Thursday, July 31, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1539



তি আমো পর্ব-০৭

0

#তি_আমো❤
#পর্ব_৭
Writer: Sidratul muntaz

🍂
আমি নাক ফুলিয়ে ঠোটের রাগ নিয়ে উচ্চারণ করলাম,

আমার লাফিং গ্যাস হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।তবে আপনি আজকে আমার সাথে যেটা করেছেন, সেটা একদমই ঠিক হয়নি।

আর তুমি আমার সাথে যেটা করছো? সেটা কি ঠিক?

আমি কি করছি?

ঈশান খপ করে আমার ডান হাতটা নিজের হাতে নিলেন।উনার বুকের বামপাশে আমার হাতের তালু মিশিয়ে মৃদু স্বরে বললেন,

দেখো না তারিন, অনুভব করতে পারো? ভেতরটায় কেমন উথাল পাথাল চলছে। এই অশান্ত মনটার যে তোমাকে বড্ড প্রয়োজন। তোমাকে ছাড়া চলবেই না। যখন অবাধ্য মনটা তার ব্যথার তীব্র আকার ধারণ করে, একটিবার চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে তোমাকে দেখার ইচ্ছা ব্যক্ত করে, আমি যে স্থির থাকতে পারি না। ভীষণ যন্ত্রণা হয়। কিভাবে বোঝাবো তোমায়? তুমি তো বড়ই অবুঝ। এতোটা অবুঝ হয়ো না প্লিজ। এতোটা অবুঝ হতে নেই। একটু তো দয়া করো এই ছোট্ট মনের উপর। তোমার অবহেলা যে তার সহ্য হয়না!

আমি খুব দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নিলাম। মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারছি না। কণ্ঠ আটকে আসছে। তবুও জড়ানো গলায় শব্দ বের করলাম,

দ দেখুন, আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলবেন না। আমার একদম ভালো লাগে না।

সত্যিই ভালো লাগে না? নাকি তোমার মনেও আমার মতো উথাল পাথাল শুরু হয়।

ঈশানের কথা শুনে মনে হল, যেন ভিতরটা কেউ খঞ্জর দিয়ে খুচিয়ে দিচ্ছে। আমি চেহারা স্বাভাবিক রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম। বললাম,

মোটেও না। আমি আপনার মতো আবেগচন্দ্র নই। আবেগের ঢালি সাজিয়ে বসিনি, যে আমার মনে উথাল পাথাল শুরু হবে। বরং আপনার কথা শুনে আমার গায়ে জ্বলুনি হচ্ছে।

উনি বাকা ঠোটে হাসলেন। আর বললেন,

তুমি তো আবেগচন্দ্রিমা। আমার আবেগচন্দ্রিমা। প্রমাণ চাও? তাহলে দেখো!

ঈশান আমার চোখের কোণ স্পর্শ করলেন। এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল মুহুর্তেই। আমি সরে গেলাম। উল্টো দিকে ঘুরে জলদি করে লাল টুকটুকে চোখ দুটো মুছে নিলাম। কিভাবে, কখন চোখের কোণ ভিজে উঠেছে, সেই খেয়াল নিজেরও হয়নি। উনি আমার কাধ স্পর্শ করলেন। নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন আমাকে। পরম আদর নিয়ে আমার গাল চেপে ধরে কপালে চুমু দিলেন। আমি সেই পরশ অনুভব করলাম। পরম তৃপ্তি নিয়েই অনুভব করলাম।মাথা তুলে ঈশানের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনার টলমল দুটো চোখ। আমি অবাক হলাম। অবাক হয়েই তাকিয়ে রইলাম। নিজের চোখ জোড়াও টলমল করছে। চিন্তা করলাম, সত্যিই কি এতোটা ভালোবাসেন উনি আমায়? আমি যে কল্পনাও করতে পারিনি এমন ভালোবাসা। আমার ঘোর লাগানো ভাবনায় ব্যঘাত ঘটিয়ে ঈশান শব্দ করলেন,

একটা রিকয়েস্ট রাখবে তারিন?

আমি আবেগের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসলাম। আবার আগের রুপ ধারণ করে শক্তমুখে ভ্রু কুচকে বললাম,

কি রিকয়েস্ট?

তখনের মতো আরেকবার ওইভাবে তাকাবে প্লিজ! বিরাট চান্স মিস করেছি।

মানে?

তোমার নেশায় মাতাল লুকটা কিন্তু ভীষণ কিউট ছিল। তখন মম না থাকলে কাছে এসে গাল টিপে দিতাম। এবার যে আফসোস হচ্ছে। এসো তোমাকে আরও একবার ওভার ডোজ দিয়ে আফসোসটা মিটিয়ে নেই।

আমি রাগে ঠোট সংকুচিত করলাম। হাত মুষ্টি করে উনার পেট বরাবর আঘাত করলাম। উনি খানিক সরে গিয়ে পেট চেপে ধরলেন। বললেন,

আউচ!

আমি দ্রুতপায়ে হেটে চলে এলাম। নিচে নেমে এসেছি। আর ঈশানের সামনেই যাব না। এই কথা মাথায় রেখেই দক্ষিণ দিকের কিচেন সাইটে গেলাম। নিহা আর মোহনা আন্টির কথার শব্দ ভেসে আসছে। সাফিন ভাইয়াও উপস্থিত। বিরাট ভোজের আয়োজন চলছে। বুফেট লাঞ্চ। ডাইনিং রুমের দেয়াল ঘেষে প্রকান্ড মাপের খাদ্যমঞ্চ জুরে সাজানো হয়েছে খাবার, বৈচিত্রময় পদের খাবার। সবাই খাবার সম্পর্কেই আলাপ করছে। আমি সামান্য গলা ঝাড়া শব্দ করে নিজের উপস্থিতির আভাস দিলাম। সবার নজর আমার দিকে স্থির হল। আন্টি বললেন,

তারিন, এতো দেরি কেনো? কোথায় ছিলে?

আমি একটু ইতস্তত কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম,

আন্টি আমি, আমি বেসিন খুজছিলাম। হাত মুখ ধোয়ার জন্য।

বেসিন তো ওইযে! তুমি হাত মুখ ধুয়ে প্লেট নিয়ে নাও।

আমি মাথা দুলালাম। নিহা আর সাফিন ভাইয়া নিজেদের মধ্যে তর্কে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি সাফিন ভাইয়ার পেছন দিকটায় বেসিনের গোল উপত্যকা ধরে দাড়ালাম। পানিতে হাত ভিজিয়ে নিচ্ছি। সাফিন ভাইয়া নিহার সাথে তর্করত অবস্থাতেই আমার দিকে ঘুরলেন। বললেন,

তারু! দেখো নিহা চিংড়ী নিচ্ছে। নিষেধ করো ওকে।
নিহা প্লেট হাতে দৌড়ে গিয়ে টেবিলে বসল। ক্রীড়নশীল হয়ে বলল,

আমি চিংড়ী মিস করতে চাইনা।

সাফিন ভাইয়াও দৌড়ে গেলেন। কপালে বিরক্তি আর রাগ দুইয়ের ভাজ একসঙ্গে এটে নিহার প্লেট থেকে চিংড়ি কেড়ে নিলেন। নিহা বিবশ হয়ে তাকালো। মেয়েটার অসহায় মুখ দেখে মায়া লাগছে। কিন্তু সাফিন ভাইয়া কোনোভাবেই ওকে চিংড়ি খেতে দিবে না। আমি মুচকি হাসলাম। আচ্ছা যে জিনিসটা ভালোবেসে মানুষ খেতে চায় , সেটা যদি পরবর্তীতে তার ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায় তাহলে কি সেই ভালোবাসা পরিত্যাগ করা উচিৎ? নাকি গ্রহণ করে মনকে পরিতৃপ্তি দেওয়া উচিৎ। ভবিষ্যতের ক্ষতিটা না হয় ভালোবাসার জন্য হজম করে নিলাম। ক্ষতি কি? চিংড়ী খেয়ে যদি নিহার ভালো লাগে, তাহলে চর্মরোগের অত্যাচার টা সহ্য করার ক্ষমতা তার থাকা উচিৎ। আমি টিস্যুপেপারে হাত মুছে প্লেট নিয়ে দাড়ালাম। খাদ্যমঞ্চ থেকে খাবার তুলছি। এতো পদ গুনে শেষ করা যাবে না। আমার প্লেটেও জায়গা হবে না, আর পেটে তো আরো না। ঈশান আমার পাশে এসে দাড়ালেন। উনাকে দেখে আমি প্লেট হাতেই সরে গেলাম। উনি মুচকি হাসি দিয়ে নিজের প্লেটে খাবার সাজাতে মনোযোগ দিলেন। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম। সাফিন ভাইয়া নিহা আর আন্টি নিজেদের মধ্যে আলাপে ব্যস্ত। এদিকে তাকাচ্ছেন না। ঈশান আমাকে ডাকলেন। বললেন,

হোয়াইট সস খাবে? লাফিং গ্যাসের মতো মিষ্টি।

আমি দাতে দাত চিপে বললাম,

আরেকবার লাফিং গ্যাস শব্দটা আমার সামনে উচ্চারণ করলে আমি আপনার গলা চেপে ধরব।

উনি উৎসাহ দেখিয়ে বললেন,

সত্যি তো?

আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। ক্ষিপ্রগতিতে নিহার পাশে গিয়ে বসলাম। তার কয়েক মিনিট পর ঈশান এসে আন্টির পাশে বসলেন। তাই দেখে নিহা বলল,

ঈশান ভাইয়া কি ডায়েটিং এ আছেন?

ঈশান বিস্মিত গলায় বললেন,

না তো! ডায়েটিং আমার দ্বারা সম্ভব না।

কেনো?

কারণ মিষ্টি জিনিস দেখলে কন্ট্রোল করতে পারি না।

আমি বিষম খেলাম। জোরে জোরে কাশছি। আন্টি অবাক চোখে তাকালেন। পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন। নিহা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,

আসলে ঈশান ভাইয়া, আপনি প্লেটে শুধু সালাদের আইটেম নিয়ে বসেছেন। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

ঈশান বললেন, ও এই ব্যপার? আসলে একটু স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলি আর কি।

সাফিন ভাইয়া বললেন, হুম। তুই তো খুব হেলথ কনসার্ন। তাই তোর অবগতির জন্য জানিয়ে রাখছি, অতি মিষ্টি জিনিস কিন্তু হেলথের জন্য খারাপ।

নিহা খাওয়া বন্ধ করে মাথায় হাত ঠেকিয়ে হেসে দিল। ঈশান অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। লভ লেটার টা কি তবে সাফিন ভাইয়ার কাছেও চালান হয়েছে? এইজন্য এভাবে বললেন? খেতে বসেও শান্তি নেই ধুর! আন্টি আমার অবস্থা খেয়াল করে বললেন,

তারিন! কি নিয়ে এতো চিন্তা করছো? কোনো বিষয়ে আপসেট?

নিহা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, আন্টি আমি জানি ও কি নিয়ে চিন্তা করছে।

আন্টি বললেন, কি নিয়ে?

পার্টির ওই মুখোশধারী ছেলেটাকে নিয়ে।

নিহার কথায় সাফিন ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে তাকালেন। আর আমি কটমট চোখে তাকালাম। আন্টি ভ্রু কুচকে বললেন,

ওই ছেলেকে নিয়ে এতো চিন্তা কিসের?

নিহা বলল, আছে আন্টি আছে। ছেলেটা যে এখনো ওর পিছু ছাড়েনি।

আন্টি অবাক হয়ে তাকালেন। বললেন,

কি? এখনো পিছু ছাড়েনি? কি ফালতু ছেলে। আসলে পার্টিতে একটা গণপিটুনি খেলে শিক্ষা হয়ে যেত। আমার সামনে পরলে তো আমি এই কাটাচামচ দিয়ে চোখ তুলে দিতাম।

ঈশান শব্দ করে উঠল। আকস্মিকভাবে কাটাচামচের খোচায় ঠোট কেটে ফেলেছেন উনি। সবাই উঠে দাড়ালাম। আন্টি কথা বলা বন্ধ করে ঈশানের দিকে দৃষ্টি দিলেন।
🍂

চলবে

তি আমো পর্ব-০৬

0

#তি_আমো❤
#পর্ব_৬
Writer: Sidratul muntaz

🍂
ছবিটাতে এক অন্যরকম ঘোর। এই ঘোরেই ডুবে ছিলাম আমি। আর সেই ডুব সাগর থেকে আমায় টেনে তুলল নিহা। কাধে হাত রেখে অবাক স্বরে বলে উঠল,

দোস্ত! তোর কেমন লাগছে এখন? ঠিকাছিস?

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। বললাম,

হ্যা ঠিকই তো আছি।

নিহা কপালে হাত ঠেকালো। হতাশ হয়ে আমার পাশে বসতে বসতে বলল,

যা খেল দেখালি আজ! আমি তো জীবনেও ভুলবো না।

আমার মুখের বিস্ময় গাঢ় রুপ ধারণ করল নিহার কথায়। আমি কি এমন করেছি যে ও এভাবে বলল? মোহনা আন্টির কণ্ঠ শুনতে পেলাম। খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে আন্টি আমার নাম উচ্চারণ করলেন,

তারিন! এখন কেমন লাগছে তোমার? ভালো লাগছে?নাকি এখনো খুব হাসি পাচ্ছে?

আন্টির কথা শুনে আমি আরো নির্বোধ হয়ে গেলাম। সবাই আমাকে নিয়ে এসব বলছে কেনো? মোহনা আন্টির হাতে একটা কাচের বাটি। উনি বাটি টা পাশের ছোট্ট টেবিলে উঠিয়ে রাখলেন। শাড়িটা হালকা তুলে দুষ্টুমী হাসি মুখে এটে বিছানায় বসতে বসতে বললেন,

কি? এখনো সাদা গোল্লাটা খেতে ইচ্ছে করছে?

নিহা ফট করে হেসে দিল। মোহনা আন্টিও হাসছে। বেশ মজা নিয়েই হাসছে। হাসতে হাসতে মোহনা আন্টি উচ্চারণ করলেন,

ঈশান যা ভয় পেয়েছিল! একবারও আর এদিকটায় আসেনি তারপর। একদম গার্ডেন সাইটে গিয়ে সাফিনের সাথে বসে আছে।

আমি বোকার মতো তাকালাম। ঈশানের আবার কি হল? নিহা আমার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টায় কাধে হাত ঠেকালো। হাসি হাসি ভাব নিয়েই হালকা ভ্রু কুচকে বলল,

আচ্ছা তুই ঈশান ভাইয়াকে সাদা গোল্লা বলতে গেলি কেনো?

মোহনা আন্টি আরো জোরে হাসলেন। কিন্তু আমি অবাক হলাম। ভ্রু কুচকে চিন্তা করলাম। সত্যিই কি ঈশান ভাইয়াকে আমি সাদা গোল্লা বলেছি? ধুর মিথ্যে কথা! উনাকে আমি গোল্লা বলতে যাবো কেনো। উনি কি গোল নাকি? উনি তো লম্বাটে। বেশ লম্বাটে। যদি আমি বলতাম সাদা লম্বদন্ড! তাহলেও ঠিক ছিল। কিন্তু গোল্লা কেনো বলতে যাবো। বাম হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছি। তখন মোহনা আন্টি বললেন,

তারিন এই দিনটা কিন্তু আমি কোনোদিন ভুলবো না। সো ফানি!

মুখে হাত দিয়ে আবারও হাসলেন। এবার আমার খুব লজ্জা লাগছে। আমি কি এমন করলাম? কিছু মনে পড়ছে না কেনো? নিহা বলল,

আন্টি আপনার ফানি মনে হচ্ছে? আমি তো বলবো সো হরিবল! ঈশান ভাইয়ার জন্য বেশি মায়া হচ্ছে। বেচারা কি ভয়টাই না পেয়েছে। তারিন তুই পারিসও।

আমার কাধে আঘাত করল নিহা৷ আমি আঘাতকৃত স্থানে কিছুক্ষণ হাত বুলালাম। কোনো উত্তর দিলাম না। মোহনা আন্টি বললেন,

যাই বলো নিহা। আমার এই ঘটনার পর থেকে খালি হাসিই পাচ্ছে। ঠিক তারিনের মতোই। একটা মজার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। হাহাহা!

গভীর হাসিতে মত্ত হলেন মোহনা আন্টি। নিহা উৎসাহ নিয়ে বলল,

কি মজার ঘটনা আন্টি? একটু শুনি তো!

হাসির ধাক্কায় এলোমেলো হওয়া চুলগুলো গোছাতে গোছাতে মোহনা আন্টি ঢোক গিলে বা ঢোকের সাথে হাসি গিলে উচ্চারণ করলেন,

ঈশান যখন ছোট ছিল, এই সাত আট বছর হবে! তখন তো আমরা থাইল্যান্ডে ছিলাম। তো একদিন হয়েছে কি, একটা ওয়েডিং সিরিমনিতে এটেন্ড করার উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা একটা এপার্টমেন্টে গিয়েছিলাম। ওই এপার্টমেন্ট টা ভীষণ অদ্ভুত, মানে বিল্ডিংটা তো বহুতল! লিফট ছাড়া চলাই যায়না। প্রায় ফিফটি প্লাস ফ্লোর হবে। তাহলে অনেকবড় বিল্ডিং।ওই বিল্ডিং এর একটা ফ্লোরেও ওয়াশরুম নেই। সব ওয়াশরুম টপ ফ্লোরে।

নিহা ভ্রু কুচকে বলল,

এটা আবার কেমন সিস্টেম?

মোহনা আন্টি হাত নাড়িয়ে বললেন, সেটাই তো। অদ্ভুত না? আচ্ছা যাই হোক, ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য আবার ইমারজেন্সি লিফটও ছিল। এখন আমরা মেইবি ছিলাম টেনথ ফ্লোরে। ঈশানের হঠাৎ ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হল। ভীষণ প্রেশার দিচ্ছিল ছেলেটার। ও আবার আমাকে কিছু বলেওনি। শুধু শুধু ঘোরাঘোরি করছিল, হাটছিল, কিছু খাচ্ছিল না, শান্ত হয়ে বসছিল না, পুরা একটা অস্থির অস্থির ভাব। তো আমি ব্যাপারটা নোটিস করে নিজে থেকেই বললাম, “বাবা তুমি কি ওয়াশরুমে যাবে?” ঈশান অসহায়ের মতো বলল, “ইয়েস মাম্মা!” তো আমি ওর বাবাকে খুজলাম। ছেলেকে ওয়াশরুমে নিতে হবে। কিন্তু তোমার আঙ্কেল আমাদের এপার্টমেন্টে ঢুকিয়েই লাপাত্তা হয়ে গেছেন। আর কোনো খোজ খবর নেই। ফোন করছি, ফোন ধরে না। তো আমি ভাবলাম আমিই নিয়ে যাই। কি আর করার! লিফটের সামনে গেলাম। লিফট নাকি বন্ধ। আমাদের অপযিট সাইডে পাঠানো হল। আর এদিকে তো ঈশানের হেব্বি প্রেশার চলছে। মুখ কাচুমাচু করে হাটছে ছেলেটা। আমি জলদি জলদি ওকে অপযিট সাইটে নিয়ে গেলাম। লিফটে ক্লিক করলাম। আর তখনই লিফটের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো তিন জমজ বোন, বাঙালি। এইরকম মোটা। বিশাল লম্বা। চুল, গায়ের গড়ন সব একই। তিনজনের মধ্যে একজন ঈশানকে দেখে মুখে হাত দিয়ে বলল,” আও! দ্যা বেবি ইজ সো কিউট!” বলতে বলতেই ঈশান কে কোলে তুলে নিল। আরেকজন হাত ধরে টানছে। তৃতীয়জন বলছে আমাকেও দিস। আর এদিকে আমি তো পরে গেছি মহা বিরক্তিতে। আর ঈশান তো চরম বিরক্ত। আমি বারবার বলছিলাম আমাদের যেতে হবে, যেতে হবে। কিন্তু মেয়েগুলোর রেসপন্স নেই । টানা হেচড়া শুরু করেছে ঈশানকে নিয়ে। গাল টিপে দিচ্ছে, বলে কিনা রসগোল্লার মতো গাল। টলটলে গাল, গুলুগুলু টা! আদরের ফোয়ারা খুলে বসেছে একদম। এরই মধ্যে লিফটও বন্ধ হয়ে গেছে। কি একটা অবস্থা?

নিহা আগ্রহ নিয়ে বলল, তারপর কি হলো আন্টি?

মোহনা আন্টি আরো এক দফা হাসির চোটে মাথা নিচু করে মুখে হাত রাখলেন। হাসতে হাসতে বললেন,

মেয়েটার কোলেই করে দিয়েছে। পুরো চুপচুপে অবস্থা।

নিহা মুখে হাত রেখে উচ্চারণ করল, শিট!

আমি হাসতে নিয়েও থেমে গেলাম। মুখে হাত রেখে হো হো করে হেসে উঠলাম। আমায় হাসতে দেখে মোহনা আন্টি মাথা তুলে তাকালেন। অতঃপর উনিও হাসতে শুরু করলেন। তিনজনই কিছুক্ষণ হাসলাম। হাসির শব্দে কাপছে ঘর। মোহনা আন্টি হাসি থামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন,

এই ঘটনার পর থেকই ঈশান আর মেয়েদের সামনে যায়না। আগে লজ্জা পেতো। আর এখন বিরক্ত হয়।

আমি মনে মনে চিন্তা করলাম। ঈশান যে এতো লাজুক টাইপ, সেটা ওকে দেখলে বোঝা যায়না। লজ্জাবতী লতা একটা! না না, উনি তো ছেলে। তাহলে হবে লজ্জাবান লতু। আমার ভাবনার প্রহর কাটিয়ে মোহনা আন্টি কাচের বাটিটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। কাচের বাটিতে স্যুপ। আমাকে বললেন স্যুপ খেয়ে নিতে। আমার পেটে আগে থেকেই ক্ষিধে ছিল। তাই খেয়ে নিলাম।

.

.

মোহনা আন্টিকে অনুসরণ করে আমি আর নিহা হাটছি। লাঞ্চটাইম হয়ে এসেছে প্রায়। তাই লাঞ্চ করার আগে বাড়িটা একটু ঘুরে দেখছিলাম। মোহনা আন্টি আমাকে বিভিন্ন জিনিসের সাথে পরিচয় করাচ্ছেন। একদিনে পুরো বাড়ির সাথে পরিচিত হওয়া যাবে না এটা নিশ্চিত। কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগবে। তবুও একটু ট্রায়াল দিচ্ছি। এবার আমরা ঈশানের ঘরে ঢুকব। ট্রায়ালের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট শুরু হতে যাচ্ছে। ঈশানের ঘরে চোখ বুলিয়ে আমি সবচেয়ে অবাক হলাম একটা বিষয় নিয়ে। এখানে ঈশানের কোনো ছবি নেই। সব ছবি বোধ হয় আন্টি নিজের ঘরে তুলে রেখেছেন। নিহা আর আন্টি নিজেদের মধ্যে কথপোকথনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। উনাদের আলাপে আমি আগ্রহ না দেখিয়ে ঈশানের ঘর পরিদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঘরটা চোখ ধাধানো সুন্দর হলেও আমার চোখ ধাধাচ্ছে না। কারণ এ বাড়িতে এসে সুন্দর জিনিস দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে চোখ দুটো। আমার অবশ্য একটা জিনিস ভালো লাগলো, যে এই ঘরটা বেশ খোলামেলা। বাগানের সাইডে হওয়ায় সূর্য্যের পূর্ণ আলো পৌছায় সম্পুর্ণ ঘর জুড়ে। বারান্দার কাচের গ্লাসের পর্দাটা সরিয়ে বাহিরের দিকে উকি দিলাম আমি। তখনই চোখে পড়ল বড় গাছের নিচে দুটো বাদর ঝুলে আছে। আই মিন ঈশান আর সাফিন ভাইয়া। ঈশান গাছের সাথে ঠেস দিয়ে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছেন। সাফিন ভাইয়াকে কিছু বলছেন হয়তো। সাফিন ভাইয়া একহাত কোমরে রেখে মাথা চুলকাচ্ছে। হঠাৎ কি মনে করে ঈশান এদিকটায় তাকালেন।আমাকে দেখেই হাতের ভাজ খুলে সোজা হয়ে দাড়ালেন উনি। মুচকি একটা হাসি দিলেন। আমি অপ্রস্তুত হয়ে পর্দাটা ছড়িয়ে দিলাম। এখন আর দেখা যাচ্ছে না উনাকে। আমি হাফ ছাড়লাম। হঠাৎ চোখাচোখি হয়ে যাওয়ায় অস্বস্তি লাগছে। মোহনা আন্টি আর নিহার আলাপ শেষ হল। এবার উনারা নিচে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আন্টি আমার দিকে হাত ইশারা করে বললেন,

এসো তারিন। নিচে যাই। লাঞ্চটাইম হয়ে গেছে।

নিহা বলল, হুম। আয় আয়!

ওরা সামনের দিকে হাটা দিল। আমি পেছন পেছন ধীরপায়ে হাটছি। দরজা পর্যন্ত যেতেই থমকে দাড়ালাম। দেয়ালের মাঝ বরাবর ঈশানের একটা ছবি চোখে পরল। আন্টি আর নিহা এতোক্ষনে ধরা ছোয়ার বাহিরে চলে গেছেন। দেয়ালে টাঙানো ছবিটা এতোই চমৎকার ছিল, যে আমি না দাড়িয়ে পারলামই না। গিটার হাতে নিয়ে একটা কমন পোজের ছবি। আচ্ছা গিটার হাতে এইরকম পোজে কি সব ছেলেদেরকেই মানায়? নাকি শুধু উনাকেই এতোটা মানাচ্ছে? আমাকে চমকে দিয়ে ঈশান আচমকা বলে উঠলেন,

আমাকে দেখছো?

আমার বুকটা ধক করে উঠল। নড়েচড়ে দাড়ালাম। কৌতুহল নিয়ে পেছনে তাকাতেই ঈশানকে দেখলাম। অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম তখনি। মুখ কাচুমাচু করে ভ্রু কুচকে বলে উঠলাম,

কি চাই?

ঈশান হাসলেন। বললেন,

আমার রুমে দাড়িয়ে আমাকেই জিজ্ঞেস করছো কি চাই? অদ্ভুত!

বলেই পকেটে হাত রেখে এক ভ্রু উচু করলেন। আমি কি বলবো খুজে না পেয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,

ও এটা আপনার রুম? ঠিকাছে তাহলে থাকেন আপনার রুমে আপনি। আমি গেলাম।

সামনের দিকে পা বাড়াতেই আমার সামনে হাত ঠেকিয়ে আটকালেন উনি। আটকিয়ে বললেন,

আরে আরে, চলে যাচ্ছো কেনো? আমার রুম বলে এভাবে চলে যাবে? দেখো বিয়ের পর কিন্তু এটা তোমারও রুম হবে। তাই এখন বলা যায় এইটা তোমার উড বি রুম। হাফ অধিকার তো তোমারও আছে।

আমি কটমট চোখে তাকালাম। বললাম,

আমি আপনাকে বিয়ে করলে তো! বয়েই গেছে আপনাকে বিয়ে করতে। এবার সামনে থেকে সরেন।

আবার দরজার চৌকাঠ পেরোতে চাইলাম আমি। উনি আবারও আটকালেন। আমার খানিকটা কাছে এসে বললেন,

তোমাকে বিয়ে করতে হবে না। বিয়ে তো আমি করবো। তুমি শুধু কবুল বলবে। তাহলেই হবে।

আমি রাগ দেখিয়ে বললাম, আপনি বাজে কথা বলা বন্ধ করবেন? কি শুরু করেছেন? আর বাই দ্যা ওয়ে, একটা কথা বলুন তো! তখন আপনি আমার সাথে কি এমন করেছিলেন? আমি অদ্ভুত আচরণ করছিলাম কেনো? আন্টির সামনে নিহার সামনে আমাকে হেনস্তা করতে চান? এইজন্য এমন করেছেন?

ইশান মুখ মলিন করে তাকালেন। বাম হাত দিয়ে মাথার পেছন দিকটা হালকা চুলকিয়ে অপরাধী কণ্ঠে বললেন,

সরি তারিন! আমি আসলে বুঝি নি। ডোজটা বেশি হয়ে গিয়েছিল।

ডোজ মানে? কিসের ডোজ?

এক মিনিট।

ঈশান প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে একটা ঔষধের শিশি বের করলেন। শিশিটা আমার মুখের সামনে ধরলেন। আমি দেখলাম। দেখে অনেকটা হোমিওপ্যাথির মতো লাগছে। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম,

এটা কি?

নাইট্রাস অক্সাইড।

মানে?

মানে.. মানে হচ্ছে লাফিং গ্যাস।

কি?

হুম। সুগন্ধিযুক্ত একটা গ্যাস। মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুতে হাসির উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। এই সুগন্ধি নাকে গেলে কারণ ছাড়াই মানুষ হাসে। দারুণ না? হালকা মিষ্টি টেস্ট। খেয়ে দেখবে?

হোয়াট ননসেন্স!

ননসেন্স না। জেনারেল সেন্স দিচ্ছি আমি তোমাকে।

রাখেন আপনার জেনারেল সেন্স। আগে বলেন এটা দিয়ে আপনি আমার সাথে কি করেছেন?

ঈশান দাত কেলোনো হাসি দিলেন। বললেন,

তোমাকে হাসানোর জন্য। মিষ্টি গ্যাস দিয়ে একটু হাসাতে চেয়েছিলাম। তবে ওভার ডোজ পড়ে যাবে ভাবিনি। তাইতো নেশা হয়েছিল তোমার।

কি? আমার নেশা হয়েছিল?

দেখো এটা কিন্তু আমার দোষ না। তুমি নড়াচড়া করছিলে বলেই না এমন হল।

কি মারাত্মক জিনিস! এইরকম একটা সাংঘাতিক গ্যাস আপনার কাছে কেনো?

আমার কাছে তো থাকার কথা না। আমিই অন্য জায়গা থেকে কালেক্ট করেছি। ডেন্টিস্টরা দাতের উপশমের জন্য এটা ব্যবহার করে। মনে করো তোমার দাতের অপারেশন হল, তুমি ব্যথায় কাতরাচ্ছো। তখন যদি এই লাফিং গ্যাস তোমার নাকের সামনে ধরা হয়! তুমি ব্যথা ভুলে হাসতে শুরু করবে। দারুণ জিনিস না? সবার জীবনেই একটা লাফিং গ্যাস দরকার। যে সব ব্যথা ভুলিয়ে মুখে হাসি এনে দেয়।

আমি হাত ভাজ করে দাড়ালাম। উনি খানিকটা নিচু হয়ে আমার মুখের কাছে ঝুকে বললেন,

এই মিষ্টি মেয়ে, তুমি কি আমার লাফিং গ্যাস হবে?
🍂

চলবে

( লাফিং গ্যাস সম্পর্কে সব ইনফরমেশন কিন্তু সত্যি। অনেকেই হয়তো জানেন। এটার টেস্ট মিষ্টি। আর ওভার ডোজে ড্রাগস এর মতো কাজ করে। তবে গল্পের খাতিরে আমি হয়তো একটু বেশিই নেশা দেখিয়েছি।😛)

তি আমো পর্ব-০৫

0

#তি_আমো
#পর্ব_৫
Writer: Sidratul muntaz

🍂
আমার হাসির বহর দেখে আন্টি আর নিহাও খানিক হেসে নিয়ে নিজেদের পোশাক-পরিচ্ছদ আর চুলের ভাজ ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মোহনা আন্টি আর নিহা হয়তো ভাবছে আমি তাদেরকে দেখে হাসছি। কিন্তু আসলে তো সেরকম না! আমি যে কেনো হাসছি, আমি নিজেও জানিনা। তবে হাসতে ভীষণ মজা লাগছে। বারবার দুই হাত তালির মতো করে বাজিয়ে হেসে উঠছি আমি। সামনে থাকা আস্তো দুজন মানুষ আমার দিকে বে আক্কেলের মতো তাকিয়ে আছে। তাই দেখে আমার আরো বেশি মজা হচ্ছে। মোহনা আন্টি এবার কিছু না বুঝতে পেরে আমার সাথে হেসে উঠলেন। নিহাও তাই করলো। দুজনই হাসি হাসি ভাব নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আর এদিকে আমি যে হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছি, দাড়িয়ে থাকা দায়। মোহনা আন্টি আমার এক কাধ টেনে ধরলেন। আমার বামহাতটা নিজের হাতের সঙ্গে জড়িয়েই হাসিমুখে একটু চিন্তার ভাজ ফেলে জিজ্ঞেস করলেন,

তারিন কি হয়েছে তোমার? এতো হাসছো কেনো?

আমি কি আর কথা বলার মতো অবস্থায় আছি? হেসেই তো যাচ্ছি। নিহাও আমায় বিপরীত পাশ থেকে ধরে আছে। হাসি যেহেতু একটা সংক্রামক রোগ, তাই আমার সাথে সাথে ওরাও কিছুটা হাসছে। তবে চিন্তাময় হাসি। দুজনই আমাকে দুই পাশ থেকে ধরে নিয়ে সোফায় বসালো। এবার শুরু হল আমার পাগলামী। উনারা আমায় সোফায় এনে বসাতেই আমি দুই পা উঠিয়ে কুজো হয়ে বসে পড়লাম। দুই হাত দিয়ে সোফার গদি মুষ্টিতে নিয়ে বলতে শুরু করলাম,

ওয়াও! কি সফট! নরম তুলতুলে। এতো মজা লাগে কেনো? মন চায় লাফাতে। একটু লাফাই?

আমার আচরণে আন্টি আর নিহা একবার চোখাচোখি করল। নিহা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলেও আন্টি কি একটা ভেবে বলে মাথা হেলিয়ে বললেন,

আচ্ছা লাফাও।

আমি সত্যি সত্যি সোফায় উঠে লাফাতে শুরু করলাম। লাফাতে লাফাতে উল্লাসের শব্দ করছি আমি। নিহা চরম অবাক হয়ে বিস্ফোরিত চোখে আমাকে থামাতে আসলেই মোহনা আন্টি আটকে দিল। ইশারা করে নিহাকে শান্ত থাকতে বলল। নিহা আন্টির ইশারায় শান্ত হয়ে গেলেও আমি শান্ত হলাম না। খপ করে সোফা থেকে নেমে গিয়ে এবার মোহনা আন্টির এক কাধ খামচে ধরলাম। তাই দেখে নিহা হালকা পাতলা একটা চিৎকার দিয়ে কয়েক কদম দুরে সরে দাড়ালো। আর আমি কি করছি? মোহনা আন্টির সো কলড কার্ল করা ব্রাউনিশ চুলে হাত বুলাচ্ছি। চুলগুলো গোছা বানিয়ে নিজের মুখের কাছে এনে সুরসুরি খাচ্ছি। মোহনা আন্টি মুখ কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করলেন। মহিলার ধৈর্য দেখে আমার অবাক লাগছে। উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষনে ঝাটার বাড়ি খেতাম। বুড়ি এখানে উপস্থিত থাকলে তো ঝাটা পেটা করতে করতে আমায় আধমরা বানিয়ে ফেলতো। ভাবতো আমায় জিনে ধরেছে। এই ভয়ে কেউ কেউ হয়তো সামনেও আসতো না, কাছেও ঘেষতো না। কিন্তু মোহনা আন্টি সেরকম কেনো আচরণই দেখাচ্ছেন না। বরং ধৈর্য ধরে আমার প্রবলেমটা বোঝার চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টায় উনি আদৌ সফল কিনা জানিনা, তবে আমি আবার উরাধুরা হাসিতে মত্ত হয়ে মোহনা আন্টির দিকে প্রশ্ন ছুড়লাম,

আন্টি…! আপনার চুল গুলো কি খাওয়া যায়? আমি খাবো! ক্ষুধা লেগেছে। আপনার চুল নুডলসের মতো। তাই আমি খাবো।

অসহায়ের মতো মুখ করে তাকালাম আমি। তখন মোহনা আন্টির নিঃসংকোচ উত্তরটা ছিল,

না মা! চুল তো খাওয়া যায় না। তবে খাওয়ার জন্য এতো কিছু থাকতে তুমি চুল কেনো খাবে?

মোহনা আন্টির উত্তর শুনে আমি কাদো কাদো মুখ করে তাকালাম। বাচ্চাদের মতো হাত পা নাড়িয়ে বললাম,

না আমি চুলই খাবো। অন্যকিছু না। নুডলসের মতো চুল খাবো।

মাথা নিচু করে ঠোটে উল্টো ভাজ ফেলে বাক্যগুলো আওরাতে আওরাতে নিহার দিকে তাকালাম। নিহা তব্দা লেগে দাড়িয়ে আছে। একটু একটু কাপছেও। যেন কারেন্টের শক লেগেছে ওর। বিদ্যুৎ ওকে তীব্র বেগে নিজের দিকে টানছে। মোহনা আন্টি আমার কাধে হাত বুলিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন হয়তো। কিন্তু আমি বলতে দিলাম না। বলার আগেই নিহার পেছনে ঈশানকে দেখে চেচিয়ে উঠলাম। চোখ বড় করে আনন্দের সাথে উচ্চারণ করলাম,

সাদা গোল্লা? এটা তো পুরো সাদা গোল্লা। আমি ওই সাদা গোল্লাটা খাবো।

বলতে বলতে ঈশানের দিকেই ছুটে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ঈশান আমায় এমনভাবে দেখলেন, যেন ভুত দেখছেন। আমি ঈশানের দিকে তেড়ে যেতেই উল্টো দিকে ঘুরে দৌড় লাগালেন ঈশান। যাকে বলে একেবারে রাম দৌড়। পুলিশের ধাওয়া খেয়েও চোর এইভাবে দৌড়ায় না। উনার পালিয়ে যাওয়া দেখে আমি মুখ ভেঙে কেদে দিলাম। এক হাত দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে অন্যহাতে ইশারা করে বললাম,

সাদা গোল্লাটা চলে গেল। কেউ ধরতে পারলে না? এবার আমি খাবো কি করে?

নিহার চোখমুখ এবার অন্যরকম হয়ে গেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সেও ঈশানের মতো উরাধুরা দৌড় লাগানোর সুযোগ খুজছে। আমি সোফায় ধপ করে বসে পড়লাম। কান্না কান্না ভাব করে দুই হাতে সোফার গদি খামচাতে খামচাতে বললাম,

সাদা গোল্লা এনে দাও, সাদা গোল্লা এনে দাও।

মোহনা আন্টি এবার মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে দ্রুতবেগে আমার কাছে আসলেন। আমি ভাবলাম সোফার গদি ছিড়ে ফেলার জন্য হয়তো আমাকে বকবেন উনি। কিন্তু এবারও আমার ধারণা ভুল হলো। উনি গদির দিকে নজর দিলেন না। আমি দুই হাত টেনে ধরে ইনিয়েবিনিয়ে দেখতে লাগলেন। নাকে পেচকী কেটে আফসোস করে বললেন,

ইশশ, হাতটার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো?

আমি সরল মুখ বানিয়ে হাতের দিকে তাকালাম। ধারালো সুতার আঘাতে হাত আমার ক্ষত বিক্ষত অবস্থা। তবুও আমার একটুও ব্যথা হচ্ছে না। একটুও না। আমি নির্বিকার ভঙ্গিতেই মোহনা আন্টির দিকে তাকালাম। উনার এক পশলা চুল আমার নাকের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। সাথে অদ্ভুত একটা শ্যাম্পুর স্মেইলে নাকে সুরসুরি অনুভূত হচ্ছে আমার। আমি হাচি দিয়ে বসলাম। হাচির শব্দে মোহনা আন্টি খানিক কেপে উঠে আমায় ছেড়ে দিলেন। এতোক্ষণ আমার সম্পুর্ন ভর মোহনা আন্টির উপর ছিল। তাইতো উনি আমায় ছেড়ে দেওয়া মাত্রই ফ্লোরে টপাস করে ঢলে পড়লাম। সব ঝাপসা ঝাপসা লাগছে…।

বালিশ থেকে মাথা তুলে তাকাতেই নিজেকে মোহনা আন্টির বেডরুমে খুজে পেলাম। আমি কি করে বুঝলাম এটা মোহনা আন্টির বেডরুম? কারণ দেয়ালে উনার বিশাল সাইজের একটা ছবি লাগানো। হাসি জমানো মুখের ছবি। মহিলা এতো সুন্দর হাসে কিভাবে? পুরুষ হলে উনার হাসির উপর ক্রাশ খেতাম। ঈশানেরও ছবির অভাব নেই। কোণায় কোণায় ঈশানের ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। বড়বেলার ছবি, ছোটবেলার ছবি, মধ্যম বেলারও ছবি আছে। মানে যখন উনি আমার মতো টিনেজার ছিলেন। এত্তো কিউট! আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো বেডরুমে না, ফটো স্টুডিওতে বসে আছি। তবে আঙ্কেলের কোনো ছবি চোখে পড়ছে না কেনো? মাথা ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকাতেই খুজে পেলাম আঙ্কেলকে। বিরাট ফ্রেমে বন্দী ছোট্ট পরিবারটার অসম্ভব মাধুর্যময় একটি ছবি। আন্টি চেয়ারে বসে আছেন, ঈশান ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে মায়ের কোলে চিবুক ঠেকিয়ে রেখেছে পরম শান্তিতে, আন্টির এক হাত ঈশানের মাথার চুলে নিবদ্ধ। আঙ্কেল চেয়ারের পেছনে দাড়িয়ে আন্টির মাথা বরাবর চিবুক ঠেকিয়ে রেখেছেন। সেও পরম স্বস্তিতে। আন্টি অন্য হাত দিয়ে আঙ্কেলের উরু স্পর্শ করে আছেন। কি অমায়িক দৃশ্য! তিনজনের মুখেই প্রাণোচ্ছল হাসি, আর সেই হাসিতেও অসম্ভব মিল, যেন বিধাতা একজন কে দেখে অন্যজনকে সৃষ্টি করেছেন। মনের মাধুরির সবটা ঢেলে সৌন্দর্যের বাগান তৈরি করে দিয়েছেন তাদের চেহারায়। মায়ের সাথে ছেলের, ছেলের সাথে বাবার, কি আশ্চর্য মিল! আমার চোখটা ভরে আসলো। ঝলমলে দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি আমি। ইশশ, ছবিটা এতো মনোমুগ্ধকর কেন? সবাইকে খুব আপন মনে হচ্ছে। বেশ আপন।
🍂

চলবে

তি আমো পর্ব-০৪

0

#তি_আমো❤
পর্ব – ৪
Writer: Sidratul muntaz

🍂
আবেগী ছেলেটাকে কিভাবে চিঠির উত্তর পাঠানো যায় সেটাই ভাবছিলাম। চট করে মাথায় আসলো নিহার নামটা। নিহার কাছে চিঠি পৌছে দিলে সে ঠিকই পিয়নের ভূমিকা পালন করে ঈশান পর্যন্ত চিঠিটা চালান করে দিবে। কিন্তু এতে আরেকটা ঝামেলা হতে পারে। এক্ষেত্রে নিহাকে জানাতে হবে যে তাদের অভদ্র সোসাইটির ভদ্রম্যান আমাকে কতটা ভদ্রতা সহিত প্রেম নিবেদন করেছেন। অবশ্য নিহার জানা উচিৎ। মিঃ আবেগচন্দ্রের ভদ্রম্যান সেজে থাকার মুখোশটা এবার বন্ধুমহলে খশে পড়ুক, এটাই তো আমি চাই। তৎক্ষণাৎ খাতা কলম ভাজ করে নিহাকে ফোন লাগাতে বসলাম। নিহা ফোনটা রিসিভ করেই সর্বপ্রথম যে বাক্য উচ্চারণ করল,

হ্যা তারু, বল? বাসায় সেইফলি পৌছেছিস?

হ্যা পৌছেছি।

কোনো ঝামেলা হয়নি তো? বাসায় ম্যানেজ করতে পেরেছিস?

ঝামেলা হতে হতে একটুর জন্য বেচে গেছি দোস্ত। তবে এখন সব নরমাল।

আমি জানতাম, ঈশান ভাইয়া যেখানে থাকবে সেখানে সব নরমাল না হয়ে পারে? উনি তো সব প্রবলেমের এক নম্বর সলিউশন। এজন্যই তো তোকে উনার সাথে পাঠিয়েছি। আর এখন নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছি। নাহলে এতোক্ষণেও তোকে ফোন না দিয়ে থাকতাম আমি ?

হুম! আমিও সেটাই ভাবছি। তুই একবারও কেনো ফোন করিস নি। এবার বুঝতে পারলাম কারণটা। এতো বিশ্বাস ঈশান ভাইয়ার প্রতি?

অবশ্যই। উনি নিজেই তো একটা বিশ্বাসের ভান্ডার। উনাকে বিশ্বাস না করে পারা যায়? আর তার প্রমাণ নিশ্চয়ই আজকে তুইও পেয়েছিস?

হ্যা! খুব ভালো প্রমাণ পেয়েছি। উনি যে আসলে কতটা বিশ্বাসের যোগ্য। শোন নিহা, তোকে একটা কথা বলবো। কিন্তু তার আগে তোকে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

কি প্রশ্ন দোস্ত?

তুই কি আমাকে বেশি বিশ্বাস করিস? নাকি ওই ঈশানকে?

এইটা আবার কেমন প্রশ্ন? দুজনকেই বিশ্বাস করি। তোরা দুজনই আমার খুব ক্লোজ। তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। আর ঈশান ভাইয়া আমার কাজিন। বড়ভাই। কেনো বলতো?

তারমানে ঈশানকে বেশি বিশ্বাস করিস?

আহা! আমি সেটা কখন বললাম? তোকেও বিশ্বাস করি। এখন বল না কি বলবি? জলদি বল!

আজকে মেকআপ রুমে যেটা হল, ওইটার জন্য ঈশান ভাইয়াই দায়ী।

আমার কথা শুনে মনে হয় নিহা ঝটকা খেয়ে ফ্ল্যাট হয়ে গেছে । তাই অপর পাশ থেকে কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। একদম সাইলেন্ট। প্রায় বিশ ত্রিশ সেকেন্ড পর নিহা মুখ খুলল। বলল,

আমিও এইটা গেস করেছিলাম। ঈশান ভাইয়াই হতে পারে।

নিহার উত্তরে এবার আমার ঝটকা লাগল। কিন্তু আমি ওর মতো সাইলেন্ট হলাম না। বরং উচ্চস্বরে বলে উঠলাম,

কি? তুই জানতিস?

জানতাম না। যাস্ট সন্দেহ হয়েছিল।

সন্দেহ হওয়ার পরেও তুই আমাকে উনার সাথে পাঠিয়ে দিলি? কিভাবে পারলি?

সন্দেহ হয়েছিল বলেই তো পাঠিয়েছি। কারণ তখন আমি আরো নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম। যদি আমার সন্দেহ সত্যি হয়, তাহলে ঈশান ভাইয়ার কাছে তুই আরো বেশি সেইফ থাকবি।

মানে?

তুই বোকা না তারু। তোর বোঝা উচিত। উনি তোকে ভালোবাসেন।

আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,

তুই আগে থেকেই সব জানতিস?

হুম। তবে সরাসরি জানতাম না। সন্দেহ থেকে জানতাম।

কিভাবে? কবে থেকে তোর এই সন্দেহ শুরু?

তুই আমার বার্থডেতে আমার বাসায় এসেছিলি না? সারপ্রাইজ পার্টি? কেক ছোড়াছোড়ির পর যে সবাইকে গোসল করতে হয়েছিল? তুই আমাদের বাসায় রাত্রীযাপন করেছিলি। মনে আছে?

হ্যা মনে আছে। আর সেইদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ঈশান ভাইয়া আমাকে একটা চিঠি লিখেছেন। তোদের যে বারান্দার পাশে বিশাল কাঠগোলাপ গাছ আছে না? সেখানে হেটে হেটে আমি কফি খাচ্ছিলাম। তখনই নাকি উনি আমায় দেখেছিলেন।

উনি তোকে চিঠি লিখেছেন? কি লিখেছেন? আমাকে মেসেঞ্জারে দে তো ছবি তুলে?

আচ্ছা দিবো। তার আগে তোর সন্দেহের কারণটা বল।

আমার সন্দেহ হয়েছে কারণ সেদিন পাশের সাইট থেকে আমি ঈশান ভাইয়ার উপর নজর রাখছিলাম। আসলে আমি না। রিদিতা, তানিশা, সামিরা, ওরা নজর রাখছিল। তখন আমিও ওদের সঙ্গ দিচ্ছিলাম। উনি আমাদের বাসায় আসলে প্রায়ই কাঠগোলাপ গাছটার নিচে গিয়ে বসেন। উনার পছন্দের ফুল কাঠগোলাপ কিনা! উনি সেখানে বসে পাবজি খেলেন। কিংবা বিভিন্ন ইম্পোর্টেন্ট কাজ করেন। আর সেদিনও সেরকম কিছুই করছিলেন। কিন্তু তুই বারান্দায় আসতেই উনি সবকাজ বাদ দিয়ে তোর দিকে তাকাচ্ছিলেন শুধু। ব্যাপারটা এতোটাই চোখে লাগছিল, যে আমি সন্দেহ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।

কিন্তু আমার না একবারও মনে পড়ছে না যে সেদিন তোদের বাসায় ঈশান ভাইয়াও ছিল। ইনফেক্ট আমি তো উনাকে কখনো দেখিই নি। আজকেই প্রথম দেখলাম।

উনি সেদিন আমাদের বাসাতেই ছিলেন। তবে সাফিনদের সাথে। অন্য জায়গায়। মেয়েদের সাইডে আসেন নি। ছেলেদের সাথে ছিলেন বলে তুই দেখিস নি।

কিন্তু আমার সব ভাইয়াদের সাথে দেখা হয়েছে, সবার সাথে কথা হয়েছে, আলাপ হয়েছে। শুধু উনার সাথেই কথা হয়নি। কেনো?

কারণ উনি ইচ্ছে করেই আসেন নি।

সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি কেনো আসেন নি?

কারণ ওইখানে রিদিতা, তানিশা ওরা ছিল। তাই আসেনি।

রিদিতা, তানিশাকে নিয়ে উনার কি প্রবলেম?

কারণ রিদিতা, তানিশা উনাকে পছন্দ করে। আর উনি মেয়েদের সঙ্গ পছন্দ করেন না।

আমি মুখ কুচকে উচ্চারণ করলাম,

কেনো? গে নাকি?

কি আজাইরা কথা বলিস! গে হতে যাবে কেন? পছন্দ করেনা আর কি!

আজব তো! পছন্দ না করার কি আছে?

সেটা মোহনা আন্টি ভালো বলতে পারবে। উনাকে জিজ্ঞেস করিস। ( হালকা হেসে)

মোহনা আন্টি কে?

এতো জলদি ভুলে গেলি? আজ পার্টিতে কার সাথে গল্প করছিলি?

ওহ! মানে ঈশানের মা? ওই আন্টিটা? কিন্তু উনাকে আমি কোথায় পাবো?

আচ্ছা তারু শোন, কাল মোহনা আন্টি আমাকে আর সাফিনকে উনার বাসায় দাওয়াত করেছেন। আমরা উড বি কাপল তো! মোহনা আন্টি ট্রিট দিতে চান আমাদের। তুই যাবি আমাদের সাথে?

ধুর ! আমি আবার যাই কিভাবে? তোরা কাপল হিসেবে দাওয়াতে যাবি তোর ফুফুর বাসায়। সেখানে কি আমার যাওয়া চলে?

অবশ্যই তোর যাওয়া চলে। কারণ মোহনা আন্টি আমাকে স্পেশালি রিকোয়েস্ট করেছেন তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

সিরিয়াসলি?

হুম। এখন যাবি কিনা বল? মানে বাসায় ম্যানেজ করতে পারবি?

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,

আন্টি মানে তোর মা যদি ভাইয়াকে ফোন করে বলে যে তোদের বাসায় দাওয়াত আছে, তাহলে ভাইয়া রাজি হলেও হতে পারে।

ঠিকাছে। তাহলে আমি মাকে দিয়ে ফোন করাবো। তুই রেডি থাকিস। একদম লেইট করবি না। সকাল দশটার মধ্যেই চলে আসবো আমি। আর এসে যেন তোকে তৈরি পাই।

আগে ভাইয়া রাজি হোক?

তারিফ ভাইয়া রাজি হবেই। ওটা আমার উপর ছেড়ে দে। তবে তোর ওই দাদীমা কোনো ভেজাল না করলেই হল।

না, ভাইয়ার কথার উপর বুড়িটা কিছু বলবে না।

নিহা প্রীতিকর হাসি দিয়ে বলল, ঠিকাছে। তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কাল দেখা হচ্ছে।

ওকে! কিন্তু মোহনা আন্টি হঠাৎ আমায় কেনো ইনভাইট করলেন সেটা বুঝতে পারলাম না।

সেটাও না হয় কালকে উনাকেই জিজ্ঞেস করিস? এখন রাখছি, বাই।

ওকে বায়।

আর মেসেঞ্জারে চিঠিটা দে।

ওকে বাবা। দিচ্ছি।

ওকে।

ফোনটা কেটেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম আমি। কাল তাহলে আবেগচন্দ্রকে নিজ হাতেই চিঠিটা দিতে পারবো। কেনো জানি ভেতরে ভেতরে ভীষণ এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে।

.

.

বিলাসবহুল সোফার নরম গদিতে বসে পুরো ড্রয়িং রুমটায় চোখ বুলাচ্ছি আমি। সম্পুর্ণ রুম এতোটাই বিশাল, যে চারদিকে ভালোমতো চোখ বুলাত গেলেও দশ মিনিট সময় লাগবে। আর ঘুরে দেখার কথা নাইই বললাম। ড্রয়িং রুমইটাই এতো বিশাল তাহলে না জানি সম্পুর্ন বাড়িটা কত আরও কত বিশাল হবে। হ্যা, আমি আবেগচন্দ্রের আবেগ দিয়ে তৈরি আলিশান বাড়ির কথাই বলছি। এই বাড়ি তৈরি করতে ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে সেই সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তবে কারিগর যে নিজের মনের পরিপূর্ণ আবেগটাই ঢেলে দিতে সক্ষম হয়েছে বাড়ির কোণায় কোণায় সেটা বুঝতে আমার বাকি নেই। তাইতো বাড়িটা এতো সুন্দর। আর অতিরিক্ত সুন্দর বাড়িতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, অস্থির লাগছে, দিনেরবেলাও এখানে লাইট জ্বালাতে হয়। সূর্যের প্রাকৃতিক আলো বিলাশী পর্দা ভেদ করে ভেতরে আসতে বাধা পায়। অবশ্য সূর্যের আলোর প্রয়োজনও নেই এখানে। তার বিকল্প হিসেবে আছে নানান ধরণের লাইট, সেগুলোও সেইরকম স্পেশাল। আমার মাথা বরাবরই একটা ঝুলছে। তবে আমার মনে হচ্ছে, আস্তো এই ঝাড়বাতিটা এখনি খুলে পড়বে। আর সেটা অবশ্যই আমার মাথা বরাবর। মুভিতে যেমন হয়না? উপর থেকে ঝাড়বাতি খশে পড়ে, তারপর নায়ক নায়িকাকে হেচকা টান দেয়। অতঃপর একজন আরেকজনের উপর ফ্ল্যাট হয়ে যায়। তখনি শুরু হয় রোম্যান্স। ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে রোম্যান্স! বাম পাশে চোখ যেতেই দেখলাম ডাইনিং আর ড্রয়িং রুম বিভক্ত করে উপরের দিকে চলে গেছে একটা সিড়ি। সিড়িটাও যথেষ্ট কারুকার্যময়। কি সুন্দর! চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো দৃশ্য। সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই মনে হয় বেডরুম গুলো সারিবদ্ধভাবে পাওয়া যাবে। আর সেদিকটা নিশ্চয়ই খুব খোলামেলা হবে। দিনের আলোর দেখা পাওয়া যাবে। মোটামোটি আইডিয়া হচ্ছে। আরাম করে সোফায় হেলান দিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম আমি। এই বাড়িটার বিশেষত্ব কি? মানুষ কেনো এতো পয়সা খরচ করে এমন বাড়ি বানায়? কি লাভ? এতে কি সময়, শ্রম, টাকা, জায়গা এসবের অপচয় হয়না? আমার চিন্তাজগতে আঘাত হেনে একটা মেয়ে বলে উঠল,

আপু, জুস খাবেন?

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। ড্যাব ড্যাব চোখে মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করলাম। অতঃপর মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম খাবো না। খেয়ে কি হবে? মনে হচ্ছে খেতে গেলেই বমি চলে আসবে। একা একা বসে খাওয়া যায় নাকি? তার উপর এই আবদ্ধ ঠান্ডা পরিবেশে? পুরো রুম জুড়ে কেমন একটা স্মেইল ছড়িয়ে আছে। যেটা আমাকে আরো বেশি বিরক্ত করছে। আমার এই বিরক্তির সুচনা হল নিহা আর সাফিন নামক দুই সেলফিশ। নিজেরা তো রোমান্টিক কাপলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, টাইম স্পেন্ড করছে, আর আমি এখানে বসে বসে বিরক্ত হচ্ছি। কি বিরক্তিকর! ফ্রীতে একটা অ্যাডভাইজ দেওয়া যায়। সেটা হল, জীবনে কখনো ” কাবাব ম্যায় হাড্ডি ” হয়ে কোথাও যেতে নেই। যেমন আমার অবস্থাটাই কল্পনা করুন! নিহা আর সাফিন ভাইয়ার কাছে তো আমি এখন “কাবাব ম্যায় হাড্ডি”। তাইতো আমাক বিনা দ্বিধায় ইগনোর করে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা। আগে জানলে এখানে জীবনেও আসতাম না ধুর! হাটুতে ভর দিয়ে উঠে দাড়ালাম আমি। এখন আমার উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ হাটাহাটি করা। কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই আচমকা সামনে চলে আসলেন ঈশান। ঈশানকে হঠাৎ দেখে হালকা চমকে উঠলাম আমি। চোখ বড় করে তাকালাম। উনি এসবের তোয়াক্কা না করেই নির্বিকার ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার হাত ধরে টানতে লাগলেন। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই জোরপূর্বক টেনে নিয়ে আসলেন একটা সরু জায়গায় চোখের পলকেই। এই ছেলে এতো ওভারস্পিডে চলে কিভাবে ? তাও আবার আমাকে সাথে নিয়ে? আমি উনার সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করলাম। নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,

প্লিজ ছাড়ুন আমাকে। এমন করছেন কেনো?

ঈশান বাকা ঠোটে হাসলেন। বললেন,

চিঠিতে কি লিখেছো? আমাকে মালি পদে বেশ ভালো মানাবে? একদম ঠিক বলেছো। আমি তো মালিই হতে চাই। তবে যেন তেন বাগানের মালি না। এই চমৎকার বাগানের মালি। ইশশশ কি সুন্দর! ( আমার মুখের কাছে ঝুকলেন)

আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম। উনার সাথে ধস্তাধস্তি জারি রেখে মুখ ফুলিয়ে বললাম,

এই কি বললেন? আমি বাগান?

উনি আমার হাত আরো শক্ত করে ধরলেন।এক ভ্রু উচু করে বললেন,

হ্যা! বাগানই তো। সাজানো ফুলের বাগান। এমন রেডিমেট একটা ফুলের বাগান থাকতে কষ্ট করে অন্য জায়গায় সাজাতে যাবো কেনো? আর পরিবেশবান্ধবের কথা বলছিলে না? আমাকে এবং আমার আশেপাশের মানুষদের নিয়ে যে তোমার এতো চিন্তা, সেটা জেনে ভালো লাগল। তবে আপাতত আমাকে নিয়ে চিন্তাটাই বেশি করা উচিৎ। তাতে তোমারই লাভ হবে। ( এক চোখ টিপে)

আমি মুখ হা করে তাকালাম। মুখ ভেঙে করুণ কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম,

দেখুন আপনি যদি আমাকে এখনি না ছাড়েন তাহলে খুব খারাপ হবে।

ঈশান আমার আরো কাছে ঘেষে বললেন,

ময়রা হওয়ার কথা বলছিলে না? মিষ্টির দোকান দিয়ে বসবো? আর দোকানের নাম কি হবে? “হাসি দিয়ে তৈরি মিষ্টি?” না না, নামটা চেঞ্জ করতে হবে। নামটা হবে” মিষ্টি দিয়ে তৈরি হাসি।” মানে আমি মিষ্টি দিবো আর তুমি হাসি দিবে। মিষ্টি তৈরি করতে আমি জানিনা। তবে মিষ্টি দিয়ে কি করে হাসি তৈরি করতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানি। দেখাবো প্রসেসটা?

দেখুন আপনি এসব কথা একদম বলবেন না। আমার ভয় লাগছে।

এখনি এতো ভয়? কিছুই তো করলাম না। মিষ্টি দেওয়ার প্রসেসটা আগে দেখাই! তারপর ভয় পেও?

আমি চোখ বড় করে বললাম, কামড়ে দিবো কিন্তু! খামচে দিবো না ছাড়লে!

ঈশান তাতেও হাসলেন। খুশি নিয়ে বললেন,

কুল! এতো ডিপে যাচ্ছো কেনো? কামড়াকামড়ি তো বিয়ের পরের ব্যাপার। এখন আগে হাসি তৈরির পদ্ধতিটা প্রয়োগ করে দেখি!

আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে উচ্চারণ করলাম, মা….!

উনি কোনোকিছুর বাধ মানলেন না। আমার কানের কাছে এসে ঠোট ছোয়ালেন। এদিকে আমি যে পুরাই কম্পিত অবস্থায় দাড়িয়ে আছি। এরই মাঝে ভেসে আসলো মোহনা আন্টির কণ্ঠস্বর। সাথে নিহার গলার আওয়াজটাও শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে দুজন কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। আমি চোখ খুলে তাকাতেই ঈশানকে আর পেলাম না। তবে ভীষণ অদ্ভুত লাগছে আমার। হাসি আসছে খুব। যেন তেন হাসি নয়, ভীষণরকম হাসি। মারাত্মক হাসি। পেট ফেটে হাসি আসছে। আমি হাসতে লাগলাম। উদ্ভট শব্দ করেই হাসতে শুরু করলাম। যাকে বলে ভুবন কাপানো হাসি! আমায় দেখে আন্টি নিহা থমকে দাড়ালেন। ভ্রু কুচকে অবাক চোখে তাকালেন। কিন্তু আমি যে হেসেই চলেছি। ওদের তাকানো দেখে আমার মনে হচ্ছে, আমি নিজেই পাগল হয়ে গেছি। উফফ, হাসি যে বাধ মানছে না! হাহাহা!
🍂

চলবে

তি আমো পর্ব-০৩

0

#তি_আমো❤
পর্ব – ৩
Writer: Sidratul muntaz

🍂
আমি এখন অপরিচিত ছেলেটির গাড়িতে বসে আছি। ছেলেটা ঠিক আমার হাতের ডানপাশ বরাবর বসে গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কথা হয়নি আমাদের মধ্যে। শুধু একবার উনি জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোথায় নামবো। আমি বলেছি বাজারের মাঝখানেই নামিয়ে দিলেই হবে। এতোবড় গাড়ি আমাদের গলিতে ঢুকবে না। আর তাছাড়া আশেপাশের মানুষ যদি দেখে, কোনো অচেনা ছেলে আমায় গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছে! অন দ্যা স্পট লংকাকান্ড শুরু হয়ে যাবে। এতো ঝামেলার থেকে বাজারে নেমে যাওয়াই ভালো। তবুও যদি শকুনি দৃষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পায়ে খুব চুলকানি হচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। যেন কিছু একটা বিধে আছে পায়ে। নিচু হয়ে পা টা চুলকাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হল না। তার আগেই হঠাৎ ছেলেটা আমার সামনে একটা বোতল এগিয়ে দিয়ে বললেন,

পানি খাবে?

আমি ভ্রু কুচকে মাথা নাড়লাম। ছেলেটা কাধ নাড়িয়ে বললেন,

ওকে! আমিই খাই।

বোতলের মুখ খুলে পানি খাচ্ছেন উনি। কিন্তু গাড়ির এখনো চলছে। স্টেয়ারিং ও ঘুরছে। আমি একটু অবাক হয়ে জানতে চাইলাম,

গাড়ি এখনো চলছে কিভাবে?

ছেলেটা পানির ঢোক গিলতে গিলতে বললেন,

এটায় অটো ফাংশন সেট আছে। এমনিতেই ঘুরে।

আমি ভ্রু নাচিয়ে উচ্চারণ করলাম, ও!

ছেলেটা আবার স্টেয়ারিং এ হাত রেখে আমার দিকে তাকালো,

আচ্ছা একটা কথা বলো তো।

কি কথা?

তোমাদের বাসা এতো কাছে কেনো?

মানে?

মানে এইযে, পাচমিনিটও হয়নি রওনা দিয়েছি। এরই মধ্যে চলেও এসেছি। বাজারের কাছাকাছি আমরা।

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। এই ছেলের আমাদের বাসা কাছে মনে হল? যেখানে আমার মনে হচ্ছে ঘণ্টা খানেক ধর দম বন্ধ অবস্থায় বসে আছি, সেখানে উনি বলছেন মাত্র পাচমিনিট? সামনের দিকে চোখ আটকাতেই বলে উঠলাম আমি,

ব্যাস ব্যাস! আর যেতে হবে না। এখানেই নামবো।

ওকে চলো নামি।

এই ওয়েট। চলো নামি মানে? আপনি কেনো নামবেন আমার সাথে?

আমি কেনো নামবো না তোমার সাথে? এতোটা রাস্তা তুমি একা যাবে নাকি? এই ভীড়ের মধ্যে? রাস্তার কি অবস্থা দেখেছো? তার উপর অন্ধকার।

ও হ্যালো! এটা না আমারই এলাকা ঠিকাছে? এইখানের প্রত্যেকটা মানুষ আমার ভাইয়াকে চিনে। এইখানে অন্তত আমার সেফটি নিয়ে কোনো প্রবলেম হবে না। বরং আপনি আমার সাথে নামলেই প্রবলেমটা হবে?

আমি নামলে প্রবলেম হবে? কেনো?

বাড়ে! এলাকার মানুষ দেখে নিবে না? তারপর কি ভাববে শুনি?

মানুষের ভাবাভাবিতে কি যায় আসে?

জানি। আপনার মানুষের ভাবাভাবিতে কিছু যায় আসবে না। তার প্রমাণ আমি আরো আগেই পেয়েছি। কিন্তু আমার যায় আসে। আমি তো একটা সাধারণ মেয়ে! মান সম্মানবোধ আছে আমার।

কথাটা শেষ করেই দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম আমি। পেছন থেকে ছেলেটা গলা উচিয়ে বলছিল,

তো আমার কি মান সম্মানবোধ নেই নাকি?

আমি শুনেও বা শোনার ভান ধরে হেটে আসলাম। কিন্তু বাসায় ঢুকতেই ঘটলো আরেক বিপত্তি। বুড়িটা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। কোমরে এক হাত রেখে শকুনি দৃষ্টি নিয়ে আমাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করছে। ভয়ে আমার আত্মাটা এতোটুকু হয়ে আসল। প্রথমেই আমার মনে হল, ভাইয়া এখন বাসায় নেই। কারণ যদি ভাইয়া বাসায় থাকতো, তাহলে বুড়িটা এমন সদর দরজা খুলে দাড়িয়ে থাকতে পারতো না। এটাই যে বিপদের আভাস! ভাইয়া থাকলেও বেচে যেতাম আমি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কুচুটে বুড়ির হাত থেকে নিস্তার নেই। শুকনো একটা ঢোক গিলে চেহারা স্বাভাবিক করে ভিতরে ঢুকে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু বাধ সাধলো বুড়িটা। দরজায় হাত ঠেকিয়ে বলল,

খাড়া! আগে ক কই গেসিলি?

আমি কপালের ঘাম আলতো করে মুছে বুড়ির দিকে শক্তচোখে তাকালাম। হাত পা অল্প অল্প কাপছে। তবুও অসীম সাহস দেখিয়ে বলে উঠলাম,

কোথায় আবার? কোচিং এ! আজকে স্পেশাল ক্লাস ছিল আমাদের। পুরো তিনঘণ্টার। ভাইয়াকে বলে গিয়েছিলাম তো। ভাইয়া সব জানে।

সত্য কইতাসোস? তোর চেহারার এই অবস্থা কেন?

ক কি অবস্থা? আরে ক্লাস করে এসেছি, কতটা পথ রিকশা ভাড়া বাচিয়ে হেটে আসতে হয়েছে জানো? খুব ক্লান্ত আমি। সরো তো ভেতরে ঢুকতে দাও।

বলতে বলতে ভিতরে পা রাখতে নিলে আরেকবার হাত ঠেকিয়ে বাধা দিল বুড়িটা।

এতোরাইতে বেলা কোচিং থাকে? আমারে শিখাস? এই চুল কতলা না এমনে এমনে পাকে নাই। সত্য কইরা ক কই গেসিলি?

আমি ভয় ভয় দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই মা ছুটে আসল। বুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলল,

মা, আপনার জন্য চা বানিয়েছি। ভেতরে চলুন।ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে চা। এই তারু তুইও ভেতরে আয়।

আমি স্বস্তির হাসি দিয়ে ভিতরে আসতে নিবো তখন আবারো বুড়িটা হাত উঠিয়ে উচ্চারণ করল,

ওই খাড়া। ( মায়ের দিকে তাকিয়ে) তোমার কৌশল আমি বুঝি আয়শা। এমন কইরা মাইয়াডারে বাচাইতে চাইতাসো। কিন্তু তা হইবো না। আগে আমি ওর ব্যাগ খোলামু। ব্যাগো আসলেই বই খাতা আছে কিনা দেহন দরকার। ওই ব্যাগ ডা দে।

কথাটা শুনে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল আমার। আমি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। মা আমাকে শান্ত থাকার ইশারা করে বুড়িকে বলল,

আহা থাক না মা। মেয়েটা বাহিরে থেকে এসেছে, খুব হয়রান। আগে তো ভেতরে আসুক। তারপর সব হবে।

না। কোনো ভেতরে আসাআসি নাই। আগে ওর ব্যাগ দেখমু তারপর চিন্তা করমু ভেতরে আইতে দেওন যায় নাকি। তারু ব্যাগ দে।

আমি ব্যাগটা আকড়ে ধরে বললাম,

না। আমি ব্যাগ কেনো দিবো? আমার ব্যাগে অনেক বই খাতা আছে, ইম্পোর্টেন্ট নোটস আছে। এসব এখন খুললে সব এলোমেলো হয়ে যাবে। তারপর আবার গুছাতে হবে। কোনো দরকার নেই।

বুড়ি উচ্চস্বরে ধমক দিল,

চুপপ! আমারে শিখাও? লেখাপড়া খালি তোমরাই করসো? আমগোর পোলাপান করে নাই? অযুহাত দেখাও? অযুহাত? তোমার অযুহাত দেহানি আমি বাইর করতাসি। বেশি বাড়সো না? ঠেং কাইট্টা ঘরে বসায় রাখমু। লেখাপড়া সব বন্ধ। তারপর অযুহাত বাইর হইবো তোমার।

বুড়ির ধমকে ব্যাগটা আমার হাত থেকে নিচে পড়ে গেল। বুড়ি মাথা নিচু করে ব্যাগটা তুলতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে কেউ উচ্চারণ করল,

এনি প্রবলেম?

আমি তুমুল গতিতে পেছনে তাকালাম। আর তাকিয়েই আমার চোখ ছানাবড়া। এ তো দেখছি ওই ছেলেটা। পকেটে হাত গুজে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। হায় আল্লাহ! এই মাল আবার এখানে কি করতে আসল? এবার তো সর্বনাশ নিশ্চিত। শেষ রক্ষাটাও বোধ হয় হলো না আর। ঠিক এই মুহুর্তে আমার ইচ্ছে করছে এই লম্বুটার ঘাসের মতো চুলগুলো টেনে টুনে ছিড়ে দিতে। উইথ আউট এনি রিজন! বুড়ির কথার আওয়াজে চমকে উঠে সামনের দিকে তাকালাম আমি। আমার ব্যাগটা হাতে নিয়ে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বুড়ি বলল,

তুমি কেডা?

ছেলেটা এক হাত পকেটে গুজেই অন্যহাতের এক আঙুল দিয়ে ভ্রু চুলকে বলতে যাচ্ছিল, আমি….

কিন্তু কথাটা শেষ করতে দিলাম না আমি। ফট করে তোতলানো কণ্ঠে বলে উঠলাম,

আমার স্যার! কোচিং এর স্যার।

আমার কথা শুনে মা আর বুড়ি দুজনেই ভ্রু কুচকালো। পেছনের ছেলেটার মুখের অবস্থা কি সেটা দেখতে পারলাম না। বুড়ি সন্দেহী দৃষ্টি নিয়ে বলে উঠল,

মাষ্টর? এতো জুয়ান মাষ্টর?

আমি বললাম,

হ্যা! উনিই তো আমাদের কোচিং এর ম্যাথ টিচার। আসলে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল কিনা আমি একা বাসায় ফিরছিলাম। আর স্যারের বাসাও এদিকেই। তাই আমাকে একটু এগিয়ে দিতে এসেছিলেন আর কি!

কথাটা শুনে বুড়ি চোখ বড় করে তাকালেও মাকে দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বাস করেছে। তাই মা একটা সন্তোষজনক হাসি দিল। কিন্তু বুড়িটা যে নাছোড়বান্দা। আমাকে অবিশ্বাস করবেই। তাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকাল। তাকিয়ে বলল,

তোমার বাসা কোন জায়গায়?

ছেলেটা গলা খাকারি দিয়ে বলল,

জ্বী, এইতো সামনে। এই গলির পরের গলিতেই।

আমার মনে হচ্ছিল এখনই হ্রৎপিন্ডটা বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ছেলেটার উত্তর শুনে হালকা স্বস্তি পেলাম। যাক, মাথায় ঘিলু বলতে কিছু আছে তাহলে ছেলেটার। বুড়িটা হতাশ কণ্ঠে উচ্চারণ করল,

ওহ! আইচ্ছা তাইলে ভেতরে আয়ো। এক কাপ চা খাইয়া যাও। ( মায়ের দিকে ঘুরে) আয়শা ভেতরে আনো ওগো।

ব্যাগটা মায়ের হাতে দিয়ে শাড়িটা হালকা উচু করে ঘরে ঢুকে গেল বুড়িটা। আমিও যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম। মা একটা অমায়িক হাসি দিয়ে ছেলেটা কে বলল,

বাবা, ভেতরে আসো না। এক কাপ চা খেয়ে যাও।

ছেলেটা সংকোচ গলায় বলল,

না আন্টি। আজ থাক। অন্য আরেকদিন। আমার একটু তাড়া আছে।

আমি সঙ্গে সঙ্গে উচু গলায় উচ্চারণ করলাম,

হ্যা মা। কোনো দরকার নেই। উনার তাড়া আছে উনাকে যেতে দাও। এই আপনি যান তো?

মা অবাক হয়ে বলল,

তারু এসব কি? স্যারের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?

আমি ভ্রু কুচকে বললাম, আরে কিসের স্যার?

বলেই জিভ কাটলাম। নিজের মাথায় চাটি মেরেই জোর পূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,

মানে, কিসের কথা বললাম? কিভাবে কথা বললাম? উনি নিজেই তো চলে যেতে চাইলেন।

ছেলেটা পেছন থেকে ইতস্তত কণ্ঠে বলল,

আচ্ছা আন্টি আমি আসি। আসসালামু আলাইকুম!

মা বড় করে হাসি টেনে বললেন, ওয়ালাইকুম আসসালাম। এসো বাবা!

ছেলেটা উল্টো দিকে ঘুরে হাটা দিতেই আমিও ঝড়ের বেগে মায়ের হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলাম। রুমে এসেই দরজায় খিল লাগিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাচলাম। আরেকটু হলেই ধরা পড়ে যাচ্ছিলাম। খুব জোড় বেচে গেছি আজ। আল্লাহ তোমার দরবারে লাখ লাখ শুকুর। এখন আমার প্রথম কাজ হচ্ছে ব্যাগের জিনিস পত্র বের করে সব গুছিয়ে নেওয়া। ভারী ভারী জিনিস বের করে ব্যাগটাকে উল্টো করে একটা ঝাড়া দিতেই বেরিয়ে এলো একটা সাদা কাগজ। ভাজ করা সাদা কাগজ। আমি কৌতুহল নিয়ে কাগজটা ফ্লোর থেকে তুললাম। দেখে তো লভ লেটার মনে হচ্ছে। এটাও আবার ওই ছেলেটার কাজ না তো? যে একটু আগে আমার ম্যাথ টিচার হয়েছিল? নিজের মনেই হাসলাম আমি। আর তখনি চোখ আটকালো পায়ের দিকে। আমার পায়ে কালো রঙের একটা পায়েল জড়ানো। এতোক্ষণ একদমই খেয়াল করিনি আমি। সেজন্যই তো পা টা তখন থেকে কেমন চুলকাচ্ছে। এসবই যে ওই ঈশান নামের ছেলেটার কারসাজি তা বুঝতে আমার বাকি নেই। তবে পায়েল টা বেশ সুন্দর। আচ্ছা ছেলেটা কি আমাকে ভালোবাসে? বাসলেও কি? আমি তো বাসি না! বিছানায় গা এলিয়ে চিঠিটা মুখের সামনে মেলে ধরলাম। অসম্ভব সুন্দর চকচকে কালো অক্ষরের লেখাগুলো চোখে ভেসে বেড়াতে লাগল। হাতের লেখাও এতো সুন্দর হয় মানুষের? আমি চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম।

ওহো মিষ্টি হাসির মেয়ে,

তুমি কি জানো? তোমার হাসিটা ঠিক কতটা মিষ্টি। আমার তো ইচ্ছে হয় সন্দেশ বানিয়ে খেয়ে নিতে। সাতক্ষীরার সন্দেশ। কিংবা সিরাজগঞ্জের পানতোয়া, অথবা ধানসিঁড়ির দই। কি? অবাক হচ্ছো? ভাবছো ছেলেটা বোধহয় পাগল, তাই এসব আবোল-তাবোল বকছে। হ্যা ঠিকই ভাবছো মিষ্টি মেয়ে! সত্যিই পাগল হয়ে গেছি আমি। পাগল তো তুমিই বানিয়েছো। কি দরকার ছিল সেদিন জোৎস্না রাতে ভেজা চুল ঝারতে ঝারতে বারান্দায় আসার? তোমার চুলের সেই অবাধ্য ঝাপটাগুলো এক নিরীহ ছেলের মনে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, সেই সর্বনাশের দায়ভার এবার কে নিবে শুনি? ছেলেটা যে পাগল হয়ে যাচ্ছে। কফি মগ হাতে বারান্দার প্রতিটি কোণ ঘুরে বেড়িয়ে তোমার আনমনে হেসে উঠার সেই অপরুপ দৃশ্য ছেলেটা যে ভুলতে পারছে না। জানো সেদিন কাঠগোলাপের সুভাষের চেয়েও প্রকট ছিল তোমার ওই চুলের সুভাষ। যা ওই অসহায় ছেলেটির জন্য তীব্র এক অত্যাচার। প্রেমে না পড়ে কি উপায় ছিল? তোমার চুলের প্রতিটি ভাজ যে এখন ছেলেটার কাছে একেকটি ভালোবাসার খোরাক। সেইরাতে জোৎস্না ঝড়ানো চাদের আলোও যে ফিকে পড়েছিল, তোমার ঝলমলানো হাসির কাছে। উদাসীন ভাবে যতবার তুমি কফিতে চুমুক দিচ্ছিলে, ছেলেটা যে আফসোসে আফসোসে মরে যাচ্ছিল, হিংসে করছিল কফি মগটাকে, ভীষণ হিংসে। তুমি অন্য কিছুতে ঠোটের উষ্ণ পরশ দিচ্ছো এই দৃশ্য যে ছেলেটার কাছে অসহ্য যন্ত্রণার। সে যেমন তোমার প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিল, তেমনি জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিল। কিভাবে বোঝাবো তোমায়? এ যন্ত্রণা যে বয়ে বেড়ানো দায়। বড্ড দায়! তাইতো লিখতে বসেছি। মনের অশান্ত অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার এক ব্যর্থ চেষ্টা বলা যায়। আর সেই চেষ্টায় আমি কতটুকু সফল জানিনা। শুধু এইটুকু জানি, এই প্রথমবার কারো প্রেমে নিজেকে বলীয়ান করেছি। দীর্ঘরাত নির্ঘুম কাটিয়েছি কারো কল্পনায় মগ্ন থেকে। কারো মিষ্টি হাসির প্রেমে মনের জমানো আবেগ গুলো আমার আত্মসমর্পণ করেছে। এবার যে যখন তখন ইচ্ছে হয় চাদের আলোয় সেই স্নিগ্ধ মুখটা দেখার। মাদকময় সেই চুলের গন্ধে মাতাল হওয়ার। আরো অনেক কিছু ইচ্ছে হয় মিষ্টি মেয়ে। কিন্তু সবটা বললে আবার রেগে যেবে না তো? ভুল বুঝে চেচিয়ে উঠবে না তো? আজকে যেমন ভুল বুঝলে? খারাপ কোনো উদ্দেশ্য যদি থাকতো, তাহলে কি তোমায় এতো যত্ন করে তুলে আনতাম? এতো যত্নে তোমার পায়ে ভালোবাসার উপহার জড়িয়ে দিতাম? তুমি খুব আনমনা তারিন! তাইতো একটিবারও খেয়াল করলে না তোমার পায়ে জড়ানো আমার সেই উপহারটিকে। এসব আমি কেনো করেছি? জানতে চাও? তোমারই প্রেমে মিষ্টি হাসির মেয়ে! মায়াবী মুখের দুষ্টু মিষ্টি হাসিটা যে আমার বুকে ব্যথা হওয়ার কারণ। এই ব্যথা সারিয়ে তোলার দায়িত্বটা নিবে? তুমি ছাড়া যে আর কেউ পারবেই না। ভালোবাসি তোমায়। অনেক বেশি ভালোবাসি। বিশ্বাস না হয় তো আমার মনের শহরে একটিবার এসে ঘুরেই যাও না! কেমন আয়োজন করে ভালোবাসার বাগান সাজিয়ে রেখেছি, শুধু তোমারই অপেক্ষায়।

তোমাতে মাতাল আমি।

চিঠিটা সম্পুর্ণ শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি। চিঠি তো নয় যেন আবেগের বস্তা। এতো আবেগ পায় কই মানুষ? আচ্ছা উনার আবেগী চিঠির একটা সোজা সাপ্টা উত্তর লিখে দিলে কেমন হয়? কিন্তু লিখলেও পাঠাবো কিভাবে? ঠিকানাও তো জানা নেই। আচ্ছা সেটা পরে ভাবা যাবে আগে লিখেই নেই। আমি খাতা কলম নিয়ে লিখতে বসে গেলাম,

মাননীয় আবেগচন্দ্র,

আপনার বস্তাপচা আবেগমার্কা চিঠিটায় চোখ বুলিয়ে আমার শুধু একটা জিনিসই মনে হয়েছে। সেটা কি জানেন? আপনার আসলে মজনু না হয়ে ময়রা হওয়া উচিৎ। কারণ মিষ্টি সম্পর্কে আপনার বেশ ভালো জ্ঞান আছে। উদাহরণ: সাতক্ষীরার সন্দেশ, সিরাজগঞ্জের পানতোয়া, ধানসিঁড়ির দই। আচ্ছা আপনি একটা কাজ করুন না? বিরাট একটা মিষ্টির দোকান খুলে বসুন। সেই দোকানের নাম হবে ” হাসি দিয়ে তৈরি মিষ্টি”। সকল জেলার বিখ্যাত বিখ্যাত মিষ্টির সমাবেশ থাকবে সেখানে। আর তা যদি না হয়, আপনার কাছে আরেকটা অপশন আছে। মালীর পদেও আপনাকে বেশ ভালো মানাবে। মনের শহরে ভালোবাসার বাগান না সাজিয়ে, নিজের শহরে একটা ফুলের বাগান সাজান না? পরিবেশবান্ধব হবে। এতেও ঢের লাভ আছে। অন্তত আপনি কোনো একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারবেন। তখন আর আপনার মাথায় ওসব শয়তানি বুদ্ধি নাড়া দিবে না। এখন যেমন আজাইরা বসে থাকার কারণে আপনার সাইকো প্রবলেম দেখা দিচ্ছে, সেটা তখন আর হবে না! আর জানেনই তো? কথায় আছে ” অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”। ফ্রীতে অনেক এডভাইস দিয়ে দিলাম মিঃ আবেগচন্দ্র! কাজে লাগিয়ে দেখবেন, ফলাফল আসতে বাধ্য। আজকের মতো তাহলে বিদায়? ভালো থাকবেন। আশেপাশের সবাইকে ভালো রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।

চিঠি তো লিখে ফেললাম। এখন কথা হচ্ছে, পাঠাবো কিভাবে?
🍂

চলবে

তি আমো পর্ব-০২

0

#তি_আমো❤
পর্ব – ২
Writer: Sidratul muntaz

🍂
ভদ্রমহিলা ঘাড় ঘুরিয়ে আবার ছেলেটার দিকে তাকালেন। তাকিয়ে বললেন,

ঈশান, এইটা তারিন। নিহার বেস্ট ফ্রেন্ড। খুব মিষ্টি মেয়ে তাইনা?

ছেলেটা মৃদু হাসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

হ্যা খুব মিষ্টি। কিন্তু এপেল জুসের মতো না।

ভদ্রমহিলা হাসিমুখেই ভ্রু কুচকে বললেন,

মানে?

মানে তোমার এপেল জুসে মিষ্টি ঠিক হয়েছে কিনা দেখো। বেশি মিষ্টি তো হলে তো আবার চেঞ্জ করে আনতে হবে।

ও, হ্যা দেখছি। ( গ্লাসে চুমুক দিয়ে) হ্যা ঠিকই তো আছে। বরং কম মিষ্টি হয়েছে। হালকা টক টক লাগছে।

ছেলেটা আবারো হাসলেন। হাসির সাথে ঝকঝকে সাদা দাতগুলোও বেরিয়ে আসল। আকাবাকা দাতের ঝলকানো হাসি, খুব সুন্দর দৃশ্য। আমার দিকে আঙুল ইশারা করে ছেলেটা বললেন,

ওইযে মিষ্টি মেয়ে আছে না? পুষিয়ে নাও।

ভদ্রমহিলা ছেলের গালে হালকা চড়ের মতো দিয়ে বললেন,

ঈশান! সবসময় ইয়ার্কি।( হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকালেন) তুমি কিন্তু কিছু মনে করোনা তারিন। ও এমনই।

আমি তো অনেক কিছুই মনে করছি। কিন্তু কিছু প্রকাশ করতে পারছি না। এই বেদনা লুকিয়ে রেখে খুশি ভাব দেখিয়ে বললাম,

না আন্টি। কিছু মনে করিনি।

ছেলেটা চলে যেতে নিচ্ছিলেন। কিন্তু আন্টি যেতে দিলেন না। টি শার্ট টেনে ধরে বসতে বললেন উনার পাশে। ছেলেটাও বসে পড়লেন। বাধ্য ছেলের মতো আন্টির বিপরীত পাশে। তবে আমার মনে হচ্ছে ছেলেটা বসতেই চাইছিলেন, শুধু মায়ের অনুরোধের অপেক্ষায় ছিলেন। এখন অনুরোধ পেয়ে গেছে, তাই নির্দ্বিধায় বসেও পড়েছেন। আন্টি ছেলের কাধে হাত রেখে বললেন,

কিছুক্ষণ আগে একটা মেয়ের সাথে মিসবিহেভ হলো না? তারিনই কিন্তু সেই মেয়ে। কত বড় ফাজিল ছেলে একবার চিন্তা কর? আমার তো ইচ্ছে করছে এখনি ছেলেটাকে দু চার ঘা লাগিয়ে আসতে। হাতের কাছে পেলে না, কম হলেও চার পাচটা চড় মেরে বুঝিয়ে দিতাম একদম।

আন্টির কথায় ছেলেটা ভ্রু কুচকে কৌতুহল নিয়ে বললেন,

তাই নাকি? উনিই সেই মেয়েটা? ( আমার দিকে তাকালেন) আচ্ছা, আপনি কি ছেলেটার মুখ দেখেছিলেন?

আমি মাথা নাড়িয়ে না বুঝালাম। বললাম,

মুখ দেখিনি। মাস্ক পড়া ছিল। মাংকি মাস্ক।

মা ছেলে দুজনই উচ্চারণ করলেন, হোয়াট?

আমি মাথা ঝাকিয়ে বললাম,

হ্যা! থাকে না কতগুলো মাস্ক, একদম মাথা থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে যায় শুধু চোখ খোলা থাকে। অনেকটা বানরের মুখের শেপ। তাই বললাম মাংকি মাস্ক। আর একটা কোর্ট টাইপ কালো কাপড় গায়ে জড়ানো ছিল। তাই উল্লেখযোগ্য কিছু খেয়াল করিনি।

ছেলেটা ভ্রু নাচিয়ে ঠোট উল্টে বললেন,

ও আচ্ছা!

আন্টি বললেন,

তাহলে তো আমার মনে হয় ছেলেটা চোর-ডাকাত কিছু হবে। তার মুল উদ্দেশ্য ছিল তোমার ব্যাগ হাতিয়ে নেওয়া। দেখো তো তোমার ফোন, টাকা-পয়সা সব ঠিকঠাক আছে কিনা?

আন্টির কথায় ছেলেটা বিষম খেলেন। অনেকটা রাগী কণ্ঠে বললেন,

আরে কি আজাইরা কথা বলছো মম! চোর–ডাকাত হতে যাবে কেনো? আর চোর-ডাকাত কি এভাবে আসে? তাদের কাছে ধারালো ছুরি থাকে, পিস্তল থাকে, এসব দেখিয়ে তারা মানুষকে ভয় দেখায়। আপনার সাথে কি ছেলেটা এমন কিছু করেছে? ( আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লাম। ছেলেটা আন্টির দিকে তাকিয়ে বললেন,

দেখেছো? আসলে চোর ডাকাত কিছু না।

আন্টি বললেন,

তাহলে তুইই বল? কি উদ্দেশ্য নিয়ে ছেলেটা এমন করেছে?

ওই ছেলের উদ্দেশ্য আমি কিভাবে জানবো? তবে আমরা শুধু খারাপটাই চিন্তা করছি। ছেলেটার কোনো ভালো উদ্দেশ্যও তো থাকতে পারে।

আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

দেখেছো তারিন কি আজগুবি কথা বলে? ভালো উদ্দেশ্য থাকলে এভাবে লুকিয়ে আসতো নাকি?

আন্টির কথার উত্তরে আমি জোরপুর্বক ঠোট প্রসারিত করে হাসলাম। ভালো উদ্দেশ্য কি খারাপ উদ্দেশ্য জানিনা। তবে আমি যে উনার নিজের ছেলেকেই সন্দেহ করছি সেটা কিভাবে বলি? আর এখন তো আমার সন্দেহের মাত্রা আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমার সন্দেহের প্রথম কারণ তো হাত। আর দ্বিতীয়ত এই ছেলেটা আমায় জিজ্ঞেস করলেন আমি ওই ছেলের মুখ দেখেছিলাম কিনা। কিন্তু উনি কি করে বুঝলেন ছেলেটা আমার অচেনা ছিল? কিংবা আমি ছেলেটাকে চিনতে পারিনি? এই কথা তো আমি নিহা ছাড়া কাউকে বলিনি। আর তৃতীয়ত হল এইরকম একটা ঘটনাতেও উনি ভালো উদ্দেশ্য খুজছেন। কেবল নিজের দোষ ঢাকার জন্যই কেউ এমনটা বলতে পারে। রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি । এরই মধ্যে কেক কাটার পর্ব শেষ। স্টেজের ভীড় কমে আসছে। ক্যামেরা ম্যান রাও সরে যাচ্ছে। নিহা এক স্লাইস কেক নিয়ে হুট করেই দৌড়ে আসল। আমি ভাবলাম আমার দিকে আসছে। তাই প্রস্তুত হয়ে নিচ্ছিলাম, কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে নিহা আন্টিকে জড়িয়ে ধরল। আহ্লাদী গলায় বলল,

আন্টি…!

আন্টি নিহার কাধে হাত নাড়িয়ে বললেন,

কনগ্রেটস নিহা! এংগেইজমেন্ট হয়ে গেল।

নিহা কেকের স্লাইস আন্টির মুখের সামনে এনে বলল,

টেক আ বাইট প্লিজ!

আন্টি এক কামড় কেক খেলেন। নিহা এবার ঈশানের দিকে ঘুরল। নেকামো হাসি দিয়ে বলল,

ঈশান ভাইয়া, টেক আ বাইট!

ছেলেটাও এক কামড় খেয়ে স্লাইসটা হাতে নিলেন।
নিহাকেও এক কামড় খাওয়ালেন। দুষ্টুমী হাসি দিয়ে হালকা একটু ক্রিম তুলে নিহার নাকের ডগায় লাগিয়ে দিলেন ছেলেটা। নিহা মুখ হা করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছেলেটার গালেও লাগিয়ে দিল ক্রিম। অতঃপর তিনজনই দুষ্টমী হাসিতে মেতে উঠল। আর আমি নিরব চোখে তাকিয়ে আছি। ওদের খুনশুটি আমার ন্যাকামো মনে হচ্ছে। কিছুসময় পর নিহা আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ভ্রু নাচিয়ে বড় হাসি টেনে আমার দিকে আসতে আসতে নিহা বলল,

তারিন! হা কর হা কর।

আমি হাত ঠেকিয়ে বাধ সাধলাম। নাকে পেচকী কেটে বললাম,

খাবোনা দোস্ত! ভালো লাগছে না। আগে বল বাসায় কখন যাবো আমি?

নিহা ব্যস্ত হয়ে বলল,

ও হ্যা। তোকে তো যেতে হবে। আচ্ছা আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তোকে বাসা পর্যন্ত পৌছে দিবে। তুই তৈরি হয়ে নে। খুব দ্রুত।

আমি মাথা হেলিয়ে উঠে যেতে নিবো তখন আন্টি আমায় আটকালেন। দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে বললেন,

এই ওয়েট, তুমি ড্রাইভারের সাথে একা যাবে নাকি? নিহা? ওকে ড্রাইভারের ভরসায় ছাড়া কি ঠিক হবে? এই রাতের বেলা? একা একটা মেয়ে!

নিহা আমার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল। আন্টির দিকে তাকিয়ে বলল,

না আন্টি কিচ্ছু হবে না। ও বাসায় পৌছে আমাকে ফোন দিবে তো! তারিন তুই ফোন করিস হ্যা?

আমিও সম্মতি জানাতে চাইলাম কিন্তু আন্টি কড়া গলায় বললেন,

আরে আগে তো বাসায় সেইফলি পৌছাতে হবে নাকি? তারপরই না ফোন। রাস্তার মাঝে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে? এমনিতেও আজকে যেটা হল, মেয়েটার উপর ফাড়া যাচ্ছে। রিস্ক নেওয়ার কি দরকার? তার চেয়ে ভালো হয় ওর বাসা থেকে কাউকে ফোন কর। ওকে এসে নিয়ে যাক।

আন্টির কথা শুনে আমি আর নিহা চোখাচোখি করলাম। বাসায় কিছুতেই ফোন করা যাবেনা। তাহলে বাধবে আরেক বিপত্তি। আন্টি যেন আমাদের চোখের ভাষা বুঝে নিলেন। তাই আরেকবার বললেন,

আচ্ছা নাহলে আমরা যাওয়ার সময় তারিনকে ড্রপ করে দিবো। এটাই ভালো হবে। কি বলো নিহা? তারিন?

নিহা অবাকচোখে আন্টির দিকে তাকালো। আমার প্রতি আন্টির এতো কনসার্নড হওয়াটা হয়তো প্রত্যাশা করেনি সে। নিহা দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলল,

না আন্টি সেটা তো সম্ভব না। ওকে জলদি বাসায় যেতে হবে। ওর একটু সমস্যা আছে। আর আপনাদের যেতে তো এখনো অনেক দেরি। তাই হবে না।

আন্টি ভ্রু কুচকে কিছু একটা চিন্তা করে আবার বললেন,

মেয়েটাকে তো এভাবে একা ছাড়া যায়না। আমারই ভয় লাগছে ওর জন্য। আচ্ছা এক কাজ করি! ঈশানকে ওর সাথে পাঠিয়ে দেই।

কথাটা শুনে আমি নিহার কাধ খামচে ধরলাম। নিহা বলল,

ঈশান ভাইয়া যেতে রাজি হবে?

আন্টি ভ্রু নাড়িয়ে বললেন, দাড়াও আমি বলে দেখছি।

ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালেন উনি। ছেলেটা দূরে টেবিলে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে সাফিন ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলেন। কথা বলছিলেন বললে ভুল হবে আসলে হাসাহাসি করছিলেন। যেন হাসির ফোয়ারা খুলে বসেছেন। আন্টির ডাকে ছুটে আসল ছেলেটা। ছেলেটা আসতেই আমি নিহাকে টেনে খানিকটা দূরে গেলাম। ফিসফিস করে নিহাকে বললাম,

নিহু! আমি কিন্তু ওই ছেলেটার সাথে যাবো না।

কেনো গেলে কি হয়েছে? ঈশান ভাইয়ার সাথে গেলেই সেফটি বেশি তারু! আন্টি ভালোর জন্যই বলছে।

ভালোর দরকার নেই। তুই আমাকে একটা উবার কল করে দে আমি তাও চলে যাবো। তবুও প্লিজ উনার সাথে না।

পাগল নাকি? তোকে আমি উবারে ছেড়ে দেই তারপর আন্টি আমাকে ঝারুক তাইনা? আন্টি তোকে নিয়ে খুব চিন্তা করছে তারু! এইজন্যই তো নিজের ছেলেকে পাঠাচ্ছেন। তাহলে বোঝ কতটা কনসার্নড তোর প্রতি? এখন যদি তুই না করে দিস তাহলে মাইন্ড করবে না?

আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে অসহায়ের মতো তাকালাম। নিহা আমাকে একটা ঠেলা মেরে বলল,

ঢং করিস না যা তো ! চেঞ্জ করে আয়। যত দেরি করবি প্রবলেম তোরই হবে। যাহ!

অপারগ হয়ে মেকআপ রুমের দিকেই যাচ্ছিলাম আমি। এরই মাঝে দুজন বয়স্ক মহিলা আমায় আটকালেন। আমাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার দেখে নিয়ে একজন বলে উঠলেন,

তুমিই ওই মাইয়াটা না? রেপ হইতে নিসিলো যে?

উনাদের কথা শুনে আমি মুখে হাত রেখে নিহার দিকে তাকালাম। নিহা কোমরে হাত রেখে অনেকটা রাগেই তেড়ে আসল। দুই মুরব্বিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

কি আন্দাজী কথা বলেন আপনারা? রেপ হতে নিবে কেনো? দেখুন সেরকম কিছুই হয়নি ওর সাথে। যাস্ট একটা মিস আন্ডারস্টেন্ডিং হয়েছে। দয়া করে গুজব রটাবেন না।

বলতে বলতে আমার কাধে হাত রাখল নিহা। উনাদের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

তারু চল তো! দেরি হচ্ছে।

আমি আর নিহা দ্রুত হেটে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে দুজনই বিড়বিড় করে কি আলাপ শুরু করল। নিহা আমায় ইশারা করে বলল ওসবে কান না দিতে। আমিও আর রেসপন্স করলাম না। আপাতত নিজের উপরই সব থেকে বেশি রাগ হচ্ছে আমার। তখন ওইভাবে চিৎকার করে সবার সামনে এসব বলা একদমই উচিৎ হয়নি। সেইজন্য আমার নিজের গালেই চড় লাগাতে ইচ্ছে হচ্ছে। মানুষ এখন তিলকে তাল বানাবে। এই ঘটনা কোথায় গিয়ে শেষ হবে কে জানে?

ভারী মেকআপ, ভারী লেহেঙ্গা সব উপড়ে ফেলে নরমাল কামিজ পড়ে নিয়েছি আমি। উচু খোপার ভাজ খুলে চুল গুলো এলোমেলো ভাবে পেছনে ছেড়ে মাথায় ঘোমটা টেনে কাধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে পুরোপুরি ভদ্রবেশ ধারণ করেছি বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই এখন অপরিচিত ছেলেটার গাড়িতে উঠতে হবে আমায়। মহা ঝামেলায় ফেসে গেছি। ছেলেটার হাতের দিকে তাকালেই তো বুক ধুকপুক করে আমার। তার উপর সারারাস্তা আমায় উনার সাথে থাকতে হবে এটা ভাবতেই আমার হার্টবিট মিস হয়ে যাচ্ছে। আর এই সবই হচ্ছে আমার প্রতি আন্টির অতিরিক্ত কেয়ারিং হওয়ার কারণে। অতিরিক্ত কোনোকিছুই আসলে ভালো না। কেয়ারিংও না।
🍂

চলবে

( “তি আমো” মানে হল “আই লভ ইউ”। এটা একটা ইতালিয়ান ভাষা।)

তি আমো পর্ব-০১

0

#তি_আমো❤
সূচনা পর্ব
Writer: Sidratul muntaz

🍂
শরীরে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলাম আমি। ভ্রু কুচকে আয়নার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করতে যাবো, তার আগেই মুখ চেপে ধরা হল আমার। ছটফট করতে করতে নিজেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি, কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বরং নিজেই হাপিয়ে উঠছি। অপরিচিত মানুষটা আমার লেহেঙ্গার ওরনা খুলে নিয়ে আমার মুখ বেধে ফেলল। ঘটনাগুলো এতো দ্রুত ঘটছে যে আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে উচু করে ধরে হাটতে লাগলেন উনি। আমি শুধু গোঙাতে পারছি আর নড়চড়া করতে পারছি, এর বেশি কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। হঠাৎই নিজেকে একটা অচেনা রুমে আবিষ্কার করলাম। যতটুকু বুঝলাম এটা এই কমিউনিটি সেন্টারের মেকআপ রুম। যেখানে কিছুক্ষণ আগেও মেয়েদের ভীড় জমে ছিল। এখন এই রুমটা সম্পুর্ন নিস্তব্ধ নিরব। ছেলেটার চেহারা দেখার সৌভাগ্য আমার হলো না। তার আগেই পুরো ঘর অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। পায়ে কারো হাতের স্পর্শ পাচ্ছি। কি হবে আজ আমার?? কি করতে চাইছে এই ছেলেটা আমার সাথে? ভয়ে যখন বুকের ভিতর ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেছে ঠিক তখনি কপালে কারো ঠোটের স্পর্শ পেলাম। সঙ্গে সঙ্গে আরো একবার কেপে উঠলাম আমি। তার কয়েক মিনিট পরেই জ্বলে উঠল লাইট। আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না এখন। ঠান্ডা বরফ শীতল এসি রুমে বসে থেকেও কপাল দিয়ে অঝোরে ঘাম বের হচ্ছে আমার। ঠোট কাপছে সেই সাথে হাত পায়ের এক্সট্রা কাপুনি তো আছেই। কোনোমতে মুখের কাছে হাতটা এনে ওরনাটা মুখ থেকে খুলে নিলাম আমি। আর তারপরেই চিৎকার শুরু, যাকে বলে আকাশ চুম্বী চিৎকার।

আমার নাম আশফীয়া তারিন। বান্ধবীর অ্যাংগেইজমেন্ট পার্টিতে এটেন্ড করার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ভাইয়ার চোখ ফাকি দিয়ে এসেছিলাম এই আলিশান কমিউনিটি সেন্টারে। ভাইয়াকে বলেছিলাম তিন ঘণ্টার কোচিং ক্লাস আছে। ব্যাগে বই খাতার বদলে লেহেঙ্গা আর সাজগোজের জিনিস ভরে এনেছিলাম, ভাইয়ার চোখ ফাকি দেওয়ার কি দুর্দান্ত কৌশল আমার! এখন নিজের আপন বড়ভাইকে ঠকানোর পরিণামটা হারে হারে টের পাচ্ছি। কি ভয়ানক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে আমায়। এখনো যে জ্ঞানটা হারাইনি এইতো অনেক বেশি।

জ্ঞান হারানোর প্রয়োজনও হল না। অলরেডি আমার চিল্লাচিল্লির অত্যাচারে মেকআপ রুমে ভীড় জমে গেছে। নিহা দ্রুতবেগে এসে আমার হাত চেপে ধরল। অস্থির গলায় আমার ঘাম মুছে দিতে দিতে বলল,

কিরে তারু। তোর এ অবস্থা কেনো? কি হয়েছে, ভয় পেয়েছিস?

আমি লাল টুকটুকে চোখ করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি আর ঢোক গিলছি। নিহা আমায় আরেকবার ধাক্কা দিল। ধাক্কা দিয়ে বলল,

এই তারু কথা বলছিস না কেনো? কি হয়েছে বলবি তো? ওইভাবে চিৎকার করছিলি কেনো?

আমি এবার নিহার দিকে ঘুরে বসলাম। নিহার দুই হাত চেপে ধরে কাপা কাপা কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম,

দোস্ত একটা ছেলে। একটা ছেলে এসেছিল। আমাকে জোর করে এখানে তুলে এনেছে। দোস্ত আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম হাত ধুতে। তখনি পেছন থেকে কেউ একজন আমার মুখ বেধে আমাকে এইখানে তুলে এনেছে। তারপর ঘরের লাইট অফ করে আমার সাথে….

কথা শেষ না করেই মুখ চেপে কেদে দিলাম আমি। সবার দৃষ্টি এখন আমার দিকে স্থির। কেউ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে, কেউবা হাসি তামাশা করছে, কেউ আবার শান্তনা দিতে আমার কাছে এসে কাধে হাত বুলাচ্ছে। কিন্তু আপাতত এসব কিছুতেই আমার যায় আসছে না। আমি শুধু এখন বাড়ি ফিরতে চাই। আর কোনো দুর্ঘটনা হওয়ার আগেই বাড়ি ফিরতে চাই। নিহা হয়তো আমার অস্বস্তির কারণটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই নিজ দায়িত্বে সবাইকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলল সে। একে একে সবাই ঘর খালি করে চলে গেল। নিহা এবার আমার দিকে মনোযোগী হল–

শোন তারু, তুই একদম ভয় পাবি না। তুই শুধু আমাকে ছেলেটার বর্ণনা দিতে পারবি? কে করেছে এমন শুধু একটা ক্লু দে তারপর আমি খুজে বের করছি।

নিহা, আমি না ছেলেটার চেহারা দেখতে পারিনি। তবে আয়নাতে হাত দেখেছিলাম। আর হাতে একটা ঘড়ি পড়া ছিল। একটা এ্যাশ কালার ঘড়ি।

এ্যাশ কালার ঘড়ি তো অনেকেই পড়ে। এখন কিভাবে বুঝবো কে?

দোস্ত হাতটাও ভালোমতো দেখেছি। খুব ফরসা হাত। আর অল্প অল্প লোম আছে। হাতের রগ গুলো কেমন ফোলা ফোলা, জিম করলে যেমন হয়না? সেরকম টাইপ।

রগ ফুলে থাকে? অল্প লোম? ফরসা হাত? এমন তো একজনই আছে।

কে?

আচ্ছা তুই আরেকবার দেখলে চিনতে পারবি।

আমি মাথা দুলিয়ে উত্তর দিলাম,

হ্যা পারবো।

নিহা আমার হাত ধরে উঠে দাড়ালো,

চল তাহলে। আগে সাফিনকে জানাতে হবে ব্যাপারটা।

আমি নিহার সাথে চলতে গিয়েও থেমে গেলাম হঠাৎ। নিহার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললাম,

নিহা, থাক দরকার নেই দোস্ত।

নিহা বিস্ফোরিত চোখে বলল,

কেনো দরকার নেই কেনো? তুই কি ভয় পাচ্ছিস নাকি?

না সেইজন্য না। দেখ, আজকে তোর আর সাফিন ভাইয়ার এ্যাংগেইজমেন্ট পার্টি। কত মেমোরেবল একটা দিন। শুধু শুধু সিন ক্রিয়েট করে পরিবেশটা নষ্ট হোক সেটা আমি চাইনা। তার থেকে ভালো তুই আমাকে বাড়ি পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা কর। অলরেডি দুই ঘণ্টা হয়ে গেছে। আর সময়ও নেই হাতে। পরে দেখা যাবে ভাইয়া আমাকে খুজতে কোচিং এ চলে যাবে।

নিহা ভ্রু কুচকে কিছু একটা চিন্তা করে বলল,

না তবুও। কে এই জঘন্য কাজটা করেছে জানা দরকার।

নিহা প্লিজ। বাদ দে। আমার ভালো লাগছে না। আমি বাসায় যেতে চাই।

নিহা আমার কাধে হাত ঠেকিয়ে বলল,

ঠিকাছে চল। আগে কেক কাটার পর্ব শেষ হোক। তারপর আমি তোকে গাড়ি করে পাঠিয়ে দিব।

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে মাথা নাড়লাম। নিহার হাত ধরে মেকআপ রুম থেকে বের হতেই সামনে পড়ল এক সুদর্শন ছেলে। ছেলেটা বেশ লম্বা, অনেকটা বাশের মতো, চুল গুলো খাড়া খাড়া, অনেকটা ঘাসের মতো, লম্বা দুর্বাঘাস, কিছু চুল কপালের এক সাইডে পড়ে আছে, আবার কিছু চুল খুব সুন্দর গোছালো ভাবে পেছন দিকে আছড়ানো। ডার্ক ব্ল্যাক চুলগুলো লাইটের আলোয় ঝলকানি দিচ্ছে। সেই সাথে ঘন চোখের পাপড়ি গুলোও প্রতিটি পলকে পলকে ঝিলিক দিচ্ছে। সেই ঝিলিকে চিলিক দিয়ে উঠছে আমার হার্টবিটও। গোলাপী ঠোট ভেদ করে ঝকঝকে সাদা দাতগুলো হালকা বেরিয়ে আসল হঠাৎ। সুদর্শন ছেলেটার হাসির দৃশ্য এটা। মুচকি হাসি। নিহাকে উদ্দেশ্য করে ছেলেটা বলে উঠল,

নিহা, সাফিন তোমাকে খুজছে।

বলতে বলতে আড়চোখে আমার দিকে তাকালো ছেলেটা। আমি এখনো ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি। তাই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম খুব দ্রুত।

নিহা বলল,

ওহ। কেক কাটার পর্ব শুরু হয়ে গেছে?

ছেলেটা কিউট করে আবার হাসল,

হ্যা। তুমি যাও, হোল্ড দ্যা নাইফ উইথ হিম। দ্যা মেইন এট্রাকশন হেজ স্টারটেড।

ওকে ওকে। এই তারু চল। আপনিও আসুন ঈশান ভাইয়া।

নিহা আমায় টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি পেছন ফিরে আরেকবার ছেলেটাকে দেখলাম। ছেলেটা এখনো ঠাই দাড়িয়ে আছে। আমাদের দিকেই দেখছে। আরেকবার চোখাচোখি হল। কিন্তু এবার আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম না। নির্লজ্জের মতোই তাকিয়ে রইলাম। একটা ওয়েটার এসে ছেলেটাকে ডাকল। ডিশে করে জুস অফার করছে। ছেলেটা জুস হাতে নিল। আমার নজর এবার ছেলেটার হাতের দিকে আটকালো। আমি আবার থমকে দাড়ালাম। এই হাত তো সেই হাত। সেইম টু সেইম। ফরসা, অল্প অল্প লোম, ফোলা ফোলা রগ, আর এ্যাশ কালার ঘড়ি। মিলে যাচ্ছে, সব মিলে যাচ্ছে! নিহার ধমকে ভাবনার জগৎ ছিন্ন হল আমার,

এই তারু! আবার দাড়িয়ে পড়লি কেনো? চল!

আমি নিহার দিকে চোখ বড় করে তাকালাম। ছেলেটার দিকে আঙুল ইশারা করে বললাম,

নিহা, ওই ছেলেটা…

আমি আর কিছু বলার আগেই নিহা উৎসাহ নিয়ে হেসে দিল। আমার কাধ খামচে ধরে দুষ্টমী ভাব নিয়ে বলল,

ক্রাশ খেয়েছিস?

আমি চোখ সরু বানিয়ে মুখ ভার করে বললাম,

আমি কখন বললাম ক্রাশ খেয়েছি? এই ছেলেটা কে আগে সেটা বল।

আরে তোকে ঈশান ভাইয়ার কথা বলতাম না? ইনিই তো ঈশান। দ্যা ভদ্রম্যান অফ আওয়ার অভদ্র সোসাইটি।

আমি মুখ কুচকে উচ্চারণ করলাম,

ভদ্রম্যান?

হ্যা, জেন্টালম্যান আর কি। আচ্ছা চল এবার আমরা কেক কাটতে যাই দেরি হচ্ছে দোস্ত! তোরই তো দেরি হচ্ছে চল!

আবার আমার হাত ধরে হাটতে লাগল নিহা। আমিও আর কোনো উত্তর দিলাম। না চুপচাপ নিহার সাথে হেটে যেতে লাগলাম। কি যে হচ্ছে, নিজেই কনফিউশনে পড়ে গেছি।

লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন, নিহা আর সাফিন ভাইয়া একসাথে ছুরি ধরে কেক কাটছে। সবাই ছবি তুলছে আর হৈ হুল্লোড় করছে। হাত তালি দিচ্ছে। আমি অনেকটা দুরে দাড়িয়ে আছি। হৈ চৈ একদমই ভালো লাগছে না। মাথাব্যথা করছে। ধীর পায়ে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই চেয়ারে বসে থাকা এক সুন্দরী মহিলার সাথে ধাক্কা খেলাম আমি। মহিলা হালকা হেসে আমায় সরি বললেন। অথচ সরি আমার বলা উচিত। কারণ বেখেয়ালি ভাবে হাটছিলাম আমি। তবুও সরিটা এক্সেপ্ট করে মুচকি হেসে বললাম,

নো প্রবলেম আন্টি।

ভদ্রমহিলা আরেকবার হেসে স্টেজের দিকে দৃষ্টি দিলেন। যেখানে কেক কাটা হচ্ছে। আমি ভদ্রমহিলাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলাম। ভদ্রমহিলার পারফিউমের ঘ্রাণ খুবই প্রখর। তবে সুইট স্মেল। আর ভদ্রমহিলা নিজেও খুব সুইট। হালকা পাতলা সিল্কের শাড়ির সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ পড়েছেন। ফিগার ফিটনেস ঠিক থাকায় দেখতে খারাপ লাগছে না। বয়সও মনে হয় বেশি হবে না। চুলগুলো ব্রাউনিশ কালার। কার্ল করে ঘাড়ের এক সাইডে ফেলে রেখেছেন। অন্যসাইড খালি। আমার দিকে আরেকবার তাকিয়ে ভদ্রমহিলা বললেন,

তুমি কি বসবে? চাইলে আমার পাশে বসতে পারো জায়গা খালি আছে।

আমার পায়ে টনটন ব্যথা হচ্ছিল তাই মাথা হেলিয়ে বসে পড়লাম। উনি আমাকে নাম জিজ্ঞেস করলেন,

নাম কি তোমার?

আমি বামসাইডের চুলগুলো কানে গুজে বললাম,

আশফীয়া তারিন।

উনি এবার একটু আগ্রহ নিয়ে বললেন,

তুমি কি নিহার বেস্টফ্রেন্ড? একটু আগে চিৎকার করছিলে যে?

আমি ইতস্তত হয়ে গেলাম উনার প্রশ্নে। ব্যাপারটা কিভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ধুর! বিছরি হয়ে যাচ্ছে। ভদ্রমহিলা আমার মুখের অবস্থা খেয়াল করে হাসলেন,

ডোন্ট মাইন্ড। এইখানে তো তোমার কোনো দোষ নেই। দোষ তো ওই ছেলেটার। কি পরিমাণ বাজে ছেলে হলে এমন কাজ করতে পারে বলোতো? আসলে শিক্ষা দীক্ষা বলতে কিচ্ছু নেই এদের। ফ্যামিলি প্রবলেম। একটা পার্টিতে এসেও বংশ পরিচয় দেখিয়ে গেল। ডিসগাস্টিং! মা বাবা কিভাবে মানুষ করে এদের? আমার ছেলে হলে আমি ওকে সঙ্গে সঙ্গে দুই চড় ঠাসিয়ে দিতাম। তারপর ত্যায্য করতাম।এমন ছেলে দরকার নেই আমার। যে মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না, সে মাকে কি করে সম্মান দিবে?

ভদ্রমহিলার কথার মাঝখানেই ঈশান নামের ছেলেটা চলে আসল। হাতে সেই জুসের গ্লাস। ভদ্রমহিলার দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

মম! ইউর মোস্ট ওয়ান্টেড, এপেল জুস।

ভদ্রমহিলা গ্লাসটা হাতে নিয়ে একটা প্রীতিকর হাসি দিলেন। ছেলেটার গালে হাত রেখে আহ্লাদী কণ্ঠে বললেন,

দেটস মাইবয়। ( অতঃপর উনি আমার দিকে তাকালেন) এইযে তারিন, এইটা আমার ছেলে।

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। আমার চমকানোর কারণ দুইটা। প্রথমত এইরকম একজন মহিলার এমন বিশাল সাইজের একটা ছেলে থাকবে আমি ভাবিনি। আর দ্বিতীয়ত,,, ভদ্রম্যান?
🍂
চলবে

হৃদয়ের অন্তরা পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0

#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_14(অন্তিম পর্ব)
#sarika_Islam
,
,
অন্তরা ঘুম থেকে উঠে দেখে সে হৃদয়ের বুকে শুয়ে আছে,অন্তরা মুচকি হেসে উঠে পরলো,,ফ্রেশ হতে চলে গেল,হৃদয়ও উঠে গেল,,অন্তরা ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে দেখে হৃদয় উঠে গেছে,হৃদয় অন্তরাকে দেখে মুচকি হেসে তার পাশ দিয়ে ওয়াশ্রুমে জায়,,
হৃদয় ফ্রেশ হয়ে এসে একটি কালো কালারের টিশার্ট পরে নেয় তারপর দুইজনে বাহিরে যায় লাঞ্চ করার জন্য,, খাওয়া দাওয়া করে হৃদয় বলল,,

_চলো ঘুরে আসি,,
_আচ্ছা,,

হৃদয় অন্তরার হাত ধরলো,তারপর হাটা ধরলো,,অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা ঘুরলো তারা,শপিং করলো অনেক খুব মজা করলো,,রাতে খাওয়া দাওয়া করে তারা বাসায় ফিরলো,,

তারা তাদের রুমে ঢুকতেই অন্তরা চমকে উঠলো,,এত্ত সুন্দর করে সাজানো তাদের রুম,,সারারুমে গোলাপের ছরাছরি,,বিছানায় লাভ সেপে গোলাপ দিয়ে h+o লেখা,,মোমবাতি দিয়ে পুরো রুম আলোকিত করা,,অন্তরা ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছে আর হৃদয় দরজা আটকে দরজার সাথে দাঁড়িয়ে অন্তরাকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে,,অন্তরা সব কিছু দেখে হৃদয়ের কাছে গিয়ে বলল,,

_wow কত সুন্দর করে সাজানো,,কে সাজিয়েছে এগুলো?
_তোমার জন্য সাজানো হয়েছে specially,(হাল্কা হেসে)
_কেন?(ভ্রু জোরা কুচকে)

অন্তরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল

_আজ আমাদের বাসররাত তাই,,

বলেই অন্তরার কানে শব্দ করে চুমু খেলো,,অন্তরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে,,হৃদয় অন্তরার দিকে একটি গোলাপি কালারের পাতলা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে বলে,,

_যাও এইটা পরে আসো,,

অন্তরা হৃদয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তার হাতের দিকে তাকায়,একটি শাড়ি তার দিকে এগিয়ে দিয়েছে,সে শাড়িটা হাতে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল,,শাড়ি পরে বের হলো,,চুলগুলো ছাড়া,,হৃদয় নেশা ভড়া চোখে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে,,অন্তরা ধীরে ধীরে হৃদয়ের দিকে এগুচ্ছে হৃদয়ও,,এক পর্যায় দুইজন খুব কাছাকাছি হয়ে গেল,,হৃদয় অন্তরার দিকে তৃষ্নার্থ ভাবে তাকিয়ে আছে,,যেন এ চাহনি কতবছর নিজের প্রিয়শিকে কাছে পাওয়ার আকাংখা,,হৃদয় অন্তরার শাড়ি ভিতর দিয়ে পেটে হাত দিল,,আরেক হাত অন্তরার মাথা ধরে সামনে আনতে লাগলো,,অন্তরার ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দিল,,পরম আবেশে শুষে নিচ্ছে,,অন্তরাও এইবার তালে তাল মিলাচ্ছস,,অন্তরার তাল মিলানো যেন হৃদয়কে আরও পাগল করে দিচ্ছে,,অন্তরাকে কিস করতে করতে বিছানায় শুয়ালো,,কিস করা শেষ হলে গলায় মুখ ডুবায়,,কিস করছে ইচ্ছে মতো কিস করছে,,অন্তরা হৃদয়ের চুল আকড়ে ধরে রেখেছে,,এইবার অন্তরার শাড়ির আচল সরাতে নিলে অন্তরা হৃদয়কে ঠেলে উঠে বসে হৃদয় তাকিয়ে থাকে অন্তরার দিকে,,অন্তরা শাড়ির আচল ঠিক করে বলে,,

_এই এইসব কি করছেন?
_আসো দেখাই কি করছি,,

বলেই অন্তরাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো,,অন্তরার ঘারে গলায় পাগলের মতো কিস করতে লাগলো,,আবার আচল সরাতে নিলে অন্তরা আবার সরিয়ে দেয়,,দেয়ালের রোমেন্টিক কাপলদের পিচ লাগানো সেখানে হাত দিয়ে বলে,,

_ওরা কি করছে?
_ওরা খেলছে,
_কি খেলা?
_আসো আমরাও খেলি তাহলেই বুঝবে,,
_কিভাবে খেলে?
_আসো আমি শিখিয়ে দেই,,

বলেই আবার অন্তরাকে শুয়ালো,,অন্তরার গলায় কিস করতে লাগলো,,কিস এক সময় বাইটে পরিনত হলো,,অন্তরা বলল,,

-ধুরর এইটা কোন খেলা হলো আমি ব্যাথা পাই তো,,
_আরে এইটা খেলা দেখ মজা পাবা,,
_নাহ আমি মজা পাচ্ছি না আমি ব্যাথা পাচ্ছি,,ধ্যাত ভালোলাগে না,,

বলেই উঠতে নিলে হৃদয় আবার ধরে ফেলে,

_এই যাবা না আসো ফিল নাও,,
_ফিল কিভাবে নিমু?
_আমি কিস করলে অনুভব করবা,,

বলেই অন্তরার ঠোটে ছোট ছোট চুমু দিতে লাগলো গলায় বুকে চুমু দিতে লাগলো,,সাথে বাইট তো ফ্রি আছে,,এক পর্যায় অন্তরার ফিল চলে আসে,,বুকে বাইট দিচ্ছে অন্তরা তাও খুব ব্যাথা পাচ্ছে,,

_আহহহহহ,,আহহহহ,

হৃদয় অন্তরার বুক থেকে মুখ তুলে ঠোটে চুমু দিয়ে বলে,,

_এইভাবে শব্দ করো না জান তাহলে আমি শেষ,,
_ব্যাথা পাই তো,,

হৃদয় আর অন্তরা মেতে উঠলো তাদের ভালোবাসার খেলায়,,,দুজনদুজনাতে মগ্ন,,,

সকালে,,হৃদয়ের আগে ঘুম ভেংগে সে পাশ ফিরে অন্তরার দিকে তাকিয়ে দেখে অন্তরা তাকে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে,,গায়ে চাদর জড়ানো,,হৃদয় মুচকি হেসে অন্তরার কপালে চুমু দিল,,অন্তরার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে,,”অবশেষে অন্তরা পুরুপুরি তার হলো”এইসব ভাবতেই হৃদয়ের মনে এক শীতল হাওয়া বইলো,,সে অন্তরাকে আর একাটু নিজের সাথে জরিয়ে নিল,,অন্তরার ও ঘুম ভেংগে গেল,,তাকে কে জানি অনেক জোরে আকরে ধরেছে,,সে নিজের দিকে তাকালো দেখলো চাদর হাল্কা উচু করে দেখলো গায়ে কাপর নেই,,সে চট করে তার পাশে তাকালো দেখলো হৃদয় তার দিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে,,হৃদয়কে দেখে কাল রাতের কথা মনে পরে গেল,,লজ্জায় মাথা আবার নিচু করে নিল,,হৃদয় অন্তরার লজ্জামাখা মুখ দেখে বলল,,

_উফফফ এইভাবে লজ্জা পেও না জান তাহলে কাল রাতে যা হয়েছে আবার হবে,(বলেই অন্তরার ঠোটে চুমু খেল)
_এই নাহ নাহ,,

বলেই অন্তরা উঠতে নিলে অন্তরাকে ধরে হুট করে অন্তরার উপর চরে বসে,,অন্তরার দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে,,

_দেখুন আর নাহ প্লিজ আমি খুব টায়ার্ড ফ্রেশ হবো,,(ইন্নসেন্ট ফেস করে বলল)

হৃদয় অন্তরার এই ইন্নসেন্ট ফেস দেখে আএ কিছু করলো না অন্তরাকে ডিপলি কিস করে তার উপর থেকে উঠে গেল,,

_আচ্ছা যাও আজ ছেরে দিলাম,,

অন্তরা গায়ে চাদর পেচিয়ে উঠে ওয়ায়শ্রুমের দিকে গিয়ে ভেংচি দেয়,,হৃদয় তেড়ে আস্তে নিয়ে বলে,,

_অন্তরায়ায়া,,

অন্তরাকে আর পায় কে এক দৌড়ে ওয়ায়শ্রুমে চলে গেল,,ফ্রেশ হয়ে আসলো,,দেখলো হৃদয় কালো কালারের টাউজার পরে খাবার সামনে নিয়ে বিছানায় বসে আছে,,অন্তরা ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে মাথার থেকে তাওয়াল খুলে চুল ঝারছে,,,হৃদয় এক দৃষ্টিতে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে,আব্র নেশা ধরে জাচ্ছে তার,,অন্তরা চুল আচড়াচ্ছে হঠাৎ পিছন থেকে হৃদয় জরিয়ে ধরে,চুলের মাঝে মুখ ডুবায়,,

_আহহহ জান যতো তোমাকে দেখি নতুন করে শুধু প্রেমেই পরি,,(বলেই অন্তরার ঘারে চুমু খেল)
_হুম হয়েছে ছারুন,,
_তোমাকে আরেকবার গোসল করার কারন বানিয়ে দেই?কি বলো?
_এই নাহ নাহ দূরে থাকেন,,(বলেই পিছে ফিরলো)
_নাহ আসো না,,(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
_আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন একসাথে খাবো,,
_নাহ,আমি এখন তোমাকে খাবো,,
_ছিহ শুধু পচা কথা,লজ্জা লাগে না বলতে
_বউয়ের কাছে কিসের সরম জান,,

বলেই অন্তরাকে ধরতে আসলেই অন্তরা তার হাতের নিচ দিয়ে তার পিছে চলে যায়, হৃদয় অন্তরার দিকে ঘুরে যেতে নেয় অন্তরা কোন মতে ঠেলেঠুলে হৃদয়কে ওয়াশ্রুমে পাঠায়,,হৃদয় শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে অন্তরা তার অপেক্ষায় বসে আছে,,তা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে তাওয়াল টা বারান্দায় রোদ দিয়ে অন্তরার পাশে গিয়ে বসে,,

_স্টাট করো,,
_হুম আপনিও করেন,,

বলেই দুইজন খাওয়া শুরু করলো,,খাওয়া দাওয়া শেষে অন্তরা সব নিয়ে টেবিলে রাখলো বারান্দার দিকে যেতে নিলে হৃদয় অন্তরাকে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়,অন্তরা এক ভ্রু উচু করে বলে,,

_কিহ?
_আমার তোমাকে চাই,সব সময় চাই আমার পাশে চাই,,
_আমারও,,

বলেই অন্তরা নিজে হৃদয়ের ঠোটে চুমু দিল,হৃদয় তো অবাক,,

_এইটা কি হলো?
_আমার বর আমার ইচ্ছে,,(ভাব নিয়ে)

হৃদয় অন্তরার গলায় কুটুস করে কামড় দিয়ে বসলো,,অন্তরা আহহ বলে গলায় হাত দিয়ে বলল,,

_এইটা কি হলো?
_আমার বউ আমার ইচ্ছে,,

বলেই দুইজনে হেসে দিল,,হৃদয় অন্তরার গলায় মুখ দেয় যেখানে কাল রাত কামড়ে কালচে করে ফেলেছে সেখানে ছোট ছোট চুমু দিচ্ছে আর অন্তরা হৃদয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছে,,,

এভাবেই শুখে আনন্দে কাটছে তাদের জীবন,,অবশ্যই তাদের জন্য দোয়া করবেন😁

🖤সমাপ্ত🖤

(সামনে এক্সাম থাকায় পরতে হয়😩,,নাহলে আম্মু খুব বকে তাই তারাতারি গল্পটা শেষ করে দিলাম😔,নাহলে আমার ইচ্ছে ছিল আরও দূর নেওয়ার🥺গল্পটা কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে অবশ্যই জানাবেন🥰)

হৃদয়ের অন্তরা পর্ব-১৩

0

#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_13
#sarika_Islam
,
,
হৃদয় তার মার কাছে গিয়ে হাসি মুখে মাকে বলল,,

_মা আমরা আজি যাবো সাজেক,,

হৃদয়ের মা কাজ করছিল ছেলের কথা শুনে পিছে ফিরে তাকালো,,ছেলের হাসি মুখখানা দেখে তার মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠলো,,আর বলল,,

_কিন্তু টিকেট

আর বলতে না দিয়ে হৃদয় বলল,,

_টিকেটের ব্যাবস্থা আমি করবো তুমি চিন্তা করো না,,

বলেই আবার উপরে গেল,,রায়হান এখন বুঝল হৃদয়ের হঠাৎ খুশি হওয়ার কারনটা,,
তাদের হানিমুনে যাওয়ার কথা শুনে মেজাজ বিগরে গেল,,চুপচাপ সোফায় বসে আছে,,

হৃদয় উপরে গিয়ে অন্তরাকে বলল,,

_জান তুমি রেডি থেক আমি আসছি,,

বলেই কপালে চুমু দিয়ে নিচে নেমে বাহিরে চলে গেল,,অন্তরা সব কিছু পেকিং করছে,,পেকিং করা শেষে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুল আচড়াচ্ছে,,হৃদয় বাহিরে গিয়েছে দেখে রায়হান ফটাফট উপরে গেল, অন্তরার রুমের দরজা চাপানো ছিল,সে ঠেলে ভিতরে ঢুকে দরজাটা পুরা চাপিয়ে দিল,,অন্তরার ঠিক পিছে গিয়ে সেই আগের মতো তার শরিরের স্মেল নিচ্ছে,,অন্তরা চুল আচড়াতে আচড়াতে হঠাৎ আয়নার দিকে নজর গেল,,দেখলো তার পিছে রায়হান দাঁড়িয়ে আছে চোখ বন্ধ করে তার স্মেল নিচ্ছে,,অন্তরা তারাতারি ঘুরে দাঁড়ায়,,অন্তরা সরে জাওয়ায় রায়হান চোখ খুলে ফেলে,, মুখে শয়তানি হাসি ঝুলে আছে,,অন্তরা বলল,,

_আপনের লজ্জা করে না বিকেলে না হৃদয় আপনাকে মারলো তারপরও আবার এসেছেন?(ঘৃনআ নিয়ে বলল)
_প্রেমের মধ্যে আবার কিসের লজ্জা,,আমি তোমাকে ভালোবাসি,,
_ছিহ,,

মুখ ছিটকে রায়হানকে কাটিয়ে চলে যেতে নিলে রায়হান হুট করে অন্তরার হাত ধরে ফেলে,,

_দেখ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি,,ওই হৃদয়ের থেকে বেশি ভালোবাসবো আমি তোমাকে,,বিশ্বাস করো আমি হৃদয়ের থেকে বেশি ভালোবাসি তোমায়,,
_ছারেন হাত আমার,, আমার হাত ছারেন,,

বলেই হাত টানাটানি করতে লাগলো,,রায়হান অন্তরাকে দেয়ালে চেপে ধরলো,,অন্তরা চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো,,

_আমাকে ছারুন ছারুন আমাকে,,হৃদয়,,,,

বলে চিল্লাতে লাগলো,,

_আচ্ছা তুমি এসো না আমার কাছে শুধু এক রাতের জন্য থাকো আমার সাথে just for one night,,

বলেই অন্তরার ঠোটের দিকে মাথা এগুতে লাগলো,,অন্তরা মাথা নাড়াতে লাগলো ক্রমাগত,,এপাশ ওপাশ করতে লাগলো,,

_just for one night,,

বলেই এগুচ্ছে,,

_কুত্তার*****

বলেই রায়হানের চুল পিছন দিয়ে ধরে বিছানায় ছিটকে ফেলে দিল,,অন্তরা ভয়ে কাপাকাপি করছে আর কান্না করছে,,হৃদয় রায়হানের কাছে গিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো,,

_তোর এত্ত বড় সাহস তোকে আমি বিকেলে ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম আমার অন্তরার আশেপাশেও ঘেষবি না কিন্তু তুই আবার আসলি আমার রুমে,,,

চিল্লাতে লাগলো আর ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো,,হৃদয়ের চিল্লাচিল্লিতে হেনা চৌধুরি আর হাসান চৌধুরি তারাতারি উপরে চলে আসে হৃদয়ের রুমে,,এসে দেখে রায়হানকে ইচ্ছেমতো মারছে আর চিল্লাচ্ছে,,হেনা চৌধুরি খেয়াল করলো অন্তরা এক কোনায় দারিয়ে কান্না করছে আর কাপছে,,সে তারাতারি অন্তরা পাশে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরল,,অন্তরা হেনা চৌধুরিকে ধরে কান্না করতে লাগলো,,হাসান চৌধুরি হৃদয়কে বলল,,

_কি হচ্ছে কি হৃদয় ওকে এভাবে মারছ কেন?

হৃদয় হাসান চৌধুরির দিকে তাকিয়ে রায়হানের কলার ধরে হাসান চৌধুরির পায়ের কাছে ফেলে দিল,,আর বলল,,

_ওকে এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বের হতে বলো,,right now,,,আমার চোখের সামনে থেকে তোমার ভাইয়ের ছেলেকে যেতে বলো,,
_কি করেছে ও হৃদয়?
_ওর সাহস কি করে হয় আমার ঘরে ঢুকে আমার বউকে ধরার,,ওকে এক্ষুনি যেতে বলো,,(বলেই লাথি মারলো)

হাসান চৌধুরি রায়হানের কলার ধরে উপরে তুলে বলল,,

_এক্ষুনি বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে হৃদয় তোকে ছেরে দিয়েছে কিন্তু আমি তোকে ছারবো না বেরিয়ে যা,,

বলেই ধাক্কা মারলো,,রায়হান ও চলে গেল,,

অন্তরা কান্না করতে করতে হেচকি তুলে ফেলেছে,,হাসান চৌধুরি অন্তরার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,

_কিছু করেছে ও মা?

অন্তরা কিছু বলছে না শুধু কান্না করেই চলছে,,হৃদয়ের রাগে শরির কাপছে,,হৃদয় অন্তরাকে ডাক দিল,,

_অন্তরা,,

অন্তরা হেনা চৌধুরির বুক থেকে মাথা তুলে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে হৃদয়ের কাছে গিয়ে তার বুকে পড়ে কান্না করতে লাগলো,,অন্তরার কান্না দেখে হৃদয়ের খুব খারাপ লাগছে,আবার রাগও হচ্ছে,,তার তো ইচ্ছে করছে রায়হানকে মেরে যেন্ত পুতে ফেলতে,,আরও ইচ্ছেমতো মারলে হয়ত রাগ কিছুটা কমতো,,

_হয়েছে আর কান্না করে না,, আমি আছি না তোমার হৃদয় থাকতে তোমার কেউ ক্ষতি করতে পারবে না,,

বলেই মাথায় হাত বুলাতে লাগলো,,অন্তরার কান্নার বেগ কিছুটা কমেছে,,এখন হেচকি তুলছে,,হৃদয় অন্তরাকে বুকে জড়িয়েই বলল,,

_আমরা আজি সাজেক যাবো,,আমি টিকেট কেটে ফেলেছি,,প্লেন দিয়ে যাবো,,

হাসান চৌধুরি বলল,,

_সাজেক কেন সিংগাপুর যা আমি টিকেট কেটে দেইজ
_নাহ,,অন্তরা সাজেক যেতে চেয়েছে আমি ওকে নিয়ে প্রথমে সেখানেই যাবো পরে না হয় অন্য কোথাও,,
_আচ্ছা ঠিক আছে,,

বলেই হেনা চৌধুরি আর হাসান চৌধুরি চলে গেল, হৃদয় অন্তরার মাথা নিজের বুক থেকে তুলে চোখ মুছে দিয়ে বলল,,

_সব পেকিং করেছ?

অন্তরা মাথা নাড়ালো,,যার অর্থ হ্যা,,হৃদয় অন্তরার দুই চোখে চুমু দিয়ে বলল,,

_এই চোখের পানি খুবি দামি কখনো অজথা একে ঝরতে দিবে না,,

বলেই অন্তরাকে টাইট হাগ দিল,,অন্তরাও হৃদয়কে জরিয়ে ধরলো,,এ যেন এক অন্য শান্তি বিরাজ করছে অন্তরার মনে,,সব দুঃখ কষ্ট নিমিষেই শেষ হয়ে যায়,,

রাতের ডিনার করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরল অন্তরা আর হৃদয় সাজেকের উদ্দেশ্যে,,সারারাত প্লেনে কাটিয়ে দিল,,সকালে এনাউন্সমেন্টের শব্দে হৃদয়ের ঘুম ভাংগে,,পরম আবেশের সাথে অন্তরার হৃদয়ের বুকের সাথে লেপ্টে আছে,,যা দেখ্ব হৃদয়ের মনে শীতল হাওয়া বইতে লাগলো,মুচকি হাসি দিয়ে অন্তরা মাথায় চুমু দিল,,হঠাৎ অন্তরা নড়েচড়ে উঠলো,,অন্তরাকে নড়েচড়ে উঠতে দেখে হৃদয় নিজের চোখ বন্ধ করে নিল,,অন্তরা দেখলো সে হৃদয়ের বুকে শুয়ে আছে বুক থেকে মাথা তুলে হৃদয়ের মুখের দিকে তাকালো,,কি সুন্দর করে শুয়ে আছে একদম নিষ্পাপ শিশুর মতো লাগছে,,কেউ বলবে এই নিষ্পাপ ডাক্তারের পিছে আস্ত বড় এক সাইকো আছে,,এইসব ভেবেই নিজের অজান্তেই হেসে দিল,,হৃদয়ের গালের কাছে এগুতে নিলে হৃদয় চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে,,

_চুপিচুপি আদর না করলেও পারো,,বর টাতো তোমারি,,

বলেই চোখ মেরে চোখ টিপ মারলো,,অন্তরার চোখ বড়বড় হয়ে গেল,,সে ভেবেছিল হৃদয় ঘুম,,

_আ,আ,আপনি ঘুমের ভান করছিলেন?(তোতলিয়ে)
_ঘুমের ভান না করলে কিভাবে জানতাম আমার বউ আমাকে এত্ত ভালোবাসে?
_আ,আমি তো মশা তারাচ্ছিলাম,,(বলেই জিব কাটলো)
_প্লেনে মশা like seriously? (বলেই হেসে দিল)আদর করছ তা বললেই হয় হুহহহহ(বলেই মুখ ভেংচি দিল)

অন্তরার এখন নিজেকে নিজের মারতে ইচ্ছে করছে কি বলদের মতো কথা বলল,,প্লেনে কি আবার মশা থাকে নাকি আজববব,,অন্তরা নিজেকে হাজারটা গালি দিয়ে বলল,,

_আচ্ছা নামা যাক এখন?

বলেই উঠে দারালো,হৃদয় বলল,,

_আচ্ছা চলো,,

বলেই অন্তরার হাত ধরে নামতে লাগলো,,গাড়িতে উঠে হোটেলে পৌছালো,নিজের রুমের চাবি নিয়ে রুমে গেল,,রুমে গিয়ে হৃদয় বলল,,

_অন্তরা যাও ফ্রেশ হয়ে আসো,,

অন্তরা মাথা নেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল,,অন্তরা ফ্রেশ হয়ে বাহির হওয়ায় হৃদয় ঢুকলো,,হৃদয় বাহির হয়ে এসে দেখে অন্তরা শুয়ে আছে,,হৃদয় তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে অন্তরার পাশে গিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বলল,,

_অন্তরা,কিছু খাবে না?
_নাহ খুব টায়ার্ড লাগছে ঘুমাবো,,উঠে খাবো,,
_আচ্ছা,,

বলেই হৃদয় বেল্কানিতে গেল তাওয়াল শুকাতে,,রুমে এসে সেও অন্তরার পাশে শুয়ে পরলো অন্তরাকে নিজের খালি বুকের সাথে চেপে ধরলো,,এভাবে বুকের সাথে চেপে ধরেছে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম তাও খালি বুক,,উফফফ অন্তরার কাছে কেমন কেমন অসস্থি ফিল হচ্ছে,,তাও কিছু বলছে না,,আস্তে আস্তে অন্তরা ঘুমিয়ে গেল,,

চলবে🖤
(ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🥰)

হৃদয়ের অন্তরা পর্ব-১২

0

#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_12
#sarika_Islam
,
,
হৃদয় রায়হানকে নিয়ে সোফায় বসলো,অন্তরা আর হেনা চৌধুরি রান্না ঘরে রান্না করছে আর গল্প করছে,,,

দুপুরে,,,

সবাই একসাথে খেতে বসলো,,খাওয়ায় শেষে সবাই ডিসার্ট খেল অন্তরা রান্না করেছে আজ প্রথম রান্না,,,সবাই খেয়ে খুব প্রশংসা করলো,,হাসান চৌধুরি 5হাজার টাকা দিল,,

_নাহ বাবা আমার লাগবে না আপনি আমাকে দোয়া দিবেন তাতেই হবে,,
_আরে রাখ মা,,আমি তো সব সময়ই তোদের দোয়া দেই,,এখন তারাতারি আমাকে নাতি নাত্নির মুখ দেখা আর সহ্য হচ্ছে না,,

অন্তরা লজ্জা পেয়ে গেল,,হৃদয় তো খুশি হয়ে গেল,,এইবার হেনা চৌধুরি অন্তরাকে একটা নেকলেস পরিয়ে দিল,,

_এইটা আমাদের খান্দানি নেকলেস মা,আমার শ্বাশুরি আমাকে দিয়েছিল আজ আমি তোকে দিলাম,,সাবধানে রাখিস,

বলেই কপালে চুমু দিল,,

_তোকে খুব মানিয়েছে,

হৃদয় কিছু বলতে যাবে পাশ থেকে রায়হান বলে উঠে,,

_দেখতে হবে না ভাবিটা কার,,(বলেই একটু ভাব নিল)

সবাই হেসে দিল,,কিন্তু হৃদয়ের মটেও সহ্য হলো না,,সবাই খাবার শেষ করলো,,সোফায় বসে রায়হানের সাথে সবাই টুকটাক কথা বলছে,,অন্তরা টেবিল গুছাচ্ছে,,তার পাশে পাশে হৃদয়ও ঘুরছে,,

_কি ব্যাপার এমন আমার পিছু পিছু ঘুরছেন কেন?
_কোথায় ঘুরছি কাজে হেল্প করছি,,
_শেষ কাজ এখন জান,,
_তুমিও চলো,,

বলেই অন্তরার হাত ধরে নিল,,

_আরে হাত ধরার কি আছে,,, এখানে বাবা মা আছে কি ভাব্বে ছারেন,,
_আমার বউ আমার ইচ্ছে তোমার কি,,

বলেই নিজের মতো করে হাটা ধরলো,,সোফায় বসলো তারা,,কথায় কথায় অন্তরার মাঝে রায়হানের দিকে চোখ চলে যায়,এই ফাকে রায়হান অন্তরাকে চোখ টিপ মারে,,অন্তরা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিল,,কেউ জিনিসটা লক্ষ না করলেও হৃদয় ঠিকি করেছে,,সে তো রাগে ফুসছে,,তার বউকে চোখ টিপ মারা এত্ত বড় সাহস শুধু ভাই বলে আজ পার পেল নাহলে আজ এখানেই যেন্ত পুতে ফেলতো,,হৃদয় আর সহ্য কর‍তে না পাড়ায় অন্তরাকে নিয়ে উঠে যেতে নিলে রায়হান বাধা দেয়,,

_আরে হৃদয় কোথায় যাস?

হৃদয় পিছে ঘুরে দাতে দাত চেপে বলল,,

_ঘরে ঘুমাবো,,
_তোর ঘুম ধরেছে তুই যা ভাবিকে রেখে যা,,
_হ্যা রেখে যাই তারপর মন ভরে দেখ আমার বউকে,(মনে মনে)
_ওকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না,,

বলেই হাটা দিতে নিলে আবারও রায়হান বলে উঠলো,,

_ভাবিকে কালো শাড়িতে কিন্তু বেশ মানিয়েছে,,(বলেই হাসি দিল)

হৃদয় পাশ ফিরে অন্তরার দিকে একবার তাকিয়ে তারাতারি সিরি বেয়ে উপরে চলে গেল,,রুমে গিয়ে জোরে দরজা লাগিলে দিল,,অন্তরা কানে হাত দিল,,

_এত্ত জোরে লাগালেন কেন?
_আমার দরজা আমার ইচ্ছা,,

অন্তরা আর কিছু বলল না,,হৃদয় সারারুম পাইচারি করছে এপাশ ওপাশ যাচ্ছে কিন্তু কোন মতেই যেন তার রাগ কমছেই না,,অন্তরা বিছানায় বসে বসে হৃদয়ের আচরন দেখছে,,আর সহ্য করতে না পেরে বলেই দিল,,

_এমন ভাবে পাইচারি করছেন কেন কোন সমস্যা?

হৃদয় পাইচারি বন্ধ করে অন্তরার দিকে তাকালো,,অন্তরাকে দেখে যেন আরও রাগ উঠে গেল,,অন্তরার গাল দুটো চেপে ধরে বলল,,,

_তোকে কে বলেছিল কালো শাড়ি পরতে?
_আপনিই তো দিয়েছেন আমি তো না করেছিলামি,,(বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি পরে গেল)

অন্তরার চোখের পানি দেখে হৃদয়ের যেন হুশ ফিরলো সে তারাতারি অন্তরার গাল ছেড়ে দিল,,অন্তরার পাশে বসে আস্থির হয়ে বলল,,

_সরি জান সরি,,আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আমি চাইনি কিন্তু তখন মাথা অনেকটাই খারাপ ছিল সরি জান,,,

বলেই সারা মুখে পাগলের মতো চুমু দিতে লাগলো,,অন্তরা বলল,,

_কি হয়েছে আপনের হঠাৎ এমন করছেন কেন?
_ওই রায়হানের সাহস কি করে হয় তোমাকে সুন্দর বলার?আমি একমাত্র তোমাকে সুন্দর বলবো আর কেউ না,,

অন্তরা এতক্ষনে বুঝতে পারলো ডাক্তার সাহেব কেন চেতেছে,,অন্তরা আরও একটু চেতানোর জন্য মজা করে বলল,,

_তাহলে খারাপ কি বলেছে আমি সুন্দর সুন্দরী তো বলবে,,(একাটু ভাব নিয়ে)

হৃদয় এতক্ষন তাও রাগটাকে কান্ট্রলে রেখেছিল কিন্তু মনে হচ্ছে এখন আর কান্ট্রলে রাখা সম্ভব নয়,,হুট করে অন্তরার চুলের মুঠি ধরে একদম নিজের মুখের সামনে নিয়ে আসলো,,হঠাৎ এভাবে ধরা অন্তরা একদম আশা করেনি,,হৃদয়ের নিশ্বাস অন্তরার মুখের উপর পরছে অন্তরার হাত পা কাপাকাপি শুরু করে দিল,,আবার এত্তটাই জোরে ধরেছে চুল যে চুলের ব্যাথাও করছে,,হৃদয় অন্তরাকে বলল,,

_কি বললি তুই?তুই আমার আমি সুন্দর বলবো আর কেউ না বুঝেছিস কেউ না যে বলতে আসবে তাকে মেরেই ফেলবো,,তুই আমার শুধু আমার,,

অন্তরা কাপা কাপা গলায় বলল,,

_আমি তো মজা করে বলছি,,,

হৃদয় অন্তরার কাপাকাপা ঠোট দেখছে এক ধ্যানে অন্তরা কি বলছে তার দিকে খেয়াল নেই,,অন্তরা কথা বলার জন্য ঠোট নারায় তখন আরও কাপে,,হৃদয়কে যেন টানছে অন্তরার দিকে,,হৃদয় অন্তরার ঠোটের দিকে তাকিয়ে মাথাটাকে ধিরে ধিরে আরও সামনে আনতে লাগলো,,অন্তরা চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে,,এই মুহুর্তে যদি ঠেকায় তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে সে যানে তাই সে কিচ্ছু বলছে না শুধু চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে,,অন্তরার চোখ বন্ধ রাখা যেন হৃদয়কে আরও গভীর ভাবে টানছে তার দিকে,হৃদয়ও চোখ বন্ধ করে অন্তরার ঠোটে ঠোট মিলয়ে দিল,,পরম আবেশে অন্তরার ঠোট শুনে নিচ্ছে,,অন্তরা হৃদয়ের শার্ট ঘামছে ধরে রেখেছে,,হঠাৎ দরজায় কড়া নরে,,কয়েকবার ধীর সুস্থে বারি দিল,কিন্তু এখন বারির বেগ যেন বেরেই চলছে,,অন্তরা হৃদয়কে ক্রমাগত ধাক্কা দিয়েই চলছে কিন্তু এক চুল পরিমান নরাতে পারছে না,,কিচ্ছুক্ষন পর হৃদয় নিজেই অন্তরাকে ছেড়ে দিল,,অন্তরাকে ছাড়ায় অন্তরা তারাতারি উঠে দাড়ালো,,

_কতক্ষন ধরে দরজা পেটাচ্ছে আর আপনি,,

হৃদয় কিছু বলছে না শুধু অন্তরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে,,এখন তার অনেকটাই শান্তি লাগছে,,তার রাগের মধ্যে অন্তরাকে চাই ই চাই,,অন্তরা দরজার দিকে এগুতে নিলে হৃদয় অন্তরার হাত ধরে ফেলে,, অন্তরা পিছে ফিরে তাকায়,,

_কি হলো দরজা খুলবো না?
_আমি খুলছি,,

বলেই অন্তরার ঠোটে শব্দ করে চুমু খেয়ে দরজা খুলতে গেল,,

_লুচু কোথাকার যখন তখন আমার চুমু খায় বেটা খচ্চর,,(মনে মনে)

হৃদয় দরজা খুলে দেখলো রায়হান দারিয়ে আছে,,রায়হান বলে উঠলো,,

_এত্তদিন লাগে তোর দরজা খুলতে?
_বল কি বলবি?
_চাচি তোকে ডাকছে নিচে যা,
_কেন?
_আমি কিভাবে বলবো কেন আমাকে কি বলেছে নাকি,,

হঠাৎ রায়হানের হাসি ফুটে উঠলো,,এখন হেসে হেসে কথা বলছে,,

_আরে যাহ তোকে ডাকছে তো,,

কথা বলছে হৃদয়ের সাথে কিন্তু নজর হৃদয়ের পিছে,,,হৃদয় রায়হানের হঠাৎ হাসির কারন খুজে পেল না,,যখন তার নজর অনুসরন করে নিজের পিছে তাকালো দেখলো অন্তরা দাড়িয়ে আছে,,সে এখন বুঝতে পারলো রায়হানের হঠাৎ হাসির কারন কি,,মুহুর্তেই তার মাথায় রক্ত উঠে গেল,,হাত মুঠ করে নিল,,অন্তরা হৃদয়ের কাছাকাছি এসে দাড়ালো,,

_আরে ভাবি তোমাকেই তো খুজছিলাম,,চলো গল্প করি,,
_ওর সাথে তোর কি গল্প?তুই বাবার সাথে গল্প কর,,(কড়া গলায়)
_আরেহহ চাচার সাথে কি কথা বলবো?যা বলার ভাবির সাথে বলবো ভাবি বলে কথা,,(বলেই চোখ টিপ মারলো)

হৃদয়ের এইবার মন চাইছে এক চর মারতে,,হৃদয় মারার জন্য হাত উঠাতে নিলে অন্তরা ফটাফট হৃদয় হাত ধরে ফেলে,,হৃদয়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়,,হঠাৎ হাত আটকে যাওয়ায় হৃদয় নিজের হাতের দিকে তাকালো,,দেখলো অন্তরা ধরে রেখেছে,,তা দেখে আর কিছু বলল না,,অন্তরা নিজে হৃদয়ের হাত ধরেছে দেখে রায়হানের খুব রাগ হলো,,সে নিজের হাত মুঠ করে নিল,,রাগ লাগছে খুব রাগ লাগছে,,তাও ঠোটে হাসির রেখে ফুটিয়ে নিচে গেল,,অন্তরা নিজের ইচ্ছেয় হাত ধরায় হৃদয় খুশি হয়ে গেল,,সে অন্তরার হাত নিয়ে একটা চুমু দিল,,অন্তরা কিছু বলল না,,কিন্তু সেইদিকে রায়হান যাওয়ার পথে পিছ ফিরে তাকিয়েছিল তারপর এইসব দেখলো,তার আরও রাগ উঠে গেল,সে নিজের রুমে গিয়ে ইচ্ছে মতো দেয়ালে ঘুষি দিতে লাগলো,,অনেক কষ্টে নিজের রাগ কান্ট্রল করল,

_I want her,,I want her just for one night,,

নিজে নিজেই বলল কথাগুলো তারপর ঠিকঠাক হয়ে নিচে নামতে লাগলো,,দেখলো নিচে হৃদয় একা বসে আছে,তার মানে অন্তরা তার রুমে,,সে নিচে না নেমে আবার উপরে চলে গেল,,হৃদয়ের রুমের দিক্ব গেল,,দেখলো দরজা ফাকা,,সে ভিতরে গিয়ে দরজাটাকে একদম চাপিয়ে দিল,,অন্তরা পিছে ফিরে জামাকাপর ভাজ করছিল তাই খেয়াল করেনি কে এসেছে,,রায়হান অন্তরার পিছ বরাবর দাড়ালো,,মাথাটাকে অন্তরার কাধ বরাবরা হাল্কা ঝুকিয়ে অন্তরার শরিরে স্মেল নিচ্ছে,,

অন্তরার পিঠে কারো গরম নিশ্বাস পরায় তারাতারি পিছে ফিরে,,পিছে ফিরে সে চমকে যায় রায়হানকে দেখে,,রায়হান চোখ বন্ধ করে ফিল নিচ্ছিল,,অন্তরা ঘুরএ জাওয়ায় রায়হান চোখ খুলে ফেলে দেখে অন্তরা তার দিকে তাকিয়ে আছে,,

_কিছু লাগবে?(অন্তরা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল)

রায়হান এক ধ্যনে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে,,কিছু বলছে না,,অন্তরার দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকায় অন্তরার কেমন অসস্থি ফিল হচ্ছে,,তাই সে আবার জিজ্ঞেস করল,,,

_কিছু লাগবে?(এইবার একটু জোরে বলল)
_হুম হুম,,হৃদয়ের পারফিউমটা দাও,,,
_দাড়ান,,

বলেন ড্রেসিংটেবিলের সামনের থেকে পারফিউমটা এনে দিল,,

_এই নেন,,

রায়হান নেওয়ার ছলে অন্তরার হাত ছুয়ে পারফিউমটা নিল,অন্তরা তারাতারি হাত সরিয়ে নিল,,

_রায়হানননন,,

চিল্লান দিয়েই কেউ রায়হানের সামনে এসে সজরে থাপ্পর মারলো,,রায়হান গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে দেখে হৃদয় রক্ত চক্ষু করে তার দিকে তাকিয়ে আছে,,আর এক হাতে অন্তরাকে ধরে রেখেছে,,অন্তরাকে ছেড়ে রায়হানের দিকে তেরে গেল হৃদয়,,রায়হানের কলার চেপে বলল,,

_আমার বউকে টাচ করার অধিকার তোকে কে দিল?আমার বউকে টাচ করিস,,,

বলেই নাক বরাবর ঘুষি দিল,,আর ওয়ার্নিং দিল,,

_আর যেন আমার বউর সামনে তোকে ঘেষতে না দেখি বের হ এক্ষুনি,,,

বলেই রায়হানকে কোলার ধরে নিজের রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিল রায়হানের মুখের উপর,,রায়হান নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল,,

_এর বদলা আমি নিবই,,তুই আমাকে মেরেছিস না দেখিস এর পরিনাম কি হয়,,(বলেই নাকের রক্ত মুছে ডেবিল হাসি হাসলো)

আর এইদিকে হৃদয় তো রাগে শরীর কাপছে,,তার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি রায়হানকে মেরে ফেলতে তার অন্তরার দিকে নজর এত্ত বড় সাহস,,সে অন্তরার কাছে গিয়ে তার হাত ঘষছে,,একবার পানির নিচে দিয়ে ঘষে তো একবার নিজের হাত দয়ে,,ওই রায়হানের স্পর্শ যেন তার অন্তরার হাতে না থাকে,,অন্তরা হৃদয়কে সান্তনা দিচ্ছে তাতেও যেন কোন কাজ হচ্ছে না,,

_শান্ত হন হৃদয়,আমার হাত ছিলে যাবে তো,,
_ছিলুক তারপরও যেন ওই বদমাইশটার ছোয়া তোমার শরিরে না থাকে,,

অন্তরা বেচারা আর কি করবে তাকে কোনভবেই শান্ত করা যাচ্ছে না,,কিছু একটা ভেবে বলল,,

_আচ্ছা আমরা আজই সাজেক যাই?

এই কথা শুনে হৃদয় অন্তরার হাত ছেরে মুখের দিকে তাকালো,,হৃদয়ের মুহুর্তেই সব রাগ যিদ ফুররররর হয়ে গেল,,সে অন্তরার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল,,

_আজিই যাবা?
_হুম,,
_আচ্ছা ঠিক আছে,,

বলেই অন্তরার কপালে ঠোট ছয়ালো,,আর ঠোটে ঠোট ছয়ালো,,তারপর দরজা খুলে বাহিরে গেলো,,

_জাক বাবা এই সাইকোটাকে কোন ভাবে শান্ত তো করতে পেরেছি,,নাহলে আজ আমার হাত যেত,,(বলেই নিজের হাত আস্তে আস্তে ঘষতে লাগলো)

হৃদয় হাসি মুখে নিচে নামলো,,রায়হান সোফায় বসা ছিল,,হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে হাসছে,তার এই হাসির রহস্য রায়হান কোথাও খুজে পেল না,,,

চলবে🖤
(ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🥰)