেখে বাপবেটি মিলে বিছানায় বসে খেলছে।বিছানার অবস্থা নাজেহাল।সামু আদিবাকে বললো,
–আদিবা দাদু ডাকছে।

আদি খেলা থামিয়ে আদিবাকে নামিয়ে দিলো।আদিবা চলে যাওয়ার পর সামু কোমড়ে হাত দিয়ে আদির সামনে গিয়ে দাড়ালো।আদি সামুকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভড়কে গেলো।

আদি থমথমে মুখে বললো,
–আমি আবার কি করেছি?তুমি এভাবে চেয়ে আছো কেন?

সামু মুখে বিরক্তি নিয়ে বললো,
–এটা কি গরুর ঘর না বিছানা?কি হাল করেছো?

আদি পুরো বিছানায় চোখ বুকিয়ে নিলো।
বিছানায় টেডিবিয়ার,ডল,গাড়ি, প্লেন আরো খেলনা এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে,কুশন ছড়ানো ছিটানো, বেড শিট এলোমেলো।সব মিলিয়ে জংগল।

সামু বললো,
–৫মিনিট সময় দিলাম তাড়াতাড়ি গুছাও।

–আমি!!!

–কেন তুমি আমাকে গোছাতে বলছো?তুমি এলোমেলো করেছো তুমি গোছাবে।

আদি দাতে দাত চেপে বিছানা গোছাতে লাগলো।মাঝেমধ্যে আড়চোখে সামুকে দেখছে সামু সোফায় আয়েশ করে বসে ফোন টিপছে।
সামু মনে মনে বলছে,
–সোনার চান,,কি ভেবেছো তোমাকে এত তাড়াতাড়ি মাফ করে দেবো?রোজ তোমাকে এভাবে ছোট খাটো টর্চার করবো।বড় টচার্র করলে তো আমারি লাগবে তাই ছোট ছোট টর্চার।

আদি কাজ শেষ করে সামুর সামনে এসে দাড়ালো।কিন্তু সেদিকে সামুর ভ্রুক্ষেপ নেই।আদি তাই নিজ থেকে বললো,
–বিছানা গুছিয়েছি।

সামু নড়েচড়ে ভাব নিয়ে না তাকিয়েই বললো, ইউ ক্যান গো নাও।

–মানে কি?আমি কি মেইড?

সামু এবার আদির দিকে চেয়ে বললো,
–তোমাকে আমি মেইড কখন বললাম?

–যেভাবে বললে ইউ ক্যান গো নাও।কেমন মেইড মেইড ফিলিং হলো।

–তোমার যদি মেইড ফিলিং হয় তবে সেটা তোমার প্রব্লেম।তোমার বাড়ি তোমার ঘর আর তোমাকেই মেইড বলবো?ইম্পসিবল!!
তুমি দাড়িয়ে ছিলে তাই বলেছি,তোমার তো নিজেরও কাজ থাকতে পারে।

–আমার কোনো কাজ নেই।আমি এখন শুয়ে থাকবো।

–এস ইউর উইশ।

আদি বিছানায় শুয়ে সামুর দিকে চেয়ে আছে। সামু ফোনের ভিতরে থাকলেও বুঝতে পারছে আদি ওকে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে।সামুর অস্বস্তি লাগছে।যতই ফোনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন না কেন পারছেনা।তাই ধাম করে উঠে বাইরে চলে গেলো।নিচে গিয়ে সবার সাথে বসে আড্ডা দিলো।

রাতের খাবার খেয়ে সামু আদিবাকে ঘরে নিয়ে এলো।আদি ল্যাপটপে কাজ করছে।আদিকে বিরক্ত করার আরেকটা বুদ্ধি মাথায় এসে গেলো।

–আদিবা পাপাকে বলো ব্রাশ করিয়ে দিতে।

আদিবা আদিকে গিয়ে বললো,
–পাপা,,মাম্মা বলছে তোমাকে দাত ব্রাশ করিয়ে দিতে।

আদি সামুর দিকে একবার চেয়ে আদিবাকে ব্রাশ করাতে নিয়ে গেলো।ব্রাশ করিয়ে বের হতেই সামু বললো,
আদিবা আমার ভালো লাগছে না পাপাকে বলো বেনী করিয়ে দিতে।

আদিবা আদির দিকে তাকাতেই আদি বলে উঠলো,
–সামু আমি বেনী করতে পারিনা।কিভাবে করে দেবো?

–কি আশ্চর্য,এখনকার যুগে কিছু পারা লাগেনা।ইউটিউব কেন আছে?ইউটিউব থেকে শিখে বানী করে দেও।

আদি ইউটিউবে কয়েকবার দেখেও বেনী করা আয়ত্তে আনতে পারছেনা।৫বার ট্রাই করার পর আদিবাকে বেনী করিয়ে দিতে পারলো।

সামু বেনি দেখে ফিক করে হেসে দিলো তারপর বললো,
–কি বেনী করেছো তুমি? মনে হচ্ছে চুলের উপর সাইক্লোন বয়ে গেছে।যাইহোক প্রথমবার তো ইটস ওকে।

সামু আদিবাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।আদি আদিবার পাশে এসে শুতেই সামু বলে উঠলো।
–এখানে কেন ঘুমাতে এসেছো?গতকাল ভাব দেখিয়ে না সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে ছিলে?একদিনেই ভাব চলে গেলো।যাও সোফায় যাও।

আদি ভেংচি কেটে বললো,যাবোনা।এই বেডের অর্ধেক মালিক আমি।

সামু চোখ বড়বড় করে বললো,
–এই এই কি করলে তুমি?

আদি অবাক হয়ে বললো,কি করলাম!!

–মেয়েদের মতো ভেংচি কাটলে!ছিঃ!

–কেন ভেংচি কি মেয়েদের পার্সোনাল প্রপার্টি?ছেলেদের ভেংচিতে অধিকার নেই?

–মাঝরাতে তোমার সাথে ঝগড়া করার মুডে নেই।

–ঝগড়া করতে পারলে তো ঝগড়া করবে?

–সেই!!তুমি তো ঝগড়া করার উপর পিএইচডি নিয়েছো।

–হুহ!

–হুহ!

এভাবেই কেটে গেছে একমাস।এই একমাসে সামু আদিকে নানাভাবে প্রচুর টর্চার করেছে।আদিও সামুকে নানান ভাবে রাগানোর চেষ্টা করেছে।প্রতিনিয়ত রুটিন মাফিক ক্ষমাও চেয়েছে কিন্তু সামু করে নি।সামু ওর সাথে আছে এতেই আদি খুশি।
এই একমাসে সামু আদির মাঝে অনেক পরিবর্তন খেয়াল করেছে।আগের আদি আর এই আদির মধ্যে অনেক তফাত।শুধু আগের মতো দুষ্ট আছে।সামুর সাথে না লাগলে ওর পেটের ভাত হজম হয়না।নিজে নিজেই ঘুম থেকে উঠে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নাস্তা করে আদিবাকে নিয়ে বের হয়ে যায়।আদিবাকে স্কুলে ড্রপ করে অফিসে যায়।অফিস থেকে ফিরে রাতের বেলা বাবার ঘরে যায়,রোজ বাবার খোজ নেয়।কিছুক্ষণ গল্প করে।আদিবার খেয়াল রাখে।কোনো কিছু নিয়ে রাগারাগি চেঁচামেচি,ভাংচুর করে না।যতটুকু রাগ একটা মানুষের মধ্যে থাকা উচিত ততটুকুই আছে অতিরিক্ত নয়।একদম ম্যাচুয়েড ড্যাশিং জেন্টেলম্যান।

রাতে সামু আদিবাকে ঘুম পারিয়ে চার্জে দেওয়ার জন্য চার্জার ছকেটে হাত বাড়াতেই আদি ওকে হেচকা টানে নিজের দিকে নেয়।সামু হটাৎ তাল সামলাতে না পেরে আদির বুকে হুমড়ি খেয়ে পরে।মাথা না তুলে,না সরে ওভাবেই আদির নিশ্বাসের শব্দ শুনছিলো হটাৎ হুশ হয় আদি ওর কোমড় জরিয়ে ধরায়।আদিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে রাগে চোখ মুখ লাল করে ফুসতে ফুসতে বলে,
—সমস্যা কি?কি করছিলে?একঘরে থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলে না?

আদি সামুর কথায় লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করলো।তারপর মুখ ভার করে জোরে শ্বাস ফেলে ছকেটের দিকে ইশারা করলো।
সামু ছকেটের দিকে চেয়ে দেখে একটু পর পর কেমন আগুন বের হচ্ছে আর শব্দ হচ্ছে।সামু স্তব্ধ হয়ে গেল।ঘুরে আদিকে কিছু বলতে যাবে তখনই
আদি বললো,
–অন্য জায়গায় চার্জ দেও।সকালে ঠিক করার ব্যবস্থা করবো।

সামুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদি বের হয়ে গেলো।সামুর কথায় আদি অনেক হার্ট হয়েছে।সামুও কথাটা বলে অনুতাপ করছে।কেন এমন একটা কথা বলতে গেলো।সামু শুয়ে শুয়ে আদির আসার অপেক্ষা করছে কিন্তু আদির আসার নাম নেই।রুমের লাইট অফ করে হালকা ব্লু শেডের লাইট অন করে আদিবার পাশে শুয়ে পড়ে।
অনেকক্ষণ পর আদি ঘরে এলো।সামু চোখ বন্ধ করে রাখলো।আদি এসে আদিবার কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।তারপর বারান্দায় চলে গেলো।অনেকক্ষণ যাওয়ার পর ও আদি ঘরে আসেনি।সামু উঠে বারান্দায় গেলো।আদি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে আছে।সামু ভয়ে ভয়ে পাশে গিয়ে বসে।আদি কারো উপস্থিতি আভাস পেয়ে মাথা তুলে বললো,
–আমি জানি তুমি কি বলতে এসেছো?বাট ইটস ওকে।প্লিজ লিভ মি এলোন।

–আদি প্লিজ আ’ম সরি।

–ইটস ওকে।আমি এটাই ডিজার্ভ করি।আ’ম ফাইন।

–আমি রাগের মাথায়,,

–রাগ!রাগ,,এই রাগ আমার পুরো জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।এই রাগের জন্য আমি অনেক ভুল করেছি।আর সবচেয়ে বড় ভুল তুমি তো জানোই।সে ভুলের ক্ষমা আজো পেলাম না।আর সেই রাগের জন্যই আজ তোমার মুখে,নিজের বউ,ভালোবাসার মানুষের কাছে এমন কথা শুনলাম।এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে।আমি তোমার কাছে রোজ ক্ষমা চাই আর বলি অপেক্ষা করে যাবো।একদিন তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিবে।কিন্তু সত্যি কি জানো আমি আর এই অপরাধের বোঝা বইতে পারছিনা।আমি বাইরে যতই স্টোং বিহেভ করিনা কেন ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছি।
জানো আমি যখন তোমাকে ছেড়ে যাই তখন কিছুদিন আমি ভালো ছিলাম কিন্তু তার পরেই আমি বুঝতে পারলাম কতবড় ভুল করেছি।তোমার কথাই ঠিক হয়েছিলো আমার রাগ আমার ভালোবাসার কাছে জিতে গেছে।আমার তখন রাগের উপর প্রচন্ড রাগ হলো।এই রাগকেই আর জীবনে রাখবোনা।ট্রিটমেন্ট নিলাম।কাউন্সিলিং করলাম।রাগ কমানোর জন্য যা যা করার দরকার করলাম।সিডনির ফ্যামাস সব ইউগা মাস্টারের শরণাপন্ন হয়েছি।মনের শান্তির জন্য অনেক অনেক কিছু করেছি যা কখনো করিনি।বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি।মনের শান্তির জন্য অদ্ভুৎ সব কাজ শিখেছি,রান্না শিখেছি।
আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।যখন তোমাকে বিয়ে করে আনি তখন আমি তোমার সাথে প্রথম অন্যায় করি।তোমাকে তোমার অধিকার না দিয়ে।তারপর তোমাকে দেখে তোমার প্রেমে পড়ি।কিন্তু তুমি আমাকে পাত্তা দেওনি।আমার ইগো হার্ট হয়।তোমাকে আমার করেই ছাটবো একটা জেদ আমার মাথায় জেকে বসে।আরো একটা অন্যায় করি।তারপর বিয়ে করি।কিন্তু বুঝতে পারি তোমাকে আমি ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া আমি কতটা অচল।কেমন একটা ভয় আমাকে পেয়ে বসে তাই আমি তোমার প্রতিটি পদক্ষেপের উপর নজর রাখি।এর মানে এই নয় আমি তোমাকে সন্দেহ করতাম।আমার তোমার উপর তোমার ভালোবাসার উপর যথেষ্ট বিশ্বাস ছিলো।আমি শুধু চাইতাম কেউ যেন তোমার কোনো ক্ষতি করতে না পারে।তারপর জানি না কেন আমি অমন একটা কাজ করলাম।
আদি নিজের হাত দিয়ে ওয়ালে ঘুষি মারে।

–আদি,,কি করছো?

–কেন করলাম আমি অমন কাজ?সেদিন অমন না করলে আজ সবার লাইফ অন্যরকম হত।তোমার আমার আদিবার সবার।এই পাচ বছরে আমি কতটা কষ্টে ছিলাম কতবার মরেছি সেটা আমিই জানি।তুমি কি বলেছিলে আমি ফূর্তি করে বেরিয়েছি।না সামু আমি ফূর্তি করে বেরাইনি।তিলেতিলে নিজেকে কষ্ট পেতে দেখেছি।ঘুম যেন চিরতরে বিদায় নিয়েছিল,কিছুতেই শান্তি পেতাম না।ছন্নছাড়া জীবন যাপন করছিলাম।ঠিকমতো ঘুম,খাওয়া হয়নি তাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।কেউ ছিলো না আমার পাশে।একা একাই ট্রিটমেন্ট করি।
অনেক একা হয়ে পড়েছিলাম।তুমি তো জানতে আমি তোমার উপর কতটা নির্ভরশীল ছিলাম।আমি কিভাবে পাচটা বছর কাটিয়েছি আমি জানি।তোমার কাছে আদিবা ছিলো আমার কি ছিলো?বেচে থাকার মতো কিছুই ছিলোনা।বেহায়া তাই মরিনি।আমার তো মরে যাওয়া উচিত ছিলো।

আদির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।

সামু বলে, আদি চুপ থাকো।

–না আমাকে বলতে দেও,,,সামু আমি আগে তোমাকে যতটা ভালোবাসতাম এখন তার চেয়ে বেশি ভালোবাসি।তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসো না?তুমি কি সত্যিই আমাকে ঘৃণা করো।তুমি কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না?আমি কি এতটাই খারাপ এতটাই জঘন্য হয়ে গেছি?আমি এতটাই অপরাধ করে ফেলেছি যে ক্ষমা পাবোনা?
তাহলে এক কাজ করো আমাকে মেরে ফেলো সামু।তোমার এই হাতে আমাকে মেরে ফেলো।আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।
(কাদতে কাদতে)

সামুও আর পারছেনা।এই অভিমান পুষে রাখতে পারছেনা।ওর ও অনেক কষ্ট হচ্ছে।সামু আদির চোখের পানি মুছে দিলো।তারপর আদির মুখ সামুর দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,

–আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে!

–কি,,শর্ত?

–আমাকেও তোমার ক্ষমা করে দিতে হবে।

আদি কিছুক্ষণ সামুর দিকে চেয়ে থেকে সামুকে জড়িয়ে ধরে।দুজনের চোখেই পানি। দুজনেই কাদছে তবে তা সুখের কান্না।

সামু নিজের চোখের পানি মুছে আদির গাল ধরে ওর চোখের পানি মুছে দিলো।
–কান্না তোমাকে মানায়না মি.জিরাফ।

আদি নাক ফুলিয়ে বললো, তুমি আমাকে আবারো জিরাফ বলছো?

–জিরাফকে জিরাফ বলবো না তো কি বলবো?

আদি বাকা হেসে বলে,
–আচ্ছা,তুমি ভুলে গেছো এই জিরাফ কি করতে পারে?তুমি তো বলেছিলে এই জিরাফ রোমা,,,

সামু আদির মুখ চেপে ধরে চোখ বড়বড় করে চাইলো।আদি সামু চেপে ধরা হাতে কিস করলো।সামু হাত সরিয়ে নিলো।ওর হাতে যেন কারেন্টের শকড লেগেছে।সামু ভ্যাবলার মতো চেয়ে রইলো।
আদি সামুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।দুজনের মধ্যেই উম্মাদনা কাজ করছে ৫বছরের জমানো উন্মাদনা।
.
.
.
.

সামু আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছে।আজ সামু শাড়ি পড়েছে।আদি পিছনে থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো।ওর চুল বেয়ে টিপটিপ করে পানি পড়ছে।

–আদি তোমার চুল দিয়ে পানি পড়ছে চুল মুছে নেও।ঠান্ডা লেগে যাবে।

–লাগুক।এখন আমার সামু আছে।

আদি সামুকে ছেড়ে আলমারি খোলে একটা বক্স এনে সামুর হাতে দিলো।সামুর বক্সটা চিনতে বাকি রইলো না।সামু আদির দিকে চেয়ে আছে।

–আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
আদি বক্স খোলে সামুকে নাকফুল,চেইন,চুরি,
কানের দুল,রিং পড়িয়ে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।
–পারফেক্ট।

সামু,আদিবাকে কোলে নিয়ে আদি নিচে নামছে।নাস্তার টেবিলে নাস্তা করছে।গল্প করছে।হাসিখুশি পারফেক্ট ফ্যামিলি।

.
.

৬মাস পর।আদির বাবা এখন হাটতে পারে।তবে আগের মতো স্পিডে নয়।তবে ধীরে ধীরে।আজ ওদের ফ্যামিলি ফটো তুলা হবে।মেয়েরা ব্লাক শাড়ি,ছেলেরা কালো রঙের স্যুট পড়বে।আদিবার জন্য ব্লাক লং প্রিন্সেস ড্রেস।নিহাদের জন্যও স্যুট নিয়েছে।নিশি খুব এক্সসাইটেড।
নিশি,আদিবা,সামু রেডি হয়ে নিচে নামছে।আদি কালো রঙের স্যুট পরেছে।চুল স্পাইক করা,হাতে ওয়াচ,ব্লাক সু।সব মিলিয়ে ড্যাশিং।সামু আদিকে দেখতে দেখতে নামছে।আদিও সামুকে দেখছে আর চোখ দিয়ে নানান কথা বলছে।সামুর দিকে এগিয়ে যাবে তখনই আদিবা এসে বললো,
–পাপা আমাকে কেমন লাগছে?

–ওরে আমার প্রিন্সেস একদম পরীর মতো লাগছে।

–মাম্মার চেয়ে বেশি সুন্দর?

আদি সামুকে চোখ মেরে বললো,
–মাম্মার চেয়ে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে আমার প্রিন্সেসকে।কারণ আমার প্রিন্সেস ওর মাম্মার চেয়ে সুন্দর।

অবশেষে ফ্যামিলি ফটো তুলা শেষ।ফটো বড় করে বাধিয়ে লিভিং রুমে রেখেছে।

আদিবাকে আদি ঘুম পাড়াচ্ছে কিন্তু আদিবা ঘুমাচ্ছেনা।কিছু একটা ভেবেই যাচ্ছে।সামু ফ্রেশ হয়ে আসতেই আদিবা বললো,
–মাম্মা আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।

সামু আদিবার পাশে বসে।আদিও আগ্রহ নিয়ে আদিবার দিকে চেয়ে আছে। আদিবা সামুকে প্রশ্ন করলো।
–মাম্মা ফুপি বলেছে তোমার পেটে ছোট এইটুকুনি একটা বাবু আছে।সত্যিই কি তোমার পেটে বাবু আছে?
আদি ফিক করে হেসে দিলো।(সামু ৩মাসের প্রেগন্যান্ট)সামু ভ্রু কুচকে আদির দিকে তাকালো তারপর বললো,
–হ্যা মা।তোমার ছোট ভাই কিংবা বোন।

–কি মজা পিহুদের(ফ্রেন্ড) মতো আমাদেরও ছোট একটা বাবু হবে।আমি ওর সাথে খেলবো।ও কবে খেলবে আমার সাথে?

আদি বললো, এর জন্য তোমাকে আরেকটু বড় হতে হবে।তুমি কোলে নিবা না।তাই বড় হতে হবে।আর সেজন্য খেতে হবে।তোমাকে ভালোমতো পড়াশোনা করতে হবে।করবে তো?

–সব করবো।

–তবে এখন তোমাকে ঘুমাতে হবে।

–আচ্ছা।

আদিবা ঘুমিয়ে গেলো।আদি সামুর হাত ধরে বললো,
–তোর শহরের ভালোবাসা আর আমার শহরের ভালোবাসা আজ মিলে আমাদের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।

–আমাদের ভালোবাসা!!

??
“তোর শহরে,কোনো এক প্রহরে

ছুয়ে দিস আমায়

আমি ভালোবেসে রবো পাশে

তোর এক ইশারায়।”

–ফাবিহা_নওশীন

সমাপ্ত…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৮

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২৮

ফাবিহা নওশীন

??
সামুর সেন্স ফিরতেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়।তারপর হাত কপালে রাখে।মাথাটা কেমন যন্ত্রণা করছে।হটাৎ সামু উঠে বসে।উঠে বসে নিজেকে আদির রুমে আবিষ্কার করে।
চারদিকে চোখ বলায়।অনেক রাত হয়ে গেছে বুঝাই যাচ্ছে।যেমনটি রেখে গিয়েছিলো তেমনি আছে।দেয়ালে ওর নিজ হাতে সাজানো আদি আর ওর নানা মুহুর্তের ছবি।তখনি বিয়ের ছবিটার কথা মনে পড়ে।মাথা ঘুরিয়ে বেডের পাশে তাকালো।বড় করে বাধানো ছবির ফ্রেমটা সেখানেই আছে।বেড থেকে নেমে সবকিছু ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।ওর ভালোবাসা,স্বপ্ন,অনুভূতি মিশে আছে ঘরের প্রতিটি জিনিসের প্রতি।কেমন মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে।নিজের ব্যবহৃত কাবার্ড খোলে।ওর জামাকাপড় ভাজে ভাজে সাজানো।মনে হচ্ছে কেউ হাত দেয়নি এতকাল।
হটাৎ সামুর আদিবার কথা মনে হলো।সামু কাবার্ড বন্ধ করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তারপর দৌড়ে সিরি বেয়ে নামছে।তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই আদি ওকে ধরে ফেলে।

তারপর সামুর দিকে চেয়ে বললো,
–হাত-পা ভাংবে তো,,

সামু আদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চেচিয়ে বললো,
–আদিবা কই?

আদিবা নিহাদের সাথে খেলছিলো।নিশি,জয়,আদির মা ওদের দেখছিলো আর নানা খোশগল্প করছিলো।আদিবা সামুর গলার আওয়াজ পেয়ে উঠে দাড়ালো।তারপর সামুর কাছে আসতে আসতে বললো,
–মাম্মা আমি এখানে!!

সামু এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আদিবাকে।তারপর গালে,কপালে চুমু দিয়ে বললো,
–মাই সানসাইন তুমি কোথায় ছিলে?জানো না তোমাকে না দেখলে আমার কত কষ্ট হয়।তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না।

–কিন্তু মাম্মা তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে তাই তোমাকে বিরক্ত করিনি।এখানে খেলছিলাম।

নিশি,জয়,আদির মা এগিয়ে এলো।
সামু বললো,
–আমি ঘুমাচ্ছিলাম!!না আমি তো,,(তখনই ওর মনে পড়লো আদি কি করেছে)
তোমার পাপা কই?

আদিবা পিছনের দিকে ইশারা করলো।সামু ঘুরে আদিকে দেখে।তারপর ওর দিকে এগিয়ে যায়।আর দাতে দাত চেপে বলে,
–আমি ঘুমাচ্ছিলাম?তুমি কি করেছো?

আদি দাত কেলিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
–ইয়ে মানে,,,আসলে,,,(সিরিতে পিছিয়ে উপরে উঠতে উঠতে)

সামান্তা আগাতে আগাতে বললো,
–কি আসলে কি?

–না,,মানে,,,
বলেই দৌড়।

–আদি,দাড়াও,পালাচ্ছো কেন?থামো বলছি।আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।
সামু রাগে ফুসফুস করতে করতে আদির পিছনে গেলো।

আদিবা মাম্মা,পাপাকে দেখে নিশিকে জিজ্ঞেস করলো,
–আচ্ছা,মাম্মা কি পাপাকে মারবে?

নিশি ভ্রু চুলকে বললো,
–শুধু মারবে না,হাড়গোড় ভেঙে দেবে।

আদি হা করে নিশির দিকে একবার চেয়ে সিড়ির দিকে চাইলো।
জয় বললো,
–নাগো মামনি,,মাম্মা পাপাকে কেন মারবে ওরা জাস্ট কথা বলবে।
জয়ের কথা শুনে নিশির হুশ এলো।

আদি দৌড়ে নিজেদের রুমে চলে গেছে।সামুও পিছু পিছু গেলো।তারপর বললো,
–পালাচ্ছো কেন?তুমি আমাকে স্পে,,আজ তোমার খবর আছে।
তারপর হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুড়ে মারছে।আদি বারবার সরে যাচ্ছে।কোনটা ওর লাগছে আবার কোনোটা লাগছে না।

–সামু আমি আহত থেকে নিহত হয়ে যাবো।আমার মাসুম মেয়েটার কি হবে?একটু ওর কথা ভাবো।

সামু কথা না বলে ডেসিন টেবিলের উপরে থেকে লোশনের বোতল ছুড়ে মারে।সেটা একদম আদির পিঠ বরাবর লাগে।আদি কিছুটা ব্যথা পাওয়ায় ক্লান্ত হলে সামু ওকে ধরে ফেলে ওর চুল টেনে বলে,

–তুমি আমাকে অজ্ঞান করে কিডন্যাপ করেছো?ছিঃ এমন কাজ কি করে করলে?তোমাকে এই ক্রাইমের জন্য পুলিশে দেওয়া দরকার।বিদেশে থেকে এই শিখেছো?

