Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 179



মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২৫

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২৫)

পিকনিকের লোকসংখ্যা অনুভব, সায়রা,অর্পা বাদে আরো ছয় জন। এর মধ্যে দুজন মেয়ে। ওরা সবাই মিলে একটা মাইক্রোবাসে ওঠেছে। গল্প হচ্ছে। কেউ কেউ গান ও গাইছে। অর্পা তার বয়ফ্রেন্ডকে কল করে সকলকে একবার দেখিয়ে নিল। তারপর আবার কথায় ডুবল। সায়রা বিষয়টা দেখে হাসল। সাঈদ আর তার সম্পর্কটা ভীষণ ম্যাচিউর ছিল। পাগলামি ছিল না কোনো। আর না কোনো সন্দেহ ছিল। অথচ, ভাগ্য তাদের আলাদা করল। ব্যাগে করে সকলের জন্য জুস আনা হয়েছে। সায়রার মনোযোগ ছিল না। অর্পা ধাক্কিয়ে ধ্যান ফেরাল।

“হ্যাঁ?”

“জুস নে।”

“ও আচ্ছা।”

সায়রা জুস তুলে নিল। সবাই একসাথে হাত রেখে জুস সহ ভিডিও করা হলো। ওদের পিকনিক হবে শহরের একদম শেষে। এই টুকরো টুকরো স্মৃতি নিয়ে বড়ো একটা ভিডিও করা হবে। অনুভব সবার ফ্রন্টে বসেছে। সায়রাকে দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। ও বার বার অর্পার মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে অর্পা ফোনে মশগুল।

অনেকটা সময় যাওয়ার পর অর্পার মনোযোগ পেল অনুভব। ইশারায় বোঝাল জায়গা বদল করলে। প্রথমে নাকোচ করলেও শেষমেশ রাজি হলো। কারণ হিসেবে জানাল সবার কথায় বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে ওর। অনুভব সায়রার পাশে বসে বলল,”তোমার মন খারাপ?”

“না।”

“চুপচাপ কেন?”

“এমনিই দেখছি।”

“ঠিক আছে। তুমি কোন রান্নাটা ভালো পারো? চিকেন নাকি ফিস?”

“সবই ভালো পারি।”

“গ্রেট, তাহলে তো কাজ সহজ হয়ে গেল।”

ওদের পৌছাতে প‍ৌছাতে দুপুর গড়িয়ে এল। একদল তাঁবু টানানোতে গেল। আরেক দল রান্নার কাজ। মেন্যুতে রয়েছে সাদা পোলাও, রোস্ট, চিংড়ি আর গোরুর মাংস ভুনা। প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র নামাচ্ছে অনুভব। সায়রা ওর সাথে সাহায্য করতে করতে বলল,”তোমাকে দেখলে বোঝা যায় না। তুমি অনেক শক্তিশালী।”

“এর জন্যই বলে, ডোন্ট জাজ আ বুক, ইটস কভার।”

“হুম। তবে এটা সত্য তোমার স্বাস্থ্য ঠিক করা দরকার।”

“সত্যিই?”

“হ্যাঁ।”

সব কিছু নামিয়ে নেওয়ার পর এবার আগুন জ্বালানোর পালা। সায়রা আগুন ধরাতে যেতে চাইলে অনুভব বাঁধা দিল।

“তুমি রান্নায় হেল্প করো। আমি যাচ্ছি।”

অনুভব আগুন ধরাতে গেল। অর্পা তাঁবু টানানোর দায়িত্বে ছিল। তার কাজ শেষ। তাই বাকিদের সাথে রান্নায় হাত লাগাল। সব আগে থেকেই প্রসেসিং করা। শুধু পরিমাণ মতো নিয়ে রান্নাটা করতে হবে। অনুভব আগুন জ্বালিয়েছে। তবে তার অবস্থা কাহিল। কিছুতেই আগুন জ্বলছিল না। ফু দিয়ে জ্বালাতে জ্বালাতে শেষমেশ ধোঁয়া পেটে গেছে তার। কাশতে কাশতে চোখ লাল হয়ে গেছে। ওকে পানি এগিয়ে দিল সায়রা।

“কী যে করো। আগুন জ্বলছিল না, বাকিদের ডেকে নিতে। কেরোসিন দিয়ে যেত কেউ।”

অনুভবের খেয়াল হলো কেরোসিনের কথা। সে একদম ভুলে গেছে। অনুভবের চোখ লাল হয়ে গেছে। অর্পা এসে কিছু কাগজ দিয়ে পাখার মতন বানিয়ে বাতাস করতে লাগল। অনুভব সেটা ওর হাত থেকে খপ করে নিয়ে বলল,”বাহ দারুণ তো। কীভাবে বানালে?”

“আগে কখনো দেখো নি?”

“না।”

অর্পা প্রসেসিং টা দেখিয়ে দিল। সায়রা অনুভবের মেয়ে বন্ধুদের সাথে মিলে রান্নায় হাত লাগিয়েছে। অনুভব ইশারায় নিচু হতে বলল অর্পাকে। অর্পা নিচু হতেই অনুভব বলল,”তোমার বান্ধবীর প্রিয় ফুল কী?”

“কেন? প্রপোজ করবে নাকি?”

“বলো না।”

“বেলি।”

“বেলি,ওয়েট। আসছি আমি।”

অনুভব চলে গেল। অর্পা সে দিকে তাকিয়ে হাসল। সত্যিকার অর্থে ও চায় সায়রা নিজের জীবন নিয়ে এগিয়ে যাক। অনুভব ছেলেটা খারাপ নয়। অর্পা মন থেকে চাইল সায়রার জীবনটা সুন্দর হয়ে ওঠুক। ভালো থাকুক মেয়েটি।

রান্না প্রায় শেষ হতে চলল। এদিকে অনুভবের ফেরার নাম নেই। ওর বন্ধু’রা কল করে নিশ্চিত হলো ছেলেটা এসেই পড়েছে। কারণ হিসেবে দেখাল, সকলের জন্য এখানকার বিখ্যাত মিষ্টি আনতে গিয়েছিল। তবে অর্পা জানে অনুভব বেলি ফুল আনতে গিয়েছিল। সায়রা আগুনের পাশে বসে ক্লান্ত হয়ে আছে। অনুভব ওকে সরিয়ে দিয়ে বলল,”যাও, তুমি রেস্ট করো।”

সায়রা ওঠে এল। অর্পা তাঁবুর ভেতর এসে সাজগোজ করছে। একটু পরেই খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা হবে। তখন আবার ভিডিও ফুটেজ নেওয়া হবে।

বিকেল চারটায় ওদের রান্না শেষ হলো। সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে বসল এক সাথে। খাবার খাওয়া হলো। ভিডিও নেওয়া হলো। সবাই বেশ হৈ হৈ করল। এখন প্রায় সন্ধ্যা হতে চলেছে। ওরা ঠিক করল কোনো এক খেলা খেলবে। এই এলাকার বিশেষ এক খেলা জুতাচোর। ছেলে মেয়ে বিভক্ত হয়ে খেলল ওরা। অনুভব ইচ্ছে করে সায়রাকে সুযোগ দিয়েছে। তাই মেয়েদের দল জিতে গেল। সায়রার ভীষণ আনন্দ হলো। শেষ জুতাটা নিয়ে নিজের অবস্থানে ফিরে লাফিয়ে ওঠল ও। ওর এই আনন্দ ভরা মুখটা অনুভবের বুকের ভেতর এসে লাগল। মেয়েটির প্রতি এত বেশি আকর্ষণ কাজ করছে ওর।

সন্ধ্যার চা কফির আয়োজন হয়েছে। সেই সাথে কাবাব। সমস্তটার ব্যবস্তা করে ওরা চা কফি হাতে নিয়ে গোল হয়ে বসল। স্পিন দ্য বোতল খেলা হবে। এটা যে কোনো পিকনিকের জন্য আকর্ষণীয় একটা খেলা। ওরা সবাই একে একে ঘুরিয়ে খেলতে লাগল। কেউ ট্রুথ নিল কেউ ডেয়ার। এমন করে সায়রার দিকেও বোতল এল। ও ট্রুথ নিল। ওর কাছে প্রশ্ন এল জীবনে কাউকে ভালোবেসেছে কী না। এই প্রশ্নে থেমে গেল ও। অনুভব সবাইকে বলল,”অন্য প্রশ্ন কর।”

সবাই অন্য প্রশ্ন করতে রাজি হলেও সায়রা হাসি মুখে বলল,”যদি বলা হয় জীবনে কাউকে ভালোবেসেছি কী না,তবে এই তালিকায় অনেক মানুষ স্থান পাবে। অনেক ক্যাটাগরিতে। তবে বিশেষ ক্যাটাগরির কথা বললে তালিকায় একজন স্থান পাবে। কিন্তু সে আমার নয়।”

পরিবেশ থম ধরে গেল। সবাই বুঝল সায়রার কণ্ঠে বেদনা। অনুভব দেখল মেয়েটির চোখ ছলছল করছে।

“সবাই চুপ করে গেলে কেন? খেলো আবার।”

আবার বোতল ঘুরানো হলো। তবে খেলার দম ফিরল না। সায়রার কান্না পাচ্ছে। ও সবাইকে বলে ওঠে আড়ালে এল। ওর পেছন পেছন এল অনুভব। পকেটে তার বেলি ফুলের মালা। অনুভব সেটা হাত তুলে নিয়ে বলল,”বেলি ফুল তোমার কেমন লাগে সায়রা।”

“হুম সুন্দর।”

সায়রা ততক্ষণে চোখ মুছে নিল। অনুভব হাত বাড়িয়ে দিয়ে ফুলের মালাসহ। মৃদু মিষ্টি এক ঘ্রাণ নাকে এসে লাগল।

“দুপুরের দিকে এনেছিলাম। শুকিয়ে গেছে।”

শুকিয়ে যাওয়া বেলি ফুলের মালাই তুলে নিল সায়রা। অনুভব শুকনো ঢোক গিলল। মনে মনে চেষ্টা করল নিজের ভালোবাসার কথা জানান দিবে কী না। তবে বিবেক তাকে বাঁধা দিল। মেয়েটি আজ কষ্টের স্মৃতি অনুভব করেছে। তাকে আর কোনো চিন্তা না দেওয়াই ভালো।

অনুভবের মেজাজ আসলে গরম। সে এত কষ্ট করে প্ল্যান করল আজ ভালোবাসার কথাটা জানাবে। অথচ ওর বন্ধু’রা ফালতু এক প্রশ্ন করে সব ভেস্তে দিল। ওর ভালো লাগছে না। ও ফ্রন্টে এসে বসেছে। পেছনে সবাই মজা করছে। সবার সাথে সায়রা ও যোগ দিয়েছে। নিজের দুঃখ ভোলার চেষ্টা করছে। অনেক সময় ধরে ফোন বেজে চলেছে। অনুভব এবার বিরক্ত হয়েই রিসিভ করল।

“স্যার, আপনি কোথায়?”

সায়েমের কণ্ঠ। সকালে সে অদ্ভুত এক কাজ করেছে। বাবা সায়েমকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফোর্স করেছিল। সে বাবার সামনে হু হা করলেও সায়েমকে সাথে নিয়ে আসে নি। বরং পথে একটা গ্রামে রেখে এসেছে।

“তুমি কোথায় আছ?”

“আপনি যেখানে রেখে গেছেন সেখানেই আছি স্যার।”

অনুভবের মেজাজ এমনিতেই গরম। তার ওপর এই বিরক্তিকর সায়েম। অনুভব দেখল তারা এখনো সায়েমের স্থান পেরিয়ে আসে নি। যাক, একদিক থেকে ভালো হলো। ছেলেটাকে পথে তুলে নেওয়া যাবে।

চলবে…
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি

মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২৪

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২৪)

বসার ঘরে অর্পার প্রবেশ ঘটতেই হাত নাড়িয়ে নিজের অবস্থান জানান দিল অনুভব। অর্পা চোখ ছোট ছোট করে চাইল। বরাবর বসে বসল,”তুমি এখানে!”

“হ্যাঁ তো।”

অর্পা মিনমিনে সুরে বলল,”সায়রা কখনো কোনো ছেলে ফ্রেন্ডকে বাড়ির ভেতরে আনে না। এমনকি ওর বয়ফ্রেন্ডকেও আনত না।”

“আচ্ছা, তার মানে কী দাঁড়াল বলো তো।”

“কী দাঁড়াল?”

“আমি কুয়াইট স্পেশাল।”

“ধুর।”

ওদের কথার মাঝে জুথি নাশতা নিয়ে এল। এসে দেখল অর্পা ও বসে আছে।

“কী অবস্থা অর্পা? কখন এলে?”

“মাত্রই এলাম ভাবি।”

“বোসো, আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসি।”

জুথি চলে যেতেই অর্পা ফিসফিস করে বলল,”তুমি স্পেশাল এর মানে কী বোঝালে?”

“বুঝো নি?”

“না।”

“মানে টা হলো….।”

বাক্যটি পূর্ণ করার আগেই সায়রার আগমন ঘটল। ও জামা বদলে এসেছে। অল্পবিস্তর সেজেছেও। তাকে মনে হচ্ছে,স্বর্গের কোনো হুর। অনুভব হা হয়ে তাকিয়ে। অর্পা একটু কাশল। ওর ধ্যান ভাঙল।

“তুই ও এসে গেছিস। যাক ভালোই হলো। ভাবি ওদের চা।”

“আনছি।”

কিয়ৎকাল পর জুথি সবার জন্য চা নিয়ে এল। অনুভব সম্পর্কে এখনো তেমন কিছু জানে না জুথি। তাই বলল,”তোমরা সবাই একই ভার্সিটির?”

“না, অনুভবের সাথে পরিচয় হয়েছে আহনাফকে পড়াতে গিয়ে।”

“আচ্ছা, সবাই গল্প করো, আমি দেখি ছেলে মেয়ে গুলো ওঠল কী না।”

জুথি চলে যেতেই অনুভব বলল,”আমার বিষয়ে বাসায় জানাও নি?”

“কী জানাব?”

“এই যে আমি তোমার….”

“বন্ধু, এটা তো সবাই জানে।”

“ওও।”

অনুভবের মুখটা ছোট হয়ে গেল। অর্পা মুখ টিপে হাসল। সায়রা চা তুলে নিয়ে বলল,”আমরা কখন বের হচ্ছি?”

“সবাইকে রিসিভ করে বের হতে নয়টা বেজে যাবে।”

“ঠিক আছে। আমি আমিরাকে ডেকে নিই।”

সায়রা আমিরাকে ডাকতে গেল। এদিকে অর্পা হো হো করে হেসে ওঠল।

“হাসলে কেন?”

“অনুভব, তুমি শুধু শুধু ভাব নিলে। দেখলে, সায়রার কাছে শুধুই বন্ধু তুমি।”

“শোনো, বন্ধুত্ব না হলে সেখানে স্পেশাল কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।”

“আচ্ছা, দেখা যাবে তোমার বন্ধুত্ব কতদূর যায়।”

“ধুর, মুডটাই খারাপ করে দিলে। তুমি একটা বিশাল খারাপ বুঝলে?”

অর্পা ভেংচি কেটে চা হাতে তুলে নিল। অনুভব কে ওর ভীষণ ফানি মনে হয়। ছেলেটার জিরাফের মতন লম্বা শরীর। শুকনো একটা ছেলে।

সায়রা আমিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,”আমিরা, ওঠ সোনা। আমি বের হবো।”

ধীরে ধীরে চোখ মেলে চাইল আমিরা। দু হাত পাশে মেলে দিয়ে বলল,”কটা বাজে মিমি?”

“ছয়টা বেজে গেছে।”

“অহ।”

আমিরা ওঠে পড়ল। সায়রা ওকে জড়িয়ে ধরল বুকের মাঝে।

“মুখ ধুয়ে আয়। আমি একটু পরই বের হবো।”

“ঠিক আছে।”

আমিরা চলে গেল। সায়রা বিছানা গুছিয়ে নিল ততক্ষণে। আমিরা ফিরলে ওকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এল। সেখানে আগে থেকেই জুঁই, মাহিম ছিল। মারুফ কাজের জন্য শহরের বাইরে অবস্থান করছে।

অনুভবের সাথে মাহিমের ভাব জমে গেছে। বেশ কিছু মাস আগে অনুভবের গাওয়া একটি গান‍ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বেশ সাড়া ফেলেছে। অনুভবের অবশ্য অতো খেয়াল নেই। ও ইদানীং সব ছেড়ে ছুড়ে উদাসীন হয়ে বসে আছে। মাহিম অনুভবের সাথে সেলফি তুলে নিয়ে বলল,”আমাদের একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে। বেশ একটিভ গ্রুপ। এটা পোস্ট করলেই আমি ভাইরাল হয়ে যাব।”

অনুভব কেবলই হাসল। অর্পা পাশ থেকে বলল,”তাই? অনুভব তুমি এত বড়ো সিঙ্গার তা তো বলো নি।”

অনুভব বুঝল পিঞ্চ কেটে কথাটা বলেছে অর্পা। ও চোখ রাঙিয়ে বলল‍,”তোমার মতন দেশদ্রোহী’রা এসব রত্নের মূল্য বুঝবে না।”

“আমি দেশদ্রোহী?”

“অবশ্যই।”

অনুভব আর অর্পা কথা বাড়াতে লাগল। সায়রা এসে ওদের কে থামাল।

“কী রে,তোরা দুজন এমন কথা কাটাকাটি করছিস কেন?”

দুজনের কেউ ই জবাব দিল না। আমিরাকে হাতের ইশারায় ডাকল অনুভব। আমিরা না গিয়েই বলল,”শত্রু, আমি তোমার সাথে কথা বলব না।”

অনুভব ওঠে এসে ওর পাশে দাঁড়াল। চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল,”বন্ধুকে শত্রু বললে?”

আমিরা মুখ ঘুরিয়ে নিল। অনুভব হেসে ওঠল। সায়রা এবার কথা বলল, “আচ্ছা,আমাদের বের হতে হবে। লেট হচ্ছে।”

“সেটাই, সাবধানে যেও সবাই।”

জুথিকে জড়িয়ে ধরল সায়রা। জুথি দু একটা পরামর্শ দিল। সবটা শুনে নিয়ে সবার থেকে বিদায় নিল ওরা।

এখানে বড়ো গাড়ির চলাচল নেই। রিকশা নিতে হবে। তবে এত সকাল যে রিকশা পাওয়া মুশকিল। শেষমেশ একটা রিকশা পেল ওরা। অনুভব রিকশার ওপরের অংশে ওঠে বসল। অর্পা আর সায়রা বসল সিটে। ওদেরকে বিদায় জানাল সবাই। সায়রার ভালো লাগছে। অনুভব ছেলেটার এই সহজ সরল আচরণ ওকে মুগ্ধ করল। ছেলেটার সাথে অল্প সময়ের আলাপ। অথচ পারফেক্ট বন্ধু হওয়ার সবটুকু ক্ষমতা আছে ওর মাঝে।

বাহাদুর খবর পেয়েছে সায়রা আজ বাসায় নেই। মারুফ ও নেই। সেই সুযোগেই বাড়িতে উপস্থিত হলো। আমিরা তখন সোফায় বসে কার্টুন দেখছিল। বাবাকে দেখে ভয় পেয়ে গেল ও।

“আমিরা, মামুনি দূরে কেন যাচ্ছ?”

আমিরার শরীর কাঁপছে। বাবাকে তার ভীষণ ভয় লাগে আজকাল। অথচ একটা সময় এই বাবাকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছে সে।

জুথি দোতলা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল। তাকে খবর দিয়েছে জুঁই। মাহিম ছাদে ছিল। সে ও মায়ের কণ্ঠ পেয়ে এসে পড়ল। সবাই কে দেখে চোখ মুখ অন্ধকার করে চাইল বাহাদুর। তাকে সমাদর করার বদলে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে জুথি বলল,”বাসায় কেন এসেছেন?”

“ভাবি, এমন আচরণ কেন করছেন? আমি কিন্তু এ বাড়ির জামাই।”

“এসব কথা আপনার মুখে মানায় না বাহাদুর ভাই। আপনি চলে যান।”

“যাব অবশ্যই। তবে মেয়ের সাথে দেখা করার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে।”

এ কথার বিপরীতে জুথি মৌন রইল। আমিরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আছে। ওর শরীর কাঁপছে।

“আমিরা, এদিকে আসো।”

আমিরা এল না। ও বরং পিছিয়ে গিয়ে জুথির হাত চেপে ধরল। মেয়ের এই আচরণে মনে মনে রুষ্ট হলো বাহাদুর। হয়তো ভেতরে ভেতরে গালিও প্রদান করল। তবে মুখে সেটির প্রকাশ না দেখিয়ে কিছু ব্যাগ পত্র বাড়িয়ে দিল।

“আমিরার জন্য জামাকাপড় এনেছি।”

“এসবের কোনো প্রয়োজন নেই।”

“আপনাদের কাছে তো কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। তবে মেয়ে যেহেতু আমার, তাই প্রয়োজন অপ্রয়োজন আমি ভালোই বুঝব।”

জুথি আবার চুপ। বাহাদুর দেখতে বলিষ্ঠ। কথাতেও তেজ আছে। জুথি লোকটার সাথে কথায় পেরে ওঠে না। বাহাদুর আমিরার জামাকাপড় গুলো রেখে বলল,”আশা করব, খুব দ্রুত মেয়ে তার নিজের ঠিকানায় ফিরবে। আপনাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ঠিক হবে।”

সায়রা থাকলে প্রতিবাদ করত নিশ্চিত। তবে জুথি সেটা পারল না। সে চুপ করে রইল।বাহাদুর গেল আরো মিনিট পাঁচেক পর। জুথি দ্রুত গিয়ে দরজা বন্ধ করল।

“বাসার দরজা খোলা কেন থাকে? কেউ আর দরজা খুলে রাখবি না।”

সবাইকে এ কথা বলে জুথি মারুফকে কল করল। সবটা শুনে মারুফ ভয়ঙ্কর এক গালি প্রদান করল বাহাদুর ও তার পরিবারকে। এই পরিবারটা ক্রমশই মুখোশ খুলতে শুরু করেছে। অথচ, শুরুর দিকে কী ভালোই না মনে হয়েছিল।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২৩

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২৩)

অনুভব মায়ের কাছে এসে নালিশ করতে লাগল। তার ভীষণ রাগ হচ্ছে।

“মা, বাবা কী শুরু করেছে!”

“কী করেছে?”

“কী করে নি? আমার বন্ধুদের পিকনিকে সায়েমকে এড করতে বলছে!”

রূপবান ছেলের কথায় তেমন পাত্তা দিলেন না। কাজ করতে লাগলেন। অনুভব রাগ দেখিয়ে চলে গেল। কিচেনের দরজার সামনে গিয়ে বলল,”আমি নাশতা করব না।”

“অনুভব, এই অনুভব।”

কে শুনে কার কথা। অনুভব রাতের পোশাক পরেই বেরিয়ে গেল। ছেলেটা যে আজ সমস্ত দিনেও বাড়ি ফিরবে না তা একেবারেই নিশ্চিত।

পার্কে এসে বসে রইল অনুভব। বাবার মতলব কী? সে কি চায় আসলে। ওর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। ভালো লাগছে না কিছু। এদিকে বেশ ক্ষিধেও পেয়েছে। পকেটে কোনো টাকা নেই। ভুলে ওয়ালেট ফেলে এসেছে। মেজাজ বেশ গরম। ও হতাশ হয়ে বসে রইল।

অনেকক্ষণ পর একটা কণ্ঠ শোনা গেল,”অনুভব।”

সায়রার গলার স্বর চিনতে ভুল হবে না ওর। ও চট করে দাঁড়িয়ে গেল। আহনাফকে নিয়ে পার্কে এসেছে ও।

“আজ পড়াতে এসেছিলে?”

“না, আহনাফকে বলেছিলাম ভালো রেজাল্ট করলে খেলতে নিয়ে আসব। তাই নিয়ে এসেছি।”

“আচ্ছা। তা আহনাফ কেমন রেজাল্ট হলো?”

আহনাফ হাসি হাসি মুখে বলল,”আমি, গড়ে নব্বই মার্ক পেয়েছি।”

অনুভব হা হওয়ার ভান করে বলল,”বাপ্রে! এত ভালো স্টুডেন্ট।”

সায়রা হেসে আহনাফের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। এত গুলো মাসে আহনাফ ভীষণ উন্নতি করেছে। এই যে ছেলেটা এখন ঠিক ঠাক কথা বলতে পারে। আগে সেটাও পারত না। কারো সাথে মিশতেও পারত না। এখন সাধারণ বাচ্চার মতই তার আচরণ।

আহনাফ, অনুভব, সায়রা। তিনজন বল নিয়ে খেলছে। অনুভব দুষ্টুমি করে সায়রার মাথায় বল লাগিয়ে দিল। সায়রা চোখ ছোট ছোট করে বলল,”এটা কী করলে?”

“কোথায় কী করলাম?”

“অনুভব, আমি ব্যথা পেয়েছি।”

“আচ্ছা, সরি,সরি। চলো আবার খেলি। আহনাফ আমি বল ছুড়ে দিব, দেখব তুই কত দ্রুত আনতে পারিস।”

কথা মতন বল ছুড়ে দিল অনুভব। বলের পেছনে ছুটল আহনাফ। সায়রা হেসে বলল,”বাচ্চা’রা হয় মাটির মতন। তাদের যেমন রূপ দেওয়া হবে তারা তেমনই হবে।”

“কথাটা কোথায় যেন শুনেছিলাম। কপি করে বললে নাকি?”

“এটা প্রচলিত একটা কথা অনুভব। এখানে কপির কিছু নেই।”

“আমি মজা করেছি। শোনো, কাল ভোরে বের হবো সবাই।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আহনাফ বল নিয়ে এসেছে। অনুভব বুঝল ক্ষিধেয় তার পেট জ্বলছে। কাল রাতেও কিছু খাওয়া হয় নি।

অনুভব দুপুরেই বাড়ি ফিরে গেল। আর সহ্য হচ্ছে না। ক্ষিধেয় টনটন করছে শরীর। সে সোজা রান্না ঘরে গিয়ে খাবার নিয়ে এল। রূপবান নিজের ঘরে শুয়ে ছিলেন। শব্দ পেয়ে ওঠে এলেন।

“কখন ফিরেছিস?”

“কথা বোলো না। ক্ষিধেয় পেট জ্বলছে।”

“আগে কেন এলি না? না খেয়ে তো চলে গিয়েছিলি।”

“কী করব মা। বাবা যা তা শুরু করেছে। এভাবে চলে নাকি? অফিসের স্টাফকে নিয়ে যাব, বন্ধুদের পিকনিকে!”

“তোর বাবা চাইছেন যাতে সায়েমের সাথে তুই মিশতে পারিস।”

“তাতে কী লাভ হবে?”

