Monday, August 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1557



সংসার পর্ব-১৩

0

#সংসার
#পর্ব_১৩

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

রুদ্র স্যার তার বুকের মাঝে টেনে নিয়ে কপালে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বালিসে মাথা রাখল।
আমিও রুদ্র স্যারের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম।

আজানের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি ওঠে ওজু করে রুদ্র স্যারকে ডেকে তুলি। দুজনে একসঙ্গে নামাজ পড়ে আবার শুয়ে পরি। শেষ রাতে ঘুমানোর জন্য এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি। বিছানার উপর শুতেই আবার ঘুমে তলিয়ে যাই।

২৫.
একের পর এক ফোনের রিংটনের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি সকাল ১১ টা বাজে। বাহিরে রোদ ঝলমল করছে। আমি ওঠে ফ্রেশ হয়ে রুদ্র স্যারকে ডেকে তুলি সে ওঠে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার শুয়ে পড়ে।
আবার ফোন বেজে ওঠলে দেখি রাকিব ভাই কল দিচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরি। এর আগেও আট বার কল দিয়েছে।

“হ্যালো, হ্যালো মেঘ শুনতে পাচ্ছো? কই ছিলে এতক্ষণ কত কল দিলাম ধরলে না যে?”

” ঘুমে ছিলাম রাকিব ভাই তাই ধরতে পারেনি। এতগুলো কল দিলেন কিছু কি বলবেন?”

“হুমম মেঘ, আজ রাইমার সাথে মিট করার কথা ছিল। কিন্তু আমি ভিষন নার্ভাস তাই বলছি তুমি আমাদের সাথে যাবে। সেই সাথে রাইমা রুদ্র সাহেব কে নিয়ে আসবে। যদি সবাই মানে তবেই সামনে আগাবো। তুমি আমার সাথে থাকবে আর রাইমার সাথে রুদ্র সাহেব আসবে।”

আমি রাকিব ভাইয়ের কথায় তাড়াতাড়ি নাস্তা করে রাকিব ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরি। আজ ফুপি আর বাবা দুজনেই এখানে থাকবে তাই পূর্ণতাকে ফুপি নিজের কাছে রেখে দিছে। আমি কয়েক বার রুদ্র স্যার কে ডাকলে সে ওঠে না তাই না বলেই চলে আসি।
,
,
আমরা রেস্টুরেন্টের ভিতর বসে আছি। আমি, রাকিব ভাই, রুদ্র স্যার, রাইমা আপু, আর রুশা ম্যাম। রাকিব ভাই রুদ্র স্যারকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব বুঝিয়ে বলছে।

“রুদ্র সাহেব আমি বুঝতে পারছি আপনার মাঝে এই মুহূর্তে অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। তবে সেগুলোর কিছুটা সত্য আর কিছু টা ভুল। আপনি হয়তো জানেন আমার সাথে মেঘ একটা সম্পর্কে আছে কিন্তু সত্যিই বলতে সেই দিন বৃষ্টির বিয়ে যাতে ভেঙ্গে না যায় তাই মেঘ মিথ্যে বলেছিল আমার আর মেঘ আলাদা সম্পর্ক আছে। তবে হ্যাঁ মেঘের উপর আমার একটা আলাদা দুর্বলতা আছে যেটা আমি রাইমাকে আগেই বলেছি। কিন্তু আমাদের অন্যকোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া আমি রাইকে ভালোবাসি আর আমার বিশ্বাস আমি রাইমাকে সুখী রাখতে পারব। বাকিটা আপনাদের সিদ্ধান্ত।”

“আমি সবটা জানি। আজ সকালেই রাইমা আমাকে সব বলেছে। আপনার কথার ধরন আমার পছন্দ হয়েছে। তাছাড়া রাইমা ছোট না ওর ভালো টা ও সবার আগে বুঝবে। আপনার সাথে আমার আলাদা কথা আছে আপনি একটু আমার সাথে অন্যপাশে চলেন। সেই সাথে খাবারের অর্ডার ও দিয়ে আসি”

রুদ্র স্যার রাকিব ভাইকে তার সাথে করে অন্যপাশে হেঁটে চলে গেলে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম এখানে তৃতীয় ব্যক্তি কে আছে যে যার কারণে অন্য পাশে চলে গেল? রাকিব ভাই আর রুদ্র সাহেবের সাথে রুশা ম্যাম ও চলে গেল খাবার অর্ডার দিতে। যাওয়ার আগে রুশা ম্যাম সবাইকে জিঙ্গেস করছে কার কি লাগবে তখন আমি বলি- “ম্যাম আপনার পছন্দ মত সবার জন্য একই খাবার অর্ডার দেন।”

আমি রুশা ম্যামকে ম্যাম বলায় রাইমা আপু শব্দ করে হেসে বলে।
“ওহহ মেঘ এখনো কি তুমি অফিসে কাজ করছো নাকি তুমি এখন আমাদের বাড়ির বউ। আমাকে রুশা আপিকে তুমি আপু বলেই ডেকো।”

রাইমা আপুর কথা শুনে রুশা ম্যাম অহংকার করে বলে-
“উহু রাইমা তুমিও না। মেঘের কি যোগ্যতা আছে আমাকে আপু বলার। কোন রকমে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য মেঘ এই বাড়িতে ডুকছে। তাছাড়া কি যোগ্যতা আছে মেঘের। এত লাই দিলে দেখবে মাথায় উঠে নাচবে।

“আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল-
“এই যে মেঘ তুমি সব ম্যাম বলেই ডাকবে।”

রুশা ম্যাম চলে যেতে রাইমা আপু আমার পাশে এসে বলল-

“মেঘ কিছু মনে করো না, রুশা আপি এমনই আর শুনো এখন যা হবে কিছুই সিরিয়াসলি নিবে না। আমি আজ সকালে ভাইয়াকে সব বলার পর সে তোমার উপর রেগে ছিল। এতো বড় সত্যি কথা কেন লুকালে চাইলে ভুল বুঝে বড় কিছু হতে পারত। তাই তোমাকে কী করে শাস্তি দেওয়া যায় সারা রাস্তা ভাইয়া ভেবেছে। শাস্তি হিসেবে তোমার ভাইয়াকে প্রপোজ করতে হবে। কিন্তু আমি যে তোমাকে এসব বলছি ভাইয়া যেন না জানে। তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য অনেক কিছু করবে। তুমি রাগ করবে না কোন কিছুতে ঠিক আছে।”

২৬.
রুদ্র স্যারদের আসার শব্দ পেয়ে রাইমা আপু তাড়াতাড়ি আবার তার জায়গায় গিয়ে সাধারণ হয়ে বসলো। আমি মনে মনে ভেবে নিয়েছি রুদ্র স্যারকে ওল্টো আমি জেলাস ফিল করাব ওল্টো সেই আমাকে প্রপোজ করবে। মনে মনে এই রকম বাচ্চাদের মতো প্রতিজ্ঞা করতেই নিজের আনমনে হেসে ওঠলাম।

রাকিব ভাই আমার পাশে বসতে বসতে বলল-

“বুঝলে মেঘ এই বিয়ে সম্ভব না, এখানেই সব কিছুর ইতি টানা দরকার। রুদ্র সাহেবের ও এটাই ইচ্ছে। আমি চায় তুমি রুদ্র সাহেবকে যেভাবে পার রাজী করাও।”

আমার রাকিব ভাইয়ের কথায় দম ফেটে হাসি পাচ্ছে। লোকটা গুছিয়ে মিথ্যে কথাও বলতে পারে না আর আমার সাথে তো মোটেই না। আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম-

“কি আর করবেন রাকিব ভাই সবার কপালে সব থাকে না। রুদ্র স্যার এটা চাচ্ছে না তাহলে ভালো কিছু ভেবেই নিষেধ করছেন। আমিও এটাই চাই। এখানেই সব কিছুর ইতি হোক।”

আমার কথা শুনে রাকিব ভাই আর রুদ্র স্যার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। রুদ্র স্যার সন্দেহের চোখে রাইমা আপুর দিকে তাকালে রাইমা আপু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকায়।

রুদ্র স্যার আর কিছু না ভেবে রুষা ম্যামের পাশে গিয়ে বসে পিঠের উপর হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। এতক্ষণ সব ঠিক চললেও এবার বেশ রাগ হলো। আমি চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছিলাম। রুশা আপু রুদ্র স্যারের সাথে লেপ্টে বসে আছে। আবার দুজন দুজনে খাইয়ে দিচ্ছি। রাগে আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পড়লো। সবার আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলেও রুদ্র স্যার দেখে ফেলে। সাথে সাথে রুশা ম্যামকে ছেড়ে দুরত্ব বজায় রেখে বসলো। হঠাৎ এমন হওয়ার রুশা ম্যাম রুদ্রের স্যারের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্যার কিছু না বলে চুপচাপ খেতে থাকল।

হঠাৎ রুশা ম্যামের হাতে ধাক্কা লেগে একটা গ্লাসের পানি সব এসে আমার গায়ের উপর পড়লো। হালকা সিল্ক কাপড়ের জামা উপর পানি পড়ায় উপর থেকে পেট দেখা যাচ্ছে। আমি কোন রকমে উরনা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছি। বসে থাকার জন্য না বুঝালেও যখন উঠে দাড়াই তখন বিচ্ছিরি ভাবে শরীরের ভিতরের অংশ ফুটে ওঠে। আমি এসব খেয়াল করেনি কিন্তু রুদ্র স্যার তার গায়ের কোট খুলে আমাকে পরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ আগের কাহিনী মনে পরলে রাগে আমি কোট টা খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হাঁটতে শুরু করে।

রুদ্র স্যার ওখানেই দাড়িয়ে রুশা ম্যামকে বকতে থাকে কারন রুশা ম্যাম ইচ্ছে করেই আমার গায়ে পানি ফেলে রেস্টুরেন্টের ভিতর অপমান করতে চেয়েছিল। রুদ্র স্যার আমার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে সবটা দেখছেন।

আমি সেদিকে না তাকিয়ে একা একা গাড়ির দিকে পা বাড়াই। তখন রাস্তার কিছু বাঝে ছেলেরা খারাপ ভাবে ইঙ্গিত করে কথা বলে।

“কি মালরে মামা। দেখছিস পুরাই হট।”

কথাটা শুনে পাশের ছেলেটা দাত কেলিয়ে বলে ওঠলো- “মামা রে কি দেখাইলি। একে পেলে তো জীবন ধন্য হয়ে যাবে।”

“আরে মামা কস কি, এরে কি তোরা দুজনেই নিবি? আমাদেরও একটু ভাগ দিস।”

“ও ফুলটুসি, এভাবে আগুন লাগিয়ে হেঁটে কই যাও, একটু দাড়াও।”

ছেলেগুলো আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে রুদ্র স্যারকে জড়িয়ে ধরি। এতক্ষণ রুদ্র স্যার রুশা ম্যামকে বকার জন্য এসব কিছু খেয়াল করেনি। হঠাৎ এভাবে এসে দৌড়ে জড়িয়ে ধরার কারণে সামনে তাকিয়ে দেখে আমার পিছনে কয়েকটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। রুদ্র স্যারের বুঝতে বাকি রইলো না কি হইছে।
ছেলেগুলো রুদ্র স্যারকে দেখে ভয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

স্যার আমাকে আড় কোলে তুলে নিয়ে হনহন করে হেঁটে গাড়ির ভিতরে এনে ধক করে গাড়ির সিটে উপর ছুড়ে মারে। ছেলেগুলোর উপর রাগ এখন আমার উপর ঝাড়ছে। রুদ্র স্যার গাড়িতে ওঠে আর কারো অসার অপেক্ষা না করেই আমাকে নিয়ে চলে যায়। রাইমা আপুও ভয়ে কিছু বলে না। ফুল স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে। আমি ভয়ে শ্বাস নিতে ভুলে গেছি। মনেহচ্ছে এখনি না আবার এক্সিডেন্ট করি।

মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি আর প্রার্থনা করছি। এবারের মত আল্লাহ বাঁচিয়ে দেও আর কখনো ভিজে গেলে গা থেকে কোট খুলব না।

#চলবে,,,,,,,,,

সংসার পর্ব-১২

0

#সংসার
#পর্ব_১২

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

আমি রাইমা আপুর কথা শুনে লজ্জায় চোখ নিচে নামিয়ে নিয়ে আসি। এভাবে সাজানোর কারন জিঙ্গেস করলে চোখ টিপে বলে সারপ্রাইজ আছে।

কিছুক্ষণ পর রাইমা আপু আমার হাত ধরে উপরে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদে ওঠে একটা কালো কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে দিয়ে রাইমা আপু আমাকে ছাদের মাঝখানে নিয়ে আসে। আমার চারপাশে মানুষের চুপচাপ নিরবতা বুঝতে পারছি। এখানে হয়ত আরো অনেকে আছে কিন্তু কেন এসেছে। আর আমার চোখ বেধেঁয় বা কেন রেখেছে।

২২.
মনের মাঝে হাজার প্রশ্ন উকি দেয়, তখনই রাইমা আপু আমার চোখের উপর কাপড় খুলে হ্যাপি বার্থডে বলে চিৎকার করে ওঠে। সাথে সাথে রাইমা আপুর গলার সাথে গলা মিলিয়ে উপস্থিত সবাই হ্যাপি বার্থডে বলে ওঠে।

আমি অবিশ্বাস্য চোখে পিটপিট করে সবার দিকে তাকাই এতক্ষণ চোখ বন্ধ থাকায় কিছু দেখতে পারছি না। চোখ বুঝে আবার সবার দিকে তাকায়। রুদ্র স্যার, শাশুড়ি মা, খালা শাশুড়ি, বাবা, ফুপি, পূর্ণতা ফুপির কোলে, রাইমা আপু আর রুশা ম্যাম সাথে বাড়ির সব কাজের লোক দাড়িয়ে আছে। বাহিরের কেউ নেই।
ছাদের চারপাশ খুব সুন্দর করে ফুল আর রঙিন লাইট দিয়ে ডেকারেশন করা।

আমি সবকিছু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখতে থাকি। আজ যে আমার জন্মদিন ভুলেই গেছি। কখনো এতো সুন্দর করে জন্মদিন পালন করা হয়নি। বৃষ্টির জন্মদিন উদ্দেশ্যে ফুপি পায়েশ রাধলে সেটাই আমি আমার জন্মদিনের সারপ্রাইজ হিসেবে নিয়ে নিতাম।

হঠাৎ রুদ্র স্যারের গলায় বাস্তবে ফিরে আসি।
“মেঘ কেক টা কাটো তাড়াতাড়ি।”

আমি রুদ্র স্যার কথায় তার দিকে তাকায়। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে তাকে খুব মানিয়েছে। চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা একটা ভাব ফুটে আছে। ঠোট দুটো হালকা লালচে কালারের। সব মিলিয়ে পাঞ্জাবিতে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
হঠাৎ রুদ্র স্যারের পাশে রুশা ম্যামকে দেখে কপাট রাগ হয়। রুশা ম্যাম স্যারের এক বাহু ধরে দাড়িয়ে আছে। এভাবে লেপ্টে থাকার মানে কী? আর রুদ্র স্যারই বা তার পাশে দাড়িয়ে আছে কেন?

রুশা ম্যাম এতক্ষণ এসব অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে ফিসফিস রুদ্র স্যারকে বলছে-
“রুদ্র তুমি যে বললে সারপ্রাইজ আছে। মেঘের জন্মদিন এটাই কী সেই সারপ্রাইজ? আর এই জন্য এতক্ষণ এত গুলো জামা চেইঞ্জ করে পরলাম? আমি কিনা ভাবলাম তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দিবে কিন্তু তুমি মেঘের জন্মদিনের জন্য এসব করেছো?”

রুদ্র স্যার মাথা নেড়ে মুচকি হেসে বলল-
“হুমমমম, ফ্রেন্ডের প্রিয় মানুষটির জন্য একটু আধটু সাজতে তো হয়ই। আর তোকে বললে তো আসতি না আর সাজতি তো দূরের কথা।”

রুদ্র স্যার কথায় রুশা আপু রেগে চিৎকার করে বলে- “উফফফ বারবার এই মেঘ মেঘ,,,,”

এতটুকু বলতেই সবাই তার দিকে তাকায়। সবাই কেক নিয়ে আসতে বিজি ছিল তাই রুশা আপুর ফিসফিসিয়ে কথা কেউ শুনেনি হঠাৎ এই ভাবে চিৎকার করে ওঠলে সবাই হতবাক হয়ে তাকায়।

রুশা আপু তার বোকামি বুঝতে পেরে মুখে জোর করে হাসি টেনে বলল-
“মেঘ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, তাড়াতাড়ি কেক কাটো। আমার তো আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না।”

আমি রুশা আপুর ভিতরের অবস্থা বুঝতে পেরে পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। ভিতরে ভিতরে হাসিতে দম আটকে আসছে। আমি ঠোঁট চেপে কোন রকমে হাসি থামিয়ে কেক কাঁটি। একে একে সবাইকে খাইয়ে দেই।

আমি খুশিতে রুদ্র স্যারকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরি। আস্তে আস্তে আমাদের দুজন কে রেখে ছাদ থেকে সবাই নিচে চলে যায়। সবাই চলে যেতেই রুদ্র স্যার আমাকে কোলে ওঠিয়ে ছাদের উপরে ফুল দিয়ে সাজানো দোলনায় বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।
আমি চুপচাপ কিছু না বলে পা দিয়ে ছাদের উপর ধাক্কা দিয়ে আস্তে আস্তে দোল খাচ্ছি। হঠাৎ রুদ্র স্যারের দিকে চোখ পরতে দেখি সে নেশা লাগানো চোখে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় অন্য দিকে তাকাই।

“বুঝলে মেঘ তোমাকে আজ অনেক বেশি হট লাগছে।”

আমি রুদ্র স্যারের কথা শুনে আরো বেশি লজ্জা পাই। স্যার যে লজ্জায় উপরে আরো লজ্জা দিতে ভালোই পারে সে বিষয়ে আমার বিশেষ জ্ঞান অর্জন করা হয়ে গেছে।

রুদ্র স্যার আমাকে লজ্জা পেতে দেখে শব্দ করে হেসে ওঠে। আমার কোল থেকে ওঠে এক লাফে দাড়িয়ে যায়। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো-

“ওঠো ওঠো, এভাবে লজ্জা পেলে এখানেই রাত কাটিয়ে দিতে হবে। আর সেই সাথে আমার প্লান ডুবে মারা যাবে। ঘরোয়া ভাবে সব কিছু করলাম যাতে তাড়াতাড়ি সব কিছু শেষ হয় আর তোমাকে নিয়ে আজকের রাতটা নিজের মতো কাটাতে পারি। তাড়াতাড়ি ওঠো তো”

আমি হাত ধরে ওঠতে নিলে, স্যার কিছু একটা ভেবে আমাকে কোলে তুলে বাসার বাহিরে নিয়ে বাইকে উপর বাসিয়ে দেয়।

২৩.
আস্তে আস্তে করে বাইক চলছে। চারপাশে মনমুগ্ধকর পরিবেশ। রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে দু একটা ট্রাক যাচ্ছে। তাছাড়া দিনের কোলাহল পরিবেশ রাতের আকাশে সব মুক্ত হয়ে চারদিকে মুগ্ধতায় ভরপুর।
ছোটবেলা থেকে সব সময় আমার রাতের এমন পরিবেশ দেখতে ইচ্ছে হলেও বাবা কখনো বের হতে দেয়নি।

রুদ্র স্যার এর মাঝে বেশ কয়েকবার তাকে ধরে বসতে বললেও আমি লজ্জায় ধরি নাই। তাই এবার বেশ জোড়ে ব্রেক করায় আমি পরে যাওয়ার ভয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলে স্যার মুচকি হেসে আমার বাইক চালাতে শুরু করে।

বাইক এসে আমার চিরচেনা পছন্দের জায়গা নদীর পাড়ে থামে। রাতের আকাশে নদীর সৌন্দর্য আরো ফুটে ওঠেছে। মাঝে মাঝে নদীর বুক থেকে ধমকা হাওয়া আসছে। আমি নদীর তীরে নেমে প্রকৃতি অনুভব করি তখন রুদ্র স্যার গুটিগুটি পায়ে পিছনে এসে আমার চুলের ক্ষোপা খুলে দেয়। কোমর ছড়ানো চুল গুলো ধমকা হাওয়া এলোমেলো করে দিচ্ছে।
আমি এক দৃষ্টিতে রুদ্র স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি। স্যার আমাকে আঙুলের ইশারায় নদীর দিকে তাকাতে বললে সেদিকে তাকিয়ে দেখি নদীর মাঝখানে শত শত ছোট ছোট ক্যান্ডেল জ্বলছে। নদীর ওই কূল থেকে কয়েক জন মানুষ ক্যান্ডেল গুলো ছাড়ছে। ক্যান্ডেল গুলোর মধ্যে হৃদয় আকৃতির ক্যান্ডেল ভাসছে। তার মাঝখানে আলো দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে ‘ভালোবাসি’ লেখা।

আমি খুশিতে স্যারের এইটা বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। স্যার আমার এক হাত ধরে নদীর বুকে ভেসে থাকা ফুল দিয়ে সাজানো একটা নৌকায় নিয়ে বসায়।
রুদ্র স্যার আর আমি পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আসি। নৌকার মাঝি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমার অজানা। পাশে থাকা এই মানুষটার সাথে আমি চোখ বুঝে পৃথিবীর যে কোন জায়গায় চোখ বুঝে যেতেও রাজী আছি।

নৌকা এসে থাকে ছোট্ট একটি দ্বীপে। দ্বীপে ছোট ছোট অনেক গুলো জেলেদের বাড়ি। যারা দু বেলা দু মুঠো খাওয়ার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে যায়।
এখানে এসে বুঝতে পারি, রুদ্র স্যারকে এরা আগে থেকেই চেনে। আর আজ আমরা আসবো তারা আগে থেকেই জানতো। খোলা মাঠে ঘাসের উপর আমাদের জন্য যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে আয়োজন করছে। কিছু কিছু ছোট ছেলে মেয়ে দূর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাদের দেখেছে। আমি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কাছে ডেকে গল্পের আসর জুড়ে দেয়। তখন রুদ্র স্যার দৌড়ে নৌকায় গিয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য চকলেট নিয়ে আসে আর সবার মাঝে ভাগ করে দেয়।

আমি অপরূপ চোখে রুদ্র স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি তখন বৃদ্ধ মহিলা আমার দিকে পায়েসের বাটি এগিয়ে দিতে দিতে বলল-
“আম্মাজান আপনি মেঘা মা না?”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ি।

“আপনার কথা রুদ্র বাবার থেকে অনেক শুনেছি। আপনি খুব ভাগ্যবাতী রুদ্র বাবার মতো জীবন সঙ্গী পেয়েছেন। রুদ্র বাবা খুব ভালা মানুষ আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা এখানে টিকে আছি খালি রুদ্র বাবার জন্য। আমাদের জন্য তো রুদ্র বাবা আল্লাহর তরফ থেকে পাঠানো ফেরেশতা।”

আমি তার কথা গুলো শুনে রুদ্র স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকি। একটা মানুষের ভিতরে আর কত রূপ আছে?কখনো জেদী, কখনো রাগী,কখনো ভালোবাসার কাতর।
রুদ্র স্যার বাচ্চাদের সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে আমার পাশে এসে ঘাসের উপর বসে পরল।
আমাকে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্রু কুঁচকে ইশারায় কি হইছে জিঙ্গেস করলে আমি নিচে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বলে মুচকি হাসি দেয়।

ওখান থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে মাঝ রাত হয়ে যায়। বাসায় ফিরে দেখি বাসার মেইন দরজা আটকানো। রাইমা আপুকে খুলে রাখতে বলেছিলো কিন্তু সে হয়তো ভুলে গেছে। তখন রুদ্র স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
” আগে যখন বাসায় ফিরতে লেইট হতো তখন ইচ্ছে করেই দেয়াল টপকে ভিতরে যেতাম যদিও আম্মু বা রাইমাকে কল দিলে খুলে দিত। কিন্তু খুব শখ করেই আমি গেট টপকাতাম। আজ টপকাবে আমি তোমাকে তুলে দিব তুমি পারবে, নাকি রাইমাকে কল দিবো?”

আমি হেসে বলি-
“না আজ বরং দেয়াল টপকে জামাইয়ের বাড়িতে চোরের মতো ডুকি।”

স্যার মুচকি হেসে এক লাফে দেয়ালের উপরে ওঠে আমার দিকে হাত বাড়ায় আমি লেহেঙ্গা এক হাতে ধরে অন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরি। স্যার আমার পাশে এসে শুয়ে পরলে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বলি-
“আমার জীবনের স্মরণীয় দিন গুলো ভিতর আজকে দিনটি দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোবাসি খুব বেশি ভালোবাসি।”

রুদ্র স্যার তার বুকের মাঝে টেনে নিয়ে কপালে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বালিসে মাথা রাখল।
আমিও রুদ্র স্যারের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম।

#চলবে,,,,,

সংসার পর্ব-১১

0

#সংসার
#পর্ব_১১ #বোনাস_পার্ট

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

বারবার কাজি অনুকে কবুল বলতে বলছে, অনু আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ঠোট দুটো কাঁপছে চোখের কাজল লেপ্টে আছে। আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কেউ ভিতর থেকে চেপে ধরেছে। এতো কষ্ট করেও দুটো ভালোবাসার সংসার টিকিয়ে রাখতে পারলাম না। এখানেই সব শেষ। বেঁচে থেকেও চারজন মানুষ জীবন্ত লাস হয়ে থাকবে।

হঠাৎ কোথা থেকে দুই জন পুলিশ আর সাথে একটা ছেলে আসে। অনুর বর্ণনায় মনে হলো এই ছেলেটি রাজ। পুলিশ কেন নিয়ে আসলো এমনি গোলমাল করলেই তো রাকিব ভাই একটা উছিলা পেয়ে ভেঙ্গে দিতো। পুলিশ দেখে অনু আর রাকিব ভাইয়ের কাকা মামারা এগিয়ে যায়।
“কি সমস্যা স্যার, আপনারা হঠাৎ এখানে?”

“আমাদের কাছে নোটিশ আছে আপনারা অন্যের বউকে বিয়ে দিচ্ছেন। সেটা সত্যিই কি না দেখতে আসলাম।”

“কি বলছেন এসব? এখানে আমাদের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে।সাপনাদের নিশ্চয়ই কোনো ভুল হইছে স্যার।”

পুলিশ দুটো তাদের কথায় উওর না দিয়ে অনুকে প্রশ্ন করলো-
“আপনার নাম কি অনু?”
অনু মাথা দুলায় যার মানে হ্যাঁ।
পুলিশ আবার জিঙ্গেস করে, “আপনি কি রাজ সাহেব কে চিনেন? আপনাদের ভিতর অন্য কোন সম্পর্ক আছে?”
অনু আবার মাথা দুলালে উপস্থিত সবাই অনুর দিখে ভুত দেখার মতো তাকিয়ে থাকে। এতোক্ষণ এখানে খুশির বন্যা বয়ে গেলেও এখন সবার মাঝে হৈচৈ লেগে গেছে।

২২.
পুলিশ অনুর আর রাকিব ভাইয়ের ফ্যামিলিকে দুইটা অপশন দেয়। এই মুহূর্তে রাজের সাথে অনুর আবার বিয়ে দিতে হবে,নয়তো রাকিব ভাইয়াকে স।তাদের সাথে নিয়ে যাবে, তারপর যে কথা হবে থানায় যেয়ে হবে।
ওখানের সবাই থানার কথা ভেবে কেঁপে ওঠে, অনুর পরিবার রাকিব ভাইয়ের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালে রাকিব ভাই মুচকি হেসে বলে-
“আংকেল আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না, আমি অনুর ভালো চাই। আপনারা ওই ছেলেটার সাথে বিয়ে দিতে পারেন আমার আপওি নেই।”

রাকিব ভাইয়ের কথা শুনে ওখানের সবাই স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়ে। আস্তের ওদের বিয়ে হয়ে যায়। আমি অনুর কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করি-
“অনু তোমাদের যে আগে বিয়ে হইছে, কই তুমি তো বললে না।”

“মেঘ আপু আমিও জানতাম না। এটা রাজ বানিয়ে বলেছে। আর ওই যে ওই দুটো পুলিশ ওটাও নকল ছিলো। রাজের ফ্রেন্ড ছিলো তারা দুইজন।”

আমি অনুর কথা শুনে কিছু অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। রাজ ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান তাকে প্রথম দেখাই বুঝেছি।
ওদের ওখানে সব কিছু ঠিক করে অনেক রাত হয়ে যায়। এদিকে আমার পূর্ণতাকে দেখার জন্য মনও মানছে না। তাই রাকিব ভাইকে চলে যাওয়ার কথা বললে প্রথমে যেতে চায় না। আজ রাত এখানেই থাকতে চায়। যেতে তিন ঘন্টা সময় লাগবে। আর এতো রাতে নিরাপদ নয় এসব রাস্তা তবুও আমি জেদ ধরি সে নিয়ে না গেলে আমি একা যাব। তারপর রাকিব ভাইও রাজি হয়।

রাকিব ভাঈয়ের সাথে বিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় রাকিব ভাইয়ের পরিবারের লোকজন রেখে চলে গেছে শুধু আমি আর ভাইয়া থেকে গেছি। আমরা ফিরে যাওয়ার সময় অনু আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলো কৃতজ্ঞার কান্না।

আমারা বাসে করে বাসায় ফিরবো। বাসে ওঠেই ক্লান্ত হয়ে আমি সিটে গা এলিয়ে দেয়। কয়েক মিনিট পর রাকিব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রাকিব ভাই আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। আমি সিটে আবার এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝে জিঙ্গেস করি।
“কিছু বলবেন রাকিব ভাই?”

“আচ্ছা মেঘ বিয়েটা তুমি ভেঙ্গেছো?”

আমি সেভাবেই চুপচাপ উওর দেয়।
“হুমমম”

“জানো আমি জানতাম তুমি বিয়েটা আটকাবে। নিছের থেকে আমি তোমাকে বেশি বিশ্বাস করি মেঘ। জানো আজ আমি কতটা খুশী। তোমাকে বোঝাতে পারব না।”

আমি রাকিব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
“রাইমা আপুকে ভালোবাসেন?”

“জানি না।”

আমি আবার সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুঝে বললাম-
“প্রত্যেক মানুষের জীবনে অতিত থাকে। তাকে কখনো ভুলা যায় না। তাকে নিয়ে যত অনুভূতি থাকে সব জীবনের প্রথম অনুভূতি। আপনি যখন সেই অনুভূতির সাম্মোখিন হবেন ততবার আপনার তার কথা মনে পরবে। তাই বলে এই নয় দ্বিতীয় বার কারো প্রেমে পরা যাবে না। প্রেমে মানুষ পরে বহুবার তবে হ্রদয়ের প্রেম একবারই হয়। যাকে সে হ্রদয়ে ভিতর রেখে দেয়। তবে বেঁচে থাকা ভালো থাকার জন্য আমার আরো একজনকে বেঁছে নিতে হয়। দিন শেষে অতীত ভুলে সেই মানুষটার খুশির জন্য আমাদের প্রানপণ লড়তে হয়। কারন আমরা সেই মানুষটাকেও ভালোবাসি। ”

কিছুক্ষন দুজনের মাঝে পিনপতন নিরাবতা। নিরবতা কাটিয়ে রাকিব ভাই কিছুক্ষণ পর বলে
“কোথায় যাবে?”
আমি গভীর নিশ্বাস নিয়ে বললাম
“পূর্ণতার কাছে।”

এতো রাতে বাড়িতে ডুকলে কে কি বলবে ভেবে আত্মা কেঁপে ওঠে। বাসার সামনে রাকিব ভাই এগিয়ে দিয়ে রিসকা নিয়ে চলে যায় তাদের বাসায়। আমি আমাদের রুমের দিক তাকিয়ে দেখি রুদ্র স্যার বারান্দা দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে তাকাতে দেখেই রুমের ভিতরে চলে যায়।

আমি আস্তে আস্তে পা রেখে বাসার ভিতরে ডুকি। ভাবছিলাম শাশুড়ি মা আজো বাসায় ফিরেনি কিন্তু বাসায় ফিরে দেখি তিনি বাড়িতে এসেছেন সাথে তার বোন আছে। তারা দুজন হল রুমে বসে গল্প করছে। এত রাতে তাদের বসে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হই। আমি তাদের সামনে গিয়ে সালাম দিয়ে উপরের রুমে সিড়ি দিয়ে ওঠে আসি। শাশুড়ি মা খুব কড়া শাসনের তবে আজ এতো রাতে বাসায় ফিরে কিছু বশছে না দেখে অবাক হয়ে রুমের দিকে পা বাড়াই।

আমি দরজা ঠেলে রুমে ডুকে দেখি স্যার বেডের এক কোনায় বসে আছে আছে। আর পূর্ণতা রুমে নেই। তখন শাওয়ার রুম থেকে কেউ একজন কথা বলতে বলতে বের হয়েছে।
“দেখে তো রুদ্র এই ড্রেসে কেমন লাগছে?”

আমি তাকিয়ে দেখি রুশা ম্যাম বের হচ্ছে। তাকে আমি আরো আগে দুবার দেখেছি রুদ্র স্যারের অফিসে। সে সেখানে লেডি ম্যানেজার। কিন্তু এতো রাতে স্যারের রুমে কেন জিঙ্গেস করতে গিয়েও জিঙ্গেস না করে বলি- “পূর্ণতা কোথায়?”

স্যার আমাকে দেখেও না দেখার মত করে তাকিয়ে থাকে। রুশা ম্যাম আমিকে দেখে বলে- “ওহহ মেঘ তুমি, এতরাতে কোথা থেকে আসলে? আমরা ভবছিলাম তুমি আসবে না। আর পূর্ণতা রাইমার রুমে। তুমি সেখানে যাও।”

রুশা ম্যাম এক প্রকার জোর করেই আমাকে রুমের বাহিরে বের করে দেয়। অনিচ্ছা সত্যেও আমি রাইমা ম্যামের রুমে যাই।

সেখানে যাওয়ার পরই, রাইমা আপু আমাকে হাতে একটা অফ হোয়াইট কালারের উপর মুক্ত পাথরের লেহেঙ্গা ধরিয়ে দিয়ে পরতে বলে। আজ নাকি সারপ্রাইজ আছে।
আমি কিছু না বুঝলেও রুইমা আপুর কথা মতো লেহেঙ্গা পরে আসি। রাইমা আপু চুল বাঁধছে আর আজ সারাদিন কি হলো জিঙ্গেস করছে।

আমি আজ সারাদিন কি কি হলো বলতেই রাইমা আপু চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পরে। আমাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

আমাকে রাইমা আপু নীজের হাতে সাজিয়ে দেয়। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের নিক্ষুত ভাবে দেখতে থাকি। রাইমা আপু আমার দুগালে হাত দিয়ে বলে-

“মাশাআল্লাহ আজ আমার ভাবি কে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। কেউ যেন নজর না দেয়। রুদ্র ভাইয়া তোমাকে দেখে জ্ঞান না হারালে হয়।”

আমি রাইমা আপুর কথা শুনে লজ্জায় চোখ নিচে নামিয়ে নিয়ে আসি। এভাবে সাজানোর কারন জিঙ্গেস করলে চোখ টিপে বলে সারপ্রাইজ আছে।

“চলবে,,,,,,

সংসার পর্ব-১০

0

#সংসার
#পর্ব_১০

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

আমার তার কথা শুনে ঘৃণায় চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পড়লো। রাকিব ভাই তাকে কিছু না বলে রুম থেকে রেগে নিচে চলে যায়।
আমি ধপ করে খাটে বসে পরলাম বাসায় ফিরে কি জবাব দিবো রাইমা আপুকে? কী করেই বা এই বিয়ে ভাঙবো ?”

আমি আর কিছু না ভেবে দৌড়ে রাকিব ভাইয়ের মায়ের কাছে চলে গেলাম। তাকে বুঝালাম যে এই বিয়ে হলে রাকিব ভাই জান্ত লাস হয়ে যাবে। আর রাইমা আপুর ব্যাপারে সব টা বললাম। সব শুনে আন্টি যা বললো তাতে আমি ধমকে দাড়াই।

২০.
“আনুর বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট থেকে অনু এখানেই থাকতো। ওর পড়ালেখা করতে হোস্টেল এ গেলেও লেখাপড়ার খরচ আমরা দিতাম। ছোট বেলায় অনু লক্ষী পতুলের মতো ছিল দেখে তখনই অনুর মাকে কথা দেয় তার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করবো। কিন্ত অনু হোস্টেল এ গিয়ে পুরোপুরি বদলে যায়। ব্যবহার ও বদলে যায়। খারাপ জিনিসে আসক্ত হয়ে পরে। তারপর শুনি রাকিব তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু ও আমাদের আগেই বলে যতদিন প্রতিষ্ঠিত হবে ততদিন যেন তোমাদের ফ্যামিলি কে না জানাই।
কিন্তু আস্তে আস্তে সব শেষ হয়ে যায়। পরিস্থিতির চাপে পরে তুমি বিয়ে করে ফেলো সেদিন আমি তোমার ফুপির কাছে বলতে চাইলে রাকিব আমাকে আর যেতে দেয়নি। ও চাইতো তুমি সুখে থাকো। কিন্তু সেই দিন তোমার ফুপির কাছে বলব না কিন্তু সর্ত দিয়েছিলাম দুই দিনের ভিতর বিয়ে করতে হবে। তারপর ওই বাড়িতে মেয়ে পছন্দ হলেও শুনেছি রাকিব বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আমি ভাবতাম কারণ হিসেবে হয়তো ও তোমাকে ভুলতে পারছে না। এদিকে শুনি অনুর সাথে রাকিবের বিয়ে না দিলে ও সুইসাইড করবে সব চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পরি। তারপর সবাইকে বলি সব কিছু তৈরি করতে আর রাকিবকে এনে সরাসরি বিয়ের পিরিতে বসাই। কিন্তু আজ শুনলাম ও অন্যজন কে ভালোবাসে তাই বিয়ে ভেঙ্গেছে। কিন্তু এখন যদি বিয়ে ভেঙ্গে দেয় তাহলে অনু নিজের কি ক্ষতি করে জানি না। সেই সাথে অনুর মা মনি কে আমাদের সারা জীবনের মতো হারাতে হবে।
যেটা হচ্ছে হোক আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আমি আন্টির কথা শুনে রুম থেকে চলে আসি। আন্টির কথাই ঠিক হয়তো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু রাইমা আপুর কী হবে? সে না করবে কোনদিন বিয়ে আর না পারবে ভালো ভাবে বাঁচতে। আর রুদ্র স্যার তার বোনকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখেতে সহ্য করতে পারবে না।

আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রুদ্র স্যার ১১ টা কল দিয়েছে। ফোন সাইলেন্ট ছিল। আমি নিজেই রুদ্র স্যারকে কল দিলে সাথে সাথে ফোন ধরে ধমকের সুরে বলে-
“ইডিয়েট, ফোন ধরতে এতক্ষণ লাগে? কোথায় তুমি,পূর্ণতা কাঁদছে ওকে কী খেতে দিব? আর কিভাবে কি বানাবো?”

আমি এতগুলো প্রশ্ন একসঙ্গে বলতে দেখে মিনমিন করে বলি-“আমি রাকিব ভাইয়ের বাড়িতে। পূর্ণতা খাবা,,,,”

আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কেটে দেয়। আমি কয়েক বার কল দিলে ফোন বন্ধ করে রেখে দেয়।পূর্নতা কাঁদছে, কিছু খাইয়েও যায় নি না জানি এখন কি রকম আছে। আমি আর কিছু না ভেবে রাইমা আপুকে ফোন করে পূর্ণতাকে খবার খাওয়াতে বলি।

২০.
কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা অনুদের বাসায় চলে আসি। বিয়েটা অনুর পৈতৃক বাড়িতেই হবে। আমি অনুকে দেখতে তার রুমে যাই। আর দুই ঘন্টার পর কাজী আসলেই বিয়ে হবে।

আমি অনুর রুমে গিয়ে নক করতেই শুনি অনু কারো সাথে কথা বলছে আর কাঁদছে। আমি বাহিরে আওয়াজ কথা গুলো ক্লিয়ার শুনতে পেলাম না তবে এটা অনুমান করলাম ও হয়তো ওর কোন লাভারের সাথে কথা বলছে।
আমি দরজায় নক না দিয়েই ঢুকে গেলাম। আমাকে অনু সামনে দেখে থতমত খেয়ে ফোন কেটে দিল।আমি অনুকে আস্থত করে সব বলতে বললে অনু বলে-

“কলেজ লাইফে রাজ নামে একটা ছেলের সাথে প্রথমে বন্ধুত্ব ছিল পরে রিলেশনে জড়ায়। কিন্তু ভুল বসত শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। হঠাৎ একদিন অনু সেই ছেলেটার ফোন নাম্বার থেকে সব কিছু বন্ধ দেখে পাগলের মতো হয়ে যায়। ওর বাড়িতে গিয়েও কোন খোজ পায় না। তারপর আস্তে আস্তে ভেবে নেয় ছেলেটা ওর সুযোগ নিয়েছে। তারপর বাড়ি ফিরে রাকিব ভাইয়ের উপর আগে থেকেই দুর্বলতা কাজ করত। সেই জন্যই সবাই ইমোশনাল ব্লাক মেইল করে বিয়েতে রাজি করায়। এর মাঝে একটা অননোন নাম্বার থেকে কল আসলে দেখে ওটা রাজের গলা। পরে রাজের থেকে সব জানতে পারে। রাজের বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছিল আর সে এতোদিন কোমায় ছিল। যার কারনে কারো সাথে যোগাযোগ হয়নি। আর তার যে চাকরি টা ছিল সেটাও চলে গিয়েছে। সব শুনে অনু ছেলেটার সাথে পালাতে চাইলে ছেলেটা না করে দেয়, এটা বলে যে তার চাকরি নেই এখন সে বিয়ে করে অনুকে সুখী রাখতে পারবে না। খাবার তো দূর ঘুমানোর জায়গা টুকুও দিতে পারবে না।”

আমি অনুর কথা শুনে ভাবতে থাকি একটা মেয়ে একজনকে কতটা ভালোবাসলে অন্য জনকে বিয়ে করার জন্য ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে পারে?
তবে ওদের সমস্যা মিটিয়ে দিতে পারলেই হবে হয়তো ওদের সম্পর্ক মিলিয়ে দিলে আরো একটা ভালোবাসার সংসার বেঁচে যাবে।
অনুর ভালোবাসায় ক্ষাত ছিল, তবে অনুর চোখে জল দেখে মনে হচ্ছে সে অনুতপ্ত। সে তার ক্ষাতটা পূরণ করে নিতে চায়, ভালোবাসা দিয়ে।

” ছিহ অনু, তোমাকে কিছু বলতেও ঘৃণা লাগছে। তুমি নিজে তো নিজের ভালোবাসা হারিয়েছো আর অন্যের ভালোবাসা কেড়ে নিচ্ছো। তোমার ধারনা আছে আজ বিয়েটা হলে কতো কিছু হতে পারতো?
রাজের নাম্বার টা দাও, আমি ওর সাথে কথা বলে সব ঠিক করছি।”

“প্লিজ আপু আমাকে বকো মারো তুমি রাজ কি কিছু বলো না, ও জানে না আজ আমার বিয়ে। আর তাছাড়া আমি কিভাবে এখন সবাইকে ছেড়ে পালিয়ে যাব।”

আমি অনুকে ধমক দিয়ে বলি-
” আবার ভুল সিধান্ত নিচ্ছো কেন? পালিয়ে যেতে হবে কখন বললাম। আমাকে ওর ফোন নাম্বার দাও কথা বলছি।”

আমি রাজকে ফোন দিয়ে কথা বলে জানতে পারি রাজ আগে রুদ্র স্যারের অফিসে কাজ করতেন, এক্সিডেন্টের কারণে চাকরি চলে গিয়েছে আর সে চাকরি ছাড়া অনুকে বিয়ে করতে চায় না। পরে আমি বলি তার আগের চাকরি ফিরিয়ে দিব, আর যদি সে অনুকে পেতে চায় তাহলে সে জেনে এখনি অনুর বাসায় এসে অনুর বিয়েতে গন্ডগোল করে। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছু কিছু সময় গন্ডগলেও ভালো কিছু পাওয়া যায়।

কিছু মেয়েরা মিলে অনুকে নীচে নিয়ে এসেছে। কাজী সাহেব ও এসেছে। চারদিকে বিয়ের উৎসবে মেতে আছে। সবাই নিজের ভাবনায় ব্যস্ত, কেউ নতুন বউ ঘরে নিবে সেই আনন্দে আবার কেউ নিজেদের মেয়ে বিদায়ের বেদনায় কাতর। আমি বার বার চারদিকে তাকিয়ে রাজকে খুজছি। রাকিব ভাই রোবটের মতো বসে আছে। অনু চোখ দুটো ভয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দুরন্ত মেয়েটা আজ ভালোবাসার কাছে চুপসে গেছে। কি অদ্ভুত এই ভালোবাসা?

বারবার কাজি অনুকে কবুল বলতে বলছে, অনু আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ঠোট দুটো কাঁপছে চোখের কাজল লেপ্টে আছে। আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কেউ ভিতর থেকে চেপে ধরেছে। এতো কষ্ট করেও দুটো ভালোবাসার সংসার টিকিয়ে রাখতে পারলাম না। এখানেই সব শেষ। বেঁচে থেকেও চারজন মানুষ জীবন্ত লাস হয়ে থাকবে।

#চলবে,,,,,,,

সংসার পর্ব-০৯

0

#সংসার
#পর্ব_০৯

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

আমি চুপচাপ চিরকুট পড়ে মুচকি হাসি দেয়। মনে মনে কিছু একটা ভেবে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠি।

“বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান,
এইবার বুঝবে তুমি কত ধানে কত চাল।”

আজ বিকালে রুদ্র স্যার আমাকে নিতে আসলে ফুপি আর বাবা জোর করে রেখে দেয় এটা বলে যে আজ রাত এখানেই থাকতে হবে। সেই সাথে আমি জোর করে রাকিব ভাইকেও আমাদের বাসায় রেখে দেয়। আর রুদ্র স্যার কে আগেই ফোন করে রাইমা আপুকে নিয়ে আসতে বলি। মনে মনে প্লান করি, আগে দুজনের মত নিব তারপর পরিবার কে জানাব।

১৮.
খাবার টেবিলে বসে সবাই খাচ্ছি, আমার সামনে রাকিব ভাই আর রুদ্র স্যার বসেছে। আর অন্য পাশে আমি আর রাইমা আপু। টেবিলে দুই সাইডে বাবা আর ফুপি বসেছে। আমি সবাইকে খাবার সার্ভ করছি তখন রুদ্র স্যার কে বলি-
“রুদ্র স্যার আপনাকে আর একটু গোস দিব?”

আমার কথায় ওখানের সবাই ভুত দেখার মতো করে আমার দিকে তাকায়। আমি প্রথমে ভুল কী বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নামিয়ে। তখন ফুপি বলে-
“কিরে মেঘ তোরা কি এখনো অফিসের বস আর স্টাফ নাকি? তুই জামাই বাবা কে স্যার ডাকিস কেন? কমনসেন্স বলতে কিছু নেই?”

তখন রাকিব ভাই হেসে বলে-
“আহ বড় মা তুমি মেঘ কে বকছো কেন? এতে মেঘের দোষ কি, নিশ্চয়ই তোমাদের আদরের জামাই মেঘের সাথে বস স্টাফদের মতো কথা বলে। কি রুদ্র সাহেব ঠিক তো?”

আমি কিছু না বলে চুপচাপ খাচ্ছি, লজ্জায় মাথা নিচু করে প্লেটে ভাত মাখিয়ে যাচ্ছি গলা থেকে খাবার নামছে না। পায়ে সুরসুরি পেলে টেবিলে নিচে তাকিয়ে দেখি পায়ে পা দিয়ে রুদ্র স্যার সুরসুরি দিচ্ছে তখন টেবিলের উপর দিয়ে রাগি চোখে তার দিকে তাকালে দেখি রাকিব ভাইয়ের সাথে এমনি সাধারণ ভাবে কথা বলছে। রাকিব ভাই তার অফিসের ব্যাপারে জিঙ্গেস করছে আর সে সাধারণ ভাবে উত্তর দিচ্ছে। মুখের সাধারণ ভঙ্গিমায় রুদ্র স্যার কে দেখে মনেই হচ্ছে না এটা তার কাজ, আমি তার দিকে আড় চোখে তাকালে সবার অগোচরে বাম চোখ ঠিপে দেয়। আমি আচমকা এমন কিছু হওয়ায় খাবার গলায় আটকে যায়। রুদ্র স্যার আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় অন্য দিকে রাকিব ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রুদ্র স্যারের দিকে একটা মানুষের এত রুপ কেমনে হয় আল্লাহ? আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র স্যার রাকিব ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে আমার দিকে গভীর চোখে তাকায়, ঠোঁটে রহস্যময় হাসি। আমি তাড়াতাড়ি করে চোখ সরিয়ে নেই নয়তো অন্য কেউ দেখলে লজ্জায় আমারই পড়তে হবে।

হঠাৎ রাইমা আপুর দিকে চোখ যায়, দেখি রাইমা আপু মুগ্ধ চোখে রাকিব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন পর্যন্ত কিছুই খাইনি, শুধু প্লেটে হাত নেড়েই যাচ্ছে। আমি আপুর পাশে গিয়ে ফিসফিসি করে বললাম-

” ডিয়ার ননদিনী আমার ভাইকে কেউ নিয়ে যাবে না। বিয়ের পর তাকে চোখ ভরে দেখবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে কন্ট্রোল করুন।”

আমার কথায় রাইমা আপু লজ্জায় তড়িঘড়ি করে চোখ সরিয়ে নেয়। আমি সামনে তাকাতেই দেখি রাকিব ভাই আমাদের দিকে তাকায়ে আছে, আমি ভ্রু কুঁচকে তাকে কী জিঙ্গেস করতেই সে মুচকি হেসে টেবিল থেকে ওঠে যায়।

খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। আমি আর ফুপি সব কিছু গুছিয়ে রাখছি। আমি ইচ্ছে করেই সব কিছু গোছাতে দেরি করছি যাতে রুদ্র স্যারের সামনে গিয়ে আর লজ্জায় না পড়তে হয়।
হঠাৎ বাবুর কান্নার আওয়াজ শুনে আর থাকতে পারি না দৌড়ে রুমে চলে যাই। রুমে যেতেই রুদ্র স্যার আচমকা আমাকে টেনে তার বুকের মাঝে নিয়ে যায়।

আমি বিরক্তমাখা ভঙ্গিতে বলি-
“উহু ছাড়েন তো, পূর্নতা কাঁদছে।

স্যার আমাক হাতের ইশারায় বিছানার উপর দেখায় পূর্নতা ঘুমিয়ে আছে। আর তার হাতের ফোন থেকে ছোট বাচ্চাদের কান্নার রিংটোন বাজছে।

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বললাম।
“আপ্নি আমাকে ধোকা দিছেন। প্রতরনা করছেন খুব খুব খারাপ আপনি।”

রুদ্র স্যার ঠোঁটের কোনায় মুচকি হাসি টেনে বলে-
“সুন্দারী বউরা যদি নিজেদের বরদের থেকে পালায়। তাদের কে কাছে পাওয়ার জন্য বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করাকে প্রতরণা বলে না গো রূপাসী বউ।

আমি স্যারের মুখে বউ ডাক শুনে লজ্জায় মাথা নিচে নামিয়ে নিয়ে আসি। স্যার আমার লজ্জার সুযোগ নিয়ে বলে-
” রাকিব সাহেব কিন্তু ঠিকই বলেছেন আমি তো আর তোমার সাথে স্বামী সুভল ব্যবহার করছি না। আজ থেকে করা উচিত কি বলো? তাহলে যদি স্যার থেকে বাঙালি বউদের মতো ওগো ডাকতে পার।”

১৯.
আমি কথা ঘুরানোর জন্য বলি- “আসলে স্যার তেমন না, পূর্ণতার খাবা……”
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। কয়েক মিনিট পর ছেড়ে দিলে আমি বড় বড় শ্বাস নিয়ে রাগী চোখে রুদ্র স্যারের দিকে তাকাই। রুদ্র স্যার আমার দিকে বাকা হেসে বলে-

“স্যার ডাকার শাস্তি এটা, আবার স্যার বললে এমন শাস্তি দিব। আর তুমি তো জানো আমি কথার খেলাপ করি না। আর যদি জামাই ডাকো তবে ভালোবাসা পাবে।”

আমি স্যারের দিকে জেদি চোখে তাকিয়ে বলি- ” আপনি খুব খারাপ লোক একটা। আপনার ভালোবাসা বা শাস্তি কোনটা আমার চাই না। ১০০ বার বলব স্যার দেখবো কি করেন। স্যার, স্যার, স্যার,,,,”

আর বলতে পারিনা তার আগেই রুদ্র স্যার আমাকে ধাওয়া করে। আমি বেডের চারপাশে ঘুরছি সাথে রুদ্র স্যার ও। হঠাৎ পায়ে সাড়ির আচল বেঁধে পরতে গেলে রুদ্র স্যার আমাকে ধরে নেই। বেডের উপর রেখে দুহাত শক্ত করে ধরে শুইয়ে দেয়। আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করি তখনই কেউ দরজায় নক দেয়।

আমি রুদ্র স্যারকে ঠেলে এক দৌড়ে ওঠে দরজা খুলে দিতেই দেখি রাইমা আপু দাড়িয়ে আছে। রাইমা আপুকে দেখে আসহায় চোখে রুদ্র স্যার বলে-

“বোন রে ছোট বেলায় আমি কি তোর কোন ক্ষতি করছিলাম? নাকি চকলেট কিনে কম দিছিলাম? বোন হয়ে ভাইয়ের এতো বড় ক্ষতি কেন করিস বল তো?”

রাইমা আপু কথার কোন আগা মাথা না পেয়ে হাবলার মতো দাড়িয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে-

“মেঘ তোমাকে রাকিব সাহেব ডাকছে। তার মা অসুস্থ তাই সেখানে সে যাচ্ছে সাথে ফুপিও যাচ্ছে। তুমি কী যাবে?”

আমি কিছু না ভেবেই বলে দেয় আমি ওদের সাথে যাব। রুদ্র স্যার কয়েক বার আমার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে পূর্ণতাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায়। আমি সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে তাড়াতাড়ি সব কিছু গুছিয়ে নেই। রাকিব ভাইয়ের মা আমাকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসে আর আজ আমি তার অসুস্থতার খবর শুনে যাবো না? রাকিব ভাইয়ের উপর রুদ্র স্যার প্রথম থেকে রাগ ছিল, মুখে মুখে ভালো ভাবে কথা বললেও ভিতরে সে কখনোই চাইতো না আমি রাকিব ভাইয়ের সাথে কথা বলি। আর আজ যখন সে নিয়ে যেতে এসেছে অথচ আমি রাকিব ভাইয়ের বাড়িতে যাচ্ছি শুনে রেগে চলে গেছে।

আমরা রাকিব ভাইয়ের বাসায় গিয়ে শুনি রাকিব ভাইয়ের বিয়ে তার ফুপাতো বোন অনুর সাথে ঠিক করেছে। আর রাকিব ভাইও কিছু বলতে পারছে অসুস্থ মা কে সে কথা দিয়েছে আজই বিয়ে করবে আর অনুকে বউ হিসেবে মেনে নিবে।
আমি সবাইকে সবকিছু বলতে চাইলেও সবাই সব কিছু গোছাতে ব্যস্ত। এক প্রকার ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হবে তবুও বাড়িতে নিজস্ব আত্মীয় স্বজনের আনাগোনা।

সবকিছু এখানে এভাবেই থেমে যাবে। আবারো একটা বেড়ে ওঠা ভালোবাসা ভেঙে যাবে। দুজনের স্বপ্নের সংসার এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কথা গুলো ভাবতেই মনে হলো কে জেনো কলিজা চেপে ধরেছে। এই রকম পরিস্থিতি আমার থেকে আর কে ভালো বুঝবে?

আমি ধীরগতিতে রাকিব ভাইয়ের রুমের সামনে গিয়ে টোকা দিতেই দরজা খুলে যায়। রুমের ভিতরে ডুকে দেখি রাকিব ভাই বরের পোশাক পরছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে অনুভূতি হীন এক মানব দাড়িয়ে আছে, যাকে যেটা বলা হয়েছে সে সেটাই রোবটের মত করে যাচ্ছে। আমাকে দেখেও না দেখের মতো করে আগে যা করছিল সেটাই করছে।

“রাকিব ভাই এটা কী করলেন? কেনো রাজি হলেন বিয়েতে, আন্টিকে কোন ভাবে মানিয়ে নিতেন।”

“সবার জীবনে সব কিছু পায় না মেঘ। কারো কারো জীবন ভালোবাসা হীন থেকে যায়। আর আমি আমার সেই জীবনকে মেনে নিয়েছি।”

আমি আরো বুঝালে সে একটা কথাই বলে সে তার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে। আমি রাইমা আপুকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বললে বলে আম্মা অসুস্থ শরীর নিয়ে এসব শুনলে বাঁচবে না। যা হবার হবে। এতোক্ষণ রাকিব ভাইয়া সাধারণ ভাবে কথা বললেও যখন বললাম রাইমা আপু যদি মরে যায় তখনই পিছন ফিরে হু হু করে কেঁদে ওঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি তাকে শান্ত করতে চেয়েও পারছি না। তখন রুমে রাকিব ভাইয়ের কাকি আসে-

“একটা বিবাহিত মেয়ের জন্য এখনো কাঁদছিস রাকিব।তাও আবার হবু বউকে বিয়ের পিরিতে বসিয়ে। তোর জন্য সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। আর এই যে মেয়ে কী যেন নাম? ওহ মেঘ তোমাকে বলছি তোমার কি একটু লজ্জা নেই। বিয়ে হয়েছে আর অন্যজন ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছো। আগে তো অনেক বলতাম তখন আসো নাই আমাদের ছেলেক ভেঙ্গে খেয়েছো আর এখন বিয়ের পর ও খাচ্ছো। এবার ওকে একটু সুখে থাকতে দাও।”

আমার তার কথা শুনে ঘৃণায় চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পরলো। রাকিব ভাই তাকে কিছু না বলে রুম থেকে রেগে নিচে চলে গেল।
আমি ধপ করে খাটে বসে পরলাম বাসায় ফিরে কি জবাব দিবো রাইমা আপুকে? কী করেই বা এই বিয়ে ভাঙবো ?”

#চলবে,,,,,,,,,

সংসার পর্ব-০৮

0

#সংসার
#পর্ব_০৮ (#সারপ্রাইজ_পর্ব)

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

এসব ভাবতেই আমার গলা শুকিয়ে যাই। আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে রুদ্র স্যারের দিক পা বাড়াই। আমি স্যারকে কিছু বলতে যাবো, কিন্তু আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার বাম হাত ধরে সিড়ি থেকে টানতে টানতে নিচে নামায়। আমি পা মচকে পড়ে গেলেও সে সেদিকে খেয়াল না করে জোরে জোরে টানতে টানতে রুমের ভিতর নিয়ে এসে বেডের উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

১৬.
রুদ্র স্যার রুমের জানালার পাশে দাড়িয়ে একের পর এক সিগারেট টানছে, আমি পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে তার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম-
“কখনো কখনো চোখের দেখা আর কানের শুনাও ভুল হয়। আপনি আজ যা দেখছেন তা সত্যিনা প্লিজ বিশ্বাস করেন।”

রুদ্র স্যার আমার কথা না শুনে এক দৃষ্টিতে জানালার বাহিরে তাকিয়ে সিগারেট ফুকছে। আমি কাধে হাত রেখে একটু নাড়া দিতেই স্যার আমার দিকে ঘুরে তাকায়।
“বিশ্বাস করুন যা দেখছেন ওসব কিছুই সত্যিই না, আপনি ভুলল বুঝছেন। দয়ে একটু কথা বলেন আপনার পায়ে পড়ি। ওভাবে চুপ করে থাকবেন না, প্লিজজজজজ।”

“কিসের বিশ্বাস, হ্যাঁ? আজ যা দেখছি এটা মিথ্যে নাকি আগেরবার বিয়ের আগে যেটা বলছো সে টা মিথ্যে?
তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো তাও মেনে নিয়েছি কিন্তু বিয়ের পর এটা আমি মেনে কি করে নিব? আর তুমি বলছো বিশ্বাস করতে? ছিহ, কি মুখ নিয়ে এটা বলছো লজ্জা করে না একজনের বউ হয়ে অন্য একজনকে জড়িয়ে ধরতে?”

রুদ্র স্যার যা বলছে তা একটুও ভুল না। আজ এখানে অন্যকেউ থাকলে হয়তো আরো বেশি বলতো। কিন্তু আমি যা করেছি তাও তো ভুল না। চোখের দেখা তো সব সময় সঠিক হয় না।
রুদ্র স্যার আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রুম থেকে বের হবার জন্য পা বাড়ায়।

আজ রাগের মাথায় কী না কী করে ভাবতেই শরীরে কাটা দেয়। না জানি আজ নিজের কী ক্ষতি করে বসে।
আমি দৌড়ে গিয়ে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরি। পা থেকে রক্ত পরছে সোজা হয়ে দাড়াতে পারছি না কিন্তু এই মুহূর্তে আমার পায়ের ব্যাথার কথা ভুলে গেছি।
আমি পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে গেলে স্যার আমাকে ঝাটকা মেরে সরিয়ে দেয়। আমি টাল সামলাতে না পেরে পাশের টেবিলের উপর পরে জোরে চিৎকার করে ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
,
,

রাকিব ছাদ থেকে নিচে যাওয়ার সময় রুদ্র কে দেখে তখন কি না মনে করলেও এখন খুব ভয় লাগছে না জানি ভুল বুঝে আবার কি করে ফেলে।
রুমে এসে একটু চোখ বুঝলেও মেঘের কথা মনে পরতে আর রুমে শুয়ে থাকতে পারে না। অন্তত রুদ্র সাহেব কে সব বলে ভুলটা ভাঙ্গিয়ে দেওয়া উচিত।

রাকিব দ্রুত গতিতে ছাদে ওঠে দেখে কোথাও মেঘ বা রুদ্র নেই। ফিরে আসার সময় কোন রিংটোনের শব্দ পেয়ে সেদিকে পা বাড়ায়। মেঘের ফোন পড়ে আছে আর কে যেন বার বার কল দিচ্ছে।

রাকিব ফোনটা তুলে নিলেও রিছিব করে না, কল টা কেটে যেতে দেখে ১৩ বার কল দিছে হয়তো জরুরী কথা ভাবতে ভাবতেই আবার কল দেয়। রাকিব আর কিছু না ভেবে কলটা রিছিভ করে।

“মেঘ তোমার কি কমনসেন্স বলতে কিছু নেই বলো তো? আমি এদিকে বসে যে চিন্তায় মরে যাচ্ছি সে টা কি ভাবছো একবার ও? আমি বুঝতে পারছি তুমি ব্যস্ত তাই বলে একটা বারও জানাতে পারলে না ওখানে কি হলো? রাকিব সাহেব কি বললো, বিয়ে কি ঠিক হয়েছে?
বলতে বলতে ফোনের ওপাশে রাইমা ডুকরে কেঁদে ওঠে। আবার বলে-
“ও মেঘ আমি জানি তুমি একজন দায়িত্বজ্ঞান মেয়ে। ভালো কিছু হলে অন্তত একবার হলেও কল দিতে। খারাপ খবর দেখেই কল দিচ্ছে বলছো না আর কল ধরছো না, তাই না?
জানো মেঘ আমার ভাগ্য টাই এমন যাকে মন থেকে চাই কখনো পাইনি। খুব ভালোবাসি যে রাকিব সাহেব কে। তাকে ছাড়া টিনেজারদের মতো আত্মহত্যা করতে পারবো না ঠিকই কিন্তু জীবন্ত লাস হয়ে থাকবো। কি হলো, কথা বলছো না কেন মেঘ। যা হইছে বলো আমি মানিয়ে নিবো তবুও চুপ করে থেকে আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিও না দয়া করে।”

কথাগুলো বলতে বলতে রাইমা আবার ডুকরে কেঁদে ওঠৈ। রাকিব চোখ থেকে এতক্ষণে কয়েক ফোটা পানি পড়ল, একটা মেয়ে তাকে এতটা ভালোবাসতে পারে সে কল্পনাই করতে পারেনি। কথা ঘুরানোর জন্য রাকিব বলল-
“হ্যালো, হ্যাঁ কে বলছেন?”

“আপনি কে? আর মেঘের ফোন আপনার কাছে কেন? কে বলছেন আপনি। নাম কি আপনার?

“জ্বী রাকিব আহমেদ। আপনি রাইমা তাই নাহ?”

রাইমা রাকিব প্রশ্নের উওর না দিয়ে কিছু না ভেবেই মনের আবেগে বলে-
“আচ্ছা আপনার কি বিয়ে ঠিক হইছে, আপনি কি বিয়ে করছেন? খুব সুখে রাখবেন আপনার বউ কে তাই না?”

“চোখের সামনে এমন একটা সুন্দরী মেয়েকে কাঁদতে দেখে কে পারে অন্য কোথাও গিয়ে বিয়ে করতে? বাই দ্যা ওয়ে আমি সুন্দরীদের জন্য সারা জীবন নিজেকে সিঙ্গেল নামে উৎসর্গ করতে রাজি আছি।”

কথা টা বলতেই রাকিব উচ্চস্বরে হেসে দেয়। মূলত রাইমাকে শান্ত করতে ফাজলামি করে এটা বলল।

১৭.
কিছুক্ষণ আগে রাইমা কি রকম একটা প্রশ্ন করলো তার আগে মেঘকে বুঝে আবেগে কত কিছুই না বলল ভাবতেই লজ্জায় ফোন কেটে দেয় রাইমা। কি করে তার সামনে যাবে ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে। রাকিব সাহেব যে তার এক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আরো লজ্জা পাইয়ে দিল এবার কি করে তার সামনে গিয়ে বলবে “ভালোবাসি আপনাকে খুব ভালোবাসি।”

রাকিব আরো একবার রাইমার ফোনে কল দিলে,কল যাওয়ার সাথে সাথে কেটে দেয় রাইমা। রাকিব মুচকি হেসে ফোনে মেসেজ একটা পার্কের লোকেশন পাঠিয়ে দুইদিন পর দেখা করতে বলে।
,
,

আমার চোখের উপর কয়েক ফোটা পানি পরলে চোখ পিটপিট করে আস্তে আস্তে তাকাই। কোথা থেকে চোখে পানি পরছে দেখতে উপরে তাকিয়ে দেখে রুদ্র স্যার আমার দিকে ঘোড় লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে টুপ টুপ করে জল পরছে। আমি বিছানা থেকে ওঠে বসতে নিলে রুদ্র স্যার বলে ওঠে

“এখন কেমন লাগছে মেঘ?”

“হুমমম এখন ভালো লাগছে।”

আমি উঠে বসতে গেলে ব্যাথায় ‘আহহহ’ বলে কেঁকিয়ে ওঠি। রুদ্র স্যার তড়িঘড়ি করে আমাকে নিজে ওঠিয়ে বসিয়ে দেয়। আমি মাথায় হাত দিয়ে দেখি মাথায় আর পায়ে ব্যান্ডেজ করা।
সিড়ি দিয়ে পরে যাওয়ার পর টান দিয়ে নামানোর সময় কাপড় ছিড়ে হাঁটু ছিলে গেছে।

রুদ্র স্যার করুণ গলায় বলে-
“আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজজজ, আমি বুঝতে পারেনি আমার রাগের কারনে তুমি কষ্ট পাবে।”

আমি রুদ্র স্যারের জবার না দিয়ে ওল্টো বলি-
“বিশ্বাস করেন আমি ওসব করেনি। আপনি যেগুলো ভাবছেন ভুল ভাবছেন। রাকিব ভাইয়ের সাথে আমার অন্য কোন সম্পর্ক নেই।”

রুদ্র স্যার আমাকে টান দিয়ে তার বুকের উপরে মাথা রেখে কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে-
“ভুল হোক বা যাই হোক, আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই প্রথম সত্য। প্রথম বার নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছিলাম। এটা ভেবে প্রথম বার ছেড়ে দিছিলাম যে তুমি সুখে থাকো। কিন্তু তুমি ছিলে কই আর ওল্টো আমিও কষ্ট পেলাম।
দ্বিতীয় বার এই ভুল আর করব না। আমি কখনো তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না। আর যদি না যাও তাই সম্পর্কের প্রথম দিনই কলমে আর শারীরিক ভাবে দুদিকেই তোমাকে নিজের করে নিয়েছে। আমি জানি সেই দিনের কথা, কতটা জানোয়ারের মতো আচারন করেছি তোমার সাথে কিন্তু বিশ্বাস করো সেই দিন যতটা না রাগ ছিল তার থেকেও বেশি ছিল ভালোবাসা।

লজ্জা আর অপরাধবোধে দুইদিন তোমার সামনে যাইনি তোমার চোখের দিকে তাকানোর ও সাহস হয়নি। তাই প্রতিদিন তুমি ঘুমালে পিছনের বারান্দার দরজা দিয়ে আসতাম তোমার সাথে কথা বলতাম। যা তুমি স্বপ্ন ভাবতে। প্রথম প্রথম যখন দেখতাম তুমি আমাকে দেখলে গুটিয়ে যাও, কথা বলতে ভয় পাও তখন নিজের ভিতর অপরাধ জেগে ওঠতো আর গিয়ে কন্টোল করতে না পেরে নিজের ক্ষতি করতাম। খুব ভালোবাসি মেঘ তোমাকে। যতটা সেই সময় তোমার কন্ঠ শুনে, না দেখে ভালোবাসতাম ততটা।

আর আমি অত ভালো না মেঘ এবার কোন ভুল করলে পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো, সুখ হোক দুঃখ দুটোই তোমার সাথে ভাগ করে নিব। আর রইলো বিশ্বাস, তুমি শুধু আমার বিশ্বাস টা কখনো ভেঙ্গো না আমি তোমার জন্য সব উৎসর্গ করবো। যতই ভুল করো অন্তত আমাকে সত্যিই টা জানিও। ”

আমি চুপচাপ রুদ্র স্যারের কথা শুনছি। একটা মানুষ কতটা ভাগ্যবতী হলে আমার একজনকে পায়। আমি সত্যিই দুনিয়ার সেরা ভাগ্যবতী।
আমি স্যারের দু হাত আমার হাতের মাঝে আনতেই স্যার ব্যাথা কেঁকিয়ে ওঠে। আমি স্যারের দিকে তাকাতে মুখে হাসি কিন্তু তার ভিতরেও কষ্টের ছাপ।
আমার হাতের দিকে চোখ পরতেই দেখি হাত রক্তে মেখে আছে। আমার তো ক্লিন করে ব্যান্ডেজ করে দিছে তাহলে এই তাজা রক্ত কী করে আসলো?

তখনই আমার রুদ্র স্যারের বাম হাতে চোখ পরে। বাম হাত ফেটে রক্ত পরছে। বেডের পাশে তাকাতেই দেখি পাশের কাচের টেবিলটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে আছে। হয়তো হাত দিয়ে আঘাত করেই ভেঙ্গেছে। আমি চুপচাপ হাত ক্লিন করে মেডিসিন লাগাতে থাকি।
অভিমানে কথা মুখ থেকে বের হচ্ছেনা চুপচাপ কাঁদছি আর ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
স্যার আমার অভিমান বুঝতে পেরে বলে-

“এই মেঘ প্লিজজ কেঁদোনা তখন তোমাকে ওই ভাবে কষ্ট পেতে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। কিন্তু তুমি এখন যেভাবে কাঁদছো সেটা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। এখন হাতে যা ব্যাথা পাচ্ছি এটা হাতেই থাকছে কিন্তু তোমার এইভাবে কান্নাটা আমার বুকে গিয়ে লাগছে। প্লিজজজ কেঁদোনা।”

আমি কিছু না বলে চুপচাপ ব্যান্ডেজ করে, আবার রুদ্র স্যারের বুকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম ভাঙলে ওঠে দেখি রুদ্র স্যার রুমে নেই। সারা রুম অন্ধকার। আমি আর কিছু না ভেবেই দৌড়ে বাহিরে চলে যাই। ফুপিকে দেখে রুদ্র কই জিঙ্গেস করতেই বলে যে রুদ্র রাতে এসেই চলে গেছে।

আমি দৌড়ে রুমে আসি। এতক্ষণ পায়ে ব্যাথার কথা মনে না থাকলেও দৌড় দেওয়ার কারণে পায়ে ব্যাথা লাগছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে রুমে লাইট অন করে আসে পাশে তাকাতেই দেখি বেডের পাশে বালিশের উপর একটা চিরকুট
“এই টুকু ব্যাথাতেই অজ্ঞান? আমার বউ এতো দুর্বল হলে চলবে না। সারাদিন দিন মার খাওয়ার মতো অভ্যাস থাকতে হবে। যতসব ন্যাকামি।”

আমি চুপচাপ চিরকুট পড়ে মুচকি হাসি দেয়। মনে মনে কিছু একটা ভেবে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠি।

“বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান,
এইবার বুঝবে তুমি কত ধানে কত চাল।”

#চলবে,,,,,,,

সংসার পর্ব-০৭

0

#সংসার
#পর্ব_০৭

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

আমি ফুপির কথায় ধমকে দাড়াই। যেভাবেই হোক এই বিয়ে ভাঙতেই হবে। রাইমা আপুকে দেয়া কথা রাখতে হবে।

পাশে তাকিয়ে দেখি রাইমা আপু দাড়িয়ে আছে চোখে পানি টলমল করছে। আমি তাকে চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করলাম যে কিছু হবে না। আমি সব ঠিক করে দিব।

আমরা সবাই রাকিব ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলাম। আমি, রাকিব ভাই, ফুপি, রাকিব ভাইয়ার একটা ফুপি, ফুপাতো বোন আর রাকিব ভাইয়ার মেজো কাকাও এসেছে। সবাই মেয়ে দেখার জন্য বসে আছি। এর মাঝে আমি বেশ কয়েক বার রাকিব ভাইয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি তবে প্রতিবারই রাকিব ভাইয়ের ফুপাতো বোন ‘অনু’ আমাদের কথার মাঝে ডুকে যেত। তাই আর সময় করে বলা হয়নি।
অনুকে প্রথম দেখাই বুঝেছিলাম গায়ে পড়া মেয়ে বিশেষ করে ছেলে দেখলে তো কথায় নেই।

১৩.
মেয়ে দেখতে এসেও এখানে একটা ছেলেকে সে পটিয়ে নিয়েছে চোখের ইশারায়। আমি সামনে বসে থাকা পাএী না দেখে তাদের চোখের ইশারা দেখছি। আর মাঝে মাঝে আমি মুচকি হেসে উঠছি।
একটা ছেলে বেশ অনেকক্ষণ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি ব্যপারটা সেভাবে না নিলেও এখন বেশ অস্বস্তি লাগছে। ছেলেটা এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ পূর্নতা কেঁদে ওঠে, এত মানুষের আনাগোনা পূর্ণতা অভ্যস্ত না তাই হয়তো বেশ ভয় পেয়েছে। আমি পূর্ণতার কান্না ধামানোর জন্য কোলে করে বাসার বাহিরে বের হলাম। বাসার এক পাশে সুন্দর একটা বাগান পূর্নতাকে কোলে নিয়ে বাগানে ঘুরছি তখনই সেই ছেলেটা এসে আমার পাশে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলল-
“হাই, আম রাহুল এন্ড ইউ”

আমি হাত না বাড়িয়ে ছোট্ট করে জবাব দিলাম-
“মেঘ”

বেশ বিরক্ত নিয়ে আমি ছেলেটার পাশ কাটিয়ে অন্য পাশে দাড়াই। তখন ছেলেটি এসে আবার বলতে শুরু করে-
“হাউ আর ইউ?”আচ্ছা আপনি ছেলের কী হন? আমি মেয়ের একমাত্র কাজিন।

“জ্বী ভালো, আমিও ছেলের কাজিন।”

“আপনি খুব সুন্দর, দেখতে অস্পরীর মতো। বেবী টাও খুব সুন্দর। ঠিক আপনার মতো।

আমি ছেলেটা কথায় মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসি। ছেলেটা আমার পিছন পিছন হাঁটতে হাঁটতে বলে-
“বেবী কাঁদছিল কেন, আমার কাছে দেন আমি বাহির থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। আপনার বোন কিন্তু আপনার মতোই সুইট। নাম কী বেবীর?”

আমি ছেলেটার কথায় তার দিকে তাকায়, ছেলেটা আমকে পূর্নতার বোন ভাবছে।
“জ্বী এটা আমার মেয়ে।”

ছেলেটা আমার কথায় আহম্মকের মতো হয়ে যাই, মুচকি হেসে সরি বলে চলে যায়। আমরা বাকী যতক্ষণ ছিলাম ছেলেটাকে আর দেখিনি। আমার এই মুহূর্তে ছেলেটার মুখটা দেখে খুব হাসি পেলেও, হাসি চেপে বিতরে এসে রাকিব ভাইয়ের পাশে বসি।

রাকিব ভাইয়ের পাশে বসতেই , ভাইয়া আমার কাছাকাছি এসে ফিসফিস আওয়াজে জিঙ্গেস করে-
“মেঘ কই গিয়েছিলে? তুমি কিছু তো বল, তোমার মেয়ে কেমন লেগেছে?”

রাকিব ভাইয়ের কথায় আমি সামনে বসা মেয়ের দিকে তাকাই মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। ফুপি আজই আংটি পরিয়ে যেতে চাই। তখন আমি মেয়ের পাশে দাড়ানো খালাকে উদ্দেশ্য করে বললাম-
“আন্টি আমার মনে হয় ছেলে মেয়ে দুজন দুজনের সম্পর্কে জেনে নিয়ে সামনে কথা বাড়ানো উচিত। দুজন দুজনের সম্পর্কে জেনে নিলে ভালো হয়।”

আমার কথায় সবাই রাজি হয়। কিন্তু রাকিব ভাই আমাকে তার সাথে করে নিয়ে যায়। আমিও যেন এটারই সুযোগ খুজছিলাম। ছাদের একপাশে রাকিব ভাই আর মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। রাকিব ভাই বার বার তাদের মাঝে আমাকে ডাকছে।
আমি পূর্নতাকে কোলে নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমি কাছে যেতেই রাকিব ভাই মেয়েটিকে বলতে শুরু করলো।

“দেখুন আমার একজন অতিত আছে। আর আমি কখনো আপনাকে তাঁর জায়গাটা দিতে পারব না। আপনার সব কিছু পূরন করব দিনশেষে আমার অতিতকেও ভালোবাসবো তার মানে এই নয় যে আপনাকে ভালোবাসবো না। আপনিই যতোটা আমার থেকে চাইবেন ততটাই পাবেন। এটা আপনি যদি মানতে পারেন তাহলে সবাইকে বলে দিবেন আমারা রাজি।”

মেয়েটা নম্র হেসে বলল-
“অতিত সবারই থাকে রাকিব সাহেব। কেউ লুকায় কেউ লুকায় না। আপনার কথা গুলো আমার ভাল লাগছে, তবে আমার কিছুদিন সময় লাগবে তারপর ভেবে জানাব।”

আমরা সবাই ওই বাসা থেকে চলে আসলাম, দুইদিন পর তারা ভেবে জানাবে এ বিয়েতে তারা রাজি কি না। তাছাড়া সবদিক থেকে দু পরিবারের পছন্দ হয়েছে। আমি রাকিব ভাইদের বাসায় এসে বেশ কয়েক বার কথা বলার চেষ্টা করেছি। তবে যতবার কথাগুলো বলতে চাইতাম ততবার রাকিব ভাইয়ের ফুপাতো বোন অনু আমাদের কথার মাঝে নানা বাহানায় আসত। বেশ বিরক্ত হয়ে রাকিব ভাইকে বাবার বাসায় নিয়ে আসি। এখানে বসে নিশ্চিতে সবটা বলা যাবে। রাতে খেয়ে পূর্নতাকে ঘুম পাড়িয়ে রাকিব ভাইকে মেসেজ দিয়ে ছাদে আসতে বললাম।

আমি ছাদের এক পাশে অনেকক্ষণ থেকে দাড়িয়ে আছি। আকাশ আজ পরিষ্কার কোথাও মেঘ নেই। ঝকঝকে চাঁদ মনে হচ্ছে রাতের প্রকৃতি চাঁদের সাথে হাসছে। ফুরফুরে বাসাত গায়ের উপর আচড়ে পড়ছে।
রাকিব ভাই পেছনে এসে ছোট একটা কাশি দিতেই আমি তার দিকে ফিরে তাকালাম। আমি তার দিকে তাকাতেই সে বলল-
“আসলে দুঃখিত, বড় মা জেগে ছিল, আমাকে দেখে তার রুমে ডেকে নিয়ে কথা বলছিল তাই একটু দেরি হলো।”

“আরে ঠিক আছে সমস্যা নেই, আপনি দেরীতে আসলেন বলে রাতের পরিবেশটা একটু উপভোগ করতে লাগলাম। আজকে আকাশ টা খুব সুন্দর তাই না?”

রাকিব ভাই আমার কথা শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল-
“রাতের আকাশ বরাবরই সুন্দর হয়। তুমি আজ অনেকদিন পর দেখছ তাই তোমার আজকের আকাশ সুন্দর মনে হচ্ছে? বাই দ্যা ওয়ে কি জানি বলবে বলছিলে? বলো এবার।”

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম-
“জানেন তো রাকিব ভাই উপরে যিনি আছেন সে কাউকে নিরাশ করেন না। ভালো কাজের ফল ভালো কাজই দেন। আমার একটা অনুরোধ রাখবেন?”

রাকিব ভাই আমার দিকে ভ্রু কুচকে কী জিঙ্গেস করতে আমি বললাম-
“আপনি এই বিয়ে ভেঙ্গে দেন। আপনাকে রাইমা আপু খুব ভালোবাসে। তাছাড়া আমি রাইমা আপুকে কথা দিয়েছি আপনাকে তার কাছে নিয়ে আসব। প্লিজ আপনি এই বিয়ে ভেঙ্গে দেন।”

রাকিব ভাই আমার কথা শুনে একটু দম নিয়ে বলল-
“মেঘ আমার জীবনের প্রথম সত্য আমি তোমায় ভালোবাসি, দ্বিতীয় সত্য আমি তোমার কোনো কথা ফেলতে পারি না। তবে আজকের জন্য আমাকে মাফ করে দেও আমি তোমার এই কথাটা রাখতে পারবো না।”

১৪.
“রাকিব ভাই এভাবে কেন বলছেন? রাইমা আপু খুব ভালো একটা মেয়ে আপনাকে খুব ভালোবাসে। দেখবেন আপনারা খুব সুখী হবেন।”

“মেঘ তুমি বুঝতেছো না, আমি জানি রাইমা খুব সুইট একটা মেয়ে। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমি জানি তুমি রুদ্র সাহেব কে ভালোবাসো। আমি তোমার উপরও রেগে নেই। আমার ভালোবাসা এক তরফা যেই দিন তোমার ওই কাজল কালো চোখের প্রেমে পরেছিলাম সেই দিন থেকেই জানতাম তুমি কখনো আমার হবে না। কিন্তু তাই বলে এটা ভেবো না তোমাকে পাওয়ার স্বপ্ন কখনো দেখিনি। আমার তোমাকে নিজের করে পাওয়ার স্বপ্ন প্রতিনিয়ত দেখতাম যার জন্য আজ আমি এত ভালো পজিশনে। কিন্তু লাভ কি তোমাকে পাওয়া আর হলো না। তাই বলে আমি সব সময় তোমার সামনে থাকতে পারবো না ক্ষমা করে দিও। রাইমাকে বিয়ে করলে আমি ওখানে গেলেই তোমাকে রুদ্র সাহেবের কাছে দেখতে হবে, যা আমি পারব না। আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না।”

রাকিব ভাইয়ার কথা শুনে আমার মনের শেষ আসা টুকুও ভেঙ্গে গেলো। আমি রাকিব ভাইএর দুহাত ধরে কান্না করে অনুরোধ করে বলতাম-
“রাকিব ভাই এমনটা করতে পারেন না। এই শেষ বার আমার শেষ অনুরোধ রাখেন। আপনি না চাইলে আমি কখনো আপনার সামনে আসবো না। আপনাকে রাইমা আপু খুব ভালোবাসে যতটা আপনি আমাকে বাসেন। আমি যে তাকে কথা দিয়েছে প্লিজ ফিরিয়ে দিয়েন না।”

আমি রাইমা আপুকে দেওয়া কথা রাখতে পারবো না ভেবে নিজের ভিতরে অপরাধরোধ জেগে ওঠে। আজ আমি ওই বাড়িতে না গেলে রাকিব ভাইয়ের রাইমা আপুকে মেনে নিতে কোনো অসুবিধা ছিল না। শুধু আজ আমার জন্য রাইমা আপু তার ভালোবাসা হারালো ভেবেই চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

আমাকে কান্না করতে দেখে রাকিব ভাই আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল-
“মেঘ কেঁদোনা প্লিজ, আমি তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারি না। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। কেঁদোনা আমি তোমার কথা পূরন করতে সাহায্য করবো।”

রাকিব ভাই কথাটা বলেই সিড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো। আমি রাকিব ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিতেই দেখি রুদ্র স্যার উপরের সিড়িতে দাড়িয়ে আছে। রুদ্র স্যারকে দেখে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো। স্যার কী রাইমা ম্যাম আর রাকিব ভাইয়ের সব কথা শুনেছেন? নাহ এতোদূর থেকে কিছু শুনতে পাবে না তবে আমার রাকিব ভাইয়ের হাত ধরা, তাকে আমার চোখের জল মুছিয়ে দেওয়া সবই দেখেছেন নিশ্চয়ই। কখন এখানে এসেছেন তিনি? আবার কি ভুল বুঝবেন, এক ভুল ভাঙতে না ভাঙতেই আবার কি ভুল বুঝবেন?

এসব ভাবতেই আমার গলা শুকিয়ে যাই। আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে রুদ্র স্যারের দিক পা বাড়াই। আমি স্যারকে কিছু বলতে নিবো, কিন্তু আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার বাম হাত ধরে সিড়ি থেকে টানতে টানতে নিচে নামায়। আমি পা মচকে পড়ে গেলেও সে সেদিকে খেয়াল না করে জোরে জোরে টানতে টানতে রুমের ভিতর নিয়ে এসে বেডের উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

#চলবে,,,,,,

সংসার পর্ব-০৬

0

#সংসার
#পর্ব_০৬

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

আমি আর কিছু না বলে বাবুর জন্য ফিটার বানাতে চলে গেলাম। স্বপ্ন দিয়ে আমি কাটিয়ে দিতে পারলেও বাবুর জন্য খাবার লাগবে।

খাবার বানাচ্ছিলাম তখন রান্নাঘরে রাইমা আপু এসে আমার পাশে দাড়ালো। আপু পাশে দাড়িয়ে উসখুস করতে দেখে বুঝলাম আপু আমাকে কিছু বলবে।
বাবুর ফিটার গুলতে গুলতে আপুকে বললাম-
“কিছু বলতে আপু”

আপু মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে লাজুক হেসে বললো-
“হ্যাঁ, আস আসলে মেঘ জানতে চাইছিলাম,,,,”

“এমন করছো কেনো? কি বলতে চাও বলো তো।”

আপু লাজুক হেসে মাথা চুলকে বলে-
“মেঘ আমি ওই যে তোমার একটা ভাই আছে না
তার সম্পর্কে জানতে চাইছিলাম।”

“ওহ রাকব ভাইয়া? হ্যাঁ কি জানতে চাও বলো?”

১১.
“এই তো ওনি কেমন, বিয়ে করেছেন নাকি? আসলে মেঘ তোমার থেকে আমি কিছু লুকাতে চাই না। প্রথম দেখায় তাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। তোমাদের বাসায় গিয়ে তার সব কিছুতে দায়িত্ব পালন আমার বেশ লেগেছে। আমার এই বয়স পর্যন্ত কখনো এমন ফিলিংস হয়নি যতটা তাকে দেখার পর থেকে আমার হচ্ছে।”

আমি আপুর কথা শুনে কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। আমি জানতাম আপু রাকিব ভাইয়াকে পছন্দ করে তবে সিওর ছিলাম না। তার মুখ থেকে শুনার জন্য এতোক্ষণ কথা প্যাঁচালাম। বৃষ্টির বিয়ের দিন রাইমা আপু সাড়িতে বেঝে সিড়ি থেকে পরে যাওয়ার সময় রাকিব ভাইয়া ধরেছিলো। তখন থেকে আপুকে রাকিব ভাইয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখতাম। যখন বৃষ্টির বিয়েতে সবাই সবার সাথে নাচছিলো তখন রাকিব ভাইয়ার সাথে রাইমা আপু নাচছিলো।তারপর থেকে রাইমা আপু রাকিব ভাইয়ের পিছু পিছু ঘুরতো, সে যেখানে যেত তার পিছুপিছু যেত। তখন রাকিব ভাই সে যেখানে যেত তার পিছে রাইমা আপুকে দেখলেও ব্যপারটা কাকতলীয় ভাবেই নিছিলো। কিন্তু আমি সবটা দেখার পর সন্দেহ হয়েছিলো তবে সিওর ছিলাম না।
রাইমা আপু খুব ভালো রাকিব ভাইয়ের সাথে খুব মানাবে। কিন্তু রাকিব ভাই কী মানবে? না মানলেও আমার কথা কখনো ফেলতে পারবে না অনুরোধ করে বললে অবশ্যই আমার কথা রাখবে। আজ হোক আর কাল রাইমা ম্যামকে যদি জীবনে পায় তবে একদিন রাকিব ভাই আমাকে কৃতজ্ঞতা জানাবে।

আমি আপুর দিকে তাকিয়ে তার ফিলিংস সত্য না মিথ্যে জানার জন্য রসিকতা করে একটু হেসে বললাম-
“আপু এটা তোমার আবেগ, ভালো লাগা হতে পারে তবে ভালোবাসা না। কিছুদিন পর চলে যাবে চিন্তা করো না। তাছাড়া রুদ্র স্যার বা বড় ম্যামও এটা মানবে না। এসব হয় না আপু তুমি ভুলে যাও।”

আমি চলে যেতে নিতেই আপু আমার হাত ধরে জ্বলজ্বল চোখে বলল-
“আমার এটা আবেগ না মেঘ, আমি সত্যিই খুব ভালোবাসি তাকে। এই কয় মাসে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। তাকে ভুলার জন্য খুব চেষ্টা করেছি কিন্তু পারেনি। বিশ্বাস করো আমি তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আর আমি জানি তুমি ভাইয়া আর মাকে মানিয়ে নিতে পারবে।”

আপুর চোখ এতোখন জ্বল জ্বল করলেও কথার বলার সাথে সাথে চোখ থেকে এই ফোটা টুপ করে জল পরলো। আমি আহম্মকের মতো তাকিয়ে ছিলাম। একজন এতোবড় ডাক্তার, সে কিনা ভালোবাসার জন্য কাঁদছে। আপুকে বুঝিয়ে শান্ত করলাম যে আমি সব ঠিক করে দিবো।
রাইমা আপুর থেকে রুদ্র স্যারের রুম কেন এলোমেলো জানতে চাইলে বলে-
যেদিন বৃষ্টির সাথে বিয়ে হইছে তারপর পর থেকে কারনে অকারনে সব রাগ রুমের জিনিস পএের উপর ঝাড়ত। আর ওই যে ওই ঘড়িটা ওটা ভেঙ্গেছিলো যেদিন আমার বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে বড় ম্যাম আর রাইমা আপু গেছিলো। সেদিন যখন শুনে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে তখন খুব রাগ করে সেই সাথে কান্নাকাটিও করে। আর রুদ্র স্যার যখন কাঁদছিলো তার কান্না দেখে বাবুও চিৎকার করে কান্না করে আর খুব কষ্টে স্যার তখন ফিটার খাইয়ে বাবুকে ঘুম পড়ায় কিন্তু রাত ১ টা বাঝতেই ঘড়ির বেল বেঝে ওঠে তখন বাবুর ঘুম ভেঙ্গে যায় আবার কান্না শুরু করে। তখন রাগে জেদে ঘড়ির হাতের পাশে ফোন ছিলো ওটা ঘড়ির উপর ছুড়ে মারে সেই সাথে ঘড়িও যায় আর ফোনও। স্যারে রুমে পার্সোনাল ভাবে কাউকেই এলাউ করে না। যখন বৃষ্টির সাথে বিয়ে হয়েছিলো তখন তারা অন্য একটা রুমে থাকত তবে এই রুমে রুদ্র স্যার কাউকে ডুকতে দিতো না, নিজে একা একা সারাদিন থাকতো। রাইমা আপু আরো বলে যে তাকে প্রায় দিনই আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে স্যারই পাঠাই তো।
আমি রাইমা আপুর মুখে কথা গুলো শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। আমি যে তার রুমে এই দুইদিন থেকে আছি কই সে তো কখনো আমাকে রুম থেকে চলে যেতে বলেনি।
তবে কি আগের পিছুটান এখনো আছে? কথাটা মনের ভিতর কয়েক বার ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে। খুশীতে চোখ জ্বল জ্বল করে ওঠে।

বাবুকে খাইয়ে ঘুম পরিয়ে দেয়। তারপর রাইমা আপুর সাহায্য কিছু কাজের লোক নিয়ে রুমটাকে পরিষ্কার করি। যতোগুলো জিনিস ভাঙ্গা ছিলো সেগুলো পরিষ্কার করে লোক দিয়ে দোকান থেকে ওই জিনিস গুলো কিনে নিয়ে আসি। সব কিছু রাইমা আপু দেখিয়ে দেয় কোনটা আগে কোথায় ছিলো,আমি আবার আগের মতো সব সাজাই। সাজানো প্রায় শেষ আমি ক্লান্ত হয়ে বেডের উপর বসে দেখতে থাকি সব কিছু কেমন লাগছে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি এই রকম একটা রুমের আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যেখানে প্রাকৃতিরও আভা পাওয়া যাবে। এগুলোর কথা আমি ফোনে একদিন মাহমুদ কে বলেছিলাম।


১২.
“জানো আমার খুব ইচ্ছে এমন একটা জায়গায় আমারা দুজনে থাকবো যেখানে বেড থাকবে কিন্তু পাশেই দোলনা থাকবে তার চারপাশে গাছ থাকবে। খোলা বাতাস থাকে। পাখি পাশে বসে কিচিরমিচির করে গান গাইবে আর আমি সেই গানের সুরে দোলনায় ঘুমিয়ে পরলে তুমি সুরসুরি দিয়ে ওঠিয়ে দিবে। আর আমি বিরক্ত মাখা ভঙ্গিতে ওঠে যেতে চাইলে তুমি পেছন দিক থেকে ওই সে সিনেমার ভিতর হিরোইন যখন রাগ করে চলে যায় তখন হিরো পিছন দিক থেকে টেনে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ঠিক সেভাবে পিছন দিক থেকে টান দিবে তবে জড়িয়ে না ধরে আমাকে দোলনায় বসিয়ে তুমি আমার কোলে শুবে। তখন আমি তোমার মাথায় বিলি কেটে দিবো আর তুমি কোমর জড়িয়ে শুয়ে থাকবে।”

এইটুকু বলেই খিলখিলিয়ে হেসে আবার গম্ভীর মুখে বলতাম, “এসব কি আর সত্যিই হবে? স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এসব কি বাস্তব হয়, বেডের পাশে দোলনা তা আবার বাগানের ভিতর। রুমের ভিতর কি আর খোলা বাতাস পাওয়া যায়?”

“কেনো পাওয়া যাবে না সানু? সব হবে, আসল না হোক তবে এভাবে সাজিয়ে নেওয়া যাবে। দোলনার পাশে ইয়া বড় একটা জানালা থাকবে যেখান থেকে খোলা বাতাস আসবে। তুমি চাইলেই সব হবে?”

আমি তখন বেশ উৎসাহ হয়ে বলতাম-” সত্যিই হবে? কিন্তু কিভাবে হবে?”
আমার প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ শুধুই হাসতো।

পুরোনো কথা মনে পরতেই আনমনে হেসে ওঠলাম।রুমের কর্নারের দিকে চোখ গেলো। দোলনার একটু পাশে বড় একটা কাচের জালনা। জানলা খুলতেই ফুরফুরিয়ে রুমের ভিতর হাওয়া ডুকতে শুরু করলো। আমি দুহাত মেলে গভীর নিশ্বাস নিলাম। একেবারে আমার স্বপ্নের রুমের মতো। কিন্তু কি যেন নেই। ভাবতেই মনে পরলো পাখি নেই। আর নাতো পাখির কিচিরমিচির সুর। ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলে এতো সুন্দর পরিবেশ কিন্তু পাখি শব্দ নেই। আসেপাশে কোথাও পাখির দোকানও নেই যে কাউকে নিয়ে আসতে বলবো। রুমের একপাশে চোখ যেতে দেখি একটা পাখির খাচা পরে আছে কিন্তু পাখি নেই।তবে কি পাখি গুলোকে রুদ্র স্যার ছেড়ে দিছে?
,
,

বিকেলের দিকে রুদ্র স্যার রুমে আসে। ভাবছিলাম সব কিছু সুন্দর করে সাজানো দেখে চমকে যাবে। কিন্তু না ওল্টো সে এমন ভাব নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো মনে হচ্ছে যে আগে থেকেই জানত রুম সাজানো থাকবে। কিছুটা মন খারাপ করে রুমের বাহিরে চলে আসলাম আজ বড় ম্যাম বাড়িতে নেই। এই বয়সে কতো ইয়াং সে। নিজেও ছোট একটা ব্যবসা সামলান। শহরের গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের মাঝে সে একজন।

আজ কেমন জানি রুদ্র স্যারকে ভয় লাগছেনা। এতদিন ভয়ে গুটিয়ে নিলেও আজ কেনো যেনো মনে হচ্ছে ভয়টা সত্যিই হোক সমস্যা কি সে তো আমার স্বামী আমার ভালোবাসা। রুদ্র স্যার খুব চেনা আপন আপন মনে হচ্ছে।
ইচ্ছে করেই রাতে কিছু না খেয়ে দোলনায় শুয়ে দুলতে দুলতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরলাম। শরীর টা ক্লান্ত লাগছে কালকে ফুপি নিতে আসবে তাই সব গোছাতে গোছাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছি।

রাত দেড়টা, কেউ একজন পাশের রুমের বারান্দা থেকে চুপচাপ আমার রুমে পা টিপে টিপে ডুকছে। ঘুমের ঘোরে মনে মনে চোর ভেবে লাঠি খুজতে লাগলাম। লাঠি না পেয়ে পাখির খাচাটা হাতে নিলাম। ঘুমের ঘোরে ভাবছি চোর টা কাছে আসলেই খাচায় বন্দি করে নিব। আস্তে আস্তে চোরটা সামনে আসলো অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছেনা। আমার হাত থেকে খাচা চুরি করবে বলে খাচা নিয়ে টানাটানি শুরু করলো।কিন্তু আমি দিবো না তাকে অনুরোধ করে বলছি-

“আমার রুমে কোনো পাখি নেই, আর কোনো পাখির সুরও নেই। তুমি কি আমার পাখি হয় গান শুনাতে পারবে? প্লিজ খাচার ভিতর ডুকে যাও।”

চোরটা আমার কথা শুনে আবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলে- “পাখি নেই বলে, নিজের জামাইকে পাখি বানিয়ে বসিয়ে রাখতে চায়। না জানি কখন বলে গাছে বাদর নেই তুমি কি আমার বাদর হবে? প্লিজ গাছে ওঠে বসে থাকো, ইডিয়েট।”

আমার হাত থেকে পাখির খাচা নিয়ে দুটি পাখি রাখলো। অন্ধকারে দেখতে পারছিনা কি পাখি তবে মনে হচ্ছে পাখি দুটো আমার মতো খুব ক্লান্ত খাচায় রাখতেই এক কোনায় গিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে।

আমাকে সেই চোর নিজ হাতে খাবার খাইয়ে খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় আমি তার গলা আকরে ধরে টুপ করে ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললাম- “ধন্যবাদ চোর ভাইয়া, আবার কিছু লাগলে জানাব।”

চোরটা বারান্দার দরজা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় অসহায় গলায় বিরবির করে কি জানি বলছিলো তবে বিরবির করে বললেও আমি স্পষ্ট শুনতে পারছি সে নিজেকে নিজে বলছে-
“যাহ রুদ্র এবার হইছে তো মন মতো? নিজের বউ ডাকে ভাইয়া তাও আবার যেই সেই ভাইয়া না চোর ভাইয়া। জীবনে আর কোন কথা শুনার স্বপ্ন বাকি আছে? তাও তোর বউয়ের থেকে শুনে নিস।
মানুস ফান্দে পড়ে কান্দে আর তুই তো নিজেই নিজে ফান্দে এসে ডুব দিছিস।”

পাখির কিচিরমিচির শব্দ ঘুম ভাঙ্গে। নাহ শুধু পাখির শব্দে না কেউ দরজায় নকও দিচ্ছে। ওঠে গিয়ে দেখি ফুপি এসেছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ফুপিকে জড়িয়ে ধরি। ফুপি তাড়াতাড়ি তৈরি হতে বলে রুদ্র স্যারকেও নাকি বলেছিলো কিন্তু সে যাবে না অফিসে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে, যাই পরে যাবে।
আমি দোলনা উপর থেকে ব্যাগ নিতেই চোখ পরে খাচায় ঝুলে থাকা দুটো লাভ বার্ডের উপর। তবে কি এটা রুদ্র স্যার রেখে গেছে? তাহলে কী রাতে যা দেখেছি ওসব স্বপ্ন ছিলো না? আমার রাতের কথা মনে পরতেই শব্দ করে হেসে ওঠি। রুদ্র স্যার কে জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ার কথা মনে পরতেই লজ্জায় দুহাতে মুখ ডেকে নেই।

ফুপি বার তাড়া দিচ্ছি তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য। আমি এতো তাড়াতাড়ি কেন কারন জিঙ্গেস করলে বলে- “কাল রাকিবের বিয়ের পাকা কথা হইছে। আজ আমরা গেলে আমাদের পছন্দ হলে তবে কালই বিয়ে হবে। মেয়ে শুনছি সুন্দরী, তিন ভাইয়ের আদরের বোন। অনেক তো বয়স হইছে ছেলেটার এবার যেহেতু বিয়েতে রাজি হইছে তবে আমরা গিয়েই বায়ে পরিয়ে দিবো। এর আগে তো বিয়ের নামও শুনতে পারতো না। কিন্তু এখন আর নাও বলে না আর হ্যাঁও বলে না।”

আমি ফুপির কথায় ধমকে দাড়ায়। যেভাবে হোক এই বিয়ে ভাঙ্গতেই হবে। রাইমা আপুকে দেওয়া কথা রাখতেই হবে।

#চলবে,,,,,

সংসার পর্ব-০৫

0

#সংসার
#পর্ব_০৫

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

ওদের বিয়ের পর আমি রুদ্র স্যারের অফিসের কাজ ছেড়ে দেই। তার ছয় মাসের মাথায় শুনি বৃষ্টি অসুস্থ, বাচ্চা হবে। সেদিন ফুপি খুশিতে যাকে পেয়েছে তাকেই মিষ্টি খাইয়েছে। মনে মনে তাছিল্য হেসে ভেবেছিলাম এই ছিল তার ভালোবাসা? এতোই যদি ভালোবাসতো তাহলে এত তাড়াতাড়ি বৃষ্টির রুপে গলে যেত না। আবার নিজেকেই ওল্টো প্রশ্ন করতাম, আমি বা আর কী ভালোবাসতাম, ভালোবাসলে কি তাকে ছেড়ে থাকা যায়?

কয়েক মাস কেটে গেছে। হঠাৎ একদিন সকাল বেলা কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে। চোখের নিচের গাড়ো কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। সুন্দর চেহারাটা মলিন হয়ে গিয়েছে। গোলগাল মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখতেই বৃষ্টি জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে।
এতোদিনের মনের ভিতরে পুষে রাখা কষ্ট রাগ অভিমান বৃষ্টির কান্না দেখে হারিয়ে গেল।

বৃষ্টির এমন অবস্থা কেনো জিঙ্গেস করলে কান্না ভরা চোখে একে একে সব বলতে শুরু করে –

“বিয়ের পর রুদ্র স্যার ভালো ব্যবহার করলেও কখনো স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে ওদের ভিতর গড়ে ওঠেনি। প্রথম প্রথম বৃষ্টি মেনে নিলেও পরে যখন রুদ্র স্যারকে এসব ব্যাপারে জোর করত তখন থেকে রুদ্র স্যার ওর সাথে ভালো ভাবে কথা বলেনি। একদিন রাগে বৃষ্টি রুদ্র স্যারকে বলেছিল-
“কেন করছেন এমন? আমি কোন পর নারী নই আপনার স্ত্রী তাহলে কেন ভালো করে কথাও বলছেন না? ওহ ওই মেঘের জন্য, ওই নষ্ট মেয়ের জন্য? ওর জন্য কখনো বাবার ভালোবাসা পায়নি এখন আপনাকেও কেড়ে নিতে চাচ্ছে। ওর মতো নষ্ট……”

০৯.
বৃষ্টিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রাগে বৃষ্টির দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলে-
“হুসসহহহ, কোনো কথা বলবি না। আমার মেঘ নষ্ট হোক খারাপ সেটা শুধু আমিই বলবো আমিই শাস্তি দিবো অন্য কেউ সেখানে কথা বললে মেরে টুকরো টুকরো করে দিবো।”

এই টুকু বলতেই বৃষ্টি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো। আমার নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। বৃষ্টি চোখের পানি মুছে আবার বলতে শুরু করে-

তারপর একদিন বাহির থেকে ড্রিংস করে বাসায় এসে মাতাল হয়ে পড়ে যার সুযোগ নিয়ে বৃষ্টির রুদ্র স্যারের সাথে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়। বৃষ্টিও সেদিন রুদ্র স্যারকে বাধা দেয়নি এটা ভেবে, রুদ্র জ্ঞানে থাকুক আর না থাকুক রুদ্রকে আপন করে পাচ্ছে এটাই অনেক। যার জন্য আজ বৃষ্টি প্রেগন্যান্ট।
কিন্তু ওর এই একটা ভুলের জন্য রুদ্র আর কখনো বৃষ্টির সাথে থাকেনি হয়ত ড্রিংস করে বাহিরে সারা রাত কাটিয়ে দিত। নয়তো অন্য রুমে এসে শুয়ে পড়ে থাকত।

বৃষ্টির প্রেগনেন্সির তিন মাসের সময় অফিসে হারিয়ে যাওয়া ফাইলে পুরোনো সিসি টিভি রেকর্ড খুজে পায় রাইমা ম্যাম। তখন সেটার একটা কপিতে রাইমার সেদিন এক্সিডেন্টের কারন বৃষ্টি এটার জানার পর থেকে ওই বাসার সবাই বৃষ্টির সাথে খারাপ ব্যবহার করত। তার জন্য আজ বৃষ্টি এখানে চলে এসেছে।

আগের বৃষ্টি আর এই বৃষ্টি সম্পূর্ণ আলাদা। বৃষ্টি আজ নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ফুপিও বৃষ্টির কষ্ট দেখে ধুকে ধুকে মরছে। আমি বৃষ্টির কষ্ট দেখে রুদ্র স্যারের কাছে অনুরোধ করতে আসতে চাইলে বৃষ্টি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে-

“রুদ্র আর আগের মতো নেই মেঘ। এখন সাইকোর মতো ব্যবহার করে। ও তোকে যতটা না ভালোবাসতো তার থেকেও এখন বেশি ঘৃণা করে। তুই আমার জন্য ওর কাছে গিয়ে নিজের ক্ষতি করবি না”

বৃষ্টির ওর ভুলের জন্য তিলে তিলে মরছে। যখন ডেলিভারি হয় তখন রুদ্র স্যারের পরিবারের সবাই এসেছিল। ডেলিভারি পর মা আর বেবী দুজনে ঠিক থাকলেও। ৪৮ ঘন্টার ভিতরে বৃষ্টি ওর সব ভুলের সমাপ্তি টেনে চলে যায় আমাদের ছেড়ে। বৃষ্টি যা যা ভুল করেছিল তার থেকে ওর শাস্তি টা অনেক বড় ছিল।বৃষ্টি তো সব শুধরে নিতে চেয়েছিল তবে কেন ওরে আল্লাহ আমাদের মাঝে থেকে নিয়ে নিল? সেদিন রুদ্র স্যার সবার মাঝ থেকে বৃষ্টির বাচ্চাকে কোলে করে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

এদিকে বাবা, ফুপি বৃষ্টিকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। আর এখন যদি বৃষ্টির মেয়েকে চোখের সামনে দেখতে পেত তাহলে একটু শান্ত হত। আমি কয়েক বার ওই বাসায় বাবু জন্য গেছিলাম কিন্তু রুদ্র স্যার এক কথায় বলে দিছে তার মেয়েকে সে কখনো দিবে না।

তার কিছুদিন পর রাইমা ম্যাম আর তার মা এসে বলে আমাকে রুদ্র স্যারের বউ করতে চায়। ফুপি এক কথায় না করে দেয়। যে ভুলে বৃষ্টিকে হারিয়েছে সেই ভুলে আমাকে হারাতে দিবে না। জেনে শুনে নরকে ঠেলে দিবে না।
ফুপি তাদের অপমান করে পাঠিয়ে দিলেও রাইমা ম্যাম পর পর কয়েক দিন এসে আমাদের বুঝায়।

“ফুপি আমি আপনাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু ওই ছোট বাচ্চাটার কথা একবার ভাবুন। ভাইয়া এখন নিজেই ঠিক নেই তার উপর বাবুকেও কারো কাছে দেয় না এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে খেয়ে দুধের বাচ্চাটা মরে যাবে। মেঘ তুমি কি চাওনা বোনের শেষ স্মৃতি বাচিয়ে রাখতে?”

ফুপি আর রাইমা ম্যামের কথার উপর কথা না করতে পারে না, এক প্রকার বাধ্য হয়েই রুদ্র স্যারকে বিয়ে করতে হয়। ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হয়েছিল। বিদায়ের সময় ফুপি আমার কপালে চুমু খেয়ে বলেছিল-
“তোর মাও এমন ছিল, অন্যের সাহায্য করতে নিজেকে বিলিয়ে দিত। আমি হিরে চিনতে ভুল করেছিরে মা। আজ আমার ভুলের জন্য বৃষ্টি চলে গেল। আমি ওকে সব কিছুতে লাই না দিলে এতো কিছু হতো না।”

‘অনুশোচনা’ বড় একটা অসুখের নাম। কেউ যদি তার কোনো কাজের জন্য অনুশোচনায় ভুগে এর থেকে তার জন্য বড় কোনো শাস্তি হতে পারে না। এই অনুশোচনা তাকে আজীবন তিলে তিলে শেষ করে দেয়। যে অসুখে আজ ফুপি ভুগছে।

বর্তমান,,,
পূর্ণতাকে কোলে নিয়ে বসে আছি। আজ বৃষ্টির কথা খুব মনে পড়ছে। এই জায়গায় আজ বৃষ্টি থাকত। ১০ মাস পেটে সন্তান রেখে কতই না স্বপ্ন বুনেছিল তবে সেই সন্তানকে কোলে নেওয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি। বৃষ্টির জায়গা থেকে ও ভুল ছিলো না। জন্মের পর থেকে সবার মুখে শুনতো তার মা বাবা তাকে তার ফুপির দিয়ে গেছিল। মায়ের আদর ওর ভাগ্যে জুটেনি এই কথাগুলো ছোট বেলা থেকে ওর মাঝে জেদের মতো কাজ করত। সেখান থেকেই আমার জন্য হিংসা কাজ করতো। ফুপির ভালোবাসা আমি কখনো পাইনি বলে বাবা বৃষ্টির থেকে আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতো এট বৃষ্টির সহ্য হতো না।
তাই আমার সবকিছুতে ওর ভাগ বসাতো একসময় ওর জেদ গুলো সম্ভাব হয়ে যায়। সব গল্পে হিরো আর ভিলেন থাকে তবে ভিলেন সবাইকে বলা যায় না, হিরোকে যেমন সব দিক থেকে পারফেক্ট তেমনই ভিলেনের সবদিক থেকে তার পরিস্থিতি দেখে তাকে ভিলেন বলতে হয়।

১০.
সারাদিনে একবারের জন্যও রুদ্র স্যার রুমে আসেনি। দুপুরে রাইমা ম্যাম খাবার দিয়ে গেছেন।
বাহিরে চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেজে। ঘড়িতে কয়টা বাঝে দেখার জন্য রুমের ওয়াল ঘড়িতে চোখ যায় ঘড়িটা ভাঙা। এই রুমের খুব সখের জিনিস দিয়ে ভরা থাকলেও সব কিছু এলোমেলো কিছু কিছু জিনিস ভাঙ্গা। রুদ্র স্যার খুব সখের মানুষ নয়তো এতো বড় বাড়ি থাকতে কেউ রুমের ভিতরে একুরিয়াম রাখে? বেশ বড় রুম, রুমের একপাশে একটা দোলনা। দোলনার চারপাশে পাস্টিকের গাছপালা দিয়ে সাজানো। নিচে ঘাসের মতো কার্পেট। মনে হচ্ছে এখানে একটা বাগান সাজানো। খুব সুন্দর করে সাজানো ছিল হয়তো, কিন্তু এখন সব কিছু এলোমেলো।

এই একদিনে এটা বেশ বুঝতে পেরেছে এইরুমে আসা সবার বারন। রাইমা ম্যামও তাই খাবার দিয়ে সাথে সাথে চলে যায়। নয়তো বাড়িতে এতোগুলো কাজের লোক থাকতেও রুম এলোমেলো থাকে?
ফোনটা হাতে নিলাম সময় দেখার জন্য, এই একদিনে ফোনটা একবারের জন্য ধরেনি বন্ধ হয়ে আছে। ফোনটা চার্জে লাগিয়ে রুমের ভিতর হাটাহাটি করতে লাগলাম।
একটা রুমের ভিতর কেউ সারাদিন কিভাবে থাকে? দম বন্ধ হয়ে আসছে।
পেটেও ইদুর দৌড়াচ্ছে। আজ রাইমা ম্যাম বাসায় নেই তাই রাতের খাবারও কেউ দিয়ে যায়নি। সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। রান্না ঘরের উদ্দিশ্যে বের হবো ভেবে রুমের দরজা খুলতেই রুমের ভিতর হুরমুর করে রুদ্র স্যার ডুকে। তাল সামলাতে না পেরে আমার গায়ের উপর পরে যায়। আমি নিজেকে সামলে রুদ্র স্যারকে তুলে দাড় করিয়ে সরে যাই। গা থেকে ড্রিংস এর বাজে গন্ধ আসছে। কেমন মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে।

আমার কালকে রাতের কথা মনে পরতেই ভয়ে কুকড়ে যাই। ভয়ে ভয়ে সেখান থেকে ফিরে এসে ওয়াশরুমের পা বাড়ায়। মনেমনে ভেবে নিয়েছি যতখন না রুদ্র স্যার ঘুমাবে ততক্ষণে আমিও বের হবো না।
প্রায় দশ মিনিট পর কোনো শব্দ না পেয়ে আমি আস্তে করে দরজা খুলে পা টিপে টিপে বাহিরে আসি। স্যার পুরো খাটে উপর ওল্টো ভাবে শুয়ে আছে। পূর্ণতা তার পাশেই। রাতে যদি পড়ে যায় এই ভয়ে আমি পূর্নতাকে দোলনায় শুইয়ে দেয়। লাইট বন্ধ করে সোফার উপর শুয়ে থাকিট।

গভীর রাত, গালের উপর কেউ স্পর্শ করছে গভীর দৃষ্টি দিয়ে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখ ঘুম থাকলেও অনুভব করছি তাকে। অচমকা ঘুম ভেঙ্গে যেত ওঠে বসে। দেখি রুদ্র স্যার নিচে হাটু গেড়ে আমার মাথার পাশে বসে আছে। হঠাৎ আমায় এভাবে ওঠতে দেখে স্যার চমকে যায়।

গভীর রাতে রুমে নিজের বউ। যার সাথে তার পবিত্র সম্পর্ক আছে। নিজেকে কন্টোল রাখতে পারেনি তাই কাছে এসেছেন। ভাবতেই আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে সোফার উপর পা দুটো ওঠিয়ে বসি। তবে কি আবার কালকের মতো ভালোবাসা হীন প্রতিশোধের আগুনে আমাকে আজো জ্বালাবেন?
রুদ্র স্যার আমাকে ভয় পেতে দেখে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো, যে হাসির পিছনে অপরাধবোধ লুকিয়ে আছে। খাবার প্লেট সামনে তুলে দিয়ে বলল।

“রাতে কিছু খাও নি, এটা খেয়ে নাও। ভয় পেওনা আমি কিছু করবনা।”

আমি কিছু না বলে খাওয়া শুরু করলাম। দুপুরে খাওয়ার পর আর কিছু খাইনি। পেটে ক্ষুদার জন্য কিছু না বলেই খেতে শুরু করলাম।
খেয়ে ঘুমঘুম চোখে আবার গুটিসুটি মেরে সোফার উপর সুয়ে পরি। রুদ্র স্যার তার আলতো হাতের বাহুতে আমাকে নিয়ে খাটের উপর শুইয়ে দেয়। আমি ওঠে খাটের উপর বসতেই বলে।
“ভয় পেওনা, আমি কিছু করবোনা। যতদিন না তোমার ভয় দূর হচ্ছে ততদিনে আমি তোমার পাশেও যাবো না। প্রমিজ।”
আমি ঘুম ঘুম চোখে মুচকি হেসে বিছানার উপর শুয়ে পরি।

সকাল হয়েছে কিছুখন আগে। রাইমা ম্যার বার বার দরজায় নক করে যাচ্ছে। আমি ওঠে দরজা খুলতেই রাইমা ম্যাম বলতে শুরু করে।

“সরি মেঘ আমি কাল বাসায় ছিলাম না, কাউকে যে তোমাকে খাবার দিবে বলে যাবো মনে ছিল না। সারারাত খুদার জ্বালাই হয়তো ঘুমাতে পারোনি। বেবী ঠিক আছে তো?”

আমি মুচকি হেসে বলি-
‘না না সবঠিক আছে ম্যাম। রাতে রুদ্র স্যার খাবার এনেছিল আমি খেয়েছি আর বাবুকে স্যার খাওইয়ে দিছে।”

রাইমা ম্যাম অবাক দৃষ্টিতে ধমকের সুরে বলল-
“কি ম্যাম ম্যাম করছো আর কখনো ম্যাম বলবে না আপু ডাকবে। আর তুমি কি স্বপ্ন দেখছো? কাল রাতে তো ভাইয়া বাসাই ফিরেনি খাবার দিবে কি করে?এখন থেকে আর কারো খাবার দিতে হবে না নিজে গিয়ে খাবার নিয়ে খাবে এটা তো তোমারও বাড়ি।”

“আমি ঠুক গিলে চারপাশে তাকালাম, রুমের কোথাও রুদ্র স্যার নেই। আর রুম ও তো ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তবে কি এটা স্বপ্ন ছিল? কিন্তু রাতে যেভাবে পেটে খুদা ছিল সেভাবে তো আর ক্ষুদা নেই।”

আমি আর কিছু না বলে বাবুর জন্য ফিটার বানাতে চলে গেলাম। স্বপ্ন দিয়ে আমি কাটিয়ে দিতে পারলেও বাবুর জন্য খাবার লাগবে।

#চলবে…..

সংসার পর্ব-০৪

0

#সংসার
#পর্ব_০৪

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

স্যার ওখানেই ঘাসের উপর বসে হাটু মুড়ে নিঃশব্দে কেঁদে ওঠে।

আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে বলি-
“আমাদের চিনতে খুব দেরী হয়ে গেছে স্যার। এখন আপনি অন্যকারো হবু স্বামী। আমাদের পুরোনো আবেগ মাখানো সম্পর্কের এখন আর দাম নেই। আমার বাসায় ফিরতে হবে।”

রুদ্র স্যার আচমকা তার দুহাতে আমার হাত ঝাপটে ধরে। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই আমি উড়ে যাব।
“না সানু এভাবে বলো না, দেখো আমি সব আগের মতো ঠিক করে নিব। তোমাকে অনেক কষ্টে খুজে পেয়েছি আর হারাতে দিবো না।”

আমি রুদ্র স্যারের বুকের মাঝে চোখ খিচে বন্ধ করে দু হাত মুঠোবন্দী করে আছি। স্যার খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আমাকে কিছু বলতে না দেখে তার বাম হাত সামনে এনে আংটি দেখিয়ে বলে-

“হ্যাঁ তোমার এইটায় তো সমস্যা এই নেও খুলে ফেললাম। আরো সমস্যা হলে আমরা পালিয়ে কোথাও দূরে চলে যাবো। কারো সামনে আসবো না। কারো মুখোমুখি হবো না আর নাতো কাউকে কিছু জানতে দিব, নাতো কারো জবাবদিহিতা দিতে হবে। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। চলো আমরা অনেক দূরে কোথাও পালিয়ে যাই।”

০৭.
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আংটির দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছি। একটু দূরেই ঘাসের ভিতর থেকে রোদের আলো পরে আংটিটা চিকচিক করছে। আমি স্যারের কথায় জবাব না দিয়ে ঘাস থেকে আংটি টা কুড়িয়ে নিয়ে সামনের দিকে হাটা শুরু করলাম। আজ এই সুন্দর প্রকৃতিকেও বিষাদময় লাগছে। ইচ্ছে করছিল পিছন ফিরে একবার দেখি স্যার কি করছে। ইচ্ছাটা চাপা দিয়ে দ্রুত গতিতে সামনের দিকে পা বাড়াই।। এখনো হয়তো জ্বলজ্বল চোখে আমার যাওয়ার পথের দিক তাকিয়ে আছে। যে চোখের দিকে তাকালে আমি আর সামনে যেতে পারবো না, এখানেই থেমে দৌড়ে তার কাছে ফিরে যেতে হবে।

রাস্তায় হাঁটছি আর মনে মনে ভাবছি, আর একবার সুযোগ দিবো নিজেকে সাজাতে। জীবনটা ছেলেখেলা না নিজেকে নিজেরই সাজিয়ে নিতে হবে।
,
,

আজ দুইদিন পর আবার রুদ্র স্যারের সামনে বসে আছি আমার পাশের চেয়ারে গা ঘেঁষে বসে আছে রাকিব ভাই। টেবিলের উপর টুং টাং শব্দ।। আমি আনমনে সেদিনের ঘাসের ভিতর থেকে কুড়িয়ে নেওয়া আংটি টা টেবিলে ফেলছি আবার তুলে একটু উপর থেকে কাচের টেবিলের উপর ফেলছি।
সবকিছু থমথমে নিরবতা। রুদ্র স্যার মুখে একগাল হাসি নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতর আসলেও রাকিব ভাইকে আমার পাশে দেখে হাসিখুশি মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে চুপসে যায়। নিরবতা ভেঙ্গে রাকিব ভাই বলে ওঠলো-

“রুদ্র সাহেব আপনাদের সম্পর্কে মেঘ আমাকে সব বলেছে। আসলে আমার বলতে একটু খারাপ লাগলেও বাস্তবতা তো অনেক ভিন্ন। আমরা অল্প বয়সে যেটা করি সেটা শুধুই কিছু দিনের আবেগ মাএ। আবেগ কেটে গেলে আমরা দ্রুত সেখান থেকে পালাই।
আরে ওই রুদ্র সাহেব কি ভাবছেন? আমি কি বলছি বুঝতে পালছেন?”

“হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি।”

“আসলে আমি আর মেঘ চার বছর ধরে রিলেশনে আছি। ভালো চাকরি করছি না বলে এখনো পরিবারকে জানাতে পারেনি। আপনার সম্পর্কে মেঘ আমাকে কালই প্রথম বলল আসা করি আপনি সব বুঝতে পেরেছেন।”

রুদ্র স্যার রাকির ভাইয়ের কথার জবাব না দিয় আমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকাতে তার চোখে আমার চোখ পরে। সেই গভীর চোখ বলে দিচ্চি এসব মিথ্যা আমি এসব বিশ্বাস করিনা। প্লিজ সানু তুমি একবার বলো এসব সত্যি না।
আমি স্যারের চোখের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে টেবিলের দিকে তাকিয়ে তার সামনে আংটি রেখে ভাঙ্গা গলায় বলি।

“এসব কিছু মিথ্যে না রুদ্র সাহেব। প্রথম জীবনে আবেগের বসে ভুলটা আপনি আকরে ধরে থাকবেন বুঝেনি। তবে এটা আমার ভুল না আপনার ভুল। আপনার বুঝতে সমস্যা হয়েছিল হঠাৎ করে কেউ এমনি চলে যায় না, সব কিছু থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছেড়ে চলে গেছিলাম। তবে সেই পিছু ছুটতে ছুটতে আপনি এখানে। ক্ষমা করবেন আমাকে।
এই নেন আংটি, আমার বোনকে কখনো এসব ব্যাপারে জানতে দিবেন না। আমার আবেগ গুলো মিথ্যে হলেও আপনার আবেগ গুলো সত্যিই আর সেই আবেগ আজ আপনার কাছে অনুরোধ করে বলছি কখনো আমার বোনকে কষ্ট দিবেন না। খুব সুখে রাখবেন যতোটা আমাকে রাখতে চেয়েছেন।”

চোখের পাশের জলগুলো লুকাতে দ্রুত পায়ে রাকিব ভাইয়ের হাত ধরে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসলাম। রাস্তায় নামতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। আমার সাথেই কেনো এসব হচ্ছে? সব ভালোবাসা পেয়েও কেনো হারিয়ে ফেলি, আর যে ভালোবাসা হারাবেনা বলে কথা দেয়, তার থেকে পালিয়ে আসতে হয়।
বুক ফেঁটে কান্না আসছে, আজ সারাজীবনের জন্য মাহমুদকে হারালাম, প্রতিদিন একটা আসা নিয়ে বেঁচে থাকতাম হয়তো মাহমুদ একদিন আবার আমার জীবনে আসবে। কিন্তু আজ নিজের ইচ্ছায় সব কিছু হারালাম। হয়তোবা রুদ্র স্যার কখনো এর পিছনের গল্পটা জানতেও পারবেনা। ভুল বুঝে আজীবন ঘৃণা করে যাবে।
নিজের অজান্তেই পাশে থাকা রাকিব ভাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। ভাইয়া আমাকে বার বার শান্ত হতে বলছে।

আমি পাবলিক প্লেসে আছি মনে হতেই সাথে সাথে রাকিব ভাইকে ছেড়ে দূরে দাড়ায়। হঠাৎ চোখ যায় রুদ্র স্যারের গাড়ির দিকে স্যার আমার দিকে একদৃষ্টিতে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে আছে। আমার চোখে চোখ পরতেই স্যার তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে দিয়ে চলে যায়।

০৮.
ফ্লাস ব্যাক,,,

সেই দিন নদীর পাড় থেকে এসে সরাসরি বাবার রুমে চলে যায়। বাবার কাছে জীবনের শেষ আবদার হিসেবে আজ রুদ্র স্যারকে চাইবো।
কিন্তু বাবার রুমের সামনে যেতেই দেখি বৃষ্টি, বাবা আর ফুপি বসে কথা বলছে। কিছুক্ষণ আগেই ফুপি আর বৃষ্টি গিয়ে বিয়ের সাজ কিনে নিয়ে এসেছে। বৃষ্টি বাবার সামনে বসে বিয়ের লেহেঙ্গা পরে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখাচ্ছে কেমন লাগবে বিয়ের দিন।

বাবার গ্রামের প্রিয় জমি বিক্রি করা টাকা হাতে নিয়ে বসে আছে। একবিন্দু আপসোস হচ্ছেনা তার চোখে মুখে খুশির ঝলক।
“আরে মেঘ মা তুই, আজ অফিস এতো তাড়াতাড়ি শেষ? এই দেখ তোর জন্যও একটা লেহেঙ্গা কিনেছি, বৃষ্টির বিয়ের দিন এটা পরলে তোকে পুতুলের মতো লাগবে মা।”

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় নিচু স্বরে বাবার দিকে তাকিয়ে বলি- “বাবা এই বিয়ে যদি না হয়, তাহলে কি হবে? যদি ওতো বড়লোক বাড়ির ছেলে আমার বোনকে বিয়ে না করে? যদি ওই ছেলে কারো হাত ধরে পালিয়ে,,,,,”

আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ফুপি রাগে আমার দু গালে দুইটা চড় মেরে চিৎকার করে বলে ওঠলো- “দেখলে দাদা কি অলক্ষুণে কথা তোমার বড় মেয়ের মুখে, অপায়া মেয়েদের মুখে এসব কথা এখন না জানি কি হয়।”

আমি কান্না ভেজা চোখে বাবার দিকে তাকাতেই বাবা বলল- “মারে এমন কথা মুখেও আনিস না। আমার আব্বার স্বপ্নের জমিটা আজ বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি আল্লাহ না করুক এমন কিছু যদি হয় আমি বাঁচবো নারে মা।”

বাবা মুখে ‘আমি বাঁচবো নারে মা’ এই কথাটা কানে যেতেই মনে হলো কে যেনো বুকের ভিতরে খাঁমচে ধরলো।
দৌড়ে রাকিব ভাইয়ের রুমে গেলাম, এই বাসায় বাবা আর রাকিব ভাইকে মন খুলে ভরসা করতে পারি।
রাকিব ভাইকে গিয়ে সব খুলে বললাম। আর আমাকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে বললাম। যদিও রাকিব ভাই প্রথমে রাজি ছিলোনা কিন্তু আমার বার বার অনুরোধ ফেলতে পারেনি।

কেন জানি না বৃষ্টিও সেদিন আমার কাছে এসে সন্দেহের চোখে বারবার অনুরোধ করেছিলো এমন কিছু যেনো না হয়।
পরে রাকিব ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারি রুদ্র স্যার এঙ্গেজমেন্ট আগেই বৃষ্টিকে তার প্রথম ভালোবাসার কথা বলেছে। সেদিন থেকে বৃষ্টি আমার উপর সন্দেহ করলেও এঙ্গেজমেন্টের দিন স্যারের ওই ভাবে চলে যাওয়া দেখে একে বারে সিওর হয় যে স্যারের প্রথম ভালোবাসা তার নিজের বড় বোনই।
এই কথা গুলো আগে থেকেই ফুপি জানতো তাই এঙ্গেজমেন্টের দিন রুমে আটকে রেখেছিলো।
যেদিন বৃষ্টি ফুপিকে এসব বলেছিলো সেদিনই রাকিব ভাই সব শুনেছিলো কিন্তু কথার অর্থ সেদিন না বুঝলেও আজ বুজতে পেরে আমাকে জানিয়েছে।

আস্তে আস্তে বিয়ের দিন চলে আসে। বিয়ের আগের দিন বাবাকে পুরোনো কলেজের কাজের বাহানা দিয়ে একটা বান্ধবীর বাসায় চলে আসি এটা বলে যে বিয়ের ঠিক সময় বাসায় এসে পৌছাবো। কিন্তু অসুস্থ কথা বলে আর বিয়ের দিন বাসায় ফিরেনি। এই ব্যাপারে ফুপি অনেক হেল্প করেছে। ফুপি কে এটা বুঝেয়েছি আমার এখানে থাকলে বৃষ্টির যদি কিছু হয় তাই বিয়ের পর চলে আসবো। বাবাকে যেনো আমাকে যেতে দিতে বলে।
সেদিন নিজের উপর বড্ড ঘৃর্না হচ্ছিলো এতো মিথ্যে বলে আজ নিজের ভালোবাসার থেকে পালাতে হচ্ছে। তবে কি করবো আমি যে পরিস্থিতির শিকার। আজ চাইলেও আমি ছুটে চলে যেতে পারি না আমার হাত পা যে বাধা। আজ আমি নিজের কথা ভাবলে সারাজীবনের জন্য ছাড়তে হবে বাবাকে। যে বাবা আমাদের জন্য সেই ছোট্ট বয়সে মা মরে যাওয়ার পরও বিয়ে করেনি তার মেয়েদের ভেবে। সেই বাবাকে কী করে এতো কষ্ট দিবো, কী করে তার বিশ্বাস ভাঙবো?
,

ওদের বিয়ের পর আমি রুদ্র স্যারের অফিসের কাজ ছেড়ে দেই। তার ছয় মাসের মাথায় শুনি বৃষ্টি অসুস্থ, বাচ্চা হবে। সেদিন ফুপি খুশিতে যাকে পেয়েছে তাকেই মিষ্টি খাইয়েছে। মনে মনে তাছিল্য হেসে ভেবেছিলাম এই ছিলো তার ভালোবাসা? এতোই যদি ভালোবাসতো তাহলে এত তাড়াতাড়ি বৃষ্টির রুপে গলে যেত না। আবার নিজেকেই ওল্টো প্রশ্ন করতাম, আমি বা আর কী ভালোবাসতাম, ভালোবাসলে কি তাকে ছেড়ে থাকা যায়?

#চলবে,,,,,