ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০৬

0
1806

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৬
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

কথাটা শুনে আকাশ খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বলল
“আমি এই পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে করবো সেটা তোমরা ভাবলে কিভাবে?আমি রিয়াকে বিয়ে করতে পারবো না আব্বু।”

কথা বলেই আকাশ রুমে চলে গেল না খেয়েই।সবাই কিছুটা চুপ হয়ে গেল।তখন আয়ান বলল

“আব্বু আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখছি।”

আয়ানের কথা শুনে ওর আম্মু বলল
“হ্যা আয়ান তুই কথা বলে দেখ।আমাদের কথা তো আর শুনলো না।তোর কথা যদি শুনে।”

রিয়া কিছু বলছে না।চুপ করে দারিয়া আছে।কিন্তু মনে মনে বলছে
“আমি পিচ্ছি তাই না।যদি আমার সাথে আপনার বিয়েটা হয় তাহলে বুঝিয়ে দিবো আমি পিচ্ছি কি না।কত বড় সাহস আমাকে পিচ্ছি বলে।আমারো সময় আসবে তখন বুঝাবো আপনাকে।”

তিনমাস পরে অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেল।নিরা আর আয়ানের সম্পর্ক অনেকটাই কাছাকাছি এসে গেছে।এই কয়েকমাসে নিরা আয়ানের প্রেমে পড়ে গেছে যেটা নিরার অজানতেই।কি থেকে কি হয়ে গেল সেটা নিরাও জানে না।কিন্তু আয়ানকে এখন অনেকটা চোখে হারায় নিরা।
গতকাল রাতের কথা।আয়ান কিছুটা রাত করে বাসায় এসেছে।নিরা আয়ানের সাথে কথা বলছে না।তাই আয়ান বলল

“কি হয়েছে আপনার?আজ এত চুপচাপ কেনো?আপনার কিটকেট চকলেট ব্যাগে রাখা আছে।আমি কিন্তু সেটার কথা ভুলি নি।”

নিরা তাও কিছু বলছে না।আগের মতই নিজের কাজ করে যাচ্ছে।আয়ান এবার নিরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল

“কি হয়েছে আপনার?আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো?”

নিরা কিছু মন খারাপ করে বলল
“আজ না আমাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া কথা ছিল।তুমি তো সেটা ভুলেই গেছো।”

আয়ান এবার বুঝলো আসল কাহিনীটা।আজ নিরাকে নিয়ে ওর বাইরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আয়ান সেটা ভুলে গেছে।আয়ান এবার নিরাকে কাছে নিয়ে বলল

“সরি সরি আমি সত্যিই ভুলে গেয়েছিলাম।আগামীকাল সপ্তাহে ঠিকই নিয়ে যাবো।আপনি প্লিজ মুড অফ করে রাখবেন না।এই যে কানে ধরলাম।আর এমন ভুল হবে না।”

নিরা কিছু বলছে না।মনে মনে হাসছে আয়ানের কান্ড দেখে।কিন্তু আয়ানের সামনে হাসলে মজাটা আর থাকবে না।

এই দিকে আকাশের অবস্থা অনেকটা খারাপ।কারন রিয়া আকাশকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।সেই দিন আকাশ রিয়াকে বিয়ে করবে না বলে রুমে চলে এসেছিল।আকাশ ভেবেছিল সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু হল তার ঠিক উল্টা।তারপরের দিন থেকে রিয়া খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়।যার ফলে রিয়া অনেকটা অসুস্থ হয়ে পরে।রিয়ার ফুপি রিয়াকে খাবার খাওয়াতে গেলে রিয়া বলে আকাশ যদি ওকে এসে না খাওয়ায় তাহলে নাকি খাবে তার আগে না।এই কথা শুনে রিয়ার ফুপি মানে আকাশের আম্মু আকাশকে গিয়ে কথাটা বলে।
আকাশ তখন কিছু করে নি চুপ করে ছিল।কিন্তু তারপরের দিন থেকে আকাশের আম্মুও রাগ করে খাওয়া বন্ধ করে দেয় তখন আকাশ বাধ্য হয়ে রিয়াকে খাবার খাওয়াতে যায়।তখন রিয়া বলে

“এর পরের বার থেকে যদি আমার বিষয়ে উল্টাপাল্টা কিছু বলেছেন তাহলে এইবারের মত আর খাওয়া বন্ধ করবো না।কিছু একটা খেয়ে শেষ হয়ে যাবো।আপনাকে যদি আমি না পাই তাহলে আমি মরে যাবো।কথাটা ভালো করে মনে রাইখেন।”

আকাশ তো সেই দিনের পরে পুরাই শান্ত হয়ে গেল।যদি রিয়ার কিছু হয় তাহলে ওর মাকে কি বলবে সেটা নিয়েই কিছুটা টেনশনে থাকে।তাই রিয়াকে কিছু বলে না।আর এটাই আকাশের বড় ভুল ছিল।রিয়ার এখন যা মন চায় তাই করে।নিজের বাসায় তো আর যায় নি ঠিকই কিন্তু আকাশকেউ শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।রাতে আকাশের রুমে ঘুমানো বাদে বাকি সময় আকাশের সাথেই থাকে।আকাশ অফিস থেকে ফিরে আসার পর থেকেই রিয়ার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়।ওয়াশরুমে গেলে আকাশকে তোয়ালে এগিয়ে দেয়া।অফিসে যাওয়ার সময় আকাশকে সব কিছু এগিয়ে দেয়া।খাবারের সময় আকাশের কি লাগবে না লাগবে সব কিছু এখন রিয়াই করে।যদি আকাশ রিয়াকে কিছু বলে বা রিয়াকে বলে এইটা করা লাগবে না বা এইটা করছিস কেনো তাহলে রিয়া কান্না করে পুরো বাসা করে।তখন আকাশ আবার আগের মত চুপ হয়ে যায়।বেচারা আকাশ এখন রিয়ার কথা মত চলে নাহলে কান্না করে সেটা মানাতে বাদ্ধ হয়।

আর রিয়াদ অনেক কষ্টে নিলার কথা নিরার কথা জানতে পারে।নিরা প্রায় দুই মাস রিয়াদের সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে তারপর নিলার নাম বলে রিয়াদকে।কিন্তু রিয়াদ এইটা এখনো জানে না নিরার ছোট বোন নিলা।নিলা প্রথমে রিয়াদের কথা শুনে অনেক রাগ করেছিল কিন্তু পরে ওর আপুর কথা শুনে রিয়াদের সাথে দেখা করতে রাজি হয়।আজ বিকালে রিয়াদের সাথে নিলার দেখা করার কথা।পাচঁটা সাতাশ বাজে কিন্তু নিলা এখনো আসে নি।পাচঁটা বিয়াল্লিশ মিনিটে নিলা রেস্টুরেন্টে আসে।নিলা অবশ্য রিয়াদের ছবি দেখেছিল তাই চিনতে আর অসুবিধা হয় নি।নিলা চেয়ারে বসতে না বসতেই রিয়াদ বলল

“কেমন আছেন আপনি?”

“ভালো।”

“আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো?”

“নাহ।”

“আপনার জন্য কি অডার করবো?মানে কি খাবেন আপনি?”

“নাহ কিছু লাগবে না।”

“তা কি করে হয়।আচ্ছা আপনি বসেন আমি আপনার ফেভারিট চকলেট আইসক্রিমটা অডার দিয়ে আসি।”

নিলা কিছু বলল না।রিয়াদ অডার দিতে চলে গেল।রিয়াদ যে দেখতে খারাপ এমনটাও নয়।রিয়াদকে দেখে নিলার খারাপ লাগে নি কিন্তু নিলা তো এই সব অন্য কারো থেকে আসা করেছিল কিন্তু তা আর হল কই।নিলার এই সব নিয়ে ভাবছিল এর মধ্যে রিয়াদ খাবার নিয়ে এসে হাজির।
রিয়াদ অনেক কথাই বলছে নিলাকে।নিলা শুধু হ্যা না বলছে।সন্ধ্যার আগে নিলা আর রিয়াদ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয় বাসায় জন্য চলে যাওয়ার জন্য।নিলা চলে যাচ্ছিল তখন রিয়াদ বলল

“আচ্ছা ম্যাডাম আপনার নাম্বারটা কি দিয়ে যাবেন?নাকি সেটার জন্যও আমাকে অপেক্ষা করতে হবে?”

