Wednesday, June 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1455



নেশালো সে পর্ব-০৭

0

#নেশালো_সে💖
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম💖

০৭.

“গাড়িতে বসে আছি আমি’ আর আয়াফ’!!আয়াফ ড্রাইভ করছে’!!বিষয়টা অনেকটাই অদ্ভুত লাগছে’!!ইদানীং আয়াফের আচরণও যেন কেমন হয়ে গেছে’!!আগের মতো তেমন ঝগড়া করে না,অনেক সুন্দরভাবে কথা বলে আমার সাথে’!!যেটা মটেও ভালো লাগে না আমার’!!করলার জুস আয়াফই তো ভালো ছিল’!!হর্ঠাৎ করে কমলার জুস হয়ে গেল কেন?একরাশ নীরবতা নিয়ে গাড়িতে বসে আছি আমি’!!কিছুক্ষণ আগেই আমরা সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে এসেছি’!!এতে মনটা খুব খারাপ লাগছে’!!আচ্ছা মেয়েদের জীবনটা এমন কেন হয়?’বড় হয় যাদের কাছে তাদের বাড়ির অতিথি হয়ে যেতে হয় একদিন’!!!সত্যি অদ্ভুত জীবন মেয়েদের’!!

||

“এদিকে ড্রাইভিং করতে করতে আড়চোখে তাকাচ্ছে আয়াফ আফিয়ার দিকে’!!সে বুঝতে পেরেছে আফিয়ার মন খারাপ’!!গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই আয়াফ বলে উঠলঃ

———“মন খারাপ?’

“আচমকা আয়াফের মুখে এমন কথা শুনে হাল্কা চমকে উঠলাম আমি’!!তারপরও নীরবে বলে উঠলামঃ

———-“একটু…

———–“ওহ!

“বলেই আয়াফ তার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো’!!আমিও আর কিছু না বলে কাঁচের জানালার দিকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম’!!সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ায় ঘুমের রেশ এখনও যায় নি আমার’!!তাই চোখ বন্ধ করতেই চোখে ঘুম মামা এসে কলিং বেল বাজালো আমার’!!কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম আমি’!!

.

“উল্টোদিকে আয়াফ যেন এটারই অপেক্ষা করছিল’!!আয়াফ আফিয়াকে নিজের কাছে টেনে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো’!!যেন কতোদিনের ইচ্ছে আজ পূরণ করতে পেরেছে সে’!!আনমনেই হাসলো আয়াফ’!!আফিয়ার চুলগুলো খুলে দিল আয়াফ’!!এতে আফিয়ার ঘন কালো লম্বা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে ভীষণ’!!আফিয়ার চুলের মাতাল করা ঘ্রাণে পাগল হয়ে যাচ্ছে আয়াফ’!!সাথে অনুভব করছে তার ভালো লাগাগুলো’!!একরাশ ভালো লাগা নিয়ে আয়াফ ড্রাইভ করছে’!!আর আফিয়াও ঘুমের ঘোরে আরাম পেয়ে আয়াফকে জড়িয়ে ধরে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে’……

“বেশকিছুক্ষন পর…..
আয়াফ গাড়ি থামিয়ে দিল’!!আচমকা গাড়ির থামিয়ে দেওয়াতে চট করে ঘুমটা ভেঙে গেল আমার’!!হর্ঠাৎই মনে হলো কাউকে জড়িয়ে ধরে আছি আমি’!!মুহূর্তেই আয়াফের কথা মনে পড়তেই শুকনো ঢোক গিললাম’!!তাড়াতাড়ি আয়াফকে ছাড়িয়ে উওেজিত মাখা মুখ নিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

———–“সরি সরি আমি আসলে বুঝতে পারি নি কখন আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি….

———–“it’s okk…

———–“বিশ্বাস করুন আমি জেনে বুঝে কিছু করি নি ঘুমের মাঝে কখন চলে গেলাম বুঝতেই পারি নি (উওেজিত হয়ে)

———–“ঠিক আছে বললাম তো…

“কে শুনে আয়াফের কথা আমি আমার মতো বক বক করেই চলেছি অতিরিক্ত নার্ভাস হয়ে গেলে যা হয় আরকি….

“এদিকে আয়াফ আফিয়ার বক বক শুনে বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে আফিয়ার দু-কাধ চেপে ধরে বললঃ

————“বললাম তো ঠিক আছে এতো বক বক কেন করো তুমি!

“আচমকা আয়াফের এমন কাজ আর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি’!!তারপর ঠোঁটে হালকা হাসি রেখে বলে উঠলামঃ

———-“আই এম সরি,,

———-“আর কতোবার সরি বলবে তুমি….

“বিনিময়ে চুপ আমি’!!হর্ঠাৎই মনে হলো আমার চুল খোলা’!!আশ্চর্য চুল খুলে গেল কি করে আমি তো শক্ত করে খোঁপা করে এসেছিলাম’!!আমি আয়াফের দিকে সন্দেহজনক চোখে তাকিয়ে বললামঃ

————“আমার চুল কি করে খুলে গেল!আর আমি আপনার ওতোটা কাছে কি করে গেলাম আমি তো ঠিক মনে আছে আমি জানালার দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে ছিলাম…..

“আফিয়ার এমন সন্দেহের ভাব দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় আয়াফ’!!পরক্ষণেই আয়াফ বিষয়টা সামলে নেওয়ার জন্য বলে উঠলঃ

———–“আমি কি জানি তুমি ঘুমের মধ্যে চলে এসেছো আমি তো আমার মতো ড্রাইভ করছিলাম তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম নাকি,,ঘুমালে তো ব্যাঙের মতো লাফালাফি করো তুমি…

“বলেই গাড়ি থেকে নেমে যায় আয়াফ!

“এদিকে আমি হাবলার মতো বসে রইলাম আয়াফের কথা শুনে’!!পরক্ষণেই আয়াফের বলা কথা কি আমি ব্যাঙ,,ভেবেই রেগেমেগে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম আমি’!!উদ্দেশ্য হচ্ছে আয়াফ দু-চারটা কথা শোনা নো……

“গাড়ি থেকে নামতেই অবাক আমি’!!কারন আমরা তো বাড়িতে এখনো আসি নি’!!মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দিয়ে কোথায় যাচ্ছে আয়াফ’!!ভেবেই চটজলদি আয়াফের সামনে দাঁড়িয়ে পরলাম আমি’!!তারপর বলে উঠলামঃ

———–“আমরা তো বাড়ি আসি নি তাহলে গাড়ি থামিয়ে কোথায় যাচ্ছি…..

———–“চল আমার সাথে, গেলেই দেখতে পাবে!

“বলেই আমার হাত ধরে হাঁটা শুরু করল আয়াফ’!!আর আমি অবাক দৃষ্টিতে আয়াফের দিকে তাকিয়ে রইলাম’!!আফিয়াকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়াফ বলে উঠলঃ

———–“এইভাবে আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে থেকে সামনে তাকিয়ে হাঁটো…..

“সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেললাম আমি’!!ছিঃ ছিঃ আয়াফ কি ভাবলো আমায়….

_____________________

“বেশকিছুক্ষন পর আমরা এসে পৌছালাম একটা এতিমখানার সামনে’!!আমি রীতিমতো অবাক আয়াফ আমায় এইরকম একটা জায়গায় গিয়ে আসবে’!!আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি আয়াফের দিকে’!!আস্তে আস্তে আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম’!!ভিতরে ঢুকতেই একদল ছেলেমেয়েরা এসে ঘিরে ধরলো আয়াফকে’!!আয়াফও খুশি মনে সবাইকে জড়িয়ে ধরল’!!আমি অল্প দূরত্বের দূর থেকে দেখছি ওদের’!!আয়াফ খুব সুন্দর ভাবে হেঁসে হেঁসে সবার সাথে কথা বলছে’!!আয়াফকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে এই মুহুর্তে’!!এই করলার জুস যে এত সুন্দর হাসতে জানে জানতাম না তো’!!এই মুহূর্তে আয়াফকেও একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে’!!হর্ঠাৎই বাচ্চাগুলোর মাঝখান থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলঃ

———–“আয়াফ ভাইয়া ওই আপুটা কে আমাদের ভাবি নাকি…..

“এতক্ষণ পর আয়াফের মনে পরলো তার সাথে আফিয়াও আছে’!!আয়াফ হাল্কা হেঁসে বললোঃ

———–“হুম তোমাদের ভাবি ওয়েলকাম করো সবাই……

“আয়াফের কথা শোনার সাথে সাথে সব বাচ্চারা আমার দিকে এগিয়ে আসলো’!!আমিও খুব খুশি হয়েছি বাচ্চাদের এমন কাজে’!!তারপর সারাদিন বাচ্চাগুলোর সাথে মজা করেই কেটে গেল আমাদের’!!

“বিকেল_৫ঃ০০টা……

“বাচ্চাগুলোর কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে রওয়ানা দিবো আমরা’!!আয়াফ একটা মধ্যবয়স্ক লোকের কাছে কিছু টাকা দিয়ে বললোঃ

———–“সবার খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখবেন কিন্তু….

“লোকটিও মুচকি হেঁসে বললোঃ

———–“কিছু চিন্তা করো না!

“বিনিময়ে আয়াফ আর কিছু না বলেই বাচ্চাগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ

———-“আজকে তাহলে আসি,আবার আসবো আমি….

“বাচ্চাগুলো মনখারাপ নিয়ে বললোঃ

———-“তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু ভাইয়া,,আর ভাবিকেও নিয়ে আসবে সাথে…

“আয়াফ তার মাথা চুলকিয়ে একবার আফিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

———-“ঠিক আছে….

“সবাই আয়াফের কথা শুনে খুশি হয়ে আয়াফকে জড়িয়ে ধরল’!!আয়াফ ওদেরকে জড়িয়ে ধরে বললঃ

———-“কেউ বেশি দুষ্টুমি করবে না কিন্তু….

———-“ঠিক আছে ভাইয়া…..

“অবশেষে সবাইকে বিদায় জানিয়ে আমরা রওয়ানা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে’!!আবারো আমি আর আয়াফ হেঁটে গাড়ি পর্যন্ত চলে আসলাম’!!গাড়ির কাছে আসতেই হর্ঠাৎ কি হলো আমার কে জানে হুট করেই আয়াফকে জড়িয়ে ধরলাম আমি’!!তারপর প্রচন্ড বেগে খুশি হয়ে বলে উঠলামঃ

———–“থ্যাংক ইউ সো মাচ, এত সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য…..

“হর্ঠাৎ আফিয়া জড়িয়ে ধরাতে আয়াফ কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হাসলো সে’!!

_____________________

“লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বসে আছি গাড়িতে’!!কিছুক্ষণ আগে কি করেছি ভাবতেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার’!!হুট করে কি হলো কে জানে আমি আয়াফকে জড়িয়ে ধরলাম’!!ভাবতেই লজ্জা লাগছে খুব’!!

“এদিকে আয়াফ আফিয়ার এমন লজ্জা মিশ্রিত মুখ দেখে ভিতরে ভিতরে খুব মজা পাচ্ছে!কিন্তু কিছু বলছে না’!!আফিয়ার লজ্জা মিশ্রিতভাব কমানোর জন্য আয়াফ বলে উঠলঃ

———–“ওটা আমার দাদুভাইর তৈরি এতিমখানা!আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন থেকেই দাদুভাইর সাথে প্রায় আসতাম এখানে’!!তারপর হর্ঠাৎ দাদুভাই মারা যাওয়ায় বাবাই সব দায়িত্ব নেয় এখানের’!!তবে দাদুভাই মারা যাওয়ার পরও এখানে আসা বন্ধ হয় নি আমার’!!ওখানকার বাচ্চাগুলোকে আমার খুব ভালো লাগে’!!ওদের সাথে সময় কাটাতে আরো বেশি ভালো লাগে’!!আমার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন ওখানে যাই আবার যখন খুব খুশি হই তখনও আসি’!!কেন জানি না নিজের প্রতিটা মুহূর্তে ওদের সাথে টাইম স্পেন করতে ভালো লাগে খুব’!

“এতটুকু বলে থামলো আয়াফ’!!এতক্ষণ আয়াফের কথাগুলো মন দিয়ে শুনলেও শেষের কথাটায় বলে উঠলাম আমিঃ

———-“তাহলে আজকে কেন এসেছেন এখানে কোন মুডে ছিলেন ভালো না খারাপ….

“মুচকি হাসলো আয়াফ’!!তারপর বললোঃ

———–“আজকে আমি খুব খুশি!

———–“কারন টা জানতে পারি কি….

———–“বলবো একদিন…..

“অবাক হলাম আমি আয়াফের কথায়’!!তবে কিছু বললাম না!নেমে আসলো আবারো কুটকুটে নীরবতা’!!

___________________________

“বেশ কয়েকঘন্টা পর আমরা এসে পৌঁছালাম বাড়িতে’!!আমরা আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে গেছে’!!আমাদের দেখে আম্মু আব্বু আর আরিশা খুশি হয়ে আসলো আমাদের সামনে’!!আরিশা তো আমায় জড়িয়ে ধরে বললোঃ

————“কেমন আছো ভাবি,বাপের বাড়ি গিয়ে আমাদের ভুলে গেছো একদম তাই না….

“হাসলাম আমি!তারপর বলে উঠলামঃ

———–“ভুলে কেন যাবো!ভুলে গেলে আসতাম নাকি….

———–“তা অবশ্য ঠিক!তা কেমন কাটলো তোমাদের….

————“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!এমন সময় শাশুড়ী মা বলে উঠলেনঃ

———–”এখন ছাড় ওকে আগে ফ্রেশ হয়ে আসুক কতোটা রাস্তা জার্নি করে এসেছে….

“আরিশাও শাশুড়ির কথা শুনে ছেড়ে দিলো’!!আমি কিছুক্ষন শাশুড়ী মায়ের সাথে কথা বলে চলে আসলাম উপরে’!!আমার আসার অনেক আগেই আয়াফ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে গেছে!!এত তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে গেল ভাবতেই অবাক লাগছে খুব’!!

.

“মাঝখানে কাটলো কয়েকটা দিন’!আনন্দ, ঝগড়া আর খুনশুটির মধ্যেই কেটেছে আয়াফের সাথে আমার’!!এখন আয়াফকে অসম্ভব ভালো লাগে আমার’!!ওর সাথে সময় কাটাতেও খুব ভালো লাগে’!!হয়তো ভালোবেসে ফেলেছি আমি’ আয়াফকে….

__________________________________________

_______________________

“ডাইনিং সেরে আমি আরিশা আর শাশুড়ী মা বসে গল্প করছি’!!আয়াফ অনেক আগেই চলে গেছে হয়তো এতক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে’!!এই মুহূর্তে নিজেকে সত্যি খুব ধন্য মনে হচ্ছে’!!কতো ভালো ওনারা’!!আসলেই বিয়েটা হয়ে ভালোই হইছে কতো ভালো তাঁরা’!!এতো অল্প সময়ে আমায় কতোটা ভালোবেসে ফেলেছে’!!হর্ঠাৎই শাশুড়ী মা বলে উঠলেনঃ

———-“অনেক রাত হয়ে গেছে এখন গিয়ে ঘুমা,কালকে ভার্সিটি যেতে হবে না’!!

“আমিও হাল্কা হেঁসে হুট করেই শাশুড়ী মাকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ

———-“তুমি খুব ভালো মা,,

“হাসলেন উনি!তারপর আমার মাথায় বুলিয়ে দিয়ে বললোঃ

———–“পাগলী মেয়ে….

“হাসলাম আমি’!

……

“অন্যদিকে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আয়াফ’!!তার এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে আফিয়ার সামনে গিয়ে কতক্ষণ ওকে কথা শোনাতে’!!এই মেয়েটা যে কবে তার ফিলিংসগুলো বুঝতে পারবে ভেবে পায় না আয়াফ’!!তবে আয়াফ ভেবে নিয়েছে আজকে রুমে আসুক কড়া করে কথা শুনিয়ে দিবে আফিকাকে রোজ রোজ এই আফিয়ার দেরি করে রুমের আসার বিষয়টা একদম পছন্দ হয় না আয়াফের’!!একরাশ হতাশ নিয়ে বলে উঠল আয়াফঃ

———–“কবে যে তুমি বুঝবে মায়াবতী আমার অনুভূতি……

||

———“ঠিক আছে এখন তাহলে আমি ঘুমোতে যাচ্ছি,তোমরাও যাও!এতক্ষণ পর সোফায় বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কথাটা বলে উঠলাম আমি’!!আমার কথা শুনে শাশুড়ী মাও বলে উঠলঃ

———-“ঠিক আছে যা….!!

———–“হুম গুড নাইট আম্মু,আর গুড নাইট মিস ননদিনী…..

———–“গুড নাইট'(শাশুড়ী মা)

———-“গুড নাইট ভাবি'(আরিশা)

“তারপর আমিও আর কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম’!!রুমে ঢুকতেই আয়াফ…….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…………

~ ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!!🖤🥀
আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে!!🥰🥀

#TanjiL_Mim♥️

নেশালো সে পর্ব-০৬

0

#নেশালো_সে💖
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম💖

০৬.

“রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়াফ আমার দিকে’!!যেন চোখ দিয়েই শেষ করে ফেলবে আমায়’!!ভিতরে ভিতরে ওনার রাগী লুক দেখে ভয় পেয়ে গেলেও সামনে তা প্রকাশ করলাম না’!!একবুক সাহস নিয়ে আবারো বলে উঠলাম আমি আয়াফকেঃ

———–“কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন?

“আয়াফ আমার কথা শুনে আচমকা আমার হাত চেপে ধরে বললঃ

———–“তোমার সাহস কি করে হলো আমার আলমারি খুলে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার…

“হুট করে আয়াফের এমন ভয়ংকর রূপ দেখে কেঁপে উঠলাম আমি’!!আয়াফ আফিয়াকে তার দিকে টেনে নিয়ে চেঁচিয়ে বললঃ

————-“কথা বলছো না কেন?

————“আমি আসলে….

————-“একদম সোজা উওর দিবে আফিয়া আমায় বেশি রাগীও না বললাম তার পরিনাম কিন্তু ভালো হবে না…

“আয়াফের এমন থ্রেট শুনে আমার কলিজা পুরো কেঁপে উঠল’!!সামান্য একটা ঝুমকার জন্য এতটা রেগে গেল আয়াফ’!!আমায় চুপ থাকতে দেখে আবারো আয়াফ বলে উঠলঃ

————-“তুমি কি কথা বলবে…..

“আয়াফের কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম আমি’!!চোখ পুরো লাল বর্ন ধারণ করেছে’!!আমি শুকনো ঢোক গিলে বললামঃ

————-“ওটা আপনার আলমারিতে থাকা ঝুমকা নয়….

“এবারের কথা শুনে আয়াফ অবাক হয়ে বললোঃ

———–“মানে…..

“একটু নীরবকন্ঠে মাথা নিচু করে বলে উঠলাম আমিঃ

————-“ওটা আমার ঝুমকা,একটা হারিয়ে গেছে,,আজকে হর্ঠাৎ আপনার আলমারিতে আমার ঝুমকাটা দেখে অবাক হয়ে যাই আমি’!!তাই জিজ্ঞেস করলাম আপনাকে কোথায় পেয়েছেন ঝুমকাটা’!!কিন্তু আপনি সামান্য একটা ঝুমকার জন্য এতটা রেগে যাবেন সত্যি বুঝতে পারি নি আমি,,সরি….