আদি নিজের চুল ছাড়িয়ে সামুকে চেপে ধরে বললো, জ্বি না।পূর্ব অভিজ্ঞতা।এর আগেও কিডন্যাপ করেছিলাম একজনকে।
তারপর ভ্রু নাচালো।সামুর আগের ঘটনা মনে পড়ে গেলো।তারপর আদিকে ছেড়ে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
–বাবা কই?তার সাথে দেখা করবো।

আদিও সচকিত হয়ে গেলো তারপর বললো, ঘরেই আছে।চলো।

সামু মায়ের সাথে কথা বলে বাবার ঘরের দিকে এগুলো।যতই এগুচ্ছে বুক ধিকধিক করছে।এত বছর পর সামনে যাবে তাও তার এই অবস্থা।কিভাবে দেখবে তার এই অবস্থা।

সামু ধীর পায়ে ঘরে যায় নিশি সামুকে জড়িয়ে ধরে।দুজনের চোখেই পানি।কেননা একে অপরের ভাবি,ননদ ছিলো না।বরং ভালো বন্ধু ছিলো।
নিশি বিছানায় বসে বাবার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
–বাবা,চোখ খোলো দেখো কে এসেছে।

আস্তে আস্তে চোখ খোলে জিজ্ঞেস করলো,
–কে এসেছে?

–বাবা সামু এসেছে।(সামুর দিকে ইশারা করে)

আহনাফ চৌধুরী সামুকে দেখে অনেক অবাক হয়।তারপর হাত বাড়িয়ে ইশারা করে।সামু হাত ধরে পাশে বসে।
–মা,তুই এসেছিস?এই বুড়ো বাপের প্রতি রাগ, অভিমান কমেছে?

–তোমার প্রতি আমার কোনো দিন রাগ,অভিমান ছিলো না আর না আছে।তুমি আমার কাছে সবসময় একি ছিলে।আমি খোজ নেইনি কারণ আমি আমার অতীত ভুলে থাকতে চেয়েছিলাম তাই।

আদিবা আদির কোলে দরজার সামনে।ভিতরে কি হচ্ছে জানার জন্য আকুপাকু করছে।তারপর আদিকে বললো, চলো।
আদি আদিবাকে বেডের সামনে নিয়ে দাড়ালো।সামু তখনও বাবার সাথে কথা বলছে।বিছানায় শুয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে আদিবার কোতুহলী হলো।নিজের কৌতুহল চাপা রাখতে না পেরে আদিকে জোরে জিজ্ঞেস করলো,
–পাপা,এটা কি আমার দাদু?

সবার দৃষ্টি আদিবার দিকে।সবাইকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে আদিবা ঘাবড়ে যায়।আদিবা আদির দিকে চেয়ে রইলো।
আদি মুচকি হেসে বললো,
–হ্যা মা এটাই তোমার দাদু।

আদির বাবা অবাক হয়ে বললো,
–বাচ্চাটা কে?

নিশি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,তোমার নাতনী।ভাইয়া আর সামুর মেয়ে।

বিস্ময় নিয়ে বললো,
–কি!!
আদির বাবার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো।
–কি বলছিস আদির মেয়ে?

আদি বললো,হ্যা।বাবা।
আদি আদিবাকে বিছানায় নামিয়ে দিলো।আদিবা কাছে গিয়ে বসে।
উচ্ছ্বসিত হয়ে সামুকে জিজ্ঞেস করে,
–কি নাম ওর?

সামু বলার আগেই নিশি বললো,
–বাবা ওকে জিজ্ঞেস করো,,দেখো কত সুন্দর করে বলে?

–কি নাম তোমার?

–আদিবা সাজান্তা চৌধুরী।

–বাহ!বেশ সুন্দর নাম তো আমার ছোট গিন্নির।আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে?

–হ্যা,তোমার কি সুন্দর বড় বড় দাড়ি,,নানা ভাইয়ের মতো?

–বিয়ে করবে আমাকে,?

–না,,

–কেন?(মন খারাপের ভান করে)

–তুমি অনেক বুড়ো।দাড়ি পেকে গেছে।নানার ও পেকে গেছে।তাই তাকেও বলেছি বিয়ে করবোনা।

–তাহলে কাকে বিয়ে করবে?

–পাপা বলেছে আমি মাম্মার চেয়েও সুন্দর।তাই আমি পাপার চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম বয়কে বিয়ে করবো।

সবাই ওর কথা শুনে হেসে দেয়।আহনাফ চৌধুরী ও হাসছে।

–আমার ছোট গিন্নি এসে পড়েছে।এবার আমি সুস্থ হয়ে যাবো।

–হ্যা বাবা,তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়ো তো।তোমাকে এভাবে মানায় না।(সামু)

–হ্যা,তোরা এসে গেছিস আমি এবার সুস্থ হয়ে যাবো।

সামুর মুখ কালো হয়ে গেলো।ও এখানে এই জন্যই আসতে চায়নি।এখানে আসলে মায়ায় জড়িয়ে যাবে।যেতে ইচ্ছে করবেনা।সবাই থাকতে বলবে,,মানাও করতে পারবেনা।

–কি রে সামু,চুপ করে আছিস কেন?চলে যাবি আবার?

আদিবা বলে উঠে,
–কেন যাবো?পাপা বলেছে এটা আমাদের বাড়ি,আমার বাড়ি।আমরা এখানেই থাকবো।মাম্মা,পাপা,তুমি সবাই একসাথে থাকবো।কত মজা হবে।তাই না মাম্মা?

সানুর দিকে অতি আগ্রহের সাথে চেয়ে আছে হ্যা শুনার আশায়।সামু আদিবার চোখের ভাষা বুঝতে পারছে।নাহ মেয়েটাকে আর কষ্ট দিবেনা,ওর ফ্যামিলি থেকে দূরে রাখবেনা।

সামু মৃদু হেসে বললো, হ্যা।

আদিবা লাফিয়ে উঠলো।আমরা এখানে থাকবো।দাদু আমরা এখানে থাকবো।
আদিও আশ্বস্ত হলো। সবার সামনে যখন বলেছে তারমানে থাকবে।

আদির বাবা বললো, কথা দে,যাবি না,,

–কথা দিলাম।

.
.

সামু আদিবাকে ঘুম পাড়াচ্ছে।আদিবা পাপা মাম্মার রুম দেখে,ছবি দেখে অনেক খুশি হয়েছে।ওর খুব পছন্দ হয়েছে।দৌড় ঝাপ করে ক্লান্ত হয়ে গেছে।নতুন জায়গায় এসে ঘুমাতেই চায়নি।অনেক রাত হওয়ায় জোর করে ঘুম পাড়াচ্ছে।
আদিবাকে মাঝে শুইয়েছে।সামু একপাশে আর আদির জন্য অন্য পাশে জায়গা রেখেছে।সামুর চোখ লেগে এসেছে।হটাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে।আদি ওর কোমড় জড়িয়ে ওর পাশেই শুয়ে আছে।সামু রেগে গেলো।

–আদি,,তুমি এখানে কেন?নিজের জায়গায় যাও।

–উহু,,

–আদি,,ভালো হবে না কিন্তু,, তুমি ভুলে গেছো তুমি আমাকে কিডন্যাপ করেছো?

–ভুলিনি।এর জন্য তুমি আমাকে অনেক মেরেছো।আর দেখো তোমাকে কিডন্যাপ না করলে তুমি আসতে না।আর না আসলে আদিবা একটা হাসিখুশি পরিবার পেতো না।।আর তোমারও তো ভালো লেগেছে।তুমি ওদের সাথে কতটা খুশি আমি দেখেছি।

–সেটা আগেই সম্ভব হতো যদি তুমি ৫বছর আগে অমন কাহিনী না করতে।

–এর জন্য তো আমি সরি বলছি,আমি অনেক অনুতপ্ত।এছাড়া আমি আর কি করতে পারি?মরে যেতে বলছো?

সামু আর কোনো কথা বললো না।আদির ঘুমের অপেক্ষা করছে। ও ঘুমিয়ে পড়লে অন্য পাশে চলে যাবে।

অনেকক্ষণ পর সামু আদির নাড়াচাড়া না পেয়ে বুঝলো ঘুমিয়ে পড়েছে।তারপর হাত সরিয়ে উঠতে নিবে তখনই আদি ঝাপটে ধরে।

সামান্তা অবাক হয়ে বললো,
–তুমি জেগে আছো?ঘুমাওনি?

—ঘুমিয়েছিলাম নাড়াচাড়ায় জেগে গেছি।আমার ঘুম অনেক হালকা। সামান্য শব্দ আর নড়াচড়ায় ঘুম ভেঙে যায়।

–কি তোমার ঘুম হালকা? মজা করছো?বোম মেরে দিলেও তোমার ঘুম ভাংগে না।

–আমার কোনো কিছুই আগের মতো নেই।সব অভ্যাস বদলে গেছে।এখন আমার এত ঘুম আসেনা।৫বছর যাবত ঘুম হারিয়ে গেছে।

–আমার এখানে থাকলে আমি নড়াচড়া করবোই।তোমার জায়গায় যাও।

–যাবোনা।

–তুমি কি জোর জবরদস্তি করবে?

সামুর কথা শুনে ওকে ছেড়ে দিয়ে উঠে গেলো।
–নাহ,,আমি আর কোনো দিন কোনো কিছুর জন্য তোমাকে জোর করবোনা।আমাকে মাফ করার জন্য ও না।তবে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে মাফ চাইবো।আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন তুমি আমাকে মাফ করবেই।

আদি সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো।সামু আদির দিকে চেয়ে রইলো।ওর এক কথায় এতটা দূরে যাবে ভাবেনি।

সকালে ঘুম ভাংতেই সামু ঘড়িতে সময় দেখে ৮টা ১০।সামু উঠে বসে।ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে।আদিবা কিংবা আদি কেউ রুমে নেই।
সামু মনে মনে বলছে,
–যা বাবা,,দুই ঘুম কাতুরে উঠে গেছে আর আমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি।

সামু উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।সেই বেড,দোলনা সব আছে।সামু রেলিং ধরে দাড়ালো।গার্ডেনে চোখ যেতেই দেখে আদি আর আদিবা ফুটবল খেলছে।আদিবা ফ্রক বদলে টিশার্ট আর হাফ প্যান্ট পড়েছে।চুলের বেনী খোলে ঝুটি করেছে।এসব যে আদি করে দিয়েছে বুঝতে বাকি নেই।
–আদি তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো।বাবা হয়েছো বলে কথা।

তারপর আদিবাকে ডাকলো।
–আদিবা!!

আদিবা খেলা রেখে সামুর দিকে চাইলো।তারপর জোরে শব্দ করে বললো,
–মাম্মা আমি পাপার সাথে খেলছি।তুমিও এসো।

–আসছি।
সামু কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে গার্ডেনে চলে গেলো।

সামু দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে।হটাৎ করে আদি খেলা থামিয়ে বললো,
–আদিবা আজ আর খেলতে হবেনা।ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে নেও।নতুন স্কুলে ভর্তি হতে হবে।
সামু যেতে চাইলে রেডি হয়ে নিও।
বলেই আদিবাকে নিয়ে চলে গেলো।সামু বুঝতে পারলো গতকালের ঘটনার জন্য আদি অভিমান করে আছে।

আদিবা দাদির হাতে খাচ্ছে।আর দাদা হুইলচেয়ারে বসে আছে।নার্স এসে কি সব বলছে।আদি ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমে যেতেই থ।হা করে চেয়ে আছে সামুর দিকে।সামু প্লাজো পড়া।শরীরে টাওয়ার জড়ানো তার উপর কাধে ওড়না জড়ানো।চুলে তোয়ালে পেচানো।বিরক্ত আলমারিতে কি যেন খুজছে।এমন অদ্ভুৎ পোশাকে সামুকে দেখে আদি চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে।সামু আদিকে দেখে
আহ করে চিতকার দেয়।
–তুমি!!

–তুমি এটা কি পড়েছো?

সামু এগিয়ে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ মুখ কুচকে বললো,
–আমাকে কিডন্যাপ করেছো?কিন্তু আমার জন্য জামাকাপড় এনেছো?

আদি বিস্ময় নিয়ে বললো, কেন আলমারি ভর্তি জামাকাপড়।এত জামাকাপড়েও হয় না?

সামু আমতা আমতা করে বলল,
–ইয়ে,,মানে,,একটা জামাও গায়ে লাগছেনা।আগের চেয়ে মোটা হয়ে গেছি।

আদি সামুকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে হোহো করে হেসে দিলো।

তা দেখে সামুর রাগ বেড়ে গেলো।
–হো হো করে না হেসে আমার জামার ব্যবস্থা করো।আমি এভাবে আর কতক্ষণ থাকবো?

–আরে এভাবেই থাকো।ড্রেসটা সেই।সামনের ঈদে এই ড্রেস ভাইরাল হবে ১০০% হাহা।।

সামু আদির কথা শুনে রাগে ফুসছে।

চলবে,,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৭

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২৭

ফাবিহা নওশীন

??
আদিবার কথা রাখতে আদিকে সাথে নিতে হয় সামুর।মেয়ে তো আর জানে ওর মাম্মা পাপার মধ্যে কি চলছে।
স্কুলের সামনে গাড়ি থামলো।সামু,আদিবা,আদি একে বের হলো।
আদিবা দৌড়ে ভিতরে যেতে গিয়ে পড়ে গেলো।সেটা দেখে আদি অস্থির হয়ে দৌড়ে ধরতে গেলে সামু আদির হাত ধরে থামিয়ে দেয়।

আদি অবাক চোখে চাইলে সামু আদিবাকে বলে,
–বেবি কিচ্ছু হয়নি।উঠে পড়ো।তুমি তো ব্রেভ গার্ল।

আদিবাও উঠে গেলো।তারপর নিজের স্কুল ড্রেস ঝেড়ে বললো,
আমি ব্যথা পাইনি।

আদি ভেবেছিলো আদিবা কাদতে শুরু করবে কিন্তু না।
সামান্তার যখন খেয়াল হলো ও আদির হাত ধরে রেখেছে তখন ছেড়ে দিয়ে বললো,
–ওকে আমি ননীর পুতুল বানাইনি যে অল্পতে কষ্ট পাবে।ওকে আমি শিখিয়েছি হোচট খেলে আবার উঠে দাড়াতে হবে। নিজে নিজেই উঠতে হবে।নিজেকে নিজের সামলে নিতে হবে।কেউ তোমাকে হাত ধরে তুলবেনা।
যাতে কেউ ওকে কষ্ট দিতে না পারে।কেউ কষ্ট দিলে নিজেকে সামলে নিতে পারে।

স্কুল ছুটির পর সামু আদিবাকে নিয়ে বের হতেই আদি সানগ্লাস খোলে মুচকি হেসে এগিয়ে আসে।আদিবাও দৌড়ে এসে পাপা বলে আদিকে জড়িয়ে ধরে।
আদিবার ক্লাসমেট রাহি আদিবার সাথে আদিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
–আদিবা কে এটা?

আদিবা বেশ ভাব নিয়ে বলে,
আমার পাপা।দেখেছিস আমার পাপা কত হ্যান্ডসাম।তোর পাপার চেয়েও বেশি হ্যান্ডসাম।

সেটা শুনে রাহি খেপে যায় আর বলে,
–তোর পাপার চেয়ে আমার পাপা বেশি হ্যান্ডসাম।

শুরু হয়ে যায় ঝগড়া।আদিবা কোমড়ে হাত দিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয়।তা দেখে সামু আর আদি হতবাক।
আদি ওদেরকে থামিয়ে বলে,
আদিবা তোমার পাপাও হ্যান্ডসাম,রাহি তোমার পাপাও হ্যান্ডসাম।দুজনেরই পাপা হ্যান্ডসাম।ওকে?আর ঝগড়া করে না ঝগড়া করা ব্যাড ম্যানারস।

আদি আদিবাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে তুলে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।সামু পাশে গিয়ে বসে।তারপর আদিবাকে বলে,
–তুমি এত ঝগড়াটে কবে হলে?আমার মেয়ে এত ঝগড়া করতে জানে জানা ছিলো না তো?

আদি পাশ থেকে বলে,দেখতে হবেনা মেয়েটা কার?মাম্মা যেমন ঝগড়াতে এক্সপার্ট।

সামু ভ্রু কুচকে আদির দিকে তাকায়।আদিবা সামুকে প্রশ্ন করে,
–মাম্মা তুমি কি ঝগড়াটে?

এমন প্রশ্নে সামু কি জবাব দেবে।
–নাহ,,আমাকে কখনো ঝগড়া করতে দেখেছো?

আদিবা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো, না।তবে কি পাপা মিথ্যা কথা বলেছে?

সামু জানে বাবা-মা মিথ্যা কথা বলে শুনলে বাচ্চাদের উপর তার প্রভাব পড়ে।তাই বললো,
–পাপা মজা করেছে।আর মজা শুধু বড়রা করে।বাচ্চারা কিন্তু মজা করেনা।তাই তুমিও মজা করবেনা।

সামু আদির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।
আদিবা মাথা নাড়ালো।

বাড়িতে গিয়েই সামুর চোখ ছানাবড়া।ড্রয়িংরুমে শপিং ব্যাগের গোডাউন।ড্রয়িংরুমে এত শপিং ব্যাগ সামু হিসাব করতে পারছেনা।এত শপিং ব্যাগের এখানে কিভাবে এলো তা জানতে খালাকে ডাকতেই আদি বললো,
–এগুলো আদিবার জন্য।

আদিবা বললো,
–আমার জন্য?

–হুম চড়ুই পাখি তোমার জন্য।তোমার জন্য ড্রেস,সুজ,ব্যাগ,টেডি,খেলনা,চকলেট অনেক কিছু আছে।

আদিবা খুশি হয়ে গেলো।আদি একটা প্যাকেট থেকে একটা লকেটসহ চেইন বের করে আদিবাকে পড়িয়ে দিলো।
সামু একটা লাগেজ দেখতে পেলো বুঝতে পারলো আদির লাগেজ।আদি হোটেল থেকে লাগেজ আনার ব্যবস্থা করেছে।
সামু আদিবাকে বললো,
–আগে স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে নেও তারপর সবকিছু দেখবে ওকে?
–ওকে।
আদিবা ভিতরে চলে গেলো।সামু আদিকে বললো,
–তোমার লাগেজ এখানে কেন?কতদিন তুমি এখানে থাকবে?

আদি ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
–যতদিন না তুমি আমার সাথে যাচ্ছো?

–আমি তো বলেছি আমি যাবোনা।

–তাহলে আমিও এখানে থাকবো।

–এটা কি তোমার বাড়ি যে তোমার ইচ্ছে হলে তুমি থেকে যাবে।

–এটা আমার বউয়ের বাড়ি।আর বউয়ের বাড়ি মানে আমার বাড়ি।

–উফফ,,তোমার কি কিছুই গায়ে বাধেনা?তুমি কি জানো তুমি বেহায়া হয়ে যাচ্ছো?

–হ্যা জানি।ভালোবাসার জন্য এটুকু বেহায়া হতেই পারি।

–উফফ,,
সামু বিরক্তি নিয়ে চলে গেলো।

আদিবা চেঞ্জ করেই আদির সাথে সব দেখে চলেছে।টেডি নিয়ে খেলছে।একটার পর একটা খেলনা বের করছে আর খেলছে।আদিবা এত খেলনা দেখে আনন্দে আত্মহারা।
সামু দূর থেকে আদিবাকে দেখছে।আদিবা নিজের পাপাকে পেয়ে কত খুশি।সামুর সে খুশি ছিনিয়ে নিতে ইচ্ছে করে না।ওর ও ইচ্ছে হয় ওর পাপা সবসময় ওর সাথে থাকুক।যেমনটি সামুর বাবা সবসময় সামুর পাশে থেকেছে।

আদি আর আদিবা একসাথে গোসল করছে।সামু এসে দেখে দুজনেই গোসল রেখে পানি দিয়ে খেলছে আর হাসছে।সামু কোমড়ে হাত দিয়ে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা স্টপ।

–কি হচ্ছে এখানে?গোসল না পানি ছিটাছিটি?আদি ও নাহয় ছোট ওর সাথে কি তুমিও বাচ্চা হয়ে গেছো।

–মাম্মা পাপার দোষ নেই।আমিই খেলছিলাম।

–খেলছিলে তারপর যদি ঠান্ডা লেগে যায়।এসো মুছে দেই।
সামু আদিবার শরীর মুছে চেঞ্জ করে দিলো।আদির প্রচন্ড ভালো লাগছে।নিজেকে পরিপূর্ণ লাগছে এত ভালো অনুভূতি আগে কখনো হয়নি।আজ বুঝতে পারলো বাবা কি জিনিস।একজন বাবা নিজের সন্তানের মুখের হাসির জন্য পারলে পুরো দুনিয়া এনে দেয়।আদিরও তাই মনে হয়।আদিবার জন্য সব করতে পারবে।

সারাদিন আদি আর আদিবা হৈ-হুল্লোড় করে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে ও নিজেও বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে।মাঝে মাঝে সামুকে একটু খেপিয়ে যায় সুযোগ বুঝে।
সামু রাতের বেলা রুমে এসে দেখে আদি আর আদিবা একসাথে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।কারো হুশ নেই।
সামু বাবা-মেয়ের ঘুমের মুহুর্তকে ক্যামেরা বন্ধি করে রাখলো।
তারপর কাউচে শুয়ে পরলো।

সকালে আদির ঘুম ভাংতেই দেখলো ও আদিবার সাথে শুয়ে।কখন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।তারপর ওর খেয়াল হলো সামু কোথায়।উঠে বসে সামুকে কাউচে দেখতে পায়।আদি ধীর পায়ে সামুর কাছে যায়।সামু কাত হয়ে শুয়ে আছে।চুল এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে।ঘুমন্ত অবস্থায় সামুকে মোহনীয় লাগছে।এই ঘুমন্ত পরীকে যে কেউ দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে।আদির ইচ্ছে করছে সামুকে একটু ছোয়ে দিতে।আদি সামুর দিকে হাত বাড়িয়ে আবার হাত সরিয়ে নিলো।তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
–নিজের বউকে ছুতে পারছিনা,কি দূর্ভাগ্য আমার।

তারপর ফোন এনে নিঃশব্দে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।ছবিতে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
–কবে আমাকে ক্ষমা করবে জান?

দুপুর বেলা আদি থাই ফুড বানাচ্ছে।এটা সেটা কাটাকাটি করে পুরো কিচেন শেষ করে দিয়েছে।সামু একটু পর পর উঁকি দিচ্ছে আর মাথায় হাত দিয়ে বলছে আমার স্বাদের কিচেন শেষ।পরিস্কার করতে ২দিন লেগে যাবে।আদিবা একটু পর পর গিয়ে বলছে,
পাপা কখন হবে?
–এইতো চড়ুই পাখি হয়ে গেছে।২মিনিট।তুমি বাইরে যাও।এখানে থাকা ঠিক হবেনা।

ডাইনিং এর উপর আদির ফোন বেজেই চলেছে।সামু ফোনের সামনে গিয়ে দেখে স্কিনে “মা” লিখা।সামুর খুব ইচ্ছে করছে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে কিন্তু কি বলবে।সামু হাত বাড়িয়ে ফোন ধরতে গিয়েও হাত সরিয়ে নেয় আর কল কেটে যায়।কল কাটার পর সামু ওয়ালপেপারে নিজের হাসোজ্জল একটা পিক দেখে।৫বছর আগে দোলনায় বসে তুলেছিলো।আদি তুলে দিয়েছিলো।সামু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আদিকে ডেকে বললো,
–তোমার ফোন বাজছে।মা ফোন করছে।

আদির রান্না শেষ।ও হাত ধুয়ে ডাইনিং টেবিলের উপরে থেকে ফোন নিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে যেতে যেতে মাকে ফোন করলো।

–হ্যালো মা।

অপর পাশ থেকে শুধু কানার শব্দ আসছে।মায়ের কান্নার শব্দ শুনে আদি বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–মা কি হয়েছে?কাদছো কেন?সব ঠিক আছে তো?বাবা ঠিক আছে?

অপর পাশ থেকে আদির মা কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কান্নার জন্য বলতে পারছেনা।

–মা কান্না থামাও,রিলেক্স হও।বলো কি হয়েছে?

কিছুই বলতে পারছেনা।সামু আদির এহেন কথা শুনে এগিয়ে এসে দাড়ালো।আদি ফোন কেটে দিলো।তারপর নিশিকে ফোন দিলো।

–নিশি কি হয়েছে?এভরিথিং ইজ ওকে?

–না ভাইয়া,,দেখেই তো গিয়েছিলি বাবার কি অবস্থা?হটাৎ করে জানি না কি হয়েছে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলো আর কেমন ছটফট করছিলো।তাই হসপিটালে নিয়ে এসেছি।তোকে জানানোর সুযোগ পাইনি।অনেক ভয় লাগছে জানিনা কি হবে?ডাক্তার এমনিতেই বলেছিলো সাবধানে থাকতে।লাইফ রিক্স আছে।আমি এখন ডাক্তারের কাছে কথা বলতে যাচ্ছি।তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।আমার খুব টেনশন হচ্ছে।মা তো পুরোই ভেঙে পড়ছে।কান্নাকাটি করছে খুব।(ধরা গলায়)

নিশি ফোন রেখে দিলো।আদির কেন জানি খুব ভয় লাগছে।মনে কু ডাকছে।বাবার কিছু হয়ে যাবে না তো।হারিয়ে ফেলবো না তো।আদি সোফায় বসে নিজের বুকের বা পাশ চেপে ধরলো।কেমন জানো চাপা ব্যথা অনুভব করছে।সামু আদির এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।
আদি বুকে হাত দিয়ে ভাবছে,

বাবার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা।এ সব কিছু আমার জন্য হয়েছে।একজন শক্তিশালী পলিটিশিয়ান কয়েক বছরের ব্যবধানে এত অল্প বয়সে এমন নির্জীব,নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে শুধু আমার জন্য।আমার জন্য তাকে অসুস্থতা ঘিরে ধরেছে।আমি একটা হাসিখুশী পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছি।আমার জন্য সবার লাইফে এত পরিবর্তন এত স্ট্রাগল।আমি সবার লাইফ ধ্বংস করে দিয়েছি।আমি অনেক বড় পাপী।আমার পাপের ক্ষমা নেই।বাবার কিছু হয়ে গেলে,,,,,
আদি আর ভাবতে পারছেনা।ওর দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।আদির চোখে পানি দেখে সামুর ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।ভয় হচ্ছে বাড়ির সবাই ঠিক আছে কিনা।সামু কখন আদির পাশে গিয়ে বসেছে সেদিকে আদির খেয়াল নেই।হটাৎ সামু আদির কাধ চেপে ধরায় আদি ওর পাশে সামুকে দেখে।

সামু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আদিকে জিজ্ঞেস করে,
–কি হয়েছে?এমন করছো কেন? সব ঠিক আছে তো?

