ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-১১

0
1742

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_১১
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

আয়ানের আম্মুর কথাতে ওরা চুপ হয়ে গেল।খাওয়া শেষে আয়ানের আম্মু বলল

“আয়ান এখন তাহলে বাসায় চল।অনেক তো হল এবার।”

“নাহ আমি ওই বাসাতে যাবো না।আমি এইখানেই ঠিক আছি আম্মু।”

“তাহলে আমিও যাবো না বাসাতে।এইখানেই থাকবো।”

“থাকো আম্মু।সেটা তো আমার জন্য আরো ভালো।”

“আকাশ তুই রিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে যাস।তোর আব্বুকে বলে দিস আমি এইখানেই থাকবো।”

আকাশ বলল
“তুমি এইখানে থাকলে আমি কেনো ওই বাসাতে থাকবো?আমিও এইখানে থাকবো।”

“নাহ তুই এইখানে থাকবি না।তোর আব্বু যতদিন না আয়ানকে এসে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে ততদিন আমি আয়ানের সাথেই থাকবো।তুই আর রিয়া বাসায় চলে যাস।”

এবার রিয়া বলল
“ফুপি যা বলেছে তাই হবে।আমরা বাসায় চলে যাবো।বাসায় গিয়ে ফুপাকে বলে দিবো আয়ান বাসায় না যাওয়া পর্যন্ত ফুপিও বাসায় যাবে না।”

আকাশ আর কথা বাড়ালো না।সন্ধ্যার পরে আকাশ আর রিয়া বেড়িয়ে পরলো বাসার জন্য।রিয়া কিছুটা খুশি কারন রিয়া আর আকাশ আজ একা।আকাশের কাধে মাথা রেখেছে রিয়া।আকাশ নিজের মত করে ড্রাইভ করছে।

আজ কি মনে রিয়াদকে কল দিলো নিলা।রিয়াদ ওর ফ্রেন্ডদের সাথে বাইরে আড্ডা দিচ্ছিলো।তখন রিয়াদের ফোনে রিং হলো।কিন্তু যখন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো নিলার নাম্বার থেকে কল এসেছে তখন রিয়াদ কিছুটা শক।রিয়াদ সাইডে গিয়ে কলটা রিসিভ করে বলল

“হুম বলেন ম্যাডাম।”

“আপনি এখন কোথায়?”

“আমি তো ফ্রেন্ডদের সাথে একটু বাইরে এসেছি।”

“রাত প্রায় নয়টা বাজে আপনি এখন বাইরে কি করছেন হ্যা?”

“ফ্রেন্ডদের সাথে একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম।”

“আপনাকে আমি ভালো ছেলে ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি তো দেখছি বাকি ছেলেদের মত।”

“আরে এইখানে খারাপ কি করে ফেললাম?”

“আপনি এখনি বাসায় যান।আগামীকাল থেকে সন্ধ্যার পর থেকে বাসার বাইরে থাকবেন না।”

“এইটা আবার কেমন কথা?বাসায় থেকে কি করবো?”

“থাক আমার কথা আপনার শুনা লাগবে না।যা মন চায় করেন।বাই।”

রিয়াদ তো পুরাই বোকা বনে গেল।হতভম্ব হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে রিয়াদ।ভাবছে কি হচ্ছে এই সব।নিলা মনে মনে হাসছে।আবার পরে কল দিবে রিয়াদকে।

রাতের সব রান্না নিরা একাই রেঁধেছে।খাওয়া শেষে সবাই ঘুমাতে রুমে গেল।নিরা আর আয়ান ওদের রুমেই ঘুমাতে গেল।আর আয়ানের আম্মু নিলা আর সায়রা এক রুমে শুয়ে পরলো।

সকালে প্রায় দশটার দিকে আকাশ আর রিয়া বাসায় পৌছে যায়।ওরা বাসায় গিয়ে দেখে আকাশের আব্বু আজ বাসায় আছে।আকাশকে দেখে ওর আব্বু বলল

“আকাশ তোর আম্মু আর ভাই কোথায়?ওরা আসে নি?”