“পুরো একশ্বাসে কথাগুলো বলে থেমে গেলাম আমি’!!

||

“এদিকে আয়াফ যেন আফিয়ার কথা শুনে শকট’!!হর্ঠাৎ আয়াফ ছেড়ে দেয় আফিয়ার হাত’!!তারপর চুপচাপ কিছু না বলেই বিছানার উপর বসে পরে’!!যেন কি হচ্ছে তা কিছুই বুঝতে পারছে না আয়াফ…

….

“হুট করে আয়াফের এভাবে শান্ত হয়ে যাওয়াটা কেমন যেন লাগছে আমার’!!কি করবো তাও বুঝতে পারছি না,রুম থেকে বেরিয়ে যাবো!কিন্তু বেরিয়ে গেলে আম্মু আব্বুকে কি বলবো!একরাশ মাথায় চিন্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!ধুর,এর চেয়ে না জিজ্ঞেস করলেই তো ভালো হতো!

“বেশকিছুক্ষন পর……

“কুটকুটে নীরবতায় দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!আর আমার থেকে কিছুটা দূরে বিছানার উপর বসে আছে আয়াফ’!!কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না’!এদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পাও ব্যাথা করছে আমার’!!আর কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে’!!কোনোকিছু না ভেবেই চুপিচুপি গিয়ে আয়াফের পাশে বসে পরলাম আমি’!!তারপর নীরবতার দেয়াল ভেঙে একবুক সাহস নিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

————“ঘুমাবেন না…..

“বিনিময়ে আয়াফ কিছু বললো না’!!ওনার চুপ থাকতে দেখে আমি আবারো বলে উঠলামঃ

————-“সরি বললাম তো,এতো রাগ করার কি আছে!আমি কথা দিচ্ছি আর জীবনে কোনোদিন না বলে আপনার জিনিসে হাত দিবো না!

“এবারো আয়াফ কিছু বললো না!নীরবেই বসে রইলো সে’!!আয়াফের এমন কাজে এখন আমার বিরক্ত লাগছে’!!একরাশ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

————-“ঠিক আছে আপনাকে কিছু বলতে হবে না আপনি থাকেন আপনার নীরবতা নিয়ে আমি ঘুমাই….

“বলেই যেই না বিছানা থেকে উঠতে যাবো সাথে সাথে আয়াফ আমার হাত ধরে ফেললো’!!ওনার এমন কাজে অবাক হয়ে তাকালাম আমি তার দিকে’!!আয়াফ টেনে বসিয়ে দিল তার পাশে’!!তারপর বলে উঠলেনঃ

————-“তোমার ঝুমকা কিভাবে হারালো….

“এতক্ষণ পর আয়াফের মুখে এমন কথা আশা করিনি আমি’!!তবে যেহেতু বলেই ফেলেছে তাই আমিও বলে উঠলামঃ

———–“কিভাবে হারিয়েছি যেটা ঠিক বলতে পারবো না,,কিন্তু একদিন ভার্সিটিতে ওটা পড়ে গিয়েছিলাম সেদিন আমার জন্মদিন ছিল’!!সেদিন অনেক লাফালাফি করছি আর কি তখন হয় তো হারিয়ে ফেলেছি,,ঠিক কখন হারালো জানি না!কিন্তু এটা আমার অনেক ফেবারিট ছিল’!!তাই একটা হারিয়ে যাওয়াতে আরেকটা রেখে দিয়েছিলাম’!!আমি ভাবতেই পারি নি ওটা আপনার কাছে থাকবে’!!আপনি কোথায় পেলেন ঝুমকাটা?’……

————-“তোমার কোনো লাল ড্রেস আছে…..

“এবারের কথায় যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছি আমি’!!আমি চোখ বড় বড় করে বলে উঠলামঃ

————“কি?’

———–“তুমি কি বাংলা বুঝতে পারো না,,যাও তোমায় বলছি কেন তোমার আলমারি কোথায় আগে বল…

————-“আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন আয়াজ…

————-“বেশি কথা বলবে না যেটা বলছি তার উওর দেয়, বলো কোথায় তোমার আলমারি….(দমক দিয়ে)

“আয়াফের দমক শুনে হাতের ইশারায় সামনে দেখিয়ে দিলাম আমি কোথায় আমার আলমারি’!!আয়াফ আর দু-মিনিট দেরি না করে চলে গেল আলমারির কাছে’!!তারপর আলমারি খুলে একটা একটা করে সব জামাকাপড় এলেমেলো করতে লাগল’!!অবশেষে আমার একটা লাল রঙের গাউন বের করলেন উনি’!!তারপর কিছুক্ষণ সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে নিলো’!!

……

“এদিকে আয়াফ ভাবছে এই ড্রেসটাই পড়েছিল সেই মেয়েটা’!!তাহলে কি? চটজলদি আয়াফ তার চোখ খুলে ফেললো’!তারপর দ্রুত গতিতে আফিয়ার সামনে এসে বললোঃ

———-“শাড়ি খুলে এটা পড়ো তো….

.

আচমকা আয়াফের মুখে এমন কথা শুনে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম আমার’!!আমি চোখ বড় বড় করে বলে উঠলামঃ

———–“আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে এতরাতে এই গাউন পরবো…

“মুহূর্তেই রেগে গেল আয়াফ’!!দমক দিয়ে বললোঃ

———–“এত কথা কেন বলো তুমি যা বলছি তাই করো তা না হলে আমি কিন্তু শাড়ি খুলে পড়িয়ে দিবো তোমায়…..

————“কি😳

———–“না তোমায় এইভাবে বললে কাজ হবে না বলেই আয়াফ এগিয়ে আসতে লাগলো আমার দিকে’!!সাথে সাথে আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলামঃ

————“না না আপনাকে কিছু করতে হবে না আমি পরে নিচ্ছি….

————“ঠিক আছে তবে হ্যা পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগলে খবর আছে তোমার,বলেই বেরিয়ে গেল আয়াফ রুম থেকে…..

||

“এদিকে আমার অবস্থা শেষ’!!আয়াফ এসব কি করছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে’!!উনি কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি’!!হায় রে শেষ পর্যন্ত একটা পাগল কি না আমার জামাই হলো’!!আমার ভাবনার মাঝখানে দরজায় নক করেই বলে উঠল আয়াফঃ

———-“হয়েছে…..

———–“এই না না আর পাঁচ মিনিট……

________________________

“এদিকে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আয়াফ ভাবছে অন্যকিছু’!!সে বিশ্বাস করতে পারছে না ওই মেয়েটা কি তাহলে আফিয়া’!!এতদিন কাছে থেকেও চিনতে পারলো সে’!!আর ভাবতে পারবে না আয়াফ!সবকিছু এলেমেলো লাগছে তার কাছে’!!এমন সময় দরজার ভিতর থেকে বলে উঠল আফিয়াঃ

———“চলে আসুন হয়ে গেছে….

“আফিয়ার কথা শুনে আয়াফ আর দু’মিনিট দাঁড়ালো না’!!দ্রুত গতিতে রুমের ভিতরে চলে গেল সে’!!অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আয়াফ আফিয়ার দিকে’!!কারন সে বুঝে গেছে ওই মেয়েটাই আফিয়া’!!আয়াফ অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে এগোচ্ছে আফিয়ার দিকে’!!

||

“হুট করে আয়াফের এইভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ঘাবড়ে গেলাম আমি’!!একটু পিছনে যেতে যেতে বলে উঠলামঃ

————“আপনি এই ভাবে এগোচ্ছেন কেন?’

“আয়াফ চুপ!

————“দেখুন আয়াফ আপনি আমায় গাউনটা পরতে বলেছেন আমি পরে ফেলেছি তারপরও এভাবে এগোলে আমি কিন্তু খেলবো না হুহ….

————“কেন খুব ভয় করছে বুঝি….

————“ভয় ভয় কেন করবে(তুতলিয়ে)

————-“তুমি ভয় পাচ্ছো না…

————“একদমই না…

————“তাহলে তোতলাচ্ছো কেন?’

————-“তো…ত….লাচ্ছি ক….ই!

“এদিকে পিছনে যেতে যেতে একদম দেয়ালের সাথে লেগে গেছি আমি’!!হাত পা থরথর করে কাঁপছে আমার’!!আয়াফও একদম কাছে এসে দাঁড়ালো আমার’!!আচমকা ঝুঁকে পরলো আয়াফ আফিয়ার দিকে’!!সাথে সাথে আফিয়া তার চোখ বন্ধ করে নিলো’!!এদিকে আয়াফ তার হাত দিয়ে টান মেরে আফিয়ার বাঁধানো খোঁপা খুলে ফেললো’!!সাথে সাথে আফিয়ার ঘন কালো লম্বা চুল খুলে কোমড় পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে’!!আয়াফ অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে আফিয়ার দিকে’!!

……

“আয়াফের একেক পর একেক কাজে অবাক হচ্ছি আমি’!!উনি কি করছেন এসব’!!অবাক হয়ে চোখ খুলে তাকালাম আমি’!!অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াফ আমার দিকে’!!

.

“আয়াফ আফিয়ার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে’!!সেই মায়াবী চোখ,সেই মাতাল করা লম্বা চুল,,আবারো এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে গেল আয়াফ’!!বুকের বাম পাশে দক দক করছে তার’!!শুধু মাথায় একটা কথাই ঘুরছে তার এত কাছে থেকেও কি করে চিনতে পারলো সে তার মায়াবতীকে’!!ভিতর থেকে কিছু একটা ফিল হচ্ছে আয়াফের’!!সে ভাবতেই পারছে না যার চোখের মায়ায় পড়ে ভালোবেসেছিল,সেই কিনা তার বউ হলো’!!আসলেই পৃথিবী খুব ছোট,আর অদ্ভুত সব আবরনে ঘেরা!!ভেবেই মুচকি হাসলো আয়াফ’!!

__________________________________________

_______________________

“রাত_২ঃ০০টা……

“বিছানা লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে আফিয়া’!!পরনে এখনো তার সেই রেড কালারের গাউন’!!চুলগুলো খোলা,,রাতের জোৎসা ভরা আলো আসছে বিছানার বাম দিকের জানালা থেকে’!!সেই আলো এসে পরছে আফিয়ার মুখে’!!আয়াফ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আফিয়ার মুখের দিকে’!!জানালার পর্দা ভেদ করে ঠান্ডা শীতল মেশানো বাতাস বইছে’!!সেই বাতাসে আফিয়ার চুলগুলো উড়ে আসছে আফিয়ার মুখে’!!আয়াফ তার হাত দিয়ে সেই চুলগুলো গুজিয়ে দিল আফিয়ার কানের পিছনে’!!আনমনে হাসলো আয়াফ’!!সে ভাবতেই পারছে না যে মেয়েটার সাথে শুরু থেকেই ঝগড়া ছাড়া ভালো ভাবে কথা হয় নি সেই মেয়েটাকেই কিনা সে ভালোবাসে’!!আরো অবাক হচ্ছে এটা ভেবে এত কাছে থেকেও কি করে চিনতে পারলো না আয়াফ তার মায়াবতীকে’!!অবশ্য চিনবে কি করে সে তো সেইভাবে কখনো তাকাই নি আফিয়ার দিকে’!!বিয়ের পর সেদিন যখন হুট তার অনেকটা কাছে চলে এসেছিল আফিয়া সেদিনই কেমন যেন লাগছিল আয়াফের’!!আসলেই ভালোবাসা খুব অদ্ভুত,বড্ড অদ্ভুত’!!আজকে আয়াফ খুব খুশি,,সে পেয়ে গেছে তার মায়াবতী কে…..

“এই মুহুর্তে আয়াফের ইচ্ছে করছে আফিয়াকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু পারছে না’!!কেমন কেমন লাগছে তার!

“একরাশ অস্থিরতা নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো আয়াফ!

_____________________

“মাঝখানে কাটলো দু’দিন! আয়াফ তো এই দু’দিন আফিয়াকে দেখতে দেখতেই পার করে দিল’!!আজকে তারা তাদের বাড়িতে ফিরবে’!!ব্রেকফাস্ট শেষ করে আয়াফ তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ডাইনিং টেবিলের পাশে’!!তার পাশে আছে আম্মু আব্বু,দুজনেই অনুতপ্ত হয়ে কথা বলছে আয়াফের সাথে’!!আর আয়াফ তাদের বার বার বারন করছে’!!অবশেষে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল আফিয়া’!!পরনে তার রেড কালারের সুন্দর শাড়ি,চুলগুলো খোপা করে ফুল দেওয়া’!!চোখে কাজল, হাতে মুঠো ভর্তি করা কাঁচের চুরি, সাথে হালকা মেকাপ দিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আফিয়াকে’!!আয়াফ তো আফিয়াকে দেখেই পাগল হয়ে গেছে’!!কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলো সে’!!আর মনে মনে বললোঃ

————–“ওই চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে আমার যে নেশা হয়ে যাবো “মায়াবতী”……
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…………

~ ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!!🖤🥀
আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে!!🥰🥀

#TanjiL_Mim♥️

নেশালো সে পর্ব-০৫

0

#নেশালো_সে💖
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম💖

০৫.

“কোলে তুলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়াফ’!!আর আমিও ভয়ে ঘাবড়ে গিয়ে খিচে চোখ বন্ধ করে আয়াফের শার্টের হাতা খামচে ধরে আছি’!!এইমাএ কি হলো সব যেন মাথার উপর দিয়ে গেল’!!কিছুক্ষণ আগে…..

“আলমারির উপর থেকে ব্যাগটা নামাতে গিয়ে আমারি ভুলের জন্য বিছানার উপর থেকে পড়ে যেতে নিলাম আমি’!!এমন সময় হুট করে কোথা থেকে আয়াফ এসে ধরে ফেললো আমায়’!!আচমকা এমনটা হওয়াতে ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি আমি’!!

____

“এদিকে আয়াফ রুমে এসেছিল একটা ফাইল নিতে ভুলে গেছিল সে সেটা নিতে’!!এমন সময় আফিয়াকে পড়ে যেতে দেখে ছুটে গিয়ে ধরলো তাকে’!!আফিয়ার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াফ’!!কিছু একটা অনুভব হচ্ছে তার’!!এই চোখ খুব চেনা লাগছে আয়াফের!হুট করেই আয়াফের সেই মেয়েটার চোখদুটো অনুভব করছে’!!তাহলে কি,,ভেবে পাচ্ছে না আয়াফ?…

“খিচে চোখ বন্ধ করে আছি আমি’!!চোখ খুলবো কি খুলবো না বুঝতে পারছি না’!!না জানি আয়াফ কি বলবে আমায়’!!কিন্তু এভাবেও তো বেশিক্ষণ থাকা যাবে না’!!আস্তে আস্তে চোখ খুলে ফেললাম আমি’!!তারপর আয়াফের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে’!!আমি একটু অবাক হয়ে বললামঃ

———–“আমাকে কি এর আগে দেখেন নি নাকি…

“বিনিময়ে আয়াফ কোনো উওর দিলো না’!!এতে আরো অবাক হলাম আমি’!!হলো কি বেটার’!!!একটু উচ্চ স্বরে বলে উঠলাম আমিঃ

————-“এই যে মিস্টার “করলার জুস”!আমায় কি এইভাবে কোলে তুলে রাখবেন নাকি, নামাবেন না….

“আফিয়ার এইবারের কথায় ধ্যান ভাঙল আয়াফের’!!চটজলদি আফিয়াকে নামিয়ে দিয়ে বলে উঠল সেঃ

————“চোখ কোথায় থাকে তোমার এইমাএই তো একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেত!

————“ইয়ে না মানে….

————“চুপ কর!তোমার ইয়ে না মানে সব দেখছি আমি!ব্যাগটা উচুতে চোখে দেখো না তুমি!সরো আমি নামিয়ে দিচ্ছি!

“বলেই আমায় সরিয়ে আয়াফ বিছানার উপর উঠে ব্যাগ নামিয়ে আনলো’!!তারপর ব্যাগটা বিছানায় রেখে বললোঃ

————“যেটা পারো না সেটা করতে যাও কেন?

“বলেই টেবিলের উপর রাখা তাঁর ফাইলটা নিয়ে চলে গেল আয়াফ’!!আর আমি শুধু আয়াফের যাওয়ার পানে হাবলার মতো তাকিয়েই রইলাম’!!যেন কি হলো আর কি বললো কিছু বুঝতেই পারলাম না…..

||

“বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা আয়াফ বসে পরলো গাড়িতে’!!আয়াফ গাড়িতে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করল’!!এদিকে আয়াফ এখনো ভাবছে আফিয়ার চোখের কথা’!!খুব মিলে যাচ্ছে কি,,আয়াফ আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো তার আর ভাবতে লাগলো সেই মেয়েটার চোখের কথা!আবারো সব এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে আয়াফের’!!আর ভাবতে পারছে না আয়াফ’!!চোখ খুলে ফেললো আয়াফ’!!আর বলে উঠল সেঃ

———-“সত্যি আমি পাগল হয়ে গেছি মনে হয়,কবে দেখা মিলবে তোমার সাথে “মায়াবতী”….

“ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো আয়াফ!একটা মেয়ে শুধুমাএ তার চোখের মায়ায় পড়ে কি করে এতো পাগল হলো আয়াফ!তা সে নিজেও বুঝতে পারছে না!

🌸”ভালোবাসা হয়তো এমনি হয়,কারো মায়াবী চোখ দেখে,কারো কথার মায়ায় পড়ে,নয়তো কারো হাসির মুগ্ধতার পরশে’!!হুট করেই হয়ে যায় ”ভালোবাসা”!!কিভাবে হবে কখন হবে সেটা তো শুধুমাএ সময়ই বলে দিতে পারে”!! 🌸

“কিন্তু ভালোবাসা যে মানুষকে খুব কষ্ট দেয় এটা হারে হারে বুঝতে পারছে আয়াফ’!!

_________________________

“বিকেল_৪ঃ০০টা……

“কিছুক্ষণ আগেই আয়াফ আসলো বাসায়’!!কতোক্ষনের মধ্যেই আমরা চলে যাবো আমাদের বাড়িতে’!!ভাবতেই আনন্দ লাগছে আমার’!!কতদিন হলো আমার রুমটা একা একা থাকছে,,আই মিস ইউ ছুনারা, আমি আর কতক্ষন পরই আসছি তোমাদের কাছে জাস্ট ওয়েট.😘উমম্মা….

“এমন সময় রুমে ঢুকলো আয়াফ’!!আমায় এইভাবে চুমু দিতে দেখে তার চোখ অটোমেটিক বড় বড় হয়ে গেল’!!আমি তো তাকে দেখেই ঠোঁটে হাত দিলাম’!!আমি কিছু বলার আগেই আয়াফ বলে উঠলঃ

———“তাড়াতাড়ি নিচে আসো বেশি দেরি হলে তোমায় রেখেই চলে যাবো কিন্তু….

“বলেই আর দু’মিনিট দাঁড়ালো না আয়াফ!হন হন করে চলে গেল সে!আয়াফ যেতেই নিজের মাথায় নিজেই একটা চাটি মারলাম’!!তারপর তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে চলে আসলাম নিলাম নিচে’!!বরাবরের মতো শাড়ি পড়েছি আজকে!যেদিন থেকে বিয়ে হয়েছে শুধু শাড়ি পড়তে হচ্ছে শুধু ভার্সিটির যাওয়ার সময় থ্রি-পিচ পড়েছিলাম!!চুল গুলো একদিকে বেনুনি করা,চোখে কাজল,সাথে হালকা মেকাপ’!আমি কখনোই ভাড়ি মেকাপ করে সাজি নি!জীবনে একবার সেঁজেছিলাম, তাও আমার জন্মদিনের দিন!বাবা গো বাবা সেদিনের কথা ভাবলে আজও হাসি পায় আমার’!!সব শয়তান বন্ধু গুলোই আমায় গায়ে ময়দা ডিম দিয়ে পুরো ভুত বানিয়ে দিয়েছিল….

“এমন সময় হর্ঠাৎই মনে পরে গেল আলমারিতে থাকা বক্সটার কথা’!!একরাশ কৌতূহল নিয়ে চললাম আমি আলমারির দিকে আজকে দেখেই ছাড়বো বক্সটায় কি আছে’!!একটু একটু করে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলাম আমি’!তারপর আয়াফের জামাকাপড়ের ভিতর থেকে বক্সটা বের করে খুলে যা দেখলাম তাতে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেঁছি আমি’!!

———-“একটা ঝুমকো’!!সামান্য একটা ঝুমকোর জন্য আয়াফ আমায় সেদিন সকালে এত কথা শোনালো’!!হর্ঠাৎই কি ঝুমকোটা হাতে নিয়ে নাড়াতে লাগলাম আমি’!!কোথায় যেন দেখেছি আরে এটা তো ভাবতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার’!!কিন্তু এটা আয়াফের কাছে আসলো কোথা থেকে?’….

“এমন সময় আরিশা ডাক দিলো আমায়’!!সাথে সাথে হাল্কা কেঁপে উঠলাম আমি’!!তারপর চটজলদি বক্সটা আলমারিতে রেখে চললাম আমি বাহিরে!কিন্তু কিছুতেই মাথায় আসছে না আয়াফ ঝুমকোটা কোথায় পেলো!😳

||

“বাড়ির সবাইকে বিদায় জানিয়ে বসে পরলাম আমি আর আয়াফ গাড়িতে’!!আমরা বসতেই ড্রাইভার কাক্কু গাড়ি চালাতে শুরু করলেন’!!গাড়ি চালাতেই কাঁচের জানালা ভেদ করে বাতাস বয়ে আসছে গাড়ির ভিতরে’!!একরাশ প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়!কিন্তু আমি এই মুহুর্তে কিছু বলতে চাচ্ছি না!তাই চুপচাপ বসে আছি গাড়িতে’!!

এদিকে আয়াফও নীরবে কিছু একটা ভাবছে’!!

“বেশকিছুক্ষন পর……

“আমাদের গাড়ি এসে থামলো আমাদের বাড়ির সামনে’!!গাড়ি থামতেই আমি খুশি হয়ে যেই না গাড়ি থেকে নামতে যাবো এমন সময় আয়াফ আমার হাতটা ধরে ফেললো’!!আয়াফের এমন কাজে আমি অবাক হয়ে তাকালাম তার দিকে’!!আমি তাকাতেই সে বলে উঠলঃ

———-“একদম গরুর মতো লাফালাফি করবে না বলছি….

“মুহূর্তের মধ্যে আয়াফের কথা শুনে মেজাজ টা বিগড়ে গেল আমার’!!আমি একটু ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে উঠলামঃ

———-“কি আমি গরু,,আমি গরু হলে আপনি তাহলে ছাগল..

———–“কি আমি ছাগল..

———–“ছাগল নয় তো কি,শুধু শুধু ভ্যা ভ্যা করেন…

“আয়াফ আরো শক্ত করে আমার হাত ধরলো’!!সাথে সাথে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম আমি’!!আয়াফ একটা রাগী লুক নিয়ে বললোঃ

———–“আমি সারাদিন ভ্যা ভ্যা করি নাকি তুমি সারাদিন ভ্যা ভ্যা কর…

———–“দেখুন আয়াফ এই মুহুর্তে আমি আপনার সাথে ঝগড়া করার মুডে নেই, ছাড়ুন আমায় আমি ভিতরে যাবো…

————“এত ভিতরে যাওয়ার তারা কিসের কি আছে ভিতরে….

“আয়াফের এমন আহামকের মতো কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললামঃ

———-“আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বলুন তো,আমি কিছু বুঝতে পারছি না!

———-“তোমাকে কিছু বুঝতে হবে না

“বলেই হাত ছেড়ে দিলেন উনি!তারপর গাড়ি থেকে নেমে গেলেন আয়াফ’!!ওনার এমন কাজে আমি পুরোই অবাক!কি বলতে চাইলেন উনি!কিছুক্ষণ বসে থেকে আমিও নেমে পরলাম গাড়ি থেকে’!!তারপর তাড়াতাড়ি চললাম বাড়ির ভিতরে…

.

কলিং বেল বাজাতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিল’!!আমাদের দেখে খুশি আম্মু বলে উঠল আয়াফকেঃ

———-“কেমন আছো বাবা!

“আয়াফও খুশি মনে জবাব দিলো…

———-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি….

“আম্মু মুচকি হেঁসে বললোঃ

———–“আমিও ভালো আছি….

“তারপর আম্মু আয়াফকে নিয়ে চলে গেল ভিতরে!এদিকে আমি শুধু নীরব দর্শকের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে ওনাদের কাহিনি দেখলাম’!!এটা হলো আম্মু আমায় কিছু না বলে আয়াফকে এতো কিছু বললো!বাহ বাহ জামাইকে পেয়ে মেয়েকে ভুলে গেল নাকি!আমার ভাবনার মাঝে আম্মু বলে উঠলঃ

———–“তুই কি বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকবি ভিতরে আসবি না….

“আম্মুর কথা শুনে একরাশ অভিমান নিয়ে বলে উঠলামঃ

————“হুম আইতাছি…

“ভিতরে ঢুকেই সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম’!!!আয়াফ আর আম্মু সোফায় বসে ছিল’!!কিন্তু সেদিকে চোখ দিয়ে আমি আমার মতো চলে আসলাম রুমে’!!রুমে ঢুকেই, সোজা এক লাফে বিছানায় শুয়ে পরলাম’!!উফ এখন খুব শান্তি লাগছে’!!কতোদিন পর আবার রুমটার সাথে দেখা হলো আমার’!!ভাবতেই ভিতর থেকে শান্তি লাগছে খুব’!!

“আচমকাই কিছু একটা মাথায় আসতেই ঠাসস করে বিছানা থেকে উঠে বসলাম আমি’!!তারপর চলে গেলাম আলমারির কাছে’!!

———“যা ভেবেছিলাম সেটাই, কিন্তু আয়াফ কোথায় পেলো…..

__________________________________________

_______________________

“রাত_৯ঃ০০টা……

“ডিনার সেরে বিছানায় বসে আছি আমি’!উদ্দেশ্য হচ্ছে আয়াফ কখন রুমে আসবে আর আমি তাকে কিছু বলবো!বেশ কিছুক্ষন পর আয়াফ চলে আসলো রুমে’!!উনি রুমে আসতেই ওনার সামনে দাঁড়িয়ে পরলাম আমি’!!আচমকা আমি সামনে চলে আসাতে আয়াফ অবাক হয়ে বললোঃ

——–“কি হলো এভাবে সামনে দাঁড়ালে কেন?

———“আপনার সাথে আমার কথা আছে….

———-“কি বলবে তুমি….

“আয়াফের কথা শুনে আমি তার সামনে একটা ঝুমকো হাতে নিয়ে বলে উঠলামঃ

———–“আপনার আলমারিতে এই ঝুমকোটা কোথা থেকে আসলো…..

“আমার হাতে ঝুমকো টা দেখে আয়াফ ঘাবড়ে গিয়ে বললোঃ

———“তুমি তুমি এটা কোথায় পেলে এটা….

———“কোথায় পেয়েছি আপনি বুঝতে পারছেন না আগে বলুন আপনি এই ঝুমকো কোথায় পেয়েছেন…….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…………

~ ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!!🖤🥀
আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে!!🥰🥀

#TanjiL_Mim♥️

নেশালো সে পর্ব-০৪

0

#নেশালো_সে💖
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম💖

০৪.

“ভরা ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে প্রপোজ করলো আশিক’!!ও আমার বেস্টফ্রেন্ড’!!আর ওর এমন কাজে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে আমার’!!আমি অবাক হয়ে বলে উঠলামঃ

———–“এসব কি বলছিস তুই….

———–“সত্যি বলছি আফিয়া তোকে আমি খুব ভালোবাসি রে…..

————“তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি…..

————“মাথা খারাপ হয় নি আমার, সত্যি বলছি আমি তোকে খুব ভালোবাসি….

————“দেখ আশিক এই ড্রামা অফ কর বলছি সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে বলতো….

————“তাকিয়ে আছে থাকুক আগে তুই আমার প্রশ্নের উওর দে তুই আমায় ভালোবাসিস কি বাসিস না….

————“দেখ আশিক এর আগেও বলছি আর এখনো বলছি বন্ধুত্বে ভালোবাসা পছন্দ নয় আমার’!!আর তার থেকে বড় কথা আমার বিয়ে হয়ে গেছে…..

“এইবারের কথা শুনে আশিকের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম!আশিক বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললোঃ

———-“কি😳

———“হুম….

“এমন সময় ছুটে আসলো আমার বন্ধুদের পুরো হল্লা পাট্টি’!!সবাই চোখ বড় বড় তাকিয়ে বললোঃ

———“তুই বিয়ে কবে করলি,আর আমরা জানতে পারলাম না এখনও……

“তারপর ওদের সামনে গিয়ে বললামঃ

———“হুট করেই হয়ে গেছে তোদের সব বলছি আগে চল!আর আশিককে বল ওর ড্রামা শেষ হয়ে গেলে আমাদের সাথে আসতে….

“আফিয়ার কথা শুনে আশিক ও একটা দাঁত কেলানি দিয়ে বললোঃ

———-“হুম হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি চল তোর বিয়ের গল্প শুনবো…

“ব্যস!আমি জানতাম আশিক এতক্ষণ যা করছিল সব নাটক ছিল!কারন এই নিয়ে বহুবার এমন করেছে ও তাই বিষয়টা নিয়ে ওতোটা মাথা ঘামালাম না!সবাই মিলে হাঁটতে শুরু করলাম ক্যান্টিন থেকে একটু দূরে থাকা ইয়া বড় মাঠের কাছে’!!ওইখানেই আমরা সবাই মিলে গাছের নিচে বসে আড্ডা দেই!!সবাই মিলে সেদিকে রওয়ানা দিলাম!আমরা ছয় বন্ধু!আমি,আশিক,আরিফ, হৃদয়,তিশা আর রুহি!আমরা ছয়জনই বেস্টফ্রেন্ড!

“সবাই হাসতে হাসতে আড্ডার আসরে চলে যাচ্ছি!

||

“এদিকে আশিক ভাবছে অন্যকিছু!আশিক সেই কলেজ লাইফ থেকে আফিয়াকে ভালোবাসে’!!বহুবার বলেও ছে কিন্তু আফিয়া গুরুত্ব দেয় নি’!!তার একটাই কথা বন্ধুত্বে ভালোবাসা Not Allow!তাই বার বার আশিক প্রপোজ করলেও শেষে গিয়ে বলে ফেলে সে ড্রামা করছে’!!কারন সে চায় না তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হোক’!!আসলে বাস্তবতাটা বড়ই কঠিন…..!!

“আশিকের ভাবনার মাঝখানে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বলে উঠলাম আমিঃ

————“কোন রাজ্যে হারিয়ে গেছিস তুই….

————“কোনো রাজ্যে হারাই নি তো আগে বল কিভাবে তোর বিয়ে হলো….

“আশিকের কথা শুনে সবাই খুব মনোযোগ নিয়ে তাকালো আমার দিকে’!!অপেক্ষা কখন শুনবে তাঁরা….

“আমি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বিয়ের আসর থেকে হয়ে যাওয়া সব ঘটনা বললাম ওদের!সবাই হা হয়ে গেছে আমার কথা শুনে!যেন কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না সত্যি সত্যি আমার বিয়ে হয়ে গেছে’!!সবাইকে এইভাবে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম আমিঃ

———–“তোরা ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন??

“এমন সময় আরিফ বলে উঠলঃ

————“এ তোরা কেউ আমায় চিমটি মার,,আমাদের আফিয়া রানীর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে’!!লাইক সিরিয়াসলি….

“আরিফের কথা শুনে হৃদয়ও বললোঃ

———-“ভাই তুই একা না আমি শকট…

“ওদের একেকজনের একেক কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

———-“এই তোদের বক বক বন্ধ করবি না আমি চলে যাবো….

“সাথে সাথে সবাই থেমে বললোঃ

———-“না দোস্ত! বিশ্বাস কর আমরা সত্যি অবাক হয়ে গেছি তোর কথা শুনে কেমনে কি সম্ভব তুই আর বিয়ে….

————“অসম্ভব হওয়ার কি আছে,আমি খারাপ নাকি…

————-“দোস্ত আমার খুব কষ্ট হচ্ছে (তিশা)

ওর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললামঃ

————-“তোর আবার কবে থেকে আমার জন্য কষ্ট হতে শুরু করল….

————-“দোস্ত তোর জন্য না তোর জামাইর জন্য না জানি বেচারার কতো কষ্ট হবে তোর সাথে থাকতে…..

“ওর কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেঁসে দিল’!!আর আমি হাবলার মতো শুধু সবাইর দিকে তাকিয়ে রইলাম!

“সারাদিন বন্ধুদের সাথে হাসি ঠাট্টা আর মজাই কেটে গেল’!!

__________________________

“বিকেল_৫ঃ০০টা…….

“আয়াফ দাঁড়িয়ে আছে সেই রোডের কিনারায়’!!যেখানে প্রথম আয়াফ সেই মেয়েটাকে দেখেছিল’!!কিছুতেই আয়াফ সেই মেয়েটাকে ভুলতে পারছে না’!!বার বার ভাবছে ভুলে যাবে কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই সেই মেয়েটার চোখদুটো ভেসে আসছে’!!খুব জোরে নিশ্বাস ফেলে দু-চোখ বন্ধ করে নিল আয়াফ’!!আবারো মেয়েটার দৌড়ে তার দিকে আসার প্রতিচ্ছবি ভাসছে’!!সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাচ্ছে আয়াফ’!!সবকিছু এলেমেলো লাগছে খুব’!!হর্ঠাৎই এমন সময় এক ঠান্ডা শীতল মেশানো বাতাস বয়ে এসে লাগলো আয়াফের গায়ে’!!চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে আয়াফ বাতাসটাকে’!!চারপাশটা কেবল অন্ধকারে ডুব দিবে এমন একটা মুহূর্ত….

“এমন সময় কেউ আয়াফের সামনে এসে বললোঃ

———–“আপনি কি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছেন নাকি….

“আচমকা কারো মুখে এমন কথা শুনে চোখ খুলে তাকালো আয়াফ’!!সামনে আফিয়াকে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল তার’!!পরক্ষণেই সে গম্ভীর আওয়াজে বলে উঠলঃ

————“ধ্যান করতে যাবো কেন এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম…..

————-“তা তো দেখতেই পারছি….

————-“কি দেখতে পারছো তুমি….

————-“এই তো আপনি রাস্তার লামপোস্টের মতো দাঁড়িয়ে আছেন…

“আফিয়ার কথা শুনে আয়াফ রেগে বলে উঠলঃ

———-“কি আমি ল্যামপোস্ট….

“হাসলাম আমি’!!তারপর বলে উঠলামঃ

———–“ওসব বাদ দিন আগে বলুন তো এই সময় এখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন আপনি, কারো জন্য অপেক্ষা করছেন বুঝি….

———–“অপেক্ষা হ্যাঁ ইয়ে না মানে…

————“কি ইয়ে না মানে মানে করছেন…

———–“না কিছু না, তুমি আগে বলো তুমি এখানে কি করছো….

————“আমি তেমন কিছু নয় আরিশাকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছিলাম’!!

————“ওহ তাহলে তুমি একা কেন আরিশা কোথায়….

————“আরিশা ওদিকে আইসক্রিম কিনতে গেছে,আমিও গেছিলাম হর্ঠাৎ আপনাকে এইভাবে ল্যামপোস্টের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এদিকে চলে আসলাম আর কি 😁

————“হু কি,কি বললে তুমি😳

———–“কিছু না! 😁

“বলেই আমি দৌড়ে পালালাম…..

“এদিকে আয়াফ তাকিয়ে আছে আফিয়ার দিকে’!!কিছু একটা ফিল হচ্ছে তার’!!কিন্তু কি, বা কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না সে…..

__________________________________________

_______________________

“রাত_১০ঃ০০টা……

“ডিনার সেরে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে আয়াফ’!!আর সোফায় বসে আছি আমি’!!হর্ঠাৎই সকালের সেই বক্সতার কথা মনে পরলো আমার’!চুপিচুপি পা টিপে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি’!!ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম আলমারির দিকে’!!এমন সময় আয়াফ পিছন থেকে বলে উঠলঃ

———-“চোরের মতো ওদিকে কোথায় যাচ্ছো তুমি….

“আচমকা আয়াফের মুখে এমন কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললাম আমি’!!তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আয়াফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

————“চোরের মতো যেতে যাবো কেন?এমনি হাঁটছিলাম….

————–“তুমি যে চোরের মতো কিছু একটা দেখতে যাচ্ছিলে সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি…..

“এই রে বুঝে গেলো নাকি আমি ওই বক্সটা খুলে দেখতে চাইছি…!!আমি আমতা আমতা করে বললামঃ

———–“দেখুন একদম ভুলভাল মন্তব্য করবেন না,আর আপনি এখনো ঘুমোন নি কেন…..

————‘না ঘুমাই নি! তোমার সাথে ঝগড়া না করলে ঘুম আসবে না তাই….

————-“দেখুন একদম বক বক করবেন না,,আমি ঘুমাবো বলেই হাঁটতে হাঁটতে আয়াফের পাশে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম আমি’!!আমাদের মাঝখানে আছে কোলবালিশ,অবশ্য এটা আমরাই আইডিয়া ছিল!

“কিছুক্ষণ পর….

আস্তে আস্তে কাঁথা সরিয়ে আয়াফের দিকে তাকালাম আমি’!!উদ্দেশ্য ঘুমিয়ে পরছে কিনা তা দেখার’!!কাঁথা সরাতেই দেখলাম আয়াফ তাকিয়ে আছে আমার দিকে’!!তা দেখেই সাথে সাথে আবার কাঁথা মুড়ি দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি’!!

||

“এদিকে আয়াফ আফিয়ার কান্ড দেখে দমকের স্বরে বললোঃ

———–“একদম চালাকি করার চেষ্টা করবে না ঘুমাও বলছি….

“আয়াফের দমকে কেঁপে উঠলাম আমি’!!তারপর আর কি অবাধ্য মন নিয়েই ঘুমিয়ে পরলাম আমি’!!!

___________________

“সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙল আমার’!!হুট করেই মনে হলো কাউকে জড়িয়ে ধরে আছি আমি’!!মিটমিট করে চোখ খুলে তাকালাম আমি’!!সামনে আয়াফের ফেস দেখেই চমকে উঠলাম’!!সাথে সাথে চটজলদি আয়াফকে ছেড়ে উঠে বসলাম আমি’!!ভাগ্যিস আমার আগে ঘুম ভেঙে ছিল না হলে দেখলে আমায় কি ভাবতো আয়াফ ছিঃ ছিঃ……

||

“ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই ব্রেকফাস্ট করছিলাম’!!এমন সময় শশুর আব্বায় আয়াফকে বলে উঠলেনঃ

———–“আজকে তুমি আফিয়াকে নিয়ে ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে এসো আয়াফ….

“আয়াফ কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ

———–“কেন?

———–“কেন মানে কি!বিয়ের রীতি অনুযায়ী তোমায় একবার বউমাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যেতে হবে!এটা নিয়ে তোমার কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না আমি এমনিতেই তুমি বউভাতের অনুষ্ঠান করতে বারন করেছো আমি কিছু বলেনি,,তাই তার বিনিময়ে তোমায় আমার কথা রাখতে হবে আয়াফ!

“আয়াফ কিছুক্ষন ভেবে বললোঃ

————-“ঠিক আছে!আমি অফিস থেকে ফিরে বিকেলে যাবো তোমাদের বউমাকে নিয়ে তাকে তৈরি হয়ে থাকতে বলো….

“বলেই আয়াফ চলে গেল……

“এমন সময় শাশুড়ী মা এসে বললোঃ

———–“বউ মা তুমিও তাহলে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে থেকো!

“আমিও মাথা নাঁড়িয়ে হা সমর্থন দিলাম!তারপর চলে আসলাম নিজের রুমে’!!রুমে ঢুকেই ব্যাগটা নামাতে লাগলাম আমি আলমারির উপর থেকে এমন সময়……
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…………

~ ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!!🖤🥀
আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে!!🥰🥀

#TanjiL_Mim♥️

নেশালো সে পর্ব-০৩

0

#নেশালো_সে💖
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম💖

০৩.

“ভেজালো শরীর নিয়ে আয়াফকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!ভয়ে হাত পা কাঁপছে’!!এই জন্যই মা বলেছিল রাত জেগে এত horror movie না দেখতে’!!এখন বেশ হয়েছে বার বার খালি মনে ওই মুভির শয়তানটা পিছন থেকে আমার গলাটা চেপে ধরবে’!!

“কিছুক্ষণ আগে ওয়াশরুমে গোসল করছিলাম’!!কতোক্ষন আগে আরিশার সাথে বসে বসে Horror movie দেখছিলাম’!!এখন ওয়াশরুমে বসে চোখ বন্ধ করলেই সেই মুভির ভয়ানক দৃশ্য ভেসে আসছে সামনে’!!এমন সময় আচমকা ঝর্না অফ হয়ে গেল’!!আমি তো ভয়ে শেষ হর্ঠাৎই কোথা থেকে একটা টিকটিকি এসে পরলো গায়ে’!!ব্যস হয়ে গেছে যতটুকু সাহস ছিল তাও শেষ’!!এমনিতে টিকটিকি আরশোলা ভয় পাই না আমি কিন্তু এই মুহুর্তে’!!ভুত…

“বলেই ভেজালো অবস্থায় ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি’!!ছাইপাশ কিছু না ভেবেই আয়াফকে জড়িয়ে ধরলাম আমি’!!হাত পা এখনো কাঁপছে আমার’!!

||

“এদিকে আয়াফ এখনো শকট যেন কি হচ্ছে সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে’!!আফিয়া আয়াফকে এতটাই শক্ত করে ধরে আছে মনে হয় ছেড়ে দিলেই তার প্রানটা চলে যাবে’!!আয়াফ বুঝতে পেরেছে কিছু একটা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে আফিয়া এমনটা করেছে’!!হাত পাও কাঁপছে তার’!!আয়াফ আসতে আসতে আফিয়ার মাথাটা ধরে বললোঃ

———–“কি হয়েছে তুমি এত কাঁপছো কেন??

“আয়াফের কথা শুনে আফিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলঃ

————“বাথরুমে ভূত আছে…..

“আফিয়ার এমন আহামরি কথা শুনে আয়াফ কি বলবে বুঝতে পারছে না’!!আয়াফ অবাক হয়ে বললোঃ

————“কি?তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি বাথরুম ভূত আসবে কোথা থেকে….

————-“আমি সত্যি বলছি হুট বাথরুমের ঝর্না অফ হয়ে গেছে….

“আফিয়ার এবারের কথা শুনে আয়াফ হাসতে হাসতে শেষ’!!আয়াফের হাসি দেখে আফিয়া বলে উঠলঃ

————–“এত হাসার কি আছে হুহ😒

“আফিয়ার কথা শুনে আরো উচ্চ স্বরে হাসলো আয়াফ’!!তারপর যথাসম্ভব নিজের হাসিকে কন্ট্রোল করে বলে উঠল সেঃ

————-“পাগল মেয়ে হয়তো পানি শেষ হয়ে গেছে…..

“আয়াফের কথা শুনে মাথাটা উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

————-“মানে…..

————-“বোকা মেয়ে হয়তো টাংকিতে পানি শেষ তাই ঝর্না অফ হয়ে গেছে’!!এই সামান্য বিষয়টা নিয়ে এইভাবে কেউ ভয় পায়….

————“আসলে বিষয়টা তেমন না,কিছুক্ষণ আগে আরিশার সাথে horror movie দেখছিলাম,,এখন ওই চোখ বন্ধ করলেই ওই মুভির ভয়ানক দৃশ্য ভেসে আসছে তারপর হর্ঠাৎ পানি অফ হয়ে গেল এতে আরো ভয় পাই আমি!তারওপর আবার কোথা থেকে একটা টিকটিকি এসে পরলো হাতে তাই এতোটা ভয়ে ঘাবড়ে গেছি আমি…..

” আফিয়ার কথা শুনে আয়াফের কি রিয়েকশন দেওয়া উচিত তা ভুলে গেছে সে’!!আয়াফ হাল্কা অসস্তি বোধ করলে…

“ভেজালো শাড়ি পড়ে আছে আফিয়া’!!পুরো শাড়ি ভিজে লেপ্টে আছে শরীরের সাথে,,চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে খুব,, তার সাথে ঠান্ডায় ঠোঁটগুলো কাঁপছে আফিয়ার’!!হর্ঠাৎ আয়াফের চোখ গেল আফিয়ার সেই ভেজালো চোখের দিকে’!!এক ঘোর লাগানো মুহূর্তে চলে গেছে সে’!!দুজনেই তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে’!!আচমকাই নিজের ঘোর লাগানো মুহূর্ত থেকে বেরিয়ে আসলো আয়াফ’!!চোখ নামিয়ে নিয়ে আফিয়াকে বলে উঠল সেঃ

———-“আর কতোক্ষন ধরে থাকবে আমায়,তোমার সাথে সাথে আমিও তো ভিজে যাচ্ছি…..

||

“এতক্ষণ পর আয়াফের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার’!!চটজলদি তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

———–“সরি সরি……

“বলেই আবারো ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে পরলাম আমি’!!

.

“আফিয়ার মুখে “সরি সরি” শুনে আবারো সেই মেয়েটার কথা মনে পরে গেল আয়াফের’!!কিছুতেই সেই মেয়েটার চোখদুটোকে ভুলতে পারছে আয়াফ’!!কিছুক্ষনের জন্য হলেও আয়াফ কিছু একটা ভাবলো’!!চোখ দু’টির কি মিল আছে…..

“এমন সময় ডাক পরলো আয়াফের’!আয়াফ তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো’!!এবং যা ভাবছিল পরক্ষণেই মাথা থেকে সরিয়ে ফেললো সে’!!

_______________________________

“মাঝখানে কাটলো দুদিন……

“সূর্যের প্রবল তাপে ঘুম ভাঙল আমার’!!পাশ ফিরে আয়াফকে দেখে হাল্কা চোখ আঁটকে গেল আমার’!!সূর্যের আলোকিত তাপ এসে পরছে তার মুখে’!!সূর্যের তাপে চকচক করছে তার মুখ,কপালের সামনে অল্প কিছু চুল লেপ্টে আছে!ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে তার কপালের চুলগুলোকে একবার ছুঁয়ে দেই’!!পরক্ষণেই আবার ভাবলাম না যদি উঠে যায় তখন…..

“এক অপূর্ণ ইচ্ছে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলাম আমি’!!তারপর মিটমিট করে হেলেদুলে চলে গেলাম ওয়াশরুমে’!!

“ভাবছি আজকে থেকে ভার্সিটি যাবো’!!কালকেই শশুর মশাই আর শাশুড়ী মা বলেছেন আমায় ভার্সিটি যেতে’!!আমি তো বেশ অবাক ভেবেছিলাম ওনারা হয়তো আর পড়াশোনা করতে দিবে না আমায়’!!এসব ভাবতে ভাবতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে চলে আসলাম আলমারির কাছে’!!ভাবছি আজকে ভার্সিটিতে কি পড়ে যাবো’!!হর্ঠাৎই চোখ গেল আলমারিতে থাকা একটা ছোট্ট বাক্সের দিকে’!!কৌতুহলী বক্সটা হাতে নিলাম আমি’!!কিছুক্ষণ হাতে নিয়ে নাড়িয়ে চাড়িয়ে যেই না খুলতে যাবো এমন হুট করে আয়াফ বক্সটা ছো মেরে টান দিয়ে নিয়ে গেল”!!হুট করে এমন কিছু একটা হবে সেটা ভাবতেই পারি নি’!!

||

“এদিকে আয়াফ রেগে আফিয়াকে বলে উঠলঃ

———-“আমার পারসোনাল জিনিসে হাত দেওয়ার সাহস কি করে হলো তোমার….

———–“আসলে আমি….

———–“আসলে কি?একদম মুখে মুখে তর্ক করবে না!কি ভাবো তুমি নিজেকে,তুমি কি নিজেকে আমার বউ ভাবতে শুরু করেছো নাকি!একদম সেটা ভাবতে যেও না,খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দিবো….

“বলেই হন হন করে চলে গেলেন উনি!

“আর আমি চুপচাপ থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি’!!
“আয়াফের প্রথম কথাগুলো গায়ে না লাগলেও লাস্টের কথাটায় বুকের ভিতর কেমন করে উঠলো আমার’!!সামান্য একটা বক্স ধরার জন্য এতগুলো কথা শোনালো আমায়’!!মুহূর্তের মধ্যে মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার’!!এখন তো জানতেই হবে ওই বক্সটার ভিতর কি আছে যার জন্য এতোটা রেগে গেল আয়াফ’!!একরাশ মন খারাপ নিয়ে ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি হতে লাগলাম আমি’!!

___________________________

“ডাইনিং টেবিলে বসে আছি আয়াফ বাদে আমরা সবাই’!!এমন সময় শাশুড়ী বলে উঠলেনঃ

————“আজকে তো তুমি ভার্সিটি যাবে তাই না বউমা!

“আমি হাল্কা হেঁসে বলে উঠলামঃ

————“জ্বী আম্মু….

————-“তুমি কোন ইয়ারে পড় যেন বলছিলে…..

————-“এই তো অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে…..

“শাশুড়ি মা হাল্কা হেঁসে বললোঃ

————“খুব ভালো!

“এমন সময় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো আয়াফ’!!পড়নে তার সাদা শার্ট,ব্লাক প্যান্ট,গলায় টাই,চুলগুলো সুন্দর করে সাজানো,আর হাতে কোট এক মিনিটের জন্য হলেও তাঁকে দেখে চোখ আঁটকে গেল আমার’!!কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলাম আমি’!কিছুক্ষন আগেও যে অপমান করলো তার দিকে তাকিয়ে থাকার কথা প্রশ্নই আসে না’!!চুপচাপ বসে খাবার খেয়ে লাগলাম আমি’!!

“আয়াফ চুপটি করে এসে বসলো টেবিলে’!!তাকে দেখে আরিশা বলে উঠলঃ

———–“গুড মর্নিং ভাইয়া…

“আয়াফ মুচকি হেঁসে বললোঃ

———–“গুড মর্নিং….

“তারপর নেমে আসলো টেবিল জুড়ে নীরবতা!শুধু টুকটাক চামচের শব্দ আসলো’!!কিছুক্ষণ পর,নীরনতার বাঁধ ভেঙে বলে উঠলাম আমিঃ

———–“আমি তাহলে এখন যাই আম্মু…..

“আফিয়ার কথা শুনে একটা বার তাকালো আয়াফ আফিয়ার দিকে’!!তারপর আবার তার খাওয়াতে মনোযোগ দিলো’!!আমার কথা শুনে শশুর মশাই বলে উঠলেনঃ

———–“তুমি একা কেন যাবে মা,আয়াফ তোমায় পৌঁছে দেবে….

“শশুর মশাইর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললামঃ

————“না বাবা তার দরকার নেই আমি একাই চলে যেতে পারবো!

————“তা কি করে হয় বলেই আয়াফের দিকে তাকিয়ে আব্বু বলে উঠলেনঃ

———–“আয়াফ তুমি অফিস যাওয়ার পথে ওকে ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে চলে যেও…..

“আয়াফ তেমন কোনো রিমেক দিলো না’!!চুপচাপ তার বাকি খাবারগুলো খেতে লাগলো’!!

||

“এদিকে আমি পরেছি বিপদে,কি করবো বুঝতে পারছি না যাবো কি যাবো না!ওই করলার জুসের সাথে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না!কিন্তু এঁরা তো আমায় একা যেতেই দিবে না,ধুর বিরক্ত লাগছে এখন….

“বেশকিছুক্ষন পর…….

“আয়াফ তার খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালো’!!তারপর মুখ মুছে বললেনঃ

———-“এখন তাহলে আমি যাচ্ছি,,আর তোমাদের আদরের বউমাকে বলো আর নক না খেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসতে এতো নক খেলে পরে তো আঙুলটাই থাকবে না মনে হয়….

||

“হুট করে আয়াফের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি’!!তাড়াতাড়ি মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললাম আমি’!!অবাক করার ভিষণ উনি তো আমার দিকে তাকান নি এতক্ষণ তাহলে বুঝলো কেমনে!!

“আয়াফের কথা শুনে হাসলো সবাই’!!আর আমি রাগে ফুসতে ফুঁসতে চলে গেলাম বাইরে…

————“কি শয়তানরে বাবা,,সবার সামনে এইভাবে বললো আমায়,,ঠিক আছে করলার জুস আমারও সময় আসবে আমিও দেখিয়ে দিবো আফিয়াকে খোঁচা মেরে কথা বললে কি হয় হুহ…

“বলতে বলতে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আয়াফের গুষ্টিউদ্ধার করতে আছি আমি।।।

||

“এদিকে বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আয়াফ হাসতে হাসতে বের হচ্ছে যেন আফিয়াকে রাগিয়ে তার খুব মজা লাগছে’!!পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক করে চলে আসলো সে’!!গাড়ির সামনে আফিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ক্ষিপ্ত আওয়াজে বলে উঠল সেঃ

———-“আমায় গালাগালি দেওয়া শেষ হলে এখন যাওয়া যাক…..

……

“আচমকা পিছন থেকে কারো মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি’!!পিছন ঘুরে আয়াফকে দেখে মেজাজটা আরো বিগড়ে গেল’!!কিন্তু এই মুহুর্তে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না আমার’!!তাই একটা রাগী মেজাজ নিয়েই বসে পরলাম গাড়িতে…..

“আফিয়ার কান্ডে হালকা হাসলো আয়াফ’!!তারপর সেও গিয়ে বসে পরলো পিছনে সিটে’!!দুজন বসতেই ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করল’!!

“আচমকা গাড়ির চাকায় একটা ইট বাজতেই হাল্কা বেঁকে গেল’!!আচমকা এমনটা হওয়াতে আফিয়া তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় আয়াফের উপর’!!আয়াফের মাথার সাথে নিজের মাথায় বারি খেলো আফিয়া’!!মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসলো তারঃ

——–“আউচ….

“বিনিময়ে আয়াফ কিছু বললো না’!!কারন এতে কারোই কোনো দোষ ছিল না’!!তারপর দুজনেই দুজনকে সামলে নিলো আবার……

__________________________________________

_______________________

“বেশকিছুক্ষন পর আমাদের গাড়ি এসে থামলো ভার্সিটির সামনে’!!আমিও কিছু না বলেই গাড়ি থেকে নেমে গেলাম’!!আয়াফরাও আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল’!!ভার্সিটি ঢুকতেই……..
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…………

~ ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!!🖤🥀
আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে!!🥰🥀

#TanjiL_Mim♥️

নেশালো সে পর্ব-০২

0

#নেশালো_সে💖
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম💖

০২.

“অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আমি আয়াফের দিকে’!!যেন উনি কি বললেন সব মাথার উপর দিয়ে গেল’!!জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে বলে উঠলাম আমিঃ

————“মানে কি,আপনি আপুকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন কিন্তু কেন??😳

“এদিকে আয়াফ ভাবছে অন্যকিছু…….

“যার জন্য বিয়ে আসরে নিজের হবু বউকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলো’!!তাকে কি পাবে কখনো’!!তবে আদিবাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার পিছনে দুটো কারন ছিল’!!এক হলো আদিবা নিজেও অন্য আরেকজনকে ভালোবাসতো’!!আর দু নাম্বার কারনটা ছিল আয়াফও চাচ্ছিল না বিয়েটা করতে’!!কিন্তু এমনটা হোক চায় নি আয়াফ’!!এইভাবে আফিয়ার সাথে বিয়ে হয়ে যাবে,এতকিছু করেও শেষ পর্যন্ত নিজের বিয়েটা আটকাতে পারলো না আর ভাবতে পারছে না আয়াফ সবকিছু এলোমেলো লাগছে তার কাছে’!!কেন যে সেদিন দেখা হয়েছিল তার সাথে’!!আয়াফের ভাবনার মাঝখানে আফিয়া বলে উঠলঃ

————“এই যে মিস্টার “করলোর জুস” কোন ভাবনার মাঝে হারিয়ে গেলেন….

“আচমকা নিজের এমন অদ্ভুত নাম শুনে আয়াফ একটা রাগী লুক নিয়ে বলে উঠলঃ

————-“কি বললে তুমি? আমি কি….

“এই রে খাইছে মুখ ফসকে সত্যি কথা বলে দিলাম তো’!!কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল আফিয়াঃ

————–“কি বলেছি কিছু বলিনি আগে আপনি বলুন আপনি আপুকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন কেন?

————–“ভালো লেগেছে তাই করেছি একদম বেশি কথা বলবে না সরো ঘুমাবো আমি বলেই আফিয়া কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো আয়াফ”!!

“এদিকে আয়াফের কান্ডে অবাক আফিয়া’!!আফিয়া রেগে আয়াফের সামনে এসে বললোঃ

————“কথার উওর না দিয়ে এইভাবে ঘুমালে কি করে হবে,,আর আপনি বিছানায় ঘুমালে আমি কোথায় ঘুমাবো…..

“আয়াফ এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলেও আফিয়ার লাস্ট কথাটা শুনে বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বলে উঠল সেঃ

————-“যেখানে ইচ্ছে সেখানে ঘুমাও কিন্তু আমায় ডিস্টার্ব করবে না…..

“বলেই কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো আয়াফ’!!আর আফিয়া হাবলার মতো শুধু তাকিয়ে রইল আয়াফের মুখের দিকে’!!

_____________________

“আজকে আয়াফের অফিসে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে’!!এমনিতেই অনেকটা লেট হয়ে গেছে তার’!!এর জন্য ড্রাইভার এর উপর ভিষণ রেগে আছে আয়াফ কারন ড্রাইভারের জন্য এমনটা হয়েছে তারওপর ঢাকার রাস্তায় অসম্ভব জ্যাম,,সব মিলিয়ে একরাশ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে গাড়িতে বসে মোবাইল টিপছে সে’!!হর্ঠাৎ কিছুটা দূর যেতেই ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিল’!!অবশ্য থামিয়ে দিয়েছে বললে ভুল হবে’!!গাড়ি নিজে নিজেই থেমে গেছে’!!আচমকা গাড়ি থেমে যাওয়ায় আয়াফ অবাক হয়ে ড্রাইভারকে বললোঃ

————“কি হয়েছে গাড়ি থামালে কেন?

————“স্যার মনে হয় গাড়ির তেল শেষ হয়ে গেছে…

“মুহূর্তে মধ্যে আরো মেজাজ বিগড়ে গেল আয়াফের’!!এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে’!!তারওপর আবার আর ভাবতে পারলো না আয়াফ’!মুখে মাস্ক পড়ে গাড়ি থেমে বেরিয়ে গেল’!!ইচ্ছে করছে গাড়িটাকে ভেঙে চুরে ফেলতে’!!আয়াফ ড্রাইভারকে গাড়িতে তেল ভরার জন্য বলে গাড়ি থেকে নেমেই হাঁটা ধরল’!!রাগ যেন সপ্তম আকাশে উড়ে গেছে তার’!!এমন সময় সামনের দিক দিয়ে একটা মেয়ে পড়নে তার গর্জিয়াস রেড কালারের গাউন,,চুলগুলো কোমড় পর্যন্ত খোলা রেখেছে,,ঘন কালো লম্বা চুল তার, দু-হাত মুঠো ভর্তি করা লাল কাঁচের চুরি’!!কিন্তু মুখ তার ওড়নার দিয়ে ঢাকা, চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না,,কিন্তু চোখ দুটোকেই অসম্ভব সুন্দর করে আঁকা! আয়াফ মেয়েটার মায়াবী চোখ দেখেই থমকে দাঁড়িয়ে পরলো কিছুক্ষণের জন্য,,কয়েক মুহূর্তের জন্য তার চোখ আঁটকে যায় মেয়েটার উপর’!!উল্টো দিকে মেয়েটা দৌড়ে এদিকেই আসছে’!!আয়াফ অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে’!!একপ্রকার দৌড়ে এসে মেয়েটা আয়াফের সাথে ধাক্কা লাগতেই মেয়েটা মুখ থেকে শুধু দুই শব্দ বের করে বললোঃ

———–“সরি,সরি….বলেই দৌড় সে…..

“মেয়েটার পিছনে আরো পাঁচ সাতটা ছেলেমেয়ে দৌড়াচ্ছে!হয়তো ধরার চেষ্টা করছে একে একে সবাই আয়াফকে টপকে চলে যেতে লাগলো’!!আর আয়াফ এখনো প্রথম মেয়েটার উপর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল’!!যেন তার নেশা হয়ে গেছে এমন’!!এক কথায় বলতে গেলে “লাভ এট ফাস্ট সাইড”!!ঘোর লাগানো মুহূর্তে চলে গেল আয়াফ’!!সেদিনের মতো সেখানে থমকে গেল আয়াফ’!!চোখ বন্ধ করলেই আয়াফের চোখের সামনে সেই মেয়েটার মুখটা ভেসে আসছে’!!শুধু বার বার মেয়েটার সেই চোখ দুটোই ভাসছে আয়াফের সামনে’!!মুখ না দেখেই আয়াফ ভালোবেসে ফেলে ওই মেয়েটাকে…….

||

“এক মগ পানি মুখে পরতেই লাফ দিয়ে উঠলো আয়াফ’!!যেন আচমকা কি হলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল’!!মিটমিট চোখে তাকালো আয়াফ’!!সামনেই আফিয়াকে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল তার’!!এত সুন্দর স্বপ্নের মাঝখানে পানি ফেলে দিলো আফিয়া’!!আয়াফ রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলঃ

———–“হোয়াট দা হেল এগুলো কি করছো তুমি…

———–“কি করছি দেখেন নি নাকি….

————“তুমি আমার মুখে পানি দিয়েছো কেন….

————-“আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এখন আসছে মুখে পানি দিয়েছেন কেন বলতে…

“আয়াফ অবাক হয়ে বললোঃ

————“মানে….

————“এতো মানে বুঝাতে পারবো না উঠুন আগে……..

“বলেই আয়াফকে একপ্রকার জোরজবরদস্তি করে উঠলাম আমি’!!আয়াফ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বিছানা থেকে উঠে চলে গেল ওয়াশরুমে,রাগে গা পুরো জ্বলে যাচ্ছে তার মানবতার খাতিরে কিছু বলছে না বলে মেয়েটায় মাথায় উঠে নাচছে তার……রাগে ফুসফুস করতে করতে চলে গেল আয়াফ…..

||

“এদিকে আমি আয়াফ যেতেই বিশ্বজয় করা এক হাসি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম’!!কাল সারারাত ঘুমাতে পারি নি আমি,,ওই সোফায় ঘুমানো যায় নাকি…..ভেবেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালাম আমি!

…………

“পাক্কা একটা ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো আয়াফ’!!মাথায় টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে….হর্ঠাৎই চোখ গেল তার বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা আফিফার দিকে,,এখনো কালকের বিয়ের পোশাকে আছে সে’!!আয়াফ মনে মনে বললোঃ

———–“কি শয়তান মেয়ে আমায় ঘুম থেকে উঠিয়ে এখন নিজে ঘুমিয়ে পরেছে!একবার ভেবেছিল আয়াফ ও আফিয়ার মতো মুখে পানি মেরে ঘুম ভাঙাবে কিন্তু আবার ভাবলো না থাক!কাল সারারাত ঘুমাই নি হয়তো,ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে’!!আয়নার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ আয়াফ….

“ঘড়িতে তখন সবেমাএ ৭ঃ০০টা বাজে…..

“হর্ঠাৎই কি ভেবে আয়াফ চলে যায় তার আলমারির কাছে’!!ছোট্ট একটা বাক্স বের করলো তার জামাকাপড়ের ভিতর থেকে,,সেই বাক্সটা থেকে বের করলো আয়াফ ছোট্ট একটা ঝুমকা’!ঝুমকাটা আর কারো নয় সেই মেয়েটার,সেদিন যখন মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগেছিল আয়াফের সাথে তখন কোনোভাবে মেয়েটার কান থেকে পড়ে যায় ঝুমকোটা আয়াফের পায়ের কাছে!সেদিন থেকে এখনো ঝুমকো টা আয়াফের কাছেই আছে’!!ঝুমকাটা হাতে নিয়ে বলে উঠল আয়াফঃ

————“কোথায় আছো তুমি “মায়াবতী” আর কি কখনো দেখা হবে না আমাদের…..

“এমন সময় আফিয়াকে নড়তে দেখে চটজলদি আয়াফ ঝুমকাটা আবারো বাক্সে ভিতর রেখে সযত্নে আলমারিতে গুছিয়ে রাখলো………

__________________________________________

_______________________

“সকালে ঘুম ভাঙল আমার ৯ঃ০০টায়…..

“বিছানায় শোয়া থেকে উঠে বসলাম আমি’!!এখন খুব ভালো লাগছে’!!!আশেপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে দেখলাম কেউ নেই,হয়তো আয়াফ অনেক আগেই চলে গেছে’!!এসব ভেবে বিছানা থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলাম আমি’!!ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই দরজায় নক করলো কেউ…….

“হাল্কা কেঁপে উঠলাম আমি’!!পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে চলে আসলাম আমি দরজার সামনে’!!দরজার খুলতেই আরিশাকে দেখে হাল্কা হাসলাম’!!আমায় দেখেই মিষ্টি করে হাসি দিয়ে বলে উঠল সেঃ

————-“গুড মর্নিং ভাবি….

“আরিশার কথা শুনে আমিও হালকা হেঁসে বলে উঠলামঃ

————-“গুড মর্নিং….

“আমার অগোছালো চুল দেখে আরিশা বলে উঠলঃ

————“ভাবি তুমি এখনো তৈরি হও নি,তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে চলে আসো নিচে একসাথে নাস্তা করবো….

————“তুমি যাও আমি আসছি….

————“ঠিক আছে ভাবি তাড়াতাড়ি এসো অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু…..

“আমি মুচকি হেঁসে বললামঃ

———–“ঠিক আছে…..

“আরিশাও আর কিছু না বলে চলে গেল নিচে’!!আমিও তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে চলে আসলাম নিচে……

||

“নিচে আয়াফসহ সবাই ছিল’!!আমিও চুপচাপ সবার সামনে বসলাম’!!সবাই আমায় দেখে খুশি হলো শুধু আয়াফ বাদে’!!তারপর সবাই মিলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম!ব্রেকফাস্ট শেষে আয়াফ চলে গেল তার কাজে!মানে অফিসে…

“আর আমি আর আরিশা রুমে এসে অনেক গল্প করলাম’!!

____________________

“দুপুর দুটো….

“আয়াফ সবেমাএ অফিস থেকে ফিরে এসে রুমে বসলো’!!প্রচুর ক্লান্ত সে’!!এমন সময় হুট করে ওয়াশরুম থেকে চেঁচিয়ে বেরিয়ে আসলো আফিয়া…..

“হুট করে কোনোকিছু না বলেই আফিয়া জড়িয়ে ধরল আয়াফকে’!!ঘটনাটা আচমকা হয়ে যাওয়াতে আয়াফ পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল…..
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…………

~ ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!!🖤🥀
আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে!!🥰🥀

#TanjiL_Mim♥️

নেশালো সে পর্ব-০১

0

#নেশালো_সে💖
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম💖
০১.

“কবুল বলেই “আয়াফ” বিয়ের আসর ছেড়ে হন হন করে চলে গেল,,আর বিয়ে বাড়ির উপস্থিত সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে’!!তবে কনে বেসে বসে থাকা আমি মোটেও অবাক হচ্ছি না’!!কারন এটা হওয়ারই ছিল বড় বোনকে বিয়ে করতে এসে ছোট বোনকে বিয়ে করতে হবে তাও আবার যাকে দু-চোখে সহ্য করতে পারে না তাকে’!!আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো মেনে নিতো ”অায়াফ”!!নিশ্চুপ ভাবে বসে আছি আমি’!!যেন কি কি হলো সব মাথার উপর দিয়ে গেল’!!অলরেডি বিয়ে বাড়ির মানুষরা বিষয়টা নিয়ে কানাফুসা শুরু করে দিয়েছে’!!আমি আমার মতো একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছি’!!ইচ্ছে করছে একটু মোবাইল গুতাতে কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা করা পসিবল নয়’!!কিছুক্ষণ পর,চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসলো আমার’!!ইচ্ছে করছে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি’!!এমন সময় আম্মু মাথায় একটা চাটি মেরে বললোঃ

———“সোজা হয়ে বসতে পারছিস না তুই….

“আম্মুর কথা শুনে আমি নীবরকন্ঠে বলে উঠলামঃ

———“মা তোমরা একটু বেশি বারাবারি করলে না,কে বলেছিল ওই “করলার জুসের” সাথে আমার বিয়ে দিতে,আপু পালিয়ে গেছে ওনারাও চলে যেতো মাটার শেষ,মাঝখান দিয়ে আমার সাথে ওই “করলার জুসকে”ফাঁসিয়ে দেওয়ার কি খুব বেশি দরকার ছিল…..

“আমার কথা শুনে আম্মু চোখ বড় বড় করে বললোঃ

———-“কি বললি তুই….

———-“বুঝতে পারো নি নাকি…..,

———-“তুই কেনো বুঝতে পারছিস না তোর সাথে বিয়ে না দিলে আয়াফের মানসম্মান কোথায় যেত আর আমরাও বা লোকজনদের কি বলতাম এত আত্মীয় স্বজনদের মাঝখানে…..

———–“বিয়ে দিয়ে কি লাভটা হলো সেই তো করলার জুস আমায় না নিয়েই চলে গেলেন,এখন খুব ভালো লাগছে বুঝি….

“এমন সময় আয়াফের বাবা আসলো আমার সামনে তারপর বলে উঠল সেঃ

———“চলো মা তোমায় যে যেতে হবে এখন….

“হুট করে এমন কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যে মন খারাপ আরো চারশো গুন বেড়ে গেল’!!এমনিতেই যখন থেকে শুনেছি আয়াফের সাথে বিয়ে হবে সেই থেকেই মন খারাপ খুব,এখন আবার…

“আমার ভাবনার মাঝে আব্বু এসে বললোঃ

———–“কি ভাবছো “আফিয়া”…..

“আমি একটু নিচু সরে বললামঃ

————“এমনটা করার কি খুব বেশি দরকার ছিল বাবা…..

“আমার কথা শুনে বাবা কিছু বললো না’!!আমার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যেতে লাগলো’!!আব্বুর এমন কাজে বুকের ভিতর ঝড় উঠলো আমার’!!আমার রুমটা, মা-বাবা, সবাইকে ছেড়ে এখন ওই করলার জুসের সাথে থাকতে হবে!! হায় রে ভাবতেই চোখ বেয়ে পানি পরছে খুব……

“একে একে সবাই আমাদের পিছন পিছন আসতে শুরু করলো’!!আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম’!!আম্মুও কাঁদলো…

“একপ্রকার জোরজবরদস্তি করে আমায় বসানো হলো গাড়িতে….

“গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করল তার আপন গতিতে….!!কি অদ্ভুত শশুড় বাড়ি যাচ্ছি অথচ পাশে যার থাকার কথা ছিল সে নেই’!!তবে সেটা ভেবে আমার তেমন কষ্ট হচ্ছে না….

||

“এদিকে আফিয়ার আব্বু আয়াফের আব্বুর হাত ধরে বললঃ

——–“যেটা হয়েছে সেটা হতো বদলাতে পারবো না বেয়াইমশাই,,আমাদের জন্যই এমনটা হলো সত্যি খুব দুঃখিত আমরা’!!(হাত জোর করে)

———-“এভাবে বলবেন না,,একটা কথা মনে রাখবেন আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে!হয়তো আয়াফের জন্য আফিয়াকেই বানানো হয়েছে তাই তো এমনটা হলো!ওটা নিয়ে ভাববেন না……

“আয়াফের আব্বুর কথা শুনে স্বস্তি পেলেন আব্বু’!!তারপর আবারো বলে উঠল আব্বুঃ

———-“আপনারা ওকে একটু গুছিয়ে নিজেদের মতো বানিয়ে দিবেন,,আমার মেয়েটা একটু দুষ্ট প্রকৃতির হলেও মনটা খুব ভালো,একটু গুছিয়ে নিয়েন…

———–“ওটা নিয়ে ভাববেন না বেয়াইমশাই,,সব ঠিক হয়ে যাবে….

“বলে বিদায় জানালো আয়াফের আব্বু!!

“একে একে সবাই চলে আসতে শুরু করলো’!!পুরো বিয়ে বাড়ির লোকজনই চলে যেতে লাগলো….ধীরে ধীরে পুরো পরিবেশ ঠান্ডা হতে শুরু করল…..

________________________________

|| ফ্লাসবেক ||🌸🌿

“সকাল থেকে বাড়িতে পুরো হৈ-হুল্লোড় পরে গেছে’!!সারা-বাড়ি ঘুরে ঘুরে উড়াধুরা লুঙ্গি ড্যান্স দিতে লাগলাম আমি’!!আপুর বিয়ে বলে কথা’!!নাচতে নাচতে আপুর রুমে ঢুকলাম আমি’!!আপুও ছিল চুপচাপ খুশি মনে বসে ছিল সে’!!আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ

————-“উফ!আপু এত যে মজা লাগছে আমার কি বলবো তোমায়…৷

“আমার কথা শুনে আপু শান্ত গলায় বললোঃ

————-“এত খুশি হচ্ছিস কেন বলতো…..

————-“যাগ বাবা তুমি ভুলে গেলে নাকি আজকে তোমার বিয়ে একটু পর তুমি করলার জুসের বউ হবে….

———–“আচ্ছা ধর,সেই করলার জুসের সাথে যদি তোর বিয়ে হয়ে যায়…

“আপুর কথা শুনে চোখ আমার চড়ুই গাছ!!আমি আপুকে ছাড়িয়ে চোখ গরম বললামঃ

———–“হুম ওই করলার জুসকে বিয়ে করবো আমি!তোমার মাথা খারাপ হইছে ওইসব ভুলভাল কথা বলে মাথা খারাপ না করে চুপচাপ এই নেও মুড়ি খাও…….(হাতে মুড়ির বাটি এগিয়ে দিয়ে)

“বলেই নাচতে নাচতে চলে গেলাম আমি’!!

“সারাদিন সবকিছুই সুন্দরভাবে চলে গেল’!!চারিদিকে শোনা গেল জামাই এসেছে,জামাই এসেছে’!!আপুকে সাজিয়ে বসে রাখা হয়েছিল বিছানায়’!!জামাই এসেছে শুনেই আপুকে রেখে চলে গেলাম আমি’!!আমি তো মহা খুশি’!!নিচে নেমে দেখলাম সবাই আছে অথচ জামাই নেই’!!বিষয়টাতে সবাই বেশ অবাক হলো’!!আয়াফের আব্বুর কাছে জিজ্ঞেস করতে উনি বললেনঃ

———-“এক্ষুনি আসবে আয়াফ’!!

“বিষয়টাতে বেশ অবাক আমরা সবাই’!!বেশকিছুক্ষন পর……
আয়াফ চলে আসলো বিয়ের আসরে,,তার চুলগুলো ছিল অল্প সল্প এলেমেলো’!!সেগুলো ঠিক করতে করতে চলে আসলেন উনি’!!উনি সামনে আসতেই আমরা সবাই দাঁত কেলানি দিলাম…..

||

আয়াফকে বসানো হলো কাজীর সামনে’!!এর ভিতর কাজী সাহেব আপুকে আনতে বললো’!!আমিও খুশি হয়ে উপরে গেলাম আপুকে নিয়ে আসতে’!!গিয়ে দেখি আপু নেই’!!পুরো অবাক আমরা এতটুকু সময়ের মধ্যে গেল কই’!!পুরো বাড়ি খুঁজেও কোথাও পাওয়া গেল না তাকে’!!এরপর আব্বু আম্মু আসলো’!!আব্বু রীতিমতো ভেঙে পড়েছিল’!!কি করবে না করবে পুরো দিশা হারা হয়ে গেছে’!!আব্বু গিয়ে আয়াফের আব্বুকে ডেকে আনলো’!!তারপর তাকে সব বুঝিয়ে বললেন’!!আয়াফের আব্বু ছিল খুব ভালো একজন মানুষ’!!ওনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে নিশ্চয়ই বিষয়টা নিয়ে রাগারাগি করতো’!!

“সবাই চিন্তিত হয়ে গেল’!!কি করবে?হুট করেই আয়াফের আব্বু বলে উঠলেনঃ

———–“আদিবার জায়গায় আফিয়াকে আমাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যাবো কেমন হবে বেয়াইমশাই…….

“আমি তো রীতিমতো ওনার কথা শুনে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছি’!!কি বলছে উনি তার মানে তখন আপুর বলা কথাটাই সত্যি হয়ে যাবে নাকি…..

“আব্বুও আয়াফের কথা আর আমাদের কথা ভেবে শুরুতেই রাজি হয়ে গেলেন’!!তারপর আর কি আপুর জায়গায় আমায় নিয়ে যাওয়া হলো’!!বিষয়টা এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে আমায় কিছু বলতেই দিলো না’………

“আয়াফ আপুর জায়গায় আমায় দেখে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হতে চাইছিল না’!!কিন্তু তার বাবা একপ্রকার জোর করেই তাকে দিয়ে কবুল বলিয়ে নিও’!!কবুল বলে আর এক মিনিটও দাঁড়ালো না আয়াজ হন হন করে বিয়ের আসর থেকে চলে গেল……

………..

———-“আমরা চলে এসেছি আসো ভাবি,,হর্ঠাৎ মেইলি কারো কন্ঠ শুনে আমি আমার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম’!!

__________________________________________

_______________________

“রাত_১০ঃ০০টা……

“একরাশ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে ভাড়ি ভাড়ি গয়নাগাটি আর ভাড়ি লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছি আমি’ সাজানো ফুলের বিছানায়’!!অসহ্য লাগছে খুব’!!একরাশ বিরক্ততা নিয়ে মাথায় থাকা ঘোমটা খুলে ফেললাম আমি’!!কিছুক্ষণ আগেই আয়াফের বোন আরিশা এত সাজিয়ে গুজিয়ে বসিয়ে রেখে গেছে’!!এমন সময় দরজার খোলার শব্দে নড়েচড়ে বসলাম আমি’!!আয়াফ চুপচাপ রুমে ঢুকে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল’!!যেন ভিতরে কেউ আছে ও দেখেই নি…..

“আমিও চুপচাপ বসে আছি বিছানায়…..!!কিছুক্ষণ পর আয়াফ বের হয়ে আলমারি থেকে বের করে একটা টিশার্ট পড়ে নিলো’!!তারপর বিছানায় এসে আমায় দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গিয়ে বলে উঠল সেঃ

———–“তুমি এখানে কি করছো……..

“হে হালুয়া এতক্ষণ পর আয়াফের মুখে এমন কথা শুনে কি রিয়েকশন দিবো আমি ভুলে গেছি’!!হুট করেই মেজাজ বিগড়ে গেল আমার’!!একটু ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে উঠলাম আমিঃ

————-“হে হালুয়া,এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন নাকি আমার সাথে আপনার বিয়ে হয়েছে…..

———–“বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে, তুমি কি ভেবেছো বিয়ে হয়েছে তাই আমি তোমার সাথে সংসার করবো,আর তুমি আমার বিছানায় কি করছো….

“আয়াফের কথা শুনে রেগে আরো আগুন আমি’!!একি তো কতক্ষণ যাবৎ নিজের ঘুমকে কন্ট্রোল করে বসেছিলাম আমি,,আর বলে কিনা বিছানায় কি করছি’!!আমি রেগে বলে উঠলামঃ

————-“আপনি যদি ভেবে থাকেন ওই স্টার জলসার নাটকের মতো বিয়ে মানেন না বলে ওই সোফায় ঘুমাবো তাহলে ভুল ভাবছেন,আমি এই খাটেই ঘুমাবো,,আপনার ঘুমাতে ইচ্ছে করলে ঘুমান না ইচ্ছে করলে ওই বাথরুমে চলে যান….

“আমার কথা শুনে আয়াফ চেঁচিয়ে বলে উঠলঃ

————“তোমার সাহস তো কম না আমার রুমে বসে আমাকেই দমকাচ্ছো…..

————“সাহসের দেখছেন কি আমিও আফিয়া হুহ,,কোথায় ওনার মানসম্মান বাঁচালাম তার জন্য ধন্যবাদ জানাবে তা না উল্টো রাগারাগি করছে….

“আমার কথা শুনে আয়াফ রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলঃ

———–“মানসম্মান বাঁচিয়ে ছো মাই ফুট উল্টো আরো সমস্যায় ফাঁসিয়ে দিয়েছো….

————“কি ফাঁসিয়ে দিয়েছে মানে…..

————“আরে তোমার বোনকে পালিয়ে যেতে তো আমি নিজেই সাহায্য করেছি…..

“আয়াফের কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার’!!আমি অবাক হয়ে চেঁচিয়ে বললামঃ

———–“কি,😳😳😳😳
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…………

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

7

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__২০_এবং_শেষ

ডায়রিটা রেখে কিছুক্ষন বারান্দায় নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে বৃষ্টি। বাইরের ঠান্ডা শীতল হাওয়া এসে তাকে ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে বার বার। খোলা চুল গুলোতে দিয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য হাতছানি।
ডায়রির প্রতিটা পাতায় রয়েছে হাজারো অনুভুতির বসবাস। বর্ষার প্রতি রাতের ভালোবাসার গভিরতা কতটুকু ছিলো ডায়রির প্রতিটা শব্দই তার বাস্তব প্রমান। আচ্ছা দির্ঘ বছরের এতো গভির ভালোবাসাও কি মুহুর্তের মাঝেই হারিয়ে যায়?

মাঝ রাতে চিৎকার করে ঘুম ছেরে লাফিয়ে বসে বৃষ্টি। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে সে। কপালে জমা হয়েছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। রাত পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিতেই এক টানে পুরু গ্লাস শেষ করে পেলে সে। তার পরও যেনো উত্তেজনা কমছেনা তার।
স্বপ্ন না এটা ছিলো চরম দুঃস্বপ্ন। বাড়ি ভর্তি মানুষের ভির। যেমনটা ছিলো তাদের বিয়ের দিন। ড্রাইনিং রুমের মেঝেতে একটা সাদা কাপরের উপর সুয়ে আছে বর্ষা। গলা পর্যন্ত সাদা কাপর দিয়ে ঢাকা তার। খোলা চুপ পড়নে লাল রংয়ের একরা জামা। ওভাবেই ফ্লোড়ে পরে আছে বর্ষার নিথর দেহটা। গলাটা ফুলে যেনো কলা গাছ হয়ে আছে। মা পাশে বসে বসে দিয়ে যাচ্ছে আত্ন চিৎকার। বাবা দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। লোকজন একে একে এসে দেখে যাচ্ছে বর্ষাকে।
পাশে থাকা কিছু মায়ের বয়সি মহিলা মাকে সান্ত করার চেষ্টা করছে বার বার।
কিছুক্ষন পর ওখানে চলে এলো এম্বুলেন্স। ওসি সাহেব বললো লাশ গাড়িতে তুলতে। পোস মার্টামের জন্য নিয়ে যেতে হবে। তার কথা মতো ব্রষাকে গাড়িতে তুলছে বাকিরা। বাবা অজ্ঞান হয়ে পরে গেছে নিচে। বৃষ্টি স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে বর্ষাকে নিয়ে যাওয়ার দিকে। আচ্ছা আপুকে কি এখন কেটে ফেলবে? তাকে কি পুরুস মানুষরা কাটবে? তাহলে তো তার পরনে জামার শেষ অংশ টুকুও থাকবেনা। ছি মরার পরও এভাবে এতোগুলো পরুষ মানুষের সামনে। আপুর কি কষ্ট হবেনা? বর্ষাকে গাড়িতে তুলতেই হাত বাড়িয়ে আপু বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বৃষ্টি। আর তখনই ঘুমটা ভেঙে যায় তার।
পাশ থেকে রাত বলে উঠে,
– আর ইউ ওকে?
বড় বড় নিশ্বাস থামিয়ে বৃষ্টি ছোট্ট করে বলে উঠে,
– হুম।
রাত বৃষ্টির মাথাটা টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে উঠে,
– নিশ্চই কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো? তাইনা? স্বপ্ন তো স্বপ্নই তাইনা। সেটা খারাপও হয় আবার ভালোও হয়। সারা দিন আমরা যেটা নিয়ে বেশি ভাবি। তাই স্বপ্ন হয়ে চোখের সামনে ভেষে উঠে। আর পৃথিবীতে সব রোগের ঔষধ থাকলেও এই চিন্তা রোগের কোনো ঔষধ নাই। সো এসব মাত্রই তোমার মনের ভুল।
বৃষ্টি সম্মতি জানিয়ে রাতের কাছ থেকে সরে আসে।
তার পর কাত হয়ে অপর দিকে চেয়ে শুয়ে থাকে বৃষ্টি।
চোখে ঘুম আসছেনা আর। এভাবেই পার হয়ে গেলো কিছু সময়।রাতের দিকে চেয়ে দেখে রাত পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ঘুমের রাজ্যে পারি দিয়েছে। বৃষ্টিরও ইচ্ছে করছে খুব, যে রাতের দিকে ঘুরে তার বুকে গুটিসুটি মেরে মিশে যে যেতে। কিন্তু চাইলেই সব চাওয়া পুরন হয়না। কারন মায়া বেরে যাবে। বৃষ্টি নিজের শরির হয়ে রাতের হাতটা ছাড়িয়ে উঠে চলে যায় বারান্দায়। ঘুম যেনো চোখের আড়াল হয়ে গেছে তার। রাত তখন তিনটা বেজে পঁচিশ। এক সাথে দুটু ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুয়ে পরে বৃষ্টি।

সকালে উঠতে মাথাটা প্রচন্ড ধরে আছে তার। ঘরির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখে পোনে নয়টা বাজে। বাইরে সূর্যটাও ধিরে ধিরে তেজস্ব হয়ে উঠছে। ইশ কতো বেলা হয়ে গেছে। উঠে ঢুলে ঢুলে ওয়াশ রুমে চলে যায় বৃষ্টি।

মায়ের কোলে মাথারেখে সুয়ে আছে রিদ। মা তার চুল গুলো হাত দিয়ে নারাচারা করছে।
– আম্মু,….
– হুম।
– বলোতো আমাকে দেখে এখন তোমার কি মনে হচ্ছে? মানে ছেলে মেয়ের চেহারা দেখলে নাকি মায়েরা সব বলে দিতে পারে।
– দিন দিন কেমন ফেকাসে হয়ে যাচ্ছিস তুই। আমার মনে হয় তুই কোনো বিষয় নিয়ে কষ্ট পাচ্ছিস।
রিদ এবার কেদে দিয়ে বলে উঠে,
– আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মু। খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে আমার।

আজ আর ক্লাস করতে ভালো লাগছেনা বৃষ্টির। দুইটা ক্লাস করে চলে আসছে বৃষ্টি। একটা রিক্সা ডেকে উঠে চলে আসছে বৃষ্টি। হটাৎ ই একটা রেস্টুরেন্টের সামনে রাতের গাড়িটা দেখতে পেলো বৃষ্টি। রিক্সা থামিয়ে ওখানে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো সে।
একটু পর বেরিয়ে এলো রাত। গাড়ি নিয়ে চলে গেলো সে। তার পরই বেড়িয়ে আসলো বর্ষা। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের চলে যাওয়ার দিকে।
বৃষ্টি চলে গেলো বাড়ির দিকে।
বাসায় গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে নেয় বৃষ্টি। তার পর লম্বালম্বি ভাবে সুয়ে থাকে বিছানায়। পাশে থাকা ফোনটা বাজতেই আছে অনাবরত। স্কিনে ভেষে আছে রাতের নাম।

রাত তখন গভির। সন্ধার পর বৃষ্টি হওয়ায় ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। ঘুমের ঘরে আচ্ছন্ন আরশি। গায়ে হালকা শিতল হওয়া স্পর্স করছে তার। কেও একজন কাঁথাটা টেনে তার গায়ে দিয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে চলে যাচ্ছে সে। আরশি পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে ডেকে উঠে,
– রিদ ভাইয়া…
আরশি চার দিকে তাকিয়ে দেখে রুমে কেও নেই। আর তার গায়েও কোনো কাঁথা নেই।
আরশির বুঝতে বাকি রইলোনা, পূর্বের সৃতি গুলো মনে এসে নাড়া দিচ্ছে বার বার।
আরশি যেনো গুন গুন করে বলে উঠে,
– আমি আর এমন করবোনা রিদ ভাইয়া। ফিরে আসোনা একটিবার। তোমার মুখে বার বার ভালোবাসি শব্দটা শুনে বিরক্ত হবোনা আর। ফিরে আসোনা একটি বার। তোমার ছোট্ট দুষ্টুমি গুলোতেও বিরক্ত হবোনা আর। ফিরে আসোনা একটি বার।

পরদিন সন্ধায় ছাদ থেকে নেমে এসে দেখে রাত্রি চৌধুরি চা বানাচ্ছে কিচেনে। বৃষ্টি মাথা নিচু করে তার সামনে গিয়ে দাড়ালো। রাত্রি চৌধুরি চা ঢালতে ঢালতে বলে উঠে,
– কিছু বলবে?
কিছু না বলেই হুট করে রাত্রি চৌধুরিকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো বৃষ্টি।
– আরে আরে কি করছে পাগলিটা। কি হয়েছে বলবেতো। রাত কি কিছু বলেছে? আজ ও বাড়িতে আসুক তার পর বুঝাচ্ছি তাকে। যেমন বাপ তেমন তার ছেলে। সোফায় বসে টিভি দেখছিলো রুদ্র চৌধুরি। সে বলে উঠে,
– আমায় নিয়ে কি বলা হচ্ছে শুনি? আমি আর আমার ছেলে কি আবার বলো তো।
– তুমি চুপ করো, তোমার আস্কারা পেয়ে পেয়ে ছেলেটা এমন হয়েছে।
– ইদানিং মনে হয় কানটাও সমস্যা করছে। কেমন জানি মনে হয় সব উল্টা পাল্টা শুনি। দুঃখিত মেডাম।
বৃষ্টি কেদে কেদে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বলে উঠে,
– আমায় ক্ষমা করে দিয়েন মা।
এই বলেই চলে যায় বৃষ্টি। রাত্রি চৌধুরি হা হয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে।

বৃষ্টি পাশে ফিরে দেখে রাত ঘুমাচ্ছে বেঘোরে। রুমটা অন্ধকার। হয়তো ঘন্টা খানেক পর ভোরের আলো ফুটে উঠতে শুরু করবে। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে সারে তিনটা বাজে।
চিরেকুট টা টেবিলে রাখলো বৃষ্টি। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রাতের ঘুমন্ত চেহারার দিকে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে তার। হিচকি তুলে কাদতে ইচ্ছে করছে আজ। রাতের মুখটায় একটা চুমু একে দিতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু তা আর হলোনা। হয়তো রাত জেগে যাবে।
এখন বাসার সবাই ঘুমাচ্ছে। যা করার এই মুহুর্তটায় করতে হবে। ছোট ব্যাগটা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে আসে বৃষ্টি। ভয় ডর আজ তার ধরা ছোয়ার বাইয়ে।এই নির্জনরাস্তায় একাকি কাদতে ইচ্ছে করছে তার। ব্যাগটা নিয়ে নিরবে হেটে চলছে সে। হয়তো আমি চলে যাওয়ার পরই সব নাটকের সমাপ্তি হবে। এসব নাটক দেখতে দেখতে আজ আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। শুনলাম বড় বোন থাকাটা নাকি ভাগ্যের ব্যাপর। তাহলে এটাই কি আজ তার ভাগ্য?

স্টেশানে বসে আছে বৃষ্টি। ভোরের আলো একটু একটু করে ফুটে উঠতো শুরু করেছে। ফোনটা বের করে সিম খুলে নেয় বৃষ্টি। যাতে কেও আর যোগাযোগ করতে না পারে। এসব মায়া জাল ছেরে অনেক দুরে চলে যেতে চায় সে। যেখানে থাকবেনা এসব ক্রাইসিস। আর নিতে পারছেনা সে। ভুল হোক সঠিক হোক এটাই আজ তার সিদ্ধান্ত যে সে চলে যাবে আজ অনেক দুরে। সবার থেকে হারিয়ে যাবে সে। তার এই নির্বাসনে জদি সব ঠিকঠাক হয়ে যায় তাহলে মন্দ কি?
ট্রেন চলছে আপন গতিতে। সামনে বসে থাকা একটা হ্যান্ডসাম ছেলে বসে বসে পত্রিকা পরছে। পেপারের কারণে মুখটা দেখা যাচ্ছেনা তার।
ট্রেনের চলায় মাঝে মাঝে ঝাকুনি দিচ্ছে হালকা। নিজের দিকে তাকিয়ে পেটে হাত দেয় বৃষ্টি। কারণ ওই পেটেও বেড়ে উঠছে নতুন কেও। তার আর রাতের এক মাত্র ভালোবাসার অংশ। আজ থেকে না হয় এই নিশ্পাপ প্রানটাকে নিয়েই বেচে থাকবে সে।

…….. সমাপ্ত……..

বিঃদ্রঃ গল্পটি অসমাপ্ত। এর মাঝে আছে আরো অনেক প্রশ্ন লুকিয়ে। রিদ ও আরশির কি হয়েছিলো? রিদ কি ফিরে আসবে। আর আসলেও সে আরশির সাথে কেমন আচরণ করবে? রাত আর বৃষ্টির কি হয়েছিলো? বৃষ্টি কি পারবে তার ছোট্ট ভালোবাসার অংশটাকে নিয়ে একা বেচে থাকতে। তাদের মাঝে কি আবার দেখা হবে? বর্ষারই বা কি হলো শেষে। সব মিলিয়ে গল্পটি অসমাপ্ত। আপনারা চাইলে সমাপ্তি পর্ব টানতে গল্পটির সিজন ২ নিয়ে আসবো খুব শিগ্রই। আর গল্পটির সম্পর্কে আপনাদের মাতামত জানাবেন। বৃষ্টির সিদ্ধান্তটা কতটুকি ভুল বা সঠিক ছিলো?

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১৯

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৯

সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষ নামক বিশ্বাস ঘাতক প্রানিটা সামনে পরতেই স্তব্দ হয়ে যায় রাত। বৃষ্টি রাগে হেটে চলে যায় সেখান থেকে।
বর্ষা দু,হাত বুকে গুজে রাতের দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– কেমন আছো?
– ভালো। তুমি এখানে? আর একা? তোমার ওই প্রিয় মানুষ, নামটা যেনো কি ওর? কোথায় সে?
বর্ষা মাথা নিচু করে বলে উঠে,
– সরি রাত। আমি না বুঝে তোমার সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। প্লিজ রাত আমায় একটিবার ক্ষমা করা যায় না?
– ক্ষমা আমি তোমাকে অনেক আগেই করে দিয়েছি। যেদিন থেকে বুঝেছি, তুমি আমার জীবন থেকে চলে গিয়েছিলে দেখে বৃষ্টির মতো কাওকে পেয়েছি আমি।
– প্লিজ রাত, ভুল তো মানুষই করে তাই না। আর তোমার মনে আছে? আমি রোজ ভুল করতাম আর তুমি ক্ষমা করে দিতে। তার পর আবার নিজেকে সুধরে নিতাম আমি। মনে আছে তোমার রাত? একটি বার সুজুগ দাও আমায়।
– তোমার ভুল গুলো ক্ষমা করে দেওয়াই আমার সব চেয়ে বড় ভুল ছিলো। কথায় আছে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালি কনা বিন্দু বিন্দু জল, তৈরি করে মরুভুমি সাগর অতল। আর তুমি কেমন মেয়ে হ্যা? কি করে পারলে এভাবে এতো বছরের ভালোবাসাটা ভুলে যেতে? আর কিভাবেই বা চাইছো এখন নিজের আপন ছোট বোনের গুছানো সংসারটাকে নষ্ট করে দিতে? তুমি কি মানুষ? একটু বিবেক বোধ কি আছে তোমার অন্তরে? এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরও কিভাবে তুমি আমার সামনে দাড়িয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছো? তোমাকে আমি যতো দেখছি ততোই অবাক হচ্ছি। যেনো আমার সামনে এক বড়ু গিড়গিটি দাড়িয়ে আছে। যে মুহুর্তেই রং বদলাতে পারে। নেক্সট টাইম এসব অধিকার চাওয়া তো দুরের কথা আমার সামনে দাড়াতেও দশ বার ভেবে দেখবে আগে। আরেকটা কথা মনে রেখো। তোমাকে হারিয়ে বৃষ্টিকে পাওয়াটা আমার দুর্ভাগ্য ছিলোনা, ছিলো সৌভাগ্য। আমি সত্যিই ভাগ্যবান ওর মতো মেয়েকে পেয়ে। যে দুঃসময়কেও চুপচাপ মানিয়ে সু-সময়ে রুপান্তরিত করতে পারে।
,
,
বৃষ্টি বর্ষাকে নিয়ে কিছু জিগ্গেস করলোনা রাতকে। রাতও এই নিয়ে আর কথা তোলেনি। রাতের বেলায় রাতের ফোনে একটা ছবি পাঠায় বর্ষা। ছবিটা ছিলো তিহানের। রাত দেখতে চেয়েছিলো ছেলেটাকে। ফোন অন করে ছবিটা দেখতেই যেনো গায়ে কাটা দিয়ে উঠে রাতের। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে তার। ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে যায় সে। বাবা বাবা বলে কয়েকবার ডাক দিতেই রাতের পাশে গিয়ে দাড়ায় বাড়ির সবাই। রুদ্র চৌধুরি ধিরে পায়ে নিচে নেমে সোফায় বসে বলে উঠে,
– কি হলো রাতের বেলায় এমন চেচাচ্ছিস কেনো?
– বাবা আরশির বিয়ের আর কয়দিন বাকি?
– কেনো সাত দিন।
– বিয়েটা এক্ষুনি কেন্সেল করো তুমি।
– কেনো কি হয়েছে?
– আরশির সাথে যে ছেলের বিয়ে হয়েছে তার নাম তুর্জয়, রাইট?
– কি বলতে ডেকেছিস আসল কথাটা বল।
– তুর্জয়ের পরু নাম কি?
– কেনো? তুর্জয় আহমের তিহান।
রাত ফোনটা বের করি রুদ্র চৌধুরির সামনে ধরে।
ছবিটা ছিলোবিদেশে থাকতে পার্টিতে মেয়ে কোলে নিয়ে ড্রিংস করার ছবি।
– ও মাই গট।
– শুধু তাই নয়, এই ছেলেটা কে তা জানো? আমাদের বিয়ের দিন বৃষ্টির বড় বোন বর্ষাকে নিয়ে পালিয়েছিলো।

ব্যাস পরদিনই ভেঙে যায় আরশির বিয়েটা। বৃষ্টি জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন কেদেছে আরশি। জানেনা কেনো কেদেছে তবে হ্যা, বিয়েটা ভেঙে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আরশিই। কিন্তু কেনো খুশি হয়েছে তাও সে জানেনা। এটা কি তাহলে অদৃশ্য কোনো এক টান?
,
,
বৃষ্টিকে ডেকে নিয়ে যায় বর্ষা। বৃষ্টি ওই বাড়িতে গিয়ে দেখে সব ঠিকঠাকই আছে। শুধু বাবা নাকি এখনো কথা বলেনি বর্ষার সাথে।
বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কেদে চলছে বর্ষা।
– প্লিজ বোন আমায় ফিরিয়ে দিস না আজ। তুই বললে রাত ঠিকই বুঝবে। দেখ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর তোকে তো আমি ছোট বেলা থেকেই কতো আদর ভালোবাসা দিয়েছি। কখনো তোর কাছে কিছু চাইনি। কিন্তু এখন বেহায়ার মতো বার বার তোর কাছে অনুরুধ করছি। আমায় ফিরিয়ে দিস না বোন।
কিছু বলতে পারছেনা বৃষ্টি। বুকের ভেতরটা শুধু হু হু করে উঠছে বার বার।
ছোট বেলা থেকে কখনো বর্ষাকে এভাবে কাদতে দেখেনি বৃষ্টি। লাইফে এই প্রথম দেখছে। তাও তাকে অনুরুধ করে করে কাদছে বর্ষা। কিচ্ছু মাথায় আসছেনা বৃষ্টির। এক মুহুর্তে কি সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়?
চোখ বন্ধ করে রাখে কিছুক্ষন। বার বার চোখের সামনে ভেষে উঠে, রাতের সাথে কাটানো মগহুর্তগুলো। নিজের অজান্তেই বৃষ্টি বতে শুরু করে,
– আমি পারবোনা রাতকে ছারতে। এই কয়েক মাসে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আমি তাকে। অনেক বেশি। তাকে আমি কিছুতেই ছারতে পারবোনা। আর তোমার জদি রাতের প্রতি এতোই ভালোবাসা থেকে থাকে, তাহলে ছেরে গিয়েছিলে কেনো এভাবে? এটাই বুঝি তোমার ভালোবাসার নমুনা? এর পর আবার অন্য ব্যটার কাওকে পেলে আবার রাতকে ছেরে যাবেনা তার কি গ্যারান্টি আছে? তোমার ওটা ভালোবাসা নয় ওটা হলো লোভ। আর আমি মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি রাতকে। আমি ছারতে পারবোনা তাকে।
– তুই রাতকে ছারতে পারবিনা?
– না।
– তাহলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি। তোর চোখের সামনে লাশ হয়ে সুয়ে থাকবে তোর ছোট বেলা থেকে আপু ডাকা মানুষটা। তোর কারনে লাশ হয়ে তোর সামনে পরে থাকবে সে। সহ্য করতে পারবি তখন?
এবার যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে বৃষ্টি। বর্ষা এমন কিছু বলবে তা হয়তো ভাবতেও পারেনি সে।

মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো বৃষ্টি। খেয়ে যেতে বলেছিলো তাকে। কিন্তু বৃষ্টির মনে দুঃশ্চিন্তার ভার। বর্ষা ছোট বেলা থেকেই এক ঘেয়ি একটা মেয়ে। জেদি মেয়ে ও। যা বলে তাই করে বসে। কোনো বিশ্বাস নেই এই মেয়েকে। না, কিচ্ছু মাথায় আসছেনা বৃষ্টির। একাকি রাস্তার পাশে বসে কিছুক্ষন নিরবে চোখের জল ছারলো বৃষ্টি। বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। নিজের স্বামিকে যতটা ভালোবাসে ততোটা নিজের বোনকেও বাসে সে। তার এখন কি সিদ্ধান্তে পৌছানো উচিৎ?
,
,
রুমটা গোচগাছ করে জামা গুলো ঠিক ভাবে আলমারিতে ঘুচিয়ে রাখছে বৃষ্টি। ফোন টিপতে টিপতে রুমে এসে সোফার মাঝে বসে রাত। কিন্তু বৃষ্টির মুখে কোনো কথা না শুনে ফোনটা সোফায় রেখে পেছন থেকে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,
– মন খারাপ?
– উহু
– তাহলে?
– এমনি ভালো লাগছেনা।
– শরির খারাপ?
– উহু ঠিক আছি আমি।
– তাহলে কিছু বলছোনা যে?
– ধরেন দুজন মানুষ, যাদের আপনি সমান ভাবেই ভালোবাসেন। সেখান থেকে জদি আপনাকে বলা হয় এক জন কে বেছে নিন। অন্য জন মরে যাবে তাহলে কি করবেন আপনি?
– গভির চিন্তার বিষয়।
– আচ্ছা ধরেন এমনও একটা পথ আছে যাতে করে দুজনই বেচে থাকবে তাহলে কি করবেন।
এবার উত্তর দিকে এক মুহুর্তও দেরি করলো না রাত।
– অবস্যই, এই পথটাই বেছে নিবো।
– ওহ্। আচ্ছা আপনি কি আপুকে এখনো ভালোবাসেন।
– ভালো বাসা যায় তাকে যে এটার সঠিক মর্যাদা দিতে যানে।
– উত্তরটা বললেন না।
আর কিছু না বলে হন হন করে বেড়িয়ে যায় রাত। হয়তো বর্ষার ব্যাপারে আর কিছু শুনতে চাইছেনা সে। আর উত্তর সে দিয়েই দিয়েছে।
কিন্তু সহজ সরল বৃষ্টি না বুঝে একটা দির্ঘশ্বাস ছারলো।
,
,
রাতের বেলায় রুম ঘাটতে ঘাটতে একটা পুরাতন ডায়রি পায় বৃষ্টি। অতটাও পুরান নয়। কিন্তু রাত যে ডায়রি লেখে তা তো জানা ছিলোনা।
খুলে পড়ার ইচ্ছে জাগে বৃষ্টির।
পুরু ডায়রিটায় বর্ষাকে নিয়ে নানান অনুভুতিতে ভরা। বর্ষার সাথে কাটানোর বেষ্ট দিন গুলো বন্ধি করে রেখেছে এই ডায়রিতে। দেখে হিংসে হয় বৃষ্টির কতো ভালোবাসা ছিলো তাদের মাঝে। রাত বর্ষাকে কতোটা ভালোবাসতো তা তার এই কলমে লিখা অক্ষরগুলোতেই প্রকাশ পাচ্ছে।
“” আজ এই বিকেলটা ছিলো আচ্ছন্ন ময় একটা বিকেল। তবুও স্নিদ্ধ শিতল ছোয়া বাতাসে পারি দিয়েছি তোমার সাথে দির্ঘতম এক পথ। ইশ, আজ এই বিকেলটা জদি শেষ না হতো তাহলে বোধ হয় ভালো হতো। হয়তো এখনো তোমার সাথে থাকতে পারতাম আমি। বাতাসে উড়ে পড়া চুল গুলো কপালে গুজে দিতাম আলতো করে। কিন্তু কোনো একদিন হটবো এমন এক অপুরন্ত পথ। বিকেল পেরিয়ে সন্ধা হবে, সন্ধা পেরিয়ে রাত, রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটে উঠবে রাঙা প্রভাত। তবুও এই পথ শেষ হবেনা আমাদের। এই মায়াবতি শুনছো তুমি? ঐ দিন হাটতে না চাইলেও হাটতে হবে তোমায়। আর না পারলেনা হয় কোলে তুলে নিবো। তবুও যতে হবে তোমায়। এই মায়াবতি শুনছো?””

এমন আরো অনেক অনুভুতি জমা এই ডায়রির পাতায়। শেষ পাতায় ছোট্ট একটা লিখা।
“” অনেক বেশিই ভালোবাসি তোমায়। আই উইশ, আমাদের বিচ্ছেদ যেনো শুধু মাত্র মৃত্যুতেই হয়।

To be continue………

~~ রি-চেক করার সময় পাইনি। ভুল ত্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১৭+১৮

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৭

রিদকে বিদায় দিয়ে সবাই চলে আসে বাড়ি। রিদ প্রায় সময়ই এই বাড়িতে ছিলো। খুব হাঁসি খুশিই ছিলো সে। কিন্তু হটাৎ এমন কেনো করলো তা সবারই অজানা। রাত সেই আসার পর থেকেই বিষন্ন মনে বসে আছে ঘরে। সেই ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে দুজন। একসাথে কতোই না সময় পার করেছে তারা। বারান্দায় চেয়ারে বসে মস্ত বড় চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
একটু পর আরশি আসলো ওখানে। কিছুক্ষন রাতের সামনে দাড়িয়ে আছে কোনো কথা নেই মুখে।
রাত নিরবতা ভেঙে বলে উঠে,
– কি রে কিছু বলবি?
মাথা নাড়িয়ে “না”সুচক সম্মতি জানিয়ে আবার চলে গেলো আরশি।
রাত আবার বসে রইলো আগের মতো।
রাতের খাবার খেয়ে সোফায় একটু গা এলিয়ে বসে আছে সবাই। রুদ্র চৌধুরি উঠে নিজের রুমে চলে গেলো একটু আগে।
রাত্রি চৌধুরির মুখে চিন্তার ভাজ। রিদ ঠিকঠাক মতো পৌছাতে পারবে কি না?
– রিদ কি তোকে কিছু বলে গেছে?
গম্ভির গলায় রাতের দিকে চেয়ে প্রশ্ন ছুরে দেয় রাত্রি চৌধুরি।
– না মা, আমায় তেমন কিছু বলে নি। রিদ তার বেশির ভাগ কথাই আমার সাথে শেয়ার করতো। কিন্তু হটাৎ কেনো চলে যাচ্ছে তা অনেকবার জিঙ্গেস করলেও কিছু বললো না সে। বললো, মামা মামির কথা নাকি মনে পরছে খুব। তাই চলে গেলো।
– কেমন আছে কি করছে, ঠিকঠাক মতো পৌছাতে পরছে কিনা তাও জানিনা।
– টেনশন করোনা, সে পৌছালেই ফোন দিবে।
– আচ্ছা, ছেকা টেকা খায়নি তো আবার?
– আমি যতদুর জানি রিদের কোনো মেয়ে বন্ধুও ছিলো না। বাকিটা কে জানে। হয়তো আমার থেকে লুকাতেও পারে। কিন্তু এমন কোনো বিষয় নিয়ে আমার সন্দেহ হয়নি কোনো দিন।
– আমার বাবার বংশে একটাই মাত্র ছেলে। কোনো অসুবিধা না হলেই হয়। পৌছালে আমায় একটু জানাস, টেনশানে মাথাটা ধরে আসছে তোরা থাক তাহলে। আমার আবার না ঘুমালে ব্যাথা বাড়তেই থাকবে।
রাত্রি চৌধুরি সোফায় ভর করে উঠতেই বৃষ্টি গিয়ে এক হাত কাধে তুলে নিয়ে বলে,
– বেশি ব্যাথা করছে মা? চলেন আপনাকে রুমে দিয়ে আসি।
না আমি ঠিক আছি যেতে পারবো, তুমি এখানে আড্ডা দাও।
– না পারবেন না, আর মায়ের মুখের উপর মেয়েদের এতো কথা বলতে নেই। চলেন তো।
রাত্রি চৌধুরি কিছুক্ষন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,
– আচ্ছা মা, আপনার কথাই চিরধার্য।
,
,
সকালে ঘুমের মাঝে হাতটা টেনে কেও তোলার চেষ্টা করছে রাতকে। কিন্তু আফসোস একটুও উঠাতে পারছেনা তাকে। এর আগে অনেক্ষন ধরে ডেকে না তুলতে পেরে এবার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিয়েছিলো বৃষ্টি। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।
হাপ ছেরে বিছানার এক পাশে ধপাস করে বসে পরে বৃষ্টি।
“এভাবে মরার মতো কেও ঘুমায়? কানের কাছে বোম মারলেও মনে হয়না এই ঘুম ভাঙবে। ইচ্ছে করছে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি।
এবার পাশে থাকা বালিশটা নিয়ে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা বারি দিলো রাতকে। তবুও রাতের কোনো সারা শব্দ নেই।
এবার একটু ঘাবরে যায় বৃষ্টি। বুকের বা-পাশটায় মাথাটা রেখে কান পেতে শুনতে থাকে হৃদপিন্ডের শব্দ।
বৃষ্টির ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তা আর হলোনা। ইন্টারে উঠেই গ্রুপ চেন্জ করেছিলো সে। ওসব বিজ্ঞান তার মাথায় ঢুকবেনা। এর চেয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়ে থাকাই ভালো। পড়ার চাপও কম।
কিন্তু এই মুহুর্তে ডাক্তারি করার একটা চান্স পেয়ে গেছে বৃষ্টি।
হাত ধরে পাল্স চেক করে, না সব ঠিকঠাক। কয়েকদিন আগে মুভিতে দেখেছে হিরোর কোনো এক কারনে জ্ঞান ফিরছেনা। হিরোইন তখন বুকের উপর দু,হাত দিয়ে চাপ দিচ্ছে। তার পর ঠোটে ঠোট রেখে কি যেনো করলো, কিছুক্ষন পর লাফিয়ে উঠে গেলো হিরো।
বৃষ্টি রাতের পেটের উপর উঠে বসলো। হাত দিয়ে বুকে হালকা করে চাপ দিচ্ছে। পদ্ধতির দ্বিতীয় ধাপ প্রয়োগ করতে কিছুটা লজ্জা গ্রাস করে নেয় তাকে। তবুও সে দেরি না করে রাতের ঠোটে ঠোট রাখে বৃষ্টি। কিছুক্ষন পর ছেরে দিয়ে দেখে রাতের এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। এবার জেনো সত্যিই ভয় গ্রাস করে নিয়েছে বৃষ্টিকে। কান্নার ভাব চলে আশে মুখে।
মুহুর্তেই যেনো খিক খিক করে হেসে উঠে রাত। যানো অনেক্ষন ধরে হাসিটা থামিয়ে রেখেছে সে। রাগের চরম পর্যায়ে নিচের ঠোটটা দাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বড় বড় পরে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। পেটের উপর বসা অবস্থায় এলোপাথারি কিল ঘুষি দিতে থাকে রাতের বুকে। রাত হাসতে হাসতে বৃষ্টির হাত দুটি ধরে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় তাকে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
– তোমার কাছ থেকে আদর পেতে হলে তো দেখছি রোজ রোজই নতুন নতুন এক্টিন করতে হবে। কিছুক্ষন আগে যভাবে বুকের উপর মাথা রেখে হৃদপিন্ডির আওয়াজ শুনছিলে ওভাবে আর কিছুক্ষন সুয়ে থাকোনা প্লিজ। অনুভুতিটা ছিলো অতুলনিয়।

নাস্তা সেরে অফিসে চলে যাচ্ছে রাত। বৃষ্টিকে কলেজে নামিয়ে দিবে যাওয়ার পথে। বর্ষা শেষ হতে চললো প্রায়। দু,এক মাস পর পরতে থাকবে হার কাপানো শীত।
সকাল থেকেই আকাশটায় মেঘলা মেঘলা ভাব। হলকা শিতক বাতাস বইছে। আকাশটা ঘিরে ফেললো মেঘ।
পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– আজ কলেজে যাবোনা আমি।
– কেনো?
– ইচ্ছে করছেনা আজ। ধরে নিন এটা একটা অনুরুধ, প্লিজ।
– তো কি করবে?
কোনো নির্জন রাস্তায় নিয়ে চলুন না।

গাড়ি এসে ব্রেক চাপলো একটা নির্জন রাস্তায়। রাতের ফোন টা বাজছে। দেখে মামির নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
– হ্যালো মামি, আসসালামু’আলাইকুম।
– ধুর বেটা আমি রিদ। তোর মামি হলাম কবে?
– ও তুই। পৌছেছিস ঠিক মতো? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
– না তেমন সমস্যা হয়নি। এইতো মাত্র এয়ার্পোট থেকে বের হলাম। তাই আম্মুর ফোন থেকেই তোকে ফোন দিলাম।
রিদ ও মামা মামির সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রাখে রাত। দেখে পাশে বৃষ্টি নেই। সামনে তাকাতেই দেখে বৃষ্টির তালে তালে নাচছে সে। রাত মুখ দিয়ে একটা “চ” সুচক শব্দ করে গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টির দিকে হাটা ধরে। বৃষ্টি দৌড়ে এগিয়ে এসে রাতের হাত দু,টি ধরে ঘুরছে আর হাসছে। ঘুরতে ঘুরতে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাতের বুকের উপর ঢলে পরে সে।
– এই বৃষ্টিতে ভিজে তো এর আগেও একবার জ্বর বাধিয়েছিলে। এখন আবার শখ উঠছে নাকি?
– হুম। অসুখ হওয়া মানেই আপনার থেকে এক্সট্রা কেয়ার পাওয়া। ওফ কি যে ভালো লাগছে।
– ওরে বাদর, এবার কেয়ার নয়। তোমার মতো বাদরের লেজ ধরে মাথায় তুলে আছার দিবো।
– সমস্যা নেই, আমার কোনো ভয় নেই, কারন আমার লেজও নেই।
বলেই রাতকে ছেরে বৃষ্টির তালে তালে নাচতে থাকে বৃষ্টি। রাত বলে উঠে,
– গাড়িতে উঠো বলছি।
– না, আমি ভিজবো আজ, আপনার ভালো না লাগলে আপনি চলে যান। তবুও আজ এই বৃষ্টি ছেরে কোথাও যাচ্ছিনা আমি।
রাত এবার আর কিছু না বলে বৃষ্টির কাছে এসেই কোলে তুলে নেয় তাকে। হাটতে থাকে গাড়ির দিকে। বৃষ্টির হাতপা ছোরাছুরি। তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে আজ এখান থেকে কোথাও যাবেনা।

বারান্দায় বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। আজ এি বৃষ্টি দেখে মনে পরে গেলো, পুরুনো এক সৃতির কথা।
রাত না থাকায় রিদ যায় আরশিকে স্কুল থেকে আনতে। আসার পথে, সে কি তুমুল বৃষ্টি। রাস্তার পাশে একটা জায়গায় ফুলের চাষ করা হয়। সেখানে ফুল গুলো গোল খাচ্ছে বৃষ্ট ফোটায়। ফুল দেখে লাফিয়ে উঠে আরশি। তখন আরো ছোট ছিলো। রিদকে বলে উঠে, ভাইয়া আমায় ওই ফুলটা এনে দাও না। রিদ গাড়ি থামিয়ে চলে যায় সেখানে। ভিজতে ভিজতে আরশির জন্য নিয়ে আসে ফুলটা। আরশি মুখ কুচকে বলে উঠে,
– এটা না তো, ওই লালটার কথা বলছি।
রিদ আবার চলে যায়। লাল ফুলটা ছিড়ে পিরে আসতেই দেখে দুইটা কুকুর তাড়া করে আসছে তার দিকে। দৌড়াতে দৌড়াতে কয়বার পড়ছে তার হিসেব নেই। কোনো মতো কুকুর গুলোর হাত থেকে বেচে গাড়িতে এসে বসে রিদ। ভয়ে শরিরটা কাপছে তার। কুকুর গুলো এসে গাড়ির পাশে লাফাতে থাকে। গ্লাস থাকায় ভেতরে আসতে পারছেনা। আরশি ভয়ে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে রিদকে। রিদও কাপা হাতে এক হাত দিয়ে আরশিকে জড়িয়ে অপর হাত দিয়ে ড্রাইবিং করে চলে গেল সেখান থেকে।

ভাবতে ভাবতেই মায়ের ডাক পেয়ে উঠে চলে যায় আরশি। রিদের সাথে কটানো মুহুর্তগুলো কেনো বার বার মনে পরছে নিজেও জানেনা সে। হয়তো দুরুত্ব বেরে গেছে বলে।

কেটে গলো আরো কয়েকদিন।
সকালে মা আজ কেনো হটাৎ বাড়ি যেতে বলছে নিজেও যানেনা সে। আবার একা। বৃষ্টিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলো রাত। বৃষ্টি ভাবলো কলেজের সময়টাতে তার খোজ নেওয়ার তেমন কেও নেই। এই সময়টায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবার চলে আসতে পারবে সে। কলেজে না ঢুকে। একটা গাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলো বৃষ্টি। কলেজ ছুটির আগেই আবার এখানে চলে আসবে সে। তাহলে কারো কাছে আর কৈফিয়ত দিতে হবেনা। বাড়ির সামনে গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরে বৃষ্টি। কলিং বেল বাজাতেই দরজা খোলে বৃষ্টির মা।
– এসেছিস? আর কেও এসেছে?
– না মা, আমি কলেজ থেকে এসেছি, কেও জানেনা।
– আচ্ছা বস।
– এমন ইমার্জেন্সি ডাকার কারন কি মা?
– তোর রুমে যা, বুঝতে পারবি ডাকার কারনটা।
বৃষ্টি ঠোট ফুলিয়ে কিছু না বুঝার মতো করে হাটা ধরে রুমের দিকে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই যেনো অবাকের চরম সীমানায় সে। মুহুর্তেই একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠে সারা শরির।
কারন বিছানায়হাত পা গুটিয়ে বসে আছে বর্ষা। যার কারনে বৃষ্টির জীবনের মোড়টা পুরাই পালটে গিয়েছিলো।

To be continue……..

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৮

দুপুর ১টার কাছাকাছি। একটা রিক্সা ডেকে উঠে পরে বৃষ্টি। সূর্যটা প্রায় মাথার উপর। রোদের তাপে যেনো চারদিকে চোখ মেলে থাকাটা কষ্ট কর। বৃষ্টি তাকিয়ে দেখলো রিক্সা ওয়ালা চাচার দিকে। ঘামে চুপচুপে অবস্থা তার। তবুও থেমে থাকছেন না তিনি। গলায় ঝুলে থাকা গামছাটা দিয়ে একটু পর পর মুখের ঘাম মুছে নিচ্ছে।
বৃষ্টির মনে আসছে কয়েকটা প্রশ্ন। সারা দিন রোদে পুরে এতো পরিশ্রম করে কতো টাকা আয় করে সে? চার,শ পাঁচ,শ তাও কতো জনের কতো কথা শুনতে হয় তাদের। এতের মাসিক আয় কতো? ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো। আর কারো কারো কাছে এই টাকা এক দিনের সামান্ন রেষ্টুরেন্টের বিল। পৃথিবী টা সত্যিই অদভুত। এই রঙিন পৃথিবিতে কারো কাছে জীবন মানে বিলাসিতা, আর কারে কাছে এই জীবন মানে কোনো রকম খেয়ে পড়ে বেচে থাকা।
হু হু করে চলছে রিক্সা। কিছুক্ষন পর পৌছে গেলো কলেজের সামনে। যাক রাত আসার আগেই পৌছে গেছে সে।
কলেজ ছুটির পর প্রায় এক ঘন্টা ওখানে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। কিন্তু রাত আসার কোনো নাম গন্ধও নেই। বৃষ্টি ঠোট ফুলিয়ে গলা টেনে রাস্তার এদিক ওদিক দেখছে বার বার। সবাই চলে গেছে প্রায়।
একটু পর ছাউনির ভেতর কিছু ছেলে এসে বসলো।
ওখান থেকে একে অপরকে বলে উঠে,
– ও মাই গট, দিনে দুপুরে এই নিরিবিলি জায়গায়ও যে চাঁদের সন্ধান পাওয়া যায় জানা ছিলো না তো।
– আরে ওসব বাদ দে, মাইয়ার বডি ফিগার দেখেছিস? কে বানালো আপু?

ছেলে গুলোর এমন বাজে কমেন্টে ইচ্ছে করছে জুতা খুলে খুলে গালের উপর রক্ত জমাটের সীল বসিয়ে দিতে। কিন্তু ভয়ও করছে এখন। শুধু এক রাশ ঘৃনা নিয়ে হিজাবটা ঠিক ঠাক করে নেয় বৃষ্টি। ওদিকে রাতেরও আসার নাম গন্ধও নেই। রাগে কিছুটা হেটে একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে যায় সে। রাত আজ আসলোনা কেনো? প্রায় দের ঘন্টা ধরে দার করিয়ে রেখেও কোনো খোজ নেই তার। আমার প্রতি কি তার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে ধিরে ধিরে?

ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয় বৃষ্টি। বিছানায় বালিশের মাঝে দু হাত রেখে তার উপর থুতনিটা রেখে উপড় হয়ে শুয়ে আছে সে। আজকের সকালটা যেনো বার বার ভেষে আসছে তার চোখে।
সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখে বর্ষা বিছানায় সুয়ে সুয়ে কাদছে। বৃষ্টি গিয়ে বসে তার কাছে। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে তাকায় বর্ষা। বৃষ্টিকে জড়ি ধরেই হু হু করে কেদে উঠে বর্ষা।
ধিরে ধিরে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব খুলে বলে বৃষ্টিকে। আজ শুধু অন্য মনস্ক হয়ে চুপ চাপ সব শুনে যাচ্ছে বৃষ্টি।
কথার মাঝখানে বর্ষা বলে উঠে,
– আমার একটা অনুরুধ রাখবি বোন?
মুহুর্তেই যেনো বুকটা ধুক করে উঠে বৃষ্টির।
বর্ষা আর কিছু বলতে যাবে তখনই ডাক পরে মায়ের। তার মা ডাকছে তাকে। রুমের বাইরে গিয়ে দেখে বর্ষা আসার খবর পেয়ে তার বাবা অসময়েই ফিরে এসেছে বাড়িতে। মনে হচ্ছে অনেক ক্ষেপে আছে সে। বৃষ্টির সাথে কোনো কথা না বলেই তিনি গেলেন বর্ষার রুমের দিকে। ভয়ে বুক ধুপ ধুপ করছে বৃষ্টির। এখন কি বড় কোনো গন্ডোগোল লাগতে চলছে ঘরে?
কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমান করে, বর্ষার দিকে কিছুক্ষন রাগি ভাবে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায় সে। একটা সস্থির নিশ্বাস ছারে বৃষ্টি।
বৃষ্টিকে আর অনুরুধের কথাটা বলা হয়নি বর্ষার। তার বাবা বৃষ্টিকে দেখে রাগের ভাবে বলে উঠে,
– তুই আজ এখানে কেনো?
বৃষ্টি কাপা কাপা গলায় বলে উঠে,
– ম মা বলেছে আসতে।
– এসেছিস, দেখেছিস এবার চল তোকে দিয়ে আসি। আমি চাই না এখানে ইমোশনের মায়ায় পরে তোর ভবিশ্যৎ নষ্ট হোক।
তার পর কলেজ ছুটির আগে চলে যায় বৃষ্টি।
ফোনটা চার্জে দিয়ে চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে সে। চোখ খুলে দেখে প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। তখন চৈতি এসে ডেকে নিয়ে যায় তাকে ছাদে। গিয়ে দেখে আরশিও ওখানে।
,
,
সাজের বেলায় রাঙা গুধুলির আলোয়। চেনা অচেনা মানুষটার পাশে হাটছে আরশি। যার সাথে তার বিয়ের কথা চলছে। আশে পাশে তাকিয়ে হাটতেই আরশি মুখ ফসকে বলে উঠে,
– দেখেন ওই ফুলটা কি সুন্দর। আমাকে এনে দিবেন ওটা?
– ধুর কিসব জিনিসের প্রতি ইন্টারেস্ট তোমার? সামনে চলো দোকান থেকে ভালো দেখে ফুল কিনে দিবো তোমায়।
আরশি আর কিছু না বলে চুপ চাপ হাটতে থাকে। ভাবতে থাকে ভালোবাসাটা কোথায়? পছন্দের ফুলটাকে ছুরে ফেলে দিয়ে সামনে দোকান থেকে কিনে দিবে বলা লোকটার মাঝে? নাকি তার পছন্দ হয়েছে শুনে বৃষ্টির মাঝে ছুটে গিয়ে বেড়া টপকে কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে ফুল নিয়ে এসে হাসি মুখে তার কানের পাশে গুজে দেওয়া সেই রিদের মাঝে?
প্রায় সন্ধা হয়ে আসে। ফুচকার দোকান দেখে আরশি বলে উঠে,
– চলেন ফুচকা খাই,,,,
– এসব ফুটপাতের জিনিস কেও খায়? চলো সামনে রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে নিবো।
এবারও আরশির ভাবনায় আসে রিদের সাথে সেই এক প্লেটে বসে ফুচকা ভাগাভাগি করার মুহুর্তটা।
একটু আর চোখে লোকটার দিকে তাকায় আরশি। আজব মানুষ, হবু বৌয়ের কোনো ইচ্ছারই দাম নেই তার কাছে।

সন্ধার পর বাসায় ফিরে রাত। কিন্তু আসার পর থেকেই রাতের সাথে কোনো কথা বলছেনা বৃষ্টি।
– তা মোহারানী আজ কি নিয়ে রেগেছে তা জানতে পারি?
– আপনি আজ আমায় কলেজ থেকে নিয়ে আসেন নি কেনো?
– ওহ্ আই এম রিয়েলি সরি। আসলে খুব জরুরি একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম তো তাই। আর তোমাকে তা বলার জন্য কতোবার ফোন দিলাম কিন্তু প্রতিবারই বন্ধ পেলাম।
– ফোনের চার্জ ছিলোনা তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
রাত এবার পেছন থেকে বৃষ্টির কাধে থুতনিটা রেখে বলে উঠে,
– তো ম্যাডাম এবার বলেন দেখি দোষটা কি শুধু আমার নাকি আপনারও।
– মোটেও আমার না, আমি কি জানতাম নাকি যে এমন হবে?
– ওকে ম্যাডাম সব দোষ আমার মেনে নিলাম। এবার হ্যাপি? হ্যাপি হলে চলুন আপনার এই পাখির বাসার মতো এলোমেলো হয়ে থাকা জঙ্গটাকে একটু পরিচর্যা করি।
– জঙ্গল আসলো কোথা থেকে আবার?
– আপনার চুলের কথা বলছি ম্যাডাম।
বৃষ্টি রেগে হাতের কুনুই দিয়ে একটা গুতা দেয় রাতকে।
– মোটেও না, আমার চুল এমনিতেও খুব সুন্দর আছে।
– তো পরিচর্যা না করলে কি এই সুন্দর্য আর থাকবে? চলো চলো।
বৃষ্টিকে সামনে বসিয়ে মনোযোগ সহকারে চুলে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে রাত। আর তা চোখ বন্ধ করে মুগ্ধ মনে উপভোগ করছে বৃষ্টি।

বর্ষার সাথে কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে বৃষ্টির। বারবারই দেখা করতে বলছে বৃষ্টিকে। নানান দুশ্চিন্তার ভার যেনো অন্য মনস্ক করে তুলছে বৃষ্টিকে। মুখের হাসিটাও যেনো আগের তুলনায় কিছুটা বিলিন হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব ইচ্ছে জাগে। ইশ যদি জীবনের শেষটা সে কখনো আগে থেকে দেখতে পেতো তাহলে জীবন নিয়ে এতো টেনশন হতোনা তার। খুব ইচ্ছে হয় তার, এই গল্পের শেষটা একটিবার দেখতে।

গতকাল চৈতি গেছে ছুটিতে তার নিজের বাড়ি। বৃষ্টি রান্নঘরে গিয়ে রান্না করছে। রাত্রি চৌধুরিও আসে কিচেনে।
– বৌমা, তোমাকে ইদানিং কেমন গম্ভির মনে হয় কেনো? মনে হয় হাসি যেনো বিলিন হয়ে গেছে তোমার মুখ থেকে। কি হয়েছে তোমার? রাতের সাথে কোনো প্রব্লম হয়েছে?
– না মা তেমন কিছু না। সব তো ঠিকই আছে। আর এটা হয়তো আপনার মনের ভুল।
– না, তোমাকে যেনো ইদানিং একটু অন্য রকম দেখায়। তাই বললাম। মনে রেখো পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশি আঘাত পরে সোজা জিনিসের উপরেই।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো কিছুদিন।বৃষ্টির ইয়ার ফাইনালও শেষ।
সন্ধার পর কফিরমগে চুমুক দিয়ে দোলনায় বসে রাত। আরশিকেও বসতে বললো ওখানে।
– আমার সেই বোন টার কয়দিন পর বিয়ে। বিশ্বাসই হচ্ছেনা আমার। কয়েক বছর আগেও এই বোনটার কাছ থেকে চকলেট খেয়ে নিলে ফ্লোড়ে বসে হাত পা ছোড়াছোরি করে কান্না করতো।
বলেই হো হোকরে হেসে দেয় রাত। রাগে ঠোট ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে আরশি।
রাত কফির মগে আবার চুমুক দিয়ে বলে উঠে,
– যে জন্য ডেকেছি তোকে। আমি তোকে কিছু প্রশ্ন করবো, উত্তর হবে হ্যা অথবা না।
– হুম বলো।
– রিদের সাথে কি তোর কিছু ছিলো?
– হটাৎ এই কথা বলছো কেনো ভাইয়া?
– আমি বলছি উত্তর হবে হ্যা অথবা না। রিদের সাথে কি তোর কোনো সম্পর্ক ছিলো?
– না।
– তোর প্রতি রিদের বা রিদের প্রতি তোর কারো মনে কি কোনো অনুভুতি তৈরি হয়েছিলো?
– তার কথা জানিনা। তবে আমার, না।
– রিদের চলে যাওয়ার কারনটা কি তুই?
– আমি কি করে জানবো? তাকেই জিগ্গেজ করো।
– ওহ্, আচ্ছা যা। আমার ধরনাটা হয়তো ভুল ছিলো। ভেবেছিলাম বিয়ের তো এখনো কিছুদিন বাকি। চাইলে সবই পাল্টে ফেলতে পারতাম। আর হ্যা, তোকে এভাবে বলার জন্য, সরি।

পড়ন্ত বিকেল, চারদিক টায় হালকা বাতাস বইছে। হালকা বাতাসে সামনে আশা চুক গুলো নারাচারা করছে। চুলগুলো কানের পেছনে গুজে আবার হাটতে শুরু করলো বৃষ্টি। গায়ে একটা কালো রঙের শাড়ি। হাতে কালো চুড়ি। আর পাশে থাকা রাতের গায়ে একটা কালো পান্জাবি। বৃষ্টির হাতের আঙুলের ফাক দিয়ে রাত আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে হাটছে দুজন। আজ শুক্রবার। তাই বিকেলে বৃষ্টিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো রাত।
রাতের ধরে থাকা হাতটা হাটতে হাটতে দুলাচ্ছে বৃষ্টি।
হটাৎ সামনে পড়লো বর্ষা। দুজনই থমকে দাড়ায় ওখানে। বর্ষা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাত ও বৃষ্টির এক হয়ে থাকা হাতের দিকে।
রাতও আচমকাই হাতটা ছেরে দিয়ে বর্ষার দিকে তাকায়।
বর্ষার উপস্থিতিতে রাত এভাবে হাত ছেরে দেওয়ায় একটু অবাক হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি যেনো মনে মনে প্রশ্ন করে উঠলো,
– এটা কি হলো?
বৃষ্টি চোখ তুলে জিগ্গাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে।

To be continue……….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।