আদি কিছুক্ষণ সামুর দিকে চুপ করে চেয়ে রইলো।আজ মনে হচ্ছে সেই পুরনো সামু ওর পাশে বসে আছে।চোখের পানি মুছে সামনের দিকে মুখ করে বললো,
–বাবা হসপিটালে।এর আগে কয়েকবার হার্ট এটাক করে শয্যা নিয়েছেন।হাটা চলা করতে পারেনা।বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিলো।কিন্তু আজ হটাৎ করে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে।ডাক্তার এর আগেই বলেছে এবার কিছু হলে আর আশা নেই।

এসব শুনে সামুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।এতকিছু হয়ে গেছে।যাকে ছোট বেলা থেকে সম্মান করে এসেছে,ভালোবেসেছে।যার কাছ থেকে এতকিছু পেয়েছে,এত ভালোবাসা পেয়েছে তার আজ এই অবস্থা?সামুর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।

আদি আবার বলতে শুরু করলো, এসবের জন্য আমি দায়ী।আমার জন্য সব হয়েছে।আমার জন্য বাবার এই অবস্থা।আজ যদি বাবার কিছু হয়ে যায় তবে আমি নিজেকে কক্ষনো ক্ষমা করতে পারবোনা।অনুশোচনায় মরে যাবো।আমার রাগ,জেদ শুধু আমার জীবন নয় আমার আশেপাশের সবার জীবন শেষ করে দিয়েছে।বাবা-মা, তুমি আমার হাসিখুশি পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে।সব শেষ করে দিয়েছে।সব।এতকিছু হচ্ছে আমার জন্য।আমি কেন মরে গেলাম না।

আদি দুহাতে মুখ চেপে ধরে আরো জোরে জোরে কাদছে।
সামুও আদির কাধ দু’হাতে চেপে ধরে কাদছে।প্রথমত আদির বাবার অবস্থা আর দ্বিতীয়ত আদির বর্তমান অবস্থা।যা দেখে ওর চোখের পানির বাধ মানছেনা।

এর মধ্যে হটাৎ আদিবার উপস্থিতি।ও পাপার রান্না করা ফুড দেখতে এসেছিলো কিন্তু মাম্মা পাপাকে এভাবে কাদতে দেখে ঘাড়ড়ে যায়।নিজেও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদা শুরু করে।সামুর হটাৎ আদিবার দিকে চোখ যায়।সামু আদিকে ছেড়ে আদিবার কাছে এসে বসে।
–আদিবা কাদে না,,।
আদির ও আদিবার দিকে খেয়াল হলো।ও কান্না থামিয়ে আদিবার কাছে এলো।আদিবাকে জড়িয়ে ধরলো।
আদিবা সামুকে জিজ্ঞেস করলো,
–মাম্মা তোমরা কাদছো কেন?

–তোমার দাদু অনেক অসুস্থ।তোমার দাদু মানে তোমার পাপার পাপা।গ্রেন্ড ফাদার।সে অসুস্থ তাই পাপা কাদছে।

তারপর আদিকে বললো,
–আদি কান্না থামাও,,তোমার এখন সেখানে থাকা প্রয়োজন।তোমাকে ঢাকা ব্যাক করতে হবে।

আদি চোখ মুছে নিজেকে সামলে বললো,হ্যা।
আদিবা বলে উঠে,
–মাম্মা আমরাও যাবো।দাদুকে দেখতে।

আদি সামুর দিকে তাকালো।তারপর বললো,
–সামু চলো।দেখো আদিবাও যেতে চাইছে।আমার উপর একটু দয়া করো।এমন ও হতে পারে বাবা তোমাকে আর আদিবাকে দেখে সুস্থ হয়ে গেলো।নিজেকে আর আমাকে ক্ষমা করে দিলো।বাবা তো তোমাকে খুব ভালোবাসতো।আর তোমার পক্ষেই ছিলো।বাবার কোনো দোষ নেই আমার শাস্তি বাবাকে দিওনা।

–দেখো বাবার উপর আমার কোনো রাগ,অভিমান নেই।আমি তাকে আগে যেমন ভালোবাসতাম এখনো বাসি।ঠিক আছে আমরা যাবো তবে হসপিটালে বাড়িতে না।

আদি আর কিছু বললো না,তোমরা তৈরি হয়ে নেও। আমাদের বেরুতে হবে।আমি সব ব্যবস্থা করছি।
সামু আদিবাকে খাইয়ে তৈরি করে দিলো।আদিবার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো।নিজের জন্য কিছুই নেয়নি।হসপিটাল থেকে ওদের বাড়িতে যাবে আদিবার নানা বাসায় তারপর পরের দিন আবার কক্সবাজার ব্যাক করবে।

সামু আদিকে খাওয়ার জন্য বলেছিলো কিন্তু ও খাবেনা।তারপর ওরা বেরিয়ে গেলো।আদির টেনশন থামছেই না।

ওরা ঢাকায় পৌছে গেছে।গাড়িতে করে হসপিটালে যাচ্ছে।সামুর কোলে আদিবা ঘুমাচ্ছে।তখনই নিশি ফোন করে বললো,
–ভাইয়া বাবার তেমন সমস্যা হয় নি।ডাক্তার বলেছে এখন ভালো আছে।তাই আমরা বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো।কাগজপত্র রেডি করা শেষ এখুনি বের হবো।তুই বাড়িতে আয়।

–আচ্ছা।(এখন কি করবো?সামু ত বাড়িতে যেতে চাইবেনা।কিন্তু আমি আমার পুরো পরিবারকে এক করার সুযোগটা হারাতে চাইনা।এর জন্য যদি আমাকে আবারো অন্যায় করতে হয় করবো।সরি সামু।)

–কি বললো নিশি আপু?

–এখন একটু ভালো আছে।আমাকে কিছু মেডিসিন নিতে হবে।

তারপর আদি কাউকে মেসেজ করে।ড্রাইভারকে একটা ঠিকানায় যেতে বলে।
গাড়ি ঠিকানায় গিয়ে থামতেই আদি নেমে একটা প্যাকেট নিয়ে আসে।তারপর সামুকে বলে,
–আদিবাকে আমার কাছে দেও।অনেকক্ষণ যাবত কোলে নিয়ে আছো।

–না ঠিক আছে।সমস্যা নেই।

–আরে দেও নিশ্চয়ই পায়ে ঝিম ধরে গেছে।
বলে এক প্রকার জোর করেই আদিবাকে কোলে নিয়ে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে সামু বললো,
–আই এম সরি।

এমন হুট করে সরি বলাতে সামু ভ্যাগাচ্যাগা খেয়ে গেলো।
–মানে?

–নিশি ফোন করে জানালো বাবাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তাই এখন আমাদের বাসায় যেতে হবে।

সামু চোখ বড়বড় করে বললো,
–তার মানে তুমি এখন আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে।আমি কিন্তু আগেই বলেছি,,

–এই জন্যই তো সরি বললাম।
সামু কিছু বুঝার আগে আদি নাক চেপে সামুর মুখে স্পে করে দিলো।সামু সেন্সলেস হয়ে গেলো।
আদি সামুর মাথাটা নিজের কাধে রেখে বললো, জানতাম রাজি হবেনা।তাই বাধ্য হয়েই,, সরি।

ড্রাইভার আদির এহেন কাজে ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
–স্যার এটা কি করলেন?

আদি ড্রাইভারকে নির্ভয় দিয়ে বললো,
–ভয় পাবেন না ভাই।এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলোনা।তাছাড়া আমার বউকেই তো অন্য মেয়ে তো নয়।

–আপনার বউ!!

–হ্যা,আপনি নতুন তাই জানেন না।ও আমার বউ।আমাদের মাঝে একটু সমস্যা হয়েছিল তাই সেপারেট ছিলাম।আপনি বাড়ির দিকে যান।

গাড়ি বাড়ির সামনে থামতেই আদিবার ঘুম ভেঙে গেলো।আদিবা চোখ খোলে বললো,মাম্মা!

–চড়ুই পাখির ঘুম ভেঙে গেছে?মাম্মা ঘুমাচ্ছে।এই দেখো আমরা এসে গেছি।

আদিবাকে জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে বড় একটা বাড়ি দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,পাপা এটা তোমার বাড়ি?

–উহু,,এটা আমার বাড়ি।তোমার বাড়ি।

তারপর ড্রাইভারকে বললো,
–ভাই ওকে একটু ভিতরে নিয়ে যান।

ড্রাইভার এসে আদিবাকে কোলে তুলে নিলো।

আদি আদিবাকে বললো, তুমি ভিতরে যাও আমি মাম্মাকে নিয়ে আসছি।

আদিবা বললো,
ওকে পাপা।

ড্রাইভার আদিবাকে কোলে নিয়ে ভিতরে গেলে নিশি বললো,এই পিচ্ছিটা কে?

–আদি স্যারের মেয়ে?

সামু ড্রাইভারের কথা শুনে তব্দা খেলো।
–কি!

আদিবার সেদিকে খেয়াল নেই।ও তো বাড়িটা দেখায় বেশি ব্যস্ত।

তখনই আদি সামুকে কোলে নিয়ে ভিতরে ঢুকে কিন্তু চেহেরা দেখা যাচ্ছিলোনা।তাই নিশি চিনতে পারেনি।কিন্তু ওর এই পিচ্ছিকে নিয়ে বেশি ইন্টারেস্ট।আদির মেয়ে কি করে?

–ভাইয়া এই পিচ্ছি নাকি তোর মেয়ে?

সামুকে সোফায় শুইয়ে বললো,হুম।

নিশি আদির কথা শুনে আকাশ থেকে ঠাস করে পড়ে কোমড় ভেঙে ফেলেছে।
–কি বলছিস?তোর মেয়ে এলো কোথা থেকে?

–তোর ছেলে যেখান থেকে এসেছে।আমার বউ দেখ আগে।
নিশি সোফার কাছে গিয়ে ফেস দেখে থ।
–সাসাসা,,,,,মু!!
কেমনে কি?আমাকে ক্লিয়ার করে সব বল।

–আমি যখন চলে যাই তার কিছুদিন পর জানতে পারে ও প্রেগন্যান্ট।ভয় আর অভিমান করে কাউকে জানায়নি।আমি কক্সবাজার গিয়ে ওফের দেখি,খোঁজ নেই তারপর সব জানতে পারি।

আদির কথা শুনে নিশি পারলে লুঙ্গি ড্রান্স করে।আদিবার কাছে গিয়ে বসে বললো,
বাবু তোমার নাম কি?

–আদিবা সাজান্তা চৌধুরী।

–হাও সুইট নেম।আদিবা আমি তোমার পাপার বোন তোমার ফুপি।

–আসসালামু আলাইকুম।

–অলাইকুম আসসালাম কিউটি।

তখনি আদির মা এলো।আর ওদের দেখে বললো, আদি,,

আদি মায়ের দিকে হাসি মুখে ঘুরে বললো,বাবা কি করে?

–ঘুমায়।
এই মেয়েটা কে?

আদি কিছু বলার আগেই বললো, তোমার নাতনী।

নিশির কথা শুনে আদির মা কয়েক হাজার বোল্টের শকড খেলো।
–আদি নিশি কি বলছে?

আদি আদিবাকে কোলে তুলে নিলো।আদিবা পাপার গলা জড়িয়ে ধরলো।
–ঠিকই বলছে।আদিবা আমার মেয়ে তোমার নাতনী।

–কি বলছিস?

–হু,আমার আর সামুর মেয়ে।এই যে সামুকেও নিয়ে এসেছি।কথা দিয়েছিলাম না তোমাকে বউ এনে দেবো।

আদির মার সামুকে দেখে মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।আদির কোল থেকে আদিবাকে নিয়ে চুম্বন করে বলে,আমার বোন,,!!

আদি আদিবাকে বলে,
–চড়ুই পাখি,,আমি মাম্মাকে ঘরে শুইয়ে রেখে আসি।তুমি ফুওই আর দাদির সাথে গল্প করো।নিশি ওকে কিছু খেতে দে।

আদি সামুকে কোলে নিয়ে উপরে চলে গেলো। তারপর রুমে গিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো।তারপর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
–আমার রানী চলে এসেছে।আজ অনেক দিন পর এ ঘর পরিপূর্ণ হলো।
তবে আমি আপাতত ভাবছি ঘুম ভেঙে কি তান্ডব চালাবে।আদি তুই পিঠে বস্তা বেধে রেডি হ।

চলবে,,

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৬

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২৬

ফাবিহা নওশীন

??
কেমন আছো? জেনে কি লাভ!
খুব অভিমান? এটাই স্বভাব।
পালাতে চাচ্ছো? ধরে রাখো।
নেই অধিকার। দূরেই থাকো।
সুখে আছো? খুব সুখে।
মিথ্যে কথা। সেটা তোমার মুখে।
ক্ষমা করো! নেই প্রয়োজন।
কিসের জন্য? ঠকানোর আয়োজন।
ভালোবাসি। আজ তবে আসি।

__নীলাদ্রী

??
সামু বিছানায় শুয়ে আদিবাকে ঘুম পাড়াচ্ছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবা ঘুমিয়ে পরলো।এবার সামুর আসল মিশন শুরু।আদিবাকে রেখে ঘরের লক করে আদির খোজ করছে।আদি সোফায় বসে বসে গেমস খেলছে।এটা দেখে সামুর রাগ যেন আরো বেড়ে গেলো।

নিজের রাগ কন্ট্রোল করে কঠিন গলায় বলল,
–আদিবা ঘুমিয়ে পড়েছে এখন তুমি যাও।আমি মেইন ডোর লক করবো।

আদি সামুর কথা শুনে খেলা রেখে মাথা তুলে সামান্তার দিকে চেয়ে বললো,
–কোথায় যাবো?

–কোথায় যাবো মানে কি?তোমার কি থাকার জায়গা নেই।যেখানে ছিলে সেখানে যাও।বাট তাড়াতাড়ি যাও।

–এত রাতে তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো?তোমার মায়া দয়া নেই?

–একদম ঢং করবা না।আর আমি যাকে তাকে দয়া করিনা।তাড়াতাড়ি বের হও।

–তুমি যতই তাড়াও আমি কোথাও যাচ্ছিনা।

–মামার বাড়ির আবদার নাকি হুহ?অনেকক্ষন যাবত সহ্য করছি আর না।এতক্ষণ কিছু বলিনি আদিবার জন্য।বাচ্চা মেয়ের সামনে সিনক্রিয়েট করতে চাইনি।এবার যাও প্লিজ।

আদি উঠে সামান্তার হাত ধরে আর সামান্তা এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে চিতকার করে বললো,
–একদম টাচ করবেনা।স্টে এওয়ে ফ্রম মি।

আদি হাত সরিয়ে বললো,
–ওকে ওকে,,বাট চিতকার করোনা প্লিজ।

–তো কি করবো?
কিছুক্ষণ থেমে তারপর শান্ত গলায় বলল, দেখো আমি কথা বাড়াতে চাইনা।তুমি প্লিজ যাও।

–সামু,,আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না?

সামান্তা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো তারপর ফিক করে হেসে দিলো।তাচ্ছিল্যের হাসি।
–ক্ষমা? তুমি কেন ক্ষমা চাইছো?তোমার তো কোনো দোষ ছিলো না সব দোষ আমার ছিলো।তাই আমাকেই ভুগতে হয়েছে।

–সামু প্লিজ,,
আমি কি কষ্ট পাইনি।আমি কি ভালো ছিলাম?

–দেখো তুমি কি করেছো,কেমন ছিলে আমার জানার দরকার নেই।তুমি যদি ভেবে থাকো তুমি এত বছর পর এসে ক্ষমা চাইবে আর সব ভুলে যাবো তাহলে ভুল ভাবছো,,ইউ আর এবসুলেটলি রং।তুমি যা করেছো আমার সাথে তা আমি না কোনো দিন ভুলবো আর না ভুলতে চাই।

–আমি তো আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।এর জন্য আমি কতটা অনুতপ্ত সেটা আমি জানি।তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।ক্ষমা করো আমাকে।আমি আর এ বোঝা নিতে পারছিনা।

–তুমি ক্ষমা চাইছো?ভুল বুঝতে পারছো তাতে কি হবে?আমার জীবনের এতগুলো বছর ফিরে আসবে?এত দুঃখ,কষ্ট পেয়েছি সেগুলো,,,
বাইরের আঘাত দেখা যায় তাতে ওষুধ লাগালে সেরে যায়,,কিন্তু ভিতরে যে আঘাত লাগে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় তাতে ওষুধ লাগানো যায়না আর তাই সারেওনা।আমার এ ক্ষতও কোনোদিন সারবেনা।

আদি মাথা নিচু করে বললো,
–সেদিন দোষ কি শুধু আমার ছিলো? তোমার ছিলো না?মানছি দোষ বেশি আমার ছিলো কিন্তু তোমার কি ছিলো না?

–দোষ ছিলো,,, এতটাই দোষ করে ফেলেছিলাম যে আমার ডিভোর্স প্রাপ্য ছিলো।তুমি ৫বছর কেন ১০বছর পর ফিরতে মেনে নিতাম কিন্তু ডিভোর্স?

–হ্যা,,ওটাই আমার লাইফের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।রাগের মাথায় অনেক বড় ভুল করেছিলাম।কিন্তু বিশ্বাস করো যে ভুলের মাশুল আমি এতগুলো বছর দিয়েছি।তোমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি নিজেকে কষ্ট দিয়েছি।তোমাকে আঘাত করতে চেয়েছিলাম।কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম।তোমাকে শতশত টুকরো করতে গিয়ে আমি নিজেই কয়েক কোটি টুকরো হয়ে গেছি।তোমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আমি পেয়েছি।অনেক পেয়েছি।আর দিও না প্লিজ।(অনুনয়ের সুরে)

–আচ্ছা তাই নাকি?তুমি কি ভাবছো তোমার এসব কথায় আমি গলে যাবো?
আমার স্বামী আমাকে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ডিভোর্স দিয়েছে তুমি জানতে না এই সমাজে ডিভোর্সি মেয়েদের অবস্থান কি?বিশেষ করে মফস্বল শহরে।সব জানতে তুমি,,আমার সাথে কি কি হতে পারে,,সবাই আমাকে কোন নজরে দেখবে।জানতে না?
প্রতিনিয়ত ডিভোর্সি হিসেবে কত কথা শুনতে হয়েছে।কত আজেবাজে কথা শুনতে হিয়েছে আমাকে।এলাকার মানুষেরা প্রতিনিয়ত কানাঘুষা করতো বাইরে বের হলে অদ্ভুৎ ভাবে তাকাতো।যেন আমি বড় কোনো পাপ করে ফেলেছি।আমার জন্য আমার পরিবারকে কত কথা শুনতে হয়েছে।তারা নাকি লোভে পড়ে বড়লোকের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে।আর সেই ছেলে দুদিন ফূর্তি করে প্রেগন্যান্ট করে ছেড়ে দিয়েছে।ছিঃ

সামুর কথা শুনে আদি সোফায় বসে পড়ল মাথায় হাত দিয়ে।
ও ভাবতেই পারছেনা ওর রাগ,জেদ,ইগো সামুর জীবনটা কতটা বিষিয়ে দিয়েছিলো।কতটা সাফার করতে হয়েছে ওকে।নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে।ওর জন্য ওর ভালোবাসাকে লোকে ফূর্তির সাথে তুলনা করেছে।কতটা বাজে ভাবে নিয়েছে ওদের সম্পর্ক।অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

মাথা নিচু করা অবস্থায় মিনমিন করে বললো,
–সব আমার এই অতিরিক্ত রাগের জন্য হয়েছে।আমার এই রাগ আমার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে।

সেটা শুনে সামু বললো,
–হুহ,,তোমাকে আগেই বলেছিলাম তোমার রাগকে কন্ট্রোল করো।তোমার এই রাগ সব শেষ করে দিবে।তুমি আসলে আমাকে ভালোই বাসোনি কখনো।তাহলে তোমার রাগ এতটা প্রায়োরিটি পেতো না।

আদি বসা থেকে উঠে বললো,
–সামু আর যাই বলো এটা বলোনা।এটা আমি মেনে নিতে পারবোনা যে আমি তোমাকে ভালোবাসি নি।আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।তুমি সেদিনও আমার ভালোবাসাকে উপহাস করেছিলে।আমার ভালোবাসায় পাগলামি ছিলো বাট মিথ্যে ছিলো না।প্লিজ এসব বলো না।

সামু মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
আদি আবার বলা শুরু করলো,
–আমি জেনে বুঝে কিছু করিনি।সব কিছু রাগের মাথায় করেছি।তুমি তো জানতে আমায়।তুমি সেদিন বলেছিলে আমার সাথে থাকা যায়না,,তোমার এই একটা কথা আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে,কতটা রক্তাক্ত করেছে সে খবর তুমি রেখেছিলে?কেন বলেছিলে?

–হ্যা বলেছিলাম রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।অনেক কিছু বলে ফেলেছিলাম।কিন্তু মিথ্যে কিছু বলিনি।তুমি আমার সাথে খেলার পুতুলের মতো বিহেব করতে না?আমি বলেছিলাম থাকা যায়না কিন্তু এটা বলিনি যে আমি তোমার সাথে থাকবোনা।একবারো বলেছিলাম?

–আমি রাগের মাথায় উল্টো পাল্টা কাজ করলে আমাকে কে থামাতো?কে বুঝাতো?কে শান্ত হতে বলতো?কে পরবর্তীতে আমাকে আমার ভুল ধরিয়ে দিতো?আমি তোমাকে বলিনি আমাকে সামলে নিও।তুমি কথা দেওনি সব সময় আমাকে সামলে নিবে?তুমি বলোনি আমার সব দায়িত্ব তোমার?তবে সেদিন কেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে?

–তুমি সময় দিয়েছিলে আমাকে?

আদি শুকনো হাসি দিয়ে বললো,সময়?সারারাত অপেক্ষা করেছি।ভেবেছি আমার সামু আসবে,আমার সাথে কথা বলবে।কিন্তু তুমি আসোনি।আমি সারারাত জেগে ছিলাম।কিন্তু তুমি আসোনি।কেন আসোনি?সেদিন যদি আসতে,,
বলেই আদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

সামু আদির কথা শুনে বিস্মিত হয়।তারপর বলে, আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবা আমাকে যেতে দেয়নি।

–বাবা?লাইক সিরিয়াসলি?বাবা আমাদের গুরুজন কিন্তু আমরা স্বামী স্ত্রী আমাদের পার্সোনাল লাইফে শুধু মাত্র আমাদের অধিকার।স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে অন্য কেউ আসতে পারেনা।তুমি কিভাবে আসতে দিলে।তোমার আমার সাথে কথা বলা উচিত ছিলো।আমার প্রচন্ড অভিমান হয়েছিলো সেদিন।

সামু চুপ করে আছে।
তারপর আবার আদি বললো,সেদিন রাগে অভিমানে আমি এমন একটা ভুল ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি।আর তার জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত পস্তাতে হয়েছে।আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে ঘৃণা করে বাচতে পারবো অনেক চেষ্টা করেছি ঘৃণা করার কিন্তু পারিনি।আমি কিছুদিন পরই ভুল বুঝতে পেরেছি।

–তবে কেন ফিরোনি?ভুল যদি বুঝেই থাকো তবে কেন ফিরনি?জবাব দেও।

–কোন মুখে তোমার সামনে দাড়াতাম।আমার তোমার সামনে দাড়ানোর মুখ ছিলো না।তাছাড়া ভেবেছিলাম সব শেষ হয়ে গেছে।
আমি কাউকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করতে পারিনি তোমার সম্পর্কে।আমার কেন জানি ভয় হতো।তারপর একদিন নিশির কাছে শুনলাম তুমি তোমার লাইফে হ্যাপি আছো।ভেবেছিলাম নতুন করে বিয়ে সংসার করেছো।তাই তোমার জীবনে আর দুঃখ আনতে চাইনি।

–কিন্তু শান্তিতে থাকতে দিলে কই?সেই তো আবার ঝড় হয়ে এলে।

–সামু প্লিজ ফিরে চলো।

সামু আদির কথা শুনে ভিষণ খেপে গেলো।
–তুমি কি আমার কথা এখনো বুঝোনি?তুমি বুঝতে পারছোনা আমি তোমাকে সহ্য করতে পারছিনা।আমি অনলি আদিবার জন্য তোমাকে টুলারেট করছি।আমি চাইনা ও ওর পাপাকে পেয়ে হারাক।ওর চোখে যে খুশির ঝলক দেখেছি তা হারিয়ে যাক।তুমি অনলি আদিবার পাপা।আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই আর না হবে।

–তুমি কি এখন আর আমাকে ভালোবাসো না?

সামান্তা অন্যদিকে ঘুরে বললো,তোমাকে এখনো সেটা বুঝাতে হবে?

–আচ্ছা,তাই?তাহলে ডিভোর্স পেপারে এতবছরেও সাইন করোনি কেন?

