Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1562



বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৯

0

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_9

আমি চোখ গোল গোল করে একটু পর পর ওই মেয়েটা আর আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছি। হঠাৎ মেয়েটা আধিক্ষেতা করে আদনান ভাইকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য হাত তুলল। সেটা দেখে আমার চোখ ইয়া বড় বড় হয়ে গেল।
মেয়েটার হাবভাব বলে দিচ্ছে মেয়ে আদনান ভাইকে পছন্দ করে। আচ্ছা ভাইয়া ও কি করে।
আচ্ছা ওদের মাঝে কি প্রেমের সম্পর্ক আছে।
ভাবনার মাঝে খাচ্ছিলাম। আর বিপত্তি ঘটল খাবার গলায় আটকে গেল। আমি খুক খুক করে কেশে উঠলাম।
আমার কাশি দেখে ভাইয়া আমার দিকে তাকালো।
এই ভাবে কাশতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে দাঁড়িয়ে পানি দিলো।
পানি খেয়ে কাশি থামলো কিন্তু চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।‌ আমি পানি মুছলাম একহাতে ভাইয়া কর্কশ গলায় বললো,,,
” কোন ধ্যানে থাকিস খাবার গলায় আটকায় কিভাবে?”
আমি মাথা উঁচু করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে তাঁরপর আবার মাথা নিচু করে পিলেটের দিকে তাকায়।
ভাইয়া রেগে বলল,,” কি হলো উওর দিচ্ছিস না কেন?”
আমি বললাম,,” আমি কিছু ভাবছিলাম না। আমি তো তোমাদের দেখছি….
এইটুকু বলেই জ্বিভে কামড় দিলাম। কি বলে ফেললাম….
ভাইয়া ও তিথি মেয়েটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তিথী মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে খাবারে হাত দিলাম ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি না তাকাবো না ভাবছি‌।
ভাইয়া অবাক করা কন্ঠে বলল,,” কি বললি?”
আমি খাবার মুখে দিয়ে দিলাম তারপর তাকালাম মুখে হাসি ফুটিয়ে কথা বলার ট্রাই করলাম। কিন্তু আমি জানি এখন ভাইয়া আমাকে একটা ধমক দিয়ে বলবে,, ” ইডিয়েট খাবার মুখে দিয়ে অমন করছিস কেন? এখন কথা বলে আর ঝামেলা বাড়াতে হবে না।”
ভাইয়া গিয়ে বসে পরলো। আমি খেতে লাগলাম।

আদনান নিজের সিটে বসতেই তিথি বলল,,,
” বেশি ন্যাকা তোর বোন। এতো বড় মেয়ে তার আবার খাবার গলায় আটকায়।”
তিথির কথা শুনে আদনান রেগে ওর দিকে তাকালো,,
“কিরে আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
“দোলাকে নিয়ে বাজে কথা যেন তোর মুখে না শুনি।”
গম্ভীর হয়ে বলল আদনান। তিথি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,,” দোলাটা আবার কে?”
একটু জোরেই বলেছে কথাটা তিথি তাই আমি খাওয়ার সময় শুনতে পাই আর মুখে বিরিয়ানি নিয়ে তার দিকে তাকায়।
আমার নাম নিলো কেন মেয়েটা আমাকে নিয়ে কি কথা বলছ?
মেয়েটা আদনান এর দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে।
আমি খাবার শেষ করে বললাম,,, ” আমার না দোলা কেন কি হয়েছে?”
আমার কথা শুনে তিথি ও সাথে আদনান ভাই আমার দিকে তাকালো।
তিথি কিছু বলবে আদনান বলল,,,” কিছু না। তুই চুপচাপ খা। কথা না বলে।”
আমি তাকিয়ে র‌ইলাম তাও আমাকে নিয়ে কি বলছে জানতে কিন্তু আর কিছু বলছে না‌। তাই খাওয়ায় মন দিলাম।

তিথি আদনান কে বলল,, ওই মেয়েটার নাম দোলা।
কেমন করে যেন দোলার দিকে তাকিয়ে বলল। আদনান কিছু বলছেনা।
তিথি এই সব কথা বাদ দিয়ে বলল,,” তুই আমার হাতে খেলি না কেন আদনান।”
আদনান শক্ত মুখ করে বলল,,” তুই ভালো করেই জানিস আমার এসব পছন্দ না। দেখা হতেই পুরো রেস্টুরেন্টে এর সবার সামনে জরিয়ে ধরলি। আবার এখন খাবার দিচ্ছিস হোয়াই এইসব আমি লাইক করি না। তাই এসব করা থেকে বিরত থাকবি। তুই আমার ফ্রেন্ড বলে কিছু বললাম না নেক্সট টাইম ফ্রেন্ড বলে ছেরে দেব না‌।”
তিথি অভিমান করে বলল,,” তুই আমাকে বকছিস আদনান। আমি তো তোকে এতদিন পর দেখে একটু ইমোশনাল হয়ে এসব করছি‌। আর তুই তো জানিস আমি তোর প্রতি দূর্বল।”
আদনান ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
” তুই ভাড়া বাসায় ই থাক।”
কথাটা শুনে তিথির পিল চমকে উঠলো,,
” না না প্লিজ। আমি তোর বাসায় থাকবো!”
“না তোকে সুবিধার লাগছে না। আবার যদি ঝামেলা করিস।”
তিথি মুখটা একটু খানি করে বলল,,
” এই ভাবে বলতে পারলি। আমি এমন করবো আমাকে ফ্রেন্ড ও ভাবিস না।”
ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে লাগল।

আদনান আর না করতে পারলো না।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে আসলাম ওই তিথি টা আদনান ভাইয়ের সাথে বসে পরলো হাসি মুখ করে দাঁত কেলিয়ে।
আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে পেছনে বসে পরলাম।
সারা রাস্তা তাদের কৃতি দেখতে দেখতে। মেয়েটা কি যে গায়ে পড়া ভাবতে পারবে না কেউ নির্লজ্জ ও লাগছে এমন বেহায়া মেয়ে কিনা ভাইয়ার ফ্রেন্ড।
আমি নিজের বাসায় চলে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে সোজা।
বাসায় এসে আর কিছু খেলাম না খাবার তো খেয়েই আসছি। রুমে এসে গোসল করেই দিলাম এক ঘুম।
ঘুম থেকে উঠলাম পাঁচটায়।
উঠে আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে মাঠে গেলাম।
ভাইয়ার না সত্তেও। আসলে আজ খেলবো না ভেবেছি ঘুরবো।
আমি মাঠে যেতেই সব বাচ্চারা লাফিয়ে উঠলো আর দৌড়ে আমার কাছে আসলো। খুশিতে নাচছে সব কটা আমাকে দেখে খুশি হয়েছে। নাফিস, এসেই বলল,,
“আপু তুমি এসেছো তোমাকে এই কদিন কতো মিস করেছি জানো।”
আমি ওর গাল টেনে দিয়ে বললাম,,,”তাই নাকি। আগে তো বলতি আমি না আসলেই ভালো এখন এতো মিস করেছিস কেন?”
নাফিস মুখটা ছোট করে বলল,,” সরি আপু আসলে তোমার সাথে পারতাম না এজন্য বলতাম কিন্তু মন থেকে তোমাকে আমরা সবাই অনেক বেশি ভালোবাসি। তোমাকে সবাই অনেক মিস করেছি তুমি চলে এসেছো আমরা খুব খুশি হয়েছি। খেলবে না আমাদের সাথে।”
আমি বললাম,,” না রে খেলা বারণ আছে ।”
“কেন আপু কে বারন করেছে।”
*আছে।”
“তাহলে কি আর খেলবে না আমাদের সাথে।
আমি তৈ খেলতে তাই কিন্তু সে জানলে যে আমাকে বকবে।”

“কে তোমাকে বকবে বলো। ”
তোরা যেনে কি করবি?
আমরা তাকে সবাই মিলে বকবো।
তাই, এসব করতে হবে না। আমরা ইচ্ছা হলেই চলে আসবো খেলতে। নো প্রবলেম! আমি কারো কথা শুনার মেয়ে নাকি আজ আমার‌ই খেলতে ইচ্ছে করছে না তোরা খেল আমি দেখি‌।”
ওরা আচ্ছা বলে চলে গেল।আমি কিছু ক্ষন থেকে চলে এলাম বাসায় না গিয়ে কি মনে করে যেন আদনান ভাইয়ের বাসায় গেলাম।
ওই তিথি মেয়েটা করছে কি দেখতে।

কলিং বেল চাপতে মামনি না এসে রুশা আসলো।
রুশা এই বাসায় কাজ করে আমাকে দেখেই একটা হাসি দিলো তারপর বলল,,
” আপা আমনে আইছেন। আমনের লগে আমার কতা আছে।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,,” আমার সাথে তোর কি কথা?”
(রুশা আমার থেকে তিন বছর এর বড়।ওর মা এই বাসায় কাজ করে। সেই সূত্রে ও ও করে মাঝে মাঝে)
রুশা মুখটা বিকৃত করে মাথা আমার দিকে এনে ফিসফিস করে বলল,,,” হুনেন তায়লে আইজকা না একতা মাইয়া নিয়া আইছে ছোট স্যার। মাইয়াডা কি যে অসভ্য। কি বিচ্ছিরি জামা কাপড় পরছে পাওডা পুরা খালি। আর আইয়াই খালি ছোট স্যারের পেছনে ঘুরঘুর করছে।স্যার বিরক্ত হলেও হুনে না। বড় মা তো মাইয়া দেইখাই আদনান ভাইজান রে ডাইকা বকছে। ইমন খারাপ মাইয়া বাড়ি আনছে দেইখা‌।”
আমি ওর কথা শুনে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি। তারপর রুশা কে চুপ করিয়া ভেতরে গেলাম ও শুরু করলে আর শেষ করে না‌।

মামনি নাকি ঘুম তাই আর তার কাছে গেলাম না। সোজা ওই তিথির রুমে গেলাম। কারন রুশার থেকে জানতে পেরেছি আদনান ভাই নাকি নিজের রুমে থেকে ওই মেয়েকে বের করে ঘুমিয়েছে। তিথির রুমে ফাঁকা ভ্রু কুঁচকে আদনান ভাইয়েরুমে এলাম। আদনান ভাইয়ের রুমে গিয়ে আমার চোখ চরক গাছ।

#চলবে

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৮

0

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_8

ভাইয়া চিৎকারে তো আমার দফারফা। আমি চোখ বন্ধ করে কাপাকাপি করছি ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে শুধু। আচমকা ভাইয়া থেমে গেল। আর কিছু জিজ্ঞেস না করে শান্তভাবে ফাহাদের দিকে তাকালাম তারপর আমার হাত ছেড়ে দিলো।
আমি ভেবেছিলাম ভাইয়ের সবার সামনে অনেক সিনক্রিয়েট করবে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না খুব ভদ্রভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করল,,,
“এই ছেলেটাকে?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম ভাইয়ের কথায়। আমতা আমতা করছি আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কি বলব ভাবছি?
“কি হল ভয় পাচ্ছিস কেন বল তোরা ক্লাস মিস দিয়েছিস কেন? ছেলেটা কি তাদের সাথে পরে।দেখে তো সেম ইয়ার মনে হচ্ছেনা। বড় লাগছে। সমস্যা নাই অনেকে ফেল করে এক ক্লাসের অনেকদিন পরে থাকে। তাই হতেই পারে।”
আমি ভাইয়ার কথা শুনে ভয়ের মাঝেও হুহু করে হেসে উঠলাম।ভাই আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার চোখ-মুখ বিরক্ত স্পষ্ট। চোখ লাল হয়েছে তার মানে এখনো রেগে আছে। কিন্তু ভাইয়া রাগ দেখাচ্ছে না। ‌আমি ভাইয়ার রাগী মুখ দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম।
আমি নিজের হাসি থামিয়ে বললাম,,
“উনি তো আমাদের সাথে পড়েনা ভাইয়া। উনি আমাদের বড়।”
তাহলে উনি এখানে কি করছে? আর তোরাই বা কি করছিস?
আমি কিছু বলার আগে মেঘলা বলে উঠলো,,,
“ভাইয়া দোলা কে কিছু বলবেন না প্লিজ। এটা আমার ভাই আমি ওদের জোর করে নিয়ে এসেছে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে।”
মাথা নিচু করে বসে পড়ে মেঘলা কথাটা বললো।
“তোমার ভাই?”
“জি ভাইয়া।”
“তা তোমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে বাড়িতে না গিয়ে এখানে এসেছ কেন?”
মেঘলা পরলো বিপাকে এখন কি বলবে?
“আসলে ভাইয়া আমাদের আজকে ট্রিট দিবে এজন্য ভাইয়া তো। মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে সেজন্য।”
“ট্রিট দিবে? না খেয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
“আমরা তো যাবো কিন্তু তার আগে ভাবছিলাম এই খানে একটু ঘুরে যায়। কি গরম পড়েছে আজকে?”
গরম গরম ভাব করে বললাম মেঘলা।
“এবার আদনান ফুলটা দেখালো এই ফুলটা কিসের জন্য।”
এতক্ষণ যা ও মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে ম্যানেজ করতে গিয়েছিল ওরা। এখন সব-গুলাই চোখ বড় বড় করে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে আমিও।

আমি বাম হাতে আঙুল কামড়াচ্ছে আর ভাবছি! কি বলবো? কি বলবো? এখন ফাহাদ যদি ভাইয়াকে বলে দেয়! আমাকে প্রপোজ করতে এসেছে। তাহলে তো ভাইয়া আমাকে মেরেই ফেলবে।
“আহসান মি। ফুল কিসের জন্য? আর ফুলটা দোলাকেই কেন দেওয়া হচ্ছিল। প্রপোজ এর মত করে।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমার কাশি উঠে গেল। তখনই আমি বলে বসলাম,,,
“আসলে ভাইয়া এই যে ফাহাদ ভাই কে দেখছো না। উনি আমাদের নেহাকে পছন্দ করে তাই নিহাকে প্রপোজ করতে আসছে। আমাদের ট্রিট দিবে প্লাস নেহা কে প্রপোজ করবে।আর তুমি তো জানো আমার ফুল কত প্রিয় ওনার হাতে একটা ফুল ছিল সেটা দেখে আমি ওইটা নেওয়ার জন্য পাগল করে ফেলি তাই ভাইয়া বাধ্য হয়ে ফুল আমাকে দিচ্ছিলো।”
এক দুমে বানাই বানাই এক্ষুনি মিথ্যা কথা বলে ফেললাম ভাইয়াকে।
ভাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে প্লাস ফাহাদ আমার শাঁকচুন্নি ফ্রেন্ড গুলো।
আমি কথাগুলো বলে নেহার দিকে একবার তাকালাম ও খেপা বাঘিনীর মত করে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়ে গিলে খাবে।
ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি ভাইয়া মনের কথাটি বিশ্বাস করেছে তার চোখের রাগ লাগছে না কিন্তু বিরক্ত।
বিরক্ত হয়ে বলল,,,
“এখানেও পাগলামো করা শুরু করে দিয়েছিস।আর উনি যে নেহাকে প্রপোজ করবে লাইক করে এটা তো আমাকে মেঘলা বলল না।”
আমি মেঘলার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,
“ও তো ভয় পেয়েছে এইসব জানলে তুমি যদি বকো।”

মেঘলা দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল ভাইয়া । মেঘলা তো আমার দিকে শুধু কঠিন মুখ করে তাকাচ্ছে
তাই আমি সামাল দেওয়ার জন্যই কথাটা বললাম।
অবশেষে সব ঝামেলা মিটলো। ভাই আমার কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে। নেহা তো লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।আর আমি কাচুমাচু মুখ করে সবার দিকে তাকাচ্ছি ফাহাদের দিকে তাকিয়ে দেখি সে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ রাঙিয়ে দিলাম ফাহাদ কে যাতে ভুল করেও ভাইয়াকে সত্যিটা না বলে আর এই গাধাকে তো আমি আমার বয়ফ্রেন্ড বানাবে না অযথা ঝামেলা করে কি লাভ?
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নেহা ও যে আমাকে কি করবে? থাক সেসব পরে ভাবা যাবে।
ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“চল বাসায় চল এখন?”
আমি বললাম আচ্ছা চলো।
এখন আর ঝামেলা করে লাভ নাই বাসায় যেতে পারলেই বাঁচি এখানে থাকলে কখন কি ঘটে যায়।
ভাইয়া আমার হাতে ফাহাদের সামনে গিয়ে বলল,,
“সরি ব্রো আমার মিষ্টেক হয়ে গেছে। তোমার হাত থেকে দোলার হাতে ফুল দেওয়া টা দেখে আমি অন্যটা ভেবে ফেলেছিলাম। দোলাকে বাদে অন্য যাকে খুশি তাকে ফুল দাও আই ডোন্ট কেয়ার।”
আমি একটু দুরে আর ফাহাদ আমার থেকে একটু দূরে ছিল। তাই ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে কি যেন বলতে লাগল আমি কিছুই শুনছি না।দূরে দাঁড়িয়ে কান খাড়া করে সেদিকে তাকিয়ে আছে আর ভয় ভয় পাচ্ছি যদি কিছু বলে দেয় ভাইয়াকে।
ওই হাঁদারাম ফাহাদ টা।
কিছু শুনছে না তাই অধৈর্য হয়ে সে দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে আমাকে নেহা টেনে ধরল। আমি আর যেতে পারলাম না নেহা খেপা বাঘিনীর মত আমার হাত ধরে আমাকে ফিসফিস করে বকতে লাগল।
চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে যেন। কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নাই আমিতো খালি ফাদার আর আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
“তুই এটা কি বললি দোলা। এভাবে তুই আমাকে ফাঁসিয়ে দিলি।”
“ওফ সার তো ঐদিকে কি কথা হচ্ছে বুঝতে পারছি না আর তুই এসে ঝামেলা করছিস।”
“করব একশ বার করব তুই কেন এই মিথ্যে কথাটা বললি। আদনান ভাইয়ের সামনে আমার মান-সম্মান এভাবে ডুবালি।”

নেহা সর-লোই না আর ওদিকের কথা শেষ হবে আদনান ভাই আমাদের দিকে তাকাতেই আমি নেহার হাতে চিমটি কাটলাম।
নেহা কিছু বলবে আমি ফিসফিস করে বললাম,,, চুপ করবি শয়তানি বান্দরনি ভাই আসতেছে।”
আদনান ভাইয়ের কথা শুনে নেহা চুপ করে গেল নেহা।

নেহা আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো আদনান ভাই এসে সবার দিকে তাকাতে সবাই কাচুমাচু করতে লাগলো। ভাইয়া সবাইকে বাই বলে আমাকে নিয়ে ছুটতে লাগলো।
গাড়িতে বসে আছি।
ভাইয়া এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,”তুই আমাকে মিথ্যে বলিস নি তো আবার।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমার হেঁচকি উঠে গেল।
আমি হেঁচকি দিচ্ছি দেখে ভাইয়া তাড়াতাড়ি গাড়ির পেছন থেকে ওয়াটার এনে আমার হাতে দিলো।
আমি কি চোখ গোল গোল করে বললাম।
মিথ্যা কেন বলব ভাইয়া?
ভাই আবার বলল,, আচ্ছা ঠিক আছে ক্লাস আর কখনো মিস দিবি না। ওকে।
আমি মাথা নেড়ে হ্যা জানালাম।
ভাই আমাকে নিয়ে বাসায় না এসে রেস্টুরেন্ট আসলো।
এখানে কেন?
কথা না বলে চুপচাপ চল।
বাসা নাকি এখানে কেন আসলে ভাইয়া?
অন্যের কাছে টিট কেন চাস। যত ইচ্ছে আমার কাছে বলবি আমি খাওয়াবো।

আর ওই তো আমি চাইছি না কেউ এটা তো মেঘলা চাইছিল।
ভাইয়া কিছু বললো না ভেতরে আমরা রেস্টুরেন্টে একটা কেবিনে বসলাম।ভাইয়া বিরিয়ানি অর্ডার দিল ভাইয়া জানে আমার বিরিয়ানি ফেভারিট।
আসে তো একটু সময় লাগবে বোরিং হয়ে গেল হাত দিয়ে বসে আছি আর চিন্তা করছি ওইখানে কী হচ্ছে কে জানে?
আচমকা ভাইয়া বলে উঠলো,,,
এত কি চিন্তা করছিস? তোর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস।
ভাইয়ের কথা শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম। গালে থেকে হাত নামিয়ে সোজা হয়ে হাসি হাসি মুখ করে বসলাম। জোর করে কি আর হাসা যায় তো দাঁত বের করে রাখলাম।
ভাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থেকে ফোন টিপতে লাগল।

15 মিনিট পর খাবার এলো আবার দেখি আবার খিদা বেড়ে গেল সমস্ত চিন্তা এক পাশে ফেলে খাওয়ার মনোযোগ দিলাম।
এক লোকমা হাসি হাসি হাসি মুখ করে মুখে দিতেই। চোখ গোল গোল করা অবস্থা হল আমার। আমার চোখে ইয়া বড় হয়ে গেল আমি খাবার মুখে না দিয়ে থ মেরে আছি।
আমার এত অবাক হওয়ার কাহিনী কথা শুনবেন নাকি।
আমার সামনে একটা মেয়ে আসলো আর ফট করে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল।
মেয়েটাকে আমি চিনি না মেয়েটা আসতে ভাইয়া চরম অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরল আর মেয়েটা কিছু না বলেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল।আমি হাঁ করে একবার ভাইয়া দিকে তাকাবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটাকে জীবনে দেখেছি বলে আমার মনে পড়ে না। ফর্সা করে একটা মেয়ে চুলগুলো জুটি করে রেখেছে। পরনে একটা হাঁটু অব্দি প্লাজো আর একটা সাদা নীল ফতোয়া তার হাতা নেই।মেয়েটা এমন ড্রেস পরে আছে দেখে আমি হতভম্ব।
ড্রেসটা খুবই বাজে আমিও ছোট ড্রেস পড়ি তাই বলে এমন শরীরের দিক বের করে রাখি না। আর মেয়েটার বয়স ভালোই লাগছে কিন্তু খুবই সুন্দরী।ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি একটু বিরক্তি মাখা মুখ করে আছে। মেয়েটা এবার ভাই আগে ছাড়লো।
“অফ আদনান তোকে ফোন করতে-করতে আমি পাগল হয়ে গেছি সকাল থেকে।”
এবার ভাইয়া বলল,,,”তিথি তুই কোথা থেকে এলি?”
মেয়েটা,,, “কোথা থেকে আর আসবো সিলেট থেকে এসেছি আজ কে? ভাবছি কিছুদিন এখানে বেরিয়ে যায়!ঢাকায় এসে পৌঁছেছি একঘন্টা আসার পর থেকে তোকে কল করছি তুই তো ফোন রিসিভ করছিস না এজন্য হতাশ হয়ে এখানে আসলাম প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।”
“তা আসার আগে জানিয়ে আসবি না কোথায় উঠেছিস?”
“আর কোথায় উঠা উঠি ভাবছি একটা হোটেলে উঠবো কিছুই তো চিনি না। তাই তোকে কল করলাম।”
“ও আচ্ছা আয় এখানে বস খা। আর হোটেলের তোর থাকতে হবে না। তুই আমাদের বাসায় থাকতে পারিস।”
“রিয়েলি আদনান!”
উজ্জ্বল মুখ করে বলল মেয়েটা।
হ্যাঁ।
এবার তাদের নজর আমার দিকে ঘুরল মেয়েটার জিজ্ঞেস করলো আমি কে?
আদনান বলল কাজিন।
মেয়েটা কেমন কেমন করে যেন আমার দিকে তাকাল পা থেকে মাথা অব্দি দেখে তারপর আদনান ভাইয়ের পাশের সিটে বসে পড়ল।
আমি বসে খায় মনোযোগ দিলাম আর তারা দুটোই বলতে হায়রে হাসাহাসি কথা।আদনান ভাই যে এতো হাসাহাসি করতে পারে জীবনে জানতাম না। আদনান ভাই আর ওই মেয়েটা হাসাহাসি করতে লাগল।

#চলবে

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৭

0

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_7

আজকে কলেজে এসে জানতে পারলাম ফাহাদ আমার সাথে দেখা করবে বলেছে। মেঘলার থেকে জানতে পারলাম ( ওইদিন দোলার ফ্রেন্ডদের নাম বলেছিলাম কিন্তু সেখানে মেঘলার নাম বলতে মনে ছিলো না সরি।আর দোলাকে নিয়ে পাঁচ জন ফ্রেন্ড বলেছিলাম। সেখানে হবে দোলাকে ছাড়াই ৫ জন ফ্রেন্ড মোট ছয় জন।)
মেঘলা আমাকে বলল,, আজকে কলেজে ক্লাস শেষ করে ফাহাদের সাথে দেখা করতে সামনের একটা পার্কে যেতে।
আমি রাজি ‌হয়ে গেলাম।
“আচ্ছা কিন্তু বাসায় যাইতে তো লেট হয়ে যাবে।”
মন খারাপ করে বললাম কারন বাসায় যেতে লেট হলে তো সবাই চিন্তা করবে!
নেহা বলল,, হ্যাঁ তাও ঠিক।
আমি আবার বললাম,,”আর তখন বলতে হইব কেন লেট করলাম? তখন কি বলব? আমার তো কখন গেট হয়না বাসায় যেতে। সব সময়‌ তো ক্লাস শেষ হলেই বাসায় চলে যায়।”
মেঘলা বলল,,, তাহলে কি তুই যাবি না?
আমি বললাম,, আমি তো যেতে চাই কিন্তু?
মেঘলা তখন বলল,, আচ্ছা একটা কাজ করা যায়।
সবাই বললাম কি? ও বলল,
“আমরা তাহলে এক ক্লাস না করে চলে যায়। তারপর ক্লাস টাইম শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাসায় রওনা দেব। তাহলে আর এক্সট্রা টাইম লাগবে না সবাই ভাববে আমরা ক্লাস করে আসছি বাড়িতে।”
মেঘলা কথাটা আমাদের সবার পছন্দ হলো।বাড়িতে আর কিছু মিথ্যা বলতে হবে না সময়মতো পৌঁছাতে পারবো।
ক্লাস শেষ করে আমরা পায়ে হেঁটেই পার্কে চলে এলাম। কারন পার্ক খুব একটা দূরে না।
অবশেষে আমার বয় ফ্রেন্ড হবে। ফাহাদ আজকে আমাকে প্রপোজ করবে সেটা আমি মেঘনা থেকে জানতে পেয়েছি।
তবুও ভয় করছে বায় ইনি চান্জ যদি আমার চেনা জানা কেউ দেখে ফেলে তাহলে তো আমার খবর আছে।
ভয়ে ভয়ে ওদের সাথে পার্কে ভেতরে ঢুকলাম।

এদিকে
আদনান একটা মিটিং করার জন্য ক্লায়েন্টের সাথে রেস্টুরেন্টে এসেছে। রেস্টুরেন্টটা আবার দোলার কলেজের পাশে ও ভেবেছে দোলার ক্লাশ শেষ হলে ওকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং শেষ করে দোলার কলেজের সামনে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠে। কিন্তু আর আধাঘণ্টার টাইম আছে।এত সময় আগে গিয়ে কি করবো ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
তাইও পাশে পার্কে আসে।
কিন্তু কি মনে করে যেন পার্কে না গিয়ে পাশে লেকের পাড়ে যায় আদনান।
লেকের পাড়ে এসে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। রোদের মাঝে হুড়মুড় করে বাতাস বইছে শরীরে। চোখে থেকে সানগ্লাস খুলে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে আদনান।
হঠাৎ তার মন চাইছে এমন নিস্তব্ধ একটা জায়গায় ওর পাশে আর দোলা রানীকে চাই। যার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে। যার হাতে হাত রেখে কিনার ঘেঁষে হাঁটবে। দুজন দুজনের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে। চোখে থাকবে না বলা অনেক ভালোবাসার কথা।
এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আদনান।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি মে দোলাকে ও নিজের করে পাবেনা আর না মনের কথা বলতে পারবে। কারণ তোমার বাবা-মা কি যে কথা দিয়েছে?দোলা এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে এইসব বিষয়ে জানানো যাবে। এখন ও দোলা অনেক ছেলে মানুষি, অবুজ, বাচ্চা। কিন্তু আমার মন তো এসব মানে না মন প্রাণ দিয়ে তো শুধু একজনকে ভালোবাসি যে আমার চোখের সামনে সব সময় থাকে তাকে দেখে যা আমার তৃষ্ণার্ত মনকে বাধা দিতে খুব কষ্ট হয়।
আদনান লেগে দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল ওর চোখের সামনে দোলার হাসিমুখটা ভেসে উঠলো ডলার হাসিমুখ দেখে আদনানের ও ঠোট আলাদা হয়ে গেল। মুখে মুচকি হাঁসি ফুটে উঠলো।

আদনান নানা কথা ভাবছিল তার সব কিছু ছিল দোলাকে ঘিরে ঠিক তখনই ওর চোখ যায় কিছুটা দুরে।
কলেজ ড্রেস পরা কয়েকটা মেয়ে দাড়িয়ে হাসাহাসি করছে। একবার তাকিয়ে বুঝতে পারে এটা দোলার কলেজ ড্রেসের কালার তার মানে তো দোলার কলেজের শিক্ষার্থী। কিন্তু দোলাদের ক্লাসে এখনো শেষ হয় নাই এরা তো আগেই বের হয়েছে কেন?
মাথা না ঘামিয়ে আদনান ফোন বের করে কাউকে ফোন দেওয়ার জন্য। ফোন করে আর এক ফ্রেন্ডকে?কথা বলতে বলতে একটু নড়াচড়া করতে লাগে তখনই ওর চোখে পরে দোলাকে আবসা একটু দেখেই থমকে যায়।
কলের ওপাশ থেকে অর বন্ধ বলে যাচ্ছে,,,
“কিরে আদনান আসবি আমার বিয়েতে?”
আদান কথা বলছে না ও থমকে দাঁড়িয়ে আছে দোলাকে দেখলে মনে হয় তাড়াতাড়ি ঘুরে তাকায় সাইট থেকে দোলার মতোই লাগছে মেয়েটাকে।
আদনান উৎসুক চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বাম সাইড দেখতে পাচ্ছেন আদনান এতে স্পষ্ট দোলায় লাগছে।মেয়েটার সামনে একটা ছেলে গোলাপ হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। আর পাশে চার পাঁচটা মেয়ে কি যেন বলে হাসাহাসি করছে?
কানের ওপাশ থেকে বলেই যাচ্ছে কথা,,,
“আদনান ভাই তুই লাইনে আছিস তো কথা বলছিস না কেন আসবি না নাকি?'”
আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি।আর কিছু বলল না আদনান ফোন কানে থেকে নামিয়ে ফোন পকেটে রেখে সামনে এগুতে লাগলো।যতই এগিয়ে যাচ্ছে তত স্পষ্ট হচ্ছে এই মেয়েটার কেউ না দোলা ছাড়া।
রাগে ওর শরীর কাঁপছে।চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে চোখমুখ শক্ত গম্ভীর করে এগিয়ে যাচ্ছে।দোলা সেখানেই চোখের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারলে ওর শান্তি লাগতো। কলেজ বাদ দিয়ে এখানে প্রেমলীলা চলছে। গটগট পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে আদনান।

দোলা ফাহাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ফাহাদ ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। দোলা ফাহাদের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে যাচ্ছে।আর ফাহাদ লজ্জিত হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে।দোলা এবার মুখে হাত দিয়ে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছে হাসির চোটে। হাসবে না কেন পাশে ওর বান্ধবীরা ও হাসতেছে একমাত্র মেঘলা বাদে যত‌ই হোক মেঘলার ভাই বলে কথা,,
আর আপনারা তো হাসির কারণটা জানেন না হাসির কারণ হচ্ছে ফাহাদ এর প্যান্টা অতিরিক্ত টাইট এর জন্য বসার সময় খুব কষ্টে বসেছে। চিপায় বসে ছেলেটা বড় কষ্টে আছে এই বসা নিয়ে কতই না কষ্ট করেছে।
বসতে চেয়েছিল না কিন্তু আমাদের দোলা রানী তো আবার বসে নাই নায়কি স্টাইলে প্রপোজ না করলে একসেপ্ট করবে না।
তাই বেচারা পড়েছে বে কায়দায়।

অনেক কষ্টে দোলা নিজের হাসি থামাল তা ও নিজের ইচ্ছায় না মেঘলার ধমক এ।
“কি হচ্ছে কি দোলা? তোরা সবাই ভাবে হাসলে আমার ভাইটার কি হবে বুঝতে পারছিস না। ওতো লজ্জায় মরে যাচ্ছে। আহারে বেচারা কেমন নিষ্পাপ হয়ে তাকিয়ে আছে তোদের একটু মায়া লাগছেনা। এমন করলে ও কি প্রপোজ করতে পারবে। তার চেয়ে বড় আমি ওকে বলি চলে যেতে তুই প্রেমট্রেম কিছু করবিনা। তাও ভাই এমন হাসিস না।”
দোলার এখন এইটাই চাইছি।ও এই ছেলেটাকে একটু বয়ফ্রেন্ড বানাবে না।ডিসাইড করে নিয়েছে। বাবারে বাবা ছেলের কি স্টাইলবাবা এত টাইট কেন পড়বে যেটা পড়ে কারও সামনে ইজি ফিল করবে না।
দোলা তাই হাসি থামালো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে এখন। মেঘলা ভেবেছে হয়তো এখন আর হাসবে না। প্রপোজ এখন হবে।
কিন্তু দোলা করল কি?
“এই যে ফাহাদ না টাহাদ দাড়ান দেখি?”
ফাহাদ দোলায় এইভাবে কথা বলায় ভরকে গেল। ছোট ছোট করে দোলার দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো মশাই এভাবে বসে আছেন কেন আপনি তো খুবই কষ্টে আছেন কখন না যেন আবার ছিড়ে যাবে।
তখন তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে তারচেয়ে বরং দাঁড়ান। ওইসব কেলেঙ্কারি হলে কিন্তু বাসায় পৌঁছাতে পারবেন না।”
ফাহাদ হুড়মুড় করে দাঁড়িয়ে গেল।
তারপর আমতা আমতা করে বলল,,”আপনি তো ওইভাবে প্রপোজ না করলে একসেপ্ট করবেন না এখন…
দোলা ফাহাদকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,”থাক ভাই তোমাকে আর আমাকে এভাবে প্রপোজ করতে হবেনা আমার প্রেম করার সাধ মিটে গেছে। তুমি এবার ফটো।”
মেঘলা তাড়াতাড়ি ওর কানে কানে বলে কি সব বলছিস?
দোলা বললো,,,” ঠিকই বলছি আমি এই হাদারামের সাথে প্রেম করব না। আমার এমন হবে না আমার তো হ্যান্ডসাম কিউটি বয় লাগবে। আর তুই কিনা আমার জন্য একটা হাঁদারাম জুটালি।”
মেঘলা রেগে বলে তুই আমার ভাইকে একদম হাদারাম বলবি না।
“অফ তোর কি নিজের ভাই এত ভাই করছিস কেন? তোর নিজের ভাই হলে ভেবে দেখতাম হাঁদারাম হলেও হতো। কিন্তু এটাকে নিতে পারবো জানু। নিজের ভাইয়া কিসের চাচতো ভাই নিয়ে এসেছিস বলদ একটা ওর সাথে কিনা আমি প্রেম করবো? ইম্পসিবল দোস্ত!”

মেঘলা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে দোলা এগিয়ে ফাহাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,”এইযে আপনার হাতের ফর্সা দিয়ে জান আমার না খুব পছন্দ! প্রপোজ করলে তো আমি পেতাম আমার জন্যএনেছিলেন প্রপোজ করতে না পারলেও বোন হিসেবে দিয়ে যান।
ছেলেটা সত্যি দোলার দিকে ফুলটা বাড়িয়ে দিতে যাবে তখনি,,,
আদনান দ্রুতগতিতে এসে দোলার হাত শক্ত করে ধরে ফাহাদের সামনে থেকে সরিয়ে নেয়। আচমকা কেউ শক্ত করে হাত ধরায় দোলা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আদনানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আদনানকে দেখে ওর চোখে এত বড় হয়েছে যেন চোখ বের হয়ে আসবে। হতভম্ব হয়ে গেছে,, আদনান ভাই এখানে কোথা থেকে আসলো?
আমার সমস্ত চিন্তা ধারণা শূন্য হয়ে গেল। ভাইয়াকে দেখে আমি বুদ্ধি শূন্য হয়ে গেছি একবার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে ভাইয়া দিকে তাকাচ্ছি ভাইয়া কঠিন চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলছি। আজ আমার কপালে কিছু নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ জানে্ ভাইয়া এখানে কি করে চলে এলো?

আমার মুখে ভয়ের রেস বেড়ে গেছে। ভয়ে আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি‌। ভাইয়া হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আমার ব্যাথা লাগছে কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না। ভাইয়ার কঠিন চোখ মুখ দেখে আমার ভেতর টা ভয়ে শেষ। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে আমি শুকনো ঢোক গিলে নিলাম। জ্বিবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,
“ভাইইইয়া তুওওওমি এখানে কি করছছছছো?”
ভাইয়া আমার কথায় প্রেক্ষিতে কিছু বললো না চোখ সরিয়ে ফাহাদ ও আমার বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল,,
” তুই এখানে কি করছিস দোলা? তোর তো এখন ও ক্লাস হচ্ছে।”
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না ভয় পাচ্ছি খুব।
“কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? এখানে কি করছিস?”
আমি আমতা আমতা করছি।
এবার ভাইয়া চিৎকার করে উঠল,,,
” কথা বল কি করছিস এখানে? আনসার মি।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি কেঁপে উঠলাম।
#চলবে

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৬

0

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#writer_Nondini_Nila
#Part_6

মুখে ঠান্ডা পানির স্পর্শে চোখ মেলে তাকালাম অগ্নিদৃষ্টিতে আদনান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললাম।
নিজের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম ভূত হয়ে আছি। ভাইয়ার কাছে ধরা পড়ে গেলাম। আর সেই ভূত ক‌ই আচ্ছা সকাল হয়ে গেছে কি?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা বাজে। তারমানে এখনো মাঝরাতে। আমি ভাইয়ার বিছানায় শুয়ে আছি।
ধরফরিয়ে উঠে বসলাম।
হাট উচু করে শাড়ির আচল হাতে নিয়ে বসে আছি আর কাপাকাপি করছি। ভাই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাগী ভাবে মনে হয় আমাকে এখন খুন করতে পারলে সে শান্তি পাবে। তার দিকে একবার কাঁপতে কাঁপতে চোখ উঁচু করে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে ভাবলাম এখন আমাকে ভাইয়ার হাত থেকে যে করেই হোক বাঁচতে হবে। এখান থেকে পালাতে হবে কি ভাবছ পালাবো ভাইয়ার রাগ যে করেই হোক কমাতে হবে।
আমি এক চোখ খুলে ভাইয়াকে দেখে ফট করে তিন চারবার সরি সরি সরি বলো উঠলাম।
তারপর চোখ খুলে কানে হাত দিয়ে বললাম,,

“আই এ্যাম ভেরি সরি ভাইয়া! প্লিজ, আমাকে কিছু বলো না। আমার না খুব ভয় লাগছে।আমাকে দেখো আমার শরীর কাপছে আমি আবার জ্ঞান হারাবো এতো ভয় পেলে প্লিজ তোমার চোখটা অন্যদিকে নাও না। কি ভয়ঙ্কর ভাবে তাকিয়ে আছো মনে হচ্ছে।আমাকে চোখের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে ও মাই গড।কোন দুঃখে যে তোমাকে আমি ভয় দেখাতে আসলাম।কোথা থেকে সত্যি কারের ভূত চলে এলো আমাকে ভয় দেখাতে।”

কথাগুলো শেষ করে চোখ ভালো করে খুললাম। ভাই এখনো সেই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে কান থেকে হাত নামিয়ে বললাম,,
“সরি সরি প্লিজ অ্যাকসেপ্ট করে নাও না। আর জীবনে তোমাকে শাস্তি দেওয়ার কথা ভাববো না।‌ তুমি যা বলবে তাই শুনবো এই যে দেখো প্রমিস করছি।”
ভাই আমার দিকে সেইভাবেই তাকিয়ে আছে রোবটের মত। আমার ভয় আত্মা শুকিয়ে আসছে। এইসব যদি ভাইয়া আব্বু আম্মু মামনি কে বলে দেয়। আমার মান সম্মান সব চলে যাবে। আর ভাই না জানি আমাকে এর জন্য কি কি শাস্তি দেবে।এখন আমার কি হবে কেন যে এমন একটা প্ল্যান করতে গিয়েছিলাম।

গভীর ভাবনায় বিভোর আমি।তখন হঠাৎ পিকচার তোলার শব্দ আমার কানে এলো আমি চমকে সামনে তাকিয়ে দেখি। আদনান ভাই নিজের ফোনের ক্যামেরা অন করে আমার এই ভূত সাজা পিকচার তুলছে। আমি স্তব্ধ হয়ে তার ছবি তোলা দেখছি।এবার ভাইয়া ফোনটা নিজের পকেট এ ভরে মুখে হাত দিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো।
সাথে চেপে ধরে আছে এমন হাসি হাসছে।যেন কোন বড়োসড়ো জোকস শুনছে আর জোকার দেখছে। আচ্ছা ভাইয়া কি আমাকে জোকার ভাবছে। নিজের দোষে নিজেই এখন জোকার হয়ে বসে আছি। ভাই হাসতে হাসতে নিজের ওয়ারডপের কাছে চলে গেল আমার থেকে অনেকটা দূর। তখনই হঠাৎ আমার ভুতের সেই আওয়াজ কানে এলো তখনই আমার সেই সময় কার ভূত আসার কথা মনে পড়ে গেল আর আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। এখনো তো একটা বাজে তারমানে ভূতটা এই ঘরে আছে। আমি ভীতু মুখ করে চারপাল দেখছি।যতসব আজে বাজে কথা এখন আমার মাথায় আসছে। আমি একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম ভয়ে।আমার চিৎকার শুনে আদনান ভাই চমকে উঠলো আর এক প্রকার দৌড়ে আমার কাছে এসে বসলো।

আমি ভয়ে কাপাকাপি করছি চোখ বন্ধ করে। ভাইয়া আমার হাত স্পর্শ করে বলল,,
“হোয়াটস হ্যাপেনস দোলা?”
আমি ভয়ে কথা বলতে পারছি না কাঁদছি।
এত কাঁপছিস কেন আর কাঁদছিস কেন কি হয়েছে তোর? বল আমাকে?
আমি ওইভাবে থেকে আস্তে আস্তে তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,”ভুওওওত ভুওওওত আছে তোমার ঘরে!
ভাইয়া মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পারল তখন একটা ধমক দিল আমাকে,,
“স্টপ?একটু কান্নার আওয়াজ যেন না পাই চুপচাপ কাপাকাপি আর কান্নাকাটি বন্ধ করে চোখ মেলে তাকিয়ে সোজা হয়ে বস ইডিয়েট একটা?”
আমি শুনছি না।
“কি হলো আমার কথা কানে যায় না আমি তোকে কান্নাকাটি করতে মানা করেছি ইডিয়েট।”
“আমার খুব ভয় করছে তুমি আমাকে ধমকাচ্ছে কেন? এত নির্দয় তুমি কবে থেকে হলে ভাইয়া?”
আমি ভাইয়ার দিকে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললাম।
ভাইয়া আমার দিকে গম্ভীর হয়ে কঠিন মুখ করে বলল,,,”ইডিয়েট কোন ভূত-পেত্নী নেই এখানে?ও সরি একটা পেত্নী এখানে আছে যে এখন আমার সামনেই বসে কান্নাকাটি করছে? ডাফার একটা এমন আজগুবি কাজকর্ম কে ঢুকিয়েছে বলতো?”
তুমি এখন ও আমাকে ধমকাচ্ছ? তোমার ঘরে ভুত আছে আমি নিজের চোখে দেখেছি?
ভাইয়া এবার সিরিয়াস হয়ে বলল,, আচ্ছা তা কি দেখেছেন আপনি?
“আমি এবার বলতে লাগলাম,,আমি নিজের চোখে দেখেছি তোমারে ঘরে আগুন হ্যা আগুন ছিল সেটা কেউ ধরে ছিল না একাই সেটা আমার চারপাশে ঘুরতে শুরু করে। তারপর তারপর কেউ আমাকে জাপ্টে ধরল তারপর তারপর ইয়েস আমাকে কামড়ে দিয়েছে। এই যে দেখো কামড়ের দাগ আছে।”
বলে ঘার দেখানোর জন্য হাত বাড়ালাম।

ভাইয়া এবার বলল,,
আচ্ছা আমার ঘরে না হয় ভূত ছিল তা তুই আমার ঘরে কি করছিলি এমন ভূত সেজে।
আমি হাত নামিয়ে ফেললাম,,,
মায়ের কথা শুনে আমি হকচকিয়ে গেছি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা,,,
“কি হল আমার প্রশ্নের উত্তর দে। ভূত সেজে কি আমাকে ভয় দেখাতে এসেছিলি?”
ভাইয়ের কথা আমার পিল চমকে উঠলো। আমি হুহু করে কেদে উঠলাম,,
এ ছাড়া উপায় নাই। বাঁচতে হলে কাঁদো দোলা কাঁদ বেশি করে কাঁদ নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলো। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে আদনান ভাই কে যদি একটু কাজে দেয়।

ভাইয়া আমার কান্না দেখে চুপ করে যায় আমি কেঁদেই যাচ্ছি।
একটু সময় আদনান ভাই চুপ করে থেকে চিৎকার করে বলে,,
“একদম কান্না অ্যাটিং করবিনা। সাহস কী করে হল তুই আমার রুমে এসে আমাকে ভয় দেখাতে চাষ। তোর মত ভীতু কিনা আমাকে ভয় দেখাবে সত্যি আমি অবাক হই তোর কাম কাজে।”
ভাইয়ার গমগম কণ্ঠ শুনে আমার কান্না অফ হয়ে গেছে।
তুই একটা কি কি বললি আমি যা বলব তাই শুনবি?
আমি একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল হুম
আচ্ছা তোকে ক্ষমা করলাম। শুধুমাত্র এই কথাটা বলার জন্য।শুধু বলা পর্যন্ত থাকলে হবে না আমার কথা শুনতে হবে আজ থেকে আমি যেটা বলবো তাই তাই করবি ওকে।
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।আর মনে মনে ভাবছি কি কি যে করাবে আমাকে দিয়ে আল্লাহ মাবুদ জানে।
কাল থেকে যেন আমি তাকে কোনোভাবেই মাঠে যেতে না দেখি বিকেলে।লোকে যদি যেতে চাস তাহলে আমার কানে খবর আসবে কারণ তোকে ফলো করার লোক আছে। তাই যদি লুকিয়ে যাস আমি সেটা খবর পাবোই। আর এইভাবে যদি আমি খবর পায় তাহলে জানিচ্ছিস‌ই তো আমি তোর কি হাল করবো?

আমার মাঠে না গেলে তো ভালো লাগে না বাড়িতে বোরিং লাগে।
সারাদিন কি বাড়িতে বসে থাকতে কারো ভালো লাগে তোমার জন্য তো আমি কোথাও যেতে পারি না।
আমার জন্য তুই কি বলছিস আমি তাকে বন্দী করে রাখি?
ভাইয়া রেগে বলল কথাটা।
আমিও মলিন মুখ করে বললাম,, বন্দী করে না রাখলেও তো এইতো মাঠে যেতে দেবে না তাহলে আমি কি সারাদিন ঘরে বসে থাকবো।
ঘরে বসে থাকবি কেন ছাদে যাবে আমাদের বাসায় আসবি।
ঘুরলে আমার কি হবে শুধু আমার তো খেলতে ভালো লাগে।।তুমি সব সময় আমার সাথে এরকম করো জন্য তোমাকে আমার সহ্য হয় না তুমি কেন আমাকে এত কড়া শাসন করো?কি শত্রুতা তোমার আমার সাথে সবকিছুতেই কেন লন্ডভন্ড করে দাও। আমার সমস্ত শখ আহ্লাদ তুমি নষ্ট করে দাও কেন?

বেশ করছি তুই এখন বড় হয়েছিস কেন বুঝিস না তুই। বাচ্চাদের মত লাফালাফি করাটা তোকে সোভা পায় না এখন। মাঠ ভর্তির লোকের সামনে তুই বাচ্চাদের মত লাফালাফি করিস তোর লজ্জা করেনা।কে তোর দিকে খারাপ নজরে তাকায় তোর তো সেদিকে খেয়াল থাকে না। সব সময় বাচ্চা মো না করলে তো চলে না আজকে তুই এসে পড়ছিস ভূত সেজে এটা কি কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করবে।আমাকে ভয় দেখাতে এসে কিনা নিজেই ভয় পেয়ে জ্ঞান হারালি। এখন যদি তোর ভালো মন্দ কিছু হয়েছে তো আমার কী হতো? কতক্ষণ অজ্ঞান হয়ে ছিলি জানিস?এ এতটা সময় আমার মধ্যে কি ঝড় বয়ে গেছে জানিস?সবকিছুর একটা লিমিট আছে এই বারোটা পর্যন্ত জেগে বসে ছিলি কিনা এই আকাম করার জন্য?

ভাইয়া ক্রোধের সাথে কথাগুলো বলল।আমি মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছি এখন আমার সত্যি কষ্ট লাগছে।
আদনান রেগে কথা গুলো বলল দোলাকে কে কিন্তু দোতলার চোখের জল দেখে নরম হয়ে গেল। এগিয়ে এসে দোলা মুখ উঁচু করে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,,
“এমন পাগলামী আর কখনো করবে না বুঝেছিস?”
আমি কিছু বলছি না চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
কি হলো আমার কথা কানে যাচ্ছেনা এতক্ষণ তো মুখে কথার খৈ ফুটেছিল এখন চুপ করে আছিস কেন?”
আমি অভিমান সুরে বললাম,, এতো এতো বকে এখন আবার দরদ দেখানো হচ্ছে। তোমাকে আমি বুঝতে পারিনা ভাইয়া একেক সময় একেক রুপ ধরো কেন?
সেটা তুই বুঝতে পারবি না তোর মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি কিছুই নাই। বলে ভাই আমার মাথায় গাট্টা মারলো।
যা এখন ঘুমিয়ে পড় কি হয়েছিস একবার আয়নায় নিজেকে দেখে যাস।
না বাবা তার দরকার নাই আমার ভয় লাগে।
ভিতুর ডিম একটা ভয় লাগে তাহলে এরকম সাজছিস কেন?

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে। ড্রেস চেঞ্জ করে গেছে মামনি র পাশে শুয়ে পড়লাম।
#চলবে

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৫

0

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#writer_Nondini_Nila
#Part_5

কলেজের শিমুল গাছের নিচে বসে আছি গালে হাত দিয়ে। আমার পাশে বসে আছে আমার ফ্রেন্ড সার্কেল। একটু আগে ওদের এই দুইদিনে আমার উপর করা সব অত্যাচারের কথা শেয়ার করেছি। তারপর থেকে সব গুলা আমাকে এতো এতো সান্ত্বনা দেওয়া শুরু করেছে।
এবার নেহা বলল,
” কষ্ট পাস না সোনা আমার। তুই মন খারাপ করে থাকলে আমাদের কারো ই ভালো লাগে না। কিরে বল! আর তোর ওই ভাইয়াকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করবো।”
নেহার কথায় সবাই সায় দিলো( আমার ফ্রেন্ড সার্কেল মোট পাঁচজন নেহা, মুসকান, ইলমা, আবিদা আর আমি) শুধু আবিদা বাদে ও একা বলল,,
” কি সব বলছিস মাই জানেমান কে তোরা শাস্তি দিবি। এটা কিন্তু ঠিক না আমি মেনে নেব না।”
ওর কথা শুনে আমার গায়ে আগুন ধরে গেল।
গমগম করে বলে উঠলাম,,,” কি বললি তুই জানেমান? এই আদনান খাটাশ আমাকে এতো এতো অত্যাচার করলো আর তুই ওকে শাস্তি দিতে না করছিস। বান্ধবী নামের কলঙ্ক তুই। হায় কপাল আমার।”
আবিদা আবার বলল,, ” সরি মাই জান্টুস। রাগিস না প্লিজ আদনান তোর সাথে অন্যায় করেছে কিন্তু ও তো আমার একটা মাত্র ক্রাশ আমি ওকে শাস্তি দিতে রাজি হয় কি করে বল আমার তো কষ্ট হবে।”
মলিন মুখ করে বলল। ওর কথায় ইলমা বলে উঠলো,,
” ওরে আমার একটা ক্রাশ আলা আইছে রে তুই না ঘন্টায় ঘন্টায় ক্রাশ খাস।”
“আগে খাইতাম এখন তো খাইনা। আমি ভালা হ‌ইয়া গেছি।”
গর্বিত হয়ে বলল।
” খাও না কাল ও না একজন কে দেখে বললি, কি দেখতে মাইরি এটাকে আমি লাইন মারবো।”
তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল ইলমা”
আবিদা রেগে তাকালো আমার দিকে।

আবিদার দিকে তাকিয়ে বলল,,,”কিরে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?”
রেগে বলল আবিদা,,,”ওদের বলতে মানা করেছিলাম ইলুর বাচ্চা।”
ইলমা হতাশ হয়ে বলল,,”আমি ইলুর বাচ্চা না তায়েফ এর বাচ্চা ভুলে কেন যাস বারবার?”
ওইটা নিয়ে লাগল দুজনের মধ্যে ঝগড়া। বিরক্ত হয়ে নাক মুখ কুঁচকে আছি। একে তে আমি আছি আমার জ্বালায় আবার এই বান্ধরনীর প্যারা। আমি একটা চিৎকার দিয়ে ওদের থামালাম।
সব গুলা চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“আর একটা কথা বললে তোদের সব কটাকে আমি করলার জোশ খাওয়াবো।”
আমার কথায় ওরা থামলো।
সবগুলা নাক মুখ ছিটকে বলল,,নো
আমি বললাম,,
“আমার জন্য কিছু করবি তা না নিজেরা ঝামেলা করছিস। তোরা আমার বান্ধবী‌ই না একজন ক্রাশ খেয়েছে বলে কিছু করবে না। আর তোরা এই ভাবে আমাকে কষ্ট দিলি। এমন বান্ধবীর কি দরকার কোন কথা নাই তোদের সাথে।”
বলে মনে খারাপ করে উঠে দাঁড়ালাম।আমাকে উঠে দাঁড়াতে দেখে ওরা উঠে সরি বলে আমাকে জোর করে আবার বসিয়ে দিল।
“প্লীজ জানু রাগ করিস না ওই আদনান কে শায়েস্তা করবোই দেখিস।”
আমি গাল ফুলিয়ে বসে আছি।
“আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসছে রে।” চিৎকার করে উঠল নেহা।
সবার সাথে আমি ও বললাম,,,”কি?
উৎফুল্ল হয়ে বলল,,,,”তুই ও তোর ভাইয়ের পছন্দ এর খাবার তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খা তাকে না দিয়ে।”

আমি খুব উৎসুক হয়ে ছিলাম ওর কথা শুনার জন্য কিন্তু শুনার পর ওকে একটা কষিয়ে চর মারতে ইচ্ছা করছে।
আমি কিনা ভাইয়ার পছন্দের খাবার খাব। ছিঃ তার পছন্দ বলতে তো ব্ল্যাক কফি উয়াক থু।
“জীবনে না।” নাক ছিটকে বললাম।
ওরা আমাকে কোন ‌ইসু দিতে পারলো না। ক্লাস শেষ করে গেটের বাইরে আসতেই নজর পরলো আদনান ভাইয়ের উপর গাড়িতে হেলান দিয়ে চোখ সানগ্লাস পড়ে এ্যাটিডিউট লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এমন লুক যে কেউ দেখেই ক্রাশ খাবে আমি খেলাম। তারপর ভাবতে লাগলাম এই খাটাশটা আমার কলেজে কি করছে?
“ও মাই জানেমান এখানে ও উফ কি হট‌ই না লাগছে। উফ আমি পাগল হয়ে যাব।”
আবিদার নেকামির কথা শুনে আমার গা পিতৃ জ্বলে যায়।
ওরা ও ভাইয়াকে ভয় পায় তাই কেউ আর আমার সাথে গেল না যার যার বাসায় গেল।
আমি একবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়ালাম একটু দূরে ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো,,

” আমাকে দেখতে পাস নি।”
আমি একবার তার মুখের দিকে তাকিয়ে রাস্তা দিকে তাকালাম।
“কথা কানে যায় না। আমাকে দেখে ও এখানে এলি কেন?”
ক্ষোভ নিয়ে বললাম,,,”আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা‌। আর তোমার সাথে আমি যাব না। তুমি এখানে কি করছো?”
“আমার সাথে যাবি না কেন? আর আমি তোকে নিতে এসেছি কে বলল?”
আমি ভাইয়ার কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম।
“আমাকে নিতেই তো এসেছো আমি জানি।”
ভাইয়া বাঁকা হাসলো তারপর বললো,, ” জী না আপনি ভুল জানেন। আমি আপনাকে নিতে আপনি নাই একটা নিউজ দিতে এসেছি।”
ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম।
“কি নিউজ?”
“আন্টি আন্কেল বাসায় নাই। তোকে আমাদের বাসায় যেতে বলেছে রাতে তারা আসবে।”
“এ্যা আম্মু আব্বু কোথায় গেছে? আমাকে তো কিছুই বলল না।”
“আসলে জেনে নিস। আসি বাই।”
বলেই ভাইয়া পকেটে থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে দিয়ে চলে গেল আমি হাঁ করে তাকিয়ে ‌র‌ইলাম।
আমার চোখের সামনে আদনান ভাইয়ের গাড়ি চলে গেল।আমি দাঁড়িয়ে দেখলাম অপমান এই সব কিছুর সুদ আমি একদিন তুলবোই খাটাশ।

তার কিছুক্ষণ পর অটো এলে আমি সোজা মামনি বাসায় চলে এলাম। আদনান ভাই সোফায় বসে ছিল। আমার দিকে চোখ বাঁকিয়ে একবার তাকিয়ে উঠে চলে গেল।
ভেংচি কেটে মামনির কাছে গেলাম।‌ আমার জামা রেখে গেছে তাই ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ছাদে চলে গেলাম।
আদনান ভাইকে আজকে আমি ভয় দেখাবো রাতে ভূত সেজে ইয়েস। এই বাসায় আজকে থাকবো আমি সব ভেবে পরিকল্পনা করে এসেছি অটোতে উঠে।
এখন শাড়ি দরকার। মামনির কাছে থেকে একটা শাড়ি নিতে হবে।
“এখানে কি করছিস?”
আদনান ভাইয়ের আওয়াজে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
“কি করছি দেখতে পাচ্ছ না।”
“দেখছি তুই না ঘুমিয়ে এখানে এসেছিস কেন?”
“আমার ইচ্ছে করছে তাই।”
“নিচে যা ঘুমা।”
“না আমি এখন ঘুমাবো না।
“যা।”
“উফফ যাব না বললাম তো ঝালাচ্ছো কেন?”
“তুই সোজা কথা শুনার মেয়ে না”। বলেই ভাইয়া আমার একদম কাছে চলে এলো। আমি ওয়ালে হেলান দিয়ে আছি ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল,,
” তুই এতো ঘাড় তেরা কেন ?”
“আমি ঘাড় তেরা না। তুমি আমার পিছে লাগ কেন বলো তো সবসময়।”
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলাম ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছু বলছে না কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই চাহনি একদম অন্যরকম আমি ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম কি গভীর এই তাকানো আমাকে ঘায়েল করে ফেলে। বুকের ভেতরটা ধড়াস ধড়াস করছে ভাইয়াকে যেন অচেনা লাগছে আমি আমতা আমতা করে কিছু বলবো ভাইয়া বললো,,,
” তোর পিছে শুধু আমিই লাগবো বুঝছিস আর যেন কেউ না আসে।”
কথার আগামাথা কিছু বুঝলাম না ভাইয়া পিছু ঘুরে চলে গেল।
আমি হা করে তাকিয়ে র‌ইলাম।

নিচে নেমে মামুনির কাছে বসে পরলাম। মামনি বসে ছিলো আমি ও বসে বললাম,,
মামনি, ও মামনি ” আহ্লাদী গলায় বললাম।
আমার ডাক শুনে তাকালো আমার দিকে তারপর ভ্রু নাচিয়ে জিগ্গেস করলো কি?
“মামনি তোমার না কত সুন্দর সুন্দর শাড়ি আছে আমাকে একটা দিবে আজকে আমি শাড়ি পড়তাম। আমার না খুব শাড়ি পরতে ইচ্ছে করতেছে।”
আমার কথা শুনে মামনি চোখ বড় বড় করে তাকালো,, কথাটা হজম করতে পারেনি মনে হয়।পারবে কি করে এর আগে আমি কখনও শাড়ি পরি নাই। আর যতবারই কেউ পড়তে বলেছে আমি না করে দিয়েছি। কোন বিয়েতে ও পরিনাই।
” কি হলো দিবে না শাড়ি?”
“তুই শাড়ি পরবি।এটা আমি ঠিক শুনছি তো।”
“এমন‌ করছো কেন পরবো তো বললাম। আগে না করতাম বলে কি এখন পরতে চাইতে পারবো না।”
মন খারাপ করে বললাম। আরে গাল ফুলাচ্ছিস কেন দেব না বলেছি কি?
“লাল টকটকে শাড়ি আছে আমার ওইটা পর তোকে না
পরী লাগবে।”
মামির কথা শুনে টাক্সি খেলাম লাল শাড়ি বলে কি ভূত সাজতে তো সাদা শাড়ি লাগবে না না লাল শাড়ি পড়া যাবে না।
“আমার সাদা শাড়ি চাই।”
মামনি আমার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলল,,” তুই সাদা শাড়ি পরবি?”
“হুম আমার সাদা শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছে। প্লীজ মামনি দাও না।”
“এটা আবার কেমন ইচ্ছে রে বাবা? সাদা তো ভালো শাড়ি নাই একটা সাদার মধ্যে কালো আছে।”
বলে মামনি উঠে শাড়ি বের করতে লাগলো তারপর সাদার মধ্যে কালো টা বের করলো আরো কিছু সুন্দর শাড়ি আমি ভূত সাজতে না চাইলে অন্য শাড়ি পরতাম।
মামনির শাড়ি জর্জেট এর কালো পুরো ছোট ছোট ফুল এটা পরলে আমাকে ভূত লাগবে না‌।
“এটাতে হবে না।”
“কি হবে না?” অবাক হয়ে বলল।
মামণির কথার উত্তরে কিছুই দিলাম না মন খারাপ করে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছি। শাড়ির মাঝে হঠাৎ একটা সাদা কি যেন চোখে পড়ল আমি হাত বাড়িয়ে সেটা হাতে নিয়ে বললাম ,,,, এটা কি মামনি?
“আর বলিস না এইটা একটা সুতির সাদা শাড়ি। আমার কলেজের একটা ফাংশন আমাকে ভূত সাজার জন্য এই শাড়িটা কিনতে হয়েছিল। আমরা একটা নাটক করছিলাম ফ্রেন্ডরা মিলে তখন কিনা আমাকে ভূত সাজার পার্ট দিল কি আর করব তখন এই শাড়িটা কিনে ছিলাম ভূত সাজবো বলে তারপর থেকেই ঘরেই পড়ে আছে।”
মামনি কথা শুনে আমার চোখ চিকচিক করে উঠলো।ও মায় আল্লাহ ভূত সাজা জন্য মামনি এই শাড়ি ব্যবহার করেছিল। আমি ও তো তাহলে এইটাই ব্যবহার করতে পারব।

“মামনি আমি এই শাড়িটাই পরবো আমাকে এইটাই দাও।”
বলেই শাড়িটা হাতে নিলাম খুশি হয়ে।
“তুই পাগল হইলি নাকি রে দোলা। এই শাড়ি পড়বি পাগল এটা কোন শাড়ি?”
“ইস মামনি দাওনা আমার এমন একটি শাড়ি পরতে ইচ্ছে ছিল এই জন্যই তো বললাম দেখো পেয়ে ও গেলাম প্লিজ প্লিজ প্লিজ না করো না।”
“তুই সত্যিই এটা পরবি তোর মাথাটা একদম গেছে রে দোলা মা।”
“আমার মাথায় কিচ্ছু হয় নাই তুমি বুঝতে পারতেছ না দাও শাড়িটা আমি এইটাই পরবো।”
মামনি হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। মামনি কে দিয়ে এই শাড়িটা পড়লাম।এখন আর ভূত সাজতে পারবেনা এখন সুন্দর করে সেজেগুজে থাকি।
মামনি আমাকে শাড়িটা পরিয়ে দিল পাথর হয়েই। তারপর আমি সুন্দর করে সেজেগুজে রুমে বসে র‌ইলাম থেকে আজ বের হবো না। আদনান ভাই যদি আমাকে আবার এই শাড়ি পরা দেখি নাই তাহলে।
দরকার নেই বাবা।
“তোকে এই বাজে শাড়িতে সুন্দর লাগছে রে দোলা। আমার দোলা সোনাটাকে একদম সাদা পরী লাগছে।”
“থ্যাংক ইউ মামনি।”মিষ্টি করে হেসে বললাম।
মামনি আমার গালে হাত রেখে চুমু খেলো।
মামনি কে বলে দিলাম আজকে আমি এখানেই থাকব মামনি ও খুশি হল বলল আমার সাথে ঘুমাবে সন্ধ্যার আগে খেয়ে নিয়েছিলাম এজন্য আর রাতে খেলাম না। রুমে বসে থাকলাম মামনি খালি আমাকে দেখছিল। আগে আগে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য শুয়ে পরলাম।
মামনিকে ও টেনে আমার পাশে শুইয়ে দিলাম।
“কিরে শাড়ি পরিয়া ঘুমাবি নাকি।”
“হ্যাঁ মামুনি আজকে আমি শাড়ি পরে ঘুমাবো।
“তোর মাথাটা সত্তি গেছে।”
“ওফ আমার মাথায় বিলি কেটে দাও না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”
মামুনি আর কথা বইলোনা আমার মাথায় বিলি কেটে দিল।
আমি ঘুমের অ্যাক্টিং করছি মামনি ঘুমিয়ে পড়লে আমি আমার মিশন শুরু করে দেবো। প্রায় আধাঘণ্টা পর মামুনির নাকে শব্দ বেড়ে গেল জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।আমি ফট করে চোখ মেলে তাকালাম মামনি ঘুমিয়ে পড়েছে ওর আমি উঠে বসে মামনি মুখের কাছে এগিয়ে মামুনকে ভালো করে দেখে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম।

আয়না সামনে এসে শাড়িটা সুন্দর করার একটু ঠিক করে নিলাম। তারপর চুলগুলো ছেড়ে এলোমেলো করে দিলাম। ঠোটে লাল লিপস্টিক ঠোঁটে বাইরে দিয়ে ও দিলাম। তারপর চুল গুলো সামনে এনে মুখ ঢেকে ফেললাম। আরেব্বাস একদম তো ভূত লাগছে আমাকে।নিজেই নিজেকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম আমি আবার ভূতে ভয় পাই খুব তাড়াতাড়ি আয়না সামনে থেকে সরে এলাম। মাই গড নিজেকে দেখে নিজে ভয় পেলাম।
আদনান ভাইয়া তো আজকে ভয় পাবেই পাবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এগারোটা বাজে এখন যাব না বারোটায় খাব বারোটার সময় ভূত আসে।
আমার উপর অত্যাচার করার সুদ আজকে আমি নিয়েই ছাড়বো।
ওইভাবেই রুমে বসে রইলাম উঠে একবার পায়চারি করছি আবার বসছি। মাঝে মাঝে মামনি নড়ে উঠছে আমি আবার বিছানার কাছে এসে বসছি। ঘড়ির কাঁটার নড়ে না যেনো। ভাই এখনো জেগে আছে আমি জানি।কারণ অফিসের কাজ দিয়ে বেশিরভাগ সময়ই জেগে থাকে ভাইয়া।
বারান্দায় এসে দেখলাম লাইট জ্বলছে। বারান্দা থেকে দরজার সামনে এসে। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছি ভাইয়ার রুম বেশি দূরে না দুইটার পরে। ভাইয়া দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ভাইয়াকে দিয়ে তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকলাম।
গটগট আওয়াজ হচ্ছে কিছুক্ষণ পর আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। রুমের ভেতর অন্ধকারে বসে আছি। সময় বারোটার সময় ঘড়ির কাঁটা যেতেই আমি উঠে দাড়াই।
অন্ধকারে আমি ভাইয়ার রুমে এলাম অদ্ভুত ভাইয়ের রুমে ডিমলাইট নাই। অন্ধকারের নিজেরই ভয় করছে। আমার হাতে ম্যাচ আছে এইটা ধরাবো রুমে গিয়ে। দরজা খুব সাবধানে খুলে ভেতরে ঢুকে আমি ভূতের আওয়াজ চালালাম এটা আমার আওয়াজ না এটা আমি মোবাইলে দিয়েছি।
এবার আমি মোমবাতি জ্বালাতে এমন সময় আমার সামনে আগুনের একটুখানি কুণ্ডলী জ্বলে উঠলো। আচমকা এটা হ‌ওয়ায় আমি থমকে গেলাম। বড় বড় চোখ করে সেদিকে তাকিয়ে আছি।
আগুনের কুন্ডুলিতে একাই নড়ছে আমার চোখ সেখানে স্তব্ধ । আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। শুধু সেটাই দেখছি সেটা আমার চারপাশে ঘুরছে। এটা কিভাবে হচ্ছে?কে করছে বিছানায় তাকালাম কেন কেউ শুয়ে আছে তার মানে আদনান ভাই বিছানায় শুয়ে আছে। এটাকে করছে ভূত??
ভুতের কথা ভাবতে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো শরীর ঘেমে একাকার। আমি ঠিক বারোটার সময় এসেছি ভূত সেজে ভাইয়াকে ভয় দেখাতে। আর আমি ভয় দেখানোর আগেই অন্য কেউ আমাকে ভয় দেখাচ্ছে তার মানে এটা সত্যি কারের ভূত। ভয়ে আতঙ্কে আমি কাঁদতে লাগলাম। আমার শরীর ভয়ে থর থর করে কাঁপছে আমার হাতের ম্যাচ কট করে হাত থেকে পড়ে গেল। পড়ার শব্দ পেয়ে নিজে ভয় পেয়ে নিজেও পড়ে যেতে লাগলাম কেউ আমাকে পেছন থেকে কোমর জরিয়ে ধরে পড়ার হাত থেকে বাঁচালো।
আমি অস্পষ্ট সুরে ভূত ভূত বলে কাপাকাপি করছি। আচ্ছা আমাকে কি ভুতে জড়িয়ে ধরেছে?কি হয়েছে আমাকে কি ভুতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। এদিকে সেই আগুনের কুন্ডুলিটা আর দেখা যাচ্ছে না। রুম একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার।অন্ধকার আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না শুধু একটা শরীর আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। তার হাত আমার কোমরে। সেকি ভুত ভূত কি আমাকে ধরেছে।এখন সত্যি কারের ভূতের হাতে কিনা আমার ঘাড় মটকানো হবে। ইস কেন যে ভাইয়াকে ভয় দেখানোর জন্য আসলাম। একবারও ভাবলাম না যদি যদি সত্যি কারের ভূত আছে আমার কি হবে?
আচ্ছা ভাইয়া তো রুমে আছে আমি ভাইরে ডাকি।
আমি ডাকলে ভাইয়া আমাকে বাঁচাতে পারবে।
ভাইয়াকে যে ডাকবো সেই শক্তিও নাই। কথা বলতে পারছিনা কথা জানো গলায় আটকে আছে কথা বলার কোন শক্তি নাই। ওই ভূত আমার ঘাড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আচ্ছা ভূত কি নিঃশ্বাস নেয়?অমনি ভূত আমার ঘাড়ে নরম উষ্ণ ছোঁয়া দিল। সাথে মনে হয় কামড়ে দিল। কামড় দিতেই আমার মনে পড়ে গেল ভ্যাম্পায়ার আচ্ছা এটা কি কোন ভ্যাম্পায়ার আমার রক্ত খেয়ে নেবে। এখন কি আমাকে মেরে ফেলবে।
আমি অতি উত্তেজনা আর ভয়ে ওইখানে জ্ঞান হারালাম।
#চলবে

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৪

0

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#writer_nondini_nila
#Part_4

আদনান ভাইয়ের ধমকি শুনে আমি ওইখানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ওদিকে মামণির ডাক ভালো শোনা যাচ্ছে। আজকে আমি বড়োসড়ো কেস খাবো মামনি আমাকে পুলিশের মত জেরা করে বলবে আমি এখানে কেন? কি বলবো? কি বলবো? যদি আদনান ভাইয়া বলে দেয় আমি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম ছিঃ ছিঃ ছিঃ মান সম্মান সব ডুবিয়ে দিলাম।
কাঁদো কাঁদো মুখ করে আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,
তিনি কি শান্তিতে সাজুগুজু করছে ছেলেরা মেয়েদের মত এত সাজুগুজু করতে পারে আল্লাহ। চুল ঠিক করছে হাতে ঘড়ি পড়ছে নিজেকে আয়না একশ ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে।
আর এদিকে আমার যে কি হচ্ছে সেটা শুধু আমি জানি।
“ভাইয়া আমি নিচে যাই মামনি আমাকে ডাকছে।”
কাচুমাচু করে বললাম।
ভাইয়া আমার দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে বলল,,
” বিছানায় বস।”
“কিন্তু মামুনি তো ডাকছে।”
“তোকে বসতে বলেছি।”
ভাইয়ার শক্ত কথা শুনে আর কিছু বলতে পারলাম না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানায় গিয়ে বসলাম। ওমনি মামুনি নুডুলস এর বাটি হাতে করে আদনান ভাইয়ের রুমে এলো আমার নামে হাক ছাড়তে ছাড়তে।
আমাকে এখানে দেখে অবাক হয়ে বলল,,
” একি রে দোলা তুই এখানে কি করছিস? আমি তোকে সেই কখন থেকে ডাকছি।”
মামনি বলতে বলতে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আমি আমতা আমতা করছি আর ভয়ে ভয়ে আড়চোখে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছি।
এখানে আছি সেটা আমার ভয় না ওতোটা কারণ এই রুমে আমি আসি‌ই কিন্তু ভয় হচ্ছে অন্য জায়গায়।
আদনান ভাই যদি বলে দেয় আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইয়াকে দেখছিলাম। ছিঃ ছিঃ ছিঃ মামনি জানলে কি ভাববে আমাকে নিয়ে ভেবেই আমার লজ্জার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

হতদম্ব হয়ে বসে আছি। আমার পাশে বসে আছে আদনান ভাই। মামনি নিচে নেমে গেছে একটু আগে নুডুলস এখানে রেখে। আদনান ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছু বলে নি। উল্টা মামনি কে বলেছে যে তিনি আমাকে ডেকেছিল এখানে আসতে বলেছে। তাই মামনি আর কিছু না বলে চলে গেছে।
পায়ের জন্য ভাইয়া বলেছে‌ এতো নড়াচড়া না করা ভালো এখানেই খেয়ে নিক।তাই রেখে গেছে। আমি ভাইয়ার মিথ্যা কথা শুনে হতভম্ব হয়ে আছি।ভাইয়া তখন আমার পাশে বসলো আর আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
“তোর আসল ব্যাপারটা বলি নাই ভাবিস না তোকে বাচিয়ে দিয়েছি। সেটা আমি এখন ও বলে দিতে পারি।”
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
আমি বুঝলাম না কিছু তাই বললাম,,” মানে।”
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর হয়ে বলল,,,” তোর ফেসবুক পাসওয়ার্ড দে।”
আমি ৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম মনে হয়। ভাইয়ের কথা শুনে আমার শ্বাস আটকে যাবার উপক্রম। তাহলে এই ছিল মনে মনে শয়তানটার।
“ফেইসবুক পাসওয়ার্ড দিবি নাকি বলে দেব যে তুই আমার দরজায় উকি দিয়ে আমার খালি গা দেখছিলি নির্লজ্জের মতো।”
ভাইয়ার কথা শুনে লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম। নিজের গালে নিজেরই কষে একটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে। ছিঃ কেন যে এখানে এসে নিজের পায়ে নিজেই কোরাল মারলাম। ভাই আমাকে কি বেহায়া মেয়েই না ভাবছে।

“কি হল মাথা নিচু করলি কেন? পাসওয়ার্ড দিতে বলেছি।”
ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে বললাম,,,” আমি ফেসবুক চালাই না ভাইয়া সত্তি।”
আদনান ভাই কঠিন মুখ করে বলল,,,” আবার মিথ্যা বলছিস মিথ্যা বলে লাভ নাই। আমি কিন্তু জানি সব তাই তাড়াতাড়ি পাসওয়ার্ড দে তুই না দিলেও পাসওয়ার্ড নিতে আমার দুই মিনিট সময় লাগবে না। কিন্তু আমি একা নিতে চাইছিনা তোর কাছ থেকে নিতে চাইছি। ভালোই ভালোই দে।”
আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,,” আমি সত্যিই…
এবার ভাইয়া মৃদু চিৎকার করে বলল,,,”আরেকবার মিথ্যা বললে কিন্তু মার একটাও মাটিতে পড়বে না।”

ভাইয়ার সাথে আর মিথ্যা কথা বলতে পারলাম না। সব বলে দিলাম। ভাইয়া আমার সামনে বসে আমার শখের আইডিটা রিমোভ করে দিল আর আমি তা কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে দেখলাম।
আমার মতো হতভাগা আর কেউ কি আছে।
ভাইয়া আমার চরম সর্বনাশ করে ক্ষান্ত হলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নুডুলসের বাটি নিজের হাতে নিল। আমি দাঁত কিড়মিড় করে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
“এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নাই। আমাকে না জানিয়ে আইডি খুলে খুব বড় অন্যায় করেছিস তুই?”
চামচ দিয়ে নুডুলস নিজের মুখে পুরে কথাটা বলল।
আমি আগুন চোখ করে তাকিয়ে আছি। এখন যদি আমার হাতে কোন অদৃশ্য ক্ষমতা থাকত। আমি এই খাটাশ, শয়তান আদনানকে আগুনের গুলি ছোড়ে ভষ্স করে দিতাম।
এত রাগের মাঝে আমার রাগটা আরো বেড়ে গেল।আমার ফেভারিট খাবার কি না আমার সামনে বসেই আদনান ভাই গিলছে সেটা আমি একদমই সহ্য করতে পারলাম না।আইডি আমার শখের থাকলেও ওইটা জন্য নিজেকে সামলে রাখতে পারব কিন্তু নিজের পছন্দের জিনিস অন্য কে খেতে দেখতে পারবোনা। আর যদি দেখতে হয় সেটা হবে আমার কাছে সবচেয়ে কষ্টদায়ক।
“তুমি নুডুলস খাচ্ছো কেন? ওইটা আমার জন্য রান্না করেছে মামনি।”
আদনান ভাই যেন আমার কথা শুনলে না।আমার কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। আমার এবার রাগ উঠল আমি একটু জোরে গলার সাউন্ড বাড়িয়ে বললাম,,,
“কি হলো কথা কানে যাচ্ছেনা নুডুলস দাও।আমার খাবার তুমি খাচ্ছ কেন? আর তুমি জানো না এটা আমার কতো পছন্দের। আমাকে না দিয়ে নিজে একা খাচ্ছ কেন?”
এবার আদনান ভাই চামচ বাটিতে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল খুব ধীরে,,”আজকে তুই নুডুলস পাবি না এটা আমি তোর সামনে বসে একা খাব।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,,,” আমি পাবোনা মানে কি?”
ভাইয়া আবার এক চামচ মুখে দিয়ে বলল,,,” পাবি না মানে পাবি না চুপচাপ বসে থেকে আমার খাওয়া দেখ।”
“দেখবো মানে কি আমি দেখব না আমি খাব দাও আমাকে বাটি। শেষ করে ফেললে তা আর একটু খাবে না দাও আমাকে।”
বলে হাত বাড়িয়ে বাটি নেওয়ার চেষ্টা করতেই ভাইয়া বাটি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আমি গোল গোল চোখ করে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি।
“ডোন্ট টাচ মি। আজকে তুই নুডুলস পাবিনা এইটা তোর শাস্তি।তোর ফেভারিট জিনিস তার চোখের সামনে বসে আমি খাব আর তুই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবি আর জ্বলবি কিন্তু খেতে পারবি না। আমার চোখের আড়ালে লুকিয়ে ফেসবুক খুলার এটাই শাস্তি।”
ভাইয়া কথাটা বলে আবার খেতে লাগলো আর আমি বিছানায় বসে বড় বড় চোখ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কাঁদো কাঁদো মুখ করে।

সত্যি আদনান ভাই আমাকে দিলনা লুডুলস। আমার সামনে বসে চেটেপুটে লুডুলস খেল জীবনে আমি তাকে এভাবে নুডুলস খেতে দেখিনি। আর আমি অসহায় মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম। কান্না পাচ্ছিলো আমার কিন্তু গরিলাটার একটু মায়া হলো না আমার প্রতি। কি যে খারাপ লাগছিল বলে বুঝাতে পারব না খাওয়ার জন্য।
ভাইয়া খাওয়া শেষ আমার হাত ধরে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।বাইরে এসে মামুনি কে কি সুন্দর মিথ্যায় না বলল আমি নাকি সবটুকু নুডুলস খেয়েছি।
ভাইয়ার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। ভাইয়ার দিকে তাকালাম ভাইয়া আমাকে চোখ টিপে মামনি কে বলল,,
“আম্মু আমি দোলাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
মামা নি বলল,, ” এখন‌ই আমি না হয় পরে দিয়ে আসতাম।”
“ওর এখন মেডিসিন নিতে হবে।”
আমার মেডিসিন নিতে হবে এটা আদনান ভাইয়ের মুখে শুনে চমকালাম ভাইয়া জানালো কিভাবে?

তারপর ভাইয়া আমার হাত ধরেই বাসা থেকে বেরিয়ে এলো ওষুধ খেতে হবে শুনে মামনি আর না করেনি।
দরজার বাইরে আসতেই ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম,,
“তুমি মামনি কে মিথ্যা বললে কেন?”
আদনান ভাই ঘাড় বাঁকিয়ে বললো,,” কি মিথ্যা বললাম।”
“আমি নুডুলস খাই নাই। আমাকে সামনে বসিয়ে রাক্ষসের মতো তুমি একা খেয়েছো।আর মামনি কে কিনা বললে আমি খেয়েছি।”
ক্ষোভ নিয়ে বললাম।
“বাসায় গিয়ে খাস। আমি দেখতে আসবো না ওইটা তোর জন্য শাস্তি ছিলো। আর আম্মু তো তোর জন্য করেছিল তাই এই টুকু মিথ্যা না বললে আবার আমাকে ঝাড়ি খেতে হতো।”
“আমি এখন গিয়ে বলে দেব তোমাকে আমি ঝাড়ি খাওয়াবো।”
বলে হাত চালাতে লাগলাম।
“হাত ছার রাক্ষস। আমি আজকে তোকে ঝাড়ি খাওয়াবোই আমার ফেবারিট খাবার নিজে রাক্ষসের মতো গিললি।”
আদনান ভাই হাত তো ছারলোই না উল্টা আমাকে শক্ত করে ধরে কোলে তুলে নিলো আমি ছটফট করছি নামার জন্য।
ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে কর্কশ গলায় বললো,,
“নড়াচড়া করলে এখানে তোকে আছাড় মারবো স্টুপিট। আর তোকে আমি বলছি না আমাকে তুই তোকানি করবি না। আপনি করে বলতে বললে তো শুনিস‌ই না এখন তুমি করে বলিস আবার তুই।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি ও বলল,,, ” নিজে তুই তোকানি করলে দোষ নাই আমি করলেই দোষ তাই না।”
ভাইয়া চোখ মুখ শক্ত করে বলল,,” আমি তোর বড় তাই তুই বলতেই পারি কিন্তু তুই বলতে পারিস না।”
“আমি এখন থেকে তুই করেই বললো তোকে। তুই একটা শয়তান, খাটাস, হনুমান , বাঁদর, বিলাই, গরিলা তোর জন্য আমার সাধের আইডিটা গেল। আহা কতো শক করেই না খুলেছিলাম আইডিটা‌। আবার আমার নুডুলস একা নিজের পেটে দিলি কতো বড় খাটাস তুই একটু ও মায়া হলো না আমার জন্য।”
আর একটা বাজে কথা বললে কিন্তু এখানেই ফেলে দেবো বলে দিলাম।
আদনান ভাই কথাটা বলেই হাত আগলা করে দিলো।আমি হকচকিয়ে গেলাম আদনান ভাইয়ের কান্ড দেখে তারাতাড়ি হাত বাড়িয়ে ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
চোখ বন্ধ নিলাম ভয়ে। আমি ভাইয়ার গলা জরিয়ে মাথাটা বুকে মিশিয়ে নিয়েছি এটা দেখে ভাইয়া হাত শক্ত করে নিলো।
“এখন ভয় পাচ্ছি কেন? আমাকে ওইসব বলার সময় তো ভয় পাচ্ছিলিনা।”
আমি ভয়ের মধ্যে থেকে ও বললাম,, ” ভয় পেলে কি বলতে পারতাম।”
আদনান ভাই রেগে বলল,,,”তুই আমাকে বকে খুশি।”
যদি আমি এক সত্যি ফেলে দেয় না না ,,‌ আমি মাথা নেড়ে না বললাম।
আমাদের বাসায় রেখে চলে গেল আদনান ভাই।
বাসায় এসে আম্মুকে নুডুলস রান্না করতে বললাম রান্না করে দিল কিন্তু আমার আর খেতে ভালো লাগল না‌ একটু ফ্রি রেখে দিলাম এত পছন্দের জিনিস তাও খেতে ইচ্ছে করলোনা একটা জেদ চেপে বসেছে ভাই আমাকে ওই ভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য। ভাবলাম আর জীবনে নুডুলস খাব‌ই না হূহ।
#চলবে

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৩

0

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#writer_Nondini_Nila
#Part_3

আদনান রুমে এসে গায়ে শার্ট খুলে সোফায় ছুড়ে মারলো। রাগে ওর শরীর কাঁপছে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হয়েছে হাত দিয়ে তা মুছে রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে এলো।ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বাম হাত বাড়িয়ে ঝর্না ছারলো ঠান্ডা পানি আদনান এর গা বেয়ে পরছে সাথে ওর রাগ কমছে।
আদনানের রাগের কারণ হচ্ছে।
কিছু ক্ষন আগে একটা ছেলের সাথে মারামারি করে এসেছে আদনান। ছেলেটার নাম সেলিম। এলাকার বখাটে ছেলে। ছেলেটা কয়েকদিন ধরেই দোলাকে ফলো করছে‌। ছেলেটার খারাপ মতলব আছে সেটা আদনান ভালো করেই বুঝেছে। ছেলেটা খবর পেয়েছে রাজিব এর কাছে। রাজিব খেয়াল করেছে দোলাকে ছেলেটা বাজে নজরে দেখে ও ফলো করে।
রাজিব হচ্ছে আদনান দের ডাইভার এর ছেলে।
ওর থেকে কালকেই খবরটা জানতে পেরেছে তারপর‌ই ওই ছেলের খোঁজ নিয়েছে সারাদিন আজকে ওই ছেলেকে ইচ্ছামতো দোলাই দিয়েছে।
ওই ছেলের এত বড় স্পর্ধা আমার জিনিসে দিকে নজর দেয়। শুধু ওর হাত-পা ভেঙেছি কিন্তু আমার তো ওকে খুন করে ফেলতে চেয়েছিলাম। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে আদনান।
চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। আস্তে আস্তে নিজেকে শান্ত করে। গোসল শেষ করে তোয়াল পেচিয়ে একহাতে চুল ঝাকাতে ঝাকাতে বেরিয়ে আসে আদনান।
দুইদিন এসবের ঝামেলায় দোলার কাছে যায় নি‌। খোঁজ নেয়নি এমন না কিন্তু সামনে যায় নি।

এদিকে,,,
আমি আদনান ভাইদের বাসায় এসেছি। দেখলাম মামনি কি জানো সিলি করছে সোফায় বসে খুব মনোযোগ সহকারে।দরজা খোলা ছিল বিধায় কলিং বেল চাপতে হয় নাই আমি কথা না বলে চুপে চাপে মামনি পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর আস্তে করে মামুনিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলাম মামনি চমকে উঠলো আর সাথে সাথে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখেই মামনি শক খেল।
“কি হয়েছে মামণি এত শক খাচ্ছ কেন? আমি, আমাকে চেনো না তুমি।”
মামনি বলল, “তুই তোর না পা ভাঙ্গা তুই এই ভাঙ্গা পা নিয়ে এখানে কি করে এলি?”
আমি মামনি কে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে সিরিয়াস হয়ে বললাম,, “আসলাম! খুব কষ্টের করে। এখন তো আমি খুব একটা হাটতে পারি না। কিন্তু তুমি তো আজকে আমাকে দেখতে গেলে না। এজন্যই, তো আমাকে আসতে হল।”
মামনি তখন বলল,, অবাক হয়ে,, “কি বললি আমি তোকে দেখতে যায় নি আজকে সকালেও না গেলাম। আবার ভেবেছি একটু পরে যাব।”
নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলাম,,”তুমি গেছিলে!”
“তো গেলাম না সকালে ও না বসে থাকলাম কতক্ষন।”
মামনি বলল। মামনি কথা শুনে,
আমি নিজের জিভে কামড় দিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,
“একদমই মনে ছিল না! মামনি তুমি কিছু মনে করো না কেমন? আমি না তোমাকে মিস করছিলাম সত্যি আমার বাসায় বসে থাকতে এতোটা বোরিং লাগছিল বলে বুঝাতে পারবো না। এজন্যই তো লুকিয়ে চলে এলাম।”
“ধুর এত ভয় পাচ্ছিস কেন এসেছিস বেশ করেছিস। কিন্তু এভাবে একা চলে আসা ঠিক হয় নি যদি কোথাও পড়ে টড়ে ব্যথা পেতি তখন কি হতো বল তো।”

আমি মাথা নীচু করে ফেললাম । মামনি আমার মাথায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কিনা তারপর, আমাকে টেনে ধরে বললো, “থাক থাক আর মন খারাপ করতে হবে না।”
তার পর মামনি আবার সেলাই করতে লাগল আমি মামনি পাশে বোরিং হয়ে বসে আছি। মামনিকে কি বলে যে এখানে থেকে উঠে আদনান ভাই রুমে যাব সেটাই ভাবছি,,
আর এক হাত মুখে দিয়ে কামড়াকামড়ি করছি।
“কিরে এমন হাত কাঁমরাচ্ছিস কেন?”
মামুনের কথায় চমকে হাত মুখে থেকে সরিয়ে ফেললাম।
“ওই না মানে আসলে।”
“কিছু খাবি কিছু রান্না করে দেবো নাকি বিস্কুট চানাচুর খাবি।”
খাবার কথা বলতেই মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।মামুনিকে আমার জন্য রান্না করতে বলি। সেই সুযোগে আমি এক ঝলক আদনান ভাইয়ের রুমে উঁকি দিয়ে আসবো।
“কিরে কিছু বলছিস না কেনো ? খাবি কিছু।”
“হ্যাঁ খাবো।”
“আচ্ছা কি খাবি বল?”
আমার ফেভারিট নুডুলস তাই মামণিকে নুডুলস রান্না করতে বললাম।
মামনি হাতের কাজ ফেলে রান্নাঘরে ছুটল। আমি মামনি যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম, তারপর সহজে আদনান ভাইয়ের রুমের সামনে চলে এলাম।
দরজা চাপানো একটু ফাঁক করে দেখি আদনান ভাই শুধু প্যান্ট পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কোন এক শার্ট নেই ।আমার একটু লজ্জা লাগল তাই তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়ালাম,,কিন্তু বেশিক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলাম না আবার ঘুরে তাকালাম ভাইয়ার দিকে নির্লজ্জের মত ভাইয়াকে এইভাবে দেখার প্রবল ইচ্ছা জাগল।
এত নির্লজ্জ কবে হয়ে গেলাম।ভাইয়া দেখতে কি জোস আহ কি হ্যান্ডসাম,আমার প্রথম ক্রাশ আহা যখন প্রথম বান্ধবীদের কাছে ওদের বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনতাম তখন ফাস্ট মনে মনে জল্পনা কল্পনা করেছিলাম আদনান ভাইকে নিয়ে।তখন দিন রাত ভাবতাম যদি আদনান ভাই আমার বয়ফ্রেন্ড হতো ইস সবাই কি বলতো ইস দোলার বয়ফ্রেন্ড টা কি সুন্দর হ্যান্ডসাম হট। কিন্তু সেটাতো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভাইয়া আমাকে দুই চোখে দেখতে পারেনা।শুধুমাত্র ছোট বোন হিসেবে যতটুক ভালোবাসার বাসে সে আমাকে কড়া শাসনে রাখে আমি জানি যদি বাই ইনি চান্স জানতে পারে আমি ভাইয়াকে বয়ফ্রেন্ড বানানোর ধান্দা করেছিলাম আমার হাড়গোড় আর থাকবে না।

এখন আমি কলেজের ওই ফাহাদকে লাইক করি।ওকে আমি আমার বয়ফ্রেন্ড বানাবো সবার বয়-ফ্রেন্ড আছে আমার কেন থাকবে না কিন্তু বেচারা হাঁদারাম আমাকে প্রপোজ করল না।ভাইয়াকে দেখে আমার হিংসে হয় ইস কোথায় ভাইয়া আর কোথায় ফাহাদ হ্যাঁ ভাইয়ের মতো ফর্সা কিন্তু এ তো হ্যান্ডসাম না। ভাইয়ের মতো একটু হ্যান্ডসাম হতো ভাইয়ের কি বডি মাস আল্লাহ সব দিক দিয়ে পারফেক্ট গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি আমার ফার্স্ট ক্রাশ যেটা ফাহাদের নাই।
আহাম্মক‌ ফাহাদ ওর নাকি খোঁচা দাড়ি ভালো লাগে না এজন্য ফ্রেশ থাকে।এটা অবশ্য আমাকে বলে নাই আমি ওর চাচতো বোনের থেকে জেনেছি ওর চাচতো বোন তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মেঘলা। মেঘলা থেকেই জেনেছি ফাহাদ আমাকে লাইক করে।
তখন থেকে ভাবছি ফাহাদ আমাকে প্রপোজ করলেই হ্যাঁ বলে দেবো আমার অবশ্য খুব একটা ভালো লাগে না ফাহাদকে। কিন্তু আমার তো বয়ফ্রেন্ড দরকার সবার বয়-ফ্রেন্ড আছে। কত গল্প করে আমার কাছে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে। আমারও তো বয়ফ্রেন্ড নিয়ে গল্প করার ইচ্ছে।
আমি আকাশ পাতাল ভাবছিলাম আদনান ভাইয়ার দরজার উঁকি মেরে।আমার তো মনেই ছিলনা সিংহে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমি এইসব ভেবে নিজের চরম বিপদ ডেকে আনছি।
আচমকা আদনান ভাইয়ার কর্কশ আওয়াজে আমার সমস্ত ধ্যান-ধারণা সমাপ্তি ঘটল। দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে কাপতে লাগলাম।আসলে দরজার মাঝে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম একটুর জন্য পড়ে যায় নাই।তারপর পায়ে ব্যথা তাই ভেতরে ঢুকেই জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
হাই সর্বনাশ কি করলাম? আমি তো ধরা পড়ে গেলাম। এখন আমার কি হবে?
কাচুমাচু করে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি চোখ ছোট্ট ছোট করে আদনান ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালাম। ভাইয়া একদম আমার সামনে দাড়িয়ে আছে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে । আমি তার গম্ভীর মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললাম,,
“তুই এখানে কি করছিস দোলা? আমার রুমের দরজার সামনে লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছিলি কেন?”
কথাটা বলে আরও একটু এগিয়ে একদম আমার গা ঘেষে দাড়ালো।

আমি ভাইয়াকে এমন ভাবে নিজের কাছে আসতে দেখে আরো কাঁপতে লাগলাম। কাঁপতে কাঁপতে আমি ব্যাথা পা দিয়ে পেছাতে গিয়ে আহ করে উঠলাম।
ভাইয়া আমাকে আহ করতে দেখে বিচলিত হয়ে এক হাতে জড়িয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে এলো।
একেতে পায়ে ব্যথা তার ওপর দরজার একটু বাড়িয়ে খেয়েছি।
“গাধা একটা! নরলি কেন? আর তুই এই পা নিয়ে এমন ঢং ঢং করে ঘুরছে কেন?, হ্যাঁ! ইডিয়েট!!”
আমি ব্যথা ভুলে স্তব্ধ হয়ে আছি আদনান ভাই আমাকে খালি শরীরে জড়িয়ে ধরেছে। আমি তার উদাম বুকের সাথে লেপ্টে আছি ভাবতে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে।
বুক ধরফর করছে আমি হতভম্ব হয়ে আদনান ভাইয়ের বুকের সাথে লেপ্টে আছি।

আমি মাথা উঁচু করে হা করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম,,
ভাইয়া রেগে বলল,, ” এমন হা করে তাকিয়ে না থেকে উওর দে তুই এখানে কি করছিস?”
বলে আমাকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে র‌ইল পুলিশের মতো। যেন আমি চোর চুরি করে ধরা পরেছি তাই পুলিশ আমাকে জেরা করছে।
ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,
” আমি তো এমনি ঘুরছিলাম।”
ভাইয়া আমার কথা শুনে বলল,,” কি ঘুরছিলি?”
আমি বললাম,,”হ্যা।”
ভাইয়া রেগে শক্ত হয়ে বলল,,,” এই পা নিয়ে তোকে ঘুরতে বলেছে কে?”
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
“কি হলো করি বলছিস না কেন? তুই এই পা নিয়ে লাফালাফি করে বেরাচ্ছিস কেন?”
চিৎকার করে।
ভাইয়ার চিৎকার শুনে আমি কেঁপে উঠলাম। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছি ভাইয়ার দিকে সরাসরি তাকাতে লজ্জা করছে ভাইয়া এখন ও খালি গায়ে।
ভাইয়া বলল,,
” তুই নিচের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না নিজের হাত মুচরাচ্ছি।
“কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
আমতা আমতা করে বললাম,, “তুমি শার্ট পরো আমার লজ্জা করছে।”
আমার কথা শুনে ভাইয়া গম্ভীর হয়ে বলল,, “লজ্জা করছে তাইনা।”
আমি মাথা নাড়লাম।
ভাইয়া আবার বলল,,,” তাহলে এতোক্ষণ লুকিয়ে দেখছিলি কেন?”
ভাইয়ার কথা শুনে আমার হেঁচকি উঠে গেল। ভাইয়া জানলো কিভাবছ আমি লুকিয়ে দেখেছি। বড় বড় চোখ করে তাকালাম ভাইয়ার দিকে ভাইয়া কঠিন মুখ করে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো আমার দিকে তাকিয়ে ছিস যে তোর না লজ্জা করছে।”
আমি নিজের জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলাম। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।
ভাইয়া ফট করে বসে পরলো আমার পায়ের কাছে।আমি চমকে উঠলাম,,
“কি করছো?”
“চুপ।” ভাইয়া কঠিন হয়ে বলল।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে চুপ করে গেলাম। ভাইয়া আমার পা ধরে দেখতে লাগল তারপর বলল,,,
“কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস?”
আমি বললাম,,”ব্যাথা পাই নাই।”
ইচ্ছে করে মিথ্যা বললাম।
“একটা চড় মারবো। আবার মিথ্যা বলছিস।”
রেগে বলল।

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর ড্রয়ার খুলে ব্যথার মলম এনে আমার পায়ে লাগিয়ে দিল খুব যত্ন সহকারে। আমি মুগ্ধ হয়ে ভাইয়ার যত্ন করা দেখলাম। তখনই মামনির কন্ঠ এলো মামনি আমাকে ডাকতেছে। ভাই হয়তো মামনির ডাক শুনেছে।
ভাইয়া শার্ট পরতে লাগল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। এখন আমার মাথায় আকাশ সমান চিন্তা। এখন মামনি যদি জিজ্ঞেস করে বলে আমি এখানে কেন এসেছি?
কি বলবো তখন?
ভাইয়া শার্ট পরে চুল ঠিক করে একদম নায়ক হয়ে আমার দিকে ঘুরে বলল,,
” তুই দাড়িয়ে আছিস কেন?”
আমি কিছু না বলে বেরিয়ে আসতে যাব, ভাইয়া আবার চিৎকার করে উঠল,
” আর এক পা নরলে তোর পা আমি একেবারে ভেঙে দেব।”
#চলবে

( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।)

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০২

1

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#writer_Nondini_Nila
#Part_2

বড় বড় চোখ করে বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আদনান ভাইয়ের দিকে। জীবনে এতো বড় শক মনে হয় খাই নাই আর। আদনান ভাইয়ের দৃষ্টি সামনের দিকে ভুলে ও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।একইভাবে সামনে দিকে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে আর আমি তার কোলে থেকে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি হতভম্ব হয়ে। আদনান ভাইয়ের ফর্সা মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে চোখ একটু ছোট করে হেঁটে যাচ্ছে। তার এই শক্ত কঠিন মুখ দেখেই আমার হার্ট এটাক করার অবস্থা। শেষমেষ কিনা আজ কেউ ধরা খেলাম তার হাতে।নিজের কপাল নিজের ই চাপরাতে ইচ্ছে হচ্ছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। এতো পোড়া কপাল আমার একটু শান্তি পায় না এরজন্য। আহারে বেচারা পা আমার কি অবস্থা হয়েছে। এই খাটাশ টার জন্য আমার পায়ের এই হার হলো।

তখন ভাইয়াকে দেখে আমি ভয়ে হাত থেকে ব্যাট নিজের পায়ের উপর ফেলে দেই।আর ও মাগো বলে চিৎকার করে পা ধরে নিচে বসে পড়ি আমি বসার সাথে সাথে ভাইয়া এক প্রকার ঝড়ের গতিতে আমার কাছে এসে পা ধরে ঘাসের উপর বসে নিজের হাঁটুর উপর আমার পা নিয়ে দেখতে থাকে কি হয়েছে? কাঠের ব্যাড সেটা তো আর কম ভাড় না এক আঙ্গুলে পড়ে সেটা সাথে সাথে ফুলে উঠেছে আর সাইড দিয়ে লাল হয়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে আমার পা।আহ কি ব্যথা ভাইয়া আমাকে অবাক করে দিয়ে একটু বকলো না বরংচ আলতোভাবে ছুঁয়ে দিয়ে বলল,,
“জানি এটা হ‌ওয়ার বাকি ছিল আমি জানতাম এমন কিছুই ঘটবে। এই জন্যই তোকে আমি বারবার বাচ্চাদের মত লাফালাফি করতে মানা করি তুই এখন আর ছোট্ট বাচ্চা রোশনী বড় হয়েছিস। কিন্তু তুই তো আমার কথা শোনার মেয়ে না। আর তোর ওড়না কোথায় ওড়না কি কোমর এ বেঁধে রাখার জিনিস বেয়াদব মেয়ে তুই কি এখনো ছোট বাচ্চা রয়েছিস। এই মাঠ ভর্তি লোকের সামনে এভাবে ওনার কোমরে বেঁধে লাফালাফি করছিস।”
ভাইয়ার কথা গুলো একদমই চিৎকার আর রাগ নিয়ে ছিল না খুব করুন গলায় ছিল সে আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিল তারপর একটু মুখটা শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আর কিছু না বলে কোলে তুলে নিল।ভাইয়ার আচমকা কাজে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম স্তব্ধ হয়ে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি। মাঠের সবাই আমাদের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমরা সিনেমা দেখাচ্ছে অসহ্য।
আমি সবার দিকে তাকিয়ে একবার ভেংচি কেটে তারপর ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলাম।
আজকে যে ফাস্ট ভাইয়ের কোলে উঠেছি এমনটা না এর আগেও বহুবার আদনান ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়েছে।এমনি এমনি না সব সময় আমি কোন না কোন আকাম করেছি আর তখনই রেগে বকাবকি করে খোলে নিয়ে বাসায় গিয়েছে। আর এখন যদি কোলে নেওয়া নিয়ে কিছু বলি খাব একটা ধমক তার থেকেই ভাবে থাকায় বেটার। আর যে ব্যথা পেয়েছি এই পা নিয়ে আমি হাটতেও পারবোনা।

ভাইয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম। আচমকা ভাইয়ার গম্ভীর কণ্ঠে বাস্তবে ফিরে এলাম,
“এমন অসভ্যের মত গলা জড়িয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
লেহালুয়া তিনি আমাকে কোলে নিয়ে সবার সামনে চলতে পারবে আর আমি তার গলা জড়িয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবো না।
কত বড় বদমাইশ হলে এমন ভাবে আমাকে বলতে পারে। আমি কটমট করে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
আদনান ভাই সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেছিল এবার আমার মুখের দিকে তাকালো।
“কি হলো এভাবে চোখ কটমট করছিস কেন?”

আমি ভীতু ভাইয়ার সামনে তো উপর এবার বলেই ফেললাম সাহস করে নিজে আমাকে কোলে নিয়ে যাচ্ছে তাতে কিছু হচ্ছেনা আর এখন আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলেই নাকি আমি অসভ্য হয়ে যাব।

“তুমি আমাকে অসভ্য বললে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি বলে আমাকে অসভ্য বলবে নিজে যে আমাকে এমন সবার সামনে নির্লজ্জের মত কোলে নিয়ে হাঁটছো এতে তুমি অসভ্য হচ্ছে না আর আমি তোমার গলা জড়িয়ে ধরেছে আরেকটু তাকিয়েছি বলে অসভ্য হয়ে গেলাম।কালকে তুমি আম্মুর সামনে আমাকে জা নয় তাই বলে বকে এসেছ তার জন্য কিনা আমার দুই দিন ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়েছে মার কাছ থেকে আবার আজকে তোমার জন্য শুধু মাত্র তোমার এই খাটাশ মুখটা দেখে আমার পা ভেঙে গেল এই অবস্থা হলো আর তুমি কিনা আমাকে সারারাস্তা ধমকাতে ধমকাতে আসছো। মামুনির সাথে আজকে দেখা করব তোমার নামে যদি আমি বিচার না দিয়েছি তো আমার নাম ও দোলা নয় হুহ।”
খুব সাহসী হয়ে একদমই কথাগুলো বলে উঠলাম।এই কথা বলতে বলতে কখন যে বাসার চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি। আমরা এখন আমাদের বাগানে আছি।আমার কথা শেষ হতেই আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে নেই সে সামনে দিকে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে আমি তো ভাবতেছি এতগুলো কথা যে বলে ফেললাম রাগের মাথায় এখন আমার উপর দিয়ে যে কি যাবে তাই ভাবছি কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাই আমাকে আর কিছুই বলো না এসব বিষয় এ ।
ড্রইংরুমে এনে সোফায় বসিয়ে দিল ভাইয়া আমাকে আমাদের এভাবে বাসায় আসতে দেখি মা এক প্রকার ছুটতে ছুটতে এসে দাঁড়াল পাশে আমার দিকে কঠিন করে তাকিয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?
আমার নামে একশো কুড়ি বদনাম করতে শুরু করে দিলো আদনান ভাই আমি রাগে ফুসফুস করছি আদনান ভাই এর বিচার দেওয়া দেখে একবার তোমাকে বাঘে পাই বাছাধন কি হাল করবো তুমি ভাবতেও পারবে না।এই দোলা কে এভাবে শায়েস্তা করার শাস্তি তো তুমি অবশ্যই পাবে। আহারে আমার পা। বলেই পা নাড়াতে গিয়েই দিল আমি চিৎকার। এত ব্যথা আমি কল্পনাও করিনি। আমার চিৎকার শুনে আদনান ভাইয়ের আর মায়ের কথায় ব্যাগাত ঘটল ভাইয়া ফ্লোরে বসে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে? আমি চিৎকার দিলাম কেন? আমার মা ও তো ব্যস্ত হয়ে গেল দুজনেই এখন ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করছি কী হয়েছে?
আহ্লাদ‌দেখাতে আসছে এখন আমাকে এতক্ষণ যে আমার নামেই কুটকাচালি করছিল দুইজন।কিছুক্ষণের মাঝেই মামনি চলে এলো আমাদের বাসায়। ভাই আমার পায়ে তখন ব্যথার মলম লাগিয়ে দিয়েছিল।মামুন এসে আমার পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করতে লাগল কী হয়েছে আমি ও মামনীর বুকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চুপ করে রইলাম।একটু পরে আদনান ভাইয়ের নামে বিচার দেওয়া শুরু করবো ভাইয়া পাশে আছে এখন কিছু বলা যাবে না। একটু পরে বলব।ভাইয়া এতো সল্ট ভাবে আমার পায়ে মলম দিচ্ছে যেন ব্যথা আমি না উনি নিজেই পেয়েছে। এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে কেনো এমনিতে তো আমাকে দু’চোখে সহ্য করতে পারে না।
জানি জানিকেন এত আদর যত্ন করছে এই ব্যাথাটা যমুনার জন্য পেয়েছে এটা বললে তুমি বকা খাবে।অবশ্য সেই বকাটা আমার পরিবারের কেউই দেবে না সেটা একমাত্র মামনি কে বললে হবে।একটু আগে আম্মুকে বলেছিলাম এই ব্যাথাটা পাওয়ার জন্য একমাত্র দায়ী আদনান ভাই।কিন্তু কি শত্রু মামার আজাদ ভাইকে তো কিছু বলবে না উল্টা সব দোষ আমার ঘাড়ে দিয়ে চলে গিয়েছে গরমপানি করতে গরম পানি পায়ে স্যাক দেবে এজন্য।

আদনান ভাই আমার পায়ে মলম দেওয়া শেষ করে চলে যাওয়ার আগে একবার আমার কানে কানে বলে গেল,,
“তুই তো আমার কাছে এমনিতেই আজ শাস্তি পেতে অমান্য করে মাঠে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এবার সেইটার আরো বেশি হল পা টা ঠিক হতে দে তারপর তোরে বাচ্চামো‌ আর অসভ্যের মতো লাফালাফি করে বেয়াদবের মত খেলার জ্বাল মেটাবো।”
কানে কানে ফিসফিস করে কথাটা বলে বেরিয়ে গেল আমি তারপা আদনান ভাই এর নামে মামুনির কাছে বিচার শুরু করলাম।
পায়ে ভালোই জখম হয়েছে রাতে আমার গা কাঁপিয়ে জ্বর চলে এলো। জ্বর এলে আমি মা ছাড়া কিছু বুঝিনা। রাতে জ্বর আসার পর থেকে মা মা করতে লাগলাম মা বাবা দুজনেই ভয়ে আমার রুমে আসলো তখন মাঝ রাতে এসে দেখে আমার শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।পায়ের ব্যথা থেকে জ্বর এসেছে আম্মু তো ভয় পেয়ে গেছে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে আমি মাকে জড়িয়ে বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি অন্য সব রোগের থেকে জর আমাকে কাবু করতে পারে ভালো। জ্বর আসলে আমি একদমই নেতিয়ে পরি। আর আজেবাজে কথা বলতে থাকি। আমিও জ্বরের মাঝে আদননা ভাইকে বকে যাচ্ছি।
আমাদের বাড়িতে এতকিছু এইসব আদনান ভাইয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছে কারণ পাশাপাশি বাড়ি হয় আমাদের বাড়িতে চেঁচামেচিতে তারা জেগে গিয়েছে মাঝরাতে আদনান ভাই রুমে শুয়েছিল তার ঘুম আসছিল না আমার পায়ের ব্যথার জন্য।কেবলই ঘুমটা ধরে ছিল তখনই চিৎকার-চেচামেচি উঠে বসে আমার রুমের দিকে তাকায় রুমের লাইটের আলো দেখে নিজের রুমে থেকে রুমের দিকে তাকিয়ে কান্নার শব্দ পেয়ে চমকে উঠে আমার জন্য। তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আসে আর সব জানতে পেরে ডাক্তারকে কল দেয়। আমার যখনই কোনো বিপদ আসে বা আমি অসুস্থ হই সবথেকে বেশি আদনান ভাই পাগল হয়ে যায় আজকেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।পাগলের মত ডাক্তার কে ফোন করে আসতে বলে কিন্তু ডাক্তার মাঝ রাতে আসবে না বলে দেয় আর পায় কে আদনান ভাই সে ডাক্তারের বাসায় চলে যায় আর জোর করে ধরে নিয়ে আসে আসবি না আবার।
আর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি।
ডাক্তার আমাকে দেখে তেমন সিরিয়াস কিছু বলল না কারণ আমার সিরিয়াস তেমন কিছুই হয়নি। পায়ের ব্যথা বাড়ার কারণে এত জর এসেছে। পায়ের ব্যথা কমে গেলে জ্বর সেরে যাবে এটা তেমন গুরুতর কিছুই না। এজন্য কেউ এমন পাগলামো করে তাকে মাঝরাতে নাকি হুমকি দিয়ে নিয়ে এসেছে। আদনান ভাই তো আমি বলতে পাগল।অবস্থা দেখে তিনি নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি ‌ ডাক্তারি কথা শুনে কিছুটা শান্ত হলো ডাক্তারকে সরি বলে আবার বাসায় পৌঁছে দিতে গেল।ডাক্তার আমাকে একটা প্যারাসিটামল ও ব্যথার ট্যাবলেট সাথে গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খাইয়ে দিয়ে চলে গেল। একটা ছোট প্যাকশিকশন লিখে দিয়ে।

দুই দিন ধরে শুয়ে থাকতে হলো জ্বর অবশ্য পরের দিনই কমে গিয়েছে আর আসেনি।কিন্তু আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়না আর আমি চাইলেও বের হতে পারি না পা যে ব্যথা কিছুটা কমলেও হাটতে পারি না। অদ্ভুত ব্যাপার আদনান ভাই আমাকে দুই দিন আর দেখতে এল না। তার এই কাজে আমি একটু না অনেক খানি অবাক হয়েছি। আমার কিছু হলে তো তিনি সারাদিন আমার পেছনে পড়ে থাকে।কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হলো সেদিন রাতের পরে তাকে আর দুদিন দেখলাম না কোথাও।তিন দিনের মাথায় পায়ের ব্যথা কমেছে একটু খুরিয়ে খুরিয়চ হাঁটি আমি সেদিন মামুনির বাসায় চলে এলাম।তার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই খাটাশ আদনানের খবর নিতে ওকে আমি সহ্য করতে পারিনা তবুও দুই দিন না দেখে কিছুটা শূন্যতা অনুভব করলাম। কেন মিস করলাম জানিনা আমি তো সব সময় চাই আদনান ভাই আমার চোখের সামনে থেকে দূরে থাকুক তাহলে আমি আমার নিজের লাইফটা শান্তি মতো নিজের লাইফটা এনজয় করতে পারবো। এই যেমন ভাইয়ের জন্য আমি কারাগারে বন্দি থাকি।আর অদ্ভুত বিষয় আমার ফ্যামিলির সবাই সেটা মেনে ও নেই।
কোথাও তার জন্য শান্তি মত থাকতে পারি না কলেজের কোন ছেলের সাথে কথা বলতে পারি না কারো সাথে কথা বলা যাবে না এই যেমন মাঠে খেলা যাবে না সবসময় বাসায় থাকো পরও এই দুঃখ
পিকনিকে যতবারই গিয়েছে আমি তার জন্য যেতে পারি নাই আর যদিও গিয়েছি সে আমার সাথে বডি কাট হয়ে গিয়েছে
আপনারাই বলুন আদনান ভাইয়ের মত মানুষেরা আমার সাথে যায় তাহলে কি আমি শান্তি মত পিকনিক ইনজয় করতে পারব।সে আমাকে এটা করতে দেবে না ওটা করতে দিবে না ওটা খেতে দেবে এটা পড়তে দেবেনা অফ অশান্তি সেখানে গিয়েও আমাকে এরকম কড়া শাসনে রাখা হয়।
সবকিছু নিয়েই তার বাড়াবাড়ি অসহ্য এজন্য তাকে আমি একদম সহ্য করতে পারি না তবুও তাকে কিনা আমি মিস করেছি ভাবা যায়।
ভাবনা-চিন্তা করতে করতে মা মণির বাসায় চলে এলাম।
#চলবে

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০১ | বাংলা রোমান্টিক ভালোবাসা গল্প

0

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_1

মাঠে বাচ্চাদের সাথে খেলছিলাম হঠাৎ কোথা থেকে আদনান ভাই আসলো আর আমার বাহু শক্ত করে ধরে রাগী চোখে তাকিয়ে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে এলো। কিছুই বুঝতে পারলাম না কিন্তু ভীতু হয়ে চুপচাপ ভাইয়ার সাথে আসলাম। আসলে আমি আদনান ভাইয়া কে প্রচন্ড ভয় পাই আর আদনান ভাই আমাকে বাচ্চাদের সাথে লাফালাফি করে খেলা করতে মানা করেছে। কিন্তু আমিতো শুনার পাত্রী না বাচ্চাদের সাথে খেলতে তো আমি খুবই ভালোবাসি।আদনান ভাইয়ের ভয় কি সেইটা আমি মিস করবো নাকি।কিন্তু ভাইয়ার মুখের উপরে কথাটা বলার সাহস আমার নাই যদিও কয়বার সাহস করে বলেছি কিন্তু আমার বাসার সবাই যে আদনান ভাইয়ের পক্ষে।তাই দাঁতে দাঁত চেপে থাকে আমাকে নিরবে সহ্য করতে হয় কিন্তু মনে মনে তাকে আমি একদমই পছন্দ করি না এই জোর-জবরদস্তির জন্য আরো বেশি হেট করি।এজন্যই তো আজকের লুকিয়ে-চুরিয়ে এখানে এসেছিলাম আজকে ভাইয়া ঢাকার বাইরে গিয়েছিল। কিন্তু কোথা থেকে চলে এলো সেটাই বুঝতে পারলাম না।

ভাইয়া আমাকে একদম আমাদের বাসার ড্রয়িং রুমে এনে ছাড়লো হাত ব্যথা হয়ে গেছে। গন্ডার একটা রাক্ষস শরীরে যত শক্তি আছে সব শক্তি দিয়ে আমার হাতটা ধরে ছিল। আমি নাক মুখ কুঁচকে আছি আর একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি আমার দিকে একবার তাকালো না চিৎকার করে আমার মাকে ডাকল মামনি বলে। আদনান ভাইয়ের চিৎকারে আমি লাফিয়ে উঠলাম।দুই হাত নিয়ে কান চেপে ধরলাম বাবারে এতো জোরে কেউ ডাকে আমার কান ফেটে গেল মনে হয়।
একটু পরেই মা এক প্রকার ছুটে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো রান্নাঘরে ছিল হয়তো। হাতে যে খুন্তি আছে তা দেখেই বুঝতে পেরেছি। মা এসে ভাইয়াকে দেখে সে কি খুশি খুশিতে বাকবাকুম হয়ে গেল।বাকবাকুম তো হবেই মাঝে ভাইয়াকে খুবই ভালোবাসি আমি যে তাদের মেয়ে আপন মেয়ে আমার মনে হয় না আমার মনে হয় আমি তাদের সৎ মেয়ে আর ভাইয়া তাদের নিজের ছেলে। এজন্য আমার দুঃখের সীমা নাই কিন্তু এই দুঃখের মাঝেও সুখ আছে। আর সেটা হলো আমার মামনি পাপ্পা। বলছি তারা কে তারা হল এই খাটাশ আদনানের মা-বাবা। খুবই ভালোবাসে আমাকে আমি ও তাদের এত ভালোবাসি।
আম্মু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,
“আদনান কখন আসলি বাবা। এত রেগে আছিস কেন কি হয়েছে?”
প্রচন্ড চিন্তিত ভঙ্গিতে মা কথাটা জিজ্ঞেস করেই আদনান ভাই এর গালে হাত দিল।
আমি মায়ের এত আদিখ্যেতা দেখে ভেংচি কাটলাম। অসহ্য লাগে এই ভালোবাসা দেখলে।

আদনান ভাইয়া আমার দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে আম্মুকে বলল,,
“ও বাইরে কিভাবে গেল মামনি ওকে আমি বাচ্চাদের সাথে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতে মানা করেছিলাম।”
আদনান ভাইয়ের কথা শুনে মা খ্যাপা বাঘিনীর মত আমার দিকে তাকালো মনে হচ্ছে আমি কোন ভয়ঙ্কর অন্যায় করে ফেলেছি আমি।
আমি আম্মুর তাকানো দেখে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি মুখে ভয়ের আভাস কিন্তু মনে মনে আদনান ভাইয়ের চোদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করছি। একবার সুযোগ পায় ভাইয়ের উচিত শিক্ষা দিব আমি।
“আমিতো জানিনা রে ওতো আমাকে বলল ও নাকি ওর বান্ধবীর বাড়ি যাবে কোন নোট আনতে।”

“কিসের নোট কোন নোট না। ও গিয়েছিলো তোমাকে মিথ্যা কথা বলে মাঠে ওই বাচ্চাদের সাথে লাফালাফি করতে। আশেপাশে কত লোকজন ছিল তুমি জানো সবার সামনে এরকম পোশাক পরে ও লাফাচ্ছিল কতোটা বেয়াদপ হয়ে গেছে। আমি ওকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি মামনি। আর কখনো যদি ও মাঠে গিয়ে বাচ্চাদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করে তো আমার হাত থেকে কেউ ওকে বাঁচাতে পারবে না সেইদিন এমনি কি তোমরা ও না।”
চিৎকার করে কথাগুলো বলে আমার দিকে আদনান ভাই রাগী চোখে তাকিয়ে কটমট করে তারপর গট গট পাঁয়ে বেরিয়ে গেল। পেছনে থেকে আম্মু ভাইয়া কে ডাকল ভাইয়া একবার তাকিয়ে খালি বলল পরে আসবো মামনি।
তারপর চলে গেল।আম্মু আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলবে আমি দৌড়ে রুমে চলে এলাম।জানি এখন ওখানে থাকলে আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে।তাই না থাকাটাই বেটার।

রুমে এসে বারান্দায় গেলাম বারান্দায় থেকে আদদান ভাইদের বাসার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমার রুমের সোজাসুজি আদনান ভাই এর রুম। ভাইয়াকে দেখলাম রুমে আছে শার্টের বোতাম খুলতেছে তখনই ফোন বেজে উঠল ফোনে নিয়ে ওই ভাবেই বারান্দায় আসতে লাগল তার বারান্দার আমার বারান্দা সাথে সাথে তাই সে বারান্দায় এসে আমাকে দেখবে তাই দৌড়ে রুমে চলে এলাম কোথাও থাকতে পারবো না খাটাশটার জন্য।

রাগে ফুসফুস করতে করতে রুমে চলে এলাম তারপর বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলাম। ঐ ভাবি ঘুমিয়ে পরেছি রাতে জাগানো পেলাম।আব্বু এসেছে আব্বুর আওয়াজ পেয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে বেরিয়ে পড়লাম।এখন আর মা বকতে পারবেনা আব্বুর সামনে বকতে পারেন আব্বু আম্মু ধমক দিয়ে দিবে।
সত্যি মা বকতে পারল না মা আমার দিকে শুধু কটমট করে তাকিয়ে ছিল আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আব্বুর সাথে খেতে বসলাম।খেয়ে রুমে এসে আবার দরজা লাগে ফেসবুকে ঢুকলাম। ফেসবুক চালাতে চালাতে কখন রাত এগারোটা বেজে গেছে আমি খেয়ালই করিনি। খেয়াল করলাম একটা অচেনা আইডি থেকে মেসেজ আশাতে। সে আমাকে এক প্রকার হুমকি দিয়েছে মেসেজ দিয়েছে,,
“তাড়াতাড়ি অফলাইন হয়ে ঘুমাও না হলে তোমার কপালে শনি আছে।”
মেসেজ দেখেই আমি শোয়া থেকে বসে পড়লাম কথার ধরনে একদম আদনান ভাইয়ের মতো।আমি তো আপনার ভাইয়ের সবগুলো আইডি আমার আইডি থেকে ব্লক করে রেখেছি। তাহলে ভাই আমার আইডি কোথায় পেল আর এইটা কি ভাইয়ের আইডি?
আঙ্গুল মুখে নিয়ে কামরাতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম তারপর।
ঐ আইডিতে ঢুকলাম আইডির নাম,
‘অদ্ভুত আমি’
একটা কার্টুন পিক দেওয়া প্রোফাইলে আর জীবনে মনে হয় না কিছু পোস্ট করছে। প্রোফাইল ফাঁকা ইনফরমেশনে কিচ্ছু নাই এটা এক নাম্বার ফ্যাক আইডি দেখেই বোঝা যায়।প্রোফাইল পিকটা দেওয়া হয়েছে 3 ঘণ্টা আগে।আচ্ছা এইটা কি আদনান ভাই আমি তার সব আইডি ব্লক করছি দেখেই এই আইডি দিয়ে আমারে উপর নজর রাখে। কথাটা ভাবতে আমার হাতে ফোন পরে গেল এটা নিশ্চিত আদনান ভাই।
আদনান ভাই এর কাছে ধরা পড়লে তো আমার খবর আছে। আমি তাড়াতাড়ি ডাটা অফ করে শুয়ে পড়লাম চিন্তায় এদিকেওদিক করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই সকালবেলা।
পরদিন শুক্রবার এর জন্য কলেজ অফ।বাসায় কাটাতে হবে আদনান ভাইয়ের ভয়ে আমি আর রুম থেকে বের হলাম না দুই তিনবার তার কণ্ঠ শুনলাম সকালে একবার খাবার রুমে খেলাম দুপুরে চুপিচুপি খেলাম।সারাদিন রুমে থেকে এতো বোর হয়ে গেছি এবার আমার একবার মাঠে যেতে হবে একটু খেলতে হবে নয় মনটা ফ্রেশ হবে না জিম মেরে রুমে বসে আছি।গালে হাত দিয়ে কি ভাবে বের হব মাকে আজকে কোন অজুহাত দিতে পারব না জানি এ জন্য লুকিয়ে বের হতে হবে। আজ শুক্রবার ভাইয়া কে নিয়ে ভয় ছিল কিন্তু আজকে ভাইয়াকে নিয়ে ভয় নেই।কারণ হলো সে নাকি দুপুরের পর কোন এক ফ্রেন্ডের সাথে কোথাও যাবে। সেই সুযোগে আমার এখন মাঠে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা হয়েছে।মা এখন রুমে আছে কারণ আব্বু বাড়িতে আব্বু সাথে মা বিকাল টাইমে বসে চা খাওয়া আর গল্প করে।

আমি সুযোগ বুঝে লুকিয়ে-চুরিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে মাঠে আসলাম আজকে আমি ক্রিকেট খেলব। বাচ্চারা সব তো আমাকে দেখি লাফিযচ্ছে সেই খুশিতে। আর কালকের জন্য সবার কতো চিন্তা আমাকে আদনান ভাই মেরেছে কিনে আন তেন।অবশেষে খেলা শুরু হলো খেলছি প্রথমে বল মারলাম তারপর আমার দ্যান আসলো আমি ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে আছি প্রথমবারই বল মারলাম খুব বিশ্রী ভাবে। কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবার সামনে লজ্জায় মাথা কাটা।বাচ্চাদের সাথে কিনা নাম পারছি না এবার আমি প্রবল সাহসিনী শক্তি সঞ্চয় করে দাঁড়িয়ে আছি ভালভাবে মারবি একদম ছক্কা।
আমি পাকা খেলোয়ার এর ব্যাট ধরে আছি।ওই পাস থেকে বল চলবে এমন সময় একজনকে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম যাকে দেখে আমার হৃদপিণ্ড চলাচল বন্ধ হয়ে গেল আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাট উচু করে ধরলাম আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে এতটাই ভয় পেয়েছি যে আমার হাত থেকে ব্যাটটা ঠাস করে পড়ে গেল।শুধু পড়ে খান্ত হল না শয়তান ব্যাট গিয়ে পড়ল আমার পায়ে।আমি মাগো বলে চিৎকার করে পাঁ ধরে নিচে বসে পড়লাম। একে তো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক সিংহ যাকে আমি প্রচন্ড ভয় পাই।যার জন্য এমনিতে আমি আধমরা সে আমার আজকে কি অবস্থা করবে সেটা কেউ জানে না। তারপর এই ব্যাটা আমার পা ভেঙে দিল।

#চলবে

আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-৪৪ শেষ পর্ব

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪৪[অন্তিম পর্ব]

বছর পেরিয়ে আবারো এসেছে বসন্ত।পাখির কলতানে মুখরিত চারিপাশ।আকাশ একেবারে স্বচ্ছ।
নীল সাদা মেঘেদের অবিশ্রাম আনাগোনা।বাগানের নরম সবুজ ঘাসের উপর দুহাঁটু গেড়ে করে বসে আছে মায়া।হিমেল হাওয়ায় চুল উড়ছে তার।দুহাত সামনের দিকে বাড়িয়ে রেখেছে সে।ঠোঁটের কোঁণে প্রসারিত হাসি টেনে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলছে,
—“আসো আম্মু তাড়াতাড়ি আসো”

সামনেই লাল ফ্রক পরিহিত এক বছর দুইমাসের ছোট্ট স্নিগ্ধা।এলোমেলো পা ফেলে মায়ের দিকে দৌড়ে আসছে সে।তার পাশে পাশেই আছে ইতি।স্নিগ্ধা হোঁচট খেলে যেন ধরতে পারে সেজন্য।
একেবারে ভালোকরে এখনো হাঁটতে শিখেনি স্নিগ্ধা।তবে আধো আধোভাবে পারে।

কাছাকাছি আসতেই তাকে দুহাতে জড়িয়ে কোলে তুলে নিল মায়া।মাথার ঝলমলে বাদামী রংয়ের চুলগুলো হাত দিয়ে আঁচড়ে দিয়ে গালে চুমু খেতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো স্নিগ্ধা।ছোট্ট ছোট্ট নরম হাতগুলো দিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে বুকে মুখ লুকালো।

একটু দূরেই জ্যাক আর জেনির মাঝখানে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে আয়ান।দুহাতে জেনির বড় বড় কানদুটো ধরে রেখেছে সে।জেনিও স্বআনন্দে মাথা পেতে রেখেছে।তাকে মেরে ফেললেও বোধহয় আয়ানের কোনো ক্ষতি করবেনা সে।

খানিকবাদে ইতির দিকে তাকালো মায়া।ক্লান্ত কন্ঠে বললো,
—“আয়ান কে নিয়ে আসোতে ইতি।জেনিটা ব্যাথা পাচ্ছে কানে।”

ইতি যেয়ে আয়ান কে নিয়ে আসতেই সে একটা রাগি দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করলো।একদম বাবার মতো রাগি হয়েছে ছেলেটা।আরিয়ানের মতোই কাটাকাটা চেহারা।তার মতো নাক ঠোঁট।কিন্তু চোখগুলো মায়ার মতো।
ওরা টুইন হলেও দুজনের চেহারায় তেমন মিল নেই।স্নিগ্ধা মায়ের মতো দেখতে আর আয়ান বাবার মতো।

ছেলের নাম আরিয়ানের সাথে মিলিয়ে রাখলেও মেয়ের নাম আরিয়ান নিজেই রেখেছে।মেয়েকে দেখলেই নাকি স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় তার চারিপাশ।তাই “স্নিগ্ধা” নামটাই রেখেছে সে।
_____________

সারাদিনের অফিস শেষে বাড়িতে ফিরেছে আরিয়ান।রুমে ঢুকে দেখে রুম ফাঁকা।
মায়া তো নেই-ই সাথে বাচ্চারাও নেই।দুবার গলা ছেড়ে মায়াকে ডাকলো আরিয়ান।কোনোরূপ সাড়া না পাওয়ায় কপালে সুক্ষ্ণ চিন্তার ভাঁজ পরলো তার।
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বেরিয়ে পরলো সে।উপর থেকে নিচে তাকাতেই দেখতে পেলো হলরুমের সোফায় আয়ানকে সাথে নিয়ে টিভি দেখছে ইতি।তখন দ্রুত উপরে আসায় খেয়াল করেনি সে।আরিয়ান সেখান থেকেই ডাকলো,
—“ইতি?”

আরিয়ানের ডাকে দ্রুত ফিরে তাকালো ইতি।টিভির সাউন্ড একটু কমিয়ে নরম গলায় বললো,
—“জি ভাইয়া বলেন।”

—“মায়া কোথায়?

—“আপু তো রুমেই।উনার নাকি ঘুম আসছিলো।”

একমূহুর্ত ভাবে আরিয়ান।ব্যালকনিটা চেক করে আসা উচিত ছিলো তার।আবারো ইতির দিকে তাকিয়ে তীর্যক কন্ঠে সে বলে,
—“আর স্নিগ্ধা?”

—“আপুর কাছেই।”

“ওহ আচ্ছা”বলে রুমে ঢুকে আরিয়ান।সোজা যেয়ে ব্যালকনির দরজা খুলতেই ঠোঁটে কোঁণ ঘেঁষে গাঢ় হাসির রেখা ফুটে উঠে।দোলনায় দু পা ভাঁজ করে তুলে ঘুমিয়ে আছে তার মায়াবতী।তার কোলেই স্নিগ্ধা।পরণের সাদা ওড়না পড়ে গিয়ে স্নিগ্ধার মাথার উপর লেপ্টে রয়েছে।তার ছোট্ট পুতুলটা ঘুমোয়নি।পিটপিট করে চেয়ে আছে।তবে মায়ের ঘুমে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য কোনোরকম শব্দও করছেনা সে।চুপটি করে পুতুলের মতো বসে আছে।আরিয়ান কাছে যায়।স্নিগ্ধার মাথার উপর থেকে ওড়নাটা সরাতেই আস্তে করে তার দিকে দু হাত বাড়িয়ে দেয় স্নিগ্ধা।যার অর্থ”কোলে নাও আমাকে”।আরিয়ান একহাতে মেয়েকে কোলে নেয়।তার বুকে মুখ গুঁজে রাখে স্নিগ্ধা।
আরিয়ান একটু ঝুঁকে।মেয়ের অগোচরে সেকেন্ডের মাথায় মায়ার কপালে চুমু খেয়ে ক্ষীণ স্বরে ডাকে,
—“মায়াবতী?উঠো।”

তার একডাকেই চোখ খুলে মায়া।জড়ানো কন্ঠে বলে,
—“আপনি…আপনি কখন আসলেন?”

—“এখনই আসলাম।তুমি উঠে রুমে যেয়ে ঘুমাও।এখানে গরম।অসুস্থ হয়ে যাবা।”

দুহাতে চোখ কচলে উঠে দাড়ায় মায়া।রুমে যেয়ে দ্রুত আরিয়ানের জামাকাপড় বের করে দিয়ে বলে,
—“আপনি যান।শাওয়ার নিয়ে আসেন।আমি খাবার রেডি করছি”।

স্নিগ্ধাকে কোল থেকে নামালো আরিয়ান।বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
—“কিছু করা লাগবেনা তোমার।আপাতত একটু ঘুমাও।তারপর রাতের খাবারটা খেয়ে ভালোমতো ঘুমিও।”

—“আপনি যানতো।গোসলে যান।বাচ্চারাও খায়নি।ক্ষুধা লেগেছেনা ওদের।খাওয়াতে হবে তো।”

আরিয়ান হাসে।তার মায়াবতীটা এক বছরেই কতটা বড় হয়ে গেছে।বাচ্চাদের খেয়াল রাখায় কোনরকম ক্রুটি হয়না তার।সবদিকে খেয়াল থাকে।একেবারে সবদিকে!শুধু নিজের খেয়াল রাখতে ভুলে যায়।আর সেই খেয়ালটাই রাখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আরিয়ানের।

——————
খাওয়া দাওয়া শেষ।রুমে চলে এসেছে তারা।
স্নিগ্ধাকে একপায়ের উরুর উপর বসিয়ে রেখেছে আরিয়ান।সবে ছোট্ট ছোট্ট দাঁত উঠা শুরু হয়েছে তার।তা দিয়েই আরিয়ানের ডানহাতের বুড়ো আঙ্গুলের নিচের অংশ ক্রমাগত কাঁমড়ে চলেছে সে।আরিয়ান মুচকি হেসে মেয়ের কামড়াকামড়ি দেখছে।
আয়ান বসে আছে বিছানার মাঝখানটায়।নিজের বুড়ো আঙ্গুলট চুষছে সে।লোল দিয়ে ঠোঁট মাখামাখি।

আরিয়ানের হাতে পানির গ্লাস দিয়ে আয়ানের কাছে যায় মায়া।আঙ্গুলটা মুখ থেকে বের করে ওড়না দিয়ে হাত মুখ মুছিয়ে দেয়।আয়ান বড় বড় চোখের পলক ফেলে মায়ার দিকে তাকায়।মায়া হেসে ফেলে।বলে,
—“দেখেন,আপনার ছেলে কিভাবে তাকাচ্ছে!”

ঘাড় বাকিয়ে তাকায় আরিয়ান।বলে,
—“ওকে দাওতো আমার কাছে।ও তো আমার কোলেই আসেনা।”

মায়া আয়ানকে নিয়ে আরিয়ানের আরেকপায়ের উরুর উপর বসিয়ে দিতে দিতে বললো,
—“শুধু আপনার না।ও কারো কোলেই যেতে চায়না।একা একাই খেলতে পছন্দ করে।”

আরিয়ান ঝুঁকে গিয়ে আয়ানের কপালে চুমু খায়।বলে,
—“তাই নাকি বাবা?মা কি সত্যি বলছে?।”

উওরে উল্টাপাল্টা শব্দে আওয়াজ করলে আয়ান।আরিয়ান কিছু না বুঝলেও ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।

চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে আরিয়ানের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা জামাকাপড় গুলো লন্ড্রিবিনে রাখলো মায়া।ড্রেসিংটেবিল থেকে একটা চুলের কাঁটা নিয়ে চুল গুলো আটকে নিল।
আরিয়ান তার দিকে ইশারা করে বাচ্চাদের বলছে,”এটা কে বলতো?এটা “মা”,বলতো “মা” বলো বলো “মা” বলো।স্নিগ্ধা হাতটা কাঁমড়ে ধরেই ফ্যালফ্যাল করে আরিয়ানের দিকে চেয়ে রয়েছে।আয়ানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সে আপনমনে আরিয়ানের বুকের গেন্জি ধরে মুচরামুচরি করছে।

কয়েকদিন যাবতই বাচ্চাদের “মা”,”বাবা” বলানোর জন্য উঠে পরে লেগেছে আরিয়ান।সে শুনেছে যেই জিনিস বাচ্চারা বেশি শুনে সেটাই তারা বলতে চেষ্টা করে।তাই রাতের বেলা বাচ্চাদের কাছে পেলেই তাদের কানের কাছে “মা”,”বাবা” বলে বলে মুখ ব্যাথা বানিয়ে ফেলে আরিয়ান।আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।

মায়া কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে।বলে,
—“ওদের যখন বলার তখন এমনেই বলবে।বুঝলেন?”

আরিয়ান তার কথা তোয়াক্কা করেনা।স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়ে বলে,
—“বলোতো আম্মু,মা বলো।মা…”।

মায়া ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে উঠে যেতে নিলেই স্নিগ্ধা আধো আধো স্বরে “মা” বলে ডেকে উঠে।পরমুহূর্তেই হাসির ঝলকানি দিয়ে উঠে আরিয়ানের মুখে।মায়া ধপ করে ফ্লোরে বসে।বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে স্নিগ্ধার দু গালে হাত রেখে বলে,
—“কি বললো ও?”

আরিয়ানের বলার আগে স্নিগ্ধা আবারো বলে উঠে”মাআ…মা”।
এবার আর নিজেকে আটকাতে পারলোনা মায়া।সশব্দে কেঁদে উঠলে সে।মায়ার কান্না দেখে ভয় পেয়ে গেলো স্নিগ্ধা।তার চেহারাও কাঁদো কাঁদো হয়ে এলো।আরিয়ান স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরা হাতটা দিয়েই মায়ার মাথায় হাত রাখলো।নরম কন্ঠে বললো,
—“মায়াবতী,কাঁদেনা।বাচ্চারা ভয় পেয়ে যাবেতো।”

মায়ার কান্না থামেনা।প্রথমবার “মা” ডাক শোনার অনুভূতিতে কি এতোটাই প্রশান্তির?নিজেকে কেমন পূর্ণ পূর্ণ লাগছে।মনে হচ্ছে জীবনে আর কিছু চাওয়ায় নেই তার।সব পেয়ে গেছে সে!সব!

মায়ার কান্না থামছে না দেখে আরিয়ান এবার প্রগাঢ় কন্ঠে বললো,
—“মায়া আর কাঁদলে কিন্তু আমি রাগ করবো।”

হেঁচকি তুলে কান্না থামায় মায়া।মেয়ের গালে চুমু খেয়ে বলে,
—“থ্যাংকিউ আম্মু।”

আরিয়ান নি:শব্দে হাসে।তার জীবনটা সত্যিই কানায় কানায় পরিপূর্ণ।কোনোকিছুর কমতি নেই।
_______________
বসন্তের সকালবেলার মিষ্টি রোদে ব্যালকনিতে বসে ভেজা চুল শুকাচ্ছে মায়া।ছুটির দিন আজকে।তন্ময় আরিয়ান কেউই অফিসে যায়নি।এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছে তন্ময়ের ঘাড়ের উপর বসে সারা বাগান চড়ে বেরাচ্ছে আয়ান।পাশেই ছায়ার নিচে স্নিগ্ধাকে নিয়ে বসে আছে ইতি।
আরিয়ান ঘুমিয়ে আছে রুমে।গভীর ঘুমে আছে দেখে সে আর ডাকেনি।
চুল মুছতে মুছতে হঠাৎই চোখ যায় ব্যালকনিতে সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো একটা ছবিতে।সেই তার জন্মদিনে তন্ময়ের হঠাৎ তোলা ছবিটা।অতিরিক্ত পছন্দ হওয়ায় ছবিটাকে প্রিন্ট করে ফ্রেমে বাধিয়ে রেখেছে আরিয়ান।
ব্যালকনির জায়গাটা খুব বেশি পছন্দের মায়ার।তাই এখানেই ছবিটা টাঙিয়ে রাখা আছে।একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে মায়া।কতশত সুন্দর প্রেমময় প্রহর সে পার করেছে এসেছে আরিয়ানের সাথে।

টাওয়ালটা ব্যালকনিতে রেখেই রুমে যায় মায়া।আরিয়ান খালিগায়ে উপুর হয়ে মাথা কাত করে ঘুমিয়ে আছে।
ফর্সা পিঠে অসংখ্য লাল লাল আঁচরের দাগ।এগুলা যে তারই কারুকার্য ভাবতেই হাসি পায় মায়ার।
কাছে যেয়ে আরিয়ানের কপালে আসা চুলগুলো সরিয়ে মাথা নামিয়ে আলতো করে চুমু খায় সে।
উঠে যেতে নিলেই তার একহাত শক্ত করে ধরে ফেলে আরিয়ান।চমকে উঠে মায়া।তারমানে আরিয়ান জেগে আছে?
তার আরো কিছু ভাববার আগেই সোজা ঘুরে একটানে মায়াকে বুকে উপর ফেলে আরিয়ান।দুহাতে কোমড় আঁকড়ে ধরে বলে,
—“আমি কাছে আসলেতো লজ্জায় শেষ হয়ে যান।আর ঘুমিয়ে থাকলে এসব?”

মায়া স্বলজ্জায় অন্যদিকে তাকায়।কি পরিমাণ লজ্জা যে লাগছে তার!আরিয়ান জেগে আছে বুঝলেতো কখনোই চুমু খেতোনা সে।কখনোই না!

—“এদিকে তাকান।”

—“দেখুন,আমি জানতাম না যে আপনি জেগে আছেন।জানলে….”

মায়ার মুখের কথা কেড়ে নেয় আরিয়ান।দুষ্টু কন্ঠে বলে,
—“এখন তো জানেন আমি জেগে আছি।তো,এই জাগ্রত অবস্থায় একটা চুমু খানতো।নয়তো কিন্তু আমি ছাড়বোনা।ঠি ক এভাবেই ধরে রাখবো।”

চোখমুখ কুঁচকে ফেলে মায়া।বলে,
—“আপনিতো প্রচন্ড খারাপ লোক।”

—“খারাপ হলে খারাপ।এখন চুমু দাও নয়তো আমি ছাড়ছিনা।”

কাঁচুমাচু করে তাকায় মায়া।আরিয়ান যখন বলেছে ছাড়বোনা মানে সত্যিই ছাড়বেনা।যতো যাই হোক!
চোখ বন্ধ করে ধীরগতিতে আরিয়ানের কপালে চুমু খায় সে।সাথে সাথেই হাতের বাঁধন আলগা করে দেয় আরিয়ান।মায়া সরে গেলে সেও উঠে বসে।মাথা নুঁইয়ে দাড়িয়ে আছে মায়া।আরিয়ানের মৃদু হেসে বলে,
—“বাচ্চারা কোথায়?”

—“বাগানে”।

—“আচ্ছা যাও তুমি।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায় মায়া।মূলত এতক্ষন আরিয়ানের উঠার জন্যই অপেক্ষা করছিলো সে।আরিয়ান বুঝতে পেরেই তাকে যেতে বলেছে।
_______________
যেহেতু ছুটির দিন তাই ঘুরতে বেরিয়েছে তারা।ইতি আর তন্ময় আলাদাভাবে ঘুরতে বেরিয়েছে।তাদেরও তো একটা একান্তে সময় কাটানোর ব্যাপার আছে।তাই তাদের আলাদাই পাঠিয়েছে আরিয়ান।

আরিয়ান আর মায়া বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়েছে।এতক্ষন পার্কে ঘোরাফেরা করছিলো তারা।এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে প্রায়।
মায়ার পরণে গাঢ় নীল শাড়ি,নীল কাঁচের চুড়ি।হাল্কা গোলাপি লিপ্সটিক।চুলগুলো ছাড়া।স্নিগ্ধার সাইজের শাড়ি পায়নি নয়তো তাকেও শাড়ি পরিয়ে দিতো মায়া।তবে শাড়ি না পাওয়ায় নীল রংয়ের ফ্রক পরে আছে স্নিগ্ধা।মাথায় নীল রংয়ের ব্যান্ড।বাদামী চুলগুলোয় ফুটে রয়েছে ব্যান্ডটা।
আরিয়ানের পরণে সাদা পান্জাবি।তার সাথে মিলিয়ে আয়ানের পরণেও সাদা পান্জাবি।সচরাচর পান্জাবি পরেনা আরিয়ান।আজকে মায়ার জোড়াজোড়িতে পরেছে।পান্জাবিতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে আরিয়ানকে।
মায়া নজরই সরাতে পারছেনা।
মায়ার কোলে আয়ান।আর আরিয়ানের পায়ের উপর বসে আছে স্নিগ্ধা।একহাতেই ড্রাইভ করছে আরিয়ান।আর আরেকহাতে মেয়ের মাথায় ক্রমাগত হাত বুলাচ্ছে সে।
আরিয়ান নিচের ঠোঁট কামড়ে মনোযোগ দিয়ে গাড়ি টার্ন নিচ্ছে।হঠাৎই আয়ান চিল্লিয়ে উঠে,
—“বাব…বাব্বা…বাবা।”

হুট করে গাড়ি থামায় আরিয়ান।চমকিত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
—“ও কি বাবা ডাকলো?”

মায়া খুশিতে বাঁধভাঙা কন্ঠে বলে,
—“জি,বাবা ডাকলো।”

আরিয়ানের ঠোঁটে উজ্জল হাসি।আয়ান আরো কয়েকবার “বাবা,বাবা” ডাকলো।”বাবা” ডাকটাতেই কেমন যেন দায়িত্ব দায়িত্ব ভাব।আরিয়ান শব্দ করে হেসে দেয়।ছেলেকে চুমু দিয়ে বলে,
—“আব্বুটা আমাকে বাবা ডাকছে।শুনছো মায়া।”

মায়া মাথা নাড়িয়ে চোখের কোণের পানিটা মুছে নেয়।দুমিয়ার সকল সুখ যেন তাদের জীবনেই ভর করেছে।


গাড়ি চলছে ধীর গতিতে।রাতের আঁধার নেমে এসেছে শহরজুড়ে।একটা নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামায় আরিয়ান।মায়া আশেপাশে চেয়ে বলে,
—“গাড়ি থামালেন যে?”

মায়ার সিটবেল্ট খুলে দিয়ে নিজের সিটবেল্টও খুলে আরিয়ান।বলে,
—“জায়গাটা চিনতে পারছো মায়াবতী?”

আরিয়ানের কথায় ভালোমতো চারিপাশে চোখ বুলায় মায়া।খানিক বাদে জায়গাটা চিনে ফেলতেই সে বলে,
—“এটা তো..”

—“আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।সেই ব্রিজটা।”

বলেই স্নিগ্ধাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।মায়ার পাশের দরজা খুলে তাকেও হাত ধরে বের করে।শাড়ি সামলে একহাতে কুঁচি ধরে দাড়ায় মায়া।আরিয়ান তার এলোমেলো আচঁল ঠি ক করে দেয়।

ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে দাড়ায় তারা।ঠান্ডা হাওয়া বইছে।মায়ার চুলগুলো উড়ে যেয়ে আরিয়ানের মুখে উপর আছরে পরছে।দুজনের কোলে দুই বাচ্চা।আজ পূর্ণিমা।চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে চারিপাশ।
মায়া কিছু বলছে না।কখনো কখনো সময়গুলোকে,মূহুর্তগুলোকে নিরব ভাবেই উপভোগ করতে হয়ে।

বেশ কিছুক্ষনের নিরবতা ভেঙে আরিয়ান মোহনীয় কন্ঠে ডাকে,
—“মায়াবতী?”

—“বলেন”।

আরিয়ান মুখে কিছু বলেনা।একবাহু জড়িয়ে ধরে মায়াকে কাছে টেনে নেয়।মায়া মৃদু হেসে তার বুকে মাথা রাখে।দুজনের দু’কাধে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে বাচ্চারা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে আরিয়ান উপলদ্ধি করতে পারে তার আঁধারে ঢাকা জীবনটা আর অন্ধকার নেই।”মায়া”নামের উজ্জল সন্ধ্যাতারাটা তার জীবনটা আলোকিত করে দিয়েছে।
প্রিয় মানুষ পাশে থাকলে জীবন সুন্দর!খুব বেশিই সুন্দর।

________সমাপ্ত________