“লাভ আছে। কাজের জন্য স্টাফদের সাথে মেশা ভালো।”

“উফ মা, তুমি সব সময় বাবার সাপোর্ট নাও। আমায় একটু ও ভালো বাসো না।”

ছেলের কথায় রূপবান হেসে ফেললেন। আরেক টুকরো মাছ ওঠিয়ে দিয়ে বললেন,”একটু স্বাস্থ্যের দিকে নজর দে বাবা। হয়েছিস তো তালগাছ, অথচ শরীরে কিছু নেই।”

“আমি তো শক্তিশালী মা।”

রূপবান চেয়ে রইলেন। সুদর্শন ছেলে তার। শক্তিশালী ঠিক আছে। তবে শরীরের যত্ন নিলে আরো বেশি শক্তিশালী হবে। এই কথাটিই বুঝতে চায় না অনুভব। ছোট থেকেই ছেলেটা একদম অলস প্রকৃতির।

গোছানোর কাজ চলছে। অর্পা আসবে একটু বাদেই। শুরুতে কথা হয়েছিল সায়রা গিয়ে অর্পাকে রিসিভ করবে। তবে পরে প্ল্যান চেঞ্জ হয়। অর্পা আর সাঈদ’রা প্রতিবেশী। ওদের বাড়িতে গেলে দেখা হওয়ার একটা সুযোগ থাকবে। যা চায় না সায়রা। এটা সত্য ভালোবাসাটা এখনো মরে যায় নি। তবে অন্যের স্বামীর প্রতি অনুভূতি দেখানোর মতো মেয়ে নয় সায়রা। হয়তো মন কে সামলানোর সাধ্য নেই তবে শরীর, সেটাকে সামলানোর সাধ্য তো আছে। ও মন থেকে চায় সাঈদ ভালো থাকুক এবং আর কখনো ওদের দেখা না হোক। সায়রা বিষয় গুলো ভাবছিল। ও মেনে নিয়েছে সবটা। সৃষ্টিকর্তা চান নি ওদের দুজনের পথচলা দীঘল হোক। নতুবা এত বাঁধা কেন থাকবে? পেয়ে গিয়েও কেন পাওয়া হবে না? সেদিন সাঈদ আর সায়রার জন্য ভাগ্য ছিল ভীষণ নিষ্ঠুর। ও নিজেকে সামলে নিল। এখন অনেক ভোর। পাঁচটা বাজে। রান্না ঘর থেকে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। জুথি নিশ্চয়ই রান্না করছে। সায়রা গিয়ে দেখল, সত্যিই তাই।

“ভাবি, ওঠতে গেলে কেন?”

“তুই না খেয়ে যাবি নাকি।”

“না খেয়েই যেতাম।”

“সকালে বের হচ্ছিস, না খেয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। অল্প কিছু খেয়ে যাবি।”

জুথিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল সায়রা। ওদের দুজনের সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে বোনের মতই। তবে মাঝে মধ্যে টানাপোড়ন চলে। যা অস্বাভাবিক কিছু না। জুথি রান্না শেষ করে সায়রার ঘরে এল। সায়রা তখন জানালা খুলতে ব্যস্ত। আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। ভোরের বাতাসে অন্য রকম এক গন্ধ থাকে। সায়রা চোখ বন্ধ করে বলল,”ভাবি, জীবন আসলে খারাপ নয়।”

জুথি হাসল। সে অল্প কিছু খাবার প্যাকেট করে দিয়েছে। সেটাই ব্যাগের ভেতরে রাখল।

“সত্যি বলতে, জীবনে খারাপ সময় না এলে ভালো সময় কোনটা সেটা অনুভব করা যায় না।”

অনুভব শব্দটি শুনে সায়রার খেয়াল হলো ছেলেটাকে কল করা হয় নি। ও চট করে কল করল। অনুভব কল রিসিভ করে বলল‍,”এই মেয়ে, কল রিসিভ করছিলে না কেন?”

সায়রা তাড়াহুড়োয় খেয়াল করে নি অনুভব কল করেছিল কী না। ও দেখে নিল অনেক গুলো মিস কল দেখাচ্ছে।

“ফোন সাইলেন্ট করা ছিল।”

“আচ্ছা, আমি তোমার বাসার কাছেই আছি।”

অনুভব বাসার কাছে চলে এসেছে! সায়রা দ্বিধায় পড়ল। তারপর মিনমিনে স্বরে বলল,”তুমি গেটের কাছে আসো, আমি নামছি।”

কল রেখে সায়রা বলল,”ভাবি, একটু হাল্কা কিছু খাবারের ব্যবস্থা কোরো তো।”

কথা গুলো বলেই নেমে গেল সায়রা। খুব ভোর হওয়ায় মানুষ জন নেই। অনুভব সায়রার বাসার নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। চার পাশে নজর বুলাচ্ছে।

“অনুভব।”

মেয়েটার কণ্ঠ কেমন সতেজ। অনুভব চোখ বন্ধ করে নিল।

“এই অনুভব।”

আবার সেই কণ্ঠ। অনুভবের মনে হলো এটা শুধু কণ্ঠই নয়, যেন কোনো মাতাল করা যন্ত্রের সুর। অথচ বিষয়টি তার মনের ভুল কেবল। প্রেমে পড়ার অনুভূতি মাত্র। লোকে বলে প্রেমে পড়লে পেত্নিকেও ভালো লাগে। আর সায়রা তো ভীষণ সুন্দরী এক মেয়ে। যাকে দেখলেই বুকের ভেতর ধীম ধীম করে।

চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি

মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২২

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২২)

কফি শপ থেকে বের হতে গিয়ে হঠাৎ একটা ছায়া দেখল অর্পা। সে চমকে গেল। পিছিয়ে গেল দু পা। অনুভব দাঁড়িয়ে। ভীষণ লম্বাটে ছেলেটাকে দেখতে ঘাড় উঁচু করতে হলো ওকে।

“তুমি এখানে…..! ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”

“শোনো অর্পা,তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”

“আমার সাথে?”

“হ্যাঁ।”

অর্পা শুকনো ঢোক গিলল। ছেলেটা কি তাকে প্রপোজ করবে নাকি!

অনুভব ভালো মতন পরখ করে নিয়ে বলল,”সায়রা চলে গেছে?”

“হ্যাঁ।”

“ওকে, চলো।”

“কোথায়?”

“কফি শপের ভেতরে।”

একরাশ বিস্ময় সাথে নিয়ে পুনরায় কফি শপের ভেতরে গেল অর্পা। অনুভব দুজনের জন্য পুনরায় অর্ডার করল।

“কী কথা বলবে?”

“খুবই সিরিয়াস।”

অনুভবের চোখ মুখ কেমন সিরিয়াস হয়ে গেল। অর্পা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বলল,”আচ্ছা। তবে বলো…।”

“ওকে।”

অনুভব লম্বা করে শ্বাস নিল। যেন নিজের ভেতরটা শুদ্ধ করে নেওয়ার চেষ্টা।

“স্যার, জুস।”

ওয়েটারের কথায় ধ্যান ভাঙল অনুভবের। অনুভব হাত সরিয়ে দিতেই ওয়েটার জুস রেখে গেল।

“জুস নাও।”

জুস নিল, অর্পা। ছেলেটাকে দেখে ওর সুবিধার মনে হচ্ছে না। অনুভব কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। তারপর বলল,”একটা খবর দিতে পারবে?”

“কী খবর?”

“তোমার বান্ধবীর বিষয়ে।”

“সায়রার বিষয়ে?”

“হুম।”

অনুভবের মতিগতি তৎক্ষণাৎ না বুঝলেও অর্পা বলল,”বলো কী খবর জানতে চাও।”

“ওর বয়ফ্রেন্ড আছে?”

বয়ফ্রেন্ডের নাম শুনে অর্পা যেন মিইয়ে গেল। মেয়েটার দীর্ঘ দিনের প্রণয়ের স্বাক্ষী ছিল সে।

“কী হলো?”

“আপাতত নেই।”

“আচ্ছা।”

“হুম। তবে বিষয়টা অনেক গভীর।”

“কেমন?”

“ওর সাথে যার সম্পর্ক ছিল তার বিয়ে হয়ে গেছে।”

অনুভব যেন স্বস্তি পেল। হেসে বলল‍,”তাহলে তো ভালোই।”

অর্পা ভ্রু কুঞ্চিত করে চাইল। অনুভব এবার চোখ মুখ অন্ধকার করে বলল,”বিয়ে কেন হলো?”

“সাঈদ ভাইয়ার মা, তিনি সায়রাকে পছন্দ করতেন না। এর অনেক গুলো কারণ আছে। তবে লাস্ট দিকে যেই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঝামেলা করেছিল সেটা হলো আমিরা।”

“আচ্ছা, আচ্ছা। কেইস তবে বিশাল ঝামেলার।”

“খুব। তবে খারাপ লাগার বিষয় হলো সাঈদ ভাইয়া বিয়ের আগের দিন সায়রাকে আনতে গিয়েছিল। সায়রা প্রথমে রাজি হয় নি। পরে অবশ্য কল করেছিল। তবে সাঈদ ভাইয়া রিসিভ করে নি।”

“কেন করে নি?”

অনুভবের চোখে মুখে উৎকণ্ঠা। অর্পা চুপ করে রইল কিছু সময়।

“এই ঘটনা আরো করুণ। সাঈদ ভাইয়া সায়রার বাসায় এসেছে এটা জানতে পেরে ওনার মা সু ই সা ইড করতে যান। আর সেটার জন্যই সাঈদ ভাইয়া ছুটে আসেন। পরে আর ফোনের সাথে কানেক্ট হতে পারেন নি। তাই বিয়েটা হয়ে যায়।”

সবটা শুনে অনুভব চেহারার ভঙ্গিমা এমন করল যেন, সে খুবই দুঃখ অনুভব করছে। অথচ বিষয়টি ভিন্ন। সে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে শত সহস্রবার ধন্যবাদ জানাল।

ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরল অনুভব। সায়রা আর তার মাঝে তৃতীয় পক্ষ নেই। এখন মেয়েটার মন চুরি করার পালা। সারাদিনে পরিশ্রম গিয়েছে। তাই নিজের ঘরে এসে সবার আগে শাওয়ার নিয়ে এল। ফ্রেশ হয়ে একেবারে ডিনার করতে বসল। রূপবান ছেলের খাবার বেড়ে দিয়ে শুধালেন,”অফিস কেমন যাচ্ছে?”

“কেমন যাবে। বোরিং টাইম।”

“ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।”

“ঠিক হবে না। আমাকে মে রে তবেই শান্তি হবে সবার।”

রূপবান চোখ মুখ অন্ধকার করে রইলেন। ছেলেটা এত বাজে কথা বলে!

খাবারের টেবিলে কথাটা ওঠল। মারুফদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় জুঁই এর জন্য বিয়ের প্রস্তাব এনেছে। কথাটা শুনে জুঁই ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল,”পাগল নাকি। আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে?”

“সেটাই তো। যার বিয়ের বয়স হয়েছে তার ই বিয়ে দিতে পারছি না। আর আমার চৌদ্দ বছরের বাচ্চা, মেয়ের নাকি বিয়ে দিব।”

জুথির কথার হাসল সায়রা। মিনমিনে কণ্ঠে বলল,”ভাবী তুমি যেন কত বছর বয়সে বিয়ে করেছ।”

সায়রার কথায় মারুফ হাল্কা কেশে ওঠল। জুথি চোখ রাঙিয়ে বলল,”কথা বাদ। সবাই খাওয়া দাওয়ায় মনোযোগ দাও।”

জুথির কথায় আরো একবার হাসল সায়রা। মারুফ আর জুথির প্রেমের বিয়ে। তবে ছেলে মেয়ের সামনে কথা গুলো ওঠলে ভীষণ লজ্জা লাগে।

আমিরা ঘরে বসে ছবির এলবাম দেখছিল। সায়রা শব্দহীন ভাবে পাশে বসল। তবে বুঝে ফেলল আমিরা। ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,”মিমি, এসে গেছ।”

“বুঝলি কেমন করে?”

“বুঝি আমি।”

“কীভাবে?”

“তোমার মাঝে মা মা গন্ধ পাই।”

কী আশ্চর্য কথা! আমিরা সায়রার মাঝে মা মা গন্ধ পায়! ওর বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠল যেন। সায়রা আমিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”পড়াশোনার কী খবর?”

“ভালো।”

“আচ্ছা। কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবি।”

“হুম। চলো ঘুমাই।”

“একটু পর ঘুমাব। তুই ঘুমিয়ে পর।”

“ঠিক আছে।”

আমিরা শুতেই গায়ে চাদর টেনে দিল সায়রা। তারপর বই নিয়ে বসল। সে ভালো একটা প্রিপারেশন নিচ্ছে। সামনে তার অনেক দায়িত্ব রয়েছে।

পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিল সায়রা। হুট করে আসা কলটায় ঘুম ভাঙল ওর। শরীর ব্যথা করছে। চোখেও ঘুম। হাতের সাহায্যে ঘুম নামানোর চেষ্টা করল। ততক্ষণে কল কেটে গেল। ফোন তুলতে তুলতে পুনরায় কল এল। অনুভব কল করেছে! এখন কটা বাজে?

সায়রা ঘড়িতে টাইম দেখতে দেখতে কল আবার কেটে গেল। সকাল হয়ে গেছে! অথচ ওর কোনো তাল নেই। তৃতীয় বার কল এল না আর। সায়রা একটু অপেক্ষা করে নিজ থেকেই কল করল।

“হ্যালো সায়রা,বিরক্ত হলে?”

“না, বলো।”

“ঘুমিয়ে ছিলে?”

“হুম।”

“তাহলে পরে বলছি।”

“না বলো। সমস্যা নেই।”

“আমার সব বন্ধু’রা মিলে পিকনিক প্ল্যান করেছি। তুমি কিন্তু জয়েন করবে।”

“অনুভব, তোমার বন্ধুদের মাঝে আমি….”

“আরে, এটা কোনো ব্যাপার হলো নাকি।”

“না অনুভব। এটা হয় না।”

“কেন হয় না?”

সায়রা একটু ভাবল। তারপর বল‍ল,”ঠিক আছে। আমার সাথে তবে অর্পাও যোগ দিবে।”

“ওকে।”

“আচ্ছা, ডিটেলস পাঠিয়ে দাও।”

“আচ্ছা।”

কল কেটে মাথা চেপে রইল সায়রা। হ্যাং হয়ে আছে। সারারাত পড়ে হয়তো ভোরের আগ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। অনুভবের নাম্বার থেকে ম্যাসেজ দিল। শহর থেকে দূরের একটা জায়গা। ওখানে পিকনিক করা হবে। সায়রা অর্পাকে কল করে জানাল। অর্পা ঘুরতে ভীষণ পছন্দ করে। ওদের বন্ধু মহলে তেমন ঘোরা হয় না। আর বন্ধু বলতে ওরা তিনজন। তাই তেমন একটা প্ল্যান করা হয় না। সোনালি এখন দেশে নেই। নতুবা তাকে ও জয়েন করানো যেত।

এই পিকনিকের আয়োজনটা একেবারেই হুট করে মাথায় এসেছে অনুভবের। ও ভেবেছে পিকনিক শেষে সায়রাকে মনের কথা জানাবে। ওর ধৈর্য হচ্ছে না আর। তাছাড়া ভয়ের একটা ব্যাপার ও আছে। যদি সায়রা নতুন করে কারো সাথে সম্পর্ক জড়িয়ে পড়ে! সেই জন্যই অনুভব ঠিক করেছে যতটা সম্ভব, দ্রুত মেয়েটিকে মনের কথা জানিয়ে দিবে। অনুভব মিটিমিটি হাসছিল। আমিন সাহেব শরীর চর্চা করে ফিরেছেন। ছেলেকে ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠতে দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছে।

“অনুভব।”

বাবার কণ্ঠ কানে যায় নি ওর। অনুভব তখনো হাসছে। আমিন সাহেব এবার গলার আওয়াজ ভারী করলেন।

“এই অনুভব।”

বাবার কণ্ঠে চমকে তাকাল অনুভব। দাঁড়িয়ে পড়ল বসা থেকে। লম্বায় তারা সমান সমান। তাই একদম দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি মিশে যাচ্ছে।

“জি বাবা।”

“হাসছিলে কেন?”

অনুভব চট করেই জবাব দিল,”পিকনিক করব বাবা। তাই সবটা ভেবে হাসছিলাম।”

আমিন সাহেব বিশ্বাস করলেন কী না কে জানে। তবে তিনি প্রসঙ্গের সাথে ঘটনা জুড়ে বললেন,”তুমি নাকি সায়েমের কথার গুরুত্বই দেও না।”

অনুভব চমকে তাকাল। বদ ছেলেটা বাবার কাছে বিচার দিয়েছে!

“যাই হোক, সায়েম আর তুমি প্রায় সম বয়সীই হবে। ছেলেটাকে বন্ধুর মতন ট্রিট করবে। বুঝলে?”

“ঠিক আছে বাবা।”

“তোমাদের প্ল্যানে ওকে এড করলে কেমন হয়?”

অনুভব মুখ শুকনো করে ফেলল। আমিন সাহেব কড়া কণ্ঠে বললেন,”তোমাদের প্ল্যানে ওকে যোগ করে নিবে। বুঝলে?”

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২১

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২১)

“তুমি ইন একটিভ কেন?”

সায়রা পড়ছিল। সে সময়েই কলটা আসে। সে না তাকিয়েই রিসিভ করেছে। অনুভবের কণ্ঠটা শুনে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে রাখল।

“কী?”

“সোশ্যাল মিডিয়ায় তোমায় পাওয়া যায় না কেন?”

“আমার ভালো লাগে না। আমি অতো সময় দেই না সোশ্যাল মিডিয়ায়।”

“তাহলে কীসে সময় দেও?”

“আমার অন্য অনেক কাজ থাকে অনুভব।”

“সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। কী করো এত?”

সায়রা এবার জবাব দিতে গিয়ে থমকে গেল। অনুভব তাকে চার্জ করছে! ছেলেটা অধিকার দেখাচ্ছে! কিন্তু তাদের মধ্যে এমন বন্ধুত্ব কী আছে যাতে করে এতটা অধিকার ফলানো যায়। ওর ভাবনার মাঝেই অনুভব পুনরায় বলে ওঠল।

“এখন থেকে দিনে একবার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে যাবে। আমি টেক্সট দিব, রিপ্লাই করবে।”

কী আশ্চর্য! সায়রা কল রেখে অবাক হয়ে রইল। এই ফিনফিনে পাতলা ছেলেটা কী বোঝাতে চাইল তাকে?

সায়রার কোনো নিয়মনীতি নেই। ও কখন খায়, কখন পড়ে কিছুর ই কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। জুথি পায়েস করেছে। সেটাই নিয়ে রাখল টেবিলে।

“সায়রা, শুনছিস?”

“বলো ভাবী।”

“বলছিলাম যে…..”

সায়রা বুঝল জুথি কিছু কথা বলতে অপ্রস্তুত বোধ করছে। ও বই রেখে ভাবীর মুখোমুখি বসল।

“বলে ফেলো ভাবী।”

“আসলে হয়েছে কী….”

“থামলে কেন?”

পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে বলল সায়রা। জুথি শুকনো ঢোক গিলে বলল,”আশেপাশের মানুষজন খুব খারাপ কথা বলছে।”

“কী বলছে?”

“বলছে, এত বড়ো মেয়ে অথচ বিয়ে করছে না। তার ওপর বোনের মেয়ে নিয়ে আদালতে দৌড়াচ্ছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য আছে।”

সায়রা এক চামচ পায়েস ওঠিয়ে মুখে তুলল। ভাঙা কণ্ঠে বলল,”ভাবী, চিনি এত বেশি কেন?”

“বেশি, কই দেখি।”

জুথি এক চামচ মুখে দিল। না, সব তো ঠিক ই আছে। সায়রা অন্য মনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। জুথি ওর পাশে দাঁড়াল।

“ভাবী, আমি জানি তারা আর কি কি বলেছে। এ ও জানি এই মানুষ গুলোই সাঈদের মায়ের কাছে আমার নামে খারাপ কথা রটাত। হয়তো এখনো রটায়। সেই জন্যই তিনি আমাকে দেখতে পারতেন না। কখনো চাইতে না আমি তার….”

সায়রা থেমে গেল। ওর গলা ধরে আসছে। জুথি বুঝল অনেক কষ্ট থেকে কথা গুলো বলেছে সায়রা। তবে সে যে সান্ত্বনা দিবে সেই বাক্য টুকুও ভেতর থেকে এল না।

আমিরার স্কুল আজ একটু দ্রুত ছুটি দিবে। তাই সায়রা ওকে আনতে গিয়েছিল। পথে দুজন হাওয়াই মিঠাই কিনল। সেটা খেতে খেতেই বাড়ির পথে আসছিল। তখনই ওকে শুনিয়ে এক মহিলা বললেন,”যাই বলো না কেন, আমার তো মনে হয় সমস্যা এদের সবার মাঝেই। বোনটার চরিত্রের দোষ তো সবাই দেখেছেই। এদের মতিগতি দেখলেও বোঝা যায় সমস্যা আছে। যেভাবে বোনের মেয়েকে নিয়ে মাতামাতি করছে। কখনো কি, দেখেছ মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি হয়। নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে। মেয়েটাকে নিতে এল বাবা-দাদি অথচ দিল না। মেয়ে মানুষ হয়ে আদালতে ছুটছে। এত সব কিছু কেন করছে, কোনো ধান্দা তো আছেই।”

সায়রা শুকনো ঢোক গিলল। সামলে নিল নিজেকে। এই মানুষ গুলোর মতন নিকৃষ্ট চিন্তার মানুষ সে আর কখনোই দেখে নি।

আমিরার জন্য খাবার বেড়ে নিয়ে নিজেও খাবার খেতে বসল সায়রা। জুথি ঘুমিয়েছিল। ঘুম থেকে ওঠে তার চোখ মুখ ফুলে গিয়েছে।

“আসছিস তোরা।”

“হ্যাঁ ভাবী। ঘুমিয়েছিলে?”

“হুম। বুয়া তো আজ আসল না রে।”

“বোধহয়, অসুস্থ।”

“কী জানি। আচ্ছা খাবার খাওয়া হলে আমাকে ডেকে দিস তো।”

“ডাকা লাগবে না। তুমি ঘুমাও। আমি সব পরিষ্কার করে নিব।”

“ঠিক আছে।”

জুথি পুনরায় ঘুমাতে গেল। রান্না করে শরীর ক্লান্ত ছিল। তাই সে ঘুমিয়েছিল। একটু ঘুমানোর পর শরীর আরো বেশি টানছে। আমিরা খেতে খেতে বলল,”মিমি, স্কুলে আমার এক ফ্রেন্ড হয়েছে। ওর জন্মদিন।”

আমিরার কথায় একটা সংকোচ দেখা যাচ্ছে। সায়রা হেসে বলল,”সংকোচ কেন করছিস? কবে জন্মদিন?”

“পরশু।”

“আচ্ছা। আমি উপহার কিনে আনব।”

আমিরা মাথা দোলাল শুধু। সে ধীরে ধীরে বড়ো হচ্ছে। সায়রার অবস্থা গুলোও বুঝতে পারে। তাই যে কোনো কিছু চাইতে লজ্জা হয়।

সায়রা সমস্ত কাজ গুছিয়ে রেখে মাহিম আর জুঁইকে বলে গেল খাবার খেয়ে নিতে। জুথির শরীরটা ভালো নেই। তাই তাকে আর ডাকা হয় নি। সন্ধ্যার কিছু পূর্বে বের হলো সায়রা। অর্পার সাথে দেখা করবে আজ। দুজনে একটা কফি শপে বসবে। টুকটাক আলোচনা আছে।

অর্পার আসতে লেট হচ্ছে। মেয়েটা জ্যামে আটকে গেছে। কল করে জানিয়েছে। বেশ কিছু সময় ধরে বসে আছে সায়রা। কিছু না নিলে খারাপ দেখায়। ওয়েটার ডেকে কফি অর্ডার করে নিল। খানিক বাদে কফি এল। একটা চুমুক দিয়েছে ওমনি ঝড়ের মতন হাজির হলো অনুভব। সায়রা চমকে তাকাল।

“তুমি!”

“তোমাকে দেখেই এলাম।”

অনুভবকে দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে। শরীরে অফিসের পোশাক। সায়রা প্রশ্ন না করে কফি কাপটা নিতে গেল। ওমনি ছো মেরে নিয়ে নিল অনুভব। কফি কাপে চুমুক বসাল। সায়রা প্রতিবাদ করে ওঠল,”এটা আমার এঁটো।”

অনুভবের হেলদোল নেই। সে আবার চুমুক বসিয়েছে। সায়রা ভ্রু কুঞ্চিত করে রইল।

“লো সুগার!”

“হুম, স্বাস্থ্য সচেতন আমি।”

অনুভব চোখ ঘুরিয়ে চাইল। দেখল সায়রা সত্যিই ফিট একটি মেয়ে। এদিকে সে রোগা পাতলা ছেলে। তাকে দেখলে মনে হবে শরীরে শক্তি নেই। যদিও কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। তবে স্বাস্থ্য’র প্রতি ভীষণ অনীহা তার।

অর্পা এসে গেছে। অনুভব টেবিলে মাথা এলিয়ে বসে ছিল। ইশারায় অর্পা বোঝাল ছেলেটা কে। সায়রা দম ফেলল।

“ও অনুভব, আমার বন্ধু। আর অনুভব, ও অর্পা, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”

অনুভব মাথা না ওঠিয়েই বলল,”হাই অর্পা।”

অর্পা যারপরনাই অবাক হলো। ব্যাগ রেখে পাশের চেয়ার টেনে বসল। সায়রা মেকি হাসি দিয়ে বলল,”ও একটু পাগল টাইপের।”

অনুভব কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে মাথা তুলল। চোখ দুটো ক্লান্তিতে নিভে গেছে। অর্পা ছেলেটার দিকে চেয়ে রইল। ভীষণ লম্বা। কমছে কম ছয় ফুট দুই! ওর মুখ হা হয়ে গেল। এ রকমের জিরাফ বাংলাদেশে খুব কম ই আছে। তার ওপর অধিক হ্যাংলা। দেখলেই মনে হয় বাতাসে উড়ে যাবে। অর্পা অনেক সময় ধরে অনুভবকে পর্যবেক্ষণ করল। তারপর মনে মনে আওড়াল ছেলেটা সুন্দর। শুধু স্বাস্থ্য সচেতন নয়।

অনুভব চেয়ার ছেড়ে ওঠে বলল‍,”তোমরা গল্প করো। আমি যাই। ভীষণ কাজ। বাই অর্পা।”

“বাই।”

অর্পা পেছন ঘুরে অনুভবের যাওয়া দেখল। তারপর বলল,”এই জিরাফটাকে পেলি কোথায়?”

“আহনাফদের প্রতিবেশি। ওখান থেকেই পরিচয়।”

“আচ্ছা, বাট ছেলেটা কিন্তু সুন্দর।”

সায়রা চোখ নাচিয়ে বলল,”তোর না বয়ফ্রেন্ড আছে।”

অর্পা মেকি হাসি দিয়ে বলল,”আমি ওকে সুন্দর বলেছি। বলেছি কি, যে ওকে পছন্দ করেছি?”

সায়রা হেসে ফেলল। অর্পা ও হাসল। তারপর পুনরায় কফি অর্ডার করা হলো। দুজনের অনেক দিন পর আড্ডা চলছে। দুই বান্ধবী নিজেদের ব্যস্ততায় একদমই সময় পায় না।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২০

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২০)

আমিন সাহেবের কড়া নির্দেশনা থাকার কারণে অনুভব আজ অফিসে এসেছে। তাও একদম পরিপাটি হয়ে। সে চিকন হলেও সুদর্শন। পোশাকটিতে বেশ ভালো লাগছে। অনুভব যখন প্রবেশ করছিল সবাই কেমন দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। ও তখন বোকার মতন চেয়ে ছিল। ভাবছিল, সে কি কোনো ভাবে চুলকানি বিশেষ পারফিউম মেখে এসেছে? নতুবা সে এক পা এক পা করে আগাতেই কেন সবাই দাঁড়িয়ে গেল। ম্যানেজার তাকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে বসিয়ে দিয়ে গেছেন। পরিপাটি সাজানো একটা কক্ষ। অনুভব চেয়ারের ব্যাক রেস্টে ঠেস দিয়ে চারপাশ দেখছে। পুরো কক্ষে নজর বুলিয়ে সে টেবিলের ওপরে থাকা পাজেল নিয়ে খেলতে লাগল। ম্যানেজার প্রবেশ করে বললেন,”অনুভব, পরিচয় করিয়ে দেই। ও হলো সায়েম। তোমার পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন।”

অনুভব ভালো মতন চেয়ে দেখল। তার পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন? এর মানে কী! বাবা কি তাকে অফিসে পার্মানেন্ট ভাবে বসানোর ধান্দা করছেন?

“অনুভব।”

ম্যানেজার রুস্তমের কণ্ঠ পেয়ে তাকাল অনুভব। মৃদু সুরে বলল,”আঙ্কেল আমি কি রোজ অফিসে আসব?”

রুস্তম একটু হাসলেন। আমিন সাহেবের সাথে তার কাজের বছর পঁচিশের ও বেশি। একদম শুরু থেকেই আছেন তিনি। অনুভব কে হতে দেখেছেন নিজের চোখে। তাই ছেলেটার স্বভাব সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই অবগত। এছাড়াও আমিন সাহেব প্রায়শই ছেলের জন্য চিন্তায় মশগুল হয়ে থাকেন। এই তো সেদিনের কথা। অফিসের সব কাজ শেষেও আমিন সাহেব বাসায় যাওয়ার তাড়ায় ছিলেন না। রুস্তম তখন বললেন,”স্যার বাসায় যাবেন না?”

আমিন সাহেবের কোনো হেলদোল নেই। তিনি শুনতেই পান নি। রুস্তম আবার ডাকলেন।

“স্যার।”

“হ্যাঁ রুস্তম। বাসায় গেলে না?”

“আপনি বসে আছেন দেখে, এলাম।”

“ওহ।”

আমিন সাহেব আবার চুপ। ছেলের জন্য চিন্তায় তিনি ঘুমাতে পারেন না। অথচ অনুভবের কোনো হেলদোল নেই। যেন দুনিয়ার কোনো কাজেই তার আগ্রহ নেই।

“স্যার আপনি কী চিন্তিত?”

আমিন সাহেবের বুক থেকে হাহাকার নামে। তিনি কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলেন,”বুঝলে রুস্তম, একটা সন্তান থাকা পৃথিবীর সবথেকে বেশি চিন্তার।”

রুস্তম একটু হেসে বললেন,”কেন স্যার? অনুভব বাবার মতন সুর্দশন ছেলেকে নিয়ে চিন্তা কীসের?”

“সুদর্শন হওয়া না হওয়া কোনো কথা নয় রুস্তম। ছেলেটা এত অলস। এভাবে তো জীবন পাড় হবে না। নিজের জন্য কিছু করার ইচ্ছাটিই নেই।”

“তাহলে অফিসে কেন পাঠাচ্ছেন না?”

“ভাবছি, কীভাবে কী করব।”

“আমার মনে হয় অনুভব বাবা অফিসে এলে কিছু সময় কাটালে একটা আলাদা দায়িত্ব চেপে বসবে। ধীরে ধীরে কাজে মন টিকে যাবে।”

আমিন সাহেব কথাটির গুরুত্ব বুঝেছিলেন। তাছাড়া আর কোনো উপায় ও নেই। অনুভব কে বেশ কড়া হুশিয়ারি দিয়ে তবেই পাঠিয়েছেন। এদিকে অনুভব ভাবছে কীভাবে এখান থেকে বের হওয়া যায়।

অনুভবের কোনো কাজ ছিল না আজ। সে শুধুই পরিচিত হয়েছে। তবু তাকে বিষন্ন লাগছে। রুপবান ছেলের পাশে বসলেন। কপালে হাত রেখে বললেন,”কী হয়েছে বাবা?”

“কী হয় নি মা?”

রুপবান আতঙ্কিত হলেন না। তিনি ছেলের মতিগতি বুঝেন। অনুভব বালিশ থেকে মাথা উঠিয়ে মায়ের কোলে মাথা রাখল।

“বাবা কেন বুঝে না আমি অফিসে যেতে চাই না?”

রূপবান তখনই উত্তর দিলেন না। একটু ভেবে বললেন,”তোমার বাবা একা কাজ করেন। তোমার উচিত তাকে সাহায্য করা।”

“বাবা এখন অনেক বেশি শক্তিশালী মা।”

“সেটা ঠিক। তবে তুমি কি জানো তিনি শক্তিশালী কেন? কারণ তিনি নিয়ম নীতি মেনে চলেছেন। সারাটা জীবন পরিশ্রম করেছেন। পরিশ্রম করলে মানুষের শরীরের ক্ষমতা বেড়ে যায়। যদি তুমি কাজ ই না করো তবে তুমি শক্তিশালী হলেও ধীরে ধীরে সেই শক্তি হারিয়ে যাবে।”

কথা গুলো কানে পৌছাল না যেন। অনুভব কোল থেকে মাথা সরিয়ে নিল। বাবার সাথে দীর্ঘ দিন সংসার করে মা ও কেমন হয়ে গেছে। সে হতাশ হলো। কঠিন সেই হতাশে ভেতর থেকে তপ্ত হাওয়া বের হয়ে এসেছে।

আহনাফকে পড়িয়ে বের হলো সায়রা। ওমনি অনুভবকে দেখতে পেল। গোমড়া মুখ। পরনে অফিসের পোশাক। মাথা থেকে পা অবধি দেখে নিয়ে সায়রা বলল,”তুমি কবে থেকে অফিসে জয়েন করলে?”

সায়রার কথায় ভ্রু কুঞ্চিত করল অনুভব। কারণ মেয়েটি এমন ভাবে বাক্যটি বলল যেন এটি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য ওর অফিসে জয়েন করা। অনুভব বেশ ভাব নিয়ে জানাল।

“কেন? আমি তো সেই কলেজের সময় থেকে বাবার অফিসে যাওয়া আসা করি। বাবার এই ব্যবসায় আমি বিশাল ভূমিকা রেখেছি।”

অনুভব যে স্পষ্ট মিথ্যে বলছে তা সায়রা ভালোই বুঝল। তবে ও বিষয়টা না ঘাটিয়ে বলল,”আচ্ছা আচ্ছা। ভালো তো।”

সায়রা রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিল। অনুভব ওর পাশে এসে দাঁড়াল।

“চলো আমি নামিয়ে দেই।”

“কেন?”

“কেন আবার কী কথা?”

“না আমি একাই যেতে পারব।”

কথাটা বলার পর ই একটা রিকশায় ওঠে গেল সায়রা। অনুভব ফ্যাকাশে ভঙ্গিতে চেয়ে রইল। সায়রা পেছন ফিরে বলল,”এই যে অনুভব মহাশয়, আপনার টাই এর ঠিক নেই। এতদিনে এই কাজটাও শিখলেন না?”

অনুভব সঙ্গে সঙ্গে তাকাল। সত্যিই টাই টা নষ্ট হয়ে গেছে। মা পরিয়ে দিয়েছিল। সে এ রকম ফর্মাল পোশাকে অভ্যস্ত নয়। তারপর ই ওর খেয়াল হলো,ও যে অফিসের ব্যাপারটি মিথ্যে বলেছে সায়রা বিষয়টা আসলেই বুঝতে পেরেছে।

অনুভবের অফিসের দ্বিতীয় দিন। ওর চোখে মুখে অতৃপ্তি। সায়েম প্রবেশ করেছে অনেক সময় হলো। অথচ অনুভবের কোনো জিজ্ঞাসা নেই। এমনকি বসতেও বলছে না। সায়েম এবার কণ্ঠের জোর কাজে লাগাল।

“হ্যালো স্যার।”

অনুভব তাকাল। তীক্ষ্ণ তার দৃষ্টি। সায়েম যেন ভয় পেল। সে শুকনো ঢোক গিলে বলল,”আমি ফাইল নিয়ে এসেছিলাম। যদি দেখতেন।”

হাত বাড়াল অনুভব। সায়েম ফাইল গুলো তুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অনুভব ইশারায় বোঝাল দাঁড়িয়ে আছ কেন। সায়েম চট করেই জবাব দিল।

“আপনার কোনো প্রয়োজন হলে। যদি কিছু না বুঝতে পারেন।”

“তোমার কী মনে হয়, আমি এতটাই অবুঝ?”

“স্যার আমি সেটা বলি নি।”

“জানি কি বলেছ। যাও এখন।”

সায়েম চলে গেল। অনুভব বিড়বিড় করতে লাগল। এই অফিসের লোক গুলোকেও তার অসহ্য লাগছে।

সায়েমের ডাক পড়েছে। ছেলেটা নিজের ব্যক্তিগত মানুষটির সাথে কলে কথা বলছি। ওমনি ডাক পড়তে হলো তার। ও হন্তদন্ত হয়ে এল। অনুভব চোখ মুখ অন্ধকার করে আছে। সে পুরো ফাইলের একটি বিষয় ও বুঝতে পারে নি।

“স্যার।”

অনুভব অলস প্রকৃতির হলেও বাইরের মানুষের কাছে নিজেকে ধরা দেবার মতন মানুষ নয়। তাই সে বলল,”ফাইল নিয়ে যাও।”

“এই সময়ের মধ্যেই সব শেষ করে ফেললেন!”

সায়েম টেবিল থেকে ফাইল তুলে নিল। অনুভব কথা বলল না। কৌতুহলবশতই ফাইল ঘাটতে লাগল সায়েম। দেখল কোনো কিছুই করা হয় নি।

“স্যার, আপনি কি সিউর?”

“কেন?”

“আপনি তো কোনো কারেকশনই করেন নি।”

“এসব আমার কাজ? আমি করলে তুমি কী করবে?”

এ কথার বিপরীতে আর কোনো কথা থাকে না। সায়েম ফাইল নিয়ে চলে গেল। অনুভব তার মাকে কল করল।

“বাবা আমাকে কোথায় ফেলল বলো তো।”

“কী হয়েছে অনুভব?”

“অসহ্য লাগছে আমার।”

অনুভব কল রেখে দিয়ে কিছু সময় বসে রইল। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে এল। সায়রা ইন একটিভ। একটিভ হয়েছিল তিনদিন আগে। মেয়েটাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া একেবারেই দুষ্কর।

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ ন‍ৌশি

মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-১৯

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৯)

সায়রা খুবই শীতল মস্তিষ্কে বসে আছে। এদিকে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে জুথির। ও এবার ধৈর্য হারিয়ে ফেলল।

“শোন সায়রা, এবার মনে হচ্ছে বড়োসড়ো একটা ঝামেলা হবে।”

“কিছুই হবে না ভাবী।”

“হবে রে। দেখ, বাহাদুর ভাই এবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। না বুঝে শুনে তো নয়।”

“অথচ, একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে আমিরাকে মেয়ে হিসেবে অস্বীকার করে এসেছিল। আপাকে নিকৃষ্ট অপবাদ দিয়ে এসেছে। এখন শুধুমাত্র প্রপার্টি হাতানোর জন্য এমনটা করছে। এই সব তো মিথ্যে নয় ভাবী।”

সায়রার কথায় মুখ চুপসে গেল জুথির। এই বিষয়টা তাকে বার বার যন্ত্রণা দেয়। সায়রা নীরব কণ্ঠেই বলল,”অতীতে অনেক কিছু হলো ভাবী। আমার আপার আসলেই দোষ ছিল না।”

জুথির ও এখন তাই মনে হয়। সত্যিই আমেনার কোনো দোষ ছিল না। অথচ কত কিছু হয়ে গেল। কত অপবাদ সইতে হলো মেয়েটিকে।

আমিরার মতন একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে আদালতে হাজির হয়েছে সায়রা। এটি তার লড়াই। সে নিজেকে এখন মায়ের আসনে বসিয়ে নিয়েছে। ওর র ক্তে মাতৃত্বের হাওয়া। আমিরা ভীত হয়ে বসে আছে। সায়রা ওকে চেপে ধরে বলল,”ভয় পাবি না।”

আমিরা হু না কিছুই বলল না। বরং সায়রার গায়ের সাথে আরেকটু চেপে বসল। আদালতের কাজ শুরু হলো। বাহাদুরের অভিযোগ বাচ্চাটির ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে। আমেনার মৃ ত্যুর পর এক প্রকার জোর করেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার ছোট্ট মেয়েটিকে। মাঝে সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। যার ফলে তাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। তার মা নিজেই অসুস্থ। ছেলের যত্ন কীভাবে করবেন? তাছাড়া অনেক ব্যক্তিগত বিষয় রয়েছে। মা হয়ে তো ছেলের সব রকম যত্ন করতে পারবে না। কত রকমের সমস্যা। যার কারণে একজন মায়ের পক্ষেও বাহাদুরের যত্ন করা সম্ভব নয়। সেই জন্যই তাকে বিয়ে করানো হয়। এর ফলে আমিরা নিজেও নতুন করে মা পাবে। এই রকম নানান কথা সাজিয়ে বলা হয়। সায়রা শুধু অবাক হচ্ছে। কতটা মিথ্যুক হলে মানুষ এ রকম কথা বলতে পারে?

সায়রার পক্ষ থেকে এবার কথা আসে। আমিরা এগারো বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে। মায়ের মৃ ত্যুর পর তার দাদি তার ওপর অত্যাচার করতে থাকে। বাবা ম দ পানি খেয়ে বাসায় ফিরতে শুরু করে। এতে করে প্রায়শই বাবার হাতের আ ঘা ত ও সইতে হয় তাকে। একদিন আমিরাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। পাশের বাসা থেকে খবরটি জানতে পেয়ে আমিরাকে তার নানা বাড়িতে আনা হয়।

দু পক্ষের কথা শেষে আদালতের কাজ শেষ হয়। আমিরা ভয়ে তখনো নড়তে পারছে না। এমন পরিবেশ তার জন্য নতুন। নতুন তো সায়রার জন্য ও। ওরা দুজন আদালত থেকে বের হয়। অনুভব একটা কাজে এদিক দিয়েই যাচ্ছিল। তখনই ওদের দেখে। ওর কাছে মনে হয় দুজন সংগ্রামী মেয়ে হেঁটে চলেছে। এক মুহূর্তের জন্য অনুভবের সমস্ত শরীর শিউরে ওঠে। কেমন একটা তপ্ততা নামে।

বের হয়েই জুথিকে কল করল সায়রা। ফোন সাইলেন্ট করা ছিল। এর মধ্যে অনেকবার কল করেছে জুথি।

“হ্যাঁ ভাবী।”

“আদালত থেকে কী বলল রে সায়রা?”

জুথির কণ্ঠে ভয়। সায়রা মৃদু সুরে বলল,”কী বলবে আর।”

“কিছু বলে নি?”

“কেইস তো একদিনে সলভ হওয়ার জিনিস নয় ভাবী। দু পক্ষের বক্তব্য শুনেছে। এখনো তো অনেক কিছু বাকি।”

“আমার ভয় হচ্ছে রে।”

“ভয় কীসের। আমিরার জন্য ওর মিমি তো সব সময় ই আছে।”

সায়রার গলা দিয়ে যেন মধু ঝড়ছে। জুথির হুট করেই কান্না পেল। সে শুরুর দিকে আমিরার সাথে অন্যায় করেছে। কারণ অবশ্য ছিল। সে প্রচুর বিরক্ত ছিল সব কিছুতে। তখন মনে হয়েছিল আমেনা ম রে গিয়ে আরো বেশি অশান্তি তৈরি করে গিয়েছে। সবটা স্মরণ করে জুথির বুক হু হু করে ওঠল।

“ভাবী, জুঁই আর মাহিম ফিরেছে?”

“হ্যাঁ। মাত্রই ফিরল।”

“ঠিক আছে। ওদের জন্য আমি স্ন্যাকস নিয়ে আসব। আসতে আসতে বোধহয় সন্ধ্যা হয়ে যাবে।

“সাবধানে আয়।”

কল রেখে সায়রা দেখল অনুভব নামের লম্বা ছেলেটি তার বরাবর দাঁড়িয়ে। সায়রা ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করল।

“তুমি এখানে কেন?”

দূর থেকেই জবাব দিল অনুভব। যার জন্য গলার স্বর হলো উঁচু।

“এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। তোমায় দেখে থেমে গেলাম। কিন্তু তুমি এখানে কী করছো?”

সায়রা মৃদু হাসল। ইশারা করে কপালের অংশ টা দেখাল। অথার্ৎ ভাগ্য তাদের এখানে নিয়ে এসেছে।

অনুভবের সাথে বাইক রয়েছে। তবে সায়রা যেতে রাজি হলো না। অনুভব আমিরাকে ইশারা করল। আমিরা বুঝেও না বোঝার মতন ভান করে রইল। অনুভব মনে মনে বলল দুষ্টু বাচ্চা।

সায়রা আর আমিরা রিকশা নিয়েছে। অনুভব ও তাদের পাশাপাশি চলছে। রিকশার গতি আর বাইকের গতি কখনো এক হয়? অনুভব এত স্লো স্পিডে চালাচ্ছে যে আশেপাশের মানুষ ও কেমন করে তাকিয়ে দেখছে। সায়রার অস্বস্তি হচ্ছে। এদিকে অনুভব বিন্দাস মনে চলছে।

“এই অনুভব।”

“বলো,শুনছি।”

“স্পিড কমিয়ে দিয়েছ কেন?”

“কমালাম কোথায়?”

“মজা না? এই স্পিডে কখনো বাইক চালায় কেউ?”

“আমি চালাই।”

“না, স্পিড বাড়াও।”

“কেন?”

“দেখো না লোকজন কেমন করে তাকাচ্ছে।”

“তো!”

অনুভবের কণ্ঠে বিস্ময়। এদিকে রিকশা ওয়ালা মামা দাঁত কেলিয়ে হাসছে।

“মামা, মনে হয় ভয় পাইতেছে।”

অনুভব ও তালে তাল মিলিয়ে হাসল। সায়রা প্রতিবাদ করে ওঠল।

“কীসের কী? তুমি যাও তো।”

অনুভব এবার শক্ত গলার বলল,”শুনলে না মামা কী বলল? আমি ভয় পাচ্ছি।”

এই টুকু বলে একটু থামল অনুভব। তারপর মিটিমিটি হেসে বলল,”হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে এ যুগের মেয়ে’রা চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলতে চায়। তোমাদের মতন দুজন ঝগড়াটে মেয়ে পাশে থাকলে আর কেউ তাকাবেও না।”

সায়রা চোখ রাঙাল। এদিকে রিকশা ওয়ালা মামা হাসছে। আমিরা এবার বলল,”অনুভব খুবই ভীতু।”

সায়রা ওকে ধমকে ওঠল,”এই নাম ধরে ডাকছিস কেন?”

“ও ই তো বলেছে নাম ধরে ডাকতে।”

সায়রাকে কথা বলতে না দিয়ে অনুভব বলল,”হুম আমরা হলাম বন্ধু। তাই না আমিরা?”

আমিরা ভেংচি কেটে বলল,”বন্ধু না শত্রু।”

অনুভব হতাশ হয়ে বলল,”ভালোই না? মিমি কে দেখেই পাত্তা নেই।”

আমিরা আর অনুভবের কথা চলতে লাগল। সায়রা তীব্র হতাশা নিয়ে বসে রইল। দুজনের কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে এরা ক্লাসমেট। এই অনুভবটা আসলেই কী পাগল?

বাড়ি অবধি আসল অনুভব। সায়রা ওকে ভদ্রতা করে বাসায় আসতেও বলল না। এর জন্য কারণ রয়েছে। প্রতিবেশি’রা ভীষণ খারাপ। এমনিতেই সায়রার নামে বাজে কথা ছড়াতে ব্যস্ত। অনুভবকে নিয়ে বাসায় গেলে আরেকটা সুযোগ পেয়ে যাবে। অনুভবের উদ্দেশ্য ছিল সায়রার বাসা চিনে যাওয়া। কজ এই মেয়েটা সোশ্যাল মিডিয়ায় একদমই সময় দেয় না। এদিকে অনুভব দিন রাত সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ে থাকে। তার একটা পেজ ও আছে। সেই পেজের ফলোয়ার প্রায় পঞ্চাশ হাজার। ভালোই আগাচ্ছিল সব। ইদানীং গান টান করে না বিধায় রিচ ডাউন হয়েছে। অনুভব চলে যেতেই সায়রা দম ফেলল। ভেতরে যেতে যেতে বলল,”কীরে অনুভব আর তোর মাঝে বন্ধু শত্রু ভাব এল কেমন করে রে?”

“আর বোলো না মিমি। আমাদের স্কুলটা তো অনুভবের বাবার ই। একদিন স্কুলে দেখা হলো। বন্ধু হলো। তারপর আবার চুল টেনে দিয়ে পালাল। এর জন্যই বন্ধু থেকে শত্রু বানিয়েছি।”

“বলিস কী রে দু মিনিটের বন্ধু ছিল তবে?”

“হুম।”

কথা বলতে বলতে ওরা ভেতরে চলে এল। সায়রা হাতের জিনিস পত্র নামিয়ে দেখল জুঁই কিচেনে। সে চা হাতে ফিরল।

“পিপি, দেখো তো চা টা কেমন হয়েছে। রিসেন্ট একটা রেসিপি দেখে শিখেছি। অনেক ভেষজগুণ রয়েছে।”

“রাখ, ফ্রেশ হয়ে আসি। আর স্ন্যাকস আছে, একটু বের কর তো সোনা।”

নির্দেশনা দিয়ে সায়রা ফ্রেশ হতে গেল। মুখে পানির ঝাপটা দিতে দিতে সায়রা’র খেয়াল হলো অনুভবের কথাটা। আমিরার কথা যদি সত্য হয়, তাহলে অনুভবের পরিবার বিশাল বড়োলোক। তবে আচরণে বোঝার উপায় নেই।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-১৮

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৮)

অনুভবের সাথে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় টুকটাক কথা হয়। ছেলেটাকে একেক সময় একেক রকম মনে হয় সায়রার। কখনো মনে হয় খুব ম্যাচিউর আবার কখনো মনে হয় ভীষণ অলস প্রকৃতির। সব মিলিয়ে কেমন গুলিয়ে আসছে। সায়রা আজ ভার্সিটির পরীক্ষা গুলো শেষ করে এল। ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা হয়ে গেল। দেখতে দেখতে সময় কোথায় চলে যায়। সব মিলিয়ে সায়রা এখন ভীষণ ব্যস্ত। পরীক্ষার জন্য আহনাফকে পড়াতে পারে নি। তবে পরীক্ষা শেষ হতেই পড়াতে এসেছে। রনু মাসের বেতন দিতে গেলেই সায়রা বলল,”আপু আমি তো এ মাসে পড়াতেই পারি নি।”

রনু হাসল। তারপর বলল,”তুমি তো ঘন্টা ধরে পড়াও না সায়রা।”

সায়রা কৃতজ্ঞতায় চোখ নামিয়ে নিল। সে সত্যিই ঘন্টা ধরে পড়ায় না। আহনাফকে ভীষণ যত্নে পড়ায় সে। এত গুলো মাস পড়াল ছেলেটাকে। কখনো কখনো খেলা ধুলায় ও সঙ্গ দিয়েছে। তাই হয়তো আগের থেকে অনেকটাই ঠিক হয়েছে আহনাফ। মাসের বেতন পেয়ে সায়রার ভালো লাগল। পরীক্ষার জন্য ভালোই খরচা হচ্ছিল। ও ভাবছিল আমিরাকে কিছু জামা কিনে দিবে। মেয়েটির চাওয়া পাওয়া আগে বিশাল থাকলেও এখানে আসার পর একেবারেই নেই হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে মায়ের মতন কেউ হতে পারবে না। সায়রা হতেও চায় না। ও চায় ভালো মিমি হতে। সে নিজের সবটুকু দিয়ে আরেকটি প্রাণকে আগলে নিবে। দিবে নতুন জীবন।

অনেক গুলো ড্রেস কিনল সায়রা। বলা চলে সব টাকাই খরচ করে ফেলল আমিরার ড্রেসের পেছনে। অনুভব ও এখানেই এসেছিল। সে প্রায় সপ্তাহেই এটা সেটা শপিং করে। সায়রাকে দেখতে পেয়ে দোতলা থেকে নেমে এল। সায়রা বেরিয়েই পড়েছিল। তবে ডাক শুনে পেছন ঘুরে তাকাল। দেখল এস্কেলেটর দিয়ে লাফিয়ে নামছে অনুভব। সায়রা চেচাতে গিয়েও থেমে গেল। চারপাশে অনেক মানুষজন। সবাই তাকিয়ে আছে। অনুভব ঝড়ের গতিতে নেমে এল যেন। সায়রা মৃদু কণ্ঠে বলল,”পাগল, ওভাবে কেন আসছিলে?”

অনুভব কথাটির জবাব না দিয়ে বরং শুধাল,”এখানে কেন?”

সায়রা চেয়ে রইল। তার হাত ভরাট করা শপিং ব্যাগে। এটা একটা শপিং মল। সে এখানে কেন আসতে পারে? অনুভবের প্রশ্নে, ও আসলেই হতাশ। আসলে অনুভব ও এ কথা বলতে চায় নি। ও অন্য কথাই বলতে চাচ্ছিল। তবে কীভাবে যে এ কথাটি বলে ফেলল নিজেও জানে না। তবে সে কথাটির তোয়াক্কা না করে অনুভব পুনরায় বলল,”তুমি আহনাফকে পড়াতে যাও না কেন?”

“আমার পরীক্ষা চলছিল।”

“সেই জন্যেই সোশ্যাল মিডিয়া অফ করে দিয়েছিলে?”

সায়রা মাথা দোলাল। অনুভব অনেক বেশি লম্বা। তার ওপর চিকন। সায়রা নিজেও লম্বা। তবু নিজেকে লিলিপুট ই মনে হচ্ছে। চারপাশের মানুষজন ওদের দেখছে। সায়রার অস্বস্তি হয়।

“আমরা এখান থেকে বেরিয়ে কথা বলি?”

অনুভব সায় জানিয়ে চলতে লাগল। মাঝে ওদের আর কথা হলো না। অনুভব ও ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিল। এই কটা দিন ওর যন্ত্রণায় গিয়েছে। সায়রার সাথে দেখা হচ্ছে না। কথা হচ্ছে না। এই প্রথম অনুভব নামের ভবঘুরে ছেলেটা অনুভব করেছিল তার জীবনটা কোথাও একটা আটকে গেছে। পিছুটান এসেছে। ও বুক ভরে শ্বাস নিল। যেন কত শত দিন পর এক টুকরো মুক্ত বাতাস ছুঁয়ে গেল শরীর ও মন।

সায়রা বলল,”ফুচকা খাবে?”

“তুমি খাওয়াবে?”

“হ্যাঁ।”

অনুভব কিছু বলল না। সে সায়রাকে এইটুকু বুঝেছে নিজ উপার্জনের টাকা ছাড়া মেয়েটি তার দেওয়া কিছুই নিবে না। এই বিষয়টি ওকে ভাবিয়ে তুলল। সে একটু নয় অনেকটাই অলস প্রকৃতির। সারাজীবন বাবার টাকায় চলেছে। অনুভব আজকাল অনেক বেশি ভাবতে শুরু করেছে। তার ভাবনার দৌড় পৌছে গেছে তিন কবুল অবধি। সায়রাকে কীভাবে মানাবে। কীভাবে ওর ভালোবাসা পাবে। এসব নিয়েই সারাক্ষণ চিন্তা করে। মিউজিকে হাত লাগায় না কত দিন হলো। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসা হয় না। হলেও অন্য মনস্ক থাকে। সব মিলিয়ে জীবনটাই যেন বদলে গেল। অনুভবের ঘোরটি ভাঙে সায়রার ছোঁয়ায়। ও দেখে সায়রা ওর হাতে বাহু দ্বারা ধাক্কিয়ে বলছে,”আরে ধরো। আমার হাতে এত গুলো জিনিস।”

অনুভব চট করে ফুচকার প্লেট ধরে। সায়রা চোখ ছোট ছোট করে বলে,”তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?”

মুখে কিছু না বললেও অনুভবের মন বলছে আমি তোমার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম সায়রা। তুমি আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছ। আমাকে ভাবতে বসিয়েছ। আমি নিজেকেই চিনতে পারছি না সায়রা। কি থেকে কি হয়ে গেল। এই আমি যে বড়ো অচেনা।

এত এত শপিং করে এনেছে সায়রা। অথচ আমিরার মুখ শুকিয়ে আছে। ও ব্যাগ গুলো কাবাডে তুলে দিয়ে বলল,”কী রে। কী হয়েছে?”

আমিরা ঝড়ের মতন এসে সায়রার বুকে পড়ল। কাঁদতে লাগল।

“আমিরা, কী হয়েছে সোনা? কাঁদছিস কেন?”

“মিমি, আমি যাব না। আমি যাব না মিমি।”

সায়রা বুঝতে পারল না। আমিরার পিঠে হাত রেখে বলল‍,”কোথায় যাবি না? কাঁদছিস কেন?”

আমিরার বলার পূর্বেই ঘরে প্রবেশ করল জুথি। হাতে কাগজ পত্র। সায়রা আমিরাকে বুক থেকে সরিয়ে বলল,”ভাবি, ও কাঁদছে কেন?”

“এই যে দেখ।”

কাগজ হাতে নিল সায়রা। তারপর দেখতে লাগল। পুরোটা পড়ে ও রাগে গজগজ করে বলল,”শ য় তা ন একটা।”

“আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে।”

“যা ইচ্ছে করুক। আমিরা কোথাও যাবে না।”

জুথি চুপ। সায়রা আমিরাকে দু হাতে আগলে নিয়ে বলল,”মিমি থাকতে তোর কোনো ভয় নেই।”

মুখে এ কথা বললেও আসলেই সায়রা চিন্তিত হলো। বাহাদুর এত দিন চুপ ছিল। সায়রা তাই ভুলেই বসেছিল বিষয়টা। এখন আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। মামলা করেছে। তাদের মতে বাচ্চার ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে। আরো কত কী লেখা আছে। সায়রা হতাশ, কিছুটা চিন্তিত। মামলা লড়তে গেলেও টাকার প্রয়োজন। তারা গরিব নয়। তবে এমন পরিস্থিতি ও নেই যে দু হাতে খরচ করবে। সব মিলিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ল ও। ওর ঘুম হারিয়ে গেল। আমিরা সবে শুয়েছে। এত সময় ভয়ে কাঁপছিল। মেয়েটির মুখশ্রীর দিকে চাইলেই সায়রার হৃদয় লাফিয়ে ওঠে। সময়ের সাথে সাথে বাচ্চাটি বড়ো হচ্ছে। কত সমস্যা রয়েছে। সায়রার বুকের ভেতর থেকে তপ্ততা নেমে আসে। সে খুব করে অনুভব করে মা হওয়া সহজ নয়। মোটেও সহজ নয়।

পরীক্ষা যেহেতু শেষ। হাতে সময় ও আছে বেশ। সায়রা ঠিক করল সে টিউশনি বাড়িয়ে দিব। এখন তো হাতে অনেক সময়। এতে বাড়তি রোজগার হবে। মামলা লড়তে পারবে। কিছু সেভিং ও হবে। সব মিলিয়ে সে টিউশনি খুঁজতে বের হলো। মাথার ওপর সূর্য ওঠেছে। রোদের তপ্ততা অনেক বেশি। সায়রা রিকশা নিল। হুড তুলে দিল। তবু রোদ যেন শরীরের সমস্ত শক্তি নিয়ে নিচ্ছে। তার ওপর লম্বা জ্যাম। সায়রা হতাশ হয়ে বসে রইল। সহসাই চোখ গেল পাশের একটি গাড়িতে। সেখানে একটি সুন্দর মেয়ে বসে। এক পলকেই চিনে ফেলল সায়রা। মেয়েটি নম্রতা। সাঈদের স্ত্রী। ও শুকনো ঢোক গিলল। সেকেন্ড কয়েক বাদে নম্রতা মাথাটা নিচু করল। সম্ভবত পায়ের কাছে কিছু একটা পড়ে গেছে। সেটা ই তুলে নিচ্ছে। সে সময়েই দেখা মিলল সাঈদের। ছেলেটাকে দেখে সায়রার সমস্ত শরীর কেঁপে ওঠল। মন মস্তিষ্ক যন্ত্রণা এসে ছুঁয়ে গেল। মানুষ যা দেখতে চায় না, সেটাই বার বার চোখে আসে। এটাই জীবন। সুখের থেকে দুঃখ বেশি।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-১৭

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৭)

সায়রা তিনদিন অসুস্থ হয়ে বাসায় ছিল। পড়াতে যেতে পারে নি। তারপর টানা তিনদিন আহনাফকে পড়িয়ে গিয়েছে। এর মাঝে অনুভবের সাথে দেখা হয় নি। ফোন নাম্বার ও নেই যে কল করবে। ছেলেটার টাকা ফেরত দিতে হবে। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ। সায়রা একটু মন খারাপ করেই বের হলো। তারপর রিকশা নিল। আজকে শাড়ি পরার কথা থাকলেও সে শাড়ি পরে নি। শরীরে নিচ্ছিল না। তবে বন্ধুদের জন্য বের হতে হচ্ছে। ও সোজা সাহবাগ গিয়ে নামল। সেখানে ফুলের রাজ্য বসেছে। শয়ে শয়ে ফুল রাখা। কী যে সুন্দর লাগছে। ও বেছে একটা গোলাপ নিল। সেটা কানের পিঠে লাগিয়ে হাঁটা লাগাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। বন্ধুদের জন্যই বই মেলায় আসতে হয়েছে তাকে। যদিও ইচ্ছে ছিল না। মেলার গেটে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল অর্পা আর সোনালী। ওদের দুজনের সাথে উষ্ণ আলিঙ্গন হলো।

“শরীর ঠিক আছে এখন?”

অর্পার প্রশ্নে মলিন হেসে নিল সায়রা। সোনালী আর অর্পা দুজনেই সাঈদের ব্যাপারে অবগত। মনের ভেতর অনেক কথা জমে থাকলেও ওরা বলতে চায় না। কারণ মেয়েটি নিজেকে সামলে নেওয়ার প্রয়াস করছে। যদি সাঈদের কথা ওঠে তবে আবার ভে ঙে যাবে।

পুরো মেলা ঘুরে ও সায়রা কোনো বই কিনল না। সে বই পছন্দ করে। তবে তার এখন সংকট চলছে। অনেক বুঝে চলতে হচ্ছে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে বইটা কিনল না। অথচ তার খুব ইচ্ছা ছিল একটা বই কেনার। কিনতে গিয়েও সেটা রেখে দিল। মনে হলো টাকাটা রাখা প্রয়োজন।

অনুভব আর তার বন্ধুরাও মেলায় ঘুরতে এসেছে। অনুভব বই পড়ুয়া নয়। সে গানের মানুষ। গান ভালোবাসে। সে এমনিতেই এসেছিল। তখনই সায়রাকে দেখতে পায়। মেয়েটি পছন্দ করা বইটি রেখে দিয়েছে সেটা বুঝতে পারে। তাই সে চট করে বইটা কিনে নেয়। ওর বন্ধু’রা ভীষণ অবাক হয়ে বলে।

“কী রে? তুই আর বই!”

“একজন কে দিব।”

এ কথা বলেই লম্বা কদম ফেলে অনুভব। সায়রার বান্ধবী’রা অন্য স্টলের সামনে গিয়ে বই কিনছে। ও একটু দূরে দাঁড়িয়ে। কারণ স্টলের সামনে গেলেই বইয়ের প্রতি ঝোঁক হবে। কিনতে ইচ্ছা হবে।

“সায়রা।”

অনুভবের কণ্ঠটা আজকাল অনেক বেশি পরিচিত হয়ে গেছে। মুহূর্তেই চিনে নিল ও। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল লম্বা দেহের চিকন ছেলেটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে।

“অনুভব, তোমাকেই খুঁজেছিলাম এ কদিন।”

“আমাকে?”

“হ্যাঁ। তোমার টাকাটা।”

এ কথা বলেই সায়রা নিজের ব্যাগ খুলতে থাকে। সেখান থেকে টাকা বের করে নিয়ে বাড়িয়ে দেয়।

“তোমার টাকাটা।”

“দরকার নেই।”

“এটা কেমন কথা? নেও। আমি তোমার থেকে ধার নিয়েছি।”

কথাটি বলেই অনুভবের হাতে টাকাটা গুজে দিল সায়রা। এতে দুজনের হাতের দূরত্ব নেমে গেল। স্পর্শ লাগল। অনুভবের মনে হলো তার ভেতরে ঝড় ওঠে গেছে। অবাধ্য সব ইচ্ছা হচ্ছে। সামনের মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরার লোভ হচ্ছে। তবে সে এমনটি করতে পারে না। আর পারে না বিধায় তার শরীরের সমস্ত লোম জেগে ওঠে। শিরশির অনুভূতি হয়। সায়রা হাত সরিয়ে নিতেই অনুভবের ধ্যান ফিরে। ও এক সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বাভাবিক হয়। তারপর হাতে থাকা ব্যাগটা বাড়িয়ে দেয়।

“কী?”

“দেখো।”

সায়রা ভ্রু কুঞ্চিত করে থেকে তারপর ব্যাগটা নেয়। খুলে দেখে বই। একটু আগেই “প্রেমানল” বইটা সে দেখে এসেছিল। পছন্দ হয়েছিল। অথচ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিতে পারে নি। সায়রা চেয়ে থাকে। অনুভব মৃদু সুরে বলল‍,”তোমার জন্য।”

সায়রা তৎক্ষণাৎ উত্তর দেয়,”আমি এটা নিতে পারব না অনুভব।”

“কেন? সমস্যা কী?”

“অনেক সমস্যা।”

আসলে সায়রা চায় না কোনো উপহার নিতে। এতে ঋণের বোঝা বাড়বে। অনুভব জোর করতে লাগল। সায়রা এতে ধৈর্যহীন হলো। উপহার যেন না নিতে হয় তাই বুদ্ধি করে বলল,”অনুভব এটা আমি নিতে পারব না। এই কারণে নিতে পারব না কারণ টাকাটা তোমার বাবার। আমার মনে হয় উপহার দিতে হয় নিজের উপার্জনের টাকায়।”

কথাটা অতো ভেবে চিন্তে বলে নি সায়রা। তবে অনুভবের খুব লেগে যায়। পৃথিবী উল্টে গেলেও সে বইটা আজ দেবেই।

“ঠিক আছে। তুমি আমায় ত্রিশ মিনিট সময় দাও।”

এ কথা বলেই অনুভব এগিয়ে যায়। একটা ছেলে ফুল বিক্রি করছিল। প্রতি পিস ত্রিশ টাকা। অনুভব সেখান থেকে বিশটা ফুল কিনে নেয় পাঁচশ টাকা দিয়ে। এক সঙ্গে এত গুলো কেনায় ২৫ টাকা করে দিয়েছে তাকে। সায়রা অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। এই ছেলে করছে টা কী?

তারপরের ঘটনা সায়রাকে আরো বেশি অবাক করে। অনুভব ফুল গুলো নিয়ে বিভিন্ন স্টলে যায় এবং অভিনব উপায়ে লেখক লেখিকাদের কাছে পঞ্চাশ টাকা করে ফুল বিক্রি করতে থাকে। এতে চারপাশে ভীড় ও জমে যায়। ভিডিও করছে অনেকে। সায়রার মনে হলো সে মাথা ঘুরিয়ে পড়বে। এ ছেলে নিশ্চিত পাগল!

ত্রিশ মিনিট পর সব গুলো ফুল বিক্রি হয়ে যায়। পাঁচশ টাকার ফুল এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। অথার্ৎ পাঁচশ টাকা লাভ হয়েছে। বই মূল্য তিনশ চল্লিশ টাকা। বাকি থাকে থাকে একশ ষাট টাকা। সেই টাকা দিয়ে অনুভব ফুল কিনে আনে। সবটা ত্রিশ মিনিটে ঘটে যায়। সায়রা শুধু চেয়ে থাকে। সায়রার বান্ধবী’রা তখনো বই কিনে ফেরে নি। অনুভব কিছুটা ক্লান্ত। ও ফুল আর বইটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”আমার নিজের উপার্জনের টাকায় কেনা। এবার নিশ্চয়ই কোনো অসুবিধা নেই?”

সায়রা বাড়ি ফিরে এসেও নিজেকে ঠিক করতে পারছে না। অনুভবের এমন আচরণ ওকে বিস্মিত করেছে। ছেলেটা নিশ্চয়ই পাগল। না হলে এমনটা কেন করবে? ও ফুল আর বই নিয়ে ওমনি বসে রইল। ড্রেস চেঞ্জ ও করল না। এভাবে কিছু সময় বসে থেকে ফুল গুলো রাখল টেবিলের ওপর। তারপর বসল বইটা নিয়ে। বইটা স্পর্শ করতেই নিজের অতীতের কথা স্মরণ হলো। প্রেমানল, যার অর্থ ভালোবাসার আগুন। তার জীবনটাও অনলে পু ড়ে গেল। কোথায় হারাল ভালোবাসা?

এক দমে বইটা পড়ে শেষ করেছে সায়রা। এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আজান পড়েছে। ও দ্রুত গিয়ে অজু করে নামাজ পড়ে নিল। তারপর গেল গোসলে। সারাদিনের ক্লান্তিটা হাওয়াই মিঠাই এর মতন মিলিয়ে গেল যেন। ভেজা চুল গুলো মুছে নিতে নিতে সায়রা ফোন অন করল। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেতেই অনেক নোটিফিকেশন এল। তারপর একটি নোটিফিকেশন এমন যে অনুভব এহমাদ আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে। অনুভব নামটা দেখেই সায়রা অ্যাকসেপ্ট করে নিল। প্রোফাইলে গিয়ে দু একটা ছবি দেখল। তারপর ভাবল ছেলেটা পাগল। নতুবা মেলায় ওমনটা করত না। কোনো সাধারণ মানুষ ওমন পাগলামি করতেই পারে না।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-১৬

0

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৬)

কক্সবাজার থেকে বাসায় ফেরার পর, সায়রার মনে হলো মাথা ফেটে যাচ্ছে। তীব্র ব্যথায় ও কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। আমিরা ঘরে প্রবেশ করে বলল,”মিমি, কী হয়েছে?”

“শরীর খারাপ লাগছে খুব।”

“মামি কে ডেকে দিব?”

“না। তুই ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে সোনা। আমি একটু ঘুমাই। খুব দরকার না হলে ডাক দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”

এই যে মেয়েটি ঘুমাল, তার ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার কিছু সময় পর। ওঠে দেখল বাইরে থেকে মৃদু চিৎকার শোনা যাচ্ছে। ও চটপট ওঠে পড়ল। বেরিয়ে দেখল সোফায় আমিরার বাবা বসে আছে। সায়রার ভ্রু কুঞ্চিত হলো। ও সরাসরি বলল,”কী সমস্যা? এ বাড়িতে কেন এসেছেন?”

বাহাদুর শুরুতেই রাগ কিংবা উচ্চবাক্য করল না। বরং দর‍দ দেখিয়ে বলল,”কেমন আছ?”

সায়রা তার কোনো বাক্যের তোয়াক্কা করল না। জুথির দিকে তাকাল। ইশারায় জুথি তাকে কিছু বোঝাল। সেটা বুঝে নিয়ে সায়রা বলল,”দেখুন বাহাদুর ভাই, আপনার সাথে আমাদের সমস্ত সম্পর্ক শেষ। আপার মৃ ত্যু র পর আপনি ও আমাদের জন্য মৃ ত হয়ে গেছেন।”

বাহাদুরের আম্মা ও বসা ছিলেন। তিনি সায়রার কথার প্রতিবাদ করে ওঠলেন।

“এই মেয়ে। ভদ্র ভাবে কথা বলো। আমার ছেলে এখনো জীবিত। তাকে তুমি মে রে ফেলছো!”

সায়রা কথাটি পুরোপুরি উপেক্ষা করে বলল,”আপনাদের সাথে কোনো রকম কথা বলার ইচ্ছা নেই। আপনারা যেতে পারেন।”

বাহাদুর এবার জবাব দিল। “আমরা এখানে থাকতে আসি নি সায়রাহ আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যেতে এসেছি।”

সায়রা সোজাসাপ্টা বলল,”আমিরা কোথাও যাচ্ছে না।”

“কেন যাবে না? আমার মেয়ে আমি নিয়ে যাব।”

“আচ্ছা? এতদিন এই দর‍দ কোথায় ছিল? ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে যখন আপনার আম্মা বের করে দিলেন আপনি কেন নির্বাক ছিলেন?”

বাহাদুর জবাব দিতে পারল না। পাশ থেকে ওর আম্মা জবাব দিল।

“অনেক কথা হয়েছে। আমরা আমিরাকে নিয়ে যাব। এটা আমাদের অধিকার।”

“আমিরা যাবে না।”

“আমরা নিয়েই যাব।”

এ কথা বলেই তিনি ওঠে দাঁড়ালেন। সায়রা মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল।

“আন্টি আপনি আমাকে অসভ্য হতে বাধ্য করবেন না।”

“বাহাদুর, মেয়ে নিয়ে চল।”

আমিরা ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। সে থরথর করে কাঁপছে।

“আমিরা চলো।”

আমিরা এক পা পিছিয়ে গেল। বাহাদুর ভ্রু কুঞ্চিত করলেন। সায়রা হুংকার দিয়ে ওঠল।

“বাহাদুর ভাই, আপনাকে সাবধান করছি। আমিরাকে স্পর্শ ও করবেন না।”

“তুমি বলে দিবে আমি কি করব আর না করব?”

“আমিরার বিষয় হলে অবশ্যই আমিই বলে দিব।”

তর্ক চলতে লাগল। বাহাদুরের আম্মা আমিরার কাছাকাছি যেতে নিলেই আমিরা ছুটে এসে জুথির পাশে দাঁড়াল। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। মারুফ এখনো ফিরে নি। ভয়ে জুথির চোখ মুখ র ক্ত হীন হয়ে যাচ্ছে।

আমিরাকে পালাতে দেখে বাহাদুরে আম্মা চেচামেচি করতে লাগলেন।

“আমিরা এদিকে আয়। আয় বলছি।”

আমিরা ভয়ে কাঁপছে। ওকে দু হাতে জাপটে ধরল জুথি।

“আন্টি আপনি জোর কেন করছেন। ও তো যাবে না।”

“কেন যাবে না? ওকে যেতেই হবে।”

এবার সায়রা জবাব দিল,”সেটি নিশ্চয়ই আপনার জানা। আপার মৃ ত্যু শোক যাওয়ার আগেই তো ছেলের জন্য ঘরে নতুন বউ এনেছেন। সেখানে কেন যাবে ও? এই ভালো মানুষি কেন দেখাচ্ছেন আমাদের জানা আছে।”

“এই অসভ্য মেয়ে। তুমি কোনো কথা বলবে না। অনেক বেশি বেয়াদব।”

সায়রা এ কথার পৃষ্ঠে কিছু না বলে বাহাদুর কে বলল,”দয়া করে বাসা থেকে বের হোন। না হলে অন্য অপশন বেছে নিতে বাধ্য হবো।”

তার কথা শেষ হতে না হতে বাহাদুরের আম্মা এসে আমিরার হাত খপ করে ধরে ফেললেন। তার শরীরের শক্তির সাথে পেরে ওঠল না জুথি। সায়রা ছুটে গিয়ে বাঁধা দিল।

“আন্টি আপনি অনেক বাড়াবাড়ি করছেন। ওর হাত ছাড়েন।”

এ কথা বলেই আমিরার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল সায়রা। তাদের এই দ্বন্দ্বে যোগ দিল বাহাদুর ও। এক পর্যায়ে ধাক্কা লাগল সায়রার বাহুতে। ও ছিটকে পড়ল অদূরে। সে সময়েই বাড়িতে প্রবেশ করল মারুফ। এই সব দেখে ও চেচিয়ে ওঠল।

“কী হচ্ছে কী এসব।”

সায়রা হাতে ব্যথা পেয়েছে। তবু ও ওঠে দাঁড়াল। ব্যথাকে পাত্তা না দিয়ে বলল,”আমিরাকে নিতে এসেছে ভাইয়া। এখন ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে। আসল উদ্দেশ্য তো অন্য জায়গায়।”

বাহাদুর আর তার মায়ের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে ওঠল। মারুফের ফেরার পর পর ই ফিরল জুঁই আর মাহিম। এত গুলো মানুষের সাথে কিছু সময় তর্ক চলল। তারপর বাহাদুর আর তার আম্মা চলে গেলেন। তবে যাওয়ার পূর্বে বললেন তারা আইনি সহায়তা নিবে। দেখবে কী করে আমিরাকে এই বাড়িতে রাখে।

হাতের এক অংশ কে টে গেছে। র ক্ত দেখা যাচ্ছে। অথচ সেসবে ধ্যান নেই সায়রার। ওর চোখ ছলছল করছে। ও এসে কান্নারত আমিরাকে বুকে জড়িয়ে ধরল।

“কাঁদিছ না। আমরা আছি তো।”

আমিরার কান্না থামছে না। ও ভীষণ ভয় পেয়ে আছে। স্মরণ করছে বিগত দিনের কথা গুলো। মায়ের মৃ ত্যুর পরে দাদির অত্যা চার, বাবার অবহেলা। না খেয়ে থাকা। আরো কত কি। এসব আমিরার বুকের ভেতর ক্ষ ত সৃষ্টি করেছে। এই ক্ষ ত কখনো যাবে না।

ব্যথাটা নামল না দুদিনেও। বরং কাঁপিয়ে জ্বর এল। এই জ্বর নিয়েই আহনাফ কে পড়াতে এসেছিল সায়রা। লিফ্টের বাটনে ক্লিক করতে গিয়ে ওর মাথা ঘুরিয়ে গেল। সেই সময়েই ছাদ থেকে নামছিল অনুভব। মেয়েটিকে দু হাতে ধরে ফেলল ও।

“সায়রা, হায় আল্লাহ, তোমার শরীরে তো জ্বর।”

সায়রার চোখ মুখ অন্ধকার লাগছে। ও কিছু দেখতে পারছে না। অনুভব ওকে এক হাতে ধরে রেখে লিফ্টের বাটনে ক্লিক করল। কিছু সময় পর লিফ্ট খুলে গেল। ও সায়রাকে নিয়ে সোজা নিজের বাসায় এল। অনুভবের মা রূপবান দ্রুত পানি পট্টির ব্যবস্থা করলেন। অনুভব নিজে সেটা সায়রার কপালে লাগিয়ে দিচ্ছে। ওর চেহারায় চিন্তার ছাপ। রূপবান ছেলের অবস্থা লক্ষ্য করলেন। তিনি বুঝলেন ছেলের মন এখানে আটকে গেছে।

সায়রা একটু সুস্থ হয়েই লজ্জায় পড়ল। তা ও অনুভব তার পথের বন্ধু। খুব বেশি দিন তো কথা হয় নি। তার পরিবারের সাথে আগে কখনো দেখাও হয় নি। সব মিলিয়ে সে লজ্জিত। তাই দ্রুত চলে যেতে চাচ্ছে। তবে রূপবান না খেয়ে যেতে দিবেন না। লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছে। তাকে খেয়ে যেতেই হবে। অনুভব আর সায়রা দু প্রান্তে বসে খাচ্ছে। মেয়েটির মাথা নত করা। ও অল্প একটু খেয়ে ওঠে যেতে নিলেই অনুভব বাঁধা দিল।

“ভালো করে খাও।”

“খেলাম তো।”

“দেখলাম, কি খেয়েছ।”

“আমি এমনই খাই অনুভব।”

“আরেকটু খাও।”

জোর করে খাবার তুলে দিল অনুভব। সায়রা হতাশ হয়ে চেয়ে রইল।

সায়রাকে বিদায় দিয়ে রূপবান ছেলেকে ডেকে নিলেন। অনুভব বরাবরের মতই গা ছাড়া ভাব নিয়ে উপস্থিত হলো।

“অনুভব, মেয়েটার কথা আগে কেন বলো নি?”

“কী বলব মা?”

“তাকে পছন্দ করো।”

“না। তেমন কিছু না।”

“আমার তো তাই মনে হলো। যাই হোক, তোমার উচিত বিজনেসে জয়েন করা।”

“আমার ভালো লাগে না ওসব।”

“তবে, সারা জীবন এভাবেই থাকবে?”

“সমস্যা কী থাকলে?”

ছেলের কথা একদমই পছন্দ হলো না রূপবানের। এক মাত্র সন্তান বিধায় একটু বেশিই আদরে বড়ো করেছেন। তবে এমন অলস হলে তো ভবিষ্যতের জন্য সমস্যা। তিনি ছেলের উদাসীনতা চেয়ে দেখতে লাগলেন। এই ছেলে বুঝতে পারছে না তার ভবিষ্যত কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি