Monday, August 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1556



সংসার পর্ব-২৩

0

#সংসার
#পর্ব_২৩

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

“আমি আর তিন মাস তো দূর তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারব না। তোকে চাই একদম আমার নিজের করে চাই।”
আকাশের কথায় জেনি মৃদু হেসে বুকে মাথা রেখে আবার চোখ বন্ধ করে।

বারান্দায় চেয়ার দুইটি একসঙ্গে করে বসে আছে মেঘ আর রুদ্র। দুজনের চোখে মুখে অনন্দের ঝলক। আকাশে তারার ঝলকানিতে সারা শহর ঝাপসা আলোয় ফুটে উঠেছে। ব্যস্ত মেঘগুলো আকাশের একপাশ থেকে ওপাশ ঘুড়ে বেড়াচ্ছে

আমি আকাশ ভাইয়া আর জেনি আপুদের দিকে তাকিয়ে বললাম-
“অবশেষে তাদের মিলটা হয়েই গেল।”

৪৫.
আমার কথা শুনে রুদ্র মৃদু হেসে ওঠে। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে রুদ্রের কাধে মাথা রেখে আবেগী গলায় বললাম-
“রুদ্র আমার একটা ছোট্ট ছেলে বাবু চাই। পূর্ণতার খেলার সাথী এনে দিবেন প্লিজ। ওর পূর্ণতার মতো ছোট ছোট হাঁত পা হবে। একসাথে দুটো বাবু সারা বাড়িতে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে বেড়াবে।”
,
,

ধমকা হওয়ার সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কিছুক্ষণ আগের ঝকঝকে রোদ পালিয়ে গিয়ে সেখানে এখন জায়গা নিয়েছে ঘন আধার। বাম হাতের ঘড়িটা জানান দিচ্ছে এখন বিকেল চারটা। অথচ চারপাশে আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে সময় রাত নয়টার কাছাকাছি। জেনি জানালার গ্রিল ধরে হঠাৎ বদলে যাওয়া আবহাওয়া আনমনে দেখছে। ঝিরঝির বৃষ্টির কনা গুলো ছিটকে মুখে উপর পড়তেই বিরক্ত নিয়ে গ্রিল ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়। সকাল বেলা বাড়িতে ঢুকার আগে কে জানত তাদের জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে।

আজ সকালে জেনি আর আকাশ নিজের গ্রামের বাড়ি বরিশালে যায়। বাবা মাকে তারাতারি বিয়ের সিদ্ধান্ত জানাবে। আগেই যেহেতু বিয়ে ঠিক করা ছিল তাই টেনশন বা ভয়ের কিছু ছিল না। ভেবেছিল বাড়িতে গিয়ে একটু জোর করে বললেই বিয়েটা হয়ে যাবে।

গ্রামের বাড়ি চারপাশের বাউন্ডারি দিয়ে ভিতরে একই সাথে আফজাল সাহেব আর ফোরকান সাহেবের বাড়ি। বাড়ির মাঝ খানে ফাঁকা মাঠের মতো জায়গা। একপাশে ছোট একটা পুকুর আর অন্যপাশে ফলের বাগান। বাড়ির এত সুন্দর পরিবেশ মাঝখানে একটা দেয়াল উঠে নষ্ট করে দিয়েছে।
আফজাল সাহেব আর ফোরকান সাহেব যথেষ্ট সমাজে জ্ঞানী গুনি লোক হলেও ভিতরের ছেলে মানুষি এখনো যাইনি। যার সূত্র ধরেই তাদের জগড়া।

বাড়ির মাঝে ফাঁপা জায়গায় দুই বন্ধু দুটো দল করে ছোট ছেলেদের সাথে ক্রিকেট বল খেলতে গিয়ে একটা বল এসে ফোরকান সাহেবের মাথায় লাগে আর সেই ছেলেটাকে আফজাল সাহেবের দলের লোক বলে সে কিছু বলেনি। ফোরকান সাহেবে প্রশ্ন কেন ছেলেটিকে কিছু বলে নাই নাকি সে ইচ্ছে করে বল মেরে তাকে মারতে বলছে? এই সামান্য বিষয়টাকে জগড়ায় পরিনত করতে তাদের দুই ঘন্টা সময়ও লাগেনি।তারপর থেকে দুজনে দুজনের সব বিষয় ধরে জগড়া করতে করতে এমন পর্যায়ে গেছেন তাদের বাড়ির মাঝে দেয়াল তুলতে হয়েছে। আর সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলে মেয়েদের বিয়া টা আর একসাথে দিবে না।
তবে তাদের এই ছেলেমানুষি নিয়ে বড্ড বিরক্ত মেহেতা বেগম আর লাইলি বেগম কিন্তু অতি ভদ্র ফেমিলীর মেয়ে হওয়ার জন্য স্বামীর কথা উপরে কথা বলতে চায় না। গোপনে গোপনে দুই বান্ধবী বেশ ঘনিষ্ঠ থাকলেও স্বামীদের কান পর্যন্ত সে কথা পৌছায় নাই।

আজ সকালে জেনি আর আকাশ বাড়ির মেইন গেইট খুলে বাড়ির মাঝখানে এমন একটা দেয়াল দেখে দুজনেই হতবম্ভ হয়ে গেল। দুজন দুজনের ঘরের দিকে চলে যায়। আকাশ ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখে আফজাল সাহেব সোফায় বসে পেপার পড়ছেন আর ফাঁকে ফাঁকে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। তার সামনেই মেহেতা বেগম একরাশ বিরক্ত নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন।

মেহেতা বেগম কে আফজাল সাহেব এমন উশখুশ করতে দেখে সোজা হয়ে তাকিয়ে চশমাটা চোখের উপর ঠেলে দিয়ে জিঙ্গেস করেন-

“এভাবে এদিক ওদিক না তাকিয়ে, কি বলতে চাও বলো?”

“আজ আকাশ আর জেনির আসার কথা, তাই বলছিলাম কি মাঝের দেয়াল টা যদি সরিয়ে ফেলেন। এটা আকাশ দেখলে কী ভালো হবে?”

বউকে কোনো কারন ছাড়াই এমন ভয় পেতে দেখে মনেমনে পৈশাচিক আনন্দ পান আফজাল সাহেব। একটু গম্ভীর গলায় বলেন-

“কোন দেয়াল টেয়াল সরানো যাবে না। বাড়ির মেইন গেটও আলাদা করব তাড়াতাড়ি। আকাশ কে বলে দিও যদি আমার বাড়িতে থাকতে চায় তবে যেন বিয়ে ভেঙে দেয়।”

আকাশ দরজায় পা দিতেই শুধু শেষের বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার কথা শুনে জিঙ্গেস করে কার বিয়ে ঠিক হইছিল আর কেনই বা ভাঙ্গবে। হঠাৎ পিছন দিক থেকে আকাশের কথা শুনে আফজাল সাহেব ভয়ে ঢুক গিলেন। ছেলের পাগলামি কোন কিছুই অজানা না তার কাছে। তবুও সাহস নিয়ে বলেন-
“ওই ফোরকান্নার মেয়ে জেনির সাথে তোমার বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছি। সেই সাথে ফোরকান ওর মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিবে বলে ঠিক করেছে তাই আমি তোমার বিয়ের জন্য অন্য জায়গায় মেয়ে পছন্দ করে রেখেছি। মেয়ের বাবা আমাদের থানার দারোগা।”

আকাশ অবাক হয়ে বলর-
“কিন্তু আমাকে এই বিষয়ে কোন কিছুই তো জানানো হয়নি। আর আমি এই বিয়ে না ভাঙ্গবো আর না অন্য বিয়ে করব।”

“আমি তোমার কাছে সিদ্ধান্ত জানতে চাইনি আকাশ। যদি আমাকে সম্মান করো তবে আমার বলার কথাকেও সম্মানের সাথে মেনে নেবে।”

আকাশ তার বাবার এমন কথা শুনে রাগে সামনে থাকা কাচের টেবিলটা ভেঙ্গে নিজের রুমে চলে যায়। জেনির সাথে বাসায় ফেরার পর ঠিক এমনটাই হয়েছে। জেনির বড় ভাবি বেশ কিছুক্ষণ এ বিষয়ে বোঝানোর পর ব্যর্থ হয়ে রুম ত্যাগ করেন। জেনি সিদ্ধান্ত নিয়েছে পালিয়ে যাবে কিন্তু তার আগেই ঝড় শুরু হয়।
হঠাৎ বারান্দায় কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে সেদিকে ছুটে গিয়ে দেখে আকাশ কাক ভেজা অবস্থায় বারান্দায় দাড়িয়ে নিজের ভিজা শার্ট টা মাছি তাড়ানো ভঙ্গিমায় ডান হাত দিয়ে ঝাড়ছে। জেনিকে আসতে দেখে বলল-

“তোর বারান্দাটা আগের থেকে পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছে এখন বেয়ে ওঠা বেশ মুশকিল। মুছে রাখিস তো।”

জেনি আকাশের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে দৌড়ে রুমের দরজা আটকে দেয়। কে কখন আসে বলা যায় না। দৌড়ে আকাশকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

“আকাশ চল আমরা পালিয়ে যাই। এখানে থাকলে কখনো আমি তোর সাথে থাকতে পারব না।”

“ধুরর বোকা। আমাদের বাবাদের তো চিনিস ছোট ছোট ব্যাপার গুলো নিয়ে বড় বড় কান্ড করে থাকে। আমরা পালিয়ে গেলে তারা কষ্ট পাবে খুব আর সেই সাথে আমাদের কখনো আর ফেরা হবেনা এ বাড়িতে।”

“কিন্তু আকাশ ওরা আমার বিয়ে কাল ঠিক করেছে। কাল এখানে থাকলে আমার বিয়ে হয়ে যাবে।”

“উহু শুধু তোর না কাল আমার বিয়েও ঠিক করেছে। তাই এখনই নিচে গিয়ে সোজা কাকুর পা ধরে কান্না করবি আর আমিও বাবার পা ধরবো দেখবি এমনিতেই তাদের মন ঠিক হয়ে যাবে।

৪৬.
জেনি আকাশের কথায় মাথা নেড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে বাবার পায়ের কাছে বসে পা ধরে বলে-
“বাবা আমি কাল বিয়ে করতে পারব না। আমি আকাশ কে ভালোবাসি সেই সাথে তোমাদের ও ভালোবাসি। আমি চাইলে এখন এখান থেকে আকাশের সাথে পালিয়ে যেতে পারি কিন্তু তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা। আমি তোমার সব সিদ্ধান্ত মেনে নিবো তবে তোমার মেয়েটা তখন জীবন্ত লাস হয়ে যাবে। কখনো আর হাসবে না কাঁদবে না। তুমি কি চাও তোমাদের ছোট একটা কারনে আমার ভালোবাসা শেষ হয়ে যাক। তাছাড়া আকাশ কি দোষ করেছে?”

মেয়ের এমন আকুতি দেখে মনটা কেঁদে উঠলো ফোরকান সাহেবের। এত বড় মেয়ে, নিজের থেকে মেয়েকে বেশী বুদ্ধিমান মনে করেন সেই মেয়েকে তার পায়ের কাছে বসেছে কিছুতেই মানতে পারছে না। চোখের সামনে মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে কি হবে কথাগুলো কল্পনায় ভেসে উঠতেই আতকে ওঠে। না সে কখনোই চায়না তার হাসি খুশি মেয়েটা শেষ হয়ে যাক। ছোট ছোট ভুল গুলোর জন্য আজ এমন হয়েছে কিন্তু সে এটা তো ভুল করেনি। আফজালের কাছে গিয়ে ছোট হতে চান না এতে তার সম্মানের ঘাটতি হবে।

“তুই এভাবে বলছিস যখন তখন আমি তোর সব কথা মেনে নিব জেনি। তবে আফজালকে বল আমার সাথে এসে কথা বলতে।”

৩৬.
এতোক্ষণ পাশে বসে বাবা মেয়ের কান্ড দেখছিল লাইলি বেগম। এবার হিংস বাঘের মতো গর্জে ওঠে বলল-

“ক্যান আপনার মেয়ে আপনি বাপ। আপনি নিজে যাবেন আফজাল ভাইয়ের কাছে, সে আসবে কেন? আর আজ যদি আপনি না যান তবে আমি আমার মেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাব। এতকাল সব পাগলামি সহ্য করছি কিন্তু এখন আমার মেয়েটার জীবন চোখের সামনে শেষ হতে দিব না।”

স্ত্রী কথায় ভয়ে পেয়ে যায় ফোরকান সাহেব। লাইলি বেগম এক কথার মানুষ সহজে রাগে না আর রাগলে থামানো মুশকিল। আনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় সে নিজেই যাবে মেয়ের বিয়ের কথা নিয়ে।

এদিকে অনেক কষ্টে আকাশ তার বাবাকে রাজি করায়। আফজাল সাহেব ওঠে ফোরকান সাহের কাছে যেতে নিলে দরজার ফটিক দিয়ে ফোরকান সাহেব কে আসতে দেখে দৌড়ে এসে নিজের জায়গায় ভাব নিয়ে বসে পড়ে। এই বয়সে তার এমন পাগলামি দেখে আকাশ ঠোঁট চেপে হেসে ওঠে।

দুই পরিবার কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয় জেনি আর আকাশকে তারা পালিয়ে দূরে পাঠিয়ে দিবে। নয়তো যাদের সাথে ওদের বিয়ে কাল ঠিক করেছে তারাও নামি দামি লোক হঠাৎ বিয়ে ভেঙ্গে দিলে থানায় কেস দিয়ে দিতে পারে।
দুজনে বাবাদের পাগলামি দেখে গোপনে হেসে উঠে।

মেহেতা বেগম আর লাইলি বেগম বসে বসে পিঠা আর নাস্তা একটা বড় ব্যাগে ভরছে। এই দিয়ে নয় বাটা শুকনো পিঠে ব্যাগে রাখছে। বাসার কাজের লোক জব্বার চোখ দুটি বড় বড় করে বাড়ির মালকিনদের কাজ দেখছে। ফোরকান গোপনে একটা গাড়ি ভাড়া করেছেন, সেই গাড়িতে সবাই মিলে মালামাল রাখছে। আজ আর একটু রাত হলেই আকাশ আর জেনি এই গাড়িতে পালিয়ে যাবে।

গাড়ির সিটে বসে দুজনে অবাক। এত মালামাল দেখে জেনি জিঙ্গেস করে-
“আমরা তো পালিয়ে যাচ্ছি নাকি ডাকাতি করে পালাচ্ছি বলো তো, এত কিছু কেন?”

জেনির কথায় আকাশের মা মেহেতা বেগন বলেন-

“এক সপ্তাহের জন্য যাচ্ছিস, এগুলো সব লাগবে। আর শুন পিছনের ব্যাগে তোর পছন্দের নাড়ু আছে খেয়ে নিস। আর সাবধানের থাকিস। বাড়ি জব্বারের ফোনে প্রতি মিনিটে মিনিটে ফোন দিবি আমাদের কারো ফোনে ফোন দিবিনা সমস্যা হতে পারে।”

ওরা সবার কাছে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরে। জেনির সবার পাগলামি দেখে মুচকি হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে-
“অবশেষে আমাদের একটা ইচ্ছে পূরণ হলো। পালিয়ে বিয়ে।”

আকাশ জেনির কথায় ভ্রু কুচকে জিঙ্গেস করে-
“এটাকে পালিয়ে বিয়ে বলে?”

ওরা ওদের বাসা বরিশাল থেকে গাড়ি করে ঢাকায় রুদ্রের বাসায় চলে আসে।

জেনি আপু আর আকাশ ভাইয়া কে এক গাড়ি মালামল দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করি-
“ভাইয়া তোমরা কি বিয়ে সাদি করে একেবারে চলে এসেছ। কই বললে না তো তোমাদের বিয়ে?”

আকাশ ভাইয়া একটু দম নিয়ে বলে-
“আরে ভাবী বাসা থেকে বিয়ের জন্য পালিয়ে এসেছি।”

আমি ভ্রু কুচকে গাড়ির দিকে ইশারা করে বললাম-
“এসব কেন?”

আমার কথা শুনে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রুদ্র স্যার বলে-
“মেঘ তুমি এসব বুঝবে না। ওদের পরিবার বাংলা সিনেমা কেও হার মানায়। এক গাড়িতে বস্তা বস্তা সবই খাবার। আংকেল আন্টি ওদের তিন চার দিনের খাবার ভেবে পাঠিয়ে দিয়েছে। কি তাই না জেনি?”
,

জেনি আপু তার বাসায় কি কি হয়েছে সব আমাকে খুলে বলতে আমি হাসতে হাসতে শেষ। তখন কপাট রাগ নিয়ে জেনি আপু বলে-
“মেঘ তুমি হাসছো? তুমি জান যখন শুনি আমার বিয়ে অন্য কোথাও ঠিক করেছে কতটা কষ্ট পাইছি।

জেনি আপুর মুখ থেকে কথা টানে নিয়ে আকাশ বলে-
“আর বলো না মেঘ ভাবছিলাম এইবার বুঝি পেত্নিটা ঘাড় থেকে উঠবে। কিন্তু তাও হলো না আরো বেশি করে চেপেছে।”

আকাশ ভাইয়ার কথা শুনে জেনি আপু পিঠে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিতেই আকাশ ভাইয়া দৌড় দেয় পিছন পিছনে জেনি আপুও ছুটে যায়।

আমি তাদের দিকে তাকিয়ে উপরে উঠতে নিলে মাথা ঘুরে সিরি থেকে পড়ে যাই। দৌড়ে রুদ্র আমার কাছে এসে কোলের মাঝে নেয় কিসব বলতে থাকে আমি অনেক কষ্টে চোখ খুলে রুদ্রকে কিছুক্ষণ দেখি। তারপর চোখ বন্ধ হয়ে যাই আমার।
,
,
#চলবে,,,,

সংসার পর্ব-২২

0

#সংসার
#পর্ব_২২

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

রাইমা আপু জ্ঞান হারিয়ে দাড়ানো থেকে পড়তে নিলে রুদ্র ভাইয়া দৌড়ে ধরতে যায় কিন্তু তার আগেই রাকিব ভাইয়া ধরে নেয়। আমি রাইমা আপুর হঠাৎ কি হইছে ভাবছি। হাত পা শীতল হয়ে চুপসে যাওয়ায় আমি আর জেনি আপু হাত পায়ের তালু হাত দিয়ে ডলছি। আস্তে আস্তে রাইমা আপুর শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
আমি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কি থেকে কি হয়ে গেল। সবার জীবনের সুখ যে বেশি দিন টিকে না।

রাইমা আপু নিস্তর দেহটা পরে রইল রাকিব ভাইয়ের কোলে। রুদ্র এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, একমাত্র বোনের এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। আমাদের চারপাশে লোকজন এসে ঘিরে ধরেছে। রাকিব ভাই রাইমা আপুর হাতের নাড়ি ধরে বলে-
“মেঘ তাড়াতাড়ি এম্বুলেস ফোন করো, আমাদের এখনই হাসপাতালে যেতে হবে।”

৪৩.
রাইমা আপু একটু পর পর জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে আবার কয়েক সেকেন্ড নিস্তব্ধ থেকে শব্দ করে শ্বাস নিচ্ছে। হঠাৎ সারা শরীর কাপিয়ে একটু জোরে শ্বাস নেয়। রাকিব ভাই ভয়ে শক্ত করে দু বাহুতে আঁকড়ে ধরে। আর শ্বাস নিচ্ছেনা দেখে রাকিব ভাই তার মুখ দিয়ে মুখ লাগিয়ে জোড়ে দু বার শ্বাস দেয়, তবুও কোন নড়াচড়া নেই, তিনবারের সময় রাইমা আপু রাকিব ভাইয়ার শ্বাস দেওয়ার সাথে সাথে জোরে শ্বাস নেয়।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের সামননে বসে আছি আমরা। রাকিব ভাইও আমার পাশে চোখে মুখে একরাশ অস্থিরতা নিয়ে বসে আছে। এতক্ষণ ডাক্তারের পাশে পাশে দৌড়ানোর জন্য ক্লান্ত হয়ে পরেছে। চোখে কোনায় পানি চিকচিক করছে।
রুদ্র রাইমা আপুকে যে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানের সামনে পায়চারি করছে। তাকে বেঁধে রেখেও এখানে বসানো যাচ্ছেনা। জেনি আর আকাশ মুখে চিন্তার ছাপ তারা তাদের অভিমানের কথা ভুলে গিয়ে রাইমা আপুকে এখানে ভর্তির ব্যাপার নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে।

ডাক্তার কেবিন থেকে বের হতেই রুদ্র দৌড়ে তার কাছে যায়।
“ডাক্তার রাইমা ঠিক আছে তো? কি হয়েছে ওর ও এমন করছে কেন?”

ডাক্তারকে দেখে রাকিব ভাই ওঠে সেখানে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
“রাই রাইমা কেমন আছে? ও ঠিক আছে স্যার?”

“প্লিজ আপনারা শান্ত হন। রুগী এখন একদম ঠিক আছে। তেমন কোন ব্যাপার না তবে হতে পারত যদি সময় মতো নিয়ে না আসতেন। রুগীর ঠান্ডায় এলার্জি+শ্বাসকষ্ট আছে যার জন্য এমনটা হইছে। বেশী ঠান্ডা পানিতে যেন রুগী গোসল না করে পরের বার থেকে খেয়াল রাখবেন। আর প্রথমে আপনারা রোগীর যা কন্ডিশন বললেন তাতে আজ খারাপ কিছু হলেও হতে পারত আল্লাহ রহমাতে তেমন কিছুই হয়নি, সময় মতো রাকিব সাহেব শ্বাস দিয়েছিলেন, ঠান্ডার জন্য রোগী শ্বাস না নিতে পারলে মরেও যায় এমন অনেক কেস আমাদের কাছে আছে।
আপনারা চাইলে রুগীর সাথে দেখা করতে পারেন। ”

আমরা সবাই রাইমা আপুর কেবিনে ডুকি। রুদ্র রাইমা আপু দু হাত আকরে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে- “ছুটকি তুই কি করে ভুলে গেলি তোর ঠান্ডায় শ্বাসকষ্ট আছে? স্বাস্থ সচেতন মেয়ে হয়েও কিভাবে ভুলে গেলি? তোর খুব কষ্ট হইছে না রে ছুটকি?”

রাইমা আপু রুদ্রের কথা শুনে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। আমরা সবাই একে একে কথা বলি। কিন্তু রাকিব ভাইয়া রাইমা আপুর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। আভিমানে অভিযোগ বড্ড জেকে ধরেছে তাকে। রাইমা আপু নিজে তাকে অপরাধী গলায় নরম সুরে ডাক দেয়।

আমরা তাদেরকে সেখানে একা রেখে বাহিরে চলে আসি। আজই ঢাকা ফিরব। রাইমা আপু অসুস্থ তাই কালকে ফিরতে চাইছিলাম কিন্তু রাইমা আপু এখানে আর থাকতে চাইনা বার বার বলছে সে বাসায় ফিরবে।
আমরা আমাদের ব্যাগ নিয়ে বান্দরবান বাসস্টেশন চলে যায়, কিন্তু সেখানে যেতে যেতে রাত সাড়ে বারোটা বাজে। শেষ বাস টা চলে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। কালকে ছাড়া আর বাস ছারবে না। শুনশান রাস্তা, দু এক টা গাড়ি আসা যাওয়া করছে। আর কোন উপায় না পেয়ে সেখানে পাশে একটা হোস্টেল এ উঠি। কিন্তু এতরাতে তারা রুম দিবে না আর তাছাড়া কোন রুম খালিও নেই।
রুদ্র কাউন্টারের লোকটাকে কিছু টাকা দিয়ে একটা রুম নিয়েছে সকালে ওঠেই চলে যাবে বলে।

রুমটা বেশ বড়, ডাবল বেড। এখানে এনায়াশে ছয়জন একরাত পাড় করে দেওয়া যাবে। আমি হাতের টলিটা রেখে ক্লান্ত হয়ে বেডে এক পাশে বসে পরলাম।
জেনি আপু রুমটা ঘুড়ে দেখছে। বেশ আধুনিক করে সাজানো হয়েছে রুমটা। রুমের মোটামুটি বড় একটা বারান্দা, তার মাঝখানে ছোট একটা টেবিল দুপাশে দুটো চেয়ার।

রুদ্র বাহির থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসেছে। সবাই সেখান থেকে খেয়ে নিলাম। আকাশ ভাই খেতে বলল-
“এখন একটা গান হলে মন্দ হতো না।”

৪৪.
আকাশ ভাইয়ের কথা শেষ না হতেই রাইমা আপু উচ্চ গলায় বলে উঠল- “মেঘ তুমি তো খুব ভালো গান গাইতে পারো। একটা গান গাও।”

আমি রাইমা আপুর কথায় তার দিকে তাকালাম কে বলবে এই মেয়েটার কয়েক ঘন্টা আগে জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছে?

আমি আপুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম-
“আপু তোমার শরীর এখন কেমন লাগছে?”

রাইমা আপু দু ঘাড় নাড়িয়ে বলল-
“আমি একদম ছিক আছি। আর তাছাড়া মানুষকে ততক্ষণ অসুস্থ মতো থাকতে হয় যতক্ষণ সে নিজে পায়ে হেঁটে বেরাতে পারে না। নয়ত শরীরের সাথে মনও অসুস্থ হয়ে পরে। তুমি একটা গান ধরলে আরো সুস্থ হয়ে উঠব।”

আপুর সাথে জেনি আপু বার বার তাড়া দিচ্ছে গান গাওয়ার জন্য। আমি মুখের খাবারটা চিবিয়ে চোখ বুঝে সুর তুললাম।

“আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে।

আমার দিন গুলো সব রং চিনেছে, তোমার কাছে এসে।
শুধু তোমায় ভালোবেসে।

তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে,
ভোরের শিশির খুব ছোঁয়ে যায়,
তোমায় ভালোবেসে।

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।”

গানটা শেষ হতেই আকাশ ভাইয়া মুখ থেকে শিশ বাজালো। আকাশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
“মেঘ আমি তো তোমার গানের প্রেমে পড়ে গেলাম। এত আবেগ দিয়ে তো কোন শিল্পীও গাইতে পারে না।”

আমি আকাশ ভাইয়ার কথায় খিলখিলিয়ে হেসে চোখের ইশারায় জেনি আপুকে দেখিয়ে বললাম-
“থাক আমার গানের প্রেমে পরতে হবে না। বউয়ের প্রেমে পড়েন।”

আকাশ ভাই আমার কথা শুনে বাঁকা চোখে জেনি আপুর দিকে তাকিয়ে অভিমানি সুরে বলে-
“বউয়ের প্রেমে তো কবেই মজে আছি। হায়! বউ কি আর সেই প্রেম বুঝে?”

জেনি আপু আকাশ ভাইয়ার কথা শুনে মুগ ভেংচি দিয়ে সেখান থেকে উঠতে উঠতে গুনগুন করে বলে ওঠলো।

“নাইবা তুমি বাসলে ভালো,
নাইবা আসলে কাছে।
জানি তোমার হৃদয় মাঝে,
অন্য সুরাজ বাঝে।”
,
,

রাত প্রায় তিন টা।
দুটো বেডে একটায় রাইমা আর রাকিব ঘুমিয়ে আছে অন্য টায় জেনি শুয়ে আছে আর তার পাশ ঘেসে অন্যদিক ফিরে আকাশ শুয়ে আছে। দুজনের কারো চোখেই ঘুম নেই। এক একভাবনায় ব্যস্ত দুজন।
হঠাৎ আকাশ জেনিকে একটু ঠেলা মারলে জেনি ঘুরে তার দিকে তাকায় বিনিময়ে আকাশ দাত কেলিয়ে হাসে। জেনি এবার বিরক্ত হয়ে আকাশকে তার পিঠ দিয়ে ঠেলা মারলে আকাশ বলে-

“কিরে ঠেলছিস কেন? ঘুমাস নি”

“না ঘুমাইনি, তুই ঠেলছিস কেন, তাই আমিও ঠেলছি।”

“তুই তো হাতির মতো শুয়ে বেড দখল করে ছিলি তাই। কিন্তু আমি তো কিছু করেনি।”

“আকাইশ্যা কি বললি আমি হাতি?”
বলতে বলতে জেনি আর একটু ধাক্কা দিতেই আকাশ বেড থেকে পরে যায়। আর শব্দ করে ‘ওমা’ বলে ওঠে। জেনি হুরমুর করে বেড থেকে নেমে আকাশের পাশে বসে বলে-
“ব্যাথা পাইছিস, কোথায় ব্যাথা পাইছিস? সরি আমি একদম বুঝতে পারেনি আর হবে না। এই ওঠ বেডের অর্থেক তো। বেশি ব্যাথা করে?”

রাইমার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। তা দেখে আকাশ মুচকি হেসে জেনির বাম হাতটা বুকের বা পাশে রেখে বলে-
“হুমম ব্যাথা পেয়েছি। এখানে খুব ব্যাথা পেয়েছি।”

“সরি রে আর কখনো হবে না।”

“আজকের ব্যাথা না তো এটা গত দুদিনের ব্যাথা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে সরিতে কমবে না।”

জেনি উত্তর দেয় না। লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়। আকাশ এবার কঠোর হয়ে বলে-
“তুই কিভাবে সুইসাইডের কথা ভাবলি? আমার কথা কি একবারও মনে পড়ল না? কি করে থাকতাম। তোর যদি কিছু হতো আমি তখনি পাহাড় থেকে ঝাপিয়ে পড়তাম।”

“ধুরর বোকা সুইসাইড কে করত? আমি তো তুই জানলা বেয়ে আসছিস দেখে ওমন টা করলাম যাতে অন্য মেয়ের দিকে তাকানোর আগের আমার কথা ১০০ বার ভাবিস। কিন্তু তুই হাদারামের মতো তখন আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার পায়ের নিচ থেকে চেয়ার সরিয়ে তারপর কোলে তুললি। গাঁধা যদি মরারই হতো তোকে নিয়ে মরতাম। আমি এত ভালো না যে তোকে অন্য মেয়ের কাছে রেখে চলে যাব।
তাছাড়া মরেলেই বা কি হতো তোর তো কত,,,”

আকাশ জেনিকে কি বলার সুযোগ না দিয়ে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
“আর এমন বলবি না, তুই জানিস না তোকে ছাড়া আমি কতটা অচল?”

জেনি আকাশের বুক আকরে ধরে বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে। দুজনের মাঝে নিরবতা।
নিরবতা কাটিয়ে আকাশ বলল-

“ওই জেনি”
“হু”
“ঘুমিয়ে গেছিস”
“হু”

“কি হু হু করছিস, বাড়িতে চল না বিয়ে করে ফেলি। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”

“কিন্তু তোর অফিস, আর তো তিন মাস বাকি তারপর তো বিয়ে হবেই।”

“আমি আর তিন মাস তো দূর তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারব না। তোকে চাই একদম আমার নিজের করে চাই।”

আকাশ কথায় জেনি মৃদু হেসে বুকে মাথা রেখে আবার চোখ বন্ধ করে।

#চলবে,,,,,

সংসার পর্ব-২১

0

#সংসার
#পর্ব_২১

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

আমি জেনি আপুকে সেখানে দেখে আঁতকে ওঠে ওঠি। এখন যদি আকাশ ভাইয়াকে লিনা আপুর রুমে জেনি আপু দেখে তাহলে সে কি করবে জানি না। ভয়ে ভয়ে আমিও সেদিকে পা বাড়াই।

৪১.
জেনি আপু দরজায় নক করতে গেলে হালকা করে দরজা চাপিয়ে রাখার জন্য নক করার আগেই দরজা খুলে যায়। ততক্ষণে আমিও জেনি আপুর পাশে এসে দাড়াই।
দরজা খুললে দেখি আকাশ ভাইয়া লিনা আপুর হাত ধরে বসে আছে আর লিনা আপু কাঁদছে। ভাইয়া হঠাৎ আমাদের রুমে ঢুকতে দেখে অপ্রস্তুত ভাবে ওঠে দাড়ায়। আকাশ ভাইয়ার চোখে জল চিকচিক করছে। জেনি আপু গিয়ে মুখে কিছু না বলে আকাশ ভাইয়াকে জোড়ে একটা থাপ্পড় মারায় ভাইয়া দু হাত পিছিয়ে যায়।

ভাইয়া কাছে এসে জেনি আপুর হাত ধরে বলে-
“জেনি শুন তুই ভুল বুঝছিস। শান্ত হ আমি সব বলছি।”

“কি বলবি তুই হ্যাঁ, কি বলবি?”

জেনি আপুর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে পাশের রুম থেকে রুদ্র দৌড়ে আসে। জেনি আপুকে বার বার আকাশ ভাইয়া থামাতে চেষ্টা করছে কিন্তু কে শুনে কার কথা।

রুদ্রকে আসতে দেখে আপু তাকেই খ জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে।
“রুদ্র আকাশ আমাকে আবার ঠকিয়েছে। ও এই মেয়েটার সাথে রুমে বসে,,,,
আপু আর কিছু বলতে পারে না, ঢুকরে কেঁদে ওঠে।

জেনি আপুর এইটুকু কথা শুনে রুদ্রের চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। রুদ্র জেনি আপু নিজের থেকে ছাড়িয়ে আকাশ ভাইয়া সার্টের কলার ধরে বলে-
“সালা বেইমান, তুই জীবনেও শুধরাবি না। তোদের মতো কিছু পুরুষের জন্য পুরুষ সমাজের আজ কলঙ্ক। এত যখন মেয়ে লাগে তাহলে কারো মন নিয়ে না খেলে পতিতালয়ে গিয়ে বসে থাকতি।”

আকাশ ভাইয়া এতক্ষণ রুদ্রকে বোঝানোর জন্য চেষ্টা করলেও, শেষের কথা গুলো শুনে চুপ হয়ে যায়। চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরে।
লিনা আপু এগিয়ে এসে জেনি আপুকে কিছু বলতে চাইলে আপু রাগে লিনা আপুর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

জেনি আপু আকাশ ভাইয়ার সামনে গিয়ে বলে-
“তোর লিনাকে নিয়ে তোর যেখানে যাওয়ার যা। তবে আমার চোখের সামনে যদি আর একবার আসিস খোদার কসম আমি সুইসাইড করব।”

আকাশ ভাইয়া জেনি আপুর কথায় কেঁপে ওঠে। জেনি আপু আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুমে এসে দরজা আটকে দেয়।
আমরা তার পিছন পিছন রুমে সামনে এসে দরজা খুলতে বললে খুলে না। হঠাৎ ভিতর থেকে কিছু পরে যাওয়ার শব্দ শুনে সবাই আঁতকে ওঠি। আকাশ ভাইয়ার আর কিছু না ভেবে পিছন দিক থেকে জানালার ওপর ভড় দিয়ে রুমে ডুকে দেখে জেনি আপু ফ্যানের সাথে উরনা বেঁধে প্রায় ঝুলে পরেছে। আকাশ ভাইয়া জেনি আপুকে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে নিচে নামাতেই আপু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

দরজা খুলে দিতেই সবাই রুমের ভিতর ডুকি। কিন্তু পাশ কেটে আকাশ ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রাইমা আপু ছিল বলে জেনি আপুর আর ডাক্তারের প্রয়োজন পরেনি।
,
,
আকাশ রিসর্টের দূরে একটা পাথরের ওপর ভাবনাহীন হয়ে বসে আছে। রুদ্র আকাশকে দেখে সেখানে এগিয়ে যায়। পাথরের উপর বসতে বসতে বলে-

“জেনিকে খুব বেশি ভালোবাসিস?”

আকাশ রুদ্রের কথা এড়িয়ে গিয়ে বলল-
“বিশ্বাস কর, আমি লিনার কাছে ইচ্ছে করে যাইনি। আর না তো লিনার উপর কোন টান ও আছে।”

“হুমম আমি বুঝতে পারছি। তোর চোখ যে সে কথাই বলছে। আমার কথায় কষ্ট পাস না, তখন জেনিকে ওই রকম ভাবে কাঁদতে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারেনি।”

আকাশ মাথা নেড়ে হাসার চেষ্টা করে বলে-
“আমি বুজতে পারছি দোস্ত, তোর জায়গায় আমি থাকলে এমনটাই করতাম।”

“কিন্তু কি হইছে, জেনি এমন করল কেন? আর ওই মেয়েটার সাথেই বা তোর সম্পর্ক কী?”

আকাশ এবার একটু হেসে চোখের জল মুছে উপরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুই তো আমার প্রথম ভালোবাসার কথা জানিস। আর সেই মেয়েটাই হচ্ছে লিনা। ওর সাথে প্রায় চার বছর পর এই দেখা। ওকে এক সময় ভালোবাসতাম কিন্তু তখন আবেগটা বেশি ছিল। ধোকা দিয়ে চলে যাওয়ার পর ফিরে আসে তবুও মেনে নেই। কিন্তু লিনা আবারও চলে যায়। কিন্তু এই বার জেনি ভাবছে আমি এখন আগের বারের মতো লিনার কাছে ফিরে যাব। তুই বল রুদ্র আমার কি এখন আবেগের বয়সটা আছে, আমি কি আবেগ আর ভালোবাসার পার্থক্য বুঝিনা? আমি তো জেনিহীন নিজেকে মানুষ ভাবতেও কল্পনা করতে পারি না।

লিনার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরেছে। ডাক্তার বলেছে ও বড় জোড় কয়েক মাস বাঁচবে। আর তাই নিজেকে হাসিখুশি রাখার জন্য এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা শুনে আমি একটু আবেগ প্রবণ হয়ে পরেছিলাম। জেনিকে বলতে চেয়েও বলেনি এটা ভেবে জেনি প্রথম দেখাই লিনাকে সহ্য করতে পারেনি আর ও এটাও পারবে না।। তাই আমি সকাল সকাল লিনার সাথে দেখা করে চলে আসতে চেয়েছিলাম যাতে জেনি কষ্ট না পায়। লিনা যাই করুক আমার খালাতো বোন তো।

হ্যাঁ একটা সময় ছিলো যখন আমি মেয়েদের মাঝে, খারাপ নেশায় ডুবে ছিলাম। কিন্তু এই যে এতটা বছর জেনির সাথে আছি ও বলতে পারবে আমি ওকেও ছুয়েও দেখেছি আজ কিভাবে ভাবলো ও আমি ওকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে থাকবো? ওর এই বিশ্বাস টা কী আমি আজও অর্জন করতে পারেনি?

জেনি কিভাবে পারলো আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা? আমার একটু দেরী হলে এতক্ষণে কি হতো ভাবতেই গাঁয়ে কাটা দেয়। সুইসাইড কিভাবে করে ওকে তো আমি বুঝাব আগে একটু ঠিক হতে দে।”

৪২.
কিছুক্ষণ আগে জেনি আপুর জ্ঞান ফিরে। আসে পাশে তাকিয়ে কাউকে খুজে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে-
“মেঘ রুদ্র কোথায়?”

আমি আপুর কথায় মুচকি হাসি দিলাম। অভিমানে আকাশ কোথায় বলতে পারছেনা তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রুদ্রের কথা জানতে চাইছে।
“এই তো বাহিরে গেছে।”

জেনি আপু একটু হেসে বলল-
“আমার জন্য তোমাদের সবার সমস্যা হলো? সবাই ঘুরতে এসে আমার জন্য ঝামেলা করতে হলো।”

“ওটা ব্যাপার না আপু,ঠিক আছে। কখনো আর এমন কথা ভাববেও না। তুমি ঠিক হলে অনেক ঘোরা যাবে।”

“আমি ঠিক আছি মেঘ। বিকেলে রুদ্রকে বলো ঘুরার প্লান করতে। কোথায় কোথায় যাওয়া যায়, আর একটা দিন বাকি আছে।”

আমাদের কথার মাঝে সেখানে গুটিগুটি পায়ে লিনা আপু এগিয়ে এলো। লিনা আপুকে দেখে জেনি আপু চোখ মুখ কুঁচকে কড়া গলায় বলল-
“মেঘ এই মেয়েটাকে আমার সামনে থেকে যেতে বলো।”

লিনা আপু জেনির আপুর কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে আপুর পাশে বসে বলতে শুরু করলো-
” আপু আমাকে ক্ষমা করে দেও। নিজের খুশির জন্য তোমাদের মাঝে এত ঝামেলা হলো। আমি জানতাম না আকাশের বিয়ে তোমার সাথে ঠিক হইছে। আমি শুধু শুনেছি আকাশের বিয়ে ঠিক হইছে। যদি জানতাম তবে কখনোই আকাশের সামনে আসতাম না।
আপু আমি আমার পাপের সাজা পাচ্ছি। যার জন্য দু দুইবার আকাশকে ঠকালাম সে আমার এমন বিপদের সময় ছেড়ে চলে গেছে।”

এই টুকু বলতেই লিনা আপু কেঁদে ওঠল। এতক্ষণে জেনি আপু ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতো চোখ জোড়া শীতল হয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল। এমন বিপদ বলতে কি বুঝেয়েছে লিনা, কিসের বিপদ?

চোখের পাশের জল মুছে একটু হেসে বলতে শুরু করলো- “আপু আমাকে ডাক্তার বলছে দুই থেকে তিন মাস বাঁচবো। ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরেছে আমার। সে জন্য জীবনের শেষ দিন গুলো নিজেকে দেওয়ার জন্য এদিক সেদিক ছটফট করে ঘুরে বেড়াই। যার সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম আজ ওর টাকা পয়সা সব আছে তবে আমাকে দেওয়ার মতো সময় হয় না। এই টাকা পয়সা সব দিচ্ছি তবে দুইটা দিন আমি ওর থেকে পাইনি। কিন্তু সেসব নিয়ে আফসোস নেই আমার কর্মফল আমাকেই তো ভোগ করতে হবে।

তোমাকে আকাশ অনেক ভালোবাসে। তোমরা একসাথে থাকলে ও খুব সুখী হবে। আমার জীবনের শেষ দিনগুলোই তোমাদের এই সুখী জিবন দেখতে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। ক্ষমা করে দিও আমায়।”

জেনি আপু সব শুনে কান্না করে লিনাকে জড়িয়ে ধরেছি। যে মেয়েটা সকালে একটা মেয়ের জন্য সুইসাইড করতে চেয়েছিল। এখন সেই মেয়েটার জন্য কান্না করছে। কি অদ্ভুত আমাদের মন। আমি আর রাইমা আপু সুপ্ত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি।
,

আমরা সবাই দুপুরে খেয়ে। বেলা দুই টায় দিকে স্বর্ন মন্দিরের উদ্দেশ্যে বের হলাম। সেখানে থেকেবের হয়ে শৈল প্রপাত ঝর্নার দেখতে চলে গেলাম।
আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো ঝর্নায় গোসল করা কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি পাথরের সাথে ঝর্না বেয়ে বেয়ে নিচে পরছে। যেখানে দাড়িয়ে পা ভিজানো গেলেও গোসল করা যাবে না। কিন্তু রাইমা আপু জেদ ধরেই একটু কুয়া টাইপ সেখানে বসে পরল। যার মানে সে গোসল করবেই।

কুয়ায় স্বচ্ছ পরিষ্কার ঠান্ডা শীতল পানি। ঝর্নার পানি পাথর চুপসে কুয়ায় পরছে। কিন্তু সেখানে একজনের বেশি দুজন গোসল করা যায় না। তবুও জেনি আপু আর রাইমা আপু দুজনে সেখানে ভিজছে। আকাশ ভাইয়া এর মাঝে বেশ কয়েকবার জেনি আপুকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথা বললেও আপু শুনেও না শুনার ভাব ধরে এড়িয়ে গেছে।

আমি রুদ্র, রাকিব ভাই, আকাশ ভাইয়া ঝর্নার চারপাশের সুন্দার্য দেখছি। পাথরের নিচে একটা বড় কুয়া যেখানে গোসল করা গেলেও রিক্স অনেক। পরে গেল জীবন শেষ। তবুও আমি যেতে চাইলে রুদ্র হাত ধরে রেখে দেয় নিচে যেতে দিবে না তাই।

হঠাৎ রাইমা আপু কুয়া থেকে ওঠে ছটফট করতে থাকে। বার বার জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। আমাদের জোড়ে জোড়ে জেনি আপু ডাকছে।
রাইমা আপুর চোখ ওল্টে যাচ্ছে। আমরা সবাই ভয়ে সেদিকে দৌড়ে যাই। রাইমা আপু জ্ঞান হারিয়ে দাড়ানো থেকে পরতে নিলে রুদ্র ভাইয়া দৌড়ে ধরতে যায় কিন্তু তার আগেই রাকিব ভাইয়া ধরে নেয়। আমি রাইমা আপুর হঠাৎ কি হইছে ভাবছি। হাত পা শীতল হয়ে চুপসে যাওয়ার আমি আর জেনি আপু হাত পায়ের তালু হাত দিয়ে ঢলছি। আস্তে আস্তে রাইমা আপুর শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
আমি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কি থেকে কি হয়ে গেল। সবার জীবনের সুখ যে বেশি দিন টিকে না।

#চলবে,,,,,,,

সংসার পর্ব-২০

1

#সংসার
#পর্ব_২০

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

আমি হাঁটতে হাঁটতে একটা পাথরের উপর বসতে গিয়ে পিছলে অন্য একটা পাথরের উপর পড়ে যায়। আর একটা পাথর আমার পায়ে এসে লাগে।
তেমন একটা ব্যাথা না পেলেও এখন এতটা দূর হাঁটা সম্ভব না। আমাকে বসে থাকতে দেখে রুদ্র আমাকে ওঠিয়ে তার কোলে নেয়। আমি বার বার বলছি আমি হেঁটে যেতে পারব কিন্তু কে শুনে কার কথা।
চারপাশের সবাই আমাদের দেখে জোড়ে চিৎকার করছে। কেউ ভিডিও করছে। আমি লজ্জায় রুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে বুকের ভিতর মাথা লুকিয়ে রাখলাম।

৩৯.
দুপুরে খাবার খেয়ে, বিকেলের দিকে চলে গেলাম চিম্বুক পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। বান্দরবান জেলা থেকে চিম্বুক পাহাড় প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

গাড়ি করে যেতে যেতে হঠাৎ আঁকাবাঁকা একটা নদী চোখে পরে। আমি দ্রুত গাড়ি থামাতে বলে সেই নদীর তীরে যাই। আমার পিছে পিছনে বাকি সবাই আসছে। মুগ্ধ চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি। বিকেলের হেলে পড়া সূর্যের জন্য নদীর পানি চিকচিক করছে। আমি সেদিকে পিটপিট করে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে প্রকৃতি আমাদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছে।
রুদ্রের দিকে উৎসাহ দৃষ্টিতে নদীর নাম কি জিঙ্গেস করলে বলে নদীর নাম সাঙ্গু নদী। এমন প্রকৃতির সাথে নদীর নাম একদম মিলছে না। মনে মনে ভাবছি নদীটার নাম কি দেওয়া যায়।

সবাই গিয়ে গাড়িতে আবার নিজ নিজ সিটে বসছে। কিন্তু আমি একই জায়গায় ভাবুক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি নদীটার নাম কি দেওয়া যায়। নদীটার সৌন্দর্য দেখে যে কেউ এর মায়ার প্রেমে পরতে বাধ্য। সেখানে নদীটার নাম কি সাঙ্গু? আমি মনে মনে ভাবলাম নদীটার “প্রেমাবীনি” হলে মন্দ হত না। আমি জোড়ে চিৎকার করে উঠলাম-
“ইয়াসস প্রেমাবীনি”

হঠাৎ আমাকে চিৎকার করতে দেখে সবাই অবাক হয়ে গাড়ির ভিতর থেকৈ তাকিয়ে রইলো। রাইমা আপু চড়া গলায় বলল-
“মেঘ তুমি কি পাগল হয়ে গেলে, নাকি জ্বীন ট্বিনে ধরছে?”

আমি নিজেই নিজের বোকামি বুঝতে পেরে অপ্রস্তুত ভাবে হেসে উঠলাম। গাড়িতে ওঠে বসতেই রুদ্র ফিসফিস করে বলল-
“মায়াবীনি নাম না হয়ে ‘প্রেমাবীনি’। মারাত্মক সুন্দর নাম দিলে নদী টার।”

আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম সে কি করে জানলো আমি এটা নদীর নাম রাখছি?
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে রুদ্র উত্তরে শুধুই মুচকি হাসে।
আমি মনে মনে বলে ওঠলাম-
“হায়! এই হাসি যে আমাকে মেরেই ফেলবে।”

আমার দিকে সবাইকে তাকিয়ে হাসতে দেখে বুঝলাম কথাটা আমি মনে মনে না জোরেই বলে ফেলছি।
,

চিম্বুক পাহাড় সমুদ্র পৃষ্ট থেকে প্রায় ২৫০০ শত ফুট উপরে অবস্থিত। এখানে দাড়ালে মনে হয় মেঘের উপরে দাড়িয়ে আছি আর মেঘ নিচ থেকে ভেসে যাচ্ছে। গড়িতে করে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছে আমরা চাঁদের বুকে পাড়ি দিচ্ছি। আমি পাহাড়ের উপর ওঠে ঘাসের উপর বসে পরি। কি অপরূপ সুন্দর্য।

জেনি আপু আর রাইমা আপু এসে ঘাসের উপর বসল।

জেনি আপু ঘাসের উপর বসতে বসতে বলল-
“সবাই সবার কাপল কে এখানে বসে প্রপোজ করলে মন্দ হবে না। কি বলিস আকাশ? ”

জেনি আপুর কথায় আকাশ ভাইয়া সায় দেয়।
আমি ভাবতে থাকি রুদ্র আমাকে কি দিয়ে প্রপোজ করবে এখানে প্রপোজ করার মতো কোনো জিনিস আছে। রুদ্র আমাকে প্রপোজ করবে ভাবতেই মনের ভিতর এক অজানা অনুভূতিতে ভরে যায়।

রাকিব ভাই পাহাড়ের আসেপাশে থেকে কিছু ঘাস ফুল নিয়ে এসে রাইমা আপুকে প্রপোজ করতেই রাইমা আপু রাকিব ভাইয়ে জড়িয়ে ধরে।
আকাশ ভাই কি দিয়ে প্রপোজ করবে ভাবতেই আসে পাশে তাকায়। তখনই রিসর্ট থেকে আসর সময় দুষ্টুমি করে রাইমা আপুর একটা উরনা গলায় পেচিয়ে নিয়েছিল। সেটা নিয়ে জেনি আপুর কাছে গিয়ে মাথায় পেচিয়ে বউদের মতো করে পরিয়ে দেয়।

তখনই রাইমা আপু বলে ওঠল-
“আকাশ ভাই এটা কি হলো? আমার উরনা দিয়ে প্রপোজ। না হবে না। এটা মানি না।”

“রাইমা,পরে না হয় বাসায় ফিরে জেনিকে প্রপোজ করা যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে তোমার ভাইয়ের প্রপোজ দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করছে। যে ছেলেটা জীবনে কোন মেয়েদের কাছে যায় নাই সেই ছেলেটা কিভাবে বউকে প্রপোজ করবে দেখার জন্য আমার আর তর সহ্য হচ্ছে না।”
আকাশ ভাইয়ার কথায় সবাই উৎসক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকায় আমি মিটমিট করে হাসছি। কি দিয়ে প্রপোজ করবে, কেমন করে প্রপোজ করবে?

রুদ্র কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে হাঁটু গেড়ে আমার সামনে ঘাসের উপর বসে। আমাকে ইশারায় তার হাঁটুর উপর পা রাখতে বললে আমি না রেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি কি করবে এটা ভেবে। চারপাশে লোকজন, কারো মুখে কোন কথা নেই সবাই তাকিয়ে আছে কি হচ্ছে এটা ভেবে।

রুদ্র মুচকি হেসে ইশারায় পা তার হাটুর উপরে রাখতে বললে আমি কাঁপা কাঁপা পা তার দিকে এগিয়ে দিতেই সে নিজে পা নিয়ে হাটুর উপরে রেখে পকেট থেকে একটা পায়েল বের করে। পাথরের দু প্যাঁচের একটা পায়েল ঝকঝক করছে। আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি।
রুদ্র পায়েল টা পায়ে পরিয়ে দিয়ে ওঠে দাড়াতেই আমি রুদ্রকে জড়িয়ে কান্না করে দিলাম। রুদ্র আমাকে কাপালের উপর তার ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। মনে মনে একটা কথাই ভেসে ওঠে আদৌ কি আমি এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?

ছোট বেলায় যার ভালোবাসা বেশি পেতাম তাকেই হারিয়ে ফেলেছি। যে ভালোবাসা উপচে পরে সেটা যে আমার কপালে বেশি দীর্ঘ হয়না। কিন্তু আমার যে রুদ্রের ভালোবাসা অনন্তকাল চাই।

৪০.
চিম্বুক পাহাড় থেকে ফিরার সময় একটা মেয়ে আমাদের দিকে হাত নেড়ে এগিয়ে আসলো।

“হেই আকাশ, তুমি এখানে,কেমন আছো? আরে জেনি আপু আপনিও আছেন যে? সবাই এখানে কি ব্যাপার।”

মেয়েটির কথা শুনে জেনি আপুর মুখটা মুহূর্তে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। জেনি আপু উত্তর না দিয়ে বলল-

“মেঘ চলো চলো আমাদের লেইট হয়ে যাচ্ছে।”

আমি আকাশ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আকাশ ভাইয়া কেমন করে মেয়েটার দিকে এই দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

মেয়েটি বলল-
“কোথায় যাবে, কোন রিসর্টে ওঠছো?”

আকাশ ভাইয়া আস্তে করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমরা নীলাচল নিলাম্বর রিসর্টে ওঠেছি, হঠাৎ এখানে‌, কেমন আছো?”

মেয়েটা মুচকি হেসে বলল-
“উমমম ভালো, এই তো ঘুরতে এসেছি। চলো আমিও নীলাচল নিলাম্বর রিসর্রটে ওঠেছি। একসাথেই যাওয়া যাবে।”

মেয়েটি কথা শেষ করার আগেই জেনি আপু বলল-
“দুঃখিত আপু, আমরা যে গাড়িতে আসছে সেখানে ছয়জনের বেশি ওঠা যাবে না। তুমি বরং অন্য টায় আসো।”

মেয়েটি মন খারাপ করে বলল-
“আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা তাহলে যাও।”

আকাশ ভাইয়া মেয়েটির সাথে আর কেউ এসেছি কিনা জিঙ্গেস করলে মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে না বলে।

“কি বলো তুমি একা এসেছো? এই সন্ধ্যায় একা এখানে একটা মেয়ে থাকা নিরাপদ হবে না। চলো আমাদের সাথে চলো কষ্ট করে হলেও রিসর্ট পর্যন্ত যেতে পারব।”

এক প্রকার জোড় করেই আকাশ ভাইয়া মেয়েটিকে আমাদের সাথে গাড়িতে নিয়ে নেয়। আমরা সবাই মেয়েটির সাথে নানান কথা বলছি। মেয়েটির নাম লিনা। একটু কথা বলেই বুঝলাম মেয়েটি অনেক মিশুক। আর অবাক করা বিষয় মেয়েটি আকাশ ভাইয়ার খালাতো বোন। অথচ জেনি আপু আকাশ ভাইয়ার কজিন হয়েও মেয়েটিকে চিনেও না চেনার ভান কেন করলো?
গাড়িতে সবাই অনেক গল্প করলেও জেনি অপু একটা কথাও বলল না আনমনা হয়ে সারাটা রাস্তা বসে ছিল। যে মেয়ে এত কথা বলে সে কি না আজ চুপচাপ। আমার একটু সন্দেহ হলেও পরে ভাবছি হয়তো ক্লান্ত তাই চুপচাপ বসে আছে।

রিসর্টে ফিরে ফ্রেশ হয়ে সবাই শহালকা রেস্ট নেই। তারপর ওঠে একসাথে ডিনার করে বারান্দায় আড্ডায় বসে পরি। একেক জন তার জীবনের একেক কথা বলছে। রুদ্র আমাদের প্রথম ফোন আলাপের কথা গুলো বললে আকাশ ভাইয়া বলে-

“সালা তলে তলে এতদূর? আমি তো ভাবতাম বিয়ের পর থেকে তুই বউ পাগল হইছিস। এখন তো দেখি বিয়ের আগে থেকেই অনেক ছিলি। আমি প্রেম করলেই জ্ঞানের ভান্ডার খুলে বসতি অথচ নিজের বেলা ষোল আনা মাফ?”

আকাশ ভাইয়ের কথায় আড্ডায় হাসির রোল পরে যায়। কথার এক ফাপে জেনি আপু বলল-

“বুঝলে মেঘ রুদ্রকে ভার্সিটিতে থাকতে সাত বার প্রপোজ করছিলাম। কয়েকবার ধমক টকম দিলেও শেষের বার তো ও সোজা গিয়ে একটা স্যারের কাছে কমপ্লেন করে। আর আমাদের সেই জহিরুল স্যারটা ছিল খুব মজার। সে এই ভালোবাসাকে বন্ধুত্বের রূপ দেয়। সেদিন সে বলছিল- একরোখা ভালোবাসা হারিয়ে যায়, কিন্তু বন্ধুত্ব হারায় না। জেনি তুমি যদি রুদ্রু কে সারা জীবন রাখতে চাও বন্ধুত্বের হাত বাড়াও।
তারপর থেকে ওর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ শুরু হয়।”

আমি জেনি আপুর কথা শুনে অবাক হয়ে যাই। সাতবার প্রপোজ করছে অথচ ব্যাপারটা তার কাছে সাধারণ।
আমাদের কথা বলতে দেখে লিনা অপু আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। লিনাকে দেখে আকাশ ভাইয়া একটু সরে তার পাশে জায়গা করে দেয় সেখানে বসতে বলে। লিনা আপু আসলেই জেনি আপু বলে-

“রুদ্র আমার ঘুম পাইছে, তোরা আড্ডা দে। সকালে কথা হবে।”

জেনি আপু চলে যেতেই আমার সন্দেহ হয়। আমি চুপচাপ সেখান থেকে উঠে জেনি আপুর রুমের সামনে এসে দেখি জেনি আপু খাটের একপাশে বসে হাটুতে মাথা গুটিয়ে কাঁদছে।

“আপু কি হইছে কাঁদছো কেন?”

আমাকে হঠাৎ জেনি আপু সামনে দেখে তাড়াতাড়ি চোখে পানি মুছে মুখে হাসি টেনে বলে-
“আরে মেঘ কাঁদছিনা তো, খারাপ লাগছে আরকি।”

আমি আপুর পাশে বসে তার কাধে হাত দিয়ে বললাম-
“আপু আমি খারাপ লাগা আর ভালো লাগা বুঝি। তোমার চোখের জল অন্য কিছু বলছে যে?”

আমার কথা শুনে জেনি আপু এবার হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।কান্না জড়িত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
“ও ও আ আমার আকাশ নিয়ে যাবে মেঘ। আমি বাঁচবো না।”

আমি জেনি আপুকে শান্ত করে কি হইছে জানতে চাইলে বলে-
“আকাশ আর লিনা ছোট বেলা থেকে একে অপর কে ভালোবাসত। তাই ওদের পরিবার ওদের দুজনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল। তখন আমার আর আকাশের সাপে নেউলে সম্পর্ক। লিনা আকাশ আর আমার থেকে দুই বছরের ছোট ছিল।

তখন আমরা ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। আকাশ আর লিনার পরিবার চাইছিল কোর্টের মাধ্যমে বিয়েটা করিয়ে রাখবে। পরে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে তখন অনুষ্ঠান করে বিয়ে করাবে। কিন্তু যেই দিন বিয়ে হবে সেই দিন লিনা কোন একটা ছেলের সাথে পালিয়ে চলে যায়।
সেইদিন আকাশ প্রথম জানতে পারে লিনা আরো সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল। সেই থেকে ওর সব মেয়ের উপর বিশ্বাস ওঠে যায়। বেশ কয়েক বার সুইসাইড করতে গেলেও প্রতিবার আমি ওকে আটকাই। সম্পর্কটা আমাদের সাপে নেউলে হলেও এটা দুজনেরই অভ্যাসে পরিনত হয়ে যায়।
আকাশ একের পর এক রিলেশনে জড়াতো আর প্রত্যেকটা সম্পর্ক আমি গিয়ে ভেঙ্গে দিতাম। তখন আবার লিনা আমাদের মাঝে আসে। আবার আকাশ লিনার মায়ায় জড়িয়ে যায়। তার কয়েক মাস পর লিনা আকাশকে একটা মেসেজ দিয়ে সব কিছু থেকে ব্লক করে দেয় যেখানে লেখা ছিলো-
“আকাশ তোমার প্রতি শুধুই আমার আবেগ। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। যে আমাকে এতদিন দূরে রেখেছে কিন্তু এখন আবার সে আমাকে চায়। আমি তার কাছে ফিরে যাচ্ছি ক্ষমা করে দিও।”

আকাশ সেই দিন খুব কষ্ট পেলেও আমি সেই ওকে সামলাই। সেই থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব শুরু। তারপর আস্তে আস্তে মেলামেশা, বিশ্বাস বাড়তে থাকে। তারপর দুইজন দুই শহরে পড়তে গেলে উপলব্ধি করি দুজন দুজকে ভালোবাসি। সেই থেকেই আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়।”

এখন আবার লিনা ফিরেছে আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে বলতে বলতেই জেনি আপু কান্নায় ভেঙ্গে পরে।

আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া আসছে। আকাশ ভাইয়া আসতে দেখে জেনি আপু তাড়াতাড়ি চোখে জল মুছে নেয়। আকাশ ভাইয়া কিছুক্ষণ জেনি আপুর দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিক পা বাড়ায়।
,

সকাল বেলা আমি নামাজ পড়ে বারান্দায় বসে প্রকৃতি অনুভব করতে থাকি। রুদ্র নামাজ পরে আবার ঘুমিয়ে গেছে। চারপাশে ঘন কুয়াশা।
হঠাৎ আমি পিছনে শব্দ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া দরজা খুলে পা টিপেটিপে বাহিরে যাচ্ছে। আমিও আকাশ ভাইয়ের পিছু নিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া লিনা আপুর রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।

লিনা আপু দরজা খুললে আকাশ ভাইয়া ভিতরে যায়। আমি দূর থেকে শুধু দেখছি তারা কি বলছে শুনতে পারছি না।
পিছনে অন্য কারো আসার শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি জেনি আপু এদিকেই আসছে। আমি জেনি আপুকে দেখে চুপচাপ বারান্দায় চলে যায়। জেনি আপু ধীরু পায়ে লিনা আপুর দরজায় নক করছে।

আমি জেনি আপুকে সেখানে দেখে আতকে ওঠি। এখন যদি আকাশ ভাইয়াকে লিনা আপুর রুমে জেনি আপু দেখে তাহলে সে কি করবে জানি না। ভয়ে ভয়ে আমিও সেদিকে পা বাড়াই।

#চলবে,,,,

সংসার পর্ব-১৯

0

#সংসার
#পর্ব_১৯

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

আমার তাদের দিকে তাকিয়ে নিমিষেই ভয় কেটে যায়। আর মুগ্ধ চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। সৃষ্টি কর্তার এক একজোড়া ভালোবাসার সংসার কতই না মধুর।

৩৭.
আমরা সবাই বান্দরবান এসে, চান্দের গাড়ি নিয়ে নিলাচল নিমাম্বর রিসর্টে চলে যাই। আকাই ভাইয়া আগে থেকেই তিনটা রুম বুক করে রেখেছিল।
এখানে এসে আমরা সবাই একসঙ্গে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরেরদিন সকাল বেলা সবাই ঘুমিয়ে আছে আমি ওঠে নামাজ পড়ে বারান্দায় যাই। চারদিকে কুয়াশার জন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না। গায়ে শীতল বাতাস উপছে পড়ছে। আমি আবার রুমে ঢুকে দেখি রুদ্র চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে।

“আজ এত সকালে ওঠলেন যে? ঘুম ভালো হয়নি?”

রুদ্র কিছু না বলে আমার হাত আচমকা টান দিয়ে বেডের ওপর বসায়। আমার কোলে মাথা রাখে। আমি ওঠতে চাইলে কোমড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। ঘুম ঘুম চোখে বলে।
“উহু নড়ো না তো।”

আমি রুদ্রের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।কপালে কয়েকটা চুল পড়ে আছে। আমি হাত দিয়ে চুল গুলো এলোমেলো করে দেয়।রুদ্র আমার পাগলামি দেখে চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসি। আর আমি ঘোড় লাগা দৃষ্টিতে তার মায়া ভরা হাসির দিকে তাকিয়ে থাকি সারা মুখে মায়ায় ছড়িয়ে আছে। তার চোখ, তার ঠোঁটে সব কিছুতে মায়া উপচে পরছে। আচ্ছা একটা মানুষ আদৌ কি এতটা পারফেক্ট হয়? এই মানুষটা যে আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার জীবন সঙ্গী মনে পরতেই সারা শরীরে খুশির শিহরণ বয়ে যায়।

চারদিকে কুয়াশা কেটে সূর্যের রঙিন আভা ফুটে ওঠেছে। আমি তাড়াতাড়ি রুদ্রকে ওঠিয়ে রুমের বারান্দায় নিয়ে যাই। আমরা যে তিনটি রুম বুক করেছি সেগুলো এক সাথেই আর তিনটি রুমের একটি বড় বারান্দা।
আমি আর রুদ্র বারান্দায় নামতে দেখি রাইমা আপু আর রাকিব ভাই রিসর্টের সামনে দাড়িয়ে কথা বলছে। দুজনের হাতেই কফির মগ। রাকিব ভাইয়া গ্রিলের সামনে দাড়িয়ে হাত দিয়ে নানান জিনিস দেখাচ্ছে আর সেটার বর্ণনা দিচ্ছে। আর রাইমা আপু গ্রিলে পিঠ ঠেকিয়ে এক দৃষ্টিতে রাকিব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি রুদ্রের এক বাহু জড়িয়ে ধরে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাদের দেখে রাইমা আপু বলল-

“মেঘ শুভ সকাল, ঘুম কেমন হলো?”

“শু-প্রভাত। অনেক ভালো, তোমাদের?”

“হ্যাঁ ভালো। জায়গা টা খুব সুন্দর তাই না?”

আমি রাইমা আপুর কথায় চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম। আসলেই জায়গাটা খুব সুন্দর। চারদিকে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। জায়গাটার নাম যেমন নিলাচল তেমনই মনে হচ্ছে আকাশের নীল আচল চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। চারদিকে সাদা মেঘের দল উড়ে বেড়াচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা খুব নিঁখুত হাতে এই জায়গাটা সাজিয়েছেন।
,

নিলাচলের চারদিকে ঘুরে দেখবো। অথচ এখন পর্যন্ত জেনি আপুর ঘুম ভাঙ্গার নাম নেই। আকাশ ভাইয়ার ঘুম না কাটলেও রুদ্রের ভয়ে ওঠে বসে আছে। ঘুম ঘুম চোখে বেশ কয়েকবার আকাশ ভাইয়া জেনি আপুকে ডাকলে ওঠে না।

তাই রুদ্র জেনি আপুকে ধাক্কা মেরে ওঠতে বলে।

“জেনি ওঠ, নাস্তা খেয়ে আমরা বের হবো। তাড়াতাড়ি ওঠ। এখানে আসছিস কি ঘুমানোর জন্য?”

জেনি আপু রুদ্রকে আকাশ মনে করে ঘুমের ঘোড়ে বকতে শুরু করলো।
“আকাইশ্যার বাচ্চা এখন থাপ্পড় খাবি। যা তো ডিস্টাপ করিস না।”

আকাশ ভাইয়া আপুর কথা শুনে দূর থেকে মিটমিট করে হাসছে যার মানে আজ সে বকা খাইনি সব রুদ্র খাইছে।

রুদ্র রাগে আকাশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওই না হেসে এই হলুমানেরে ঘুম থেকে তোল। নয়ত তোর একদিন কি আমার একদিন।”

আকাশ ভাই হাসি থামিয়ে মুখটা পেচার মতো করে বেডের দিক এগিয়ে গেল।
“ভাইরে ভাই এই চিপা থেকে বের কর। একদিকে তুই ধমক দিস অন্যদিকে ওইটায় বকা দে। বল আমি কোন দিকে যামু।”

আকাশ ভাইয়ের অবস্থা থেকে বুক ফেটে হাসি আসলেও আমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি আটকিয়ে রাখি। নয়ত এই মুহূর্তে হাসলে আকাশ ভাইয়া কাঁদতে কাঁদতে বলবে মেঘ তুমিও হাসছো?

আকাশ ভাইয়া ভয়ে ভয়ে বেডের পাশের গ্লাস থেকে বেডের দুই হাত দূরে গিয়ে জেনি আপুর মুখে ওপর পানি ঠেলে দেয়। জেনে আপু রাগে চিৎকার দিয়ে ওঠলে সামনে রুদ্রকে দেখে চুপসে যায়। অপরাধী ভাঙ্গিতে বসে থাকে।

৩৮.
আমরা সবাই নাস্তা শেষ করে ড্রেস চেইঞ্জ করতে যাই। আমি আর রাইমা আপু নীল কালারের সাড়ি পরেছি। আমাদের দেখে জেনি আপু বলে-
“ওই তোমরা নীল সাড়ি পরছো, আমাকে আগে বলতে আমিও নিয়ে আসতাম।”

জেনির আপুর কথা শুনে রাইমা আপু বলে-
“জেনি আপু তুমি যে নিলাচল এসে নীল শাড়ি আনবেনা আমরা কি জানি?”

জেনি আপু মন খারাপ করে বসে থাকলে আমি গিয়ে বললাম-
“আপু এই নাও এটা হালকা নীল কালার সাড়ি আমার কাছে এক্সটা ছিল। এটা পরো। কিন্তু এটার সাথে মিলিয়ে নীল ব্লাউজ নেই।

“উহু মেঘ ওসব লাগবে না। আমার নীল ফতুয়া আছে। জিন্সের ওপর এটা পরে নিতে পারব।”

আমি, রাইমা আপু আর জেনি আপু সেজে গুজে রিসর্ট থেকে বের হলাম একটু দূরেই আকাই ভাইয়া প্রকৃতির ছবি তুলছে আর রুদ্র আর রাকিব ভাই দাড়িয়ে কথা বলছে।
রাইমা আপুকে নীল সাড়িতে খুব মানিয়েছে কিন্তু জেনি আপুকে ভালো লাগলেও নিচের দিক থেকে ঠিক একটা ভালো লাগছেনা জিন্সের কারনে। জেনি আপুর অবস্থা দেখে আমার ওই বাংলা প্রবাদের কথা মনে পরল- ‘উপর ঠিক ঠাক নিচে সদরঘাট।’ সাড়ির সাথে জিন্স সত্যিই হাস্যকর। তবুও এই হালকা রঙের নীল শাড়িতে জেনি আপুকে আকাশের দেবী মনে হচ্ছে।

আমরা রুদ্রদের দিকে এগিয়ে গেলে রাকিব ভাই হালকা হেসে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলে-
“নিলাচলের বুকে তিন নীল রমনী যেন নিলাচলের সূন্দার্য আরো ফুটিয়ে তুলেছে।”

আমি রাকিব ভাইয়ের কথায় মুচকি হাসি দেয়। রুদ্র আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে-
“তোমাকে নীল রঙে যে এত সুন্দর লাগে আগে কেন বলোনি। তাহলে আমি পছন্দের জায়গায় আকাশি না রেখে নিল রঙকে বেশি প্রধান্য দিতাম।”

আমাদের এগিয়ে আসতে দেখে আকাশ ভাইয়া সবার অগোচরে জেনি আপুর কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।

জেনি আপু আকাশ ভাইয়ার সামনে গিয়ে বলল-
“এই তুই তো বললি না আমাকে কেমন লাগছে?”

আকাশ ভাইয়া একটু হেসে বলল-
“পেত্নির মতো। জিন্সের সাথে শাড়ি ও মাই গড তুই মনে হয় প্রথম মেয়ে এ কিনা জিন্সের সাথে শাড়ি পরেছে। বুইন তুই আসলেই জিনিয়াস। গ্রামের চাচাতো বোন যখন আধুনিক বউ হয়।”

জেনি আপু আকাশ ভাইয়ার কথা শুনে পিঠে কয়েকটা কিল বসিয়ে বলে-
“হারামি আমি তো আর তোর মত হাফ প্যান্ট পরে নেই। দেখিস আজ যদি কয়েকটা ছেলে পটিয়ে না নেয় তবে আমার নামও জেনি না।”

আমি জেনি আপুর কথায় হালকা হেসে সামনের দিক এগিয়ে যাই। আমার পিছন পিছন সবাই আসছে। আকাশ ভাইয়াকে ঘুম ঘুম চোখে হাঁটতে দেখে রুদ্র বলল-
“সালা ঠিক মত হাঁট। নয়তো এখান থেকে পরে গেলে বিয়ের আগে জেনি বিধবা হবে। রাতে ঠিক মত ঘুমাস নি? আমার বিয়ে করেও তো দিব্যি ঘুমিয়েছি তাহলে তোর হলো কি?”

“ভাই তুই আমার জায়গায় থাকলে বুঝতি। সারারাত বসে বসে ঘুমিয়েছি। এই হারামিটা অচেনা জায়গা ভয় পায়। একটা পাখি ডাক দিলেও চিৎকার করে ওঠে।শেষ রাতে একটু শুইছি তাও আবার সোফায়। একবার ভাব ভাই বিয়ের আগেই এই অবস্থা বিয়ের পর কি হবে?”

আকাশ ভাইয়ের কথা শুনে আমরা সবাই হেসে ওঠলাম। পাহাড়ের মাঝখান থেকে রাস্তা। রাস্তার দু পাশে মনে হচ্ছে প্রকৃতি সূন্দার্য এখানে এসে ঘুমিয়ে আছে। আমরা সবাই হেঁটে হেঁটে সব জায়গা দেখছি। চারপাশ দেখে মনে হচ্ছে আকাশের নিচে মেঘ আর সেই মেঘের ভিতর বাড়ি।
হঠাৎ আমি একটা জায়গা দেখে সেখানে দৌড়ে যাই। জায়গাটার নাম রোয়াদো রং। জায়গা খুব সুন্দর আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকি। এখানে দাড়িয়ে কয়েকটা দিন অনায়াসে পাড় করে দেওয়া যায়।
আমার পাশে চোখ পরতেই দেখি রুদ্র আমার দিকে ঘোড় লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি আচমকা খুশিরে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরি।

“মেঘ ছাড়ো, সবাই তাকিয়ে আছে।”

আমার চারদিকের কথা মনে পরতেই তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়। দেখি আশেপাশের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় মাথা নত করে ভাবি- এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমি কি অন্য কাউকে জড়িয়ে ধরেছি। এটাতো আমারই জামাই।”
‘আমার জামাই’ কথাটা মনে মনে কয়েকবার আওড়াতেই আবার লজ্জায় লাল হয়ে ওঠি।

আকাশ ভাইয়া আমাদের সবার ছবি তুলতে তুলতে ক্লান্ত হয়ে বসে আছেন। কিন্তু বসে বসে জেনি আপুর ছবি তুলে যাচ্ছেন। জেনি আপু বিভিন্ন পোজে দাড়াচ্ছে আর আকাশ ভাইয়া বিরক্ত মাখা ভঙ্গিতে সেগুলো ক্যামেরায় বন্দি করছে।

আমি হাঁটতে হাঁটতে একটা পাথরের উপর বসতে গিয়ে পিছলে অন্য একটা পাথরের উপর পরি। আর একটা পাথর আমার পায়ে এসে পরে।
তেমন একটা ব্যাথা না পেলেও এখন এতটা দূর হাঁটা সম্ভব না। আমাকে বসে থাকতে দেখে রুদ্র আমাকে ওঠিয়ে তার কোলে নেয়। আমি বার বার বলছি আমি হেঁটে যেতে পারব কিন্তু কে শুনে কার কথা।
চারপাশের সবাই আমাদের দেখে জোড়ে চিৎকার করছে। কেউ ভিডিও করছে। আমি লজ্জায় রুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে বুকের ভিতর মাথা লুকিয়ে রাখলাম।

#চলবে,,,,

সংসার পর্ব-১৮

0

#সংসার
#পর্ব_১৮

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

ভালোবাসায় বেশি কিছুর প্রয়োজন নেয়। সবার এক রকম করে ভালোবাসতে পারে না। কেউ প্রকাশ করে ভালোবাসে আবার কেউ অপ্রকাশ্য ভাবে ভালোবেসে। আবার কেউ যতটা প্রকাশ করে তার থেকেও দ্বিগুণ ভালোবাসে।
ভালোবাসার মানুষটির কাছে সব কিছু আসা না করে তার ভিতর যা আছে তা নিয়ে সুখী থাকলে সব সুখ খুজে পাওয়া যায়।

৩৫.
সবাই টেবিলে খাবার খাচ্ছিলাম। তখন জেনি আপু বলল-
“রুদ্র আমরা বান্দরবান ঘুরতে যাওয়ার প্লান করছি। তোরা যাবি? অনেক দিন থেকে কোথাও যাওয়া হয় নাই রিফ্রেশমেন্টের প্রয়োজন।”

রুদ্র জেনি আপুর কথার উপরে না করে দেয় অফিসে অনেক কাজ আছে বলে। তখন জেনি আপু রাইমা আপুদের উদ্দেশ্য করে বলে-

“তা রাইমা তোমারাও তো হানিমুনে কোথাও যাও নি। চলো আমাদের সাথে কোথাও ঘুরে আসি। তোমাদের হানিমুন হবে আর সাথে আমাদের একটা ট্রুরও হবে। কি রাকিব সাহেব আপনার অফিসে কোন কাজ নেই তো?”

“না আমার অফিসে কোন কাজ নেই। রাইমা চাইলে আমার যেতে সমস্যা নেই। রাইমা তুমি যেতে চাও?”

রাইমা আপু করুণ চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল-
“না না আমরা সবাই যাব আর ভাইয়া যাবে না তা হয় না। ভাইয়া গেলে আমিও যাব।”

সবাই রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র কি বলে শুনার জন্য। আমি রুদ্রের হাতটা টেবিলের নিচ থেকে চেপে ধরি। যার মানে প্লিজ চলুন না আমিও যেতে চাই। রুদ্র আমার দিকে তাকালে আমি ইশারায় অনুরোধ করে চোখের ইশারা দিয়ে বললাম আমি যেতে চাই।

“আচ্ছা যাব। তবে মাএ তিন দিনের জন্য। তারপরেই ফিরতে হবে। কিন্তু পূর্ণতাকে নিয়ে যাব কি করে?বাবুর ঠান্ডা লাগবে তো।”

“রুদ্র তোর ভাবতে হবে না। আমরা আগেই সব ঠিক করে নিয়েছে। ফুপি আসছে সেই থাকবে পূর্ণতার সাথে। আর তাছাড়া তোরাও তো হানিমুনে কোথাও যাস নি। রিফ্রেশমেন্টও হবে সাথে হানিমুন এক্সটা ফ্রি।”

আমি আকাশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম-
“তা ভাইয়া আমরা তো সবাই হানিমুনে যাব। কিন্তু আপনারা কেন যাবেন শুনি?”

আকাশ ভাইয়া আমার কথা শুনে বাঁকা হেসে জেনি আপুকে উদ্দেশ্য করে বাম চোঁখ টিপে দিয়ে বলল-

“ভাবিজান আমরাও না হয় হানিমুনটা সেরে ফেলি। বিয়ের পর আর কোন ঝামেলা থাকবে না তাহলে।”

আকাশ ভাইয়ের কথা শুনে জেনি আপু লজ্জায় লাল হয়ে ভাইয়ার পিঠে কয়েক টা কিল বসিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
,

ফুপির সাথে বাবাও আসছে। নয়ত বাড়িতে বাবা তিন দিন কি করে একা থাকবে। শাশুড়ি মা বার বার অনুরোধ করে আসতে বলায় বাবা এসেছে। শাশুড়ি মা এই তিন দিন আমি থাকব না বলে সময় কাটানোর জন্য ফুপি আর বাবাকে তাদের সাথে থাকতে অনুরোধ করেছে। মানুষ যতই স্মার্ট হোক বৃদ্ধ বয়সে নিজের বয়সের মতো কারো সাথে কথা বলার মত একজন সাথি পেলে সব সময় হাসিখুশি থাকে। নিজেকে উৎসর্গ করে নিজের কথার মাঝে।

আমি পূর্ণতার সব কিছু ফুপিকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এতক্ষণ যাওয়ার জন্য বেশ উৎসাহ থাকলেও পূর্ণতাকে ছেড়ে এই তিন দিন থাকতে হবে ভেবে যেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু আমি এখন যেতে না চাইলে কারোই আর যাওয়া হবে না ভেবে সব কিছু গোছাতে শুরু করি।

রুদ্র আমার মন খারাপের কারন বুঝতে পেরে বলে-
“মেঘ কোথাও যাওয়ার আগে এত মন খারাপ করতে নেই। পূর্ণতা আর একটু বড় হলে নিয়ে যেতে পারতাম তাছাড়া মোবাইল তো আছেই আমার ওখান থেকে সব সময় পূর্ণতা কে দেখব।”

সত্যিই তো, আমার এতক্ষণ মনেই ছিল না ভিডিও কলে পূর্ণতাকে যখন খুশি দেখতে পারব। মনে পরতেই মুখে হাসি ফোটে ওঠে।

সবাই সবার বাসায় চলে গেছে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আসার জন্য। অনেকটা পথ যেতে হবে তাই আমি টপস আর জিন্স পরে নিলাম। এগুলো আগে পরলেও বিয়ের পর শাড়ি ছাড়া আর কিছু পরে হয়নি।

আমাকে এই ড্রেসে দেখে রুদ্র স্যার খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমার বউটার দিন দিন এমন সুন্দর হওয়ার কারন কি শুনি?”

“যার বর এত স্মার্ট, তার বউ যদি সুন্দরী না হয় তবে কি মানায়? তাছাড়া হানিমুনে যাচ্ছি বলে কথা।”

রুদ্র পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ ডুবিয়ে বলে-
“তা বউটার হানিমুনের যাওয়ার এত তাড়া কেন? হানিমুনের জন্য প্রস্তুত তো? সেখানে গিয়ে লজ্জায় কুঁকরে গেলে কিন্তু চলবে না।”

৩৬.
আমি রুদ্রের কথা শুনে কোন জবাব না দিয়ে মুচকি হাসি দেই। পিছন থেকে রুদ্রকে ছাড়াতে চাইলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ।

“উমম ডিস্টাপ করো না।”

“উহু ছাড়েন তো, আমার সুরসুরি লাগছে।”

“তুমি তোমার কাজ করলেই তো পার। আমায় বিরক্ত করছো কেন? আমি কি তোমাকে বিরক্ত করছি?

আমি রুদ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে যাই। কি বলে ওল্টো আমি নাকি তাকে বিরক্ত করছি ভাবা যায়!
আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে আগের মতো জামা কাপড় গোছাতে শুরু করি।

আমরা সবাই বান্দরবান যাওয়ার উদ্দেশ্যে ডলফিন পরিবহণে ওঠে বসে আছি। কিন্তু আকাশ ভাইয়া আর জেনি আপুর কোন খোঁজ নেই। তাদের সিট ফাঁকা পরে আছে। আমি বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। বার বার রুদ্র তাদের ফোনে কল দিচ্ছে কিন্তু কোন সাড়া নেই। বাস ছেড়ে দিয়েছে আস্তে আস্তে চলতে শুরু করছে। যতটা আগ্রহ নিয়ে এসে ছিলাম তা এক নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।
হঠাৎ বাসের ভিতর লাফিয়ে জেনি আপু আর আকাশ ভাইয়া ওঠি। দুজনের পিঠে দুটো ব্যাগ। মনে হচ্ছে কোন কলেজের স্টুডেন্ট তারা। আমি তাদের দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠি কিন্তু রুদ্র রাগে চেঁচিয়ে বলে-

“সালা তোদের আসতে এতক্ষণ লাগে? কি করছিস এতক্ষণ ফোন ধরিস নাই কেন?”

রুদ্রের কথা শুনে জেনি আপু বলে ওঠল-
“রুদ্র আর বলিস না। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমি ওর কাছে আমার ব্যাগটা দিয়ে ছিলাম আর এই আকাইশ্যা ব্যাগটা দরজার সামনেই রেখে আসছে। অর্ধেক রাস্তা আসার পর আমার ব্যাগের কথা মনে পরলে বলে ইচ্ছে করে বাসার সামনে রেখে আসছে।তখন আবার ব্যাগ নিতে বাসায় যেতে হয়। বল কেমনডা লাগে?”

জেনি আপুর কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ ভাইয়া চেঁচিয়ে বলল-
“দেখ রুদ্র এই জেনি ছেনিরে আমারে আকাইশ্যা বলতে নিষেধ কর। ওর জন্য পুরো পাঠক মহল আমাকে আকাইশ্যা নামে ডাকে। হবু বউ বলে তুমি করে না বলুক অন্তত আকাশ বলে তো ডাকতে পারে।”

“রুদ্র, আকাইশ্য আমারে জেনি ছেনি কইলো ক্যান? আমি ওর সাথে এক সিটে বসবো না। ওরে ওঠতে বল নয়তো খরব আছে।”

“হ্যাঁ আমি ও তোর সাথে বসমু না। এই রুদ্র বাস থামাতে বল। আমি পরের বাসে যামু।”

রুদ্র এতক্ষণ তাদের কথায় ‘তুমি বলোনি আমি বুঝিনি’ টাইপ ভাব ধরে থাকলেও এবার চিৎকার করে ধমক দিয়ে বলল-
“এবার আর একটা কথা বললে আমি তোদের দুটো কে বাস থেকে ফেলে দিব। এই মামা বাস থামান। এখনই দুজনে নামবি হেঁটে হেঁটে আসবি। যাহ নাম।”

রুদ্রের ধমক শুনে তারা দুজনে চুপচাপ বাসের সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো। তাও একজন আর একজনকে মিনমিন করে বলছে-
“এসব তোর জন্য হইছে, রুদ্র তোর জন্য খেপছে।”

আমি তাদের জগড়া দেখে মুচকি হাসছি। এই জগড়ার মাঝেও দুজনের ভিতর আলাদা ভালোবাসা জড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ বাস কিছুর সাথে ধাক্কা খাওয়ার উপর থেকে নিচে ছিটকে পরে আবার চলতে শুরু করে। আমি ভয়ে রুদ্রের এক বাহু জড়িয়ে ধরি। আর সে আমাকে তার বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। হঠাৎ রাকিব ভাইয়ের দিকে চোখ পড়ায় দেখি রাইমা আপু ভয়ে রাকিব ভাইয়ার হাত তার দু হাত দিয়ে মুঠো করে শক্ত করে ধরে আছে। আর রাকিব ভাইয়া অস্তির হয়ে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে বলছে-
“এই নিন পানি খান, ভয় পাবেন না। সব ঠিক আছে।”

রাইমা আপু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ছিল। রাকিব ভাইয়ের কথা শুনে চোখ খুলে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ঠকঠক করে পানির বোতল শেষ করে। রাকিব ভাইয়ের এক বাহু জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে চোখ বুঝে শুয়ে পরে।

আমার তাদের দিকে তাকিয়ে নিমিষেই ভয় কেটে যায়। আর মুগ্ধ চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। সৃষ্টি কর্তার এক একজোড়া ভালোবাসার সংসার কতই না মধুর।

#চলবে,,,,,

সংসার পর্ব-১৭

0

#সংসার
#পর্ব_১৭

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

“কি কি কর করিছিলে মে মেঘ, আমার কথা একবারও ভাবলে না? অন্তত পূর্ণতার কথা একবার ভাবতে। সামান্য ভুলে এত বড় শাস্তি দিতে একবারও তোমার আত্মা কাপল না? আমি আর দুইটা মিনিট পর আসলি কি হতো?”

রুদ্র স্যার হয়তো ভাবছে আমি আত্মহত্যা করছি, কি আজব এতটা সোজা জীবন চাইলেই কি নিয়ে নেওয়া যায়?

৩৩.
আমি কিছু না বলে হাতের ইশারায় ছাদের পাশে পরে থাকা ফোনটা ইশারায় দেখিয়ে দিলাম। স্যার সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। তারপর ফোনটা তুলে আমার হাতে দিলে দেখি নিচে পরে গিয়ে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। রুদ্র স্যার বেশ কয়েকবার খোলার চেষ্টা করলেও ফোনটা আর অন হয়না।
আমি আর কিছু না বলে সেখান থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে নিচে রুমে চলে আসলাম। ফোন চার্জে লাগিয়ে পূর্ণতার পাশে শুয়ে রুদ্র স্যারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু সারা দিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরি।

মাঝ রাতে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি হুরমুর করে ওঠে বসি। রুদ্র স্যার আমাকে তার কোলের মাঝে নিয়ে বসে আছে আর আমি কোথায় আছি ভাবতেই দেখি রুমের ভিতরের দোলনায় উপর শুয়ে আছি। গত দুই দিনের কথা মনে পরতেই আমি তাড়াতাড়ি করে রুদ্র স্যারের কোল থেকে ওঠে নিতে গেলে রুদ্র স্যার আমাকে পিছন দিক থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

“স্যার প্লিজজজ ছাড়েন, হাতে লাগছে।”

“মেঘ শান্ত হয়ে বসো, আমার সব কথা শুনো তারপর তোমার যা ইচ্ছে শাস্তি দিও। তবুও ইগনোর করো না।”

আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ সেখানে বসে থাকি। স্যার আমার গালে হাত দিয়ে বলে-
“মেঘ আমার কথা বিশ্বাস করো আমি তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এসব করলেও এর বাহিরে যে এত বড় সত্যিই লুকিয়ে ছিল আমি জানতাম না। বিশ্বাস করো।”

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম-
“কোন কোন সত্যির কথা বলছেন আপনি? ওই মেসেজ নাকি ওই ভিডিও না ওই ছবির। কোনটা মিথ্যে আর কোনটা সত্যিই? কেন কেন এমন করলেন আমার সাথে? আমার ভালোবাসায় এক চিমটিও ক্ষাত ও ছিল না তবে কেন এমন করলেন? যে সত্যি আমি বার বার ভুলতে চাই সেই সত্যি কেন আবার সামনে নিয়ে আসেন?”

কথা গুলো বলতে বলতে আমি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠি। আমাকে শান্ত করে রুদ্র স্যার আস্তে তার বুকে জড়িয়ে নেয়। আমি তার শার্টের কলার ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠি।

“মেঘ বিশ্বাস কর, আমি জানতাম না তুমি এত বড় সত্য বুকের মাঝে বয়ে বেড়াচ্ছো। আমি সেদিন রুশার কাছে গিয়ে বলেছিলাম, সেই ছবি আর প্রথম মেসেজটা যেন ও তোমাকে দেয় আর ছদে দাড়িয়ে তোমার শব্দ পেলে যেন ওই কথা গুলো বলে। রুশা প্রথমে সাহায্য করতে না চাইলেও ওকে বলেছিলাম আমি ওর এর পরিবর্তে যে কোন ইচ্ছে পূরণ করব।
আর এই জন্যই আমি ইচ্ছে করে রুমে তোমার ফোনের পাশে আমার ফোনটা রেখে যাই। আমি ভেবেছিলাম তুমি ফোনে ওই সব দেখে ছাদে চলে আসবে। কিছুক্ষণ আমাকে বকবে অভিমান তারপর সবটা বলার পর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যখন তোমাকে ওই ছবি আর মেসেজ দেয় আর উপরে তোমার আসার অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু তুমি যখনই ছাদে আসো তখন রুশা জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে দেয়। আমি রুশাকে ছিটকে দূরে সরিয়ে দেই। সাথে সাথে ছাদে তোমাকে খুজে দেখি তুমি ছাদে নেই। আমি ভাবছি তুমি অভিমান করে চলে গেছো। তখনই আমি রুশাকে আমাদের বাসা থেকে চলে যেতে বললে, ও বলে আমি ওয়াদা করেছিলাম ওর একটা ইচ্ছে পূরণ করব তাই ওর ইচ্ছে আমি যেন ওকে ক্ষমা করে দেই। সেই সাথে বাসা থেকে তাড়িয়ে না দেয়। ও এই বিয়ে টায় থাকতে চায়।

ছোট বেলা থেকেই রুশা সব সময় আমাকে ভালোবাসত কিন্তু আমি কখনো ও কে বন্ধু ছাড়া ভাবে নি। হঠাৎ কাছে পাওয়ায় আবেগের বসে কিস করছে ভেবে আমি ওকে আর কিছু বলি নাই। কিন্তু আমি কখনো ভাবেনি এগুলো ওর পূর্ব পরিকল্পিত।

তারপর ছাদ থেকে আমি রুমে এসে ভাবছি তোমাকে সবটা বলে দিব। কিন্তু এসে দেখি তুমি ঘুমিয়ে পরেছো তাই ভাবছি তুমি প্রথম কথা গুলো শুনে চলে এসেছো। রুশা কিস করছে ওটা দেখলে এতক্ষণ শান্ত থাকতে না। তাই আমি অপেক্ষা করছিলাম তুমি কখন আমার থেকে সবটা জানতে চাইবে।
সেদিন চিলেকোঠায় বসে যখন ভিডিওর কথা বললে তখন থেকে সন্দেহ হয় কিসের ভিডিও? তাই তোমার সাথে কথা বলে জানতে চাইতাম কিন্তু তুমি আমাকে ইগনোর করছিলে। তাই সেই ফোনটা খুজি কিন্তু ওটাও কোথাও পাই না। তখন আমার সন্দেহ হইছিলো এর পিছনে নিশ্চয়ই বড় কিছু আছে। আর তাই রুশার কাছে সব কিছু জানতে চাইলে তোমার নামে ওল্টো কথা বললে তখন আমি উপরে তোমার কাছে ছাদে চলে যায়।
ছদে ওঠে তুমি নুইয়ে ফোন তুলছিলে আর আমি ভাবছি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো।

তারপর তুমি রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলে আমি রুমে গিয়ে ফোনটা চার্জ থেকে খুলে অন করতেই ফোন খুলে যায়। আর সেই মেসেজ দেখতে গিয়ে ভিডিও চোখে পরে সেই সাথে শেষের মেসেজ টা। বিশ্বাস করো আমি এর ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।”

আমি সব শুনে হতবম্ভ হয়ে যাই। আমার জানার পিছনে এত বড় একটা সত্যিই লুকিয়ে ছিল। কিন্তু তবুও অভিমান গুলো বড্ড ভারি হয়, এটা ভেবে যে ভিডিও মিথ্যে কিন্তু ছবি তো আর মিথ্যে না।

“কিন্তু ওই ছবি, আপনি আর রুশা ম্যামের।”

রুদ্র এবার হালকা হেসে বলল-
“এত কিছু মিথ্যে হলে ছবি টা আর কি করে সত্যিই হবে? এটা আমাদের প্রথম দিনের ছবি, তুমি তখন ঘুমিয়ে ছিলে কিন্তু আমি ছবিটা নিয়েছিলাম তারপর তোমার জায়গায় ইডিট করে রুশাকে বসিয়ে নিয়েছিলাম। আমি ভাবছিলাম তুমি ছবির সত্যিই টা বুঝতে পারবে কারন ছবিতে তোমার ঘাড়ে তিল আছে কিন্তু রুশার ঘাড়ে কোন তিল নেই। আর তাছাড়া তুমি কিভাবে এসব বুঝবে তুমি তো সন্দেহ করেই কূল পাওনা। ভাবতেই অবাক লাগে এমন একটা মেয়ে কি করে আমার অফিসে একদিন চাকরি পাইছিল?”

এতোক্ষণ অভিমান ভরা থাকলে, শেষের কথা টায় বেশ অপমান লাগলো, আমি না কিছবির সত্যিইটা ধরতে পারি নাই।
আমি কান্না মিশৃত হাসি মাখা গলায় ধমকের সুরে বললাম-
“দেখুন একটু মজা করবেন না। আমি ছবিটা ঠিক ধরেছিলাম কিন্তু ভিডিও টা দেখে সব এলোমেলো হয়ে গেছিলো।”

আমাকে হাসতে দেখে স্যার বলল-
“যাক আমার কুইনটার মুখে হাসি তো ফুটল। ওই সব ভিডিও কথা বাদ দাও আর কখন এসব কথা মুখেও তুলব না। তুমি তো আমার জেলাস হও বা না হও আমারই থাকবে।”

আমি স্যারকে একটু দূরে ধাক্কা দিয়ে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম-
“আপনি কি রুশা ম্যামের সেই ভিডিওটা সব দেখেছেন?”

স্যার আমার দিক তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল-
“নাহ এখন পর্যন্ত দেখিনি। তবে আমার বউ যদি চায় তবে দেখতে পারি। না মানে আমার বউ টা এত হট থাকতেও যদি অন্য মেয়ের ভিডিও দেখতে হয়। সেটা তোমার কাছে ভালো লাগবে বলো তো?”

আমি স্যারের কথা শুনে সেখান থেকে লজ্জায় চলে আসলাম। লোকটা এমন কেন? সিরিয়াস মুহূর্তেও কি তার লজ্জা দিতে হবে।

আমাকে চলে আসতে দেখে পিছন দিক থেকে জোড়ে চেঁচিয়ে বলল-
“যাও যাও সুন্দরী, কত দূর আর পালাবে রাতে সেই তো আমার কাছেই আসতে হবে।”

সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে দেখি রুদ্র স্যার আমার কোমড় জড়িয়ে শুয়ে আছে। জানালা থেকে কাচের আলো তার মুখে পরছে। সারা মুখে কমলতা ছড়িয়ে আছে। পাশেই গুটিয়ে পূর্ণতা ঘুমিয়ে আছে। আমি চোখ ভরে তাদের দুজন কে দেখলাম। এমন একটা সংসার প্রত্যেকটি মেয়ের স্বপ্ন। আর আমি না চাইতেই সব পেয়েছি।
এক সময় সব হারিয়ে ছিলাম তার পরিবর্তে আল্লাহ আজ আমাকে সব দিছে।

৩৪.
বেশ কয়েক মাস কেটে যায়। এর মাঝে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। রাইমা আপু মাঝে মাঝে বাসায় এসে কয়েক দিন থেকে চলে যায়। রাকিব ভাইও রাইমা আপুকে চোখের আড়াল হতে দেয় না। আকাশ ভাইয়ের এখানেই চাকরি হওয়ায় জেনি আপুও এখানে চলে এসেছে আর রুদ্রের অফিসে কাজ করছে। মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় এসে তারা দুজনে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে যায়।
কিছু মাস পরেই জেনি আপুর আর আকাশ ভাইয়ার বিয়ে হবে।
আর সেই দিনের পর থেকে রুশা ম্যামকে আর এ বাসায় দেখিনি। আর তারপর থেকেও কখনো রুদ্র স্যারকে স্যার বলে ডাকেনি। বেচারা স্যার যেন না বলি তার জন্য কত কিছু করলো আর পরে নিজেই ফেসে গেল। শাশুড়ি মাও আমাকে আগের থেকে অনেক আপন করে নিয়েছে। আমাকে ছাড়া তার যেমন দিন শুরু হয়না তেমনই রাতও শেষ হয় না। পূর্ণতা এখন আদো আদো গলায় কিছু কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে পারে।

আমি জানালার পাশে দাড়িয়ে আগের সব কথা ভাবছিলাম, তখনই রুদ্র পিছন দিক থেকে এসে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতুনি রেখে বলে-
“কি হলো, আমার বউটার কি মন খারাপ।”

আমি হেসে মাথা ঝাকিয়ে না বলি।
“আমি ভাবছিলাম আগে আমি কেমন ছিলাম আর আজ কেমন। নিজেকে পরিপূর্ণ নারী মনে হয়।”

“উহু এখনো পরিপূর্ণ হওনি তো। এত লজ্জা নিয়ে কি পরিপূর্ণ নারী হওয়া যায়। লজ্জা কমাও আর আমাকে আদর দাও অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।”

আমি রুদ্রের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে দেখি অফিসের পোশাক পরে তৈরী হয়ে আছে।

“উমমম আগে বলেন তো, দিন দিন এত ইয়াং হচ্ছেন কেন? নাকি অন্য কোন মতলব আছে। আমাকে দেখুন কেমন মিসেস মিসেস মনে হচ্ছে।”

আমার কথা শুনে রুদ্র একটু ভাব নিয়ে বলল-
“তুমি তো দিন দিন বুড়ি হয়ে যাচ্ছো, আমি এত তারাতারি বুড়া হতে পারব না। জীবনে এখনো কত রোমান্স বাকি আছে।”

আমি তার কথা শুনে বেড থেকে বালিশ তার গায়ের উপর মেরে চলে আসি। আমি চলে আসতেই রুদ্র নিজেকে নিজে বলছে।
“এবার হলো তো রুদ্র তোর, আগেই ভাল ছিল স্যার স্যার বলে ডাকত, কিছু বলার আগে দিয়ে দিত। তা না নিজেই সব কিছু ঠিক করলি কিন্তু লজ্জাটা ভাঙ্গতে পারলি না। এবার এভাবেই অফিসে চলে যা। আদর আর পাওয়া হবে না বালিশের মারই খা।”
,

আজ রাইমা আপু আর রাকিব ভাইয়া আসবে। তাই জেনি আপু আর আকাশ ভাইয়াকেও আসতে বলেছি।
দরজায় বেল বেঝে ওঠায় আমি দরজা খুলে দেখি আকাশ ভাইয়া জেনি আপুকে কোলে করে নিয়ে এসেছে। আর জেনি আপুর হাতে কয়েকটা শপিংয়ের ব্যাগ। আমি জেনি আপু অসুস্থ ভেবে আকাশ ভাইকে বলি-
“ভাইয়া কি হইছে আপুর? অসুস্থ নাকি?”

“আরে মেঘ আমি পাক্কা সুস্থ আছি, বরং এটা পাগল হইছে। শপিংমল থেকে আসার সময় বলছিলাম এতগুলো ব্যাগ আমার কাছে তুই কিছু নে। কিন্তু ও সোজা আমাকে কোলে তুলে নিল।”

“মেঘ তুমি দেখো মাএ তিনটে ব্যাগ সে একা নিতে পারে না তাই নিয়ে রাস্তার মাঝে জগড়া করছিলো আর কিছু লোক ভিডিও করছিল। বাঙ্গালী বলে কথা তাই তাদে ভিডিও গুলোকে আর একটু ভাইরাল করার জন্য কোলে নিয়েই চলে আসলাম।”

আমি ভাইয়ার কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠি। তখনই রুদ্র রুম থেকে আসতে আসতে বলে-
“ভাই রে ভাই কে তুমি। আমি আমার বউকে এমন করে কখনো হাসাতে পারি না আর তুমি কিনা দুটো কথায় হাসিয়ে যাচ্ছো?”

আকাশ ভাইয়া সোজা গিয়ে জেনি আপুকে সোফার উপর ফেলে দেয়।
“আহহ আকাইশ্যা কোমড় টা তো ভেঙ্গে দিলি। একটু রুদ্রকে দেকে শেখতে তো পারিস। ক্লাসের সব ছেলে ভালো ছাএ, যে কিনা ছিল সব মেয়ের ক্রাশ। এত এত সুন্দরী মেয়ে প্রপোজ করছিল কখনো ফিরেও তাকাত না। সে আজ বউ পাগল। আর তুই সব সময় আমার পিছনেই পরে আছিস।”
,

,
রাকিব ভাই হাতে কয়েকটা বাজারের ব্যাগ নিয়ে আসতেই রাইমা আপু তাড়াতাড়ি তার হাত থেকে বাজারের ব্যাগ গুলো নিয়ে নেয়।

তড়িঘড়ি করে ঠান্ডা শরবত নিয়ে তাকে দেয়। তখন আকাশ ভাইয়া বলে-
“দেখ বউ কেমন হতে হয়। আর তুই কিনা কিভাবে আমাকে সব সময় আমাকে খাটাতে হয় সেটাই ভেবে যাস।”

আকাশ ভাইয়ের কথা শুনে রাইমা আপু লজ্জায় গুটিয়ে যায়। আমি মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। সবার ভালোবাসায় যদি এমন পূর্ণতা পেত তবে মনে হয় এই পৃথিবীর সব মানুষের হাসিটা প্রকৃত হত

ভালোবাসায় বেশি কিছুর প্রয়োজন নেয়। সবার এক রকম করে ভালোবাসতে পারে না। কেউ প্রকাশ করে ভালোবাসে আবার কেউ অপ্রকাশ্য ভাবে ভালোবেসে। আবার কেউ যতটা প্রকাশ করে তার থেকেও দ্বিগুণ ভালোবাসে।
ভালোবাসার মানুষটির কাছে সব কিছু আসা না করে তার ভিতর যা আছে তা নিয়ে সুখী থাকলে সব সুখ খুজে পাওয়া যায়।

#চলবে,,,,,,

[বিঃ দ্রঃ তিন তিনটা ভালোবাসার জোড়া সংসার। কোনটায় জগড়ায় মাতামাতি, কোনটা ভালোবাসায় আবার কোনটা আবেগে ভরপুর।
কিন্তু যত যাই হোক দিন শেষে তারা প্রত্যেকে এক নৌকার মাঝি। সবাই ভালোবাসায় কাতর।

এই তিন জোড়ার ভিতর কোন চরিএ টা বেশি ভালো লেগেছে?]

সংসার পর্ব-১৬

0

#সংসার
#পর্ব_১৬

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

আমি চোখের জল মুছে সিদ্ধান্ত নিলাম এভাবে কষ্ট পাব না। রুদ্র স্যারের নিজের মুখ থেকে সবটা শুনব কেন করল এমন? এর পিছনে শুধু কি আমার ভুল নাকি অন্য কোন সত্যিই লুকিয়ে আছে। যতই যা হোক এটা আমার সংসার। আমি গুছিয়ে রাখব আমার সংসারের যত্নে গড়া ভালোবাসার জিনিস গুলো।

সংসার মানেই তো সংগ্রাম সেখানে আমি কেন সংগ্রাম না করেই হেরে যাব। রুদ্র স্যার যা করেছে তার শাস্তি তিলে তিলে পাবে। আমি কেন কোন কিছু না করে শাস্তি পাব? হেরে যাওয়ার মেয়ে তো আমি না। ছোট বেলায় এত অত্যাচারের মধ্য দিয়ে বড় হলাম তখন তো কখনও বাবা আমাকে হেরে যাওয়ার গল্প শুনাইনি। তাহলে মনে মনে কেন এই কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে যে, আমি সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে যাই। নাকি সত্যিই ভালোবাসার কাছে সবাই পরাজিত।

৩১.
রুদ্র স্যার আজ বিকেল থেকে অনেক ব্যস্ত। সব কাজে তাকে প্রয়োজন। সবাইকে সব কিছু দেখিয়ে দিচ্ছে। কোথায় কোনটা রাখবে, কোথায় কি বসাবে, কিভাবে করবে।
আমি অনেকক্ষণ থেকে স্যারের জন্য হল রুমের এক পাশ থেকে ওপাশে হাঁটছি। কখন ফ্রি হবে আর কখন সব কিছুর সত্যিই টা জানব। ছাদ থেকে সন্ধ্যার দিকে কাজ করে নিচে নামছিল তখনই আমি সিড়ির পাশের ছোট্ট চিলেকোঠায় ঘরটিতে রুদ্র স্যারকে টেনে নিয়ে আসি।

“উফফ মেঘ তুমি। এভাবে টান দিয়ে ভয় পাইয়ে দিলে তো। কিছু বললে এমনি ডাক দিতে টান দেওয়ার কি হলো।”

“আমার আপনার সাথে জরুরী কথা আছে।”

স্যার এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে দাড়িয়ে, বাঁকা হেসে বলল-
“জরুরী কথা নাকি অন্য কিছু হ্যাঁ, বরকে তো আজকাল চোখের আড়াল হতেই দেও না। আবার কাছে আসলেও লজ্জায় গুটিয়ে যাও।”

“দেখুন আমি ফাজলামি মুডে নেই। বললাম তো কিছু কথা আছে।”

রুদ্র স্যার এবার সোজা হয়ে দাড়িয়ে, শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলল-
“কী কথা বলো তো। একটা কথা আছে এইটুকু বলছ কিন্তু কী কথা সেটা বলছ না। নাকি রোমান্স চাই, লজ্জায় বলতে পারছ, বলো তো?”

আমি বুঝলাম রুদ্র স্যারকে এভাবে বললে ফাজলামি করেই যাবে। তাই সরাসরি আর কিছু না বলে বললাম-

“আপনার সাথে রুশা ম্যামের ব্যাপারে জানতে চাই। আমি এখন আপনার স্ত্রী । আপনি মানুন বা না মানুন আমি মানি। আর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে আপনার সব কিছু জানার। রুশা ম্যামের সাথে অতীতে কোন কিছু থাকলে সেটা শুধুই অতীত। কিন্তু বর্তমানে তাকে আপনার জীবনে টানতে পারবেন না যতদিন আমি আপনার জীবনে আছি।”

আমার কথা শুনে রুদ্র স্যার মুচকি হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসলে আমি পিছিয়ে যাই। আমাকে পিছিয়ে যেতে দেখে সে আমার আরো কাছে আসে। আমি তাকে আরো কাছে আসতে দেখে ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যেতে নিলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। আমি পাশ ফিরে সেখান থেকে চলে যেতে নিলে রুদ্র স্যার দুই হাত দিয়ে দেয়ালে আটকে দিয়ে আমার নাকের সাথে নাক ঘসে ঠোঁট কামড় দিয়ে বলে-

“কেন বেবী তুমি জেলাস নাকি? রুশা আর আমার ভালোবাসা থাকতেই পারে যেহেতু তুমি আমাকে স্বামী হিসেবে মানো না, কথায় কথায় স্যার বলে ডাকো।

আর আমার সাথে রুশার অতীতে কিছু ছিল না কিন্তু বর্তমানে অনেক কিছু আছে। আমি চাইলেই তো আর রুশাকে ছারতে পারিনা তাই না? এখন তুমি যদি মন খুলে ভালোবাসতে পার, বাঙ্গালী বউদের মতো ওগো বলে ডাকতে পার তবে আমি ভেবে দেখব রুশার সাথে সম্পর্কটা ইতি টানা যায় কিনা। তাছাড়াও বউ ছারা রোমান্স জমে নাকি?”

আমি রুদ্র স্যারের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। আমিকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এত কিছু। এতটা নিচে নামতে পারল? আমাকে যদি ভালোই বাসতো তবে আমার কাছে তার চাহিদা গুলো সব বলতে পারতো। এভাবে ঠকিয়ে জেলাস ফিল করাতো না।

আমার এসব ভাবতেই চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল পড়ে। আমাকে হঠাৎ কাঁদতে দেখে রুদ্র স্যার চমকে যায়। আমাকে শান্ত করার জন্য গালে হাত দিতেই আমি তার হাত ছিটকে ফেলে রাগে গালে একটা থাপ্পড় মারি।

দুহাতে শার্টের কলার শক্ত করে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলি- “আমি কখনও আপনাকে ক্ষমা করব না। আপনি শুধু আমার সাথে প্রতারণা করেন নাই আমার বিশ্বাস ভেঙ্গেছেন। আমার বাঁচার সব ইচ্ছে শেষ করে দিয়েছেন। ওই ভিডিও, ওই ছবি, আর মেসেজ আমাকে জ্যান্ত লাশ বানিয়ে দিয়েছে। আমি থাকব না আপনার সাথে কখনই না। আপনি একটা প্রতারক। যতবার ভাবে সব ভুলে যাব ততবারই আপনাদের ছাদের দৃশ্য গুলো মনে পরে যায়। যতবার ভাবি সংগ্রাম করব ততবার আমি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাই। সব ছেড়ে চলে যাব আমি আমার বোনের মেয়েকে এই নরকে রেখে যাব না। ওকেও সাথে করে নিয়ে যাব।

“মেঘ কি বলছো, শান্ত হও। কিসের ভিডিও কী,,,,,”

আমি রুদ্র স্যারকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সেখান থেকে চলে আসি। বার বার নতুন বাহানা তৈরী কেন করছে? আমাকে তার প্রয়োজন না হলে কেন নিয়ে আসল এই বাড়িতে, কেন এত মায়ায় বাঁধলো? শুধুই কি পূর্ণতার জন্য? তাকে প্রয়োজন হলে আমাদের ওই বাড়িতে দিয়ে আসত। মায়ের মমতায় বড় করতাম তবে কেন আমাকে এভাবে ঠকালো।

আমি তারপর থেকে রুদ্র স্যারকে এড়িয়ে চলেছি। স্যার এর মাঝে কয়েক বার ডাকলেও আমি কোন না কোন কাজের বাহানা দিয়ে চলে এসেছি। হয়ত পূর্ণতাকে খাওয়াচ্ছি, নয়তো বাসার কাজ করছি বলে এড়িয়ে গেছি।

সন্ধ্যায় রাইমা আপুর রুমে বসে পূর্ণতাকে নিয়ে আনমনে বসে খেলছিলাম। তখন রাইমা আপু একটা বোরকা পরে অন্য একটা বোরকা হাতে নিয়ে আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল-

“মেঘ তাড়াতাড়ি বোরকা টা পরে নেও। আমাদের বের হতে হবে।”

“কেন আপু কোথায় যাবে। আর পূর্ণতা এখনো জেগে আছে?”

“তুমি তাড়াতাড়ি বোরকাটা পরে নাও। শুধু পনেরো মিনিট লাগবে। আর পূর্ণতাকে কারো কাছে মেনেজ করে রেখে যাবোনি। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হও।”

আমি আর কথা না বাড়িয়ে পাঁচ মিনিটের ভিতর তৈরী হয়ে নিলাম। রাইমা আপু পূর্ণতাকে কোলে নিয়ে রুদ্র স্যারের রুমে জেনি আপুর কাছে নিয়ে গেল। আমি মনেমনে ভয় পাচ্ছিলাম যদি রুদ্র স্যার রুমে থাকে কিন্তু রুমে আসার পর দেখি জেনি আপু আর আকাশ ভাইয়া বসে বসে ফোন টিপছে। রুদ্র স্যার রুমে নেই দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম।

“হেই জেনি আপু তুমি কি ফ্রি আছো। পূর্ণতাকে রাখতে পারবে?”

“হ্যাঁ আমি একদম পাক্কা ফ্রি আছি। দাও দাও আমার ছোট মা টাকে কোলে দাও। কিন্তু তোমারা দুজন এভাবে বোরকা পরছো কেন, কোথায় যাচ্ছ?”

রাইমা আপু লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমায় বলল-
“আসলে আপু নিচে আমাদের জন্য রাকিব সাহেব অপেক্ষা করছেন। আর বিয়ের একদিন আগে দেখা করব বাড়ির লোকজন দেখে কি ভাববে তাই বোরকা পরে নিলাম।”

“হ্যাঁ তা বুঝলাম, কিন্তু মেঘকে নিয়ে যাচ্ছ কেন? একা গেলেই তো পারতে।”

“আসলে আপু আমাদের দুজনের দেখা করতে লজ্জা করছিল। তাই রাকিব সাহেব বলল মেঘকে যেন নিয়ে যাই। তাছাড়া আমিও একা যাবো কিভাবে তাই আর কি।”

“তা কাল তো বিয়ে বাসর ঘরে ডুকলেও কি মেঘকে নিয়ে ডুকবে? তোমার যা ভাই মেঘকে খুজে না পেলে আস্ত রাখবে না কিন্তু।”

৩২.
জেনি আপুর কথা শুনে আকাশ ভাইয়া হাহা করে হেসে ওঠলো। আর রাইমা আপু লজ্জায় গুটিয়ে গেল। তা দেখে আকাশ ভাইয়া বলল-
“দেখ দেখ রাইমাকে দেখে কিছু শেখ। বরের নাম শুনে বোন আমার লজ্জায় লাল হয়ে গেল আর তুই কিনা বরকে নাম ধরে ডাকিস তাও আবার সোজা আকাইশ্যা বলে।”

আকাশ ভাইয়ার কথা শুনে জেনি আপু হেসে বলল-
“হে হে আমার দ্বারা এসব হবে না। এত যে লুতুপুতু প্রেম করলি তাদের থেকে রোমান্টিক ডাকে মন ভরেনি?

জেনি আপু পূর্ণতার কপালে চুমু খেয়ে আবার বলল-
“পারলে আমাকে পূর্ণতা মত লক্ষী একটা মেয়ে এনে দিস, তোর সব স্বপ্ন পূরন করব।”

“সেগুরে বালি। তোর মেয়ে আবার হবে আবার লক্ষী? আল্লাহ কাছে দোয়া কর আমার মতো যেন মেয়ে হয়।”

আকাশ ভাইয়ের কথা শুনে তাদের দুজনের ভিতর আবার জগড়া বাঝলো। আমরা আর কিছু না বলে বেড়িয়ে আসলাম। তাদের সাথে কথা বাড়ালে আজ আর এখান থেকে বের হতে হবে না।
রুম থেকে চলে আসার সময় দেখি রুদ্র স্যার রুমে ঢুকছে। আমি রুদ্র স্যার কে ঢুকতে দেখেই দরজার একপাশে ভয়ে চলে গেলাম। সেই সময় রাগের মাথায় কত কি বললাম আমার একটা থাপ্পড়ও দিলাম না জানি এখন একা পেলে কী না কী করে।

আমাকে দেখে রুদ্র স্যার গম্ভীর গলায় বলল-
“মেঘ আমার ফোনটা কই দেখছি না তো? তুমি কি জানো?”

আমি মাথা দুলিয়ে না বলে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে যাই।
সেই রাতে ওই ভিডিও আর ছবি দেখার পর রাগে ফোনটা আছাড় মারি। তখন রুমের কোথায় গিয়ে পরছে জানি না।
,
,

আজ আপুর বিয়ে। পার্লার থেকে লোকজন আসে রাইমা আপুকে সাজিয়ে দিবে বলে। তখন জোর করে রাইমা আপু আমাকেও সাজিয়ে দেয়। সেই সাথে জেনি আপু আর রুশা ম্যাম ও।
আমি গোল্ডেল কালারের একটা গাউন পরে, চুল গুলো খুলে দিয়েছি। সেই সাথে ঠৌঁটে নুড কালারের লিপস্টিক, চোখ কালো কাজল, হাত ভড়া চুড়িতে নব বধুর মতো লাগছে।
রাইমা আপুকেও আজ ভিষন সুন্দর লাগছে, লাল কালারের লেহেঙ্গা পরছে। জেনি আপু পিংক কালারের একটা গাউন পরেছে সব মিলিয়ে সবাইকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তখনই পাশের রুম থেকে রুশা ম্যাম আসে। সে একা পাশের রুমে গিয়ে সাজছিলো। রুশা ম্যামকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে আকাশি কালারের সাড়িটা তার ফর্সা গায়ে ফুটে আছে। কিন্তু রুশা ম্যাম উচ্চতায় বেশ লম্বা হওয়ায় সাড়িটা তেমন মানাচ্ছে না। তবুও মনে হচ্ছে তার রূপ আজ উপছে পরছে। তাকে দেখে রাইমা আপু বলল-

“রুশা আপু আজ যা লাগছে না তোমাকে। আকাশি কালারের সাড়িতে আকাশের পড়ি মনে হচ্ছে। আকাশি কালার কিন্তু ভাইয়ার খুব পছন্দের কালার।”

তখন জেনি আপু বলল-
“না রাইমা তুই যাই বলো আজ কিন্তু সব থেকে মেঘকে বেশি সুন্দর লিগছে। সব দিক থেকে পারফেক্ট। আমার তো মনে হচ্ছে জামাই কনফিউজড হয়ে যাবে কোনটা তার বউ ভেবে।”

জেনি আপুর কথায় আমি খিলখিল করে হেসে ওঠি। আসলেই আজ সবাইকে বউ বউ লাগছে।

অনুষ্ঠানের সময় রুশা ম্যাম রুদ্র স্যারের আসে পাশে ঘুরাঘুরি করলেও রুদ্র স্যার ইগনোর করছে। আমি দূর থেকে সবটা দেখছি আর মনে মনে হাসছি। স্যার বেশ কয়েক বার আমি একা কোথাও থাকলে আমার পাশে এসে কথার বলার চেষ্টা করলে আমি বার বার ইগনোর করে চলে এসেছি।
,

রাইমা আপুর বিদায়ের সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন কাঁদলো। কৃতজ্ঞতা জানালো আমার জন্যই আজ রাকিব ভাইকে পেয়েছে বলতেই আবার ডুকরে কেঁদে ওঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। রুদ্র স্যারকে রাইমা আপু জড়িয়ে ধরলে স্যারকে দ্বিতীয় বারের মতো কাঁদতে দেখলাম।
আসলেই ছেলেরা সহজে কাঁদে না তবে তারা প্রিয় মানুষের কাছে বরাবরের মতো দূর্বল। শাশুড়ি মা খুবই কঠিন একজন নারী তবে আজ সে ও একমাএ মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বিদয়ের সময় হু হু করে কেঁদে ওঠলো। আসলে বিদায় তো এমনই। হোক সুখের বা দুঃখের তা সবসময়ই বেদনাদায়ক।

,

আমি মন খারাপ করে রুমে বসে আছি। এই বাড়িতে কেউ যদি আমার সঙ্গ দেওয়ার মতো থাকত সে ছিল রাইমা আপু আজ সেও চলে গেল। তবে মন ভিতরে শান্তি বয়ে যাচ্ছে। আজ আবার একটা ভালোবাসার সংসার শুরু হবে।

সন্ধ্যায় দিকে আমি রুদ্র স্যারের বেডের উপর বসে পূর্ণতাকে খাবার খাওয়াচ্ছিলাম। বাড়িতে কয়েক জন মেহমান ছাড়া বাকি সবাই চলে গেছে। তখন জেনি আপু রুমে ডুকতে ডুকতে বলল-
“মেঘ তোমাদের বাসায় ঝাড়ু টা কই বলো তো। রুমটা খুব নোংরা।

“আপু তুমি বসো। আমি দেখছি।”

“আরে না তুমি বাবুকে খাওয়াও আমি দেখছি। আর রুদ্র তো বাহিরের কাউকে রুমে এলাউ করে না তার থেকে বরং আমি নিজেই ঝাড়ু দেই।”

পূর্ণতা ঘুমায়ে গেলে আমি ওঠে নিজেই ঝাড়ু দেই। জেনি আপু ঝাড়ু খুজে না পাওয়ায় কান্ত হয়ে পূর্ণতার পাশে ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমি ঝাড়ু দিতে গিয়ে টেবিলের নিচে রুদ্র স্যারের ফোনটা বন্ধ অবস্থায় কুড়িয়ে নেই।
তখনই রুদ্র স্যার রুমে এসে আমাকে দেখে আমার হাত ধরে দোলনায় বসায়।

আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করলে আমাকে শক্ত করে কোমর জড়িয়ে শক্ত করে ধরে বসে।

“কি সমস্যা মেঘ? আমাকে ইগনোর করছো কেন? তোমার সমস্যা না বললে আমি কিভাবে বুঝব বলো। আমার ভুলটা কি বলতো, কেন ইগনোর করছ আমাকে?”

আমি কিছু না বলে একটু ছাড়া পেয়ে ওঠতে গেলেই রুদ্র স্যার ওঠে শক্ত করে আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। তখনই আকাশ ভাইয়া রুমে ডুকতে ডুকতে বলে-

“ভাই বউয়ের সাথে পরে রোমান্স করার আগে দরজা আটকিয়ে নিতে হয়। তুই তো আগে আমার সব কাজে বাঁধা দিয়ে বলতি সবুরে মেওয়া ফলে। নিজের বেলায় বুঝি আর সবুর সহ্য হচ্ছে না।”

আকাশ ভাইয়ের কথা শুনে রুদ্র স্যার আমাকে ছেড়ে দিলে আমি দৌড়ে রুমে থেকে বের হয়ে ছাদে ওঠি।

আমি ছাদের একপাশে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকি। তখনই হাতে রুদ্র স্যারের ফোনটার দিকে চোখ পরে।
ফোনটা সেদিন ছিটকে পড়ায় অফ হয়ে গেছে আমি অন করে ছাদের গ্লিলের পাশে দাড়িয়ে আবার আগের সেই মেসেজ গুলো অন করতেই সেই ভিডিও টা চোখে পরে। ভিডিও আর ছবি দেখে হাত কাঁপতে কাঁপতে ফোনটা গ্লিলের ওপর পাশে ছাদের কর্নারে পরে যায়।

আমি সেখান থেকে ফোন নিতে গেলে কোথা থেকে রুদ্র স্যার এসে বুকের জড়িয়ে ধরে। স্যারের সারা শরীর কাঁপছে। কিছু বলতে পারছেনা। আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।

আমি কিছু না বুঝে আবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকি। স্যার কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-

“কি কি কর করিছিলে মে মেঘ, আমার কথা একবারও ভাবলে না? অন্তত পূর্ণতার কথা একবার ভাবতে। সামান্য ভুলের শাস্তি এত বড় দিতে একবারও তোমার আত্মা কাপল না? আমি আর দুইটা মিনিট পর আসলি কি হতো?”

#চলবে,,,,
[খুব তাড়াতাড়ি রহস্য সামনে আসছে। কোন কিছু ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

সংসার পর্ব-১৫

0

#সংসার
#পর্ব_১৫

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না। চিৎকার করে ডুকরে কেঁদে ওঠলাম। নাহ আমার রুদ্র এসব করতে পারে না, কখনোই না। অনেক বেশি ভালোবাসি। মন কিছুতেই চোখের দেখাকে বিশ্বাস করছে না।
আচ্ছা আমার মন যেটা বলছে সেটা কী সত্যি নাকি চোখের দেখা সত্যি?
সত্যিই কী তবে রুদ্র পূর্ণতার জন্য ভালোবাসার নাটক করছে?

মনের ভিতর হাজার প্রশ্ন আসলেও মনকে শক্ত করে ওঠে দাড়াই। এটা আমার সংসার রুদ্র মানুক আর না মানুক কখনোই আমি এই সংসার কাউকে দিব না। এই সংসার এই স্বপ্ন সব আমার গুছানো। এই কয়টা মাসে সবাইকে আপন করে নিয়েছি কাউকে ছেড়ে কোথাও যাব না কখনোই না। আমার সংসার, আমার ভালোবাসা, আমার মেয়ে কাউকেই আমি ছাড়তে পারব না সবাইকে চাই। আর যতকষ্ট হোক আমি সবাইকেই ধরে রাখব।

২৯.
আমি ওঠে ফ্রেশ হয়ে পূর্ণতার পাশে শুয়ে পরি। তখনই রুদ্র স্যার রুমে আসে। আমার দিকে কিছুক্ষণ অপরাধি দৃষ্টিতে তাকালে আমি পাত্তা না দেওয়ায় ওয়াশরুমে চলে যায়। আজ না চাইতেও রুদ্র স্যারের সামনে থাকতে ইচ্ছে করছে না। তাই আমি রুদ্র স্যার ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার আগেই রাইমা আপুর রুমে চলে যাই। আজকের রাতটা ওখানেই থাকব।

আমাকে রাইমা আপু তার রুমের সামনে দেখে বলে-
“মেঘ তুমি এখানে, কিছু বলবে? নাকি ভাইয়া কিছু বলেছে।”

“না আপু তেমন কিছুই না। তুমি দুইদিন পর চলে যাবে মন খারাপ লাগছিল তাই তোমার কাছে চলে আসলাম।”

আমি আপুর কাছে বসতেই আপুকে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি ডুকরে কেঁদে ওঠি, ভিতরের অভিমানগুলো কান্না বেরিয়ে আসে। আমি আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করছি। তখনই রুশা ম্যাম রাইমা আপুর ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসে।

“কান্নাকাটি করছো কেন মেঘ? রাইমা চলে যাবে ভেবে মন মানছে না কি?”

আমি রুশা ম্যামের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ উত্তর দেই। রুশা ম্যাম মাত্রই শাওয়ার নিয়েছে। হাতে ভিজানো জামা যেটা আমি তখন ছাদে পরা দেখেছি। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় জিঙ্গেস করলাম।

“ম্যাম এত রাতে গোসল করলেন যে গরম লাগছে নাকি?”

রুশা ম্যাম মুচকি হেসে বলল-
“মেঘ তুমি কি ছোট নাকি, মেয়েদের বিশেষ কিছু মুহূর্ত পর গোসল করতে হয়। তুমি জানো না, আর তাছাড়া তোমার তো বিয়ে হইছে জানার কথা ছিল।”

আমি রুশা ম্যামের কথায় তার দিকে আরো সন্দেহের চোখে তাকাই। কোন বিশেষ মুহূর্তের কথা বলছে রুশা ম্যাম তার তো এখনো বিয়ে হইনি তবে কি আমার ভাবনাই ঠিক?
আমি রুশা ম্যামকে প্রশ্ন করব তার আগেই রুশা ম্যাম রুম থেকে চলে যায়। তাই আমি রাইমা আপু প্রশ্ন করলাম-
“আপু রুশা ম্যাম তোমার ওয়াশরুমে আসলো কেন? আর তাছাড়া আপু বিশেষ মুহূর্ত বলতে কি বুঝিয়েছে।”

আপু আমার কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে ঔঠল। মনে হচ্ছে আমি কোন মজার জোকস শুনিয়েছি।

“ওহহ মেঘ তুমি কি বাচ্চা মেয়ে? আপু কথা বলার ভঙ্গি দেখে বুঝনি সে তোমার সাথে মজা করছে আর তুমি কি না সিরিয়াসলি নিয়ে নিলা। পাগল আপুর কি বিয়ে হইছে?
আর আজ এমনিতেই আমার রুমে এসে বলল তোর ওয়াশরুমে একটু ইউজ করা যাবে গরম লাগছে খুব গোসল করব। আর সেই সাথে তোমাকেও কল দিয়ে রুমে ডাকতে বলল দুদিন পর চলে যাব তাই গল্প করতে। কিন্তু তুমি তো কল দেওয়ার আগেই চলে আসলে।”

আমি রাইমা আপুর কথা শুনে কিছু না বলে চুপচাপ গুটিয়ে পাশে শুয়ে পরলাম। কি করে বলব সবটা তাকে? রুশা ম্যাম মজা করে না ওটা সত্যিই বলেছিল।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গতে দেখি আমি রুদ্র স্যারের বুকের মাঝে শুয়ে আছি। আমি তো রাতে রাইমা আপুর কাছে শুয়ে ছিলাম তবে এখানে কি করে আসলাম। ভাবতে না ভাবতেই বাসার মেইন দরজার কলিং বেল বেজে ওঠলো।

কালকে রাইমা আপুর বিয়ে। বাড়িতে প্রায় সব মেহমান এসেছে, রাতে সবাই মিলে মজা করায় অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছে। তাই এখন সকাল ৭ টা বাজলেও কেউ ঘুম থেকে ওঠে নাই।

আমি ওঠে মেইন দরজা খুলে দিয়ে দেখি দুইজন ছেলেমেয়ে দাড়িয়ে আছে। দুজনই দেখতে রুদ্র স্যারের বয়সি হবে। মেয়েটা দেখতে অনেকটা বিদেশিদের মতো গায়ের রং ধবধবে ফর্সা, চুল গুলো হালকা লালচে কালারের। আমি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে পর্যবেক্ষন করলাম কারা হতে পারে?
তখনই মেয়েটা বলে ওঠলো।

“হেই ইউ, কি ভাবছো আমাদের ভিতরে ডুকতে দিবে না?”

আমি চুপচাপ দরজা ছেড়ে পাশে দাড়ালাম। তারা আমাকে ঠেলে সরাসরি উপারে রুদ্র স্যারের রুমে চলে গেল। আমিও দরজাটা লাগিয়ে তাদের পিছুপিছু উপরে চলে আসলাম।

রুদ্র স্যার এখনো ঘুমিয়ে আছে। আর তারা দুইজন গিয়ে রুদ্র স্যারকে তুলছে। ফর্সা দেখতে বিদেশি মেয়েটা রুদ্র স্যারকে তার বাহুতে তুলতেই রুদ্র স্যারের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ঘুম চোখে বলে-
“‘উফফফ জেনি ছাড় তো। রাতে ঘুম হয়নি একটু ঘুমাতে দে।”

তারা দুইজন চমকে গিয়ে বলল-
“রুদ্র তুই অবাক হসনি আমরা আসছি দেখে?”

“এখানে অবাক হওয়ার কি আছে। তোরা আজ না তো কাল আসতি জানতাম। এখানে অবাকের কি আছে। যা তো একটু ঘুমাতে দে।”

৩০.
তখনই বেডের পাশ থেকে ছেলেটা গ্লাসের পানি নিয়ে চোখের উপর ঢেলে দিয়ে বলল-

“শালা বিয়ে করে বউয়ের সাথে সারারাত রোমান্স করে এখন আর বন্ধুদের চিনিস না। এত কষ্ট করে রাত বারোটার বাস ধরলাম সকাল সকাল এসে তোকে চমকে দিব। কিন্তু তোর ভার্সিটি লাইফের মত এসে আজও শুনতে হলো ‘এখানে অবাক হওয়ার কি হয়েছে?’ সালা তুই কি মাবন না এলিয়েন ধুররর।”

রুদ্র স্যারের চোখে পানি পরতেই চোখ ডলে বিরক্ত মাখা ভঙ্গিতে ওঠে বসে।
“কুল ব্রো কুল। সে কপাল আমার নাই রে বউয়ের সাথে রোমান্স সে তো স্বপ্নেই দেখি বাস্তবে আর হবে না।”

রুদ্র স্যারের কথায় তারা তিনজন হেসে ওঠে।
“যদি বউয়ের সাথে রোমান্সই করতে না পারিস তবে এই রকম হিরোদের মতো চেহারা আর বডি দিয়ে কি হবে বল? আমাকে দেখ বিয়ে ঠিক করে নিয়েছি আর হবু বউকে নিরাপদে রেখে অন্যমেয়েদের ও পটিয়ে নিচ্ছি।”

তখনই পাশে থাকা মেয়েটি রেগে সেই ছেলেটির গায়ে কয়েক টা কিল দিয়ে বলল-
“সালা তোর একটা দিয়ে হয়না, আরো লাগে? দাড়া সব বের করছি।”

“মাফ কর বুইন। আমার মনে ছিলো না তুই যে পাশে আছিস। তোর মতো বউ থাকতে আর কি লাগে।”

রুদ্র স্যার তাদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে-
“তোরা একটুও পরিবর্তন হবি না? দেখবি তোদের যখন বেবী হবে তাদের টম এন্ড জেরি দেখার প্রয়োজন হবে না। তোদের দেখেই দিন পার করে দিবে।”

আমি এতক্ষণ তাদের কথা দরজার সামনে দাড়িয়ে শুনছিলাম আর তাদের দেখে এটা বুঝলাম তারা হয়ত রুদ্র স্যারের বেস্ট ফ্রেন্ড নয়তো রুদ্র স্যার কারো সাথে এত ফ্রি না। হঠাৎ বেডের পাশে আমার ফোন বেজে ওঠায় আমি রুমে ডুকে বেড থেকে ফোন নিতে যাই।

তখনই মেয়েটা চিৎকার করে বলে ওঠে-
“এই এই রুমে এসো না। এই রুমের ভিতরে ডুকছো কেন? কে তুমি এই বাড়িতে নতুন আসছো বুঝি?”

আমি অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। আমার রুমের ভিতরে আমি ডুকব না, কিন্তু কেন?

“এই জেনি তুই কি আমার বউকেও আমার রুমে আসতে দিবি না।”

রুদ্র স্যারের কথা শুনে মেয়েটি বলল-
“এটা তোর বউ, আহারে আগে বলবি তো। ভাবি এসো এসো। আগের বার তুই তোর রুমে বাহিরের একটা ছেলে ডুকছিলো বলে, তুই সেদিন যে কান্ড করলি মনে পরলে এখনো গায়ে কাটা দেয়।”

“রুদ্র তুই আবারো আমাকে ছ্যাকা দিলি। আমি দরজা খুলার সময় সামনে ভাবিকে দেখে ভাবলাম হয়ত লাইন মারার জন্য আরো একটা মেয়ে পাইছি কিন্তু তুই মাত্র যে কথাটি বললি তাতে আমি হার্ট এ্যাটাক করলেও করতে পারি।”

ছেলেটির কথা শুনে পাশের মেয়েটি তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠলো। দুই একটা পিঠে কিল বসালো।

রুদ্র স্যার আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। ছেলেমেয়ে দুটার নাম জেনি আর আকাশ দুজনেই কাজিন সেই সাথে তারা ফিওন্সি। স্কুল জীবন থেকে তাদের তিনজনের বন্ধুত্ব। কলেজ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পড়লেও ভার্সিটিতে আবার পরিচয় হয় এবং সেই থেকে তাদের বন্ধুত্বটা গভীর হয়। ভার্সিটি শেষ হওয়ার পর চাকরির জন্য তিন জনে তিন জায়গায় থাকলেও ভার্চুয়ালে নিয়মিত যোগাযোগ হয়।

জেনি আপুর সাথে কথা বলে বুঝলাম সরল প্রকৃতির রাগী একজন মেয়ে তবে রাগটা যখন তখন শুরু আবার শেষ। আর আকাশ ভাইয়া যত যা করুক জেনি আপুর উপর ভালোবাসা অনেক। যতগুলো গার্লফ্রেন্ডের কথা বলছে সবার কথা সরল মনে জেনি আপুর সামনে বললে আপু রাগে কয়েকটা কিল বসিয়ে একটু গালি দিয়ে রাগ শেষ। আর ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে সে আপুর এই রাগটাকে বেশ ইনজয় করে।
আমি তাদের দুষ্টুমি ভরা কথা শুনে মুহূর্তেই মনটা ভালো হয়ে গেল। আমিও তাদের কথায় সাই দিলাম।

“মেঘ জানু তুমি নাকি আমার একমাত্র সুইটি কুইটি বেস্টুকে রোমান্স করার সুযোগ দাও না? আরে না পারলে বলো, আমি তোমাকে রোমান্স শিখাব।”

“একদম না ভাই, তোর রোমান্স শিখাতে হবে না। পরে দেখা যাবে তোর থেকে শিখে আমার বউও কথায় কথায় বকা আর কিল দিবে। আমি আকাশের মতো আমার পিঠ আর কান সরকারি করে দিতে পারমুনা ভাই। তোর প্যাঁচানো কথা আর কিল বাপরে বাপ। তার থেকে আমার বউ যেমন আছে তেমনই থাকুক। রোমান্স ছাড়া জীবনে কান আর পিঠের অনেক প্রয়োজন আছে।”

রুদ্র স্যারের কথায় আকাশ ভাইয়া দুঃখ প্রকাশ করল। আবার তিনজনই শব্দ করে হেসে ওঠলো। আমি একদৃষ্টিতে রুদ্র স্যারের নিঁখুত সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি নিঁখুত সেই হাসি কে বলবে এই হাসির পিছনে কত বড় প্রতারনা লুকিয়ে আছে।

জেনি আপু আর আকাশ ভাইয়াকে একটা রুম দেওয়া হলে সেখানে গিয়েও তারা গন্ডগোল পাকালো।

“রুদ্র আমি এই আকাইশ্যার সাথে এক রুমে থাকমু না। এমনিতেই ওর চরিত্র ঠিক না।”

“হুমম রুদ্র আমিও এই কুটনির সাথে থাকমু না। ওর কিল খেতে খেতে দেখবি পরের দিন আমি তক্তা হয়ে গেছি।”

“আরে বাপ মাফ কর, তোদের তো বিয়ে হবে তবে এত কথা কেন। যদি না থাকতে পারিস তাহলে বিয়ের পর কিভাবে থাকবি? এখন বাড়িতে অনেক মেহমান দুজনকে দুটো রুমে কি করে থাকবি বল?”

“আমি এসব জানিনা রুদ্র, কিন্তু আকাইশ্যার সাথে থাকমু না। তারপর বিয়ের আগে দেখবি আমার সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। দরকার পরলে আমি তোর সাথে থাকব তবুও ওর সাথে না।”

তাদের কথা শুনে আমি বললাম।
“রুদ্র স্যার আর আকাশ ভাইয়া এক সাথে ঘুমাক আর আমি রাইমা আপু আর জেনি আপু এক সাথে থাকব।”

আমার কথা শুনে সবাই রাজি হলেও রুদ্র স্যার কিছুক্ষণ করুন চোখে তাকালেও আর কিছু করার ছিল না তাই কিছু বলল না।

আমিও কিছুদিন রুদ্র স্যারের সাথে থাকতে হবে না ভেবে খুশী হলাম অন্তত কিছুদিন তো দূরে থাকি। এই মুহূর্তে তার সাথে থাকলে রাইমা আপুর বিয়েটা উপভোগ করতে পারব না।
মনে মনে সব কিছু ঠিক ভাবলে বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে।
“আমি পারবো না রুদ্র, কখনই পারবোনা তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে। হারানো জিনিস ফিরে পেয়ে হারানোর ব্যাথা কি সেই জানে কতটা কষ্টের।”

আমি চোখের জল মুছে সিদ্ধান্ত নিলাম এভাবে কষ্ট পাব না। রুদ্র স্যারের নিজের মুখ থেকে সবটা শুনব কেন করল এমন? এর পিছনে শুধু কি আমার ভুল নাকি অন্য কোন সত্যিই লুকিয়ে আছে। যতই যা হোক এটা আমার সংসার। আমি গুছিয়ে রাখব আমার সংসারের যত্নে গড়া ভালোবাসার জিনিস গুলো।

#চলবে,,,,,,

[কোথাও কোন লেখা ভুল হলে ক্ষমা করবেন। ভালোবাসা নিবেন।💚]

সংসার পর্ব-১৪

0

#সংসার
#পর্ব_১৪

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি আর প্রার্থনা করছি। এবারের মত আল্লাহ বাঁচিয়ে দেও আর কখনো ভিজে গেলে গা থেকে কোট খুলব না।

গাড়ি এসে বাসার সামনে থামতেই রুদ্র স্যারের বের হওয়ার অপেক্ষা না করে আমি দৌড়ে গাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে পা আটকে পরে যাই। তারপর ও না দাড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তারাতারি রুমের ভিতর ডুকে দরজা আটকিয়ে দেয়। পিছন ফিরে দেখি রুদ্র স্যার অবাক হয়ে হতভম্বের মত তাকিয়ে আছে। সে হয়ত ভাবেনি আমি এভাবে বের হয়ে যাব।

রুমে এসে হাটুর উপরে কাপড় টেনে দেখি পরে যাওয়ার কারনে মচকে গিয়ে ফুলে লাল হয়ে আছে। আমি মলম দিতে গিয়েও ব্যাথার কারনে দিতে পারি নাই।

২৭.
অনেকক্ষণ থেকে রুদ্র স্যার দরজায় নক করছিলো। আমি খুলছি না দেখে এবার বেশ জোরে ধাক্কা দিচ্ছে।
“মেঘ দরজা খুলো বলছি। আমি এমনেতেই রেগে আছি আর রাগাবা না। তারাতাড়ি দরজা খুলো নয়ত এই দরজা ভাঙ্গে ফেলতে আমার সময় লাগবে না।”

এর মাঝে রাইমা আপুরাও বাড়িতে এসে রুমের বাহিরে চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে। সবাই বার বার দরজা খুলতে বলছে। এবার আমি ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে পা বাড়াই।
দরজা খুলেই এক দৌড়ে ওয়াশরুমের ভিতর ডুকে যাই। রুমের ভিতর কিছুক্ষণ সবার আনাগোনা থাকলেও কিছুক্ষণ পর কারো শব্দ না পেয়ে সবাই চলে গেছে ভেবে দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে দেখি বেডের উপর রাইমা আপু আর রুশা ম্যাম বসে চুপচাপ ফোন টিপছে। রাকিব ভাই সোফায় পা দুলিয়ে বসে আছে আর রুদ্র স্যার কই দেখার জন্য ঘাড় ঘুড়াতেই দেখি আমার পিছনে চোখ বড় বড় করে দাড়িয়ে আছে। আমি ভয়ে ওল্টো দৌড় দিয়ে ওয়াশরুমের ভিতর ডুকতে গেলে রুদ্র স্যার হাত ধরে টান দিয়ে বুকের মাঝে নিয়ে নেয়।
পায়ে ওল্টো মুচড়ে যাওয়ার জন্য ব্যাথায় শব্দ করে আহ বলে চিৎকার করে নিচে বসে পরি।
আমার সাথে সাথে রুদ্র স্যারও কি হইছে দেখার জন্য নিচে বসে আমার হাঁটুর ওপরে কাপড় তুলে দেখতে নেয়। আমি লজ্জায় তাড়াতাড়ি প্লাজুটা নিচে নামিয়ে নেয়। রুদ্র স্যার পরিস্থিতি বোঝার জন্য একবার রাইমা আপুদের দিকে আবার একবার রাকিব ভাইয়ের দিকে তাকায়। তারাও যেন রুদ্র স্যারের চোখের ভাষা পরে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার সময় রাকিব ভাই মুচকি হেসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে যায়।

সবাই চলে যেতেই রুদ্র স্যার আবার প্লাজু হাঁটুর উপর ওঠাতে গেলে আমি চেপে ধরি। কি করে স্যারকে বোঝাও শুধু তাদের দেখে লজ্জা পাইনি আপনাকে দেখেও লজ্জা পাই।

“স্যার প্লিজ হাঁটুর ওপারে ওঠাবেন না। আমি মলম দিয়ে নিচ্ছি। আপনি প্লিজ এখন যান।”

“এই মুহূর্তে আমার যা ইচ্ছে করছে মেঘ। একবার না তোমাকে স্যার ডাকতে নিষেধ করলাম? এক সাথে এতগুলো শাস্তি নিতে পারবে না তুমি। তাই দিচ্ছি না বলে ভেবেও না ছেড়ে দিব। দেখি পা ছাড়ো আমাকে দেখতে দাও।”

আমি করুন চোখে তার দিকে তাকিয়ে পা ধরে রাখি। রুদ্র স্যার আমার দিকে রাগী চোখে তাকালে আমি তাড়াতাড়ি পা ছেড়ে দেই।
স্যার কিছুক্ষণ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে পা দেখে হঠাৎ পা ধরে সোজা করে টান দেয়। আমি ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠতেই স্যার আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।

“আপনি মানুষ না রাক্ষস। এভাবে ব্যাথা পা ধরে কেউ টান দেয়?”

“কেন জানু এর আগে অপরাধ করার সময় মনে ছিলো না আপনার এর শান্তি কতটা রোমান্টিক ভাবে ভয়াবহ হতে পারে?”

আমি ওঠে দাড়াই। আশ্চর্যজনক ভাবে পায়ে একটুও ব্যাথা নেই। পা মচকে যাওয়ায় সোজা করে টান দেওয়ার কারনে সব ঠিক হয়ে গেছে তবুও কপাট রাগ নিয়ে বললাম।
“এভাবে কেউ ব্যাথা পায়ে টান দেয়। অন্তত দু তিন দিন পর এভাবে ঠিক করতে পারতেন। তার উপর ব্যাথা দিয়ে মন খুলে চিৎকারও করতে দিলেন না ঠোঁটে উপরে ঠোঁট,,,,”

রাগের মাথায় কার সামনে কি বলছি মন পরতেই কথা ধামিয়ে এমন ভাব করি যেন এই মুহূর্তের যে কথাটা বলছি এটা কখনোই আমি বলেনি।

“কেন জানু কি হলো? ডাবল ডোজের শাস্তি তোমার ভালো লাগলো না? আর ঠোঁটের উপরে ঠোঁট কী বলো তো? কি হলো বলো?”

আমি লজ্জায় কথা ঘুরানোর জন্য বললাম-
“পূর্নতা খেয়েছে কি না দেখে আসছি?”

রুদ্র স্যারকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি দৌড়ে রুমের বাহিরে চলে আসি।

২৮.
দশদিন পর রাকিব ভাই আর রাইমা আপুর বিয়ে। বাড়িতে মোটামুটি মেহমান আসতে শুরু করেছে। এর মাঝে বেশ কয়েকবার রুদ্র স্যার আমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য রুশা ম্যামের স্যাহায্য নিছে।
,

রাত ১২ টা।
আর দুইদিন পর রাইমা আপুর বিয়ে। বাসা প্রত্যেকটা রুম বিভিন্ন ভাবে সুন্দর করে ডেকারেশন করা। আমি আমার রুমের ভিতর পূর্ণতা কে ঘুম পরিয়ে দোলনার পাশের বড় জানলাটা খুলে দাড়ালাম। ঝিরঝির করে বাতাস আসছে। আমি মন খুলে প্রকৃতিকে অনুভব করছিলাম আর ভাবছিলাম রুদ্র স্যারের নেইক্স জেলাস ফিল করানোর জন্য কি উপায় ব্যবহার করবে। এবার আর অপেক্ষা করাব না এখানেই সব শেষ করে নতুন করে সাজিয়ে নিব।
আমাকে জেলাস ফিল করাতে গিয়ে বেচারা রাইমা আপুর বিয়েটা এতদিন আটকে ছিল। আমাকেও পটাতে পারছিল আর বিয়েটাও হচ্ছিলো না।

সেদিন রাইমা আপুর রুদ্র স্যারের কাছে এসে বলে- “অনেক হইছে এবার বিয়েতে রাজি হয়ে যা ভাই”

রুদ্র স্যার তখন এক কথায় বলে দেয় আমি যতদিনে রুদ্র স্যারকে প্রপোজ না করব ততদিনে বিয়েতে সে রাজি হবে না। আর আমিও তার কথার উপরে বলে দেই আমি কাউকে প্রপোজ করতে পারব না।
রাইমা আপু আমাদের দুজনের অবস্থা দেখে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিল। তার অবস্থা ছিলো- “ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।”

রাইমা আপু সেদিন আপসুসের স্বরে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেছিল-
“ভাইরে ভুলটা যেহেতু আমার শাস্তি টা তো পেতেই হবে। আমারই উচিত হয়নি তোকে সেদিন সবটা জাননো। আর জানালাম তো জানালাম তার উপর মেঘকেও সতর্ক করে দিলাম। আমার ভুল ছিল ওই লোক টার মতো যে, চোরকেও বলত চুরি করতে আর বাসার গিয়ে লোকদের বলত জেগে থাকতে নয়ত চোর আসবে তার মতো। নয়ত এতদিন ভাইয়া তুমি যেসব করলে ততদিনে মেঘ কেঁদে কেঁদে কবেই পটে যেত।”

সেইদিনের কিছুদিন পর রাকিব ভাইয়ের মা অসুস্থ হয়ে পরাই রুদ্র স্যার এমনিতেই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।বিয়ের ডেট ঠিক করার পর রাইমা আপুও হাসতে হাসতে রদ্র স্যারকে বলেছিল-

“বুঝলি ভাইয়া তুমি যদি চলো ডালে ডালে তো আমার হবু শাশুড়ি চলে পাতায় পাতায়। সেদিন সে অসুস্থ হয়নি। তোমার আর মেঘের জেদের কথা শুনে একটু অভিনয় করেছিলো। দেখলে তো কিভাবে বিয়েতে রাজী করাতে হয়।”

রুদ্র স্যার সব শুনে রাইমা আপু মারতে গেলে রাইমা আপু হাসতে হাসতে বলে-
” হুহহ বউ সাথে তো পারিস না তাই বোনের পিছনে পরছিস।”
,,,,,,,,

রাইমা আপুর কথাটা মনে পরতেই খিলখিল করে হেসে ওঠলাম। জানালা থেকে এখনো ফুরফুর করে হাওয়া আসছে। ঘড়িতে সাড়ে বারোটা বাজে। রুদ্র স্যার এখনো রুমে আসেনি। হঠাৎ ফোনে মেসেজের শব্দ আসলে আমি ফোনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখি রুদ্র স্যারের মোবাইলে রুশা ম্যামের মেসেজ এসেছে। যাতে লেখা-
“রুদ্র আর নাটক ভালো লাগে না। এই বিষয়ের ইতি টানো। পূর্ণতাকে নিয়ে তো তোমার চিন্তা আমি পূর্ণতাকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করতে পারবো। বৃষ্টি মেঘের বোন দেখে তার মেয়েকে মানুষ করতে পারলে তোমাকে ভালোবেসে আমি তোমার মেয়েকে আমার মেয়ে কেন মানতে পারব না? তাড়াতাড়ি ছাদে এসো কথা আছে। তোমার দুটো ফোনের কোনটা তোমার সাথে জানি না তাই দুটোই এই মেসেজটা দিলাম।”

আমি মেসেজ দেখে জেলাস ফিল করার জন্য নতুন ফন্দি ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আমি রুশা ম্যামের মেসেজ উপরে টেনে তুলতেই দেখি বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবে রুশা ম্যাম আর রুদ্র স্যারের ছবি। রুদ্র স্যারের নগ্ন বুকে রুশা ম্যাম চোখ বুঝে শুয়ে আছে। ছবিটা ইডিট করা ভেবে আরো ভালো করে জুম করে দেখি। ছবিতে রুদ্র স্যারের বুকের মাঝখানে তিলটা ফুটে আছে। সেই সাথে রুশা ম্যামের ঘাড়ের তিলটা ফুটে আছে।
মেসেজ দেখার সাথে সাথে একটা ভিডিও আসে। আমি সাথে সাথে ভিডিওটা অন করতেই দেখি রুশা ম্যামের নগ্ন দেহের ভিডিও। এতো পুরোপুরি মিল তো আর ইডিট করে করা যায় না। ভিডিওটার নিচে আর একটা মেসেজ আসে।
“নাও এই বার হলো? এখন একটু রাগ কমাও রুদ্র। আমি ছাদে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি এসো। আজ আমাকে যেভাবে চাইবে আমি তোমাকে সেভাবেই সপে দিব। বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমাকে।”

আমি ভিডিওটির সাথে রুদ্র স্যার আর রুশা ম্যামের ছবিটা বেশ কয়েকবার মিলিয়ে পার্থক্য হিসেবে রুশা ম্যামের তিলটা ভিডিওটির সাথে মিলছেনা তাছাড়া সবটাই এক। মনে একরাশ সন্দেহ আর ভয় নিয়ে নিচে বসে পরি। তারপর আবার ওঠে ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

কাঁপা কাঁপা পায়ে ছাদে উঠি। ছাদের চারপাশে অন্ধকার একপাশ থেকে কারো ফিসফিসিয়ে কথা শুনে সেদিকে পা বাড়াই।

রুদ্র স্যারের পিছন দিক থেকে দেখেই বুঝতে পারি এটা রুদ্র স্যার। রুশা ম্যামকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর রুশা ম্যাম বিরবিরের মতো শব্দ করেই বলছে-
“এসব বাদ দাও রুদ্র, আমি আর পারছিনা মেঘ কে মানতে। প্লিজ সব ছেড়ে চলো আমরা দূরে কোথাও চলে যাই। এই অভিনয়ের শহরে আর ভালো লাগে না।”

রুদ্র স্যার রুমা ম্যামকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করছে এটা বলে কিছুদিনের ভিতর সব ঠিক হয়ে যাবে। সাথে সাথেই রুশা ম্যাম রুদ্র স্যারের ঠোঁটে গভীর ভাবে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।

আমি সেখানে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এটা স্বপ্ন কিছুক্ষণের ভিতর ভেঙ্গে যাবে। দুঃস্বপ্ন থেকে বের হওয়ার জন্য আমি ছটফট করতে লাগলাম।

নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না। চিৎকার করে ডুকরে কেঁদে ওঠলাম। নাহ আমার রুদ্র এসব করতে পারে না, কখনোই না। অনেক বেশি ভালোবাসি। মন কিছুতেই চোখের দেখাকে বিশ্বাস করছে না।
আচ্ছা আমার মন যেটা বলছে সেটা কী সত্যি নাকি চোখের দেখা সত্যি?
সত্যিই কী তবে রুদ্র পূর্ণতার জন্য ভালোবাসর নাটক করছে?

#চলবে,,,,,