–সেটা নিতান্তই আমার ব্যাপার।এর কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।তুমি কালকে পেপার এনে দিও আমি সাইন করে দিবো।তারপর তুমি বিয়ে করো যা খুশি করো আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার।

–সামু তুমি মন থেকে এসব বলছোনা,তোমার অনেক কিছু যায় আসে।এত বছরে তোমার আমার কথা মনে পড়েনি?তুমি যতবার আদিবাকে আদিবা বলে ডেকেছো ততবারই আমাকে মনে করেছো।আদিবাকে আদিবা ডাকার সময় প্রথম আমার নাম নিয়েছো।আমাদের বিয়ে আমাদের সংসার সব এতো সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব।আমি যেমন ভুলতে পারি নি তুমিও পারোনি।অস্বীকার করোনা।

–হ্যা,মনে পড়ে।৯মাসের সংসারে ১৪মাসের বিবাহিত জীবনে তুমি কি করেছো সব মনে পড়ে।তা ভুলি কি করে।

–হ্যা আমি তোমার স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করেছি।সব সময় নজরে রেখেছি।কিন্তু আমি তোমাকে কখনো সন্দেহ করিনি,অবিশ্বাস করিনি।কিন্তু কেন করেছি?
ভুলে গেলে রাজের ঘটনা আর ক্লাবের ঘটনা।কি হতে যাচ্ছিলো।আর তোমার ফ্রেন্ড জানভি ও তো তোমাকে ড্রাগের ট্রাপে ফেলতে চেয়েছিলো।ফিনান্সশিয়াল বেনিফিটের জন্য। এ ঘটনা গুলো আমাকে বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো।খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তাই আমি রিক্স নিতে চাইনি।তোমাকে সবসময় চোখে চোখে রাখতে চেয়েছি।
বিপদ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছি।
হয়তো আমার ওয়েটা অন্যরকম ছিলো।

–বিপদ?বিপদের ভয়ে কি মানুষ ঘরে বসে থাকে।তুমি থাকো?বিপদকে মোকাবিলা করতে হয়।আমি এই ৫বছরে কি কোনো সমস্যায় পড়িনি।সব মোকাবিলা করিনি।তুমি বিপদে পড়োনি?

–আমি তো বলছি ভুল করেছি।এর চেয়ে বেশি আমি কি করতে পারি?বলো কি করতে পারি?না বুঝে করেছি ভুল।তাই বলে কি এই ভুলের ক্ষমা নেই?প্লিজ ফিরে চলো।আদিবা আমার মেয়ে।ও সুন্দর একটা লাইফ ডিজার্ভ করে।ওকে আমি সুন্দর একটা লাইফ দিতে চাই।

–না আমি কোথাও যাবো আর না আদিবা।তুমি ওর বাবা।তুমি ওর সাথে দেখা করতে পারো,সময় কাটাতে পারো বাট ও ওর মায়ের কাছেই থাকবে।ওকে তুমি নিতে পারবে না।

–সামু তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি চাইলেই আদিবাকে আমার কাছে নিয়ে যেতে পারি।সে ক্ষমতা আমার আছে।

সামু আদির কথা শুনে ঘাবড়ে যায়।আসলেই আদি চাইলেই আদিবাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে।সে পাওয়ার ওর আছে।সামু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আদির দিকে চাইলো।
তারপর কিচেনে চলে গেলো।আদি বুঝতে পারলো না সামু এই মুহুর্তে কেন এভাবে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর সামু মাছ,মাংস কাটার ছুড়ি নিয়ে এলো।
আদি কিছুই বুঝতে পারছেনা।
তারপর আদির হাতে ছুড়ি দিয়ে বললো,
–যদি আদিবাকে আমার কাছ থেকে নিতেই হয় আইনী ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই এটা দিয়ে আমাকে খুন করে নিয়ে যাও।

আদি ছুড়িটা ফেলে দিয়ে বললো,
–কি বলছো?আমি আদিবাকে নিতে চাইলে নিয়েই যেতাম।আমি শুধু আদিবাকে নয় তোমাকেও চাই।আমি তো এত বছর জানতাম না আমার কোনো মেয়ে আছে।আমি তো শুধু জেনে এসেছি সামু আছে।আমার সামু।আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি তুমি।তুমি কেন বুঝতে চাইছো না?

সামু চিতকার করে উঠলো।
–আমার বুঝার দরকার নেই কিচ্ছু বুঝতে চাইনা।আমি তোমাকে ঘৃণা করি শুধু ঘৃণা করি।

–সামু প্লিজ চিতকার চেচামেচি করোনা।আমি নিতে পারিনা।আস্তে বলো।আমি শুনছি।

সামু হা হয়ে গেলো।আদি নাকি চিতকার চেচামেচি নিতে পারেনা।সামু আর কিছু না বলে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

আদি পিছনে থেকে বললো,যতই ঘৃণা করো আমি যাচ্ছিনা।বিকজ আই লাভ ইউ।

রাতে আর কারো খাওয়া হলো না।সামু রাগে গজগজ করতে করতে ফ্রেশ হয়ে আদিবার পাশে শুয়ে পরলো। তারপর ধপ করে উঠে বসে,
আশ্চর্যজনক ব্যাপার!আমি তো খেয়ালই করিনি।আদির সাথে এত কথা বলছি।রাগারাগি করছি।চেচামেচি করছি।কিন্তু ও আমার সাথে যখনি কথা বলছে শান্ত গলায় কথা বলছে।একবার ও উঁচু গলায় কথা বলেনি।আর না রাগ দেখিয়েছে ঘটনা কি?ও তো এতটা শান্ত কখনো ছিলো না।ওর তো এতোক্ষনে কয়েক দফা চিতকার করার কথা।ভাংচুর করার কথা।
আমি এসব কেন ভাবছি যা খুশি হোক।
সামু আবার শুয়ে পরলো।

???

শুনলাম তোর শহরে আজকাল হলুদ খামে নীল চিঠির কাড়াকাড়ি?
কি ভাবিস তাই বলে কি হিংসায় আমি জ্বলে মরি?
ভাবিস না যে তোকে বলেই দিবো ভালোবাসি,
কারণ আমার শহরে ভালোবাসায় চরম এলার্জি।

—ঘাসফড়িং

আদি সোফায় শুয়ে আছে কিন্তু ঘুম আসছেনা।ওর খুব ক্ষুধা পেয়েছে।এপাশ ওপাশ করে অনেক কষ্টে ঘুমালো।হটাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো।ক্ষুধায় পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।ঘুম আসছেনা।আদি উঠে পানি খেয়ে নিলো।
তারপর কিচেনে গেলো।কিন্তু কাউকে না জানিয়ে খেতেও বাধছে।কেমন চুরি চুরি মনে হচ্ছে।আবার সামুকে যে ডাকবে সেটাও কেমন বেমানান দেখায়।কিছুক্ষণ আগেই ওদের মধ্যে যেসব কথা হয়েছে তাতে।
আদি এতকিছু না ভেবে ক্ষুধার জ্বালায় সামুর দরজায় নক করলো।কিন্তু সামুর হুশ নেই।অনেক বার নক করার পর সামু বিরক্তি নিয়ে হাই তুলতে তুলতে দরজা খোলে দিলো।কিন্তু চোখ মেলতে পারছেনা।
–কি চাই?
আদি হা করে সামুর দিকে চেয়ে আছে।আদি কোনো উত্তর না দেওয়ায় সামু চোখ ভালো ভাবে খোলে আদিকে দেখছে।আদি ওর দিকে চেয়ে আছে তাই নিজের দিকে তাকালো।ওর চুল এলোমেলো,টিশার্ট দিয়ে পেট বের হয়ে আছে,লেডিস টাওজার হাটুর জায়গায় ঘুচিয়ে থাকার কারণে উঠে আছে।
সামু নিজেকে দেখে চিতকার করে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তারপর জামাকাপড় ঠিক করে ওড়না জড়িয়ে বের হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–কি চাই এই মাঝরাতে?

–সামু আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে।ক্ষুধায় পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে আর কামড়াচ্ছে।ঘুম আসছেনা।(পেটে হাত দিয়ে)

আদিকে এভাবে দেখে সামুর হাসি পেলেও বেশি মায়া লাগলো।নিশ্চয়ই অনেক ক্ষুধা লেগেছে।
–এসো।
সামু আদিকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে খাবার দিলো।খাবার দেখে মনে হচ্ছে আদি হীরার ক্ষনি পেয়েছে।

আদি খেতে নিবে তখনই সামুকে বললো,
–তুমিও তো খাওনি।ঝগড়া করেই শুয়ে পড়েছো।
–আমি ঝগড়া করেছি?
–না,,মানে,,তুমি না আমি করেছি।তুমিও খেয়ে নেও।তোমার বাড়িতে তোমার খাবার খাব আর তুমি না খেয়ে থাকবে?ব্যাপারটা ভালো দেখায়না।
–আমার ক্ষুধা নেই।চুপচাপ খেয়ে উঠো।

আদি আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো।এমনিতেই পেটে ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে।
আদি খুব স্পীডে খাচ্ছে।তা দেখে সামু আপেলে কামড় দিয়ে বললো,
–কতদিন যাবত অভুক্ত?

আদি খাবার থামিয়ে বললো,
–খাবারের খুটা দিচ্ছো?সে দেও।সারাদিনে দু কাপ কফি খেয়েছি মাত্র।তুমি তো কিছু খেতে দিলে না।

কথাটা শুনে সামুর খারাপ লাগলো।যতই রাগ অভিমান থাকুক বর বলে কথা যাকে কোনো একদিন জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলো।সামু তো জানে আদির না খেয়ে থাকার অভ্যাস নেই।

খাওয়া শেষ করে আদি বললো,বাচা গেলো।নয়তো ইদুরেরা আমার পেটের নাড়িভুড়ি খেয়ে নিতো।
সামু ভ্রু কুচকে তাকালো।
সামু একটা রুম দেখিয়ে বললো,
ওখানে গিয়ে ঘুমাও।

সকালে সামু আদিবাকে স্কুলের জন্যে রেডি করছে।অফিস থেকে ২দিনের ছুটি নিয়েছে।কেননা ওর আদিবাকে আদির কাছে ছাড়তে ভয় হয়।মনে হয় ও না থাকলেই আদি মেয়েকে নিয়ে যাবে।
বাইরে বের হতেই দেখে আদি গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে।তা দেখে সামু ভ্রু কুচকে তাকালো।আদি বললো,
চলো আমি তোমাদের সাথে যাবো।
–কোনো প্রয়োজন নেই?তোমাকে যেতে হবেনা।

–আমি গেলে কি সমস্যা?আমি কি আমার মেয়ের স্কুলে যেতে পারিনা?

–আমরা যাচ্ছি।আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আদিবা চুপচাপ।গাল ফুলিয়ে রেখেছে।দুজনেই আদিবার দিকে চেয়ে আছে তারপর একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে।

আদি আদিবার সামনে বসে বললো,
–চড়ুই পাখি কি হয়েছে?

–পাপা মাম্মা আজ আমাকে আদর করে নি।

সামু অবাক হয়ে আদিবার সামনে বসে বললো,আমি কি করেছি সানসাইন?

–তুমি আমাকে রেডি করে প্রতিদিন কপালে চুমু দেও আজকে দেওনি।

–ওলে,,আমার সোনা ভুল হয়ে গেছে।চলো ভুলেএ জন্য দুইটা দিয়ে দিলাম।
সামু মনে মনে বলছে, বাপকা বেটি।আদি যেমন করতো মেয়েও তেমন করে।
আদি মনে সেই স্মৃতি গুলো ভেসে উঠছে।অফিসের জন্য রেডি করে সামু আদির কপালে কিস করতো আর আদি মজা করে বলতো,
প্যাক্টিস করে রাখো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

–পাপা তুমিও দেও,,,
আদি মুচকি হেসে আদিবার কপালে চুমু দিলো।

আদিবা বাবা-মায়ের কাছ থেকে আদর পেয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো।

চলবে..

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৫

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২৫

ফাবিহা নওশীন

??

সামান্তা গার্ডেনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।
বাড়িতে এসে আদিবাকে রুমে রেখেই গার্ডেনে চলে আসে।একটু শান্তিমতো কেদে নিজেকে হালকা করার প্রচেষ্টায়।আদিবা তার মাম্মাকে কাদতে দেখলে নিজেও কান্নাকাটি করবে তাই ওর আড়াল হতেই গার্ডেনে চলে আসে।তারপর জোরে জোরে কাদে।কাদতে কাদতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।এখন শুধু ফুপাচ্ছে।

“আদি কেন,,?কেন আবার আমার সামনে এসে আমাকে দূর্বল করে দিলে?নিজেকে তো মজবুত করে নিয়েছিলাম।তোমার দেওয়া আঘাত নিজের বুকে দাফন করে দিয়ে নতুন করে বাচতে চেয়েছিলাম।তবে আবার কেন এত বছর পর আমার সামনে এলে?এবার কোন ঝড় নিয়ে এলে?আমাকে আবার তছনছ করতে চাইছো?আদিবা…না আদিবা আমার মেয়ে,,আমার কাছ থেকে কেউ ওকে কেড়ে নিতে পারবেনা।তুমিও না।প্লিজ আদি আর এসো না আমার জীবনে?আমার সুখ কেড়ে নিতে।এসোনা।”

“আই নিড হার এট এনি কস্ট।গট ইট?।দুদিনের মধ্যে আমার খোজ চাই।সব ডিটেইলস আমি আগেই দিয়েছি।আর কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন তবে আমার খোজ চাই।”
আদি ফোন রেখে দিলো।ঢাকা ব্যাক করার সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলেছে।সকালেই ঢাকা ব্যাক করবে।

আদি হোটেলের বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।আর নিজেকে নিজেই শান্তনা দিচ্ছে।
“আদি রিলেক্স,তুই যা ভাবছিস তাই হবে।ওই ছেলেটাকে দেখে হাসব্যান্ড ভেবেছিস,,ওর সাথে ছিলো বলেই কি হাসব্যান্ড হবে?এমন ও তো হতে পারে ওর ফ্রেন্ড বা আত্মীয় স্বজন কিংবা কলিগ,প্রতিবেশী অনেক কিছুই হতে পারে।”
আবারো বলছে,
আমি সামুকে বেবির কথা বলেছিলাম।আমরা আলাদা হয়েছি প্রায় পাচ বছর।আর মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে ৪বছর হবে।৪বছরের কম হবেনা।ওর নাম আদিবা।আদি,,,আদিবা।সামু বলেছিলো আমাদের মেয়ে হবে আর মেয়ের নাম আদিবা।আমার নামের সাথে মিলিয়ে নাম আদিবা।বেবিটা যদি আমার না হয় তবে ওর নাম আদিবা কেন রাখবে?অন্য নাম রাখতে পারতো।আর ওখানে যা দেখেছি সেটাও।(বালিতে সামুর লাভ সেপের লিখাটা দেখেছে।অনেকে বলেছে লিখাটা তো থাকার কথা না।ঢেউয়ে মুছে যাওয়ার কথা। তাদের বলছি যেখানে ঢেউ আছড়ে পরেছে সেখানেই যে লিখেছে তা কিন্তু বলিনি।সাগড়ের পাড়ে লিখেছে।তবে কিছুটা দূরে।ওখানে বলেই দিয়েছি আদিবার চেয়ে কিছুটা দূরে।সাগর বা নদীতে ঢেউ যেখানে আছড়ে পড়ে তার চেয়ে বেশ কিছুটা জায়গা বেশি পর্যন্ত ভেজা থাকে।আর কিছু কিছু জায়গায় বালু পানি জমে থেকে সুন্দর প্রলেপের মতো তৈরি হয়।যারা গিয়েছেন দেখেছেন।আর যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছিলো মানুষ জন কম ছিলো তাই কেউ নষ্ট করতে পারেনি।আশা করি উত্তর পেয়ে গেছেন।)হ্যা বেবিটা আমার।আমার বেবি।হ্যা আমার, আমার।”
আদি পাগল হয়ে যাচ্ছে।বিরবির করে এক কথাই বলছে।

সামান্তা শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কিছুতেই ঘুম আসছেনা।অস্থির অস্থির লাগছে।আদির মুখটা ভেসে উঠছে।কেমন শুখিয়ে গেছে।চেহারায় ম্যাচুয়েড ভাব এসেছে।সেই চোখ, নাক,চুল সবকিছু একি আছে।সামান্তার কেমন ভয় হতে লাগলো আদি যদি আদিবার কথা জানতে পারে আদিবাকে নিয়ে যেতে চায় তাহলে?ও আর ভাবতে পারছেনা ওর কলিজার টুকরো আদিবা।সামু আদিবার গালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
মাই সানসাইন।

আদি কক্সবাজার থেকে বাড়ি ফিরেছে।অফিসের কিছু কাজ আছে সেগুলো চুকিয়ে আবার কক্সবাজার যাবে।

রাতের বেলায়-
আদির মা আদির পাশে এসে বসলো।
আদি ল্যাপটপে চোখ রেখে বললো,
–মা কিছু বলবে?

–হ্যা,এভাবে আর কতদিন?সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু কর।অনেকের জীবনেই অনেক দূর্ঘটনা ঘটে তাই বলে জীবন থেমে থাকেনা।আমাদের বয়স হয়েছে।তোর বাবার অবস্থাও দেখছিস।আমাদের ও তো ইচ্ছে হয় তোকে সুখী দেখতে।নাতি নাতনীর মুখ দেখতে।তুই আবার বিয়ে কর।

–সামুর খবর জানো কিছু?

আদির এমন প্রশ্নে আদির মা ঘাবড়ে যায়।থমথমে মুখে বলে,
–নাহ,,সামু আর যোগাযোগ করেনি।সামুর বাবাও তোর বাবার সাথে যোগাযোগ রাখেনি।৫বছর আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।নিশিকে একদিন ফোন করেছিলো সামু।বলেছে ওর জব হয়েছে।ও ওর লাইফে ভালো আছে।তারপর আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তুই ও তোর লাইফে ভালো থাক।বিয়ে কর।

–তোমার বউ লাগবে তো?ঠিক আছে এনে দিবো।

আদির এমন কথায় আদির মা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে।
–সত্যি বলছিস?

–হুম,,তবে আমি আনবো।সময় হলেই আনবো।তোমরা নিজেরা কিছু করোনা।

–ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস।তোর খুশিতেই খুশি।

–আমি আগামীকাল আবার কক্সবাজার যাচ্ছি কাজ আছে।

–আজই তো এলি

–দরকার ছিলো তাই এসেছি।কাজ বাকি আছে কক্সবাজারে।শেষ করেই চলে আসবো।শুধু দোয়া করো যে কাজে যাচ্ছি তাতে যেন সফল হই।যদি কাজটা মন মতো হয় তবে আমার সাথে সাথে তোমরাও হ্যাপি হবে।

আদির মা ছেলের কথা কিছুই বুঝতে পারলো না তবুও বললো,
অবশ্যই সফল হবি।দোয়া করি।

আদি কক্সবাজারে এসেছে সাতদিন হয়ে গেছে কিন্তু সামুর কোনো খোজ কেউ এনে দিতে পারেনি।এদিকে সামান্তাও কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছে যে আদি আর ওদের লাইফে ব্যাক করছেনা।

আদির রাগ হচ্ছে।আগের মতো রাগ নেই তবে আজ রাগ হচ্ছে।এতদিন হয়ে গেলো কেউ খোজ দিতে পারলো না।সামনে থাকা লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–আপনারা কি হ্যা?সাতটা দিন পার হয়ে গেলো আর আপনারা কোনো খোজ দিতে পারলেন না।আপনাদের পিছনে অযথা টাকা খরচ করছি।

হটাৎ ফোন বেজে উঠলো।আদি নিজেকে শান্ত করে স্বাভাবিক হয়ে ফোন রিসিভ করলো।
কয়েক মিনিটের মাথায় আদির মুখে হাসি ফুটে।
ফোন রেখে বললো, আই গট ইউ।

সামু অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে চুলগুলো উচু করে বেধে কফি নিয়ে বসেছে খেতে।আদিবা ঘুমিয়ে আছে।তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।খালা ব্যস্ত তাই সামু উঠে দরজা খোলল।দরজা খোলে ওর চোখ চড়কগাছ।শরীর কাপছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।যেন বোবা হয়ে গেছে।
দরজায় আদি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
সামু অনেক কষ্ট করে ঢুক গিলে বললো,
–তুমি এখানে?

–কি আশ্চর্য ভিতরে ঢুকতে দিবে না?এক্স হাসব্যান্ড বলে কি ভদ্রতা করবে না?
উত্তরের অপেক্ষা না করেই ভিতরে ঢুকে গেলো।

সামান্তা কিছুই বুঝতে পারছেনা।ভয়ে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।এভাবে হুট করে এখানে আসার কারণ কি সেটাও বুঝতে পারছেনা।আর ঠিকানা কোথায় পেলো।সব গুলিয়ে যাচ্ছে।

আদি পুরো ড্রয়িং রুমে চোখ বুলিয়ে সোফায় আরাম করে বসতে বসতে বললো,
নাইচ হোম।

সামান্তা হাতে হাত ঘষতে ঘষতে মিনমিন করে বললো,
এখানে কেন এসেছো?
আদি সামান্তার কথার উত্তর না দিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।সামান্তার চোখে চোখ পড়তেই অস্বস্তিতে সামান্তা চোখ সরিয়ে নেয়।আদি সামুকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে।
পড়নে কালো প্লাজো নেবি ব্লু কালার ঢিলাঢালা হাটু অবধি জামা।গলায় ওড়না জড়ানো।চুলগুলো উচু করে হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে বাধা।গলায় একটা চিকুন চেইন।হাত,কান খালি।আগের চেয়ে কিছুটা মোটা হয়েছে।
আদির এভাবে চুপ করে বসে থাকা মেনে নিতে না পেরে কিছুটা জোরেই বললো,
–কি চাই এখানে?

আদি হালকা হেসে বললো,
–দেখতে এলাম।কেমন সংসার পেতেছো?কোথায় আছো কেমন আছো?

–দেখা হয়ে গেছে এবার যাও।

সামু বারবার বেডরুমের দরজার দিকে তাকাচ্ছে।আদিবার ঘুম থেকে উঠার সময় হয়ে গেছে।ঘুম থেকে উঠেই সামুর খোজ করবে।তখন ড্রয়িং রুমে আসবে,,আর তখন ওকে আদি দেখবে।তাই সামু চাইছে আদি তার আগেই চলে যাক।

–কি অদ্ভুৎ তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন?আমি কি শুধু তোমাকে দেখতে এসেছি?তোমার হাসব্যান্ডের সাথে পরিচয় করাবে না?আরে ভয় পেওনা আমি কিছু জানাবো না।ফ্রেন্ড পরিচয় দেবো।আর তোমার মেয়ে কই?তাকে দেখছি না।তোমার মেয়ে মাশাল্লাহ।

–ও ঘুমাচ্ছে।বাড়িতে আমি একা আছি সো চলে যাও।

–মাম্মা!!
আদিবার ঘুম থেকে উঠে সামুকে ডাকছে।ডাকতে ডাকতে রুমের বাইরের দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে।আদি-সামু দুজনের দৃষ্টি সেদিকে।সামু বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে নিলো।

আদি বসা থেকে উঠে বললো,এইতো উঠে গেছে।

আদিবা আদির দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।ওদের বাড়িতে কে এসেছে বুঝতে পারছেনা।আদি আদিবার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাটু গেড়ে বললো,
–কিউটি ভালো আছো?
–হ্যা,,
–স্কুলে পড়ো?
–হ্যা।
–গুড।আচ্ছা একটা কথা বলো তো,,
সামান্তা বুঝতে পারছেনা আদি কি করতে চাইছে।
আদিবা খুশি মনে বললো,কি?
–তোমার বাবার নাম কি?
সামু বাধা দেওয়ার আগেই আদিবা ফট করে বলে দিলো,
–পাপার নাম আদিল চৌধুরী।(হাত নাড়িয়ে)

আদি স্তব্ধ হয়ে গেল।পুরো রুম জোরে নীরবতা বিরাজ করছে।
আদি আদিবার গালে হাত ছোয়ালো।টপ করে ওর ডান চোখ থেকে পানি পড়লো।সামু কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।মেয়ে সব শেষ করে দিয়েছে।
–আংকেল তুমি কাদছো কেন?
আদি চোখ মুছে বললো,আমি কাদছি না।এমনিতেই পানি এসে পড়েছে।
সামু আদির চোখে এই প্রথম পানি দেখলো।আদির সাথে চোখ মিলানোর সাহস হচ্ছেনা।মাথা নিচু করে রাখলো।

–বেবি তুমি এখানে থাকো।তোমার মাম্মার সাথে আমার একটু কথা আছে।কেমন?
আদিবা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।আদি সামান্তার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।

গার্ডেনে নিয়ে হাত ছেড়ে দেয়।সামান্তা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।আদি নিজের কোমড়ে দুহাত দিয়ে সামুর দিকে চেয়ে আছে।দুজনের মধ্যে নীরবতা।সব নীরবতা ভেঙে আদি শান্ত কন্ঠে বললো,

–কেন আদিবাকে আমার কাছ থেকে আড়াল করতে চাইছো?

সামু মুখ কঠিন করে বললো,কেন চাইবো না?কে তুমি?

আদি বিস্ময় নিয়ে বললো,তুমি ভালো করেই জানো কে আমি?

–ওহ,,আচ্ছা,,তুমি ওর বাবা।তাই তো?কিসের বাবা হাহ,,কিসের?যে বাবা ওর মাকে তুচ্ছ একটা কারণে ডিভোর্স দিয়ে চোরের মতো পালিয়ে গিয়েছে সে বাবা?এতগুলো বছর যেখানে আমি ওকে একা কষ্ট করে মানুষ করেছি কই ছিলে তুমি?

–তুমি প্রেগন্যান্ট ছিলে সেটা কি আমি জানতাম?

–কেন জানবে না?তুমি সেদিন বেবি চাওনি?বলোনি তোমার বেবি লাগবে?আমরা ডক্তরের সাথে মিট করিনি?
কোনো উত্তর নেই তোমার কাছে?

–সামু মানছি আমার ভুল হয়েছে কিন্তু তুমি সেদিন বিচে আমাকে জানালে না কেন?

–আদিবা আমার মেয়ে।আমি ওকে জন্ম দিয়েছি।ও শুধু আমার কাছেই থাকবে।তোমার মতো মানুষের কাছে আমি ওকে দেবোনা।

–আমি ওর বাবা।

সামান্তা হাসছে।
–লাইক সিরিয়াসলি,একটা মেয়ে যখন প্রেগন্যান্ট থাকে তখন তার সবচেয়ে বেশি কাকে প্রয়োজন পড়ে?প্রেগন্যান্সির প্রথম খবর আহ্লাদী কন্ঠে স্বামীকে জানায়,প্রেগন্যান্সির সময় হাসব্যান্ডরা বেবি,বেবির মায়ের জন্য কত কি করে।অন্যদের দেখেছি আর কেদেছি।বেবি যখন প্রথম নড়াচড়া করে উচ্ছ্বসিত হয়ে তখন হাসব্যান্ডকে জানায়।যখন লেবার পেইন উঠে হসপিটালে ওটিতে নেওয়ার সময় একটা মেয়ে তার হাসব্যান্ডকে খোজে।আমার হাত ধরে কেউ বলে নি সামু ভয় পেওনা তোমার কিছু হবেনা।আমি আছি।বেবি আর তুমি ভালো থাকবে।
সামান্তা চোখের পানি মুছে বললো,আমি ওর খেয়াল রেখেছি,,লালন পালন করেছি।নিজের খেয়াল রেখেছি।পড়াশোনা করেছি।সব একা করেছি।
আর তখন তুমি নিশ্চয়ই তোমাতে মজে ছিলে,ফূর্তি করে বেরিয়েছো।

–মানছি আমার ভুল ছিলো কিন্তু আমার তো জানার অধিকার আছে।

–হ্যা,তুমি তো যাওয়ার আগে আমাকে বলে গিয়েছিলে,,কোথায় গিয়েছিলে বলে গিয়েছিলে।বাড়িতেও দুই বছর যোগাযোগ করোনি।

–হ্যা,আমি নিখোঁজ ছিলাম বাট আমার বাড়ির কাউকে জানাওনি,,তাদেরকে জানাতে পারতে।তারা তো তোমার কোনো খবর ই জানেনা।তারা জানলেও আজকে গল্প টা অন্য রকম হতো।

সামান্তা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
–হ্যা,অন্যরকমই তো হতো।আমাকে ও বাড়িতে নিয়ে যেতো বেবির নিউস শুনে।এক্স পুত্রবধূ হিসেবে।তারপর তোমার কানে যখন বেবির নিউজ যেতো তখন তুমি পিতা হিসেবে উদয় হতো।তারপর তোমার মনের বাকি ক্ষোভ মেটাতে আমাকে পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্য আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে।আমাকে ছুড়ে ফেলে দিতে।আমার কোনো অধিকার থাকতো না কেননা ডিভোর্স,,,

–সামু,,আমাকে তোমার এতটা খারাপ মনে হয়?

–কেন,,তুমি আমাকে ডিভোর্স কেন দিয়েছিলে?আমাকে ধ্বংস করতে নয়?তোমাকে তো বলেছিলাম আমাকে তুমি ছেড়ে দিলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো।তুমি তো সেই পয়েন্ট ব্যবহার করেছো।আর যখন দেখতে আমি মেয়েকে নিয়ে কিছুটা ভালো আছি।তখন মেয়েকে কেড়ে নিয়ে আমাকে পুরোপুরো শেষ করে দিতে।তুমি আমার সাথে যা করেছো তাতে তোমাকে এতটা ভালো মনে হওয়ার ও তো কোনো কারণ নেই।

আদি বাকা হেসে বললো,
–ঠিক বলেছো আমাকে এতটা ভালো মনে হওয়ার ও কিছু নেই।যাইহোক যেটা বলতে চাই।মাকে কথা দিয়েছি তাকে বউ এনে দেবো।পাচবছর তো একা আছি।আর কত দিন একা থাকবো।বিয়ে তো করতে হবে।তবে তার আগে ডিভোর্সের বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি।আমি তোমাকে ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিয়ে গিয়েছি কিন্তু অফিসিয়ালি কিছুই হয়নি।আমি পেপারটাও পাইনি।আমি ডিভোর্স কনফার্ম করেই বিয়েতে বসতে চাই।দেখা গেলো বিয়ে করলাম তারপর তুমি এসে নাটক শুরু করলে ডিভোর্স নিয়ে তখন তো আরেক মছিবতে পড়তে হবে।তাই সব ঝামেলা চুকাতে চাই।

আদির কথা শুনে সামান্তার চোখে পানি চলে এলো।আদি আর বিয়ে করে নি।এখন বিয়ে করবে।আর ওকে এসব কথা শুনাচ্ছে।
–আমি তোমার লাইফে হস্তক্ষেপ করবো?ডিভোর্স নিয়ে নাটক করবো?এতটা ছোট লোক আমি নই।আমি তোমার লাইফে কখনও ইন্টারফেয়ার করবোনা নিশ্চিন্তে থাক।

–তুমি আমাকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে দেও তবেই আমি নিশ্চিন্ত হবো।তারপর তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো।

–এটা এখন আমার কাছে নেই।

–মিথ্যা বলোনা।তোমার কাছেই আছে।ঠিক আছে যতদিন তুমি আমাকে পেপার দিচ্ছোনা ততদিন আমি তোমাদের লাইফ থেকে যাবোনা।আর আদিবাকে,,,

সামু ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
–আদিবাকে কি?
আদি রহস্যময় হাসি দিলো।
সামু ভয়ার্ত স্বরে বলে,আদিবা আমার কাছেই থাকবে।আমি পেপার দিলে তুমি ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে না,,

–ওকে ডান।

সামু বাড়ির দিকে হাটা দিলো আদিও বিজয়ের হাসি হেসে ওকে ফলো করছে।সামান্তার কাছে আপাতত আদিবার চেয়ে মূল্যবান কিছুই নেই।মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই।
সামু আলমারি থেকে পেপার বের করে টেবিল থেকে পেন নিতে যায় সাইন করার জন্য তখনই আদি ছু মেরে পেপার নিয়ে নেয়।
তারপর পেপার উল্টেপাল্টে দেখে বলে,
আমি জানতাম তুমি সাইন করোনি।আমার মন এটাই বলছিলো।

সামু আমতা আমতা করে বলল,করা হয়নি দেও করে দিচ্ছি।

আদি মুচকি হেসে সামুর দিকে চেয়ে পেপার দু’হাত দিয়ে মাঝ বরাবর টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে।তারপর কয়েক টুকরো করে মেঝেতে ছেড়ে দেয়।

সামান্তা আদির কাজে অবাক হয়ে যায়।বিচলিত হয়ে বললো,
–এটা কি করলে তুমি?

আদি হাই তুলতে তুলতে বললো,আমার ডিভোর্স চাইনা।

সামু কিছু বলতে যাবে তখনই আদিবার প্রবেশ।আদিকে দেখে বলে,
–আংকেল তুমি কি আজকে এখানে থাকবে?

আদি ওকে কোলে নিয়ে বলে,যদি থাকি তুমি কি রাগ করবে?
–নাহ,,তুমি থাকো।তুমি থাকলে ভালো হবে তাইনা মাম্মা?

সামু কি বলবে বুঝতে পারছেনা। আদি সেটা দেখে বলে,
–আমি তোমার সাথে থাকবো।আচ্ছা আদিবা তোমার পাপা কই?
–মাম্মা বলেছে প্লেনে করে আকাশ দিয়ে বিদেশে থাকে।আমি বড় হলেই চলে আসবে।
–তোমার পাপাকে মনে পড়ে না?
–হ্যা,,প্লেনকে বলেছি ও যেন পাপাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে।
–তাই?দেখতে ইচ্ছে করে না?
–আমি ছবিতে দেখেছি।মাম্মা দেখিয়েছে।আমার পাপা অনেক সুন্দর একদম তোমার মতো।হিহি।

আদির চোখে পানি ছলছল করছে।সামু আর পারছেনা।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।আদিবাকে কি বলবে এটাই ওর পাপা,,মেয়েকে আর কতদিন পাপার কাছ থেকে দূরে রাখবে।সামু ঠিক করলো বলে দিবে আদিবাকে।

তার আগেই আদি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে বলে দিলো,
–আমিই তোমার পাপা,,
আদিবা অবাক হয়ে আদির মুখের দিকে চেয়ে আছে।তারপর সামুর দিকে চাইলো।আদিও অসহায়ের মতো সামুর দিকে চাইলো।আদি বুঝতে পারলো সামু না বললে আদিবা ওকে বিশ্বাস করবেনা।

সামু বড়সড় শ্বাস নেয় মাথা নাড়ে তারপর বলে,
হ্যা আদিবা,,এটা তোমার পাপা।

আদিবা আদির দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে, তোমার নাম কি আদিল চৌধুরী?
আদি মাথা নেড়ে হেসে বলে,হুম।

আদিবার খুশি কে দেখে।ও পাপাকে পেয়ে অনেক খুশি।
–কি মজা আমার পাপা এসে পড়েছে।তুমি আর যাবে না তো?
–না,,
আদি আদিবাকে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়।
সামু চোখ মুছে বাবা মেয়েকে একা ছেড়ে দিলো।

রাত হয়েছে সামু রাতের রান্নার ব্যবস্থা করে ডাইনিং টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।আদিবা সোফায় বসে কার্টুন দেখছে।তখনই আদি দুকাপ কফি নিয়ে সামুর সামনে একটা রেখে নিজে আরেকটা নিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল।সামু একবার আড়চোখে দেখে নিজের কাজে মন দিলো।
তা দেখে আদি বললো,কফি নিজে বানিয়েছি।ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
নিজে বানিয়েছি শুনে সামু বিষম খেলো।এ ছেলে বলে কি।
সামু কফির দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
বাব্বা আদিল চৌধুরী কফি বানাতে পারে?

–শুধু কফি না আমি ইতালিয়ান,চাইনিজ, থাই,জাপানিজ খাবার ও বানাতে পারি।

সামান্তা টেবিলে ভর করে গালে হাত দিয়ে বসে ছিলো।ওর কথা শুনে হাত সরে পড়ে যেতে নেয়।

–আরে পড়ে গিয়ে থুতনি ভাংতে চাও।কফি খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?নাকি ভাবছো কিছু মিশিয়ে দিয়েছি।ওয়েট,
আদি চেঞ্জ করে নিজেরটা সামুকে দিয়ে কফিতে চুমুক দিলো।

সামুর অসহ্য লাগছে।শুধু মাত্র আদিবার জন্য কিছু বলছেনা।আদিবা ঘুমালেই ওকে দেখে নিবে।ভদ্রতা বজায় রাখতে কফিতে চুমুক দিয়ে হা।
এত ভালো কফি ও কোনো দিন খেয়েছে কিনা মনে পড়ছেনা।এত ভালো কফি কোথায় বানানো শিখেছে।সামু আড়চোখে আদিকে দেখে ওর দিকে চেয়ে আছে জানার জন্য কফি কেমন হয়েছে।

সামু আদিকে উদ্দেশ্য করে বললো, জঘন্য হয়েছে!
বলেই ল্যাপটপ নিয়ে উঠে চলে গেলো।

আদি মুচকি হেসে বললো, তোমার অভিমান ভেংগে তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসার ফুল ফুটাবো।জানি সহজ হবেনা।তবে চেষ্টা করে যাবো যতদিন পর্যন্ত না মেনে নিচ্ছো।

চলবে….?

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৪

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২৪

ফাবিহা নওশীন

??
৫বছর পর আদি নিজের বাড়িতে পা রেখেছে।দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে।ভিতরে ঢুকতে পারছেনা।পা কেমন কাপছে।

আদিকে পুরনো এক সার্ভেন্ট দেখে চিতকার করে উঠলো,
–ছোট সাহেব এসেছে,,ছোট সাহেব এসেছে।

চিতকার শুনে আদির মা আর নিশি বের হয়ে আসে।নিশি বাবার পাশে বসে ছিলো।
আদিকে দেখে সবাই অবাক।আদি যে আসবে সেটা কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও কল্পনা করেনি।নিশি বুঝে নি ওর কথাগুলো শুনে রিয়েক্ট করে এভাবে চলে আসবে।
আদির মা ছেলেকে এত বছর পর দেখে কেদে ফেলেন।দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরেন।আদিকে ধরে কাদতেই থাকেন।

–তুই এতো পাষাণ কেন?একবারো কি আমাদের কথা মনে পড়েনি?তোর বাবা-মা এই বাড়িতে একা কেমন আছে জানতে ইচ্ছে করে নি।তোর বাবা,,,

নিশি ছলছল চোখে পিছনে গিয়ে দাড়ালো।

আহনাফ চৌধুরী বিছানায় শুয়ে আছে।আদি পাশে গিয়ে বসে হাত ধরলো।আদির বাবা পিটপিট করে চোখ মেলে আদিকে দেখে।আদিকে দেখে ছলছল চোখে আদির দিকে তাকায়।
–বাবা!!

আহনাফ চৌধুরী অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলো।বড্ড অভিমান জমেছে ছেলের প্রতি।
–বাবা,মুখ ফিরিয়ে থাকবে?আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না?অনেক শাস্তি তো পেয়েছি।যদি চাও আরো শাস্তি দিতে পারো,,তবুও ক্ষমা করো।আমি আর নিতে পারছিনা।বাবা দয়া করো।

আদির বাবা আর মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারলো না।আদির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।একে অপরের প্রতি জমা হাজার অভিমান অশ্রু হয়ে ঝড়লো।

নিশি ওর ছেলের কান্না থামাতে পারছেনা।নিশি কোলে নিয়ে নানান কথায় কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।আদি এগিয়ে এলো।
–কি হয়েছে মামা কাদছো কেন?

নিহাদ আদির দিকে চেয়ে কান্না থামালো।নতুন মানুষের উৎপত্তি।তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।তা দেখে আদি হেসে বললো,
–নিহাদ,,আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি,,?আমার কোলে
এসো,,(হাত বাড়িয়ে)
নিহাদ আদির কোলে এলো।আদি ওকে কোলে নিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বলছে,
–আমার লক্ষী মামা,তোমার জন্য কি এনেছি জানো,,,অনেক খেলনা এনেছি,জামা এনেছি,,তুমি খেলবা,,,
পেটে কাতুকুতু দিলো।দুজনেই খিলখিল করে হাসছে।

আদির মা আদিকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।সব ঠিক থাকলে ওর ও ফ্যামিলি পূর্ণ থাকতো।

–আদি তুই আগে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।ওর সাথে পড়ে খেলিস,,ওরা কিছুদিন আছে এখানে।

আদি নিশির কাছে নিহাদকে দিয়ে উপরের দিকে যেতে নিলেই আদি মা বললো,
–তোর রুম অগোছালো।তুই কিছুদিন অন্য রুমে থাক।তারপর ঠিকঠাক করে নিজের রুমে আসিস।চল তোকে অন্য রুম দেখাই।(রুমের সবকিছু আগের মতোই আছে।সামুর জিনিসপত্র দেখে যদি মন খারাপ হয়না)

–সমস্যা নেই মা।আমি ম্যানেজ করে নিবো।(আমি জানি কি জন্য এসব বলছো)

আদি নিজের রুমের দরজার লক ধরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো।জোরে শ্বাস ফেলে দরজা খোলে দরজার সামনে দাড়িয়ে পুরো ঘরে চোখ বুলালো।সবকিছুই আগের মতোই আছে।সামু নিজের হাতে পুরো ঘরের ডেকোরেশন করেছিলো।সবকিছুতেই সামুর ছোয়া আছে।চোখ গেলো বিছানার পাশের ওর আর সামুর বড় করে বাধানো বিয়ের ছবিটার দিকে।ধীর পায়ে সেখানে গিয়ে সামুর মুখের উপর হাত বুলালো।

তুমি এখন যারই হওনা কেন,,এখানে যে আছে সে শুধু আমার আর সারাজীবন থাকবে।

আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খোলে।সেখানে ভাজে ভাজে সামুর জামাকাপড় রাখা।সব সেভাবেই আছে।সাজানো গুছানো।এত বছরে কেউ হয়তো ছুয়েও দেখেনি।আদি আলমারি বন্ধ করে ফ্রেশ হতে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে পেচিয়ে আয়নার সামনে দাড়াতেই একটা বক্স দেখলো।সেই বক্স যেটায় করে নাক ফুল,চেইন,চুরি,আংটি এনেছিলো।আদি বক্সটা খোলে সবকিছু ভিতরেই পেলো।

তুমি সব রেখে গেছো সামু,,তুমি যে খালি হাতে এবাড়ি থেকে বেরিয়েছো বুঝতে বাকি নে।যেখানে আমি তোমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছি সেখানে এসব দিয়ে কি করবে,,ঠিকই তো।
আদি বক্সটা আলমারিতে যত্ন করে রেখে দিলো।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
আদি নিচে গিয়ে খাবার সেরে উপরে চলে এলো।বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে।কিছুই ভালো লাগছে না।
উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।সেখানেও সব একি আছে।সেই বেড,,সামুর দোলনা ওর রকিং চেয়ার,শুধু কিছুটা পুরনো হয়ে গেছে।কেউ যে ব্যবহার করে নি দেখেই বুঝা যাচ্ছে।ফুলের টপ গুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।ওদের সেই ছোট্ট বাগান।
আদি গিয়ে দোলনায় গিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

“আমার এ আপসোস আজীবনের।যতদিন বেচে থাকবো ততদিনের।কেন আমি তোমাকে ডিভোর্স লেটার দিয়ে গিয়েছিলাম,,।কেন তোমাকে বেধে রাখতে পারলাম না।চলে গেলে আমাকে ছেড়ে, তোমার আদিকে ছেড়ে।তোমার কথা মনে হলে বুকের ভিতরটা জ্বলে যায় সামু।তুমি কোথায় আছো?”
আদির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।শার্টের হাতা দিয়ে মুছে নিলো।

????

“ইট পাথরের এ শহরে

গাড়ি বাড়ির এ বহরে

খুজছে এ মন ভীষণ করে

দ্বীপান্বিতা….”?

????

“তুই আর যাবি না তো?”আদির মায়ের প্রশ্ন।

আদি মুখে খাবার তুলে বললো,
–না মা,,আমি এখানেই থাকবো।

আদির কথা শুনে খুশিতে তার চোখ চকচক করছে।
–সত্যি বলছিস?
–হুম,,আমি ছাড়া তোমাদের আর কে আছে?আর স্বার্থপর হতে পারবোনা।তোমাদের সাথেই থাকবো।বিজনেস দেখাশোনা করবো।আবার সব দায়িত্ব নিবো।

আদির মা কিছু বলার জন্য আকুবাকু করছে।তা দেখে আদি বললো,
–কিছু বলবে?

–হ্যা,মানে,,তুই আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারিস না?

–নতুন করেই তো শুরু করেছি।এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করোনা।

আদির মা আর কিছু বলতে পারলোনা।ছেলে যদি আবার রাগ করে চলে যায়।সেটা আর এ বয়সে মেনে নেওয়া সম্ভব না।পরে আস্তেধীরে বুঝিয়ে বলা যাবে।যদি আবার বিয়ে করে নতুন করে সব শুরু করে।
–আচ্ছা,তুই যেমন চাস।

আদির বুঝতে বাকি নেই আদির মা কি বলবেন।কিন্তু বিয়ে যে আর ওর দ্বারা সম্ভব নয়।সামান্তার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারবেনা।অসম্ভব।

আদি বাইরে থেকে ফিরে রুমে যেতেই ধাক্কা খেলো।সার্ভেন্টরা মিলে ওর আর সামুর বিয়ের ছবিটা খুলছে।
–স্টপ ইট।(কিছুটা চিতকার করে)
সার্ভেন্টারা ভয় পেয়ে থমকে গেলো।আদি চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বলল,
–এটা কেন খুলছেন আপনারা?

–ম্যাডাম বলেছেন।

–তার দরকার নেই।আপনারা যান।আমি মা কে বলে দিবো।

ওরা চলে গেলো।আদি ছবিটার পাশে গিয়ে ছবিটা ঠিক করে রেখে বললো,,
তুমি এখানেই থাকবে।তোমাকে রাখতে পারিনি বলে কি তোমার ছবি,তোমার স্মৃতি রাখতে পারবোনা।

“মা,,আমার ঘরে সব যেমন আছে তেমনই থাকবে।কোনো কিছু সরানো কিংবা এড করার প্রয়োজন নেই।প্লিজ।”

–কিন্তু,,,

–প্লিজ,,মা।

–আচ্ছা,,।

–আর হ্যা,আমি কয়েকদিনের জন্য কক্সবাজার যাচ্ছি অফিসের কাজে।আগামীকাল ই যাচ্ছি।

–ঠিক আছে।আমি তোর সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছি।

আদি মৃদু হেসে বললো,
–তার আর প্রয়োজন নেই মা,,তোমার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে।সে এখন নিজের কাজ নিজেই করতে পারে।আমিই প্যাকিং করে নেবো।তুমি শুধু বাবা আর নিজের খেয়াল রেখো।

–আচ্ছা,,(ছেলেটা আমার সত্যিই বড় হয়ে গেছে,বদলে গেছে।)

আদি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।অফিসের কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ততায় সময় কাটিয়েছিলো।হোটেলে এখন ল্যাপটপে বসে কাজ করছে।কিছু কাজ আছে শেষ করে বিকেলের দিকে সমুদ্রের ধারে যাবে।সূর্যাস্ত দেখবে।সামুর ইচ্ছে ছিলো আদির সাথে সূর্যাস্ত দেখবে।আদি কথাও দিয়েছিলো নিয়ে যাবে কিন্তু কাজের জন্য আর সময় হয়নি।

.
.
.
.

সামুর ফোন বেজেই চলেছে।সামু রান্না করছে।আজ শুক্রবার।অফিস নেই।মন ভালো লাগছে না কেমন অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে।তাই আদিবার জন্য নিজ হাতে রান্না করছে।দৌড়ে গিয়ে ফোন তুলে,
–হ্যা ভাইয়া বলো।

–সামু আদিবাকে নিয়ে রেডি থাকিস।বিকেলে ঘুরতে বের হবো।সাথে তোর ভাবিও আছে।

–তোমরা যাও না,,তোমাদের মধ্যে কাবাবের হাড্ডি হতে কেন যাবো?

–এই চুপ কর তো।তোর ভাবিই বলেছে।

–ভাইয়া,ভালো লাগছে না আজ।মন ভালো নেই।অন্য সময়।

–বাইরে চল ভালো লাগবে।

–প্লিজ ভাইয়া।

–আচ্ছা,ঠিক আছে।আদিবাকে দে,,

সামু আদিবাকে ফোন দিলো।
–হ্যালো মামা,,

–হ্যা মামা শোন,আমরা আজকে সমুদ্রের ধারে ঘুরতে যাবো।তোমাকে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার আম্মু যাবেনা বলছে।আমরা ওখানে অনেক মজা করবো।ঝিনুক কুড়াবো কিন্তু তোমার মাম্মা তো রাজিই হচ্ছেনা।

আদুবা ফোন কান থেকে সরিয়ে কান্না শুরু করে দিলো, মাম্মা যাবো,,
সামু মেয়ের কান্না দেখে বললো
–আচ্ছা,যাবো।দেও ফোন দেও।

–ভাইয়া এটা কি হলো,,

–তোর দূর্বল জায়গায় খুচা দিলাম নয়তো যেতে না।বিকেলে রেডি থাকিস।

–হুহ,,আচ্ছা।

সমুদ্রের পাড়ে শো শো বাতাস বইছে।কিছুটা রোদ আছে।সামু পার্পেল কালার ফোরপিচ পড়েছে।সিল্কি চুলগুলো উচু করে ঝুটি করেছে।হালকা সাজ,চোখে সানগ্লাস।আদিবাকেও পার্পেল কালার ফ্রক পড়িয়েছে।চুলগুলো ঝুটি করা।সামনে ফুলের ব্যান্ড লাগানো।শখ করে ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে দিয়েছে সামু।
সামুর চুলগুলো উড়ছে।ঝুটি করেও শান্তি নেই।সামুর বড় মামার ছেলে,সাদ ভাইয়া,,আর তার বউ একসাথে বসে গল্প করছে।আদিবা আর সামু সমুদ্রের পাড়ে হাটছে।আদিবা খুব খুশি মনে কি যেন কুড়াচ্ছে।আর নরম বালিতে আকা আকি করছে।সামু দাঁড়িয়ে মেয়ের কান্ড দেখছে।
ওর ও ইচ্ছে হলো কিছু লিখতে।ছোট বেলায় ভেজা মাটিতে,বালিতে কত কিছু লিখতো।আকা আকি করতো।

সামান্তা আদিবার কিছুটা দূরে গিয়ে লাভ সেপের মধ্যে লিখলো।
সামান্তা
+
আদিল
. +
আদিবা

সামান্তা পানিতে হাত ধুয়ে আদিবাকে দেখতেই দেখে ও আকা আকি রেখে এক দৃষ্টিতে কিছু দেখছে।সেদিকে তাকাতেই দেখে দুজন বাচ্চা ছেলে তার বাবার সাথে খেলছে।বাবা দৌড়াচ্ছে বাচ্চারা তাকে ধরার চেষ্টা করছে।

আদিবার অবস্থা বুঝতে পেরে ওর কাছে গিয়ে বললো,
–আমার সানসাইনের খেলতে ইচ্ছে করছে।চলো আমরা দুজন খেলি।

আদিবা খুশি হয়ে সামুর দিকে তাকালো।তারপর বললো,
–তুমি আমার সাথে খেলবে মাম্মা?

–হুম,অবশ্যই তুমি জানো তোমার মতো ছোট থাকতে আমি কি পরিমাণ দৌড়াদৌড়ি করেছি।তুমি আমাকে কখনোই ধরতে পারবে না।

–আমি পারবো,,আমি অনেক স্টং।তোমাকে আমি ধরে ফেলবো।

–ঠিক আছে লেটস সি,,বেবি।

সামু বলেই দৌড়।সামু কিছুটা জোরেই দোড়াচ্ছে যাতে আদিবা ওকে ধরতে না পারে।যাতে আরো বেশি চেষ্টা করে।
সামু পিছনের দিকে চেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে কারো সাথে ধাক্কা খায়।
সামনে ঘুরে মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে অপরাধীর ভংগীতে বলতে লাগলো,,
–সরি আসলে আ,,,,,
আর বলতে পারলোনা।

বাকি কথাটা গলায় এসে আটকে যায়।পুরো পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে যায়।ওর সামনে আদি দাড়িয়ে।আদি একদৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।নিজেরা যেন নিজেদের ভুলে,পুরো পৃথিবীকে ভুলে একে অপরকে দেখায় ব্যস্ত।
দুজনের ভিতরেই তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।সবকিছু যেন উলটপালট হয়ে যাচ্ছে।পুরো পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।নিশ্বাস যেন ভারী হয়ে আসছে।দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে।বুকের ভিতর খুব দ্রুত হার্টবিট হচ্ছে।এতো দ্রুত হচ্ছে যেন মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী হার্টবিটের ধুকধুকানি শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
সামুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে বারবার।চোখের কোনে পানি জমেছে।পলক পড়লেই যেন পানি ঝড়ে পড়বে।তবুও যেন শান্তি পাচ্ছেনা।কিছু বলতেও পারছেনা।ওর মধ্যে প্রিয়কে এত বছর পর দেখার যেমন তৃপ্তি আছে তেমনি ভয়টাও বেড়ে যাচ্ছে।
আদির সামুকে এতবছর পর দেখে অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কি বলবে খোজে পাচ্ছেনা।আর বলার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছে।হাজার চেষ্টা করে ঠোঁট ও নড়াতে পারছেনা।
সামু বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।ওর এই মুহুর্তে কি করা উচিত কি বলা উচিত বুঝতে পারছেনা।কিছু কি বলা উচিত, না চলে যাওয়া উচিত,, না ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য যে অভিমান,রাগ সৃষ্টি হয়েছে তা ঝাড়া উচিত না জানতে চাওয়া উচিত কেন এমন করলো,,
নাহ,,এসবের কোনো মানেই হয়না এখন।না এখন আর সেই রাগ অভিমানের কোনো মূল্য আছে।
আদি নিজেকে সামলে কিছু বলতে যাবে তখনই আদিবা এসে সামুর হাত ধরে টেনে বললো,
–ধরে ফেলেছি!!
আদিবার টানে সামুর ঘোর ভাংলো।আদিবার দিকে তাকালো ঠিকই কিন্তু কি বললো তা কান অব্ধি পৌছে নি।
আদি একবার সামুর দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আদিবার দিকে।সামু আদিবাকে একবার দেখে আড়চোখে আদিকে দেখে নিলো।
আদি আদিবার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামুকে শুখনো মুখে বললো,
–তুমি এখানে,,

সামান্তা ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,
–এই শহরেই আমার সংসার।

–মাম্মা তুমি কি আর খেলবে না?
আদিবা সামুর হাত ধরে বললো।

আদি মাম্মা ডাক শুনে চমকে আদিবার দিকে তাকালো তারপর সামুর দিকে চেয়ে বললো,
–তোমার মেয়ে?

সামু মাথা নিচু করে মাথা উপর নিচ ঝাকিয়ে সায় দিলো।এমন কিছুই হওয়ার ছিলো তবুও আদির ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।তবুও নিজেকে সামলে আদিবার সামনে হাটু গেরে বললো,
–বাবু তোমার নাম কি?

আদিবা মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বললো,
–আদিবা,,(টেনে টেনে)
সামু চোখে হাত দিয়ে মনে মনে বলছে, কেলো করেছে।এমনিতে নাম জিজ্ঞেস করলে উল্টা পাল্টা নাম বলে আর আজ,,
আদি নাম শুনে চমকে সামুর দিকে তাকায়।সামু জানতো এমন কিছুই হবে।সামু আদির দিকে চেয়ে বললো,
–কোনো একদিন স্বপ্ন দেখেছিলাম মেয়ের নাম আদিবা রাখবো তাই রেখেছি।সুন্দর হয় নি নামটা?
আদি আর বলার মতো ভাষা খোজে পাচ্ছেনা।
তখনই ডাক পড়লো।

–সামু!

দুজনেই উৎসের দিকে তাকালো।পিছনে ঘুরে দেখে সাদ দাড়িয়ে আছে।
–সামু যেতে হবে।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।

সামু সমুদ্রের দিকে চেয়ে দেখে সূর্য ঢলে পড়েছে।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
–আসছি।
সামু আদির দিকে একবার চেয়ে আদিবার হাত ধরে বললো,চলো।

আদির মনে হচ্ছে ওর হৃদপিন্ডটা কেউ কেটে টুকরো টুকরো করে দিয়ে গেলো।সামুর আর পিছনে ঘুরে দেখার সাহস হয়নি।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।অনেক কষ্টে,অনেক যুদ্ধ করে আটকে রেখেছিলো।কিন্তু আর পারছেনা।বারবার ওড়না দিয়ে মুছে নিচ্ছে।আদিবা দেখলে নানান প্রশ্ন করবে।
কিছুটা আড়ালে যাওয়ার পর পিছনে ঘুরে দেখে আদি ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।সামুর খুব কষ্ট হচ্ছে।

আদি দাড়ানো থেকে বসে পড়ল।

“আদি এমনটাই তো হওয়ার ছিলো।তুই তো জানচিস তবুও কেন কষ্ট পাচ্ছিস?তুই তো চেয়েছিলি ও ভালো থাকুক।ও ভালো আছে।সুখে আছে।তবুও কেন আমার ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে।”
আদির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।এতদিন পর দেখেও কিছু বলতে পারলোনা।মন ভরে দেখতে পারলো না।
আদি সমুদ্রের পাড়ে বসে আছে।
সামু এত তাড়াতাড়ি নিজেকে গুছিয়ে কিভাবে নিলো?এটাই ওর মাথায় ঢুকছেনা।হাসব্যান্ড ঠিক আছে কিন্তু এতো বড় বাচ্চা।ওদের ডিভোর্সের পর পর ই কিভাবে বিয়ে করতে পারলো?এটা কি সম্ভব?সামু শক্ত হলেও এতটা পাষাণ নয় যে সবকিছু মাটিচাপা দিয়ে কয়েকমাসের মাথায় বিয়ে করে নিবে।নিজেকে সামলাতে কম করে হলেও একবছর সময় প্রয়োজন।
কিন্তু এতবড় বাচ্চা,,কিভাবে?তাও ওর নামে,,আদি কোনো হিসাব মিলাতে পারছেনা নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।

পরক্ষণেই ভাবলো,
হয়তো সামলে নিয়েছে।আমাকে ঘৃণা করে ভালোভাবে বাচার জন্য বিয়ে করে নিয়েছে।হয়তো বা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।তবে করেছে তো,ভালো তো আছে।সামু আমাকে ভুলে গেছে কিন্তু আমি কেন পারছিনা,,,।

রাত হয়ে গেছে।আদি দু’হাতে বালি খামচে ধরে চিতকার করে কাদছে।ওর চিতকারের শব্দ সমুদ্রের গর্জনের মাঝে মিলিয়ে যাচ্ছে।হয়তো কেউ শুনতে পারছেনা।কেউ জানতে পারছে না কোনো এক প্রেমিক তার প্রেয়সীকে হারানোর ব্যথায় আহাজারি করছে।

গুটিগুটি পায়ে সমুদ্রের জলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।বড়বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে।ওর ইচ্ছে করছে সমুদ্রের মাঝে নিজেকে বিসর্জন দিতে।কিন্তু না পারবে না।এতটা স্বার্থপর হতে।নিজের পরিবারকে আরো একবার শোকের ছায়ায় ভাসাতে পারবেনা।আদি চোখ মুছে জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে চিতকার করে বললো, ভালোবাসি সামু,,অনেক ভালোবাসি।
ওর চিতকারের শব্দ মিলিয়ে গেলো।

চারদিকে অন্ধকার।ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে সমুদ্র থেকে উঠে পাড় দিয়ে হেটে চলেছে।হটাৎ কিছু দেখে চমকে যায়।তারপর ধপ করে বালিতে বসে ভালো ভাবে আলো ফেলে পরখ করে দেখে নেয়।
আদির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।আদির মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে,,
“আই নিউ ইট সামু,,আই নিউ ইট,আমার সামু আমাকে ভুলতে পারেনা।আমি আসছি।পুরো কক্সবাজার তন্নতন্ন করে হলেও তোমাদের খোজে বের করবো।হে মাবুদ আমি যা ভাবছি তাই যেন হয়।”

চলবে….?

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৩

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২৩

ফাবিহা নওশীন

??
“সামু তুই কি হ্যাপি?”

মায়ের এমন প্রশ্নে সামু অবাক হয়ে গেলো।কি বলে এসব।ও প্রেগন্যান্ট।ও মা হতে চলেছে,,ছোট্ট একটা বাচ্চা আসবে।ওকে মা বলে ডাকবে,,আর ও খুশি হবেনা?
সামু উল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
–কেন আম্মু আমার সময় তুমি আমাকে নিয়ে হ্যাপি ছিলেনা?

মেয়ের এমন প্রশ্নে সামুর মা সামুর বাবার দিকে চাইলো।সামুর বাবা বললো,
–তুই হ্যাপি থাকলেই আমরা হ্যাপি,,তবে ওদের এ নিউসটা দেওয়া দরকার?

–কাদের?

–তোর শ্বশুর বাড়ি,, ওদের বাচ্চা ওরা জানবে না?,

সামান্তা অবাক হয়ে বললো,
–ওদের বাচ্চা?ওদের বাচ্চা নয়,,এটা আমার বাচ্চা,,আমার বেবির ভাগ আমি কাউকে দেবোনা,,ও শুধু আমার থাকবে।আমার বেচে থাকার অবলম্বন ও।আদি আমাকে ঘৃণা করে।ও আমাকে ডিভোর্স দিয়ে গেছে।ও যদি জানতে পারে বেবির কথা যদি আমার কাছে থেকে নিয়ে যায়?তখন আমি কি করবো?কিভাবে বাচবো আব্বু?আমি মরে যাবো।আমার কাছে এই বেবি ছাড়া আর কিছু নেই।আদি বিয়ে কর‍তে পারবে,ও বেবি হবে ফ্যামিলি হবে,,আমার কি থাকবে?আমার উপর একটু দয়া করো,,রহম করো আব্বু।(কাদতে কাদতে)

–সামু তুই কাদছিস কেন?কাদিস না,,আমরা তো বেবির কথা ভেবেই বলেছি।

–আমার কথা কেন ভাবছো না,,বেবিকে ওরা কিছুতেই এখানে রাখতে চাইবেনা।আর আমি না ওখানে যেতে পারবো।আমি আমার বেবিকে নিয়ে বাচতে চাই।ওকে আমি মানুষ করবো।ও বড় হলে,যখন বুঝের হবে তখন যদি ওর বাবার কাছে যেতে চায় তাহলে আমি মানা করবোনা।কিন্তু ওকে এখন আমার চাই।আমি বড্ড একা আম্মু।
শুধু মাত্র তিনটা বছর আমার আর বেবির দায়িত্ব নেও,,আমার গ্রাজুয়েশন শেষ হলেই আমি জব নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো।

সামুর বাবা অবাক হয়ে বললো,
–সামু কি বলছিস এসব?আমি সারাজীবন তোর আর বেবির দায়িত্ব নিবো।তুই এসব কেন ভাবছিস।আমি কি দায়িত্ব নিতে ভয় পাই?বাবা আমি তোর।তুই আমার কলিজার টুকরো।তোর জন্য সব করতে পারবো আমি।

–আমার কসম লাগে আব্বু,,কেউ যেন না জানে।

–আচ্ছা,আচ্ছা কেউ জানবেনা।তুই উত্তেজিত হোস না।রিলেক্স।

কেউ জানতে পারেনি বেবির কথা।তবে সামুর প্রেগন্যান্সি আর ডিভোর্সের খবর শুনে পাড়াপড়শিরা নিজ পয়সা খরচ করে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে একজন থেকে আরেকজনকে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে।পাড়া পড়শিদেশের যা কাজ আর কি।ইনিয়ে বিনিয়ে নানান কথা বলা বলা।
সামনে কেউ বলতে পারেনা কেননা ওই এলাকায় সামুর বাবার যথেষ্ট নামডাক আছে।
কিন্তু অগোচরে বলে বেড়ায়।
লোভে পড়ে বড়লোকের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে।সেই ছেলে দুদিন ফূর্তি করে প্রেগন্যান্ট করে ছেড়ে দিয়েছে।
এসব কথার ১০টা উত্তর সামুর কাছে আছে কিন্তু বলতে ইচ্ছে করেনা।বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা এসে সহানুভূতি দেখাতে আসে।
এসব আর সহ্য হয়না সামুর।ও ওর পড়াশোনা, বেবির যত্ন নিয়ে বিজি থাকে।আর অবসরে পেটে হাত দিয়ে বেবির সাথে সুখ-দুঃখের কথা বলে কাটায়।

???

দেখতে দেখতে আদি আর সামান্তার বিচ্ছেদের ৫বছর কেটে গেছে।সামু কক্সবাজারে জব করছে প্রায় ২বছর।সেখানে ওর বড় মামা বড় মাপের একজন ব্যবসায়ী।অনেক নামিদামি মানুষের সাথে উঠাবসা।তাই সেখানে ভালো একটা চাকরির জন্য বেশি কষ্ট করতে হয়নি।ভালো বেতনে চাকরি,অফিস থেকে থাকার জন্য একটা বাংলো,গাড়ি পেয়েছে।সেখানেই তার সানসাইনকে নিয়ে থাকে।জরিনা খালা সামুর অনুপস্থিতিতে সামুর মেয়ের দেখাশোনা করে।যে কিনা সামুদের বাসায় কাজ করতো।তার ছেলে মেয়ে কেউ নেই।তিনি ২বছর আগে কক্সবাজারে সামুর সাথে এসেছে।সামিরও বড় হয়ে গেছে।ভার্সিটিতে পড়ে।মাসের বেশিরভাগ সময় সামুর ওখানে থাকে।সব মিলিয়ে সামু বেশ ভালো আছে।ও চেয়েছিলো নিজের চেনা শহর থেকে দূরে থাকতে তাই হয়েছে।সামুর বাবা-মা ও বাধা দেয়নি।তারাও চান তাদের মেয়ে,নাতনি ভালো থাকুক।

সামু মেয়েকে তিনমাস হলো স্কুলে ভর্তি করেছে।মেয়ের বয়স ৪বছর হলেও কথাবার্তা,চালচলন ৭বছরের বাচ্চাদের মতো।সামু ওকে ওভাবেই তৈরি করেছে।বেশ দুষ্ট হয়েছে।দেখতে হবে তো মেয়েটা কার।
দুই বজ্জাতের সামু আর আদির।

রাতের বেলা সামু মেয়েকে পড়াতে বসেছে।
–বাবুই বলো তো হুয়াট ইস ইউর নেম?

–প্রিন্সেস,,সানসাইন,,বাবুই,,আদু,,(ঝুটি নাড়িয়ে)

সামুর কপালে হাত।
হায়রে মেয়ে,,কি বলে।নিজেকে সামলে মেয়েকে বলে,,
–নাম জিজ্ঞেস করলে এসব বললে মিস তোমাকে রসগোল্লা দিবে বুঝেছো?

–হিহি,,তাহলে তো ভালো হবে মাম্মা।আমি খেয়ে ফেলবো।

–উফফ,,ঠিক করে বলবে,,নয়তো মার খাবে।আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।
মাথা ঝুলিয়ে সায় জানালো।

–মাই নেম ইজ আদিবা সাজান্তা চৌধুরী।

–এই তো গুড গার্ল।হুয়াট ইজ ইউর মাদার নেম?

–মাই মাদার নেইম ইজ সামান্তা সেহনুজ।

–হুয়াট ইজ ইউর ফাদার নেম?

–মাই ফাদার নেম ইজ আদিল চৌধুরী।

সামান্তা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।ওর পড়াতে ভালো লাগছে না।তারপর বললো,
–বেবি তোমার ছুটি চলো কার্টুন দেখবে।

মেয়েকে কার্টুন ছেড়ে দিয়ে আলমারি থেকে ডিভোর্স পেপার বের করলো।আর সেই চিঠি।চিঠিটা আরেকবার পড়লো।এত বছরে কতবার পড়েছে হিসেব নেই।
পেন হাতে নিলো সাইন করার জন্য।পেন বসানোর সাথে সাথেই হাতটা কেপে উঠলো।

তারপর পেন ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলছে,
–হুয়াই?হুয়াই?এতবার চেষ্টা করেও কেন সামান্য একটা সাইন করতে পারি না।কেন পারিনা?কেন আমি আমার জীবন থেকে তোমাকে বাদ দিতে পারিনা।তুমি তো পেরেছো,,তবে আমি কেন পারছিনা আদি।টেল মি..

রাতে আদিবাকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।আকাশে দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।আকাশে চাদ নেই।তারারা ঝিকঝিক করছে।আকাশে কোনো মেঘ নেই।শুভ্র সুন্দর আকাশ।

????

#তাকে_বলে_দিও!

তাকে বলে দিও!
এখন আর আমি তাকে ভালোবাসি না।
যেমন সেও বাসে না আমায়!
তাকে বলে দিও,তার মিথ্যে প্রতিশ্রুতির পাহাড়ে চাপা পড়ে বহুকাল আগে মৃত্যু হয়েছে আমার।
এখন আমার দেহ মৃত্যু উপত্যাকা,
সেখানে তার যাওয়া মানা।
সেখানে আর ফুল ফোটে না,
চাঁদ ওঠে না পূর্ণিমা রাতে।
আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে হয়,
কাউকে ভেঙেচুরে মানুষ কিভাবে শান্তিতে ঘুমায়!
কৈ?আমি তো পারি না!
তাকে বলে দিও,বিচ্ছেদের পর সবাই বেঁচে থাকে না।
অনেকে বাঁচার চেষ্টা করে রোজ,রোজ!
যেমন আমি চেষ্টা করি,তাকে ভুলে যাওয়ার।
তাকে বলে দিও,সে জানো ভুল করেও আমায় মনে না করে!
-জয়

????

সত্যিই আদি আমাকে তোমার মনে পড়েনা?হয়তো পড়েনা,,নয়তো এত বছরেও কেন তুমি দেশে ফিরলে না।বাবা-মায়ের জন্য ও তো ফিরতে পারতে।নিশ্চয়ই কোনো বিদেশীনিকে বিয়ে করে সুখে আছো।আমিও আছি।সুখে আছি।রোজ রোজ নিজেকে স্টং প্রুফ করার জন্য লড়াই করি।
আমার লাইফের সানসাইনকে নিয়ে ভালো আছি।তবে কি জানো তোমাকে আজো ভুলতে পারি না।সারাদিনের ব্যস্ততায় তোমাকে ভুলে থাকার চেষ্টায় সফল হলেও এই একাকিত্ব রাতে তোমাকে বেশ মনে পড়ে।তাতে কি!!

সামান্তাঅভিমানী মুখ করে ঘরে গিয়ে আদিবাকে জড়িয়ে শুয়ে পরলো।

সিডনি ??
আদি কিচেনে থেকে কফি বানিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।তারপর কফিতে চুমুক দিয়ে ফোন বের করে।ফোনের লক খোলে স্কিনের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।সেখানে সামান্তার হাস্যোজ্জ্বল একটা ছবি।ফোনের স্কিনে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো।

“কেমন আছো সামু?নিশ্চয়ই ভালো।আমি চাই তুমি ভালো থাকো।আমি প্রতি প্রার্থনায় সে দোয়াই করি।কি করছো?ও এখন তো ওখানে গভীর রাত।নিশ্চয়ই কারো বুকে শান্তিতে ঘুমাচ্ছো?কিন্তু কি জানো?আমার ঘুম হয়না।একটা রাতও ঘুমাতে পারি না।তুমি বলতে না আমি বড্ড ঘুমকাতুরে।কিন্তু এখন আমার ঘুম দেখলে নির্ঘাত হার্ট এটাক করতে।মদেও নেশা হয়না তাই মদ ছেড়ে দিয়েছি বহুকাল আগে।কেমন যেন হয়ে গেছি।দেখলে অবাকের উপর অবাক হতে।
নিশির কাছে শুনেছি তুমি তোমার লাইফে ভালো আছো,খুশি আছো।পড়াশোনা শেষ করে জব করছো।আমার শহরের সাথে সাথে নিজ শহরও নাকি ছেড়ে দিয়েছো।যাক ভালো থাকো।ভালো থাকাই তুমি ডিজার্ভ করো।
আমিও আছি আমার মতো।প্রতিদিন কল্পনায় তুমি এসে আমার সাথে কথা বলো।জানো আজো সেই স্বপ্ন দেখি।একটা মেয়ে ছাদের নিচের দিকে ঝুকে আছে।তার ফেস দেখা যাচ্ছেনা।পিঠের উপর আঁকাবাঁকা লালচে চুল।একভাগ নিচের দিকে ঝুকে পড়েছে।ফর্সা হাতে মেহেদী দেওয়া।আমি আজো তার চেহারা দেখার জন্য আকুবাকু করি।সে আমার দিকে ঘুরে ঘৃণার দৃষ্টি দেয় যা আমি সহ্য করতে পারিনা।আচ্ছা তুমি কি আমাকে ঘৃণা করো?আমাকে কি তোমার মনে পড়ে না?আমিও না কি বলছি,,তোমার কি সে সময় আছে।নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত আছো হয়তো।
আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে ঘৃণা করে আজীবন বাচতে পারবো কিন্তু কি জানো সে ঘৃণার মেয়াদ বছরখানেক ছিলো।তারপর….
তারপর বুঝতে পারলাম আমি কি করেছি।নিজের জীবন নিজের হাতে ধ্বংস করে দিয়েছি।নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছি।তোমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেকে খুন করেছি।তোমাকে কয়েকশো টুকরো করতে গিয়ে নিজেই কয়েক লাখ টুকরো হয়েছি।কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।তোমার সামনে দাড়ানোর মতো সাহস আমার নেই।কিভাবে দাড়াবো?তোমার সাথে আমি অনেক অন্যায় করেছি,,
তোমার বলা কথাগুলো আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলো সামু,,আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিলো।তুমি হয়তো তা দেখতে পাওনি,,”

আদির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।হাতের তালু দিয়ে মুছে নিলো।তারপর আবার বললো,
“তুমি ভালো থেকো কিন্তু এজীবনে আমার আর ভালো থাকা হবেনা।কারণ আমার ভালো থাকার জন্য যে তোমাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন।ভালোবাসি তোমাকে খুব ভালোবাসি।আজীবন বাসবো।”
ফোনটা পকেটে রেখে দিলো।তারপর মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে পড়ল।চিতকার করে বললো, ভালোবাসি সামু,,,

~~~~
আদির ফোন বেজেই চলেছে।নিশি ফোন করেছে।নিশি কখনো ফোন করে না।আদি এত বছরে কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি।মাঝেমধ্যে নিশিকে ফোন করে বাড়ির খবর নেয়।কিন্তু নিশি নিজ থেকে কখনো ফোন করে না।হয়তো অভিমানে।আদি যখন ফোন করে তখন বোন হিসেবে ভাইকে অস্বীকার না করতে পেরে ফোন রিসিভ করে।নিশির বিয়ে হয়েছে ২বছরের একটা ছেলে আছে।

“ভাইয়া বাবা আবারো হার্ট এটাক করেছে।বিছানায় পড়ে আছে।জানিনা কি হবে?এ নিয়ে ৩বার হয়ে গেছে।যদি দেখতে ইচ্ছে করে,,বাবার প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা, দায়িত্ব বোধ থাকে তবে আসিস।নয়তো তুই তোর মতোই থাক।”
বলেই ফোন কেটে দিলো।
এর আগেও অনেক বার নিশি যেতে বলেছে কিন্তু আদির এক কথা ওখানে আর ফিরবে না।

আদি জোরে শ্বাস ফেলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো,
“আদি ব্যাক করবে তার বাবার জন্য।অনেক হয়েছে।”

চলবে…?

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২২

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২২

ফাবিহা নওশীন

??

ঘুম ভাংতেই সামুর মাথাটা চিনচিন করছে।সারারাত ঘুম হয়নি।প্রচুর কেদেছে তাই মাথা ভারের সাথে প্রচন্ড ব্যথা।মাথা চেপে ধরে উঠে বসে।ঘড়িতে সময় দেখে লাফিয়ে উঠলো।
৯টা৪৪মিনিট।সকালের দিকে ঘুমিয়েছে কখন চোখ লেগে এসেছে।বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে বাইরে যেতেই একজন সার্ভেন্ট এসে একটা বড় খাম দিয়ে গেলো।সামু কিছুই বুঝতে পারছেনা।কে দিলো এটা।

তাই সার্ভেন্টকে জিজ্ঞেস করলো,
–এটা কার?কে দিয়েছে?
–আদি স্যার পাঠিয়েছে।

সামু বুঝতে পারছেনা কিসের খাম দিবে আদি এত সকালে।সামু আর কিছুনা বলে উপরের দিকে একবার চেয়ে খামটা খুলে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল।দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।সামু জোরে চিতকার করে উঠলো।ওর চিতকার শুনে সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।

আদির বাবা,মা,বোন সবাই এসে হাজির।সবাই জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা।নিশি ওকে টেনে উঠানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তুলতে পারছেনা।ওর হাতে থাকা কাগজগুলো হাতে নিলো।
তাতে একটা চিঠি আর আদির সাইন করা ডিভোর্স পেপার।নিশির হাত থেকে পেপারটা পড়ে গেলো।সবাই স্তব্ধ হয়ে ডিভোর্স পেপারের দিকে চেয়ে আছে।

নিশি চিঠিটা খুলে জোরে জোরে পড়া শুরু করলো,

“আমার সাথে থাকা যায়না তাই না?মুক্তি দিয়ে দিলাম আজীবনের জন্য মুক্তি দিয়ে দিলাম।আমি চলে যাচ্ছি আর কোনো দিন ফিরবোনা।তুমি আমার ভালোবাসার কোনো দাম দেওনি,,শুরু পাগলামিটাই দেখেছো।এখন দেখো আমাকে ছাড়া কতটা ভালো থাকতে পারো।তুমি আমাকে ভেঙে কয়েক টুকরো করেছো আর আমি তোমাকে শত টুকরো করে দিয়ে গেলাম।নিজের টুকরো গুলো হাতরেও খোজে পাবেনা।শেষ কথা আমি তোমাকে ঘৃণা করি।খুব ঘৃণা করি।
বিদায়।”

আদির খোজ করে জানা গেলো সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।নিশি ফোনে বারবার ট্রাই করছে কিন্তু সুইচড অফ।
সামু কিছু না বলে পেপারগুলো নিয়ে উপরে চলে গেলো।আদির মা নিশি সামুর পিছু পিছু গেলো।সামু দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।

বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে।
–নিশি আপু প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দেও।
সামু আবারো চিঠিটা খোলে,,
চোখের পানিতে চিঠিটা ভেসে যাচ্ছে।
সামান্য একটা কথার জন্য এতবড় শাস্তি দিলে আদি?এত ঘৃণা করো এত?আমি বলেছি থাকা যায়না কিন্তু এটা তো বলি নি তোমার সাথে থাকবো না।এটা তো একবারো বলিনি,,কেন এমন করলে আদি?আমি শুধু তোমাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম।এতদিন তোমার সব কথা মেনে চলেছি,ভালোবেসেছি তার কি কোনো মূল্যই নেই।এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারলে তুমি?

সামু চিঠিটা বুকে জড়িয়ে হাওমাও করে কাদছে।
আহনাফ চৌধুরী কপালে হাত দিয়ে বসে আছে।আদির মা কাদছে।নিশি পাইচারি করছে আর বারবার চেষ্টা করছে আদির খোজ করার।কিন্তু পারছেনা।বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—ভাইয়া এটা কি করলো?রাগ অভিমান হয়েছে কিছুদিন নাহয় দূরে থাকতে পারতো কিন্তু ডিভোর্স??

আহনাফ চৌধুরী আদির মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–দেখোছো কি ছেলে পেটে ধরেছো?বাবার উপরের ক্ষোভ বউয়ের উপর দেখালো।আমি থাপ্পড় মেরেছি,,দুচার কথা বলেছি।সামুকে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে ভুল করেছি এসব বলেছি তাই সামুকে তার শাস্তি দিলো।
ওকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করবোনা।ও আমার ছেলেই না।সামু আমার মেয়ে হয়েই এ বাড়িতে আজীবন থাকবে।ওর মতো ছেলের দরকার নেই আমার।

কেউ কোনো কথা বলছেনা।সামু নিচে নামছে।ওকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে কোথাও যাচ্ছে।সবাই উঠে দাড়ালো।
সামু কোথাও যাচ্ছিস?
সামু শুখনো মুখে বললো,
–আমি চলে যাচ্ছি বাবা।
সবাই ওর কথা শুনে হতবাক।নিশি বলছে,
–সামু কি বলছিস তুই পাগল হয়ে গেছিস?

–আমি ঠিকই আছি।ডিভোর্সের পর কোন মেয়ে শ্বশুর বাড়ি থাকে?তাই আমি চলে যাচ্ছি।

আদির বাবা,
–না তুই কোথাও যাবি না,,তুই আমার মেয়ে।তুই এখানেই থাকবি।

আদির মা,
–সামু তুই যাস না,,আদি রাগের মাথায় এসব করেছে দেখবি ঠিক চলে আসবে।

–না মা,,আদি রাগের মাথায় করেনি।ভেবেচিন্তে করেছে।চিঠি পড়ে বুঝোনি।ওর আমার উপর রাগ হয়েছে ও রাগ করে কোথাও চলে যেতে পারতো কিন্তু তা করেনি আমাকে একবারে ওর জীবন থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থাও করে গেছে।তাহলে আমি এখানে কেন থাকবো?কিসের টানে থাকবো।

আদির বাবা,,
–সামু তুই কোথাও যাবি না।

–আমাকে আটকিও না।আমার এখানে অনেক কষ্ট হচ্ছে।দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমার জন্য আর কঠিন করোনা।আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও।আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাদের।মাফ করে দিও।তোমরা আমার জন্য যা করেছো তার ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবোনা।ভালো থেকো।

সামু বেরিয়ে গেলো।হাজার চেষ্টা করেও কেউ ওকে আটকাতে পারেনি।আদি যাওয়াতে ওরা যতটা না ভেঙে পড়েছে তার চেয়ে বেশি সামুর জন্য ভেঙে পড়েছে।মেয়েটার জীবন ধ্বংস হয়ে গেলো।

সামু গাড়িতে বসে আছে।চোখের পানি বাধ মানছে না।ওড়না দিয়ে বারবার চোখের পানি মুছে নিচ্ছে।এ-শহর ওকে এত স্বপ্ন দেখিয়ে ওর সাথে এমন প্রতারণা করবে ভাবতে পারেনি।

অতিরিক্ত কোনো কিছুই নাকি ভালোনা।অতিরিক্ত ভালোবাসা,জেদ,রাগ,বিশ্বাস,ইগো,লোভ।লোকে বলে অতিরিক্ত জিনিস মানুষের জীবনে দুঃখ ডেকে আনে।আর সেটা যদি অতিরিক্ত রাগ হয় তাহলে তার ফলাফল অতি ভয়াবহ।অতিরিক্ত রাগ জীবন ধ্বংস করে দেয়।রাগের বশে নেওয়া একটা ভুল ডিসিশন সব তছনছ করে দেয়।

??
Jinke darmiyan guzri thi abhi
Kal tak yeh meri zindegi
Lo unn bahon ko thandi chao ko
Hum bhi kar chale alvida
.. Alvida abvida
Meri rahein alvida
meri sasein kehti hai alvida
Alvida alvida ab kehna aur kiya
Jab tune keh diya alvida…….

?????

গাড়ি গিয়ে সামুদের বাসার গেইটের সামনে থামলো।নিজেকে মৃত মনে হচ্ছে।গাড়ি থেকে নামার শক্তি পাচ্ছে না।শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে গেইটের সামনে দাড়িয়ে রইলো।গেইট খোলা।ভিতরটা দেখা যাচ্ছে।সামু ধীর পায়ে হেটে যাচ্ছে।যেন বোধ নেই।রোবটের মতো এগিয়ে চলেছে।মেইন ডোরের সামনে গিয়ে বেল বাজিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
সামুর আম্মু এসে দরজা খোলে সামুকে দেয়ালের সাথে হেলান দেওয়া অবস্থায় দেখে।ওর চোখমুখ শুখনো।চুলগুলো এলোমেলো কেমন বিধ্বস্ত লাগছে।ওর মায়ের বুক ধক করে উঠলো।

উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
–সামু,,,কি হয়েছে?

সামু মায়ের দিকে শান্ত চাহনি দিয়ে হুট করেই জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কেদে দিলো।সামুকে কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছেনা।ভিতরে নিয়ে বসিয়ে সামুর আব্বুকে ফোন করে বাসায় ডেকে আনে।সবাই মিলে অনেক চেষ্টা করেও কোনো কথা বের করতে পারেনি।কেদেই যাচ্ছে।
সামুর বাবা উপায় না দেখে আহনাফ চৌধুরীকে ফোন করে,,তিনি সবটা বলেন না শুধু বলেন আদি আর সামুর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।কোন মুখে বলবেন সবটা।তাই এটুকুই বলেন।

রাতের বেলা সামু নিজের ঘরে বসে বাবা-মাকে সবটা খোলে বলে।আদি ওকে চিরদিনের মতো ছেড়ে চলে গেছে আর ফিরবেনা।সামুও আর ও বাড়ি ফিরবেনা সব জানায়।সামুর বাবা রেগে গিয়ে আদির বাবাকে ফোন করতে গেলে সামু বাধা দেয় আর বলে ওদের কোনো দোষ নেই।সামুর মা সামুকে জড়িয়ে কেদেই চলেছে।
সেদিন রাতে একবুক কষ্ট নিয়ে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়ে।

সামু খাওয়া নাওয়া সব ছেড়ে ঘরেই পরে থাকে।চারদেয়ালে নিজেকে বন্ধি করে নিয়েছে।কারো সাথে কথাও বলেনা।সারাদিন রাত কেদেই চলেছে।

এক সপ্তাহ পর,,,
ভোরবেলা আজানের শব্দে সামুর ঘুম ভেঙে যায়।বিছানা ছেড়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নামাজে দাড়ায়।আজ থেকে নতুন ভোরের শুরু।নামাজ শেষ করে মোনাজাত ধরে।সেখানে তার মনের গোপন বাসনা গুলো আল্লাহর দরবারে পেস করে।
নামাজ শেষে ছাদে যায়।চারদিকে আলো ফুটছে।পাখিরা কিচিরমিচির করছে।স্নিগ্ধ বাতাস বইছে।বাতাসেরা সামুকে ছুয়ে যাচ্ছে।টপে ফুটে থাকা ফুল গুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছে।রেলিং ধরে দাড়ায়।আকাশের দিকে চেয়ে বলে,

“আদি আজকের পর আমি আর তোমার জন্য কাদবোনা,তোমার জন্য কষ্ট পাবোনা।আজ থেকে আমার নতুন জীবন শুরু।আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো আর তুমি সেই পয়েন্ট ব্যবহার করেছো।তুমি ভেবেছিলে আমাকে ধ্বংস করে দিবে কিন্তু না আমি সেটা হতে দিবোনা।আমিও ভালো থাকবো।তুমি আমাকে ঘৃণা করো তাই না ঠিক আছে তাই করো।কারণ তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসোনি।ভালোবাসলে তুমি এটা করতে পারতে না।আমিও আর তোমাকে নিয়ে ভাববোনা।
হে মাবুদ!তুমি আমাকে শক্তি দেও,,এমন কিছু করো যাতে আমার জীবনে বেচে থাকার শক্তি জোগায়।আমাকে লড়াই করার সাহস দেয়।আমাকে শক্তি দেও।আমার বেচে থাকার শক্তির উৎসর সন্ধান দেও।মনে শান্তি দেও।”

সকাল ১০টা।সামু আহনাফ চৌধুরীকে ফোন করলো,,
–আসসালামু আলাইকুম বাবা।

–অলাইকুম আসসালাম।কেমন আছিস?

–জ্বী ভালো। আপনি?

–দীর্ঘশ্বাসের শব্দ।
বাড়িটা কেমন যেন হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে কেউ মারা গেছে।
সামু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
–আমার তোমার একটা সাহায্যের প্রয়োজন।আমার ভার্সিটির ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করে দিন।আমি পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে চাই।আমি চাইলেই হোস্টেল কিংবা অন্যভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু আমি আর ওই শহরে ফিরতে চাইনা।

আদির বাবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, আচ্ছা।আমি ব্যবস্থা করে দিবো।তোর খুশিতেই আমি খুশি।তোর বাবাকে বলিস আমাকে মাফ করে দিতে।

–ভালো থাকবেন।নিজের খেয়াল রাখবেন।

.
.

সামু নিজ শহরের ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলো।শুরু হলো নতুন পথচলা।নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে।পড়াশোনা করছে।নিয়মিত ভার্সিটি যাচ্ছে।তবে শরীর ঠিক যাচ্ছেনা।ইদানীং মাথা ঘুরায়,,কিছু খেতে ইচ্ছে করেনা,গা মেজমেজ করে।শরীর অনেক দূর্বল লাগে।শুধু ঘুম পায়।
ডিভোর্স পেপার খুব যত্নে রেখেছে।অনেক বার সেখানে সাইন করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সাহসে কুলোয় নি।কিসের যেন একটা বাধা আসে বারবার।কিসের যেন টান,,,বারবার এই টান উপেক্ষা করতে চাইলেও পারেনা।

শরীর ভালো না লাগায় ভার্সিটি থেকে বাড়িতে চলে এসেছে।শরীর অনেক দূর্বল লাগছে।কলিং বেল বাজিয়েই ধপাস করে পড়ে গেলো।
সামুর মা দরজা খোলে এভাবে সামুকে পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে চিতকার করে উঠলো।

.
.

সিডনি রাতেরবেলা-
আদি নাইট ক্লাবে বসে বসে মদ খাচ্ছে।নেশায় পুরো টুইটুম্বুর।পকেট থেকে ফোন বের করে সামুর একটা ছবি বের করে বলে,,
আই হেইট ইউ সামু,,হেইট ইউ।।হেইট ইউ,,
তারপর নেশায় ঢলে পড়ে।

সামু নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে।পাশেই ওর আম্মু,আব্বু,সামির আর একজন ডাক্তার বসে আছে।তিনি সামুকে চেকাপ করছে।গুরুগম্ভীর অবস্থা,,,
সামুর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–উনি মা হতে চলেছেন।
পুরো ঘরে পিনপতন নীরবতা।

সামুর চোখে পানি ছলছল করছে।আল্লাহ ওর দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।ওর জীবনে বেচে থাকার শক্তি পাটিয়েছে।ওর সানসাইন,,ওর বেবি।যে ওকে বেচে থাকার শক্তি দিবে।লড়াই করার সাহস জোগাবে।
কিন্তু ওর মা-বাবার মুখ দেখে কিছু বুঝা যাচ্ছেনা।কেমন চুপসে আছে।তাতে কি সামু তো খুশি।

চলবে…

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২১

0

#তোর_শহরে_ভালোবাসা?

পর্ব-২১

ফাবিহা নওশীন

??
সামু ৪দিনের জায়গায় আজ ৫দিন যাবত বাবার বাড়ি আছে।আদি রেগে বোম হয়ে আছে।গতকাল থেকে ওর সাথে কথা বলেনা।আজ সকালে আসার কথা।আদি রুমে পাইচারি করছে।আজ আর অফিসে যাবেনা।রাগের মাথায় যদি উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলে তাই বাড়িতেই আছে।তখনই সামুর ফোন।এসময়ে সামুর ফোন দেখে চমকে যায় আদি।তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে,,

–হ্যালো,,

সামু নিশ্চুপ।বিষয়টি আদির ঠিক লাগছেনা।

তারপর চিতকার করে বললো,
–কথা বলছো না কেন?আই থিংক তুমি আরো কিছুদিন থাকার পাইতারা করো।ডোন্ট টেল মি,,যে তুমি আজ আসছোনা।

সামু একটা ঢুক গিলে বললো,
আদি রাগ করোনা প্লিজ।অনেক দিন পড়ে এসেছি,,সবাই অনেক জোর করছে।তাই,,

–তাই কি,,সবাই জোর করছে।সবার কথা বলছো তুমি আর আমি,,আমি কি?আমি কেউ না?আমার প্রজেক্টের কাজ চলছে তুমি জানতে আমি কতটা বিজি কাজটা নিয়ে,,তবুও তুমি তোমার মতো গেলে,,ওকে ফাইন গিয়েছো,,ভালো কথা।
কিন্তু কি করছো তুমি, তোমার এতো থাকার ইচ্ছে তুমি পরে যেতে আমাকে নিয়ে,, আর কি বলেছিলে পরে আবার যাবে আমাকে নিয়ে,,কিন্তু কি করলে তুমি,,?

–আদি আমি সরি।প্লিজ আর একদিন আগামীকাল সকালে চলে আসবো।

আদি রাগে শক্ত করে জানালার পর্দা মুঠো করে ধরে রেখেছে।তারপর একটান দিয়ে ছিড়ে ফেলে বললো,
–তোর ডানা গজিয়ে গিয়েছে না,,?অনেক উড়ছিস তুই।দাড়া আমি আসছি তোর ডানা কাটতে।

–আদি প্লিজ আমার,,
আদি খট করে ফোন কেটে দিলো।সামান্তা ভয়ে জমে যাচ্ছে।ওর ভয় আদিকে নিয়ে না বরং আদি যদি এখানে এসে উল্টো পাল্টা কিছু করে বসে।

আদি নিচে গিয়ে জানালো কিছুক্ষণ পর ই সামুকে আনতে যাচ্ছে।তাই আদির মা যাবার সব ব্যবস্থা করলেন।ছেলে বিয়ের পর প্রথম বার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে।উপহার,ফল,মিষ্টি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবস্থা করে ফেললেন।সামুকে ফোন করে সব বুঝিয়ে দিলেন।সামু নিজে এ বাসায় জানিয়ে দিলো আদি আসছে।বাড়িতে জামাই আপ্যায়নের তোড়জোড় ব্যবস্থা চলছে।

দুপুর বেলা আদি গিয়ে উপস্থিত।আদি ভিতরে গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় পর্ব সাড়লো।সামু শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছে।কিন্তু না আদি সম্পুর্ন ঠান্ডা।

সামু আম্মু বললো,
–সামু আদিকে উপরে নিয়ে যা।আমি নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

–আচ্ছা।
সামু আদির দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে আদিও ওকে অনুসরণ করছে।
সামুর বুক ঢিপঢিপ করছে।আদি যে একটা হাঙ্গামা করবে সেটা শিওর,,

রুমে ঢুকতেই আদি দরজা লাগিয়ে লক করে দিলো।সামু ঘুরে দাড়াতেই আদির রক্তবর্ণ চেহেরা দেখলো।চোখ লাল হয়ে আছে।আদি সামুর দুবাহু চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো,
–কি বলে এসেছিলি?কি বলে দিয়েছিলাম তোকে? আসলে তোকে আসতে দেওয়াই ঠিক হয়নি,,

সামু কাচুমাচু হয়ে বললো,
–আদি,,

–চুপ একদম চুপ,,কথা বলবিনা।তুই একটা মিথ্যেবাদী।তুই তো ভালো করেই আমাকে জানিস,,তুই জানিস না আমি তোকে ছাড়া এতদিন থাকতে পারবোনা।

–আমি জানি কিন্তু এরাও তো পরিবার।এদের চাওয়া পাওয়া নিয়েও তো আমাকে ভাবতে হবে।সবাই খুব মন খারাপ করছিলো,

–মন খারাপ করলে আজীবন থেকে যাবি?হু?বিয়ে হয়েছে এখন আমার বাড়িই তোর সব।বাপের বাড়ি আসবি দুদিন থাকবি ব্যাস।একা এসে এতদিন থাকছিস,,জামাই ছাড়া।

–তোমাকে তো বলেছিলাম,,

–কি বলেছিলি?তুই জানতি আমি আসতে পারবোনা কতটা পেরায় আছি,,দায়সারা হয়ে বলেছিস।

–আদি আমি মন থেকেই বলেছি।

–আমার এখন এসব জানার দরকার নেই।সন্ধ্যায় আমরা ব্যাক করছি।এখন বাজে ২টা,,৬টায় রওনা দিবো।এতক্ষণে যত কথা যত ব্যথা সব বাড়ির মানুষের সাথে শেয়ার কর।তারপর প্যাকিং কর।

–আজ প্রথমবার এসেছো এভাবে চলে গেলে সবাই কি বলবে?

–আই ডোন্ট কেয়ার।আমরা আজই যাচ্ছি।তুই যদি না যাস থাক,,মানা করবো না আমি চলে যাবো।

–ঠিক আছে,চলে যাবো তোমার সাথে। (ছলছলে চোখে)

আদি সামুকে ছেড়ে দিলো।সামু নিচে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর নাস্তা নিয়ে এসে দেখে আদি ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে শার্টের বোতাম সব খোলে খাটে বসে আছে।সামু বুঝতে পারলো ওর গরম লাগছে।
তাই ট্রে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে তোয়ালে ভিজিয়ে এনে আদির গলা মুছতে গেলেই আদি সরিয়ে দেয়।সামু আবার মুছতে যায়।
আদি এক ঝাটকায় সরিয়ে দেয়।তারপর বলে,
–এতো ভালোবাসা দেখাতে হবেনা,,এতদিন এই ভালোবাসা কই ছিলো?

সামু থমকে যায়।তারপর আবার জোর করে মুছতে যায়।আদি কিছু বলতে যাবে তখনই শীতল কণ্ঠে বলে,
–এতো রাগ করছো কেন?তোমার কথা তো মেনেই নিয়েছি,,ঢাকা ব্যাক করছি।তাহলে এমন করছো কেন?(তোমার কষ্ট আমাকে স্পর্শ করলেও আমার কষ্ট তোমাকে কেন স্পর্শ করেনা।কেন তুমি স্বার্থপরের মতো নিজের কথাই কেবল ভাবো?আমার কথা একটু ভাবতে পারোনা)

আদি আর কিছু বললো না।সামু ওর পুরো শরীর মুছে দিয়ে ঘরের দক্ষিনের জানালা খোলে দিলো।ঝড়ের বেগে বাতাস আসছে।আদি অবাক হয়ে সেদিকে চেয়ে রইলো।পুরো ঘর মুহুর্তেই ঠান্ডা হয়ে গেলো।
যাকে বলে আল্লাহর রহমত।
সামু মিষ্টি হেসে বললো,
এমনই,,আল্লাহর রহমত।আমার রুমে ফ্যান ছাড়া লাগে না।সবসময় আল্লাহর রহমত বহে।

দুপুরের খাবারের পর সামু ওর আম্মুকে চলে যাওয়ার কথা বলতেই ওর আম্মু শকড,,

–কি বলছিস,,জামাই এতদিন পর এলো।আর তুই বলছিস আজকেই চলে যাবি।আমি আদির সাথে কথা বলবো।

–আম্মু বলে লাভ হবেনা।ও একটা প্রজেক্ট নিয়ে অনেক বিজি আছে।এত ব্যস্ততার মধ্যে শুধু আমাকে নিতে এসেছে।থাকার জন্য আসেনি।অন্য সময় আসবো।

–তবুও,

–আম্মু প্লিজ বাদ দেও,,মেয়েকে বিয়ে দিয়েছো সে এখন পর হয়ে গেছে।আসবে দুদিন থাকবে এই,,

সামুর আম্মু সামুর চোখে অভিমান দেখতে পেলো।ওর ভিতরে যে ঝড় বইছে বুঝতে পারছে।
–তুই অনেক বদলে গেছিস সামু,,নিজেকে আড়াল করতে শিখে গেছিস।তোর চঞ্চলতাও হারিয়ে গেছে।

সামু এবার ডুকরে কেঁদে উঠে।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–তোমাদের সামু বিলীন হয়ে গেছে আম্মু,,

–কাদেনা,,,বোকা মেয়ে কাদিস কেন?শোন আদি তোকে চোখে হারায় তাই এমন পাগলামি করে।দেখিস না কাজ ফেলে তোকে নিতে ছুটে এসেছে।
তিনি সামুকে শান্তনা দিচ্ছেন।
সামুকে জড়িয়ে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

অবশেষে সামু আদির সাথে বাসায় ফিরে।সামু শাশুড়ী মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
ফ্রেশ হয়ে চাদর জড়িয়ে শুয়ে পরলো।রাতে খাবে না বলে দিয়েছে।কেউ যেন না ডাকে।কিছুক্ষণ পর আদি সামুর পাশে বসে ওর মাথায় বিলি কাটছে।সামুর এই মুহুর্তে আদিকে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।এত কষ্ট দিয়ে এখন সোহাগ দেখাচ্ছে।তাই হাত সরিয়ে দিয়ে বিরক্তিকর মুখে বললো,
–প্লিজ বিরক্ত করোনা,ভালো লাগছেনা।

–আমি তোমাকে বিরক্ত করছি?আমাকে এখন তোমার বিরক্ত লাগছে??বাহ ভালো।

বলেই আদি উঠে চলে গেলো।আদি যে রাগ করলো সেটা সামু বুঝতে পারলো কিন্তু এ নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।চাদরটা মাথা পর্যন্ত তুলে শুয়ে পরলো।জার্নির কারণে ক্লান্তিতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে।হটাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো।পাশ ফিরে আদিকে খোজছে কিন্তু আদি নেই।সামু উঠে বসে।বিছানা দেখে বুঝাই যাচ্ছে এখানে কেউ শুয়নি।সামু উঠে ওয়াশরুম চেক করলো।সেখানেও নেই।বারান্দার দরজা খোলা।বারান্দায় গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।
আদি বারান্দায় বেডে শুয়ে আছে।

–উফফ এই ছেলেকে নিয়ে পারিনা,,এত্ত অভিমান।আমি রাগ করেছি কই আমার রাগ ভাংগাবে তা না নিজেই অভিমান করে বসে আছে।জীবনটা তেজপাতা।

সামু আদির পাশে গিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।আদিকে জড়িয়ে ধরতেই আদি বললো,
–কেন এসেছো এখানে?

সামু চমকে গেলো।মনে হচ্ছে ভূত দেখেছে।
–এই তুমি এখনো ঘুমাওনি?

–না,,ঘুম আসছে না।তুমি কেন এসেছো?আমি তো শুধু তোমাকে বিরক্ত করি।

–আদি তুমি কবে বুঝবে আমাকে?কেন বুঝো না?তুমি আমার সাথে কি ব্যবহার করেছো ভুলে গেলে?আমি তোমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছি।বাড়ি থেকে এসেছি মন খারাপ ছিলো।আর তুমি এ নিয়ে উল্টো রাগ করে আছো?

–তাহলে কার সাথে রাগ করবো?তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমার সব শূন্য লাগে।তবুও কেন এতদিন থাকলে?আরো থাকতে চাইলে?তুমি তো আমাকে একটুখানিও মিস করোনি।

–কে বলেছে করিনি,,মিস করেছি কিন্তু,,

–থাক আর বলতে হবে না।কি মিস করেছো জানা আছে,,

–তুমি জানো তুমি অনেক স্বার্থপর,,শুধু নিজেরটা বুঝো।

–নিজেরটা বুঝবো না তো রাস্তার মানুষের টা বুঝবো?আর নিজের মানে কি,,?আমি তোমার খেয়াল রাখি না?

–হ্যা রাখো,,আচ্ছা বাদ দেও।ঘুমাও অফিস আছে তোমার।আজকে অফিসে যাওনি।

–হুম।

এভাবে কেটে গেছে আরো অনেক সময়।সামান্তার ফার্স্ট ইয়ার এক্সাম শেষ।তাই ভার্সিটি অফ।বাসায় বেকার কি করবে,,,আদিকে বলেছিলো পরীক্ষার পর একসাথে ওদের বাড়িতে যাবে কিন্তু আদি যে সিনক্রিয়েট করেছে তাতে সামুর আর ইচ্ছে হয়না।সামু ভাবছে রুমের ডেকোরেশন চেঞ্জ করবে।
তাই শুরু হলো।নিশি আর সামু মিলে সব পছন্দ করলো।তারপর ডেকোরেশন শুরু।আদি অফিস থেকে এসে রুমে ঢুকে থ,,
–এ কার রুম?আমার রুম তো,,না ভুলে অন্য রুমে এসে পড়েছি।তখনই চোখ গেলো বেডের সাথের দেয়ালে বড়সড় করে ঝুলানো ওদের বিয়ের ছবিটা।বিভিন্ন জায়গায় ওদের ছবি।
না সব ই তো ঠিক আছে।তার মানে আমার রুম ই।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সামু বেডে বসে পা ঝুলাচ্ছে।

সামুকে দেখে হালকা হেসে বললো,
–আমি তো ভেবেছিলাম ভুল করে অন্য কারো রুমে চলে এসেছি।তুমি তো দেখছি আমার রুম পুরো পাল্টে দিয়েছো।চিনায় যাচ্ছেনা।

সামু ভ্রু কুচকে বললো,
–তোমার রুম মানে?বিয়ের পর ছেলেদের আর নিজের রুম থাকে না।বউয়ের হয়ে যায় সব।পুরো রুমের সবকিছুর মালিক সে।সো,,এই রুম আর এই রুমের সবকিছুর মালিক থুরি মালকিন আমি।তুমি গেস্ট।

আদি সামুর দুহাত তুলে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো,
–তোমার লজিকে ভুল আছে।মানলাম সবকিছু তোমার।কিন্তু বউটা তো আমার।আর বউয়ের সম্পদ মানে আমার সম্পদ।তাই বউয়ের সাথে এই রুমের ও মালিক আমি।

–তাই তো,,এই লজিক আমার মাথায় আগে আসেনি কেন?

–কারণ তুমি বোকা।হিহি,

–হিহি,,তুমি আমাকে যতটা বোকা ভাবো জনাব আমি ততটা বোকা নই।প্রুফ চাও,,ওয়েট।
এই ধরো তুমি বাইরে যেমন ভিতরে অন্য রকম।বাইরে হাসিখুশি সাদাসিধা বাচ্চা একটা ছেলে দেখাও কিন্তু ভিতরে খুবই চালাক প্রকৃতির মানুষ।যেমন তেমন চালাক নয় ভয়ংকর চালাক।কোনো কিছুতেই তোমার কিছু যায় আসেনা।নিজেরটা ঠিক থাকলেই হলো।আর এই যে এত ভালোবাসা দেখাও তুমি,,তোমার ভালোবাসার চাইতে পাগলামি বেশি।

–তুমি বলতে চাও আমি তোমাকে ভালোবাসি না?

–বাসোনা কে বলেছে বাসো।তবে ভরসা করোনা।অনেক ইনসিকিউরড ফিল করো।বেধে রাখতে চাও।জানো তো অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।বাট আমি ভিতরে যেমন বাইরে তেমন।তুমি আমার ভিতর বাহির দুটোই জানো।একদম খোলা মেলা বই।কিন্তু আমি তোমার ভিতরটা এখনো ছুতে পারিনি।তুমি ছুতে দেওনি।আমি শক্ত মনের হলেও আমারও কিছু দূর্বলতা আছে।যেখানে আঘাত করলে আমি শত শত টুকরো হয়ে যাবো যার টুকরো খোজেও পাওয়া যাবেনা।আমি ধ্বংস হয়ে যাবো।তার মধ্যে অন্যতম দূর্বলতা তুমি।তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দেও তবে আমি,,,

–সামু কি বলছো আমি তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারিনা।এসব ভাবতেও চাইনা।আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।

–তুমি আমাকে ছাড়বে না।তোমার উপর আমার সে বিশ্বাস থাকলেও তোমার রাগ,জেদের উপর আমার বিশ্বাস নেই।তুমি রাগের বশে যা খুশি করতে পারো।ভালোবাসার কাছে হারলেও রাগের কাছে তুমি হারবেনা।সেটাই আমার ভয়।অনেক ভয় হয় জানো তো,,

আদি আর কিছু ভাবতে পারছেনা।সত্যিই এই রাগ ওর জীবন ধ্বংস করে দিবে না তো?

???

দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ ধরে।ক্লাস শেষে জানভি সামুকে বললো,
–দোস্ত আমার একটু তোর হেল্পের প্রয়োজন।

–হ্যা,বল।

–আম্মুর জন্য ওষুধ নিতে হবে,,কিন্তু ওষুধটা এখানে পাওয়া যায়না।কিছুটা দূরে যেতে হবে।আমার একা যেতে ইচ্ছে করছে না,তুই সাথে চল না প্লিজ।

–কিন্তু আমাকে তো এখন বাসায় যেতে হবে।

–ওষুধ টা আমার নিতেই হবে।খুব দরকার।প্লিজ চল।

সামু কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
–ঠিক আছে চল।

ওদের গাড়ি একটা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামলো।এখানে ফার্মেসী আছে বলে মনে হচ্ছে না।তাই সামু জানভিকে জিজ্ঞেস করলো,
–ওই কোথায় এসেছিস?এখানে কি ওষুধ পাওয়া যাবে?

–হুম এখানেই পাওয়া যাবে।চল।

কিছুক্ষণ ইতস্তত করে সামুর ইচ্ছে না থাকা স্বত্তেও বন্ধুর মন রাখতে যাচ্ছে।দুতলা বিল্ডিংয়ে উঠে কাচের একটা বড় গেইট দেখতে পেলো।সেখানে একজন ওয়াচম্যান দাড়িয়ে আছে।সামু জানভিকে ফিসফিস করে বললো,
–ওই এখানে কি??

–এখানেই পাওয়া যাবে।না পেলে আমি শেষ।তুই ভয় পাস না।

সামু কিছুই বুঝতে পারছেনা।জানভি একটা কার্ড বের করে ওয়াচম্যানকে দেখাতেই ওদের ঢুকতে দিলো।ভিতরে ঢুকে কিছুটা জায়গা ফাকা তারপর দেখলো কিছুটা শোরগোল শুনা যাচ্ছে।সামু জানভির হাত চেপে ধরে।
–জান আমার ভয় লাগছে।কোথায় এসেছি।আগে জানলে আমি আসতাম না।

–বেকুব ভয় পাচ্ছিস কেন?ভিতরে যাবো কথা বলে নিয়ে চলে আসবো,,

–কিসের মেডিসিন বলতো?

জানভি কিছুটা হেসে বললো,
–তুই বুঝবি না।নাম শুনলে হার্ট এটাক করবি।তাই চুপচাপ থাক।

চারদিকে অনেক ছেলে মেয়ে,,সবাই মর্ডান ড্রেস পড়া।হৈ-হুল্লোড় করছে।গান বাজছে।সামু বুঝে গেলো ও কোনো ক্লাবে আছে।কিন্তু এই ক্লাবে কি নিতে এসেছে জানভি।জানভিকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই জানভি ওকে দাড়াতে বলে কয়েকজন ছেলে মেয়ে একটা টেবিলে গোল করে বসে আছে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।সেখানে গিয়ে কথা জোরে দিলো।কি বলছে সামু শুনতে পারছে না।সামু ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর খুব ভয় লাগছে।কিছুক্ষণ পরে আর না পেরে জানভিকে ডাকতে লাগলো কিন্তু জানভি চিন্তিত ভংগীতে কি যেন বলছে ওদের সাথে।সামুর কথা শুনছেই না।কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে জানভিকে ফোন দিলো কিন্তু রিসিভ করছে না।কত মানুষ জন ওকে ওভার টেক করে যাচ্ছে সামুর আর ভালো লাগছেনা।চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।কিন্তু ওখান থেকে বেরিয়ে গেইটের সামনে যেতে নিলেই একটা ছেলে ওর সামনে এসে দাড়ায়।কি যেন বিরবির করে বলছে।সামুর বিষয়টি ভালো ঠেকছেনা।তাই অন্য পাশে গিয়ে দাড়ালো।কিন্তু ছেলেটা সেখানেও চলে গেলো।ওর কাছে গেলেই সামু দু’হাতে জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় ছেলেটাকে।ছেলেটা এতে ক্ষেপে যায় আর আজেবাজে কথা বলতে থাকে।সামু কিছুটা ঘাবড়ে যায়।ওর সামনে আরো দুজন ছেলে এসে দাড়ায়।এমন একটা জায়গায় তিনজন নেশাগ্রস্ত মানুষের সাথে লড়াই করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।তাই উল্টো দিকে হাটা ধরে ওরাও ওকে ফলো করছে।সামুর হাত পা,শরীর কাপছে।পা আটকে যাচ্ছে বারবার।সামনে একটা ওয়াশরুম দেখতে পেয়ে দৌড়ে ঢুকে যায় ভিতরে।ছেলেগুলোও দৌড় দেয় কিন্তু ততক্ষণে সামু দরজা লক করে ফেলছে।সামুর ভয়ে সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠছে।ওরা দরজা ধাক্কাচ্ছে।সামু তাড়াতাড়ি জানভিকে ফোন দিলো।কিন্তু জানভি ফোন তুলছে না।মেসেজ করেও কাজ হচ্ছেনা।এদিকে ওরা দরজা ধাক্কাচ্ছে মনে হচ্ছে ভেঙে ফেলবে।সামুর মাথা কাজ করছেনা।ও আদিকে ফোন করলো।এদি জানতে পারলে ওকে খুন করবে তবুও এখন আদির চেয়ে ওরা বেশি ডেঞ্জারাস।আদিকে ফোন দিতেই রিসিভ করলো।আদি অফিস থেকে বাসায় ফিরছে।

–হ্যালো,,সামু,

সামু কাদতে কাদতে বললো,
–কোথায় তুমি?

আদি সামুর কান্না শুনে ব্রেক কষে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–সামু কি হয়েছে জান আমার কাদছো কেন?

—আদি আমি বিপদে পরেছি।

সামুর কথা শুনে আদি ঘাবড়ে গেলো।
–সামু কি হয়েছে,,,কোথায় তুমি?তুমি কি ভার্সিটিতে না রাস্তায়?টেল মি ডেম ইট।

সামু কান্না করতে করতে বললো,
–আমি জানি না কোথায় আছি,,জানভি আমাকে ওষুধ কিনার কথা বলে একটা ক্লাবে নিয়ে এসেছে।আমি যখন দেখলাম এটা ক্লাব আমি ওকে রেখে একাই চলে আসছিলাম।তখন কয়েকটা ছেলে আমার পিছু নেয়।

অজানা ভয়ে আদির হাত-পা কাপতে শুরু করে,
–ছেছেছে,,,লে,,?

–হ্যা,আমি ওয়াশরুমে দরজা লক করে আছি।ওরা বাইরে। আমার খুব ভয় করছেম

–সামু রিলেক্স,ভয় পেওনা।আগে বলো কিভাবে ওখানে গিয়েছো,,জায়গাটা কোথায়?আমি আসছি।

–ড্রাইভারকে নিয়ে এসেছি।মেইনরোডের সামনে ৫তলা বিল্ডিংয়ের ২তলায়।

–আচ্ছা আমি ড্রাইভারের কাছ থেকে ঠিকানা নিচ্ছি।তুমি ফোন কাটবেনা।

–আচ্ছা,তুমি তাড়াতাড়ি এসো।

আদি ড্রাইভারের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে রকেটের গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে।ড্রাইভারকে বলছে ক্লাবের যেতে কিন্তু কার্ড ছাড়া ওনাকে ঢুকতে দিচ্ছেনা।ছেলেগুলো দরজার বাইরে থেকে নানান কথা বলছে।আদি এত স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে তবুও মনে হচ্ছে রাস্তা শেষ হচ্ছেনা।সামুর সাথে ফোনে কানেক্টেড ছিলো।বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে দুতলায় উঠে গেলো।গেইটের সামনে গিয়ে ওয়াচম্যানকে সজোরে ধাক্কা মেরে ভিতরে ঢুকে গেলো।

সামু,,আমি ক্লাবে এসে পরেছি।ভয় পেওনা।কোনদিকে আছো সেটা বলো।
সামুর ভয় পুরোপুরি কেটে গেছে।ও আদিকে সবটা বললো।
আদি ওয়াশরুমের বাইরে ৩জন ছেলে দেখতে ওদেরকে হালকা ধোলাই দিয়ে সামুকে বললো,
–আমি দরজার বাইরে,বাইরে এসো।

সামু আস্তে আস্তে দরজা খোলে আদিকে দেখে দৌড়ে বের হয়ে এসে আদিকে জাপটে ধরে।সামুর সারা শরীর কাপছে।আদি ভয়ে,চিন্তায় ঘেমে একাকার।ও সামুকে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
–ভয় পেওনা,আমি এসে গেছি জান।

তারপর সোজা করে দাড় করিয়ে ছেলেগুলো কে দেখিয়ে বললো,
এরা?
সামু হ্যা বললো।আদি সামুকে ছাড়িয়ে ওদের একজনকে ধরে কাচের টেবিলে মাথা বারি দিলো।সাথে সাথেই ছেলেটা রক্তাক্ত মাথা নিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো।বাকি দুইজনকে ধরে দেয়ালে আঘাত করে চিতকার করে বললো,
–কুকুরের বাচ্চারা,,তোরা আমার বউয়ের দিকে হাত বাড়িয়েছিস?বাজে নজর দিয়েছিস?তোদের চোখ তুলে নিবো।
ততক্ষণে ভিড় জমে গেছে।মারামারির এক পর্যায়ে কিছু লোক আদিকে ওদের থেকে দূরে সরাচ্ছে।ভীর ঠেলে জানভি এলেই আদি ওকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।ওর গালে সজারো একটা থাপ্পড় মেরে বলে,
–তোকে যদি আর সামুর আসেপাশে দেখি কেটে কুচিকুচি করে ফেলবো।মনে রাখবি।

বলেই সামুকে টানতে টানতে বেরিয়ে গেলো।

চৌধুরী বাড়ির লিভিংরুমে পিনপতন নীরবতা বিরাজমান।সবাই বসে আছে আর সামু মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে। আদি হাতের মুঠো শক্ত করে এদিক সেদিক পাইচারি করছে।মাঝেমধ্যে কপালে আংগুল ঘষছে যাতে রাগটা কমাতে পারে।

আদি নীরবতা ভেঙে বললো,
–বাবা বুঝতে পারছো কি সাংঘাতিক বন্ধু পাতিয়েছে।ওই মেয়ে ড্রাকস খায়।ড্রাকস নিতে ক্লাবে গিয়েছিলো আর সেখানে সামু নাচতে নাচতে চলে গেছে।

আদির বাবা বললো,
–ও তাও বলছে ও এসবের কিছুই জানেনা।ওকে মায়ের মেডিসিনের কথা বলে জোর করে নিয়ে গিয়েছে।

–যাবে কেন?কত বড় অঘটন ঘটতে যাচ্ছিলো বুঝতে পারছো?

সামুর পাশ থেকে নিশি বললো,
–ভাইয়া,সামু তো ঠিক আছে।এখন আর ওকে বকাবকি করিস না।আসার পর থেকেই বকে যাচ্ছিস।এমনিতেই ভয় পেয়ে আছে।

আদির বাবা বললো,
–হ্যা,,অনেক হয়েছে।বলছে তো ভুল হয়েছে আর এমন হবেনা।এবার ছাড় মেয়েটাকে।

আদির মা বললো,সামু যা ফ্রেশ হয়ে নে।
সামু আড়চোখে তাকাতেই আদি হনহন করে উপরে চলে গেলো।সামুও পিছু পিছু হাটা ধরলো।

আদি কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বেডে শুয়ে আছে।গভীর ভাবে কিছু ভাবছে।সামু আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে বসে ওর চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
–তুমি কি এখনো রেগে আছো?

আদি হাত সরিয়ে চোখ মেলে বললো,নো,,কেন এখন কি আমাকে বকবে,,না মানে সবসময় তো এমনি করো।আমার রাগ কমলে তোমার রাগ দেখানো শুরু হয়।

সামু আদির মাথায় মাথা ঠেকিয়ে বললো,
–না,,কারণ এবার দোষ আমার ছিলো।

আদি একটানে সামুকে বুকে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
–জানো কত ভয় পেয়েছিলাম আমি।আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো।

–আমারও,, আমার মনে হচ্ছিলো আমি আর তোমার কাছে ফিরতে পারবোনা।অনেক ভয় পেয়েছিলাম।

–থাক ভুলে যাও এসব।

কিছুক্ষণ পর–
–সামু,,
–হুম।
–আমি ভাবছি আমরা বেবি নিবো।
–বেবি!!আদি কি বলছো তুমি?আমার পড়াশোনা,,,
–আই নো তোমার গ্রাজুয়েশন শেষ হয়নি।বয়স ২০হয়নি,,আমার ২৭হয়নি কিন্তু আমার বেবি চাই।প্লিজ না করোনা।সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হবে না।আমার এক ফ্রেন্ডের বেবি হয়েছে অনেক কিউট।ওকে দেখে,,

–ওকে দেখে তোমারও ইচ্ছে হচ্ছে।তাই তো,,আচ্ছা ঠিক আছে।

–রিয়েলি,,চলো বেবির নাম ঠিক করি,,

–আমি ঠিক করে ফেলেছি।আমার প্রথম মেয়ে হবে।আর আমাদের প্রিন্সেসের নাম হবে আদিবা।আদির মেয়ে আদিবা,,

–ওয়াও,,ওকে ডান।
(সরি বেব,,এখন আমিও বেবি চাইনি কিন্তু তোমাকে ঘরবন্দী করার এর চেয়ে ভালো কোনো ওয়ে নেই।আমি চাই তোমার লাইফ আমি, আমার পরিবার আর এই বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক।আর একমাত্র বেবিই পারে তোমার স্টাডি বন্ধ করে বাসায় রাখতে।তোমাকে নিয়ে আমি কোনো রিক্স নিতে চাইনা)

এক সপ্তাহ পর রাতের বেলা —
আদি লিভিং রুমে ওর মা-বাবার সাথে বসে আছে।আহনাফ চৌধুরী বুঝতে পারছে গুরুতর কিছু।

–বাবা,,সামু আর স্টাডি করবেনা?

–কিহ!!

–হ্যা,,আমি চাইনা সামু আর স্টাডি করুক।

–আদি তোর মাথা ঠিক আছে।সামু এসব বলেছে?ও বললেও আমি শুনবোনা।

–না সামু বলেনি,,আমি বলেছি।আমি চাইনা ও আর পড়ুক।ওর বাইরে যাওয়ার দরকার নেই।

–আদি তুই ওই সামান্য ঘটনার জন্য এমন করছিস?আমি তোর এই অন্যায় আবদার মেনে নিবোনা।

–বাবা আমার বউ,,আমি ডিসিশন নিবো।

–আদি!!সামু আমার মেয়ে।ওর সাথে কোনো অবিচার আমি হতে দেবোনা।

চিতকার শুনে সবাই ড্রয়িং রুমে চলে এলো।
সামু সিড়িতে দাড়িয়ে সব শুনেছে।সামু এগিয়ে এসে বলল,
–আদি তুমি এই ডিসিশন নেওয়ার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছো,?

–আমি তোমার ভালোটাই ভেবেছি।

–এতো ভালোই ভেবেছো যে আমার স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করছো।
আমাকে ঘরবন্দী করতে চাইছো?

–আমি বলেছি তুমি আর পড়বে না ব্যাস পড়বেনা।

–আদি আমি তোমার স্ত্রী,দাসী নই।তুমি যা বলবে তাই মেনে নিবো?তোমার অনেক অন্যায় আবদার এতোদিন মেনে এসেছি।টু শব্দ করিনি।কিন্তু তুমি আজ অনেক বাড়াবাড়ি করছো,,।

–অন্যায় আবদার?তুমি,,

–হ্যা নয়তো কি,,এটা করোনা,ওটা করোনা।পার্টিতে যাবেনা,,বাপের বাড়ি বেড়াবে না,,তাহলে সারাজীবন থেকে যাও,,কোচিং-এর স্যার ফোন করেছে কেন,,ওই কোচিং-এ আর পড়বেনা,কাদবে না,,কাদলে খুন করে ফেলবো,,তাই আর তোমার সামনে কাদিনি,আড়ালে কেদেছি।কিন্তু সে কান্না তোমাকে স্পর্শ করেনি কখনো।অনেক কাদিয়েছো,কষ্ট দিয়েছো,,এখন ফ্রেন্ড ড্রাগস নেয় তাই আমি পড়বোনা।তোমার কথামতো উঠছি বসছি তুমি কি করেছো।
আর হ্যা,,বেবি,,ওইসব বানানো গল্প তাই না আদি?আর কত এভাবে আমাকে বোকা বানাবে?কেন আদি কেন?তুমি আমার অস্তিত্বের বিলীন করে দিয়েছো দিনের পর দিন।
আমি আর পারছিনা,,আদি,,তুমি আর কত আমার সাথে এমন করবে?(কাদতে কাদতে)

সবাই সামুর কথা শুনে স্তব্ধ।আদি সামুর সাথে এসব করেছে,এত অন্যায় করেছে,,কেউ কিচ্ছু জানেনা।
আদি বাবা ক্ষেপে উঠলেন।
–আদি তুই দিনের পর দিন মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিয়েছিস?তুই এতবড় অমানুষ?তুই আমার ছেকে?তোর জন্য এই পরিবারের জন্য কি না করেছে ও?

–আমি ওর হাসব্যান্ড আমার জন্য করবেনা তো বাইরের লোকের জন্য করবে?কার জন্য করবে তুমি সামু?

–আদি তুমি সিক।তোমার সাথে কোনো সুস্থ মানুষ থাকতে পারেনা,,

–কি বললে,,?(সামুর দিকে তেড়ে গিয়ে)

–তোর মতো অমানুষ ওকে ডিজার্ভ ই করেনা।অসভ্য ইতর ছেলে।আমি নিজের হাতেই ওর জীবনটা নষ্ট করেছি।

–তাই নাকি সামু?(সামুর দিকে তাকিয়ে)

সামু মাথা নিচু করে রেখেছে।
আদি চিতকার করে উঠলো,, কথা বলো সামু,,

সামুরও প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো।
–কি বলবো?কি শুনতে চাও?তুমি আমার বিশ্বাস ভালোবাসা নিয়ে খেলা করেছো,,তোমার সাথে কি করে থাকবো আমি যেখানে আমার ইচ্ছে অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে।সারাজীবন কি কি করবে আমার সাথে তা আর বুঝতে বাকি নেই।এমন করলে কিভাবে থাকবো তোমার সাথে?

আদির মাথা গরম হয়ে গেলো।কপালের রগ ফুটে উঠেছে।মাথায় রক্ত টগবগ করছে।
–কি বললি তুই আমার সাথে থাকা যায়না?
বলেই সামুর গালে সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারলো।সামু ছিটকে পড়ে গেলো।নিশি ওকে তুলে দাড় করালো।
সাথে সাথেই আদির বাবা আদির দুগালে দুটো থাপ্পড় দিলো।পুরো বাড়ি স্তব্ধ হয়ে গেলো সামু ঘটনা বুঝতে পেরে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
–কুলাঙ্গার,বদমাইশ ছেলে, তুই এসব করছিস ওর সাথে এতদিন?তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাই আমার সামনে এভাবে তুই সামুর গায়ে হাত তুললি?
কোন পাপে যে তুই আমার ছেলে হয়ে জন্ম নিয়েছিলি,,আর দ্বিতীয় পাপ করেছি তর মতো কুলাঙ্গারের সাথে সামুর মতো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে।ওর সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।এই অপরাধের ক্ষমা হয়না।দূর হয়ে যা,,আমার সামনে থেকে।

আদি সামুর দিকে বিস্ফোরিত চোখে একবার চেয়ে উপরে চলে গেলো।সামু আদির পিছনে যেতে নিলেই আদির বাবা ওকে আটকে দেয়।
–তুই আজকে আর ওর আশেপাশে যাবিনা।গেস্ট রুমে থাকবি।
আর পারলে আমাকে ক্ষমা করিস।
বলেই তিনি চোখের কোনে পানি মুছে নিজের রুমে চলে গেলেন।সামু বাবার কথা অমান্য করতে পারেনি।তাই একবার উপরের দিকে চেয়ে নিচের গেস্ট রুমে চলে গেলো।

আদি অনেক রাত পর্যন্ত রুমে পাইচারি করছে।সামুর আসলে ওর সাথে কঠোর বুঝাপড়া আছে।কিন্তু সামু আসেনি,,
মাঝরাতে আদি কাউকে ফোন করে বললো, আগামীকাল সকালের ফ্লাইটে সিডনির টিকিট কনফার্ম করতে।আর্জেন্ট।
তারপর উকিলকে ফোন করে বলে,
–ডিভোর্স পেপার রেডি করুন।আগামীকাল সকালেই সব রেডি চাই।আমি ইমেইল করে ডিটেইলস পাঠিয়ে দিচ্ছি।
তারপর ফোন রেখে দিয়ে বললো,
–আমার সাথে থাকা যায়না।তাহলে থাক তুই তোর মতো।

চলবে…