Tuesday, July 8, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1856



অনুভূতি পর্ব ৫১

0

অনুভূতি
পর্ব ৫১
মিশু মনি
.
৮৪.
পূর্ব, সায়ান ও আরাফ মেঘালয়কে দেখেই ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলো। যেন কতদিন পর প্রাণের বন্ধুকে দেখছে ওরা। তিনজনই একসাথে নানান প্রশ্ন শুরু করে দিলো।

মিশু এসে দাঁড়ালো পিছনে। পূর্ব মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, “পাত্র তো এসে গেছে মহারাণী। এবার আমাদের ট্রিট দেন।”

মিশুর করুণ মুখটা একটু স্বাভাবিক হলো। ও হাসার চেষ্টা করে বললো, “দিবো দিবো। রোদকে আসতে বলোনি তুমি? ও এখনো এলো না যে?”
-“এসে যাবে। আজকে অফিস শেষ করেই আসবে। দারুণ মজা হবে মনেহচ্ছে।”

আরাফ বললো, “মজা না ছাই। বাচ্চার আকিকা আর বিয়ে দুটোই একসাথে হলে না মজা লাগত।”

সবাই হেসে উঠলো শব্দ করে। রান্নাঘর থেকে আন্টি বেরিয়ে এসেছেন সেটা কারো খেয়ালই হলোনা। আন্টিও মুচকি হেসে বললেন, “তোমরা পারোও বটে। সায়ান,ডেকোরেশনের কাজ কদ্দুর হলো?”
-“এইতো আন্টি রকেট গতিতে চলছে। আজকেই ওরা বিয়ের গেট আর বাইরের লাইট লাগানো কমপ্লিট করে ফেলবে।”
-“আর ওয়েডিং প্লানার ঠিকঠাক মত কাজ করছে তো? দেখো কালকে থেকেই কিন্তু বাসায় গেস্ট আসা শুরু করবে। আমি চাচ্ছিলাম আজকেই যদি গেটের কাজটা রেডি হতো তবে ভালো হতো। আমার ভাবি আর ভাতিজিরা সবাই অনেক দিন পর আসবে।”

সায়ান আনন্দে লাফিয়ে উঠে বললো, “আন্টির কত্তগুলা ভাতিজি গো? আমার লাইনটা এবার ঠিক হবে তো?”
আন্টি হেসে বললেন, “সে হবে আশাকরি। মেঘালয়ের কাজিনের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আর তাছাড়া ওর সুন্দরী শালিকা আছে।”
সায়ান একবার মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, “নাহ, বাচ্চাকাচ্চা আর পালতে পারবো না বাবাহ। নিজে হাতে মানুষ করবো,পরে সেই বাচ্চাই আমায় ফেলে বড়লোকের হাত ধরে ভেগে যাবে। গেবন শূন্য!”

মেঘালয় ও ওর বন্ধুরা মুখ টিপে হাসলো। মিশু মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেললো। যদিও ওর কোনো দোষ নেই প্রয়াসের ব্যাপারে। তবুও কথাটা ওকে উদ্দেশ্য করেই ছোড়া। একটু খারাপ তো লাগবেই। মিশু খেয়াল করে দেখলো মেঘালয় টাওয়েল পড়েই সোফায় বসে আছে। ও প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য মেঘকে বললো, “প্যান্ট পড়বা না?”

মেঘালয় তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো, “আমি কি ন্যাংটা আছি মনেহচ্ছে?”

বলেই ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুললো। ওর বন্ধুরাও মিনমিন করে হাসছে। মিশু আবারো লজ্জায় পড়ে গেলো। এখন কি ওর শুধুই লজ্জা পাওয়ার সময়? একটু একাকীভাবে মেঘালয়ের সাথে কথা বলার সুযোগ পেতো যদি। বড্ড ইচ্ছে করছে একবার সরি বলতে,সবকিছু মিটমাট করে নিতে।

মা বললেন, “তোদের সাথে থাকাটা ঠিক হবেনা। মুরুব্বি আছি এটা তোদের হুশ থাকেনা।”
পূর্ব ফাজলামি করে বললো, “আন্টি মুরুব্বি? আপনাকে মুরুব্বি মনে করার কোনো মানে হয়? কোনো এঙ্গেল থেকে কেউ মুরুব্বি বলবে? এখনো দুইবার বিয়ে দেয়া যাবে।”

আন্টি লাজুক ভঙ্গিতে হাসলেন। ছেলেগুলো ভারি দুষ্টু। এখানে আকাশ থাকলে আরো বেশি দুষ্টুমি চলতো। মেঘের বাবাটা ছেলেপেলে কাছে পেলে একেবারে বাচ্চাছেলের মতন হয়ে যায়। লোকটা একা একা অফিসে কি করছে কে জানে! উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন করার জন্য রুমে গেলেন। বিয়ের ত্রিশ বছর পরও ভালোবাসা আর কেয়ারনেসটা ঠিক আগের মতই আছে। স্বামীর ব্যাপারে উনি অনেক বেশি দূর্বল।

আন্টি চলে যাওয়ার পর সায়ান বললো, “মেঘ,রাতে হুইস্কি চলবে?”
-” MS ড্যানিয়েল”
-“বাসায় আছে?”
-“নাহ, খাইনা অনেক দিন। শুনলাম আমার শ্বাশুরিমা আসবেন আজ বাসায়। ওনার সামনে ওসব খাওয়া টাওয়া কেমন হয়ে যায়না?”

পূর্ব বললো, “তোকে কে খেতে বলছে ব্যাংজাদা? আমরা খাবো আর তুই ইয়ে খাবি,ইয়ে।”
-“আমি আবার কিয়ে খাবো ছাগলজাদা?”

পূর্ব একটু এগিয়ে এলো মেঘালয়ের কাছাকাছি। কিন্তু কাছে এসেও জোরে জোরেই বললো, “কেন? দুধ খাবি। অতি উপাদেয় খাদ্য। তোমার এখন দুধ খাওয়ার সময় বাবু, মদ খেলে বিয়ে হয়না।”

মিশু লজ্জায় নীল হয়ে উঠলো। ওর বন্ধুরা কি সব ফাজলামো শুরু করেছে। সায়ান বললো, “বুন্দু তুমি বিল দিবা,আমরা গিলবো। তোমার এখন ওসব খাওয়ার সময় না। তুমি এখন দুধচা খাবা,দুধকফি খাবা,ছানা,মিষ্টি, মধু এইসব খাবা।”

মেঘালয় হেসে বললো, “এইগুলা কি আমি জীবনে খাইনি যে আজকে নতুন করে খেতে হবে? আর আমার কি বাড়িতে দুধ দেয়া গরু আছে যে এইসব খাবার এভেলেবল?”
-“গরু না থাকুক কিন্তু.. থাক, বাকিটা আর বললাম না। আমি ভদ্র ছেলে।”

মিশু লজ্জায় আর তাকিয়ে থাকতে পারছে না। ছেলেগুলো বড্ড অশ্লীল কথা বলে। ও রুমের দিকে যেতে লাগলো এমন সময় মেঘালয় বললো, “আমার প্যান্ট টা পড়তে হবে। একটু বাইরে যাবো। তোরা বস আমি একটু আসছি।”

ওরা বসে রইলো। মিশু মেঘালয়ের কথাটা শুনে ধীরেধীরে মেঘের রুমের দিকেই যাচ্ছে। মেঘালয় দ্রুত হেঁটে মিশুর পাশ দিয়েই রুমে চলে গেলো। যাওয়ার সময় মিশুর হাতের সাথে ওর হাত হালকাভাবে স্পর্শ করলো। শিউরে উঠলো মিশু। ক্রমশই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছে। ওর ইচ্ছে করলো মেঘালয়ের হাত টেনে ধরতে। কিন্তু মেঘালয় একটু দাঁড়ালো ও না। সোজা গিয়ে রুমে ঢুকলো।

মিশু গিয়ে দরজায় দাঁড়ালো। দেখলো মেঘ প্যান্ট পড়ছে। ও ভিতরে গিয়ে বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে বললো, “একবার কথাও বলা যায়না আমার সাথে?”

মেঘালয় কোনো জবাব দিলো না। মিশু আবার বললো, “তুমি কোথায় ছিলে এই কটা দিন?”
– “থানচি।”

মিশু অবাক হয়ে বললো, “থানচি! তুমি আমাকে রেখে একা একা থানচি ঘুরে এলে!”
মেঘালয় জবাব দিলোনা। মিশুর বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ওর কতদিনের ইচ্ছে থানচি যাবে। সময় হয়ে ওঠেনি যাওয়ার। মেঘালয় ওকে রেখে একাই ঘুরে এলো? এতটা স্বার্থপর কবে হলো মেঘ! খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে ওর। হাত কচলাতে কচলাতে বললো, “নাফাখুম গিয়েছিলে?”
-“হুম”
-“আমিয়াখুম?”
-“হুম”
-“সাতভাইখুম?”
-“হুম”
-“রেমাক্রি?”
-“হুম”

মিশুর গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। গলায় কথা আটকে যাচ্ছে এসে। সাজেকের পর মেঘালয় ওকে নিয়ে শিলং আর নীলগিরি দেখিয়ে এনেছে। মেঘালয় বলেছিলো এরপর থানচি নিয়ে যাবে ওকে। সব সুন্দরেরা নাকি ওখানে লুকিয়ে বসে আছে। অথচ নিজে একা একা ঘুরে আসলো! মিশু বাম হাতের পিঠে চোখ মুছে ঢোক গিললো।

মেঘালয় একবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, “এত কাগজির রস দেখিয়ে লাভ কি? শরবত বানিয়ে খাওয়ালেও ভালো লাগতো। এমনিতেই আজকে খুব গরম লাগছে। যা দেখছি তাই হট লাগছে।”

মিশু হাসবে নাকি রাগবে বুঝতে পারলো না। মেঘালয় এই কথাটা বারবার কেন বলছে? একে তো সব ঘুরে এসেছে শুনে হিংসেয় জ্বলে যাচ্ছে মিশু। তার উপর এভাবে শুধু ফাজলামো করেই যাচ্ছে। রাগ করতেও পারছে না। শুধু মুখটা করুণ করে চেয়ে আছে মেঘালয়ের দিকে।
মেঘ জামাকাপড় পড়ার পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াতে লাগলো। গুনগুন করে গানও গাইছে। মিশুর খুব কান্না পাচ্ছে। একটু কষ্ট দিয়েছে বলে কি এতগুলা কষ্ট দিতে হবে? একা একা সব সুন্দর দেখে আসলো!

মেঘালয় চুল আচড়ানোর পর ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে সোজা বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। মিশুর দিকে একবার তাকালো ও না। মিশুর কান্না বেড়ে গেলো আরো। ও বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে মনেমনে খুব গালি দিতে লাগলো মেঘালয়কে। একবার ওকে বললে কি এমন হতো? মিশুও সাথে গেলে সব ঝগড়া মিটমাট হয়েই যেতো। এভাবে কষ্ট দেয়ার কোনো মানে হয়!

মেঘালয় ও বন্ধুরা মিলে গিটার নিয়ে বসেছে। বারান্দায় বসে গিটারে সুর তোলার চেষ্টা করছে মেঘালয়। আর বাকিরা প্লাস্টিকের বোলের উপর ঢোল তবলা বাজাচ্ছে। পূর্ব দুটো স্টিলের বাটি দিয়ে ঝুনঝুনি বাজাচ্ছে। বাজনা শুনে মিশু আর শুয়ে থাকতে পারলো না। বিছানা থেকে উঠে এসে দাঁড়ালো বারান্দার পাশে। মেঘালয় ওর উপস্থিতি টের পেয়ে গান শুরু করলো,

“তুমি তলে তলে টেম্পু চালাও আমি করলে হরতাল,
আমি করলে হরতাল ভাইয়া,আমি করলে হরতাল,
শুধু ডাইনে বামে ঘোরাও দেইখা তিতা হইলো প্রেমের ঝাল..”

এ আবার কেমন গান! মেঘালয় গান গেয়ে চলেছে আর বন্ধুরা সাথে তাল মিলাচ্ছে। মিশুর কান্না থেমেছে ঠিকই কিন্তু গান শুনে রাগ হচ্ছে রীতিমত।

“তুমি তলে তলে ভেসপা চালাও, আমি বসলে চাক্কা টাল..
এই ভেসপা তোমার ঠেলতে ঠেলতে খইসা গেছে জুতার ছাল..
ফুল কলিরে ফুলকলি..
fool বানাইয়া কই গেলি?
গন্ধ পাইয়া টাকার নেশায় আমারে থুইয়া দৌড় দিলি..
চোখেতে ধূলা দিয়া, বড়লোক করলা বিয়া..
এই জ্বালা মিটাবো আমি ডিজে গানের বেস দিয়া….
আর বলবোওওওওওওও..
আইজ আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়া….”

মিশু রাগে ফুঁসছে আর ওর বন্ধুরা মুখ টিপে হাসছে আর গান গাইছে। এটা কোনো গান হলো? অন্যসময় গাইলে মিশু খুব এনজয় করতো ব্যাপারটা কিন্তু আজকে মোটেও নিতে পারছে না। মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ও দাঁতে দাঁত চেপে রাগে ফুঁসছে শুধু।

সায়ান মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, “আপা বসেন। আপনি উপস্থাপনা করেন আমাদের সংগীতানুষ্ঠানের?”

মিশু কিছু বললো না। এসে পাশে বসে পড়লো মেঘালয়ের। মেঘালয় গান শেষ করে বললো, “আজ আমার শ্বাশুরি মা আসবে নাকি?”
মিশু বললো, “সকালের বাসে উঠেছে, রাত হয়ে যাবে আসতে।”
-“রিসিভ করতে যাবো?”

সায়ান ও আরাফ বললো, “আমরা আছি কি করতে? তোর শ্বাশুরিমা মানে আমাদের ও শ্বাশুরিমা।”
মিশু হেসে বললো, “ওরা এখানেই এসে থাকবে?”
মেঘালয় বললো, “হুম। সব আয়োজন আমাদের বাসায়। ওরা অযথা তোমার বাসায় একা একা কি করবে?”

মিশু আর কিছু বললো না। বউ এ বাড়িতেই থাকবে ব্যাপারটা কেমন যেন হয়ে যায়। বাবা মাকে বলেছিলো কথাটা। কিন্তু আকাশ আহমেদ বলেছেন কোনো সমস্যা নেই। বিয়ে এ বাড়িতেই হবে। বউ এখানে আছে তাতে কি এসে যায়? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বউকেও ওনাদের বাসায় এনে রেখে বিয়ে পড়িয়েছে। রবী ঠাকুর এক ঘর থেকে বের হয়ে হেঁটে হেঁটে অন্য ঘরে গিয়ে বিয়ের মণ্ডপে বসেছিলেন। অত বছর আগে ওরকম করা গেলে এখনও করা যাবে। লোকজন কি বললো তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। এ জন্যই প্রথমদিন বিয়ে পড়ানো হবে,আর বৌভাত হবে দ্বিতীয় দিন। যাতে করে গেস্টরা শুধুমাত্র বৌভাতেই আসতে পারেন। মিশুর বাসায় আলাদা করে আয়োজন করতে গেলে অনেক ঝামেলা কারণ ওর কেউ নেই। একমাত্র মা ও ছোটবোন ছাড়া। আয়োজন করবে কে আর সবকিছু দেখাশোনাই বা কে করবে?

মিশু তন্ময় হয়ে এসব ভাবছিলো। মেঘালয়ের ফোনে টুংটুং করে মেসেজ আসছে। মেঘালয় ফোন বের করে দেখে মিটিমিটি হাসতে লাগলো। মিশু আসার আগেই ও সায়ানকে বলেছিলো, “দোস্ত একটা আইডিতে লগিন কর তো।”
-“কার আইডি?”
-“রিমিকা আহসান।”
-“রিমিকা কে?”
-“আজ থেকে তুই রিমিকা।”
-“আমি রিমিকা মানে?”

মেঘালয় এরপর সায়ানের ফোনে রিমিকার আইডি লগ ইন কর দিয়ে কনভারসেশন দেখতে বললো। মেসেজ গুলা দেখে হো হো করে হেসে উঠলো সায়ান। মেঘ ওকে বলে দিয়েছে যেন একটু পরপর রিমিকার আইডি থেকে ওকে মেসেজ পাঠায়। সায়ান এখন সেটাই করছে। এদিকে মেঘালয় ফোন নিয়ে রিমিকার মেসেজ রিপ্লাই করছে দেখে মিশু রাগে ক্ষোভে জ্বলে যেতে লাগলো।

মেঘালয় বললো, “জ্বলে?”

সবাই হেসে উঠলো। মিশু রেগেমেগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলো। মেঘালয় বললো, “হিংসে হয়? আমার মত হতে চাও?”
পূর্ব বললো, “তবে দুধ খাও।”

বলেই ওরা আবারো হেসে উঠলো। মিশুর মেজাজ গরম হয়ে গেলো। ও মেঘালয়ের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মেসেজ গুলা দেখতে দেখতে প্রচণ্ড রেগে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে একটু সরে এসে বললো, “ফোন আর দিচ্ছিনা।”

মেঘালয় বললো, “সেকি! মেয়েটা ওয়েট করবে রিপ্লাইয়ের জন্য।”
-“নিকুচি করি তোমার রিপ্লাইয়ের। আমার সাথে কথা বলছিলে একবারও এসে?”
-“তাহলে কি আমি ভূতের সাথে কথা বললাম এসে?”
-“ভালো করে কথা বলেছিলে একবার ও?”
-“আমি কি খারাপ করে কথা বলি? সায়ান, পূর্ব তোরাই বলতো আমি কি খারাপ করে কথা বলি?”

মিশুর আরো রাগ হলো। ও রাগে গজরাতে গজরাতে সেখান থেকে চলে গেলো। মেঘালয়ের ফোনটা নিয়েই গেছে সাথে করে। সায়ান ঝোপ বুঝে কোপ মারতে লাগলো। একের পর এক মেসেজ পাঠাতে লাগলো,
“Megh biyeta ki kono vabe cancel kora jayna? ami tmk onk love kori megh. trust me”
মিশু রিপ্লাই দিলো,
” বেহায়া মেয়ে, মেসেজ দেয়া বন্ধ কর নয়তো তোর ঘাড় মটকে রক্ত খাবো মা…”

মেঘালয়ের বন্ধুরা হেসে উঠলো ওর রিপ্লাই দেখে। একজন আর.জে কে বোকা বানাতে পেরে মজা লাগছে ওদের। সায়ান আবারো লিখলো,
“joto gali dao ar jai bolo. I just love you megh. tomar biye vangar bebosta krbo ami. dorkar hle uncle k bolbo. any how I need you. I only love you.”

মিশু রিপ্লাই দিলো, “তুই গু খাইয়া মর কুত্তি,, আরেকবার মেসেজ দিকে তোর দাঁতের জায়গায় দাঁত থাকবে না।”

আবারো হেসে উঠলো সবাই। মিশু দারুণ গালি দিতে পারে তো। ওরা হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে ঢলে পড়তে লাগলো। মেঘালয় বললো, “সায়ান কত ধানে যেন কত চাল?”
সায়ান বললো, “যত চালে যত ময়দা…”
– “হা হা হা”

চলবে..

অনুভূতি পর্ব ৫০

0

অনুভূতি
পর্ব ৫০
মিশু মনি
.
৮১.
মিশু মেঘালয়ের বিছানায় শুয়ে ওর বালিশ চেপে ধরে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে। এই চাদর আর বালিশে মেঘালয়ের স্পর্শ মিশে আছে, ওর শরীরের গন্ধ মিশে আছে। খুব করে অনুভব করছে মেঘালয়কে। ও কোথায় আছে কিছুই জানেনা কেউ। ওর সব বন্ধুদেরকে কল দিয়েছিলো কেউই মেঘালয়ের কোনো খোজ জানেনা। মিশু ক্রমশই অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগলো। একটা মাস ধরে মেঘালয়কে এভোয়েড করেছে ও,সেটা ভেবে নিজের চুল নিজেরই টেনে টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

মিশুর ফোনে প্রয়াস কল দিয়েছে। ও দুবার কল কেটে দেয়ার পরও কল দিচ্ছে। মিশু কান্না থামাতে পারছে না কিছুতেই। বাধ্য হয়েই ফোন বন্ধ করে রেখে দিলো। মেঘালয়কে একবার দেখার জন্য ছটফট করছে ও। এখন সামনে পেলে দুই পা ধরে ক্ষমা চাইতো মেঘালয়ের কাছে। তবুও ওকে চাই,খুব করে চাই।

মেঘালয়ের মা এসে মিশুকে খাবার তুলে খাওয়ালেন। বললেন, “মেঘালয় এমন করার ছেলে না। কি হয়েছিলো বলবি?”
-“আমি ওকে অনেকদিন যাবত এভোয়েড করছিলাম। ইচ্ছে করেই করিনি,আমি ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এই ব্যস্ততা আর ক্যারিয়ারের অজুহাতে অনেকবার খারাপ আচরণ করেছি ওর সাথে।”
-“আমার ছেলেটা অবহেলা সহ্য করতে পারেনা।”
-“সেটা কেউই পারেনা। আর আমিতো বারবার ওকে আমার কাছ থেকে…”

কথাটা বলতে গিয়ে মিশু থেমে গেলো। ওকে জানোয়ারের সাথে তুলনা করার কথাটা মনে পড়ে গেলো ওর। যে ছেলেটার বুকে লাথি দেয়ার পরও মেঘালয় ওর পায়ে চুমু দিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো। টানা এক ঘন্টা পা টিপে দিয়েছিলো, মাথায় জলপটি দিয়েছিলো সারা রাত জেগে থেকে। এই ছেলেটাকে কিভাবে এত কষ্ট দিতে পারলো ও? নিজের ইচ্ছে করছে নিজেকে আঘাত করতে।

মা বললেন, “টেনশন করিস না। ও যেখানেই থাকুক, কতদিন এভাবে থাকবে? এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ? তারপর ঠিকই ফিরে আসবে। আমাকে ছেড়ে ও থাকতে পারেনা, আর তোকেও ও অনেক ভালোবাসে। আমার বিশ্বাস তোকে ছেড়েও থাকতে পারবে না। সম্পর্কে এরকম হয়।”

মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মনেমনে বললো, এটা শুধুই সম্পর্ক ছিলোনা। মেঘালয়ের পুরো পৃথিবী জুড়ে শুধু আমিই ছিলাম। আর আমরা তো তথাকথিত প্রেমিক প্রেমিকা নই,আমরা স্বামী স্ত্রী। এই বাঁধন তুচ্ছ করার সাধ্য আমাদের নেই।
মিশু বললো, “আম্মু আমার একটা কথা রাখবে?”
-“কি কথা?”
-“আপনারা বিয়ের সব আয়োজন করে ফেলবেন প্লিজ? সব জায়গায় ছড়িয়ে দিন মেঘালয়ের বিয়ের কথা। ও যেখানে থাকুক ছুটে চলে আসবে।”
-“ওকে ছাড়াই বিয়ের আয়োজন করবো?”
-“হুম। ও তো অভিমান করে দূরে ডুব মেরে আছে,যখন দেখবে সব জায়গায় প্রচার হয়ে গেছে বিয়ে হচ্ছে। ও কিভাবে দূরে লুকিয়ে বসে থাকবে? আমাকে ছেড়ে কয়দিন ই বা থাকতে পারবে মেঘ? আর বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট হয়েছে শুনলে দূরে থাকতেই পারবে না।”

মা হেসে বললেন, “ভালো আইডিয়া তো। মেঘালয় কতদিন অভিমান করে থাকবে? আমরা এদিকে বিয়ের সব আয়োজন করে ফেলি,দেখা যাবে বিয়ের আগেই হুট করে এসে হাজির। এত বিশাল আয়োজন হবে যে,মেঘ নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাবে।”

মিশু শ্বাশুরিমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমাকে ভূল বুঝোনা প্লিজ আম্মু। আমি নাহয় একটু ভূল করেছি। শুধরানোর সুযোগ দাও আমায়।”
-“পাগলী মেয়েটা। চিন্তা করিস না। বিয়ের ব্যবস্থা করছি দ্রুত। তুই এখানেই থাক,সবার সাথে এনজয় কর।”
-“সবার সাথে এনজয়? অথচ যার বিয়ে তার খবর নাই।”
মা হেসে উঠলেন। মিশুর ও হাসি পেয়ে গেলো।

৮২.
বিয়ের আয়োজন দ্রুত গতিতে শুরু হয়ে গেলো। আকাশ আহমেদ নিজে গিয়ে সায়ান, আরাফ ও পূর্ব সবাইকে নিয়ে এসেছে বাসায়। যেহেতু আর নিজস্ব কোনো লোক নেই। এখন সমস্ত আয়োজন এদের সবাই মিলে করতে হবে।দুদিন কেটে গেছে। মেঘালয় কোথায় আছে কেউ বলতে পারছে না। সে যেখানেই থাকুক, পত্রিকায় ইতিমধ্যেই খবর প্রকাশিত হয়ে গেছে, “জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মেঘালয় আহমেদের সাথে জুটি বাঁধতে চলেছেন আর.জে মিশু।”

এই শিরোনামে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে পাত্রের কোনো খোঁজ নেই। মিশু নিজের ওয়ালেও স্ট্যাটাস দিয়ে দিয়েছে, “মেঘালয়ের সাথে সম্পর্কটা প্রায় বছর খানেকের। ভেবেছিলাম আরো দেরিতে বিয়ের পিড়িতে বসবো, কিন্তু বাবা মায়ের কথা ভেবে তাড়াতাড়ি করতে হচ্ছে। আকাশ আহমেদের মতন বাবা আর বর্ষা আহমেদের মতন মাকে দূরে রাখা অসম্ভব ব্যাপার। আর মেঘালয় আহমেদ? সে কথা আর নাইবা বললাম। একটু না দেখলেই যেন দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।”

সবখানে ভাইরাল হয়ে গেলো কথাগুলি। মেঘালয় নিউজ দেখে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারলো না। তার অনুপস্থিতিতে এসব কি ছড়িয়েছে? ওকে ছাড়াই বিয়ের আয়োজন করে ফেলেছে এটা কেমন কথা! পাত্রই নাই তাহলে বিয়ে হবে কার সাথে? হাসিও পাচ্ছে,কষ্টও হচ্ছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার। মা বাবাও মিশুর সাথে পাগলামি শুরু করে দিয়েছেন।

তিনদিনের মাথায় মেঘালয় বাসায় এসে হাজির।

৮৩.
মিশু মেঘালয়ের রুমে শুয়ে শুয়ে কি যেন ভাবছে। এমন সময় দরজায় একটা মানবছায়া দেখে চমকে উঠলো। মেঘালয়!

