মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২৫

0
71

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২৫)

পিকনিকের লোকসংখ্যা অনুভব, সায়রা,অর্পা বাদে আরো ছয় জন। এর মধ্যে দুজন মেয়ে। ওরা সবাই মিলে একটা মাইক্রোবাসে ওঠেছে। গল্প হচ্ছে। কেউ কেউ গান ও গাইছে। অর্পা তার বয়ফ্রেন্ডকে কল করে সকলকে একবার দেখিয়ে নিল। তারপর আবার কথায় ডুবল। সায়রা বিষয়টা দেখে হাসল। সাঈদ আর তার সম্পর্কটা ভীষণ ম্যাচিউর ছিল। পাগলামি ছিল না কোনো। আর না কোনো সন্দেহ ছিল। অথচ, ভাগ্য তাদের আলাদা করল। ব্যাগে করে সকলের জন্য জুস আনা হয়েছে। সায়রার মনোযোগ ছিল না। অর্পা ধাক্কিয়ে ধ্যান ফেরাল।

“হ্যাঁ?”

“জুস নে।”

“ও আচ্ছা।”

সায়রা জুস তুলে নিল। সবাই একসাথে হাত রেখে জুস সহ ভিডিও করা হলো। ওদের পিকনিক হবে শহরের একদম শেষে। এই টুকরো টুকরো স্মৃতি নিয়ে বড়ো একটা ভিডিও করা হবে। অনুভব সবার ফ্রন্টে বসেছে। সায়রাকে দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। ও বার বার অর্পার মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে অর্পা ফোনে মশগুল।

অনেকটা সময় যাওয়ার পর অর্পার মনোযোগ পেল অনুভব। ইশারায় বোঝাল জায়গা বদল করলে। প্রথমে নাকোচ করলেও শেষমেশ রাজি হলো। কারণ হিসেবে জানাল সবার কথায় বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে ওর। অনুভব সায়রার পাশে বসে বলল,”তোমার মন খারাপ?”

“না।”

“চুপচাপ কেন?”

“এমনিই দেখছি।”

“ঠিক আছে। তুমি কোন রান্নাটা ভালো পারো? চিকেন নাকি ফিস?”

“সবই ভালো পারি।”

“গ্রেট, তাহলে তো কাজ সহজ হয়ে গেল।”

ওদের পৌছাতে প‍ৌছাতে দুপুর গড়িয়ে এল। একদল তাঁবু টানানোতে গেল। আরেক দল রান্নার কাজ। মেন্যুতে রয়েছে সাদা পোলাও, রোস্ট, চিংড়ি আর গোরুর মাংস ভুনা। প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র নামাচ্ছে অনুভব। সায়রা ওর সাথে সাহায্য করতে করতে বলল,”তোমাকে দেখলে বোঝা যায় না। তুমি অনেক শক্তিশালী।”

“এর জন্যই বলে, ডোন্ট জাজ আ বুক, ইটস কভার।”

“হুম। তবে এটা সত্য তোমার স্বাস্থ্য ঠিক করা দরকার।”

“সত্যিই?”

“হ্যাঁ।”

সব কিছু নামিয়ে নেওয়ার পর এবার আগুন জ্বালানোর পালা। সায়রা আগুন ধরাতে যেতে চাইলে অনুভব বাঁধা দিল।

“তুমি রান্নায় হেল্প করো। আমি যাচ্ছি।”

অনুভব আগুন ধরাতে গেল। অর্পা তাঁবু টানানোর দায়িত্বে ছিল। তার কাজ শেষ। তাই বাকিদের সাথে রান্নায় হাত লাগাল। সব আগে থেকেই প্রসেসিং করা। শুধু পরিমাণ মতো নিয়ে রান্নাটা করতে হবে। অনুভব আগুন জ্বালিয়েছে। তবে তার অবস্থা কাহিল। কিছুতেই আগুন জ্বলছিল না। ফু দিয়ে জ্বালাতে জ্বালাতে শেষমেশ ধোঁয়া পেটে গেছে তার। কাশতে কাশতে চোখ লাল হয়ে গেছে। ওকে পানি এগিয়ে দিল সায়রা।

“কী যে করো। আগুন জ্বলছিল না, বাকিদের ডেকে নিতে। কেরোসিন দিয়ে যেত কেউ।”

অনুভবের খেয়াল হলো কেরোসিনের কথা। সে একদম ভুলে গেছে। অনুভবের চোখ লাল হয়ে গেছে। অর্পা এসে কিছু কাগজ দিয়ে পাখার মতন বানিয়ে বাতাস করতে লাগল। অনুভব সেটা ওর হাত থেকে খপ করে নিয়ে বলল,”বাহ দারুণ তো। কীভাবে বানালে?”

“আগে কখনো দেখো নি?”

“না।”

অর্পা প্রসেসিং টা দেখিয়ে দিল। সায়রা অনুভবের মেয়ে বন্ধুদের সাথে মিলে রান্নায় হাত লাগিয়েছে। অনুভব ইশারায় নিচু হতে বলল অর্পাকে। অর্পা নিচু হতেই অনুভব বলল,”তোমার বান্ধবীর প্রিয় ফুল কী?”

“কেন? প্রপোজ করবে নাকি?”

“বলো না।”

“বেলি।”

“বেলি,ওয়েট। আসছি আমি।”

অনুভব চলে গেল। অর্পা সে দিকে তাকিয়ে হাসল। সত্যিকার অর্থে ও চায় সায়রা নিজের জীবন নিয়ে এগিয়ে যাক। অনুভব ছেলেটা খারাপ নয়। অর্পা মন থেকে চাইল সায়রার জীবনটা সুন্দর হয়ে ওঠুক। ভালো থাকুক মেয়েটি।

রান্না প্রায় শেষ হতে চলল। এদিকে অনুভবের ফেরার নাম নেই। ওর বন্ধু’রা কল করে নিশ্চিত হলো ছেলেটা এসেই পড়েছে। কারণ হিসেবে দেখাল, সকলের জন্য এখানকার বিখ্যাত মিষ্টি আনতে গিয়েছিল। তবে অর্পা জানে অনুভব বেলি ফুল আনতে গিয়েছিল। সায়রা আগুনের পাশে বসে ক্লান্ত হয়ে আছে। অনুভব ওকে সরিয়ে দিয়ে বলল,”যাও, তুমি রেস্ট করো।”

সায়রা ওঠে এল। অর্পা তাঁবুর ভেতর এসে সাজগোজ করছে। একটু পরেই খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা হবে। তখন আবার ভিডিও ফুটেজ নেওয়া হবে।

বিকেল চারটায় ওদের রান্না শেষ হলো। সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে বসল এক সাথে। খাবার খাওয়া হলো। ভিডিও নেওয়া হলো। সবাই বেশ হৈ হৈ করল। এখন প্রায় সন্ধ্যা হতে চলেছে। ওরা ঠিক করল কোনো এক খেলা খেলবে। এই এলাকার বিশেষ এক খেলা জুতাচোর। ছেলে মেয়ে বিভক্ত হয়ে খেলল ওরা। অনুভব ইচ্ছে করে সায়রাকে সুযোগ দিয়েছে। তাই মেয়েদের দল জিতে গেল। সায়রার ভীষণ আনন্দ হলো। শেষ জুতাটা নিয়ে নিজের অবস্থানে ফিরে লাফিয়ে ওঠল ও। ওর এই আনন্দ ভরা মুখটা অনুভবের বুকের ভেতর এসে লাগল। মেয়েটির প্রতি এত বেশি আকর্ষণ কাজ করছে ওর।

সন্ধ্যার চা কফির আয়োজন হয়েছে। সেই সাথে কাবাব। সমস্তটার ব্যবস্তা করে ওরা চা কফি হাতে নিয়ে গোল হয়ে বসল। স্পিন দ্য বোতল খেলা হবে। এটা যে কোনো পিকনিকের জন্য আকর্ষণীয় একটা খেলা। ওরা সবাই একে একে ঘুরিয়ে খেলতে লাগল। কেউ ট্রুথ নিল কেউ ডেয়ার। এমন করে সায়রার দিকেও বোতল এল। ও ট্রুথ নিল। ওর কাছে প্রশ্ন এল জীবনে কাউকে ভালোবেসেছে কী না। এই প্রশ্নে থেমে গেল ও। অনুভব সবাইকে বলল,”অন্য প্রশ্ন কর।”

সবাই অন্য প্রশ্ন করতে রাজি হলেও সায়রা হাসি মুখে বলল,”যদি বলা হয় জীবনে কাউকে ভালোবেসেছি কী না,তবে এই তালিকায় অনেক মানুষ স্থান পাবে। অনেক ক্যাটাগরিতে। তবে বিশেষ ক্যাটাগরির কথা বললে তালিকায় একজন স্থান পাবে। কিন্তু সে আমার নয়।”

পরিবেশ থম ধরে গেল। সবাই বুঝল সায়রার কণ্ঠে বেদনা। অনুভব দেখল মেয়েটির চোখ ছলছল করছে।

“সবাই চুপ করে গেলে কেন? খেলো আবার।”

আবার বোতল ঘুরানো হলো। তবে খেলার দম ফিরল না। সায়রার কান্না পাচ্ছে। ও সবাইকে বলে ওঠে আড়ালে এল। ওর পেছন পেছন এল অনুভব। পকেটে তার বেলি ফুলের মালা। অনুভব সেটা হাত তুলে নিয়ে বলল,”বেলি ফুল তোমার কেমন লাগে সায়রা।”

“হুম সুন্দর।”

সায়রা ততক্ষণে চোখ মুছে নিল। অনুভব হাত বাড়িয়ে দিয়ে ফুলের মালাসহ। মৃদু মিষ্টি এক ঘ্রাণ নাকে এসে লাগল।

“দুপুরের দিকে এনেছিলাম। শুকিয়ে গেছে।”

শুকিয়ে যাওয়া বেলি ফুলের মালাই তুলে নিল সায়রা। অনুভব শুকনো ঢোক গিলল। মনে মনে চেষ্টা করল নিজের ভালোবাসার কথা জানান দিবে কী না। তবে বিবেক তাকে বাঁধা দিল। মেয়েটি আজ কষ্টের স্মৃতি অনুভব করেছে। তাকে আর কোনো চিন্তা না দেওয়াই ভালো।

অনুভবের মেজাজ আসলে গরম। সে এত কষ্ট করে প্ল্যান করল আজ ভালোবাসার কথাটা জানাবে। অথচ ওর বন্ধু’রা ফালতু এক প্রশ্ন করে সব ভেস্তে দিল। ওর ভালো লাগছে না। ও ফ্রন্টে এসে বসেছে। পেছনে সবাই মজা করছে। সবার সাথে সায়রা ও যোগ দিয়েছে। নিজের দুঃখ ভোলার চেষ্টা করছে। অনেক সময় ধরে ফোন বেজে চলেছে। অনুভব এবার বিরক্ত হয়েই রিসিভ করল।

“স্যার, আপনি কোথায়?”

সায়েমের কণ্ঠ। সকালে সে অদ্ভুত এক কাজ করেছে। বাবা সায়েমকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফোর্স করেছিল। সে বাবার সামনে হু হা করলেও সায়েমকে সাথে নিয়ে আসে নি। বরং পথে একটা গ্রামে রেখে এসেছে।

“তুমি কোথায় আছ?”

“আপনি যেখানে রেখে গেছেন সেখানেই আছি স্যার।”

অনুভবের মেজাজ এমনিতেই গরম। তার ওপর এই বিরক্তিকর সায়েম। অনুভব দেখল তারা এখনো সায়েমের স্থান পেরিয়ে আসে নি। যাক, একদিক থেকে ভালো হলো। ছেলেটাকে পথে তুলে নেওয়া যাবে।

চলবে…
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে