Thursday, July 3, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1423



ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-১০

0

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_১০
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

আকাশকে বাসায় আসতে দেখে ওর আম্মু বলল
“আকাশ আয়ান কোথায়?আয়ানকে নিয়ে আসিস নি।”

“আম্মু আয়ান আসে নি।কাজ শেষ করে বিকালে আসবে।”

রিয়া বলল
“আয়ান কি আমাদের সাথে বাসায় যাবে না?”

“হয়তো না।আয়ানের কথা শুনে এটাই বুঝলাম।”

আয়ানের আম্মু কান্না করছে।নিরা ওর শাশুড়ির কাছে গিয়ে বলল
“আম্মু আপনি কান্না করছেন কেনো?আয়ান তো বলে নি আপনাকে চলে যেতে।আপনি এইখানে থেকে যান।আয়ানকে বুঝিয়ে বলেন তাহলেই দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আয়ানের আম্মু বলল
“আয়ান আমাদের কারো কথাতে বাসায় যাবে না।ওর আব্বু যতদিন না ওকে বাসায় যেতে বলছে। ততদিন পর্যন্ত আয়ান বাসায় যাবে না।”

এবার আকাশ বলল
“আমারো তাই মনে হয়।কিন্তু আব্বু কি আয়ানকে বলবে বাসায় যেতে?”

“আমি ঠিক জানি না আকাশ।তোর আব্বু আয়ানকে বাসায় যেতে বলবে কি না সেটা আমার জানা নেই।কিন্তু আমি আয়ানকে ছেড়ে এখন বাসায় যাচ্ছি না।আমি এইখানেই থাকবো।”

রিয়া বলল
“হ্যা ফুপি এটাই ভালো হবে।ওনি তো আয়ানকে বাসায় নিয়ে যেতে পারলো না।বাসায় কত কি বলেছিল কিন্তু এইখানে এসে ওনার সব কথা ফুড় হয়ে গেছে।”

আকাশ রাগি চোখে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।নিলা নিরাকে ফিসফিস করে বলল

“আপু রিয়া আপু আকাশ ভাইয়াকে ওনি করে বলছে কেনো?”

“রিয়া আকাশ ভাইয়াকে ভালোবাসে।বিয়ের কথাবার্তা চলছে।এবার বুঝেছিস।”

“এত দূর!আমাকে তো এইসব কিছুই বললে না।”

“তোকে বলে কি হবে হ্যা?তুই কি আমাকে বলেছিস তুই রিয়াদকে পছন্দ করিস।কিরে বলেছিস সেই কথা?”

নিলা এবার চুপ হয়ে গেল।হঠাৎ রিয়া বলল

“ভাবি!”

“হ্যা রিয়া বলো।”

“বাসায় কি কিছু আছে রান্না করার মত?”

“আসলে আমরা গতকালকেই এই বাসাতে এসেছি।দুপুরে অল্প কিছু রান্না করার জন্য আছে।”

রিয়া আকাশকে বলল
“আপনি বাজার থেকে মাছ মাংস চাল আর কিছু কাচা বাজার নিয়ে আসুন।ভাবি আর আমি মিলে রান্না করবো দুপুরের জন্য।এখন তাড়াতাড়ি যান।”

আকাশ রিয়ার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে থেকে হনহন করে চলে গেল।নিরা ওর শাশুড়ি মাকে নিয়ে ভিতরে রুমে গেল।ওদের পিছনে সায়রাও গেল।এখন ড্রয়িংরুমে শুধু রিয়া আর নিলা আছে।রিয়া নিলাকে বলল

“তোমার সাথে ঠিক মত কথা হয় না নিলা।আজ কথা বলা যাবে কি বলো?”

“হ্যা আপু সেটা বলা যায়।

“এইখানে বসো।”

নিলা আর রিয়া নিচে বসলো।রিয়া বলল
“তা দিনকাল কেমন চলছে?”

“ভালো আপু।”

“আর আমার ভাইয়ের সাথে কেমন চলছে?”

কথাটা শুনে নিলা কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল।নিলা ভাবে নি রিয়া এমন কিছু বলবে।নিলা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।রিয়া নিচু হয়ে নিলার চেহারা দেখে বলল

“ইস আমার ভাইয়ের কথা বলাতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।আমি কিন্তু সব জানি।”

এবার নিলা সামনে তাকিয়ে বলল
“কি জানেন আপু?”

“এই যে আমার ভাই তোমাকে ভালোবাসে।কিন্তু তুমি ঠিক মত ওকে পাত্তা দেও না।”

নিলা হেসে বলল
“আপু আপনার ভাই এখনো এই কথাটা আমাকে বলতে পারে নি।সামনে থাকলে এমন একটা চেহারা করে মনে হয় কিছুই বুঝে না।কিন্তু ফেসবুকে দেখি কত ভাব আপনার ভাইয়ের।”

“ওইটা আর বলতে।রিয়াদের ভার্সিটিতে একবার যেও।তাহলেই বুঝতে পারবে।”

“কেনো আপু?”

“তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে কিছুটা শান্ত হয়ে গেছে নাহলে বেশিরভাগ সময় ভার্সিটিতে মারামারি করে।”

“কিন্তু ওনাকে দেখে তো সেটা বুঝা যায় না।”

“আগে এমন ছিল না।ভার্সিটিতে পড়ার পর থেকেই এমন হয়েছে।কিন্তু এখন আবার কিছুটা চুপচাপ।”

“ওহ আচ্ছা।”

রিয়ার সামনে কিছু বলল না নিলা।কিন্তু মনে মনে নিলা বলছে
“ভার্সিটি মারামারি করেন তাই না।একবার দেখা হোক।তখন আপনাকে মজা দেখাচ্ছি।আপনাকে যদি ঠিক না করেছি তাহলে আমার নামও নিলা না।”

আকাশ অনেক কিছুই বাজার করে নিয়ে এসেছে।নিরা আর রিয়া সব কিছু নিয়ে রান্নাঘরে গেল।ওরা ঠিক করছে কি কি রান্না করবে।নিলা ভিতরের রুমে গিয়ে আয়ানের আম্মুর পাশে বসলো।নিলাকে দেখে আয়ানের আম্মু বলল

“কেমন আছো নিলা মা?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি।আপনার শরীর এখন কেমন আছে?”

“আয়ান চলে আসার পরে আর আগের মত নেই।”

“এখন তো আয়ান ভাইয়ার কাছে থাকবেন।ভাইয়াকে একটু বকে দিবেন আন্টি।এমন কেউ করে বলেন?কাউকে না বলে এইখানে চলে এসেছে।জানেন আন্টি আম্মুও অনেক টেনশন করেছিল আয়ান ভাইয়াকে নিয়ে।কিন্তু এখন ভাইয়ার খোজ পেয়ে অনেকটা খুশি হয়েছে।”

“আমার যদি আরেকটা ছেলে থাকতো তাহলে তোমাকে সেই ছেলের বউ করে নিয়ে যেতাম।”

নিলা কিছু বলল না।কিন্তু নিলার পাশ থেকে সায়রা বলল

“আন্টি আপনার বড় ছেলে দেখতে কিন্তু বেস হ্যান্ডসাম।ওনার বিয়ে কি হয়ে গেছে?”

“তোমার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে পিচ্চি?”

রুমের ভিতরে আসতে আসতে আকাশ কথাটা বলল।কথাটা শুনে নিলা আর আকাশের আম্মু মুচকি মুচকি হাসছে।আর সায়রা তো পুরাই লজ্জায় পরে গেল।সায়রা ভাবে নি আকাশ এখন রুমে আসবে।সায়রা বলল

“আসলে আকাশ ভাইয়া আমি কথাটা মজা করে বলেছি।”

“তার মানে আমি হ্যান্ডসাম না।”

“না ভাইয়া।আমি এমনটা বলি নি।”

“তাহলে কেমন?”

“বলেছি আপনি অনেক ভালো।”

কথাটা বলেই সায়রা দৌড়ে রুম থেকে চলে গেল।এইখানে থাকলে সায়রা যে লজ্জায় পরবে সেটা বুঝেই পালিয়েছে।নিলা আয়ানের আম্মুকে বলল

“আন্টি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?”

“হ্যা নিলা মা বলো।”

“আন্টি আয়ান ভাইয়া এমন কেনো?”

“আয়ান আবার কেমন নিলা?”

“এই যে এতো রাগি।”

এবার আকাশ বলল
“আয়ানের এইসব আব্বু থেকে পেয়েছে।আব্বুও এমন তাই আয়ানও এমন হয়েছে।”

“কি বলেন ভাইয়া! আঙ্কেলও এমন!কিন্তু ওনাকে দেখে তো মনে হয় না?”

আকাশের আম্মু বলল
“আয়ানকে দেখে তোমার এমন মনে হয়েছিল নিলা?”

“না আন্টি।”

“বাপ ছেলে পুরো এক রকমের।”

দুপুরের রান্না শেষ করে ফেলেছে নিরা আর রিয়া মিলে।আজ সবাই নিচে খেতে বসেছে।খাওয়ার মধ্যে নিলা বলল

“আজ এইভাবে খেতে কিন্তু খারাপ লাগছে না।”

আকাশ বলল
“হ্যা আমারো বেশ ভালো লাগছে।এক্স

আকাশের আম্মু বলল
“খাওয়া শেষে কথা বলো সবাই।এখন খাওয়াতে মন দাও।”

আকাশের আম্মু কথা শুনে কেউ আর তেমন কথা বলল না।খাওয়া শেষে সবাই রেস্ট নিতে চলে গেল।আকাশকে আলাদা রুমে রেস্ট নেয়ার জন্য দেয়া হল।আর বাকি সবাই ভিতরের রুমে রেস্ট নিলো।বিকালের মধ্যে আয়ান বাসায় চলে আসলো।আয়ানের আম্মু আয়ানকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।অনেক দিন পরে আয়ানের আম্মু আয়ানকে দেখলো।আয়ান বলল

“আম্মু আমি বাইরে থেকে এসেছি।আগে ফ্রেশ হয়ে নেই।তারপরে তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুয়ে থাকবো।এখন ফ্রেশ হয়ে যেতে দেও আগে।”

“তুই কিভাবে পারলি আয়ান আমাকে ছেড়ে থাকতে?”

“আচ্ছা আম্মু এই সব কথা পরে হবে এখন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

আয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেল।রিয়া আয়ানের মাকে বলল

“দেখেছো ফুপি আয়ান কেমন করলো?মন তো চাচ্ছিল গিয়ে দুইটা লাগিয়ে দেই।”

“তুই চুপ কর তো।আয়ান কিন্তু তো ছয়দিনের বড়।”

“বড় না ছাই।শয়তানের হাড্ডি একটা।”

কিছুসময় পরে আয়ান ফ্রেশ হয়ে আসলো।নিরা খাবার নিয়ে এসে আয়ানকে দিলো।আয়ান খাবারটা খাবে তখন আয়ানের আম্মু ওর হাত থেকে খাবারটা নিজের হাতে নিয়ে বলল

“নিজের হাতে খেতে হবে না আজ।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

আয়ানের আম্মু আয়ানকে খাইয়ে দিচ্ছে।তখন আকাশ বলল

“আম্মু আমাকে তো এইভাবে খাইয়ে দিলে না কখনো?”

“রিয়াকে বল খাইয়ে দিতে।কয়েকদিন পর যখন তোদের বিয়ে হবে তখন রিয়াকে বলিস তোকে খাইয়ে দিতে।”

এবার রিয়া বলল
“সেই হিসেবে তো নিরা ভাবি আয়ানকে খাইয়ে দিবে।তাহলে তুমি কেনো আয়ানকে খাইয়ে দিচ্ছো?”

এবার আয়ান বলল
“আম্মু পেত্নীটাকে এই বাসাতে নিয়ে আসলে কেনো?আমার ভালো এই পেত্নী কোনো দিনই দেখতে পারে না।”

“ফুপি তোমার ছেলেকে বলো চুপ থাকতে না হলে কিন্তু ওর খবর আছে।”

আয়ানের আম্মু বলল
“এই তোরা থামবি?”

আয়ানের আম্মুর কথাতে ওরা চুপ হয়ে গেল।খাওয়া শেষে আয়ানের আম্মু বলল

“আয়ান এখন তাহলে বাসায় চল।অনেক তো হল এবার।”

“নাহ আমি ওই বাসাতে যাবো না।আমি এইখানেই ঠিক আছি আম্মু।”

#চলবে…

ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০৯

1

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৯
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

আকাশ অফিসে বসে কাজ করছিল।তখন বাসা থেকে আকাশের কাছে কল আসলো।আকাশ কিছু না ভেবেই কলটা রিসিভ করে বলল

“হ্যা আম্মু বলো।”

“আকাশ আয়ানের খোজ পেয়েছি।তুই জলদি বাসায় আয়।”

“আমি এখনি বাসায় আসছি আম্মু।”

কলটা কেটেই আকাশ বেড়িয়ে পরলো বাসায় জন্য।নতুন বাসাতে তেমন কিছুই নেই।তাই নিরাকে নিয়ে মার্কেটে গেল কিছু জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসতে।রান্না করার জন্য কিছু আর রাতের খাবারের জন্য কিছু নিয়ে আসলো।বাসায় এসে নিরা বলল

“আয়ান তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করো।আমি এর মধ্যে রান্না বসিয়ে দেই।”

আয়ান মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেল।আর নিরা রান্না ঘরে গেল।আকাশ কিছুসময়ের মধ্যে বাসায় চলে আসলো।আকাশ ওর আম্মুকে বলল

“আম্মু আয়ান এখন কোথায় আছে বলো আমাকে।আমি ওকে নিয়ে আসছি।”

আকাশের আম্মুর পাশ থেকে রিয়া বলল
“আয়ান এখন সিলেটে আছে।”

“সিলেটে ঠিকানা কি আছে তোর কাছে?”

“নাহ।কিন্তু নিরা ভাবি নাকি আয়ানের সাথেই আছে।”

“তুই নিরাকে কল দিয়ে আয়ানের ঠিকানাটা জেনে নে।”

নিরা রান্না করছিল তখন রিয়ার নাম্বার থেকে কল আসলো।নিরা কল রিসিভ করে বলল

“হ্যা রিয়া বলো।”

“ভাবি আয়ান কোথায় এখন?”

“বাসাতেই আছে।ফ্রেশ হতে গেছে।কেনো কি হয়েছে?”

“তুমি যে আয়ানকে খুজে পেয়েছো সেটা বলো নি কেনো?”

“আসলে রিয়া আয়ান বলেছিল ওর কথা বাসার কাউকে যেন না বলি।”

“আচ্ছা এখন আয়ানের ঠিকানা দেও।”

নিরা আয়ানের নতুন বাসার ঠিকানা দিয়ে দিলো।আকাশ রিয়ার থেকে ঠিকানাটা নিয়ে চলে আসবে তখন আকাশের আম্মু আর রিয়া বলল তারাও নাকি যাবে।পরে ওদের নিয়েই বেড়িয়ে পরলো।

নিলা একা একা বসে ফোন চালাচ্ছিল তখন সায়রা রুমে আসলো।সায়রা বলল

“আপু কি করছো?”

“দেখছিস না ফোন চালাচ্ছি।”

সায়রা নিলার পাশে বসে বলল
“আপু নিরা আপুর বাসায় কবে যাবে?”

“মনে হয় আগামীকাল সকালে।কেনো?”

“আমাকেও সাথে নিয়ে যাবে?মানে আমিও যেতে চাচ্ছিলাম।”

“আচ্ছা যাস।খালা যদি যেতে দেয় তাহলে যাস।”

“আম্মু বলেছে তুমি নিয়ে গেলে যেতে দিবে।”

“তাহলে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠিস।”

“আচ্ছা আপু এই ছেলেটা কে গো?”

নিলা ফোনে রিয়াদের ফেসবুক আইডিটা দেখছিল।সায়রা সেটাই দেখে কথাটা বলল।নিলা বলল

“এইটা আমার একটা ফ্রেন্ড।”

“আপু তোমার ফ্রেন্ডটা তো বেস হ্যান্ডসাম।সিঙ্গেল নাকি?”

কথাটা শুনে নিলা এমন ভাবে সায়রার দিকে তাকালো মনে হয় সায়রা কোনো ভুল কথা বলে ফেলেছে।সায়রা কিছুটা ভয়ে পেয়ে বলল

“আমি তো এমনেই জিজ্ঞাস করেছিলাম আপু।আমার একটু কাছে এখন আমি আসি।”

সায়রা কোনোরকম ভাবে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।নিলা যেইভাবে সায়রার দিকে তাকিয়েছে সেটা দেখে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।

নিরা রান্না শেষ করে রুমে গেল।আয়ান ফোনে একটু কাজ করছিল।নিরাকে আসতে দেখে বলল

“রান্না শেষ হয়েছে?”

“হ্যা।আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নি তারপরে খাবার দিচ্ছি।”

“আচ্ছা।”

রাতে আরিফ মাহমুদ মানে আয়ানের আব্বু বাসায় আসলো।কিন্তু বাসায় কেউ নেই।তাই আকাশকে কল দিলো।আকাশ ড্রাইভ করছিল।তখন ওর আব্বু কল দিয়েছে।আকাশ ফোনটা রিয়া কাছে দিয়ে বলে কথা বলতে।রিয়া কল রিসিভ করে বলে

“হ্যালো ফুপা।”

“হ্যা রিয়া তোরা সবাই কোথায়?বাসায় কেউ নেই কেনো?”

“ফুপা আমরা সবাই আয়ানের কাছে যাচ্ছি সিলেটে।আয়ানকে আনতে।”

“তোর ফুপিকে দেখে রাখিস।রাখছি এখন।”

আরিফ মাহমুদ কলটা কেটে দিলেন।রিয়ার পাশ থেকে আকাশের আম্মু বলল

“কি বলেছে ওনি?”

“বলেছে তোমার খেয়াল রাখতে।”

আকাশের মা কিছু আর বলল না।নিরা ফ্রেশ হয়ে এসে বলল

“আয়ান খেতে আসো।”

“হুম চলেন।”

নিরা আর আয়ান একসাথে খেতে বসলো।খাওয়ার মধ্যে নিরা বলল

“আমাকে এত তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিবে সেটা ভাবিনি।”

“আপনি আবার কি অন্যায় করেছিলেন?”

“এই যে সে দিন আমার জন্য তোমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো আব্বু।আমি যদি তোমাকে সত্যি কথাটা না বলতে বললাম তাহলে তো আর এমন কিছু হতো না।সব সমস্যা তো আমাকে নিয়েই হয়েছিল।”

“এইখানে তো আপনার কোনো দোষ ছিল না।আপনার মনে হয়েছিল সত্যিটা সবার জানার দরকার।তাই আপনি এমনটা করতে বলেছিলেন।আর অন্যায়টা যেহেতু আমি করেছিলাম।তাই শাস্তিটা তো আমাকেই পাওয়ার দরকার তাই না।”

“তুমি তো আমার জন্যই এইসব করেছিলে আয়ান।কিন্তু তোমার পদ্ধতিটা কিছুটা ভুল ছিল।কিন্তু এটার মানে এই না যে তুমি সবার থেকে দূরে সরে থাকবে।”

“আচ্ছা এই সব কথা এখন বাদ দিন।জলদি খাবার শেষ করুন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”

নিরা আর কথা বাড়ালো না।খাবার শেষ করে নিরা সব কিছু গুছিয়ে রাখতে চলে গেল।যেহেতু আজ নতুন বাসাতে উঠেছে।তাই বাসাতে কোনো খাট নেই।ওরা আজ নিচে ঘুমাবে।আয়ান বিছানাতে শুয়ে ছিল কিছুসময় পর নিরা এসে আয়ানের বুকে এসে শুয়ে পরলো।আয়ান কিছুটা হাসলো।নিরা বলল

“আয়ান!”

“হুম।”

“এত লুকোচুরি কেনো করলে?”

“যদি লুকোচুরি না করতাম তাহলে তো আপনাকে পেতাম না।আর আপনিও তো আমাকে ভালোবাসতেন না তাই না।”

নিরা আয়ানের বুক থেকে মাথা তুলে বলল
“আমি তোমাকে ভালোবাসি এইটা আবার তোমাকে কে বলেছে হ্যা?”

আয়ান হেসে বলল
“তাহলে আমার কাছে আছেন কেনো চলে যান?আমাকে যেহেতু ভালোই বাসেন না তাহলে আসলেন কেনো এইখানে?”

“চুপ একদম চুপ।বেশি কথা বললে এখন কিন্তু তোমার খবর আছে বলে দিলাম।আমাকে ঘুমাতে দেও।অনেক দিন শান্তি মত ঘুমাতে পারি নি।”

আয়ান কিছু বলল না শুধু হাসলো।ঘুমিয়ে গেল ওরা।পরের দিন সকালে আয়ান ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে চলে গেল।নিরা নিলাকে কল দিয়ে বলল বাসায় আসতে।যেহেতু নতুন বাসাটা বেশি দূরে ছিল না তাই এক ঘন্টার মধ্যে নিলা আর সায়রা নিরার কাছে চলে আসলো।

আকাশ সিলেটে চলে এসেছে কিন্তু আয়ানের নতুন বাসাটা ঠিক কোথায় সেটা বুঝতে পারছে না।তাই রিয়াকে বলল নিরার সাথে কথা বলতে।নিরা ওর বোনদের সাথে কথা বলছিল তখন রিয়ার কল আসলো।নিরা কলটা রিসিভ করে বলল

“হ্যা রিয়া বলো।”

“ভাবি আমরা তো এসে পরেছি সিলেটে কিন্তু বাসাটা তো খুজে পাচ্ছি না।”

পরে নিরা বুঝিয়ে বলল বাসার ঠিকানাটা।রিয়ার সাথে কথা শেষ করতেই নিলা বলল
“আপু রিয়া আপু কেনো কল দিয়েছিল?”

“আম্মু রিয়া আর আয়ানের ভাই আসতেছে।কিন্তু বাসাটা ঠিক খুজে পাচ্ছে না।তাই ঠিকানাটা বলে দিলাম।”

“তুমি না আয়ান ভাইয়ার সাথে থাকবে তাহলে ওনাদেরকে আয়ান ভাইয়ার কথা বললে কেনো?”

“আমি কি সারাজীবন আয়ানকে আলাদা থাকবো নাকি?আর আয়ানের সাথে এইখানে থাকছি কারন আয়ান আবার চলে না যায়।আবার চলে গেল আমি আয়ানকে ছাড়া থাকবো কিভাবে?তাই রিয়া যখন বাসার ঠিকানা জানতে চেয়েছিল তখন বাসার ঠিকানাটা বলে দেই।”

“তুমি যে কি করতে চাচ্ছো আপু।আমি কিছুই বুজতে পারছি না।”

“তোর এত বুঝে কাজ নেই।আমি সবাইকে একসাথে নিয়ে থাকতে চাই এবার বুঝেছিস।”

নিলা আর কিছু বলল না।কিছুসময় পর রিয়ারা চলে আসলো এই বাসাতে।আয়ান মা তো বাসায় আসার সাথে সাথেই আয়ানকে খুঁজছে।রিয়া বলল

“ভাবি আয়ান কোথায়?”

“আয়ান তো রেস্টুরেন্টে গেছে।”

“এত সকালে রেস্টুরেন্টে কেনো?”

“আয়ান রেস্টুরেন্টের ম্যানেজের জব করে।”

কথাটা শুনে আকাশ বলল
“আমাদের নিজস্ব অফিস থাকতে আয়ান কি না রেস্টুরেন্টে ম্যানেজারের জব করে।কোন রেস্টুরেন্টে জব করে আয়ান?”

“এইখানে আসার সময় যে বড় রেস্টুরেন্টটা আছে সেটাতেই।”

আকাশ বলল
“আম্মু তোমরা এইখানে থাকো আমি আয়ানকে নিয়ে আসছি।”

আয়ানের মা বলল
“তুই একটু তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় আয়ানকে।”

আকাশ বেড়িয়ে গেল রেস্টুরেন্টের জন্য।আয়ান আজ একটু আগেই গিয়েছে রেস্টুরেন্টে।কারন গতকাল ছুটি নিয়েছিল।তাই আজ আগে এসে গতকালকের সব হিসাবটা মিলাচ্ছে।কিছুসময় পর একজন এসে আয়ানকে বলল

“স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।”

আয়ান কাজটা রেখে কে এসেছে সেটা দেখতে গেল।আয়ান গিয়ে দেখে আকাশ দারিয়ে আছে।আয়ানকে দেখে আকাশ বলল

“আয়ান তুই নাকি এইখানে ম্যানেজারের জব করছিস?”

“হ্যা ভাইয়া।”

“আমাদের অফিস থাকতে তুই কি না এইখানে জব করছিস।তোর এইখানে জব করার দরকার নেই।তুই আমার সাথে আমাদের বাসায় চল।তোর বাসায় আম্মু এসেছে তোকে দেখার জন্য।এখন বাসায় চল তোর।”

“ভাইয়া আমি ওই বাসাতে যাবো না।তুমি আম্মুকে বলো আমার জন্য অপেক্ষা করতে।আমি বিকালে এসে আম্মুর সাথে দেখা করছি।এখন তুমি বাসায় যাও।”

“তুই তাহলে আমার সাথে যাবি না।”

“তুমি ভালো করেই জানো আমি এখন যাবো না।তাই এখানে কথা না বলে বাসায় যাও।আমি বিকালে বাসায় আসছি।”

আকাশকে বাসায় আসতে দেখে ওর আম্মু বলল
“আকাশ আয়ান কোথায়?আয়ানকে নিয়ে আসিস নি।”

#চলবে…

ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০৮

0

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৮
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

নিলা খাবার অডার দিতে চলে গেল।নিরা আর সায়রা বসে আছে।কিছুসময় পর নিলা এসে বলল

“আপু আয়ান ভাইয়া।”

হঠাৎ আয়ানের কথা শুনে নিরা কিছুটা চমকে গেল।নিরা বলল

“কোথায় আয়ান?তুই আয়ানকে কোথায় দেখেছিস নিলা?”

“আপু ওইদিকে আয়ান ভাইয়াকে দেখিছি।একজনের সাথে কথা বলছে।”

নিরা আর কিছু না বলে নিলার দেখিয়ে দেয়া জায়গাতে ছুটে চলে গেল।সেইখানে গিয়ে দেখে আয়ান কারো সাথে কথা বলছে।নিরা কিছুটা দূর থেকেই বলল

“আয়ান!”

রেস্টুরেন্টে একজনের কিছুটা সমস্যা হয়েছে।তাই ম্যানেজারকে কথাটা বলা হয়।আর এইখানের নতুন ম্যানেজার ছিল আয়ান।তাই আয়ান গিয়ে তার সমস্যার কথা নিয়ে কথা বলছিল।তখন হঠাৎ আয়ান বলে কেউ ডাক দেয়।আয়ান পাশে তাকিয়ে দেখে নিরা দারিয়ে আছে।আয়ান নিরাকে এইখানে আশা করে নি।হঠাৎ করেই নিরা দৌড়ে গিয়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে।আয়ান তো ভেবাচেকা খেয়ে যায়।পাবলিক প্লেসে এইভাবে নিরা আয়ানকে জড়িয়ে ধরবে সেটা আয়ানের ধারনা ছিল না।জড়িয়ে ধরা অবস্থাতে নিরা বলছে

“আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না আয়ান।আমাকে তোমার সাথে রাখো নাহলে আমি মরে যাবো।প্লিজ আয়ান।”

আশেপাশের সবাই আয়ান আর নিরা দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ানের পাশে যে লোকটা ছিল সেও কিছুটা লজ্জা পেয়ে ওদের সামনে থেকে চলে গেল।আয়ান কিছুটা লজ্জায় পরে গেছে।তাই নিরাকে বলল

“আপনি পাবলিক প্লেসে এইসব কি শুরু করে দিয়েছেন?আমাকে ছাড়েন সবাই দেখছে আমাদের।”

“দেখলে দেখুক।আগে বলো তুমি আমাকে ছেড়ে আর যাবে না।”

“আগে আমাকে ছাড়ুন।আমরা অন্য কোথাও গিয়ে এই সব নিয়ে কথা বলি।এখন ছাড়ুন।”

আয়ান আর নিরা সামনাসামনি বসে আছে।নিলা আর সায়রা পাশের টেবিলে আলাদা বসেছে।নিরা বলল

“আয়ান প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা।তুমি যা বলবে আমি তাই করতে রাজি?”

“তার আগে বলেন আপনি এইখানে কি করছেন?”

“আসলে এইখানে নিলার খালার বাসা।নিলা আমাকে জোড় করে এইখানে ঘুরতে নিয়ে এসেছে।”

“বাসার সবাই কেমন আছে?”

“সবাই তোমাকে খুঁজছে।আম্মু তো প্রায় সময় তোমার জন্য কান্না করে।”

“আমার সাথে এই অবস্থাতে থাকতে পারবেন?”

“হ্যা হ্যা পারবো।তুমি যেইভাবে বলবে সেইভাবেই আমি থাকতে রাজি।তাও আমার ছেড়ে যেও না আয়ান।”

“আপনি এখন আপনার বোনদের সাথে বাসায় চলে যান।আমি আগামীকাল আপনাকে গিয়ে নিয়ে আসবো।”

“নাহ আমি কোথাও যাবো না।তোমার সাথেই থাকবো।”

“এখন আমার সাথে থাকবেন কিভাবে?এইখানে আমি কাজ করি।আর যেইখানে থাকি সেটাতে শুধু ব্যাচেলার থাকে।রাতের মধ্যে নতুন বাসা ঠিক করে আগামীকাল আপনাকে নিয়ে একেবারে উঠবো।”

“নাহ সেটা হবে না।আমি তোমাকে আর একা ছাড়ছি না।”

আয়ান শুধু নিরার দিকে তাকিয়ে আছে।ভালো করে বুঝিয়ে বলল তারপরেও কি শুরু করে দিয়েছে নিরা।পাশের টেবিলে সায়রা নিলাকে বলল

“আপু এই ভাইয়াটা বুঝি নিরা আপুর হাজব্যান্ড?”

“হ্যা কেনো? কি হয়েছে?”

“না মানে ভাইয়াটা অনেক হ্যান্ডসাম আবার কিউটও।আমার যদি এমন একটা বয়ফ্রেন্ড থাকতো তাহলে বিয়ের জন্য আর টেনশন হত না।”

“ওই তুই এখনো ঠিক মত কলেজও শেষ করিস নি তার আগেই বিয়ে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে দিয়েছিস?আজ বাসায় চল আমি খালাকে বলছি তোকে যেন বিয়ে দিয়ে দেয়।”

“বইলো সমস্যা নেই।যদি এমন একটা ছেলের সাথে আম্মু বিয়ে দিতে চায় তাহলে আমার কোনো সমস্যা নাই।”

নিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।নিলা ভাবছে
“এই মেয়ের মাথাটা গেছে আয়ান ভাইয়াকে দেখে।আল্লাহ ভালো জানে ওর এখন কি হবে।”

আয়ান ভাবছে একদিনের মধ্যে বাসায় কোথা থেকে পাবে।নিরাকে তো বলে দিয়েছে নতুন বাসা নিয়ে তারপরে নিরাকে সেই বাসাতে নিবে।কিন্তু এখন বাসা পাওয়া তো মুখের কথা না।আয়ান আর কিছু না ভেবে এইখানের কয়েকজন ফ্রেন্ডকে কল দিয়ে বাসার কথা বলল।

নিরা নিলা আর সায়রা বাসায় চলে এসেছে।নিরা তো আয়ানকে ছাড়া আসতেই চাচ্ছিল না।আয়ান অনেক বুঝিয়ে নিলাকে বলে নিরাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।নিলা আজ কি মনে করে আয়ানের সাথে কথা বলেছিল।কেনো বলেছিল সেটা নিলা ঠিক জানে না।বাসায় এসে প্রথমে আয়ানকে কল দিলো নিরা।রেস্টুরেন্ট থেকে আসার আগে আয়ানের থেকে ওর নতুন নাম্বারটা নিয়ে নিয়েছিল।

এই দিকে নিলা বাসায় এসে ওর আম্মুকে কল দিয়ে বলে দিলো আয়ানের কথা।নিলার আম্মু এই কথা শুনে খুব খুশি।আয়ানদের বাসায় সবাই খেতে বসেছে।তখন আকাশ বলল

“আব্বু আয়ানের কোনো খোজ পেলে?”

“আমি ওকে খুজি নি।তাই ওর খোজ আমার কাছে নেই।”

“আব্বু আয়ান যা করেছিল সেটা আমার সাথে করেছিল।আমি তো ওকে সেটার জন্য ক্ষমা করে দিয়েছি।এখন তুমি আয়ানকে বাসায় নিয়ে এসো।”

আয়ানের আব্বু কিছু না বলে খাবার শেষ করে রুমে চলে গেল।আকাশ ওর আম্মুকে বলল

“আম্মু তুমি টেনশন করো না।আমি আয়ানকে বাসায় নিয়ে আসবো।”

“কত দিন হয়ে গেল আয়ানকে দেখি না।তুই একটু ভালো করে আয়ানের খোজটা বের কর না আকাশ।”

“আম্মু আমি তো চেষ্টা করতেছি।কিন্তু আয়ান যে কোথায় গেছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”

আয়ান অনেক কষ্টে একটা বাসা ঠিক করতে পেরেছে।বেশি বড় না আবার বেশি ছোট না।আয়ান আর নিরার জন্য বাসাটা মোটামুটি ঠিক আছে।পরের দিন আয়ান ছুটি নিয়েছে।সকালে উঠে নতুন বাসায় গেল সব ঠিক করতে।দুপুরে নিরা আয়ানকে কল দিলো।

“হ্যালো আয়ান! বাসায় কি ঠিক করতে পেরেছো?”

“হ্যা একটা বাসা তো পেয়েছি কিন্তু আপনার কি সেটা পছন্দ হবে কি না সেটা নিয়েই কিছুটা টেনশনে আছি।”

“আমরা ওই বাসাতে থাকতে পারলেই হবে।আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবো।”

“আচ্ছা তাহলে বিকালে রেডি হয়ে থাইকেন।আপনাকে নিতে আসবো।”

“আচ্ছা।”

রিয়াদ কয়েকবার নিলাকে কল দিচ্ছে কিন্তু নিলা কলটা রিসিভ করছে না।গত তিনদিন নিলার সাথে হয় নি রিয়াদের।রিয়াদ আবার কল দিলো নিলাকে।এবার নিলা কলটা রিসিভ করে বলল

“আপনি আজ এতবার কল দিচ্ছেন কেনো?দেখছেন যে কলটা ধরছি না।তার পরেও কেনো কল দিচ্ছেন।”

“আসলে কয়েকদিন ধরে তো আপনার সাথে কথা হয় নি।তাই আজ কথা বলার জন্য কল দিয়েছি।আচ্ছা আজ কি আপনি দেখা করতে পারবেন একটু?”

“নাহ।”

“কেনো?কি হয়েছে?”

“আমি ঢাকাতে নেই।সিলেটে এসেছি খালার বাসাতে।”

“ওহ।তা কবে আসবেন?”

“ঠিক জানি না।আপুর বাসাতে কিছুদিন থাকবো মনে হয়।তারপরে আসবো।”

“আপুর বাসাতে মানে?নিরা ভাবি কি আপনার সাথে?আর ভাবি কি ওইখানে আলাদা বাসা নিয়েছে নাকি?”

পরে নিলা আয়ানের কথা রিয়াদকে বলে দেয়।আয়ান যে এইখানে আছে সেটা শুনে রিয়াদ অনেকটা শক।রিয়াদ আর কিছু কথা বলে নিলার সাথে আবার পরে কথা বলবে বলে কলটা কেটে দিলো।নিলার সাথে কথা শেষ করে রিয়াদ ওর আপুকে রিয়াকে কল দিলো।রিয়া এখনো ওর ফুপির বাসাতেই আছে।রিয়া রিয়াদের কল রিসিভ করে বলল

“হ্যা রিয়াদ বল।”

“আপু আয়ান ভাইয়ার খোজ পাওয়া গেছে।”

“সত্যি!কোথায় এখন আয়ান?তোর সাথে ওর কোথায় দেখা হয়েছে?”

“আপু আমার সাথে দেখা হয় নি।কিন্তু নিরা ভাবি নাকি এখন আয়ান ভাইয়ার সাথেই আছে।”

“তা আয়ান এখন কোথায়?”

“সিলেটে।”

“আচ্ছা রিয়াদ আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি। আগে ফুপিকে খবরটা দিয়ে আসি।ফুপি আয়ানের কথা শুনে খুব খুশি হবে।”

“আচ্ছা আপু।”

বিকালে আয়ান সায়রাদের বাসার সামনে এসে নিরাকে কল দিয়ে নিচে আসতে বলল।নিরা রেডি হয়ে আয়ানের সাথে চলে গেল।নতুন বাসাটা নিরার কাছে খারাপ লাগে নি।নিরা বলল

“বাসাটা কিন্তু খারাপ হয় নি।আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।”

“তাড়াহুড়াতে এই বাসাটা নিয়েছি।কিছুদিন পরে ভালো একটা বাসা ঠিক করবো।ততদিন এইটা থাকেন।”

“আমার কাছে এই বাসাটাই ভালো লাগছে।”

আকাশ অফিসে বসে কাজ করছিল।তখন বাসা থেকে আকাশের কাছে কল আসলো।আকাশ কিছু না ভেবেই কলটা রিসিভ করে বলল

“হ্যা আম্মু বলো।”

“আকাশ আয়ানের খোজ পেয়েছি।তুই জলদি বাসায় আয়।”

#চলবে…

ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০৭

0

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৭
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

এবার আয়ান যা বলল সেটা শুনে নিরা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলার মত অবস্থা।আয়ান বলল

“হ্যা আমিই আকাশ ভাইয়াকে কিডন্যাপ করিয়েছিলাম।”

কথাটা শুনে নিরা নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।নিরা কিছুসময় ভাবার পরে বলল

“আয়ান তুমি আমার সাথে ফান করছো তাই না।”

“নাহ।আমি সত্যি বলছি।ভাইয়াকে যদি কিডন্যাপ না করাতাম তাহলে তো আপনাকে পেতাম না।”

কথাটা শুনে নিরা হতভম্ব হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

“মানে?”

“মানে হল আমি আপনাকে ভালোবাসি।তাও আবার তিন বছর আগে থেকেই।”

“কি বলছো এইসব আয়ান!তোমার পরিবারের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল যেইদিন তোমরা আমাকে দেখতে এসেছিলে?তাহলে তিন বছর আগে থেকে কিভাবে আমাকে ভালোবাসো?”

আয়ান নিরার থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে নিরাকে একটা ফটো দেখিয়ে বলল

“কিছু মনে পরেছে?”

নিরা ফটোটা ভালো করে দেখলো।এইটা নিরার দুই তিন বছর আগের ছবি।ফটোতে নিরা পানির উপর দারিয়ে।এই ফটোটা নিরা কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার সময়ের ফটো।আরো কয়েকটা ফটো ছিল কিন্তু শেষ ফটোতে আয়ানের ঠিক পিছনে নিরাকে দেখা যাচ্ছিল।আয়ান আবার বলল

“আমি তখন থেকেই আপনাকে ভালোবাসি।”

“তাহলে সেটা কাউকে বলো কি কেনো?”

“নিজের থেকে বড় কাউকে ভালোবাসি।সেটা কে বলবো?আর আগে যদি বললাম তাহলে কি আপনি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হতেন?”

“তোমার পরিবারকে তো বলতে পারতে।নাকি সেটার পারতে না আয়ান?”

“আমি ঠিক করেছিলাম ভাইয়ার বিয়ে হওয়ার পরে বাসায় আপনার কথা বলল।কিন্তু যখন ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে আপনাকে দেখলাম।তখন আমার কি অবস্থা হয়েছিল সেটা আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।কিন্তু আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলতে চাই নি।তাই বিয়ের আগের দিন হলুদের অনুষ্ঠান শেষে ভাইয়াকে কিডন্যাপ করিয়ে রেখি। যাতে আপনার বিয়েটা আমার সাথেই হয়।”

নিরা চুপ করে আছে কিছু বলছে না।কেউ নিরার অজানতেই ভালোবাসতে পারে সেটা নিরার জানা ছিল না।আয়ানও চুপ করে আছে।আজ দুইজনের মধ্যে নিরবতা ভিন্ন কিছু বলতে চাচ্ছে।আয়ানের একটাই ভয় নিরা যদি ওকে ছেড়ে একেবারের জন্য চলে যায় তাহলে আয়ান কি করবে?এবার নিরা বলল

“আয়ান আমার সাথে এসো।”

আয়ান নিরার দিকে তাকিয়ে দেখলো নিরা রুম থেকে চলে যাচ্ছিল।নিরার পিছন পিছনে আয়ানও রুম থেকে বের হয়ে গেল।ড্রয়িংরুমে আয়ানের আম্মু নিরা আর আয়ানকে।দেখে বলল

“তোরা এসে পরেছিস।এখন খাবার খেতে বসে পর।”

নিরা বলল
“আম্মু আপনি আব্বুকে একটু নিয়ে আসেন তো।আয়ান কিছু বলবে সবাইকে।”

“কি হয়েছে নিরা মা?”

“আম্মু প্লিজ আপনি আব্বুকে ডেকে নিয়ে আসুন।”

ওদের কথা বলার মধ্যে সবাই এসে গেছে।আয়ানের আব্বু বলল
“কি হয়েছে নিরা মা।”

এবার নিরা বলল
“আয়ান এবার সবাইকে সত্যিটা বলো।”

আকাশ বলল
“কিসের সত্যি কথা বলবে আয়ান?”

আয়ানের আব্বু বলল
“কিরে আয়ান কি সত্যি কথা বলবি তুই?”

তারপরে আয়ান যা বলল তা শুনে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল।আয়ানের আম্মু এসে আয়ানকে একটা চর মেরে বলল

“ছিঃ আয়ান তুই নিজের ভাইকে কিডন্যাপ করেছিলি।তাও আবার নিরার জন্য?তুই বললে কি আমরা তোর বিয়ে নিরার সাথে করাতাম না নাকি?তুই এই কাজটা কিভাবে করতে পারলি হ্যা?”

আয়ান কিছু বলছে না।কিন্তু মনে মনে বলছে
“আম্মু তোমরা সবাই রাজি হলেও নিরা কি রাজি হতো?আর নিরার পরিবার?তারা কি রাজি হত নিরা আর আমার বিয়েতে?কখনোই না।”

আকাশ কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল।আকাশের পিছনে রিয়াও আকাশের রুমে দিকে গেল।এবার আয়ানের আব্বু বলল

“তুই কি নিজে বাসা থেকে চলে যাবি নাকি আমি ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তোকে বের করতে হবে?”

নিরা বলল
“আব্বু আমি..”

“নাহ নিরা মা তুই কিছু বলিস না আজ।এমন ছেলে আমার থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।কিরে তুই এখনো দারিয়ে আছিস কেনো?”

আয়ান বলল
“হুম যাচ্ছি।”

আয়ান রুমের দিকে যাচ্ছিল তখন আয়ানের আব্বু বলল
“যেইভাবে আছিস সেইভাবেই চলে যা।”

আয়ান একবার সবার দিকে তাকিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।আয়ানের আব্বু নিরাকে বলল

“নিরা মা তোর যদি এইখানে থাকতে মন না চায় তাহলে তোর আব্বু আম্মুর কাছে চলে যেতে পারিস।আমাদের জন্য নিজের ক্ষতি করিস না।আমরা আমাদের ছেলেকে ভালোভাবে লালনপালন করতে পারি নি।তা না হলে এমনটা হত না।”

আয়ানের আব্বুও রুমে চলে গেলেন।ড্রয়িংরুমে শুধু নিরা আর ওর শাশুড়ি আছে।নিরা শাশুড়ি মাকে কিছু বলবে কিন্তু সেটা আর হয়ে পারলো না।কারন আয়ানের মা এখনো দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।আর তার চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু কান্না কোনো শব্দ হচ্ছে না।

আয়ান রাস্তার পাশে বসে আছে।রাত অনেক হয়েছে তাই রানাকে কল দিয়ে বলেছে এইখানে আসতে।কিছুসময়ের মধ্যে রানা বাইক নিয়ে আয়ানের বলা জায়গাতে এসে পরলো।আয়ানকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে রানা অনেকটা শক।রানা কিছুটা বিচলিত হয়ে বলল

“আয়ান তুই এইভাবে রাস্তার পাশে বসে আছিস কেনো?আর এত রাতে তুই এইখানে কি করছিস?”

“তুই আমাকে কিছুদিন থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবি?”

“কি হয়েছে আয়ান?কোনো সমস্যা হয়েছে?”

“সেটা জেনে তোর কোনো কাজ নেই।তুই শুধু বল আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে পারবি কিছুদিনের জন্য?”

“আচ্ছা তুই এখন আমার সাথে চল।বাকি সব কথা পরে হবে।”

আয়ান আর কিছু না বলে রানার সাথে চলে গেল।নিরা রুমে বসে ভাবছে নিরা যা করেছে সেটা ঠিক নাকি ভুল?কিছুটা দোটানাতে পরে গেছে নিরা।

আকাশের পাশে রিয়া বসে আছে।রিয়ার এখন আকাশকে ঠিক কি বলা উচিত সেটা রিয়া ঠিক জানে না।তাও রিয়া বলল

“আপনি কি আয়ানের উপর রেগে আছে বা ও যা করেছে সেটাতে কষ্ট পেয়েছেন?”

“আচ্ছা রিয়া আয়ান যদি আমাকে এই কথাটা বিয়ের আগে বলতো তাহলে কি আমি নিরাকে বিয়ে করার কথা ভাবতাম। কিন্তু আয়ান কিভাবে পারলো এই রকম একটা কাজ করতে?”

“আমার মনে হচ্ছে সমস্যাটা এইখানে না।অন্য কিছু।নাহলে আয়ান তো এমন কিছু করার কথা না।”

আকাশ কিছু বলল না।চুপ করে থাকলো।বাসাটা কেমন থমথমে হয়ে গেছে।বাসার সবাই আয়ানের বিষয়টা নিয়ে অনেকটাই শক।পরের দিন এই খবরটা আয়ানের মামার বাসায় চলে যায় সাথে নিরাদের বাসাতেও।প্রথম কয়েকদিন সবাই আয়ানের চলে যাওয়া নিয়ে চুপ থাকলেও সপ্তাহ খানিক পরে সবাই আয়ানের খোজ জানতে চায় কিন্তু কেউ আর আয়ানের খোজ পায় না।

আয়ানের আব্বু বাদে আয়ানের খোজ সবাই করছে কিন্তু কেউ ঠিক জানে না আয়ান কোথায় আছে।রিয়া আকাশকে বলে

“ফুপি এখন প্রতি রাতেই আয়ানের জন্য কান্না করছে।আপনি একটু খুজে নিয়ে আসুন না আয়ানকে।”

“তোর কি মনে হয় রিয়া আমি আয়ানকে খুজি নি?আয়ানের খোজ পেলে আমি ঠিকই ওকে বাসায় নিয়ে আসতাম।হয়তো আয়ান একটা ভুল করেছিল।কিন্তু সেটার জন্য আমি আমার ভাইকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি না তাই না।”

“তো এখন কি করবেন?আয়ান বাসা থেকে চলে গেছে প্রায় দুই মাস হয়ে গেল কিন্তু এখনো কোনো খোজ পাওয়া গেল না।নিরা ভাবি এখন মনে করছে সব কিছু ওনার জন্য হয়েছে।তাই সবসময় মনখারাপ করে বসে থাকে।তাই আমি ভাবির ছোট বোনকে কল দিয়ে বলেছি ভাবিকে কিছুদিনের জন্য যেন তাদের বাসায় নিয়ে যায়।”

আকাশ এখন আর নিরার বিষয়টা নিয়ে ভাবে না।কিন্তু মাঝেমাঝে ঠিকই নিরার কথা মনে পরে কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেয় না।এখন আকাশ আয়ানকে নিয়ে ভাবছে।

নিরা গতকাল ওর আব্বু আম্মুর কাছে চলে এসেছে।প্রথমে আসতে চাচ্ছিল না কিন্তু নিলার অনেক জোরাজোরিতে আসতে হয় নিরাকে।নিলা নিজে ওর আব্বুকে নিয়ে নিরাকে আনতে গিয়েছিল।আয়ানের পরিবার কিছু বলে নি।কারন নিরা আর আগের মত নেই।অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে।তাই আয়ানের আম্মু আর যেতে না করেনি।

নিলা নিরার রুমে এসে দেখে নিরা চুপ করে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।নিলা যে রুমে এসেছে সেই দিকে নিরার কোনো খেয়াল নেই।নিলা নিরার পাশে বসে বলল

“আপু!”

নিরা কিছু না বলে শুধু নিলার দিকে তাকালো।নিলা বলল

“আপু এইভাবে আর কত দিন?নিজের কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো?”

“আর কিছু বলবি?”

নিলা বুঝলো এইভাবে নিরার কিছু হবে না।তাই ঠিক করলো কোথাও থেকে ঘুরে আসবে।তাই বলল

“আপু আগামীকাল তুমি আমার সাথে খালার বাসায় যাবে।”

“নাহ আমার ভালো লাগছে না।তুই একা যা।”

“ওহ এখন তুমি যাবে কেনো আমার সাথে?আমি কে তোমার?আমি তো তোমার কেউ না।তুমি তো আমাকে নিজের বোন ভাবো না।যদি ভাবতে তাহলে আমার সাথে ঠিকই যেতে।”

“ব্লাকমেইল করছিস?”

“যা ভাবো তুমি।এখন বলো যাবে কি না।”

“দুই দিনের বেশি কিন্তু আমি থাকতে পারবো না আগেই বলে দিলাম।”

“আচ্ছা যেমনটা তুমি বলবে সেটাই হবে।আমি তাহলে সব গুছিয়ে নেই।”

নিলা কিছুটা খুশি হয়ে চলে গেল।কিন্তু নিরার মনে খুশি নেই।নিরা আয়ানকে অনেকটা মিস করে।আয়ানের সাথে কাটানো সময়টা অনেক মিস করে নিরা।

রাতেই দুই বোন বেড়িয়ে পরে নিলার খালার বাসাতে যাওয়ার জন্য।সকালের মধ্যে নিরা আর নিলা সিলেটে পোঁছে যায়।বিকালে নিলার খালাতো বোন সায়রা, নিরা আর নিলাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যায়।ঘুরাঘুরি শেষে সায়রা বলে

“আপু অনেক তো ঘুরলাম এখন চলো কিছু খেয়ে নেই।”

নিরা কিছু বলছে না।নিলা বলল
“হ্যা চল।এইখানে ভালো রেস্টুরেন্ট কোথায় আছে সেটাতে চল।”

সায়রা বলল
“তাহলে আমাদের এইখানের বেস্ট রেস্টুরেন্ট যেটা সেটাতে চলো।”

রেস্টুরেন্টে তিনজন বসে আছে।নিলা বলল
“আপু তোরা বস আমি খাবার অডার দিয়ে আসি।”

নিলা খাবার অডার দিতে চলে গেল।নিরা আর সায়রা বসে আছে।কিছুসময় পর নিলা এসে বলল

“আপু আয়ান ভাইয়া।”

#চলবে…

ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০৬

0

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৬
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

কথাটা শুনে আকাশ খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বলল
“আমি এই পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে করবো সেটা তোমরা ভাবলে কিভাবে?আমি রিয়াকে বিয়ে করতে পারবো না আব্বু।”

কথা বলেই আকাশ রুমে চলে গেল না খেয়েই।সবাই কিছুটা চুপ হয়ে গেল।তখন আয়ান বলল

“আব্বু আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখছি।”

আয়ানের কথা শুনে ওর আম্মু বলল
“হ্যা আয়ান তুই কথা বলে দেখ।আমাদের কথা তো আর শুনলো না।তোর কথা যদি শুনে।”

রিয়া কিছু বলছে না।চুপ করে দারিয়া আছে।কিন্তু মনে মনে বলছে
“আমি পিচ্ছি তাই না।যদি আমার সাথে আপনার বিয়েটা হয় তাহলে বুঝিয়ে দিবো আমি পিচ্ছি কি না।কত বড় সাহস আমাকে পিচ্ছি বলে।আমারো সময় আসবে তখন বুঝাবো আপনাকে।”

তিনমাস পরে অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেল।নিরা আর আয়ানের সম্পর্ক অনেকটাই কাছাকাছি এসে গেছে।এই কয়েকমাসে নিরা আয়ানের প্রেমে পড়ে গেছে যেটা নিরার অজানতেই।কি থেকে কি হয়ে গেল সেটা নিরাও জানে না।কিন্তু আয়ানকে এখন অনেকটা চোখে হারায় নিরা।
গতকাল রাতের কথা।আয়ান কিছুটা রাত করে বাসায় এসেছে।নিরা আয়ানের সাথে কথা বলছে না।তাই আয়ান বলল

“কি হয়েছে আপনার?আজ এত চুপচাপ কেনো?আপনার কিটকেট চকলেট ব্যাগে রাখা আছে।আমি কিন্তু সেটার কথা ভুলি নি।”

নিরা তাও কিছু বলছে না।আগের মতই নিজের কাজ করে যাচ্ছে।আয়ান এবার নিরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল

“কি হয়েছে আপনার?আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো?”

নিরা কিছু মন খারাপ করে বলল
“আজ না আমাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া কথা ছিল।তুমি তো সেটা ভুলেই গেছো।”

আয়ান এবার বুঝলো আসল কাহিনীটা।আজ নিরাকে নিয়ে ওর বাইরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আয়ান সেটা ভুলে গেছে।আয়ান এবার নিরাকে কাছে নিয়ে বলল

“সরি সরি আমি সত্যিই ভুলে গেয়েছিলাম।আগামীকাল সপ্তাহে ঠিকই নিয়ে যাবো।আপনি প্লিজ মুড অফ করে রাখবেন না।এই যে কানে ধরলাম।আর এমন ভুল হবে না।”

নিরা কিছু বলছে না।মনে মনে হাসছে আয়ানের কান্ড দেখে।কিন্তু আয়ানের সামনে হাসলে মজাটা আর থাকবে না।

এই দিকে আকাশের অবস্থা অনেকটা খারাপ।কারন রিয়া আকাশকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।সেই দিন আকাশ রিয়াকে বিয়ে করবে না বলে রুমে চলে এসেছিল।আকাশ ভেবেছিল সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু হল তার ঠিক উল্টা।তারপরের দিন থেকে রিয়া খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়।যার ফলে রিয়া অনেকটা অসুস্থ হয়ে পরে।রিয়ার ফুপি রিয়াকে খাবার খাওয়াতে গেলে রিয়া বলে আকাশ যদি ওকে এসে না খাওয়ায় তাহলে নাকি খাবে তার আগে না।এই কথা শুনে রিয়ার ফুপি মানে আকাশের আম্মু আকাশকে গিয়ে কথাটা বলে।
আকাশ তখন কিছু করে নি চুপ করে ছিল।কিন্তু তারপরের দিন থেকে আকাশের আম্মুও রাগ করে খাওয়া বন্ধ করে দেয় তখন আকাশ বাধ্য হয়ে রিয়াকে খাবার খাওয়াতে যায়।তখন রিয়া বলে

“এর পরের বার থেকে যদি আমার বিষয়ে উল্টাপাল্টা কিছু বলেছেন তাহলে এইবারের মত আর খাওয়া বন্ধ করবো না।কিছু একটা খেয়ে শেষ হয়ে যাবো।আপনাকে যদি আমি না পাই তাহলে আমি মরে যাবো।কথাটা ভালো করে মনে রাইখেন।”

আকাশ তো সেই দিনের পরে পুরাই শান্ত হয়ে গেল।যদি রিয়ার কিছু হয় তাহলে ওর মাকে কি বলবে সেটা নিয়েই কিছুটা টেনশনে থাকে।তাই রিয়াকে কিছু বলে না।আর এটাই আকাশের বড় ভুল ছিল।রিয়ার এখন যা মন চায় তাই করে।নিজের বাসায় তো আর যায় নি ঠিকই কিন্তু আকাশকেউ শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।রাতে আকাশের রুমে ঘুমানো বাদে বাকি সময় আকাশের সাথেই থাকে।আকাশ অফিস থেকে ফিরে আসার পর থেকেই রিয়ার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়।ওয়াশরুমে গেলে আকাশকে তোয়ালে এগিয়ে দেয়া।অফিসে যাওয়ার সময় আকাশকে সব কিছু এগিয়ে দেয়া।খাবারের সময় আকাশের কি লাগবে না লাগবে সব কিছু এখন রিয়াই করে।যদি আকাশ রিয়াকে কিছু বলে বা রিয়াকে বলে এইটা করা লাগবে না বা এইটা করছিস কেনো তাহলে রিয়া কান্না করে পুরো বাসা করে।তখন আকাশ আবার আগের মত চুপ হয়ে যায়।বেচারা আকাশ এখন রিয়ার কথা মত চলে নাহলে কান্না করে সেটা মানাতে বাদ্ধ হয়।

আর রিয়াদ অনেক কষ্টে নিলার কথা নিরার কথা জানতে পারে।নিরা প্রায় দুই মাস রিয়াদের সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে তারপর নিলার নাম বলে রিয়াদকে।কিন্তু রিয়াদ এইটা এখনো জানে না নিরার ছোট বোন নিলা।নিলা প্রথমে রিয়াদের কথা শুনে অনেক রাগ করেছিল কিন্তু পরে ওর আপুর কথা শুনে রিয়াদের সাথে দেখা করতে রাজি হয়।আজ বিকালে রিয়াদের সাথে নিলার দেখা করার কথা।পাচঁটা সাতাশ বাজে কিন্তু নিলা এখনো আসে নি।পাচঁটা বিয়াল্লিশ মিনিটে নিলা রেস্টুরেন্টে আসে।নিলা অবশ্য রিয়াদের ছবি দেখেছিল তাই চিনতে আর অসুবিধা হয় নি।নিলা চেয়ারে বসতে না বসতেই রিয়াদ বলল

“কেমন আছেন আপনি?”

“ভালো।”

“আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো?”

“নাহ।”

“আপনার জন্য কি অডার করবো?মানে কি খাবেন আপনি?”

“নাহ কিছু লাগবে না।”

“তা কি করে হয়।আচ্ছা আপনি বসেন আমি আপনার ফেভারিট চকলেট আইসক্রিমটা অডার দিয়ে আসি।”

নিলা কিছু বলল না।রিয়াদ অডার দিতে চলে গেল।রিয়াদ যে দেখতে খারাপ এমনটাও নয়।রিয়াদকে দেখে নিলার খারাপ লাগে নি কিন্তু নিলা তো এই সব অন্য কারো থেকে আসা করেছিল কিন্তু তা আর হল কই।নিলার এই সব নিয়ে ভাবছিল এর মধ্যে রিয়াদ খাবার নিয়ে এসে হাজির।
রিয়াদ অনেক কথাই বলছে নিলাকে।নিলা শুধু হ্যা না বলছে।সন্ধ্যার আগে নিলা আর রিয়াদ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয় বাসায় জন্য চলে যাওয়ার জন্য।নিলা চলে যাচ্ছিল তখন রিয়াদ বলল

“আচ্ছা ম্যাডাম আপনার নাম্বারটা কি দিয়ে যাবেন?নাকি সেটার জন্যও আমাকে অপেক্ষা করতে হবে?”

নিলা রিয়াদের দিকে বাকা করে তাকিয়ে থেকে রিয়াদের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলার নাম্বার সেভ করে দিয়ে হনহন করে চলে গেল নিলা।নিলার এমন কান্ড দেখে রিয়াদ হাসছে আর বলছে

“আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার আগে তোমার পিছু আমি ছাড়ছি না নিলু।”

রিয়াদ কিছুসময় নিলার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে রিয়াদও বাসায় চলে গেল।নিলা বাসায় গিয়ে প্রথমেই ওর আপুকে কল দিলো।নিরা এর শাশুড়ির সাথে রান্নাঘর কাজ করছিল তখন নিলার কল আসাতে শাশুড়িকে বলে রুমে গিয়ে কলটা রিসিভ করে বলল

“হ্যা নিলা বল।”

“আপু তুমি এইটা কার সাথে দেখা করতে বলেছিলে আমাকে হ্যা?আমার মাথা খেয়ে ফেলেছে আজ।এখনো আমার মাথা ব্যথা করছে।”

“আচ্ছা সেটা না হয় বুঝলাম।কিন্তু তোর কাছে রিয়াদকে কেমন লেগেছে সেটা বল।”

“কোনো রকম।”

“আচ্ছা তাহলে আমাদের কাজিন লিজা আছে না। লিজা কিন্তু রিয়াদের কথা আমাকে বলেছিল।তোর কাছে ভালো না লাগলে আমি রিয়াদের কথা লিজাকে বলে দেই।কি বলিস?”

“ওনার জন্য লিজা ঠিক না।লিজা যেমন মেয়ে ওনার সাথে মানিয়ে চলতে পারবে না।পরে সমস্যা হবে।”

“ওহ তাই নাকি!তাহলে কে মানিয়ে চলতে পারবে তুই?”

“ধুর আপু তুমিও না।তুমি একটু বেশি বেশিই বুঝো।আমি রাখছি এখন বাই।”

কলটা কেটে দিলো নিলা।আর এইদিকে নিরা নিলার অবস্থা বুঝতে পেরে মনে মনে হাসছে।কিছুসময় পরে আয়ান অফিস থেকে বাসায় আসলো।আজ কিছুটা ক্লান্ত লাগছে আয়ানকে।তাই নিরা বলল

“আয়ান তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি খাবার রেডি করছি।”

আয়ান নিরার দিকে হালকা হেসে ফ্রেশ হয়ে চলে গেল।নিরা রুম থেকে বাইরে যাচ্ছিল তখনি আয়ানের ফোনে কল আসলো।নিরা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে।নিরা সাধারণত আয়ানের ফোনে কোনো কল আসলে সেটা রিসিভ করে না কিন্তু আজ কি মনে করে কলটা রিসিভ করলো।বিপরীত পাশ থেকে বলল

“আয়ান রাজ বলছে ওর নাকি আরো টাকা লাগবে।যদি না দিস তাহলে নাকি সবাইকে বলে দিবে তুই তোর ভাইকে কিডন্যাপ করিয়েছিস।এখন তুই কি..”

আয়ান ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসাতে নিরা কলটা কেটে দিল।আয়ান রুমে এসে দেখে আয়ানের ফোন নিরার হাতে।আয়ান বলল

“কেউ কি কল দিয়েছিল?”

নিরা সরাসরি বলল
“আয়ান তুমি কি তোমার ভাইকে কিডন্যাপ করিয়েছিলে?”

আয়ান কিছু না বলে মুচকি হাসলো।নিরা আবার বলল

“কি হল আয়ান বলো তুমি কি তোমার ভাইকে কিডন্যাপ করিয়েছিলে?”

এবার আয়ান যা বলল সেটা শুনে নিরা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলার মত অবস্থা।

#চলবে…

ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০৫

0

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৫
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

এবার নিরা না চাইতেও ভিতরে চলে গেল।রুমে আয়ান বসে ছিল।নিরাকে আসতে দেখে আয়ান বলল

“আপনি কি এখনো সেই বিষয়টা নিয়ে আমার উপর রেগে আছন?”

“তুমি কোন বিষয়ের কথা বলছো আয়ান?আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।”

“দুপুরে আপনার আব্বু আম্মুর সাথে লাঞ্চ না করেই বেড়িয়ে গেলাম।সেটা নিয়ে হয় তো আপনি কিছুটা রেগে আছেন?”

“নাহ তেমন কিছু না।”
(“আমার তো তোমার সামনে আসতেই মন চাচ্ছে না।তোমাকে দেখলেই শুধু দুপুরের সেই দৃশ্যের কথা মনে পরে যায়।মন এই খান থেকে পালিয়ে যাই।”)

“তাহলে আমি এখন শুয়ে পড়ি।আচ্ছা আপনার কাছে কি কোল বালিস আছে? না মানে কোল বালিস ছাড়া আমার ঘুমে কিছুটা সমস্যা হয়।”

“আমি এনে দিচ্ছি।তুমি শুয়ে পড়ো।”

নিরা কোলবালিশ নিয়ে এসে খাটের মধ্যে রেখে শুয়ে পরলো।কিছুসময় পর নিরা শুয়া থেকে উঠে বসে আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে।হালকা আলোতে আয়ানকে ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে।নিরা মনে মনে ভাবছে
“ইস একদম বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে।আয়ান যে কেনো আমার বড় হল না।এইসব আমি কি ভাবছি।এইটা ঠিক না।মাথা থেকে এইসব বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে যা নিরা।তোর জন্য এইসব না।”

নিজের মাথায় আস্তে করে বারি দিয়ে আবার শুয়ে পরলো।পরের দিন সকাল সকাল রিয়াদ ওর ফুপির বাসায় এসে হাজির।রিয়াদকে দেখে আকাশের মা বলল

“ভালো করেছিস এসে।এখন তোর আকাশ ভাইয়ের রুমে গিয়ে রেস্ট নে।নাস্তার সময় কথা হবে ঠিক আছে।”

রিয়াদ কিছুটা ক্লান্ত।তাই কিছু না বলেই আকাশের রুমে চলে গেল রেস্ট করতে।নিলা আজ অনেকটা সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছে।বারান্দায় বসে সকালে আবহাওয়া অনুভূতি নিচ্ছে।আগে আপুর সাথে বসে সকালে আবহাওয়া অনুভূতি উপভোগ করতো কিন্তু এখন তো নিলা একা।

নিরার ঘুমটা ভেঙে গেল।অনেকটা সকাল হয়ে গেছে কিন্তু চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে নিরা আয়ানের বুকের উপর খুব আরাম করে শুয়ে আছে।নিরা এক ঝটকায় আয়ানের থেকে দূরে শরে গেল।ভাগ্য ভালো আয়ানের ঘুমটা এখনো ভাঙে নি।যদি আয়ান দেখে ফেলতো নিরা ওর বুকের উপর ঘুমিয়ে ছিল তাহলে কি লজ্জাটাই নাহ পেতে হতো নিরার।কিন্তু নিরা ঘুমের মধ্যে আয়ানের বুকের গেল কিভাবে?নিরা তো ঘুমের মধ্যে স্লিলিং ওয়াক করে না তাহলে? কিন্তু সেটা যাই হোক নিরার ঘুমটা আজ অনেক ভালো হয়েছে।

আকাশ ঘুম থেকে উঠে পাশে রিয়াদকে দেখলো।রিয়াদ আকাশকে দেখে বলল

“গুড মর্নিং আকাশ ভাইয়া।”

“গুড মর্নিং রিয়াদ।কখন এসেছিস তুই।”

“বেশিক্ষণ হয় নি ভাইয়া।”

“আচ্ছা তুই থাক।আমার আবার আজ অফিসে যেতে হবে।”

“আচ্ছা ভাইয়া।”

আকাশ ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেল।কিন্তু আজ রিয়াকে নাস্তা টেবিলে আনতে দেখে আকাশ কিছুটা অবাক হল।কারন রিয়া তো কখনো নাস্তা দেয় না।আকাশ আর সেই দিকে খেয়াল না দিয়ে নাস্তা শেষ করে রেডি হতে গেল।আরিফ মাহমুদ তার শ্যালকের সাথে রাতে এসে আকাশ আর রিয়ার বিয়ের কথা বলবে বলে ঠিক করে।তাই নাস্তা করার সময় তেমন কিছু বলে নি।

রিয়াদ নাস্তা করতে এসে ওর আম্মুকে বলল
“আম্মু নিরা ভাবি কোথায়?ভাবিকে তো দেখছি না?”

আকাশের মামি মানে রিয়াদের মা বলল
“নিরা তো বাসায় নেই।নিরা আর আয়ান গতকাল নিরাদের বাসায় গেছে।আজ বা আগামীকালকের মধ্যে চলে আসবে।”

“ওহ আচ্ছা।”
(“তাহলে একটু অপেক্ষা করতে হবে মনে হচ্ছে।সমস্যা নেই ওই মেয়ের জন্য না হয় একটু অপেক্ষা করলাম।”)

দুইদিন পরে আয়ান আর নিরা বাসায় চলে আসে।রাতে কিছুটা দেড়ি করে আসাতে কারো সাথে আর তেমন কথা হয় নি।পরের দিন সকালে নিরা আয়ানের আম্মুর সাথে নাস্তা বানাতে সাহায্য করতে চাচ্ছিল কিন্তু আয়ানের মা বলল

“নিরা তোর কিছু করতে হবে না মা।তুই রুমে গিয়ে দেখ আয়ানের কিছু লাগবে কি না।আয়ান তো মনে হয় আজ অফিসে যাবে।”

“আম্মু আমি আয়নের সব কিছু রেডি করে দিয়ে এসেছে।আপনি এখন বলেন আমাকে কি করতে হবে?”

“তাহলে নিরা মা তুই খাবার গুলো নিয়ে টেবিলে রেখে দিয়ে আয়।”

“আচ্ছা আম্মু।”

নিরা নাস্তা গুলো খাবার টেবিলে রেখে আসলো।কিছুসময় পর সবাই এক এক করে নাস্তার টেবিলে আসলো নাস্তা করার জন্য।সবার শেষে আয়ান আসলো নাস্তা করতে।আয়ানকে দেখে আকাশ বলল

“কিরে আয়ান কখন আসলি?”

“ভাইয়া গতকাল রাতে এসেছি।বেশি রাত হয়ে গেছিল তাই আর কারো সাথে তেমন একটা দেখা হয় নি।”

“ওহ।তা আজ অফিসে যাবি নাকি?”

“হুম যাবো তো।”

একটু পরেই নিরা আর আয়ানের আম্মু রান্না ঘর থেকে আসলো সবাইকে নাস্তা দিতে।নিরাকে দেখে আকাশ কিছুক্ষণ নিরার দিকে তাকিয়ে ছিল।নিরা অবশ্য বিষয়টা খেয়াল করেছিল।নাস্তা শেষ করে আয়ান আকাশ আর ওদের আব্বু অফিসে চলে গেল।

নিরা নাস্তা শেষ করে রুমে যাচ্ছিল তখন রিয়াদ বলল
“ভাবি আপনার সাথে একটু কথা বলা যাবে?খুব দরকার ছিল।”

“আচ্ছা তাহলে রুমে আসো।”

নিরা আর রিয়াদ রুমে গেল।নিরা বলল
“এবার বলো রিয়াদ কি বলবে।”

“ভাবি তুমি আমার নাম জানলে কিভাবে?”

“রিয়া আমাকে বলেছিল তোমার কথা।তা এখন বলো কি বলবে।”

“আসলে ভাবি আমি একটা মেয়েকে বিয়ের দিন দেখেছিলাম কিন্তু একটা জরুরি কাজ থাকায় আমাকে চলে আসতে হয়েছি।কিন্তু পরে আর সেই মেয়েটার খোজ পাই নি।তুমি আমাকে একটু হেল্প করবে ভাবি?প্লিজ ভাবি না করো না।”

“ওহ তাহলে তো মনে হচ্ছে প্রেমভালোবাসার বিষয়।তা মেয়েটার কোনো ছবি আছে?”

“না ভাবি।”

“তাহলে আমি চিনবো কিভাবে রিয়াদ মেয়েটা কে?”

“আমি বলছি তুমি ভালো করে শুনো তাহলেই চিনতে পারবে।”

“আচ্ছা বলো।”

“বিয়ের দিন মিষ্টি কালারের লেহেঙ্গা পরেছিল।উচ্চতা প্রায় পাচঁ ফিটের মত হবে।আর হাসলে দুই গালেই টোল পড়ে।আরেকটা কথা ভাবি।”

“কি?”

“মেয়েটার নাকটা একটু ছোট।”

“হ্যা তোমাকে বলছে।নাক ঠিকই আছে।তোমার চোখেই ছোট লেগেছে।”

“তুমি চিনেছো নাকি মেয়েটাকে?”

“নাহ।ঠিক চিনতে পারি নি।কিন্তু আমি খোজ নিয়ে দেখছি মেয়েটা কে।ওকে।”

“আচ্ছা ভাবি।তুমি একটু খোজ নিয়ে দেখো প্লিজ।তুমি যা বলবে তাই হবে।তুমি শুধু মেয়েটার খোজটা বের করে দেও তাহলেই হবে।”

“আচ্ছা তুমি এখন যাও আমি দেখছি বিষয়টা।”

“আচ্ছা।”

রিয়াদ চলে গেল।নিরা মনে মনে বলছে
“ওর কত বড় সাহস।আমার বোনের নাকি নাক ছোট।আমার বোন যেইভাবে আছে সেইভাবেই পারফেক্ট আর কত কিউট!আর এই রিয়াদ বলছে কি না ওর নাক ছোট।রিয়াদকে আগে বলল না নিলার কথা।আগে দেখে নেই রিয়াদ কেমন তার পরে এইটা নিয়ে নিলার সাথে কথা বলল।”

আয়ান অফিসে কাজ করছিল তখন টেলিফোনে আয়ানের আব্বু ফোন দিয়ে তার রুমে যেতে বলল।আয়ান ওর আব্বুর রুমে গিয়ে বলল

“হ্যা আব্বু বলো।”

“আকাশের জন্য রিয়াকে তোর আম্মু পছন্দ করেছে।এখন তোর কি মতামত।”

“এইটা নিয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলেছো?”

“নাহ এখনো বলে নি।কিন্তু তোর মামার কোনো আপত্তি নেই।এখন তোর মতামত নিয়ে তারপরে আকাশের সাথে কথা বলল।”

“আমি রিয়াকে ভাবি বলে ডাকতে পারবো না আব্বু।সেটা আগেই বলে দিলাম।নাহ হলে আমাকে সারাদিন জ্বালিয়ে শেষ করে দিবে।”

আয়ানের আব্বু হেসে বলল
“তাহলে তো ভালোই হবে।”

রাতে সবাই একসাথে খাবার খেতে বসলো।রিয়ার আব্বু আম্মু বাসায় চলে গেছে একদিন আগেই।আয়ানের আম্মু নিরা আর রিয়া সবাইকে খাবার দিচ্ছিল তখন আয়ানের আব্বু বলল

“আচ্ছা আকাশ তোর সাথে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিল।”

“হ্যা আব্বু বলো।”

“তোর আম্মু আর আমি ঠিক করেছি রিয়ার সাথে তোর বিয়ে দিবো।এখন তোর মতামত কি আকাশ?”

কথাটা শুনে আকাশ খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বলল
“আমি এই পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে করবো সেটা তোমরা ভাবলে কিভাবে?আমি রিয়াকে বিয়ে করতে পারবো না আব্বু।”

#চলবে…

ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০৪

0

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৪
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

চেয়ারে বসতে বসতে কথাটা বলল রানা।আয়ান বলল

“নাহ তেমন কিছু না।এখন বল কি জন্য আমাকে ডেকেছিস?”

“তুই যে কাজটা ঘটিয়েছিস সেটাতে তুই কোনো সমস্যায় পড়তে নাও পাড়িস।কিন্তু বাকি যারা তোকে হেল্প করেছে তারা কিন্তু ঠিকই সমস্যাতে পরবে।”

খাবার টেবিলে নিরার আব্বু আম্মু আর নিলা বসে আছে।নিলা এইখানে খেতে আসতে চাচ্ছিল না কিন্তু নিরার জোরাজুরিতে আসতে হল।নিরার আব্বু বলল

“নিরা মা আয়ান খেতে আসতে বল।আমরা সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছি।”

“আব্বু আয়ান একটু বাইরে গেছে তোমার সবাই খেয়ে নেও।ওর আসতে মনে হয় দেড়ি হবে।”

এবার নিরার আম্মু বলল
“সে কি কথা নিরা?আয়ান আবার কখন বাইরে গেল?”

“কিছুসময় আগেই বের হয়েছে।তোমরা এখন খেয়ে নেও।”

“আগে তুই আয়ানকে ফোন দিয়ে কথা বলে জেনে নে।ওর আসতে কতক্ষণ লাগবে?”

এবার নিরা কি করবে?নিরার কাছে তো আয়ানের নাম্বার নেই।নিরা কিছু না বলে ওর আম্মুর রুমে গেল।আম্মুর ফোন থেকে যদি আয়ানের নাম্বারটা পাওয়া যায়।কিন্তু আয়ানদের বাসার শুধু একজনের নাম্বার আছে সেটা আয়ানের আম্মুর।কি করবে সেটা আর না ভেবে শাশুড়ি মার কাছে কল দিলো নিরা।

আকাশ ছাদে দারিয়ে আছে।রিয়া আকাশকে বাসার সব রুমে খুজে এবার ছাদে খুঁজতে এলো।আকাশকে ছাদে দেখে একটু দম নিয়ে নিলো।অনেকটা হাপিয়ে পরেছে রিয়া।আকাশের সামনে গিয়ে বলল

“আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে অনেকটা হাপিয়ে গেছি।আর আপনি এইখানে দারিয়ে আকাশ দেখেছেন?”

আকাশ একবার রিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার আগের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো।রিয়া আকাশকে অনেক কথাই বলছে কিন্তু আকাশ কিছুই বলছে না।মনে হচ্ছে রিয়া নিজের সাথেই নিজে একা একা কথা বলছে।এবার রিয়া কিছুটা রেগে গিয়ে বলল

“আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না নাকি?আমি কত কি বলছি আর আপনি একটা কথাও বলছেন না।আমার সাথে কথা বলতে মন না চাইলে বলে দিলেই পারেন।এইভাবে এড়িয়ে যাওয়ার তো কোনো মানে হয় না।”

রিয়া এতক্ষণ সামনের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিল কিন্তু যখনি আকাশের দিকে তাকালো দেখলো আকাশের চোখে জল।

রিয়াদের কাজ আজকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।রিয়াদ ঠিক করেছে ও নিরা ভাবির সাথে এইটা নিয়ে কথা বলবে।কারন একমাত্র নিরা ভাবিই পারবে ওকে এই বিষয়ে হেল্প করতে।এটাই রিয়াদের ধারনা।তাই ঠিক করেছে আজ কাজ শেষ করে রিয়াদ আগামীকাল ওর ফুপির বাসায় যাবে।

নিরা শাশুড়ি মার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তার থেকে আয়ানের নাম্বারটা নিয়ে নিলো।আয়ানের সাথে কথা বলে জানতে পারলো আয়ানের আসতে রাত হবে।নিরা আর তেমন কিছু বলে নি।

রাতে আয়ান বাসায় আসে।ফ্রেশ হয়ে কিছুসময় রেস্ট নিয়ে খাবার খেতে বসে সবার সাথে কিন্তু খাবার টেবিল একজন নেই।সেটা হল নিলা।নিরা নিলাকে টেবিলে না দেখতে পেয়ে বলল

“আম্মু নিলা খাবে না?ও আসছে না কেনো?”

“নিলার নাকি শরীরটা ভালো লাগছে না।তাই আজ ও ডিনারটা ওর রুমেই করবে।আমি ওর খাবার রুমে দিয়ে এসেছি।এই নিয়ে তোকে টেনশন করতে হবে না।”

“তোমরা খাওয়া শুরু করো।আমি একটু নিলাকে দেখে আসি।”

নিরা খাবার রেখেই নিলার রুমে চলে গেল।কেউ আর খেলো না।সবাই চুপ করে বসে আছে।নিরা আসলে তারপরে খাবে।হঠাৎ করেই নিরার মা বলল

“বাবা আয়ান যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কথা বলতে পারি?”

“হ্যা আম্মু বলেন।এতে জিজ্ঞাস করার কি আছে।”

“তোমার আর নিরা মধ্যে সব কি ঠিক আছে?না মানে হঠাৎ করেই তোমাদের বিয়েটা হয়ে গেল।তার মধ্যে আরো কত কি হলো।এই সব নিয়ে কি তোমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়েছে?”

“আম্মু আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন সেটা আমি বুঝেছি।কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমাদের মধ্যে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।হতে পারে একটু সময় লাগবে আমাদের নিজেদের গুছিয়ে নিতে কিন্তু তার মানে এই না আমাদের মধ্যে সমস্যা আছে।”

“কথাটা শুনে খুব ভালো লাগলো আয়ান।”

রিয়া ওর ফুপির রুমে বসে আছে।আকাশের বিষয়ে ফুপিকে কিছু বলবে।কিছুসময় পরে রিয়ার ফুপি আসলো।রিয়াকে বলল

“হ্যা রিয়া বল কি বলবি?”

“ফুপি তুমি আকাশ ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দেও।”

“হঠাৎ আকাশের বিয়ের কথা বলছিস কেনো?কিছু কি হয়েছে নাকি রিয়া?”

রিয়া বিকালে ছাদে কি কি হয়েছে সেই সব কথা বুঝিয়ে বলে ফুপিকে।সব শুনে আকাশের মা কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে

“আমি জানি তুই আকাশকে নিয়ে অনেক ভাবিস।আর আকাশের এই বিষয়ে আমিও ভেবেছি।ভেবেছিলাম কিছুদিন পরে তোর ফুপাকে বলল আকাশের বিয়ের কথা কিন্তু এখন দেখছি এইটা নিয়ে আগেই কথা বলতে হবে।কিন্তু মেয়ে পাবো কোথায় রিয়া?ভালো একটা মেয়েরও খোজ লাগবে নাকি?”

“খুঁজলেই আশেপাশে পেয়ে যাবে।যদি একটু ভালো করে খুজে দেখো।আর এমন মেয়েকেই নিয়ে আজবে যে তোমার ছেলেকে নিয়ে ভাবে।”

নিরা নিলার রুমে গিয়ে দেখলো নিলা শুয়ে আছে।আর খাবার গুলো টেবিলের উপর রাখা।নিরা নিলার পাশে গিয়ে বলল

“কিরে নিলা তোর নাকি শরীর খারাপ?আমাকে বলিস নি কেনো?”

“তেমন কিছু না আপু।একটু মাথাটা ব্যথা করছিল তাই শুয়ে আছি।”

“খাবার গুলো এখনো খাস নি কেনো?”

“পরে খাবো আপু।তুমি এখন খাবার খেতে যাও।”

নিরা আর কিছু না বলে হাত ধুয়ে এসে খাবার নিয়ে নিলার মুখের সামনে ধরে বলল

“নে হা কর।”

“আমি পরে খেয়ে নিবো আপু।”

“ও বুঝেছি আমি তো তোর বোন না।তাই আমার হাতে খাবি কেনো?”

খাবারটা মুখে নিয়ে নিলা বলল
“পরের বার থেকে এই কথা বললে খাওয়া অবস্থায় বলছি তোমার সাথে আর কথা বলবো না।”

“তাহলে আমার বলার সাথেসাথেই খাবারটা খেয়ে নিতে পাড়তিস।আমিও তাহলে এই কথা বলতাম না।”

মুখ গোমরা করে নিলা শুধু বলল
“হুম।”

নিলাকে খাইয়ে দিয়ে নিরা আবার ড্রয়িংরুম রুমে গেল।নিরা বলল
“আম্মু নিলাকে খাইয়ে দিয়ে আসলাম।রাতে আর ওর রুমে যাওয়া লাগবে না।”

নিরার আব্বু বলল
“আমার বড় মেয়ে না থাকলে ছোট মেয়েটার কি যে হতো আল্লাহ ভালো জানে।ওদের মা তো শুধু নিরাকে নিয়েই থাকে।”

এবার নিরার আম্মু বলল
“নিরার আব্বু এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।”

নিরা বলল
“আম্মু আব্বু এবার তোমরা থামো।বাসায় যে কেউ এসেছে সেটা মাথায় রেখো।”

নিরার আব্বু আম্মু আর কথা বলল না।খাবার খেয়ে সবাই রুমে চলে গেল।নিরা ওর রুমের সামনে ঘুরঘুর করছে কিন্তু ভিতরে যেতে চাচ্ছে না।কারন নিরা এখনো আয়ানের সামনে যেতে লজ্জা পাচ্ছে।খাবার টেবিলে আব্বু আম্মু ছিল তাই লজ্জাটা তেমন করছিল না।কিন্তু এখন তো আয়ান রুমে একা।ওর সামনে কিভাবে যাবে সেটাই ভাবছে।

আকাশের মা আকাশের আব্বুকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল কিন্তু সাহস করে বলতে পারছে না।আরিফ মাহমুদ তার স্ত্রী অবস্থা বুঝতে পেরে বলল

“তুমি কি কিছু বলবে নাকি?”

“না মানে হ্যা।একটা কথা বলার ছিল।”

“হ্যা বলো কি বলবে।”

“আসলে আমি চাচ্ছিলাম রিয়াকে আকাশের বউ করতে।এখন এইখানে তোমার মতামত কি?”

“তোমার ভাই কি আকাশের সাথে রিয়ার বিয়ে দিতে রাজি হবে?”

“নিরা তুই এইভাবে রুমের বাইরে দারিয়ে আছিস কেনো?”

হঠাৎ কারো কথাতে নিরা কিছুটা চমকে গেল।পিছনে তাকিয়ে দেখে নিরার আম্মু দারিয়ে আছে।আম্মুকে দেখে আমতা আমতা করে বলল

“আস..লে আম্মু আমি আমি এক..টু পরেই..”

“তুই কি বলছিস?আর তোর কথা এইভাবে আটকিয়ে যাচ্ছে কেনো?”

“না মানে আম্মু..”

“হয়েছে আমাকে আর কিছু বলতে হবে না।এখন রুমে যা।”

নিরা মনে মনে বলছে
“কিন্তু আম্মু আমার তো রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না।আয়ানের সামনে কিভাবে যাবো।আমার তো লজ্জা করছে ওর সামনে যেতে।”

“কিরে এখনো দারিয়ে আছিস কেনো?এখনি রুমে যা।”

এবার নিরা না চাইতেও ভিতরে চলে গেল।রুমে আয়ান বসে ছিল।নিরাকে আসতে দেখে আয়ান বলল

“আপনি কি এখনো সেই বিষয়টা নিয়ে আমার উপর রেগে আছন?”

#চলবে…

ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-২+৩

0

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০২_০৩
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

আয়ান আর নিরা রুমের বাইরে আসতেই থমকে গেল।কারন ড্রয়িংরুমে আকাশ দারিয়ে আছে।আয়ানের রুম থেকে আয়ান আর নিরাকে একসাথে বের হতে দেখে আকাশ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ বলল

“আয়ান তোর রুমে নিরা কি করছিলো?আর তোরা একসাথে কেনো?”

আয়ান কিছু বলবে তার আগেই আকাশের মা বলল
“আয়ানের সাথে নিরার বিয়ে হয়েছে গতকাল।”

মার কথা শুনে আকাশ হতভম্ব হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ কোনো দিন ভাবেও নি ওর হবু বউের সাথে আয়ানের বিয়ে হবে।এবার আকাশ কিছুটা ইমোশনাল হয়ে বলল

“আম্মু এইটা তোমরা কেনো করলে।আমার সাথে তো নিরার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।তাহলে আয়ানের সাথে কেনো নিরার বিয়ে হলো?”

এবার আকাশের আব্বু কিছুটা রেগে বলল
“তাহলে নিরার সাথে কাকে বিয়ে দিবো তোকে?তুই তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে কোথায় চলে গেলি।তখন নিরার কথা মনে ছিল না?এখন কেনো এই কথা বলছিস?”

“আব্বু আমি ইচ্ছে করে যাই নি।কেউ আমাকে কিডন্যাপ করেছিল।”

আকাশের কথা শুনে আয়ান আর নিরা অনেকটা শক।সেটা ওদের দেখেই সেটা বুঝা যাচ্ছিল।কিন্তু আরিফ মাহমুদ মানে আকাশের আব্বু বলল

“আমি এটা মানতে পারছি না তোমাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।কিডন্যাপ করলে তো আমাদের থেকে কেউ টাকা চাইবে কিন্তু আমাদের থেকে তো কেউ টাকা চায় নি।আর তোকে দেখেও তো মনে হচ্ছে না তোর কিডন্যাপ হয়েছিল।”

সবাই এবার ভালো করে আকাশের দিকে খেয়াল করলো।আকাশকে দেখে মনে হচ্ছিল না।কিন্তু আকাশ যে মিথ্যা বলবে এমনটাও না।আকাশের মার বিশ্বাস তার ছেলে মিথ্যা বলছে না।তাই তিনি বললেন

“আমার মনে হচ্ছে আকাশ মিথ্যা বলছে না।আর মিথ্যা বলে আকাশের কি লাভ হবে?”

আকাশের আব্বু বলল
“ওর কি লাভ হবে সেটা জানি না কিন্তু আকাশ নিরাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিল না সেটা আমি বুঝতে পেড়েছি।”

আকাশ বলল
“যদি আমি বিয়েটা নাই করতাম তাহলে সেটা আগেই বলে দিলাম।আমি নিরার সাথে বাকিটা জীবন একসাথে কাটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা আর সম্ভব হল না।”

আকাশের কথা শুনে নিরা অনেকটা আশ্চর্য হলো।কারন নিরা ভাবে নি ওকে নিয়েও কেউ এইভাবে ভাবে।নিরা আর ওইখানে না দারিয়ে রুমে ভিতরে চলে আসলো।এতক্ষণ আকাশের মামা কিছু বলে নি কিন্তু এই সব শুনে বলল

“আকাশ তুই এখন তোর রুমে যা।আমরা এইটা নিয়ে পরে কথা বলল।আর দুলাভাই এখন এইসব নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই।বাসায় অনেক মেহমান আছে।”

আরিফ সাহেব তার শ্যালকের কথা শুনে আর কিছু না বলে সবাইকে রুমে যেতে বলে।আয়ান কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু মামা ইশারাতে বলল এখন কিছু না বলতে।আকাশকে বাসায় আসতে দেখে একজন খুব খুশি।সেটা হলো আকাশের মামাতো বোন রিয়া।কারন রিয়া আকাশকে ভালোবাসে।

নিরা রুমে এসে ভাবছে
“যাকে নিয়ে মনে অনুভূতি ছিল সে আমাকে গ্রহণ করে নি।সেই খানে আকাশের থেকে কিছু আশা করাটা বোকামো ছাড়া আর কিছু না।”
এর মধ্যে আয়ান রুমে এসে পড়েছে।কিন্তু নিরার সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই।আয়ান নিরাকে কিছু ভাবতে দেখে বলল

“আপনি কি ভাইয়ার কথা নিয়ে ভাবছেন?”

আয়ানের কথাতে নিরা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে দেখলো আয়ান কিছু বলছে।তাই বলল

“তোমার কথাটা ঠিক বুঝলাম না।”

“বলেছি আপনি কি আকাশ ভাইয়ার কথা ভাবছেন?”

“নাহ তেমন কিছু না।”

দুজন চুপ করে বসে আছে।কিছুসময় পরে নিরা বলল

“আচ্ছা তোমার ভাই তো চেয়েছিল আমাকে বিয়ে করতে কিন্তু বিয়ে হয়ে গেল তোমার সাথে।এখন তোমার ভাইয়ের সামনে আমি কিভাবে যাবো।আমাকে দেখে হয়তো তোমার ভাইয়ের মন খারাপ হতে পারে।”

“আসলে ভাইয়ার বিষয়টা আমি ঠিক বলতে পারলাম না।আচ্ছা আমি আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলে দেখি।”

আরিফ মাহমুদ রুমে বসে অনেকটা টেনশনে আছে।কারন আকাশ যাকে পছন্দ করে তার আয়ানের বিয়ে হয়ে গেছে।আকাশ আর আয়ান যেহেতু একই বাসাতে থাকবে তাহলে নিরার সাথে আকাশের দেখা হবেই।এটাই আরিফ মাহমুদকে ভাবাচ্ছে।

রিয়া নাস্তা নিয়ে ফুপির কাছে গেল।রিয়াকে দেখে ওর ফুপি বলল
“রিয়া কিছু কি বলবি?আর নাস্তা কার জন্য নিয়ে এসেছিস?”

“আসলে ফুপি নাস্তাটা আকাশ ভাইয়ার জন্য নিয়ে এসেছি।তুমি কি একটু দিয়ে আসবে?ওনি হয়তো এখনো নাস্তা করে নি।”

“তুই যখন নিয়ে এসেছিস তাহলে তুই নিজেই আকাশকে নাস্তাটা দিয়ে আয়।আমার এই দিকে একটু কাজ আছে।”

রিয়া মুচকি হেসে আকাশের রুমে দিকে গেল।রিয়া এটাই চেয়েছিল।রিয়া রুমের ভিতরে গিয়ে দেখলো আকাশ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।রিয়া কিছু না ভেবেই আকাশের সামনে গিয়ে বলল

“এই নিন আপনার নাস্তা।”

আকাশ মাথা তুলে দেখে রিয়া।কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল
“রিয়া তুই এখন এই সব নিয়ে যা।আমার ভালো লাগছে না।”

রিয়া আকাশের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল
“ফুপি আমাকে পাঠিয়েছে আপনাকে নাস্তাটা দিয়ে যেতে।আমার কোনো ঠেকা পড়েনি যে আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসবো।”

রিয়া নাস্তাটা টেবিলের উপরে রেখে চলে গেল।রিয়ার কাজ হয়ে গেছে।রিয়া আকাশকে দেখতে মন চাচ্ছিল তাই রুমে এসে নাস্তা দেয়ার নাম করে দেখে নিলো।

রুমে আনমনা হয়ে বসে আছে নিলা।গতকাল রাত থেকে কিছুই খাওয়া হয় নি।হঠাৎ নিলা মা এসে বলল

“নিলা তোর আপু আসবে আজ।চল আমার সাথে।নাস্তা করে আমাকে রান্না করতে সাহায্য করবি।”

“আপু কি একা আসবে?”

“একা কেনো আসবে।আয়ানও সাথে আসছে।”

“তুমি যাও আম্মু।আমার ভালো লাগছে না।তুমি খালাকে নিয়ে আজ রান্নাটা করো।আমাকে কেউ আর এখন ডেকো না।আমি কিছুসময় একা থাকতে চাচ্ছি।”

“জানি না তোর কি হয়েছে কিন্তু তোর আপু আসলে ওর সামনে এমন করিস না।তাহলে কিন্তু নিরার মন খারাপ হয়ে যাবে।”

কথাটা বলেই নিলার মা চলে গেল।কিভাবে এখন আয়ানের সামনে যাবে এইটা নিয়ে অনেকটা ভাবনায় পড়ে গেছে নিলা।
আয়ান ওর আব্বুর সাথে কথা শেষ করে রুমে এসে নিরাকে বলল

“আপনি রেডি হয়ে নিন।আমরা নাস্তা করার পরেই বের হচ্ছি।”

“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

“আপনাদের বাসায়।আব্বু বলেছে যেতে।”

“আয়ান তুমি কি মন থেকে যেতে চাচ্ছো?”

“না যাওয়ার কোনো কারন তো নেই।”

দুপুরে আকাশ বাসার সবার সাথে টেবিলে খেতে বসলো।খাবার টেবিলে আকাশের আব্বু আম্মু মামা মামি আর রিয়া আছে।কিন্তু আকাশ, আয়ান আর নিরাকে টেবিলে দেখতে পেলো না।আরিফ মাহমুদ তার ছেলে আকাশকে বলল

“তুই যাদের খুঁজছিস ওরা বাসায় নেই।”

সবাই খাবার খাওয়া বন্ধ করে আকাশের আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ বলল

“আব্বু আয়ান কোথায় গেছে?”

“আমি ওদের নিরাদের বাসায় যেতে বলেছি।যাতে তোর সাথে কথা বলতে পারি।”

“আব্বু তুমি কি বলবে সেটা আমি জানি।আমি এমন কিছু করবো না যাতে বাসায় কোনো সমস্যা হয়।আর নিরার থেকে আমি এখন থেকে দূরেই থাকবো।”

এবার রিয়া বলল
“আকাশ ভাইয়া যেহেতু বলেছে ভাবির থেকে দূরে থাকবে তাহলে এই সব নিয়ে আর কথা না বললেই ভালো।”

আকাশের মামা বলল
“দুলাভাই আকাশ যেহেতু বলে তাহলে এই সব নিয়ে আর কথা না বলাই ভালো।যা হয়ে গেছে সেটা তো আর বদলানো যাবে না তাই না।”

আরিফ মাহমুদ তার শ্যালকের কথা শুনে কিছুটা গভীরভাবে বলল
“সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আকাশের কথাটা।সেটা তো ঠিক বুঝতে পারছি না।আকাশ তো বলছে ও নিরাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল তাহলে বিয়ের আগে পালিয়ে গেল কেনো?”

রিয়া বলল
“মামা ভাইয়া তো বলল ওনাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।আর আমারো তাই মনে হচ্ছে।”

রিয়ার কথাতে আকাশের আব্বু বাদে বাকিরা সহমত দেয়।এবার আকাশের আব্বু বলল
“যদি আকাশের কথা সত্যি হয় তাহলে ওকে কিডন্যাপ করেছিল কে?আর কিডন্যাপ করে কার লাভ হয়েছে?”

একটু আগেই আয়ান আর নিরা বাসায় এসেছে।নিরার আব্বু জামাই আসবে বলে অনেক কিছু বাজার করে নিয়ে এসেছে।বাসায় আসার পর থেকেই আয়ানের জামাই আদর দেখে নিরা কিছুটা বিরক্ত হয়ে রুমে চলে গেল।নিরার হঠাৎ নিলার কথা মনে পড়লো।তাই নিলার রুমে গেল।কিন্তু রুম ভিতর থেকে লক করা।নিরা কিছুটা আশ্চর্য হল।কারন নিলার রুম কখনোই লক থাকে না।নিরা এবার নিলার দরজাতে ধাক্কা দিয়ে বলল

“নিলা এই নিলা।দরজাটা খুল।”

নিরার কন্ঠ শুনে না চাইতেও নিলা দরজাটা খুলে দিলো।নিরা ভিতরে গিয়ে বলল

“কিরে নিলা তুই তো কখনো দরজা লক করে রাখিস না।তাহলে আজ কি হয়েছে তোর?কিরে কিছু বলছিস না কেনো?”

“কি বলবো আপু?কি শুনতে চাও তুমি।যাকে নিয়ে আমার সব স্বপ্ন ছিল তাকে তো তুমি বিয়ে করে নিলে।”

#চলবে…

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৩
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

নিরার কন্ঠ শুনে না চাইতেও নিলা দরজাটা খুলে দিলো।নিরা ভিতরে গিয়ে বলল

“কিরে নিলা তুই তো কখনো দরজা লক করে রাখিস না।তাহলে আজ কি হয়েছে তোর?কিরে কিছু বলছিস না কেনো?”

“কি বলবো আপু?কি শুনতে চাও তুমি।যাকে নিয়ে আমার সব স্বপ্ন ছিল তাকে তো তুমি বিয়ে করে নিলে।”

কিন্তু নিলা এই সব কিছুই বলতে পারলো না।শুধু বলল
“নাহ আপু তেমন কিছু না।তুমি ছিলে না তো তাই একটু মন খারাপ ছিল।চেয়েছিলাম তোমার সাথে রাগ করে আর কথা বলল না কিন্তু তোমার সাথে রাগ করে থাকতে পারলাম না।”

“আমার ছোট বোনটা অনেক ভালো।সে কি আমার সাথে রাগ করে থাকতে পারে।”

কথাটা বলে নিলাকে জড়িয়ে ধরলো নিরা।নিলা মনে মনে বলছে
“আপু তোমাকে কোনো দিন সত্যি কথাটা বলতে পারবো না।ক্ষমা করে দিস আপু।”

আয়ান ড্রয়িংরুমে বসে আছে।পাশে আয়ানের শ্বশুর মানে রায়হান শিকদার।জামাই আর শ্বশুর মিলে পারিবারিক কথা বলছে নিজেদের মধ্যে।এর মধ্যে নিরার মা মানে আয়ানের শাশুড়ি ওদের গল্প করতে দেখে বলল

“নিরার আব্বু তুমি এখন কি শুরু করে দিলে।আয়ানকে এখন একটু রেস্ট করতে দেও।বাবা আয়ান তুমি নিরার রুমে গিয়ে রেস্ট নেও।কিছুসময় পরে সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো।”

নিরার মা ভিতরে চলে গেল।আয়ানের শ্বশুর কিছু না বলে কোথায় যেনো গেল।কিন্তু আয়ান তো জানে না নিরার রুম কোনটা।এখন কি করবে আয়ান সেটাই ভাবছে।

রিয়া গুনগুন করে গান গাইছে।এখন আকাশকে নিয়ে রিয়ার আর তেমন একটা টেনশন নেই।হঠাৎ রিয়ার ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ওর ছোট ভাই রিয়াদ কল দিয়েছে।রিয়া কলটা ধরবে কি ধরবে না সেটাই ভাবছে।আসলে রিয়াদ রিয়াকে একটা কাজ দিয়েছিল কিন্তু রিয়া সেটার কথা ভুলেই গেছে।ভাবতে ভাবতে কলটা কেটে গেল।রিয়াদ আবার কল দিলো এইবার কল রিসিভ করেই বলল

“ভাই তুই যে কাজটা করতে দিয়েছিলি সেটার কথা সত্যি ভুলে গেছি।প্লিজ রিয়াদ রাগ করিস না ভাই।”

“আমি জানতাম আপু তুই এমনি করবি।তোকে শুধু একটা মেয়ের খোজ নিতে বলেছিলাম কিন্তু তুই সেটাও পারলি না আপু।তুই শুধু আকাশ ভাইয়ের কথাই ভাবতে থাক।ছোট ভাইয়ের কথা তোর আর ভাবা লাগবে না।”

রিয়াদ কলটা কেটে দিলো।রিয়া আর কল দিলো না।কারন ভুলটা রিয়ার ছিল।বিয়ের দিন রিয়াদ একটা মেয়েকে দেখেছিল।মেয়েটাকে রিয়াদের অনেক পছন্দ হয়েছিল কিন্তু একটা জরুরি কাজ আসায় কারনে তখন বিয়ে থেকে চলে আসে।চলে আসার আগে ওর বড় বোনকে মেয়েটার ড্রেসের কালার আর গঠনরূপ বলে মেয়েটাকে খুজে বের করতে বলেছিল কিন্তু সেটা রিয়া পরে ভুলে যায়।তার জন্যই রিয়াদ কিছুটা রাগ করে কলটা কেটে দিলো।

আয়ান নিরার রুমটা খুজে পাচ্ছে না।তাই কিছু না ভাবেই ভিতরে চলে গেল।প্রথমে একটা রুম দেখলো কিন্তু এইটা তো নিরার রুম হবে না কারন রুমে প্যান্ট আর লুঙ্গি দেখতে পেয়েছে।হয়তো এইটা নিরার আব্বু আম্মুর রুম।পরের রুমে সামনে গিয়েই দেখলো নিরা ওর বোন নিলার সাথে কথা বলছে।

নিলার ইচ্ছে ছিল না নিরার সাথে কথা বলার কিন্তু নিরা যেহেতু নিজেই এসেছে তাই আর কথা না বলে থাকতে পারলো না।নিলা হঠাৎ খেয়াল করলো দরজায় আয়ান দারিয়ে আছে।আয়ানকে দেখে নিলার মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল।নিলা চাচ্ছিল না আয়ানের সাথে ওর দেখা হোক।কিন্তু ইচ্ছে না থাকার সত্তেও দেখা হয়ে গেল।নিলা আয়ানের সাথে কথা বলবে না ঠিক করে নিয়েছে।কারন নিলা আর চাচ্ছে না কষ্টটা বাড়াতে।তাই নিরাকে বলল

“আপু আয়ান ভাইয়া এসেছে।তোমায় হয়তো খুঁজছে।”

নিলার কথা শুনে নিরা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ান দারিয়ে আছে।নিরা আয়ানের কাছে গিয়ে বলল

“তুমি কি কিছু বলবে?”

“আসলে আম্মু বলল আপনার রুমে গিয়ে রেস্ট করতে কিন্তু আমি তো আপনার রুম কোনটা সেটা জানি না।”

“সামনে গিয়ে ডানদিকের রুমটা আমার।তুমি রুমে যাও আমি একটু পরে আসছি।”

আয়ান আর কিছু না বলে নিরার কথা মত সেই রুমে গেল।নিরা নিলার কাছে গিয়ে বলল

“আসলে আয়ান আমার রুমটা খুজে পাচ্ছিল না।তাই আমাকে খুজছিল।”

“ওহ।তাহলে আপু তুমি এখন যাও।ভাইয়াকে গিয়ে সময় দেও।ওনি তো আর জানে না কোথায় কি রাখা আছে তাই না।নাহলে পরে আবার কিছুই খুজে পাবে না।”

“আসলেই ঠিক বলেছিস।আচ্ছা তুই থাক আমি ওকে সব দেখিয়ে দিয়ে আসি।”

“হুম।”

নিরা চলে গেল।নিলা মনে মনে বলছে
“একদিনের মধ্যেই তোমাদের মিল হয়ে গেল।আয়ানের কত খেয়াল রাখছো।আমি না হয় আয়ানকে নাই পেলাম কিন্তু তুমি ওনাকে নিয়ে সুখে থেকো আপু।তোমাদের মধ্যে আমি কখনো আসবো না”

দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে রুমে বসে আছে আকাশ।নিরার বিষয় নিয়ে ভাবছে।আকাশ তো এমনটা চায় নি।তাহলে কেনো ওর সাথে এমন হল।আর এই সব কেই বা করলো?কেনো করলো? এই সব অনেকটা ভাবাচ্ছে আকাশকে।

“আকাশ আসবো?”

হঠাৎ কারো কথা শুনে আকাশ ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশের মা দারিয়ে আছে।

“ভিতরে এসে আম্মু।আর এইভাবে অনুমতি নেয়ার কি আছে?”

“তুই হয়তো কিছু ভাবছিস মনে হয়।সেটা কি আমাকে বলবি?”

“তেমন কিছু না আম্মু।আচ্ছা আম্মু তোমার কাছে কি মনে হয় এই কাজটা কে করতে পারে?”

“আমি ঠিক জানি না আকাশ।আচ্ছা আমি তোকে যেটা বলতে এসেছি।সেটা বলি আগে।”

“হুম বলো আম্মু।”

“তুই নিরাকে নিয়ে আর ভাবিস না বাবা।নিরা কিন্তু এখন তোর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী।”

আকাশ কিছু বলছে না।শুধু এক ধ্যানে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশের আম্মু আবার বলল

“আগামীকাল থেকে আবার তোর আব্বুর সাথে অফিসে যাবি।অফিসের কাজ করলে দেখি কিছুটা ভালো লাগবে।”

“আচ্ছা আম্মু।”

“এখন একটু রেস্ট নে।”

আকাশের আম্মু চলে গেল।কিন্তু আকাশের চিন্তার এখনো ঠিক আগেই জায়গায় আছে।কে করতে পারে এই কাজ।আর কারই বা এতে লাভ হবে?

নিরা রুমের ভিতরে যাচ্ছিল তখনি কারো সাথে হঠাৎ ধাক্কা লেগে পরে যাবে কিন্তু কেউ নিরাকে ধরে ফেলে।নিরা খেয়াল করে দেখে আয়ান নিরার কোমর ধরে দারিয়ে আছে।যার কারনে নিরা পরে যায় নি।আয়ান নিরাকে ঠিকভাবে দাড় করিয়ে বলল

“আসলে আমার একটু তাড়া ছিল তাই খেয়াল করি নি আপনাকে।আর এইটার জন্য সরি।”

“হুম।”

নিরা অনেকটা লজ্জায় পরে গেছে।আগে কখনো এমনটা হয় নি।কিন্তু আজ হঠাৎ কি থেকে কি হলো নিরা বুঝতে পারে নি।লজ্জায় আয়ানের দিকে তাকাতে পারছে না নিরা।তাই মাথা নিচু করে শুধু হুম বলল।আয়ান নিরার অবস্থা বুঝতে পেরে বলল

“আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।কিছু প্রয়োজন হলে কল দিয়েন।”

নিরা মাথা নিচু করেই মাথা নাড়ালো।আয়ান বেড়িয়ে গেল।নিরা ভিতরে গিয়ে একা একা ভাবছে
“ইস কি হলো এটা।আয়ান কি ভাবছে আমার বিষয়ে।এখন ওর সামনে কিভাবে যাবো।কিন্তু আয়ানের ছোঁয়াতে আমার এমন লাগছিল কেনো?মন চাচ্ছিল এইভাবেই থেকে যাই।ছিঃ ছিঃ আমি এইসব কি ভাবছি।আয়ান তো আমার থেকে বয়সে ছোট ওকে নিয়ে আমি এইসব কি ভাবছি।”

রিয়াদ অনেকটা বিরক্ত নিজের উপর।কেনো যে বিয়ের দিন ওর জরুরি কাজটা পড়লো।যদি ওই দিন জরুরি কাজটা না থাকতো তাহলে অন্তত সেই মেয়েটার খোজ পেতে পারতো।কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না রিয়াদের।

রেস্টুরেন্ট এ আয়ান ওর ফ্রেন্ড রানার সাথে দেখা করতে এসেছে।রানা এখনো আসে নি।আয়ান কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া দৃশ্যটা নিয়ে ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

“কিরে আয়ান তুই এইভাবে একা একা হাসছিস কেনো?তোর ভালোবাসার মানুষ কি তোর প্রেমে পড়ে গেছে নাকি?যে এমন ভাবে হাসছিস।”

চেয়ারে বসতে বসতে কথাটা বলল রানা।আয়ান বলল

“নাহ তেমন কিছু না।এখন বল কি জন্য আমাকে ডেকেছিস?”

#চলবে…

ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০১

0

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#সূচনা_পর্ব
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

“আকাশের সাথে তোর বিয়েটা আর হচ্ছে না।আকাশ নাকি গতকাল রাতেই পালিয়েছে।তাই আকাশের ছোট ভাই আয়ানের সাথে তোর বিয়ে হবে।”

বিয়ের জন্য সাজছিল নিরা।তখনি নিরার মা এসে কথাটা বলল।নিরার মার কথা শুনে পার্লার থেকে আসা মেয়ে গুলো নিরার মার দিকে তাকিয়ে আছে।নিরা কিছুসময় চুপ থেকে বলল

“আপনার চুপচাপ দারিয়ে আছেন কেনো?আম্মু কি বলেছে শুনেন নি?বিয়ে তো হচ্ছে।এমন তো না যে বিয়েটা হচ্ছে না তাই না।”

নিরার কথা শুনে পার্লারের মেয়ে গুলো আবার নিজেদের কাজ করতে লাগলো।নিরার মা নিরার কথা শুনে খুশি হয়ে রুম থেকে চলে আসলো।রুমের বাইরে নিরার আব্বু রায়হান শিকদার দারিয়ে ছিল।নিরার মা বাইরে আসতেই তিনি বলল

“তুমি কিভাবে পারলে ওনাদের কথাতে রাজি হতে?একে তো আকাশের ছোট ভাই আয়ানের সাথে নিরার বিয়ে দিচ্ছো।তার মধ্যে আয়ান নিরার থেকে বয়সে ছোট।নিজের মেয়ে হলে কি ওর সাথে তুমি এমনটা করতে পারতে?”

“দেখো নিরার আব্বু, তোমাকে আজ শেষ বারের মত বলে দিচ্ছি।এই কথাটা আর যেনো তোমার মুখ থেকে না শুনি।নিরার যখন দেড় মাস বয়স তখন থেকে আমি ওকে নিজের মেয়ের মত লালনপালন করছি।তাই আমার মেয়ের কিসে ভালো আর কিসে খারাপ হবে সেটা আমার থেকে ভালো কেউ আর বুঝবে না।আর আয়ানের কথা বলছো? নিরার থেকে মাত্র এক বছরের ছোট।তাতে সমস্যা কোথায়?”

রায়হান শিকদার তার স্ত্রীর কথা শুনে চুপ করে থাকলো।কারন এখন তার স্ত্রীকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই সেটা সে বুঝতে পেড়েছে।তাই তিনি বিয়ের আয়োজন করতে চলে গেলেন।বর যে চেঞ্জ হয়েছে সেটা শুধু নিরার আব্বু আম্মু আর নিরা জানে।নিরাদের বাসার বাকিদের এই বিষয়ে এখনো কিছু বলা হয় নি।

আরিফ মাহমুদ তার ছোট ছেলে আয়ানের রুমে গেছে।কারন আয়ানের সাথে একবার কথা বলে নেয়া দরকার।রুমে গিয়ে আয়ানকে বলল

“আয়ান তোর কি এই বিয়েতে কোনো আপত্তি আছে?”

“না আব্বু।তুমি আর আম্মু যখন চাচ্ছো ওনার(নিরার) সাথে আমার বিয়ে দিতে তাহলে সেটাই হবে।”

“আসলে নিরা মেয়েটা অনেক ভালো।তোর আম্মুর অনেক পছন্দ মেয়েটাকে।এখন যদি তুই বিয়েটা না করিস তাহলে নিরা আমাদের বাড়ির বউ হতে পারবে না।”

রুমে বাইরে থেকে এই সব শুনে আয়ানের মামাতো বোন রিয়া খুব খুশি।কারন আকাশের বিয়েটা নিরার সাথে হচ্ছে না।

নিরার ছোট বোন নিলা খুব সুন্দর করে সাজছে।কারন আজ নিলা তার ক্রাশের সাথে দেখা করবে।একটু পরপর নিজেকে আয়নাতে দেখছে আর নিজের মধ্যে কোনো কমতি আছে কি না সেটা দেখছে।
নিরার বিয়েতে আর বেশি সময় বাকি নেই।বারোটা বেজে গেছে।একটু পরেই আয়ানদের বাসা থেকে সবাই এসে পরবে।তাই রায়হান সাহেব আরিফ সাহেবকে কল দিয়ে জেনে নিলো আর কতক্ষণ সময় লাগবে।

আয়ান আর নিরা বিয়ের স্টেজে বসে আছে।নিরার রিলেটিভরা নিরার সাথে আয়ানকে দেখে অনেকটা আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে।সবাই নিজেদের মধ্যে কানাকানি করছে।তখন নিলা আয়ানকে দেখে প্রায় পাগল পাগল অবস্থা।নিজের ক্রাশকে বর সেজে দেখে নিলা প্রায় শেষ।সবাইকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিরার মা অন্য একভাবে বুঝিয়ে বলল।নিলা কথাটা শুনে কষ্ট আর দুঃখে বিয়ে থেকে বাসায় চলে গেল।

বিয়েটা হয়ে গেল।আর কিছুসময় পরে নিরা তার নতুন পরিবারে যাবে।বিয়েতে যারা নিরার রিলেটিভ ছিল তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল নিরাকে নিয়ে।

“দেখেছেন কেমন মেয়ে?নিজের বরের ছোট ভাইকে বিয়ে করে নিলো।কেমন নির্লজ্জ মেয়ে।”

“এইটা তো হিসেবে নিরার দেবর হতো।কিন্তু নিরা কিভাবে এই ছেলে বিয়ে করতে পারবো?”

“শুনেছিলাম এই ছেলে নিরার থেকে বয়সে ছোট।আর পরিবারও কেমন?মেয়ের থেকে বয়সে ছোট ছেলের সাথে বিয়ে দিলো।”

“সৎ মা বলেই নিরার থেকে বয়সে ছোট ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে।যদি নিজের মেয়ে হত তাহলে নিরার সাথে এমনটা করতে পারতো না।”

নিজের রিলেটিভ থেকে এমন কথা শুনে নিরা ভিতরে ভিতরে অনেকটা আপসেট।কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দিলো না।নিরারও যে বিয়েতে মত ছিল এমনটা না।নিরার আম্মু যেহেতু বিয়েটা ঠিক করেছে তাই সে দ্বিমত করে নি।কিন্তু কোনো দিন ভাবে নি নিজের থেকে বয়সে ছোট ছেলের সাথে বিয়ে হবে।

নিজের বাসর ঘরে বসে আছে নিরা।কিন্তু নিরার আজ এই রুমে থাকার কথা ছিল না।অন্য রুমে থাকার কথা ছিল।নিরা আকাশকে নিয়ে তেমন একটা ভাবছে না।কারন আকাশের সাথে নিরার তেমন একটা কথা হয় নি।আর আকাশকে দেখেছিল মাত্র একদিন।যে দিন নিরাকে ওরা দেখতে এসেছি।

আরিফ মাহমুদ আর তার স্ত্রী এখন আকাশকে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত।কারন আকাশ কোথায় আছে সেটা কেউ জানে না।আকাশের আম্মু বলল

“তুমি কি কোনো খোজ পেলে আকাশের?”

“নাহ।গতকাল রাত থেকেই লোক লাগিয়েছি কিন্তু কেউ এখনো খোজ পায় নি।”

“নাকি আকাশের কোনো বড় রকমের বিপদ হয়েছে?”

“আরে এই সব কি বলো?আকাশের কিছু হবে না।আমি ঠিকই আকাশকে খুঁজে নিয়ে আসবো।তুমি এইসব নিয়ে বেশি টেনশন করো না।”

আকাশ মা আর কিছু বললেন না।তার স্বামী যেহেতু বলেছে আকাশকে খুজে নিয়ে আসবে তাহলে আকাশকে সে ঠিকই নিয়ে আসবে।

“নিলা!এই নিলা! সেই এখন থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছিস মা।এবার তো দরজাটা খুল।”

তখন নিরার পাশে আয়ানকে দেখে নিলা বিয়ের স্টেজ থেকে চলে আসে।বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ করে অনেক কান্না করে।নিলা ভাবে নি নিজের ক্রাশের সাথে ওর আপুর বিয়ে হবে।আয়ানকে নিয়ে কত কি ভেবেছিল নিলা কিন্তু এখন সব শেষ।রাতেও রুমে বসে আয়ানের কথা ভাবছিল আর কান্না করছিল।তখনি নিলার মা এসে কথা গুলো বলল।নিলা চোখের পানি মুছে দরজা খুলে দিয়ে খাটে এসে আবার শুয়ে পরলো।নিলার মা নিলার পাশে বসে বলল

“কি হয়েছে নিলা?এইভাবে শুয়ে আছিস কেনো?উঠে বস।আমার দিকে তাকা।”

“কি হয়েছে।”

নিলা উঠে বসতেই নিলার মা নিলার চেহারা দেখে বলল
“কিরে নিলা তুই চেহারার এই কি অবস্থা করেছিস কেনো?”কি হয়ে আমাকে বল মা?”

“কিছু হয় নি আম্মু।”

“নিরার কথা মনে পড়ছে?আরে এতে মন খারাপের কি আছে।নিরা কি একেবারের জন্য চলে গেছে নাকি।যখন মন চাইবে আয়ানদের বাসা থেকে ঘুরে আসবি।এই সব নিয়ে মন খারাপ করতে নেই।”

নিলা কিছু না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।নিলার মা মনে করছে নিলা ওর বোনের জন্য কান্না করছে কিন্তু এমন না।নিলা আয়ানকে হারিয়ে ফেলার কারনে কান্না করছে।

সন্ধ্যা থেকে রাত হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আয়ানের রিলেটিভরা নিরাকে দেখা শেষ হয় নি।আয়ানের মা এসে সব রিলেটিভদের বুঝিয়ে রুম থেকে নিয়ে গেল।
নিরা এখন রুমে একা।কিছুসময় পরে আয়ান রুমে আসলো।খাটের সামনে আসতেই নিরা নিচে এসে আয়ানকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে যাচ্ছিল তখন আয়ান বলল

“এটা আপনি কি করছেন?আপনি প্লিজ এই সব করবেন না।”

এই প্রথম নিরার সাথে আয়ান কথা বলল।এর আগে আয়ান নিরার সাথে বা নিরা আয়ানের সাথে কথা বলে নি।কথা বলে নি সেটা ভুল হবে।কথা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না।কিন্তু এখন ওরা স্বামী স্ত্রী।আয়ানের কথা শুনে নিরা পা না ছুঁয়ে খাটে গিয়ে আগের মত বসে পড়লো।
আয়ান ফ্রেশ হয়ে এবার খাটে এসে বসলো।দুই জনের মধ্যে কিছুটা নিরবতা।আয়ান এবার নিজে থেকে বলল

“আমাদের বিয়েতে আপনি খুশি না তাই না?”

“আপনি নিজে কি আমাকে বিয়ে করে খুশি?নিজের থেকে বয়সে বড় মেয়েকে বিয়ে করে কোনো ছেলেই খুশি হয় না।আপনারও হয়তো ইচ্ছে ছিল সুন্দর একটা কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করার কিন্তু আমার জন্য সেটা আর হয় নি।”

“আপনি নিজেই বলছেন আমি আপনার ছোট আবার নিজেই আমাকে আপনি করে বলছেন।এটা তো ঠিক না।আমাকে তুমি করে বলবেন।”

নিরা কিছু বলছে না।আয়ানের কথাটা তো ঠিকই।আয়ান আবার বলল

“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।এইসব নিয়ে তো আর ঘুমাতে পারবেন না।”

নিরা আয়ানকে কিছু না বলে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আয়ান ঘুমিয়ে গেছে।আর খাটের মাঝখানে কোলবালিশ দেয়া।আয়ানের দিকে তাকিয়ে নিরা মনে মনে বলছে

“তুমি আমার থেকে বয়সে বড় হলে না কেনো আয়ান?”

আয়ানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিরা শুয়ে পরলো।কখন যে ঘুমিয়ে গেছে নিরা তা জানে না।
সকালে রুমের বাইরে থেকে কিছুটা চেঁচামেচির শব্দ হচ্ছিল।নিরা ঘুম থেকে উঠে দেখে আয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে।আয়ানকে ডাক দিয়ে নিরা গোসল করতে চলে গেল।যদিও ওদের মধ্যে কিছুই হয় নি।রুমে এসে দেখে আয়ান আবার আগের মত ঘুমাচ্ছে।তাই এবার আয়ানের কাছে গিয়ে বলল

“আয়ান উঠে পড়ো।বাইরে কিছু মনে হয় হয়েছে।গোসল করে তাড়াতাড়ি বাইরে এসো।”

আয়ান নিরার দিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে গেল।এর মধ্যে নিরা ঘরটা গুছিয়ে নিলো।আয়ান বের হতেই নিরা বলল

“এখন কি বাইরে যাবে?”

“হুম চলেন।সেই কখন থেকে চেঁচামেচি হচ্ছে।গিয়ে দেখি কি হয়েছে।”

আয়ান আর নিরা রুমের বাইরে আসতেই থমকে গেল।কারন ড্রয়িংরুমে আকাশ দারিয়ে আছে।আয়ানের রুম থেকে আয়ান আর নিরাকে একসাথে বের হতে দেখে আকাশ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ বলল

“আয়ান তোর রুমে নিরা কি করছিলো?আর তোরা একসাথে কেনো?”

চলবে।

পারফেক্ট কাপল পর্ব-১৫ এবং অন্তিম পর্ব

1

#পারফেক্ট_কাপল
#অন্তিম পর্ব
#ইনান

পিছনে তাকাতেই আকাশ আর অনি অবাক হয়ে যায় । কারণ ডার্ক মাফিয়া গ্রুপ এর সবাই ওদের লোকদের মেরে দিছে । আকাশ আর অনি আবার সামনের দিকে এবার আরেক দফা অবাক হয়ে যায় ।

অগ্নি আর নিধি দাড়িয়ে আছে । কিন্তু ওদেরকে চেয়ারের সাথে বাধা হয়েছে । পাশে তাকাতেই দেখে পুরো ফ্যামিলি দাড়িয়ে আছে ।

“তোমরা ছুটলে কী করে ?
অনির কথায় হালকা হাসলাম আমি
“ডার্ক মাফিয়ার কিং আর কুইনকে আটকে রাখা সহজ নয়
“মানে

তখনই পিছন থেকে মিলি ওদের মাথায় বন্দুক তাক করে বলে
“মানে হলো নিধি আর অগ্নি মাফিয়া টিম এর লিডার

অনি আর আকাশ মিলির দিকে অবাক চোখে তাকায় । ওদের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা অনেক অবাক হয়েছে আকাশ দাতে দাত চেপে মিলির দিকে তেরে আসতেই মিলি আকাশের পায়ে গুলি করে দেয় ।

“বিশ্বাসঘাতক
অনির কথায় মিলি হাসলো তারপর বলল
“আমি কী একবারো বলছি যে আমি তোদের দলে ?
অনি বোকার মতো উত্তর দিল
“না
“তাহলে আমি বিশ্বাসঘাতক হলাম কী করে ? আমি প্রথম থেকেই ডার্ক মাফিয়া গ্রুপের দলে । আর অগ্নিকে ভালোবাসাটা একটা নাটক ছিল যাতে আমি তোদের সাথে থাকতে পারি

অনি রেগে গিয়ে মিলিকে কিছু করতে যাবে তখনি মিলি অনির পায়ে গুলি করে দেয় । অনি যখন ব্যথায় কাতরাচ্ছিল তখন মা কাদতে কাদতে বলে

“তোকে কী নিজের মেয়ের থেকে কোন অংশে কম দেখেছিলাম । আরে তোর মা-বাবাকে খুন করার কারণ তোর বাবা তিনটা মেয়েকে ধর্ষণ করছিল আর তোর মা তা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল । একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের ক্ষতি কী করে করতে পারে ।
তখন অনি চিল্লিয়ে বলে
“বেশ করেছে ধর্ষণ করেছে । পুরুষ হওয়ার কারণে বাবার একাধিক মেয়ের লালসা থাকতেই পারে আর মা স্ত্রী হিসেবে স্বামীকে সাহায্য করার কর্তব্য পালন করছে ।

অনির কথায় আমি আর অগ্নি তচ্ছিল্য হাসলাম । কতটা নিচু মন মানিসকতার হলে এমন কথা বলতে পারে । অগ্নি এগিয়ে গিয়ে অনির গালে থাপ্পর মারে

“আমার লজ্জা লাগছে তোকে আমার বোন ভাবতে । ওপস সরি তুই তো আমার বোনই না ।
আমি এগিয়ে এসে বললাম
“একটা মেয়ে হয়ে তুই এই কথাটা কী করে বলতে পারলি ।

তখন আমি অভি মানে রিয়াদ আর সাব্বির মানে আরিশকে ইশারা করলাম আকাশ আর অনিকে এখান থেকে নিয়ে যেতে । ওরা ওদেরকে নিয়ে চলে যায় । আমরা সবাই বাসায় চলে আসি

বাবা মা একেবারে চুপ হয়ে গেছে কারো সাথে কথা বলে না । অনেক বড়সড় শকট খেয়েছে তা বুঝতে পেরেছি । শকট পাওয়ার ই কথা এত বছর যাকে নিজের মেয়ের মতো দেখেছে সেই মেয়ে এতো খারাপ হলো ।
.
.
.
আমি আর অগ্নি বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলাম । অগ্নি কেন দাড়িয়ে আছে আমি জানি না কিন্তু আমি দাড়িয়ে ভাবছি আকাশকে আর অনিকে শাস্তি দেওয়ার কথা ।

“অগ্নি
“হুম বলো
“আমার একটা বাঘ লাগবে কালকের মধ্যে
“কেন কী করবে

আমি অগ্নির দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসলাম । আমির হাসি দেখে আর কিছু বলল না কিন্তু কিছু একটা বুঝতে পেরেছে যে আমি কী করতে চলছি
.
.
.
পরের দিন
আমি ঘুম থেকে উঠেই বৌ ভাতের আয়োজন করতেছি । অগ্নিও ব্যস্ত হয়ে গেছে কাজে । ইশা আর রিমিকে পার্লার থেকে সাজানোর জন্য মেয়ে এসেছে ।

আমি এই ফাকে অগ্নিকে ডেকে আলাদা জায়গায় নিলাম

“আমি যেইটা আনতে বলছিলাম আনছো ?
অগ্নি আমার কমড় জড়িয়ে আমাকে কাছে টেনে এনে বলে
“আমার বউ চেয়েছে পাবে না ।
“তাই তো
“তা ডার্ক মাফিয়া গ্রুপের কুইন আপনি কী প্ল্যান করছেন একটু বলবেন প্লীজ
“না বলা যাবে না । যখন সময় হবে দেখতে পাবে ।

বাসার সব কাজ মিটিয়ে আরিশ আর রিয়াদের কাধে বাকিটা ছেড়ে দিয়ে আমি আর অগ্নি গেলাম আমাদের আস্তানায় ।
.
.
.
“মিলি বাঘ দিয়ে গেছে লোকজন

অগ্নি কথায় মিলি ইশারা করে দেখালো । মিলির ইশারা অনুযায়ী তাকালাম । একটা কাচায় ক্ষুধার্ত বাঘ আছে ।

“মিলি ওরা কোথায়
“ঐযে চেয়ারে বাধা আছে
“ওদেরে দুজনকে ঐ ক্ষুধার্ত বাঘের কাচায় ছেড়ে দাও

আমার কথায় আকাশ আর অনি চিত্‍কার করছে কিন্তু মুখে টেপ লাগানোর জন্য শোনা যাচ্ছে না । আমি গিয়ে ওদের মুখের টেপটা খুলে দিলাম

“নিধি প্লীজ আমায় ছেড়ে দে আমি তোর কাজিন

আকাশের কথায় আমি, মিলি আর অগ্নি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম । তার পর বলতে লাগলাম

“তোকে তো আমি ৩ বছর আগেই আমার কাজিনের তালিকা থেকে বের করে দিছি যখন জানতে পারলাম তুই রেড মাফিয়া গ্রুপের কিং

আমি মিলিকে ইশারা করতেই মিলি আমাদের গ্রুপের লোকদের নির্দেশ দিলো ওরা এসে আকাশ আর অনিকে নিয়ে বাঘের কাচায় ছেড়ে দিল ।

আমি ওদের শেষ হওয়াটা এক নজরে দেখতে লাগলাম । অগ্নির দিকে তাকাতেই অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো

“বাহ্ আমার মতোই চিন্তা ধারা
“এই জন্য ই তো আমরা পারফেক্ট কাপল

আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম । মিলি বলে উঠে
“সত্যিই তোমরা পারফেক্ট কাপল

সমাপ্ত
ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য ।