মিশু লাফিয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে এসে জাপটে ধরলো মেঘালয়কে। জড়িয়ে ধরেই কেঁদে ফেললো। কান্নার জন্য কথাও বলতে পারলো না। অনেক্ষণ ধরে কাঁদতে কাঁদতে কাঁপছে রীতিমত। মেঘালয় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিশুকে ধরলো ও না একবার। উচিৎ শিক্ষা হয়েছে মেয়েটার। অনুশোচনায় দগ্ধ হোক,তারপর…

মিশু বললো, “কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি আমায় ফেলে? আমি তো মরেই যেতাম তোমায় ছাড়া। তুমি জানোনা এই মেয়েটা তোমাকে ছাড়া কতটা অসহায়? এভাবে কেউ ডুব দেয়?”

মেঘালয় মনেমনে হাসলো। এমন টাই হওয়া স্বাভাবিক। প্রিয় মানুষ কাছে থাকলে তার গুরুত্ব বোঝা যায়না। আর বেশি ভালোবাসা পেলে সবাই হজম করতে পারেনা,বদহজম হয়ে যায়। মিশুর গায়ে নতুন বাতাস লেগেছে, মেঘালয়ের গুরুত্ব বোঝার মত অবস্থা ওর ছিলোনা। সেজন্যই কিছুদিনের জন্য ডুব মারতে বাধ্য হয়েছিলো মেঘ।

মিশু বললো, “আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও মেঘ। তবুও আমাকে ছেড়ে যেওনা কোথাও।”
মেঘালয় মিশুকে ওর বুক থেকে তুলে দাড় করিয়ে দিয়ে নিজে এসে বিছানায় বসলো। এসি টা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “উফফ কি গরম আজকে! যা দেখছি তাই হট লাগছে!”

মিশুর কান্না এখনো থামেনি। মেঘালয়ের মুখে এমন কথা শুনে ও কান্নারত অবস্থায়ই ফিক করে হেসে ফেললো। মেঘালয় গায়ের শার্ট টা খুলে সোফার উপর ছুড়ে মারলো। তারপর দুহাতে মাথার চুলগুলো ঠিক করতে লাগলো। মিশু ওর উন্মুক্ত বুকের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠলো একেবারে। কতদিন এই রোমশ বুকটা দেখেনি ও! মেঘালয় আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছে দেখতে। চুলগুলো বড় হয়ে গেছে,দাড়িও বড় হয়েছে। তবুও কি বিপজ্জনক রকমের হ্যান্ডসাম লাগছে ছেলেটাকে।

মিশু উন্মাদের মতন ছুটে এসে আচমকাই মেঘালয়ের কোলের উপর বসে ওর বুকে মুখ ডুবিয়ে শরীরের ঘ্রাণ নিতে লাগলো। মেঘালয় থতমত খেয়ে গেলো এমন আচরণে। বাহ! মাত্র কয়েকদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখাতেই একেবারে হোমিওপ্যাথি ওষুধের মতন কাজ করেছে। ওর হাসি পেয়ে গেলো কিন্তু হাসলো না। মিশুকে দূর্বল করে দেয়ার জন্যই ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলো। ওর বিশ্বাস ছিলো, মেঘালয়ের শূন্যতা মিশুকে দহনে দগ্ধ করবে ঠিকই। সেই বিশ্বাসই সত্যি হলো।

মিশু মেঘালয়ের বুকের লোমে নাক ঘষতে লাগলো। মেঘালয় অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এভাবে পাগলামি করলে অস্থির না হয়ে উপায় আছে? মিশু একটা হাত মেঘালয়ের গালে রেখে আরেকহাতে মাথাটা ধরে আছে আর নাকটা ঘষছে ওর বুকের সাথে। মেঘালয় বললো, “উফফ খুব উশখুশ লাগছে। শাওয়ার নিতে হবে।”

কথাটা বলেই মিশুকে ছাড়িয়ে রেখে উঠে পড়লো বিছানা থেকে। মিশুকে সরিয়ে দেয়ায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো মিশুর। রাগ উঠে গেলো। একইসাথে মনে পড়ে গেলো সেইদিনের কথা। যেদিন মেঘালয়কে সরিয়ে দিয়ে ও বলেছিলো খুব উশখুশ লাগছে গোসল করতে হবে। মেঘালয় বিছানায় ছটফট করছিলো আর ও গোসল করে এসে ওকে ফেলে বাইরে চলে গিয়েছিলো। কথাটা মনে করে অনুশোচনা হচ্ছে মিশুর। ইস! কেন যে সেদিন অমন করেছিলো। এই ছেলেটার থেকে কিভাবে দূরে থাকা যায়? যায়না যায়না।

মেঘালয় বাথরুমে ঢুকে গেলো। একবার দরজাটা একটু ফাঁক করে মিশুর মুখটা দেখে নিয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দিলো। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে হেসে উঠলো শব্দ করে। এতক্ষণ অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছিলো। বুদ্ধিতে কাজ হয়েছে তাহলে। ও জানতো একটু দূরে গেলেই মিশু ঠিকই বুঝবে। এবার দ্যাখ কেমন লাগে? এবার ঠ্যালা বুঝো, কতধানে কত চাল আর কত চালে কত ময়দা?

মিশুর চোখে পানি এসে গেছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে চোখ মুছতে লাগলো ও। মেঘালয় এসে একবার কথাও বলছে না ওর সাথে। কি রাগ রে বাবাহ! কতক্ষণ এভাবে রেগে থাকবে কে জানে? খুব কষ্ট হচ্ছে তো।

মেঘালয় গোসল করে বের হলো। টাওয়েল পড়ে খালি গায়ে এসে দাঁড়ালো আয়নার সামনে। বডি স্প্রে নিয়ে গায়ে স্প্রে করলো কয়েকবার। মিশু ওর দিকে তাকিয়ে আবারো শিহরিত হয়ে উঠলো। পাগল করা সুন্দর লাগছে মেঘালয়কে। টাওয়েলটা হাঁটু অব্দি। আর হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের গোড়ালি অব্দি ঘন লোমে ঢাকা। মেঘালয় জানে মিশুর অন্যরকম দূর্বলতা এই পায়ের লোমের প্রতি। তাই ও পা মোছেনি। ভেজা পায়ে ভেজা লোমগুলো লেপ্টে আছে একেবারে। কি যে সুন্দর লাগছে! মিশু দেখছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে মেঘালয়ের পায়ের দিকে। মেঘালয় আয়নায় দেখছে মিশুর মুখটা। ও বুঝতে পারছে মিশুর দৃষ্টি এখন ওর পায়ের প্রতি। পায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ পিটপিট করছে মেয়েটা। মেঘালয় মুখ টিপে হাসছে, হাসি চেপে রাখতে খুবই কষ্ট হচ্ছে ওর।

মেঘালয় আয়নার পাশের সোফায় বসে ফোনটা হাতে নিয়ে চাপতে লাগলো। প্যান্ট পড়া ছেড়ে ফোনে কিসের এত কাজ? মিশু রেগে যাচ্ছে ক্রমাগত। আর পিটপিট করে তাকাচ্ছে। মিশু রুমে আছে এটা যেন মেঘালয়ের খেয়ালেই নেই। মেঘ এমন ভাব করে ফোন চাপছে। বাব্বাহ! নতুন ফোন কিনেছে? ফোন কিনেছে তবুও মিশুকে একবার কল দেয়নি? এত বড় সাহস!

মেঘালয় ওয়াইফাই কানেক্ট করামাত্রই টুংটুং করে মেসেঞ্জারে মেসেজ আসতে লাগলো। মিশু জ্বলে পুরে ছাই হওয়ার মত অবস্থা। মেঘালয় আড়চোখে দু একবার তাকায় মিশুর দিকে। আর মনেমনে হাসে, দ্যাখ কেমন লাগে?

মেঘালয় কাকে যেন কল দিয়ে বললো, “এত কেন মেসেজ দিতে হবে? মেসেজ দেয়া বন্ধ করো প্লিজ। কি বললা? নাহ,আমি মাত্র শাওয়ার নিয়ে আসলাম। কিহ! ভেজা স্নিগ্ধ চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে করছে? আর ইউ ক্রেজি রিমিকা? আমার স্নিগ্ধ চেহারা আমি কাউকে দেখাই না। আর তোমাকে তো নয়ই। কেন বুঝছো না আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমিতো জানিনা, বাবা মা ঠিক করে ফেলেছে আর কিইবা করতে পারি? আমি আবার ওদের বাধ্যগত সন্তান। হা হা হা, আচ্ছা হোয়াটস এপে আসো। না না, ভিডিও কল দিতে পারবো না। দুটো ছবি দিচ্ছি,জাস্ট দুটো। আর হ্যা, এটাই লাস্ট। দুদিন বাদে আমার বিয়ে, নেক্সট টাইম আর কিচ্ছু চাইবে না।”

মেঘালয় কল কেটে দিয়ে কয়েকটা ছবি তুললো ফোনে। মিশুর কান্না পেয়ে যাচ্ছে আর রাগে ফুঁসছে ও। রিমিকা টা আবার কে? আর কিসের এত প্রেম তার সাথে? গোসল করে খালি গায়ের স্নিগ্ধ চেহারা তাকে দেখাতে হবে? এত বড় সাহস? মিশু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এসে মেঘালয়ের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে দেখলো রিমিকা’র সাথে কনভারসেশন। অনেক গুলা মেসেজ। মেসেজ দেখে মনেহচ্ছে মেয়েটা মেঘালয়কে খুবই ভালোবাসে। আর মেঘালয় ওকে পাত্তা দেয়না বলে কান্নাকাটিও করে। মেঘালয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে সে হাত কেটে সেই ছবি আবার সেন্ড করেছে। মিশু হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে।

মেঘালয় কিছু বললো না। মুখ টিপে হেসে অন্যদিকে তাকালো। রিমিকা মেঘালয়ের ই ফেক আইডি। এক বান্ধবীর ছবি নিয়ে প্রোফাইলে দিয়েছে। মেঘালয় নিজেই রিমিকার আইডি থেকে মেসেজ গুলো পাঠিয়েছে। শুধুমাত্র মিশুকে ক্ষেপানোর জন্য। তাই হাসি চেপে রাখতে পারছে না। ওর হাসি দেখলে মিশু ক্ষেপে যাবে তাই দেখাতে চায়না। অন্যদিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে হাসি চেপে গেলো। মিশু ফোনটা রেখে বললো, “এই মেয়ে কে? আমার স্বামীর সাথে তার কিসের এত লটরপটর? রিমিকা না টিমিকা, খুন করে ফেলবো একদম। তোমার সাহস তো কম না,তুমি ওকে পিক পাঠাতে যাচ্ছো?”

মেঘালয় হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললো, “যা করছি সব ওপেনে। কারো আড়ালে গিয়ে তো করিনি। আমিতো আর অন্যের মত কাউকে না জানিয়ে বার্থডে পার্টিতে গিয়ে কেক খাওয়াইনি,নাচিনি। সেই ছবি পাবলিক ও করিনি।”

মিশুর বুক ফেটে যেতে চাইলো কথাটা শুনে। ভেতর থেকে ঠেলে কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইছে। ও যখন এসব করেছে তখন বুঝতে পারেনি কাজটা অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। আর মেঘালয় কিনা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইচ্ছেকৃত ভাবে এমন করবে?

মিশু মেঘালয়ের কোলের উপর এসে বসলো। তারপর মেঘালয়ের মুখটা দুহাতে ধরতে যাবে এমন সময় মেঘালয় বললো, “কোলের উপর বসার কোনো মানে হয়? এত ভারি ওজনের মানুষটাকে কোলে নেয়ার মত এনার্জি নাই গায়ে। খিদা লাগছে।”

মিশু রেগে বললো, “কি বললা? আমি ভারী মানুষ? আমার এতই ওজন?”
-“ছোটখাটো আলুর বস্তা,আবার বলে কিনা এতই ওজন? হাও ফানি।”
-“কি বললা? আমাকে সবসময় কোলে নিয়ে থাকতে,যেখানে যেতে সেখানেই কোলে নিয়ে যেতে আর বলছো আমার ওজন আলুর বস্তার মতন?”
– “আলুর বস্তা তো কম হয়ে গেলো। ছোটখাটো হাতির বাচ্চা বলা উচিৎ ছিলো।”
-“আমি হাতির বাচ্চা? আমায় কেন বিয়ে করেছিলে তুমি?”
-“একটা চুমু খেয়েছিলাম বলে। বাবারে সেকি কান্না! আমার মতন ইনোসেন্ট ছেলেদের মাথা এভাবেই নষ্ট করো তোমরা।”

মিশুর চোখে পানি এসে গেলো। কাঁদো কাঁদো গলায় কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। মেঘালয়ের গলা টিপে ধরে বললো, “মেরে ফেলবো।”

মেঘালয় হাসি চেপে বললো, “আই এম সো হাংরি। আই নিড ফুডস”
-“ইংরেজি মারাচ্ছো? আমার সাথে ইংলিশ কপচাপা না।”
– “চুল কাটাকে আপনার সামনে হেয়ার কাটিং বলতে হয়। তাহলে খাবারকে ফুডস না বললে অন্যায় হয়ে যাবেনা?”

মিশুর আবারো কান্না পেয়ে গেলো। ও মেঘালয়ের মুখটা দুহাতে ধরে বললো, “মেঘ, এমন বিহ্যাভ কেন করছো?”

মেঘালয় অন্যদিকে তাকালো। কারণ চোখাচোখি হলেই মেঘ শেষ। তাই মিশুকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। মিশু বললো, “না,আমি উঠতে দিবো না। আমি তোমার কোলেই বসে থাকবো। যেখানে যাবা আমাকে কোলেই নিয়ে যাবা।”

তারপর মেঘালয়ের বুকে একটা আলতো চুমু একে দিলো মিশু।

মেঘালয় মনেমনে হাসলো। এইতো বাচ্চাটার বাচ্চামি ভাব ফিরে এসেছে। ঠেলায় পড়লে বিলাই গাছে উঠে। মেঘালয় জোরে জোরে মাকে ডাকলো, “এই আম্মু একটু আসবা এই রুমে?”

মিশু লাফ দিয়ে কোল থেকে নেমে বললো, “আম্মুকে ডাকছো কেন?”
-“কোল থেকে নামানোর আর কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না তাই।”

কথাটা বলেই মেঘালয় রুম থেকে বেড়িয়ে খাবার টেবিলে চলে গেলো। মিশু মেঝেতে বসে কান্না করে ফেললো। মেঘালয় বদলে গেছে। প্রিয় মানুষ বদলে গেলে এতটা কষ্ট হয়! সত্যিই তাহলে মেঘ ও অনেক কষ্ট পেয়েছে! সহ্য হচ্ছেনা মিশুর। এদিকে মেঘ খাবার টেবিলে বসে মায়ের হাতে খাবার খাচ্ছে আর মনেমনে বলছে,এবার বুঝুক কেমন লাগে? একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি!

চলবে..

অনুভূতি পর্ব ৪৯

0

অনুভূতি
পর্ব ৪৯
মিশু মনি
.
৭৮.
মিশু একটু আগেই ঘুমিয়েছে। কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙায় একটু বিরক্ত হলো। দরজার ফুটো দিয়ে দেখলো মেঘালয় এসেছে। ও দরজা খুলে দিয়েই চোখ কচলাতে কচলাতে বললো, “এত রাতে!”

মেঘালয় আচমকাই কোলে তুলে নিলো মিশুকে। তারপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোজা রুমে চলে এলো। রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েই মিশুকে দরজার উপরেই ঠেস দিয়ে ধরলো দুহাতে। মিশু পরে যাচ্ছিলো বলে ওর কোলে বসেই দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরতে বাধ্য হলো। মেঘালয় ওকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দুহাতে শক্ত করে মাথাটা চেপে ধরে মিশুর নিচের ঠোঁটটা নিজের দুই ঠোঁটের ভেতরে নিয়ে নিলো।

মিশু মেঘালয়ের এমন আকস্মিক আক্রমণে খেই হারিয়ে ফেলেছে। থতমত খেয়ে গেছে একদম। গতকাল থেকে কোনো ফোনও দিলোনা। আজ এমন মাঝরাতে হুট করে এসেই এমন আকস্মিক হামলা করলো যে বাঁধা দেয়ার ও সুযোগ নেই। মিশুর এখনো ঘুমের ঘোরই কাটেনি। ও দুহাতে মেঘালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে রইলো। মেঘালয় একটা হাত ওর কোমরে রেখে খুব জোরে চাপ দিতে লাগলো। আস্তে আস্তে হাতটা একটু একটু করে উপরে তুলছে আর জোরে চেপে ধরছে। এতদিনের সমস্ত অবহেলা আর যন্ত্রণার অবসান এভাবেই ঘটাতে চাইছে ও। সমস্ত কষ্টেরা যেন নির্বাসন নিচ্ছে এই রাগের মধ্য দিয়ে।

মিশু ওর স্পর্শে ক্রমশই অস্থির হয়ে উঠছে। একটানা অনেক্ষণ ধরে চুম্বনের পর মুখটা ছেড়ে দিলো মেঘালয়। মিশু ওর বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে বিড়বিড় করে বললো, “এটা কি হলো? এভাবে এসে…”

মেঘালয় হেসে বললো, “হুট করে ফিরে এসে লুট করে নিয়ে যাবো। বলেছিলাম না একদিন?”
-“যাও দুষ্টুটা।”

মেঘালয় মিশুকে আরো জোরে ঠেস দিয়ে ধরলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, “প্রয়াসের আইডিতে এটা কি দেখলাম?”
-“আমরা সবাই ওনার বার্থডেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই লোকটা একান্ত আমাকেই হাইলাইট করবে আমি ভাবিনি।”

মেঘালয় খুব জোরে মিশুর পেটে চাপ দিয়ে ধরে বললো, “আমার সহ্য হয়না অন্য কাউকে। জানিস না তুই? আজকে তোকে খুন করেই ফেলবো আমি।”

বলেই মিশুকে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর উপর। কিন্তু এরপর মিশু যা করলো সেটার জন্য একদম ই প্রস্তুত ছিলোনা মেঘালয়। মিশু মেঘালয়ের ঘাড়ে জোরে কামড় দিয়ে একেবারে দাগ বসিয়ে দিলো। মেঘালয় মুখ তুলে বললো, “এরকম হিংস্র কামড় দিচ্ছো কেন?”
-“তুমি এত হিংস্র জানোয়ারের মতন বিহ্যাভ কেন করছো?”

মেঘালয় রেগে বললো, “কি বললা তুমি? এতদিন ধরে আমাকে দগ্ধ করতে করতে আজকে আমাকে জানোয়ারের সাথে কম্পেয়ার করছো?”
-“আমি তোমাকে দগ্ধ করিনি কখনো। তুমি অযথাই আমাকে ভূল বুঝলে আমার কিছু করার নেই। এখন আমাকে ছাড়ো তো। এভাবে চেপে ধরলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”

মেঘালয় আরো জোরে মিশুকে চেপে ধরে বললো, “দম বন্ধ হয়ে মরে যাও। আমাকে কেন দূরে রাখো তুমি?”
-“মেরেই ফেলো তো আমাকে। আমি মরলেই যেন তোমার কত শান্তি।”

মেঘালয় হুট করেই ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মিশু সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে এবার। বারবার মেঘালয়কে এভাবে সরিয়ে দেয়ার পরিণাম কতটা ভয়ংকর হবে ভাবতেও পারেনা ও। মেঘালয়কে কি মানুষ মনে হয়না? এটা রীতিমত অপমান। মেঘালয়ের ভেতরটা কিভাবে পুড়ছে সেটা কি ধরতে পারছে না ও? একমাস যাবত এভোয়েড করে দুবার ওকে সরিয়ে দিলো কাছ থেকে। একদিন পস্তাতে হবে এসবের জন্য।

মেঘালয় বিছানা ছেড়ে নেমে এসে বললো, “আর কখনো তোমাকে ছুঁয়েও দেখবো না। সারাক্ষণ ফোন দেই,আমাকে ব্যস্ততা দেখাও। একটা মাস হলো আমাকে নিজে থেকে ফোন দাওনা। আমি যতরাতেই দেই,তুমি টায়ার্ডনেস দেখিয়ে ঘুম দাও। আরে আমি সারাদিন কত ছুটাছুটি করে, পরিশ্রম করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে ওয়েট করি তোমার সাথে একবার কথা বলার জন্য। আর তুমি আমাকে ব্যস্ততা নামক অজুহাত দেখাও। আমার স্পর্শ আজকাল অসহ্য লাগে? সেজন্য কাছে টানলেই আমাকে অপমান করে সরিয়ে দাও? আমাকে তো খুব বিরক্ত লাগছে তাইনা? এই মেঘালয় আর কক্ষনো বিরক্ত করবে না তোমাকে। কক্ষনো বিরক্ত করবে না।”

কথাটা বলেই দ্রুত হেঁটে মেঘালয় বাসা থেকে বেড়িয়ে এলো। মিশু বিছানায় বসে রইলো থ হয়ে। মাঝরাতে কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছে না ও। মেঘালয় এভাবে মন খারাপ করে চলে গেলো! সবকিছু কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগছে ওর। বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা অনুভূত হতে শুরু করলো।

মেঘালয় বাসা থেকে বেড়িয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো খুব জোড়ে। ওর চোখেমুখে আগুন ঝরছে। মিশুর এই আমূল পরিবর্তন মেনে নেয়ার মত নয়। মেঘালয় আর কিছুই করবে না। যে নিজে পরিবর্তন হয়েছে,সে নিজ দায়িত্বেই ঠিক হয়ে যাবে। মেঘালয়কে হারানোটা কত বড় অপ্রাপ্তি ঠিকই বুঝবে ও। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
মিশু অনেক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো। তারপর বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।

৭৯.
সকালে ঘুম ভাঙল অনেক বেলা করে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে নিলো। আজকে রেডিওতে প্রোগ্রাম নেই। বিকেলে ফটোগ্রাফি এক্সিবিশনের অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতে হবে। এখন কি করা যায় তাহলে? মেঘালয়কে কি একবার কল দেবে? এরপর ই রাতের ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো। মেঘ বুঝি রাগ করেছে খুব। অত গভীর ভাবে কিছু ভাবলো না মিশু। মনেমনে বললো, “মেঘ তো আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবে না। ঠিকই একটু পরেই কল দেবে। জগতের সমস্ত নিয়ম ভেঙে যাবে তবুও মেঘালয় আমাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত থাকতে পারবে না।”

এটা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে ইয়োগা করতে আরম্ভ করলো। মেডিটেশন করলো অনেক্ষণ ধরে। বেশ মানসিক প্রশান্তি লাগছে। মেঘালয় দারুণ একটা জিনিস শিখিয়ে দিয়েছে। টেনশন হলে একবার মেডিটেশনে বসলেই সমস্ত টেনশন উধাও হয়ে যায়। ছেলেটা এত ভালো! মিশু একবার হাসলো মনেমনে। সত্যিই ছেলেটা অনেক ভালো। এত ভালোবাসে কেউ কখনো! মেঝেতে বসেই এসব ভেবে ভেবে হাসছিলো।

ফোন বেজে উঠলো মিশুর। ও স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রয়াস ফোন দিয়েছে। রিসিভ করে বললো, “হ্যালো।”
-“মিশু, গুড মর্নিং।”
-“গুড মর্নিং, কালকে আপনি ক্যাপশনে ওটা কি লিখেছেন? আর আমাকেই কেন এভাবে হাইলাইট করলেন?”
-“উম,রাগ করেছো?”
-“সেটা নয়। আমার ফ্যামিলি মেম্বারের কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হয়েছে।”
-“ওহ, সরি। একটু বুঝিয়ে বলোনা। এটা আর এমন কি ব্যাপার? সবার কমেন্ট গুলো দেখেছো? আমাদের জুটিটাকে নাকি খুব সুন্দর মানিয়েছে।”
-“কিসের জুটি?”
-“হা হা হা। রেগে যাচ্ছো? আরে সবাই ভাবছে আমরা একে অপরকে.. বুঝোই তো। আমার আম্মুর ও নাকি তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। আম্মু বলছে আরেকবার তোমাকে বাসায় নিয়ে আসতে।”
মিশুর মেজাজ চড়ে গেলো। বললো, “আমি ব্যস্ত এখন। ফোন রাখছি।”

ফোন রেখে রাগে ফুঁসতে লাগলো মিশু। প্রয়াসের সাথে ওর সেরকম কোনো সম্পর্ক নেই। কেবলমাত্র কলিগ হিসেবেই দেখে মিশু। কিন্তু লোকটা ওকে খুব পছন্দ করে। একটু একটু স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছে। মিশু জানেনা এসব। ওর বার্থডে তে সব কলিগ মিলে গিয়েছিলো কিন্তু মিশুকে নিয়েই লোকটা এত মাতামাতি করেছে। কয়েকটা ছবি আপলোড দিয়েছে।

মিশু মনেমনে বললো, “আমার পক্ষে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয় কারণ আমি শুধুই মেঘালয়ের। অপরপাশের মানুষটা তাকে নিয়ে কি ভাবছে সেটা না জেনেই এই লোকগুলা এমন মাতামাতি করে যে মেজাজ গরম হয়ে যায়। আমার জগতে মেঘালয় ছাড়া আর কেউ থাকতে পারেনা। আর কক্ষনো কথা বলবো না এই লোকটার সাথে। সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করে দিলো।”

মিশু মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর উঠে শাওয়ার নিয়ে এসে লাঞ্চ সেরে নিলো। দুপুর পেরিয়েছে। একটু পরেই বের হবে এক্সিবিশনে যাওয়ার জন্য। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রেডি হয়ে নিলো। তারপর বেড়িয়ে পড়লো বাসা থেকে।

প্রোগ্রাম খুব ভালোভাবেই শেষ হলো। রাত নয়টার দিকে বাসায় ফিরলো মিশু। বাসায় এসে চেঞ্জ করে শাওয়ার নিলো। তারপর খাবার টেবিলে এসে একটা আপেল নিয়ে কামড়াতে কামড়াতে টিভিটা ছেড়ে দিয়ে বসলো। রৌদ্রময়ী কদিন হলো আলাদা বাসায় উঠেছে। ওর বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে পূর্ব’র সাথে। বাসায় একদম একা মিশু। এই মুহুর্তে হুট করেই খুব একা একা লাগতে শুরু করলো।

হঠাৎ ই মনটা কেমন বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেলো। রাত ১২ টা বেজে গেছে। ফোনের দিকে কয়েকবার তাকালো মিশু। আজ সারাদিনে ফোনটা বারবার বাজলো না কেন? মেঘালয় দিনে কয়েকবার কল দেয়,আজকে একবার ও দিলো না কেন? ফোনটা এখনো বেজে উঠছে না কেন?

মিশু এসে ফোন হাতে নিয়ে মেঘালয়ের নাম্বারে কল দিলো। ফোন আনরিচেবল শুনেই বুকটা ধক করে উঠলো ওর। সারাদিন একবার ও কল দিলোনা এখন আবার বন্ধ! মিশুর বুকটা চিনচিন করে উঠলো। পুরো বাড়িটা একা, আজ রোদও নেই। মেঘালয় ফোনও দিচ্ছেনা,কেমন যেন একাকীত্ব ভর করলো এসে। মিশু একটা টেক্সট পাঠালো মেঘালয়ের নাম্বারে, “phone bondho keno?”

মেসেজ সাকসেস হলোনা। মিশু মেসেজ বক্সের মেসেজ গুলো দেখতে লাগলো। মেঘালয় দুদিন আগে দিয়েছে, “mishu emon behave keno korcho amar sathe?”
“tomar ki hoyeche bolba please?”
“kono karone amar upor rege acho tumi? tomar vetor kichu niye confusion cholche? ki hoiche bolba amk?”

এরকম প্রায় ত্রিশটা মেসেজ যেসবের সারমর্ম হচ্ছে মিশুর কিছু হয়েছে কিনা? মিশু কেন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে? আর মেঘালয়কে কেন কষ্ট দিচ্ছে? প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো মিশু। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো, “আসলেই কি আমি বদলে গেছি?”

আয়না দেখে নিজেই চমকে উঠলো। সত্যিই আয়নায় নিজের যে প্রতিবিম্ব ও দেখছে সেটা সত্যিকার মিশু নয়। এটা নকল মিশু। এই মিশু কৃত্রিম,অনেক রংচং মেখে বানানো। এটা মেঘালয়ের মিশু নয়। মেঘালয়ের কষ্ট পাওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়?

মিশুর বুকের চিনচিন ব্যথাটা আরো বেড়ে গেলো। খুব খারাপ লাগছে ওর। কিন্তু এই পরিবর্তন কিভাবে কোথ থেকে হলো ও কিছুই বুঝতে পারেনি। মনমরা হয়ে আয়নার পাশের সোফায় বসে রইলো অনেক্ষণ। ফোন হাতে নিয়ে কয়েকবার কল দিলো মেঘালয়ের নাম্বারে, কিন্তু বন্ধ পাচ্ছে। কেন যেন একবার সরি বলার প্রয়োজন অনুভব করছে মিশু। কিন্তু ওর নাম্বার তো বন্ধ।

ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো অনেক রাতে।

পরদিন ঘুম ভাংলো অনেক দেরিতে। আজকে সকালেই প্রোগ্রাম আছে। রেডি হয়ে নাস্তা করে কাজে চলে গেলো। কাজের মাঝে কিছু মনে হয়নি। কিন্তু কাজ থেকে বাসায় এসে ফোন নিয়ে দেখলো মেঘালয় একবার ও কল দেয়নি। মিশুর এবার সত্যি সত্যি চিন্তা হচ্ছে। বিকেল হয়ে গেলো, দুদিন ধরে মেঘ কল দিচ্ছেনা। তবে কি সত্যি সত্যিই রাগ করেছে ও?

মিশু চিন্তায় ভেঙে পড়লো। মেঘালয় ফোন দিচ্ছেনা কেন? সত্যিই সেদিন রাতে কষ্ট পেয়েছে? মিশু অনেকবার কল দিয়েও নাম্বার বন্ধ পেলো। তারপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো সেদিন রাতে আসলেই কেমন আচরণ করেছে মেঘালয়ের সাথে। কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করতেই সব স্পষ্ট ভেসে উঠলো চোখের সামনে। সব মনে পড়ে যাচ্ছে আর বুক ফেটে কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইছে।

মিশুর এতদিনের সব অন্যায় আচরণের কথা মনে করে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। মেঘালয় যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। নয়ত নিজের ভূলগুলো বোঝার সাধ্য ওর কখনোই হতোনা। সত্যিই মেঘালয়ের শূন্যতা খুব করে অনুভব করছে ও। মেঘালয়কে ছাড়া একটা দিনও চলবে কি? ও কোথায় এখন? ফোন দিচ্ছেনা কেন?

মিশু মেসেঞ্জার, হোয়াটস এপ সবখানেই মেসেজ পাঠিয়ে রাখলো। চারদিন আগে একটিভ ছিলো। বাসায় তো ওয়াইফাই আছে, মেঘালয় কি তাহলে বাসায় নেই? কিছুই মাথায় আসছে না মিশুর।

থাকতে না পেরে মেঘালয়ের মায়ের নাম্বারে কল দিলো। দুবার রিং হলো কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না। মিশুর বুক ফেটে যাচ্ছে। চার পাঁচদিন আগে আংকেল আন্টি বিয়ের কথা বলেছিলেন। মিশু কিছুদিন সময় চেয়েছিলো বলেই কি ওনারাও রেগে গেছেন? মা ছেলে সবাই মিলে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে বসে আছে। মিশুর এ শহরে আর কে আছে ওনারা ছাড়া? একমাত্র মেঘালয় ছাড়া আর আপন বলতে ওর কেউ নেই। মেঘালয় কোথায়?

মিশু অনেকবার কল দিলো মেঘালয় আর ওর মায়ের নাম্বারে। ওর বাবার নাম্বারে কল দিয়ে দেখলো নাম্বার বন্ধ। টেনশন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। খুবই অসহায় লাগছে নিজেকে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লো মিশু।

৮০.
পরদিন সকালের প্রোগ্রাম শেষ করেই মিশু মেঘালয়ের বাসায় চলে এলো। এসে মেঘালয়ের মাকে দেখেই নিজেকে সামলাতে পারলো না। ছুটে এসে ওনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আম্মু আমাকে মাফ করে দাও। আমাকে মাফ করে দাওনা প্লিজ।”

মিশুর এরকম কান্নার কারণ বুঝতে না পেরে উনি জিজ্ঞেস করলেন, “কি হইছে মিশু?”
মিশু অবাক হয়ে বললো, “আপনি জানেন না কি হয়েছে?”
– “না তো। মেঘ তো কিছুই বলেনি।”
– “রাতে অনেকবার কল দিলাম আপনার নাম্বারে, ধরলেন না কেন তাহলে?”
মা বললেন, “আমার নাম্বার সাইলেন্ট করে ঘুমিয়েছিলাম।”
– “বাবার নাম্বার বন্ধ পেলাম কেন? সবাই আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে বসে আছেন?”
-“আকাশ তো রাতে ফোন বন্ধ করে ঘুমায়। সকালে কল ব্যাক করতে চাইলাম, পরে ভাবলাম তোর তো এই সময়ে প্রোগাম থাকে তাই আর কল দিইনি।”

মিশু ওনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে গেলো, “আম্মু মেঘ আমার সাথে খুব রাগ করেছে। তিনদিন ধরে আমাকে ফোন দেয়না। ওর নাম্বার ও বন্ধ।”
মা মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “আমি জানিনা তোদের মাঝে কি হয়েছে। তবে মেঘালয় যখন এসে বলল বিয়ে ক্যানসেল করে দাও তখনি ভাবলাম হয়ত ব্রেকাপ হয়ে গেছে তোমাদের। মেঘালয় আর কিছুই বলেনি। ওর ফোন রুমে পড়ে আছে। ও কোথায় গেছে কিচ্ছু বলে যায়নি।”

মিশু কান্নায় ভেঙে পড়লো। বিয়ের ব্যাপারটা ডিনাই করার কারণেই মেঘালয় আরো বেশি কষ্ট পেয়েছে। ব্রেকাপ কি করে হবে? স্বামী স্ত্রী’র মাঝে তো ব্রেকাপ হয়না। এটা তো মাকে বলা সম্ভব না। তবে সবমিলিয়ে পাহাড় সমান কষ্ট দিয়ে ফেলেছে মেঘালয়কে। এখন কি হবে? কেউই জানেনা মেঘালয় কোথায় আছে!

চলবে..

অনুভূতি পর্ব ৪৮

0

অনুভূতি
পর্ব ৪৮
মিশু মনি
.
৭৭.
খাবার টেবিলে বাবা চারটা কার্ড দেখিয়ে বললেন, “ইনভাইটেশন কার্ড। ডিজাইন গুলো মিশুকে দেখিয়ে একটা সিলেক্ট করিস।”
মেঘালয় চমকে উঠলো কার্ড দেখে। একদিনের মধ্যে বাবা কার্ডও পছন্দ করে ফেলেছে! আসলে বাবা মা ওকে খুবই ভালোবাসেন,তাই ছেলেকে সারপ্রাইজ দিতেও ভালোবাসেন। কিন্তু মিশু তো এখনি কিছুতেই বিয়ে করতে চাইছে না, এটা বাবা মাকে কিভাবে বলা সম্ভব?
বাবা বললেন, “আমি এদিকে যা যা করতে হয় সবই ভেবেচিন্তে ঠিক করে ফেলবো। যেহেতু আমাদের আর নিজস্ব লোক নেই,আমাদেরকেই সব ব্যবস্থা করতে হবে। তোর কাজিনদের ডাকবি, আমি তোর চাচা আর মামাদের ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। এখন তোর প্রথম কাজ হচ্ছে একজন ভালো ওয়েডিং প্লানারকে সিলেক্ট করা।”
মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, “আব্বু! এসব কি বলো? এত দ্রুত এতকিছু করে ফেলেছো?”
বাবা বললেন,”হুম। কারণ আমার একটাই ছেলে,কিন্তু আমাদের রিলেটিভ আর ফ্রেন্ড সার্কেল অনেক। বিয়ে তো একবার ই হবে,আমি চাই আগামী দুদিনের মধ্যেই সব আত্মীয় স্বজন আমাদের বাসায় চলে আসুক। এক সপ্তাহ ধরে আনন্দ চলুক বিয়ের। আকাশ আহমেদের ছেলের বিয়ে বলে কথা। এক সপ্তাহ বাসায় লাইট জ্বলবে,হৈ চৈ হবে। তবেই না বিয়ে বাড়ি বিয়ে বাড়ি মনেহবে।”
মেঘালয়ের বুকটা চিনচিন করতে শুরু করেছে। মিশু যদি আগের মত থাকতো তাহলে আজকের এই কথাগুলো শুনলে ওর সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করতো। বাবা মা ওকে নিজের মেয়ের মত মনে করে। ওনারা কত কিছু প্লান করে ফেলেছেন। এখন কিভাবে বাধা দেবে মেঘালয়? কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। বাবার আরো দু একটা প্লান শুনে মেঘালয় নিজের রুমে আসলো। এসেই কল করলো মিশুকে।
বাবার সমস্ত প্লানের কথা শুনে মিশু বললো, “এতকিছু কেন ব্যবস্থা করে ফেললো? এত তাড়াতাড়ি আমি বিয়ে করতে চাইনা।”
– “বিয়ে তো হয়েই গেছে। এমন ভাব করছো যেন তোমাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে আমার সাথে?”
– “ব্যাপার সেটা নয়। সংসার আর এত বড় একটা ওয়েডিং প্রোগ্রামের জন্য মেন্টাল প্রিপারেশন দরকার। হুট করেই হয়না।”
– “মিশু,প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্ন থাকে এরকম ধুমধাম করে খুব আয়োজন করে বিয়ে হোক। বাবার মত শ্বশুর পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। তুমি শ্বশুর শ্বাশুরি নয়,নতুন বাবা মা পেতে চলেছো।”
– “মেঘ,একটু বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ।”
মেঘালয় বললো, “আমার ভাই হিমালয়কে হারিয়ে মা আমাকে বুকে আগলে রেখে বড় করেছে। তাদের কত স্বপ্ন আর আশা আমাকে নিয়ে। আমার পছন্দ ওরা মেনে নিয়েছে। তোমাকে ভালোবাসি কথাটা শুনে ওরা তোমার পরিচয় জানার ও প্রয়োজন মনে করেনি। মেনে নিয়েছে তোমায়। এখন ওদের করা প্লান গুলোকে আমি চুরমার করে দিতে পারিনা। তোমার আপত্তি থাকলে তুমি নিজে কথা বলো ওদের সাথে।”
মিশু একটু থেমে বললো, “আমিই বাবার সাথে কথা বলবো।”
– “কিহ! তুমি বাবার সাথে কথা বলবে তবুও বিয়ে করবে না?”
– “একটু সময় নিবো কিছুদিন। অন্তত দুইমাস।”
– “তারমানে আমাকে আরো দুইমাস তোমাকে ছাড়া থাকতে হবে? আমি পারছি না মিশু। আমার কষ্ট হয়।”
মিশুর জবাব পাওয়া গেলো না। কলটা হুট করেই হোল্ড হয়ে গেলো। মেঘালয় তিন মিনিট ফোন কানে ধরে রইলো, কল হোল্ড। ও রাগে ফোনটা গায়ের জোরে ছুড়ে মারলো। ফোনটা দেয়ালে লেগে ব্যাটারি খুলে বিছানার উপর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। মেঘালয় মেঝেতে বসে রাগে নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়তে লাগলো। আজকে দিনে মিশুকে কাছে পাওয়ার পর ওভাবে সরিয়ে দিয়েছে সেই আঘাতটা এখন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মেঘালয় ও তো মানুষ, কত সহ্য হয়?
ও সায়ানকে কল দিয়ে বললো, “দোস্ত কই তুই? খাওয়ার মত কিছু আছে?”
– “মানে? কি খাবি?”
– “মাল খাবো মাল। মেজাজ খুব গরম, কিছু আছে?”
– “এত রেগে আছিস কেন? মিশুর সাথে কিছু হয়েছে?”
মেঘালয়ের বুকে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ার মতন প্রশ্নটা এসে লাগলো। কিভাবে এর উত্তর দিবে ও? কতটা দহনে দগ্ধ হচ্ছে সে শুধু মেঘালয়ের ভেতর টাই জানে। বাবা মায়ের করা প্লানগুলোকে কিভাবে ধুলিসাৎ করবে ভেবে আরো খারাপ লাগছে। দুপুরে মিশুর কাছ থেকে তাচ্ছিল্য হওয়ার পর মেজাজ চরম খারাপ হয়ে আছে। মিশু কি ভেবেছে ওকে? ও কি বনের জন্তু? কিন্তু সায়ানকে কিছু বলতে পারলো না।
সায়ান বললো, “কি হইছে আমাকে বলবি না?”
– “বাসায় আংকেল আন্টি আছে?”
– “না। দুজনেই সিলেটে আছে। দুদিন থাকবে।”
– “আমি আসছি তোর বাসায়।”
মেঘালয় ওর বাবা মায়ের রুমে এসে বাবাকে বললো, “আব্বু, আমি সায়ানদের বাসায় যাচ্ছি। কখন আসবো বলতে পারছি না। আমার ফোন আছাড় দিয়েছি, দরকার হলে সায়ানের নাম্বারে কল দিও।”
বাবা মা অবাক হয়ে তাকালেন মেঘালয়ের দিকে। কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছেন না ওনারা। মেঘালয়ের কি হলো হঠাৎ করে? এমন তো কখনো করেনা ও। ফোন আছাড় দেয়ার মত বাজে অভ্যাস ওর কখনোই ছিলোনা। ওনারাও চিন্তায় পড়ে গেলেন।
মেঘালয় বললো, “আমি একটু একা থাকতে চাইছি দুটো দিন। মিশু ফোন দিলে কি বলে শুনিও। আর মিশুকেই জিজ্ঞেস করো ও এখন ই বিয়ের জন্য প্রস্তুত কিনা?”
বাবা কিছু একটা বলতে যাবেন কিন্তু তার আগেই মেঘালয় এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “টেনশন করোনা আমার জন্য। শুধু দোয়া করো একটু। আমার মনের উপর দিয়ে খুব ঝড় বয়ে যাচ্ছে।”
আর কিছুই বললো না। সোজা বেড়িয়ে এসে গাড়ি নিয়ে সায়ানের বাসায় চলে এলো।
সায়ানকে সব কথা খুলে বলে অনেকটা হালকা লাগছে মেঘালয়ের। সায়ান নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। চেয়ে আছে মেঝের দিকে। ওর বিশ্বাস ছিলো দুনিয়া উলটে গেলেও মিশু কখনো বদলাবে না। সেই মিশুই বদলে গেছে ব্যাপারটা কিছুতেই ও মেনে নিতে পারছে না। ভেতরে দহন শুরু হয়ে গেলো ওর ও। এটা কিভাবে সম্ভব!
মেঘালয় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সায়ান বললো, “নিশ্চয় ভালোমতো ঘুমাস না। আজকে আমার সাথে ঘুমা তো। আমাকে একটু ভাবতে দে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ মাইন্ডে একটা আলোচনা করা যাবে।”
মেঘালয় কিছু বললো না। ওর মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। গত একটা মাস ধরে একটু একটু করে মিশুর পরিবর্তন শুরু হয়েছে। প্রথমে বুঝতে পারেনি ও। বুঝতে পারার পর অনেকবার করে মিশুকে বলেছে তুমি আর আগের মত নেই। মিশু হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে। আর এখন বললে অস্বীকার করছে কথাটা। কি করতে পারে ও এখন? চিন্তায় ঘুম আসবে না। তাই বেশ কয়েকটা স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। মাথাটাও একটু বিরতি চাইছিলো। শোয়ার পরপরই ঘুম এসে গেলো।
মেঘালয়ের ঘুম ভাংলো পরেরদিন দুপুর দুটার পর। সায়ান জানালো ওর আম্মু একবার ফোন দিয়ে খোজ নিয়েছে। মেঘালয় আশা করেছিলো মিশু একবার ফোন দেবে। কিন্তু মিশুর ফোন না পেয়ে একটু মন খারাপ ই হলো ওর। সায়ান খাবার নিয়ে এসে বলল, “আগে খা তারপর কথা বলি।”
মেঘালয় সায়ানের অনুরোধে একটু খাবার খেলো। তারপর দুই বন্ধু মিলে আলাপ করতে লাগলো কিভাবে মিশুকে সবকিছু বুঝিয়ে বলা যায়। সায়ান বললো, “যেভাবে পারিস ওকে একবার ট্যুরে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে ঘুম পারিয়ে হলেও ওকে নিয়ে যেতে হবে। সিস্টেমে একবার ট্যুরে নিয়ে গেলে দেখবি একান্ত তোকে পেয়ে সব ভূলে গেছে।”
আইডিয়াটা বেশ পছন্দ হলো মেঘালয়ের। মিশুকে যেভাবে পারে ট্যুরে নিয়ে যেতে হবে। দরকার হলে মিথ্যে বলে নিয়ে যেতে হবে। কারণ প্রকৃতির কাছে গেলে ও একদম বদলে যায়। সেই বাচ্চা স্বভাবটা চলে আসে ওর মাঝে। এখন ওকে নিয়ে কোথাও একাকী ভাবে ঘুরতে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। একান্তভাবে পেলে সবকিছু বুঝিয়ে বলা সম্ভব। তারপর বিয়েতেও রাজি করানো যাবে।
কোথায় যাওয়া যায় এসব নিয়েও প্লান করে ফেললো। এখন কিভাবে মিশুকে ট্যুরে নিয়ে যাবে সেটা ভাব্বার বিষয়। এটা নিয়েই চিন্তা করতে লাগলো দুই বন্ধু মিলে। মেঘালয়ের ফোন তো বাসায় পড়ে আছে, মিশু কি একবার ফোনও দেয়নি? খুব জানতে ইচ্ছে করছে। তবুও মনটাকে শান্ত করে বসে রইলো ও।
সারাদিন কোথাও বের হলোনা। রাতে বের হয়ে পূর্ব, আরাফ ও সায়ানের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়ে একটু আড্ডা দিলো। কাজের চাপে অনেক দিন বন্ধুদেরকে সময় দিতে পারেনি। অনেকদিন পর সবার সাথে কথা বলে বেশ ভালো হয়ে গেলো মনটা। কিন্তু সায়ান ছাড়া কাউকেই জানালো না মিশুর এই অদ্ভুত পরিবর্তনের কথা।
রাতে সায়ানের বাসাতেই ফিরলো। বাড়িতেও কল দিলোনা। সায়ানকে জানিয়ে রাখলো মা ফোন দিলে যেন কথা বলে রেখে দেয়। ও একটু একা থাকতে চায়। রুমে চুপচাপ শুয়ে শুয়ে মনে করছে সেই প্রথম দিনের কথাগুলো। রাতারগুলে গিয়ে পাগলিটা চাটনি বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছিলো। কত সুন্দর ছিলো মিশু পাগলীটা। এখনকার মিশুটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না মেঘালয়। বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে চাইছে।
এমন সময় সায়ান এসে বললো, “মেঘ, Rj প্রয়াসের মান্থলি ইনকাম কত হয় রে?”
মেঘ একটু ভেবে বললো, “ও তো অনেক রকমের কাজ করে। এই দুই লাখের মত আসে।”
সায়ান হেসে বললো, “বাহ! আর তোর মাসে কত আসে?”
– “আমি তো সেভাবে হিসেব করিনি। সবকিছু শুধু দেখাশোনা করি। যখন যা লাগে বের করে নেই। ইনকামের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবিনি কখনো।”
সায়ান এসে হাসতে হাসতে বললো, “এটাই স্বাভাবিক না? প্রয়াসের অনেক নাম যশ। হ্যান্ডসাম, সেলিব্রেটি, ফিল্ম টিল্ম করে। আরো কত কি!”
– “মানে? হঠাৎ ওর কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন?”
সায়ান ওর ফোনটা এগিয়ে দিলো মেঘালয়ের দিকে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকানো মাত্রই মেঘালয় দেখতে পেলো প্রয়াসের আইডি থেকে ছবি আপলোড করা হয়েছে। সেই ছবিতে মিশু ওকে কেক খাইয়ে দিচ্ছে আর আশেপাশে অনেক লোকজন হাত তালি দিচ্ছে। ক্যাপশনে লিখেছে, “এই পুতুল বালিকাকে ছাড়া আমার বার্থডে একদম অসম্পূর্ণ থেকে যেতো।”
মেঘালয়ের মাথায় রক্ত উঠে গেলো যেন। ও সায়ানের ফোনটাই আছাড় মারতে যাচ্ছিলো। সায়ান ওকে থামালো। মেঘালয় কিছুতেই আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। বিছানার উপর একটা পাওয়ার ব্যাংক ছিলো সেটা নিয়েই মেঝেতে ছুড়ে মারলো।
সায়ান মেঘালয়কে ধরে বলল, “কি পাগলামি করছিস?”
মেঘালয় ডুকরে কেঁদে উঠলো এবার। সায়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি আর সহ্য করতে পারছি না রে। আর পারছি না। একটা মাস ধরে আমাকে এভোয়েড করে যাচ্ছে মিশু। আমি সহ্য করতে করতে আর নিতে পারছি না। এতদিন তবুও নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি। কিন্তু এটা দেখার পর আর পারছি না।”
সায়ান বললো, “কষ্ট পাস না। হতে পারে ওদের মাঝে কোনো রিলেশন নেই। মিশু হয়ত জাস্ট ফ্রেন্ডলি মেশে। যেহেতু একসাথে কাজ করে,একটা ভালো বন্ডিং ক্রিয়েট হতেই পারে। তুই মন খারাপ করিস না। ও তো তোর বউ।”
মেঘালয় চোখ মুছে বললো, “আমার এতটুকু বিশ্বাস আছে যে মিশু আর কারো সাথে এফেয়ারে জড়াবে না। কিন্তু আমি যে ওকে কোনো ছেলের সাথে দেখলে সহ্য করতে পারিনা। আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। এটা কি মিশু জানেনা? তবুও কেন প্রয়াসের সাথে মিশতে যাবে ও?”
সায়ান কিছু বলার মত ভাষা খুঁজে পেলোনা। মেঘালয়কে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, “টেনশন করিস না। হয়ত এমনিতেই দাওয়াতে গেছে,প্রয়াসই হয়ত ওকে পছন্দ করে। এটা নিয়ে মন খারাপ করিস না।”
মেঘালয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “মানলাম তোর কথাই ঠিক। কিন্তু অন্য কারো সাথে আমি ওকে মানতে পারিনা একদম ই। তুই কি জানিস আমাদের বিয়ের প্রথম রাতেই ওকে আমি থাপ্পড় মেরেছিলাম? ও তোদের সাথে ডান্স করেছিলো বলে। তোরা আমার সবচেয়ে আপনজন, তবুও আমি মেনে নিতে পারিনি। বাসর রাতে ঘরে ঢুকেই ও আমার থাপ্পড় খেয়েছে।”
সায়ান অবাক হয়ে তাকালো মেঘালয়ের দিকে।
মেঘালয় একটু থেমে আবারো বললো, “সায়ান রাগ করিস না। আমার প্রোগ্রামের দিন তোকে ওর হাত ধরে বসে থাকতে দেখে আমি সহ্য করতে পারিনি। অনেক কষ্টে গান গেয়েছিলাম। ওকে নিয়ে বাইরে আসার সময় তুই ওর কাঁধে হাত রেখেছিলি এটা দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আমি কি করেছি জানিস? বাইরে বের হয়ে পাগলের মত বিহ্যাভ করছিলাম মিশুর সাথে। একবার বলছিলাম মেডিকেলে যাবো, একবার রিক্সা নিয়ে শিল্পকলা। আমার মেজো খালামণির সাথে চরম খারাপ আচরণ করেছিলাম সেদিন। বাসায় গিয়ে মিশুকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছিলাম শুধুমাত্র তোর সাথে ওভাবে দেখে। ওর জিভ বেড়িয়ে এসেছিলো এত জোরে টিপে ধরেছিলাম। ভাবতে পারিস?”
সায়ান অবাক হয়ে বললো, “মেঘ! তুই ওকে কতটা ভালোবাসিস আমাদের কারো অজানা নয়। ও ছোট মানুষ, হুট করেই নতুন পরিবেশ পেয়েছে তাই এরকম করছে। তুই প্লিজ মন খারাপ করিস না।”
– “আমি মরে যাবো রে ওকে ছাড়া। ও ছাড়া আমার দুনিয়াটা অন্ধকার।”
– “কিন্তু এখন ওকে এই ব্যাপার নিয়ে সিন ক্রিয়েট করে কোনো লাভ হবেনা। বরং ও আরো রেগে যাবে। যে বদলে যায়,তার মধ্যে কখনো এসব ন্যায় নীতি বোধ কাজ করেনা।”
মেঘালয় একটু ভেবে বলল, “আমি ওকে কিভাবে বুঝাবো? কি বললে বুঝবে ও?”
সায়ান কিছুক্ষণ গালে হাত দিয়ে বসে চিন্তা করলো। তারপর বললো, “ওকে বুঝাতে গেলেও ও ক্ষেপে যাবে। তখন উলটা তোর উপর রিয়েক্ট দেখাবে। বলতেও পারে আমি সেপারেশন চাই।”
– “কিহ!”
মেঘালয় দুহাতে মাথার চুল টেনে ধরে কান্না করে ফেললো। বললো, “আমার জগতের পুরোটাই ওকে দিয়ে দিয়েছি। সবখানে শুধু মিশু রাজত্ব করে। ওকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে? আমাকে খুন করে ফেললেও এতটা কষ্ট হবেনা যতটা ওকে ছেড়ে দিতে হবে। আমি কি করবো এখন? কিছুই মাথায় আসছে না।”
সায়ান মেঘালয়কে জড়িয়ে ধরে রইলো কিছুক্ষণ। প্রখর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মেঘালয় আজ নিতান্তই নিঃস্ব হয়ে গেছে। বড্ড অসহায় দেখাচ্ছে ওকে। এই মেঘালয় একজন সত্যিকার প্রেমিক,একজন সত্যিকার ভালোবাসার মানুষ। যে তার ভালোবাসা ছাড়া অসহায়। কিভাবে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। সায়ান নিজে একবার কথা বলবে কি মিশুর সাথে?
মেঘালয় বললো, “আমার মাথা কাজ করছে না। কিছু খেতে হবে। ড্রিংকস করবো।”
– “পাগলামো করিস না তো। ভাব আর একটা উপায় বের কর। সবকিছুর আগে জানতে হবে মিশু প্রয়াসের সাথে কোনো রিলেশনশিপে গেছে কিনা।”
– “প্লিজ এই কথা বলিস না। প্রয়াসকে খুন করে ফেলবো আমি।”
– “শান্ত হ দোস্ত।”
মেঘালয় কে অনেক সান্ত্বনা দিচ্ছে সায়ান। তবুও মেঘালয় কিছু বুঝতে চাইছে না। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। মিশুকে ছাড়া কিচ্ছু ভাবতে পারছে না ও।
মেঘালয় বললো, “আম্মু আব্বুকে এটা কিছুতেই বলা যাবেনা। ওরা ওদিকে বিয়ের প্লান করছে। আমি বলেছিলাম দশ দিনের মধ্যে এরেঞ্জ করতে। সেজন্য মামা চাচাদেরকেও ফোনে জানিয়ে দিয়েছে। সবাই এসে যাবে দুদিনের মধ্যে। কি করি এখন বল? এখন যদি মিশু বলে দেয় আরো সময় চাই,তখন বাবা মা কষ্ট পাবেনা?”
– “তা তো পাবেই। এটা তো আর রিলেশন নয় যে ব্রেকাপ করবি।”
মেঘালয় বললো, “রিলেশনের ব্রেকাপ হয়, স্বামী স্ত্রীর ডিভোর্স হয়। কিন্তু ভালোবাসার কখনো ব্রেকাপ হয়না রে। এটা আজীবন থাকে। আমি ওকে ভালোবাসি, প্রচণ্ড ভালোবাসি।”
সায়ান নিশ্চুপ। এরকম পরিস্থিতি আসবে সেটা ভেবে ও আগেই ভয় পেয়েছিলো। তবে ও ভেবেছিলো মেঘালয় বদলে যাবে। মিশু বদলে যাবে এটা ওর কল্পনাতীত ছিলো। এখন মেয়েটার মনে কি চলছে বুঝে আসছে না ওর।
মেঘালয় হঠাৎ উঠে বাথরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে বললো, “আমি একটু বের হবো।”
-“কই যাবি?”
মেঘালয় কোনো উত্তর দিলো না। চুপচাপ বসে ভাবতে লাগলো। কি যেন ভাবছে গভীর মনোযোগ দিয়ে। সায়ান ওর দিকে বারবার তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। মেঘালয় উঠে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো, “আমি মিশুর কাছে যাচ্ছি।”
সায়ান চমকে উঠলো- “এত রাতে?”
– “হুম।এবার আমি কি করি তাই দ্যাখ। আমার অবহেলা সহ্য হচ্ছেনা।”
সায়ান তাকিয়ে রইলো মেঘালয়ের দিকে। মেঘালয়ের চোখেমুখে যেন আগুন ঝরছে। ও বাসা থেকে বেড়িয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত মিশুর বাসার দিকে রওনা দিলো।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ৪৭

0

অনুভূতি
পর্ব ৪৭
মিশু মনি
.
মিশু ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলো। মেঘালয় বালিশ থেকে মুখ তুলে দেখলো মিশু চুল আচড়াচ্ছে। এতক্ষণ খেয়াল ই করেনি মেঘালয়, মিশুর লম্বা চুলগুলো কেটে ছোট ছোট করে ফেলেছে। মেঘালয়ের মেজাজ প্রচণ্ড গরম হয়ে গেলো। এত সুন্দর চুলগুলোর এই অবস্থা করে ফেলেছে!
মেঘালয় উঠে এসে মিশুকে হেচকা টানে বুকের উপর টেনে নিলো। তারপর রেগে বললো, “এই কয়েকদিন কিচ্ছু বলিনি তোমায়। তোমার চুল স্বপ্নে দেখে তোমার প্রেমে পড়েছি আমি। আর তোমার চুলের এই হাল কি করে হলো?”
মিশু মেঘালয়ের বাহুর বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বললো, “সবসময় চুল লম্বাই ছিলো। একটু ছোট করে দেখলাম কেমন দেখায়।”
– “চুল কাটার আগে আমার পারমিশন নিয়েছিলে?”
– “হেয়ার কাটিং এর জন্য পারমিশন কেন নিতে হবে?”
মেঘালয়ের আরো রাগ উঠে গেলো। ও মিশুকে দুহাতে চেপে ধরে বললো, “জানিস না তোর চুলের প্রতি আমার কত দূর্বলতা? কতবার করে বলেছি যেন আজীবন তোমার চুলের ঘ্রাণ এমনই থাকে। সবসময় চুলগুলো এমনই রেখো। আর তুমি চুল ছোট করে ফেলেছো,আবার কালার ও করেছো?”
মিশু বললো, “কক্ষনো করিনি। তাই ইচ্ছে করলো করতে।”
– “তুমি কখন পার্লারে যাও সেটাও আমাকে বলোনা। আমিতো তোমার চুল না দেখলে বুঝতেই পারতাম না তুমি আজকাল পার্লারে যাও।”
– “পার্লারে যাওয়াটা কি দোষের?”
– “মেঘালয়ের বউ পার্লারে কেন যাবে?”
– “আজব কথা বললে।”
– “হ্যা বললাম। কারণ আমার বউ কখনো পার্লারে যাবেনা, প্রয়োজনে পার্লার থেকে বিউটিশিয়ান নিজে আমার বাসায় এসে আমার বউকে সার্ভিস দেবে। আমি কখনোই চাইনি তুমি চুল কেটে কালার করে এতটা মডার্ন হয়ে যাও। তোমার ন্যাচারাল লুকটার জন্যই আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
– “এখন কি ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে না?”
মেঘালয় বললো, “ইচ্ছে করছে তোমাকে কামড়ে শেষ করে ফেলি। কতদিন থেকে সারাক্ষণ ব্যস্ততার অজুহাত দেখাচ্ছো। আমি কিচ্ছু বলিনি। তুমি সপ্তাহে একদিন আমাকে সময় দিলেও আমার আপত্তি নেই। যাতে তুমি ভালো থাকো সেটাই করো। কিন্তু তুমি নিজেকে চেঞ্জ করে ফেলবা আমি সেটা মানতে পারবো না। মাসে একবার দেখা হলেও তোমার পবিত্র আর বিশুদ্ধ ন্যাচারাল চেহারাটা দেখতে চাই আমি।”
মিশু এবার গায়ের জোরে মেঘালয়ের হাতের বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। মেঘালয়ের রাগ এখনো কমছে না। কিন্তু মিশুকে কিছুই বলতে পারছে না ও। রাগে নিজের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে ওর। বদলানো মানে একেবারে চেহারাও বদলে ফেলেছে! এটা কিভাবে সম্ভব!
মিশু বললো, “শান্ত হও মেঘ। এত রেগে যাবে আমি বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম তুমি খুশিই হবে। কিন্তু আমার সব কাজে তুমি খুশি হওনা,সেটা আমার জানা ছিলোনা।”
মেঘালয় মিশুর সামনে এসে চোখে চোখ রেখে বললো, “তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করতে নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি আমি। কিন্তু তুমি নিজেকে বদলে ফেলো না প্লিজ। দোহাই লাগে তোমার।”
– “আমি একটুও বদলাইনি মেঘ। তুমি আমায় ভূল বুঝছো। আমাকে আগের মত ভালোবাসার চোখে দেখো, দেখবে আমি একটুও বদলাইনি।”
– “তুমি ইদানীং ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়তে শিখেছো?”
– “এটা নিয়েও তোমার অভিযোগ? যেখানে চলাফেরা করি,সেখানে পড়তেই হয়। তোমার চেয়ে ভালো কে জানে? একটা পার্টিতে কি আমি কামিজ স্যালোয়ার পড়ে যাবো?”
– “নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলো না মিশু। তুমি যেমন ছিলে,তাতেই তোমাকে আর সবার থেকে অনন্য আর সুন্দর লাগতো। অন্যকে নকল করে সুন্দরী হওয়া যায়না।”
মিশু রেগে বললো, “আমি কাউকে নকল করছি না। আমার যেটা পড়তে বা যা করতে কমফোর্ট ফিল করবো, আমি সেটাই পড়বো। এতে কাউকে নকল করার কথা কেন আসছে মেঘ?”
মেঘালয় আর কিছু বললো না। এভাবে মিশুকে বোঝানো সম্ভব না। ওকে ধীরেসুস্থে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলতে হবে। কিন্তু মিশু তো দ্রুত রেডি হচ্ছে বাইরে যাওয়ার জন্য। মেঘালয় কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। মিশু আয়নার সামনে সাজগোজ করছে। মেঘালয় একটু ভেবে এগিয়ে এসে ওকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। মিশুর পেটে হাত রেখে বলল, ” আমি বলেছিলাম না রেগুলার ইয়োগা করলে তোমার ফিগার দেখে যেকোনো ছেলের মাথা ঘুরে যাবে। দেখেছো পেটটা কত স্লিম লাগছে?”
মিশুর রাগ নিমেষেই কমে গেলো। ও আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো, “সত্যি বলছো?”
মেঘালয় হেসে বলল, “হুম আমার পাগলী টা। কিন্তু একটু মেদ থাকলেই তোমায় সুন্দর দেখাতো, নাভীটা একদম কুয়ার মত লাগতো আগে।”
মিশু মুচকি হেসে বললো, “হা হা হা। সবার তো স্লিম ফিগার পছন্দ। তোমার আবার হালকা মেদ ভালো লাগে?”
– “তুমি আমার সেরা সুন্দরী ছিলে বুঝলে? এখনো ভালোই লাগছে। কিন্তু আগে তোমাকে ন্যাচারাল লাগতো ”
– “এখন কি প্লাস্টিক প্লাস্টিক লাগে?”
– “স্ট্যাচু স্ট্যাচু লাগে। হা হা হা।”
মিশু হেসে বললো, “ছাড়ো তো। রেডি হতে দাও।”
মেঘালয় মিশুর কাঁধে মাথা রেখে ওর গালে গাল ঘষে ছোট ছোট দাড়ির হালকা খোঁচা দিয়ে বললো, “তোমার গায়ের স্মেলটা দারুণ মিশু।”
মিশু শিহরিত হয়ে উঠলো। মেঘালয়কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো, “এখন দুষ্টুমি না। আমার রিহার্সাল আছে।”
– “যাবে তো। একটু ভালোবাসতে দাও। তোমাকে দেখলে একদম ই দূরে থাকা যায়না। বড্ড আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছো। পাগল হয়ে যাচ্ছি।”
– “মেঘ,তুমি এই অসময়ে কেন এলে? আমার কাজ আছে।”
– “একটু পরে গেলে কিছু হবেনা। রেগুলার তো আর আসিনা, কতদিন পরে এলাম।”
– “উফফ পেটে এভাবে হাত বুলাচ্ছো কেন মেঘ? অস্থির হয়ে উঠছি তো।”
– “অস্থির করতেই চাইছি। এখন তোমার কোথাও যাওয়া হবেনা। এখন আমার মাঝে মিশে যাবা তুমি।”
– “বাচ্চাদের মতন করোনা তো। আমার একটা প্রোগ্রাম আছে। কিছু ডায়ালগ মুখস্থ করতে হবে আমায়।”
মেঘালয় বললো, “সব হবে। পরে যেও। আমাকে কেন এত দূরে সরিয়ে রাখো বলোতো? এরকম একটা বউকে রেখে কি দূরে থাকা যায়?”
মিশু হাসার চেষ্টা করে বললো, “কাজের সময় দুষ্টুমি?”
মেঘালয় মিশুর টপসের নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে ওর পেটে চাপ দিতে দিতে বললো, “কতটা চেঞ্জ হয়ে গেছো তুমি। আজকাল আর লজ্জায় নীল হয়ে যাওনা। আগে যদি এভাবে বলতাম তাহলে বলতে, তুমি একটা খুব খারাপ। সেই কথাটা শুনতে এত ভালো লাগতো আমার! আমার বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে লজ্জায় মরে যেতে। দুটো কিল বসাতে আমার বুকে। বড্ড মিস করি সেইসব দিনগুলোকে!”
মিশু কিছু বললো না। নিজের বদলে যাওয়ার কথাগুলো শুনতে শুনতে আর মেঘালয়ের পাগল করা স্পর্শে অস্থির হয়ে উঠতে লাগলো। মেঘালয় আস্তে আস্তে পিছনে সরে এসে মিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরেই বিছানায় শুয়ে পড়লো। মিশুর জিন্সের ভেতর দিয়ে ওর তলপেটে হাত রাখলো। মিশুর ঘোর ঘোর লেগে যাচ্ছে। মেঘালয় মিশুর পায়ে পা রেখে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে লাগলো। মিশু উত্তেজনায় ছটফট করতে শুরু করেছে। ছেলেটা এত দুষ্টু,এমন ভাবে ঘায়েল করে ফেলে যে নেশা ধরে যায়। এমন সময় মিশুর ফোন বেজে উঠলো।
মিশু ওঠার চেষ্টা করতেই মেঘালয় ওকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। মিশু ফোন রিসিভ করে বললো, “হ্যালো”
ওপাশ থেকে কি বললো বোঝা গেলো না। মিশু বললো, “আচ্ছা আমি এক্ষুণি আসছি।”
ফোন রেখেই বললো, “সরি মেঘ। আমাকে যেতে হবে এখন। শিল্পকলায় একটা ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতে বলেছে। আমি এখনো ফাইনালি জানাইনি কিছু। প্রধান অতিথি হাসানুল হক ইনু। সে কারণেই ইচ্ছে করছে প্রোগ্রামটা করি। এখান গিয়ে একটু দেখে আসতে হবে কি ব্যাপার।”
মেঘালয় কিছু বললো না। আজকাল এতকিছু করছে ওকে কিছুই জানানোর প্রয়োজন মনে করেনা মিশু। অযথা বলেই বা কি হবে। সে যাই করুক,এই অবস্থায় মেঘালয়কে ফেলে গেলে সেটা খুবই কষ্টদায়ক হবে মেঘের জন্য। ও সহ্য করতে পারবে না এরকম আচরণ। যাকে সবটুকু উৎসর্গ দিতে পারে,যার জন্য দিনরাত একাকার করে পরিশ্রম করে যাচ্ছে সেই মেয়েটাকে যদি একটু ভালোবাসতে না পারে এরচেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে?
মিশু বললো, “তুমি কি যাবে? না গেলে তোমার কোনো কাজ না থাকলে বাসায় থাকো। আমি তাড়াতাড়ি ফিরবো।”
মেঘালয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই বারবার সারপ্রাইজড হয়ে যাচ্ছে। এতকিছু কল্পনাও করেনি ও। এত দ্রুত এত বিশাল সব পরিবর্তন সত্যিই মেনে নেয়ার মত নয়। মেঘালয় দুহাতে মুখ ঢেকে বিছানায় বসে রইলো। মিশু সেদিকে খেয়াল ও করলো না। ফ্রেশ হয়ে এসে আরেকবার চুলগুলো আচড়িয়ে নিয়ে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো। দরজার কাছে গিয়ে বললো, “আমি আসছি। জরুরি কাজ না থাকলে আজকে থেকে যাও।”
কথাটা বলেই চলে গেলো মিশু। মেঘালয়ের বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। জরুরি কাজ থাকলেও মিশু একবার বললে সবকাজ ফেলে ওকে সময় দিতো মেঘ। মিশুর খুশির জন্য সবই করতে পারবে ও। আজকে যদি ওর জায়গায় মিশু থাকত, আর মেঘালয়ের যদি সরকারি চাকরীও হতো তবুও মিশুর ভালোলাগার জন্য ডিউটিতে যেতো না ও। চাকরী জলে যাক,মিশুর প্রশান্তি আগে। যে মিশুর জন্য এতটা ভালোবাসা বুকে নিয়ে আজকে ওকে বিয়ের কথাটা বলবে বলে এসেছে,সে মিশু ওকে পাত্তাই দিলোনা। এতটা কাছে পাওয়ার পর এভাবে ফেলে চলে গেলে মানুষের মাথা ঠিক থাকার কথা না। সেখানে মেঘালয় ওকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে,মেঘালয়ের মনের অবস্থা সাংঘাতিক রকমের খারাপ হলো। ও বিছানায় শুয়ে রইলো চুপচাপ।
৭৬.
মিশু সন্ধ্যার পরপর ই ফিরলো। বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে গেছে। মেঘালয় বিছানা ছেড়ে ওঠেনি। শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুম ভাঙার পর শুয়েই আছে। মিশু এসে বিছানার পাশে বসে বললো, “ঘুম হলো? ওঠো, নাস্তা করো।”
মেঘালয় কিছু বললো না। চোখ মেলে তাকালো মিশুর দিকে। মিশুকে খুবই স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। বাসায় ফিরে আবার শাওয়ার নিয়েছে বোধহয়। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। দুপাশের সামনের কাটা চুলগুলো মুখের উপর এসে পড়েছে। মেঘালয় অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলো মিশুর মুখের দিকে। এই মেয়েটাকে ছাড়া ও বাঁচবে কি করে?
মিশু বললো, “কি দেখছো অমন করে? ওঠো, ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করবে। আমিতো ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছো। যাক,থেকে গিয়ে ভালোই করেছো। কতদিন কাছে পাইনা তোমায়।”
মেঘালয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “দুপুরে ওভাবে আমাকে তাচ্ছিল্য করে ফেলে রেখে গেলে। এখন আবার এটা বলছো?”
– “মেঘ,আমি কাজ ছিলো বললাম না। সবকিছুর একটা সময় থাকে।”
– “হুম,আমার জানা ছিলোনা। সরি।”
– “রাগ করছো কেন? কাল আমার অফডে। আজকে সারারাত দুজনে জেগে জেগে গল্প করবো। এখন উঠবে কি?”
মেঘালয় উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলো। রাত নেমেছে। চা খেতে খেতে বললো, “নতুন নতুন কাজ করছো। আমাকে জানাও না কিছু।”
– “ব্যস্ততার কারণে জানানো হয়না।”
– “জগতে ব্যস্ততা বলে কিছু নেই। সবই গুরুত্বের উপর নির্ভর করে। আমি কঠিন ব্যস্ততার সময়েও তোমাকে সময় দিয়েছি।”
– “তারমানে বলতে চাইছো আমি তোমায় গুরুত্ব দিইনা?”
মেঘালয় নিশ্চুপ রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো, “একটা সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলাম তোমায়।”
– “হুম বলো।”
মেঘালয় চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, “আগামী দশদিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে হচ্ছে।”
মিশু চমকে উঠে বললো, “বিয়ে মানে! কিসের বিয়ে?”
মেঘালয় বললো, “আমাদের বিয়ে। আব্বু আম্মু চাইছে তোমাকে বিয়ে করে বাসায় তুলতে। ভেবেছিলাম আরো তিন চার বছর পর বাসায় তুলবো। ওরা চাইছে যখন দেরি করে লাভ কি? আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিনেই আমরা আরেকবার বিয়ে করবো। কি বলো?”
মিশু অবাক হয়ে চেয়ে আছে। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “সম্ভব না। কিছুতেই সম্ভব না।”
মেঘালয় অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো মিশুর দিকে। ভেবেছিলো মিশু খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু মিশু এরকম বলবে সেটা ও ভাবতেও পারেনি। অদ্ভুত লাগছে।
মিশু বললো, “এত তাড়াতাড়ি আমি সংসারে জড়াতে পারবো না। আগে নিজের মত করে লাইফটা এনজয় করি,ক্যারিয়ার গোছাই তারপর।”
– “তোমার লাইফে আমি ছাড়া আর কি আছে? সবই হবে,আমাদের ভালোবাসার স্বীকৃতি পেয়ে সব করবে।”
– “সংসার একটা ঝামেলার জিনিস। আমি এখন ই পারবো না।”
– “তোমাকে কোনো ঝামেলা করতে হবেনা। আমাদের বাসায় তোমার কোনো দায়িত্ব নেই,শুধু আমাকে ভালোবাসবে”
– “এখনি না মেঘ। আরো কিছুদিন সময় যাক তারপর। এত তাড়াতাড়ি কেন?”
– “তুমিই আগে বলতে কবে বাসায় তুলবো? আজ এটা বলছো?”
– “হ্যা,কারণ মাত্র ক্যারিয়ার শুরু হচ্ছে আমার।”
– “উফ ক্যারিয়ার রাখবে তুমি? আমার বিজনেস পুরোটাই তোমায় দিয়ে দিবো, সব তোমায় দিয়ে দিবো, সব। তুমি জনপ্রিয় Rj হয়েছো, টিভিতে উপস্থাপনা করছো। আর কি চাও?”
মিশু অবাক হয়ে গেলো মেঘালয়ের ঝাঁঝালো কথা শুনে। বললো, “একটু নিজের মত এনজয় করতে দাও।”
– “তোমার এনজয় করার জন্য তোমার আমাকে বাদ দিতে হবে? আমার সাথে কতদিন ভালোমতো কথা বলোনা তুমি?”
– “মেঘ,একটু বুঝার চেষ্টা করো। এত তাড়াতাড়ি সংসার পারবো না আমি।”
মেঘালয় উঠে এসে মিশুর পায়ের কাছে বসে ওর কোলে মাথা রেখে বললো, “তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো মিশু। আমি একদমই তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আর তোমাকে নিয়ে আজকাল খুব চিন্তা হয়। তুমি ইদানীং বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করো। আমাদের বাসায় থাকলে একটু শাসনে থাকবা,আমার সাথে বের হবা সবসময়। আমার চিন্তা থাকবে না।”
– “তোমার সাথে সবসময় বের হতে হবে? আমার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইছো তুমি?”
– “এটা কি বললা মিশু? আমি তোমাকে স্বাধীনতা দিচ্ছি,সবসময় আমার সাথে রাখতে চাইছি আর তুমি বলছো?”
– “হ্যা। আমার স্বাধীনতা কেন কেড়ে নিতে চাও তুমি? আমাকে একটু স্বাধীন ভাবে থাকতে দিবানা?”
মেঘালয় মিশুর কোল ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে পা মেলে দিয়ে বসে পড়লো। মিশুর মুখ থেকে এমন কথা একদম ই আশা করেনি ও। বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মাটির ভেতর ঢুকে যেতে। কি বলবে বুঝতে না পেরে নিশ্চুপ হয়ে রইলো। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো ওর। মা ফোন দিয়েছে। রিসিভ করে বললো, “হ্যা আম্মু বলো।”
মা বললেন, “বাসায় আসবি একটু তাড়াতাড়ি? তোর আব্বু একটু তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে। একসাথে ডিনার করবো। জলদি আসিস।”
মেঘালয় “আচ্ছা” বলে রেখে দিলো। ভালোই হলো। এই মুহুর্তে মিশুর সামনে বসে থাকলে মিশুর তিক্ততা আরো বেড়ে যেতো। আর ওরও খারাপ লাগতো খুব। তারচেয়ে এখন বাসায় চলে যাওয়াটাই ভালো হবে। ভেবেচিন্তে সবকিছু ঠিক করে ফেলতে হবে।
মেঘালয় মায়ের কথাটা মিশুকে বলে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। মিশু একবার থাকতেও বললো না। ঠায় বসে রইলো সোফায়। মেঘালয় বুক ভরা যন্ত্রণা নিয়ে বেড়িয়ে এলো বাসা থেকে। ছেলেদের নাকি কখনো কাঁদতে নেই,যদি চিৎকার করে একবার কাঁদতে পারতো!
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ৪৬

0

অনুভূতি
পর্ব ৪৬
মিশু মনি
.
৭৩.
খুব সকালেই ঘুম ভাংলো সবার। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় উপভোগ করা হলো। সাজেকের সৌন্দর্য দুহাতে ভেতরে গ্রহণ করলো সবাই। ক্ষণিকে ক্ষণিকে রূপ বদলায় সাজেক। এখনি সবকিছু সুন্দর স্পষ্ট, একটু পরেই আবার মেঘে ছেয়ে যায়। কুয়াশার মত মেঘ এসে গা ভিজিয়ে দেয়,আবার কখনো হুট করেই নেমে পড়ে বৃষ্টি। হেলিপ্যাডের সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় সবই উপভোগ করা হলো। এখন চলে যেতে হবে ভেবে মিশুর মনটা একদম খারাপ হয়ে গেছে।
মেঘালয় ওকে খুব করে বোঝালো যে আবারো ওকে নিয়ে আসবে কিন্তু কিছুতেই ওর মুখে হাসি ফুটলো না। খুব কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা। লেগুনায় পুরোটা পথ ছাদের উপর বসে মেঘালয় শক্ত করে ধরে রইলো ওকে। সাজেক থেকে ফেরার পথে দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে তারপর খাগড়াছড়ি ফিরলো। মিশু এখনো মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। আসার সময় কত আনন্দ হচ্ছিলো আর যেতে হচ্ছে মনখারাপ করে। সারাজীবন যদি পাহাড়ের উপর বসেই কাটিয়ে দেয়া যেতো!
খাগড়াছড়ি থেকে বাস ছাড়লো রাত্রিবেলা। বাসে উঠেই মেঘালয়ের বুকে মাথা রেখে আরামের ঘুম দিলো মিশু। মেঘালয় ধরে রইলো ওকে। মেয়েটা এখনো বড় হলোনা,কোথাও গেলে আর ফিরতে চায়না কিছুতেই। এই মন খারাপের রেশ আরো কিছুদিন থাকবে ওর। খুব দ্রুত আরেকটা ট্যুরের ব্যবস্থা করতে হবে মনেহচ্ছে।
রোদ পূর্ব’র কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। পূর্ব ওর জীবনের নানান গল্প শুনাচ্ছে আর ও মুগ্ধ হয়ে শুনছে। পূর্ব বলেছে এখন থেকে রোজ দেখা হবে ওর সাথে। সকালে রোদকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে যাবে আবার সন্ধ্যার আগে ওকে নিয়ে বাসায় পৌছে দেবে। নতুন এক সুখাস্পর্শে মুখরিত হয়ে উঠছে রোদ।
নিখিল ও দুপুরের প্রথম হানিমুন বেশ সুন্দর কাটলো। ওরা একে অপরকে হারানোর পর আবারো পেয়ে কি পরিমাণ সুখী হয়েছে তা শুধু ওরাই জানে। একে অপরকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে যে!
৭৪.
দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেলো।
মিশু বেশ জনপ্রিয় রেডিও জকি হয়ে উঠেছে। মিডিয়ার জগতে নতুন পা দেয়ার পরও দ্রুত এত ভালো প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট করতে শিখবে এটা মেঘালয় কল্পনাও করেনি। ওর যেকোনো কাজ শেখার ক্ষমতা ভালো। মেধাকে দারুণ কাজে লাগাতে পারে মেয়েটা। রেগুলার ভার্সিটিতে যাওয়া আসা, প্রোগ্রামে আসা, টুকটাক ঘুরতে যাওয়া, আর কাজের ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই ওর দিন কাটছে।
মেঘালয়ের নতুন এলবাম বেড়িয়েছে আর রেডিওতে গান করছে। গানের প্রতি ঝোক কমে এসেছে মেঘালয়ের। মিশু মিডিয়ায় পা দেয়ার পর থেকে ও এসব কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। দুজনেই সেলিব্রেটি হয়ে গেলে সমস্যা। মিশু ক্যারিয়ারে দ্রুত উঠছে যখন, উঠুক। ইদানীং টিভির প্রোগ্রামে উপস্থাপনার কাজ করছে মেয়েটা। বেশ অফার পাচ্ছে কাজের। মোটামুটি জনপ্রিয় দুটো প্রোগ্রামে উপস্থাপনা করেছে। সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে ও।
মেঘালয় গান কমিয়ে দিয়ে বাবার বিজনেসে মন দিয়েছে। একমাত্র ছেলে,সব দায়িত্ব ওকেই নিতে হবে। সারাদিন অফিসে কাজ দেখাশুনা করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে যখন মিশুকে ফোন দেয়,
মিশু রিসিভ করে বলে, “আমি এখনো বাইরে। বাসায় ফিরে ফোন দিবো।”
মেঘালয় ফোন কেটে দিয়ে অপেক্ষা করে। অনেক্ষণ সময় পেরিয়ে যায় তবুও মিশুর কল আসেনা। ও আবারো কল দেয়। মিশু রিসিভ করে বলে, “মাত্র বাসায় ঢুকলাম, ফ্রেশ হয়ে ফোন দিচ্ছি।”
মেঘালয় ক্লান্ত শরীরে শুয়ে অপেক্ষা করে ওর ফোনের জন্য। তবুও কল আসেনা। দেখতে দেখতে ঘন্টাখানেক পার হয়ে যায়। মেঘালয় অস্থির হয়ে ওঠে। কথা না বললে ঘুমও আসেনা। ও একবার কথা বলার জন্য কল দেয় মিশুকে। মিশু রিসিভ করে ঘুম জড়ানো গলায় বলে, “ঘুমাচ্ছি। কাল ফোন দিও। খুব টায়ার্ড আমি। এখন ঘুমুতে দাও।”
মেঘালয় কল কেটে দিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। অপলক ভাবে অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকে। স্ক্রিনে মিশুর উচ্ছল ছবি। ওর ছবির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ওর জায়গায় মিশু থাকলে নির্ঘাত কান্না করে দিতো। ও তো ছেলে,তাই কাঁদতে পারেনা। গত দুটো সপ্তাহ ধরে প্রতিটা রাতেই এরকম করছে মিশু। মেঘালয় ওর বাসায় যেতে চায়,সেটাও বারণ করে দেয়। ব্যস্ততার অজুহাত দেখায়। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার পর সারারাত জেগে মেঘালয়কে সময় দেয়ার মত এনার্জি নাকি থাকেনা আর। মেঘালয় কিছুই বলেনা,শুধু ওর এই নিশ্চুপ বদলে যাওয়া দেখে যায়।
যেই মেয়েটা ছয় মাস আগেও একটা রাত ফোন না দিলে কান্নায় ভেঙে পড়তো, আজ তার কথা বলার মত সময় নেই। যে মেয়েটা পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করে বসে থাকতো মেঘালয় কবে আসবে, যেদিন মেঘালয় ওর কাছে আসতো সেদিন বিকেল থেকেই সাজগোজ করে বসে থাকতো। আজ সেই মেয়েটা পনের দিন ধরে দেখা না করেই আছে। একবার ভিডিও কল দিয়ে মুখটা দেখানোর মতন সময়ও নাকি নেই! মানুষ উপরে উঠে গেলে কি এমন ই হয়? কই মেঘালয় যখন সাধারণ একটা ছেলে থেকে একজন জনপ্রিয় শিল্পী হয়ে উঠলো,যখন প্রতিটা পত্রিকায় ওর মাউন্টেইনিয়ারিং এর ছবি ছাপা হলো তখন তো মেঘালয় একটুও বদলায় নি। বরং মিশুর ভালোর জন্যই গান গাওয়া কমিয়ে দিয়েছে ও। আর সেই মিশুই কিনা…!
রাত একটা থেকে দুটো, দুটো থেকে আড়াইটা বেজে গেলো। নার্ভগুলো ধীরেধীরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। ঘুমে চোখ বুজে আসছে মেঘালয়ের। ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো। ঘুমিয়ে গেলো আস্তে আস্তে।
বাইরে বৃষ্টি নেমেছে। খুব বাতাস হচ্ছে। মেঘালয়ের মা এসে দেখলেন রুমের দরজা খোলাই আছে। মেঘালয় জানালা খোলা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। উনি এসে রুমের জানালা লাগিয়ে দিলেন। মেঘালয়ের গায়ের উপর চাদর টেনে দিলেন। ছেলেটাকে খুবই মায়াবী দেখাচ্ছে। নিজের খেয়াল রাখেনা ঠিকমত, একটুও সেজেগুজে বাইরে যায়না। গত কয়েকদিন থেকে চুল ও আচড়ায় না ঠিকমত। মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
রুমে এসে মেঘালয়ের বাবাকে বললেন, “একটা কথা বলবো?”
আকাশ আহমেদ ঝড়ের শব্দে উঠে বসেছেন। উনি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হুম বলো।”
– “বলছি যে, মেঘ তো এখন বিজনেসে ভালোই মন দিয়েছে। ওর তো পড়াশোনাও শেষ। এখন কি বিয়েটা দেয়া যায়না ওর?”
উনি চমকে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। বিয়ের কথাটা একদম ই মাথায় আসেনি ওনার। মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললেন, “মেঘ কি এখনি বিয়ে করতে চায়?”
– “না চাওয়ার কি আছে? ওকে তো আর কষ্ট করে চাকরী নিতে হবেনা। গান করছে,বিজনেস করছে। এখন বিয়েটা দিয়ে দাও।”
– “হুম, জিজ্ঞেস করে দেখি কি বলে।”
মা বললেন, “যাই বলুক ওকে বিয়ের তাগাদা দিতে হবে। মিশুর সাথে প্রায় বছর খানেকের সম্পর্ক, ওরা কি চায়না বিয়ে করতে? এতদিনের সম্পর্ক, মেঘ মাঝেমাঝেই ওর ওখানে যায়। চার পাঁঁচবার ট্যুরেও গেলো একসাথে। ওদের সম্পর্ক নিশ্চয় স্বামী স্ত্রী’র মত হয়েই গেছে। আমাদের উচিৎ বিয়ে দিয়ে দেয়া তাইনা?”
বাবা বললেন, “হুম। আচ্ছা কাল নাস্তার টেবিলেই তুলে দেখো কথাটা।”
সকালে খাবার টেবিলে কথাটা বলতেই মেঘালয় উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। মিশু আজকাল ব্যস্ততার অজুহাতে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে, ওকে ছাড়া থাকতে খুবই কষ্ট হয় মেঘালয়ের। এরকম একটা প্রস্তাব তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতন। বিয়ে করে ওকে নিজের কাছে এনে রাখবে,সারাক্ষণ বাবা মায়ের সাথে থাকবে। সবাই জানবে ও মেঘালয়ের স্ত্রী। যখন তখন ওর কর্মস্থলেও গিয়ে হাজির হতে পারবে।
মেঘালয় খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমার লক্ষী আম্মু। দশদিনের মধ্যে আয়োজন করতে পারবা না? আমি আর দেরি করতে চাইনা।”
মা হেসে বললেন, “বাবাহ! এতদিন দেরি করতে পারলি আর এখন দশদিনের মধ্যেই?”
মেঘালয় লজ্জা পেয়ে বললো, “মা, ওর মত পুতুলটাকে দূরে রাখি কি করে বলো? আমিতো ভেবেছিলাম ওর পড়াশোনা শেষ না হওয়া অব্দি বিয়ের জন্য তোমাদেরকে বলতেই পারবো না।”
– “পড়াশোনা চালিয়েই যাক। আর দুজনেই তো মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছিস, অযথা দেরি করে কি হবে?”
মেঘালয় মাকে জড়িয়ে ধরে রইলো। ওর কি যে আনন্দ হচ্ছে। এখন মিশুকে সারপ্রাইজ দিতে হবে।
৭৫.
ভার্সিটি থেকে ফিরেই মিশু দেখলো মেঘালয় ওর বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে। বেশ অবাক হলো ও। রাতে মেঘালয় কল দিয়েছিল,কথা বলা হয়নি। সকালে ৮ টায় ক্লাস ছিলো,উঠে ক্লাসে চলে গেছে। মাত্র ফিরলো ভার্সিটি থেকে। ছেলেটার সাথে সেরকম কথা হচ্ছেনা কয়টাদিন ধরে।
মিশু এসে মেঘালয়ের গায়ে হাত রেখে বললো, “ঘুমাচ্ছো?”
মেঘালয় চমকে উঠলো মিশুর ডাক শুনে। ঘুম জড়ানো গলায় বললো, “একটু ঘুম এসে গিয়েছিলো। রাতে ঘুম হয়নি তো।”
মিশুর দিকে ভালোমতো তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, “পনের দিন পর দেখছি তোমায়। কতটা বদলে গেছো!”
বলেই মিশুকে কাছে টেনে নেয়ার চেষ্টা করলো। ওর কাছাকাছি আসার পর যখনি ঠোঁট স্পর্শ করতে যাবে মিশু ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো, “আমার খুব উশখুশ লাগছে। সরো তো আগে ফ্রেশ হয়ে আসি।”
মেঘালয় হতাশ হয়ে ওকে ছেড়ে দিলো। মিশু আজকাল কেমন যেন হয়ে গেছে। আর আগের মত কাছে আসতেও চায়না।
মিশু বাথরুমে ঢুকে গেলো আর কিছু না বলেই। মেঘালয় উঠে বাইরে গিয়ে রান্নাঘর থেকে খাবার এনে টেবিলে সাজালো। যত্ন করে খাবার রেডি করে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো মিশুর জন্য। মিশু গোসল থেকে বেড়িয়ে একটা টি-শার্ট ও কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে চুলে টাওয়েল বেধে খাবার টেবিলের কাছে আসলো। ওর স্নিগ্ধ চেহারা দেখে পাগল হয়ে গেলো মেঘালয়। উঠে এসে মিশুর কোমরে হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে নিয়ে বললো, “ইস! আমার বউটা দিনদিন যা আকর্ষণীয় হচ্ছে,ইচ্ছে করছে তোমাকেই খেয়ে ফেলি।”
মিশু মেঘালয়ের গালে বুলিয়ে দিয়ে বললো, “তুমি কালো হয়ে গেছো কেন?”
– “বউয়ের গায়ের রঙ বরের গায়ের রঙের ব্যস্তানুপাতিক। তুমি ফর্সা হচ্ছো তাই আমি কালো হচ্ছি।”
– “হা হা, তাই নাকি? তোমাকে খুবই উসকোখুসকো দেখাচ্ছে মেঘ। নিজের একটু কেয়ার করতে পারোনা?”
– “নাহ পারিনা। আমার দিকে তাকানোর সময় তো আজকাল তোমার নেই। অযথা নিজের কেয়ার করে কি করবো?”
মিশু হাসলো। মেঘালয়ের বাহুর বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। মেঘালয় ওর পাশেই বসলো। মিশু খাবারে হাত দিয়ে বললো, “শুরু করো।”
মেঘালয় অবাক হয়ে যাচ্ছে মিশুর আচরণ দেখে। এত পরিবর্তন! হুট করেই হয়নি। ধীরেধীরে হয়েছে। মেঘালয় ওকে অনেকবার বলেছে, “মিশু তুমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছো। প্লিজ কখনো চেঞ্জ হয়ে যেওনা।”
মিশু হেসে বলেছে, “আমি আজীবন এমনই থাকবো মেঘমনি।”
তবুও আজ এতটা বদলে গেছে! মেঘালয়ের দিকে তাকানোর সময় ও ওর হচ্ছেনা। এমন ভাব করছে যেন মেঘালয় আসাতে খুব বিরক্ত হয়েছে ও।
মেঘালয় কষ্ট করে খাবার তুলে নিলো। কিন্তু নিজে মুখে না দিয়ে মিশুর দিকে এগিয়ে দিলো। মিশু ওর হাতেই খাবার খেয়ে যাচ্ছে অথচ একবার ও ওকে খেতে বলছে না। এমন কেন মেয়েটা?
মেঘালয় বললো, “আমার খিদে পেয়েছে মিশু।”
– “সেকি! তুমি খাচ্ছোনা কেন? খাও।”
মেঘালয়ের বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। মিশুর এমন পরিবর্তন ও মানতে পারছে না। অনেক কষ্টে একটু ভাত মুখে দিলো কিন্তু গলা দিয়ে নামলো না। মিশু বললো, “একটা নিউজ আছে।”
মেঘালয় নিশ্চুপ। মিশু বলেই গেলো, “একটা বিজ্ঞাপনে কাজ করার অফার পেয়েছি।”
মেঘালয় আঁৎকে উঠে বললো, “মডেল! কোনো দরকার নেই।”
– “কেন? আমিতো ভাবলাম তুমি শুনলে হ্যাপি হবে। বাট..”
– “মিশু,তুমি জকির কাজ করছো করো। আর উপস্থাপনার কাজটাও ভালো। কিন্তু পুরোপুরিভাবে মিডিয়ায় নেমে পড়ো আমি চাইনা সেটা। তোমাকে মডেল হতে হবেনা। তুমি আমার স্ত্রী, আমার ভালোবাসা, আমার মিশু।”
মিশু কিছু বললো না। কিন্তু ওর মুখটা কালো হয়ে গেছে। মেঘালয় বললো, “আমাকে একবার ও বলার প্রয়োজন মনে করোনি? আজকাল কোথায় যাও কি করো কিচ্ছু জানাও না।”
– “তুমি বিজি থাকো, কিংবা আমি আমি বিজি থাকি তাই জানানো হয়না।”
– “ভালো। তোমার কি মন খারাপ হচ্ছে? শোনো, আমি মডেলিং করতে দিবো না মিশু। তুমি মিডিয়ার আর কোনোকিছুতেই যেতে পারবে না। পড়াশোনা করো আর রেডিওতে কাজ করো। তোমার জীবনের অন্য একটা লক্ষ্য আছে সেটা ভূলে যেওনা।”
মিশু কিছু না বলে চুপচাপ খাচ্ছে। মেঘালয় আরেকবার মিশুর মুখে তুলে দিতে যাচ্ছিলো কিন্তু মিশু নিলো না। সরিয়ে দিয়ে বললো, “আর খাবো না। পেট ভরে গেছে।”
কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও মেঘালয় হাসলো। বললো, “হাত ধুয়ে নাও। রুমে যাও আমি আসছি।”
মিশু হাত ধুয়ে রুমে চলে গেলো। মেঘালয় রুমে এসে দেখলো মিশু বিছানায় শুয়ে ফোনে কি যেন করছে। মেঘালয় এসে পাশে শুয়ে পড়লো।
মিশু অনেক্ষণ ধরে ফোন চাপাচাপি করছে। মেঘালয় ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বিছানায় রেখে মিশুকে বুকে টেনে নিলো। আলতো করে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো, “রাগ করেছো?”
– “না। রাগ করবো কেন?”
– “তুমি আজকাল এত ব্যস্ত থাকো, আমার খুব কষ্ট হয় পাগলীটা। মিডিয়াকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিলে ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছুই থাকবে না। বুঝো সেটা?”
মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “বাদ দাও। আমি করছি না আর কিছু।”
– “পড়াশোনা ঠিকমত করো। আর তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। এ বছরের সবচেয়ে সেরা সারপ্রাইজ।”
– “দার্জিলিং ট্যুর নাকি? এখন কোথাও যাবোনা। কয়েকদিন টানা প্রোগ্রাম আছে।”
মেঘালয় হতাশ হয়ে বললো, “সেরকম কিছু না। এরচেয়েও বড় সারপ্রাইজ।”
মিশু সেদিকে কোনো উৎসাহ না দেখিয়ে উঠে বসতে বসতে বললো, “আমাকে বের হতে হবে।”
মেঘালয়ের বুকে হাতুরি পিটতে লাগলো। মিশু ওকে ফেলে এভাবে চলে যাচ্ছে আর বলছে বের হতে হবে? মেঘালয় কি বলতে চাইছে সেটা শোনার ও আগ্রহ নেই?
মিশু বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মেঘালয় বালিশে মুখ গুঁজে দিয়ে দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরলো বালিশটা। ওর সবকিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে। মিশুকে বিন্দু পরিমাণ রাগ দেখানোর সাধ্য ওর নেই। ও কোনভাবেই মিশুকে আঘাত করতে পারেনা। ইচ্ছে করছে ঘরের সমস্তকিছু ভেঙে ফেলতে।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ৪৫

0

অনুভূতি
পর্ব ৪৫
মিশু মনি
.
৭১.
রৌদ্রময়ী দুহাত দুদিকে মেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ উড়ে এসে ওর শরীর স্পর্শ করে চলে গেলো। কি সুখ সুখ অনুভূতি!
পূর্ব বললো, “তোমাকে আজ আকাশের মতই লাগছে রোদ।”
পূর্ব’র কথা শুনে রোদ ওর দিকে ফিরে তাকালো। মুচকি হাসি ফুটে উঠলো ওর মুখে। ধীরেধীরে সকালের শুভ্রতা ছড়িয়ে পড়েছে। চারদিকে কুয়াশার মতন মেঘ ছড়িয়ে আছে। অন্যরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এখানে। মিশু ও মেঘালয় এখনো একে অপরকে জড়িয়ে ধরেই আছে। এদিকে নিখিল ও দুপুর একসাথে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। আকাশটা খুব বিশাল লাগছে এখান থেকে। মনেহচ্ছে পুরো পৃথিবীটাকেই দেখতে পাচ্ছে ওরা।
একটু আগেও এখানে ছিলো শুধুই মেঘের ছড়াছড়ি। সবকিছু ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলো। অথচ খানিক বাদেই সমস্তটা একদম পরিষ্কার হয়ে গেলো।একদিকে মিজোরাম রাজ্য,একদিকে দীঘিনালা, আর পাহাড়ের চূড়া সবটাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘ জমে আছে। আস্তে আস্তে সূর্য উদিত হচ্ছে। মুগ্ধ হয়ে সবাই সূর্যাস্ত উপভোগ করলো। এরপর একসাথে বসে সকালের নাস্তা সেরে নিলো। ছেলেরা ওদের পিঠের ব্যাগে করে নাস্তা আর পানি বয়ে নিয়ে এসেছে। কারণ নাস্তা করতে দেরি হয়ে গেলে আর সূর্যোদয় দেখা হতোনা। আর এখান থেকে নেমে যেতেও অনেক দেরি হবে। কাজেই নাস্তা ব্যাগে করেই নিয়ে আসতে হয়েছে। নাস্তার পর একসাথে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা চললো। সকালের স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে। সূর্যের রঙিন আলোকরশ্মি এসে পড়েছে গায়ের উপর,পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায়।এক অন্যরকম ভালোলাগা ছেয়ে যাচ্ছে।
সায়ান ও আরাফ বললো, “তোমরা সবাই এখানে এনজয় করো। আমরা কংলাক ঝরনা দেখে আসি। ঝরনায় কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে স্নান সেরে আসবো।”
মিশু মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, “এই আমরা ঝরনায় যাবোনা?”
মেঘালয় বললো, “ঝরনায় যেতে হলে পাহাড়ের ঢালে নামতে হবে মিশু সোনা। অনেক দূর্গম পথ। এখানে উপরে যেমন দেখছো,তার একদম ভিন্ন। পুরো পথটাই বন্য জংগলে ঢাকা। তুমি ওই ঘন জংগল পেড়িয়ে যেতে পারবা?”
মিশু আত্মবিশ্বাসী স্বরে বললো, “আমি পারবো। চলোনা প্লিজ যাই।”
মেঘালয় হেসে বললো, “একদম পাহাড়ি লতা আর প্রাচীন বৃক্ষে ঢাকা পুরো পথটা। অনেক কষ্ট হবে তোমার। সায়ান আর আরাফ যাক,আমরা বরং লুসাই দের সাথে কথা বলে আসি।”
মিশু মুখটা করুণ করে বললো, “লুসাইদের সাথে কথা বলে ঝরনায় যাওয়া যাবেনা?”
– “আজকে থাক না, ঝিরিপথ দিয়ে যেতে হবে। আমি চাইনা অত কঠিন ট্রেইল করে খুব বেশি টায়ার্ড হয়ে পড়ো। তারপর আমাদের মধুচন্দ্রিমা…”
সবাই মুখ টিপে হাসলো মেঘালয়ের কথা শুনে। মিশু মুখটা ছোট্ট একটু করে তাকিয়ে আছে। মেঘালয় বললো, “ঝিরিপথটা অনেক দূর্গম। পাহাড়ি জংগল আর অনেক প্রাচীন বৃক্ষ দিয়ে ঢাকা রাস্তাটা। এই ট্রেইলে ট্রেকিং করে আসার পর রাতে নাক ডেকে ঘুমোবে তুমি। তখন আর একদম ই মজা হবেনা। আজকে রাতে আমরা সারারাত পার্টি করবো, বারবিকিউ হবে। কত মজা হবে ভাবতে পারো?”
মিশু তবুও মুখটা ছোট্ট একটু করেই আছে। ওর এখন খুব করে ঝরনায় যেতে ইচ্ছে করছে। মেঘালয় বললো, “পাগলি, এত মন খারাপ করোনা। আরেকবার এসে নিয়ে যাবো তোমায়। আজকে তোমাকে নতুন নতুন কিছু জিনিস দেখিয়ে আনি চলো।”
মিশু কিছু বললো না। মেঘালয় ওর মুখ দেখে বুঝতে পারছে ও ঝরনা দেখতে যাবেই। তার উপর প্রাচীন বৃক্ষ আর লতাপাতার কথা শুনেছে। ওর এখন ঝরনায় যাওয়ার ইচ্ছেটা আরো বেড়ে গেছে। মুখটা করুণ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘালয় হেসে ফেললো ওর মুখ দেখে।
সায়ান বললো, “তুই আর মিশুও চল আমাদের সাথে।”
মেঘালয় একটু কি যেন ভেবে বললো, “আচ্ছা ঠিক আছে। ওঠো মিশু,”
মিশু আনন্দে লাফিয়ে উঠে মেঘালয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো। ছোট্ট বাচ্চারা আনন্দে যেমন লাফায়,সেরকম লাফাতে লাগলো। ওরা আর কিছুক্ষণ এখানে থাকার পর কংলাক ঝরনায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিদায় নিলো সবার কাছ থেকে। নিখিল, দুপুর আর রোদ ও পূর্ব এখানেই থেকে গেলো। ওরা নেমে যাওয়ার পর নিখিল ও দুপুরও নিজেদের মত রোদের কাছ থেকে সরে আসলো। রোদ ও পূর্ব দুজনে বসে রইলো একে অপরের পিঠে হেলান দিয়ে। আরো একবার মেঘ এসে ওদের ছুঁয়ে দিয়ে গেলো।
নিখিল ও দুপুর হাত ধরাধরি করে আস্তে আস্তে পাহাড় থেকে নিচে নেমে এলো। ওরা আশেপাশের পরিবেশ দেখতে দেখতে কটেজের দিকে যেতে লাগলো।
৭২.
একরাতের জন্য কটেজ ভাড়া নেয়া হয়েছিলো। আজকে ওরা ক্লাব হাউজে থাকার অনুমতি নিয়েছে। ক্লাব হাউজের সামনে ফাঁকা জায়গাটায় তিনটা তাবুও টাঙিয়ে ফেলেছে। রাতে এই ফাঁকা জায়গায় একটু গান বাজনা আর আড্ডা হবে। ক্লাব হাউজের কেয়ারটেকার মইয়া লুসাই দাদা রান্নার ব্যবস্থা করে দিবেন। মেঘালয় ও সায়ান নিজ হাতে বারবিকিউ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাতে তাহলে বেশ মজাই হবে মনেহচ্ছে।
বুনো পরিবেশ আর পাথুরে পথে ট্রেকিং করে এসেও মিশুকে একটুও ক্লান্ত দেখাচ্ছে না। বরং দিব্যি ছুটোছুটি করে তাবু টাঙাতে সাহায্য করলো। বিকেলটা যে যার মত করে কাটিয়ে এসেছে। মেঘালয় মিশুকে নিয়ে লুসাইদের গ্রামে গিয়েছিলো। ওদের ঘরবাড়ি দেখতে দেখতে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলো মিশু। লুসাইরা পাহাড়ে জুম চাষ করে,কি কি চাষ করে,কিভাবে করে সবই শুনে নিয়েছে। ওর খুব মজা লাগছিলো ওদের গ্রামে ঘুরতে। মানুষ গুলো খুবই ভালো আর মিশুক মনে হয়েছে। বাচ্চাগুলো চেয়ে চেয়ে দেখছিলো ওদের দিকে। মিশু দুটো বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর ও করে দিয়েছে।
একটা বাড়িতে বসে হুকা টেনেছে আর গল্পও করেছে। মেঘালয়কে হুকা টানতে দেখে মিশুও টেনেছে। কিন্তু একবার টেনেই ওর সেকি কাশি! ওর কাণ্ড দেখে লুসাইরা হাসছিলো। পুরোটা বিকেল সেখানে কাটিয়ে দিয়ে কংলাক পাহাড়েই সূর্যাস্ত দেখে তারপর রুইলুই পাড়ায় ফিরে এসেছে ওরা। এসে তাবু টাঙানো, খড়ি জোগাড় করে রাখা, রান্নার ব্যবস্থা সব করে ফেললো।
রাত্রিবেলা
কাঠখড়িতে আগুন জ্বালিয়ে ওরা চারপাশে বসে আগুন পোহাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। বারবিকিউ টা দারুণ টেস্টি হয়েছিলো, সেটার প্রশংসা চললো অনেক্ষণভর। এরপর শুরু হলো গান বাজনা। মেঘালয়ের সাথে ওর বন্ধুরাও শুরু করে দিলো। আজকে নিখিলও যোগ দিয়েছে সাথে।
“বয়স আমার বেশিনা,ওরে টুকটুকির মা
খালি চুল কয়ডা পাইক্কা গ্যাছে বাতাসে…
তোমার মাইয়াডারে দেবানা,এই কথা মোরে কবানা
তাইলে কিন্তু মরে যাবানি উপোসে…
বয়স আমার বেশিনা,ওরে টুকটুকির মা
খালি চুল কয়ডা পাইক্কা গ্যাছে বাতাসে…”
গান শুনে মিশু হেসেই খুন। ও মেঘালয়ের এক হাতে শক্ত করে চেপে ধরে বসে আছে। চারিদিক মেঘে জড়ো হয়ে গেছে। যেখানে বসে আছে সেখানেই মেঘ উড়ে উড়ে আসছে। কুয়াশার মতন মেঘ এসে গা ভিজিয়ে দিচ্ছে। আগুনের পাশে বসে থাকতে বেশ লাগছে।
গান শেষ করে সবাই শুয়ে পড়লো। একইসাথে সবাই সোজা হয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে লাগলো। মাথার উপর রাশি রাশি নক্ষত্র। তারাগুলো দেখে মনেহচ্ছে সবগুলা মাথার উপর ঝুলে আছে,মনেহয় একটা ঢিল ছুড়লেই সব তারা টুপ করে গায়ের উপর পড়বে। এত কাছ থেকে কক্ষনো নক্ষত্র দেখেনি মিশু। ওর এতটা পরিমাণে সুখ সুখ লাগছে! মাঝেমাঝে মেঘ উড়ে এসে গায়ের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। এত সুন্দর কেন সবকিছু!
শুয়ে থেকেও গান হলো কয়েকটা। রাত দুটোর দিকে একটা তাবুতে মিশু ও মেঘালয় শুতে চলে গেলো। নিখিল ও দুপুর একটায় চলে গেলো। এখন বাকি রইলো একটা তাবু। ক্লাব হাউজে রোদ শুতে গেলে পূর্ব,আরাফ ও সায়ান তাবুতে শুতে পারবে। কিন্তু রোদকে রুমে যেতে বলাটা কেমন যেন হয়ে যায়। এদিকে রোদকে তাবুতে শুতে বললে ওদের তিনজনকে রুমে গিয়ে শুতে হবে। সেটাও ইচ্ছে করছে না। তিনজনের ই ইচ্ছে করছে তাবুতে থাকতে। আরেকটা তাবুর ব্যবস্থা করতে পারেনি বলে তিনটাই করতে হয়েছে। এখন কি করা যায় তবে?
পূর্ব বললো, “আমি আর রোদ আজকে সারারাত বাইরে বসে থাকবো আর গল্প করবো”
রোদ চমকে উঠলো ওর কথায়। প্রস্তাবটা লোভনীয়। কিন্তু লজ্জা লাগছে ওর। সায়ান রোদকে জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে তাই করবে?”
রোদ বললো, “আচ্ছা। আমার তো বাইরে বসে তারা গুনতেই ভালো লাগছে।”
আরাফ একবার দুষ্টুমি করে বললো, “আমরা দুজন বরং বাইরে বসে থাকি আর পূর্ব ও রোদ একসাথে তাবুতে ঘুমাক।”
কথাটা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো রোদ। মাথাই তুলতে পারছিলো না। সায়ান ও আরাফ হাসতে হাসতে তাবুতে শুতে গেলো। রোদ ও পূর্ব একসাথে শুয়ে রইলো ঘাসের উপর। আজকের জন্য পুরো ক্লাব হাউজই ওদের। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে,ভেতরে কেউই থাকতে গেলো না। সবাই বাইরে তাবুতেই শুয়ে পড়েছে।
রোদ বললো, “আজকের রাতটা এতটা সুন্দর, সত্যি আমার জীবনে এত সুন্দর রাত বোধহয় কক্ষনো আসেনি।”
পূর্ব হেসে বললো, ” কখনো কি ভেবেছিলে আমার সাথে গভীর রাতে এভাবে পাহাড়ের উপর শুয়ে থাকবা?”
রোদ লজ্জা পেয়ে কাছে সরে আসলো পূর্ব’র। দুজনে একদম কাছাকাছি শুয়ে আছে। অন্ধকার রাতে এভাবে ঘাসের উপর শুয়ে আকাশ দেখার মাঝে অন্যরকম সুখ বিরাজ করে। পূর্ব বললো, “স্কাই কালার শাড়িতে তোমাকে পাক্কা আসমানি আসমানি লাগছিলো।”
– “ইস! হয়েছে। আর বলতে হবেনা।”
– “এখন মেঘ আর মিশু কি করছে বলোতো?”
রোদ লজ্জায় কুকড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হলো। ওরা দুজন কি করছে এরকম লজ্জাজনক প্রশ্ন করতে পূর্ব’র কি একটুও লজ্জা করলো না? ছেলেটা খুবই পাজি। নিশ্চয়ই এখন দুষ্টমি ভরা হাসি হাসছে।
রোদ বললো, “মিশু নিশ্চয়ই মেঘালয়ের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।”
– “আহ! আমার ও ইচ্ছে করে ওরকম ভাবে কাউকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকতে।”
– “কাউ মানে তো গরু। গরুকে বুকে নিয়ে শুয়ে থাকবেন?”
পূর্ব হো হো করে হেসে বললো, “হুম। একরাতের জন্য তুমি কি গরু হবে রোদ?”
রোদের হাসি পেলো। ও আচমকা পূর্ব’র বুকে মাথা রেখে জাপটে ধরলো ওকে। পূর্ব দুহাতে রোদকে বুকে চেপে ধরে বললো, “এরকম মুহুর্ত আমার লাইফে এত তাড়াতাড়ি আসবে ভাবিনি।”
– “কিরকম?”
– “এইযে মাথার উপর আকাশ। তারাগুলো মিটিমিটি জ্বলছে। মনেহচ্ছে ঢিল ছুড়লেই টুপ করে একটা তারা ঝরে পড়বে গায়ের উপর। আমার চারিদিকে মেঘ ভাসছে। কুয়াশা ভিজিয়ে দিচ্ছে শরীর। ঘাসের উপর শুয়ে একজন রোদকে বুকে চেপে ধরে আছি।”
– “রোদ না, গরুকে বুকে চেপে ধরে আছেন”
-“হা হা হা।”
দুজনেই শব্দ করে হাসছে। তাবুর ভেতর থেকে ওদের হাসির শব্দ শুনে বড্ড আনন্দ হচ্ছে দুপুরের। অবশেষে পোড়া কপালীর মুখের হাসি ফিরিয়ে দিলো কেউ। এত সুন্দর হাসির শব্দ কতদিন শোনেনি দুপুর। প্রিয় বোনের প্রিয় হাসির শব্দ শুনতে শুনতে দুপুর ও নিখিলের বুকে মাথা রেখে সুখে ভেসে যেতে লাগলো। মনেহচ্ছে আজ রাতে পৃথিবীতে স্বর্গ নেমে এসেছে।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ৪৪

0

অনুভূতি
পর্ব ৪৪
মিশু মনি
.
৬৯.
রোদের চোখে পানি এসে গেলো। ও আস্তে করে মাথাটা রাখলো পূর্ব’র কাঁধের উপর। পূর্বকে নিঃসন্দেহে ভালো মানুষ বলা যায়। ও কখনোই শুধুমাত্র মজা নেয়ার জন্য কাঁধে মাথা রাখতে বলবে না। বললে একদম আপন ভেবেই বলবে। এসব কিছু ভেবে বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো রোদের।
পূর্ব বললো, “বুকের ভেতর কেমন ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে তাইনা?”
রোদ কোনো কথা বললো না। ঢিপঢিপ আওয়াজ ওরও হচ্ছে। কিন্তু মুখে কিছু বলা যাচ্ছেনা। খুব লজ্জা করছে ওর। লাজুক ভঙ্গিতে বললো, “আপনি কি কখনো কারো এই ঢিপঢিপ শব্দের কারণ হয়েছিলেন?”
– “খুব সম্ভবত হইনি কখনো।”
– “আজকে হয়েছেন। আমি তাহলে ভাগ্যবতী বলতে হবে।”
পূর্ব আর কোনো কথা বললো না। ওর ও ইচ্ছে করছে রোদের নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হওয়ার কারণ হতে। ওর ইচ্ছে করছে রোদের সমস্ত দুঃখ,সমস্ত যন্ত্রণা ঘুচিয়ে দিতে। রোদ মেয়েটা অনেক দুঃখী। একবার ওকে আপন করে নেয়া যায়না?
পূর্ব রোদের হাত ধরে ফেললো। কেঁপে উঠলো রোদ। ওর হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল রাখলো পূর্ব। আস্তে আস্তে একজনের হাতের মাঝে আরেকজনের হাত একদম জড়াজড়ি হয়ে গেলো। কেউই কোনো কথা বলছে না। কিন্তু একজনের বুকের ভেতর কেমন তোলপাড় হচ্ছে আরেকজন সেটা ঠিকই ধরতে পারছে।
এভাবেই দুজনে চেয়ে রইলো নক্ষত্রভরা আকাশের দিকে। হাতে হাত, একইসাথে দুজনের নিশ্বাস পড়ছে। দুজনের মনে একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, “আমি কি ওকে ভালোবাসি?”
পূর্ব ধীরেধীরে মুখটা একটু কাছে এগিয়ে আনলো। রোদও মাথাটা কাঁধ থেকে সরিয়ে আস্তে করে পূর্বর বুকে ঢলে পড়লো। এই প্রথম কোনো ছেলের এত কাছে চলে এসেছে ও। পূর্ব’র বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গেছে। সেই শব্দ শুনতে শুনতে কেমন যেন মাতাল হয়ে যাচ্ছে রোদ। এত সুখ কখনো হয়নি ওর। পূর্ব দুহাতের নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ফেললো রোদকে। রোদের মাথাটা বুকে চেপে ধরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। পুর্ব’র নিজের ও খুব সুখ সুখ লাগছে। রোদের ভারি হয়ে আসা নিশ্বাস বুকের উপর পড়ছে। দুজনের নিশ্বাস ঘন হচ্ছে। পূর্ব কি বলবে বুঝতে পারছে না,খেই হারিয়ে ফেলেছে। কেউই কোনো কথা না বলে চুপচাপ জড়াজড়ি করে বসে রইলো।
রাত অনেক বেড়ে গেছে। রোদ ঘুমিয়ে পড়েছে পূর্ব’র বুকের উপর ঢলে পড়ে। ওর মাথাটা কোলের উপর নিয়ে বারান্দায় শান্ত হয়ে বসে আছে পূর্ব। এভাবেই থাকবে নাকি উঠে রুমে যাবে বুঝতে পারছে না কিছুতেই। নড়লেই তো রোদের ঘুম ভেঙে যাবে। কিন্তু এভাবেও তো থাকা যায়না। রাত বেড়ে যাচ্ছে। যদিও পুরো কটেজটাই এখন ওদের দখলে তারপরও সারারাত এভাবে বারান্দায় বসে কাটিয়ে দেয়ার কোনো মানে হয়না। কালকে আবার সারাদিন ঘুরতে হবে।
পূর্ব মৃদু স্বরে ওকে ডাকলো, “রোদ। এই রোদ।”
রোদের কনো সাড়া শব্দই নেই। কত শান্তিতে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। পূর্ব আবারো ডাকলো- “এই রোদ। পাগলি মেয়েটা..”
রোদ উম বলে ওর গলাটা ভালোমতো পেঁচিয়ে ধরলো। শরীর ঝিমঝিম করে উঠলো পূর্ব’র। এভাবেই তো একেবারে খুন করে ফেলবে মেয়েটা। একদণ্ড শান্তি দিচ্ছেনা আবার যদি এভাবে আগলে রাখতে চায়,তাহলে তো মরণ ই। কি যে করবে ও!
রোদকে আস্তে করে কোলে তুলে নিলো পূর্ব। এবার ঘুম ভেঙে গেলো ওর। পূর্ব কোলে নেয়া মাত্রই চোখটা আবারো ভিজে উঠতে শুরু করেছে। রোদের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে এলো। পূর্ব ওকে কোলে তুলে নিয়ে রোদের রুমে চলে এলো। বিছানায় শুইয়ে দেয়ামাত্রই রোদ চোখে মেলে তাকালো। ঘরে সৌরবিদ্যুতের আলো জ্বলছে। হালকা আলোয় পূর্ব’র চোখে চোখ রেখে কেঁপে উঠলো রোদ। পূর্ব দেখলো মেয়েটির চোখে জল। এ জল হয়ত সুখের! কিন্তু তবুও ওর বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। অন্যরকম একটা যন্ত্রণা আঁচ করতে পারছে ও। সত্যি সত্যিই রোদকে ভালবেসে ফেলেছে বুঝতে পেরেছে পূর্ব।
রোদ অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে পূর্ব’র দিকে। ওর চোখে মায়া,এক অলৌকিক মায়া। এই মায়ায় নিমেষেই গ্রাস করে ফেলা সম্ভব। এখানে থাকলে সত্যিই ভূলভাল কিছু ঘটে যাবে আজ। পূর্ব আর কিছু না বলে রোদের চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো। আবেশে চোখ বুজে ফেললো রোদ। পূর্ব নিচু হয়ে এসে ওর একদম চোখের কাছে চোখ রেখে বললো, “শাড়িতে তোমাকে কি যে মায়াবী লাগে,বলে বোঝাতে পারবো না। সবসময় শাড়ি পড়ে থাকার অভ্যেস করে নিও কেমন? আর নিজের একটু খেয়াল কি রাখা যায়না? চুলগুলো এত অগোছালো করে রাখো কেন হুম? একটু আছড়ানো যায়না? এখন লক্ষীমেয়ের মতন ঘুমিয়ে পড়ো তো। মেঘ ছুতে চাইলে খুব ভোরেই উঠতে হবে কিন্তু।”
আরেকবার হাত বুলিয়ে দিলো কপালে। রোদের গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সুখেই মনেহয় মরে যাবে ও। এত সুখ জীবনে কখনো বোধহয় পায়নি ও।কেউ কক্ষনো ওকে এভাবে বলেনি,এভাবে একটু ভালোবাসেনি। ও কেঁদেই চললো। সোলারের টিমটিমে আলোয় সে জল চোখ এড়ালো না পূর্ব’র। আস্তে করে চোখটা মুছে দিয়ে বললো, “আর কান্না নয় রোদ,তোমার সমস্ত যন্ত্রণা আজকের এই জলেই ধুয়ে মুছে চলে যাক। যত জমানো কষ্ট সব নির্বাসন দিয়ে যাও। এই পূর্ব আর কক্ষনো কাঁদতে দেবেনা তোমায়,মাথায় থাকে যেন।”
রোদের ইচ্ছে করছে পূর্বকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। পূর্ব’র ও ইচ্ছে করছে ঠিক একই কাজটা করতে। কিন্তু এখন ওকে একবার স্পর্শ করলে কোথ থেকে কি হয়ে যাবে কিছুই বুঝতে পারবে না। আবেগের বশে কোনো ভূল করতে রাজি নয় পূর্ব। ও আর কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। দরজাটা যাওয়ার সময় লাগিয়ে দিয়ে গেলো। রোদ বালিশ জাপটে ধরে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে। কেন কাঁদছে ও নিজেও জানেনা। অরণ্য’র দেয়া অপমানের সমস্ত যন্ত্রণা আজকের চোখের জলে বেড়িয়ে এসেছে। সব কষ্ট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পূর্ব বলেছে আজকের কান্নাই শেষ কান্না হোক, আজই সব যন্ত্রণা নির্বাসন দিয়ে দিতে। এত সুখ কি কপালে সইবে ওর?
বাকি রাতটা নির্ঘুম কেটে গেলো। অনেক্ষণ কাঁদার পর নানান রঙিন স্বপ্ন দেখতে দেখতে ভোররাতে ঘুমিয়ে পড়লো রোদ। এদিকে পূর্ব’র ও বাকি রাতটা খুব ছটফটানির মধ্য দিয়ে কেটে গেলো। এত অস্থিরতা কিসের বুঝতে পারেনা ওরা।
৭০.
ভোরবেলা মেঘালয়ের ডাকে চোখ মেলে তাকালো মিশু। মেঘালয় ওর ডান দিকে শুয়ে আছে আর বারবার সেদিক থেকে ডাকছে। মিশু চোখ না মেলেই বললো, “সারারাত জ্বালিয়েছো। এখন একটু ঘুমুতে দিবা প্লিজ?”
মেঘালয় কোনো বারণ শুনলো না। মিশুকে জোর করেই বিছানার উপর তুলে বসালো। মিশু বিরক্তমুখে চোখ কচলে যেই ওর দিকে তাকাতে গেছে,অমনি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চোখ গেলো। সাদা সাদা অজস্র মেঘের ভেলা পালা করে ছুটে আসছে, চারদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ। জানালা থেকে একটু দূরে ঘরের নিচে শুধু মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। মনেহচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। কিন্তু জানালা থেকে অনেক নিচে মেঘগুলো। ছোঁয়া যাচ্ছেনা। এত কাছ থেকে মেঘ দেখতে পারবে সেটা কল্পনাও করেনি মিশু। সকাল সকাল ঘুম ভাঙিয়ে এমন মেঘের খেলা দেখলে মনটা কেমন যেন করে ওঠে। মিশু বিস্ময়ে কথাই বলতে পারলো না।
মেঘালয় তাড়া দিয়ে বললো, “সারপ্রাইজড?”
মিশু বললো, “হুম। সত্যিই অদ্ভুত মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে পুরো পাহাড় জুরে।”
– “মাত্র সকাল হলো। সূর্য উঠবে একটু বাদেই। মেঘ ছুতে চাইলে এক্ষুনি আমাদের বেড়িয়ে পড়া দরকার মিশু। আমি সবাইকে ডেকে এসেছি, তুমি একটু রোদকে ডেকে দাও দ্রুত। ওর বোধহয় ঘুম ভাঙেনি।”
মিশু তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নামলো। ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ছুটলো রোদের ঘরের দিকে। দরজা খোলাই ছিলো। এসে রোদকে ডেকে তুললো ঘুম থেকে। রোদ আড়মোড়া ভেঙে বললো, “এত সকালে ডাকছো কেন মিশমিশি?”
মেঘালয় মিশুকে যেভাবে চমকে দিয়েছে মিশু ঠিক সেভাবেই রোদকে চমকে দিলো। বিছানায় বসে এত কাছে মেঘ দেখতে পেয়ে রোদ বেশ চমকালো। খুশি হয়ে বলল, “ইস কি সুন্দর মেঘ!”
মিশু একটু হেসে বললো, “রাতে ঘুম হয়েছে বলে তো মনেহয় না। তাইনা?”
রোদের সবকিছু মনে পড়ে গেলো। ও লাজুক ভঙ্গিতে বললো, “উম।”
– “মেঘ বললো পূর্বকে রাত দুটার দিকে তোমার রুম থেকে বেরোতে দেখেছে। তো, কতদূর এগোলো? ঠোঁটে ঠোঁটে কথা হলো? নাকি আরো বেশি?”
রোদ লজ্জায় লাল হয়ে বললো, “উহু সেরকম কিছুই না। পূর্ব খুব ভালো, খুবই ভালো।”
– “হু,এবার ওঠো। বাকিটা পরে শুনবো। এখন না গেলে আর মেঘ ছোঁয়া হবেনা।”
– “আচ্ছা উঠছি। মিশু,তোমার আকাশী রঙের শাড়িটা আমায় দেবে পড়তে?”
মিশু ভেবেছিলো আজকে আকাশী রঙের শাড়িটা পড়বে। কিন্তু রোদের সদ্য ভালোবাসাবাসি শুরু হচ্ছে ভেবে ও বললো, “আচ্ছা আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি। ভাইয়া বুঝি শাড়িতে খুব সুন্দর লাগে বলেছে?”
– “হুম।”
– “যাক। দুজনের একটা গতি হলো। বলেছিলাম না, একজনের মাথা ঠিকই ঘুরে যাবে? গরীবের কথা বাসি হলেও ফলে।”
রোদ হাসলো। সেই সিলেটে প্রথম দেখা হওয়ার পর থেকেই তো ওদের মধ্যে একটু একটু অনুভূতি জন্মাচ্ছিলো। এখন সেটা দুজনেই ফিল করতে শুরু করেছে। লাজে রাঙা হয়ে উঠলো মুখটা।
মিশু ওর শাড়িটা রোদকে দিয়ে এসে জামা পড়ে নিলো। পাহাড়ে ট্রেকিং করতে হবে। শাড়ি পড়ে কিভাবে রোদ ট্রেকিং করবে সেই ভালো জানে। তবে পড়তে চেয়েছে যখন বাধা তো দেয়া যায়না। মিশু নিজের রুমে এসে দ্রুত রেডি হয়ে নিলো।
কটেজের বাইরে এসে সবাই একত্রিত হলো। পূর্ব’র চোখে মুখে এখনো ঘুম লেগে আছে। ছেলেটা যে সারারাত ঘুমায়নি,সেটা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রোদের সাথে চোখাচোখি হতেই দুজনের হার্টবিট দুম করেই বেড়ে গেলো। রোদ কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো বারবার। প্রেমে পড়ার প্রথম অনুভূতি বুঝি এমনই হয়!
সবাই বেড়িয়ে পড়লো কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। ওদের কটেজ থেকে পাহাড় বেশি দূরে নয়। তবুও লেগুনায় বেশ খানিকটা পথ যেতে হলো। তারপর শুরু হলো ট্রেইল। রোদ শাড়ি তুলে ধরে পাহাড়ে উঠছে। পাহাড়ের দুদিকে দুটো পথ চলে গেছে। সায়ান ও আরাফ সবার আগে আগে হাঁটছিলো। ওরা বামদিকে যাচ্ছে দেখে মেঘালয় বললো, “আগে ডানদিকে চল। এদিকে ভিড় কম থাকবে। আর মেঘ ও দেখা যাবে ভালোমতো।”
ওরা আবার ফিরে আসলো। দুজনকে খুবই ছন্নছাড়া দেখাচ্ছে। সবাই কাপল হয়ে গেছে আর ওরা দুজন শ্যাওলার মত ঝুলে আছে ওদের পিছনে। ভালো দেখায় কি? আরাফ তো সবার সামনে বলেই ফেললো, “নেক্সট টাইম থেকে বউ ছাড়া ট্যুরে যাবোনা।”
সবাই হেসে ফেললো ওর কথা শুনে। মেঘালয় মিশুর হাত ধরে ফেলছে বারবার, মিশুকে নিয়ে ওর বড্ড দুশ্চিন্তা হয়। কিছুক্ষণ ট্রেকিং করেই পৌছে গেলো কংলাক পাহাড়ের চূড়ায়!
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে লাগলো সবাই। এখানে দাঁড়িয়ে বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মনেহচ্ছে পুরো পৃথিবীটাই দেখছে ওরা। এত বিশাল প্রান্তর সামনে। বিশাল মহাশূন্য আর রাশি রাশি মেঘ। আসার পথেই কুয়াশার মত মেঘেরা গা ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। মিশু কেবলই উৎফুল্ল হয়ে উঠছে।
মেঘালয় খেয়াল করে দেখলো এক রাশি তুলোর মত মেঘ উড়ে আসছে। ও ছুটে এসে মিশুর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে সেখানে গিয়ে দাড় করালো। মিশু মুগ্ধতার চোটে কথাই বলতে পারছে না। এমন সাদা মেঘ ও কক্ষনো দেখেনি। মেঘেরা উড়ে আসছে ওদের দিকে। মিশু উত্তেজনায় কাঁপছে। মেঘালয় ওর পিছনে দাঁড়িয়ে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। মিশু মেঘালয়ের বুকে পিঠ ঠেকে দাঁড়ালো। মেঘালয় ওর পিছনে দাঁড়িয়ে হাত দুটো মিশুর হাতে তুলে নিয়ে সামনে বাড়িয়ে দিলো। মিশু উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে মেঘালয়ের বুকের উপর সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশাল আকাশ আর এই মহাশূন্যের মাঝে উড়ে আসা মেঘ দেখে ওর মনেহচ্ছে নিজেই বোধহয় আকাশে উড়ছে। মেঘালয়ের হাতের উপর আলতো করে হাত রেখে আবেশে চোখ বুজে ফেললো মিশু। গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ এসে শরীর ফুঁড়ে ঢুকে যেতে লাগলো। দুজনকে একসাথে আলিঙ্গন করছে মেঘ। মেঘ স্পর্শ করার অনুভূতি এত সুন্দর হতে পারে মিশু কখনো কল্পনাও করেনি। অজান্তেই ওর দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে টপটপ করে। বহু প্রতিক্ষীত সেই অনুভূতি!
মেঘের স্পর্শে চোখ বুজে ফেলেছে ও। চোখ মেলেই আবার মিটমিট করে বন্ধ করে ফেললো। মনেহচ্ছে একটু গাঢ় কুয়াশা। শীতল এক অনুভূতি! ভেতরে কাঁপন ধরে গেছে একেবারে। মেঘেদের দল উড়ে চলে যাওয়ার পর মিশু পিছন ফিরে মেঘালয়কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। সায়ান ওদের মেঘের ভেতরের ছবি তুলে নিয়েছে। কখনো এরকম মেঘ ও দেখেনি। আজ মিশুর জন্যই বোধহয় মেঘেরা তার পথ ভূলে এ পথে এসেছে এভাবে। রাজকন্যাকে দেখতেই এসেছে ওরা। নয়ত মেঘগুলো কত নীচে, এত উপড়ে সবসময় আসেনা ওরা।তবে উপরে সব জায়গায় কুয়াশার মতন মেঘ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
মিশু এখনো কাঁপছে। মেঘালয়ের বুকে মাথা রেখে শক্ত করে ওকে ধরে আছে। মেঘালয় এই আনন্দটুকু দেয়ার জন্যই এত আয়োজন করে মিশুকে নিয়ে এসেছে এখানে। একেই বলে ভালোবাসা!
মিশুর কপালে আলতো চুমু এঁকে দিয়ে মেঘালয় বললো, “ভালোবাসি মিশু,প্রচণ্ড ভালোবাসি।”
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ৪৩

0

অনুভূতি
পর্ব ৪৩
মিশু মনি
.
৬৭
খাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়লো সবাই। বিকেল গড়িয়ে এসেছে। এখন হেলিপ্যাডে যাওয়া হবে। বিকেলটা ওখানে কাটিয়ে দিয়ে সূর্যাস্ত দেখে তারপর কটেজে ফিরবে। মিশুর চেহারায় একটা লাজুক রাঙা আভা চলে এসেছে। দেখলেই ওর গালটা আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। মেঘালয় বারবার ড্যাবড্যাব চোখে তাকাচ্ছে ওর দিকে। আজীবন দেখলেও বোধহয় দেখার সাধ মিটবে না। চোখ দুটো শতবার দেখেও তৃপ্ত হতে চায়না। কি মায়া ছড়িয়ে আছে মেয়েটার পবিত্র মুখে! কত বিশুদ্ধ চাহনি।
মিশু মেঘালয়েকে একটা খোঁচা মেরে বলল, “কি হলো? এভাবে দেখছো কি?”
– “এবারের মধুচন্দ্রিমা একেবারে সার্থক তাইনা?”
– “কেন?”
– “মধুর মিষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেছে।”
মিশু ক্ষেপে বললো, “বড্ড দুষ্টু তুমি। এসব দুষ্টুমি ফেলে এখন বলো আমরা যাচ্ছি কোথায়?”
– “হ্যালিপ্যাডে যাচ্ছি। সূর্যাস্ত দেখতে।”
– “আর মেঘ?”
– “মেঘ আজকে তোমাকে একেবারে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে,তবুও সাধ মেটেনি?”
মিশু এগিয়ে এসে দুটো কিল বসালো মেঘালয়ের বুকে। ছেলেটা বড্ড দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে। এভাবে বললে লজ্জা লাগেনা? বুঝেও এরকম করে বলে। যেন মিশুর লাজ রাঙা চেহারাটা দেখতেই ওর সুখ হয়।
সবাই মিলে পৌছে গেলো হ্যালিপ্যাডের কাছে। যাওয়ার আগেই রুনময় রিসোর্ট দেখতে পেয়ে মিশু মুখটা বাচ্চাদের মতন ছোট্ট একটু করে বললো, “এখানে কি শুধু আর্মিরা থাকে?”
– “না তো। এটা একটা রিসোর্ট।”
– “আমরা কেন এখানে থাকলাম না?”
প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলোনা মেঘালয়। হেসে বললো, “এখানে থাকতে চাও? আচ্ছা এর পরেরবার এসে তোমাকে নিয়ে এখানে আসবো।”
– “সত্যি তো?”
– “হুম।”
হেলিপ্যাডে ঢোকার আগেই একটা ছোট্ট পার্ক সামনে পড়ে। পার্কের ভেতরে একটা দোলনা আছে। চারিদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সামনে বিশাল আকাশ। পাহাড়,আকাশ, সবুজের মিশ্রণে এক অপূর্ব শোভা তৈরী হয়েছে। দোলনা দেখেই মিশু আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না। ছুটে গিয়ে দোলনায় বসে পা দোলাতে লাগলো। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। কি যে অপরূপ লাগছে প্রকৃতিটাকে! দূর থেকে রূনময় রিসোর্ট দেখতেও ভালো লাগছে। রিসোর্টের সামনে যে রাস্তা দিয়ে আসা হলো,সেটাও অসম্ভব সুন্দর। রাস্তাগুলোও এত সুন্দর হতে হয় বুঝি! সবকিছুই ছবির মত সুন্দর। মানুষ কেন যে নিজের দেশ ছেড়ে অন্যকোথাও ঘুরতে যায়?
মেঘালয় এসে মিশুর পাশে বসল। বাকিরা সবাই হেলিপ্যাডের দিকে যাচ্ছে। ওরা দুজন এখানে বসে দোল খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো।
পূর্ব ও রোদ একসাথে হাঁটছে। নিখিল ও দুপুর ওদেরকে ছেড়ে সামনে চলে গিয়েছে। সায়ান ও আরাফ পুরো হেলিপ্যাড ছোটাছুটি করছে আর দুজনে তর্ক করছে মজার মজার সব ব্যাপার নিয়ে।
রোদ পূর্বকে বললো, “এতবড় আকাশ আমি কখনো দেখিনি। সামনে যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড়ের চুড়া আর আকাশ। আমরা সব পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছি তাইনা?”
– “এখানে তিনবেলা এলে তিনরকম সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সকালে সূর্যোদয় একরকম লাগে, বিকেলবেলা অন্যরকম আর সূর্যাস্তের ভিউ আবার অন্যরকম।”
– “আপনি এখানে আগেও এসেছেন তাইনা?”
পূর্ব বললো, “হুম। মেঘালয় আর সায়ান দুজনেই প্রচুর ঘুরাঘুরি করে। ওদের সাথে আমিও বেড়িয়ে পড়ি। আমার সবসময় সময় হয়ে উঠেনা। তারপরও চেষ্টা করি।”
রোদ বলল, “আমার ও খুব এভাবে দূর বহুদূর ঘুরতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু আমার কখনো যাওয়া হয়না কোথাও। আগে বাবা যেতে দিতো না, কিংবা নানান কারণে যেতে পারতাম না। ভেবেছিলাম বিয়ের পর বরের সাথে ঘুরবো। সেটাও ভাগ্যে নেই। আসলে মেয়েদের সব ইচ্ছে পূর্ণ হয়না।”
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রোদ। পূর্ব ওর মুখের দিকে তাকালো। বড্ড করুণ দেখাচ্ছে মুখটা। মেয়েটার চেহারায় একটা মায়া আছে। এই বিকেলের রঙিন আলোয় কত রাঙা লাগছে সে মায়াবী মুখটা, অথচ অরণ্য এরকম একটা মেয়েকে ওভাবে কষ্ট দিলো! মায়াবতী জিনিসটা কি সেটা বোঝার ক্ষমতা অরণ্য’র ছিলোনা। পূর্বকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে রোদ বললো, “আচ্ছা, আপনার গার্ল ফ্রেন্ডকে নিয়ে আসেন নি কেন?”
পূর্ব মুচকি হেসে বললো, “থাকলে তো নিয়ে আসবো। হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
– “আমি ভেবেছিলাম আছে। প্রায়ই আপনাকে অনেক্ষণ ফোনে কথা বলতে দেখি।”
– “ওহ, বাসায় কথা বলি। আমার আম্মু আমাকে মুহুর্তের জন্য চোখের আড়াল করতে দেয়না। আম্মুর সাথেই অনেক্ষণ কথা বলতে হয়।”
– “আপনাকে খুব ভালোবাসেন উনি তাইনা?”
-“হুম প্রচুর ভালোবাসে।”
– “সব মায়েরাই তার ছেলেমেয়েকে অনেক ভালোবাসে। মায়েরা এমনই হয়।”
পূর্ব বললো, “সব মায়েরা এমন হয়না। সায়ানের ভাগ্যটা খুব খারাপ। ওর মা সারাবছর বিজনেস, মিটিং এসব নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই কখনো সময় পায়নি মায়ের কাছ থেকে। মায়ের আদর কি সেটা বলতেই পারেনা ও। আর যে মেয়ের সাথেই রিলেশন হয়,সবার ধান্ধা থাকে ওর টাকা পয়সার প্রতি। কেউ ওকে সত্যিকার ভাবে ভালোই বাসলো না।”
কথাটা শুনে সায়ানের প্রতি একটু মায়া লাগলো রোদের। কত ভালো একটা ছেলে,অথচ কত একা! বিধাতা কিছু কিছু মানুষকে খুব নিঃসঙ্গ করে পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে। সায়ান তার একজন, রোদ নিজেও তার একজন। আজীবন নিঃসঙ্গ থাকতে হবে হয়ত।
আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস!
হেলিপ্যাডের সূর্যাস্ত একদম অনন্য। বিশাল প্রান্তরে সূর্য ধীরেধীরে ডুবে যায়। মাথার উপর শুধুই মহাশূন্য। সামনে পাহাড়,আর গাঢ় সবুজ। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। সামনে ছোটছোট ঘর চোখে পড়ে। লাল সবুজ ঘরের চালা। প্রকৃতি নিস্তব্ধ হয়ে রূপের ডালা সাজিয়ে রেখেছে এখানে। দূরে দোলনায় মেঘালয় ও মিশু বসে আছে। মিশু মেঘালয়ের কাঁধে মাথা রেখেছে। মেঘালয় মিশুর হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল রেখে চঞ্চলতার ঝুড়ি খুলে বসেছে। ওদেরকে দেখলেই মনেহয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী কাপল। এত সুখী কেন ওরা!
রোদকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পূর্ব জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাবছো?”
– “মিশুর ভাগ্যটা খুব ভালো। কয়টা মেয়ের ভাগ্যে এমন একটা মেঘালয় জোটে?”
– “হুম। মেয়েটাও কিন্তু অনেক ভালো। কয়টা ছেলেই বা এরকম একটা মিশু পায়? মিশু একটু অনন্য বলেই কিন্তু ওরকম একটা ছেলে পেয়েছে।”
রোদ একটু বাঁকা চোখে তাকালো পূর্ব’র দিকে। যদিও কথাটা সত্য, ও ভালোভাবেই জানে। তবুও তার সামনে একটা মেয়ের প্রশংসা শুনতে মোটেও ভালো লাগছে না। রাগ লাগছে। ও ক্ষেপে গেলেও সেটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেড়িয়ে আসলো।
পূর্ব নিজেও ক্ষেপে গেছে। ওর ইচ্ছে করছে রোদের হাত টেনে ধরে একদম কাছে টেনে নিয়ে ওর মুখটা দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরতে। তারপর চোখে চোখ রেখে বলতে ইচ্ছে করছে, “আমাকে কি মেঘালয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম মনেহয়? আমাকে ভালো লাগেনা?”
কিন্তু পারছে না সেটা বলতে। কেমন যেন সংকোচ কাজ করছে। আর কেনই বা বলবে এ কথা? রোদ ওর কে?
রোদ বললো, “কি দেখছেন এভাবে?”
পূর্ব থতমত খেয়ে অন্যদিকে তাকালো। গোধূলি বিকেল দেখতে খুবই আনন্দ হচ্ছে। কেন যেন ইচ্ছে করছে রোদকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখতে। সেই যে প্রথম দেখা হলো, তারপর আর কখনো ওকে শাড়ি পড়তে দেখেনি। শাড়িতে মেয়েদেরকে কতটা সুন্দর লাগে এটা কি মেয়েরা জানেনা? সবসময় শাড়ি পড়ে থাকতে কি হয়? মিশু শাড়ি পড়লে একটা সতেজতা চলে আসে ওর চেহারায়। চঞ্চলতা আরো গভীর হয়ে ওঠে। মনেহয় উচ্ছল কিশোরী। রোদ শাড়ি পড়লে ওকে ও কোনো অংশে কম লাগবে না। একবার কি বলবে শাড়ি পড়তে?
পূর্ব আনমনে এসব ভাবছে আর চেয়ে আছে আকাশের দিকে। মিশু মেঘালয় হেলিপ্যাডে এসে সূর্যাস্ত দেখছে। গাঢ় সবুজ ঘাসের উপর বসে খুনসুটি করছে আর খিলখিল করে হাসছে মিশু। পূর্ব’র ও ইচ্ছে করছে এভাবেই খুনসুটি করতে। কিন্তু কার সাথে? কোনো উত্তর খুঁজে পায়না ও। রোদের প্রতি একটু একটু ভালোলাগা কাজ করছে ওর। তবে কি রোদকেই….?
৬৮.
সন্ধ্যার পর কটেজে ফিরে এলো ওরা। রাতের খাবার খেয়ে এসে যে যার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। রোদ বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছে। মেঘ উড়ে উড়ে আসছে, সাদা তুলোর মত মেঘ। এক পাহাড়ের উপর দিয়ে আরেক পাহাড়ে চলে যাচ্ছে। ওর মনে পড়ছে সকালের কথা। হাজাছড়া ঝরনায় স্নানের সময় মেঘালয় কত গভীর আবেশে মিশুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো। মিশু লজ্জায় রাঙা হয়ে মুখ লুকালো ওর বুকে। সবাই অন্যদিকে চেয়ে ছিলো তখন। মেঘালয় আগেই সবাইকে বলেছিলো যেন কেউ ওদের দিকে না তাকায়। তবুও চুপিচুপি রোদ ওদের প্রেম দেখে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিলো। ওদেরকে দেখলে রোদের খুবই কষ্ট হয়। তিনদিন পরপর মেঘালয় আসে মিশুর কাছে, মিশু সারাদিন অপেক্ষা করে থাকে ওর জন্য। খুব যত্ন করে সাজুগুজু করে, বসে থাকে কখন মেঘ আসবে? মেঘালয় আসার পর মিশু বারবার শব্দ করে হাসে। রোদের রুম থেকে ওদের হাসির শব্দ শোনা যায়। ও বের হয়না রুম থেকে। মেঘালয় মিশুকে কোলে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়ায়, রান্নাঘরে মিশুকে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে থাকে। সুইমিংপুলে একসাথে দুষ্টুমি করতে করতে গোসল করে। এসব না চাইলেও রোদের চোখে পড়ে। কিংবা রোদ ইচ্ছে করেই কখনো জানালার ফাঁক দিয়ে তাকায় পুলের দিকে। মিশু মেঘালয়ের দুই কাঁধের উপর নিজের দুইপা তুলে দিয়ে পানিতে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকে, দেখলে বুকটা ফেটে কান্না আসে রোদের। ঝাপসা হয়ে আসে সবকিছু। ও তবুও তাকায় ওদের দিকে। সারারাত কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলে। ওরও ইচ্ছে করে কারো এমন ভালোবাসা পেতে। কিন্তু পায়না সেটা। সবার ভাগ্যে সবকিছু থাকেনা। কেন এরকম একটা মেঘালয় ও পেলোনা?
আজকেও কান্না পেয়ে যাচ্ছে রোদের। এমন একটা মেঘালয় কেন ও পেলোনা? এই একটা প্রশ্ন নিজেই নিজেকে বারবার করতে লাগলো। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। কারো ভালোবাসা, স্পর্শ, একটু যত্ন পেতে ইচ্ছে করছে। কেউ হাত ধরে পাহাড়ে উঠবে, ঝরনায় যাওয়ার সময় হাত ধরে নিয়ে যাবে, খুব করে আগলে রাখবে। কেন এই সুখটুকু ওর ভাগ্যে হলোনা? শুধু কালো বলে? শ্যামলা রঙের মেয়েরা কি মেয়ে নয়? ও কি দেখতে খুব খারাপ?
রোদের খুব কান্না পাচ্ছে। ও বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। ব্যাগ থেকে শাড়ি বের করে যত্ন করে পড়লো। কপালে টিপ দিলো,চোখে কাজল আঁকলো। ভ্রু দুটো আরেকটু কালো করলো, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিলো। এখন পাক্কা মায়াবতী লাগছে ওকে। আয়নায় তাকিয়ে একবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ও। নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা রৌদ্রময়ী, তুই দেখতে কি খারাপ? তোকে কেন আমার চোখে এত ভালো লাগে? আর কারো চোখে কি তোকে ভালো লাগবে না?”
এমন সময় কে যেন দরজায় নক করলো। রোদ দরজা খুলে দিয়ে দেখলো মিশু। মিশু বললো, “আপু বারান্দায় আসো। সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে আকাশের তারা গুনবো। জানো আকাশটা কত সুন্দর দেখাচ্ছে বারান্দা থেকে?”
কথাটা বলার পরপর ই মিশু অবাক হয়ে তাকালো। চোখে মুখে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বললো, “একি রোদ আপু! তোমাকে একদম পরির মত লাগছে গো। এত মিষ্টি লাগছে উফফ!”
রোদ মুচকি হেসে বললো, “তাই না?”
– “হুম। আসো আসো। আজকে আমাদের তিনজন ব্যাচেলর ভাইয়ের মধ্যে একজনের মাথা ঠিকই ঘুরে যাবে দেখো।”
– “মানে!”
– “পূর্ব, সায়ান আর আরাফের মধ্যে একজন আজকে তোমার প্রেমে পড়ে যাবে শিওর।”
– “কি যে বলোনা।”
– “দেখে নিও তুমি। এবার আসো তো আমার সাথে।”
মিশু রোদের হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। রোদের চুলগুলো সুন্দর করে আচড়ে দিলো। খোলাচুলে মারাত্মক সুন্দর লাগছে রোদকে। মিশু বারবার ওর রূপের প্রশংসা করতে লাগলো। রোদ খুবই লজ্জা পাচ্ছে ওর কথা শুনে।
বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই সবাইকে একবার অবাক হয়ে তাকাতেই হলো ওর দিকে। পূর্ব’র বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করে উঠলো। আজকে বিকেলেই ওর ইচ্ছে হয়েছিলো রোদকে শাড়ি পঢ়া অবস্থায় দেখতে। সত্যি সত্যি দেখবে সেটা ও কল্পনাও করেনি। কিন্তু রোদকে শাড়িতে আর হালকা সাজে এত বেশি সুন্দর লাগবে ও ভাবতেও পারেনি। মুখে মেকাপ ও তো করেনি। তবুও অপ্সরী অপ্সরী লাগছে।
সায়ান ও আরাফ ও একবার চমকালো ওকে দেখে। সবাই বসে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো একসাথে। এভাবে একসাথে থাকলে খুব কোলাহল হবে। তাই যে যার মত আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। যার যার রুমের কাছে বারান্দায় বসে সবাই আকাশ দেখবে। আর যেহেতু এখানে দুজন কাপল আছে, কাজেই এটা তো করতেই হবে। মেঘালয় ও মিশু সবার আগেই উঠে চলে গেলো। নিখিল ও দুপুর ও চলে গেলো নিজেদের রুমে। পূর্ব সায়ানকে কানেকানে কি যেন বলতেই ও হেসে বললো, “আচ্ছা।”
রোদ একাই বসে আছে ওদের সাথে। ও উঠে দাঁড়ালো নিজের রুমে যাওয়ার জন্য। আস্তে আস্তে হেঁটে রুমের দিকে পা বাড়ালো। ইলেক্ট্রিসিটি নেই। সৌরবিদ্যুতের আলোয় এই কাঠ ও বাঁশের বারান্দা অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। বারান্দা থেকে দূরের পাহাড়্গুলো স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই চোখ ধাধিয়ে যায়। রাত্রিবেলা দূরের কিছু দেখাও যায়না। আকাশের তারাগুলো যেন খুব কাছে চলে এসেছে। রোদ নিজের রুমের দরজার কাছে এসেছে,এমন সময় পূর্ব’র গলা শুনতে পেলো, “এখুনি ঘুমোবে?”
রোদ চমকে উঠে বললো, “না। এত তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে না।”
– “কিছুক্ষণ গল্প করি বসে? বারান্দা থেকে আকাশ দেখি একসাথে?”
– “হুম আচ্ছা।”
পূর্ব যেদিকে যাচ্ছে রোদ ওর পিছুপিছু চলে এলো। রুমের পিছনের দিকের বারান্দায় এসে বসে পড়লো। এখানকার অধিকাংশ রিসোর্ট ও কটেজ বাঁশ ও কাঠের তৈরী। ঘরে শুয়ে শুয়েই জানালা দিয়ে মেঘের উড়ে আসা দেখা যায়। বারান্দায় বসে সুন্দর আকাশ দেখা যায়। রাতের অন্ধকারে আকাশের রূপ বদলায়। নক্ষত্রগুলো খুব কাছে নেমে আসে। আর অন্ধকারেও চারিদিকে মেঘের দলের ছুটে আসার উপস্থিতি অনুভব করে শিউরে উঠতে হয়।
পূর্ব ও রোদ বারান্দায় পাশাপাশি বসলো। পূর্ব প্রথমেই বললো, “সবসময় শাড়ি পড়ে থাকতে পারো না?”
রোদ চমকে উঠে বললো, “কেন?”
– “বাঙালী মেয়েদের শাড়িতেই সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে। আর তোমাকে যা লাগছে! সাজেকের মেঘের মতন সুন্দর।”
রোদ হেসে বললো, “কালো মেঘ!”
পূর্ব কিছু বললো না। এখানে সোলারের আলো নেই। অন্ধকার বারান্দায় পাশাপাশি বসে কেমন কেমন যেন ফিল হচ্ছে দুজনের ভেতরেই। চারিদিক খুব বেশি নিস্তব্ধ। এই কটেজে বেশি রুম নেই। যে কয়টা রুম আছে,বলতে গেলে সবগুলোই ওরাই বুক করে ফেলেছে। ওদের মধ্যে চেঁচামেচি করার কেউ নেই। সবাই নিজ নিজ বউ নিয়ে ব্যস্ত। দুই অভাগা সায়ান ও আরাফ নিশ্চয়ই গলা জড়াজড়ি করে বসে আছে। বাকি থাকলো পূর্ব ও রোদ। ওরা কি চাইলেই একটু ভালো থাকতে পারেনা? পূর্ব মনেমনে এসবই ভাবছে। রোদের কথা শুনে সম্বিৎ ফিরে পেলো, “আচ্ছা, তারাগুলো এত কাছে চলে এসেছে কেন?”
– “আমরা যে তারাদের কাছে চলে এসেছি, তাই।”
– “আমরা কালকে কোথায় যাবো? এখনো তো মেঘ ছুঁয়ে দেখাই হলোনা।”
– “কাল খুব ভোরে উঠতে হবে। ভাগ্য ভালো হলে এখানে বাইরেই মেঘ ধরতে পারবো। নয়ত ভোরবেলা উঠেই আমাদের কংলাক পাড়ায় যেতে হবে।”
– “ওহ আচ্ছা। সেখানে কি কি আছে?”
– “ওটা মূলত লুসাইদের গ্রাম। লুসাইরা থাকে, আর পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। ওখানে গেলে মেঘ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে।”
-“আমাকেও?”
পূর্ব হেসে বললো,”আজব কথা বললে। মেঘ সবাইকে ভিজিয়ে দিয়ে গেলে তোমাকে বাকি রাখবে কেন?”
– “আমি কালো তো। তাই সবাই আমাকে দূরে সরিয়ে রাখে।”
– “তুমি কালো? হা হা হা। তোমার মত একটা মেয়ে এটা বলছে আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।”
– “আগে আমার ও বিশ্বাস হতোনা। আজকাল হয়। যা ঘটে গেছে আমার লাইফে, তারপর এটা বিশ্বাস করতেই হয়।”
পূর্ব একটু ঝাঁঝালো গলায় বললো, “এসব কথা প্লিজ মনে করোনা তো। তুমি কতটা সুন্দর তোমার বোধহয় জানা নেই।”
– “তাই নাকি? আপনার জানা আছে?”
– “এই ফালতু টপিক বাদ দিবা? আকাশের তারা দেখো। একটা তারা আরেকটা তারার সাথে কথা বলছে। দেখেছো?”
রোদ আকাশের দিকে তাকালো। তারপর নিশ্চুপ হয়ে গেলো একদম। এত কাছ থেকে তারাদের কখনো দেখেনি ও। এত সুন্দর লাগছে উফফ! মনেহচ্ছে সব তারা মিটিমিটি করে একে অপরকে ভালোবাসার কথা জানান দিচ্ছে। আনন্দে ছেয়ে যাচ্ছে ভেতরটা। উত্তেজনায় উৎফুল্ল হয়ে উঠলো রোদ। আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো পূর্ব’র কাছাকাছি। পূর্ব ও একটু কাছে এগিয়ে এসেছে। এখন চাইলেই রোদকে নিবিড়ভাবে ছোঁয়া যায়। ওর ভেতরে কাঁপন ধরে গেছে।
রাত বাড়ছে। আর পাহাড়ের মাঝে কঠিন নির্জনতায় রাত আরো বেশি গভীর মনেহচ্ছে। মেঘেদের আনাগোনা টের পাওয়া না গেলেও খুব কাছেই মেঘ এসে উড়ে বেড়াচ্ছে, ভাবলেই শরীরে একটা অন্যরকম স্পন্দন হয়। কি যে ভালো লাগে!
পূর্ব বললো, “একবার আমার কাঁধে মাথা রাখবে রোদ?”
রোদ চমকে উঠলো। অজান্তেই পানি এসে গেলো ওর চোখে। এত সুখকর কথা বোধহয় কক্ষনো শোনেনি ও।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ৪২

0

অনুভূতি
পর্ব ৪২
মিশু মনি

৬৬.
মিশুর চেঁচামেচিতে সায়ান ও আরাফও গাড়ির ছাদে উঠে বসলো। এখান থেকে দীঘিনালা অব্দি ছাদে করে যাওয়া যাবে। তারপর খুব সম্ভবত আর্মিরা আর ছাদে যেতে দেবেনা। এইটুকু সুযোগ মিস করবে কেন ওরা?
মিশু বসেছে সামনেই। মেঘালয় ওর পাশে বসে শক্ত করে হাত চেপে ধরেছে। গাড়ি ছুটছে দ্রুত গতিতে। চারিদিকের মনোরম সৌন্দর্য মুহুর্তেই গ্রাস করে ফেলতে চাইছে ওদেরকে। সায়ান ও আরাফ একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে আর প্রাণভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। বাতাসে মিশুর নীল শাড়ির আঁচল উড়তে শুরু করেছে। মেঘালয় ওর শাড়ির আঁচল গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আবার হাতের মুঠোয় করে মিশুর হাতে দিয়ে দিলো। মিশুর যে পরিমাণ আনন্দ হচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। ও বারবার মেঘালয়কে জাপটে ধরছে খুশিতে।
বেশ কিছুদূর আসার পর ও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। চারিদিক এত বেশি সুন্দর! শুধু ঘন সবুজ আর সবুজ। অরণ্য’র মাঝখান দিয়ে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে মনেহচ্ছে। মাথার উপর নীলাকাশ, গাড়ির ছাদে বাতাস এসে উড়ে নিয়ে যেতে চাইছে। মিশু বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে শুধু।
দীঘিনালা পৌছে গেলো তাড়াতাড়ি। মিশুকে হাত ধরে ছাদ থেকে নামানোর সময় ও উৎসুক চোখে আশেপাশে তাকালো। মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এটাই সাজেক?”
মেঘালয় হেসে বললো, “না রে পাগলী। আরো ঘন্টা তিনেক লাগতে পারে সাজেক যেতে।”
– “সত্যি! আবারো ছাদে উঠতে পারবো? ইস খুব মজা হবে!”
– “ছাদে আর নাও ওঠা হতে পারে। দেখা যাক কথা বলে অনুমতি নিতে পারি কিনা।”
– “কার সাথে কথা বলবা? কে অনুমতি দিবে?”
চুল উড়ে এসে মিশুর মুখের উপর পড়েছে। মেঘালয় হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো, “এখান থেকে আর্মির স্কটে যেতে হবে আমাদের পাগলীটা। এখানে কিছু কাজ সেরে তারপর যেতে হবে।”
মেঘালয় সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো, “হাতে আরো দেড় ঘন্টার মত সময় আছে। আমরা বরং হাজাছড়া ঝরনা থেকে ঘুরে আসি? কি বলিস?”
সায়ান উত্তর দেয়ার আগেই মিশু লাফিয়ে উঠলো, “তোমরা না গেলেও আমি যাবো। আমাকে নিয়ে চলোনা মেঘ। প্লিজ। আমরা ঝরনা স্নান করতে পারবো?”
মিশুকে লাফাতে দেখে মেঘালয় আর এক মুহুর্ত ও দেরি করলো না। আর্মিদের কাছ থেকে সমস্ত ফর্মালিটিজ শেষ করে এসে দ্রুত বেড়িয়ে গেলো হাজাছড়া ঝরণার দিকে। যেতে যেতে নানান বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিলো সবার মধ্যে। সায়ান বলল, “ম্যাশ ভাবি আমার গার্ল ফ্রেন্ড কই?”
মিশু হেসে জবাব দিলো, “সে তো পাবেই। সার্কুলার দিছি,দেখি কতজন এপ্লাই করে। তারপর ইন্টার্ভিউ।”
সায়ান হাসলো। মিশু গটগট করে এগিয়ে যাচ্ছে। মেঘালয় ওর হাত ধরে রেখেছে। দুজনে এগোচ্ছে আর মেঘালয় বিভিন্ন বিষয় শিখিয়ে দিচ্ছে মিশুকে। গাইড হিসেবে মেঘালয়কে ১০০ তে ৯৮ দেয়া যায়। খুবই যত্নের সাথে নিয়ে যাচ্ছে মিশুকে। আর সবকিছু দেখিয়ে দিচ্ছে নিজ দায়িত্বে।
ঝরনার কাছে পৌছতে খুব বেশি সময় লাগলো না। মিশু শাড়ি এক হাতে উপরে তুলে ছপছপ করে এগিয়ে গেলো ঝরনার দিকে। শাড়ি পড়েও মেয়েটা কিভাবে ট্রেকিং করছে ভাবাই যায়না। অদ্ভুত একটা মেয়ে বাবাহ! সবাই ওর স্টামিনা দেখে অবাক হয়ে যায়। যেখানে ট্রেকিং শেষে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সেখানে ও আনন্দে উল্লাস করে।
মিশু ঝরনায় গিয়ে দ্রুত পানি ছিটিয়ে খেলা করতে লাগলো। পানিতে বসে পা দুটো মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিতে লাগলো। পাহাড় থেকে শো শো শব্দ হচ্ছে। ঠিক শো শো শব্দও বলা যায়না। কেমন যেন ঝিরঝির একটা শব্দ। ঝরনার অন্যরকম একটা শব্দ আছে। মিশু চোখ বন্ধ করে ঝরনার জলে ভিজতে লাগলো। বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছে আর পানিতে নেমে বসে আছে। বরফ শীতল জলে পা কেটে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। এত ঠাণ্ডা কেন এই জল! অবশ্য বেশ আরাম ও লাগছে। ঝরনার মাঝে কেমন একটা ভালোবাসা মিশে থাকে যেন।
মেঘালয়ের স্পর্শে চোখ খুললো মিশু। তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে আর কেউ নেই,শুধু মেঘালয়। বাকিরা সবাই অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছে। মিশু অবাক হয়ে বললো, “হোয়াটস আপ?”
মেঘালয় ওকে টেনে তুলে এনে ঝরনার নিচে দাড় করিয়ে দিলো। একসাথে খুব জোরে পানির ঢল মাথার উপর পড়ছে যেন। মাথার তালু ফেটে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু বেশ ভালো লাগছে। মেঘালয় মিশুকে জড়িয়ে ধরে দুহাতে ওর মুখটা ধরলো। তারপর ঝরনার মাঝেই চোখ মেলে ওকে দেখার চেষ্টা করলো। মিশুর গালে লেগে থাকা পানির বিন্দুগুলো দেখে আজকে ওর হিংসে হচ্ছে। ইস! মেঘালয় যদি জল হতো ঠিক এভাবেই ছুঁয়ে থাকতো ওর গাল, ঠোঁট, প্রতিটা চুল।
মেঘালয় আস্তে আস্তে মিশুর মুখটা এগিয়ে এনে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। মিশু হারিয়ে যেতে লাগলো সুখের অন্য এক রাজ্যে। মেঘালয় হেচকা টানে ওকে বুকে টেনে নিলো। ঝরনার নিচে ভিজতে ভিজতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রইলো।
অনেক্ষণ সময় নিয়ে ঝরনায় ভিজলো ওরা। গোসল শেষ করে পানিতে বসে অনেক্ষণ পানি ছিটিয়ে খেলা করলো মিশু। তারপর আবার ঝরনা থেকে ফিরে আসার জন্য বের হলো। প্রতিদিন সকাল ১১ টায় আর্মির স্কটে যেতে হয় সাজেকে। সকালে কোনোভাবে বহর মিস করলে সারাদিন অপেক্ষা করে তারপর আবার বিকেলে সাড়ে তিনটায় যেতে হয়। বিকেলে মিস করে ফেললে পরেরদিন সকাল অব্দি অপেক্ষা করতে হয় সাজেক যাওয়ার জন্য।একবার মিস হয়ে গেলে আসাটাই তো বৃথা। এজন্যই কোনোভাবে স্কট মিস করা যাবেনা। সবাই দ্রুত চলে আসলো।
সাড়ে দশটার পরপরই আবারো চান্দের গাড়ি ছেড়ে গেলো দীঘিনালা হতে। মেঘালয় আর্মির সাথে কথা বলে মিশুকে নিয়ে ছাদে ওঠার অনুমতি নিয়েছে। একদম ভেজা শরীর,তার উপর ভেজা শাড়ি। এ অবস্থায় ভেতরে বসে গেলে মিশুর জ্বর এসে যাবে। এমনিতেই মেয়েটা ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারেনা। আজকে অনেক্ষণ ঝরনায় ভিজেছে। ছাদে গেলে রোদ ও বাতাসে শুকিয়ে যাবে শাড়ি। দুজনে ছাদে বসে একে অপরকে জড়াজড়ি হয়ে রইলো। গাড়ি খুব দ্রুত ছুটতে লাগলো।
মিশু ক্রমশই উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। আঁকাবাঁকা সর্পিল রাস্তা। ঠিক যেন সাপের মত এঁকেবেঁকে চলেছে। কখনো উঁচু,কখনো নিঁচু। কখনো ঘন সবুজ অরণ্য আবার কখনো স্বচ্ছ নীলাকাশ চোখে পড়ে। খুব কাছ থেকে মেঘের ভেলা ভেসে যেতেও দেখা যায়। গাড়ি এগিয়ে চলেছে এঁকেবেঁকে। একদম রোলার কোস্টারের মত। মিশু আনন্দে কথাই বলতে পারছে না। বারবার কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে। যত এগিয়ে যাচ্ছে,পাহাড়ি এলাকার মনোরম সৌন্দর্য ভেতরটাকে কেমন এলোমেলো করে দিচ্ছে। দুমড়ে মুচড়ে যেতে চাইছে। এত সুন্দর কেন সবকিছু! একদম ছবির মত সুন্দর! ইচ্ছে করছে মেঘগুলো হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখি। ইস! কখন যে মেঘ ছুতে পারবো!
মেঘালয়ের আঙুলের ফাঁকে আঙুল রেখে মিশু চোখ ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে রাস্তার দিকে। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে ভেতর থেকে। আর কোনো কিছুই শুনতে চায়না ও। শুধু হৃদয় ভরে স্বাদ নিতে চায় এ প্রকৃতির সবটুকু সৌন্দর্যের। দুচোখ ভরে দেখতে চায় সমস্ত নীল, মেঘ, সবুজ, সব সবকিছু।
মিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে এত সুন্দর দেখতে দেখতে। সাজেকের কাছাকাছি চলে আসার পর ও কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো। মেঘালয় খেয়াল করে দেখলো মিশু কাঁদছে। ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখে সমানে কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা। আর এত সুন্দর দেখলে কাঁদবে না ই বা কেন? সর্পিলাকার এই রোলার কোস্টারের মতন রাস্তাটার দুধার বেয়ে সুন্দর ঝাউ জংগল। দূরে দেখা যায় বিস্তৃত পাহাড়। কখনো আবার পাহাড়ের গা ঘেষে গাড়ি চলে যায়। ধীরেধীরে যত কাছে আসছে, প্রকৃতি তত বেশি মুগ্ধ করে দিচ্ছে। রুইলুই পাড়ার কাছাকাছি চলে এসেছে। দুপাশে সুন্দর লাল সবুজ রঙের বাড়ি। সবকিছু একদম ছবির মতন সাজানো গুছানো আর সুন্দর। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘ জমে আছে, মেঘ আটকে আটকে আছে সবখানে। কিছু মেঘ আবার ধীরেধীরে উড়ে চলে যাচ্ছে এক পাহাড়ের উপর দিয়ে আরেক পাহাড়ে। দূর থেকে এসব দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে যেতে চায়। চোখে আপনা আপনি পানি চলে আসে!
সাজেকে পৌছে গেলো ওরা। আগে থেকেই কটেজ ঠিক করা ছিলো। ভেতরে এসে মিশুকে তাড়াতাড়ি শাড়ি বদলাতে বললো মেঘালয়। মিশু কিছুতেই ভেতরে আসতে চাইছিলো না। ওর ছুটে গিয়ে পাহাড় আর আকাশের বিশালতা অনুভব করতে ইচ্ছে করছিলো। মেঘ পাহাড়ের ভাজে ভাজে আটকে আছে,দেখতে কি যে সুখ লাগে! কখন চোখ ভরে দেখতে পারবে সমস্ত সৌন্দর্য? ও একদম অস্থির হয়ে উঠলো।
রুমে ঢুকেই মেঘালয় ভেজা কাপড় ছেড়ে তোয়ালে গায়ে পেঁচালো। মিশুর শাড়ি খুলে ফেলে দিয়ে ওর তোয়ালের ভেতরে টেনে নিলো মিশুকে। মিশুর ভালো লাগছে না মেঘালয়ের সাথে থাকতে। ছুটে বাইরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। মেঘালয় একটা তোয়ালের ভেতরে দুজনের শরীর ভালমতো পেঁচিয়ে নিলো। মিশু ওর উষ্ণ স্পর্শে আরো অস্থির হয়ে উঠলো। দুহাতে মেঘালয়ের গলা জাপটে ধরে বললো, “তাড়াতাড়ি চলোনা বাইরে যাই। প্লিজ?”
– “যাবো তো পাগলী টা। এখন বের হয়ে কোথায় যাবা? এতটা পথ জার্নি করে আসলাম। এখন ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে একেবারে বের হবো।”
– “এখানে মেঘ কোথায় ছোঁয়া যাবে?”
– “পাহাড়ের উপর। আমি নিয়ে যাবো তো পাগলী, এত অস্থির হচ্ছো কেন?”
– “আমার যে আর তর সইছে না। সবকিছু এত সুন্দর কেন!”
– “তোমার মেঘ কি সুন্দর নয়?”
মিশু একবার তাকালো মেঘালয়ের শরীরের দিকে। গলা থেকে বুক অব্দি দারুণ ফর্সা, আর বুক থেকে শুরু করে নাভি পর্যন্ত লোমে আবৃত। মিশু আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, “তোমার মত সুন্দর জিনিস আমি আর একটাও দেখিনি লাইফে।”
– “হা হা, জিনিস বলছো কেন?”
– “তুমি সবকিছুর চেয়েও সুন্দর। তোমার চোখের মাঝে ডুব দিলেই মনেহয় স্বর্গ খুঁজে পাবো। তোমার ঠোঁটের ভেতরে রাজ্যের সমস্ত রূপকথা লুকিয়ে থাকে। তোমার শরীরের গন্ধে আমি উন্মাদ হয়ে যাই।”
– “আর?”
মেঘালয় মিশুর চোখে চোখ রেখেছে। একই তোয়ালের ভেতরে দুজনের উষ্ণ শরীর মিশে যাচ্ছে ধীরেধীরে। মিশু কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে আস্তে আস্তে। মেঘালয়ের চোখের তীব্রতার কাছে হার মেনে যাচ্ছে ওর মুগ্ধ চোখ। এভাবে তাকায় কেউ! খুন হয়ে যাবো তো! মিশু চোখ নামিয়ে নিয়েও থাকতে পারেনা। মেঘালয়ের কাঁপা কাঁপা ঠোঁট দুটো আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। ছেলেটা এত্ত মিষ্টি কেন!
মেঘালয় বললো, “মেঘ ছোঁবেনা?”
– “ছুঁয়েই তো আছি।”
– “মেঘ তোমার গাল,মুখ, ঠোঁট সব ভিজিয়ে দেবেনা?”
মিশু শিউড়ে উঠে বললো, “এভাবে বলতে হয়না মেঘ। আমিতো পাগল হয়েই যাবো।”
– “আর আমিতো হয়েই আছি। কতবার কতরকম ভাবে কাছে পেয়েছি তোমায়। তবুও কেবলই মনেহয়, এই বুঝি প্রথম স্পর্শ করছি। এমন হয় কেন মিশু?”
মিশু মেঘালয়কে জরিয়ে ধরে বললো, “জানিনা। কিচ্ছু জানিনা। শুধু জানি, ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি।”
চলবে..