“আয়ান বলেছে এই বাসাতে আসবে না।আর আয়ান এইখানে আসবে না দেখে আম্মু আয়ানের কাছে থেকে গেছে।”

“তুই ওকে একটু বুঝিয়ে বাসায় আনতে পারলি না।”

“আব্বু তুমি ভালো করেই জানো আয়ান কেমন।তোমার কি মনে হয় আমি ওকে জোড় করি নি?”

আকাশের আব্বু আর কিছু বলল না।আকাশ ওর রুমে চলে গেল।আরিফ মাহমুদ বুঝতে পেরেছেন সে যদি তার ছেলে আনতে না যায় ততদিন আয়ান এই বাসাতে আসবে না।

আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেছে আয়ানের আম্মু আয়ানের কাছে আছে।আকাশ আর রিয়া প্রতিদিন আয়ান আর ওর আম্মু সাথে কথা বলে।এর মধ্যে রিয়ার মাথায় বিয়ের জোখ ধরেছ।রিয়া ওর আম্মু আব্বুকে এইটা বলেছে কিন্তু তারা তেমন কিছুই বলে নি।রাতে আকাশ অফিস থেকে ফিরে আসতেই রিয়া বলল

“আমাদের বিয়েটা কবে হবে হ্যা?আমি আর এইভাবে কয়দিন থাকবো?”

আকাশ ভ্রু কুচকে বলল
“তোর আবার আজ কি হলো হঠাৎ?”

“আর কত দিন এইভাবে থাকবো আমি?আপনি জলদি আমাকে বিয়ে করে নেন।আমি এইভাবে আর থাকতে পারছি না।”

“আয়ান আগে বাসায় আসুক তারপর।”

“আয়ানকে বাসায় নিয়ে আসলে বিয়ে করবেন আমাকে?”

“আয়ান বাসায় আসার এক সপ্তাহের মধ্যে তোকে বিয়ে করবো।এবার হয়েছে।এখন আয়ানকে বাসায় আনার চিন্তা কর।”

“আপনি কিন্তু বলেছেন আয়ান বাসায় আসলে আমাকে বিয়ে করবেন।”

“আমাকে কি তোর মিথ্যুক মনে হয়?”

“আমি সেটা বলি নি।কিন্তু আয়ান আসলে আবার এই কথা ভুলে যেয়েন না।”

পরের দিন রিয়া ওর ফুপিকে কল দিলো।ফুপিকে বলল

“ফুপি তোমার বড় ছেলে কিন্তু বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।আয়ানকে বলো এখন বাসায় এসে পরতে।”

“তুই এই কথা আমাকে বলছিস কেনো?আয়ানকে বল বাসায় চলে আসতে।আমাকে এইসব বলে লাভ নেই।”

“ওই শয়তানের সাথে কথা বললেই আমাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিবে।তার থেকে তুমি একটু আয়ানকে বুঝিয়ে বলো যাতে আয়ান বাসায় চলে আসে।এখন ওনি রাজি হয়েছে পরে যদি আবার মত চেঞ্জ করে ফেলে তাহলে?”

“আমাকে এই সব বলে কিছু হবে না রিয়া।আয়ান বাসায় আসলে আমি তোর কথা গুলো ওকে বলল।কিন্তু বাকিটা আয়ানের উপর।সেটা আমি কিছু জানি না।”

“আচ্ছা ফুপি তুমি একটু ভালো করে বললেই হবে।এখন রাখছি।”

রিয়া এখন বসে বসে ভাবছে কি করা যায়।কিছু যদি একটা না করে তাহলে আকাশের সাথে এখন আর বিয়েটা করতে পারবে না।এই দিকে আজ অনেকদিন হল নিলার সাথে কথা বলতে পারছে না রিয়াদ।কারন নিলা ফোন বন্ধ করে রেখেছে।তাই আজ আবার কল দিলো নিলার নাম্বারে।কিন্তু সেই আগের মতই নাম্বার বন্ধ।এবার নিরাকে কল দিলো।

নিলা আর নিরা ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছিল তখন নিরা ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো রিয়াদ কল দিয়েছে।নিলা বলল

“আপু কে কল দিয়েছে?”

“রিয়াদ কল দিয়েছে।নে কথা বল।তোর জন্যই মনে হয় কল দিয়েছে।”

“নাহ আমি কথা বলল না এখন।তুমি কথা বলো।আমার কথা বললে বলবে আমি সায়রাদের বাসায় চলে গেছি।আর কলটা রিসিভ করে লাউডস্পিকার অন করো।আমিও শুনবো।”

নিরা আর কিছু না বলে কলটা রিসিভ করে লাউডস্পিকার অন করে বলল

“হ্যা রিয়াদ বলো।”

“ভাবি তোমার বোন কোথায়?”

“কে নিলা?”

“হ্যা ভাবি।”

“ও তো সায়রাদের বাসায় চলে গেছে।কেনো ভাই কি হয়েছে?”

“আর বইলো না ভাবি।সেই দিন রাতে কল দিয়ে আমাকে বলল আমি কোথায়।আমি বলেছিলাম বাইরে আছি বন্ধুদের সাথে।আমি এত রাতে বাইরে কেনো।এইটা কিছু একটু কথা বলার পরে ফোন অফ করে রেখেছে।এখনো কল দিয়েছি কিন্তু নাম্বার বন্ধ বলছে।ভাবি আমি এখন কি করবো বলো।”

“তোমার তো ওর কথাটা শুনা উচিত ছিল।এখন আমি কি বলল ভাই।আমার কাছে থাকলে হয়তো কিছু বলতাম কিন্তু ও তো এইখানে নেই।আচ্ছা আমি সায়রার সাথে কথা বলে দেখি নিলার সাথে কথা বলা যায় কি না।”

“তুমি একটু চেষ্টা করো।”

“আচ্ছা ভাই।এখন রাখছি।”

“আচ্ছা ভাবি।”

কলটা কাটতেই নিলা আর নিরা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।নিরা বলল
“তুই তো রিয়াদকে পাগল বানিয়ে ছাড়বি।”

“পাগল হলেও চলবে।কিন্তু খারাপ হলে না।রিয়া আপু বলেছে ওনি নাকি ভার্সিটি মারামারি করে।তাই এমন করেছি।না হলে পরেও এমন করবে।”

“যা করবি বুঝে শুনে করবি।কিছু হলে কিন্তু সবাই পরে আমাকে ধরবে।”

“হ্যা এখন তো তোমার দেবরই সব।আমি তো কিছু না।”

“আমি কি সেটা বলেছি তোকে।”

“হুম জানি সেটা।”

আরিফ মাহমুদ অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করেছে আয়ানকে সে নিয়ে আসবে।বাসাটাও কেমন খালিখালি লাগছে আয়ানকে ছাড়া।কিন্তু আয়ানের ঠিকানা তো আরিফ মাহমুদের কাছে নেই।কি করে আয়ানের ঠিকানাটা পাবে সেটাই চিন্তা করছে।

রাতে কাজ শেষ করে আয়ান বাসায় এসেছে।আয়ান ফ্রেশ হয়ে আসতেই নিরা আয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।আয়ান বলে

“কি ম্যাডাম আজ কিছুটা অন্য রকম লাগছে?”

“আমরা আর কত দিন এইভাবে থাকবো আয়ান?”

“মানে!”

“রিয়া আজ কল দিয়েছিল আম্মুকে।তোমার ভাই নাকি বিয়েতে রাজি হয়েছে কিন্তু তুমি বাসায় না গেলে নাকি বিয়ে করবে না।এখন রিয়া তো টেনশনে আছে।পরে যদি আকাশ ভাইয়া মত চেঞ্জ করে ফেলে।”

“ওই পেত্নীর জন্য আমি বাসায় যেতে পারবো না।আমার কোনো ইচ্ছে নেই ওই বাসাতে যাওয়ার।”

“আমি তোমাকে জোড় করবো না আয়ান।কিন্তু আমি চাই না এইভাবে থাকতে।আমারো মন চায় সবাইকে একসাথে নিয়ে থাকতে।”

“হুম ভালো।”

রাতের খাবার খেয়ে আকাশের আব্বু রুমে যাচ্ছিল তখন ওনার শ্যালক কল দিলো মানে রিয়ার আব্বু।রিয়ার আব্বু এত রাতে কল দেয়াতে আরিফ মাহমুদ কিছু অবাক হলেন।সে কলটা রিসিভ করতেই তার শ্যালক বলল

“হ্যালো দুলাভাই আপনার সাথে একটু দরকারি কথা ছিল।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে