Wednesday, June 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1456



বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১৫+১৬

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৫

বাতরুমে অনেক্ষন ধরে আটকে আছে রিদ। বার বার দরজা থাপড়াচ্ছে সে। বাইরে বুকে দু হাত গুজে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে আরশি। আরশি আজ কঠোর হয়ে আছে। বেটা সারা দিন আমার পেছনে পড়ে থাকিস। জ্বালিয়ে শেষ করিস আমায়। আজ ভালোভাবেই জব্দ করেছি তোকে। বাহ্ সকালে কি সুন্দরে আমাকে তার চাকরানী বানিয়ে ফেলেছিলো। এবার বুঝ আরশির পেছনে লাগার ফল কেমন।
আজ বেটাকে ভালোভাবে শিক্ষা দিতে হবে। যাতে সব শেষে বলে উঠে। আরশি আর তোর সাথে কোনো ফাজলামি করবোনা। ছেরে দে মা কেদে বাচি।

রিদ বিছানায় সুয়ে আছে। আজ বেচারার অবস্থা ছিলো নাজেহাল। রাত্রি চৌধুরি আরশিকে ডেকে বলে উঠে,
– এই আরশি, রিদের জন্য এক গ্লাস সেলাইন বানিয়ে আনতো।
কথাটা শুনা মাত্রই রিদ বলে উঠে,
– এই ফুফি না না না, আমি এখন পুরাপুরি সুস্থ আছি। তাকে দিয়ে আমার খেদমত করালে পরে দেখা যাবে এর চাইতেও করুন অবস্থা করে ছারবে।
– এর চাইতেও করুন অবস্থা করে ছারবে মানে? আরশি কি তোর সাথে কিছু করেছে?
কথাটা একটু রাগি ভাব নিয়ে বলে উঠে রাত্রি চৌধুরি।
আরশির দিকে তাকিয়ে একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বলে উঠে,
– না না ফুফি সে কিছু করেনি। এমনিই সে যে পরিমান বাদর। তাই কথার কথা বললাম আরকি। আর সে তো সারাজীবনই খেদমত করবে এখন বিয়ের আগে এতো কষ্ট করিও না ওকে দিয়ে।
রাত্রি চৌধুরি একটু ভ্রু যুগল কুচকে বলে উঠে,
– সারা জীবন খেদমদ করবে মানে?
মুহুর্তেই বিষম উঠে গেলো রিদের। আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– না না ফুফি আমি এভাবে বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি যে, আরশিতো বিয়ের পর তার শশুর বাড়ির মানুষের খেদমত করতে করতে পেরেশান হয়ে যাবে। তাই বিয়ের আগে তাকে দিয়ে কোনো কাজ করিও না এটাই বলছি আমি।
– ও তাই বল।
পাশ থেকে আরশি বলে উঠে,
– বাদ দাও মা, রিদ ভাইয়ের এমনিতেই মাথার তার দু,একটা ছিরে গেছে। আর এখন এই অবস্থা। তাই মনে হয় আবোল তাবোল বকছে।
রিদ দাত মুখ খিচে বলে উঠে,
– দেখলে ফুফি। বাদরের বাদর তোমার সামনে আমায় কিভাবে অপমান করছে।
– হ্যা আমি সত্যিটা বলতেই তা অপমানিত হয়ে গেলে। আর জানো মা, রাত ভাইয়া তো রিদ ভাইয়ের অবস্থার কথা সুনে হাসতে হাসতে শেষ। ভাবিও একই ভাবে লুতুপুতু খাচ্ছে। ভাইয়া ভাবিকে কলেজ থেকে নিয়ে বাড়ি চলে আসছে এখন। ভাগ্যিস আমি কলেজে জাইনি আজ নাহলে কত সুন্দর একটা মুহুর্ত মিস করে ফেলতাম।
রিদ দাত খিটখিটে বির বির করে বলে উঠে, তুমি যে আজ কেনো কলেজে যাওনি তা তো আমিই ভালো জানি।

রাতে লুডু খেলতে বসলো তারা চার জন। রাত ও রিদ একটু আগে বাইরে থেকে এসেছে। আর আসতেই টেনে নিয়ে লুডু খেলার আসর জমায় বৃষ্টি ও আরশি। একটা মাঝারি সাইজের বোর্ডেই খেলতে বসছে তারা। আরশিই বললো বোর্ডে খেলবে। ফোনে খেললে তো আর ধাপ্পা মারা যাবেনা। আরশি ও বৃষ্টি মিলে এক টিম। রাত ও রিদ মিলে এক টিম।
খেলা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় রাত খেয়াল করলো আরশি ও বৃষ্টির গুটি পাকা ঘরে। রাত খটমটিয়ে বলে উঠে,
– এই জন্যই তোদের মতো চোরের সাথে খেলতে চাই না। তোদের গুটি পাকা ঘরে গেলো কিভাবে?
আরশি সহজ ভাবেই বলে উঠে,
– আরে আজব, সব ঘর ঘুরেই তো ঢুকলো।
– তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তোদের ছয় উঠলো তিন টা নাকি চারটা। তাহলে তোদের দুজনের সাতটা গুটি মাঠে দৌড়া দৌড়ি করছে কিভাবে।
রিদও পাশ থেকে তাল মিলিয়ে বলে উঠে,
– হুম তাই তো।
আরশি রিদের দিকে চেয়ে চোখ রাঙিয়ে একটা মুচকি হাসি দিতেই, রিদ একটা ঢোগ গিলে বলে উঠে,
– না রাত ঠিকই তো আছে। ওদের উঠেছে তাই উঠিয়েছে। এতো কথা না বলে খেলনা।
– ঠিক আছে মানে। আমি নিশ্চিত ওরা চুরি করে খেলছে। আর তুই কি আমার টিমের প্লেয়ার নাকি ওদের দলের? হটাৎ ওদের হয়ে দালালি করছিস কেনো?
পাশে বসে তাদের ঝগড়া দেখে পিট পিট করে হাসছে বৃষ্টি।

রাতের খাবার খেতে আসলো সবাই। রিদের প্লেটে খাবার তুলে দিতেই সে বলে উঠে,
– খাবার কে রেধেছে ফুফি?
,
,
কেটে গেলো একদিন।
কলেজ ছুটিতে রাতের জন্য অপেক্ষা করছে বৃষ্টি। ইদানিং ছিটুর পর বৃষ্টিকে বাসায় নিয়ে আসে রাতই। আরশিকে কিছুটা দুর থেকে তুলতে হয়, দুজনের কলেজ আলাদা।
ওখানে দাড়িয়ে থাকতেই দেখা হয় রাতের বন্ধু রাফির সাথে।
– আরে ভাবি কেমন আছেন?
বৃষ্টি আশ পাশে তাকিয়ে বলে উঠে,
– ভাবি কাকে বলছেন ভাইয়া?
– কেনো আপনাকে? রাতের বৌ তো আমার ভাবিই হবে তাইনা?
– কিন্তু আমি তো ওর কাজিন হই। সেদিন বললো না আপনাকে?
– রাত আমাকে আপনাদের সম্পর্কে সব বলেছে। এবং আপনি যে তার স্ত্রী সেটাও বলেছে। যদিও আমি বাইরে থাকতে তেমন একটা যোগাযোগ হতোনা তার সাথে। কিন্তু রাতের মুখে যা শুনলাম তাতে আমারো খুব খারাপ লেগেছে। এতো বছরের প্রেমও এভাবে ধোকা দিলো তাকে। রাত হয়তো এখনো ভুলতে পারেনি তাকে। কারণ বর্ষার কথা উঠতেই তার চোখে মুখে দেখেছি আমি কান্নার ছাপ। এতো বছর ধরে গড়ে তোলা ভালোবাসার পাত্রটা হুট করে খালি হয়ে যাওয়াতে হয়তো একটু বেশিই আঘাত পেয়েছে সে। তো যাই হোক। আপনিই এখন তার সব, খেয়াল রাখবেন তার। দোয়া করি অনেক সুখি হোন আপনারা। আর হ্যা, আমি কয়েকদিন পর আবার চলে যাচ্ছি। দুই মাসের ছুটিতে এসেছিলাম মাত্র। দোয়া করবেন আমার জন্য।

রাতকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি বৃষ্টি। কিন্তু মনে তার চিন্তার ভাজ। রাত কি এখনো আপুকে সত্যিই ভুলতে পারেনি? তাহলে রাফি ভাইয়া যে বললো, আপুর কথা মনে উঠতেই তার চোখে এখনো পানি দেখতে পায়। তাহলে আপুকে কি এখনো ভালোবাসে বাত? আপু যদি ওই লোকটার কাছে পতারনার শিকার হয়ে আবার ফিরে আসে তাহলে কি আমায় দুরে ঠেলে দিবে রাত?

বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়ার খেলা চলছে। সন্ধার পর সবাই দল বেধে বসলো টিভি দেখতে। রুদ্র চৌধুরি এদিকটায় একটু অদ্ভুত মানুষ। যখন বাংলাদেশের খেলা চলবে তখন তার সাথে দল বেধে সবাইকে দেখতে হবে। কারণ তার কথা হলো দল বেধে খেলা দেখতে আলাদা একটা মজা।
অনেক্ষন টিভির সামনে বসে খেলা দেখাটা একটা আজাইরা কাজ ছারা কিছুই না, বানি তে আরশি চৌধুরি। তাই সে বার বার হাই তুলে সোফায় ঢলে পড়ছে। তার ভাবনা হয়তো এমন ঘুমের ভান ধরলে রুদ্র চৌধুরি তাকে রুমে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু না এমনটা কিছুই হলো না। রুদ্র চৌধুরি বলে উঠে,
– ঘুম আসলে চোখে পানি ছিটিয়ে আয়। দল বেধে খেলা দেখায় কতো মজা তা জানিস?
তোদের একটা গল্প বলি। আমার ছোট বেলার গল্প। আমি তখন থাকতাম গ্রামে। এবং ওটাই ছিলো আমার জন্মস্থান ও বাসস্থান। তখন আমরা বন্ধু বান্ধবরা এমন খেলা চললে দল বেধে চলে যেতাম খেলা দেখতে। গ্রামে কয়েকটা দোকান ছিলো। ওখানে মাত্র একটা দোকানেই টিভি ছিলো। সব বন্ধুরা গিয়ে উঠতাম ওই দোকানেই। এই জন্য তোর দাদার হাতে কতো মার খেয়েছি তার হিসেব নেই। এক দিন তো রাস্তার পাশের একট বাশের বেত কেটে। দোকান থেকে পিটাতে পিটাতে বাড়ি গিয়ে নিয়েছিলো সন্ধা বেলায়। পড়তে না বসে খেলা দেখতে চলে গিয়েছিলাম তাই। ওইদিন খুব বেশিই মেরেছিলো। তার পর থেকে এসব আড্ডবাজি বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মন দেই। গ্রামে আমাদের অনেক ভিটে ছিলো। যেগুলো পরিত্যাক্ত হয়ে পরে থাকতো বেশির ভাগ। বড় হয়ে পড়া লেখা শেষ করে ওসব জমি গুলো বেচে, শহরে এসে ব্যাবসায় জড়িয়ে পরি। আর আজ এই পর্যন্ত। এই খেলা দেখার জন্য কম মার খাইনি। বাবার প্রতি তখন খুব রাগ হতো। এক দু,বার বাড়ি থিকে পালিয়ে গিয়ে কোথাও জায়গা না পেয়ে আবার ফিরে এসেছি। কিন্তু হারিয়ে ফেলার পর এখন বুঝি বাবা কি জিনিস। যে বাবা মারের পরও আমায় ভালোবেসেবুকে জড়িয়ে বলতেন, আড্ডাবাজি করা ভালো না বাবা। কথায় আছে না, লেখাপড়া করে যে গাড়ি গোড়ায় চড়ে সে। কিন্তু আজ বাড়ি গাড়ি সবই আছে নেই শুধু সেই বাবা-মা। এতটুকু বলেই চোখের কোনে জমে থাকা জল গুলো মুছে নেয় রুদ্র চৌধিরি। রাত গিয়ে তার পাশে বসে,
– ধুর বাবা, কে বলেছে তোমার বাবা নেই, এই যে আমি আছি।
রুদ্র চৌধুরি হেসে বলে উঠে,
– হুম আমার এখন বাবা তুই থাকলেও মা কিন্তু দুইটা। এই যে, আরশি ও বৃষ্টি এখন এরাই আমার মা আর তুই বাবা।
পাশ থেকে রিদ বলে উঠে,
– তার মানে আমি তোমাদের কেও না?
– ধুর পাগল কেও না কিরে, তুই তো আমার এক মাত্র আঙ্কেল। সবাই জদি বাবা হয় তাহলে আঙ্কেল হবে কে তুই বল।

– আরশির জন্য একটা ভালো সম্বোন্ধ এসেছে। আমার বন্ধুর ছেলে। নিজেদের বিজনেস আছে আর ছেলে বাইরে সেটেল।
এতো হাসি ঠাট্টার মাঝে রুদ্র চৌধুরির মুখে এমন কথা শুনে বুকটা ধুক করে উঠে রিদের। আরশিও যেনো অবাকের চরম সীমানায়।
রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– মেয়েটার আগে পড়া লোখা শেষ হোক তার পর এসব নিয়ে ভাবি আমরা।
– পড়া লেখা তারা বিয়ের পর করাবে। আর ওর তো এখন আইন অনুযায়ি বিয়ের বয়সও হয়ে গেছে। আর আমাদের দাদি/নানি এদের বিয়ে হয়েছিলো ১২-১৩ বছরের মধ্যে। দু,দিন পর দেশে আসছে ছেলে।

রাতের বেলায় সকলে ঘুমের ঘরে বিভোর। ছাদে হাটাহাটি করছে রিদ। মনে রয়েছে চরম উত্তেজনা। সন্ধায় রুদ্র চৌধুরির বলা কথা গুলো দু, কান জুরে বাজছে তার। আরশির বিয়ে তাও আবার অন্য ছেলের সাথে, ইম্পসিবল। যার জন্য এতো কিছু করলাম। বাবা মাকে ছেরে দেশে পরে আছি যার জন্য, তাকেই কিনা চোখের সামনে অন্য কারো হয়ে যাতে দেখবো, এটা মোটেও আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। কিভাবে বলবো সবাইকে আমার মনের কথা? কিভাবে বলবো যে আরশিকে আমি চাই তাকে ছারা আমি শুন্য। না কিচ্ছু মাথায় আসছেনা আমার, সুধু এতটুকু মাথায় আসছে, তাকে ছারা আমি কিছুতেই ভালো থাকতে পারবোনা। কারন তার খুনসুটি, পাগলামি, জ্বালাতন এগুলোতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এসব ভুলে আমি অন্য কাওকেই নিজের জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবোনা। কিছুতেই না।

সকালে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে নাস্তা বানাতে চলে গেলো বৃষ্টি। রাতকে ডেকে দিতে আসলো সে। কারণ তার অফিসে যেতে হবে। রাতের পাশে বসে মিষ্টি শুরে ডাক দিলো বৃষ্টি। রাতের কোনো হুস নেই সেদিকে। বৃষ্টি এবার দু হাত দিয়ে নেরে নেরে বলে উঠে,
– উঠবেন নাকি পানি ঢেলে দিবো?
– রাত ঘুমু ঘুমু চোখে বলে উঠে, পানি কেনো ঢালবে? আদর করতে যানোনা?
রাতের কথায় হা হয়ে গেলো বৃষ্টির গাল। রাত আঙুল দিয়ে গালে দেখিয়ে দেয়, এখানে আদর করো।
বৃষ্টি লাজুক ভঙ্গিতে বলে উঠে,
– আমি পারবো না।
– তাহলে আমিও উঠবো না।
– তাহলে ঘুমান আপনি আমি গেলাম।
– আচ্ছা যাও, আমায় একটু ঘুমাতে দাও।
সাত পাঁচ ভেবে বৃষ্টি নিচু হয়ে রাতের গালে একটু গভির ভাবে চুমু দিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। রাত হা হয়ে রইলো। কারন সে হয়তো ভাবেনি বৃষ্টির মতো লাজুক মেয়ে নিজে তার গালে এভাবে চুমু একে দিবে।

ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে রাত। টাওয়াল দিয়ে মুখটা মুখে নিলো সে। তখনি চোখ পরে বিছানায় থাকা বৃষ্টির ফোনটা বাজছে। রাত কয়েক বার বৃষ্টিকে ডাক দিলেও শুনতে পায়নি বৃষ্টি। রাত ফোনটা হাতে তুলে দেখে বাংলাদেশি নাম্বার। রিসিভ করে কানে তুলে নিলো রাত।
ওপাস থেকে ভেষে আসে একটা মেয়েলি কন্ঠ। রাত চিনতে না পেরে বলে উঠে,
– কে বলছেন?
রাতের কন্ঠ বেজে উঠতেই নিশ্চুপ হয়ে গেলো ওপাস। একটু একটু কান্নার শব্দ আসছে ওপাশ থেকে। বুঝাই যাচ্ছে যে মেয়েটা ফোন দিয়েছে সে কাদছে। কিন্তু কে এই মেয়ে?
– হ্যালো কে বলছেন?
ওপাশ থেকে মেয়েটা একটু কেদে বলে উঠে,
– রাত……..
– হুম, আপনার পরিচয়টা দিবেন প্লিজ?
-রাত……
ওপাশ থেকে কান্নার গতি আরো বারছে।
– আরে বলুন না আপনি কে? নাহলে ফোন রাখছি আমি।
– রাত, রাত, রাত……..
এবার নিস্তব্দ হয়ে গেলো রাতও। এবার আর কন্ঠটা চিনতে অসুবিধা হলোনা তার। তার চোখের কোনেও ধিরে ধিরে জমে যাচ্ছে জল।

To be continue……….

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৬

ফোনে তীব্র গতিতে বেড়ে চলছে মেয়েটার কান্নার গতি। স্তব্ধ হয়ে আছে রাত। সেই চেনা কন্ঠস্বর অচেনা পরিচয়ে রাতের কানে বেজে উঠতেই চোখের কোনে পানি জমে গেলো তার। কিছু বলছেনা সে, শুধু বর্ষার কান্নার শব্দ গুলো কানে আসছে তার।
বর্ষা চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
– কেমন আছো রাত।
রাত গম্ভির গলায় উত্তর দেয়,
– বেচে আছি।
– এভাবে কেনো বলছো তুমি?
– হ্যা আছি ভালোই আছি। তোমার কি খবর? আশা করি হাসবেন্ট নিয়ে সুখেই আছো। দোয়া করি চলতি পথে বেঈমান গুলোও সুখে থাকুক।
আবারও কন্নায় ভেঙে পড়ে বর্ষা। মাঝে মাঝে হিচকি তুলে কাদছে সে।
রাত আবারও ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– অজথা কান্নার অভিনয় করে লাভ নেই। ইনজয় করো, আমার থেকেও বেটার কাওকে পেয়েছো ইনজয় করো সময়টা।
বৃষ্টি এবার কাদতে কাদতে বলে উঠে,
– সেদিন বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর, তিহানদের বাসায় উঠেছিলাম। কেও ছিলোনা তাদের বাসায়। শুধু আমি আর তিহান। একা একটা একটা ছেলে ও একটা মেয়ে তাও আবার এই রাতে, নিজেকে আমি সেইভ ভাবিনি তখন। কিন্তু তিহানের চরিত্রে আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য দেখিনি। সেদিন মনে হয়েছিলো এই তিহানকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। তার পরদিব তিহানের সাথে চলে গেলাম ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে। ভালোই কাটছিলো দিন। খুব শিগ্রই বিয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। তিহানের ওখানকার এক বান্ধবির জম্মদিন পার্টতে গিয়েছিলাম। পার্টি শেষে সবাই চলে যাচ্ছে।আমি তখন তিহানকে বাইরে দাড় করিয়ে একটু ওয়াশ রুমে যাই। বের হয়ে দেখি তিহান সেখানে নেই। একটু হেটে উপরে যেতেই দেখি একটা রুম থেকে অদ্ভুদ শব্দ কানে আসছে। অতি ব্যাস্ততায় হয়তো দরজাটা লাগাতে ভুলে গিয়েছিলো। দরজা খুলে ভেতরে যেতেই দেখি তিহান ও তার বান্ধবি টা। এতটুকু বলেই হু হু করে কেদে দিলো বর্ষা। তার পর ওখানে এক বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয় আমার। তার হেল্পে আমি তিহানের থেকে মুক্তি পাই। কারন তিহান আমায় ভালোবাসেনি। চিট করেছে আমার সাথে।
রাত গম্ভির গলায় বলে উঠে,
– এসব কথা আমায় বলছো কেনো? আমি কি শুনতে চেয়েছি তোমার কাছে?
বর্ষা এখনো কাদছে,
রাত বলে উঠে,
– ওকে রাখলাম আমি, তোমার সাথে কথা বলে সময়টুকু নষ্ট করতে চাইনা আমি।
– রাত আমি আবার তোমার জীবনে………..
বাকিটা বলার আগেই ফোন কেটে দেয় রাত। হয়তো কথাটা শুনতে পায়নি সে।
রাত ফোনটা রেখে বিছানায় গিয়ে বসে দু,পা প্লোড়ে ছড়ানো। একটা অস্থিকর ভাব নিয়ে দু, হাত দিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো পেছনের দিকে নিয়ে আবার ছেরে দিলো সে। ছোট চুল গুলো পুনরায় আবার সামনে চলে আসে। রাতের চোখে পানি। যেই বর্ষাকে সে সব সময় চাইতো কষ্ট থেকে আগলে রাখতে আর সেই বর্ষাই আজ এতোটা কষ্টে আছে। যাই হোক সবই তার নিজের ভুলের প্রশ্চিত্ব।
বৃষ্টি রুমে আসতেই ঝটপট চোখের পানি মুছে ওয়াশ রুমে চলে যায় রাত। চোখে পানি ছিটিয়ে আবার বেড়িয়ে আসে সে। বৃষ্ট তখন ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে বিছানায়? রাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলেউঠে,
– আপনি কাদছিলেন?
– ক কই না তো।
– আপনার মনটাকে মাঝে মাঝে এমন বিষন্ন দেখতে একধম ভালো লাগেনা। একটু হাসি খুশু থাকেন না প্লিজ।
কথাটা রাতের খুব কাছাকাছি গিয়ে বলে উঠে বৃষ্টি।
রাত এবার তারাহুরা করে নিচে চলে যেতেই বৃষ্টি পেছন থেকে হাতটা ধরে বলে উঠে,
– আপুর সাথে কথা হয়েছে তাই না? কল লপস্টে দেখলাম একটু আগে আপুর নাম্বারটা থেকে কল এসেছে আর তা রিসিভও হয়েছে। কি বলেছে আপু?
– না এমনি কেমন আছে এসব আর কি।
– একটা প্রশ্ন করবো?
রাত এবার ঘুরেবৃষ্টির দু গালেহাত রেখে মিষ্টি করে হেসে বলে উঠে,
– কি?
– আপু জদি কখনো ফিরে আশে তাহলে কি আমায় দুড়ে ঠেলে দিবেন?
,
,
,
একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে আরশি ও তার বাবার পছন্দের ছেলেটা। গতকাল দেশে এসেছে সে। আরশির সাথে আজ দেখা করতে এসেছে এই রেস্টুরেন্টে। রিদও আরশিকে ফলো করতে করতে এসেছে এখানে। রেষ্টুরেন্টের অপর মাথায় মাস্ক পড়ে মাথায় একটা কেপ দিয়ে বসে আছে রিদ।
আরি ও লোকটা খুব হেসে হেসেই কথা বলছে। তা কেনো জানি সহ্য হচ্ছেনা রিদের। ইচ্ছে করছে এখনি উঠে আরশিকে ভুবন কাপানো দু,টা চর দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ছেলেটাকে বলতে,
– আরশি ইজ মাই লাইফ।
কিন্তু তা করলোনা সে। উঠে চলে গেলো সেখান থেকে।

রাতের বেলায় ছাদে দাড়িয়ে আছে রিদ। আরশি রিদের পাশে এসে দাড়ায়।
– ভাইয়া ডেকেছিলে?
– হুম, আজ ছেলেটাকে কেমন লাগলো?
– ভালোই তো ছিলো। খারাপ না।
– আমার থেকেও ভালো? দেখতে শুনতে ভালো হলে প্যামিলি ব্যাগ রাউন্ড, ছেলের ভালো পজিশন থাকলেই কি সে ফার্পেক্ট হয়ে যায়?
– মানে?
– তার মাঝে এমন কি আছে যা আমার মাঝে নেই? কিন্তু আমার মাঝে যা আছে তা ওই ছেলেটার মাঝে নেই। আর তা হলো কাওকে এক তরফা ভালোবাসা। হয়তো তার মাঝেও সেটা আছে। কিন্তু আমর থেকে কেও তোকে কখনোই বেশি ভালোবাসতে পারবেনা। একটা ছেলে কাওকে কতোটা ভালোবাসলে ফ্যামিলি ছেরে হাজার মাইল দুরে বছরের পর বছর একা পরে থাকে? কখনো ভেবে দেখেছিস একটা ছেলে একটা মেয়েকে কতোটা ভালো বাসলে তার জীবনের বাজি ধরতেও দিধা বোধ করেনা। যেমনটা আমি করেছিলাম তুই যখন ক্লাস নাইনে ছিলি। চাইলে সেদিন তোকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে আমি সরে যেতে পারতাম। কিন্তু সেদিন আমি নিজের মরনকে যতটা ভয় করিনি তার চেয়ে বেশি ভয় ছিলো তোকে হারিয়ে ফেলার। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে সেদিন তোকে বাচিয়ে দির্ঘ এক মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছি ওই হসপিটালে। আমি সত্যিই ব্যর্থ। ভুল কাওকে এতোটা বেশি ভালোবেসেছি বলে। আমি আজ তোর কাছ থেকে জাস্ট একটা কথাই শুনতে চাই। তুই কি আমায় ভালোবাসিস নাকি আমি আমার ধারনাটাই ভুল ছিলো?
– রিদ ভাই আমি কখনোই তোমার এসব কথায় সিরিয়াস ছিলাম না। আমি ভাবতায় হয়তো তুমি আমায় নিয়ে মজা করতে। আর তোমাকে আমি যাষ্ট ভাইয়ের মতোই দেখতাম। কখনো ওসব কোনো অনুভুতি তোমার জন্য সৃষ্টি হয়নি আমার। তুমি আমার সাথে মজা করতে আমিও তোমার সাথে মজা করতাম, যাস্ট এতটুকুই। আর তুমি আমাকে সব সময় সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিতে তাই আমিও তোমায় মাঝে মাঝে সারপ্রাইজ দিতাম। কিন্তু কেনো তুমি এটাকে এতো এগিয়ে নিতে চাইছো? কেনো আমার তোমাকে ভালোই বাসতে হবে? কেনো তোমাকে আমার বয়ফ্রেন্ডই হতে হবে? হোয়াই? আর তুমি আমার জন্য অনেক করেছো এটা আমি শিকার করছি তাই বলে এভাবে বেহায়ার মতো ওসবের বিনিময় ভালোবাসা চাইছো।
– ভালোবাসাকে কোনো কিছু দিয়ে বিনিময় করা যায় না আরশি।আর আমি বেহায়া, তোকে হারানোর ভয়ে আমি বেহায়া হয়ে গেছি আজ। প্লিজ আরশি এমন করিস না আমার সাথে। প্রতিদিনের মতো বলনা যে এটাও কোনো মজা ছিলো।
– দেখো রিদ ভাই, অন্য কোনো ছেলে হলে এখন থাপ্পর দিয়ে সব দাত ফেলে দিতাম। তুমি দেখে এখনো সম্মান দিয়েই কথা বলছি আমি। নেক্সট টাইম এসব নিয়ে বাড়ির কারো সাথে কোনো কথাই বলবে না তুমি। তাহলে কিন্তু আমিও ভুলে যাবো যে তুমি আমার কাজিন হও এবং আমার থেকে বড়।

পরদিন সকালে বাড়ি চলে যায় রিদ। এই বাড়িতে আর এক মুহুর্তও থাকতে ইচ্ছে করছে না তার। যতক্ষন এ বাড়িতে থাকছে ততোক্ষনই বুকের ভেতরটা শুধু খাঁ খাঁ করে উঠছে।
এভাবেই কেটে গেলো আরো দুদিন। মনে তীব্র কষ্ট রাত ভর চাপা কান্নায় দুইটা দিন পার হয়ে গেছে রিদের।
রাতে বৃষ্টির বাবাকে ফোন দেয় রিদ। জানায় পরদিন বিকেলে তার ফ্লাইট। বাবা মায়ের কাছে চলে যাচ্ছে অস্ট্রিলিয়া।
– কি অদ্ভুদ কথাবার্তা। আগামি মাসে আরশির বিয়ে আর তুই কাল চলে যাচ্ছিস এটা কোনো কথা?
– বাবা মাকে ছেরে অনেক বছরই তো এখানে পড়ে আছি। এবার আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা তাদের ছারা। আমার বিদায় বেলায় আশা করি তোমরা সকলেই থাকবে।

এই নিয়ে রাতের সাথেও কথা হয় রিদের। পরদিন রিদের সাথে চলে গেলো সবাই এয়ার্পোর্টে। রাত, রুদ্র চৌধুরি, রাত্রি চৌধুরি, আরশি, বৃষ্টি সবাই আসছে।
এয়ার্পোর্টে দাড়িয়ে আছে সবাই। রিদ যেনো আজ কিছুতেই ভিতরে জেতে চাইছেনা আজ। আর একটু আর একটু বলতে বলতে অনেক্ষন কাটিয়ে দিলো তাদের সাথে। এতোটা বছর যেখানে ছিলো, যাদের কাছে বার বার ছুটে আসতো, যাকে এক তরফা ভালো বেসে গিয়েছিলো তাদের সবাই এখানে উপস্থিত। এক মাত্র আপন বলতে এরা ছারা আর কেও ছিলোনা এখানে। আজ সেই আপন লোকদের ফেলেই চলে যাচ্ছে অনেক দুরে।
একটু পর ইমিগ্রেশন ক্রস করে ভেতরে চলে যাবে সে। চোখের জল টপ টপ করে গড়িয়ে পরছে রিদের গাল বেয়ে। রুদ্র চৌধুরিকে জড়িয়ে ধরে সে,
– অনেক দিন তো আপনাদের সাথে ছিলাম আঙ্কেল। আপনারাই ছিলেন আমার আপন বলতে সব। এখানে বেশির ভাগ সময়ই কাটিয়েছি আপনাদের সাথে। জদি কখনো আমার ব্যাবহারে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে প্লিজ। নিজের ছেলে ভেবে মাপ করে দিবেন।
রুদ্র চৌধুরিও কিছু বলছেনা শুধু রিদকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি মুছে নিচ্ছে। রাত্রি চৌধুরিও গিয়ে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো রিদকে। রুদ্র চৌধুরি ও রাত্রি চৌধুরির মাঝখানে রিদ। চোখের পানি গড়িয়ে পরছে অঝরে।
রাতকে জড়িয়েই হুহু করে কেদে দিলো রিদ। কারন রাত শুধু রাত ভাই ছিলোনা এক জন ভালো বন্ধুও। প্রায় পাচ মিনিট ধরে রাতকে জড়িয়ে ধরে কাদছে রিদ। ছারার আগে ফিস ফিস করে শুধু একটাই কথা বলেছে।
“বর্ষাকে হারানোটা তোর আফসোস নয়। বৃষ্টির মতো মেয়েকে হারিয়ে ফেললে এটাই হবে তোর জীবনের সব চেয়ে বড় আফসোস। ওর মতো একটা মেয়ের সাথেই তুই সুখি হবি জীবনে। দুজন দুজনের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখিস চির কাল। স্বামী স্ত্রির বন্ধন একটা পবিত্র বন্ধন। এর মাঝে কখনো অন্য কোনো অপবিত্রটতাকে স্থান দিসনা।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চোখের জন মুছে ইমিগ্রশন ক্রশ করে ভিতরে চলে গেলো রিদ। তবুও বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে সবাইকে আবার দেখার জন্য। সবাইকে ছেরে যাওয়ার কষ্ট যেনো বুকের মাঝে খাঁ খাঁ করছে আজ। আরশির দিকে তাকাতেই চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে তার। তবুও নিজেকে সমলে আরশির দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা মুখে একটা হাসির রেখা টানে রিদ। যেনো ইশারায় বলে উঠে,
“” ভালো থাকিস।

To be continue…….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১৩+১৪

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৩

আজ রাতের চরিত্রে সত্যি হতভাগ বৃষ্টি। রাতের মতো ছেলে যে এতোটা নিচে নেমে যাবে তা ভাবতেও পারেনি সে।
ওই বাড়িতে আর ফিরবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিলো বৃষ্টি। বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় বৃষ্টির মা। বৃষ্টিকে জড়িয়ে একটা হাসি দেয় সে। কাধে হাত রেখে ঘরে নিয়ে যায় তাকে।
– আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো তোর?
– না মা।
– আর তুই একা কেনো? জামাই আসেনি?
– মা প্লিজ এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো লাগেনা। এক গ্লাস সরবত দাও তো মা। খুব গরম লাগছে।
বৃষ্টির মা একটা দির্ঘশ্বাস ফেললো। হয়তো বুঝে গেছে মেয়ের এমন কথা ফিরানোর কারণটা। এমজন মায়ের কাছে যে সন্তানের কিছু লুকানোটা কস্টের তার একটা প্রমান হয়তো বৃষ্টির মা ই।
– তুই বস আমি এক্ষুনি আসছি।
সোফায় ধপাস করে বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। সামনে আসা চুল গুলো কানের পেছনে পার করে সোফায় হেলান দিয়ে মুখটা উপর করে আছে বৃষ্টি। এক অদৃশ্য আগুনের শিখায় ভিতরটায় সব পুড়ে যাচ্ছে তার। সব যেনো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে অন্তরে। অন্তর্দহনে শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ।

কিছুক্ষন পর মায়ের ডাকে ঠিক হয়ে বসে বৃষ্টি। সরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে গ্লাসে চুমুক দেয় সে। সামনে থাকা অন্য কোনো খাবারেই হাত দেয়নি সে। সরবত টুকু খেয়ে আর কিছু না বলেই রুমে চলে যায় বৃষ্টি। ব্যাগটা রেখে ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে খাটে লম্বা হয়ে সুয়ে থাকে বৃষ্টি।
আজ চোখে একটুও পানি নেই বৃষ্টির। হয়তো আজ চোখের জলও বন্ধী হয়ে গেছে মনে কোনো এক বন্ধি দরজার ঘরে।
এই সন্ধার পর সময়টায় বৃষ্টির সব চেয়ে ফেভারিট একটা খাবার ছিলো চিপ্স ভাজা। এক প্লেট চিপ্স ভেজে পড়তে পড়তেও খেতো সে।
চিপ্স ভেজে বৃষ্টির পাশে এসে বসে তার মা।
– কিরে মা শরির খারাপ?
– না মা, এমনি সুয়ে আছি। কিছু বলবে?
– এই নে সিপ্স খাঁ।
– না মা, ইচ্ছে করছেনা এখন।
– আরে খেয়ে দেখ, এক সময় এটা তোর এই সন্ধায় পছন্দের খাবার ছিলো।
– পছন্দের তো অনেক কিছুই ছিলো মা। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে গেছে। বাবা কখন আসবে মা?
– চলে আসবে একটু পর। আর তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– হুম মা বলো।
– বিয়ের আগের আমার সেই বৃষ্টি আর এখন কার বৃষ্টির মাঝে যেনো আকাশ পাতাল তফাৎ খুজে পাই আমি। সত্যিই তুই সম্পূর্নই পরিবর্তন হয়ে গেছিস মা। তুই ওই বাড়িতে ঠিক আছিস তো? এতো কম বয়সে আমরা তোর মাথায় গোটা একটা সংসারের ভার চাপিয়ে দিয়েছি। আমরা মা বাবা হিসেবে সত্যিই অনেক সার্থপর। সমস্যা হলে বল। আজই তোর বাবার সাথে কথা বলে ফাইনাল সিদ্ধান্তে পৌছাবো আমরা। তোকে আর ওই বাড়িতে যেতে হবে না। আবার আগের মতো জিবন যাপন করতে পারবি তুই। সব আগের মতো হয়ে যাবে আবার।
– চাইলেই কি আবসর আগের জীবনে ফিরে যাওয়া যাবে কি, মা? এই দুই চোখ যা দেখলো, এই হৃদয় যা অনুভব করলো তা তো আর চাইলেও মুছে ফেলতে পারিনা মা। ভুলতে পারবো কি, জীবনে ঘটে যাওয়া মুহুর্তগুলো? সব সৃতির দেয়াল হয়ে বার বার আমার চলতি পথে বাধা হয়ে দাড়াবে।
– এখন তুই কি চাস মা? তুই যা চাইবি তাই করবো আমরা। মানসম্মান বাচাতে তোর সাথে অনেক সার্থপরতার পরিচয় দিয়ে ফেলেছি আমরা। আমরা চাইলেও তোকে আর আগের জীবনে ফিরিয়ে দিতে পারবোনা। এখন তোর মনের অবস্থাটাও বুঝা মুশকিল। তুই কি সত্যিই ঠিক আছিস রে মা?
এবার মা’কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেদে দিলো বৃষ্টি।
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে রাতের অনেক গুলো মিসড কল। ফোনটা হাতে নিয়ে অফ করে ফেললো বৃষ্টি। হয়তো এর পর রাত আরো ফোন দিবে। আর রাতের সাথে কথা বলারও ইচ্ছে আমার নেই।
চা য়ের কাপে পুনরায় চুমুক দিতেই টেবিলে থাকা মায়ের ফোনটা বেজে উঠলো। বৃষ্টি সিউর যে এখন নিশ্চই রাতই ফোন দিয়েছে। বাবা একটু আগে নাস্তা শেষ করে চলে গিয়েছে আর সে এখনো টেবিলে বসা। মা ও রান্না ঘরে সব ঘোচাচ্ছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা আন নোন নাম্বার। মা কে কয়েকবার ডাক দিয়ে রিসিভ করে নিলো সে।
– হ্যালো কে বলছেন। আর যেই বলে থাকুন, দেখছেন না ফোন ধরছিনা, আর বন্ধও করে রেখেছি। এখন মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে কেনো বিরক্ত করছেন? সুনুন আপনার সাথে সংসার করার সব ইচ্ছে মরে গেছে আমার। থাকেন আপনি ওই তৃষ্নাকে নিয়ে। আর আমি আর ওই বাড়িতে যাচ্ছিনা। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি, ওকে?
এটুকু বলেই থেমে গেলো বৃষ্টি। অপেক্ষা করতে থাকে রিপ্লাইয়ের জন্য। কিন্তু ওপাস থেকে ভেষে আসলো একটা মেয়েলি কন্ঠ,
– বৃষ্টি…..
– সরি, এক জনের উপর রাগ করে হয়তো ভুল করে আপনাকে ঝেরেছি। কে বলছেন?
– বৃষ্টি আমায় চিনতে পারছিস না?
– চেনা চেনা মনে হচ্ছে বাট চিনতে পারছিনা। পরিচয়টা দিলে খুশি হতাম।
– বৃষ্টি আমি বর্ষা।
এবার থমকে গেলো বৃষ্টির কন্ঠস্বর। বাগ রুদ্ধ হয়ে গেছে সে। সব কিছু এভাবে গোলমাল করে দিয়ে আজ এতোদিন পর হটাৎ পরিবারের কথা মনে হোলো তার।
বৃষ্টির নিরবতা ভাংলো বর্ষার ডাকে।
– কিছু বলছিস না যে? এখনো রাত করে আছিস আমার উপর?
– এমন কেনো করলি আপু? ছোট বেলা থেকে তোর সব কিছু আমিই সামাল দিতাম। তোকে কতো ভালোবাসতাম আর সেই তুই ই আমাকে এই প্রতিদান দিলি?
– বৃষ্টি আমি মামছি আমি ভুল করেছি। আর আমি চাই সেই ভুলটা শুধরে নিতে। আমি জানি রাত তোকে এখনো স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেনি। দেখ চাইলেই সব আবার আগের মতো হওয়া সম্ভব।
– আপু তুই কি আর কিছু বলবি? নাহলে আমি ফোন রাখতাম।
– জানি তুই আমার উপর এখনো রেগে আছিস। বাবা মা কেমন আছে?
– আছে যেমন রেখে গিয়েছিলি তার চেয়ে ভালো আছে।
– আব্বু আম্মু কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছে?
– না, তারা এখন তোকে চুমু দিয়ে বরণ করার জন্য লসল গালিচা বিছিয়ে ফুলের ভান্ডার নিয়ে বসে আছে।
আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো বৃষ্টি। বর্ষার সাথে যতই কথা বলছে ততোই রাগটা চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বৃষ্টির। আরেকটু হলে হয়তো মায়ের ফোনটা এখনি আছড়ে টুকরু টুকরু করে ফেলতো।
,
,
সন্ধায় কলিং বেলের আওয়াজে। দরজা খোলে বৃষ্টির মা। দরজা খুলে রাতকে দেখেই অবাকের চরম সীমানায় সে। রাত যে এই বাড়িতে এলো তা বিশ্বাসই হচ্ছেনা তার। কারণ রাত সবার মুখের উপরই বলে দিয়েছিলো। তার পা কখনো এই ঘরের দরজার সামনে পড়বে না।
কিন্তু আজ রাত এখানে? তাই একটু অবাক সে।
– আসসালামুআলাইকুম মা।
– ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছে বাবা?
– জ্বি মা, আলহাম্দুলিল্লাহ্।
– আসো ভেতরে আসো।
ভেতরে এসে সোফায় গিয়ে বসলো রাত। বৃষ্টি রাতকে দেখে পুরুপুরিই অবাক। রাতের সামনে আসলো না সে নিজের রুমে গিয়ে বসে আছে সে। কিছুক্ষন পর রুমে আসলো রাত। দেখে বৃষ্টি বিছানায় বসে বসে কাদছে। রাত গিয়ে তার কাছে বসতেই ছিটকে দুরে সরে যায় সে। বৃষ্টি রাতের এক হাত ধরে টেনে খাট থেকে নামিয়ে নিচে দাড় করায়।
– শুনো আজ আমি এখানে তোমার কোনো কথাই শুনতে আসিনি। আর না তোমাকে কোনো কথা শুনাতে। আমি জানি, আমি কিছু বলতে চাইলেও তুমি এখন শুনবেনা। তাই তোমাকে কিছু বলবোনা আমি শুধু দেখাবো। কাপর চোপর সব চেন্জ করে নাও, আর চলো আমার সাথে।
– কি ভেবেছেন টা কি আপনি? আমায় খেলার পুতুলের মতো নাচাবেন আর আমি নাচবো? আমি এতোটাও বোকা নই। আমি কোথাও যাচ্ছিনা এখন।
– দেখো বৃষ্টি তোমাকে প্রথমেই বলেছি আমি কিছু শুনতে চাই না আর আমি এতো কথাও পছন্দ করিনা। তুমি শুধু আমার ভালো রুপটাই দেখেছো। আমি চাইনা এখানে আমার খারাপ রুপটা তোমার সামনে প্রকাশ পাক। সো কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নাও।

নিচে গিয়ে দেখে বৃষ্টির মা আর কাজের মেয়েটা রান্না করছে। চলে যেতে চাইলেও বৃষ্টির বাবা ও মা খাওয়ার আগে যেতে দেয়নি তাদের। রাত আাসার কিছুক্ষন পরই বৃষ্টির বাবা এসেছে।
সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বৃষ্টির হাতটা ধরে বেড়িয়ে গেলো রাত। বৃষ্টি আজ আর কিছু বলছেনা। শুধু রোবটের মতো সোজা হয়ে রাতের সাথে হাটছে।

রাত তখন গভির, প্রায় ১২ টা বেজে গেছে। বৃষ্টিকে হাত ধরে হেচকা টানে কোলে বসিয়ে নেয় রাত। সামনে লেপটপটা ওপেন করে বৃষ্টিকে বলে উঠে,
– চুপচাপ দেখতে থাকো। আমায় সন্দেহ করো তাই না? দেখো ওই দিনের সি,সি,টিভি ফুটেজ।
ভিডিও ওপেন করে সামনে রেখে দিলো রাত। আর এক হাত দিয়ে বৃষ্টির কোমরটা শক্ত করে জড়িয়ে নিলো যাতে উঠে যেতে না পারে। ভিডিও চলছে, দেখে রাত বসে বসে লেপটপে কি যানো করছে। তখনি রুমে কেও একজন ঢুকে পড়লো। হ্যা তৃষ্না। কথার এক ফাকে রাত উঠে তৃষ্নার সামনে গিয়ে কি যেনো বুঝাচ্ছে তাকে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে, হয়তো রাত খুব রেগে আছে। এর মাঝেই দরজা ঠেলে বৃষ্টি ভিতরে
প্রবেশ করতেই তৃষ্না হুট করে কিছু না বলেই জড়িয়ে ধরে রাতকে।
তাদের এমন অবস্থা দেখে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো বৃষ্টি। তখনি তৃষ্নাকে ধাক্কা দিয়ে দাত মুখ খিচকে তৃষ্নার গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় রাত। তারপর সেও ছুটে চলে বৃষ্টির পিছন পিছন। থাপ্পর খেয়ে ফ্লোড়ে ছিটকে পরে তৃষ্না কিছুক্ষন ওভাবে থেকেই হুট করে উঠেই নিজের জামাটা খুলে নেয় সে। তৃষ্না ছোট জামাটা খুলতেই বৃষ্টি ঘুরে রাতের চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরে। রাত মুচকি হেসে বলে উঠে,
– আমায় না হয় কিছুক্ষনের জন্য অন্ধ বানিয়ে দিলে। কিন্তু তুমি দেখো আমার দোষটা কোথায় ছিলো। এখন হয়তো তোমার সন্দেহটা দুর হবে। বৃষ্টি আড় চোখে লেপটপের দিকে তাকাতেই দেখে। তৃষ্না ছোট কাপর টা রাতের ব্যাগে ঢুলিয়ে দিলো। তার পর জামা পড়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো। এবার রাতের চোখ ছারলো বৃষ্টি। রাত আবার বলে উঠে,
– এবার কি আমার চরিত্র নিয়ে তোমার কোনো সন্দেহ হচ্ছে।
বৃষ্টি একবার লুকুচুরি দৃষ্টিতে রাতের দিকে পিট পিট করে তাকিয়ে আবার লজ্জা ভঙ্গিতে চোখ নামিয়ে ফেললো।

To be continue……..

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৪

– আপনি এর আগে এই খারাপ ভিডিওটি দেখেছেন? রাতের দিকে বরাবর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কথাটা বলে উঠে বৃষ্টি।
প্রতি উত্তরে কিছু বললো না রাত। শুধু মুখে একটা হাসির রেখা টানলো।
মুখটা যেনো আবারও নিমেশেই মলিন হয়ে গেলো বৃষ্টির। সেখান থেকে উঠে চলে যেতেই রাত পুনরায় হাত ধরে টেনে কোলে বসিয়ে নেয় তাকে। বৃষ্টির মুখটা শুধু মলিন নয় অনেকটা অভিমানও ভর করেছে তার মাঝে। কিন্তু কেনো? তাদের মাঝে তো কোনো ভালোবাসাই নেই। তাহলে রাগ, অভিমান, অভিমান ভাঙানোর ব্যাস্ততা এগুলো কোন সম্পর্কের অংশ? এই সম্পর্কের কি কখনো একটা নাম হবে না? এটা কি চিরকালই থেকে যাবে একটা নাম হিন সম্পর্ক?
আচ্ছা রাতও কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে? নাকি এটা শুধু মাত্র তার দায়িত্ব ভেবেই পালন করছে রাত?
রাতের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে বারান্দায় চলে যায় বৃষ্টি।
ফুটফুটে চাদের আলোয় মেতে উঠেছে চার পাশ। তবুও যেন প্রাকৃতির সব অংশ ই স্তব্দ হয়ে আছে। বাতাস হিনা নিঝুম হয়ে আছে প্রকৃতি।
রাত গিয়ে দাড়ায় বৃষ্টির পাশে।
– কাল এই সময়টায় প্রকৃতি ছিলো একেবারে অন্ধকার। আকাশে মস্তবড় চাঁদের দেখা মিলেনি গত কাল। কেনো যানো?
বৃষ্টি আগ্রহ দৃষ্টিতে বলে উঠে,
– কেনো?
রাত এবার বরাবর বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– হয়তো তুমি ছিলে না বলে প্রকৃতিতে ও নেমে এসেছে আধার। আর সেই কিরণ শুন্যতার অবসন ঘটলো আজ তুমি ফিরে এসেছো বলে, সব অভিমান ভুলে গিয়ে প্রকৃতিতে ছরিয়ে দিচ্ছে সুন্দর্যতার এক অপূর্ব বাহার।
– আপনি কি জানেন, যে এক খন্ড কালোমেঘ এসেও এই কিরণ ঢেকে ফেলতে পারে। তখন কি প্রকৃতি সুন্দর্য শুন্যতায় ভুগবে না?
রাত কিছুটা ভেবে বলে,
– না, প্রকৃতি সেটা দুই হাতে সরিয়ে দিয়ে সকল আধারের মাঝে পুনরায় আলো ফিরিয়ে আনবে। আর ওই চাঁদটা হলে তুমি, আমি না হয় প্রকৃতি হয়েই তোমার এই চাঁদপরীর ছড়ানো আলো উপভোগ করে যাবো।
– তাহলে কি আপনি চান আমাদের মাঝে দুরুত্ব বেরে যাক?
– এমন মনে হওয়ার কারন?
– এইযে আমাদের সম্পর্কটা চাঁদ আর প্রকৃতির সাথে তুলনা করলেন। চাঁদ কিন্তু প্রকৃতির মাঝে সারা বছর আলো ছরায় না, মাঝে মাঝে হারিয়ে গিয়ে দিয়ে যায় আমাবস্যা।
– দুরুত্বই তো গুরুত্ব বাড়ায়। থেকে যায় মনে একটা অদৃশ্য টান। খা খা করে মনের মাঝে জ্বলে উঠা এক উত্তেজিত শুন্যতা।
– তাহলে আমি ভেবে নিবো কি, যে গত কালও চাঁদ হিনা এই মানব প্রকৃতি শুন্যতায় খাঁ খাঁ করছিলো।
রাত কোনো সংকোচ ছারাই উত্তর দেয়,
– হয় তো।
– তাহলে প্রকৃতি আর চাদের মাঝে এতো দুরুত্ব কেনো তারা কি সত্যি কারের চাঁদ আর প্রকৃতির মতো এক হবেনা কখনো?
রাত এবার বৃষ্টির চোখে চোখ রেখে বরাবর দৃষ্টি স্থির করে বলে উঠে,
– আজ এই চাঁদের মতো করে এই ব্যর্থ প্রকৃতিকে কি আপন করে নিবে তুমি? ছরিয়ে দিবে কি তার মাঝে ভালোবাসার আলো?
বৃষ্টি ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। রাত মুখের কোনে একটা হাসি ফুটিয়ে কোলে তুলে নেয় বৃষ্টিকে। মুহুর্তেই যেনো বৃষ্টির সমস্ত শরির জুরে একটা শিতল শিহরণ বয়ে গেলো।
কিছুক্ষন ওভাবে স্থির থেকে সেও জড়িয়ে ধরলো রাতের গলাটা। চেয়ে আছে একে অপরের মুখের দিকে। সুচনা হলো একটি নতুন ভালোবাসার রাত।
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে যায় আরশি। জেদ করেছে আজ সকলের জন্য নাস্তটা সে নিজেই তৈরি করবে। নামাজ শেষ করে কিচেনে চলে গেলো সে। মা কেও পাঠিয়ে দিয়েছে এখান থেকে। আরশি সব কিছু করছে আর চৈতি হাই তুলতে তুলতে আরশিকে সাহায্য করছে। কিছুক্ষন পর কলিং ব্যাল এর শব্দ কানে এলো।
এতো ভোরে আবার কে এসেছে? আরশি বলে উঠে, — চৈতি দেখো তো মনে হয় দুধ ওয়ালা এসেছে।
– আচ্ছা আপা দেখতাছি।

দরজা খুলতেই রিদ হন হন করে ঢুকে পরে ঘরে।
– আরে রিদ ভাই আপনে? আর এতো সকালে?
– কেনো আসতে মানা নাকি? কি করছিলে?
– ওই তো ভাইয়া, নাস্তা বানাচ্ছিলাম আমি ও আরশি আপা মিলে।
– কিহ্, আরশি? তাহলে তো আগে তাকেই দেখতে হচ্ছে। ঠিকঠাক মতো বানাতে পারে কিনা? নাকি আবার সবাইকে ডায়রিয়া রুগি বানিয়ে ছারবে?
বৃষ্টির পেছনে গিয়ে ডান কানের পাশে ফু দেয় রিদ। বৃষ্টি ডান দিকে ফিরতেই বাম কানের পাশে ফু দেয় সে। বৃষ্টি বাম দিকে ফিরে আবার ডান কানে ফু। বৃষ্টি এবার হাতে বেলুনিটা নিয়ে পেছন ফিরে তাকায়। দেখে রিদ তার দিকে চেয়ে দাত কেলিয়ে হাসছে।
– রিদ ভাই তুমি এতো সকালে এখানে কি করো?
– কেনো আমার ফুফির বাড়ি আমি আসবো না কি তুই আসবি?
– তো কি এমন দরকার পরলো যে এতো সকাল সকাল আসতে হলো?
– সত্যি বলবো।
– মিথ্যে বললে, বেলুনি দিয়ে মাথায় মারবো।
– তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই চলে এলাম।
পাশ থেকে খিক খিক করে হেসে উঠে চৈতি। চৈতির হাসিতে যেনো অপ্রস্তুত হয়ে গেলো বৃষ্টি। কিছু বলতে চেয়েও বলার মতো কিছু খুজে পেলোনা সে। হাপ ছেরে বলে উঠে,
– চৈতি এখান থেকে যাও তো।
– জ্বি আপা মনি আপনি আপনি না কইলেও আমি চলে যািতাম। বলে আবারও হেসে উঠে চৈতি। সেখান থেকে চলে গেলো সে।
রিদ বুকে হাত গুজে বলে উঠে,
– কার সাথে ঝগড়া হয়েছে আজ?
– ঝগড়া হবে কেনো। আর তুমি এমন ভাবে বলছো যাতে আমি ঝগড়াটে?
– তুই করো সাথে ঝগড়া না করলে এভাবে সবার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছিস কেনো?
– আমি আবার কি করলাম?
– তোর টই খাবার খেয়ে নিশ্চই আজ সবাই জগিংয়ে নেমে যাবে। আর রাস্তা হবে রুম টু ওয়াশরুম। তো এটা কি নিরিহ মানুষদের উপর একটা অত্যচার নয়?
এবার যেনো এক রাশ রাগ এসে বাসা বাধলো বৃষ্টির মনে। ইচ্ছে করছে বেলুনিটা দিয়ে এক বারি দিয়ে মাথা টা দু,ভাগ করে ফেলতে।
– দেখি সর, আমিই করছি, দেখা যাবে তুই আবার হাতে তেল ফেলে পুড়ে ফেলেছিস। পরে আবার আমাকে লোকের কাছে শুনতে হবে, বৌয়ের হাত পোড়া।
এবার যেনো রাগটা আরো বেড়ে গেলো আরশির। অনেক কিছু বলতে চেয়েও কিছুই মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা না। হাফ ছেরে বলে উঠে,
– বাবা তুই এখান থেকে সর। তোর সাথে কথা বললে আমার মাথা জিম ঝিম করবে। ড্রাংনিং রুমে গিয়ে বস। আমি আজ একটু স্পেশাল করেই তোর জন্য খাবার বানাবো। তবুও এখান থেকে যা বাবা যা।
রিদ তখন পরটা ভাজছে। ভাজতে ভাজতে বে উঠে, শেয়ারিং মানেই এক্সট্রা কেয়ার। জানিস না তুই? আর আমি আমার শশুরের মেয়ের কেয়ার করবো না তো কার কেয়ার করবো বল?
বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই বৃষ্টির মা প্রবেশ করলো সেখানে।
– আরে রিদ কখন আসলি তুই?
– এইতো ফুফি একটু আগে। আর বলোনা ফুফি। সকাল বেলায় তোমাদের বাড়িতে এসেছি বলে এভাবে অপমান হবো ভাবতেও পারিনি। আগে জানলে কখনোই তোমাদের না জানিয়ে আসতাম না। আসলে এই বাড়িতে আমার কোনো মুল্যই নেই।
– কেনো কে অপমান করলো তোকে। কার এতো বড় সাহস যে আমার একটা মাত্র ভাইপোকে অপমান করবে? আর এই বাড়িতে সকাল ভোর এগুলো কি? যখন খুশি তখন আসবি। তোকে কে কি বলেছে? তার নামটা বল একবার।
– আর কে বলবে ফুফি? ঘরে ঢুকতেই আরশি মেডাম বলে উঠে, এতো সকালে এই বাড়িতে কি? আর আমার নাকি সভাব খারাপ হয়ে যাচ্ছে যখন তখন এসে পড়ি। ফুফির বাড়িতে আসতে হলেও নাকি আগে অনুমতি নিয়ে তার পর আসতে হবে। এখন তুমিই বলো ফুফি এতো অপমানের পর এই বাড়িয়ে থাকা যায়? এতটুকুতে শেষ নয় ফুফি, আমাকে এখানে ডেকে এনে বলে, সবার জন্য নাস্তা বানাতে। কোনো কাজ না করে নাকি অন্য ধংস করা আমার সভাব। আরো কতো কি বললো। আর তুমিই ভাবো, যেই আমি কখনো রান্না ঘরে আসিনা। সেই আমি আজ রান্না করছি। তাহলে ভেবেই দেখো কতখানি অপমান সহ্য করতে হয়েছে আমাকে।
আরশি যেনো বাকরুদ্ধ, চোখ দু,টি মারবেলের মতো বড় করে আছে, গালটা বানিয়ে রেখেছে এক মস্ত বড় গুহা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে সে। আরশির মা পাশ থেকে বলে উঠে,
– তুই যেমন আমার মেয়ে তেমনি সেও আমার ছেলে। আর এই তোর নিজ হাতে রান্না করে সকলকে খাওয়ানোর নমুনা?
– মা বিশ্বাস করো, এই খাচ্চর টা সব বানিয়ে বানিয়ে বলছে। এই খাচ্চরকে আমি এসব কিচ্ছু বলিনি।
– দেখলে ফুফি, তোমার সামনে আমাকে খাচ্চর বলে অপমান। এগুলো ভাবা যায়, তুমিই বলো।
আরশির মা রিদের হাত ধরে বলে উঠে,
– চলতো এখান থেকে। আজ থেকে তুই কয়েকদিন এখানে জমিয়ে খাবি শুধু আর সব রান্না করবে আরশি নিজের হাতে। আর এটাই ওর শাস্তি।
এবার নিজের চুল নিজে ছিরে ফেলতে ইচ্ছে করছে আরশির। কি সুন্দরে শুকনো মাথায় একটা গেম খেলে দিলো খচ্চরটা। এখন আমাকে ওর কাজের বেটি হতে হবে। ছুটাচ্ছি তোর ভোজন দাড়া।
,
,
নাস্তা শেষে বৃষ্টিকে নিয়ে অফিসে চলে গেলো রাত। তৃষ্নাকে আগেই ফোন দিয়ে অফিসে আসতে বলেছে রাত। যদিও সেদিনই চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলো তৃষ্নাকে। তবুও আজ ডাকলো বৃষ্টির সাথে সত্যিটা দেখাতে।

গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে তৃষ্না। রাত অনেক গুলো কথা শুনিয়েছে এতোক্ষন। বৃষ্টির ইচ্ছে করছিলো সেও তৃষ্নার ডান গালো আরেকটা বসিয়ে দিতে।
রাত এক হাতে বৃষ্টিকে কাছে টেনে নিলো। বৃষ্টির কাধে এক হাত রেখে শক্ত করে মিশিয়ে রেখেছে তার সাথে। আজ আর রাতের স্পর্শে অবাক হয়নি বৃষ্টি। এর চাইতেও গভির স্পর্শের শিহরণে শিহরিত হয়েছে সে রাতের ভালোবাসায়।

সকালে নাস্তা করার পর শুধু রুমে আর ওয়াশ রুমে দৌড়া দৌড়ি করছে রিদ। কেনো এমন করছে?
সবার জন্য চা বানানোর সময় মায়ের দৃষ্টির আড়ালে রিদের চা টা একটু স্পেশাল ভাবেই বানায় আরশি। আর সেই স্পেশাল চা খেয়ে রিদের এই অবস্থা।
রিদ সকাল থেকে রুম থেকে বের হয়নি। রুম আর বাতরুমটাই তার এখন সব। বাইরে গেলেও আবার লোক লজ্জার ভয়। আসলে ফাদে পরলে বাঘও বিড়াল। রিদ ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে টেটে হাত দিয়ে দিয়ে রুমে পায়চারি করছে। আবার চাপতেই দৌড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায় সে। কিছুক্ষন পর বেড় হতেই খেয়াল করে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই আরশি বলে উঠে,
– ওখানেই থাকো তুমি। বের হওয়ার কি দরকার? বের হয়েতো আবার ওখানেই দোড় দিবে। এক কাজ করো ওখানেই থেকে যাও তুমি। খাবার দাবার লাগলে আমাকে বলবে কিন্তু। আমার তো আবার তোমাকে নিজ হাতে রান্না করে দিতে হবে।
– দরজা খোল আরশি। আমার মাথাটা কিন্তু চরম খারাপ হচ্ছে।
– এই খবরদার একধম আমার সাথে সাউড করবে না তাহলে আজ সারাদিন এখানেই থাকতে হবে।
– প্লিজ দরজাটা খোল। সোনা বোন আমার, লক্ষি বোন থুক্কু বউ আমার দরজাটা খোল। সেলাইন খেয়ে সুয়ে পরবো আমি। শরিরটা ক্লান্ত হযে গেছে আমার। একটু বিশ্রামের দরকার। প্লিজ দরজাটা খোল আরশি।
– ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ো। মায়ের আদেশ অনুযায়ি না হয় আমি বরং তোমার জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করি। পেরা নিও না ভাইয়া চিল।

To be continue………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১২

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ_১২

রাতকে এভাবে দেখে হাত পা যেনো অবস হয়ে আসছে বৃষ্টির। নিজের চোখ কেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে আর সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। রাতও হতভ্বম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। ওদিকে তৃষ্না এখনো জড়িয়ে ধরে আছে রাতকে। যেনো পরিস্থিতির দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। রাতও আজ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। মুখে যেনো কিছু বলার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে।
আর এক মুহুর্তও ওখানে না দাড়িয়ে থেকে মুখ চেপে কান্না করতে করতে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায় বৃষ্টি। রাত তৃষ্নাকে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দেয়। তৃষ্নার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে ছুট দেয় বৃষ্টির পিছন পিছন।
পেছন থেকে অনেকবার ডাকলেও কোনো সারা দেয়না বৃষ্টি। নিচে গিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে যায় বৃষ্টি। রাত দৌড়ে গিয়ে গাড়ির পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টিকে বলতে থাকে,
– প্লিজ বৃষ্টি একবার আমার কথাটা শুনো তুমি।।
বৃষ্টি শান্ত ভাবে ড্রাইভারকে বলে উঠে। ভাইয়া চলেন।
গ্লাসটা উঠিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো বৃষ্টি।

দুপুরে উত্তপ্ত রোদে ওখান থেকে কিছুটা দুরে নাদিটর পাড়ে গিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। হাকলকা মরে যাওয়া ঘাসের উপর তার ছায়াটা যেনো সাদা কাগজে কালো পেন্সিল দিয়ে একে দেওয়া ছায়ার মতংো বুঝা যাচ্ছে এমন রোদ। ছাতি ফাটা রোদ যাকে বলে। নদীর পানিও কোমে যাচ্ছে ধিরে ধিরে ধরে। শীত এলে হয়তো আরো কমে যাবে। তার জীবনটাও আজ এই নদির মতো মনে হচ্ছে তার। নদী যেমন বর্ষায় পানিতে ভর্তি থাকে তখন মনে হয় তার সব চাওয়াই আজ পরিপূর্ন। আবার যখন ঋতু পরিবর্তনে শুকিয়ে যায় তখন মনে হয় এই প্রশান্তি টা ছিলো শুধু কিছু মুহুর্তের জন্য। তেমনই আজ বৃষ্টির জীবনটা। এতোদিন ভেবেছিলো বর্ষার সেই সতেজ নদীটার মতো স্বচ্ছল। কিন্তু জানতোনা এভাবে ঋতু পরিবর্তনের আগেই সেই জোয়ার শুকিয়ে ফাটা মাটিতে রুপ নেবে। কপালের ঘাম ঘাম বেয়ে মাটিতে পরছে তার। পেছন থেকে ড্রাইভাল লোকটা বলে উঠে, আপা চলেন, এভাবে ভর দুপুরে খারা রোদে বসে থাকা ঠিক না। কোনো উত্তর দিলোনা বৃষ্টি। আশে পাশে পরিবেশটা আরো অসহ্য লাগছে। সেখান থেকে উঠে গাড়ি করে সোজা বাড়ি পৌছে গেলো সে।

বাসায় প্রবেশ করে কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা রুমে চলে গেলো বৃষ্টি। শরিরের ঘাম গুলো শুকিয়ে গেছে এতোক্ষনে।
রাত্রি চৌধুরি সবে খাবার শেষ করে উঠেছে। হাত ধুয়ে সোজা চলে গেলো বৃষ্টির রুমে।
তখন বিছানায় বসে বসে কাদছিলো বৃষ্টি। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ঝটপট চোখের পানি মুছে নিলো বৃষ্টি। এমন ভাব ধরে বিছানায় বসলো যাতে কিছুই হয়নি। রাত্রি চৌধুরি তার কাছে এসে বসলো।
– এতো তারাতারি চলে এলে, সব ঠিক টাক আছে তো?
– হুম মা।
– পাগলটা কি সারপ্রইজ’ড হয়নি?
বৃষ্টি জোর পূর্বক হাসি দিয়ে আবারও বলে উঠে,
– হুম।
মনে মনে বলতে থাকে। “আমি নিজেই তো আজ অনেক বড় সারপ্রাইজ’ড হয়ে গেছি মা। রাত্রি চৌধুরী আবারও হাসি মুখে বলে উঠে,
– পাগলটার কি রাগ ভেঙেছে?
– হুম।
রাত্রি চৌধুরি হাসির রেখা টেনে বলে উঠে,
– আমি জানতাম আমার ছেলেটা আর যাই হোক আর রাগ করে থাকতে পারবেনা। রাত ছোট বেলা থেকেই এমন। যতই রাগ করুক না কেনো, হালকা একটু ভালোবাসা আর তার পছন্দের কিছু জিনিস পেলেই রাগটা পানি হয়ে যেতো। তুমিও আস্তে আস্তে সব বুঝে যাবে। মিশে যাবে রাতের প্রতিটি শিরার সাথে। এক চাহোনি দেখেই বলে দিতে পারবে সে কি চায়। জানিনা আর কতোদিন এভাবে থাকবো? একটাই ছেলে আমার। এই শেস বয়সেও নাতি-নাতনি নিয়ে খেলা সব দাদা দাদির ই শখ। জানিনা আমাদের সেই শখ টা পুরন হবে কিনা? জানিনা কবে এই ঘরটায় ছোট্ট ছোট্ট পা দৌড়া দৌড়ি করবে? দোয়া করি দিনটা যেনো খুব তারাতারিই আসে। আর তুমি অনেক শুখি হবে মা। শুধু আমার পাগল ছেলেটাকে সামলে রেখো, যদি কখনো আমরা হারিয়ে যাই। তো খেয়েছো?
– হুম, আপনার ছেলের সাথেই খেয়ে নিয়েছি।
বৃষ্টি যদিও খায়নি, তবুও মিথ্যা বলেছে শাশুরিকে। তার এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছেনা। আশেপাশে কিছুই ভালো লাগছেনা। চার পাশটায় মনে হয় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মিথ্যা না বললে, রাত্রি চৌধুরি খাইয়েই ছারতো তাকে। মাঝে মাঝো খুব লোভ হয় বৃষ্টির, এমন একটা ফ্যামিলিকে খুব আপন করে পেতে। আচ্ছা সে কি এই ফ্যামিলির আপন কেও?

সেখানে আর না থেকে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো বৃষ্টি। পুরু গতিতে শাওয়ার অন করে ফ্লোড়ে বসে পরে সে। চোখে বার বার ভেষে উঠছে তৃষ্না আর রাতের দৃশ্যটা। নিশ্চুপ হয়ে কান্না করছে সে। কেনো হচ্ছে তার সাথে এমন? অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়েটা হলো তার। তাও আবার অন্যরকম ভাবে। ছিলোনা কনো প্রস্তুতি। পরিবার একটিবার জানতে চাইলোনা তারও কোনো মনের মানুষ আছে নাকি? কিছুই জিগ্গেস করেনি তাকে। শুধু মান সম্মান বাচাতে তসর সম্মতি নিয়ে বৌ সাজিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে এই বাড়ি। মাত্র কয়েকদিনের কেয়ারে কিচ্ছু ভুলে যায়নি সে। বাশর রাতেও সেই ফিন ফিনে রুমটা কাপিয়ে তোলা থাপ্পরটাও ভুলেনি। গাল পুলে গিয়েছিলো সেদিন। দু,দিন ব্যাথা ছিলো গালে। কিচ্ছু ভুলেনি। হ্যা, ভুলে যেতে চেয়েছে তার সাথে কি হয়েছে। মনে রাখলে তো আর সব আবার আগের মতো ফিরে পাওয়া যাবেনা। এতোদিনের রাতকে দেখে একটু হলেও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিলো মনে। চেয়েছিলো সব ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করবে সে। কিন্তু এভাবেই কি সব শুরু করা যায়? সব সহ্য করে কি পরে থাকা যায়? কেনো তার জিবনটা বার বার ঘুচিয়ে তুলতে চাইলেও এমন এলো মেলো হয়ে যাচ্ছে? কেনো? কেনো? কেনো? প্রশ্ন।

কান্নার গতিটা এবার আরো বেড়ে গেলো বৃষ্টির। চিৎকার দিয়ে দিয়ে কাদছে সে। সবে মাত্র ইন্টার শেষ করে, অনার্সে একটি বছর পার হলো। তার মাঝে এতো কিছু ঘটে গেলো তার সাথে। এতো চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কি তার আছে? কম বয়সি মেয়েদের ধর্যটাও এতো শক্ত না। কিছু চেয়ে তা না পেলেও অভিমান ভর করে মনে। আর সেই বয়সেই সে, একটা পরিবারকে ঘুচিয়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে। নিজের সব ইচ্ছা বিষর্জন দিয়ে হলেও চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। তারও কি অন্য আট দশটা মেয়ের মতো স্বামির ভালোবাসা নিয়ে সংসার ঘুচিয়ে তুলতে ইচ্ছে করেনা? তার তা না হয়ে, এই বয়সেই নিজের স্বামির বুকে দেখেছে অন্য একটা মেয়েকে। এর চাইতে আনন্দের মুহুর্ত আর কিই বা হতে পারে? কেনো তার সাথে এমন হচ্ছে বার বার। কেনো? কেনো? কেনো? এই সব কেনোর উতর সে আজ পেতে চায়। এসব ভাবতে ভাবতে শুধু বেড়ে চলছে কান্নার গতি। আর তা চার দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ।

ঘন্টা খানেক পর দরজায় আওয়াজ পেতেই চেন্জ হয়ে বাইরে আসে বৃষ্টি। রাতকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে সে। রাত পেছন থেকে বৃষ্টির হাতটা ধরে টান দিয়ে মিশিয়ে নেয় তার সাথে।
– ছারুন প্লিজ। অসস্থি লাগছে আমার।
– আমি টার্চ করলে তোমার অসস্থি লাগে?
– লাগে এখন সব লাগে। ছারুন আমায়?
– আগে আমার পুরু কথাটা শুনো তুমি। তার পর তুমি যা ইচ্ছে তাই করো।
– কি শুনাবেন আপনি? যে ওই মেয়েটার সাথে যে আপনার সম্পর্ক আছে তা আমাকে জানাতে মনে নেই তাই তো? আমি আপনার কাছ থেকে কোনো কিছুরই জবাবদিহি চাইছিনা। সো আপনার জবাবদিহিতার প্রয়োজন নেই। আর আমি বা আপনার কে? শুধু নামেই মাত্র সম্পর্কটা। আর আমাদের মাঝেও কি এমন কিছু হয়েছে? যার কারনে আমি কষ্ট পবো? নো ওয়ে। যে আমার ইমোশন বুঝেনা তার জন্য কষ্ট পাওয়ার কোনো মানেই হয়না। আর অনয় মেয়ের সাথেপ্রেম করুন, ফুর্তি করুন, যাই করুন, কিছুই মনে করবো না আমি। দিনের পর দিন অন্য মেয়ের সাথে ফুর্তি করে আমার কাছে ভালো সাজার কোনো প্রয়োজন নেই।
“” ঠাস,,,
বৃষ্টির গালে আচমকাই একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় রাত। ছল ছল দৃষ্টিতে রাতের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে বৃষ্টি। অন্য একটা মেয়ের জন্য আজ আমার গায়ে হাত তুললো রাত। এটাই বুজি আমার ভাগ্য।
রাগের বসে হটাৎ কি করে ফেললো তা নিয়েও আফসোস শুরু হয়ে গেলো রাতের। বৃষ্টি দৌড়ে সেখান থেকে প্রস্থান করায়, ফ্যালফ্যাল ভাবে চেয়ে আছে রাত। কিছুক্ষন দাড়িয়ে ৎেকে সেও ঢুকে যায় ওয়াশ রুমে।

রাতের ব্যাগটা এখনো সোফায় পরে আছে। ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু একটা বাইরে বের হয়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা হাতে নিতেই রাগটা ঘৃনায় পরিনত হতে থাকে। ব্যাগ থেকে বেছিয়ে এলো মেয়েদের একটা ছোট্ট কাপর। ছি! এতটা নিচে নেমে গেছে রাত?

নিচে গিয়ে টেবিন থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো বৃষ্টি। তবুও যেনো উত্তেজন কমছেনা তার। হাতে থাকা গ্লাসটা জোড়ে ছুড়ে মারে ফ্লোড়ে। কাচ বাঙার শব্দে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে রুদ্র চৌধুরি।
– কি ব্যাপার তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেনো? রাত কি কিছু করেছে?
– না বাবা। এমনিতেই পানি কাওয়ার সময় গ্লাসটা পরে গেছে।
– তোমার কিছু হয়নি তো?
– না বাবা।
রুদ্র চৌধুরি একটু জোড়ে বলে উঠে,
– এই চৈতি। কোথায় তুই। এখানে এসে কাশ গুলো পরিস্কার করে দে তো।
– না বাবা আমি করে নিচ্ছি সমস্যা নাই।

সন্ধার পর রুদ্র চৌধুরিকে বলে নিজের বাড়ি চলে এলো বৃষ্টি। আর এক মুহুর্তেও ওই বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করছেনা তার? এতো দিন ধরে তৈরি হওয়া স্বপ্নটা আজ থেকে দুই ভাগে বিভক্ত।

To be continue………..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১১

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১১

তৃষ্না ফোনটা বের করে কি যেনো বৃষ্টির দিকে এগিয়ে দিলো। কিন্তু তা দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই বৃষ্টির। একটু আগে রাতের আচরনে অনেকটাি কষ্ট মনের মাঝে বাসা বেধে নিয়েছে। যদি তৃষ্নার দেখানো জিনিসটা খুব খারাপ কিছু হয় তাহলে তো সে সহ্য করতে পারবেনা। আর মুহুর্তও সেখানে না দাড়িয়ে নিচের দিকে হাটা ধরলো বৃষ্টি। তৃষ্না যাই দেখাক না কেনো। আজ কিছুই দেখবেনা সে। কিচ্ছু না।

রাত অনেক হলো। বৃষ্টি রুমে প্রবেশ করে দেখে রাত বিছানায় সুয়ে আছে। রুমের লাইট অফ। জানালার পর্দাগুলোও সড়ানো। চাদের আলো কিছুটা এসে পরছে রাতের গায়ে। ওভাবেই দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। অনেক্ষন হয়ে গেছে রাতের মুখে কোনো কথা নেই। বৃষ্টি একটু এগিয়ে গিয়ে জানালার পর্দাটা টেনে দিলো। এবার রুমটা মোটামুটি অন্ধকার। রাত চট করে রেগে গেলো বৃষ্টির কাজে।
– এটা কি করলে তুমি? পর্দা টানলে কি আমি টানতে পারতাম না? তোমাকে কি আগ বাড়িয়ে কিছু করতে বলেছি আমি? চাঁদের আলোটা কি এমন ক্ষতি করেছে শুনি?
– এভাবে আলো থাকলে কি ঘুমানো যায়? আমি ভাবলাম আপনার হয়তো অসুবিধা হচ্ছে। আর আপনিও চাঁদের আলো দিয়ে কি করবেন শুনি?
– ঠান্ডা লাগছে তো তাই চাঁদের আলো পোহাচ্ছি। যত্তসব আজাইরা ন্যাকামি।
বলেই বিছানা থেকে নেমে বারান্দার দিকে হাটা ধরলো রাত। বৃষ্টি পেছন থেকে বলে উঠে,
– কোথায় যাচ্ছেন?
– চাঁদের আলো পোহাতে। ঘরের চাঁদ তো ভিন দেশে আলো ছরাতে শুরু করে দিয়েছে, তাই প্রাকৃতিক চাঁদের মাঝেই সেই স্বাদ খুজে নিতে হবে।
বৃষ্টি ভালোই বুঝতে পারছে, তাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো রাত। তখনও ঠোট ফুলিয়ে বললো,
– আমিও কি আসবো?
রাত বিরক্তি ভঙ্গিতে দাত কেলিয়ে বলে উঠে,
– জ্বি আসেন। দুজন মিলে জোৎস্না বিলাস করবো।
বৃষ্টি খুশিতে হকচকিয়ে বলে উঠে,
– তাহলে তো আরো ভালো। দুজন আজ আর ঘুমাবো না, সারা রাত জোৎস্না বিলাস করবো। খারাপ না আইডিয়াটা।
রাত এবার দাত মুখ খিচে বলে উঠে,
– স্টুপিড।
বলেই বারান্দায় গিয়ে ফ্লোড়ে বসে পড়লো সে। চাঁদের আলোটা এবার বরাবরই গায়ে এসে পরছে। কিছুক্ষন পর বৃষ্টিও এসে বসলো তার পাশে। কিছু বললোনা রাত। এবং কোনো কথাও বলছেনা বৃষ্টির সাথে।
বৃষ্টি মুহুর্তেই রাতের এক হাত জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বলে উঠে,
– সরি, আর কখনো এমন হবেনা।
রাত একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
– জানো বৃষ্টি। এমন একটা জোৎস্নার রাত নিয়েও অনেক স্বপ্ন ছিলো মনে। এরকম চাঁদের আলোয় বসে বসে বর্ষার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে কতো রাত্রি পার করে দিয়েছি তার কোনো হিসেব নেই। এভাবে ফোনে সারা রাত পার হয়ে গেলেও মনে একটা শুন্যতা কাজ করতো। কারণ তখন সে আমার পাশে থাকতোনা। শুধু তার ভয়েজ ও নিশ্বাসের শব্দ গুলোও উপলব্দি করতাম আমি। ভাবতাম, এক সময় তো এই দুরুত্বটা আর থাকবেনা। এই জোৎস্নার আলোয় দুজন মিলে বসে গল্প করতে করতেই না হয় নিন্দ্রাহিন রাত্রি যাপন করবো? কিন্তু দেখো, এখন গল্পের মোড় কোথায় গিয়ে দাড়ালো। ওসব ভাবলে মনে হয় সব ছিলো মিছে মায়া। সময়টা চলে গেছে গল্পটা রয়ে গেছে সৃতি হয়ে। সে নিজেই দুজনের মসঝখানে দাড় করিয়েছি এক বিশাল সৃতির দেয়াল।

রিদের বাড়ির ছাদে একটা ছোট্ট ফুলের বাগান আছে। ওখানে ওগুলোতে পানি দিচ্ছে সে। পেছনে আরশি এসে দাড়ায় তার। রাগে মুখটা ফোসফোস করছে তার। হাত দুটি কোমরে। ওড়না দিয়ে কোমরটা শক্ত করে বাধা। দেখে মনে হয় একেবাকে মারামারি করার জন্য প্রস্তুত সে।
– এটা কি হলো?
রিদ ফুল গাছ গুলোতে পানি দিতে দিতে বলে উঠে,
-কি?
– গতকাল রাতের কথা বলছি। সবাইকে কি বললে, আমি যেনো তোমার কি হই? আবার বৃক্ষ রোপনের আগে ফলের জন্য পার্থনা করছে, বাহ্ কি চমৎকার দৃশ্য।
– তো প্রব্লেম কি? আগে থেকে মুরুব্বিদের দোয়া নিয়ে নিচ্ছি। এতে দোষের কি দেখলি তুই?
আরশির নিজের চুল নিজে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে রিদকে চরম ভাষায় কয়েকটা বাংলা গালি ছুড়ে মারতে। কিন্তু আপসোস তা এখন কিছুই মনে পরছেনা তার। তার এই একটা সমস্যা, ঝগড়ার সময় ঠিকটাক পয়েন্টগুলো মাথায় আসেনা।
– দেখুন রিদ ভাই, মাথাটা আমার চরম ভাবে খারাপ হচ্ছে কিন্তু। কালকে লোকজনের সামনেও কিছু বলতে পারিনি আমি। এখন ইচ্ছে করছে,,,,
রিদ এবার পাত্রটা রেকে আরশির দিকে তাকায়। রিদের তাকানো দেখেই থমকে যায় আরশি। রিদ এক পা এক পা করে আগায় তার দিকে। আরশিও পিছ নামতে নামতে পেছনে থাকা ছোট দেওয়ালের সাথে আটকে যায়। রিদ তার দিকে ঝুকে বলে,
– কি ইচ্ছে করছে? বলনা,,,,
আরশি আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– ইচ্ছে করছে ,,,
– কি?
– ইচ্ছে করছে তোমাকে মাথায় তুলে ছাদ থেকে ছুরে ফেলে দিই।
– তাই? তো দে না। তোর হাতে যে আমি মরতেও রাজি স্বপ্নপরী।
আরশি রিদকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নেয়। চলে যাওয়ার সময় আবার বলে উঠে,
– দেখো রিদ ভাই, তুমি আমার সাথে ফাজলামি করো তা ঠিক আছে। কিন্তু ফাজলামির মাত্রাটা অতি বেড়ে গেলেও আবার সমস্যা। কালকের কাজটা তুমি ঠিক করোনি।
আরশি চলে গেলো। রিদ একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,
“” সবই কি তোর কাছে ফাজলামি মনে হয়রে আরশি। আমার ছোট্ট ছোট্ট পাগলামি গুলো, মনের সুপ্ত অনুভুতিগুলো কি কখনো তোর মনকে স্পর্শ করতে পারেনি। তোর জন্যই যে বাবা মায়ের সাথে চলে না গিয়ে পড়ে আছে এই দেশে তা কি তুই বুঝিস না?””

বিকেলে সবাই চলে যাওয়ার কথা বললেও রিদ যেতে দিচ্ছেনা তাদের।
– প্লিজ ফুফি, আরো একটা দিন থাকোনা। প্রয়োজনে কালকে আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো।
– কিন্তু আরশি তো জেদ ধরেছে সে চলে যাবে। তো,,,,
– আরে ফুফি কি বলছো তুমি। এই বাচ্চা একটা মেয়ের কথায় তুমি চলে যাচ্ছো। জেদ ধরেছেতো, দুটা থাপ্পর দিয়ে বসি রাখলেই তো হয়। বাচ্চাদের আবার শ্বাসন না করলে মাথার আগায় চড়ে বসবে। আমি তো বিয়ে করলে বাচ্চা মেয়েকেই করবো যাতে ন্যাকামো করলেও ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখতে পারি।
রিদের কথায় হেসে দিলো উপস্থিত সবাই। শুধু রাগে ফুলছে আরশি। তাকে বাচ্চা বলে অপমান?
– আর তোমরা তো জানোই আমি এখানে একা থাকি। বাবা মা ও নাই। আর তোমরা তো আমার মা-বাবা…………….রি মতো।
কথাটা বলেই আরশির দিকে তাকায় রিদ। বেচারি কেমন রাগে ফুলছে।
– প্লিজ ফুফা ফুফি আরেকটা দিন থেকে যাও তোমরা প্লিজ।

পরদিন বিদায় নিয়ে চলে গেলো সবাই।
সকালে রাত অফিসে চলে গেলো। আজ আর বৃষ্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেলোনা সে। মনে হয় অভিমানের পাল্লা এখনো ভারি।
শাশুরি দুপুরের সব খাবার তৈরি করালো বৃষ্টিকে দিয়ে। রাতের পছন্দের খাবার সব।
রান্না শেষে বৃষ্টিকে ফ্রেশ হয়ে হয়ে তার রেমে যেতে বললো রাত্রি চৌধুরি। শাশুরির কথা মতো তার রুমে চলে গেলো বৃষ্টি।
বৃষ্টিকে ডেকে নিয়ে একটা নীল রংয়ের শাড়ি পড়িয়ে দিলো সে। বৃষ্টিকে নিয়ে খাবার গুলো নিয়ে গাড়িতে তুলে দেয় রাত্রি চৌধুরি। ছোট্ট করে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– দেখি এবার আমার কিভাবে রাগ করে থাকে? যেমনটা শিখিয়ে দিয়েছি তেমনটাই বলবে ঠিক আছে?
বৃষ্টি লজ্জা মাখু মুখ নিয়ে সম্মতি জানালো।

গড়ি পৌছে গেলো রাতের অফিসের সামনে। আগে একবার রুদ্র চৌধুরির সাথে এসেছিলো সে। রাত কোথায় বসে সেটাও তার মুখস্ত।
বৃষ্টি খাবার নিয়ে ধিরে ধিরে এগুতে থাকে। কেমন জেনো লজ্জা ফিল করছে সে। নিশ্চই রাত এখন তাকে এভাবে দেখলে সারপ্রাইজ’ড হয়ে যাবে। বৃষ্টি রাতের নিকটে এসেই নিজেকে একবার দেখে নেয় সে। না সব ঠিকঠাক। বড় একটা শ্বাস টেনে একটা হাসির রেখা টানে বৃষ্টি। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই, সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ’ড ট হয়ে যায় সে নিজেই। খাবার গুলো পরে যায় হাত থেকে। হাত পা কাপছে তার। কপালে জমা হচ্ছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। নিজের চোখ কেই যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা তার। রাতও হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে।

To be continue…………..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১০

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১০

বৃষ্টির শাড়ির কুচি গুলো খুব মনোযাগ দিয়ে ঠিক করছে রাত। বৃষ্টির দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে রাতের দিকে। ইশ তার প্রতিটা দিনই জদি এমন হতো? বাইরে থেকে মায়ের ডাক কানে এলো তাদের।
– কি রে তোদের হলো?
– এইতো মা হয়ে গেছে।
শাড়ি ঠিক করতে করতেই উত্তর দিলো রাত। কুচি গুলো ঠিক হয়ে গেলে তারাহুরা করতে গিয়ে রাত নিজেই গুজে দেয় কুচিগুলো। রাতের আঙুলের স্পর্শ পেটে লাগতেই কেপে উঠে বৃষ্টি। চোখ দুটু বন্ধ করে হাতে থাকা শাড়ির অংশটা খামচে ধরে বৃষ্টি। বাকি সব ঠিকঠাক করে আঙুল দিয়ে গালে ছোট্ট করে একটা চাটি মারে রাত।
– ম্যাডাম হয়ে গেছে এবার চলুন।
রাতের কথায় যেনো ধ্যান ভেঙে বাস্তবে ফিরে আসে বৃষ্টি। লজ্জায় মাথাটা নিচু করে হাটা ধরে রাতের পেছন পেছন।
নিচে আসতেই রাত্রি চৌধুরি বৃষ্টির সারা শরিরে চোখ বুলিয়ে বলে উঠে,
– মাশাল্লাহ্। শাড়িতেই নারী। শাড়িতে যে তোমায় কতো সুন্দর লাগে এটা জদি জানতে তাহলে কখনোই তুমি শাড়ি ছারতে চাইতে না।
পাশ থেকে আরশি বলে উঠে,
– ভাবি, তুমি তো দেখছি খুব ভালো শাড়ি পড়তে পারো। আমাকেও একটু শিখিয়ে দিবে।
– না আরশি তুমি ভুল ভাবছো, শাড়ি তো আমি……
এটুকু বলতেই খুক খুক করে কাঁশা শুরু করলো রাত।
বৃষ্টিও কথা ঘুরাতে বলে উঠে,
– না শাড়ি তো আমিই পড়েছি।
– তো আমি কখন বললাম যে, ভাইয়া পড়িয়ে দিয়েছে?
– তবে রে,
রাত টেবিল থেকে ফল কাটার ছুড়িটা নিয়ে তাড়া করলো আরশিকে। আরশি দৌড়ে লুকিয়ে যায় মায়ের পিছে। রাত্রি চৌধুরি একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে উঠে,
– এই তোরা কি যাবি?
তখনি সদর দরজার কাছে এসে ড্রাইভার ডাক দেয় তাদের।

বাইরে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ঘরির দিকে বার বার তাকাচ্ছে রুদ্র চৌধুরি। তাদের দেখেই গাড়িতে গিয়ে বসে সে। সন্ধা হওয়ার আগেই ওই বাড়িতে পৌছে যায় তারা। বেশ বড় সর ভাবেই পার্টিটা হচ্ছে আজ। সব ঠিকঠাক ভাবেই সাজানো গোছানো।
রিদ খুব ব্যাস্তভাবে এগিয়ে এলো তাদের দেখে।
– আঙ্কেল, ফুফি, ভাবি তোমাদের এখন আসার সময় হলো? সেই কখন ধরে অপেক্ষা করছি তোমাদের জন্য। আব্বু আম্মু কেও নেই পাশে। আর তোমরাও এলে এতো দেরি করে। আর রাত কোথায় ফুফি।
– আছে বাইরে, ওই তো আসছে।

– কিরে তোর এখন আসার সময় হলো? তুইও কি আজ সবার মতো মেহমান হয়ে গেলি নাকি? অন্তত তোর থেকে এটা আশা করা যায় না।
– কি করবো বল, আসতেতো আরো আগেই চেয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েদের ঘসামাজার বেপারে তো তুই জানিসই। তাই না?. আর এখনো তো অনেক সময় বাকি আছে। চল চল।
– হুম চল।

রিদের বাবার দু, একজন বন্ধুকেও ইনভাইট করা হয়েছে পার্টিতে। আরশিকে সাথে নিয়ে সকলের সাথেই কথা বলছে রিদ। আরশি রিদের পাশে হেটে হেটে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ভাইয়া ভাবি এরা যে কই গেলো কে জানে?
হটাৎই রিদের বাবার এক বন্ধুর স্ত্রী, আরশিকে রিদের সাথে দেখেই বলে উঠে,
– সে কি রিদ, বিয়ে করে ফেলেছো নাকি?
– জ্বি, আন্টি, এই যে এই লেন্জা ছারা বাদর টাকে।
রিদের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় আরশি। কিহ্, বিয়ে? কবে?
– আমরা তো জানলাম ই না রিদ।
– সব হুটহাট হয়ে গেছে আর আমিও আপনাদের একটা সারফ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই এই পার্টিতে হুট করেই বৌ নিয়ে দাড়ালাম আপনাদের সামনে।
– যাই হোক, মেয়েটা কিন্তু খুবই মিষ্টি দেখতে। একধম তোমাদের দুজনের পার্ফেক্ট জুটি। দোয়া করি এমন করে যেনো খুব শিগ্রই আরো সারফ্রাইজ দিতে পারো।
– জ্বি আন্টি দোয়া করেন, সামনে যেনো দু,জন থেকে তিন জন হয়ে আপনাদের সামনে দাড়াতে পারি।

ওদিকে রাগে খটমট করছে আরশি। পারছেনা কিছু কইতে, পারছেনা কথাগুলো সইতে। ফিউর সিংগেল একটা মেয়েকে নিয়ে রিলেশন বাদ দিয়ে ডিরেক্ট বিয়ে পার হয়ে বাচ্চা কাচ্চা পর্যন্ত চলে গেলো। কি সাংঘাতিক কথা বার্তা। রাগে যেনো কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে আরশির। ইচ্ছে করছে রিদকে সকলের সামনে মেরে, না কুচি কুচি করে সেই রক্ত দিয়ে লিখে দিতে,
” না, আমি ফিউর সিংগেল।

শাড়ি পরে ঠিঠাক ভাবে হাটতে পারছেনা বৃষ্টি। শাড়ির কুচিতে পা পরছে বার বার। একটু ওয়াশ রুমে গিয়েছিলো সে। আর ওদিকে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা তা দেখছে রাত।
ওয়াশ রুম থেকে ফিরার সময় শাড়ির কুচিগুলো হাত দিয়ে উচু করে ঠোট ফুলিয়ে চার পাশে তাকাচ্ছে বৃষ্টি। রাতকে দেখে এগিয়ে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতেই কেও একজন ধরে ফেলে বৃষ্টিকে। চোখ বন্ধ করে নেয় বৃষ্টি। কারণ সে যানে এটা রাত ছারা কেও না। কোথাও পরে যেতে লাগলে রাত ঠিকই এভাবে ধরে ফেলে তাকে। আর আজ সবার সামনে? কি লজ্জা। আজ আর চোখ কুলবো না। চোখ কুলে তাকে দেখলেই আমি লজ্জায় মরে যাবো। আশে পাশে লোকজনকে দেখলে আরো সে লজ্জা দ্বিগুল হয়ে যাবে।
রাতের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে চোখ খোলে বৃষ্টি। চোখ খুলতেই যেনো আকাশ থেকে পড়লো সে। সামনে থাকা ব্যাক্তিটি রাত নয়, অন্য একটি ছেলে। আর সে তার দিকে তাকিয়ে টানলো একটা প্রশারিত হাসির রেখা।
এক ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছেলেটার কাছ থেকে ছারিয়ে নেয় বৃষ্টি। রাতের দিকে তাকাতেই দেখে রাতের চক্ষুজোড়া রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। নিজেকে সংযোত রেখে সেখান থেকে সরে গেলো রাত। আর বৃষ্টি শাড়িটা উচু করে ধরে আস্তে আস্তে দৌড়াতে থাকে রাতের পিছন পিছন।

– বিশ্বাস করুন আমি ওসব ইচ্ছে করে করিনি। হ্যা আমি আপনি ভেবে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ছিলাম, এটা আমার অপরাধ। এটা সম্পুর্নই একটা এক্সিডেন্ট। আর এই অপরাধের শাস্তি দিন আমায়, মারেন, থাপ্পর দেন তবুও রাগ করে থাকবেন না প্লিজ। ভালো লাগেনা আমার।
– কেনো আমি রাগ করতে যাবো? আমি পুরু পুরিই নরমাল।আর তুমি কে যে এই সামান্য কারণ নিয়ে তোমার সাথে আমি রাগ করবো? তুমি শুধু নামেই মাত্র আমার স্ত্রী, আর তাছারা তোমাকে আমি স্বাধিনতা দিয়ে দিয়েছি, এখন তোমার যা ইচ্ছে তুমি তাই করো। তাতে আমার বিন্দু মাত্র সমস্যা নাই।
– প্লিজ এভাবে বলবেন না। এটা একটা এক্সিডেন্ড মাত্র।
– ছেলেরা যখন ঝাপটে ধরে, তখন চোখ বন্ধ করে উপভোগ করার মজাই আলাদা তাই না? তো এভাবে আমার কাছে কান্নাকাটি করার তো কোনো দরকার নেই।
– সত্যিই কি আমি আপনার কেও না?
– না।
কথাটা বলেই ছাদ থেকে হাটা ধরে রাত। শক্ত হয়ে ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। রাত সিরি দিয়ে নামতেই তৃষ্নার মুখুমুখি হয়। কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই হাটা ধরে নিচের দিকে। তৃষ্না দৌড়ে গিয়ে দাড়ায় বৃষ্টির পাশে।
– কি হলো কাদছো কেনো বৃষ্টি? কথাটা একটু টেনে টেনে বললো তৃষ্না। বৃষ্টির উত্তর না পেয়ে আবার বললো তৃষ্না।
– রাত তোমায় ভালোবাসেনা বলে দিয়েছে তাই তো? আমি জানি যে, রাত সত্যিই তোমাকে ভালোবাসেনা। সে এতোদিন যেভাবেই আচরণ করুন না কেনো? তা করেছে শুধু তার কর্তব্য ভেবে। রাত তোমাকে মন থেকে কোনো দিনই মেনে নিবেনা। সারাদিন আমিই রাতের পাশে থাকি, সো রাত অল্প হলেও আমার সাথে সব শেয়ার করে। সেদিন তো রাত সরাসরিই বললো তোমাকে সে তার জীবনে চায়ই না। শুধু বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করে নিচ্ছে। সো, আমি বলি কি? তুমি এতো অবহেলায় না থেকে রাতের কাছ থেকে সরে অন্য কাওকে বেছে নাও, এটাই তোমার মোঙ্গল বয়ে আনবে।
আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা তাই তো? ওয়েট।
তৃষ্টা ফোন বের করে। একটু ঘাটাঘাটি কটে কি যেনো বের করে বৃষ্টির সামনে ধরলো। তার ধারনা এটা দেখার পর রাতের সম্পর্কে তার ধারনাটাই পাল্টে যাবে।

To be continue…………..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-৮+৯

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৮_ও_৯

গাড়ি থেকে নেমে রাতের সাথে কোনো কথা না বলেই ঘরের দিকে হাটা ধরলো বৃষ্টি। আজ আর রাতের কোনো কথাই শুনবোনা। পেয়েছেটা কি ও, আমি তার কোন জনমের কাজিন হই? বেটা খাচ্চর, পরিচয় জদি না দিতে পারস তাহলে এভাবে ক্যাপল হয়ে আমার সাথে যাওয়ার কি দরকার ছিলো। আমি কি বলেছি?
বিরবির করতে করতে সীড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে বৃষ্টি। হাতের আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে বিরবির করতে করতে বেখেয়ালি ভাবে পা মচকে যায় বৃষ্টির।
– আউ…………
চিৎকার দিতেই চোখ বন্ধ করে নেয় সে। হয়তো অপেক্ষা করছে এরপর কি হবে তা দেখার জন্য। কিন্তু না, তেমন কিছুই হয়নি। চোখ খুলতেই সামনে ভেসে উঠে রাতের চেহারাটা। রাত একহাতে বৃষ্টির হাত ধরে আছে অপর হাত বৃষ্টির কোমরে। রাতের হাত আচমকাই কোমরে চলে যাওয়া অপ্রস্তুত হয়ে যায় বৃষ্টি। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে সে। রাত তাতে কোনো ভ্রু-ক্ষেপ না করে শুন্যে তুলে বৃষ্টিকে। তারাতারি সেখান থেকে হেটে রুমে চলে আসে রাত। বৃষ্টি যেভাবে বাঘে ধরা চিৎকার দিলো তাতে এক্ষুনি মা, আরশি আর চৈতি এসে হাজির হয়ে যাবে। বাবা অফিসে তাই আসার কোনো সম্ভাবনাও নাই। কিন্তু মা ও ছোট বোনের সামনে এভাবে থাকাটাও পুরুপুরি লজ্জার ব্যাপার।

রুমে এনেই ধপাস করে নামিয়ে দেয় বৃষ্টিকে। একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বিছানায় বসে পড়ে বৃষ্টি। তীব্র রোদে এই দুপুর বেলায় খনিকটা পথ যার্নি করে ক্লান্তি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় রাত। বৃষ্টি ওভাবেই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়।
প্রায় আধা ঘন্টা পর লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল দিয়ে স্নিদ্ধ চুলগুলো মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে রাত।
রাতকে দেখেই উঠে বসে বৃষ্টি। ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য মেঝেতে পা ফেলতেই আউ করে উঠে বৃষ্টি। খেয়াল করে ডান পা টা ফুলে যাচ্ছে তার। সাথে অসম্ভব ব্যাথা। কি ব্যাপার? এতোক্ষন তো কোনো ব্যাথা ছিলোনা। কিন্তু হটাৎ এমন ব্যাথা করছে কেনো। পা টা কি সত্যিই মচকে গেছে? হালকা কোড়াতে কোড়াতে জামা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় সে।
ফ্রেশ হয়ে অনেক্ষন হলো বিছানায় সুয়ে আছে বৃষ্টি। ব্যাথাটা আরো আগের চেয়ে বারছে। খাবার রেডি করে সকলে খেতে বসেছে নিচে বৃষ্টি আসছেনা দেখে রাতের মা কয়েকবার ডেকেছে তাকে। রাত রুমে এসে দেখে বৃষ্টি শুয়ে আছে লম্বা হয়ে। আর চোখ দিয়ে পানি পরছে তার। রাত গিয়ে বসলো তার পাশে।
– সবাই তোমার জন্য নিচে অপেক্ষা করছে, আর তুমি সুয়ে আছো? চলো চলো। একি তোমার চোখে পানি? কাদছো কেনো?
– পা টা প্রচন্ড ব্যাথা করছে মনে হয় ভেঙে গেছে।
রাত পায়ের দিকে তাকাতেই দেখে ডান পায়ের পাতাটা অনেকটা ফুলে গেছে।
– এতো সিরিয়াস বিষয় আমাকে না বলেই একা একা রুমে শুয়ে আছো? তোমার তো এখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে পা এক্সরে করতে হবে। দেখি উঠো।
– আমার ক্ষুদা লেগেছে খুব।
হটাৎ বৃষ্টির এমন করুন শুরে বলা কথাটা যেনো বুকে গিয়ে লেগেছে রাতের। বড্ড মায়া কাজ করছে আজ বৃষ্টির প্রতি।
নিচ থেকে খাবার নিয়ে এলো বৃষ্টির জন্য। খুব মনোযোগ দিয়ে খাবার মেখে মেখে বৃষ্টির মুখে তুলে দিচ্ছে সে।

আরশি ও রাত্রি চৌধুরি বৃষ্টিকে ধরে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। রাত ড্রাইবিং করছে।

– চিন্তার কোনো কারণ নেই। পায়ের কিছুই হয়নি। শুধু একটু মচকে গেছে। হাটাচলা করলে আবার ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি এগুলো সময় মতো খাওয়ালে কালকের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।
ডাক্তারের সস্থির কথা শুনলেও সস্থির নিশ্বাস ফেলছেনা রাত। ফার্মেসি থেকে ঔষধ গুলো নিয়ে বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে রাত। ধরে ধরে ঘরে নিয়ে গেলো বৃষ্টিকে।
হাটা চলা করতে বললেও তাতে নারাজ বৃষ্টি। ঘুম পাগলি এখন হাটতে পারবেনা। গুম পাগলি এখন ঘুমাবে। প্রচুর ঘুমাবে।

পায়ে ঠান্ডা শীতল ছোয়া অনুভব করতেই চোখ মেলে বৃষ্টি। প্রায় সন্ধা পার করে দিয়েছে এক ঘুমে। দেখে রাত খুব মনোযোগ দিয়ে তার পায়ে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে। বরফ লাগিয়ে দিলে ব্যাটা মোটামুটি কমে যায়। কিন্তু রাত তার পায়ে হাত দেওয়াতে একটু অস্বস্থি বোধ হয় বৃষ্টির। আচমকাই পা সরিয়ে নিলো সে।
– ছি ছি, কি করছেন এটা? আপনি আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন?
– তো মোহারানি, এটাও যদি কোনো অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে শাস্থি অবস্যই দিবেন। তার আগে তো পায়ের ব্যাথা কমতে হবে তাইনা? তো চুপচাপ বসেন।
– আমি অপরাধের কথা বলছিনা। আপনি আমার সম্পর্কে স্বামী হন। আর আমার থেকে বয়সেও বড়। তো আপনার আমার পায়ে হাত দেওয়া টা সোভা পায় না।
বৃষ্টির কথায় রাত ঠোট জোড়ায় আঙুল দিয়ে “স” সুচক শব্দ করতেই থেমে যায় বৃষ্টি।

বৃষ্টিকে ধরে ধরে ছাদে অনেক্ষন হাটালো রাত। কারণ মচকে যাওয়া পা হাটা চলা না করলে ব্যাথা কমবেনা সহজে। অনেক্ষন হাটাহাটির পর দোলনায় গিয়ে বসে দুজন। বৃষ্টির আজ ব্যাথার চেয়েও রাতের কেয়ার গুলোই উপভোগ করছে বেশি। স্বামির কেয়ার পেতে হলে দেখি রোজ রোজ অসুস্থ হতে হবে। রাত আজ কিছু বললেও কানের এপাস দিয়ে ঢুকে ওপাস দিয়ে বের করে দিচ্ছে সে। শুধু তাকিয়ে আছে রাতের বার বার নরে উঠা ঠোটের দিকে।
বৃষ্টিকে দোলনায় গিয়ে নিচে চলে যায় রাত। গরম গরম চা বানিয়ে আবার এসে বসে বৃষ্টির পাশে। বৃষ্টির দিকে কাপ বাড়িয়ে দিয়েই চায়ে চুমুক দিলো রাত। রাতের দিকে তাকানো অবস্থায় গরম চায়ে চুমুক দিতেই যেনো গালটা পুরে গেলো তার। এক হাতে চায়ের কাপটা ধরে আরেক হাতের আঙুল গুলো নাচিয়ে নাচিয়ে রাতকে বুঝাচ্ছে যে তার গাল পুরে গেছে একেবারেই।
উত্তেজিত হয়ে রাতও এক হাতে গালটা ধরে আরেক হাত দিয়ে বাতাস করতে থাকে। বাতাস কম মনে হওয়ায় মাঝে মাঝে ফু দিয়ে দিচ্ছে সে। বৃষ্টি আবারও আড় চোখে তাকিয়ে আছে রাতের মুখের পানে। মনে হচ্ছে রাতকে এভাবে দেখতে হলে, আজ থেকে রোজ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গাল পুড়ে ফেলতে হবে। তবে গালের এই জ্বালা পোড়া রাতের এই ফু দেওয়াটা এভাবেই সারা রাত পার হয়ে গেলেও মন্দ হয় না। সে না হয় এভাবেই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকবে আজ।
,
,
,
কেটে গেলো আরো দু,একদিন।
আজ রিদ আসছে এই বাড়ি। ভাইয়ের এম মাত্র ছেলে বলে আথিতিয়তার কমতি রাখবেনা রাত্রি চৌধুরি।
বিকেল বেলায় বসে বসে লুডু খেলছে আরশি ও বৃষ্টি। রিদ এসেই পেছন থেকে আরশির চোখ দু,টি চেপে ধরলো। এতে একটুও অবাল হলোনা আরশি। শান্তভাবে বলে উঠলো,
– খেলার সময় ফাজলামি করোনা তো রিদ ভাই। দেখছোনা ভাবিকে শুকনো ভাবে একটা গোল খাইয়ে দিচ্ছি।
রিদ চোখ ছেরে ধপ করেই আরশির পাশে বসলো,
– তুই কি করে বুঝলি যে এটা আমি?
– এই অসময়ে ফাজলামিটা তুমি ছারা আর কে করতে পারে বলো। তাছারা তোমার এসব ফাজলামিতে আমি রোজই অভ্যস্ত। সো তোমার ছোয়াও আমি আলাদা বুঝতে পারি।
পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– সে কিরে আরশি। রিদ ভাইয়ার ছোয়াটাও কি তুমি মনে একে ফেলেছো। তোমরা যে এক ট্রেনে এতোগুলো স্টেশন পার হয়ে গেলে আগে তো জানতাম না।
বৃষ্টির কথায় একটু বিষম খেলো আরশি।
– ফাজলামি করোনাতো ভাবি। আমি তো কথার কথা বললাম।
রিদ একটা বাকা হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– বুঝলেন ভাবি, আপনার ননদ টা আস্ত এক গাধি। এই মানবকে মিস করলে কোন গাধার কপালে জুটবে কে জানে?
বলতে বলতেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায় রিদ।

সন্ধায় কলেজ রোড ধরে সোডিয়ামের আলোয় পাশাপাশি হাটছে রিদ ও আরশি। রিদ ভ্র কুচকে আরশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– আজ হটাৎ আমায় নিয়ে হাটতে বের হওয়ার কারন?
– এমনি ইচ্ছে হলো তাই।
রিদ পকেটে হাত গুজে হেটে চলছে নিরবে। কিছুক্ষন পর চোখ পরলো কলেজের পাশে থাকা ফুচকার স্টলে। হুট করে আরশি বলে উঠে,
– ফুচকা!
– খাবি?
– হুম।
ফুচকার স্টলে গিয়ে দেখে জাফর মিঞা। আরশির জন্য কলেজের এদিকে প্রায়ই আশা হয় রিদের। সেই সুবাদে স্টলের মালিক জাফর মিঞার সাথে, ভালো পরিচয় রিদের।
– আরে রিদ ভাই অনেকদিন পর আসলেন। কেমন আছেন?
– জ্বি আলহাম্দুলিল্লাহ। আপনার কি খবর।
– এইতো ভাই আল্লায় রাখছে।
– ঝাল করে এক প্লেট পুচকা দিন, আর আরেকটা ঝাল কন করে।
– আচ্ছা মামা দাড়ান দিচ্ছি।

ফুচকা খেয়ে রাত বিল দিতে লাগলে জাফর মিয়া বলে,
– ভাইয়া, বিল ১২ হাজার ৬ শত টাকা।
– মজা করবেন না ভাই নিন।
– মজা করছিনা ভাই, আরশি গত দের মাস ধরেই এখানে ফুচকা খায় বান্ধবিরা সহ। বিল সব আপনার নামে। বললো, এক সাথে দিয়ে দিবে।
রিদ ভ্রু কুচতে আরশির দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো মনোযোগ সহকারে ফুচকা ঢুকাচ্ছে গালে। যেনো এসবে তার কোনো পাত্তাই নেই। অবশসেষে রিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– হা করে তাকিয়ে আছো কেনো রিদ ভাইয়া। বাকিই তো খেয়েছি। চুরি তো আর করিনি। দিয়ে দাও বিল।
– এতো ফুচকা কি করে তোর পেটে গেলো তাইতো বুঝতে পারছিনা। অন্য খাবার হলে মানা যেতো। কিন্তু, সারে বারো হাজার টাকার ফুচকা তো পাহার সমান। এতো পুচকা খেলি কিভাবে।
– আরে আমি কি এক দিনে খেয়েছি নাকি? আর আমার সাথে আমার বন্ধবিরাও ছিলো। এতো কথা না বলে বিলটা দিয়ে দিলেই তো হয়।
রিদ একটু মাথা ঝাকিয়ে মানি ব্যাগটা বের করলো। দেখে ঠিক ১২ হাজার ৬ শত টাকাই আছে।
বের করে দিয়ে দিলো জাফর মিঞাকে। কি রে এখান থেকে ক্রেডিট কার্ডটা কোথায় গেলো? মানি ব্যাগ তো পুরাই খালি।
আরশি গলা টেনে বলে উঠে,
– কি খুজছো?
– ক্রডিট কার্ডটা খুজে পাচ্ছিনা।
– হয়তো ভুলে বাসায় ফেলে এসেছো।
– হতে পারে।

আবারও হাটা ধরলো তারা।
– দেখ কি করলি? মানি ব্যাগ পুরাই খালি। আর কার্ডটাও আনতে ভুলে গেছি।
– চাপ নিও না ভাইয়া। তোমার কাছে নেই তো কি হয়েছে? আমার কাছে তো আছে। এই মুহুর্তের জন্য তুমি ফকির হয়ে গেলেও কিন্তু আমি ফকির নই।
আরশি জেদ করেছে আজ আর বাড়ি ফিরবেনা সে। সারা রাত ধরে এই শহরটা ঘুরবে সে।
রাতে খাবারের বিলটাও দিলো আরশি।

রাত তখন ১১ টা ৫০ মিনিট।
রিদের চোখটা বেধে নিলো আরশি।
– চুপচাপ চলো কোনো প্রশ্ন করবেনা।
– কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস এভাবে?
– মেরে ফেলতে। চুপ চাপ থাকো।
একটা নির্দিষ্ট যায়গায় নিয়ে আসলো রিদকে।
– কিরে আর কতোক্ষন?
১২ টা বাজতেই চোখ খুলে দিলো আরশি। রিদ দেখে একটা খোলা মাঠে। মাঝখানটা মোমবাতি দিয়ে সাজানো। মোমবাতির মাঝখানে রয়েছে আবার একটি বড় কেক।
– এসব কি? কেনো?
– হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ভাইয়া। আজনা ২৫ শে অক্টোবর, তোমার বার্থডে। সো, সারফ্রাইজ।
– আমার তো মনেই ছিলোনা যে আজ আমার বার্থডে। তোর কি করে মনে থাকলো?
– ওসব বাদ দাও তো। আগে বলো, সারফ্রাইজড হয়েছো কিনা?
– ভিষন।
– আর এই নাও এগুলো তোমার বার্থডে গিফট।
– তার মানে তুই তখন শপিং গুলো রাতের জন্য বলে বলে আমার জন্য করেছিস?
– হুম, আর এই নাও তোমার ক্রডিট কার্ড। আমার কাছেই ছিলো, আমি জানতাম তোমার কাছে টাকা থাকলে তুমি কিছুতেই আমাকে বিল পরিশোধ করতে দিতেনা। তাই তোমার সব টাকা ফুচকা ওয়ালা মামার কাছে রেখে আর ক্রেডিট কার্ড টা নিয়ে নিয়েছিলাম, তুমি যখন ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে গিয়েছিলে। কারণ তোমার বার্থডে গিফট, বার্থডে সেলিব্রেইট আমি নিজ টাকায় করতে চেয়েছি।

পরদিন সন্ধায় রিদের বার্থডে উপলক্ষে তার বাড়িতে পার্টির আয়োজন করলো রিদ। আজ পার্টিতে সবাই থাকবে। থাকবেনা শুধু রিদের বাবা মা। তারা অস্ট্রেলিয়া থাকে। রিদকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। সে যায়নি কোনো এক অদৃশ্যটানে। তার ধারনা সে চোখের আড়াল হলেই অন্য কারো স্বপ্নের জগতে হারিয়ে যাবে তার স্বপ্ন পরি।

আজ রিদের বার্থডে পার্টিতে যাচ্ছে সবাই। বৃষ্টির মনটা ভালো থাকলেও খারাপ হয়ে গেলো। সেদিন বাড়িতে আশা ওই মেয়েটাকে দেখে। সেও যাবে আমাদের সাথে। রাতের বাবা ওই মেয়েটাকে রেখেছিলো রাতের পার্সোনাল এসিস্টেন হিসেবে। তাকে চাকরি দেওয়ারও একটা যথেষ্ট কারণ আছে।
একদিন অফিস থেকে ফেরার সময় একটা এক্সিডেন্ড হয়েছিলো রুদ্র চৌধুরির। ড্রাইবার ও তার অবস্তা তখন ছিলো করুন। মেয়েটা তখন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। দেখে মানুষের ভির। সকলে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো রুদ্র চৌধুরিকে। কেও তাকে ধরার সাহস করেনি। কিন্তু ওই মেয়েটা সেদিন তাদেরকে নিয়ে যায় হসপিটালে। ও নেগেটিভ রক্তের প্রয়েজন হওয়ায়। মেয়েটা নিজে রক্ত দিয়েছিলো রুূ্র চৌধুরিকে। সেদিন রুদ্র চৌধুরি মনে করলো আল্লাহ এই মেয়েটার উসিলায় তার জীবনটা ফিরিয়ে দিয়েছে। তখন মেয়েটাও চাকরি খুজছিলো। আর তা শুনে রুদ্র চৌধুরি কোনো ইন্টারভিউ ছারাই তাকে চাকরিতে নিয়ে নেয়। আর সেই মেয়েটাই হলো এই তৃষ্না।
আর তৃষ্নাকে রাতের পাশে একধম সহ্য হয়না বৃষ্টির। কারনে অকারণে শুধু রাতের পাশে ঘুর ঘুর করে তৃষ্না। তা একধমই অসহ্যকর বৃষ্টির কাছে। বৃষ্টির সামনে দিয়ে গাল মুচরে হেটে চলে গেলো তৃষ্না। রাগে যেনো গা দিয়ে রি রি করে একটা অসহ্যকর শিহরণ বয়ে গেলো।

বৃষ্টির শাশুরি রাত্রি চৌধুরি, একটা লাল রংয়ের শাড়ি দিয়ে গেলো বৃষ্টিকে। সেই বিয়ের দিন থেকে আজ পর্যন্ত একবারও শাড়ি পরতে দেখলোনা বৃষ্টিকে। তাই আজ শাড়ি পড়েই যেতে হবে তাকে।
রাত্রি চৌধুরি শাড়িটা দিয়েই চলে গেলো নিজে রেডি হতে। এদিকে আরেকটা বিপত্তি ঘটলো। বৃষ্টি শাড়ি পরতে পারেনা। কোনো রকম গায়ের সাথে পেচিয়ে আয়নায় গেখছে নিজেকে। দরজার সামনে দাড়িয়ে হেসে চলছে রাত।
– হাসছেন কেনো? ভ্রু জুগল কুচকে কথাটা বললো বৃষ্টি।
– তোমার শাড়ি পরা দেখে।
– কারো দুর্বলতা নিয়ে মজা করা ভালোনা। আর আমার দুবর্লতা শাড়ি পড়ায়।
– তাহলে কি এভাবেই যাবে?
চুপ করে আছে বৃষ্টি। রাত গলা ছেরে কয়েকবার মাকে ডাক দিলো। কিন্তু মায়ের কোনো সদরা শব্দ পেলোনা সে। চৈতিও নেই। আর আরশিতো শাড়ি পড়াতে পুরাই ঢেড়স।
– এক কাজ করো শাড়ি ছারো, অন্য কিছু পড়ো।
– না মা বলেছে এটাই পড়তে।
– তাহলে কি এভাবেই যাবে?
– আপনি পড়িয়ে দিন না। (কথার ফাকে মুখ ফসকে বলে ফেলায় জ্বিভে একটা ছোট্ট কামর দেয় বৃষ্টি) ভাবছে হয়তো ভুল কিচু আবদার করে বসেছে সে। কিন্তু তার ধারণা মিথ্যা প্রমান করে রাত এসেই বৃষ্টির শাড়ি ঠিক করতে লাগলো। অবাক হয়েছে তবুও মনোযোগ দিয়ে রাতের শাড়ি পড়ানোর দিকে তাকিয়ে আছে সে। রাত শাড়ির কুচিগুলো এক এক করে ঠিক করে দিচ্ছে। আর বৃষ্টি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

To be continue…………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-০৭

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৭

ইদানিং রাতের আচার আচরণে অনেকটাই পরিবর্তন দেখা যায়। বৃষ্টির সাথেও আগের মতো অস্বাভাবিক আচরণ করেনা সে। স্ত্রীর অধিকার না দিলেও আচরণ টা ঠিক ঠাকই করে বৃষ্টির সাথে। এটা কি বৃষ্টির প্রতি তার কর্তব্য পালন করা? নাকি একটু সহানুভুতি? নাকি বৃষ্টির প্রতি তার ধিরে ধিরে ভালোবাসা জম্ম নেওয়া? এটা যেনো একটা অজানা প্রশ্ন।

সন্ধার পর সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে বৃষ্টি। বাইরে গাড়ির হর্ণ শুনতে পায় সে। বুঝতেই পারছে রাত এসেছে। ঘরে প্রবেশ করতেই দেখে রাতের হাতে ভারি কিছু। যা হাতে করে ঘরে নিয়ে আসছে সে। পেপার দিয়ে মোড়ানোর কারনে বুঝা যাচ্ছেনা ওটা।
ওগুলো রুমের এক পাশে রেখে হাত থেকে ঘরি খুলছে রাত। বৃষ্টি পেছন থেকে বলে উঠে,
– এগুলো কি?
– অফিসের কিছু কাগজ।
– ওহ্।
টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় রাত। দেখার আগ্রহ জম্মালেও অফিসের কাগজ পত্র শুনে আর গুরুত্ব দিলোনা বৃষ্টি। মায়ের ডাক আসতেই নিচে চলে গেলো সে।

রাতে খাবার খেয়ে বেলকনিতে বসে আছে বৃষ্টি। এই থমথমে পরিবেশে জোৎস্নার দেখাও আলাদা একটা তৃপ্তিময়। হাতে দু,টা কফির মগ নিয়ে বৃষ্টির পাশে এসে বসলো রাত। বৃষ্টির পাশে বসে একটা কফির মগ বাড়িয়ে দেয় তার দিকে।
– নাও কফি,
– উহু, ইচ্ছে করছেনা।
– নাও নাও, ভালো লাগবে। আমি নিজ হাতে বানিয়েছি। খেয়ে বলবে কিন্তু কেমন হয়েছে।
– আপনি বানিয়েছেন? বাব্বাহ্, তাহলে তো খেয়েই দেখতে হয়।
রাত কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে উঠে,
– আমার কফির প্রশংসা করলে নাকি নাকি অপমান করলে ঠিক বুঝতে পারছিনা। যাই হোক কেমন হয়েছে?
– জঘন্ন।
– ওটা খারাপ হলে আমারটা ট্রাই করতে পারো। এটা ভালোই হয়েছে।
– না থাক, এমনি দুষ্টুমি করছিলাম। খুব ভালো কফি বানার আপনি।
একটা মৃদ হাসি দিয়ে কফির মগে চুমুক দেয় দুজনই।

-তোমার না সামনে ইয়ার ফাইনাল?
বৃষ্টি মাথা নিচু বলে উঠে,
– হুম।
– শুধু হুম হুম করলে কি হবে? পরিক্ষার জন্য তো প্রস্তুতি ও থাকতে হয়।
বৃষ্টি একটা নিশ্বাস ফেলে বলে,
– আর প্রস্তুতি, দের মাস ধরে কলেজের সাথে নেই কোনো সংযোগ, বই খাতার সাথে নেই কোনো সম্পর্ক।
– আগামি কাল থেকে তুমি আবার কলেজে যাচ্ছো। তোমার সাথে কলেজে গিয়ে আমিই স্যারদের বুঝিয়ে বলবো।
বৃষ্টি খুশিতে হকচকিয়ে বলে উঠে,
– সত্যি?
– হুম।
– তাহলে কাল বাড়ি গিয়ে বইগুলোও সব নিয়ে আসবো। সেই সাথে বাবা মাকেও দেখে আশা হবে। যাবেন?
– এখন তুমি ওই বাড়িতে গিয়ে বই নিয়ে আসবে। আর পরে বলবে, নিজের বৌয়ের পড়াশুনার জন্য বই যৌতুক নিছি।
– কিহ্! বই নিয়ে আশার সাথে যৌতুকের কি সম্পর্ক? আর আমি ওসব বলবো কেনো?
– মেয়েদের এই একটা সমস্যা হলো, ঝগড়ার সময় কোনো কিছু নিয়ে খোটা দেওয়া। বলতে গেলে এটাও তাদের একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে।
– দেখেন সবাই এক নয়? আর আপনি ডিরেক্টলি মেয়ে জাতিকে এভাবে অপমান করতে পারেন না, হুম।
– ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে সত্যিটা বললেই ওটা অপমান হয়ে যায় তাই না?
– আপনার মতো পাগলের সাথে ঝগরা করার মুড নেই আমার, হুহ্। তাছারা বই না আনলে পড়বো কি?

রাত বৃষ্টির হাত ধরে নিয়ে চলে যায় রুমে। বিছানায় বসিয়ে তখন নিয়ে আশা ওই পেপার মোড়ানে জিনিসটা নিয়ে আসে তার সামনে।
– এটা খুলে দেখো সব ঠিকঠাক আছে নাকি?
বৃষ্টি ওটা খুলে দেখে তার প্রয়োজনিয় সব বই ই নিয়ে এসেছে রাত।
– তার মানে আপনি তখন বই নিয়ে এসেছেন?
– হুম, তোমার বই সম্পুর্ন সেট ই আছে। কাল থেকে আবার স্টাডির সাথে সু-সম্পর্ক গরে তুলবে। এই বাড়ির বৌ হয়ে মাজ পথে পড়াশুনা বন্ধ করে দাও এটা আমি চাই না।
কাল থেকে আবার কলেজে যাবে বৃষ্টি। ভেবেছিলো এই বাড়িতে এসে তার পড়াশুনাটাই অফ হয়ে গেছে। কখনো বলার সাহস পায়নি রাতকে। যতটা খারাপ ভেবেছে অতোটাও খারাপ নয় লোকটা। এখন তার বাচ্চাদের মতো গলা জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে।
“” আপনি খুব ভালো।

পরদিন কলেজে গিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে নেয় রাত। ছুটি শেষে বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো রাত। হটাৎ বৃষ্টি হাত নাচিয়ে বলতে থাকে,
– এই গাড়ি থামান গাড়ি থামান।
গাড়ি থামিয়ে রাগি লুক নিয়ে বলে উঠে,
– কি হলো বানরের মতো এমন লাফাচ্ছো কেনো?
– ওইযে দেখেন, ফুলগুলো কি সুন্দর। আমাকে দু,টু এনে দিন না।
– বন্যেরা যেমন বনে সুন্দর, শিশুরা যেমন মাতৃ কোলে, তেমনই পুষ্প সব সময় গাছেই সুন্দর। মানুষের হাতে সুন্দর লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। তারপর ঠিকই সে ছুড়ে ফেলে দেয়, সেগুলো। এগুলো এখন গাছে থাকায় তুমি যেমন সৌন্দর্যটা উপভোগ করছো, এখন জদি ছিরে ফেলো তেমন অন্যরা কি আর সেই সুন্দর্যটা উপভোগ করতে পারবে?
– আমি এতো কিছু বুঝিনা। আমাকে একটা হলেও এনে দিন। আর আমি প্রিয় মানুষের কাছ থেকে কিছু পেলে, সেটা ফেলে দিই না, যত্ন করে রেখে দিই।
রাত কিছুক্ষন বৃষ্টির দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে, গাড়ি থেকে নেমে ওই ফুলগাছ গুলোর কাছে চলে গেলো।
জানালা দিয়ে মাথা বের করে রাতের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয় বৃষ্টি।

ফুল নিয়ে ফেরার পতেই একটা ছেলে গাড়ি থেকে নেমে বন্ধু বন্ধু বলে জড়িয়ে ধরে রাতকে।
– আরে দোস্ত কতো বছর পর দেখা। কেমন আছিস?
ওদের কথাপোকথনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো বৃষ্টি।
গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে যায় সে। রাতের বন্ধু রাফিকে দেখিয়ে রাত বলে উঠে,
– আমার কলেজ ফ্রেন্ড রাফি। বাইরে থাকে, আজ ৪ বছর পর দেশে ফিরেছে।
বৃষ্টি হাই বলে হাত বাড়িয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। রাফিও হাত বাড়িয় বলে উঠে,
– নাইস টু মিট ইউ।
রাতের দিকে তাকিয়ে হাত ছেরে দেয় বৃষ্টি। একটা রাগি লুক দেখতে পায় রাতের চোখে। রাফি রাতকে বলে উঠে,
– কি হয় তোর?
বৃষ্টিও একটু উৎসাহের দৃষ্টিতে তাকায় রাতের দিকে। রাত আজ তাকে কি বলে সম্মোধন করে এটা দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে সে।
রাত একবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– আমার কাজিন বৃষ্টি।
– ওহ্।
নিমেষেই মুখটা গোমড়া হয়ে যায় বৃষ্টির। নিজের স্ত্রী হিসেবে সম্মোধন করতে কি এতোই গায়ে লাগে তার? গোমড়া মুখে সেখান থেকে হাটা ধরে বৃষ্টি।
” যেখানে আমার বর্তমান পরিচয়টা দিতে তার মুখে বাধে, সেখান থেকে প্রস্থান করাটাই ভালো।
রাত ও রাফি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। রাফি রাতের কাধে হাত রেখে বলে উঠে,
– ওর হটাৎ কি হলো। কাহিনি বলতো।
– কিছুনা বাদ দে।
– কাজিন বলায় মুখটা বাংলা ৫ হয়ে গেছে। আমার মনে হয় তোর কাজিন তোকে ভালোবেসে ফেলেছেরে। বলেই একটা হাসি দেয় রাফি।
বৃষ্টি গিয়ে গাড়িতে উটে বসে রইলো।
সারা পথ আর রাতের সাথে একটাও কথা বলেনি বৃষ্টি। তবুও মনকে এটা বুঝ দেয়,
” আজ আমার এমন লাগছে কেনো? সত্যিই তো আমি ওর কেও না। সে তো আগেই বলে দিয়েছিলো আমি তার স্ত্রী শুধু মাত্র নামে। তার পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার কেওই না আমি। কেও না।

To be continue…………

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-০৬

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ_৬

বৃষ্টি হটাৎ অনুভব করলো তাকে কেও ঘুমের মাঝে কোলে নিয়ে হাটছে। পিট পিট করে তাকাতেই চোখ পরে সামনে রাতের মুখের দিকে। হটাৎ এমন হওয়ায় পুরু ব্যাপারটাই যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে বৃষ্টির। রাত আর তাকে কোলে তোলা, ইম্পসিবল। চোখ দুটি বুজে রইলো বৃষ্টি। এই প্রথম রাতের স্পর্শ অনুভব করছে সে। জ্বরের ঘোরেও যেনো অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে তার মাঝে। আজ রাত যেই পথেই হাটুক না কেনো, এই পথটা যেনো হয় এক অফুরন্ত পথ।

বৃষ্টিকে নিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিলো রাত। পাতলা কম্বলটা গায়ে টেনে দিলো। মাথায় পাশে বসে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির মুখের দিকে। হতটা কপালে রেখে জ্বর চেক করছে সে।
চোখ বুজে মুহুর্তটা ভালোই উপভোগ করছে বৃষ্টি। কাত হয়ে জড়িয়ে ধরে রাতকে। মাথার পাশে বসায়, কোমর ধরে জড়িয়ে ধরার সুবিধাটা ভালোই হয়েছে তার। কিন্তু তাও আজ রাত কিছু বলছেনা। শুধু চুপ চাপ চেয়ে আছে বৃষ্টির দিকে।

আবার কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো তা খেয়ালই করেনি বৃষ্টি। কিছুক্ষন পর চোখ খুলতেই চার পাশে সবাইকে দেখতে পেলো সে। পাশে বসে ঔষধ লিখে রাতকে দিলো ডাক্তার। অপর পাশে বাবা মা আরশি সবাই বসে আছে। ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে চলে গেলো রাত। বৃষ্টি পিট পিট করে তাকাচ্ছে সবার দিকে। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে, যেনো এক মস্ত বড় কান্ড পাকিয়ে ফেলেছে সে।

পাখির কিচির মিচির শুনা যাচ্ছে চার দিকে। ভোরের আলো পুরুপুরি ভাবে ফুটে উঠেছে। বিছানায় কম্বল মুড়িয়ে আরাম করে শুয়ে আছে বৃষ্টি। আর রাতকে দেখলো ওয়াশরুম থেকে বৃড়িয়ে আসতে।
বৃষ্টি এইবার শিওর হলো যে গতকাল রাতের ব্যাপারটা স্বপ্ন নয় সত্যি রাত তাকে কোলে নিয়ে হেটেছে। তাহলে কি রাত আর আমি একই বিছানায় ছিলাম আজ? ভাবতেই লজ্জায় শিওরে উঠলো বৃষ্টি। রাতের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট পড়ে নিচে চলে গেলো সে।
ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৭ টা। বাইরে সোনালি রোদ টা ধিরে ধিরে প্রখর হয়ে উঠছে। পাখিদের কিচির মিচিরের শব্দটাও কমে গিয়েছে অনেকটা। এখন শরির কিছুটা হালকা লাগছে বৃষ্টির। তবে মাথাটা এখনো কিছুটা ধরে আছে। ধিরে পায়ে বিছানা থেকে নেমে নিচে চলে গেলো সে। দেখে মা আর চৈতি মিলে নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে দিচ্ছে। তাদের দেখেই কিচেনের দিকে এগিয়ে যায় বৃষ্টি। মনে একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে তার। বাড়ির বৌ পড়ে ঘুমুচ্ছে আর শাশুরি রান্না ঘরে।
– মা আপনি কেনো কষ্ট করছেন? চৈতিকে বললেই তো সে আমায় ডেকে দিতো। আমি পরে ঘুমুচ্ছি আর আপনি কষ্ট করছেন, ব্যাপারটা কি মানানসই বলুন?
রাতের মা রাত্রি চৌধুরি মুখে একটা হাসির রেখা টেনে বলে উঠে,
– তোমার শরির কেমন লাগছে এখন?
– এখন মোটামুটি ভালো লাগছে মা।
রাত্রি চৌধুরি বৃষ্টির কপালে হাত রেখে বলে উঠে,
– জ্বর তো দেখছি এখনো আছে। আচ্ছা তুমি কি এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলে যে গতকাল সারা বিকেল বৃষ্টিতে ভিজলে? এখন জ্বর বাধিয়ে ফেললে। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। আর রাত কি ঔষধগুলো এনেছে?
– কেনো অন্য বাড়ির একটা মেয়ের কাজ আমার কেনো করতে হবে? আমি কি তার কাজের লোক নাকি? যত্বসব ফাউল কথাবার্তা।
পাশে চেয়ার টেনে বসতে বসতে কথাটা বললো রাত।
হাসি মুখটা যেনো নিমেশেই মলিন হয়ে যায় বৃষ্টির। সত্যি ই তো সে অন্য বাড়ির মেয়ে। সুজুগ বুঝে ঠিকই খোচাটা দিয়ে দিলো রাত।
মুখটা গোমড়া করে উপরে চলে যায় বৃষ্টি। ওদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে নাস্তা করতে ব্যাস্ত রাত। যেনো বৃষ্টির অভিমানটা তার চোখেই ধরা পরেনি।
পাশ থেকে রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– দিলিতো মেয়েটার মনটা খারাপ করে। আচ্ছা একটা কথা বলতো, কেনো ওর সাথে এমন করিস তুই? দোষটা কি তার, যে সব কিছু তাকেই সহ্য করতে হবে? কখনো একটু ভালো ব্যাবহার করিসনা মেয়েটার সাথে। জীবনে মানুষ কষ্ট পায়, প্রতারিত হয়, আরো কতো কিছুই হয় মানুষের জীবনে। তাই বলে তার জেদ অন্য কারো উপরই ফেলতে হবে? একটা মেয়ের নতুন বাড়িতে নতুন বৌ হয়ে এসে সব কিছু ঘুচিয়ে তুলতেও কয়েকমাস সময় লাগে। মনের মাঝে থাকে পরিবার ছেরে আশার কষ্ট। আর সেখানেও যদি তার জীবন স্বামী, শশুর বাড়ির অবহেলায় ডুবে থাকে তাহলে তার মনের অবস্থাটা কেমন তা শুধু সে নিজেই বুঝতে পারে। আর বিয়েটাতে তো তুই নিজেই সম্মতি দিয়েছিস, তাহলে কেনো এমন করছিস মেয়েটার সাথে। তুই এখন অবুজ নয়। জদি পারিস বৃষ্টির জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে দিখিস। এটুকু বলেই কিচেনের দিকে হাটা ধরে রাতের মা। রুদ্র চৌধুরিও এসে নাস্তা করছে।
খাওয়া শেষ করে একটা প্লেটে কিছু নাস্তা নিয়ে উপরে চলে যায় রাত।
বিষন্ন মনে খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। রাতকে দেখে দাড়িয়ে যায় সে। হাত দুটু একটু কাচুমাচু করে সেখান থেকে সরে যেতেই পেছন থেকে হাতটা চেপে ধরলো রাত।
– আমাকে দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি কোনো এলিএন নই। আর অভিমানি মুখেও তোমাকে হেব্বি লাগে। এখন যাও অভিমান দুর করে ফ্রেশ হয়ে আসো।
চলে যেতে চেয়েও রাতের কথায় এবার স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। বৃষ্টিকে ওভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাত উঠে বৃষ্টির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ওয়াশ রুমে। বৃষ্টিকে আয়নার সামনে দার করিয়ে ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে বৃষ্টির দিকে বাড়িয়ে দেয় রাত।
– নাও এটা, এখন কি তোমালকে আমার ব্রাশও করে দিতে হবে?
– না, আমি নিজের কাজ নিজে করতে পারবো। অন্য বাড়ির মানুষের জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা।

বৃষ্টি ফ্রেশ হয়ে বের হয় ওয়াশ রুম থেকে। হাত মুখ মুছে আয়নার সামনে বসে পরে সে। রাত হাতটা ধরে তার পাশে এনে বসায় বৃষ্টিকে,
– এখন তোমার বডি ট্রিটমেন্ট করার সময় নয়। শরিরের যত্ন নেওয়ার সময়। খেয়ে ঔষধ না খেলে সুস্থ হবে কি করে? দেখি হা করো।
রাত একে একে খাইয়ে দিলো বৃষ্টিকে। খাওয়া শেষে ঔষধ গুলোও খাইয়ে দিলো। দুটা ঔষধ বড় হওয়ায় সেগুলো ভেঙে দিলো রাত।
– আপনি না বললেন, ঔষধ আনেন নি। তহলে?
– চিন্তা করোনা, ঘর থেকে উল্টা পাল্টা ঔষধ খাওয়াচ্ছিনা তোমাকে। তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন নিয়ে আসলাম।
রাত বৃষ্টিকে খাইয়ে উঠে আশার সময় আবার দাড়িয়ে বলে উঠে,
– শুনো, এই বাড়িটা তোমারও। যাই হোক তুমি এখন এই বাড়ির বৌ। সো ভয় নয় নিজের বাড়িতে অধিকার নিয়েই চলবে। তাছারা এই বাড়িতে আশার পর থেকে শুধু কষ্টই পেয়েছো তুমি। বাসর রাতেও তোমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করিনি আমি। রাগের বসে তোমার গায়ে হাতও তুলেছি। এই বাড়িতে তোমাকে হাতের আঘাতে না হলেও মুখের আঘাতে কষ্ট দিয়ে এসেছি দিনের পর দিন। বিশ্বাস করো আমি এসব কেনো করেছি তা আমি নিজেও জানিনা। আমি সত্যিই আমার ব্যাবহারের জন্য লজ্জিত। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।
– আপনি নিজেকে এতোটা ছোট করে দেখবেন না প্লিজ। আপনার তো কোনো দোষ নেই এতে। আমার পরিবার থেকে আপনি যেই আঘাতটা পেয়েছেন তাতে,,,,,,
– স্টপ, বর্ষা তোমার পরিবারের কেও না। তোমার পরিবারের কিছু হলেও তোমার কেও না। কারন তুমিও এখন ওই বাড়ির অতিথি এই চৌধুরি বাড়ির বৌ। সো ওর নাম আমার সামনেও উচ্চারন করবেনা কখনো।
এই বলে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো রাত। বৃষ্টির চোখের কোনে ভিজে উঠেছে, আজ তা দুঃখে নয়। রাত কি তাহলে আজ তাকে স্ত্রী হিসেবে সম্মোধন করে নিলো?
সাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে অফিসের জন্য রেডি হলো রাত। রুদ্র চৌধুরি আগেই অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নাস্তা করছিলো। নিচে গিয়ে রুদ্র চৌধুরিকে বলে উঠে,
– বাবা আমি যাচ্ছি। আমি থাকতে তোমাকে আর কষ্ট করতে হবেনা। তুমি এখন থেকে রেষ্ট নিবে শুধু। আজ থেকে আমি একাই সামলাবো সব।
– তুই কি একা সব সামলাতে পারবি?
– অবশ্যই পারবো বাবা। তোমার ছেলে না আমি? তুমি এক সময় সব একা সামলিয়েছো না? আর তোমার সাথে গিয়ে গিয়ে তো আমি সব বুঝেি নিয়েছি এখন। So, no tention, you take rest.😊

বিকেলে বাইরে হাটতে বেড়িয়েছে বৃষ্টি ও আরশি। বৃষ্টি ঘুমাচ্ছিলো তখনই আরশি উঠিয়ে নিয়ে আসলো তার সাথে ঘুরতে।
ঘুরতে ঘুরতে প্রায় সন্ধা হয়ে গেলো। একটা রেষ্টুরেন্টে ঢুকে খাবার অর্ডার করলো আরশি।
এলো পাথারি সব খাবার খেয়ে চলছে আরশি। বৃষ্টি পাশে বসে ধিরে ধিরে খাচ্ছে আর আরশির দিকে তাকিয়ে হাসছে।

খাবার শেষে হেলান দিয়ে বসে আছে আরশি। বিলের কাগজ হাতে নিয়ে দেখে ৩ হাজার ৭ শত টাকা বিল। ব্যাগ চেক করে মাথায় হাত দেয় আরশি। বৃষ্টিকে নিয়ে তাড়া হুরা করে বের হতে একটা টাকাও নিয়ে আসেনি সাথে। ব্যাগে আছে শুধু কিছু খুচরা টাকা।
বিল প্লে করে তারপর যেতে হবে এখান থেকে। ফোনটা হাতে নিয়ে ওটাও বন্দ হয়ে আছে, হয়তো চার্জ শেষ। নয়তো ভাইয়া অথবা বাবাকে বলে টাকা নিয়ে নিতো। বৃষ্টিও ফোন আনেনি সাথে করে, আরশি ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আসায় এতো কিছু খেয়াল ছিলোনা তার। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধা হয়। উপায় খুজে পাচ্ছেনা আরশি। হটাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি চাপলো তার। ফোনটা কানে ধরেই কান্না শুরু করে সে,
– ও আল্লা গো একি হয়ে গেলো গো, আমার সব শেষ হয়ে গেলো গো।
বলেই এমন ভাবে দৌড় দিলো যাতে মস্ত বড় সর্বনাস হয়ে গেছে তার। পেছন পেছন বৃষ্টিও ছুটলো তার সাথে। যেনো মস্ত বড় কিছু হারিয়ে ফেলেচে তারা।

রাস্তায় এসে হাপাতে থাকে দুজন। বৃষ্টি হাপাতে হাপাতে বলে উঠে,
– এই আরশি কার কি হয়ে বলো তো। আমি আর টেনশন নিতে পারছিনা।
বৃষ্টির কথায় অট্ট হাসিতে মেতে উঠে আরশি।
– তুমি সত্যি একটা গাধি ভাবি। এমনটা না করলে কি ওখান থেকে বেরোতে পারতাম।
– তার মানে এটা তোমার বেড়িয়ে আসার ধান্দা ছিলো?😮
– হুম😉

রাতে খাবার খেয়ে ছাদে দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি ও আরশি। পেছন থেকে রাত গিয়ে বুকে দু,হাত গুজে দাড়ালো।
– ভাইয়া কিছু বলবে?
– বিকেলের পর রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলি?
– একটু বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলাম ভাইয়া।
– তা বুঝলাম, কিন্তু আজ আবার কোন কান্ড পাকিয়ে আসলি?
– কই না তো।
– তুই বলবি নাকি আমিই বলে দিবো?.
– কোনো কান্ড পাকালেই তো বলবে তাইনা?
– তোরা কি ভেবেছিস তোদেরকে রেস্টুরেন্ট থেকে এমনি এমনি আসতে দিয়েছে।
জ্বিভে কামর দেয় আরশি। আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– তু তুমি জানলে কি করে।
– কারন ওরা জানে তুই আমার বোন আর বাবার একমাত্র মেয়ে। ভালোই ডস দিতে শিকেছিস দেখি।
বৃষ্টি আস্তে করে পাশ কাটিয়ে সরে যেতেই রাত তার হাতটা ধরে আবার আরশির পাশে এনে দাড় করালো,
– তুমি কোথায় যাচ্ছো?
– আমি কিছু করিনি, যা করেছে আরশি করেছে।
– যে চুরি করে আর যে পাহারা দেয় দুজনই সমান অপরাধি।

ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। আরশিও তার রুমে চলে গেছে। বৃষ্টি গিয়ে শুয়ে পরলো সোফায়। চোখ বুজে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত সে। আচমকাই কেও এসে টেনে তোলে বৃষ্টির হাতটা ধরে। চোখ খুলে দেখে রাত।
– কিছু লাগবে আপনার?
– আজ থেকে তোমার আর সোফায় শুতে হবেনা বৃষ্টি। তুমি এই বাড়ির বৌ তাই তোমার সব কিছুতেই অধিকার আছে। বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়ো তুমি। আমিই আজ থেকে এখানে থাকবো।
– না না আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা। আপনি ঘুমান, আমি ঠিকই আছি।
– আমি কিছু জানতে চেয়েছি তোমার থেকে? এখান থেকে সরতে বলেছি সরো আজ থেকে আমি এখানেই ঘুমাবো। এতো বড় খাট খালি পরে আছে তুমি গিয়ে ওখানেই ঘুমাবে আজ থেকে।

To be continue……

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 💖

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-০৫

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৫

রিদের কথায় একটু অসহ্যকর ভাব নিয়ে চোখ মুখ কুচকে তার দিকে তাকায় আরশি।
– আমি মোটেও ঘুমের মাঝে বকিনা রিদ ভাই, তুমি সব সময় আমায় নিয়ে ফাজলামি করো।
এবার রিদ একটু নরে চরে বসে,
– ফাজলামি করবো কেনো? যা সত্য তাই তো বলছি, কার সাথে কথা বলিসরে এতো? আমায় নিয়ে স্বপ্ন টপ্ন দেখিস নাকি?
বলেই একটা দাত কেলানো হাসি দেয় রিদ। এই জ্বরের ঘোরেও নিজের চুল নিজে ছিরে ফেলতে ইচ্ছে করছে আরশির। চোখ মুখ খিচে বলে উঠে,
– তোমাকে নিয়ে দেখা ওটা স্বপ্ন হতে পারেনা। ওটা হবে দুঃস্বপ্ন।
– তার মানে তুই স্বীকার করে নিলি যে তুই আমায় নিয়ে দুঃস্বপ্ন হলেও দেখিস। তাহলে চিন্তা করে দেখ, তুই যাই বলিস, তোর স্বপ্নে কিন্তু আমার মতো সু-পুরুষই থাকে।
নিজের বোকামিতে আরশি আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– তুমি যাও তো রিদ ভাই, আমার মাথা ধরে যাচ্ছে। আর নিজেকে যে সব সময় সু-পুরুষ দাবি করো? তাহলে একটা মেয়ের বেড রুমে অনুমতি ছারা ঢুকে পরাটা কোন সু-পুরুষের কাজ একটু বলবে?
– কোনো সু-পুরুষেরই নিজের স্ত্রীর রুমে আসতে অনুমতি নেয় না। তেমন আমিও। আর হবু স্বামীর সাথে এমন বিহেব করা কি আদৌ ঠিক?
রিদের কথায় চোক্ষুজোড়া বড় বড় করে তাকায় আরশি। এই বড় বড় চক্ষু জোড়া রিদের মুখের পানে স্থির হয়ে আছে।
– বস আমি খাবার নিয়ে আসছি। খাওয়া শেষ করে ঠিকঠাক ঔষধ খেয়ে নিবি, দেখবি জ্বর চলে গেছে। তুই একটু বস আমি যাবো আর আসবো।
এটা বলেই আরশির ডান গালে একটা চুমু একে দিয়ে পানির পাত্রটা আর পট্টি দেওয়া কাপরটা নিয়ে হন হন করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো রিদ। আরশি যনো এবার অবাকের সপ্তম আকাশে অবস্থান করছে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে ছিলো রিদের চলে যাওয়ার দিকে। কি অসভ্য ছেলেরে বাবা।
,
,
খাওয়ার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে সবাই। রুদ্র চৌধুরি রাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
– আগামি কাল বৃষ্টিকে গিয়ে নিয়ে আসবি ওই বাড়ি থেকে। বাড়ির নতুন বৌ বাবার বাড়ি গেছে আর তুই একটি বার খোজ খবরও নিলিনা। এটা কেমন ধরনের ব্যাবহার রাত? আগামি কাল গিয়ে নিয়ে আসবি বৃষ্টিকে।
– সরি বাবা, তুমি ভালো করেই জানো ওই বাড়িতে আমি যেতে ইচ্ছুক নই। আর এসব উস্ক ঝামেলায় আমাকে না জড়ালেই খুশি হবো।
– ঝামেলা? যেটাকে তুই ঝামেলা মনে করছিস ওটা তোর দায়িত্বের মধ্যে পরে। আর তাছারা বৃষ্টি এখন তোর বিয়ে করা স্ত্রী। আর তার সব দায় দায়িত্ব এখন তোরই। কথা না বাড়িয়ে যা বলছি তাই করবি।
খাবার টেবিল থেকে উঠে হন হন করে রুমে চলে গেলো রাত। ছেলের এমন আচরণে একটা হতাশার নিশ্বাস ছারলো রুদ্র চৌধুরি।
,
,
মেয়েদের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত। এই অদ্ভুত জীবনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় তাদের। যেই বাড়িতে তার জম্ম, যেই বাড়িটা ১৮-২০ বছর ধরে নিজের বাড়ি বলে মনে করতে, সেই বাড়িতেই তাদের এক সময় অতিথি হয়ে আসতে হয়।
বৃষ্টি বাবার বাড়ি আশার আজ কয়েকদিন হয়ে গেলো, তবুও একটিবার ফোন দিলোনা রাত। শাশুরির কাছ থেকেই রাতের খোজ খবর নিতে হয় তার। এমনকি নিতেও আসলোনা তাকে। এতে একটুও অবাক হলোনা বৃষ্টি। কারণ এমনটাই হওয়ার কথা। নিজেকে বড্ড বেহায়া মনে হচ্ছে তার। এতো অবহেলার পরও ওই বাড়িতে পরে আছে, বেড়াতে আসছে আবার ফিরেও যাচ্ছে। এতে যেনো একটুও ভ্রুক্ষেপ নেই রাতের।
আরো দু,একদিন থাকতে বললেও থাকলোনা বৃষ্টি। বৃষ্টিকে দিয়ে আসছে তার বাবা। আজ কিছু বলছেনা সে। হয়তো বুঝতেই পারছে তার মেয়ে ওই বাড়িতে কতোটা সুখে আছে। জানালা দিয়ে বিষন্ন মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো তার বাবা।

ঘরে প্রবেশ করতেই আরশি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টিকে।
– কেমন আছো ভাবি?
– ভালো, তুমি।
– খারাপ থাকলেও এখন তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেলাম।
আরশির কথায় হেসে দিলো বৃষ্টি।
রুদ্র চৌধুরিকে সালাম করে উঠে দাড়ায় বৃষ্টি। রাতের মাকে সালাম করে উঠে দাড়তে বৃষ্টিকে জড়িয়ে নেয় সে।
– ঘরের লক্ষি ফিরে এসেছে বলে।
উপর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব দেখে চলছে রাত। বৃষ্টি রাতকে দেখে আড় চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তার দিকে। বৃষ্টির দৃষ্টি খেয়াল করতেই সেখান থেকে চলে গেলো রাত।
ব্যাগটা তুলে বৃষ্টিকে নিয়ে রুমের দিকে হাটা ধরলো আরশি। একটা জোড় পূর্বক হাসির রেখা টেনে হাটা ধরলো বৃষ্টিও।

ছাদে ফুলের টব গুলোতে পানি দিচ্ছে বৃষ্টি। ফুল ফোটার সময় হয়েছে গাছ গুলোতে। আরশি গেছে কলেজে। প্রতিদিন আরশির সাথে কলেজে চলে গেলেও আজ যায়নি সে। এক্সামও ঘনিয়ে এসেছে তার। তবুও যেনো নিজেকেপ্রস্তুত করতে পারছেনা। পেছন থেকে মায়ের কন্ঠ পেয়ে ঘুরে তাকালো বৃষ্টি।
– কিছু বলবেন মা?
– হুম, এদিকে আসো।
– হ্যা মা বলুন।
– মা, আমি জানি এখানে তোমার সাথে যাই হচ্ছে সব অন্যায় হচ্ছে। ভুলটা তো তোমার না, তবুও সব দিক থেকে কষ্ট টা তোমারই পেতে হচ্ছে। বিশ্বাস করো রাত এমন ছিলোনা। ভালোবাসা নামক একটা ধোকা এলোমেলো করে দিয়েছে তার জীবন টা। একটা সতেজ বৃক্ষও যখন শুকনো হয়ে ঢলে পড়ে, তখন তার গোড়ায়ও পানি দিয়ে প্রান ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর আমার রাত এখন সেই বৃক্ষটার মতোই। একটা ধোকা তাকে যতটা আঘাত করেছে, ঠিক ততোটাই ভালোবাসা প্রয়োজন তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য। আর আমার মনে হয় সেটা তুমি পারবে। আমার ছেলেটাকে আগের মতো করে দিও তুমি।
– আমি চেষ্টা করবো মা।
– ভালোবাসার গভিরতা তারাই মাপতে পারে যারা এটা পেয়েও খুব নির্মম ভাবে হারিয়ে ফেলে। তুমি অনেক সুখি হবে মা। অনেক সুখি হবে।
এটা বলেই চোখের কোনের জলটা মুছে হাটা ধরলো রাতের মা। ওখানে এখনো বসে আছে বৃষ্টি। আবারও এই পরিবারের জ্বালের মাঝে জড়িয়ে গেলো সে। যখনই ভাবে এসব ছেরে অনেক দুরে চলে যাবে তখনি নিজেকে এটা বুঝ দেয় যে, জদি সেও চলে যায় তাহলে তার আর বর্ষার মাঝে তফাৎ টা কি থাকবে? আবারও এলোমেলো হয়ে যাবে পরিবার টা। ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা সম্ভব। এমন একটা সময় আসবে যখন এসব সমস্যা থাকবেনা। কিন্তু কবে আসবে সেই সু-দিন।

এভাবেই কেটে গেলো একটি মাস। এই একটি মাসে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। শুধু রাতের পাগলামু গুলো কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। হয়তো সে নিজেও এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু বৃষ্টির প্রতি অবহেলাটা এখনো তার মাঝে বিধ্যমান। বৃষ্টিকে এখনো এড়িয়ে চলে সে।

সন্ধা ৭ টা,
সোফায় বসে ছিলো বৃষ্টি। কনিং ব্যাল এর শব্দ আসে কানে। উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয় বৃষ্টি। দেখে একটা সুন্দরি মেয়ে দাড়িয়ে আছে বাইরে। বৃষ্টিকে দেখে মুখটা কুচকে বলে উঠে,
– রাত আছে?
– না নেই।
– তাহলে স্যার আছে?
– নাহ্, কেওই নেই।
– বুজলাম না আজ অফিস থেকেও তারাতারি চলে এসেছে আর আমাকেও রাত কিছু বলে আসেনি। আচ্ছা ঠিক আছে। রাত আসলে বলবে তাকে কেও খুজতে এসেছে।

আর কিছু না বলেই সেখান থেকে প্রস্থান করলো মেয়েটা। হতভ্বম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। কিছুই বুঝতে পারছেনা সে। রাত আসলে তাকে বলে আসতে হবে কেনো? আর এমন ভাবে বলছে যাতে রাত ওর খুব কাছের কেও। আচ্ছা রাত কি তাহলে বাইরেও অন্য একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে? কথা গুলো ভাবতেই যেনো কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে তার। মাথাটা ঘুরছে। বুকের ভেতরটায় চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছে মুহুর্তেই। কিন্তু এমন কেনো হচ্ছে তার? সে তো রাতের কেও না। নাহ্ কিছুই ভাবতে পারছেনা সে, মাথাটা প্রচুর ধরে গেছে তার।

ওইদিন রাতকে কিছু বলার সাহস পায়নি বৃষ্টি। ভয়ের সাথে কিছুটা অভিমানও ভর করেছিলো মনে।

শেষ বিকেলের দিকে ছাদে দাড়িয়েছিলো রাত। থালার মতো লাল সূর্যটা আজ দেখতে পারছেনা সে। সারা আকাশ মেঘে ঢেকে আছে। পুরু আকাশটা কালো হয়ে যাচ্ছে ধিরে ধিরে। হালকা বাতাসে চুলগুলো নারাচারা করছে রাতের।
বৃষ্টি এসে দাড়ায় তার পাশে। তার খোলা চুল গুলোও উড়ছে বাতাসে।
– আপনার যে বাইরেও সম্পর্ক আছে যানতাম না তো।
কথাটা একটু অভিমানি সুরেই বললো বৃষ্টি। বৃষ্টির কথায় ভ্রু কুচকে তাকালো রাত।
বৃষ্টি আবার বলে উঠে,
– গতকাল সন্ধায় আপনার গার্লফ্রেন্ড এসেছিলো বাসায়। আপনাকে খুজছিলো, বাসায় ছিলেন না তাই আবার চলে গেছে।
বৃষ্টির কথায় কোনো প্রতি উত্তর দিলোনা রাত। শুধু একটা হাসির রেখা টেনে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। রাতের কোনো উত্তর না পেয়ে কান্নার ভাব চলে এলো মুখে। হয়তো ভেবেছিলো রাত বলবে, না ও আমার গার্লফ্রন্ড না এমনি বন্ধু ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্কই নেই।
এই জাতিয় উত্তর আশা করেছিলো। কিন্তু রাত কিছু বলেনি। তাহলে কি মেয়েটার সাথে কি রাতের সম্পর্কটা গভির?
কান্নার ভাবটা চেপে রেকে একটু অভিমানি শুরে বলে উঠে,
– আমাদের সম্পর্কটা কি এমনই থাকবে?
– হয়তো।
এইটুকু বলে পকেটে হাত রেখে হাটা ধরলো রাত।
ওভাবেই দাড়িয়ে রইলো বৃষ্টি। কিছুক্ষন পরই মুষলধারে বৃষ্টি নেমে আসলো। বৃষ্টিতে ঔভাবে দাড়িয়েই ভিজতে থাকলো বৃষ্টি। এই বর্ষন কি পারেনা তার সব কষ্ট ধুয়ে মুছে শেষ করে দিতে?

খেয়ে দেয়ে সুয়ে পরলো সবাই। প্রতি দিনের মতো সোফায় গিয়ে সুয়ে পরলো বৃষ্টি। শরিরটা কেমন কাপছে। শীতল ভাব অনুভব করছে সে। হয়তো সন্ধায় ভিজে জ্বর চলে আসছে ধিরে ধিরে।

বৃষ্টি হটাৎ অনুভব করলো তাকে কেও ঘুমের মাঝে কোলে তুলে নিয়ে হাটছে। পিট পিট করে চোখ খুলতেই দেখে রাত। রাত কোলে করে নিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিলো বৃষ্টিকে। এই প্রথম রাতের স্পর্স অনুভব করলো বৃষ্টি। জ্বরের ঘোরেও যেনো অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করলো তার মাঝে। চুপ চাপ চোখ বন্ধ কর আছে সে। বৃষ্টিকে বিছানায় সুইয়ে পাতলা কম্বলটা গায়ে টেনে দিয়ে পাশে বসে কপালে হাত বুলাচ্ছে রাত।

To be continue………….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-০৪

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৪

বৃষ্টি কিছুক্ষন রাতের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে দাড়িয়ে আছে। আজ কেনো জানি বড্ড মায়া লাগছে মানুষটার জন্য তার। একটা দির্ঘশ্বাস পেলে হাটা ধরে বৃষ্টি। দরজা খুলতেই আরশি দাত কেলিয়ে বলে উঠে,
– কি হলো ভাবি? তোমার আশিক তো দেখি বেঘোরে ঘুমাচ্ছা তাহলে দরজা খুলতে এতো দেরি হলো কেনো তোমার?
আরশির কথায় কিছুটা লজ্জার ছাপ ভেষে উঠে বৃষ্টির মুখে।

বৃষ্টিকে নিয়ে নিচে চলে যায় আরশি। দেখে অনেক মেহমান বসে আছে ওখানে। বৃষ্টিকে দেখে সবাি কেমন ভ্র কুচকে তাকায় বৃষ্টির দিকে। যেনো বৃষ্টি একটা আসামি আর বাকিরা তার বিচার করতে বসেছে। পাশ থেকে এক মহিলা রাতের মাকে বলে উঠে,
– এটাই তাহলে বৌ? দেখতে শুনতে তো ভালোই আছে দেখছি।
পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠে,
– আরে ওই বোনটার শরির স্বাস্থ আরো ভালো ছিলো। কি মায়াবি মেয়ে ছিলো সে। কিন্তু কে জানতো এতো ভালো মেয়েটা এমন কাজ করে বসবে?
আগের মহিলাটা আবার বলে উঠে,
– আজকালকার মেয়েদের বুঝা বড় দায়। কখন মনে কি ফন্দি আটে তা বুঝাই মুশকিল। বড় বোনটা তো বিয়ের দিনই বেটা মানুষ নিয়ে ভাগছে। যার বড় বোনের চরিত্র এমন সেখানে ছোট বোনটাও আর কেমনই হবে? এখন এটা টিকলেই হলো।
ওদের কথা শুনে চোখের কোনে পানি জমে গেলো বৃষ্টির। তবুও মুখ বুজে সব সহ্য করছে মাথা নিচু করে।
পাশ থেকে আরশি বলে উঠে,
– আচ্চা চাচি, আপনারা এমন ভাবে কথা বলছেন যেনো, আপনার ছেলের গলায় ধরে আমরা কাওকে ঝুলিয়ে দিয়েছি? তাছারা ভাইয়ার সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছে। সে জদি ভালো তাকে তাহলে আপনাদের এতো জ্বলে কেনো? নাকি আপনার মেয়েকে বিয়ে করেনি দেখে তাই এমন জ্বলছে?
মহিলাটা চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে,
– দেখলেন আজকাল মেয়েরা কেমন চট চট কথার উত্তর দিয়ে দেয়। মুরুব্বিরা কথা বলার সময় কথা মাটিতে পরতে পারেনা তার আগেই তুলে নেয় মুখে।
পাশের মহিলাটা একটু নরে চরে বসে,
– আচ্ছা মা তোমার নাম কি?
বৃষ্টি কাপা গলায় ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
– বৃষ্টি।
– বাহ্, দুই বোনের নামে তো বেস ভালোই মিল আছে। তো তোমার বোনটা এভাবে বিয়ের দিন ভেগে গেলো কেনো? ছেলেটার সাথে কি আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো তার?
সবার এমন আহম্বকি প্রশ্নের উত্তর খুজে পাচ্ছেনা বৃষ্টি। তাই চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে সে। তাদের কোনো কথাই স্বস্থিকর নয়। প্রতিটি কথায় যেনো অসস্থি তৈরি করছে মনে। যেখানে একটা মেয়ের বিয়ের পর কতো মানুষ আসবে তাকে দেখার জন্য, সকলে হাসিখুশি ভাবে সময় কাটাবে তার সাথে, নতুন বৌ নিয়ে থাকবে সকলের মনে খুশির উত্তেজনা, আর সেখানে তাকে আজ দাড়িয়ে দাড়িয়ে তার এবং বোনের চরিত্রের ইন্টারবিউ দিতে হচ্ছে। বিয়েটা এভাবে হওয়া, বাসর রাতে স্বামির কাছে অপমানিত হয়ে চর খাওয়ার দৃশ্য। সত্যিই তার ভাগ্যটা অতুলনিয় ভাগ্য হিসেবে চিহ্নিত।

নিয়ম অনুসারে আজ মেয়ে পক্ষরা এই বাড়িতে আসার কথা। কিন্তু সেটাও কেন্সেল করে দিয়েছে রাত। ওই বাড়িথেকে কেও আসেনি আজ রুমের এক কোনে বসে আছে বৃষ্টি। শুধু চোখের কোনে গড়িয়ে পড়া পানি গুলো হাত দিয়ে মুছে নিচ্ছে সে। রাত সেই সকালে বেড়িয়েছে এখনো বাড়ি ফিরেনি।
আরশি রুমে আসতেই তরিঘরি করে চোখের পানি মুছে গাল টেনে একটা হাসি দিলো বৃষ্টি। তবুও কান্নার ভাবটা আরশির চোখ এড়ালোনা।
বৃষ্টির চোখের জল মুছে দিয়ে বলে উঠে,
– কেদোনা ভাবি। এক সময় দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া আসলে এমন ছিলোনা। বাবা মায়ের মুখের উপর সে কোনোদিনও কথা বলেনি। এই একটা কষ্টই পালটে দিয়েছে তার জীবনটা। এতো বছরের ভালোবাসা ভুলতে তো একটু সময় লাগবে এটাই তো সাভাবিক। কিছু মেয়েদের জীবনটাই এমন। কিছু কিছু পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাও একটা বড় সংগ্রাম। কেদোনা ভাবি, এই সুন্দর মুখে কান্নাটা একধম বেমানান। একটু হাসো আয়নায় গিয়ে দেখো নিজেকে কতো সুন্দর লাগবে ওই হাসিতে।
হটাৎই আরশিকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেদে দিলো বৃষ্টি।

এভাবে কেটে গেলো আরো দুদিন। রাতে সবাই মিলে খাচ্ছে টেবিলে। আরশি বৃষ্টিকে বসিয়ে দিলো রাতের পাশে। চুপচাপ বসে প্লেট টেনে নিলো রাত।
রাতের মা ইশারা করে রাতের প্লেটে খাবার তুলে দিতে বললো বৃষ্টিকে। মায়ের কথা মত কাপা হাতে রাতের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে বৃষ্টি। হাতটা কাপছে তার।
হটাৎই রাত উঠে দাড়ায় খাবার ছেরে।
– কিরে আবার কি হলো? উঠে গেলি কেনো?
– ইচ্ছে হলো তাই।
হন হন করে হেটে রুমে চলে গেলো রাত। মুখটা গোমরা করে মাথা নিচু করে রইলো বৃষ্টি।

সকলে খেয়ে নেয় বসে। বৃষ্টিকে দিয়ে রাতের খাবারটা রুমে পাঠিয়ে দেয় তার বাবা। ভয়ে ভয়ে খাবার গুলো রাতের পাশে রেখে বলে উঠে,
– দয়া করে আমি দোষ করলে খাবারের উপর রাগ দেখাবেন না। শরির খারাপ করবে। খাবারটা খেয়ে নিন।
রাত সুয়ে থাকা অবস্তায় বলে উঠে,
– নিয়ে যাও এগুলো।
বৃষ্টি কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো। কি করবে বুঝতে পারছেনা সে।
রাত হুট করে উঠে খাবার সহ প্লেট টা ছুড়ে মারলো প্লোড়ে। এক পাশে দড়িয়ে একটু কেপে উঠে বৃষ্টি। তার শরির দিয়ে একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেলো।
– খিদে নেই বললাম, কথা কানে যায় না? আর একধম আমার সামনে ভালো সাজতে আসবিনা। যতটুকু আছিস ততোটুকুতেই পরে থাক। এর চাইতে বেশি আগানোর চেষ্টা করবিনা।
বলেই হন হন করে ছাদে গিয়ে সিগারেট ধরালো রাত। সেখানে দাড়িয়ে থেকে একটা বড় নিশ্বাস নিলো বৃষ্টি।

রাত তখন গভির, হটাৎ ঘুম ভেঙে গেলো বৃষ্টির। কানে এলো নিঃশব্দে কিছু কান্নার আওয়াজ। সোফা থেকে নেমে ধিরে পায়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো বৃষ্টি। দেখে চাঁদের আলোয় বেলকনিতে বসে বর্ষার ছবি হাতে নিয়ে নিরবে কেদে যাচ্ছে রাত। চখের জল গড়িয়ে পরছে গাল বেয়ে।
নিরবে রাতের পাশে গিয়ে বসলো বৃষ্টি। একবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো রাত। আজ আর বৃষ্টিকে কিছু বলছেনা রাত। ইচ্ছে করছে সব কষ্ট আজ বৃষ্টির সাথে ভাগাভাগি করে নিতে। বৃষ্টিও চুপচাপ বসে তার কাধে একটি হাত রাখলো। সে কখনো ছেলেদের এভাবে কাদতে দেখেনি। দেকেছে মায়ের মার খেয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা কান্না করছে। কিন্তু বড় হওয়ার পর এভাবে কোনো ছেলেকে কাদতে দেখেনি সে। বর্ষা কি আঘাতটাই না দিয়েছে তাকে।
,
,
কেটে গেলো আরো দু,দিন। আজ বৃষ্টিকে নিতে এসেছে তার বাবা। বিয়ের পর স্বামী সহ বাপের বাড়ি দু,একদিন থেকে আসার প্রথাটা আমাদের সমাজে প্রচলিত। কিন্তু রাত ওই বাড়িতে যেতে নারাজ। যেতে হলে বৃষ্টি একাই যাবে। অনেক জোরাজুরি করেও রাতকে নিতে পারেনি কেও। রাতের বাবা বৃষ্টির বাবাকে বুঝিয়ে বললো ব্যপারটা। দরকার হলে রাত ওই বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে যাবে বৃষ্টিকে।
অবশেষে রাজি হয়ে যায় বৃষ্টির বাবাও। বৃষ্টিকে নিয়ে চলে যায় সে।
,
,
রাত ৮ টা একটা পাতলা কাঁতা গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে আরশি। শরির টা ভালো নেই আজ। সকালে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর উঠেছে। সন্ধায় ডাক্তার এসে ঔষধ লিকে দিয়ে গেছে।
ঘুমাচ্ছে সে, হটাৎ খেয়াল করলো তার দিকে কেও একজন ঝুকে মাথায় পট্টি দিচ্ছে। চোখ খুলতেই দেখে রিদ ভাইয়া। মা বাবা কেওই পাশে নেই। রিদকে দেখে এক লাপে বিছানা থেকে উঠে বসে সে। রিদ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,
– আরে আরে কি করছিস? তোর তো জ্বর, শুয়ে থাক আমি মাথায় জ্বল পট্টি দিয়ে দিচ্ছে।
– আপনার সাহস তো দেখছি কম না। আমার বেড রুমে চলে এলেন? তাও আবার রাতে?
আরশি কথাটা যেনো ফু দিয়ে ফেলে দিলো রাত। শান্ত গলায় বলে উঠে,
– কিছু খাবি?
– নাহ্।
– তুই যে ঘুমের মাঝেও বকিস তা তো আগে জানা ছিলোনা। এই কার সাথে এমন বকিস রে তুই?

চলবে