নিলা রিয়াদের দিকে বাকা করে তাকিয়ে থেকে রিয়াদের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলার নাম্বার সেভ করে দিয়ে হনহন করে চলে গেল নিলা।নিলার এমন কান্ড দেখে রিয়াদ হাসছে আর বলছে

“আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার আগে তোমার পিছু আমি ছাড়ছি না নিলু।”

রিয়াদ কিছুসময় নিলার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে রিয়াদও বাসায় চলে গেল।নিলা বাসায় গিয়ে প্রথমেই ওর আপুকে কল দিলো।নিরা এর শাশুড়ির সাথে রান্নাঘর কাজ করছিল তখন নিলার কল আসাতে শাশুড়িকে বলে রুমে গিয়ে কলটা রিসিভ করে বলল

“হ্যা নিলা বল।”

“আপু তুমি এইটা কার সাথে দেখা করতে বলেছিলে আমাকে হ্যা?আমার মাথা খেয়ে ফেলেছে আজ।এখনো আমার মাথা ব্যথা করছে।”

“আচ্ছা সেটা না হয় বুঝলাম।কিন্তু তোর কাছে রিয়াদকে কেমন লেগেছে সেটা বল।”

“কোনো রকম।”

“আচ্ছা তাহলে আমাদের কাজিন লিজা আছে না। লিজা কিন্তু রিয়াদের কথা আমাকে বলেছিল।তোর কাছে ভালো না লাগলে আমি রিয়াদের কথা লিজাকে বলে দেই।কি বলিস?”

“ওনার জন্য লিজা ঠিক না।লিজা যেমন মেয়ে ওনার সাথে মানিয়ে চলতে পারবে না।পরে সমস্যা হবে।”

“ওহ তাই নাকি!তাহলে কে মানিয়ে চলতে পারবে তুই?”

“ধুর আপু তুমিও না।তুমি একটু বেশি বেশিই বুঝো।আমি রাখছি এখন বাই।”

কলটা কেটে দিলো নিলা।আর এইদিকে নিরা নিলার অবস্থা বুঝতে পেরে মনে মনে হাসছে।কিছুসময় পরে আয়ান অফিস থেকে বাসায় আসলো।আজ কিছুটা ক্লান্ত লাগছে আয়ানকে।তাই নিরা বলল

“আয়ান তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি খাবার রেডি করছি।”

আয়ান নিরার দিকে হালকা হেসে ফ্রেশ হয়ে চলে গেল।নিরা রুম থেকে বাইরে যাচ্ছিল তখনি আয়ানের ফোনে কল আসলো।নিরা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে।নিরা সাধারণত আয়ানের ফোনে কোনো কল আসলে সেটা রিসিভ করে না কিন্তু আজ কি মনে করে কলটা রিসিভ করলো।বিপরীত পাশ থেকে বলল

“আয়ান রাজ বলছে ওর নাকি আরো টাকা লাগবে।যদি না দিস তাহলে নাকি সবাইকে বলে দিবে তুই তোর ভাইকে কিডন্যাপ করিয়েছিস।এখন তুই কি..”

আয়ান ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসাতে নিরা কলটা কেটে দিল।আয়ান রুমে এসে দেখে আয়ানের ফোন নিরার হাতে।আয়ান বলল

“কেউ কি কল দিয়েছিল?”

নিরা সরাসরি বলল
“আয়ান তুমি কি তোমার ভাইকে কিডন্যাপ করিয়েছিলে?”

আয়ান কিছু না বলে মুচকি হাসলো।নিরা আবার বলল

“কি হল আয়ান বলো তুমি কি তোমার ভাইকে কিডন্যাপ করিয়েছিলে?”

এবার আয়ান যা বলল সেটা শুনে নিরা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলার মত অবস্থা।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে