Monday, August 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1555



আমার ক্রাশ পর্ব-০৯

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ৯
#Tanisha Sultana (Writer)

কাজের জন্য সায়ানের বাংলাদেশ আসা দুদিন পিছিয়ে যায়। সায়ান কেমন অস্থির হয়ে আছে

তুলিকে হার্ট করে এখন আমিই কষ্ট পাচ্ছি। বেশি কথা বলুক পাগলামি করুক তবুও ও আশেপাশে থাকলে খুব ভালো লাগে। মনটা ভালো হয়ে যায়।
সায়ান মনে মনে ভাবছে কথা গুলো

সায়ান
মনা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে। সায়ান সোফায় বসে ছিলো। মনা সায়ানের পাশে বসে

কি হয়েছে? মন খারাপ?

মনা সায়ানের দুগালে হাত দিয়ে বলে।
নহহহ
তাহলে?

“এমনিতেই

” এমনিতেই তো চুপচাপ?

“হুম
মনা সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে
” আই এম সো হ্যাপি

“কেনো?

” কেনো আবার আপদ বিদেয় হয়েছে। এবার আমি আর তুমি অনেক ঘুরবো শপিং করবো এন্ড রোমান্স করবো
সায়ান মনা ছাড়িয়ে একটু দুরে গিয়ে বসে

“মনা তুমি আমায় সত্যি ভালোবাসো তো
মনা ঘাবড়ে যায়।

” এ হঠাৎ এই কথা বলছে কেনো? সায়ান কি কিছু বুঝতে পেরেছে? সায়ান বুঝে গেলে তো ঝামেলা। ওই তুলি সায়ানের মনে সন্দেহ ঢুকিয়েছে না কি সায়ানই আমার পিছু নিয়েছে। ওহহ গড এবার করবো কি
মনা মনে মনে ভাবছে।

সায়ান মনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
“এসব কি বলছো সায়ান? আমি য়ে তোমাকে কতোটা ভালোবাসি সেটা নিয়ে তোমার সন্দেহ আছে? তুমি এতো চেঞ্জ হয়ে গেছো? নিজের রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছি তোমায়?

সায়ান মনাকে হালকা জড়িয়ে ধরে
” আই এম সরি মনা। আসলে তোমায় একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলাম একটা ছেলের সাথে তাও আবার হাত ধরে

“আআমার ফ্রেন্ড

” ওহহহ

🌺🌺
রাগে নিজের রুমে পায়চারি করছে তুলি
“আমার গায়ে হাত তুললো। তাইবা তাজনিন তুলির গায়ে। এতো বড় সাহস।এখনো নাকের রক্ত শুকায় নাই। সায়ান মাহবুবরে এবার তুলির রনোচন্ডি রুপটা দেখাবো। শালা হনুমান একটা।
আমারই ভুল হয়েছে জোর করে বিয়ে করে।

সেদিন তুলির বাবা আর সায়ানের বাবা সায়ান তুলিকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ছিলো এটা নিয়ে চাপ দেয়। তুলিও নেকা কান্না শুরু করে দেয়। পরে ওদের চাপে বিয়ে করতে রাজি হয় সায়ান।

সায়ানের বাবা মা তুলিকে দেখতে এসেছে৷ শশুড় শাশুড়ীর সামনে গাল ফুলিয়ে বসে আছে তুলি
” তুলি। শাশুড়ী বলে

“তোমার ছেলে আমার গায়ে হাত তুলেছে একদম তোমাদের বাড়িতে আমাকে যেতে বলবা না। ওই মনা খালাম্মার জন্য আমায় মারলো।

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে তুলি।
শশুড় তুলির মাথায় হাত বুলায়
” ওকে উচিৎ শিক্ষা দেবো। তুমি শান্ত হও
তুলি দুরে গিয়ে বসে

“সিমপেথি দেখাতে হবে না। মন থেকে ক্রাশকে ডিলিট করে দিয়েছি। তবে হ্যাঁ সায়ান যদি আমার আমার কাছে এসে মাথা ঠুকে হ্মমা চায় আমি ভেবে দেখবো।

তুলি হনহনিয়ে রুমে চলে যায়।

পরেরদিন সন্ধায় সায়ান বাসায় আসে। দরজায় নক করে মা দরজা খুলে
” কি চায়?

“মা আমি তোমার ছেলে

” তুলিকে না নিয়ে এলে বাসায় ঢুকতে পারবে না
মা মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়

“এ কি জ্বালায় পরলাম

সায়ান তুলিদের বাসায় যায়। তুলির মা দরজা খুলে দেয় কিন্তু কথা বলে না। সায়ান তুলির রুমে চলে যায়। তুলি ফ্লোরে মাথা রেখে খাটের ওপর পা রেখে নিক্স দেখছে। সায়ান ঠাস করে বিছানায় সুয়ে পরে। অনেকটা জার্নি করে সায়ান বেশ ক্লান্ত।

তুলি সায়ানের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার টিভিতে মন দেয়
” তুলি এক গ্লাস পানি দেবে
তুলি শুনেও না শোনার ভান করে।
“আন্টি এক গ্লাস পানি দেন তো
জোরে তুলির মাকে বলে। তুলির মা দৌড়ে পানি নিয়ে আসে। সায়ান এক ঢোকে পুরো পানিটা খেয়ে ফেলে।
তুলির মা চলে যায়।
” তুলি বাড়ি চলো
তুলির কথা টা কানে তুলে না
“এই মেয়েটা এতো জেদি আর রাগী কেনো? এতো তেজ আসে কোথা থেকে? এখন যে কি করে নিয়ে যাবো
সায়ান বিরবির করে বলে
” কিছু বলছি তোমায়
তুলি কানে হেডফোন দেয়
“এই তেরা মেয়েকে বলে কিছু হবে না।

সায়ান তুলির হেডফোন খুলে দেয়
” কিছু বলছি আমি
“হু আর ইউ?
তুলির এমন প্রশ্নে সায়ান হা হয়ে যায়। তুলির কপালে হাত দিয়ে দেখে
” আর ইউ ওকে

তুলি সায়ানের হাত ধরে বলে
“ধরলি কেন তুই আমারে? কে তুই? ধরাধরি করতে ভাল্লাগতেছে?
” তুলি
“ওই নাটক করবি না। ছ্যাছড়া কোথাকার
সায়ান হা হয়ে শুনছে

” তুলি আমি সায়ান?

“তো কি আমি নাচবো

” আমি তোমাকে নিতে এসেছি

“নিয়ে পাচার করে দেবেন না কি? মতলব খারাপ

” তুলি আমি তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো

“আপনাকেই চিনি না আপনার বাড়ি যাবো কেনো

” আই এম সরি। আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলবো না
সিরিয়াল হয়ে বলে সায়ান।

“কিহহহ তুই আমার গায়ে হাত দিছিলি? তোর কতো বড় সাহস।

” এভাবে কাজ হবে না

সায়ান তুলিকে কোলে তুলে নেয়।

“না মা আমাকে
তুলি সায়ানের গায়ে চর থাপ্পড় দিচ্ছে কিন্তু সায়ান নামাচ্ছে না। তুলিকে কোলে করে বাইরে আসে
” আন্টি ওর লাগেজটা পাঠিয়ে দেবেন

বলেই সায়ান চলে যায়। তুলকে কোলে করেই বাড়িতে ঢুকে আর রুমে নিয়ে যায়। তুলি তো চিল্লিয়েই যাচ্ছে।

ধপাস করে খাটে ফেলে দেয় সায়ান
“ও মা গো আমার কোমরটা ভেঙে গেলো গো আল্লাহ গো মরে গেলাম। কেউ একটু হেলেপ করো এই লোকটা শিশু নির্যাতন করছে

সায়ান দুকানে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে
” একটু থামো প্লিজ
তুলি থেমে যায়।
“দেখো কি করেছো রাহ্মসী একটা
তুলিকে হাত বুক দেখিয়ে

” তো আপনি আমাকে কিডন্যাপ করলেন কেনো? থাকবো না এখানে?
তুলি বিছানা থেকে নামতে যায়।
সায়ান তুলিকে বিছানার সাথে চেপে ধরে

“এক পা নরলে পা ভেঙে রেখে দেবো বলে দিলাম।

সায়ান ওয়াশরুমে চলে যায়।
” পা ভেঙে দেবে। হনুমান একটা। জন্মের মতো মনার নাম ভুলিয়ে দেবো তোকে। ওয়েট এন্ড সী😎

তুলি ওয়াশরুমের দরজার কাছে তেল ফেলে
“আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলে এবার মজা বুঝো।
আমি বরং একবার ট্রাই করি জামাই কেমনে পরবে
তুলি ট্রাই করতে গিয়ে ধপাস হয়ে পড়ে যায়। কিছু পরার শব্দে সায়ান দরজা খুলে দেখে তুলি পরে গেছে হাতে তেলের বোতল। সায়ানের আর বুঝতে বাকি নেই তুলি ওকে ফেলে দেওয়ার জন্য এমন করে।
সায়ান হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। তুলি কাঁদছে। কোমরে প্রচুর ব্যাথা পেয়েছে

” এ্যাঁ আমি আর কখনো মা হতে পারবো না

“কেনো?

” তোরে কমু কেন? তুই যা ওই খালাম্মার কাছে

তুলি একা একা উঠার চেষ্টা করছে পারছে না। সায়ান ধরতে যায়
“মেয়ে দেখলেই গায়ে হাত দিতে মন চায় তাই না

সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” নাহহ আরও অনেক কিছু করতে মন চায়

“চাইবোই তো তুই তো একটা লুচ্চা

” বড় তোমার থেকে আমি সম্মান দিয়ে কথা বলো

“কচু সম্মান দেবো তোরে আমি। হনুমান একটা

তুলি একা একা উঠে দাঁড়ায়। বেডে গিয়ে বসে

” আসলেই আমি গাঁধা। কি দরকার ছিলো ট্রাই করার। আমি পচা তুলি। জামাই তো পড়লোই না😭
বিরবির করে বলছে আর কাঁদছে

সায়ান ফোন দেখতে দেখতে বলে
“মরা কান্না জুরার কিছু নেই। এখানে কেউ মরে নাই
” হ মরলেই তো খুশি হইতেন😭

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-০৮

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ৮
#Tanisha Sultana (Writer)

তুলি সায়ানকে পানি এগিয়ে দেয়
“বেবি পানিটা খাও
” ততততুমমি
“জান তোতলাও কেনো? আমি তো এখনো কিছুই করলাম না
” কি করবা? সায়ান ভয়ার্তক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে। তুলি সায়ানের পেটের দিক থেকে হাত আস্তে আস্তে উপরে উঠাতে থাকে। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে
“তুমি জানো না আমি কি করবো?
সায়ান জীভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। দরদর করে ঘামছে।
” প্লিজ হাত সরাও
“কেনো?
” সুরসুরি লাগে
“তাই না কি গো
মনা এতোখন এখানে ছিলো না। মনা তুলিকে পেছন থেকে দেখে চিনতে পারে নি
” হু আর ইউ? সায়ানের সাথে কি করছো?
তুলি পেছনে তাকায়। তুলিকে দেখে টাসকি খায়
তুলি মিষ্টি করে হেসে বলে
খালাম্মা আমি আপনার বফের বউ সুইট তুলি😎
“এখানে কি করছো তুমি? 😡
” জামাই রে নিতে আসছি। একা একা কি আর ভালো লাগে বলেন? আমি আবার জামাইরে ছাড়া বেশিখন থাকতে পারি না। জামাইও পারে না। এখানে বোধ হয় কেউ জোর করে আটকে রাখছে। তাই না জান
কি মেয়েরে বাবা। কিসব কথা বলছে। চারপাশে এতো লোকজন। এর কি কোনো লজ্জা বোধ নেই। পাগল করে দেবে আমাকে।
সায়ান বিরবির করে বলছে।
“সায়ান এসব কি? মনা রেগে বলে
” কিসব খালাম্মা? তুলি ভ্রু কুচকে বলে।
“আমি সায়ানের সাথে কথা বলছি।
” সায়ান এখন আমাকে দেখাই ব্যস্ত সো আমার সাথে কথা বলতে হবে
“ইডিয়েট
” এই ওয়ার্ড টা নিশ্চয় আমার ক্রাশ জামাইয়ের কাছ থেকে শিখেছেন?
“কি জামাই জামাই করো
” আমার জামাই আছে তাই জামাই জামাই করি তাতে তোমার কি?
“সায়ান এই মেয়েটাকে আমার জাস্ট সয্য হয় না
” জামাই এই খালাম্মা টাকে আমার জাস্ট সয্য হয় না
“বেয়াদব
” সেম টু ইউ
“ডিজগাস্টিং
মনা রেগেমেগে চলে যায়। তুলি সায়ানের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়।

🌺🌺
” কেমন লাগছে আমাকে?
সায়ান দেয়ালের দিকে ফিরে বলে
“ভভালো
তুলি সায়ানকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে
” ভালো করে দেখে বলেন
সায়ান একটু তাকিয়ে বলে
“নাইস
তুলি সায়ানকে বিছানায় বসিয়ে দেয় তারপর সায়ানের কোলে বসে পরে
” নাইস সুইট কিউট এগুলো সবাই বলে। আমি অন্য কিছু বলবেন
“কককি বলবো
” যার জন্য আপনি তোতলাচ্ছেন তাই বলবেন।
“…..
” বলেন
সায়ান ঢোক গিলে
“না বললে কিন্তু
তুলি সায়ানের দিকে মুখটা এগিয়ে নেয়
” হহহহহহহহহটটটটটটটটট
“সো সুইট। এবার না তুতলিয়ে বলুন
” পানি খাবো
“কিহহহহহ😡
” পানি খামু
তুলি ঠুস করে কোল থেকে নেমে ঠাস করে পানি নিয়ে আসে।
“খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন
সায়ান এক ঢোকে পুরো পানিটা শেষ করে। তুলি বোতলটা রেখে আবার কোলে এসে বসে
” এবার বলুন
“কি বলবো?
” ভুলে গেলেন😱
“হুমমম
” কোনো বেপার না আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমাকে কেমন লাগছে
“বললাম
” না তুতলিয়ে আবার
“হট
” 😱😱😱
“🥺🥺🥺
” এমন করে তাকিও না হার্ট অ্যাটাক করবো
“করো
” আপনি কিন্তু বিধবা হবেন
“বেঁচে যাবো
” হুমম খালাম্মাকে বিয়ে করতে পারবেন
“হুমমমম
” এরকম স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন
“আমার স্বপ্ন তো পূরণ হবেই
” এতো কনফিডেন্স
“ভালোবাসি তো
“মনা আপনাকে ভালোবাসে না
” আমি তো বাসি
“আমিও বাসি। আমার ক্রাশরে প্রচুর ভালোবাসি
তুলি ঠাস করে একটা পাপ্পি দেয়
” কথায় কথায় গালি চুমা দেও কেন
“তুলার মতো নরম গাল থাকলে তো চুমু দিমুই
” ইডিয়েট
“লাভ ইউ
” হেট
তুলি সায়ানের ঠোঁটে আঙুল রাখে
“লাভ ইউ টু হবে
” হেট ইউ হবে
সায়ান তুলিকে কোল থেকে নামিয়ে বেরিয়ে যায়।

সকালে তুলি ঘুম থেকে উঠে দেখে সায়ান রুমে নেই। তুলি ফ্রেশ হয়ে হোটেলের বাইরে যায়। দেখে মনা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে
” হেলো খালাম্মা
“পরে কথা বলছি
মনা ফোন কেটে দেয়।
” তুমি এখানে
“তো কোথায় যাবো?
” তুলি বড় বোনের মতো একটা এডভাইস দেই। আমাদের লাইফ থেকে সরে যাও
“ছোট বোনের মতো আমি একটা রিকোয়েস্ট করছি। আমাদের লাইফ থেকে চলে যাও
” মনা কখনো নিজের অধিকার ছাড়ে না। তাছাড়া সায়ান আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে
“রিয়েলি
” সন্দেহ আছে
“টেস্ট হয়ে যাও
” ওকে
তুলি দুটো ছুরি আনে। একটা মনার হাতে দেয়। আর একটা তুলির হাতে
“ওই যে সায়ান আসছে। তুমিও ছুড়ি দিয়ে নিজেকে আঘাত করবে আমি করবো দেখি সায়ান কার কাছে আগে ছুটে আসে।
” আমার কাছেই আসবে
“দেখা যাক
” ওকে

দুজনেই চিৎকার দেয়। সায়ান দৌড়ে তুলির কাছে যায়। তুলির হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে।
“পাগল তুমি? এভাবে হাত কাটলে কেনো?
তুলি বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। মনা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। আসলে মনা হাত কাটেই নি আর তুলি সত্যি সত্যি হাতে ছুড়ি বসিয়ে দিয়েছে। তুলি মনার কানে ফিসফিস করে বলে

” সায়ান আমার কাছে ছুটে এসেছে। আমি কখনো অভিনয় করি না। সত্যি ভালোবাসি সায়ানকে। যেমন সত্যি হাত কাটলাম। আর তুমি অভিনয় করো। ভালোবাসো না তার প্রুফ এখন দিলা। জয় কিন্তু ভালোবাসার ই হয়।

“কি বলছো ওর কানে কানে? তোমার হাত কেটে গেছে বুঝছো?
সায়ান বলে।
তুলি সায়ানের গালে হাত দিয়ে বলে
” হাত কেটে ছিলো কিন্তু ডুমি ছোঁয়াতে সেরে গেছে
“পাগল তুমি
” আপনারই বউ
“মনা মুখটা কালো করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
সায়ানের কথায় মনা একটু হকচকিয়ে যায়। মিথ্যে একটু হাসি দিয়ে বলে
” সায়ান তোমার সাথে কথা আছে
“তুলি রুমে চলে যাও। মনা চলো

সায়ান মনার হাত ধরে হাটা ধরে। মনা পেছনে তাকিয়ে তুলিকে চোখ মারে
” সায়ান আপনি খুব খারাপ। খুব খারাপ আপনি
তুলি কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায়।

কিছুখন পরে সায়ান আসে।
“তুমি এভাবে ফ্লোরে বসে আছো কেনো?
তুলি উঠে চোখের পানি মুছে সায়ানের সামনে দাঁড়ায়।
” তাহলে কি করবো? স্বামী অন্য মেয়ের সাথে ফুর্তি করতে গেছে সেই আনন্দে নাচবো? কয়ডা লাগে আপনার? এতো বাজে কেনো আপনি?
“আমি তোমাকে ইচ্ছে করে বিয়ে করি নি
” পেয়েছেন এই এক কথা। এই কথাটা বাদ রাখুন। আপনার মনা একটা ফর্ট খারাপ বেহায়য়া প্লেগার্ল একটা মেয়ে। কতো ছেলের সাথে রিলেশন আছে এটা ও নিজেও জানে না। তোমার টাকাপয়সার জন্য তোমার সাথে আছে
তুলির কথা শেষ হওয়ার আগেই সায়ান ঠাস করে তুলির গালে একটা চর মেরে দেয়। তুলি ছিটকে পরে যায়
“মনাকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা না
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।

তুলির নাক দিয়ে রক্ত পরছে। রাগে হাত পা কাঁপছে তুলির। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। তবুও কষ্ট মষ্ট করে উঠে দাঁড়ায়।
” ভেরি গুড সায়ান মাহবুব ভেরি গুড।
“তুলি আমি
তুলি ঝাড়ি মেরে বলে
” একদম সিমপেথি দেখাতে আসবেন না। একটু ভালোবাসি বলেই তো এতো অবহেলা তাই না। ঠিক আছে মুক্ত করে দিলাম
রুমে থেকে বেরিয়ে যায় তুলি। সায়ান দেয়ালে ঘুসি মারে
” এটা কি করলাম আমি? এখন না জানি তুলি কি করে বসে

তুলি জিসানের রুমে নক করে জিসান দরজা খুলে দেয়।
“তুলি কি হয়েছে তোর?
তুলি কাঁদতে কাঁদতে রুমে ঢুকে।
” আমি বাড়ি যাবে
“হুমম যাবি কিন্তু তোর এই অবস্থা কেনো?
জিসান তুলিকে বসায়। পানি দেয়। তুলি খায় না। হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে। নাক থেকে রক্ত পরছে।
“বল আমায় কি হইছে
” সায়ান আমাকে মারছে
“কিহহহহহ
তুলি খুলে বললো।
” খুব খারাপ করছে সায়ান।
“আমি বাড়ি যাবো
” ব্যবস্থা করছি

সায়ান পুরো হোটেল তন্নতন্ন করে খুঁজছে। কোথাও তুলিকে পাচ্ছে না। পাগল পাগল অবস্থা সায়ানের। কোথায় খুঁজবো তোমায়? এতোটুকু সময়ের মতো কোথায় গেলো? জিসানও রুমে নেই। এই মেয়েটা সত্যি আমাকে পাগল করে দেবে।
সায়ানের ফোনে ফোন আসে
“হেলো
” আমরা বাংলাদেশ ফিরে যাচ্ছি।
“জিসান
জিসান ফোন কেটে দেয়। সায়ান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
” আমি খুব খারাপ করছি তুলির সাথে। এটা করা একদম ঠিক হয় নাই। বাংলাদেশ গিয়ে হ্মমা চেয়ে নেবো।
পুরো রাস্তা তুলি কান্না করছে। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে। জিসান এক হাতে তুলিকে জড়িয়ে ধরেছে।
তুলি তুলিদের বাড়িতে যায়। নক করে তুলির মা দরজা খুলে দেয়
“তুলি তোর এই অবস্থা কেনো? কি হয়েছে
জিসান তুলিকে ধরে রেখেছে।
” আন্টি হেল্প করো
মা আর জিসান মিলে তুলিকে রুমে নিয়ে আসে।

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-০৭

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান তুলির নাক পর্যন্ত গিয়ে থেমে যায়। ছিটকে দুরে সরে যায়। তুলি হো হো করে হেসে ওঠে
“তুমি হাসছো কেনো?🤔
তুলি টান দিয়ে সায়ানকে কাছে এনে কানে ফিসফিস করে বলে
” এতো ভয় পেলে চলে বস
“ভয় কেনো পাবো
” তাহলে থামলেন কেনো?
সায়ান এবার উওর দিতে পারছে না। কেনো এগিয়ে গেলো আর কেনোই বা থামলো তা সায়ান নিজেও জানে না তুলিকে কি বলবে
“আপনার ঠোঁটটা যেমন লাল টুকটুকে আমি ভাবছিলাম খুব মিষ্টি হবে হয়ত
” হয়ত কেনো?🙄
“মিষ্টি না তো পানছে। ইয়াক
তুলি নাক মুখ কুচকে বলে। সায়ানের খুব রাগ হয় আমার ঠোঁটকে পানছে বললো অথচ সেদিন জোর করে কিছ করতে গেছিলো।
তুলি সায়ানের ঠোঁটে আঙুল রাখে
“আপনার গালে এতো দাঁড়ি কেনো গো। আমি কিছ করতে গেলে সুরসুরি লাগে। একেতে পানছে ঠোঁট তারপর দাঁড়ি। কিছ করার ইন্টারেস্ট টাই চলে যায়।
” তোমার ঠোঁট ও পানছে
“আপনি বুঝলেন কি করে? আমি ঘুমিয়ে গেলে কখনো টেস্ট করেছেন না কি
তুলি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে। সায়ান বোকা বনে যায়।
” ইডিয়েট একটা।
“এই একটা ওয়ার্ড আর কতোদিন শুনবো
” যতদিন না মানুষ হবে

সায়ান তুলি দুজনই ভিজে কাক হয়ে গেছে। তুলির পরনে টিশার্ট আর স্কার্টটা ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে। দেয়ালে ভর দিয়ে তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান তুলির দিকে তাকাতে চাইছে না তবুও চোখ জোড়া তুলিতেই বারবার আটকে যাচ্ছে।
“ভালোবাসি আপনাকে
সায়ান তুলির কাছে যায়। তুলির মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দেয়। হাত দিয়ে তুলির ভেজা ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়
” আআপনি
সায়ান তুলির ঠোঁটে হাত দেয়। একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় সায়ান।

“আর কতোখন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো?
সায়ান ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে তুলিকে। তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়েই উওর দেয়
” যতখন আমি আছি তুমি আছো ততক্ষণ।
সায়ানের বিরক্ত লাগছে। সায়ান বেরিয়ে তুলির জন্য জামাকাপড় নিয়ে যায়।
“ধরো চেঞ্জ করে নাও
” তুমি করিয়ে দাও
“হোয়াট
” না দিলে এভাবেই এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো
তুলি ফ্লোরে বসে বলে। সায়ান পরেছে মহা মুশকিলে। মদ খেলে মানুষ মাতাল হয়। তুলি মাতাল হয়েছে ঠিক আছে কিন্তু তাল ঠিক আছে। মানুষ বলে না জাতে মাতাল তালে ঠিক।

‘”ওই জামাই ঠান্ডা লাগছে তো
সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে দেখে কাঁপছে ঠান্ডায়।
“ওওঠো
সায়ান তুলির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। তুলি উঠে সায়ান চোখ বন্ধ করে তুলিকে চেন্জ করাচ্ছে। তুলি সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।
” হয়ে গেছে।
“হুমমম
সায়ান চলে যেতে নেয় তুলি হাত ধরে
” কি
তুলি সায়ানের দুগালে হাত দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। সায়ান হয়ত এটারই অপেক্ষায় ছিলো। সায়ান তুলিকে ছাড়ানোর চেষ্টা না করে দু-হাতে আগলে নেয়।

রাত দশটা। মনা হনহনিয়ে সায়ানের রুমে যায়।
“আসবো
সায়ান সবে তুলিকে শুয়িয়ে দিয়ে সবে চেঞ্জ করে এসে বসেছে।
” আরে মনা ভেতরে এসো
মনা ভেতরে আসে
“এতোখন রুমে কি করছো?
” মানে কি?
“আমি এই মেয়ের সাথে তোমাকে একদম সয্য করতে পারছি না।
সায়ান মনার কাঁধে হাত দিয়ে বলে
” বুঝতে পারছি। দেশে ফিরি তারপর ডিভোর্স দিয়ে দেবো। দেন আমরা বিয়ে করে নেবো
মনা বিজয়ীর হাসি দিয়ে বলে
“লাভ ইউ সো মাচ
” লাভ ইউ টু
মনা সায়ানকে জড়িয়ে ধরে। সায়ান ধরতে গিয়েও থেমে যায়।
“চলো ডিনার করবো
” কিন্তু ও
“বাদ দাও তো ওর কথা
মনা সায়ানকে নিয়ে চলে যায়।

মাঝরাতে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সায়ান নেই
” গেলো কোথায়?
বেলকানির দিক থেকে সিগারেটের ধোঁয়া আসছে। তুলি বেলকনিতে চলে যায়।
“না ঘুমিয়ে আপনি সিগারেট খাচ্ছেন?
সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলে
” তুমি
“তো কি মনা থাকবে
“তুমি না মদ গিলেছিলে তাহলে এতো তারাতাড়ি
” আমি মদ খেয়েছি 🙄
“হুমম বমি করলে তারপর
” তারপর
সায়ান গলা ঝেড়ে স্বাভাবিক হয়ে বলে
“বলো
” আমি তো কোককোলা খেয়েছিলাম
“কিহহহহহ😱
” হুমমম
“তাহলে তোমার সব
” মনে আছে। আরে আমি তো ইচ্ছে করেই করেছি
“ইউ😡😡😡😡😡
” তোমার বউ😘😘😘
আজ কিন্তু আপনার ঠোঁটটা ভীষণ মিষ্টি ছিলো
“ইডিয়েট
” আপনারই তো বউ
“হুরররর😡

সায়ান মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তুলি সায়ানের সামনে গিয়ে বসে
” আমি আপনাকে ভালোবাসি প্রায় চার বছর যাবৎ। আমি দেখতে কিন্তু ভালোই সুন্দর। আমার পেছনে অনেক ছেলে ঘুরে। আপনি আমাকে পাত্তা দেন নি। ইভেন এখনো অবহেলা করেন। আমি কিন্তু কখনো ভাবি নি ইনফেক্ট এখনো ভাবি না যদি বাই চান্স আপনার থেকে আলাদা হয়ে যায়।
সায়ান মন দিয়ে শুনছে। তুলি একটু হেসে বলে
“ছেলেরা মনে হয় এমনি হয়।
” কেমন
“এই যে সারাক্ষণ মনা মনা বলেন অথচ
তুলি থেমে যায়।
“অথচ কিছু না। আমি কিচ্ছু করি নি। আমি মনাকেই ভালোবাসি।
তুলি নরেচরে বসে
” ভালো
“🥱🥱🥱
“গুড নাইট
” তুলি
“হুম
” সরি
“কেনো?
” আমার তোমাকে থামানো উচিত ছিলো
“হুমমম
” তুমি বলছিলো চার বছর বাট আমি তো তোমাকে বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকে চিনি
“আপনি চিনবেন কি করে? আপনি তো ভালোবাসতেন না
তুলি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে
” আই প্রমিজ আমি আপনার থেকে মনাকে আলাদা করে দেবো এন্ড আমার এক ডজন বাবুর বাবা বানাবো

সায়ান তুলির নাক টেনে দেয়
“এসব বাদ দিয়ে লেখাপড়ায় মন দাও

আজ একটু দেরি করে ঘুম ভাঙে সায়ানের। হয়ত অনেক রাতে ঘুমানোর জন্য। তুলি বেলকনিতে চলে যায়। মনা দরজায় নক করে। তুলি দরজা খুলে
” খালাম্মা তুমি এখানে
“সায়ানের কাছে এসেছি
মনা ভেতরে ঢুকতে যায়
” আমার বর ঘুমচ্ছে।
“একদম আমার বর আমার বর বলবে না
” তো কি খালাম্মার বর বলবো
“আমার সাথে লাগতে এসো না। ফল ভালো হবে না
তুলি একটু হেসে বলে
” সেটাই

মনা হনহনিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়।
“সায়ান বেবি ওঠো
সায়ান ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে
” গুড মর্নিং জান
তুলির মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠে।
“যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। একসাথে বেরবো
সায়ান ফ্রেশ হতে হয়ে বেরিয়ে যায়। তুলি নামক কেউ আছে সেটা ওর মাথায় নেই।

” আমাকে ইগনোর করলো। এই তুলিকে ইগনোর করা।

তুলি ছোট একটা ড্রেস উচু জুতো ভারি মেকাপ পরে বের হয়। নায়েকাদের মতো হেলেদুলে হাঁটছে। সবার নজর তুলির দিকে। দারুণ লাগছে তুলিকে।
জিসান একটা মেয়ের সাথে কথা বলছিলো তখন তুলির দিকে চোখ যায়
“এতো কিউট মেয়ে। কিন্তু কেমন চেনাচেনা লাগছে। কোথায় যেনো দেখছি একে?

” জিসান বেবি
তুলি কিউট করে বলে। জিসান ধপ করে পরে যায়। তুলি গিয়ে ধরে
“বেবি পরলে কি করে?
” আআআমমমি
“কিহ
” আপনি কে বোইন
তুলি জিসানের মাথায় গাট্টা মেরে বলে
“তুলি
” তুই
“😎😎😎😎
” আমার ব্রো আজ পাগল হয়ে যাবে
“কোথায় তিনি
জিসান তুলিকে নিয়ে যায়। সায়ান মনার সাথে কথা বলছিলো। আশেপাশে সবাই তুলির দিকে তাকিয়ে আছে।
” সায়ান জান
সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে হেচকি উঠে যায়।

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-০৬

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান মা বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হচ্ছে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে।
“মা তুলি জিসান কই? ওদের দেখছি না
” কি জানি
“তুলিকে বলে দিও আমি গেছি। বাচ্চা মেয়ে
” ঠিক আছে। তুই সাবধানে যাস
সায়ান গাড়িতে বসে অবাক
“তুমি এখানে?
” শুধু ও না আমিও
তুলি ব্যাক ছিটে বসে আছে আর জিসান পেছনের।
“তুমি কি ভেবেছিলে জামাই আমারে রাইখা সিঙ্গাপুর যাইবা তাও আবার ওই খালাম্মার সাথে আর আমি এটা হতে দেবো
” আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো তুমি তুলি।
“হুমমমম। এবার চলো হানিমুনটাও সেরে আসবো
জিসান কাশি দেয়। সায়ান হাত দিয়ে চুল টানে।
” তোমাদের তো পাসপোর্ট ভিসা নেই
সায়ান বিজয়ীর হাসি দিয়ে বলে। জিসান তুলি পাসপোর্ট ভিসা বের করে দেখায়। সায়ান বিরক্ত হয়ে গাড়ি চালানো শুধু করে।

মনাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। মনা লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির কাছে এসে
“হেলো বেবি এতো লেট করলে কেনো কখন থেকে ওয়ের করছি

মনা গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে আসতে গিয়ে তুলিকে দেখে
” সায়ান এ এখানে কেনো? (পেছনে তাকিয়ে) জিসানও। সায়ান তুমি একটা কাজে যাচ্ছো।
“আমিও সেটাই বলছি আমরা একটা কাজে যাচ্ছি সেখানে খালাম্মা কেনো যাবে
তুলির কথায় মনা দ্বিগুন রেগে যায়।
মনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ান বলে
” মনা গাড়িতে বসো এমনিতেই লেট হয়ে গেছে আরও দেরি হলে ফ্লাইট টা ধরতে পারবো না
“বসবো কোথায়?
” পেছনে জায়গা আছে তো
তুলি দাঁত কেলিয়ে হাসে মনা ফুসতে ফুসতে পেছনে জিসানের পাশে বসে।

“জানো মনা খালাম্মা থুক্কু আপু আমি তো আসতেই চাইছিলাম না সায়ান জোর করে নিয়ে এলো। কি বলতো আমাকে ছাড়া দুই মিনিট থাকতে পারে না। বাড়িতেও সব সময় আমার আচল ধরো ঘুরে। বললাম তো মনা খালাম্মা যাচ্ছে তো আমি না গেলাম কি বললো জানো বললো মনা যাচ্ছে তো কি হয়েছে তোমাকেও যেতে হবে। তুমি না গেলে হানিমুন করবো কার সাথে।
তুলির কথা শুনে সায়ানের কোমায় যাওয়ার উপক্রম। মনার তো গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। জিসান শিশ বাজিয়ে বলে
” তোর মতো এতো কিউট মেয়েকে ভালো না বেসে থাকা যায় বল। কতো কিউট তুই তাইতো ব্রো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
মনা তো ফুলে ফুলে লুচি হয়ে যাচ্ছে।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“তুলি
” ওহহহ জামাই এখন না এখানে ওরা আছে
তুলি লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে। সায়ান মনা জিসান অবাক
“এখন না মানে কি? মনা বলে
” জামাই রোমাঞ্চ করতে বলছে তাই বললাম এখন না
“কখন বললাম 😡(সায়ান)
তুলি সায়ানের গাল টেনে বলে
” আমার জানটা লজ্জা পেয়েছে।

“তুই একটা জিনিসই মাইরি
জিসান মনে মনে বলে।

অবশেষে সিঙ্গাপুর পৌঁছে যায়। এয়ারপোর্টা ঘুরে ঘুরে দেখছে তুলি। সবাই কেমন গোছানো। তুলি ফোনের স্কিনে একবার নিজের চেহারা দেখে। ঠিক পেতনি পেতনি লাগছে। মনা তো ছোট একটা ড্রেস মাঘায় সানগ্লাস ভাবসাব ই আলাদা। আর তুলি ফকিন্নির মতো এসেছে।

” কেনো যে এভাবে আসতে গেলাম। এবার সবাই আমাকে পাগল ভেবে ঢিল ছুড়বে। আর মনাকে দেখো হাটু বের করে আমার রাশরে ইমপ্রেস করতেছে। আমিও কম যায় না আমিও ছোট ড্রেস পরবো। তখন দেখবো জামাই কি করে আমার থেকে চোখ ফেরায়।

জিসান তুলির মুখের সামনে তুরি বাজায়

“কি ভাবছিস এতো
” ভাবছি মনা আপু থুক্কু খালাম্মার মতো ড্রেস পরবো
“কস কি?😱
” হুৃমমম কিনে দে না
“টাকা নাই তো
” ও জামাই। তুলি সায়ানকে ডাকে। সায়ান এগিয়ে আসে
“কি
” টাকা,দেন
“কেনো
” মনা খালাম্মার মতো ড্রেস কিনবো
“কেনো?
” হাটু বের না করলে তো আবার আপনি ইমপ্রেস হবেন না
“তুমি একটা পাগল
” জানি টাকা দেন
“ওই ড্রেস কিনতে হবে না
” আমি কিনবো
“যা ইচ্ছে করো
সায়ান টাকা দেন। জিসান তুলি শপিং মলে চলে যায়।

তিনটা রুম বুক করেছে জিসান। একটা জিসানের জন্য আর একটা মনার জন্য আর অন্যটা তুলি সায়ানের জন্য।
” সায়ান আমি একা একটা রুমে থাকতে পারবো না। মনা ন্যাকামী করে বলে
সায়ান কিছু বলবে তার আগেই তুলি বলে
“তাহলে তোমার সাথে থাকার জন্য একটা কাজের লোক খুঁজে দেই।
” আমি কাজের লোকের সাথে ঘুমাবো😡
“তাহলে কি আমার জামাইয়ের সাথে ঘুমাবে না কি যতসব
” সায়ান তুমি কিছু বলবে না
“ও কি বলবে
মনা সায়ানের হাত ধরে। তুলি টেনে সায়ানকে সরিয়ে নেয়। জিসান পুরো সিনটা ভিডিও করছে।
” তুলি এসব হচ্ছে কি? (সায়ান)
“কি হচ্ছে বুঝতে পারছেন না তাই না। আমি একটা জিনিস বুঝি না আপনি কোথাও গেলে বা পোষ্ট বা কমেন্ট করলে ‘মেয়েরা ছাবুন ছাবুন কইরা ধরে কেন’
” এই মেয়ে কি বলে (মনা)
“আপনার বুঝতে হবে না,খালাম্মা। জামাই চলো
তুলি সায়ানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।

” এভাবে টেনে আনলে কেনো?
“তো কি কোলে করে আনবো না কি যতসব
” 🥺
“এমনভাবে তাকাইয়ো না গো খুন হয়ে যাবো😘
” তুমি ওইভাবে ঠোঁট বাঁকা,কইরো না
“কেনো গো
” হার্ট অ্যাটাক করবো তো
“আমি আছি তো
” সেটাই তো টেনশনের
“আচ্ছা আপনাকে ইমপ্রেস করবো কিভাবে?
” পারবা না
“অবশ্যই পারবো যদি আপনি আমার দিকে ভালো করে দশ মিনিট তাকান
” ওতো সময় নাই
“মনার,জন্য সময়,আছে তো
” অবশ্যই সি ইজ মাই লাইফ লাইন
তুলি কিছু না বলে৷ বেলকনিতে চলে যায়।

“জোর করে সব করা যায় কিন্তু কারো মন জয় করা যায় না। আর যদি তার মনে অন্য কেউ থাকে তাহলে তো কোনোভাবেই তার মনে জায়গা করা পসিবল না। সম্ভব না জেনেও আমরা তার পেছনে পরে থাকি। তার একটু এটেনশন পাওয়ার জন্য আমরা কতোকিছু করি৷ কিন্তু সেই মানুষ টা দিন শেষে একটু খোঁজ ও নেয় না। কেমন আছি জানতেও চায় না। তবু্ও আমরা ভালোবেসে যায়। তাকে ভালো রাখতে চায়৷ হয়ত এটাই ভালোবাসা।

তুলির চোখে পানি চলে আসে। হাতের উল্টো পিঠে মুছে ফেলে
” সায়ানের মনে অন্য কেউ থাকতে পারে কিন্তু আমার মনে সায়ান ছাড়া কেউ নেই। সায়ান পারমানেন্টলি আমার হয়ে গেছে। কেউ আমার থেকে সায়ানকে আলাদা করতে পারবে না। ওই খালাম্মার কাহিনি তো আমি এখানেই শেষ করবো।
তুলি নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেয়।

“তুমি চেঞ্জ করবে না।
তুলি একপলক সায়ানের দিকে তাকায়।
” আপনি ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দেন।
“পাগল হইছো
” হুমমম আপনার প্রেমে
“তুমি কেনো বুঝো না
” আপনি কেনো বুঝেন না আমি আপনার বউকে
“আমি মনাকে খুব ভালোবাসি
” মদ খামু
“হোয়াট
তুলি রুমে ঢুকে মদের বোতল বের করে চুমুক দেয়। জিসানকে দিয়ে আনিয়েছিলো রাতে পার্টি করবে বলে।
” আরে করছো কি
তুলি ঢকঢক করে পুরো বোতল শেষ করে। সায়ান মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“ভালোবাসেন না তাই না? কেনো বাসেন না? আমি কি দেখতে খারাপ? বলুন।
তুলি সায়ানের দিকে এগোচ্ছে আর বলছে সায়ান পিচ্ছোচ্ছে।
” খুব ভালো লাগে তাই না আমাকে কষ্ট দিতে? আমাকে কাঁদাতে ভালো লাগে
সায়ান বিছানায় বসে পরে। তুলি সায়ানের ওপরে পরে যায়।
“তুলি তুমি
” আমি ঠিক আছি। ভালোবাসি আপনাকে
“আমাকে যেতে দাও আমি লেবুর শরবত নিয়ে আসি।
” মদের নেশা তো কেটে যাবে কিন্তু আপনার নেশা কাটাবো কি করে? বলুন না
“পরলাম আরেক ঝামেলায়
সায়ান বিরবির করে বলে। তুলি বমি করে দেয় সায়ানের ওপরে। সায়ান তুলিকে কোলে তুলি বাথরুমে চলে যায়। তুলি কল ছেড়ে দেয়
” এটা কি করলে😡
তুলি সায়ানের ঠোঁটে আঙুল দেয়
“কোনো কথা না।
” ঠান্ডা লেগে যাবে তো
তুলি শক্ত করে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে। সায়ানের কেনো জানি তুলিকে সরাতে ইচ্ছে করছে না। তুলি বুকে মাথা রাখাতে সায়ানের খুব শান্তি লাগছে। বুকের ভেতরো একটা শিতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত ভালো লাগছে। এই ভালো লাগার নামই বোধহয় ভালোবাসা।
“তুলি চেন্জ করতে হবে তো
তুলি বুক থেকে মাথা তুলে। সায়ান তুলির দিকে তাকায়। গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট দুটো কাঁপছে তুলির। হয়ত ঠান্ডায়। সায়ানের খুব ছুঁয়ে দিতে মন চাইছো। কিন্তু সাহস হচ্ছে না। অবশেষে সব ভাবনা বাদ দিয়ে তুলির ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট জোড়া এগিয়ে দেয় সায়ান।
(তারপরের টুকু কাল বলবোনি🥱🥱)

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-০৫

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana (Writer)

সবাই দরজা ধাক্কাচ্ছে তবুও তুলি দরজা খুলছে না। সায়ানের বাবা মাও চলে এসেছে। তুলির মা তো কান্না কাটি শুরু করে দিছে।
এভাবে হবে না দরজা ভাঙতে হবে
আদর ভাঙার চেষ্টা করছে কিন্তু ভাঙছে না

সায়ান একপাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে
“আমি কি একটু বেশি বকে ফেললাম? কিন্তু ও তো কিচ্ছু বুঝে না যে যা বলে তাই করে। এবার আমি কি করবো? দরজা ধাক্কাবো যদি আমার ওপর রেগে যায়। ধুর কি ভাবছি রেগে যাবে কি রেগেই তো আছে।

সায়ান তুই দাঁড়িয়ে আছোস কেন?
সায়ানের মা বলে। সায়ানও দরজা ধাক্কায়
” তুলি সরি প্লিজ দরজা খুলো। ভুল হয়ে গেছে আর বকবো না প্লিজ
মনা ফোন দেয়। সায়ান ওখান থেকে বেরিয়ে ফোন রিসিভ করে
” হুম বলো
“কোথায় তুমি? ওভাবে দৌড়ে কোথায় গেলে
” তোমায় পরে বলছি
“পরে মানে এখন বলবে আর আমার কাছে আসবে
” মনা প্লিজ
“সায়ান প্লিজ
” বোঝার চেষ্টা করো
“খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়। প্লিজ সায়ান। ভালোবাসি তো
” আসছি
সায়ান ফোন কেটে চুপিচুপি চলে যায়।

আদর আর বাবা মিলে দরজা ভেঙে ফেলে। ভেতরে গিয়ে দেখে তুলি হাত পা কেটে বসে আছে। হাত পা থেকে রক্ত ঝড়ছে
আদর মা বাবা দৌড়ে তুলির কাছে যায়।
জিসান নিশি শাশুড়ী শশুর ওরা দাঁড়িয়ে আছে।

“কি হয়েছে এমনটা কেনো করছো? তুলির বাবা তুলির দুগালে হাত রেখে বলে।
” রাগ কন্ট্রোল করলাম।
“মানে (আদর)
” আমি একটু একা থাকতে চাই
“কিন্তু তুলি
” বললাম না একা থাকতে চাই
মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই তুলি চেচিয়ে বলে। সবাই বেরিয়ে যায়। তুলি উঠে চোখের পানি মুছে
“আমি হারবো না। তাইবা তাজনিন তুলি কখনো হারতে শিখেনি। আর অন্যায়ের কাছে তো না ই। ওই মনা এভাবে জিততে পারবে না। সায়ান আমার ক্রাশ আর ও আমারই থাকবে। আর কারো না। আমার বাচ্চাদের বাবা সায়ানই হবে।

তুলি জামাকাপড় লাগেজে ঢুকিয়ে নিয়ে বের হয়।
” কোথায় যাচ্ছ? (বাবা)
তুলি না দাঁড়িয়েই বলে
“শশুর বাড়ি
বাবা মা পেছন থেকে তুলিকে ডাকে কিন্তু তুলি সারা দেয় না। হনহনিয়ে চলে যায়।

দুই বার কলিং বেল বাজানোর পরে জিসান দরজা খুলে দেয়
” তুই
“চোখে কম দেখোস না কি?
” না মানে
তুলি জিসানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। সায়ানের রুমে চলে যায়। সায়ান আরাম করে সুয়ে মনার সাথে কথা বলছিলো তুলিকে দেখে উঠে বসে
“তুলি তুমি
” তো কি খালাম্মা আসবে
তুলি সায়ানের কাছ থেকে ফোন নেয়
“হেলো আমি মিসেস সায়ান মাহমুদ বলছি
” তো আমি কি করবো? মনা রেগে বলে
“বিবাহিত পুরুষকে ফোন করেন কেন খালাম্মা
” মানে
“মানলাম আমার স্বামী একটু নিকনিক বেশি করে। মেয়ে দেখলেই ক্লোজ আপ হাসি দেই তাই বলে ওনার পেছনে পরে থাকবেন? ওনার তো একটা নিষ্পাপ বউ আছে বউয়ের তো আবার বুকের বা পাশ আছে তাই না
” তো
“বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যাথা করে তো

সায়ান তুলির কাছ থেকে ফোনটা নেয়। কেটে দেয়। তুলি অগ্নি দৃষ্টিতে সায়ানের দিকে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
” ফোনটা নিলেন কেনো?
“আমার ফোন আমি নিছি তোমার কি?
” আমি অসুস্থ তাও আপনি মনার সাথে দেখা করতে চলে গেলেন
“হ্যাঁ তো
সায়ান বিছানা থেকে নামতে যায় তুলি সায়ানের ওপরে উঠে পরে
” হচ্ছে টা কি?
সায়ানের কলার ধরে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে তুলি
“তুই জানোস না কি হচ্ছে
” হুটহাট এভাবে এটাক করো কেন
“তাহলে কি সারাক্ষণই এমন করবো না কি
” সরো তো
“ভালোবাসি আপনাকে
” আমি বাসি না
“কেনো?
” মনা
তুলি সায়ানের ঠোঁটে আঙুল দেয়
“এখানে সায়ান তুলি আছে। আর সায়ান তুলির মধ্যে কোনো মনা টনা থাকবে না। বুঝলি
সায়ান তো ঘামতে শুরু করেছে। কেমন মেয়েরে আল্লাহ
” কি হলো
“হুম
” কি হুম
“থাকবে না
” কে
“মনা
গুড
তুলি সায়ানের কপালে একটা চুমু দিয়ে সরে যায়। সায়ান উঠে বসে।
” আমি আপনাকে খুব বিরক্ত করি তাই না
“হুমম
” কিচ্ছু করার নাই সারাজীবন আপনাকে আমার এই বিরক্তি সয্য করতে হবে।
“সেটাই
” হুম সেটাই।
“হাত পায়ের এমন অবস্থা করছো কেন?
” আপনি আমায় বকলেন কেন?
“তাই বলে
” ইচ্ছে তো করছিলো মরে যেতে
“পাগল একটা
” আপনারই তো বউ
সায়ান তুলির হাত পায়ের রক্ত মুছে দেয়।

সায়ানের সিঙ্গাপুর যাওয়ার ডেটটা এগিয়ে এসেছে। দুইদিন পরেই যেতে হবে। সায়ান ফোনে মনাকে বলছিলো তুলি শুনে ফেলেছে। শাশুড়ীর রুমে যায়।
দেখে শশুর শাশুড়ী নিশির বিয়ের কথা আলোচনা করছে।
“মা বাবা
” আরে তুলি ভেতরে এসো
হাসিমুখে বলে শাশুড়ী। তুলি ভেতরে গিয়ে শশুরের পাশে বসে
“কি হয়েছে তুলি? শশুড় মশাই বলে
” তোমার ছেলে দুদিন পরে সিঙ্গাপুর যাচ্ছে
“হুম জানি তো
” আমাকে নেবে না বলছপে😭
“ও নিবে না ওর বাপ নিবে (মা)
” আমাকে কেনো টানছো🥺 (বাবা)
“তুমি থামো। তুলি তুমি কান্না করো না সায়ানের সাথে তুমি যাচ্ছ
” সত্যি 😁
“হুম সতি
” আমার সোনা মা😘

তুলি এক দৌড়ে চলে যায়। জিসানের কাছে যায় বলতে
“তোরা সিঙ্গাপুর যাচ্ছিস আমাকেও নিয়ে চল
” ইহহহহহ শক কতো। আমি কতো নাকানি চুবানি খেয়ে রাজী করিয়েছি
“প্লিজ দোস্ত আমার সোনা মনা টুনুমুনু দোস্ত
” ঠিক আছে দেখছি
“লাভ ইউ
” টু

প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই
তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চায়

তুলি জিসান গানটা গাইছে আর লাগেজ গোছাচ্ছে। সায়ান অফিস থেকে বাড়ি এসে দেখে এই অবস্থা
“পাগলটা আবার যাচ্ছে দেখি। গেলেই ভালো আমি শান্তিতে সিঙ্গাপুর যেতে পারবো। কোনো সমস্যা হবে না।

” কি হচ্ছে এখানে?
তুলি আর জিসান গান বন্ধ করে সায়ানের দিকে তাকায়।
“জিসান বাবু তুমি এবার যাও আমি জামাইয়ের সাথে রোমাঞ্চ করবো
সায়ান বড়সড় চোখ করে তুলির দিকে তাকায়।
” আমি দেখমু
“যা বলছি

জিসান চলে যায়। তুলি সায়ানের হাত থেকে অফিস ব্যাগ নেই।
” কাল যাচ্ছি
সায়ান বেডে বসতে বসতে বলে।
“ভালো
” আমি আর মনা যাচ্ছি
“গ্রেট
কি বেপার রাগলো না কেন? সায়ান মনে মনে
” তোমার যদি পাসপোর্ট ভিসা থাকতো তো তোমাকেও নিয়ে যেতাম
“মরছি মরছি 😱😱
আমার জামাই আমারে এতো ভালোবাসে আল্লাহ
” ইডিয়েট
“যাহ বাবা করলাম কি?
” কিছু না পাগল
“আপনারই বউ
সায়ান ফ্রেশ হতে চলে যায়।

সায়ান বেলকনিতে বসে সিগারেট খাচ্ছে। যদিও সায়ান সিগারেট খায় না তবে আজ কেনো জানি খেতে মন চাচ্ছে। সায়ান একটা দোটানায় পড়ে গেছে। সায়ানের ঠিক কি করা উচিৎ সায়ান বুঝতে পারছে না। একদিকে ভালোবাসা একদিকে বউ। তাও আবার ডেঞ্জারাস বউ৷ সায়ান এতো দিনে এটা বুঝে গেছে তুলি সায়ানকে ছাড়বে না। কিন্তু সায়ান তুলিকে ছেড়ে দিতে চায়। মনার সাথে সংসার করতে চায়। সায়ান ভেবে নিয়েছে আর সিঙ্গাপুর থেকে ফিরবে না। ওখানেই থাকবে মনার সাথে।

এসব ভাবছো আর সিগারেট খাচ্ছে সায়ান। তুলি বেলকনিতে এসে দেখে ফ্লোরে সিগারেটের বাঁকি আংশ অনেক গুলো পরে আছে। আর সায়ানের দু হাতে দুটো সিগারেট

” আপনি সিগারেট খাচ্ছেন কোন দুঃখে। একটা বউ আছে গার্লফ্রেন্ড আছে। চাকরি আছে বাবা মা আছে তাহলে সিগারেটের কি প্রয়োজন।
সায়ান এক পলক তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

“মানুষ কি শুধু দুঃখে সিগারেট খায়? সুখেও খায়। আমিতো সুখে খাচ্ছি।

তুলি সায়ানের পায়ের কাছে বসে
“যদি কখনো জানতে পারেন আপনাকে মনা ঠকাচ্ছে আপনার কষ্ট হবে
সায়ান হো হো করে হাসে
” এটা অবাস্তব কথা। মনা কখনো আমাকে ঠকাবে না
“এর ওপর কালো জাদু করেছে দেখছি। তুলি মনে মনে বলে
“অন্ধ বিশ্বাস ভালো না জামাই।
” হয়ত
“আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি
” অনেক বার শুনেছি
“হয়ত শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছেন কিন্তু আমি তো বিরক্ত হয় না

সায়ান পাল্টা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে।
” এই মেয়েটা মনে হয় মেজিক জানে। কেমন আমাকে প্রতিনিয়ত ওর কাছে টানছে। কিন্তু আমি কঠোর থাকবো। মনা আমার সব। ভালোবাসি মনাকে

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-০৪ | বাংলা রোমান্টিক ভালোবাসা গল্প

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana (Writer)

তুলি মন প্রাণ দিয়ে রান্না শিখতেছে। বেস্ট রান্না ও শিখবেই। শাশুড়ী বা নিশি কাউকেই রান্না ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
প্রায় দুইঘন্টা রান্না শেখার পরে তুলি রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে বলে

“রান্না করার তো বেপারই না। এটা তো আমার বা হাতের খেলা😎
শাশুড়ী টেস্ট করেন

শাশুড়ী ভয়ে ভয়ে বলে
” আমি কেনো? জিসান আছে তো

“নাহহহহ আপনিই খাবেন

শাশুড়ী ভয়ে ভয়ে খায়। নাহহ বেশ ভলো হয়েছে।

” আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি বাই গাইজ

ওদের বাই বলে তুলি রুমে ঢুকতে। তাও আবার সাধারণ ভাবে না গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে
বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়
……………
………….
তুমি ছুঁয়ে দিলে হায়
আমার কি যে হয়ে যায়❤️

সায়ান রুমে বসে কাজ করছিলো তুলির গান শুনে তুলির দিকে তাকায়।

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো গো জামাই। প্রেম প্রেম পাচ্ছে না কি😘

সায়ান কাজে মন দিয়ে বলে
” ইডিয়েট

“আপনারই তো বউ

” সেটাই তো কপাল

তুলি একটা ভেৎচি কেটে ফোন হাতে নেয়। দেখে সায়ান মনা আর সায়ানের একটা পিক কভার ফটো দিছে। তুলি ওখানে কমেন্ট করে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত🥱

সায়ানের কমেন্ট টা দেখে মাথা গরম হয়ে যায়।

“কি কমেন্ট করলে তুমি?

তুলি ফোনটা রেখে বলে

” সত্যি কথাই তো বললাম

“মনা আমার গার্লফ্রেন্ড

” খালাম্মা কি করে গার্লফ্রেন্ড হয়?

“আর একবার খালাম্মা বললে চাপকে গাল লাল করে দেবো

” সব সময় পিচ্চি টাকে বকতে আপনার ভালো লাগে

“তোমার আমার হার মাংস জ্বালিয়ে খেতে ভালো লাগে

” হুম ভীষণ ভালো লাগে

“যাও তো এখান থেকে কাজ করতে দাও

” মনা খালাম্মা যদি থাকতো তাহলে কি এই কথা বলতেন?

সায়ান গম্ভীর হয়ে বলে

“নাহহহ মাথায় করে রাখতাম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম আমার মায়াবীনির দিকে। চোখের তৃষ্ণা মেটাতাম। মনা আমার জীবন। আমি ওকে আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।

তুলি হাত তালি দিয়ে লাফিয়ে ওঠে। সায়ান ভয় পেয়ে যায়

” দারুণ ডাইলোক দেন আপনি। হিরোদের মতো। আমার হিরো। আপনাকে এতোগুলা লাভ ইউ।

“কারে কি কইলাম

” বউরে লাভ ইউ কইলেন

“মাথা খারাপ হয়ছে না কি আমার

” আমাকে দেখে হতেও পারেন

“ইডিয়েট

সায়ান বিরক্ত হয়ে কাজে মন দেয়
” যে বোঝে না তাকে বোঝানো যায় কিন্তু যে বুঝেও না বোঝার ভান করে তাকে বোঝানোর সামর্থ্য কারো নেই”

তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে গালে হাত দিয়ে। সায়ান এক মনে কাজ করে যাচ্ছে। তুলি ভাবছে সায়ানের সাথে প্রথম দিন দেখা হওয়ার কথা।

তুলি বাইক চালিয়ে কলেজে যাচ্ছিলো তখন দেখে রাস্তার পাশে কতোগুলো ছেলে সায়ানকে মারছে আর একটা মেয়ে মানে মনা দাঁড়িয়ে দেখছে। তুলি বীর মহিলার মতো গিয়ে ছেলেদের সাথে ফাইট করে ছেলেদের ভাগিয়ে দেয়। মনা তো দৌড়ে চলে যায়। সায়ানের হুশ ছিলো না তাই সায়ান তুলিকে দেখে নি।

“হেলো

সায়ান তুলির সামনে তুরি বাজিয়ে বলে। তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে

” হুম জামাই বলো

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? খেয়ে ফেলবে না কি?

” খেতেই তো মন চায় আমার হট হট গ্রীষ্মকালরাকে

“যাও এখান থেকে

তুলি লাফ দিয়ে গিয়ে সায়ানের কোলে বসে পরে।

” এটা কি হলো

“লাভ ইউ

” হেট ইউ। নামো তো

তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।

“এমন করেন কেনো আমার সাথে। (আদুরী সুরে)

” তাহলে কেমন করবো

“ভালোবাসবেন

” মনাকে ভালোবাসি তো

“ওই ভালোবাসা না

” তাহলে কোন ভালোবাসা

“শরম করে বুঝেন না কেন🙈🙈

” এসব বাদ দাও পড়ালেখায় মন দাও

তুলি সায়ানের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলে

“হুম

” কি হুম

তুলি ঠাস করে সায়ানের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে ফেলে সায়ান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

“এটা কি হলো😡

” তুমি কি করতে যাচ্ছিলে

“আপনি জানেন না আমি কি করতে যাচ্ছিলাম

” নাহহ জানি না

“কিছ,করতে যাচ্ছিলাম বুঝছেন

” তুলি তুমি এমন কেনো করো

“ভালোবাসি তাই করি

” সরো কাজ আছে আমার

“তুলি গলা জড়িয়ে আরো কাছে গিয়ে বলে

” সরবো না

“ভাল্লাগে না

” আমার ভাল্লাগে

“তুলি প্লিজ
তুলি সরে যায়

সায়ান উঠে ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। জিসান আসে

“কি রে কি করোস

” নাচতেছি

“চেতস কেন

” ভাল্লাগতেছে না

“একটা জিনিস দেখবি

” কিহহহহহ

জিসান ফোন বের করে তুলিকে ছবি দেখায়। তুলি যখন সায়ানের কোলে বসেছিলো তখন তুলছে জিসান। কিছ করার ছবিও তুলছে। পিক দেখে তুলি লাফিয়ে ওঠে

“এই না হলো আমার টুনুমুনু দোস্ত উম্মমমমনা😘😘😘😘

” এগুলো আপলোড দিয়ে দে

“ওকে বেবি

জিসান চলে যায়।

সায়ান মনার সাথে কথা বলছে
” কি করো
“বসে আছি। তুমি
” তোমার কথা ভাবছি
“লাভ ইউ সো মাচ মনা
” লাভ ইউ টু
“বিকেলে মিট করবো
” করতে পারি যদি তুমি আমায় কিছ করো
সায়ানের তুলির কথা মনে পরে যায়। একটু আগে কিছ করছিলো সেটাও মনে পরে।
“এতোদিনের রিলেশন আমাদের কিন্তু তুমি আমায় টাচ করো না৷ কেনো বলো তো
” বাদ দাও
“কেনো
” সামনের মাসে সিঙ্গাপুর যেতে হবে
“আমিও যাবো
” তুমি কেনো যাবে
“প্লিজ আমি যাবো। কখনো সিঙ্গাপুর যায় নি। প্লিজ নিয়ে যাবে
” পাগলি একটা
“হুম তোমার। নিয়ে যাবে
” ঠিক আছে

কথা বলা শেষ করে সায়ান রুমে এসে দেখে তুলি বেলকনির দরজার ওখানে দাঁড়িয়ে আছে
“তুমি এখানে
তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে
” থ্যাংকু জামাই
“কেনো
” আপনি এখনো খালাম্মা কে টাচ করেন নাই তাই

সায়ান তুলিকে ছাড়িয়ে রুমে ঢুকে
“আমি কিন্তু সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য আপনাকে জোর করবো না
সায়ান হাঁপ ছেড়ে বলে
” ধন্যবাদ
“তবে বাবা আই মিন শশুরমশাই জোর করবে
” ইউ😡
“তুলি আপনার ঝাকানাকা বউ
সায়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে
” জানু মনু বেবি বাবু টুনুমুনু আপনি ঠিক আছেন তো?
তুলিও সায়ানের পাশে বসে
“এগুলো কি বললে
” এগুলো ভালোবাসার প্রতিক। অতিরিক্ত ভালোবাসলে এসব বলতে হয়।
“কে শেখায় এসব
” আপনি শিখবেন না কি? সমস্যা নাই আমি শেখাবো। আমি তো এক্সপার্ট
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি
” জানটা😘
“হপ🥺
😘😘😘😘

তুলি চলে যায়।

” আমি পাগল হয়ে বের না হওয়া পর্যন্ত এই মেয়ে আমাকে ছাড়বে না। কি সাংঘাতিক

আজ তুলিকে তুলির বাবা এসে নিয়ে গেছে। কয়দিন বাবার বাড়িতে থাকবে। সায়ানের খুশি দেখে কে। সায়ান তো খুশিতে লাফাতে লাফাতে মনার সাথে মিট করতে চলে যায়।

সায়ান মনার জন্য কফিশপে অপেক্ষা করছে আর ফেসবুক দেখছে। হঠাৎ নিউজফিল্ডে দেখে সায়ান তুলির রোমান্টিক ছিন।

“ও মাই গড এই মেয়ে তো মানসম্মান ডুবিয়ে ফেলবে। আজ একে ইচ্ছে মতো ঝাড়বো যাতে ফাজলামির ভুত মাথা থেকে বেরিয়ে যায়।

সায়ান কফিশপ থেকে বেরিয়ে উল্টাপাল্টা দৌড় দেই। মনা যে পেছন থেকে ডাকছে সেদিকে খেয়াল নেই।

সায়ান দৌড়াতে দৌড়াতে তুলিদের বাড়িতে যায়। বাড়িটা কাছে হওয়ায় দৌড়েই যায়।

তুলি ওর মায়ের সাথে রান্না করছিলো

” তুলি

তুলি পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান
তুলি হাসিমুখে এগিয়ে যায়

“আরো জামাই আপনি আসেন আসেন। আমাকে এতো মিছ করেন। এিশ মিনিট ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারেন না। এতো ভালোবাসেন কেনো গো আমায়? আমিও না আপনাকে মিছ করছিলাম ভীষণ। কিন্তু লজ্জায় বলতে পারি নি। কিন্তু এখন আপনি চলে এলেন।

তুলি মা আর সায়ান দুজনই লজ্জা পায়। সায়ান তুলির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়।

” কি হলো এখানে আনলেন কেন?

সায়ান তুলির হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলে

“কমনসেন্স নাই তোমার? অবুঝ তুমি? কেনো পেছনে পরে আছো? কি পিক আপলোড দিছো? মানসম্মানের ভয় নেই তোমার? এতো খারাপ কেনো তুমি? সব সময় কি ফাজলামি ভালো লাগে না কি? ইডিয়েট একটা। জাস্ট সয্য হয় না তোমাকে আমার। মুক্তি দাও প্লিজ

সায়ানের কথা গুলো তীরের মতো বিধে তুলির শরীরে। তুলি দৌড়ে একটা ফাঁকা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

চলবে ❤️

আমার ক্রাশ পর্ব-০৩

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ৩
#Tanisha Sultana (Writer)

অবশেষে সায়ান তুলির বিয়েটা হয়েই গেলো। কবুল বলেই তুলি উরাধুরা নাচা শুরু করে দিছে। ক্রাশ বর হইছে ভাবা যায়। বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হইছে। বিয়ে শেষে তুলি জিসান আর নিশি তুলি সায়ানের বাসব সাজাচ্ছে। তুলিই একমাত্র মেয়ে যে নিজের বাসর নিজেই সাজাচ্ছে।

“দোস্ত তোর নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে (জিসান)

” আমি আবার কি মহান কাজ করলাম🤔

“নিজের বাসর নিজেই সাজাচ্ছিস🤣

” ভাই ঠিক বলসো (নিশি)

“আমার নাম কোথায় লেখা থাকবে জানি না। তবে তোর ভাই যে আমার সাথে কি করবে ভাবছি

” কি আর করবে বাসর করবে

“তাই যেনো হয়। আল্লাহ হেলেপ করো তোমার নিষ্পাপ বান্দারে
(বিয়েটা কি করে হলো আস্তে আস্তে বলবো)

একহাত ঘোমটা টেনে বসে আছে তুলি।
“সায়ান এসে কি করবে? আমার ঘোমটা সবারে। আমি ওকে সালাম করতে যাবো ও বলবে তোমার স্থান আমার পায়ে না বুকে। তারপর?

এসব ভাবছে আর নিজে নিজেই হাসছে।
” একটা গান খুব মনে পরছে।

বুক চিনচিন করছে হায়,
মন তোমায় কাছে চায়

তুলি সুর তুলে গানটা গাইছে তখন ঠাস করে দরজা খুলে সায়ান ঢুকে। পাগড়ি ছুড়ে ফেলে। পানজাবির বুতাম খুলে ঠুসঠাস করে পানজাবি খুলে।
তুলি সায়ানের সামনে গিয়ে বলে

” এতো তারাহুরো করে খুলছেন কোনো? আমি তো বর বেশে আপনাকে দেখতেই পারলাম না। যদিও আমি জানি আপনাকে দারুণ লাগছে তারপর একটা পিক তুলতাম। আপলোড দিতাম আসলে সবার কাছে আপনার কথা এতো বলেছি যে সবাই আপনাকে দেখার জন্য এক্সাইটেড।

সায়ান তুলির গলা চেপে ধরে

“কেনো করলে তুমি? কি চাও তুমি? তুমি কি ভেবেছো এসব করে আমার থেকে মনাকে দুরে করে দেবে? পারবে না। কজ আমি মনাকে আর মনা আমাকে আমরা দুজন দুজনকে ভীষণ ভালোবাসি। কেনো তুমি থার্ডপারসন হচ্ছো আমাদের মধ্যে

তুলি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।

” আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমার আপনাকে চায়।

“আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর কখনো বাসবোও না

ভালোবাসো আর নাই বা বাসো
শুধু তোমায় ভালো বাসতে দিও

তুলি সুর টেনে গানটা গায়। সায়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে

” ওহহহ গড
কি করে মুক্তি পাবো তোমার থেকে?

তুলি সায়ানের পাশে বসে

“আপনি মুক্তি পাওয়ার কথা ভাবছেন আর আমি বেবির কথা ভাবছি

” কিহহহহ

“হুম। ভাবছি এগারো না বারোটা বেবি নেবো। পুরো একটা ব্রাজিলের টিম বানাবো। তারপর ২০২২ সালের বিশ্ব কাপটা আমরাই জিতে নেবো

“ককককককককি

” আপনি যদি আরও বেশি নিতে চান তবে আমার পবলেম নেই

“এই তুমি মানুষ

” নাহহ আপনার বউ

সায়ান দাঁড়িয়ে বলে

“বের হও

” কেনো?

“তোমার সাথে বেড শেয়ার করা সম্ভব না

” এক সাথে না ঘুমালপ বেবি হবে কি করে?

সায়ান তুলির হাত ধরে রুমের বাইরে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়

“যাহ বাবা আমাকে অপমান করলো। রুম থেকে বের করে দিলো। আমিও ছাড়বো না। দেখে নেবো। বিয়ে করা বউ আমি #আমার ক্রাশের। আমাকে ইগনোর করবা দেখাচ্ছি।

” এ্যা এ্যা😭😭😭😭😭😭😭

তুলি জোরে কাঁদতে থাকে।

“এই মেয়ে এভাবে কাঁদলে তো আবার বাবা বকবে। এমনিতেই কোলে নেওয়ার জন্য একে বিয়ে করতে হয়েছে। এবার রুম থেকে বের করার জন্য না জানি কি হবে। তার থেকে রুমে নিয়ে আসি।

সায়ান এসব ভেবে দরজা খুলে

” সমস্যা কি তোমার😡

“আপনি শিশু নির্যাতন কেনো করছেন😭

” ওই চুপ

সায়ান তুলির মুখে হাত দেয়।

“রুমে চলো

সায়ান চলে যায়। তুলি এক লাফে উঠে নাচতে নাচতে রুমে ঢুকে।

” থ্যাংকু জামাই 😘

“ওভারে ঠোঁট বাঁকালে কেনো😡

” এভাবে ঠোঁট বেঁকিয়ে কিছ করলাম। উড়ল্ত কিছ😘

“কে শেখাই এসব তোমায়

” মোবাইল শেখাই। সিনেমা দেখে শিখি। আপনি শিখবেন?

“সাট আপ

” সাট আপ বানান পারেন তো

“কিহহহ

” খালি গায়ে আপনাকে যা লাগছে না পুরাই হট হট গ্রীষ্ম কাল🤣

“আল্লাহ কে এটা

” আপনার একমাত্র সুইট কিউট মিষ্টি বউ তুলি।

“এর সাথে আর একটু থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো

সায়ান বেলকনির দরজা লক করে বেলকনিতে বসে থাকে। দরজা লক না করলে আবার তুলি চলে আসবে।
মনা কল দেয়

” কি করে আমার জানটা
“সায়ান চৌধুরীর সাথে কথা বলি। তুমি?
” হবু মিসেস এর সাথে কথা বলি। ওই মেয়েটার কি করবো সবই তো বললাম তোমায়
“তোমার কিঢ়ু করতে হবে না। ওই মেয়ের ব্যবস্থা তো আমি করবো
” কি করবে
“ওয়েট এন্ড সি
” ওকে
“এখন তুমি পাগলটাকে নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসো
” কিন্তু
“বলবা তোমার অফিস এখান থেকে কাছে হয় সেই জন্য এই বাড়িটা ভাড়া নিয়েছো
” ঠিক আছে। তবে তুলি কিন্তু ভীষণ ডেঞ্জারাস
“শুধু কি ডেঞ্জারাস সয়তান একটা😡
” বাদ দাও ওর কথা। এখন বলো খেয়েছো
“নাহহ। তুমি
” নাহহহ
“যাও এখুনি খেয়ে আসো। এতো রাত হয়েছে আর তুমি এখনও খাও নি। ইটস নট ফেয়ার সায়ান
” ওকে খাবো। তুমি
“আমিও খেয়ে আসি
” ওকে লাভ ইউ
“লাভ ইউ টু
” 😘😘😘
“😘😘

সায়ান বেলকনিতেই ঘুমিয়ে ছিলো। আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে। রুম থেকে ল্যাপটপ এনে বেলকনিতেই কাজ করতে থাকে।

নয়টা পর্যন্ত কাজ করে রুমে যায়। তুলি বাথরুমে গোছল করতেছিলো।দরজা লক করতে ভুলে গেছে। সায়ান কোনো কিছু না ভেবেই বাথরুমে ঢুকে পরে। তুলির দিকে তাকিয়ে সায়ান চোখ বড়বড় করে ফেলে। এখান থেকে বের হওয়ার কথা মনে নেই। তুলি তো শান্তিতে গোছল করছে। কোনোদিকে খেয়াল নেই।

তুলির এবার সায়ানের দিকে নজর যায়। সায়ান চিল্লানি দিতে যায় তুলি মুখ চেপে ধরে

” একদম চেঁচাবেন না।

সায়ান ঘামছে। তুলি সায়ানের খুব কাছে দাঁড়ানো। তুলি সরে দাঁড়ায় সায়ান এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। বাইরে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নেয়

“আল্লাহ এই মেয়ে কি?

সায়ান জিসানের রুমে চলে যায়। ওখানে গিয়ে গোছল করে। রুমে এসে দেখে তুলি বাকি সব পরে শাড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ করে

” ও জামাই
সায়ান একবার আড়চোখে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়

“ওই সায়ান ডাকছি তোরে শুনোস না

” নাহহ শুনি না। আমার কান বন্ধ

“আমি খুলে দিবো

তুলি সায়ানের দিকে সয়তানির একটা হাসি দিয়ে বলে।
” আমার কাজ আছে

“আমারও

” ফাজলামি ভালো লাগে না
“আমারও
” ইডিয়েট
সায়ান ফাইল টাইল নিয়ে বেরিয়ে যায়৷ তুলি একটা ওড়না জড়িয়ে লেহেঙ্গারের মতো পরে সায়ানের পিছে দৌড় দেয়।

কিন্তু সায়ানকে ধরতে পারে না। তুলি গাল ফুলিয়ে রুমে চলে যায়। ইউটিউব দেখে শাড়ি পরা শেখে। তারপর ফোন নিয়ে বসে। দেখে সায়ানের ফ্রেন্ড লিস্টে ৫১২ জন ফ্রেন্ড তার মধ্যে ৫০০ জনই মেয়ে

“আমার লুচ্চা ক্রাশের ভাব দেখে মরে যায়। মেয়ে দেখলেই নিকনিক শুরু হয়ে যায়। দেখাচ্ছি বাড়ি আসো তুমি। খুব বম্ভচারি হয়ে ঘুড়ে বেড়াও তাই না।

” ওই লেডি কি করোস?

জিসান রুমে ঢুকতে ঢুকিতে বলে

“তোর ভাইয়ের নিকনিক দেখছি।
” তুই একটা মানুষ ই। কেমন ছলে বলে কৌশলে ব্রোকে বিয়ে করে নিলি।

“হুম এবার দেখ ছলে বলে কৌশলে ব্রাজিলের টিম ও বানিয়ে ফেলবো

” কথা বার্তা সাবধানে বল আমি তোর দেবর

“সো হোয়াট
” আরে গাধী এসব বলতে নেই

“করে দেখাতে হয় বুঝি

” তোর কাজিনরে পটাই দে

“আমার কাজিন কি গাঁজা খাইছে না কি যে আমি বললেই পটে যাবে। তবে তুই যদি তোর ভাইয়ের মন জয় করাতে হেল্প করিস তবে ভেবে দেখবো

” ওকে ডান। আগে তোকে রান্না শিখতে হবে

“আমি তো রান্না পারি

” আরও বেটার পারতে হবে

“তুই বলতে চাইছিস আমি বেটার রান্না করি না😡

” বাদ দে। হট হট সাজতে হবে

“ধুর

” কেন?

“তোর কাছ থেকে হট শব্দটা শিখলাম। যখনই তোর ভাইয়ের সামনে হট শব্দটা বলি রনোচন্ডা রুপ ধারণ করে।

” রনোচন্ডী শুনেছি চন্ডা তো শুনি নি

“আমি নতুন আবিষ্কার করলাম।

” তুলি
শাশুড়ী ডাকে

“তোর মা ডাকছে আসছি

” চল

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-০২

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana (Writer)

“এখানে কি হচ্ছে এসব?
সায়ান রাগী সুরে বলে। জিসান তুলির পেছনে লুকায়।
” ও মাই গড আপনাকে রাগলে কতো কিউট লাগে। মনডায় চায় টুক কইরা একটা কিছ করে দেই😘

সায়ান এবার হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। জিসান আর নিশি সায়ানের মুখ দেখে লুকিয়ে হাসছে।

“তোমার কি বাড়ি ঘর নেই। রোজ এখানে কি করতে আসো?

” জিসান নিশিপু যাও তো

জিসান বলে
“কোথায় যাবো

” বুদ্ধু বাইরে যা

“কেনো?

” আমি এখানে কেনো এসেছি এটা তোর ভাইকে বুঝাবো।

“ওরা,কোথাও যাবে না

” যাও তারাতাড়ি

“যাবি না তোরা

জিসান নিশি দৌড় দেয়। তুলি এবার মুরা টেনে সায়ানের সমান হয়ে দাঁড়ায়। কি যেনো বলছিলেন

” এখানে কেনো এসেছো?

“রোমাঞ্চ করতে

সায়ানের গালে হাত দিয়ে বলে তুলি।

” রররোমমম

“তোতলানোর মতো কিছু করি নি। আর আমি এতোটাও খারাপ না যে বিয়ের আগেই এসব করবো। তবে কিছ টা করাই যায় কিন্তু লিপস্টিক নষ্ট হয়ে যাবে বলে কিছও করতে পারবো না

” বোইন মাপ কর আমায়
সায়ান হাত জোর করে বলে। তুলি সায়ানের কলার ধরে কাছে টেনে আনে
“কি বললি তুই আবার বল তো

” ববো
সায়ানের কথা শেষ করার আগেই তুলি টুক করে সায়ানের গালে পাপ্পি দেয়।

“এখন বল
” তুলি

তুলি সায়ানকে ছেড়ে দেয়। সায়ান হাপ ছেড়ে বাঁচে।
“নেক্সট টাইম বোন বললে কি যে করবো

” তুলি আমার গার্লফ্রেন্ড আছে

“সেই জন্যই তো আপনাকে আরও বেশি ভালো লাগে।

” তুমি বোকামি করছো

“আই নো

” ডিজগাস্টিং

“শুনুন না একটা কথা বলার ছিলো

সায়ান বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে তাকায়। তুলি সায়ানের মুখটা নিজের দিকে ঘুরায়

” কাল আমরা বিয়ে করবো

“হোয়াট

সায়ান চিৎকার করে বলে। তুলি কানে হাত দেয়।

” চিল্লান কেন?

“আমি মনাকে ভালোবাসি। বিয়ে যদি করি তো মনাকেই করবো।

তুলি দাঁত কেলিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়।
সায়ান বেলকনিতে চলে যায়।
” এই মেয়েটা এমন কেনো? পুরো পাগল করে দেবে। ভাল্লাগে না
সায়ান বিরবির করে বলে।

“কি করে ওনার মনে জায়গা করে নেবো? মন ভর্তি তো শুধু ওই খালাম্মা৷ আল্লাহ হেলেপ করো। খালি মিঠাইরে হেলেপ কইরো না। একটা এক্সকিডেন্ট থুক্কু এক্সিডেন্ট করাই দেও প্লিজ। বিয়ে তো কাল আমি সায়ানকে করবোই কিন্তু কি করে করবো। ভাববার বিষয়

তুলি এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে সায়ানের রুমেই। অনেক রাত পর্যন্ত সায়ান মনার সাথে ফোনে কথা বলে রুমে এসে দেখে তুলি চার হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।

“এখন করবো কি এই আপদ বিদায় করবো কি করে। একে নিশির রুমে দিয়ে আসি।

সায়ান তুলিকে কোলে করে নিশির রুমে দিতে যায়। সায়ানের বাবা দেখে ফেলে আর কিছু পিক তুলে নেয়। তুলিকে নিশির রুমে দিয়ে এসে সায়ান অফিসের কাজ করতে বসে।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তুলি সায়ানদের বাড়ির ছাঁদে যায়। গিয়ে দেখে জিসান দৌড়াদৌড়ি করছে।
” কি রে গরুর মতো দৌড়াচ্ছিস কেনো?

“জীম করছি

” আগে কবি তো। দেখ জিসান কি সুন্দর ফুল।

“ফুলের দিকে নজর দিস না। তুই বাড়ি যাবি না

“ইনডিরেকলি অপমান করলি তবুও আমি তোদের বাড়িতেই থাকবো। তোর ভাই একটা হেব্বি মাল। ওরে আমার চায়

” ব্রোর গার্লফ্রেন্ড আছে

“সো হোয়াট আমার ও বয় ফ্রেন্ড আছে।
আর শোন তোর ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড থাকুক আর যাই থাকুক আজ তোর ভাইরে আমি বিয়ে করেই ছাড়বো

” জাস্ট সি

“এখন চল আমার সাথে

” কোথায়

“ফুল চুরি করবো

” কিহহহহ

তুলি জিসানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। বাগানের বাইরে জিসানরে দাঁড় করিয়ে ভেতরে ঢুকে পরে। ফুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে কারো সাথে ধাক্কা খায়।

“ইউ

” বেবি তুমি

“তুমি আমার গাছের ফুল ছিঁড়ছো😡

” আমি তো ভেবেছিলাম এটা ফুল গাছ। কিন্তু এটা যে আপনার গাছ বুঝতে পারি নি। কিন্তু এখন তো বুঝে গেছি

“তো

” এখন তো সব আমি একাই ছিড়ে নিয়ে যাবো

“একদম গাছে হাত দিবা না

” দিবোই দেখি আপনি কি করেন। ইহহহহ একটু পরে আমাদের বিয়ে হবে আর এখন ঢং দেখাচ্ছে। এতো সুন্দর একটা পরিবেশ কোথায় একটু রোমান্টিক কথা বলবে জড়িয়ে ধরবে তা না ইংরেজদের মতো ভাষণ শুরু করে দিছে।

“ডিজগাস্টিং। তুমি কি বকবক ছাড়া কিছু পারো না

তুলি একটু ভেবে বলে
” আমি রান্না করতে পারি খাবেন আপনি? ঠিক আছে আমি তাহলে আপনার জন্য মাংস রান্না করি। গরুর মাংস। এই আইটেম টা বেশ ভালো রান্না করি আমি। যদিও কেউ খেতে চায় না তবুও আমি জোর করে খাইয়ে দেই। আসছি

“শুনো
কে শোনে কার কথা তুলি দৌড়ে চলে যায় আবার ঝড়ের বেগে ছুটে এসে সায়ানকে হালকা জড়িয়ে ধরে
” লাভ ইউ
বলে আবার ঝড়ের বেগে চলে যায়।

“না জানি কপালে কি আছে

🌺🌺

কিচেনে তুলি গরুর মাংস রান্না করছে। সায়ানের মা আর নিশি হা করে তাকিয়ে আছে। কি যে রান্না করছে ওরা বুঝতে পারছে। রান্না প্রায় শেষের দিকে হলুদ দেয়।
আদর আর তুহিন (তুলির বাবা) তুলিকে নিতে আসে। এসেই তুলি রান্না করছে শুনে এক দৌড়ে চলে যায়। জিসান বেপারটা জানে না।

অবশেষে তুলির রান্না শেষ হয়৷ গরুর মাংস আর পোলাও। টেবিলে খাবার সার্ভ করে সায়ানের বাবা জিসান আর সায়ানকে ডেকে আনে। খাবারের চেহারা দেখেই সবার পেট ভরে গেছে।

মামমি তোমায় রান্না করতে কে বলেছে? সায়ানের বাবা বলে

” আপনার ছেলে। ও বললো হবু বউয়ের হাতে রান্না খেতে চায়। তাই তো রান্না করলাম।
তুলি হাসি মুখে উওর দেয়।

আমি মোটেও এসব বলি নি😡
সায়ান রেগে বলে

কি মিথ্যে বাদী রে বাবা

তোমাকে

সায়ান চুপচাপ খাও।
সায়ানের বাবা বলে

এসব খাওয়া যাবে?( সায়ান)

কেনো খাওয়া যাবে না (তুলি)

“ঠিক আছে তুমি খাও

আগে আপনারা খাবেন দেন আমি খাবো

আমি এমন অখাদ্য খাবো না
সায়ান চেয়ার থেকে উঠে যায়।

ঠিক আছে আপনার খেতে হবে না। আমার বেষ্টু খাবে

জিসান ঢোক গিলে

মাপ কইরা দে বোইন

জিসান এক দৌড়ে চলে যায়।

এসব করে নিজেকে বাঁদর প্রমাণ করছো। আমার মন তুমি পাবে না। কজ আমি মনাকে ভালোবাসি। বোঝো ভালোবাসার মানে?

সায়ান চলে যায়। তুলিও রাগ করে বাড়ি চলে যায়

বিকেল বেলা তুলি গভীর ভাবনায় ব্যস্ত। কি করে সায়ানকে বিয়ে করবে। বিয়ে তো সায়ানকেই করনে।
এমন সময় তুলির বাবা রুমে আসে।

” তুলি

“হুম বাবা

” কাল রাতে তুমি কোথায় ঘুমিয়েছিলে।
“সায়ানের রুমে

” লজ্জা করছে না নিরদিধায় বলতে।

“না তো

” কাল তুমি একদম কাজটা ঠিক করো নি

তুলি বাবার হাত ধরে বলে

“সরি বাবা আর এমন করবো না

” সায়ানকে ভালোবাসো

তুলি বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে

“আমি ওকে বিয়ে করতে চায় বাবা।

” কিন্তু

“তুমি তো আমার সব আবদার পূরণ করো প্লিজ লাস্ট একটা আবদার তোমার কাছে। প্লিজ বাবা

” সায়ান অন্য কাউকে ভালোবাসে

“তুমি পারবে কি না বলো। কোনো এক্সকিউজ না

” দেখছি

“কাল রাতে সায়ানের রুমে ছিলাম এটাকেই ইসু করো

” দেখছি

তুলির বাবা চলে যায়। তুলিও হাঁটতে বের হয় বাড়ির কাছেই নদীর পারে। নদী পারে বসে সায়ানের কথা ভাবছে তখন

এতো রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই
তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চায়
মেঘলা হয়ে যাক আরও পাঁচটা বারো মাস
কোনো বিকেল বেলাতে তুই আমার হয়ে যাস

গানের সুরটা ভেসে এসে আবছা হয়ে যায়। তুলি উঠে দাঁড়ায়। তাকিয়ে দেখে সায়ান গিটার বাজাচ্ছে আর গান গাইছে আর মনা সায়ানের হাত ধরে হাঁটছে

“এই যে ক্রাশ দাঁড়ান। আমি আপনার পেছনে দৌড়াচ্ছি। ও ক্রাশ দাঁড়ান না। পা ব্যাথা হয়ে গেলো। ক্রাশের পায়ে জোর কতো রে

তুলি দৌড়ে সায়ানের সামনে যায়। সায়ান গান বন্ধ করে। তুলি হাঁপাচ্ছে

” কি চায় (মনা)

“আরে রাখেন আপনার কি চায় কখন থেকে দৌড়াচ্ছি। পা ভেঙে হেছে। ফোসকা পরে গেছে। এতো জোরে কেউ হাঁটে। আর আপনি কি কানা?

মনা রেগে বলে

” হোয়াট

“কানা না কি আপনি আমার ক্রাশের হাত ধরে হাঁটছেন৷ চোখে কম দেখেন? #আমার ক্রাশ আমি হাত ধরে হাঁটবো তা না উনি হাত ধরে হাঁটছে। আর কখনো যেনো হাত ধরে হাঁটতে না দেখি

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-০১

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana (Writer

রাত বারোটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। সায়ান রুমে ঢুকে ভয় পেয়ে যায়। কারণ ওয়াশরুম থেকে পানি পরার শব্দ আসছে। সায়ান আবার ভুতের ভয় পায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে

“ককককে ওওওখানে?
ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে সায়ান আরও ভয় পেয়ে যায়। এই বুঝি ভুতে ঘাড় মটকে দেবে। ভয়ে সায়ান চোখ বন্ধ করে ফেলে।

তুলি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সায়ানকে দেখে থমকে যায়
” ওয়াও হবু ভাবি বলেছিলো সুন্দর কিন্তু আমি তো দেখছি মারাক্তক সুন্দর।

মেয়েলি কন্ঠ শুনে সায়ান চোখ খুলে। প্লাজু আর টিশার্ট পরা ভেজা চুলে টাওয়াল হাতে একটা রমনীকে দেখে সায়ান চোখ বড়বড় করে।

“হু আর ইউ

” আপনি মারাক্তক সুন্দর। এতো সুন্দর মানুষ হয়। আমি তো প্রথম দেখাই ফিদা হয়ে গেলাম আল্লাহ কি সুন্দর গো। আল্লাহ আপনারে খালি আমার জন্য এতো সুন্দর করে বানিয়েছে।

“আমি জিজ্ঞেস করেছি আপনি কে?
বিরক্তি নিয়ে বলে সায়ান

” গুড কোশ্চেন আমি কে? আমি তাইবা তানজিন তুলি। সবাই তুলি বলে ডাকে। আপনি চাইলপ তাইবা বলে ডাকতে পারেন। আর আমি এগারো ক্লাসে পড়ি

“হোয়াট

” এগারো ক্লাস মানে বুঝেন নাই। আরে ইন্টার ফাস্ট ইয়ার। এটা তো বাচ্চারাও বুঝে যাবে আর আপনি বুঝলেন না। আপনি তো দেখি বলদ

“কিহহহহ বলললে

সায়ান রেগে বলে
” কালা না কি? ক্রাশ কালা হলে সমস্যা নাই। আমি শুধু বলেই যাবো আপনি বকতে পারবেন না। সত্যি একটা কথা বলি আপনি দেখতে মারাক্তক সুন্দর হলেও। একটু বলদ টাইপের। তবে বেপার না আমি ঠিক করে নেবো। যাই হোক আবার পরিচয় পর্বে আসি। বাবার নাম তুহিন চৌধুরী। দাভাইয়ের নাম আদর। মায়ে

“সাট আপ
সায়ান জোরে একটা ধমক দেয়। তুলি ভয় পেয়ে দুপা পিছিয়ে যায়। বুকে থুথু দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে

” আল্লাহ গো আর একটু হলে পরাণটা বেরিয়ে যেতো। বাচ্চা মেয়েটাকে কেউ এভাবে ধমক দেয়? দেখেন কতো কিউট আমি। এরকম একটা কিউট টুনুমুনু বেবিকে বকতে আপনার খারাপ লাগছে না৷ নেহাত আমি গুড গার্ল না হলে কান্না করে দিতাম

সায়ান চুল টেনে রাগ কন্ট্রোল করে বলে

“তো মামনি তুমি এখানে কি করবো

” নাউজুবিল্লাহ ছিছি হবু বউকে কেউ মামনি বলে

“হবু বউ

” হুম। কাল আপনার বোন আই মিন আমার হবু ভাবি বলেছিলো আপনি খুব ভালো দেখতে তাই আমি আজ দেখতে এসেছিলাম। আমার তো আপনাকে দারুণ লাগেছে তাই ভাবছি শুভ কাজটা তারাতড়ি সেরে ফেলবো। এরকম একটা হট ছেলেকে কেউ হাত ছাড়া করে

তুলির কথা শুনে সায়ানের কাশি উঠে যায়। তুলি মোরা এনে মোরার ওপর দাঁড়িয়ে সায়ানের মাথায় ফু দেই

“সাট সাট সাট
মাথায় চাটি মারে আর বলে। সায়ান একটু দুরে সরে যায়

” এগুলো কি

“কাশি কমাচ্ছি

” বের হবা তুমি

“নাহহহ

” লাস্ট বার বলছি বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে

” কেনো বের হবো? আর আপনি কেমন মানুষ হ্যাঁ আমি আপনার বোনের হবু ননদ সম্পর্কে আপনাদের হবু আত্মীয় আর আপনি এমন রুড বিহের করছেন। ইটস নট ফেয়ার

“আল্লাহ এ কার পাল্লায় পরলাম। কোন পাগল কপালে জুটলো
সায়ান বিরবির করে বলে।

” কি বললেন?

“মা মা
সায়ানের মা দৌড়ে আসে

” কি হয়েছে?

“এই মেয়েটা কে? আর এখানে কি করছে?

” তুলি তুমি এখানে

“হুম আন্টি এই রুম টা ভালো লাগলো তাই এখানে এসেছি। দেখেন না কেমন বিহেব করছে৷ দুবার ধমক দিয়েছে।

” সায়ান ওকে বকেছিস কেনো?

“অতিরিক্ত কথা বলে। পাগল একটা

” আন্টি আমায় পাগল বললো। তোমার ছেলেটা হট হলেও প্রচুর পাঁজি

সায়ান আর সায়ানের মা চোখ বড়বড় করে তাকায়। আন্টি কাশি দেয়

“মা একে আমার চোখের সামনে থেকে সরাও

” আমি যাবো না

তুলি বিছানায় বসে পড়ে।

“তুমি যাবে না তোমার ঘাড় যাবে

সায়ান তুলির হাত ধরে টেনে বের করে দিয়ে ধারাম করে দরজা বন্ধ করে দেয়

” দেখলে আন্টি ইনসাল্ট করলো?

“হুম

” তোমার এই নিরামিষ হট ছেলেকে আমার চায়

“কিহহহহ

” হুম

তুলি হনহনিয়ে চলে যায়।

সকালে তুলির ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হয়। উঠে কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে বাইরে গিয়ে দেখে। জিসান সায়ানের ভাই। নিশি সায়ানের বোন। আদর তুলির ভাই। আর সায়ানের মা ব্রেকফাস্ট করছে।

“সায়ান কোথায়?
তুলি জিজ্ঞেস করে।

” ব্রো তো কখন বেরিয়ে গেছে (জিসান)

“আমি আসছি
তুলিও দৌড় দেয়

” বোন আমরা এখন বাড়ি যাবো

“তুই যা আমি বিকেলে চলে যাবো

তুলি দৌড়ের ওপর বলে চলে যায়।

🌺🌺

” এইয়ে মামনি রাস্তা ঘাটে পুরুষ নির্যাতন করছেন কেনো?

পার্কে সায়ান আর সায়ানের গার্লফ্রেন্ড বসে ছিলো। মনা সায়ানকে কিছ করতে যাচ্ছিলো তখন পেছন থেকে তুলি বলে। মনা সায়ান পেছনে তাকায়

“হু আর ইউ
মনা রেগে বলে

” আমি যেই হই। আপনি কি কাজটা ঠিক করছেন। একটা শিশু নির্যাতন করছেন।বাই এনি চান্স যদি আমি পুলিশে কমপ্লেন করি জানেন আপনার কি অবস্থা হবে?

“তুমি এখানে কি করছো?
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে

” শিশু আই মিন পুরুষ নির্যাতন রোধ করতে এসেছি। ভাগ্যিস এসেছিলাম না হলে তো আপনার কলঙ্ক লেগে যেতো। এই কলঙ্ক ঢাকতে আপনি সুইসাইড করতেন। কি বস থ্যাংক্স বলেন

সায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে। সায়ান ধাক্কা দিয়ে হাত সরিয়ে দেয়

“ইডিয়েট

” সবাই বলে

“সায়ান তুমি চেনো একে?
মনা জিজ্ঞেস করে

” ও মা চিনবে না কেনো? কাল রাতে কতো কথা হলো। কি গো বলেন

“সাট আপ
সায়ান আবার ধমক দেয়।

” আল্লাহ হেলেপ করো। এই লাটসাহেব তো কথায় কথায় ধমক দেয়। বাই দা ওয়ে এই খালাম্মা টা কে?

“আমি সায়ানের গার্লফ্রেন্ড মনা😎

তুলি তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সায়ানের গায়ের ওপর গিয়ে পরছে। মনা সায়ান দুজনেই বিরক্ত হয়ে তাকাচ্ছে তুলির দিকে

” সিরিয়াসলি এই খালাম্মা আপনার গার্লফ্রেন্ড। আরে একে তো আন্টির থেকে বাজে দেখতে। চয়েস খারাপ আপনার।

মনা রেগে বলে

“সায়ান

” আরে আমি জানি ওনার নাম সায়ান এতো জোরে জোরে বলতে হবে না

“তুমি যাবে এখান থেকে

” কেনো যাবো। আর এই যে আন্টি আপনি এবার কিন্তু বড়সড় একটা বাঁশ খাইবেন

সায়ান মনা দুজনেই একসাথে বলো

“বাঁশ

” ইয়েস বাঁশ। কজ সায়ান এবার সুন্দরী শান্তশিষ্ট ভালো কিউট সুইট তুলিকে পেয়ে গেছে এবার আপনার সাথে ব্রেকআপ করবে

“সাট আপ তুলি
সায়ান কিছুটা জোরে বলে

” আপনার সাট আপ আপনার পকেটে রাখেন। আমাকে কথা বলতে দিন।

সায়ান মনার হাত ধরে বলে

“মনা চলো এখান থেকে এই মেয়েটা একটা পাগল

” আপনি আবার আমায় পাগল বললেন? পাগল হলেও আপনার হবু বউ হুম

“বিয়ে করলে আমি মনাকেই করবো। কজ সি ইজ মাই লাভ
সায়ান মনার দিকে তাকিয়ে বলে

” ও আল্লাহ গো কতো ডক কইরা ইংরেজি কয় আমার ক্রাশ। এই পোলা তো আমারে পাগল করে দেবে

“ইউ
মনা তুলির দিকে এগিয়ে যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে আটকে দেয়

” বাদ দাও তো চলো

সায়ান মনার হাত ধরে যেতে নেয়

“বেবি রাতে দেখা হচ্ছে

সায়ান মনা দাঁড়িয়ে যায়।

“রাতে দেখা হচ্ছে মানে (মনা)

” খালাম্মা এটা আমার আর ক্রাশের পারসোনাল মেটার নাক গলান কেন? ক্রাশ লাভ ইউ উম্মমমমমমমমা বাই

তুলি এক দৌড়ে চলে যায়

“আল্লাহ কি ডেঞ্জারাস মেয়ে রে। এর হাত থেকে বাঁচবো কেমনে? এতো আমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে মারবে।

রাতে তুলি বাবা মাকে বলে সায়ানদের বাড়িতে দিয়ে আসার জন্য কিন্তু ওনারা তুলিকে যেতে বারণ করে দিয়েছে। যদিও বাড়িটা কাছে। পায়ে হেটে হেঁটে যেতে ছয় সাত মিনিট লাগে।

তুলি এবার ভাবছে যাবে কি করে। পরে বুদ্ধি বের করে নিশি আর জিসানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বলে। বাবা মা নিশি কে দেখলে আর আটকাবে না। হবু বউমা বলে কথা।

সায়ান বেলকনিতে বসে মনার সাথে কথা বলছে

” প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই
তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চায়
সায়ানের রুম থেকে সম্মিলিত কন্ঠে গানের সুর ভেসে আসছে

“মনা পরে কথা বলছি

সায়ান ফোন কেটে দেয়

” এতো রাতে আমার রুমে কে গান গায়

সায়ান এগিয়ে যায়। দেখে জিসান তুলি আর নিশি উচ্চ শুরে গান গাইছে

“আল্লাহ আবার এই মেয়ে

সংসার পর্ব-২৪ এবং শেষ পর্ব

5

#সংসার
#পর্ব_২৪ (অন্তিম পর্ব)

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

আমি তাদের দিকে তাকিয়ে উপরে উঠতে নিলে মাথা ঘুরে সিরি থেকে পড়ে যাই। দৌড়ে রুদ্র আমার কাছে এসে কোলের মাঝে নেয় কিসব বলতে থাকে আমি অনেক কষ্টে চোখ খুলে রুদ্রকে কিছুক্ষণ দেখি। তারপর চোখ বন্ধ হয়ে যাই আমার।

৪৭.
চারপাশে নিরব নিস্তব্ধতা, মাথা ঝিমঝিম করছে। আমি মাথা ধরে বিছানায় উপর ওঠে বসি। সামনেই রুদ্র চেয়ারের উপর বসে বসে ঘুমাচ্ছে। আমার ঠিক পাশের বেডে আকাশ ভাইয়া ঘুমাচ্ছে আর তার পাশ ঘেসে রাইমা আপু দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে ঘুমাচ্ছে। আমি চারপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি আমরা কোথায় আছি। এটা কোন হাসপাতালের রুম। পিনপতন নিরাবতার মাঝে কেউ পাশের রুম থেকে মাঝে মাঝে একটু কেশে ওঠে আবার নিরব হয়ে যাচ্ছে।
আমার ডান হাত রুদ্র ধরে রেখেছে, আমি আস্তে আস্তে হাত সরিয়ে নিতে গেলে রুদ্র জেগে যায়।

“তুমি জাগলে কখন, এখন কেমন লাগছে।”

আমি মাথা নেড়ে বললাম-
“হুমম ভালো লাগছে। আমরা এখানে কেন?”

রুদ্র মুচকি হাসলো-
“তোমাকে ছোট্ট আর একটা এনে পূর্নতা দিলে আমাকে কি দিবে বলো?”

আমি তার কথা না বুঝে বললাম-
“উহু আমার ছোট্ট পূর্ণতা না, একটা ছোট্ট পূর্ণক চাই আপনার মতো।”

“না আমার তো তোমার মতো একটা মেয়ে চাই। যে কি রাগী হবে তার আধো অধো ভাষায় তোমার মতো শাসন করবে। আমার দুটো পূর্ণতা চাই।”

আমি একটু ভেবে বলি-
“আমার তাহলে দুটোই চাই, একটা ছোট পূর্ণতা আর আপনার মতো একটা পূর্ণক।”

আমার কথায় রুদ্র মুচকি হেসে ডান হাতটা আমার পেটের উপর রেখে বলে-
“এখানে ছোট্ট একটা বাবু নিয়ে এসেছি। এবার থেকে আমাকে বেশি বেশি আদর দিতে হবে।”

আমি রুদ্রের কথায় অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকালে রুদ্র বাঁকা হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে পেটের দিকে তাকিয়ে থাকি। এখানে আমার আর একটা সোনামনি আছে। আমি কিছুক্ষণ পর রুদ্রের দিকে তাকাই। খুশিতে রুদ্রের চোখে জল চিকচিক করে ওঠে। আমি দু হাত মেলে দিলি রুদ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়।

“মেঘ আজ আমি ভীষণ খুশি। আমার জীবনের সব থেকে খুশির দিন আজকে। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এত সুখ দেওয়ার জন্য। পৃথিবীতে ‘আপনি বাবা হতে চলেছেন’ এর থেকে মধুর বাক্য আর কিছু হতেই পারে না মেঘ। তুমি কখনো মা হতে পারবে না বলে মা তোমার থেকে আমাকে কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু আজ দেখো আল্লাহ আমাদের সব সুখ দিছে। আজ আমরা পরিপূর্ণ সুখী। আমাদের সংসারে কোনো অপূর্ণতার ছাপ নেই।”

রুদ্রের কথায় আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে। শেষের কথা গুলো আমার চরম সত্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমি যে মা হতে পারব না আর মা হলেও মৃত্যুর আসঙ্খা আছে। কথাটা মনে পরতেই আমার আত্মা কেঁপে ওঠে। না আমি কখনো রুদ্রকে আর পূর্ণতা ছেড়ে যেতে পারব না। আর না তো এই সাজানো সংসার ভাঙ্গতে পারব।

আমি রুদ্রুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।
“রুদ্র আমি আপনাকে ছাড়া কোথাও যেতে পারব না। কোথাও না। খুব ভালোবাসি আপনাকে।”

আমার কথায় মুচকি হেসে রুদ্র বলে-
“এই মেঘ পাগল হয়ে গেলে? কোথায় যাবে তুমি? কি ভাবছো আগের বার যেতে দিছি বলে এবার যেতে দিব?
বাবা মেয়ে মিলে পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখব। তখন একটা জিনিস খুব ভালো হবে আদর করতে গেলে লজ্জায় পালিয়ে যেতে তো পারবে না।”

আমি রুদ্রের কথায় শব্দ করে কেঁদে ওঠি। রুদ্র আমাকে শান্ত করে বলে-
“আরে বোকা কাঁদছো কেন? এটা তো আমাদের খুশির দিন কান্না মানায়? দাড়াও তো রাইমা, ফুপি বার বার ফোন দিছিলো ওদের খুশির সংবাদটা দিয়ে নেই।”

আমি রুদ্রের কথায় ভয়ে কেঁপে ওঠি ফোনটা হাত থেকে কেড়ে নিতেই রুদ্র বলে-
“মেঘ এত লজ্জায় পাও কেন বলো তো,? মা হবে এখানে তো খুশির খবর আর তুমি লজ্জায় কাউকে বলতে দিচ্ছো না?”

আমি মুখে হাসি টেনে বললাম-
“উহু এটা এভাবে বলব না। সবাইকে সারপ্রাইজ দিব। কয়েক মাস যাক তারপর পূর্ণতার জন্মদিনে সবাই এই খুশির সংবাদটা দিবো।”

রুদ্র মাথা নেড়ে মুচকি হেসে বলে-
“পাগলি”

আকাশ ভাইয়া আর জেনি আপুকেও সবাইকে বাবু হওয়ার কথা বলতে রুদ্র নিষেধ করেছে, সারপ্রাইজ দিবে বলে। আমি বাসায় এসে রুদ্রের আনন্দ দেখে ঠোঁট টিপে কান্না আটকাই পূর্ণতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। কি করে বলব আমার বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কতটুকু। আজ যদি বলতাম তবে যে করেই হোক এভারেশন করাত আর আমি কিভাবে পারতাম আমার অনাগত সন্তানকে মারতে। আজ রুদ্রকে যতটা খুশি দেখতে পারছি তা কি কখনো পারতাম?
রাইমা আপুর, ফুপি আর বাবা আমার সব কিছু জানলেও বাহিরের কেউ জানত না। আর কয়েক মাস পর তাদের জানিলে তখন রুদ্র জানলে চাইলেও কিছু করতে পারবে না। পেটের উপর হাত রেখে কয়েক ফোঁটা চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল-

“আমি তোকে কখনোই হারাতে দিব না। নিজের প্রানের বিনিময়ে তোকে এই সুন্দর পৃথিবী দেখাব।”

৪৮.
আকাশ ভাইয়াসআর জেনি আপু আমাদের বাড়িতে এই পাঁচ মাস ধরে লুকিয়ে আছেন। তারা পালিয়ে আসার পর ছেলে পক্ষ আর মেয়ে পক্ষরা অনেক ঝামেলা করে। বাড়ি ভাঙচুর করে।

তখন কথায় কথায় জেনির বাবা ফোরকান সাহেব বলেছিলেন-
“আমরা যে ছেলে মেয়েদের পালাতে সাহায্য করেছি আপনাদের কেন বলব, তাহলে আপনারা যদি ওদের নামে কেস দিয়ে দেন?”

জেনির বাবার বোকামির ফলে তারা সত্যি সত্যি কেস দিয়ে দিছে। তাও আবার মানহাই+নরী নির্যাতন মামলা। সেখানে বলা হয়েছে তাদের মেয়ের সাথে প্রতারণা করে ঠকিয়ে আকাশ পালিয়ে গেছে।

কিন্তু এ নিয়ে তাদের বাবাদের কোন আপসোস নেই দিন দিন আদালতে যেতে অভ্যস্ত তবুও দুই বন্ধু তাদের ছেলে মেয়ে কোথায় আছে বলেনি। আর সেই জন্য এতদিন লুকিয়ে এখানে বসে আছে। যতদিন কেস শেষ না হবে ততদিন না বাড়িতে যেতে পারবে আর না বিয়ে করতে পারবে। আর যদি বাড়িতে যায় তবেই দারোগা তার মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।
,

আকাশ আনমনে জানলার কাছে বসে আছে। জীবনটা তার কাছে ভাল্লাগেনা টাইপ হয়ে গেছে। এতদিনে বউ নিয়ে রোমান্স করার কথা সেখানে এখন ভাইবোনের মতো বাসার ভিতর লুকিয়ে বসে আছে।

“এই জেনি এক গ্লাস পানি দিবি।”

জেনি ফোন টিপতে টিপতে বলল-
“টেবিলের উপর জগ গ্লাস আছে তুই নিয়ে খা। নতুন একটা মাল পেয়েছি। এটাকে পটিয়ে নেই। সালা আমার পিকে কমেন্ট করে ‘সুন্দরী তুমি কি সিঙ্গেল আছো?”

জেনির কথায় আকাশের মুখে কোন ভাবন্তর দেখা গেলো না। সে এগিয়ে এসে গ্লাসে পানি ঠালতে ঠালতে বলল-
“আল্লাহ আমার মতো জীবন তুমি সবাইকে দিও, তাহলে সবাই বুঝবে হবু ব্যাচেলার জামাইদের যন্ত্রণা কতটা কঠিন। বলছিলাম তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারব না সেখানে আজ পাঁচ মাস শেষ হলো।”

জেনি আকাশের কথা শুনেও না শুনার ভাব ধরে ফোন টিপতে থাকলো।

“ও জেনি শুন না? ওইই শুনতে পারছিস তুই।”

আকাশ জোড়ে চেচিয়ে ওঠলে জেনি চেচিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলে-
“কানের পাশে ভ্যা ভ্যা করিস ক্যান? কি বলবি বল শুনতে পারছি।”

“একটু বাহিরে ঘুরতে যাবি?”

“পুলিশের ডান্ডা খেতে নাকি?”

“আরে চল না ঢেকে ঢুকে যাব, কেউ ধরতে পারবে না।”

“আচ্ছা যাব। দুদিন পর পূর্ণতার জন্মদিন ওর মার্কেট করতে যাব। মেঘ কে জিঙ্গেস কর কখন যাবে?”

জেনির কথা শুনে আকাশের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। গলা চেচিয়ে বলে-
“ওও ভাবী, ভাবী শপিংয়ে কখন যাবে। এখানে এর একটু থাকলে মরে যাব। আমাকে বাঁচাও।”

আকাশের চিৎকার শুনে বিরক্ত হয়ে তাকায় আকাশের দিকে। আজকাল আকাশের ওভার এক্টিনয়ে বিরক্ত হয়ে গেছে। যখন জেনি বাহিরে যেতে চায় তখন নেওয়ার ধারে কাছেও যায় না। অথচ যখন যেতে পারবে না তখন আকাশের যেতেই হবে। যতসব বিরক্ত কর।
,
,

সকাল বেলা গোসল করে আয়নার সামনে চুল আচড়াতে গিয়ে আয়নার চোখ পড়ে আমার। পিটপিট করে রুদ্র বেডের উপর শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে পিছন ফিরে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁটকে কি হইছে জানতে চাইলে রুদ্র মাথা নেড়ে না বলে মুচকি হাসে।

“তোমাকে আজকাল সিগ্ধ লাগে। পাঁচ মাসে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে তোমার মাঝে। গাল হাত পা গুলুমুলু হয়ে গেছে। নাক ফুলটা আজকাল তোমার চেহেরায় চকচক করছে। আচ্ছা গর্ভবতী মেয়েদের সবাইকে কী এই সময় বেশি সুন্দর লাগে? নাকি শুধু আমার চোখেই?”

আমি রুদ্রের কথায় মুচকি হাসি দিতেই রুদ্র বাঁকা হেসে বলে- “ওগো রমনী এত সুন্দর ঠোঁটে ওমন করে হেসোনা পাগল হয়ে যাব। যদি এই সময়টা এমন সুন্দর লাগে তাহলে আমি দুটো সন্তান না বিশটা সন্তান চাই। অন্তত বিশ বছর তোমার এই সুন্দার্য তো দেখতে পারব।”

জেনি আপু রুদ্রের কথা শুনে রুমে ডুকতে ডুকতে বলে-

“হহ ভাই তোরা বাচ্চা পয়দা করবি আর আমরা ফুপিরা সব গুলো দেখে রাখমু। একদিন সর্বোচ্চ সন্তানের বাবা হয়ে গ্রিস বুকে নাম লেখাবি আর সাথে আমার ছোট করে নাম থাকবে ‘এই সেই মহিলা যে সর্বোচ্চ সন্তান লালন পালন করছেন। আহা কত সুন্দর কথা!”

জেনি আপুর কথায় তাল মিলিয়ে রুদ্র বলে-
“তুই চাইলে এতে আমার কোন আপওি নেই। একমাত্র বান্ধবীর আবদার বলে কথা।”

আমি তাদের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নুইয়ে বললাম-
“ছিহহহ। কি সব কথা বলো তোমরা।”

“থাক ভাই তোর এত কিছু করতে হবে না, আগে বউয়ের লজ্জা কমা। আর শুন যা বলতে আসছিলাম কাল তো পূর্নতার জন্মদিন তাই সবাইকে জানিয়ে দিস আর মেঘের এই অবস্থায় মার্কেটে যেতে হবে না তাই আমি রাইমাকে ফোন করে বিকেলে আসতে বলেছি তুই বাকি সবাইকে আসতে বল।”

আমি জেনির আপু কথায় কেঁপে ওঠি। রাকিব ভাইয়ের মা অসুস্থ থাকায় তাদের গ্রামে বাড়ি এতদিন ছিলো বলে কিছুজানতে পারেনি। আজ রাইমা আপু আসলে কি হবে যদি রুদ্রের সামনে সব কিছু বলে দেয়। নাহ যে করেই হোক রুদ্র শোনার আগে আমার রাইমা আপুকে সব বুঝাতে হবে।

আমি গোপনে অনলাইনে কিছু ওষুধ এই ব্যাপারে খাচ্ছি, যেখানে যা শুনেছি সবই নিচ্ছি ইন্টারনেট ঘেটে এর সমাধান হিসেবে পেয়েছি মনে জোর রেখে হাসি খুশি থাকলে আল্লাহ রহমাতে কিছু হবে। আমার মতো এমন অনেকে আছে যারা বাচ্চা জন্ম দিয়ে বেবী মা দুজনেই সুস্থ আছেন। তাহলে আমি কেন পারব না?

৪৯.
বিকেলে জেনি আপু আর আকাশ ভাইয়া মার্কেটে চলে যায় সেখানে রাইমা আপু তার বাসা থেকে আসবে। আমি বেডের একপাশে হেলান দিয়ে বসে গল্পের বই পরছিলাম। রুদ্র উপুড় হয়ে শুয়ে তার পিঠে পূর্ণতাকে বসিয়ে রাখছিল। পূর্ণতা আজকাল অল্প অল্প করে মা বাবা দাদু বলতে পারে। কয়েক পা হেঁটে যায় আর থপ করে বসে পরে। মাঝেমাঝে রুদ্র ধমক দিলে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। আজকাল পূর্ণতাকে নিয়েই আমাদের দিন কেটে যাচ্ছে।

আমি গল্প পড়তে পড়তে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললাম-

“বুঝলেন রুদ্র সংসার মানেই সংগ্রাম। এখানে কে আসলো কে গেলো সেটা কেউ দেখা না। আর সংসার কারো জন্য বসে থাকে না। তাই কখনো ভেঙ্গে পরবে না এই সংসারকে বাঁচিয়ে রাখতে নতুন নতুন মানুষকে মেনে নিয়ে পাশের প্রিয় মানুষ গুলোকে গুছিয়ে রাখতে হয়।”

আমার কথায় আগামাথা না পেয়ে রুদ্র তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে, পূর্ণতা পিঠের উপর বসে বমি করছে। ভরা পেটে পিঠের উপর নিয়ে নাড়াচাড়া দেওয়ার জন্য এমনটা করছে। আমি রুদ্রের অবস্থা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠি। আমাকে হাসতে দেখে পূর্ণতা হাত পা জোড়ে জোড়ে নাড়িয়ে হেসে ওঠে। মনে হচ্ছে সে বহুত ভালো কাজ করে।

রুদ্র কিছুখণ আমার দিকে আবার কিছুখণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে- “মা মেয়ে দুজনেই আমার বিপক্ষে। এসব সব বিপক্ষ দলের ষড়যন্ত্র।”

রুদ্র টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে শাওয়ার নিতে যায় আর আমি পূর্ণতাকে খাটের উপর শুইয়ে ঘুম পরাই। তখনই রেগেমেগে রাইমা আপু আসে।

“মেঘ এসব কি শুনছি? তুমি প্রেগনেন্ট আর আমাকে জানাও নাই তুমি? কি করে এতবড় সত্যি লুকালে? তুমি কী সব ভুলে গেছ? কি হতে পারে এর পরিনিতি।”

আমি রাইমা আপুকে আর বলার সুযোগ না দিয়ে বারান্দায় টেনে নিয়ে আসি। রুদ্র শাওয়ার নিচ্ছি যদি শুনতে পাই গন্ডগোল বেঝে যাবে।

বারান্দায় নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলি-
“আপু আমি কিছু ভুলেনি সব মনে আছে আমার, তুমি এসব রুদ্রকে বলো না। তাহলে ও আর কিছুর বলার সুযোগ রাখবে না বাচ্চা নষ্ট করাবে। আমি আমার সন্তান কে হারাতে পারব না।”

হাতের ইশারায় রুমের দিকে ইশারা করে বললাম-
“ওই দেখো রুমে প্রত্যেকটা খেলনা দুটো দুটো করে কিনে সারা রুম সাজিয়ে রেখেছে। রুদ্রের এমন ছেলে মানুষি আমি আর কখনো দেখিনি। ওর এত খুশি গুলো কি করে কেড়ে নিবো বল। রুদ্র যদি এসব ব্যাপারে জানতে পারে তবে ও খুব কষ্ট পাবে সাথে আমাদের অনগত সন্তান কে মেরে ফেলে আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্বিতীয় বার ভাববে না কিন্ত আমি আমার জীবনের বিনিময়ে বাবুকে চাই।”

“মেঘ তুমি একবার ভাবো তোমার কিছু হলে ভাইয়া কি করে বাঁচবে? আর পূর্ণতার কি হবে ভাবতে পারছো? আমরা সবাই ওকে আদর করলেও কিন্তু কতক্ষণ আর সেইটা থাকবে ও তোমার মত অন্য কারো কাছে ভালো থবে?”

আমি চোখের জল টুকু মুছে বললাম-
“আমি আর কিছু ভাবতে চাইনা আপু। আমি রুদ্রকে খুশি রাখতে চাই। বাঁচতে পারব কি না জানিনা তবে শেষ কথাটা রেখো রুদ্রকে কিছু জানাবে না। তোমার পায়ে পরি।”

আমি কথা বলে চলে আসতে নিলে ধমকে দাড়াই। কালো টিসার্টে রুদ্র আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে দু হাতে দুটো কফির মগ।
রুদ্র কফির মগটা পাশে রেখে আমার পাশ ঘেসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“তুমি ভাবলি কি করে আমি আমার সন্তান কে মেরে ফেলব, আমার কি ওর জন্য মায়া নেই? কিন্তু আমার তোমাকে চাই। আমি তো তোমার সব কথা রেখেছি তার বিনিময়ে তুমি আমাকে এই রকম শাস্তি দিতে পারো না। এতবড় সত্যিই টা লুকিয়ে রাখলে? আমার কথা একবারও ভাবলে না, আমি কখনো তোকে ক্ষমা করব না কখনো না।”

রুদ্র রাগে সেখান থেকে রাগে দরজায় লাথি মেরে চলে যায়, পিছন পিছন রাইমা আপু রুদ্রকে ডাকতে ডাকতে তার দিকে ছুটে যায়।

৪৯.
আজ বাসায় থমথমে পরিবেশ। ফুফির বার বার কল দিয়ে যাচ্ছে আমার ধরার মতো সাহস হচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগে রুদ্র আমার হাত ধরে তার জীবন ফিরিয়ে দিতে বললেও আমি তার কথায় বলেছি এভরোশন বাদে যে কোন কথা মেনে নেব। যদি আমাকে জোর করে তবে সারাজীবনের জন্য এ বাসা ছেড়ে চলে যাব। অন্তত আমার সন্তান তো বেঁচে থাকবে। আমার কথা শুনে রুদ্র রাগে রুমে সব জিনিস পএ ভেঙ্গে রুম থেকে চলে গেছে।
আমি ক্লান্ত শরীর নিয়ে পূর্ণতার পাশে শুয়ে পরি। পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরি। মাঝ রাতে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি রুদ্র আমার পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। রুদ্রকে এমন অবস্থায় দেখে মনটা হুহু করে কেঁদে ওঠে। আমি ওঠে বসতেই রুদ্র আমার কোলে মাথা রেখে ছোট বাচ্চাদের মতো বলে ওঠে-

“মেঘ আমারকে ছেড়ে কোথাও যেও না, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।”

চোখের জল টুকু মুছে আবার কড়া গলায় বলে ওঠল- “তোকে আমি কোথাও যেতে দিব না, কোথাও না। এত সাহস তোর হয় কি করে আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?”

এইটুকু বলতেই হুহু করে আবার কেঁদে। রুদ্রের চোখের পানি দেখে আমিও ডুকরে কেঁদে ওঠি।
,
,

আজ দুটো মাস পার হয়ে গেছে। এই দু মাসে রুদ্র বেশ পরিবর্তন হয়েছে, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। কিছু জিঙ্গেস করলে হু হা বলে উওর দেয়।
জেনি আপু আর আকাশ ভাইয়া আজ চলে যাবে। এক সপ্তাহ পর তাদের বিয়ে। তাদের নামে যে কেস চলছিল সেটা এখন বন্ধ। সেখানে দারোগার মেয়েই নাকি অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে তাই তার কেস তুলে নিয়েছে।
জেনি আপু চলে যাওয়ার সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছে। রুদ্রকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে যাতে আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে।

আমি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি চেকআপের জন্য। রুদ্র সাথে করে নিয়ে আসলে হাসপাতালের ভিতর ঢুকেনি রাইমা আপুকে ডেকে তার সাথে পাঠিয়ে দিয়েছে।
ডাক্তার আজ চেক করে রাইমা আপুর দিকে তাকিয়ে বলে-
“ডাক্তার রাইমা মিসেস রুদ্রের কন্ডিশণ খুব ভালো, নিয়মিত ওষুধ খেলে মনে জোড় রাখলে আসা করি কিছু হবে না। সামনের মাসে আবার একটু আসবেন তাহলে বুঝতে পারব সম্পূর্ণ আশঙ্কা মুক্ত হয়েছে কি না।”

আজ রুদ্র একটু সাধারণ ব্যবহার করলেও প্রতিদিনের মত আজও রাতে রুমে আসেনি। আমি জেগে বসে আছি রুদ্র আসলে কথা বলব। ও এমন করলে কখনোই মনে জোড় রাখতে পারব না।
আমি বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরি। রাতে কপালে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকাতেই দেখি রুদ্র আমার সামনে বসে আছে।আমি রুদ্রকে দেখে উৎসাহ গলায় বললাম-
“জানেন আজ ডাক্তার কি বলেছে।”

রুদ্র গম্ভীর গলায় উওর দিল-
“হুমম জানি।”

আমি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললাম-
“এমন করছেন কেন? আমার আপনাকে এখন খুব প্রয়োজন আর আপনি এমন কেন করছেন?”

রুদ্র আমার কথার উওর না দিয়ে বলল-“সেদিন বই পরতে পরতে ওই কথাগুলো মানে কি এটা ছিলো মেঘ?তুমি কেমন করে ভাবছো তুমি চলে গেলে আমি অন্য কাউকে মেনে নিতে পারব। আমি নিজেই তো মরে যাব।তুমি ভুলে গেছো সংসার হয়ত থেমে থাকেনা কিন্তু থেমে থাকে মানুষের মন।”

৫০.
আর দুইদিন পর আকাশ ভাইয়াদের বিয়ে। তারা খুব আপসোস করছে আমরা যেতে পারব না বলে। রুদ্রকে বার বার ফোন করে জিঙ্গেস করছে কখন কোনটা করবে তাকে রুদ্র কিছু বললে উওরে একগাল হাসি দিয়ে বলে- “দোস্ত রাগ করিস ক্যান জীবনের প্রথম বিয়ে আমি কি এসব নিয়ম টিয়ম জানি? তাছাড়া আমার সব কিছুতে তুই যত উপদেশ দিছিস সব কিছু ভালো হয়েছে।”

রুদ্র এই কদিনে স্বাভাবিক ব্যবহার করা শুরু করেছে। আমাকে হাসিখুশি রাখার জন্য প্রানপণ চেষ্টা করছে। ফুপি বাবা শাশুড়ি মা প্রথম প্রথম রেগে থাকলেও এখন রিপোর্ট সাধারণ শুনে সবাই খুশি। ফুপি ছোট বাবুদের বেশ কিছু কাঁথা পাঠিয়েছেন। সেই সাথে রাইমা আপুও সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের খাতা দিয়ে গেছেন।

রাইমা আপুর কথা মনে পরতেই তাকে ফোন দিতে বলে।

“মেঘ আমি আরো কিছু কাঁথা বানিয়েছি। এখন ভাবছি এগুলো কি করে দিব দুদিন খুব ব্যস্ত থাকব তারপর দিয়ে যাব কেমন। আর তুমি নিয়মিত ওষুধ খাবা ঠিক আছে।”

আমি রাইমা আপুর কথার উওর না দিয়ে বললাম-
“আপু বাবুদের এত কাঁথা লাগে? তাছাড়া পূর্ণতার কাঁথাও তো আছে। আচ্ছা শুনো আমি একা একটা কাঁথা সেলাই করছি। যেখানে আমার রুদ্রের আর পূর্ণতার নাম লিখছি। এখন রুদ্র চাচ্ছে মেয়ে হলে মেঘলা নাম রাখবে আর ছেলে হলে পূর্ণক। কিন্তু কাঁতার শেষে কি নাম লিখবো বলো তো?”

আমার কথায় রাইমা আপু হেসে দিয়ে বলে-
“তোমরা দুজনেই পাগল হয়ে গেছো বুঝলে। তুমি কাঁতার নামের জায়গা ফাঁকা রাখো বাবু হওয়ার পর লিখো কি নাম লিখবে।”

“ইশশশ আমিও কি বোকা। ভাবছিলাম দুটো নামই লিখে রাখবো।আর তো মাএ দুই মাস তারপরই লিখতে পারবো।”

আমার জেনি আপুদের বিয়ে যেতে ইচ্ছে করলে রুদ্র কে বলি। প্রথমে নিষেধ করলেও পরে রাজী হয়। এই অবস্থায় গাড়িতে যাওয়া ঠিক হবে না তাই লঞ্চ যাব। ঢাকা থেকে অনেক লঞ্চ বরিশালে যায় সেখানের একটা লঞ্চের কেবিন রুদ্র বুক করে রেখেছে। গ্রামের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিয়ে ভাবতেই গা শিওরে ওঠে।

ফুপি এই অবস্থায় জেতে নিষেধ করছিলো সাথে জুড়ে দিয়েছিল কিছু আদি নিয়মগুলি। এই অবস্থায় বের হলে নাকি মানুষের নজর পরে।
কিন্তু অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে ফুপি মা কে রাজি করাই। রাইমা আপু প্রথমে বকলেও ওখানে যাওয়ার পর আরো হাসি খুশি থাকতে পারব ভেবে কিছু বলে না।কিন্তু সবার কড়া নিষেধ বিয়েতে যেন লাফালাফি না করি।
,
,

আজ মেঘলা আকাশ। চারপাশের প্রকৃতি ধমকা হাওয়ায় জানান দিচ্ছি আজ কাল বৈশাখী ঝড় হতে পারে।
আমি কেবিনের জানালা দিয়ে বাহিরের পরিবেশ দেখছি। আমার জীবন কোথা থেকে কোথায় এসে দাড়িয়েছে। রুদ্র পাশে পূর্ণতাকে কোলে নিয়ে কিছু খাবার আনতে গেছে। হঠাৎ পাশে রুদ্র ফোন বেঝে ওঠায় দেখি আকাশ ভাইয়া কল দিচ্ছে।

“হ্যা রুদ্র, শুন আজকে তো,,,

“ভাইয়া আমি মেঘ। রুদ্র বাহিরে গেছে। ওইতো আসছে এই নেন।

“রুদ্র এই শুন না ভাই। আজকে জেনির বোনেরা আসবে ওদের তো আমি এতকাল বোন ডাকছি এবার কি শালি বলতে হবে। নাকি বোন ডাকলে মাইন্ড করবে।”

“আরে ভাই তোর যা খুশি ডাক। এবার ফোন রাখ, আমরা আসতেছি তারপর দেখা যাবে, রাখছি।”

“ওই ওই ফোন কাটিস না আর একটা কথা শুন, জেনি এখনো আমাকে আকাঈশ্যা বলে ওরে কি করলে আর ডাকবে না বল তো?”

“তুই বিয়ের ঠেলায় পাগল হইছিস বুঝছি। আচ্ছা শুন জেনিকে তুই আগের মতো করে জেনি ছেনি ডাক দেখবি ও শুধরে যাবে। কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয়। রাখছি এখন লঞ্চ ছাড়ছে।”

ফোন কাটতেই এতক্ষণ চেপে রাখা হাসি হাসতে থাকি। আমাকে হাসতে দেখে বলে-
“হহ তোমরা দুজনে প্রশ্ন করতে করতে আমাকে পাবনায় দিও।”
,
,

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে ওঠে বসি। ওয়াশরুমে যেতে হবে। ঝড় ওঠেছে বাহিরে নামতে ভয় করলেও আমি গুটিগুটি পায়ে নামতে নিলে রুদ্র ওঠে বসে। আমাকে ধরে ওয়াশরুমের দিক নিয়ে আসে। আজ পেটে খুব ব্যাথা করছে, এখনো তো দুমাস বাকি তবে কিসের ব্যাথা?
কিছুক্ষণের মাঝে ঝড় ভয়ংকর রুপ নেই। ঝড়ের জন্য লঞ্চের ভিতরে বসা মানুষ এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছে। আমি রুদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। রুদ্র আমার বাহু ধরে শান্ত হতে বলে কেবিনের দিকে পা বাড়ায়।

হঠাৎ লঞ্চে ভিতর বিকট আওয়াজের শব্দ হয়, সবাই চিৎকার চেচামেচি করছে ইন্জিনরুমে আগুন লেগেছে। আমি ভয়ে রুদ্র বাহু শক্ত করে ধরি। লঞ্চে একপাশ থেকে পানি ডুকতে শুরু করেছে। অন্যপাশে আগুন ধরেছে। হঠাৎ আমি পূর্ণতা পূর্ণতা বলে চিৎকার করে ওঠতেই রুদ্র কেবিনের দিকে দৌড়ে যেতে শুরু করে। কেবিনের ওই দিকটায় আগুন ধরেছে। আমরা যে পাশটায় এখান থেকে অনায়াসে নদীতে লাফিয়ে পরে জীবন বাঁচানো যায়। রুদ্র সেখান থেকে আগুনের দিক যাওয়া ধরলে কিছু লোক ওকে টেনে ধরেহ রুদ্র ওদের ধাক্কা মেরে কেবিনের ভিতর ডুকে।

কেবিনে ডুকতেই কিছুখণের ভিতর আমাদের কেবিন আগুনে জ্বলে ওঠে। আমি চিৎকার দিয়ে সেখানেই বসে পরি। চোখ জ্বলছে মাথাটা ভার ভার লিগছে তখনই দেখি রুদ্র পূর্ণতাকে পিঠের উপর নিয়ে লঞ্চের ভিতর যে পানি ডুকছে সেখান থেকে ওঠে আসছে। আমি দৌড়ে রুদ্রের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। রুদ্রের সারা মুখে কালি লেপ্টে আছে। আমি রুদ্রকে ছেড়ে পূর্ণতাকে কোলে নেই। পূর্ণতা নড়ছেনা, একদম শান্ত হয়ে শুয়ে আছে। আমি পূর্ণতাকে কয়েকবার আদরের স্বরে ডাকলে রুদ্র কমল গলায় বলে-

“আমাদের পূর্ণতা আর উঠবে না মেঘ। ও ওর বাবাইয়ের উপর অভিমান করেছে।”

আমি নিঃশব্দে পূর্ণতাকে নিচে শুইয়ে দেই। সবাই যে যেরকম পারছে এখান থেকে বের হচ্ছে। আমার পেটে আবার ব্যাথা ওঠলে আমি চিৎকার করে কুঁকড়ে ওঠি।

রুদ্র আমার পেট চুমু খায়। পরক্ষণেই পূর্ণতার কপালে চুমু খেয়ে ওঠে দাড়িয়ে পূর্ণতাকে কোলে নিয়ে আমার হাত ধরে। আমি ব্যাথায় উঠতে নিলেও বসে পরে। আমার জন্য রুদ্রও যেতে পারছেনা। লঞ্চের একপাশ তলিয়ে গেছে অন্যপাশের আগুন ক্রমশই আমাদের দিকে তেড়ে আসছে।

আমি কোন রকমে লঞ্চের পাশে এসে রুদ্রকে বললাম-

“আমি তোমার কোন কথাই রাখতে পারলাম। আমাকে কখনো ক্ষমা করো না কখনোই না। পৃথিবীর নিয়মই এটা রুদ্র আর মেঘ একই সাথে একই আকাশে থাকতে পারে না। তুমি আমার পূর্ণতাকে আমার বোন বৃষ্টির কবরের পাশে শুইয়ে রেখে দিও।কেউ যেন বিরক্ত না করে। সোনা মেয়ে ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। লক্ষি মেয়েটা আমার।”

পূর্ণতার কপালে চুমু খেয়ে রুদ্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুদ্রকে লঞ্চ থেকে ধাক্কা দিলাম। শরীরটা ক্লান্ত হয়ে আসছে। চারদিকে আগুনের কালো ধোয়া ছেয়ে গেছে।
আমি পেটে হাত দিলাম।
“আমার সোনা আমাকে ক্ষমা করে দিও, তোমাকে বাঁচানোর জন্য আমি জীবন দিয়ে দিতাম। কিন্তু নিয়তি চায়না তোমাকে এই সুন্দর পৃথিবী দেখাতে। থাক বাবা তোমার এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে থাকতে হবে না যেখানে তোমার বাবা মাকে একসাথে রাখতে চায় না। ক্ষমা করে দিও সোনা।”

রুদ্র কে তো পাঠিয়েছি ভাবতেই ঠোঁটের কোনায় মুচকি হাসি ফুটে ওঠে।
তখনই লঞ্চের পাশ থেকে মৃদু শব্দে মেঘ বলে ডেকে ওঠে। আমি সেদিয়ে ওঠে যেতে নিলে পেটে ব্যাথায় বসে পরি হামাগুরি দিয়ে সেখানে এগিয়ে গিয়ে দেখি রুদ্র একহাতে মেয়েকে জড়িয়ে অন্য হাতে লঞ্চের এককোনা ধরে আমাকে ডাকছে। আমি রুদ্রের দিকে তাকালে ও অশহায় চোখে আমার দিকে তাকায় যার মানে সে আমাকে ছাড়া কোথাও যাবে না।

আমি রুদ্রকে দেখে মুচকি হেসে বললাম-
“মেয়েটা তো দিয়ে দিছি আবার কেন আসলে। এই ছেলেটা আমি নিয়ে যাবো একে তোমার কাছে দিলে ওপারে আমি একলা কি করে থাকবো। যাও তো চলে যাও।”

আমার কথা শুনে রুদ্রের গাল গড়িয়ে কয়েক ফোটা জল পরে।
“বড্ড বোকাই থেকে গেলে তুমি আমি তোমাকে ছাড়া একা থাকতে পারি না তুমি ভুলে গেলে?”

রুদ্র পানির ভিতর থেকে আমার বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কপালে চুমু খায়। বড্ড বেশি ভালোবাসি ‘সানু’ তোমাকে। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আমাদের ভালোবাসা সহ্য হলো না।”
,
,

বিয়ের পোশাকে দুজন ছেলে মেয়েকে এত মানুষের ভিড়ে দৌড়াতে দেখে সবাই তাকিয়ে আছে।
পুলিশ নদী থেকে লাস তুলে এক সাথে রেখে কালো কাপড় দিয়ে ডেকে রেখেছে।
আকাশ আর জেনি সকাল থেকে রুদ্র মেঘের অপেক্ষা করতে করতে বিয়ের পিরতে বসেছে তখনই কেউ পাস থেকে বসে ওঠে আজকে ঢাকা থেকে বরিশাল আসার পথে একটা লঞ্চ ঝড়ে ডুবে গিয়ে অনেক মানুষ মারা গেছে। কথা গুলো শুনে শিউরে ওঠে দুজনে ছুটে চলে আসে নদীর পাড়ে। চারপাশে পুলিশ কারো কাছে যেতে দিচ্ছেনা তবুও জেনি আকাশ তাদেল ঠেলে লাসের ভিতরে যায়।
সবাই একটু একটু করে দেখছে এই আশায় যেন এখানে ওদের না পাওয়া যায়। হঠাৎ জেনি থেমে দাড়িয়ে পরে। জেনিকে থামতে দেখে আকাশ ভ্রু কুঁচকে তাকালে জেনি হাতের ইশারা করলে সেদিক তাকিয়ে দেখে একটা ছোট হাত কালো কাপুড়ের পাশ থেকে বেড়িয়ে রয়েছে। হাতে একজোড়া রূপার সাদা চুড়ি। যেটা জেনি পূর্ণতাকে জন্মদিনে পরিয়ে দিয়েছিলো। জেনি সেখানে বসে কাপড় সরিয়ে শক্ত করে ঘুমিয়ে থাকা পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরে। তার পাশেই একে পরের হাত ধরে রুদ্র আর মেঘ শুয়ে আছে। জেনি আর আকাশ কারো মুখে কোন কথা নেই।
আকাশ নিঃশব্দে সেখানে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। কিছু লোক সবাই কে এম্বুলেন্সে ভরে ওদের নিয়ে যায় আর আকাশ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের কোনায় পানি গুলি শুকিয়ে গেছি। জেনি পাশে বসে পাগলের মতো কাঁদছে। রাইমা একের পর এক আকাশের ফোনে কল দিচ্ছে।

“আকাশ ভাইয়া, খবরে দেখলাম লঞ্চের আগুল লেগে ডুবে গেছে। ভাইয়া কই ওরা ঠিক আছে তো। ওদের কাছে ফোনটা দাও তো।”

আকাশের কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ভাইয়ের মৃত্যু বোনের কাছে বলা। রুদ্রের কাছে জানতে ইচ্ছে করছে ‘আচ্ছা রুদ্র ভাইয়ের মৃত্যু বোনের কাছে কিভাবে বলতে হয়।
,
,

আজ আকাশ বাবা হয়েছে, হাসপাতালে ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে দ্রুত রুদ্রের নাম্বারের ফোন বাবা হওয়ার আনন্দ কিভাবে প্রকাশ করতে হয় জানতে। কিন্তু ফোনের ওপশ থেকে একজন কর্কশকণ্ঠে বল ওঠে নাম্বারটা বন্ধ আছে। আকাশের চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরে। সংসারটা তাদের ঠিক চলছে মাঝে মাঝে দীর্ঘ শ্বাসের কারনে থেমে যেতে হয়। হাসতে গেলে কষ্ট। খুব ইচ্ছে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে ওর দুঃখ আনন্দের মুহূর্তগুলো বলতে।

রাইমা ছোট্ট একটা কেক নিয়ে পা টিপেটিপে ভাইয়ের রুমে ডুকছে। আজ যে তার ভাইয়ের জন্মদিন। পিছন পিছন রাকিব ধীরু পায়ে রুমে ডুকছে।
রুমের ভিতর ডুকতেই কিছু ছোট ছেলে মেয়ের কন্ঠ ভেসে ওঠে- ‘ফুপ্পি আমি এখানে’ শব্দ গুলো কানে যেতেই দু কান চেপে ধরে বসে পরে।
পাশেই চোখ পরে মেঘের বানানো কাঁথার দিকে। নিচের নামটা ফাঁকা পরে আছে। মেঘের হাসি মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মেঘ মুচকি হেসে বলে ‘এই তো দু মাস বাকি।”

রাইমা কাঁথাটা বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। রাকিব রাইমার ঘাড়ে হাত রাখতেই রাইমা ওঠে রাকিব কে জড়িয়ে ধরে।

রাকিবের মনে পরে মেঘকে ধন্যবাদ জানানো হয়নি এত ভালো একজন জীবনসঙ্গিনী দেওয়ার জন্য।
তার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। চোখের সামনে ভেসে মেঘের বলা কথা গুলো-

“প্রত্যেক মানুষের জীবনে অতিত থাকে। তাকে কখনো ভুলা যায় না। তাকে নিয়ে যত অনুভূতি থাকে সব জীবনের প্রথম অনুভূতি। আপনি যখন সেই অনুভূতির সাম্মোখিন হবেন ততবার আপনার তার কথা মনে পরবে। তাই বলে এই নয় দ্বিতীয় বার কারো প্রেমে পরা যাবে না। প্রেমে মানুষ পরে বহুবার তবে হৃদয়ের প্রেম একবারই হয়। যাকে সে হৃদয়ের ভিতর রেখে দেয়।

তবে বেঁচে থাকা, ভালো থাকার জন্য আমাদের আরো একজনকে বেঁছে নিতে হয়। দিন শেষে অতীত ভুলে সেই মানুষটার খুশির জন্য আমাদের প্রানপণ লড়তে হয়। কারন আমরা সেই মানুষটাকে সুখী দেখতে চাই।”

#সমাপ্ত