Wednesday, July 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1500



ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-১০

0

ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-১০
রোকসানা আক্তার

বাবার ভয়ে যে যার রুমে চলে আসে এবং আমিও। আমি রুমে আসার পর আবার মেমোরিটা খুঁজতে থাকি।সাথী আমার রুমে কড়া নেড়ে বলে,
-ভাইয়া,তোমাকে খালামণি ডাকে।
-তোর খালামণিকে বল এখানে এসে আমার সাথে একটু দেখা করে যেতে।
-আচ্ছা বলতেছি।।
সাথী মাকে ডাকতে চলে যায়।আমি এদিকটায় মেমোরি খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হয়ে পড়ি।রুমের সবকিছু উলটপালট হয়ে যায় এমনভাবে টুকতেছি।।
মা আমার রুমে প্রবেশ করেন।
-কেন ডাকলি, শাওন??
-কথা আছে মা তোমার সাথে।একটু বসো।।

মা বিছানার উপর পা গেঁথে বসেন।।আমি অনেক বিরক্তি হয়ে মায়ের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলি,
-মেমোরিটা আলমারিতে রেখেছিলাম,কিন্তু এখন খুঁজে পাচ্ছি না।দাৎ!!!
-তুই সাথীকে নিয়ে বাহিরে যাওয়ার পর তোট রুমেতো কেউ আর আসেনি।ভালো করে খুঁজে দেখ হয়তো কোথাও রেখেছিস।।
-হুমা মা সেটাই।।
-এবার বল আমায় কেন ডাকলি??
-এতদিনের লুকোনো কথা আজ আমায় দৃষ্টিগোচর করতেই তোমাকে ডাকা।প্লিজজ মা,আল্লাহর কসম আমার কাছে আর কিছু লুকাবে না!!

মা অনেকটা তটস্থ হয়ে চোখগুলো আড়চোখা করে বলেন,
-তো-তোর কা-কাছে কি এমন লুকচ্ছি যেটা তুই জানিস না!কি বলছিস এসব!?
-ফাহাদ আমার আপন ভাই না!এটা আমি সিউর!!এবার বলো,উনি আমার কেমন ভাই যাকে তুমি ছেলে হিসেবে মেনে নিয়েছ??
-শাওন??কিসব বাঁজে বকছিস তুই!??
-নাহ মা কোনো বাঁজে বকছি না।কারণ,ফাহাদ ভাই যদি সত্যিই আমার আপন ভাই হতো তাহলে আমাদের সাথে এরকমটি বিহেভ কখনোই করতে পারতেন না।নিজের মা,বাবা এবং ভাইয়ের কাছে পর মেয়েকে সবচেয়ে আপন ভাবতেন না!!নাকি আমি তোমাদের পর,ওটা বলো?!?

-শাওনন???
এ বলে মা আমার গালে দু’টো থাপ্পড় বসিয়ে দেন।আর নোনাঅশ্রু দু’গাল বেয়ে পড়তে থাকে মায়ের।। আমিও অবুঝের মতো অন্যদিক তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছি।।তারপর মা কান্নাকে ধামাচাপা দিয়ে বলেন,
-তুই সত্যটা জানতে চাস??
-হ্যাঁ মা হ্যাঁ, আমি সত্যটা জানতে চাচ্ছি।ফাহাদ ভাই কে, বা আমি কে!! ফাহাদ কোন মা-বাবার ছেলে এবং আমি কোন মা-বাবার ছেলে!!প্লিজজ বলো আমায়!আমি আর নিতে পারছি না মা!!
-তোর বাবা দু’বিয়ে করেছিলেন শাওন!!ফাহাদ যখন ৬ বছরের ছিল তখন ফাহাদের মা ক্যান্সারে মারা যান।আর তখন তোর বাবা আমায় বিয়ে করে আমায় এ’বাড়ি নিয়ে আসেন। আমার বাবার কাছে অনেক আকুতি মিনতি করে।।
আমি জীবনে স্বামী এবং আমার সংসারকে বড় করে দেখেছি।তাই তোর বাবার প্রতিটি আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।তবে,একটা দিক আর মেনে নিতে পারিনি সেটা হলো তোকে গর্ভে ধারণ করা।তোর বাবা চাইতেন না আমি কোনো সন্তান পেটে নিতে,কারণ আমার আমাদের অন্য সন্তান পৃথিবীতে আসলে ফাহাদের প্রতি আমার মায়া কবে যাবে সে ভেবে।তারপরও,আমি অনেক কষ্টে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তোকে গর্ভে নিয়েছি।তুই যখন পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হস,তখন থেকেই তোর বাবার কড়া নজরদারি পড়ে তোর থেকেও ফাহাদকে বেশি ভালোবাসতে যাতে ফাহাদ তার মা হারানোর বেদনা ভুলতে পারে। আমি তা-ই মেনে নিয়েছি শাওন।তাই তোর বাবার চাক্ষুষে ফাহাদকেই স্নেহ করেছি।এজন্য ছোটবেলা গোপন বিহীন তুই আমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছিস। তোকে এবং ফাহাদকে নিয়ে কখনোই আমার মনে অসমতল মনোভাব জন্মায়নি।আর,
তোকে নিয়ে কখনোই স্বজনপ্রীতি মনোভাব দেখাই নি।তোকে যতটা ভালোবাসতাম,ঠিক ততটা ফাহাদকেও।ফাহাদকে কখনোই মায়ের অভাব বুঝতে দিই নি যাতে তোরা একই মায়ের পেটেটর উদরের ভাই এমনটা ভাবতে পারিস।।

আমি মায়ের এসব কথা শুনে মুখে একটা অট্ট হাসির লেশ টানি,আর বলি,
-তুমি সৎ না ভাবলেও,সেই কুলাঙ্গার শেষ পর্যন্ত সৎভাই পরিচয় দিয়েছে।
-বাবা সাবধান!!তোর বাবা যাতে এসবের কিছুই না জানতে পারে!!
-এখন আর জেনে কি লাভ হবে, মা!??? তবে,তুমি ভয় পেও না।।।আমি আছি তোমার পাশে।।

মা মুখের ঘাম মুছে বলেন,
-আচ্ছা তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেতে আয়।
এ বলে মা আমার রুম থেকে প্রস্থান করেন।।বিছানার উপর বসে মোবাইলটা একটু হাতে নিই। নেটে আসতেই একটা ভিডিও চোখে পড়ে!! ভাইরাল করা একটা ভিডিও ফেসবুক ইউজাররা একের পর এক শেয়ার করে পুরো ফেইসবুক জগৎকে ফাঁটিয়ে ফেলছে।
আমি বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ ক্লিয়ার হতে ভিডিও অপশনে ক্লিক করি।আর ভিডিওটি অপেন হতেই যা দেখলাম,সত্যি আমি পুরোই স্তব্ধ।আর এ স্তব্ধতার মাঝে মুখে একগাল হাঁসি ফুঁটে উঠলো।।জোয়ারের আনন্দে ভেসে যাচ্ছে আমার মন,প্রাণ,হৃদয়।।
এ’তো কাল রাতের সেই জঘন্য ভিডিও যেখানে নিদু এবং ভাইয়ার আদুরী বউয়ের অবৈধ পরকীয়ার ফুটেজ!!
বাহ,বাহ চোর বুঝি অবশেষে ধরা খেলো এবং শাওনের পথটা ক্লিয়ার হলো।।নাচতে ইচ্ছে করছে আমার।।
ইয়াহু!!অবশেষে নাগ গিন গিন গিন নাচ দিয়েই ফেলি।আউলা-ঝাউলা নাচনের তালে গাই। ফেইসবুকে এত্ত সুন্দর একটা কাজ কে করতে পারে,তাকে সাধুবাদ জানাই।।।
তড়িঘড়ি নিদুকে কল মারি।।নিদু কলটা রিসিভ করেই খিলখিলিয়ে হেঁসে দেয়, আর বলে,
-কেমন খেলললাম,গুরু??
-গুরু আমি নই,আপনি।আপনিতো একদম চালাকের গুরু।তবে,আমায় যে বললেন না? এ কাজটা কখন করলেন??
-আপনাকে মেমরিটা দেওয়ার আগেই আমি ফেন মেমরিতে ভিডিওটি নিয়ে আসি।আর দুপুরের দিকেই ফেসবুক,টুইটার,ইউটিউবে দিয়ে ফেলি।।আপনার ভাবীতো এখন লজ্জ্বা-ঘৃণায় রক্তিম।হিহিহিহি।।।
-হা হা হ হা।উম্মা নিদু ভাই।ওয়েট,ভাইয়াকে আগে এই গুড নিউজটা দিয়ে আসি।দ্যান,তোমার সাথে কথা বলছি৷
-ওকে ডান,ডান।বায়।।

খুশির তালে ধপাস ধপাস করে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকি। আর গেস্ট রুমে আসতেই দেখি ভাইয়ার চোখ,নাক,মুখ খিঁচে শরীর থেকে ঝরঝর করে প্রবল ধারার ঘাম ছুটছে।হাতটায় কাঁপুনি ধরে মোবাইল টা যেন এক্ষুনি ফ্লোরে পড়ে যাবে। পা’গুলো ধরধরে কাঁপছে।।
আমি মাথাটা একটু এগিয়ে দিয়ে দেখি ভাইয়াতো আমার প্রাণের ভাবীর সেই জঘন্য ভিডিওটি দেখতেছে,আর এমন প্রতিবন্ধী ভাব এনে হাঁপিয়ে উঠছে।

ঠাস করে মোবাইলটা ফ্লোরে সজোরে আঘাত করেন।।ঝংকার আওয়াজে আমি কান হাত দিয়ে চেপে ধরি।মা,বাবা,আন্টি এবং সাথী তড়িঘড়ি এখানে চলে আসেন কি হয়েছে কি হয়েছে বলে!!

আমি আর দেরী না করে একলাফে বাবার সামনে আমার মোবাইলটা হাত পেতে রাখি!!ইঙ্গিত করি ভিডিওটির দিকে।।
বাবা আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ভিডিওটা অপেন না করেই ধপ্পাস করে সেফায় বসে পড়েন চিন্তামগ্নে।মুখটায় মলীনতা ভাব এনে বলেন,
-আমার আর মান,ইজ্জত,সম্মান কিছুই রইল না!!সব শেষ হয়ে গেল আমার!!জানি না কি ভুল করেছি এখন তার প্রায়শ্চিত্ত ফল ভোগ করছি।।

-এত্ত অস্থির হবেন না। ফাহাদকে বলো ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে,তাহলেই হবে!!(মা)

ভাইয়া মায়ের কথায় মুখে শব্দ না তুলে ক্রুদ্ধমনে নিজের রুমে চলে যান।আর আমি ড্যারা চোখে তাকিয়ে গালভর্তি মিটিমিটি হাসি।আহা!!শেয়ালের ফাদ সিংহের কাছে ঠিকই ধরা খেতে হয়।এখন ভাবীজান গো তোমারও তাই হলো.(মনে মনে)

বাসার সবাই নিস্তব্ধে বসে আছে।কারো মুখেই যেন ভাষা নেই।।
আমি ধীরগতিতে হেঁটে বাবার পায়ে গিয়ে বসি,আর বাবাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিতে থাকি।
-বাবা,চিন্তা করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।প্রতিটি ফ্যামিলিতে এরকম সমস্যা হয়-ই।সমস্যা আছে,ইনসাল্লাহ সমাধানও পাবে।হতাশ হয়ো না বাবা।উপরের আল্লাহই সব দেখছেন।।

বাবা আমার কথা নিশ্চুপে শুনে বুকভরা কষ্ট নিয়ে বলেন,
-জানিস,শাওন??এইজন্যই আমি প্রেম-ভালোবাসার বিয়ে পছন্দ করি না।মাকাল ফলের মতো এইধরনের প্রেম-ভালোবাসার বিয়ে সব ন্যাস্য করে দিতে পারে।ফাহাদ যা-ই করলো,আমি তোকে এইধরনের বিয়েতে সমর্থণ দিব না।প্লিজজ বাবা,আমাদের যাতে মান-সম্মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুলে,আশা করি তুই এমনটি কখনোই করবি না।তোর মা আছে,তোর বাবা আছে। আমরাই ভালে দেখে তোকে বিয়ে করাবো,তবুও তোর কাছে এই বাবার বিনীত অনুরোধ তুই এমনটি করবি না,নাহলে এই দুনিয়াতে আমাদের আর থাকার ইচ্ছেটাই মরে যাবে।

মাও বাবার কথায় আঁচলে মুখ গুঁজে চোখের পানি ফেলেন।সাথী ফকফক চেয়ে আছে।আর আমার বুক মুঁচড়াতে থাকে।তাহলে রিলেশনের বিয়ে আমার কপালে আর বুঝি জুটলো না!!হায়রে,পুড়া কপাল!!এক জট থেকে বাঁচালেও অন্য জটে পেঁচিয়ে ফেলিস!!

তারপর,রাতে কারোই আমাদের খাওয়া হয়নি।ভাইয়া দরজাটা তখন যে অফ করলেন,আর খুলেননি।আমরাও যে যার রুমে চলে আসি।
আমি নিরিবিলি বসে খুশিতে নাঁচছি,আবার ফ্যামিলির জন্যে বুকটাকে বিষণ্ণ করে তুলছি।।
রাতটা কোনোমতে পার হয়।সকালে সাথী আমার রুম থেকে এসে আমায় জাগিয়ে তুলে।
বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিই।সাথী আমার দিকে তোয়ালে টা এগিয়ে দিয়ে বলে,
-ভাইয়া চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।।ঔ পাপ তোমাদের মাথা থেকে গেছে এটাই বেশি।

-পাপতে এখনো যায় নি রে সাথী।ডিভোর্স হলেই পাপ যেত।
-ভাইয়া জানো?মানুষ যখন ভালোবেসে বিয়ে করারও এমনটা হয়,তখন আমার মন বলে লাইফে আর প্রেমই না করতে।আর তোমাকেও ভালো না বাসতে।বিয়ের পর যদি তুমিও আমায় ডিভোর্স দাও,তখন??

বেখেয়ালী হাসি চলে আসে ওর কথায়।ছোট মানুষতো,বুদ্ধিতে যতটুকু কুলিয়েছে ততটুকুই বলছে।
-আরেহ,,বাদ দে এসব।এসব মাথা থেকে ঝেড়ে পড়ালেখার কথা ভাব,কাজে আসবে।।

এ বলে রুম থেকে চলে আসি।বাবাকে রুম থেকে ডেকে তুলি ব্রেকফাস্ট করার জন্যে।বাবা ভাইয়ার রুমের সামনে গিয়ে ভাইয়াকে ডাকতে থাকেন।অনেক বার ডাকার পর দরজা খুলেন ভাইয়া।মুখটা অনেক ফুলে আছে,চোখগুলে লাল হয়ে গেছে।মুখে ভ্যাপসা একটা ছাপ উপলব্ধি করতে পারি।ভাইয়া যে রাত একছিটেও ঘুমান নি তা মুখ দেখলেই স্পষ্ট।।

তারপর বাবার কথায় ফ্রেশ হতে যান ভাইয়া।ছকিনা খালা ভাইয়াকে রুমেই নাস্তা দিয়ে আসেন।।।
আমরা সবাই নাস্তা খেতে বসি।বাবা নাস্তার চামচ মুখে তুলেও অনিচ্ছা সত্ত্বে খেয়ে নেন।।

সবার ব্রেকফাস্ট শেষ হলে আমি আমার রুমে চলে আসি।রুমে আসতেই শিমলার কল।
-হ্যালো,শিমলা??
-কি বাঁদর? ভুলে গেলি আমায়??
-নাহ তে!!কেন ভুলবো বল তোকে?তুইতো আবার জবের কাজে বিজি।তো চাকরিটা হয়েছে তোর?
-ইন্টারভিউ দিয়েছি।এখন দেখি সিলেক্ট করে কি না!
-ইনসাল্লাহ হয়ে যাবে তোর চাকরি।টেনশন নিস না।
-হুম।।ফেইসবুকে আজ ঢুকার পরতো আমি পুরো ফিদা!!.ঔ মহিলাকে নিয়ে তো ফেইসবুকে তুমুল ঝড়!!
-ঝড় তো সবে শেষ হলো।একটু পরিণতি টা দেখতে দে না।।
-হুম।
-তো কবে বাসায় আসছিস??
-এইতো নেক্সট উইকে চলে আসবো।।
-ওকে তাড়াতাড়ি চলে আসিস।তোর অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আমি শেষ!অনেক কিছু তোর সাথে বলার আছে।
-ওকে ওকে।বাসায় এসে এতদিনের জমানো সবকথা তোর শুনবো। এবার খুশি??
-হুম আমিতো সেই লেভেলের খুশি।
-হিহিহিহি।আচ্ছা পরে কথা হবে, শাওন । বায়য়
-বায়য়য়,বেইবি।।।

ল্যাপটপ টা ওপেন করি।।অনেকদিন হয়েছে ভার্সিটির খবর নেওয়া হয়নি।হৃদয়টা কেমন আছে তারও খবর জানি না।হৃদয়কে অনলাইনে দেখে একটা মেসেজ করি।হুট করে সাথী নিচ থেকে ডাকতে থাকে।।ভাইয়া?ভাইয়া?ভাইয়া??তাড়াতাড়ি নিচে আসো!!!
সাথীর আওয়াজ শুনে ল্যাপটপ টা অফ করে নিচে চলে আসি।।নিচে এসে দেখি সবাই টিভির সামনে বসে আছে।
আমি টিভির সামনে গিয়ে দাড়াই।টিভিতে হঠাৎ নিউজ দেখতে পাই,
–গতকাল শিপ্রা নামের যে মেয়েকে নিয়ে নিদু নামের এক ছেলের পরকীয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে,আজ সকালে সেই নিদুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।লাশটি নিকটস্থ নদীর কিনারায় খুঁজে পাওয়া যায়।
খবর নিয়ে জানা যায়, তাকে চরমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।।অপরাধীকে এখনো শনাক্ত করা হয়নি,তারজন্যে বেদম প্রহরের মতো পুলিশ তল্লাসি চালাচ্ছে।

আমি নিউজটা দেখে থতমত খেয়ে যাই!!নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।কাল রাত ১২ টাই তো নিদুর সাথে আমার শেষ কথা হলো,তাহলে নিদুকে এত্ত তাড়াতাড়ি কে খুন করতে পারে।।পুরো শরীরের লোম আমার খাড়া হয়ে যায়।সাথী,মা,বাবা,আন্টি সবাই খুশি নিদুর মৃত্যুতে।কিন্তু আমার মন মানছে না!!আমার মন বলছে নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।।

চলবে…..

ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০৯

0

ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-০৯
রোকসানা আক্তার

পরে সবাই ব্রেকফাস্টটা সেরে নিই। বাবা আমাদের সাথে আর ব্রেকফাস্ট করেননি।ছকিনা খালা বাবাকে উনার শয়ন ঘরেই নাস্তা দিয়ে আসেন।

আমি আর একমিনিট ও দেরী না করে সাথীকে নিয়ে বাহিরে চলে আসি।।
-উফস ভাইয়া,আস্তে একটু হাঁটো না?দেখতেই তো পাচ্ছ আমি তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারি না।
-আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুই এখানে একটু বস এবং আমিও একটু জিরিয়ে নিই।ক্লান্ত হয়ে গেছি অনেক।
-ঘর থেকে যেভাবে হাতটা ধরে এদিকে টেনে নিয়ে আসলে মনে হচ্ছে তোমার আইসক্রিম চোরে নিয়ে যাচ্ছে।।তো ক্লান্ততো হবেই!!

সাথীর কথায় বেখেয়ালি হাসি চলে আসে আমার।মাঝেমধ্যে মেয়েটির সপাৎ সপাৎ কথা শুনতে ভালোই লাগে।হাসিটা মুখে চেপে বলি,
-বয়সের তুলনায় পাকা হওয়া ভালো না সাথী!
-আবার সেই বয়স!!তোমার এই ঢং-এর কথায় আর বাঁচি না ভাইয়া!

-হয়েছে হয়েছে যত বেশি বসতে দিব,তত বেশি পটপটাবি।এখন চল
-আচ্ছা চলো।।

বাড়ির গেইট থেকে বের হয়ে পথিমধ্যে একটা রিক্সায় সাথীকে নিয়ে উঠে বসি।
-ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-গেলেই বুঝবি।

বেঘোরে রিক্সা চলতে থাকে।কখনোবা রিক্সার এবং গাছগাছালির বাতাসে মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে।
রিক্সা একটি “কুল শপ” – এর সামনে থামে।আমি সাথীকে নিয়ে কুল শপের ড্রাইনিং বসে পড়ি।ওয়েটার এসে তিনটে কোণ আইসক্রিম দিয়ে যায়।তা দেখে সাথী অনেকটা অবাক হয়ে বলে,
-তিনটা কেন ভাইয়া?আবার কোনো গেস্টকে ইনভাইট করলে নাকি???

আমি থুতনির নিচে হাত গুঁজে বলি,
-হু।
-কাকে!?
-এই যে তোকে।
-আমি বুঝি গেস্ট?আর তাও দু’টো একসাথে!?সম্ভব না ভাইয়া।
-কোণ আইসক্রিম তোর-না অনেক প্রিয়?
-হুম।তাহলে, কোনো কথা না বলে সোঁজা খেয়ে নে এবং আমাকেও খেতে দে।

সাথী শপের চারপাশটা তাকিয়ে বলে,
-ভাইয়া,আমরা এখানে না বসে তারচেয়ে ভালো রাস্তার ফুটপাতে হেঁটে হেঁটে গল্প করবো আর আইসক্রিম খাবো।আমি স্কুলের বান্ধবীদের সাথে এভাবে আইসক্রিম খাই,একবার এভাবে খেয়ে দেখো আলাদা একটা ইন্টারেস্ট পাবা ভাইয়া।

কিছুক্ষণ চুপসে থেকে বলি,
-আচ্ছা,চল।

হাঁটতে হাঁটতে সাথী বলতে থাকে,
-ভাইয়া,ঔ ভক্ষণ কি সত্যি সত্যি আমায় বিয়ে করবে??
-আরেহ না। ও তোর একটা চুলও ছুতে পারবে না।
-কিন্তু আমার কেন জানি ভয় হয়,ভাইয়া?
-কোনো ভয় নেই সাথী।তোর এই শাওন ভাইয়া থাকতে তোর কিছুই হবে না।জাস্ট ট্রাই টু রিলাক্স সাথী এন্ড কিপ ইন বিলিভিং অন মি!!
সাথী আমার কথায় অনেকটা খুশি হয়ে রাজ্যের কথা শুরু করে দেয়।
সাথী কথার ধ্যানে হাঁটছে আর কিছুক্ষণ পর পর মুখের মধ্যে একগাল আইসক্রিম পুরে নিচ্ছে।আমি মাথা হেলিয়ে ওর কথার সম্মতি দিয়ে যাচ্ছি।।হঠাৎ পথিমধ্যে সাথী কাউকে দেখতে পেয়ে বলে উঠে,
-ভাইয়া,দেখো?এই মেয়েটি সেদিনের সেই মেয়েটি না? যে ফাহাদ ভাইয়ার শ্বশুর বাড়ি থেকে বিয়ের সময় এসেছিল?
আমি সাথীর আঙ্গুলের ইঙ্গিতে মেয়েটির দিকে তাকাই।তাকিয়ে দেখি,মেয়েটি আর কেউ নয়,পৃথুলী।
-ও তো পৃথুলী,সাথী।
-হুম,ভাইয়া।দাড়াও কথা বলে আসি।

সাথী একথা বলে আমাকে এড়িয়ে পৃথুলীর সাথে কোলাকুলি করে নেয়।পৃথুলী বোধহয় আমায় এতক্ষণে দেখতে পায়নি।আমিও সাথীর পিছু পিছু পৃথুলীর সামনে হাজির হয়ে ওকে একটা সারপ্রাইজড দিই।পৃথুলী আমাকে দেখামাএই চোখগুলো কপালের দিকে তুলে এবং পিছন ঘুরে পা বাড়াতেই আমি ওর হাতটা ধরে ফেলি।
-কি হয়েছে,পৃথুলী?তুমি আমায় দেখে ভয় পাচ্ছো কেন?আমি কি ভালুক!?
-ভাইয়া,প্লিজজ?আমাকে ছেড়ে দিন।
-আজিব তো!!সমস্যা কি ওটাইতো বলবা।

-কি ব্যাপার,পৃথুলী?তুমি শাওন ভাইয়াকে দেখে এরকম করছো কেন?(সাথী)
-আ-আ-মি কিছু বলতে পারবো না।আমাকে এখন বাসায় যেতে দিন।আমি বাড়ি যাবো।

পৃথুলীর ছটফটানি দেখে আমি হতভম্ব।আর মেয়েটির মনে নিশ্চয়ই কেউ ভয়ের ফলা ফলছে। নাহলে,সাডেনলি এরকম উদ্ভট বিহেভ আশাতীত নয়।আমি পৃথুলীর সামনে হাটু গেঁড়ে বসি এবং ডান হাতটা আলতো ধরে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলি,
-পৃথুলী?আমাকে ভয় পেও না।আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।এই দেখ,সাথীকে কত আদর করি।তোমাকেও করবো যদি আমায় দেখে ভয় না পাও।
সাথীও আমার কথায় আশ্বাস দেয়।পৃথুলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-আপনি আমাদের দিবানি আপুকে কেন মারলেন?!??
-মানে??দিবানি মারা গেছে?
-হ্যা!!আজ থেকে তিন বছর আগে দিবানি আপুকে কেউ খুন করে মেরে ফেলেছে,আর সেটা আপনি!!.

মাথাটা হিম হয়ে আসে আমার!!সাথী বিস্ময় হয়ে মুখে হাত রাখে। পৃথুলী এসব কি বলছে!
আমি নিজেকে সংযত রেখে বলি,
-তোমাকে কে বলেছে এ’কথা আমি দিবানি খুন করেছি?
-শিপ্রা আপু বলেছেন।যেদিন আপনার রুমে গিয়ে আপনার সাথে দেখা করেছিলাম সেদিন আপু আমায় ডেকে বলেছেন,আপনিই সেই খুনী যে দিবানি আপুকে হত্যা করেছিলেন।আর,আমি যদি আপনাকে দিবানি আপুর মৃত্যুর কথা বলে দিই,তাহলে আপনিও আমায় দিবানি আপুর মতো খুন করে ফেলবেন।আমাকে সত্যি খুন করে ফেলবেন নাতো??

পৃথুলীর আঁকুপাঁকু কথায় ক্ষণিকে আমার শরীরের তাপমাএা বাড়তে থাকে,কানদুটো লাল হয়ে যায়।আর পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যাচ্ছে।।দিবানি কি সত্যিই মারা গেছে?আর যদি মারাই যায় তাহলে আমি ওকে খুন করতে যাবো কেন এবং কি এমন স্বার্থে?!
নিশ্চয়ই এই শিপ্রা ডাইনী কোনো ফন্দি আঁটার জন্যে আমায় মিথ্যে হত্যাকারীর বানাচ্ছে।তবে,এই শিপ্রা দিবানির কি হয়?
-আচ্ছা, পৃথুলী? দিবানি তোমার শিপ্রা আপুর কি হয়?
-দিবানি আপু শিপ্রা আপুর আপন বোন।
-আ-আপন,বোন!?
-জ্বী।

-তুমি কি নিশ্চিত যে দিবানি মারা গেছে??
-হত্যাকারী হয়ে সাধু সাঁজার নাটক করতে আসছেন??
এ বলে পৃথুলী পিছু হটে দৌড়ে চলে যায়।সাথী আমার দিকে হকচকিয়ে তাকিয়ে বলে,
-ভাইয়া?পৃথুলী এসব কি বলছে??
-ও’তো অবুঝ।তাই পাগলের মতো উদ্ভট কথা বলছে।তুই কি বিলিভ করবি ভাইয়া খুনী??
-তা কখনোই না, ভাইয়া।।
-তাহলে চুপ থাক!!!

সাথী মাথা নেড়ে আমার কথায় চুপসে যায়।কিন্তু আমার কান যেন এসব কিছুতেই বিলিভ করছে না!!পৃথুলীর কথাগুলোই বার বার কানে বাঁজছে!!

সাথী সারা রাস্তায় হেঁসে-খেলে কাটিয়েছে,আর আমি ভাবনাতুর পৃথুলীকে নিয়ে।হুট করে যোহরের আযান পড়ে যায়।সাথী আমার হাত নেড়ে বলে,
-ভাইয়া দুপুর হয়ে গেছে।চলো বাসায় যাবো।।
-আজ রেস্টুরেন্টে আমরা দুপুরের খাবারটা সেরে নিব।বাসায় আজ খাবো না।
-ওকে, ভাইয়া!!

সাথীকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকি।ওখানে লাঞ্চটা সেরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটা রিক্সা নিই।সাথী এবং আমি রিক্সায় উঠে বসি।
-ভাইয়া?আমরা কি বাড়ি যাবো?
-নাহ!!
-তাহলে??
-পার্কে।।
-তোমার মনটা এখন এখন ভালো নেই ভাইয়া।চলে,বাসায় ফিরে যাই?
-আরেহ নাহ বোকা,চল!!

সাথীও হয়তো বুঝেছে আমার মনটা ভালো নেই।তবে,মনটা খারাপ থাকলেও আমায় ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।অনেক বড় ঝড় এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিলেও সাথীর আবদার আমি অপূরন রাখবো না।কারণ,বাবা মরা মেয়েটার আক্ষেপগুলো এখনো অপূরন্ত । যখন সর্ট সময়ের জন্যে ঢাকা থেকে বাড়ি আসতাম,তখন একে একে অনেকগুলো ইচ্ছের কথা আমায় জানান দিত।দাবিগুলো মেটাবো মেটাবো বলে সময়ে কূলাতে পারতাম না।তাই আজকের দিনটা শুধুই সাথীর জন্যে।।

পার্কে আসার পর নিদুর কলের পর কল যেন মোবাইলটা ফেঁটে যাবে।সাথী বিরক্ত হয়ে বলে,
-ভাইয়া,কে এত্তবার কল দেয়??
-আরেহ,পাবাজ!!
-নিজের বন্ধু কল দিয়েছে,কলটা রিসিভ করতেই তো পারো?
-আরেহ না,পরে ওর সাথে কথা বলতে পারবো।এবার বল কোন দোলনায় ছড়বি??
-ঘোড়ার দোলনা টা আমার ভীষণ ভীষণ পছন্দ। ওটাতে চড়বো ভাইয়া।।

-ওকে।।
দুটো টিকেট কিনে নিই।একটা আমার এবং অন্যটি সাথীর।দুজনে ঘোড়ার সিটে উঠে বসি।আর আনন্দে খিলখিল করে হেসে দুজন ভেসে যাচ্ছি।সাথী মাঝে মাজ ভয় পেয়ে চমকে উঠে।পেছনের সিটে ঘোড়ার সিটে বসে আমি সাথীকে আশ্বাস দিই,
-আরে বোকা ভয় পাস কেন?পেছনে আমি আছি না?পড়ে গেলে আমি তোকে ধরে ফেলবো।সো,ভয় নেই। ওকে??
সাথীও খুশির তালে মাথা নাড়ে।
সময় শেষ হলে দুজন নেমে পড়ি।নিদু আবার কল দেয়।পরে তটস্তাবোধ নিয়ে কলটা রিসিভ করি,
-হ্যালো??
-আরেহ ভাই,আজ সকাল থেকে আপনার নাম্বার অফ পাচ্ছি।এখন রিং বাঁজছে কল রিসিভ হচ্ছে না। আপনার নাম্বারের ২০০ বারের মতো ট্রাই করেছি।তারপরও, আপনার কোনো রেসপন্স নেই।
কাজ শেষে কি সেরে গেলেন নাকি??এই নিদুকো চেনেন আপনি চেনেন? এক কোপে গলা ফাঁক করে দিব!!আর,বেশি চালাকি করার চেষ্টা করবে না,নাহলে ফেঁসে যাবেন কিন্তু!!বলে দিলাম।সো এলার্ট!!

আমি নিদুর কথায় হম্বিতম্বি হয়ে ইতস্ততা নিয়ে বলি,
-ভাই বিলিভ করুন বাবা রেগে যাওয়ার পর বাবাকে শান্ত করতে করতে বুকের ব্যথা দ্বিগুণ হয়।ফোনে চার্জ ছিল কি ছিল না তা একদম মাথায় ছিল না।পরে,ফোনটা একটু চার্জ লাগিয়ে এতক্ষণ মায়ের কাছে ছিলাম।আর এখন রুমে এসে দেখি আপনার কল বাঁজছে।।দুঃখিত ভাইয়া,আমি সঠিক সময়ে রিসিভ করতে পারিনি।
চোখ টিপে কথাগুলো বলি।নিদু বিশ্বাস করে ফেলে।
-ওকে, নেক্সট বার এমনটি যেন না হয়।আর সাথীর ব্যাপারে কি ভেবেছেন এবং ওকে আমার হাতে কবে তুলে দিবেন?ডেট দিন!!আমার আর তর সইছে না!!

-হবে,হবে।।আচ্ছা আচ্ছা একটু পরে কথা বলছি।বাবা আমার রুমে আসছেন।

তাগাদা দেখিয়ে নিদুর কলটা কেটে দিই।সাথী আমার মিথ্যে অভিনয় দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খায়।
-কি ব্যাপার,ভাইয়া?? তুমি তোমার বন্ধুর কাছে মিথ্যে বললে কেন??
-পাবাজ যদি এমুহূর্তে জেনে ফেলে আমি এখানে,ও চলে আসবে।আমি চাই না আমার আর সাথীর মাঝে থার্ড পার্সোন আসুক।(আবারো চোখ টিপে বলি)
সাথী খুশি হয়ে বলে,
-নাহ,নাহ আসা লাগবে না।তুমি ফোনটা অফ করে ফেল ভাইয়া।।

তারপর আমাদের অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি হয়।অতঃপর,সন্ধের দিকে বাড়ি ফিরি।বাসায় আসতেই ভাইয়ার চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনতে পাই।ভাইয়া হয়তো ব্যবসার কাজ সেরে বাড়ি চলে এসেছেন।
বাবা ভাইয়ার উপর রাগছেন। আমি বিষয়টি ভালোভাবে ক্লিয়ার হওয়ার জন্যে উনাদের সামনে আসি।
বাবা ভাইয়াকে বার বার একই কথা বলছেন,
-ওই মেয়ের এই বাড়িতে কোনো জায়গা নেই!!!নেক্সট বার ওই মেয়ের কথা তুই আমায় বলবি না!!
-বাবা,শিপ্রা ওরকম না!তোমাদের হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।।শিপ্রা আমায় সব বলেছে ফোন করে,ও এসবের কিছুই জানে না।শিপ্রার সাথে আমার ১ বছর সম্পর্ক ছিল,আমি জানি ও কেমন মেয়ে।

ভাইয়ার কথায় আমার হট্ট হাসি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।ওনার বউ ধোঁয়া তুলসী পাতা।হাহাহাহা।।

-ফাহাদ,তুই যদি ওই মেয়েটাকে ডিভোর্স না দিস,তাহলে তুই ওকে নিয়ে অন্যএে চলে যা।।
-বাবা,আবার ডিভোর্স !!?? কিসব বলছো তোমরা এসব!??
-বাবা সং হয়ে দাড়িয়ে অন্যদিক তাকিয়ে আছেন।বাবা খুবই কঠিন মনের মানুষ একবার যে ডিসিশন নেন,তা থেকে আর পিছপা হোননা। কাউকে একবার ঘৃণা করলে,তাকে সহজে গ্রহণ করেননা। এইসব কারণেই আজ পর্যন্ত বাবার সাথে আমার দূরত্ব। এখন এই দূরত্বটা ভাইয়ার সাথেও ঘটছে,আহা সে খুশিতে নাচতে ইচ্ছে হচ্ছে।।
আর আমি যদি এর ফাঁকে একটু মশলা না মিশাই,তাহলেতো আর জমিয়ে উঠবে না
-ভাইয়া?শুধু বাবা না?আমরাও দেখেছি।মাকে জিজ্ঞেস করো??

-আচ্ছা ঠিক আছে।আমি বিলিভ করবো যদি আমায় কোনো প্রমাণ দেখাতে পারিস!
-তুমি প্রমাণ দেখতে চাও??
-হুম!!
-আজ যখন সাথীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম, তখন পথিমধ্যে নিদু আমার হাতে একটা মেমরি কার্ড ধরিয়ে দেয়। জিজ্ঞেস করলে বলে,
আপনারাতো আমায় বিলিভ করেন না,তাই এই ভিডিওতে সব প্রমাণ পাবেন।আশা করি ভুলভ্রান্তি কার সব ক্লিয়ার হবেন!!
সাথী কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। ওর সামনেই আমার হাতে নিদু একটা মেমরি কার্ড দিয়েছিল।তাই নারে সাথী?(চোখ টিপে)

সাথী আমার দিকে তাকিয়ে থতমত খায়।আর ভাইয়ার ক্রুদ্ধতায় আমায় সেইভ করতে হ্যাঁ বলে।।
-তাহলে দেখা??
-ওয়েট,আমি সেটা তখনই বাসায় এসে আমার রুমে রেখে দিই।দাড়াও নিয়ে আসতেছি।।।

আমি রুমে এসে যে জায়গায় মেমরি কার্ডটা রেখেছিলাম সে জায়গাটা টুকতে থাকি।কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না!আচমকা হয়ে অস্থির হয়ে পড়ি!!!
-ব্যাপার কি!!এখান থেকে মেমরি কার্ডটি কোথায় উধাও হলো!?আমিতো এখানেই সুন্দরভাবে রেখে গিয়েছিলাম।
রাগে আলমারির দরজায় জোরে একটা লাথি মারি।।নিচে গিয়ে এখন ভাইয়াকে কি বলবো?ভাইয়া মা,বাবা এবং আমাকে মিথ্যাবাদী ভাববে। হায় আল্লাহ!!!কপালে কিছুক্ষণ হাত গুঁজে রাখি।নিচ থেকে আবার ডাক আসে আমার।।।

হতভম্বতার সহিত নেচে নামতে থাকি।মা,সাথী এবং আন্টি আমায় দেখে খুশির তালে চোখগুলো উনাদের ঝলঝল করে উঠে,এখন যেন কোনো আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করে শান্তি পাবেন।
আমি ব্যর্থমনে নিচে নেমে বলি,
-ভাইয়া,মেমরি টা কোথায় যেন রেখেছি,খেয়াল নেই।ভালোভাবে খুঁজতে হবে।।দুঃখিত ভাইয়া!!

এ বলে নতজানু হয়ে থাকি।।
ভাইয়া দাঁত খিঁচে বলেন,
-সবাই মিথ্যে বলছো তোমরা!!আমার বউকে এই বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার জন্যে তোমরা এমন ফন্দি আঁটছো!!!তোমাদের কারো কথা আমি বিলিভ করি না।জীবনে আমার এই একটাই দুঃখ,এই মাকে মা ডেকেও আজীবন আমায় সৎ ভেবে এসছেন।আগেই জানতাম,পরের ছেলে কখনোই আপন হয় না।।

আমি কথাগুলো শুনে হা হয়ে থাকি।ভাইয়া এসব কি বলছেন।মাকে ইঙ্গিত করে বলি,
-মা,ভাইয়া এসব কি বলছেন??!

বাবা কথা ঘুরানোর চেষ্টায় আমাদের ধমক দিয়ে উঠেন।।এই সবাই যার যার ঘরে যাও।আর কোনো অবজারভেশন শুনতে চাচ্ছি না!!
মা ভয়ে কাঁবু হয়ে আমায় বলেন,
-বাবা যা তোর রুমে চলে যা।।

আমার কেন জানি মন বলছে,সবাই আমার থেকে কিছু একটা লুকচ্ছে। যেটা মা,ভাইয়া,বাবা এবং আন্টি সবাই জানেন!!

চলবে…..

ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০৮

0

ভাবিনি ফিরে আসবে(পর্ব-০৮)
রোকসানা আক্তার

আমি আর একমুহূর্ত দাড়িয়ে না থেকে ঘর থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসি এবং ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি রান করি।কারণ,এখন নিদুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি,শএুর সাথে আজ সন্ধি করে আসবো।

অতঃপর,নিদুদের বাড়িতে চলে আসি।।নিদুদের বাড়ির গেইটের সামনে আসতেই নিদুকে দোলনার উপর বসে একমগ্নে সিগারেট টানতে দেখি। নিদুর একটা চামচা আমাকে দেখামাএই আমার দিকে বন্দুক তাক করে।

আমি তাকে হাত দিয়ে ইশারা করি, কুল কুল!!আমি কোনো খেকো প্রাণী নই,আমি মানুষ।সো,আক্রমণ হওয়ার কোনো আকাঙ্খা নেই।
নিদু আমাকে দেখে ফেলে এবং ভ্রু কুঁচকে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে কী চাই।আমিও ইঙ্গিত দিয়ে বলি উঠি,
-জ্বী,আপনাকে চাচ্ছি।

নিদু পাহারাদারকে নির্দেশ করে বন্দুক সরাতে এবং আমায় ভেতরে ঢুকতে দিতে।সড়াৎ সড়াৎ পাহারাদার তা-ই করে এবং আমি ঢুকে পড়ি তড়িঘড়ি।
নিদুর কাছে গিয়ে কোনো সম্বোধন ছাড়াই বলি,
-আপনি সাথীকে চাচ্ছেন,রাইট??

নিদু আমার কথায় ভ্রু কপালে উঁচিয়ে হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দেয়।আমার দিকে আর একবার ভালোভাবে তাকিয়ে নেয় এবং বলে,
-তোমাকে আমার চেনা চেনা লাগছে!!
-জ্বী,আমি আসলাম চৌধুরীর ছেলে শাওন চৌধুরী।আর সাথী আমার কাজিন।
-প্রথমেই গেইজ করেছিলাম।যাইহোক,কেন আসলে ওটা বলো?
-সাথীকে আমি আপনার হাতে তুলে দিতে!

নিদু আমার কথায় খুশিতে ধুকধুকি বাঁজাতে থাকে।আর বলে,
-সত্যি??কিন্তু, এখানে আপনার কি স্বার্থ?আমিতো জানি সাথী তার শাওন ভাইকে ভালোবাসে।আর সেই শাওন ইতো আপনি,না?

-ইউ আর রাইট, আপনার বুদ্ধি আছে বটে।তবে,
আমার কোনো স্বার্থ নেই!!কারণ,আমার প্রেমিকা আছে,ইভেন বিয়েও করে ফেলেছি আমরা।যদিও বাসায় তা জানে না।এই প্রথম আপনি জানলেন।সাথী ছোট,কিছু বুঝে না।তাই অবুঝের মতো উল্টাপাল্টা বকে!!আমি শুনেছি আপনি সাথীকে অবিরল ভালোবাসেন এন্ড ইউ ওয়ান্ট টু ম্যারি হিম।এইক্ষেত্রে আমি আপনাকে হ্যাল্প করবো।

-কেমন হ্যাল্প?
-আপনি যদি জোর জবরদস্তি করেন,তাহলে কখনো সাথীর ভালোবাসা পাবেন না।একটু চালাকচতুর হতে হবে সাথীকে নিজের করে নিতে।আর ওটার নিরামিষ আমি আপনায় দিব,তবে একটা শর্তে!!
-কিসের শর্ত!!

আমি মোবাইলের গ্যালারী ওপেন করে নিদুর চোখের সামনে একটা পিকচার দেখাই।
-এটা কার ছবি??
-একটা মেয়ের!ওর নাম শিপ্রা!!
-উনার পিকচার দিয়ে আমি কি করবো!?
-সাথীকে যদি পেতে চাও তাহলে উনাকে আপনার শিকার বানাতে হবে।
-মানে??আমিতো কিছুই বুঝতেছি না।
-আরেহ বাবা,আপনি ড্রামা জানো??
-হু,জানি।একদম ফকফকা।
-এই তো আপনাকে দিয়ে হবে।
তারপর,আমি ফিসফিস করে নিদুকে সবটা বুঝিয়ে দিই।নিদু সবটা বুঝে নেয়।
-ওকে আমি রাজি।তবে,আমি কোনো টাকা চাই না,আমার অনলি সাথীকেই দরকার।

নিদু আমার কথায় রাজি হওয়ার কারণ সে জানে সাথী আমার প্রতি দুর্বল।তাই আমি যা বলবো সাথী তাই মেনে নিবে।।

-সেটা তুমি পাবে।চিন্তা করো না!!
-কাজটা কবে সারবো??
-আজ রাতের মধ্যেই।ভাইয়া আজ ব্যবসার কাজে দূরে আছেন।
-ওকে।
-আর হ্যা,ভিডিওটি ঠিকঠাক আমার হাতে দিয়ে দিবেন।আমি বাহিরে গিয়েই আপনার থেকে নিয়ে নিব।
-ওকে,ডান!আপনি টেনশন নিবেন না।ভাবুন কাজ হয়ে গেছে।
-জ্বী,সে আশা-ই আছি।
-আচ্ছা,আমাদের সাথে এত্ত মধুর কথোপকথন তো হলোই,এখন একগ্লাস গরম চা খেয়ে যাও।
-ওকে খাবো।।

হাসিমুখে নিদুর চায়ের অফার গ্রহণ করি।বুয়া এসে আমাদের দু’কাপ মালাই করা চা দিয়ে যায়।তৃপ্তীর সাথে খেয়ে নিদুকে বিধায় জানাই।আজ আমার বড্ড খুশি লাগছে।।এখন বড্ড খুশিটার পরিণতিটা অপেক্ষা।।।

রাত ১ টা বাঁজে।সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।আমি সদর দরজার সামনে পায়চারী করছি।নিদুর এখনো আসার নামগন্ধ দেখতে পাচ্ছি না।এই লোকটা আমায় মিথ্যে বললো নাতো?সন্দেহ হচ্ছে ভীষণ।এসব ভাবনার মধ্যেই আমার সামনে নিদু এসে হাজির।
আমি নিদুর কাঁধে হাত বুলিয়ে বলে উঠি,
-সাবাস!!
-এবার এত্ত কথা না বাড়িয়ে রুম দেখিয়ে দেন।

আমি নিদুকে নিয়ে টিপটিপ পা পেলে ভাইয়ার বউয়ের রুমের সামনে আসি।আর নিদুকে পর্দার পেছনটায় লুকিয়ে রাখি।।

আমি ড্রয়িং রুমের দিকে তাড়াতাড়ি ছুটে এসে জোরে আওয়াজ করে উঠি।
-কাজের বুয়া কেউ কি নেই?আমায় এককাপ দুধ চা করে দিতে?সবাই কি ঘুমচ্ছে নাকি??

কাজের বুয়া কেউই কোনো সাড়াশব্দ করল না।হয়তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।কিছুক্ষণ পর,
-কি চা খাবে?রং চা নাকি দুধ চা?

উনার দিকে তাকাতে আমার চোখগুলো ঝিকমিক করে উঠে।ইয়াপ,এতক্ষণ তো এই অপেক্ষাই করেছিলাম!ডাইনী,তুই কখন দরজা খুলে রুম থেকে বের হইবি এবং নিদু ওই সুযোগে তোর রুমে প্রবেশ করবে!

-ইয়ে মানে, আমার জন্যে দুধ চা করে আনেন।
-ওকে!!তবে একটা নয়,দু’টো।আমিও আজ আমার প্রাণের দেওরার সাথে চা পান করবো।

-ওকে!!!

উনি চলে যায় কিচেন রুমে চা বানাতে।আমি সোফায় এসে বসে পড়ি!!
ইতোমধ্যে চা নিয়ে উনি হাজির হয়।
আমার দিকে এককাপ এগিয়ে দেয় এবং নিজে এককাপ নিয়ে বসে পড়ে।

আমি কাপে মুখ লাগিয়ে এক চুমুক দিতেই কেশে উঠি।
-কাশছো কেন, শাওন??
-মানে আমার চায়ে চিনি কম হয়েছে।বোধহয়,আর কিছু পরিমাণ চিনি এড করতে হবে চায়ে
-ওকে,তুমি বস।আমি কিচেন থেকে চিনি নিয়ে আসতেছি।

এ বলে উনি উনার চায়ের কাপ টি-টেবিল এর উপর রেখে চলে যান।এই সুযোগে উনার চায়ে ঘুমের ঔষুধ মিক্স করে দিই।
বড্ড আনন্দ আনন্দ লাগছে আমার।
-এই নাও,তোমার চিনি।

তারপর আমার চা খাওয়াটা শেষ হয়। আর শতানী দৃষ্টি দিয়ে উনার দিকে তাকাই।উনার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে।এখনই যেন ঢলে পড়ে ঘুমে।

-আরেহ,আপনি এখানে ঘুমচ্ছেন কেন!?আপনি আপনার বেডে যান!!
-ওকে।গু-গুত নাইট।

উনি হেলেদুলে উনার রুমে চলে যান এবং দরজা বন্ধ করে দেন।

সকাল ১০ টা বেঁজে যায়।উনার ঘুম থেকে উঠার কোনো নামগন্ধ নেই।মা কিছুক্ষণ পর পর উনাকে শিপ্রা শিপ্রা বলে ডেকে যাচ্ছেন।
পরে তটস্থ হয়ে দরজায় নক করেন!!তারপর ও উনি দরজা খুলছেন না।মা আমাকে এবং বাবাকে ডাক দেন।।
আমি,বাবা দৌড়ে দরজার সামনে আসি।মা বাবাকে বলে উঠেন,
-শিপ্রা যে দরজা খুলছে না।মানে তো কিছুই বুঝছি না।
-কোনো অঘটন ঘটে গেল নাতো?শাওন তাড়াতাড়ি দরজা ভাঙ্গ!!

আমি বাবার সম্মতি পেয়ে দরজা ভাঙ্গতে থাকি।ঠাস ঠাস করে দরজা খুলে যায়।আর দরজা খুলে যাওয়ার ওর যে দৃশ্য দেখলাম,সত্যি ওসব দেখার জন্যে মা-বাবা কেউই রাজি ছিলেন না।
শিপ্রা পর পুরুষের বুকের উপর মাথা রেখে নির্বিঘ্নে ঘুমচ্ছে !!!
বাবার মাথা ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস !! বাবা জোরে চিৎকার দিয়ে উঠেন,
-শিপ্রা?!!!

তড়িঘড়ি উনি বিছানার উপর বসে পড়ে গায়ে পাতলা চাদর এঁটে নেন!!
আর নিদুকে বাবা দৌড়ে ধরতে যান।
-বদমাশ,তুই আমার ঘরে এসে আমার বউমার উপর আক্রমণ !???
-বিশ্বাস করুন, চাচা?আমার কোনো দোষ নেই।উনি আমাকে কাল রাত আসতে বলেন।উনার স্বামী নাকি বাসায় নেই,তাই।
-কি!!!??
-জ্বী,চাচা!সত্যি!

আমি আবার এসবের মাঝে একটু মধু মাখি।
-জানো,বাবা?ভাইয়ার বিয়ের রাতেও উনি আমার সাথে এমনটি করতে চেয়েছেন,তারপর তোমরা খামোখা না বুঝে আমাকেই উল্টো দোষী ভেবেছ!

-আমি বললাম না?আমার শাওন খারাপ না?এই তোমার উগ্রতার কারণে আমার সৎ ছেলেটিকে দোষী করলে!ওইটা একটা বজ্জাত মেয়ে!ফাহাদ বজ্জাত একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে এ বাড়ি!এরে তাড়াতাড়ি এ বাড়ি থেকে বিতাড়িত করো!!নাহলে,আমার মুখে ধুলো দিবে!!

ভাইয়ার বউ কিছু বলতে যাবে। বাবা উনাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বলে,
-তুমি এখনই এই বাড়ি থেকে চলে যাও!!যেদিন ফাহাদ আসবে,ওদিন তোমায় আমরা ভালোভাবে বুঝে এ বাড়ি আনবো,এর আগে নয়য়!!গেট আউট ফ্রম হেয়ার।

-ব-ব্বা?প্লিজজ….এসব নিশ্চয়ই কেউ ষড়যন্ত্র করেছে আমার উপর!!

-আপনার রুম লক করা ছিল ভেতর থেকে।আর আপনার রুম আপনি ছাড়া লক করবে কে!!কোনো আত্মা নাকি প্রেতাত্মা !!? বাবা শুনুন উনার কথা!??(আমি)

-এ-এসব কেমন কথা!!??(শিপ্রা)
-এই স্টপ!!!!আর কোনো কথা শুনছি না।তুমি তাড়াতাড়ি চলে যাও আমার বাড়ি থেকে!!(বাবা)

বাবার সাথে তাল মেলাতে আমারও বেশ ভালো লাগছে!!আর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,বাবা প্লিজজ একেবারে ধুঁয়ে দাও এসব বজ্জাতকে!!আমার এতদিন শুকিয়ে যাওয়া হৃদয়টাতে আজ পানি আসলো!!

তারপর আর-কি!!বিড়ালকেও পরিস্থিতিতে পড়লে লেজ গুটাতে হয়।
পরে বাবার কটু দৃষ্টির দিকে তাকাতে আর না পেরে একমতে বাধ্য হয়ে বাসাতে বেরিয়ে যায়।যাওয়ার সময় বলে,
-আমি দেখে নিব পরে!!!ভালো থাকবেন বাবা+মা।আসি!!!
যাওয়ার সময় আমার দিকে একনজর তাকালো।আমার প্রচন্ড হাসি পেয়েছে।

অতঃপর,ডাইনী একটা বাড়ি থেকে বিদেয় হলো।।আর,আমি বাবাকে সংযত রেখে নিদুকে বিদেয় করি।।

আমি তাড়াতাড়ি আমার রুমে এসে বেলকনি বেয়ে লাফ দিয়ে নিচে নামি।আর নিদুর কাছে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে চলে আসি।
-এবার কালরাতের ভিডিওটি দাও।
-আগে ভালোভাবে দেখে নিন,সম্পূর্ণ ভিডিও ওকে কিনা??
আমি নিদুর থেকে ফোনটা নিয়ে ভিডিওটি চেক করি।সবকিছু ওকে পেয়ে মেমোরি কার্ডটা হাতে নিয়ে ওকে ফোনটা দিয়ে দিই।আর বলি,
-তাড়াতাড়ি বিদেয় হোন।আপনাকে কেউ আমার সাথে দেখলে বিপদ হবে।
-হুম।এবার সাথীকে কবে আমার হাতে তুলে দিবেন??
-আরেহ বাবা!!আমি বলবো,একটু সময় তো দাও?পরিস্থিতিটা ঠান্ডা হোক।গরম গরম সব করতে গেলে সবকিছু হারাতে হবে।কি থেকে কি করবে সবকিছুর নির্দেশনা আমি দিব।এখন শুধু আমার উপর বিশ্বাস রেখে একটু অপেক্ষা করেন!

-ওকে,তাহলে গেলাম।
নিদু যাওয়ার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। বুকে কয়েকটা ফুঁ দিয়ে নিই।।

পেছন দিকটায় ঝুলে ঝুলে উঠে বাসার মধ্যে প্রবেশ করি।।।
এসব কথা কাউকে বলবো না এখন এবং শিমলাকেও না।নাহলে,দেওয়ালেরও কান আছে।পরে হিতে বিপরীত হবে।।তবে,মনে মনে একটু ভয়ও কাজ করছে!!

-ঔ মহিলা যদি আমার ভিডিওটি ভাইয়াকে দেখায় এবং নিদু যদি সবটা বলে দেয়!!!তখন???

মাথায় নানান চিন্তা আবার আসতে থাকে। মুহূর্তে সবকিছু মাথা থেকে ঝেরে ফেলে মনকে শক্ত করে নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা জুগাতে থাকি।
-নাহ!!আমাকে ভয় পেলে আর হবে না!!একবার ভয় পেয়ে সব হারিয়েছি।এখন ভয়কে জয় করতে হবে।

আমি সাথীর মাকে কল করি।সাথীকে তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে।
উনি যদিও প্রথমে নিয়ে আসতে অসম্মতি জানালেন,তারপর রাজি হলেন।

আমি তড়িৎ বেগে নিচে চলে আসি।দেখি বাবা প্রচন্ড রাগ এবং ঘৃণা নিয়ে সোফার উপর বসে আছেন এবং কিছুক্ষণ পর পর দাঁত খিঁচেন।

আমি হালকা কেশে বলি,
-বাবা,বসব?
-হু,বস!!
-বাবা কিছু কথা বলতে আসছি।
-বল!!.
মাও আমাদের পাশে ছিলেন।
-বাবা,আমি আসলে চাচ্ছি আজতো স্বচক্ষে দেখলেন নিদু কেমন প্রকৃতির লোক।এমন একটা ছেলের হাতে সাথীকে তুলে দেওয়া আদৌ কি ঠিক!আমরা চোখে দেখে,কানে শুনে কেন ছোট অবুঝ একটা মেয়েকে নরকে ঠেলে দিব,বল বাবা?
সে কি আমাদের আত্মীয় না?তার সাথে আমাদের কি রক্তের সম্পর্ক নেই,বলো??

বাবা আমার কথায় কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকেন।তারপর,বলেন,
-আমি দেখবো সে বিষয়টি! দেখি কি করা যায়!!আর ওই নিদুর যত টাকা চাই,আমি দিব এবং ওর মতো কুলাঙ্গারকে জেলের ভাত খাওয়াবো!!

-টাকাটা কিসের জন্যে দিবে, বাবা?
-জেনেও না জানার ভান করছিস কেন!?(বাবা)
আমি বুঝলাম বাবা সাথীর বাবার পাওনা টাকা শোধ দেওয়ার কথা বলছেন।খুশিতে আমার মনটা নেচে ওঠে।আমিতো এতদিন এরকমই চেয়েছিলাম।আল্লাহ,তোমার কাছে হাজারো শুকরিয়া,বাবা অতঃপর বুঝতে পারলো।

বাবা এ স্থান থেকে নিজের শয়ন রুমে চলে যান।আমি খুশির তালে লাফিয়ে উঠে মাকে জড়িয়ে আদর করতে থাকি।
-উম্মা,মা আমার!!তোমার মতো এমন সাপোর্টার একজন মা পেয়েছি আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে লাকী!!

এরই মধ্যে সাথী স্যুটকেস নিয়ে হাজির।আর ভাইয়া ভাইয়া বলে আমার কাছে আসে।সাথীর মা ও এসেছেন।উনি আমার সাথে সখ্য মিলে অন্যএে চলে যান।সাথী বলে উঠে,
-ভাইয়া?আমরা আজ বিকেলে ঘুরতে বের হবো,যাবা?
-কই যাবি??
-তুমি যেখানে নাও।
-পার্কে যেতে পারি।শিমলাকে জল দিব?
-ভাইয়া শিমলা আপু মে বি আসতে পারবেন না।উনার চাকরির ডকুমেন্টস জমা দিতে অফিসে গিয়েছেন।

-ওহ আচ্ছা।আচ্ছা চল এখন বাহিরে যাই আমরা।বাহিরে নিয়ে তোকে এখন ইচ্ছেমতো কোণ আইসক্রিম খাওয়াবো।

-সকাল থেকে কিছুই খাইনি।খালি পেটটা এখনো খা খা করছে।কিছু খেয়ে পেটপুরে নিই,তারপর কোণ আইসক্রিম ।

-আরেহ বোকা,বাহিরেও নাস্তা করা যাবে,চল?

মা এবং আন্টি এসে বলেন,
-আগে নাস্তাটা সেরে নে শাওন?পরে বের হইস।সময় অনেক পাবি!!
সাথীও মায়ের কথায় সম্মতি জানায়।কিন্তু আমার যে তর সইছে না,কাল সাথীকে কোণ আইসক্রিম খাওয়ানোটা অপূর্ণ থেকে গেল।

চলবে…..

ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০৭

0

ভাবিনি ফিরে আসবে(পর্ব-০৭)
রোকসানা আক্তার

শিমলার কথায় জিনুকের কলটি রিসিভ করি।শিমলা পাশ থেকে বলে,
-শাওন,লাউড দে?লাউড দে?শুনি কি বলে জিনুক।
তারপর লাউড অপশন অন করি


-হ্যালো,জিনুক?
-হ্যালো আসসালামু -আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন??
-এই তো ভালো।তুমি কেমন আছো?

-জ্বী ভাইয়া,আলহামদুলিল্লাহ। ভাইয়া একটা কথা বলার জন্যে কল দিয়েছি।
-আচ্ছা,কি বলবে বলো?
-ভাইয়া সোহানার বিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে হবে।ওর হবু বরের কানাডায় যাওয়ার খুব তাড়া,তাই বিয়ের কাজটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলবে।

-ওহ!!

-ভাইয়া আপনি মে বি হ্যাপী সোহানার বিয়েতে??
-এখানে দুঃখী হওয়ার কি আছে,বলো??

-ভাইয়া,আমি জানি, আপনি কথাগুলো খুব কষ্টের মাঝে বলতেছেন।তবে একটা কথা–যে বুঝতে চায়না, তাকে কখনো বুঝানো যায় না।ওকে কালও আস্ক করেছিলাম ও আপনার লাইফে ফিরবে কি না?য়ু-হু,ও ওর সিদ্ধান্তেই অটল।ও ওর হবু বরকেই বিয়ে করবে!!আর লাইফ কারো জন্যে থেমে থাকে না।মন খারাপ করবেন না।আজকে যার জন্যে কাঁদছেন,ক’দিন পর ওকে হারিয়ে হাসবেন। কারণ,বিধাতা আপনার লাইফে এরথেকেও ভালো কিছু রেখেছেন হয়তো।

পাশ থেকে শিমলাও জিনুকের কথায় সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।আর মনে মনে বলে,
-রাইট বলছো জিনুক,একদম রাইট।আমি এ ত্যাড়াকে বুঝাতে পারছি না,তুমি একটু বুঝাও এই গাদাটাকে!!

-আচ্ছা বুঝলাম। আর কিছু বলবে জিনুক?
-নাহ,ভাইয়া।ভালো থাকবেন রাখি।আবার কথা হবে,বায়য়।
-বায়য়, জিনুক।

কলটা কাটার পরই শিমলার বকবকানি স্টার্ট!!
-দেখছিস?জিনুকের সাথে আমিও একমত!তুই-ই শালা শুধু দ্বিমত!আমিতো দোয়া করি সোহানার বিয়েটা ভালোয় ভালোয় শেষ হোক,তারপর তোর বিয়েটা সাথীর সাথে!!

ওর কথা শুনে আমার বড্ড হাসি পায়।
-এই তুই গর্দভের মতো হাসছিস কেনরে?
-তোর কথাশুনে হাসি আসে,তাই হাসলাম।
-আমি কি মন্দ কিছু বলছি নাকি?দেখ,আবার হাসে!!
-আচ্ছা শোন,এতদিন বলতাম সাথী একটা অবুঝ মেয়ে।আর এখনতো দেখি তুইও!তোকে ক্লাস ওয়ান-টু তে ভর্তি করিয়ে দেওয়া উচিত যাতে গোড়া থেকে প্রাইমারী জ্ঞান মাথায় ঢুকাতে পারিস।সাথী বাচ্চা একটা মেয়ে,ওর সাথে বার বার কেন আমার বিয়ের কথা বলিস!ওর কি এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে?

-আরতো দেড়/২ বছর।পরেতো ১৮+ এ পা দিবে।সময় কখন উড়ে যাবে নিজেই হদিস করতে পারবি না। আমি আন্টির সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে যাচ্ছি।তুই থাক এখানে।
এ বলে শিমলা তরহর উঠে দাড়ায়!!আর পাগলের মতো বাড়ির দিকে ছুটে চলে।
-আরে দাড়া, দাড়া।পাগল একটা।মাথায় কখন কি আসে কি বলে ও নিজেই জানে না।

শিমলা আমার কথা অগ্রাহ্য করে ও ওর মতোই চলে গেল।মনটা কেন জানি আমার ভীষণ খারাপ!!মানুষ যখন ভীষণ আঘাত পায়,তখন চুপসে যায়।এখন আমার অবস্থাটাও তাই।মনকে কোনোমতে সায় দিতে না পেরে দোলনা থেকে উঠে দাড়ায়।বাড়ির চারপাশটা কিছুটা হেঁটে পুকুর পাড়ে গিয়ে একমগ্নে দাড়িয়ে থাকি।হঠাৎ করে পেছন থেকে কে যেন জড়োসড়ো একটা ধাক্কা লাগিয়ে দেয়।আমি কূল খুঁজে না পেয়ে পানির মধ্যে পড়ে যাই।আর ঘুরে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি সাথী খিলখিল করে হাঁসছে।আমার বুঝতে আর সময় লাগলো না যে এ কাজটি কে করেছে!

মুখটা কোনোরকমে দাঁড় করে নিই সাথীকে আচ্ছামত বকার জন্যে।যেই মুখতুলে কিছু বলতে যাবো,ওমনি সাথী ঝাঁপিয়ে আমার দিকে লাফ মারে।আমি তা দেখে ভয়ে কাবু। এ মেয়ের তো সাহস বেশ!!

আমায় বেখালি মনে ভেঁজাতে থাকে সাথী।আমি ছাড় দি নি,আমিও সাথীকে ভিজিয়ে দিই।এভাবে ভেজাভেজির খেলা অনেকক্ষণ চলে।একটা মুহূর্ত এসে সাথী ক্লান্ত হয়ে যায়।এই মুহূর্তে সাথীকে কেন জানি আমার ভীষণ ভালো লেগে যায়।ভেঁজা চুল,ক্লান্ত হাসি এবং ওর শরীরের প্রতিটি ভাঁজের অংশ আমার নজর কাড়ে।জামা ভেজা থাকার কারনে শরীরের সর্বাঙ্গ দেখা যাচ্ছে,তার উপর পাতলা জামা পরিহিত। আসলে,ওকে এখন একটা যুবতী মেয়ের মতো দেখা যাচ্ছে।

আমি যে ওরদিকে অন্যদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছি, ওর ওসব দিকে একদম খেয়াল নেই।ও শুধু ওর মতে হেসেই যাচ্ছে,বেশ মানায় সাথী খিলখিলিয়ে হাসলে।

এভাবে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসে। ও এরইমধ্যে চোখে এককোষ পানি ছিটে আমাকে ধ্যানের ঘর থেকে বাহিরে নিয়ে আসে।আমার নিজেরই খেয়াল ছিল না, আমি যে এতক্ষণ নেশার ঘোরে ছিলাম।।নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত রেখে বলি,
-সাথী?জ্বর আসবে তোর।ঘরে যা তাড়াতাড়ি।ভেজা জামাকাপড় চ্যান্জ করে নে।
-আচ্ছা ভাইয়া।

এ বলে সাথী চলে যায়।আমি আস্তে আস্তে পা ফেলে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকি এবং রুমে আসি।বাথরুম থেকে জামাকাপড় চ্যান্জ করে কোমরে একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে নিই। হঠাৎ করে সাথী আমার রুমে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।মুখে অনেকটা রাগান্বিত ভাব এনে বলি,
-এসব কেমন অসভ্যতা, সাথী?
-ভাইয়া,তুমি আমার সাথে কেন এরকম করো,বলোতো?আমি যে তোমায় কত্ত ভালোবাসি,সত্যি বলে বুঝাতে পারবো না।
-তোর এসব পাগলামো,সাথী।এসব এ বয়সে হয়, বোন।আর এমতাবস্থায় কেউ তোকে আমার রুমে দেখলে খারাপ ভাববে।
-ভাবলে ভাবুক গা,আমি তা পরোয়া করি না।আমি শুধু তোমাকে ভাবি, ভাইয়া।।
-সাথী ছাড়,বলছি!!?
-ছাড়বো না!
-সাথী?!!
এ বলে জোরে চিল্লিয়ে উঠি।আর তরতরিয়ে আমার কোমর থেকে হাতগুলে সরে যায়।আমি বুঝতে পারি,সাথী রাগ করে আমার রুম থেকে চলে গিয়েছে।

ওদিকে আর ভ্রুক্ষেপ না করে জামাকাপড় চ্যান্জ করে ফেলি।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের ফোল্ড ঠিক করতে করতে মাকে আমার রুমে প্রবেশ করতে দেখি।। মায়ের মুখে অনেকটা উৎসুক ভাব,হয়তো কিছু বলবেন।
-মা কিছু বলবে?(আয়নার সামনে দাড়িয়েই বলি)
-হু,বাবা।তোর সাথে কিছু কথা আছে।
-কি বলবে,বলো?
-ব-বাবা,আমাদের সাথীর ব্যাপারে বলতে চাচ্ছি।

আমি অনেকটা অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে ঘুরে তাকাই। ভ্রু কুঁচকে বলি,
-সাথীর ব্যাপার মানে, আমার বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছো?
-হু, বাবা।

আমার মুখে অনেকটা অর্থহীন হাসি চলে আসে।
-মা তুমিও শিমলার সাথে….
-নারে,বাবা। সাথী দেখতে ওতোটা খারাপ নয়।আর ও আমাদের আত্মীয়। সাথী তোকে যতটা বুঝবে,অন্যকেউ ততটা বুঝবে নারে।

-মা,আমিতো তা জানি!আর ওর এখনো বয়স হয়নি।তাছাড়া,আমিও এখন পাএ হিসেবে প্রস্তুত না!

আমার একথায় মায়ের মুখটা মলীন হয়ে যায়।
মলীনতা সুরে বলেন,
-তুই কি এই সংসারে আমার খারাপ চাচ্ছিস?বিয়ে-সাধি আল্লাহর উপর।মানুষ সমস্যায় পড়লে,পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিতে হয়।সংসারের যে অবস্থা কখন কার উপর আক্রমণ হয়ে বসে বলা যায় না।তুই আমাকে একা রেখে ঢাকা চলে যাবি,কেউ দেখার মতো আমায় এ বাসায় নেই।বড় ছেলে থেকেও যেন হারিয়ে গেছে। আর বউমার কথা কি বলবো।

-মা আমার-না জানো?মাঝে মাঝ মনে হয় ফাহাদ ভাই আমার আপন ভাই না।কারন,কোনো রক্তের সম্পর্কের ভাই ভাইয়ের সাথে এরকমটি বিহেভ করতে পারে না!!

মা আমার কথা এড়িয়ে বলেন,
-এসব বাদ দে।এখন নিজের কথা ভাব।।সাথীকে যদি এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আসিস,ও আমাকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা,আদর,মায়া করবে।আমি ওকে পেলে পর মেয়ের কথা ভুলে যাবো,কারণ তখন আমি ভাববো আমারও একটা মেয়ে আছে।

আমি বুঝতে পারি মায়ের মনের আক্ষেপ!!তারপরও সম্ভব না আমার পক্ষে!!কি করবো,কাকে বুঝাবো মাথাটা যেন এখন গোবরে ভরা।

-মা,তুমি এখন যাও।তোমার সাথে আমি পরে কথা বলছি এ ব্যাপারে।মা চলে যাওয়ার পর আমি অনেকক্ষণ যাবৎ বিছানার উপর বসে থাকি।।

শিমলা একটা মেসেজ দেয় আমার ফোনে।
-তাড়াতাড়ি আমাদের রুমে আয় তো একটু??
আমি হতবাক!পাশের রুম থেকে আমায় মেসেজ করার কি এমন প্রয়োজন পড়লো!?একটা ডাক দিলেইতো হতো।

তারপর শিমলাদের রুমে যাই,দরজার সামনে দাড়িয়ে ওদের নাটক দেখতে থাকি।
সাথী তড়িঘড়ি জামাকাপড় গোছগাছ করছে আর ব্যাগে ঢুকচ্ছে।। মুখটায় গোমড়া ভাব দেখা যাচ্ছে।শিমলা বুঝাতে চাচ্ছে,কিছুতেই কর্ণপাত করছে না।এই পিচ্চি মেয়ের রাগ আমি আজ স্বচক্ষে প্রথম দেখলাম।তেলে-বেগুনে আগুন যেন এখনই আমাদের বাঘের মতো গিলে ফেলে।আমি শিমলাকে চোখ ইশারা করে চলে যেতে বলি।শিমলা রুম ত্যাগ করে।আমি রুমে ঢুকে দরজা হালকা ঠেলে দিয়ে সাথীর পাশে গিয়ে বসি।
-সাথী, সোনা,চলে যাবে??

আমার কথার উওর না দিয়ে নিজমগ্নে গোছগাছ করেই যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জামাকাপড় সব ব্যাগে তোলা শেষ।বিছানা থেকে দাড়িয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে অভিমুখে দরজার দিকে রওনা করতেই আমি হাতটা ধরে ফেলি।
-হাত ছাড়ো,আমার!কোন অধিকারে আমার হাত ধরেছ?

-তুই আমায় আগে এটা বল তুই চলে যাচ্ছিস কেন!কেউ কি তোকে তাড়িয়ে দিচ্ছো?

-বাড়ি যাওয়ার মানে জেনেও কথা ঘুরানোর চেষ্টা করো কেন, ভাইয়া!!
-আচ্ছা,আই এম স্যরি!আমি তোর সাথে খারাপ বিহেভ করে ফেলেছি!!


এখনো গোমড়ামুখ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি?কথা বলবি না ভাইয়ার সাথে??
ওর থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে আমি আলতোভাবে ওর কোমরে স্পর্শ করি।আর কোমরে হাত রেখে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিই,
-এই মেয়ে,এত অভিমান করলে হবে??ভাইয়ার তখন মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল,তাই এমনটি করেছি।বললাম তো স্যরি!এখনো কি মাফ করবি না?

-ভাইয়া,তুমি সত্যিই কি আমায় ভালোবাসো না?

আমার ওর কথায় বিরক্তিভাব চলে আসে মনে।মেয়েটাকে যে কিভাবে বুঝাবো নিজেই জানি না

-আচ্ছা, শোন?তুই আমার ছোটবোন না?তোকে অবশ্যই ভালোবাসি।
-লাগবে না তোমার এমন ভালোবাসা!গেলাম!
আবার দরজার দিকে পা দিতেই আমি সাথীকে কোলে তুলে নিই।এবার কোলে তুলে কপালে চুমু লাগাতে থাকি।সাথী মেয়েটা ছোট বাচ্চা হলে কি হবে যেন ডানাকাটা পরী!
-লাগবে না তোমার আদর!আমি এ আদর চাই না!!

আচ্ছা শোন,তোর জন্যে কোণ আইসক্রিম আনতেছি।খাবি??
-সত্যি ভাইয়া!!?কোণ আইসক্রিম খাওয়াবা?
-হু।
আচ্ছা,তাড়াতাড়ি আমার জন্যে, শিমলা আপু জন্য দু’টো কোণ আইসক্রিম নিয়ে আসবা!

-ওকে,ছুটকী।

এ বলে ওকে কোল থেকে নামিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে আসি।
কোণ আইসক্রিম নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।চটি চটি পা পেলে গেস্ট রুমের দিকে আসতেই সোফায় বসা দেখতে পাই মাকে,বাবাকে,ভাইয়ার বউকে, শিমলার মা-বাবা এবং সাথীর মাকে! হঠাৎ করে আমাদের বাড়ি উনাদের আগমন-এর মানে বুঝলাম না।

আর হ্যাঁ,সাথীর অবশ্য বাবা নেই।সাথী ছোট থাকতে আঙ্কেল কার এক্সিডেন্টে মারা যান।সে থেকে সাথী একা হয়ে যায়।ভেতরে থাকলে তার মা,আর বাহিরে থাকলে আমরা এবং শিমলাদের ফ্যামিলি।

মা আমায় দেখে বলেন,
-ওই যে শাওন এসে পড়েছে।বাবা,এদিকে আয়।

আমি উনাদের সামনে গিয়ে সবাইকে সালাম করি।উনারা আমার সালামের জবাব নেন।সত্য কথা বলতে,আমি আসলে বড়দের সাথে কথা খুবই কম বলি।মার্জিত আচরণ যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই করি।এজন্য, আজ পর্যন্ত বড়দের সাথে আমার সখ্য মিলেনি।জানি না,কাকা-কাকির সাথে কিভাবে অনেকটা মিশুক হলাম।আমি অনেকটা ইতস্তত হয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বলি,
-মা,আইসক্রিম গুলো শিমলা এবং সাথীর হাতে দিয়ে আসছি,নাহলে গলে যাবে।
-আচ্ছা,যা বাবা।

আমি শিমলাদের রুমের দরজায় নক করি।
-শিমলা?আইসক্রিম গুলো নে।
শিমলা আইসক্রীম গুলো হাত থেকে নেয় এবং আমায় বলে উঠে,
-আমরা এখন চলে যাবো,শাওন।সবকিছু গোছগাছ করে ফেলেছি।
-হঠাৎ চলে যাবি মানে?!!
-সাথীর জন্যে।
-সাথীর আবার কি হয়েছে?
-সাথীকে এতদিন বিয়ে করার কথা তোকে কেন বলছি, জানিস?কারণ,সাথীকে এক ভক্ষণ থেকে বাঁচানোর জন্যে।কিন্তু তুই বার বার ওর বিয়ের বয়স হয়নি বলে পিছিয়ে গিয়েছিস।আর-কি,ও এখন অন্যের হয়ে যাবে তুইও হাফ ছেড়ে বাঁচবি।
-কি বলছিস,তুই এসব!?আমিতো কিছুই বুঝছি না!!
-এখন এসব বলার সময় নেই।সবাই নিচে অপেক্ষা করছে,বাসায় যেতে হবে।

শিমলা আমার কাছ থেকে চলে যায়।আমি রুমের দিকে একটা নজর দিই,সাথীকে কোথাও দেখতে পাইনা।হয়তো বেলকনিতে হবে।
বেলকনির দিকে হেঁটে গিয়ে দেখি সাথীর চোখদুটো পানিতে ঝলসানো,আর বার বার ফুঁপিয়ে যাচ্ছে সাথী

পাশে একটা চেয়ার টেনে বসি।আর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলি,
-সাথী,কি হয়েছে ভাইয়াকে সব খুলে বল?
-ভাইয়া,আমি কি অন্যের হয়ে যাচ্ছি?তোমার বউ হওয়ার ভাগ্য আমার কপালেকি নেই, ভাইয়া?নাকি বাবা নেই বলে!

সাথীর কথায় আমার শরীরের লোমগুলো খাড়া হয়ে যায়।
-এসব কি বলছিস,সাথী?!
-নিদু ভাইয়া কেমন তুমিতো ভালো করেই জানো!
-নিদু আবারো তালবাহানা শুরু করেছে,সাথী??

সাথী আমার কথার ভ্রুক্ষেপ না করে বেলকনি ত্যাগ করে।
নিদু হলো এলাকার গুন্ডা-মাস্তানদের মধ্যে একজন।নিদুর বাবা আহনাস খিদ্দেরী অসহায় মানুষদের ঠকিয়ে দ্বিগুণ হারে চড়া সুদ হাতিয়ে নেয় এবং কারো দেনা পরিশোধ করতে দেরী হলে ছেলেকে দিয়ে উনাদের বস্ত-ভিটা বিক্রি করিয়ে দেন।
সাথীর বাবা মারা যাওয়ার আগে আহনাস খিদ্দেরী থেকে বাড়ি বন্ধক দিয়ে যান।আর বাড়ি বন্ধক দেওয়ার একটাই কারণ ছিল, তা হলো সাথীর বাবার চিকিৎসার খরচ বহনের জন্যে।উনার অনেক বড় হৃদরোগ হয়েছিল যেখানে লাখ লাখ টাকাও ব্যয় করে কোনো লাভ হয়নি।
আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম,আর সাথী ছিল তার মায়ের পেটে। আজ পর্যন্ত দেনা পরিশোধ না করায় নিদুর চোখ পড়েছে সাথীর উপর!ও সাথীকে চায়,ওরা ওদের বন্ধকের টাকা ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে না।তারপরও,৩ মাস আগে সাথীর মা নিদুকে কথা দিয়েছিল সুদসমেত সবটাকা পরিশোধ করে দিবে,তবুও ওই ভক্ষণের এখন টাকা চাই না,চাই শুধু সাথীকে।
আমি ঢাকা থাকতে এতকিছু মাথায় গাঁথি নি।মা বলতো,আর আমি হু-হা করে শুনতাম।তবে,ব্যাপারটা যে এতটাই ক্রিটিকাল হবে, এখন শুধু আমার হাত-পা কাঁপতেছে।

আমি তড়িঘড়ি নিচে নেমে আসি।আর সাথীর মাকে উদ্দেশ্য করে বলি,
-আন্টি , সাথীকে নিয়ে যাবেন না,ও আমাদের বাড়ি থাকুক।নিদুর সাথে আমি বুঝবো!!!

-বাবারে,নিদুকে তুমি চেননা।ওকে এতদিন বিভিন্ন বাহবা দিয়ে দমিয়ে রেখেছি।এখন ওর হিংস্র শক্তির কাছে আমার মেয়ের বলী হতে হবে।কিছুই করার নেই!!টাকা ছাড়া আমার মেয়ের জীবন রক্ষে নেই,আর এতগুলো টাকা আমার পক্ষে দেওয়া ও সম্ভব না!কেউ কি চায় কারো মেয়েকে কেউ জোর করে একটা কুলাঙ্গারের হাতে তুলে দিতে?বলো?কোনো মা-ই চায়না!!

সাথীর মা কাঁদতে কাঁদতে একথাগুলো বলেন।আর আমি ড্যারাচোখ দিয়ে বাবার দিকে তাকাই।
এ বাবার প্রতি কেন জানি ঘৃণা হয়।এতগুলো বছর নিজের কোনো অন্তরঙ্গ আত্মীয় দুর্দশায় পড়ে আছে,অথচ এই হৃদয়হীন বাবার টনক নড়ে না!এত্তটাকা থেকেও যদি মন না থাকে,তাহলে সে মানুষ না!!

আমার চোখের সামনে থেকে শিমলা,শিমলার মা-বাবা এবং সাথী,সাথীর মা চলে যায়।সাথী চলে যাওয়ার সময় কাঁদো মুখকরে একবার পেছন ঘুরে আমার দিকে তাকায়।
অবুঝের মতো চোখবুঁজে দাড়িয়ে আছি।কিছু বলতে যেয়েও পারছি না।।
আমার মাও কেঁদে যাচ্ছেন!!আর বলছেন,
-বাবা,সাথীকে বাঁচা বাবা।ওই বদমাশ সাথীর জীবনটাকে নষ্ট করে দিবে।

-শাওন সাথীকে বাঁচিয়ে কি লাভটা হবে,শুনি??(বাবা)
-মা চুপসে থাকেন।
-তুমি কি ভেবেছ আমি কিছুই জানি না!?তোমার ফকিন্নি মার্কা আত্মীয়-স্বজন নিজের মাথার উপর গেড়ে রাখো,আমার বংশের ধারেকাছেও যেন না ঘেঁষে!!আত্মীয় আছে আত্মীয়ই থাকবে!!আর যদি শাওন ঔ মেয়েকে বিয়ে করে,তাহলে ওর এ বাড়িতে কোনো জায়গা নেই।বলে দিলাম!!

বাবা ক্রুদ্ধ হয়ে চলে যান।মা মুখে কাপড়ের আঁচল গুঁজে সোফায় বসে কাঁদতে থাকেন।
কারণ,সাথীর মা আমার মায়ের খালাতো বোন।তাই,নিজের রক্তের জন্যে মায়া লাগাটাই স্বাভাবিক।

এরই মধ্যে বদ মহিলা আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
-বাবার মনে সন্দেহের বীজ বুনা আমার কাজ।আর বিয়ে বন্ধ হবে তোমার!ভালো তোমাকে কখনোই থাকতে দিব না, মিস্টার শাওন!যদি না তুমি আমাকে খুশি পারো।তাহলে,তোমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

এ বলে উনি ওনার রুমে প্রস্থান করেন।আমি সং এর মতো দাড়িয়ে আছি।আমার ভাবনা শুধু সাথীকে নিয়েই।মেয়েটি এভাবে আমাদের আমাদের বাড়ি থেকে চলে গেল,ভাবতেই বুকের বাম পাঁজরটা ছ্যাৎ করে উঠে।সেই কোণ আইসক্রিম টি-টেবিলের উপরই পড়ে রইলো,আর মানুষগুলো চলে গেলো!!

চলবে…..

ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০৬

0

ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-০৬
রোকসানা আক্তার

আমি উনার সাথে কুশল বিনিময় না করাতে উনি অনেকটা ক্রুদ্ধ হয়ে যান এবং নিজেকে সংযত রেখে বলেন,
-আমার হাত ডেইলি ১০-১২ বার হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুঁই।হাত যদি ময়লা মনে হয়,তাহলে বলো আবারো বেসিনে গিয়ে আরেকটা ধোঁয়া দিয়ে আসি।

উনি কথাটা অবশ্য আমায় ইনসাল্ট করে বলেন।আমি ইতস্ততাবোধ নিয়ে বলি,
-আসলে সেরকম না।আ-আমার একটা অভ্যেস আমি মেয়েদের সাথে হাত মেলাতে পারি না।।
-বাব্বা,ভীষণ লাজুকতো তুমি!?ক’দিন পার্টিতে এসে মজামাস্তি করে যেও,এসব লাজুক-রক্তিমতা সব কেটে যাবে,বুঝলে???

আমি জানতাম এধরনের মহিলাদের সাথে কথা বললে বেকার সময় নষ্ট।তাই বাসায় চলে যাওয়ার তাগাদা দিই।
-আ-আপু,আসলে আমি চলে যাবো আমার এসাইনমেন্টটা শেষ করা এখনো বাকি।
-আরে ইয়ার,এই বয়সে জাস্ট রিলাক্স এন্ড ফান অলটাইম।ক্ষেত পোলাপান এধরনের থিংকিং নিয়ে থাকে,পড়ার আরো অনেক সময় পাবে।প্লিজজ ইয়ার আজ অন্তত একটু সময় দাও?আমি তোমার ক্যাম্পাসের বড় বোন সো রিকুয়েষ্ট রাখতেই পারো।আর জানোইতো সবাই আমার কথার বাহিরে একপা ও নড়চড় করে না, তুমি সেখানে আমার অফার রিজেক্ট করবে??!

তখন যেন উনার চোখদুটো হিংস্র প্রাণীর মতো লাল হয়ে যায়,এমন কথা বলেছেন।আমি অনেকটা ভয় পেয়ে যাই।আর মনে মনে হৃদয়কে বকতে থাকি।ও কেন আমায় এখানে নিয়ে আসে। এরই মধ্যে রাফাজ আমার জন্যে ড্রিংক নিয়ে আসে।
-আরে দোস্ত খা খা।একবার খেলে কোনো সমস্যা নেই।
আমরাও একটুআধটু খাই জাস্ট বিশেষ কোনো পার্টিতে।।

উনি শতানী হাসি দিয়ে ইশারা করেন ড্রিংকটা হাতে নিতে এবং ভার্সিটির অনেক ছেলে-মেয়ে দৌড়ে আমার কাছে এসে সবার জড়োসড়ো রিকুয়েষ্ট আজ অন্তত ওদের সাথে ড্রিংকটা করতে।।।

-পরে??(শিমলা অনেকটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে)

-পরে আর কি,বাধ্য হলাম।১ গ্লাস খাওয়ার পর আমার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসে।মাথাটা ঘুরোয় এবং চারপাশটা যেন আমার মাথার উপর ঘুরতে থাকে,মুহূর্তে আমি ফ্লোরে পড়ে যাই।তারপর জানি না আর কি হয়েছে।।।
সকাল হলে নিজেকে একটা বিছানার উপর আবিষ্কার করি।তাও নগ্ন অবস্থায়।আমি শরীরের উপর থেকে কম্বলটা সরাতে গেলেই নিজে নিজেকে দেখে হতবাক!!!রাতে আমার সাথে কি ঘটেছিল।মাথাটা আমার ঝিম হয়ে আসে।কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমার প্যান্ট,গেন্জি কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না,অস্থির হয়ে যাই আমি।

হুট করে আমার রুমে একজন মহিলাকে প্রবেশ করতে দেখি।উনি মাএ স্নানটা সেরে এসেছেন।চুল তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বলেন,
-সোনা,এত্ত অস্থির হবার কিছু নেই।এখানে নেই,শুধু আমি ছাড়া।।

আমি মহিলার দিকে তাকিয়ে বুক ফেটে কান্না আসে আমার।আর কাঁদো কাঁদো মুখে বলি,
-আপু, আপনি আমার সাথে এটা কি করলেন!?আমি আপনার জুনিয়র!ছিঃআপনি আমার সাথে এমনটি করতে পারলেন?! আমার ভাবতেও ঘৃণা হয়য়!!

-নো,নো বেইবি এত্ত সিরিয়াস হচ্ছ কেন?আমিতো আর একা মজা পাইনি,তুমিই বেশি কিছু করলে!!

-ইউ বাস্টার্ড !! আমি এখনই গিয়ে আপনার নামে পুরুষ হয়রানির মামলা করবো!!

উনি আমার কথা শুনে কেলকেলিয়ে হেসে উঠেন।।আর বলেন,
-এসব তোমার বৃথা চেষ্টা!!তুমি চাইলেও এখন কিছু করতে পারবে না!কারণ,রাতে আমাদের সহবাসের সবটা ভিডিও সেইভ হয়ে গেছে!!এখন সেটা আমার কাছেই।অনেক কষ্টে সোনা,তোমায় বাহানা দিয়ে এখানে এনেছি।আমার অনেক দিনের স্বাদ ছিল তোমায় ভালোবাসতে, আর তা কাল পূরণ করলে।।

-আপনি কি মানুষ?নাকি পশু?আপনার মাঝে তো নারীত্বের কোনো অভিলাষ নেই।বেশ্যা একটা আপনি!!

-আমার কথা ভেবে তোমার কোনো লাভ নেই।এখন নিজের কথা ভাবো।এসব যদি কাল পুরো ক্যাম্পাস এবং তোমার গফ সোহানার হাতে দিই,তাহলে সে ব্রেকাপতো করবেই এবং তোমায় ভার্সিটি থেকে বিতাড়িত করা হবে!!

আমি অনেকটা হতভম্ব হয়ে যাই।।আমার মাথায় কিছুই কাজ করছে না এ মুহূর্তে কি করবো,কি বলবো!!পাগল পাগল অবস্থা হয়ে যায়।নাহ পারি ঔ মহিলাকে তক্ষুণি খুন করে ফেলি।আমি বুঝতে পারি একটা হোটেলে আমার অবস্থান তখন,তাই খুনের ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলি।নাহলে,খুনী বলে সবাই আমাকে অপরাধী ভাবতো।।।চোখমুখ বুঁজে চুপসে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি।উনি গলাটা হালকা ঝেড়ে আবার বলেন,

-এখন তোমার দুর্বলতার প্রধান কারণ সামান্য একটা ভিডিও।আর এই সামান্য ভিডিওটাই তোমার জীবন।কারণ,তোমার মান-সম্মান,ইজ্জত সবকিছুর প্রশ্ন এই ভিডিওটি।।।

-এখন বলুন,ভিডিওটি দিয়ে আপনার কি এমন লাভ?
-আমার কোনো লাভ নেই।।তবে,একটা আবদার!!

-আবদার?!
-হু,যদি রাজি থাকো তাহলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। ভিডিওটি আমার কাছে নিরাপদে থাকবে অন্যকেউ হরণ করবে না।এতটুকু বিশ্বাস আমার উপর রাখতে পারো।

-আচ্ছা কি আবদার চাই,আপনার??

-ইদানীং ক্যাম্পাসে সবার মুখেমুখে শুনতেছি ভার্সিটির মধ্যে ক্রাশ নাম্বার ওয়ান সোহানা,তার সাথে তোমার গভীর প্রেম চলছে??

আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকি।।

-তাকে তোমার ছাড়তে হবে!

আমি মাথাটা উনার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলি,
-তাকে ছাড়বো মানে!?
-সোজা বাংলা বুঝ না তুমি?মানে ব্রেকাপ!!
-কি এমন কারণ যে আমি সোহানার সাথে ব্রেকাপ করবো!?
-কারণ কিছুই না।ব্রেকাপ মানে অনলি ব্রেকাপ!!কথা বাড়ানোর চেষ্টা করলে খারাপ হবে কিন্তু!!
-কি করবেন আপনি/??

-কি করবো???!!!
এ বলে উনি উচ্চ আওয়াজে হেঁসে উঠেন এবং আবার মুখটা বাঁকা করে বলেন,
-তোমার ভিডিওটি শেষ পর্যন্ত সোহানার হাতে দেখতে চাও??সোহানা ঠাস ঠাস করে দু’গাল লাল করে ক্যাম্পাসে সবার সামনে তোমায় কুলাঙ্গার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে?তোমার চরিএ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে??প্রতিটি টিভি,নিউজ,ম্যাগাজিনে তোমায় নিয়ে সমালোচনা করতে?
তুমি নাকি ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে!?মা-বাবাকে সমাজের সামনে অভদ্রতায় পরিচয় দিতে???

-উনার কথাগুলো আমার কানদুটোকে আগুনের মতো লাল করে দেয় যেন আগুন জ্বলতে জ্বলতে ধোঁয়া বের হচ্ছে!!
-প্লিজজ,আমি আর নিতে পারছি না।বন্ধ করুন আপনার কথা। আমি রাজি আছি সোহানাকে ছেড়ে দিব,তবে সময় লাগবে।।
-সময়??কতদিন সময় নিবে?
-আসলে দিনের কথা বলতে পারিনা, মাসও লাগতে পারে।।।
-ওকে।তবে,আমি তোমার পেছনে সিসি ক্যামেরার মতো আছি।এটা ভুলে যেও না যে আমি নির্দেশ দিয়েই উধাও!!

তারপর থেকে আমার লাইফটা দিনকে দিন পরিবর্তন হতে থাকে।কারো সাথে ওতোটা মিশি না,দূরে দূরে থাকি।আমার সিজিপিএ খারাপ আসতে থাকে।বাসায় টিচাররা কল দিয়ে নালিশ করেন,আর বাসার প্যারা,সোহানার প্যারা,ক্লাসমেটদের প্যারা,ওই বদ মহিলার প্যারায় আমার লাইফটা পেন্ডেমিক এ পরিণত হতে থাকে।।।সোহানা আমার মাঝে এসব দিক লক্ষ্য করতে পেরে অনেকটা সন্দেহাবসর হয়ে যায়।এসব কিছুর কারণ আস্ক করতে চাইলেও বলতাম না।মনে শুধু একটাই ভাবনা ছিল কবে ওর সাথে সব বিচ্ছেদ করবো!!!.।

একদিন ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ওই মহিলার ডাক পড়ে।উনার পালিত একটা কুকুর আমায় এসে বলে,
-আপনাকে আপামণি ডাকছেন?
মুহূর্তেই যেন আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ!!কেঁপে কেঁপে বলি,
-আচ্ছা আপনি যান।আমি আসতেছি।।।

মস্ত একটা বটগাছের নিচে বসে পা হেলিয়ে হেলিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছেন!!আর চারপাশ দাড়িয়ে কয়েকটা গিরগিটি চামচামি করছে।আমি উনার সামনে গিয়ে সালাম করি,
-আসসালামু-আলাইকুম,আপু?
উনি আকাশের দিকে তাকিয়ে একমগ্নে সিগারেটে আরেকটা টান মারেন এবং আমার মুখ বরাবর ধোঁয়া টা ছাড়েন!সিগারেটের ধোঁয়া আমার নাকে-মুখে ঢুকে পড়ে,ভীষণ কাশতে থাকি আমি।তা দেখে পাশের সবাই খিলখিল করে হেসে দেয়।।আমি আমার লাইফে কখনো স্মক করিনি,তাই স্মকের ধোঁয়াটা সহ্য করাটাও আমার পক্ষে কষ্টকর।
উনি আমার দিকে সরু দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছেন।আর আমার চোখগুলো মাটির দিকে স্থবির।আমার তখন মন চেয়েছিল মাটির সাথে মিশে যাই!!উনি হালকা কেশে বলেন,
-এখানে দাড়িয়ে থাকবে নাকি পয়সালা শেষ করে বিদেয় হবে!!?
-জ-জ-জ্বী?
-এই ছেলে তুমি কি কথার অর্থ বুঝো না?এভাবে নিচের দিকে চেয়ে আছো কেন?হিজরা?

সবাই আরো বেশি হাসির জোয়ারে ভেসে যায়, হিজরা শব্দটা শুনে।চোখবুঁজে সহ্য করে নিই।তারপর বলি,
-ম-মানে??
-এত থতমত খেয়ে কথা বলো কেন!?আমিতো বাঘ না যে ভয় পাবে আমায়!মাথা সোঁজা করো???

আমি বাধ্য হয়ে উনার চোখ বরাবর চোখ রাখি।
-এইতো ভদ্র ছেলে!!!এবার কাজের কথায় আসি!সোহানার সাথে এখনো নাকি ইটিস-পিটিস চলতেছে!!?
-ন-না মানে?
-আবার?তোতলাও!!ডিরেক্ট এন্সার দিবে!এখনো ও কি ব্রেকাপ করনি!?
-নাহ!.
-তোমাকে আমি ১০ দিন সময় দিলাম!জাস্ট অনলি টেন ডেস!মনে থাকবে??

-জ্বী!
-ওকে এবার আসতে পারো।।

আমি তেড়ে অপোজিট দিকে ফিরে চলে আসি।আস্তে আস্তে বুঁকের হৃদস্পন্দন টা চলতে থাকে।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভার্সিটির দেয়ালের ওপাশে গিয়ে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদি।ডিসিশন নিই এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো!!সুইসাইডই আমার একমাএ সঠিক সল্যুশন।এরকম হীনমন্যতা লাইফ রেখে কোনো লাভ নেই।আমি একজন পুরুষ হয়ে নারীর নির্যাতন সহ্য করছি কিভাবে!!আমাদের মতো মার্জিত ছেলেরা কখনো সমাজে সঠিক মূল্যায়ন পায় না,পায় তো ওরা যার বখাটে!!যারা ৮/১০ টা মেয়ের সাথে নাইট ডেট করে,যারা মদ,জুয়া,স্মকে মর্ত থাকে,যারা খালি খালি বাপের পকেটের টাকা নষ্ট করে। ওদেরই সমাজের মানুষ সাদরে গ্রহণ করে।

এসব ভাবছি আর চোখের পানি নিমিষে ফেলছি।পেছন থেকে সোহানা আমার কাঁধে হাত রেখে বলে,
-ভার্সিটিতো এখন আসলে???
আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে, সোহানার দিকে কটু দৃষ্টি দিয়ে বলি,
-দূর হও আমার থেকে।কখনোই আমার ধারেকাছে ঘেঁষার ট্রাই করবে না।ব্রেকাপ চাই তোমার থেকে!!

সোহানা হয়তো আমার থেকে এমনটি আশা করেনি।মুখে একটা ঘৃণার ভাব এনে বলে,
-তোমাকে আমি আমার লাইফ থেকেও অনেক বেশি ভালেবেসেছি।আজ সে মানুষটি আমাকে যে এভাবে কষ্ট দিবে,সত্যি তা আমার ধারণার বাহিরে ছিল।ওকে ভালো থাকবে,আর কখনোই তোমার সামনে আসবে না।বরঞ্চ আমি আরো বেশি খুশি যে ছেলেটা গফের ঠিকমতো খোঁজ-খবর,কেয়ার কিছুই নিতে না ওদের সাথে রিলেশন রাখার কোনো মানেই হয় না!!

আমাদের কথার মাঝে রাফাজ এসে বলে,
-ও শিপ্রা আপুকে ভালোবাসে,তাই তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছে সোহানা!!ভুলে যাও এদেরকে। যারা নিউ কাউকে পেয়ে পুরাতন কাউকে ভুলে যায়।।।

সোহানা নিজের মনকে সায় দিতে না পেরে আবারও বলে,
-আর কখনোই আমার লাইফে ফিরে আসবে না।তুমি আর কখনোই আমাকে পাবে না!!!মিথ্যে ভালোবাসার চাদরে মুঁড়িয়ে ছিলে আমায়,বিশ্বাস করে হাতটি ধরেছি।আজ সে হাতকে ঘৃণা করি এবং সে হাতের মানুষটিকেও!!

এ বলে কান্না করতে করতে সোহানা দৌড়ে চলে যায়।।।

-তারপর শাওন,কি ঘটেছিল??
-তারপর আর-কি সবকিছুর এখানেই সমাপ্তি!!আর এই শিপ্রা ডাইনীর সেমিস্টারও কম্প্লিট এন্ড ভার্সিটিতে আর উনাকে কখনো দেখিনি।।।

-আচ্ছা শোন,আমি একটা বিষয়ে এখনো ক্লিয়ার না।সোহানার সাথে তোর সম্পর্ক ছিল ক’মাস?
-এই ১ বছর!!
-ওহ আচ্ছা!!
-তো সুসাইড থেকে কিভাবে নিজেকে দূরে রেখেছিস?
-মায়ের কারণে।মায়ের মুখের দিকে তাকালে পৃথিবীর সবকিছুই তুচ্ছ মনে হয়।মা আমার পৃথিবী!!মাকে ছেড়ে অন্যকারো জন্য পৃথিবীকে ত্যাগ করবো?যেখানে আমার মা আছে, সেখানেই আমি।।

-বুঝলাম।তবে,তুই আমার সাথে আগে যা-ই শেয়ার করেছিলি,তবে ভয়ংকর এই ভিডিও-এর কথা বলিস নি।আমিতো ভাবলাম,ভার্সিটি একটু-আধটু ঝামেলা হয়ই!এসবতো কিছুই না!!কিন্তু তোর সাথে যা ঘটলো সত্যি কি বলবো,ভাষা আমার নেই!!!আর সর্বোপরি দাড়ায়,উনি হয়তো দুটা কারণে তোর ভাইকে বিয়ে করে নিয়েছে।
নাম্বার ওয়ান-সম্পওি
নাম্বার টু-তোর থেকে অন্যকিছু!!
আর উনি এতই চালাক যে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার উপায় খুঁজছে!!আমি তা কখনোই হতে দিব না,শাওন!?তোকে এমুহূর্তে বিয়ে করা উচিত!!আর হুম,বিয়েটা করে নিলে উনি তোর সাথে খারাপ কিছু করতে পারবে না।

-আমি কাকে বিয়ে করবো?কি বলছিস,এসব তুই?সোহানাতো অন্যের হয়ে যাচ্ছে!

-সোহানা ছাড়া অন্যকোনো মেয়ে নেই?? যে মেয়ে তোর সবকিছু মানিয়ে নিতে পারবে,তোকে বুঝবে!বাট সোহানা তোকে বুঝে নিরে!

-বুঝেছে।হয়তো ওকে আমি বুঝাতে পারিনি!আর এখন বিয়ে করলে কি এমন সমাধান?

-তোর যে এখন অবস্থা!এই মুহুর্তে কোনো মেয়ে তোর পাশে থাকা উচিত।তুই যেহেতু এখন আনম্যারিড,সেহেতু নিমিষেই বদনাম রটাতে পারবে তোর।আর তুই একা এই বদের সাথে পারবি না।একজন সঙ্গী গাছের শেকড়ের মতো তোকে আঁকড়ে অন্যের থেকে নিজের স্বামীকে রক্ষা করার উপায় খুঁজবে।সমস্যা কখনো একা সমাধান করা যায় না,যার জন্যে অন্যকারো সাহায্য নিতে হয়!!বাংলো রক্ষা করতে চাচ্ছিস না?তাহলে একটা বিয়ে করে কারণ দাড় করা।তোর বাচ্চা-কাচ্চা হবে,ওদের ভাগ আছে এই বাংলোতে।তাই একপাক্ষিক না হয়ে,দ্বিপাক্ষিক ব্যাপারটা দেখবে সবাই!!বুঝছিস তুই??

-মাথায় কিছু আসছে না।।আর ওই ভিডিও!!? ওটার কাছেইতো আমি ব্যর্থ!!ওটির কারণেই প্রতিবাদের মুখ আমার বন্ধ!
-ওইটা আমার উপর ছেড়ে দে!!আমি ওটা উদ্ধার করবো!!!
এরইমধ্যে আমার ফোনকল বেঁজে ওঠে!!!জিনুক কল দিয়েছে যে সোহানার বেস্ট ফ্রেন্ড!!
-কে কল দিয়েছে রে?
-জিনুক!..

-রিসিভ কর।নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে কল দেওয়ার ।
-হু,আচ্ছা দেখি।

চলবে…..
ওখানের পর্বটায় ওদের রিলেশনশীপের সময়টা ১ বছর দিয়ে দিয়েছি।২ বছর হবে না।এখান দিয়ে মিস্টেক হয়েচে।

ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০৫

0

ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-০৫
রোকসানা আক্তার

-শাওন আমার কি মনে হয়, জানিস?তোকে ঔ শিপ্রা ভাবী আগ থেকেই চেনে।নাহলে, ব্রেকাপ এবং ফাহাদ ভাইকে পটিয়ে বিয়ে এসব নিয়ে ডাউট হচ্ছে ভীষণ!এমনও হতে পারে তোদের সম্পওি পাওয়ার লোভে এসব করছে উনি!
-হুম,ভাইয়াকে বিয়ে করা তারও একটা কারণ হতে পারে।
তবে,এখানে সম্পওির সাথে আমার ব্রেকাপের কি সম্পর্ক !

শিমলা হাই তুলতে তুলতে বলে,
-ফার্স্ট অল, উনি তোকে পছন্দ করেছে।দ্যান,বৃথা চেষ্টায় সেকেন্ড টার্গেট অন ফাহাদ ভাই এবং মিশনে এখন সফলও হয়েছে।

শিমলার থিংকিং-টি মোটেও মন্দ নয়।
-রাইট বলছিস, শিমলা।তবে, আম…….
আমি কিছু বলতে যেয়েও থেমে যাই।কারণ, আমাদের মধ্যকার কথোপকথন এতক্ষণে ভাইয়ার বউ দরজার সামনে দাড়িয়ে সবটা শুনতে পায়।উনি শিমলার কথায় পাল্টা জবাব ছুঁড়ে দিয়ে বলেন,

-আমি সম্পওির লোভে বিয়ে করেছি?আমি শাওনকে ভালোবাসি বিধায় ওদের মধ্যকার বাধা হয়ে দাড়িয়েছি?এতই নিচু ধারণা তোমাদের?

এসব বলে উনি খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠেন। উনার হাসির উচ্চ আওয়াজে পুরো রুম যেন থরথর করে কেঁপে উঠে।
হাসি থামিয়ে আবার বলেন,
-আমি ফাহাদকে বিয়ে করেছি এজন্য যে কারণ আমরা দু’জন-দুজনকে অনেক ভালোবাসি।ফাহাদের সাথে আমার রিলেশন ছিল শাওন ভার্সিটি এডমিট হওয়ার আগে থেকেই ।আর,আমার প্রাণের দেওরা পড়াশুনা অফ করে অন্যমেয়ের সাথে টাংকি-পাংকি মারবে, আমি তা দেখে হাত গুটিয়ে আঙ্গুল চুষবো?পরে রেজাল্ট দিবে,সিজিপিএ আসবে খারাপ।মা-বাবা এবং ফাহাদের ড্রিম গোল্লায় ছুটবে।ওকে জিজ্ঞেস করো, সোহানার সাথে ব্রেকাপ হওয়ার পর রেজাল্ট কি এসেছিল ওর?ও ফার্স্ট ক্লাস অর্জন করেছে।তাও আমার অবদানে।আর,এত কনট্রিবিউশনের জন্যে যদি তোমরা স্বার্থপরতা দেখাও,তাহলে আমার আর কি বলার আছে।বলো শিমলা?

এ বলে উনি ন্যাঁকা কান্না করে দেন!!ন্যাকা কান্নায় শিমলার মায়া হয়।
-ওহ,তাহলে এজন্যে?আমি আসলে ভাবী আপনাকে ভুল বুঝেছি।আই এম স্যরি ভাবী।আমি বুঝতে পারিনি।ক্ষমা করবেন।

শিমলার নতজানু ভঙ্গিটা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে যায়।ও ডাইনীটার সব কথাই বিশ্বাস করে ফেলেছে!!
-আচ্ছা ভাবী আপনারা কথা বলুন আমি আসছি।আন্টি মনে হয় আমায় ডাকছেন।
এ বলে শিমলা তরহর করে চলে যায়।আমি অনেকটা ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যাই!!দূর,সালা তেলা মাথায় তেল দেওয়ায় মনুষ্য জাতির রোগ!! শিমলাও শেষ পর্যন্ত তাই করলো।

শিমলা চলে যাওয়ার পর উনি আমার দিকে আড়নয়নে তাকান। একটা শতানী হাসি মুখে এঁটে ভ্রু কপালে উঁচে বলেন,
-কি কেমন খেললাম?বললাম না আমার বিরুদ্ধে যেও না,নাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে!!তুমি এখনো আমায় বোধহয় চেনো নি!

-আপনার মতো দু’টাকার মেয়েকে আমি সেই ৩ বছর আগেই চিনেছি।ট্রিকিবাজদের এই শাওন পরোয়া করে না,শাওন সত্যের কান্ডারী।কোনো মিথ্যেই এই শাওনকে টলাতে পারবে না!!
উনি আমার কথার জবাব না উল্টো আমার দিকে একপা একপা করে এগুতে থাকেন।
-দেখেন,ভালো হবে না কিন্তু!!আপনি মাএাতিরিক্ত অসদাচরণ করতেছেন! আপনি ভুলে যাচ্ছেন যে আপনি আপনার লিমিটেশন ক্রস করতেছেন!!

আমি এসব বলছি আর পিছু হটছি।পিছু হটতে হটতে একদম বেলকনির গ্রিলে ঘেঁষে যাই।না পারছি পেছনে যেতে, আর না পারছি সামনে হাঁটতে।
উনি ফকফক তাকিয়ে একদম আমার কাছে চলে আসেন। সড়াৎ করে বেলকনির দরজাটা বন্ধ করে দেন। আমি আচমকা হয়ে মুখতুলে কিছু বলতে গেলে উনি ওমনিই টপকে আমার মুখ চেপে ধরেন!হাতের আঙ্গুলের ডগা দিয়ে আমার মুখ হতে বুক পর্যন্ত আলতোভাবে স্পর্শ করেন।

-এত কথা বলো কেন,শাওন?আমাকে তোমার ভালো লাগে না?কিন্তু তোমাকে দেখলে আমি আমার পথের দিশা হারিয়ে ফেলি!সবকিছু যেন আমার উলটপালট হয়ে যায়।আর একবার তোমার স্পর্শের ছোঁয়া পেতে চাচ্ছি।প্রথমটি ছিল জোরপূর্বক, কিন্তু এবার হবে স্বইচ্ছে।আর যদি না মানো,তাহলেতো জানোই সোহানাকে যেভাবে হারিয়েছ,ঠিক সেইম এখন সেভাবে নিজের মান-ইজ্জত হারাবে সোনা।যদি ভিডিওটি ভাইরাল করে দিই!তখন ভাবো একবার, সমাজে মুখ দেখাবে কি করে।সবাই মুখতুলে বলবে,দেওরা ভাবীর সাথে জোর করে এসব করেছে।ছিঃ,কলঙ্কিত হবে তুমি আমি নই!তুমি এবং আমি জানি এই ভিডিওটি আমার বিয়ের আগের!!আর ভাইরাল করবো বিয়ের পরের বলে।হিহিহিহি
উনি আবার খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে।আমার সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়।চোখ বুঁজে সহ্য করে নিই,কিন্তু নিজেকে মানাতে পারছি না।টলটল করে চোখ দিয়ে পানির স্রোত বের হতে থাকে।শূন্যে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছি আর থমকে ঔ মহিলার কথা শুনে যাচ্ছি।
-না সোনা, কেঁদো না।তুমি কাঁদলে আমি ভীষণ আঘাত পাই।আঘাতটা যেনো এই বুকের মাঝ বরাবর চিনচিন করে ওঠে। আর, নেক্সট সম্মতি দিলে বাংলোর ভাগটাও নিবো না।ওটা তোমার মায়েরই থাকবে।আমার শুধু একটাই চাওয়া তোমাকে আর একবার কাছে পেতে।

-আপনি কি এখান থেকে যাবেন?প্লিজজ!!আই ওয়ান্ট টু লিভ এলোন।আমি আর নিতে পারছি না!!!

-আমি জানি সোনা তুমি বাধ্য।কিন্তু কি করবে বলো এছাড়া তোমার যে আর উপায় নেই।
-আপনি সব আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে করেছেন।আপনি ক’দিন মিথ্যেকে সত্য বলে উপস্থাপন করবেন!?এক দিন,দু’দিন,তিন দিন!কিন্তু সত্যের জয়,মিথ্যের পরাজয়!!ছাড়ুন বলছি!

এক জাটকায় উনাকে সরিয়ে দিই এবং বেলকনির দরজা খুলে রুম থেকে চলে আসি।ঘর থেকে বের হয়ে দোলনায় একমগ্নে বসে দোল খাচ্ছি আর কান্না করছি।বুক ঢুকরে কান্না আসছে আমার।হুট করে সাথী এসে আমার পাশে বসে,আর আমায় জড়িয়ে ধরে বলে,
-ভাইয়া,মন খারাপ?
তড়িঘড়ি চোখের পানি মুছে নিই।আর মুখে মৃদু হাঁসি টেনে বলি,
-চোখে বোধহয় কি যেন পড়েছে।আচ্ছা দেখতো চোখের ভেতর কিছু দেখতে পাচ্ছিস কিনা।
সাথীর দিকে চোখটা এগিয়ে দিই।সাথী আলতো হাতে আমার চোখ দেখতে থাকে।সাথীর ছোঁয়ায় আমার মনে এক অজানা শিহরণ জাগে।ইচ্ছে করে সাথীকে এই দুঃসময়ে জড়িয়ে ধরে বলি সাথী আমি একা,সত্যি আমি আজ বড় একা।কাউকে কিছু বলতে পারছি না সাথী!তুই আমায় বিশ্বাস করবি,বল?ভুল বুঝবি নাতো?

মনের ভাবনার কথাগুলো চোখগুলোকে ঝাপসা করে দেয়।
-ভাইয়া তোমার চোখে একদানা ধলোবালির ছিটেও নেই।তোমার নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।তোমার মুখ না বললেও তোমার চোখ বলছে।প্লিজজ আমাকে বলো না ভাইয়া কি হয়েছে তোমার?
-স-সাথী?
এ বলে ওকে জড়িয়ে ধরি।সাথীও আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর মাখায়।
-আমিতো ভাবছি সাথী তুই চলে গেছিস।বাসায় আসার পর তোকে একবারও দেখিনি।
-আমি যাইনি ভাইয়া।আমি রুমেই ছিলাম।আমি শুধু তোমার অপেক্ষাই করেছিলাম তুমি কখন আসবে।তুমি যাওয়ার সময় আমাকে বলে যাও নি।জানো?আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।
-এখন আসছি না ছুটকী?
এ বলে ওর কপালে একটা চুমু লাগাই। সাথী আমায় আরো কাছে টেনে বলে,
-ভাইয়া,আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালেবাসি।

এরইমধ্যে শিমলা এসে গলা ঝাড়ে।
-ভালেবাসা মাখামাখি একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেতো?
আমার ধ্যান ভাঙ্গতেই লজ্জা পেয়ে যাই এবং সাথীও।লাজুকতা মুখে বলি,
-ও আমার ছোটবোন।ছোটবোনকে আদর করতে সমস্যা কোথায়?.
-তুমি আমায় ভালোবাসো না, ভাইয়া?এই আরি!!তোমাদের কারো সাথে আর কথা বলবো না,গেলাম।
সাথী বেজার মুখটা করে চলে যায়।

আমি হালকা মুঁচকি হেঁসে মাথা নেড়ে বলি,
-পাগলী একটা!দেখছিস?এখনও কত অবুজ?আর তুই বলছিস আমি এর সাথে প্রেম করতে?
-ক’দিন পর তুই নিজেই ওর প্রেমে পড়বি।প্রমিজ করলাম।

বেকার একটা হাসি দিয়ে উঠি।।
-তুইতো আমার তেলা মাথায় তেল দিছিস!সো, আমার এখানে কেন! যা ওই ডাইনীর সাথে গিয়ে তাল মিলা?
-এখানে এসেছি একটা গুপ্ত জিনিস নিয়ে।
এ বলে শিমলা হাতের মোবাইলের দিলে ইঙ্গিত করে।
-তো মোবাইলে কি এমন গুপ্ত জিনিস আছে,শুনি?
-ওয়েট দেখাচ্ছি।
শিমলা আমার পাশে এসে বসে এবং মোবাইল রেকর্ডিং এ ঢুকে।আর রেকর্ড লিস্টগুলো চেক করতে করতে হতাশ হয়ে যায়।
-শিমলা,এনিথিং রং?
-শাওন,এখানেতো কোনো কথা রেকর্ড হয়নি।রেকর্ড টাতো আমি সেইভ করেছিলাম।।তাও ৪০ সেকেন্ডের রেকর্ড মাএ শব্দ/কথাহীন!এটা কি করে সম্ভব!?। কেউ কি রেকর্ডটা ডিলিট করে আমাদের বোকা বানালো নাতো?পরে,আবার রেকর্ড অন করে চলে যায় যাতে আমরা সন্দেহ না করতে পারি।
শিমলা এসব বলে হাম্ভীতাম্ভী করতে থাকে।
-আমি বুঝতেছি না কিসের রেকর্ডের কথা বলছিস তুই?
-তোর ভাবীকে সাপোর্ট করা আমার একটাই কারণ ছিল,তা হলো উনার আসল চেহারাটা উন্মোচিত করা!তাই উনাকে একটু উসকে দিয়ে আন্টির বাহানা দিয়ে রুম থেকে চলে আসি।যাতে উনি খুশি হয়ে তোকে আরো অনেক কিছু বলে।তোর রুম থেকে বের হওয়ার আগে রেকর্ড অপশন অন করে যাই।কিন্তু এখন ৪০ সেকেন্ডের একটা রেকর্ড দেখতেছি শব্দহীন।

-উফস!!মিশন ফেইলড!আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও ওই ডাইনীটা আমার রুমে ছিল।আর তুই আমার রুমে ব্যাক করতে ৪০ সেকেন্ত লেট করিস!ডাইনীটা হয়তো রেকর্ড অন দেখে ফেলে,এই সুযোগে ডিলিট দিয়ে রেকর্ডিং আবার অন করে।
এরইমধ্যে ৪০ সেকেন্ড রেকর্ড সেইভ হয়ে যায়।
।তুই ডাইনীটাকে চিনিস না শিমলা ও অনেক চাটুকার!

-দেখো নিব,এই ডাইনী আমার থেকেও বেশি চাটুকার কি’না!আসল মুখোশ খুলে দিতে সময় লাগবে না।এখন শুধু একটু অপেক্ষা শাওন।
-শিমলা আমি তোকে আজ কিছু সত্য কথা বলতে চাই।আমি সব চাপা রেখে তিলে তিলে পুড়ে যাচ্ছি।বিশ্বাস কর এখন শুধু পাগল হওয়াটা বাকি।

-আচ্ছা সব বল।আমাকে তুই ক্লিয়ার করে আজও কিছুই বলিস নি।এখন বলবি,আর কোনো অজুহাত দেখতে চাই না।
-আচ্ছা।তাহলে শোন,
আমি যখন নতুন ভার্সিটি এডমিট হই,তখন খুবই শান্ত ছিলাম। কারো সাথে ওতোটা মিশতাম না।ভার্সিটিতে আমার চলা-ফেরার ভাবভঙ্গি, এটিটিউড,স্টাডি সবাইকে আকর্ষণ করে।এতে অনেকেই আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে হাত বাড়ায়।।খুশিমনে ওদের বন্ধুত্ব একসেপ্ট করি। শুরু হয় ভার্সিটি লাইফের সুমধুর দিনগুলোর মুহূর্ত। ভার্সিটিতে কখনো নতুন কোনো মেয়ে ভর্তি আসলে সিরিয়াল বাই সিরিয়াল ওদের প্রপোজাল শুরু হতো,আর যারা একসেপ্ট করতো ওদের সাথে টাইমপাস রিলেশন শুরু করে দিত পাজিগুলা।তা দেখে আমরাও আনন্দ পেতাম। তবে ওসব নিয়ে আমার মন তখন উৎসুক ছিল না।দিবানির প্রপোজাল রিজেক্টের মুহূর্তটা মনকে একটু হলেও ব্যথিত করতো।

-তুই তো ওকে পাওাই দেসনি।এখন এসব বলে লাভ নেই।তবে,যাই বলিস শাওন মেয়েটা তোর জন্যে অনেক পাগল ছিল রে।আর,লাস্ট কবে যেন দিবানির সাথে তোর দেখা হয়েছিল?

-ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার আগে!!!আমার এখনো মনে আছে জানিস?দিবানি যখন লাস্টবার আমার হ্যা/না উওর শুনতে এসেছিল। আমার উওরে নিরাশ হয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিল,সেদিন আমিও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।কারণ, দিবানিকে সরাসরি রিজেক্ট করা উচিত হয়নি।আস্তে আস্তে বুঝানো উচিত ছিল।

-রাইট!!তবে,সেদিনের পর থেকে দিবানির আর খোঁজ পাস নি,না?
-নাহ!!
-শিমলা?নাকি আমি দিবানির মনে কষ্ট দেওয়াতে আজ নিজেই তার ফল ভোগ করছি? কারো মনে কষ্ট দেওয়া ঠিক নারে!
-নাহ,নাহ এসব কেমন কথা বলছিস!তুই যখন ওকে ভালোবেসে ছ্যাকা দিতি,তাহলে একটা কথা ছিল।তবে,ওর প্রতি তোরতো ফিলিংসই ছিল না।।আর হ্যাঁ এটাই একপাক্ষিক ভালোবাসা।আর একপাক্ষিক ভালোবাসায় কখনো রিলেশন হয়না।

-তোকে আমি পৃথুলীর ব্যাপারেও কিছু বলবো,আগে পৃথুলীটা কে ভালোভাবে জেনে নিই!!

-পৃথুলী….শিপ্রা ভাবীর খালাতো বোনের কথা বলতেছিস যে বিয়ের সময় এসেছিল?
-হু।
-ওর সাথে আবার কি?(ভ্রু কুঁচকে বলে শিমলা)
-দিবানির সাথে পৃথুলীর সম্পর্ক , আর পৃথুলীর সাথে শিপ্রা ডাইনীর সম্পর্ক!!

-মানে??
-বুঝতেছি না।সব মাকড়সার ঝালে বন্ধি।

-আমি তোর কথা কিছুই বুঝতেছি না।কি বলছিস সব?

-বুঝবি,সবই বুঝবি পরে। তবে আমায় একটু সময় দে।,আমার মন বলছে সম্পূর্ণ ড্রামাটাই দিবানিকে ঘিরে যেটার ফলা ফলছে শিপ্রা!!

-সবকিছু কেন জানি এলোমেলো লাগতেছে!!আচ্ছা,এত্ত প্যাঁচাল শুনি না।যেখান থেকে শুরু করছিস ওখান থেকে বল।(শিমলা)

-পরে,১ বছর এভাবে বন্ধুদের সাথে সময় কাটে।ততদিনে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই ডাবল,আর আমিই একমাএ ব্যক্তি যে ছিলম সিঙ্গেল।তার ৩ মাস পর সোহানা নামে কোনো মেয়ের ভার্সিটিতে প্রথম আগমন ঘটে।তাকে দেখে সবাই ক্রাশ খায়,এতটাই সুন্দর ছিল সে।।আমারও একটু একটু ভালো লেগেছিল, জাস্ট চোখের দেখা ভালেলাগা তবে ভালোবাসা নয়।সোহানার প্রতি ক্রাশ খাওয়া ছেলেরা ছ্যাকা খেয়ে বসে ওদের গার্লফ্রেন্ডের থেকে।ব্যাপারটা খুবই মজাদার ছিল।তারপরও সোহানাকে পেল না,কারণ সোহানা ছিল খুবই দাম্ভিক মেয়ে,যেই ছেলে তার কাছে গোলাপ নিয়ে যেত সবাই ব্যথার চোটে গাল ঢোলতে ঢোলতে শূন্য হাতে ফিরে আসতো।
তা দেখে আমরা খিলখিলিয়ে হাসতাম

অতঃপর,আমার ফ্রেন্ডরা আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
-দোস?এবার তুই একটু ট্রাই কর মেয়েটাকে পটাতে পারস কি না।আমরা ডাবল হয়েতো প্রপোজ করলাম,আর তুই সিঙ্গেল হয়ে করবি।দেখি তোর কপালে কি লিখন!!

আরেকটা ফ্রেন্ড বলে উঠে,
-ভার্সিটির ভিপি পটাতে পারে নি,আর এই ছ্যাংরা পারবে?হা হা হা হা।এত আকাশ কুসুম কল্পনা,কিছুতেই ভাবা যায় না।
ওর সাথে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।আমার প্রচন্ড রকম একটা জেদ হয়।সেদিন দাঁত কামড়ে ওদের বলি,
-আমি করবো প্রপোজ।তবে বাজি লাগাতে হবে।ও যদি আমার প্রপোজ একসেপ্ট করে,তাহলে তোরা সবাই আমাকে ৫ হাজার টাকা দিবি।আর যদি গ্রহণ না করে,তাহলে তোরা আমায় সবার সামনে কান ধরাবি!!

সবাই অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তারপরও উপহাস করে বলে, আচ্ছা আচ্ছা আমরা রাজি।
পরদিন ভার্সিটিতে সবার সামনে সোহানাকে প্রপোজ করি।সোহানা আমার আপাদমস্তক একনজ দেখে নিয়ে গোমড় হয়ে তাঁকিয়ে থাকে।

ক্যাম্পাসের চারপাশে সবাই দাড়িয়ে ভেবেই নেয় যে সোহানা আমায় ভালোবাসবে না।
যেই দেখি সোহানা হ্যা ও বলছে না এবং না ও বলছে না,আমি মাথাটা নিচু করে অপোজিটে ঘুরে আসতেই সোহানর ডাক পড়ে,
-আরেহ,কোথায় যাচ্ছেন? দাড়ান!আমিতো এতদিন আপনাকেই চেয়েছিলাম।

আমি তখন যতই না খুশি,তারচেয়ে বেশি অবাক।ও আমার হাত থেকে হাসিমুখে গোলাপটা গ্রহণ করে।আর জড়োসড়ো সবার হাতের তালি বেজে উঠে।খুশিতে সেদিন আমার নাচতে ইচ্ছে হয়েছিল।

বাজি ধরা বন্ধুদের দিকে আড়নয়নে তাকাই।তারা বুকের কিনার হাত দিয়ে উইন ইঙ্গিত করে।।।
তারপর থেকে সোহানার চলে আমার প্রতি অগাধ প্রেম আর আমার চলে কৃএিম ভালোবাসা।হয়তো,সোহানার মনে তা অবিদিত।

ভার্সিটি গেলে ৮/৯ ঘন্টাই সোহানার সাথে কাটতো।আর,তখন বন্ধুদেরও ওতো সময় দেওয়া হতো না।

হঠাৎ একদিন হৃদয় এসে বলে,
-দোস,চল?আমরা আজ একজায়গায় যাবো।রাফাজ বলেছিল আজ ওখানে যেতেই যেতে,ডোন্ট মিস।আমাদের জন্যে নাকি সারপ্রাইজ আছে!!

-কিসের সারপ্রাইজ রে?
-আরে বাবা,গেলেইতে বুঝবি।সারপ্রাইজ কি কেউ বলে দেয় নাকি?
-জানি সেটা। আচ্ছা যাবো।

সন্ধের পর হৃদয়ের সাথে হাঁটা ধরি সারপ্রাইজের আাশায়।
হৃদয় আমায় একটা পার্টিতে নিয়ে যায় যেখানে নাচানাচি , ড্রিংক,আড্ডা, মজামাস্তিতে মর্ত সবাই।সব থেকে দুঃখজনক বিষয় হলো, আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের সবগুলোই এখানে উপস্থিত। তারা মেয়েদের সাথে নাচানাচির তালে ড্রিংক!! আমি ওখান থেকে ফিরে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু রাফাজ,হৃদয় এবং অনেকে আমায় জোর করে রেখে দিয়েছিল।
এখানে নাকি ওদের একটা গ্যাঙ্গ আছে! যে গ্যাঙ্গের প্রধান পরিচালকের সাথে আমায় পরিচয় হয়ে পার্টি থেকে বিদেয় নিতাম।

আমি অনেকক্ষণ যাবৎ একটা সোফায় বসে থাকি গ্যাঙ্গ পরিচালকের সাথে সাক্ষাৎ করে হোস্টেলে ফিরবো বলে।এর ফাঁকে অনেকে আমায় ড্রিংকের অফার করে,আমি খুশিমনে৷ ফিরিয়ে দিই।

হুট করে ওদের গ্যাঙ্গের প্রধান আমার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে বসতে বসতে বলে,
-আমাদের এই পার্টিতে তোমাকে স্বাগতম!
আমি গ্যাঙ্গের প্রধানকে তখন চিনতাম না।তাই হাসিমুখে হ্যান্ডশেক টাও ফিরিয়ে দিই।উনি হয়তো অনেকটা আমার প্রতি অনুতপ্ত হয়ে যান এবং কলিজার কোণে ক্রোধটাকে ঝাঝালে করতে থাকেন।

কারণ,কোনো মহিলা এধরনের গ্যাঙ্গ নিয়ে মজামাস্তিতে লিপ্ত আমি তা মোটেও পছন্দ করিনা।আর জানিস,এই গ্যাঙ্গের প্রধান কে ছিল?

-কে?

-শিপ্রা আপু!!বর্তমান আমাদের ভাবী!!!

চলবে…

ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০৪

0

ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-০৪
রোকসানা আক্তার

হোস্টেলে এসে কাঁধের ব্যাগটা বিছানার উপর ছিটকে ফেলে বাথরুমে ফ্রেশ হতে চলে যাই।বাথরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত-মুখ মুছতে মুছতে মোবাইলের দিকে নজর পড়ে।কল হয় রিং বাঁজছে না,তারমানে ফোনটা সাইলেন্ট করা।তোয়ালে টা কাঁধের উপর আলতোভাবে রেখে ফোনটা হাতে নিই।শিমলা কল দিয়েছে।
-হু বল!কল দিয়েছিস কেন?না আসতেই কলের ছোটাছুটি!
-কল দিয়ে মনে হয় তোকে বিরক্ত করে ফেলছি!?
-আচ্ছা বাদ দে।কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।আমার আবার প্রচন্ড খিদে পেয়েছে কিছু খেতে হবে!.
-আমাদের না বলে চোরের মতো ঢাকায় চলে আসলি?বাসায় যে গুণগুণ কান্নার ছুটকী রেখে গেছিস তাকে থামাবে টা কে শুনি??
আমি স্পষ্টত বুঝতে পারি শিমলা এখন সাথীর কথা বলতেছে।
-তা আমি কি করে বলব?তুইতো একটা মালিশ, তোর মালিশে ওর কান্নাটা পালিশ করে দে।
-এই তুই আসলে এইরকম কেন বলতো আমাকে,শাওন?
হুট করে শিমলার কানের পাশ থেকে সাথী ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,
-ভাইয়া,তুমি রাগ করে চলে গেলে?তোমাকে অনেক মিস করতেছি।ভাইয়া কিছু খেয়েছ?কেমন আছো?ঠিকমতো পৌঁছেছো?
আমি চোখগুলো বুঁজে বিরক্তিবোধ নিয়ে ওর কথাগুলো শুনতে থাকি। এমুহূর্তে এসব ফ্যানফ্যানানি শুনার মোড নেই আমার। তারপরও ছোট বাচ্চা তো বুঝিয়ে শুনিয়ে কিছু একটা বলি।
-দেখ আমাদের সাথী সোনা,কান্না করবে না একদম।যদি কান্না করো তাহলে আমি আজ সারাদিন উপোস থাকবো।এই বলে দিলাম।
-আচ্ছা আমি কান্না করবো না।আপনি আগে খেয়ে নিন ভাইয়া?
-এই তো লক্ষীমেয়ে,যদি পাশে থাকতি একটা চুমু লাগাতাম।
-সত্যি ভাইয়া,আপনি আমায় আদর করতেন?
-হু করতাম!সাথী মিষ্টিটাকে একটা মিষ্টি আদর দিতাম।
-য়ু,লজ্জ্বা পাচ্ছি ভীষণ।।
মুহূর্তে যেন প্রেমের সাগরে তলিয়ে যাচ্ছি। মাথাটা ঝাঁকানি দিয়ে ধ্যান থেকে বেরিয়ে আসি,আর ওকে কড়া একটা ধমক দিয়ে উঠি।
-কাঁদবি না,একদম কাঁদবি না।রাখি।

এ বলে ফোনটা কেটে দিই।আজকে আর হোস্টেলের খাবার খাইনি,বাহিরে থেকেই দুপুরের লাঞ্চটা করে নিই।পথিমধ্যে ছোটকাকু কল দেন উনার বাসায় যাওয়ার জন্যে। খুব জড়োসড়ো রিকুয়েষ্ট আর না করে পারি নি।উনি উওরাতে থাকেন।উওরায় উনাদের বাড়ি।ছোট কাকুর সাথে আমার বাবার বিশাল ঝামেলা হয়েছিল।কারণ,কাকু গরীবের মেয়ে বিয়ে করাতে বাবা তা মেনে নিতে পারেননি।তাই বাবা আর কাকু-কাকি কে ঘরে তুলেননি।এতে কাকা বাধ্য হয়ে কাকিকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে।আজ কাকিমার অধ্যবসায়ের সুফলে অনেক বড় একটা বাড়ি করতে পেরেছেন।কাকিমা বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজার।তবে,কাকা-কাকিমার মনে সারাজনম একটাই দুঃখ থেকে গেল কাকিমা জননী এবং কাকা পিতা হতে পারেননি।এইজন্য,আমাকে ছেলের মতো স্নেহ করেন। বেড়াতে গেলে কখনো কোনোকিছুর কমতি রাখেন না।আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে আমার সাথেই উনাদের সম্পর্ক ভালো।মায়ের সাথে সম্পর্ক বাবার জন্যে বিচ্ছিন্ন আর বড় ভাই বাবার অনুগত। তাই ঢাকায় থাকলে উনাদের বাড়ি আমার প্রায়ই যাওয়া হয়।

আমি এসি গাড়িতে উঠে উওরায় নামি এবং কাকুর বাসায় এসে পৌঁছে যাই । আজ রাস্তায় জ্যাম খুবই কম ছিল,তাই কোনো রকম ঝামেলাহীনভাবে সহজে আসতে পারি।নাহলে,ঢাকার রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকতাম।

কাকা আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেন।কাকিমা ও হাসিমুখে দৌড়ে আমার হাতটা ধরে সোফার উপর নিয়ে বসান।
কাকা সানগ্লাসটা চোখের সামনে থেকে সরিয়ে কোনোমতে পানি মুছে বলেন,
-পরশু ফাহাদের বিয়ে গেল আর আমাদের যাওয়ার ভাগ্য হলো না।কত্ত আশা ছিল,ফাহাদ একদিন বড় হলে ওর বিয়েতে নাচবো, গাইবো। কিন্তু আশা যে কখনো অপূর্ণ থেকে যায়,তা তোমার ওই আউলা বাবার মুখটা না দেখলে বুঝতাম না।

-কাকা প্লিজজ,বাবার কথা ছাড়ুন।ইনসল্লাহ এই শাওনের বিয়ের প্রথম কার্ডটা আসবে এই বাড়িতে।

আমার কথা শুনে কাকা ও কাকি হেঁসে ওঠেন।
কাকা বলে উঠেন,
-ওটাতো অবশ্যই,বাবা।তোমার বিয়েতে যাওয়া আমার কিন্তু একদম মিস হবে না।ওই ত্যারা ভাইটাকে অন্তত তোমার বিয়ের সময় পরোয়া করবো না। কারণ,আমার ছেলে শাওনের বিয়েতে আমি থাকবো না এটা কেমন করে হয়!!.
-আচ্ছা কাকা, আচ্ছা।।
কাকিমা আমাদের কথার ফাঁকে বলে উঠেন,
-তোমরা ভবিষ্যৎ বিয়ের কথা বলতেছো,কিন্তু আমরাতো ইতোমধ্যেই একটা বিয়ের দাওয়াত পেতে যাচ্ছি।
আমি খুব উৎসুক হয়ে বলি,
-কার বিয়ে কাকি?
-আমার বোনের ছেলের।ও কানাডায় থেকে এসেছে এবং কাল এংগেইজমেন্ট।
-শাওন,মেয়েতো তোদের ভার্সিটির মনে হয়,নাহ শাহনাজ?(কাকা)
– কোন ভার্সিটির কথা বলেছিল আমার ঠিক খেয়াল নেই।
-কাকি মেয়ের নাম কি?
-সোহানা জাহান নিলা।রিয়াজুল সাহেবের একমাএ মাএ মেয়ে।বাড়ি ধানমন্ডিতে ওদের।মেয়ে তবে অনেক মাশাল্লাহ!!আর আমাদের শাহিদের জন্যে এরকম যে একটা মেয়ে পেয়েছি সত্যি তা ভাগ্যের ব্যাপার!!

ক্ষণিকে আমার দু’কান লাল হয়ে যায়,চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণতায় ছুঁয়ে যায়।এ’তো সোহানা নয়তো?বাড়ির ঠিকানা,পিতার নাম সবইতো মিলে গেছে!!এক মুহূর্তে এখানে থাকার ইচ্ছেটা মারা খায়।কাকা-কাকিকে তাগাদা দেখিয়ে বলে উঠি,
-কাকা-কাকি আমি এখন যাচ্ছি।আমার হোস্টেলমেট হৃদয় ঢাকায় নাকি ব্যাক করছে,তাকে একটু রিসিভ করতে হবে। আমার ঠিক খেয়াল ছিল না কাকা আপনাকে একথা বলতে।আপনাদের সাথে একটু দেখা হলো এতেই অনেক।
-সে-কি বাবা,না খেয়ে চলে যাবি?
-ইনসাল্লাহ, কাকিমা আরেকদিন আসবো।তখন খেয়ে যাবো।এখন আসি।
কাকিমা হাত বাড়িয়ে তাকিয়েই আছে,আর আমি উনাদের বাড়ি থেকে প্রস্থান করি।

রুমে গিয়ে পায়চারী করতে থাকি। বুঝতেছি না এসব কি হচ্ছে,সবটা তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।নাকি, সোহানার সাথে কথা বলবো একবার!ও কি সত্যি সত্যিই তাহলে বিয়ে করতে যাচ্ছে!?
নাহ,নাহ এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি মাথাটা গরম হয়ে যায় আমার!!
আমি এখনই তড়বড়িয়ে সোহানাকে কল দিই। তিন,চারবার রিং বাঁজার পর কল উঠায়।
-হ্যালো,সোহানা?(অস্থির অনুভূতি নিয়ে বলি)
-জ্বী,কিছু বলবেন?মিস্টার শাওন?
-সোহানা আমায় এটা বলো, তোমার হবু বরের নাম কি?
-শাহিদ চৌধুরী হাসান।
নামটা শুনার পর পুরো পৃথিবী আমার চারপাশটা ঘুরতে থাকে।আমিও যেনো ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে পড়ে যাচ্ছি।।
-তুমি সত্যি উনাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো?তুমি কি জানো?উনি আমার রিলেটিভ?!.
-ওতো কিছু জেনে আমার কোনো লাভ নেই,মিস্টার শাওন! আপনিতো এটা খুব ভালোকরে জানেন, সোহানা খান একবার যে সিদ্ধান্ত নেয়,সেটাতেই অটল। একদম নড়ছড় নাই।
-তাহলে শেষ পর্যন্ত তুমিও আমায় ঠকালে!?বাহ,এতদিন পর তাহলে তোমার আসল চেহারাটা দেখতো পেলাম!ধন্যবাদ!!আসল চেহারাটা দেখানোর জন্যে!!
-বাজি ধরে যে ছেলে আমায় ভালোবাসে সে ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা বৃথা।আর আপনার ভাবীর সাথে বাজি ধরলেন না?ওই ভাবীকে জিতে যাওয়া টাকাগুলো ফেরত দিয়ে দিন।এতে,সোহানা নামের কোনো মেয়ের কথা কখনোই ভাবনায় আসবে না।রাখি।
-শুনো,তোমার কিন্তু ভুল হচ্ছে।তুমি প্রতিটি পদে পদে আমায় ভুল বুঝে এসেছ!তুমি বিলিভ করো,আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে বাজি ধরেছি!জাস্ট ইট!!এসব উদ্ভট কথা কেন বলো!বুঝাও আমাকে!
-কি বুঝাবো?কাল জিনুক আপনার ফ্রেন্ডের থেকে শুনে আমায় বলে দিয়েছে!আমিতো এসবের কিছুই জানতাম না আগে!!এমন একটা বেইমানকে আমি ভালোবেসেছি যে কি না আমার স-সাথে বাজি…
এই বলে থেমে যায় সোহানা। আর তড়িঘড়ি কলটা কেটে দেয়।
কথাটা নিশ্চয়ই আমার রুমমেট হৃদয় বলেছে!কারণ,ওর কাছেই শুধু জিনুকের নাম্বারটি ছিল!!
এছাড়া,এসব কথা ও ছাড়া আর কেউ বলবে না!!
সন্ধে হয়ে আসে।এরইফাঁকে হুট করে হৃদয়ের মেসেজ।ওর আর্জেন্ট একটা প্রবলেম হয়ে গেছে,ওর লিভারের রিপোর্টটা আজ হাতে পাবে সেইজন্যেই ঢাকা ব্যাক করা।
আমি শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ফুলে উঠি।আজ ওকে ইচ্ছেমতো মারবো।আমার অপেক্ষা,আর এখন শুধু ওর আসার পালা।

এশারের আযানের পর ও রুমে এসে উপস্থিত রিপোর্ট হাতে নিয়ে।আর ধুকধুকি বাঁজিয়ে বলে,
-ইয়াপ দোস্ত, আমি অনেক ভয় পেয়েছি। ভাবলাম রিপোর্টটা খারাপ আসবে।যদি খারাপ আসতো তাহলেতো প্রাণের সিগারেট খাওয়া অফ হয়ে যেত।এই দেখ,আসার সময় ২ টা প্যাকেট সিগারেট নিয়ে এসেছি,আজ প্রাণ খুলে খাবো,আর আনন্দ করবো।
আমি একপায়ের হাঁটু গুঁজে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি।
ও মনের নাচুনে বেলকনিতে যায়।আমি পা টা বের করে ধীরে ধীরে পা ফেলে ওর কাছে আসি।
ও আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-একটান নিবি, নে?
-তুই জানিস না আমি স্মক করি না?
এ বলে চোখগুলো আগুনের মতো লাল করে ওর নাকের ডগায় জোরে দুটো ঘুষি বসিয়ে দিই।মুহূর্তে ঝরঝর করে রক্তের স্রোত যেতে থাকে!!এখনই ওকে না পারি এক কামড়ে গিলে ফেলি।ওর শার্টের কলারে হাত দিয়ে বলি,
-তোর সাহসতো কম না? জিনুকের সাথে প্রেম করার ইচ্ছে জাগছে আর মিলিয়ে দিলাম আমি। আর তুই ঘরের ইদুর হয়ে ঘরের বাণ কাটছিস,শালা!!!একদম মেরে ফেলবো!! মেরে ফেলবো তোকে!

হৃদয়ের মুহূর্তে চোখগুলোর পলক ছোট হয়ে আসে। আর নড়বড়ে ফ্লোরে ধপ্পাস করে পড়ে যায় এবং
বাঁচাও বাঁচাও বলে আওয়াজ করে করে তুলে।আমি আর একমুহূর্তে দেরী না করে ওকে ছেড়ে দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে তরহর করে রুম থেকে বেরিয়ে যাই।নাহলে বিপদ হতে পারে।জীবনের এই প্রথম কারো গায়ে হাত তুলেছি,তাই অনেকটা ঘাবড়ে গেলাম।হয়তো,হৃদয় তা দু’চোখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি।

আমি হোস্টেলের কর্তৃপক্ষের চোখের আড়াল হওয়ার জন্যে কিছু না ভেবেই চলন্ত একটা বাসে উঠে বসে পড়ি।বাসটি এখন কোথায় যাচ্ছে আমি নিজেও তা জানি না।পুরো শরীর ঘামে ভেজে একাকার।।
ড্রাইভারের কথার আওয়াজে বাসটি থামে এবং পরে বুঝতে পারি বাসটি গুলিস্তান এসে পৌঁছেছে, সামনে আর যাবে না।আমি বাসটি থেকে নেমে পড়ি।এখন কোথায় যাবো,কোথায় থাকবো, কি করবো মাথায় কিছুই কাজ করছে না।
একটা দোকানের কিণারা ঘেষে বসে পড়ি, নিয়ন বাতির আলোয়তে রাতের ঢাকা শহর অন্যরকম লাগে।আজ মনে হয় সারারাত এখানেই কাটিয়ে দিতে হবে।কারণ,আপাতত কারো বাসায় যাওয়ার উদগ্রীব মনটা হারিয়ে ফেলছি,মস্ত বড় একটা বিপদ ঘটিয়ে এখানে মাথায় হাত দিয়ে ক্ষান্ত মন নিয়ে বসে আছি।রাত যত গভীর হতে থাকে,
চারপাশ লোকদের তত আনাগোনা কমতে থাকে।
একটা মুহূর্তে গাড়ি,রিক্সা,সি.এন.জি,ঘোড়ার গাড়ি চলাচল বন্ধ হয় যায় এবং সম্পূর্ণ স্থানটি মানুষ বিহীন ফাঁকা।।
এখানে বসেই নিবৃওি কেটে যায় আমার সারারাত।সকালের দিকে ১০ টাকা দিয়ে একটি খোলা বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি এবং চায়ের দোকানে গিয়ে মালাই করা একটা দুধ’চা খেয়ে নিই।

সকাল না হতে ব্যস্ত নগরের মানুষজন ব্যস্ততা নিয়ে যার যার কর্মস্থলে ছুটে চলে।সেদিকে কতক্ষণ তাকিয়ে ভাবি,
মানুষের জীবনটা আসলেই অনেকটা কষ্টের!
এভাবে অনেকক্ষণ এদিক-ওদিকটা হেঁটে-হুঁটে স্থানটি যখন আর কোলাহলপূর্ণ হতে থাকে,তখনই বিরক্তিবোধ কাজ করতে থাকে।গুলিস্তান এলাকাটি এমনিতেই অনেক জনবহুল,তার উপর বাস স্টেশনগুলো।চিপা চাপা রাস্তা,একফাঁক জায়গা নিয়ে হাঁটতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।।
তিক্ত মন নিয়ে আবার আরেকটা কোণে জায়গা করে নিরবে দাড়িয়ে থাকি। এসব ব্যাপারে শিমলাকে জানানোর জন্যে উদগ্রীব হয়ে তৎক্ষনাৎ শিমলাকে কল দিয়ে উঠি,
-হ্যালো,শিমলা??বোন, আমি আজ অনেক বড় একটা অপরাধ করে ফেলেছি।
-কি বলছিস,শাওন। কিছুই বুঝছি না।আবার বল।
চারপাশের গাড়ির হর্ণে আমার কথার আওয়াজ ওপাশে পৌঁছায় না।
পরে,কলটা কেটে দিই।

এভাবে এখানে উঠা-বসা করেতো সময় কাটালে হবে না।হৃদয় যদি মারা গেলো?আর আমাকে পুলিশ দিয়ে যদি তাড়া করা হয়,নাহ এখানে বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকার সুবিধে মনে হচ্ছে না।
মোবাইলটা ভালোভাবে হাতের মধ্যে আঁকড়ে ধরে বিকাশ দোকানে ঢুকি। বিকাশ থেকে কিছুটা টাকা তুলে নি।।
এরমধ্যে শিমলা কল দিয়ে উঠে,
-হ্যালো,শাওন??তুই কোথায়? একটু বাড়ি আসতে পারবি আর্জেন্ট?
আমি অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি,
-বাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে রে, শিমলা?
-হ্যাঁ-রে,তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আস।
আমি কলটা কেটে দিই তড়িঘড়ি ।
বাড়ির সমস্যা বলতে আমার মায়ের কিছু হলেই আমি মরে যাবো।প্রায়ই বাবা মায়ের সাথে ঝগড়া করে,মাকে উল্টাপাল্টা হাইপার করে দিলে মা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যান।প্রেশারের রোগীর জন্য এটি একটি বড় সমস্যা।

খুলনার টিকেট কেটে বাড়ি রওনা করি।অতঃপর খুলনা সদরে বাস এসে থামে আমি বাস থেকে নামতেই চোখপড়ে পৃথুলীর দিকে ।ও বুচকা-বুচকি হাতে নিয়ে একটি বৃদ্ধমহিলার সাথে দাড়িয়ে আছে।হয়তো বাসে উঠার ব্যাকুল আগ্রহে। আমি পৃথুলী বলে ওকে ডাক দিই। ও আমায় দেখে বৃদ্ধা মহিলার পেছনে মুখ লুকোতে আপ্রাণ চেষ্টা।
কিন্তু আমিতো ভয় পাওয়ার মতো কিছুই বলিনি।জাস্ট ওর নামটা ধরে ডাকছি।

আমি অনেকটা অবাক হচ্ছি। যে মেয়ে হাসিখুশি কথা বলেছে দু’দিন আগে, সে মেয়ে এখন আমায় এত্ত ভয় পাচ্ছে কেন!?
তবুও সাহস নিয়ে ওর একেবারে সামনে চলে আসি।বৃদ্ধা আমায় দেখে বলে উঠে,
-এই ছেলে তুমি আমার নাতনীকে তাড়া করছো কেন?.
অবাক দৃষ্টি দিয়ে বুড়ির কথা শ্রবণ করি
দেখতে তো বয়স আশি,কথার টনক তো তারুণ্যকেও হার মানাবে! তারপর বলি,
-নানী আমি আপনার নাতনী!শিপ্রা ইসলামকে তো চেনেন,না?
-কোন শ্রিপা?
এবার বুঝলাম বুড়ির বয়স আশিই ইজ পারফেক্ট। কারণ,বুড়ি ঠাহর করতে মনে হয় দাঁত ৩২ মড়মড়ে ভেঙ্গে যাবে,যাইহোক এখনতো গালে দুঃ’টো বাদে সবগুলো ফাঁকা।
-কিছুদিন আগে যে শিপ্রার বিয়ে হলো,ও।
-ও হ্যা,চিনতে পারছি। তো তুমি কে ভাই??
-নানু,চলো? আমরা চলে যাই,ও একটা খুনী!ও আমাদের মেরে ফেলবে!!!(পৃথুলী)

পৃথুলী আমাকে আর কথা বলতে না দিয়ে ভয়ে ভয়ে ওর নানুর হাত টেনে আমাকে অতিক্রম করে চলে যায়।হয়তো বৃদ্ধা কিছুই না বুঝে মুখটা হা করে পৃথুলীর সাথে চলে যায়।কিছু জানতে চেয়েও জানার সময়টুকু পাননি।

আর, আমি হতভম্বতার সহিত দাড়িয়ে থেকে ভাইয়ের বউ ডাইনীর কথা ভাবতে থাকি।ওই ডাইনীই ছোট এই মেয়েটির কানে উল্টোপাল্টা থিউরি সোপে দিয়েছে,এজন্য মেয়েটি হয়তো আমায় দেখে এত্ত ভয় পাচ্ছে৷।
কিন্তু কী এমন থিউরী ওর মেমোরীতে ঢুকিয়ে দেবে!?এসবের মানে বুঝতেছি না।ওই ডাইনী যতই চালাকি করুক না কেন,এই শাওনের সাথে ও যুদ্ধে কোনোদিনও জিতবে না।ইট ইজ মাই প্রমিজ !!

অবশেষে বাড়ি এসে পৌঁছাই।বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই ড্রাইনিং-এ মা,বাবা,ভাই এবং উনার বউ বসে আছেন।আর শিমলা মায়ের পাশে দাড়িয়ে আছে।
মায়ের মুখটায় বিষন্ন চিন্তার চাপ,বাবা ক্রুদ্ধতায় অন্যদিক তাকিয়ে আছে,ভাই-ভাইয়ের বউ শতানী মনোভাব নিয়ে একে-অপরের দিকে তাকাতাকি করছে।আমি বুঝতে পারি নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল ঘটেছে।

আমি হালকা গলা কেশে হাটিহাটি পা ফেলে উনাদের সামনে আসি।আমায় দেখে সবাই অনেকটা
চমকে যায়।কারণ বাড়িতে আজতো আমার আসার কথা না।শিমলা যে আমায় আসতে বলেছে এটা শুধু শিমলা এবং আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।এমনকি মাও না।পরক্ষণে ভাইয়া আমায় দেখে বলে উঠে,
-ওহ,তুই আসছিস ভালো করছিস।তোর সাথেও আমার কিছু হিসেব মিটমাট করার আছে!!
আমি ভাইয়ার কথা শুনে অনেকটা ভড়কে যাই,কি এমন কিছু মিটমাট করের জন্যে সবাই গোল বৈঠকে বসলো!!গলাটা পরিষ্কার করে বলে,
-আচ্ছা কি বলবে,বলো!
-আমারদের যে পুরনো বাংলোটা আছে ওটার ভাগ আমি তোকে দিতে চাচ্ছি না!আমি তোকে ওটার বদলে অন্যদিক দিয়ে ভাগ দিয়ে দিবো!!!কারণ,আমি ওটা বিক্রি করে ব্যবসায় শুরু করবো!বাবার এতে কোনো অসম্মতি নেই,বাবা মেনে নিয়েছেন।এখন,মা আর তুই কি বলতে চাস ক্লিয়ার কর!

আমি ভাইয়ার কথা শুনে অনেকটা ধাঁধায় পড়ে যাই।কারণ,এই বাংলোটা আমার নানা আমার মাকে বিয়ে উপলক্ষে গ্রিফট দিয়েছিলেন।কারণ,আমার মা নানার একমাএ মেয়ে ছিলেন এবং নানার সব সম্পওিই মায়ের।তাহলে,এটা ভাইয়া বিক্রি করতে যাচ্ছে কোন দুঃখে!! মা জীবিত থাকতে এসব হাঙ্গামা ভাইয়াকে দিয়ে এখনই শুরু করে দিল এই মহিলা!!
আমি টপকে ভাইয়ার কথার জবাব দি।
-আমার তাতে কোনো আপওি নেই যদি মায়ের আপওি না থাকে!!
মা আমার দিকে চেয়ে সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন,চেহারাটা বলছে মায়ের মনটা ভীষণ ভার দুঃখে-ক্ষোভে।
-তোর মা কি বলবে?!এখানে আমি যা বলব তাই হবে!!(বাবা)
-বাবা,দেখো?এটা মায়ের শেষ স্মৃতি!মায়ের একটা স্মৃতি অন্তত তো টিকিয়ে রাখো?
-এখানে আমার ছেলে ব্যবসা করতে চাচ্ছে এটাতো খারাপ কিছু না।অকেজো বাংলো টা খালি খালি রেখে কোনো লাভ আছে বরং তা থেকে কিছু টাকা আসবে সে-ই ভালো।
-নাহ,বাবা এটা হতে পারে না!!
আমি যে-ই বাবার বিরুদ্ধে কথা বললাম ওমনি ভাই এসে আমার গালে ঠাস ঠাস দু’টো চড় বসিয়ে দেয়।শিমলা এ দৃশ্য দেখে মুখে হাত দিয়ে হতবাক হয়ে যায়,মা আঁচলের মধ্যে মুখটা গুঁজে চোখের পানি মুছে নেয়।
মনের অজান্তে আমার চোখ বেয়ে দু’ফুটো টপকে জল গড়িয়ে পড়ে।
-ছোট আছিস ছোটদের মতো থাকবি!বড়দের সাথে তর্ক করা মানায় না!আর কোনমুখে তুই কথা বলতে আসছিস?আমার বউয়ের মান-ইজ্জত খেয়ে?বেয়াদব!!সর আমার সামনে থেকে!!
বাবাও ভাইয়ের সাথে আমার উপর ক্রুদ্ধ ভাব এনে অন্যদিক মুখ করে তাকিয়ে থাকে।

আমি গালে হাত দিয়ে উনার কথা শুনে যাচ্ছি । ভাইয়ের বউ এরইমধ্যে বলে উঠে,
-ঠিক করলে ফাহাদ!!এসব কুলাঙ্গারকে কিসের বাংলোর ভাগ দিবে?এদের তো রাস্তায় জায়গা করে দেওয়া উচিত,ওখানে থালা পেতে ভিক্ষা করে খাওয়ায় এদের শ্রেয়!!

আমি দাড়িয়ে না থেকে তড়িঘড়ি আমার রুমে চলে আসি, আর হাতের কাছে যততএ যা পাচ্ছি সব ফ্লোরে সজোরে আঘাত করে ভেঙ্গেচুরে দিচ্ছি।শিমলা আমার রুমে এসে আমায় বাঁধা প্রদান করতে থাকে করতে!
-পাগল হয়ে গেছিস,তুই?এসব কি করছিস!?উনারা সব বলবে আর তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি নাকি?বরং প্রতিবাদের ঝড় তুলবি।কারণ,এটা তোর বাবার সম্পওি না যে কুওাকে বিলিয়ে দিবি,এটা তোর মায়ের সম্পওি!!

শিমলা ভাই-ভাইয়ার বউকে কুওা বলে সম্বোধন করাতে আমি অনেকটা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাই!!হাত দিয়ে ইঙ্গিত করি এরকমটি ও কেন বলছে,ও’কি সব জানে!?
-শাওন,তোর সাথে যা হয়েছে আমি সব জানি।দেখছিস?তুই আমায় বলিসনি কিন্তু আন্টি আমায় কালরাত সবটা কুলে বলেছেন!

শিমলার কথা শুনে কলিজাটা আমার অনেক বড় হয়ে যায়!শিমলাকে কাছে টেনে বলি,
-শিমলা শুধু আমার সাথে কেনই বা এসব হচ্ছে ? আমিতো কখনো কারো ক্ষতি করিনি!
-এসব হয়ে যায় রে! মনের অজান্তে!!তবুও নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখতে হয়।নাহলে,এই মিথ্যে পৃথিবীতে দুর্ভাগাদেরই ঢুকরে ঢুকরে মরতে হয়।
-শিমলা তুই জানিস? এই ডাইনীটা হচ্ছে সেই শিপ্রা ডাইনী যার জন্যে আমি আজ আমার সোহানাকে হারাতে বসছি!

-কী!???
শিমলা প্রায়ই হতবাক!!!
চলবে…..

ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০৩

0

ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্বঃ০৩
রোকসানা আক্তার

আমি রুমে ঢুকতেই আমার ফোনটা বেঁজে ওঠে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই নাম্বারটি অপরিচিত মনে হয়। ইতস্ততাবোধ নিয়ে কানের কাছে মোবাইলটি গুঁজতেই ফোনের ওপাশ থেকে কড়া কড়া গলায় ভেসে আসে,
-যে ছেলে অন্য মেয়েকে পেতে নিজের গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ব্রেকাপ করে, সেই মেয়ে অতঃপর ভাবী হয়ে ঘরে আসলো !নাকি বন্ধকী ভাইকে দেওয়া হলো!!!

কন্ঠস্বরটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝতে আমার সমস্যা হলো না।সোহানা আজ এক বছর পর আমায় কল দিল!!কতগুলো স্মৃতির পাতা খোলাসা হচ্ছে ধীরে ধীরে।।
-সোহানা তুমি?হঠাৎ আমার মোবাইলে কল?
-কেন?কল দিয়ে অনেক বড় অপরাধ করে ফেললাম নাকি?
-না,না তা বলি নি।আজ ১ টা বছর চলে গেল,কারো সাথে কারো কথা হয়নি।
-কথা বলার মুখ রাখলেইতো!!যাইহোক,আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আপনার ভাই বিয়ে করলো কেন?
-সোহানা তোমার ভুল হচ্ছে কোথাও!তুমি এই ভুল বুঝাবুঝির কারণে আজও তুমি আমায় ঘৃণা চোখে দেখতেছো।উফস,সোহানা তোমাকে আমি কিভাবে বুঝাবো!!
-আমার বুঝতে হবে না!দু’টো বছর রিলেশন করে অনেক বুঝে ফেলেছি।আর হ্যাঁ,এখন বুঝেও কোনো লাভ নেই।কারণ, আগামী মাসে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে।আর বিয়ের পর কানাডা চলে যাবো।

এরইমধ্যে মা এবং শিমলা আমার রুমে এসে হাজির হয়।
-বাবা,ভালো করছিস ফাহাদের শ্বশুর
বাড়ি যেতে রাজি হোস নি।

আমি তরহর ফোনটা কেটে দি।আর মায়ের মলিন চেহারা খানা দেখে কাছে গিয়ে বুকে টেনে নিই মাকে।
-মা,তুমি শুধু আমায় দোয়া করবে।মায়ের দোয়ায় পৃথিবীর কোনো অশুভ শক্তি সন্তানের বিপদ ডেকে আনতে পারে না।
শিমলা আমাদের কথার ভাবাবেগ না বুঝে ভ্রু কুঁচকে বলে,
-ব্যাপার কি শাওন,আন্টি?কোনো সমস্যা হয়েছে?

শিমলাকে আমি চোখ টিপ মেরে ইঙ্গিত করছি যে ব্যাপারটা ওকে পরে বলবো,মায়ের সামনে নয়।
শিমলা বুঝে দু’পাশে মাথা নাড়ে।
আমি মাকে বুক থেকে ছাড়িয়ে মুখটি সামনে এনে বলি,
-আচ্ছা মা, তুমি এখন ভীষণ ক্লান্ত।যাও এবার একটু রেস্ট নাও মা।
মা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলেন,
-আচ্ছা তাহলে তোরা কথা বল আমি যাচ্ছি।
-আচ্ছা মা।

মা চলে যাওয়ার পর শিমলাকে হ্যাচকা টান দিয়ে বিছানার উপর বসিয়ে আমি পাশে বসি।
-শালা,তোর হাতটা তো একটা গণ্ডারের হাত!এত জোরে কেউ টান মারে?দেখ,হাতটা কত্তো লাল হয়ে গেছে!এখন মলম লাগিয়ে দে।
-তুই কি আমার ঘরের বউ নাকি যে মলম লাগিয়ে দিব?
-বউ না-ই হলাম,তুইতো জানিস আমি তোর জান।এই জানকে প্রাণের কথা বলতে বলীয়ান।
-আসছে আমার কবিরে…!!জীবনে তো একটা ছড়াও বলতে পারিস নি আবার আসছিস কবি কবি ভাব নিতে?
-কবি হয়ে ঘুরবো বৃন্দাবন। প্রিয় মানুষগুলোর থেকে আড়ালে রব চিরকাল!

শিমলার কথাটি শুনে আমার মুডটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।কারণ,সে একটা ছেলেকে একসময় অনেক ভালোবাসতো।তার নাম ছিল কায়েস।
কিন্তু কায়েস শিমলার সাথে ছলনাময়ী খেলা খেলে জিতো যায়।সে শিমলাে দূরে সরানোর জন্যে ক্যান্সারের রিজন দেখায়।শিমলা তা সত্যি সত্যি বিশ্বাস করে ফেলে এবং কায়েস যতদিন বাঁচবে, ততদিন তার পাশে থাকবে শিমলা। এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ছিল শিমলা ।তাও ছেলেটি নারাজ।সে কিছুতেই শিমলাকে কষ্ট দিতে চায় না।তাই শিমলা প্রিয় মানুষটির মুখে হাসি ফুটানোর জন্যে কায়েসের কথায় রাজি হয়ে কমিউনিকেট অফ করে দেয়।এভাবে,১ মাস,৬ মাস, ১২ মাস পার হয়। তারপরও শিমলা ছেলেটির অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে।
একদিন এসে বলবে,
শিমলা চলো,দু’জন একসাথে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাই।ওখানে কোনো শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারবে না।কিন্তু না,ছেলেটির কোনো খবরই শিমলার কাছে আসে না যেন দু’জন দু’পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন । শিমলা প্রায় ভেবেই নেয় কায়েস মারা গেছে। এ দুঃখ বুকে ধারণ করে প্রতিজ্ঞা নেয় শিমলা আর কারো সাথে নো রিলেশন এন্ড নো বিয়ে!!এভাবে অনেকদিন ওর একাকিত্ব জীবন কাটে।
একদিন,শিমলা ভার্সিটি যাওয়ার সময় কায়েসের বন্ধু রিদনের সাথে পথিমধ্যে দেখা হয়।তার থেকে জানতে পারে ক্যান্সারের রিজন দেখিয়ে সে শিমলাকে ছেড়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে এখন সংসার করতেছে।
পৃথিবীটা আসলেই স্বার্থপর!মানুষ ক্ষণিকে মানুষকে ভুলে যেতে পারে!
শিমলার কথা ভাবতে আমার মনটাও খারাপ হয়ে যায়।কারণ,সোহানার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে!ওর সাথে আমার রিলেশনটা যদিও টাইমপাশ ছিল,তবুও হৃদয়কোণে ওর প্রতি একবিন্দু হলেও মায়া জমেছিল। কারণ,ভালোবাসাহীনতায় ও আমি ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।।
-আমার মন খারাপ বিধায়, তুই ও মন খারাপ করে ফেললি?
শিমলার কথা শুনে হকচকিয়ে ওর মুখের দিকে তাকাই।
-তুই আমার মনের ভাষা বুঝলি কিভাবে রে?
-আমি যে তোর মনের মানুষ এজন্য।
এ বলে আবার খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে শিমলা। এবং আবার বলে,
-আচ্ছা এবার শোন,আমি যে কারণে তোদের বাসায় আজ থেকে গেছি,সে কারণের ফয়সালাটা আগে শেষ করি।
-কোন ফয়সালা?(ভ্রু কুঁচকে বলি)
-সে-কি! তুই মুহূর্তেই সব ভুলে যাস!আজ দুপুরে কি বলেছিলি আমায়?
শিমলাকে জঘন্য ঔ মহিলার কথা বলতে যেয়েও পারি না।মুখটা যেন বন্ধ হয়ে আসছে।শিমলা যদি আমায় খারাপ ভাবে, তখন? সবাই যদি আমার দোষ দেয়?ট্রিকিবাজরা অনেক মিথ্যেকেও সত্য উপস্থাপন করে।
নাহ,নাহ এই বিষয়টি আমার মাঝেই লুপ্ত থাকুক। কথাটি এড়িয়ে সোহানার কথা নিয়ে আসি।
-ওহ,হ্যাঁ হ্যাঁ।জানিস?সোহানার বিয়ে হতে যাচ্ছে।

-তাহলেতো,ছ্যাকা খেয়ে বসলি।আমি না একটা জিনিস ভাবি,জানিস সেটা কী?
-কী,বল?
-তুই বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে যার সাথে রিলেশন করেছিলি,সে মেয়েই তোকে এখন ঠকাচ্ছে?শুনে হাসি আসলো।
-তুই না সবসম কথা না বুঝে কথা বলিস!
-আচ্ছা শোন শোন ফান করছি।আর,এই তুই দিনকে দিন এত গোমড়ামুখর হচ্ছিস কেন রে?যে কোনো বিষয়ই সিরিয়াসভাবে নিচ্ছিস।নতুন কারো প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি রে?

-আবার সে একই কথা! দাৎ আমি গেলাম!
এ বলে বিছানা ছেড়ে উঠতেই শিমলা আমার হাতটা টান দিয়ে বিছানার উপর বসায়।
-শাওন, শোন?সোহানার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,কারণ ও তোর কপালে নেই।আর তুইতো ওকে নিজ থেকে ভালোবাসিস নি জাস্ট বাজি।বাজির ঠেলায় ছক্কা!এটাইতো!?আর তুইতো কখনো বলিস নি সোহানাকে মন থেকে ভালোবাসিস।
-হেলেদুলে মজা করাটাও অনেক সময় বাস্তব হয়ে যায় শিমলা,জানিস তুই?
-এখন কি ওকে পালিয়ে নিয়ে আসবি?তোর এখনো অনার্স শেষ হয়নি এন্ড ইউ ডোন্ট হ্যাভ এ্যানি জব!আই থিংক,মেয়ের বাবাও সোহানাকে তুলে দিবে না।পরে,অনেক ঝামেলা হবে।
-উফস,তুইতো আমার কথা বুঝছিস না শিমলা। আমি বলতে চাচ্ছি আমার উপর সোহানার এখনও ভুল ধারনা, সে এখনো আমায় ফ্রট ভাবে!!
-তা দিয়ে তুই কি করবি?
-আমি এত্ত কিছু জানি না। আর ব্যাপারটি হলো,ও-ও কখনো আমার থেকে কারণ জানতে চায়নি ব্রেকাপের। আমি ব্রেকাপের কথা উঠোতেই ও মহাখুশিতে ব্রেকাপ মেনে নেয় যেন সে বন্দী খাঁচা থেকে ছাড়াপাখি।শিমলা তুই জানিস না?যতদিন ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল,ততদিন ঝগড়াঝাটি, ভুল বুঝাবুঝি এরকম পরিস্থিতি ছিল!আমিও আর সহ্য করতে পারিনি।তাই রাগের বশে….
-তাই রাগের বশে এই জ্বালা থেকে বাঁচার জন্যে ভার্সিটির ওই গুন্ডি আপুর মাধ্যমে একটা রিজন ক্রিয়েট করে ব্রেকাপ,রাইট?তোরা ছেলেরা না আসলে ধোঁকাবাজ মেয়েদের মন নিয়ে খেলিস!
-পাগল হয়ে গেছিস,তুই?এসব কি বলছিস?এসব কিছুই না।
-আচ্ছা আমি মানলাম এসব ফল্ট! এবার আমায় বল,ওই আপুটি ragging এ ব্রেকাপ করাতে বাধ্য করিয়েছিলেন তোকে,তাহলে এখানে উনার কি স্বার্থ ছিল?আর এমনত নয় যে তোর ব্রেকাপের পরতো উনি তোর সাথে সম্পর্ক গড়তে লাফাচ্ছিল ,বরং পরে উনি ভার্সিটি থেকে উধাও।আই গেইজ,উনি কোনো প্রেতাত্মা ছিল নাতো?
শিমলা এ বলে খিলখিলিয়ে হেঁসে দেয়।কারণ শিমলা নিজেই জানে না এখন ওই ডাইনীটা আমার ভাইয়ের বউ!!!ভাবনা ঝেড়ে শিমলাকে বলি,

-প্রেতাত্মা নয়!উনার সেমিস্টার কম্প্লিট হয়ে যায়।আর কেন করিয়েছিলেন তার কারণ জানি না।
-আর তুইও একটা গাধা!কেউ থ্রেট দিলেই কি নিজের প্রিয় মানুষটিকে হারাতে হয়?
মুহূর্তে আমার মাথাটা নিচু হয়ে আসে।কারণ,একমাএ আমিই জানি কি হয়েছিল আমার সাথে।মানুষ যখন কোনো কূল খুঁজে পায় না,তখন তার শখের জিনিস গুলোকেও একসময় ছেড়ে দিতে হয়।

-জানি বলবি না।কারণ,যতবার জানার চেষ্টা করেছি,ততবারই এড়িয়ে গেছিস। আর শোন,সাথী তোদের বাসায় আজ থেকে গেলো,তোকে কিছু কথা বলার জন্যে!!

শিমলার কথায় মাথা উঁচিয়ে অনেকটা হকচকিয়ে যাই।
-মানে,কিসের কথা?
-জানিস,যে মানুষগুলো আমাদের পাওা দেয় না,ওই মানুষগুলোর পেছনে আমরা ছুটে চলি।কিন্তু আমরা কখনো কি ভেবেছি এর থেকেও বেশি নিজের অতি চেনা মানুষগুলোও প্রাণ উজাড় করে আমাদের ভালোবাসে,তবে আমরা তার মর্যাদা দিই না।
-তুই বলতে চাচ্ছিস,আমি সাথীর সাথে রিলেশন করি,এটাই?
-হু শাওন।সাথী দেখতে শুনতে খারাপ নারে।অনেক ভালো মেয়ে। তোকে সবসময় খুশিতে রাখবে,কখনো কষ্ট পেতে দিবে না।কষ্টটা বুকে চেপে রাখা কতটা যে কঠিন,সেটা আমিই জানি।তাই আমাদের ওই মানুষগুলোকে বেশি ভালোবাসা উচিত যারা আমাদের তাদের থেকেও বেশি ভালোবাসে।।
-হাউ ইজ ইট পসিবল,শিমলা!ও একটা ছোট বাচ্চা!এসব অর্থহীন কথা বলে হাসাচ্ছিস নাকি?
ওকে আমি আমার বোনের মতো দেখি,জাস্ট ইট।
-যাইহোক,যা-ই ভাবিস।আর মাএ ২/৩ বছর পর ১৮ বছর হবে,ততদিনে তুইও নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারবি।এখানে বয়স নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
তবে সাথীর সাথে একবার কথা বলে দেখিস।গেলাম প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। আজ নাচানাচি করে ক্লান্ত,তার উপর অনেক খেয়েছি।এখন শান্তির একটা ঘুম দিলে আরাম হবে।যাই।

শিমলা রুম থেকে প্রস্থান করে।আমি বুঝতে পারি,শিমলা চায় আমি সাথীকে ভালোবাসি আর সোহানাকে ছেড়ে দিই।কিন্তু সোহানাকে ও যেমনটি ভাবছে সোহানা তেমনটি নয়!!
সোহানার প্রতি ফিলিংসটা শূন্যহীন সবার সামনে,কিন্তু মনের গভীরে অনেকটা মায়া জমে আছে।
ইদানীং শূন্য রুমটায় একাকীত্ব অনুভব করতেছি।কারো সামনে লজ্জায় যেতে পারছি না।মাথায় কোনোকিছুই কাজ করছে না।
উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে সব। নাকি ঢাকায় ব্যাক করবো!
মনটাকে স্থির না রাখতে পেরে বিছানা থেকে উঠে দাড়াই।টিপটিপ পা পেলে দরজার দিকে হাঁটা ধরি।হুট করেই কারো শরীরের সাথে ধাক্কা খাই।তাকিয়ে দেখি,সাথী!!
-ত-তুমি?
-হ্যা,আমি।কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া?
-এ-এইতো মায়ের কাছে।বাবা কোথায় জানো?
-আঙ্কেল বসার রুমে।উনি আপনার চাচার সাথে একটু পর বাহিরে যাবে।
-ওহ।।ভেতরে আসবে?
-আসতে চাচ্ছি যদি অনুমতি দেন?
-আচ্ছা সমস্যা নেই আসো।
অন্যদিন থেকে আজকের দিনে সাথীর সাথে কথা বলতে কেন জানি ইতস্ততাবোধ করছি। অন্যসময় আসলে ওর সাথে শুধু দুষ্টমিতেই মেতে উঠতাম।আজ কথাও বলতে পারছি না।
সাথী বিছানার উপর গিয়ে বসে আর আমি চেয়ার টেনে বসি।
অনেকক্ষণ সে ও চুপ থাকে, এবং আমিও।তারপর ও কথার প্রলাপ ফেলে বলে,
-ভা-ভাইয়া,আপনাকে কিছু আজ সত্যি সত্যি কথা বলতে চাচ্ছি।

আমি লাগামহীন ভাবে বলি,
–আমি জানি তুমি কি বলবে!কিন্তু সেটা সম্ভব না।কারণ,তুমি এখনো অনেক ছোট,কিছুই বুঝো না।।
-ভাইয়া,আমি এখন ক্লাস টেনে পড়ি।আমি এখনো ছোট নই।আর,আমার সাথের অনেক বাব্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে।
-তা দিয়ে তুমি আমায় কি বুঝাতে চাচ্ছো?তোমার চঞ্চলতা, কিশোরী চালচলন এভরিথিং ছোট বাচ্চামোর মতো বিহেভ,সেখানে তুমি এসে আমায়…হাউ ফানি। প্লিজজ বোন ভাই হিসেবে বলছি,পড়ালেখায় মনোযোগ দে,ভালোভাবে পড়ালেখাটা শেষ কর।আমার মতো হাজারো ছেলে তোর লাইফে আসবে এবং যাবে। এসব কিছুই না।

আমি স্পষ্ট দেখতেছি সাথীর চোখে পানি।আর কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বলে,
-স্কুলের সবাই আমায় পছন্দ করে।আমি কারো প্রপোজাল একসেপ্ট করি না।সবাইকে বলি আমি আমার শাওন ভাইয়াকে ভালোবাসি।
-উফস,বোন।প্লিজজ কুল।এসব সবাই শুনলে রাগবে।
যা শিমলার কাছে গিয়ে শুয়ে পড়।ভাইয়া একটু বাহিরে যাচ্ছি।

এ বলে যে-ই উঠতে যাবো,ও আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর কেঁদে কেঁদে বলে,
-ভাইয়া,আমি আপনাকে ছাড়তে পারবো না।প্লিজ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিবেন না।আমি শুধু আপনাকেই চাই।আপনার জন্যে আমি সব করতে পারবো, ভাইয়া!!!

অনেক কষ্টে সাথীকে ছাড়িয়ে সিড়ি বেয়ে নিচের দিকে হাটা ধরি।বসার রুম শূণ্য। বাবা হয়তো চলে গেছেন।
আমি ড্রাইনিং টেবিলের সামনে যেতে দেখি মা প্লেট-বাঢী গোছগাছ করছেন।মায়ের কাছে গিয়ে বলি,
-মা,তোমাকে না বললাম রেস্ট নিতে?আর তুমি এসব করছো কেন?বাড়ির কাজের লোকরা কোথায়?
-নিজের বাড়ি নিজে যেভাবে সাজিয়ে রাখি অন্যে কি সেভাবে পারে, বাবা?
-হয়েছে,এখন নানান তালবাহানা শুরু করবা।আর যেটা বলার জন্যে আসছি আমি আগামীকাল ঢাকায় ব্যাক করছি।

মা অনেকটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকান।
-ঢাকা যাবি মানে?তোর ভার্সিটি না অফ?
-হু,হোস্টেলে উঠবো!!
-কত মাস পর আসলি,ক’টা দিন থাক না বাবা?
-মা আমি আর পারতেছি না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।একটু খোলা জায়গায় দম নিতে পারলে মন শান্তি পাবে।

মা আমার মনের বেদনা বুঝতে পেরে আশ্বাস দিয়ে বলেন,
-আচ্ছা,আমি তোর বাবার সাথে কথা বলে দেখি।
-আচ্ছা মা।এ বলে সদর দরজার দিকে হেটে একটু বাহিরে আসি আজ কতটা দিন পর বাড়িটিকে অন্যরকম সজ্জিত দেখতেছি। লাল,নীল বাতি পুরো বাড়িটিকে আলাদা করে তুলেছে।হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়ে আসতেই পাবাজ দৌড়ে আমার সামনে আসে।হাঁপিয়ে হা্ঁপিয়ে বলে,
-একা একা ঘুরতে বের হইলি কেন?শিমলা,সাথী ওদের নিয়ে একটু বের হলেতো আমি সাথীর সাথে একটু টাইমপাশ করতে পারতাম।
ভ্রু কুঁচকে বলি,
-সাথীর সাথে টাইমপাশ?ছোট মেয়ের সাথে আবার কিসের টাইমপাশ?
-দোস্ত তোকে তো আমার বলাই হয়নি। তোর কাজিনটা দেখতে সেই!!যতবার দেখি,ততবার প্রেমে পড়ি।
-পাগল হয়ে গেছিস তুই?এসব কি বলছিস!!আর ওতে বাচ্চা একটা মেয়ে!!বয়স মাএ ১৫ বছর।
-তা নিয়ে আমার সমস্যা নেই দোস্ত।আমার মাস্টার্স কম্প্লিট করতে এখনো ২ বছর বাকি।ততদিনে ও ১৮ তে পা দিবে।
-ও হায়ার স্টাডি করবে।আর ওর সাথে এসব পাগলামো কথা বলিস না। ওর মন নষ্ট হয়ে যাবে,প্লিজজ ভাই।কারণ,ও আমার বোনের মতো!!
-দোস্ত পাগলামোর কথা তো পরে।ও তো আমার সাথে কথাই বলতে চায় না।আজ কতবার চেষ্টা করলাম একটু বলতে,কিন্তু না তোর কাজিনের তো সেই ভাব।মাগোমা,ছোট হলে কি হবে,দেমাক বয়স থেকেও অপ্রতুল।

এরই মধ্যে বাবা চলে আসেন।উনি ঘরের মধ্যে ঢুকে যান। আমি পাবাজকে ইশারা দিয়ে বলি,
-তুই বাড়ি যাবি?নাকি আজ আমাদের বাড়ি থাকবি?
-ভাবলাম তোদের বাড়ি থাকবো।আচ্ছা, দোস্ত আসল কথা শোন?আজ এত্তবড় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেল কিছুই বললি নাতো আমায় এখনও!!
প্লিজজ ইগনোর দিস টপিকস।আমি চলে যাচ্ছি।
এ বলেই ঘরের দিকে হাটা ধরি আর পিছু পিছু পাবাজ।
সদর দরজায় আসতেই বাবার রাগেস্বরের আওয়াজ শুনতে পাই।
-ওরকম বেয়াদব ছেলে কথা আমায় বলছো কেন?এ বাড়ি থাকবে নাকি থাকবে না তা দিয়ে আমি কি করবো?আর আমাকে এসব কথা কখনোই বলবে না,ওকে?
-মা ভীতুমনে কিছু বলতে যেয়েও বলার লেশটুকু মুখে লেগে আছে।
আমি আর দাড়িয়ে না থেকে মাথানিচু করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতেই বাবা আমায় দেখে ফেলেন এবং খেলখেলিয়ে বলেন,
-ওরে না বলছি?আমার চোখের সামনে না আসতে?ফাহাদের মা ওকে বলো ও যদি ঢাকায় যেতে চায়, তাহলে ঢাকায় চলে যেতে!!আমি ওর ছায়াও দেখতে চাই না!!

সাথী দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবটা শুনে ভ্যাবাছ্যাকা খাচ্ছে।হয়তো ভাবছে,বাবা আমাকে এসব কেন বলছেন!!!
আমি আর একমুহূর্ত দাড়িয়ে না থেকে রুমে এসে দরজাটা আঁটকে দিই।দরজার সামনে সাথী এসে আওয়াজ তুলে বলে,
-ভাইয়া দরজা খুলো?প্লিজজ ভাইয়া রাগ করো না?
আমি দরজার এপাশ থেকে বলে উঠি,
-সাথী ভাইয়া ঠিক আছি।তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।আর হ্যাঁ পাবাজ কোথায় রে ওকি আমাদের ঘরে?.
-হু,উনি আঙ্কেলের সাথে বসে আছেন।
-যাইহোক, ও কথা বলতে চাইলেও ওর সাথে কথা বলবি না।
-আচ্ছা ভাইয়া।
-যা তোর রুমে যা।
সাথী হয়তো চলে যায়।আমি আর কোনো আওয়াজ শুনতে পাইনি।আমার মনটা বিষন্ন রকম খারাপ হয়ে যায়।।হৃদয়ের এসব অন্তর্ঘাত বেদনা বলার মতো কাউকে পাচ্ছি না।শিমলাকে বলতে যেয়েও ওর পাল্টা জবাবে ভীতুর মতো কাবু হয়ে যাচ্ছি।

সোহানার কথা কেন জানি আজ খুব করে মনে পড়ছে।হয়তো সোহানাকে বলতে পারতাম মনের যত অবচেতন কথা।কিন্তু সব বলতে যেয়েও জড়তা মনে আপন মানুষগুলো থেকে দূরে থাকি।তাদের পর করে দিই।
তারা আমায় ভুল বুঝে,ভুল বুঝে দূরে চলে যায়।যেমনটি, আজ সোহানা করতেছে!!
হে খোদা,এই পৃথিবীতে আমার সবকিছুইতো কেড়ে নিলে।একটু নাহয় রেখে দিয়ে আমায় বাঁচার সুযোগ করে দাও।।।বুক ফেঁটে কান্না আসে আমার!!!কাঁদতে পারছি না।সবকিছুই বিতৃষ্ণা লাগতেছে।।।
মাথাটা বালিশের উপর এলিয়ে দিই।আর ভাবি,
-সবাই আমার পর হয়ে গেল!সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেল।দূরের মানুষ গুলোও এবং কাছের মানুষ গুলোও!!!

রাতে মা এসে দরজা অনেক বার নক করে যায় কিছু খাওয়ার জন্যে।আমি তখন যে দরজা বন্ধ করি একদম সকাল বেলায় দরজা খুলি।
হাতে জামা-কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে মায়ের সাথে এক টক্কর দেখা করি। মা আমাকে দেখেই কেঁদে দেন।
আমি শুধু চুপচাপ মায়ের মমতাটে শুঁকে নিই এবং মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিই।
-আমার জন্যে চিন্তা করো না, মা।আমি আবার আসবো!কারণ, সব রাক্ষসের কবলে তোমায় একা থাকতে দিবো না।ভালো থেকো, মা।

এ বলে মাকে এড়িয়ে আসতে মা আমাকে শাওন বলে ডাক দেয়।
-জ্বী,মা?
মা চোখগুলোয় অনেক কড়াভাব এনে বলে,
-ফাহাদের বউ তোর সাথে কেন এমনটি করলো,কারণ বলবি মাকে বাবা?
আমি একটা অভিমানী মুঁচকি হাসি দিয়ে বলি,
-আবার যদি ফিরে আসি মা,তখন শুনবে।
চলবে….

(আপনাদের কি মনে হয়?এখানে নায়িকা কে হবে?সাথী,দিবানি নাকি সোহানা?)

ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০২

0

ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-০২
রোকসানা আক্তার

আস্তে আস্তে গভীর রাত নেমে আসে।আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশের পানে পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছি।সাদা ওই আকাশের মাঝে তারাগুলো কী সুন্দর নিবৃত্তি ঘুমচ্ছে আর জেগে উঠছে!!হৃদয়টা সুকমলে ছুঁয়ে যাচ্ছে।মন বলে,
মানুষ না হয়ে যদি তারা হতাম?তাহলেতো নিব্যি সবাইকে দেখতে পেতাম। নিরবতা মানুষগুলোর কষ্টের ভাগিদার হতাম।কখনো এত আঘাত পাওয়ার বেদনা শুঁকতে হতো না।

পেছন থেকে কারো কাশির আওয়াজ কানে বাঁজে।তাকিয়ে দেখি মা খাবার প্লেট হাতে দাড়িয়ে আছেন।
মাকে দেখে আমার চোখগুলো ঝিকঝিক করে উঠে।কারণ,আমার লাইফর প্রতিটি দুর্ভোগ মুহূর্তে ,সর্বদা মা আমার পাশে থেকে আশ্বাস জুগিয়েছেন।নাহলে,কবে যে পৃথিবী থেকে বিদেয় নিতাম!

মা আমার দিকে মুঁচকি হেঁসে প্লেট হাতে নেওয়ার ইশারায় ইঙ্গিত দেন।
-নাহ,মা আমি কিছু খাবো না।তুমি এসব ফিরিয়ে নিয়ে যাও।
-পাগল হয়েছিস,শাওন?সে দুপুর থেকে অনাহারে।এখন যদি মুখে কিছু না তুলিস তাহলেতো অসুখ পড়বে বাবা।
আমি ছলনাময়ী হাসির রেখা টেনে বলি,
-অসুখ পড়লে আর কি,মরে যাবো।
-চুপ একদম!পাঁজি ছেলে কোথাকার!
-কেন!!!আমি মরে গেলে কুলাঙ্গার ছেলের জন্যে সমাজে হেয় হওয়া লাগবে না।একটা আপদ বিদেয় হবে।চরিএহীন ছেলে থেকেও কি লাভ!!

আমার কথায় মায়ের চোখ দু’টো সরু হয়ে যায়।আর ঝরঝরে চোখের পানি বেয়ে পড়তে থাকে।আমি জানি,আমার জন্যে মায়ের অনেক কষ্ট হয়,কিন্তু নিরুপায় মা বাবার অবাধ্য হয়ে কিছু করতে পারেন না।বাবা মাকে খুব কঠোর নজরদারিতে রাখেন,নিজে চাইলেও মুখ ফুঁটে স্বাধীনভাবে কোনো কথা বলতে পারেন না।
আমি ধীরপায়ে হেঁটে আমার কাছে যেয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে দু’চোখের পানি মুছে দিই এবং কপালে একটা চুমু বসাই।আর জড়িয়ে বলি,
-আমার লক্ষী মা,একদম কাঁদবে না।তুমি জানো না?তুমি কাঁদলে আমি ভীষণ আঘাত পাই,আমার হৃদয় রক্তক্ষরণ হয়।
মুখটা সামনে এনে আবার বলি,
এই দেখো,আবার কাঁদে।বললাম না আর কাঁদবে না!!
-শাওন,বাবা?আজ ওরা কিভাবে তোকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসালো! আমি জানি,আমার শাওন কখনো অন্যায় করতে পারে না।
-আমি জানি মা,তুমি অন্তত আমায় বুঝবে কেউ না বুঝুক।
মা চোখের পানি মুছে বলেন,
-আয় বাছা,তোকে আমি আজ নিজ হাতে খাইয়ে দিই।
-সত্যি মা আজ আমায় খাইয়ে দিবে?
চোখগুলো ঝলমল করে ওঠে আমার।আজ কতদিন পর মায়ের হাতে খাবার খাবো।সেই যে ৫ম সেমিস্টারের সময় বাড়ি থেকে বিদেয় হলাম,আর বাড়ি আসা হয়নি।এবার ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়ি আসি।।
মা নালা তুলে যেই মুখে দিতে যাবে,ওমনি বাবার ডাক পড়ে,
-ফাহাদের মা?ফাহাদের মা?কোথায় গেলে তুমি,কোথায়?
বাবার চিল্লানিতে মা তড়িঘড়ি ভাতের প্লেট বিছানার উপর রেখে কাপড়ের আঁচল মাথায় টেনে রুম থেকে বের হয়ে যান।কারণ,মাকে এখন বাবা আমার রুমে দেখতে পেলে বিপদ হতে পারে।

মা চলে যাওয়ার পর আমি ভাতের প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকি,আর আমার চোখ দিয়ে দু’ফুটো মোটা অশ্রু গাল বেয়ে পড়তে থাকে।
আজ ও বুঝি মায়ের হাতের খাবার খাওয়া হলো না।এই একটা আক্ষেপ সবসময় আমায় তাড়িত করে।কারণ,বাবা সবসময় চাইতেন মা আমার থেকে বড়ভাইয়াকে বেশি আদর করুক।আমি কখনো এমন একপাক্ষিকতার মানে বুঝতাম না বাবা কেন এমনটি করতেন!
ছোটবেলায় মা আমাকে রেখে ভাইয়াকে খাইয়ে দেওক,ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় রেডি হওয়ার জন্যে মা আমার আগে ভাইয়াকে গোছগাছ করে দেওক,কোনো বায়না আমার আগে ভাইয়ার পূরণ করুক ইত্যাদি। বাবার এরকম অসমতল দৃষ্টিকটু আমাকে অনেক ক্ষুব্ধ করতো।
একটা সময় নিস্তব্ধতা পরিবেশে একা বসে থাকলে,দিনশেষে মা যখন আমায় কোলে নিয়ে আদরের পরশ আমার চোখে,মুখে,মাথায় ছোঁয়াতেন আমি তখন সব ভুলে যেতাম।ছোটবেলায় বাচ্চারা মায়ের আদরের পূজারী হয়!এটাই বাস্তব!

পরক্ষণে এসব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে ভাতের প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে বিছানায় উদাসমনে শুয়ে পড়ি!!এরইমধ্যে রাজ্যের ঘুম মাথাচাড়া দিতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যাই।।

ভোরের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সকাল দশ’টা বাঁজে। তাহলে রাত অনেক ঘুমোলাম!
আজ বউভাত। ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে মেহমান আসবে।।বাড়ির কাজের লোক তাড়াতাড়ি রেডি হওয়ার জন্য রুমে এসে বার বার নক করে যায় ।।
আমি ওদিকে কর্ণপাত না করে দরজাটা বন্ধ করে ফেলি।
কিছুক্ষণ বাদে মা এসে দরজায় নক করেন,জানি নাস্ত হাতে নিয়েই রুমে এসছেন।আমি রুমের ভেতর থেকেই মাকে কড়া বারণ করে দিই,
-মা খাবো না।দয়া করে প্লিজজ জ্বালাতন করো নাতো!
মা অনেকক্ষণ ধরে দরজায় কড়া নাড়তেই থাকেন।আর আমি অনড় হয়ে নিজের সিদ্ধন্তে অটল।পরে,মা বিরক্ত হয়ে চলে যান।
এভাবে বিভিন্ন চিন্তায় বসে থাকতে থাকতে ১ টা বেঁজে যায়। আমি বাথরুমে গিয়ে গোসলটা সেরে আসি।সাথে ওযুটাও।

জায়নামাজটা নিয়ে জোহরের নামাজে দাড়াই।
নামাজ শেষ করে মোনাজাতে হাত রাখতেই চোখ দুটো বেয়ে গড়গড়িয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে।আর বিধাতার কাছে অনেক অভিযোগ দাড় করাতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু বলতে যেয়েও পারছি না বিধাতার কাছে বিচার তুলতে।

চোখের পানি আগলে মোনাজাতটা শেষ করে জায়নামাজটা ভাঁজ করে ড্রেসি টেবিলের মধ্যে রেখে দিই।।
হঠাৎ করে নিচ থেকে হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ আসতে থাকে।আমি দৌড়ে বেলকনিতে যাই।ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন বাড়ি না ঢুকতেই হাঙ্গামা শুরু করছে।।
ওরা এমনভাবে ধাক্কাধাক্কি করছে যেন কার আগে কে ঢুকতে পারে তার প্রতিযোগীতা চলছে।।
আমি এসব আজাইরা কাজকারবার না দেখার প্রয়াশে মাথাটা সামান্য হেলতেই একটা মেয়ের উপর নজর পড়ে!!
মেয়েটি কে দেখে মনে হলো, কোথায় যেন দেখেছি ওকে!কোথায় যেন দেখেছি!!

ঠাহর করতে পারতেছি না।।কিন্তু আমার মন বলছে,এই মেয়েটার সাথে আমার কোনো অতীত জড়ানো।যেটার জন্যে আজও পথের দিশা খুঁজে পাই না।খুঁজতে গেলে দুকূল হারিয়ে ফেলি।আমি আর একমুহূর্ত এখানে না দাড়িয়ে থেকে নিচে নামতে থাকি।
দ্রুত পদক্ষেপে নিচে নেমে উদগ্রীব হয়ে যেই সদর দরজার দিকে পা বাড়াবো,ওমনি বাবার কটু দৃষ্টি পড়ে।।চোখ দিয়ে ইশারা করে ভেতরে যেতে বলেন।
আমি চোখগুলো বুঁজে ব্যর্থমনে আবার আমার রুমে ফিরে আসি।মনটা খারাপ হয়ে যায় মেয়েটিকে যে দেখার সুযোগ হলো না।


প্রায় ১০ মিনিট পর,
শাওন ভাইয়া?সবাইকে দেখলাম আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?
তড়বড়িয়ে পেছনে ঘুরে তাকাতেই চোখগুলো আমার ছানাবড়া!! এতো সেই মেয়ে যাকে কিছুক্ষণ আগে নিচে দেখলাম।কিন্তু মেয়েটিকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে।
আমি খুব কৌতূহলী হয়ে আস্ক করি,
-তুমি আমায় চেন?.
মেয়েটি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।মেয়েটির বয়স ১৪/১৫ হবে।আমি ভ্রু কুঁচকে আবার বলি,
-কিভাবে চেন আমায়?কোথাও দেখেছ?
-জ্বী!

এবার আমার চোখগুলো খাড়া।খুব উৎসুক হয়ে বলি,
-কোথায় দেখলে?
-ভাইয়া আপনার মনে আছে?একদিন যে আমি স্কুল যাওয়ার পথে আপনার হাতে একটা চিরকুট দিয়েছিলাম।আপনার চেহারাটি আমার খুব করে মনে আছে।তাই আপনি এখন যে নিচে নামলেন,আমি আপনার চেহারাটা তীর্যকভাবে পরক্ষ করতে পেরেছি।

আমি অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলি,
-কিসের চিরকুট দিয়েছিলে আমার হাতে তুমি!?!
-আরেহ ভাইয়া,আপনিতো সবই ভুলেই গেলেন। ওইযে দিবানি আপু দিয়েছিল,ওই চিরকুটটা।

এই মেয়েটির কথায় আমার দু’কান বেয়ে ঘামের বৃষ্টি ঝরতে থাকে।যখন মেয়েটি চিরকুটটি আমার হাতে দিল তখন অনেক ছোট্রি ছিল।আর এখন মাশাল্লাহ অনেক বড় হয়ে গিয়েছে,এজন্যই বোধহয় চিনি নি।
আমার অনেকগুলো অতীত যেন ধীরে ধীরে স্মৃতির পাতা খুলছে।নিজেকে সংযত রেখে বলি,

-তোমার দিবানি আপু এখন কোথায়?
মেয়েটি আমার দিকে ড্যারা চোখে তাকিয়ে যেই ঠোঁট নাড়বে,ওমনি ভাইয়ার বউ আমার রুমে এসে হাজির!!.
-আরে পৃথুলী,তুই এখানে!সবাই যে তোকে খুঁজছে!!তুই এখানে কি করিস!?
-ন-না মানে,আপু।
-আচ্ছা হয়েছে ন-ন্ন-না করা লাগবে না।যা নিচে যা।

ওর নামটি এখন জানলাম “পৃথুলী”। বাহ,খুব সুন্দর নাম।পৃথুলী ভদ্র মেয়ের মতো মাথা হেলিয়ে নিচে চলে যায়।আর ভাইয়ার বউ আমার দিকে হয়তো তাকিয়ে আছে।আমি এখন অন্যদিক মুখ করে তাকিয়ে আছি।উনার দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করিনা।
উনি হুট করে বলে উঠেন,
-লজ্জা পেলে হবে না!এখনো তোমার সাথে অনেক কিছু করার বাকি আছে।সবেতো এই বাড়ি পা রাখলাম,বাদবাকির মিশন সামনে গোয়িং অন!

এ বলেই চলে যান।।।

আমি যতটা অবাক,ততটা ধাঁধায় পড়ে যাই।পৃথুলী ভাইয়ার বউয়ের কেমন আত্মীয় হোন!আমিতো আগে কখনো জানতাম না!! হায় আল্লাহ,সব মাকড়সার জালের মতো সব পাকড় একসাথে।যেখানে যাই,সেখানে আটকাই!!
অতঃপর,আবার মনস্থির করি,
-নাহ!!যে করেই হোক।এটির রহস্য উদঘাটন করবোই!!
এসব অনেকক্ষণ যাবৎ ভাবতে থাকি।আমার ভাবনার স্মৃতিরা যেন ঘোর কাটে না।মনখারাপ বিধায় হাতে একটা গল্পের বই নিই পড়ার জন্যে।

-আরে শাওন?কিরে?নিচে সবাইকে দেখতে পাচ্ছি,কিন্তু তোকে যে দেখা যাচ্ছে না!দিনকে দিন এত দেমাক বাড়ছে ক্যান তোর, হুম?(শিমলা)

-আরে শিমলা আপু আর বলবেন না,উনাকে দেখলে আমরা আবার ক্রাশ খেয়ে যামু তো তাই সেই ভয়ে বের হয় না।(সাথী)

-হুম,কিউটের ডিব্বা হলে এমনই!!!(শিমলা)

বিরবির কথার শোরগোলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার একগাদা কাজিন আমার দরজার সামনে এসে হাজির!!!
ওদের দেখে চোখগুলো বড় করে ফেলি।

-কি ভাইয়া,সারপ্রাইজড হলে বুঝি? (সাথী)
-ন-না,এখানে সারপ্রাইজড হওয়ার কি আছে!!
-সারপ্রাইজড তো সাথী!এর চেয়ে আর কি বাকি শাওন?(শিমলা)

শিমলার কথায় সব একতালে হেঁসে ওঠে।আর সাথী লজ্জায় মাথা নিচু করে আনে।কারণ,সাথী আমায় মনে মনে অনেক ভালোবাসে।আমি ওকে শুধু আমার ছোটবোন হিসেবেই দেখি।ওর সাথে ফ্রীলি বিধায় সবাই ভাবে আমিও সাথীকে পছন্দ করি।

সাথীর লাজুকতায় শিমলা বলে ওঠে,
-ও ললনাবতী,লজ্জ্বা পেলে গো নাকি?
আবার খিলখিল হাসির আওয়াজ সবার।আমিও একটু মুঁচকি হাসি ওদের দুষ্টুমিতে।
-হয়েছে,হয়েছে!তোমরা আর মান-সম্মান রাখলে না!!গেলাম আমি!!
সাথী অভিমানে প্রস্থান করে।।আর ওদের মুখেতো হাসির লেশটুকু লেগেই আছে।আমি চোখ ঝাঁটা দিয়ে বলি উঠি,
-আজতো হাসির মাংস রান্না করা হয়নি যে যার কারণে এত্ত হাসিস!
-ভাঁজা মাছতো তুমি উল্টে খেতে যানো শাওন ভাইয়া!!মনে মনে মনকলা খাও,আর এখানে এসে মহানন্দের গীত গাও।(রাকিব)

এবার আমি অনেকটা রাগ হয়ে ওদের দিকে কটুকথা ছুটে দিই।
-এখান থেকে যাবি তোরা?নাকি ঘাড় ধরে সবগুলারে বাদরের মতো ঝুলাতে বাধ্য করবো!?
-ওর-রে,এই ছ্যামরা আমাদের বাদর বানালো রে ।আমরা কি কানা চোখে তাকিয়ে থাকবো নাকি রে শাওন!! (শিমলা)
-আপু,তুমি আমায় একবার আদেশ দাও।আমি শাওন ভাইয়ার শায়েস্তা করতেছি।
-তোরতো হাতির শরীর!যে কেউ দেখলেই ১০মাইল দূরে পিছপা!!(আমি)

-আচ্ছা, যদি এতই ভয় পাও।তাহলে আমাদের ট্রিট দাও।আমরা ভদ্র,সাবলীলভাবে তোমার রুম ত্যাগ করব।কি বলিস তোরা?এবং কি বলেন শিমলা আপু??(রাকিব)

-রাইট!কানাকুয়ো আমাদের সেই ২/৩ বছর ধরে কোণ আইসক্রিম খাবাবে খাবাবে বলে ঘুরিয়েছে,আজও আমাদের বায়না মেটাতে পারলো না।ওকে কি আমরা সোঁজা -সাপ্টা ছেড়ে দিব!?.(শিমলা)

-দেখ ভাই,এখানে এত্ত কোলাহল না করে।তোদের বায়নার টাকা দিয়ে দিচ্ছি।তোরা ভালোই ভালোই চলে গিয়ে আমায় একটু শান্তিতে থাকতে দে।।

-রুমে তো এসি চলছে এখানে আবার অশান্তি কিসের!?(শিমলা)
দাৎ আবার কথা বাড়ানোর জম!আমি মুখটা বাঁকা করে অন্যদিক তাকিয়ে থাকি।এরফাঁকে শিমলা বলে উঠে,
-মন খারাপ নাকি রে তোর?
শিমলা এবং আমি পিঠাপিঠি। দুজন-দুজনের সাথে অনেকটা মিশুক।যেদিন দুজন এক হই,সেদিন গল্প-গুজব করতে করতে কখন যে বেলা ফুরিয়ে যায় বলা মুশকিল।সে আমার লাইফের সব ইতিহাস জানে।আমার মনের সকল অব্যক্ত ভাষা শিমলার সাথে শেয়ার করি এবং ঝগড়া করতে সদা বলীয়ান দুজন।আর মিলে গেলে ঝগড়া টগরা সব ধূলোয় ধূলিসাৎ।
শিমলার কথায় আমি হালকা মাথা নাড়ি আর বলি,
-তোর সাথে কথা আছে শিমলা আমার!

-ওকে,শুনবো।এর আগে ওদের বিেয় কর।বাচ্চা-পোলাপান, জানিসতো জ্বালিয়ে মারবে।
শিমলার কথায় ওদের দিকে এক হাজার টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে বলি,
-এই নে….
রাকিব আচমকা হয়ে বলে,
-সে-কি ভাইয়া, এত্ত কম টাকা নিবো না।আমাদের ৩ হাজার চাই!!
সবাই একতাল বাঁজিয়ে রাকিবের সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে,
-হ্যা ৩ হাজার চাই।
শিমলা ওদের চিল্লানিতে কানে হাত দিয়ে রাখে।আমিও অনেকটা বিরক্ত নিয়ে আর বাকি ২ হাজার টাকা মানিব্যাগ থেকে বের করে ওদের বিদেয় করি।

ওরা টাকাগুলো পেয়ে খুশির তালে নাচতে নাচতে চলে যায়।শিমলা মুঁচকি হেঁসে বিছানায় বসতে বসতে বলে,
-এবার বল,কি হয়েছে তোর এবং কি কথা আমার জন্যে এতদিন জমিয়ে রেখেছিস?
-শিমলা,আমরা মনটা ভীষণ খারাপ রে।আচ্ছা,বলতো মন ভালো করার কোনো ওষুধ আছে।।

শিমলা আমার দুঃখে কাতর না হয়ে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।।
-আরে,হাসছিস কেন??
-তো হাসবো নাতো কি কাঁদবো?আমার কি মনে হয়, জানিস?
-কী?
-তোকে সাইকোলজিস্ট দেখাতে হবে!!!
-কেন?(চোখ বড় করে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলি)
-মাঝে মাঝে তোর এমন উদ্ভট কথায় খোলাকাশে মনখুলে হাসতে মন চায়।
-তুই না বুঝে কি আজিব কথা বলছিস!তুই জানিস?আমার সেই ভার্সিটি লাইফের কালো অধ্যায়ের দিনগুলো বার বার আমার মনে হানা দেয়।আমি নিঃশ্বাস নিতে পারতেছি না,বিলিভ কর শিমলা!?

শিমলা ভ্রু কুঁচকে আবার উদ্ভট কথা বলে উঠে,
-এরে শাওন,ব্যাপার কী!সোহানা আবার তোর লাইফে ব্যাক করলো নাকি?
-এইতো দিচ্ছিস মাথাটা গরম করে।বলবো ভাতের কথা আর তুই উঠাচ্ছিস মাংসের কথা।
-আচ্ছা আচ্ছা। এবার মনোযোগ দিয়ে সবশুনবো,বল!
-শিমলা,দিবানির ব্যাপারে আজ….এই বলেই থেমে যাই।কারণ কথা বলতে দিলো না আমার রুমের দরজার সামনে দাড়ানো কাল রাতের সেই মেয়েটি এবং সেই ছোট্রি পৃথুলী ।তারা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
শিমলা আমার কথা আর না শুনতে পেয়ে আমার চোখ অনুসরণ করে দরজার দিকে চায়। ওদিকে তাকিয়ে মুঁচকি হেঁসে বলে,
-আরে শিবহানা পৃথুলী, ভেতরে আসো?ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন?

রাতের মেয়েটির নাম তাহলে শিবহানা।শিবহানা মৃদু হেঁসে ভেতরে আসে।কিন্তু পৃথুলী ভয়ে কুকড়ে কেন জানি শিমুলার হাত ছেড়ে দেয় এবং দৌড়ে নিচে চলে যায়।আমি অনেকটা ভড়কে যাই এইরকম কান্ড দেখে!!
শিবহানা আমাদের সামনে এসে শিমুলাকে বলতে থাকে,
-শিমলা আপু,তোমরা কি নিয়ে কথা বলতেছো?
-আর বলো না,ও ওর দাদার আমলের ইতিহাস তুলেছে।

মেয়েটি হিহিহি হেসে বলে,
-তাই নাকি??
-হু।
আচ্ছা,শিমলা ও কে?
শিমলা আমার এমন প্রশ্নে অবাক দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-যে কাল থেকে তোদের বাড়ি।তুই তাকে এখনো চিনছিস না?
-কি করে আর চিনবো!আমিতে আর কারো সাথে তেমন কথা বলিনা।
– কথা বলবেই বা কি করে উনি,শিমলা আপু?যে ঝিমা মুরগির মতো রুমে বসে ডিমে তা দিচ্ছে তার আর কথা বলার প্রয়োজন হয় নাকি?

আমি মেয়েটির কথায় আর কোনো রেওয়াজ তুলিনি। চুপ হয়ে থাকি।।
মেয়েটা আবার হাই তুলতে তুলতে বলে,
-যাইহোক আমি পরিচয়টা দিয়ে দিচ্ছি।আমি হলাম আপনার ভাবীর মামাতো বোন।মানে আপনার বেয়াইন।কাল রাত অবশ্য বলতে চেয়েছিলাম,কিন্তু ওই সময়টি আর দেননি।

এর মধ্যে পাবাজের ডাক পড়ে।
-আরেহ,শিমলা এবং শিবহানা তোমাদের সবাই খুঁজতেছে আর তোমরা শাওনের সাথে গল্পে মর্ত?
-নাহহ,এমনি।আপনার জানের জান দোস্ততো নববধূ সাঁজছে,তাই আর কি দেখতে আসলাম।(শিমলা)
আচ্ছা,চলুন ভাইয়া।(শিবহানা)
হাত ইশারা দিয়ে শিবহানা সামনের দিকে হাঁটতেছে আর পেছন ফিরে আমার দিকে ড্যারাড্যারা চোখে তাকিয়ে শতানী ছলে মুঁচকি হাসতেছে।।।

সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে একে একে সবাই বাড়ি থেকে বিদেয় নেয়।আর অপেক্ষা করে কণেপক্ষরা কণেকে বাড়ি নেওয়ার জন্যে।।
কণেপক্ষের সবাই বলতে থাকে
আজ যেহেতু বউভাত ছিল।বউভাত উপলক্ষে বরপক্ষ লোকজন উনাদের বাড়ি যেতে।এ নিয়ে তান্ডব শুরু হয়ে যায়।

আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। যদি আমাকে যেতে বলে,তাহলে তো ব্যাপারটা অন্যরকম দেখাবে।আমি ভীতমনে দরজাটা বন্ধ করে ফেলি।
কথা আছে,যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধা হয়।
দরজা বন্ধ করতে না করতেই দরজায় ঘনঘন কড়া নাড়ার শব্দ হয়।
জেদ করে গিয়ে দরজা খুলতেই চোখগুলো কপালের দিকে উঠে যায়।
ভাইয়ের বউ শতানী হাসি টেনে চোখটিপ মেরে ভ্রু কুঁচকায় আমার দিকে চেয়ে,আর বলে
-আমার সাথে এখন আমাদের বাড়ি যাবে।নো আরি,নো এক্সকিউজ। ওকে?
এই বলে উনি হেলেদুলে আমার রুমে ঢুকে ওয়াড্রবের দরজা খুলে আমার জামাকাপড়ে হাত লাগাতেই আমি উনাকে বাঁধা প্রদান করি।
-দেখেন,কাউকে জোর করার আপনার কোনো অধিকার নেই।আমি যাচ্ছি না আপনার বাড়ি,বের হোন আমার রুম থেকে!!

উনি হতভম্ব হয়ে বলেন,
-আহারে দেওরা,তুমি জানো? শ্বশুর-শাশুড়ী এবং তোমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে যেয়ে তোমায় অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি,প্রাণতো আমার ওখানে অর্ধেক গেলো।
-আচ্ছা,সত্য করে বলেনতো আপনি কি চাচ্ছেন এই বাড়িতে?কি এমন স্বার্থে নিচুকতার পরিচয় দিচ্ছেন!?
উনি আমার দিকে খোলসহীন চোখ দিয়ে বলেন,
-এখন এত কথা না বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও তো।আজাইরা প্যাঁচাল পারে!!
-আমি কি আপনার পালিত বিড়াল?যে বললেই সব মেনে নিবো!
-যদি না মানো,তাহলেতো জানোই আমার হিংস্রতা,আমি কি করতে পারি!!
-আপনি কি আমায় থ্রেট দেখাচ্ছেন?
-নো,নো সোনা থ্রেট নয়!এটা জাস্ট ভালোবাসা!!আর তুমি আমায় একটু ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হবে তোমার?তোমার সর্বাঙ্গ আমায় নেশায় ফেলেছে।নেশায় আসক্তি ভালোবাসা মাখামাখি তুমিও আরাম পাবে এবং আমিও।। এতে,তো তোমার কোনো লস নেই।।।

আমার দাঁত খিঁচে আসে এই মহিলাকে কষিয়ে দু’গাল লাল করে দিতে।কিন্তু,এধরনের লোলুপ মহিলারা তিল কে তৈল বানিয়ে সমাজকে ন্যাস্য করে দিতে পারে নিজেকে অনেক কষ্টে দমিয়ে বলি,
-আপনি কিন্তু লিমিটেশন ক্রস করতেছেন!!

এ বলে আমি উনাকে ইগনোর করে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।আর দ্রুত পদক্ষেপে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকি। ওখানে নামতেই সবাই আমার দিকে চোখতুলে তাকায়।কেউ তাকায় হাসোজ্জ্বলে,কেউবা কটু দৃষ্টি এড়ে!!!
আমাকে দেখে বাবার চোখগুলো লাল হয়ে যায়!!আমি বাবার দিকে না তাকালেও ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করতে পেরেছি।
আমি সবার সামনে দাড়িয়ে বলে উঠি,
-দেখেন,আমার ভার্সিটির এসাইনমেন্ট,কুইজ,প্রেজেন্টেশন ঝুলে আছে,কালই আমায় ঢাকায় ব্যাক করতে হবে।ওগুলোর প্যারায় আমার মাথা হ্যাং।এই মুহূর্তে কোথাও বেড়ানোর ধৈর্য আমার নেই।ক্ষমা করবেন সবাই।
এ বলে চলে আসি,সবাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।আর সিড়ির উপরে দাড়িয়ে ভাইয়ের বউ মুখ খিঁচে এবং দু’হাত মুঠ করে ক্রোধে ফুঁপে ওঠে।

চলবে….
১ম পর্বে আমার একটু মিস্টেক ছিল।তা হলো,আবির+শাওন দুটো নাম ব্যবহার করেছিলাম।আসলে আবির হবে না,নায়কের নাম শাওন। আর এখনো গল্পের প্রধান কাহিনীতে আসিনি,সবকিছুই অজানা,সে পর্যন্ত গল্পের সাথে থাকুন।
তাছাড়া, সবাই নিরব দর্শকের মতো গল্প পড়ে চলে যাবেন না।গঠন মূলক মন্তব্য করবেন যাতে আপনাদের চাহিদানুযায়ী গল্পটি ফুঁটিয়ে তুলতে পারি।

ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০১

0

ভাবিনি ফিরে আসবে
সূচনা পর্ব
রোকসানা আক্তার

হঠাৎ ভাবীকে দেখে আমি বড়সড় একটা ধাক্কা খাই।১ বছর আগে যে মেয়েটির কারণে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমার ব্রেকাপ হয়েছিল, আজ কি না সে মেয়েকে আমার বড় ভাই বিয়ে করে এনেছে। তাহলে এই শিপ্রা আপুর সাথেই আমার ভাইয়ের এতটা বছর সম্পর্ক ছিল!?হায় আল্লাহ আমিতো আগে জানলে কচুগাছে দড়ি লাগিয়ে গলায় ফাঁস দিতাম!

উনিসহ আমরা একই ভার্সিটি পড়তাম।উনি ছিলেন ১২তম সেমিস্টারে,আর আমি ৭ম সেমিস্টারে।উনাকে আমি বড় আপু হিসেবেই জানতাম। আমার এতদিন সেমিস্টার এক্সাম ছিল।আজ শেষ হলো।তাই, বিয়ে এবং এংগেইজমেন্ট-এ উপস্থিত থাকতে পারিনি। দুপুরে পরিক্ষাটা শেষ দিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করি। বিকেল ৪টায় বাড়ি এসে পৌঁছি।আর এখন সন্ধে ৬ টা, ভাইয়া বউ নিয়ে আমাদের বাড়ি হাজির!!তাও নিজের শএুকে আমার ভাইয়া বিয়ে করে ঘরে তুলছেন,ভাবতেই সারা দেহের লোম খাড়া হয়ে যায়।

একমুহূর্তে সদর দরজার সামনে না দাড়িয়ে তরহর ছুটে আমার রুমের বেলকনিতে এসে দাড়াই।ঘামের যে ঝর্ণাধারা বেয়ে পড়ছে মনে হয় আজকে২ বার গোসল সেরেছি একটা ঘামের গোসল,আরেকটা পানির গোসল।মাথাটা যেন খুব ভার হয়ে আসছে,আর বার বার উনার মুখখানা চোখের সামনে ভাসছে!

আর ভাবনার স্মৃতিগুলো পৃষ্ঠার পাতা উল্টোচ্ছে।
-ভাইয়া শেষমেশ এই গুন্ডি একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনলো?এ’তো আমাদের সংসারে ফাটল ধরে ১২ টা বাজাবে। হে মাবুদ,এই মেয়েটিকে বিয়ের আগে একবার দেখলেইতো আজ এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।সেদিন কেন ভাইয়ার সাথে গেলাম না,নাহলে তো বিয়ে কেন রিলেশনটাই লন্ডভন্ড করে দিয়ে আসতাম উনি যেমনটি আমার সাথে করেছিলেন!!

এসব ভাবছি আর নিজের কপাল নিজে চাপড়াচ্ছি । দরজায় কারো টোকার শব্দ হয়।
-শাওন?এই শাওন?আরে ব্যাটা তুই কই? ভাবীকে বাড়িতে সবাই মিলে সাদরে গ্রহণ করবি তা না,উল্টো দরজা বন্ধ করে আছিস।আরে দরজা খোল।

এই পাবাজের জন্য-না শান্তিতে একটু থাকতেও পারছি না।শালা যেখানে সেখানে জ্বালাতন শুরু করে।আমি জোরে বলে উঠি,
-আমি এখন বাহিরে যেতে পারবো না।কাজ আছে আমার।তোরা বন্ধু-বান্ধব থাকতে আমার আবার কষ্ট করা লাগে নাকি?

-শালা তুই পাগল?আমরা হচ্ছি বন্ধু,আর তুই হচ্ছিস দেবর।এখানে আমাদের থেকেও তোর প্রাধান্য বেশি এবং দায়িত্বও।

ইসসস!আসছে আমার সুশীল দায়িত্ববান। শালা ন্যাড়া একটা সবসময় টাক থাকে।নিজের চুলেরই দায়িত্ব নিতে পারে না,সে কি না মানুষের দায়িত্ব নেয়।খাটাস কোথাকার!!
অবশ্য কথাগুলে মনে মনেই বলছি,নাহলে পাবাজ বাদরটা আবার রাগ যাবে।

-কিরে এই শাওন?কথা বলছিস না কেন?কতক্ষণ ধরে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকবো?পা টা তো ব্যথা হয়ে যাচ্ছে।

– আরে ব্যথার কথা ভুলতে ওখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মশা মার শালা।

পাবাজ জানে আমার সাথে কথা বলে ফেরে উঠতে পারবে না।তাই এক বস্তা বিরক্তি নিয়ে নিচে চলে যায়।।।হয়তো মায়ের কাছে গিয়ে বলবে আমার পাগলামোর কথা!

নিজের মনকে আর সায় দিতে না পেরে পায়চারী করতে থাকি।একবার দক্ষিণ দিকে হাঁটি,আরেকবার উওর দিকে।


আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ আসে,তাও সজোরে।অতঃপর,মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে দরজা খুলে কড়া চোখে সবার দিকে তাকাই।
এরই মধ্যে মা বলে উঠে,
-বাবা,বউমা বলছে ওর ছোট দেবর যদি ওকে বরণ না করে ঘরে তুলে,তাহলে সে কোনোমতে ঘরে আসবে না।

উফস!!এই মহিলাটা আসলে কি চায়!?

-কি হলো,বাবা?কথা বলছিস না কেন?মেহমানরা কি বলবে এমন ত্যাড়ামী করলে?আমাদের ভালো জানবে?বল?
-ও বরণ করবে না?ও কি বলতে চায়?!!(বাবা)

আমি বাবাকে দেখে ঢুকরে যাই।কারণ,বাবাকে আমি সবার থেকে বেশি ভয় পাই।এখন একটা ফন্দি না আঁটলে ফেঁসে যাওয়ার উপক্রম,কাজেই বোকা বক দেখিয়ে বলে উঠি,
-বাবা আমার না প্রচন্ড মাথাব্যথা করছে।
-মাথাব্যথা -টাথাব্যথা সব ভালো হয়ে যাবে।আগে সবার সাথে ভাবীকে বরণতো করে নে,নাহয় বরণটা করেই রুমে আবার চলে আসিস।
-হু,বাবা।তোর বাবা ঠিকই বলছে।

আমি বাধ্য হয়ে বাবাকে সম্মতি জানিয়ে সবার সাথে হাঁটা ধরি।আর হাঁটার তড়িৎ গতি পালস রেট বেড়ে যাচ্ছে।এখনই যেন মন চায় পালিয়ে বদ্ধ একটা ঘরে একা বসে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলি।

ভাবতে ভাবতে কণের সামনে প্রায়ই উপস্থিত।আমি মুখতুলে উনার দিকে তাকাই,উনি শতানী হাসির চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে । মাথাটা আবার নিচু করে ফেলি।উনি মুহূর্তে বলেন,
-শাওম?আমায় ঘরে তুলবে না?দাড়িয়ে আছো কেন সং এর মতো?
-হ্যা,কি রে শাওন?তোর ভাবীকে ঘরে তুল?(হাসিমুখে বলেন ভাইয়া)
আমি উনার পাশে যেতেই উনি চোখগুলো বড় করে ফিসফিস করে বলেন,
-প্রাণের দেওরা,বিয়েতো করলাম নামে তোমার ভাইকে,আর আসল খেলাতো হবে তোমার সাথে!!!

আমি ভড়কে খুক খুক করে কাশতে থাকি।সবাই সরু দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি মুঁচকি হেসে হাতের ইশারায় বলি,
-ভাবী,চলুন?
উনিও মুঁচকি হাঁসছেন,তবে বিষাদ মনে।

কোনো মতে উনাকে সবাই মিলে সোফার উপর বসিয়ে আমি তড়িঘড়ি আমার রুমে এসে হাঁপাতে থাকি।হাঁপাতে হাঁপাতে চোখে প্রায়ই কান্না চলে আসে।নিজের চুলগুলো নিজের ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে,কিন্তু কি করব আমি যে নিরুপায়!!!

ওসব ভাবনা পরক্ষণে ঝেড়ে ফেলে বিছানায় এলিয়ে একসাইড হয়ে বালিশের উপর মাথাটা পেঁতে রাখি।হালকা ঘোর চোখে একটা তন্দ্রাঘুম চলে আসে।


হঠাৎ শরীরে কারো হাতের স্পর্শ পাই। আমার সারা শরীর শিরিশির করে উঠে।বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসি। চোখ তুলে তাকাতেই,
আ-আরে আ-আ-পনি?
বাম হাত দিয়ে আমার মুখ চাপড়ে বলেন,
-চুপ,একদম চুপ।কোনো কথা বলবি না!আমার অনেক দিনের শখ ছিল তোর সাথে বাসর করার।
এই বলে উনি উনার বুকের উপর থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে ব্লাউজ খুলতে যাবেন,ওমনি আমি বলে উঠি,
-ভাবি,প্লিজজ? এমনটি ঠিক না।আমি আপনার ছোট ভাই।মানুষ ছোটভাইয়ের সাথে এমনটি করলে,আল্লাহর কাছে এর দায়ী দিতে হবে।প্লিজজ ভাবী,দোহাই আপনার!!

উনি আমার কথা কর্ণপাত না করে ফকফক ব্লাউজ খুলে অর্ধনগ্ন অবস্থা!আমি দু’হাত মুঠ করে চোখদুটো বন্ধ করে রাখি।আর উনি ধাপে ধাপে আমার দিকে এগুচ্ছেন।আমি আর উপায়ন্তর না পেয়ে ছিটকে উনাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলি,
-গুন্ডামি করেছেন,তা ভার্সিটিতে।এটা বাড়ি,ভার্সিটি নই। ভদ্রতার সহিত চলবেন,ভালো ব্যবহার পাবেন।তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হোন,নাহলে আপনার আসল মুখোশ সবার সামনে খুলে হাতে তুলে দিব!!

উনি অনেকক্ষণ এদিক-ওদিক তাকিয়ে উনার ব্লাউজটি তরহর পরিধান করে নিজের ব্লাউজ নিজেই ছিঁড়তে থাকেন।
আমি অনেকটা অবাক হয়ে যাই,কিন্তু এর মানে বুঝতেছি না কেন উনি এমনটা করতেছেন!

এরই মধ্যে কান্নামুখরে চিৎকার করে উঠেন উনি।আব্বা-আম্মা,ওগো?কোথায় সবাই?দেখো,শাওন আমার কি সর্বনাশ করে ফেলল গো?ও আমার কি করে ফেললো!

এ বলে উনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অভিমানী কান্না জুড়ে দেন।
আমি অনেকটা হতভম্ব হয়ে পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যাচ্ছে।আমার দু’পা এবং মুখ থরথরে কাঁপতে থাকে।মুখ দিয়ে আমার কোনো ভাষা আসছে না কি থেকে কি বলব!!

ভাইয়া,মা-বাবা চিৎকারের আওয়াজে দরজার সামনে এসে দরজায় জোরে জোরে নক করতে থাকেন।
-শাওন,দরজা খোল?এই শাওন?
-বউমা তোমার কি হয়েছে দরজা খুলো?

আমার এতক্ষণে ঠাহর হয় উনি যে ভেতর থেকে দরজাটা আগেই নক করে দিয়েছিলেন।
আমি কোনোকিছু না বুঝার আগেই উনি গিয়ে দরজা খুলে ভাইয়াকে কাঁদো কাঁদো চেহারায় আঁকড়ে ধরে আর বলে,
-তোমার ভাইয়ের থেকে আমায় রক্ষা করো,রক্ষা করো ফাহিদ।নাহলে,আমার সর্বনাশ কের ফেলবে!!

বাবার রাগটা একটু বেশিই।ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে অগ্রসর হয়ে ঠাস ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দেন।
-কুলাঙ্গার ছেলে!!!তোর মতো কুলাঙ্গারকে আমি জন্ম দিয়েছি আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে!

আবারও বেহুঁতাশ চোপড়াতে থাকেন।
-ওগো,থামো,থামো।
-মা,তুমি কোনো কথা বলো না!শিপ্রা শাওনকে ছোট ভাই হিসেবে জানে।যখন বললাম, আবিরের প্রচন্ড মাথাব্যথা, দৌড়ে ওকে দেখতে যায়।।আর এখানে এসে যে এমন পরিস্থিতিতে পড়বে,ছিঃ মা,ছিঃ!!ভাবতেই আমার মাথা হেইট হয়ে আসে।

বাবার থাপড়ানো কিছুতেই কমছে না। থাপড়াতে থাপড়াতে গালদুটো লাল করে ফেলে,আর ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।মা অবুঝের মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।।
চিল্লা-পাল্লার আওয়াজে পাবাজ দৌড়ে আসে।
-আঙ্কেল এসব কি করছেন!নিচে তো মেহমান! সবাই দেখলে কি ভাববে!?প্লিজজজ চাচা এমনটি করবেন না।

বাবার হিংস্র জানোয়ারের মতো আমার উপর আরো বেশি খেঁপে উঠেন।পাবাজঅনেক কষ্টে সংযত করে আমার থেকে বাবাকে ছাড়িয়ে নেয়।আর বাবা গলা উঁচিয়ে বলেন,
-ওরে বলবা,ও যাতে রুম থেকে আর বের না হয়!!!আমার সব মেহমানের সামনে এই কুলাঙ্গাররে চেহারা দেখতে চাই না,নাহলে আমার মাথা হেইট হয়ে যাবে

পাবাজ আবার বলে উঠে,
-আঙ্কেল এখনো কেউ কিছু বুঝেনি।প্লিজজ এই জিনিসটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করবেন না।শাওনেরর হয়তো ভুল হয়ে গেছে।এই কথাটা ধামাচাপা দিয়ে অন্যকথা বলতে হবে। ভাবি প্লিজজ?আপনিও নিজেকে একটু এখন কনজার্ভেটিভ রাখবেন,কেউ যাতে কিছু না বুঝতে পারে।নাহলে আমাদের খারাপ ভাববে।।

জানেন,বাবা?আমি ফাহিদের(আমার বড় ভাই)থেকে যখন শুনলাম মাথাব্যথা নিয়ে কাতরাচ্ছে,তখনই আমি ওকে দৌড়ে দেখতে আসি।
আর এসে যে…..
মুখটা নিচু করে ন্যাকা কান্না শুরু হয় ভাবীর

উনি আবার হাউমাউ কান্না করে বলেন,
-আমি পারবো,পারবো!আমার স্বামীর বাড়ি আমার সম্মান,উনাদের কোনমুখে ছোট করব!

-এইতো লক্ষী বউ।চলো এবার।
ভাইয়া একথা বলে ভাবিকে জড়িয়ে নেন।সবাই আমার দিকে কটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যান পাবাজ দাড়িয়ে থাকে শুধু।
অতঃপর, আমি পাবাজকে জড়িয়ে ধরে কাছে এসে বলি,

-পাবাজ রে আমি বুঝি এতই খারাপ!?আমার উপর মা-বাবার এতটাই অবিশ্বাস!উনারা আমায় এখনো চিনলো না!?যারা তিল তিল করে আমাকে ছোট থেকে বড় করেছে আজ তারা আমায় চিনলো না?!
আজ সবার কাছে আমি চরিএহীন অপরাধী!!আমি খারাপ,আমি কুলাঙ্গার!!

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি আমি!!পাবাজ সান্ত্বনা দিতে থাকে।
-দোস, ভুল বোঝাবুঝি তে সবার এরকমই হয়।দেখবি,সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন বাসায় মেহমানতো তাই আঙ্কেল রেগে গেছেন।

-দোস,তুই বল?আমি কি এরকম ছেলে?আমার চরিএে কখনো খারাপ কিছু দেখেছিস?

-আরেহ বোকা,তুইতো পুরাই সিরিয়াস!আমরা দু’জন ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছি,শুধু আমিই জানি তুই কেমন।কিন্তু,উনি এসব কি বলছেন?আর উনার ব্লাউজ ছিঁড়ল কিভাবে?

আমি পাবাজের কথায় চুপ করে থাকি।
-কি শাওন, বল?তোর সাথে কিছু হয়েছে?

আমি যদি এখন সব বলতে যাই।তাহলে, আমাদের ফ্যামিলির ওপর সবার খারাপ দৃষ্টি যাবে।সবাই ভাববে,উনার সাথে আমার খারাপ সম্পর্ক আছে।পরে,মা-বাবা,ভাই সমাজের কাছে কলুষিত হবে।আমি চাইনা আমাদের ঘরের কথা বাহিরে রটাক,তা যতই নির্বোধ মিথ্যে হোক ।।কিন্তু কেউতো আর বিশ্বাস করবে না আমার সে ভার্সিটি লাইফের কালো অধ্যায়ের ঘটনা!

-আচ্ছা বুঝলাম,তুই বলবি না।এখন পেলাম বন্ধুর পরিচয়। তুই আমায় এতটাই অবিশ্বাস করিস।গেলাম।
এ বলে পাবাজ ব্যথিত হৃূয় নিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করে।।

আমি ফ্লোরের দিকে চোখগুলো সরু করে তাকিয়ে থাকি।আমার আজ কিছুই বলার নেই।কারণ,আমার সাথে আজ যা ঘটছে, কেউই আমার কথা বিশ্বাস করবে না।।।

কি ব্যাপার বেহাই সাহেব,মন খারাপ?
আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা শুচিস্মিতা মেয়ে অপলক চাহনি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।।পরনে তার গাঢ় খয়েরী কালার লেহেঙ্গা।বেশ বানিয়েছে যেন কোনো অপ্সরী।তবে মেয়েটিকে আমি চিনতে পারিনি,এই প্রথম বোধহয় দেখলাম।

আমি কিছু না ভেবে বলে উঠি,
-কে আপনি???!
হেলেদুলে হেঁটে আমার পাশে এসে বসে বলে,
-প্রথমে আমি আপনাকে কি নাম ডেকে সম্বোধন করলাম,একটু ভাবুনতো?

আমি হতভম্ব হয়ে ভাবতে থাকি এবং বলা শব্দগুলো মাথায় আসতেই,বলে উঠি
“কি ব্যাপার বেহাই সাহেব”
-ইয়েস,এটা।এবার বলুন আমি আপনার কি হতে পারি?

-আপনি আমার ভাইয়ের আত্মীয়! এটাই?
-ও মা,সেটা কেমন কথা!শুধু আপনার ভাইয়ের আত্মীয় হতে যাবো কেন,আপনারও তো আত্মীয়!
প্রচন্ড রাগ চটে বসে মাথার উপর আমার।রাগকে সামাল দিয়ে অনেক কষ্টে বলে উঠি,
-আপনি যাবেন?..
-যাবো মানে?
-মানে আমার হেড পেইন।পরে কথা বলছি!!!

আমার কথায় মেয়েটি মাথা এগিয়ে আমার দিকে অনেকক্ষণ নিশ্চুপতারসহিত তাকিয়ে থাকে।আর তরতর করে বিছানা থেকে উঠে আমার সামনে দাড়ায়।হাতের মধ্যে গুঁজে রাখা তুলো এবং ডেটল বের করে,তুলাতে হালকা ডেটল লাগিয়ে নেয়।

তুলা-ডেটল মিশ্রিত হাত আমার ঠোঁটের দিকে ক্রম অগ্রসর হতে থাকে।আমি আমার মাথাটা পিছু হেলিয়ে এক ঝটকায় মেয়েটির হাত থেকে তুলো- ডেটল ফেলে দিই। সড়াৎ সড়াৎ দাড়িয়ে বলি,
-এখান থেকে চলে যান!!আমাকে তুলা-ডেটল লাগিয়ে দিতে হবে না।আমি নিজেই লাগিয়ে নিতে পারবো।

মেয়েটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অন্যদিক তাকায়।পরক্ষনে আমার দিকে কড়া দৃষ্টি দিয়ে বলে,
-আপনার এসব ড্রামা পকেটে নিয়ে ঘুরেন। আর নিজের প্রায়শ্চিত ফল পাওয়ার অপেক্ষায় বসে বসে প্রহর গুনেন!. এখন জস্ট সময়ের পালা!!
এ বলে দমকা হাওয়ায় উধাও হয়ে যায় মেয়েটি।আমার মাথাটা ভীষণ ভার হয়ে আসতেছে!এসব আমার সাথে থেকে কি হচ্ছে?কেন হচ্ছে?আমি কার কি ক্ষতি করেছি?!

আমিতো সোহানাকে অনেক ভালোবাসতাম।কিন্তু সে জায়গায়ও উনি বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছিলেন।মেনে নিলাম সোহানাকে ছাড়তে!!! এখন কেমন নাটক শুরু করলেন আমার সাথে?কি এমন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে আমার বিপক্ষে হাত বাড়ালেন!.
হে আল্লাহ,তুমি রহম করো আমাকে?সকল বিপ-মসিবত থেকে রক্ষা করো,,,!!
আজ কান্না যেন কোনোকিছুতেই থামছে না।কন্ঠ যেন বাকরুদ্ধ!!!

চলবে???