মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২১

0
77

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২১)

“তুমি ইন একটিভ কেন?”

সায়রা পড়ছিল। সে সময়েই কলটা আসে। সে না তাকিয়েই রিসিভ করেছে। অনুভবের কণ্ঠটা শুনে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে রাখল।

“কী?”

“সোশ্যাল মিডিয়ায় তোমায় পাওয়া যায় না কেন?”

“আমার ভালো লাগে না। আমি অতো সময় দেই না সোশ্যাল মিডিয়ায়।”

“তাহলে কীসে সময় দেও?”

“আমার অন্য অনেক কাজ থাকে অনুভব।”

“সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। কী করো এত?”

সায়রা এবার জবাব দিতে গিয়ে থমকে গেল। অনুভব তাকে চার্জ করছে! ছেলেটা অধিকার দেখাচ্ছে! কিন্তু তাদের মধ্যে এমন বন্ধুত্ব কী আছে যাতে করে এতটা অধিকার ফলানো যায়। ওর ভাবনার মাঝেই অনুভব পুনরায় বলে ওঠল।

“এখন থেকে দিনে একবার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে যাবে। আমি টেক্সট দিব, রিপ্লাই করবে।”

কী আশ্চর্য! সায়রা কল রেখে অবাক হয়ে রইল। এই ফিনফিনে পাতলা ছেলেটা কী বোঝাতে চাইল তাকে?

সায়রার কোনো নিয়মনীতি নেই। ও কখন খায়, কখন পড়ে কিছুর ই কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। জুথি পায়েস করেছে। সেটাই নিয়ে রাখল টেবিলে।

“সায়রা, শুনছিস?”

“বলো ভাবী।”

“বলছিলাম যে…..”

সায়রা বুঝল জুথি কিছু কথা বলতে অপ্রস্তুত বোধ করছে। ও বই রেখে ভাবীর মুখোমুখি বসল।

“বলে ফেলো ভাবী।”

“আসলে হয়েছে কী….”

“থামলে কেন?”

পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে বলল সায়রা। জুথি শুকনো ঢোক গিলে বলল,”আশেপাশের মানুষজন খুব খারাপ কথা বলছে।”

“কী বলছে?”

“বলছে, এত বড়ো মেয়ে অথচ বিয়ে করছে না। তার ওপর বোনের মেয়ে নিয়ে আদালতে দৌড়াচ্ছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য আছে।”

সায়রা এক চামচ পায়েস ওঠিয়ে মুখে তুলল। ভাঙা কণ্ঠে বলল,”ভাবী, চিনি এত বেশি কেন?”

“বেশি, কই দেখি।”

জুথি এক চামচ মুখে দিল। না, সব তো ঠিক ই আছে। সায়রা অন্য মনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। জুথি ওর পাশে দাঁড়াল।

“ভাবী, আমি জানি তারা আর কি কি বলেছে। এ ও জানি এই মানুষ গুলোই সাঈদের মায়ের কাছে আমার নামে খারাপ কথা রটাত। হয়তো এখনো রটায়। সেই জন্যই তিনি আমাকে দেখতে পারতেন না। কখনো চাইতে না আমি তার….”

সায়রা থেমে গেল। ওর গলা ধরে আসছে। জুথি বুঝল অনেক কষ্ট থেকে কথা গুলো বলেছে সায়রা। তবে সে যে সান্ত্বনা দিবে সেই বাক্য টুকুও ভেতর থেকে এল না।

আমিরার স্কুল আজ একটু দ্রুত ছুটি দিবে। তাই সায়রা ওকে আনতে গিয়েছিল। পথে দুজন হাওয়াই মিঠাই কিনল। সেটা খেতে খেতেই বাড়ির পথে আসছিল। তখনই ওকে শুনিয়ে এক মহিলা বললেন,”যাই বলো না কেন, আমার তো মনে হয় সমস্যা এদের সবার মাঝেই। বোনটার চরিত্রের দোষ তো সবাই দেখেছেই। এদের মতিগতি দেখলেও বোঝা যায় সমস্যা আছে। যেভাবে বোনের মেয়েকে নিয়ে মাতামাতি করছে। কখনো কি, দেখেছ মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি হয়। নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে। মেয়েটাকে নিতে এল বাবা-দাদি অথচ দিল না। মেয়ে মানুষ হয়ে আদালতে ছুটছে। এত সব কিছু কেন করছে, কোনো ধান্দা তো আছেই।”

সায়রা শুকনো ঢোক গিলল। সামলে নিল নিজেকে। এই মানুষ গুলোর মতন নিকৃষ্ট চিন্তার মানুষ সে আর কখনোই দেখে নি।

আমিরার জন্য খাবার বেড়ে নিয়ে নিজেও খাবার খেতে বসল সায়রা। জুথি ঘুমিয়েছিল। ঘুম থেকে ওঠে তার চোখ মুখ ফুলে গিয়েছে।

“আসছিস তোরা।”

“হ্যাঁ ভাবী। ঘুমিয়েছিলে?”

“হুম। বুয়া তো আজ আসল না রে।”

“বোধহয়, অসুস্থ।”

“কী জানি। আচ্ছা খাবার খাওয়া হলে আমাকে ডেকে দিস তো।”

“ডাকা লাগবে না। তুমি ঘুমাও। আমি সব পরিষ্কার করে নিব।”

“ঠিক আছে।”

জুথি পুনরায় ঘুমাতে গেল। রান্না করে শরীর ক্লান্ত ছিল। তাই সে ঘুমিয়েছিল। একটু ঘুমানোর পর শরীর আরো বেশি টানছে। আমিরা খেতে খেতে বলল,”মিমি, স্কুলে আমার এক ফ্রেন্ড হয়েছে। ওর জন্মদিন।”

আমিরার কথায় একটা সংকোচ দেখা যাচ্ছে। সায়রা হেসে বলল,”সংকোচ কেন করছিস? কবে জন্মদিন?”

“পরশু।”

“আচ্ছা। আমি উপহার কিনে আনব।”

আমিরা মাথা দোলাল শুধু। সে ধীরে ধীরে বড়ো হচ্ছে। সায়রার অবস্থা গুলোও বুঝতে পারে। তাই যে কোনো কিছু চাইতে লজ্জা হয়।

সায়রা সমস্ত কাজ গুছিয়ে রেখে মাহিম আর জুঁইকে বলে গেল খাবার খেয়ে নিতে। জুথির শরীরটা ভালো নেই। তাই তাকে আর ডাকা হয় নি। সন্ধ্যার কিছু পূর্বে বের হলো সায়রা। অর্পার সাথে দেখা করবে আজ। দুজনে একটা কফি শপে বসবে। টুকটাক আলোচনা আছে।

অর্পার আসতে লেট হচ্ছে। মেয়েটা জ্যামে আটকে গেছে। কল করে জানিয়েছে। বেশ কিছু সময় ধরে বসে আছে সায়রা। কিছু না নিলে খারাপ দেখায়। ওয়েটার ডেকে কফি অর্ডার করে নিল। খানিক বাদে কফি এল। একটা চুমুক দিয়েছে ওমনি ঝড়ের মতন হাজির হলো অনুভব। সায়রা চমকে তাকাল।

“তুমি!”

“তোমাকে দেখেই এলাম।”

অনুভবকে দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে। শরীরে অফিসের পোশাক। সায়রা প্রশ্ন না করে কফি কাপটা নিতে গেল। ওমনি ছো মেরে নিয়ে নিল অনুভব। কফি কাপে চুমুক বসাল। সায়রা প্রতিবাদ করে ওঠল,”এটা আমার এঁটো।”

অনুভবের হেলদোল নেই। সে আবার চুমুক বসিয়েছে। সায়রা ভ্রু কুঞ্চিত করে রইল।

“লো সুগার!”

“হুম, স্বাস্থ্য সচেতন আমি।”

অনুভব চোখ ঘুরিয়ে চাইল। দেখল সায়রা সত্যিই ফিট একটি মেয়ে। এদিকে সে রোগা পাতলা ছেলে। তাকে দেখলে মনে হবে শরীরে শক্তি নেই। যদিও কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। তবে স্বাস্থ্য’র প্রতি ভীষণ অনীহা তার।

অর্পা এসে গেছে। অনুভব টেবিলে মাথা এলিয়ে বসে ছিল। ইশারায় অর্পা বোঝাল ছেলেটা কে। সায়রা দম ফেলল।

“ও অনুভব, আমার বন্ধু। আর অনুভব, ও অর্পা, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”

অনুভব মাথা না ওঠিয়েই বলল,”হাই অর্পা।”

অর্পা যারপরনাই অবাক হলো। ব্যাগ রেখে পাশের চেয়ার টেনে বসল। সায়রা মেকি হাসি দিয়ে বলল,”ও একটু পাগল টাইপের।”

অনুভব কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে মাথা তুলল। চোখ দুটো ক্লান্তিতে নিভে গেছে। অর্পা ছেলেটার দিকে চেয়ে রইল। ভীষণ লম্বা। কমছে কম ছয় ফুট দুই! ওর মুখ হা হয়ে গেল। এ রকমের জিরাফ বাংলাদেশে খুব কম ই আছে। তার ওপর অধিক হ্যাংলা। দেখলেই মনে হয় বাতাসে উড়ে যাবে। অর্পা অনেক সময় ধরে অনুভবকে পর্যবেক্ষণ করল। তারপর মনে মনে আওড়াল ছেলেটা সুন্দর। শুধু স্বাস্থ্য সচেতন নয়।

অনুভব চেয়ার ছেড়ে ওঠে বলল‍,”তোমরা গল্প করো। আমি যাই। ভীষণ কাজ। বাই অর্পা।”

“বাই।”

অর্পা পেছন ঘুরে অনুভবের যাওয়া দেখল। তারপর বলল,”এই জিরাফটাকে পেলি কোথায়?”

“আহনাফদের প্রতিবেশি। ওখান থেকেই পরিচয়।”

“আচ্ছা, বাট ছেলেটা কিন্তু সুন্দর।”

সায়রা চোখ নাচিয়ে বলল,”তোর না বয়ফ্রেন্ড আছে।”

অর্পা মেকি হাসি দিয়ে বলল,”আমি ওকে সুন্দর বলেছি। বলেছি কি, যে ওকে পছন্দ করেছি?”

সায়রা হেসে ফেলল। অর্পা ও হাসল। তারপর পুনরায় কফি অর্ডার করা হলো। দুজনের অনেক দিন পর আড্ডা চলছে। দুই বান্ধবী নিজেদের ব্যস্ততায় একদমই সময় পায় না।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে